![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“হুমায়ুন আহমেদের হিমুর আছে জল গল্পটি তিনি শেষ করেননি। তিনি পাঠকদের উপর ছেরে দিয়েছেন গল্পের সমাপ্তির ব্যাপারে। আমি আমার মত করে গল্প সমাপ্ত করলাম। আপনি যদি হিমুর আছে জল বইটি পড়ে থাকেন তাহলে নিচের অংশটুকু পড়ে আনন্দ পাবেন”
আমরা খাচ্ছি।লঞ্চ ডুবছে।তৃষ্ণা ওয়াইনের বোতলের মুখ খুলতে খুলতে বলল, হাউ এক্সাইটিং!
কী সুন্দর যে তাকে লাগছে,‘মুখের পানে চাহিনু অনিমেষ,বাজিল বুকে সুখের মত ব্যথা।’তৃষ্ণা চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমাকে একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।আমি মাঝে মাঝে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি।
নিচ থেকে বিকট হৈ চৈ শুনা যাচ্ছে।মনে হয় লঞ্চ তলিয়ে যেতে শুরু করছে।আতর তাড়াহুড়া করে আমার পাশে এসে বসল।বলল, ‘হিমু ভাই আমি আপনাকে বলেছিলাম না আমি আপনার কেনা গোলাম।আমি থাকতে আপনার কিছু হবেনা।প্রয়োজনে আমি আপনাকে কাঁধে নিয়ে পারে যাব।
‘তুমি অস্থির হয়না।আমাদের মধ্যে কারো কিছু হবেনা। আমরা সবাই বেঁচে যাব। প্রকৃতি আমাদের নিয়ে একধরনের খেলাই মেতেছে।সে কিছুক্ষণ পর শান্ত হবে’ আতরের চোখে মুখে আনন্দের আভাস দেখা দিল।সে আনন্দিত গলাই বলল ‘হিমু ভাই নিচে যে পানি ঢুকা আরম্ভ হইছে।আমাদের এখন করনীয় কী?’
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।স্বয়ং নেতা আমার কাছে পরামর্শ চাচ্ছে। ব্যাপারটা তারা বুঝার চেষ্টা করছে।ভয়ংকর দুর্যোগের সময়ও মানুষ আতঙ্কিত তাদের লিডার কে নিয়ে।সবার মাঝে অস্থিরতা বেড়ে চলছে।অস্থিরতা নিয়ে আমার বাবার লিখিত আদেশ কোন অবস্থাতেই অস্থির হওয়া যাবেনা।আমি আমার বাবার আদেশ পালন করছি।কিন্তু মনের মধ্যে সামান্য অস্থিরতা কাজ করছে তৃষ্ণাকে নিয়ে।এ মেয়ে কোন সাধারণ মেয়ে নই।প্রকৃতির সাথে তাল মিলেয়ে সেও তার মত করে খেলছে।ঝামেলার কথা হচ্ছে সে মাঝে মাঝে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে।ব্যাপারটা খুবই সাঙ্ঘাতিক।তাকে কিছুতেই আমার মনের মধ্যে প্রবেশ করানো যাবেনা।তৃষ্ণা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।আমিও তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।নিচের যারা ছিল তারা সবাই উপরে আসতে শুরু করেছে।আতর সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।তবে সে কথা বলছে থেমে থেমে।মনে হয় কাঁটা এখনো তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে।লঞ্চ ধীরে ধীরে ডুবতে আরম্ভ করছে।তবে ঝড় থেমে গেল।লঞ্চ ডুবছে কারণ লঞ্চে পানি ঢুকছে।আমার বাবা আমাকে অনেক ছোট বেলায় পানিতে ডুবিয়ে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।মন্দ না।ছোটবেলার অভিজ্ঞতাটা এখন অনেকটা ভাসা ভাসা হয়ে গেছে।আজকে আরেকটু প্র্যাকটিস করা যাবে।পীর কুতুবির কথাবার্তা আবার ফিলসফি লাইনে চলে গেছে।উনি ব্যাখ্যা করছেন জগতের কঠিন-তম কাজ হচ্ছে নিজেকে জানা।
“বাছারা প্রথমে জানতে হবে তুমি কে?কি তোমার পরিচয়।মনে রাখবা আমিত্ব বলতে কিছু নাই।তুমি তোমার না।তুমি হয়ছ আরেকজনের সম্পত্তি। আল্লাহ পাক আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার গোলামি করার জন্য।যা কিছু ঘটে সব কিছু তার ইচ্ছাই ঘটে”
ভিড়ের মধ্য থেকে একজন বলে উঠল, ‘পীর সাহেব, আজকের এই ঘটনাও কি আল্লাহ পাকের ইশারাই ঘটতাছে?’
