নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানবতাকে সব পরিচয়ের উপরে স্থান দিতে পারলেই পৃথিবী আরও সুন্দর হবে।

চলো স্বপ্ন ছুঁই

একটু পড়ি, একটু লিখি

চলো স্বপ্ন ছুঁই › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ঘড়ি"

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৫৬

।কিছুক্ষণ পরেই পরিক্ষা তাই সকল কাজ তাড়াতাড়ি না করে উপায় নাই।তাইতো খাওয়ার জন্য হলের মেসে প্রবেশ আর কারো থেকে একটা ঘড়ি ম্যানেজ করার তাগিদ।

প্লেটটি ধুইতেছি আর সবার হাতের দিকে তাকাচ্ছি যদি একটা ঘড়ির সন্ধান পাই।

কয়েকটা হাত খুজার পরেই চোখে পড়ল এক কাছের ছোট ভাইয়ের হাতে একটা ঘড়ির উপস্থিতি।

তার পাশে গিয়ে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছি, কিন্তু এই স্বস্তি মুহূর্তেই দূরীভূত হয়ে গেল এ যে ঘড়ি নয় নব্য ফ্যাশন, সময়ের ঠিক নাই কিন্তু ঘড়ি চকচকে!!!""

ভাবলাম, ডিজিটাল যুগের মানুষের কাছে সময় গণনার চেয়ে ফ্যাশন অতি জরুরী!!!! আসলে, ফ্যাশন তাই যা অন্যের চোখকে ধোকা দেয়!!!! বিশ্বায়নের যুগে সময় গণনার জন্য ঘড়ির দরকার নেই,বহু মাধ্যম বিদ্যমান, কিন্তু ঘড়িকে কব্জিতে সাজানোর ফ্যাশন এর সুনাম যে অতিপ্রাচীন।

আশায় গুড়ে বালি, তাই অন্যত্র খুঁজতে হবে কাংখিত ঘড়ি। পাশে এক ছোট ভাইয়ের হাতে আবারো দুর্লভ বস্তুটির উপস্থিতি।
আবার স্বস্তি, এবার পেয়ে গেছি!!! কিন্তু ছোট ভাইয়ের চোখে চোখ পড়তেই মৃদু হাসি, যেন লজ্জায় লাল হচ্ছে।
তার বদনখানির পানে তাকিয়ে বুঝলাম ,এই যুগে কেউ ঘড়ি খুঁজছে তা যেন এক অশুত বাক্য ছাড়া কিছুই নয়!!!!এটা অতি অপরিচিত, বেমানান!!!

কিছুক্ষণ পড়েই তার অট্টহাসির আড়ালে বুঝলাম, এটাও ফেইক বা ফ্যাশন,ঘড়ি নয়!!!!! সময় দেখা তার কাছেও মুখ্য নয়,মুখ্য পূর্বসূরীদের ঐতিহ্য,ঘড়ি পরার রেওয়াজ।

আমি হতাশ!!!! এই যুগে, এই সময়ে দুইটি আস্ত ঘড়ি কাছে পাওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজন মিটিল না,অস্বস্তি ভর করিল, এই মুহূর্তে ঘড়ি ম্যানেজ করা শুধু কষ্টই নহে যেন হিমালয় জয়ের চেয়েও কঠিন। সময় অল্প,অপশন অপর্যাপ্ত, তাই কর্মসাধন দুঃসাধ্য।

মুহূর্তেই সমস্ত মেসে ঘড়ি খুঁজার পর্ব শুরু হয়ে গেল,প্রয়োজন তাই পেতে হবেই। মনে হল, হল জীবনে সব চাইতে বড় পাওয়া বুঝি এটাই--- "যেকারো দরকার, সবাই মিলে মিটানোর চেষ্টা!!!! "

কি অসীম আন্তরিকতা,কি অদম্য ইচ্ছাশক্তি, কি কর্ম উদ্যম!!! সত্যি নান্দনিক, শৈল্পিক, শিক্ষণীয় তো বটেই।
এইতো সৃষ্টির সৌন্দর্য, জীবনের জয়গান,তারুন্যের শক্তি,ভ্রাতৃত্ববোধ।একের জন্য অন্য, এইতো সৃষ্টির রহস্য!!! পৃথিবী সৃষ্টির সার্থকতা!!!!

