নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের দর্শন

পৃথিবীটা এমন একটি জায়গা যেখানে সবাই সুখী হতে চায়। কিন্তু খুব কম ব্যক্তিই সুখ উপভোগ করতে পারে। আর তাই সুখের পিছনে না ছুটে যে অবস্থায় আছেন, সেই অবস্থায়ই জীবনটাকে উপভোগ করুন।

প্রবাসী ভাবুক

সকলে মিলিয়া সাজাব সুন্দর পৃথিবীকে।

প্রবাসী ভাবুক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ও তার অসমাপ্ত স্বপ্ন.........

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৬

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন এটা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পিছনে তার অবদানকে খাট করে দেখার কোন সুযোগ নেই৷ দেশের জনগণ সেটা কখনোই অস্বীকার করেও না৷ এই নেতা তার জীবদ্দশায় যা করে গেছে তার বর্ণনা করলেই তার সম্মানের কোন ঘাটতি না হয়ে বরং বৃদ্ধি পেত৷ কিন্তু আওয়ামী লীগ অতিরঞ্জিত করতে গিয়ে বরং তাকে নিয়ে মানুষের কটুক্তি করতে বাধ্য করা হচ্ছে৷



সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, থ্রি-জি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল৷ এটা কত হাস্যকর ছিল তা মনে করলে আমার মত নিরস মানুষেরও হাসির রসদ যোগায়! প্রেসিডেন্ট এরশাদের সময়ে যমুনা বহুমুখী সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও কাজ শুরু হয়েছিল বিএনপির সময়ে এবং বাকী অসমাপ্ত কাজ শেষ করেই ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, এটা ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন৷ তাই সেতুর নাম পরিবর্তন করে নাম দেওয়া হল 'বঙ্গবন্ধু সেতু'৷ প্রচার করা হল, এটা আওয়ামী লীগের অবদান৷ সাথে সাথে বঙ্গবন্ধুর সেতু'র ছবির পাশে বঙ্গবন্ধুর অর্ধঘুমন্ত ছবি দিয়ে সারাদেশে পোস্টারিং করায় তা যথেষ্ট হাস্যরসের জন্ম দিয়েছিল সেই সময়ে৷ এরপর বর্তমানে যা কিছু নতুন তৈরি বা উদ্বোধন করা হয় সব আওয়ামী নেতানেত্রীরাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বলে চালিয়ে দেয়৷ এসব নিয়ে অবশ্য সাধারণ মানুষ এখন আর হাসাহাসি করে না৷ বরং একই কথা বারবার শুনতে শুনতে এখন বিরক্তি ধরে গিয়েছে৷ অথচ মানুষের মধ্যে এই বিরক্তি সৃষ্টি না বঙ্গবন্ধুর সঠিক স্বপ্নটাই যদি সঠিক উপায়ে প্রকাশ করত তাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের বিতৃষ্ণা বৃদ্ধি না পেয়ে আরও বেশি সম্মানিত হত৷



আওয়ামী লীগের মধ্যে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়৷ তা হল অন্য কারও অবদানকে স্বীকার না করে শুধু বঙ্গবন্ধুর ছাড়া আর কারও কোন অবদান নাই এটাই দেশের মানুষকে বুঝানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে৷ এটা করার মূল লক্ষ্য হল, বঙ্গবন্ধুকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতার ব্যবসা করা৷ আর এটাই হল, বঙ্গবন্ধুর চুড়ান্ত অপমান৷ বঙ্গবন্ধুকে শুধু আওয়ামী নেতারাই পণ্য ভাবে না৷ বঙ্গবন্ধুর চরম বিরোধী যারা প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বানানোর ঘোষনা দিয়েছিল, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে আনন্দে নেচেছিল, সেই জাসদ নেতারাও শেখ মুজিবকে পণ্য বানিয়ে পুরোদমে ক্ষমতার ব্যবসা করে যাচ্ছে৷ অবশ্য এটাতে জাসদের যতটা অবদান তার চেয়েও বেশি শেখ হাসিনার ক্ষমতালিপ্সা৷ আর তাই তারা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যাচ্ছে৷



