নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কেই জানতে চাই। সমালোচনা করি বলেই তো সমালোচিত!

ইব্‌রাহীম আই কে

লিখতে পারিনা। মাঝে মাঝে একটু চেষ্টা করি। বন্ধুবান্ধব সবার অভিযোগ আমি গল্প লিখতে পারিনা আমার লেখা গুলো প্রবন্ধ টাইপের হয় আর খুব বড় হয় তাই কারোর পড়ার ইচ্ছে হয়না।

ইব্‌রাহীম আই কে › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোটা।

২৩ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৪৮

ফারহানের মনটা আজ মনে হয় দু'ভাগ হয়ে যাচ্ছে। একই অস্তিত্বে দুটি অনুভূতি বহন করা সত্যি কষ্টকর। হৃদয়টা ছিড়ে যাচ্ছে। বেদনার আকাশে চাঁদ ও অবশ্য মাঝে মাঝে উঁকি মারছে। এতো মন খারাপের কি আছে? আজতো তার খুশি হওয়ার কথা। তার ভাই আজ সুইজারল্যান্ড যাচ্ছে। এটাই তার প্রথম দেশের বাহিরে যাওয়া কিন্তু হয়ত আর কখনো দেশে না ফেরার ও কারণ হতে পারে এটা। ফারহান ভাবছে, "আচ্ছা নাইম কি সত্যিই আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? ও কি আর কখনো ফিরে আসবেনা আমার কাছে। ওর অস্তিত্বে একমাত্র আমি আর আমার অস্তিত্বেও একমাত্র ও।" ফারহান ভাবতেছিল তার ছোট ভাই নাইমকে নিয়ে।

অবশ্য ছোট বলাটাও ঠিক হবেনা। কয়েকমিনিটের ব্যবধান দু'ভাইয়ের মধ্যে। তারা যমজ ছিল। ফারহান ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েকমিনিট পর নাইম পৃথিবীর মুখ দেখতে পায়। সেই হিসেবে ফারহানকেই সবাই বড় বলে আখ্যায়িত করে। এই কয়েকমিনিট আগে পৃথিবীর মুখ দেখার জন্যই হয়ত তার উপর এতো দায়িত্ব পড়েছে। নাইমকে সম্পূর্ণ দেখা শোনার ভার তার উপর। যখন নিজের আশ্রয় দরকার তখনই যদি তার ছায়াতলে অন্য কাউকে আশ্রয় দেওয়ার দায়িত্ব পড়ে তখন নিজেকে কেমন আসহায় মনে হয় তা ফারহান হতে ভালো আর কেউ বুঝবেনা।

তার বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তার মা মারা যায়। প্রায় দু'বছর পর তার বাবা দ্বিতীয় বিয়েটা করে নেন। মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও সবকিছু শান্তিতেই চলছিলো। কিন্তু তাদের একটা সৎ ভাই জন্ম নেওয়ার পর কেমন যেন তার মা (সৎ মা) বদলে জেতে শুরু করে। হয়ত একটা বাচ্চা জন্ম দেওয়ার সার্থকতাই তার মধ্যে সৎ মায়ের আচরণ ফুটে উঠাতে প্রভাব বিস্তার করেছিলো। দিন দিন তার মায়ের আসল রুপ্টা খোলস হতে বের হচ্ছিলো। অষ্টম শ্রেণীর মধ্যভাগে তার বাবা তার উপর নাইম এর দায়িত্ব দিয়ে দুজনকে হোস্টেলে ভর্তি করিয়ে দেয়।

ক্লাসে কখনো প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হয়নি। বিজ্ঞানের প্রতি নেশা থাকলেও নবম শ্রেণীতে উঠে মানবিক বিভাগ নিতে বাধ্য হয়েছিলো। কারণ যেদিন তার বাবা তাদের দুজনকে হোস্টেলে দিয়েছিলো সেদিন তার বাবা তাকে বলেছিলো,"ফারহান আমি চাই তোমরা দুজন আমরণ একসাথে থাক। কখনো ভাব্বেনা নাইম তোমার ভাই বা অন্য কেউ ছিল। সবসময় এটাই ভাব্বে যে ও তোমার একটা ফুস্ফুস যেটা সক্রিয় আছে এবং থাকবে। কিন্তু তোমার কাছে অবস্থিত তোমার ফুস্ফুস্টা নিষ্ক্রিয়।"

