![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১) তাজহাট জমিদার বাড়ীঃ
রংপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পুর্বে লালবাগ নামক এলাকায় অবস্থিত তাজহাট জমিদার বাড়িটি। বৃহত্তর রংপুরে যতগুলো প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, তার মধ্যে তাজহাট জমিদার বাড়ি অন্যতম। জমিদার বাড়িটি অনেকের কাছে তাজহাট রাজবাড়ি হিসেবে পরিচিত।
বিংশ শতাব্দীতে বৃহত্তর রংপুর শাসন করতেন তৎকালীন স্বনামখ্যাত জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায়। মহারাজা গোপাল ছিলেন শক্তিশালী ও পরাক্রমশালী শাসক। তিনি প্রজাদের ভালো-মন্দ বিচার বিশ্লেষণ করে সবসময় তাদের পাশে থাকতেন। তার জমিদারিতে কোনো প্রজাই অসন্তুষ্ট হতেন না। তিনি ব্রিটিশদের অনুগত জমিদার থাকলেও প্রজাদের কাছে তার গ্রহণযোগ্য ছিল অধিক। প্রজাদের অনুরোধে রাজা গোপাল একটি স্থাপনা তৈরি করতে সম্মত হন। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি রাজা গোপাল প্রায় ২ হাজার রাজমিস্ত্রির সহায়তায় একটি জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। সেই জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে তাজহাট জমিদার বাড়ি হিসেবে সুপরিচিত। বাড়িটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয় প্রায় দেড় কোটি টাকা।
বাড়িটির চারদিকে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ শোভা, ফুলের বাগান, উত্তর ও দক্ষিণাংশে কামিনী, মেহগনি, কাঁঠাল ও আমবাগান। ঢাকার আহসান মঞ্জিলের মতো দেখতে এই জমিদার বাড়িটির তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রয়েছে রাজা গোপালের ব্যবহৃত নানা জিনিস। প্রাসাদের বড় আকর্ষণ সামনের দিকের শ্বেতপাথরের সিঁড়ি। প্রাসাদটির সামনের বদ্বীপের মাঝে আছে মার্বেল পাথরের এক ফোয়ারা। তাজহাট জমিদার বাড়িটি লাল ইট, শ্বেত পাথর ও চুনা পাথর দ্বারা নির্মিত বিধায় দেখতে দৃশ্যত এর একটি নান্দনিক রূপ রয়েছে। চারতলা বিশিষ্ট এই জমিদার বাড়িটির ভেতরে রয়েছে অসংখ্য কক্ষ, গোসলখানা ও অতিথি শয়নশালা।
২০০৫ সালের আগে জমিদার বাড়িটি তাজহাট রাজবাড়ি হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। ২০০৫ সালে তৎকালীন সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি জাদুঘর হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০৫ সাল পরবর্তী সময় থেকে বাড়িটি তাজহাট জমিদারবাড়ি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী এই বাড়িটি পরিদর্শন করতে আসে। বাড়িটি জাদুঘরে রূপান্তরিত হওয়ার পর থেকে রংপুরবাসীর কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রাচীন এই রাজবাড়িটি শুধু জমিদার গোপাল রায়ের স্মৃতিই বহন করছে না, বরং প্রাচীন ঐতিহ্য বহন করে চলছে। সে কারণে জমিদার বাড়িটি বাংলাদেশের গর্বে পরিণত হয়েছে
যেভাবে যেতে হবেঃ
