নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তাফসীর নিয়ে গবেষনামূলক লিখা লিখতে ভালবাসি, যুক্তি সহজে হজম হয় না, বিশুদ্ধ কিতাবের উদ্ধৃতি ছাড়া ধর্মীয় কোন বিষয় গ্রহণ করি না, আক্রমনাত্বক সমালোচনা পড়তে ও লিখতে সাচ্ছন্দ বোধ করি।

ডিগবাজি বিশারদ

খাটি কাঠমূল্লা যাকে বলে সেটাই আমি

ডিগবাজি বিশারদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমার প্রভু অবিনশ্বর, বাকিসব নশ্বর

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩

সূরা আর-রহমান। কত সুন্দর! সূরার নামটি। তার তিলাওয়াত মনকে শীতল ও উর্বর করে। চক্ষু প্লাবিত করে। একজন সাধারণ মানুষের অতিআগ্রহ থাকে সূরাটির প্রতি। পুরা রমজান কাটে সূরা রহমান কবে আসবে? এ অপেক্ষায়।
আল্লাহ পাক অতি মায়াভরা শব্দে বান্দাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রদত্ত্ব নিয়ামতের কথা। 'ফাবি আয়্যি আলা....' এর ঝংকারে একজন নিম্নমানের মুমিনের অন্তরও আন্দোলিত হয়। আবেদন সৃষ্টি হয় অনুভূতিতে।
অনেক ঘটনাও এমন ঘটেছে, শুধু সূরা আর-রহমানের তিলাওয়াত শুনেই ইসলাম গ্রহণ করেছেন অনেকে। আমাদের পল্লি কবি জসিমুদ্দীন তার আত্মজীবনি মূলক গ্রন্থ 'জীবন কথা'তে স্বীয় পিতার সূরা আর-রহমান তিলাওয়াতের কথা হাহাকার মাখা শব্দে উল্লেখ করেছেন। একই ধরণের ঘটনা হুমায়ুন আহমেদও লিখেছেন 'জোছনা ও জননীর গল্প' নামক উপন্যাসে। আরও কত কি....
--
সূরাটিতে এমন দুটি আয়াত আছে, যার মাঝে দুনিয়া এ আখিরাতের সফলতা নিহিত। মহাবিশ্বের তাবৎ বস্তুর হাকীকত খুলে দেয়া হয়েছে সেখানে। আয়াত-

»كلُّ منْ عليها فانٍ
»وَّ يبقٰى وَجْهُ ربِّك ذوْ الجلالِ و الإكرامِ
»فبِأيِّ آلاء ربّكما تكذِّبانِ

অর্থঃ ভূ-পৃষ্ঠে যা-কিছু আছে, সবই ধ্বংশ হবে। বাকি থাকবে কেবল তোমার প্রতিপালকের গৌরবময়, মহানুভব সত্তা। সুতরাং তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামতকে অস্বিকার করবে?।
(সূরা আর-রহমান, আয়াত ২৬-২৮, [তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন - মুফতি তাকি উসমানী, খন্ড ৩, পৃ ৪৫৮])
.
অর্থগুলো একটু মনোযোগ দিয়ে পড়ুন দেখবেন কত ভাল লাগে। নিজেকে কত সৌভাগ্যবান মনে হয়।
প্রথম আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা মাধুরি মাখা শব্দে বললেন- মহাবিশ্বে যা-কিছু আছে গ্রহ নক্ষত্র, বাড়ি গাড়ি, গাছ পালা, পাহাড় পর্বত, মানব দানব, কল কারখানা ইত্যাদী সব ধ্বংস হয়ে যাবে।
কারণ- আমরা চর্মচক্ষে যত বিষয়-বস্তু দেখি সব মহাবিশ্ব সংশ্লিষ্ট। এহিসাবে মহাবিশ্ব হল মূল, তদসংশ্লিষ্ট সবকিছুই তার অনুগামী। কাজেই মূল বস্ত যদি নশ্বর বা ধংসশীল হয়, তদসংশ্লিষ্ট জিনিষ তো আরও আগে ধ্বংস হবে।
.
পৃথীবি কেন নশ্বর?
যুক্তি- একটি কথা ভাল করে স্মরণ রাখবেন, অবিনশ্বর সেই বস্তুকেই বলা যায় 'যার শুরুও নেই শেষও নেই' আর 'যে বস্তুর শুরু-শেষ আছে' তা নশ্বর তথা ধ্বংসশীল। মহাবিশ্বের যেহুতু শুরুও আছে শেষও আছে তাই মহাবিশ্ব ও তদসংশ্লিষ্ট সবকিছু নশ্বর।
.
প্রমানঃ 'গত শতাব্দিতেও বিজ্ঞান মহল মনে প্রাণে বিশ্বাস করত যে, মহাবিশ্ব অনন্তকাল ধরে আছে। যেহুতু মহাবিশ্বের শুরু-শেষ কিছু নেই। কিন্তু থার্মোডাইনামিক্সের তাপ ও গতির সুত্র আবিষ্কৃত হবার পর এই ধারণা পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
থার্মোডাইনামিক্সের সুত্র বলছে- এই মাহবিশ্ব ক্রমাগত ও নিরবিচ্ছিন্নভাবে উত্তাপ অস্তিত্ত থেকে অনুত্তান অস্তিত্তের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে চলতে একসময় মহাবিশ্বের সকল শক্তি নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর মহাবিশ্ব ধ্বংস হয়ে যাবে।'
(দেখুনঃ প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ, শিরোনাম- স্রষ্টাকে কে সৃষ্টি করল? হুমায়ুন আজাদের সাথে কথোপকথন)


