![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু পড়ি, একটু লিখি
চঞ্চল সদ্য ক্লাশ নাইনে উঠেছে। ইদানিং হলে যেয়ে সিনেমা দেখার অভ্যাস গড়ে উঠেছে বেশ। নতুন সিনেমা,বন্ধুদের আড্ডা ও সিনেমা হলের বারান্দা অনেকটা সমার্থক হয়ে উঠেছে, কোনটি মিস করলে দিনটি ভালো কাটেনা
চঞ্চল বড় হতে শুরু করেছে, নতুন ক্লাশে উঠে তার তাই মনে হচ্ছে কেননা আশ পাশের সবাই তার কথার গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে বলে মনে হচ্ছে। এই যেমন- মা তাকে আগের মত বকে না, একটু সন্ধ্যা হলেই বাড়ি ফেরার জন্য পীড়াপীড়ি করে না,বাবা সব সময় চোখে চোখে রাখে না, তাছাড়া শিক্ষকেরাও ক্লাশে পড়ানোর সময় কিছুটা নমনীয় ভঙ্গিতেই শাসায়।
চঞ্চলের নিজের জীবনে অবশ্য কর্মকান্ডের তেমন একটা হের ফের ঘটেনি। আগেও পড়তে বসতে হত এখনও নিয়মিত বসতেই হয়,তবে আগের চেয়ে পড়ার চাপ একটু বেশিই মনে হয়।
তার অবশ্য এতে কোন আক্ষেপ, খারাপ লাগা বা অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়নি।তবে একটা ব্যাপারে তার আকর্ষণের উত্থান ঘটেছে তা হল- ঘরে বসে নয়, নতুন সিনেমা সিনেমা হলে গিয়েই দেখতে হবে,তা প্রথম সপ্তাহেই দেখা চাইই চাই। এ ব্যাপারে কোন কম্প্রোমাইজ নাই।
আজকাল চোখ কেবল টিভি,পেপার বা ম্যাগাজিন এ নতুন ছবি মুক্তির খবর খুঁজে বেড়ায়,তা হউক শাকিব,দেব বা জিত, তাতে কিছু আসে যায় না। প্রশ্ন হল কোন হলে সিনেমাটা প্রথম মুক্তি পাবে, তা তার বাসা থেকে কত দূরত্বে?
টিকেট এর টাকা???তা ফুপু,দাদি,দাদা বা ক্ষেত্র বিশেষে আব্বার কাছ থেকেও ম্যানেজ করা যাবেই।
চঞ্চল যেখানেই যায় তার চোখ খুঁজে বেড়ায় দুটি শব্দ
-১।ছবি
২।হল
আজকে এক বিয়ের দাওয়াতে সে ঢাকা শহরে যাচ্ছে পরিবারের সাথে। প্রথমে সে যেতে চাইছিল না, কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো যে,নতুন হলের সন্ধান পাওয়া যেতেও পারে,মিলবে ঢাকা শহরের হল দেখার অতৃপ্ত স্বাদ!!!
গাড়ি থেকে শাহবাগ নেমে টি এস সি মোড়, জগন্নাথ হল,সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এর পাশ দিয়ে আজিমপুর এ উঠল বিয়ে বাড়িতে।
বাড়ির চারদিকে রং বে রঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো বিল্ডিং,চারপাশে উতসব উতসব আমেজ।কিন্তু চঞ্চল কি তাতে খুশি হয়??
না,তার মন আকু পাকু করছে আসার সময় দেখা জগন্নাথ হল,সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এ কি ছবি চলে বা হলে টিকেট কত দামি বা কাউকে নিয়ে হলে গিয়ে সিনেমা দেখা যায় কিনা তা জানার জন্য বা সুযোগ খোজার জন্য।
তবে এসব হলের নাম দেখে তার একটা বিষয়ে খটকা লাগছে, এত হলের নাম সে শুনেছে কিন্তু মুসলিম হল বলেতো কোন নাম শুনেনি।সিনেমা হল তাতে আবার কেবল মুসলিমরাই সিনেমা দেখার সুযোগ পাবে, তা কি করে হয়?? সে ভাবে হয়তো ঢাকা শহরে ছবি দেখার জন্য সব ধর্মের আলাদা আলাদা হল এর ব্যবস্থা আছে।
এই কথায় তার মন সায় দিল, কেননা আসার সময় জগন্নাথ হলও তো' দেখেছে।
ইতিমধ্যে সে এও জেনেছে যে আশ- পাশে মানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ নাকি ১৮ টি হল আছে। এ কথা শুনতেই সে এই জায়গায় যেতে চায়, সিনেমা না দেখা হোক, অন্তত কি কি সিনেমা চলে তাতো জানা যাবে!!!!
