![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটু পড়ি, একটু লিখি
স্কুলের এক দল ছাত্রের সাথে শিক্ষকের মন মালিন্য থেকে বিরোধের জের ধরে গ্রাম্য সালিশের আয়োজন।
উঠানে গোল হয়ে বসে একদল মানুষের অট্টহাসির আভায় জনবিরোধ মীমাংসা করার রেওয়াজ আজ অবধি সম্যধিক পরিচিত।আজকেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি।
বিচার বসেছে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার একটু আগ মুহূর্তে। গলা ঝেড়ে কেশে মুরব্বিরা বিচার শুরু করেছেন এই বলে যে, সবাই আইছোনিগো, কথা কইমু নি? (সবাই আসলে কথা শুরু করি)
চারপাশের দাঁড়িয়ে থাকা জনতা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠল কন কাকা, শুরু করেন।
এবার পান চিবাতে চিবাতে শার্টের বোটাম আটানোর সাথে সাথে বিচারের মধ্যমনি মাদবর উপস্থিত সবার উদ্দেশ্যে হাক ছাড়েন, কেউ ডিস্টার্ব করবা না বলে রাখলাম,মুরিব্বিদের কথার মাঝে কথা কইবা না কিন্তু,তাইলে কিন্তু ভাল হইব না।
জ্বী মাদবর সাব, শুরু করেন, একসাথে উপস্থিত লোকজনের জবাব।
কই ছেমড়ারা?
চাচা আছি, এইতো আমরা।
তয় তোমাদের সাথে মাস্টার সাহেবের কি হইছে, বল দেখি,,,,,,,,,,,,,,,,
নানা পর্ব শেষে রায় ঘোষণা হয়েছে।শিক্ষকের সাথে অশোভন আচরণের জন্য মাফ চাইতে হবে। তবে তোমরা চাইলে তোমাদের পক্ষ থেকে যে কেউ একজন মাফ চাইলেই হবে।
ছাত্র জনতা সবাই উতসুক রায় এবার কার্যকর হবে, অন্যায় জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া বাধ্যতামূলক।
একপাশে ছাত্রদের একটা জটলা বাধছে। মাফ চাইতে হবে!!!"
এদের একজন কিন্তু অত্যন্ত আগ্রহী, সে মাফ চাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছে। এখন বন্ধুদের অনুমতি পেলেই ভাগ্য সুপ্রসন্ন,মাফ চাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে।আগে ভাগে আগ্রহ না দেখালে যদি সুযোগ মিস হয়!!!
পৃথিবীতে বহু প্রতিযোগিতা দেখেছি কিন্তু মাফ চাওয়ার জন্যও যে কেউ এত প্রস্তুতি নিতে পারে তা জানা ছিল না।
কখনও শার্টের হাতা গুটানো,আবার কখনো চুল ঠিক করার ফুসরত নাই। কি অবাক করা কান্ড!!! এ যে রীতি মত আনন্দ উতসাহের ব্যাপার মনে হচ্ছে!!!!
মাফ চাইতেও যে মানুষ এত উদগ্রীব,উতকন্ঠায় থাকতে পারে তা আরো পাচ'শ বছর এই ধরায় বেচে থাকলেও জানা হত কিনা সন্দেহ,যা আজ সচক্ষে অবলোকন না করলে বিলকুল বিশ্বাস হত না।
জানিনা মাফ চাওয়ার এত আনন্দ উতসাহ সে কোথায় সঞ্চয় করেছিল??? কোথেকেই বা এর যোগান মেলে????
কেউ একজন বলে উঠল আমরা মাফ চাইব কেন??? সাথে সাথে হাত দিয়ে তার মুখ বন্ধ করে বলছে, আচ্ছা আমিতো মাফ চাইব,তোরা কেউ চাইবি না। আর এতে লজ্জারই বা কি আছে???
ক্ষমা চাওয়া বা সরি ! বলার মাঝে কি কোন লজ্জা নাই???? বন্ধুরা সবাই নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও সে মাফ চাওয়ার ক্ষেত্রে অনড়। যাই হোক, সে মাফ চাইবেই!!!
সে বন্ধুদের ম্যানেজ করতে চাইছে তাও আবার মাফ চাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য!!!!
