নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মরহুম বিবেককে জাগ্রত করো

যুদ্ধাপরাধিদের সাপোর্ট দেওয়া ছাগুর দল দূরে থাকবেন।

ছন্নছাড়া পথিক

জীবন পথের এক অজানা পথিক আমি। উদ্দেশ্যহীন জীবনের উদ্দেশ্য খুঁজে বেড়ানই আমার কাজ। যদিও জানি যে জীবনে উদ্দেশ্য থাকা বা না থাকা কোন প্রভাব ফেলে না।

ছন্নছাড়া পথিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যবিত্তের সুখ

২১ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:০৪

“এই, নবাবজাদা। ঘুম থেকে উঠে বাজারে যা”

“আহ! মা, একটু শান্তিতে ঘুমাতেও দিবে না নাকি?”

“লাটসাহেবের কথা শুন। পড়ালেখা, কাজ_কাম কিছু নাই খালি নবাবের মতো বসে খাবে আর ঘুমাবে। বলি তোর বাপের কি জমিদারী আছে নাকি?”

“তা তুমি এত কথা শুনাচ্ছ কেন? তুমি কি জমিদারের বউ নাকি”

“তবে রে হারামজাদা”

ছেলের কানে ধরে তাকে বাথরুমে ঢুকালেন রেহানা বেগম। একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণী। ২ বেডরুমের একটি ছোট ভাড়া বাসায় থাকে নাজমুল সাহেবের পরিবার। নাজমুল সাহেব একটি প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। স্কুলের বেতন আর ছাত্র পড়িয়ে কোনোমতে দিনাতিপাত হয়। ছেলে রুবেল এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাউন্টিং এ মাস্টার্স করেছে। বর্তমানে তার চাকরি খোঁজার জন্য ব্যস্ত থাকার কথা থাকলেও সে কোন চেষ্টাই করছে না। এই নিয়ে রেহানা বেগমের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। ছেলে বড় হয়েছে তাও বুড়ো বাবাকে কষ্ট করে রোজগার করতে হয় এই কথা নিয়ে দিনে ২০ বার বিলাপ করেন। তার বিলাপে অবশ্য রুবেল বা তার বাবা নাজমুল সাহেব মোটেও বিচলিত হন না। রুবেল হচ্ছে স্বাধীনচেতা। ধরাবাঁধা কাজ তার ভাল লাগে না। সে স্বপ্ন দেখে নিজের একটা ব্যবসা খুলবে। ছোট একটি ফুলের দোকান। সে নিজেই বসবে দোকানে। রঙ বেরঙ্গের নানা ফুল বিক্রি করবে সে।

ছেলের পাগলামিতে মা বড়ই চিন্থিত। মাঝে মাঝে পীরের দেওয়া তাবিজ এনে লুকিয়ে ছেলের বালিশের নিচে রেখে দেন। যদি ছেলেটার একটা গতি হয়। কিন্তু নাজমুল সাহেব ছেলের পরিকল্পনা নিয়ে খুবি আশাবাদী। যদিও তিনি বাইরে তা প্রকাশ করেন না। তিনি ঘরে প্রয়োজন ছাড়া একটা কথা ও বলেননা। রুবেল যখন এস এস সি তে বোর্ড স্ট্যান্ড করেছিল তখন তিনি শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, “ভাল করে পড়। এই রেজাল্ট ই শেষ না”

বাবার নির্লিপ্ততায় রুবেল অবশ্য মন খারাপ করেনি। সে জানে তার রেজাল্ট এ তার বাবার থেকে খুশি আর কেউ হয় নি। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যখন মাথার কাছে ২টি ৫০০ টাকার নোট আর একটি হ্যান্ড নোট পেয়েছিল জেতিতে লেখা ছিল, “৫ কেজি মিষ্টি কিনে সবাইকে দিবি আর বাকি টাকায় নিজের জন্য কিছু কিনবি” সেদিন সে আর ভাল করে বুজেছিল তার বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা। সেদিন বেচে যাওয়া ৭০০ টাকা সে আজ যত্ন করে রেখে দিয়েছে।



