![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত
দামেস্কর এক অধিবাসীর নাম ছিলো 'লেথ বার্লি'। লেথ বার্লি সেখানকারই এক 'মেরি' নামের সুন্দরী যুবতীকে প্রচণ্ড ভালবাসতো। লেথ বার্লি মেরিকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখতো একসাথে জীবনযাপন করার। এবং মেরি লেথ বার্লির কাছে যা চাইতো লেথ বার্লি তাকে সবকিছুই দেওয়ার চেষ্টা করতো। তাদের বিয়ের কিছুদিন পূর্বে মেরি বললো, "তোমার আর আমার খুব ছোট্ট একটা সংসার হবে। যেখানে তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ থাকবেনা। তুমি আমার জন্যে একটি আলাদা বাড়ি তৈরি করো। যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকবো। মেরি নিজেও জানতো লেথ বার্লির পক্ষে এখন নতুন আরেকটি বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয়। লেথ বার্লি পক্ষে এখন নতুন বাড়ি বানানো এখন সম্ভব নয় মেরিকে সেটা জানালে। মেরি তাকে বললো, "নতুন বাড়ি না করতে পারলে আমাদের বিয়ে হচ্ছেনা। আমি সবার সাথে থাকতে পারবো না। আমি শুধু তোমাকে নিয়ে থাকতে চাই।" লেথ বার্লির আর বোঝার বাকি রইলোনা যে মেরি লেথ বার্লির মা-বাবার সঙ্গে একই ছাদের নীচে থাকতে অনিচ্ছুক। লেথ বার্লি সিদ্ধান্ত নিলো তার মা-বাবাকে সে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিবে। সেখানে সে প্রতিমাসেই আলাদা খরচ দিবে এবং প্রতিমাসে গিয়ে দেখে আসবে। মা-বাবাকে নানান কথা বলে লেথ বার্লি বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এলো। যাবার পূর্বে লেথ বার্লির বাবা লেথ বার্লিকে বললো, "বাবা বার্লি, আজ আমরা হয়তো তোমার কাঁধের অনেকবড় বোঝা হয়ে গেছি। কিন্তু একটা সময় আমরাই তোমাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। এখন হয়তো তোমার কাছে অন্যকেউ অনেক আপন হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছে গোটা জীবনেও তোমার চেয়ে কেউ বেশি আপন ছিলোনা। চলে যাচ্ছি আজ তোমাকে রেখে। তোমাকে যেদিন হসপিটাল থেকে প্রথম এই বাড়িতে এনেছিলাম অনেক আয়োজন করা হয়েছিলো। আজও অনেক আয়োজন হচ্ছে মনের মাঝে। শুধু আমি আর তোমার মা সেটা দেখতে পাচ্ছি। সারাজীবন যাকিছু করেছি শুধু তোমার ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করেছি। ভবিষ্যতে যেন তুমি ভালো থাকতে পারো সেইজন্য ছুটে বেড়িয়েছি দেহের ঘাম ঝরিয়ে। ভেবেছিলাম শেষ বেলায় তোমার সঙ্গে আমাদের অবসর সময় কাটবে। কিন্তু সময় কি জিনিস সেটা আজ বুঝিয়ে দিয়েছো তুমি। যে মায়ের বুকের দুগ্ধ খেয়ে আজ তুমি সবল, সেই বুকেই তুমি আজ আঘাত করলে। তবুও কোনো অভিশাপগ্রস্ত করছিনা তোমাকে। দোয়া করি সারাজীবন সুখে থাকো। ভালো থাকো সবসময়।
.
