![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তৃতীয় পর্ব পড়ুন!!!
১১
হঠাৎ করে তারা বিলাসী-জীবন ত্যাগ করল।যেমনটা অনেক কম বিলাসী মানুষের সময়ে হয়ে থাকে।সংকীর্ণতা এবং দারিদ্রতার মাঝে তাঁদের জীবন চলতে লাগল।যেমনটা অনেক কম গরিবের কপালে জোটে।
না।তাঁদের জীবন কিছুই হারাইনি।তাঁরা শুধু ধনী থেকে গরীব হয়েছেন।দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী নে'আমতকে(ভোগ-বিলাস) ছেড়ে দিয়েছেন। পরকালের চিরস্থায়ী নি'আমত লাভের জন্যই তাঁদের এই গরিব হওয়া।এতে তাঁদের কোন দুঃখ নেই।অনুশোচনা নেই।কারন,দুনিয়ার নে'আমত তো দু'দিনের!
১২
উমর ইবনে আব্দুল আযীয তাঁর সব গোলাম-খাদেমকে আজাদ(মুক্ত) করে দিলেন।যাবতীয় সব সম্পদ বায়তুল মালে(রাষ্টীয় কোষাগার) জমা করে দিলেন। রাজকীয়-শাহী প্রসাদ ছেড়ে মসজিদের উত্তর পার্শ্বে ছোট্ট একটি ঘরে বসবাস করতে লাগলেন।
মিসর থেকে একজন মহিলা এল।খলিফার দরবারে।উদ্দেশ্য খলিফার সাথে সাক্ষাত করা।
মহিলাটি মানুষের কাছে জিজ্ঞেস করল, "খলিফার প্রসাদ কোথায়?"
মানুষ তাকে খলিফার ছোট্ট ঘরের দিকে রাস্তা দেখিয়ে দিল।
মহিলাটি দেখল,এক মহিলা পুরনো কাপড়ে চাটাইয়ের উপর বসে আছে।আরেক পুরুষ, তাঁর দুই হাতে মাটি,যা দিয়ে তিনি ঘরের দেয়াল মেরামত করছেন।
মহিলাটি চাটাইয়ের উপর বসা মহিলাকে খলিফার ব্যাপারে প্রশ্ন করল।
মহিলাটি যখন জানতে পারল চাটাইয়ে বসা মহিলাটি-ই হচ্ছে ফাতিমা বিনতে আব্দুল মালিক।খলিফাপত্নী-উমাইয়া সম্রাজ্ঞী।
তখন মহিলাটি হতবাক হয়ে গেল।ভয়ে কাঁপতে লাগল।
ফাতিমা মহিলাটি-কে অভয় দিলেন হাসি মুখে তার সাথে কথা বলা শুরু করলেন।
মহিলাটি যখন ফাতিমার উপর আস্থাশীল এবং ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল,তাকে বলল," হে সম্রাজ্ঞী! এই কামারের কাছ থেকে আপনি পর্দা কেন করছেন না!?"
ফাতিমা বলল, "এই কামারই-তো আমিরুল মু'মিনিন উমর ইবনে আব্দুল আযীয! "
((আল্লাহ-ই ভাল জানেন।এই উত্তর পাওয়ার পর মহিলাটির ভেতরকার অনুভূতি কেমন ছিল!!))
১৩
একবার খলিফা অসুস্থ হয়ে পড়লেন।তাঁর গায়ে ছিল পুরাতন কাপড়।খলিফার শ্যালক
মাসলামা বিন আব্দুল মালিক তার বোনের কাছে এল। খলিফার অবস্থা দেখে বলল, "হে ফাতিমা!আমিরুল-মু'মিনিনের জামাটা ধুয়ে দিয়ো।"
ফাতিমাঃহ্যাঁ।
পরদিন মাসলামা আবার এল।দেখল,খলিফার গায়ে সেই আগের পুরাতন জামা-ই রয়ে গেল।ধোয়া হয় নাই।
মাসলামা ফাতেমা-কে আবারও বলল, "ফাতিমা!খলিফার জামাটা ধুয়ে দিয়ো। কেননা খলিফার কাছে ভিবিন্ন রাষ্টের মানুষ দেখা করার জন্য আসে।"
ফাতেমাঃ আল্লাহর কসম!আমিরুল মু'মিনিনের কাছে এটা ছাড়া আর কোন জামা নেই।
১৪
খাদেমদের মধ্যে শুধুমাত্র একজন খাদেম(চাকর) রেখেছিলেন।কম বয়সী খাদেম।অর্ধ বিশ্বের খলিফার জীর্ণশীর্ণ 'প্রসাদে' শুধুমাত্র একজন খাদেম ছিল।
একদিন ফাতিমা খাদেমকে খাবার দিলেন।খাবার ছিল শুধু 'ডাল'।
খাদেম রাগকরে বলল, "শুধু ডাল!প্রতিদিন ডাল..!!??"
