![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখালিখি পেশা নয়, নেশা! আর আমি লেখায় আসক্ত
অর্পার মৃত্যুর সংবাদ শুনে আমি বিন্দুমাত্র বিচলিত হয়নি। বরং ভীষণ আনন্দ পেয়েছি! অট্টহাসি হেসেছি হা হা করে। হাসতে হাসতে একপর্যায়ে ভাবলাম কেউ এভাবে একা একা হাসতে দেখলে নিশ্চিত আমাকে সাইকো ভাববে। তাছাড়া মানুষ মরে গেলে তো কাঁদতে হয়। আর তাই আমার এখন উচিত অর্পার মৃত্যুতে না কাঁদলেও মনখারাপ করে ভং ধরে বসে থাকা। মনখারাপের ভং ধরতে গিয়ে আমি আবারও খিকখিক করে এসে উঠলাম!
কে জানে কার বাঁচ্চার বাবা হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেলাম। দুদিন বেড শেয়ার করার পর কয়েকদিন পর কোনো মেয়ে এসে বলবে তার পেটে আমার বাঁচ্চা কনসেপ্ট হয়েছে আর আমি তা এতো সহজে বিশ্বাস করবো এতটা বোকা ছেলে আমি নই। আমার এখন আনন্দের সময়, উপভোগের সময়, কারো দায়ভার নেওয়ার সময় নয়।
বন্ধুদের সাথে আমিও অর্পার জানাযায় অংশগ্রহণ করার জন্য অর্পাদের বাসায় পৌঁছালাম। সবার মলিন মুখের সাথে আমিও মুখটা গোমড়া করে ভং ধরে রইলাম অর্পার শোকে। ভাগ্যিস বন্ধুরা কেউ অর্পার আর আমার ব্যাপারে কোনকিছু কখনো আঁচ করতে পারেনি। তা না হলে এতক্ষণ হয়তো আমাকে জেলহাজতে বসে বসে সময় পাড় করতে হতো।
অর্পার গলায় ফাঁসের কালচে দাগটা দেখতে খুব বিভৎস দেখাচ্ছিল। অবশ্য এমন দাগ এর পূর্বেও দেখে দেখে আমি অভ্যস্ত প্রায়। গত সোহানা, মেহরিনের ফাঁস নিয়ে সুইসাইড করা দেহটাও আমি খুব কাছে থেকে দেখেছি। যদিও রিয়ার বিষ খেয়ে সুইসাইড করা দেহের তুলনায় অর্পার এই সদ্যমৃত লাশ দেখতে অনেক ভালো দেখাচ্ছে।
কারো দূর্বল জায়গায় আঘাত করে আমি ভীষণরকম পৈশাচিক আনন্দ পাই। আর আঘাতটা যদি ঠিক জায়গায় ঠিক এমনি করে সোহানা, মেহেরিন, রিয়া কিংবা অর্পার মতো করতে পারি তাহলে তো আনন্দ প্রতি রক্তকণিকায় মিশে টইটুম্বুর! আপদও বিদায় আর আনন্দও ভরপুর!
এইবার নেহার পালা। যে করেই হোক এইবার নেহাকে বেডে তুলতেই হবে। হঠাৎ মহিন সামনে এসে বললো, "অর্পার জানাযা এখন শুরু হবে বাইরে চল।"
মহিনের কথাশুনে নেহার প্রতি আমার ভাবনার ঘোর কেটে গেল। আমি মহিনের সাথে অর্পার জানাযা পড়ার জন্য বাহিরে এসে দাঁড়ালাম। জানাযা শেষে যখন অর্পার লাশ নিয়ে কবরস্থানের দিকে যাবে ঠিক তখন অর্পার মা-বাবা চিৎকার করে কান্না শুরু করলো। তাদের কান্না দেখে তখন আমারও কিছুটা খারাপ লাগছিলো। তখন মনে হলো অর্পা চাইলে তো বাঁচ্চাটা ফেলে দিয়ে মৌ, সানজিদার মতো বাঁচতে পারতো। আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারতো। আবার ভাবলাম বেঁচে থাকলে বিপদটা মনে হয় আমাকেই গ্রাস করতো! ভালোই হয়েছে আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে।
অর্পাকে শেষ শয্যায় শুয়িয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসলাম। মা আমাকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, "কি কারণে মেয়েটা সুইসাইড করলো রে?"
আমি খুব সহজ করেই মায়ের প্রশ্নের উত্তর দিলাম, "কোন ছেলের সাথে যেন রিলেশন ছিলো সে ঠকিয়েছে তাই সুইসাইড করেছে।"
মা বললো, "ঐসব জানোয়ার গুলোর মাঝে মনুষ্যত্ব বলে কিছুই নেই। সহজসরল মেয়েদের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে ঠকায়। নিজেরাও একদিন ঠকবে সেই ভয় নেই।"
মায়ের কথাশুনে আমি বললাম, "হ্যা মা ঠিক বলেছো। মানুষ এভাবে কেন যে মানুষকে ঠকায়!"
মায়ের জানোয়ার বলে গালি দেওয়াটা শুনে ভাবলাম ওদের মা-বাবাও বুঝি এভাবেই আমাকে কুত্তা, জানোয়ার গালাগাল দিচ্ছে। দিলে দিক! গালি দিলে আমার কি! দিক গালি। বেশি বেশি করে গালি দিক!