সহজে এভাবে বুঝুন- আপনার হাতে যে স্মার্টফোনটি রয়েছে, এর ব্যাটারির উত্তাপ এখন ১০০%। এই উত্তাপ কিন্তু অনন্তকাল ধরে থাকবে না। ক্রমাগত ব্যাবহারের ফলে উত্তাপ নিঃশেষ হয়ে মোবাইল বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক মহাবিশ্বের অবস্থাও এমন। মহাবিশ্ব তার উত্তাপ হারিয়ে একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে।
মহাবিশ্ব যে মাত্রা থেকে তার উত্তাপ হারানো শুরু করেছে, সেটা হল তার শুরু। আর উত্তাপ নিঃশেষ হয়ে যখন ধ্বংস হবে, সেটা হল তার শেষ।
আমরা আগেই বলেছি- যে বস্তুর শুরু-শেষ আছে তা ধ্বংসশীল। সুতরাং মহাবিশ্ব ধ্বংসশীল।
.
এরপর আল্লাহ পাক বলেছেন- 'অবিনশ্বর শুধু মাত্র তার সত্বা' কারণ তিনি মহাবিশের স্রষ্টা।
যুক্তি- আর স্রষ্টাকে নশ্বর সৃষ্টবস্তু দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। স্রষ্টার নশ্বরতা প্রমান করতে হলে যেহুতু নশ্বর সৃষ্ট বস্তু দিয়ে ব্যাখ্যা করতে হয় তাই এটা অগ্রহণযোগ্য।
.
সৃষ্ট বস্তু দিয়ে স্রষ্টাকে কেন ব্যাখ্যা করা যায় না?
আপনার হাতে যে স্মার্টফোনটি আছে, ধরে নিন তার স্রষ্টা আপনি। এখন যদি প্রশ্ন করি- এই স্মার্টফোনের কোন হার্ডওয়্যারে আপনি আছেন? আপনার কোড সংখ্যা কত?
এর কি কোন উত্তর আসবে? নিশ্চয় না। সুতরাং বুঝা গেল আপনার সৃষ্ট বস্তু দিয়ে আপনাকে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। আল্লাহ যেহুতু মহাবিশ্বের স্রষ্টা কাজেই তার সৃষ্ট বস্তু দিয়ে তাকে নশ্বর প্রমান করা অসম্ভব। সুতরাং তিনি অবিনশ্বর।
.
এক দ্বীনি ভাই! আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন- وجه ربك ذو الجلال و الإكرام এবং اسم ربك ذي الجلال و الإكرام এই আয়াতদ্বয়ের গঠনাকৃতি এক হওয়া সত্তেও ই'রাব ভিন্ন হল কেন?

উত্তর- প্রথম আয়াতে ذو الجلال টা وجه এর সিফাত হয়েছে। আর দ্বীতিয় আয়াতে ذي الجلال টা ربك এর সিফাত হয়েছে। একারণেই ইরাবের ভিন্নতা এসেছে। কারণ সিফাত তার মাওসূফের ই'রাব গ্রহণ করে।
(দেখুনঃ ই'রাবুল কুরআন - মুহিউদ্দিন দরবেশ, খন্ড ৯, পৃ ৪০৪ ও ৪২০)
.
উপকারি বিষয়গুলা ছেড়ে অনুপোকারি বিষয়গুলার আলোচনা করলাম। আয়াত থেকে শিক্ষনীয় যা কিছু আছে তা পরিহার করে চলাটা অপরাধ হয়েছে।
আল্লাহ আমাকে বুঝার তোফীক দান করুক। এর পরে আয়াতের যে ব্যাখ্যা সালাফ থেকে বর্ণিত আছে তা লিখার চেষ্টা করব ইংশা আল্লাহ...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে এই সূরাটির অনুবাদ শুনেছি।
খুব ভালো লেগেছে।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৯

ডিগবাজি বিশারদ বলেছেন: আবেগময় একটি সূরা।
ধন্যবাদ।

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০০

হাবিব বলেছেন: সূরা আর-রাহমান একজন চিন্তাশীলের জন্য যথেষ্ট

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৯

ডিগবাজি বিশারদ বলেছেন: গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.