পীর বললেন ‘অবশ্যই সব কিছু যখন আল্লাহর ইচ্ছাই হয় এটাও তার ইচ্ছা।সবাই আর কথা না বলে দুয়া ইউনুস পড়া ধর’
সবাই দুয়া ইউনুস পড়া আরম্ভ করল।তৃষ্ণা ব্যাপার গুলো খুবই মুগ্ধ হয়ে ভিডিও করছে।তাকে উদ্দেশ্য করে একজন যুবক বলল, ‘ম্যাডাম দয়া করে আমাকে তুলবেন না।আমার ক্যামেরা ফ্যাস ভালোনা’। হঠাত লক্ষ করলাম এদিকে একটা লঞ্চ আসছে।লঞ্চটা সবার নজরে পড়ল।কিন্তু কেও দোয়া ইয়ুনুস পড়া বন্ধ করলনা।সবাই একতালে সূর করে পড়ছে।সারেং খালেককে এতক্ষণ খেয়াল করিনি।সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠল, ‘আই যার গৈ আই যার গৈ’
এর তরজমা আমি বুঝলাম না।সে যাওয়ার কথা বলছে নাকি আসার কথা বলছে?আসার কথা বলাটা যুক্তি সঙ্গত।কারণ আরেকটা লঞ্চ আমাদের দিকে আসছে। কিন্তু তখন বলেছে “চাঁনপুর যার গৈ” মানে চাঁদপুর চলে যাচ্ছে। আমি খালেককে জিজ্ঞেস করলাম ‘আই যার গৈ আই যার গৈ’ এর মানে কি?সে আমার দিকে তাকিয়ে খুবই উৎসাহের সাথে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করতে লাগল।
“আই যার গৈ” মানে চলে আসতেছে।কিন্তু “আই” শব্দের অর্থ হইতেছে আসা।আবার “আই” শব্দের অর্থ হইতেছে আমি। যেমন “আই যাইর গৈ” মানে আমি চলে যাচ্ছি আবার “আই যায়ুম গৈ” মানে আমি চলে যাব।
আমি চুপ করে রইলাম।সে থামার নাম নিচ্ছেনা।সামান্য ই কার নিয়ে অর্থের এত ঝামেলা।বড়ই বিচিত্র ভাষা।আমাকে রক্ষা করল আতর।সে খালেক কে ধমক দিয়ে বলল, ‘আপনি এখানে কি করতেছেন।যান যাত্রীদের ঐ লঞ্চে ট্রান্সফার করার ব্যবস্থা নেন। সবাই লাইনে দাঁড়িয়েছে।কারাও মধ্যে তেমন উল্লাস নেই।যেন আরেকটা লঞ্চ আসাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।তাদের মধ্যে আর কোন রকম অস্থিরতা দেখা দিলনা।আমার বাবা তার উপদেস বানীতে তিনি লিখেছেন…
প্রিয় পুত্র হিমালয়।তুমি মানুষের চরিত্রকে খুব ভালো করে
পর্যবেক্ষন করিবে।তুমি তাদের মধ্যে খুবই অদ্ভুত কিছু
দেখিতে পাইবে।তারা খুব সহজেই তাদের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে আবার
খুব সহজেই পূর্বের আকারে ফিরে আসে।খুবই সূক্ষ্ম ভাবে
লক্ষ করিলে তুমি বুঝিতে পারিবে প্রতিটি মানুষই অভিনয়ের
জালে আবদ্ধ।যে যার যার ভূমিকাই প্রতিনিয়ত অভিনয় করে যাচ্ছে।
বেশিরভাগ মানুষই তা না জেনে করে।তুমি অভিনয় করিবে
সচেতনতার সাথে।যখনি তুমি অভিনয় করিবে যেন কেউ তোমার উদ্দেশ্য
বুঝিতে না পারে।যেন তোমাকে নিয়ে কেউ ভবিষ্যৎ বানী করিতে না পারে।
আমরা সবাই অন্য লঞ্চে চলে গেলাম।তৃষ্ণা আমার একটা হাত ধরল।আমি খুব সাবধানে আমার হাতটি সরিয়ে নিলাম।হিমুরা কখনো কোন মেয়ের হাত ধরনা।সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসল।আমিও তার দিকে তাকিয়ে হাসলাম।পীর কুতুবির হাতে দেখলাম হাতকরা লাগানো।ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন পীর কুতুবি থেকে একটু দূরে বসে আছে।আমি পীর কুতুবির দিকে এগিয়ে গেলাম।তৃষ্ণাও আমার সাথে আসছে।