নাইম বিজ্ঞান পড়ার যোগ্য নয় তাই বাধ্য হয়েই ফারহানকে মানবিক বিভাগে ভর্তি হতে হয়েছিলো। ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাধে তার টিউশনি পেতে কোন বেগ পেতে হয়নি। সেই থেকে নিজের পায়ে হাটা শুরু। শুধু হাটা নয়, সদ্য হাটতে শিখার সাথে সাথে কারোর দায়িত্ব নিতেও বাধ্য হয়েছিলো। আচ্ছা কয়েক মিনিট ই কি তার জীবনের অভিশাপ ছিলো? না। হয়ত কয়েক মিনিট পর জন্ম নিলেও একই দায়িত্ব নিতে হতো তাকে। ছোটবেলায় টাইফয়েড এ আক্রান্ত হয়ে তার বাম কানটা অকেজো হয়ে পড়ে সাথে শারীরিক ভারসাম্যও হা্রিয়ে ফেলে। অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে পড়ে আর খুব পাগলামো করে। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝতে তেমন সমরথ নয়। এককথায় অটিস্টিক বলা যায়। মেধা তার তেমন নেই বললেই চলে। ফারহান তার ছাত্রাবস্থায় আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে সমর্থ হয়েছিলো যে, এটার প্রমাণ তার ভাইকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে পড়ানোর জন্য যোগ্য করে গড়ে তোলার মাঝে। যদিও ফারহানের তুলনায় নাইমের রেজাল্ট অনেক বাজেই হয়েছিলো কিন্তু প্রতিবন্ধী কোটাই তাকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে ভর্তির জন্য সুযোগ করে দেয়।

শুধুমাত্র বাবার কথা রক্ষার জন্য আর ভাইকে একলা ছেড়ে দিতে ইচ্ছে না হওয়াতে সে আজ ঢাকা শহরের কোন এক কলেজে ভর্তি হয়েছিলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এর আন্ডারে। রেজাল্ট ভালো ছিলো, কোন প্রকার ঝামেলা পোহানো ছাড়াই স্নাতকের পাঠ চুকে নিয়েছিলো। ফারহান আর নাইম এবার একইসাথে বিসিএস পরীক্ষার দুটি ধাপ উত্তীর্ণ হয়েছিলো। ভাইভা পর্যন্ত এসে ফারহান তৃতীয়বারের মতো পরাজয়ের স্বাদ গ্রহণ হরতে বাধ্য হলো অথচ প্রথমবারের অংশগ্রহণেই নাইম ফরেন ক্যাডারে টিকে গেলো। অবশ্য এর অন্তড়ালে নাইমের সহায় ছিলো আলাদিনের চেরাগের অনুপস্থিতিতে প্রতিবন্ধী কোটা।

নাইমের প্রতিবন্ধকতা হয়ত প্রকৃতি ইচ্ছে করেই দেয়নি। প্রকৃতি তার ভারসাম্য রক্ষা করে চলছিলো শুধু। প্রকৃতি তার নিজের অবস্থানের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল। ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সে যে কোন সময় যে কোন কিছুই করতে পারে। নিজের অস্তিত্ত রক্ষা করার জন্য প্রকৃতি অনেক সময় মানবসৃষ্ট অতিরঞ্জতাকে নিমিষেই ধুলার সাথে মিশিয়ে দেয়। মানুষের মাঝে সীমাবদ্ধতা থাকবে আর এটাই হবে পরস্পর পরস্পরের প্রতি সদয় হওয়ার কারণ। কিন্তু আমাদের যেটা শিক্ষা নেওয়ার দরকার তা কখনো আমরা নিতে পারিনা। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আমাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতাই এটা।