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কি কি স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই তালিকা হয়ত কিয়ামত পর্যন্ত লিখে গেলেও অসমাপ্ত রয়ে যাবে৷ কারণ থ্রি-জি এর মত নিত্য নতুন যত উদ্ভাবনই বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত হবে সেই উদ্ভাবিত সব স্বত্বের অধিকারও বঙ্গবন্ধুর ছিল বলে চালিয়ে দেওয়া হতে পারে৷ স্বপ্ন যেহেতু একটি অলিখিত বিষয় তাই এই বিষয়ে আমি আপত্তি করলেও সবার সেটা মেনে নিতে হবে এমন কোন কথা নাই৷ তাছাড়া এরকম আপত্তি করার মত এতবড় বেরসিকও আমি হতে চাই না৷



স্বপ্ন নিয়ে অনেক কথা বললেও তিনি জীবদ্দশায় যা করে গেছেন সেগুলোকে পরিবর্তন করতে গেলেই যত ঝামেলার সৃষ্টি হয়৷ কারণ তার কৃতকর্ম তো অনেকটা দলিলের মত৷ অপ্রকাশিত স্বপ্ন দেখার মত আপেক্ষিক কিছু না৷



স্বাধীনতার ঘোষক ও ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিনের৷ আসলে স্বাধীনতা কে ঘোষণা করেছিল এটা নিয়ে যেহেতু বিতর্ক রয়েছে এবং সেই সময়ে যেহেতু আমার জন্মই হয়নি কোনটা সঠিক সে বিষয়ে এখনও স্থির হতে পারিনি৷৷ বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চের ভাষণেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন বলে আওয়ামী লীগ ইদানিং দাবী করে আসছে৷ এখানেই যত বিপত্তি৷ তাজউদ্দিন আহমদের বক্তব্য ও তার মেয়ের সদ্য প্রকাশিত লেখনী, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, সাংবাদিক নিরমল সেন, সেক্টর কমান্ডার শওকত আলী বীর বিক্রম, কবি শামসুর রহমান, মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকারসহ অনেকেই বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঐসময়ে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি৷ আর যেসব ব্যক্তিবর্গ এসব কথা বলেছেন, তারা সক্রিয়ভাবে শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেননি, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বস্থানীয় ছিলেন৷ আর এই কথাটি শুধু প্রমাণ নয় বুঝার জন্যও কোন বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জনের সাথে বৈঠক করে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য৷ ৭ই মার্চ যদি তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই থাকেন তাহলে বাংলাদেশে থেকে তিনি কেন ২৫ মার্চ পর্যন্ত চেষ্টা চালাবেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে? এ থেকে নিশ্চিত ভাবে বুঝা যায়, তিনি ৭ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি৷



শেখ হাসিনা নিজে পিতার অবদানকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার তো করছেই সেই সুযোগে কিছু সুযোগসন্ধানী যাদের মুক্তিযুদ্ধে কোন উল্লেখযোগ্য অবদান নেই এমনকি মোটেই কোন অবদান নেই তারাও মুজিবকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছে৷ আর প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যারা মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে থেকে যুদ্ধ করেছেন বা নেতৃত্ব দিয়েছেন বা খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা তারা সত্য বলায় তাদেরকেও রাজাকার বানিয়ে ফেলেছেন৷



মুক্তিযুদ্ধের সাথে বঙ্গবন্ধুর অবদান কেউ অস্বীকার না করলেও আওয়ামী স্বার্থান্বেষী নেতারা বাড়াবাড়ি এত বেশি করে ফেলেছে যে মানুষ বঙ্গবন্ধুকে সম্মানের পরিবর্তে এখন এসব কথা শুনলে বিরক্তি বোধ করে৷ আর এসব বিতর্কের সমাধান খুব শীঘ্র শেষ হবে তারও কোন সম্ভাবনা নাই৷ এভাবে চলতে থাকলে মুক্তিযুদ্ধ থেকে অনুপ্রেরণার পরিবর্তে নতুন প্রজন্ম এটাকে ভুলে যেতে চাইবে যা আমাদের কারোরই কাম্য নয়৷

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৯

নাইমুল ইসলাম বলেছেন: বেশ চমৎকার ভাবে প্রতিটি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন। অবাক হলাম আবার খুব বেশি ভালোও লাগছে কারণ এত সত্য কথা একসাথে লিখেছেন দেখে। ধন্যবাদ ভাই সবার সাথে বিষয়গুলা শেয়ার করার জন্য :)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫১

প্রবাসী ভাবুক বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ! আমি ইতিহাসবিদ নই৷ ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান সীমিত৷ আবার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গিয়ে দেখি তাতে প্রচন্ড গোঁজামিল৷ আর তাই ইতিহাস এবং বাস্তবতা দুটোর সম্মিলন থেকেই আমাদের বুঝে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.