নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঈন উদ্দিন জাহেদ

ইলশেবিষ্টিঘিয়েরোদ

মূলতঃ কবিতা লিখি । মাঝে মাঝে গদ্য।ফরমায়েশি লেখা পারিনা বলে প্রতিদিন পাঠকের কাছে আসা সম্ভব হয় না। মনে হয় উচিৎও না।

ইলশেবিষ্টিঘিয়েরোদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গালিবের গজল থেকে/ মাঈনউদ্দিন জাহেদ

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২

গজল অর্থাৎ প্রেমালাপ- যার বিচিত্র চিন্তার প্রকাশ- পরিধি বিশাল , বিরহ থেকে মিলন আকাঙ্ক- হতাশা -ব্যথা-বেদনা-স্বাদ-আহ্লাদ-ঈর্ষা-যন্ত্রনা-ক্রটি,অভিমান-আর্তি। গজল শুরু হয় যে দু‘টো চরণ দিয়ে তাকে বলা হয় মাতলা ।প্রথম পংক্তির শেষ শব্দটি আগের শব্দ দ্বিতীয় পংক্তির শেষ শব্দটির আগের একটি শব্দের সঙ্গেঁ ধ্বনিগত মিল থাকতে হয়। এ মিলকে বলা হয় ‘কাফিয়া’। গজলের পরবর্তী প্রতিটি কবিতার দ্বিতীয় পংক্তির শেষ শব্দটি‘ মাতলা’র দ্বিতীয় পংক্তির শেষ শব্দটির স্থানে বার বার ছন্দিত হবে, আর এর নাম ‘রাফিফ’। গজলের দু’টো মিল। একটি ধ্বনিগত -কাফিয়া, দ্বিতীয়টি রাদিফÑ শব্দগতরা পুনরাবৃত্তি। গজলের শেষ কবিতা কে বলে মাকতা । বাংলা কবিতায় ঈশ্বের গুপ্তের কবিতাবলীতে এ মিল পাওয়া যায়। গজলের নায়িকা কখনও কিশোরী নয় বরং হয় তারা যুবতী - যে মনোরঞ্জন প্রাঞ্জ। তাকে বলা হয় ‘তাওয়াযেফ’- যাকে উদ্দেশ্য করে গজল রচনা হতো তারা সাধারণত পান সভায় গজলের সুরে নাচতেন । একনিষ্ঠ না হলেও যারা তন্ময় মূহুতের একান্ত জন। গজলের গাওয়ার একটি নির্দিষ্ট ঢং আছে। যাতে অভিজাত বাংলার তরুনী কিংবা অনিন্দ্য সুন্দরী নৃত্য পটিরসীরা। তাদের ধনাঢ্য বণিক বা আমীর-ওমরাদের মনোরঞ্চনের জন্য নিজেদের রুপকে তুলে ধরতে। যা রক্ষনশীল মুসলিম সমাজে শালীনতার আড়ালে আর একটি বিকৃতি । বিশিষ্ট চিন্তক আবু সায়ীদ আইয়ুবের মূল্যায়ন হচ্ছে Ñ এই শালীনতা বোধ, যার আওয়াতায় সমযৌন প্রেম উনবিংশ শতাব্দীর উর্দু কাব্যে সমাদৃত হলো।এবং নারীর প্রতি প্রতি পুুুুুুুরুষের ভালোবাসা বহিস্কৃত হলো বা প্রচ্ছন্ন রইলো আমাদের আজকের রুচিতে যতোই অদ্ভুত ঠেকুক, তাকে অস্বীকার করার জো নেই । তেমনি ভাবে বাঙালি মুসলিম বিত্তশালী সমাজে ঢুকে গিয়েছিল ঊনিশ শতকে ‘ঘেটুপুত্র’ রাখার প্রবণতা আর বাঙালি হিন্দু সমাজে কালি পুজা উপলক্ষে ‘নাটটো পোয়া’ নাচনো প্রথা । সামাজিক বিবর্তনের মধ্যদিয়ে অনেক বিকৃতি এখন লোপ পেয়েছে ঠিকই ,তবে তাদের ক্ষতের চিহৃ বয়ে চলছে। আমাদের ইতিহাস গজল নিয়ে একটি বিমোহিত বোধঁ আছে রুচিশীল শিক্ষিত সমাজে । এটা একধরনের নষ্টালজিয়া । আমাদের ভেতরের অপ্রাপ্তিগুলো কে আমরা ভাব-গানের মাঝে খুজিফিরি।উর্দ্দু সাহিত্যের অসাধারণ গজল শিল্পী মীর্জা গালিব। তার গজল থেকে ক’টি ভাবঅনুবাদ-





