| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলাম হাউস
তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আর তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়।
রিয়াদুস সালেহীন (১ম খণ্ড)
ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদ : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
গ্রন্থকারের ভূমিকা
যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি একক, প্রতাপশালী, পরাক্রমশালী, মহা ক্ষমাশীল। যিনি রাত্রিকে আচ্ছাদিত করেন দিন দ্বারা, যা হৃদয়বান জ্ঞানবান ব্যক্তিদের জন্য উপদেশস্বরূপ, বিচক্ষণ ও উপদেশগ্রহণকারীদের জর্য জ্ঞানালোক স্বরূপ। যিনি সৃষ্টিকুলের মধ্য হতে যাদেরকে মনোনীত করেছেন তাদেরকে সচেতন করেছেন, সুতরাং তাদেরকে এ পার্থিব সংসারের মোহমুক্ত করেছেন, তাদেরকে তার নিজের ব্যাপারে সতর্কতা ও সতত চিন্তা-গবেষণায় ব্যাপৃত রেখেছেন, তাদেরকে প্রতিনিয়ত উপদেশ ও শিক্ষা গ্রহণে রত রেখেছেন। তিনি তাদেরকে নিরবধি নিজ আনুগত্য করার, আখেরাতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার, যে বিষয় তাকে অসন্তুষ্ট করে এবং ধ্বংস অনিবার্য করে সে বিষয় হতে সতর্ক থাকার এবং অবস্থা ও পরিস্থিতির পরিবর্তন সত্ত্বেও তাতে যত্নবান থাকার তাওফীক দিয়েছেন।
আমি তার প্রশংসা করি, অতিশয় ও পবিত্রতম প্রশংসা, ব্যাপকতম ও অধিকতম বর্ধনশীল প্রশংসা। আর সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, যিনি কৃপানিধি ও দানশীল, চরম দয়াশীল, পরম করুনাময়। সাক্ষ্য দেই যে, আমাদের নেতা মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, তাঁর প্রিয়পাত্র ও বন্ধু, যিনি সরল পথ-প্রদর্শক ও সঠিক দ্বীনের প্রতি আহ্বানকারী। আল্লাহর অসংখ্য দরুদ ও সালাম তাঁর উপর বর্ষিত হোক এবং সকল নবী, সকলের বংশধর এবং সকল নেক বান্দাদের উপরও।
অতঃপর মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ ﴾ [الذاريات: ٥٦، ٥٧]
“আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে। (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬-৫৭)
এটি স্পষ্ট ঘোষণা যে, জ্বিন-ইনসান ইবাদতের জন্য সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং তাদের উচিত, সেই কর্মের প্রতি যত্ন নেওয়া, যার জন্য তারা সৃষ্ট হয়েছে এবং বিষয়-বিতৃষ্ণার সাথে ভোগ-বিলাস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। যেহেতু পার্থিব জীবন হল ক্ষণস্থায়ী, চিরস্থায়ী নয়। তা হল পারের নাও মাত্র, আনন্দের বসত-বাড়ী নয়। অস্থায়ী পানি পানের ঘাট, চিরস্থায়ী বাসস্থান নয়। এই জন্য তার সচেতন বাসিন্দা তারাই, যারা আল্লাহর ইবাদত-গুযার এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান মানুষ তারাই, যারা তার প্রতি আসক্তিহীন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّمَا مَثَلُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا كَمَآءٍ أَنزَلۡنَٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخۡتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلۡأَرۡضِ مِمَّا يَأۡكُلُ ٱلنَّاسُ وَٱلۡأَنۡعَٰمُ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَخَذَتِ ٱلۡأَرۡضُ زُخۡرُفَهَا وَٱزَّيَّنَتۡ وَظَنَّ أَهۡلُهَآ أَنَّهُمۡ قَٰدِرُونَ عَلَيۡهَآ أَتَىٰهَآ أَمۡرُنَا لَيۡلًا أَوۡ نَهَارٗا فَجَعَلۡنَٰهَا حَصِيدٗا كَأَن لَّمۡ تَغۡنَ بِٱلۡأَمۡسِۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢٤ ﴾ [يونس: ٢٤]
“দুনিয়ার জীবনের দৃষ্টান্ত তো এরূপঃ যেমন আমরা আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করি যা দ্বারা ভূমিজ উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদ্গত হয়, যা থেকে মানুষ ও জীব-জন্তু খেয়ে থাকে। তারপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয় এবং তার অধিকারিগণ মনে করে সেটা তাদের আয়ত্তাধীন, তখন দিনে বা রাতে আমাদের নির্দেশ এসে পড়ে তারপর আমরা তা এমনভাবে নির্মূল করে দেই, যেন গতকালও সেটার অস্তিত্ব ছিল না। এভাবে আমরা আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করি এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে।” (সূরা ইউনুস: ২৪ আয়াত)
আর এ মর্মে আরও অনেক আয়াত রয়েছে। কবি কত সুন্দরই না বলেছেন,
নিশ্চয় আল্লাহর অনেক বিচক্ষণ বান্দা আছেন,
যাঁরা দুনিয়াকে স্থায়ীভাবে বর্জন করেছেন এবং ভয় করেছেন ফিতনাকে।
দুনিয়া নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে জেনেছেন যে,
তা কোনো জীবের জন্য (চির) বাসস্থান নয়।
তাকে তাঁরা সমুদ্র গণ্য করেছেন
এবং তা পারাপারের জন্য কিশতী বানিয়েছেন নেক আমলকে।
সুতরাং এই যদি তার অবস্থা হয়, যা বর্ণনা করলাম এবং এই যদি আমাদের ও যে জন্য আমরা সৃষ্ট হয়েছি তার অবস্থা হয়, যা পূর্বে উল্লেখ করলাম, তাহলে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তির উচিত যে, সে নিজেকে সৎলোকদের দলভুক্ত করবে, জ্ঞানী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিবর্গের পথ অবলম্বন করবে, ইতোপূর্বে যার দিকে ইঙ্গিত করেছি, তার জন্য প্রস্তুত হবে এবং যার প্রতি সতর্ক করেছি, তাতে যত্নবান হবে। আর এর জন্য সবচেয়ে সঠিক পথ ও নির্ভুল পন্থা হল, আমাদের নবীর সহীহ হাদীসের সাথে আদব প্রদর্শন করা (তার আদর্শ গ্রহণ করা), যিনি পূর্বাপর সকল মানুষের নেতা এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষ অপেক্ষা অধিক সম্মানীয়। তাঁর উপর এবং সকল নবীগণের উপর আল্লাহর অসংখ্য দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
আর আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائدة: ٢]
“তোমরা সৎ ও সংযমশীলতার কাজে পরস্পর সহযোগিতা কর”। (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)
তাছাড়া সহীহসূত্রে প্রমাণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দাহ নিজ ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।” (মুসলিম, ২৬৯৯)
“যে ব্যক্তি কল্যাণের প্রতি পথনির্দেশ করে তার জন্য ঐ কল্যাণ সম্পাদনকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব লাভ হয়।” (ইবন হিব্বান)
“যে ব্যক্তি সৎপথের দিক আহ্বান করে (দাওয়াত দেয়) সে ব্যক্তির ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমান সওয়াব লাভ হবে। এতে তাদের সওয়াব থেকে কিছুমাত্র কম হবে না। আর যে ব্যক্তি অসৎ পথের দিকে আহ্বান করে সেই ব্যক্তি ঐ পথের অনুসারীদের সমপরিমাণ গোনাহের ভাগী হবে। এতে তাদের গোনাহ থেকে কিছুমাত্র কম হবে না।” (মুসলিম ২৬৭৪)
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন, “আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে আল্লাহ যদি একটি লোককেও হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য লাল উটনী (আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ) অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী ৩৭০১, মুসলিম ২৪০৬ নং)
সুতরাং আমি মনস্থ করলাম যে, সহীহ হাদীস সম্বলিত একটি সংক্ষিপ্ত গ্রন্থ সঞ্চয়ন করি, যাতে এমনসব বিষয়ের সমাবেশ ঘটবে, যা পাঠকের জন্য আখেরাতের পাথেয় হবে, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক আদব ও শিষ্টাচারিতা অর্জন হবে, যাতে উৎসাহপ্রদান, ভীতিপ্রদর্শন এবং পরহেযগার মানুষদের নানা আদবসম্বলিত বিষয়, বিরাগমূলক, আত্মা-অনুশীলন ও চরিত্রগঠনমূলক, অন্তরশুদ্ধি ও হৃদরোগের চিকিৎসামূলক, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সংশুদ্ধি ও তার বক্রতা দূরীকরণমূলক ইত্যাদি আল্লাহ ভক্তদের উদ্দেশ্যমূলক আরও অন্যান্য হাদীস পরিবেশিত হবে।
আর এতে আমি বাধ্যবাধকতার সাথে স্পষ্ট সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য হাদীস উল্লেখ করব না এবং যা উল্লেখ করব, তাতে প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ হাদীসগ্রন্থের হাওয়ালা দেব। কুরআনে আযীযের আয়াতে কারীমা দিয়ে এর পরিচ্ছেদগুলোর সূচনা করব। শব্দের সঠিক উচ্চারণ এবং নিগুঢ় অর্থ-সম্বলিত ব্যাখ্যার প্রয়োজনবোধে মূল্যবান টীকা-টিপ্পনী ব্যবহার করব। যখন বলব, متفق عليه তখন তার মানে হবে, হাদীসটিকে বুখারী ও মুসলিম (সহীহাইনে) বর্ণনা করেছেন।
আমি আশা করি যে, এ গ্রন্থ যদি পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে, তাহলে তা যত্নবান পাঠকের জন্য কল্যাণের পথ-প্রদর্শক হবে এবং সকল প্রকার মন্দ ও সর্বনাশী কর্ম থেকে বিরত রাখবে।
আমি সেই ভাইয়ের কাছে আবেদন রাখব, যিনি এ গ্রন্থের কিছু অংশ দ্বারাও উপকৃত হবেন, তিনি যেন আমার জন্য, আমার পিতা-মাতার জন্য, আমার উস্তাদ, সকল বন্ধু-বান্ধব ও সমস্ত মুসলিমের জন্য দো‘আ করেন। আর আমি মহানুভব আল্লাহর উপর ভরসা করি, তাঁকেই আমার সবকিছু সমর্পন করি, তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি, তিনিই আমার জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর প্রেরণাদান ছাড়া পাপ থেকে ফেরার এবং সৎকাজ করার (নড়া-চড়ার) কোনো শক্তি নেই।
1- بَابُ الْإِخْلَاصِ وَإِحْضَارِ النِّيَّةِ
فِيْ جَمِيْعِ الأَعْمَالِ وَالْأَقْوَالِ وَالأَحْوَالِ الْبَارِزَةِ وَالْـخَفِيَّةِ
পরিচ্ছেদ - ১ : ইখলাস প্রসঙ্গে
প্রকাশ্য ও গোপনীয় আমল (কর্ম) কথা ও অবস্থায় আন্তরিকতা ও বিশুদ্ধ নিয়ত জরুরী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ [البينة: ٥]
অর্থাৎ “তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম।” (সূরা বাইয়িনাহ্ ৫নং আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لَن يَنَالَ ٱللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَآؤُهَا وَلَٰكِن يَنَالُهُ ٱلتَّقۡوَىٰ مِنكُمۡۚ ﴾ [الحج: ٣٧]
অর্থাৎ “আল্লাহর কাছে কখনোও ওগুলির মাংস পৌঁছে না এবং রক্তও না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩৭ নং আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ قُلۡ إِن تُخۡفُواْ مَا فِي صُدُورِكُمۡ أَوۡ تُبۡدُوهُ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ ﴾ [ال عمران: ٢٩]
অর্থাৎ “বল, তোমাদের মনে যা আছে তা যদি তোমরা গোপন রাখ কিংবা প্রকাশ কর, আল্লাহ তা অবগত আছেন।” (সূরা আলে ইমরান ২৯ নং আয়াত)
1/1- عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّةِ، وَإِنَّمَا لِامْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ فَهِجْرَتُهُ إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ. (متفقٌ على صحته)
১/১। উমার রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যাবতীয় কার্য নিয়ত বা সংকল্পের উপর নির্ভরশীল। আর মানুষের জন্য তাই প্রাপ্য হবে, যার সে নিয়ত করবে। অতএব যে ব্যক্তির হিজরত (সবদেশত্যাগ) আল্লাহর (সন্তোষ লাভের) উদ্দেশ্যে ও তাঁর রসূলের জন্য হবে; তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তির হিজরত পার্থিব সম্পদ অর্জন কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যেই হবে, তার হিজরত যে সংকল্প নিয়ে করবে তারই জন্য হবে।”
এই হাদীসটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ ও ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ এটিকে ‘এক তৃতীয়াংশ অথবা অর্ধেক দ্বীন’ বলে অভিহিত করেছেন।
এটিকে ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর গ্রন্থ সহীহ বুখারীতে সাত জায়গায় বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেক স্থানে এই হাদীসটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হল কর্মের বিশুদ্ধতা ও কর্মের প্রতিদান নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত---সে কথা প্রমাণ করা।
2/2- وَعَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ عَبدِ الله عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : يَغْزُو جَيْشٌ الْكَعْبَةَ، فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنْ الْأَرْضِ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ، قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ! كَيْفَ يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ وَفِيهِمْ أَسْوَاقُهُمْ وَمَنْ لَيْسَ مِنْهُمْ؟ قَالَ: يُخْسَفُ بِأَوَّلِهِمْ وَآخِرِهِمْ، ثُمَّ يُبْعَثُونَ عَلَى نِيَّاتِهِمْ. (متفقٌ عليه. هذا لفظ البخاري).
২/২। উম্মুল মু’মেনীন উম্মে আব্দুল্লাহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি বাহিনী কা‘বা ঘরের উপর আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে বের হবে। অতঃপর যখন তারা সমতল মরুপ্রান্তরে (বাইদা) পৌঁছবে তখন তাদের প্রথম ও শেষ ব্যক্তি সকলকেই যমীনে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তিনি (আয়েশা) বলেন যে, আমি (এ কথা শুনে) বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! কেমন করে তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে? অথচ তাদের মধ্যে তাদের বাজারের ব্যবসায়ী এবং এমন লোক থাকবে, যারা তাদের (আক্রমণকারীদের) অন্তর্ভুক্ত নয়। তিনি বললেন, তাদের প্রথম ও শেষ সকলকে ধসিয়ে দেওয়া হবে। তারপর তাদেরকে তাদের নিয়ত অনুযায়ী পুনরুত্থিত করা হবে।’’
3/3 وعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا قَالَت: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «لاَ هِجْرَةَ بَعْدَ الْفَتْحِ وَلَكِنْ جِهَادٌ وَنِيَّةٌ وَإِذَا اسْتُنْفِرْتُمْ فَانْفِرُوا».متفق عليه
৩/৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মক্কা বিজয়ের পর (মক্কা থেকে) হিজরত নেই; বরং বাকী রয়েছে জিহাদ ও নিয়ত। সুতরাং যদি তোমাদেরকে জিহাদের জন্য ডাক দেওয়া হয়, তাহলে তোমরা (জিহাদে) বেরিয়ে পড়।’’
‘মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরত নেই’ এর অর্থ এই যে, মক্কা এখন ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত হল। ফলে এখান থেকে মুসলিমরা আর হিজরত করতে পারবে না।
4/4 عَنْ أَبِي عبدِ اللهِ جابر بن عبدِ اللهِ الأنصاريِّ رَضي اللهُ عنهما، قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبيِّ ﷺ في غَزَاةٍ، فَقالَ : «إِنَّ بالمدِينَةِ لَرِجَالاً ما سِرْتُمْ مَسِيراً، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِياً، إلاَّ كَانُوا مَعَكمْ حَبَسَهُمُ الْمَرَضُ» وَفي روَايَة : «إلاَّ شَرَكُوكُمْ في الأجْرِ» رواهُ مسلمٌ
৪/৪। আবূ আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক অভিযানে ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘মদীনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদীনায় থাকতে বাধ্য করেছে।’’ আর একটি বর্ণনায় আছে যে, ‘‘তারা নেকীতে তোমাদের অংশীদার।’’
5/5 ورواهُ البخاريُّ عن أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ : رَجَعْنَا مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ مَعَ النَّبيِّ ﷺ، فقال: «إنَّ أقْواماً خَلْفَنَا بالْمَدِينَةِ مَا سَلَكْنَا شِعْباً وَلاَ وَادياً، إلاّ وَهُمْ مَعَنَا ؛ حَبَسَهُمُ العُذْرُ» .
৫/৫। সহীহ বুখারীতে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু থেকে এরূপ বর্ণনা রয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাবূক অভিযান থেকে আমাদের প্রত্যাবর্তনকালে তিনি বললেন যে, ‘‘আমাদের পিছনে মদীনায় এরূপ কিছু লোক আছে যারা প্রত্যেক গিরিপথ বা উপত্যকা অতিক্রমকালে আমাদের সাথে রয়েছে। বিশেষ ওজর তাদেরকে ঘরে থাকতে বাধ্য করেছে।’’
6/6 وعَنْ أَبِي يَزيدَ مَعْنِ بنِ يَزيدَ بنِ الأخنسِ رضي الله عنه، وهو وأبوه وَجَدُّه صحابيُّون، قَالَ : كَانَ أبي يَزيدُ أخْرَجَ دَنَانِيرَ يَتَصَدَّقُ بِهَا، فَوَضعَهَا عِنْدَ رَجُلٍ في الْمَسْجِدِ، فَجِئْتُ فأَخذْتُها فَأَتَيْتُهُ بِهَا . فقالَ: واللهِ، مَا إيَّاكَ أرَدْتُ، فَخَاصَمْتُهُ إِلى رسولِ اللهِ ﷺ، فقَالَ: «لكَ مَا نَوَيْتَ يَا يزيدُ، ولَكَ ما أخَذْتَ يَا مَعْنُ» رواهُ البخاريُّ .
৬/৬। আবূ ইয়াযীদ মা‘ন ইবনে ইয়াযীদ ইবনে আখনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু - তিনি (মা‘ন) এবং তাঁর পিতা ও দাদা সকলেই সাহাবী---তিনি বলেন, আমার পিতা ইয়াযীদ দান করার জন্য কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা বের করলেন। অতঃপর তিনি সেগুলি (দান করতে) মসজিদে একটি লোককে দায়িত্ব দিলেন। আমি (মসজিদে) এসে তার কাছ থেকে (অন্যান্য ভিক্ষুকের মত) তা নিয়ে নিলাম এবং তা নিয়ে বাড়ী এলাম। (যখন আমার পিতা এ ব্যাপারে অবগত হলেন তখন) বললেন, আল্লাহর কসম! তোমাকে দেওয়ার নিয়ত আমার ছিল না। (ফলে এগুলি আমার জন্য হালাল হবে কি না তা জানার উদ্দেশ্যে) আমি আমার পিতাকে নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তিনি বললেন, ‘‘হে ইয়াযীদ! তোমার জন্য সেই বিনিময় রয়েছে যার নিয়ত তুমি করেছ এবং হে মা’ন! তুমি যা নিয়েছ তা তোমার জন্য হালাল।’’
7/7 وَعَنْ أَبِي إسحَاقَ سَعدِ بنِ أبي وَقَّاصٍ مالِكِ بنِ أُهَيْب بنِ عبدِ مَنَافِ بنِ زُهرَةَ بنِ كِلاَبِ بنِ مُرَّةَ بنِ كَعبِ بنِ لُؤيٍّ القُرشِيِّ الزُّهريِّ رضي الله عنه، أَحَدِ العَشَرَةِ المشهودِ لَهُم بِالْجَنَّةِ، قَالَ : جَاءَنِي رسولُ اللهِ ﷺ يَعُودُنِي عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بي، فقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، إنِّي قَدْ بَلَغَ بي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مالٍ وَلا يَرِثُني إلا ابْنَةٌ لِي، أفأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي ؟ قَالَ: «لاَ»، قُلْتُ : فالشَّطْرُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فقَالَ: «لا»، قُلْتُ : فالثُّلُثُ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ : «الثُّلُثُ والثُّلُثُ كَثيرٌ أَوْ كبيرٌ إنَّكَ إنْ تَذَرْ وَرَثَتَكَ أغنِيَاءَ خيرٌ مِنْ أنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يتكفَّفُونَ النَّاسَ، وَإنَّكَ لَنْ تُنفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغي بِهَا وَجهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ في فِيِّ امْرَأَتِكَ»، قَالَ : فَقُلتُ : يَا رسولَ اللهِ، أُخلَّفُ بعدَ أصْحَابي ؟ قَالَ: «إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ فَتَعملَ عَمَلاً تَبتَغي بِهِ وَجْهَ اللهِ إلاَّ ازْدَدتَ بِهِ دَرَجةً ورِفعَةً، وَلَعلَّكَ أنْ تُخَلَّفَ حَتّى يَنتَفِعَ بِكَ أقْوَامٌ وَيُضَرَّ بِكَ آخرونَ . اَللهم أَمْضِ لأصْحَابي هِجْرَتَهُمْ ولاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أعقَابهمْ، لكنِ البَائِسُ سَعدُ بْنُ خَوْلَةَ»يَرْثي لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ أنْ ماتَ بمَكَّة . مُتَّفَقٌ عليهِ .
৭/৭। সা‘দ ইবন আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যে দশজন সাহাবীকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছিল ইনি তাঁদের মধ্যে একজন-। বিদায় হজ্জ্বের বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার রুগ্ন অবস্থায় আমাকে দেখা করতে এলেন। সে সময় আমার শরীরে চরম ব্যথা ছিল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার (দৈহিক) জ্বালা-যন্ত্রণা কঠিন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে--যা আপনি সবচক্ষে দেখছেন। আর আমি একজন ধনী মানুষ; কিন্তু আমার উত্তরাধিকারী বলতে আমার একমাত্র কন্যা। তাহলে আমি কি আমার মাল-সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ দান করে দেব?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে অর্ধেক মাল হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ আমি বললাম, ‘তাহলে কি এক তৃতীয়াংশ দান করতে পারি?’ তিনি বললেন, ‘‘এক তৃতীয়াংশ (দান করতে পার), তবে এক তৃতীয়াংশও অনেক। কারণ এই যে, তুমি যদি তোমার উত্তরাধিকারীদের ধনবান অবস্থায় ছেড়ে যাও, তাহলে তা এর থেকে ভাল যে, তুমি তাদেরকে কাঙ্গাল করে ছেড়ে যাবে এবং তারা লোকের কাছে হাত পাতবে। (মনে রাখ,) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও তুমি বিনিময় পাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি আমার সঙ্গীদের ছেড়ে পিছনে (মক্কায়) থেকে যাব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি তোমার সঙ্গীদের মরার পর জীবিত থাক এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কাজ কর, তাহলে তার ফলে তোমার মর্যাদা ও সম্মান বর্ধন হবে। আর সম্ভবতঃ তুমি বেঁচে থাকবে। এমনকি তোমার দ্বারা কিছু লোক (মু’মিনরা) উপকৃত হবে। আর কিছু লোক (কাফেররা) ক্ষতিগ্রস্ত হবে। হে আল্লাহ! তুমি আমার সাহাবীদেরকে হিজরতে পরিপূর্ণতা দান কর এবং তাদেরকে (হিজরত থেকে) পিছনে ফিরিয়ে দিও না। কিন্তু মিসকীন সা‘দ ইবনে খাওলা।’’ তাঁর মৃত্যু মক্কায় হওয়ার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন।
8/8 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ صَخرٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنَّ الله لاَ ينْظُرُ إِلى أجْسَامِكُمْ، وَلاَ إِلَى صُوَرِكمْ، وَلَكن ينْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعمَالِكُم» رواه مسلم
৮/৮। আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবন সাখ্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের দেহ এবং তোমাদের আকৃতি দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমল দেখেন।’’
9/9 وعَنْ أَبِي موسى عبدِ اللهِ بنِ قيسٍ الأشعريِّ رضي الله عنه، قَالَ : سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذٰلِكَ في سبيلِ الله ؟ فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا، فَهوَ في سَبِيلِ اللهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
৯/৯। আবূ মূসা আব্দুল্লাহ ইবনে কায়স আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, যে বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে, অন্ধ পক্ষপাতিত্বের জন্য যুদ্ধ করে এবং লোক প্রদর্শনের জন্য (সুনাম নেওয়ার উদ্দেশ্যে) যুদ্ধ করে, এর কোন্ যুদ্ধটি আল্লাহর পথে হবে? আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কালেমাকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, একমাত্র তারই যুদ্ধ আল্লাহর পথে হয়।’’
10/10 وعَنْ أَبِي بَكرَةَ نُفيع بنِ الحارثِ الثقَفيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا التَقَى المُسلِمَان بسَيْفَيهِمَا فالقَاتِلُ وَالمَقْتُولُ في النّارِ» قُلتُ : يا رَسُولَ اللهِ! هَذا القَاتِلُ فَمَا بَالُ المقْتُولِ ؟ قَالَ: إنَّهُ كَانَ حَريصاً عَلَى قتلِ صَاحِبهِ».مُتَّفَقٌ عليهِ.
১০/১০। আবূ বাক্রাহ নুফাই ইবন হারেস সাক্বাফী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে আপোসে লড়াই করে, তখন হত্যাকারী ও নিহত দু’জনই জাহান্নামে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হত্যাকারীর জাহান্নামে যাওয়া তো স্পষ্ট; কিন্তু নিহত ব্যক্তির ব্যাপার কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সেও তার সঙ্গীকে হত্যা করার জন্য লালায়িত ছিল।’’
11/11 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قالَ رَسُول الله ﷺ: «صَلاةُ الرَّجلِ في جمَاعَةٍ تَزيدُ عَلَى صَلاتهِ في سُوقِهِ وبيتهِ بضْعاً وعِشرِينَ دَرَجَةً، وَذَلِكَ أنَّ أَحدَهُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضوءَ، ثُمَّ أَتَى المَسْجِدَ لا يُرِيدُ إلاَّ الصَّلاةَ، لاَ يَنْهَزُهُ إِلاَّ الصَلاةُ : لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلاَّ رُفِعَ لَهُ بِهَا دَرجَةٌ، وَحُطَّ عَنْهُ بها خَطِيئَةٌ حَتَّى يَدْخُلَ المَسْجِدَ، فإِذا دَخَلَ المَسْجِدَ كَانَ في الصَّلاةِ مَا كَانَتِ الصَّلاةُ هِي تَحْبِسُهُ، وَالمَلائِكَةُ يُصَلُّونَ عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ في مَجْلِسِهِ الَّذِي صَلَّى فِيهِ، يَقُولُونَ : اَللهم ارْحَمْهُ، اَللهم اغْفِرْ لَهُ، اَللهم تُبْ عَلَيهِ، مَا لَم يُؤْذِ فيه، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ» مُتَّفَقٌ عليه، وهذا لفظ مسلم .
১১/১১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষের জামাআতের সঙ্গে নামায পড়ার নেকী, তার বাজারে ও বাড়ীতে নামায পড়ার চেয়ে (২৫ বা ২৭) গুণ বেশী। আর তা এ জন্য যে, যখন কোন ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ করে সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে মসজিদে আসে এবং সালাতই তাজক মসজিদে নিয়ে যায়, তখন তার মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা উন্নত হয় ও একটি পাপ মোচন করা হয়। অতঃপর যখন সে মসজিদে প্রবেশ করে, তখন যে পর্যন্ত সালাত তাকে (মসজিদে) আটকে রাখে, সে পর্যন্ত সে নামাযের মধ্যেই থাকে। আর ফিরিশতারা তোমাদের কোন ব্যক্তির জন্য সে পর্যন্ত রহমতের দো‘আ করতে থাকেন---যে পর্যন্ত সে ঐ স্থানে বসে থাকে, যে স্থানে সে সালাত আদায় করেছে। তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ! এর প্রতি দয়া কর, হে আল্লাহ! একে ক্ষমা কর, হে আল্লাহ! এর তওবাহ কবুল কর।’ (ফিরিশতাদের এই দো‘আ সে পর্যন্ত চলতে থাকে) যে পর্যন্ত সে কাউকে কষ্ট না দেয়, যে পর্যন্ত তার ওযূ নষ্ট না হয়।’’
12/12 وَعَنْ أَبِي العبَّاسِ عَبدِ اللهِ بنِ عَبَّاسِ بنِ عَبدِ المُطَّلِبِ رَضِيَ اللهُ عنهما، عَن رَسُول الله ﷺ، فِيمَا يَروِي عَن رَبّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالى، قَالَ: «إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً،وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمئةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ تَعَالَى عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً»مُتَّفَقٌ عليهِ .
১২/১২। আবুল আব্বাস আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বরকতময় মহান প্রভু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পুণ্যসমূহ ও পাপসমূহ লিখে দিয়েছেন। অতঃপর তিনি তার ব্যাখ্যাও করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি কোনো নেকী করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত করতে পারে না, আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা তার জন্য (কেবল নিয়ত করার বিনিময়ে) একটি পূর্ণ নেকী লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর কাজটি করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে দশ থেকে সাতশ গুণ, বরং তার চেয়েও অনেক গুণ নেকী লিখে দেন। পক্ষান্তরে যদি সে একটি পাপ করার সংকল্প করে; কিন্তু সে তা কর্মে বাস্তবায়িত না করে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিকট একটি পূর্ণ নেকী হিসাবে লিখে দেন। আর সে যদি সংকল্প করার পর ঐ পাপ কাজ করে ফেলে, তাহলে আল্লাহ মাত্র একটি পাপ লিপিবদ্ধ করেন।’’
13/13 وَعَنْ أَبِي عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عنهما، قَالَ : سمعتُ رسولَ الله ﷺ، يقول: «انطَلَقَ ثَلاثَةُ نَفَرٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى آوَاهُمُ المَبيتُ إِلى غَارٍ فَدَخلُوهُ، فانْحَدرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الغَارَ، فَقالُوا : إِنَّهُ لاَ يُنْجِيكُمْ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ إِلاَّ أنْ تَدْعُوا اللهَ بصَالِحِ أعْمَالِكُمْ . قَالَ رجلٌ مِنْهُمْ : اَللهم كَانَ لِي أَبَوانِ شَيْخَانِ كبيرانِ، وكُنْتُ لا أغْبِقُ قَبْلَهُمَا أهْلاً ولاَ مالاً، فَنَأَى بِي طَلَب الشَّجَرِ يَوْماً فلم أَرِحْ عَلَيْهمَا حَتَّى نَامَا، فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوقَهُمَا فَوَجَدْتُهُما نَائِمَينِ، فَكَرِهْتُ أنْ أُوقِظَهُمَا وَأَنْ أغْبِقَ قَبْلَهُمَا أهْلاً أو مالاً، فَلَبَثْتُ - والْقَدَحُ عَلَى يَدِي - أنتَظِرُ اسْتِيقَاظَهُما حَتَّى بَرِقَ الفَجْرُ والصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَميَّ، فاسْتَيْقَظَا فَشَرِبا غَبُوقَهُما . اَللهم إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاء وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنّا مَا نَحْنُ فِيهِ مِنْ هذِهِ الصَّخْرَةِ، فانْفَرَجَتْ شَيْئاً لا يَسْتَطيعُونَ الخُروجَ مِنْهُ.
قَالَ الآخر : اَللهم إنَّهُ كانَتْ لِيَ ابْنَةُ عَمّ، كَانَتْ أَحَبَّ النّاسِ إليَّ - وفي رواية : كُنْتُ أُحِبُّها كأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرِّجَالُ النساءَ - فأَرَدْتُهَا عَلَى نَفْسِهَا فامْتَنَعَتْ منِّي حَتَّى أَلَمَّتْ بها سَنَةٌ مِنَ السِّنِينَ فَجَاءتْنِي فَأَعْطَيْتُهَا عِشْرِينَ وَمئةَ دينَارٍ عَلَى أنْ تُخَلِّيَ بَيْني وَبَيْنَ نَفْسِهَا فَفعَلَتْ، حَتَّى إِذَا قَدَرْتُ عَلَيْهَا - وفي رواية : فَلَمَّا قَعَدْتُ بَينَ رِجْلَيْهَا، قالتْ : اتَّقِ اللهَ وَلاَ تَفُضَّ الخَاتَمَ إلاّ بِحَقِّهِ، فَانصَرَفْتُ عَنْهَا وَهيَ أَحَبُّ النَّاسِ إليَّ وَتَرَكْتُ الذَّهَبَ الَّذِي أعْطَيتُها . اَللهم إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابْتِغاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لا يَسْتَطِيعُونَ الخُرُوجَ مِنْهَا.
وَقَالَ الثَّالِثُ : اَللهم اسْتَأْجَرْتُ أُجَرَاءَ وأَعْطَيْتُهُمْ أجْرَهُمْ غيرَ رَجُل واحدٍ تَرَكَ الَّذِي لَهُ وَذَهبَ، فَثمَّرْتُ أجْرَهُ حَتَّى كَثُرَتْ مِنهُ الأمْوَالُ، فَجَاءنِي بَعدَ حِينٍ، فَقالَ : يَا عبدَ اللهِ، أَدِّ إِلَيَّ أجْرِي، فَقُلْتُ: كُلُّ مَا تَرَى مِنْ أجْرِكَ: مِنَ الإبلِ وَالبَقَرِ والْغَنَمِ والرَّقيقِ، فقالَ : يَا عبدَ اللهِ، لاَ تَسْتَهْزِىءْ بِي! فَقُلْتُ : لاَ أسْتَهْزِئ بِكَ، فَأَخَذَهُ كُلَّهُ فاسْتَاقَهُ فَلَمْ يتْرُكْ مِنهُ شَيئاً. الَّلهُمَّ إنْ كُنتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فافْرُجْ عَنَّا مَا نَحنُ فِيهِ، فانْفَرَجَتِ الصَّخْرَةُ فَخَرَجُوا يَمْشُونَ»مُتَّفَقٌ عليهِ .
১৩/১৩। আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবন উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, তোমাদের পূর্বে (বানী ইসরাঈলের যুগে) তিন ব্যক্তি একদা সফরে বের হল। চলতে চলতে রাত এসে গেল। সুতরাং তারা রাত কাটানোর জন্য একটি পর্বত-গুহায় প্রবেশ করল। অল্পক্ষণ পরেই একটা বড় পাথর উপর থেকে গড়িয়ে নীচে এসে গুহার মুখ বন্ধ করে দিল। এ দেখে তারা বলল যে, ‘এহেন বিপদ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নেক আমলসমূহকে অসীলা বানিয়ে আল্লাহর কাছে দো‘আ কর।’ সুতরাং তারা সব সব আমলের অসীলায় (আল্লাহর কাছে) দো‘আ করতে লাগল।
তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি জান যে, আমার অত্যন্ত বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছিল এবং (এও জান যে,) আমি সন্ধ্যা বেলায় সবার আগে তাদেরকে দুধ পান করাতাম। তাদের পূর্বে স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও কৃতদাস-দাসী কাউকে পান করাতাম না। একদিন আমি গাছের খোঁজে দূরে চলে গেলাম এবং বাড়ী ফিরে দেখতে পেলাম যে পিতা-মাতা ঘুমিয়ে গেছে। আমি সন্ধ্যার দুধ দহন করে তাদের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখলাম, তারা ঘুমিয়ে আছে। আমি তাদেরকে জাগানো পছন্দ করলাম না এবং এও পছন্দ করলাম না যে, তাদের পূর্বে সন্তান-সন্ততি এবং কৃতদাস-দাসীকে দুধ পান করাই। তাই আমি দুধের বাটি নিয়ে তাদের ঘুম থেকে জাগার অপেক্ষায় তাদের শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকলাম। অথচ শিশুরা ক্ষুধার তাড়নায় আমার পায়ের কাছে চেঁচামেচি করছিল। এভাবে ফজর উদয় হয়ে গেল এবং তারা জেগে উঠল। তারপর তারা নৈশদুধ পান করল। হে আল্লাহ! আমি যদি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য করে থাকি, তাহলে পাথরের কারণে আমরা যে গুহায় বন্দী হয়ে আছি এ থেকে তুমি আমাদেরকে উদ্ধার কর।’’
এই দো‘আর ফলস্বরূপ পাথর একটু সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।
দ্বিতীয়-জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমার একটি চাচাতো বোন ছিল। সে আমার নিকট সকল মানুষের চেয়ে প্রিয়তমা ছিল। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) আমি তাকে এত বেশী ভালবাসতাম, যত বেশী ভালবাসা পুরুষরা নারীদেরকে বাসতে পারে। একবার আমি তার সঙ্গে যৌন মিলন করার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু সে অস্বীকার করল। পরিশেষে সে যখন এক দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ল, তখন সে আমার কাছে এল। আমি তাকে এই শর্তে ১২০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) দিলাম, যেন সে আমার সঙ্গে যৌন-মিলন করে। সুতরাং সে (অভাবের তাড়নায়) রাজী হয়ে গেল। অতঃপর যখন আমি তাকে আয়ত্তে পেলাম। (অন্য বর্ণনা অনুযায়ী) যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম, তখন সে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং অবৈধভাবে (বিনা বিবাহে) আমার পবিত্রতা নষ্ট করো না। সুতরাং আমি তার কাছ থেকে দূরে সরে গেলাম; যদিও সে আমার একান্ত প্রিয়তমা ছিল এবং যে স্বর্ণমুদ্রা আমি তাকে দিয়েছিলাম তাও পরিত্যাগ করলাম। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তুমি আমাদের উপর পতিত মুসীবতকে দূরীভূত কর।’’
সুতরাং পাথর আরো কিছুটা সরে গেল। কিন্তু তাতে তারা বের হতে সক্ষম ছিল না।
তৃতীয়জন দো‘আ করল, ‘‘হে আল্লাহ! আমি কিছু লোককে মজুর রেখেছিলাম। (কাজ সুসম্পন্ন হলে) আমি তাদের সকলকে মজুরী দিয়ে দিলাম। কিন্তু তাদের মধ্যে একজন মজুরী না নিয়ে চলে গেল। আমি তার মজুরীর টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করলাম। (কিছুদিন পর) তা থেকে প্রচুর অর্থ জমে গেল। কিছুকাল পর একদিন সে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার মজুরী দিয়ে দাও।’ আমি বললাম, ‘এসব উঁট, গাভী, ছাগল এবং গোলাম (বাঁদি) যা তুমি দেখছ তা সবই তোমার মজুরীর ফল।’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার সঙ্গে উপহাস করবে না।’ আমি বললাম, ‘আমি তোমার সঙ্গে উপহাস করিনি (সত্য ঘটনাই বর্ণনা করছি)।’ সুতরাং আমার কথা শুনে সে তার সমস্ত মাল নিয়ে চলে গেল এবং কিছুই ছেড়ে গেল না। হে আল্লাহ! যদি আমি এ কাজ একমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করে থাকি, তাহলে যে বিপদে আমরা পড়েছি তা তুমি দূরীভূত কর।’’ এর ফলে পাথর সম্পূর্ণ সরে গেল এবং সকলেই (গুহা থেকে) বের হয়ে চলতে লাগল।
2- بَابُ التَّوْبَةِ
পরিচ্ছেদ - ২ : তওবার বিবরণ
উলামা সম্প্রদায়ের উক্তি এই যে, প্রত্যেক পাপ থেকে তওবা করা (চিরতরে প্রত্যাবর্তন করা) ওয়াজেব (অবশ্য-কর্তব্য)। যদি গোনাহর সম্পর্ক আল্লাহর (অবাধ্যতার) সঙ্গে থাকে এবং কোন মানুষের অধিকারের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাহলে এ ধরনের তওবা কবুলের জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। ১। পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২। পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩। ঐ পাপ আগামীতে দ্বিতীয়বার না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। সুতরাং যদি এর মধ্যে একটি শর্তও লুপ্ত হয়, তাহলে সেই তওবা বিশুদ্ধ হবে না।
পক্ষান্তরে যদি সেই পাপ মানুষের অধিকার সম্পর্কিত হয়, তাহলে তা গ্রহণীয় হওয়ার জন্য চারটি শর্ত আছে। উপরোক্ত তিনটি এবং চতুর্থ শর্ত হল, হকদারদের হক ফিরিয়ে দিতে হবে। যদি অবৈধ পন্থায় কারো মাল বা অন্য কিছু নিয়ে থাকে, তাহলে তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যদি কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয় অথবা অনুরূপ কোনো দোষ করে থাকে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে শাস্তি নিতে নিজেকে পেশ করতে হবে অথবা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যদি কারো গীবত করে থাকে, তাহলে তার কাছে তা বৈধ করে নেবে।
সমস্ত পাপ থেকে তওবাহ করা ওয়াজেব। আংশিক পাপ থেকে তওবাহ করলে সেই তওবাহ হকপন্থী আলেমগণের নিকট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হবে এবং অবশিষ্ট পাপ রয়ে যাবে। তওবা ওয়াজেব হওয়ার ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে উম্মতের ঐকমত্যও বিদ্যমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَتُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [النور: ٣١]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা নূর ৩১ আয়াত)
﴿ وَأَنِ ٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِ ﴾ [هود: ٣]
অর্থাৎ “তোমরা নিজেদের প্রতিপালকের নিকট (পাপের জন্য) ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতঃপর তাঁর কাছে তওবা (প্রত্যাবর্তন) কর।” (সূরা হূদ ৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا ﴾ [التحريم: ٨]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।” (সূরা তাহরীম ৮ আয়াত)
1/14 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : سمعْتُ رسولَ الله ﷺ، يقول: «والله إنِّي لأَسْتَغْفِرُ الله وأَتُوبُ إِلَيْه في اليَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً». رواه البخاري .
১/১৪। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ ৭০ বারের অধিক আল্লাহর নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা ও তওবা করি।’’
2/15 عَنِ الأَغَرِّ بنِ يَسَارٍ الْمُزَنِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: « يَا أَيُّهَا النَّاسُ، تُوبُوا إِلى اللهِ واسْتَغْفِرُوهُ، فَإنِّي أتُوبُ في اليَومِ مِئَةَ مَرَّةٍ». رواه مسلم .
২/১৫। আগার্র ইবনে ইয়াসার মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর সমীপে তওবা কর ও তাঁর নিকট ক্ষমা চাও! কেননা, আমি প্রতিদিন ১০০ বার করে তওবাহ করে থাকি।’’
3/16 وَعَنْ أَبِي حَمزَةَ أَنَسِ بنِ مَالكٍ الأنصَارِيِّ رضي الله عنه خَادِمِ رَسُولِ الله ﷺ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لَلهُ أفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرهِ وقد أضلَّهُ في أرضٍ فَلاةٍ».مُتَّفَقٌ عليه
وفي رواية لمُسْلمٍ: «للهُ أَشَدُّ فَرَحاً بِتَوبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يتوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتهِ بأرضٍ فَلاةٍ، فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابهُ فأَيِسَ مِنْهَا، فَأَتى شَجَرَةً فاضطَجَعَ في ظِلِّهَا وقد أيِسَ مِنْ رَاحلَتهِ، فَبَينَما هُوَ كَذَلِكَ إِذْ هُوَ بِها قائِمَةً عِندَهُ، فَأَخَذَ بِخِطامِهَا، ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ: اَللهم أنْتَ عَبدِي وأنا رَبُّكَ ! أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الفَرَحِ».
৩/১৬। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম, আবূ হামযাহ আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দার তওবা করার জন্য ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা বেশী আনন্দিত হন, যে তার উট জঙ্গলে হারিয়ে ফেলার পর পুনরায় ফিরে পায়।’’(বুখারী ৬৩০৯, মুসলিম ২৭৪৭, আহমাদ ১২৮১৫)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এইভাবে এসেছে যে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার তওবায় যখন সে তওবা করে তোমাদের সেই ব্যক্তির চেয়ে বেশী খুশী হন, যে তার বাহনের উপর চড়ে কোনো মরুভূমি বা জনহীন প্রান্তর অতিক্রমকালে বাহনটি তার নিকট থেকে পালিয়ে যায়। আর খাদ্য ও পানীয় সব ওর পিঠের উপর থাকে। অতঃপর বহু খোঁজাখুঁজির পর নিরাশ হয়ে সে একটি গাছের ছায়ায় ঘুমিয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে বাহনটি হঠাৎ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে যায়। সে তার লাগাম ধরে খুশীর চোটে বলে ওঠে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার দাস, আর আমি তোমার প্রভু!’ সীমাহীন খুশীর কারণে সে ভুল করে ফেলে।’’
4/17 وعَنْ أَبِي موسَى عبدِ اللهِ بنِ قَيسٍ الأشْعريِّ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ الله تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ بالليلِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، ويَبْسُطُ يَدَهُ بالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيلِ، حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِها». رواه مسلم .
৪/১৭। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নিজ হাত রাতে প্রসারিত করেন; যেন দিনে পাপকারী (রাতে) তওবা করে। এবং দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন; যেন রাতে পাপকারী (দিনে) তওবাহ করে। যে পর্যন্ত পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় না হবে, সে পর্যন্ত এই রীতি চালু থাকবে।’’
5/18 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ تَابَ قَبْلَ أنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِها تَابَ اللهُ عَلَيهِ». رواه مسلم .
৫/১৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হওয়ার পূর্বে তওবা করবে, আল্লাহ তার তওবা গ্রহণ করবেন।’’
6/19وعَنْ أَبِي عبد الرحمان عبد الله بنِ عُمَرَ بنِ الخطابِ رضيَ اللهُ عنهما، عن النَّبي ﷺ، قَالَ: «إِنَّ الله - عز وجل - يَقْبَلُ تَوبَةَ العَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
৬/১৯। আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বান্দার তওবাহ সে পর্যন্ত কবুল করবেন, যে পর্যন্ত তার প্রাণ কণ্ঠাগত না হয়।”
7/20 وعن زِرِّ بن حُبَيْشٍ، قَالَ : أَتَيْتُ صَفْوَانَ بْنَ عَسَّالٍ رضي الله عنه أسْألُهُ عَن الْمَسْحِ عَلَى الخُفَّيْنِ، فَقالَ : ما جاءَ بكَ يَا زِرُّ ؟ فقُلْتُ : ابتِغَاء العِلْمِ، فقالَ : إنَّ المَلائكَةَ تَضَعُ أجْنِحَتَهَا لطَالبِ العِلْمِ رِضًى بِمَا يطْلُبُ . فقلتُ : إنَّهُ قَدْ حَكَّ في صَدْري المَسْحُ عَلَى الخُفَّينِ بَعْدَ الغَائِطِ والبَولِ، وكُنْتَ امْرَءاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبيِّ ﷺ فَجئتُ أَسْأَلُكَ هَلْ سَمِعْتَهُ يَذكُرُ في ذلِكَ شَيئاً ؟ قَالَ : نَعَمْ، كَانَ يَأْمُرُنا إِذَا كُنَّا سَفراً - أَوْ مُسَافِرينَ - أنْ لا نَنْزعَ خِفَافَنَا ثَلاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيالِيهنَّ إلاَّ مِنْ جَنَابَةٍ، لكنْ مِنْ غَائطٍ وَبَولٍ ونَوْمٍ . فقُلْتُ : هَلْ سَمِعْتَهُ يَذْكرُ في الهَوَى شَيئاً ؟ قَالَ : نَعَمْ، كُنّا مَعَ رسولِ اللهِ ﷺ في سَفَرٍ، فبَيْنَا نَحْنُ عِندَهُ إِذْ نَادَاه أَعرابيٌّ بصَوْتٍ لَهُ جَهْوَرِيٍّ : يَا مُحَمَّدُ، فأجابهُ رسولُ الله ﷺ نَحْواً مِنْ صَوْتِه: «هَاؤُمْ»فقُلْتُ لَهُ : وَيْحَكَ ! اغْضُضْ مِنْ صَوتِكَ فَإِنَّكَ عِنْدَ النَّبي ﷺ، وَقَدْ نُهِيتَ عَنْ هذَا ! فقالَ : والله لاَ أغْضُضُ . قَالَ الأعرَابيُّ : المَرْءُ يُحبُّ القَوْمَ وَلَمَّا يلْحَقْ بِهِمْ ؟ قَالَ النَّبيُّ ﷺ «المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ يَومَ القِيَامَةِ» فَمَا زَالَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى ذَكَرَ بَاباً مِنَ المَغْرِبِ مَسيرَةُ عَرْضِهِ أَوْ يَسِيرُ الرَّاكبُ في عَرْضِهِ أرْبَعينَ أَوْ سَبعينَ عاماً» قَالَ سُفْيانُ أَحدُ الرُّواةِ : قِبَلَ الشَّامِ، خَلَقَهُ الله تَعَالَى يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاواتِ والأَرْضَ مَفْتوحاً للتَّوْبَةِ لا يُغْلَقُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْهُ. رواه الترمذي وغيره، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
৭/২০। যির্র ইবনে হুবাইশ বলেন যে, আমি মোজার উপর মাসাহ করার মাসআলা জিজ্ঞাসা করার জন্য সাফওয়ান ইবনে আস্সালের নিকট গেলাম। তিনি বললেন, ‘হে যির্র! তোমার আগমনের উদ্দেশ্য কি?’ আমি বললাম, ‘জ্ঞান অন্বেষণ।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় ফিরিশতামণ্ডলী ঐ অন্বেষণের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিদ্যার্থীর জন্য নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন।’
অতঃপর আমি বললাম, ‘পেশাব-পায়খানার পর মোজার উপর মাসাহ করার ব্যাপারে আমার মনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। যেহেতু আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী, তাই আপনার নিকট জানতে এলাম যে, আপনি এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন কি না?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ! যখন আমরা বিদেশ সফরে বের হতাম, তখন তিনি আমাদেরকে (সফরে) তিনদিন ও তিন রাত মোজা না খোলার আদেশ দিতেন (অর্থাৎ আমরা যেন এই সময়সীমা পর্যন্ত মাসাহ করতে থাকি), কিন্তু বড় অপবিত্রতা (সঙ্গম, বীর্যপাত ইত্যাদি) হেতু অপবিত্র হলে (মোজা খুলতে হবে)। কিন্তু পেশাব-পায়খানা ও ঘুম থেকে উঠলে নয়। (এ সবের পর রীতিমত মাসাহ করা জায়েয)।’ আমি বললাম, ‘আপনি কি তাঁকে ভালবাসা সম্পর্কে কিছু আলোচনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সফরে ছিলাম। আমরা তাঁর সঙ্গে বসেছিলাম, এমন সময় এক বেদুঈন অতি উঁচু গলায় ডাক দিল, ‘‘হে মুহাম্মাদ!’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাকে উঁচু আওয়াজে জবাব দিলেন, ‘‘এখানে এস!’’ আমি তাকে বললাম, ‘‘আরে তুমি নিজের আওয়াজ নীচু কর! কেননা, তুমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আছ। তাঁর নিকট এ রকম উঁচু গলায় কথা বলা তোমার (বরং সকলের) জন্য নিষিদ্ধ।’’ সে (বেদুঈন) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! আমি তো আস্তে কথা বলবই না।’’ বেদুঈন বলল, ‘‘কোন ব্যক্তি কিছু লোককে ভালবাসে; কিন্তু সে তাদের (মর্যাদায়) পৌঁছতে পারেনি? (এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী?)।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যুত্তরে বললেন, ‘‘মানুষ কিয়ামতের দিন ঐ লোকদের সঙ্গে থাকবে, যাদেরকে সে ভালবাসবে।’’ পুনরায় তিনি আমাদের সাথে কথাবার্তা বলতে থাকলেন। এমনকি তিনি পশ্চিম দিকের একটি দরজার কথা উল্লেখ করলেন, যার প্রস্থের দূরত্ব ৪০ কিংবা ৭০ বছরের পথ অথবা তিনি বললেন, ওর প্রস্থে একজন আরোহী ৪০ কিম্বা ৭০ বছর চলতে থাকবে। (সুফইয়ান এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী বলেন যে, এই দরজা সিরিয়ার দিকে অবস্থিত।) আল্লাহ তা‘আলা এই দরজাটি আসমান-যমীন সৃষ্টি করার দিন সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সময় থেকে তা তওবার জন্য খোলা রয়েছে। পশ্চিমদিক থেকে সূর্য না উঠা পর্যন্ত এটা বন্ধ হবে না।’
8/21 وعَنْ أَبِي سَعيد سَعْدِ بنِ مالكِ بنِ سِنَانٍ الخدريِّ رضي الله عنه : أنّ نَبِيَّ الله ﷺ، قَالَ: «كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكمْ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وتِسْعينَ نَفْساً، فَسَأَلَ عَنْ أعْلَمِ أَهْلِ الأرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَاهِبٍ، فَأَتَاهُ . فقال : إنَّهُ قَتَلَ تِسعَةً وتِسْعِينَ نَفْساً فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوبَةٍ ؟ فقالَ : لا، فَقَتَلهُ فَكَمَّلَ بهِ مئَةً، ثُمَّ سَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الأَرضِ، فَدُلَّ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ . فقَالَ : إِنَّهُ قَتَلَ مِئَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ ؟ فقالَ : نَعَمْ، ومَنْ يَحُولُ بَيْنَهُ وبَيْنَ التَّوْبَةِ ؟ انْطَلِقْ إِلى أرضِ كَذَا وكَذَا فإِنَّ بِهَا أُناساً يَعْبُدُونَ الله تَعَالَى فاعْبُدِ الله مَعَهُمْ، ولاَ تَرْجِعْ إِلى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أرضُ سُوءٍ، فانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ أَتَاهُ الْمَوْتُ، فاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ ومَلائِكَةُ العَذَابِ . فَقَالتْ مَلائِكَةُ الرَّحْمَةِ : جَاءَ تَائِباً، مُقْبِلاً بِقَلبِهِ إِلى اللهِ تَعَالَى، وقالتْ مَلائِكَةُ العَذَابِ : إنَّهُ لمْ يَعْمَلْ خَيراً قَطُّ، فَأَتَاهُمْ مَلَكٌ في صورَةِ آدَمِيٍّ فَجَعَلُوهُ بَيْنَهُمْ - أيْ حَكَماً - فقالَ : قِيسُوا ما بينَ الأرضَينِ فَإلَى أيّتهما كَانَ أدنَى فَهُوَ لَهُ . فَقَاسُوا فَوَجَدُوهُ أدْنى إِلى الأرْضِ التي أرَادَ، فَقَبَضَتْهُ مَلائِكَةُ الرَّحمةِ».مُتَّفَقٌ عليه. وفي رواية في الصحيح: «فَكَانَ إلى القَريَةِ الصَّالِحَةِ أقْرَبَ بِشِبْرٍ فَجُعِلَ مِنْ أهلِهَا».وفي رواية في الصحيح: «فَأَوحَى الله تَعَالَى إِلى هذِهِ أَنْ تَبَاعَدِي، وإِلَى هذِهِ أَنْ تَقَرَّبِي، وقَالَ : قِيسُوا مَا بيْنَهُما، فَوَجَدُوهُ إِلى هذِهِ أَقْرَبَ بِشِبْرٍ فَغُفِرَ لَهُ».وفي رواية: «فَنَأى بصَدْرِهِ نَحْوَهَا».
৮/২১। আবূ সাঈদ সা‘দ ইবন মালেক ইবন সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফিরিশ্তা উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফিরিশ্তাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশ্তারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশ্তা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ আছে যে, ‘‘পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সৎশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য করা হল।’’
সহীহতে আরো একটি বর্ণনায় এইরূপ এসেছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ দেশকে (যেখান থেকে সে আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে যাও এবং এই সৎশীলদের দেশকে আদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা এ দু’য়ের দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং তাকে সৎশীলদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।’’
আরো একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘সে ব্যক্তি নিজের বুকের উপর ভর করে ভালো দেশের দিকে একটু সরে গিয়েছিল।’’
9/22 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ كَعبِ بنِ مالكٍ، وَكَانَ قَائِدَ كَعبٍ رضي الله عنه مِنْ بَنِيهِ حِينَ عمِيَ، قَالَ : سَمِعتُ كَعْبَ بنَ مالكٍ رضي الله عنه يُحَدِّثُ بحَديثهِ حينَ تَخلَّفَ عن رسولِ اللهِ ﷺ في غَزْوَةِ تَبُوكَ. قَالَ كعبٌ : لَمْ أتَخَلَّفْ عَنْ رسولِ الله ﷺ في غَزْوَةٍ غزاها قط إلا في غزوة تَبُوكَ، غَيْرَ أنّي قَدْ تَخَلَّفْتُ في غَزْوَةِ بَدْرٍ، ولَمْ يُعَاتَبْ أَحَدٌ تَخَلَّفَ عَنْهُ ؛ إِنَّمَا خَرَجَ رسولُ الله ﷺ والمُسْلِمُونَ يُريدُونَ عِيرَ قُرَيْشٍ حَتَّى جَمَعَ الله تَعَالَى بَيْنَهُمْ وبَيْنَ عَدُوِّهمْ عَلَى غَيْر ميعادٍ . ولَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رسولِ الله ﷺ لَيلَةَ العَقَبَةِ حينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلامِ، وما أُحِبُّ أنَّ لي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وإنْ كَانَتْ بدرٌ أذْكَرَ في النَّاسِ مِنْهَا. وكانَ مِنْ خَبَري حينَ تَخَلَّفْتُ عَنْ رسولِ اللهِ ﷺ في غَزْوَةِ تَبُوكَ أنِّي لم أكُنْ قَطُّ أَقْوى ولا أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عنْهُ في تِلكَ الغَزْوَةِ، وَالله ما جَمَعْتُ قَبْلَهَا رَاحِلَتَيْنِ قَطُّ حَتَّى جَمَعْتُهُمَا في تِلْكَ الغَزْوَةِ وَلَمْ يَكُنْ رسولُ الله ﷺ يُريدُ غَزْوَةً إلاَّ وَرَّى بِغَيرِها حَتَّى كَانَتْ تلْكَ الغَزْوَةُ، فَغَزَاها رسولُ الله ﷺ في حَرٍّ شَديدٍ، واسْتَقْبَلَ سَفَراً بَعِيداً وَمَفَازاً، وَاستَقْبَلَ عَدَداً كَثِيراً، فَجَلَّى للْمُسْلِمينَ أمْرَهُمْ ليتَأهَّبُوا أُهْبَةَ غَزْوِهمْ فأَخْبرَهُمْ بوَجْهِهِمُ الَّذِي يُريدُ، والمُسلِمونَ مَعَ رسولِ الله كثيرٌ وَلاَ يَجْمَعُهُمْ كِتَابٌ حَافِظٌ ( يُريدُ بذلِكَ الدّيوَانَ) قَالَ كَعْبٌ : فَقَلَّ رَجُلٌ يُريدُ أنْ يَتَغَيَّبَ إلاَّ ظَنَّ أنَّ ذلِكَ سيخْفَى بِهِ ما لَمْ يَنْزِلْ فِيهِ وَحْيٌ مِنَ الله، وَغَزا رَسُول الله ﷺ تِلْكَ الغَزوَةَ حِينَ طَابَت الثِّمَارُ وَالظِّلالُ، فَأنَا إلَيْهَا أصْعَرُ، فَتَجَهَّزَ رسولُ الله ﷺ وَالمُسْلِمُونَ مَعَهُ وطَفِقْتُ أغْدُو لكَيْ أتَجَهَّزَ مَعَهُ، فأرْجِعُ وَلَمْ أقْضِ شَيْئاً، وأقُولُ في نفسي : أنَا قَادرٌ عَلَى ذلِكَ إِذَا أَرَدْتُ، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمادى بي حَتَّى اسْتَمَرَّ بالنَّاسِ الْجِدُّ، فأصْبَحَ رسولُ الله ﷺ غَادياً والمُسْلِمُونَ مَعَهُ وَلَمْ أقْضِ مِنْ جِهَازي شَيْئاً، ثُمَّ غَدَوْتُ فَرَجَعْتُ وَلَمْ أقْضِ شَيئاً، فَلَمْ يَزَلْ يَتَمَادَى بي حَتَّى أسْرَعُوا وتَفَارَطَ الغَزْوُ، فَهَمَمْتُ أنْ أرْتَحِلَ فَأُدْرِكَهُمْ، فَيَا لَيْتَني فَعَلْتُ، ثُمَّ لم يُقَدَّرْ ذلِكَ لي، فَطَفِقْتُ إذَا خَرَجْتُ في النَّاسِ بَعْدَ خُرُوجِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَحْزُنُنِي أنِّي لا أرَى لي أُسْوَةً، إلاّ رَجُلاً مَغْمُوصَاً عَلَيْهِ في النِّفَاقِ، أوْ رَجُلاً مِمَّنْ عَذَرَ اللهُ تَعَالَى مِنَ الضُّعَفَاءِ، وَلَمْ يَذْكُرْنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ حَتَّى بَلَغَ تَبُوكَ، فَقَالَ وَهُوَ جَالِسٌ في القَوْمِ بِتَبُوكَ: «ما فَعَلَ كَعْبُ بْنُ مَالِكٍ ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ : يا رَسُولَ اللهِ، حَبَسَهُ بُرْدَاهُ والنَّظَرُ في عِطْفَيْهِ. فَقَالَ لَهُ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ رضي الله عنه : بِئْسَ مَا قُلْتَ ! واللهِ يا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمْنَا عَلَيْهِ إلاَّ خَيْرَاً، فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ ﷺ . فَبَيْنَا هُوَ عَلى ذَلِكَ رَأى رَجُلاً مُبْيِضاً يَزُولُ بِهِ السَّرَابُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كُنْ أَبَا خَيْثَمَةَ»، فَإذَا هُوَ أبُو خَيْثَمَةَ الأنْصَارِيُّ وَهُوَ الَّذِي تَصَدَّقَ بِصَاعِ التَّمْرِ حِيْنَ لَمَزَهُ المُنَافِقُونَ .قَالَ كَعْبٌ : فَلَمَّا بَلَغَنِي أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَدْ تَوَجَّهَ قَافِلاً مِنْ تَبُوكَ حَضَرَنِي بَثِّي، فَطَفِقْتُ أتَذَكَّرُ الكَذِبَ وأقُولُ : بِمَ أخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ غَدَاً ؟ وأسْتَعِيْنُ عَلى ذَلِكَ بِكُلِّ ذِي رأْيٍ مِنْ أهْلِي، فَلَمَّا قِيْلَ : إنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قّدْ أظَلَّ قَادِمَاً، زَاحَ عَنّي البَاطِلُ حَتَّى عَرَفْتُ أَنِّي لَنْ أَنْجُوَ مِنْهُ بِشَيءٍ أَبَداً، فَأجْمَعْتُ صدْقَهُ وأَصْبَحَ رَسُولُ الله ﷺ قَادِماً، وَكَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ بَدَأَ بِالمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ لِلنَّاسِ، فَلَمَّا فَعَلَ ذلِكَ جَاءهُ المُخَلَّفُونَ يَعْتَذِرونَ إِلَيْه ويَحْلِفُونَ لَهُ، وَكَانُوا بِضْعاً وَثَمانينَ رَجُلاً، فَقَبِلَ مِنْهُمْ عَلانِيَتَهُمْ وَبَايَعَهُمْ واسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَوَكَلَ سَرَائِرَهُمْ إِلى الله تَعَالَى، حَتَّى جِئْتُ، فَلَمَّا سَلَّمْتُ تَبَسَّمَ تَبَسُّمَ المُغْضَبِ. ثُمَّ قَالَ: «تَعَالَ»، فَجِئْتُ أمْشي حَتَّى جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ، فقالَ لي: «مَا خَلَّفَكَ ؟ ألَمْ تَكُنْ قَدِ ابْتَعْتَ ظَهْرَكَ ؟»قَالَ : قُلْتُ : يَا رسولَ الله، إنّي والله لَوْ جَلَسْتُ عِنْدَ غَيْرِكَ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا لَرَأيتُ أنِّي سَأخْرُجُ مِنْ سَخَطِهِ بِعُذْرٍ ؛ لقَدْ أُعْطِيتُ جَدَلاً، ولَكِنِّي والله لَقَدْ عَلِمْتُ لَئِنْ حَدَّثْتُكَ اليوم حَدِيثَ كَذبٍ تَرْضَى به عنِّي لَيُوشِكَنَّ الله أن يُسْخِطَكَ عَلَيَّ، وإنْ حَدَّثْتُكَ حَدِيثَ صِدقٍ تَجِدُ عَلَيَّ فِيهِ إنّي لأَرْجُو فِيهِ عُقْبَى الله - عز وجل -، والله ما كَانَ لي مِنْ عُذْرٍ، واللهِ مَا كُنْتُ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ مِنِّي حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْكَ . قَالَ : فقالَ رسولُ الله ﷺ «أمَّا هَذَا فقَدْ صَدَقَ، فَقُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ فيكَ» وَسَارَ رِجَالٌ مِنْ بَنِي سَلِمَة فاتَّبَعُوني فَقالُوا لِي : واللهِ مَا عَلِمْنَاكَ أذْنَبْتَ ذَنْباً قَبْلَ هذَا لَقَدْ عَجَزْتَ في أنْ لا تَكونَ اعتَذَرْتَ إِلَى رَسُول الله ﷺ بما اعْتَذَرَ إليهِ المُخَلَّفُونَ، فَقَدْ كَانَ كَافِيكَ ذَنْبَكَ اسْتِغْفَارُ رَسُولِ الله ﷺ لَكَ . قَالَ : فَوالله ما زَالُوا يُؤَنِّبُونَنِي حَتَّى أَرَدْتُّ أَنْ أرْجعَ إِلَى رسولِ الله ﷺ فأُكَذِّبَ نَفْسِي، ثُمَّ قُلْتُ لَهُمْ : هَلْ لَقِيَ هذَا مَعِيَ مِنْ أَحَدٍ ؟ قَالُوا : نَعَمْ، لَقِيَهُ مَعَكَ رَجُلانِ قَالاَ مِثْلَ مَا قُلْتَ، وَقيلَ لَهُمَا مِثْلَ مَا قيلَ لَكَ، قَالَ : قُلْتُ : مَنْ هُما ؟ قَالُوا : مُرَارَةُ بْنُ الرَّبيع الْعَمْرِيُّ، وهِلاَلُ ابنُ أُمَيَّةَ الوَاقِفِيُّ ؟ قَالَ : فَذَكَرُوا لِي رَجُلَينِ صَالِحَينِ قَدْ شَهِدَا بَدْراً فيهِما أُسْوَةٌ، قَالَ : فَمَضَيْتُ حِينَ ذَكَرُوهُما لِي . ونَهَى رَسُول الله ﷺ عَنْ كَلامِنا أيُّهَا الثَّلاثَةُ مِنْ بَيْنِ مَنْ تَخَلَّفَ عَنْهُ، فاجْتَنَبَنَا النَّاسُ - أوْ قَالَ : تَغَيَّرُوا لَنَا - حَتَّى تَنَكَّرَتْ لي في نَفْسي الأَرْض، فَمَا هِيَ بالأرْضِ الَّتي أعْرِفُ، فَلَبِثْنَا عَلَى ذلِكَ خَمْسِينَ لَيْلَةً . فَأمّا صَاحِبَايَ فَاسْتَكَانا وقَعَدَا في بُيُوتِهِمَا يَبْكيَان . وأمَّا أنَا فَكُنْتُ أشَبَّ الْقَومِ وأجْلَدَهُمْ فَكُنْتُ أخْرُجُ فَأشْهَدُ الصَّلاَةَ مَعَ المُسْلِمِينَ، وأطُوفُ في الأَسْوَاقِ وَلا يُكَلِّمُنِي أَحَدٌ، وَآتِي رسولَ الله ﷺ فأُسَلِّمُ عَلَيْهِ وَهُوَ في مَجْلِسِهِ بَعْدَ الصَّلاةِ، فَأَقُولُ في نَفسِي : هَلْ حَرَّكَ شَفَتَيْه برَدِّ السَّلام أَمْ لاَ ؟ ثُمَّ أُصَلِّي قَريباً مِنْهُ وَأُسَارِقُهُ النَّظَرَ، فَإِذَا أقْبَلْتُ عَلَى صَلاتِي نَظَرَ إلَيَّ وَإِذَا الْتَفَتُّ نَحْوَهُ أعْرَضَ عَنِّي، حَتَّى إِذَا طَال ذلِكَ عَلَيَّ مِنْ جَفْوَةِ المُسْلِمينَ مَشَيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ جِدارَ حائِط أبي قَتَادَةَ وَهُوَ ابْنُ عَمِّي وأَحَبُّ النَّاس إِلَيَّ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ فَوَاللهِ مَا رَدَّ عَليَّ السَّلامَ، فَقُلْتُ لَهُ : يَا أَبَا قَتَادَةَ، أنْشُدُكَ بالله هَلْ تَعْلَمُنِي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ ﷺ ؟ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ فَسَكَتَ، فَعُدْتُ فَنَاشَدْتُهُ، فَقَالَ : اللهُ ورَسُولُهُ أَعْلَمُ. فَفَاضَتْ عَيْنَايَ، وَتَوَلَّيْتُ حَتَّى تَسَوَّرْتُ الجِدَارَ، فَبَيْنَا أَنَا أمْشِي في سُوقِ الْمَدِينة إِذَا نَبَطِيٌّ مِنْ نَبَطِ أهْلِ الشَّام مِمّنْ قَدِمَ بالطَّعَامِ يَبيعُهُ بِالمَدِينَةِ يَقُولُ : مَنْ يَدُلُّ عَلَى كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ ؟ فَطَفِقَ النَّاسُ يُشِيرُونَ لَهُ إلَيَّ حَتَّى جَاءنِي فَدَفَعَ إِلَيَّ كِتَاباً مِنْ مَلِكِ غَسَّانَ، وَكُنْتُ كَاتباً . فَقَرَأْتُهُ فإِذَا فِيهِ : أَمَّا بَعْدُ، فإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنا أنَّ صَاحِبَكَ قَدْ جَفَاكَ وَلَمْ يَجْعَلْكَ اللهُ بدَارِ هَوانٍ وَلاَ مَضْيَعَةٍ، فَالْحَقْ بنَا نُوَاسِكَ، فَقُلْتُ حِينَ قَرَأْتُهَا : وَهَذِهِ أَيضاً مِنَ البَلاءِ، فَتَيَمَّمْتُ بهَا التَّنُّورَ فَسَجَرْتُهَا، حَتَّى إِذَا مَضَتْ أَرْبَعُونَ مِنَ الْخَمْسينَ وَاسْتَلْبَثَ الْوَحْيُ إِذَا رسولُ رسولِ الله ﷺ يَأتِيني، فَقالَ : إنَّ رسولَ الله ﷺ يَأمُرُكَ أنْ تَعْتَزِلَ امْرَأتَكَ، فَقُلْتُ : أُطَلِّقُهَا أمْ مَاذَا أفْعَلُ ؟ فَقالَ : لاَ، بَلِ اعْتَزِلْهَا فَلاَ تَقْرَبَنَّهَا، وَأَرْسَلَ إِلَى صَاحِبَيَّ بِمِثْلِ ذلِكَ . فَقُلْتُ لامْرَأتِي : الْحَقِي بِأهْلِكِ فَكُوني عِنْدَهُمْ حَتَّى يَقْضِيَ اللهُ في هَذَا الأمْرِ. فَجَاءتِ امْرَأةُ هِلاَلِ بْنِ أُمَيَّةَ رسولَ الله ﷺ فَقَالَتْ لَهُ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ هِلاَلَ بْنَ أمَيَّةَ شَيْخٌ ضَائِعٌ لَيْسَ لَهُ خَادِمٌ، فَهَلْ تَكْرَهُ أنْ أخْدُمَهُ ؟ قَالَ: «لاَ، وَلَكِنْ لاَ يَقْرَبَنَّكِ»فَقَالَتْ : إِنَّهُ واللهِ ما بِهِ مِنْ حَرَكَةٍ إِلَى شَيْءٍ، وَوَالله مَا زَالَ يَبْكِي مُنْذُ كَانَ مِنْ أمْرِهِ مَا كَانَ إِلَى يَومِهِ هَذَا . فَقَالَ لي بَعْضُ أهْلِي : لَو اسْتَأْذَنْتَ رسولَ الله ﷺ في امْرَأَتِكَ فَقَدْ أَذِن لاِمْرَأةِ هلاَل بْنِ أمَيَّةَ أنْ تَخْدُمَهُ ؟ فَقُلْتُ : لاَ أسْتَأذِنُ فيها رسولَ الله ﷺ، وَمَا يُدْرِيني مَاذَا يقُول رسولُ الله ﷺ إِذَا اسْتَأْذَنْتُهُ، وَأَنَا رَجُلٌ شَابٌ ! فَلَبِثْتُ بِذَلِكَ عَشْرَ لَيَالٍ فَكَمُلَ لَنا خَمْسُونَ لَيْلَةً مِنْ حِينَ نُهِيَ عَنْ كَلاَمِنا، ثُمَّ صَلَّيْتُ صَلاَةَ الْفَجْرِ صَبَاحَ خَمْسِينَ لَيْلَةً عَلَى ظَهْرِ بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِنَا، فَبَيْنَا أَنَا جَالِسٌ عَلَى الْحالِ الَّتي ذَكَرَ الله تَعَالَى مِنَّا، قَدْ ضَاقَتْ عَلَيَّ نَفْسي وَضَاقَتْ عَلَيَّ الأرْضُ بِمَا رَحُبَتْ، سَمِعْتُ صَوْتَ صَارِخٍ أوفَى عَلَى سَلْعٍ يَقُولُ بِأعْلَى صَوتِهِ : يَا كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ أبْشِرْ، فَخَرَرْتُ سَاجِداً، وَعَرَفْتُ أنَّهُ قَدْ جَاءَ فَرَجٌ . فآذَنَ رسولُ الله ﷺ النَّاسَ بِتَوْبَةِ الله - عز وجل - عَلَيْنَا حِينَ صَلَّى صَلاةَ الفَجْر فَذَهَبَ النَّاسُ يُبَشِّرُونَنَا، فَذَهَبَ قِبَلَ صَاحِبَيَّ مُبَشِّرونَ وَرَكَضَ رَجُلٌ إِلَيَّ فَرَساً وَسَعَى سَاعٍ مِنْ أسْلَمَ قِبَلِي، وَأَوْفَى عَلَى الْجَبَلِ، فَكانَ الصَّوْتُ أسْرَعَ مِنَ الفَرَسِ، فَلَمَّا جَاءني الَّذِي سَمِعْتُ صَوْتَهُ يُبَشِّرُني نَزَعْتُ لَهُ ثَوْبَيَّ فَكَسَوْتُهُمَا إيَّاهُ بِبشارته، وَاللهِ مَا أمْلِكُ غَيْرَهُمَا يَوْمَئِذٍ، وَاسْتَعَرْتُ ثَوْبَيْنِ فَلَبسْتُهُما، وَانْطَلَقْتُ أتَأمَّمُ رسولَ الله ﷺ يَتَلَقَّاني النَّاسُ فَوْجاً فَوْجاً يُهنِّئونَني بالتَّوْبَةِ وَيَقُولُونَ لِي : لِتَهْنِكَ تَوْبَةُ الله عَلَيْكَ . حَتَّى دَخَلْتُ الْمَسْجِدَ فَإِذَا رسولُ الله ﷺ جَالِسٌ حَوْلَه النَّاسُ، فَقَامَ طَلْحَةُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ رضي الله عنه يُهَرْوِلُ حَتَّى صَافَحَني وَهَنَّأَنِي، والله مَا قَامَ رَجُلٌ مِنَ المُهَاجِرينَ غَيرُهُ - فَكَانَ كَعْبٌ لاَ يَنْسَاهَا لِطَلْحَةَ - . قَالَ كَعْبٌ : فَلَمَّا سَلَّمْتُ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ قَالَ وَهُوَ يَبْرُقُ وَجْهُهُ مِنَ السُّرُور: «أبْشِرْ بِخَيْرِ يَومٍ مَرَّ عَلَيْكَ مُذْ وَلَدَتْكَ أُمُّكَ»فَقُلْتُ : أمِنْ عِنْدِكَ يَا رَسُول الله أَمْ مِنْ عِندِ الله ؟ قَالَ: «لاَ، بَلْ مِنْ عِنْدِ الله - عز وجل»، وَكَانَ رسولُ الله ﷺ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ حَتَّى كَأَنَّ وَجْهَهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ وَكُنَّا نَعْرِفُ ذلِكَ مِنْهُ، فَلَمَّا جَلَسْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ قُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ مِنْ تَوْبَتِي أنْ أنْخَلِعَ مِنْ مَالِي صَدَقَةً إِلَى اللهِ وَإِلَى رَسُولهِ . فَقَالَ رسولُ الله ﷺ: «أمْسِكَ عَلَيْكَ بَعْضَ مَالِكَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ».فقلتُ : إِنِّي أُمْسِكُ سَهْمِي الَّذِي بِخَيبَر . وَقُلْتُ: يَا رسولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى إِنَّمَا أنْجَانِي بالصِّدْقِ، وإنَّ مِنْ تَوْبَتِي أنْ لا أُحَدِّثَ إلاَّ صِدْقاً مَا بَقِيتُ، فوَالله مَا عَلِمْتُ أَحَداً مِنَ المُسْلِمينَ أبْلاهُ الله تَعَالَى في صِدْقِ الحَدِيثِ مُنْذُ ذَكَرْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله ﷺ أحْسَنَ مِمَّا أبْلانِي الله تَعَالَى، واللهِ مَا تَعَمَّدْتُ كِذْبَةً مُنْذُ قُلْتُ ذلِكَ لِرسولِ الله ﷺ إِلَى يَومِيَ هَذَا، وإنِّي لأرْجُو أنْ يَحْفَظَنِي الله تَعَالَى فيما بَقِيَ، قَالَ : فأَنْزَلَ الله تَعَالَى : ﴿ لَّقَد تَّابَ ٱللَّهُ عَلَى ٱلنَّبِيِّ وَٱلۡمُهَٰجِرِينَ وَٱلۡأَنصَارِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ ٱلۡعُسۡرَةِ ﴾ حَتَّى بَلَغَ : ﴿ إِنَّهُۥ بِهِمۡ رَءُوفٞ رَّحِيمٞ ١١٧ وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ حَتَّىٰٓ إِذَا ضَاقَتۡ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَرۡضُ بِمَا رَحُبَتۡ ﴾ حَتَّى بَلَغَ : ﴿ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ﴾ [التوبة: ١١٧، ١١٩] قَالَ كَعْبٌ : واللهِ ما أنْعَمَ الله عَليَّ مِنْ نعمةٍ قَطُّ بَعْدَ إذْ هَدَاني اللهُ للإِسْلامِ أَعْظَمَ في نَفْسِي مِنْ صِدقِي رسولَ الله ﷺ أنْ لا أكونَ كَذَبْتُهُ، فَأَهْلِكَ كما هَلَكَ الَّذينَ كَذَبُوا ؛ إنَّ الله تَعَالَى قَالَ للَّذِينَ كَذَبُوا حِينَ أنْزَلَ الوَحْيَ شَرَّ مَا قَالَ لأَحَدٍ، فقال الله تَعَالَى : ﴿ سَيَحۡلِفُونَ بِٱللَّهِ لَكُمۡ إِذَا ٱنقَلَبۡتُمۡ إِلَيۡهِمۡ لِتُعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ فَأَعۡرِضُواْ عَنۡهُمۡۖ إِنَّهُمۡ رِجۡسٞۖ وَمَأۡوَىٰهُمۡ جَهَنَّمُ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ٩٥ يَحۡلِفُونَ لَكُمۡ لِتَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡۖ فَإِن تَرۡضَوۡاْ عَنۡهُمۡ فَإِنَّ ٱللَّهَ لَا يَرۡضَىٰ عَنِ ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٩٦ ﴾ [التوبة: ٩٥، ٩٦] قَالَ كَعْبٌ : كُنّا خُلّفْنَا أيُّهَا الثَّلاَثَةُ عَنْ أمْرِ أُولئكَ الذينَ قَبِلَ مِنْهُمْ رسولُ الله ﷺ حِينَ حَلَفُوا لَهُ فَبَايَعَهُمْ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمْ وَأَرْجَأَ رَسُولُ الله ﷺ أمْرَنَا حَتَّى قَضَى الله تَعَالَى فِيهِ بذِلكَ . قَالَ الله تَعَالَى: ﴿ وَعَلَى ٱلثَّلَٰثَةِ ٱلَّذِينَ خُلِّفُواْ ﴾ وَليْسَ الَّذِي ذَكَرَ مِمَّا خُلِّفْنَا تَخلُّفُنَا عن الغَزْو، وإنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إيّانا وإرْجَاؤُهُ أمْرَنَا عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ واعْتَذَرَ إِلَيْهِ فقبِلَ مِنْهُ. مُتَّفَقٌ عليه .
وفي رواية : أنَّ النَّبيّ ﷺ خَرَجَ في غَزْوَةِ تَبْوكَ يَومَ الخَميسِ وكانَ يُحِبُّ أنْ يخْرُجَ يومَ الخمِيس . وفي رواية : وكانَ لاَ يقْدمُ مِنْ سَفَرٍ إلاَّ نَهَاراً في الضُّحَى، فإِذَا قَدِمَ بَدَأَ بالمَسْجِدِ فَصَلَّى فِيهِ رَكْعَتَيْنِ ثُمَّ جَلَسَ فِيهِ.
৯/২২। কা‘ব ইবনে মালেকের পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, এই আব্দুল্লাহ কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর ছেলেদের মধ্যে তাঁর পরিচালক ছিলেন, যখন তিনি অন্ধ হয়ে যান। তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আমি (আমার পিতা) কা‘ব ইবনে মালেককে ঐ ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি, যখন তিনি তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে থেকে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তাবূক যুদ্ধ ছাড়া যে যুদ্ধই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন তাতে কখনোই তাঁর পিছনে থাকিনি। অবশ্য বদরের যুদ্ধ থেকে আমি পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বদরের যুদ্ধে যে অংশগ্রহণ করেনি, তাকে ভৎর্সনা করা হয়নি। আসল ব্যাপার ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমগণ কুরাইশের কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনে বের হয়েছিলেন। (শুরুতে যুদ্ধের নিয়ত ছিল না।) পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে ও তাঁদের শত্রুকে (পূর্বঘোষিত) ওয়াদা ছাড়াই একত্রিত করেছিলেন। আমি আক্বাবার রাতে (মিনায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে উপস্থিত ছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আক্বাবার রাত অপেক্ষা আমার নিকটে বদরের উপস্থিতি বেশী প্রিয় ছিল না। যদিও বদর (অভিযান) লোক মাঝে ওর চাইতে বেশী প্রসিদ্ধ। (কা‘ব বলেন,) আর আমার তাবূকের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে থাকার ঘটনা এরূপ যে, এই যুদ্ধ হতে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম অন্য কোন সময় ছিলাম না। আল্লাহর কসম! এর পূর্বে আমার নিকট কখনো দু’টি সওয়ারী (বাহন) একত্রিত হয়নি। কিন্তু এই (যুদ্ধের) সময়ে একই সঙ্গে দু’টি সওয়ারী আমার নিকট মওজুদ ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন ‘তাওরিয়া’ করতেন (অর্থাৎ সফরের গন্তব্যস্থলের নাম গোপন রেখে সাধারণ অন্য স্থানের নাম নিতেন, যাতে শত্রুরা টের না পায়)। এই যুদ্ধ এইভাবে চলে এল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীষণ গরমে এই যুদ্ধে বের হলেন এবং দূরবর্তী সফর ও দীর্ঘ মরুভূমির সম্মুখীন হলেন। আর বহু সংখ্যক শত্রুরও সম্মুখীন হলেন। এই জন্য তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলেন; যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী যথোচিত প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ফলে তিনি সেই দিকও বলে দিলেন, যেদিকে যাবার ইচ্ছা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে অনেক মুসলিম ছিলেন এবং তাদের কাছে কোন হাজিরা বহি ছিল না, যাতে তাদের নামসমূহ লেখা হবে। এই জন্য যে ব্যক্তি (যুদ্ধে) অনুপস্থিত থাকত সে এই ধারণাই করত যে, আল্লাহর অহী অবতীর্ণ ছাড়া তার অনুপস্থিতির কথা গুপ্ত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই যুদ্ধ ফল পাকার মৌসুমে করেছিলেন এবং সে সময় (গাছের) ছায়াও উৎকৃষ্ট (ও প্রিয়) ছিল, আর আমার টানও ছিল সেই ফল ও ছায়ার দিকে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমরা (যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুতি নিলেন। আর (আমার এই অবস্থা ছিল যে,) আমি সকালে আসতাম, যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমিও (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নিই। কিন্তু কোন ফায়সালা না করেই আমি (বাড়ী) ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম যে, আমি যখনই ইচ্ছা করব, যুদ্ধে শামিল হয়ে যাব। কেননা, আমি এর ক্ষমতা রাখি। আমার এই গড়িমসি অবস্থা অব্যাহত রইল এবং লোকেরা জিহাদের আয়োজনে প্রবৃত্ত থাকলেন।
অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমরা একদিন সকালে জিহাদে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমি প্রস্তুতির ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তেই উপনীত হতে পারলাম না। আমি আবার সকালে এলাম এবং বিনা সিদ্ধান্তেই (বাড়ী) ফিরে গেলাম। সুতরাং আমার এই অবস্থা অব্যাহত থেকে গেল। ওদিকে মুসলিম সেনারা দ্রুতগতিতে আগে বাড়তে থাকল এবং যুদ্ধের ব্যাপারও ক্রমশঃ এগুতে লাগল। আমি ইচ্ছা করলাম যে, আমিও সফরে রওয়ানা হয়ে তাদের সঙ্গ পেয়ে নিই। হায়! যদি আমি তাই করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)। কিন্তু এটা আমার ভাগ্যে হয়ে উঠল না। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চলে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকের মাঝে আসতাম, তখন এ জন্যই দুঃখিত ও চিন্তিত হতাম যে, এখন (মদীনায়) আমার সামনে কোন আদর্শ আছে তো কেবলমাত্র মুনাফিক কিংবা এত দুর্বল ব্যক্তিরা যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমার্হ বা অপারগ বলে গণ্য করেছেন।
সম্পূর্ণ রাস্তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবূক পৌঁছে যখন তিনি লোকের মাঝে বসেছিলেন, তখন আমাকে স্মরণ করলেন এবং বললেন, ‘‘কা‘ব ইবন মালেকের কী হয়েছে?’’ বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহঙ্কার) তাকে আটকে দিয়েছে।’’ (এ কথা শুনে) মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘বাজে কথা বললে তুমি। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তার ব্যাপারে ভাল ছাড়া অন্য কিছু জানি না।’’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন।
এসব কথাবার্তা চলছিল এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে সাদা পোশাক পরে (মরুভূমির) মরীচিকা ভেদ করে আসতে দেখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যেন আবূ খাইসামাহ হও।’’ (দেখা গেল,) সত্যিকারে তিনি আবূ খাইসামাহ আনসারীই ছিলেন। আর তিনি সেই ব্যক্তি ছিলেন, যিনি একবার আড়াই কিলো খেজুর সদকাহ করেছিলেন বলে মুনাফিকরা (তা অল্প মনে করে) তাঁকে বিদ্রূপ করেছিল।’
কা‘ব বলেন, ‘অতঃপর যখন আমি সংবাদ পেলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূক থেকে ফিরার সফর শুরু করে দিয়েছেন, তখন আমার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে উপস্থিত হল এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করার চিন্তা করতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আগামী কাল যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিরবেন, সে সময় আমি তাঁর রোষানল থেকে বাঁচব কি উপায়ে? আর এ ব্যাপারে আমি পরিবারের প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষের সহযোগিতা চাইতে লাগলাম। অতঃপর যখন বলা হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন একদম নিকটবর্তী, তখন আমার অন্তর থেকে বাতিল (পরিকল্পনা) দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, মিথ্যা বলে আমি কখনই বাঁচতে পারব না। সুতরাং আমি সত্য বলার দৃঢ় সঙ্কল্প করে নিলাম। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে (মদীনায়) পদার্পণ করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, যখন তিনি সফর থেকে (বাড়ি) ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম তিনি মসজিদে দু’ রাকআত নামায পড়তেন। তারপর (সফরের বিশেষ বিশেষ খবর শোনাবার জন্য) লোকেদের জন্য বসতেন। সুতরাং এই সফর থেকে ফিরেও যখন পূর্ববৎ কাজ করলেন, তখন মুনাফেকরা এসে তাঁর নিকট ওজর-আপত্তি পেশ করতে লাগল এবং কসম খেতে আরম্ভ করল। এরা সংখ্যায় আশি জনের কিছু বেশী ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ করে নিলেন, তাদের বায়আত নিলেন, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তাদের গোপনীয় অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দিলেন। অবশেষে আমিও তাঁর খিদমতে হাজির হলাম। অতঃপর যখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তখন তিনি রাগান্বিত ব্যক্তির হাসির মত মুচকি হাসলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘সামনে এসো!’’ আমি তাঁর সামনে এসে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তুমি কেন জিহাদ থেকে পিছনে রয়ে গেলে? তুমি কি বাহন ক্রয় করনি?’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোন লোকের কাছে বসতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবে কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে যেতাম। বাকচাতুর্য (বা তর্ক-বিতর্ক করা)র অভিজ্ঞতা আমার যথেষ্ট রয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি যে, যদি আজ আপনার সামনে মিথ্যা বলি, যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, তাহলে অতি সত্বর আল্লাহ তা’আলা (অহী দ্বারা সংবাদ দিয়ে) আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দেবেন। পক্ষান্তরে আমি যদি আপনাকে সত্য কথা বলি, তাহলে আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট এর সুফলের আশা রাখি। (সেহেতু আমি সত্য কথা বলছি যে,) আল্লাহর কসম! (আপনার সাথে জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে) আমার কোন অসুবিধা ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার সাথ ছেড়ে পিছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এই লোকটি নিশ্চিতভাবে সত্য কথা বলেছে। বেশ, তুমি এখান থেকে চলে যাও, যে পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কোন ফায়সালা না করবেন।’’
আমার পিছনে পিছনে বনু সালেমাহ (গোত্রের) কিছু লোক এল এবং আমাকে বলল যে, ‘‘আল্লাহর কসম! আমরা অবগত নই যে, তুমি এর পূর্বে কোন পাপ করেছ। অন্যান্য পিছনে থেকে যাওয়া লোকেদের ওজর পেশ করার মত তুমিও কোন ওজর পেশ করলে না কেন? তোমার পাপ মোচনের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।’’ কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! লোকেরা আমাকে আমার সত্য কথা বলার জন্য তিরস্কার করতে থাকল। পরিশেষে আমার ইচ্ছা হল যে, আমি দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে প্রথম কথা অস্বীকার করি (এবং কোন মিথ্যা ওজর পেশ করে দিই।) আবার আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘আমার এ ঘটনা কি অন্য কারো সাথে ঘটেছে?’’ তাঁরা বললেন, ‘‘হ্যাঁ। তোমার মত আরো দু’জন সমস্যায় পড়েছে। (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে) তারাও সেই কথা বলেছে, যা তুমি বলেছ এবং তাদেরকে সেই কথাই বলা হয়েছে, যা তোমাকে বলা হয়েছে।’’ আমি তাদেরকে বললাম, ‘‘তারা দু’জন কে?’’ তারা বলল, ‘‘মুরারাহ ইবনে রাবী‘ আমরী ও হিলাল ইবনে উমাইয়্যাহ ওয়াক্বেফী।’’ এই দু’জন যাঁদের কথা তারা আমার কাছে বর্ণনা করল, তাঁরা সৎলোক ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ ছিল। যখন তারা সে দু’জন ব্যক্তির কথা বলল, তখন আমি আমার পূর্বেকার অবস্থার (সত্যের) উপর অনড় থেকে গেলাম (এবং আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূরীভূত হল। যাতে আমি তাদের ভৎর্সনার কারণে পতিত হয়েছিলাম)। (এরপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে পিছনে অবস্থানকারীদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সাথে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন।’
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘লোকেরা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেল।’ অথবা বললেন, ‘লোকেরা আমাদের জন্য পরিবর্তন হয়ে গেল। পরিশেষে পৃথিবী আমার জন্য আমার অন্তরে অপরিচিত মনে হতে লাগল। যেন এটা সেই পৃথিবী নয়, যা আমার পরিচিত ছিল। এইভাবে আমরা ৫০টি রাত কাটালাম। আমার দুই সাথীরা তো নরম হয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিলেন। কিন্তু আমি দলের মধ্যে সবচেয়ে যুবক ও বলিষ্ঠ ছিলাম। ফলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সাথে নামাযে হাজির হতাম এবং বাজারসমূহে ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলত না। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হতাম এবং তিনি যখন নামাযের পর বসতেন, তখন তাঁকে সালাম দিতাম, আর আমি মনে মনে বলতাম যে, তিনি আমার সালামের জওয়াবে ঠোঁট নড়াচ্ছেন কি না? তারপর আমি তাঁর নিকটেই নামায পড়তাম এবং আড়চোখে তাঁকে দেখতাম। (দেখতাম,) যখন আমি নামাযে মনোযোগী হচ্ছি, তখন তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন এবং যখন আমি তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরাচ্ছি, তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন!
অবশেষে যখন আমার সাথে মুসলিমদের বিমুখতা দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন একদিন আমি আবূ ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বাগানে দেওয়াল ডিঙিয়ে (তাতে প্রবেশ করলাম।) সে (আবূ ক্বাতাদাহ) আমার চাচাতো ভাই এবং আমার সর্বাধিক প্রিয় লোক ছিল। আমি তাকে সালাম দিলাম। কিন্তু আল্লাহর কসম! সে আমাকে সালামের জওয়াব দিল না। আমি তাকে বললাম, ‘‘হে আবূ ক্বতাদাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালবাসি?’’ সে নিরুত্তর থাকল। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারেও সে চুপ থাকল। আমি তৃতীয়বার কসম দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে সে বলল, ‘‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই বেশী জানেন।’’ এ কথা শুনে আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু বইতে লাগল এবং যেভাবে গিয়েছিলাম, আমি সেইভাবেই দেওয়াল ডিঙিয়ে ফিরে এলাম।
এরই মধ্যে একদিন মদীনার বাজারে হাঁটছিলাম। এমন সময় শাম দেশের কৃষকদের মধ্যে একজন কৃষককে---যে মদীনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতে এসেছিল---বলতে শুনলাম, কে আমাকে কা‘ব ইবন মালেককে দেখিয়ে দেবে? লোকেরা আমার দিকে ইঙ্গিত করতে লাগল। ফলে সে ব্যক্তি আমার নিকটে এসে আমাকে ‘গাস্সান’-এর বাদশার একখানি পত্র দিল। আমি লিখা-পড়া জানতাম তাই আমি পত্রখানি পড়লাম। পত্রে লিখা ছিলঃ-
‘--- অতঃপর আমরা এই সংবাদ পেয়েছি যে, আপনার সঙ্গী (মুহাম্মাদ) আপনার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় থাকার জন্য সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন; আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করব। পত্র পড়ে আমি বললাম, ‘‘এটাও অন্য এক বালা (পরীক্ষা)।’’ সুতরাং আমি ওটাকে চুলোয় ফেলে জ্বালিয়ে দিলাম। অতঃপর যখন ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন গত হয়ে গেল এবং অহী আসা বন্ধ ছিল এই অবস্থায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন দূত আমার নিকট এসে বলল, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দিচ্ছেন!’’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘আমি কি তাকে তালাক দেব, না কী করব?’’ সে বলল, ‘‘তালাক নয় বরং তার নিকট থেকে আলাদা থাকবে, মোটেই ওর নিকটবর্তী হবে না।’’ আমার দুই সাথীর নিকটেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন। আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘‘তুমি পিত্রালয়ে চলে যাও এবং সেখানে অবস্থান কর---যে পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা এ ব্যাপারে কোন ফায়সালা না করেন।’’ (আমার সাথীদ্বয়ের মধ্যে একজন সাথী) হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রসূলাল্লাহ! হিলাল ইবন উমাইয়াহ খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোন খাদেমও নেই, সেহেতু আমি যদি তার খিদমত করি, তবে আপনি কি এটা অপছন্দ করবেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, (অর্থাৎ তুমি তার খিদমত করতে পার।) কিন্তু সে যেন তোমার (মিলন উদ্দেশ্যে) নিকটবর্তী না হয়।’’ (হিলালের স্ত্রী) বলল, ‘‘আল্লাহর কসম! (দুঃখের কারণে এ ব্যাপারে) তার কোন সক্রিয়তা নেই। আল্লাহর কসম! যখন থেকে এ ব্যাপার ঘটেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত সে সর্বদা কাঁদছে।’’
(কা‘ব বলেন,) ‘আমাকে আমার পরিবারের কিছু লোক বলল যে, ‘‘তুমিও যদি নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত।) তিনি হিলাল ইবন উমাইয়ার স্ত্রীকে তো তার খিদমত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।’’ আমি বললাম, ‘‘এ ব্যাপারে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইব না। জানি না, যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে অনুমতি চাইব, তখন তিনি কী বলবেন। কারণ, আমি তো যুবক মানুষ।’’
এভাবে আরও দশদিন কেটে গেল। যখন থেকে লোকদেরকে আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়ে গেল। আমি পঞ্চাশতম রাতে আমাদের এক ঘরের ছাদের উপর ফজরের নামায পড়লাম। নামায পড়ার পর আমি এমন অবস্থায় বসে আছি যার বর্ণনা আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ব্যাপারে দিয়েছেন- আমার জীবন আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল---এমন সময় আমি এক চিৎকারকারীর আওয়ায শুনতে পেলাম, সে সাল‘আ পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চৈঃস্বরে বলছে, ‘‘হে কা‘ব ইবনে মালেক! তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি তখন (খুশীতে শুকরিয়ার) সিজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) মুক্তি এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামায পড়ার পর লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ আমাদের তওবা কবূল করে নিয়েছেন। সুতরাং লোকেরা আমাদেরকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আসতে আরম্ভ করল। এক ব্যক্তি আমার দিকে অতি দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এল। সে ছিল আসলাম (গোত্রের) এক ব্যক্তি। আমার দিকে সে দৌড়ে এল এবং পাহাড়ের উপর চড়ে (আওয়াজ দিল)। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল। সুতরাং যখন সে আমার কাছে এল, যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম, তখন আমি তার সুসংবাদ দানের বিনিময়ে আমার দেহ থেকে দু’খানি বস্ত্র খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম। আল্লাহর কসম! সে সময় আমার কাছে এ দু’টি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি নিজে দু’খানি কাপড় অস্থায়ীভাবে ধার নিয়ে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে মুবারকবাদ জানাতে লাগল এবং বলতে লাগল, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমার তওবা কবুল করেছেন, তাই তোমাকে ধন্যবাদ।’’ অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। (দেখলাম,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসে আছেন এবং তাঁর চারপাশে লোকজন আছে। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে ছুটে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মুবারকবাদ দিলেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর কেউ উঠলেন না।’ সুতরাং কা‘ব ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এই ব্যবহার কখনো ভুলতেন না। কা‘ব বলেন, ‘যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম জানালাম, তখন তিনি তাঁর খুশীময় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাকে বললেন, ‘‘তোমার মা তোমাকে যখন প্রসব করেছে, তখন থেকে তোমার জীবনের বিগত সর্বাধিক শুভদিনের তুমি সুসংবাদ নাও!’’ আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শুভসংবাদ আপনার পক্ষ থেকে, না কি আল্লাহর পক্ষ থেকে?’’ তিনি বললেন, ‘‘না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে।’’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যেত, মনে হত যেন তা একফালি চাঁদ এবং এতে আমরা তাঁর এ (খুশী হওয়ার) কথা বুঝতে পারতাম। অতঃপর যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে বসলাম, তখন আমি বললাম, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার তওবা কবুল হওয়ার দরুন আমি আমার সমস্ত মাল আল্লাহ ও তাঁর রসুলের রাস্তায় সাদকাহ করে দিচ্ছি।’’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কিছু মাল নিজের জন্য রাখ, তোমার জন্য তা উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘‘যাই হোক! আমি আমার খায়বারের (প্রাপ্ত) অংশ রেখে নিচ্ছি।’’ আর আমি এ কথাও বললাম যে, ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমাকে সত্যবাদিতার কারণে (এই বিপদ থেকে) উদ্ধার করলেন। আর এটাও আমার তওবার দাবী যে, যতদিন আমি বেঁচে থাকব, সর্বদা সত্য কথাই বলব।’’ সুতরাং আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সত্য কথা বলার প্রতিজ্ঞা করলাম আমি জানি না যে, আল্লাহ তা‘আলা কোন মুসলিমকে সত্য কথার বলার প্রতিদান স্বরূপ উৎকৃষ্ট পুরস্কার দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমি যেদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ কথা বলেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা করিনি। আর আশা করি যে, বাকী জীবনেও আল্লাহ তা‘আলা আমাকে এ থেকে নিরাপদ রাখবেন।’
কা‘ব বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা (আমাদের ব্যাপারে আয়াত) অবতীর্ণ করেছেন, (যার অর্থ), ‘‘আল্লাহ ক্ষমা করলেন নবীকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবীর অনুগামী হয়েছিল, এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়। আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল; পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও হতে বাঁচার অন্য কোন আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহই হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময়। হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।’’ (সূরাহ তাওবাহ ১১৭-১১৯ আয়াত)
কা‘ব ইবন মালেক বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে ইসলামের জন্য হিদায়াত করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সত্য কথা বলা অপেক্ষা বড় পুরস্কার আমার জীবনে আল্লাহ আমাকে দান করেননি। ভাগ্যে আমি তাঁকে মিথ্যা কথা বলিনি। নচেৎ তাদের মত আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম, যারা মিথ্যা বলেছিল। আল্লাহ তা‘আলা যখন অহী অবতীর্ণ করলেন, তখন নিকৃষ্টভাবে মিথ্যুকদের নিন্দা করলেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তাদের ব্যাপারে বললেন, ‘‘যখন তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাবে, তারা তখন অচিরেই তোমাদের সামনে শপথ করে বলবে, যেন তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; অতএব তোমরা তাদেরকে উপেক্ষা কর; তারা হচ্ছে অতিশয় ঘৃণ্য, আর তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম, তা হল তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল। তারা এ জন্য শপথ করবে যেন তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, অনন্তর যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজী হয়ে যাও, তবে আল্লাহ তো এমন দুষ্কর্মকারী লোকদের প্রতি রাজী হবেন না।’’ (ঐ ৯৫-৯৬ আয়াত)
কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘হে তিনজন! আমাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত পিছিয়ে রাখা হয়েছিল তাদের থেকে যাদের মিথ্যা কসম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (অজান্তে) গ্রহণ করলেন, তাদের বায়‘আত নিলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ব্যাপারটা পিছিয়ে দিলেন। পরিশেষে মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে ফায়সালা দিলেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’’ পিছনে রাখার যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তার অর্থ যুদ্ধ থেকে আমাদের পিছনে থাকা নয়। বরং (এর অর্থ) আমাদের ব্যাপারটাকে ঐ লোকদের ব্যাপার থেকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যারা তাঁর কাছে শপথ করেছিল এবং ওযর পেশ করেছিল। ফলে তিনি তা কবূল করে নিয়েছিলেন।’
আর একটি বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূকের যুদ্ধে বৃহস্পতিবার বের হয়েছিলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়া পছন্দ করতেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি সফর থেকে কেবল দিনে চাশ্তের (সূর্য একটু উপরে উঠার) সময় আসতেন এবং এসে সর্বপ্রথম মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত নামায পড়তেন অতঃপর সেখানেই বসে যেতেন (এবং লোকের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর বাসায় যেতেন।)’
10/23 وَعَنْ أَبِي نُجَيد عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ الخُزَاعِيِّ رضي الله عنهما : أنَّ امْرَأةً مِنْ جُهَيْنَةَ أتَتْ رسولَ الله ﷺ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَى، فقالتْ : يَا رسولَ الله، أصَبْتُ حَدّاً فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا نَبيُّ الله ﷺ وَليَّها، فقالَ: «أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فإذا وَضَعَتْ فَأْتِني»فَفَعَلَ فَأَمَرَ بهَا نبيُّ الله ﷺ، فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِهَا فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا. فقالَ لَهُ عُمَرُ: تُصَلِّي عَلَيْهَا يَا رَسُول الله وَقَدْ زَنَتْ ؟ قَالَ: «لَقَدْ تَابَتْ تَوْبَةً لَوْ قُسِمَتْ بَيْنَ سَبْعِينَ مِنْ أهْلِ المَدِينَةِ لَوَسِعَتْهُمْ، وَهَلْ وَجَدْتَ أَفضَلَ مِنْ أنْ جَادَتْ بنفْسِها لله - عز وجل - ؟» رواه مسلم .
১০/২৩। আবূ নুজাইদ ইমরান ইবনে হুসাইন খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, জুহাইনা গোত্রের এক নারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হল। সে অবৈধ মিলনে গর্ভবতী ছিল। সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি তাই আপনি আমাকে শাস্তি দিন!’ সুতরাং আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আত্মীয়কে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি একে নিজের কাছে যত্ন সহকারে রাখ এবং সন্তান প্রসবের পর একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সুতরাং সে তাই করল (অর্থাৎ প্রসবের পর তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিয়ে এল)। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড় তার (শরীরের) উপর মজবুত করে বেঁধে দেওয়ার আদেশ দিলেন। অতঃপর তাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলার আদেশ দিলেন। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এই মেয়ের জানাযার নামায পড়লেন, অথচ সে ব্যভিচার করেছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘(উমার! তুমি জান না যে,) এই স্ত্রী লোকটি এমন বিশুদ্ধ তওবা করেছে, যদি তা মদীনার ৭০টি লোকের মধ্যে বণ্টন করা হত তা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। এর চেয়ে কি তুমি কোন উত্তম কাজ পেয়েছ যে, সে আল্লাহর জন্য নিজের প্রাণকে কুরবান করে দিল?’’