কিন্ত মানুষ যখন কর্তার উপর কর্তাগিরি শুরু করবে তখন তো তার ধ্বংস অনিবার্য হয়ে পরবে এটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তাকে তার গতিতে চলতে দেওয়া উচিৎ। মানুষ তার মধ্যে বসবাসকারী হয়ে যখন তার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদস্বরূপ কোন রূল জারী করবে তার মানে নিজেই নিজের ধ্বংস সুনিশ্চিত করলো।

আচ্ছা শুধুমাত্র তাদের প্রক্রিত প্রদত্ত প্রতিবন্ধকতার প্রতিধান দিতে বা এটাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যে, "ওরাও মানুষ, ওদেরও আমাদের মতো বাঁচতে ইচ্ছে করে, ওদেরও আমাদের মতো ভালো অবস্থানে নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করে" যদি এই ব্যাবস্থা নেওয়া হয় তবে............

হঠাত পিছন হতে নাইমের কণ্ঠস্বর শোনার সাথে ফারহানের ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটল। সে সম্ভিত ফিরে পেলো, খুব দ্রুত নিজেকে স্বাভাবিক অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টা করলো। নাইম বলল, "ভাইয়া আমি এসে গেছি।" নাইম বাবার সাথে দেখা করতে গ্রামে গিয়েছিলো। ফারহান নিজের চক্ষু লজ্জায় আর বাবাকে দেওয়া কথা রাখতে না পারায় (ফারহানের সাথে নাইম থাকতেছেনা, তারমানে নাইমকে ফারহান দেখে শুনে রাখছেনা।) আজ বাবার সামনে যেতে পারেনি তাই সকাল থেকেই এয়ারপোর্টে নাইমের আসার জন্য অপেক্ষা করতেছিলো। ফারহান বলল, "আমি তোর সকল পেপারস ঠিক করে রেখেছি। সব ঠিকঠাক মতো প্যাঁক করা আছে।

নাইম- ভাইয়া তোকে ছাড়া চলে যাব! একা থাকতে খুব কষ্ট হবে।

ফারহান-এতো সুন্দর দেশে যাচ্ছিস, এত ভালো একটা সরকারী চাকরী, সরকারের এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা পোস্ট তোর জন্য অপেক্ষা করছে আর তুই কিনা......

নাইম-ভাইয়া আমার কেমন জানি নিশ্বাসটা বন্ধ হয়ে আসছে এটা ভেবে যে তোকে ছাড়া আমি চলে যাচ্ছি। আমি কি পারব আমার এই সীমাবদ্ধতাগুলো অতিক্রম করে দেশের মর্যাদা রক্ষা করতে!!!

মাইক্রোফোন থেকে ভেসে আসা ফ্লাইট নম্বর শোনার মুহূর্ত খানেক পর ফারহান উপলব্ধি করতে পারল যে নাইম চলে গেছে তাকে ছেড়ে। হয়ত চিরদিনের জন্য!

গাল বেঁয়ে দু'ফোটো লবণাক্ত পানি ঝড়ে পড়ল। নিজেকে আজ খুব অসহায় মনে হচ্ছে দিতিয়বারের মতো। সে এক আট-দশজনের মতোই সাধারণ মানুষ। একজন প্রতিবন্ধকতাহীন পারফ্যাক্ট মানুষ। এটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে দাড়ালো আজ। ডিপ্রেশন আরো চেপে ধরল তাকে। ভাবছে কেন সে আজ প্রতিবন্ধী হলোনা? আজ নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে। এমন অসহায়ত্তে, মানুষিক ডিপ্রেশনে থেকে আত্মহত্যা করাটা হয়ত কোন অপরাধ হবেনা!

