নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মেহেদি হাসান, মি. বিকেল নামে পরিচিত। আমি একজন লেখক, অভিনেতা, সমাজকর্মী, রেডিও জকি, ওয়েব ও অ্যাপ ডেভেলপার, সম্পাদক, উপস্থাপক, রক্তদাতা, এবং নাট্য পরিচালক। মাইক্রোসফটে ডেভেলপার হিসেবে কর্মরত এবং গল্প বলা আমার প্রধান পরিচয়।

মি. বিকেল

আমি মোঃ মেহেদি হাসান, কলম নাম মি. বিকেল।

মি. বিকেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

যৌন ছায়া (Sexual Shadow): অবদমিত ইচ্ছা ও মনোজাগতিক দ্বন্দ্বের গল্প

১৪ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:২৯



সাধারণত মানুষ আত্মহত্যা করতে চায় না। হত্যা করতে চায় কিন্তু সেটা নিজেকে নয়। হতাশা, ব্যর্থতার অনুভূতি, ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা, অতিরিক্ত সমালোচনা, রাগ, হিংসা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব কে হত্যা করতে চায়।

এ নিয়ে একটি বিখ্যাত প্রবাদ প্রচলিত আছে, “The ego must die before the soul can live. (অর্থ: আত্মার বিকাশের জন্য অহং-এর বিনাশ আবশ্যক।)”

আপনি নিশ্চয় ‘স্প্লিট ক্যারেক্টার (Split Character)’ শব্দটি শুনেছেন। মানে হলো মানুষের আচরণের ক্ষেত্রে একটি দ্বৈত প্যাটার্ন। এই ভালো, এই খারাপ। অবশ্য এই শব্দটি মনোবিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত কোন শব্দ নয়, না আমি DID (Dissociative Identity Disorder) সমস্যার কথা বলার চেষ্টা করছি।

বাংলাদেশের রক্ষণশীল পরিবেশে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা খুবই কঠিন। কারো কারো জেলে যাওয়ারও রেকর্ড আছে। কিন্ত একই সমাজে পরকীয়া বাড়ছে। সংসার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বড় বড় শারীরিক ও মানসিক রোগও জন্ম নিচ্ছে। এখানে যৌনতা বিষয়টির সাথে সরাসরি মুখোমুখি হবেন কীভাবে? আবার আপনি যদি ‘মেয়ে’ হোন তাহলে বিষয়টি কিন্তু আরো অনেক জটিল।

ভারতীয় অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের প্রধান প্রবক্তা আদি শংকরাচার্য্য অজ্ঞতা নিয়ে বলেছিলেন, “…মানুষ বিভিন্ন রকমের কন্ডিশনিং মানে ধর্মীয়-পারিবারিক-সামাজিক নিয়ম-নীতির দ্বারা পরিচালিত হতে বাধ্য হয় যেখানে নিজেকে পুরোপুরি প্রকাশ করার সুযোগ থাকে না। আর এই বুঝাবুঝির পূর্ণতা দিতে গিয়ে অজ্ঞতার জন্ম নেয় (ভাবার্থ)।” ইসলামিক দর্শনেও স্বীকার করা হচ্ছে, কারো সাথে যৌনতার আকাঙ্খা থাকা মানেই সেটা সরাসরি পাপ নয়; মানে যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা কর্মে পরিণত হচ্ছে (যেমন: যিনা)।

সুইচ মনোবিজ্ঞানী কার্ল গুস্তাভ ইয়ং বিষয়টি নিয়ে একটু ঝেড়ে কেশেছেন। তিনি মানুষের মধ্যে জমে থাকা যৌনতার আকাঙ্খা ও যৌনতা বিষয়টিকে চেপে যাওয়ার সাইড ইফেক্ট সামনে এনেছেন। আমি অবশ্য এই বিষয়টি কিছুটা আমার মত করে ব্যাখ্যা করবো প্রান্তিক পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে। কারণ আমি সবসময় প্রান্তিক পাঠকদের জন্যেই লিখে থাকি।