11/24 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عنهما أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «لَوْ أنَّ لابنِ آدَمَ وَادِياً مِنْ ذَهَبٍ أحَبَّ أنْ يكُونَ لَهُ وَادِيانِ، وَلَنْ يَمْلأَ فَاهُ إلاَّ التُّرَابُ، وَيَتْوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ» مُتَّفَقٌ عليه
১১/২৪। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি আদম সন্তানের সোনার একটি উপত্যকা হয়, তবুও সে চাইবে যে, তার কাছে দুটি উপত্যকা হোক। (কবরের) মাটিই একমাত্র তার মুখ পূর্ণ করতে পারবে। আর যে তওবা করে, আল্লাহ তওবা গ্রহণ করেন।’’
12/25 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أنَّ رسولَ الله ﷺ، قَالَ: «يَضْحَكُ اللهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى إِلَى رَجُلَيْنِ يقْتلُ أَحَدهُمَا الآخَرَ يَدْخُلانِ الجَنَّةَ، يُقَاتِلُ هَذَا في سَبيلِ اللهِ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يتُوبُ اللهُ عَلَى القَاتلِ فَيُسْلِم فَيُسْتَشْهَدُ».مُتَّفَقٌ عليه
১২/২৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ সুবহানাহু অতা‘আলা ঐ দু’টি লোককে দেখে হাসেন, যাদের মধ্যে একজন অপরজনকে হত্যা করে এবং দু’জনই জান্নাতে প্রবেশ করবে। নিহত ব্যক্তিকে আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা অবস্থায় (কোন কাফের কর্তৃক) হত্যা করে দেওয়া হল। পরে আল্লাহ তা‘আলা হত্যাকারী কাফেরকে তওবা করার তাওফীক প্রদান করেন। ফলে সে ইসলাম গ্রহণ করে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে যায়।’’
3- بَابُ الصَّبْرِ
পরিচ্ছেদ - ৩ : সবর (ধৈর্যের) বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱصۡبِرُواْ وَصَابِرُواْ ﴾ [ال عمران: ٢٠٠]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ধৈর্য ধারণে প্রতিযোগিতা কর।” (সূরা আলে ইমরান ২০০ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥﴾ [البقرة: ١٥٥]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু ধনপ্রাণ এবং ফলের (ফসলের) নোকসান দ্বারা পরীক্ষা করব; আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।” (সূরা বাকারাহ ১৫৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ﴾ [الزمر: ١٠]
অর্থাৎ “ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেওয়া হবে।” (সূরা যুমার ১০ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শুরা ৪৩ আয়াত)
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَعِينُواْ بِٱلصَّبۡرِ وَٱلصَّلَوٰةِۚ إِنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٣ ﴾ [البقرة: ١٥٣]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে থাকেন।” (সূরা বাকারাহ ১৫৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ٣١ ﴾ [محمد: ٣١]
অর্থাৎ “আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমি তোমাদের মধ্যে মুজাহিদ ও ধৈর্যশীলদেরকে জেনে নিই এবং আমি তোমাদের অবস্থা পরীক্ষা করি।” (সূরা মুহাম্মাদ ৩১ আয়াত)
আয়াতসমূহে ধৈর্যের আদেশ এবং তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে তার সংখ্যা অনেক ও প্রসিদ্ধ।
1/26 وَعَنْ أَبِي مَالِكٍ الحَارِثِ بنِ عَاصِمٍ الأشعريِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺ: «الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمان، والحَمدُ لله تَمْلأُ الميزَانَ، وَسُبْحَانَ الله والحَمدُ لله تَملآن - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَينَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ، والصَّلاةُ نُورٌ، والصَّدقةُ بُرهَانٌ، والصَّبْرُ ضِياءٌ، والقُرْآنُ حُجةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ. كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائعٌ نَفسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُها». رواه مسلم
১/২৬। আবূ মালিক হারিস ইবনে ‘আসেম আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়। নামায হচ্ছে জ্যোতি। সাদকাহ হচ্ছে প্রমাণ। ধৈর্য হল আলো। আর কুরআন তোমার স্বপক্ষে অথবা বিপক্ষে দলীল। প্রত্যেক ব্যক্তি সকাল সকাল সবকর্মে বের হয় এবং তার আত্মার ব্যবসা করে। অতঃপর সে তাকে (শাস্তি থেকে) মুক্ত করে অথবা তাকে (আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ক’রে) বিনাশ করে।’’
2/27 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ سَعدِ بنِ مَالِكِ بنِ سِنَانٍ الخُدرِي رَضِيَ الله عَنهُمَا : أَنَّ نَاساً مِنَ الأَنْصَارِ سَألُوا رسولَ الله ﷺ فَأعْطَاهُمْ، ثُمَّ سَألوهُ فَأعْطَاهُمْ، حَتَّى نَفِدَ مَا عِندَهُ، فَقَالَ لَهُمْ حِينَ أنْفْقَ كُلَّ شَيءٍ بِيَدِهِ: «مَا يَكُنْ عِنْدي مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أدَّخِرَهُ عَنْكُمْ، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ، وَمَنْ يَتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ . وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأوْسَعَ مِنَ الصَّبْر». مُتَّفَقٌ عليه
২/২৭। আবূ সায়ীদ সা‘দ ইবনে মালিক ইবনে সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে কিছু আনসারী আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিছু চাইলেন। তিনি তাদেরকে দিলেন। পুনরায় তারা দাবী করল। ফলে তিনি (আবার) তাদেরকে দিলেন। এমনকি যা কিছু তাঁর কাছে ছিল তা সব নিঃশেষ হয়ে গেল। অতঃপর যখন তিনি সমস্ত জিনিস নিজ হাতে দান করে দিলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে যা কিছু (মাল) আসে তা আমি তোমাদেরকে না দিয়ে কখনই জমা করে রাখব না। (কিন্তু তোমরা একটি কথা মনে রাখবে) যে ব্যক্তি চাওয়া থেকে পবিত্র থাকার চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখবেন। আর যে ব্যক্তি (চাওয়া থেকে) অমুখাপেক্ষিতা অবলম্বন করবে, আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করবেন। যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা প্রদান করবেন। আর কোন ব্যক্তিকে এমন কোন দান দেওয়া হয়নি, যা ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও বিস্তর হতে পারে।
3/28 وَعَنْ أَبِي يَحيَى صُهَيبِ بنِ سِنَانٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: « عَجَباً لأََمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ للمُؤْمِن : إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيراً لَهُ، وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ». رواه مسلم
৩/২৮। আবূ ইয়াহয়া সুহাইব ইবনে সিনান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মু’মিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার সুখ এলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর দুঃখ পৌঁছলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’
4/29 وعن أنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا ثَقُلَ النَّبيُّ ﷺ جَعلَ يَتَغَشَّاهُ الكَرْبُ، فَقَالَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ الله عَنهَا : وَاكَربَ أَبَتَاهُ . فقَالَ: «لَيْسَ عَلٰى أَبيكِ كَرْبٌ بَعْدَ اليَوْمِ»فَلَمَّا مَاتَ، قَالَتْ : يَا أَبَتَاهُ، أَجَابَ رَبّاً دَعَاهُ ! يَا أَبتَاهُ، جَنَّةُ الفِردَوسِ مَأْوَاهُ ! يَا أَبَتَاهُ، إِلَى جبْريلَ نَنْعَاهُ ! فَلَمَّا دُفِنَ قَالَتْ فَاطِمَةُ رَضي الله عنها : أَطَابَتْ أنْفُسُكُمْ أنْ تَحْثُوا عَلَى رَسُول الله ﷺ التُّرَابَ ؟! رواه البخاري
৪/২৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী অসুস্থ হয়ে পড়লেন এবং তাকে কষ্ট ঘিরে ফেলল, তখন (তাঁর কন্যা) ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, ‘হায়! আব্বাজানের কষ্ট!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা শুনে বললেন, ‘‘আজকের দিনের পর তোমার পিতার কোনো কষ্ট হবে না।’’ অতঃপর যখন তিনি মারা গেলেন, তখন ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, ‘হায় আব্বাজান! প্রভু যখন তাঁকে আহ্বান করলেন, তখন তিনি তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। হায় আব্বাজান! জান্নাতুল ফিরদাউস তাঁর বাসস্থান। হায় আব্বাজান! আমরা জিবরীলকে আপনার মৃত্যু-সংবাদ দেব।’ অতঃপর যখন তাঁকে সমাধিস্থ করা হল, তখন ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা (সাহাবাদেরকে) বললেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর মাটি ফেলতে কি তোমাদেরকে ভাল লাগল? ’
5/30 وعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ زيدِ بنِ حارثةَ مَوْلَى رسولِ الله ﷺ وحِبِّه وابنِ حبِّه رَضِيَ اللهُ عنهما، قَالَ: أرْسَلَتْ بنْتُ النَّبيِّ ﷺ إنَّ ابْني قَد احْتُضِرَ فَاشْهَدنَا، فَأَرْسَلَ يُقْرئُ السَّلامَ، ويقُولُ: «إنَّ للهِ مَا أخَذَ وَلَهُ مَا أعطَى وَكُلُّ شَيءٍ عِندَهُ بِأجَلٍ مُسَمًّى فَلتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ»فَأَرسَلَتْ إِلَيْهِ تُقْسِمُ عَلَيهِ لَيَأتِينَّهَا. فَقَامَ وَمَعَهُ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، وَمُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ، وَأُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ، وَزَيْدُ بْنُ ثَابتٍ، وَرِجَالٌ رضي الله عنهم، فَرُفعَ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ الصَّبيُّ، فَأقْعَدَهُ في حِجْرِهِ وَنَفْسُهُ تَقَعْقَعُ، فَفَاضَتْ عَينَاهُ فَقالَ سَعدٌ : يَا رسولَ الله، مَا هَذَا ؟ فَقالَ: «هٰذِهِ رَحمَةٌ جَعَلَها اللهُ تَعَالَى في قُلُوبِ عِبَادِهِ». وفي رواية: «فِي قُلُوبِ مَنْ شَاءَ مِنْ عِبَادِهِ، وَإِنَّما يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبادِهِ الرُّحَماءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩০। আবূ যায়েদ উসামাহ ইবনে যাইদ ইবনে হারেসাহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাধীনকৃত দাস এবং তাঁর প্রিয়পাত্র তথা প্রিয়পাত্রের পুত্র থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা তাঁর নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, ‘আমার ছেলের মর মর অবস্থা, তাই আপনি আমাদের এখানে আসুন।’ ‘তিনি সালাম দিয়ে সংবাদ পাঠালেন যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা যা নিয়েছেন, তা তাঁরই এবং যা দিয়েছেন তাও তাঁরই। আর তাঁর কাছে প্রতিটি জিনিসের এক নির্দিষ্ট সময় আছে।” অতএব সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং সওয়াবের আশা রাখে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কন্যা পুনরায় কসম দিয়ে বলে পাঠালেন যে, তিনি যেন অবশ্যই আসেন। ফলে তিনি সা‘দ ইবনে ‘উবাদাহ, মু‘আয ইবনে জাবাল, উবাই ইবনে কা‘ব, যাইদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং আরো কিছু লোকের সঙ্গে সেখানে গেলেন। শিশুটিকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তুলে দেওয়া হল। তিনি তাকে নিজ কোলে বসালেন। সে সময় তার প্রাণ ধুক্ধুক্ করছিল। (তার এই অবস্থা দেখে) তাঁর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু প্রবাহিত হতে লাগল। সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! একি?’ তিনি বললেন, ‘‘এ হচ্ছে দয়া, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন।’’ অন্য একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘যে সব বান্দার অন্তরে তিনি চান তাদের অন্তরে রেখে দিয়েছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে কেবল মাত্র দয়ালুদের প্রতিই দয়া করেন।’’
6/31 وَعَن صُهَيبٍ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «كَانَ مَلِكٌ فيمَنْ كَانَ قَبلَكمْ وَكَانَ لَهُ سَاحِرٌ فَلَمَّا كَبِرَ قَالَ للمَلِكِ : إنِّي قَدْ كَبِرْتُ فَابْعَثْ إلَيَّ غُلاماً أُعَلِّمْهُ السِّحْرَ ؛ فَبَعثَ إِلَيْهِ غُلاماً يُعَلِّمُهُ، وَكانَ في طرِيقِهِ إِذَا سَلَكَ رَاهِبٌ، فَقَعدَ إِلَيْه وسَمِعَ كَلامَهُ فَأعْجَبَهُ، وَكانَ إِذَا أتَى السَّاحِرَ، مَرَّ بالرَّاهبِ وَقَعَدَ إِلَيْه، فَإذَا أَتَى السَّاحِرَ ضَرَبَهُ، فَشَكَا ذلِكَ إِلَى الرَّاهِب، فَقَالَ : إِذَا خَشيتَ السَّاحِرَ، فَقُلْ : حَبَسَنِي أَهْلِي، وَإذَا خَشِيتَ أهلَكَ، فَقُلْ : حَبَسَنِي السَّاحِرُ فَبَيْنَما هُوَ عَلَى ذلِكَ إِذْ أَتَى عَلَى دَابَّةٍ عَظِيمَةٍ قَدْ حَبَسَتِ النَّاسَ، فَقَالَ : اليَوْمَ أعْلَمُ السَّاحرُ أفْضَلُ أم الرَّاهبُ أفْضَلُ ؟ فَأخَذَ حَجَراً، فَقَالَ : اَللهم إنْ كَانَ أمْرُ الرَّاهِبِ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ أمْرِ السَّاحِرِ فَاقْتُلْ هذِهِ الدّابَّةَ حَتَّى يَمضِيَ النَّاسُ، فَرَمَاهَا فَقَتَلَها ومَضَى النَّاسُ، فَأتَى الرَّاهبَ فَأَخبَرَهُ . فَقَالَ لَهُ الرَّاهبُ : أَيْ بُنَيَّ أَنْتَ اليَومَ أفْضَل منِّي قَدْ بَلَغَ مِنْ أَمْرِكَ مَا أَرَى، وَإنَّكَ سَتُبْتَلَى، فَإن ابْتُلِيتَ فَلاَ تَدُلَّ عَلَيَّ ؛ وَكانَ الغُلامُ يُبْرىءُ الأكْمَهَ وَالأَبْرصَ، ويداوي النَّاسَ مِنْ سَائِرِ الأَدْوَاء . فَسَمِعَ جَليسٌ لِلملِكِ كَانَ قَدْ عَمِيَ، فأتاه بَهَدَايا كَثيرَةٍ، فَقَالَ : مَا ها هُنَا لَكَ أَجْمعُ إنْ أنتَ شَفَيتَنِي، فَقَالَ : إنّي لا أشْفِي أحَداً إِنَّمَا يَشفِي اللهُ تَعَالَى، فَإنْ آمَنْتَ بالله تَعَالَى دَعَوتُ اللهَ فَشفَاكَ، فَآمَنَ بالله تَعَالَى فَشفَاهُ اللهُ تَعَالٰى، فَأَتَى المَلِكَ فَجَلسَ إِلَيْهِ كَما كَانَ يَجلِسُ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَنْ رَدّ عَلَيْكَ بَصَرَكَ ؟ قَالَ : رَبِّي، قَالَ : وَلَكَ رَبٌّ غَيري ؟ قَالَ : رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ، فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الغُلامِ، فَجيء بالغُلاَمِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : أيْ بُنَيَّ، قَدْ بَلَغَ مِنْ سِحْرِكَ مَا تُبْرِئُ الأَكْمَهَ وَالأَبْرَصَ وتَفْعَلُ وتَفْعَلُ ! فَقَالَ : إنِّي لا أَشْفي أحَداً، إِنَّمَا يَشفِي الله تَعَالَى . فَأَخَذَهُ فَلَمْ يَزَلْ يُعَذِّبُهُ حَتَّى دَلَّ عَلَى الرَّاهبِ ؛ فَجِيء بالرَّاهبِ فَقيلَ لَهُ : ارجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَعَا بِالمِنْشَارِ فَوُضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بِجَليسِ المَلِكِ فقيل لَهُ : ارْجِعْ عَنْ دِينِكَ، فَأَبَى، فَوضِعَ المِنْشَارُ في مَفْرِق رَأسِهِ، فَشَقَّهُ بِهِ حَتَّى وَقَعَ شِقَّاهُ، ثُمَّ جِيءَ بالغُلاَمِ فقيلَ لَهُ: ارْجِعْ عَنْ دِينكَ، فَأَبَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أصْحَابهِ، فَقَالَ : اذْهَبُوا بِهِ إِلَى جَبَلِ كَذَا وَكَذَا فَاصْعَدُوا بِهِ الجَبَل، فَإِذَا بَلَغْتُمْ ذِرْوَتَهُ فَإِنْ رَجَعَ عَنْ دِينِهِ وَإلاَّ فَاطْرَحُوهُ . فَذَهَبُوا بِهِ فَصَعِدُوا بِهِ الجَبَلَ، فَقَالَ : اَللهم أكْفنيهمْ بِمَا شِئْتَ، فَرَجَفَ بهِمُ الجَبلُ فَسَقَطُوا، وَجاءَ يَمشي إِلَى المَلِكِ، فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَا فَعَلَ أصْحَابُكَ ؟ فَقَالَ : كَفَانِيهمُ الله تَعَالَى، فَدَفَعَهُ إِلَى نَفَرٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: اذْهَبُوا بِهِ فاحْمِلُوهُ في قُرْقُورٍ وتَوَسَّطُوا بِهِ البَحْرَ، فَإنْ رَجعَ عَنْ دِينِهِ وإِلاَّ فَاقْذِفُوهُ . فَذَهَبُوا بِهِ، فَقَالَ : اَللهم أكْفِنيهمْ بمَا شِئْتَ، فانْكَفَأَتْ بِهمُ السَّفينةُ فَغَرِقُوا، وَجَاء يَمْشي إِلَى المَلِكِ . فَقَالَ لَهُ المَلِكُ : مَا فعلَ أصْحَابُكَ ؟ فَقَالَ : كَفَانِيهمُ الله تَعَالَى . فَقَالَ لِلمَلِكِ : إنَّكَ لَسْتَ بِقَاتِلِي حَتَّى تَفْعَلَ مَا آمُرُكَ بِهِ . قَالَ : مَا هُوَ ؟ قَالَ : تَجْمَعُ النَّاسَ في صَعيدٍ وَاحدٍ وتَصْلُبُني عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ خُذْ سَهْماً مِنْ كِنَانَتي، ثُمَّ ضَعِ السَّهْمَ في كَبدِ القَوْسِ ثُمَّ قُلْ : بسْم الله ربِّ الغُلاَمِ، ثُمَّ ارْمِني، فَإنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذلِكَ قَتَلتَني، فَجَمَعَ النَّاسَ في صَعيدٍ واحدٍ، وَصَلَبَهُ عَلَى جِذْعٍ، ثُمَّ أَخَذَ سَهْماً مِنْ كِنَانَتِهِ، ثُمَّ وَضَعَ السَّهْمَ في كَبِدِ القَوْسِ، ثُمَّ قَالَ : بِسمِ اللهِ رَبِّ الغُلامِ، ثُمَّ رَمَاهُ فَوقَعَ في صُدْغِهِ، فَوَضَعَ يَدَهُ في صُدْغِهِ فَمَاتَ، فَقَالَ النَّاسُ : آمَنَّا بِرَبِّ الغُلامِ، فَأُتِيَ المَلِكُ فقيلَ لَهُ : أَرَأَيْتَ مَا كُنْتَ تَحْذَرُ قَدْ والله نَزَلَ بكَ حَذَرُكَ . قَدْ آمَنَ النَّاسُ . فَأَمَرَ بِالأُخْدُودِ بأفْواهِ السِّكَكِ فَخُدَّتْ وأُضْرِمَ فيهَا النِّيرانُ وَقَالَ : مَنْ لَمْ يَرْجعْ عَنْ دِينهِ فَأقْحموهُ فيهَا، أَوْ قيلَ لَهُ: اقتَحِمْ فَفَعَلُوا حَتَّى جَاءت امْرَأةٌ وَمَعَهَا صَبيٌّ لَهَا، فَتَقَاعَسَتْ أنْ تَقَعَ فيهَا، فَقَالَ لَهَا الغُلامُ : يَا أُمَّهْ اصْبِري فَإِنَّكِ عَلَى الحَقِّ!». رواه مسلم
৬/৩১। সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্ব যুগে একজন বাদশাহ ছিল এবং তাঁর (উপদেষ্টা) এক জাদুকর ছিল। জাদুকর বার্ধক্যে উপনীত হলে বাদশাহকে বলল যে, ‘আমি বৃদ্ধ হয়ে গেলাম তাই আপনি আমার নিকট একটি বালক পাঠিয়ে দিন, যাতে আমি তাকে জাদু-বিদ্যা শিক্ষা দিতে পারি।’ ফলে বাদশাহ তার কাছে একটি বালক পাঠাতে আরম্ভ করল, যাকে সে জাদু শিক্ষা দিত। তার যাতায়াত পথে এক পাদ্রী বাস করত। যখনই বালকটি জাদুকরের কাছে যেত, তখনই পাদ্রীর নিকটে কিছুক্ষণের জন্য বসত, তাঁর কথা তাকে ভাল লাগত। ফলে সে যখনই জাদুকরের নিকট যেত, তখনই যাওয়ার সময় সে পাদ্রীর কাছে বসত। যখন সে পাদ্রীর কাছে আসত জাদুকর তাকে (তার বিলম্বের কারণে) মারত। ফলে সে পাদ্রীর নিকটে এর অভিযোগ করল। পাদ্রী বলল, ‘যখন তোমার ভয় হবে যে, জাদুকর তোমাকে মারধর করবে, তখন তুমি বলবে, আমার বাড়ির লোক আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল। আর যখন বাড়ির লোকে মারবে বলে আশঙ্কা হবে, তখন তুমি বলবে যে, জাদুকর আমাকে (কোন কাজে) আটকে দিয়েছিল।’
সুতরাং সে এভাবেই দিনপাত করতে থাকল। একদিন বালকটি তার চলার পথে একটি বিরাট (হিংস্র) জন্তু দেখতে পেল। ঐ (জন্তু)টি লোকের পথ অবরোধ করে রেখেছিল। বালকটি (মনে মনে) বলল, ‘আজ আমি জানতে পারব যে, জাদুকর শ্রেষ্ঠ না পাদ্রী?’ অতঃপর সে একটি পাথর নিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! যদি পাদ্রীর বিষয়টি তোমার নিকটে জাদুকরের বিষয় থেকে পছন্দনীয় হয়, তাহলে তুমি এই পাথর দ্বারা এই জন্তুটিকে মেরে ফেল। যাতে (রাস্তা নিরাপদ হয়) এবং লোকেরা চলাফিরা করতে পারে।’ (এই দো‘আ করে) সে জন্তুটাকে পাথর ছুঁড়ল এবং তাকে হত্যা করে দিল। এর পর লোকেরা চলাফিরা করতে লাগল। বালকটি পাদ্রীর নিকটে এসে ঘটনাটি বর্ণনা করল। পাদ্রী তাকে বলল, ‘বৎস! তুমি আজ আমার চেয়ে উত্তম। তোমার (ঈমান ও একীনের) ব্যাপার দেখে আমি অনুভব করছি যে, শীঘ্রই তোমাকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সুতরাং যখন তুমি পরীক্ষার সম্মুখীন হবে, তখন তুমি আমার রহস্য প্রকাশ করে দিও না।’
আর বালকটি (আল্লাহর ইচ্ছায়) জন্মান্ধত্ব ও কুষ্ঠরোগ ভাল করত এবং অন্যান্য সমস্ত রোগের চিকিৎসা করত। (এমতাবস্থায়) বাদশাহর জনৈক দরবারী অন্ধ হয়ে গেল। যখন সে বালকটির কথা শুনল, তখন প্রচুর উপঢৌকন নিয়ে তার কাছে এল এবং তাকে বলল যে, ‘তুমি যদি আমাকে ভাল করতে পার, তাহলে এ সমস্ত উপঢৌকন তোমার।’ সে বলল, ‘আমি তো কাউকে আরোগ্য দিতে পারি না, আল্লাহ তা‘আলাই আরোগ্য দান করে থাকেন। যদি তুমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন কর, তাহলে আমি আল্লাহর কাছে দো‘আ করব, ফলে তিনি তোমাকে অন্ধত্বমুক্ত করবেন।’ সুতরাং সে তার প্রতি ঈমান আনল। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরোগ্য দান করলেন। তারপর সে পূর্বেকার অভ্যাস অনুযায়ী বাদশাহর কাছে গিয়ে বসল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘কে তোমাকে চোখ ফিরিয়ে দিল?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু!’ সে বলল, ‘আমি ব্যতীত তোমার অন্য কেউ প্রভু আছে?’ সে বলল, ‘আমার প্রভু ও আপনার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকে গ্রেপ্তার করল এবং তাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ (চিকিৎসক) বালকের কথা বলে দিল। অতএব তাকে (বাদশার দরবারে) নিয়ে আসা হল। বাদশাহ তাকে বলল, ‘বৎস! তোমার কৃতিত্ব ঐ সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে যে, তুমি জন্মান্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করছ এবং আরো অনেক কিছু করছ।’ বালকটি বলল, ‘আমি কাউকে আরোগ্য দান করি না, আরোগ্য দানকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।’ বাদশাহ তাকেও গ্রেপ্তার করে ততক্ষণ পর্যন্ত শাস্তি দিতে থাকল, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে ঐ পাদ্রীর কথা বলে দিল।
অতঃপর পাদ্রীকেও (তার কাছে) নিয়ে আসা হল। পাদ্রীকে বলা হল যে, ‘তুমি নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যাও।’ কিন্তু সে অস্বীকার করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। করাতটি তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বাদশাহর দরবারীকে নিয়ে আসা হল এবং তাকে বলা হল যে, ‘তোমার ধর্ম পরিত্যাগ কর।’ কিন্তু সেও (বাদশার কথা) প্রত্যাখান করল। ফলে তার মাথার সিঁথিতে করাত রাখা হল। তা দিয়ে তাকে (চিরে) দ্বিখন্ডিত করে দিল; এমনকি তার দুই ধার (মাটিতে) পড়ে গেল। তারপর বালকটিকে নিয়ে আসা হল। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তুমি ধর্ম থেকে ফিরে এস।’ কিন্তু সেও অসম্মতি জানাল। সুতরাং বাদশাহ তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে অমুক পাহাড়ে নিয়ে যাও, তার উপরে তাকে আরোহণ করাও। অতঃপর যখন তোমরা তার চূড়ায় পৌঁছবে (তখন তাকে ধর্ম-ত্যাগের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর) যদি সে নিজের ধর্ম থেকে ফিরে যায়, তাহলে ভাল। নচেৎ তাকে ওখান থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাও।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গিয়ে পাহাড়ের উপর আরোহণ করল। বালকটি আল্লাহর কাছে দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জন্য তাদের মুকাবেলায় যে ভাবেই চাও যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং পাহাড় কেঁপে উঠল এবং তারা সকলেই নীচে পড়ে গেল।
বালকটি হেঁটে বাদশার কাছে উপস্থিত হল। বাদশাহ তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার সঙ্গীদের কি হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়েছেন।’
বাদশাহ আবার তাকে তার কিছু বিশেষ লোকের হাতে সঁপে দিয়ে বলল যে, ‘একে নিয়ে তোমরা নৌকায় চড় এবং সমুদ্রের মধ্যস্থলে গিয়ে তাকে ধর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা কর! যদি সে স্বধর্ম থেকে ফিরে আসে, তাহলে ঠিক আছে। নচেৎ তাকে সমুদ্রে নিক্ষেপ কর।’ সুতরাং তারা তাকে নিয়ে গেল। অতঃপর বালকটি (নৌকায় চড়ে) দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি এদের মোকাবেলায় যেভাবে চাও আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাও।’ সুতরাং নৌকা উল্টে গেল এবং তারা সকলেই পানিতে ডুবে গেল।
তারপর বালকটি হেঁটে বাদশাহর কাছে এল। বাদশাহ বলল, ‘তোমার সঙ্গীদের কী হল?’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাদের মোকাবেলায় আমার জন্য যথেষ্ট হয়ে গেছেন।’ পুনরায় বালকটি বাদশাহকে বলল যে, ‘আপনি আমাকে সে পর্যন্ত হত্যা করতে পারবেন না, যে পর্যন্ত না আপনি আমার নির্দেশিত পদ্ধতি অবলম্বন করবেন।’ বাদশাহ বলল, ‘তা কী?’ সে বলল, ‘আপনি একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করুন এবং গাছের গুড়িতে আমাকে ঝুলিয়ে দিন। অতঃপর আমার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রাখুন, তারপর বলুন, ‘‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর আমাকে তীর মারুন। এভাবে করলে আপনি আমাকে হত্যা করতে সফল হবেন।’
সুতরাং (বালকটির নির্দেশানুযায়ী) বাদশাহ একটি মাঠে লোকজন একত্রিত করল এবং গাছের গুঁড়িতে তাকে ঝুলিয়ে দিল। অতঃপর তার তূণ থেকে একটি তীর নিয়ে তা ধনুকের মাঝে রেখে বলল, ‘বিসমিল্লাহি রাব্বিল গুলাম!’ (অর্থাৎ এই বালকের প্রতিপালক আল্লাহর নামে মারছি।) অতঃপর তাকে তীর মারল। তীরটি তার কান ও মাথার মধ্যবর্তী স্থানে (কানমুতোয়) লাগল। বালকটি তার কানমুতোয় হাত রেখে মারা গেল। অতঃপর লোকেরা (বালকটির অলৌকিকতা দেখে) বলল যে, ‘আমরা এ বালকটির প্রভুর উপর ঈমান আনলাম।’ বাদশার কাছে এসে বলা হল যে, ‘আপনি যার ভয় করছিলেন তাই ঘটে গেছে, লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছে।’ সুতরাং সে পথের দুয়ারে গর্ত খুঁড়ার আদেশ দিল। ফলে তা খুঁড়া হল এবং তাতে আগুন জ্বালানো হল। বাদশাহ আদেশ করল যে, ‘যে দ্বীন থেকে না ফিরবে তাকে এই আগুনে নিক্ষেপ কর’ অথবা তাকে বলা হল যে, ‘তুমি আগুনে প্রবেশ কর।’ তারা তাই করল। শেষ পর্যন্ত একটি স্ত্রীলোক এল। তার সঙ্গে তার একটি শিশু ছিল। সে তাতে পতিত হতে কুণ্ঠিত হলে তার বালকটি বলল, ‘আম্মা! তুমি সবর কর। কেননা, তুমি সত্যের উপরে আছ।’’
7/32 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : مَرَّ النَّبيُّ ﷺ بِامرَأةٍ تَبكِي عِنْدَ قَبْرٍ، فَقَالَ: «اتّقِي الله واصْبِري»فَقَالَتْ : إِليْكَ عَنِّي ؛ فإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيبَتي وَلَمْ تَعرِفْهُ، فَقيلَ لَهَا : إنَّه النَّبيُّ ﷺ فَأَتَتْ بَابَ النَّبيِّ ﷺ، فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابينَ، فقالتْ : لَمْ أعْرِفكَ، فَقَالَ: «إنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الأُولى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. وفي رواية لمسلم: «تَبكِي عَلَى صَبيٍّ لَهَا».
৭/৩২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। সে একটি কবরের পাশে বসে কাঁদছিল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধারণ কর।’’ সে বলল, ‘আপনি আমার নিকট হতে দূরে সরে যান। কারণ, আমি যে বিপদে পড়েছি আপনি তাতে পড়েননি।’ সে তাঁকে চিনতে পারেনি (তাই সে চরম শোকে তাঁকে অসঙ্গত কথা বলে ফেলল)। অতঃপর তাকে বলা হল যে, ‘তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ সুতরাং (এ কথা শুনে) সে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুয়ারের কাছে এল। সেখানে সে দারোয়ানদেরকে পেল না। অতঃপর সে (সরাসরি প্রবেশ করে) বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আঘাতের শুরুতে সবর করাটাই হল প্রকৃত সবর।’’
মুসলিমের একটি বর্ণনায় আছে, সে (মহিলাটি) তার মৃত শিশুর জন্য কাঁদছিল।
8/33 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رسولَ الله ﷺ قَالَ: «يَقُولُ اللهُ تَعَالَى : مَا لعَبدِي المُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إلاَّ الجَنَّةَ». رواه البخاري
৮/৩৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আমার মু’মিন বান্দার জন্য আমার নিকট জান্নাত ব্যতীত অন্য কোন পুরস্কার নেই, যখন আমি তার দুনিয়ার প্রিয়তম কাউকে কেড়ে নিই এবং সে সওয়াবের নিয়তে সবর করে।’’
9/34 وعن عائشةَ رضيَ الله عنها: أَنَّهَا سَألَتْ رَسُولَ الله ﷺ عَنِ الطّاعُونِ، فَأَخْبَرَهَا أنَّهُ كَانَ عَذَاباً يَبْعَثُهُ اللهُ تَعَالَى عَلَى مَنْ يَشَاءُ، فَجَعَلَهُ اللهُ تعالى رَحْمَةً للْمُؤْمِنينَ، فَلَيْسَ مِنْ عَبْدٍ يَقَعُ في الطَّاعُونِ فَيَمكُثُ في بلدِهِ صَابراً مُحْتَسِباً يَعْلَمُ أنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ إلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أجْرِ الشّهيدِ . رواه البخاري.
৯/৩৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি তাঁকে বললেন যে, ‘‘এটা আযাব; আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি ইচ্ছা করেন এটা প্রেরণ করেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা একে মু’মিনদের জন্য রহমত বানিয়ে দিলেন। ফলে (এখন) যে ব্যক্তি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হবে এবং সে নিজ দেশে ধৈর্য সহকারে নেকীর নিয়তে অবস্থান করবে, সে জানবে যে, তাকে তাইই পৌঁছবে যা আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য লিখে দিয়েছেন, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য শহীদের মত পুরস্কার রয়েছে। ”
10/35 وعن أنس رضي الله عنه قَالَ : سمعتُ رسولَ الله ﷺ يقول: «إنَّ الله - عز وجل - قَالَ : إِذَا ابْتَلَيْتُ عبدي بحَبيبتَيه فَصَبرَ عَوَّضتُهُ مِنْهُمَا الجَنَّةَ»يريد عينيه. رواه البخاري
১০/৩৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যখন আমি আমার বান্দাকে তার প্রিয়তম দুটি জিনিস দ্বারা (অর্থাৎ চক্ষু থেকে বঞ্চিত করে) পরীক্ষা করি এবং সে সবর করে আমি তাকে এ দু’টির বিনিময়ে জান্নাত প্রদান করব।’’
11/36 وعن عطَاء بن أبي رَباحٍ، قَالَ : قَالَ لي ابنُ عَباسٍ رضي اللهُ عنهما : ألاَ أُريكَ امْرَأةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّة؟ فَقُلْتُ: بَلَى، قَالَ : هذِهِ المَرْأةُ السَّودَاءُ أتَتِ النَّبيَّ ﷺ، فَقَالَتْ : إنّي أُصْرَعُ، وإِنِّي أتَكَشَّفُ، فادْعُ الله تَعَالَى لي . قَالَ: «إنْ شئْتِ صَبَرتِ وَلَكِ الجَنَّةُ، وَإنْ شئْتِ دَعَوتُ الله تَعَالَى أنْ يُعَافِيكِ». فَقَالَتْ : أَصْبِرُ، فَقَالَتْ : إنِّي أتَكَشَّفُ فَادعُ الله أنْ لا أَتَكَشَّف، فَدَعَا لَهَا . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/৩৬। আত্বা ইবনে আবী রাবাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি চাও তাহলে সবর কর; এর বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দো‘আ করব।’’ স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি সবর করব।’ অতঃপর সে বলল, ‘(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়।’ ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন।
12/37 وَعَنْ أَبِي عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَأَنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ يَحْكِي نَبِيّاً مِنَ الأَنْبِياءِ، صَلَواتُ الله وَسَلامُهُ عَلَيْهمْ، ضَرَبه قَوْمُهُ فَأدْمَوهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، يَقُولُ: «اَللهم اغْفِرْ لِقَومي، فَإِنَّهُمْ لا يَعْلَمونَ».مُتَّفَقٌ علَيهِ
১২/৩৭। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি যেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীদের মধ্যে কোন এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি; (আলাইহিমুস সালাতু অসসালাম) যাঁকে তাঁর স্বজাতি প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। আর তিনি নিজ চেহারা থেকে রক্ত পরিষ্কার করছেন আর বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও। কেননা, তারা জ্ঞানহীন।”
13/38 وعَنْ أَبِي سعيدٍ وأبي هريرةَ رضيَ الله عنهما، عن النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا يُصيبُ المُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ، وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ، وَلاَ حَزَنٍ، وَلاَ أذَىً، وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوكَةُ يُشَاكُهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بِهَا مِنْ خَطَاياهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৩/৩৮। আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যে কোনো ক্লান্তি, অসুখ, চিন্তা, শোক এমন কি (তার পায়ে) কাঁটাও লাগে, আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।’’
14/39 وَعَنِ ابنِ مَسعودٍ رضي الله عنه، قَالَ : دخلتُ عَلَى النَّبيِّ ﷺ وَهُوَ يُوعَكُ، فقلت : يَا رَسُولَ الله، إنَّكَ تُوْعَكُ وَعْكاً شَدِيداً، قَالَ: «أجَلْ، إنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلانِ مِنكُمْ» قلْتُ: ذلِكَ أن لَكَ أجْرينِ ؟ قَالَ: «أَجَلْ، ذلِكَ كَذلِكَ، مَا مِنْ مُسْلِمٍ يُصيبُهُ أذىً، شَوْكَةٌ فَمَا فَوقَهَا إلاَّ كَفَّرَ اللهُ بهَا سَيِّئَاتِهِ، وَحُطَّتْ عَنْهُ ذُنُوبُهُ كَمَا تَحُطُّ الشَّجَرَةُ وَرَقَهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৪/৩৯। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। সে সময় তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনার যে প্রচণ্ড জ্বর!’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! তোমাদের দু’জনের সমান আমার জ্বর আসে।’’ আমি বললাম, ‘তার জন্যই কি আপনার পুরস্কারও দ্বিগুণ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! ব্যাপার তা-ই। (অনুরূপ) যে কোন মুসলিমকে কোন কষ্ট পৌঁছে, কাঁটা লাগে অথবা তার চেয়েও কঠিন কষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলা এর কারণে তার পাপসমূহকে মোচন করে দেন এবং তার পাপসমূহকে এভাবে ঝরিয়ে দেওয়া হয়; যেভাবে গাছ তার পাতা ঝরিয়ে দেয়।’’
15/40 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْراً يُصِبْ مِنْهُ». رواه البخاري
১৫/৪০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকে দুঃখ-কষ্টে ফেলেন।’’
16/41 وعن أنس رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺ: «لا يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ المَوتَ لضُرٍّ أَصَابَهُ، فَإِنْ كَانَ لاَ بُدَّ فاعلاً، فَليَقُلْ : اَللهم أحْيني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيراً لِي، وَتَوفّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيراً لي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/৪১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো বিপদে পড়ার কারণে যেন মরার আকাঙ্ক্ষা না করে। আর যদি করতেই হয়, তাহলে সে যেন বলে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে জীবিত রাখ; যে পর্যন্ত জীবিত থাকাটা আমার জন্য মঙ্গলময় হয়। আর আমাকে মরণ দাও; যদি মরণ আমার জন্য মঙ্গলময় হয়।’’
17/42 وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ خَبَّابِ بنِ الأَرتِّ رضي الله عنه، قَالَ : شَكَوْنَا إِلَى رسولِ الله ﷺ وَهُوَ متَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ في ظلِّ الكَعْبَةِ، فقُلْنَا : أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا ألاَ تَدْعُو لَنا ؟ فَقَالَ: «قَدْ كَانَ مَنْ قَبْلَكُمْ يُؤْخَذُ الرَّجُلُ فَيُحْفَرُ لَهُ في الأرضِ فَيُجْعَلُ فِيهَا، ثُمَّ يُؤْتَى بِالمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأسِهِ فَيُجْعَلُ نصفَينِ، وَيُمْشَطُ بأمْشَاطِ الحَديدِ مَا دُونَ لَحْمِه وَعَظْمِهِ، مَا يَصُدُّهُ ذلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَاللهِ لَيُتِمَّنَّ الله هَذَا الأَمْر حَتَّى يَسيرَ الرَّاكبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَموتَ لاَ يَخَافُ إلاَّ اللهَ والذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ، ولكنكم تَسْتَعجِلُونَ». رواه البخاري، وفي رواية: «وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً وَقَدْ لَقِينا مِنَ المُشْرِكِينَ شدَّةً».
১৭/৪২। খাব্বাব ইবনে আরাত্ত্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অভিযোগ করলাম (এমতাবস্থায়) যে, তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ‘আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না?’ তিনি বললেন, ‘‘(তোমাদের জানা উচিত যে,) তোমাদের পূর্বেকার (মু’মিন) লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে (পুঁতে) রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের মাংসের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই (কঠোর পরীক্ষা) তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। আল্লাহর কসম! আল্লাহ নিশ্চয় এই ব্যাপারটিকে (দ্বীন ইসলামকে) এমন সুসম্পন্ন করবেন যে, একজন আরোহী সান‘আ’ থেকে হাযরামাউত একাই সফর করবে; কিন্তু সে (রাস্তায়) আল্লাহ এবং নিজ ছাগলের উপর নেকড়ের আক্রমণ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না। কিন্তু তোমরা তাড়াহুড়ো করছ।’’
একটি বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাদরকে বালিশ বানিয়ে বিশ্রাম করছিলেন এবং আমরা মুশরিকদের দিক থেকে নানা যাতনা পেয়েছিলাম।
18/43 وعن ابن مسعودٍ رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا كَانَ يَومُ حُنَينٍ آثَرَ رَسُولُ الله ﷺ نَاساً في القِسْمَةِ، فَأعْطَى الأقْرَعَ بْنَ حَابسٍ مئَةً مِنَ الإِبِلِ، وَأَعْطَى عُيَيْنَة بْنَ حصن مِثْلَ ذلِكَ، وَأَعطَى نَاساً مِنْ أشْرافِ العَرَبِ وآثَرَهُمْ يَوْمَئِذٍ في القِسْمَةِ . فَقَالَ رَجُلٌ : واللهِ إنَّ هذِهِ قِسْمَةٌ مَا عُدِلَ فِيهَا، وَمَا أُريدَ فيهَا وَجْهُ اللهِ، فَقُلْتُ : وَاللهِ لأُخْبِرَنَّ رسولَ الله ﷺ، فَأَتَيْتُهُ فَأخْبَرتُهُ بمَا قَالَ، فَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ حَتَّى كَانَ كالصِّرْفِ . ثُمَّ قَالَ: «فَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لم يَعْدِلِ اللهُ وَرسولُهُ ؟» ثُمَّ قَالَ: «يَرْحَمُ اللهُ مُوسَى قَدْ أُوذِيَ بأكْثَرَ مِنْ هَذَا فَصَبر».فَقُلْتُ : لاَ جَرَمَ لاَ أرْفَعُ إِلَيْه بَعدَهَا حَدِيثاً. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৮/৪৩। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, হুনাইন যুদ্ধের গনিমতের মাল বণ্টনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে (তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য) প্রাধান্য দিলেন (অর্থাৎ অন্য লোকের তুলনায় তাদেরকে বেশী মাল দিলেন)। সুতরাং তিনি আক্বরা‘ ইবনে হাবেসকে একশত উঁট দিলেন এবং ‘উয়াইনা ইবনে হিসনকেও তারই মত দিলেন। অনুরূপ আরবের আরো কিছু সম্ভ্রান্ত মানুষকেও সেদিন (মাল) বণ্টনে প্রাধান্য দিলেন। (এ দেখে) একটি লোক বলল, ‘আল্লাহর কসম! এই বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি এবং এতে আল্লাহর সন্তোষ লাভের ইচ্ছা রাখা হয়নি!’ আমি (ইবনে মাসউদ) বললাম, ‘আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এই সংবাদ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেব।’ অতএব আমি তাঁর কাছে এসে সেই সংবাদ দিলাম যা সে বলল। ফলে তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে এমনকি লালবর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যদি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ইনসাফ না করেন, তাহলে আর কে ইনসাফ করবে?’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ মূসাকে রহম করুন, তাঁকে এর চেয়ে বেশী কষ্ট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছিলেন।’’ অবশেষে আমি (মনে মনে) বললাম যে, ‘আমি এর পরে কোন কথা তাঁর কাছে পৌঁছাব না।’
19/44 وعن أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «إِذَا أَرَادَ الله بعبدِهِ الخَيرَ عَجَّلَ لَهُ العُقُوبَةَ في الدُّنْيا، وَإِذَا أَرَادَ اللهُ بِعَبدِهِ الشَّرَّ أمْسَكَ عَنْهُ بذَنْبِهِ حَتَّى يُوَافِيَ بِهِ يومَ القِيَامَةِ».وَقالَ النَّبيُّ ﷺ: «إنَّ عِظَمَ الجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ البَلاَءِ، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا أَحَبَّ قَوْماً ابْتَلاَهُمْ، فَمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السُّخْطُ» رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
১৯/৪৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে তাড়াতাড়ি দুনিয়াতে (পাপের) শাস্তি দিয়ে দেন। আর যখন আল্লাহ তাঁর বান্দার অমঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে (শাস্তিদানে) বিরত থাকেন। পরিশেষে কিয়ামতের দিন তাকে পুরোপুরি শাস্তি দেবেন।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘‘বড় পরীক্ষার বড় প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা যখন কোনো জাতিকে ভালবাসেন, তখন তার পরীক্ষা নেন। ফলে তাতে যে সন্তুষ্ট (ধৈর্য) প্রকাশ করবে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি রয়েছে। আর যে (আল্লাহর পরীক্ষায়) অসন্তুষ্ট হবে, তার জন্য রয়েছে আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’’
20/45 وعن أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ رضي الله عنه يَشتَكِي، فَخَرَجَ أبُو طَلْحَةَ، فَقُبِضَ الصَّبيُّ، فَلَمَّا رَجَعَ أَبُو طَلْحَةَ، قَالَ : مَا فَعَلَ ابْنِي ؟ قَالَتْ أمُّ سُلَيم وَهِيَ أمُّ الصَّبيِّ : هُوَ أَسْكَنُ مَا كَانَ، فَقَرَّبَتْ إليه العَشَاءَ فَتَعَشَّى، ثُمَّ أَصَابَ منْهَا، فَلَمَّا فَرَغَ، قَالَتْ : وَارُوا الصَّبيَّ فَلَمَّا أَصْبحَ أَبُو طَلْحَةَ أَتَى رسولَ الله ﷺ فَأخْبَرَهُ، فَقَالَ: «أعَرَّسْتُمُ اللَّيلَةَ؟» قَالَ : نَعَمْ، قَالَ: «اَللهم بَارِكْ لَهُمَا»، فَوَلَدَتْ غُلاماً، فَقَالَ لي أَبُو طَلْحَةَ : احْمِلْهُ حَتَّى تَأْتِيَ بِهِ النَّبيَّ ﷺ، وَبَعَثَ مَعَهُ بِتَمَراتٍ، فَقَالَ: «أَمَعَهُ شَيءٌ ؟» قَالَ : نَعَمْ، تَمَراتٌ، فَأخَذَهَا النَّبيُّ ﷺ فَمَضَغَهَا، ثُمَّ أَخَذَهَا مِنْ فِيهِ فَجَعَلَهَا في فِيِّ الصَّبيِّ، ثُمَّ حَنَّكَهُ وَسَمَّاهُ عَبدَ الله . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية للبُخَارِيِّ : قَالَ ابنُ عُيَيْنَةَ : فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصارِ : فَرَأيْتُ تِسعَةَ أوْلادٍ كُلُّهُمْ قَدْ قَرَؤُوا القُرْآنَ، يَعْنِي : مِنْ أوْلادِ عَبدِ الله المَولُودِ .
وَفي رواية لمسلمٍ : مَاتَ ابنٌ لأبي طَلْحَةَ مِنْ أمِّ سُلَيمٍ، فَقَالَتْ لأَهْلِهَا : لاَ تُحَدِّثُوا أَبَا طَلْحَةَ بابْنِهِ حَتَّى أَكُونَ أَنَا أُحَدِّثُهُ، فَجَاءَ فَقَرَّبَتْ إِلَيْه عَشَاءً فَأَكَلَ وَشَرِبَ، ثُمَّ تَصَنَّعَتْ لَهُ أَحْسَنَ مَا كَانَتْ تَصَنَّعُ قَبْلَ ذلِكَ، فَوَقَعَ بِهَا . فَلَمَّا أَنْ رَأَتْ أَنَّهُ قَدْ شَبِعَ وأَصَابَ مِنْهَا، قَالَتْ : يَا أَبَا طَلْحَةَ، أَرَأَيتَ لو أنَّ قَوماً أعارُوا عَارِيَتَهُمْ أَهْلَ بَيتٍ فَطَلَبُوا عَارِيَتَهُمْ، أَلَهُمْ أن يَمْنَعُوهُمْ ؟ قَالَ : لا، فَقَالَتْ : فَاحْتَسِبْ ابْنَكَ، قَالَ: فَغَضِبَ، ثُمَّ قَالَ : تَرَكْتِني حَتَّى إِذَا تَلطَّخْتُ، ثُمَّ أخْبَرتِني بِابْنِي؟! فانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى رسولَ الله ﷺ فَأخْبَرَهُ بِمَا كَانَ فَقَالَ رسولُ الله ﷺ: «بَارَكَ اللهُ في لَيْلَتِكُمَا»، قَالَ : فَحَمَلَتْ . قَالَ : وَكانَ رسولُ الله ﷺ في سَفَرٍ وَهيَ مَعَهُ، وَكَانَ رسولُ الله ﷺ إِذَا أَتَى المَدِينَةَ مِنْ سَفَرٍ لاَ يَطْرُقُهَا طُرُوقاً فَدَنَوا مِنَ المَدِينَة، فَضَرَبَهَا المَخَاضُ، فَاحْتَبَسَ عَلَيْهَا أَبُو طَلْحَةَ، وانْطَلَقَ رسولُ الله ﷺ . قَالَ : يَقُولَ أَبُو طَلْحَةَ : إنَّكَ لَتَعْلَمُ يَا رَبِّ أَنَّهُ يُعْجِبُنِي أنْ أخْرُجَ مَعَ رسولِ الله ﷺ إِذَا خَرَجَ وَأَدْخُلَ مَعَهُ إِذَا دَخَلَ وَقَدِ احْتَبَسْتُ بِمَا تَرَى، تَقُولُ أُمُّ سُلَيْمٍ : يَا أَبَا طَلْحَةَ، مَا أَجِدُ الَّذِي كُنْتُ أجدُ انْطَلِقْ، فَانْطَلَقْنَا وَضَرَبَهَا المَخَاضُ حِينَ قَدِمَا فَوَلدَت غُلامَاً. فَقَالَتْ لِي أمِّي : يَا أنَسُ، لا يُرْضِعْهُ أحَدٌ حَتَّى تَغْدُو بِهِ عَلَى رسولِ الله ﷺ، فَلَمَّا أصْبَحَ احْتَمَلْتُهُ فَانْطَلَقْتُ بِهِ إِلَى رسولِ الله ﷺ ..وَذَكَرَ تَمَامَ الحَدِيثِ
২০/৪৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবূ ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এক ছেলে অসুস্থ ছিল। আবূ ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন কোন কাজে বাইরে চলে গেলেন তখন ছেলেটি মারা গেল। যখন তিনি বাড়ি ফিরে এলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘আমার ছেলে কেমন আছে?’ ছেলেটির মা উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘সে পূর্বের চেয়ে আরামে আছে।’ অতঃপর তিনি তাঁর সামনে রাতের খাবার হাজির করলেন। তিনি তা খেলেন। অতঃপর তার সঙ্গে যৌন-মিলন করলেন। আবূ ত্বালহা যখন এসব থেকে অবকাশপ্রাপ্ত হলেন, তখন স্ত্রী বললেন যে, ‘(আপনার বাইরে চলে যাওয়ার পর শিশুটি মারা গেছে।) সুতরাং শিশুটিকে এখন দাফন করুন।’ সকাল হলে আবূ ত্বালহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন যে, ‘‘তোমরা কি আজ রাতে মিলন করেছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি এ দুজনের জন্য বরকত দাও?’’ অতএব (তাঁর দো‘আর ফলে নির্দিষ্ট সময়ে উম্মে সুলাইম) একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। (আনাস বলেন,) আমাকে আবূ ত্বালহা বললেন, ‘তুমি একে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে নিয়ে যাও।’ আর তার সঙ্গে কিছু খেজুরও পাঠালেন। তিনি বললেন, ‘তার সঙ্গে কি কিছু আছে?’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘জী হ্যাঁ! কিছু খেজুর আছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিলেন এবং তা চিবালেন। অতঃপর তাঁর মুখ থেকে বের করে শিশুটির মুখে রেখে দিলেন। আর তার নাম ‘আব্দুল্লাহ’ রাখলেন। (বুখারী-মুসলিম)
বুখারীর আর এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উয়াইনাহ বলেন যে, জনৈক আনসারী বলেছেন, ‘আমি এই আব্দুল্লাহর নয়টি ছেলে দেখেছি, তারা সকলেই কুরআনের হাফেয ছিলেন।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, আবূ ত্বালহার একটি ছেলে, যে উম্মে সুলাইমের গর্ভ থেকে হয়েছিল, সে মারা গেল। সুতরাং তিনি (উম্মে সুলাইম) তাঁর বাড়ির লোককে বললেন, ‘তোমরা আবূ ত্বালহাকে তাঁর পুত্রের ব্যাপারে কিছু বলো না। আমি স্বয়ং তাঁকে এ কথা বলব।’ সুতরাং তিনি এলেন এবং (স্ত্রী) তাঁর সামনে রাতের খাবার রাখলেন। তিনি পানাহার করলেন। এ দিকে স্ত্রী আগের তুলনায় বেশী সাজসজ্জা করে তাঁর কাছে এলেন এবং তিনি তাঁর সঙ্গে মিলন করলেন। অতঃপর তিনি যখন দেখলেন যে, তিনি (স্বামী) খুবই পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং যৌন-সম্ভোগ করে নিয়েছেন, তখন বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আচ্ছা আপনি বলুন! যদি কোন সম্প্রদায় কোন পরিবারকে কোন জিনিস (সাময়িকভাবে) ধার দেয়, অতঃপর তারা তাদের ধার দেওয়া জিনিস ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে কি তাদের জন্য তা না দেওয়ার অধিকার আছে?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘না।’ অতঃপর স্ত্রী বললেন, ‘আপনি নিজ পুত্রের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে প্রতিদান পাওয়ার আশা রাখুন। (অর্থাৎ আপনার পুত্রও আল্লাহর দেওয়া আমানত ছিল, তিনি তাঁর আমানত ফিরিয়ে নিয়েছেন।)’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, (এ কথা শুনে) তিনি রাগান্বিত হলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি আমাকে কিছু না বলে এমনি ছেড়ে রাখলে, অবশেষে আমি সহবাস করে যখন অপবিত্র হয়ে গেলাম, তখন তুমি আমার ছেলের মৃত্যুর সংবাদ দিলে!’ এরপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হয়ে যা কিছু ঘটেছে তা বর্ণনা করলেন। তা শুনে তিনি দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! তাদের দু’জনের জন্য এই রাতে বরকত দাও।’ সুতরাং (এই দো‘আর ফলে) তিনি গর্ভবতী হলেন।
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সফরে ছিলেন। উম্মে সুলাইম ও (তাঁর স্বামী আবূ ত্বালহা) তাঁর সঙ্গে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল যে, যখন তিনি সফর থেকে মদীনায় আসতেন তখন তিনি রাতে আসতেন না। যখন এই কাফেলা মদীনার নিকটবর্তী হল, তখন উম্মে সুলাইমের প্রসব-বেদনা উঠল। সুতরাং আবূ ত্বালহা তাঁর খিদমতের জন্য থেমে গেলেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনায়) চলে গেলেন।’ আনাস বলেন, ‘আবূ ত্বালহা বললেন, ‘‘হে প্রভু! তুমি জান যে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে বাইরে যান, তখন আমি তাঁর সঙ্গে যেতে ভালবাসি এবং তিনি মদীনায় প্রবেশ করেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে প্রবেশ করতে ভালবাসি এবং তুমি দেখছ যে, (আমার স্ত্রীর) জন্য আমি থেমে গেলাম।’’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হে আবূ ত্বালহা! আমি পূর্বে যে বেদনা অনুভব করছিলাম এখন তা অনুভব করছি না, তাই চলুন।’ সুতরাং আমরা সেখান থেকে চলতে আরম্ভ করলাম। যখন তাঁরা দু’জনে মদীনা পৌঁছলেন, তখন আবার প্রসব বেদনা শুরু হল। অবশেষে তিনি একটি পুত্র সন্তান প্রসব করলেন। আমার মা আমাকে বললেন, ‘যে পর্যন্ত তুমি একে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে না নিয়ে যাবে, সে পর্যন্ত কেউ যেন একে দুধ পান না করায়।’ ফলে আমি সকাল হতেই তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমত নিয়ে গেলাম। অতঃপর আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাকী হাদীস বর্ণনা করলেন।
21/46 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أنّ رَسولَ الله ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ الشَّدِيدُ بالصُّرَعَةِ، إنَّمَا الشَدِيدُ الَّذِي يَملكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الغَضَبِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২১/৪৬। আবূ হুরাইরাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(প্রকৃত) বলবান সে নয়, যে কুস্তিতে (অপরকে পরাজিত করে)। প্রকৃত বলবান (কুস্তিগীর) তো সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে কাবুতে রাখতে পারে।’’
22/47 وعن سُلَيْمَانَ بنِ صُرَدٍ رضي الله عنه، قَالَ : كُنْتُ جالِساً مَعَ النَّبيّ ﷺ، وَرَجُلانِ يَسْتَبَّانِ، وَأَحَدُهُمَا قدِ احْمَرَّ وَجْهُهُ، وانْتَفَخَتْ أوْدَاجُهُ، فَقَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: «إنِّي لأَعْلَمُ كَلِمَةً لَوْ قَالَهَا لَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ، لَوْ قَالَ : أعُوذ باللهِ منَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ، ذَهَبَ منْهُ مَا يَجِدُ».فَقَالُوا لَهُ : إنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «تَعَوّذْ باللهِ مِنَ الشَّيطَانِ الرَّجِيمِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২২/৪৭। সুলাইমান ইবনে সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে বসে ছিলাম। এমতাবস্থায় দু’জন লোক একে অপরকে গালি দিচ্ছিল। তার মধ্যে একজনের চেহারা (ক্রোধের চোটে) লালবর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তার শিরাগুলো ফুলে উঠেছিল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি এমন এক বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তাহলে তার ক্রোধ দূরীভূত হবে। যদি সে বলে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম’ (অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইছি), তাহলে তার উত্তেজনা ও ক্রোধ সমাপ্ত হবে।’’ লোকেরা তাকে বলল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাও (অর্থাৎ উপরোক্ত বাক্যটি পড়)।’
23/48 وَعَن مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه : أنَّ النَّبيَّ ﷺ قَالَ: «مَنْ كَظَمَ غَيظاً، وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أنْ يُنْفِذَهُ، دَعَاهُ اللهُ سُبحَانَهُ وَتَعَالى عَلَى رُؤُوسِ الخَلائِقِ يَومَ القِيامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنَ الحُورِ العِينِ مَا شَاءَ». رواه أَبو داود والترمذي، وَقالَ : «حديث حسن»
২৩/৪৮। মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ক্রোধ সংবরণ করবে অথচ সে তা বাস্তবায়িত করার ক্ষমতা রাখে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে ডেকে এখতিয়ার দিবেন যে, সে যে কোন হুর নিজের জন্য পছন্দ করে নিক।’’
24/49 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِي ﷺ : أَوصِني . قَالَ: «لا تَغْضَبْ» فَرَدَّدَ مِراراً، قَالَ: « لاَ تَغْضَبْ». رواه البخاري
২৪/৪৯। আবূ হুরাইরাহ থেকে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে আবেদন জানাল যে, আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ লোকটি বার বার এই আবেদন জানাল। তিনি (প্রত্যেক বারেই) তাকে এই অসিয়ত করলেন যে, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’
25/50 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَا يَزَالُ البَلاَءُ بالمُؤمِنِ وَالمُؤْمِنَةِ في نفسِهِ ووَلَدِهِ وَمَالِهِ حَتَّى يَلْقَى الله تَعَالَى وَمَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
২৫/৫০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিন পুরুষ ও নারীর জান, সন্তান-সন্ততি ও তার ধনে (বিপদ-আপদ দ্বারা) পরীক্ষা হতে থাকে, পরিশেষে সে আল্লাহ তা‘আলার সঙ্গে নিষ্পাপ হয়ে সাক্ষাৎ করবে।’’
26/51 وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ، فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أخِيهِ الحُرِّ بنِ قَيسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمَرُ رضي الله عنه، وَكَانَ القُرَّاءُ أصْحَابَ مَجْلِس عُمَرَ رضي الله عنه وَمُشاوَرَتِهِ كُهُولاً كانُوا أَوْ شُبَّاناً، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لابْنِ أخيهِ : يَا ابْنَ أخِي، لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأمِيرِ فَاسْتَأذِنْ لِي عَلَيهِ، فاسْتَأذَن فَأذِنَ لَهُ عُمَرُ. فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: هِي يَا ابنَ الخَطَّابِ، فَواللهِ مَا تُعْطِينَا الْجَزْلَ وَلا تَحْكُمُ فِينَا بالعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ رضي الله عنه حَتَّى هَمَّ أنْ يُوقِعَ بِهِ. فَقَالَ لَهُ الحُرُّ : يَا أميرَ المُؤْمِنينَ، إنَّ الله تَعَالَى قَالَ لِنَبيِّهِ ﷺ: ﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩] وَإنَّ هَذَا مِنَ الجَاهِلِينَ، واللهِ مَا جَاوَزَهاَ عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا، وكَانَ وَقَّافاً عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى . رواه البخاري
২৬/৫১। ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন যে, উয়াইনাহ ইবনে হিসন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনে কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই (হুর্র) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর নিকটে রাখতেন। আর কুরআন বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সভাষদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)কে বললেন, ‘হে ইবনে খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করেন না!’ (এ কথা শুনে) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাগান্বিত হলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, ‘‘তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।’’ (সূরা আল আ’রাফ ১৯৮ আয়াত) আর এ এক মূর্খ।’ আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) সত্বর থেমে যেতেন।
27/52 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أن رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «إنَّهَا سَتَكونُ بَعْدِي أثَرَةٌ وأُمُورٌ تُنْكِرُونَها» قَالُوا : يَا رَسُول الله، فَمَّا تَأْمُرُنا ؟ قَالَ : «تُؤَدُّونَ الْحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسأَلُونَ الله الَّذِي لَكُمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২৭/৫২। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পরে (শাসকগোষ্ঠী দ্বারা অবৈধভাবে) প্রাধান্য দেওয়ার কাজ হবে এবং এমন অনেক কাজ হবে যেগুলোকে তোমরা মন্দ জানবে।’’ সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (সেই অবস্থায়) আমাদেরকে কী আদেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘যে অধিকার আদায় করার দায়িত্ব তোমাদের আছে, তা তোমরা আদায় করবে এবং তোমাদের যে অধিকার তা তোমরা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে।’’
28/53 وَعَنْ أَبِي يَحْيَى أُسَيْد بن حُضَير رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً مِنَ الأنْصارِ، قَالَ : يَا رَسُولَ الله، ألاَ تَسْتَعْمِلُني كَمَا اسْتَعْمَلْتَ فُلاناً، فَقَالَ: «إِنَّكُمْ سَتَلْقَونَ بَعْدِي أَثَرَةً فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوني عَلَى الحَوْضِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২৮/৫৩। আবূ ইয়াহইয়্যা উসাইদ ইবনে হুদাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একজন আনসারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে কোনো সরকারী পদ নিয়োগ দেবেন, যেমন অমুককে দিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমার (মৃত্যুর) পর (অবৈধভাবে) অগ্রাধিকার দেওয়ার কাজ দেখবে! সুতরাং ধৈর্য ধারণ করবে; যে অবধি তোমরা হাওযের কাছে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ না করবে।’’
২৯/৫৪। আবূ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, শত্রুর সাথে মোকাবেলার কোন এক দিনে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা করলেন (অর্থাৎ যুদ্ধ করতে বিলম্ব করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে গেল, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ (যুদ্ধ) কামনা করো না এবং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। কিন্তু যখন শত্রুর সামনা-সামনি হয়ে যাবে, তখন তোমরা দৃঢ়তার সাথে যুদ্ধ কর! আর জেনে রেখো যে, জান্নাত আছে তরবারির ছায়ার নীচে।’’ অতঃপর তিনি দো‘আ করে বললেন, ‘‘হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘ সঞ্চালনকারী এবং শত্রুসকলকে পরাজিতকারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত কর এবং তাদের মুকাবিলায় আমাদেরকে সাহায্য কর।’’
4- بَابُ الصِّدْقِ
পরিচ্ছেদ - ৪ : সত্যবাদিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَكُونُواْ مَعَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١١٩ ﴾ [التوبة: ١١٩]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।” (সূরা তাওবাহ ১১৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱلصَّٰدِقِينَ وَٱلصَّٰدِقَٰتِ ﴾ [الاحزاب: ٣٥]
অর্থাৎ “---সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদিনী নারী ---এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَلَوۡ صَدَقُواْ ٱللَّهَ لَكَانَ خَيۡرٗا لَّهُمۡ ﴾ [محمد: ٢١]
অর্থাৎ “সুতরাং যদি তারা আল্লাহর সাথে সত্য বলত, তাহলে তাদের জন্য এটা মঙ্গলজনক হত।” (সূরা মুহাম্মাদ ২১ আয়াত)
এ বিষয়ে উল্লেখনীয় হাদীসসমূহ:
1/55 عَنِ ابنِ مَسْعُودٍ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ الصِّدقَ يَهْدِي إِلَى البرِّ، وإنَّ البر يَهدِي إِلَى الجَنَّةِ، وإنَّ الرَّجُلَ لَيَصدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيقاً . وَإِنَّ الكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الفُجُورِ، وَإِنَّ الفُجُورَ يَهدِي إِلَى النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَكْذِبُ حَتَّى يُكتَبَ عِنْدَ الله كَذَّاباً» مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৫৫। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় সত্য পুণ্যের পথ দেখায় এবং পুণ্য জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (অবিরত) সত্য বলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত আল্লাহর কাছে তাকে খুব সত্যবাদী বলে লিখা হয়। পক্ষান্তরে মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। একজন মানুষ (সর্বদা) মিথ্যা বলতে থাকে, শেষ অবধি আল্লাহর নিকটে তাকে মহা মিথ্যাবাদী বলে লিপিবদ্ধ করা হয়।’’
2/56 عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ الحَسَنِ بنِ عَليِّ بنِ أبي طَالِبٍ رَضِيَ الله عَنهُما، قَالَ : حَفظْتُ مِنْ رَسُول الله ﷺ: «دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ ؛ فإنَّ الصِّدقَ طُمَأنِينَةٌ، وَالكَذِبَ رِيبَةٌ»رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث صحيح»
২/৫৬। আবূ মুহাম্মাদ হাসান ইবনে আলী ইবনে আবী ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এই শব্দগুলি স্মরণ রেখেছি যে, ‘‘তুমি ঐ জিনিস পরিত্যাগ কর, যে জিনিস তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর যাতে তোমার সন্দেহ নেই। কেননা, সত্য প্রশান্তির কারণ এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণ।’’
3/57 عَنْ أَبِي سفيانَ صَخرِ بنِ حربٍ رضي الله عنه في حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ في قِصَّةِ هِرَقْلَ، قَالَ هِرَقْلُ : فَمَاذَا يَأَمُرُكُمْ - يعني : النَّبيّ ﷺ قَالَ أبو سفيانَ : قُلْتُ : يقولُ: «اعْبُدُوا اللهَ وَحدَهُ لا تُشْرِكوُا بِهِ شَيئاً، وَاتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، ويَأْمُرُنَا بالصَلاةِ، وَالصِّدْقِ، والعَفَافِ، وَالصِّلَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৫৭। আবূ সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করেন যাতে (রোমের বাদশাহ) হিরাক্লিয়াসের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসা করলেন (তখন তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি) ‘তিনি---অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম---তোমাদেরকে কোন্ কাজের আদেশ করছেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলছেন যে, ‘‘তোমরা মাত্র এক আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার করো না এবং ঐসব কথা পরিহার কর, যা তোমাদের বাপ-দাদারা বলত (এবং করত)।’’ আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়া, সত্য কথা বলা, চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষা করা এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখার আদেশ দেন।’
4/58 عَنْ أَبِي ثَابِتٍ، وَقِيلَ: أبي سَعِيدٍ، وَقِيلَ : أبي الوليد، سَهْلِ بن حُنَيْفٍ وَهُوَ بدريٌّ رضي الله عنه : أنَّ النَّبيّ ﷺ قَالَ: «مَنْ سَأَلَ الله تَعَالَى الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ وَإِنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ». رواه مسلم
৪/৫৮। আবূ সাবেত, মতান্তরে আবূ সাঈদ বা আবুল অলীদ সাহ্ল ইবনে হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (আর তিনি বাদরী সাহাবী ছিলেন) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সত্য অন্তর নিয়ে আল্লাহর নিকট শাহাদত প্রার্থনা করবে, তাকে আল্লাহ তা‘আলা শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছাবেন; যদিও তার মৃত্যু নিজ বিছানায় হয়।’’
5/59 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «غَزَا نبيٌّ مِنَ الأنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلاَمُهُ عَلَيْهمْ فَقَالَ لِقَومهِ : لا يَتْبَعَنِّي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأةٍ وَهُوَ يُريدُ أنْ يَبْنِي بِهَا وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا، وَلا أحَدٌ بَنَى بُيُوتاً لَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا، وَلا أحَدٌ اشْتَرَى غَنَماً أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ أَوْلادَها. فَغَزا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاةَ العَصْرِ أَوْ قَريباً مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ لِلشَّمْسِ : إِنَّكِ مَأمُورَةٌ وَأنَا مَأمُورٌ، اَللهم احْبِسْهَا عَلَيْنَا، فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَيهِ، فَجَمَعَ الغَنَائِمَ فَجَاءتْ - يعني النَّارَ- لِتَأكُلَهَا فَلَمْ تَطعَمْها، فَقَالَ : إنَّ فِيكُمْ غُلُولاً، فَلْيُبايعْنِي مِنْ كُلِّ قَبيلةٍ رَجُلٌ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ فَقَالَ : فِيكُمُ الغُلُولُ فَلْتُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلَينِ أَوْ ثَلاَثَةٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ : فِيكُمُ الْغُلُولُ، فَجَاؤُوا بِرَأْسٍ مِثلِ رَأسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ، فَوَضَعَهَا فَجاءت النَّارُ فَأكَلَتْها . فَلَمْ تَحلَّ الغَنَائِمُ لأَحَدٍ قَبْلَنَا، ثُمَّ أحَلَّ الله لَنَا الغَنَائِمَ لَمَّا رَأَى ضَعْفَنا وَعَجْزَنَا فَأحَلَّهَا لَنَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৫৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নবীদের মধ্যে কোনো এক নবী জিহাদের জন্য বের হওয়ার ইচ্ছা করলেন। সুতরাং তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, ‘আমার সঙ্গে যেন ঐ ব্যক্তি না যায়, যে নতুন বিবাহ করেছে এবং সে তার সাথে বাসর করার কামনা রাখে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত সে তা করেনি। আর সেও নয়, যে ঘর নির্মাণ করেছে; কিন্তু এখনো পর্যন্ত ছাদ ঢালেনি। আর সেও নয়, যে গর্ভবতী ভেড়া-ছাগল কিম্বা উটনী কিনেছে এবং সে তাদের বাচ্চা হওয়ার অপেক্ষায় আছে।’ অতঃপর সেই নবী জিহাদের জন্য বেরিয়ে পড়লেন। তারপর তিনি আসরের নামাযের সময় অথবা ওর নিকটবর্তী সময়ে ঐ গ্রামে (যেখানে জিহাদ করবেন সেখানে) পৌঁছলেন। অতঃপর তিনি সূর্যকে (সম্বোধন ক’রে) বললেন, ‘তুমিও (আল্লাহর) আজ্ঞাবহ এবং আমিও (তাঁর) আজ্ঞাবহ। হে আল্লাহ! একে তুমি আটকে দাও (অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল বের না হওয়া পর্যন্ত সূর্য যেন না ডোবে)।’ বস্তুতঃ সূর্যকে আটকে দেওয়া হল। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা (ঐ জনপদটিকে) তাদের হাতে জয় করালেন। অতঃপর তিনি গনীমতের মাল জমা করলেন। তারপর তা গ্রাস করার জন্য (আসমান থেকে) আগুন এল; কিন্তু সে তা খেল না (ভষ্ম করল না)। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে খিয়ানত আছে (অর্থাৎ তোমাদের কেউ গনীমতের মাল আত্মসাৎ করেছে)। সুতরাং প্রত্যেক গোত্রের মধ্য হতে একজন আমার হাতে ‘বায়আত’ করুক।’ অতঃপর (বায়আত করতে করতে) একজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে। সুতরাং তোমার গোত্রের লোক আমার হাতে ‘বায়আত’ করুক।’ সুতরাং দুই অথবা তিনজনের হাত তাঁর হাতের সঙ্গে লেগে গেল। তিনি বললেন যে, ‘তোমাদের মধ্যে খিয়ানত রয়েছে।’ সুতরাং তারা গাভীর মাথার মত একটি সোনার মাথা নিয়ে এল এবং তিনি তা গনীমতের সাথে রেখে দিলেন। তারপর আগুন এসে তা খেয়ে ফেলল। (শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে,) আমাদের পূর্বে কারো জন্য গণীমতের মাল হালাল ছিল না। পরে আল্লাহ তা‘আলা যখন আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা দেখলেন, তখন আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।’’
6/60 عَنْ أَبِي خَالِدٍ حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺ: «البَيِّعَانِ بالخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا، فَإنْ صَدَقا وَبيَّنَا بُوركَ لَهُمَا في بيعِهمَا، وإنْ كَتَمَا وَكَذَبَا مُحِقَتْ بركَةُ بَيعِهِما». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৬০। আবূ খালেদ হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত (চুক্তি পাকা বা বাতিল করার) স্বাধীনতা রয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা পৃথক (স্থানান্তরিত) না হবে। আর যদি তারা সত্য কথা বলে এবং (পণ্যদ্রব্যের প্রকৃতি) খুলে বলে, (দোষ-ত্রুটি গোপন না রাখে,) তাহলে তাদের কেনা-বেচার মধ্যে বরকত দেওয়া হয়। আর তারা যদি (দোষ-ত্রুটি) গোপন রাখে এবং মিথ্যা বলে, তাহলে তাদের দু’জনের কেনা-বেচার বরকত রহিত করা হয়।’’
5- بَابُ الْمُرَاقَبَةِ
পরিচ্ছেদ - ৫ : মুরাক্বাবাহ্ (আল্লাহর ধ্যান)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلَّذِي يَرَىٰكَ حِينَ تَقُومُ ٢١٨ وَتَقَلُّبَكَ فِي ٱلسَّٰجِدِينَ ٢١٩ ﴾ [الشعراء: ٢١٨، ٢١٩]
অর্থাৎ “যিনি তোমাকে দেখেন; যখন তুমি দন্ডায়মান হও (নামাযে) এবং তোমাকে দেখেন সিজদাকারীদের সাথে উঠতে-বসতে।” (সূরা শু‘আরা ২১৮-২১৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَهُوَ مَعَكُمۡ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡۚ ﴾ [الحديد: ٤]
অর্থাৎ “তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।” (সূরা হাদীদ ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَخۡفَىٰ عَلَيۡهِ شَيۡءٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِي ٱلسَّمَآءِ ٥ ﴾ [ال عمران: ٥]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে যমীন ও আকাশের কোনো কিছুই গোপন নেই।”(সূরা আলে ইমরান ৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلۡمِرۡصَادِ ١٤ ﴾ [الفجر: ١٤]
অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক সময়ের প্রতীক্ষায় থেকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা ফাজ্র ১৪ আয়াত)
তাঁর অমোঘ বাণী,
﴿ يَعۡلَمُ خَآئِنَةَ ٱلۡأَعۡيُنِ وَمَا تُخۡفِي ٱلصُّدُورُ ١٩ ﴾ [غافر: ١٩]
অর্থাৎ “চক্ষুর চোরা চাহনি ও অন্তরে যা গোপন আছে সে সম্বন্ধে তিনি অবহিত।”
(সূরা মু’মিন ১৯ আয়াত)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। উক্ত মর্মবোধক হাদীসসমূহ:
مسلم
১/৬১। উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমরা একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বসে ছিলাম। হঠাৎ একটি লোক আমাদের কাছে এল। তার পরনে ধবধবে সাদা কাপড় এবং তার চুল কুচকুচে কাল ছিল। (বাহ্যতঃ) সফরের কোন চিহ্ন তার উপর দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনছিল না। শেষ পর্যন্ত সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসল; তার দুই হাঁটু তাঁর (নবীর) হাঁটুর সঙ্গে মিলিয়ে দিল এবং তার হাতের দুই করতলকে নিজ জানুর উপরে রেখে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ইসলাম হল এই যে, তুমি সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই, আর মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রমযানের রোযা রাখবে এবং কা‘বা ঘরের হজ্জ্ব করবে; যদি সেখানে যাবার সঙ্গতি রাখ।’’ সে বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন।’ আমরা তার কথায় আশ্চর্য হলাম যে, সে জিজ্ঞাসাও করছে এবং ঠিক বলে সমর্থনও করছে! সে (আবার) বলল, ‘আপনি আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফিরিশ্তাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ, তাঁর রাসূলসমূহ, পরকাল এবং ভাগ্যের ভাল-মন্দের প্রতি বিশ্বাস রাখবে।’’ সে বলল, ‘আপনি যথার্থ বলেছেন।’ সে (তৃতীয়) প্রশ্ন করল যে, ‘আমাকে ইহসান সম্পর্কে বলুন! তিনি বললেন, ‘‘ইহসান হল এই যে, তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে; যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে তিনি কিন্তু তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’’ সে (পুনরায়) বলল, ‘আপনি আমাকে কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বলুন (সেদিন কবে সংঘটিত হবে?)’ তিনি বললেন, ‘‘এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত (ব্যক্তি) জিজ্ঞাসাকারীর চেয়ে বেশী অবহিত নয়। (অর্থাৎ কিয়ামতের নির্দিষ্ট দিন আমাদের দু’জনেরই অজানা)।’’ সে বলল, ‘(তাহলে) আপনি ওর নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে আমাকে বলে দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘(ওর কিছু নিদর্শন হল এই যে,) কৃতদাসী তার মনিবকে প্রসব করবে (অর্থাৎ যুদ্ধবন্দী এত বেশী হবে যে, যুদ্ধ বন্দিনী ক্রীতদাসী তার মনিবের কন্যা প্রসব করবে)। আর তুমি নগ্নপদ, বস্ত্রহীন ও দরিদ্র ছাগলের রাখালদেরকে অট্টালিকা নির্মাণের কাজে পরস্পর গর্ব করতে দেখবে।’’ অতঃপর সে (আগন্তুক প্রশ্নকারী) চলে গেল। (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) ‘আমি অনেকক্ষণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে থাকলাম।’ পুনরায় তিনি বললেন ‘‘হে উমার! তুমি, কি জান যে, প্রশ্নকারী কে ছিল?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ইনি জিব্রাঈল ছিলেন, তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন শিখানোর জন্য এসেছিলেন।’’
2/62 عَنْ أَبِي ذَرٍّ جُنْدُبِ بنِ جُنادَةَ وأبي عَبدِ الرحمانِ مُعاذِ بنِ جَبَلٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَن رَّسُولِ الله ﷺ قَالَ: «اتَّقِ الله حَيْثُمَا كُنْتَ وَأَتْبعِ السَّيِّئَةَ الحَسَنَةَ تَمْحُهَا، وَخَالِقِ النَّاسَ بِخُلُقٍ حَسَنٍ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»
২/৬২। আবূ যার্র জুন্দুব ইবন জুনাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও মু‘আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং পাপের পরে পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর।’’
3/63 عَن ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : كُنتُ خَلفَ النَّبيّ ﷺ يَوماً، فَقَالَ: «يَا غُلامُ، إنِّي أعلّمُكَ كَلِمَاتٍ : احْفَظِ اللهَ يَحْفَظْكَ، احْفَظِ اللهَ تَجِدْهُ تُجَاهَكَ، إِذَا سَألْتَ فَاسأَلِ الله، وإِذَا اسْتَعَنْتَ فَاسْتَعِنْ باللهِ، وَاعْلَمْ : أنَّ الأُمَّةَ لَوْ اجْتَمَعَتْ عَلَى أنْ يَنْفَعُوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَنْفَعُوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبهُ اللهُ لَكَ، وَإِن اجتَمَعُوا عَلَى أنْ يَضُرُّوكَ بِشَيءٍ لَمْ يَضُرُّوكَ إلاَّ بِشَيءٍ قَدْ كَتَبَهُ اللهُ عَلَيْكَ، رُفِعَتِ الأَقْلاَمُ وَجَفَّتِ الصُّحفُ». رواه الترمذي، وَقالَ : «حديث حسن صحيح»
وفي رواية غيرِ الترمذي: «احْفَظِ الله تَجِدْهُ أَمَامَكَ، تَعرَّفْ إِلَى اللهِ في الرَّخَاءِ يَعْرِفكَ في الشِّدَّةِ، وَاعْلَمْ : أنَّ مَا أَخْطَأكَ لَمْ يَكُنْ لِيُصِيبكَ، وَمَا أصَابَكَ لَمْ يَكُنْ لِيُخْطِئَكَ، وَاعْلَمْ : أنَّ النَّصْرَ مَعَ الصَّبْرِ، وَأَنَّ الفَرَجَ مَعَ الكَرْبِ، وَأَنَّ مَعَ العُسْرِ يُسْراً».
৩/৬৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি একদা (সওয়ারীর উপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে (বসে) ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! আমি তোমাকে কয়েকটি (গুরুত্বপূর্ণ কথা শিক্ষা দেব (তুমি সেগুলো স্মরণ রেখো)। তুমি আল্লাহর (বিধানসমূহের) রক্ষণাবেক্ষণ কর (তাহলে) আল্লাহও তোমার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। তুমি আল্লাহর (অধিকারসমূহ) স্মরণ রাখো, তাহলে তুমি তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। যখন তুমি চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাও। আর যখন তুমি প্রার্থনা করবে, তখন একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা কর। আর এ কথা জেনে রাখ যে, যদি সমগ্র উম্মত তোমার উপকার করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই উপকার করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি তোমার ক্ষতি করার জন্য একত্রিত হয়ে যায়, তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার (তাকদীরে) লিখে রেখেছেন। কলমসমূহ উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং খাতাসমূহ (তাকদীরের লিপি) শুকিয়ে গেছে।’’
তিরমিযী ব্যতীত অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘আল্লাহর (অধিকারসমূহের) খিয়াল রাখ, তাহলে তাঁকে তোমার সম্মুখে পাবে। সুখের সময় আল্লাহকে চেনো, তবে তিনি দুঃখ ও কষ্টের সময় তোমাকে চিনবেন। আর জেনে রাখ যে, তোমার ব্যাপারে যা ভুলে যাওয়া হয়েছে (অর্থাৎ যে সুখ-দুঃখ তোমার তাকদীরে নেই), তা তোমার নিকট পৌঁছবে না। আর যা তোমার নিকট পৌঁছবে, তাতে ভুল হবে না। আর জেনে রাখ যে, বিজয় বা সাহায্য আছে ধৈর্যের সাথে, মুক্তির উপায় আছে কষ্টের সাথে এবং কঠিনের সঙ্গে সহজ জড়িত আছে।’’
4/64 عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : إِنَّكُمْ لَتَعمَلُونَ أَعْمَالاً هِيَ أدَقُّ في أعيُنِكُمْ مِنَ الشَّعْرِ، كُنَّا نَعُدُّهَا عَلَى عَهْدِ رَسُول الله ﷺ مِنَ المُوبِقاتِ . رواه البخاري
৪/৬৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (তাঁর যুগের লোকদেরকে সম্বোধন ক’রে) বলেছেন যে, ‘তোমরা বহু এমন (পাপ) কাজ করছ, সেগুলো তোমাদের দৃষ্টিতে চুল থেকেও সূক্ষ্ম (নগণ্য)। কিন্তু আমরা সেগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে বিনাশকারী মহাপাপ বলে গণ্য করতাম।’
5/65 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ الله تَعَالَى يَغَارُ، وَغَيرَةُ الله تَعَالَى، أنْ يَأتِيَ المَرْءُ مَا حَرَّمَ الله عَلَيهِ».متفق عَلَيهِ
৫/৬৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আত্ম মর্যাদাবোধ করেন। আর আল্লাহর আত্ম মর্যাদা জেগে ওঠে তখন যখন কোনো মানুষ এমন কাজ করে ফেলে, যা তিনি তার উপর হারাম করেছেন।’’
6/66 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّه سَمِعَ النَّبيَّ ﷺ، يقُولُ: «إنَّ ثَلاثَةً مِنْ بَني إِسْرَائِيلَ : أبْرَصَ، وَأَقْرَعَ، وَأَعْمَى، أَرَادَ اللهُ أنْ يَبْتَليَهُمْ فَبَعَثَ إِليْهمْ مَلَكاً، فَأَتَى الأَبْرَصَ، فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ : لَوْنٌ حَسنٌ، وَجِلدٌ حَسَنٌ، وَيَذْهبُ عَنِّي الَّذِي قَدْ قَذِرَنِي النَّاسُ ؛ فَمَسَحَهُ فَذَهَبَ عَنْهُ قَذَرُهُ وَأُعْطِيَ لَوناً حَسنَاً . فَقَالَ : فَأيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليكَ؟ قَالَ : الإِبلُ - أَوْ قالَ : البَقَرُ شكَّ الرَّاوي - فَأُعطِيَ نَاقَةً عُشَرَاءَ، فَقَالَ : بَاركَ الله لَكَ فِيهَا. فَأَتَى الأَقْرَعَ، فَقَالَ: أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إلَيْكَ؟ قَالَ: شَعْرٌ حَسَنٌ، وَيَذْهَبُ عَنِّي هَذَا الَّذِي قَذِرَني النَّاسُ ؛ فَمَسَحَهُ فَذَهبَ عَنْهُ وأُعْطِيَ شَعراً حَسَناً . قالَ : فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : البَقَرُ، فَأُعْطِيَ بَقَرَةً حَامِلاً، وَقالَ : بَارَكَ الله لَكَ فِيهَا . فَأَتَى الأَعْمَى، فَقَالَ : أَيُّ شَيءٍ أَحَبُّ إِلَيْكَ ؟ قَالَ : أَنْ يَرُدَّ الله إِلَيَّ بَصَرِي فَأُبْصِرُ النَّاسَ؛ فَمَسَحَهُ فَرَدَّ اللهُ إِلَيْهِ بَصَرهُ. قَالَ: فَأَيُّ المَالِ أَحَبُّ إِليْكَ ؟ قَالَ : الغَنَمُ، فَأُعْطِيَ شَاةً والداً، فَأَنْتَجَ هذَانِ وَوَلَّدَ هَذَا، فَكانَ لِهذَا وَادٍ مِنَ الإِبلِ، وَلِهذَا وَادٍ مِنَ البَقَرِ، وَلِهَذَا وَادٍ مِنَ الغَنَمِ. ثُمَّ إنَّهُ أَتَى الأَبْرَصَ في صُورَتِهِ وَهَيئَتِهِ، فَقَالَ : رَجلٌ مِسْكينٌ قَدِ انقَطَعَتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَري فَلا بَلاغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ باللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسْأَلُكَ بِالَّذي أعْطَاكَ اللَّونَ الحَسَنَ، والجِلْدَ الحَسَنَ، وَالمَالَ، بَعِيراً أَتَبَلَّغُ بِهِ في سَفَري، فَقَالَ : الحُقُوقُ كثِيرةٌ . فَقَالَ : كأنِّي اعْرِفُكَ، أَلَمْ تَكُنْ أَبْرَصَ يَقْذَرُكَ النَّاسُ فَقِيراً فأعْطَاكَ اللهُ!؟ فَقَالَ : إِنَّمَا وَرِثْتُ هَذَا المالَ كَابِراً عَنْ كَابِرٍ، فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ الله إِلَى مَا كُنْتَ . وَأَتَى الأَقْرَعَ في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ لَهُ مِثْلَ مَا قَالَ لِهَذا، وَرَدَّ عَلَيهِ مِثْلَ مَا رَدَّ هَذَا، فَقَالَ : إنْ كُنْتَ كَاذِباً فَصَيَّرَكَ اللهُ إِلَى مَا كُنْتَ. وَأَتَى الأَعْمَى في صُورَتِهِ وَهَيْئَتِهِ، فَقَالَ : رَجُلٌ مِسْكينٌ وابنُ سَبيلٍ انْقَطَعتْ بِيَ الحِبَالُ في سَفَرِي، فَلا بَلاَغَ لِيَ اليَومَ إلاَّ بِاللهِ ثُمَّ بِكَ، أَسأَلُكَ بالَّذِي رَدَّ عَلَيْكَ بَصَركَ شَاةً أَتَبَلَّغُ بِهَا في سَفري؟ فَقَالَ : قَدْ كُنْتُ أعمَى فَرَدَّ اللهُ إِلَيَّ بَصَرِي فَخُذْ مَا شِئْتَ وَدَعْ مَا شِئْتَ فَوَاللهِ مَا أَجْهَدُكَ اليَومَ بِشَيءٍ أخَذْتَهُ للهِ - عز وجل. فَقَالَ : أمْسِكْ مالَكَ فِإنَّمَا ابْتُلِيتُمْ . فَقَدْ رضي الله عنك، وَسَخِطَ عَلَى صَاحِبَيكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৬৬। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘বানী ইস্রাঈলের মধ্যে তিন ব্যক্তি ছিল। একজন ধবল-কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত, দ্বিতীয়জন টেকো এবং তৃতীয়জন অন্ধ ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করলেন। ফলে তিনি তাদের কাছে একজন ফিরিশ্তা পাঠালেন। ফিরিশতা (প্রথমে) ধবল-কুষ্ঠ রোগীর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়মত বস্তু কি?’ সে বলল, ‘সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক। আর আমার নিকট থেকে এই রোগ দূরীভূত হোক---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার দেহে হাত ফিরালেন, যার ফলে (আল্লাহর আদেশে) তার ঘৃণিত রোগ দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর রং দেওয়া হল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম ধন কী?’ সে বলল, ‘উট অথবা গাভী।’ (এটি বর্ণনাকারীর সন্দেহ।) সুতরাং তাকে দশ মাসের গাভিন একটি উটনী দেওয়া হল। তারপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এতে বরকত (প্রাচুর্য) দান করুন।’
অতঃপর তিনি টেকোর কাছে এসে বললেন, ‘তোমার নিকট প্রিয়তম জিনিস কী?’ সে বলল, ‘সুন্দর কেশ এবং এই রোগ দূরীভূত হওয়া---যার জন্য মানুষ আমাকে ঘৃণা করছে।’ অতঃপর তিনি তার মাথায় হাত ফিরালেন, যার ফলে তার (সেই রোগ) দূর হয়ে গেল এবং তাকে সুন্দর কেশ দান করা হল। (অতঃপর) তিনি বললেন, ‘তোমার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় ধন কোন্টা?’ সে বলল, ‘গাভী।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন গাই দেওয়া হল এবং তিনি বললেন, ‘আল্লাহ এতে তোমার জন্য বরকত দান করুন।’
অতঃপর তিনি অন্ধের কাছে এলেন এবং বললেন, ‘তোমার নিকটে প্রিয়তম বস্তু কী?’ সে বলল, ‘এই যে, আল্লাহ তা‘আলা যেন আমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন যার দ্বারা আমি লোকেদেরকে দেখতে পাই।’ সুতরাং তিনি তার চোখে হাত ফিরালেন। ফলে আল্লাহ তাকে তার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। ফিরিশ্তা বললেন, ‘তুমি কোন্ ধন সবচেয়ে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘ছাগল।’ সুতরাং তাকে একটি গাভিন ছাগল দেওয়া হল।
অতঃপর ঐ দু’জনের (কুষ্ঠরোগী ও টেকোর) পশু (উটনী ও গাভীর) পাল বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং এই অন্ধেরও ছাগলটিও বাচ্চা প্রসব করল। ফলে এর এক উপত্যকা ভরতি উট, এর এক উপত্যকা ভরতি গরু এবং এর এক উপত্যকা ভরতি ছাগল হয়ে গেল।
পুনরায় ফিরিশ্তা (পরীক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁর পূর্বের চেহারা ও আকৃতিতে) কুষ্ঠরোগীর কাছে এলেন এবং বললেন, ‘আমি মিসকীন মানুষ, সফরে আমার সকল পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে সবদেশে পৌঁছনোর জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার কোন উপায় নেই। সেজন্য আমি ঐ সত্তার নামে তোমার কাছে একটি উট চাচ্ছি, যিনি তোমাকে সুন্দর রং ও সুন্দর ত্বক দান করেছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে উত্তর দিল যে, ‘(আমার দায়িত্বে আগে থেকেই) বহু অধিকার ও দাবি রয়েছে।’
(এ কথা শুনে) ফিরিশ্তা বললেন, ‘তোমাকে আমার চেনা মনে হচ্ছে। তুমি কি কুষ্ঠরোগী ছিলে না, লোকেরা তোমাকে ঘৃণা করত? তুমি কি দরিদ্র ছিলে না, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ধন প্রদান করেছেন?’ সে বলল, ‘এ ধন তো আমি পিতা ও পিতামহ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি।’ ফিরিশ্তা বললেন, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
অতঃপর তিনি তার পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে টেকোর কাছে এলেন এবং তাকেও সে কথা বললেন, যে কথা কুষ্ঠরোগীকে বলেছিলেন। আর টেকোও সেই জবাব দিল, যে জবাব কুষ্ঠরোগী দিয়েছিল। সে জন্য ফিরিশ্তা তাকেও বললেন যে, ‘যদি তুমি মিথ্যাবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তোমাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দিন!’
পুনরায় তিনি তাঁর পূর্বেকার আকার ও আকৃতিতে অন্ধের নিকট এসে বললেন যে, আমি একজন মিসকীন ও মুসাফির মানুষ, সফরের যাবতীয় পাথেয় শেষ হয়ে গেছে। ফলে সবদেশে পৌঁছার জন্য আল্লাহ অতঃপর তোমার সাহায্য ছাড়া আজ আমার আর কোন উপায় নেই। সুতরাং আমি তোমার নিকট সেই সত্তার নামে একটি ছাগল চাচ্ছি, যিনি তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছেন; যার দ্বারা আমি আমার এই সফরের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাই।’ সে বলল, ‘নিঃসন্দেহে আমি অন্ধ ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিলেন। (আর এই ছাগলও তাঁরই দান।) অতএব তুমি ছাগলের পাল থেকে যা ইচ্ছা নাও ও যা ইচ্ছা ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম! আজ তুমি আল্লাহ আয্যা অজাল্লার জন্য যা নেবে, সে ব্যাপারে আমি তোমাকে কোন কষ্ট বা বাধা দেব না।’ এ কথা শুনে ফিরিশ্তা বললেন, ‘তুমি তোমার মাল তোমার কাছে রাখ। নিঃসন্দেহে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হল (যাতে তুমি কৃতকার্য হলে)। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার প্রতি সন্তুষ্ট এবং তোমার সঙ্গীদ্বয়ের প্রতি অসন্তুষ্ট হলেন।’’
7/67 عَنْ أبِيْ يَعْلٰى شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ رضي الله عنه عَنْ الَّنَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «الكَيِّسُ مَنْ دَانَ نَفْسَهُ، وَعَمِلَ لِما بَعْدَ الْموْتِ، وَالْعَاجِزُ مَنْ أَتْبَعَ نَفْسَهُ هَواهَا، وتمَنّٰى عَلَى اللهِ الْأَمَانِيْ»رواه التِّرْمِذيُّ وقالَ حديثٌ حَسَنٌ
৭/৬৭। শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : সে ব্যক্তি জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন, যে তার নিজের আত্মপর্যালোচনা করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য (নেক) আমল করে। আর ঐ লোক দুর্বল যে স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, আবার আল্লাহর কাছে অবাস্তব আশা পোষণ করে।
8/68 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «مِنْ حُسْنِ إسْلامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لا يَعْنِيهِ» حديث حسن رواه الترمذي وغيرُه.
৮/৬৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য (অর্থাৎ তার উত্তম মুসলিম হওয়ার একটি চিহ্ন) হল অনর্থক (কথা ও কাজ) বর্জন করা।’’ (হাসান হাদীস, তিরমিযী প্রমুখ)
9/69 عَنْ عُمَرَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: «لَا يُسْأَلُ الرَّجُلُ فِيْمَ ضَرَبَ اِمْرَأَتَهُ»رواه أبو داود وغيرُه .
৯/৬৯। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন: “কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে কি জন্য প্রহার করেছে তা নিয়ে (যথাযথ কর্তৃপক্ষ ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে) প্রশ্ন করা যাবে না।” (কারণ এতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রাইভেসী লঙ্ঘন হয়) আবূ দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ এটি বর্ণনা করেছেন। আবূ দাউদ ও ইবনু মাজাহ।
6- بَابُ التَّقْوٰى
পরিচ্ছেদ - ৬ : আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতা
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ﴾ [ال عمران: ١٠٢]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় কর।” (সূরা আলে ইমরান ১০২ আয়াত)
উক্ত আয়াতে যথার্থভাবে ভয় করার ব্যাখ্যা রয়েছে এই আয়াতে;
তিনি বলেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ ﴾ [التغابن: ١٦]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর।” (সূরা তাগাবুন ১৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَقُولُواْ قَوۡلٗا سَدِيدٗا ٧٠ ﴾ [الاحزاب: ٧٠]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল।” (সূরা আহযাব ৭০ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ﴾ [الطلاق: ٢، ٣]
অর্থাৎ “আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে আল্লাহ তার নিস্কৃতির পথ করে দিবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন।” (সূরা ত্বালাক্ব ২-৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِن تَتَّقُواْ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّكُمۡ فُرۡقَانٗا وَيُكَفِّرۡ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۗ وَٱللَّهُ ذُو ٱلۡفَضۡلِ ٱلۡعَظِيمِ ٢٩ ﴾ [الانفال: ٢٩]
অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্যকারী শক্তি দেবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অতিশয় অনুগ্রহশীল।” (সূরা আনফাল ২৯ আয়াত)
আল্লাহভীতি, সংযমশীলতা ও তাক্বওয়া-পরহেযগারীর গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
১/৭০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রশ্ন করা হল যে, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তাদের মধ্যে যে সবচেয়ে আল্লাহ-ভীরু।’’ অতঃপর তাঁরা (সাহাবীরা) বললেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছি না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে ইউসুফ (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি), যিনি স্বয়ং আল্লাহর নবী, তাঁর পিতা নবী, পিতামহও নবী এবং প্রপিতামহও নবী ও আল্লাহর বন্ধু।’’ তাঁরা বললেন, ‘এটাও আমাদের প্রশ্ন নয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তোমরা কি আমাকে আরবের বংশাবলী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছ? (তবে শোনো!) তাদের মধ্যে যারা জাহেলী যুগে ভাল, তারা ইসলামেও ভাল; যদি দ্বীনী জ্ঞান রাখে।’’
2/71 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ: «إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرةٌ، وإنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا فَيَنْظُرَ كَيفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاء ؛ فإنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إسرائيلَ كَانَتْ في النِّسَاءِ»رواه مسلم
২/৭১। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দুনিয়া মধুর ও সবুজ (সুন্দর আকর্ষণীয়)। আর নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে এর প্রতিনিধি নিয়োজিত করে দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ করছ? অতএব তোমরা (যদি সফলকাম হতে চাও তাহলে) দুনিয়ার ধোঁকা থেকে বাঁচ এবং নারীর (ফিৎনা থেকে) বাঁচ। কারণ, বানী ঈস্রাইলের সর্বপ্রথম ফিৎনা নারীকে কেন্দ্র করেই হয়েছিল।’’
3/72 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أَسألُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى». رواه مسلم
৩/৭২। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অত্তুক্বা, অলআফা-ফা অলগিনা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সৎপথ, তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা ও অভাবশূন্যতা প্রার্থনা করছি।
4/73 عَنْ أَبِي طَرِيفٍ عَدِيِّ بنِ حَاتِمٍ الطَّائيِّ رضي الله عنه، قَالَ : سمعتُ رسولَ الله ﷺ، يقول: «مَنْ حَلَفَ عَلَى يَمِينٍ ثُمَّ رَأَى أتْقَى للهِ مِنْهَا فَليَأتِ التَّقْوَى». رواه مسلم
৪/৭৩। আবূ ত্বারীফ আদী ইবনে হাতেম ত্বাই রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (এ কথা) বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো বিষয়ের উপর কসম খাবে অতঃপর তার চেয়ে বেশী আল্লাহর তাকওয়ার বিষয় দেখবে, তার উচিত আল্লাহর তাকওয়ার বিষয় গ্রহণ করা।’’
5/74 عَنْ أَبِي أُمَامَةَ صُدَيّ بنِ عجلانَ الباهِلِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : سَمِعتُ رسولَ الله ﷺ يَخْطُبُ في حجةِ الوداعِ، فَقَالَ: «اتَّقُوا الله وَصلُّوا خَمْسَكُمْ، وَصُومُوا شَهْرَكُمْ، وَأَدُّوا زَكاةَ أَمْوَالِكُمْ، وَأَطِيعُوا أُمَرَاءَكُمْ تَدْخُلُوا جَنَّةَ رَبِّكُمْ» رواه الترمذي وَقالَ : «حديث حسن صحيح»
৫/৭৪। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি বিদায় হজ্জের অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাষণ দিতে শুনেছি, ‘‘তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরয) নামায পড়, তোমাদের রমযান মাসের রোযা রাখ, তোমাদের মালের যাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরীয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’
7- بَابُ الْيَقِيْنِ وَالتَّوَكُّلِ
পরিচ্ছেদ - ৭ : দৃঢ়-প্রত্যয় ও (আল্লাহর প্রতি) ভরসা
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَلَمَّا رَءَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلۡأَحۡزَابَ قَالُواْ هَٰذَا مَا وَعَدَنَا ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَصَدَقَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥۚ وَمَا زَادَهُمۡ إِلَّآ إِيمَٰنٗا وَتَسۡلِيمٗا ٢٢ ﴾ [الاحزاب: ٢٢]
অর্থাৎ “বিশ্বাসীরা যখন শত্রুবাহিনীকে দেখল তখন ওরা বলে উঠল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তো আমাদেরকে এই প্রতিশ্রুতিই দিয়েছেন এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্যই বলেছিলেন। এতে তো তাদের বিশ্বাস ও আনুগত্যই বৃদ্ধি পেল।” (সূরা আহযাব ২২ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ قَالَ لَهُمُ ٱلنَّاسُ إِنَّ ٱلنَّاسَ قَدۡ جَمَعُواْ لَكُمۡ فَٱخۡشَوۡهُمۡ فَزَادَهُمۡ إِيمَٰنٗا وَقَالُواْ حَسۡبُنَا ٱللَّهُ وَنِعۡمَ ٱلۡوَكِيلُ ١٧٣ فَٱنقَلَبُواْ بِنِعۡمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَضۡلٖ لَّمۡ يَمۡسَسۡهُمۡ سُوٓءٞ وَٱتَّبَعُواْ رِضۡوَٰنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ ذُو فَضۡلٍ عَظِيمٍ ١٧٤ ﴾ [ال عمران: ١٧٣، ١٧٤]
অর্থাৎ “যাদেরকে লোকেরা বলেছিল যে, তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু এ (কথা) তাদের বিশ্বাস দৃঢ়তর করেছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক। তারপর তারা আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহসহ ফিরে এসেছিল, কোন অনিষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেনি এবং আল্লাহ যাতে সন্তুষ্ট হন তারা তারই অনুসরণ করেছিল। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল।” (সূরা আলে ইমরান ১৭৩-১৭৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱلۡحَيِّ ٱلَّذِي لَا يَمُوتُ ﴾ [الفرقان: ٥٧]
অর্থাৎ “তুমি তাঁর উপর নির্ভর কর যিনি চিরঞ্জীব, যাঁর মৃত্যু নেই।” (সূরা ফুরক্বান ৫৮আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ﴾ [ابراهيم: ١١]
অর্থাৎ “মু’মিনদের উচিত, কেবল আল্লাহর উপরই নির্ভর করা।” (সূরা ইব্রাহীম ১১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَإِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِۚ ﴾ [ال عمران: ١٥٩]
অর্থাৎ “তুমি কোন সংকল্প গ্রহণ করলে আল্লাহর প্রতি নির্ভর কর। (নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর উপর নির্ভরশীলদেরকে ভালবাসেন।)” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)
আরো আল্লাহ বলেন,
﴿وَمَن يَتَوَكَّلۡ عَلَى ٱللَّهِ فَهُوَ حَسۡبُهُۥٓ﴾ [الطلاق: ٣]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করবে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট হবেন।” (সূরা ত্বালাক ৩ আয়াত)
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ ٱللَّهُ وَجِلَتۡ قُلُوبُهُمۡ وَإِذَا تُلِيَتۡ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتُهُۥ زَادَتۡهُمۡ إِيمَٰنٗا وَعَلَىٰ رَبِّهِمۡ يَتَوَكَّلُونَ ٢ ﴾ [الانفال: ٢]
অর্থাৎ “বিশ্বাসী (মু’মিন) তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করার সময় ভীত হয় এবং যখন তাঁর আয়াত তাদের নিকট পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের বিশ্বাস (ঈমান) বৃদ্ধি করে এবং তারা তাদের প্রতিপালকের উপরই ভরসা রাখে।”
একীন (দৃঢ়প্রত্যয়) ও তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপর ভরসা)র গুরুত্ব সম্বন্ধে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/75 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ الأُمَمُ، فَرَأيْتُ النَّبيَّ ومَعَهُ الرُّهَيطُ، وَالنَّبِيَّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالرَّجُلانِ، وَالنبيَّ لَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ إِذْ رُفِعَ لي سَوَادٌ عَظيمٌ فَظَنَنْتُ أَنَّهُمْ أُمَّتِي فقيلَ لِي : هَذَا مُوسَى وَقَومُهُ، ولكنِ انْظُرْ إِلَى الأُفُقِ، فَنَظَرتُ فَإِذا سَوادٌ عَظِيمٌ، فقيلَ لي : انْظُرْ إِلَى الأفُقِ الآخَرِ، فَإِذَا سَوَادٌ عَظيمٌ، فقيلَ لِي : هذِهِ أُمَّتُكَ وَمَعَهُمْ سَبْعُونَ ألفاً يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ»، ثُمَّ نَهَضَ فَدخَلَ مَنْزِلَهُ فَخَاضَ النَّاسُ في أُولئكَ الَّذِينَ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ ولا عَذَابٍ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذينَ صَحِبوا رسولَ الله ﷺ، وَقالَ بعْضُهُمْ : فَلَعَلَّهُمْ الَّذِينَ وُلِدُوا في الإِسْلامِ فَلَمْ يُشْرِكُوا بِالله شَيئاً - وذَكَرُوا أشيَاءَ - فَخَرجَ عَلَيْهِمْ رَسُولُ الله ﷺ، فَقَالَ: «مَا الَّذِي تَخُوضُونَ فِيهِ ؟»فَأَخْبَرُوهُ فقالَ: «هُمُ الَّذِينَ لاَ يَرْقُونَ وَلا يَسْتَرقُونَ، وَلا يَتَطَيَّرُونَ؛ وعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوكَّلُون»فقامَ عُكَّاشَةُ ابنُ محصنٍ، فَقَالَ : ادْعُ الله أنْ يَجْعَلني مِنْهُمْ، فَقَالَ: «أنْتَ مِنْهُمْ»ثُمَّ قَامَ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ : ادْعُ اللهَ أنْ يَجْعَلنِي مِنْهُمْ، فَقَالَ: « سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৭৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার কাছে সকল উম্মত পেশ করা হল। আমি দেখলাম, কোন নবীর সাথে কতিপয় (৩ থেকে ৭ জন অনুসারী) লোক রয়েছে। কোন নবীর সাথে এক অথবা দুইজন লোক রয়েছে। কোন নবীকে দেখলাম তাঁর সাথে কেউ নেই। ইতোমধ্যে বিরাট একটি জামাআত আমার সামনে পেশ করা হল। আমি মনে করলাম, এটিই আমার উম্মত। কিন্তু আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল মূসা ও তাঁর উম্মতের জামাআত। কিন্তু আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।’ অতঃপর তাকাতেই আরও একটি বিরাট জামাআত দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হল যে, ‘এটি হল আপনার উম্মত। আর তাদের সঙ্গে রয়েছে এমন ৭০ হাজার লোক, যারা বিনা হিসাব ও বিনা আযাবে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে।’’
এ কথা বলে তিনি উঠে নিজ বাসায় প্রবেশ করলেন। এদিকে লোকেরা ঐ বেহেশ্তী লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিল, যারা বিনা হিসাব ও আযাবে বেহেশ্তে প্রবেশ করবে। কেউ কেউ বলল, ‘সম্ভবতঃ ঐ লোকেরা হল তারা, যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবা।’ কিছু লোক বলল, ‘বরং সম্ভবতঃ ওরা হল তারা, যারা ইসলামে জন্মগ্রহণ করেছে এবং আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি।’ আরো অনেকে অনেক কিছু বলল। কিছু পরে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট বের হয়ে এসে বললেন, ‘‘তোমরা কি ব্যাপারে আলোচনা করছ?’’ তারা ব্যাপার খুলে বললে তিনি বললেন, ‘‘ওরা হল তারা, যারা ঝাড়ফুঁক করে না, ঝাড়ফুঁক চায় না এবং কোন জিনিসকে অশুভ লক্ষণ মনে করে না, বরং তারা কেবল আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।’’
এ কথা শুনে উক্কাশাহ ইবনে মিহসান উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘(হে আল্লাহর রাসূল!) আপনি আমার জন্য দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকে তাদের দলভুক্ত করে দেন!’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের মধ্যে একজন।’’ অতঃপর আর এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আপনি আমার জন্যও দো‘আ করুন, যেন আল্লাহ আমাকেও তাদের দলভুক্ত করে দেন।’ তিনি বললেন, ‘‘উক্কাশাহ (এ ব্যাপারে) তোমার অগ্রগমন করেছে।’’
2/76 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا أيضاً : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ كَانَ يَقُولُ: «اَللهم لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ. اَللهم أعُوذُ بعزَّتِكَ؛ لاَ إِلٰهَ إلاَّ أَنْتَ أنْ تُضِلَّني، أَنْتَ الحَيُّ الَّذِي لاَ يَمُوتُ، وَالجِنُّ والإنْسُ يَمُوتُونَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وهذا لفظ مسلم واختصره البخاري
২/৭৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু অআলাইকা তাওয়াক্কালতু অইলাইকা আনাবতু অবিকা খা-স্বামতু। আল্লাহুম্মা আউযু বিইয্যাতিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আন তুদ্বিল্লানী, আন্তাল হাইয়্যুল্লাযী লা য়্যামূত, অলজিন্নু অলইন্সু য়্যামূতূন।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি নিজকে তোমার নিকট সমর্পণ করলাম, তোমার প্রতি ঈমান আনলাম, তোমারই উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম, তোমারই ক্ষমতায় (শত্রুর বিরুদ্ধে) বিবাদ করলাম। হে আল্লাহ! তোমার ইয্যতের অসীলায় আমি আশ্রয় চাচ্ছি---তুমি ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই---তুমি আমাকে পথভ্রষ্ট করো না। তুমি সেই চিরঞ্জীব, যে কখনো মরবে না এবং দানব ও মানবজাতি মৃত্যুবরণ করবে।
3/77 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا أيضاً، قَالَ : حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ، قَالَهَا إِبرَاهيمُ ﷺ حِينَ أُلقِيَ في النَّارِ، وَقَالَها مُحَمَّدٌ ﷺ حِينَ قَالُوا: «إنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إيْماناً وَقَالُوا : حَسْبُنَا اللهُ وَنعْمَ الوَكيلُ». رواه البخاري، وفي رواية لَهُ عَنِ ابن عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُما، قَالَ : كَانَ آخِرَ قَولِ إبْرَاهِيمَ ﷺ حِينَ أُلْقِيَ في النَّارِ : حَسْبِي اللهُ وَنِعْمَ الوَكِيلُ.
