নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত!

ডাকনাম ইমু ইমরান

লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত

ডাকনাম ইমু ইমরান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ "প্রপোজ পাগলা"

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:১৯

-- দোস্ত সুপ্তিকে তোর কেমন লাগেরে?
-- কোন সুপ্তি?
-- আরে ঐযে ক্লাসে যেই মেয়েটা স্যারের প্রশ্ন শুনার আগেই উত্তর দিয়ে বসে থাকে।
-- ঐ মেয়েতো একটা জিনিয়াসরে মামা! কেমনে মনে রাখে রসায়নের এতো কঠিন প্রশ্নের উত্তর!
-- কেমন লাগে সেটা বল?
-- ভালোই, তবে চারচোখা তো তাই একটু অন্যরকম লাগে।
-- ভাবছি সুপ্তিকে আজ প্রপোজ করবো!
.
ইমুর কথাশুনে আবির বাসার দিকে হাটতে শুরু করলো। ইমু আবিরের শার্ট পিছন থেকে টেনে ধরে বললো---
-- ঐ দাঁড়া! কোথায় যাচ্ছিস কোনকিছু না বলে?
.
আবির ইমুর দিকে অবাক চোখে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ইমু আবিরের এমনভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আবিরকে বললো---
-- ঐ সমস্যা কি! এভাবে হা করে তাকিয়ে আছিস কেন?
.
আবির কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বললো---
-- আমরা ভার্সিটিতে কতদিন যাবৎ ক্লাস করছি?
-- কেন? কি হয়েছে?
-- আগে বল তারপর বলছি।
-- আড়াই মাসের মতো তো হবেই। এইবার বল কেন?
-- এই আড়াই মাসে কয়টা মেয়েকে প্রপোজ করেছিস হিসেব আছে?
-- আরে ধূর! এগুলো হিসেব করার কি আছে!
-- হিসেব করার কি আছে মানে! প্রেম তোর, প্রেমিকা তোর। বিনা পারিশ্রমে তার জন্যে আমাকে কত ঝড় সইতে হয় সেটা নিশ্চয় তুই ভালো জানিস। গত তিন সাপ্তাহে তানিয়া, উর্মি, অনামিকা, তিনটা মেয়েকে হাতে পায়ে ধরে তারপর তোর সাথে রিলেশন করিয়ে দিয়েছিলাম। এক সাপ্তাহ যেতে না যেতেই সব ব্রেকআপ!
-- কি করবো বল? সবগুলো কেমন হ্যালা লা লা টাইপের। ভেতরে কোনো রোমান্টিকতা নেই। আর অনামিকাতো তুমি বলতে গেলে তিনবার তু বলে তু তু তুমি বলে।
-- তানিয়ার সাথে ব্রেকআপ করলি কেন? মেয়েটার কোনদিক দিয়ে কম ছিলো শুনি!
-- ব্রেকআপ না করে কি করবো! সেদিন রাতে ছাদের উপর দাঁড়িয়ে জ্যোৎস্না পোহাচ্ছি। এমন সময় ফোন দিয়ে বললাম একটা রবীন্দ্র সংগীত শোনাতে। সে বলে রবীন্দ্র সংগীত গাইতে পারেনা! এমন একটা মুহূর্তে গার্লফ্রেন্ড যদি একটা রবীন্দ্র সংগীত না শোনাতে পারে তার সাথে কিভাবে চলা যায় বল? আবার বলে সে শিল্পকলায় গান করে। এসব মেয়েদের কে শিল্পকলার গেইট দিয়ে কে যে ঢুকতে দেয় তাই বুঝিনা!
-- আশ্চর্যকথা! আচ্ছা সবাই কি সবকিছু পারে? তানিয়া আধুনিক গান শিখেছে তুই ওর কাছে আধুনিক কোনো গান শুনতে চাইতি। না শোনালে তখন তুই ব্রেকআপ করতিস মেনে নিতাম।
-- বাদ দে দোস্ত, যেটা যাওয়ার সেটা যাবেই। দেখতো ঐ মেয়েটাকে?
.
আবির রেগে ইমুকে বললো---
-- প্রপোজ করবি? চল্ যাই, আজ তুই বলবি আমি পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো। দেখি তোর কত কথা মুখে ফুটে। চল্,
.