আজব পৃথিবী, বড় রহস্যময়ী এর মানুষগুলো!!!! কে মাফ চাইতে চায়,কে বাধ্য হয়ে মাফ চায়, বোঝা মুশকিল!!
ব্রিটিশ রাজরা এদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় কথায় কথায় সরি!,আর চা খাওয়া শিখিয়ে দিয়ে গেলেও তা কয়েক যুগের ব্যবধানে একজন বাঙলী এত সুন্দরভাবে রপ্ত করছে বা করতে পারে তা এই ঘটনা না দেখলে বিশ্বাস হত না।
সে হাত ভাজ করে ট্রাইল দিচ্ছে,এইভাবে মাফ চাইলেই তো হবে, তাই না???
সুন্দর!!!
স্টাইলিশ!!!
মাফ চাওয়ার ভঙ্গি!!!!
নান্দনিক মাফ চাওয়ার চাহনি
!!!
তার ভাব দেখে মনে হল মাফ চাওয়া কোন সংকোচ বা বিব্রত হওয়ার কিছু নেই,বরং এটা মনে হয় সম্মানের!!!!
দুনিয়ার মানুষগুলোর কর্মকান্ডের বিচিত্রতা দেখে সত্যিই মুগ্ধ।
কেউ কেউ বাধ সাধল মাফ চাইতেই দিবে না।
এভারেস্ট কিংবা আন্দিজ পর্বতমালা জয়ের দৃঢ় সংকল্প নয়, হাজার বাধা পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে নয়, এই বালকে সংগ্রাম করতে হচ্ছে শুধু মাফ চাওয়ার জন্য!!! একটু হাতজোড় করার জন্যে!!!! তাও কত প্রতিকূলতা!!!এও সম্ভব!!!
বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন সময় কাউকে মাফ চাইতে দেখলেও কারো মুখে এত হাসি-খুশি ভাব দেখেছি বলে মনে হয়নি।
সে অবশেষে ক্ষমা চাইতে পেরেছিল,সবার প্রসংশাও কুড়িয়ে ছিল সবার দোষ ঘাড়ে নিয়ে মাফ চাওয়ার বদান্যতার কারণে।
যদিও সে এত কিছু করেছিল চুক্তির শর্ত হিসেবে যা অভিনব,অবিশ্বাস্য,নান্দনিকও বটে আর তা হল ভাড়ায় মাফ চাওয়া।সে একজন পেশাদার মাফ চাওয়া ভাড়াটে লোক।
বিশ্বায়নের যুগে টাকার বিনিময়ে গর্ভ ভাড়া দেয়া, পিতৃত্ব ধার করা,কন্টাক্ট ম্যারেজ,সন্তান লালন পালন করে দেয়া,ছোট্ট বাচ্চাকে আদর যত্ন করা বা ডে কেয়ার এর কদর উচ্চবিত্ত সমাজে ঢেড় বেশি হলেও গ্রাম্য সমাজে একটু বিনীত হওয়া, একটু সম্মান করে কথা বলা,একটু সৌজন্যতাবোধ দেখানোর কদর এখনো অনেক বেশি। তাইতো এমন সৃজনশীল পেশার লোকজনের চাহিদা ক্রমাগত বাড়তেই পারে যা এক সময় ব্যবসা সফল হতে বাধ্য।
হয়তো এমন একদিন আসবে যখন ভাড়ায় কান্না করার লোক,ভাড়ায় বাবা বলার লোক, মা বলার লোকের অভাব হবে না,ভাড়ায় ঘন্টা মেপে সন্তানের সোহাগ কেনা যাবে। তাতে কি এসবে নান্দনিকতার ভাটা পরবে ?????:
যা কিছুই হোক না কেন মুক্তবাজার অর্থনীতির যুগে মানুষের অনুভূতি বিক্রির ব্যবসা অন্য যেকোন ব্যবসাকে ছাড়িয়ে যাবে তা হলফ করেই বলা যায়। ডিজিটাল যুগের এই এনালগ সংস্কৃতি চর্চার অভিনব ব্যবসার নান্দনিকতা ছড়িয়ে যাবে অন্য সকল ডিজিটাল ব্যবসার পরতে পরতে, জয় করে নিবে একবিংশ শতাব্দীর বিজয় রথকে তা নি:সন্দেহেই বলা যায়।
ক্ষমার নান্দনিকতা
১২/০৭/২০১৪
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৩
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
শিরোনামে ভাললাগা।