৩/৭৭। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, ‘‘হাসবুনাল্লাহু অনি’মাল অকীল’’ কথাটি ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলেছিলেন, যখন তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি তখন বলেছিলেন যখন লোকেরা বলেছিল যে, ‘(কাফের) লোকেরা তোমাদের মুকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে; ফলে তোমরা তাদেরকে ভয় কর।’ কিন্তু এ কথা তাদের ঈমানকে বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল, ‘‘হাসবুনাল্লাহ্ অনি‘মাল অকীল।’’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক। (বুখারী) অন্য এক বর্ণনায় ইবনে আব্বাস বলেন, আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার সময় ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শেষ কথা ছিল, ‘‘হাসবিয়াল্লাহ্ অনি‘মাল অকীল।’’
4/78 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «يَدْخُلُ الجَنَّةَ أَقْوامٌ أَفْئِدَتُهُمْ مِثلُ أَفْئِدَةِ الطَّيرِ». رواه مسلم
৪/৭৮। আবূ হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে এমন লোক প্রবেশ করবে, যাদের অন্তর হবে পাখীর অন্তরের মত।’’
* কারো নিকট এর অর্থ হল এই যে, তারা পাখীর মত আল্লাহর উপর নির্ভরশীল হবে। আর অনেকের নিকট এর অর্থ এই যে, (পাখীর অন্তরের মত) তাদের অন্তর নরম হবে।
5/79 عَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّهُ غَزَا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ قِبلَ نَجْدٍ، فَلَمَّا قَفَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قَفَلَ معَهُمْ، فَأَدْرَكَتْهُمُ القَائِلَةُ في وَادٍ كثير العِضَاه، فَنَزَلَ رَسُول الله ﷺ وَتَفَرَّقَ النَّاسُ يَسْتَظِلُّونَ بالشَّجَرِ، وَنَزَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ تَحتَ سَمُرَة فَعَلَّقَ بِهَا سَيفَهُ وَنِمْنَا نَوْمَةً، فَإِذَا رسولُ الله ﷺ يَدْعونَا وَإِذَا عِنْدَهُ أعْرَابِيٌّ، فَقَالَ: «إنَّ هَذَا اخْتَرَطَ عَلَيَّ سَيفِي وَأنَا نَائمٌ فَاسْتَيقَظْتُ وَهُوَ في يَدِهِ صَلتاً، قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قُلْتُ : الله - ثلاثاً» وَلَمْ يُعاقِبْهُ وَجَلَسَ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية قَالَ جَابرٌ : كُنَّا مَعَ رَسُولِ الله ﷺ بذَاتِ الرِّقَاعِ، فَإِذَا أَتَيْنَا عَلَى شَجَرَةٍ ظَلِيلَةٍ تَرَكْنَاهَا لِرَسُولِ الله ﷺ، فجاء رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ وَسَيفُ رَسُول الله ﷺ معَلَّقٌ بالشَّجَرَةِ فَاخْتَرطَهُ، فَقَالَ: تَخَافُنِي ؟ قَالَ: «لاَ»فَقَالَ : فَمَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ: «الله».
وَفي رِوَايَةِ أبي بَكْرٍ الإسمَاعِيلِي في صَحِيحِه، قَالَ : مَنْ يَمْنَعُكَ مِنِّي ؟ قَالَ: «اللهُ» قَالَ : فَسَقَطَ السيفُ مِنْ يَدهِ، فَأخَذَ رسولُ الله ﷺ السَّيْفَ، فَقَالَ: «مَنْ يَمْنَعُكَ مني ؟».فَقَالَ : كُنْ خَيرَ آخِذٍ . فَقَالَ: «تَشْهَدُ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ الله وَأَنِّي رَسُول الله ؟»قَالَ : لاَ، وَلَكنِّي أُعَاهِدُكَ أنْ لا أُقَاتِلَكَ، وَلاَ أَكُونَ مَعَ قَومٍ يُقَاتِلُونَكَ، فَخَلَّى سَبيلَهُ، فَأَتَى أصْحَابَهُ، فَقَالَ : جئتُكُمْ مِنْ عنْد خَيْرِ النَّاسِ .
৫/৭৯। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নাজদের (বর্তমানে রিয়াদ অঞ্চল) দিকে জিহাদে রওনা হলেন। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাড়ী) ফিরতে লাগলেন, তখন তিনিও তাঁর সঙ্গে ফিরলেন। (রাস্তায়) প্রচুর কাঁটাগাছ ভরা এক উপত্যকায় তাঁদের দুপুরের বিশ্রাম নেওয়ার সময় হল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বিশ্রামের জন্য) নেমে পড়লেন এবং (সাহাবীগণও) গাছের ছায়ার খোঁজে তাঁরা বিক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি বাবলার গাছের নীচে অবতরণ করলেন এবং তাতে স্বীয় তরবারি ঝুলিয়ে দিলেন, আর আমরা অল্পক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে গেলাম। অতঃপর হঠাৎ (আমরা শুনলাম যে,) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ডাকছেন। সেখানে দেখলাম যে, একজন বেদুঈন তাঁর কাছে রয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘আমার ঘুমের অবস্থায় এই ব্যক্তি আমার তরবারি খুলে আমার উপর ধরে আছে। অতঃপর আমি যখন জাগলাম, তখন তরবারিখানি তার হাতে খুলা অবস্থায় দেখলাম। (তারপর) সে আমাকে বলল, ‘আমা হতে তোমাকে (আজ)কে বাঁচাবে?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ!’ এ কথা আমি তিনবার বললাম।’’ তিনি তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। অতঃপর তিনি বসে গেলেন। (অথবা সে বসে গেল।) (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে জাবের বলেন যে, আমরা ‘যাতুর রিক্বা’তে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। অতঃপর (ফিরার সময়) যখন আমরা ঘন ছায়াবিশিষ্ট একটি গাছের কাছে এলাম, তখন তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য ছেড়ে দিলাম। (তিনি বিশ্রাম করতে লাগলেন।) ইতিমধ্যে একজন মুশরিক এল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরবারি গাছে ঝুলানো ছিল। তারপর সে তা (খাপ থেকে) বের করে বলল, ‘তুমি আমাকে ভয় করছ?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ।’’
আবূ বাকর ইসমাঈলীর ‘সহীহ’ গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, সে বলল, ‘আমার হাত থেকে তোমাকে কে বাঁচাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ।’’ বর্ণনাকারী বলেন, তারপর তার হাত থেকে তরবারিটি পড়ে গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তরবারিখানি তুলে নিয়ে বললেন, ‘‘(এবার) তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে?’’ সে বলল, ‘তুমি উত্তম তরবারিধারক হয়ে যাও।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি সাক্ষ্য দিচ্ছ যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল?’’ সে বলল, ‘না। কিন্তু আমি তোমার কাছে অঙ্গীকার করছি যে, তোমার বিরুদ্ধে কখনো লড়বো না। আর আমি সেই সম্প্রদায়েরও সাথী হবো না, যারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে।’ সুতরাং তিনি তার পথ ছেড়ে দিলেন। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের নিকট এসে বলল, ‘আমি তোমাদের নিকটে সর্বোত্তম মানুষের কাছ থেকে এলাম।’
6/80 عَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُونَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ، تَغْدُو خِمَاصاً وَتَرُوحُ بِطَاناً»رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
৬/৮০। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযোগ্য ভরসা রাখ, তবে তিনি তোমাদেরকে সেই মত রুযী দান করবেন যেমন পাখীদেরকে দান করে থাকেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত হয়ে (বাসা থেকে) বের হয় এবং সন্ধ্যায় উদর পূর্ণ করে (বাসায়) ফিরে।’’
7/81 عَنْ أَبِي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «يَا فُلانُ، إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ، فَقُل : اَللهم أسْلَمتُ نَفْسي إلَيْكَ، وَوَجَّهتُ وَجْهِي إلَيْكَ، وَفَوَّضتُ أَمْري إلَيْكَ، وَأَلجأْتُ ظَهري إلَيْكَ رَغبَةً وَرَهبَةً إلَيْكَ، لا مَلْجَأ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إلاَّ إلَيْكَ، آمنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أنْزَلْتَ ؛ وَنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ . فَإِنَّكَ إِنْ مِتَّ مِنْ لَيلَتِكَ مِتَّ عَلَى الفِطْرَةِ، وَإِنْ أصْبَحْتَ أَصَبْتَ خَيراً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية في الصحيحين، عن البراءِ، قَالَ : قَالَ لِي رَسُول الله ﷺ: «إِذَا أَتَيْتَ مَضْجِعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءَكَ للصَّلاةِ، ثُمَّ اضْطَجعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيمَنِ، وَقُلْ ... وذَكَرَ نَحْوَهُ ثُمَّ قَالَ : وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ».
৭/৮১। বারা ইবনে আযেব থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে অমুক! তুমি যখন বিছানায় শোবে, তখন (এই দো‘আ) পড়, যার অর্থ, হে আল্লাহ! আমি আমার আত্মা তোমাকে সঁপে দিলাম, আমার চেহারা তোমার দিকে ফিরিয়ে দিলাম, আমার ব্যাপার তোমাকে সঁপে দিলাম এবং আমার পিঠ তোমার দিকে লাগিয়ে দিলাম; তোমার (জান্নাতের) আগ্রহে ও (জাহান্নামের) ভয়ে। তুমি ছাড়া কোন আশ্রয়স্থল ও পরিত্রাণস্থল নেই। আমি সেই কিতাবের প্রতি ঈমান আনলাম যেটি তুমি অবতীর্ণ করেছ এবং সেই রসূলের প্রতি যাঁকে তুমি পাঠিয়েছ। (অবশেষে তিনি বলেন,) অতঃপর তুমি যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ কর, তাহলে তুমি ইসলামের উপর মৃত্যুবরণ করবে। আর যদি তুমি সকালে ওঠ তবে, তুমি (এর) উপকার পাবে।’’
বারা ইবনে আযেব থেকেই বুখারী ও মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন যে, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তুমি (রাতে শোবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন তুমি নামাযের মত ওযূ কর। তারপর ডানপাশে শুয়ে যাও এবং (উপরোক্ত দো‘আ) পড়।’’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তুমি উপরোক্ত দো‘আটি তোমার শেষ কথা কর।’’ (অর্থাৎ এই দো‘আ পড়ার পর অন্য দো‘আ পড়বে না বা কোন কথা বলবে না)।
8/82 عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه قَالَ : نَظَرتُ إِلَى أَقْدَامِ المُشْرِكينَ وَنَحنُ في الغَارِ وَهُمْ عَلَى رُؤُوسِنا، فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله، لَوْ أَنَّ أَحَدَهُمْ نَظَرَ تَحْتَ قَدَمَيهِ لأَبْصَرَنَا . فَقَالَ: «مَا ظَنُّكَ يَا أَبا بَكرٍ بِاثنَيْنِ اللهُ ثَالِثُهُمَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/৮২। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মুশরিকদের পায়ের দিকে তাকালাম যখন আমরা (সওর) গুহায় (লুকিয়ে) ছিলাম এবং তারা আমাদের মাথার উপরে ছিল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি তাদের মধ্যে কেউ তার পায়ের নীচে তাকায়, তবে সে আমাদেরকে দেখে ফেলবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ বাকর! সে দু’জন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা, যাদের তৃতীয়জন আল্লাহ।’’
9/83 عَن أمِّ سَلَمَةَ رَضِي الله عَنها : أَنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ، قَالَ: «بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ، اَللهم إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ»حديثٌ صحيح، رواه أبو داود والترمذي وغيرهما بأسانيد صحيحةٍ . قَالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح»وهذا لفظ أبي داود
৯/৮৩। উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বাড়ি থেকে বের হতেন, তখন (এই দো‘আ) বলতেন---যার অর্থ, আল্লাহর নাম নিয়ে (বের হলাম), আমি আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি ভ্রষ্ট হই বা আমাকে ভ্রষ্ট করা হয়, আমার পদস্খলন হয় বা পদস্খলন করানো হয়, আমি অত্যাচারী হই অথবা অত্যাচারিত হই অথবা আমি মূর্খামি করি অথবা আমার প্রতি মূর্খামি করা হয়---এসব থেকে।
10/84 عن أنس رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَنْ قَالَ - يَعْني : إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيتِهِ - : بِسمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، وَلا حَولَ وَلا قُوَّةَ إلاَّ باللهِ، يُقالُ لَهُ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ وَوُقِيتَ، وَتَنَحَّى عَنْهُ الشَّيطَانُ»رواه أبو داود والترمذي والنسائي وغيرهم . وَقالَ الترمذي: «حديث حسن»، زاد أبو داود : «فَيَقُولُ - يَعنِي : اَلشَّيْطَانُ لِشَيْطَانٍ آخَر : كَيفَ لَكَ بِرجلٍ قَدْ هُدِيَ وَكُفِيَ وَوُقِيَ ؟»
১০/৮৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সবীয় গৃহ থেকে বের হওয়ার সময় বলে, ‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।’ (অর্থাৎ আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া পাপ থেকে ফিরা এবং পুণ্য করা সম্ভব নয়।) তাকে বলা হয়, ‘তোমাকে সঠিক পথ দেওয়া হল, তোমাকে যথেষ্টতা দান করা হল এবং তোমাকে বাঁচিয়ে নেওয়া হল।’ আর শয়তান তার নিকট থেকে দূরে সরে যায়।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ প্রমুখ) তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। আবূ দাউদ এই শব্দগুলি বাড়তি বর্ণনা করেছেন, ‘‘ফলে শয়তান অন্য শয়তানকে বলে যে, ‘ঐ ব্যক্তির উপর তোমার কিরূপে কর্তৃত্ব চলবে, যাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করা হয়েছে, যাকে যথেষ্টতা দান করা হয়েছে এবং যাকে (সকল অমঙ্গল) থেকে বাঁচানো হয়েছে?’
11/85 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ أَخَوانِ عَلَى عَهدِ النَّبيّ ﷺ وَكَانَ أحَدُهُمَا يَأتِي النَّبيَّ ﷺ وَالآخَرُ يَحْتَرِفُ، فَشَكَا المُحْتَرِفُ أخَاهُ لِلنَّبي ﷺ، فَقَالَ : «لَعَلَّكَ تُرْزَقُ بِهِ» رواه الترمذي بإسناد صحيحٍ عَلَى شرطِ مسلم
১১/৮৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে দুই ভাই ছিল। তাদের মধ্যে একজন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (দ্বীন শিক্ষার জন্য) আসত এবং আর একজন হাতের কোন কাজ করে উপার্জন করত। অতঃপর উপার্জনশীল (ভাইটা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তার (শিক্ষার্থী) ভাইয়ের (কাজ না করার) অভিযোগ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সম্ভবতঃ তোমাকে তার কারণেই রুযী দেওয়া হচ্ছে।’’
8- بَابُ الْاِسْتِقَامَةِ
পরিচ্ছেদ - ৮ : দ্বীনে অটল থাকার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَٱسۡتَقِمۡ كَمَآ أُمِرۡتَ ﴾ [هود: ١١٢]
অর্থাৎ “সুতরাং তুমি যেরূপ আদিষ্ট হয়েছ সেইরূপ সুদৃঢ় থাক।” (সূরা হুদ ১১২ আয়াত)
তিনি আরোও বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ تَتَنَزَّلُ عَلَيۡهِمُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ أَلَّا تَخَافُواْ وَلَا تَحۡزَنُواْ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ٣٠ نَحۡنُ أَوۡلِيَآؤُكُمۡ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١ نُزُلٗا مِّنۡ غَفُورٖ رَّحِيمٖ ٣٢ ﴾ [فصلت: ٣٠، ٣٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বলে, ‘আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ’ তারপর তাতে অবিচলিত থাকে, তাদের নিকট ফিরিশতা অবতীর্ণ হয় (এবং বলে), ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। ইহকালে আমরা তোমাদের বন্ধু এবং পরকালেও; সেখানে তোমাদের জন্য সমস্ত কিছু রয়েছে যা তোমাদের মন চায়, যা তোমরা আকাঙ্ক্ষা কর। চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লার পক্ষ হতে এ হবে আপ্যায়ন’।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩০-৩২ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٣ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤ ﴾ [الاحقاف: ١٣، ١٤]
অর্থাৎ “নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ অতঃপর এই বিশ্বাসে অবিচলিত থাকে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই জান্নাতের অধিবাসী সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে, এটাই তাদের কর্মফল।” (সূরা আহক্বাফ ১৩-১৪ আয়াত)
1/86 وَعَنْ أَبِي عَمْرٍو، وَقِيلَ : أبي عَمْرَةَ سُفيَانَ بنِ عَبدِ الله رضي الله عنه، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، قُلْ لِي في الإسْلامِ قَولاً لاَ أسْأَلُ عَنْهُ أَحَداً غَيْرَكَ . قَالَ: «قُلْ : آمَنْتُ بِاللهِ، ثُمَّ استَقِمْ». رواه مسلم
১/৮৬। আবূ আমর (মতান্তরে) আবূ আমরাহ সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে ইসলামের এমন একটি কথা বলে দিন, যে সম্পর্কে আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে জিজ্ঞাসা না করতে হয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি বল, আমি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম, অতঃপর (তার উপর) অনড় থাক।’’
2/87 وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «قَارِبُوا وَسَدِّدُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّهُ لَنْ يَنْجُوَ أَحَدٌ مِنْكُمْ بعَمَلِهِ»قَالُوا : وَلا أَنْتَ يَا رَسُولَ الله ؟ قَالَ: «وَلاَ أنا إلاَّ أنْ يَتَغَمَّدَنِيَ الله بِرَحمَةٍ مِنهُ وَفَضْلٍ». رواه مسلم
২/৮৭। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (হে মুসলিমরা!) (দ্বীনের ব্যাপারে) ভারসাম্য বজায় রাখ এবং সোজা হয়ে থাক। আর জেনে রাখ যে, তোমাদের মধ্যে কেউই স্বীয়কর্মের দ্বারা (পরকালে) পরিত্রাণ পাবে না।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনিও নন?’ তিনি বললেন, ‘‘আমিও নই। তবে আল্লাহ আমাকে তাঁর অনুগ্রহে ও দয়াতে ঢেকে রেখেছেন।’’
* আলেমগণ বলেন, ‘ইস্তিক্বামাত’ বা আল্লাহর দ্বীনে অটল থাকার অর্থ হলঃ সর্ব কাজে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁর আনুগত্য করা। এটি একটি ব্যাপকার্থবোধক শব্দ। এটি হল সর্ব কাজের জন্য সুন্দর নীতি। আর আল্লাহই তওফীকদাতা।
9- بَابُ فِي التَّفَكُّرِ فِيْ عَظِيْمِ مَخْلُوْقَاتِ اللهِ تَعَالٰى وَفَنَاءِ الدُّنْيَا وَأَهْوَالِ الآخِرَةِ وَسَائِرِ أُمُوْرِهِمَا وَتَقْصِيْرِ النَّفْسِ وَتَهْذِيْبِهَا وَحَمْلِهَا عَلَى الْاِسْتِقَامَةِ
পরিচ্ছেদ - ৯ : আল্লাহ তা‘আলার বিশাল সৃষ্টিজগৎ, পৃথিবীর ধ্বংস, পরকালের ভয়াবহতা এবং ইহ-পরকালের বিষয়াদি নিয়ে, আত্মার ত্রুটি ও তার শুদ্ধীকরণ এবং তাকে আল্লাহর দ্বীনে অটল রাখার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধকরণ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَآ أَعِظُكُم بِوَٰحِدَةٍۖ أَن تَقُومُواْ لِلَّهِ مَثۡنَىٰ وَفُرَٰدَىٰ ثُمَّ تَتَفَكَّرُواْۚ ﴾ [سبا: ٤٦]
অর্থাৎ “বল, আমি তোমাদের একটি বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছি : তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে দু’জন করে অথবা একা একা দাঁড়াও এবং চিন্তা করে দেখ।” (সূরা সাবা ৪৬ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هَٰذَا بَٰطِلٗا سُبۡحَٰنَكَ ﴾ [ال عمران: ١٩٠، ١٩١]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র’।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০ -১৯১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ أَفَلَا يَنظُرُونَ إِلَى ٱلۡإِبِلِ كَيۡفَ خُلِقَتۡ ١٧ وَإِلَى ٱلسَّمَآءِ كَيۡفَ رُفِعَتۡ ١٨ وَإِلَى ٱلۡجِبَالِ كَيۡفَ نُصِبَتۡ ١٩ وَإِلَى ٱلۡأَرۡضِ كَيۡفَ سُطِحَتۡ ٢٠ فَذَكِّرۡ إِنَّمَآ أَنتَ مُذَكِّرٞ ٢١ ﴾ [الغاشية: ١٧، ٢١]
অর্থাৎ “তবে কি তারা উঁটের দিকে লক্ষ্য করে না যে, কিভাবে ওকে সৃষ্টি করা হয়েছে? এবং আকাশের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে ঊর্ধ্বে উত্তোলন করা হয়েছে? এবং পর্বতমালার দিকে যে, কিভাবে ওটাকে স্থাপন করা হয়েছে? এবং ভূতলের দিকে যে, কিভাবে ওটাকে সমতল করা হয়েছে? অতএব তুমি উপদেশ দিতে থাক; তুমি তো একজন উপদেশদাতা মাত্র।” (সূরা গাশিয়াহ ১৭-২১ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ أَفَلَمۡ يَسِيرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَيَنظُرُواْ﴾ [محمد: ١٠]
অর্থাৎ “তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করেনি? তাহলে দেখত (যে, তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে।)” (সূরা মুহাম্মাদ ১০ আয়াত)
10- بَابُ فِي الْمُبَادَرَةِ إِلَى الْخَيْرَاتِ
وَحَثِّ مَنْ تَوَجَّهَ لِخَيْرٍ عَلَى الإِقْبَالِ عَلَيْهِ بِالْجِدِّ مِنْ غَيْرِ تَرَدُّدٍ
পরিচ্ছেদ -১০ : শুভকাজে প্রতিযোগিতা ও শীঘ্র করা এবং পুণ্যকামীকে পুণ্যের প্রতি তৎপরতার সাথে নির্দ্বিধায় সম্পাদন করতে উৎসাহিত করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَٱسۡتَبِقُواْ ٱلۡخَيۡرَٰتِۚ ﴾ [البقرة: ١٤٨]
অর্থাৎ এতএব তোমরা সৎকর্মে প্রতিযোগিতা কর। (সূরা বাক্বারাহ ১৪৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ ۞وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣ ﴾ [ال عمران: ١٣٣]
অর্থাৎ “তোমরা প্রতিযোগিতা (ত্বরা) কর, তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে ক্ষমা এবং বেহেশ্তের জন্য, যার প্রস্থ আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা ধর্মভীরুদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৩ আয়াত)
এ বিষয়ে হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/88 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «بَادِرُوا بِالأعْمَال فتناً كَقِطَعِ اللَّيْلِ المُظْلِمِ، يُصْبحُ الرَّجُلُ مُؤْمِناً وَيُمْسِي كَافِراً، وَيُمْسِي مُؤمِناً ويُصبحُ كَافِراً، يَبيعُ دِينَهُ بعَرَضٍ مِنَ الدُّنيا». رواه مسلم
১/৮৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমরা অন্ধকার রাতের টুকরোসমূহের মত (যা একটার পর একটা আসতে থাকে এমন) ফিত্নাসমূহ আসার পূর্বে নেকীর কাজ দ্রুত করে ফেল। মানুষ সে সময়ে সকালে মু’মিন থাকবে এবং সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে অথবা সন্ধ্যায় মু’মিন থাকবে এবং সকালে কাফের হয়ে যাবে। নিজের দ্বীনকে দুনিয়ার সম্পদের বিনিময়ে বিক্রয় করবে।
2/89 عَنْ أَبِي سِرْوَعَةَ عُقبةَ بنِ الحَارِثِ رضي الله عنه، قَالَ : صَلَّيتُ وَرَاءَ النَّبيّ ﷺ بالمَدِينَةِ العَصْرَ، فَسَلَّمَ ثُمَّ قَامَ مُسْرِعاً، فَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بعْضِ حُجَرِ نِسَائِهِ، فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ، فَخَرَجَ عَلَيهمْ، فَرأى أنَّهمْ قَدْ عَجِبُوا مِنْ سُرعَتهِ، قَالَ : «ذَكَرتُ شَيئاً مِنْ تِبرٍ عِندَنَا فَكَرِهتُ أنْ يَحْبِسَنِي فَأمَرتُ بِقِسْمَتِهِ». رواه البخاري
وفي رواية لَهُ: «كُنتُ خَلَّفتُ في البَيْتِ تِبراً مِنَ الصَّدَقةِ فَكَرِهتُ أنْ أُبَيِّتَهُ».
২/৮৯। আবূ সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনে হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে মদীনায় আসরের নামায পড়লাম। অতঃপর সালাম ফিরে তিনি অতি শীঘ্র দাঁড়িয়ে পড়লেন। তারপর লোকদের গর্দান টপকে তাঁর কোন এক স্ত্রীর কামরায় চলে গেলেন। লোকেরা তাঁর শীঘ্রতা দেখে ঘাবড়ে গেল। অতঃপর তিনি বের হয়ে এলেন; দেখলেন লোকেরা তাঁর শীঘ্রতার কারণে আশ্চর্যান্বিত হয়েছে। তিনি বললেন, ‘‘(নামাযে) আমার মনে পড়ল যে, (বাড়ীতে সোনা অথবা চাঁদির) একটি টুকরা রয়ে গেছে। আমি চাইলাম না যে, তা আমাকে আল্লাহর স্মরণে বাধা দেবে। যার জন্য আমি (দ্রুত বাড়ীতে গিয়ে) তা বণ্টন করার আদেশ দিলাম।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বাড়ীতে সাদকার একটি স্বর্ণখণ্ড ছেড়ে এসেছিলাম। অতঃপর আমি তা রাতে নিজ গৃহে রাখা পছন্দ করলাম না।’’
3/90 عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِي ﷺ يَومَ أُحُد : أَرَأيتَ إنْ قُتِلتُ فَأَيْنَ أَنَا ؟ قَالَ: «في الجنَّةِ» فَأَلْقَى تَمَرَاتٍ كُنَّ في يَدِهِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৯০। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, উহুদ যুদ্ধের দিন এক সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ‘আপনি বলুন! আমি যদি (কাফেরদের হাতে) মারা যাই, তাহলে আমি কোথায় যাব?’ তিনি বললেন, ‘‘জান্নাতে।’’ এ কথা শোনামাত্র তিনি তাঁর হাতের খেজুরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। তারপর (কাফেরদের সাথে) যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।
4/91 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، فَقَالَ : يَا رسولَ الله، أيُّ الصَّدَقَةِ أعْظَمُ أجْراً؟ قَالَ: «أنْ تَصَدَّقَ وَأنتَ صَحيحٌ شَحيحٌ، تَخشَى الفَقرَ وتَأمُلُ الغِنَى، وَلاَ تُمهِلْ حَتَّى إِذَا بَلَغتِ الحُلقُومَ قُلْتَ لِفُلاَنٍ كَذَا وَلِفُلاَنٍ كَذَا، وقَدْ كَانَ لِفُلانٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ সাদ্কাহ নেকীর দিক দিয়ে বড়?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার সে সময়ের সাদকাহ করা (বৃহত্তম নেকীর কাজ) যখন তুমি সুস্থ থাকবে, মালের লোভ অন্তরে থাকবে, তুমি দরিদ্রতার ভয় করবে এবং ধন-দৌলতের আশা রাখবে। আর তুমি সাদকাহ করতে বিলম্ব করো না। পরিশেষে যখন তোমার প্রাণ কণ্ঠাগত হবে, তখন বলবে, ‘অমুকের জন্য এত, অমুকের জন্য এত। অথচ তা অমুকের (উত্তরাধিকারীর) হয়েই গেছে।’’
5/92 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَخَذَ سَيفاً يَومَ أُحُدٍ، فَقَالَ: «مَنْ يَأخُذُ منِّي هَذَا ؟»فَبَسطُوا أيدِيَهُمْ كُلُّ إنسَانٍ مِنْهُمْ يقُولُ : أَنَا أَنَا . قَالَ: «فَمَنْ يَأخُذُهُ بحَقِّه ؟»فَأَحْجَمَ القَومُ، فَقَالَ أَبُو دُجَانَةَ رضي الله عنه: أنا آخُذُهُ بِحَقِّهِ، فَأَخَذَهُ فَفَلقَ بِهِ هَامَ المُشْرِكِينَ . رواه مسلم
৫/৯২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, উহুদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একখানি তরবারি হাতে নিয়ে বললেন, ‘আমার কাছ থেকে এই তরবারি কে নেবে?’ সাহাবীগণ নিজ নিজ হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই বলতে লাগলেন, ‘আমি, আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘কে এর হক আদায়ের জন্য নেবে?’’ (এ কথা শুনে) সবাই থমকে গেলেন। অতঃপর আবূ দুজানা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আমি এর হক আদায়ের জন্য নেব।’ তারপর তিনি তা নিয়ে নিলেন এবং তার দ্বারা মুশরিকদের শিরোচ্ছেদ করতে থাকলেন।
6/93 عَنِ الزُّبَيرِ بنِ عَدِيّ، قَالَ : أَتَيْنَا أَنَسَ بنَ مَالِكٍ رضي الله عنه فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا نَلْقَى مِنَ الحَجَّاجِ . فَقَالَ : «اصْبرُوا ؛ فَإنَّهُ لاَ يَأتِي زَمَانٌ إلاَّ وَالَّذِي بَعدَهُ شَرٌّ مِنهُ حَتَّى تَلقَوا رَبَّكُمْ»سَمِعتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ ﷺ . رواه البخاري
৬/৯৩। যুবাইর ইবনে আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকটে এলাম এবং তাঁর কাছে হাজ্জাজের অত্যাচারের অভিযোগ করলাম। তিনি বললেন, ‘তোমরা ধৈর্য ধারণ কর। কারণ, এখন যে যুগ আসবে তার পরবর্তী যুগ ওর চেয়ে খারাপ হবে, শেষ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।’ (আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) ‘এ কথা আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে শুনেছি।’
7/94 عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: «بَادِرُوْا بِالأَعْمَالِ سَبْعاً، هَلْ تَنْتَظُرُوْنَ إلاَّ فَقْراً مُنْسِياً، أَوْ غَنِيٌ مُطْغِياً، أَوْ مَرَضاً مُفْسِداً، أَوْ هَرَماً مُفْنِداً أَوْمَوْتاً مُجْهِزاً أَوِ الدَّجَّالَ فَشَرُّ غَائِبٌ يُنْتَظِرُ، أَوِ السَّاعَةُ فَالسَّاعَةُ أَدْهٰى وأَمَرُّ» رواه الترمذي وقال: حديثٌ حسن .ٰ
৭/৯৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাতটি জিনিসের পূর্বেই তোমরা জলদি সব কর্ম করে ফেল। তোমরা কি অপেক্ষায় থাকবে যে, এমন দারিদ্র এসে যাক ইসলামের আদেশ পালন হতে যা বিস্মৃত রাখে? অথবা এমন ধন-দৌলত হোক যা ইসলাম দ্রোহিতার দিকে ধাবিত করে? অথবা এমন ব্যাধি হোক যা শরীরকে দুর্বল করে দেয়? অথবা এমন বার্ধক্য আসুক যা জ্ঞান বিনষ্ট করে? অথবা হঠাৎ মরণ এসে যাক, অদৃশ্য দুই দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটুক অথবা কিয়ামাত এসে যাক? আর কিয়ামাত তো নিতান্তই বিভীষিকাময় ও তিক্ত।
8/95 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أن رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ يَومَ خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ هذِهِ الرَّايَةَ رَجُلاً يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ يَفتَحُ اللهُ عَلَى يَدَيهِ» قَالَ عُمَرُ رضي الله عنه: مَا أحبَبْتُ الإِمَارَة إلاَّ يَومَئِذٍ، فَتَسَاوَرتُ لَهَا رَجَاءَ أنْ أُدْعَى لَهَا، فَدَعَا رَسُولُ الله ﷺ عَلِيَّ بنَ أبِي طَالِبٍ رضي الله عنه فَأعْطَاهُ إيَّاهَا، وَقَالَ: «امْشِ وَلا تَلتَفِتْ حَتَّى يَفتَحَ اللهُ عَلَيكَ» فَسَارَ عليٌّ شيئاً ثُمَّ وَقَفَ وَلَمْ يَلتَفِتْ فَصَرَخَ : يَا رَسُولَ الله، عَلَى مَاذَا أُقَاتِلُ النّاسَ ؟ قَالَ: «قاتِلْهُمْ حَتَّى يَشْهَدُوا أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ الله، فَإِذَا فَعَلُوا فقَدْ مَنَعُوا مِنْكَ دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إلاَّ بحَقِّهَا، وحِسَابُهُمْ عَلَى الله». رواه مسلم
৮/৯৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি, এই পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। আল্লাহ তা‘আলা তার হাতে বিজয় দান করবেন।’’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি কখনো কর্তৃত্বভার গ্রহণের ইচ্ছা করিনি (কিন্তু সেদিনই আমার বাসনা হল)। সুতরাং আমি এই আশাতে উঠে উঁচু হয়ে দাঁড়াতে থাকলাম; যেন আমাকে এর জন্য ডাকা হয়।’ অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী ইবন আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে ডাকলেন। তারপর তিনি তাঁর হাতে পতাকা তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘তুমি চলতে শুরু কর এবং কোন দিকে তাকাবে না; যে পর্যন্ত না আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে বিজয় দান করবেন।’’ অতঃপর আলী কিছু দূর গিয়ে থেমে গেলেন এবং কোন দিকে না তাকিয়ে উঁচু আওয়াজে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কিসের জন্য লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি সে পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবে, যে পর্যন্ত তারা এ কথার সাক্ষ্য না দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (কেউ সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল। যখন তারা এ কাজ করবে তখন নিঃসন্দেহে তাদের জান ও মালকে তোমার হাত হতে বাঁচিয়ে নেবে। কিন্তু তার অধিকারের সাথে (অর্থাৎ সে যদি কোন মুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে প্রতিশোধ স্বরূপ তাকে হত্যা করা বৈধ হবে এবং সে যদি কারোর মাল ছিনিয়ে নেয় অথবা যাকাত না দেয়, তাহলে সে মাল তার কাছ থেকে আদায় করা জরুরী।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’
11- بَابُ الْمُجَاهَدَةِ
পরিচ্ছেদ -১১ : মুজাহাদাহ বা দ্বীনের জন্য এবং আত্মা, শয়তান ও দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা, টানা পরিশ্রম ও আজীবন সংগ্রাম করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهۡدِيَنَّهُمۡ سُبُلَنَاۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٦٩ ﴾ [العنكبوت: ٦٩]
অর্থাৎ “যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথসমূহে পরিচালিত করব। আর আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গেই থাকেন।” (সূরা আনকাবূত ৬৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
অর্থাৎ “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱذۡكُرِ ٱسۡمَ رَبِّكَ وَتَبَتَّلۡ إِلَيۡهِ تَبۡتِيلٗا ٨ ﴾ [المزمل: ٨]
অর্থাৎ “সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে মগ্ন হও।” (সূরা মুয্যাম্মিল ৮ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ ﴾ [الزلزلة: ٧]
অর্থাৎ “সুতরাং কেউ অণু পরিমাণ ভালো কাজ করলে সে তা দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ وَمَا تُقَدِّمُواْ لِأَنفُسِكُم مِّنۡ خَيۡرٖ تَجِدُوهُ عِندَ ٱللَّهِ هُوَ خَيۡرٗا وَأَعۡظَمَ أَجۡرٗاۚ ﴾ [المزمل: ٢٠]
অর্থাৎ “তোমরা তোমাদের আত্মার মঙ্গলের জন্য ভাল যা কিছু অগ্রিম প্রেরণ করবে তোমরা তা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর এবং পুরস্কার হিসাবে মহত্তর পাবে।” (সূরা মুয্যাম্মিল ২০ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ ﴾ [البقرة: ٢٧٣]
অর্থাৎ “আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
এ বিষয়ে সুবিদিত আয়াত অনেক রয়েছে। উক্ত মর্মের হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/96 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الله تَعَالَى قَالَ : مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ». رواه البخاري
১/৯৬। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা---যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরয ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে লাগি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে! আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দিই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দিই।’’
(‘আমি তার কান হয়ে যাই----।’ অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টি মোতাবেক সে শোনে, দেখে, ধরে ও চলে।)
2/97 عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ فيما يرويه عن ربّه - عز وجل -، قَالَ: «إِذَا تَقَرَّبَ العَبْدُ إلَيَّ شِبْراً تَقَرَّبْتُ إِلَيْه ذِرَاعاً، وَإِذَا تَقَرَّبَ إلَيَّ ذِرَاعاً تَقَربْتُ مِنهُ بَاعاً، وِإذَا أتَانِي يَمشي أتَيْتُهُ هَرْوَلَةً». رواه البخاري
২/৯৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মহান প্রভু হতে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন বান্দা আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তখন আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। যখন সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয় তখন আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হই। আর যখন সে আমার দিকে হেঁটে আসে তখন আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।’’
3/98 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «نِعْمَتَانِ مَغبونٌ فِيهِمَا كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ : الصِّحَّةُ، وَالفَرَاغُ». رواه البخاري
৩/৯৮। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এমন দুটি নিয়ামত আছে, বহু মানুষ সে দু’টির ব্যাপারে ধোঁকায় আছে। (তা হল) সুস্থতা ও অবসর।’’
4/99 عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أَنَّ النَّبيّ ﷺ كَانَ يقُومُ مِنَ اللَّيلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقُلْتُ لَهُ : لِمَ تَصنَعُ هَذَا يَا رَسُولَ الله، وَقدْ غَفَرَ الله لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ؟ قَالَ: «أَفَلاَ أُحِبُّ أنْ أكُونَ عَبْداً شَكُوراً؟». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৯৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে (এত দীর্ঘ) কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা দুখানি (ফুলে) ফেটে (দাগ পড়ে) যেত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এরূপ কাজ কেন করছেন? আল্লাহ তো আপনার আগের ও পিছের সমস্ত পাপ মোচন করে দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি কি তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হতে পছন্দ করব না?’’
১০০। মুগীরাহ ইবন শু’বাহ কর্তৃক বুখারী-মুসলিমে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
5/101عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، أنَّها قَالَتْ : كَانَ رَسُولُ الله ﷺ إِذَا دَخَلَ العَشْرُ أَحْيَا اللَّيلَ، وَأيْقَظَ أهْلَهُ، وَجَدَّ وَشَدَّ المِئْزَر . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/১০১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, ‘যখন (রমযানের শেষ) দশক শুরু হত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত জাগতেন, নিজ পরিবারকে জাগাতেন, (ইবাদতে) খুবই চেষ্টা করতেন এবং (এর জন্য) তিনি কোমর বেঁধে নিতেন।’
6/102 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُؤْمِنُ القَوِيُّ خَيرٌ وَأَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنَ المُؤْمِنِ الضَّعيفِ وَفي كُلٍّ خَيرٌ. احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ، واسْتَعِنْ بِاللهِ وَلاَ تَعْجَزْ . وَإنْ أَصَابَكَ شَيءٌ فَلاَ تَقُلْ لَوْ أنّي فَعَلْتُ كَانَ كَذَا وَكَذَا، وَلَكِنْ قُلْ : قَدرُ اللّهِ، وَمَا شَاءَ فَعلَ ؛ فإنَّ لَوْ تَفْتَحُ عَمَلَ الشَّيطَانِ». رواه مسلم
৬/১০২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (দেহমনে) সবল মু’মিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মু’মিন অপেক্ষা বেশী প্রিয়। আর প্রত্যেকের মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। তুমি ঐ জিনিসে যত্নবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর ও উৎসাহহীন হয়ো না। যদি তোমার কিছু ক্ষতি হয়, তাহলে এ কথা বলো না যে, ‘যদি আমি এ রকম করতাম, তাহলে এ রকম হত।’ বরং বলো, ‘আল্লাহর (লিখিত) ভাগ্য এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন।’ কারণ, ‘যদি’ (শব্দ) শয়তানের কাজের দুয়ার খুলে দেয়।
৭/১০৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে এটিও বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জাহান্নামকে মনোলোভা জিনিসসমূহ দ্বারা ঘিরে দেওয়া হয়েছে এবং জান্নাতকে ঘিরে দেওয়া হয়েছে কষ্টসাধ্য কর্মসমূহ দ্বারা।’’
‘ঘিরে দেওয়া হয়েছে’ অর্থাৎ ঐ জিনিস বা কর্ম জাহান্নাম বা জান্নাতের মাঝে পর্দাস্বরূপ, যখনই কেউ তা করবে, তখনই সে পর্দা ছিঁড়ে তাতে প্রবেশ করবে।
8/104 عَنْ أَبِي عبد الله حُذَيفَةَ بنِ اليمانِ رضي الله عنهما، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبيّ ﷺ ذَاتَ لَيلَةٍ فَافْتَتَحَ البقَرَةَ، فَقُلْتُ : يَرْكَعُ عِنْدَ المئَةِ، ثُمَّ مَضَى . فَقُلْتُ : يُصَلِّي بِهَا في ركعَة فَمَضَى، فقُلْتُ : يَرْكَعُ بِهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا، يَقرَأُ مُتَرَسِّلاً : إِذَا مَرَّ بآية فِيهَا تَسبيحٌ سَبَّحَ، وَإذَا مَرَّ بسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإذَا مَرَّ بتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ، ثُمَّ رَكَعَ، فَجَعَلَ يَقُولُ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ»فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحواً مِنْ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ: «سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ»ثُمَّ قَامَ طَويلاً قَريباً مِمَّا رَكَعَ، ثُمَّ سَجَدَ، فَقَالَ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى»فَكَانَ سُجُودُهُ قَريباً مِنْ قِيَامِهِ . رواه مسلم
৮/১০৪। আবূ আব্দুল্লাহ হুযাইফা ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাক্বারাহ পড়তে আরম্ভ করলেন। অতঃপর আমি মনে মনে) বললাম যে, ‘তিনি একশো আয়াত পড়ে রুকুতে যাবেন।’ কিন্তু তিনি (তা না ক’রে) ক্বিরাআত করতে থাকলেন। তারপর আমি (মনে মনে) বললাম যে, ‘তিনি এই সূরা এক রাকাআতে সম্পন্ন করবেন; এটি পড়ে রুকূ করবেন।’ কিন্তু তিনি (সূরা) নিসা আরম্ভ করলেন। তিনি তা সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি (সূরা) আলে ইমরান শুরু করলেন। সেটিও সম্পূর্ণ পড়লেন। (এত দীর্ঘ ক্বিরাআত সত্ত্বেও) তিনি ধীর শান্তভাবে থেমে থেমে পড়ছিলেন। যখন কোন এমন আয়াত এসে যেত, যাতে তাসবীহ (আল্লাহর পবিত্রতার বর্ণনা) আছে, তখন তিনি (ক্বিরাআত বন্ধ করে) তাসবীহ (অর্থাৎ সুবহানাল্লাহ) পড়তেন। আর যখন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত এসে যেত, তখন প্রার্থনা করতেন। যখন আশ্রয় চাওয়ার আয়াত আসত, তখন আশ্রয় চাইতেন। অতঃপর তিনি রুকূ করলেন; তাতে তিনি বলতে লাগলেন, ‘সুবহানা রাব্বিয়াল ‘আযীম।’ সুতরাং তাঁর রুকুও তাঁর কিয়ামের (দাড়ানোর) মত দীর্ঘ হয়ে গেল! অতঃপর তিনি ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বললেন ও (রুকু হতে উঠে) প্রায় রুকু সম দীর্ঘ কিয়াম করলেন। অতঃপর তিনি সাজদাহ করলেন এবং (সাজদায়) তিনি ‘সুবহানা রাবিবয়াল আ’লা’ (দীর্ঘ সময় ধরে) পড়লেন ফলে তাঁর সাজদাহ তাঁর কিয়ামের সমান হয়ে গেল!
9/105 عن ابن مسعود رضي الله عنه، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ النَّبيّ ﷺ لَيلَةً، فَأَطَالَ القِيامَ حَتَّى هَمَمْتُ بأمْرِ سُوءٍ ! قيل: وَمَا هَمَمْتَ بِهِ ؟ قَالَ : هَمَمْتُ أنْ أجْلِسَ وَأَدَعَهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/১০৫। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, ‘আমি এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়লাম। অতঃপর তিনি দীর্ঘ কিয়াম করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমি খারাপ কাজের ইচ্ছা করলাম।’ তাঁকে প্রশ্ন করা হল যে, ‘আপনি কি ইচ্ছা করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি ইচ্ছা করেছিলাম যে, আমি বসে যাই এবং (তাঁর অনুসরণ) ছেড়ে দিই।’
10/106 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَن رَسُول الله ﷺ، قَالَ: «يَتْبَعُ المَيتَ ثَلاَثَةٌ : أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَملُهُ، فَيَرجِعُ اثنَانِ وَيَبْقَى وَاحِدٌ : يَرجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ، وَيَبقَى عَملُهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১০/১০৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির সঙ্গে যায়ঃ তার আত্মীয়-স্বজন, তার মাল ও তার আমল। অতঃপর দু’টি জিনিস ফিরে আসে এবং একটি জিনিস রয়ে যায়। তার আত্মীয়স্বজন ও তার মাল ফিরে আসে এবং তার আমল (তার সঙ্গে) রয়ে যায়।
11/107 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ النَّبيّ ﷺ: «الجَنَّةُ أَقْرَبُ إِلَى أَحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثلُ ذلِكَ». رواه البخاري
১১/১০৭। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের জুতোর ফিতার চেয়েও অধিক নিকটবর্তী এবং জাহান্নামও তদ্রূপ।’’
12/108 عَنْ أَبِي فِراسٍ رَبيعةَ بنِ كَعبٍ الأَسلَميِّ خَادِمِ رَسُولِ الله ﷺ، وَمِن أَهلِ الصُّفَّةِ رضي الله عنه، قَالَ : كُنْتُ أبِيتُ مَعَ رَسُولِ الله ﷺ فآتِيهِ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ، فَقَالَ: «سَلْنِي»فقُلْتُ : أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ في الجَنَّةِ . فَقَالَ: «أَوَ غَيرَ ذلِكَ»؟ قُلْتُ : هُوَ ذَاكَ، قَالَ: «فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ» رواه مسلم
১২/১০৮। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম ও আহলে সুফ্ফার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আবূ ফিরাস রাবীআহ ইবনে কা‘ব আসলামী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে রাত কাটাতাম। আমি তাঁর কাছে ওযূর পানি এবং প্রয়োজনীয় বস্তু এনে দিতাম। (একদিন তিনি খুশী হয়ে) বললেন, ‘‘তুমি আমার কাছে কিছু চাও।’’ আমি বললাম, ‘আমি আপনার কাছে জান্নাতে আপনার সাহচর্য চাই।’ তিনি বললেন, ‘‘এ ছাড়া আর কিছু?’’ আমি বললাম, ‘বাস্ ওটাই।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি, অধিকাধিক সিজদা করে (অর্থাৎ প্রচুর নফল নামায পড়ে) তোমার (এ আশা পূরণের) জন্য আমাকে সাহায্য কর।’’
13/109 عَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ، وَيُقَالُ : أَبُو عَبدِ الرَّحمَانِ ثَوبَانَ ـ مَولى رَسُولِ الله ﷺ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسولَ الله ﷺ يَقُولُ: «عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ ؛ فَإِنَّكَ لَنْ تَسْجُدَ للهِ سَجْدَةً إلاَّ رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرجَةً، وَحَطَّ عَنكَ بِهَا خَطِيئةً». رواه مسلم
১৩/১০৯। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খাদেম সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘তুমি অধিকাধিক সাজদাহ করাকে অভ্যাস বানিয়ে নাও। কারণ, তুমি যে কোন সাজদাহ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারায় তোমাকে মর্যাদায় এক ধাপ উঁচু করে দেবেন এবং তোমা থেকে একটি গোনাহ মিটিয়ে দেবেন।’’
14/110 عَنْ أَبِي صَفوَانَ عَبدِ اللهِ بنِ بُسْرٍ الأسلَمِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «خَيرُ النَّاسِ مَنْ طَالَ عُمُرهُ، وَحَسُنَ عَمَلُهُ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»
১৪/১১০। আবূ সাফওয়ান আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সর্বোত্তম মানুষ সেই ব্যক্তি যার বয়স দীর্ঘ হয় এবং আমল সুন্দর হয়।’’
ِرها . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৫/১১১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনে নাদর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! প্রথম যে যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর) আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি কী করব আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)।’ অতঃপর যখন উহুদের দিন এল, তখন মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! এরা অর্থাৎ সঙ্গীরা যা করল তার জন্য আমি তোমার নিকট ওযর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি।’ অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা‘দ ইবনে মু‘আযকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে সা‘দ ইবনে মু‘আয! জান্নাত! কা‘বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হতে তার সুগন্ধ পাচ্ছি।’ (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।) সা‘দ বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে যা করল, আমি তা পারলাম না।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমরা ধারণা করতাম যে, (সূরা আহযাবের ২৩নং) এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। ‘‘মু’মিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।’’
16/112 عَنْ أَبِي مَسعُودٍ عُقبَةَ بنِ عَمرٍو الأنصَارِي البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا نَزَلَتْ آيةُ الصَّدَقَةِ كُنَّا نُحَامِلُ عَلَى ظُهُورِنَا، فَجَاءَ رَجُلٌ فَتَصَدَّقَ بِشَيءٍ كَثيرٍ، فقالوا : مُراءٍ، وَجَاءَ رَجُلٌ آخَرُ فَتَصَدَّقَ بِصَاعٍ، فقالُوا : إنَّ اللهَ لَغَنيٌّ عَنْ صَاعِ هَذَا ! فَنَزَلَتْ : ﴿ ٱلَّذِينَ يَلۡمِزُونَ ٱلۡمُطَّوِّعِينَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ فِي ٱلصَّدَقَٰتِ وَٱلَّذِينَ لَا يَجِدُونَ إِلَّا جُهۡدَهُمۡ فَيَسۡخَرُونَ مِنۡهُمۡ سَخِرَ ٱللَّهُ مِنۡهُمۡ وَلَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ٧٩ ﴾ [التوبة: ٧٩] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، هذا لفظ البخاري
১৬/১১২। আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনে ‘আমর আনসারী বাদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন সাদকার আয়াত অবতীর্ণ হল, তখন (সাদকা করার জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে) আমরা নিজের পিঠে বোঝা বহন করতাম (অর্থাৎ মুটে-মজুরের কাজ করতাম)। অতঃপর এক ব্যক্তি এল এবং প্রচুর জিনিস সাদকাহ করল। মুনাফিকরা বলল, ‘এই ব্যক্তি রিয়াকার (লোককে দেখানোর জন্য দান করছে।)’ আর এক ব্যক্তি এল এবং সে এক সা’ (আড়াই কিলো) জিনিস দান করল। তারা বলল, ‘এ (ক্ষুদ্র) এক সা’ দানের আল্লাহ মুখাপেক্ষী নন।’ অতঃপর এই আয়াত অবতীর্ণ হলঃ ‘‘বিশ্বাসীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যারা সাদকা দান করে এবং যারা নিজ পরিশ্রম ব্যতিরেকে কিছুই পায় না, তাদেরকে যারা দোষারোপ করে এবং উপহাস করে, আল্লাহ তাদেরকে উপহাস করেন এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’’
17/113 عَنْ أَبِي ذَرٍّ جُندُبِ بنِ جُنَادَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ فِيمَا يَروِي عَنِ اللهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، أنَّهُ قَالَ : «يَا عِبَادي ! إنِّي حَرَّمْتُ الظُلْمَ عَلَى نَفْسي وَجَعَلْتُهُ بيْنَكم مُحَرَّماً فَلا تَظَالَمُوا . يَا عِبَادي ! كُلُّكُمْ ضَالّ إلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاستَهدُوني أهْدِكُمْ . يَا عِبَادي ! كُلُّكُمْ جَائِعٌ إلاَّ مَنْ أطْعَمْتُهُ فَاستَطعِمُوني أُطْعِمْكُمْ . يَا عِبَادي ! كُلُّكُمْ عَارٍ إلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فاسْتَكْسُونِي أكْسُكُمْ . يَا عِبَادي ! إنَّكُمْ تُخْطِئُونَ باللَّيلِ وَالنَّهارِ وَأَنَا أغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً فَاسْتَغْفِرُوني أغْفِرْ لَكُمْ . يَا عِبَادي! إنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضُرِّي فَتَضُرُّوني، وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفعِي فَتَنْفَعُوني . يَا عِبَادي ! لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذلِكَ في مُلكي شيئاً . يَا عِبَادي! لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا نَقَصَ ذلِكَ من مُلكي شيئاً. يَا عِبَادي! لَوْ أنَّ أوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا في صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَألُوني فَأعْطَيتُ كُلَّ إنْسَانٍ مَسْألَتَهُ مَا نَقَصَ ذلِكَ مِمَّا عِنْدِي إلاَّ كَمَا يَنْقصُ المِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ البَحْرَ . يَا عِبَادِي! إِنَّمَا هِيَ أعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا، فَمَنْ وَجَدَ خَيراً فَلْيَحْمَدِ الله، وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذلِكَ فَلا يَلُومَنَّ إلاَّ نَفْسَهُ».قَالَ سعيد : كَانَ أَبُو إدريس إِذَا حَدَّثَ بهذا الحديث جَثا عَلَى رُكبتيه . رواه مسلم
১৭/১১৩। আবূ যার্র জুন্দুব ইবন জুনাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সুমহান প্রভু হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (আল্লাহ) বলেন, ‘‘হে আমার বান্দারা! আমি অত্যাচারকে আমার নিজের জন্য হারাম করে দিয়েছি এবং আমি তা তোমাদের মাঝেও হারাম করলাম। সুতরাং তোমরাও একে অপরের প্রতি অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই পথভ্রষ্ট; কিন্তু সে নয় যাকে আমি সঠিক পথ দেখিয়েছি। অতএব তোমরা আমার নিকট সঠিক পথ চাও আমি তোমাদেরকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই ক্ষুধার্ত; কিন্তু সে নয় যাকে আমি খাবার দিই। সুতরাং তোমরা আমার কাছে খাবার চাও, আমি তোমাদেরকে খাবার দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই বস্ত্রহীন; কিন্তু সে নয় যাকে আমি বস্ত্র দান করেছি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে বস্ত্র চাও, আমি তোমাদেরকে বস্ত্রদান করব। হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত পাপ করে থাক, আর আমি সমস্ত পাপ ক্ষমা করে থাকি। সুতরাং তোমরা আমার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেব। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনো আমার অপকার করতে পারবে না এবং কখনো আমার উপকারও করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পরহেযগার ব্যক্তির হৃদয়ের মত হৃদয়বান হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছু বৃদ্ধি করতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ মানুষ ও জ্বিন সকলেই তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় একজন পাপীর হৃদয়ের মত হৃদয়ের অধিকারী হয়ে যায়, তাহলে এটা আমার রাজত্বের কোন কিছুই কমাতে পারবে না। হে আমার বান্দারা! যদি তোমাদের প্রথম ও শেষ তোমাদের মানুষ ও জ্বিন সকলেই একটি খোলা ময়দানে একত্রিত হয়ে আমার কাছে প্রার্থনা করে, আর আমি তাদের প্রত্যেককে তার প্রার্থিত জিনিস দান করি, তাহলে (এ দান) আমার কাছে যে ভান্ডার আছে, তা হতে ততটাই কম করতে পারবে, যতটা সূঁচ কোন সমুদ্রে ডুবালে তার পানি কমিয়ে থাকে। হে আমার বান্দারা! আমি তোমাদের কর্মসমূহ তোমাদের জন্য গুণে রাখছি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে তার পূর্ণ বিনিময় দেব। সুতরাং যে কল্যাণ পাবে, সে আল্লাহর প্রশংসা করুক। আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু (অর্থাৎ অকল্যাণ) পাবে, সে যেন নিজেকেই তিরস্কার করে।’’
(হাদীসের একজন বর্ণনাকারী) সাঈদ বলেন, আবূ ইদরীস (এই হাদীসের অন্য একজন বর্ণনাকারী) যখন এই হাদীস বর্ণনা করতেন, তখন হাঁটু গেড়ে বসে যেতেন।
12- بَابُ الْحَثِّ عَلَى الْاِزْدِيَادِ مِنْ الْخَيْرِ فِيْ أَوَاخِرِ الْعُمْرِ
পরিচ্ছেদ - ১২ : শেষ বয়সে অধিক পরিমাণে পুণ্য করার প্রতি উৎসাহ দান
আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন,
﴿ أَوَ لَمۡ نُعَمِّرۡكُم مَّا يَتَذَكَّرُ فِيهِ مَن تَذَكَّرَ وَجَآءَكُمُ ٱلنَّذِيرُۖ ﴾ [فاطر: ٣٧]
অর্থাৎ “আমি কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্রহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্রহণ করতে পারত? তোমাদের নিকট তো সতর্ককারীও এসেছিল।” (সূরা ফাত্বির ৩৭ আয়াত)
ইবনে আব্বাস ও সত্যানুসন্ধানী আলেমগণ বলেন, আয়াতের অর্থ এই যে, আমরা কি তোমাদেরকে ৬০ বছর বয়স দিইনি? পরবর্তী হাদীসটি এই অর্থের কথা সমর্থন করে। কেউ বলেন যে, এর অর্থ ১৮ বছর। আর কিছু লোক ৪০ বছর বলেন। এটি হাসান (বাসরী) কালবী ও মাসরুকের মত। বরং এ কথা ইবনে আব্বাস থেকেও বর্ণিত হয়েছে। তাঁরা বলেন যে, যখন কোনো মদীনাবাসী চল্লিশ বছর বয়সে পদার্পণ করেন, তখন তিনি নিজেকে ইবাদতের জন্য মুক্ত করেন। কিছু লোক এর অর্থ পরিণত বয়স করেছেন। আর আল্লাহর বাণীতে উক্ত ‘সতর্ককারী’ বলতে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও বেশীরভাগ আলেমের মতে স্বয়ং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। কিছু লোকের নিকট সতর্ককারী হল বার্ধক্য। এটা ইকরিমাহ্, ইবনে ‘উয়াইনাহ ও অন্যান্যদের মত।
এ মর্মে হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/114 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «أَعْذَرَ الله إِلَى امْرِئٍ أَخَّرَ أجَلَهُ حَتَّى بَلَغَ سِتِّينَ سَنَةً». رواه البخاري
১/১১৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির জন্য কোন ওজর পেশ করার অবকাশ রাখেন না (অর্থাৎ ওজর গ্রহণ করবেন না), যার মৃত্যুকে তিনি এত পিছিয়ে দিলেন যে, সে ৬০ বছর বয়সে পৌঁছল।’’
আলেমগণ বলেন, ‘এই বয়সে পৌঁছে গেলে ওজর-আপত্তি পেশ করার আর কোনো সুযোগ থাকবে না।’
2/115عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : كَانَ عُمَرُ رضي الله عنه يُدْخِلُنِي مَعَ أَشْيَاخِ بَدرٍ فَكَأَنَّ بَعْضَهُمْ وَجَدَ في نفسِهِ، فَقَالَ : لِمَ يَدْخُلُ هَذَا معنا ولَنَا أبْنَاءٌ مِثلُهُ ؟! فَقَالَ عُمَرُ : إنَّهُ مَنْ حَيثُ عَلِمْتُمْ ! فَدعانِي ذاتَ يَومٍ فَأدْخَلَنِي مَعَهُمْ فَمَا رَأيتُ أَنَّهُ دَعَاني يَومَئذٍ إلاَّ لِيُرِيَهُمْ، قَالَ : مَا تَقُولُونَ في قَولِ الله : ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ [النصر: ١] فَقَالَ بعضهم : أُمِرْنَا نَحْمَدُ اللهَ وَنَسْتَغْفِرُهُ إِذَا نَصَرنَا وَفَتحَ عَلَيْنَا، وَسَكتَ بَعْضُهُمْ فَلَمْ يَقُلْ شَيئاً . فَقَالَ لي : أَكَذلِكَ تقُولُ يَا ابنَ عباسٍ ؟ فقلت : لا. قَالَ : فَمَا تَقُولُ ؟ قُلْتُ : هُوَ أجَلُ رَسُولِ الله ﷺ أعلَمَهُ لَهُ، قَالَ : ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ [النصر: ١] وَذَلِكَ عَلاَمَةُ أجَلِكَ ﴿ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابَۢا ٣ ﴾ [النصر: ٣] فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه: مَا أعلَمُ مِنْهَا إلاَّ مَا تَقُولُ . رواه البخاري
২/১১৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন যে, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে (তাঁর সভায়) প্রবেশ করাতেন। তাঁদের মধ্যে কিছু লোক যেন মনে মনে ক্ষুণ্ণ হলেন। অতএব বললেন, ‘এ আমাদের সঙ্গে কেন প্রবেশ করছে? এর মত (সমবয়স্ক) ছেলে তো আমাদেরও আছে।’ (এ কথা শুনে) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘এ কে, তা তোমরা জান।’ সুতরাং তিনি একদিন আমাকে ডাকলেন এবং আমাকে তাঁদের সঙ্গে (সভায়) প্রবেশ করালেন। আমার ধারণা ছিল যে, এদিন আমাকে ডাকার উদ্দেশ্য হল, তাদেরকে আমার মর্যাদা দেখানো। তিনি (পরীক্ষাস্বরূপ সভার লোককে) বললেন, ‘তোমরা আল্লাহর এই কথা ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় উপস্থিত হবে।’’ (সূরা নাসর: ১ আয়াত) এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে কী বলছ?’ কিছু লোক বললেন, ‘আমাদেরকে এতে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য ও বিজয় দান করবেন, তখন যেন আমরা তাঁর প্রশংসা করি ও তাঁর কাছে ক্ষমা চাই।’ আর কিছু লোক নিরুত্তর থাকলেন; তাঁরা কিছুই বললেন না। (ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘হে ইবনে আব্বাস! তুমিও কি এ কথাই বলছ?’ আমি বললাম, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি (এর ব্যাখ্যা) কী বলছ?’ আমি বললাম, ‘তা হল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যু সংবাদ, যা আল্লাহ তাঁকে জানিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘‘যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় সমাগত হবে।’’ আর সেটা হল তোমার মৃত্যুর পূর্বলক্ষণ। ‘‘তখন তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর ও তাঁর কাছে সবীয় ত্রুটির জন্য ক্ষমা চাও। নিশ্চয়ই তিনি তওবা গ্রহণকারী।’’ (সূরা নাসর: ৩ আয়াত) অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এর অর্থ আমি তাই জানি, যা তুমি বললে।
3/116 عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : مَا صَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ صَلاةً بَعْدَ أَنْ نَزَلتْ عَلَيهِ : ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ إلاَّ يَقُولُ فِيهَا : «سُبحَانَكَ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللهم اغْفِرْ لي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ عَنهَا : كَانَ رَسُولُ الله ﷺ يُكْثِرُ أنْ يقُولَ في رُكُوعِه وسُجُودهِ: «سُبْحَانَكَ اَللهم رَبَّنَا وَبِحَمدِكَ، اَللهم اغْفِرْ لِي»، يَتَأوَّلُ القُرآنَ . معنى: «يَتَأَوَّلُ القُرآنَ»أي يعمل مَا أُمِرَ بِهِ في القرآن في قوله تَعَالَى : ﴿ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ﴾ [النصر: ٣]
وفي رواية لَهُ : كَانَ رسولُ الله ﷺ يُكثِرُ مِنْ قَولِ: «سبْحَانَ اللهِ وَبِحَمدِهِ أسْتَغفِرُ اللهَ وأتُوبُ إِلَيْهِ».قَالَتْ : قُلْتُ : يَا رسولَ اللهِ، أَراكَ تُكثِرُ مِنْ قَولِ سُبحَانَ اللهِ وَبِحَمدهِ أسْتَغْفِرُ اللهَ وأتُوبُ إِلَيْه ؟ فَقَالَ: «أخبَرَني رَبِّي أنِّي سَأرَى عَلامَةً في أُمَّتي فإذا رَأيْتُها أكْثَرْتُ مِنْ قَولِ: سُبْحَانَ اللهِ وبِحَمدهِ أسْتَغْفرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْه فَقَدْ رَأَيْتُهَا: ﴿ إِذَا جَآءَ نَصۡرُ ٱللَّهِ وَٱلۡفَتۡحُ ١ ﴾ فتح مكّة، ﴿ وَرَأَيۡتَ ٱلنَّاسَ يَدۡخُلُونَ فِي دِينِ ٱللَّهِ أَفۡوَاجٗا ٢ فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ وَٱسۡتَغۡفِرۡهُۚ إِنَّهُۥ كَانَ تَوَّابَۢا ٣ ﴾ [النصر: ٢، ٣]
৩/১১৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ’ অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাযে অবশ্যই এই (দো‘আ) পড়তেন ‘সুবহানাকা রাব্বানা অবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী’ (অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু! আমরা তোমার প্রশংসায় তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর। (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহায়নের তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রুকু ও সাজদায় অধিকাধিক ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগফিরলী’ পড়তেন। তিনি কুরআনের হুকুম তামিল করতেন। অর্থাৎ এই দো‘আ পড়ে তিনি কুরআনে বর্ণিত ‘‘(হে নবী) তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর এবং তাঁর কাছে ক্ষমা চাও।’’ আল্লাহর এই আদেশ পালন করতেন।
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অধিক পরিমাণে (এই দো‘আ) পড়তেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা অবিহামদিকা আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলায়ক।’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এই শব্দগুলো কী, যেগুলোকে আমি আপনাকে নতুন করে পড়তে দেখছি?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার জন্য আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে, যখন আমি তা দেখব তখন এটি পড়ব। (চিহ্নটি হল) ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি ওয়াল-ফাতহ---- শেষ সূরা পর্যন্ত।’’
মুসলিমের আর একটি বর্ণনায় আছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী পড়তেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে বেশী বেশী ‘‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’’ (দো‘আটি) পড়তে দেখছি (কী ব্যাপার)?’ তিনি বললেন, ‘‘আমার প্রভু আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, আমি শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে একটি চিহ্ন দেখব। সুতরাং আমি যখন তা দেখব, তখন ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, আস্তাগফিরুল্লাহা অআতূবু ইলাইহ’ (দো‘আটি) বেশী বেশী পড়ব। এখন আমি তা দেখে নিয়েছি, ‘ইযা জা-আ নাসরুল্লাহি অলফাত্হ।’ যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। অর্থাৎ মক্কাবিজয়। আর তুমি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবে। তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর এবং তাঁর সমীপে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি অধিক তওবা গ্রহণকারী।
4/117 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : إِنَّ اللهَ - عَزَّ وَجَلّ - تَابَعَ الوَحيَ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ قَبلَ وَفَاتهِ حَتَّى تُوُفِّيَ أكْثَرَ مَا كَانَ الوَحْيَ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/১১৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মৃত্যুর পূর্বে (পূর্বাপেক্ষা) বেশী অহী নিরবচ্ছিন্নভাবে অবতীর্ণ করেছেন।
5/118 عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «يُبْعَثُ كُلُّ عَبْدٍ عَلَى مَا مَاتَ عَلَيهِ». رواه مسلم
৫/১১৮। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (কিয়ামতের দিন) প্রত্যেক ব্যক্তিকে ঐ অবস্থায় উঠানো হবে, যে অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করেছে।
13- بَابُ فِيْ بَيَانِ كَثْرَةِ طُرُقِ الْخَيْرِ
পরিচ্ছেদ -১৩ : পুণ্যের পথ অনেক
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ﴾ [البقرة: ٢١٥]
অর্থাৎ “তোমরা যে কোন সৎকাজ কর না কেন, আল্লাহ তা সম্যকরূপে অবগত।”(সূরা বাক্বারা ২১৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يَعۡلَمۡهُ ٱللَّهُۗ ﴾ [البقرة: ١٩٧]
অর্থাৎ “তোমরা যে সৎকাজ কর, আল্লাহ তা জানেন।” (আল-বাক্বারাহ: ১৯৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ ﴾ [الزلزلة: ٧]
অর্থাৎ “কেউ অণু পরিমাণ সৎকর্ম করে থাকলেও সে তা দেখতে পাবে।” (সূরা যিলযাল ৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ مَنۡ عَمِلَ صَٰلِحٗا فَلِنَفۡسِهِۦۖ ﴾ [الجاثية: ١٥]
অর্থাৎ “যে সৎকাজ করে, সে নিজ কল্যাণের জন্যই তা করে।” (সূরা জাসিয়াহ ১৫ আয়াত)
এ বিষয়ে আয়াত অনেক রয়েছে এবং হাদীসও অগণিত রয়েছে। তার মধ্যে কিছু আমরা বর্ণনা করব।
1/119 عَنْ أَبِي ذَرٍّ جُنْدبِ بنِ جُنَادَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، أيُّ الأَعْمَالِ أفْضَلُ ؟ قَالَ: «الإيمانُ باللهِ وَالجِهادُ في سَبيلِهِ».قُلْتُ : أيُّ الرِّقَابِ أفْضَلُ ؟ قَالَ: «أنْفَسُهَا عِنْدَ أهلِهَا وَأكثَرهَا ثَمَناً».قُلْتُ : فإنْ لَمْ أفْعَلْ ؟ قَالَ: «تُعِينُ صَانِعاً أَوْ تَصْنَعُ لأََِخْرَقَ».قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، أرأيْتَ إنْ ضَعُفْتُ عَنْ بَعْضِ العَمَلِ ؟ قَالَ: «تَكُفُّ شَرَّكَ عَنِ النَّاسِ؛ فإنَّهَا صَدَقَةٌ مِنْكَ عَلَى نَفْسِكَ».مُتَّفَقٌ عليه
১/১১৯। আবূ যার্র জুনদুব ইবন জুনাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন্ আমল সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা ও তাঁর পথে জিহাদ করা।’’ আমি বললাম, ‘কোন্ গোলাম (কৃতদাস) স্বাধীন করা সর্বোত্তম?’ তিনি বললেন, ‘‘যে তার মালিকের দৃষ্টিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অধিক মূল্যবান।’’ আমি বললাম, ‘যদি আমি এ সব (কাজ) করতে না পারি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কোন কারিগরের সহযোগিতা করবে অথবা অকর্মন্যের কাজ করে দেবে।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (এর) কিছু কাজে অক্ষম হই (তাহলে কি করব)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি মানুষের উপর থেকে তোমার মন্দকে নিবৃত্ত কর। তাহলে তা হবে তোমার পক্ষ থেকে তোমার নিজের জন্য সাদকাহস্বরূপ।’’
2/120 عَنْ أَبِي ذَرٍّ أيضاً رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلامَى منْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ : فَكُلُّ تَسبيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحمِيدةٍ صَدَقَة، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكبيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأمْرٌ بِالمعرُوفِ صَدَقةٌ، ونَهيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقةٌ، وَيُجزِىءُ مِنْ ذلِكَ رَكْعَتَانِ يَركَعُهُما مِنَ الضُّحَى». رواه مسلم
২/১২০। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সাদকাহ রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সাদকাহ এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশ্তের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।’’
3/121 عَنْهُ، قَالَ : قَالَ النَّبيُّ ﷺ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ أعْمَالُ أُمَّتِي حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْتُ في مَحَاسِنِ أعْمَالِهَا الأذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّريقِ، وَوَجَدْتُ في مَسَاوِىءِ أَعمَالِهَا النُّخَاعَةَ تَكُونُ في المَسْجِدِ لاَ تُدْفَنُ». رواه مسلم
৩/১২১। ঐ আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের ভালমন্দ কর্ম আমার কাছে পেশ করা হল। সুতরাং আমি তাদের ভাল কাজের মধ্যে ঐ কষ্টদায়ক জিনিসও পেলাম, যা রাস্তা থেকে সরানো হয়। আর তাদের মন্দ কর্মসমূহের তালিকায় মসজিদে ঐ কফও পেলাম, যার উপর মাটি চাপা দেওয়া হয়নি।’’
* মাটি চাপা দেওয়ার কথা তিনি এই জন্য বলেছেন যে, সে যুগে মসজিদের মেঝে মাটিরই ছিল। বর্তমানে পাকা মেঝে কাপড় অথবা পানি দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
4/122 وَعَنْهُ : أَنَّ نَاساً قَالُوا : يَا رَسُولَ الله، ذَهَبَ أهلُ الدُّثُور بالأُجُورِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَيَتَصَدَّقُونَ بِفُضُولِ أمْوَالِهِمْ، قَالَ: «أَوَلَيسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَدَّقُونَ بِهِ: إنَّ بِكُلِّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقةً، وَكُلِّ تَكبيرَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَحمِيدَةٍ صَدَقَةً، وَكُلِّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةً، وَأمْرٌ بالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وفي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ» قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ، أيَأتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أجْرٌ ؟ قَالَ: «أرَأيتُمْ لَوْ وَضَعَهَا في حَرامٍ أَكَانَ عَلَيهِ وِزرٌ ؟ فكذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا في الحَلالِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ». رواه مسلم
৪/১২২। উক্ত বর্ণনাকারী থেকেই বর্ণিত, কিছু সাহাবী বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারা সাদকাহ করছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজের নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদের স্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন করে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারণ করে, তবে এতেও কি তার পুণ্য হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয় হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারণ করে, তাহলে তাতে তার পুণ্য হবে।’’
5/123 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ لِي النَّبيُّ ﷺ: «لاَ تَحْقِرنَّ مِنَ المَعرُوفِ شَيئاً وَلَوْ أَنْ تَلقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَليقٍ». رواه مسلم
৫/১২৩। উক্ত আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)।
6/124 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «كُلُّ سُلامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَومٍ تَطلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ : تَعْدِلُ بَينَ الاثْنَينِ صَدَقةٌ، وتُعِينُ الرَّجُلَ في دَابَّتِهِ، فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالكَلِمَةُ الطَيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وبكلِّ خَطْوَةٍ تَمشيهَا إِلَى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ، وتُميطُ الأذَى عَنِ الطَّريقِ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
ورواه مسلم أيضاً من رواية عائشة رَضي الله عنها، قَالَتْ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «إنَّهُ خُلِقَ كُلُّ إنْسَانٍ مِنْ بَنِي آدَمَ عَلَى سِتِّينَ وثلاثمئة مفْصَل، فَمَنْ كَبَّرَ اللهَ، وحَمِدَ الله، وَهَلَّلَ اللهَ، وَسَبَّحَ الله، وَاسْتَغْفَرَ الله، وَعَزَلَ حَجَراً عَنْ طَريقِ النَّاسِ، أَوْ شَوْكَةً، أَوْ عَظماً عَن طَريقِ النَّاسِ، أَوْ أمَرَ بمَعْرُوف، أَوْ نَهَى عَنْ مُنكَر، عَدَدَ السِّتِّينَ والثَّلاثِمئَة فَإنَّهُ يُمْسِي يَومَئِذٍ وقَدْ زَحْزَحَ نَفسَهُ عَنِ النَّارِ».
৬/১২৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে। (আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’
এটিকে ইমাম মুসলিম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।) সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহু আকবার’ বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকে পাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সব মিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল), সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।’’
7/125 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ غَدَا إِلَى المَسْجِد أَوْ رَاحَ، أَعَدَّ اللهُ لَهُ في الجَنَّةِ نُزُلاً كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/১২৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করেন। সকাল বা সন্ধা যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানীর উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।’’
8/126 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «يَا نِسَاءَ المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شاةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/১২৬। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মুসলিম নারীগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) অবশ্যই তুচ্ছ না ভাবে। যদিও তা ছাগলের খুর হয়।’’
9/127 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «الإيمانُ بِضْعٌ وَسَبعُونَ أَوْ بِضعٌ وسِتُونَ شُعْبَةً : فَأفْضَلُهَا قَولُ : لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأَدْنَاهَا إمَاطَةُ الأذَى عَنِ الطَّريقِ، والحياءُ شُعبَةٌ مِنَ الإيمان». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/১২৭। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাটের বেশী শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম (শাখা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন (শাখা) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (পাথর কাঁটা ইত্যাদি) দূরীভূত করা। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’
10/128 وعَنْهُ : أنَّ رَسُول الله ﷺ، قَالَ: «بَينَما رَجُلٌ يَمشي بِطَريقٍ اشْتَدَّ عَلَيهِ العَطَشُ، فَوَجَدَ بِئراً فَنَزَلَ فِيهَا فَشرِبَ، ثُمَّ خَرَجَ فإذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ يأكُلُ الثَّرَى مِنَ العَطَشِ، فَقَالَ الرَّجُلُ : لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الكَلْبُ مِنَ العَطَشِ مِثلُ الَّذِي كَانَ قَدْ بَلَغَ مِنِّي، فَنَزَلَ البِئْرَ فَمَلأَ خُفَّهُ مَاءً ثُمَّ أمْسَكَهُ بفيهِ حَتَّى رَقِيَ، فَسَقَى الكَلْبَ، فَشَكَرَ الله لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ»قالوا : يَا رَسُول اللهِ، إنَّ لَنَا في البَهَائِمِ أَجْراً ؟ فقَالَ: «في كُلِّ كَبِدٍ رَطْبَةٍ أجْرٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية للبخاري: «فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ، فأدْخَلَهُ الجَنَّةَ»وفي رواية لهما: «بَيْنَما كَلْبٌ يُطِيفُ بِرَكِيَّةٍ قَدْ كَادَ يقتلُهُ العَطَشُ إِذْ رَأَتْهُ بَغِيٌّ مِنْ بَغَايَا بَنِي إسْرَائِيل، فَنَزَعَتْ مُوقَها فَاسْتَقَتْ لَهُ بِهِ فَسَقَتْهُ فَغُفِرَ لَهَا بِهِ».
১০/১২৮। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘একদা এক ব্যক্তি পথ চলছিল। তাকে খুবই পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল। সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের হয়ে দেখতে পেল যে, (ওখানেই) একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাচ্ছে ও কাদা চাটছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, ‘পিপাসার তাড়নায় আমি যে পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম, কুকুরটিও সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি ভর্তি করল। অতঃপর সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’’
সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী রয়েছে।’’
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।’’
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কোন এক সময় একটি কুকুর একটি কূপের চারিপাশে ঘোরা-ফিরা করছিল। পিপাসা তাকে মৃতপ্রায় করে তুলেছিল। (এই অবস্থায়) হঠাৎ বনী ঈস্রাঈলের বেশ্যাদের মধ্যে এক বেশ্যা তাকে দেখতে পেল। অতঃপর সে তার চামড়ার মোজা খুলে তা হতে (কূপ থেকে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। সুতরাং এই আমলের কারণে তাকে ক্ষমা করা হল।’’
11/129 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لَقدْ رَأيْتُ رَجُلاً يَتَقَلَّبُ في الجَنَّةِ في شَجَرَةٍ قَطَعَهَا مِنْ ظَهْرِ الطَرِيقِ كَانَتْ تُؤذِي المُسْلِمِينَ». رواه مسلم
وفي رواية: «مَرَّ رَجُلٌ بِغُصْنِ شَجَرَةٍ عَلَى ظَهرِ طَرِيقٍ، فَقَالَ : وَاللهِ لأُنْحِيَنَّ هَذَا عَنِ المُسْلِمينَ لاَ يُؤذِيهِمْ، فَأُدخِلَ الجَنَّةَ».وفي رواية لهما: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشي بِطَريقٍ وَجَدَ غُصْنَ شَوكٍ عَلَى الطريقِ فأخَّرَه فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ».
১১/১২৯। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্য হতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মুসলিমদেরকে কষ্ট দিচ্ছিল।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘এক ব্যক্তি রাস্তার উপর পড়ে থাকা একটি গাছের ডালের পাশ দিয়ে পার হল। সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি এটিকে মুসলিমদের পথ থেকে অবশ্যই সরিয়ে দেব; যাতে তাদেরকে কষ্ট না দেয়। সুতরাং তাকে (এর কারণে) জান্নাতে প্রবেশ করানো হল।’’
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘একদা এক ব্যক্তি রাস্তা চলছিল। সে রাস্তার উপর একটি কাঁটাদার ডাল দেখতে পেল। অতঃপর সে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তা‘আলা তার এই আমল কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।’’
12/130 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمَّ أَتَى الجُمُعَةَ فَاسْتَمَعَ وَأنْصَتَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْن الجُمُعَةِ وَزِيادَةُ ثَلاثَةِ أيَّامٍ، وَمَنْ مَسَّ الحَصَا فَقَدْ لَغَا». رواه مسلم
১২/১৩০। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযূ করল, অতঃপর জুমআহ পড়তে এল এবং মনোযোগ সহকারে নীরব থেকে খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুমআহ ও (আগামী) জুমআর মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট) পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া হল। আর যে ব্যক্তি (খুৎবাহ্ চলাকালীন সময়ে) কাঁকর স্পর্শ করল, সে অনর্থক কর্ম করল।’’ (অর্থাৎ সে জুমআর সওয়াব বরবাদ করে দিল।)
13/131 وعَنْهُ : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «إِذَا تَوَضَّأ العَبْدُ المُسْلِمُ، أَو المُؤمِنُ فَغَسَلَ وَجْهَهُ خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَينيهِ مَعَ المَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ، فَإِذا غَسَلَ يَدَيْهِ خَرَجَ مِنْ يَدَيهِ كُلُّ خَطِيئَة كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ المَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ، فَإِذَا غَسَلَ رِجْلَيهِ خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مشتها رِجْلاَهُ مَعَ المَاء أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيّاً مِنَ الذُّنُوبِ». رواه مسلم
১৩/১৩১। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলিম বা মু’মিন বান্দা যখন ওযূর উদ্দেশ্যে তার মুখমণ্ডল ধৌত করে, তখন ওযূর পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে দুই চক্ষুর দৃষ্টির মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার হাত দু’টিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে যায়, যা সে উভয় হাত দ্বারা ধারণ করার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। অতঃপর যখন সে তার পা দুটিকে ধৌত করে, তখন পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে প্রত্যেক সেই গোনাহ বের হয়ে, যা সে তার দু’পায়ে চলার মাধ্যমে করে ফেলেছিল। শেষ অবধি সমস্ত গোনাহ থেকে সে পবিত্র হয়ে বের হয়ে আসে।’’
14/132 وعَنْهُ، عَن رَسُولِ الله ﷺ، قَالَ: «الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّراتٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ». رواه مسلم
১৪/১৩২। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমআহ থেকে আর এক জুমআহ এবং এক রমযান থেকে আর এক রমযান, এগুলো এর মধ্যকার (সংঘটিত সাগীরা) গোনাহ মুছে ফেলে; যদি কাবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় তাহলে (নতুবা নয়)।’’
15/133 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «ألا أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟» قَالُوا : بَلَى، يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «إِسْبَاغُ الوُضُوءِ عَلَى المَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الخُطَا إِلَى المَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاةِ بَعْدَ الصَّلاةِ فَذلِكُمُ الرِّبَاطُ». رواه مسلم
১৫/১৩৩। উক্ত আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা পাপসমূহকে নিশ্চিহ্ন করে দেন এবং মর্যাদা বর্ধন করেন?’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘অবশ্যই বলুন, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘কষ্টের সময় পূর্ণরূপে ওযূ করা, মসজিদের দিকে বেশী বেশী পদক্ষেপ করা (অর্থাৎ দূর থেকে আসা) এবং এক নামাযের পর দ্বিতীয় নামাযের অপেক্ষা করা। সুতরাং এই হল (নেকী ও সওয়াবে) সীমান্ত পাহারা দেওয়ার মত।’’
16/134 وعَنْ أَبِي مُوسى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسولُ الله ﷺ: «مَنْ صَلَّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/১৩৪। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দুই ঠান্ডা (অর্থাৎ ফজর ও আসরের) নামায পড়বে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’
17/135 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إِذَا مَرِضَ العَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيماً صَحِيحاً». رواه البخاري
১৭/১৩৫। উক্ত আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন বান্দা অসুস্থ হয় অথবা সফরে থাকে, তখন তার জন্য ঐ আমলের মতই (সওয়াব) লেখা হয়, যা সে গৃহে থেকে সুস্থ শরীরে সম্পাদন করত।’’
18/136 وعن جَابرٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رسولُ الله ﷺ: «كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ». رواه البخاري
১৮/১৩৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক নেকীর কাজ সাদকাহস্বরূপ।’’
19/137 وعَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَغْرِسُ غَرْساً إلاَّ كَانَ مَا أُكِلَ مِنْهُ لَهُ صَدَقَةً، وَمَا سُرِقَ مِنهُ لَهُ صَدَقَةً، وَلاَ يَرْزَؤُهُ أَحَدٌ إلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقَةً». رواه مسلم
وفي رواية لَهُ: «فَلاَ يَغْرِسُ المُسْلِمُ غَرْساً فَيَأْكُلَ مِنْهُ إنْسَانٌ وَلاَ دَابَّةٌ وَلاَ طَيْرٌ إلاَّ كَانَ لَهُ صَدَقة إِلَى يَومِ القِيَامةِ».وفي رواية لَهُ: «لاَ يَغرِسُ مُسْلِمٌ غَرساً، وَلاَ يَزرَعُ زَرعاً، فَيَأكُلَ مِنهُ إنْسَانٌ وَلاَ دَابَةٌ وَلاَ شَيءٌ، إلاَّ كَانَتْ لَهُ صَدَقَةً».
১৯/১৩৭। উক্ত জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে কোন মুসলিম কোন গাছ লাগায়, অতঃপর তা থেকে যতটা খাওয়া হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয়, তা থেকে যতটুকু চুরি হয়, তা তার জন্য সাদকাহ হয় এবং যে কোনো ব্যক্তি তার থেকে কিছু গ্রহণ করে, সেটাও তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।’’
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিম যে গাছ লাগায়, আর তা থেকে কোনো মানুষ, কোনো জন্তু এবং কোনো পাখী যা কিছু খায়, তা কিয়ামত পর্যন্ত তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।’’
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিম যে গাছ লাগায় এবং ফসল বুনে অতঃপর তা থেকে কোনো মানুষ, কোন জন্তু অথবা অন্য কিছু খায়, তবে তা তার জন্য সাদকাহ হয়ে যায়।’’
19/138 ورويَاه جميعاً مِنْ رواية أَنَسٍ رضي اللَّه عنه قولُهُ: «يرْزَؤُهُ»أي : يَنْقُصهُ .
১৯/১৩৮। উক্ত হাদীসটি বুখারী-মুসলিম উভয়েই আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন যাতে يَرْزَؤُهُ শব্দ আছে, যার অর্থ ‘কোনো কিছু কমিয়ে ফেলে’।
20/139 وعَنْهُ، قَالَ : أَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَن يَنتَقِلُوا قُربَ المَسجِدِ فَبَلَغَ ذَلِكَ رَسُولَ الله ﷺ، فَقَالَ لهم: «إنَّهُ قَدْ بَلَغَني أنَّكُمْ تُرِيدُونَ أنْ تَنتَقِلُوا قُربَ المَسجِد ؟»فقالُوا : نَعَمْ، يَا رَسُول اللهِ قَدْ أَرَدْنَا ذلِكَ . فَقَالَ: «بَنِي سَلِمَةَ، دِيَارَكُمْ، تُكْتَبْ آثَارُكُمْ، ديَارَكُمْ تُكْتَبْ آثَارُكُمْ»رواه مسلم . وفي روايةٍ: «إنَّ بِكُلِّ خَطوَةٍ دَرَجَةً». رواه مسلم . رواه البخاري أيضاً بِمَعناه مِنْ رواية أنس رضي الله عنه .
২০/১৩৯। উক্ত জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত যে, বনু সালেমাহ মাসজিদের নিকটে স্থান পরিবর্তন করার ইচ্ছা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই সংবাদ পৌঁছল। সুতরাং তিনি তাদেরকে বললেন, ‘‘আমি খবর পেয়েছি যে, তোমরা স্থান পরিবর্তন করে মাসজিদের নিকট আসার ইচ্ছা করছ?’’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা এর ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বললেন, ‘‘হে বনূ সালেমাহ! তোমরা তোমাদের (বর্তমান) গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে। তোমরা আপন গৃহেই থাকো; তোমাদের পদচিহ্নসমূহ লেখা হবে।’’ (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের প্রত্যেক পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি হবে।’’
১৪০। ইমাম বুখারী (রহঃ)ও ঐ মর্মে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণনা করেছেন।
20/141 وعَنْ أَبِي الْمُنذِر أُبيِّ بنِ كَعْب رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ رَجُلٌ لا أعْلَمُ رَجلاً أبْعَدَ مِنَ المَسْجِدِ مِنْهُ، وَكَانَ لاَ تُخْطِئُهُ صَلاةٌ، فَقيلَ لَهُ أَوْ فَقُلْتُ لَهُ: لَوِ اشْتَرَيْتَ حِمَاراً تَرْكَبُهُ في الظَلْمَاء وفي الرَّمْضَاء ؟ فَقَالَ: مَا يَسُرُّنِي أنَّ مَنْزِلي إِلَى جَنْبِ المَسْجِدِ إنِّي أريدُ أنْ يُكْتَبَ لِي مَمشَايَ إِلَى المَسْجِدِ وَرُجُوعِي إِذَا رَجَعْتُ إِلَى أهْلِي، فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «قَدْ جَمَعَ اللهُ لَكَ ذلِكَ كُلَّهُ». رواه مسلم. وفي رواية: «إنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ».
২১/১৪১। আবুল মুনযির উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, একটি লোক ছিল। আমি জানি না যে, অন্য কারো বাড়ি তার বাড়ির চেয়ে দূরে ছিল। তা সত্ত্বেও তার কোনো নামায ছুটত না। অতঃপর তাকে বলা হল অথবা আমি (কা’ব) তাকে বললাম যে, ‘তুমি যদি একটি গাধা কিনে আঁধারে ও ভীষণ রোদে তার উপর সওয়ার হয়ে আসতে, (তাহলে তা তোমার পক্ষে ভাল হত?)’ সে বলল, ‘আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার বাড়ি মসজিদ সংলগ্নে হোক। কারণ আমি তো এই চাই যে, (দূর থেকে) আমার পায়ে হেঁটে মসজিদ যাওয়া এবং ওখান থেকেই পুনরায় বাড়ী ফিরা, সবকিছু যেন আমার নেকীর খাতায় লেখা যায়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার কথা শুনে) বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এ সমস্ত তোমার জন্য একত্র করে দিয়েছেন।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় তোমার জন্য সেই সওয়াবই রয়েছে, যার তুমি আশা করেছ।’’
22/142 عَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «أرْبَعُونَ خَصْلَةً: أعْلاَهَا مَنيحَةُ العَنْزِ، مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بِخَصْلَة مِنْهَا؛ رَجَاءَ ثَوَابِهَا وتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا، إلاَّ أدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الجَنَّةَ». رواه البخاري
২২/১৪২। আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবন ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চল্লিশটি সৎকর্ম আছে তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোনো আমলকারী এর মধ্য হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’
23/143 عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه، قَالَ : سَمِعتُ النَّبيّ ﷺ، يَقُولُ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ. وَفي رِوَايَةٍ لَّهُمَا عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ، فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ».
২৩/১৪৩। আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’ (বুখারী-মুসলিম)
উক্ত আদী হতে বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোনো আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল এবং বামদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়। আর যে ব্যক্তি এরও সামর্থ্য রাখে না, সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে।’’
24/144 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنَّ اللهَ لَيَرْضَى عَنِ العَبْدِ أنْ يَأكُلَ الأَكْلَةَ، فَيَحمَدَهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ، فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا». رواه مسلم
২৪/১৪৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে খাবার খায়, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা পানি পান করে, অতঃপর তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে।’’
25/145 عَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «عَلَى كلّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ».قَالَ : أرأيتَ إنْ لَمْ يَجِدْ ؟ قَالَ: «يَعْمَلُ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ» قَالَ : أرأيتَ إن لَمْ يَسْتَطِعْ ؟ قَالَ: «يُعِينُ ذَا الحَاجَةِ المَلْهُوفَ» قَالَ : أرأيتَ إنْ لَمْ يَسْتَطِعْ، قَالَ: «يَأمُرُ بِالمعْرُوفِ أوِ الخَيْرِ»قَالَ : أرَأيْتَ إنْ لَمْ يَفْعَلْ ؟ قَالَ: «يُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ، فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
২৫/১৪৫। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রত্যেক মুসলিমর উপর সাদকাহ করা জরুরী।’’ আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, ‘যদি সে সাদকাহ করার মত কিছু না পায় তাহলে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে তার হাত দ্বারা কাজ করে (অর্থ উপার্জন করবে) অতঃপর তা থেকে সে নিজে উপকৃত হবে এবং সাদকাও করবে।’’ পুনরায় আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে কোন অভাবী বিপন্ন মানুষের সাহায্য করবে।’’ আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যদি সে তাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে মানুষকে ভাল কাজের নির্দেশ দেবে।’’ আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যদি সে এটাও না পারে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে (অপরের) ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকবে। কারণ, সেটাও হল সাদকাহস্বরূপ।’’
14- بَابُ فِي الاِقْتِصَادِ فِي الْعِبَادَةِ
পরিচ্ছেদ -১৪ : ইবাদতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ طه ١ مَآ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكَ ٱلۡقُرۡءَانَ لِتَشۡقَىٰٓ ٢ ﴾ [طه: ١، ٢]
অর্থাৎ “ত্বা-হা-। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।” (সূরা ত্বাহা ১-২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يُرِيدُ ٱللَّهُ بِكُمُ ٱلۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ ٱلۡعُسۡرَ ﴾ [البقرة: ١٨٥]
অর্থাৎ “আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা তাঁর কাম্য নয়।” (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫ আয়াত)
1/146 وعن عائشة رضي الله عنها : أنَّ النَّبيّ ﷺ دخل عَلَيْهَا وعِندها امرأةٌ، قَالَ: «مَنْ هذِهِ ؟»قَالَتْ: هذِهِ فُلاَنَةٌ تَذْكُرُ مِنْ صَلاتِهَا . قَالَ: «مَهْ، عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيقُونَ، فَواللهِ لاَ يَمَلُّ اللهُ حَتَّى تَمَلُّوا»وكَانَ أَحَبُّ الدِّينِ إِلَيْهِ مَا دَاوَمَ صَاحِبُهُ عَلَيهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/১৪৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট গেলেন, তখন এক মহিলা তাঁর কাছে (বসে) ছিল। তিনি বললেন, ‘‘এটি কে?’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বললেন, ‘অমুক মহিলা, যে প্রচুর নামায পড়ে।’ তিনি বললেন, ‘‘থামো! তোমরা সাধ্যমত আমল কর। আল্লাহর কসম! আল্লাহ ক্লান্ত হন না, যতক্ষণ না তোমরা ক্লান্ত হয়ে পড়।’’ আর সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যেটা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।
‘আল্লাহ ক্লান্ত হন না’- এ কথার অর্থ এই যে, তিনি সওয়াব দিতে ক্লান্ত হন না। অর্থাৎ তিনি তোমাদেরকে সওয়াব ও তোমাদের আমলের প্রতিদান দেওয়া বন্ধ করেন না এবং তোমাদের সাথে ক্লান্তের মত ব্যবহার করেন না; যে পর্যন্ত না তোমরা নিজেরাই ক্লান্ত হয়ে আমল ত্যাগ করে বস। সুতরাং তোমাদের উচিত, তোমরা সেই আমল গ্রহণ করবে, যা একটানা করে যেতে সক্ষম হবে। যাতে তাঁর সওয়াব ও তাঁর অনুগ্রহ তোমাদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন থাকে।
2/147 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : جَاءَ ثَلاثَةُ رَهْطٍ إِلَى بُيُوتِ أزْوَاجِ النَّبيّ ﷺ، يَسْأَلُونَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبيّ ﷺ، فَلَمَّا أُخْبِروا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوهَا وَقَالُوا : أَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبيِّ ﷺ وَقدْ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَا تَأخَّرَ. قَالَ أحدُهُم : أمَّا أنا فَأُصَلِّي اللَّيلَ أبداً . وَقالَ الآخَرُ : وَأَنَا أصُومُ الدَّهْرَ أَبَداً وَلا أُفْطِرُ . وَقالَ الآخَر : وَأَنا أعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أتَزَوَّجُ أبَداً . فَجَاءَ رَسُولُ الله ﷺ إلَيهِم، فَقَالَ: «أنْتُمُ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا ؟ أَمَا واللهِ إنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ، وَأَتْقَاكُمْ لَهُ، لَكِنِّي أصُومُ وَأُفْطِرُ، وأُصَلِّي وَأَرْقُدُ، وَأَتَزَوَّجُ النِّساءَ، فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/১৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, তিন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাসায় এলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। অতঃপর যখন তাঁদেরকে এর সংবাদ দেওয়া হল তখন তাঁরা যেন তা অল্প মনে করলেন এবং বললেন, ‘আমাদের সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তুলনা কোথায়? তাঁর তো আগের ও পরের সমস্ত গোনাহ মোচন করে দেওয়া হয়েছে। (সেহেতু আমাদের তাঁর চেয়ে বেশী ইবাদত করা প্রয়োজন)।’ সুতরাং তাঁদের মধ্যে একজন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রাতভর নামায পড়ব।’ দ্বিতীয়জন বললেন, ‘আমি সারা জীবন রোযা রাখব, কখনো রোযা ছাড়ব না।’ তৃতীয়জন বললেন, ‘আমি নারী থেকে দূরে থাকব, জীবনভর বিয়েই করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের নিকট এলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা এই এই কথা বলেছ? শোনো! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করি, তার ভয় অন্তরে তোমাদের চেয়ে বেশী রাখি। কিন্তু আমি (নফল) রোযা রাখি এবং রোযা ছেড়েও দিই, নামায পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আর নারীদের বিয়েও করি। সুতরাং যে আমার সুন্নত হতে মুখ ফিরিয়ে নিবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’
3/148 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أنَّ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «هَلَكَ المُتَنَطِّعُونَ»قالها ثَلاثاً . رواه مسلم
৩/১৪৮। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীনের ব্যাপারে নিজের পক্ষ থেকে কঠোরতা অবলম্বনকারীরা ধ্বংস হয়ে গেল। (অথবা ধ্বংস হোক।)’’ এ কথা তিনি তিনবার বললেন।
4/149 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ الدِّينَ يُسْرٌ، وَلَنْ يُشَادَّ الدِّيْنُ إلاَّ غَلَبَهُ، فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَأبْشِرُوا، وَاسْتَعِينُوا بِالغَدْوَةِ وَالرَّوْحَةِ وَشَيءٍ مِنَ الدُّلْجَةِ». رواه البخاري .
وفي رواية لَهُ: «سَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَاغْدُوا وَرُوحُوا، وَشَيءٌ مِنَ الدُّلْجَةِ، القَصْدَ القَصْدَ تَبْلُغُوا».