আগমনী এক্সপ্রেস, এস আর ট্রাভেলস, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন সহ বেশ কয়েকটি বাস গাবতলী, মহাখালী ও কল্যানপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ভাড়া ২৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। রংপুর শহর থেকে লালবাগ এলাকার দুরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। অটোরিক্সা, রিক্সা অথবা গাড়ীতে করে যেতে পারেন তাজহাট জমিদার বাড়ী।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকার জন্য রংপুর শহরই উত্তম। এখানে অনেকগুলো ভাল মানের হোটেল রয়েছে।
অনুমিত খরচঃ
প্রবেশ ফি
জনপ্রতি প্রবেশ ফি মাত্র ১০ টাকা। আর গাড়ী পাকিং ৫৭ টাকা।
সময়সূচীঃ
১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ঃ
সোমবার : দুপুর ২.৩০ হতে ৬ টা পর্যন্ত
শুক্রুবার : সকাল ১০ টা হতে ১২.৩০ ও ২.৩০ হতে ৬ টা পর্যন্ত
শনি-মঙ্গলবার : সকাল ১০ টা হতে ৬ টা পর্যন্ত
১ অক্টোবর থেকে ৩০ মার্চঃ
সোমবার : দুপুর ১.৩০ হতে ৫ টা পর্যন্ত
শুক্রুবার : সকাল ৯ টা হতে ১২.৩০ ও ২.০০ হতে ৫ টা পর্যন্ত
শনি-মঙ্গলবার : সকাল ৯ টা হতে ৫ টা পর্যন্ত ।
২) বালিয়াটি জমিদার বাড়ীঃ
মানিকগঞ্জ জেলার বালিয়াটিতে অবস্থিত উপনিবেশিক স্থাপত্যের অন্যতম নির্দশন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার জুড়ে অবস্থিত এই প্রাসাদ কমপ্লেক্সটির ৭টি দক্ষিনমুখি প্রাসাদ আছে। উনিশ শতকের জমিদারদের জমিদার বাড়ির এক অনন্য নিদর্শন বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি। যদিও মানিকগঞ্জ তার পূর্বের খ্যাতি আর যশ হারিয়ে ফেলেছে অনেক আগেই তবু এই বালিয়াটি জমিদার বাড়ি এখনও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে তার আভিজাত্য আর ঐতিহ্যকে মনে করিয়ে দেবার প্রবল আকাঙ্খায়।
জমিদার বাড়ির পৌছার আগেই চোখে পড়বে বেশ সুন্দর একটা পুরনো স্থাপনার স্কুল। ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়। এ স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অন্যতম সদস্য হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। তার সহোদর ঈশ্বরচন্দ্র রায় চৌধুরীর নামেই এই স্কুলটির নামকরণ করা হয়। স্কুলটির সামনেই বিশাল প্রশ্বস্ত মাঠ।
স্কুল ছেড়ে আর একটু সামনে মোড় ঘুরতেই চোখ জুড়িয়ে দেখা মিলবে সিংহদরজার, তিন তিনটি ; আর অনুপম সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়ির। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মূলত ভিন্ন ব্লকে প্রায় একই রকম দেখতে পাঁচটি জমিদারবাড়ির সমন্বয়। তার মধ্যে দক্ষিণমুখো প্রশ্বস্থ তিনটি স্থাপনা রাস্তার দিক থেকে চোখে পড়ে। আর তার আগেই চোখ আটকে যাবে অনন্য স্থাপনার আলাদা আলাদা তিনটি সিংহ ফটকে। প্রতিটি ফটকের উপর দন্ডায়মান তেজস্বী সিংহ। জমিদার বাড়ির গৌরবময় ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেয় মুহুর্তে। ভেতরের প্রতিটি দালান নকশাখচিত আর করন্থিয়ান ডিজাইনের গোলাকার কলামে সারিবদ্ধভাবে সুসজ্জিত যা লম্বায় প্রায় ৪০০ ফুট।
