নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পাঠ করুন, আপনার পালনকর্তা মহা দয়ালু।

আস সালাম - আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক

উম্মু আবদুল্লাহ

তোমরা মুসলিম হয়ে আমাকে ধন্য করেছ, তা মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য করেছেন। (হুজুরাত:১৭)

উম্মু আবদুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদ শপিং এর বিড়ম্বনা (গল্প)

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৫

"ওরে বাবা", একটু থামল ঝিলি, "ঈদের এই বাজারে ঢাকার সব মানুষই যেন দোকানে দোকানে ঘোরাঘুরি করে সময় কাটাচ্ছে। একটা দোকানেও ভাল মত দাড়ানোর জায়গা পেলাম না।" ভিড় ঠেলে দোকান থেকে বেরিয়ে বোন মিলির উদ্দেশ্যে মন্তব্য করল।



"আসলে রোজা আসার সাথে সাথেই কেনাকাটা করে রাখা দরকার। এখন তো জামা কাপড় দেখারই কোন সুযোগ পাচ্ছি না। আমি কিন্তু আগেই তেমনটি বলেছিলাম। এখন দেখ, গত তিনদিন ধরে ঘোরাঘুরি করে কি নাজেহাল অবস্থা আমাদের। রোজা রেখে এত বেশী হাটা জঘন্য রকমের বিরক্তিকর।" মিলি জবাব দেয়, যদিও জানে ঝিলির কাছে এরকম শপিং খুব প্রিয়।



"তা তো বলেছিলি বুঝলাম। কিন্তু জামার ভ্যারাইটিস তো রোজার প্রথমে থাকে না। সেজন্যে না করেছিলাম। শেষ দিকে ঈদের আগ মুহুর্তে বাজার করতে চেয়েছিলাম। এখন দেখছি উল্টোটা বরং ঠিক ছিল। ভ্যারাইটিস দিয়ে কি হবে যদি দেখার সুযোগই না পেলাম।" হঠাৎ প্রসংগ ঘুরিয়ে ফেলে ঝিলি। "সামনের দোকানের ডিসপ্লের জামাটা তো চমৎকার! এদিকে আয় বরং। " বোনকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ধাই করে দোকানে ঢুকে যায়।



দোকানটার নাম অনিন্দিতা। ফিক্সড প্রাইসের দোকান।



"ঐ জামাটা কি দেখতে পারি?" ভিড় ভাট্টা ঠেলে সামনে এগিয়ে দোকানদারকে ঝিলি জিজ্ঞাসা করে।



"নিশ্চয়ই। কয়েকটা কালারও হবে।" দোকানী কাপড়গুলো বের করে ঝিলির দিকে এগিয়ে দেয়। এর পরপরই মনোযোগী হয়ে যায় পাশের কাস্টমারের দিকে।



বেশ কয়েকটা জামা নাড়াচাড়া করে তার মধ্যে দুটো জামা পছন্দ করে ঝিলি। জানতে চায়, "আপনাদের ট্রায়াল রুম কোথায়?"



পাশের কাস্টমারের সাথে কথা বলতে বলতে দোকানী ট্রায়াল রুম দেখিয়ে দেয়। ঝিলি ভিড় ঠেলে চলে যায় ট্রায়াল রুমের দিকে। জামা পছন্দের আনন্দে ভুলে গেল মিলির কথা।



এদিকে ভিড় ছাড়িয়ে মিলি এসে দোকানে ঢুকে এইমাত্র। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে খুজতে থাকে বোনকে। না পেয়ে একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে যায়। কোথায় গেল ঝিলি। অবশেষে বোনের খোজে ঢুকে পরে পাশের দোকানে। ভাবে, ওখানেই বোধকরি ঝিলিকে পাওয়া যাবে।



মিলি যখন ঝিলিকে খোজায় ব্যস্ত, ঝিলি তখন ট্রায়াল রুমে জামা পড়ায় ব্যস্ত। এপাশ ওপাশ করে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগল। অনেক চিন্তা ভাবনায় ঠিক করল গোলাপী রং এর পোশাকটা মেরুনের চেয়ে ভাল হবে। তবে সাইজ আর এক সাইজ বেশী হতে হবে। আবার একটু খুত খুত লাগল। হয়ত সবুজ রং হলে আরেকটু ভাল হত। যাক, অনেক খোজাখুজি হয়েছে - আর ঘোরাঘুরি সম্ভব নয়। এটাই কিনে বাড়ী যাওয়া যাক। ঈদের কেনাকাটায় সে যথেষ্টই ক্লান্ত।



"সবুজ কালারটা তো আপনাদের কাছে নেই?" আরেকবার শিওর হতে চাইল ঝিলি।



"না, শুধু গোলাপী আর মেরুনই রয়েছে।" দোকানী মাথা নেড়ে বলে।



"সাইজ একটু বড় দিন।" ঝিলি ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে বলে। অনিন্দিতায় ফিক্সড প্রাইস বলে দামাদামি নেই। তাই সেদিকে গেল না ঝিলি।



দোকানী প্যাক করতে করতে মিলি এসে দাড়ায় ঝিলির পাশে। এতক্ষনে সে বোনকে খুজে বের করতে পেরেছে। মিলিকে দেখে ঝিলি বলল, "কিনতে পারলাম শেষ পর্যন্ত। তুই কোথায় ছিলি এতক্ষন।"



"তোকে খোজায় ব্যস্ত ছিলাম। কি কাপড় কিনলে দেখতে পারি।"