ফাতিমা বলল,"হে বৎস!এটা তো তোমার মাওলা(মনিব)আমিরুল মু'মিনিনের খাবার!
(..........!!!!)
১৫
একদিন খলিফার আঙ্গুর খাওয়ার ইচ্ছা হল।
তিনি ফাতেমা-কে বললেন,"হে ফাতেমা!তোমার কাছে কি দেরহাম আছে?
যা দিয়ে আঙ্গুর কেনা যাবে?
ফাতেমাঃ আপনি আমিরুল মু'মিনিন।আপনার কি আঙ্গুর কেনার সামর্থ নেই?
খলিফাঃ ফাতেমা!আমার তো যমিনের এই সামান্য টুকরা ছাড়া আর কিছুই নেই।যার আয় দিয়ে আমার প্রয়োজন-ই পূরণ হয় না।
এটার উপর ধৈর্য ধরা,জাহান্নামের আগুনের উপর ধৈর্য্য ধরার মত।
১৬
সবকিছু নিঃশেষ হওয়ার পর ফাতেমার কাছে শুধু তার স্বর্ণালঙ্কারগুলোই ছিল।
একদিন উমর ইবনে আব্দুল আযীয ফাতেমাকে বললেন, "ফাতেমা!তুমি জান,তোমার এই সমস্ত স্বর্ণালংকারগুলো যা তোমার আব্বা তোমাকে উপহার দিয়েছেন, মুসলমানদের সম্পদ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল।
আমি চাচ্ছি না যে,এই তুমি এই সম্পদগুলো নিয়ে আমার সাথে থাকবে।তোমার ইচ্ছা, হয়তো তুমি এগুলো বায়তুল মালে জমা দিয়ে দিবে,আর না হয় আমি তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবো।
ফাতেমাঃ আমি আল্লাহকে আবং আপনাকে বেছে নিব।এই সম্পদগুলো ধংস হয়ে গেলেও কোন সমস্যা নাই।
তারপর ফাতেমা স্বর্ণালংকারগুলো বায়তুল মালে জমা করে দেয়।
১৭
খলিফার স্ত্রী এমন সাধারণ জীবন যাপন করেছিলেন!যে জীবনের উপর হয়তো অন্য কারো ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব হত/হবে না।
এবং এই জীবনের উপর-ই ফাতিমা সন্তুষ্ট ছিল।তাঁর স্বামীর অনুসরণ এবং আল্লাহর কাছ থেকে প্রতিদানের আশায়।
আল্লাহর ভয় এবং আখেরাতের চিন্তায় তিনি(আমিরুল মু'মিনিন) সব সময় ভীত-সত্বস্ত্র থাকতেন।
একবার তাঁর কাছে একজন ভাল মানুষ এলেন।তাঁর বন্ধু।
খলিফা তাকে বললেনঃ গতরাত্র কবর এবং কবরের বাসিন্দাদের অবস্থার উপর চিন্তা করতে করতে কেটে দিয়েছিলাম।
তাঁর বন্ধু বলতে লাগলেনঃ সেই ব্যক্তিকে দেখলে আপনার অবস্থা কেমন হবে?জীবীত থাকাকালীন যে ছিল সুঠাম দেহের অধিকারী, সুদর্শন, সচ্ছল, সৌখিন যুবক কিন্তু মৃত্যুর তিন দিন পর তার দেহ পোকামাকড়ে ভরপুর,পোকামাকড় তার দেহের গোস্ত খেয়ে ফেলছে!!??
এ কথা শুনে উমর ইবনে আব্দুল আযীয কান্না শুরু করলেন। কান্না করতে করতে একপর্যায়ে তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলেন।
ভেতর থেকে ফাতেমা এই অবস্থা দেখে খাদেম মুযাহেমকে ডাকলেন।
"মুযাহেম!এই লোকটাকে তারাতারি ঘর থেকে বের করে দাও?"
লোকটি বেরিয়ে গেল। ফাতেমা এসে উমর ইবনে আব্দুল আযীযের চেহেরায় পানি ঝারাতে লাগল,আর কান্না করতে লাগল।
কিছুক্ষণ পর উমর ইবনে আব্দুল আযীযের হুশ ফিরে এলে ফাতেমা-কে জিজ্ঞেস করলেন, ফাতেমা!তুমি কান্না করছো কেন?
