![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালবাসি আমার দেশকে। ভালবাসি বিজ্ঞান। [email protected]
বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস প্রায় আড়ায় হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬৯ সালে এথেন্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দেখতে তেমন সুদর্শন না হলেও তাঁর বুদ্ধিদীপ্ততা এবং উদ্ভাবনীশক্তির জন্য তিনি সবাইকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম ছিলেন। তাঁর বাবার মতই জীবিকা হিসেবে ভাস্কর্যকেই বেছে নিয়েছিলেন। অধার্মিকতা, দেবতাদের বিরুদ্ধাচারণ এবং এথেনীয় যুবসমাজকে ভ্রষ্টপথে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুলে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মূলত যেসব যুদ্ধাপরাধের জন্য সক্রেটিসকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তা তখন উল্লেখ করা হয়নি। কারন সে সময় সরকার যেকোন যুদ্ধাপরাধ জনসমক্ষে প্রকাশ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। সক্রেটিসের বিরুদ্ধে আনীত নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো ছিল এই যে, তিনি খরমোইদেস, ক্রিটিয়াস ও তাঁর প্রিয় শীষ্য আলকিবিয়াদেস- এর সাহায্যে এথেন্সে যুদ্ধকালীন সময়ে একটি প্রতিবিপ্লব ঘটানোর চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি এথেন্সের অভিজাত তরুণ সমাজকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার উষ্কানি দিয়ে যাচ্ছিলেন। ধারণা করা হয় সক্রেটিসের এই বিচার আয়োজন করা হয়েছিল তাঁকে ভয় দেখানোর জন্য। যাতে তিনি এথেন্স ছেড়ে পালিয়ে যান। বিপর্যস্ত গণতন্ত্রকে সক্রেটিসের অবিরাম সমালোচনা থেকে বাঁচানোর জন্য এথেনীয় শাসকরা তাঁকে এথেন্স থেকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। প্লেটো তাঁর নাটকীয় সংলাপ গ্রন্থ “এপোলজি” তে লিখেছেন, সক্রেটিস বিচার এড়াতে চাইলে বিচার শুরুর অনেক আগেই পালিয়ে যেতে পারতেন অথবা গণতন্ত্রের প্রকাশ্য বিরোধিতা বন্ধ করে কিংবা জরিমানা দিয়েও তিনি মুক্তি পেতে পারতেন। কিন্তু তিনি আইন এড়াতে চান নি। যেহেতু তিনি নিজেকে এথেন্সের উপকারক ভাবতেন তাই এথেনীয় আইনকে উপেক্ষা করে নিজের কোন অপরাধ তা যতই ক্ষুদ্র হোক জ্ঞাতসারে করতে চান নি। তিনি তাঁর দর্শনের বিমূর্ত নীতিগুলো থেকে কখনো সরে দাড়ান নি। আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে যে জবানবন্দী দিয়েছিলেন তাতেই তাঁর দর্শন ব্যক্ত হয়েছে। তাঁর দার্শনিক সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি মৃত্যু বরণ করতে চেয়েছিলেন। নইতো তিনি বিচারক বা জুরিদের তুষ্ট করার চেষ্টা করতেন। অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তির জন্যও আবেদন করতে পারতেন। কিন্তু তিনি এসবের কিছুই করেন নি। কিন্তু কি সেই দর্শন যার জন্য তিনি এড়িয়ে না গিয়ে সেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করলেন? প্লেটো তাঁর “এপোলজি” গ্রন্থে সক্রেটিসের দর্শনের সেই মূলসূত্রগুলো তুলে ধরেছেন। প্লেটো নিজেই সক্রেটিসের বিচারের সময় উপস্থিত থেকে তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্ধেষপ্রসূতভাবে আনীত অভিযোগগুলো খন্ডনের চেষ্টা করেছিলেন। সক্রেটিসের দর্শনের মূলসূত্রসমূহ হলঃ-
