নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজের সম্পর্কেই জানতে চাই। সমালোচনা করি বলেই তো সমালোচিত!

ইব্‌রাহীম আই কে

লিখতে পারিনা। মাঝে মাঝে একটু চেষ্টা করি। বন্ধুবান্ধব সবার অভিযোগ আমি গল্প লিখতে পারিনা আমার লেখা গুলো প্রবন্ধ টাইপের হয় আর খুব বড় হয় তাই কারোর পড়ার ইচ্ছে হয়না।

ইব্‌রাহীম আই কে › বিস্তারিত পোস্টঃ

হঠাৎ বৃষ্টি।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১৮



আজকের লেখাটা গল্প হিসেবে প্রত্যাশা করলে আমি বলব কিঞ্চিৎ ভূল কিছু চাহিয়াছেন।আজকে বৃষ্টিময় কিছু মুহূর্তকে সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালাবো।

সময়ঃ সন্ধ্যা ৬টা ও টার পরবর্তী মুহূর্ত।
স্থানঃ সংসদ ভবন এলাকা।

সংসদ ভবনের দক্ষিণ পাশে আড্ডাটা চলছিলো। অনেক সময় চায়ের কাপে ভালো আড্ডা জমেনা আবার কখনোবা চায়ের কাপ ছাড়া ভালোই আড্ডা জমে যায়। পূর্ব প্লান মোতাবেক আমরা ৬ টার দিকে উঠে যাব কিন্তু আড্ডার মোহে সেটা আর কারোরই মনে থাকলোনা। এলারম হিসেবে কাজ করল পরিষ্কার আকাশের দু'একফোঁটা বৃষ্টি। মোবাইলে সময় দেখে সাথে সাথেই বাস ধরার জন্য আমরা বঙ্গবন্ধু চত্বর তথা খামার বাড়ি এর দিকে রওনা হলাম। প্রকৃতির বিপরীতে মানুষ কখনো জয় লাভ করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়না। বৃষ্টির মাত্রা ক্রমশই বাড়তে থাকল।

একটা কথা বার বার মনে পড়ছিলঃ প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টি আরোপ কর শিক্ষণীয় অনেক কিছুই জানতে পারবে, প্রকৃতির খেয়ালীপনা গুলো বুঝতে পারবে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হবে।

হাঁটতেছিলাম আর চারিপার্শ্বের অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করতেছিলাম। আমাদের এলাকার পার্কে আড্ডা দেওয়ার সময় একবার বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিলো তখন সাথে থাকা ফ্রেন্ডকে বলেছিলাম, "যত বেশি অন্ধকার তত বেশি আন্তঃআণবিক আকর্ষণ, আন্তঃআণবিক আকর্ষণ যত বেশি আন্তঃআণবিক দূরত্ব তত কম।" বৃষ্টির যতই তার নিচে পতনের মাত্রা বাড়তেছে কাপলদের মধ্যকার আকর্ষণ ততই বেড়ে যাচ্ছিলো সুতরাং তাদের মধ্যকার দূরত্ব কমবে এটাই স্বাভাবিক। একজন আর একজনকে খুব কাছ হতে দেখার সুযোগ পাচ্ছে একমাত্র প্রকৃতির কল্যাণেই। অবশ্য কিছু লুতুপুতু টাইপের পারসন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ভূল করেন না। সর্বোচ্য সুযোগ সন্ধানীর আশায় অপেক্ষা করে হোকনা সেটা দুর্যোগ পূর্ণ কোন মুহূর্ত কিংবা প্রকৃতির অভিশাপ।

আসলে ঢাকা শহরে অনেক ভালো মনের মানুষও আছে। কিন্তু গুটিকয়েকের হিংস্রতা ও নৃশংসতার কাছে তারা হেরে যায়। আমরা পূর্ব-দক্ষিণ কর্নারে পৌঁছে রেস্ট্রিক্টেড এরিয়ার বাইরে দাড়িয়ে ছিলাম। আমরা যদি সীমানা অতিক্রম করতাম তাহলে অন্তত নিজেকে বৃষ্টির হাত হতে নিরাপদ রাখতে পারতাম। কারণ ভিতরের গাছগুলো খুব ঘন ছিল এবং ছাতার মত আবরণী তৈরি করেছিলো। কিন্তু সাধারণ জনগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিল।

এক হকার এর কাছে কিছু পলিথিন ছিল। সবাইকে এই বলে সে পলিথিন বিলি করতেছিল, "আপনারা এটা দিয়ে হয়ত নিজেদের মাথা ঢেকে রাখেন আর না হয় নিজেদের মোবাইলটাকে প্যাকেট করে রাখেন।" কিন্তু আমার কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই তার স্টক খালি হয়ে যায়।

নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস উপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।

ঠিক তেমনিভাবে নিজের জায়গা থেকে আর একটা গাছতলাকে বেশি নিরাপদ মনে হচ্ছিলো। সেখানে পৌঁছানোর পর অবস্থা আরো করুণ হয়ে গেলো। উপর হতে বৃষ্টি গাছের পাতা ভিজতে ভিজতে এখন চুইয়ে চুইয়ে সোজা নিচের দিকে আমাদের মাথায় পড়ছিল। মাথাটা পুরোপুরি ভিজে গেল। একটা কাপল আমাদের গাছতলায় দাড়িয়ে থেকে খুব বেশি ভিজেছিল (আমাদের এখানে পৌঁছানোর আগেই।) একজন লোক নিজের সহ তাদের মাথার উপরেও ছাতাটা তুলে ধরল। এটা একটা স্বাভাবিক মানবতার সম্পর্ক ছিল। এরকম্ভাবে কেউ কেউ কখনো নিজের ছায়াতলে কাউকে আশ্রয় দিয়েছিল আবার কেউবা আগ বাড়িয়ে আশ্রয় নিয়েছিল।