কথাগুলো বলতে বলতে লেথ বার্লির বাবা-মা উভয়ই কান্নায় ভেঙে পরলো। মোটা ফ্রেমের চশমার ফাঁক দিয়ে লেথ বার্লির বাবার চোখেরজল মাটিকে স্পর্শ করলো। অতঃপর লেথ বার্লির মা-বাবা চলে গেলেন বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমটা লেথ বার্লিদের বাসার খুব কাছেই ছিলো। তাই ছেলেকে একপলক দেখার জন্যে লেথ বার্লির মা-বাবা প্রতিদিন লেথ বার্লির বাড়ির সামনে এসে আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকতো। লেথ বার্লির মা-বাবা লেথ বার্লিকে দেখার জন্যে বাড়ির সামনের যেই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো। সেই রাস্তাতেই দামেস্কের অনেকবড় ত্রাস হ্যারিলাক যাওয়া আসা করতো। প্রতিদিন বিকেলে লেথ বার্লির মা-বাবাকে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে হ্যারিলাক জিজ্ঞেস করলো---
-- আপনার প্রতিদিন এই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?
.
হ্যারিলাকের প্রশ্ন শুনে লেথ বার্লির মা-বাবা দুজনেই মাথা নত করে রইলো। পুনরায় আবার প্রশ্ন করার পর লেথ বার্লির বাবা বললো---
-- আমাদের ছেলেটা এই বাড়িতেই থাকে। আমরা তাকে একপলক দেখার জন্যে রোজ এইখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকি।
-- আপনার কোথায় থাকেন? আর ছেলের কাছেই বা যান না কেন?
-- আমরা এখন পাশের বৃদ্ধাশ্রমে থাকি। আর ছেলের কাছে এখন তার ভালবাসার মানুষ অনেকবড়।
.
হ্যারিলাকের লেথ বার্লির বৃদ্ধ মা-বাবার কথাগুলো শুনে অনুভূতিতে আঘাত লাগলো। নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিলো লেথ বার্লিকে কঠিন শাস্তির মধ্যেদিয়ে মা-বাবাকে যে আপনের আপন সেটা বুঝিয়ে দেওয়ার। পরদিন বিকেলে হ্যারিলাক তার ভাবনা অনুযায়ী হ্যারিলাক কাজ শুরু করলো। লেথ বার্লির বাড়ির ভিতরে হ্যারিলাক তার এক সহকারী ক্যামেরাম্যান কে নিয়ে প্রবেশ করলো। কলিংবেল চাপতেই মেরি এসে দরজা খুললো। হ্যারিলাক বাসার ভেতরে ঢোকবার অনুমতি নিলো। এবং বাসার মধ্যে ঢুকে লেথ বার্লি আর মেরিকে একসঙ্গে করে হ্যারিলাক জানতে চাইলো---
-- আমরা নবদম্পতি কিছু মানুষদের সুখময় মুহূর্ত নিয়ে একটি সিডি তৈরি করছি। আমি কিছু প্রশ্ন করবো আর আপনারা সেই প্রশ্নের উত্তর দেবেন।
.
লেথ বার্লি ও মেরি দুজনেই সম্মতি জানালো। হ্যারিলাক প্রথম প্রশ্ন করলেন---
-- আপনারা একজন আরেকজনকে কতটা ভালবাসেন?
.
লেথ বার্লি আর মেরি একে অপরেকে চুম্বন করে বললো---
-- আমরা দুজন দুজন অনেক ভালবাসি।
.
