![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাউকে অতিক্রম করতে চাইনা, ব্যতিক্রম হতে চাই।
বাংলাদেশ, একটি ভূখণ্ড। যার বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে নদ-নদী। তবে দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি রয়েছে যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। একে “ম্যানগ্রোভ বন” বলা হয়। এর কিন্তু চমৎকার একটা নাম আছে। সুন্দরবনের অধিকাংশ গাছই চির সবুজ ম্যানগ্রোভ শ্রেণির। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী ৷ এই বনে থাকা “সুন্দরী” গাছের নামেই বনের নামটি সুন্দরবন।
আপনাকে যদি বাংলাদেশের কিছু দর্শনীয় স্থানের নাম বলতে বলা হয়, তাহলে আপনার মস্তিস্কে প্রথম যে কয়েকটি স্থানের নাম আসবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুন্দরবন। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ অসংখ্য পশু-পাখির অনন্যসাধারণ সমাগম এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের পাশাপাশি এ বনে রয়েছে অবিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যা ভ্রমণ পিপাসুদের নজর কাড়তে বাধ্য। সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত প্রধান প্রধান নদীগুলো হলো- পশুর, শিবসা, বলেশ্বর, রায়মঙ্গল। সুন্দরবনে নদী ছাড়াও শত শত খাল জালের মতো ছড়িয়ে রয়েছে পুরো বন জুড়েই। সুন্দরবনের মূল রূপ ও রহস্য হচ্ছে জোয়ার আর ভাঁটায়। সুন্দরবনে জোয়ার ভাটার খেলা চলে প্রতিনিয়ত। জোয়ার ভাটার কারনেই একটু পর পর সুন্দরবনের চেহারা বদলে যায়। যে খাল আপনি এখন দেখবেন পানিতে ভরপুর একটু পরেই আবার সেই খালেই দেখবেন পানি নেই আছে শুধুই কাঁদামাটি।
সুন্দরবন পৃথিবীর একক বৃহত্তম ও সম্মুদ্ধতম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। বাংলাদেশের দক্ষিন-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছে এই বিস্তীর্ন বন। দেশে সংরক্ষিত বনের শতকরা একান্ন ভাগই সুন্দরবন বনাঞ্চল। প্রায় দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুডে বিস্তৃত সুন্দরবনের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা বাংলাদেশে অবস্থিত এবং এক-তৃতীয়াংশ এলাকা ভারতে অবস্থিত। সুন্দরবন অর্প্বু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সম্পদ এবং জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধশালী হওয়ায় ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বন্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় পার্ক নামে। এছাড়া বৈজ্ঞানিক, নৃতত্ব ও প্রত্মতাত্ত্বিক বিবেচনায় সুন্দরবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঠ, মাছ, মধু, গোলপাতা এবং ঘর তৈরীর বিভিন্ন উপকরনের জন্য সুন্দরবনের উপর বর্তমানে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় পয়ত্রিশ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের সম্পদের উপর নির্ভরশীল।
সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। অসংখ্য নদী-নালা ও খাল জালের মত জড়িয়ে আছে এই বনের মধ্যে যা বন প্রকৃতির এক অপরূপ চিত্তাকর্ষক ও বিস্ময়কর অবদান। বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সুন্দরবনের উল্লেখযোগ্য বন্যপ্রাণী হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, বানর, শুকর, কুমির, ডলফিন, গুইসাপ, কিং কোবরাসহ আরোও বেশ কয়েক প্রজাতির সাপ, কচ্ছপ, বনমোরগ-মুরগি, ভোদর, বাদুড়, কাঠবিড়ালি, হাস পাখি, গাংচিল, বক, মদনটাক, চখা, ঈগল, চিল, শকুন ও বিভিন্ন ধরনের মাছরাঙা। সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। সুন্দরবনের দুষ্টু বানরের দুষ্টামি, চঞ্চলতা, ক্ষিপ্রতা পর্যটকদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে। সুন্দরবনের বানরগুলো আকারে খুব বেশি বড় হয় না।
“If the Sundarbans goes under, the tiger episode on earth is over,” says one Indian naturalist. Photograph by Tim Laman
সুন্দরবনের সংলগ্ন বেশিরভাগ মানুষের জীবনসু ও জীবিকা সুন্দরবনকে ঘিরেই। ডাঙ্গায় বিশ্ববিখ্যাত হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বন্য শুকোর, বানর, বিষাক্ত সাপ ও সরিসৃপ আর পানিতে কুমির এর ভয়কে তুচ্ছ করে স্থানীয় জেলে বাওয়ালী, মৌয়ালীসহ বহু পেশা জীবির লোকেরা তাদের জীবিকাক্ষ সন্ধানে সুন্দরবনে যায়। যান্ত্রিক ও এক ঘেয়েমি জীবনের ক্লান্তি অবসানে সজীব নিঃশ্বাস নিতে মানুষ খোজে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্র। সে দিক বিবেচনায় অসংখ্য প্রজাতির উদ্ভিদ ও পশু-পাখির এক স্বর্গ রাজ্য, চোখ জুড়ানো চিত্রা হরিণ, গাছে গাছে মৌমাছির চাক, বিভিন্ন শ্রেনীর মাছ, সাগর ও বনের সংমিশ্রনে এক অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য, বাওয়ালী, মৌয়ালী ও জেলে সম্প্রদায়ের গান বাজনা ও নানা প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড উপভোগ করার জন্য সুন্দরবন পর্যটকের জন্য খ্বুই আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনে পূর্নিমা ও অমাবস্যা রাতের সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। চাঁদনি রাতে চাঁদের আলো যখন বনের ওপর ছড়িয়ে পড়ে তখন হালকা আলোয় বনের গাছগাছালির সৌন্দর্য তুলনাহীন। আর অমাবস্যার রাতে বনের নীরবতা উপভোগ করা যায়। অমাবস্যার রাতে সুন্দরবনের বৃক্ষের ওপর জোনাকি পোকার আলো ছড়ানোর দৃশ্য সত্যিই অপুর্ব সুন্দর। সৌন্দর্য যেমন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষকে মুগ্ধ করে তেমনি এর বহুমাত্রিক সম্পদও রয়েছে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে প্রত্যেক বছরে সুন্দরবন থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় হয় সরকারের।
