![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন পথের এক অজানা পথিক আমি। উদ্দেশ্যহীন জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়ানই আমার কাজ। যদিও জানি যে জীবনে উদ্দেশ্য থাকা বা না থাকা কোন প্রভাব ফেলে না।
১ম পর্বের লিঙ্ক - Click This Link
সে বলিল , “ তুমি একলা আছ বুঝি ? তবে একটু বসি । একটু গল্প করা যাক । পঁয়ত্রিশ বৎসর পূর্বে আমিও মানুষের কাছে বসিয়া মানুষের সঙ্গে গল্প করিতাম । এই পঁয়ত্রিশটা বৎসর আমি কেবল শ্মশানের বাতাসে হুহু শব্দ করিয়া বেড়াইয়াছি । আজ তোমার কাছে বসিয়া আর-একবার মানুষের মতো করিয়া গল্প করি । ”
অনুভব করিলাম , আমার মশারির কাছে কে বসিল । নিরুপায় দেখিয়া আমি বেশ-একটু উৎসাহের সহিত বলিলাম , “ সেই ভালো । যাহাতে মন বেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠে এমন একটা-কিছু গল্প বলো । ”
সে বলিল , “ সব চেয়ে মজার কথা যদি শুনিতে চাও তো আমার জীবনের কথা বলি । ”
গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া দুটা বাজিল-
“ যখন মানুষ ছিলাম এবং ছোটো ছিলাম তখন এক ব্যক্তিকে যমের মতো ভয় করিতাম । তিনি আমার স্বামী । মাছকে বঁড়শি দিয়া ধরিলে তাহার যেমন মনে হয় আমারও সেইরূপ মনে হইত । অর্থাৎ কোন্-এক সম্পূর্ণ অপরিচিত জীব যেন বঁড়শিতে গাঁথিয়া আমাকে আমার স্নিগ্ধগভীর জন্মজলাশয় হইতে টান মারিয়া ছিনিয়া লইয়া যাইতেছে — কিছুতে তাহার হাত হইতে পরিত্রাণ নাই । বিবাহের দুই মাস পরেই আমার স্বামীর মৃত্যু হইল এবং আমার আত্মীয়স্বজনেরা আমার হইয়া অনেক বিলাপ-পরিতাপ করিলেন । আমার শ্বশুর অনেকগুলি লক্ষণ মিলাইয়া দেখিয়া শাশুড়িকে কহিলেন , ‘ শাস্ত্রে যাহাকে বলে বিষকন্যা এ মেয়েটি তাই । ' সে কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। — শুনিতেছ ? কেমন লাগিতেছে । ”
আমি বলিলাম , “ বেশ । গল্পের আরম্ভটি বেশ মজার । ”
“ তবে শোনো । আনন্দে বাপের বাড়ি ফিরিয়া আসিলাম । ক্রমে বয়স বাড়িতে লাগিল । লোকে আমার কাছে লুকাইতে চেষ্টা করিত , কিন্তু আমি নিজে বেশ জানিতাম আমার মতো রূপসী এমন যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় না । তোমার কী মনে হয় । ”
“ খুব সম্ভব । কিন্তু আমি তোমাকে কখনো দেখি নাই । ”
