![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন পথের এক অজানা পথিক আমি। উদ্দেশ্যহীন জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়ানই আমার কাজ। যদিও জানি যে জীবনে উদ্দেশ্য থাকা বা না থাকা কোন প্রভাব ফেলে না।
২য় পর্বের লিঙ্ক - Click This Link
“ কিন্তু আমার সেই নির্লজ্জ নিরাবরণ নিরাভরণ চিরবৃদ্ধ কঙ্কাল তোমার কাছে আমার নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়াছে । আমি তখন নিরুপায় নিরুত্তর ছিলাম । এইজন্য পৃথিবীর সব চেয়ে তোমার উপর আমার বেশি রাগ । ইচ্ছা করে , আমার সেই ষোলো বৎসরের জীবন্ত, যৌবনতাপে উত্তপ্ত আরক্তিম রূপখানি একবার তোমার চোখের সামনে দাঁড় করাই , বহুকালের মতো তোমার দুই চক্ষে নিদ্রা ছুটাইয়া দিক , তোমার অস্থিবিদ্যাকে অস্থির করিয়া দেশছাড়া করি । ”
আমি বলিলাম , “ তোমার গা যদি থাকিত তো গা ছুঁইয়া বলিতাম , সে বিদ্যার লেশমাত্র আমার মাথায় নাই । আর তোমার সেই ভুবনমোহন পূর্ণযৌবনের রূপ রজনীর অন্ধকারপটের উপরে জাজ্বল্যমান হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে । আর অধিক বলিতে হইবে না । ”
“ আমার কেহ সঙ্গিনী ছিল না । দাদা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন , বিবাহ করিবেন না । অন্তঃপুরে আমি একা । বাগানের গাছতলায় আমি একা বসিয়া ভাবিতাম , সমস্ত পৃথিবী আমাকেই ভালোবাসিতেছে , সমস্ত তারা আমাকে নিরীক্ষণ করিতেছে , বাতাস ছল করিয়া বার বার দীর্ঘনিশ্বাসে পাশ দিয়া চলিয়া যাইতেছে এবং যে তৃণাসনে পা দুটি মেলিয়া বসিয়া আছি তাহার যদি চেতনা থাকিত তবে সে পুনর্বার অচেতন হইয়া যাইত । পৃথিবীর সমস্ত যুবাপুরুষ ঐ তৃণপুঞ্জরূপে দল বাঁধিয়া নিস্তব্ধে আমার চরণবর্তী হইয়া দাঁড়াইয়াছে এইরূপ আমি কল্পনা করিতাম ; হৃদয়ে অকারণে কেমন বেদনা অনুভব হইত । ”
“ দাদার বন্ধু শশিশেখর যখন মেডিকেল কালেজ হইতে পাস হইয়া আসিলেন তখন তিনিই আমাদের বাড়ির ডাক্তার হইলেন। আমি তাঁহাকে পূর্বে আড়াল হইতে অনেকবার দেখিয়াছি । দাদা অত্যন্ত অদ্ভূত লোক ছিলেন — পৃথিবীটাকে যেন ভালো করিয়া চোখ মেলিয়া দেখিতেন না । সংসারটা যেন তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট ফাঁকা নয় — এইজন্য সরিয়া সরিয়া একেবারে প্রান্তে গিয়া আশ্রয় লইয়াছেন । ”
“ তাঁহার বন্ধুর মধ্যে এক শশিশেখর । এইজন্য বাহিরের যুবকদের মধ্যে আমি এই শশিশেখরকেই সর্বদা দেখিতাম। এবং যখন আমি সন্ধ্যাকালে পুষ্পতরুতলে সম্রাজ্ঞীর আসন গ্রহণ করিতাম তখন পৃথিবীর সমস্ত পুরুষজাতি শশিশেখরের মূর্তি ধরিয়া আমার চরণাগত হইত । — শুনিতেছ ? কী মনে হইতেছে । ”