বাথরুম থেকে বের হয়ে নাস্তা করে বাজারে গেল রুবেল। বাজারের জন্য মাত্র ৩০০ টাকা দিয়েছে। ৩০০ টাকায় কি কিনবে বুঝতে পারছে না রুবেল। জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে কয়দিন পর না খেয়ে থাকতে হবে। ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করে তাজা ট্যাংরা মাছ উঠেছে। বাবার অনেক প্রিয় খাবার। দাম জিজ্ঞেস করেই পিছিয়ে আসে রুবেল। কিনতে গেলে আর কিছুই কিনা হবে না। তবুও বাবার ট্যাংরা মাছ খেয়ে তৃপ্তি ভরা ঢেকুর তোলা মুখ টার কথা দেখার জন্য ও ট্যাংরা মাছ কিনবেই সিদ্ধান্ত নিল। বাসায় ফিরে এসে জমানো টাকা থেকে কিছু টাকা নিল। তারপর আবার বাজারে গেল। উদ্দেশ্য পরক্ষভাবে বাবার তৃপ্তিভরা মুখখানি দেখা।

বাজার করে বীর বেশে ঘরে ঢুকে রুবেল। এত দাম দিয়ে ট্যাংরা কিনার জন্য মার কাছে বেশ বকা খেল। কিন্তু গায়ে মাখল না ও। মা কে বলল ভাল করে রান্না করতে। দুপরে বাবা ছেলে একসাথে খাবে। আনন্দ ভরা মন নিয়ে বাইরে বের হয় রুবেল। আর ভাবতে থাকে মধ্যবিত্তের আনন্দগুলো কত সুলভ। লাখ টাকার বিছানায় শুয়েও বড়লোকের ঘুম আসে না। তাহলে কি লাভ এত টাকা থেকে। এর থেকে মধ্যবিত্ত হয়ে থাকাই ভাল।

দুপুরে ঘরে ফিরে রুবেল। বাবা কি আনন্দ পাবে তা কল্পনা করে ঘরে ঢুকছিল। কিন্তু একি ঘর এত নীরব কেন। এই সময় তো বাবার কাছে ওর নামে উচ্চস্বরে নালিশ করার কথা ছিল মায়ের। প্রতিদিন এমনই হয়। আজ এত নীরব কেন। একটু চিন্তা হতে থাকে ওর। দরজায় নক করল অনেকক্ষণ কেউ খুলল না। পাশের বাসার চাচী ওর নাম ধরে ডাকল। পিছন ফিরে তাকাল রুবেল।

“বাবা রুবেল, তোমার বাবার স্কুল থেকে খবর এসেছিল। তোমার বাবা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরার পথে রাস্তায় বাস এক্সিডেন্ট করেছেন। তোমার মা গেছেন ক্লিনিকে। তোমার মোবাইল নাই তাই জানাতে পারে নাই”



৫ মিনিট পুরো স্তব্ধ হয়ে থাকে রুবেল। বুকের ভিতরটা খাঁ খাঁ করে উঠে। ওর পুরো দুনিয়া দুলে উঠে। শক এতটাই বেশি ছিল যে ও কান্না করতেও ভুলে গেছে। কোন ক্লিনিকে বাবা আছে তা জেনেই ও রওয়ানা হল।

ক্লিনিকে ঢুকে দেখল বাবার লাশের পাশে বসে আছে ওর মা। মূর্তির মত। তার ও চোখের জল শুকিয়ে গেছে।





৮ বছর পরের কথা।

রুবেল এখন একজন নামকরা ব্যবসায়ী। তার ফুলের দোকানটি বাংলাদেশের সব থেকে বড় ফুলের দোকান। পুরো বাংলাদেশে এর শাখা ছড়িয়ে আছে। আজ রুবেলের টাকার কোন অভাব নাই। যত ইচ্ছা ট্যাংরা কিনতে পারে। কিন্তু যে তৃপ্তিভরা মুখটা ও বারবার দেখতে চায় তা দেখতে পারে না। থেকেও নেই হয়ে গেছে ওর সুখ। ওর স্বপ্ন। সে ও তার মা এই দুজনই এখন তাদের পরিবার। কিন্তু পরিবার টা অসম্পূর্ণ। ২ জন পাথরের মূর্তি খায় দায় চলাফেরা করে। যে ভবিষ্যৎ সাফল্যের কথা ওরা ভেবে এসেছিল তা পূরণ হয়েছে কিন্তু যে সুখ ওরা চেয়েছিল তা তাদের ২ বেডরুমের ছোট বাসাতেই আটকে গেছে।



------ছন্নছাড়া পথিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.