‘পীর সাহেব,আপনার হাতে হাতকরা পড়িয়ে দিল কখন?’ পীর কুতুবি আমার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন।তিনি বললেন, ‘সাংবাদিক ভাই, কি করব বলেন।জিন কফিলের সাথে এই বিষয়ে অনেক্ষন কথা বললাম।তাকে বললাম তার দোষ স্বীকার করে নিতে কিন্তু সে কিছুতেই রাজি হবেনা।তাই তার উপর রাগ করে কনো ব্যবস্থা নিচ্ছি না।তবে আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সে তার ভুল বুঝতে পারবে।
তৃষ্ণা বলল, ‘পীর সাহেব, আপনি বেচে যাবেন।পীর সাহেব তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি দিল। তৃষ্ণাও রহস্যময়ই হাসি দিল।রহস্যে রহস্যে কাটা।আমরা প্রফেসর সাহেবের কাছে গেলাম।ওখানে দেখতে পেলাম ওনার ছাত্রী আর ওনি হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলছে।মানুষ বড়ই বিচিত্র প্রাণী।তার মধ্যে মেয়েরা আরও বিচিত্র।ব্যাপারটা শেক্সপিয়র ভালো করে বুঝতে পেরেছেন। “every women is a criminal. Sorry to my mother” প্রফেসর সাহেব, কেমন আছেন? তিনি আমার দিকে ভালো করে তাকাচ্ছেন না।মনে হয় লজ্জা পাচ্ছেন।আমি তার লজ্জাকে আরও খানিকটা বাড়িয়া দিয়ে বললাম, বরিশালে আপনার ক্লাইন্টকে কি জবাব দিবেন।এই লঞ্চটা তো মনে হয় আবার ফিরে যাচ্ছে।তিনি পুরপুরি হকচকিয়ে গেলেন।মানুষের এই চেঙেরা দেখতে আমার খুব আনন্দ লাগে।আমি তাকে আরও হকচকিয়ে দিলাম।বললাম, এই লাইনে ভালোই টাকা ইনকাম করা যায়।সমস্যা একটাই কেউ যাতে চিনে ফেলতে না পারে।চিনে ফেললে সমস্যা।
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আপনি আমাকে কিভাবে চিনেছেন’।
অনুমান করেছি।আমার অনুমান শক্তি খুব ভালো।
আমরা সেখানে আর দাঁড়ালাম না।তৃষ্ণা আমাকে বলল, তুমি উনাকে কিভাবে চিনলে? আমি তাকে বললাম, তুমি কিভাবে বুঝলে যে পীর কুতুবি বেঁচে যাবেন? সে আর কথা বলল না। আমরা এগিয়ে গেলাম রশিদ খানের দিকে।তিনি বসে আছেন একা।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন। আমি তাকে বললাম, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।আপনি এত গুলো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন।আপনি আরেকটা লঞ্চ কে খবর দিয়েছেন।
তিনি বললেন, হিমু সাহেব, বসুন। আপনার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলি।আমি তার কাছে বসলাম।তৃষ্ণাও আমার পাসে বসল।
রশিদ খান আমাকে বললেন, সব কিছু কেমন জানি শান্ত হয়ে গেছে।তিনি হুট করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, আপনি কিভাবে বুঝলেন যে আমি আরেকটা লঞ্চ আনার ব্যবস্থা করেছি?