একজন সিঙ্গেল মেয়েকেও দেখা যাচ্ছিলো একা একটি ছাতার নিচে। তার কাছে আশ্রয় নেওয়ার জন্য কেউ যায়নি (ছেলেরা তো কেউ যায়নি (যাবেও না) এমনকি কোন মেয়েও না।) আমাদের সাথেই দাঁড়ানো এক সম বয়সি (ছাতি ওয়ালির) মেয়েকে প্রসঙ্গ ক্রমে জিজ্ঞাসা করাতে সে বলল, "যা ভিজার ভিজে গেছি। কি দরকার আর একজনের কাছে যেয়ে আশ্রয় নেওয়ার। হয়ত সে ডিস্টার্বড ফিল করতে পারে। যদি এমনটা না হত তাহলে সেই কাউকে না কাউকে আশ্রয় দিত।

ছাতিওয়ালী মেয়েটাও হয়ত ভাবছে কেউ যদি আমার এখানে আশ্রয় চাইত তাহলে আমি দিতাম। এখন আমি আগ বাড়িয়ে কাকে রেখে কাকে আশ্রয় দিব। (আমার ধারণা)

হঠাৎ পশ্চিম দিক হতে পূর্ব দিকে প্রচণ্ড বাতাস বইতে শুরু করলো। সাথে বজ্রপাত সহ প্রচুর বৃষ্টিপাত। এতক্ষণ শুধু মাথাই (মূলত) ভিজেছিল আর এই বাতাসে পুরো শরীর ভিজে গেলো। মনে হল যেন প্রকৃতি তার ক্ষোভের ষোলকলাই ঝেড়ে দিচ্ছে।

সেখানে আর সময় নষ্ট না করে রাস্তার বিপরীত পার্শ্বে চলে গেলাম যেখানে খামার বাড়ি থেকে আড়ং যাওয়ার রিক্সাগুলো দাড়ায়। কেউ কেউ রিক্সায় উঠেছিলো শুধুমাত্র আশ্রয়ের জন্য। কেউবা বৃষ্টি থামলে আড়ং (বা যে কোন যায়গায়) যাবে বলে রিক্সা বুকিং দিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। কেউবা সাময়িক আশ্রয় নেওয়ার জন্য রিক্সা ভাড়া করেছিলো।

একটা পর্যায়ে ৮ নম্বর বাসে উঠে পড়লাম। পুরো ভিজে গিয়েছিলাম বলে গেটেই দাড়িয়ে রইলাম। কি দরকার ভিতরে যেয়ে অন্যান্য যাত্রীদের অসুবিধার কারণ হওয়ার। খামার বাড়ি হতে আড়ং এর রাস্তার দু পাশের এবং মধ্যখানের রোড ডিভাইডারের গাছ গুলোর মধ্যে অনেক গাছ ভেঙ্গে পরে। মধ্যখানের পুলিশ চেকপোস্টের জায়গাটা পুরুটাই গাছের আস্তরণে ছেয়ে যায়। বড় বড় অনেক গাছ ও ভেঙ্গে পড়েছিল ঠিক যেমন গাছের ছায়াতলে আমি সহ শত শত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলাম। আমাদের আশ্রয়স্থলটাও কতটা অনিরাপদ।

আসাদগেট হতে একজন উঠল তার কাছে হেল্পার ভাড়া চাইল।
হেল্পারঃ মামা, ভাড়াটা আমার কাছেই দেন।
যাত্রীঃ মামা, ভাড়া নাই।
হেল্পারঃ ভাড়া নাই মানে?
যাত্রীঃ বৃষ্টিতে একটা টঙের দোকানে আশ্রয় নিয়েছিলাম। দোকানদার একটা বড় পলিথিন আমাদের জন্য টেনে দিয়েছিল। আমি সহ আরো কয়েকজন সেখানে ছিলাম। এর মধ্যে আমাদের দুজনের মানিব্যাগ ও মোবাইল চুরি হয়ে যায়। নিরাপদ রাখার মতো দুইটা বস্তু যখন খোয়া গেছে তখন আমি বৃষ্টিতে ভিজলেতো আর সমস্যা নেই। তাই চলে আসলাম। টাকা নেই।
হেল্পারঃ থাক লাগবেনা। তবে মামা একটু সাবধানে থাকবেন না।

শিশুমেলায় এসে আমি নেমে গেলাম বাস থেকে। তার পর হাঁটা শুরু করাতে এক রিক্সাওয়ালা আমাকে বলছে।
রিক্সাওয়ালাঃ মামা হেঁটে কই যাইবেন। এমনেতো ভিজে গেছেন, তার উপর আরো ভিজে যাবেন।
আমিঃ মামা যাইবেন পার্কের মাঠের পাশে? (২০০ মিটার হবে)
রিক্সাওয়ালাঃ থাক মামা, তাহলে হেঁটেই যান!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৮ সকাল ১০:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ঢাকা শহরের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন সুন্দর করে।

২৬ শে মে, ২০১৮ দুপুর ২:২৪

ইব্‌রাহীম আই কে বলেছেন: বাস্তবতা আমাকে কিছু লেখার জন্য অনেক অনুপ্রেরণা যোগায়। আমার বেশিরভাগ টপিক থাকে বাস্তবতা রিলেটেড।

আমি কেন যেন আধ্যাত্মিকতার ব্যাপার গুলো নিয়ে ভাবতে পারিনা!!!

ধন্যবাদ আপনাকে, আমাকে উৎসাহমূলক মন্তব্য করার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.