কলেজ জীবনে আপনি কোন ছেলে/মেয়ের সাথে একটু কথা বলার আগ্রহ অনুভব করতে পারেন। একসাথে চা খাওয়া, রেস্টুরেন্টে একসাথে বসে ব্যক্তিগত আলাপ জমানো, নোটস্‌ শেয়ার করা, একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা। মস্তিষ্কে হাজারো চিন্তা তাকে নিয়ে বাহিত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। আপাতদৃষ্টিতে আপনার নিজেরও মনে হবে এসব আপনি এমনি এমনিই করছেন। ঐ সমাজের নির্দিষ্ট কন্ডিশনিং ভেদে আপনি তার ব্যাখ্যাও পেয়ে যাবেন।

ধরুন, আপনি ভাবছেন, “ও তো আমার বন্ধু হয়। সেজন্য এটুকু করাই যায়।” এরকম ব্যাখ্যা আমাদের মন খুব সহজেই স্বাভাবিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আপনার বন্ধু/বান্ধবীর সাথে একসাথে একটু হেঁটে চলা তো আর বিশেষ কোন অন্যায় নয়, পাপ বিষয়টি ভিন্ন।

স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলেও নির্দিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে অনেক তথ্য স্মৃতি হিসেবে থেকে যেতে পারে। সময় সময় আপনি ভেবে অবাক হতে পারেন একজন বা নির্দিষ্ট মানুষদের সম্পর্কে আপনার মস্তিষ্কে অনেক অনেক স্মৃতির উপস্থিতি বিদ্যমান, কিন্তু কারণ কী? আপনি তো তার সাথে প্রেমে যুক্ত ছিলেন না। আপনি তাকে বা সে আপনাকে বিশেষ কোন ইঙ্গিতও দেয় নাই। আপনাদের মধ্যে যা ছিলো তা শুধুমাত্র একটি বন্ধুত্বের ফ্রেমওয়ার্কে আপনি নিজেকে বুঝাতে সক্ষম।

সমস্যা এই পর্যন্ত হলে তা স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ছেড়ে দেওয়াই ভালো। কিন্তু এর পরের ধাপে যেটা হয় সেটা হলো, ঐ নির্দিষ্ট ব্যক্তি (ছেলে/মেয়ে) আপনার স্বপ্নে প্রায় প্রায় এসে থাকে। আপনার সাথে তার স্বপ্নের মধ্যেও যা হয় সেটাও আপনি বিভিন্ন কারণে নিজের কাছেই মেনে নিতে পারেন না। হতে পারে স্বপ্নে আপনি তার সাথে যৌনতা করা অবস্থায় নিজেকে দেখছেন। ঐ স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবার পর নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হচ্ছেন।

এই লজ্জিত হবার কারণ একাধিক হতে পারে। ধরুন, আপনি বা সে অন্য কারো সাথে সম্পর্কে গেছেন, বা, আপনারা দুজনেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করেছেন। নীতিগত ভাবে আপনার বর্তমান পার্টনার বা আপনার স্বামী/স্ত্রীর সাথে আপনাকে নিষ্ঠাবান থাকা সত্যিই জরুরী। কিন্তু আপনার সাথে যা ঘটছে সেখানে আপনার বর্তমান সম্পর্কের প্রতি সরাসরি আঘাত আসতে পারে।

আপনি তখন চাইলেন, যেহেতু এমন স্বপ্ন থেকে উদ্ভূত চিন্তা আমাকে সামাজিকভাবে একজন ভুল মানুষে পরিণত করতে পারে, আমার বর্তমান সম্পর্কে সরাসরি আঘাত আসতে পারে সুতরাং আমাকে এই পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়া উচিত। এই চেপে যাওয়া দিয়ে আমরা অন্তত আমাদের সাথে দুটো অন্যায় করে থাকি।