আবির ইমুর হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির সামনে দাঁড়ালো। আবির ইমুকে দেখিয়ে মেয়েটিকে বললো---
-- আমার বন্ধু ইমু ইমরান, আপনাকে কিছু কথা বলবে।
-- জ্বি বলুন?
.
ইমু শার্টের কলার ঠিক করে মেয়েটিকে জিজ্ঞাস করলো---
-- তোমার নামটা কি?
-- শার্মিলি,
-- সুন্দর নাম, আমি ইমু, ইমু ইমরান। কোন ডিপার্টমেন্টে আছো?
-- পাবলিক হেলথ্ ফাইনার ইয়ারে,
.
মেয়েটি ৩ বছরের সিনিয়ার শুনে ইমুর মাথায় যেন বাজ পরলো। নরম গলা ছেড়ে ইমু বললো---
-- সরি আপু কিছু মনে করবেন না, আসলে আপনার মতোই দেখতে একজনকে খুঁজছি। বিশ্বাস করেন দেখতে একদম আপনার মতো।
-- সামনে থেকে সরে দাঁড়ান,
-- আপু সরি বলেছিতো,
-- আপনি সরে দাঁড়াবেন নাকি সরাতে হবে?
.
ইমু আস্তে করে একপাশ হয়ে দাঁড়ালো। দূরে দাঁড়িয়ে আবির সবকিছু প্রত্যক্ষ করে প্রচণ্ড হাসতে লাগলো। আবিরের এই হাসি দেখে ইমু কাছে গিয়ে বললো---
-- বলদের মতো হাসছিস কেন?
-- মিটেছে আজ প্রপোজ করার সখ?
-- তুই কি ভেবেছিস এই মেয়ে এভাবে অপমান করেছে বলে সুপ্তিকে আমি প্রপোজ করবোনা? আজ এবং এখনি সুপ্তিকে প্রপোজ করে তোকে আমি দেখিয়ে দিবো।
-- ঠিকাছে দেখা তাহলে,
-- সুপ্তি কোথায় আছে তুই জানিস?
-- এখান দিয়েই আসবে অপেক্ষা কর।
-- ঠিকাছে তাই করছি।
.
আধঘণ্টা পর সুপ্তির দেখা মিললো। ইমু সুপ্তির সামনে যাওয়ার পূর্বে বেশ কয়েকবার চুল আর শার্টের কলার ঠিক করে সুপ্তির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো---
-- কেমন আছো সুপ্তি?
-- সরি, কে আপনি?
-- মজা করছো, ঠিকাছে সমস্যা নেই আমিও মজা করতে পছন্দ করি।
-- আমি সত্যিই আপনাকে চিনতে পারছিনা!
-- সিরিয়াসলি?
-- জ্বি,
-- আমি তুমি একই ডিপার্টমেন্টের। আমার নাম ইমু।
-- নামটা বলার জন্যে এখানে দাঁড় করিয়েছো?
-- আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই,
-- ঠিকাছে বলো?
-- তোমাকে প্রথমদিন দেখার পর থেকেই আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আই থিনক, আই এম ফল ইন লাভ।
-- সিরিয়াসলি?
-- হুম, আমি তোমাকে ভালবাসি।
-- আমিও তোমাকে ভালবাসি।
-- মানে!
-- মানে তুমি আমাকে বললে না তুমি আমাকে ভালবাসো? আমিও তোমাকে ভালবাসি।
-- সত্যি বলছো?
-- অদ্ভুত! এখানে মিথ্যে বলবার কি আছে!
-- তুমি একটু দাঁড়াও আমি অবিরের সাথে একটু কথা বলে আসি।
-- আবিরটা কে?
-- ঐ যে ও আবির। আমার বন্ধু। থাকো তুমি আমি একটু কথা বলে আসি।
.
ইমু আবিরের সাথে কথাবলার জন্য আবিরের কাছে গেল। গিয়ে আবিরকে ইমু ফিসফিস করে বললো---
-- দোস্ত সুপ্তিও আমাকে ভালবাসি বলেছে।
-- সত্যিই?
-- হ্যা,
-- তাহলে আর দেরি কেন শুরু করে দে তো প্রেম লীলা।
-- নারে দোস্ত!
-- কেন কি হলো আবার?
-- সুপ্তিকে ভালবাসি বললাম আর ও নিজেও সাথেসাথে ভালবাসি বলে দিলো! তুই যাই বলিস আমি নিশ্চিত এরমাঝে নিশ্চয় কোনো গড়বড় আছে। এই মেয়ে একদম ভালো হবেনা। কি রকম চটান চটান করে ভালবাসি বলে ফেললো। ভালো মেয়ে হলে কি আর এমনভাবে বলতে পাড়তো। সহজসরল দেখতে হলে কি হবে!
-- তাহলে তুই সুপ্তির সাথে সম্পর্ক করবিনা?
-- না,
-- তাহলে এখন গিয়ে কি বলবি?
