নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শেরপা

দেখতে চাই ধরনী

মুনতাসির

আমি পাহাড়ে চড়ি,সাগরে ডুবি, পৃথিবী আমার প্রেম

মুনতাসির › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুই চাকায় কসোভো

০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৯


ঢাকা থেকে ক্রিস্টিনা পৌঁছানোর পর দুদিন কেটেছে বিশ্রামে। পথে নামার আগের দিনই সব রেডি করে। ফেললাম। দলে আমি ছাড়াও আছেন শামিসা আখতার ও মোরশেদ অম্ললাম। তিনজনের জন্য দুটি সাইকেল, এর মধ্যে একটি ট্যান্ডেন।

২০ সেপ্টেম্বর সাতসকালে রাজধানী শহর প্রিন্তিনা থেকে মিত্রোভিস্তার পথ ধরি। শুরুতে রাস্তা বেশ মসৃণ। তবে ছোট ছোট চড়াই আছে। প্রথম প্যাডেল মারার পরই বুঝে ছিলাম হ্যান্ডেলবারটা নড়বড়ে। শক্ত করার জন্য দরকার একটা সাধারণ রেজ, আমাদের কাছে তা নেই। ছুটির সকালে দোকানপাটও বন্ধ। আমাদের দরকার একটা ওয়ার্কশদ। কিন্তু গত দুই দিনে কফিশপ আর গাড়ির শোরুম ছাড়া আর কিছু চোখে পড়েনি।

শহরতলির কোলাহল কমতেই একটা মেকানিকের দোকান চোখে পড়ল। সেখানে থামলাম। রেঞ্জ হাতে নিয়ে সাইকেলের হ্যান্ডেলবারটা টাইট করে নিলাম। যাক আর চিন্দ্র নেই। এবার চলা শুরু হলো-কখনো দুই পাশে পড়ল দোকানপাট, কখনো অকরিত ধূসর-সবুজ প্রান্তর। বাড়িঘরগুলো মাঝেমধ্যে পাহাড়ের ব্যাকড্রপে যেন কম্পিউটরের ডেস্কটপ ওয়ালপেপার।

সার্বিয়ার সাবেক প্রদেশ কসোভো ২০০৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল। বলকান অঞ্চলের ছোট দেশ। এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়ার পথও তা-ই সংক্ষিপ্ত। এই যেমন আজকের গন্তব্য মাত্র ১০ কিলোমিটার। এই পথে বারকয়েক বিশ্রাম আর চড়াই-উতরাই পেরিয়ে পৌছে গেলাম হোটেলে। তবে বিপদে পড়লাম হোটেলে প্রবেশ করে। সাইকেল রাখার আলাদা জায়গা নেই। এখন কী হবে? ব্যবস্থা করলেন ছোটেলের কর্মচারীরাই।

তাঁদের এই সামান্য সৌজন্যই যেন আতিথেয়তার জানান দিল।

কাছে। সার্ব আর অলবেনিয়ান গোষ্ঠীর বিভক্তি নিয়োনিংপ্তা এলাকাটা সার্বিয়ার সীমান্তের আর রাজনৈতিক ঐনাপোড়েন সাঝেমধ্যেই চরমে আতিথেয়তা আর অদ্ভুত আন্তরিকতায়। কারণ, পৌঁছে যায়। তবে আমাদের স্বাগত জানাল খাবার, দুপুরে খেতে গিয়ে অনুভব করলাম এখানে খাবার যত সুস্বাদু, তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ করে মানুষের ব্যবহার। দাম নিয়ে অদ্ভূত সততায় বারবার জিজ্ঞাসা করেন, 'দাম ঠিক হয়েছে তো?'

এ শহরে কোনো হোটেল নেই

মিশ্রেনিৎপ্তায় রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে প্রখর রোদের মধ্যেই দক্ষিণমুখী যাত্রা শুরু হলো। রাস্তাজুড়ে যানবাহনের অবিরাম শব্দ। দুপুর নাগাদ ক্লিনায় পৌঁছে গেলাম। ক্যাফে আর রেস্তোরাগুলোয় উপচে পড়ছে মানুষে, টেবিল ছড়িয়ে গেছে ফুটপাত পর্যন্ত। ক্লিনা আমাদের কাছে তৎক্ষনাৎ এক প্রাণবায় জায়গা বলে মনে হলো, গতি আর জীবনের ছন্দে ক্যাফে আর কথোপকথনের ঘেরাটোপে বিশ্রাম ভরপুর। প্রথমে ভেবেছিলাম এখানেই রাত কাঠিব। নেওয়ার আইডিয়াটা লোভনীয় লাগছিল। কিন্তু হায়, হোটেল খুঁজতে গিয়ে হতাশ হলো, ক্লিনর বলছে, একমাত্র অপশন কয়েক কিলোমিটার দূরে শহরের ভেতরে কোনো হোটেল নেই! গুগল ম্যাপ এক হাইওয়ে মোটেলে। কিন্তু সেখানে কোন পথে গেলে ভালো হবে?
আমাদের দ্বিধাগ্রস্ত দেখে ঠিক তখনই এক তরুণী এগিয়ে এল। একমুহূর্ত না দেবে হাসিমুখে সাহায্যের প্রস্তাব দিল। শুধু দিকনির্দেশনা নয়, বাক