৪/১৪৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘নিশ্চয় দ্বীন সহজ। যে ব্যক্তি অহেতুক দ্বীনকে কঠিন বানাবে, তার উপর দ্বীন জয়ী হয়ে যাবে। (অর্থাৎ মানুষ পরাজিত হয়ে আমল ছেড়ে দিবে।) সুতরাং তোমরা সোজা পথে থাক এবং (ইবাদতে) মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর। তোমরা সুসংবাদ নাও। আর সকাল-সন্ধ্যা ও রাতের কিছু অংশে ইবাদত করার মাধ্যমে সাহায্য নাও।’’
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা সরল পথে থাকো, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, সকাল-সন্ধ্যায় চল (ইবাদত কর) এবং রাতের কিছু অংশে। আর তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, মধ্যমপন্থা অবলম্বন কর, তাহলেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাবে।’’
অর্থাৎ অবসর সময়ে উদ্যমশীল মনে আল্লাহর ইবাদত কর; যে সময়ে ইবাদত করে তৃপ্তি পাওয়া যায় এবং তা মনে ভারী বা বিরক্তিকর না হয়। আর তাহলেই অভীষ্টলাভ করতে পারবে। যেমন বুদ্ধিমান মুসাফির উক্ত সময়ে সফর করে এবং যথাসময়ে সে ও তার সওয়ারী বিশ্রাম গ্রহণ করে। (না ধীরে চলে এবং না তাড়াহুড়া করে।) ফলে সে বিনা কষ্টে যথা সময়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়।
5/150 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : دَخَلَ النَّبيُّ ﷺ المَسْجِدَ فَإِذَا حَبْلٌ مَمْدُودٌ بَيْنَ السَّارِيَتَيْنِ، فَقَالَ: «مَا هَذَا الحَبْلُ ؟»قالُوا : هَذَا حَبْلٌ لِزَيْنَبَ، فَإِذَا فَتَرَتْ تَعَلَّقَتْ بِهِ . فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «حُلُّوهُ، لِيُصلِّ أَحَدُكُمْ نَشَاطَهُ فَإِذَا فَتَرَ فَلْيَرْقُدْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/১৫০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করলেন। হঠাৎ দেখলেন যে, একটি দড়ি দুই স্তম্ভের মাঝে লম্বা করে বাঁধা রয়েছে। তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই দড়িটা কি (জন্য)’’? লোকেরা বলল, ‘এটি যয়নাবের দড়ি। যখন তিনি (নামায পড়তে পড়তে) ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন এটার সঙ্গে ঝুলে যান!’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এটিকে খুলে ফেল। তোমাদের মধ্যে (যে নামায পড়বে) তার উচিত, সে যেন মনে স্ফূর্তি থাকাকালে নামায পড়ে। তারপর সে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন সে যেন শুয়ে যায়।’’
6/151 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ يُصَلِّي فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّومُ، فإِنَّ أحدكم إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ لا يَدْرِي لَعَلَّهُ يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبُّ نَفْسَهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/১৫১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন নামায পড়া অবস্থায় তোমাদের কারো তন্দ্রা আসবে, তখন তাকে ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না তার ঘুম চলে যাবে। কারণ, তোমাদের কেউ যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামায পড়ে, তাহলে সে অনুভব করতে পারবে না যে, সম্ভবতঃ সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে গালি দিচ্ছে।
7/152 وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ الله عَنهُما، قَالَ: كُنْتُ أصَلِّي مَعَ النَّبيِّ ﷺ الصَّلَوَاتِ، فَكَانتْ صَلاتُهُ قَصْداً وَخُطْبَتُهُ قَصْداً . رواه مسلم
৭/১৫২। আবূ আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে নামায পড়তাম। সুতরাং তাঁর নামাযও মধ্যম হত এবং তাঁর খুৎবাও মধ্যম হত।’
8/153 وعَنْ أَبِي جُحَيْفَة وَهْب بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ : آخَى النَّبيُّ ﷺ بَيْنَ سَلْمَانَ وَأَبي الدَّرْداءِ، فَزارَ سَلْمَانُ أَبَا الدَّرداءِ فَرَأى أُمَّ الدَّرداءِ مُتَبَذِّلَةً، فَقَالَ : مَا شَأنُكِ ؟ قَالَتْ : أخُوكَ أَبُو الدَّردَاءِ لَيْسَ لَهُ حَاجَةٌ في الدُّنْيَا، فَجاءَ أَبُو الدَّرْدَاءِ فَصَنَعَ لَهُ طَعَاماً، فَقَالَ لَهُ : كُلْ فَإِنِّي صَائِمٌ، قَالَ : مَا أنا بِآكِلٍ حَتَّى تَأكُلَ فَأَكَلَ، فَلَمَّا كَانَ اللَّيلُ ذَهَبَ أَبُو الدَّردَاءِ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ، فَنَامَ، ثُمَّ ذَهَبَ يَقُومُ فَقَالَ لَهُ : نَمْ . فَلَمَّا كَانَ مِن آخِر اللَّيلِ قَالَ سَلْمَانُ : قُمِ الآن، فَصَلَّيَا جَمِيعاً فَقَالَ لَهُ سَلْمَانُ: إنَّ لِرَبِّكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِنَفْسِكَ عَلَيكَ حَقّاً، وَلأَهْلِكَ عَلَيكَ حَقّاً، فَأعْطِ كُلَّ ذِي حَقٍّ حَقَّهُ، فَأَتَى النَّبيَّ ﷺ فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «صَدَقَ سَلْمَانُ». رواه البخاري
৮/১৫৩। আবূ জুহাইফা ওয়াহব ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (হিজরতের পর মদীনায়) সালমান ও আবূ দারদার মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করলেন। অতঃপর সালমান (একদিন তাঁর দ্বীনী ভাই) আবূ দারদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে (তাঁর বাড়ী) গেলেন। তিনি (আবূ দারদার স্ত্রী) উম্মে দারদাকে দেখলেন, তিনি মলিন কাপড় পরে আছেন। সুতরাং তিনি তাঁকে বললেন, ‘তোমার এ অবস্থা কেন?’ তিনি বললেন, ‘তোমার ভাই আবূ দারদার দুনিয়ার কোনো প্রয়োজনই নেই।’ (ইতোমধ্যে) আবূ দারদাও এসে গেলেন এবং তিনি তাঁর জন্য খাবার তৈরী করলেন। অতঃপর তাঁকে বললেন, ‘তুমি খাও। কেননা, আমি রোযা রেখেছি।’ তিনি বললেন, ‘যতক্ষণ না তুমি খাবে, আমি খাব না।’ সুতরাং আবূ দারদাও (নফল রোযা ভেঙ্গে দিয়ে তাঁর সঙ্গে) খেলেন। অতঃপর যখন রাত এল, তখন (শুরু রাতেই) আবূ দারদা নফল নামায পড়তে গেলেন। সালমান তাঁকে বললেন, ‘(এখন) শুয়ে যাও।’ সুতরাং তিনি শুয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর আবার তিনি (বিছানা থেকে) উঠে নফল নামায পড়তে গেলেন। আবার সালমান বললেন, ‘শুয়ে যাও।’ অতঃপর যখন রাতের শেষাংশ এসে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, ‘এবার উঠে নফল নামায পড়।’ সুতরাং তাঁরা দু’জনে একত্রে নামায পড়লেন। অতঃপর সালমান তাঁকে বললেন, ‘নিশ্চয় তোমার উপর তোমার প্রভুর অধিকার রয়েছে। তোমার প্রতি তোমার আত্মারও অধিকার আছে এবং তোমার প্রতি তোমার পরিবারেরও অধিকার রয়েছে। অতএব তুমি প্রত্যেক অধিকারীকে তার অধিকার প্রদান কর।’ অতঃপর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে সমস্ত ঘটনা শুনালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সালমান ঠিকই বলেছে।’’
9/154 وعَنْ أَبِي محمد عبدِ اللهِ بنِ عَمْرو بن العَاصِ رَضي الله عنهما، قَالَ : أُخْبِرَ النَّبيُّ ﷺ أنِّي أقُولُ: وَاللهِ لأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلأَقُومَنَّ اللَّيلَ مَا عِشْتُ. فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «أنتَ الَّذِي تَقُولُ ذلِكَ؟» فَقُلْتُ لَهُ : قَدْ قُلْتُهُ بأبي أنْتَ وأمِّي يَا رسولَ الله . قَالَ: «فَإِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذلِكَ فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاثةَ أيَّامٍ، فإنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا وَذَلكَ مِثلُ صِيامِ الدَّهْرِ» قُلْتُ : فَإِنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَوماً وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ»قُلْتُ : فَإنِّي أُطِيقُ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ، قَالَ: «فَصُمْ يَوماً وَأفْطِرْ يَوماً فَذلِكَ صِيَامُ دَاوُد عليه السلام، وَهُوَ أعْدَلُ الصيامِ» .
وفي رواية: «هُوَ أفْضَلُ الصِّيامِ» فَقُلْتُ: فَإِنِّي أُطيقُ أفْضَلَ مِنْ ذلِكَ، فَقَالَ رسولُ الله ﷺ: «لاَ أفضَلَ مِنْ ذلِكَ»، وَلأنْ أكُونَ قَبِلْتُ الثَّلاثَةَ الأَيّامِ الَّتي قَالَ رَسُول الله ﷺ أحَبُّ إليَّ مِنْ أهْلي وَمَالي.
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أنَّكَ تَصُومُ النَّهَارَ وتَقُومُ اللَّيلَ ؟»قُلْتُ : بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «فَلاَ تَفْعَلْ : صُمْ وَأَفْطِرْ، وَنَمْ وَقُمْ ؛ فإنَّ لِجَسَدِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِعَيْنَيكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإِنَّ لِزَوْرِكَ عَلَيْكَ حَقّاً، وَإنَّ بِحَسْبِكَ أنْ تَصُومَ في كُلِّ شَهْرٍ ثَلاثَةَ أيَّامٍ، فإنَّ لَكَ بِكُلِّ حَسَنَةٍ عَشْرَ أمْثَالِهَا، فَإِنَّ ذلِكَ صِيَامُ الدَّهْر»فَشَدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ، قُلْتُ : يَا رَسُول الله، إنِّي أجِدُ قُوَّةً، قَالَ: «صُمْ صِيَامَ نَبيِّ الله دَاوُد وَلاَ تَزد عَلَيهِ» قُلْتُ : وَمَا كَانَ صِيَامُ دَاوُد ؟ قَالَ: «نِصْفُ الدَّهْرِ»فَكَانَ عَبدُ الله يقول بَعدَمَا كَبِرَ : يَا لَيتَنِي قَبِلْتُ رُخْصَة رَسُول الله ﷺ .
وفي رواية: «أَلَمْ أُخْبَرْ أَنَّكَ تَصُومُ الدَّهرَ، وَتَقْرَأُ القُرآنَ كُلَّ لَيْلَة ؟»فقلت : بَلَى، يَا رَسُول الله، وَلَمْ أُرِدْ بذلِكَ إلاَّ الخَيرَ، قَالَ: «فَصُمْ صَومَ نَبيِّ اللهِ دَاوُد، فَإنَّهُ كَانَ أعْبَدَ النَّاسِ، وَاقْرَأ القُرْآنَ في كُلِّ شَهْر»قُلْتُ : يَا نَبيَّ اللهِ، إنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ: «فاقرأه في كل عشرين»قُلْتُ : يَا نبي الله، إني أطيق أفضل من ذلِكَ ؟ قَالَ: «فَاقْرَأهُ في كُلِّ عَشْر»قُلْتُ : يَا نبي اللهِ، إنِّي أُطيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ ؟ قَالَ: «فاقْرَأهُ في كُلِّ سَبْعٍ وَلاَ تَزِدْ عَلَى ذلِكَ»فشدَّدْتُ فَشُدِّدَ عَلَيَّ وَقالَ لي النَّبيّ ﷺ: «إنَّكَ لا تَدرِي لَعَلَّكَ يَطُولُ بِكَ عُمُرٌ»قَالَ : فَصِرْتُ إِلَى الَّذِي قَالَ لي النَّبيُّ ﷺ . فَلَمَّا كَبِرْتُ وَدِدْتُ أنِّي كُنْتُ قَبِلتُ رُخْصَةَ نَبيِّ الله ﷺ . وفي رواية: «وَإِنَّ لِوَلَدِكَ عَلَيْكَ حَقّاً».
وفي رواية: «لاَ صَامَ مَنْ صَامَ الأَبَدَ» ثلاثاً .
وفي رواية: «أَحَبُّ الصِيَامِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صِيَامُ دَاوُد، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللهِ تَعَالَى صَلاةُ دَاوُدَ: كَانَ يَنَامُ نِصفَ اللَّيلِ، وَيَقُومُ ثُلُثَهُ، وَيَنَامُ سُدُسَهُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوماً وَيُفطِرُ يَوماً، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاقَى».
وفي رواية قال: «أنْكَحَني أَبي امرَأةً ذَاتَ حَسَبٍ وَكَانَ يَتَعَاهَدُ كنَّتَهُ - أي : امْرَأَةَ وَلَدِهِ - فَيَسْأَلُهَا عَنْ بَعْلِهَا . فَتقُولُ لَهُ : نِعْمَ الرَّجُلُ مِنْ رَجُلٍ لَمْ يَطَأْ لَنَا فِرَاشاً، وَلَمْ يُفَتِّشْ لَنَا كَنَفاً مُنْذُ أتَيْنَاهُ . فَلَمَّا طَالَ ذلِكَ عَلَيهِ ذَكَرَ ذلك للنَّبيِّ ﷺ، فَقَالَ: «القَنِي بِهِ»فَلَقيتُهُ بَعد ذلك، فَقَالَ: «كَيْفَ تَصُومُ ؟»قُلْتُ : كُلَّ يَومٍ، قَالَ: «وَكَيْفَ تَخْتِمُ ؟»قُلْتُ : كُلَّ لَيْلَةٍ، وَذَكَرَ نَحْوَ مَا سَبَقَ، وَكَانَ يَقْرَأُ عَلَى بَعْضِ أهْلِهِ السُّبُعَ الَّذِي يَقْرَؤُهُ، يَعْرِضُهُ مِنَ النَّهَارِ ليَكُونَ أخَفّ عَلَيهِ باللَّيلِ، وَإِذَا أَرَادَ أنْ يَتَقَوَّى أفْطَرَ أيَّاماً وَأحْصَى وَصَامَ مِثْلَهُنَّ كرَاهِيَةَ أنْ يَترُكَ شَيئاً فَارَقَ عَلَيهِ النَّبيَّ ﷺ . كُلّ هذِهِ الروَايَاتِ صَحِيحَةٌ، مُعظمُها في الصَّحِيحَين، وَقَلِيل مِنْهَا في أحدِهِما .
৯/১৫৪। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার ব্যাপারে সংবাদ দেওয়া হল যে, আমি বলছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন দিনে রোযা রাখব এবং রাতে নফল নামায পড়ব।’ সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এ কথা বলছ?’’ আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসন্দেহে আমি এ কথা বলেছি, আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি এর সাধ্য রাখ না। অতএব তুমি রোযা রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। অনুরূপ (রাতের কিছু অংশে) ঘুমাও এবং (কিছু অংশে) নফল নামায পড় ও মাসে তিন দিন রোযা রাখ। কারণ, নেকীর প্রতিদান দশগুণ রয়েছে। তোমার এই রোযা জীবনভর রোযা রাখার মত হয়ে যাবে।’’ আমি বললাম, ‘আমি এর অধিক করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি একদিন রোযা রাখ, আর দু’দিন রোযা ত্যাগ কর।’’ আমি বললাম, ‘আমি এর বেশী করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে একদিন রোযা রাখ, আর একদিন রোযা ছাড়। এ হল দাঊদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা। আর এ হল ভারসাম্যপূর্ণ রোযা।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘এটা সর্বোত্তম রোযা।’’ কিন্তু আমি বললাম, ‘আমি এর চেয়ে বেশী (রোযা) রাখার ক্ষমতা রাখি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এর চেয়ে উত্তম রোযা আর নেই।’’ (আব্দুল্লাহ বলেন,) ‘যদি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ অনুযায়ী (প্রত্যেক মাসে) তিন দিন রোযা রাখার পদ্ধতি গ্রহণ করতাম, তাহলে তা আমার নিকট আমার পরিবার ও সম্পদ অপেক্ষা প্রিয় হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আমি কি এই সংবাদ পাইনি যে, তুমি দিনে রোযা রাখছ এবং রাতে নফল নামায পড়ছ?’’ আমি বললাম, ‘সম্পূর্ণ সত্য, হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পুনরায় এ কাজ করো না। তুমি রোযাও রাখ এবং (কখনো) ছেড়েও দাও। নিদ্রাও যাও এবং নামাযও পড়। কারণ তোমার উপর তোমার দেহের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার চক্ষুদ্বয়ের অধিকার আছে। তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার আছে এবং তোমার উপর তোমার অতিথির অধিকার আছে। তোমার জন্য প্রত্যেক মাসে তিন দিন রোযা রাখা যথেষ্ট। কেননা, প্রত্যেক নেকীর পরিবর্তে তোমার জন্য দশটি নেকী রয়েছে আর এটা জীবনভর রোযা রাখার মত।’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি সামর্থ্য রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর নবী দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা রাখ এবং তার চেয়ে বেশী করো না।’’ আমি বললাম, ‘দাউদের রোযা কেমন ছিল?’ তিনি বললেন, ‘‘অর্ধেক জীবন।’’ অতঃপর আব্দুল্লাহ বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পর বলতেন, ‘হায়! যদি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করতাম (তাহলে কতই না ভাল হত)!’
আর এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আমি সংবাদ পেয়েছি যে, তুমি সর্বদা রোযা রাখছ এবং প্রত্যহ রাতে কুরআন (খতম) পড়ছ।’’ আমি বললাম, ‘(সংবাদ) সত্যই, হে আল্লাহর রাসূল! কিন্তু এতে আমার উদ্দেশ্য ভাল ছাড়া অন্য কিছু নয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর নবী দাউদের রোযা রাখ। কারণ, তিনি লোকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ইবাদতগুযার ছিলেন। আর প্রত্যেক মাসে (একবার কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর অধিক করার শক্তি রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি কুড়ি দিনে (কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর থেকে বেশী করার সামর্থ্য রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি প্রত্যেক দশদিনে (কুরআন খতম) পড়।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আমি এর চেয়েও বেশী ক্ষমতা রাখি।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি প্রত্যেক সাতদিনে (খতম) পড় এবং এর বেশী করো না (অর্থাৎ এর চাইতে কম সময়ে কুরআন খতম করো না।)’’ কিন্তু আমি কঠোরতা অবলম্বন করলাম। যার ফলে আমার উপর কঠিন করে দেওয়া হল। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি জান না, সম্ভবতঃ তোমার বয়স সুদীর্ঘ হবে।’’ আব্দুল্লাহ বলেন, সুতরাং আমি ঐ বয়সে পৌঁছে গেলাম, যার কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন। অবশেষে আমি যখন বৃদ্ধ হয়ে গেলাম, তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম, হায়! যদি আমি আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি গ্রহণ করে নিতাম।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন,) ‘‘আর তোমার উপর তোমার সন্তানের অধিকার আছে---।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তার কোন রোযা নেই (অর্থাৎ রোযা বিফল যাবে) সে সর্বদা রোযা রাখে।’’ এ কথা তিনবার বললেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহর নিকট প্রিয়তম রোযা হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর রোযা এবং আল্লাহর নিকট প্রিয়তম নামায হচ্ছে দাউদ ‘আলাইহিস সালাম-এর নামায। তিনি মধ্য রাতে শুতেন এবং তার তৃতীয় অংশে নামায পড়তেন এবং তার ষষ্ঠ অংশে ঘুমাতেন। তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ছাড়তেন। আর যখন শত্রুর সামনা-সামনি হতেন তখন (রণভূমি হতে) পলায়ন করতেন না।’’
আরোও এক বর্ণনায় আছে, (আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর) বলেন, আমার পিতা আমার বিবাহ এক উচ্চ বংশের মহিলার সঙ্গে দিয়েছিলেন। তিনি পুত্রবধুর প্রতি খুবই লক্ষ্য রাখতেন। তিনি তাকে তার স্বামী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন। সে বলত, ‘এত ভালো লোক যে, সে কদাচ আমার বিছানায় পা রাখেনি এবং যখন থেকে আমি তার কাছে এসেছি, সে কোনদিন আবৃত জিনিস স্পর্শ করেনি (অর্থাৎ মিলনের ইচ্ছাও ব্যক্ত করেনি।)’ যখন এই আচরণ অতি লম্বা হয়ে গেল, তখন তিনি (আব্দুল্লাহর পিতা) এ কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তাকে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বল।’’ সুতরাং পরবর্তীতে আমি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি কিভাবে রোযা রাখ?’’ আমি বললাম, ‘প্রত্যেক দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘কিভাবে কুরআন খতম কর?’’ আমি বললাম, ‘প্রত্যেক রাতে।’ অতঃপর তিনি ঐ কথাগুলি বর্ণনা করলেন, যা পূর্বে গত হয়েছে। তিনি (আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর) তাঁর পরিবারের কাউকে (কুরআনের) ঐ সপ্তম অংশ পড়ে শুনাতেন, যা তিনি (রাতের নফল নামাযে) পড়তেন। দিনের বেলায় তিনি তা পুনঃ পড়ে নিতেন, যাতে তার তার উপর সহজ হয়। আর যখন তিনি শক্তিমান হতে চাইতেন তখন কয়েকদিন রোযা ভাঙ্গতেন আর গুণে রাখতেন, তারপর সে দিনগুলোর অনুপাতে রোযা রাখতেন, যাতে করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যে অবস্থার উপর ছেড়েছেন সে অবস্থার ব্যতিক্রম হয় এমন অপছন্দনীয় কাজ সংঘটিত না হয়। এ বর্ণনাগুলো সবই সহীহ বর্ণনা; যার বেশিরভাগই বুখারী ও মুসলিমে এসেছে অথবা এ দুটির একটিতে আছে।
10/155 وعَنْ أَبِي رِبعِي حَنظَلَةَ بنِ الربيعِ الأُسَيِّدِيِّ الكَاتِب أَحَدِ كُتَّابِ رَسُولِ الله ﷺ قَالَ : لَقِيَنِي أَبُو بَكر رضي الله عنه، فَقَالَ : كَيْفَ أنْتَ يَا حنْظَلَةُ ؟ قُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ ! قَالَ : سُبْحَانَ الله مَا تَقُولُ ؟! قُلْتُ: نَكُونُ عِنْدَ رَسُولِ الله ﷺ يُذَكِّرُنَا بِالجَنَّةِ وَالنَّارِ كأنَّا رَأيَ عَيْنٍ، فإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُول الله ﷺ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسينَا كَثِيراً، قَالَ أَبُو بكر رضي الله عنه : فَوَالله إنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هَذَا، فانْطَلَقْتُ أَنَا وأبُو بَكْر حَتَّى دَخَلْنَا عَلَى رَسُول الله ﷺ . فقُلْتُ : نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُول اللهِ ! فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «وَمَا ذَاكَ ؟»قُلْتُ : يَا رَسُول اللهِ، نَكُونُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ والجَنَّةِ كأنَّا رَأيَ العَيْن فإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الأَزْواجَ وَالأَوْلاَدَ وَالضَّيْعَاتِ نَسينَا كَثِيراً . فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ، لَوْ تَدُومُونَ عَلَى مَا تَكُونونَ عِنْدِي، وَفي الذِّكْر، لصَافَحَتْكُمُ الملائِكَةُ عَلَى فُرُشِكُمْ وَفي طُرُقِكُمْ، لَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وسَاعَةً»ثَلاَثَ مَرَات . رواه مسلم
১০/১৫৫। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন লেখক আবূ রিব‘য়ী হান্যালাহ ইবন রাবী‘ আল-উসাইদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘হে হানযালাহ! তুমি কেমন আছ?’ আমি বললাম, ‘হানাযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে!’ তিনি (আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ! এ কি কথা বলছ?’ আমি বললাম, ‘(কথা এই যে, যখন) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে থাকি, তিনি আমাদের সামনে এমন ভঙ্গিমায় জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, যেন আমরা তা স্বচক্ষে দেখছি। অতঃপর যখন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে বের হয়ে আসি, তখন স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও অন্যান্য (পার্থিব) কারবারে ব্যস্ত হয়ে অনেক কিছু ভুলে যাই।’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমাদেরও তো এই অবস্থা হয়।’ সুতরাং আমি ও আবূ বকর গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খিদমতে হাজির হলাম। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! হানযালাহ মুনাফিক হয়ে গেছে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে কি কথা?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যখন আপনার নিকটে থাকি, তখন আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা এমনভাবে শুনান; যেমন নাকি আমরা তা প্রত্যক্ষভাবে দেখছি। অতঃপর আমরা যখন আপনার নিকট থেকে বের হয়ে যাই এবং স্ত্রী সন্তান-সন্ততি ও কারবারে ব্যস্ত হয়ে পড়ি, তখন অনেক কথা ভুলে যাই। (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা সর্বদা এই অবস্থায় থাকতে, যে অবস্থাতে তোমরা আমার নিকটে থাক এবং সর্বদা আল্লাহর স্মরণে মগ্ন থাকতে, তাহলে ফিরিশ্তাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের পথে তোমাদের সঙ্গে মুসাফাহা করতেন। কিন্তু ওহে হানযালাহ! (সর্বদা মানুষের এক অবস্থা থাকে না।) কিছু সময় (ইবাদতের জন্য) ও কিছু সময় (সাংসারিক কাজের জন্য)।’’ তিনি এ কথা তিনবার বললেন।
11/156 وَعنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : بَينَمَا النَّبيُّ ﷺ يَخطُبُ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ قَائِمٍ فَسَأَلَ عَنْهُ، فَقَالُوا : أَبُو إسْرَائيلَ نَذَرَ أنْ يَقُومَ في الشَّمْسِ وَلاَ يَقْعُدَ، وَلاَ يَسْتَظِل، وَلاَ يَتَكَلَّمَ، وَيَصُومَ، فَقَالَ النَّبيّ ﷺ: «مُرُوهُ، فَلْيَتَكَلَّمْ، وَلْيَسْتَظِلَّ، وَلْيَقْعُدْ، وَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ». رواه البخاري
১১/১৫৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কোন এক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুৎবাহ দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন যে, একটি লোক (রোদে) দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর তিনি তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকেরা বলল, ‘আবূ ইসরাঈল। ও নযর মেনেছে যে, ও রোদে দাঁড়িয়ে থাকবে, বসবে না, ছায়া গ্রহণ করবে না, কথা বলবে না এবং রোযা রাখবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা ওকে আদেশ কর, ও যেন কথা বলে, ছায়া গ্রহণ করে, বসে এবং রোযা পুরা করে।’’
15- بَابُ الْمُحَافَظَةِ عَلَى الْأَعْمَالِ
পরিচ্ছেদ - ১৫ : আমলের রক্ষণাবেক্ষণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ ﴾ [الحديد: ١٦]
অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের সময় কি আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত তারা হবে না? বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল।” (সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَقَفَّيۡنَا بِعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَ وَءَاتَيۡنَٰهُ ٱلۡإِنجِيلَۖ وَجَعَلۡنَا فِي قُلُوبِ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُوهُ رَأۡفَةٗ وَرَحۡمَةٗۚ وَرَهۡبَانِيَّةً ٱبۡتَدَعُوهَا مَا كَتَبۡنَٰهَا عَلَيۡهِمۡ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ رِضۡوَٰنِ ٱللَّهِ فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۖ ﴾ [الحديد: ٢٧]
অর্থাৎ “অতঃপর আমি তাদের অনুগামী করেছিলাম আমার রাসূলগণকে এবং অনুগামী করেছিলাম মারয়্যাম তনয় ঈসাকে আর তাকে দিয়েছিলাম ইঞ্জীল এবং তার অনুসারীদের অন্তরে দিয়েছিলাম করুণা ও দয়া; কিন্তু সন্ন্যাসবাদ এটা তো তারা নিজেরা প্রবর্তন করেছিল, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিধান ছাড়া আমি তাদেরকে এ (সন্ন্যাসবাদে)র বিধান দিইনি; অথচ এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।” (সূরা হাদীদ ২৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّتِي نَقَضَتۡ غَزۡلَهَا مِنۢ بَعۡدِ قُوَّةٍ أَنكَٰثٗا ﴾ [النحل: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার সুতা মজবুত করে পাকাবার পর ওর পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।” (সূরা নাহ্ল ৯২ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَٱعۡبُدۡ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأۡتِيَكَ ٱلۡيَقِينُ ٩٩ ﴾ [الحجر: ٩٩]
অর্থাৎ “আর তোমার মৃত্যু উপস্থিত হওয়া পর্যন্ত তুমি তোমার রবের ইবাদত কর।” (সূরা হিজর ৯৯ আয়াত)
এ মর্মের অন্যতম হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ-র হাদীস, ‘‘সেই আমল তাঁর নিকট প্রিয়তম ছিল, যা তার আমলকারী লাগাতার করে থাকে।’’ যা পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে গত হয়েছে।
1/157 وَعَن عُمَرَ بنِ الخطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبهِ مِنَ اللَّيلِ، أَوْ عَنْ شَيءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ مَا بَيْنَ صَلاةِ الفَجْرِ وَصَلاةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيلِ». رواه مسلم
১/১৫৭। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার রাতের অযীফা (নামায বা তেলাওয়াত ইত্যাদি) রেখে ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর সে তা ফজর ও যোহরের মধ্য সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য রাতে পড়ার মতই (সওয়াব) লেখা হয়।’’
2/158 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «يَا عبدَ اللهِ، لاَ تَكُنْ مِثْلَ فُلان، كَانَ يَقُومُ اللَّيلَ فَتَرَكَ قِيَامَ اللَّيلِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/১৫৮। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক লোকের মত হয়ো না, যে রাতে নফল নামায পড়ত, অতঃপর তা ছেড়ে দিয়েছে।’’
3/159 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا، قَالَتْ : كَانَ رَسُول الله ﷺ إِذَا فَاتَتْهُ الصَّلاةُ مِنَ اللَّيلِ مِنْ وَجَعٍ أَوْ غَيرِهِ، صَلَّى مِنَ النَّهارِ ثنْتَيْ عَشرَةَ رَكْعَةً. رواه مسلم
৩/১৫৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন যে, ‘যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায কোনো ব্যথা-বেদনা অথবা অন্য কোন কারণে ছুটে যেত, তখন তিনি দিনে বার রাকআত নামায পড়ে নিতেন।’ (মুসলিম)
16- بَابُ الْأَمْرِ بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى السُّنَّةِ وَآدَابِهَا
পরিচ্ছেদ -১৬ : সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَآ ءَاتَىٰكُمُ ٱلرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَىٰكُمۡ عَنۡهُ فَٱنتَهُواْۚ ﴾ [الحشر: ٧]
অর্থাৎ “আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।” (সূরা হাশ্র ৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ [النجم: ٣، ٤]
অর্থাৎ “সে মনগড়া কথাও বলে না। তা তো অহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়।” (সূরা নাজ্ম ৩-৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ لِّمَن كَانَ يَرۡجُواْ ٱللَّهَ وَٱلۡيَوۡمَ ٱلۡأٓخِرَ ﴾ [الاحزاب: ٢١]
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর (চরিত্রের) মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে।” (সূরা আহযাব ২১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]
অর্থাৎ “কিন্তু না, তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ﴾ [النساء: ٥٩]
قَالَ العلماء : معناه إِلَى الكتاب والسُنّة،
অর্থাৎ “আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (ঐ ৫৯ আয়াত)
আলেমগণ বলেন, এর অর্থ হল: কিতাব ও সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দাও।
তিনি আরো বলেন,
﴿ مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ وَمَن تَوَلَّىٰ فَمَآ أَرۡسَلۡنَٰكَ عَلَيۡهِمۡ حَفِيظٗا ٨٠ ﴾ [النساء: ٨٠]
অর্থাৎ “যে রসূলের আনুগত্য করল, সে আসলে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” (ঐ ৮০ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَإِنَّكَ لَتَهۡدِيٓ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٥٢ صِرَٰطِ ٱللَّهِ ﴾ [الشورا: ٥٢، ٥٣]
অর্থাৎ “আর নিশ্চয়ই তুমি সরল পথ প্রদর্শন কর---সেই আল্লাহর পথ----।” (সূরা শুরা ৫২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَلۡيَحۡذَرِ ٱلَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنۡ أَمۡرِهِۦٓ أَن تُصِيبَهُمۡ فِتۡنَةٌ أَوۡ يُصِيبَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴾ [النور: ٦٣]
অর্থাৎ “সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় অথবা কঠিন শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে।” (সূরা নূর ৬৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱذۡكُرۡنَ مَا يُتۡلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ وَٱلۡحِكۡمَةِۚ ﴾ [الاحزاب: ٣٤]
অর্থাৎ “আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয়, তা তোমরা স্মরণ রাখ।” (সূরা আহযাব ৩৪ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
1/160 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «دَعُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ، إِنَّمَا أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ كَثْرَةُ سُؤالِهِمْ واخْتِلافُهُمْ عَلَى أنْبيَائِهِمْ، فَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْء فَاجْتَنِبُوهُ، وَإِذَا أمَرْتُكُمْ بأمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/১৬০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যে ব্যাপারে তোমাদেরকে (বর্ণনা না দিয়ে) ছেড়ে দিয়েছি, সে ব্যাপারে তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও (অর্থাৎ সে ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করো না)। কারণ, তোমাদের পূর্ববর্তীরা তাদের অধিক প্রশ্ন করার এবং তাদের নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন জিনিস থেকে নিষেধ করব, তখন তোমরা তা হতে দূরে থাক। আর যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/161 عَنْ أَبِي نَجيحٍ العِرباضِ بنِ سَارِيَةَ رضي الله عنه قَالَ : وَعَظَنَا رسولُ اللهِ ﷺ مَوعظةً بَليغَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ، فَقُلْنَا: يَا رسولَ اللهِ، كَأَنَّهَا مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ فَأوْصِنَا، قَالَ: «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللهِ، وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ وَإنْ تَأمَّر عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ، وَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ فَسَيَرَى اختِلافاً كَثيراً، فَعَليْكُمْ بسُنَّتِي وسُنَّةِ الخُلَفاءِ الرَّاشِدِينَ المَهْدِيِيِّنَ عَضُّوا عَلَيْهَا بالنَّواجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ ؛ فإنَّ كلَّ بدعة ضلالة». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
২/১৬১। আবূ নাজীহ আল-ইরবাদ ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা।’’
3/162 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ: «كُلُّ أُمَّتِي يَدخُلُونَ الجَنَّةَ إلاَّ مَنْ أبَى».قيلَ : وَمَنْ يَأبَى يَا رَسُول الله ؟ قَالَ: «مَنْ أَطَاعَنِي دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ أبَى». رواه البخاري
৩/১৬২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার উম্মতের সবাই জান্নাতে যাবে; কিন্তু সে নয় যে অস্বীকার করবে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! (জান্নাতে যেতে আবার) কে অস্বীকার করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে আমার অনুসরণ করবে, সে জান্নাতে যাবে এবং যে আমার অবাধ্যতা করবে, সেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে।’’
4/163 عَنْ أَبِي مُسلِمٍ، وَقِيلَ : أَبي إيَاسٍ سَلَمَةَ بنِ عَمرِو بنِ الأكوَعِ رضي الله عنه : أَنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ الله ﷺ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: «كُلْ بِيَمِينكَ»قَالَ : لاَ أسْتَطيعُ . قَالَ: «لاَ استَطَعْتَ»مَا مَنَعَهُ إلاَّ الكِبْرُ فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ . رواه مسلم
৪/১৬৩। আবূ মুসলিম মতান্তরে আবূ ইয়াস সালামাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আকওয়া’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে বাম হাতে খাবার খেল। তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার ডান হাতে খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারব না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো।’’ একমাত্র অহংকার তাকে ডান হাতে খাওয়া থেকে বাধা দিয়েছিল। অতঃপর সে তার ডান হাত তার মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।
5/164 عَنْ أَبِي عَبدِ الله النُّعمَانِ بنِ بَشِير رَضِيَ الله عنهما، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يقول: «لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم : كَانَ رَسُول الله ﷺ يُسَوِّي صُفُوفَنَا حَتَّى كأنَّما يُسَوِّي بِهَا القِدَاحَ حَتَّى إِذَا رَأَى أَنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ . ثُمَّ خَرَجَ يَوماً فقامَ حَتَّى كَادَ أنْ يُكَبِّرَ فرأَى رَجلاً بَادياً صَدْرُهُ، فَقَالَ: «عِبَادَ الله ! لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ».
৫/১৬৪। নু‘মান ইবন বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা তোমাদের (নামাযের) কাতার অবশ্যই সোজা কর, নতুবা আল্লাহ তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’ (বুখারী-মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারসমূহ এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি তার দ্বারা তীর সোজা করছেন। যতক্ষণ না তিনি অনুভব করতেন যে, আমরা তাঁর নিকট থেকে এর গুরুত্ব বুঝে নিয়েছি। অতঃপর একদিন তিনি (নামায পড়ার জন্য) বের হয়ে তিনি (ইমামের জায়গায়) দাঁড়ালেন। এমনকি তিনি তকবীর বলে নামায শুরু করতে যাচ্ছেন, এমতাবস্থায় তিনি একটি লোককে দেখলেন যে, সে তার বুক কাতার থেকে বের করে রেখেছে। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অবশ্যই তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করবে, নচেৎ তিনি তোমাদের চেহারা পরিবর্তন করে দেবেন। (অথবা তোমাদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।)’’
6/165 عَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ : احْتَرقَ بَيْتٌ بالمَدِينَةِ عَلَى أهْلِهِ مِنَ اللَّيلِ، فَلَمَّا حُدِّثَ رسولُ الله ﷺ بشَأنِهِمْ، قَالَ: «إنَّ هذِهِ النَّارَ عَدُوٌّ لَكُمْ، فَإِذَا نِمْتُمْ، فَأطْفِئُوهَا عَنْكُمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/১৬৫। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, মদীনায় রাতের বেলায় একটি ঘর তার বাসিন্দা সমেত পুড়ে গেল। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাদের সংবাদ দেওয়া হল, তখন তিনি বললেন, ‘‘এই আগুন তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা যখন ঘুমোতে যাবে, তখন তা নিভিয়ে দাও।’’
7/166 عَنْهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنَّ مَثَلَ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى والعِلْم كَمَثَلِ غَيثٍ أَصَابَ أرْضاً فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفةٌ طَيِّبَةٌ، قَبِلَتِ المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ والعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أمسَكَتِ المَاء فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ فَشَربُوا مِنْهَا وَسَقُوا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَ طَائفةً مِنْهَا أخْرَى إنَّمَا هِيَ قيعَانٌ لا تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ في دِينِ اللهِ وَنَفَعَهُ بمَا بَعَثَنِي الله بِهِ فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأساً وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/১৬৬। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা যমীনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সব্জি উৎপন্ন করে এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়াত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়াতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।’’
8/167 عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَثَلِي وَمَثَلُكُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ أوْقَدَ نَاراً فَجَعَلَ الجَنَادِبُ والفَرَاشُ يَقَعْنَ فِيهَا وَهُوَ يَذُبُّهُنَّ عَنْهَا، وَأَنَا آخذٌ بحُجَزِكُمْ عَنِ النَّارِ، وَأنْتُمْ تَفَلَّتُونَ مِنْ يَدَيَّ». رواه مسلم
৮/১৬৭। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার ও তোমাদের উদাহরণ ঐ ব্যক্তির মত যে আগুন প্রজ্জ্বলিত করল। অতঃপর তাতে উচ্চুঙ্গ ও পতঙ্গ পড়তে আরম্ভ করল, আর সে ব্যক্তি তা হতে তাদেরকে বাধা দিতে লাগল। আমিও তোমাদের কোমর ধরে তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাচ্ছি, আর তোমরা আমার হাত থেকে ছুটে গিয়ে (জাহান্নামের আগুনে) পতিত হচ্ছ।’’
9/168 عَنْهُ : أنَّ رَسُول الله ﷺ أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحْفَةِ، وَقَالَ: «إنَّكُمْ لا تَدْرونَ في أَيِّها البَرَكَةُ». رواه مسلم
وفي رواية لَهُ: «إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا، فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذىً، وَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ، وَلا يَمْسَحْ يَدَهُ بالمنْدِيلِ حَتَّى يَلْعَقَ أصَابعَهُ فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي في أيِّ طَعَامِهِ البَرَكَةُ».
وفي رواية لَهُ: «إنَّ الشَّيطَانَ يَحْضُرُ أَحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيءٍ مِنْ شَأنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فَإذَ سَقَطَتْ مِنْ أَحَدِكُمْ اللُّقْمَةُ فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذَىً، فَلْيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيطَانِ».
৯/১৬৮। উক্ত জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খাবার পর) আঙ্গুলগুলি ও বাসন চেটে খাওয়ার আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘ওর কোনটিতে বরকত আছে তা তোমরা জান না।’’ (মুসলিম)
তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যখন তোমাদের কারো (হাত থেকে) গ্রাস পড়ে যাবে, তখন সে যেন তা তুলে নেয়। অতঃপর তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয় এবং তা শয়তানের জন্য ছেড়ে না দেয়। আর যতক্ষণ পর্যন্ত আঙ্গুল না চাটবে, ততক্ষণ যেন সে রুমালে হাত না মুছে। কেননা, সে জানে না যে, তার কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’
তাঁর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় শয়তান তোমাদের কারো নিকট তার প্রত্যেক কাজে হাজির হয়; এমনকি সে তার খাবার সময়েও হাজির হয়। সুতরাং যখন তোমাদের মধ্যে কারো গ্রাস পড়ে যাবে, তখন তাতে যে ময়লা থাকে তা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং তা শয়তানের জন্য না ছাড়ে।’’
: ﴿ وَكُنتُ عَلَيۡهِمۡ شَهِيدٗا مَّا دُمۡتُ فِيهِمۡۖ ﴾ [المائدة: ١١٧] إِلَى قولِهِ: ﴿ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ
১০/১৬৯। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নসীহত করার জন্য আমাদের মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদেরকে আল্লাহর নিকট উলঙ্গ পা, উলঙ্গ দেহ ও খতনাবিহীন অবস্থায় একত্রিত করা হবে। (আল্লাহ বলেন,) ‘যেমন আমি প্রথম সৃষ্টি করেছি আমি পুনর্বার তাকে সেই অবস্থায় ফিরাবো। এটা আমার প্রতিজ্ঞা, যা আমি পুরা করব।’ (সূরা আম্বিয়া ১০৪ আয়াত)
জেনে রাখো! কিয়ামতের দিন সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-কে বস্ত্র পরিধান করানো হবে। আরো শুনে রাখ! সে দিন আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে অতঃপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তারপর আমি বলব, ‘হে প্রভু! এরা তো আমার সঙ্গী।’ কিন্তু আমাকে বলা হবে, ‘এরা আপনার (মৃত্যুর) পর (দ্বীনে) কী কী নতুন নতুন রীতি আবিষ্কার করেছিল, তা আপনি জানেন না।’ (এ কথা শুনে) আমি বলব--যেমন নেক বান্দা (ঈসা আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, ‘‘যতদিন আমি তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের ক্রিয়াকলাপের সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমিই তো ছিলে তাদের ক্রিয়াকলাপের পর্যবেক্ষক। আর তুমি সর্ববস্তুর উপর সাক্ষী। তুমি যদি তাদেরকে শাস্তি দাও, তবে তারা তোমারই বান্দা। আর যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি তো পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়।’ (সূরা মায়েদা ১১৭ আয়াত) অতঃপর আমাকে বলা হবে যে, ‘নিঃসন্দেহে আপনার ছেড়ে আসার পর এরা (ইসলাম থেকে) পিছনে ফিরে গিয়েছিল।’
11/170 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ رضي الله عنه، قَالَ : نَهَى رَسُولُ الله ﷺ عَنِ الخَذْفِ، وَقَالَ: «إنَّهُ لاَ يَقْتُلُ الصَّيْدَ، وَلاَ يَنْكَأُ العَدُوَّ، وإنَّهُ يَفْقَأُ العَيْنَ، وَيَكْسِرُ السِّنَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية : أنَّ قَريباً لابْنِ مُغَفَّل خَذَفَ فَنَهَاهُ، وَقالَ : إنَّ رَسُول الله ﷺ نَهَى عَن الخَذْفِ، وَقَالَ: «إنَّهَا لاَ تَصِيدُ صَيداً» ثُمَّ عادَ، فَقَالَ : أُحَدِّثُكَ أنَّ رسولَ الله ﷺ نَهَى عَنْهُ، ثُمَّ عُدْتَ تَخذفُ!؟ لا أُكَلِّمُكَ أَبَداً.
১১/১৭০। আবূ সাঈদ আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বৃদ্ধ ও তর্জনী আঙ্গুল দ্বারা) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না এবং শত্রুকে ঘায়েলও করা যায় না। বরং তাতে চোখ নষ্ট হয় ও দাঁত ভাঙ্গে। (বুখারী-মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ইবনে মুগাফফাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর এক আত্মীয় দুই আঙ্গুল দিয়ে কাঁকর ছুঁড়ছিল। তা দেখে তিনি তাকে নিষেধ করলেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঐভাবে) কাঁকর ছুঁড়তে নিষেধ করেছেন। কেননা, তা দিয়ে শিকার করা যায় না। কিন্তু সে আবার ঐ কাজ করতে লাগল। তখন তিনি বলে উঠলেন, ‘আমি তোমাকে বলছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কাজ করতে নিষেধ করেছেন আবার তুমি ছুঁড়তে লাগলে? যাও! তোমার সাথে আর কথাই বলব না।’
12/171 وعَن عَابِسِ بنِ رَبِيعَةَ قَالَ: رَأيْتُ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ رضي الله عنه يُقَبِّلُ الحَجَرَ - يَعْنِي : الأسْوَدَ - وَيَقُولُ: إني أَعْلَمُ أنَّكَ حَجَرٌ مَا تَنْفَعُ وَلاَ تَضُرُّ، وَلَولا أنِّي رَأيْتُ رَسُولَ الله ﷺ يُقَبِّلُكَ مَا قَبَّلْتُكَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১২/১৭১। আবেস ইবনে রাবি‘আহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে ‘হাজারে আসওয়াদ’ চুমতে দেখেছি, তিনি বলছিলেন, ‘আমি সুনিশ্চিত জানি যে, তুমি একটা পাথর; তুমি না উপকার করতে পার, আর না অপকার? আমি যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তোমাকে চুমতে না দেখতাম, তাহলে আমি তোমাকে চুমতাম না।
17- بَابُ فِي وُجُوْبِ الْاِنْقِيَادِ لِحُكْمِ اللهِ تَعَالٰى
পরিচ্ছেদ -১৭ : আল্লাহর বিধান মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। আর যাকে এর দিকে আহ্বান করা হবে ও তাকে ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দেওয়া হবে, সে কী উত্তর দেবে?
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [النساء: ٦٥]
অর্থাৎ “কিন্তু না, তোমার রবের শপথ! তারা বিশ্বাসী (মু’মিন) হতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তাদের নিজেদের বিবাদ-বিসম্বাদের বিচারভার তোমার উপর অর্পণ না করে, অতঃপর তোমার সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে তাদের মনে কোন দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নেয়।” (সূরা নিসা ৬৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّمَا كَانَ قَوۡلَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذَا دُعُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ لِيَحۡكُمَ بَيۡنَهُمۡ أَن يَقُولُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٥١ ﴾ [النور: ٥١]
অর্থাৎ যখন বিশ্বাসীদেরকে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য আল্লাহ এবং তাঁর রসূলের দিকে আহ্বান করা হয়, তখন তারা তো কেবল এ কথাই বলে, ‘আমরা শ্রবণ করলাম ও মান্য করলাম।’ আর ওরাই হল সফলকাম। (সূরা নূর ৫১ আয়াত)
এই পরিচ্ছেদের সঙ্গে যে সব হাদীস সম্বন্ধ রাখে তার মধ্যে আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সেই হাদীসটিও অন্তর্ভুক্ত; যা পূর্বোক্ত পরিচ্ছেদের প্রথমে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া আরো হাদীস রয়েছে, যার কিছু নিম্নরূপঃ-
1/172 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا نَزَلَتْ عَلَى رَسُول الله ﷺ : ﴿ لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ﴾ الآية [البقرة: ٢٨٤] اشْتَدَّ ذلِكَ عَلَى أصْحَابِ رَسُولِ الله ﷺ، فَأتَوا رَسُولَ الله ﷺ ثُمَّ بَرَكُوا عَلَى الرُّكَبِ، فَقَالُوا : أيْ رسولَ الله، كُلِّفْنَا مِنَ الأَعمَالِ مَا نُطِيقُ: الصَّلاةَ والجِهَادَ والصِّيامَ والصَّدَقَةَ، وَقَدْ أُنْزِلَتْ عَلَيْكَ هذِهِ الآيَةُ وَلا نُطيقُها. قَالَ رَسُول الله ﷺ: «أتُرِيدُونَ أنْ تَقُولُوا كَمَا قَالَ أَهْلُ الكتَابَينِ مِنْ قَبْلِكُمْ: سَمِعْنَا وَعَصَيْنَا ؟ بَلْ قُولُوا سَمِعنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ المَصِيرُ» فَلَمَّا اقْتَرَأَهَا القومُ، وَذَلَّتْ بِهَا ألْسنَتُهُمْ أنْزَلَ اللهُ تَعَالَى في إثرِهَا : ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥﴾ [البقرة: ٢٨٥] فَلَمَّا فَعَلُوا ذلِكَ نَسَخَهَا اللهُ تَعَالَى، فَأنزَلَ الله - عز وجل - : ﴿لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَعَلَيۡهَا مَا ٱكۡتَسَبَتۡۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَآ إِن نَّسِينَآ أَوۡ أَخۡطَأۡنَاۚ ﴾ [البقرة: ٢٨٦] قَالَ : نَعَمْ ﴿ رَبَّنَا وَلَا تَحۡمِلۡ عَلَيۡنَآ إِصۡرٗا كَمَا حَمَلۡتَهُۥ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِنَاۚ ﴾ قَالَ : نَعَمْ ﴿ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِۦۖ ﴾ قَالَ : نَعَمْ ﴿ وَٱعۡفُ عَنَّا وَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَآۚ أَنتَ مَوۡلَىٰنَا فَٱنصُرۡنَا عَلَى ٱلۡقَوۡمِ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٢٨٦﴾ قَالَ : نَعَمْ . رواه مسلم
১/১৭২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর এই আয়াত অবতীর্ণ হল, অর্থাৎ ‘‘আকাশমণ্ডলী ও ভূমণ্ডলের মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার সবই আল্লাহর মালিকানাধীন। যদি তোমরা তোমাদের মনের কথা প্রকাশ কর অথবা তা গোপন কর, আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তার হিসাব গ্রহণ করবেন।’’ (সূরা বাক্বারাহ ২৮৪ আয়াত) তখন এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের জন্য প্রচণ্ড ভারী মনে হল। ফলে তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং তাঁরা হাঁটুর উপর ভর দিয়ে বসে গিয়ে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা (এমন) অনেক কাজের আদিষ্ট হয়েছি, যা (সম্পাদন) করা আমাদের ক্ষমতাধীন; (যেমন) নামায, জিহাদ, রোযা ও সাদকাহ। আর এই আয়াতটি যে আপনার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আমাদের ক্ষমতার বাইরে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি তোমাদের পূর্ববর্তী আহ্লে কিতাব (ইয়াহুদী ও খৃষ্টান)দের মত বলতে চাও যে, ‘আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম?’ বরং তোমরা বল, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম। হে আমাদের প্রতিপালক। আমরা তোমার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ সুতরাং যখন লোকেরা আয়াতটি পড়ল এবং তাদের জিভে সেটি পঠিত হতে থাকল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তারপর এই আয়াতটি অবতীর্ণ করলেন, ‘‘রাসূল তার প্রতি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তাতে সে বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাসিগণও। সকলে আল্লাহতে, তাঁর ফিরিশ্তাগণে, তাঁর কিতাবসমূহে এবং তাঁর রাসূলগণে বিশ্বাস স্থাপন করেছে। (তারা বলে,) ‘আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না।’ আর তারা বলে, ‘আমরা শুনলাম ও মান্য করলাম! হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা তোমার ক্ষমা চাই, আর তোমারই দিকে (আমাদের) প্রত্যাবর্তন হবে।’’ (সূরা বাক্বারা ২৮৫ আয়াত) যখন তাঁরা এ কাজ করলেন, তখন পূর্ববর্তী আয়াতটিকে আল্লাহ মনসূখ (রহিত) করে দিলেন। অতঃপর (তার পরিবর্তে) অবতীর্ণ করলেন, ‘‘আল্লাহ কাউকেও তার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব অর্পণ করেন না। যে ভাল উপার্জন করবে সে তার (প্রতিদান পাবে) এবং যে মন্দ উপার্জন করবে সে তার (প্রতিফল পাবে)। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি, তাহলে তুমি আমাদেরকে অপরাধী করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তিগণের উপর যেমন গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছিলে, আমাদের উপর তেমন দায়িত্ব অর্পণ করো না।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘হে আমাদের রব! এমন ভার আমাদের উপর অর্পণ করো না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ! ‘আর তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর, আমাদের পাপ মোচন কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমি আমাদের অভিভাবক। অতএব সত্য প্রত্যাখ্যানকারী (কাফের) সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে (সাহায্য ও) জয়যুক্ত কর।’ আল্লাহ বললেন, হ্যাঁ!
18- بَابُ النَّهْيِ عَنْ البِدَعِ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ
পরিচ্ছেদ -১৮ : বিদ‘আত এবং (দ্বীনে) নতুন নতুন কাজ আবিষ্কার করা নিষেধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَمَاذَا بَعۡدَ ٱلۡحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَٰلُۖ ﴾ [يونس: ٣٢]
অর্থাৎ “সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কী আছে?” (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ﴾ [الانعام: ٣٨]
অর্থাৎ “আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি।” (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ ﴾ [النساء: ٥٩]
অর্থাৎ “আর যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত) অর্থাৎ কিতাব ও সুন্নাহর দিকে।
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [الانعام: ١٥٣]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।” (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/173 عَن عَائِشَة رَضِي الله عَنهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ أحْدَثَ في أمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وفي رواية لمسلم: «مَنْ عَمِلَ عَمَلاً لَيْسَ عَلَيهِ أمرُنا فَهُوَ رَدٌّ».
১/১৭৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল---যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’
2/174 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ رَسُولُ الله ﷺ إِذَا خَطَبَ احْمَرَّتْ عَينَاهُ، وَعَلاَ صَوتُهُ، وَاشْتَدَّ غَضَبُهُ، حَتَّى كَأنَّهُ مُنْذِرُ جَيشٍ، يَقُولُ: «صَبَّحَكُمْ وَمَسَّاكُمْ»وَيَقُولُ: «بُعِثتُ أنَا والسَّاعَةُ كَهَاتَينِ» وَيَقْرِنُ بَيْنَ أُصبُعَيهِ السَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى، وَيَقُولُ: «أمَّا بَعْدُ، فَإنَّ خَيْرَ الحَديثِ كِتَابُ الله، وَخَيرَ الهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍ ﷺ، وَشَرَّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا، وَكُلَّ بِدْعَة ضَلالَةٌ» ثُمَّ يَقُولُ: «أنَا أوْلَى بِكُلِّ مُؤمِنٍ مِنْ نَفسِهِ، مَنْ تَرَكَ مَالاً فَلأَهْلِهِ، وَمَنْ تَرَكَ دَيْناً أَوْ ضَيَاعاً فَإلَيَّ وَعَلَيَّ». رواه مسلم
২/১৭৪। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাষণ দিতেন, তখন তাঁর চক্ষুদ্বয় লাল হয়ে যেত এবং তাঁর আওয়াজ উঁচু হত ও তাঁর ক্রোধ কঠিন রূপ ধারণ করত। যেন তিনি (শত্রু) সেনা থেকে ভীতি প্রদর্শন করছেন। তিনি বলতেন, ‘‘(সে শত্রু) তোমাদের উপর সকালে অথবা সন্ধ্যায় হামলা করতে পারে।’’ আর তিনি তাঁর তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলদ্বয় মিলিত করে বলতেন যে, ‘‘আমাকে এবং কিয়ামতকে এ দু’টির মত (কাছাকাছি) পাঠানো হয়েছে।’’ আর তিনি বলতেন, ‘‘আম্মা বা‘দ (আল্লাহর প্রশংসা ও সাক্ষ্য দান করার পর) নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা।’’ অতঃপর তিনি বলতেন, ‘‘আমি প্রত্যেক মু’মিনদের নিকট তার আত্মার চেয়েও নিকটতম। যে ব্যক্তি মাল ছেড়ে (মারা) যাবে, তা তার উত্তরাধিকারীদের জন্য এবং যে ঋণ অথবা অভাবী সন্তান-সন্ততি ছেড়ে যাবে, তার দায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত।’’
৩/১৭৫। ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়ার যে (১৬১নং) হাদীসটি ‘সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব’ পরিচ্ছেদে অতিবাহিত হয়েছে তা এখানেও উল্লেখ্য।
19- بَابُ فِيْ مَنْ سَنَّ سُنَّةً حَسَنَةً أَوْ سَيِّئَةً
পরিচ্ছেদ -১৯ : যে ব্যক্তি ভাল অথবা মন্দ রীতি চালু করবে
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤ ﴾ [الفرقان: ٧٣]
অর্থাৎ “যারা (প্রার্থনা করে) বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকে আমাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্য আদর্শস্বরূপ কর’।” (সূরা ফুরক্বান ৭৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَجَعَلۡنَٰهُمۡ أَئِمَّةٗ يَهۡدُونَ بِأَمۡرِنَا ﴾ [الانبياء: ٧٣]
অর্থাৎ “আর আমি তাদেরকে করলাম নেতা, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে মানুষকে পথ প্রদর্শন করত।” (সূরা আম্বিয়া ৭৩ আয়াত)
1/176 عَنْ أَبِي عَمرٍو جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا فِيْ صَدْرِ النَّهَارِ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فَجَاءَهُ قَومٌ عُرَاةٌ مُجْتَابي النِّمَار أَوْ العَبَاء، مُتَقَلِّدِي السُّيُوف، عَامَّتُهُمْ مِن مُضَرَ بَلْ كُلُّهُمْ مِنْ مُضَرَ، فَتَمَعَّرَ رَسُولُ الله ﷺ لمَاَّ رَأَى بِهِمْ مِنَ الفَاقَة، فَدَخَلَ ثُمَّ خَرَجَ، فَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَذَّنَ وَأَقَامَ، فصَلَّى ثُمَّ خَطَبَ، فَقَالَ: «﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمُ ٱلَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفۡسٖ وَٰحِدَةٖ ﴾ إِلَى آخر الآية : ﴿ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلَيۡكُمۡ رَقِيبٗا ١ ﴾ [النساء: ١] ، والآية الأُخْرَى التي في آخر الحَشْرِ : ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلۡتَنظُرۡ نَفۡسٞ مَّا قَدَّمَتۡ لِغَدٖۖ ﴾ [الحشر: ١٨] تَصَدَّقَ رَجُلٌ مِنْ دِينَارِهِ، مِنْ دِرهمِهِ، مِنْ ثَوبِهِ، مِنْ صَاعِ بُرِّهِ، مِنْ صَاعِ تَمْرِهِ - حَتَّى قَالَ - وَلَوْ بِشقِّ تَمرَةٍ»فَجَاءَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ بِصُرَّةٍ كَادَتْ كَفُّهُ تَعجِزُ عَنهَا، بَلْ قَدْ عَجَزَتْ، ثُمَّ تَتَابَعَ النَّاسُ حَتَّى رَأيْتُ كَومَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَثِيَابٍ، حَتَّى رَأيْتُ وَجْهَ رَسُولِ الله ﷺ يَتَهَلَّلُ كَأنَّهُ مُذْهَبَةٌ. فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «مَنْ سَنَّ في الإسلامِ سنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أجْرُهَا، وَأجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ، مِنْ غَيرِ أنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورهمْ شَيءٌ، وَمَنْ سَنَّ في الإسْلامِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيهِ وِزْرُهَا، وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ، مِنْ غَيرِ أنْ يَنْقُصَ مِنْ أوْزَارِهمْ شَيءٌ». رواه مسلم
১/১৭৬। আবূ ‘আমর জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা দিনের প্রথম ভাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম। অতঃপর তাঁর নিকট কিছু লোক এল, যাদের দেহ বিবস্ত্র ছিল, পশমের ডোরা কাটা চাদর (মাথা প্রবেশের মত জায়গা মাঝে কেটে) পরে ছিল অথবা ‘আবা’ (আংরাখা) পরে ছিল, তরবারি তারা নিজেদের গর্দানে ঝুলিয়ে রেখেছিল। তাদের অধিকাংশ মুদ্বার গোত্রের (লোক) ছিল; বরং তারা সকলেই মুদ্বার গোত্রের ছিল। তাদের দরিদ্রতা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। সুতরাং তিনি (বাড়ির ভিতর) প্রবেশ করলেন এবং পুনরায় বের হলেন। তারপর তিনি বেলালকে (আযান দেওয়ার) আদেশ করলেন। ফলে তিনি আযান দিলেন এবং ইকামত দিলেন। অতঃপর তিনি নামায পড়ে লোকদেরকে (সম্বোধন ক’রে) ভাষণ দিলেন। তিনি বললেন, ‘‘হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন ও তা হতে তার সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নরনারী (পৃথিবীতে) বিস্তার করেছেন। সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন।’’ (সূরা নিসা ১ আয়াত) অতঃপর দ্বিতীয় আয়াত যেটি সূরা হাশরের শেষে আছে সেটি পাঠ করলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আর প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের (কিয়ামতের) জন্য সে কি অগ্রিম পাঠিয়েছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’’ (সূরা হাশর ১৮ আয়াত)
‘‘সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা), দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা), কাপড়, এক সা’ গম ও এক সা’ খেজুর থেকে সাদকাহ করে।’’ এমনকি তিনি বললেন, ‘‘খেজুরের আধা টুকরা হলেও (তা যেন দান করে)।’’ সুতরাং আনসারদের একটি লোক (চাঁদির) একটি থলে নিয়ে এল, লোকটির করতল যেন তা ধারণ করতে পারছিল না; বরং তা ধারণ করতে অক্ষমই ছিল। অতঃপর (তা দেখে) লোকেরা পরস্পর দান আনতে আরম্ভ করল। এমনকি খাদ্য সামগ্রী ও কাপড়ের দু’টি স্তূপ দেখলাম। পরিশেষে আমি দেখলাম যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা যেন সোনার মত ঝলমল করছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি ইসলামে ভাল রীতি চালু করবে, সে তার নিজের এবং ঐ সমস্ত লোকের সওয়াব পাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর তার উপর আমল করবে। তাদের সওয়াবের কিছু পরিমাণও কম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন করবে, তার উপর তার নিজের এবং ঐ লোকদের গোনাহ বর্তাবে, যারা তার (মৃত্যুর) পর তার উপর আমল করবে। তাদের গোনাহর কিছু পরিমাণও কম করা হবে না।’’
2/177 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ مِنْ نَفْسٍ تُقْتَلُ ظُلْماً إلاَّ كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لأَنَّهُ كَانَ أوَّلَ مَنْ سَنَّ القَتلَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/১৭৭। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে কোন প্রাণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হবে, তার পাপের একটা অংশ আদমের প্রথম সন্তান (কাবীল) এর উপর বর্তাবে। কেননা, সে হত্যার রীতি সর্বপ্রথম চালু করেছে।’’
20- بَابُ فِي الدَّلَالَةِ عَلٰى خَيْرِ وَالدُّعَاءِ إِلٰى هُدًى أَوْ ضَلاَلَةٍ
পরিচ্ছেদ -২০ : মঙ্গলের প্রতি পথ-নির্দেশনা এবং সৎপথ অথবা
অসৎপথের দিকে আহ্বান করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱدۡعُ إِلَىٰ رَبِّكَۖ ﴾ [القصص: ٨٧]
অর্থাৎ “তুমি তোমার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান কর।” (সূরা ক্বাসাস ৮৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]
অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” (সূরা নাহ্ল ১২৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ۘ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “সৎকাজ ও আত্মসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদাহ ২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে।” (সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াত)
1/178 وَعَنْ أَبِي مَسعُودٍ عُقبةَ بنِ عَمرٍو الأَنصَارِي البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أجْرِ فَاعِلِهِ». رواه مسلم
১/১৭৮। আবূ মাসউদ উক্ববাহ ইবনে ‘আমর আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ভাল কাজের পথ দেখাবে, সে তার প্রতি আমলকারীর সমান নেকী পাবে।’’
2/179 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدَىً، كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أجُورِ مَنْ تَبِعَه، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ أجُورِهمْ شَيئاً، وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ، كَانَ عَلَيهِ مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لاَ يَنْقُصُ ذلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيئاً». رواه مسلم
২/১৭৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি (কাউকে) সৎপথের দিকে আহ্বান করবে, সে তার প্রতি আমলকারীদের সমান নেকী পাবে। এটা তাদের নেকীসমূহ থেকে কিছুই কম করবে না। আর যে ব্যক্তি (কাউকে) ভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করবে, তার উপর তার সমস্ত অনুসারীদের গোনাহ চাপবে। এটা তাদের গোনাহ থেকে কিছুই কম করবে না।’’
3/180 وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيْ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ يَومَ خَيبَر: «لأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَداً رَجلاً يَفْتَحُ الله عَلَى يَدَيهِ، يُحبُّ اللهَ وَرَسولَهُ، ويُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ»، فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أيُّهُمْ يُعْطَاهَا . فَلَمَّا أصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رسولِ الله ﷺ كُلُّهُمْ يَرْجُو أنْ يُعْطَاهَا. فَقَالَ: «أينَ عَلِيُّ ابنُ أَبي طالب ؟»فقيلَ: يَا رسولَ الله، هُوَ يَشْتَكي عَيْنَيهِ . قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْه»فَأُتِيَ بِهِ فَبَصَقَ رسولُ الله ﷺ في عَيْنَيْهِ، وَدَعَا لَهُ فَبَرِىءَ حَتَّى كأنْ لَمْ يكُن بِهِ وَجَعٌ، فأعْطاهُ الرَّايَةَ . فقَالَ عَليٌّ رضي الله عنه: يَا رَسُول اللهِ، أقاتِلُهمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا ؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بسَاحَتهمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإسْلاَمِ، وَأخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللهِ تَعَالَى فِيهِ، فَوَالله لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيرٌ لَكَ مِنْ حُمْرِ النَّعَم». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/১৮০। আবূল আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার (যুদ্ধের) দিন বললেন, ‘‘নিশ্চয় আমি আগামীকাল যুদ্ধ-পতাকা এমন এক ব্যক্তিকে দেব, যার হাতে আল্লাহ বিজয় দান করবেন, আর সে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসেন।’’ অতঃপর লোকেরা এই আলোচনা করতে করতে রাত কাটিয়ে দিল যে, তাদের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে এটা দেওয়া হবে। অতঃপর সকালে তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেল। তাদের প্রত্যেকেরই এই আকাঙ্ক্ষা ছিল যে, পতাকা তাকে দেওয়া হোক। কিন্তু তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আলী ইবনে আবী ত্বালেব কোথায়?’’ তাঁকে বলা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তাঁর চক্ষুদ্বয়ে ব্যথা হচ্ছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে ডেকে পাঠাও।’’ সুতরাং তাঁকে ডেকে আনা হল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চক্ষুদ্বয়ে থুতু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। ফলে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন; যেন তাঁর কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তিনি তাঁকে যুদ্ধ-পতাকা দিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! তারা আমাদের মত (মুসলিম) না হওয়া পর্যন্ত কি আমি তাদের বিরুদ্ধে লড়তে থাকব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি প্রশান্ত হয়ে চলতে থাক; যতক্ষণ না তাদের নগর-প্রাঙ্গনে অবতরণ করেছ। অতঃপর তাদেরকে ইসলামের দিকে আহ্বান কর এবং তাদের উপর ইসলামে আল্লাহর যে জরুরী হক রয়েছে তাদেরকে সে ব্যাপারে অবগত করাও। আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ তা‘আলা তোমার দ্বারা একটি মানুষকে হিদায়াত করেন, তাহলে তা তোমার জন্য (আরবের শ্রেষ্ঠ সম্পদ) লাল উঁটনী অপেক্ষাও উত্তম।’’
4/181 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ فتىً مِنْ أَسلَمَ، قَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ معي مَا أتَجَهَّز بِهِ، قَالَ: «ائتِ فُلاَناً فإنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ»فَأتَاهُ، فَقَالَ: إنَّ رسولَ الله ﷺ يُقْرِئُكَ السَّلامَ، وَيَقُولُ : أعْطني الَّذِي تَجَهَّزْتَ بِهِ، فَقَالَ : يَا فُلاَنَةُ، أعْطِيهِ الَّذِي تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلا تَحْبِسي مِنْهُ شَيئاً، فَواللهِ لاَ تَحْبِسِين مِنْهُ شَيئاً فَيُبَاركَ لَكِ فِيهِ . رواه مسلم
৪/১৮১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের এক যুবক বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করছি; কিন্তু আমার কাছে তার প্রস্তুতির সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি অমুকের কাছে যাও। কেননা সে (জিহাদের জন্য) প্রস্তুতি নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’’ সুতরাং সে (যুবকটি) তার নিকট এসে বলল, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম দিচ্ছেন এবং বলছেন যে, যে সরঞ্জাম তুমি (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত করেছ, তা তুমি আমাকে দাও।’ অতএব সে (তার স্ত্রীকে) বলল, ‘হে অমুক! আমি জিহাদের জন্য যে সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিলাম, তুমি সব একে দিয়ে দাও এবং তা হতে কোন জিনিস আটকে রেখো না। আল্লাহর কসম! তুমি তার মধ্য হতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না।’
21- بَابُ التَّعَاوُنِ عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوٰى
পরিচ্ছেদ -২১ : নেকী ও সংযমশীলতার কাজে পারস্পরিক সহযোগিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “সৎকাজ ও আত্মসংযমে তোমরা পরস্পর সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদাহ ২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلۡعَصۡرِ ١ إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ ٢ إِلَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلۡحَقِّ وَتَوَاصَوۡاْ بِٱلصَّبۡرِ ٣ ﴾ [العصر: ١، ٣]
অর্থাৎ “সময়ের শপথ!। মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়। আর উপদেশ দেয় ধৈর্য ধারণের।” (সূরা আসর)
ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, লোকেরা অথবা তাদের অধিকাংশই এই সূরা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার ব্যাপারে উদাসীন। (তফসীর ইবনে কাসীর)
1/182 وَعَنْ أَبِي عَبدِ الرَّحمَانِ زَيدِ بنِ خَالِدٍ الجُهَنِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسولُ الله ﷺ: «مَنْ جَهَّزَ غَازِياً في سَبيلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازياً في أهْلِهِ بِخَيرٍ فَقَدْ غَزَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/১৮২। আবূ আব্দুর রাহমান যায়দ ইবনে খালিদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সরঞ্জাম দিয়ে আল্লাহর পথে কোন মুজাহিদ প্রস্তুত করে দিল, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি স্বয়ং জিহাদ করল। আর যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদের পরিবারে উত্তমরূপে প্রতিনিধিত্ব করল, নিঃসন্দেহে সেও জিহাদ করল।’’ (অর্থাৎ সেও জিহাদের নেকী পাবে।)
2/183 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيْ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ بَعَثَ بَعثاً إِلَى بَني لِحْيَان مِنْ هُذَيْلٍ، فَقَالَ: «لِيَنْبَعِثْ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا وَالأجْرُ بَيْنَهُمَا». رواه مسلم
২/১৮৩। আবূ সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুযাইল গোত্রের একটি শাখা বনু লিহ্ইয়ানের দিকে এক সেনাবাহিনী প্রেরণ (করার ইচ্ছা) করলেন। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক দুই ব্যক্তির মধ্যে একজন যাবে; আর সওয়াব দু’জনেই পাবে।’’
3/184 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ لَقِيَ رَكْباً بالرَّوْحَاءِ، فَقَالَ: «مَنِ القَوْمُ؟» قَالُوا : اَلْمُسلِمُونَ، فَقَالُوا : مَن أنتَ ؟ قَالَ: «رَسُولُ الله»، فَرَفَعَت إِلَيْهِ امرأةٌ صَبياً، فَقَالَتْ: ألِهَذَا حَجٌّ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، وَلَكِ أجْرٌ». رواه مسلم
৩/১৮৪। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, রওহা নামক স্থানে এক কাফেলার সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কারা?’’ তারা বলল, ‘(আমরা) মুসলিম।’ অতঃপর তারা বলল, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, ‘‘(আমি) আল্লাহর রাসূল।’’ অতঃপর একজন মহিলা তার এক বাচ্চাকে তাঁর দিকে তুলে বলল, ‘এর কি হজ্জ আছে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, আর তুমিও নেকী পাবে।’’
৪/১৮৫। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে মুসলিম আমানাতদার কোষাধ্যক্ষ মালিকের আদেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং সে ভালো মনে তাকে পূর্ণ মাল দেয়, যাকে মালিক দেওয়ার আদেশ করে, সেও সাদকাহকারীদের মধ্যে একজন গণ্য হয়।’’
22- بَابُ النَّصِيْحَةِ
পরিচ্ছেদ -২২ : হিতাকাঙ্ক্ষিতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ ﴾ [الحجرات: ١٠]
অর্থাৎ “সকল ঈমানদাররা তো পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজরাত ১০ আয়াত)
তিনি নূহ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَأَنصَحُ لَكُمۡ ﴾ [الاعراف: ٦٢]
অর্থাৎ “(নূহ বলল,) আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি (বা হিতকামনা করছি)।”(সূরা আ‘রাফ ৬২ আয়াত)
তিনি হূদ আলাইহিস সালাম-এর কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِينٌ ﴾ [الاعراف: ٦٨]
অর্থাৎ “(হূদ বলল,) আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা (বা হিতাকাঙ্ক্ষী)।” (সূরা আ‘রাফ ৬৮ আয়াত)
হাদীসসমূহ:-
1/186 عَنْ أَبِي رُقَيَّةَ تَمِيمِ بنِ أوسٍ الدَّارِيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيّ ﷺ، قَالَ : «الدِّينُ النَّصِيحةُ» قُلنَا : لِمَنْ ؟ قَالَ: «لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلأئِمَّةِ المُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ». رواه مسلم
১/১৮৬। আবূ রুক্বাইয়াহ তামীম ইবন আওস আদ-দারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করার নাম।’’ আমরা বললাম, ‘কার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রসূলের জন্য, মুসলিমদের শাসকদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য।
2/187 عَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ : بَايَعْتُ رَسُولَ الله ﷺ عَلَى إقَامِ الصَّلاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، والنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
২/১৮৭। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া ও সকল মুসলিমর জন্য কল্যাণ কামনা করার উপর বায়‘আত করেছি।
3/188 عَن أنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأَخِيهِ مَا يُحبُّ لِنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/১৮৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কেউ প্রকৃত ঈমানদার হবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার ভায়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’
23- بَابُ الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْيِ عَنْ المُنْكَرِ
পরিচ্ছেদ - ২৩ : ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤ ﴾ [ال عمران: ١٠٤]
অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা (লোককে) কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকার্যের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কার্য থেকে নিষেধ করবে। আর এ সকল লোকই হবে সফলকাম।” (সূরা আলে ইমরান ১০৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ ﴾ [ال عمران: ١١٠]
অর্থাৎ “তোমরাই শ্রেষ্ঠতম জাতি। মানবমণ্ডলীর জন্য তোমাদের অভ্যুত্থান হয়েছে, তোমরা সৎকার্যের নির্দেশ দান কর, আর অসৎ কার্য (করা থেকে) নিষেধ কর, আর আল্লাহতে বিশ্বাস কর।” (সূরা আলে ইমরান ১১০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ‘রাফ ১৯৯ আয়াত)
অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتُ بَعۡضُهُمۡ أَوۡلِيَآءُ بَعۡضٖۚ يَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ ﴾ [التوبة: ٧١]
অর্থাৎ “আর বিশ্বাসী পুরুষরা ও বিশ্বাসিনী নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজে নিষেধ করে।” (সূরা তাওবাহ ৭১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ ﴾ [المائدة: ٧٨، ٧٩]
অর্থাৎ “বনী ইস্রাঈলের মধ্যে যারা অবিশ্বাস করেছিল তারা দাঊদ ও মারয়্যাম-তনয় কর্তৃক অভিশপ্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল অবাধ্য ও সীমালংঘনকারী। তারা যেসব গর্হিত কাজ করত তা থেকে তারা একে অন্যকে বারণ করত না। তারা যা করত নিশ্চয় তা নিকৃষ্ট।” (সূরা মায়েদাহ ৭৮-৭৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ وَقُلِ ٱلۡحَقُّ مِن رَّبِّكُمۡۖ فَمَن شَآءَ فَلۡيُؤۡمِن وَمَن شَآءَ فَلۡيَكۡفُرۡۚ ﴾ [الكهف: ٢٩]
অর্থাৎ “বলে দাও, সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যান করুক।” (সূরা ক্বাহফ ২৯ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ ﴾ [الحجر: ٩٤]
অর্থাৎ “অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ তা প্রকাশ্যে প্রচার কর।” (সূরা হিজর ৯৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্রে বলেছেন,
﴿ أَنجَيۡنَا ٱلَّذِينَ يَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلسُّوٓءِ وَأَخَذۡنَا ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ بِعَذَابِۢ بَِٔيسِۢ بِمَا كَانُواْ يَفۡسُقُونَ ﴾ [الاعراف: ١٦٥]
অর্থাৎ “(যে উপদেশ তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল, তখন) যারা মন্দ কাজে বাধা দান করত তাদেরকে আমি উদ্ধার করলাম এবং যারা অত্যাচারী ছিল তারা সত্যত্যাগ করত বলে আমি তাদেরকে কঠোর শাস্তির সাথে পাকড়াও করলাম।” (সূরা আ‘রাফ ১৬৫ আয়াত)
এ মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আর হাদীসসমূহ নিম্নরূপঃ-
1/189 عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «مَنْ رَأى مِنْكُمْ مُنْكَراً فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أضْعَفُ الإيمَانِ». رواه مسلم
১/১৮৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোন গর্হিত কাজ দেখবে, সে যেন তা নিজ হাত দ্বারা পরিবর্তন করে দেয়। যদি (তাতে) ক্ষমতা না রাখে, তাহলে নিজ জিভ দ্বারা ( উপদেশ দিয়ে পরিবর্তন করে)। যদি (তাতেও) সামর্থ্য না রাখে, তাহলে অন্তর দ্বারা (ঘৃণা করে)। আর এ হল সবচেয়ে দুর্বল ঈমান।’’
2/190 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ: «مَا مِنْ نَبيٍّ بَعَثَهُ اللهُ في أمَّة قَبْلِي إلاَّ كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّونَ وَأصْحَابٌ يَأخُذُونَ بِسنَّتِهِ وَيَقْتَدُونَ بِأَمْرِهِ، ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوفٌ يَقُولُونَ مَا لاَ يَفْعَلُونَ وَيَفْعَلُونَ مَا لاَ يُؤْمَرونَ، فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلبِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلسَانِهِ فَهُوَ مُؤمِنٌ، وَلَيسَ وَرَاءَ ذلِكَ مِنَ الإيمَانِ حَبَّةُ خَرْدَل». رواه مسلم
২/১৯০। ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার পূর্বে আল্লাহ যে কোনো নবীকে যে কোনো উম্মতের মাঝে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে তাঁর (কিছু) সহযোগী ও সঙ্গী হত। তারা তাঁর সুন্নতের উপর আমল করত এবং তাঁর আদেশের অনুসরণ করত। অতঃপর তাদের পরে এমন অপদার্থ লোক সৃষ্টি হল যে, তারা যা বলত, তা করত না এবং তারা তা করত, যার আদেশ তাদেরকে দেওয়া হত না। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ হাত দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন, যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে সে মু’মিন এবং যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজ জিভ দ্বারা সংগ্রাম করবে সে মু’মিন। আর এর পর সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’’
3/191 عَنْ أَبِي الوَلِيدِ عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه قَالَ: بَايَعْنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى السَّمْعِ والطَّاعَةِ في العُسْرِ واليُسْرِ، والمَنْشَطِ وَالمَكْرَهِ، وَعَلَى أثَرَةٍ عَلَيْنَا، وَعَلَى أنْ لاَ نُنازِعَ الأمْرَ أهْلَهُ إلاَّ أنْ تَرَوْا كُفْراً بَوَاحاً عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ تَعَالَى فِيهِ بُرْهَانٌ، وَعَلَى أنْ نَقُولَ بِالحَقِّ أيْنَمَا كُنَّا لاَ نَخَافُ في اللهِ لَوْمَةَ لاَئِمٍ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/১৯১। আবূ অলীদ উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এই মর্মে বাইয়াত করলাম যে, দুঃখে-সুখে, আরামে ও কষ্টে এবং আমাদের উপর (অন্যদেরকে) প্রাধান্য দেওয়ার অবস্থায় আমরা তাঁর পূর্ণ আনুগত্য করব। রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে তার নিকট থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়ার লড়াই করব না; যতক্ষণ না তোমরা (তার মধ্যে) প্রকাশ্য কুফরী দেখ, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল রয়েছে। আর আমরা সর্বদা সত্য কথা বলব এবং আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করব না।’
4/192 عَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَثَلُ القَائِمِ في حُدُودِ اللهِ وَالوَاقعِ فِيهَا، كَمَثَلِ قَومٍ اسْتَهَمُوا عَلَى سَفِينَةٍ فَصَارَ بَعْضُهُمْ أعْلاها وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا، وَكَانَ الَّذِينَ في أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوا مِنَ المَاءِ مَرُّوا عَلَى مَنْ فَوْقهُمْ، فَقَالُوا: لَوْ أنَّا خَرَقْنَا في نَصِيبِنَا خَرْقاً وَلَمْ نُؤذِ مَنْ فَوقَنَا، فَإِنْ تَرَكُوهُمْ وَمَا أرَادُوا هَلَكُوا جَمِيعاً، وَإنْ أخَذُوا عَلَى أيدِيهِمْ نَجَوا وَنَجَوْا جَمِيعاً». رواه البخاري
৪/১৯২। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত সীমায় অবস্থানকারী (সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে বাধাদানকারী) এবং ঐ সীমা লংঘনকারী (উক্ত কাজে তোষামোদকারীর) উপমা হল এক সম্প্রদায়ের মত; যারা একটি দ্বিতলবিশিষ্ট পানি-জাহাজে লটারি করে কিছু লোক উপর তলায় এবং কিছু লোক নিচের তলায় স্থান নিল। (নিচের তলা সাধারণতঃ পানির ভিতরে ডুবে থাকে। তাই পানির প্রয়োজন হলে নিচের তলার লোকদেরকে উপর তলায় যেতে হয় এবং সেখান হতে সমুদ্র বা নদীর পানি তুলে আনতে হয়।) সুতরাং পানির প্রয়োজনে নিচের তলার লোকেরা উপর তলায় যেতে লাগল। (উপর তলার লোকদের উপর পানি পড়লে তারা তাদের উপর ভাগে আসা অপছন্দ করল। তারা বলেই দিল, ‘তোমরা নিচে থেকে আমাদেরকে কষ্ট দিতে এসো না।’) নিচের তলার লোকেরা বলল, ‘আমরা যদি আমাদের ভাগে (নিচের তলায় কোন স্থানে) ছিদ্র করে দিই, তাহলে (দিব্যি আমরা পানি ব্যবহার করতে পারব) আর উপর তলার লোকদেরকে কষ্টও দেব না। (এই পরিকল্পনার পর তারা যখন ছিদ্র করতে শুরু করল) তখন যদি উপর তলার লোকেরা তাদেরকে নিজ ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় (এবং সে কাজে বাধা না দেয়), তাহলে সকলেই (পানিতে ডুবে) ধ্বংস হয়ে যায়। (উপর তলার লোকেরা সে অন্যায় না করলেও রেহাই পেয়ে যাবে না।) পক্ষান্তরে উপর তলার লোকেরা যদি তাদের হাত ধরে (জাহাজে ছিদ্র করতে) বাধা দেয়, তাহলে তারা নিজেরাও বেঁচে যায় এবং সকলকেই বাঁচিয়ে নেয়।’’
৫/১৯৩। উম্মুল মু’মেনীন উম্মে সালামাহ হিন্দ্ বিন্তে আবী উমাইয়া হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের উপর এমন শাসকবৃন্দ নিযুক্ত করা হবে, যাদের (কিছু কাজ) তোমরা ভালো দেখবে এবং (কিছু কাজ) গর্হিত। সুতরাং যে ব্যক্তি (তাদের গর্হিত কাজকে) ঘৃণা করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে এবং যে আপত্তি ও প্রতিবাদ জানাবে, সেও পরিত্রাণ পেয়ে যাবে। কিন্তু যে ব্যক্তি (তাতে) সম্মত হবে এবং তাদের অনুসরণ করবে (সে ধ্বংস হয়ে যাবে)।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না; যে পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায কায়েম করবে।’’
6/194 عَن أُمِّ المُؤمِنِينَ أُمِّ الحَكَمِ زَينَبَ بِنتِ جَحشٍ رَضِيَ الله عَنهَا : أن النَّبيّ ﷺ دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعاً، يَقُولُ: « لا إِلٰهَ إلاّ الله، وَيلٌ للْعَرَبِ مِنْ شَرٍّ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ اليَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأجُوجَ وَمَأجُوجَ مِثلَ هذِهِ»، وحلّق بأُصبُعيهِ الإبهامِ وَالَّتِي تَلِيهَا، فَقُلتُ : يَا رَسُولَ الله، أنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الخَبَثُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/১৯৪। উম্মুল মু’মিনীন উম্মুল হাকাম যয়নাব বিনতে জাহ্শ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিকট শঙ্কিত অবস্থায় প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেন, ‘‘আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই, আরবের জন্য ঐ পাপ হেতু সর্বনাশ রয়েছে যা সন্নিকটবর্তী। আজকে ইয়া’জূজ-মা’জূজের দেওয়াল এতটা খুলে দেওয়া হয়েছে।’’ এবং তিনি (তার পরিমাণ দেখানোর জন্য) নিজ বৃদ্ধ ও তর্জনী দুই আঙ্গুল দ্বারা (গোলাকার) বৃত্ত বানালেন। আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎলোক মওজুদ থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংসপ্রাপ্ত হব?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, যখন নোংরামি বেশী হবে।’’
7/195. عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إيَّاكُمْ وَالجُلُوسَ في الطُّرُقَاتِ»! فقالوا : يَا رَسُول الله، مَا لَنَا مِنْ مجالِسِنا بُدٌّ، نتحدث فِيهَا . فَقَالَ رسولُ الله ﷺ: «فَإذَا أبَيْتُمْ إلاَّ المَجْلِسَ، فَأَعْطُوا الطَّريقَ حَقَّهُ».قالوا : وما حَقُّ الطَّريقِ يَا رسولَ الله ؟ قَالَ: «غَضُّ البَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلامِ، وَالأمْرُ بِالمَعْرُوفِ، والنَّهيُ عن المُنْكَرِ» مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/১৯৫। আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা রাস্তায় বসা হতে বিরত থাক।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে মজলিসে না বসলে তো আমাদের উপায় নেই; আমরা সেখানে কথাবার্তা বলি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তোমরা (সেখানে) না বসে মানবেই না, তখন তোমরা রাস্তার হক আদায় কর।’’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! রাস্তার হক কি?’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভাল কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা।’’
8/196. عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا : أن رَسُولَ الله ﷺ رَأى خاتَماً مِنْ ذَهَبٍ في يَدِ رَجُلٍ فنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ، وَقالَ: «يَعْمدُ أحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا في يَدِهِ»! فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعدَمَا ذَهَبَ رَسُولُ الله ﷺ: خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ. قَالَ: لاَ وَالله لاَ آخُذُهُ أبَداً وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ الله ﷺ. رواه مسلم
৮/১৯৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ একটি লোকের হাতে সোনার আংটি দেখতে পেলেন। অতঃপর তিনি তা খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে একজন স্বেচ্ছায় আগুনের টুকরা নিয়ে তা স্বহস্তে রাখতে চায়!’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলে সেই লোকটিকে বলা হল, ‘তুমি তোমার আংটিটা তুলে নাও এবং (তা বিক্রি করে অথবা উপঢৌকন দিয়ে) তার দ্বারা উপকৃত হও।’ সে বলল, ‘না। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা ফেলে দিয়েছেন, তা আমি কখনই তুলে নেব না।’
9/197. عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الحَسَنِ البَصرِي : أَنَّ عَائِذَ بنَ عَمرٍو رضي الله عنه دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللهِ بنِ زِيَاد، فَقَالَ : أي بُنَيَّ، إِنِّي سَمِعتُ رَسُول الله ﷺ يَقُولُ: «إنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الحُطَمَةُ» فَإِيَّاكَ أنْ تَكُونَ مِنْهُمْ، فَقَالَ لَهُ : اجلِسْ فَإِنَّمَا أنْتَ مِنْ نُخَالَةِ أصْحَابِ مُحَمَّد ﷺ، فَقَالَ : وهل كَانَتْ لَهُم نُخَالَةٌ إِنَّمَا كَانَتِ النُّخَالَةُ بَعْدَهُمْ وَفي غَيْرِهِمْ . رواه مسلم
৯/১৯৭। আবূ সাঈদ হাসান বাসরী বর্ণনা করেন যে, আয়েয ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (ইরাকের গভর্নর) উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট গেলেন। অতঃপর (উপদেশ স্বরূপ) বললেন, ‘বেটা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় নিকৃষ্টতম শাসক সে, যে প্রজাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে। সুতরাং তুমি তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে দূরে থাকো।’ যিয়াদ তাঁকে বলল, ‘আপনি বসুন, আপনি তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের চালা আটার অবশিষ্ট ভুসি (অপদার্থ)!’ তিনি বললেন, ‘তাঁদের মধ্যেও কি ভুসি আছে? (কখনই না।) বরং ভুসি তো তাঁদের পরবর্তী এবং তাঁরা ছাড়া অন্যদের মধ্যে আছে।’
10/198. عَن حُذَيفَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسي بِيَدِهِ، لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنْ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَاباً مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُوْنَهُ فَلا يُسْتَجَابُ لَكُمْ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
১০/১৯৮। হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে, তা না হলে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর আযাব পাঠাবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর কাছে দো‘আ করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।’’
11/199. عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «أفْضَلُ الجِهَادِ كَلِمَةُ عَدْلٍ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائرٍ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
১১/১৯৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অত্যাচারী বাদশাহর নিকট হক কথা বলা সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ।’’
12/200. عَنْ أَبِي عَبدِ الله طَارِقِ بن شِهَابٍ البَجَليِّ الأَحْمَسِيّ رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبيّ ﷺ وَقَد وَضَعَ رِجلَهُ في الغَرْزِ: أيُّ الجِهادِ أفضَلُ؟ قَالَ: «كَلِمَةُ حَقٍّ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَائرٍ». رواه النسائي بإسناد صحيح
১২/২০০। আবূ আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনে শিহাব বাজালী আহমাসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করল এমতাবস্থায় যে, তিনি (সওয়ারীর উপর আরোহণ করার জন্য) পাদানে পা রেখে দিয়েছিলেন, ‘কোন্ জিহাদ সর্বশ্রেষ্ঠ?’ তিনি বললেন, ‘‘অত্যাচারী বাদশাহর সামনে হক কথা বলা।’’
13/201. عَنْ اِبْنِ مَسْعُوْدٍ رضي الله عنه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ : «إِنَّ أَوَّلَ مَا دَخَلَ النَّقْصُ عَلٰى بَنِي إِسْرائيلَ أَنَّهُ كَانَ الرَّجُلُ يَلْقىٰ الرَّجُلَ فَيَقُولُ : يَا هٰذَا اتَّقِ اللهِ وَدَعْ مَا تَصْنَعُ فَإِنَّهُ لَا يَحِلُّ لَكَ، ثُمَّ يَلْقَاهُ مِنَ الْغَدِ وَهُوَ عَلىٰ حَالِهِ، فَلَا يَمْنَعُهُ ذٰلِكَ أَنْ يَكُوْنَ أَكِيلَهُ وَشَرِيْبَهُ وَقَعِيْدَهُ، فَلَمَّا فَعَلُوْا ذٰلِكَ ضَرَبَ اللهِ قُلُوْبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ» ثُمَّ قَالَ : ﴿لُعِنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۢ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَلَىٰ لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۚ ذَٰلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعۡتَدُونَ ٧٨ كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوۡنَ عَن مُّنكَرٖ فَعَلُوهُۚ لَبِئۡسَ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٧٩ تَرَىٰ كَثِيرٗا مِّنۡهُمۡ يَتَوَلَّوۡنَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۚ لَبِئۡسَ مَا قَدَّمَتۡ لَهُمۡ أَنفُسُهُمۡ ﴾ إِلىٰ قَوْلِهِ : ﴿ فَٰسِقُونَ ﴾ [المائدة: ٧٨، ٨١] ثُمَّ قَالَ: «كَلاَّ، وَاللهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ، وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ، وَلَتَأْخُذُنَّ عَلىٰ يَدِ الظَّالِمِ، وَلَتَأْطِرُنَّهُ عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا، وَلَتَقْصُرُنَّهُ عَلَى الْحَقِّ قَصْراً، أَوْ لَيَضْرِبَنَّ اللهِ بِقُلُوْبِ بَعْضِكُمْ عَلَى بَعْضٍ، ثُمَّ لَيَلْعَنْكُمْ كَمَا لَعَنَهُمْ»رواه أبو داود، والترمذي وقال : حديث حسن .
১৩/২০১। ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথমে এভাবে অন্যায় ও অপকর্ম প্রবেশ করেঃ এক (আলিম) ব্যক্তি অপর ব্যক্তির সাথে মিলিত হতো এবং তাকে বলত, হে অমুক! আল্লাহকে ভয় কর এবং যা করছ তা পরিত্যাগ কর, কারণ, তোমার জন্য এ কাজ অবৈধ, সে তার সঙ্গে দ্বিতীয় দিনও মিলিত হয়ে তাকে একই অবস্থায় দেখতে পেত কিন্তু সে কাজ তাকে তার পানাহার ও উঠা-বসায় অংশীদার হতে বাধা দিত না, তাদের অবস্থা এরকম হওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের একের অন্তরের (কালিমার) মাধ্যমে অপরের অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলা অন্ধকার করে দিলেন। তারপর তিনি এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘বানী ইসলাঈলের মাঝে যারা কুফরীর পথ ধরল দাঊদ ও ‘ঈসা ইবনু মারইয়ামের মুখ দিয়ে তাদের প্রতি লানত করা হলো। কেননা, তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অতিরিক্ত সীমালঙ্ঘন করেছিল। তারা পরস্পরকে পাপ কাজ করতে নিষেধ করত না। তারা অতিশয় নিকৃষ্ট কর্মপন্থা অবলম্বন করেছিল। বহু লোককে তোমরা দেখছ, যারা (মু‘মিনদের বদলে) কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব ও সহায়তা করতে ব্যস্ত। নিশ্চয়ই সামনে খুব মন্দ পরিণতিই রয়েছে, যার ব্যবস্থা তাদের প্রবৃত্তিসমূহ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি ক্রোধান্বিত হয়েছেন। তাদের আযাবভোগ স্থায়ী হবে। আল্লাহ, রাসূল এবং সেই জিনিসের প্রতি তারা যদি প্রকৃতই ঈমান আনত, তাঁর (নাবীর) প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাহলে তারা কখনও বন্ধুরূপে (ঈমানদার লোকদের বিপরীতে) কাফিরদেরকে গ্রহণ করতো না। কিন্তু তাদের মধ্যে অধিকাংশ ব্যক্তিই ফাসিক’’- (সূরা আল-মায়িদাহ্ঃ ৭৮-৮১)। তারপর তিনি (মহানবী) বললেনঃ কখনও নয়! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম! অবশ্যই তোমরা সৎ কর্মের আদেশ দিতে থাক এবং অন্যায় ও খারাপ কাজ হতে (মানুষকে) বিরত রাখ, অত্যাচারীর হাত মজবূত করে ধর এবং তাকে টেনে তুলে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত কর। তাকে হকের উপর এনে ছাড়। নচেৎ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের (নেককার ও গুনাহ্গার) পরস্পরের অন্তরকে একত্রিত করে (অন্ধকার করে) দিবেন, তারপর তোমাদেরকেও বানী ইসরাঈলের ন্যায় অভিশপ্ত করবেন। হাদীসটি ইমাম আবূ দাউদ ও তিরমিযী বর্ণনা করেছেন। তিরমিযি বলেছেন, এটা হাসান হাদীস। হাদীসের মূল শব্দগুলো আবূ দাউদের-৪৩৩৬।
মূল হাদীসের অর্থ নিম্নরূপঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন বানী ইসরাঈল গর্হিত কর্মে লিপ্ত হলো, তাদেরকে তাদের আলিমগণ তা হতে বিরত থাকতে বলল, কিন্তু তারা তা করল না। তাদের সাথে আলিমগণ উঠা-বসা ও পানাহার চালিয়ে যেতে থাকল। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরস্পরের হৃদয়কে একত্রিত করে দিলেন (ফলে আলিমরাও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ল)। আল্লাহ তা‘আলা দাউদ ও ঈসা ইবনু মারইয়ামের মুখ দিয়ে তাদেরকে অভিশাপ দিলেন। কেননা, তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং অত্যন্ত বাড়াবাড়ি শুরু করেছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঠেস দিয়ে বসা ছিলেন। তিনি সোজা হয়ে বসলেন এবং বলেলনঃ কখনও নয়, সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার জীবন! তাদেরকে তোমরা (অত্যাচারীদেরকে) হাত ধরে টেনে এনে হক্ব ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত ছেড়ে দিবে না।
14/202. عَنْ أَبِي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه، قَالَ : يَا أيُّهَا النَّاسُ، إنّكُم لتَقرَؤُون هَذِهِ الآيَة : ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ عَلَيۡكُمۡ أَنفُسَكُمۡۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ﴾ [المائدة: ١٠٥] وَإِنِّي سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ يَقُولُ: «إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الظَّالِمَ فَلَمْ يأخُذُوا عَلَى يَدَيْهِ أوشَكَ أنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابٍ مِنْهُ». رواه أَبُو داود والترمذي والنسائي بأسانيد صحيحة
১৪/২০২। আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা এই আয়াত পড়ছ, ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমাদের আত্মরক্ষা করাই কর্তব্য। তোমরা যদি সৎপথে পরিচালিত হও তবে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’ (সূরা মায়েদাহ ১০৫ আয়াত) কিন্তু আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘যখন লোকেরা অত্যাচারীকে (অত্যাচার করতে) দেখবে এবং তার হাত ধরে না নেবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে (আমভাবে) তার শাস্তির কবলে নিয়ে নেবেন।’’
24 - بَابُ تَغْلِيْظِ عُقُوْبَةِ مَنْ أَمَرَ بِمَعْرُوْفٍ أَوْ نَهٰى عَنْ مُنْكَرٍ وَخَالَفَ قَوْلُهُ فِعْلَهُ
পরিচ্ছেদ - ২৪ : সেই ব্যক্তির শাস্তির বিবরণ যে ব্যক্তি ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করে; কিন্তু সে নিজেই তা মেনে চলে না
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞أَتَأۡمُرُونَ ٱلنَّاسَ بِٱلۡبِرِّ وَتَنسَوۡنَ أَنفُسَكُمۡ وَأَنتُمۡ تَتۡلُونَ ٱلۡكِتَٰبَۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٤٤ ﴾ [البقرة: ٤٤]
অর্থাৎ “কি আশ্চর্য! তোমরা নিজেদের বিস্মৃত হয়ে মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দাও, অথচ তোমরা কিতাব (গ্রন্থ) অধ্যয়ন কর, তবে কি তোমরা বুঝ না?” (সূরা বাক্বারাহ ৪৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٢ كَبُرَ مَقۡتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُواْ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٣ ﴾ [الصف: ٢، ٣]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা বল কেন? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সূরা স্বাফ ২-৩ আয়াত)
তিনি শুআইব আলাইহিস সালামের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,
﴿ وَمَآ أُرِيدُ أَنۡ أُخَالِفَكُمۡ إِلَىٰ مَآ أَنۡهَىٰكُمۡ عَنۡهُۚ ﴾ [هود: ٨٨]
অর্থাৎ (শুআইব বলল,) আর আমি এটা চাই না যে, আমি তোমাদের বিপরীত সেই সব কাজ করি, যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করছি। (সূরা হূদ ৮৮ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
1/203. وَعَنْ أَبِي زَيدٍ أُسَامَةَ بنِ حَارِثَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «يُؤْتَى بالرَّجُلِ يَوْمَ القيَامَةِ فَيُلْقَى في النَّارِ، فَتَنْدَلِقُ أقْتَابُ بَطْنِهِ فَيدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الحِمَارُ في الرَّحَى، فَيَجْتَمِعُ إِلَيْه أهْلُ النَّارِ، فَيَقُولُونَ : يَا فُلانُ، مَا لَكَ ؟ أَلَمْ تَكُ تَأمُرُ بالمعْرُوفِ وَتنهَى عَنِ المُنْكَرِ ؟ فَيقُولُ : بَلَى، كُنْتُ آمُرُ بِالمَعْرُوفِ وَلا آتِيهِ، وأنْهَى عَنِ المُنْكَرِ وَآتِيهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২০৩। আবূ যায়দ উসামাহ ইবনে যায়দ ইবনে হারেসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে আনা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সেখানে তার নাড়ি-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে এবং সে তার চারিপাশে এমনভাবে ঘুরতে থাকবে, যেমন গাধা তার চাকির চারিপাশে ঘুরতে থাকে। তখন জাহান্নামীরা তার কাছে একত্রিত হয়ে তাকে বলবে, ‘ওহে অমুক! তোমার এ অবস্থা কেন? তুমি না (আমাদেরকে) সৎ কাজের আদেশ, আর অসৎ কাজে বাধা দান করতে?’ সে বলবে, ‘অবশ্যই। আমি (তোমাদেরকে) সৎকাজের আদেশ দিতাম; কিন্তু আমি তা নিজে করতাম না এবং অসৎ কাজে বাধা দান করতাম; অথচ আমি নিজেই তা করতাম!’’
25 - بَابُ الْأَمْرِ بِأَدَاءِ الْأَمَانَةِ
পরিচ্ছেদ - ২৫ : আমানত আদায় করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُكُمۡ أَن تُؤَدُّواْ ٱلۡأَمَٰنَٰتِ إِلَىٰٓ أَهۡلِهَا ﴾ [النساء: ٥٨]
অর্থাৎ “আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে।” (সূরা নিসা ৫৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّا عَرَضۡنَا ٱلۡأَمَانَةَ عَلَى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱلۡجِبَالِ فَأَبَيۡنَ أَن يَحۡمِلۡنَهَا وأَشۡفَقۡنَ مِنۡهَا وَحَمَلَهَا ٱلۡإِنسَٰنُۖ إِنَّهُۥ كَانَ ظَلُومٗا جَهُولٗا ٧٢ ﴾ [الاحزاب: ٧٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আমি আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতমালার প্রতি এ আমানত অর্পণ করতে চেয়েছিলাম। ওরা ভয়ে বহন করতে অস্বীকার করল; কিন্তু মানুষ তা বহন করল। নিশ্চয় সে অতিশয় যালেম ও অতিশয় অজ্ঞ।” (সূরা আহযাব ৭২ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
1/204 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: «آيةُ المُنافقِ ثلاثٌ : إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: «وَإِنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أنَّهُ مُسْلِمٌ».
