![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাধ্যমিকের গণ্ডি কোনও রকমে পেরিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছি। ছুটো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে ভালোবাসি। 'ইচ্ছেপুরণ ফাউন্ডেশন' এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছি বর্তমানে।উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছি। ছুটো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ লিখতে ভালোবাসি। 'ইচ্ছেপুরণ ফাউন্ডেশন' এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে আছি বর্তমানে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্যাতন তৃতীয় বিশ্বে নতুন কোনও সমস্যা নয়। বিশেষত বাংলাদেশে এটা যেন অতি স্বাভাবিক কিছু হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন আছে কিন্তু এখনও নির্যাতন চলছে অনেক স্কুল-কলেজেই।কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখেছিলাম, রাজশাহীর এক কলেজ শিক্ষক তার ছাত্রের গোঁফ ছিঁড়ে ফেলেছিল বোটানি পড়া শিখে না যাওয়ায়। ক’দিন আগে আমাদের কলেজের (ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়) ফিজিক্স এর শিক্ষক ছাত্রদের ঘুষিয়েছিলেন ফিজিক্সের একটা অংক করতে না পারায়।আমার বেশ মনে পরে আমি হাইস্কুলে পড়ার সময় একদিন অনুপস্থিত থাকায় আমাকে সন্ধিবেত দিয়ে ইচ্ছেমত পেটানো হয়। অথচ আমার তখন ক্লাস রোল ছিল এক। আমাদের শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক আনিসুর রহমান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমি কেনও স্কুলে আসিনি ? জবাবে বলেছিলাম, “আমার মন ভাল ছিল না।” তাই উনি আমায় মেরেছিলেন। যা হোক সে তো বেশ আগের কথা। আমি আমার অন্যান্য বন্ধুদের কাছ থেকে এখনও প্রায়ই শুনি প্রাইভেট না পড়ায় উমুক স্যার নাম্বার কম দিয়েছেন। তমুক স্যার ক্লাসে মেরেছেন। এ তো আমাদের ময়মনসিংহের বিভিন্ন কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের অবস্থা। শুধু ময়মনসিংহের নয় প্রকৃতপক্ষে পুরো দেশেই এ অবস্থা বিদ্যমান আছে। সরকারি কলেজে মারের যন্ত্রণা না থাকলেও শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ যথেষ্ট আছে। আমি বলছি না সব শিক্ষকই এমন। তবে এদের সংখ্যা কিন্তু নেহাত কম নয়।আর হাই স্কুল , প্রাইমারি স্কুলে এই হার আরও অনেক বেশি।শুধু শিক্ষকের নির্যাতনই আমাদের দেশের ছাত্রদের জন্য বড় সমস্যা নয়, অভিবাভকেরাও কম নন। তবে অভিবাভকদের শারীরিক নির্যাতনের চেয়ে মানসিক নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগ ছাত্র। আমাদের অভিবাকেরা সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এতই উদ্ভিগ্ন যে তারা মনে করেন তার সন্তান ২৪ ঘণ্টাই পড়বে। এতে তার সন্তানের মানসিক বিকাশ কতোটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তা তারা ভেবে দেখেন না। আর পরীক্ষা চলাকালে তাদের এই উদ্বিগ্নতার মাত্রা সীমা ছাড়িয়ে যায়। যেমন পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই বাইরে ঘোরাঘুরি, পাঠ্যবইয়ের বাইরে বই পড়া, খেলাধুলা সকল কিছুর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। শুধু বইয়ের মাঝে মুখ গুজে বসে থাকো! পরীক্ষা সম্পর্কে ভয় ভীতি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের ক্ষেত্রে কি আসলেই সহায়ক?
