নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যেহেতু বদলে গেছি তাই...

বদলে গেছি

ইমরান মামা

চাই না

ইমরান মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দাঁত পড়া সমগ্র-১

০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:০২

দাঁতগুলো হবে আমার রূপকথার বইয়ে আঁকা রাক্ষসের দাঁতের মত। নিদেন পক্ষে খরগোশের মত-- আম্মার দেখানো এ ধরনের ভয়েও আমি এত ভীত হই নি যতটা ভীত ছিলাম দাঁত তোলার ব্যাপারে। একটা সুতা দিয়ে পেঁচিয়ে হ্যাচকা টানে তোলা হবে দাঁত। সেও কী সহ্য করার মত! না। হোক আমার দাঁত রাক্ষসের মত, হোক খরগোশের মত।

এবার মা অন্য পথ ধরলেন। বলতে লাগলেন আমার খালাতো ভাই সুমন আতিক আর খালাতো বোন শাহানাজের পর্যন্ত দাঁত পড়েছে। ওদরে বয়স সাত হয়ে গেছে। আর আমি এখনও দাঁত ফেলতে দিচ্ছি না। আমার বয়সও বাড়ছে না। মা রীতি মত ধিক্কার দিতে থাকেন। আমি বরং বড় হব না তবু দাঁতে কাউকে হাত দিতে দিচ্ছি না। দাঁত নড়তে নড়তে পরোন্মুখ। তবু আপ্রাণ চেষ্টা চালাই দাঁত ধরে রাখতে। মুখের ভেতর জিভও নাড়াই কম। পাছে দাঁত না পড়ে যায়।

একদিন বৃষ্টির সকালে আমি আর আমার খালাতো বোন শাহনাজ ছাতা মাথায় যাচ্ছিলাম অতুল দা'র দোকানে। সে আমাদের স্বপ্নের দোকান। এক টাকায় পাওয়া যায় মেলা কিছু। আর যদি টাকাটাতে পাখির ছবি থাকে তা হলে পোয়া বারো। আমরা আজ আচার খাবো। শাহানাজের প্রস্তাব ছিল ক্রিম রোল খাওয়ার কিন্তু আমি তা নাকচ করে দিয়েছি। আমার দাঁত আমাকেই বুঝতে। দাঁত থাকতেই দাঁতের মর্যাদা দিতে হয়। যা হোক দোকান যাওয়ার পথে দেখি রাস্তার ধারে বসে রোমান নামের আমাদের বয়সী এক দুষ্ট (তখন মনে হয়েছিল) ছেলে টয়লেট সারছে। বৃষ্টিতে ভেসে সে পানি আসছে রাস্তায়। বোন আমার ছিছি করে উঠে। আমাকেও ছি ছি করতে হয়। আমি বরং বোনের চাইতে একটু বেশিই ছি ছি করি। বোনের সামনে বীর সাজার ক্ষীণ বাসনা হয়েছিল কি না জানি না তবে আমি বেশ রাগান্বিত হয়েই রোমানকে বলি এই রাস্তায় পায়খানা করিস কেন? বেচারার বেশ লাগে বোধ হয়। আর লাগবেই না কেন? এটা তো ওদের পাড়া। আর ওদের পাড়াতেই তো অতুলদা'র দোকান। এত যখন ওদের সম্পদ ওদের কে চোখ রাঙ্গানো নিশ্চয় বরদাস্ত করবে না ওরা। সে তার হাঁটু পর্যন্ত নামানো ইংলিশ প্যান্ট (হাফ প্যান্ট) পরে ঢ্যাং ঢ্যাং করে আসে আমার সামনে। আর কিছু বুঝতে না দিয়ে আমার মুখ বরাবর এক পাঞ্চ কষে দেয়। হ্যা পড়েছে। পড়েছে আমার প্রথম দাঁত। অবশেষে আমার মায়ের আশা পূর্ণ করে আমি সাত বছর বয়সে পা রাখতে পারলাম। অবশ্যই রোমান তখন থেকে আমার কাছে সবচেয়ে ভাল ছেলে। ও ঘুষিটা না মারলে তো আর আমি সাত বছর বয়সে পা রাখতে পারতাম না।

এর পরের দাঁত টা ফেলে দিয়েছিলেন কার্জন ভাই। না সেটা তেমন বড় ইতিহাস না। পাড়া মহল্লার সেকালের ফুটবল খেলায় আমার মত তাল পাতার সেপাই আর অল্প বয়স্কদের কপালে গোল কিপার হওয়াই জুটত। যখন আমার অন্য সবল সুঠাম বন্ধুরা গোলে বল ঢুকিয়ে দৌড়ে বেড়াতো সারা মাঠ তখন আমি বারে দাঁড়িয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাটতাম। একারণে কোন কালেই আমি ফুটবল খেলায় মজা পাই নি। তবু কার্জন ভাইয়ের নির্দেশে, আমাদের স্বপ্নের নায়কের নির্দেশে আমাকে গোল বারে দাড়াতে হতো। গোল কিপার হওয়াটা তেমন কঠিন কিছু নয়। সোহেল ভাইয়া শিখিয়েছিল বল নিয়ে ওই দলের প্লেয়ার গোলের কাছে আসলেই তার পায়ের কাছে শুয়ে পড়তে হবে। এ তো বেশ সোজা কাজ। শুয়ে পড়তাম বলে বড়রা তেমন জোরে বলও মারত না। কিন্তু সেদিন কার্জন ভাই একটু দূর থেকেই বল শট করলেন। আমার আর শুয়ে পড়া হল না। তবে দাঁতটা পড়ে গেল। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি সুমনের সমান হয়ে গেলাম। আমাদের দুজনেরই দুইটা করে দাঁত পড়েছে।

(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:২০

ধ্রুবমেঘ বলেছেন: চমৎকার হয়েছে। চলুক আপনার দাঁত পড়ার কাহিনী।

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:২৬

টিয়াপাখি বলেছেন: :) :)খুব সুন্দর হয়েছে।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:২৭

সুবিদ্ বলেছেন: দাঁতফেলা নিয়ে অনেক ভীতিকর অভিজ্ঞতা হয়েছে ছোট্টবেলায়... কী যে চিৎকার দিতাম:(

ভালো লাগছে, চলুক...

৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

বড় বিলাই বলেছেন: :D :D :D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.