১। তখনই সত্যিকারের জ্ঞানী হওয়ার পথে তুমি এগোতে পার যখন তুমি জানবে যে তুমি কিছুই জান না। দেবতা এপোলোর মন্দির ডেলফিতে দৈববাণী হয়েছিল যে সক্রেটিসই হচ্ছে জীবিতদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী পুরুষ। তাই সক্রেটিস জুরিদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি প্রমাণ করতে চাইলাম দৈববাণী ভুল। তাই আমি প্রথমে গেলাম রাষ্ট্রপরিচালকদের কাছে এবং দেখলাম যাদেরকে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী বলে মনে করা হয় তারাই সবচেয়ে বেশি মূর্খ। তখন আমি বুঝলাম আমি তাদের চেয়ে বেশি জ্ঞানী, কারন আমি অন্তন এইটুকু জানি যে আমি কিছুই জানি না। তারপর আমি কবিদের কাছে গেলাম এবং দেখলাম তারা জ্ঞানের সাহায্যে নয় বরং দৈবজ্ঞানীদের মত অনুপ্রাণিত হয়ে কাব্য রচনা করেন। তারা অনেক চমৎকার কথা বলেন কিন্তু যা বলেন তার কিছুই বুঝেন না। তথাপি কবিরা মনে করেন তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। তারপর আমি গেলাম কারিগরদের কাছে, দেখলাম তারা অনেক কিছুই জানেন যা আমি জানি না। যেমন জাহাজ কিংবা জুতো তৈরি করা। কিন্তু কবিদের মত তারা বিশ্বাস করেন তাদের জানা বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যেমন জুতো তৈরি করা। এ বিশ্বাস তাদের জ্ঞানী হতে বাঁধা দেয়। এসবকিছু দেখেশুনে আমি সিদ্ধান্তে এলাম যে আসলে কেউই জ্ঞানী নয়- রাষ্ট্রপরিচালকরা নয়, কবিরা নয়, কারিগররা নয় এমনকি আমিও নই, যার সম্পর্কে ডেলফিতে দৈববাণী শোনা গিয়েছিল। কিন্তু আমি অন্তত এইটুকু জানি যে আমি কিছুই জানি না।
২। সক্রেটিসের জবানবন্দিতে পাওয়া দ্বিতীয় দার্শনিক সূত্র হল, জ্ঞান ও সত্য চর্চার মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন বা পরিচর্যা করা। তিনি বলেছেন, আমি এথেন্সের ছোট বড় সবাইকে বলি- তোমরা তোমাদের শরীর বা অর্থের পেছনে ছুটো না। তোমাদের প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন সাধন। যতদিন সত্য ও জ্ঞানের খোঁজ না পাও ততদিন পর্যন্ত অর্থ, যশ ও প্রতিপত্তির কথা চিন্তা কোরো না। সততা অর্থ থেকে আসে না বরং সততাই অর্থ ও অন্যান্য ভালো জিনিসগুলো টেনে আনে। এটাই আমার শিক্ষা। যদি এই মতবাদ এথেন্সের যুবসমাজকে কুপথে নেয় তবে আমি দোষী। যদি কেউ বলে আমি এসব ছাড়া অন্যকিছু শিখিয়েছি, তবে সে মিথ্যুক।
৩। সক্রেটিস এরপর এথেনীয়দের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যদি আমাকে দোষী সাব্যস্ত কর, তাহলে যারা আমাকে তোমাদের কাছে পাঠিয়েছেন সেই দেবতাদের বিরুদ্ধাচারণ করে পাপ করবে। আমি একটি ডাঁশ (যেসব মাছি গরু, ঘোড়া ইত্যাদির রক্ত পান করে) মাত্র, যাকে দেবতারা এই রাষ্ট্রে পাঠিয়েছেন। কারন রাষ্ট্র হচ্ছে একটি বিশাল ঘোড়ার মত, বিশাল বপুর জন্য এটি অলস ও মন্তর গতিসম্পন্ন হয়ে পড়ে। আমার দায়িত্ব হচ্ছে হুল ফুটিয়ে এটা চাঙ্গা করা। এজন্যই সব সময় সব জায়গায় আমি তোমাদের আলোকিত করে জাগানোর চেষ্টা করি। তোমরা আমার মত আর কাউকে এত সহজে খুঁজে পাবে না। অতএব আমাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তোমাদের উপদেশ দিচ্ছি।
৪। সক্রেটিসের চতুর্থ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হল,”জ্ঞানেই পুণ্য”। এই নীতি অনুযায়ী ভালোকে জানা মানে ভালো কাজ করা। মানুষ খারাপ কাজ করে শুধুমাত্র তার অজ্ঞতার জন্য। যদি জ্ঞানেই পুণ্য লাভ হয়, ভালোকে জানার অর্থ যদি হয় ভালো কাজ করা, তাহলে একজন লোক তখনই খারাপ কাজে ব্যাপৃত হয় যখন সে ভালোকে জানতে ব্যর্থ হবে। এখানেই সক্রেটিস তাঁর বিখ্যাত উক্তিটি করলেন,”সেচ্ছায় কেউ কুকর্ম করে না”। ভালোকে জানার পর কেউ সেচ্ছায় মন্দকে বেছে নেয় না। কিন্তু আমরা তো প্রায়শ বলি- ‘জেনেশুনে অন্যায় কাজটি করলাম’ অথবা ‘চাইলেই ভালো কাজটি করতে পারতাম’। সক্রেটিসের বিবেচনায় এটা একেবারেই অসম্ভব; সত্যি কেউ যদি ভালো’কে জানে তবে সে ভালো কাজটিই করবে। তুমি যা করছ এর চেয়ে উত্তম বিবেচনাবোধ তোমার থাকলে তুমি সেটাই করতে। সক্রেটিস আরো বলছেন, যখন কেউ খারাপ কাজ করে তখন সে এই আশায় করে যে এর ফলে সে এতে উপকৃত হবে, লাভবান হবে। একজন চোর জানে যে চুরি করা অন্যায়, কিন্তু যখন সে একটি হীরার আংটি চুরি করে তখন সে এই আশায় করে যে এর ফলে সে কাঙ্ক্ষিত রমনীর যৌনানুগ্রহ লাভ করবে। এই চোরের মত প্রায় সবাই জীবনপাত