১/২০৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি; (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা ভঙ্গ করে এবং (৩) তার কাছে আমানত রাখা হলে তার খিয়ানত করে।’’
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম (তবু সে মুনাফিক)।’’
2/205. وَعَن حُذَيفَةَ بنِ اليَمَانِ رضي الله عنه، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ حَدِيثَينِ قَدْ رأيْتُ أحَدَهُمَا وأنا أنتظرُ الآخَر : حَدَّثَنَا أَنَّ الأمَانَةَ نَزلَت في جَذرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ نَزَلَ القُرآنُ فَعَلِمُوا مِنَ القرآن، وَعَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ، ثُمَّ حَدَّثَنَا عَن رَفعِ الأمَانَةِ، فَقَالَ: «يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبهِ، فَيَظَلُّ أثَرُهَا مِثلَ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّومَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبهِ، فَيَظَلُّ أثَرُهَا مِثلَ أَثَرِ المَجْلِ، كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبراً وَلَيسَ فِيهِ شَيءٌ» ثُمَّ أخَذَ حَصَاةً فَدَحْرَجَهُ عَلَى رِجْلِهِ «فَيُصْبحُ النَّاسُ يَتَبَايعُونَ، فَلا يَكَادُ أحدٌ يُؤَدّي الأَمَانَةَ حَتَّى يُقَالَ : إنَّ في بَني فُلان رَجُلاً أميناً، حَتَّى يُقَالَ لِلرَّجُلِ : مَا أجْلَدَهُ ! مَا أَظْرَفَهُ ! مَا أعْقَلَهُ ! وَمَا في قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّة مِن خَرْدَل مِنْ إيمَان».وَلَقدْ أتَى عَلَيَّ زَمَانٌ وَمَا أُبَالِي أيُّكُمْ بَايَعْتُ : لَئن كَانَ مُسْلِماً لَيَرُدَّنَّهُ عليَّ دِينهُ، وَإنْ كَانَ نَصْرانِيّاً أَوْ يَهُودِياً لَيَرُدَّنَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، وَأَمَّا اليَوْمَ فَمَا كُنْتُ أُبَايعُ مِنْكُمْ إلاَّ فُلاناً وَفُلاناً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২০৫। হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট দু’টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। একটি তো আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং দ্বিতীয়টির জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, আমানত মানুষের অন্তরের অন্তঃস্তলে অবতীর্ণ হয়েছে। অতঃপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। তারপর তারা কুরআন থেকে জ্ঞানার্জন করেছে। তারপর তারা নবীর হাদীস থেকেও জ্ঞানার্জন করেছে। এরপর আমাদেরকে আমানত তুলে নেওয়া সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন, ‘‘মানুষ এক ঘুম ঘুমানোর পর তার অন্তর থেকে আমানত তুলে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর মত তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। পুনরায় মানুষ এক ঘুম ঘুমাবে। আবারো তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন জ্বলন্ত আগুন গড়িয়ে তোমার পায়ে পড়লে যেমন একটা ফোস্কা পড়ে কালো দাগ দেখতে পাওয়া যায় তার মত চিহ্ন থাকবে। তুমি তাকে ফোলা দেখবে; কিন্তু বাস্তবে তাতে কিছুই থাকবে না।’’ অতঃপর (উদাহরণস্বরূপ) তিনি একটি কাঁকর নিয়ে নিজ পায়ে গড়িয়ে দিলেন। (তারপর বলতে লাগলেন,) ‘‘সে সময় লোকেরা বেচা-কেনা করবে কিন্তু প্রায় কেউই আমানত আদায় করবে না। এমনকি লোকে বলাবলি করবে যে, অমুক বংশে একজন আমানতদার লোক আছে। এমনকি (দুনিয়াদার) ব্যক্তি সম্পর্কে মন্তব্য করা হবে, সে কতই না অদম্য! সে কতই না বিচক্ষণ! সে কতই না বুদ্ধিমান! অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমানও থাকবে না।’’ (হুযাইফা বলেন,) ইতোপূর্বে আমার উপর এমন যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে, যখন কারো সাথে বেচাকেনা করতে কোন পরোয়া করতাম না। কারণ সে মুসলিম হলে তার দ্বীন তাকে আমার (খিয়ানত থেকে) বিরত রাখবে। আর খ্রিষ্টান অথবা ইয়াহূদী হলে তার শাসকই আমার হক ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু বর্তমানের অবস্থা হচ্ছে এই যে, আমি অমুক অমুক ছাড়া বেচা-কেনা করতে প্রস্তুত নই।
3/206. وَعَن حُذَيفَةَ وَأبي هُرَيرَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «يَجمَعُ اللهُ تبَارَكَ وَتَعَالَى النَّاسَ فَيَقُومُ المُؤمِنُونَ حَتَّى تُزْلَفَ لَهُمُ الجَنَّةُ، فَيَأتُونَ آدَمَ صَلَواتُ اللهِ عَلَيهِ، فَيقُولُونَ : يَا أَبَانَا اسْتَفْتِحْ لَنَا الجَنَّةَ، فَيقُولُ : وَهَلْ أخْرَجَكُمْ مِنَ الجَنَّةِ إلاَّ خَطيئَةُ أبيكُمْ ! لَسْتُ بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى ابْنِي إِبْراهيمَ خَلِيل اللهِ . قَالَ : فَيَأتُونَ إبرَاهِيمَ فَيَقُولُ إبراهيم : لَسْتُ بِصَاحِبِ ذلِكَ إِنَّمَا كُنْتُ خَليلاً مِنْ وَرَاءَ وَرَاءَ، اعْمَدُوا إِلَى مُوسَى الَّذِي كَلَّمَهُ الله تَكليماً. فَيَأتُونَ مُوسَى، فَيَقُولُ : لستُ بِصَاحِبِ ذلِكَ، اذْهَبُوا إِلَى عِيسى كلمةِ اللهِ ورُوحه، فيقول عيسى : لستُ بصَاحبِ ذلِكَ، فَيَأتُونَ مُحَمَّداً ﷺ فَيَقُومُ فَيُؤذَنُ لَهُ، وتُرْسَلُ الأَمَانَةُ وَالرَّحِمُ فَيَقُومانِ جَنْبَتَي الصِّرَاطِ يَمِيناً وَشِمَالاً فَيَمُرُّ أوَّلُكُمْ كَالبَرْقِ» قُلْتُ : بأبي وَأمِّي، أيُّ شَيءٍ كَمَرِّ البَرقِ ؟ قَالَ: «ألَمْ تَرَوا كَيْفَ يمُرُّ وَيَرْجِعُ في طَرْفَةِ عَيْن، ثُمَّ كَمَرّ الرِّيحِ، ثُمَّ كَمَرِّ الطَّيْرِ، وَشَدِّ الرِّجَال تَجْري بهمْ أعْمَالُهُمْ، وَنَبيُّكُمْ قَائِمٌ عَلَى الصِّراطِ، يَقُولُ : رَبِّ سَلِّمْ سَلِّمْ، حَتَّى تَعْجِزَ أعْمَالُ العِبَادِ، حَتَّى يَجِيء الرَّجُلُ لا يَسْتَطِيعُ السَّيْرَ إلاَّ زَحْفاً، وَفي حَافَتي الصِّراطِ كَلاَلِيبُ معَلَّقَةٌ مَأمُورَةٌ بِأخْذِ مَنْ أُمِرَتْ بِهِ، فَمَخْدُوشٌ نَاجٍ، وَمُكَرْدَسٌ في النَّارِ».وَالَّذِي نَفْسُ أَبي هُرَيْرَةَ بِيَدِهِ، إنَّ قَعْرَ جَهَنَّمَ لَسَبْعُونَ خَرِيفاً. رواه مسلم
৩/২০৬। হুযাইফাহ ও আবূ হুরাইরাহ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বরকতময় মহান আল্লাহ (কিয়ামতের দিন) সকল মানুষকে একত্রিত করবেন। অতঃপর মু’মিনগণ উঠে দাঁড়াবে; এমনকি জান্নাতও তাদের নিকটবর্তী করে দেওয়া হবে। (যার কারণে তাদের জান্নাত যাওয়ার ইচ্ছা প্রবল হয়ে যাবে)। সুতরাং তারা আদম (সালাওয়াতুল্লাহি আলাইহি)র নিকট আসবে। অতঃপর বলবে, ‘হে আমাদের পিতা! আমাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) জান্নাত খুলে দেওয়ার আবেদন করুন।’ তিনি বলবেন, ‘(তোমরা কি জান না যে,) একমাত্র তোমাদের পিতার ভুলই তোমাদেরকে জান্নাত থেকে বহিষ্কার করেছে? সুতরাং আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আমার ছেলে ইব্রাহীম খলীলুল্লাহর নিকট যাও।’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘অতঃপর তারা ইব্রাহীমের নিকট যাবে।’’ ইব্রাহীম বলবেন, ‘আমি এর উপযুক্ত নই। আমি আল্লাহর খলীল (বন্ধু) ছিলাম বটে, কিন্তু আমি এত উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নই। (অতএব) তোমরা মূসার নিকট যাও, যার সঙ্গে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেছেন।’ ফলে তারা মূসার নিকট যাবে। কিন্তু তিনি বলবেন, ‘আমি এর যোগ্য নই। তোমরা আল্লাহর কালেমা ও তাঁর রূহ ঈসার নিকট যাও।’ কিন্তু ঈসাও বলবেন, ‘আমি এর উপযুক্ত নই।’ অতঃপর তারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসবে। সুতরাং তিনি দাঁড়াবেন। অতঃপর তাঁকে (দরজা খোলার) অনুমতি দেওয়া হবে। আর আমানত ও আত্মীয়তার বন্ধনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সুতরাং উভয়ে পুল সিরাত্বের দু’দিকে ডানে ও বামে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর তোমাদের প্রথম দল বিদ্যুতের মত গতিতে (অতি দ্রুতবেগে) পুল পার হয়ে যাবে। আমি (আবূ হুরাইরাহ) বললাম, ‘আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! বিদ্যুতের মত গতিতে পার হওয়ার অর্থ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি দেখনি যে, বিদ্যুত কিভাবে চোখের পলকে যায় ও আসে?’’ অতঃপর (দ্বিতীয় দল) বাতাসের মত গতিতে (পার হবে)। তারপর (পরবর্তী দল) পাখী উড়ার মত এবং মানুষের দৌড়ের মত গতিতে। তাদেরকে তাদের নিজ নিজ আমল (সিরাত্ব) পার করাবে। আর তোমাদের নবী পুল-সিরাতের উপর দাঁড়িয়ে থাকবেন। তিনি বলবেন, ‘‘হে প্রভু! বাঁচাও, বাঁচাও!’’ শেষ পর্যন্ত বান্দাদের আমলসমূহ অক্ষম হয়ে পড়বে। এমনকি কোন কোন ব্যক্তি পাছা ছেঁচড়াতে ছেঁচড়াতে (সিরাত্ব) পার হবে। আর সিরাত্বের দুই পাশে আঁকড়া ঝুলে থাকবে। যাকে ধরার জন্য সে আদিষ্ট তাকে ধরে নেবে। অতঃপর (কিছু লোক) জখম হলেও বেঁচে যাবে। আর কিছু লোককে মুখ থুবড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে। সেই সত্তার কসম, যার হাতে আবূ হুরাইরার প্রাণ আছে! নিশ্চয় জাহান্নামের গভীরতা সত্তর বছরের (দূরত্বের পথ)।
4/207. وعَنْ أَبِي خُبَيبٍ عَبدِ اللهِ بنِ الزُّبَيرِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : لَمَّا وَقفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ الجَمَل دَعَانِي فَقُمْتُ إِلَى جَنْبه، فَقَالَ : يَا بُنَيَّ، إنَّهُ لاَ يُقْتَلُ اليَومَ إلاَّ ظَالِمٌ أَوْ مَظْلُومٌ، وَإنِّي لا أراني إلاَّ سَأُقْتَلُ اليوم مظلوماً، وإنَّ مِنْ أكبرَ هَمِّي لَدَيْنِي، أفَتَرَى دَيْننا يُبقي من مالِنا شَيئاً ؟ ثُمَّ قَالَ : يَا بُنَيَّ، بعْ مَا لَنَا وَاقْضِ دَيْنِي، وَأوْصَى بِالثُّلُثِ وَثُلُثِهِ لِبَنِيهِ، يعني لبني عبد الله بن الزبير ثُلُثُ الثُّلُث . قَالَ : فَإنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا بَعْدَ قَضَاءِ الدَّينِ شَيء فَثُلُثُه لِبَنِيكَ . قَالَ هِشَام : وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللهِ قَدْ وَازى بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ خُبيبٍ وَعَبَّادٍ، وَلهُ يَوْمَئذٍ تِسْعَةُ بَنينَ وَتِسْعُ بَنَات . قَالَ عَبدُ الله : فَجَعلَ يُوصينِي بدَيْنِهِ وَيَقُولُ : يَا بُنَيَّ، إنْ عَجَزْتَ عَن شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِنْ عَلَيهِ بِمَوْلاَيَ . قَالَ : فَوَاللهِ مَا دَرَيْتُ مَا أرَادَ حَتَّى قُلْتُ : يَا أبَتِ مَنْ مَوْلاَكَ ؟ قَالَ : الله . قَالَ : فَوَاللهِ مَا وَقَعْتُ في كُرْبةٍ مِنْ دَيْنِهِ إلاَّ قُلْتُ : يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ فَيَقْضِيَهُ . قَالَ : فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ وَلَم يَدَعْ دِينَاراً وَلا دِرْهماً إلاَّ أرَضِينَ، مِنْهَا الغَابَةُ وإحْدَى عَشْرَةَ دَاراً بالمَدِينَةِ، وَدَارَيْنِ بالبَصْرَةِ، ودَاراً بالكُوفَةِ، ودَاراً بمِصْرَ . قَالَ : وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي كَانَ عَلَيهِ أنَّ الرَّجُلَ كَانَ يَأتِيهِ بالمال، فَيَسْتَودِعُهُ إيَّاهُ، فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ : لا، وَلَكِنْ هُوَ سَلَفٌ إنِّي أخْشَى عَلَيهِ الضَّيْعَةَ. وَمَا وَليَ إمَارَةً قَطُّ وَلا جِبَايَةً ولا خراجاً وَلاَ شَيئاً إلاَّ أنْ يَكُونَ في غَزْوٍ مَعَ رسولِ الله ﷺ أَوْ مَعَ أَبي بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَان رضي الله عنهم، قَالَ عَبدُ الله: فَحَسَبْتُ مَا كَانَ عَلَيهِ مِن الدَّيْنِ فَوَجَدْتُهُ ألْفيْ ألْفٍ وَمئَتَي ألْف ! فَلَقِيَ حَكِيمُ بنُ حِزَام عَبْدَ الله بْنَ الزُّبَيْرِ، فَقَالَ : يَا ابْنَ أخِي، كَمْ عَلَى أخي مِنَ الدَّيْنِ ؟ فَكَتَمْتُهُ وَقُلْتُ : مِئَةُ ألْف . فَقَالَ حَكيمٌ : واللهِ مَا أرَى أمْوَالَكُمْ تَسَعُ هذِهِ . فَقَالَ عَبْدُ اللهِ : أرَأيْتُكَ إنْ كَانَتْ ألْفَي ألف وَمئَتَيْ ألْف ؟ قَالَ : مَا أرَاكُمْ تُطيقُونَ هَذَا، فَإنْ عَجَزْتُمْ عَنْ شَيءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بي، قَالَ : وَكَانَ الزُّبَيرُ قَد اشْتَرَى الغَابَةَ بِسَبْعِينَ ومئة ألف، فَبَاعَهَا عَبدُ اللهِ بِألْفِ ألْف وَسِتّمِئَةِ ألْف، ثُمَّ قَامَ فَقَالَ : مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ شَيْء فَلْيُوافِنَا بِالغَابَةِ، فَأتَاهُ عَبدُ اللهِ بنُ جَعفَر، وَكَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ أرْبَعمئةِ ألْف، فَقَالَ لعَبدِ الله : إنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا لَكمْ ؟ قَالَ عَبدُ الله : لا، قَالَ : فَإنْ شِئتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيمَا تُؤَخِّرُونَ إنْ إخَّرْتُمْ، فَقَالَ عَبدُ الله : لا، قَالَ : فَاقْطَعُوا لِي قطْعَةً، قَالَ عَبدُ الله : لَكَ مِنْ هاهُنَا إِلَى هَاهُنَا . فَبَاعَ عَبدُ اللهِ مِنهَا فَقَضَى عَنْهُ دَينَه وَأوْفَاهُ، وَبَقِيَ مِنْهَا أرْبَعَةُ أسْهُم وَنِصْفٌ، فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَة وَعنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، وَالمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ، وَابْنُ زَمْعَةَ، فَقَالَ لَهُ مُعَاويَةُ : كَمْ قُوِّمَتِ الغَابَةُ ؟ قَالَ : كُلُّ سَهْم بمئَة ألف، قَالَ : كَمْ بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَ: أرْبَعَةُ أسْهُم وَنصْفٌ، فَقَالَ المُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيرِ : قَدْ أخَذْتُ مِنْهَا سَهماً بِمئَةِ ألفٍ، قَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ : قَدْ أخَذْتُ مِنْهَا سَهْماً بمئَةِ ألْفٍ . وَقالَ ابْنُ زَمْعَةَ : قَدْ أخَذْتُ سَهْماً بِمئَةِ ألْفٍ، فَقَالَ مُعَاويَةُ : كَمْ بَقِيَ مِنْهَا ؟ قَالَ : سَهْمٌ ونصْفُ سَهْم، قَالَ : قَدْ أخَذْتُهُ بخَمْسِينَ وَمئَةِ ألْف . قَالَ : وَبَاعَ عَبدُ الله بْنُ جَعفَر نَصيبهُ مِنْ مُعَاوِيَةَ بِسِتِّمِئَةِ ألْفٍ، فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ، قَالَ بَنُو الزُّبَيرِ : اقسمْ بَينَنَا ميراثَنا، قَالَ : وَاللهِ لا أقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أنَادِي بالمَوْسم أرْبَعَ سنينَ : ألا مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيرِ دَيْنٌ فَلْيَأتِنَا فَلْنَقْضِهِ . فَجَعَلَ كُلّ سَنَةٍ يُنَادِي في المَوْسِمِ، فَلَمَّا مَضَى أرْبَعُ سنينَ قَسَمَ بيْنَهُمْ وَدَفَعَ الثُّلُثَ . وَكَانَ للزُّبَيْرِ أرْبَعُ نِسْوَةٍ، فَأصَابَ كُلَّ امرَأةٍ ألْفُ ألف وَمِئَتَا ألْف، فَجَميعُ مَالِه خَمْسُونَ ألفَ ألْفٍ وَمِئَتَا ألْفٍ . رواه البخاري
৪/২০৭। আবূ খুবাইব আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) বলেন, যখন আমার পিতা যুবাইর) ‘জামাল’ যুদ্ধের দিন দাঁড়ালেন, তখন তিনি আমাকে ডাকলেন। সুতরাং আমি তাঁর পাশে দাঁড়ালাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে বৎস! আজকের দিন যারা খুন হবে সে অত্যাচারী হবে অথবা অত্যাচারিত। আমার ধারণা যে, আমি আজকে অত্যাচারিত হয়ে খুন হয়ে যাব। আর আমার সবচেয়ে বড় চিন্তা আমার ঋণের। (হে আমার পুত্র!) তুমি কি ধারণা করছ যে, আমার ঋণ আমার কিছু সম্পদ অবশিষ্ট রাখবে (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ করার পর কিছু মাল বেচে যাবে)?’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আমার পুত্র! তুমি আমার সম্পদ বেচে আমার ঋণ পরিশোধ করে দিও।’ আর তিনি এক তৃতীয়াংশ সম্পদ অসিয়ত করলেন এবং এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ তাঁর অর্থাৎ আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর ছেলেদের জন্য অসিয়ত করলেন। তিনি বললেন, ‘যদি ঋণ পরিশোধ করার পর আমার কিছু সম্পদ বেঁচে যায়, তাহলে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার ছেলেদের জন্য।’
(হাদীসের এক রাবী) হিশাম বলেন, আব্দুল্লাহর কিছু ছেলে যুবাইরের কিছু ছেলে খুবাইব ও আববাদের সমবয়স্ক ছিল। সে সময় তাঁর নয়টি ছেলে ও নয়টি মেয়ে ছিল। আব্দুল্লাহ বলেন, অতঃপর তিনি (যুবাইর) তাঁর ঋণের ব্যাপারে আমাকে অসিয়ত করতে থাকলেন এবং বললেন, ‘হে বৎস! যদি তুমি ঋণ পরিশোধ করতে অপারগ হয়ে যাও, তাহলে তুমি এ ব্যাপারে আমার মওলার সাহায্য নিও।’ তিনি (আব্দুল্লাহ) বলেন, আল্লাহর কসম! তাঁর উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পারলাম না। পরিশেষে আমি বললাম, ‘আব্বাজান! আপনার মওলা কে?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ।’ আব্দুল্লাহ বলেন, অতঃপর আল্লাহর কসম! আমি তাঁর ঋণের ব্যাপারে যখনই কোন অসুবিধায় পড়েছি তখনই বলেছি, ‘হে যুবাইরের মওলা! তুমি তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দাও।’ সুতরাং আল্লাহ তা আদায় করে দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ বলেন, (সেই যুদ্ধে) যুবাইর খুন হয়ে গেলেন এবং তিনি (নগদ) একটি দীনার ও দিরহামও ছেড়ে গেলেন না। কেবল জমি-জায়গা ছেড়ে গেলেন; তার মধ্যে একটি জমি ‘গাবাহ’ ছিল আর এগারোটি ঘর ছিল মদীনায়, দু’টি বাসরায়, একটি কুফায় এবং একটি মিসরে। তিনি বলেন, আমার পিতার ঋণ এইভাবে হয়েছিল যে, কোনো লোক তাঁর কাছে আমানত রাখার জন্য মাল নিয়ে আসত। অতঃপর যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘না, (আমানত হিসাবে নয়) বরং তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে থাকবে। কেননা, আমি তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছি।’ (কারণ আমানত নষ্ট হলে তা আদায় করা জরুরী নয়, কিন্তু ঋণ আদায় করা সর্বাবস্থায় জরুরী)।
তিনি কখনও গভর্নর হননি, না কদাচ তিনি ট্যাক্স, খাজনা বা অন্য কোন অর্থ আদায় করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। (যাতে তাঁর মাল সংগ্রহে কোন সন্দেহ থাকতে পারে।) অবশ্য তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবূ বাকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের সঙ্গে জিহাদে অংশ নিয়েছিলেন (এবং তাতে গনীমত হিসাবে যা পেয়েছিলেন সে কথা ভিন্ন)।
আব্দুল্লাহ বলেন, একদা আমি তাঁর ঋণ হিসাব করলাম, তো (সর্বমোট) ২২ লাখ পেলাম। অতঃপর হাকীম ইবনে হিযাম আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। হাকীম বললেন, ‘হে ভাতিজা! আমার ভাই (যুবাইর)এর উপর কত ঋণ আছে?’ আমি তা গোপন করলাম এবং বললাম, ‘এক লাখ।’ পুনরায় হাকীম বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার মনে হয় না যে, তোমাদের সম্পদ এই ঋণ পরিশোধে যথেষ্ট হবে।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘ কী রায় আপনার যদি ২২ লাখ হয়?’ তিনি বললেন, ‘আমার মনে হয় না যে, তোমরা এ পরিশোধ করার ক্ষমতা রাখো। সুতরাং তোমরা যদি কিছু পরিশোধে অসমর্থ হয়ে পড়, তাহলে আমার সহযোগিতা নিও।’
যুবাইর এক লাখ সত্তর হাজারের বিনিময়ে ‘গাবাহ’ কিনেছিলেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ সেটি ১৬ লাখের বিনিময়ে বিক্রি করলেন। অতঃপর তিনি দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন যে, ‘যুবাইরের উপর যার ঋণ আছে সে আমার সঙ্গে ‘গাবাহ’তে সাক্ষাৎ করুক।’ (ঘোষণা শুনে) আব্দুল্লাহ ইবনে জা’ফর তাঁর নিকট এলেন। যুবাইরকে দেওয়া তাঁর ৪ লাখ ঋণ ছিল। তিনি আব্দুল্লাহকে বললেন, ‘তোমরা যদি চাও, তবে এ ঋণ তোমাদের জন্য মওকুফ করে দেব?’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘যদি তোমরা চাও যে, ঋণ (এখন আদায় না করে) পরে আদায় করবে, তাহলে তাও করতে পার।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি আমাকে এই জমির এক অংশ দিয়ে দাও।’ আব্দুল্লাহ বললেন, ‘এখান থেকে এখান পর্যন্ত তোমার রইল।’
অতঃপর আব্দুল্লাহ ঐ জমি (ও বাড়ি)র কিছু অংশ বিক্রি করে তাঁর (পিতার) ঋণ পরিপূর্ণরূপে পরিশোধ করে দিলেন। আর ঐ ‘গাবাহ’র সাড়ে চার ভাগ বাকী থাকল। অতঃপর তিনি মুআবিয়াহর কাছে এলেন এমতাবস্থায় যে, তাঁর কাছে ‘আমর ইবনে উসমান, মুনযির ইবনে যুবাইর এবং ইবনে যাম‘আহ উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়াহ তাঁকে বললেন, ‘গাবাহর কত দাম হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘প্রত্যেক ভাগের এক লাখ।’ তিনি বললেন, ‘কয়টি ভাগ বাকী রয়ে গেছে?’ তিনি বললেন, ‘সাড়ে চার ভাগ।’ মুনযির ইবনে যুবাইর বললেন, ‘আমি তার মধ্যে একটি ভাগ এক লাখে নিয়ে নিলাম।’ ‘আমর ইবনে উসমান বললেন, ‘আমিও এক ভাগ এক লাখে নিয়ে নিলাম।’ ইবনে যাম‘আহ বললেন, ‘আমিও এক ভাগ এক লাখে নিয়ে নিলাম।’ অবশেষে মু‘আবিয়াহ বললেন, ‘আর কত ভাগ বাকী থাকল?’ তিনি বললেন, ‘দেড় ভাগ।’ তিনি বললেন, ‘আমি দেড় লাখে তা নিয়ে নিলাম।’
আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে জা’ফর তাঁর ভাগটি মু‘আবিয়ার কাছে ছয় লাখে বিক্রি করলেন।’
অতঃপর যখন ইবনে যুবাইর ঋণ পরিশোধ করে শেষ করলেন, তখন যুবাইরের ছেলেরা বলল, ‘(এবার) তুমি আমাদের মধ্যে আমাদের মীরাস বণ্টন করে দাও।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মধ্যে (তা) বণ্টন করব না, যতক্ষণ না আমি চার বছর হজ্জের মৌসমে ঘোষণা করব যে, যুবাইরের উপর যার ঋণ আছে সে আমাদের কাছে আসুক, আমরা তা পরিশোধ করে দেব।’ অতঃপর তিনি প্রত্যেক বছর (হজ্জের) মৌসমে ঘোষণা করতে থাকলেন। অবশেষে যখন চার বছর পার হয়ে গেল, তখন তিনি তাদের মধ্যে (মীরাস) বণ্টন করে দিলেন এবং এক তৃতীয়াংশ মাল (যাদেরকে দেওয়ার অসিয়ত ছিল তাদেরকে তা) দিয়ে দিলেন। আর যুবাইরের চারটি স্ত্রী ছিল। প্রত্যেক স্ত্রীর ভাগে পড়ল বারো লাখ ক’রে। তাঁর সর্বমোট পরিত্যক্ত সম্পদ ছিল পাঁচ কোটি দু’লাখ।
26- بَابُ تَحْرِيْمِ الظُّلْمِ وَالْأَمْرِ بِرَدِّ الْمَظَالِمِ
পরিচ্ছেদ - ২৬ : অন্যায়-অত্যাচার করা হারাম এবং অন্যায়ভাবে
নেওয়া জিনিস ফেরৎ দেওয়া জরুরী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ ﴾ [غافر: ١٨]
অর্থাৎ “সীমালংঘনকারীদের জন্য অন্তরঙ্গ কোন বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারীও নেই যার সুপারিশ গ্রাহ্য করা হবে।” (সূরা মু’মিন ১৮ আয়াত)
﴿ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِن نَّصِيرٖ ﴾ [الحج: ٧١]
অর্থাৎ “যালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা হাজ্জ ৭১ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
এই পরিচ্ছেদে আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর (১১৩নং) হাদীসটিও উল্লেখ্য, যেটি ‘মুজাহাদাহ’ পরিচ্ছেদের শেষে বর্ণিত হয়েছে।
1/208. وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ ؛ فَإنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ . وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإِنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ . حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ، وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ». رواه مسلم
১/২০৮। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা অত্যাচার করা থেকে বাঁচো, কেননা অত্যাচার কিয়ামতের দিন অন্ধকার স্বরূপ। (অর্থাৎ অত্যাচারী সেদিন আলো পাবে না)। আর তোমরা কৃপণতা থেকে দূরে থাকো। কেননা, কৃপণতা পূর্ববর্তী লোকেদেরকে ধ্বংস করেছে। এ কৃপণতা তাদেরকে নিজেদের রক্তপাত করার এবং হারামকে হালাল জানার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে।’’
2/209. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَالَ: «لَتُؤَدَّنَّ الحُقُوقُ إِلَى أهْلِهَا يَومَ القِيَامَةِ، حَتَّى يُقَادَ للشَّاةِ الجَلْحَاءِ مِنَ الشَّاةِ القَرْنَاءِ». رواه مسلمُ، إنَّ رَبَّكُمْ لَيْسَ بأعْوَرَ وإنَّهُ أعْوَر
২/২০৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন প্রত্যেক হকদারের হক অবশ্যই আদায় করা হবে। এমন কি শিংবিহীন ছাগলকে শিংযুক্ত ছাগলের নিকট থেকে বদলা দেওয়া হবে।’’
3/210. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : كُنَّا نَتَحَدَّثُ عَنْ حَجَّةِ الوَدَاعِ، والنَّبيُّ ﷺ بَيْنَ أظْهُرِنَا، وَلا نَدْرِي مَا حَجَّةُ الوَدَاعِ حَتَّى حَمِدَ اللهَ رَسُول الله ﷺ وَأثْنَى عَلَيهِ ثُمَّ ذَكَرَ المَسْيحَ الدَّجَّال فَأطْنَبَ في ذِكْرِهِ، وَقَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبيٍّ إلاَّ أنْذَرَهُ أُمَّتَهُ، أنْذَرَهُ نُوحٌ وَالنَّبِيُّونَ مِنْ بَعْدِهِ، وَإِنَّهُ إنْ يَخْرُجْ فِيكُمْ فَما خَفِيَ عَليْكُمْ مِنْ شَأنِه فَلَيْسَ يَخْفَى عَليْك ُ عَيْنِ اليُمْنَى، كَأنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ . ألا إنَّ الله حَرَّمَ عَلَيْكُمْ دِمَاءكُمْ وَأمْوَالَكُمْ كحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، في بَلَدِكُم هَذَا، في شَهْرِكُمْ هَذَا، ألا هَلْ بَلّغْتُ ؟»قالُوا : نَعَمْ، قَالَ: «اَللهم اشْهَدْ» ثلاثاً« وَيْلَكُمْ - أَوْ وَيْحَكُمْ - انْظُروا : لا تَرْجعُوا بَعْدِي كُفّاراً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه
৩/২১০। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা বিদায়ী হজ্জ্বের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা করেছিলাম। এমতবস্থায় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। আর আমরা জানতাম না যে, বিদায়ী হজ্জ কী? পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা করলেন। অতঃপর কানা দাজ্জালের কথা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ যে নবীই পাঠিয়েছেন, তিনি নিজ জাতিকে তার ব্যাপারে ভয় দেখিয়েছেন। নূহ ও তাঁর পরে আগমনকারী নবীগণ তার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করেছেন। যদি সে তোমাদের মধ্যে বের হয়, তবে তার অবস্থা তোমাদের কাছে গোপন থাকবে না। তোমাদের কাছে এ কথা গোপন নয় যে, তোমাদের প্রভু কানা নয়, আর দাজ্জাল কানা হবে। তার ডান চোখ কানা হবে, তার চোখটি যেন (গুচ্ছ থেকে) ভেসে ওঠা আঙ্গুর। সতর্ক হয়ে যাও, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের প্রতি তোমাদের রক্ত ও মাল হারাম করে দিয়েছেন। যেমন তোমাদের এদিন হারাম তোমাদের এই শহরে, তোমাদের এই মাসে। শোনো! আমি কি (আল্লাহর পয়গাম) পৌঁছে দিয়েছি?’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি তিনবার বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক। (অতঃপর বললেন,) তোমাদের জন্য বিনাশ অথবা আফশোস। দেখো, তোমরা আমার পর এমন কাফের হয়ে যেও না যে, তোমরা একে অপরের গর্দান মারবে।’’
4/211. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا : أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «مَنْ ظَلَمَ قَيدَ شِبْرٍ مِنَ الأرْضِ، طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أرَضِينَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২১১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কারো জমি এক বিঘত পরিমাণ অন্যায়ভাবে দখল করে নেবে, (কিয়ামতের দিন) সাত তবক (স্তর) যমীন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।’’
5/212. وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنَّ الله لَيُمْلِي لِلظَّالِمِ، فَإِذَا أخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ»، ثُمَّ قَرَأَ: ﴿ وَكَذَٰلِكَ أَخۡذُ رَبِّكَ إِذَآ أَخَذَ ٱلۡقُرَىٰ وَهِيَ ظَٰلِمَةٌۚ إِنَّ أَخۡذَهُۥٓ أَلِيمٞ شَدِيدٌ ١٠٢ ﴾ [هود: ١٠٢] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২১২। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা অত্যাচারীকে অবকাশ দেন। অতঃপর যখন তিনি তাকে পাকড়াও করেন, তখন তাকে ছাড়েন না।’’ তারপর তিনি এই আয়াত পড়লেন---যার অর্থ, ‘‘তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও এরূপই হয়ে থাকে। যখন তিনি অত্যাচারী জনপদকে পাকড়াও করে থাকেন। নিশ্চয়ই তাঁর পাকড়াও কঠিন যন্ত্রণাদায়ক।’’ (সূরা হূদ ১০২ আয়াত, বুখারী-মুসলিম)
6/213. وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ : بَعَثَنِي رَسُولُ الله ﷺ، فَقَالَ: «إنَّكَ تَأتِي قَوْماً مِنْ أهلِ الكِتَابِ فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنِّي رسولُ الله، فَإنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ افْتَرضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَواتٍ في كُلِّ يَوْمٍ وَلَيلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ قَدِ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤخَذُ مِنْ أغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإنْ هُمْ أطَاعُوا لِذَلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أمْوَالِهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ ؛ فإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَها وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/২১৩। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে (ইয়ামানের শাসকরূপে) পাঠাবার সময় বলেছিলেন, ‘‘তুমি আহলে কিতাব সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং তুমি তাদেরকে ‘আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল’ এ কথার সাক্ষ্যদানের প্রতি দাওয়াত দেবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে, আল্লাহ তাদের উপর প্রতি দিন ও রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। তারা যদি এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের সম্পদের ওপর সাদকাহ (যাকাত) ফরয করেছেন। তাদের মধ্যে যারা সম্পদশালী তাদের থেকে যাকাত উসূল করে যারা দরিদ্র তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তুমি (যাকাত নেওয়ার সময়) তাদের উৎকৃষ্ট মাল নেওয়া থেকে দূরে থাকবে। আর অত্যাচারিতের বদ-দো‘আ থেকে বাঁচবে। কারণ তার বদ-দো‘আ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা নেই (অর্থাৎ শীঘ্র কবুল হয়ে যায়)।’’
7/214. وَعَنْ أَبِي حُمَيدٍ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي رضي الله عنه، قَالَ : اِسْتَعْمَلَ النَّبيُّ ﷺ رَجُلاً مِنَ الأزْدِ يُقَالُ لَهُ : ابْنُ اللُّتْبِيَّةِ عَلَى الصَّدَقَةِ، فَلَمَّا قَدِمَ، قَالَ : هَذَا لَكُمْ، وَهَذَا أُهْدِيَ إِلَيَّ، فَقَامَ رسولُ الله ﷺ عَلَى المِنْبَرِ فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيهِ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعدُ، فَإِنِّي أسْتَعْمِلُ الرَّجُلَ منْكُمْ عَلَى العَمَلِ مِمَّا وَلاَّنِي اللهُ، فَيَأتِي فَيَقُولُ : هَذَا لَكُمْ وَهَذا هَدِيَّةٌ أُهْدِيتْ إلَيَّ، أفَلا جَلَسَ في بيت أبِيهِ أَوْ أُمِّهِ حَتَّى تَأتِيَهُ هَدِيَّتُهُ إنْ كَانَ صَادِقاً، واللهِ لا يَأخُذُ أحَدٌ مِنْكُمْ شَيئاً بِغَيرِ حَقِّهِ إلاَّ لَقِيَ الله تَعَالَى، يَحْمِلُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَلا أعْرِفَنَّ أحَداً مِنْكُمْ لَقِيَ اللهَ يَحْمِلُ بَعيراً لَهُ رُغَاءٌ، أَوْ بَقَرَةً لَهَا خُوَارٌ، أَوْ شَاةً تَيْعَرُ» ثُمَّ رفع يديهِ حَتَّى رُؤِيَ بَيَاضُ إبْطَيْهِ، فَقَالَ: «اَللهم هَلْ بَلَّغْتُ» ثلاثاً. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/২১৪। আবূ হুমাইদ আব্দুর রহমান ইবনে সা‘দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয্দ গোত্রের ইবনে লুতবিয়্যাহ নামক এক ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করার কাজে কর্মচারী নিয়োগ করলেন। সে ব্যক্তি (আদায়কৃত মালসহ) ফিরে এসে বলল, ‘এটা আপনাদের (বায়তুল মালের), আর এটা আমাকে উপহার স্বরূপ দেওয়া হয়েছে।’ এ কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে উঠে দন্ডায়মান হয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করে বললেন, ‘‘অতঃপর বলি যে, আল্লাহ আমাকে যে সকল কর্মের অধিকারী করেছেন তার মধ্য হতে কোনও কর্মের তোমাদের কাউকে কর্মচারী নিয়োগ করলে সে ফিরে এসে বলে কি না, ‘এটা আপনাদের, আর এটা উপহার স্বরূপ আমাকে দেওয়া হয়েছে!’ যদি সে সত্যবাদী হয়, তবে তার বাপ-মায়ের ঘরে বসে থেকে দেখে না কেন, তাকে কোন উপহার দেওয়া হচ্ছে কি না? আল্লাহর কসম; তোমাদের মধ্যে যে কেউ কোন জিনিস অনধিকার গ্রহণ করবে, সে কিয়ামতের দিন তা নিজ ঘাড়ে বহন করা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে। অতএব আমি যেন অবশ্যই চিনতে না পারি যে, তোমাদের মধ্য হতে কেউ নিজ ঘাড়ে চিঁহিঁ-রববিশিষ্ট উঁট, অথবা হাম্বা-রববিশিষ্ট গাই, অথবা মেঁ-মেঁ-রববিশিষ্ট ছাগল বহন করা অবস্থায় আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছ।’’
আবূ হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাতকে উপর দিকে এতটা তুললেন যে, তাঁর উভয় বগলের শুভ্রতা দেখা গেল। অতঃপর তিনবার বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি কি পৌঁছে দিলাম?’’
8/215. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ كَانَتْ عِنْدَهُ مَظْلمَةٌ لأَخِيه، مِنْ عِرضِهِ أَوْ مِنْ شَيْءٍ، فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ اليَوْمَ قبْلَ أنْ لاَ يَكُونَ دِينَار وَلاَ دِرْهَمٌ ؛ إنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلمَتِهِ، وَإنْ لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيهِ». رواه البخاري
৮/২১৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার (কোন মুসলিম) ভাইয়ের উপর তার সম্ভ্রম অথবা কোন বিষয়ে যুলুম করেছে, সে যেন আজই (দুনিয়াতে) তার কাছে (ক্ষমা চেয়ে) হালাল করে নেয়, ঐ দিন আসার পূর্বে যেদিন দীনার ও দিরহাম কিছুই থাকবে না। তার যদি কোন নেক আমল থাকে, তবে তার যুলুমের পরিমাণ অনুযায়ী তা হতে নিয়ে নেওয়া হবে। আর যদি তার নেকী না থেকে, তবে তার (মযলূম) সঙ্গীর পাপরাশি নিয়ে তার (যালেমের) উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।’’
9/216. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «المُسْلِمُ منْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ، وَالمُهَاجِرُ مَنْ هَجَرَ مَا نَهَى اللهُ عَنْهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/২১৬। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রকৃত মুসলিম সেই, যার জিভ ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে। আর প্রকৃত মুহাজির (দ্বীনের খাতিরে স্বদেশ ত্যাগকারী) সেই, যে আল্লাহ যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তা ত্যাগ করে।’’
10/217. وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ عَلَى ثَقَل النَّبيِّ ﷺ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ كِرْكِرَةُ، فَمَاتَ، فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «هُوَ في النَّارِ»فَذَهَبُوا يَنْظُرُونَ إِلَيْه، فَوَجَدُوا عَبَاءةً قَدْ غَلَّهَا . رواه البخاري
১০/২১৭। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামানের জন্য একটি লোক নিযুক্ত ছিল। তাকে কিরকিরাহ বলা হত। সে মারা গেলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে জাহান্নামী।’’ অতঃপর (এ কথা শুনে) সাহাবীগণ তাকে দেখতে গেলেন (ব্যাপার কী?) সুতরাং তাঁরা একটি আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) পেলেন, সেটি সে (গনীমতের মাল থেকে) চুরি করে নিয়েছিল।
11/218. وَعَنْ أَبِي بَكْرَةَ نُفَيْعِ بنِ الحَارِثِ رضي الله عنه عَنِ النَّبيّ ﷺ قَالَ: « إنَّ الزَّمَانَ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ اللهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرضَ: السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرَاً، مِنْهَا أرْبَعَةٌ حُرُمٌ: ثَلاثٌ مُتَوالِياتٌ: ذُو القَعْدَة، وذُو الحِجَّةِ، وَالمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشعْبَانَ، أيُّ شَهْر هَذَا ؟» قُلْنَا : اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَننَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيْرِ اسْمِهِ، قَالَ: «ألَيْسَ ذَا الحِجَّةِ ؟» قُلْنَا : بَلَى . قَالَ: «فَأيُّ بَلَد هَذَا ؟»قُلْنَا : اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بِغَيرِ اسْمِهِ . قَالَ: «ألَيْسَ البَلْدَةَ ؟»قُلْنَا : بَلَى . قَالَ: «فَأيُّ يَوْم هَذَا ؟»قُلْنَا : اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ، فَسَكَتَ حَتَّى ظَنَنَّا أنَّهُ سَيُسَمِّيهِ بغَيرِ اسْمِهِ . قَالَ: «ألَيسَ يَوْمَ النَّحْرِ ؟»قُلْنَا : بَلَى . قَالَ: «فَإنَّ دِمَاءكُمْ وَأمْوَالَكُمْ وَأَعْرَاضَكُمْ عليكم حَرَامٌ، كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا في بَلَدِكُمْ هَذَا في شَهْرِكُمْ هَذَا، وَسَتَلْقُونَ رَبَّكُمْ فَيَسْألُكُمْ عَنْ أعْمَالِكُمْ، ألا فَلا تَرْجعوا بعدي كُفّاراً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْض، ألا لَيُبَلِّغ الشَّاهِدُ الغَائِبَ، فَلَعَلَّ بَعْضَ مَنْ يَبْلُغُهُ أنْ يَكُونَ أوْعَى لَهُ مِنْ بَعْض مَنْ سَمِعَهُ»، ثُمَّ قَالَ : «إلاَّ هَلْ بَلَّغْتُ، ألاَ هَلْ بَلَّغْتُ ؟» قُلْنَا : نَعَمْ . قَالَ: «اَللهمّ اشْهَدْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/২১৮। আবূ বাক্রাহ নুফাই ইবনুল হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় যামানা (কাল) নিজের ঐ অবস্থায় ফিরে এল যেদিন আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। (অর্থাৎ দুনিয়া সৃষ্টি করার সময় যেরূপ বছর ও মাসগুলো ছিল, এখন পুনর্বার সে পুরাতন অবস্থায় ফিরে এল এবং আরবের মুশরিকরা যে নিজেদের মন মত মাসগুলোকে আগে-পিছে করেছিল তা এখন থেকে শেষ করে দেওয়া হল।) বছরে বারটি মাস; তার মধ্যে চারটি হারাম (সম্মানীয়) মাস। তিনটি পরস্পরঃ যুল ক্বা‘দাহ, যুলহিজ্জাহ ও মুহাররাম। আর (চতুর্থ হল) মুদ্বার গোত্রের রজব; যা জুমাদা ও শা‘বান এর মধ্যে রয়েছে। এটা কোন্ মাস?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।’ অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার নাম ব্যতীত অন্য নাম বলবেন। তিনি বললেন, ‘‘এটা যুল-হিজ্জাহ নয় কি?’’ আমরা বললাম, ‘অবশ্যই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘এটা কোন্ শহর?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।’ অতঃপর তিনি কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, তিনি হয়তো তার নাম ব্যতীত অন্য নাম বলবেন। তিনি বললেন, ‘‘এ শহর (মক্কা) নয় কি?’’ আমরা বললাম, ‘অবশ্যই।’ তিনি বললেন, ‘‘আজ কোন্ দিন?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সর্বাধিক জ্ঞাত।’ অতঃপর তিনি চুপ থাকলেন। আমরা ভাবলাম, তিনি হয়তো এর অন্য নাম বলবেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘এটা কি কুরবানীর দিন নয়?’’ আমরা বললাম, ‘অবশ্যই।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্ভ্রম তোমাদের (আপসের মধ্যে) এ রকমই হারাম (ও সম্মানীয়) যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ শহরে এবং তোমাদের এ মাসে রয়েছে। শীঘ্রই তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে। অতঃপর তিনি তোমাদেরকে তোমাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন। সুতরাং তোমরা আমার পর এমন কাফের হয়ে যেও না যে, তোমরা এক অপরের গর্দান মারবে। শোনো! উপস্থিত ব্যক্তি যেন অনুপস্থিতকে (এ সব কথা) পৌঁছে দেয়। কারণ, যাকে পৌঁছাবে সে শ্রোতার চেয়ে অধিক স্মৃতিধর হতে পারে।’’ অবশেষে তিনি বললেন, ‘‘সতর্ক হয়ে যাও! আমি কি পৌঁছে দিলাম?’’ আমরা বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থাক।’’
12/219. وَعَنْ أَبِي أُمَامَةَ إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ الحَارِثِي رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «مَنِ اقْتَطَعَ حَقَّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ بِيَمِينِهِ، فَقدْ أوْجَبَ اللهُ لَهُ النَّارَ، وَحَرَّمَ عَلَيهِ الجَنَّةَ»فَقَالَ رَجُلٌ : وإنْ كَانَ شَيْئاً يَسيراً يَا رَسُول الله ؟ فَقَالَ: «وإنْ قَضيباً مِنْ أرَاك». رواه مسلم
১২/২১৯। আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনে সা’লাবা হারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (মিথ্যা) কসম খেয়ে কোন মুসলিমর হক মেরে নেবে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম ওয়াজেব এবং জান্নাত হারাম করে দেবেন।’’ একটি লোক বলল, ‘যদি তা নগণ্য জিনিস হয় হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যদিও তা পিল্লু গাছের একটি ডালও হয়।’’
13/220. وَعَن عَدِيّ بنِ عَميْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : سمعت رَسُول الله ﷺ، يقول: «مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ مِنْكُمْ عَلَى عَمَل، فَكَتَمَنَا مِخْيَطاً فَمَا فَوْقَهُ، كَانَ غُلُولاً يَأتِي به يَومَ القِيَامَةِ»فَقَامَ إليه رَجُلٌ أسْوَدُ مِنَ الأنْصَارِ، كَأنِّي أنْظُرُ إِلَيْهِ، فَقَالَ : يَا رَسُول الله، اقْبَلْ عَنِّي عَمَلَكَ، قَالَ: «وَمَا لَكَ ؟»قَالَ: سَمِعْتكَ تَقُولُ كَذَا وكَذَا، قَالَ: «وَأَنَا أقُولُه الآنَ : مَنِ اسْتَعْمَلْنَاهُ عَلَى عَمَلٍ فَلْيَجِيءْ بِقَلِيلِهِ وَكَثِيرِهِ، فَمَا أُوتِيَ مِنْهُ أخَذَ، وَمَا نُهِيَ عَنْهُ انْتَهَى». رواه مسلم
১৩/২২০। আদী ইবনে আমীরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমরা তোমাদের মধ্যে যাকে কোন কাজে নিযুক্ত করি, অতঃপর সে আমাদের কাছে সূঁচ অথবা তার চেয়ে বেশী (কিম্বা কম কিছু) লুকিয়ে নেয়, তো এটা খিয়ানত ও চুরি করা হয়। কিয়ামতের দিন সে তা সঙ্গে নিয়ে হাজির হবে।’’ এ কথা শুনে আনসারদের মধ্যে একজন কৃষ্ণকায় মানুষ উঠে দাঁড়ালেন, যেন আমি তাকে (এখন) দেখছি। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি (যে কাজের দায়িত্ব আমার উপর অর্পণ করেছিলেন) তা আমার কাছ থেকে ফিরিয়ে নেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার কি হয়েছে?’’ সে বলল, ‘আমি আপনাকে এ রকম কথা বলতে শুনলাম।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি এখনো বলছি যে, যাকে আমরা কোন কাজে নিযুক্ত করি, সে যেন অল্প-বেশী (সমস্ত মাল) আমার কাছে নিয়ে আসে। অতঃপর তা হতে তাকে যতটা দেওয়া হবে, তাইই সে গ্রহণ করবে এবং যা হতে তাকে বিরত রাখা হবে, সে তা থেকে বিরত থাকবে।’’
14/221. وعَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا كَانَ يَوْمُ خَيبَر أقْبَلَ نَفَرٌ مِنْ أصْحَابِ النَّبيِّ ﷺ، فقَالُوا : فُلاَنٌ شَهِيدٌ، وفُلانٌ شَهِيدٌ، حَتَّى مَرُّوا عَلَى رَجُلٍ، فقالوا : فُلانٌ شَهِيدٌ . فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «كَلاَّ، إنِّي رَأيْتُهُ في النَّار في بُرْدَةٍ غَلَّهَا أَوْ عَبَاءة». رواه مسلم
১৪/২২১। উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন খাইবারের যুদ্ধ হল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবী এসে বললেন, ‘অমুক অমুক শহীদ হয়েছে।’ অতঃপর তাঁরা একটি লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন এবং বললেন, ‘অমুক শহীদ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘কখনোই না। সে (গনীমতের) মাল থেকে একটি চাদর অথবা আংরাখা (বুক-খোলা লম্বা ও ঢিলা জামা) চুরি করেছিল, সে জন্য আমি তাকে জাহান্নামে দেখলাম।’’
15/222. وَعَنْ أَبِي قَتَادَةَ الحَارِثِ بنِ رِبعِيٍّ رضي الله عنه، عن رَسُول الله ﷺ : أَنَّهُ قَامَ فِيهِم، فَذَكَرَ لَهُمْ أنَّ الجِهَادَ في سَبِيلِ الله، وَالإِيمَانَ بالله أفْضَلُ الأعْمَالِ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ الله، تُكَفَّرُ عَنّي خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله ﷺ: «نَعَمْ، إنْ قُتِلْتَ في سبيلِ اللهِ، وَأنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبر»ثُمَّ قَالَ رَسُول الله ﷺ: «كَيْفَ قُلْتَ ؟» قَالَ : أرَأيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ الله، أتُكَفَّرُ عَنّي خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ لَهُ رَسُول الله ﷺ: «نَعمْ، وَأنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبِرٍ، إلاَّ الدَّيْنَ ؛ فإنَّ جِبريلَ عليه السلام قَالَ لي ذلِكَ». رواه مسلم
১৫/২২২। আবূ ক্বাতাদাহ হারেস ইবনে রিবয়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদের) মাঝে দাঁড়ালেন। অতঃপর তাঁদের জন্য বর্ণনা করলেন যে, ‘‘আল্লাহর পথে জিহাদ এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা সর্বোত্তম আমল।’’ এ শুনে একটি লোক দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি বলুন, যদি আমাকে আল্লাহর পথে হত্যা করে দেওয়া হয়, তবে কি আমার পাপরাশি মোচন করে দেওয়া হবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘‘হ্যাঁ। যদি তুমি আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও নেকীর কামনাকারী হয়ে (শত্রুর দিকে) অগ্রগামী হয়ে এবং পিছপা না হয়ে খুন হও, তাহলে।’’ পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি কি যেন বললে?’’ সে বলল, ‘আপনি বলুন, যদি আল্লাহর পথে আমাকে হত্যা করা হয়, তবে কি আমার পাপরাশি মোচন করে দেওয়া হবে?’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ। যদি তুমি আল্লাহর পথে ধৈর্যশীল ও নেকীর কামনাকারী হয়ে (শত্রুর দিকে) অগ্রগামী হয়ে এবং পিছপা না হয়ে (খুন হও, তাহলে)। কিন্তু ঋণ (ক্ষমা হবে না)। কেননা জিব্রীল আলাইহিস সালাম আমাকে এ কথা বললেন।’’
16/223. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسولَ الله ﷺ، قَالَ: «أتدرُونَ مَنِ المُفْلِسُ ؟»قَالُوا : المفْلسُ فِينَا مَنْ لاَ دِرهَمَ لَهُ ولا مَتَاع، فَقَالَ: «إنَّ المُفْلسَ مِنْ أُمَّتي مَنْ يأتي يَومَ القيامَةِ بصَلاَةٍ وَصِيامٍ وزَكاةٍ، ويأتي وقَدْ شَتَمَ هَذَا، وقَذَفَ هَذَا، وَأَكَلَ مالَ هَذَا، وسَفَكَ دَمَ هَذَا، وَضَرَبَ هَذَا، فيُعْطَى هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ، وهَذَا مِنْ حَسناتهِ، فإنْ فَنِيَتْ حَسَناتُه قَبْل أنْ يُقضى مَا عَلَيهِ، أُخِذَ منْ خَطَاياهُم فَطُرِحَتْ عَلَيهِ، ثُمَّ طُرِحَ في النَّارِ». رواه مُسلم
১৬/২২৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি জান, নিঃস্ব কে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে নিঃস্ব ঐ ব্যক্তি, যার কাছে কোন দিরহাম এবং কোনো আসবাব-পত্র নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে (আসল) নিঃস্ব তো সেই ব্যক্তি, যে কিয়ামতের দিন নামায, রোযা ও যাকাতের (নেকী) নিয়ে হাযির হবে। (কিন্তু এর সাথে সাথে সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে। কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ আরোপ করেছে, কারো (অবৈধরূপে) মাল ভক্ষণ করেছে। কারো রক্তপাত করেছে এবং কাউকে মেরেছে। অতঃপর এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে, এ (অত্যাচারিত)কে তার নেকী দেওয়া হবে। পরিশেষে যদি তার নেকীরাশি অন্যান্যদের দাবী পূরণ করার পূর্বেই শেষ হয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপরাশি নিয়ে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।’’
16/224. وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ الله عَنهَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «إنَّمَا أنا بَشَرٌ، وَإنَّكُمْ تَخْتَصِمُونَ إلَيَّ، وَلَعَلَّ بَعْضَكُمْ أنْ يَكُونَ ألْحَنَ بِحُجّتِهِ مِنْ بَعْضٍ، فأَقْضِيَ لَهُ بِنَحْوِ مَا أسْمعُ، فَمَنْ قَضَيتُ لَهُ بِحَقِّ أخِيهِ فَإِنَّما أقطَعُ لَهُ قِطعةً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৭/২২৪। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি তো একজন মানুষ। আর তোমরা (বিবাদ করে) ফায়সালার জন্য আমার নিকট আসো। হয়তো তোমাদের কেউ কেউ অন্যের তুলনায় অধিক বাকপটু। আর আমি তার কথার ভিত্তিতে তার পক্ষে ফায়সালা করি। সুতরাং আমি যদি কাউকে তার (মুসলিম) ভায়ের হক তার জন্য ফায়সালা করে দিই, তাহলে আসলে আমি তার জন্য আগুনের টুকরা কেটে দিই।’’
18/225. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لَنْ يَزَالَ المُؤْمِنُ في فُسْحَةٍ مِنْ دِينهِ مَا لَمْ يُصِبْ دَماً حَرَاماً». رواه البخاري
১৮/২২৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিন ব্যক্তি তার দ্বীনের প্রশস্ততায় থাকে; যতক্ষণ না সে অবৈধ রক্তপাতে লিপ্ত হয়।’’
19/226. وَعَن خَولَةَ بِنتِ عَامِرٍ الأنصَارِيَّة، وَهِيَ امرأَةُ حَمْزَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَتْ : سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يقول: «إنَّ رِجَالاً يَتَخَوَّضُونَ فِي مَالِ الله بغَيرِ حَقٍّ، فَلَهُمُ النَّارُ يَومَ القِيَامَةِ». رواه البخاري
১৯/২২৬। হামযাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর স্ত্রী খাওলাহ বিনতে আমের আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘কিছু লোক আল্লাহর মাল নাহক ব্যয়-বণ্টন করবে। সুতরাং তাদের জন্য কিয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুন রয়েছে।’’
27- بَابُ تَعْظِيْمِ حُرُمَاتِ الْمُسْلِمِيْنَ وَبَيَانِ حُقُوْقِهِمْ وَالشَّفْقَةِ عَلَيْهِمْ وَرَحْمَتِهِمْ
পরিচ্ছেদ - ২৭ : মুসলিমদের মান-মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা-প্রদর্শন ও তাদের অধিকার-রক্ষা এবং তাদের প্রতি দয়া-দাক্ষিণ্যের গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ ﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
আরো বলেন,
﴿وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
তিনি বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “বিশ্বাসীদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (হিজ্র ৮৮আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿مَن قَتَلَ نَفۡسَۢا بِغَيۡرِ نَفۡسٍ أَوۡ فَسَادٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ ٱلنَّاسَ جَمِيعٗا وَمَنۡ أَحۡيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحۡيَا ٱلنَّاسَ جَمِيعٗاۚ ﴾ [المائدة: ٣٢]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ করার দণ্ডদান উদ্দেশ্য ছাড়া কাউকে হত্যা করল, সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষকেই হত্যা করল। আর কেউ কারো প্রাণরক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল।” (সূরা মায়েদাহ ৩২ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
1/227. وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُؤْمِنُ للْمُؤْمِنِ كَالبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضَاً». وشبَّكَ بَيْنَ أصَابِعِهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২২৭। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মু’মিন অপর মু’মিনের জন্য অট্টালিকার ন্যায়, যার এক অংশ অন্য অংশকে মজবূত করে রাখে।’’ তারপর তিনি (বুঝাবার জন্য) তাঁর এক হাতের আঙ্গুলগুলি অপর হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে ঢুকালেন।
2/228. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ مَرَّ في شَيْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنا، أَوْ أَسْوَاقِنَا، وَمَعَهُ نَبْلٌ فَلْيُمْسِكْ، أَوْ لِيَقْبِضْ عَلَى نِصَالِهَا بكَفّه ؛ أنْ يُصِيبَ أحَداً مِنَ المُسْلِمِينَ مِنْهَا بِشَيْء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২২৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের কোনো মসজিদ অথবা কোনো বাজারের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবে, তার উচিত হবে, হাতের তালু দ্বারা তার ফলাকে ধরে নেওয়া। যাতে কোনো মুসলিম তার দ্বারা কোনো প্রকার কষ্ট না পায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/229. وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَثَلُ المُؤْمِنينَ في تَوَادِّهِمْ وتَرَاحُمِهمْ وَتَعَاطُفِهمْ، مَثَلُ الجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى مِنْهُ عُضْوٌ تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الجَسَدِ بِالسَّهَرِ والحُمَّى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২২৯। নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মত। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/230. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَبَّلَ النَّبيُّ ﷺ الحَسَنَ بْنَ عَليٍّ رَضِيَ الله عَنهُمَا، وَعِنْدَهُ الأَقْرَعُ بْنُ حَابِس، فَقَالَ الأقْرَعُ : إن لِي عَشرَةً مِنَ الوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أحَداً . فَنَظَرَ إِلَيْهِ رَسُول الله ﷺ، فَقَالَ: «مَنْ لا يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ !». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৩০। আবূ হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-কে চুমু দিলেন। ঐ সময় তাঁর নিকট আক্বরা‘ ইবন হাবেস বসা ছিলেন। আক্বরা‘ বললেন, ‘আমার দশটি ছেলে আছে, আমি তাদের কাউকেই কোনোদিন চুমু দেইনি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/231. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قَدِمَ نَاسٌ مِنَ الأعْرَابِ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ، فَقَالُوا : أتُقَبِّلُونَ صِبْيَانَكُمْ ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ»قَالُوا : لَكِنَّا وَاللهِ مَا نُقَبِّلُ! فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «أَوَ أَمْلِك إنْ كَانَ اللهُ نَزَعَ مِنْ قُلُوبِكُم الرَّحْمَةَ !». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৩১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, কিছু বেদুঈন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ‘আপনারা কি আপনাদের শিশু-সন্তানদেরকে চুমু দিয়ে থাকেন?’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ তারা বলল, ‘কিন্তু আল্লাহর কসম! আমরা চুমু দেই না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহ যদি তোমাদের অন্তর থেকে দয়া উঠিয়ে নেন, তবে আমি কি তার মালিক করে দিতে পারি?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/232. وَعَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ لاَ يَرْحَمِ النَّاسَ لاَ يَرْحَمْهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/২৩২। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করবে না, আল্লাহও তার প্রতি দয়া করবেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
7/233. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ للنَّاسِ فَلْيُخَفِّفْ، فَإنَّ فِيهِم الضَّعِيفَ وَالسَّقِيمَ وَالكَبيرَ، وَإِذَا صَلَّى أحَدُكُمْ لِنَفْسِهِ فَلْيُطَوِّل مَا شَاءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/২৩৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন লোকদের নিয়ে নামায পড়ে, তখন সে যেন সংক্ষেপ করে। কারণ তাদের মাঝে দুর্বল, অসুস্থ ও বৃদ্ধ লোক থাকে। আর যখন কেউ একাকী নামায পড়ে, তখন সে ইচ্ছামত দীর্ঘ করতে পারে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
8/234. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : إنْ كَانَ رَسُول الله ﷺ لَيَدَعُ العَمَلَ، وَهُوَ يُحبُّ أنْ يَعْمَلَ بِهِ؛ خَشْيَةَ أنْ يَعمَلَ بِهِ النَّاسُ فَيُفْرَضَ علَيْهِمْ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/২৩৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কখনো (নফল) আমল করতে পছন্দ করা সত্ত্বেও এই ভয়ে ছেড়ে দিতেন যে, লোকেরা তা আমল করবে এবং তার ফলে তাদের উপর তা ফরয করে দেওয়া হবে। (বুখারী ও মুসলিম)
9/235. وَعَنْهَا رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ : نَهَاهُمُ النَّبيُّ ﷺ عنِ الوِصَالِ رَحمَةً لَهُمْ، فَقَالُوا : إنَّكَ تُوَاصِلُ ؟ قَالَ: «إنّي لَسْتُ كَهَيْئَتِكُمْ، إنِّي أَبِيْتُ يُطْعِمُنِي رَبِّي وَيَسقِيني». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
৯/২৩৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে দয়াপূর্বক ‘সওমে ওয়িসাল’ (বিনা ইফতারে একটানা রোযা) রাখতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা বললেন, ‘‘আপনি তো ‘সওমে ওয়িসাল’ রাখছেন?’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের মত নই। আমাকে তো আমার প্রতিপালক রাতে পানাহার করান।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অর্থাৎ পানাহারকারীর মত শক্তি দান করেন।
10/236. وَعَنْ أَبِي قَتادَةَ الحَارِثِ بنِ رِبعِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «إنِّي لأَقُومُ إِلَى الصَّلاةِ، وَأُرِيدُ أَنْ أُطَوِّلَ فِيهَا، فَأسْمَعُ بُكَاءَ الصَّبيِّ فَأَتَجَوَّزَ في صَلاَتِي كَرَاهِيَةً أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمِّهِ». رواه البخاري
১০/২৩৬। আবূ কাতাদাহ্ হারেস ইবনে রিব‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি নামায পড়তে দাঁড়াই এবং আমার ইচ্ছা হয় তা দীর্ঘ করি। অতঃপর আমি শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনি। ফলে আমি তার মায়ের কষ্ট হওয়াটা অপছন্দ মনে করে নামায সংক্ষিপ্ত করি।’’ (বুখারী)
11/237. وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «مَنْ صَلَّى صَلاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ». رواه مسلم
১১/২৩৭। জুন্দুব ইবনে আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামা‘আতে) পড়ল, সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে তার যিম্মার কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর যিম্মার কিছু দাবী করবেন, তাকে পাকড়াও করবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’(মুসলিম)
(বলা বাহুল্য, যে নামায পড়ে, সে আল্লাহর যিম্মাদারীতে। সুতরাং সে সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র; তার সাথে সম্মানের সাথে ব্যবহার কর)
12/238. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ. مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ يَومَ القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১২/২৩৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের কোনো এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
13/239. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمُ، لاَ يَخُونُهُ، وَلاَ يَكْذِبُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِم حَرَامٌ عِرْضُهُ وَمَالهُ وَدَمُهُ، التَّقْوى هاهُنَا، بحَسْب امْرىءٍ مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحْقِرَ أخَاهُ المُسْلِم». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
১৩/২৩৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার বিশ্বাসঘাতকতা করবে না, তাকে মিথ্যা বলবে না (বা মিথ্যাবাদী ভাববে না), তার সাহায্য না করে তাকে অসহায় ছেড়ে দেবে না। এক মুসলিমের মর্যাদা, মাল ও খুন অপর মুসলিমের জন্য হারাম। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ মনে করাটাই একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
14/240. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لاَ تَحَاسَدُوا، وَلاَ تَنَاجَشُوا، وَلاَ تَبَاغَضُوا، وَلاَ تَدَابَرُوا، وَلاَ يَبعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْع بَعْض، وَكُونُوا عِبَادَ الله إخْوَاناً، المُسْلِمُ أخُو المُسْلم : لاَ يَظْلِمُهُ، وَلا يَحْقِرُهُ، وَلاَ يَخْذُلُهُ، التَّقْوَى هاهُنَا - وَيُشِيرُ إِلَى صَدرِهِ ثَلاَثَ مَرَّاتً - بحَسْب امْرئٍٍ مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحقِرَ أخَاهُ المُسْلِمَ، كُلُّ المُسْلم عَلَى المُسْلم حَرَامٌ، دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ». رواه مسلم
১৪/২৪০। উক্ত বর্ণনাকারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, কেনা-বেচাতে জিনিসের মূল্য বাড়িয়ে একে অপরকে ধোঁকা দিয়ো না, একে অপরের প্রতি শত্রুতা রেখো না, এক অপর থেকে (ঘৃণাভরে) মুখ ফিরায়ো না এবং একে অপরের (জিনিস) কেনা-বেচার প্রস্তাবের উপর কেনা-বেচা করো না। আর হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার প্রতি যুলুম করবে না, তাকে তুচ্ছ ভাববে না এবং তাকে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দেবে না। তাকওয়া তথা আল্লাহ-সচেতনতা এখানে (অন্তরে) রয়েছে। (তিনি নিজ বুকের দিকে ইঙ্গিত করে এ কথা তিনবার বললেন।) কোন মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ ভাবা একটি মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, মাল এবং তার মর্যাদা অপর মুসলিমের উপর হারাম।’’ (মুসলিম)
16/241. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يُؤمِنُ أحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لأخِيهِ مَا يُحِبُّ لنَفْسِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/২৪১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ (পূর্ণ) মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করবে, যা সে নিজের জন্য পছন্দ করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
17/242. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «انْصُرْ أخَاكَ ظَالماً أَوْ مَظْلُوماً».فَقَالَ رجل : يَا رَسُولَ اللهِ، أنْصُرُهُ إِذَا كَانَ مَظْلُوماً، أرَأيْتَ إنْ كَانَ ظَالِماً كَيْفَ أنْصُرُهُ ؟ قَالَ: «تحْجُزُهُ ـ أَوْ تمْنَعُهُ ـ مِنَ الظُلْمِ فَإِنَّ ذلِكَ نَصرُهُ». رواه البخاري
১৭/২৪২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর, সে অত্যাচারী হোক অথবা অত্যাচারিত।’’ তিনি (আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! অত্যাচারিতকে সাহায্য করার বিষয়টি তো বুঝলাম; কিন্তু অত্যাচারীকে কিভাবে সাহায্য করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে অত্যাচার করা হতে বাধা দেবে, তাহলেই তাকে সাহায্য করা হবে।’’(বুখারী)
18/243. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم خَمْسٌ : رَدُّ السَّلامِ، وَعِيَادَةُ المَريض، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإجَابَةُ الدَّعْوَة، وتَشْميتُ العَاطِسِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية لمسلم: «حَقُّ المُسْلِم عَلَى المُسْلِم ستٌّ : إِذَا لَقيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأجبْهُ، وإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ الله فَشَمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ، وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ»
১৮/২৪৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের পাঁচটি অধিকার রয়েছেঃ (১) সালামের জবাব দেওয়া, (২) রোগীকে দেখতে যাওয়া, (৩) জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, (৪) দাওয়াত গ্রহণ করা এবং (৫) কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মুসলিমের উপর মুসলিমের অধিকার ছয়টিঃ তুমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তাকে সালাম দাও, সে তোমাকে দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত গ্রহণ কর, সে তোমার কাছে উপদেশ চাইলে তুমি তাকে উপদেশ দাও, সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে তার জবাব দাও, সে অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাও এবং সে মারা গেলে তার জানাযায় অংশ গ্রহণ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
19/244. وَعَنْ أَبِي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِسَبعٍ، وَنَهَانَا عَن سَبعٍ : أمَرَنَا بعيَادَة المَرِيض، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وتَشْمِيتِ العَاطسِ، وَإبْرَارِ المُقْسِم، ونَصْرِ المَظْلُوم، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإِفْشَاءِ السَّلامِ، ونَهَانَا عَنْ خَواتِيمٍ أَوْ تَخَتُّمٍ بالذَّهَبِ، وَعَنْ شُرْبٍ بالفِضَّةِ، وَعَن الميَاثِرِ الحُمْرِ، وَعَن القَسِّيِّ، وَعَنْ لُبْسِ الحَريرِ والإسْتبْرَقِ وَالدِّيبَاجِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৯/২৪৪। আবূ ‘উমারাহ বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সাতটি কাজ করতে নিষেধ করেছেন। তিনি রোগীকে দেখতে যেতে, জানাযায় অংশগ্রহণ করতে, কেউ হাঁচি দিলে তার জবাব দিতে, শপথকারীর শপথ রক্ষা করতে, নিপীড়িতদের সাহায্য করতে, সালামের প্রসার ঘটাতে এবং কেউ দাওয়াত দিলে তা গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তিনি আমাদেরকে সোনার আংটি পরতে, রূপার পাত্র ব্যবহার করতে, রেশমের জিনপোশ, কাস্সী, ইস্তাবরাক ও দীবাজ (সর্বপ্রকার রেশমী পোশাক) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
28- بَابُ سَتْرِ عَوْرَاتِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالنَّهْيِ عَنْ إِشَاعَتِهَا لِغَيْرِ ضَرُوْرَةٍ
পরিচ্ছেদ - ২৮ : মুসলিমদের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা জরুরী
এবং বিনা প্রয়োজনে তা প্রচার করা নিষিদ্ধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ ٱلۡفَٰحِشَةُ فِي ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۚ ﴾ [النور: ١٩]
অর্থাৎ “যারা মু’মিনদের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” (সূরা নূর ১৯ আয়াত)
1/245. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْداً في الدُّنْيَا إلاَّ سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم
১/২৪৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’’ (মুসলিম)
2/246. وَعَنهُ، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «كُلُّ أُمَّتِي مُعَافىَ إلاَّ المُجَاهِرِينَ، وَإنّ مِنَ المُجَاهَرَةِ أنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ باللَّيلِ عَمَلاً، ثُمَّ يُصْبِحُ وَقَدْ سَتَرَهُ اللهُ عَلَيهِ، فَيقُولُ : يَا فُلانُ، عَمِلتُ البَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا، وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ، وَيُصبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللهِ عَنْه». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২৪৬। উক্ত সাহাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার সকল উম্মত মাফ পাবে, তবে পাপ-প্রকাশকারী ব্যতীত। আর এক প্রকার প্রকাশ এই যে, কোনো ব্যক্তি রাতে কোনো পাপকাজ করে, যা আল্লাহ গোপন রাখেন। কিন্তু সকাল হলে সে বলে বেড়ায়, ‘হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি।’ অথচ সে এমন অবস্থায় রাত্রি অতিবাহিত করেছিল যে, আল্লাহ তার পাপ গুপ্ত রেখেছিলেন। কিন্তু সে সকালে উঠে তার উপর আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলে!’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/247. وعنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا زَنَتِ الأَمَةُ فَتَبيَّنَ زِنَاهَا فَلْيَجْلِدْهَا الحَدَّ، وَلا يُثَرِّبْ عَلَيْهَا، ثُمَّ إنْ زَنَتِ الثَّانِيَةَ فَلْيَجْلِدْهَا الحَدَّ، وَلا يُثَرِّبْ عَلَيْهَا، ثُمَّ إنْ زَنَتِ الثَّالِثَةَ فَلْيَبِعْهَا وَلَوْ بِحَبْل مِنْ شَعَر». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২৪৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(কারো) দাসী যখন ব্যভিচার করে আর তা প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন সে যেন তাকে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। অতঃপর দ্বিতীয়বার যদি ব্যভিচার করে, তাহলে সে যেন তাকে শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত বেত্রাঘাত করে এবং তিরস্কার না করে। পুনরায় যদি ব্যভিচার করে, তাহলে যেন চুলের একটি রশির বিনিময়ে হলেও তাকে বিক্রি করে দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/248. وَعَنهُ، قَالَ : أُتِيَ النَّبيَّ ﷺ بِرَجُلٍ قَدْ شَرِبَ خَمْراً، قَالَ: «اضْربُوهُ»قَالَ أَبُو هريرة : فَمِنَّا الضَّارِبُ بِيَدِهِ، والضَّارِبُ بِنَعْلِهِ، وَالضَّارِبُ بِثَوبِهِ . فَلَمَّا انْصَرَفَ، قَالَ بَعضُ القَومِ : أخْزَاكَ الله، قَالَ: «لا تَقُولُوا هَكَذا، لاَ تُعِينُوا عَلَيهِ الشَّيْطَانَ». رواه البخاري
৪/২৪৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক মাতালকে উপস্থিত করা হল। তিনি তাকে প্রহার করার আদেশ দিলেন। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের মাঝে কেউ তাকে হাত দ্বারা, কেউ জুতা দ্বারা এবং কেউ বা কাপড় দ্বারা প্রহার করল। লোকটি যখন চলে গেল, তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ তোকে লাঞ্ছিত করুক।’ তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এরূপ বলো না; তার বিরুদ্ধে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ো না।’’ (বুখারী)
29- بَابُ قَضَاءِ حَوَائِجِ الْمُسْلِمِيْنَ
পরিচ্ছেদ - ২৯ : মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ﴾ [الحج: ٧٧]
অর্থাৎ “উত্তম কাজ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” (সূরা হাজ্জ ৭৭ আয়াত)
1/249. عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «المُسْلِمُ أَخُو المُسْلِم، لا يَظْلِمهُ، وَلاَ يُسْلِمُهُ. مَنْ كَانَ في حَاجَة أخيه، كَانَ اللهُ في حَاجَته، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِم كُرْبَةً، فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بها كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَومِ القِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ اللهُ يَومَ القِيامَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২৪৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তার উপর অত্যাচার করবে না এবং তাকে অত্যাচারীর হাতে ছেড়ে দেবে না। যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পূর্ণ করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন এক বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বহু বিপদের একটি বিপদ দূর করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে, আল্লাহ কিয়ামতে তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
2/250. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنيَا، نَفَّسَ الله عَنْهُ كُربَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ، وَمَنْ يَسَّر عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ الله عَلَيهِ في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِماً سَتَرَهُ الله في الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، والله في عَونِ العَبْدِ مَا كَانَ العَبْدُ في عَونِ أخِيهِ، وَمَنْ سَلَكَ طَريقاً يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْماً سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَريقاً إِلَى الجَنَّةِ . وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ في بَيت مِنْ بُيُوتِ اللهِ تَعَالَى، يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَيْنَهُمْ إلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ، وَغَشِيتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَحَفَّتْهُمُ المَلاَئِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ الله فِيمَنْ عِندَهُ . وَمَنْ بَطَّأ بِهِ عَمَلُهُ لَمْ يُسْرِع بِهِ نَسَبُهُ». رواه مسلم
২/২৫০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের কোন পার্থিব দুর্ভোগ দূরীভূত করবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের দুর্ভোগসমূহের মধ্যে কোন একটি দুর্ভোগ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করবেন। আর যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা তার মুসলিম ভাইয়ের সহযোগিতা করতে থাকে, আল্লাহও সে বান্দার সাহায্য করতে থাকেন। যে ব্যক্তি এমন পথে চলে--যাতে সে (দ্বীনী) বিদ্যা অর্জন করে, তার জন্য আল্লাহ জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। আর যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর কোনো এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে ও নিজেদের মধ্যে তা অধ্যয়ন করে, তখনই (আল্লাহর পক্ষ থেকে) তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, তাদেরকে (আল্লাহর) রহমত আচ্ছাদিত করে নেয়, ফিরিশ্তা তাদেরকে ঘিরে নেয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী (ফিরিশ্তা)দের মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন। আর যাকে তার আমল পশ্চাদ্গামী করেছে (অর্থাৎ নেকীর কাজ করেনি) তার বংশ তাকে অগ্রগামী করতে পারবে না।’’ (মুসলিম)
30- بَابُ الشَّفَاعَةِ
পরিচ্ছেদ - ৩০ : সুপারিশ করা
আল্লাহ বলেন,
﴿ مَّن يَشۡفَعۡ شَفَٰعَةً حَسَنَةٗ يَكُن لَّهُۥ نَصِيبٞ مِّنۡهَاۖ ﴾ [النساء: ٨٥]
অর্থাৎ “কেউ কোন ভাল কাজের সুপারিশ করলে ওতে তার অংশ থাকবে।” (সূরা নিসা ৮৫ আয়াত)
1/251. وَعَنْ أَبِي مُوسَى الأشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ النَّبيُّ ﷺ إِذَا أتاهُ طَالِبُ حَاجَةٍ أقبَلَ عَلَى جُلَسَائِهِ، فَقَالَ: «اشْفَعُوا تُؤْجَرُوا، وَيَقْضِي الله عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا أَحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: «مَا شَاءَ».
১/২৫১। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু বলেন, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন প্রয়োজন প্রার্থী আসত, তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলতেন, ‘‘(এর জন্য) তোমরা সুপারিশ কর, তোমাদেরকে প্রতিদান দেওয়া হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর যবানে যা পছন্দ করেন, তা ফায়সালা করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, যা ইচ্ছা করেন (তা ফায়সালা করে দেন)।
2/252. وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا في قِصَّةِ بَرِيرَةَ وَزَوْجِهَا، قَالَ: قَالَ لَهَا النَّبيُّ ﷺ: «لَوْ رَاجَعْتِهِ!» قَالَتْ : يَا رَسُولَ اللهِ تَأمُرُنِي ؟ قَالَ: «إنَّمَا أَشْفَع» قَالَتْ : لاَ حَاجَةَ لِي فِيهِ . رواه البخاري
২/২৫২। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বারীরাহ ও তার স্বামীর (বিচ্ছেদের) ঘটনা প্রসঙ্গে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারীরাকে বললেন, ‘‘তুমি যদি তার কাছে ফিরে যেতে (তাহলে ভাল হত)!’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে আদেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘(না।) আমি (কেবলমাত্র) সুপারিশ করছি।’’ সে বলল, ‘(তাহলে) তার আমার কোন প্রয়োজন নেই।’ (বুখারী)
31- بَابُ الْإِصْلاَحِ بَيْنَ النَّاسِ
পরিচ্ছেদ - ৩১ : (বিবাদমান) মানুষদের মধ্যে মীমাংসা (ও সন্ধি) করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ ﴾ [النساء: ١١٤]
অর্থাৎ “তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোন কল্যাণ নেই, তবে যে (তার পরামর্শে) দান খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় (তাতে) কল্যাণ আছে।” (সুরা নিসা ১১৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَٱلصُّلۡحُ خَيۡرٞۗ ﴾ [النساء: ١٢٨]
অর্থাৎ “বস্তুতঃ আপোস করা অতি উত্তম।” (ঐ ১২৮ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَأَصۡلِحُواْ ذَاتَ بَيۡنِكُمۡۖ ﴾ [الانفال: ١]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর এবং নিজেদের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন কর।” (সূরা আনফাল ১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ إِخۡوَةٞ فَأَصۡلِحُواْ بَيۡنَ أَخَوَيۡكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٠]
অর্থাৎ “সকল বিশ্বাসীরা তো পরস্পর ভাই ভাই, সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাই-এর মধ্যে সন্ধি স্থাপন কর।” (সূরা হুজুরাত ১০ আয়াত)
1/253. عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كُلُّ سُلامَى مِنَ النَّاسِ عَلَيهِ صَدَقَةٌ، كُلَّ يَومٍ تَطلُعُ فِيهِ الشَّمْسُ : تَعْدِلُ بَينَ الاثْنَينِ صَدَقةٌ، وتُعِينُ الرَّجُلَ في دَابَّتِهِ، فَتَحْمِلُهُ عَلَيْهَا أَوْ تَرفَعُ لَهُ عَلَيْهَا مَتَاعَهُ صَدَقَةٌ، وَالكَلِمَةُ الطَيِّبَةُ صَدَقَةٌ، وبكلِّ خَطْوَةٍ تَمشيهَا إِلَى الصَّلاةِ صَدَقَةٌ، وتُميطُ الأذَى عَنِ الطَّريقِ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২৫৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষ থেকে প্রদেয় একটি করে সাদকাহ রয়েছে। (আর সাদকাহ শুধু মাল খরচ করাকেই বলে না; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা করে দেওয়াটাও সাদকাহ, কোনো মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবা তার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।’’ (বুখারী-মুসলিম)
2/254. وَعَن أمِّ كُلْثُومِ بِنتِ عُقْبَةَ بنِ أَبي مُعَيطٍ رَضِيَ الله عَنهَا، قَالَتْ : سمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «لَيْسَ الكَذَّابُ الَّذِي يُصْلِحُ بَيْنَ النَّاسِ فَيَنْمِي خَيراً، أَوْ يقُولُ خَيْراً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةِ مُسلِمٍ زِيَادَة، قَالَتْ : وَلَمْ أسْمَعْهُ يُرْخِّصُ في شَيْءٍ مِمَّا يَقُولُهُ النَّاسُ إلاَّ في ثَلاثٍ، تَعْنِي: الحَرْبَ، وَالإِصْلاَحَ بَيْنَ النَّاسِ، وَحَدِيثَ الرَّجُلِ امْرَأَتَهُ، وَحَدِيثَ المَرْأةِ زَوْجَهَا.
২/২৫৪। উম্মে কুলসুম বিন্তে উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘ঐ ব্যক্তি মিথ্যাবাদী নয়, যে মানুষের মধ্যে সদ্ভাব স্থাপন করার জন্য (বানিয়ে) ভাল কথা পৌঁছে দেয় অথবা ভাল কথা বলে। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় বর্ধিত আকারে আছে, উম্মে কুলসুম রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কেবলমাত্র তিন অবস্থায় মিথ্যা বলার অনুমতি দিতে শুনেছিঃ যুদ্ধের ব্যাপারে, লোকের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করার সময় এবং স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের (প্রেম) আলাপ-আলোচনায়।’
3/255. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : سَمِعَ رسولُ الله ﷺ صَوْتَ خُصُومٍ بِالبَابِ عَاليةً أصْوَاتُهُمَا، وَإِذَا أحَدُهُمَا يَسْتَوْضِعُ الآخَر وَيَسْتَرْفِقُهُ في شَيءٍ، وَهُوَ يَقُولُ : وَاللهِ لاَ أفْعَلُ، فَخَرجَ عَلَيْهِمَا رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: «أيْنَ المُتَأَلِّي عَلَى اللهِ لاَ يَفْعَلُ المَعْرُوفَ ؟»، فَقَالَ : أَنَا يَا رسولَ اللهِ، فَلَهُ أيُّ ذلِكَ أحَبَّ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরজার নিকট দু’জন বিবাদকারীর উচ্চ আওয়ায শুনতে পেলেন। তাদের মধ্যে একজন অপরজনকে কিছু ঋণ কমাবার এবং নম্রতা প্রদর্শন করার জন্য অনুরোধ করছিল। আর ঋণদাতা বলছিল, ‘আল্লাহর কসম! আমি (এটা) করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দু’জনের কাছে বেরিয়ে এসে বললেন, ‘‘সে ব্যক্তি কোথায়, যে আল্লাহর উপর কসম খাচ্ছিল যে, সে ভাল কাজ (ঋণ কম এবং নম্রতা) করবে না?’’ সে বলল, ‘আমি, হে আল্লাহর রাসূল! (এখন) সে (ঋণ কম করা অথবা সময় নেওয়া) যা পছন্দ করবে, আমি তাতেই রাজি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/256. وَعَنْ أَبِي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيّ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَلَغَهُ أنَّ بَني عَمرِو بنِ عَوْفٍ كَانَ بَيْنَهُمْ شَرٌّ، فَخَرَجَ رَسولُ الله ﷺ يُصْلِحُ بَينَهُمْ في أُنَاس مَعَهُ، فَحُبِسَ رَسُولُ الله ﷺ وَحَانَتِ الصَّلاة، فَجَاءَ بِلالٌ إِلَى أَبي بَكرٍ رَضِيَ الله عنهما، فَقَالَ : يَا أَبا بَكْر، إنَّ رَسُولَ الله ﷺ قَدْ حُبِسَ وَحَانَتِ الصَّلاةُ فَهَلْ لَكَ أنْ تَؤُمَّ النَّاس ؟ قَالَ : نَعَمْ، إنْ شِئْتَ، فَأقَامَ بِلالٌ الصَّلاةَ، وتَقَدَّمَ أَبُو بَكْرٍ فَكَبَّرَ وَكَبَّرَ النَّاسُ، وَجَاءَ رَسُول الله ﷺ يَمشي في الصُّفُوفِ حَتَّى قَامَ في الصَّفِّ، فَأَخَذَ النَّاسُ في التَّصْفيقِ، وَكَانَ أَبُو بكرٍ رضي الله عنه لاَ يَلْتَفِتُ في الصَّلاةِ، فَلَمَّا أكْثَرَ النَّاسُ في التَّصْفيقِ الْتَفَتَ، فإِذَا رَسُول الله ﷺ، فَأَشَارَ إِلَيْه رسولُ الله ﷺ فَرَفَعَ أَبُو بَكْر رضي الله عنه يَدَهُ فَحَمِدَ اللهَ، وَرَجَعَ القَهْقَرَى وَرَاءهُ حَتَّى قَامَ في الصَّفِّ، فَتَقَدَّمَ رَسُول الله ﷺ، فَصَلَّى للنَّاسِ، فَلَمَّا فَرَغَ أقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، فَقَالَ: «أيُّهَا النَّاسُ، مَا لَكُمْ حِينَ نَابَكُمْ شَيْءٌ في الصَّلاةِ أخَذْتُمْ في التَّصفيق ؟! إِنَّمَا التَّصفيق للنِّساء . مَنْ نَابَهُ شَيْءٌ في صَلاتِهِ فَلْيَقُلْ : سُبْحَانَ الله، فَإِنَّهُ لاَ يَسْمَعُهُ أحدٌ حِينَ يقُولُ : سُبْحَانَ الله، إلاَّ الْتَفَتَ . يَا أَبَا بَكْر : مَا مَنَعَكَ أنْ تُصَلِّي بالنَّاسِ حِينَ أشَرْتُ إلَيْكَ ؟»، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: مَا كَانَ يَنْبَغي لابْنِ أَبي قُحَافَةَ أنْ يُصَلِّي بالنَّاسِ بَيْنَ يَدَيْ رَسُول الله ﷺ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৫৬। আবুল আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমর ইবনে ‘আউফ গোত্রের কিছু লোকের মাঝে কিছু ঝগড়া-বিবাদ ছিল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে কিছু লোককে নিয়ে তাদের মধ্যে আপোস-মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য সেখানে হাজির হলেন। সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেলেন। অপর দিকে নামাযের সময় হয়ে গেল। সুতরাং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এসে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আটকে গেছেন। এদিকে নামাযেরও সময় হয়ে গেছে। আপনি কি নামাযের লোকদের ইমামতি করবেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যদি চাও।’ অতঃপর বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামাযের ইকামত দিলেন এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এগিয়ে গিয়ে (তাহরীমার) তকবীর বললেন এবং লোকেরাও তকবীর বলল। ইতোমধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন এবং কাতারগুলো অতিক্রম করে (প্রথম) কাতারে এসে দাঁড়ালেন। (তা দেখে) লোকেরা হাততালি দিতে শুরু করল। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামাযরত অবস্থায় কোনো দিকে তাকান না, কিন্তু লোকেদের অধিক মাত্রায় হাততালির কারণে তিনি তাকিয়ে দেখতে পেলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে হাতের ইশারায় (নিজের জায়গায় থাকতে) নির্দেশ দিলেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত উপরে তুলে আল্লাহর প্রশংসা করলেন। তারপর কিবলার দিকে মুখ রেখে পিছনে ফিরে এসে কাতারে শামিল হলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামনে গিয়ে লোকদের ইমামতি করলেন এবং নামায শেষ করে লোকদের দিকে ফিরে বললেন, ‘‘হে লোক সকল! কি ব্যাপার যে, নামায অবস্থায় কিছু ঘটতে দেখে তোমরা হাততালি দিতে শুরু করলে? (জেনে রেখো, নামাযে) হাততালি দেওয়া তো মহিলাদের কর্তব্য। নামায অবস্থায় কারো কিছু ঘটলে সে যেন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে। কারণ, এটা শুনলে কেউ তার দিকে ভ্রূক্ষেপ না করে পারবে না। হে আবূ বকর! তোমাকে যখন ইশারা করলাম, তখন ইমামতি করতে তোমার কিসের বাধা ছিল?’’ তিনি বললেন, ‘আবূ কুহাফার ছেলের জন্য সঙ্গত ছিল না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে লোকদের ইমামতি করবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
32- بَابُ فَضْلِ ضِعْفَةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَالْفُقَرَاءِ وَالْخَامِلِيْنَ
পরিচ্ছেদ - ৩২ : দুর্বল, গরীব ও খ্যাতিহীন মুসলিমদের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
1/257. عَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ: «ألاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ الجَنَّةِ ؟ كُلُّ ضَعِيف مُتَضَعَّف، لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/২৫৭। হারেসাহ ইবনে অহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম খায়, তাহলে তা তিনি নিশ্চয়ই পুরা করে দেন। আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় সবভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’ (বুখারী, মুসলিম)
2/258. وَعَنْ أَبِي عَبَّاسٍ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : مَرَّ رَجُلٌ عَلَى النَّبيّ ﷺ، فَقَالَ لِرَجُلٍ عِنْدَهُ جَالِسٌ: «مَا رَأيُكَ في هَذَا ؟»، فَقَالَ : رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِ النَّاسِ، هَذَا واللهِ حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ يُنْكَحَ، وَإنْ شَفَعَ أنْ يُشَفَّعَ . فَسَكَتَ رسولُ اللهِ ﷺ، ثُمَّ مَرَّ رَجُلٌ آخَرُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ الله ﷺ: «مَا رَأيُكَ في هَذَا ؟»فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، هَذَا رَجُلٌ مِنْ فُقَراءِ المُسْلِمِينَ، هَذَا حَرِيٌّ إنْ خَطَبَ أنْ لا يُنْكَحَ، وَإنْ شَفَعَ أنْ لاَ يُشَفَّعَ، وَإنْ قَالَ أنْ لاَ يُسْمَعَ لِقَولِهِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «هَذَا خَيْرٌ مِنْ مِلءِ الأرْضِ مِثْلَ هَذَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২৫৮। আবু আব্বাস সাহ্ল ইবনে সা‘দ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশ দিয়ে পার হয়ে গেল, তখন তিনি তাঁর নিকট উপবিষ্ট একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘এ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মন্তব্য কী?’’ সে বলল, ‘এ ব্যক্তি তো এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোক। আল্লাহর কসম! সে কোথাও বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। কিছুক্ষণের মধ্যে আর এক ব্যক্তি পার হয়ে গেল। তিনি ঐ (উপবিষ্ট) লোকটিকে বললেন, ‘‘এ লোকটির ব্যাপারে তোমার অভিমত কী?’’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! এ তো একজন দরিদ্র মুসলিম। সে এমন ব্যক্তি যে, সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না, কারো জন্য সুপারিশ করলে তা কবুল করা হবে না এবং সে কোনো কথা বললে, তার কথা শ্রবণযোগ্য হবে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐরূপ লোকদের চাইতে বহু উত্তম।’’ (বুখারী, মুসলিম)
3/259. وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «احْتَجَّتِ الجَنَّةُ والنَّارُ، فَقَالتِ النَّارُ : فِيَّ الجَبَّارُونَ وَالمُتَكَبِّرُونَ . وَقَالتِ الجَنَّةُ : فِيَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ وَمَسَاكِينُهُمْ، فَقَضَى اللهُ بَيْنَهُمَا : إنَّكِ الجَنَّةُ رَحْمَتِي أرْحَمُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَإنَّكِ النَّارُ عَذَابِي أُعَذِّبُ بِكِ مَنْ أشَاءُ، وَلِكلَيْكُمَا عَلَيَّ مِلْؤُهَا». رواه مسلم
৩/২৫৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাত ও জাহান্নামের বিবাদ হল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে উদ্ধত ও অহংকারী লোকেরা।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার ভিতরে দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিদের বসবাস।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে ফায়সালা করলেন যে, ‘তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি, তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেব। আর তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’ (মুসলিম)
4/260. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ الله ﷺ، قَالَ: «إنَّهُ لَيَأتِي الرَّجُلُ السَّمِينُ العَظِيمُ يَوْمَ القِيَامَةِ لاَ يَزِنُ عِنْدَ اللهِ جَناحَ بَعُوضَةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৬০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মোটা-তাজা বৃহৎ মানুষ আসবে, আল্লাহর কাছে তার মাছির ডানার সমানও ওজন হবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/261. وَعَنهُ : أَنَّ امْرَأَةً سَوْدَاءَ كَانَتْ تَقُمُّ المَسْجِدَ، أَوْ شَابّاً، فَفَقَدَهَا، أَوْ فَقَدَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَسَأَلَ عَنْهَا، أو عَنهُ، فَقَالُوا : مَاتَ . قَالَ: «أَفَلا كُنْتُمْ آذَنْتُمُونِي»فَكَأنَّهُمْ صَغَّرُوا أمْرَهَا، أَوْ أمْرهُ، فَقَالَ: «دُلُّونِي عَلَى قَبْرِهِ»فَدَلُّوهُ فَصَلَّى عَلَيْهَا، ثُمَّ قَالَ: «إنَّ هذِهِ القُبُورَ مَمْلُوءةٌ ظُلْمَةً عَلَى أهْلِهَا، وَإنَّ اللهَ تَعَالَى يُنَوِّرُهَا لَهُمْ بِصَلاَتِي عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৬১। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, কালোবর্ণের একজন মহিলা অথবা যুবক মসজিদ ঝাড়ু দিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (একদিন) দেখতে পেলেন না। সুতরাং তিনি তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সাহাবীগণ বললেন, ‘সে মারা গেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে সংবাদ দিলে না কেন?’’ তাঁরা যেন তার ব্যাপারটাকে নগণ্য ভেবেছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও।’’ সুতরাং তাঁরা তার কবরটি দেখিয়ে দিলেন এবং তিনি তার উপর জানাযা পড়লেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয় এ কবরসমূহ কবরবাসীদের জন্য অন্ধকারময়। আর আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য আমার জানাযা পড়ার কারণে তা আলোময় করে দেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/262. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «رُبَّ أشْعَثَ أغبَرَ مَدْفُوعٍ بِالأبْوابِ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ». رواه مسلم
৬/২৬২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বহু এমন লোকও আছে যার মাথা উষ্কখুষ্ক ধুলোভরা, যাদেরকে দরজা থেকে ধাক্কা দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। (কিন্তু সে আল্লাহর নিকট এত প্রিয় যে,) সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন।’’ (মুসলিম)
7/263. وَعَن أُسَامَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحْبُوسُونَ، غَيْرَ أنَّ أصْحَابَ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ . وَقُمْتُ عَلَى بَابِ النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/২৬৩। উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি জান্নাতের দরজায় দাঁড়ালাম। অতঃপর দেখলাম যারা জান্নাতে প্রবেশ করেছে তাদের অধিকাংশ গরীব-মিসকীন মানুষ। আর ধনবানদেরকে (তখনও হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। পক্ষান্তরে (অন্যান্য) জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমি জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম যে, যারা তাতে প্রবেশ করেছে তাদের বেশীর ভাগই নারীর দল। (বুখারী ও মুসলিম)
8/264. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لَمْ يَتَكَلَّمْ في المَهْدِ إلاَّ ثَلاثَةٌ : عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ، وَصَاحِبُ جُرَيْجٍ، وَكَانَ جُرَيْجٌ رَجُلاً عَابِداً، فَاتَّخَذَ صَوْمَعَةً فَكَانَ فِيهَا، فَأَتَتْهُ أُمُّهُ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : يَا رَبِّ أُمِّي وَصَلاتِي فَأَقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ فَانْصَرَفَتْ . فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي، فَأقْبَلَ عَلَى صَلاتِهِ، فَلَمَّا كَانَ مِنْ الغَدِ أتَتْهُ وَهُوَ يُصَلِّي، فَقَالَتْ : يَا جُرَيْجُ، فَقَالَ : أيْ رَبِّ أمِّي وَصَلاتِي، فَأقْبَلَ عَلَى صَلاَتِهِ، فَقَالَتْ : اَللهم لاَ تُمِتْهُ حَتَّى يَنْظُرَ إِلَى وُجُوهِ المُومِسَاتِ . فَتَذَاكَرَ بَنُو إسْرائِيل جُرَيْجاً وَعِبَادَتَهُ، وَكَانَتِ امْرَأةٌ بَغِيٌّ يُتَمَثَّلُ بحُسْنِهَا، فَقَالَتْ: إنْ شِئْتُمْ لأَفْتِنَنَّهُ، فَتَعَرَّضَتْ لَهُ، فَلَمْ يَلْتَفِتْ إِلَيْهَا، فَأتَتْ رَاعِياً كَانَ يَأوِي إِلَى صَوْمَعَتِهِ، فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا فَوقَعَ عَلَيْهَا، فَحَمَلَتْ، فَلَمَّا وَلَدَتْ، قَالَتْ : هُوَ مِنْ جُريج، فَأتَوْهُ فَاسْتَنْزَلُوهُ وَهَدَمُوا صَوْمَعَتَهُ، وَجَعَلُوا يَضْرِبُونَهُ، فَقَالَ : مَا شَأنُكُمْ ؟ قَالُوا : زَنَيْتَ بهذِهِ البَغِيِّ فَوَلَدَتْ مِنْكَ . قَالَ : أيْنَ الصَّبيُّ ؟ فَجَاؤُوا بِهِ فَقَالَ : دَعُوني حَتَّى أصَلِّي، فَصَلَّى فَلَمَّا انْصَرفَ أتَى الصَّبيَّ فَطَعنَ في بَطْنِهِ، وَقالَ : يَا غُلامُ مَنْ أبُوكَ ؟ قَالَ : فُلانٌ الرَّاعِي، فَأَقْبَلُوا عَلَى جُرَيْجٍ يُقَبِّلُونَهُ وَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ، وَقَالُوا : نَبْنِي لَكَ صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَب . قَالَ : لاَ، أعِيدُوهَا مِنْ طِينٍ كَمَا كَانَتْ، فَفَعلُوا . وبَينَا صَبِيٌّ يَرْضَعُ منْ أُمِّهِ فَمَرَّ رَجُلٌ رَاكِبٌ عَلَى دَابَّةٍ فَارِهَةٍ وَشَارَةٍ حَسَنَةٍ، فَقَالَتْ أُمُّهُ : اَللهم اجْعَل ابْنِي مِثْلَ هَذَا، فَتَرَكَ الثَّدْيَ وَأقْبَلَ إِلَيْهِ فَنَظَرَ إِلَيْهِ، فَقَالَ : اَللهم لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، ثُمَّ أقْبَلَ عَلَى ثَدْيه فَجَعَلَ يَرتَضِعُ»، فَكَأنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُول الله ﷺ وَهُوَ يَحْكِي ارْتضَاعَهُ بِأصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ في فِيه، فَجَعَلَ يَمُصُّهَا، قَالَ: «وَمَرُّوا بِجَارِيَةٍ وَهُم يَضْرِبُونَهَا، ويَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ، وَهِيَ تَقُولُ : حَسْبِيَ اللهُ ونِعْمَ الوَكِيلُ . فَقَالَتْ أمُّهُ : اَللهم لاَ تَجْعَل ابْنِي مِثْلَهَا، فَتَركَ الرَّضَاعَ ونَظَرَ إِلَيْهَا، فَقَالَ : اَللهم اجْعَلْنِي مثْلَهَا، فَهُنَالِكَ تَرَاجَعَا الحَديثَ، فَقَالَتْ : مَرَّ رَجُلٌ حَسَنُ الهَيْئَةِ، فَقُلْتُ : اَللهم اجْعَلْ ابْنِي مِثْلَهُ، فَقُلْتَ : اَللهم لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، وَمَرُّوا بهذِهِ الأمَةِ وَهُمْ يَضْرِبُونَهَا وَيَقُولُونَ : زَنَيْتِ سَرَقْتِ، فقلتُ : اَللهم لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهَا، فَقُلْتَ : اَللهم اجْعَلْنِي مِثْلَهَا ؟! قَالَ : إنَّ ذلك الرَّجُل كَانَ جَبَّاراً، فَقُلْتُ : اَللهم لا تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، وَإنَّ هذِهِ يَقُولُونَ : زَنَيْتِ، وَلَمْ تَزْنِ وَسَرقْتِ، وَلَمْ تَسْرِقْ، فَقُلْتُ : اَللهم اجْعَلْنِي مِثْلَهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/২৬৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (নবজাত শিশুদের মধ্যে) দোলনায় তিনজনই মাত্র কথা বলেছে; মারয়্যামের পুত্র ঈসা, আর (বনী ইস্রাঈলের) জুরাইজের (পবিত্রতার সাক্ষী) শিশু। জুরাইজ ইবাদতগুযার মানুষ ছিল এবং সে একটি উপাসনালয় (আশ্রম) বানিয়েছিল। একদা সে সেখানে নামায পড়ছিল। এমন সময় তার মা তার নিকট এসে তাকে ডাকলে সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (দুটিই গুরুত্বপূর্ণ; কোনটিকে প্রাধান্য দিই, তার সুমতি দাও)।’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। আর তার মা ফিরে গেল। পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তার পরবর্তী দিনে সে নামাযে ব্যস্ত থাকা অবস্থায় আবার তার মা এসে ডাক দিল, ‘জুরাইজ!’ সে (মনে মনে) বলল, ‘হে প্রভু! আমার মা ও আমার নামায (এখন কী করি?)’ সুতরাং সে নামাযে মশগুল থাকল। তখন (তিন তিন দিন সাড়া না পেয়ে তার মা তাকে বদদো‘আ দিয়ে) বলল, ‘হে আল্লাহ! বেশ্যাদের মুখ না দেখা পর্যন্ত তুমি ওর মরণ দিও না।’
বনী ইস্রাঈল জুরাইজ ও তার ইবাদতের কথা চর্চা করতে লাগল। এক বেশ্যা মহিলা ছিল, যার দৃষ্টান্তমূলক রূপ-সৌন্দর্য ছিল। সে বলল, ‘তোমরা চাইলে আমি ওকে ফিতনায় ফেলতে পারি।’ সুতরাং সে নিজেকে তার কাছে পেশ করল। কিন্তু জুরাইজ তার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করল না। পরিশেষে সে এক রাখালের কাছে এল, যে জুরাইজের আশ্রমে আশ্রয় নিত। সে দেহ সমর্পণ করলে রাখাল তার সাথে ব্যভিচার করল এবং বেশ্যা তাতে গর্ভবতী হয়ে গেল। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ঠ করল, তখন (লোকেদের জিজ্ঞাসার উত্তরে) বলল, ‘এটি জুরাইজের সন্তান।’ সুতরাং লোকেরা জুরাইজের কাছে এসে তাকে আশ্রম হতে বেরিয়ে আসতে বলল। (সে বেরিয়ে এলে) তারা তার আশ্রম ভেঙ্গে দিল এবং তাকে মারতে লাগল। জুরাইজ বলল, ‘ কী ব্যাপার তোমাদের? (এ শাস্তি কিসের?)’ লোকেরা বলল, ‘তুমি এই বেশ্যার সাথে ব্যভিচার করেছ এবং তার ফলে সে সন্তান জন্ম দিয়েছে।’ সে বলল, ‘সন্তানটি কোথায়?’ অতঃপর লোকেরা শিশুটিকে নিয়ে এলে সে বলল, ‘আমাকে নামায পড়তে দাও।’ সুতরাং সে নামায পড়ে শিশুটির কাছে এসে তার পেটে খোঁচা মেরে জিজ্ঞাসা করল, ‘ওহে শিশু! তোমার পিতা কে?’ সে জবাব দিল, ‘অমুক রাখাল।’ অতএব লোকেরা (তাদের ভুল বুঝে এবং এই অলৌকিক ঘটনা দেখে) জুরাইজের কাছে এসে তাকে চুমা দিতে ও স্পর্শ করতে লাগল। তারা বলল, ‘আমরা তোমার আশ্রমকে স্বর্ণ দিয়ে বানিয়ে দেব।’ সে বলল, ‘না, মাটি দিয়েই তৈরী করে দাও, যেমন পূর্বে ছিল।’ সুতরাং তারা তাই করল। (তৃতীয় শিশুর ঘটনা হচ্ছে বনী ইস্রাঈলের) এক শিশু তার মায়ের দুধ পান করছিল। এমন সময় তার পাশ দিয়ে উৎকৃষ্ট সওয়ারীতে আরোহী এক সুদর্শন পুরুষ চলে গেল। তার মা দো‘আ করে বলল, ‘হে আল্লাহ! আমার ছেলেটিকে ওর মত করো।’ শিশুটি তখনি মায়ের দুধ ছেড়ে দিয়ে সেই আরোহীর দিকে ফিরে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ আমাকে ওর মত করো না।’ তারপর মায়ের দুধের দিকে ফিরে দুধ চুষতে লাগল। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের তর্জনী আঙ্গুলকে নিজ মুখে চুষে শিশুটির দুধ পান দেখাতে লাগলেন। আমি যেন তা এখনো দেখতে পাচ্ছি। পুনরায় (তাদের) পাশ দিয়ে একটি দাসীকে লোকেরা মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা বলছিল, ‘তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস!’ আর দাসীটি বলছিল, ‘হাসবিয়াল্লাহু অনি‘মাল অকীল।’ (আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট ও তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।) তা দেখে মহিলাটি দো‘আ করল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না।’ ছেলেটি সাথে সাথে মায়ের দুধ ছেড়ে দাসীটির দিকে তাকিয়ে বলল, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ অতঃপর মা-বেটায় কথোপকথন করল। মা বলল, ‘একটি সুন্দর আকৃতির লোক পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো। তখন তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আবার ওরা ঐ দাসীকে নিয়ে পার হলে আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার ছেলেকে ওর মত করো না। কিন্তু তুমি বললে, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো! (এর কারণ কী?)’ শিশুটি বলল, ‘(তুমি বাহির দেখে বলেছ, আর আমি ভিতর দেখে বলেছি।) ঐ লোকটি স্বৈরাচারী, তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো না। আর ঐ দাসীটির জন্য ওরা বলছে, তুই ব্যভিচার করেছিস, চুরি করেছিস, অথচ ও এ সব কিছুই করেনি। তাই আমি বললাম, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ওর মত করো।’ (বুখারী)
33- بَابُ مُلَاطَفَةِ الْيَتِيْمِ وَالْبَنَاتِ وَسَائِرِ الضَّعْفَةِ وَالْمَسَاكِيْنَ وَالتَّوَاضُعِ مَعَهُمْ وَخَفْضِ الْجَنَاحِ لَهُمْ
পরিচ্ছেদ - ৩৩ : অনাথ-এতীম, কন্যা-সন্তান ও সমস্ত দুর্বল ও দরিদ্রের সঙ্গে নম্রতা, তাদের প্রতি দয়া ও তাদের সঙ্গে বিনম্র ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “মু’মিনদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (সূরা হিজর ৮৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ تُرِيدُ زِينَةَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]
অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না এবং ভিক্ষুককে ধমক দিয়ো না।” (সূরা যুহা ৯-১০ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ أَرَءَيۡتَ ٱلَّذِي يُكَذِّبُ بِٱلدِّينِ ١ فَذَٰلِكَ ٱلَّذِي يَدُعُّ ٱلۡيَتِيمَ ٢ وَلَا يَحُضُّ عَلَىٰ طَعَامِ ٱلۡمِسۡكِينِ ٣ ﴾ [الماعون: ١، ٣]
অর্থাৎ “তুমি কি দেখেছ তাকে, যে (দ্বীন বা) কর্মফলকে মিথ্যা মনে করে থাকে? সে তো ঐ ব্যক্তি, যে পিতৃহীনকে রূঢ়ভাবে তাড়িয়ে দেয়। এবং সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদানে উৎসাহ প্রদান করে না।” (সূরা মাউন ১-৩ আয়াত)
1/265. وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ : كُنَّا مَعَ النَّبيِّ ﷺ سِتَّةَ نَفَرٍ، فَقَالَ المُشْرِكُونَ لِلنَّبيِّ ﷺ : اُطْرُدْ هَؤُلاَءِ لاَ يَجْتَرِئُونَ عَلَيْنَا، وَكُنْتُ أنَا وَابْنُ مَسْعُودٍ وَرَجُلٌ مِنْ هُذَيْلٍ وَبِلالٌ وَرَجُلاَنِ لَسْتُ أُسَمِّيهِمَا، فَوَقَعَ في نَفسِ رَسُولِ اللهِ ﷺ مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقَعَ فَحَدَّثَ نَفسَهُ، فَأنْزَلَ اللهُ تَعَالَى : ﴿ وَلَا تَطۡرُدِ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ ﴾ [الانعام: ٥٢] رواه مسلم
১/২৬৫। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা ছ’জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে ছিলাম। ইতোমধ্যে মুশরিকরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, ‘এদেরকে (আপনার মজলিস থেকে) তাড়িয়ে দিন, যেন এরা আমাদের ব্যাপারে দুঃসাহসী হতে না পারে।’ (সা‘দ বলেন,) আমি, ইবনে মাসউদ, হুযাইল গোত্রের এক ব্যক্তি, বিলাল এবং আরও দু’জন ছিলেন, যাদের নাম আমি করছি না। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অন্তরে আল্লাহ যা ইচ্ছা করলেন তাই ঘটল। সুতরাং তিনি মনে মনে (তাঁদেরকে তাড়ানোর) কথা ভাবলেন। যার জন্য আল্লাহ এই আয়াত অবতীর্ণ করলেন, ‘‘যারা তাদের প্রতিপালককে প্রাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ডাকে, তাদেরকে তুমি বিতাড়িত করো না।’’ (সূরা আন‘আম ৫২ আয়াত, মুসলিম)
2/266. عَنْ أَبِي هُبَيرَة عَائِذِ بنِ عَمرٍو المُزَنِي وَهُوَ مِنْ أهْلِ بَيعَةِ الرِّضْوَانِ رضي الله عنه : أنَّ أبَا سُفْيَانَ أتَى عَلَى سَلْمَانَ وَصُهَيْبٍ وَبلاَلٍ في نَفَرٍ، فَقَالُوا : مَا أخَذَتْ سُيُوفُ اللهِ مِنْ عَدُوِّ الله مَأْخَذَهَا، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رضي الله عنه: أتَقُولُون هَذَا لِشَيْخِ قُرَيْشٍ وَسَيدِهِمْ ؟ فَأتَى النَّبيَّ ﷺ، فَأخْبَرهُ، فَقَالَ: «يَا أَبَا بَكْرٍ، لَعلَّكَ أغْضَبتَهُمْ؟ لَئِنْ كُنْتَ أغْضَبْتَهُمْ لَقَدْ أغْضَبتَ رَبَّكَ». فَأَتَاهُمْ فَقَالَ : يَا إخْوَتَاهُ، أغْضَبْتُكُمْ؟ قَالُوا : لاَ، يَغْفِرُ اللهُ لَكَ يَا أُخَيَّ . رواه مسلم
২/২৬৬। বায়আতে রিযওয়ানে অংশগ্রহণকারীদের একজন (সাহাবী) আবূ হুবাইরাহ ‘আইয ইবনে ‘আমর মুযানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, (হুদাইবিয়ার সন্ধি ও বায়‘আতের পর) আবূ সুফিয়ান (কাফের অবস্থায়) সালমান, সুহাইব ও বিলালের নিকট এল। সেখানে আরো কিছু সাহাবা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা (আবূ সুফিয়ানের প্রতি ইঙ্গিত করে) বললেন, ‘আল্লাহর তরবারিগুলো আল্লাহর শত্রুর হক আদায় করেনি।’ (এ কথা শুনে) আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘তোমরা এ কথা কুরাইশের বয়োবৃদ্ধ ও তাদের নেতার সম্পর্কে বলছ?’ অতঃপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং (এর) সংবাদ দিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবু বকর! সম্ভবতঃ তুমি তাদেরকে (অর্থাৎ সালমান, সুহাইব ও বেলালকে) অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে থাক, তাহলে তুমি আসলে তোমার প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করেছ।’’ সুতরাং আবূ বকর তাঁদের নিকট এসে বললেন, ‘ভাইয়েরা! আমি কি তোমাদেরকে অসন্তুষ্ট করেছি?’ তাঁরা বললেন, ‘না। আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুক প্রিয় ভাইজান!’ (মুসলিম)
3/267. وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أَنَا وَكَافلُ اليَتِيمِ في الجَنَّةِ هَكَذا» وَأَشارَ بالسَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا. رواه البخاري
৩/২৬৭। সাহ্ল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি ও এতীমের তত্ত্বাবধানকারী জান্নাতে এভাবে (পাশাপাশি) থাকব।’’ এ কথা বলার সময় তিনি (তাঁর) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল মিলিয়ে উভয়ের মাঝে একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন। (বুখারী)
4/268. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كَافلُ اليَتيِم لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ في الجَنَّةِ»وَأَشَارَ الرَّاوِي وَهُوَ مَالِكُ بْنُ أنَسٍ بالسَّبَّابَةِ وَالوُسْطَى . رواه مسلم
৪/২৬৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিজের অথবা অপরের অনাথ (এতীমের) তত্ত্বাবধায়ক; আমি এবং সে জান্নাতে এ দু’টির মত (পাশাপাশি) বাস করব।’’ বর্ণনাকারী আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের দিকে ইঙ্গিত করলেন। (মুসলিম)
5/269. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَيْسَ المِسْكينُ الَّذِي تَرُدُّهُ التَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلا اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ إِنَّمَا المِسكِينُ الَّذِي يَتَعَفَّفُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ: «لَيْسَ المِسكِينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ واللُّقْمَتانِ، وَالتَّمْرَةُ والتَّمْرَتَانِ، وَلَكِنَّ المِسْكِينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غنىً يُغْنِيه، وَلاَ يُفْطَنُ بِهِ فَيُتَصَدَّقَ عَلَيهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْأَلُ النَّاسَ».