গবেষণায় দেখা গিয়েছে অতিরিক্ত ভয় আলসার, মাথাব্যথা, এলার্জির, ডিপ্রেশনের মতো কিছু অসুখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতি বছর এস এস সি ও এইচ এস সি এই দুই বড় পাবলিক পরীক্ষায় কৃতকার্য না হতে পেরে অনেক ছাত্রদের আত্মহত্যা করার কথাও শুনা যায়। পড়াশুনা নিয়ে ঠিক কতটুকু চাপ শিশুকে প্ররোচিত করে এইরকমভাবে নিজেকে ধ্বংস করে দেয়ার পথ বেঁছে নিতে! বর্তমানের পি এস সি নামক আরও এক ঘাতক পরীক্ষা চলছে।আমাদের এখানে চারপাশে শুধু উঁচু উঁচু দালানকোঠা। খোলা মাঠ নেই। কোন পার্ক নেই শিশুদের খেলার। ছুটোছুটি করার, সবুজ সতেজ প্রকৃতি ঘেরা পরিবেশে প্রান ভরে শ্বাস নিবে এতোটুকু জায়গা পর্যন্ত নেই! তাহলে শিশুরা খেলবে কোথায়? তাই শহরের শিশুদের কাছে এখন বিনোদন মানে কম্পিউটার নয়ত টিভি। আর এতে তারা দিনদিন মুটিয়ে যাচ্ছে।
২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার একটি পাবলিক স্কুলের ২৬৬ জন ছাত্র ও ২০২ জন ছাত্রীদের উপর করা গবেষণায় দেখা যায় স্থূলতার প্রাদুর্ভাব ১৭.৯%; যেখানে ছেলেরা শীর্ষস্থান অধিকার করে আছে ১৯.৯% নিয়ে এবং মেয়েরা ১৫.৩% নিয়ে এবং স্থূলতা সবচেয়ে বেশী ১০-১৩ বছর বয়স্ক ছাত্র ছাত্রীদের ভিতর। আর এই হার এখন উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে।
আমাদের এশিয়ার সবচেয়ে বড় শপিং মলের দরকার নেই, দরকার খেলার মাঠের। যেখানে শিশুরা খেলবে।
যা হোক দেরীতে হলেও সরকার এ ব্যাপারে অনেকটাই সচেতন হয়েছে।
শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের ওপর শাস্তি নিষিদ্ধসংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে সরকার। নীতিমালায় শারীরিক ও মানসিক শাস্তির সংজ্ঞা নির্ধারণসহ এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়, ছাত্রছাত্রীদের ১১ ধরনের শারীরিক শাস্তি দেওয়া যাবে না। আর মানসিক শাস্তি হিসেবে মা-বাবা, বংশ ও ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করা যাবে না। অশোভন অঙ্গভঙ্গিসহ শিক্ষার্থীদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এমন আচরণও করা যাবে না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধের সাড়ে আট মাস পর ২১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা-সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১১’ প্রণয়ন করে।
নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বলতে সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মাদ্রাসাসহ (আলিম পর্যন্ত) অন্য সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়েছে। নীতিমালায় নিষিদ্ধ করা শাস্তিগুলো হলো, হাত-পা বা কোনো কিছু দিয়ে আঘাত বা বেত্রাঘাত, শিক্ষার্থীর দিকে চক বা ডাস্টারজাতীয় বস্তু ছুড়ে মারা,
আছাড় দেওয়া ও চিমটি কাটা, কামড় দেওয়া, চুল টানা বা চুল কেটে দেওয়া, হাতের আঙুলের ফাঁকে পেনসিল চাপা দিয়ে মোচড় দেওয়া, ঘাড় ধাক্কা, কান টানা বা ওঠবস করানো,
চেয়ার, টেবিল বা কোনো কিছুর নিচে মাথা দিয়ে দাঁড় করানো বা হাটু গেড়ে দাঁড় করে রাখা, রোদে দাঁড় করে বা শুইয়ে রাখা কিংবা সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড় করানো এবং ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে এমন কোনো কাজ করানো, যা শ্রম আইনে নিষিদ্ধ।
নীতিমালায় বলা হয়, কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা কিংবা শিক্ষা পেশায় নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি অথবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঠদানকালে কিংবা অন্য কোনো সময় ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে উল্লিখিত আচরণ করবেন না, যা শাস্তি হিসেবে গণ্য হয়।
এসব অপরাধের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে, তা ১৯৭৯ সালের সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী হবে এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
উপরোক্ত অভিযোগের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ১৯৮৫-এর আওতায় অসদাচরণের অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। প্রয়োজনে ফৌজদারি আইনেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।কিন্তু যে হারে নির্যাতন হয়েছে সে হারে কত জনের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছে তা কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। এ বিধি প্রণয়নের পর চালানো এক জরিপে জানা যায় এখনও ৫৯ শতাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষকের হাতে শারীরিক শাস্তি পেয়ে থাকে। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) আর্থিক সহায়তায় ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) জরিপটি পরিচালনা করে। কিন্তু আসলেই কি শারীরিক নির্যাতন কোনও ভাল ফলাফল বয়ে আনে ?
