নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি মানুষ (!)। তাই মানবতার প্রাধান্য সবার আগে। তারপর না হয় জাতি-গোষ্ঠীর প্রাধান্য। -- [email protected]

হাবিব ইমরান

পড়তে, ভাবতে এবং স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোয় দারুণ পছন্দ। ধার্মিকতা আর বকধার্মিকতার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি বিলকুল অপছন্দ।

হাবিব ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্থাপত্য পরিচিতিঃ পর্ব- ৫ [মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য- ১]

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৮

দেখুন,
পর্ব -১. Click This Link [বাংলাদেশের স্থাপত্য (ক)]
পর্ব -২. Click This Link [বাংলাদেশের স্থাপত্য (খ)]
পর্ব -৩. Click This Link [বাংলাদেশের স্থাপত্য (গ)]
পর্ব -৪. Click This Link [মহাস্থানগড়]


বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের স্মৃতিকে লালন করার জন্য এবং পরবর্তি প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার চেতনাকে প্রবাহিত করার জন্য। স্বাধীনতাযুদ্ধ স্মরণে নির্মিত এসব ভাস্কর্য রাজধানী শহর ছাড়িয়ে দেশের সর্বত্রই রয়েছে। এমনকি বাংলাদেশের বাইরে, বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলেও রয়েছে স্বাধীনতাযুদ্ধের এসব ভাস্কর্য।

১৭.১ অপরাজেয় বাংলাঃ

অপরাজেয় বাংলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বন্দুক কাঁধে দাঁড়িয়ে থাকা তিন নারী-পুরুষের ভাস্কর্য যেটি সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে সেটি 'অপরাজেয় বাংলা'। এর তিনটি মূর্তির একটির ডান হাতে দৃঢ় প্রত্যয়ে রাইফেলের বেল্ট ধরা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। এর মডেল ছিলেন আর্ট কলেজের ছাত্র মুক্তযোদ্ধা বদরুল আলম বেনু। থ্রি নট থ্রি রাইফেল হাতে সাবলীল ভঙ্গিতে দাঁড়ানো অপর মূর্তির মডেল ছিলেন সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে। আর নারী মূর্তির মডেল ছিলেন হাসিনা আহমেদ। ১৯৭৯ সালের ১৯ জানুয়ারি পূর্ণোদ্যমে অপরাজেয় বাংলার নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৭৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় এ ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়। তবে অপরাজেয় বাংলার কাছে ভাস্করের নাম খচিত কোন শিলালিপি নেই। স্বাধীনতার এ প্রতীক তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন গুণী শিল্পী ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনের বেদিতে দাঁড়ানো তিন মুক্তিযোদ্ধার প্রতিচ্ছবি যেন অন্যায় ও বৈষম্য দূর করে দেশে সাম্য প্রতিষ্ঠার গান গাইছে। এ ভাস্কর্যে সব শ্রেণীর যোদ্ধার প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে।

১৭.২ জয়বাংলাঃ

জয়বাংলা ভাস্কর্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত 'জয় বাংলা' ভাস্কর্যের উদ্বোধন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠার ৫১ বছর পর চবিতে এটিই প্রথম ভাস্কর্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার ও বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরের মধ্যবর্তী চৌরাস্তার মধ্যখানে ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়েছে।
২৫ অক্টোবর, ২০১৮, (বৃহস্পতিবার) বিকেলে নবনির্মিত ভাস্কর্যটির শুভ উদ্বোধন করেন চবি উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।
'জয় বাংলা' ভাস্কর্যের ভাস্কর হচ্ছেন, সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহান। নির্মান কমিটির সমন্বয়ক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী এবং সদস্য সচিব ছিলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক শায়লা শারমিন। উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের গৌরবের ঠিকানা। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে '৭১' এ মহান মুক্তিযুদ্ধ বীর বাঙালির অসীম ত্যাগের মহিমা এ প্রজন্মের সন্তানদের কাছে চির অম্লান করে রাখার প্রত্যয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ভাস্কর্যটি নির্মান করা হয়েছে।

১৭.৩ . সংশপ্তকঃ

সংশপ্তক ভাস্কর্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালের ২৬ মার্চ নির্মিত হয়েছিল স্মারক ভাস্কর্য সংশপ্তক। এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যুদ্ধে শত্রুর আঘাতে এক হাত, এক পা হারিয়েও রাইফেল হাতে লড়ে যাচ্ছেন দেশমাতৃকার বীর সন্তান। যুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় জেনেও লড়ে যান যে অকুতোভয় বীর সেই সংশপ্তক। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক পায়ে ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ভাস্কর্যটি। এর ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান।