করে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও অর্থের পিছে ছুটে। কারন তারা মনে করে এসবই ভালো এবং এসবের মাঝেই সুখ নিহিত রয়েছে। কিন্তু তারা জানে না কোনটি ভালো। তারা জানে না এসবের কোনটিই ভালো না এবং এসবের মাধ্যমে সে কখনও সুখ খুঁজে পাবে না। মানুষের জন্য কি ভালো এবং কিসে তাদের সুখ, মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত এবং কিভাবে সে সেটা আয়ত্ত করবে তা জানতে প্রথমেই মানবচরিত্র বুঝতে হবে। মানুষ যদি তা বুঝার চেষ্টা না করে, যদি কোনদিন না জানে কোনটি তাঁর জন্য ভালো, তাহলে সুখী হওয়ার সমস্ত চেষ্টায় ব্যর্থ হবে। এধরনের জীবনকে সক্রেটিস অপরীক্ষিত জীবন বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর অন্যতম বিখ্যাত এক বাক্যে তিনি ঘোষনা করেছেন,’অপরীক্ষিত জীবন ভালো জীবন নয়’।
আদালতে জবানবন্দী দিতে গিয়ে সক্রেটিস এরকমই তেজোদীপ্ত ভাষায় তাঁর দার্শনিক চিন্তাসমৃদ্ধ বক্তৃতা দিয়েছিলেন। অবশেষে রায় ঘোষিত হয়ঃ সক্রেটিসকে বিষপান করে মরতে হবে। এই রায় ঘোষণার প্রায় একমাস পর তিনি যাকে সত্য ও ন্যায় বলে জানতেন সেই সত্য ও ন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় থেকে দ্বিধাহীন চিত্তে হেমলক বিষপানের মাধ্যমে মৃত্যুকে বরণ করে নিলেন। এভাবেই সে যুগের শ্রেষ্ট মানুষটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। প্লেটোই প্রথম ব্যাক্তি যিনি তাঁর মৃত্যুকে শহীদের মৃত্যু হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্লেটো তাঁর অন্যতম সংলাপ গ্রন্থ “ফিডো”র ইতি টেনেছেন এইভাবে,”এবং এভাবেই মৃত্যুবরণ করলেন আমাদের বন্ধু। আমরা বলতে পারি তাঁর সময়ে তিনি ছিলেন আমাদের পরিচিত সবার মধ্যে সর্বোত্তম, সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী এবং নীতিজ্ঞানসম্পন্ন মানুষ”।
তথ্যসূত্রঃ Plato: His thought on philosophy and politics.
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: প্রায় আড়ায় হাজার বছর আগের এই মানুষটার চিন্তাভাবনা দেখলে সত্যি অবাক লাগে। কি সুন্দর চিন্তাভাবনা করে গেছেন।
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১৭
আজমান আন্দালিব বলেছেন: প্রিয়তে
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
৩| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:২৬
জাকারিয়া জামান তানভীর বলেছেন: পড়ার মত একটা পোস্ট। লেখককে ধন্যবাদ।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:০১
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
অনেক চমৎকার একটা পোস্ট +++ এমন একটি পোস্টের জন্য সাধুবাদ জানাই।
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা নিবেন।
৫| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৪:৪৮
হিমালয় হিমু বলেছেন: শিক্ষামূলক পোস্ট.ভাল লাগা রইল।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:১৪
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ হিমু ভাই।
৬| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৫:২৬
খেয়া ঘাট বলেছেন: হিমালয় হিমু বলেছেন: শিক্ষামূলক পোস্ট.ভাল লাগা রইল।
১৪ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৭:১৯
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা রইল
৭| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২২
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: কিন্তু আমি অন্তত এইটুকু জানি যে আমি কিছুই জানি না।
কি গভীর এই অনুভব! সত্যিকারের জ্ঞানীর লক্ষণ বিনয়।
৮| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২১
মুহম্মদ ইমাম উদ্দীন বলেছেন: হুম। আসলেই।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯
এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: লিখাটি ভালো লাগলো।