কথাটা শেষ করার সাথেসাথে হ্যারিলাকের দলের আরও কিছুলোক বাইরে থেকে তাড়াহুড়ো করে বাসার ভেতরে প্রবেশ করলো। লেথ বার্লি আর মেরিকে বেধে ফেললো। তারপর হ্যারিলাক ও তার দল বাইরে বেড়িয়ে লেথ বার্লির বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলো। লেথ বার্লি আর মেরি বাড়ির ভিতরে অনেক উচ্চস্বরে চিৎকার করতে লাগলো। যখন পায় আগুন তাদের দুজনেরই অনেক নিকটে তখন হ্যারিলাকের দলের একজন সদস্য হ্যারিলাকে নির্দেশে রুমের ভেতরে ঢুকে মেরি হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দিলো। মেরির বাঁধন খোলার সাথেসাথে মেরি দৌড়ে গিয়ে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে লাগলো। লেথ বার্লির চিৎকার শুনতে পেয়ে বাড়ির সামনে লেথ বার্লিকে দেখার জন্যে তার মা-বাবা এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। তারা ছেলের চিৎকার শুনে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো। ছেলের চিৎকার শুনে মা-বাবা বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ছেলেকে উদ্ধার করার জন্যে অগ্নিগৃহের মাঝে প্রবেশ করলো। এবং লেথ বার্লির বৃদ্ধ বাবা লেথ বার্লির সমস্ত বাঁধন খুলে দিলো। অতঃপর লেথ বার্লি ও তার বাবা মা সবাই সুস্থ ভাবেই বাড়ির বাইরে এসে হ্যারিলাকের সামনে উপস্থিত হলো। হ্যারিলাক তখন লেথ বার্লিকে উদ্দেশ্য করে বললো, "শোনো বার্লি, পূর্বে তোমার সাথে আমার কোনো বিরোধ ছিলোনা। তুমি যাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতে সে আজ তোমাকে অগ্নিগৃহের মাঝে তোমাকে ফেলে রেখে আপন প্রাণ বাঁচিয়েছে। আর তোমার মা-বাবা, যারা কিনা তোমাকে একপলক দেখার জন্যে প্রতিদিন তোমার বাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো তারাই তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আজ তোমাকে উদ্ধার করেছে। এরপরেও কি তোমার বুঝতে বাকি কে তোমাকে বেশি ভালবাসে?
.
লেথ বার্লি তখন তার মা-বাবার পায়ের উপর পরে কাঁদতে লাগলো। ক্ষমা চাইতে লাগলো অগণিতবার কান্না কণ্ঠে। তখন হ্যারিলাক বললো, যে তোমাকে সত্যিই ভালবাসবে সে তোমার আশেপাশের মানুষ, পরিবেশ যেমনই হোকনা কেন। সে সবকিছু মানিয়ে নিয়ে তোমাকে ভালবাসবে। আর যাদের ভালবাসায় নানান অভিযোগ, অনুরোধ থাকবে তারা সত্যিকার অর্থে তোমাকে সঠিকভাবে ভালবাসতে পারেনি। অতঃপর লেথ বার্লি সকল ভুল বুঝতে পেরে মা বাবাকে সঙ্গে নিয়ে মেরির সম্মুখীন হলো। মেরিকে বললো, "খুব সৌভাগ্যবান আমি। একভুলে বাড়ি হারিয়েছি তার বিনিময়ে মা-বাবাকে কাছে পেয়েছি। আমার আর কোনো বাড়ি নেই এখন। তুমি চাইলে এখন আমাদের সবার সাথে থাকতে পারো। আর যদি তা না থাকতে পারো, প্রস্থান করতে পারো এখন থেকে।
.
ছোটভাই খুব মন দিয়েই গল্পটা শুনলো। আমি ওকে বললাম---
-- কিরে গল্প থেকে কিছু বুঝলি।
.
ছোটভাইটা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো---
-- হ্যা ভাইয়া, আমি বাঁচতে চাই। আমি আমার মা-বাবার জন্যে বাঁচতে চাই। সবকিছুর ঊর্ধ্বে হচ্ছে মা-বাবা। আমাকে ক্ষমা করো ভাইয়া।
-- আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবেনা। যা গিয়ে চাচা-চাচির কাছে ক্ষমা চেয়ে নে। আর জীবনটা নেশার মাঝে না কাটিয়ে মা-বাবার কাছে উৎসর্গে করে দে।
-- হ্যা ভাইয়া তাই দিবো, আমি যাই।
-- কোথায়?
-- মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবো, যাই ভাইয়া।
-- ঠিকাছে যা,
.
ব্যর্থতা নিয়ে যারা এমন দেবদাস হওয়ার জল্পনাকল্পনায় বিভোর আছো। তারা হয়তো মনে রাখনি মা-বাবা নামের একটি পৃথিবী আছে। যাদের ভালবাসা অতিক্রম করার মতো পৃথিবীতে কেউ নেই। নেশাগ্রস্থ জীবন থেকে একটু অবসর নিয়ে দেখ জীবনটা কত সুন্দর, কত সুন্দর তোমার জীবন ব্যবস্থা।
©somewhere in net ltd.