ভেতরে ঢুকেই বিক্ষিপ্ত মন শান্ত হয়ে আসবে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির অনুপম নির্মানশৈলী আর হারানো জাঁকজমকের অতীত দেখে। পুরো জমিদার বাড়িটি প্রায় ২০ একর জমির উপর তৈরি। পুরো প্রাঙ্গনে বিভিন্ন মাপের ঘর রয়েছে ২০০টির উপরে। প্রথমে ঢুকলেই সারি সারি সাজানো সিন্দুক যা প্রদর্শনের জন্য অপেক্ষা করে আছে। বলে রাখা ভালো এই জমিদার বাড়িটি কিছুদিন আগেও সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী আর কিছু দপ্তরের অধীনে দখল ছিল। মূলত তাদের সরিয়ে দখলমুক্ত করাই বর্তমান প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের সাফল্যমাত্র। এ বাড়ির সমস্ত সরঞ্জাম, তৈজষ, মূল্যবান স্মৃতিসামগ্রী সব লুট হয়ে গেছে সেই ৪৮ সালে। তারপর ধীরে ধীরে সাধারণ লোকজনের হাতেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এইসব ভবন আর ভবনের আসবারসহ অন্যান্য। বিশ কিছু সামগ্রী স্থানান্তর করা হয়েছে জাতীয় যাদুঘর, শাহবাগে। আর বালিয়াটিতেই একটা রুমে অবশিষ্ট কিছু মালামাল রক্ষিত আছে। সে রুম এখন তালাবদ্ধ। ঐ রুমই ছিল জমিদার বাড়ির মূল বৈঠকখানা।
প্রথম বাড়ি পেরিয়ে ভেতরে গেলে চারটি মহল। যা জমিদারবাড়ির অন্দরমহল নামে পরিচিত। পিনপতন নিরবতা। বাইরের প্রচন্ড গরমের মধ্যেও অন্দরমহলের ভেতর শীতল আবহাওয়া। সব কিছু মিলে কেমন যেন অন্যরকম অনুভূতি এনে দেয় মন, মননে, শরীরে।
অন্দরমহলের উত্তরে বিরাট বিরাট ঘাট বাঁধানো পুকুর। টলটলে জলের বাঁধানো ঘাটে বসে কাটিয়ে দিতে পারেন বেশ কিছুটা সময়। আশা করি ভাল লাগবে। তাহলে ঘুরে আসুন বালিয়াটি জমিদার বাড়ি।
যেভাবে যেতে হবেঃ
বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ঢাকা থেকে ৩৫ কি. মি. উত্তরপূর্বে। বালিয়াটির পঞ্চিমে ৪ কি.মি গেলে মানিকগঞ্জ সদর। প্রায় ঘন্টা দেড়েক পথ পেরুলে সাটুরিয়া বাজার। সাটুরিয়া বাজার থেকে ১০ মিনিটের পথ, রিকসায়।
কোথায় থাকবেনঃ
থাকতে হবে মানিকগঞ্জ শহরের কোন হোটেলে। এখানে বেশ কয়েকটি থাকার হোটেল আছে। তবে সবই মাঝারি মানের। তবে জমিদার বাড়ীর খুব কাছেই নাহার গার্ডেন নামে একটি পিকনিক স্পট আছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
৩) ভাওয়াল রাজবাড়ীঃ
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর সদরের রানীবিলাসমনি স্কুলের পাশে অবস্থিত ভাওয়াল রাজার এই প্রসাদটি অবস্থিত। একটি বিরাট নাগলিঙ্গম ফুলের গাছ দরজার ঠিক পরেই। সারা বছরই ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকে গাছটা। দরজার ওপর জেলা পরিষদের সাইনবোর্ড। ১৯৭৮ সালে বাড়িটিকে জেলা পরিষদ ভবন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রবেশমুখ পার হলেই প্রশস্ত একটি বারান্দা, এরপর একটি হলঘর। ওপরে ওঠার জন্য আগে শাল কাঠের প্রশস্ত সিঁড়ি ছিল। নাটমন্দির