অল্পক্ষণ পরেই ঘড়ি পাওয়া গেল।তাই স্বস্তি, অন্তত নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই কাংক্ষিত বস্তু হাজির।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শক্তি, হল জীবনের শক্তি, এই জায়গায় যে---- "যখন যা দরকার তা যেভাবেই হোক ম্যানেজ করতেই হবে,ম্যানেজ হবেই। হোক সেটা নিজে ম্যানেজ করব,নয়তো সবাই মিলে কার্যোদ্ধার করব। "
কি অপরূপ এই শক্তি,দরকার তাই একই কাজে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়া!!!!!!

ঘড়ি হাতে দিয়ে রিকশায় উঠেই গন্তব্যে রওয়ানা। যেতে একটু সময় লাগবে তাই এত কষ্ট করে ম্যানেজ করা ঘড়িটির দিকে তাকিয়েই দেখি ব্রান্ড "TISSOT",অবাক,আবার ধাধায় পড়ে গেলাম।

কেননা,
এই TISSOT এর সাথে যে, জড়িয়ে আছে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

এইতো সেদিন,এক নিকট আত্মীয়ের জন্য "couple" ঘড়ি কেনার উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা সিটিতে যাই। তাদের বিবাহ বার্ষিক এর উপহার তাই সাধ্যের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ঘড়ি কিনতেই হবে।

Rado,Tissot,Credence,Time Zone এ ঘড়ি দেখলাম।কিন্তু সাধ আর সাধ্য মেলাতে বেশ কষ্ট হল। যেটা পছন্দ হয় সেটা ৭০,০০০-৬,৭৫,৩৮৯ এর মধ্যে।কিন্তু আমাদের বাজেট যে,এর চেয়ে ঢেড় কম।

যাইহোক, পছন্দ রেখে পকেটের দিকে তাকিয়ে, বাজেট বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত একজোড়া ঘড়ি কিনলাম।

তবে,বিক্রেতাদের আচরণ দেখে মনে হল - দেশে ঘড়ি কেনার লোকের অভাব নেই। এমনও মানুষ আছে সপ্তাহে ঘড়ি পাল্টায়,ফ্যাশন নয়,শখের তাগিদে ঘড়ি কেনে,একটি নয় একাধিক,ডজন বা কয়েক ডজন।

এখনও যে মানুষ এত ঘড়ি কে নে তা বুঝার জন্য দরকার নেই কোন পরিসংখ্যান বা গবেষণাপত্র,বরং উতরোত্তর এই ঘড়ির দোকান গুলোর রূপ লাবণ্য, ঔজ্জ্বলতা,সাজসজ্জা দেখেই বিলকুল বুঝা যায়।

এত,অত শখের কথা শুনলেও ঘড়ি কেনাও যে কারো শখ হতে পারে তা পূর্বে জানা ছিল না। প্রতি মাসেও যে নতুন নতুন ঘড়ি কেনা যায়, এটা এক নতুন অভিজ্ঞতা। তাইতো আবারো বিখ্যাত উক্তির পুনরাবৃত্তি "জানার কোন শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই"

পরিক্ষার হলে পৌছে পরিক্ষা কেমন দিলাম সেটা বড় কথা নয় বরং খানিকক্ষণ আগে মেসে যে শিক্ষা পেলাম,তাই যেন মনে বার বার উচ্চারিত হতে লাগল----------

"একের প্রয়োজন অন্যের চেষ্টা, এই হোক মানবতার মূলমন্ত্র, চলার সারথি, সৃষ্টির রহস্য "
"ঘড়ি"
১৭/০২/২০১৭

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.