প্রথমত, যে ব্যক্তির সাথে আপনি তীব্র যৌনতা অনুভব করেছিলেন সেটার মীমাংসা অনেক আগেই করা উচিত ছিলো। দ্বিতীয়ত, বর্তমানে পুনরায় ঐ যৌনতার ইচ্ছাকে চেপে যাওয়া মানে নিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে নিজ থেকেই বাদ দেওয়া।

এই পর্যায়ে এসে আমাদের মধ্যে জন্ম নিতে পারে বেঁচে থাকার প্রতি অনীহা, জীবনের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য না খুঁজে পাওয়া, কিছু একটা মিসিং বলে মনে হওয়া। এমনকি বর্তমান পার্টনারের সাথে যৌনতার আকাঙ্খা কমে যাওয়া। যৌনতায় লিপ্ত হচ্ছেন কিন্তু যৌনতা করার মুহুর্তে যে আনন্দ সেটা ঠিক খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেকটা যৌনতা করাটাও একটি দায়িত্ব বা পার্টনারের প্রতি নিষ্ঠার প্রমাণ হিসেবে যৌনতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে।

এই পর্যায়ে এসে আপনি নিজেই নিজেকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝাচ্ছেন। এসব ঠিক নয়, এসব নিয়ে চিন্তা করা উচিত নয়, এসব আমাকে ভুলপথে নিয়ে যাবে, মানুষ ভুল ভাববে, পাপ হবে, আমার বর্তমান সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে, আমি আমার কাছে বাজে মানুষে পরিণত হতে পারি... ইত্যাদি ইত্যাদি।

আপনি নিজেকে যতই বুঝাতে থাকবেন ততই আপনার আকাঙ্খা অবদমিত হতে থাকবে। এক সময় মনে হতে পারে, জীবনটাই বড্ড বেশি ভারি বলে মনে হচ্ছে। কারণ ধর্মীয়, পারিবারিক ও সামাজিক নিয়ম-নীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে নিজেকে প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। অন্তত সবার জন্য তো সম্ভব নয়।

এখান থেকেই আমাদের মধ্যে দ্বৈত চরিত্রের উদয় হতে পারে। এক ধরণের ‘ছায়া (Shadow)’। মানুষের মনোজগতের সবচেয়ে রহস্যময় অধ্যায়গুলোর মধ্যে একটি হলো এই ‘যৌন ছায়া (Sexual Shadow)’। এই ধারণাটি বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কার্ল গুস্তাভ ইয়ং-এর ‘দ্য শ্যাডো আর্কিটাইপ’ তত্ত্ব থেকে উৎসারিত, যা আমাদের অচেতন মনের সেই অংশকে নির্দেশ করে যেখানে সমাজ বা ব্যক্তিগত ভয়ে লুকিয়ে রাখা যৌন ইচ্ছা, লজ্জা ও ট্যাবু জমা হয়।

মানে হলো দমন করা সকল বিষয় কোথাও হারিয়ে যায় না বরং এই সমস্ত কিছু আমাদের মনের অচেতন অংশে জমা হয়ে থাকে। ইয়াং বলতেন, “ছায়া যত গভীর, তার মধ্যে লুকিয়ে থাকা শক্তিও তত প্রবল।”

এই সমস্যা শুরু হতে পারে শৈশবে হস্তমৈথুনের সময় বড়দের হাতে ধরা পড়ে অপমানিত হলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে সমাজ বা পরিবার বলতে পারে, “যৌনতার সময় মেয়েদের কে প্যাসিভ আচরণ দেখানো জরুরী।” যদিও কোন কোন মেয়ে এগ্রেসিভ যৌনতা পছন্দ করতে পারেন কিন্তু প্রকাশে অক্ষম থেকে যান। মাদ্রাসার মত রক্ষণশীল পরিবেশে পবিত্র আল-কোরআনের যৌনতা নিয়ে স্পষ্ট আয়াত থাকলেও তা ব্যাখ্যা করার অনীহা এবং অনাগ্রহ। বৈবাহিক ধর্ষণ মূলত একধরনের অত্যাচার; এসব স্বীকারে দ্বিধা থাকলে। বাস্তব জীবনে ফ্যান্টাসি পূরণ না হলে পর্ণগ্রাফি দেখে অপরাধবোধে ভুগলে। এই ছাড়াও নানান কারণে যৌনতার ইচ্ছা অবদমিত হতে পারে।

প্রশ্ন হলো, আপনি আপনার ছায়ার সাথে কীভাবে লড়বেন?