রয়েছে বাড়ির ঠিক মধ্যিখানে। এটি লম্বালম্বি একটি বড় টিনের ঘর। মঞ্চটি মাঝখানে। লক্ষ্নৌয়ের বাইজিরাও দাওয়াত পেত নাচার জন্য। রাজবাড়ির অন্যান্য অনুষ্ঠানও হতো এই ঘরে। জমিদার শিকারে গেলে যদি কাউকে মনে ধরত হাতি পাঠাতেন তাঁকে উঠিয়ে আনার জন্য। পশ্চিমের দোতলা ভবনে তাঁর জন্য ঘর বরাদ্দ করতেন। মনোরঞ্জনের জন্য রাজবিলাস নামের আরেকটি কামরা ছিল। রাজার বিশ্রামাগার হাওয়ামহলও ছিল এই ভবনের নিচতলায়। দক্ষিণ দিকের খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষটি হচ্ছে ’পদ্মনাভি’। মাঝের বড় ঘরটির নাম ’রানিমহল’ ছোটবড় মিলিয়ে ৩৬০টি কক্ষ আছে এই ভবনে।
রাজবাড়ি ঘুরে চলে আসতে পারেন রাজপরিবারের শ্মশানে যার নাম শ্মশানেশ্বরী। এটি এক কিলোমিটার উত্তরে চিলাই নদীর তীরে। পুরনো একটি শিব মন্দির আছে। একটি শিখর কাঠামোর সমাধি মন্দিরও আছে, ফুল-লতা-পাতায় অলংকৃত। কম বয়সী আরো তিনটি সমাধি মন্দির রয়েছে এখানে। রাজবাড়ি আর শ্মশানঘাটের মাঝখানে আছে শালবন। শালবন থেকে খানিক এগোলে ‘রাজা অধর চন্দ্র স্কুল ও কলেজ’ দেখা যায়।
ইতিহাসঃ
প্রায় ১৫ একর জায়গার ওপর নির্মিত ভাওয়াল রাজবাড়ি। জমিদার লোকনারায়ণ রায় নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন, শেষ করেন রাজা কালিনারায়ণ রায়। ভাওয়াল রাজারা বেশি আলোচনায় আসে পরিবারের মেঝো সন্তান রমেন্দ্রনারায়ণ রায়ের কারণে। তিনিই মরে গিয়ে আবার ফিরে আসার ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্য দার্জিলিং গিয়েছিলেন। চাউর হয়েছিল তিনি মারা গেছেন। আসলে রানি বিভাবতী ও ডাক্তার আশুতোষ দাশগুপ্ত ষড়যন্ত্র করে তাঁকে বিষ প্রয়োগ করেন। ভাড়াটিয়া ডোম দিয়ে চিতায় পোড়ানোর ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে ডোমরা না পুড়িয়েই চলে আসেন। রমেন্দ্র নারায়ণ জেগে ওঠেন। ৯ বছর পর স্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়ে ভাওয়ালে এসে উপস্থিত হন। তিনি জমিদারি দাবি করে মামলা ঠুকে দেন। ব্রিটিশ আমলে ঘটনাটি কলকাতায়ও খুব ঝড় তোলে।
যেভাবে যেতে হবেঃ
ঢাকা হতে যেতে হবে গাজীপুর চৌরাস্তা। সেখান হতে ডান দিকে রাস্তাটি গিয়েছে জয়দেবপুর সদর বরাবর। জয়দেবপুর সদর রেল ক্রসিং পার হয়ে সামান্য সামনে এগিয়ে গেলেই রানী বিলাসমনি স্কুল। এই স্কুলের ঠিক বিপরীত পাশেই ভাওয়াল রাজবাড়ীটি অবস্থিত। আর রাজবাড়ী হতে ১ কিমি উত্তরে এগিয়ে গেলেই শ্মশান। রাজবাড়ী হতে শ্মশান রিক্সা করে যেতে লাগে মাত্র ১০ মিনিট।
কোথায় থাকবেনঃ
ঢাকা থেকে সরাসরি এটি দর্শন করে আবার দিনের দিনই ফিরে যাওয়া যায়। তবে কেউ এখানে থাকতে চাইলে আবাসিক হোটেলে থাকতে পারেন। এখানকার থাকার মান খুব একটা উন্নত নয়।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থানঃ
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ।
৪) পুঠিয়া রাজবাড়ীঃ