“ দেখ নাই? কেন । আমার সেই কঙ্কাল । হি হি হি হি। - আমি ঠাট্টা করিতেছি । তোমার কাছে কী করিয়া প্রমাণ করিব যে , সেই দুটো শূন্য চক্ষুকোটরের মধ্যে বড়ো বড়ো টানা দুটি কালো চোখ ছিল এবং রাঙা ঠোঁটের উপরে যে মৃদু হাসিটুকু মাখানো ছিল এখনকার অনাবৃতদন্তসার বিকট হাস্যের সঙ্গে তার কোনো তুলনাই হয় না- এবং সেই কয়খানা দীর্ঘ শুষ্ক অস্থিখণ্ডের উপর এত লালিত্য এত লাবণ্য , যৌবনের এত কঠিন-কোমল নিটোল পরিপূর্ণতা প্রতিদিন প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিতেছিল, তোমাকে তাহা বলিতে গেলে হাসি পায় এবং রাগও ধরে । আমার সেই শরীর হইতে যে অস্থিবিদ্যা শেখা যাইতে পারে তাহা তখনকার বড়ো বড়ো ডাক্তারেরাও বিশ্বাস করিত না । আমি জানি , একজন ডাক্তার তাঁহার কোনো বিশেষ বন্ধুর কাছে আমাকে কনকচাঁপা বলিয়াছিলেন । তাহার অর্থ এই , পৃথিবীর আর সকল মনুষ্যই অস্থিবিদ্যা এবং শরীরতত্ত্বের দৃষ্টান্তস্থল ছিল , কেবল আমি সৌন্দর্যরূপী ফুলের মতো ছিলাম । কনকচাঁপার মধ্যে কি একটা কঙ্কাল আছে? ”
“ আমি যখন চলিতাম তখন আপনি বুঝিতে পারিতাম যে একখণ্ড হীরা নড়াইলে তাহার চারি দিক হইতে যেমন আলো ঝক্মক্ করিয়া উঠে, আমার দেহের প্রত্যেক গতিতে তেমনি সৌন্দর্যের ভঙ্গি নানা স্বাভাবিক হিল্লোলে চারি দিকে ভাঙিয়া পড়িত । আমি মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ ধরিয়া নিজের হাত দুখানি নিজে দেখিতাম — পৃথিবীর সমস্ত উদ্ধত পৌরুষের মুখে রাশ লাগাইয়া মধুরভাবে বাগাইয়া ধরিতে পারে এমন দুইখানি হাত । সুভদ্রা যখন অর্জুনকে লইয়া দৃপ্ত ভঙ্গিতে আপনার বিজয়রথ বিস্মিত তিন লোকের মধ্য দিয়া চালাইয়া লইয়া গিয়াছিলেন তাঁহার বোধ করি এইরূপ দুখানি অস্থূল সুডোল বাহু , আরক্ত করতল এবং লাবণ্যশিখার মতো অঙ্গুলি ছিল । ”
(চলবে)সে বলিল , “ তুমি একলা আছ বুঝি ? তবে একটু বসি । একটু গল্প করা যাক । পঁয়ত্রিশ বৎসর পূর্বে আমিও মানুষের কাছে বসিয়া মানুষের সঙ্গে গল্প করিতাম । এই পঁয়ত্রিশটা বৎসর আমি কেবল শ্মশানের বাতাসে হুহু শব্দ করিয়া বেড়াইয়াছি । আজ তোমার কাছে বসিয়া আর-একবার মানুষের মতো করিয়া গল্প করি । ”
অনুভব করিলাম , আমার মশারির কাছে কে বসিল । নিরুপায় দেখিয়া আমি বেশ-একটু উৎসাহের সহিত বলিলাম , “ সেই ভালো । যাহাতে মন বেশ প্রফুল্ল হইয়া উঠে এমন একটা-কিছু গল্প বলো । ”
সে বলিল , “ সব চেয়ে মজার কথা যদি শুনিতে চাও তো আমার জীবনের কথা বলি । ”
গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢং করিয়া দুটা বাজিল-
“ যখন মানুষ ছিলাম এবং ছোটো ছিলাম তখন এক ব্যক্তিকে যমের মতো ভয় করিতাম । তিনি আমার স্বামী । মাছকে বঁড়শি দিয়া ধরিলে তাহার যেমন মনে হয় আমারও সেইরূপ মনে হইত । অর্থাৎ কোন্-এক সম্পূর্ণ অপরিচিত জীব যেন বঁড়শিতে গাঁথিয়া আমাকে আমার স্নিগ্ধগভীর জন্মজলাশয় হইতে টান মারিয়া ছিনিয়া লইয়া যাইতেছে — কিছুতে তাহার হাত হইতে পরিত্রাণ নাই । বিবাহের দুই মাস পরেই আমার স্বামীর মৃত্যু হইল এবং আমার আত্মীয়স্বজনেরা আমার হইয়া অনেক বিলাপ-পরিতাপ করিলেন । আমার শ্বশুর অনেকগুলি লক্ষণ মিলাইয়া দেখিয়া শাশুড়িকে কহিলেন , ‘ শাস্ত্রে যাহাকে বলে বিষকন্যা এ মেয়েটি তাই । ' সে কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে। — শুনিতেছ ? কেমন লাগিতেছে । ”