‘আপনি ফোনে কথা বলার সময় আমি খেয়াল করেছি’
মনে হচ্ছে তিনি এখনো বিভ্রান্তিতে আছেন। রশিদ খান আমার দিকে তাকিয়ে আবারো বললেন, ‘তখন যে আমার স্ত্রী ফোন করেছে, সেটা কিভাবে বুঝলেন?’
আমার অনুমান শক্তি ভালো। আপনার চেহারার এক্সপ্রেশন দেখে অনুমান করেছি।তবে এখন বুঝতে পারছি, আপনি মনে মনে ভাবছেন আতর মিয়াকে একটা শিক্ষা দিবেন।
এবার তিনি একটু নড়েচড়ে বসেছে।
তিনি বললেন, ‘তার কি শিক্ষা পাওয়া উচিত নয় মনে করছেন?’
‘অবশ্যয় উচিত।কিন্তু আপনি যে কর্ম করেছেন, তার জন্যও আপনার শিক্ষা পাওয়া উচিত।আপনি নিশ্চয় চান না, আপনার মেয়ে বিষয়টি জানতে পারুক।
উনি এখন সূর্যের দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকুক। আমরা উঠে গেলাম।
তৃষ্ণা আমাকে বলল, ‘যাক আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা পৌছব।সেখানেই কাজী অফিসে আমরা বিয়ে করব।আমাদের বাসর হবে আমার চাচার বাসাই। বাসর কিন্তু আমি নিজের হাতে সাজাব।বাই দ্যা ওয়ে তোমার কোন ফুল বেশী পছন্দ।
কদম ফুল। এখন বর্ষার সময়।কদম ফুল পাওয়া যাবে।
ঠিক আছে। কদম ফুল দিয়ে আমার মনে হয় জীবনে কারো বাসর সাজানো হয়নি। ওকে, কদম ফুলের সাথে আমার একটা পছন্দের ফুল থাকবে।আমার পছন্দের ফুল হচ্ছে বেলি।
তৃষ্ণা বাসর পর্যন্ত চিন্তা করে ফেলেছে।তার চিন্তা যেন পরের ধাপে অগ্রসর না হয়, আমি তাকে বললাম ‘তাহলে আমাদের অনেক প্রস্তুতি নিতে হবে।বিয়ের তারিখটা ফিক্সড করে ফেল। তৃষ্ণা বলল, আগামী সপ্তাহের এই দিনেই আমাদের বিয়ে হবে। আমাদের পরিচয়ের ঠিক এক সপ্তাহ পর।আমি বললাম, ঠিক আছে।
আমরা এখন লঞ্চ ঘাটে পৌছায় গেছি।সবাই চলে যাচ্ছে।নামার সময় পীর কুতুবির সাথে দেখা।উনাকে নিয়ে যাচ্ছে দুইজন কনস্টবল।ইন্সপেক্টর জাকির হোসেন তার থেকে দূরে আছেন।তিনি মনে হয় ভালোই ভই পেয়েছেন।জাকির হোসেন আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।কিন্তু কোন কথা বললেন না।আমি পীর কুতুবির দিকে তাকালাম।তিনি আমার দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে বললেন, সাংবাদিক ভাই, চলে যাচ্ছি।ভুলত্রুটি করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়েন।আমরা হচ্ছি আদম বংশ।ভুলত্রুটি করবনা এমন হতেই পারেনা।