রাজশাহী শহর থেকে ৩৪ কিলোমিটার এবং রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে ও পুঠিয়া বাজারের দক্ষিণ পার্শ্বে দ্বিতল বিশিষ্ট আয়তাকার পরিকল্পনায় নির্মিত পুঠিয়া রাজবাড়িটি একটি আকর্ষণীয় ঐতিহাসিতক স্থাপনা।
পুঠিয়া রাজবাড়ী একটি দোতলা বিল্ডিং। বেশ উঁচু ও বড়। রাজবাড়ীর থামগুলোও অনেক মোটা। রাজবাড়ীর সামনে বিশাল মাঠ, দুই দিকে দুটি বিশাল দিঘি। রাজবাড়ীর দরজা বা বারান্দায় দাঁড়িয়ে সামনে মাঠের ওপারে উত্তর দিকে চোখে পড়ে একটি বিশাল আকৃতির চার থাকবিশিষ্ট পিরামিডের আকৃতির বিশাল একটি মন্দির। সেটিকে বলা হয় দোলমঞ্চ। মূল ভবনে প্রবেশপথের দুই দিকে অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিমে ভবনটি মোটামুটি সমানভাবে বিস্তৃত। ভবনটির সামনে চওড়া একটা বারান্দা। মাঝখানে বিশাল থাম ধরে আছে ব্যালকনি ও ছাদ। পুরো ভবনটির দেয়ালজুড়ে নানা রকম নকশার কারুকাজ এখনো মনোমুগ্ধকর। প্রাসাদের মূল দরোজাটিও বিশাল ও কারুকার্যময়। দরোজা দিয়ে ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়ে অপূর্ব টেরাকোটাখচিত বিশাল আকৃতির একটা মন্দির। দিনাজপুরের কান্তজির মন্দিরের আদলে নির্মিত সে মন্দিরের নাম পঞ্চরত্ন গোবিন্দ মন্দির। মন্দিরের দেয়ালজুড়ে পোড়া মাটির ফলকে খচিত বিভিন্ন পৌরাণিক ও ধর্মীয় কাহিনির চিত্র। সেগুলো বেশ আকর্ষণীয়। নিয়মিত সে মন্দির থেকে আষাঢ় মাসে বিশাল আকারে রথযাত্রা উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখানে রয়েছে একটি শিক মন্দির। শিব মন্দিরটাই পুঠিয়া রাজবাড়ীর প্রধান আকর্ষণ। পুঠিয়া রাজবাড়ী এলাকায় ঢোকার মুখেই একটা দিঘির পাড়ে উঁচু বেদির ওপর শিব মন্দিরটি নির্মিত। ১৮২৩ সালে রানি ভুবন মোহিনী দেবী এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরে রয়েছে পাঁচটি চূড়া। এ মন্দিরের অন্য নাম পঞ্চরত্ন শিব মন্দির।
যেভাবে যেতে হবেঃ
রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে রিক্সাযোগে মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ, ভাড়া মাত্র পাঁচ টাকা। রাজশাহী শহর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ৩৪ কিলোমিটার এবং নাটোর থেকে ১৮ কিলোমিটার ভাড়া যথাক্রমে ২০ টাকা ও ১৫ টাকা।
কোথায় থাকবেনঃ
পুঠিয়াতে জেলা পরিষদের দুইটি ডাকবাংলো আছে যেখানে নির্ধারিত ভাড়া পরিশোধ করে থাকা যাবে। তবে আসার পূর্বেই ডাকবাংলোতে কক্ষ বরাদ্দ নিতে হবে জেলা পরিষদ থেকে। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের ফোন নং ০৭২১-৭৭৬৩৪৮ এছাড়া পুঠিয়া বাসস্ট্যান্ডের পাশে একটি বেসরকারী আবাসিক হোটেল রয়েছে। সেখানেও থাকতে পারেন।
৫) দিনাজপুর রাজবাড়িঃ