রাস্তা ধরে আমাদের হেঁটে নিয়ে গেল একটা যোড় পর্যন্ত। তারপর একার সড়ক দেখিয়ে বলল, এই পথেই যেতে হবে।

এভাবেই পৌঁছে গেলাগ হোটেল নোরায়।

১৬ শতকের এক ঘরে

কসোভোর পাহাড়ি পথে রোদ বড় যন্ত্রণা দেয়। দুপুর গড়াতেই অসহনীয় হয়ে ওঠে তাপ। তৃতীয় দিন তাই প্রথম আলোয় ভোরের ঠান্ডা বাতাস গায়ে দেখে শুরু করলাম। আজকের পথ তুলনায় ছোট। তবে অবিরাম চড়াই। একটানা উঠতে হচ্ছে।

আমরা লীরে ধীরে উঠছিলাম। পথ কঠিন হলেও একধরনের প্রশান্তি অনুভব করছিলাম। প্রতিটি বাঁক আমাদের মনোযোগকে আরও গানীর করছিল।

পেয়া শহরে ঢুকতেই গাড়ির ভিড়ে গতি কমে গেল। অনেক সাইকেল আরোহীর পক্ষে হয়তো ভিড়ের ফাঁক গলে যাওয়া সহজ, কিন্তু টান্ডেম সাইকেল নিয়ে সেটা করা কঠিন। দীর্ঘ ফ্রেমে বাঁক নেওয়া যায় না সহজে। শেষমেশ নামতে হলো, সাইকেল ঠেলে হাঁটতে লাগলাম ফুটপাত ধরে। পেয়ার ফুটপাতও বহুমুখী-কোথাও সাইকেল লেন, কোথাও পথচারীর রাস্তা আর কোথাও আবার গাড়ির পার্কিং স্পট! তবু এই ভিড় লকার মতো নয়। এখানে চিৎকার নেই, হর্নের হাহাকার নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের হোটেল খুঁজে পেলাম। শহরের মাঝখানে, সুবিধাজনক জায়গায়। সূর্য তখনো নিচু, আর আমরা বিস্মিত যে এত তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছি। প্রতিদিনের যতো আজ থামলাম এক কাপ কফি আর প্যাট্টির জন্য। কসোভোর প্রতিদিনের জীবন যদি কোয়ে একটা িনিসে সংজ্ঞায়িত হয়, তবে তা হলো ক্যাফে-সংস্কৃতি। প্রতিটি ছোট্ট পেট্রিশণে তাজা রুটি, মিষ্টি আর কফি। সবই সহজলভ্য, সস্তা আর স্বাদের।
হোটেলে জিনিসপত্র রেখে বেরিয়ে পড়লাগ দেয়ার পুরোনো বাজার ঘুরতে। বাজারের গলি, কাঠের দোকানপাট আর বাতাসে ভেসে থাকা কফি ও কাবাবের গন্ধ। সোনা-রুপা-তামার কাজের সারি সারি দোকান চোখে পড়ল। হাতে খোদাই করা কাঠের অলংকারও বিক্রি হয়। একটু হেঁটে পৌঁছে গেলাম তামির বে ইন নামে ১৮ শতকের এক ঘরে। এটি এখন একটি জাদুঘর। ঘরটিতে কড়িকাঠের হাদ, আঙিনাজুড়ে ঝুলে থাকা লতাপাতা। সর্বত্র। ছড়িয়ে আছে এক নিঃশব্দ সৌন্দর্য। আমরাই ছিলাম সেদিনের দর্শক। গাইড তরুণী হাসিমুখে এগিয়ে এলেন। ঘর থেকে ঘরে নিয়ে গেলেন। বর্ণনা করলেন আলবেনীয় ঐতিহ্যবাহী পোশাক, জুতা, গয়না, উলের ভাত, আমার কফি পাত্রসহ নানা কিছুর। অন্য এক ঘরে দেখলাম রোমান আর। বাইজেন্টাইন যুগের নিদর্শন-খোদাই করা পাথর,

মৃৎপাত্রের টুকরা, পুরোনো মুদ্রা। চতুর্থ দিনের যাত্রা শুরু করতে হবে ভোরেই। সেই প্রস্তুতি নিতেই জনত ফিরে এলাম হোটেলে।















প্রকাশিত : ছুটির দিনে, প্রথম আলো, ১ নভেম্বর ২০২৫





মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৭

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: ভ্রমন কাহিনী
আরও ছবি দিলে এই বর্ননা প্রানবন্ত হবে ।

০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৪৪

মুনতাসির বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন, এখানে একটা গ্যালারি করব। ধন্যবাদ।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮

হুমায়রা হারুন বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা। কয়েকটা ছবি দেন।

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪১

মুনতাসির বলেছেন: আমি চেষ্টা করলাম কিছু ছবি দিতে।

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: যে শহরে হোটেল নেই, সে শহরে রাত্রিযাপন করতে হলে মানুষ কোথায় থাকবে?
উপাসনালয়ে?

০২ রা নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৬

মুনতাসির বলেছেন: শহরের বাহিরে হোটেল ছিল। একটাই। এই শহর অন্য বড় শহরগুলোর কাছে হবার কারনে হোটেল ছিল না বলেই আমার মনে হয়েছে। ৪০ কিলোমিটার খুব অল্প দূরত্ব গাড়িতে। আমরা অনেকটা হাইওয়ে ইন জাতীয় হোটেলে ছিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.