নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্তি নাই

ইমরান সামি ব্লগ

নাচন কুদন..অলস জীবন

ইমরান সামি ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ১৫ আগস্ট: ছোট্ট খুকি তুলির পরিবারের কাঁন্না আর আহাজারিতে বুক বাসানোর দিন; আর জেমি\'র পরিবারের মহোৎসবে রঙিন হওয়ার দিন

১৫ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

এক.
ছোট্ট খুকি তুলির আকুতি......মাগো! বাপজান সেই কখন থেকে কাঁন্না করছে, ও-মা.... মাগো.... বাপজান এরকম কাঁদছে কেন? অবুঝ তুলির নিষ্পাপ অন্তরটায় পাথরসম কষ্ট অনুভুত হচ্ছে। ফেকাসে হয়ে যাওয়া মুখাবয়বের দিকে তাকালে যে কারো বুকটা ধড়ফড় করে উঠবে।

সেই কখন থেকে মায়ের কাছে প্রশ্ন করে যাচ্ছে তুলি; অথচ তুলির জিজ্ঞাসার কোন মুল্যই যেন নাই। ছোটদের কোন জিজ্ঞাসার বুঝি প্রতুত্তর করতে হয়না। সারাদিনের কাজকর্ম, রান্নাবান্না আর ধোয়ামুচার ধকল এবং পাতিলের কালি সমেত ময়লার আবরনে মলিন মায়ের মুখখানাও যে কালো মেঘের অন্ধকারে বিমর্ষ হয়ে আছে সে কি আর তুলি দেখতে পাচ্ছে(?) তুলিকে উত্তর দিতে গেলে নিজেকে সামালে রাখতে পারবেন না জানেন তিনি।

তুলির মা জানেন, তুলির আব্বার কাঁন্না থামাবার সাধ্য কারো নাই। তিনিও কাজকাম শেষ করে ফ্রী হন সন্ধা নাগাদ। সন্ধার পর তিনিও অমাবস্যার অন্ধকারে বুকফাটিয়ে কাঁদেন। তুলির মায়ের কাছে প্রতিটা রাতই অমাবস্যা রাত। আব্বাতো শুধু আজকের দিনটাই কাঁদছেন। আজকের এই দিনে তিনি প্রানভরে কাঁদবেন । দু-বছর আগে ঠিক এই দিনেই!! এই আজকের দিনেই নব্যরক্ষী বাহিনীর হায়েনারা একে একে তাঁদের দুই ছেলেকে চোখের সামনে গুলি করে এবং এক মেয়েকে ধর্ষন করতে করতে ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছিল। চারপাশে শত শত চোখ সেদিন কালো চশমায় ঢাকা ছিলনা, খোলাই ছিল। অথচ একটি চোখের ভাষাও সেদিন প্রতিবাদী হয়নি। পরিণতির ভয়াবহতা দেখলোইতো সবাই।

তুলির আব্বার আর মায়ের পরিনতির কোন ভয় নাই। তাইতো একজন সকাল থেকে প্রতিবাদ শুরু করেছেন, কাঁদছেন । আর মা? তিনিতো প্রতিরাতের নিঝুম অমাবস্যায় প্রতিবাদ জানান, প্রতি রাতেই কাঁদেন, আপন শোকে মাতম করেন । তুলির আব্বা আর মা'র প্রতিবাদের অস্র চোখের জল।

মায়ের চেহারার দিকে আর তাকাতে ইচ্ছা করছেনা তুলির। সকাল থেকে তুলির কাছে প্রিয় আব্বাটার শিশুদেরমত অনবরত এমন কাঁন্না আর আহাজারি একদম অসহ্য লাগছে । তারও কাঁন্না করতে ইচ্ছে করছে।

আব্বা দুপুর বেলার তপ্ত রোদের মধ্যে উঠনের দক্ষিন কোনে বুড়ই গাছটির নিছে বসে আসেন । গাছের ছায়া যেন আব্বাকে করুনা করছে, রোদের তীব্রতাকে দমিয়ে রেখেছে। ফেলে রাখা কাঠের তক্তার উপর হাঁটু গেড়ে বসে কাঁদছেনতো কাঁদছেনই। আব্বার বাঁ হাঁটুর উপর দুহাত এবং ফোলা গালটাকে ঠেকিয়ে তুলি ডাক দিল আব্বা..... ও আব্বা!!!। আদরের শিশু কন্যার উদ্ধিগ্ন ভরাট কন্ঠে 'আব্বা' ডাক শুনে আবেগের বাঁধ আর স্থির রাখতে পারলেন না । দুচোখ থেকে বিষাদের ঢেউ আর শতদুঃখের উন্মত্ততায় যেন অশ্রূর জোয়ার বইতে শুরু করেছে। আব্বা..... তোমার কি হয়েছে!! আব্বা.... আর কেঁদোনাতো!!আব্বাগো..............
তুলিও কাঁদছে! কিন্তু তুলির কাঁন্না শিশু সুলভ নয়! তুলি কাঁদছে- "বোবা কান্না"।