আমি বললাম ঠিক আছে ক্ষমা করে দিলাম।
আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে আতর মিয়াকে কোথাও দেখা যাচ্ছেনা।আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।বুড়া মিয়াকে নামতে দেখা যাচ্ছে।আমি ওনার কাছে গেলাম।
‘বুড়া মিয়া মনে হচ্ছে আরও কিছুদিন বাঁচবেন’
‘বুড়া মিয়া বলল, বাবা হায়াত মৌত সব আল্লাহর হাতে।তিনি যতদিন বানায়া রাখেন’
তৃষ্ণা আমার কাছে আমার ঠিকানা আর মোবাইল নাম্বার চাইল।আমি তাকে রুপাদের ঠিকানা দিয়ে দিলাম।আমি তাকে বললাম, তুমি এতক্ষণ কোথাই ছিলে।
ফোন করতে গেছি।আমাকে এখানে অপেক্ষা করতে হবে।কেউ একজন আমাকে নিতে আসবে।আমি বললাম, ঠিক আছে তুমি অপেক্ষা কর। আমি যাই।
আমি ওকে আর কথা বলার সুযোগ দিলাম না।আমি ওখান থেকে সরে গেলাম।এই মেয়ের সাথে বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা।
আমি আমার মেসে ফিরে আসলাম।কেন জানি আজ মেসটাকে খুব আপন মনে হচ্ছে।মেসের ম্যানেজার মকবুল আমার দিকে তাকিয়ে বলল, হিমু ভাই এতদিন কোথাই ছিলেন? একটু নদী দেখতে গিয়েছিলাম।আমার খোজে কি কেউ এসেছিল?
জি।
কে এসেছিল?
আপনার ফুফাতো ভাই বাদল।আপনাকে খুব আর্জেন্ট তার সাথে দেখা করতে বলেছে।
বাদলের সব কাজেই আর্জেন্ট হয়।এখন আমার আর্জেন্ট কাজ হচ্ছে গোসল করে লম্বা একটা ঘুম দেয়া।এছাড়া আমার আর কোন আর্জেন্ট কাজ নেই।আমি গোসল করে ঘুমোতে গেলাম।বিছানাই শোয়া মাত্র আমার ঘুম এসে গেছে।ঘুমের মধ্যে বাবাকে স্বপ্ন দেখলাম।তিনি পীর কুতুবির সাথে কথা বলছেন।আবার দেখলাম তিনি আমার দিকে আসছেন।আমার পাশে বসেছেন।
হিমু তোর রুপাকে বেশী পছন্দ নাকি তৃষ্ণাকে?
কেন?বাবা।
আমি ঠিক করেছি,তোর বিয়ে দিব।পীর কুতুবির সাথে কথা হয়েছে।তার নাকি সময় নেই।দুইদিন পর তাকে ফাঁসি দিয়ে দিবে।
আমি ঘুমের মধ্যে ভাবতে লাগলাম।
বাবা বলল, হিমু তুই কি শুরু করেছিস?তুই তোর গন্তব্য থেকে সরে যাচ্ছিস।
আমার গন্তব্য কোথাই?
তোর গন্তব্য হচ্ছে মহা পুরুষ হওয়া।
তুমি কিছুক্ষণ আগে আমার বিয়ের কথা বললে না বাবা?