মিলি প্যাকেটের ভেতরে উকি মারল।



"ওদিকে আয়।" একটু নিরিবিলি কোনের দিকে ঝিলি ডাকল মিলিকে।



জামাটা মেলে ধরল ঝিলি। "আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।"



"আপা, তুই এই জামা কিনেছিস!" বিষ্ময় ঝরে পরে মিলির গলায়।



"হ্যা। কেন তোর পছন্দ হচ্ছে না?" এবার ঝিলির অবাক হবার পালা।



" আপা, আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই এটা কিনেছিস।" মিলির হতভম্ব ভাব কিছুতেই কাটছে না।



"মিলি, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না তোর কথা।" ঝিলি চেয়ে আছে মিলির দিকে।



"আপা, তোর কাজ কারবার আমিও বুঝতে পারছি না। আজ তিন দিন ধরে আমরা দোকানে দোকানে ঘুরছি তোর জামা পছন্দ হচ্ছে না বলে। আর তিন দিন পরে তুই যে জামা কিনলি সেটা তো আমরা প্রথমেই দেখেছিলাম ইস্টার্ন প্লাজায়।" মিলি বলতে থাকে।



"মনে পড়েছে আপা, এই জামাটা নেবার জন্য দোকানদার তোকে কত সাধল। তার কাছে নাকি সবুজ, হলুদ সহ আরো কয়েকটা কালার ছিল। সেদিন বলেছিলি ওটা তোর পছন্দ হয় নি।"



তাই তো। ঠিক, হুবহু একই জামা তারা ইস্টার্ন প্লাজায় দেখেছিল। একটু একটু করে ঝিলিরও মনে পড়তে থাকে।



"শুধু তাই নয় আপা। তুই এখন অনিন্দিতা থেকে যে দামে কিনেছিস, ইস্টার্ন প্লাজার ঐ দোকানদার কিন্তু তিনশ টাকা কমে দিতে চেয়েছিল।" মিলি বলতেই থাকে।



ঝিলি হতবাক হয়ে শুনতে থাকে মিলির কথা। চোখের সামনে যেন রিপ্লে হতে থাকে দৃশ্যগুলো। সেই ইস্টার্ন প্লাজা, সেই দোকানদার, সেই সাধাসাধি!! নিজের দোষে করা অহেতুক বিড়ম্বনায় ঈদ শপিং এর আনন্দই যেন মাটি হয়ে যায়।





বিষয়টা বুঝতে পারে মিলি। "থাক আপা, মন খারাপ করবি না। এখন তো জানলি ওটাই তোর জন্য সবচেয়ে ভাল জামা। না হয় এই জানার জন্য তিনদিন গেল, তিনশ টাকা গেল। সময় কিংবা টাকার চেয়ে বিশ্বাসের মূল্য কি বেশী নয়?" ফেরার পথে মিলি বোনকে সাত্ত্বনা দিতে থাকে।



মার্কেটিং এর বিড়ম্বনা শেষ হওয়ার হাফ ছাড়ছে মিলি।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:০৮

বলাক০৪ বলেছেন: সত্যের মতোই হয়েছে। আমি ঈদ শপিংএ জীবনে এত কষ্ট পেয়েছি, যে গত ২৫-২৬ বছর ধরে নিজের জন্য কিছুই কিনিনা। বাপরে।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০১

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: শপিং নিয়ে মন খারাপ হওয়া আমার জন্য এতবার ঘটেছে যে আর নূতন করে মন খারাপ হয় না। মন খারাপ করা আমি ছেড়েই দিয়েছি।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৩৫

পুরাতন বলেছেন: মিলিঝিলির গল্প ভালো লাগলো , বাস্তব অভিগ্যতা থেকেই লিখলেন মনে হল:)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ২:৩৪

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: ধরে ফেলেছেন দেখছি!!!!!!!!!!!!!

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৫৫

শায়মা বলেছেন: হা হা হা

এত রকমের জামা কাপড়ে সব গুলিয়ে যাবারই কথা।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:১২

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: ঠিক !!!!!!!

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:৩৬

পারভেজ বলেছেন: কে জানে?! মার্কেটে মার্কেটে ঘুরে হয়তো রুচিই বদলে গেছে!
:)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ বিকাল ৩:০৫

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: সেইটাই হয়েছে আর কি। বাধা গরু সব সময়ে ফিরে আসে তার খুটির কাছে।

৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৩৮

আশাবাদী মানুষ বলেছেন: +

হুম। ঝামেলা গুলোও জীবনে সয়ে জীবনের সুখ পেতে চাই।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৫৮

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: পুরো একমত। ঈদের ঝক্কি ঝামেলা ঈদকেই মহীয়ান করে।

ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৭

কোলাহল বলেছেন: বাস্তবিক এমনই হয়। আবার কখনো কখনো অবস্থাটা এমন হয় যে যা পাই একটা কিছু কিনে ঝামেলা মুক্ত হই।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ১:৩৭

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: সত্যি বলতে কি বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোতেই আমার এ গল্পের পটভূমি মাথায় এসেছে। সবার ঈদ শপিং এর টুকরো টুকরো গাল গল্প .............।

৭| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:০০

বিবেক সত্যি বলেছেন: যাতায়াতের সময় নিয়ে সবমিলিয়ে বড়জোর দুইঘন্টার মামলা । তবে দোকানদাররা ছেলে কাষ্টমারকে খাতির করেনা, এতে কষ্ট পাইসি একটু..

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৯:২৩

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: দুই ঘন্টার মামলা! ঈদ বাজার নিয়ে কোন আইডিয়া আছে?

খাতির পাবার জন্য শেষ মেশ দোকানদারদের ধরতে হবে! এত খারাপ অবস্থা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.