সুন্দরবন নামকরণ
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরী গাছ। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা প্রচুর জন্মায়। আবার সমুদ্রের নিকটে অবস্থিত বিধায় সমুন্দর শব্দ হতে প্রথমে সমুন্দরবন ও পরে সুন্দরবন নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে “সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
ইতিহাস ঐতিহ্যে সুন্দরবন
সুন্দরবনের ইতিহাস বেশ প্রাচীন, প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ শতাব্দী, বাগমারা ব্লকে চাঁদ সওদাগর দ্বারা নির্মিত প্রাচীন শহরের ধন্গ্সাবসেশ পাওয়া যায়৷ মুঘল আমলে এই অঞ্চলটি স্থানীয় জমিদারদের ইজারা দেওয়া হয়েছিল৷ মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে সৈন্য বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে বহু দুস্কৃতি জঙ্গলে আত্মগোপন করে থাকত এবং বহু দুষ্কৃতি হিঙ্গস্র বাঘের পেটে যায়৷ পরবর্তীকালে, ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে বহু নির্মান পর্তুগিজ দস্যু, জলদস্যু, লবন স্মুগলার এবং ডাকাতদের দখলে যায়,যার বহু প্রমান এখনো নেতিধপানি ও সুন্দরবনের বিভিন্ন অঞ্চলে আজও দেখা যায়
রাশমেলা উদযাপনে সুন্দরবন ভ্রমন আপনাকে দিবে নতুনত্বের স্বাদ
আজ থেকে প্রায় দুইশত বছর পুর্বে অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুন ছিল এবং জমিদারদের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল। এই বনভূমি ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমান অবস্থানে পৌছেছে, সুন্দরবন হলো প্রথম মান্গ্রভ বনভূমি যা বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পনা করা হয়, ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চলটি মুঘল রাজ আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পর ১৭৬৪ সালে এর ম্যাপ তৈরি করেন৷ পরবর্তীকালে ১৮৬০ সালে ব্রিটিশরা বাংলা প্রদেশের অধীনে একটি বনবিভাগ তৈরি করেন৷ এই মাপজোকএর কাজটি পুরোটাই করা হয় স্থানীয় মানুষদের নিয়ে কারণ ইংরেজদের এই দুর্গম অঞ্চলের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না৷
১৮২৮ সালে বৃটিশ সরকার সর্বপ্রথম সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধিকার অর্জন করে। ১৮৩০ সাল থেকে সুন্দরনের বিভিন্ন অংশ লীজ দেওয়া শুরু হয়। ইউরোপীয়ানরা এই লীজ গ্রহণ করে অমূল্য এ বনাঞ্চলকে পরিস্কার করে আবাদী জমিতে রূপান্তর করতে থাকে। ফলে সুন্দরবনের আয়তন ব্যাপক হারে কমতে থাকাক্ষ পর সরকারের বোধোদয় ঘটে। সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯সালে । ১৮৭৫ সালে এই ম্যানগ্রোভ বনভূমির একটা বড় অংশ সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা করা হয়, ১৮৬৫ সালের বনভূমি আইন দ্বার৷ এবং ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষনা দেয়া হয়। পরবতী বছরে বাকি বনাঞ্চলটিও সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়, যার ফলে পুরো বনভূমিটির নিয়ন্ত্রণ জেলা প্রশাসনএর বদলে বন প্রশাসনের অধীনে হয়ে যায়, ১৮৭৯ সালে হওয়া এই ফরেষ্ট বিভাগের প্রধান ভবনটি ছিল অধুনা বাংলাদেশের খুলনা জেলায় প্রথম লিখিত পরিকল্পনা নেওয়া হয় ১৮৯৩-৯৮ সালের জন্য৷ সুন্দরবনের প্রথম বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নাম এম. ইউ. গ্রীন। সর্বপ্রথম ১৮৩১ সালে বর্তমান খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলা জুড়ে সুন্দরবনের মানচিত্র প্রকাশিত হয়। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে আরও একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পরে। যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।
বিস্তারিত চলবে, জানতে–পড়তে আমাদের সাথে থাকুন।
১। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (দ্বিতীয় পর্বঃ ভৌগলিক অবস্থা ও ভূ-প্রকৃতি)
২। সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য (৩য় পর্ব: জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রানী)
ভিজিট সুন্দরবন- সুন্দরবনের স্বর্গ রাজ্যে আপনাদের স্বাগতম)
লেখক: আবু মুহাম্মাদ
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০২
আবু মুহাম্মদ বলেছেন: আরো পড়তে আমাদের সাথে থাকুন
২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৫৯
ডাঃ নাসির বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৬
সনেট কবি বলেছেন: খুব ভাল পোষ্ট।