তার আবার খটকা লাগে যে, আসার সময়তো কি সিনেমা চলে তার পোস্টারতো চোখে পড়ল না,তবে সে এও ভাবে যে, আমিতো কেবল এক দিকে দেখেছি,ভিতরেতো পোস্টার থাকতেও পারে বা এমনোতো হতে পারে যে ঢাকায় সিনেমা হলে পোস্টার থাকে না বা থাকলেও ফেইসবুকে থাকে।
এইসব ভাবতে ভাবতে খাওয়ার সময় এলে খেতে বসে ছোট্ট মামার পাশে। মামার সাথে তার বেশ ভালো সখ্যতাও আছে, বেশ কয়েকবার একসাথে সিনেমাও দেখেছে। তবে আজকে পাশে বসেছে অন্য কারণে।
খেতে খেতে একবার যদি সিনেমা দেখার ব্যাপারে মামাকে রাজি করানো যায়,তাহলেই সব ইচ্ছা পূরণ হবে !!!! কেননা,মামা অনেক শিক্ষিত,ছোট্ট বেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো,বুয়েটেও চান্স পেয়েছে।তাই তাকে কেউ কোন কাজে বাধা দেয় না। টাকা দিতেও কুন্ঠাবোধ করে না।তাই মামার সাথে গেলে কেউ কিছুই বলবে না।
খাওয়ার ফাকে মামাকে বলে মামা-- একটু ঘুরতে নিয়ে যাবে??? কানেকানে বলে একটা সিনেমা দেখতাম!!! মামা বলে, তো কি সিনেমা চলে ভাইগ্না??? জানিনা মামা, তবে আসার সময় বেশ কিছু হল দেখলাম যেমন- জগন্নাথ হল,সলিমুল্লাহ মুসলিম হল!!!!
উত্তর শুনে মামা হাসে তবে তা চঞ্চলকে বুঝতে দেয় না যে, সে কি বলেছে!!!!
মামা বলে উঠে, মামা ওইসব হলে যেতে হলে অনেক পড়াশোনা করতে হবে,একটা সিট পেতে হলে অনেক প্রতিযোগিতা করতে হবে,আরো অনেক বড় হতে হবে।
চঞ্চল যেন আকাশ থেকে পড়ল!!!!অনেক কিছু পেতে হলে অনেক কিছু করতে হবে সে এর পূর্বেও অনেক শুনেছে, তবে হলে সিনেমা দেখতে হলেও যে অনেক পড়াশোনা করতে হয় তা সে কখনো শুনেনি!!!!
চঞ্চল ভাবে প্রতিযোগিতা সে করতে পারবে,শক্তি সামর্থ্য কিংবা দীর্ঘ লাইন কোন সমস্যা নয়,তবে কি এমন প্রতিযোগিতা সে বুঝে পায় না, যার জন্য মামা আগেই বলবে!!!!!
মামা এও বলেছে যে,ওখানে যেতে হলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে।
চঞ্চল রীতিমত হতভম্ব!!!!!
ছবি দেখার জন্য ভালো রেজাল্ট করতে হবে????বড় হতে হবে????