১৭.৪. সাবাস বাংলাদেশঃ

সাবাশ বাংলাদেশ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে নিতুন কুণ্ডুর তৈরি 'সাবাস বাংলাদেশ' নামের ভাস্কর্য দেখা যায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক শিক্ষক-ছাত্র শহীদ হওয়ায় এর স্মৃতিকে চির অমস্নান করে রাখার জন্য উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। নির্মাণের জায়গা নির্ধারণ করা হয় সিনেট ভবনের দক্ষিণে। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৯৯১ সালের ৩ ফেব্রম্নয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের উদ্যোগে শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর উপস্থাপনায় নির্মাণ কাজ শুরম্ন হয়। নির্মাণ কাজ শেষে ফলক উন্মোচন করেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। ভাস্কর্যটি দাঁড়িয়ে আছে ৪০ বর্গফুট জায়গা নিয়ে, যেখানে রয়েছে দু'জন বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি। একজন রাইফেল উঁচু করে দাঁড়িয়ে আর তার বাঁ বাহুটি মুষ্টিবদ্ধ করে জাগানো। অন্যজন রাইফেল হাতে দৌড়ের ভঙ্গিতে রয়েছে; যার পরনে প্যান্ট, মাথায় এলোমেলো চুলের প্রাচুর্য যা কিনা আধুনিক সভ্যতার প্রতীক। এ দু'জন মুক্তিযোদ্ধার পেছনে ৩৬ ফুট উঁচু একটি দেয়ালও দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের উপরের দিকে রয়েছে একটি শূন্য বৃত্ত, যা দেখতে সূর্যের মতোই। ভাস্কর্যটির নিচের দিকে ডান ও বাম উভয়পাশে ৬ ফুট বাই ৫ ফুট উঁচু দু'টি ভিন্ন চিত্র খোদাই করা হয়েছে। ডানদিকের দেয়ালে রয়েছে দু'জন যুবক-যুবতী। যুবকের কাঁধে রাইফেল, মুখে কালো দাড়ি, কোমরে গামছা বাঁধা, যেন বাউল। আর যুবতীর হাতে একতারা। গাছের নিচে মহিলা বাউলের ডান হাত বাউলের বুকে বাম দিকের দেয়ালে রয়েছে মায়ের কোলে শিশু, দু'জন যুবতী একজনের হাতে পতাকা। পতাকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেঞ্জিপরা এক কিশোর। শিল্পী নিতুন কুণ্ডু তার মনতুলি দিয়ে এমনভাবে ভাস্কর্যটি চিত্রিত করেছেন দেখলে মনে হয় যেন ১৯৭১ সালেরই অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি।

১৭.৫. বিজয় '৭১

'বিজয় '৭১' ভাস্কর্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৭১ সালের মহান মুক্তি সংগ্রামে বাংলার সর্বসত্মরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মূর্ত প্রতীক হয়ে আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য 'বিজয় '৭১'। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনের সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে 'বিজয় '৭১'। ভাস্কর্যে একজন নারী, একজন কৃষক ও একজন ছাত্র মুক্তিযোদ্ধার নজরকাড়া ভঙ্গিমা বার বার মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে নিয়ে যায় দর্শনার্থীদের। একজন কৃষক মুক্তিযোদ্ধা বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরেছে আকাশের দিকে। তার ডান পাশেই শাশ্বত বাংলার সর্বস্বত্যাগী ও সংগ্রামী নারী দৃঢ়চিত্তে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছেন। যার সঙ্গে আছে রাইফেল। অন্যদিকে একজন ছাত্র মুক্তিযুদ্ধে গ্রেনেড ছোড়ার ভঙ্গিমায় বাম হাতে রাইফেল নিয়ে তেজোদীপ্তচিত্তে দাঁড়িয়ে। বিখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী শ্যামল চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে 'বিজয় '৭১' ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ ২০০০ সালের জুন মাসে শেষ হয়। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। 'বিজয় '৭১' ভাস্কর্য দেখতে প্রতিদিন অগণিত মানুষ ক্যাম্পাসে ভিড় জমায়।

১৭.৬. জাগ্রত চৌরঙ্গীঃ

জাগ্রত চৌরঙ্গী, জয়দেবপুর চৌরাস্তা

মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য। ভাস্কর আবদুর রাজ্জাক জাগ্রত চৌরঙ্গীর ভাস্কর। এটি ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত এটিই প্রথম ভাস্কর্য। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চের আন্দোলন ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ। আর এই প্রতিরোধযুদ্ধে শহীদ হুরমত উল্যা ও অন্য শহীদদের অবদান এবং আত্মত্যাগকে জাতির চেতনায় সমুন্নত রাখতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার সড়কদ্বীপে স্থাপন করা হয় দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যকর্ম জাগ্রত চৌরঙ্গী।
________________________________________
তথ্যসূত্রঃ
১৯. ক খ গ ঘ ঙ ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, সুজন ঘোষ, সাইফুর রহমান আকন্দ, মোঃ হাবিবুর রহমান, দৈনিকজনকণ্ঠ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।
-ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক জাবির স্থাপনা সমূহ, মাহিদুল ইসলাম মাহি,বেস্টনিউজ ডটকম, ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
-মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাবির সংশপ্তক, ওয়ালিউল্লাহ, ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১২ডিসেম্বর ২০১১ খ্রিস্টাব্দ।
২১. 'বিজয় ৭১', মোঃ শাহীন আলম, দৈনিক সমকাল। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।
-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মরণে নির্মিত ভাস্কর্য বিজয় '৭১, দৈনিক সমকাল। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৮ আগস্ট ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
২২. জাগ্রত চৌরঙ্গী:মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য, সাইফুল ইসলাম খান, দৈনিক কালের কণ্ঠ। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ:২৫ মার্চ ২০১২ খ্রিস্টাব্দ।
-ঢাকার পাশে গাজীপুর,মুস্তাফিজ মামুন, সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ২০ এপ্রিল, ২০১০ খ্রিস্টাব্দ।
-ঢাকার কাছেই গাজীপুর,দৈনিক সকালের খবর।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো পোষ্ট।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৭

হাবিব ইমরান বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.