নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.................

আদম আদোনিস

নিজের সম্পর্কে কথা বলতে ভালো লাগে না। আমার ব্লগ ই আমার হয়ে কথা বলবে।

আদম আদোনিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ আমি সারারাত জোছনা দেখবো....

১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৩১

ছোটবেলায় যে বাসায় থাকতাম, সেই বাসার বারান্দাটা অনেক বড় ছিল। আমি আর আমার ছোটবোন সারাক্ষণ বারান্দায় দৌড়াদৌড়ি করতাম, জানালার গ্রিল বেয়ে উপরে উঠে বসে থাকতাম। শিশুমনের অনেক বিচিত্র খেয়াল থাকে। সেই খেয়ালের বশেই কিনা, সাদা কাগজ গোল করে কেটে চাঁদ বানিয়ে একেবারে গ্রিলের মাথায় টাঙিয়ে রাখতাম। সেই চাঁদ আমরা দেখতাম, আর পুলকিত হতাম। কিন্তু রাতের আকাশে এত বড় একটা চাঁদ দেখেও আমার মধ্যে কোন ভাবান্তর আসতো না।

যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছি, আমার নবম জন্মদিনে একটা বই উপহার পেলাম। বইয়ের নামঃ আমার ছেলেবেলা। লেখকের নাম: হুমায়ুন আহমেদ। তখন অনেক গল্পের বই ই পড়তাম। কিন্তু এই লেখকের বই কখনো পড়া হয় নি। কৌতুহল নিয়েই পড়তে শুরু করলাম।

যতই পড়ি...আমি যেন ক্রমশই এক অন্য জগতে হারিয়ে যেতে থাকলাম। পৃথিবীতে থেকেও আমি যেন হয়ে গেলাম পৃথিবী বিচ্ছিন্ন। একটার পর একটা পাতা উল্টেই যাচ্ছি, উল্টেই যাচ্ছি। যখন পড়া শেষ করলাম, আমার মাথায় শুধু একটা জিনিসই ঘুরপাক খেতে লাগলো। ‘জোছনার ফুল’ দেখতে কেমন হয়? কিভাবে ধরা যায় এই ফুল? সেই দিন থেকে আমার আর কাগজ কেটে চাঁদ বানাতে ইচ্ছা করলো না। রাতের আকাশের আসল চাঁদই আমার ভালো লাগতে শুরু করলো। রাতে ঘুমানোর সময় মশারির ভিতর আমিও ‘জোছনার ফুল’ ধরার এক মজার খেলায় মেতে উঠলাম।

সময়ের সাথে সাথে হয়তো সেই খেলা হারিয়ে গেছে, কিন্তু হারায় নি চাঁদের প্রতি সেই সীমাহীন কৌতুহল। যে কৌতুহল শুধু আমারই নয়, যুগ যুগ ধরে আরো অসংখ্য অগণিত বাঙালিও চাঁদের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। চন্দ্রাহত হতে চেয়েছে। জোছনা রাতে বনে যেতে চেয়েছে। তেঁতুল বনে জোছনা দেখতে চেয়েছে। এই যে চাঁদের প্রতি সীমাহীন আবেগ, তীব্র এক কৌতুহল...এসবই সম্ভব করেছেন একজন মানুষ। তিনি হুমায়ুন আহমেদ।

তাঁর লেখনীর এমনই এক তীব্র আকর্ষণ ছিল, আপাতদৃষ্টিতে তুচ্ছ জিনিসকেও তিনি উপস্থাপন করেছেন অসামান্য নান্দনিকতায়। পৃথিবীর শুরু থেকেই চাঁদের আলো ছিল। ভরা পূর্ণিমার জোছনা ছিল। বর্ষার বৃষ্টি ছিল। ছিল মেঘমেদুর বর্ষার দিনে গাছ উপচিয়ে পরা কদমফুল। তাঁর আগে কে ই বা পেরেছেন এসবের প্রতি মানুষের দুর্নিবার আকর্ষণ সৃষ্টি করতে? কেউ পারেন নি। তিনি পেরেছেন। মানব মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ছোট ছোট আনন্দ, ছোট ছোট দুঃখ, কিংবা নাম না জানা অযুত-নিযুত চাওয়া পাওয়ার ছবি তিনি এঁকেছেন তাঁর লেখনীর রংতুলিতে। কত অসাধারণই না সেই দৃশ্যকল্প! তাঁর লেখা প্রেমের উপন্যাস পড়লে নিজের অজান্তেই চোখ ভিজে ওঠে। কখনোবা স্বপ্নচারী হতে ইচ্ছা করে। উপন্যাসের সেই কল্পিত প্রেমিকার হাত ধরে অজানার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরতে ইচ্ছা করে। পাশাপাশি বসে জোছনা দেখতে ইচ্ছা করে। ভিজতে ইচ্ছা করে অঝোর বর্ষায়। এমন সুতীব্র আবেগ আর কারো লেখা পড়ে আমার আসেনি।