৫/২৬৯। উক্ত সাহাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মিসকীন সে নয়, যাকে একটি খেজুর এবং দু’টি খেজুর এবং এক গ্রাস বা’ দুগ্রাস (অন্ন) ফিরিয়ে দেয়। বরং মিসকীন তো ঐ ব্যক্তি, যে (অভাব থাকা সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে দূরে থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মিসকীন সে নয়, যে এক অথবা দু টুকরা খেজুর কিংবা এক অথবা দু মুঠো খানা পেয়ে বিদায় হয়ে যায়। কিন্তু মিসকীন হল সেই ব্যক্তি, যে প্রয়োজন মোতাবেক যথেষ্ট রুযীর মালিক নয় এবং সাধারণতঃ লোকে তাকে অভাবী বলে চিনতেও পারে না; যাতে তাকে দান করা যায়। আর সে নিজে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’ (অর্থাৎ পেটে ক্ষুধা রেখে মুখে লাজ করে।)
6/270. وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «السَّاعِي عَلَى الأَرْمَلَةِ وَالمِسْكِينِ، كَالمُجَاهِدِ في سَبيلِ اللهِ»وَأحسَبُهُ قَالَ: «وَكالقَائِمِ الَّذِي لاَ يَفْتُرُ، وَكَالصَّائِمِ الَّذِي لاَ يُفْطِرُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/২৭০। উক্ত সাহাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করায় চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন,) আমি ধারণা করছি যে, তিনি এ কথাও বললেন, ‘‘সে ঐ নফল নামায আদায়কারীর মত যে ক্লান্ত হয় না এবং ঐ রোযা পালনকারীর মত যে রোযা ছাড়ে না।’’ (বুখারী)
7/271. وَعَنهُ، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «شَرُّ الطَّعَامِ طَعَامُ الوَلِيمَةِ، يُمْنَعُهَا مَنْ يَأتِيهَا، وَيُدْعَى إِلَيْهَا مَنْ يَأْبَاهَا، وَمَنْ لَمْ يُجِبِ الدَّعْوَةَ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُولَهُ». رواه مسلم
وَفي رِوَايَةٍ في الصَّحِيحَينِ : عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ مِن قَولِهِ : «بئْسَ الطَّعَامُ طَعَامُ الوَلِيمَةِ يُدْعَى إِلَيْهَا الأغْنِيَاءُ ويُتْرَكُ الفُقَراءُ».
৭/২৭১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাবার ঐ অলীমার খাবার, যাতে যে (স্বয়ং) আসে তাকে (অর্থাৎ মিসকীনকে) বাধা দেওয়া হয় এবং যাকে আহ্বান করা হয় সে (অর্থাৎ ধনী) আসতে অস্বীকার করে। আর যে ব্যক্তি দাওয়াত গ্রহণ করল না, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নাফরমানী করল।’’ (মুসলিম)
বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘অলীমার খাবার নিকৃষ্টতম খাবার, যাতে বিত্তশালীদেরকে ডাকা হয় এবং দরিদ্রদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
8/272. عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ عَالَ جَارِيَتَيْن حَتَّى تَبْلُغَا جَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ أنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ»وضَمَّ أصَابِعَهُ . رواه مسلم
৮/২৭২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দু’টি কন্যার লালন-পালন তাদের সাবালিকা হওয়া অবধি করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সে এ দু’টি আঙ্গুলের মত পাশাপাশি আসব।’’ অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মিলিত করে (দেখালেন)। (মুসলিম)
9/273. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأةٌ وَمَعَهَا ابنَتَانِ لَهَا تَسْأَلُ، فَلَمْ تَجِدْ عِنْدِي شَيئاً غَيْرَ تَمْرَةٍ وَاحدَةٍ، فَأعْطَيْتُهَا إيَّاهَا فَقَسَمَتْهَا بَيْنَ ابْنَتَيْها ولَمْ تَأكُلْ مِنْهَا، ثُمَّ قَامَتْ فَخَرجَتْ، فَدَخَلَ النَّبيُّ ﷺ عَلَينَا، فَأخْبَرْتُهُ فَقَالَ: «مَنِ ابْتُليَ مِنْ هذِهِ البَنَاتِ بِشَيءٍ فَأحْسَنَ إلَيْهِنَّ، كُنَّ لَهُ سِتراً مِنَ النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/২৭৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা তার দু’টি মেয়ে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট ভিক্ষা চাইল। অতঃপর সে আমার নিকট একটি খুরমা ব্যতীত কিছুই পেল না। সুতরাং আমি তা তাকে দিয়ে দিলাম। মহিলাটি তার দু’মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল এবং সে নিজে তা থেকে কিছুই খেল না, অতঃপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এলেন। আমি তাঁকে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, ‘‘যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর যদি সে তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এ কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে অন্তরাল হবে।’’ (বুখারী, মুসলিম)
10/274. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : جَاءَتني مِسْكينةٌ تَحْمِلُ ابْنَتَيْنِ لَهَا، فَأطْعَمْتُها ثَلاَثَ تَمرَات، فَأعْطَتْ كُلَّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا تَمْرَةً وَرَفَعتْ إِلَى فِيها تَمْرَةً لِتَأكُلها، فَاسْتَطعَمَتهَا ابْنَتَاهَا، فَشَقَّتِ التَّمْرَةَ الَّتي كَانَتْ تُريدُ أنْ تَأكُلَهَا بَيْنَهُمَا، فَأعجَبَنِي شَأنُهَا، فَذَكَرْتُ الَّذِي صَنَعَتْ لِرَسُولِ الله ﷺ، فَقَالَ: «إنَّ الله قَدْ أوْجَبَ لَهَا بِهَا الجَنَّةَ، أَوْ أعتَقَهَا بِهَا مِنَ النَّارِ». رواه مسلم
১০/২৭৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মিসকীন মহিলা তার দু’টি কন্যাকে (কোলে) বহন করে আমার কাছে এল। আমি তাকে তিনটি খুরমা দিলাম। অতঃপর সে তার কন্যা দু’টিকে একটি একটি করে খুরমা দিল এবং সে নিজে খাবার জন্য একটি খুরমা মুখ-পর্যন্ত তুলল। কিন্তু তার কন্যা দু’টি সেটিও খেতে চাইল। সুতরাং মহিলাটি যে খেজুরটি নিজে খেতে ইচ্ছা করেছিল, সেটিকে দু’ভাগে ভাগ করে তাদের মধ্যে বণ্টন করে দিল। সুতরাং তার (এ) অবস্থা আমাকে মুগ্ধ করল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট মহিলাটির ঘটনা বর্ণনা করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য তার এ কাজের বিনিময়ে জান্নাত ওয়াজেব করে দিয়েছেন অথবা তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন।’’ (মুসলিম)
11/275. وَعَنْ أَبِي شُرَيحٍ خُوَيْلِدِ بنِ عَمرٍو الخُزَاعِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ النَّبيُّ ﷺ: «اَللهم إنِّي أُحَرِّجُ حَقَّ الضَّعِيفَينِ : اليَتِيم وَالمَرْأةِ».حديث حسن رواه النسائي بإسناد جيد
১১/২৭৫। আবূ শুরাইহ্ খুওয়াইলিদ ইবনে ‘আমর খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমি লোকদেরকে দুই শ্রেণীর দুর্বল মানুষের অধিকার সম্বন্ধে পাপাচারিতার ভীতিপ্রদর্শন করছি; এতীম ও নারী।’’ (নাসায়ী, উত্তম সূত্রে)
12/276. وَعَن مُصعَبِ بنِ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: رَأى سَعدٌ أنَّ لَهُ فَضْلاً عَلَى مَنْ دُونَهُ، فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «هَلْ تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ إلاَّ بِضُعَفَائِكُمْ». رواه البخاري هكذا مُرسلاً، فَإِنَّ مُصعَبَ بنَ سَعدَ تَابِعِيٌّ، وَرَوَاهُ الحَافِظ أَبُو بَكرٍ البَرقَاني في صَحِيحِهِ مُتَّصِلاً عَن مُصعَبٍ، عَنْ أَبِيهِ رضي الله عنه.
১২/২৭৬। মুসআব ইবনে সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (তাঁর পিতা) সা‘দ ধারণা করলেন যে, তার চেয়ে নিম্নশ্রেণীর লোকের উপর তাঁর মর্যাদা রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমাদেরকে দুর্বলদের কারণেই সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়। (বুখারী মুরসাল সূত্রে, যেহেতু মুসআব ইবন সা‘দ তাবেঈ। তবে হাফেয আবূ বকর বারক্বানী তাঁর সহীহ গ্রন্থে ‘মুস‘আব নিজ পিতা হতে’ মুত্তাসিল সূত্রে বর্ণনা করেছেন।)
13/277. وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ عُوَيمِرٍ رضي الله عنه، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «ابْغُونِي الضُّعَفَاءَ، فَإنَّمَا تُنْصَرُونَ وتُرْزَقُونَ، بِضُعَفَائِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسناد جيد
১৩/২৭৭। আবূ দারদা উআইমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘আমার জন্য তোমরা দুর্বলদেরকে খুঁজে আনো, কেননা তোমাদের দুর্বলদের কারণেই তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় এবং রুযী দেওয়া হয়।’’ (আবূ দাউদ, উত্তম সূত্রে)
34- بَابُ الوَصِيَّةِ بِالنِّسَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৩৪ : স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার অসিয়ত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [النساء: ١٩]
অর্থাৎ “তোমরা তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর।” (সূরা নিসা ১৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَن تَسۡتَطِيعُوٓاْ أَن تَعۡدِلُواْ بَيۡنَ ٱلنِّسَآءِ وَلَوۡ حَرَصۡتُمۡۖ فَلَا تَمِيلُواْ كُلَّ ٱلۡمَيۡلِ فَتَذَرُوهَا كَٱلۡمُعَلَّقَةِۚ وَإِن تُصۡلِحُواْ وَتَتَّقُواْ فَإِنَّ ٱللَّهَ كَانَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١٢٩ ﴾ [النساء: ١٢٩]
অর্থাৎ “তোমরা যতই সাগ্রহে চেষ্টা কর না কেন, স্ত্রীদের প্রতি সমান ভালোবাসা তোমরা কখনই রাখতে পারবে না। তবে তোমরা কোন এক জনের দিকে সম্পূর্ণভাবে ঝুঁকে পড়ো না এবং অপরকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছেড়ে দিও না। আর যদি তোমরা নিজেদের সংশোধন কর ও সংযমী হও, তবে নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা নিসা ১২৯ আয়াত)
1/278. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «اسْتَوْصُوا بالنِّسَاءِ خَيْراً ؛ فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلعٍ، وَإنَّ أعْوَجَ مَا في الضِّلَعِ أعْلاهُ، فَإنْ ذَهَبتَ تُقيمُهُ كَسَرْتَهُ، وَإنْ تَرَكْتَهُ، لَمْ يَزَلْ أعْوجَ، فَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية في الصحيحين: «المَرأةُ كالضِّلَعِ إنْ أقَمْتَهَا كَسَرْتَهَا، وَإن اسْتَمتَعْتَ بِهَا، اسْتَمتَعْتَ وفِيهَا عوَجٌ».
وفي رواية لمسلم: «إنَّ المَرأةَ خُلِقَت مِنْ ضِلَع، لَنْ تَسْتَقِيمَ لَكَ عَلَى طَريقة، فإن اسْتَمْتَعْتَ بِهَا اسْتَمْتَعْتَ بِهَا وَفيهَا عوَجٌ، وإنْ ذَهَبْتَ تُقِيمُهَا كَسَرْتَها، وَكَسْرُهَا طَلاَقُهَا».
১/২৭৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা স্ত্রীদের জন্য মঙ্গলকামী হও। কারণ নারীকে পাঁজরের (বাঁকা) হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর পাঁজরের হাড়ের সবচেয়ে বেশী বাঁকা হল তার উপরের অংশ। যদি তুমি এটাকে সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তাকে ছেড়ে দাও তাহলে তো বাঁকাই থাকবে। তাই তোমরা নারীদের জন্য মঙ্গলকামী হও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারী ও মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলা পাঁজরের হাড়ের মত। যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও, তবে তুমি তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর যদি তুমি তার দ্বারা উপকৃত হতে চাও, তাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে।’’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহিলাকে পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সে কখনই একভাবে তোমার জন্য সোজা থাকবে না। এতএব তুমি যদি তার থেকে উপকৃত হতে চাও, তাহলে তার এ বাঁকা অবস্থাতেই হতে হবে। আর যদি তুমি তা সোজা করতে চাও, তাহলে তা ভেঙ্গে ফেলবে। আর তাকে ভেঙ্গে ফেলা হল তালাক দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/279. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ زَمْعَةَ رضي الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيَّ ﷺ يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَهَا، فَقَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: «﴿ إِذِ ٱنۢبَعَثَ أَشۡقَىٰهَا ١٢ ﴾ [الشمس: ١٢] انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزيزٌ، عَارِمٌ مَنيعٌ في رَهْطِهِ»، ثُمَّ ذَكَرَ النِّسَاءَ، فَوعَظَ فِيهنَّ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أحَدُكُمْ فَيَجْلِدُ امْرَأتَهُ جَلْدَ العَبْدِ فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَومِهِ».ثُمَّ وَعَظَهُمْ في ضَحِكِهمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ ؟!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/২৭৯। আব্দুল্লাহ ইবনে যামআহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে খুৎবাহ দিতে শুনলেন। তিনি (খুৎবার মাধ্যমে) (সালেহ নবীর) উটনী এবং ঐ ব্যক্তির কথা আলোচনা করলেন, যে ঐ উঁটনীটিকে কেটে ফেলেছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যখন তাদের মধ্যকার সর্বাধিক হতভাগ্য ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠল। (সূরা শাম্স ১২ আয়াত) (অর্থাৎ) উঁটনীটিকে মেরে ফেলার জন্য নিজ বংশের মধ্যে এক দুরন্ত চরিত্রহীন প্রভাবশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠেছিল।’’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদের কথা আলোচনা করলেন এবং তাদের ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কেউ তার স্ত্রীকে দাসদের মত প্রহার করে। অতঃপর সম্ভবত দিনের শেষে তার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। (এরূপ উচিত নয়।)’’ পুনরায় তিনি তাদেরকে বাতকর্মের ব্যাপারে হাসতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ এমন কাজে কেন হাসে, যে কাজ সে নিজেও করে?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/280. وعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُول الله ﷺ: «لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقاً رَضِيَ مِنْهَا آخَرَ»، أَوْ قَالَ: «غَيْرَهُ»رواه مسلم
৩/২৮০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ঈমানদার পুরুষ যেন কোন ঈমানদার নারী (স্ত্রীকে) ঘৃণা না করে। যদি সে তার একটি আচরণে অসন্তুষ্ট হয়, তবে অন্য আচরণে সন্তুষ্ট হবে।’’ (মুসলিম)
4/281. وَعَن عَمرِو بنِ الأحوَصِ الجُشَمِي رضي الله عنه : أنَّهُ سَمِعَ النَّبيّ ﷺ في حَجَّةِ الوَدَاعِ يَقُولُ بَعْدَ أنْ حَمِدَ الله تَعَالَى، وَأثْنَى عَلَيهِ وَذَكَّرَ وَوَعظَ، ثُمَّ قَالَ: «ألا وَاسْتَوصُوا بالنِّساءِ خَيْراً، فَإِنَّمَا هُنَّ عَوَانٍ عِنْدَكُمْ لَيْسَ تَمْلِكُونَ مِنْهُنَّ شَيْئاً غَيْرَ ذلِكَ إلاَّ أنْ يَأتِينَ بِفَاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ، فَإنْ فَعَلْنَ فَاهْجُرُوهُنَّ في المَضَاجِع، وَاضْرِبُوهُنَّ ضَرباً غَيْرَ مُبَرِّحٍ، فإنْ أطَعْنَكُمْ فَلا تَبْغُوا عَلَيهنَّ سَبيلاً ؛ ألاَ إنَّ لَكُمْ عَلَى نِسَائِكُمْ حَقّاً، وَلِنِسَائِكُمْ عَلَيْكُمْ حَقّاً ؛ فَحَقُّكُمْ عَلَيهِنَّ أنْ لا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ مَنْ تَكْرَهُونَ، وَلا يَأْذَنَّ في بُيُوتِكُمْ لِمَنْ تَكْرَهُونَ ؛ ألاَ وَحَقُّهُنَّ عَلَيْكُمْ أنْ تُحْسِنُوا إِلَيْهِنَّ في كِسْوَتِهنَّ وَطَعَامِهنَّ»رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
৪/২৮১। ‘আমর ইবনে আহ্ওয়াস জুশামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, তিনি সর্বপ্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ দান ও নসীহত করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘শোনো! তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার কর। কেননা, তারা তোমাদের নিকট কয়েদী। তোমরা তাদের নিকটে এ (শয্যা-সঙ্গিনী হওয়া, নিজের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং তোমাদের মালের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি) ছাড়া অন্য কোনও জিনিসের অধিকার রাখ না। হ্যাঁ, সে যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতার কাজ করে (তাহলে তোমরা তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার অধিকার রাখ)। সুতরাং তারা যদি এমন কাজ করে, তবে তাদেরকে বিছানায় আলাদা ছেড়ে দাও এবং তাদেরকে মার। কিন্তু সে মার যেন যন্ত্রণাদায়ক না হয়। অতঃপর তারা যদি তোমাদের অনুগত হয়ে যায়, তবে তাদের জন্য অন্য কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। মনে রেখ, তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের অধিকার রয়েছে, অনুরূপ তোমাদের উপর তোমাদের স্ত্রীদের অধিকার রয়েছে। তোমাদের অধিকার হল, তারা যেন তোমাদের বিছানায় ঐ সব লোককে আসতে না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর এবং তারা যেন ঐ সব লোককে তোমাদের বাড়ীতে প্রবেশ করার অনুমতি না দেয়, যাদেরকে তোমরা অপছন্দ কর। আর শোনো! তোমাদের উপর তাদের অধিকার এই যে, তাদেরকে ভালোরূপে খেতে-পরতে দেবে।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
* কয়েদী অর্থাৎ বন্দিনী। স্বামীর হুকুম পালনের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীকে বন্দিনীর সাথে তুলনা করেছেন।
* যন্ত্রণাদায়ক না হয়ঃ অর্থাৎ তাতে কেটে-ফুটে না যায় এবং কঠিন ব্যথা না হয়।
* অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো নাঃ অর্থাৎ এমন পথ অনুসন্ধান করো না, যাতে তাদেরকে নাজেহাল করে কষ্ট দাও। (অথবা তালাক ইত্যাদি দেওয়ার কথা ভেবো না।)
5/282. وَعَن مُعَاوِيَةَ بنِ حَيدَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ الله، مَا حَقُّ زَوجَةِ أَحَدِنَا عَلَيهِ ؟ قَالَ: «أنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طعِمْتَ، وَتَكْسُوهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، وَلاَ تَضْرِبِ الوَجْهَ، وَلا تُقَبِّحْ، وَلا تَهْجُرْ إلاَّ في البَيْتِ».حديثٌ حسنٌ رواه أَبُو داود وَقالَ : معنى «لا تُقَبِّحْ»أي : لا تقل : قبحكِ الله .
৫/২৮২। মুআবিয়াহ ইবনে হাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কারো স্ত্রীর অধিকার স্বামীর উপর কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি খেলে তাকে খাওয়াবে এবং তুমি পরলে তাকে পরাবে। (তার) চেহারায় মারবে না, তাকে ‘কুৎসিত হ’ বলবে না এবং তার থেকে পৃথক থাকলে বাড়ীর ভিতরেই থাকবে।’’ (অর্থাৎ অবাধ্য স্ত্রীকে বাধ্য করার জন্য বিছানা পৃথক করতে পারা যাবে, কিন্তু রুম পৃথক করা যাবে না।) (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
* ‘কুৎসিত হ’ বলবে নাঃ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তোমাকে কুৎসিত করুক’ বলে অভিশাপ দেবে না।
6/283. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أكْمَلُ المُؤمِنِينَ إيمَاناً أحْسَنُهُمْ خُلُقاً، وخِيَارُكُمْ خِيَارُكُم لِنِسَائِهِمْ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
৬/২৮৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সবার চেয়ে পূর্ণ মু’মিন ঐ ব্যক্তি যে চরিত্রে সবার চেয়ে সুন্দর, আর তাদের মধ্যে সর্বোত্তম ঐ ব্যক্তি, যে নিজের স্ত্রীর জন্য সর্বোত্তম।’’ (তিরমিযী)
7/284. وَعَن إِيَاسِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي ذِبَابٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تَضْرِبُوا إمَاء الله» فجاء عُمَرُ رضي الله عنه إِلَى رسولِ الله ﷺ، فَقَالَ : ذَئِرْنَ النِّسَاءُ عَلَى أزْوَاجِهِنَّ، فَرَخَّصَ في ضَرْبِهِنَّ، فَأطَافَ بآلِ رَسُولِ اللهِ ﷺ نِسَاءٌ كَثيرٌ يَشْكُونَ أزْواجَهُنَّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَقَدْ أطَافَ بِآلِ بَيتِ مُحَمَّدٍ نِسَاءٌ كثيرٌ يَشْكُونَ أزْوَاجَهُنَّ لَيْسَ أولَئكَ بخيَارِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৭/২৮৪। ইয়াস ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে প্রহার করবে না।’’ পরবর্তীতে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘মহিলারা তাদের স্বামীদের উপর বড় দুঃসাহসিনী হয়ে গেছে।’ সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রহার করার অনুমতি দিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পরিবারের নিকট বহু মহিলা এসে নিজ নিজ স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আরম্ভ করল। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের নিকট প্রচুর মহিলাদের সমাগম, যারা তাদের স্বামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। (জেনে রাখ, মারকুটে) ঐ (স্বামী)রা তোমাদের মধ্যে ভালো মানুষ নয়।’’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
8/285. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «الدُّنْيَا مَتَاعٌ، وَخَيرُ مَتَاعِهَا المَرْأَةُ الصَّالِحَةُ». رواه مسلم
৮/২৮৫। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পৃথিবী এক উপভোগ্য সামগ্রী এবং তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সামগ্রী হচ্ছে পুণ্যময়ী নারী।’’ (মুসলিম)
35- بَابُ حَقِّ الزَّوْجِ عَلَى الْمَرْأَةِ
পরিচ্ছেদ - ৩৫ : স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ ﴾ [النساء: ٣٤]
অর্থাৎ “পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লার হিফাযতে (আদেশ ও তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে।” (সূরা নিসা ৩৪ আয়াত)
হাদীসসমূহ:
১/২৮৬। এ প্রসঙ্গে বহু হাদীস বিদ্যমান রয়েছে; তার মধ্যে পূর্ববর্তী পরিচ্ছেদে উল্লিখিত ‘আমর ইবনে আহওয়াস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর (২৮১নং) হাদীসটি অন্যতম।
2/287. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امرَأتَهُ إِلَى فرَاشِهِ فَلَمْ تَأتِهِ، فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا، لَعَنَتْهَا المَلائِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ لَهُمَا: «إِذَا بَاتَتِ المَرأةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبحَ».
وَفي رِوَايَةٍ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «والَّذِي نَفْسِي بيَدِهِ مَا مِنْ رَجُلٍ يَدْعُو امْرَأتَهُ إِلَى فِرَاشهِ فَتَأبَى عَلَيهِ إلاَّ كَانَ الَّذِي في السَّمَاء سَاخطاً عَلَيْهَا حَتَّى يَرْضَى عَنها».
২/২৮৭। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় ডাকে এবং সে না আসে, অতঃপর সে (স্বামী) তার প্রতি রাগান্বিত অবস্থায় রাত কাটায়, তাহলে ফিরিশ্তাগণ তাকে সকাল অবধি অভিসম্পাত করতে থাকেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘যখন স্ত্রী নিজ স্বামীর বিছানা ত্যাগ করে (অন্যত্র) রাত্রিযাপন করে, তখন ফিরিশ্তাবর্গ সকাল পর্যন্ত তাকে অভিশাপ দিতে থাকেন।’’
আর এক বর্ণনায় আছে যে, ‘‘সেই আল্লাহর কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ বিছানার দিকে আহ্বান করার পর সে আসতে অস্বীকার করলে যিনি আকাশে আছেন তিনি (আল্লাহ) তার প্রতি অসন্তুষ্ট থাকেন, যে পর্যন্ত না স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায়।’’
3/288. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أيضاً : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأةٍ أنْ تَصُومَ وزَوْجُهَا شَاهدٌ إلاَّ بإذْنِهِ، وَلاَ تَأذَنَ في بَيْتِهِ إلاَّ بِإذنِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وهذا لفظ البخاري
৩/২৮৮। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর জন্য নফল রোযা রাখা বৈধ নয় এবং স্বামীর সম্মতি ব্যতিরেকে তার ঘরে কাউকে প্রবেশ করার অনুমতি দেওয়াও তার জন্য বৈধ নয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর)
4/289. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ الله عنهما، عَن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «كُلُّكُم رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ: وَالأمِيرُ رَاعٍ، والرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أهْلِ بَيتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيةٌ عَلَى بَيْتِ زَوْجها وَوَلَدهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৮৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকেই অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। একজন পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামী ও সন্তানের দায়িত্বশীল, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
5/290. وَعَنْ أَبِي عَلِيِّ طَلْقِ بنِ عَلِيِّ رضي الله عنه : أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إِذَا دَعَا الرَّجُلُ زَوْجَتهُ لحَاجَتِهِ فَلْتَأتِهِ وَإنْ كَانَتْ عَلَى التَّنُور». رواه الترمذي والنسائي، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح»
৫/২৯০। আবূ আলী ত্বাল্ক ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার প্রয়োজনে আহ্বান করবে, তখন সে যেন (তৎক্ষণাৎ) তার নিকট যায়। যদিও সে উনানের কাছে (রুটি ইত্যাদি পাকানোর কাজে ব্যস্ত) থাকে।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে)
6/291. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «لَوْ كُنْتُ آمِراً أحَداً أنْ يَسْجُدَ لأحَدٍ لأمَرْتُ المَرأةَ أنْ تَسْجُدَ لزَوجِهَا». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
৬/২৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি যদি কাউকে কারো জন্য সিজদাহ করার আদেশ করতাম, তাহলে নারীকে আদেশ করতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদাহ করে।’’ (তিরমিযী হাসান সূত্রে)
7/292. وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «أَيُّمَا اِمْرأَةٍ مَاتَتْ وَزُوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الجَنَّةَ»رواه الترمذي وقال حديث حسن .
৭/২৯২। উম্মু সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, স্ত্রীর প্রতি তার স্বামী সন্তুষ্ট ও খুশি থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোক মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। হাদীসটি ইমাম তিরমিযি বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটা হাসান হাদীস।
8/293. وَعَن مُعَاذِ بنِ جَبَلٍ رضي الله عنه، عن النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «لاَ تُؤْذِي امْرَأةٌ زَوْجَهَا في الدُّنْيَا إلاَّ قَالَتْ زَوْجَتُهُ مِنَ الحُورِ العِينِ لاَ تُؤذِيهِ قَاتَلكِ اللهُ ! فَإِنَّمَا هُوَ عِنْدَكِ دَخِيلٌ يُوشِكُ أنْ يُفَارِقَكِ إِلَيْنَا». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»
৮/২৯৩। মু‘আয ইবন জাবাল কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখনই কোনো মহিলা দুনিয়াতে নিজ স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখনই তার সুনয়না হূর (জান্নাতী) স্ত্রী (অদৃশ্যভাবে) ঐ মহিলার উদ্দেশ্যে বলে, ‘আল্লাহ তোকে ধ্বংস করুন। ওকে কষ্ট দিস্ না। ও তো তোর নিকট সাময়িক মেহমান মাত্র। অচিরেই সে তোকে ছেড়ে আমাদের কাছে এসে যাবে।’’ (তিরমিযী)
9/294. وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً هِيَ أضَرُّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّساء». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/২৯৪। উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি আমার পর পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক অন্য কোন ফিতনা ছাড়লাম না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
36- بَابُ النَّفَقَةِ عَلَى الْعِيَالِ
পরিচ্ছেদ - ৩৬ : পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَعَلَى ٱلۡمَوۡلُودِ لَهُۥ رِزۡقُهُنَّ وَكِسۡوَتُهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ ﴾ [البقرة: ٢٣٣]
অর্থাৎ “জনকের কর্তব্য যথাবিধি তাদের ভরণ-পোষণ করা।” (সূরা বাক্বারাহ ২৩৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لِيُنفِقۡ ذُو سَعَةٖ مِّن سَعَتِهِۦۖ وَمَن قُدِرَ عَلَيۡهِ رِزۡقُهُۥ فَلۡيُنفِقۡ مِمَّآ ءَاتَىٰهُ ٱللَّهُۚ
অর্থাৎ “সামর্থ্যবান নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করবে এবং যার জীবনোপকরণ সীমিত সে আল্লাহ যা দান করেছেন, তা হতে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে সামর্থ্য দিয়েছেন, তার চেয়ে গুরুতর বোঝা তিনি তার উপর চাপান না।” (সূরা ত্বালাক্ব ৭ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ ﴾ [سبا: ٣٩]
অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে, তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা’ ৩৯ আয়াত)
1/295. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «دِينَارٌ أنْفَقْتَهُ في سَبيلِ اللهِ، وَدِينار أنْفَقْتَهُ في رَقَبَةٍ، وَدِينارٌ تَصَدَّقْتَ بِهِ عَلَى مِسْكِينٍ، وَدِينَارٌ أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ، أعْظَمُهَا أجْراً الَّذِي أنْفَقْتَهُ عَلَى أهْلِكَ». رواه مسلم
১/২৯৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় কর, এক দীনার ক্রীতদাস মুক্ত করার কাজে ব্যয় কর, এক দীনার কোন মিসকীনকে সদকাহ কর এবং এক দীনার তুমি পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ দীনারের বেশী নেকী রয়েছে যেটি তুমি পরিবার-পরিজনের উপর ব্যয় করবে।’’ (মুসলিম)
2/296. وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ، وَيُقَالُ لَهُ : أَبو عَبدِ الرَّحمَانِ ثَوبَانَ بنِ بُجْدُد مَوْلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ : قَالَ رَسُولِ اللهِ ﷺ: «أفْضَلُ دِينَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ : دِينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ، وَدينَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى دَابَّتِهِ في سَبيلِ الله، وَدِينارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى أصْحَابهِ في سَبيلِ اللهِ». رواه مسلم
২/২৯৬। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বাধীনকৃত গোলাম আবূ আব্দুল্লাহ মতান্তরে আবু আব্দুর রহমান সাওবান ইবনে বুজদুদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(সওয়াবের দিক দিয়ে) সর্বশ্রেষ্ঠ দীনার সেইটি, যে দীনারটি মানুষ নিজ সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করে, যে দীনারটি আল্লাহর রাস্তায় তার সওয়ারীর উপর ব্যয় করে এবং সেই দীনারটি যেটি আল্লাহর পথে তার সঙ্গীদের পিছনে খরচ করে।’’(মুসলিম)
3/297. وَعَن أمِّ سَلمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، هَلْ لِي أَجرٌ فِي بَنِي أَبي سَلَمَة أنْ أُنْفِقَ عَلَيْهِمْ، وَلَسْتُ بِتَارِكَتِهِمْ هكَذَا وَهكَذَا إنَّمَا هُمْ بَنِيّ ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، لَكِ أجْرُ مَا أنْفَقْتِ عَلَيْهِمْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/২৯৭। উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি (আমার প্রথম স্বামী) আবূ সালামাহর সন্তান-সন্ততির উপর ব্যয় করি, তাতে কি আমি নেকী পাব? আমি তো তাদেরকে এভাবে ছেড়ে দিতে পারছি না, তারা তো আমারই সন্তান।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তাদের উপর ব্যয় করার দরুন নেকী পাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/298. وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه في حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ الَّذِي قَدَّمنَاهُ في أَوَّلِ الكِتَابِ في بَابِ النِّيَةِ : أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ لَهُ: «وَإنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ إلاَّ أُجِرْتَ بِهَا حَتَّى مَا تَجْعَلُ فِيْ فِيِّ امْرَأَتِك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/২৯৮। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি তাঁর দীর্ঘ (বিগত ৬ নম্বর) হাদীসে বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যা ব্যয় করবে, তোমাকে তার বিনিময় দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে গ্রাস তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও তারও বিনিময় তুমি পাবে!’’ (বুখারী, মুসলিম)
5/299. وعَنْ أَبِي مَسْعُودٍ البَدْرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا أنْفَقَ الرَّجُلُ عَلَى أَهْلِهِ نَفَقَةً يَحْتَسِبُهَا فَهِيَ لَهُ صَدَقَةٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/২৯৯। আবূ মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সওয়াবের আশায় কোন মুসলিম যখন তার পরিবার-পরিজনের জন্য খরচ করে, তখন তা সাদকাহ হিসাবে গণ্য হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/300. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يُضَيِّعَ مَنْ يَقُوتُ».حديث صحيح رواه أَبُو داود وغيره .
وَرَوَاهُ مُسلِمٌ في صَحِيحِهِ بِمَعنَاهُ، قَالَ: «كَفَى بِالمَرْءِ إثْمَاً أنْ يحْبِسَ عَمَّنْ يَمْلِكُ قُوتَهُ».
৬/৩০০। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একটি মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটা যথেষ্ট যে, সে তাদের (অধিকার) নষ্ট করবে (অর্থাৎ তাদের ভরণ-পোষণে কার্পণ্য করবে) যাদের জীবিকার জন্য সে দায়িত্বশীল।’’ (আবূ দাউদ প্রমুখ, সহীহ)
উক্ত অর্থ সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,) ‘‘মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যার খাদ্যের মালিক, তার খাদ্য সে আটকে রাখে।’’
7/301. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ فِيهِ إلاَّ مَلَكَانِ يَنْزِلاَنِ، فَيقُولُ أحَدُهُمَا : اَللهم أعْطِ مُنْفقاً خَلَفاً، وَيَقُولُ الآخَرُ : اَللهم أعْطِ مُمْسِكاً تلَفاً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/৩০১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
وَعَنهُ، عَنِ النَّبيّ ﷺ، قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ»رواه البخاري
উক্ত সাহাবী হতেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী)
37- بَابُ الإِنْفَاقِ مِمَّا يُحِبُّ وَمِنَ الْجَيِّدِ
পরিচ্ছেদ - ৩৭ : নিজের পছন্দনীয় ও প্রিয় জিনিস খরচ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।” (সূরা আলে ইমরান ৯২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا كَسَبۡتُمۡ وَمِمَّآ أَخۡرَجۡنَا لَكُم مِّنَ ٱلۡأَرۡضِۖ وَلَا تَيَمَّمُواْ ٱلۡخَبِيثَ مِنۡهُ تُنفِقُونَ وَلَسۡتُم بَِٔاخِذِيهِ إِلَّآ أَن تُغۡمِضُواْ فِيهِۚ ﴾ [البقرة: ٢٦٧]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি জমি হতে তোমাদের জন্য যা উৎপাদন করে থাকি, তা থেকে যা উৎকৃষ্ট তা দান কর। এমন মন্দ জিনিস দান করার সংকল্প করো না, যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৬৭ আয়াত)
1/302. عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ أَبُو طَلْحَةَ رضي الله عنه أكْثَرَ الأنْصَار بالمَدِينَةِ مَالاً مِنْ نَخْل، وَكَانَ أَحَبُّ أمْوالِهِ إِلَيْه بَيْرُحَاء، وَكَانتْ مُسْتَقْبلَةَ المَسْجِدِ وَكَانَ رَسُول الله ﷺ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّب . قَالَ أنَسٌ : فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: ﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ قام أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى أنْزَلَ عَلَيْكَ : ﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرُحَاءُ، وَإنَّهَا صَدَقَةٌ للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا، وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا رَسُول الله حَيْثُ أرَاكَ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «بَخ ! ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، وقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى أنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ : أفْعَلُ يَا رَسُولَ الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في أقَارِبِهِ، وبَنِي عَمِّهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩০২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সবচেয়ে অধিক খেজুর-বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ (আলে ইমরান ৯২আয়াত) তখন আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ করে বলেছেন, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান করে দিন।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আরে! এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার আপন-জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও।’’ আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম)
38- بَيَانُ وُجُوْبِ أَمْرِهِ وَأَوْلاَدِهِ الْمُمَيِّزِيْنَ وَسَائِرِ مَنْ فِيْ رَعِيَّتِهِ بِطَاعَةِ اللهِ تَعَالٰى
وَنَهْيِهِمْ عَنْ المُخَالَفَةِ، وَتَأْدِيْبِهِمْ، وَمَنْعِهِمْ عَنْ اِرْتِكَابِ مَنْهِيٍّ عَنْهُ
পরিচ্ছেদ - ৩৮ : পরিবার-পরিজন, স্বীয় জ্ঞানসম্পন্ন সন্তান-সন্ততি ও আপন সমস্ত অধীনস্থদেরকে আল্লাহর আনুগত্যের আদেশ দেওয়া, তাঁর অবাধ্যতা থেকে তাদেরকে নিষেধ করা, তাদেরকে আদব শেখানো এবং শর‘য়ী নিষিদ্ধ জিনিস থেকে তাদেরকে বিরত রাখা ওয়াজিব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأۡمُرۡ أَهۡلَكَ بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱصۡطَبِرۡ عَلَيۡهَاۖ ﴾ [طه: ١٣٢]
অর্থাৎ “তুমি তোমার পরিবারবর্গকে নামাযের আদেশ দাও এবং ওতে অবিচলিত থাক।” (সূরা ত্বাহা ১৩২আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦ ﴾ [التحريم: ٦]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর অগ্নি হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম-হৃদয়, কঠোর-সবভাব ফিশিতাগণ, যারা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তাই করে।” (সূরা তাহরীম ৬ আয়াত)
1/303. عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: أَخَذَ الحَسَنُ بنُ عَلِيٍّ رَضِيَ الله عَنهُمَا تَمْرَةً مِنْ تَمْرِ الصَّدَقَةِ فَجَعَلَهَا في فِيهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كَخْ كَخْ إرْمِ بِهَا، أمَا عَلِمْتَ أنَّا لاَ نَأكُلُ الصَّدَقَةَ !؟». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رِوَايَةٍ: «أنَّا لا تَحِلُّ لَنَا الصَّدَقَةُ».
১/৩০৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাদকার একটি খুরমা নিয়ে তাঁর মুখে রাখলেন। তা দেখে রাসূলুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘ছিঃ ছিঃ! ফেলে দাও। তুমি কি জান না যে, আমরা সাদকাহ খাই না?’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘....আমাদের জন্য সাদকাহ হালাল নয়।’’
2/304. وَعَن أَبي حَفصٍ عُمَرَ بنِ أَبي سَلَمَةَ عَبدِ اللهِ بنِ عَبدِ الأسَدِ رَبِيبِ رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ : كُنْتُ غُلاَماً فِي حِجرِ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَكَانَتْ يَدي تَطِيشُ في الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا غُلامُ، سَمِّ الله تَعَالَى، وَكُلْ بيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ».فَمَا زَالَتْ تِلْكَ طِعْمَتي بَعْدُ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/৩০৪। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সৎ ছেলে আবূ হাফ্স উমার ইবনে আবী সালামা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আসাদ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা আমি ছোট হিসাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোলে ছিলাম। খাবার (সময়) বাসনে আমার হাত ঘুরছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে আহার কর এবং তোমার কাছ থেকে খাও।’’ তারপর থেকে আমি সব সময় এ পদ্ধতিতেই আহার করে আসছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/305. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ : الإمَامُ رَاعٍ وَمَسْؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، والرَّجُلُ رَاعٍ في أهْلِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مَالِ سَيِّدِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩০৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। গোলাম তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। অতএব প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/306. وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».حديث حسن رواه أَبُو داود بإسناد حسن
৪/৩০৬। ‘আমর ইবনে শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আম্রের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আম্র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
5/307. وَعَن أَبي ثُرَيَّةَ سَبْرَةَ بنِ مَعبَدٍ الجُهَنِيِّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «عَلِّمُوا الصَّبِيَّ الصَّلاةَ لِسَبْعِ سِنِينَ، وَاضْرِبُوهُ عَلَيْهَا ابْنَ عَشْرِ سِنِينَ».حديث حسن رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».ولفظ أَبي داود: «مُرُوا الصَّبِيَّ بِالصَّلاةِ إِذَا بَلَغَ سَبْعَ سِنِينَ».
৫/৩০৭। আবূ সুরাইয়াহ সাবরাহ ইবনে মা‘বাদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা শিশুকে সাত বছর বয়সে নামায শিক্ষা দাও এবং দশ বছর বয়সে তার জন্য তাকে মার।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
আবূ দাঊদের শব্দেঃ ‘‘শিশু সাত বছর বয়সে পৌঁছলে তাকে তোমরা নামাযের আদেশ দাও।’’
39- بَابُ حَقِّ الْجَارِ وَالْوَصِيَّةِ بِهِ
পরিচ্ছেদ - ৩৯ : প্রতিবেশীর অধিকার এবং তার সাথে সদ্ব্যবহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ﴾ [النساء: ٣٦]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)
1/308. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ وَعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَا زَالَ جِبْريلُ يُوصِينِي بِالجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩০৮। ইবনে উমার ও আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জিব্রাইল আমাকে সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসিয়ত করে থাকেন। এমনকি আমার মনে হল যে, তিনি প্রতিবেশীকে ওয়ারেস বানিয়ে দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/309. وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً، فَأكثِرْ مَاءهَا، وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ». رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ عن أَبي ذر، قَالَ : إنّ خَلِيلِي ﷺ أوْصَاني: «إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَاً فَأكْثِرْ مَاءها، ثُمَّ انْظُرْ أهْلَ بَيْتٍ مِنْ جِيرَانِكَ، فَأصِبْهُمْ مِنْهَا بِمعرُوفٍ».
২/৩০৯। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারি) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর এবং তোমার প্রতিবেশীদের খেয়াল রাখ।’’ (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আবূ যার্র বলেন, আমাকে আমার বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অসিয়ত করে বলেছেন যে, ‘‘যখন তুমি ঝোল (ওয়ালা তরকারী) রান্না করবে, তখন তাতে পানির পরিমাণ বেশী কর। অতঃপর তোমার প্রতিবেশীর বাড়িতে রীতিমত পৌঁছে দাও।’’
3/310. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ، وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ!» قِيلَ : مَنْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «الَّذِي لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ!». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: «لا يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ».
৩/৩১০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়। আল্লাহর কসম! সে ব্যক্তি মু’মিন নয়।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘কোন্ ব্যক্তি? হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘যে লোকের প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদে থাকে না।
4/311. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا نِسَاءَ المُسْلِمَاتِ، لاَ تَحْقِرَنَّ جَارةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩১১। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার অপর প্রতিবেশিনীর উপঢৌকনকে তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হোক না কেন। (বুখারী, মুসলিম)
5/312. وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَمْنَعْ جَارٌ جَارَهُ أنْ يَغْرِزَ خَشَبَةً في جِدَارِهِ»، ثُمَّ يقُولُ أَبُو هُرَيرَةَ : مَا لِي أرَاكُمْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ ! وَاللهِ لأَرْمِيَنَّ بِهَا بَيْنَ أكْتَافِكُمْ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩১২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন প্রতিবেশী যেন তার প্রতিবেশীকে তার দেওয়ালে কাঠ (বাঁশ ইত্যাদি) গাড়তে নিষেধ না করে। অতঃপর আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, কী ব্যাপার আমি তোমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরাতে দেখছি! আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আমি এ (সুন্নাহ)কে তোমাদের ঘাড়ে নিক্ষেপ করব (অর্থাৎ এ কথা বলতে থাকব)। (বুখারী ও মুসলিম)
6/313. وَعَنهُ : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بالله وَاليَومِ الآخرِ، فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৩১৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
7/314. وَعَن أَبي شُرَيْحٍ الخُزَاعيِّ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُحْسِنْ إِلَى جَارِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَسْكُتْ». رواه مسلم بهذا اللفظ، وروى البخاري بعضه.
৭/৩১৪। আবূ শুরায়হ খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, অথবা নীরব থাকে।’’ (মুসলিম, কিছু শব্দ বুখারীর)
8/315. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّ لِي جارَيْنِ، فَإِلَى أيِّهِمَا أُهْدِي؟ قَالَ: «إِلَى أقْرَبِهِمَا مِنكِ بَاباً». رواه البخاري
৮/৩১৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার দু’জন প্রতিবেশী আছে। (যদি দু’জনকেই দেওয়া সম্ভব না হয় তাহলে) আমি তাদের মধ্যে কার নিকট হাদিয়া (উপঢৌকন) পাঠাব?’ তিনি বললেন, ‘‘যার দরজা তোমার বেশী নিকটবর্তী, তার কাছে (পাঠাও)।’’ (বুখারী)
9/316. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «خَيْرُ الأَصْحَابِ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِصَاحِبِهِ، وَخَيرُ الجِيرَانِ عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرُهُمْ لِجَارِهِ». رواه الترمذي، وَقالَ : «حديث حسن»
৯/৩১৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম সঙ্গী সে, যে তার সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর নিকট সেই প্রতিবেশী সর্বোত্তম, যে তার প্রতিবেশীর দৃষ্টিতে সর্বাধিক উত্তম।’’ (তিরমিযী-হাসান)
40- بَابُ بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَصِلَةِ الأَرْحَامِ
পরিচ্ছেদ - ৪০ : পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এবং আত্মীয়তা অক্ষুণ্ণ রাখার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ ﴾ [النساء: ٣٦]
অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ ٱلَّذِي تَسَآءَلُونَ بِهِۦ وَٱلۡأَرۡحَامَۚ ﴾ [النساء: ١]
অর্থাৎ “সেই আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা কর এবং জ্ঞাতি-বন্ধন ছিন্ন করাকে ভয় কর।” (সূরা নিসা ১ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَصِلُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ ﴾ [الرعد: ٢١]
অর্থাৎ “আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুণ্ণ রাখে।” (সূরা রা’দ ২১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حُسۡنٗاۖ ﴾ [العنكبوت: ٨]
অর্থাৎ “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি।” (সূরা আনকাবূত ৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে’।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَوَصَّيۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ بِوَٰلِدَيۡهِ حَمَلَتۡهُ أُمُّهُۥ وَهۡنًا عَلَىٰ وَهۡنٖ وَفِصَٰلُهُۥ فِي عَامَيۡنِ أَنِ ٱشۡكُرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيۡكَ إِلَيَّ ٱلۡمَصِيرُ ١٤ ﴾ [لقمان: ١٤]
অর্থাৎ “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী কষ্টের পর কষ্ট বরণ করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তার স্তন্যপান ছাড়াতে দু’বছর অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” (সূরা লুকমান ১৪ আয়াত)
1/317. وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : سَأَلتُ النَّبِيَّ ﷺ : أيُّ العَمَلِ أحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى ؟ قَالَ: «الصَّلاةُ عَلَى وَقْتِهَا»، قُلْتُ : ثُمَّ أيٌّ ؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ»، قُلْتُ : ثُمَّ أيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ في سبيلِ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩১৭। আবূ আব্দুর রাহমান আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কোন্ আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, ‘‘যথা সময়ে নামায আদায় করা।’’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা।’’ আমি বললাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/318. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لا يَجْزِي وَلَدٌ وَالِداً إلاَّ أنْ يَجِدَهُ مَمْلُوكاً، فَيَشْتَرِيهُ فَيُعْتِقَهُ»رواه مسلم
২/৩১৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন সন্তান (তার) পিতার ঋণ পরিশোধ করতে পারবে না। কিন্তু সে যদি তার পিতাকে ক্রীতদাসরূপে পায় এবং তাকে কিনে মুক্ত করে দেয়। (তাহলে তা পরিশোধ হতে পারে।)’’ (মুসলিম)
3/319. وَعَنهُ أَيضاً رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ باللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩১৯। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহেমানের খাতির করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়তার বন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে, নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/320. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ الخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ، فَقَالَتْ : هَذَا مَقَامُ العَائِذِ بِكَ مِنَ القَطِيعةِ، قَالَ : نَعَمْ، أمَا تَرْضَيْنَ أنْ أصِلَ مَنْ وَصَلَكِ، وَأقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ ؟ قَالَتْ : بَلَى، قَالَ : فَذَلِكَ لَكِ، ثُمَّ قَالَ رَسُول الله ﷺ: «اقْرَؤُوا إنْ شِئْتمْ: ﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣] مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية للبخاري : فَقَالَ الله تَعَالَى: «مَنْ وَصَلَكِ، وَصَلْتُهُ، وَمَنْ قَطَعَكِ، قَطَعْتُهُ».
৪/৩২০। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ সকল কিছুকে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি সৃষ্টি কাজ শেষ করলেন, তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক উঠে বলল, ‘(আমার এই দন্ডায়মান হওয়াটা) আপনার নিকট বিচ্ছিন্নতা থেকে আশ্রয়প্রার্থীর দন্ডায়মান হওয়া।’ তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হ্যাঁ তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমার সাথে যে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখব। আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করব।’ সে (রক্ত সম্পর্ক) বলল, ‘অবশ্যই।’ আল্লাহ বললেন, ‘তাহলে এ মর্যাদা তোমাকে দেওয়া হল।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা চাইলে (এ আয়াতটি) পড়ে নাও; ‘ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।’’ (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত) (বুখারী ও মুসলিম) বুখারীর অন্য বর্ণনায় ভিন্ন শব্দ বর্ণিত হয়েছে।
5/321. وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، مَنْ أحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِي ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ : «أُمُّكَ»، قَالَ : ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «أبُوكَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية : يَا رَسُولَ اللهِ، مَنْ أَحَقُّ بحُسْنِ الصُّحْبَةِ ؟ قَالَ: «أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أُمُّكَ، ثُمَّ أَبَاكَ، ثُمَّ أدْنَاكَ أدْنَاكَ».
৫/৩২১। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার বাপ।’’(বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশী হকদার কে?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার বাপ, তারপর যে তোমার সবচেয়ে নিকটবর্তী।’’
6/322. وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «رَغِمَ أَنفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ، ثُمَّ رَغِمَ أنْفُ مَنْ أدْرَكَ أبَويهِ عِنْدَ الكِبَرِ، أَحَدهُما أَوْ كِليهمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الجَنَّةَ». رواه مسلم
৬/৩২২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলিধূসরিত হোক, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেল; একজনকে অথবা দু’জনকেই। অতঃপর সে (তাদের খিদমত ক’রে) জান্নাত যেতে পারল না।’’ (মুসলিম)
7/323. وَعَنهُ رضي الله عنه : أَنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّ لِي قَرَابةً أصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوني، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلَمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: «لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ». رواه مسلم
৭/৩২৩। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অনড় থাকবে।’’ (মুসলিম)
8/324. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ : «مَن أحَبَّ أنْ يُبْسَطَ لَهُ فِي رِزْقِهِ، ويُنْسأَ لَهُ فِي أثَرِهِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/৩২৪। আনাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি চায় যে, তার রুযী (জীবিকা) প্রশস্ত হোক এবং আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/325. عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : كَانَ أَبُو طَلْحَةَ رضي الله عنه أكْثَرَ الأنْصَار بالمَدِينَةِ مَالاً مِنْ نَخْل، وَكَانَ أَحَبُّ أمْوالِهِ إِلَيْه بَيْرُحَاء، وَكَانتْ مُسْتَقْبلَةَ المَسْجِدِ وَكَانَ رَسُول الله ﷺ يَدْخُلُهَا وَيَشْرَبُ مِنْ مَاءٍ فِيهَا طَيِّب . قَالَ أنَسٌ : فَلَمَّا نَزَلَتْ هذِهِ الآيةُ: ﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ [ال عمران: ٩٢] قام أَبُو طَلْحَةَ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، إنَّ الله تَعَالَى أنْزَلَ عَلَيْكَ : ﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ ﴾ وَإنَّ أَحَبَّ مَالِي إِلَيَّ بَيْرُحَاءُ، وَإنَّهَا صَدَقَةٌ للهِ تَعَالَى، أرْجُو بِرَّهَا، وَذُخْرَهَا عِنْدَ الله تَعَالَى، فَضَعْهَا يَا رَسُول الله حَيْثُ أرَاكَ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «بَخ ! ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، ذلِكَ مَالٌ رَابحٌ، وقَدْ سَمِعْتُ مَا قُلْتَ، وَإنِّي أرَى أنْ تَجْعَلَهَا في الأقْرَبينَ»، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ : أفْعَلُ يَا رَسُولَ الله، فَقَسَّمَهَا أَبُو طَلْحَةَ في أقَارِبِهِ، وبَنِي عَمِّهِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৯/৩২৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, মদীনার আনসারীগণের মধ্যে আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সবচেয়ে অধিক খেজুর বাগানের মালিক ছিলেন। মসজিদে নববীর নিকটবর্তী বায়রুহা নামক বাগানটি তাঁর কাছে অধিক প্রিয় ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাগানে প্রবেশ করে সুপেয় পানি পান করতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল; যার অর্থ, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ (আলে ইমরান ৯২আয়াত) তখন আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহ আপনার উপর (আয়াত) অবতীর্ণ করে বলেছেন, ‘‘তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ।’’ আর বায়রুহা বাগানটি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয়। এটি আল্লাহর নামে সদকাহ করা হল। আমি এর কল্যাণ কামনা করি এবং তা আল্লাহর নিকট আমার জন্য জমা হয়ে থাকবে। কাজেই আপনি যাকে দান করা ভাল মনে করেন, তাকে দান করে দিন।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আরে! এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। এ হচ্ছে লাভজনক সম্পদ। তুমি যা বলেছ, তা শুনেছি। আমি মনে করি, তুমি তোমার আপন-জনদের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও।’’ আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তাই করব।’ তারপর তিনি তাঁর আত্মীয়-স্বজন, আপন চাচার বংশধরদের মধ্যে তা বণ্টন করে দিলেন। (বুখারী-মুসলিম)
10/326. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : أقبلَ رَجُلٌ إِلَى نَبيِّ الله ﷺ، فَقَالَ : أُبَايِعُكَ عَلَى الهِجْرَةِ وَالجِهَادِ أَبْتَغي الأَجْرَ مِنَ الله تَعَالَى . قَالَ: «فَهَلْ لَكَ مِنْ وَالِدَيْكَ أحَدٌ حَيٌّ؟» قَالَ : نَعَمْ، بَلْ كِلاهُمَا. قَالَ: «فَتَبْتَغي الأجْرَ مِنَ الله تَعَالَى؟» قَالَ : نَعَمْ. قَالَ: «فارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ، فَأحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وهذا لَفْظُ مسلِم .
وفي رواية لَهُمَا: جَاءَ رَجُلٌ فَاسْتَأذَنَهُ في الجِهَادِ، فقَالَ: «أحَيٌّ وَالِداكَ ؟»قَالَ : نَعَمْ، قَالَ: «فَفيهِمَا فَجَاهِدْ» .
১০/৩২৬। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি আল্লাহর নবীর নিকট এসে বলল, ‘আমি আপনার সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকী পাওয়ার উদ্দেশ্যে হিজরত এবং জিহাদের বায়‘আত করছি।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমার পিতা-মাতার মধ্যে কি কেউ জীবিত আছে?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ; বরং দু’জনই জীবিত রয়েছে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে নেকী পেতে চাও?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে যাও এবং উত্তমরূপে তাদের খিদমত কর।’’ (বুখারী, আর শব্দগুলি মুসলিমের)
উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে জিহাদ করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, ‘‘তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছে?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘অতএব তুমি তাদের (সেবা করার) মাধ্যমে জিহাদ কর।’’
11/327. وَعَنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ الوَاصِلُ بِالمُكَافِئ، وَلكِنَّ الوَاصِلَ الَّذِي إِذَا قَطَعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا». رواه البخاري
১১/৩২৭। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সেই ব্যক্তি সম্পর্ক বজায়কারী নয়, যে সম্পর্ক বজায় করার বিনিময়ে বজায় করে। বরং প্রকৃত সম্পর্ক বজায়কারী হল সেই ব্যক্তি, যে কেউ তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলে সে তা কায়েম করে।’’ (বুখারী)
12/328. وَعَن عَائِشَةَ، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالعَرْشِ تَقُولُ : مَنْ وَصَلَنِي، وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَنِي، قَطَعَهُ اللهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১২/৩২৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন আরশে ঝুলন্ত আছে এবং সে বলছে, ‘যে আমাকে অবিচ্ছিন্ন রাখবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে অবিচ্ছিন্ন রাখবেন। আর যে আমাকে বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহ তাঁর সম্পর্ক তার সাথে বিচ্ছিন্ন করবেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
13/329. وَعَن أُمِّ الْمُؤمِنِينَ مَيمُونَةَ بِنتِ الحَارِثِ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّهَا أعْتَقَتْ وَلِيدَةً وَلَمْ تَستَأذِنِ النَّبيَّ ﷺ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُهَا الَّذِي يَدُورُ عَلَيْهَا فِيهِ، قَالَتْ: أشَعَرْتَ يَا رَسُولَ اللهِ، أنِّي أعتَقْتُ وَلِيدَتِي؟ قَالَ: «أَوَ فَعَلْتِ؟» قَالَتْ: نَعَمْ. قَالَ: « أما إنَّكِ لَوْ أعْطَيْتِهَا أخْوَالَكِ كَانَ أعْظَمَ لأََِجْرِكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৩/৩২৯। উম্মুল মু’মেনীন মায়মূনাহ বিনতিল হারেস রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি তাঁর একটি ক্রীতদাসীকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি না নিয়েই মুক্ত করলেন। অতঃপর যখন ঐ দিন এসে পৌঁছল, যেদিন তাঁর কাছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যাওয়ার পালা, তখন মায়মূনাহ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যে আমার ক্রীতদাসীকে মুক্ত করে দিয়েছি, আপনি কি তা বুঝতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি (সত্যই) এ কাজ করেছ?’’ মায়মূনা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যদি ক্রীতদাসীটিকে তোমার মামাদেরকে দিতে, তাহলে তুমি বেশী সওয়াব পেতে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
14/330. وَعَن أسماءَ بِنتِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَتْ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ مُشرِكَةٌ في عَهْدِ رسولِ الله ﷺ، فاسْتَفْتَيْتُ رَسُولَ الله ﷺ، قُلْتُ : قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّي وَهِيَ رَاغِبَةٌ، أفَأصِلُ أُمِّي ؟ قَالَ: «نَعَمْ، صِلِي أُمَّكِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৪/৩৩০। আসমা বিন্তে আবূ বকর সিদ্দীক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে আমার অমুসলিম মা আমার কাছে এল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলাম; বললাম, ‘আমার মা (ইসলাম) অপছন্দ করা অবস্থায় (আমার সম্পদের লোভ রেখে) আমার নিকট এসেছে, আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখব কি?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
15/331. وَعَن زَينَبَ الثَّقَفِيَّةِ امرَأَةِ عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُ وَعَنهَا، قَالَتْ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «تَصَدَّقْنَ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ»، قَالَتْ : فَرَجَعْتُ إِلَى عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ، فَقُلتُ لَهُ : إنَّكَ رَجُلٌ خَفِيفُ ذَاتِ اليَدِ، وَإنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَدْ أمَرَنَا بِالصَّدَقَةِ فَأْتِهِ، فَاسأَلهُ، فإنْ كَانَ ذلِكَ يْجُزِئُُ عَنِّي وَإلاَّ صَرَفْتُهَا إِلَى غَيْرِكُمْ . فَقَالَ عَبدُ اللهِ : بَلِ ائْتِيهِ أنتِ، فانْطَلَقتُ، فَإذَا امْرأةٌ مِنَ الأنْصارِ بِبَابِ رسولِ اللهِ ﷺ حَاجَتي حَاجَتُها، وَكَانَ رَسُولُ الله ﷺ قَدْ أُلْقِيَتْ عَلَيهِ المَهَابَةُ، فَخَرجَ عَلَيْنَا بِلاَلٌ، فَقُلْنَا لَهُ : ائْتِ رَسُولَ اللهِ ﷺ، فَأخْبِرْهُ أنَّ امْرَأتَيْنِ بِالبَابِ تَسألانِكَ : أُتُجْزِئُ الصَّدَقَةُ عَنْهُمَا عَلَى أزْواجِهمَا وَعَلَى أيْتَامٍ في حُجُورِهِما ؟، وَلاَ تُخْبِرْهُ مَنْ نَحْنُ، فَدَخلَ بِلاَلٌ عَلَى رَسُولِ الله ﷺ، فَسَأَلَهُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ هُمَا ؟»قَالَ : امْرَأةٌ مِنَ الأنْصَارِ وَزَيْنَبُ . فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «أيُّ الزَّيَانِبِ هِيَ ؟»، قَالَ: امْرَأةُ عَبدِ الله، فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «لَهُمَا أجْرَانِ : أجْرُ القَرَابَةِ وَأجْرُ الصَّدَقَةِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৫/৩৩১। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর স্ত্রী যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে মহিলাগণ! তোমরা সাদকাহ কর; যদিও তোমাদের অলংকার থেকে হয়।’’ যায়নাব রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, সুতরাং আমি (আমার স্বামী) আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এসে বললাম, ‘আপনি গরীব মানুষ, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাদকাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব আপনি তাঁর নিকট গিয়ে এ কথা জেনে আসুন যে, (আমি যে, আপনার উপর ও আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করি তা) আমার পক্ষ থেকে সাদকাহ হিসাবে যথেষ্ট হবে কি? নাকি আপনাদেরকে বাদ দিয়ে আমি অন্যকে দান করব?’ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘বরং তুমিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে জেনে এসো।’ সুতরাং আমি তাঁর নিকট গেলাম। দেখলাম, তাঁর দরজায় আরও একজন আনসারী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে, তার প্রয়োজনও আমার প্রয়োজনের অনুরূপ। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভাবগম্ভীরতা দান করা হয়েছিল। (তাঁকে সকলেই ভয় করত।) ইতোমধ্যে বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আমাদের পাশ দিয়ে যেতে দেখে বললাম, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গিয়ে বলুন, ‘দরজার কাছে দু’জন মহিলা আপনাকে জিজ্ঞাসা করছে যে, তারা যদি নিজ স্বামী ও তাদের তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত এতীমদের উপর খরচ করে, তাহলে তা সাদকাহ হিসাবে যথেষ্ট হবে কি? আর আমরা কে, সে কথা জানাবেন না।’ তিনি প্রবেশ করে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তারা কে?’’ বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘এক আনসারী মহিলা ও যায়নাব।’ তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘কোন্ যায়নাব?’’ বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উত্তর দিলেন, ‘আব্দুল্লাহর স্ত্রী।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাদের জন্য দু’টি সওয়াব রয়েছে, আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার সওয়াব এবং সাদকাহ করার সওয়াব।’’ (বুখারী-মুসলিম)
16/332. وَعَن أَبي سُفيَانَ صَخرِ بنِ حَربٍ رضي الله عنه في حَديثِهِ الطويل في قِصَّةِ هِرَقْلَ: أنَّ هِرَقْلَ قَالَ لأَبِي سُفْيَانَ: فَمَاذَا يَأمُرُكُمْ بِهِ؟ يَعْنِي النَّبيّ ﷺ، قَالَ: قُلْتُ: يَقُولُ: « اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ، وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيئاً، واتْرُكُوا مَا يَقُولُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأمُرُنَا بِالصَّلاةِ، وَالصِّدْقِ، والعَفَافِ، والصِّلَةِ»مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/৩৩২। আবূ সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে (রোম-সম্রাট) হিরাক্লিয়াসের ঘটনা সম্পর্কিত দীর্ঘ হাদীসে বর্ণিত, হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ানকে বললেন, ‘তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তোমাদেরকে কী নির্দেশ দেন?’ আবূ সুফিয়ান বলেন, আমি বললাম, ‘তিনি বলেন, ‘‘তোমরা এক আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কোন কিছুকে অংশীদার করো না এবং তোমাদের বাপ-দাদার ভ্রান্ত পথ পরিত্যাগ কর।’’ আর তিনি আমাদেরকে নামায পড়ার, সত্যবাদিতার, চারিত্রিক পবিত্রতার এবং আত্মীয়তা বজায় রাখার আদেশ দেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
17/333. وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أرْضاً يُذْكَرُ فِيهَا القِيرَاطُ» . وفي رِوَايَةٍ: «سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا القِيراطُ، فَاسْتَوْصُوا بأهْلِهَا خَيْراً ؛ فَإنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِماً»وفي رواية: «فَإِذَا افتَتَحتُمُوهَا، فَأَحسِنُوا إِلَى أَهلِهَا ؛ فَإِنَّ لَهُم ذِمَّةً وَرَحِماً»، أَوْ قَالَ: «ذِمَّةً وصِهْراً». رواه مسلم
১৭/৩৩৩। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা অদূর ভবিষ্যতে এমন এক এলাকা জয় করবে, যেখানে ক্বীরাত্ব (এক দীনারের ২০ ভাগের একভাগ স্বর্ণমুদ্রা) উল্লেখ করা হয়।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা অচিরে মিসর জয় করবে এবং এটা এমন ভূখণ্ড যেখানে কীরাত্ব (শব্দ) সচরাচর বলা হয়। (সেখানে ঐ মুদ্রা প্রচলিত।) তোমরা তার অধিবাসীদের সাথে ভাল ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যখন তোমরা তা জয় করবে, তখন তার অধিবাসীর প্রতি সদ্ব্যবহার করো। কেননা, তাদের প্রতি (আমাদের) দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং আত্মীয়তা রয়েছে।’’ অথবা বললেন, ‘‘দায়িত্ব (অধিকার ও মর্যাদা) এবং বৈবাহিক সম্পর্ক রয়েছে।’’ (মুসলিম)
* আলেমগণ বলেন, তাদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আত্মীয়তা এভাবে যে, ইসমাঈল -এর মা হাজার (বা হাজেরা) তাদেরই বংশের ছিলেন। বৈবাহিক সম্পর্ক এভাবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র ইব্রাহীমের মা মারিয়াহ তাদের বংশের ছিলেন।
18/334. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ : لَمَّا نَزَلَت هَذِهِ الآيَةُ : ﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾ [الشعراء: ٢١٤] دَعَا رَسُولُ الله ﷺ قُرَيْشاً، فَاجْتَمَعُوا فَعَمَّ وَخَصَّ، وَقالَ: «يَا بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ، يا بَنِي كَعْبِ بْنِ لُؤَيٍّ، أنقِذُوا أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي مُرَّةَ بنِ كَعْبٍ، أنْقِذُوا أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي عَبْدِ مَنَاف، أنْقِذُوا أنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ، يَا بَنِي هَاشِم، أَنقِذُوا أَنفُسَكُم مِنَ النَّار، يَا بَني عَبدِ الْمُطَّلِب، أَنقِذُوا أَنفُسَكُم مِنَ النَّار، يَا فَاطِمَةُ، أنْقِذِي نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ . فَإنِّي لاَ أمْلِكُ لَكُمْ مِنَ اللهِ شَيئاً، غَيْرَ أنَّ لَكُمْ رَحِماً سَأبُلُّهَا بِبِلالِهَا». رواه مسلم
১৮/৩৩৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল যার অর্থ হল, ‘‘তুমি তোমার নিকট আত্মীয়বর্গকে সতর্ক কর।’’ (সূরা শুআরা ২১৪ আয়াত) তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরায়েশ (সম্প্রদায়)কে আহ্বান করলেন। সুতরাং তারা একত্রিত হল। অতঃপর তিনি সাধারণ ও বিশেষভাবে (সম্বোধন করে) বললেন, ‘‘হে বানী আব্দে শাম্স! হে বানী কা‘ব ইবনে লুআই! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী মুর্রাহ ইবনে কা‘ব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দে মানাফ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী হাশেম! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে বানী আব্দিল মুত্তালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। হে ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও। কারণ, আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের (উপকার-অপকার) কিছুরই মালিক নই। তবে তোমাদের সাথে (আমার) যে আত্মীয়তা রয়েছে তা আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই আর্দ্র রাখব। (আখেরাতে আমার আনুগত্য ছাড়া আত্মীয়তা কোনো কাজে আসবে না।)’’ (মুসলিম)
* উক্ত হাদীসে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করাকে আগুনের সাথে উপমা দেওয়া হয়েছে, যা পানি দিয়ে নিভাতে হয়। তাই আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখাকে তা আর্দ্র বা ভিজে রাখা বলা হয়েছে।
19/235. وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ جِهَاراً غَيْرَ سِرٍّ، يَقُولُ: «إنَّ آل بَني فُلاَنٍ لَيْسُوا بِأولِيَائِي، إِنَّمَا وَلِيِّيَ اللهُ وَصَالِحُ المُؤْمِنينَ، وَلَكِنْ لَهُمْ رَحِمٌ أبُلُّهَا بِبلاَلِهَا». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، واللفظ للبخاري
১৯/৩৩৫। আবূ আব্দুল্লাহ ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গোপনে নয় প্রকাশ্যে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘অমুক গোত্রের লোকেরা (যারা আমার প্রতি ঈমান আনেনি তারা) আমার বন্ধু নয়। আমার বন্ধু তো আল্লাহ এবং নেক মু’মিনগণ। কিন্তু ওদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে, আমি (দুনিয়াতে) অবশ্যই তা আর্দ্র রাখব।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দ বুখারীর)
20/336. وَعَن أَبي أَيُّوبٍ خَالِدِ بنِ زَيدٍ الأَنصَارِي رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، أخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ، وَيُبَاعِدُني مِنَ النَّارِ . فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «تَعْبُدُ الله، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيئاً، وَتُقِيمُ الصَّلاةَ، وتُؤتِي الزَّكَاةَ، وتَصِلُ الرَّحمَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২০/৩৩৬। আবূ আইয়ূব খালেদ ইবনে যায়েদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমাকে এমন আমল বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে, তার সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে এবং রক্ত সম্পর্ক বজায় রাখবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
21/337. وَعَن سَلمَانَ بنِ عَامِرٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: .... الصَّدَقَةُ عَلَى المِسكينِ صَدَقةٌ، وعَلَى ذِي الرَّحِمِ ثِنْتَانِ : صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن».
২১/৩৩৭। সালমান ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘---মিসকীনকে সাদকাহ করলে সাদকাহ (করার সওয়াব) হয়। আর আত্মীয়কে সাদকাহ করলে দু’টি সওয়াব হয়ঃ সাদকাহ করার ও আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখার।’’ (তিরমিযী, উল্লেখ্য যে, হাদীসের প্রথম অংশ সহীহ নয় বলে উল্লেখ করা হয়নি।)
22/338. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَتْ تَحْتِي امْرَأةٌ، وَكُنْتُ أحِبُّهَا، وَكَانَ عُمَرُ يَكْرَهُهَا، فَقَالَ لي : طَلِّقْهَا، فَأبَيْتُ، فَأتَى عُمَرُ رضي الله عنه النَّبيَّ ﷺ، فَذَكَرَ ذلِكَ لَهُ، فَقَالَ النَّبيّ ﷺ: «طَلِّقْهَا». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
২২/৩৩৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমার বিবাহ বন্ধনে এক স্ত্রী ছিল, যাকে আমি ভালবাসতাম। কিন্তু (আমার পিতা) উমার তাকে অপছন্দ করতেন। সুতরাং তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি ওকে ত্বালাক দাও।’’ কিন্তু আমি (তা) অস্বীকার করলাম। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলেন এবং এ কথা উল্লেখ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, ‘‘তুমি ওকে ত্বালাক দিয়ে দাও।’’ (সুতরাং আমি তাকে ত্বালাক দিয়ে দিলাম।) (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ সূত্রে)
* (উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ মহিলার চরিত্রে এমন কিছু দেখেছিলেন, যার জন্য তাঁর কথা মেনে ত্বালাক দেওয়া জরুরী ছিল। অনুরূপ কারো পিতা দেখলে বা জানতে পারলে তাঁর কথা মেনে পুত্রের উচিত স্ত্রীকে ত্বালাক দেওয়া। নচেৎ পিতামাতার কথা শুনে ভালো স্ত্রীকে অকারণে ত্বালাক দেওয়া পিতৃমাতৃভক্তির পরিচয় নয়।)
23/339. وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً أَتَاهُ، قَالَ : إنّ لِي امرَأةً وإنّ أُمِّي تَأمُرُنِي بِطَلاقِهَا، فَقَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «الوَالِدُ أوْسَطُ أبْوَابِ الجَنَّةِ، فَإنْ شِئْتَ، فَأضِعْ ذلِكَ البَابَ، أَو احْفَظْهُ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
২৩/৩৩৯। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাঁর নিকট এসে বলল, ‘আমার এক স্ত্রী আছে। আমার মা তাকে ত্বালাক দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।’ আবূ দারদা বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘পিতা-মাতা জান্নাতের দুয়ারসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দুয়ার। সুতরাং তুমি যদি চাও, তাহলে এ দুয়ারকে নষ্ট কর অথবা তার রক্ষণাবেক্ষণ কর।’’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ সূত্রে)
24/340. وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «الخَالةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح»
২৪/৩৪০। বারা ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কৃর্তক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘খালা মায়ের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত।’’ (তিরমিযী)
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক সহীহ ও প্রসিদ্ধ হাদীস রয়েছে, তার মধ্যে গুহাবন্দী তিন ব্যক্তির (১৩নং) হাদীস, জুরাইজের (২৬৪নং) লম্বা হাদীস এবং আরো অন্যান্য সহীহ ও প্রসিদ্ধ হাদীস সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে উল্লেখ করলাম না। তার মধ্যে ‘আমর ইবন আবাসাহর (৪৪৩নং) হাদীসটি বড়ই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ইসলামের অনেকানেক মৌলনীতি ও শিষ্টাচারিতার কথা বর্ণিত হয়েছে। যেটিকে পূর্ণরূপে ‘আল্লাহর দয়ার আশা রাখার গুরুত্ব’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ করব -ইনশাআল্লাহ। যে হাদীসে সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবুঅতের শুরুর দিকে মক্কায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এলাম এবং বললাম, ‘আপনি কি?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি নবী।’’ আমি বললাম, ‘নবী কি?’ তিনি বললেন, ‘‘আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।’’ আমি বললাম, ‘ কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।---’’ (অতঃপর পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর আল্লাহই অধিক জানেন।)
41- بَابُ تَحْرِيْمِ الْعُقُوْقِ وَقَطِيْعَةِ الرِّحْمِ
পরিচ্ছেদ - ৪১ : পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হারাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَهَلۡ عَسَيۡتُمۡ إِن تَوَلَّيۡتُمۡ أَن تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَتُقَطِّعُوٓاْ أَرۡحَامَكُمۡ ٢٢ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فَأَصَمَّهُمۡ وَأَعۡمَىٰٓ أَبۡصَٰرَهُمۡ ٢٣ ﴾ [محمد: ٢٢، ٢٣]
অর্থাৎ “ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। ওরা তো তারা, যাদেরকে আল্লাহ অভিশপ্ত করে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ২২-২৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهۡدَ ٱللَّهِ مِنۢ بَعۡدِ مِيثَٰقِهِۦ وَيَقۡطَعُونَ مَآ أَمَرَ ٱللَّهُ بِهِۦٓ أَن يُوصَلَ وَيُفۡسِدُونَ فِي ٱلۡأَرۡضِ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱللَّعۡنَةُ وَلَهُمۡ سُوٓءُ ٱلدَّارِ ٢٥ ﴾ [الرعد: ٢٥]
অর্থাৎ “যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্য আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্য আছে মন্দ আবাস।” (সূরা রা’দ ২৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ ۞وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا ٢٣ وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا ٢٤ ﴾ [الاسراء: ٢٣، ٢٤]
অর্থাৎ “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের এক জন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না; বরং তাদের সাথে বলো সম্মানসূচক নম্র কথা। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া কর; যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছে’।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ২৩-২৪ আয়াত)
1/341. وَعَن أَبي بَكرَةَ نُفَيعِ بنِ الحَارِثِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «ألا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبَائِرِ؟» ثلاثاً، قُلْنَا: بَلَى، يَا رَسُول الله، قَالَ: «الإشْرَاكُ بالله، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ»، وكان مُتَّكِئاً فَجَلَسَ، فَقَالَ: «ألاَ وَقَوْلُ الزُّورِ وَشَهَادَةُ الزُّورِ» فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى قُلْنَا: لَيْتَهُ سَكَتَ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩৪১। আবূ বাকরাহ নুফাই‘ ইবনে হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সবচেয়ে বড় (কাবীরাহ গোনাহগুলো সম্পর্কে জ্ঞাত করবো না?’’ সবাই বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(সেগুলো হচ্ছে) আল্লাহর সাথে শির্ক করা এবং পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া।’’ তিনি হেলান দিয়ে বসেছিলেন, এবার সোজা হয়ে বসে বললেন, ‘‘শুনে রাখ, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’’ এ কথাটি তিনি পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমরা বলতে লাগলাম, ‘আর যদি তিনি না বলতেন!’(বুখারী ও মুসলিম)
2/342. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «الكَبَائِرُ : الإشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْس، وَاليَمِينُ الغَمُوسُ». رواه البخاري
২/৩৪২। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে আস (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘‘আনহুমা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহ হচ্ছে, আল্লাহর সাথে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, প্রাণ হত্যা করা এবং মিথ্যা কসম খাওয়া।’’(বুখারী)
3/343. وَعَنهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مِنَ الكَبَائِر شَتْمُ الرَّجُل وَالِدَيهِ !»، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللهِ، وَهَلْ يَشْتُمُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ ؟! قَالَ: «نَعَمْ، يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أبَاه، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رِوَايَةٍ: «إنَّ مِنْ أكْبَرِ الكَبَائِرِ أنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ !»، قِيلَ :يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيهِ ؟! قَالَ: « يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أباهُ، وَيَسُبُّ أُمَّهُ، فَيَسُبُّ أُمَّهُ».
৩/৩৪৩। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল আপন পিতা-মাতাকে গালি দেওয়া।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপন পিতা-মাতাকে কি কোনো ব্যক্তি গালি দেয়?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, সে লোকের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে এবং সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, সুতরাং সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কাবীরাহ গুনাহসমূহের একটি হল নিজের পিতা-মাতাকে অভিশাপ করা।’’ জিজ্ঞেস করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মানুষ নিজের পিতা-মাতাকে কিভাবে অভিশাপ করে?’ তিনি বললেন, ‘‘সে অপরের পিতাকে গালি-গালাজ করে, তখন সেও তার পিতাকে গালি-গালাজ করে থাকে। আর সে অন্যের মা-কে গালি দেয়, বিনিময়ে সেও তার মা-কে গালি দেয়।’’
4/344. وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ جُبَيرِ بنِ مُطعِمٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ قَاطِعٌ».قَالَ سُفيَانُ في رِوَايَتِهِ : يَعْنِي : قَاطِعُ رَحِم . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৪৪। আবূ মুহাম্মাদ জুবাইর ইবনে মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ সুফিয়ান তাঁর বর্ণনায় বলেন, অর্থাৎ ‘‘আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী।’’(বুখারী ও মুসলিম)
5/345. وَعَن أَبي عِيسَى المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ عَلَيْكُمْ : عُقُوقَ الأمَّهَاتِ، وَمَنْعاً وَهَاتِ، وَوَأْدَ البَنَاتِ، وكَرِهَ لَكُمْ : قِيلَ وَقالَ، وَكَثْرَةَ السُّؤَالِ، وَإضَاعَةَ المَالِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩৪৫। আবূ ঈসা মুগীরা ইবন শু‘বাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের জন্য (তিনটি কর্মকে) হারাম করেছেন; মায়ের অবাধ্যাচরণ করা, অধিকার প্রদানে বিরত থাকা ও অনধিকার কিছু প্রার্থনা করা এবং কন্যা জীবন্ত প্রোথিত করা। আর তিনি তোমাদের জন্য অপছন্দ করেছেন (তিনটি কর্ম); ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা (বা জনরবে থাকা), অধিক (অনাবশ্যক) প্রশ্ন করা (অথবা প্রয়োজনের অধিক যাচ্ঞা করা) এবং ধন-মাল বিনষ্ট (অপচয়) করা।’’ (বুখারী ৫৯৭৫নং ও মুসলিম)
42- بَابُ فَضْلِ بِرِّ أَصْدِقَاءِ الْأَبِ وَالْأُمِّ وَالْأَقَارِبِ وَالزَّوْجَةِ
وَسَائِرِ مَنْ يُّنْدَبُ إِكْرَامُهُ
পরিচ্ছেদ - ৪২ : পিতা-মাতার ও নিকটাত্মীয়ের বন্ধু, স্ত্রীর সখী এবং যাদের সম্মান করা কর্তব্য তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার মাহাত্ন্য
1/346. عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «إنّ أبَرَّ البرِّ أنْ يَصِلَ الرَّجُلُ وُدَّ أبيهِ».
وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ دِينَارٍ، عَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أنَّ رَجُلاً مِنَ الأعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيقِ مَكَّةَ، فَسَلَّمَ عَلَيهِ عَبدُ الله بْنُ عُمَرَ، وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ، وَأعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأسِهِ، قَالَ ابنُ دِينَار : فَقُلْنَا لَهُ : أصْلَحَكَ الله، إنَّهُمُ الأعرَابُ وَهُمْ يَرْضَوْنَ باليَسير، فَقَالَ عبد الله بن عمر : إن أَبَا هَذَا كَانَ وُدّاً لِعُمَرَ بنِ الخطاب رضي الله عنه، وإنِّي سَمِعتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ أبرَّ البِرِّ صِلَةُ الرَّجُلِ أهْلَ وُدِّ أبِيهِ».
وفي رِوِايَةٍ عَنِ ابنِ دِينَارٍ، عَنِ ابنِ عُمَرَ : أنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ الرَّاحِلةِ، وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأسَهُ، فَبيْنَا هُوَ يَوماً عَلَى ذلِكَ الحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أعْرابيٌّ، فَقَالَ : ألَسْتَ فُلاَنَ بْنَ فُلاَنٍ ؟ قَالَ : بَلَى . فَأعْطَاهُ الحِمَارَ، فَقَالَ : ارْكَبْ هَذَا، وَأعْطَاهُ العِمَامَةَ وَقالَ : اشْدُدْ بِهَا رَأسَكَ، فَقَالَ لَهُ بَعضُ أصْحَابِهِ : غَفَرَ الله لَكَ أعْطَيْتَ هَذَا الأعْرَابيَّ حِمَاراً كُنْتَ تَرَوَّحُ عَلَيهِ، وعِمَامةً كُنْتَ تَشُدُّ بِهَا رَأسَكَ ؟ فَقَالَ : إنِّي سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ مِنْ أبَرِّ البِرِّ أنْ يَصِلَ الرَّجُلُ أهْلَ وُدِّ أبيهِ بَعْدَ أنْ يُولِّيَ».وَإنَّ أبَاهُ كَانَ صَديقاً لعُمَرَ رضي الله عنه. رَوَى هذِهِ الرواياتِ كُلَّهَا مسلم
১/৩৪৬। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার সাথে পিতার মৈত্রী সম্পর্ক ছিল, তা অক্ষুণ্ণ রাখা সবচেয়ে বড় পুণ্যের কাজ।’’
আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, এক বেদুঈন মক্কার পথে তাঁর সাথে মিলিত হল। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উমার তাকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার উপর সওয়ার ছিলেন তার উপর চাপিয়ে নিলেন। আর যে পাগড়ী তাঁর মাথায় ছিল, তিনি তা তাকে দিয়ে দিলেন। ইবনে দীনার বলেন, আমরা বললাম, ‘আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন, এরা তো বেদুঈন, এরা তো সবল্পেই তুষ্ট হয় (ফলে এর সাথে এত কিছু করার কী প্রয়োজন)?’ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘এর পিতা উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘পিতার বন্ধুর সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকী।’’
অন্য এক বর্ণনায় ইবনে দীনারের সূত্রে ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, ইবনে উমারের মক্কা যাওয়ার সময় তার সাথে একটি গাধা থাকত। তিনি যখন উটের উপরে চেপে বিরক্ত হয়ে পড়তেন, তখন (এক ঘেঁয়েমি কাটানোর জন্য) ঐ গাধার উপর চেপে বিশ্রাম নিতেন। তাঁর একটি পাগড়ী ছিল, তিনি তা মাথায় বাঁধতেন। একদিন তিনি গাধার উপর সওয়ার ছিলেন, এমতাবস্থায় এক বেদুঈন তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন, ‘তুমি কি অমুকের পুত্র অমুক নও?’ সে বলল, ‘অবশ্যই!’ অতঃপর তিনি তাকে গাধাটি দিয়ে বললেন, ‘এর উপর আরোহন কর’ এবং তাকে পাগড়ীটি দিয়ে বললেন, ‘এটি তোমার মাথায় বাঁধ।’ (এ দেখে) তাঁকে তাঁর কিছু সাথী-সঙ্গী বলল, ‘আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! আপনি এই বেদুঈনকে ঐ গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার উপর চড়ে আপনি বিশ্রাম নিতেন এবং তাকে ঐ পাগড়ীটিও দিলেন, যেটি আপনি নিজ মাথায় বাঁধতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘পিতার মৃত্যুর পর তার বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা সবচেয়ে বড় নেকীর কাজ।’’ আর এর পিতা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর বন্ধু ছিলেন।
এ বর্ণনাগুলো সবই ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন।
2/347. وعن أبي أُسَيْد - بضم الهمزة وفتح السين - مالكِ بنِ ربِيعَةَ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه قال : بَيْنا نَحْنُ جُلُوسٌ عِنْدَ رسول اللهِ ﷺ إذ جاءَهُ رجُلٌ مِنْ بني سَلَمة فقالَ : يارسولَ اللهِ هَلْ بقى مِن بِرِّ أَبويَّ شىءٌ أَبرُّهُمَا بِهِ بَعدَ مَوْتِهِمَا ؟ فقال: «نَعَمْ، الصَّلاَة علَيْهِمَا، والاسْتِغْفَارُ لَهُما، وإِنْفاذُ عَهْدِهِما، وصِلةُ الرَّحِمِ التي لا تُوصَلُ إِلاَّ بِهِمَا، وإِكَرَامُ صَدِيقهما» رواه أبو داود .
২/৩৪৭। আবূ উসাইদ মালিক ইবনু রাবী‘আহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, কোনো একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে বসা ছিলাম। এমন সময় বানী সালামা সম্প্রদায়ের জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার মারা যাবার পরও আমার উপর তাদের প্রতি সদাচারণ করার দায়িত্ব আছে কি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য দু‘আ করবে, তাদের গুনাহের মাগফিরাত প্রার্থনা করবে, তাদের কৃত ওয়াদা পূর্ণ করবে, তাদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে এ জন্যে উত্তম ব্যবহার করবে যে, এরা তাদেরই আত্মীয় এবং বন্ধু-বান্ধব এবং তাদেরকে সম্মান দেখাবে।
3/348. وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ : مَا غِرْتُ عَلَى أحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبيِّ ﷺ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، وَمَا رَأيْتُهَا قَطُّ، وَلَكِنْ كَانَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا، وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ، ثُمَّ يقَطِّعُهَا أعْضَاء، ثُمَّ يَبْعثُهَا في صَدَائِقِ خَديجَةَ، فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ : كَأنْ لَمْ يَكُنْ في الدُّنْيَا إلاَّ خَديجَةَ ! فَيَقُولُ: «إنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لي مِنْهَا وَلَدٌ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية : وإنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاءَ، فَيُهْدِي في خَلاَئِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ .
وفي رواية:كَانَ إِذَا ذبح الشاة، يقولُ: «أَرْسِلُوا بِهَا إِلَى أصْدِقَاءِ خَديجَةَ».
وفي رواية : قَالَت : اسْتَأذَنتْ هَالَةُ بِنْتُ خُوَيْلِد أُخْتُ خَدِيجَةَ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَعرَفَ اسْتِئذَانَ خَديجَةَ، فَارتَاحَ لِذَلِكَ، فَقَالَ: «اَللهم هَالةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ».
৩/৩৪৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খাদীজা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রতি আমার যতটা ঈর্ষা হতো, ততটা ঈর্ষা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অপর কোন স্ত্রীর প্রতি হতো না। অথচ আমি তাঁকে কখনো দেখিনি। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় তাঁর কথা আলোচনা করতেন এবং যখনই তিনি ছাগল যবাই করতেন, তখনই তার বিভিন্ন অঙ্গ কেটে খাদীজার বান্ধবীদের জন্য উপহারস্বরূপ পাঠাতেন।
আমি তাঁকে মাঝে মধ্যে (রসিকতা ছলে) বলতাম, ‘মনে হয় যেন দুনিয়াতে খাদীজা ছাড়া আর কোন মেয়েই নেই।’ তখন তিনি (তাঁর প্রশংসা করে) বলতেন, ‘‘সে এই রকম ছিল, ঐ রকম ছিল। আর তাঁর থেকেই আমার সন্তান-সন্তুতি।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন, তখন খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এতটা পরিমাণে মাংস পাঠাতেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট হত।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বকরী যবাই করতেন, তখন বলতেন, ‘‘খাদীজার বান্ধবীদের নিকট এই মাংস পাঠিয়ে দাও।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহ বলেন, ‘একদা খাদীজার বোন হালা বিনতে খুআইলিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসার অনুমতি চাইল। তিনি খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ করলেন, সুতরাং তিনি আনন্দবোধ করলেন এবং বললেন, ‘‘আল্লাহ! হালা বিনতে খুআইলিদ?’’
এ বর্ণনায় فَارتَاحَ (আনন্দবোধ করলেন) শব্দ এসেছে। আর হুমাইদীর ‘আল-জাম‘উ বাইনাস সহীহাইন’-এ এসেছে فَارتَاعَ শব্দ। অর্থাৎ তার প্রতি যত্ন নিলেন ও আগ্রহ প্রকাশ করলেন।
4/349. وَعَن أَنَسِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ : خَرَجتُ مَعَ جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ البَجَليّ رضي الله عنه في سَفَرٍ، فَكَانَ يَخْدُمُني، فَقُلْتُ لَهُ : لاَ تَفْعَل، فَقَالَ : إِنِّي قَدْ رَأيْتُ الأنْصَارَ تَصْنَعُ بِرَسُولِ اللهِ ﷺ شَيئاً آلَيْتُ عَلَى نَفسِي أنْ لاَ أصْحَبَ أحَداً مِنْهُمْ إلاَّ خَدَمْتُهُ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৪৯। আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমি জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সাথে সফরে বের হলাম। (আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও) তিনি আমার খিদমত করতেন। সুতরাং আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি এমন করবেন না।’ তিনি বললেন, ‘আমি আনসারগণকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে (অনেক) কিছু করতে দেখেছি। তাই আমি শপথ করেছি যে, তাঁদের মধ্যে যাঁরই সঙ্গী হব, তাঁরই খিদমত করব।’(মুসলিম)
43- بَابُ إِكْرَامِ أَهْلِ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَبَيَانِ فَضْلِهِمْ
পরিচ্ছেদ - ৪৩ : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর বংশধরের প্রতি শ্রদ্ধা রাখা এবং তাঁদের মাহাত্ম্যের বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذۡهِبَ عَنكُمُ ٱلرِّجۡسَ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِ وَيُطَهِّرَكُمۡ تَطۡهِيرٗا ﴾ [الاحزاب: ٣٣]
অর্থাৎ “হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো কেবল তোমাদের মধ্য থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান।” (সূরা আহযাব ৩৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
1/350. وَعَن يَزِيدَ بنِ حَيَّانَ، قَالَ : انْطَلَقْتُ أنَا وحُصَيْنُ بْنُ سَبْرَة، وَعَمْرُو ابنُ مُسْلِم إِلَى زَيْدِ بْنِ أرقَمَ رضي الله عنه، فَلَمَّا جَلسْنَا إِلَيْهِ قَالَ لَهُ حُصَيْن : لَقَدْ لقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثِيراً، رَأيْتَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، وَسَمِعتَ حَدِيثَهُ، وغَزوْتَ مَعَهُ، وَصَلَّيْتَ خَلْفَهُ : لَقَدْ لَقِيتَ يَا زَيْدُ خَيْراً كَثيراً، حَدِّثْنَا يَا زَيْدُ مَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ : يَا ابْنَ أخِي، وَاللهِ لقد كَبِرَتْ سِنِّي، وَقَدُمَ عَهدِي، وَنَسِيتُ بَعْضَ الَّذِي كُنْتُ أعِي مِنْ رَسُولِ الله ﷺ، فَمَا حَدَّثْتُكُمْ، فَاقْبَلُوا، وَمَا لاَ فَلاَ تُكَلِّفُونيهِ . ثُمَّ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَوماً فِينَا خَطِيباً بمَاءٍ يُدْعَى خُمَّاً بَيْنَ مَكَّةَ وَالمَدِينَةِ، فَحَمِدَ الله، وَأثْنَى عَلَيهِ، وَوعظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ: «أمَّا بَعدُ، ألاَ أَيُّهَا النَّاسُ، فَإنَّمَا أنَا بَشَرٌ يُوشِكَ أنْ يَأتِي رَسُولُ ربِّي فَأُجِيبَ، وَأنَا تَارِكٌ فِيكُم ثَقَلَيْنِ : أوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ، فِيهِ الهُدَى وَالنُّورُ، فَخُذُوا بِكِتَابِ الله، وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ»، فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ الله، وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأهْلُ بَيْتِي أُذكِّرُكُمُ اللهَ في أهلِ بَيْتي، أُذَكِّرُكُمُ الله في أَهلِ بَيتي»فَقَالَ لَهُ حُصَيْنٌ : وَمَنْ أهْلُ بَيتهِ يَا زَيْدُ، أَلَيْسَ نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيْتِهِ ؟ قَالَ : نِسَاؤُهُ مِنْ أهْلِ بَيتهِ، وَلكِنْ أهْلُ بَيتِهِ مَنْ حُرِمَ الصَّدَقَةَ بَعدَهُ، قَالَ : وَمَنْ هُمْ ؟ قَالَ : هُمْ آلُ عَلِيٍّ وَآلُ عَقِيلٍ وَآلُ جَعفَرَ وآلُ عَبَّاسٍ . قَالَ : كُلُّ هَؤُلاَءِ حُرِمَ الصَّدَقَةَ ؟ قَالَ : نَعَمْ. رواه مسلم ، وفي رواية: «ألاَ وَإنّي تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَليْنِ : أحَدُهُما كِتَابُ الله وَهُوَ حَبْلُ الله، مَنِ اتَّبَعَهُ كَانَ عَلَى الهُدَى، وَمَنْ تَرَكَهُ كَانَ عَلَى ضَلالَة».
১/৩৫০। ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান বলেন, আমি, হুস্বাইন ইবনে সাবরাহ ও ‘আমর ইবনে মুসলিম যায়দ ইবনে আরক্বাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলাম। যখন আমরা তাঁর পাশে বসলাম, তখন হুস্বাইন তাঁকে বললেন, ‘হে যায়দ! আপনি প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন; আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তাঁর সাথে থেকে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর পিছনে নামায পড়েছেন। হে যায়দ! আপনি প্রভূত কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছেন। আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কোন কথা শুনান, যা আপনি (স্বয়ং) তাঁর নিকট থেকে শুনেছেন।’ তিনি বললেন, ‘হে ভাতিজা! আল্লাহর কসম! আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি এবং (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে) আমার যে যুগটা কেটেছে, তাও যথেষ্ট পুরানো হয়ে গেছে। (ফলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যে কথা আমার স্মরণে ছিল, তার কিছু ভুলে গেছি। সুতরাং আমি যা বলব, তা গ্রহণ কর এবং যা বর্ণনা করব না, তার জন্য আমাকে বাধ্য করো না।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে মক্কা ও মদীনার মধ্যে ‘খুম’ নামক ঝর্ণার নিকটে খুতবাহ দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তিনি সর্বাগ্রে আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ওয়ায করলেন ও উপদেশ দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘আম্মা বা‘দ। হে লোকেরা! শোনো, আমি একজন মানুষ মাত্র, শীঘ্রই (আমার নিকট) আমার প্রতিপালকের দূত আসবেন এবং আমি (আল্লাহর নিকট যাওয়ার জন্য) তাঁর ডাকে সাড়া দেব। আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি আল্লাহর কিতাব, যাতে হিদায়াত ও আলো রয়েছে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর এবং তা মযবুত করে ধারণ কর।’’ সুতরাং তিনি আল্লাহর কিতাবের উপর (আমল করার প্রতি) উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘(আর দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে,) আমার পরিবার; আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি। আমি তোমাদেরকে আমার পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহর স্মরণ দিচ্ছি।’’ তারপর হুস্বাইন তাঁকে বললেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর পরিবার কারা? হে যায়দ! তাঁর স্ত্রীরা কি তাঁর পরিবারভুক্ত নন?’ তিনি (যায়দ) বললেন, ‘(নিঃসন্দেহে) স্ত্রীরা তাঁর পরিবারভুক্ত। কিন্তু তাঁর পরিবার (বলতে) তাঁরা, যাঁদের উপর তাঁর (মৃত্যুর) পর সাদকাহ হারাম করা হয়েছে।’ হুস্বাইন জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাঁরা কারা?’ যায়দ জবাব দিলেন, ‘তাঁরা হচ্ছেন আলীর পরিবার, আক্বীলের পরিবার, জা‘ফরের পরিবার এবং আব্বাসের পরিবার।’ হুস্বাইন বললেন, ‘এদের সকলের প্রতি সাদকাহ হারাম করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, শোনো, ‘‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (গুরুত্বপূর্ণ) জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। তার মধ্যে একটি হল আল্লাহর কিতাব; আর তা আল্লাহর রশি। যে ব্যক্তি তার অনুসরণ করবে, সে সঠিক পথে থাকবে এবং যে তা পরিহার করবে, সে ভ্রষ্টতায় থাকবে।’’(মুসলিম)
2/351. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَن أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه - مَوقُوفاً عَلَيهِ - أنَّهُ قَالَ : «ارْقَبُوا مُحَمداً ﷺ في أهْلِ بَيْتِهِ» . رواه البخاري
২/৩৫১। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মাওকূফ সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, ‘‘তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি তাঁর পরিবারবর্গের মাধ্যমে সম্মান প্রদর্শন কর।’’ (বুখারী)
* (অর্থাৎ তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করলে তাঁকে শ্রদ্ধা করা হবে।)
44- بَابُ تَوْقِيْرِ الْعُلَمَاءِ وَالْكِبَارِ وَأَهْلِ الْفَضْلِ
وَتَقْدِيْمِهِمْ عَلٰى غَيْرِهِمْ، وَرَفْعِ مَجَالِسِهِمْ، وَإِظْهَارِ مَرْتَبَتِهِمْ
পরিচ্ছেদ - ৪৪ : উলামা, বয়স্ক ও সম্মানী ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা করা, তাঁদেরকে অন্যান্যদের উপর প্রাধান্য দেওয়া, তাঁদের উচ্চ আসন দেওয়া এবং তাঁদের মর্যাদা প্রকাশ করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ﴾ [الزمر: ٩]
অর্থাৎ “বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? বুদ্ধিমান লোকেরাই কেবল উপদেশ গ্রহণ করে।” (সূরা যুমার ৯ আয়াত)
1/352. وَعَن أَبي مَسعُودٍ عُقبَةَ بنِ عَمرٍو البَدرِي الأَنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَؤُمُّ القَوْمَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ الله، فَإنْ كَانُوا في القِراءَةِ سَوَاءً، فأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ، فَإنْ كَانُوا في السُّنَّةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ كَانُوا في الهِجْرَةِ سَوَاءً، فَأَقْدَمُهُمْ سِنّاً، وَلاَ يَؤُمّنَّ الرَّجُلُ الرَّجُلَ في سُلْطَانِهِ، وَلاَ يَقْعُدْ في بَيْتِهِ عَلَى تَكْرِمَتِهِ إلاَّ بِإذْنهِ». رواه مسلم
وفي رواية لَهُ: «فَأقْدَمُهُمْ سِلْماً» بَدَلَ «سِنّاً» أيْ إسْلاماً .
وفي رواية: «يَؤُمُّ القَومَ أقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ، وَأقْدَمُهُمْ قِراءةً، فَإنْ كَانَتْ قِرَاءتُهُمْ سَوَاءً فَيَؤُمُّهُمْ أقْدَمُهُمْ هِجْرَةً، فَإنْ كَانُوا في الهِجْرَةِ سَواء، فَليَؤُمُّهُمْ أكْبَرُهُمْ سِنّاً».