গজল ঃ১

যে আমি বার বার খুলি দরজা-জানালা

সেকি এলো সেকি এলো

বধুর চিঠি নিয়ে এলো নাকি বায়ূ-

বিশাদে আকাশ এলোমেলো

সে এলে আমার ঘরে বসে থাকি অবিরত

খোদার কি কুদরত!

এক বার দেখি ওকে, আবার দেখি ঘর

শূন্য ঘরে একি স্বপ্নীল জগৎ?

হৃদয়ের ক্ষত হৃদয়েই থাক

দেখবে কেন অন্য লোক?

দেহ-সৌষ্টব্যে পড়বে নজর-

দেখে যদি হিংসুটে লোক!

কী আর দেখবে তার -যার মাথায়

শোভা পায় মানিক্য মুকুট

বন্ধুর মাথায় মুক্তো জ্বলে আমি জ্বলি ঈর্ষায়

তার ভাগ্য নিয়ে করি আমি মাথা ক্ট্ ুক্ট্।ু

গজল ঃ২

নাইবা যদি কাঁদতাম আমি

এঘর হোতা বিরনে ভূমি ;

সাগর না হয় ,হতো মহাসাগর

কিংবা হতো মরুভূমি ।

হৃদয়ের কথা কি আর বলবো

দিলতো নয় কাফের দিল

কমিনা নাহলে এ দিল কি আর

এমন পেরেশান হয়ে যেতো ।

জীবনের এই তপস্যা শেষে-

একবারও তোমার দেখা না পেলে ;

তার চেয়ে তো ঢের ভালো হতো জীবন

তোমার ঘরের দারওয়ান হলে ।







গজল ঃ৩

চলে বলে চাই এমন কোন খানে -

যেখানে নেই কেউ;

সমব্যথী নেই সমভাষী নেই

চলো চলে যাই; সেই খানে।

চলো বাধিঁ ঘর দরোজা জানালাহীন ,

প্রাচীরও ছাদহীন ;

নেই কোন প্রতিবেশী ,

নেই বলবার কেউ

আমি তুমি বন্ধনহীন ,,.

ভুগি যদি রোগ-শোকে? দেখবার কেউ নেই

মৃত্যু যদি বা আসে, কাদঁবার কেউ নেই ।

গজল ঃ ৪

এসো তুমি প্রাণ যায় যায়

এসো তুমি! অপেক্ষার ধর্য্য নেই আর ।

জীবনশেষে দেহেম্বত্ত পাইও যদি

জীবনশেষে জ্বালার সেকী হয় প্রতিদান ?

তোমার মেহফিলে যদি কেঁদে ফেলি ?

ভয়ে তাই মরে যাই;

প্রাণ ভরে কাঁদার মতো পাইনা একটু ঠাঁই !

হায় ....হায় .....হায় ।

আমার হৃদয়ের কোথায় আছে হিংসা -ক্রোধ

প্রেমের ভস্মস্তুপে থাকে না কোনো বিরোধ;

আমাকে হত্যার যদি করো শপথ !

ভেঙ্গে না প্রতিঞ্জা যেন আবার ;

শপথ করেছে গালিব মাতাল হবে না,

নয়তো হবে না বন্ধুর প্রতিঞ্জা পালন ।

গজল ঃ ৫

আয়নাতে দেখে চুপ কেন? প্রেমে লাজ ?

হৃদয় দেবে না বলে গর্ব ছিলো; করো সাজ;

পত্রবাহকের প্রাণ নিয়োনা তোমার হাতে ;

নেই তার অপরাধ,তার তাতে

যা কিছু হয়েছে আমার অপরাধ সকলি আমার ।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.