আজ হুমায়ুন আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। বারে বারে মনে পড়ে যাচ্ছে এক বছর আগের এই দিনটির কথা। খবরটা শোনার পর অনেকক্ষণ আমি নিজের ভিতরে ছিলাম না। বিশ্বাস-অবিশ্বাসের এক অদ্ভূত দোলাচলে তখন আমি হতবিহবল হয়ে গিয়েছিলাম। বুকের ভিতর দলা পাকিয়ে কান্না আসছিলো। আমার মতই কেঁদেছিল তাঁর অগণিত ভক্ত-পাঠক। আপনজনের মৃত্যুতেও মানুষ হয়তো এতটা কাঁদে না।

এই লেখাটা লিখতে গিয়েও বারেবারে আমার চোখ ভিজে আসছে। মনে পড়ে যাচ্ছে হিমু, মিসির আলী, শুভ্র, রূপা কিংবা মৃন্ময়ীর কথা। তাঁকে হারিয়ে আমরা তাঁর এই চরিত্রগুলোকেও হারিয়ে ফেলেছি। অথচ তারা ছিল আমাদের কতটাই না কাছের মানুষ! কতদিনের পরিচিত। এই একবছর পরে এসেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাদেরকে আমরা আর কোথাও পাবো না।

সন্ধ্যা থেকেই মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে আজ। ছাদে গিয়ে দেখি, আকাশে মস্ত বড় এক চাঁদ উঠেছে। আজ পূর্ণিমা কিনা, আমি জানি না। জানার দরকারও নেই। তিনি বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যু হবে কোন এক চান্নী পসর রাতে। এই দিনটা তাই আজীবনই চান্নী পসর রাত হয়ে থাকবে আমার কাছে।

আজ রাতে আমি ঘুমাবো না। ছাদে বসে জোছনা দেখবো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকবো সারারাত। আর মনে মনে ভেবে নেবো...অদেখা আরেক পৃথিবীতে তিনি আমার পাশে বসেই জোছনা দেখছেন। তাঁর সাথে আরো আছে হিমু, রূপা, মিসির আলী, শুভ্র, মৃন্ময়ী। মৃন্ময়ীর মন আজও ভালো নেই। তারপরও সে আজ জোছনা দেখবে। রূপার হাতে হাত রেখে হিমুও জোছনা দেখবে। মোটা মোটা ফিজিক্স এর বই রেখে আজ শুভ্রও জোছনা দেখবে। জোছনা দেখবেন মিসির আলীও। হয়তোবা শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি আসবে আকাশ ভেঙে। সেই বৃষ্টিতে ভিজবো আমরা সবাই।



আর বাস্তবের পৃথিবীতে?



জোছনা দেখতে দেখতেই হয়তো দুই চোখে বর্ষা নামবে আজ।



অন্যলোকে ভালো থাকুন...হুমায়ুন আহমেদ। অনেক ভালো...অনেক অনেক ভালো।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১:৪০

হাবিব০৪২০০২ বলেছেন: ভাল লাগলো
লেখায় +

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৩:৩৩

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: এই একবছর পরে এসেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, তাদেরকে আমরা আর কোথাও পাবো না।

৩| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:২৯

মাহতাব সমুদ্র বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন। লেখার ধরন চমত্‍কার। জোছনা মাখুক হিমু রূপা মৃন্ময়ী আপনি আমি.. জোছনা বৃষ্টির পথপ্রদর্শক ওপারেও ভালো থাকুন। আপনার জন্য শুভ কামনা।

৪| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

আদম আদোনিস বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.