আমি সনিশ্বাসে বলিলাম , “ মনে হইতেছে , শশিশেখর হইয়া জন্মিলে বেশ হইত । ”
“ আগে সবটা শোনো । ”
একদিন বাদলার দিনে আমার জ্বর হইয়াছে । ডাক্তার দেখিতে আসিয়াছেন । সেই প্রথম দেখা ।
“ আমি জানলার দিকে মুখ করিয়া ছিলাম , সন্ধ্যার লাল আভাটা পড়িয়া রুগ্ণ মুখের বিবর্ণতা যাহাতে দূর হয় । ডাক্তার যখন ঘরে ঢুকিয়াই আমার মুখের দিকে একবার চাহিলেন তখন আমি মনে মনে ডাক্তার হইয়া কল্পনায় নিজের মুখের দিকে চাহিলাম । সেই সন্ধ্যালোকে কোমল বালিশের উপরে একটি ঈষৎক্লিষ্ট কুসুমপেলব মুখ ; অসংযমিত চূর্ণকুন্তল ললাটের উপর আসিয়া পড়িয়াছে এবং লজ্জায় আনমিত বড়ো বড়ো চোখের পল্লব কপোলের উপর ছায়া বিস্তার করিয়াছে । ”
ডাক্তার নম্র মৃদুস্বরে দাদাকে বলিলেন , ‘ একবার হাতটা দেখিতে হইবে । '
“ আমি গাত্রাবরণের ভিতর হইতে ক্লান্ত সুগোল হাতখানি বাহির করিয়া দিলাম । একবার হাতের দিকে চাহিয়া দেখিলাম , যদি নীলবর্ণ কাঁচের চুড়ি পরিতে পারিতাম তো আরো বেশ মানাইত । রোগীর হাত লইয়া নাড়ী দেখিতে ডাক্তারের এমন ইতস্তত ইতিপূর্বে কখনো দেখি নাই । অত্যন্ত অসংলগ্নভাবে কম্পিত অঙ্গুলিতে নাড়ী দেখিলেন। তিনি আমার জ্বরের উত্তাপ বুঝিলেন , আমিও তাঁহার অন্তরের নাড়ী কিরূপ চলিতেছে কতকটা আভাস পাইলাম । বিশ্বাস হইতেছে না ? ”
আমি বলিলাম , “ অবিশ্বাসের কোনো কারণ দেখিতেছি না — মানুষের নাড়ী সকল অবস্থায় সমান চলে না । ”
(চলবে)“ কিন্তু আমার সেই নির্লজ্জ নিরাবরণ নিরাভরণ চিরবৃদ্ধ কঙ্কাল তোমার কাছে আমার নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়াছে । আমি তখন নিরুপায় নিরুত্তর ছিলাম । এইজন্য পৃথিবীর সব চেয়ে তোমার উপর আমার বেশি রাগ । ইচ্ছা করে , আমার সেই ষোলো বৎসরের জীবন্ত, যৌবনতাপে উত্তপ্ত আরক্তিম রূপখানি একবার তোমার চোখের সামনে দাঁড় করাই , বহুকালের মতো তোমার দুই চক্ষে নিদ্রা ছুটাইয়া দিক , তোমার অস্থিবিদ্যাকে অস্থির করিয়া দেশছাড়া করি । ”
আমি বলিলাম , “ তোমার গা যদি থাকিত তো গা ছুঁইয়া বলিতাম , সে বিদ্যার লেশমাত্র আমার মাথায় নাই । আর তোমার সেই ভুবনমোহন পূর্ণযৌবনের রূপ রজনীর অন্ধকারপটের উপরে জাজ্বল্যমান হইয়া ফুটিয়া উঠিয়াছে । আর অধিক বলিতে হইবে না । ”
