![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
’তোমরা যখন পড়তে বসো মানুষ হবার জন্য আমি না হয় পাখিই হব, পাখির মত বন্য-
আমার অনুভূতি কখনই সার্বজনীন না। আমি আমাকে যেভাবে দেখি আমার পরিবারকে সেভাবে দেখিনা, আবার পরিবারকে যেভাবে দেখি এলাকার সবমানুষকে সেভাবে দেখিনা। এভাবেই আমার অনুভূতির ক্রমশ পরিবর্তন হয়, রিবার-ধর্ম-দেশ ভেদে। রাস্তায় যেদিন সেই নিরীহ মানুষটাকে নির্যাতিত হতে দেখেছিলাম, আমি সেদিন কিছুই করিনি কারণ আমি জানতাম সে আমার পরিবারের কেউ নয়। অযথা একটা অপরিচিত লোকের জন্য ঝামেলায় জড়ানোর কোন মানেই ছিলনা।
আমার দেশে প্রতিবছর হাজার মানুষ রাজনৈতিক সহিংসতায় বা সন্ত্রাসী আক্রমণে মারা যাচ্ছে কিন্তু আমি নির্বিকার থাকি, নিজের পিঠ বাঁচিয়ে চলি। কিন্তু আমি চুপ থাকিনা যেদিন বিএসএফ এর হাতে একজন বাঙালিও মারা পরে। আমি সোচ্চার হই, আমি কাঁটাতারে ঝুলানো ছবি নিয়ে প্রতিবাদ করি। দেশের স্বাধীনতা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন হই। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমি দেশাত্মবোধের প্রদর্শনীতে নেমেছিলাম না। শামিম ওসমান, জয়নাল হাজারী বা সাকা চৌধুরী নয়, আমার উদ্বিগ্নতার কারণ ছিল কাঁটাতারে ঝুলানো ফেলানির লাশ।
আমাকে দেশ আর পরিবারে আবদ্ধ ভাবলে আপনি ভুল করবেন। আমি বহির্বিশ্বের খবর ও রাখি। ২০০০ পরবর্তী কঙ্গো যুদ্ধে যখন লক্ষ-লক্ষ (প্রায় ৪০ লক্ষ) মানুষ মারা পরে তখন কেবলমাত্র আমরা রঙিন টেলিভিশন কিনেছিলাম। বরাবরই এই কালোদের টিভিতে জীবিত বা মৃত যেকোনভাবে দেখতেই আমার বিরক্ত লাগত। তার উপর তখন আমেরিকার জালিমরা তখন আফগানিস্তান আক্রমন করেছিল। আমি বুকের রক্ত ঢেলেই দিতে চেয়েছিলামই কিন্তু শুধু আফগানিস্তান যেতে পারিনি। আমি সুদানে চলমান দুর্ভিক্ষের খবরও জানি। আমি এই খবরও রাখি যে ইরাকি-কুর্দি, তুর্কি-কুর্দি সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষাধিক নিহত হয়েছে, এখনো হচ্ছে কিন্তু তা আমার চিন্তার কারণ হয়নি। আমি জানি পাকিস্তানে সামান্য গোত্রভেদের কারনে মসজিদে বোমা হামলা হয়, এইটা আমার ধর্ম অনুভূতিতে আঘাত আনেনি। ২০০৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানে ৭৮৯৪৬ জন মৃতের খবরও আমি জানি। কিন্তু তা আমার মানবতাবোধ ব্যাহত করেনি। রাশিয়া-ইউক্রেন, আফ্রিকান, সাউথ-আমেরিকান যুদ্ধ আমাকে টলাতে পারেনি। আমার জীবন স্বাভাবিকই চলছিল।
এমনকি ফিলিস্তিনিতে হামাস-ফাতেহ্ সংঘর্ষের সময়ও সব ঠিক ছিল। সব পালটে গেল যখন ইসরায়েল হামলা চালালো গাঁজায়। আমি কেঁপে উঠলাম। এত মুসলিমের মৃত্যুতে আমি দিশেহারা হয়ে গেলাম। এখানে মানুষ মরেনি, মুসলিম মরেছে, এখানে সন্ত্রাসীরা মারেনি, ইহুদীরা মেরেছে। আমি মানতে পারলাম না। আমি হাপিত্যেশ করা শুরু করলাম। আবারও আমি হাতে ছবি নিয়ে প্রতিবাদ করা শুরু করলাম। অন্যান্য যুদ্ধের ছবি ভেজাল মিশিয়ে ঘটনার গুরত্ত বাড়িয়ে তুলতে আমার হাত কাঁপল না। হাজার খানেক মানুষের মৃত্যু আমার মানবতাবোধ নাড়িয়ে দিল। আমার বিবেকবোধ জাগিয়ে দিল। আমি চিৎকার করে বলতে শুরু করলাম “হে ইসরায়েল, তোমাদের অস্ত্রভাণ্ডার, তোমাদের জিডিপি (২৪৩ বিলিয়ন ডলার) আকাশছোঁয়া হতে পারে কিন্তু তার উপরও আমাদের আল্লাহ্ আছেন।
আমি বাঙালি। যুদ্ধের যাবতীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারণ আমি ধর্মীয়ভাবে দেখতে বেশি পছন্দ করি। আমি প্রভাবিত নই, আমি পক্ষপাতী নই। আমি নিরপেক্ষ। আমি বরাবরই একটু আবেগি আর ঢেউ একটু বেশিই পছন্দ। সেইটা নারীর কোমরের হোক আর সমসাময়িকতার হোক। আমার সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল, আমি এইসব ভুলে কাল থেকে নিজের কাজে মন দিতে সামান্যতমও ঝামেলায় পরব না।
"আমি অবশ্যই গাজায় ইসরায়েলই আগ্রাসনের তীব্রভাবে বিপক্ষে।"
©somewhere in net ltd.