-- আমি কি আর যাবো নাকি! তুই গিয়ে বলবি আমরা এমনিই সবাই মিলে মজা করছিলাম।
-- যদি থাপ্পড় দেয় সেটা কে খাবে?
-- তুই আমার বন্ধু হয়ে এতটুকু আমার জন্যে করতে পারবিনা?
-- তাহলে বল এইবারই শেষ প্রপোজ?
-- ঠিকাছে যা, আর প্রপোজ করবোনা।
-- কথা দে,
-- আজব তো! কথা দেওয়ার কি এমন হলো। যা যা সুপ্তি দাঁড়িয়ে আছে।
.
আবির সুপ্তিকে গিয়ে বললো---
-- সরি সুপ্তি, আমরা আসলে সবাই মজা করছিলাম।
-- তোমার কি মনে হয় আমি ইমুকে সত্যিই ভালবেসেছি?
.
আবির চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। সুপ্তি বললো---
-- তোমাদের মতো ছেলেদের দেখলেই ভার্সিটিতে পড়ুয়া কোনো মেয়ে ঠিক বলে দিতে পারে তোমরা কোন টাইপের। রাস্কেল!!
.
কথাগুলো আবিরকে শুনিয়েই সুপ্তি চলে গেল। আর আবির বরাবরের মতো মুখটা মলিন করে এসে ইমুর সামনে দাঁড়ালো। ইমুকে বললো---
-- ফের যদি আবার কোনদিন কোনো মেয়েকে প্রপোজ করার কথা শুনি!
-- ঠিকাছে বন্ধু আর শুনবিনা, চল বাসায় চল।
.
ইমু আর আবির দুজনেই বাসায় চলে আসলো। প্রায় সাপ্তাহ খানেক কোনোরকম কোনো প্রপোজ না করেই ইমু দিনগুলো পার করে দিলো। ক্লাসের মাঝে নতুন মুখের উদয় হলো। মেয়েটিকে ইমু প্রথমবার দেখতে পেয়েই আবির কাছে জিজ্ঞাস করতে গিয়েও কথা ফিরিয়ে নিলো। পাশে বসে থাকা আদরের কাছে জানতে চাইলো---
-- ঐ মেয়েটা কে রে বন্ধু?
-- নতুন দেখলি নাকি আজ?
-- হ্যা, আগে কখনো দেখনি ক্লাসে।
-- আগেও ছিলো। বোরকা পরে আসতো। ওর নাম নওশিন।
.
৩ মাস পর।
.
আবির ইমুর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে লেকের পাড়ে আসলো। দেখলো ইমু একটা বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছে। আবির বললো---
-- কিরে মন খারাপ?
-- তুই কিভাবে জানলি আমি এখানে?
-- খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম। কি হয়েছে?
-- টাকা আছে তোর কাছে?
-- কত টাকা?
-- ৩ হাজার হলেই হবে।
-- কি করবি টাকা দিয়ে?
-- গত সাপ্তাহে শীতের জামাকাপড় কিনবো বলে বাসে থেকে টাকা নিয়েছিলাম। কেনা হয়নি বলে মা, ভাবি মিলে অনেক কথা শুনাইছে। আর বলছে কালকেই যেন শপিং করি।
-- তোর একাউন্টে না টাকা আছে?
-- শেষ,
-- বাসার ব্যাংকে?
-- শেষ,
-- বিকাশেও তো থাকার কথা।
-- সেটাও শেষ!
-- এতো টাকা দিয়ে কি করেছিস তুই?
-- নওশিনের সাথে ডেটে গিয়ে সব শেষ হয়ে গেছে।
-- নওশিন ডেটের খরচ দেয়নি একদিনও?
-- ওর কথা বাদ দে,
-- কেন? ওর সাথে আবার কি হয়েছে?
-- গতরাতে শেষ অব্দি ও ফাইনালি ব্রেকআপটা করেই ফেলেছে।
-- কেন?
-- আমি নাকি ওর যোগ্য নই!
-- হা হা হা,
-- হাসছিস কেন?
-- বুঝলি দোস্ত! এই বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে কেউ কারো যোগ্য নয়। তোর কাছে আজ একজন অযোগ্য, তুই আবার আরেকজনের কাছে অযোগ্য। যোগ্যের অযোগ্যের হিসেব বাদ দিয়ে কাউকে ভালবাসলে তোকে যোগ্য করে নিতে হয়। নিজের মতো করে তৈরি করে নিতে হয়। প্রকৃতপক্ষে সেটাই তো ভালবাসা, সেটাই তো প্রেম।
.
লেখকঃ ডাকনাম ইমু ইমরান।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.