ওটা আমি ছিলাম নারে বোকা।ওটা ছিল তোর মনের সয়তান।ও তোকে ঘোলাচ্ছে।তোর খুবই সাবধান হতে হবে।
আমি সাবধান আছি বাবা।তুমি এখন যাও। আমাকে ঘুমাতে দাও।
আচ্ছা ঠিক আছে তুই ঘুমা।আমি একটু পীর কুতুবির সাথে কথা বলে আসি।
আমার ঘুম ভাঙল ভোর চারটাই।আমি টানা পনের ঘণ্টা ঘুমিয়েছি।বাইরে তাকিয়ে দেখি এখনো অন্ধকার।আমার প্রচণ্ড খিদা লেগেছে।দুই গ্লাস পানি খেলাম।পানি খাওয়ার পর আরও খারাপ লাগছে।বাবাকে পীর কুতুবির সাথে কেন স্বপ্ন দেখলাম ব্যাপারটা বুঝতে পারছিনা।পীর কুতুবি তার স্ত্রীকে খুন করেছে।এর মধ্যে কি কোন যোগসূত্র আছে?
আজ মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটবে। কি ঘটবে বুঝতে পারছিনা।লঞ্চের ঘটনাটা ঘটেছে আজ তিন দিন হল।এই তিন দিনে মনে হয় রুপার বারোটা বেজে গেছে।তৃষ্ণা অবশ্যয় রুপাদের বাড়িতে গিয়ে হাজির হবে।রুপাকে একটা ফোন করা দরকার।আমি পাশের ঔষধের দোকানে গেলাম।দোকানের ছেলেটা আমাকে দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
হিমু ভাই ফোন করবেন?
আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়লাম।সে আমাকে একটা কোনাই বসতে দিল।পাশে পেপারের উপর চোখ পড়ল।এমনিতে আমি পেপার পড়তে অভ্যস্ত না।কিন্তু প্যাপারে যা দেখলাম তা দেখে মোটামোটা আমি ভড়কে গেলাম। পেপারে পীর কুতুবির একটা ছবি আছে।সেখানে তিনি একটি তসবি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
নিজস্ব সংবাদ দাতা
মিরাকল বলতে যা বুঝাই তা হয়েছে হাবীব কুতুবির জীবনে(৫৫)।তিনি তার দুই স্ত্রী ও এক শালী কে খুন করেছেন।কিন্তু তিনি দাবি করছেন খুন তিনি করেন নি।খুন করেছে তার পালক জিন কফিল।তাকে ফাঁসীর জন্য দার করানো হয়েছে।যখনি জল্লাদ হ্যান্ডল টান দিল,দড়ি ছিরে তিনি সাথে সাথে নিচে পড়ে গেলেন।পরে তাকে আর ফাঁসি দেয়া হয়নি।তাকে আদালত কর্তৃক ক্ষমা ঘোষিত করা হয়েছে।এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, জিন কফিল শেষ পর্যন্ত তার ভুল বুঝতে পেরেছে।এবং সময় মত সে ফাঁসির দড়ি ছিরে দিয়েছে।ঘটনাটি ঘটার পর তার মুরিদের সংখ্যা এখন প্রচুর।পুলিশ থেকে জানা যায়, তারা নিজেরাও হতভম্ব কিন্তু দড়িটা ভেজা ছিল বলে দাবি করা হচ্ছে।এই নিয়ে তারা আর কোন কথা বললেন না।এই বিষয়ে উক্ত এলাকার জন সাধারণের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা যাই, পীর হাবীব কুতুবি একজন অলৌকিক ক্ষমতাধর মানুষ।এলাকাবাসী জানান, তাকে নাকি কেউ কেউ শূন্যে ভেসে থাকতে দেখেছে।তারা আরও জানান, তার কাছ থেকে পানি পড়া খেয়ে স্থানীয়দের রোগ নিরাময় হচ্ছে।আমরা স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগ নিরাময়ের কথা জানতে চাইলে, পরিচয় গোপন রাখতে ইচ্ছুক একজন ডাক্তার জানান, এগুলো কুসংস্কার ছাড়া কিছুই নয়।এটা একধরনের অপচিকিতসা।বর্তমান যুগে এসব বিশ্বাস করার মত কোন যুক্তি নেই।
আমি পেপার পড়ে রুপাকে ফোন করলাম।আজ ভাগ্য ভালো রুপা ফোন ধরেছে।
হ্যালো কে হিমু?