ফাতেমাঃ আপনার মৃত্যু এবং বিচ্ছেদ কল্পনা করে কান্না করছি।
১৮
উমর ইবনে আব্দুল আযীযের জীবদ্দশায় ফাতেমা কেঁদেছিল তাঁর কষ্ট এবং মেহনত দেখে।
তাঁর মৃত্যুর পর কেঁদেছিল বিরহ-বিচ্ছেদে।
কাঁদতে কাঁদতে একপর্যায়ে ফাতেমা দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলে।
১৯
একদিন ফাতেমার কাছে তার দুই ভাই ইয়াযীদ এবং মাসলামা এল।তার অবস্থা জানতে।
ফাতেমার কান্না দেখে তারা বলল,"বোন তুমি যা চাও আমরা সব দিতে প্রস্তুত আছি।"
ফাতেমাঃ আল্লাহর কসম,আমি কোন ধন-সম্পদের জন্য কান্না করছি না।আমিরুল মু'মিনিনের একটা স্মৃতি আমার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে,তাই কান্না করছি।
তারা বললঃ সে স্মৃতিটা কি?
ফাতেমাঃ আমিরুল মু'মিনিন কে এক রাত্রে দেখলাম,তিনি নামাজ পড়ছেন।
নামাজে তেলাওয়াত করতে করতে যখন এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলেন,
(আয়াত~তরজমা~: যেদিন মানুষ বিক্ষিপ্ত পতঙ্গের ন্যায় হয়ে যাবে,এবং পাহাড়্গুলো ধুনা- রঙিন তুলার মত হয়ে যাবে....)
তিনি ফুঁফিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন।
তাঁর কান্না দেখে আমি মনে করলাম হয় তিনি মারা যাবেন।এভাবেই ফজরের নামাজের সময় হয়ে গেল।
২০
উমর ইবনে আব্দুল আযীযের ইন্তেকালের পর ফাতেমার ভাই ইয়াযীদ যখন খলিফা হলেন,তখন ইয়াযীদ ফাতেমার স্বর্ণালঙ্কারগুলো ফেরত দিতে চাইলেন।
কিন্তু ফাতেমা এর উত্তরে বললেন,
'আল্লাহর কসম!তাঁর জীবদ্দশায় আমি তাঁর অনুসরণ করেছি,মৃত্যুর পর এসে তাঁর নাফরমানি করবো,এটা হতে পারে না।আমার এগুলোর প্রয়োজন নেই।
ফাতেমার সেই অলঙ্কারগুলো ইয়াযীদ তার পরিবারের মাঝে বণ্টন করে দিল।
(সমাপ্ত)
১১ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:২৫
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ.....
২| ১০ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৬
মিতক্ষরা বলেছেন: ভাল লাগল। কিন্তু একটি কথা। উমর ইবনে আবদুল আযীযও কি তার অন্য বংশের ধারা অনুযায়ী আব্বাসীয়দের সাথে কঠোর আচরন করতেন?
১১ ই মার্চ, ২০১৫ ভোর ৬:৩১
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: উমর ইবনে আব্দুল আযীযের জীবন এবং তাঁর বংশের মাঝে অনেক পার্থক্য ছিল।তাঁর ন্যায়-ইনসাফ ছিল খুলাফায়ে রাশেদিন এর মত।তিনি আব্বাসীয়দেরও উপর যুলুম কেন করবেন?
বরং ক্ষমতায় বসার পর তিনি তাঁর বংশ উমাইয়া-দের মধ্যে যার মুসলমানদের সম্পদ কুক্ষিগত করেছিল,সেগুলো ফিরিয়ে নিয়েছিলেন।
তাঁর জীবনী বিস্তারিত পড়লে আরো অনেক কিছু জানা যাবে।
তাঁর ইনসাফের কারণে ইতিহাস তাকে পঞ্চম খলিফা হিসেবে স্মরণ করে.....
ধন্যবাদ।
৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৩০
রুদ্রপথিক বলেছেন: মাশা'আল্লাহ!!!!
অনেক চমৎকার হয়েছে।
পড়ে খুব ভাল লাগল।
পরবর্তি লেখার অপেক্ষায় আছি....
ও প্রিয়তে রাখলাম।
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৩
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: শুকুরিয়া।
ধন্যবাদ আপনাকে।
৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৭:৪৩
রুদ্রপথিক বলেছেন: ভাই
উমর ইবনে আব্দুল আযীযের ব্যাপারে আররো কিছু জানতে চাই।
আশা করি জানাবেন।
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৫
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: ইনশাআল্লাহ।
উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহ. কে নিয়ে আরো লেখার পরিকল্পনা আছে।দো'আ করবেন।
৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪
প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। ধন্যবাদ
১৩ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আশাকরি বাকি পর্বগুলোও পড়বেন।
৬| ১৩ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫১
আরজু পনি বলেছেন:
আগের পর্বগুলো পড়তে হবে ।
প্রিয়তে ।
বর্ষপূর্তির অনেক শুভেচ্ছা রইল।
১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:৫০
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
শুভেচ্ছা এবং প্রীতি রইল।
৭| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০১
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: Click This Link
৮| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০৫
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: Click This Link
৯| ১৫ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:০৭
হেজাজের কাফেলা বলেছেন: Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০
শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: টুকরো কাহিনীগুলো পড়তে ভালোই লাগছিল।