“ আমার কেহ সঙ্গিনী ছিল না । দাদা প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন , বিবাহ করিবেন না । অন্তঃপুরে আমি একা । বাগানের গাছতলায় আমি একা বসিয়া ভাবিতাম , সমস্ত পৃথিবী আমাকেই ভালোবাসিতেছে , সমস্ত তারা আমাকে নিরীক্ষণ করিতেছে , বাতাস ছল করিয়া বার বার দীর্ঘনিশ্বাসে পাশ দিয়া চলিয়া যাইতেছে এবং যে তৃণাসনে পা দুটি মেলিয়া বসিয়া আছি তাহার যদি চেতনা থাকিত তবে সে পুনর্বার অচেতন হইয়া যাইত । পৃথিবীর সমস্ত যুবাপুরুষ ঐ তৃণপুঞ্জরূপে দল বাঁধিয়া নিস্তব্ধে আমার চরণবর্তী হইয়া দাঁড়াইয়াছে এইরূপ আমি কল্পনা করিতাম ; হৃদয়ে অকারণে কেমন বেদনা অনুভব হইত । ”
“ দাদার বন্ধু শশিশেখর যখন মেডিকেল কালেজ হইতে পাস হইয়া আসিলেন তখন তিনিই আমাদের বাড়ির ডাক্তার হইলেন। আমি তাঁহাকে পূর্বে আড়াল হইতে অনেকবার দেখিয়াছি । দাদা অত্যন্ত অদ্ভূত লোক ছিলেন — পৃথিবীটাকে যেন ভালো করিয়া চোখ মেলিয়া দেখিতেন না । সংসারটা যেন তাঁহার পক্ষে যথেষ্ট ফাঁকা নয় — এইজন্য সরিয়া সরিয়া একেবারে প্রান্তে গিয়া আশ্রয় লইয়াছেন । ”
“ তাঁহার বন্ধুর মধ্যে এক শশিশেখর । এইজন্য বাহিরের যুবকদের মধ্যে আমি এই শশিশেখরকেই সর্বদা দেখিতাম। এবং যখন আমি সন্ধ্যাকালে পুষ্পতরুতলে সম্রাজ্ঞীর আসন গ্রহণ করিতাম তখন পৃথিবীর সমস্ত পুরুষজাতি শশিশেখরের মূর্তি ধরিয়া আমার চরণাগত হইত । — শুনিতেছ ? কী মনে হইতেছে । ”
আমি সনিশ্বাসে বলিলাম , “ মনে হইতেছে , শশিশেখর হইয়া জন্মিলে বেশ হইত । ”
“ আগে সবটা শোনো । ”
একদিন বাদলার দিনে আমার জ্বর হইয়াছে । ডাক্তার দেখিতে আসিয়াছেন । সেই প্রথম দেখা ।
“ আমি জানলার দিকে মুখ করিয়া ছিলাম , সন্ধ্যার লাল আভাটা পড়িয়া রুগ্ণ মুখের বিবর্ণতা যাহাতে দূর হয় । ডাক্তার যখন ঘরে ঢুকিয়াই আমার মুখের দিকে একবার চাহিলেন তখন আমি মনে মনে ডাক্তার হইয়া কল্পনায় নিজের মুখের দিকে চাহিলাম । সেই সন্ধ্যালোকে কোমল বালিশের উপরে একটি ঈষৎক্লিষ্ট কুসুমপেলব মুখ ; অসংযমিত চূর্ণকুন্তল ললাটের উপর আসিয়া পড়িয়াছে এবং লজ্জায় আনমিত বড়ো বড়ো চোখের পল্লব কপোলের উপর ছায়া বিস্তার করিয়াছে । ”
ডাক্তার নম্র মৃদুস্বরে দাদাকে বলিলেন , ‘ একবার হাতটা দেখিতে হইবে । '
“ আমি গাত্রাবরণের ভিতর হইতে ক্লান্ত সুগোল হাতখানি বাহির করিয়া দিলাম । একবার হাতের দিকে চাহিয়া দেখিলাম , যদি নীলবর্ণ কাঁচের চুড়ি পরিতে পারিতাম তো আরো বেশ মানাইত । রোগীর হাত লইয়া নাড়ী দেখিতে ডাক্তারের এমন ইতস্তত ইতিপূর্বে কখনো দেখি নাই । অত্যন্ত অসংলগ্নভাবে কম্পিত অঙ্গুলিতে নাড়ী দেখিলেন। তিনি আমার জ্বরের উত্তাপ বুঝিলেন , আমিও তাঁহার অন্তরের নাড়ী কিরূপ চলিতেছে কতকটা আভাস পাইলাম । বিশ্বাস হইতেছে না ? ”
আমি বলিলাম , “ অবিশ্বাসের কোনো কারণ দেখিতেছি না — মানুষের নাড়ী সকল অবস্থায় সমান চলে না । ”
(চলবে)
©somewhere in net ltd.