তুমি কিভাবে বুঝেছ আমি ফোন করেছি।
বুঝিনি।যেই ফোন করছে, তাকে হিমু নাকি জিজ্ঞেস করছি।আচ্ছা তুমি নিজেকে কী মনে কর?
আমি নিজেকে হিমু মনে করি।
তোমার এইসব ফাজলামো কথা বাদ দাও।তোমার একটা চিঠি আছে আমার কাছে।তৃষ্ণা নামের একটা মেয়ের।
চিঠিটা তুমি পড়েছ?
তোমার চিঠি আমি পড়ব কেন?
তাও ঠিক।
তুমি ওকে আমাদের বাসার ঠিকানা দিয়েছ কেন?এদিকে বাবা এটা নিয়ে হৈচৈ শুরু করেছে।
রুপা শুনো, তুমি একটা কাজ কর। চিঠিটা খুলে আমাকে পড়ে শোনাও।
তোমার চিঠি আমি পড়ব কেন?
তুমি এমনিতেই চিঠিটা পড়েছ।এখন আমাকে পড়ে শুনাবে।
রুপা চিঠি পড়া শুরু করল।
হিমু, তোমার সাথে লঞ্চে কিছু মুহূর্ত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মুহুর্থ ছিল।ঐ মুহুর্থ আমি আজীবন মনে রাখব। সেদিন বুঝতে পারলাম তুমি খুবই অহংকারী একটা ছেলে।তুমি নিজের চারিদিকে সব সময় রহস্য তৈরি করে রাখ।তুমি অনেক স্বাধীনচেতা মানুষ এবং তোমার কোন পিছুটান নেই। আবার পিছুটান সৃষ্টি করে এমন কিছু তুমি জীবনে করবেনা।আমার মত অনেক মেয়ে হয়ত তোমার প্রেমে পড়েছে।কাড়ন তুমি এমন কিছু কর যা দেখে মেয়েরা মুগ্ধ হয়।আমি তোমাকে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ভালবেসেছি।তোমাকে নিয়ে বাসরের স্বপ্ন দেখেছি।কিন্তু আমি জানি তুমি আমার সাথে এ নিয়ে হেঁয়ালি করেছে। আমি তোমার হেয়লিপনা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছি।তবুও তোমাকে ভালবেসেছি।তোমার হেয়ালিপনায় আমাকে তোমার কাছে নিয়ে এসেছে।আমি আমাদের বাসর সাজাবো কদম ফুল আর বেলি ফুল দিয়ে।যেদিন আমরা বিয়ের তারিখ ঠিক করেছি, সেদিন আমি বাসর সাজাবো।তুমি হবে আমার কল্পনার স্বামী।তুমি সব কিছু পারলেও তোমাকে ভালোবাসা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারবেনা।আমি তোমাকে সারা জীবন ভালবাসব।আমি জীবনে কাওকেই বিয়ে করবনা। তোমার নিজেরও শাস্তি পাওয়া উচিত। যখনি আমার কথা তোমার মনে পড়বে তুমি কষ্ট পাবে।এটাই তোমার শাস্তি।ভালো থেকো।
রুপা মনে হচ্ছে কাঁদছে।কাঁদাটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার।আমি ফোন রেখে দিলাম।কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানো ঠিক না।আমি হেটে চলেছি ঢাকার রাজপথে।আমি এই পথের রাজা।
©somewhere in net ltd.