আমি বলিলাম , “ বেশ । গল্পের আরম্ভটি বেশ মজার । ”
“ তবে শোনো । আনন্দে বাপের বাড়ি ফিরিয়া আসিলাম । ক্রমে বয়স বাড়িতে লাগিল । লোকে আমার কাছে লুকাইতে চেষ্টা করিত , কিন্তু আমি নিজে বেশ জানিতাম আমার মতো রূপসী এমন যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় না । তোমার কী মনে হয় । ”
“ খুব সম্ভব । কিন্তু আমি তোমাকে কখনো দেখি নাই । ”
“ দেখ নাই? কেন । আমার সেই কঙ্কাল । হি হি হি হি। - আমি ঠাট্টা করিতেছি । তোমার কাছে কী করিয়া প্রমাণ করিব যে , সেই দুটো শূন্য চক্ষুকোটরের মধ্যে বড়ো বড়ো টানা দুটি কালো চোখ ছিল এবং রাঙা ঠোঁটের উপরে যে মৃদু হাসিটুকু মাখানো ছিল এখনকার অনাবৃতদন্তসার বিকট হাস্যের সঙ্গে তার কোনো তুলনাই হয় না- এবং সেই কয়খানা দীর্ঘ শুষ্ক অস্থিখণ্ডের উপর এত লালিত্য এত লাবণ্য , যৌবনের এত কঠিন-কোমল নিটোল পরিপূর্ণতা প্রতিদিন প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিতেছিল, তোমাকে তাহা বলিতে গেলে হাসি পায় এবং রাগও ধরে । আমার সেই শরীর হইতে যে অস্থিবিদ্যা শেখা যাইতে পারে তাহা তখনকার বড়ো বড়ো ডাক্তারেরাও বিশ্বাস করিত না । আমি জানি , একজন ডাক্তার তাঁহার কোনো বিশেষ বন্ধুর কাছে আমাকে কনকচাঁপা বলিয়াছিলেন । তাহার অর্থ এই , পৃথিবীর আর সকল মনুষ্যই অস্থিবিদ্যা এবং শরীরতত্ত্বের দৃষ্টান্তস্থল ছিল , কেবল আমি সৌন্দর্যরূপী ফুলের মতো ছিলাম । কনকচাঁপার মধ্যে কি একটা কঙ্কাল আছে? ”
“ আমি যখন চলিতাম তখন আপনি বুঝিতে পারিতাম যে একখণ্ড হীরা নড়াইলে তাহার চারি দিক হইতে যেমন আলো ঝক্মক্ করিয়া উঠে, আমার দেহের প্রত্যেক গতিতে তেমনি সৌন্দর্যের ভঙ্গি নানা স্বাভাবিক হিল্লোলে চারি দিকে ভাঙিয়া পড়িত । আমি মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ ধরিয়া নিজের হাত দুখানি নিজে দেখিতাম — পৃথিবীর সমস্ত উদ্ধত পৌরুষের মুখে রাশ লাগাইয়া মধুরভাবে বাগাইয়া ধরিতে পারে এমন দুইখানি হাত । সুভদ্রা যখন অর্জুনকে লইয়া দৃপ্ত ভঙ্গিতে আপনার বিজয়রথ বিস্মিত তিন লোকের মধ্য দিয়া চালাইয়া লইয়া গিয়াছিলেন তাঁহার বোধ করি এইরূপ দুখানি অস্থূল সুডোল বাহু , আরক্ত করতল এবং লাবণ্যশিখার মতো অঙ্গুলি ছিল । ”
৩য় পর্বের লিঙ্ক - Click This Link
©somewhere in net ltd.