দিনাজপুর রাজবাড়ি দিনাজপুর শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধ্বংসপ্রাপ্ত নিদর্শন মাত্র। আদিতে প্রতিরক্ষা পরিখা ও উচুঁ প্রাচীর বেষ্টিত দিনাজপুর রাজবাড়ির বর্তমান পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তুপে প্রবেশের জন্য পশ্চিম দিকে একটি উচুঁ খিলানপথ রয়েছে। প্রবেশ পথের বাম দিকে মূল প্রাসাদ এলাকার মধ্যে খোলা জায়গায় রয়েছে একটি কৃষ্ণ মন্দির। ডানদিকে রয়েছে প্রাসাদের বহির্বাটির কিছু ধ্বংসাবশেষ ও অপর একটি প্রবেশ পথ। বর্গাকার চত্বরটির পূর্বপার্শ্বে রয়েছে চত্বরমূখী সমতল ছাদ বিশিষ্ট একটি মন্দির। চারটি সেমি-কোরিনাথিয়ান স্তম্ভের উপর মন্দিরের সামনের বারান্দা এবং অপর এক সেট কলামের উপর মূল হল ঘরটির ছাদ ন্যস্ত।
এ সকল দালান-কোঠা এবং পূর্ব ও দক্ষিণের দুটি বৃহৎ দিঘি, পরিখা, বাগান, একটি বিলুপ্ত চিড়িয়াখানা, একটি টেনিস কোর্ট, কাচারি ও কুমার হাউসসহ রাজবাড়িটি প্রায় ১৬.৪১ একর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। মূল মহল ও এর সংলগ্ন পরিখা সম্ভবতঃ অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপীয়, মুসলিম ও হিন্দু রীতির এক অদ্ভুত সংমিশ্রণে, যা খুব একটি দৃষ্টিনন্দন হয়নি। রামডাঙ্গা নামক দুটি সমান্তরাল পরিখা প্রাসাদটি ঘিরে ছিল। পরিখাটি সম্ভবত আলীবর্দী খানের শাসনামলে রংপুরের ফৌজদার সৈয়দ আহমেদ খানের আক্রমণের পরই রামনাথ খনন করেছিলেন।
আয়না মহল নামে পরিচিত পূর্বমুখী দ্বিতল মূল প্রাসাদটির অধিকাংশই এখন ধসে পড়েছে। এ ধ্বংসাবশেষে অথবা টিকে থাকা সামান্য কিছু নিদর্শনের মাঝে বা চুর্ণ-বিচুর্ণ পাথরের কোথাও এর পূর্বের কাচের মোজাইক চোখে পড়ে না। পূর্বদিকের ৪৫.৭২ মিটার প্রাসাদে ৩.০৫ মিটার প্রশস্ত একটি বারান্দ রয়েছে। ব্যালকনির উভয় পার্শ্বে দুটি প্রশস্ত প্যাঁচানো সিড়ি দোতালায় উঠে গেছে। সম্মখভাগের বারান্দাটির নিচে রয়েছে গ্রিক আয়োনিক রীতির স্তম্ভের সারি। জোডায় জোড়ায় স্থাপিত স্তম্ভগুলিতে আবার রয়েছে গোলাকৃতির ব্যান্ড। একটি মাত্র আয়তাকার প্যানেল ব্যতীত উপরের প্যারাপেটটি সমতল। প্যারাপেট থেকে সামান্য উচু আয়তাকার প্যানেলটিতে রয়েছে রাজকীয় চিহ্নের মাঝে রিলিফ করা মুখোমুখি দুটি হাতি ও মুকুটের নকসা। মহলটির মেঝে সাদা-কালো মার্বেল পাথর দ্বারা এবং ছাদ, বিশেষ করে দরবার হল, জলসা হল, তোষাখানা ও পাঠাগার, স্টাকো পদ্ধতিতে চকচকে করা হয়েছে।
আশেপাশে যা পাবেনঃ
কড়াই বিল
দিনাজপুর শহর হতে পশ্চিমে ১৫ কিমি দূরে বিরল উপজেলায় কড়াই বিলের অবস্থান। শীতকালে এখানে সাইবেরিয়া অঞ্চল হতে প্রচুর পাখির আগমন ঘটে।
সিংড়া ফরেস্ট
বীরগঞ্জ উপজেলার দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও মহাসড়কের পূর্বে সিংড়া ফরেস্ট অবস্থিত। এই বনভূমিতে প্রচুর শালগাছ দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া ইদানিং বন বিভাগের লাগানো ইউক্যালিপ্টাস ও আকাশমনি গাছ বনকে করেছে আরো সমৃদ্ধ। বনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট একটি নদী দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে দেয়।
হিলি স্থলবন্দর
দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলায় হিলি স্থলবন্দর অবস্থিত। এটি দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ৬০ কি: মি: দক্ষিনে জেলা সীমানায় অবস্থিত। হিলি স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর উপজেলা এবং ভারত অংশে রয়েছে দক্ষিন দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট। বন্দরের আমদানী ও রফতানী হয় সড়ক পথে।
যেভাবে যেতে হবেঃ
প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে দিনাজপুর। বাস ও ট্রেন দুই ভাবেই যাওয়া যায়।
ট্রেনঃ ট্রেনে যাওয়া সবচাইতে আরামদায়ক ও বুদ্ধিমানের কাজ। ঢাকার কমলাপুর থেকে ২টি আন্তঃনগর ট্রেন দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। দ্রুতযান এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে সন্ধ্যা ৭.৫০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং দিনাজপুর গিয়ে পৌছায় সকাল ৫.১০ মিনিটে। অপরদিকে একতা এক্সপ্রেস সকাল ৯.৫০ মিনিটে কমলাপুর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭.২০ মিনিটে দিনাজপুর গিয়ে পৌছায় ।
দ্রুতযান এক্সপ্রেস > বুধবার > ঢাকা থেকে ছাড়ে ১৯:৫০ মি. > দিনাজপুর পৌছায় ০৫:১০ মিনিটে
দ্রুতযান এক্সপ্রেস > বুধবার > দিনাজপুর থেকে ছাড়ে ০৮:২০ মি. > ঢাকায় পৌছায় ১৮:১৫ মিনিটে
একতা এক্সপ্রেস > মঙ্গলবার > ঢাকা থেকে ছাড়ে ০৯:৫০ মি. > দিনাজপুর পৌছায় ১৯:২০ মিনিটে
একতা এক্সপ্রেস > সোমবার > দিনাজপুর থেকে ছাড়ে ২২:০০ মি. > ঢাকায় পৌছায় ০৭:৩৫ মিনিটে
বাসঃ ঢাকা-দিনাজপুর বাস সার্ভিস ও খুব ভাল। রাস্তা ভাল হওয়ায় বাসে যেতে কোন প্রকার সমস্যা হয়না। ঢাকার গাবতলী হতে নাবিল পরিবহন, হানিফ পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন সহ বেশ কয়েকটি বাস সার্ভিস রয়েছে। তাছাড়া উত্তরা হতেও কিছূ পরিবহন দিনাজপুর যায়।
কোথায় থাকবেনঃ
দিনাজপুর শহরে থাকার জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কপোর্রেশন এর মোটেল সহ অনেকগুলো ব্যাক্তিমালিকানাধীন হোটেল রয়েছে। আপনি চাইতে এখানে থাকতে পারেন। হোটেল ডায়মন্ড, পূর্নভবা, েহাটেল আল রশিদ উল্লেখযোগ্য।
েহাটেল বুকিং এর জন্য নিচের নাম্বারে েযাগােযাগ করতে পারেন ঃ
পর্যটর েমাটেল ঃ ০৫৩১- ৬৪৭১৮
েহাটেল তিলত্তমা ঃ ০৫৩১- ৬১২৭৯
েহাটেল আল রশিদ ঃ ০৫৩১-৬৫৬৫৮, ৬৪২৫১
েহাটেল েগাল্ডেন টাওয়ান ঃ ০৫৩১- ৬৫৯২০
েহাটেল ইউনিক ঃ ০৫৩১-৫২২০৩, ০১৭৩৬৩৩৫২৬৪।
খরচপাতিঃ
ট্রেন ভাড়া
প্রথম শ্রেনী বার্থ কম্পার্টমেন্ট > ৫৩৫ টাকা
প্রথম শ্রেনী সিট > ৩৭০ টাকা
েশাভন চেয়ার > ২৫০ টাকা
েশাভন সিট > ১৮০ টাকা
বাস ভাড়া
ঢাকা থেকে দিনাজপুর ঃ ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা
রংপুর থেকে দিনাজপুর ঃ ১০০ টাকা
হোটেল ভাড়া
পর্যটন েমাটেল ঃ ৮০০ – ১৫০০ টাকা
হোটেল ডায়মন্ড ঃ ৫০০ – ৬০০ টাকা
েহাটেল পুর্নভবা ঃ ৩০০ – ৫০০ টাকা
েহাটেল আল রশিদ ঃ ৩০০ – ৫০০ টাকা
কাছের দর্শনীয় স্থানঃ
দিনাজপুরের মাটির বাড়ি
©somewhere in net ltd.