![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন পথের এক অজানা পথিক আমি। উদ্দেশ্যহীন জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়ানই আমার কাজ। যদিও জানি যে জীবনে উদ্দেশ্য থাকা বা না থাকা কোন প্রভাব ফেলে না।
আমরা তিন বাল্যসঙ্গী যে ঘরে শয়ন করিতাম তাহার পাশের ঘরের দেয়ালে একটি আস্ত নরকঙ্কাল ঝুলানো থাকিত । রাত্রে বাতাসে তাহার হাড়গুলা খট্খট্ শব্দ করিয়া নড়িত । দিনের বেলায় আমাদিগকে সেই হাড় নাড়িতে হইত । আমরা তখন পণ্ডিত-মহাশয়ের নিকট মেঘনাদবধ এবং ক্যাম্বেল স্কুলের এক ছাত্রের কাছে অস্থিবিদ্যা পড়িতাম । আমাদের অভিভাবকের ইচ্ছা ছিল আমাদিগকে সহসা সর্ববিদ্যায় পারদর্শী করিয়া তুলিবেন । তাঁহার অভিপ্রায় কতদূর সফল হইয়াছে যাঁহারা আমাদিগকে জানেন তাঁহাদের নিকট প্রকাশ করা বাহুল্য এবং যাঁহারা জানেন না তাঁহাদের নিকট গোপন করাই শ্রেয় ।
তাহার পর বহুকাল অতীত হইয়াছে । ইতিমধ্যে সেই ঘর হইতে কঙ্কাল এবং আমাদের মাথা হইতে অস্থিবিদ্যা কোথায় স্থানান্তরিত হইয়াছে অন্বেষণ করিয়া জানা যায় না ।
অল্পদিন হইল একদিন রাত্রে কোনো কারণে অন্যত্র স্থানাভাব হওয়াতে আমাকে সেই ঘরে শয়ন করিতে হয় । -অনভ্যাসবশত ঘুম হইতেছে না । এপাশ ওপাশ করিতে করিতে গির্জার ঘড়িতে বড়ো বড়ো ঘন্টাগুলো প্রায় সব কটা বাজিয়া গেল । এমন সময়ে ঘরের কোণে যে তেলের সেজ জ্বলিতেছিল সেটা প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরিয়া খাবি খাইতে খাইতে একেবারে নিবিয়া গেল । ইতিপূর্বেই আমাদের বাড়িতে দুই-একটা দুর্ঘটনা ঘটিয়াছে । তাই এই আলো নেবা হইতে সহজেই মৃত্যুর কথা মনে উদয় হইল। মনে হইল এই-যে রাত্রি দুই প্রহরে একটি দীপশিখা চিরান্ধকারে মিলাইয়া গেল , প্রকৃতির কাছে ইহাও যেমন আর মানুষের ছোটো ছোটো প্রাণশিখা কখনো দিনে কখনো রাত্রে হঠাৎ নিবিয়া বিস্মৃত হইয়া যায় , তাহাও তেমনি ।
ক্রমে সেই কঙ্কালের কথা মনে পড়িল । তাহার জীবিতকালের বিষয় কল্পনা করিতে করিতে সহসা মনে হইল, একটি চেতন পদার্থ অন্ধকারে ঘরের দেয়াল হাতড়াইয়া আমার মশারির চারি দিকে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে , তাহার ঘন ঘন নিশ্বাসের শব্দ শুনা যাইতেছে । সে যেন কী খুঁজিতেছে , পাইতেছে না, এবং দ্রুততর বেগে ঘরময় প্রদক্ষিণ করিতেছে । নিশ্চয় বুঝিতে পারিলাম, সমস্তই আমার নিদ্রাহীন উষ্ণ মস্তিষ্কের কল্পনা এবং আমারই মাথার মধ্যে বোঁ বোঁ করিয়া যে রক্ত ছুটিতেছে তাহাই দ্রুত পদশব্দের মতো শুনাইতেছে । কিন্তু, তবু গা ছম্ছম্ করিতে লাগিল । জোর করিয়া এই অকারণ ভয় ভাঙিবার জন্য বলিয়া উঠিলাম , “ কেও। ” পদশব্দ আমার মশারির কাছে আসিয়া থামিয়া গেল এবং একটা উত্তর শুনিতে পাইলাম , “ আমি । আমার সেই কঙ্কালটা কোথায় গেছে তাই খুঁজিতে আসিয়াছি । ”
আমি ভাবিলাম , নিজের কাল্পনিক সৃষ্টির কাছে ভয় দেখানো কিছু নয় — পাশবালিশটা সবলে আঁকড়িয়া ধরিয়া চিরপরিচিতের মতো অতি সহজ সুরে বলিলাম , “ এই দুপুর রাত্রে বেশ কাজটি বাহির করিয়াছ । তা , সে কঙ্কালে এখন আর তোমার আবশ্যক ? ”
অন্ধকারে মশারির অত্যন্ত নিকট হইতে উত্তর আসিল , “ বল কী । আমার বুকের হাড় যে তাহারই মধ্যে ছিল । আমার ছাব্বিশ বৎসরের যৌবন যে তাহার চারি দিকে বিকশিত হইয়াছিল — একবার দেখিতে ইচ্ছা করে না ? ”
আমি তৎক্ষণাৎ বলিলাম , “ হাঁ , কথাটা সংগত বটে । তা , তুমি সন্ধান করো গে যাও । আমি একটু ঘুমাইবার চেষ্টা করি । ” (চলবে)
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৫
ছন্নছাড়া পথিক বলেছেন: কঙ্কাল ৩য় পর্ব - Click This Link
৩| ০৫ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৪
ছন্নছাড়া পথিক বলেছেন: শেষ পর্ব- Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৩৮
ছন্নছাড়া পথিক বলেছেন: কঙ্কাল ২য় পর্ব - Click This Link