হায় হায়!!! এ কেমন সিনেমা যে এই বয়সেও দেখা যাবে না??? সে ছোট্ট বেলা থেকে অনেক ছবি দেখেছে, কিন্তু টাকা হলেই হলে যাওয়া যায় না বা টিকেট পাওয়া যায় না তা কেমন করে হয়??? ৩/৬/৯টা যেকোন একবার তো টিকেট পাওয়াই যাবে।
সেইবার চঞ্চল এর সিনেমা দেখা হয়নি তা বয়স না হওয়া,প্রতিযোগিতার যোগ্যতা অর্জন করতে পর্যাপ্ত সময় না হওয়া বা মামার ব্যস্ততার সে যে কারণেই হোক।
তবে বাসায় ফিরে এসে সে, মামার সাথে কথা বলে যে, তাকে কি করতে হবে যার ফলে সে এতগুলো হল আছে এমন যায়গায় যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে বা ছবি দেখার প্রতিযোগিতা করতে সমর্থ হবে।
মামার কথা মত সে সব কিছু করতে পারবে,তাকে যে পারতেই হবে কেননা নিজ এলাকার সব সিনেমা হল তার ভাজাভাজা হয়ে গেছে,সিনেমার বারান্দার মাটি তার পায়ের স্পর্শ বুঝতে পারে। তাই অন্য জায়গায় নতুন সিনেমা হলে ছবি দেখতে হবে।
এসএসসি,এইচএসসি পাশ করে প্রস্তুতি নিয়ে ভর্তি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সে সুযোগ পায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার।
চঞ্চল সাবজেক্ট পেয়েছে ইংলিশ, আর সেই হৃদয় কাঁপানো সলিমুল্লাহ মুসলিম হল এ বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু হলে আসার পর যা সে বুঝতে পারে তা হল--সে যা ভেবেছে এটা এমন হল নয় বা সিনেমা দেখার হল নয়,এটা এমন একজায়গা যেখান থেকে সব দিকে যাওয়ার পথই খোলা আছে,তা সিনেমাই হোক বা অন্যত্র। খেলোয়ার, শিক্ষক,সাহিত্যিক,রাজনীতিবিদ, সুরকার,গীতিকার,নাট্যকার,সঙ্গীতজ্ঞ,বিসিএস ক্যাডার,গবেষক,উদ্যোক্তা,আরো কত কি।
সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিঁড়িটা যেহেতু বেশ বড়, তাই সিড়ির দুই পাতের মধ্যদিয়ে নিচে পরে যাওয়ার ঝুকিও কম নয়। তাই সাবধানে সামনে পদক্ষেপ ফেলার বিকল্প নাই।
কাংখিত লক্ষ্যে পৌছার জন্য একটি পরিকল্পনা মাফিক জীবন যে বড্ড বেশি দরকারী।
ইচ্ছাশক্তি, সময়নিষ্ঠা, পরিশ্রম করার ইচ্ছা থাকলেই জীবিনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া যেতে পারা যায় আকাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, সাথে ভাগ্য থাকলেই হওয়া যাবে দেশ কিংবা বিশ্বসেরা।
এখনও চঞ্চল সিনেমা দেখে তবে জগন্নাথ বা সলিমুল্লাহ হলে নয় বলাকা বা স্টার সিনেপ্লেক্স এ। তবে সে ভাবতে পারে জগত কিংবা আশ-পাশে কত রহস্য লুকিয়ে আছে যার অনুসন্ধান করতে হলে তাকে না জানি কতদূর পড়তে হবে বা কত বড় হতে হবে???????
সে শিখেছে যে, সব বয়সে বা কেবল নির্দিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা করে সব বিষয়ে পান্ডিত্য অর্জন করা যায় না।এর জন্য দরকার সাধনা,কঠোর পরিশ্রম,বিশ্বাস ও ভাগ্যদেবীর আর্শীবাদ।
তবে,চঞ্চল অনুধাবন করতে পেরেছে যে,সবচেয়ে যে বিষয়টি বেড়ে উঠা বা পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য জরুরী তা হল - সঠিক সময়ে সঠিক গাইডলাইন, সাহস যোগানোর মত মানুষ, উতসাহ দেয়ার মত আপনজন,প্রেরণা দেয়ার মত প্রিয়মুখ। এসব যদি একটি বাড়ন্ত শিশুকে পরিপূর্ণভাবে দেয়া যায়,তবে সে আর যা কিছুই হোক না কেন, অন্তত মানুষ হয়ে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে।
চঞ্চল এর কাছে আদর্শ তার মামা,স্বপ্ন পূরণ এর সারথি তার মামা।আপনি, আমি কি কারো আদর্শ হতে পারি???? পারি কি কারো জীবন বিকাশের পথে সিড়ি হতে??????????
পারি কি একজন চঞ্চল এর জীবন গড়ার পথে একটু অংশীদার হতে???
পারি কি একটু অনুপেরণা যোগাতে?????
বদলে দেবার মন্ত্র
১৩/০১/২০১৭
©somewhere in net ltd.