Christchurch Health and Development Study থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে Professor David Fergusson বলেন-
Evaluations of the relationship between reports of physical punishment or abuse during childhood and psychosocial outcomes in early adulthood clearly showed that young people reporting harsh or abusive treatment had increased rates of conduct problems, substance abuse, depression, anxiety and violent crime. There were, however, no clear differences between the adjustment of young people who reported that their parents never used physical punishment and those who reported that their parents infrequently used physical punishment.
অর্থাৎ শারীরিক শাস্তি শিশুর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন ভূমিকাই রাখতে পারে না।
শারীরিক শাস্তির উপর গবেষণা পত্রে Elizabeth Gershoff উল্লেখ করেন-
Ten of the 11 meta-analyses indicate parental corporal punishment is associated with the following undesirable behaviours and experiences; decreased moral internalisation, increased child aggression, increased child delinquent and antisocial behaviour, decreased quality of relationship between parents and child, decreased child mental health, increased risk of being a victim of physical abuse, increased adult aggression, increased adult criminal and antisocial behaviour, decreased adult mental health, and increased risk of abusing own child or spouse. Corporal punishment was associated with only one desirable behaviour, namely increased immediate compliance .
মোদ্দাকথা মানসিক ও দৈহিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ছাড়া শারীরিক শাস্তির আর কোন কার্যকারিতা নেই।
প্রত্যাশিত হারে না হলেও আশার কথা হচ্ছে তুলনামূলক ভাবে আগের চেয়ে মানসিক ও দৈহিক নির্যাতন কমেছে। কিন্তু অপরিবর্তিত রয়েছে কউমি মাদ্রাসা শিক্ষায়। নানা কারণে সরকার কউমি মাদ্রাসার অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ না করলেও এমন গর্হিত অপরাধ এড়িয়ে যাওয়া যায় না।দেশের বেশিরভাগ কউমি মাদ্রাসায় শারীরিক নির্যাতন চলে।একবার পত্রিকায় দেখেছিলাম ঢাকার এক মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষিকা তার ছাত্রীদের পায়ে গরম ভাজা কাঠির ছেঁক দিয়েছে। সরকারকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুস্থ মানসিক ও শারীরিক বিকাশ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে কউমি মাদ্রাসায় পড়া ছেলেটিও বিশ্বাস করে এ দেশ তার। আর তাই তার পূর্ণ বিকাশের দায়িত্ব আমাদের।, এ দেশের।
হোক স্কুল, মাদ্রাসা বা কলেজ এ নোংরা সামাজিক ব্যাধি বন্ধ করতে প্রয়োজন আইনের যথাযথ প্রয়োগ, প্রয়োজন গণসচেতনতা। গনসচেতনাতা বৃদ্ধির লক্ষে এ বিষয়টিকে সামনে রেখে রচনা প্রতিযোগিতা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে এ ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে স্থানীয় প্রশাসন এবং তাদেরকে তা করতে হবে। আমাদের এক হয়ে রুখতে হবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, প্রতিহত করতে হবে। প্রতিহত করতে হবে আমাদের জন্য। আমদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। যারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে চারণ করবে। বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিবে।
©somewhere in net ltd.