দুই.
সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামেচি করা জেমির রুমের ত্রিসীমার মধ্যে একশ চুয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ করার সম অপরাধ। আজ সকাল সকাল আব্বুর জেমি....এই জেমি....মা আমার......চিৎকার শুনে লাফিয়ে উঠে জেমি। আব্বুর এতবড় দুঃস্বাহস! আইন অমান্য করে এত সকাল সকাল ডিস্টার্ব? আব্বুকে উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। চোখ ডলতে ডলতে ডাইনিংয়ে আম্মুর কাছে যাচ্ছিল যখন চোখ পড়লো ড্রয়িংরুমের দিকে। ড্রয়িংরুমের চিত্র দেখে জেমির চোখ দুটো ইয়া বড়বড়। ঠোটের কোনে ময়ুরপঙ্খির ডানার আগায় চিকচিকে নিলাব্রুর চঞ্চলা ঝিলিক। জেমি যেন হাতের কাছে চাঁদেরবুড়ীর দেখা পেয়েছে, ছোট্ট জেমির উল্লাসিত শিশুমন ডানা ঝাপটিয়ে নেচে উঠল । ভুলে গেল সকাল সকাল চিৎকার চেঁচামিচির আইন ভাঙ্গার কথা।

আব্বু....... জেমি তার দুইহাত উপরে উঠিয়ে লাফিয়ে উঠলো, কচি কন্ঠে আব্বু বলে হালকা চিৎকার দিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে থাকা হাসোজ্জল আব্বুর দিকে দৌড়ে গেল। এসেই ঝাপিয়ে পড়লো সোফায় বসে থাকা আব্বুর ডান পাশে রাখা বহুদিনের স্বপ্ন "বার্বি ডলটার" উপর। ৬ বছর বয়েষি কোন ছোট্ট রাজকুমারীর আদলে বানানো 'বার্বি ডল'টিকে জেমি জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে আর বসে থেকেই লাফাচ্ছে, চোখে মুখে স্বপ্নপূরণের অনাবিল আনন্দের মুখরতা।

আমরিকান খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাট্টেলের তৈরী এই প্রিয় 'বার্বি ডল' কথা বলতে পারে। আব্বুর কাছে সেই কবে থেকে জেমি এই ডলটি চেয়ে আসছিল তার কোন হিসাব নাই। আমেরিকা থেকে এবার মেয়ের প্রিয় ডলটা নিয়েই ফিরলেন। প্রিয় বার্বি ডল পেয়ে মেয়ের সীমাহীন আনন্দ দেখে শতসুখের স্বর্গরাজ্য আবিষ্কার করে ফেলার মত অট্টহাসির তবলা বাজিয়ে যাচ্ছেন জেমির আব্বু।

বাপ মেয়ে মিলে এমন তার ছেড়ার মত করছো কেন হ্যা? ডাইনিং থেকে ধমকের সুরে চিল্লায়ে উঠলো জেমির মা। মেয়ের আবদার রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন না থাকা শর্তেও মন্ত্রীর সাথে আমেরিকা যাওয়ার গল্প শুনিয়েছ ভাল কথা, চারদিন থাকার কথা বলে সাতদিন থেকে এসেছ তাও ঠিক আছে, রাত তিনটায় তোমার ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে তাও বুঝলাম, কিন্তু তোমার এত আদরের জেমির জন্মদিন আজ চলে যাচ্ছে তার কোন খবরই নাই তোমার কাছে???

ঔওওওফফফ শীট!!!! স্যরি ডারলিং... আই এম ভেরী.... ভেরী....স্যরি!!!

হয়েছে! স্যরি বলতে হবেনা। আমি দুপুরের জন্য সব এ্যারেইঞ্জমেন্ট করে রেখেছি। তোমার বন্ধুদের সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে। সবাই আসবেন কথা দিয়েছেন। মেজর অতুল, আইজিপি প্রতুল, র্যাবের ডিজি সন্তুল, বিজিবি প্রধান মাতুল তাদের পরিবার সহ উপস্থিত থাকার কথা দিয়েছেন। খাওয়া দাওয়া শেষে যৌথবাহিনীর সৌজন্যে আইজিপি সাহেব "ডিজে সোনিকা" আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

যাক! বাঁচালে আমাকে! তোমার এ্যারেইঞ্জমেন্ট সব ঠিক থাকলে আশা রাখি দিনটি দারুন এনজয়েবল হবে।

ঠিক থাকবেনা মানে? অবশ্যই থাকবে। রেডিসন থেকে ১২টার মধ্যে এসে সব পৌঁছে যাবে। তোমার জার্নিতে অনেক ধকল গেছে। ঘন্টা দুয়েক রেস্ট নাও। আমরা মা মেয়ে 'পারসোনা' ( বিউটি পার্লার)থেকে ততক্ষনে এসে যাবো।

তিন.
আজকের দিনটা তুলির পরিবারের জন্য শুধুই কাঁন্না আর আহাজারিতে বুক বাসানোর দিন । আবার আজকের দিনটাই জেমির পরিবারের মহোৎসবে রঙিন হওয়ার দিন।

ষোল কুটি বাঙালীর মধ্যে চার কুটি পরিবার।

দুই কুটি তুলির পরিবারের যন্ত্রণায় সম কাতর, ব্যথায় ব্যথাহত।

আর বাকি দুই কুটি জেমির পরিবারের পক্ষে আনন্দ উৎসবের রথযাত্রী।

আজ ১৫ আগস্ট। আজকের দিন শুধু বেদনার নয়; শুধু আনন্দ-উৎসবেরও নয়। খুঁজে দেখুন, ৩৬৫ দিনই কোথাও না কোথাও, কোননা কোন পরিবারে এরকম "১৫ আগস্ট" বিরাজ করছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.