উত্তর খুব সহজ। এজন্য আপনাকে আপনার বর্তমান সম্পর্কের বারোটা বাজানোর দরকার নাই। যুক্তি দিয়ে নয়, আপনি আপনার ছায়ার সাথে কথা বলুন, ফেস করুন। সে কি চায়? কীভাবে চায়? কার সাথে চায়? কেন চায়? সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লিখুন। সম্ভব হলে এই বিষয়গুলো লজ্জা ব্যতিরেকে আপনার বর্তমান পার্টনারের সাথে শেয়ার করুন। নিজেকে বিচার করতে যাবেন না। শুধু সমস্ত বিষয়গুলো ধ্যান দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। এতে করে অধিকাংশ সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। বিশেষ করে যখন আপনি আপনার ছায়া চরিত্রকে গ্রহণ করেন এবং মেনে নেন। এতে করে গবেষণা মতে আত্ম সুখের অনুভূতি ৭৩% পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

কিন্তু এটা তো গেল নিজ পার্টনারের সাথে যৌনতার বিষয়। কিন্তু যদি আপনার অন্য কাউকে ভালো লাগে? তাহলে রিয়েলিটি চেক করতে হবে,

প্রশ্ন: যদি বাস্তবে সুযোগ পাইতাম, তবুও কি পার্টনারকে ছাড়তাম?
উত্তর: ৯২% ক্ষেত্রেই না (গ্লোবাল রিলেশনশিপ স্টাডি, ২০২৩)

বাকি ৮% মানুষদের জন্য আমার কাছে উত্তর নাই। খুব সম্ভবত আপনাদের বিয়ে করা বা কোন স্থায়ী সম্পর্কের কমিটমেন্টে যাওয়া উচিত হবে না।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০২৫ রাত ২:২৬

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: এই পর্যায়ে এসে আমাদের মধ্যে জন্ম নিতে পারে বেঁচে থাকার প্রতি অনীহা - সবসময় চাইলেই কি সব পাওয়া যায়? মন তো কত কিছুই চায়? কিন্তু তাই বলে বেঁচে থাকার প্রতি অনীহা আসবে কেন?

১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৫

মি. বিকেল বলেছেন: স্টাডি এমনটাই বলছে, যেহেতু আমি ব্যক্তিগতভাবে এমন কিছু মোকাবিলা করছি না বা করতে হচ্ছে না সেহেতু পরিষ্কার ধারণা নাই।

২| ১৪ ই জুন, ২০২৫ রাত ২:৩২

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৬

মি. বিকেল বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫

কামাল১৮ বলেছেন: মানুষ সামাজিক জীব।সামাজিক নীয়ম কানুনকেই প্রাধান্য দিতে হবে।

১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৭

মি. বিকেল বলেছেন: সমাজিক নিয়ম-কানুনের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নেই, স্থান ও সময় ভেদে অনেক আলাদা।

৪| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আপনি কি বলতে চান??

১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৮

মি. বিকেল বলেছেন: আমার মনে হয়, আমি আমার পাঠকদের বিষয়টি বুঝাতে সক্ষম হয়েছি।

৫| ১৪ ই জুন, ২০২৫ সকাল ১০:০৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: রাজীব নুর বলেছেন: আসলে আপনি কি বলতে চান??

১৮ ই জুন, ২০২৫ রাত ১:০৮

মি. বিকেল বলেছেন: আপনি কি কিছুই বলবেন না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.