রুমের মাঝে গিয়ে আবারও আমি খিকখিক করে হাসতে শুরু করলাম।
অর্পার মৃত্যুর পর কেটে গেলে বেশকিছুদিন। এর মাঝে নেহাকেও অনেক কষ্ট রাজি করিয়েছি। আজ নেহাকে নিয়ে বন্ধুর ফ্লাটে যাওয়ার কথা। আর নেহাও যাবে বলে এতক্ষণে হয়তো বাসায় তৈরি হচ্ছে। নতুন মাংসের গন্ধে মোহিত হবো আজ আবার, প্রতিটি পেশির ভিন্ন ভিন্ন স্বাদে উন্মাদ হয়ে দেহের উত্তাপ্ত ঘামে ভেজাবো যুগলবন্দী শরীর। আহ! ভাবতেই যেন আর তর সইছে না।
বাসা থেকে বের হলাম নেহাকে নিয়ে বের হওয়ার উদ্দেশে। বন্ধুকেও ফোন করে কনফার্ম হয়েছি সব ঠিকঠাক আছে। রাস্তার মোড়ে গিয়ে রিকশায় উঠে বসতেই মায়ের ফোন আসলো। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই মায়ের কান্নার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আমি মাকে বললাম, "কি হয়েছে? কান্না করছো কেন?"
মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো, "জলদি বাসায় আয়।"
রিকশাওয়ালাকে থামতে বললাম। রিকশা থেকে নেমে দৌড়ে আমি বাসার দিকে ছুটলাম। নিশ্চিত বাসায় কোনো অঘটন ঘটেছে সেটা ঢের আন্দাজ করতে পারছিলাম। বাসায় ঢুকতেই দেখলাম মিহির রুমের সামনে দাঁড়িয়ে মা মিহিকে অনেক ডাকাডাকি করছে। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি হয়েছে মিহির?"
মা বললো, "কতক্ষণ যাবত ওকে ডাকছি কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছিনা। সকালে উঠে নাস্তাও করেনি আজ।"
মায়ের কথাশুনে আমি মায়ের সাথে মিহিকে ডাকতে শুরু করলাম। কিন্তু মিহির কোনো প্রতিউত্তর পেলাম না। অনেক ডাকাডাকি পর যখন কোনো সাড়াশব্দ মিললো না তখন একপর্যায় বাধ্য হলাম মিহির রুমের দরজা ভেঙে ফেলতে। যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। আমার আদরের বোনটি আমার ফ্যানের সাথে ঝুলছে। আমি দৌড়ে গিয়ে মিহির পা জড়িয়ে ওকে উঁচু করে ধরলাম। মিহির ঠান্ডা শীতল হয়ে যাওয়া পা দুটো আমাকে বলে দিলো, 'অনেক দেরি হয়ে গেছেরে ভাইয়া।' মায়ের কণ্ঠের চিৎকারে স্তব্ধ হয়ে গেল শহরের সব কোলাহল। পাগলের মতো হয়ে মাকে বললাম, "রশি কাটার জন্য কিছু একটা দাও।"
মা রান্নাঘর থেকে ধারালো একটি ছুড়ি এনে আমার হাতে দিলো। চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে বোনটাকে একহাতে বেষ্টন করে আরেক হাত দিয়ে রশিটা কাটতেই মিহি আমার কাঁধে মাথা নুয়িয়ে দিলো। বিছানার উপর শুয়িয়ে দিয়ে মিহির গলা থেকে রশি খুলতেই নিথর হয়ে পরে রইলো মিহির দেহ। মিহির সেই নিথর দেহ আর মায়ের কান্না আমাকে বাকরুদ্ধ করে ফেললো।
মিহির নীলবর্ণ মুখটা দেখতে সেসময় ঠিক সোহানার মতো হয়ে উঠেছিল! আর গলায় ফাঁসের সেই কালচে দাগটা অর্পার মতোই বিভৎস দেখাচ্ছিল সেসময়! বারবার সোহানা আর অর্পার মুখটা যেন মিহির মুখের উপর ভেসে উঠছিল। তীব্র যন্ত্রণায় আমি হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসে পড়লাম। মায়ের চিৎকার কতটা তীব্র যন্ত্রণাদায়ক হয় তা উপলব্ধি করতে পারছিলাম।
মিহির সাইডটেবিলের উপর রাখা সাদা একটি পেপার দেখে মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগে উঠলো। হাতে নিয়ে সে পেপারের মাঝে লেখাটা পড়ে যেন নিজেরই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসলো। এর পূর্বে এমন একটি পেপার মেহেরিনও আমার হাতে দিয়েছিল। যার মাঝে লেখা ছিলো,- Interpretation : Positive pregnancy.
আমার আর বুঝতে বাকি রইলোনা, আমার বোনটি আমারই মতো কোনোএক জানোয়ারের লালসার শিকার হয়ে আজ নিথর হয়ে শুয়ে আছে। তার কখনো বিচার হবে না! যেমনটা ইতিপূর্বে আমার বিচার কখনো হয়নি।
.
ডাকনাম ইমু ইমরান
©somewhere in net ltd.