ফারহান আবার নাইমকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলো। আচ্ছা আমিতো জানি নাইম কোন ধরণের ছেলে। পড়াশোনায়, মেধায়, জরুরী সিদ্ধান্ত নিতে কতইনা অপারগ। কতইনা অক্ষম সে ভালো মন্দের সূক্ষ্ম তফাৎ করতে, কতইনা অক্ষম হবে সে কূটনৈতিক ব্যাপার বুঝে-শুনে রাষ্ট্রের ভালো মন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত জানাতে।

অথচ আজ তার উপরই একটি রাষ্ট্রের ভার পড়েছে। যাকে কিনা ঘন্টা খানেক আগেও রূটিন মাফিক খাবার খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিলো আমার উপর। আহা বাংলাদেশ! আজ তুমি এমন একটি মানুষের উপর দায়িত্ব দিয়েছো তোমার দেখা শোনা করানোর জন্য। ভাবতেই অবাক লাগছে ফারহানের, আজ হতে নাইম ও সিদ্ধান্ত জানাতে শুরু করবে আর সেটাও নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়ার মতো কিছু সিদ্ধান্ত!

নাহ আসলেই প্রকৃতির উপর কর্তৃত্বগিরি করার উচিৎ। আমরা বাম হাত দিয়ে কেন সবসময় শৌচকার্য সম্পন্ন করব? বাম হাত ও তো ইচ্ছে পোষণ করে, ইস! আমি যদি খাবার মুখে তুলে দিতে পারতাম। ফারহান সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো বাকি জীবন বাম হাতের পরিশ্রম-ত্যাগের স্বীকৃত দেওয়ার জন্য আজ হতেই ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য সম্পন্ন করব আর বাম হাত দিয়ে খাবার খাবে!!!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১:৩৬

মাআইপা বলেছেন: খুব ভাল হয়েছে। লিখতে থাকুন।

২৪ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:১৯

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে। চেষ্টা করতেছি, আসা করি গাইডলাইন দিবেন।

২| ২৬ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
গল্পের আকারে লিখেছেন।
আমি চাই আপনাকে প্রথম পাতায় লেখার সুযোগ দেওয়া হোক।

২৬ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:০৫

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: গল্প লিখতে পারিনা। তাই চেষ্টা করার স্পৃহা ও কখনো পাইনা। তারপরও মাঝে মাঝে নিজের মনের বিরুদ্ধে গল্প টাইপের কিছু লিখতে বসি। আপনার " সুন্দর লেখা।
গল্পের আকারে লিখেছেন। " এই মন্তব্যটা আমাকে গল্প লিখতে সাহায্য করবে।

দাদা আমিও প্রত্যাশা করছি একদিন আমার লেখাও প্রথম পাতায় প্রকাশিত হবে। সেই আশা ব্যাক্ত করেই লিখে যাচ্ছি।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ধারনা আপনার লেখা প্রথম পাতায় আসে না। কারন আমি প্রথম পাতায় সব সম্নয় চোখ রাখি। সেখানে আপনার কোনো পোষ্ট চোখে পড়েনি।

২৬ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৪:১০

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: ব্লগে নতুন এসেছি তাই প্রথম পাতায় লেখা প্রকাশ করার মত লেখা এখনো লিখতে পারতেছিনা। এজন্যই আমার লেখা কখনো আপানার সম্মুখে যায়নি।
প্রাথমিক অবস্থায় আপনাদের মন্তব্য হয়তো মডুদের দৃষ্টির মধ্যে পরলে আমার লেখা প্রথম পাতায় যাওয়ার একটা সুযোগ পেতে পারে। তাই আপনাদেরকে আমার ব্লগে ইনভাইট করা।

আশা করি সবসময় পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাবেন।

অসংখ্য ভালোবাসা আপনার জন্য।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১১:৫১

খায়রুল আহসান বলেছেন: ডানহাতে শৌচকার্য সম্পন্ন করার ভাবনাটা ব্যতিক্রমধর্মী। অন্য কোন উপায়েও প্রকৃতির অনুশাসনের প্রতি নতজানু না হয়ে প্রকৃতির উপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করা যেত।
নিরন্তর শুভ হোক আপনার এ ব্লগযাত্রা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.