১/৩৫২। আবূ মাসঊদ উক্ববাহ ইবনে ‘আমর বাদরী আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জামাআতের ইমামতি ঐ ব্যক্তি করবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল কুরআন পড়তে জানে। যদি তারা পড়াতে সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে যে সুন্নাহ (হাদীস) বেশী জানে সে (ইমামতি করবে)। অতঃপর তারা যদি সুন্নাহতে সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে সর্বাগ্রে হিজরতকারী। যদি হিজরতে সমান হয়, তাহলে তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ (ইমামতি করবে)। আর কোনো ব্যক্তি যেন কোনো ব্যক্তির নেতৃত্বস্থলে ইমামতি না করে এবং গৃহে তার বিশেষ আসনে তার বিনা অনুমতিতে না বসে।’’ (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’র পরিবর্তে ‘সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারী’ শব্দ রয়েছে।
আর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘জামাআতের ইমামতি করবে, যে তাদের মধ্যে বেশী ভালো কুরআন পড়তে পারে, যার ক্বিরাআত বেশী ভালো, অতঃপর ক্বিরাআতে সবাই সমান হলে সে ইমামতি করবে, যে তাদের মধ্যে আগে হিজরত করেছে। হিজরতে সবাই সমান হলে সে ইমামতি করবে, যে তাদের মধ্যে বয়সে বড়।’’
2/353. وَعَنهُ، قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا في الصَّلاةِ، وَيَقُولُ: «اسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا، فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ، لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رواه مسلم
২/৩৫৩। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায শুরু করার সময় আমাদের (বাজুর উপরি অংশে) কাঁধ ছুঁয়ে বলতেন, ‘‘তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও এবং বিভিন্নরূপে দাঁড়ায়ো না, (নতুবা) তোমাদের অন্তরসমূহ বিভিন্ন হয়ে যাবে। আর তোমাদের মধ্যে যারা বয়ঃপ্রাপ্ত ও বুদ্ধিমান, তারাই যেন আমার নিকটে (প্রথম কাতারে আমার পশ্চাতে) থাকে। অতঃপর যারা বয়স ও বুদ্ধিতে তাদের নিকটবর্তী তারা। অতঃপর তাদের যারা নিকটবর্তী তারা।’’(মুসলিম)
3/354. وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لِيَلِني مِنْكُمْ أُولُوا الأحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ»ثَلاثاً: «وَإيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الأسْوَاق». رواه مسلم
৩/৩৫৪। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারা যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়। অতঃপর যারা (উভয় ব্যাপারে) তাদের নিকটবর্তী।’’ এরূপ তিনি তিন বার বললেন। (অতঃপর তিনি বললেন,) ‘‘আর তোমরা (মসজিদে) বাজারের ন্যায় হৈচৈ করা হতে দূরে থাকো।’’ (মুসলিম)
4/355. وَعَن أَبي يَحيَى، وَقِيلَ : أَبي مُحَمَّدٍ سَهلِ بنِ أَبي حَثْمَةَ الأنصَارِي رضي الله عنه، قَالَ : انطَلَقَ عَبدُ اللهِ ابنُ سهْلٍ وَمُحَيِّصَةُ بنُ مَسْعُودٍ إِلَى خَيْبَرَ وَهِيَ يَومَئذٍ صُلْحٌ، فَتَفَرَّقَا، فَأتَى مُحَيِّصَةُ إِلَى عبدِ اللهِ بنِ سَهلٍ وَهُوَ يَتشَحَّطُ في دَمِهِ قَتِيلاً، فَدَفَنَهُ، ثُمَّ قَدِمَ المَدِينَةَ فَانْطَلَقَ عَبدُ الرَّحمَانِ بنُ سَهلٍ وَمُحَيِّصَةُ وحُوَيِّصَةُ ابْنَا مَسْعُودٍ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، فَذَهَبَ عَبدُ الرَّحمَانِ يَتَكَلَّمُ، فَقَالَ: «كَبِّرْ كَبِّرْ»وَهُوَ أحْدَثُ القَوم، فَسَكَتَ، فَتَكَلَّمَا، فَقَالَ: «أتَحْلِفُونَ وتَسْتَحِقُّونَ قَاتِلَكُمْ ؟»وذكر تمام الحديث . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৫৫। আবূ ইয়াহয়্যা মতান্তরে আবূ মুহাম্মাদ সাহ্ল ইবনে আবূ হাসমা আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে সাহ্ল এবং মুহাইয়িস্বাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খায়বার রওয়ানা হলেন। সে সময় (সেখানকার ইয়াহুদী এবং মুসলিমের মধ্যে) সন্ধি ছিল। (খায়বার পৌঁছে স্ব স্ব প্রয়োজনে) তাঁরা পরস্পর পৃথক হয়ে গেলেন। অতঃপর মুহাইয়িস্বাহ আব্দুল্লাহ ইবনে সাহলের নিকট এলেন, যখন তিনি আহত হয়ে রক্তাক্ত দেহে তড়পাচ্ছিলেন। সুতরাং মুহাইয়িস্বাহ তাঁকে (তাঁর মৃত্যুর পর) সেখানেই সমাধিস্থ করলেন। তারপর তিনি মদীনা এলেন। (মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মৃতের ভাই) আব্দুর রহমান ইবনে সাহ্ল এবং মাসউদের দুই ছেলে মুহাইয়িস্বাহ ও হুওয়াইয়িস্বাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গেলেন। আব্দুর রহমান কথা বলতে গেলেন। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলতে দাও, বয়োজ্যেষ্ঠকে কথা বলতে দাও।’’ আর ওঁদের মধ্যে আব্দুর রহমান বয়সে ছোট ছিলেন। ফলে তিনি চুপ হয়ে গেলেন এবং তাঁরা দু’জন কথা বললেন। (সব ঘটনা শোনার পর) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি কসম খাচ্ছ এবং (নিজ ভাইয়ের) হত্যাকারী থেকে অধিকার চাচ্ছ?’’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
5/356. وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ كَانَ يَجْمَعُ بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ مِنْ قَتْلَى أُحُد يَعْنِي في القَبْرِ، ثُمَّ يَقُولُ: «أيُّهُمَا أكْثَرُ أخذاً للقُرآنِ ؟»فَإذَا أُشيرَ لَهُ إِلَى أحَدِهِمَا قَدَّمَهُ في اللَّحْدِ . رواه البخاري
৫/৩৫৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদের শহীদগণের দু’জনকে একটি কবরে একত্র করে জিজ্ঞেস করছিলেন, ‘‘এদের মধ্যে কুরআন হিফ্য কার বেশী আছে?’’ সুতরাং দু’জনের কোন একজনের দিকে ইশারা করা হলে প্রথমে তাঁকে বগলী কবরে রাখছিলেন। (বুখারী)
6/357. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «أرَانِي فِي المَنَامِ أتَسَوَّكُ بِسِوَاكٍ، فَجَاءَنِي رَجُلاَنِ، أحَدُهُما أَكبَرُ مِنَ الآخَرِ، فَنَاوَلْتُ السِّوَاكَ الأصْغَرَ، فَقِيلَ لِي : كَبِّرْ، فَدَفَعْتهُ إِلَى الأكْبَرِ مِنْهُمَا». رواه مسلم مسنداً والبخاري تعليقاً.
৬/৩৫৭। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি নিজেকে স্বপ্নে দাঁতন করতে দেখলাম। অতঃপর দু’জন লোক এল, একজন অপরজনের চেয়ে বড় ছিল। আমি ছোটজনকে দাঁতনটি দিলাম, তারপর আমাকে বলা হল, ‘বড়জনকে দাও।’ সুতরাং আমি তাদের মধ্যে বয়োজ্যেষ্ঠ লোকটিকে (দাঁতন) দিলাম।’’ (মুসলিম, বুখারী ছিন্ন সনদে)
7/358. وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ مِنْ إجْلالِ اللهِ تَعَالَى : إكْرَامَ ذِي الشَّيْبَةِ المُسْلِمِ، وَحَامِلِ القُرآنِ غَيْرِ الغَالِي فِيهِ، وَالجَافِي عَنْهُ، وَإكْرَامَ ذِي السُّلْطَانِ المُقْسِط». حديث حسن رواه أَبُو داود
৭/৩৫৮। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পাকা চুলওয়ালা বয়স্ক মুসলিমের, কুরআন বাহক (হাফেয ও আলেম)-এর যে কুরআনের ব্যাপারে অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞাকারী নয় এবং ন্যায়পরায়ণ বাদশাহর সম্মান করা এক প্রকার আল্লাহ তা‘আলাকে সম্মান করা।’’(আবূ দাউদ)
8/359. وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ غِيرنَا، وَيَعْرِفْ شَرَفَ كَبيرِنَا».حديث صحيح رواه أَبُو داود والترمذي، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن صحيح».وَفي رِوَايَةِ أبي دَاوُد: «حَقَّ كَبيرِنَا».
৮/৩৫৯। ‘আমর ইবনে শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি (শুআইব) তাঁর (আমরের) দাদা (আব্দুল্লাহর ইবনে আমর) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে আমার দলভুক্ত নয়, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের প্রতি দয়া করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান জানে না।’’ (সহীহ হাদীস, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ) আবূ দাঊদের এক বর্ণনায় আছেঃ ‘‘আমাদের বড়দের অধিকার জানে না।’’
9/360. وَعَنْ مَيْمُوْنَ بْنِ أَبِيْ شَبِيْبٍ رَحِمَهُ اللهُ أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا مَرَّ بِهَا سَائِلٌ، فَأَعْطَتْهُ كِسْرَةً، وَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ عَلَيْهِ ثِيَابٌ وهَيْئَةٌ، فَأَقْعَدََتْهُ، فَأَكَلَ فَقِيْلَ لَهَا فِيْ ذٰلِكَ ؟ فَقَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: « أَنْزِلُوْا النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ»رواه أبو داود . لٰكِنْ قَالَ : مَيْمُوْنُ لَمْ يُدْرِكْ عَائِشَةَ .
وَقَدْ ذَكَرَهُ مُسْلِمٌ فِيْ أَوَّلِ صَحِيْحِهِ تَعْلِيْقاً فَقَالَ : وَذُكَرَ عَنْ عائِشَةَ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: أَمَرَنَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنْ نُنْزِلَ النَّاسَ مَنَازِلَهُمْ، وَذَكَرَهُ الْحَاكِمُ أَبُوْ عَبْدِ اللهِ فِيْ كِتابِهِ: «مَعْرْفَةُ عُلُوْمِ الْحَدِيْثِ»وقال : هو حديثٌ صحيح .
৯/৩৬০। মাইমুন ইবনু আবি শাবীব রাহিমাহুল্লাহু থেকে বর্ণিত, ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সামনে দিয়ে একজন ভিক্ষুক যাচ্ছিল। তিনি তাকে এক টুকরা রুটি প্রদান করলেন। আবার তার সম্মুখ দিয়ে সজ্জিত পোশাকে এক ব্যক্তি যাচ্ছিল। তাকে তিনি বসালেন এবং খাবার খাওয়ালেন। এ ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : “মানুষকে তার মর্যাদা অনুযায়ী স্থান দাও।” হাদীসটি ইমাম আবূ দাউদ উদ্ধৃত করেছেন। কিন্তু বলেছেন, আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সঙ্গে মাইমুনের সাক্ষাৎ হয়নি। ইমাম মুসলিম তার সহীহ হাদীস গ্রন্থে এটাকে মু‘আল্লাক হাদীস হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘‘আমাদেরকে আদেশ করেছেন মানুষকে তার পদমর্যাদা অনুযায়ী স্থান দিতে’’। এ হাদীসটি ইমাম হাকিম আবূ ‘আবদুল্লাহ (রাহ
তার ‘‘মারিফাতু উলুমিল হাদীস’’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটি সহীহ হাদীস।
10/361. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ : قَدِمَ عُيَيْنَةُ بْنُ حِصْنٍ، فَنَزَلَ عَلَى ابْنِ أخِيهِ الحُرِّ بنِ قَيسٍ، وَكَانَ مِنَ النَّفَرِ الَّذِينَ يُدْنِيهِمْ عُمَرُ رضي الله عنه، وَكَانَ القُرَّاءُ أصْحَابَ مَجْلِس عُمَرَ رضي الله عنه وَمُشاوَرَتِهِ كُهُولاً كانُوا أَوْ شُبَّاناً، فَقَالَ عُيَيْنَةُ لابْنِ أخيهِ : يَا ابْنَ أخِي، لَكَ وَجْهٌ عِنْدَ هَذَا الأمِيرِ فَاسْتَأذِنْ لِي عَلَيهِ، فاسْتَأذَن فَأذِنَ لَهُ عُمَرُ. فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: هِي يَا ابنَ الخَطَّابِ، فَواللهِ مَا تُعْطِينَا الْجَزْلَ وَلا تَحْكُمُ فِينَا بالعَدْلِ. فَغَضِبَ عُمَرُ رضي الله عنه حَتَّى هَمَّ أنْ يُوقِعَ بِهِ. فَقَالَ لَهُ الحُرُّ : يَا أميرَ المُؤْمِنينَ، إنَّ الله تَعَالَى قَالَ لِنَبيِّهِ ﷺ: ﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩] وَإنَّ هَذَا مِنَ الجَاهِلِينَ، واللهِ مَا جَاوَزَهاَ عُمَرُ حِينَ تَلاَهَا، وكَانَ وَقَّافاً عِنْدَ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى . رواه البخاري
১০/৩৬১। ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন যে, উয়াইনাহ ইবনে হিস্বন এলেন এবং তাঁর ভাতিজা হুর্র ইবনে কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। এই (হুর্র) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর খেলাফত কালে ঐ লোকগুলির মধ্যে একজন ছিলেন যাদেরকে তিনি তাঁর নিকটে রাখতেন। আর কুরআন-বিশারদগণ বয়স্ক হন অথবা যুবক দল তাঁরা উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সভাষদ ও পরামর্শদাতা ছিলেন। উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে বললেন, ‘হে আমার ভ্রাতুষ্পুত্র! এই খলীফার কাছে তোমার বিশেষ সম্মান রয়েছে। তাই তুমি আমার জন্যে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অনুমতি চাও।’ ফলে তিনি অনুমতি চাইলেন। সুতরাং উমার তাকে অনুমতি দিলেন। অতঃপর যখন উয়াইনাহ ভিতরে প্রবেশ করলেন, তখন উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু)কে বললেন, ‘হে ইবনে খাত্ত্বাব! আল্লাহর কসম! আপনি আমাদেরকে পর্যাপ্ত দান দেন না এবং আমাদের মধ্যে ন্যায় বিচার করেন না!’ (এ কথা শুনে) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রেগে গেলেন। এমনকি তাকে মারতে উদ্যত হলেন। তখন হুর্র তাঁকে বললেন, ‘হে আমীরুল মু’মেনীন! আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে বলেন, ‘‘তুমি ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন কর। ভাল কাজের আদেশ প্রদান কর এবং মূর্খদিগকে পরিহার করে চল।’’ (সূরা আল আ’রাফ ১৯৮ আয়াত) আর এ এক মূর্খ।’ আল্লাহর কসম! যখন তিনি (হুর্র) এই আয়াত পাঠ করলেন, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটুকুও আগে বাড়লেন না। আর তিনি আল্লাহর কিতাবের কাছে (অর্থাৎ তাঁর নির্দেশ শুনে) থেমে যেতেন।(বুখারী)
11/362. وَعَن أَبي سَعِيدٍ سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ رضي الله عنه، قَالَ : لَقَد كُنتُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ غُلاماً، فَكُنْتُ أحْفَظُ عَنْهُ، فَمَا يَمْنَعُنِي مِنَ القَوْلِ إلاَّ أنَّ هَاهُنَا رِجَالاً هُمْ أسَنُّ مِنِّي . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/৩৬২। আবূ সাঈদ সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কিশোর ছিলাম। আমি তাঁর কথাগুলি মুখস্থ করে নিতাম। কিন্তু আমাকে বর্ণনা করতে একটাই জিনিস বাধা সৃষ্টি করত যে, সেখানে আমার চেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ উপস্থিত থাকত।’ (বুখারী ও মুসলিম)
12/363. وعن أَنس رضي الله عنه قال : قال رسول الله ﷺ: «ما أَكْرَم شَابٌّ شَيْخاً لِسِنِّهِ إِلاَّ قَيَّضَ اللهِ لَهُ مَنْ يُكْرِمُهُ عِنْد سِنِّه»رواه الترمذي وقال حديث غريب .
১২/৩৬৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি কোনো বৃদ্ধ লোককে কোনো যুবক তার বার্ধক্যের কারণে সম্মান দেখায়, তবে তার বৃদ্ধাবস্থায় আল্লাহ এমন লোককে নির্ধারণ করে দিবেন, যে তাকে সম্মান দেখাবে।” তিরমিযী হাদীসটিকে গরীব বলেছেন।
45- بَابُ زِيَارَةِ أَهْلِ الْخَيْرِ وَمُجَالَسَتِهِمْ وَصُحْبَتِهِمْ وَمَحَبَّتِهِمْ وَطَلَبِ زِيَارَتِهِمْ وَالدُّعَاءِ مِنْهُمْ وَزِيَارَةِ الْمَوَاضِعِ الْفَاضِلَةِ
পরিচ্ছেদ - ৪৫ : ভাল লোকদের সাথে সাক্ষাৎ করা, তাঁদের সাহচর্য গ্রহণ করা, তাঁদেরকে ভালবাসা, তাঁদেরকে বাড়িতে দাওয়াত দেওয়া, তাঁদের কাছে দো‘আ চাওয়া এবং বরকতময় স্থানসমূহের দর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ مُوسَىٰ لِفَتَىٰهُ لَآ أَبۡرَحُ حَتَّىٰٓ أَبۡلُغَ مَجۡمَعَ ٱلۡبَحۡرَيۡنِ أَوۡ أَمۡضِيَ حُقُبٗا ٦٠ ﴾ [الكهف: ٦٠] إِلَى قوله تَعَالَى : ﴿ قَالَ لَهُۥ مُوسَىٰ هَلۡ أَتَّبِعُكَ عَلَىٰٓ أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمۡتَ رُشۡدٗا ٦٦ ﴾ [الكهف: ٦٦]
অর্থাৎ “(স্মরণ কর,) যখন মূসা তার সঙ্গীকে বলেছিল, দুই সমুদ্রের সঙ্গমস্থলে না পৌঁছে আমি থামব না অথবা আমি যুগ যুগ ধরে চলতে থাকব।” -এখান থেকে আল্লাহর বাণী:- “মূসা তাকে বলল, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা হতে আমাকে শিক্ষা দেবেন এই শর্তে আমি আপনার অনুসরণ করব কি?” (সূরা কাহফ ৬০-৬৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ﴾ [الكهف: ٢٨]
অর্থাৎ “তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে।” (সূরা কাহফ ২৮ আয়াত)
1/364. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ : قَالَ أَبُو بَكرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ : انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أيْمَنَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَزُورُهَا، فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا، بَكَتْ، فَقَالاَ لَهَا : مَا يُبْكِيكِ ؟ أمَا تَعْلَمِينَ أنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لرَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَتْ : مَا أبْكِي أَنْ لاَ أَكُونَ أَعْلَمُ أنَّ مَا عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلَكِنْ أبكي أنَّ الوَحْيَ قدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّماءِ، فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى البُكَاءِ، فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا . رواه مسلم
১/৩৬৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাবসানের পর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’ সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম? তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে, তা অধিকতর উত্তম সে কথা আমি জানি না। কিন্তু আমি এজন্য কাঁদছি যে, আসমান হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে আইমান (তাঁর এ দুঃখজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম)
2/365. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ: «أنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَاً لَهُ في قَريَة أُخْرَى، فَأرْصَدَ الله تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكاً، فَلَمَّا أتَى عَلَيهِ، قَالَ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : أُريدُ أخاً لي في هذِهِ القَريَةِ . قَالَ : هَلْ لَكَ عَلَيهِ مِنْ نِعْمَة تَرُبُّهَا عَلَيهِ ؟ قَالَ : لا، غَيْرَ أنِّي أحْبَبْتُهُ في الله تَعَالَى، قَالَ : فإنِّي رَسُولُ الله إلَيْكَ بَأنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أحْبَبْتَهُ فِيهِ». رواه مسلم
২/৩৬৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফিরিশ্তাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন। যখন সে তাঁর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘এ লোকালয়ে আমার এক ভাই আছে, আমি তার কাছে যাচ্ছি।’ ফিরিশ্তা জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার প্রতি কি তার কোন অনুগ্রহ রয়েছে, যার বিনিময় দেওয়ার জন্য তুমি যাচ্ছ?’ সে বলল, ‘না, আমি তার নিকট কেবলমাত্র এই জন্য যাচ্ছি যে, আমি তাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ ফিরিশ্তা বললেন, ‘(তাহলে শোনো) আমি তোমার নিকট আল্লাহর দূত হিসাবে (এ কথা জানাবার জন্য) এসেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন; যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’(মুসলিম)
3/366. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ عَادَ مَرِيضاً أَوْ زَارَ أخاً لَهُ في اللهِ، نَادَاهُ مُنَادٍ : بِأنْ طِبْتَ، وَطَابَ مَمْشَاكَ، وَتَبَوَّأتَ مِنَ الجَنَّةِ مَنْزِلاً». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»، وفي بعض النسخ: «غريب»
৩/৩৬৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোনো রোগীকে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেয় অথবা তার কোনো আল্লাহর ওয়াস্তে কৃত ভাই এর সাথে সাক্ষাৎ করে, সে ব্যক্তিকে এক (গায়বী) আহ্বানকারী আহ্বান করে বলে, ‘সুখী হও তুমি, সুখকর হোক তোমার ঐ যাত্রা (সাক্ষাতের জন্য যাওয়া)। আর তোমার স্থান হোক জান্নাতের প্রাসাদে।’’(তিরমিযী, হাসান বা গরীব সূত্রে)
4/367. وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «إِنَّمَا مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ وَجَلِيسِ السُّوءِ، كَحَامِلِ المِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إمَّا أنْ يُحْذِيَكَ، وَإمَّا أنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الكِيرِ : إمَّا أنْ يُحْرِقَ ثِيَابَكَ، وَإمَّا أنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحاً مُنْتِنَةً». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৩৬৭। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হল, কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) ও হাপরে ফুৎকারকারী (কামারের) ন্যায়। কস্তুরী বহনকারী (আতরওয়ালা) হয়তো তোমাকে কিছু দান করবে অথবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে অথবা তার কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে। আর হাপরে ফুৎকারকারী (কামার) হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ পাবে।’’ (বুখারী, মুসলিম)
5/368. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «تُنْكَحُ المَرْأَةُ لأَرْبَعٍ : لِمَالِهَا، وَلِحَسَبِهَا، وَلِجَمَالِهَا، وَلِدِينِهَا، فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاك». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৩৬৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘চারটি গুণ দেখে মহিলাকে বিবাহ করা হয়; তার ধন-সম্পদ, তার বংশ মর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য এবং তার দ্বীন-ধর্ম দেখে। তুমি দ্বীনদার পাত্রী লাভ করে সফলকাম হও। (অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।)’’ (বুখারী)
* এর অর্থঃ লোকেরা সাধারণতঃ মহিলার এই চার গুণ দেখে বিবাহ করে থাকে। তুমি দ্বীনদার পেতে আগ্রহী হও, তাকে বিবাহ কর এবং তার সঙ্গ ও সাহচর্য পেয়ে ধন্য হও।
6/369. وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : قَالَ النَّبيُّ ﷺ لِجِبرِيلَ: «مَا يَمْنَعُكَ أنْ تَزُورَنَا أكثَرَ مِمَّا تَزُورُنَا ؟»فَنَزَلَتْ : ﴿ وَمَا نَتَنَزَّلُ إِلَّا بِأَمۡرِ رَبِّكَۖ لَهُۥ مَا بَيۡنَ أَيۡدِينَا وَمَا خَلۡفَنَا وَمَا بَيۡنَ ذَٰلِكَۚ ﴾ [مريم: ٦٤] رواه البخاري
৬/৩৬৯। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিব্রাঈলকে বললেন, ‘আপনি যতটা আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তার চেয়ে বেশী সাক্ষাৎ করতে আপনার বাধা কিসের?’ ফলে এ আয়াত অবতীর্ণ হল, ‘‘(জিব্রাঈল বললেন,) আমরা তোমার প্রতিপালকের আদেশ ব্যাতিরেকে অবতরণ করি না। যা আমাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে এবং উভয়ের মধ্যস্থলে রয়েছে সে সকলই তাঁর মালিকানাধীন।’’ (সূরা মারয়্যাম ৬৪ আয়াত, বুখারী)
7/370. وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «لا تُصَاحِبْ إلاَّ مُؤْمِناً، وَلاَ يَأْكُلْ طَعَامَكَ إلاَّ تَقِيٌّ». رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد لا بأس بِهِ .
৭/৩৭০। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মু’মিন মানুষ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গী হয়ো না এবং তোমার খাবার যেন পরহেযগার ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ না খায়।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
8/371. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «الرَّجُلُ عَلَى دِينِ خَلِيلِهِ، فَليَنْظُرْ أَحَدُكُمْ مَنْ يُخَالِلُ». رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح، وَقالَ الترمذي: «حديث حسن»
৮/৩৭১। আবু হুরাইরাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের উপর হয়। অতএব তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করছে।’’ (আবূ দাউদ, তিরিমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
9/372. وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وَفي رِوَايَةٍ: قِيلَ لِلنَّبِي ﷺ: الرَّجُلُ يُحِبُّ القَومَ وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ؟ قَالَ: «المَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ».
৯/৩৭২। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষ (দুনিয়াতে) যাকে ভালবাসে (কিয়ামতে) সে তারই সাথী হবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘‘কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি। তিনি বললেন, মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
10/373. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ أَعرَابِياً قَالَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ : مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَا أعْدَدْتَ لَهَا ؟»قَالَ : حُبَّ الله وَرَسُولهِ، قَالَ: «أنْتَ مَعَ مَنْ أحْبَبْتَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ، وهذا لفظ مسلم، وفي رواية لهما : مَا أعْدَدْتُ لَهَا مِنْ كَثيرِ صَوْمٍ، وَلاَ صَلاَةٍ، وَلاَ صَدَقَةٍ، وَلَكِنِّي أُحِبُّ الله وَرَسُولَهُ.
১০/৩৭৩। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কিয়ামত কবে ঘটবে?’ তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তুমি এর জন্য কি প্রস্তুতি নিয়েছ?’’ সে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ভালবাসা।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
উভয়ের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আমি বেশি নামায-রোযা ও সাদকাহর মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে পরিনি। কিন্তু আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসি। (তিনি বললেন, তুমি যাকে ভালবাস, তারই সাথী হবে।)’’
11/374. وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ تَقُولُ في رَجُلٍ أَحَبَّ قَوْماً وَلَمْ يَلْحَقْ بِهِمْ؟ فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «المَرْءُ مَعَ مَنْ أحَبَّ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১১/৩৭৪। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! কোনো ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়কে ভালবাসে, কিন্তু (আমলে) তাদের সমকক্ষ হতে পারেনি।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মানুষ যাকে ভালবাসে, সে তারই সাথী হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
12/375. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «النَّاسُ مَعَادِنٌ كَمَعَادِنِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، خِيَارُهُمْ في الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ في الإسْلاَمِ إِذَا فَقُهُوا، وَالأرْوَاحُ جُنُودٌ مُجَنَّدَةٌ، فَمَا تَعَارَفَ مِنْهَا ائْتَلَفَ، ومَا تَنَاكَرَ مِنْهَا اخْتَلَفَ». رواه مسلم
১২/৩৭৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সোনা-রূপার খনিরাজির মত মানব জাতিও নানা গোত্রের খনিরাজি। যারা জাহেলী যুগে উত্তম ছিল, তারা ইসলামী যুগেও উত্তম; যখন তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান লাভ করে। আর আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’(মুসলিম)
13/376. وروى البخاري قوله: «الأَرْوَاحُ»إِلخ، من رواية عائشة رضي اللَّه عنها .
১৩/৩৭৬। তবে বুখারী ‘‘আত্মাসমূহ সমবেত সৈন্যদলের মত। সুতরাং আপোসে যে আত্মাদল পরিচিত ও অভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে মিলন ও বন্ধুত্ব স্থাপিত হয়ে থাকে এবং যে আত্মাদল আপোসে অপরিচিত ও ভিন্ন প্রকৃতির হয়, সে আত্মাদলের মাঝে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য প্রকট হয়ে ওঠে।’’ এ অংশটুকু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। (বুখারী)
14/377. وَعَن أُسَيْرِ بنِ عَمرٍو، وَيُقَالُ : ابنِ جَابِرٍ، قَالَ : كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه إِذَا أتَى عَلَيهِ أمْدَادُ أهْلِ اليَمَنِ سَألَهُمْ : أفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ ؟ حَتَّى أتَى عَلَى أُوَيْسٍ رضي الله عنه، فَقَالَ لَهُ : أنْتَ أُوَيْسُ ابْنُ عَامِر ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ، فَبَرَأْتَ مِنْهُ إلاَّ مَوْضِعَ دِرْهَمٍ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : لَكَ وَالِدةٌ ؟ قَالَ : نَعَمْ . قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُويْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادِ أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ كَانَ بِهِ بَرَصٌ، فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ موْضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالدةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى الله لأَبَرَّهُ، فإنِ اسْتَطَعْتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَل»فَاسْتَغْفِرْ لي فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ : أيْنَ تُريدُ ؟ قَالَ : الكُوفَةَ، قَالَ : ألاَ أكْتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ : أكُونُ في غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ، فَلَمَّا كَانَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أشْرَافِهِمْ، فَوافَقَ عُمَرَ، فَسَألَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، فَقَالَ : تَرَكْتُهُ رَثَّ البَيْتِ قَليلَ المَتَاعِ، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «يَأتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أمْدَادٍ مِنْ أهْلِ اليَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ إلاَّ مَوضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ لَوْ أقْسَمَ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ، فَإنِ اسْتَطْعتَ أنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ، فَافْعَلْ»فَأتَى أُوَيْساً، فَقَالَ : اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ : أنْتَ أحْدَثُ عَهْداً بسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لي . قَالَ : لَقِيتَ عُمَرَ ؟ قَالَ : نَعَمْ، فاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ . رواه مسلم
لَقِيَهُ مِنْكُمْ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
وفي رِوَايَةٍ لَهُ : عَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ : إنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ : أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَمُرُوهُ، فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
১৪/৩৭৭। উসাইর ইবনে ‘আমর মতান্তরে ইবনে জাবের থেকে বর্ণিত, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট যখনই ইয়ামান থেকে সহযোগী যোদ্ধারা আসতেন, তখনই তিনি তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘তোমাদের মধ্যে কি উয়াইস ইবনে ‘আমের আছে?’ শেষ পর্যন্ত (এক দলের সঙ্গে) উয়াইস (ক্বারনী) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (মদীনা) এলেন। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি উয়াইস ইবনে আমের?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ললেন, ‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের)?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি (পুনরায়) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমার শরীরে শ্বেত রোগ ছিল, তা এক দিরহাম সম জায়গা ব্যতীত (সবই) দূর হয়ে গেছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘তোমার মা আছে?’ উয়াইস বললেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনে আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের কাছে আসবে। তার দেহে ধবল দাগ আছে, যা এক দিরহাম সম স্থান ছাড়া সবই ভাল হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী হবে। সে যদি আল্লাহর প্রতি কসম খায়, তবে আল্লাহ তা পূরণ করে দেবেন। সুতরাং (হে উমার!) তুমি যদি নিজের জন্য তাকে দিয়ে ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’ সুতরাং তুমি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা কর।’
শোনামাত্র উয়াইস উমারের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। অতঃপর উমার তাঁকে বললেন, ‘তুমি কোথায় যাবে?’ উয়াইস বললেন, ‘কূফা।’ তিনি বললেন, ‘আমি কি তোমার জন্য সেখানকার গর্ভনরকে পত্র লিখে দেব না?’ উয়াইস বললেন, ‘আমি সাধারণ গরীব-মিসকীনদের সাথে থাকতে ভালবাসি।’
অতঃপর যখন আগামী বছর এল তখন কূফার সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হজ্জে এল। সে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তাকে উয়াইস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল, ‘আমি তাঁকে এই অবস্থায় ছেড়ে এসেছি যে, তিনি একটি ভগ্ন কুটির ও স্বল্প সামগ্রীর মালিক ছিলেন।’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘‘মুরাদ (পরিবারের) এবং ক্বার্ন্ (গোত্রের) উয়াইস ইবনে আমের ইয়ামানের সহযোগী ফৌজের সঙ্গে তোমাদের নিকট আসবে। তার দেহে ধবল রোগ আছে, যা এক দিরহামসম স্থান ছাড়া সবই ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের সাথে সদাচারী (মা-ভক্ত) হবে। সে যদি আল্লাহর উপর কসম খায়, তাহলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেবেন। যদি তুমি তোমার জন্য তার দ্বারা ক্ষমাপ্রার্থনার দো‘আ করাতে পার, তাহলে অবশ্যই করবে।’’
অতঃপর সে (কূফার লোকটি হজ্জ সম্পাদনের পর) উয়াইস (ক্বারনীর) নিকট এল এবং বলল, ‘আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ উয়াইস বললেন, ‘তুমি এক শুভযাত্রা থেকে নব আগমন করেছ। অতএব তুমি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘তুমি উমারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছ?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ।’ সুতরাং উয়াইস তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করলেন। (এসব শুনে) লোকেরা (উয়াইসের) মর্যাদা জেনে নিল। সুতরাং তিনি তার সামনের দিকে (অন্যত্র) চলে গেলেন। (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় উসাইর ইবনে জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, কুফার কিছু লোক উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এল। তাদের মধ্যে একটি লোক ছিল, সে উয়াইসের সাথে উপহাস করত। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে ক্বার্ন গোত্রের কেউ আছে কি?’ অতঃপর ঐ ব্যক্তি এল। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের নিকট ইয়ামান থেকে উয়াইস নামক একটি লোক আসবে। সে ইয়ামানে কেবলমাত্র তার মা-কে রেখে আসবে। তার দেহে ধবল রোগ ছিল। সে আল্লাহর কাছে দো‘আ করলে আল্লাহ তা এক দীনার অথবা এক দিরহাম সম স্থান ব্যতীত সবই দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমাদের কারো যদি তার সাথে সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন তোমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘সর্বশ্রেষ্ঠ তাবেঈন হল এক ব্যক্তি, যাকে উয়াইস বলা হয়। তার মা আছে। তার ধবল রোগ ছিল। তোমরা তাকে আদেশ করো, সে যেন তোমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমাপ্রার্থনা করে।’’
15/378. وَعَنْ عَمَرَ بْنِ الْخَطَّابَ رضي الله عنه قَالَ : اِسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ ﷺ فِيْ العُمْرَةِ، فَأَذِنَ لِيْ، وَقَالَ: «لَا تَنْسَنَا يَا أَخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ»فَقَالَ كَلِمَةً مَا يسُرُّنِيْ أَنَّ لِيْ بِهَا الـدُّنْيَا. وفي روايةٍ قَالَ: «أَشْرِكْنَا يَا أخَيَّ فِيْ دُعَائِكَ».حديثٌ صحيحٌ رواه أَبو داود، والترمذي وقال : حديثٌ حسنٌ صحيحٌ .
১৫/৩৭৮। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আমি উমরাহ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, “প্রিয় ভাই আমার, তোমার দু’আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না।” (উমার বলেন) এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে গোটা পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক (বিবেচিত) নয়। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ভাইয়া! তোমার দু‘আয় তুমি আমাদেরকেও শরীক রেখো।” (আবূ দাউদ ও তিরমিযি) যঈফ।
15/379. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ : كَانَ النَّبيُّ ﷺ يَزُورُ قُبَاءَ رَاكِباً وَمَاشِياً، فَيُصَلِّي فِيهِ رَكْعَتَيْنِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وفي رواية : كَانَ النَّبيُّ ﷺ يَأتي مَسْجِد قُبَاءَ كُلَّ سَبْتٍ رَاكباً، وَمَاشِياً وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَفْعَلُهُ .
১৫/৩৭৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সওয়ার হয়ে ও পায়ে হেঁটে (মসজিদে) কুবার যিয়ারত করতেন। অতঃপর তাতে দু’ রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবার সওয়ার হয়ে এবং কখনো পায়ে হেঁটে মসজিদে কুবা যেতেন। আর ইবনে উমারও এরূপ করতেন।’
* (প্রকাশ থাকে যে, এ মসজিদে ক্বুবায় কোনো নামায পড়লে একটি উমরাহ আদায় করার সমান সওয়াব লাভ হয়।) (ইবনে মাজাহ ১৪১২নং, সহীহ নাসাঈ ৬৭৫নং)
46- بَابُ فَضْلِ الْحُبِّ فِي اللهِ وَالْحَثِّ عَلَيْهِ
وَإِعْلاَمِ الرَّجُلِ مَنْ يُحِبُّهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ، وَمَاذَا يَقُوْلُ لَهُ إِذَا أَعْلَمَهُ
পরিচ্ছেদ - ৪৬ : আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো সাথে ভালবাসা রাখার মাহাত্ম্য এবং তার প্রতি উৎসাহ প্রদান ও যে ব্যক্তি অন্য কাউকে ভালবাসে তাকে সে ব্যাপারে অবহিত করা ও কী বলে অবহিত করবে তার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿مُّحَمَّدٞ رَّسُولُ ٱللَّهِۚ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى ٱلۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيۡنَهُمۡۖ تَرَىٰهُمۡ رُكَّعٗا سُجَّدٗا يَبۡتَغُونَ فَضۡلٗا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٗاۖ سِيمَاهُمۡ فِي وُجُوهِهِم مِّنۡ أَثَرِ ٱلسُّجُودِۚ ذَٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِۚ وَمَثَلُهُمۡ فِي ٱلۡإِنجِيلِ كَزَرۡعٍ أَخۡرَجَ شَطَۡٔهُۥ فََٔازَرَهُۥ فَٱسۡتَغۡلَظَ فَٱسۡتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِۦ يُعۡجِبُ ٱلزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ ٱلۡكُفَّارَۗ وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ مِنۡهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمَۢا ٢٩ ﴾ [الفتح: ٢٩] إِلَى آخر السورة
অর্থাৎ “মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল; আর তার সহচরগণ কাফেরদের প্রতি কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল; তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত অবস্থায় আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনা করতে দেখবে। তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার চিহ্ন থাকবে, তাওরাতে তাদের বর্ণনা এরূপই। আর ইঞ্জীলে তাদের দৃষ্টান্ত একটি চারা গাছ, যা হতে নির্গত হয় কিশলয়, অতঃপর এটা শক্ত ও পুষ্ট হয় এবং দৃঢ়ভাবে কাণ্ডের উপর দাঁড়িয়ে যায়, যা চাষীদেরকে মুগ্ধ করে। এভাবে (আল্লাহ বিশ্বাসীদের সমৃদ্ধি দ্বারা) অবিশ্বাসীদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। ওদের মধ্যে যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমা ও মহা পুরস্কারের।” (সূরা ফাত্হ ২৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ تَبَوَّءُو ٱلدَّارَ وَٱلۡإِيمَٰنَ مِن قَبۡلِهِمۡ يُحِبُّونَ مَنۡ هَاجَرَ إِلَيۡهِمۡ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمۡ حَاجَةٗ مِّمَّآ أُوتُواْ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ٩ ﴾ [الحشر: ٩]
অর্থাৎ “আর (মুহাজিরদের আগমনের) পূর্বে যারা এ নগরী (মদীনা)তে বসবাস করেছে ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে তারা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে।” (সূরা হাশ্র ৯ আয়াত)
1/380. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «ثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ بِهِنَّ حَلاوَةَ الإيمَانِ : أنْ يَكُونَ اللهُ وَرَسُولُهُ أحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سَوَاهُمَا، وَأنْ يُحِبّ المَرْءَ لاَ يُحِبُّهُ إلاَّ للهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أنْ يَعُودَ في الكُفْرِ بَعْدَ أنْ أنْقَذَهُ الله مِنْهُ، كَمَا يَكْرَهُ أنْ يُقْذَفَ في النَّارِ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩৮০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকে, সে ঈমানের মিষ্টতা লাভ করে থাকে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হবে; কাউকে ভালোবাসলে কেবল আল্লাহ’র জন্যই ভালবাসবে। আর কুফরী থেকে তাকে আল্লাহর বাঁচানোর পর পুনরায় তাতে ফিরে যাওয়াকে এমন অপছন্দ করবে, যেমন সে নিজেকে আগুনে নিক্ষিপ্ত করাকে অপছন্দ করে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
2/381. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ : إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله - عز وجل -، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ : إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
২/৩৮১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আয্যা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহ্বান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে অশ্রু বয়ে যায়।’’(বুখারী-মুসলিম)
3/382. وَعَنهُ، قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنّ الله تَعَالَى يَقُولُ يَوْمَ القِيَامَةِ : أيْنَ المُتَحَابُّونَ بِجَلاَلِي ؟ اليَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلِّي». رواه مسلم
৩/৩৮২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘আমার মহিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য পরস্পরকে যারা ভালবেসেছিল তারা কোথায়? আজকের দিন আমি তাদেরকে আমার ছায়ায় আশ্রয় দেব, যেদিন আমার (আরশের) ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া নেই।’’(মুসলিম)
4/383. وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ تَدْخُلُوا الجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا، وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أوَلاَ أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أفْشُوْا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ». رواه مسلم
৪/৩৮৩। উক্ত রাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না; যতক্ষণ না তোমরা মু’মিন হবে। এবং তোমরা মু’মিন হতে পারবে না; যে পর্যন্ত না তোমরা পরস্পরে ভালবাসা রাখবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজ বলে দেব না, যখন তোমরা তা করবে, তখন তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’(মুসলিম)
5/384. وَعَنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ: «أنَّ رَجُلاً زَارَ أَخَاً لَهُ في قَريَة أُخْرَى، فَأرْصَدَ الله تَعَالَى عَلَى مَدْرَجَتِهِ مَلَكاً»، وَذَكَرَ الحدِيثَ إلى قَولِهِ: « إِنَّ اللهَ قَدْ أَحَبَّكَ كَمَا أحْبَبْتَهُ فِيهِ». رواه مسلم
৫/৩৮৪। উক্ত রাবী থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি অন্য কোন গ্রামে তার ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য বের হল। আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তায় এক ফিরিশ্তাকে বসিয়ে দিলেন, তিনি তার অপেক্ষা করতে থাকলেন।’’ অতঃপর বাকী হাদীস উল্লেখ করে বললেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে ভালবাসেন যেমন তুমি তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাস।’’(মুসলিম) (৩৬৫ নং হাদীস দ্রষ্টব্য)
6/385. وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ أنَّهُ قَالَ في الأنصَارِ: «لاَ يُحِبُّهُمْ إلاَّ مُؤمِنٌ، وَلاَ يُبْغِضُهُمْ إلاَّ مُنَافِقٌ، مَنْ أحَبَّهُمْ أَحَبَّهُ الله، وَمَنْ أبْغَضَهُمْ أبْغَضَهُ الله». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৩৮৫। বারা’ ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘তাদেরকে কেবলমাত্র মু’মিনই ভালোবাসে এবং তাদের প্রতি কেবলমাত্র মুনাফিকই বিদ্বেষ রাখে। যে ব্যক্তি তাদেরকে ভালবাসবে, আল্লাহও তাকে ভালবাসবেন। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি বিদ্বেষ রাখবে, আল্লাহও তার প্রতি বিদ্বেষ রাখবেন।’’(বুখারী-মুসলিম)
7/386. وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «قَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - : المُتَحَابُّونَ في جَلالِي، لَهُمْ مَنَابِرُ مِنْ نُورٍ يَغْبِطُهُمُ النَّبِيُّونَ وَالشُّهَدَاءُ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح».
৭/৩৮৬। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আমার মর্যাদার ওয়াস্তে যারা আপোসে ভালবাসা স্থাপন করবে, তাদের (বসার) জন্য হবে নূরের মিম্বর; যা দেখে নবী ও শহীদগণ ঈর্ষা করবেন।’’(তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
8/387. وَعَن أَبي إِدرِيسَ الخَولاَني رَحِمَهُ الله، قَالَ :دخَلْتُ مَسْجِدَ دِمَشْقَ، فَإذَا فَتَىً بَرَّاقُ الثَّنَايَا وَإِذَا النَّاسُ مَعَهُ، فَإِذَا اخْتَلَفُوا في شَيْءٍ، أَسْنَدُوهُ إِلَيْه، وَصَدَرُوا عَنْ رَأيِهِ، فَسَأَلْتُ عَنْهُ، فَقِيلَ : هَذَا مُعَاذُ بْنُ جَبَل رضي الله عنه. فَلَمَّا كَانَ مِنَ الغَدِ، هَجَّرْتُ، فَوَجَدْتُهُ قَدْ سَبَقَنِي بالتَّهْجِيرِ، ووَجَدْتُهُ يُصَلِّي، فانْتَظَرتُهُ حَتَّى قَضَى صَلاتَهُ، ثُمَّ جِئْتُهُ مِنْ قِبَلِ وَجْهِهِ، فَسَلَّمْتُ عَلَيهِ، ثُمَّ قُلْتُ : وَاللهِ إنّي لأَحِبُّكَ لِلّهِ، فَقَالَ : آلله ؟ فَقُلْتُ : اللهِ، فَقَالَ : آللهِ ؟ فَقُلْتُ : اللهِ، فَأخَذَنِي بِحَبْوَةِ رِدَائِي، فجبذني إِلَيْهِ، فَقَالَ : أبْشِرْ ! فإنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «قَالَ الله تَعَالَى: وَجَبَتْ مَحَبَّتي لِلْمُتَحَابِّينَ فِيَّ، وَالمُتَجَالِسينَ فِيَّ، وَالمُتَزَاوِرِينَ فِيَّ، وَالمُتَبَاذِلِينَ فِيَّ».حديث صحيح رواه مالك في الموطأ بإسناده الصحيح .
৮/৩৮৭। আবূ ইদ্রীস খাওলানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি দিমাশকের মসজিদে প্রবেশ করে এক যুবককে দেখতে পেলাম, তাঁর সামনের দাঁতগুলি খুবই চকচকে এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও (বসে) রয়েছে। যখন তারা কোনো বিষয়ে মতভেদ করছে, তখন (সিদ্ধান্তের জন্য) তাঁর দিকে রুজু করছে এবং তাঁর মত গ্রহণ করছে। সুতরাং আমি তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম (যে, ইনি কে)? (আমাকে) বলা হল যে, ‘ইনি মু‘আয ইবন জাবাল।’ অতঃপর আগামী কাল আমি আগেভাগেই মসজিদে গেলাম। কিন্তু দেখলাম সেই (যুবকটি) আমার আগেই পৌঁছে গেছেন এবং তাঁকে নামাযরত অবস্থায় পেলাম। সুতরাং তাঁর নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর আমি তাঁর সামনে এসে তাঁকে সালাম দিলাম। তারপর বললাম, ‘আল্লাহর কসম! আমি আপনাকে আল্লাহর ওয়াস্তে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম?’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর কসম।’ অতঃপর তিনি আমার চাদরের আঁচল ধরে আমাকে তাঁর দিকে টানলেন, তারপর বললেন, ‘সুসংবাদ নাও।’ কারণ, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘‘আমার সন্তুষ্টি লাভের জন্য যারা পরস্পরের মধ্যে মহব্বত রাখে, একে অপরের সঙ্গে বসে, একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ এবং একে অপরের জন্য খরচ করে, তাদের জন্য আমার মহব্বত ও ভালবাসা ওয়াজেব হয়ে যায়।’’(মুওয়াত্তা, বিশুদ্ধ সূত্রে)
9/388. وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَادِ بنِ مَعدِ يكَرِب رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا أَحَبَّ الرَّجُلُ أخَاهُ، فَليُخْبِرْهُ أَنَّهُ يُحِبُّهُ»رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالتِّرمِذِي، وَقالَ: «حديث صحيح»
৯/৩৮৮। আবূ কারীমা মিকদাদ ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কোন মানুষ তার ভাইকে ভালবাসে, তখন সে যেন তাকে জানিয়ে দেয় যে, সে তাকে ভালবাসে।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
10/389. وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، وَاللهِ، إنِّي لأُحِبُّكَ، ثُمَّ أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لاَ تَدَعَنَّ في دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ تَقُولُ : اَللهم أعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ».حديث صحيح، رواه أَبُو داود والنسائي بإسناد صحيح
১০/৩৮৯। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বললেন, ‘‘হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে ভালবাসি। অতঃপর আমি তোমাকে অসিয়ত করছি, হে মু‘আয! তুমি প্রত্যেক নামাযের পশ্চাতে এ শব্দগুলো বলা ছাড়বে না, ‘আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী আলা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার যিকর করার, তোমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার এবং উত্তমরূপে তোমার ইবাদত করার ব্যাপারে আমাকে সাহায্য কর।) (আবূ দাউদ, নাসায়ী বিশুদ্ধ সূত্রে)
11/390. وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه : أنَّ رَجُلاً كَانَ عِنْدَ النَّبيِّ، ﷺ، فَمَرَّ رَجُلٌ بِهِ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ الله، أنِّي لأُحِبُّ هَذَا، فَقَالَ لَهُ النَّبيّ ﷺ: «أأعْلَمْتَهُ ؟»قَالَ : لاَ . قَالَ: «أعْلِمْهُ»فَلَحِقَهُ، فَقَالَ : إنِّي أُحِبُّكَ في الله، فَقَالَ : أَحَبَّكَ الَّذِي أحْبَبْتَنِي لَهُ . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
১১/৩৯০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট (বসে) ছিল। অতঃপর এক ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। (যে বসেছিল) সে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! নিঃসন্দেহে আমি একে ভালবাসি।’ (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘‘তুমি কি (এ কথা) তাকে জানিয়েছ?’’ সে বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং সে (দ্রুত) তার পিছনে গিয়ে (তাকে) বলল, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে তোমাকে ভালবাসি।’ সে বলল, ‘যাঁর ওয়াস্তে তুমি আমাকে ভালবাস, তিনি তোমাকে ভালবাসুন।’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
47- بَابُ عَلَامَاتِ حُبِّ اللهِ تَعَالٰى لِلْعَبْدِ
وَالْحَثِّ عَلَى التَخَلُّقِ بِهَا وَالسَّعْيِ فِيْ تَحْصِيْلِهَا
পরিচ্ছেদ - ৪৭: বান্দাকে আল্লাহর ভালবাসার নিদর্শনাবলী, এমন নিদর্শন অবলম্বন করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং তা অর্জন করার জন্য প্রয়াসী হওয়ার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
অর্থাৎ “বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর। ফলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আলে ইমরান ৩১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ يُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوۡمَةَ لَآئِمٖۚ ذَٰلِكَ فَضۡلُ ٱللَّهِ يُؤۡتِيهِ مَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٥٤ ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ তার দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফেরদের প্রতি কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন নিন্দুকের নিন্দায় ভয় করবে না, এ আল্লাহর অনুগ্রহ যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন। বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যময়, প্রজ্ঞাময়।” (সূরা মায়েদাহ ৫৪ আয়াত)
1/391 عَن أبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الله تَعَالَى قَالَ: مَنْ عَادَى لِي وَلِيّاً فَقَدْ آذَنْتُهُ بالحَرْبِ، وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بشَيءٍ أَحَبَّ إلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيهِ، وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقرَّبُ إلَيَّ بالنَّوافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإذَا أَحبَبتُهُ كُنْتُ سَمعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، ويَدَهُ الَّتي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشي بِهَا، وَإنْ سَأَلَني أعْطَيْتُهُ، وَلَئِنِ اسْتَعَاذَنِي لأُعِيذَنَّهُ ». رواه البخاري
১/৩৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার কোনো বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার বিরুদ্ধে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল। আমার বান্দা যে সমস্ত জিনিস দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করে, তার মধ্যে আমার নিকট প্রিয়তম জিনিস হল তা, যা আমি তার উপর ফরয করেছি। (অর্থাৎ ফরযের দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করা আমার নিকটে বেশী পছন্দনীয়।) আর আমার বান্দা নফল ইবাদতের মাধ্যমে আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকে, পরিশেষে আমি তাকে ভালবাসতে শুরু করি। অতঃপর যখন আমি তাকে ভালবাসি, তখন আমি তার ঐ কান হয়ে যাই, যার দ্বারা সে শোনে, তার ঐ চোখ হয়ে যাই, যার দ্বারা সে দেখে, তার ঐ হাত হয়ে যাই, যার দ্বারা সে ধরে এবং তার ঐ পা হয়ে যাই, যার দ্বারা সে চলে। আর সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি তাকে দেই এবং সে যদি আমার আশ্রয় চায়, তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় দেই।’’(বুখারী)
(‘আমি তার কান হয়ে যাই----।’ অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টি মোতাবেক সে শোনে, দেখে, ধরে ও চলে।)
2/392 وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا أَحَبَّ اللهُ تَعَالَى العَبْدَ، نَادَى جِبْريلَ: إنَّ الله تَعَالَى يُحِبُّ فُلاناً، فَأَحْبِبْهُ، فَيُحِبُّهُ جِبريلُ، فَيُنَادِي في أَهْلِ السَّمَاءِ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاناً، فَأحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أهْلُ السَّمَاءِ، ثُمَّ يُوضَعُ لَهُ القَبُولُ في الأرْضِ ». متفق عليه .
وَفي رِوَايَةٍ لمسلم: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الله تَعَالى إِذَا أَحَبَّ عَبداً دَعَا جِبرِيلَ، فَقَالَ: إنّي أُحِبُّ فُلاَناً فأحْبِبهُ، فَيُحِبُّهُ جِبرِيلُ، ثمَّ يُنَادِي في السَّمَاءِ، فَيَقُولُ: إنَّ اللهَ يُحِبُّ فُلاَناً فَأَحِبُّوهُ، فَيُحِبُّهُ أَهلُ السَّمَاءِ، ثمَّ يُوضَعُ لهُ القَبُولُ في الأَرضِ، وَإِذَا أبْغَضَ عَبْداً دَعَا جِبْريلَ، فَيَقُولُ: إنّي أُبْغِضُ فُلاناً فَأبْغِضْهُ . فَيُبغِضُهُ جِبريلُ ثُمَّ يُنَادِي في أَهْلِ السَّماءِ: إنَّ اللهَ يُبْغِضُ فُلاناً فَأبْغِضُوهُ، فَيُبْغِضُهُ أَهْلُ السَّمَاءِ ثُمَّ تُوضَعُ لَهُ البَغْضَاءُ في الأَرْضِ » .
২/৩৯২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ অমুককে ভালবাসেন, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ সুতরাং জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালবাসেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি অমুককে ভালবাসি, অতএব তুমিও তাকে ভালবাস।’ তখন জিবরীলও তাকে ভালবাসতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ভালবাসেন। কাজেই তোমরাও তাকে ভালবাসো।’ তখন আকাশবাসীরা তাকে ভালবাসতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে গ্রহণযোগ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।
আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন বান্দাকে ঘৃণা করেন, তখন তিনি জিবরীলকে ডেকে বলেন, ‘আমি অমুককে ঘৃণা করি, অতএব তুমিও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন জিবরীল তাকে ঘৃণা করতে শুরু করেন। অতঃপর তিনি আকাশবাসীদের মধ্যে ঘোষণা করে দেন যে, ‘আল্লাহ অমুক বান্দাকে ঘৃণা করেন। কাজেই তোমরাও তাকে ঘৃণা কর।’ তখন আকাশবাসীরাও তাকে ঘৃণা করতে শুরু করে। অতঃপর পৃথিবীতেও তাকে ঘৃণ্য করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’
3/393 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَعَثَ رَجُلاً عَلٰى سَريَّةٍ فَكَانَ يَقْرَأُ لأَصْحَابِهِ في صَلاَتِهِمْ فَيَخْتِمُ بـ { قُل هُوَ الله أَحَدٌ }، فَلَمَّا رَجَعُوا ذَكَرُوا ذلِكَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: «سَلُوهُ لأَيِّ شَيْءٍ يَصْنَعُ ذٰلِكَ» ؟ فَسَألُوهُ فَقَالَ: لأَنَّهَا صِفَةُ الرَّحْمٰنِ فَأَنَا أُحِبُّ أنْ أقْرَأ بِهَا . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أخْبِرُوهُ أنَّ اللهَ تَعَالَى يُحِبُّهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩৯৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে একটি মুজাহিদ দলের আমীর করে জিহাদে পাঠালেন। তিনি যখন নামাযে ইমামতি করতেন, তখনই (প্রত্যেক রাকআতে সূরা পড়ার পর) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) দিয়ে (ক্বিরাআত) শেষ করতেন। মুজাহিদগণ সেই অভিযান থেকে প্রত্যাবর্তন করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, ‘‘তাঁকে জিজ্ঞাসা কর, কেন সে এ কাজটি করেছে?’’ সুতরাং তারা তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বললেন, ‘এই সূরাটিতে পরম করুণাময় (আল্লাহ)র গুণাবলী রয়েছে। এই জন্য সূরাটি তেলাওয়াত করতে আমি ভালবাসি।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালবাসেন।’’(বুখারী ও মুসলিম)
48- بَابُ التَّحْذِيْرِ مِنْ إِيْذَاءِ الصَّالِحِيْنَ وَالضَّعْفَةِ وَالْمَسَاكِيْنَ
পরিচ্ছেদ - ৪৮: নেক লোক, দুর্বল ও গরীব মানুষদেরকে কষ্ট দেওয়া থেকে ভীতিপ্রদর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِ بِغَيۡرِ مَا ٱكۡتَسَبُواْ فَقَدِ ٱحۡتَمَلُواْ بُهۡتَٰنٗا وَإِثۡمٗا مُّبِينٗا ٥٨ ﴾ [الاحزاب: ٥٨]
অর্থাৎ “যারা বিনা অপরাধে বিশবাসী পুরুষ ও নারীদেরকে কষ্ট দেয়, তারা অবশ্যই মিথ্যা অপবাদ এবং স্পষ্ট অপরাধের বোঝা বহন করে।” (সূরা আহযাব ৫৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا ٱلۡيَتِيمَ فَلَا تَقۡهَرۡ ٩ وَأَمَّا ٱلسَّآئِلَ فَلَا تَنۡهَرۡ ١٠ ﴾ [الضحا: ٩، ١٠]
অর্থাৎ “অতএব তুমি পিতৃহীনের প্রতি কঠোর হয়ো না। এবং ভিক্ষুককে ধমক দিও না।” (সূরা যুহা ৯-১০ আয়াত)
এই পরিচ্ছেদের সঙ্গে সম্পৃক্ত বহু হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে ৯৬ নং হাদীস, যাতে বলা হয়েছে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন বন্ধুর সাথে শত্রুতা করবে, তার সঙ্গে আমার যুদ্ধের ঘোষণা রইল।’’
যেমন ২৬৬ নং হাদীসটিও এই পরিচ্ছেদের সাথে সম্পর্ক রাখে; যাতে বলা হয়েছে, ‘‘সম্ভবতঃ তুমি তাদেরকে (অর্থাৎ সালমান, সুহাইব ও বিলালকে) অসন্তুষ্ট করেছ। তুমি যদি তাদেরকে অসন্তুষ্ট করে থাক, তাহলে তুমি তোমার প্রতিপালককে অসন্তুষ্ট করেছ।’’
1/394 وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ: « مَنْ صَلَّى صَلاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ في ذِمَّةِ الله فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ الله مِنْ ذِمَّته بشَيءٍ، فَإنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ منْ ذمَّته بشَيءٍ يُدْركْهُ، ثُمَّ يَكُبُّهُ عَلَى وَجْهِهِ في نَارِ جَهَنَّمَ ». رواه مسلم
১/৩৯৪। জুন্দুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামায (জামাআতে) পড়ল, সে আল্লাহর জামানতে চলে এল। সুতরাং আল্লাহ যেন অবশ্যই তোমাদের কাছে তার জামানতের কিছু দাবী না করেন। কারণ, যার কাছেই তিনি তাঁর জামানতের কিছু দাবী করবেন, তাকে পাকড়াও করবেন। অতঃপর তিনি তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’’ (মুসলিম) (বলা বাহুল্য, যে নামায পড়ে সে আল্লাহর জামানতে। সুতরাং সে সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র।)
49- بَابُ إِجْرَاءِ أَحْكَامِ النَّاسِ عَلَى الظَّاهِرِ
وَسَرَائِرِهِمْ إِلَى اللهِ تَعَالٰى
পরিচ্ছেদ - ৪৯: লোকের বাহ্যিক অবস্থা ও কার্যকলাপের ভিত্তিতে বিধান প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দেওয়া হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ ﴾ [التوبة: ٥]
অর্থাৎ “কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও।” (সূরা তওবাহ ৫ আয়াত(
1/395. وَعنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: »أُمِرْتُ أنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ الله، وَيُقيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءهُمْ وَأمْوَالَهُمْ إلاَّ بحَقِّ الإسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى الله تَعَالَى». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৩৯৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমাকে লোকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে; যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। আর তারা নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে। যখন তারা এ কাজগুলো সম্পাদন করবে, তখন তারা আমার নিকট থেকে তাদের রক্ত (জান) এবং মাল বাঁচিয়ে নেবে; কিন্তু ইসলামের হক ব্যতীত (অর্থাৎ সে যদি কাউকে হত্যা করে, তবে তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তাকে হত্যা করা হবে।) আর তাদের হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/396. وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ طَارِقِ بنِ أَشْيَمَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَكَفَرَ بما يُعْبَدُ مِنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى الله تَعَالَى ». رواه مسلم
২/৩৯৬। আবূ আব্দুল্লাহ ত্বারেক ইবনে আশয়্যাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার মাল ও রক্ত হারাম হয়ে গেল ও তার (অন্তরের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে।’’(মুসলিম)
3/397 وَعَن أَبي مَعبَدٍ المِقدَادِ بنِ الأسْوَدِ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ: أرَأيْتَ إنْ لَقِيتُ رَجُلاً مِنَ الكُفَّارِ، فَاقْتتَلْنَا، فَضَرَبَ إحْدَى يَدَيَّ بِالسَّيْفِ، فَقَطَعَها، ثُمَّ لاَذَ مِنِّي بِشَجَرَةٍ، فَقَالَ: أسْلَمْتُ لِلّهِ، أَأَقْتُلُهُ يَا رَسُولَ اللهِ بَعْدَ أنْ قَالَهَا ؟ فَقَالَ: «لاَ تَقْتُلهُ » فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، قَطَعَ إحْدَى يَدَيَّ، ثُمَّ قَالَ ذَلِكَ بَعْدَ مَا قَطَعَهَا ؟! فَقَالَ: «لا تَقتُلْهُ، فإنْ قَتَلْتَهُ فَإنَّهُ بِمَنْزِلَتِكَ قَبْلَ أنْ تَقْتُلَهُ، وَإنَّكَ بِمَنْزِلَتِهِ قَبْلَ أنْ يَقُولَ كَلِمَتَهُ الَّتِي قَالَ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৩৯৭। আবূ মা‘বাদ মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, ‘‘আপনি বলুন, যদি আমি কোন কাফেরের সম্মুখীন হই এবং পরস্পরের মধ্যে লড়ি, অতঃপর সে তরবারি দিয়ে আমার হাত কেটে দেয়, তারপর আমার (পাল্টা) আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য সে একটি গাছের আশ্রয় নিয়ে বলে, ‘আমি আল্লাহর ওয়াস্তে ইসলাম গ্রহণ করলাম।’ তার এ কথা বলার পর হে আল্লাহর রসূল! আমি কি তাকে হত্যা করব?’’ তিনি বললেন, ‘‘তাকে হত্যা করো না।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে আমার একটি হাত কেটে ফেলবে। কাটার পর সে ঐ কথা বলবে তাও?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করো না। যদি তুমি তাকে হত্যা কর, তাহলে (মনে রাখ) সে তোমার সেই মর্যাদা পেয়ে যাবে, যাতে তুমি তাকে হত্যা করার পূর্বে ছিলে। আর তুমি তার ঐ কথা বলার পূর্বের অবস্থায় উপনীত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/398 وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: بَعَثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ إِلَى الْحُرَقَةِ مِنْ جُهَيْنَةَ فَصَبَّحْنَا القَوْمَ عَلَى مِيَاهِهِمْ، وَلَحِقْتُ أنَا وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ رَجُلاً مِنْهُمْ، فَلَمَّا غَشَيْنَاهُ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، فَكفَّ عَنْهُ الأَنْصَارِي، وطَعَنْتُهُ برُمْحِي حَتَّى قَتَلْتُهُ، فَلَمَّا قَدِمْنَا المَدِينَةَ، بَلَغَ ذلِكَ النَّبيَّ ﷺ فَقَالَ لِي: «يَا أُسَامَة، أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ ؟! » قُلْتُ: يَا رَسُولَ الله، إِنَّمَا كَانَ مُتَعَوِّذاً، فَقَالَ: «أقَتَلْتَهُ بَعْدَ مَا قَالَ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ ؟! » فَمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا عَلَيَّ حَتَّى تَمنْيَّتُ أنِّي لَمْ أكُنْ أسْلَمْتُ قَبْلَ ذلِكَ اليَوْمِ . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أقالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَقَتَلْتَهُ ؟! » قُلْتُ: يَا رَسُولَ الله، إِنَّمَا قَالَهَا خَوْفاً مِن السِّلاحِ، قَالَ: « أَفَلاَ شَقَقْتَ عَنْ قَلْبِهِ حَتَّى تَعْلَمَ أَقَالَهَا أمْ لاَ ؟! » فمَا زَالَ يُكَرِّرُهَا حَتَّى تَمَنَّيْتُ أنِّي أسْلَمْتُ يَوْمَئذٍ.
৪/৩৯৮। উসামা ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে জুহাইনা গোত্রের এক শাখা হুরাকার দিকে পাঠালেন। অতঃপর আমরা সকাল সকাল পানির ঝর্নার নিকট তাদের উপর আক্রমণ করলাম। (যুদ্ধ চলাকালীন) আমি ও একজন আনসারী তাদের এক ব্যক্তির পিছনে ধাওয়া করলাম। যখন আমরা তাকে ঘিরে ফেললাম, তখন সে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল। আনসারী থেমে গেলেন, কিন্তু আমি তাকে আমার বল্লম দিয়ে গেঁথে দিলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত তাকে হত্যা করে ফেললাম। অতঃপর যখন আমরা মদীনা পৌঁছলাম, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছল। তিনি বললেন, ‘‘হে উসামা! তার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরেও কি তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে প্রাণ বাঁচানোর জন্য এরূপ করেছে।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পরও তুমি তাকে খুন করেছ?’’ তিনি আমার সামনে এ কথা বারবার বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আজকের পূর্বে আমি ইসলাম গ্রহণ না করতাম (অর্থাৎ এখন আমি মুসলিম হতাম)। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সে কি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তুমি তাকে হত্যা করেছ?’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে কেবলমাত্র অস্ত্রের ভয়ে এই (কলেমা) বলেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি তার অন্তর চিরে দেখেছিলে যে, সে এ (কলেমা) অন্তর থেকে বলেছিল কি না?’’ অতঃপর একথা পুনঃ পুনঃ বলতে থাকলেন। এমনকি আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম যে, যদি আমি আজ মুসলিম হতাম।
5/399 وَعَن جُندُبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَعَثَ بَعْثاً مِنَ المُسْلِمينَ إِلَى قَومٍ مِنَ المُشرِكينَ، وَأنَّهُمْ التَقَوْا، فَكَانَ رَجُلٌ مِنَ المُشْركينَ إِذَا شَاءَ أنْ يَقْصِدَ إِلَى رَجُل مِنَ المُسْلِمينَ قَصَدَ لَهُ فَقَتَلَهُ، وَأنَّ رَجُلاً مِنَ المُسْلِمِينَ قَصَدَ غَفْلَتَهُ . وَكُنَّا نَتَحَدَّثُ أنَّهُ أُسَامَةُ بْنُ زَيْدٍ، فَلَمَّا رَفَعَ عَلَيهِ السَّيفَ، قَالَ: لا إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، فَقَتَلهُ، فَجَاءَ البَشيرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ فَسَألَهُ وَأخبَرَهُ، حَتَّى أخْبَرَهُ خَبَرَ الرَّجُلِ كَيْفَ صَنَعَ، فَدَعَاهُ فَسَألَهُ، فَقَالَ: «لِمَ قَتَلْتَهُ ؟ » فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أوْجَعَ في المُسلِمِينَ، وَقَتَلَ فُلاَناً وَفُلاَناً، وَسَمَّى لَهُ نَفَراً، وَإنِّي حَمَلْتُ عَلَيهِ، فَلَمَّا رَأى السَّيفَ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ . قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أقَتَلْتَهُ ؟ » قَالَ: نَعَمْ . قَالَ: «فَكَيفَ تَصْنَعُ بلاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، إِذَا جَاءتْ يَوْمَ القِيَامَةِ ؟ » قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اسْتَغْفِرْ لِي . قَالَ: «وكَيفَ تَصْنَعُ بِلاَ إِلٰهَ إلاَّ الله إِذَا جَاءَتْ يَوْمَ القِيَامَةِ ؟ » فَجَعَلَ لاَ يَزِيدُ عَلَى أنْ يَقُولَ: «كَيفَ تَصْنَعُ بِلاَ إِلٰهَ إلاَّ الله إِذَا جَاءتْ يَوْمَ القِيَامَةِ ». رواه مسلم
৫/৩৯৯। জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিম মুজাহিদীনের একটি দল এক মুশরিক সম্প্রদায়ের দিকে পাঠালেন। তাদের পরস্পরের মধ্যে মুকাবেলা হল। মুশরিকদের মধ্যে একটি লোক ছিল সে যখন কোনো মুসলিমকে হত্যা করার ইচ্ছা করত, তখন সুযোগ পেয়ে তাঁকে হত্যা করে দিত। (এ অবস্থা দেখে) একজন মুসলিম (তাকে খুন করার জন্য) তার অমনোযোগিতার সুযোগ গ্রহণ করলেন। আমরা পরস্পরের মধ্যে বলাবলি করছিলাম যে, উনি হলেন উসামা ইবনে যায়দ। (অতঃপর যখন সুযোগ পেয়ে) উসামা তরবারি উত্তোলন করলেন, তখন সে বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কিন্তু তিনি তাকে হত্যা করে দিলেন। অতঃপর (মুসলিমদের যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সংবাদ নিয়ে) সুসংবাদবাহী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এল। তিনি তাকে (যুদ্ধের ব্যাপারে) জিজ্ঞাসা করলেন। সে তাঁকে (সমস্ত) সংবাদ দিল। এমনকি শেষ পর্যন্ত সে ঐ ব্যক্তিরও খবর অবহিত করল। তিনি উসামাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে বললেন, ‘‘তুমি কেন তাকে হত্যা করেছ?’’ উসামা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে মুসলিমদেরকে খুবই কষ্ট দিয়েছে এবং অমুক অমুককে হত্যাও করেছে।’ উসামা কিছু লোকের নামও নিলেন। ‘(এ দেখে) আমি তার উপর হামলা করলাম। অতঃপর সে যখন তরবারি দেখল, তখন বলল, ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তাকে হত্যা করে দিয়েছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’ উসামা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’ (তিনি বারংবার একথা বলতে থাকলেন এবং) এর চেয়ে বেশী কিছু বললেন না, ‘‘কিয়ামতের দিন যখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আসবে, তখন তুমি কী করবে?’’(মুসলিম)
6/400 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُتبَةَ بنِ مَسعُودٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عُمَرَ بنَ الخَطَّابِ رضي الله عنه، يَقُولُ: إنَّ نَاساً كَانُوا يُؤْخَذُونَ بِالوَحْيِ في عَهْدِ رَسُولِ الله ﷺ، وَإنَّ الوَحْيَ قَدِ انْقَطَعَ، وإِنَّمَا نَأخُذُكُمُ الآنَ بما ظَهَرَ لَنَا مِنْ أعمَالِكُمْ، فَمَنْ أظْهَرَ لَنَا خَيْراً أمَّنَّاهُ وَقَرَّبْنَاهُ، وَلَيْسَ لَنَا مِنْ سَرِيرَتِهِ شَيْء، اللهُ يُحَاسِبُهُ فِي سَرِيرَتِهِ، وَمَنْ أظْهَرَ لَنَا سُوءاً لَمْ نَأمَنْهُ وَلَمْ نُصَدِّقْهُ وَإنْ قَالَ: إنَّ سَرِيرَتَهُ حَسَنَةٌ . رواه البخاري
৬/৪০০। আব্দুল্লাহ ইবনে উত্বাহ্ ইবনে মাসঊদ বলেন, আমি উমার ইবনে খাত্তাবকে বলতে শুনেছি, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কিছু লোককে অহী দ্বারা পাকড়াও করা হত। কিন্তু অহী এখন বন্ধ হয়ে গেছে। (সুতরাং) এখন আমরা তোমাদের বাহ্যিক কার্যকলাপ দেখে তোমাদেরকে পাকড়াও করব। অতঃপর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য ভাল কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং তাকে আমরা নিকটে করব। আর তাদের অন্তরের অবস্থার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহই তার অন্তরের হিসাব নেবেন। আর যে ব্যক্তি আমাদের জন্য মন্দ কাজ প্রকাশ করবে, তাকে আমরা নিরাপত্তা দেব না এবং তাকে সত্যবাদীও মনে করব না; যদিও সে বলে আমার ভিতর (নিয়ত) ভাল।’(বুখারী)
50- بَابُ الْخَوْفِ
পরিচ্ছেদ - ৫০: আল্লাহ ও তাঁর আযাবকে ভয় করা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَإِيَّٰيَ فَٱرۡهَبُونِ ﴾ [البقرة: ٤٠]
অর্থাৎ “তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।” (সূরা বাক্বারাহ ৪০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ بَطۡشَ رَبِّكَ لَشَدِيدٌ ١٢ ﴾ [البروج: ١٢]
অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও বড়ই কঠিন।” (সূরা বুরুজ ১২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ أَخۡذُ رَبِّكَ إِذَآ أَخَذَ ٱلۡقُرَىٰ وَهِيَ ظَٰلِمَةٌۚ إِنَّ أَخۡذَهُۥٓ أَلِيمٞ شَدِيدٌ ١٠٢ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّمَنۡ خَافَ عَذَابَ ٱلۡأٓخِرَةِۚ ذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّجۡمُوعٞ لَّهُ ٱلنَّاسُ وَذَٰلِكَ يَوۡمٞ مَّشۡهُودٞ ١٠٣ وَمَا نُؤَخِّرُهُۥٓ إِلَّا لِأَجَلٖ مَّعۡدُودٖ ١٠٤ يَوۡمَ يَأۡتِ لَا تَكَلَّمُ نَفۡسٌ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ فَمِنۡهُمۡ شَقِيّٞ وَسَعِيدٞ ١٠٥ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَشَهِيقٌ ١٠٦ ﴾ [هود: ١٠٢، ١٠٦]
অর্থাৎ “আর এরূপই তাঁর পাকড়াও; যখন তিনি কোন অত্যাচারী জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন। নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যাতনাদায়ক কঠিন। নিশ্চয় এ সব ঘটনায় সে ব্যক্তির জন্য নিদর্শন রয়েছে যে ব্যক্তি আখেরাতের শাস্তিকে ভয় করে। ওটা এমন একটা দিন হবে যেদিন সমস্ত মানুষকে সমবেত করা হবে এবং ওটা হবে সকলের উপস্থিতির দিন। আর আমি ওটা নির্দিষ্ট একটি কালের জন্যই বিলম্বিত করছি। যখন সেদিন আসবে তখন কোন ব্যক্তি আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কথাও বলতে পারবে না। সুতরাং তাদের মধ্যে কেউ হবে দুর্ভাগ্যবান এবং কেউ হবে সৌভাগ্যবান। অতএব যারা দুর্ভাগ্যবান তারা তো হবে জাহান্নামে; তাতে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ হতে থাকবে।” (সূরা হূদ ১০২-১০৬ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿وَيُحَذِّرُكُمُ ٱللَّهُ نَفۡسَهُۥۗ﴾ [ال عمران: ٢٨]
অর্থাৎ “আল্লাহ তাঁর নিজের সম্বন্ধে তোমাদেরকে সাবধান করছেন।” (আলে ইমরান ২৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَوۡمَ يَفِرُّ ٱلۡمَرۡءُ مِنۡ أَخِيهِ ٣٤ وَأُمِّهِۦ وَأَبِيهِ ٣٥ وَصَٰحِبَتِهِۦ وَبَنِيهِ ٣٦ لِكُلِّ ٱمۡرِيٕٖ مِّنۡهُمۡ يَوۡمَئِذٖ شَأۡنٞ يُغۡنِيهِ ٣٧ ﴾ [عبس: ٣٤، ٣٧]
অর্থাৎ “সেদিন মানুষ পলায়ন করবে আপন ভ্রাতা হতে এবং তার মাতা ও তার পিতা হতে, তার পত্নী ও তার সন্তান হতে। সেদিন তাদের প্রত্যেকের এমন গুরুতর অবস্থা হবে, যা নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে।” (সূরা আবাসা ৩৪-৩৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ١ يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ ٢ ﴾ [الحج: ١، ٢]
অর্থাৎ “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা ভয় কর তোমাদের প্রতিপালককে; (আর জেনে রেখো যে,) নিঃসন্দেহে কিয়ামতের প্রকম্পন এক ভয়ানক ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে সেদিন প্রত্যেক স্তন্যদাত্রী নিজ দুগ্ধপোষ্য শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। আর মানুষকে দেখবে মাতাল সদৃশ, অথচ তারা নেশাগ্রস্ত নয়; বস্তুত আল্লাহর শাস্তি বড় কঠিন।” (সূরা হজ্জ্ব ১-২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَلِمَن خَافَ مَقَامَ رَبِّهِۦ جَنَّتَانِ ٤٦ ﴾ [الرحمن: ٤٦]
অর্থাৎ “আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে, তার জন্য রয়েছে দু’টি (জান্নাতের) বাগান।” (সূরা আর-রাহমান ৪৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَأَقۡبَلَ بَعۡضُهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ يَتَسَآءَلُونَ ٢٥ قَالُوٓاْ إِنَّا كُنَّا قَبۡلُ فِيٓ أَهۡلِنَا مُشۡفِقِينَ ٢٦ فَمَنَّ ٱللَّهُ عَلَيۡنَا وَوَقَىٰنَا عَذَابَ ٱلسَّمُومِ ٢٧ إِنَّا كُنَّا مِن قَبۡلُ نَدۡعُوهُۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡبَرُّ ٱلرَّحِيمُ ٢٨ ﴾ [الطور: ٢٥، ٢٨]
অর্থাৎ “তারা একে অপরের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করবে এবং বলবে, নিশ্চয় আমরা পূর্বে পরিবার-পরিজনের মধ্যে শংকিত অবস্থায় ছিলাম। অতঃপর আমাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে উত্তপ্ত ঝড়ো হাওয়ার শাস্তি হতে রক্ষা করেছেন। নিশ্চয় আমরা পূর্বেও আল্লাহকে আহবান করতাম। নিশ্চয় তিনি কৃপাময়, পরম দয়ালু।” (সূরা ত্বূর ২৫-২৮ আয়াত)
এ বিষয়ে বহু আয়াত রয়েছে। যেমন হাদীসও রয়েছে অনেক। নিম্নে কতিপয় হাদীস উল্লিখিত হলঃ
1/401 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَهُوَ الصَّادِقُ المَصدُوقُ: «إنَّ أحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ في بَطْنِ أُمِّهِ أربَعِينَ يَوماً نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذلِكَ، ثُمَّ يُرْسَلُ المَلَكُ، فَيَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ، وَيُؤْمَرُ بِأرْبَعِ كَلِمَاتٍ: بِكَتْبِ رِزْقِهِ وَأجَلِهِ وَعَمَلِهِ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ . فَوَالَّذِي لاَ إِلٰهَ غَيْرُهُ إنَّ أحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وبيْنَهَا إلاَّ ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ، فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ فَيدْخُلُهَا، وَإنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إلاَّ ذِرَاعٌ، فَيَسْبِقُ عَلَيهِ الكِتَابُ فَيعْمَلُ بِعَمَلِ أهْلِ الجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১/৪০১। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, যিনি সত্যবাদী ও যাঁর কথা সত্য বলে মানা হয় সেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, ‘‘তোমাদের এক জনের সৃষ্টির উপাদান মায়ের গর্ভে চল্লিশ দিন যাবৎ বীর্যের আকারে থাকে। অতঃপর তা অনুরূপভাবে চলিলশ দিনে জমাটবদ্ধ রক্তপিন্ডের রূপ নেয়। পুনরায় তদ্রূপ চল্লিশ দিনে গোশে্তর টুকরায় রূপান্তরিত হয়। অতঃপর তার নিকট ফিরিশ্তা পাঠানো হয়। সুতরাং তার মাঝে ‘রূহ’ স্থাপন করা হয় এবং চারটি কথা লিখার আদেশ দেওয়া হয়; তার রুযী, মৃত্যু, আমল এবং পাপিষ্ট না পুণ্যবান হবে তা লিখা হয়। সেই সত্তার শপথ, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! (জন্মের পর) তোমাদের এক ব্যক্তি (বাহ্যদৃষ্টিতে) জান্নাতবাসীদের মত কাজ-কর্ম করতে থাকে এবং তার ও জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থেকে যায়। এমতাবস্থায় তার (তাকদিরের) লিখন এগিয়ে আসে এবং সে জাহান্নামীদের মত আমল করতে লাগে; ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। আর তোমাদের অন্য এক ব্যক্তি প্রথমে (বাহ্যদৃষ্টিতে) জাহান্নামীদের মত আমল করে এবং তার ও জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাত তফাৎ থাকে। এমতাবস্থায় তার (তাকদীরের) লিখন এগিয়ে আসে। তখন সে জান্নাতীদের মত ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করে; পরিণতিতে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
2/402 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يُؤتَى بِجَهَنَّمَ يَومَئذٍ لَهَا سَبْعُونَ ألفَ زِمَامٍ، مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبعُونَ ألْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا ». رواه مسلم
২/৪০২। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামকে এ অবস্থায় নিয়ে আসা হবে যে, তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে। প্রত্যেক লাগামের সাথে সত্তর হাজার ফিরিশতা থাকবেন। তাঁরা তা টানতে থাকবেন।’’ (মুসলিম)
3/403 وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ أهْوَنَ أهْلِ النَّارِ عَذَاباً يَوْمَ القِيَامَةِ لَرَجُلٌ يُوضَعُ في أخْمَصِ قَدَمَيْهِ جَمْرَتَانِ يَغْلِي مِنْهُمَا دِمَاغُهُ . مَا يَرَى أنَّ أَحَداً أشَدُّ مِنْهُ عَذَاباً، وَأنَّهُ لأَهْوَنُهُمْ عَذَاباً ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৪০৩। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘কিয়ামতের দিবসে ঐ ব্যক্তির সর্বাপেক্ষা হাল্কা আযাব হবে, যার দু’ পায়ের তলায় জ্বলন্ত দু’টি অঙ্গার রাখা হবে। যার ফলে তার মাথার মগজ ফুটতে থাকবে। সে মনে করবে না যে, তার চেয়ে কঠিন আযাব অন্য কেউ ভোগ করছে। অথচ তারই আযাব সবার চেয়ে হাল্কা!’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/404 وَعَن سَمُرَةَ بنِ جُندُبٍ رضي الله عنه: أنَّ نَبيَّ الله ﷺ، قَالَ:«مِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ النَّارُ إِلَى كَعْبَيهِ، وَمنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى رُكْبَتَيهِ، وَمنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى حُجزَتِهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ تَأخُذُهُ إِلَى تَرْقُوَتِهِ ». رواه مسلم
৪/৪০৪। সামুরাহ ইবনে জুনদুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জাহান্নামীদের মধ্যে কিছু লোকের পায়ের গাঁট পর্যন্ত আগুন হবে, কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো কারো কণ্ঠাস্থি (গলার নিচের হাড়) পর্যন্ত হবে।’’ (মুসলিম)
5/405 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ العَالَمِينَ حَتَّى يَغِيبَ أحَدُهُمْ في رَشْحِهِ إِلَى أنْصَافِ أُذُنَيهِ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৫/৪০৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন লোকেরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হবে (এবং তাদের এত বেশি ঘাম হবে যে,) তাদের মধ্যে কেউ তার ঘামে তার অর্ধেক কান পর্যন্ত ডুবে যাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/406 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ خُطبَةً مَا سَمِعْتُ مِثلَهَا قَطُّ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً » فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَجُوهَهُمْ، وَلَهُمْ خَنِينٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ وفي رواية: بَلَغَ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَنْ أَصْحَابِهِ شَيْءٌ فَخَطَبَ، فَقَالَ: «عُرِضَتْ عَلَيَّ الجَنَّةُ وَالنَّارُ، فَلَمْ أرَ كَاليَومِ في الخَيرِ وَالشَّرِّ، وَلَوْ تَعْلَمونَ مَا أعلَمُ لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً» فَمَا أتَى عَلَى أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَوْمٌ أَشَدُّ مِنْهُ، غَطَّوْا رُؤُسَهُمْ وَلَهُمْ خَنِينٌ .
৬/৪০৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদেরকে এমন ভাষণ শুনালেন যে, ওর মত (ভাষণ) কখনোও শুনিনি। তিনি বললেন, ‘‘যা আমি জানি, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে।’’ (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের বিলাপের রোল আসতে লাগল। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে সাহাবীদের কোনো কথা পৌঁছল। অতঃপর তিনি ভাষণ দিয়ে বললেন, ‘‘আমার নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হল। ফলে আমি আজকের মত ভাল ও মন্দ (একত্রে) কোন দিনই দেখিনি। যদি তোমরা তা জানতে, যা আমি জানি, তাহলে কম হাসতে আর বেশি কাঁদতে।’’ সুতরাং সাহাবীদের জন্য সেদিনকার মত কঠিনতম দিন আর ছিল না। তাঁরা তাঁদের মাথা আবৃত করে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
7/407 وَعَنِ المِقدَادِ رضي الله عنه، قَالَ: سمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «تُدْنَى الشَّمْسُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنَ الخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ ». قَالَ سُلَيْم بنُ عَامِرٍ الرَّاوِي عَنِ المِقدَادِ: فَوَاللهِ مَا أدْرِي مَا يَعنِي بِالمِيلِ، أَمَسَافَةَ الأرضِ أَمِ المِيلَ الَّذِي تُكْتَحَلُ بِهِ العَيْنُ ؟ قَالَ: «فَيكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أعْمَالِهِمْ في العَرَقِ، فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ، وَمِنهُم مَن يَكُونُ إِلَى رُكبَتَيهِ، وَمِنهُم مَنْ يَكُونُ إِلَى حِقْوَيْهِ، وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ العَرَقُ إلْجَاماً». قَالَ: وَأَشَارَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بيدهِ إِلَى فِيهِ . رواه مسلم
৭/৪০৭। মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টজীবের এত কাছে করে দেওয়া হবে যে, তার মধ্যে এবং সৃষ্টজীবের মধ্যে মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে।’’ মিক্বদাদ থেকে বর্ণনাকারী সুলাইম ইবন আমের বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মীল’ শব্দের কী অর্থ নিয়েছেন, যমীনের দূরত্ব (মাইল), নাকি (সুরমাদানীর) শলাকা যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়? ‘‘সুতরাং মানুষ নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামে ডুবতে থাকবে। তাদের মধ্যে কারো তার পায়ের গাঁট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত (ঘাম হবে) এবং তাদের মধ্যে কিছু এমন লোকও হবে যাদেরকে ঘাম লাগাম লাগিয়ে দেবে।’’ (অর্থাৎ নাক পর্যন্ত ঘামে ডুববে।) এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মুখের দিকে ইশারা করলেন। (মুসলিম)
8/408 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «يَعْرَقُ النَّاسُ يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ في الأَرضِ سَبْعِينَ ذِراعاً، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৮/৪০৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন মানুষের প্রচণ্ড ঘাম হবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত নিচে যাবে। আর তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত থাকবে। এমন কি কান পর্যন্তও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/409 وَعَنهُ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ إذْ سَمِعَ وَجْبَةً، فَقَالَ: «هَلْ تَدْرُونَ مَا هَذَا ؟ » قُلْنَا: اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . قَالَ: «هذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ في النَّارِ مُنْذُ سَبْعينَ خَريفاً، فَهُوَ يَهْوِي في النَّارِ الآنَ حَتَّى انْتَهَى إِلَى قَعْرِها فَسَمِعْتُمْ وَجْبَتَهَا ». رواه مسلم
৯/৪০৯। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি হলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে ছিলাম। অকস্মাৎ তিনি কোনো জিনিস পড়ার আওয়াজ শুনলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তোমরা জান এটা কি?’’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল বেশী জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘এটা ঐ পাথর, যেটিকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, এখনই তা জাহান্নামের গভীরতায় (তলায়) পৌঁছল। ফলে তারই পড়ার আওয়াজ তোমরা শুনতে পেলে।’’ (মুসলিম)
10/410 عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إلاَّ سَيُكَلِّمُهُ رَبُّهُ لَيْسَ بَينَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ، فَيَنْظُرُ أَيْمَنَ مِنْهُ فَلاَ يَرَى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنْظُرُ أَشْأَمَ مِنْهُ فَلاَ يَرى إلاَّ مَا قَدَّمَ، وَيَنظُرُ بَيْنَ يَدَيهِ فَلاَ يَرَى إلاَّ النَّار تِلقَاءَ وَجْهِهِ، فَاتَّقُوا النَّارَ وَلَو بِشِقِّ تَمْرَةٍ» . متفق عليه
১০/৪১০। আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে তার প্রতিপালক কথা বলবেন; তার ও তাঁর মাঝে কোন আনুবাদক থাকবে না। (সেখানে) সে তার ডানদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকে তা-ই দেখতে পাবে যা সে অগ্রিম পাঠিয়েছিল। বামদিকে তাকাবে, সুতরাং সেদিকেও নিজের কৃতকর্ম দেখতে পাবে। আর সামনে তাকাবে, সুতরাং তার চেহারার সামনে জাহান্নাম দেখতে পাবে। অতএব তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়।’’ (বুখারী-মুসলিম)
11/411 وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنِّي أَرَى مَا لاَ تَرَوْنَ، أطَّتِ السَّمَاءُ وَحُقَّ لَهَا أنْ تَئِطَّ، مَا فِيهَا مَوضِعُ أرْبَعِ أصَابعَ إلاَّ وَمَلَكٌ وَاضِعٌ جَبْهَتَهُ سَاجِداً للهِ تَعَالَى . وَاللهِ لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضَحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيْتُمْ كَثِيراً، وَمَا تَلَذَّذْتُمْ بالنِّسَاءِ عَلَى الفُرُشِ، وَلَخَرَجْتُمْ إِلَى الصُّعُدَاتِ تَجْأرُونَ إِلَى اللهِ تَعَالَى ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن »
১১/৪১১। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আমি দেখি, যা তোমরা দেখতে পাও না। আকাশ কটকট্ করে শব্দ করছে। আর এ শব্দ তার করা সাজে। এতে চার আঙ্গুল পরিমাণ এমন জায়গা নেই, যেখানে কোনো ফিরিশ্তা আল্লাহর জন্য সিজদায় নিজ কপাল অবনত রাখেননি। আল্লাহর কসম! তোমরা যদি জানতে যা আমি জানি, তবে তোমরা কম হাসতে এবং বেশী কাঁদতে এবং বিছানায় তোমরা স্ত্রীদের সাথে আনন্দ উপভোগ করতে না। (বরং) তোমরা আল্লাহর আশ্রয় নেওয়ার জন্য পথে পথে বের হয়ে যেতে।’’(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ)
12/412 وَعَن أَبي بَرزَةَ نَضْلَةَ بنِ عُبَيدٍ الأسلَمِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَومَ القِيَامَةِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَ أفنَاهُ ؟ وَعَنْ عِلمِهِ فِيمَ فَعَلَ فِيهِ ؟ وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أيْنَ اكْتَسَبَهُ ؟ وَفيمَ أنْفَقَهُ ؟ وَعَنْ جِسمِهِ فِيمَ أبلاهُ ؟ » رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن صحيح »
১২/৪১২। আবূ বারযাহ নাদ্বলাহ ইবনে উবাইদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন বান্দার পা দু’খানি সরবে না। (অর্থাৎ আল্লাহর দরবার থেকে যাওয়ার তাকে অনুমতি দেওয়া হবে না।) যতক্ষণ না তাকে প্রশ্ন করা হবে; তার আয়ু সম্পর্কে, সে তা কিসে ক্ষয় করেছে? তার ইলম (বিদ্যা) সম্পর্কে, সে তাতে কী আমল করেছে? তার মাল সম্পর্কে, কী উপায়ে তা উপার্জন করেছে এবং তা কোন্ পথে ব্যয় করেছে? আর তার দেহ সম্পর্কে, কোন কাজে সে তা ক্ষয় করেছে?’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
13/413 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، رضي الله عنه، قَالَ: قَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: « يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا » ثُمَّ قَالَ: «أَتَدْرُوْنَ مَا أَخْبَارَهَا؟ » قَالُوْا: اَللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ . قَالَ: «فَإِنَّ أَخْبَارَهَا أَنْ تَشْهَدَ عَلىٰ كُلِّ عَبْدٍ أَوْ أَمَةٍ بِمَا عَلىٰ ظَهْرِهَا، تَقُوْلُ: عَمِلْتَ كَذَا وَكَذَا فِيْ يَوْمٍ كَذَا وَكَذَا، فَهَذِهِ أَخْبَارَهَا » رواه الترمذي وقال: حديث حسن.
১৩/৪১৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেনঃ ‘‘সেদিন তা (যমীন) তার প্রত্যেক বিষয় বর্ণনা করবে’’- (সূরা আয্-যিলযালঃ ৪)। অতঃপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ তোমরা কি জানো যমীন সেদিন কী বর্ণনা করবে? উপস্থিত সকলেই বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ যমীন বলবে, এই এই কর্ম তুমি এই এই দিন করেছো। এগুলো হলো তার বর্ণনা।
14/414 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كَيْفَ أنْعَمُ ! وَصَاحِبُ القَرْنِ قَدِ التَقَمَ القَرْنَ، وَاسْتَمَعَ الإذْنَ مَتَى يُؤمَرُ بالنَّفْخِ فَيَنْفُخُ » فَكَأنَّ ذلِكَ ثَقُلَ عَلَى أصْحَابِ رسولِ الله ﷺ فَقَالَ لَهُمْ: «قُولُوا: حَسْبُنَا الله وَنِعْمَ الوَكِيلُ ». رواه الترمذي، وَقالَ: حديث حسنٌ
১৪/৪১৪। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি কেমন করে হাসিখুশি করব, অথচ শিঙ্গা ওয়ালা (ইস্রাফীল তো ফুৎকার দেওয়ার জন্য) শিঙ্গা মুখে ধরে আছেন। আর তিনি কান লাগিয়ে আছেন যে, তাঁকে কখন ফুৎকার দেওয়ার আদেশ দেওয়া হবে এবং তিনি ফুৎকার দেবেন।’’ অতঃপর এ কথা যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের জন্য ভারী বোধ হল। সুতরাং তিনি তাঁদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা বল, ‘হাসবুনাল্লাহু অনি‘মাল অকীল।’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং উত্তম সাহায্যকারী।’’(তিরমিযী, হাসান)
15/415 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ خَافَ أدْلَجَ، وَمَنْ أدْلَجَ بَلَغَ المَنْزِلَ. أَلاَ إنَّ سِلْعَةَ اللهِ غَالِيَةٌ، ألاَ إنَّ سِلْعَةَ الله الجَنَّةُ ». رواه الترمذي، وَقالَ: «حديث حسن»
১৫/৪১৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি গভীর রাত্রিকে ভয় করে সে যেন সন্ধ্যা রাত্রেই সফর শুরু করে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যারাত্রে চলতে শুরু করে সে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যায়। সাবধান! আল্লাহর পণ্য বড় দামী। শোনো! আল্লাহর পণ্য হল জান্নাত।’’ (তিরমিযী, হাসান)
16/416 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ القِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ جَمِيعاً يَنْظُرُ بَعضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ؟! قَالَ: «يَا عائِشَةُ، الأمرُ أشَدُّ مِنْ أنْ يُهِمَّهُمْ ذلِكَ » .
وفي رواية: «الأَمْرُ أهمُّ مِنْ أنْ يَنْظُرَ بَعضُهُمْ إِلَى بَعضٍ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/৪১৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মানুষকে হাশরের ময়দানে উঠানো হবে খালি পা, উলঙ্গ ও খাত্নাবিহীন অবস্থায়।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! পুরুষ ও মহিলারা একে অপরের প্রতি দৃষ্টিপাত করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হে আয়েশা! তাদের এরূপ ইচ্ছা করার চাইতেও কঠিন হবে তখনকার অবস্থা।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘তাদের একে অন্যের দিকে তাকাতাকি করা অপেক্ষা ব্যাপার আরো গুরুতর হবে।’’
51- بَابُ الرَّجَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৫১: আল্লাহর দয়ার আশা রাখা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣ ﴾ [الزمر: ٥٣]
অর্থাৎ “ঘোষণা করে দাও (আমার এ কথা), হে আমার দাসগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছ, তারা আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয় তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার ৫৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَهَلۡ نُجَٰزِيٓ إِلَّا ٱلۡكَفُورَ﴾ [سبا: ١٧]
অর্থাৎ “আমি অকৃতজ্ঞ (বা অস্বীকারকারী)কেই শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা সাবা ১৭ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿ إِنَّا قَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡنَآ أَنَّ ٱلۡعَذَابَ عَلَىٰ مَن كَذَّبَ وَتَوَلَّىٰ ٤٨ ﴾ [طه: ٤٨]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আমাদের প্রতি অহী (প্রত্যাদেশ) প্রেরণ করা হয়েছে যে, শাস্তি তার জন্য, যে মিথ্যা মনে করে ও মুখ ফিরিয়ে নেয়।” (সূরা ত্বাহা ৪৮ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَرَحۡمَتِي وَسِعَتۡ كُلَّ شَيۡءٖۚ ﴾ [الاعراف: ١٥٦]
অর্থাৎ “আমার দয়া তা তো প্রত্যেক বস্তুতে পরিব্যাপ্ত।” (সূরা আ’রাফ ১৫৬ আয়াত)
1/417 وَعَن عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ شَهِدَ أنَّ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأنَّ مُحَمداً عَبْدهُ ورَسُولُهُ، وَأنَّ عِيسَى عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ ألْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ ورُوحٌ مِنْهُ، وَأنَّ الجَنَّةَ حَقٌّ، وَالنَّارَ حَقٌّ، أدْخَلَهُ اللهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: «مَنْ شَهِدَ أنْ لا إِلٰهَ إلاَّ اللهُ وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، حَرَّمَ اللهُ عَلَيهِ النَّارَ ».
১/৪১৭। ‘উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রসূল এবং ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল, আর তাঁর বাণী যা তিনি মারয়্যামের মধ্যে নিক্ষেপ করেছেন এবং তাঁর (পক্ষ থেকে সৃষ্ট) রূহ। আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন; তাতে সে যে কর্মই করে থাকুক না কেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর রসূল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’’
2/418 وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ النَّبيّ ﷺ: «يَقُولُ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: مَنْ جَاءَ بِالحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أمْثَالِهَا أَوْ أزْيَد، وَمَنْ جَاءَ بالسَيِّئَةِ فَجَزَاءُ سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا أَوْ أغْفِرُ . وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي شِبْراً تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعاً، وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعاً تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعاً، وَمَنْ أتَانِي يَمْشِي أتَيْتُهُ هَرْوَلَةً، وَمَنْ لَقِيَني بِقُرَابِ الأرْضِ خَطِيئَةً لاَ يُشْرِكُ بِي شَيئاً، لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغفِرَةً ». رواه مسلم
২/৪১৮। আবূ যার্র বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি একটি নেকী করবে, তার জন্য দশ গুণ নেকী রয়েছে অথবা ততোধিক বেশী। আর যে ব্যক্তি একটি পাপ করবে, তার বিনিময় (সে) ততটাই (পাবে; তার বেশী নয়) অথবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক বিঘত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি এক হাত নিকটবর্তী হব। আর যে ব্যক্তি আমার প্রতি এক হাত নিকটবর্তী হবে, আমি তার প্রতি দু’হাত নিকটবর্তী হব। যে আমার দিকে হেঁটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাব। আর যে ব্যক্তি প্রায় পৃথিবী সমান পাপ করে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, অথচ সে আমার সাথে কাউকে শরীক করেনি, তার সাথে আমি তত পরিমাণই ক্ষমা নিয়ে সাক্ষাৎ করব।’’ (মুসলিম)
3/419 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ أَعرَابِي إِلَى النَّبيِّ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الموجِبَتَانِ؟ قَالَ: «مَنْ مَاتَ لاَ يُشْرِكُ بالله شَيئاً دَخَلَ الجَنَّةَ، وَمَنْ مَاتَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً دَخَلَ النَّار ». رواه مسلم
৩/৪১৯। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! (জান্নাত ও জাহান্নাম) ওয়াজেবকারী (অনিবার্যকারী) কর্মদু’টি কি?’ তিনি বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করবে না, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তার সাথে কোনো জিনিসকে অংশীদার করবে (এবং তওবা না করে ঐ অবস্থাতেই সে মৃত্যুবরণ করবে) সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (মুসলিম)
4/420 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ وَمُعَاذٌ رَدِيفُهُ عَلَى الرَّحْلِ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ » قَالَ: لَبِّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ » قَالَ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ وَسَعْدَيْكَ، قَالَ: «يَا مُعَاذُ» قَالَ: لَبِّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ وسَعْدَيْكَ، ثَلاثاً، قَالَ: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَشْهَدُ أَن لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ صِدْقاً مِنْ قَلْبِهِ إلاَّ حَرَّمَهُ الله عَلَى النَّار ». قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أفَلاَ أُخْبِرُ بِهَا النَّاس فَيَسْتَبْشِرُوا ؟ قَالَ: «إِذاً يَتَّكِلُوا ». فأخبر بِهَا مُعاذٌ عِنْدَ موتِه تَأثُّماً . مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৪/৪২০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, মু‘আয যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সওয়ারীর উপর বসেছিলেন, তখন তিনি তাঁকে বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত আছি এবং আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ তিনি (পুনরায়) বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি হাজির আছি এবং আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ তিনি (আবার) বললেন, ‘‘হে মু‘আয!’’ (মুআযও) বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি উপস্থিত আছি এবং আপনার খিদমতের জন্য প্রস্তুত রয়েছি।’ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা তিনবার বললেন। (এরপর) তিনি বললেন, ‘‘যে কোন বান্দা খাঁটি মনে সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কেউ (সত্য) উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও তাঁর রসূল, তাকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য হারাম করে দেবেন।’’
মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কি লোকদেরকে এই খবর বলে দেব না? যেন তারা (শুনে) আনন্দিত হয়।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তো তারা (এরই উপর) ভরসা করে নেবে (এবং আমল ত্যাগ করে বসবে)।’’ অতঃপর মু‘আয (ইলম গোপন রাখার) পাপ থেকে বাঁচার জন্য তাঁর মুত্যুর সময় (এ হাদীসটি) জানিয়ে দিয়েছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
5/421. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ أَوْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا - شَكَّ الرَّاوِي - ولاَ يَضُرُّ الشَّكُّ في عَينِ الصَّحَابيّ ؛ لأنَّهُمْ كُلُّهُمْ عُدُولٌ- قَالَ: لَمَّا كَانَ غَزوَةُ تَبُوكَ، أصَابَ النَّاسَ مَجَاعَةٌ، فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أذِنْتَ لَنَا فَنَحَرْنَا نَواضِحَنَا فَأكَلْنَا وَادَّهَنَّا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «افْعَلُوا » فَجاء عُمَرُ رضي الله عنه، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنْ فَعَلْتَ قَلَّ الظَّهْرُ، وَلَكِن ادعُهُمْ بفَضلِ أزْوَادِهِمْ، ثُمَّ ادعُ الله لَهُمْ عَلَيْهَا بِالبَرَكَةِ، لَعَلَّ الله أنْ يَجْعَلَ في ذلِكَ البَرَكَةَ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «نَعَمْ » فَدَعَا بِنَطْع فَبَسَطَهُ، ثُمَّ دَعَا بِفضلِ أزْوَادِهِمْ، فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَجِيءُ بكَفّ ذُرَةٍ وَيَجِيءُ بِكَفّ تَمرٍ وَيَجِيءُ الآخرُ بِكِسرَةٍ حَتَّى اجْتَمَعَ عَلَى النَّطعِ مِنْ ذلِكَ شَيءٌ يَسيرٌ، فَدَعَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِالبَرَكَةِ، ثُمَّ قَالَ: «خُذُوا في أوعِيَتِكُمْ » فَأَخَذُوا في أوْعِيَتِهِم حَتَّى مَا تَرَكُوا في العَسْكَرِ وِعَاءً إلاَّ مَلأُوهُ وَأَكَلُوا حَتَّى شَبعُوا وَفَضَلَ فَضْلَةٌ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأنّي رَسُولُ اللهِ، لا يَلْقَى الله بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فَيُحْجَبَ عَنِ الجَنَّةِ ». رواه مسلم
৫/৪২১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অথবা আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, (বর্ণনাকারী সন্দেহে পড়েছেন। অবশ্য সাহাবীর ব্যক্তিত্ব নির্ণয়ে সন্দেহ ক্ষতিকর কিছু নয়। কেননা সকল সাহাবাই নির্ভরযোগ্য।) সাহাবী বলেন, তাবুকের যুদ্ধের সময় সাহাবীগণ অতিশয় খাদ্য-সংকটে পড়লেন। সুতরাং তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের সেচক উট জবাই করে তার গোশ্ত ভক্ষণ এবং চর্বি ব্যবহার করি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (ঠিক আছে) তোমরা কর। (এ সংবাদ শুনে) উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আপনি (এমন) করেন, তাহলে সওয়ারী কমে যাবে। বরং আপনি (এই করুন যে,) তাদেরকে নিজেদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য আনতে বলুন এবং তাদের জন্য তাতে আল্লাহর কাছে বরকতের দো‘আ করুন। সম্ভবতঃ আল্লাহ তাতে বরকত দেবেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হ্যাঁ, (তাই-ই করি।)’’ সুতরাং তিনি চামড়ার একখানি দস্তরখান আনিয়ে নিয়ে তা বিছালেন। অতঃপর তিনি তাঁদের অবশিষ্ট খাদ্যদ্রব্য জমা করার নির্দেশ দিলেন। ফলে কেউ তো এক খাবল ভুট্টা আনলেন, কেউ তো এক খাবল খুরমা এবং কেউ তো রুটির একটি টুকরাও আনলেন। পরিশেষে কিছু পরিমাণ খাদ্য জমা হয়ে গেল। তারপর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘তোমরা আপন আপন পাত্রে নিয়ে নাও।’’ সুতরাং তাঁরা সব সব পাত্রে নিতে আরম্ভ করলেন। এমনকি সৈন্যের মধ্যে কোন পাত্র শূন্য রইল না। তাঁরা সকলেই খেয়ে তৃপ্ত হলেন এবং কিছু বেঁচেও গেল। অবশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। যে কোন বান্দা সন্দেহমুক্ত হয়ে এ দু’টি (সাক্ষ্য) নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, তাকে যে জান্নাতে যেতে বাধা দেওয়া হবে -তা হতেই পারে না (বরং সে বিনা বাধায় জান্নাতে প্রবেশ করবে)।’’ (মুসলিম)
6/422 وَعَن عِتْبَانَ بن مالك رضي الله عنه وَهُوَ مِمَّن شَهِدَ بَدراً، قَالَ: كُنتُ أُصَلِّي لِقَوْمِي بَني سَالِم، وَكَانَ يَحُولُ بَيْنِي وبَيْنَهُمْ وَادٍ إِذَا جَاءَتِ الأَمْطَار، فَيَشُقُّ عَلَيَّ اجْتِيَازُهُ قِبَلَ مَسْجِدِهم، فَجِئتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَقُلتُ لَهُ: إنّي أنْكَرْتُ بَصَرِي وَإنَّ الوَادِي الَّذِي بَيْنِي وبَيْنَ قَومِي يَسِيلُ إِذَا جَاءَتِ الأمْطَارُ فَيَشُقُّ عَلَيَّ اجْتِيَازُهُ فَوَدِدْتُ أنَّكَ تَأتِي فَتُصَلِّي في بَيْتِي مَكَاناً أتَّخِذُهُ مُصَلّى، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «سَأفْعَلُ » فَغَدَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأَبُو بَكرٍ رضي الله عنه بَعْدَ مَا اشْتَدَّ النَّهَارُ، وَاسْتَأذَنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَأذِنْتُ لَهُ، فَلَمْ يَجْلِسْ حَتَّى قَالَ: «أيْنَ تُحِبُّ أنْ أُصَلِّيَ مِنْ بَيْتِكَ ؟ » فَأشَرْتُ لَهُ إِلَى المَكَانِ الَّذِي أُحِبُّ أَنْ يُصَلِّيَ فِيهِ، فَقَامَ رَسُول الله ﷺ فَكَبَّرَ وَصَفَفْنَا وَرَاءَهُ فَصَلَّى رَكعَتَينِ ثُمَّ سَلَّمَ وَسَلَّمْنَا حِينَ سَلَّمَ فَحَبَسْتُهُ عَلَى خَزيرَةٍ تُصْنَعُ لَهُ، فَسَمِعَ أهلُ الدَّارِ أنَّ رَسُول الله ﷺ في بَيْتِي فَثَابَ رِجالٌ مِنْهُمْ حَتَّى كَثُرَ الرِّجَالُ في البَيْتِ، فَقَالَ رَجُلٌ: مَا فَعَلَ مَالِكٌ لا أرَاهُ ! فَقَالَ رَجُلٌ: ذلِكَ مُنَافِقٌ لا يُحِبُّ الله ورسولَهُ، فَقَالَ رَسُول الله ﷺ: «لاَ تَقُلْ ذلِكَ، ألاَ تَرَاهُ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله يَبْتَغي بِذَلِكَ وَجهَ الله تَعَالَى » فَقَالَ: اللهُ ورَسُولُهُ أعْلَمُ أمَّا نَحْنُ فَوَاللهِ مَا نَرَى وُدَّهُ وَلاَ حَدِيثَهُ إلاَّ إِلَى المُنَافِقينَ ! فَقَالَ رَسُولُ الله ﷺ: «فإنَّ الله قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله يَبْتَغِي بذَلِكَ وَجْهَ الله ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৬/৪২২। ইতবান ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, যিনি বদর যুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, তিনি বলেন, আমি আমার গোত্র বানু সালেমের নামাযে ইমামতি করতাম। আমার ও তাদের (মসজিদের) মধ্যে একটি উপত্যকা ছিল। বৃষ্টি হলে ঐ উপত্যকা পেরিয়ে তাদের মসজিদে যাওয়া আমার জন্য কষ্টকর হত। তাই আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে হাযির হয়ে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার দৃষ্টিশক্তিতে কমতি অনুভব করছি। (এ ছাড়া) আমার ও আমার গোত্রের মধ্যকার উপত্যকাটি বৃষ্টি হলে প্লাবিত হয়ে যায়। তখন তা পার হওয়া আমার জন্য কষ্টকর হয়। তাই আমার একান্ত আশা যে, আপনি এসে আমার ঘরের এক স্থানে নামায আদায় করবেন। আমি সে স্থানটি নামাযের স্থান রূপে নির্ধারিত করে নেব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আচ্ছা তাই করব।’’ সুতরাং পরের দিন সূর্যের তাপ যখন বেড়ে উঠল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার বাড়ীতে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইলে আমি তাঁকে অনুমতি দিলাম। তিনি না বসেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোমার ঘরের কোন্ স্থানে আমার নামায পড়া তুমি পছন্দ কর?’’ আমি যে স্থানে তাঁর নামায পড়া পছন্দ করেছিলাম, তাঁকে সেই স্থানের দিকে ইশারা করে (দেখিয়ে) দিলাম। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নামাযে) দাঁড়িয়ে তকবীর বললেন। আমরা সারিবদ্ধভাবে তাঁর পিছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দু’রাকআত নামায পড়ে সালাম ফিরালেন। তাঁর সালাম ফিরার সময় আমরাও সালাম ফিরালাম। তারপর তাঁর জন্য যে ‘খাযীর’ (চর্বি দিয়ে পাকানো আটা) প্রস্তুত করা হচ্ছিল, তা খাওয়ার জন্য তাঁকে আটকে দিলাম। ইতোমধ্যে মহল্লার লোকেরা শুনল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বাড়িতে। সুতরাং তাদের কিছু লোক এসে জমায়েত হল। এমনকি বাড়িতে অনেক লোকের সমাগম হল। তাদের মধ্যে একজন বলল, ‘মালেক (ইবনে দুখাইশিন) করল কী? তাকে দেখছি না যে?’ একজন জবাব দিল, ‘সে মুনাফিক! আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এমন কথা বলো না। তুমি কি মনে কর না যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে?’’ সে ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন। তবে আল্লাহর কসম! আমরা মুনাফিকদের সাথেই তার ভালবাসা ও আলাপ-আলোচনায় তাকে দেখতে পাই।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের কামনায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
7/423 وَعَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ: قُدِمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بسَبْيٍ فَإِذَا امْرَأةٌ مِنَ السَّبْيِ تَسْعَى، إِذْ وَجَدَتْ صَبياً في السَّبْيِ أخَذَتْهُ فَألْزَقَتهُ بِبَطْنِهَا فَأَرضَعَتْهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أتَرَوْنَ هذِهِ المَرْأةَ طَارِحَةً وَلَدَها في النَّارِ؟» قُلْنَا: لاَ وَاللهِ. فَقَالَ:« للهُ أرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هذِهِ بِوَلَدِهَا ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৭/৪২৩। উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী এল। তিনি দেখলেন যে, বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা (তার শিশুটি হারিয়ে গেলে এবং স্তনে দুধ জমে উঠলে বাচ্চার খোঁজে অস্থির হয়ে) দৌড়াদৌড়ি করছে। হঠাৎ সে বন্দীদের মধ্যে কোনো শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিয়ে (দুধ পান করাতে লাগল। অতঃপর তার নিজের বাচ্চা পেয়ে গেলে তাকে বুকে-পেটে লাগিয়ে) দুধ পান করাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি মনে কর যে, এই মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলতে পারে?’’ আমরা বললাম, ‘না, আল্লাহর কসম!’ তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটা দয়ালু, আল্লাহ তার বান্দাদের উপর তার চেয়ে অধিক দয়ালু।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
8/424 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لَمَّا خَلَقَ الله الخَلْقَ كَتَبَ في كِتَابٍ، فَهُوَ عِنْدَهُ فَوقَ العَرْشِ: إنَّ رَحْمَتِي تَغْلِبُ غَضَبي » . متفق عليه
৮/৪২৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগত তৈরী সম্পন্ন করলেন, তখন একটি কিতাবে লিখে রাখলেন, যা তাঁরই কাছে তাঁর আরশের উপর রয়েছে, ‘‘অবশ্যই আমার রহমত আমার গযব অপেক্ষা অগ্রগামী।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/425 وَعَنهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «جَعَلَ اللهُ الرَّحْمَةَ مِئَةَ جُزْءٍ، فَأمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ، وَأنْزَلَ في الأرْضِ جُزْءاً وَاحِداً، فَمِنْ ذلِكَ الجُزءِ يَتَرَاحَمُ الخَلائِقُ، حَتَّى تَرْفَعَ الدَّابّةُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أنْ تُصِيبَهُ» .
وَفي رِوَايَةٍ: «إنّ للهِ تَعَالَى مئَةَ رَحمَةٍ، أنْزَلَ مِنْهَا رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ الجِنِّ وَالإنسِ وَالبهائِمِ وَالهَوامّ، فَبِهَا يَتَعَاطَفُونَ، وبِهَا يَتَرَاحَمُونَ، وبِهَا تَعْطِفُ الوَحْشُ عَلَى وَلَدِهَا، وَأخَّرَ اللهُ تَعَالَى تِسْعاً وَتِسْعينَ رَحْمَةً يرْحَمُ بِهَا عِبَادَهُ يَوْمَ القِيَامَة ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
وَرَوَاهُ مُسلِمٌ أَيضاً مِنْ رِوَايَةِ سَلْمَانَ الفَارِسيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ للهِ تَعَالَى مِئَةَ رَحْمَةٍ فَمِنْهَا رَحْمَةٌ يَتَرَاحمُ بِهَا الخَلْقُ بَيْنَهُمْ، وَتِسْعٌ وَتِسعُونَ لِيَومِ القِيَامَةِ».
وَفي رِوَايَةٍ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى خَلَقَ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ مَئَةَ رَحْمَةٍ كُلُّ رَحْمَةٍ طِبَاقُ مَا بَيْنَ السَّماءِ إِلَى الأرْضِ، فَجَعَلَ مِنْهَا في الأَرضِ رَحْمَةً فَبِهَا تَعْطفُ الوَالِدَةُ عَلَى وَلَدِهَا، وَالوَحْشُ وَالطَّيْرُ بَعْضُهَا عَلَى بَعْض، فَإذا كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ أَكمَلَهَا بِهذِهِ الرَّحمَةِ ».
৯/৪২৫। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। তার মধ্যে নিরানববই ভাগ তিনি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। আর পৃথিবীতে একভাগ অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই সৃষ্টজগৎ একে অন্যের উপর দয়া করে। এমনকি জন্তু তার বাচ্চার উপর থেকে পা তুলে নেয় এই ভয়ে যে, সে ব্যথা পাবে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে একটি মাত্র রহমত তিনি মানব-দানব, পশু ও কীটপতঙ্গের মধ্যে অবতীর্ণ করেছেন। ঐ এক ভাগের কারণেই (সৃষ্টজীব) একে অপরকে মায়া করে, তার কারণেই একে অন্যকে দয়া করে এবং তার কারণেই হিংস্র জন্তুরা তাদের সন্তানকে মায়া করে থাকে। বাকী নিরানববইটি আল্লাহ আখেরাতের জন্য রেখে দিয়েছেন, যার দ্বারা তিনি কিয়ামতের দিন আপন বান্দাদের উপর রহম করবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীসটিকে ইমাম মুসলিমও সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলার একশটি রহমত আছে, যার মধ্য হতে মাত্র একটির কারণে সৃষ্টিজগৎ একে অন্যের প্রতি দয়া প্রদর্শন করে। আর নিরানব্বইটি (রহমত) কিয়ামতের দিনের জন্য রয়েছে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান যমীন সৃষ্টি করার দিন একশটি রহমত সৃষ্টি করলেন। প্রতিটি রহমত আসমান ও যমীনের মধ্যস্থল পরিপূর্ণ (বিশাল)। অতঃপর তিনি তার মধ্য হতে একটি রহমত পৃথিবীতে অবতীর্ণ করলেন। ঐ একটির কারণেই মা তার সন্তানকে মায়া করে এবং হিংস্র প্রাণী ও পাখীরা একে অন্যের উপর দয়া করে থাকে। অতঃপর যখন কিয়ামতের দিন হবে, তখন আল্লাহ এই রহমত দ্বারা সংখ্যা পূর্ণ করবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
10/426 وَعَنهُ، عَنِ النَّبيِّ ﷺ فِيمَا يَحكِي عَن رَبَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، قَال:« أذْنَبَ عَبْدٌ ذَنْباً، فَقَالَ: اَللهم اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، فَقَالَ الله تَبَاركَ وَتَعَالَى: أذنَبَ عَبدِي ذَنباً، فَعَلِمَ أنَّ لَهُ رَبّاً يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بِالذَّنْبِ، ثُمَّ عَادَ فَأذْنَبَ، فَقَالَ: أيْ رَبِّ اغْفِرْ لِي ذَنْبي، فَقَالَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى: أذنَبَ عبدِي ذَنباً، فَعَلِمَ أنَّ لَهُ رَبّاً، يَغْفِرُ الذَّنْبَ، وَيَأْخُذُ بالذَّنْبِ، قَدْ غَفَرْتُ لِعَبْدِي فَلْيَفْعَلْ مَا شَاءَ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১০/৪২৬। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রতিপালক থেকে বর্ণনা করেন, কোন বান্দা একটি পাপ করে বলল, ‘হে প্রভু! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন প্রভু আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন।’ অতঃপর সে আবার পাপ করল এবং বলল, ‘হে প্রভু! তুমি আমার পাপ ক্ষমা কর।’ তখন আল্লাহ তাবারাকা অতা‘আলা বলেন, ‘আমার বান্দা একটি পাপ করেছে, অতঃপর সে জেনেছে যে, তার একজন প্রভু আছেন, যিনি পাপ ক্ষমা করেন অথবা তা দিয়ে পাকড়াও করেন। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করলাম। সুতরাং সে যা ইচ্ছা করুক।’ (বুখারী ও মুসলিম)
*‘সে যা ইচ্ছা করুক’ কথার অর্থ হল, সে যখন এইরূপ করে; অর্থাৎ পাপ করে সাথে সাথে তওবা করে এবং আমি তাকে মাফ করে দেই, তখন সে যা ইচ্ছা করুক, তার কোন চিন্তা নেই। যেহেতু তওবা পূর্বকৃত পাপ মোচন করে দেয়।
11/427 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ لَمْ تُذْنِبُوا، لَذَهَبَ الله بِكُمْ، وَجَاءَ بِقَومٍ يُذْنِبُونَ، فَيَسْتَغْفِرُونَ اللهَ تَعَالَى، فَيَغْفِرُ لَهُمْ ». رواه مسلم
১১/৪২৭। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সেই মহান সত্তার কসম যাঁর হাতে আমার প্রাণ আছে! যদি তোমরা পাপ না কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে অপসারিত করবেন এবং এমন জাতির আবির্ভাব ঘটাবেন যারা পাপ করবে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাইবে। আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’ (মুসলিম)
12/428 وَعَن أَبي أَيُّوبَ خَالِدِ بنِ زَيدٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «لَوْلاَ أنَّكُمْ تُذْنِبُونَ، لَخَلَقَ الله خَلْقاً يُذْنِبُونَ، فَيَسْتَغْفِرونَ، فَيَغْفِرُ لَهُمْ ». رواه مسلم
১২/৪২৮। আবূ আইয়ূব খালেদ ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা যদি গুনাহ না কর, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা এমন জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা গুনাহ করবে তারপর তারা (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা চাইবে। আর তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’’(মুসলিম)
13/429 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا قُعُوداً مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، مَعَنَا أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، في نَفَرٍ فَقَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا، فَأبْطَأَ عَلَيْنَا فَخَشِينَا أنْ يُقتَطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رَسُولَ اللهِ ﷺ، حَتَّى أتَيْتُ حَائِطاً للأنْصَارِ ... وَذَكَرَ الحَدِيثَ بِطُولِهِ إِلَى قوله: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «اذهَبْ فَمَن لَقِيتَ وَرَاءَ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، مُسْتَيقِناً بِهَا قَلبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ ». رواه مسلم
১৩/৪২৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বসেছিলাম। আমাদের সঙ্গে আবূ বাকর ও উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)ও লোকদের একটি দলে উপস্থিত ছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্য থেকে উঠে (কোথাও) গেলেন। তারপর তিনি আমাদের নিকট ফিরে আসতে বিলম্ব করলেন। সুতরাং আমরা ভয় করলাম যে, আমাদের অবর্তমানে তিনি (শত্রু) কবলিত না হন। অতঃপর আমরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে (সভা থেকে) উঠে গেলাম। সর্বপ্রথম আমিই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খোঁজে বের হলাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত এক আনসারীর বাগানে এলাম। (অতঃপর) তিনি দীর্ঘ হাদীস বর্ণনা করলেন, যাতে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি যাও! অতঃপর (এ বাগানের বাইরে) যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ ঘটবে, যে হৃদয়ের দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর সাক্ষ্য দেবে, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে দাও।’’(মুসলিম)
﴿ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ وَمَنۡ عَصَانِي ِن تُعَذِّبۡهُمۡ فَإِنَّهُمۡ عِبَادُكَۖ وَإِن تَغۡفِرۡ لَهُمۡ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ ١١٨ ﴾ واه مسلم
১৪/৪৩০। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইব্রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে আল্লাহর এ বাণী পাঠ করলেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! এসব প্রতিমা বহু মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে; সুতরাং যে আমার অনুসরণ করবে সে আমার দলভুক্ত, কিন্তু কেউ আমার অবাধ্য হলে তুমি তো চরম ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।’’ (সূরা ইব্রাহীম ৩৬) এবং ঈসা আলাইহিস সালাম-এর উক্তি (এ আয়াতটি পাঠ করলেন), ‘‘যদি তুমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর, তবে তারা তোমার বান্দা। আর যদি তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে তুমি অবশ্যই প্রবল পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।’’ (সূরা মায়েদাহ ১১৮ আয়াত) অতঃপর তিনি তাঁর হাত দু’খানি উঠিয়ে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! আমার উম্মত, আমার উম্মত।’’ অতঃপর তিনি কাঁদতে লাগলেন। আল্লাহ আয্যা অজাল্ল বললেন, ‘হে জিব্রীল! তুমি মুহাম্মাদের নিকট যাও---আর তোমার রব বেশী জানেন---তারপর তাকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা কর?’ সুতরাং জিব্রীল তাঁর নিকট এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সে কথা জানালেন, যা তিনি (তাঁর উম্মত সম্পর্কে) বলেছিলেন---আর আল্লাহ তা অধিক জানেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘হে জিব্রীল! তুমি (পুনরায়) মুহাম্মাদের কাছে যাও এবং বল, আমি তোমার উম্মতের ব্যাপারে তোমাকে সন্তুষ্ট করে দেব এবং অসন্তুষ্ট করব না।’ (মুসলিম)
15/431 وَعَن مُعَاذِ بنِ جَبَلٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ رِدْفَ النَّبيِّ ﷺ عَلَى حِمَارٍ، فَقَالَ:« يَا مُعَاذُ، هَلْ تَدْرِي مَا حَقُّ الله عَلَى عِبَادِهِ ؟ وَمَا حَقُّ العِبَادِ عَلَى الله ؟ » قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . قَالَ:«فإنَّ حَقَّ اللهِ عَلَى العِبَادِ أنْ يَعْبُدُوهُ، وَلاَ يُشْرِكُوا بِهِ شَيئاً، وَحَقَّ العِبَادِ عَلَى اللهِ أنْ لاَ يُعَذِّبَ مَنْ لا يُشْرِكُ بِهِ شَيئاً ». فقلتُ: يَا رَسُولَ الله، أفَلا أُبَشِّرُ النَّاسَ ؟ قَالَ: «لاَ تُبَشِّرْهُمْ فَيَتَّكِلُوا ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৫/৪৩১। মু‘আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি গাধার উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘হে মু‘আয! তুমি কি জানো, বান্দার উপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর উপর বান্দার হক কী?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূলই অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, ‘‘বান্দার উপর আল্লাহর হক এই যে, সে তাঁরই ইবাদত করবে, এতে তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না। আর আল্লাহর উপর বান্দার হক এই যে, যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না তিনি তাকে আযাব দেবেন না।’’ অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি কি লোকদেরকে (এ) সুসংবাদ দেব না?’ তিনি বললেন, ‘‘তাদেরকে সুসংবাদ দিও না। কেননা, তারা (এরই উপর) ভরসা করে বসবে। (বুখারী ও মুসলিম)
16/432 وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «المُسْلِمُ إِذَا سُئِلَ في القَبْرِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ الله، وَأنّ مُحَمّداً رَسُولُ الله، فَذَلِكَ قَولُهُ تَعَالَى: ﴿ يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۖ ﴾ [ابراهيم: ٢٧] ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
১৬/৪৩২। বারা ইবনে আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হয়, তখন সে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া (সত্য) কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল। এই অর্থ রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার এই বাণীতে, ‘যারা মু’মিন তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের জীবনে প্রতিষ্ঠা দান করেন।’’ (সূরা ইব্রাহীম ১৭ আয়াত) (বুখারী ও মুসলিম)
17/433 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إنّ الكَافِرَ إِذَا عَمِلَ حَسَنَةً، أُطعِمَ بِهَا طُعْمَةً مِنَ الدُّنْيَا، وَأَمَّا المُؤْمِنُ فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى يَدَّخِرُ لَهُ حَسَنَاتِهِ في الآخِرَةِ، وَيُعْقِبُهُ رِزْقاً في الدُّنْيَا عَلَى طَاعَتِهِ».
وَفي رِوَايَةٍ: «إنَّ الله لاَ يَظْلِمُ مُؤْمِناً حَسَنَةً يُعْطَى بِهَا في الدُّنْيَا، وَيُجْزَى بِهَا في الآخِرَةِ . وَأَمَّا الكَافِرُ فَيُطْعَمُ بِحَسَنَاتِ مَا عَمِلَ للهِ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا، حَتَّى إِذَا أفْضَى إِلَى الآخرَةِ، لَمْ يَكُنْ لَهُ حَسَنَةٌ يُجْزَى بِهَا». رواه مسلم
১৭/৪৩৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কাফের যখন দুনিয়াতে কোনো পুণ্য কাজ করে, তখন বিনিময়ে তাকে দুনিয়ার (কিছু আনন্দ/খাবার জাতীয়) উপভোগ করতে দেওয়া হয়। (আর আখেরাতে সে এর কিছুই প্রতিদান পাবে না)। কিন্তু মু’মিনের জন্য আল্লাহ তা’আলা আখেরাতে তার প্রতিদানকে সঞ্চিত করে রাখেন এবং দুনিয়াতে তিনি তাকে জীবিকা দেন তাঁর আনুগত্যের বিনিময়ে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘মহান আল্লাহ কোন মু’মিনের উপর তার নেকীর ব্যাপারে যুলুম করেন না। তাকে তার প্রতিদান দুনিয়াতেও দেওয়া হয় এবং আখেরাতেও দেওয়া হবে। কিন্তু কাফেরকে ভাল কাজের বিনিময়--যা সে আল্লাহর জন্য করে--দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়। এমন কি যখন সে আখেরাতে পাড়ি দেবে, তখন তার এমন কোনো পুণ্য থাকবে না যে, তার বিনিময়ে তাকে কিছু (পুরস্কার) দেওয়া যাবে।’’ (মুসলিম)
18/434 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ كَمَثَلِ نَهْرٍ جَارٍ غَمْرٍ عَلَى بَابِ أحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْم خَمْسَ مَرَّات ». رواه مسلم
১৮/৪৩৪। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘পাঁচ ওয়াক্তের নামাযের উদাহরণ প্রচুর পানিতে পরিপূর্ণ ঐ নদীর মত, যা তোমাদের কারো দুয়ারের (সামনে বয়ে) প্রবাহিত হয়, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে।’’ (মুসলিম)
19/435 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ:«مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ، فَيقُومُ عَلَى جَنَازَتهِ أرْبَعُونَ رَجُلاً لاَ يُشْرِكُونَ بِاللهِ شَيئاً، إلاَّ شَفَّعَهُمُ اللهُ فِيهِ ». رواه مسلم
১৯/৪৩৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে কোনো মুসলিম মারা যায় আর তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক শরীক হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না। নিশ্চয় আল্লাহ তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবূল করেন।’’ (মুসলিম)
20/436 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ في قُبَّة نَحْواً مِنْ أربَعِينَ، فَقَالَ:«أتَرْضَونَ أنْ تَكُونُوا رُبُعَ أهْلِ الجَنَّةِ ؟ » قُلْنَا: نَعَمْ . قَالَ: «أتَرْضَوْنَ أنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أهلِ الجَنَّةِ ؟ » قُلْنَا: نَعَمْ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمّدٍ بيَدِهِ، إنِّي لأَرْجُو أنْ تَكُونُوا نِصْفَ أهْلِ الجَنَّةِ وَذَلِكَ أنَّ الجنَّةَ لاَ يَدْخُلُهَا إلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَةٌ، ومَا أنْتُم في أهْلِ الشِّركِ إلاَّ كَالشَّعْرَةِ البَيْضَاءِ فِي جِلدِ الثَّورِ الأَسْوَدِ، أَوْ كَالشَّعْرَةِ السَّودَاءِ في جِلدِ الثَّورِ الأحْمَر ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২০/৪৩৬। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা প্রায় চল্লিশ জন মানুষ রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে একটি তাঁবুতে ছিলাম। একসময় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি পছন্দ কর যে, তোমরা জান্নাতবাসীদের এক চতুর্থাংশ হবে?’’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি জান্নাতবাসীদের এক তৃতীয়াংশ হতে পছন্দ কর?’’ আমরা বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তাঁর শপথ, যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাশী যে, জান্নাতবাসীদের অর্ধেক তোমরাই হবে। এটা এ জন্য যে, শুধুমাত্র মুসলিম প্রাণ ছাড়া অন্য কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর মুশরিকদের তুলনায় তোমরা এরূপ, যেরূপ কালো বলদের গায়ে (একটি) সাদা লোম অথবা লাল বলদের গায়ে (একটি) কালো লোম।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
21/437 وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِذَا كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ دَفَعَ اللهُ إِلَى كُلِّ مُسْلِم يَهُودِياً أَوْ نَصْرَانِياً، فَيَقُولُ: هَذَا فِكَاكُكَ مِنَ النَّارِ » .
وَفِي رِوَايَةٍ عَنْهُ، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «يَجِيءُ يَوْمَ القِيَامَةِ نَاسٌ مِنَ المُسْلِمينَ بِذُنُوبٍ أَمْثَال الجِبَالِ يَغْفِرُهَا الله لَهُمْ ». رواه مسلم
২১/৪৩৭। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইয়াহুদী অথবা খ্রিষ্টানকে দিয়ে বলবেন, ‘এই তোমার জাহান্নাম থেকে বাঁচার মুক্তিপণ।’’
উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন কিছু সংখ্যক মুসলিম পাহাড় সম পাপ নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তা (সবই) তাদের জন্য ক্ষমা করে দেবেন।’’ (মুসলিম)
* ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিমকে একজন ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টানকে দিয়ে বলবেন, এই তোমার জাহান্নাম থেকে বাঁচার মুক্তিপণ।’ এ কথার অর্থ আবূ হুরাইরার হাদীসে বর্ণিত হয়েছে; ‘প্রত্যেকের জন্য বেহেশ্তে একটি নির্দিষ্ট স্থান আছে এবং জাহান্নামেও আছে। সুতরাং মু’মিন যখন বেহেশ্তে প্রবেশ করবে, তখন জাহান্নামে তার স্থলাভিষিক্ত হবে কাফের। যেহেতু সে তার কুফরীর কারণে তার উপযুক্ত। আর ‘মুক্তিপণ’ অর্থ এই যে, তুমি জাহান্নামের সম্মুখীন ছিলে; কিন্তু এটি হল তোমার মুক্তির বিনিময়। যেহেতু মহান আল্লাহ জাহান্নাম ভরতি করার জন্য একটি সংখ্যা নির্ধারিত রেখেছেন। সুতরাং তারা যখন তাদের কুফরী ও পাপের কারণে সেখানে প্রবেশ করবে, তখন তারা হবে মু’মিনদের ‘মুক্তিপণ।’ আর আল্লাহই অধিক জানেন।
22/438 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «يُدْنَى المُؤْمِنُ يَوْمَ القِيَامَة مِنْ رَبِّهِ حَتَّى يَضَعَ كَنَفَهُ عَلَيهِ، فَيُقَرِّرُهُ بذُنُوبِهِ، فَيَقُولُ: أَتَعرِفُ ذَنْبَ كَذَا ؟ أتَعرِفُ ذَنْبَ كَذَا ؟ فَيَقُولُ: رَبِّ أعْرِفُ، قَالَ: فَإنِّي قَدْ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيا، وَأنَا أغْفِرُهَا لَكَ اليَومَ، فَيُعْطَى صَحِيفَةَ حَسَنَاتِهِ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২২/৪৩৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কিয়ামতের দিন ঈমানদারকে রাববুল আলামীনের এত নিকটে নিয়ে আনা হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তার উপর নিজ পর্দা রেখে তার পাপসমূহের সবীকারোক্তি আদায় করে নেবেন। তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘এই পাপ তুমি জান কি? এই পাপ চিন কি?’ মু’মিন বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমি জানি।’ তিনি বলবেন, ‘আমি পৃথিবীতে তোমার পাপকে গোপন রেখেছি, আর আজ তা তোমার জন্য ক্ষমা করে দিচ্ছি।’ অতঃপর তাকে তার নেক আমলের আমলনামা দেওয়া হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
23/439 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أنَّ رَجُلاً أصَابَ مِن امْرَأة قُبْلَةً، فَأتَى النَّبيَّ ﷺ فَأخْبَرَهُ، فَأنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: ﴿ وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَيِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّئَِّاتِۚ ﴾ [هود: ١١٤] فَقَالَ الرجل: أَلِي هَذَا يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২৩/৪৩৯। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমা দিয়ে ফেলে। পরে সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বিষয়টি জানায়। তখন আল্লাহ তা‘আলা এই আয়াত অবতীর্ণ করেন, ‘‘দিনের দু’প্রান্তে সকাল ও সন্ধ্যায় এবং রাতের প্রথম ভাগে নামায কায়েম কর। নিশ্চয়ই পুণ্যরাশি পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়।’’ (সূরা হূদ ১১৪) লোকটি জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ কি শুধু আমার জন্য?’ তিনি বললেন, ‘‘না, এ আমার সকল উম্মতের জন্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
24/440 وَعَن أَنَسٍ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَصَبْتُ حَدّاً، فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، وَحَضَرَتِ الصَّلاةُ، فَصَلَّى مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَلَمَّا قَضَى الصَّلاةَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنِّي أصَبْتُ حَدّاً فَأقِمْ فيَّ كِتَابَ اللهِ . قَالَ: «هَلْ حَضَرْتَ مَعَنَا الصَّلاةَ »؟ قَالَ: نَعَمْ . قَالَ: «قَدْ غُفِرَ لَكَ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২৪/৪৪০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি; তাই আমার উপর দণ্ড প্রয়োগ করুন।’ ইতোমধ্যে নামাযের সময় হল। সেও আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামায পড়ল। নামায শেষ করে পুনরায় সে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! নিশ্চয় আমি দণ্ডনীয় অপরাধ করে ফেলেছি; তাই আমার উপর আল্লাহর কিতাবে ঘোষিত দণ্ড প্রয়োগ করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি আমাদের সাথে নামায আদায় করেছ?’’ সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চই তোমার অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
* উক্ত হাদীসে ‘দণ্ডনীয় অপরাধ’ বলতে সেই অপরাধ উদ্দেশ্য নয়, যাতে শরীয়তে নির্ধারিত দণ্ড আছে; যেমন মদপান, ব্যভিচার প্রভৃতি। কেননা এমন দণ্ডনীয় অপরাধ নামায পড়লেই ক্ষমা হয়ে যাবে না। যেমন সে দণ্ড প্রয়োগ না করাও শাসকের জন্য বৈধ নয়।
25/441 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الله لَيرْضَى عَنِ العَبْدِ أنْ يَأكُلَ الأَكْلَةَ، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا ». رواه مسلم
২৫/৪৪১। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বান্দার (এ কাজে) সন্তুষ্ট হন যে, (কিছু) খেলে সে তার উপর আল্লাহর প্রশংসা করে অথবা কিছু পান করলে সে তার উপর তাঁর প্রশংসা করে।’’ (মুসলিম)
26/442 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «إنَّ اللهَ تَعَالَى يَبْسُطُ يَدَهُ باللَّيلِ ليَتُوبَ مُسِيءُ النَّهَارِ، وَيَبْسُطُ يَدَهُ بالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِيءُ اللَّيلِ، حَتَّى تَطلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا ». رواه مسلم
২৬/৪৪২। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা রাতে নিজ হাত প্রসারিত করেন, যেন দিবাভাগের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। আর তিনি দিনেও নিজ হাত প্রসারিত করেন, যেন রাতের অপরাধী তাওবাহ করে নেয়। যতক্ষণ না পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় হবে (এ নিয়ম অব্যাহত থাকবে)।’’ (মুসলিম)
27/443 وَعَن أَبي نَجِيحٍ عَمرِو بنِ عَبَسَةَ السُّلَمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ وأنَا في الجاهِلِيَّةِ أظُنُّ أنَّ النَّاسَ عَلَى ضَلاَلَةٍ، وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ، وَهُمْ يَعْبُدُونَ الأَوْثَانَ، فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أخْبَاراً، فَقَعَدْتُ عَلَى رَاحِلَتِي، فَقَدِمْتُ عَلَيهِ، فإِذَا رَسُولُ اللهِ ﷺ مُسْتَخْفِياً، جُرَءَاءُ عَلَيهِ قَومُهُ، فَتَلَطَّفَتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيهِ بِمَكَّةَ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا أنْتَ ؟ قَالَ: «أَنَا نَبيٌّ » قُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ ؟ قَالَ:«أرْسَلَنِي الله » قُلْتُ: وَبِأَيِّ شَيْء أرْسَلَكَ ؟ قَالَ: « أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الأرْحَامِ، وَكَسْرِ الأَوْثَانِ، وَأنْ يُوَحَّدَ اللهُ لاَ يُشْرَكُ بِهِ شَيْء » قُلْتُ: فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا ؟ قَالَ: «حُرٌّ وَعَبْدٌ » وَمَعَهُ يَوْمَئذٍ أَبُو بَكرٍ وَبِلاَلٌ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قُلْتُ: إنّي مُتَّبِعُكَ، قَالَ: «إنَّكَ لَنْ تَسْتَطيعَ ذلِكَ يَومَكَ هَذَا، ألا تَرَى حَالي وحالَ النَّاسِ ؟ وَلَكِنِ ارْجعْ إِلَى أهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ بِي قَدْ ظَهرْتُ فَأتِنِي » قَالَ: فَذَهَبْتُ إِلَى أهْلِي وقَدِمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ المَدِينَةَ حَتَّى قَدِمَ نَفَرٌ مِنْ أهْلِي المَدِينَةَ، فَقُلتُ: مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ المَدِينَةَ ؟ فَقَالُوا: النَّاس إلَيهِ سِرَاعٌ، وَقَدْ أَرَادَ قَومُهُ قَتْلَهُ، فلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذلِكَ، فقَدِمْتُ المَدِينَةَ، فَدَخَلْتُ عَلَيهِ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَتَعْرِفُني ؟ قَالَ:«نَعَمْ، أنْتَ الَّذِي لَقَيْتَنِي بمكّةَ » قَالَ: فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أخْبِرنِي عَمَّا عَلَّمَكَ الله وأَجْهَلُهُ، أخْبِرْنِي عَنِ الصَّلاَةِ ؟ قَالَ: «صَلِّ صَلاَةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلاَةِ حَتَّى تَرْتَفِعَ الشَّمْسُ قِيدَ رُمْحٍ، فَإنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيطَان، وَحينَئذٍ يَسجُدُ لَهَا الكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإنَّ الصَلاَةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بالرُّمْحِ، ثُمَّ اقْصُرْ عَنِ الصَّلاةِ، فَإنَّهُ حينئذ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فإذَا أقْبَلَ الفَيْءُ فَصَلِّ، فَإنَّ الصَّلاةَ مَشْهُودَةٌ مَحضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّي العَصرَ، ثُمَّ اقْصرْ عَنِ الصَّلاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فإنَّهَا تَغْرُبُ بينَ قَرْنَيْ شَيطَانٍ، وَحِينَئذٍ يَسْجُدُ لَهَا الكُفّارُ » قَالَ: فَقُلتُ: يَا نَبيَّ اللهِ، فَالوُضُوءُ حَدِّثنِي عَنْهُ ؟ فَقَالَ: «مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ، فَيَتَمَضْمَضُ وَيسْتَنْشِقُ فَيَسْتَنْثِرُ، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ المَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيهِ إِلَى المِرفقَيْن، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أنَامِلِهِ مَعَ الماءِ، ثُمَّ يَمْسَحُ رَأسَهُ، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رَأسِهِ مِن أطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الماَءِ، ثُمَّ يَغسِلُ قَدَمَيهِ إِلَى الكَعْبَيْنِ، إلاَّ خَرَّتْ خَطَايَا رِجلَيْهِ مِنْ أنَاملِهِ مَعَ الماَءِ، فَإنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى، فَحَمِدَ الله تَعَالَى، وَأَثنَى عَلَيهِ ومَجَّدَهُ بالَّذِي هُوَ لَهُ أهْلٌ، وَفَرَّغَ قَلبَهُ للهِ تَعَالَى، إلاَّ انْصَرفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيئَتِه يَومَ وَلَدَتهُ أُمُّهُ» . فَحَدَّثَ عَمرُو بنُ عَبَسَةَ بِهَذَا الحَدِيثِ أَبَا أُمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ لَهُ أَبُو أُمَامَة: يَا عَمْرَو بنَ عَبَسَةَ، انْظُر مَا تقولُ! فِي مَقَامٍ وَاحِدٍ يُعْطَى هَذَا الرَّجُلُ ؟ فَقَالَ عَمْرٌو: يَا أَبَا أُمَامَةَ، لَقَد كَبُرَتْ سِنّي، وَرَقَّ عَظمِي، وَاقْتَرَبَ أجَلِي، وَمَا بِي حَاجَةٌ أنْ أكْذِبَ عَلَى اللهِ تَعَالَى، وَلاَ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، لَوْ لَمْ أسمعه مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ، إلاَّ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَينِ أَوْ ثَلاثاً، حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَّات، مَا حَدَّثْتُ أبَداً بِهِ، وَلكنِّي سَمِعتُهُ أكثَرَ مِن ذَلِكَ . رواه مسلم
২৭/৪৪৩। আবূ নাজীহ ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, জাহেলিয়াতের (প্রাগৈসলামিক) যুগ থেকেই আমি ধারণা করতাম যে, লোকেরা পথভ্রষ্টতার উপর রয়েছে এবং এরা কোন ধর্মেই নেই, আর ওরা প্রতিমা পূজা করছে। অতঃপর আমি এক ব্যক্তির ব্যাপারে শুনলাম যে, তিনি মক্কায় অনেক আজব আজব খবর বলছেন। সুতরাং আমি আমার সওয়ারীর উপর বসে তাঁর কাছে এসে দেখলাম যে, তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি গুপ্তভাবে (ইসলাম প্রচার করছেন), আর তাঁর সম্প্রদায় (মুশরিকরা) তাঁর প্রতি (দুর্ব্যবহার করে) দুঃসাহসিকতা প্রদর্শন করছে। সুতরাং আমি বিচক্ষণতার সাথে কাজ নিলাম। পরিশেষে আমি মক্কায় তাঁর কাছে প্রবেশ করলাম। অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, ‘আপনি কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি নবী।’’ আমি বললাম, ‘নবী কী?’ তিনি বললেন, ‘‘আমাকে মহান আল্লাহ প্রেরণ করেছেন।’’ আমি বললাম, ‘কী নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করেছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘জ্ঞাতিবন্ধন অক্ষুণ্ণ রাখা, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা, আল্লাহকে একক উপাস্য মানা এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করার নির্দেশ দিয়ে।’’ আমি বললাম, ‘এ কাজে আপনার সঙ্গে কে আছে?’ তিনি বললেন, ‘‘একজন স্বাধীন মানুষ এবং একজন কৃতদাস।’’ তখন তাঁর সঙ্গে আবূ বকর ও বিলাল (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) ছিলেন। আমি বললাম, ‘আমিও আপনার অনুগত।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি এখন এ কাজ কোনো অবস্থাতেই করতে পারবে না। তুমি কি আমার অবস্থা ও লোকদের অবস্থা দেখতে পাও না? অতএব তুমি (এখন) বাড়ি ফিরে যাও। অতঃপর যখন তুমি আমার জয়ী ও শক্তিশালী হওয়ার সংবাদ পাবে, তখন আমার কাছে এসো।’’
সুতরাং আমি আমার পরিবার পরিজনের নিকট চলে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (পরিশেষে) মদীনা চলে এলেন, আর আমি স্বপরিবারেই ছিলাম। অতঃপর আমি খবরাখবর নিতে আরম্ভ করলাম এবং যখন তিনি মদীনায় আগমন করলেন, তখন আমি (তাঁর ব্যাপারে) লোকদেরকে জিজ্ঞাসা করতে লাগলাম। অবশেষে আমার পরিবারের কিছু লোক মদীনায় এল। আমি বললাম, ‘ঐ লোকটার অবস্থা কি, যিনি (মক্কা ত্যাগ করে) মদীনা এসেছেন?’ তারা বলল, ‘লোকেরা তার দিকে ধাবমান। তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে হত্যা করার ইচ্ছা করেছিল; কিন্তু তারা তা করতে সক্ষম হয়নি।’
অতঃপর আমি মদীনা এসে তাঁর খিদমতে হাযির হলাম। তারপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে চিনতে পারছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তুমি তো ঐ ব্যক্তি, যে মক্কায় আমার সাথে সাক্ষাৎ করেছিল।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে যা শিক্ষা দিয়েছেন এবং যা আমার অজানা---তা আমাকে বলুন? আমাকে নামায সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি ফজরের নামায পড়। তারপর সূর্য এক বল্লম বরাবর উঁচু হওয়া পর্যন্ত বিরত থাকো। কারণ তা শয়তানের দু’ শিং-এর মধ্যভাগে উদিত হয় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং সে সময় কাফেররা তাকে সিজদা করে। পুনরায় তুমি নামায পড়। কেননা, নামাযে ফিরিশ্তা সাক্ষী ও উপস্থিত হন, যতক্ষণ না ছায়া বল্লমের সমান হয়ে যায়। অতঃপর নামায থেকে বিরত হও। কেননা, তখন জাহান্নামের আগুন উস্কানো হয়। অতঃপর যখন ছায়া বাড়তে আরম্ভ করে, তখন নামায পড়। কেননা, এ নামাযে ফিরিশ্তা সাক্ষী ও উপস্থিত হন। পরিশেষে তুমি আসরের নামায পড়। অতঃপর সূর্য ডোবা পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকো। কেননা, সূর্য শয়তানের দু’ শিঙ্গের মধ্যে অস্ত যায় (অর্থাৎ এ সময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে) এবং তখন কাফেররা তাকে সিজদাহ করে।’’
পুনরায় আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি আমাকে ওযূ সম্পর্কে বলুন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে কেউ পানি নিকটে করে (হাত ধোওয়ার পর) কুল্লি করে এবং নাকে পানি নিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে, তার চেহারা, তার মুখ এবং নাকের গুনাহসমূহ ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার চেহারা ধোয়, তখন তার চেহারার পাপরাশি তার দাড়ির শেষ প্রান্তের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার হাত দু’খানি কনুই পর্যন্ত ধোয়, তখন তার হাতের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার মাথা মাসাহ করে, তখন তার মাথার পাপরাশি চুলের ডগার পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যখন তার পা দু’খানি গাঁট পর্যন্ত ধোয়, তখন তার পায়ের পাপরাশি তার আঙ্গুলের পানির সাথে ঝরে যায়। অতঃপর সে যদি দাঁড়িয়ে গিয়ে নামায পড়ে, আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করে--যার তিনি যোগ্য এবং অন্তরকে আল্লাহ তা‘আলার জন্য খালি করে, তাহলে সে ঐ দিনকার মত নিষ্পাপ হয়ে বেরিয়ে আসে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।’’
তারপর ‘আমর ইবনে আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী আবূ উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করলেন। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, ‘হে ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ! তুমি যা বলছ তা চিন্তা করে বল! একবার ওযূ করলেই কি এই ব্যক্তিকে এতটা মর্যাদা দেওয়া হবে?’ ‘আমর বললেন, ‘হে আবূ উমামাহ! আমার বয়স ঢের হয়েছে, আমার হাড় দুর্বল হয়ে গেছে এবং আমার মৃত্যুও নিকটবর্তী। (ফলে এ অবস্থায়) আল্লাহ তা‘আলা অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি মিথ্যা আরোপ করার আমার কী প্রয়োজন আছে? যদি আমি এটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে একবার, দু’বার, তিনবার এমনকি সাতবার পর্যন্ত না শুনতাম, তাহলে কখনই তা বর্ণনা করতাম না। কিন্তু আমি তাঁর নিকট এর চেয়েও অধিকবার শুনেছি।’ (মুসলিম)
28/444. وَعَن أَبي مُوسَى الأشعَرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: «إِذَا أرَادَ اللهُ تَعَالَى رَحمَةَ أُمَّةٍ، قَبَضَ نَبيَّهَا قَبْلَها، فَجَعَلَهُ لَهَا فَرطاً وَسَلَفاً بَيْنَ يَدَيْهَا، وإذَا أَرَادَ هَلَكَةَ أُمَّةٍ، عَذَّبَهَا وَنَبِيُّهَا حَيٌّ، فَأَهلَكَهَا وَهُوَ حَيٌّ يَنظُرُ، فَأَقَرَّ عَينَهُ بِهَلاَكِهَا حِينَ كَذَّبُوهُ وَعَصَوا أمْرَهُ ». رواه مسلم
২৮/৪৪৪। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন আল্লাহ তা‘আলা কোন উম্মতের প্রতি অনুগ্রহ করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের নবীকে তাদের পূর্বেই তুলে নেন। অতঃপর তিনি তাঁকে সেই উম্মতের জন্য অগ্রগামী ও ব্যবস্থাপক বানিয়ে দেন। আর যখন তিনি কোন উম্মতকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদেরকে তাদের নবীর উপস্থিতিতে শাস্তি দেন। তিনি নিজ জীবদ্দশায় তাদের ধ্বংস স্বচক্ষে দেখেন। সুতরাং আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে নবীর চক্ষুশীতল করেন, যখন তারা তাঁকে মিথ্যাবাদী মনে করে এবং তাঁর আদেশ অমান্য করে।’’ (মুসলিম)
52- بَابُ فَضْلِ الرَّجَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৫২: আল্লাহর কাছে ভাল আশা রাখার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা (মূসা আলাইহিস সালাম-এর অনুসারী) এক নেক বান্দার ব্যাপারে সংবাদ দিয়ে বলেন,
﴿ وَأُفَوِّضُ أَمۡرِيٓ إِلَى ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ بَصِيرُۢ بِٱلۡعِبَادِ ٤٤ فَوَقَىٰهُ ٱللَّهُ سَئَِّاتِ مَا مَكَرُواْۖ ﴾ [غافر: ٤٤، ٤٥]
অর্থাৎ “আমি আমার ব্যাপার আল্লাহকে সোপর্দ করছি। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর দাসদের প্রতি সবিশেষ দৃষ্টি রাখেন। অতঃপর আল্লাহ তাকে ওদের ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট হতে রক্ষা করলেন এবং কঠিন শাস্তি ফিরআউন সম্প্রদায়কে গ্রাস করল।” (সূরা গাফির ৪৪-৪৫ আয়াত)
1/445 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، أَنَّهُ قَالَ: «قَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ حَيْثُ يَذْكُرُنِي، وَاللهِ، للهُ أفْرَحُ بِتَوبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أحَدِكُمْ يَجِدُ ضَالَّتَهُ بالفَلاَةِ، وَمَنْ تَقَرَّبَ إلَيَّ شِبْراً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعاً، وَمَنْ تَقَرَّبَ إِلَيَّ ذِرَاعاً، تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ بَاعاً، وَإِذَا أقْبَلَ إِلَيَّ يَمْشِي أقْبَلْتُ إِلَيْهِ أُهَرْوِلُ ». متفقٌ عليه
১/৪৪৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্ল বলেন, ‘আমি সেইরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি, যখন যে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশী হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/446 وَعَن جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَبلَ مَوْتِه بِثَلاَثَةِ أَيَّامٍ، يَقُولُ: «لاَ يَمُوتَنّ أحَدُكُمْ إِلاَّ وَهُوَ يُحْسِنُ الظَّنَّ بِاللهِ - عَزَّ وَجَلَّ ». رواه مسلم
২/৪৪৬। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মৃত্যুর তিনদিন পূর্বে তাঁকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আল্লাহর প্রতি সুধারণা না রেখে তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই মৃত্যুবরণ না করে।’’ (মুসলিম)
3/447 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «قَالَ اللهُ تَعَالَى: يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي . يَا ابْنَ آدَمَ، لَوْ بَلَغَت ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي . يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايا، ثُمَّ لَقَيْتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِها مَغْفِرَةً ». رواه الترمذي، وقال:« حديث حسن»
৩/৪৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! যাবৎ তুমি আমাকে ডাকবে এবং ক্ষমার আশা রাখবে, তাবৎ আমি তোমাকে ক্ষমা করব। তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে থাকে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কাউকে শরীক না করে থাক, তাহলে আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার নিকট উপস্থিত হব।’’ (তিরমিযী, হাসান)
53- بَابُ الْجَمْعِ بَيْنَ الْخَوْفِ وَالرَّجَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৫৩: একই সাথে আল্লাহর প্রতি ভয় ও আশা রাখার বিবরণ
জ্ঞাতব্য যে, সুস্থ অবস্থায় বান্দার উচিত হল, অন্তরে আল্লাহর আযাবের ভয় এবং তাঁর রহমতের আশা রাখা। এ ক্ষেত্রে ভয় ও আশা উভয়ই সমান হবে। পক্ষান্তরে অসুস্থ অবস্থায় নিছকভাবে আশা রাখা উচিত। কুরআন ও সুন্নাহ এবং অন্যান্য স্পষ্ট উক্তিতে এ কথার ভূরি ভূরি প্রমাণ বর্তমান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَلَا يَأۡمَنُ مَكۡرَ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ﴾ [الاعراف: ٩٩]
অর্থাৎ “তারা কি আল্লাহর কৌশলের ভয় রাখে না? বস্তুত ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর কৌশলের হতে নিরাপদ বোধ করে না।” (সূরা আ‘রাফ ৯৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّهُۥ لَا يَاْيَۡٔسُ مِن رَّوۡحِ ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡقَوۡمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ﴾ [يوسف: ٨٧]
অর্থাৎ “অবিশ্বাসী (কাফের) সম্প্রদায় ব্যতীত কেউই আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হয় না।” (সূরা ইউসুফ ৮৭ আয়াত)
অন্য জায়গায় তিনি বলেন,
﴿ يَوۡمَ تَبۡيَضُّ وُجُوهٞ وَتَسۡوَدُّ وُجُوهٞۚ ﴾ [ال عمران: ١٠٦]
অর্থাৎ “সেদিন কতকগুলো মুখমণ্ডল সাদা (উজ্জ্বল) হবে এবং কতকগুলো মুখমণ্ডল কালো হবে।” (আলে ‘ইমরান ১০৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ ٱلۡعِقَابِ وَإِنَّهُۥ لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ١٦٧ ﴾ [الاعراف: ١٦٧]
অর্থাৎ “আর তোমার প্রতিপালক তো শাস্তিদানে সত্বর এবং তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুও।” (সূরা আ‘রাফ ১৬৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٖ ١٣ وَإِنَّ ٱلۡفُجَّارَ لَفِي جَحِيمٖ ١٤ ﴾ [الانفطار: ١٣، ١٤]
অর্থাৎ “পুণ্যবানগণ তো থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে এবং পাপাচারীরা থাকবে (জাহীম) জাহান্নামে।” (সূরা ইনফিত্বার ১৩-১৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٦ فَهُوَ فِي عِيشَةٖ رَّاضِيَةٖ ٧ وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ ﴾ [القارعة: ٦، ٩]
অর্থাৎ “তখন যার (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, সে তো সন্তোষময় জীবনে (সুখে) থাকবে। কিন্তু যার পাল্লা হাল্কা হবে, তার স্থান হবে হাবিয়াহ।” (সূরা ক্বারিয়াহ ৬-৯ আয়াত)
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আশা ও ভয় রাখার কথা কুরআন মাজীদের কোন কোন স্থানে মাত্র একটি আয়াতে, কোন স্থানে দু’টি আয়াতে এবং কোন স্থানে তিন বা ততোধিক আয়াতে একত্রে বিবৃত হয়েছে।
1/448 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤمِنُ مَا عِنْدَ الله مِنَ العُقُوبَةِ، مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ، وَلَوْ يَعْلَمُ الكَافِرُ مَا عِنْدَ الله مِنَ الرَّحْمَةِ، مَا قَنَطَ مِنْ جَنَّتِهِ أحَدٌ ». رواه مسلم
১/৪৪৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যদি মু’মিন জানত যে, আল্লাহর নিকট কী শাস্তি রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাতের আশা করত না। আর যদি কাফের জানত যে, আল্লাহর নিকট কী করুণা রয়েছে, তাহলে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না।’’ (মুসলিম)
2/449 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ:« إِذَا وُضِعَتِ الجنازةُ واحْتَمَلَهَا النَّاسُ أَوِ الرِّجَالُ عَلَى أعناقِهِمْ، فَإنْ كَانَتْ صَالِحَةً، قَالَتْ: قَدِّمُونِي قَدِّمُونِي، وَإنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ، قَالَتْ: يَا وَيْلَهَا! أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلاَّ الإنْسانُ، وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ». رواه البخاري
২/৪৪৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন জানাযা খাটে রাখা হয় এবং লোকেরা অথবা পুরুষরা কাঁধে বহন করতে শুরু করে, তখন সে নেককার হলে বলতে থাকে, ‘আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও। আমাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও।’ আর বদকার হলে সে বলতে থাকে, ‘হায় ধ্বংস আমার! তোমরা এটিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া সবাই তার শব্দ শুনতে পায়। মানুষ তা শুনলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলত। (বা মারা যেত।)’’ (বুখারী)
3/450 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «الجَنَّةُ أقْرَبُ إِلى أحَدِكُمْ مِنْ شِرَاكِ نَعْلِهِ، وَالنَّارُ مِثْلُ ذلك ». رواه البخاري
৩/৪৫০। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাত তোমাদের কারো জুতোর ফিতার চাইতেও বেশী নিকটবর্তী, আর জাহান্নামও তদ্রূপ।’’ (বুখারী)
54- بَابُ فَضْلِ الْبُكَاءِ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ تَعَالٰى وَشَوْقًا إِلَيْهِ
পরিচ্ছেদ - ৫৪: আল্লাহর ভয়ে এবং তাঁর সাক্ষাতের আনন্দে কান্না করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيَخِرُّونَ لِلۡأَذۡقَانِ يَبۡكُونَ وَيَزِيدُهُمۡ خُشُوعٗا۩ ١٠٩ ﴾ [الاسراء: ١٠٩]
অর্থাৎ “তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে (সিজদা) দেয় এবং এ (কুরআন) তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ১০৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ أَفَمِنۡ هَٰذَا ٱلۡحَدِيثِ تَعۡجَبُونَ ٥٩ وَتَضۡحَكُونَ وَلَا تَبۡكُونَ ٦٠ ﴾ [النجم: ٥٩، ٦٠]
অর্থাৎ “তোমরা কি এই কথায় বিস্ময়বোধ করছ? এবং হাসি-ঠাট্টা করছ! ক্রন্দন করছ না?” (সূরা নাজ্ম ৫৯-৬০ আয়াত)
1/451 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي النَّبيُّ ﷺ: «اِقْرَأْ عَليَّ القُرْآنَ » قُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَقرَأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ ؟! قَالَ: «إِنِّي أُحِبُّ أَنْ أسْمَعَهُ مِنْ غَيرِي » فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سُورَةَ النِّسَاءِ، حَتَّى جِئْتُ إِلى هذِهِ الآيَةِ: ﴿ فَكَيۡفَ إِذَا جِئۡنَا مِن كُلِّ أُمَّةِۢ بِشَهِيدٖ وَجِئۡنَا بِكَ عَلَىٰ هَٰٓؤُلَآءِ شَهِيدٗا ٤١ ﴾ [النساء: ٤١] قَالَ: «حَسْبُكَ الآنَ » فَالَتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৪৫১। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি আমার সামনে কুরআন তিলাওয়াত কর।’’ উত্তরে আমি আরজ করলাম, ‘আমি আপনার সামনে তিলাওয়াত করব, অথচ তা আপনার উপর অবতীর্ণ করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি অন্যের কাছ থেকে তা শুনতে ভালবাসি।’’ অতএব আমি সূরা ‘নিসা’ তিলাওয়াত করলাম। পরিশেষে যখন আমি এ আয়াতে এসে পৌঁছলাম; যার অর্থ, ‘‘তখন তাদের কী অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী (নবী) উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব?’’ তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘‘যথেষ্ট, এবার থাম।’’ আমি তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর চক্ষু দু’টি থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারী ও মুসলিম)
2/452 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَبَ رَسُولُ اللهِ ﷺ خُطبَةً مَا سَمِعْتُ مِثلَهَا قَطُّ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا أعْلَمُ، لَضحِكْتُمْ قَلِيلاً وَلَبَكَيتُمْ كَثِيراً ». فَغَطَّى أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَجُوهَهُمْ، وَلَهُمْ خَنِينٌ. مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
২/৪৫২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা এমন ভাষণ দিলেন যে, ওর মত (ভাষণ) কখনোও শুনিনি। (তাতে) তিনি বললেন, ‘‘যা আমি জানি তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা কম হাসতে এবং অধিক কাঁদতে।’’ (এ কথা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁদের চেহারা ঢেকে নিলেন এবং তাদের বিলাপের রোল আসতে লাগল। (বুখারী ও মুসলিম)
3/453 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ في الضَّرْعِ، وَلاَ يَجْتَمِعُ غُبَارٌ في سَبِيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديثٌ حَسنٌ صحيحٌ »
৩/৪৫৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করেছে, যতক্ষণ না (দোহনকৃত) দুধ বাঁটে ফিরে যাবে। (অর্থাৎ দু’টোই অসম্ভব)। আর আল্লাহর রাস্তার ধুলো ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে না।’’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
৪/৪৫৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’ (বুখারী-মুসলিম)
5/455 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ الشِّخِّيرِ رضي الله عنه، قَالَ: أَتَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَهُوَ يُصَلِّي وَلِجَوْفِهِ أَزِيزٌ كَأَزِيزِ المِرْجَلِ مِنَ البُكَاءِ . حديث صحيح رواه أَبو داود والترمذي في الشمائل بإسناد صحيح
৫/৪৫৫। আব্দুল্লাহ ইবনে শিখ্খীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি নামায পড়ছিলেন এবং তাঁর বুক থেকে চুলার হাঁড়ির (ফুটন্ত পানির) মত কান্নার অস্ফুট রোল শোনা যাচ্ছিল।’ (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে, শামায়েলে তিরমিযী বিশুদ্ধ সূত্রে)
6/456 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لأُبَي بنِ كَعبٍ رضي الله عنه: «إنَّ الله - عَزَّ وَجَلَّ - أَمَرَنِي أَنْ أقْرَأَ عَلَيْكَ: ﴿ لَمۡ يَكُنِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ ﴾ [البينة: ١] قَالَ: وَسَمَّانِي ؟ قَالَ: «نَعَمْ » فَبَكَى أُبَيٌّ . متفقٌ عَلَيْهِ . وَفِي رِوَايَةٍ: فَجَعَلَ أُبَيٌّ يَبْكِي .
৬/৪৫৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, ‘‘আল্লাহ আমাকে আদেশ করলেন যে, আমি তোমাকে ‘সূরা লাম য়্যাকুনিল্লাযীনা কাফারু’ পড়ে শুনাই।’’ উবাই ইবন কা‘ব বললেন, ‘(আল্লাহ কি) আমার নাম নিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ সুতরাং উবাই (খুশীতে) কেঁদে ফেললেন। অন্য এক বর্ণনায় আছে, উবাই কাঁদতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
7/457 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ أَبُو بَكرٍ لِعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا بَعْدَ وَفَاةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ: انْطَلِقْ بِنَا إِلَى أُمِّ أيْمَنَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا نَزُورُهَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَزُورُهَا، فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَيْهَا، بَكَتْ، فَقَالاَ لَهَا: مَا يُبْكِيكِ ؟ أمَا تَعْلَمِينَ أنَّ مَا عِنْدَ اللهِ خَيْرٌ لرَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَتْ: مَا أبْكِي أَنْ لاَ أَكُونَ أَعْلَمُ أنَّ مَا عِنْدَ الله تَعَالَى خَيْرٌ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلَكِنْ أبكي أنَّ الوَحْيَ قدِ انْقَطَعَ مِنَ السَّماءِ، فَهَيَّجَتْهُمَا عَلَى البُكَاءِ، فَجَعَلا يَبْكِيَانِ مَعَهَا . رواه مسلم
৭/৪৫৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনাবসানের পর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, ‘চলুন, আমরা উম্মে আইমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাই, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন।’ সুতরাং যখন তাঁরা উম্মে আইমানের কাছে পৌঁছলেন, তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। অতঃপর তাঁরা তাঁকে বললেন, ‘তুমি কাঁদছ কেন? তুমি কি জানো না যে, আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য (দুনিয়া থেকে) অধিক উত্তম?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি এ জন্য কান্না করছি না যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আল্লাহর নিকট যা রয়েছে তা অধিকতর উত্তম, সে কথা আমি জানি না। কিন্তু আমি এ জন্য কাঁদছি যে, আসমান হতে ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল।’ উম্মে আইমান (তাঁর এ দুঃখজনক কথা দ্বারা) ঐ দু’জনকে কাঁদতে বাধ্য করলেন। ফলে তাঁরাও তাঁর সাথে কাঁদতে লাগলেন। (মুসলিম)
8/458 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللهِ ﷺ وَجَعُهُ، قِيلَ لَهُ فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ » فَقَالَت عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: إنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ، إِذَا قَرَأَ القُرْآنَ غَلَبَهُ البُكَاءُ، فَقَالَ: «مُرُوهُ فَليُصَلِّ » .
وَفِي رِوَايَةٍ عَن عَائِشَةٍَ، رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: قُلتُ: إنَّ أَبَا بَكْرٍ إِذَا قَامَ مَقَامَكَ لَمْ يُسْمِعِ النَّاسَ مِنَ البُكَاءِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৮/৪৫৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন (মরণ রোগে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কষ্ট বেড়ে গেল, তখন তাঁকে (জামা‘আত সহকারে) নামায পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হল। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আবূ বকরকে নামায পড়াতে বল।’’ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘আবূ বকর নরম মনের মানুষ, কুরআন পড়লেই তিনি কান্না সামলাতে পারেন না।’ কিন্তু পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তাকে নামায পড়াতে বল।’’
আয়েশা থেকে অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘আবূ বকর যখন আপনার জায়গায় দাঁড়াবেন, তখন তিনি কান্নার কারণে লোকদেরকে (কুরআন) শুনাতে পারবেন না।’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/459 وَعَن إِبرَاهِيمَ بنِ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ عَوفٍ: أَنَّ عَبدَ الرَّحمَانِ بنَ عَوفٍ رضي الله عنه أُتِيَ بِطَعَامٍ وَكَانَ صَائِماً، فَقَالَ: قُتِلَ مُصْعَبُ بنُ عُمَيْرٍ رضي الله عنه، وَهُوَ خَيْرٌ مِنِّي، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مَا يُكَفَّنُ فِيهِ إِلاَّ بُرْدَةٌ إِنْ غُطِّيَ بِهَا رَأسُهُ بَدَتْ رِجْلاهُ ؛ وَإنْ غُطِّيَ بِهَا رِجْلاَهُ بَدَا رَأسُهُ، ثُمَّ بُسِطَ لَنَا مِنَ الدُّنْيَا مَا بُسِطَ - أَو قَالَ: أُعْطِينَا مِنَ الدُّنْيَا مَا أُعْطِينَا- قَدْ خَشِينا أنْ تَكُونَ حَسَنَاتُنَا عُجِّلَتْ لَنَا، ثُمَّ جَعَلَ يَبكِي حَتَّى تَرَكَ الطَّعَامَ . رواه البخاري
৯/৪৫৯। ইব্রাহীম ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদিন আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কাছে খাবার আনা হল, তখন তাঁর রোযা ছিল। তিনি বললেন, ‘মুস‘আব ইবনে ‘উমাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু শহীদ হলেন। আর তিনি ছিলেন আমার চেয়ে ভাল লোক। (অথচ) তাঁকে কাফন দেওয়ার মত এমন একটি চাদর ভিন্ন অন্য কিছু পাওয়া গেল না, যা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে পা দু’টি বের হয়ে যাচ্ছিল এবং পা দু’টি ঢাকলে মাথা বের হয়ে যাচ্ছিল! তারপর আমাদের জন্য পৃথিবীর যে প্রাচুর্য দেওয়া হল, অথবা তিনি বললেন, ‘আমাদেরকে পার্থিব সম্পদ যা দেওয়া হল, আমাদের আশংকা হয় যে, আমাদের সৎকর্মের (বিনিময়) আমাদের জন্য ত্বরান্বিত করা হয়েছে। অতঃপর তিনি কাঁদতে লাগলেন, এমনকি খাবারও পরিহার করলেন।’ (বুখারী)
10/460 وَعَن أَبي أُمَامَة صُدَيِّ بنِ عَجلاَنَ البَاهِلِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ شَيْءٌ أحَبَّ إِلَى اللهِ تَعَالَى مِنْ قَطْرَتَيْنِ وَأثَرَيْنِ: قَطَرَةُ دُمُوعٍ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَقَطَرَةُ دَمٍ تُهَرَاقُ في سَبيلِ اللهِ. وَأَمَّا الأَثَرَانِ: فَأَثَرٌ فِي سَبيلِ اللهِ تَعَالَى، وَأَثَرٌ فِي فَرِيضَةٍ مِنْ فَرَائِضِ الله تَعَالَى ». رواه الترمذي، وقال:« حديثٌ حسنٌ »
১০/৪৬০। আবূ উমামাহ সুদাই ইবনে ‘আজলান বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট দু’টি বিন্দু এবং দু’টি চিহ্ন অপেক্ষা কোনো বস্তু প্রিয় নয়। (এক) ঐ অশ্রু বিন্দু যা আল্লাহর ভয়ে বের হয় (দুই) ঐ রক্ত বিন্দু যা আল্লাহর পথে বইয়ে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে দু’টি চিহ্ন হলঃ (এক) ঐ চিহ্ন যা আল্লাহর পথে (জিহাদ করে) হয় (দুই) আল্লাহর কোনো ফরয কাজ আদায় করে যে চিহ্ন (দাগ) পড়ে।’’ (তিরমিযী, হাসান)
এ বিষয়ে আরো হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে একটি ‘ইরবায ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর হাদীস, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল।’ যা ১৬১ নম্বরে অতিবাহিত হয়েছে।
55- بَابُ فَضْلِ الزُّهْدِ فِي الدُّنْيَا
পরিচ্ছেদ - ৫৫: দুনিয়াদারি ত্যাগ করার মাহাত্ম্য, দুনিয়া কামানো কম করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং দারিদ্রের ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّمَا مَثَلُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا كَمَآءٍ أَنزَلۡنَٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخۡتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلۡأَرۡضِ مِمَّا يَأۡكُلُ ٱلنَّاسُ وَٱلۡأَنۡعَٰمُ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَخَذَتِ ٱلۡأَرۡضُ زُخۡرُفَهَا وَٱزَّيَّنَتۡ وَظَنَّ أَهۡلُهَآ أَنَّهُمۡ قَٰدِرُونَ عَلَيۡهَآ أَتَىٰهَآ أَمۡرُنَا لَيۡلًا أَوۡ نَهَارٗا فَجَعَلۡنَٰهَا حَصِيدٗا كَأَن لَّمۡ تَغۡنَ بِٱلۡأَمۡسِۚ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَتَفَكَّرُونَ ٢٤ ﴾ [يونس: ٢٤]
অর্থাৎ“ বস্তুত পার্থিব জীবনের দৃষ্টান্ত তো বৃষ্টির মত, যা আমি আসমান হতে বর্ষণ করি। অতঃপর তার দ্বারা উৎপন্ন হয় ভূপৃষ্ঠের উদ্ভিদগুলো অতিশয় ঘন হয়ে, যা হতে মানুষ ও পশুরা ভক্ষণ করে। অতঃপর যখন ভূমি তার শোভা ধারণ করে ও নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে এবং তার মালিকরা মনে করে যে, তারা এখন তার পূর্ণ অধিকারী, তখন দিনে অথবা রাতে তার উপর আমার (আযাবের) আদেশ এসে পড়ে, সুতরাং আমি তা এমনভাবে নিশ্চিহ্ন করে দিই, যেন গতকাল তার অস্তিত্বই ছিল না। এরূপেই আয়াতগুলোকে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য বিশদরূপে বর্ণনা করে থাকি।” (সূরা ইউনুস ২৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱضۡرِبۡ لَهُم مَّثَلَ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا كَمَآءٍ أَنزَلۡنَٰهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ فَٱخۡتَلَطَ بِهِۦ نَبَاتُ ٱلۡأَرۡضِ فَأَصۡبَحَ هَشِيمٗا تَذۡرُوهُ ٱلرِّيَٰحُۗ وَكَانَ ٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ مُّقۡتَدِرًا ٤٥ ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱلۡبَٰقِيَٰتُ ٱلصَّٰلِحَٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ ثَوَابٗا وَخَيۡرٌ أَمَلٗا ٤٦ ﴾ [الكهف: ٤٥، ٤٦]
অর্থাৎ “তাদের কাছে পেশ কর উপমা পার্থিব জীবনের; এটা পানির ন্যায় যা আমি বর্ষণ করি আকাশ হতে, যার দ্বারা ভূমির উদ্ভিদ ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে উদগ্ত হয়। অতঃপর তা বিশুষ্ক হয়ে এমন চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় যে, বাতাস ওকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান। ধনৈশবর্য ও সন্তান-সন্ততি পার্থিব জীবনের শোভা। আর সৎকার্য, যার ফল স্থায়ী, ওটা তোমার প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশা প্রাপ্তির ব্যাপারেও উৎকৃষ্ট।” (সূরা কাহফ ৪৫-৪৬ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
﴿ ٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا لَعِبٞ وَلَهۡوٞ وَزِينَةٞ وَتَفَاخُرُۢ بَيۡنَكُمۡ وَتَكَاثُرٞ فِي ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَوۡلَٰدِۖ كَمَثَلِ غَيۡثٍ أَعۡجَبَ ٱلۡكُفَّارَ نَبَاتُهُۥ ثُمَّ يَهِيجُ فَتَرَىٰهُ مُصۡفَرّٗا ثُمَّ يَكُونُ حُطَٰمٗاۖ وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِ عَذَابٞ شَدِيدٞ وَمَغۡفِرَةٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرِضۡوَٰنٞۚ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ٢٠ ﴾ [الحديد: ٢٠]
অর্থাৎ “তোমরা জেনে রেখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, অতঃপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ণ দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরা-টুকরা (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা হাদীদ ২০ আয়াত)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ ٱلشَّهَوَٰتِ مِنَ ٱلنِّسَآءِ وَٱلۡبَنِينَ وَٱلۡقَنَٰطِيرِ ٱلۡمُقَنطَرَةِ مِنَ ٱلذَّهَبِ وَٱلۡفِضَّةِ وَٱلۡخَيۡلِ ٱلۡمُسَوَّمَةِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ وَٱلۡحَرۡثِۗ ذَٰلِكَ مَتَٰعُ ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱللَّهُ عِندَهُۥ حُسۡنُ ٱلۡمََٔابِ ١٤ ﴾ [ال عمران: ١٤]
অর্থাৎ “নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভান্ডার, পছন্দসই (চিহ্নিত) ঘোড়া, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহর নিকটেই উত্তম আশ্রয়স্থল রয়েছে।” (আলে ইমরান ১৪)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِٱللَّهِ ٱلۡغَرُورُ ٥ ﴾ [فاطر: ٥]
অর্থাৎ “হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সস্পর্কে তোমাদেরকে প্রবঞ্চিত না করে।” (সূরা ফাত্বির ৫ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ أَلۡهَىٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ ١ حَتَّىٰ زُرۡتُمُ ٱلۡمَقَابِرَ ٢ كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ٣ ثُمَّ كَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ٤ كَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُونَ عِلۡمَ ٱلۡيَقِينِ ٥ ﴾ [التكاثر: ١، ٥]
অর্থাৎ “প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমাদের নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)।” (সূরা তাকাসুর ১-৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمَا هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا لَهۡوٞ وَلَعِبٞۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَ لَهِيَ ٱلۡحَيَوَانُۚ لَوۡ كَانُواْ يَعۡلَمُونَ ٦٤﴾ [العنكبوت: ٦٤]
অর্থাৎ “এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পারলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন; যদি ওরা জানত।” (সূরা আনকাবূত ৬৪ আয়াত)
এ মর্মে প্রচুর আয়াত রয়েছে এবং হাদীসও অগণিত। তার মধ্যে কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করছিঃ-
1/461 عَن عَمرِو بنِ عَوفٍ الأنصَارِي رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَعَثَ أَبَا عُبَيدَةَ بنَ الجَرَّاحِ رضي الله عنه إِلَى الْبَحْرَيْنِ يَأتِي بِجِزْيَتِهَا، فَقَدِمَ بمَالٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ، فَسَمِعَتِ الأَنْصَارُ بقُدُومِ أَبي عُبيْدَةَ، فَوَافَوْا صَلاَةَ الفَجْرِ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَلَمَّا صَلَّى رَسُولُ اللهِ ﷺ، انْصَرفَ، فَتَعَرَّضُوا لَهُ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ حِيْنَ رَآهُمْ، ثُمَّ قَالَ:« أظُنُّكُمْ سَمعتُمْ أنَّ أَبَا عُبَيْدَةَ قَدِمَ بِشَيْءٍ مِنَ الْبَحْرَيْنِ ؟ » فَقَالُوا: أَجَل، يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: «أبْشِرُوا وَأَمِّلُوا مَا يَسُرُّكُمْ، فَوَالله مَا الفَقْرَ أخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنِّي أخْشَى أنْ تُبْسَط الدُّنْيَا عَلَيْكُمْ كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، فَتُهْلِكَكُمْ كَمَا أهْلَكَتْهُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৪৬১। ‘আমর ইবনে ‘আউফ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জার্রাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। অতঃপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগণ তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরে যেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, ‘‘আমার মনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।’’ তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না। বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্ততা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, যেমন তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। অতঃপর তা তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/462 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: جَلَسَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى الْمِنْبَرِ، وَجَلَسْنَا حَوْلَهُ، فَقَالَ: «إنَّ ممَّا أخَافُ عَلَيْكُمْ مِنْ بَعْدِي مَا يُفْتَحُ عَلَيْكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَزِينَتِهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৪৬২। আবূ সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমাদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর দুনিয়ার শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।’’(বুখারী ও মুসলিম)
3/463 وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ:« إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإنَّ الله تَعَالَى مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ ». رواه مسلم
৩/৪৬৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে।’’ (মুসলিম)
4/464 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ:« اَللهم لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشَ الآخِرَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৪৬৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/465 وَعَنهُ، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ: أهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ: فَيَرْجِعُ اثْنَانِ، وَيَبْقَى وَاحِدٌ: يَرْجِعُ أهْلُهُ وَمَالُهُ وَيبْقَى عَمَلُهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৪৬৫। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিনটি জিনিস মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সে তিনটি হল তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/466 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يُؤْتَى بِأنْعَمِ أهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أهْلِ النَّارِ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَيُصْبَغُ فِي النَّارِ صَبْغَةً، ثُمَّ يُقَالُ: يَا ابْنَ آدَمَ، هَلْ رَأيْتَ خَيْراً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيمٌ قَطُّ ؟ فَيَقُولُ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ، وَيُؤْتَى بِأشَدِّ النَّاسِ بُؤسَاً في الدُّنْيَا مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، فَيُصْبَغُ صَبْغَةً في الجَنَّةِ، فَيُقَالُ لَهُ: يَا ابْنَ آدَمَ، هَلْ رَأيْتَ بُؤساً قَطُّ ؟ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ ؟ فيَقُولُ: لاَ وَاللهِ، مَا مَرَّ بِي بُؤْسٌ قَطُّ، وَلاَ رَأيْتُ شِدَّةً قَطُّ ». رواه مسلم
৬/৪৬৬। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’। আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।’’ (মুসলিম)
7/467 وَعَنِ المُسْتَوْرِدِ بنِ شَدَّادٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:« مَا الدُّنْيَا في الآخِرَةِ إِلاَّ مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ أُصْبُعَهُ في اليَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ يَرْجِعُ ». رواه مسلم
৭/৪৬৭। মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আখেরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রের কতটুকু পানি নিয়ে ফিরছে।’’ (মুসলিম)
8/468 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مَرَّ بِالسُّوقِ وَالنَّاسُ كَنَفَتَيْهِ، فَمَرَّ بِجَدْيٍ أَسَكَّ مَيِّتٍ، فَتَنَاوَلَهُ فَأَخَذَ بِأُذُنِهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَيُّكُم يُحِبُّ أنْ يَكُونَ هَذَا لَهُ بِدرْهَم ؟ » فَقَالُوا: مَا نُحِبُّ أنَّهُ لَنَا بِشَيْءٍ وَمَا نَصْنَعُ بِهِ ؟ ثُمَّ قَالَ: «أَتُحِبُّونَ أَنَّهُ لَكُمْ ؟ » قَالُوا: وَاللهِ لَوْ كَانَ حَيّاً كَانَ عَيْباً، إنَّهُ أسَكُّ فَكَيْفَ وَهُوَ ميِّتٌ ! فَقَالَ: «فوَاللهِ للدُّنْيَا أهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذَا عَلَيْكُمْ ». رواه مسلم
৮/৪৬৮। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। অতঃপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করবে?’’ তাঁরা বললেন, ‘আমরা কোনো জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমরা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি পছন্দ কর যে, (বিনামূল্যে) এটা তোমাদের হোক?’’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারণে দোষযুক্ত ছিল। এখন তো সে মৃত (সেহেতু একে কে নেবে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগল ছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।’’ (মুসলিম)
9/469 وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ أَمْشِي مَعَ النَّبي ﷺ فِي حَرَّةٍ بِالمَدِينَةِ، فَاسْتَقْبَلَنَا أُحُدٌ، فقال:« يَا أَبَا ذَرٍّ » قُلتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ . فَقَالَ: «مَا يَسُرُّنِي أنَّ عِنْدِي مِثْلَ أُحُدٍ هَذَا ذَهَباً تَمْضِي عَلَيَّ ثَلاَثَةُ أيّامٍ وَعِنْدِي مِنْهُ دِينَارٌ، إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ، إِلاَّ أنْ أقُولَ بِهِ في عِبَادِ الله هَكَذَا وَهَكَذَا وَهكَذَا» عَن يَمِينِهِ وَعَن شِمَالِهِ وَمِنْ خَلْفِهِ، ثُمَّ سَارَ، فَقَالَ: «إنَّ الأَكْثَرينَ هُمُ الأَقَلُّونَ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلاَّ مَنْ قَالَ بالمَالِ هكَذَا وَهكَذَا وَهكَذَا » عَن يَمِينِهِ وَعَن شِمَالِهِ وِمنْ خَلْفِهِ «وَقَلِيلٌ مَاهُمُ». ثُمَّ قَالَ لِي: «مَكَانَكَ لاَ تَبْرَحْ حَتَّى آتِيكَ» ثُمَّ انْطَلَقَ في سَوادِ اللَّيْلِ حَتَّى تَوَارَى، فَسَمِعْتُ صَوتاً، قَدِ ارْتَفَع، فَتَخَوَّفْتُ أنْ يَكُونَ أحَدٌ عَرَضَ لِلنَّبيِّ ﷺ، فَأرَدْتُ أنْ آتِيهِ فَذَكَرتُ قَوْلَه: «لا تَبْرَحْ حَتَّى آتِيَكَ » فَلَم أبْرَحْ حَتَّى أتَانِي، فَقُلْتُ: لَقَدْ سَمِعْتُ صَوتاً تَخَوَّفْتُ مِنْهُ، فَذَكَرْتُ لَهُ، فَقَالَ: «وَهَلْ سَمِعْتَهُ ؟ » قُلتُ: نَعَمْ، قَالَ: «ذَاكَ جِبريلُ أتَانِي فَقَالَ: مَنْ مَاتَ مِنْ أُمَّتِكَ لاَ يُشْرِكُ بِاللهِ شَيْئاً دَخَلَ الْجَنَّةَ »، قلت: وَإنْ زَنَى وَإنْ سَرَقَ ؟ قَالَ:« وَإنْ زَنَى وَإنْ سَرَقَ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري
৮/৪৬৯। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্য হতে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য তা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।’’
অতঃপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, ‘‘প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে ব্যয় করে। কিন্তু এ রকম লোকের সংখ্যা নেহাতই কম।’’
তারপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) আসছি।’’ এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতে লাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ আমি এক জোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে, কোনো শত্রু হয়তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, কিন্তু তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, ‘‘তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে (ফিরে) এসেছি।’’ সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) আমি বললাম, ‘আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম।’ সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম। তিনি বললেন, ‘‘তুমি শব্দ শুনেছিলে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘‘তিনি জিব্রাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছে এসে বললেন, ‘আপনার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ আমি বললাম, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে তবুও কি?’ তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
10/470 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَباً، لَسَرَّنِي أنْ لاَ تَمُرَّ عَلَيَّ ثَلاَثُ لَيالٍ وَعِنْدِي مِنْهُ شَيْءٌ إِلاَّ شَيْءٌ أرْصُدُهُ لِدَيْنٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৪৭০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।’’ (বুখারী-মুসলিম)
11/471 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «انْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَلَ مِنْكُمْ وَلاَ تَنْظُرُوا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ ؛ فَهُوَ أجْدَرُ أنْ لاَ تَزْدَرُوا نِعْمَةَ الله عَلَيْكُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلم
وَفِي رِوَايَةِ البُخَارِي: «إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ عَلَيْهِ في المَالِ وَالخَلْقِ، فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أسْفَل مِنْهُ » .
১১/৪৭১। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমাদের মধ্যে যে নীচে তোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকায়ো না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছ মনে করবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
বুখারীর বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সে যেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিম্নস্তরের।’’
12/472 وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ، وَالدِّرْهَمِ، وَالقَطِيفَةِ، وَالخَمِيصَةِ، إنْ أُعْطِيَ رَضِيَ، وَإنْ لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ ». رواه البخاري
১২/৪৭২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উত্তম পোশাক-আশাক ও উত্তম চাদরের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়।’’(বুখারী)
13/473 وَعَنهُ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ، مَا مِنهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ: إمَّا إزارٌ، وَإمَّا كِسَاءٌ، قَدْ رَبَطُوا في أعنَاقِهِمْ، فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن، وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ، فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ . رواه البخاري
১৩/৪৭৩। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’ (বুখারী)
14/474 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «الدُّنْيَا سِجْنُ الْمُؤْمِنِ، وَجَنَّةُ الكَافِرِ ». رواه مسلم
১৪/৪৭৪। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।’’(মুসলিম)
15/475 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِمَنْكِبَيَّ، فَقَالَ: «كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ سَبيلٍ» . وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَقُولُ: إِذَا أمْسَيتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ . رواه البخاري
১৫/৪৭৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’(বুখারী)
* এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেন, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ো না এবং তাকে নিজের আসল ঠিকানা বানিয়ে নিও না। মনে মনে এ ধারণা করো না যে, তুমি তাতে দীর্ঘজীবী হবে। তুমি তার প্রতি যত্নবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো না। তার সাথে তোমার সম্পর্ক হবে ততটুক, যতটুক একজন প্রবাসী তার প্রবাসের সাথে রেখে থাকে। তাতে সেই বিষয়-বস্তু নিয়ে বিভোল হয়ে যেও না, যে বিষয়-বস্তু নিয়ে সেই প্রবাসী ব্যক্তি হয় না, যে স্বদেশে নিজের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চায়। আর আল্লাহই তওফীক দাতা।
16/476 وَعَن أَبي العَبَّاسِ سَهلِ بنِ سَعدٍ السَّاعِدِي رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ أحَبَّنِي اللهُ وَأحَبَّنِي النَّاسُ، فَقَالَ: «ازْهَدْ في الدُّنْيَا يُحِبّك اللهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ ». حديث حسن رواه ابن ماجه وغيره بأسانيد حسنة
১৬/৪৭৬। আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।’’ (ইবনে মাজাহ প্রমুখ, হাসান সূত্রে, সিলসিলাহ সহীহাহ ৯৪৪নং)
17/477 وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: ذَكَرَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه، مَا أَصَابَ النَّاسُ مِنَ الدُّنْيَا، فَقَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِي مَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلأ بِهِ بَطْنَهُ. رواه مسلم
১৭/৪৭৭। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’(মুসলিম)
18/478 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ الله عَنهَا، قَالَتْ: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ، وَمَا فِي بَيْتِي مِنْ شَيْءٍ يَأكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَطْرُ شَعِيرٍ فِي رَفٍّ لِي، فَأكَلْتُ مِنْهُ حَتَّى طَالَ عَلَيَّ، فَكِلْتُهُ فَفَنِيَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১৮/৪৭৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘রাসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলেন যে, তখন একটা প্রাণীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ঘরে ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল। এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্তু যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।’ (বুখারী ও মুসলিম)
19/479 وَعَن عَمرِو بنِ الحَارِثِ أَخِي جُوَيْرِيَّةَ بِنتِ الحَارِثِ أُمِّ المُؤْمِنِينَ، رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: مَا تَرَكَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عِنْدَ مَوْتِهِ دِينَاراً، وَلاَ دِرْهَماً، وَلاَ عَبْداً، وَلاَ أَمَةً، وَلاَ شَيْئاً إِلاَّ بَغْلَتَهُ الْبَيضَاءَ الَّتي كَانَ يَرْكَبُهَا، وَسِلاَحَهُ، وَأرْضاً جَعَلَهَا لاِبْنِ السَّبِيلِ صَدَقَةً . رواه البخاري
১৯/৪৭৯। উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিনতে হারেসের ভাই ‘আমর ইবনে হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যুর সময় কোনো দীনার, দিরহাম, ক্রীতদাস, ক্রীতদাসী এবং কোনো জিনিসই ছেড়ে যাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার উপর তিনি সওয়ার হতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ করে গেছেন।’ (বুখারী)
20/480 وَعَن خَبَّابِ بنِ الأَرَتِّ رضي الله عنه، قَالَ: هَاجَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ نَلْتَمِسُ وَجْهَ اللهِ تَعَالَى، فَوَقَعَ أجْرُنَا عَلَى اللهِ، فَمِنَّا مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَأكُل مِنْ أجْرِهِ شَيْئاً، مِنْهُمْ: مُصْعَبُ بن عُمَيْرٍ رضي الله عنه، قُتِلَ يَوْمَ أُحُد، وَتَرَكَ نَمِرَةً، فَكُنَّا إِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رَأْسَهُ، بَدَتْ رِجْلاَهُ، وَإِذَا غَطَّيْنَا بِهَا رِجْلَيْهِ، بَدَا رَأسُهُ، فَأمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ، أنْ نُغَطِّي رَأسَهُ، وَنَجْعَلُ عَلَى رِجْلَيْهِ شَيْئاً مِنَ الإذْخِرِ، وَمِنَّا مَنْ أيْنَعَتْ لَهُ ثَمَرَتُهُ، فَهُوَ يَهْدِبُهَا . متفقٌ عَلَيْهِ
২০/৪৮০। খাববাব ইবনে আরাত্ত্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমরা আল্লাহর চেহারা (সন্তুষ্টি) লাভের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে (মদীনা) হিজরত করলাম। যার সওয়াব আল্লাহর নিকট আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের কেউ এ সওয়াব দুনিয়াতে ভোগ করার পূর্বেই বিদায় নিলেন। এর মধ্যে মুস‘আব ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু; তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন এবং শুধুমাত্র একখানা পশমের রঙিন চাদর রেখে গেলেন। আমরা (কাফনের জন্য) তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর পা বেরিয়ে গেল। আর পা ঢাকলে তাঁর মাথা বেরিয়ে গেল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, ‘‘তা দিয়ে ওর মাথাটা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর ‘ইযখির’ ঘাস বিছিয়ে দাও।’’ আর আমাদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছেন, যাঁদের ফল পেকে গেছে। আর তাঁরা তা সংগ্রহ করছেন।’(বুখারী ও মুসলিম)
২১/৪৮১। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান দুনিয়ার মূল্য বা ওজন থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তার (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।’’(তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
22/482 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «أَلاَ إنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ تَعَالَى، وَمَا وَالاهُ، وَعَالِماً وَمُتَعَلِّماً» رواه الترمذي، وقال:«حديث حسنٌ»
২২/৪৮২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘শোনো! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তার মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর যিকর এবং তার সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও তালেবে-ইলম নয়।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
23/483وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تَتَّخِذُوا الضَّيْعَةَ فَتَرْغَبُوا في الدُّنْيَا». رواه الترمذي، وقال: «حديثٌ حسنٌ »
২৩/৪৮৩। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা জমি-জায়গা, বাড়ি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।’’(তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
24/484 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: مَرَّ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ نُعَالِجُ خُصّاً لَنَا، فَقَالَ: «مَا هَذَا ؟ » فَقُلْنَا: قَدْ وَهَى، فَنَحَنُ نُصْلِحُهُ، فَقَالَ: «مَا أرَى الأَمْرَ إِلاَّ أعْجَلَ مِنْ ذَلِكَ » . رواه أَبو داود والترمذي بإسناد البخاري ومسلم، وقال الترمذي:«حديثٌ حسنٌ صحيحٌ »
২৪/৪৮৪। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এমতাবস্থায় যে, আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘এটা কী?’’ আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি ব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী ভাবছি।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, বুখারী ও মুসলিমের সূত্রে)
25/485 وَعَن كَعبِ بنِ عِيَاضٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ لِكُلِّ أُمَّةٍ فِتْنَةً، وفِتْنَةُ أُمَّتِي: المَالُ » رواه الترمذي، وقال: «حديثٌ حسنٌ صحيحٌ »
২৫/৪৮৫। কা‘ব ইবনে ‘ইয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি; ‘‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমার উম্মতের ফিতনা হচ্ছে মাল।’’(তিরমিযী, হাসান সহীহ সূত্রে)
26/486 وَعَنْ أَبِيْ عَمْرٍو، وَيُقَاُلُ: أَبُوْ عَبْدِ الله، وَيُقَالُ: أَبُوْ لَيْلىٰ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رضي الله عنه، أَنَّ النَّبِيَّﷺ قَالَ: « لَيْسَ لِإِبْنِ آدَمَ حَقٌّ فِيْ سِوٰى هٰذِهِ الْخِصَالِ: بَيْتٌ يَسْكُنُهُ، وَثَوْبٌ يُوَارِي عَوْرَتَهُ وَجِلْفُ الخُبْزُ، وَالمَاءِ » رواه الترمذي وقال: حديث صحيح.
২৬/৪৮৬। আবূ ‘আমর ‘উসমান ইবনু আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (তাকে আবূ ‘আব্দুল্লাহ ও আবূ লাইলাও বলা হয়) হতে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আদম সন্তানের তিনটি বস্তু ব্যতীত কোন বস্তুর অধিকার নেই। তা হলো: তার বসবাস করার জন্য একটি বাড়ি, শরীর আবৃত করার জন্য কিছু কাপড় এবং কিছু রুটি ও পানি। হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করে বলেন, এটি সহীহ হাদীস।
27/487 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ الشِّخِّيرِ رضي الله عنه، أنه قَالَ: أتَيْتُ النَّبيَّ ﷺ، وَهُوَ يَقْرَأُ: ﴿ أَلۡهَىٰكُمُ ٱلتَّكَاثُرُ ١ ﴾ [التكاثر: ١] قَالَ:« يَقُولُ ابْنُ آدَمَ: مَالِي، مالي، وَهَلْ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ مِنْ مَالِكَ إِلاَّ مَا أكَلْتَ فَأفْنَيْتَ، أَو لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ، أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ ؟! » رواه مسلم
২৭/৪৮৭। আব্দুল্লাহ ইবনে শিখ্খীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, এমতাবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন। তিনি বললেন, ‘‘আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুমি খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথবা যা তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদকাহ করে (আখেরাতের জন্য) জমা রেখেছ।’’ (মুসলিম)
28/488 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ لِلنَّبِيِّ ﷺ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ، فَقَالَ: «انْظُرْ مَاذَا تَقُولُ ؟ » قَالَ: وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ، ثَلاَثَ مَرَّات، فَقَالَ: «إنْ كُنْتَ تُحِبُّنِي فَأَعِدَّ لِلْفَقْرِ تِجْفَافاً، فإنَّ الفَقْرَ أسْرَعُ إِلَى مَنْ يُحِبُّني مِنَ السَّيْلِ إِلَى مُنْتَهَاهُ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن » .
২৮/৪৮৮। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল।’’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে তিনবার বলল। তিনি বললেন, ‘‘যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালবাসবে স্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রুতগতিতে দারিদ্র্য তার নিকট আগমন করবে।’’ (তিরমিযী, হাসান)
29/489 وَعَن كَعبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلاَ فِي غَنَمٍ بِأفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ المَرْءِ عَلَى المَالِ وَالشَّرَفِ لِدِينهِ». رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
২৯/৪৮৯। কা‘ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ছাগলের পালে দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লোভ-লালসা তার দ্বীনের জন্য বেশী ক্ষতিকারক।’’(তিরমিযী)
30/490 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: نَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى حَصيرٍ، فَقَامَ وَقَدْ أثَّرَ في جَنْبِهِ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ اتَّخَذْنَا لَكَ وِطَاءً . فَقَالَ: «مَا لِي وَلِلدُّنْيَا ؟ مَا أَنَا في الدُّنْيَا إِلاَّ كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا » رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৩০/৪৯০। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা চাটাই-এর উপর শুলেন। অতঃপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে তার দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই।’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ার সাথে আমার কী সম্পর্ক? আমি তো (এ) জগতে ঐ সওয়ারের মত যে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য) গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।’’(তিরমিযী, হাসান-সহীহ)
31/491. وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَدْخُلُ الفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمئَةِ عَامٍ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث صحيح »
৩১/৪৯১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘গরীব মু’মিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (তিরমিযী, সহীহ)
32/492 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ وَعِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رضي الله عنهما، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «اطَّلَعْتُ في الجَنَّةِ فَرَأيْتُ أكْثَرَ أهْلِهَا الفُقَرَاءَ، وَاطَّلَعْتُ في النَّارِ فَرَأيْتُ أكْثَرَ أهْلِهَا النِّسَاءَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩২/৪৯২। ইবনে আব্বাস ও ইমরান ইবনে হুসাইন ( থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই গরীব লোক। আর জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
33/493 ورواه البخاري أيْضاً من روايةِ عِمْرَان بنِ الحُصَينِ ..
৩৩/৪৯৩। ইমাম বুখারী উক্ত হাদীসকে ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন।
34/494 وَعَن أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «قُمْتُ عَلَى بَابِ الجَنَّةِ، فَكَانَ عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا المَسَاكِينُ، وَأصْحَابُ الجَدِّ مَحبُوسُونَ، غَيْرَ أنَّ أصْحَابِ النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِم إِلَى النَّارِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩৪/৪৯৪। উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়ে দেখতে পেলাম, সেখানে অধিকাংশ নিঃসব লোক রয়েছে। আর ধনবানরা তখনো (হিসাবের জন্য) অবরুদ্ধ রয়েছে। অথচ দোযখীদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
35/495 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «أصْدَقُ كَلِمَةٍ قَالَهَا شَاعِرٌ كَلِمَةُ لَبِيدٍ: ألاَ كُلُّ شَيْءٍ مَا خَلاَ اللهَ بَاطِلُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩৫/৪৯৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে সত্য কথা যা কোন কবি বলেছেন, তা হল লাবীদ (কবির) কথা, (তিনি বলেছেন,) ‘শোনো, আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই বাতিল।’’ (বুখারী)
56- بَابُ فَضْلِ الْجُوْعِ وَخُشُوْنَةِ الْعَيْشِ وَالْاِقْتِصَارِ عَلَى الْقَلِيْلِ مِنَ الْمَأْكُوْلِ وَالْمَشْرُوْبِ وَالْمَلْبُوْسِ وَغَيْرِهَا مِنْ حُظُوْظِ النَّفْسِ وَتَرْكِ الشَّهَوَاتِ
পরিচ্ছেদ - ৫৬: উপবাস, রুক্ষ ও নীরস জীবন যাপন করা, পানাহার ও পোশাক ইত্যাদি মনোরঞ্জনমূলক বস্তুতে অল্পে তুষ্ট হওয়া এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব বর্জন করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿۞فَخَلَفَ مِنۢ بَعۡدِهِمۡ خَلۡفٌ أَضَاعُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَٱتَّبَعُواْ ٱلشَّهَوَٰتِۖ فَسَوۡفَ يَلۡقَوۡنَ غَيًّا ٥٩ إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يَدۡخُلُونَ ٱلۡجَنَّةَ وَلَا يُظۡلَمُونَ شَيۡٔٗا ٦٠ ﴾ [مريم: ٥٩، ٦٠]
অর্থাৎ “তাদের পর এল অপদার্থ পরবর্তীগণ, তারা নামায নষ্ট করল ও প্রবৃত্তিপরায়ণ হল; সুতরাং তারা অচিরেই অমঙ্গল প্রত্যক্ষ করবে। কিন্তু তারা নয় যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে; তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে; আর তাদের প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” (সূরা মারয়্যাম ৫৯-৬০ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ فِي زِينَتِهِۦۖ قَالَ ٱلَّذِينَ يُرِيدُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا يَٰلَيۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَآ ُوتِيَ قَٰرُونُ إِنَّهُۥ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٧٩ وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ وَيۡلَكُمۡ ثَوَابُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لِّمَنۡ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗاۚ ﴾ [القصص: ٧٩، ٨٠]
অর্থাৎ “কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না।” (সূরা কাস্বাস ৭৯-৮০ আয়াত)
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
﴿ ثُمَّ لَتُسَۡٔلُنَّ يَوۡمَئِذٍ عَنِ ٱلنَّعِيمِ ٨ ﴾ [التكاثر: ٨]
অর্থাৎ “এরপর অবশ্যই সেদিন তোমরা সুখ-সম্পদ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হবে।” (সূরা তাকাসুর ৮)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا ١٨ ﴾ [الاسراء: ١٨]
অর্থাৎ “কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা সত্বর দিয়ে থাকি, পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি; সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ১৮ আয়াত)
1/496 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ ﷺ مِنْ خُبْزِ شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: مَا شَبِعَ آلُ محَمّدٍ ﷺ مُنْذُ قَدِمَ المَدِينَةَ مِنْ طَعَامِ البُرِّ ثَلاثَ لَيَالٍ تِبَاعاً حَتَّى قُبِضَ .
১/৪৯৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহুআনহা বলেন, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিজন তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ক্রমাগত দু’দিন যবের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিজন মদীনায় আগমনের পর থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত ক্রমাগত তিনদিন পর্যন্ত গমের রুটি পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পাননি।’
2/497 وَعَن عُروَةَ، عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، أنَّهَا كَانَتْ تَقُولُ: وَاللهِ، يَا ابْنَ أُخْتِي، إنْ كُنَّا نَنْظُرُ إِلَى الهِلاَلِ، ثُمَّ الهِلالِ: ثَلاَثَةُ أَهلَّةٍ في شَهْرَيْنِ، وَمَا أُوقِدَ فِي أبْيَاتِ رَسُولِ اللهِ ﷺ نَارٌ. قُلْتُ: يَا خَالَةُ! فَمَا كَانَ يُعِيشُكُمْ ؟ قَالَت: الأَسْوَدَانِ التَّمْرُ وَالمَاءُ، إِلاَّ أنَّهُ قَدْ كَانَ لِرَسُولِ اللهِ ﷺ جِيرَانٌ مِنَ الأَنْصَارِ، وكَانَتْ لَهُمْ مَنَائِحُ وَكَانُوا يُرْسِلُونَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ ألْبَانِهَا فَيَسْقِينَا . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৪৯৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি (একবার) উরওয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, ‘হে ভগিনীপুত্র! আমরা দু’মাসের মধ্যে তিনবার নয়া চাঁদ দেখতাম। কিন্তু এর মধ্যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গৃহসমূহে (রান্নার) জন্য আগুন জ্বালানো হত না।’ উরওয়াহ বললেন, ‘খালা! তাহলে আপনারা কী খেয়ে জীবন কাটাতেন?’ তিনি বললেন, ‘কালো দু’টো জিনিস দিয়ে। অর্থাৎ শুকনো খেজুর আর পানিই (আমাদের খাদ্য হত)। অবশ্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিবেশী কয়েকজন আনসারী সাহাবীর দুগ্ধবতী উটনী ও ছাগী ছিল। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য দুধ পাঠতেন, তখন তিনি আমাদেরকে তা পান করাতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/498 وَعَن أَبي سَعِيدٍ المَقبُرِيِّ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّهُ مَرَّ بِقَومٍ بَيْنَ أَيدِيهِمْ شَاةٌ مَصْلِيَّةٌ، فَدَعَوْهُ فَأبَى أَنْ يأْكُلَ . وَقَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعيرِ . رواه البخاري
৩/৪৯৮। আবূ সা‘ঈদ মাক্ববুরী বলেন, একদা আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একদল লোকের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে ভুনা বকরী ছিল। তারা তাঁকে (খেতে) ডাকল। তিনি খেতে রাজী হলেন না এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ তিনি কোন দিন যবের রুটিও পেট পুরে খাননি।’ (বুখারী)
4/499 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: لَمْ يَأكُلِ النَّبيُّ ﷺ عَلَى خِوَانٍ حَتَّى مَاتَ، وَمَا أكَلَ خُبْزاً مُرَقَّقاً حَتَّى مَاتَ . رواه البخاري . وفي رواية لَهُ: وَلاَ رَأى شَاةً سَمِيطاً بعَيْنِهِ قَطُّ .
৪/৪৯৯। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো (টেবিল জাতীয় উঁচু স্থানে) এর উপর খাবার রেখে আহার করেননি এবং তিনি মৃত্যু পর্যন্ত পাতলা (চাপাতি) রুটি খাননি। বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, আর তিনি কখনোও ভুনা (গোটা) বকরী স্বচক্ষে দেখেননি। (বুখারী)
৫/৫০০। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, উমার ইবনুল খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে, সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকার ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’ (মুসলিম)
6/501 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا رَأى رَسُول اللهِ ﷺ النَّقِيَّ مِنْ حِينِ ابْتَعَثَهُ الله تَعَالَى حَتَّى قَبضَهُ الله تَعَالَى . فَقِيلَ لَهُ: هَلْ كَانَ لَكُمْ في عَهدِ رَسُول اللهِ ﷺ مَنَاخِلُ ؟ قَالَ: مَا رَأى رَسُول اللهِ ﷺ مُنْخُلاً مِنْ حِينَ ابْتَعَثَهُ اللهُ تَعَالَى حَتَّى قَبَضَهُ اللهُ تَعَالَى، فَقِيلَ لَهُ: كَيْفَ كُنْتُمْ تَأكُلُونَ الشَّعِيرَ غَيْرَ مَنْخُولٍ ؟ قَالَ: كُنَّا نَطحَنُهُ وَنَنْفُخُهُ، فيَطيرُ مَا طَارَ، وَمَا بَقِيَ ثَرَّيْنَاهُ . رواه البخاري
৬/৫০১। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (রসূলরূপে) পাঠিয়েছেন, তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত (চালুনে চালা) ময়দা দেখেননি। অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হল, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে কি আপনাদের আটা চালার চালুনি ছিল?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (রসূলরূপে) পাঠানোর পর থেকে মৃত্যুবরণ পর্যন্ত তিনি আটা চালার চালুনি দেখেননি।’ তাঁকে বলা হল, ‘তাহলে আপনারা আচালা যবের আটা কিভাবে খেতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা যব পিষে ফুঁক দিতাম, এতে যা উড়ার উড়ে যেত, আর যা অবশিষ্ট থাকত তা ভিজিয়ে খামীর বানাতাম।’ (বুখারী)
7/502 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجَ رَسُول اللهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ أَوْ لَيْلَةٍ، فَإذَا هُوَ بأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، فَقَالَ:«مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُما هَذِهِ السَّاعَةَ ؟ » قَالاَ: الجُوعُ يَا رَسُولَ اللهِ. قَالَ: «وَأَنَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُما، قُومَا»، فقَامَا مَعَهُ، فَأتَى رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ، فَإِذَا هُوَ لَيْسَ في بيْتِهِ، فَلَمَّا رَأَتْهُ المَرْأَةُ، قَالَت: مَرْحَبَاً وَأهلاً .فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أيْنَ فُلاَنُ ؟ » قَالَت: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لنَا المَاءَ . إِذْ جَاءَ الأَنْصَارِيُّ، فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ وَصَاحِبَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: الحَمْدُ للهِ، مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكْرَمَ أضْيَافاً مِنِّي، فَانْطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ، فَقَالَ: كُلُوا، وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إيْاكَ وَالْحَلُوبَ » فَذَبَحَ لَهُمْ، فَأكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ العِذْقِ وَشَرِبُوا . فَلَمَّا أنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لأَبي بَكْر وَعُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ القِيَامَةِ، أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ، ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيمُ ». رواه مسلم
৭/৫০২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন অথবা কোন এক রাতে (ঘর থেকে) বের হলেন, অতঃপর অকস্মাৎ আবূ বকর ও উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)এর সঙ্গে তাঁর দেখা হল। তিনি বললেন, ‘‘এ সময় তোমরা বাড়ী থেকে কেন বের হয়েছ?’’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার তাড়নায় হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে। আমিও সেই কারণে বাড়ি থেকে বের হয়েছি, যে কারণে তোমরা বের হয়েছ। তোমরা ওঠো (এবং আমার সঙ্গে চল)।’’ অতঃপর তাঁরা দু’জনে তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। তারপর তিনি এক আনসারীর বাড়ী এলেন। আনসারী সে সময় বাড়ীতে ছিলেন না। যখন তাঁর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলেন তখন অভ্যর্থনা ও সবাগত জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘‘অমুক (আনসারী) কোথায়?’’ তিনি বললেন, ‘আমাদের জন্য মিঠা পানি আনতে গেছেন।’ এর মধ্যে আনসারী এসে গেলেন। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ, আজ আমার (বাড়ীর) চেয়ে সম্মানিত মেহমান কারো (বাড়ীতে) নেই।’ অতঃপর তিনি চলে গেলেন এবং খেজুরের একটা কাঁদি আনলেন, যাতে কাঁচা, শুকনো এবং পাকা (টাটকা) খেজুর ছিল। অতঃপর আনসারী বললেন, ‘আপনারা খান এবং তিনি নিজে ছুরি ধরলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘‘দুধালো ছাগল জবাই করো না।’’ অতঃপর তিনি (ছাগল) জবাই করলেন। তাঁরা ছাগলের (মাংস) খেলেন, ঐ খেজুর কাঁদি থেকে খেজুর খেলেন এবং পানি পান করলেন। তারপর তাঁরা যখন (পানাহার করে) পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)কে বললেন, ‘‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! নিশ্চয় তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে বাড়ী থেকে বের করেছিল, কিন্তু এখন এ নিয়ামত উপভোগ করে নিজেদের (বাড়ী) ফিরে যাচ্ছ।’’ (মুসলিম)
উক্ত আনসারীর নাম ছিলঃ আবুল হাইসাম তাইয়িহান; যেমন তিরমিযীতে আছে। আর উক্ত জিজ্ঞাসাবাদ গণনার উদ্দেশ্যে করা হবে, ধমকি বা শাস্তি দেওয়ার উদ্দেশ্যে নয়।
8/503 وَعَن خَالِدِ بنِ عُمَيْرٍ العَدَوِيِّ، قَالَ: خَطَبَنَا عُتْبَةُ بنُ غَزْوَانَ، وَكَانَ أمِيراً عَلَى البَصْرَةِ، فَحَمِدَ الله وَأثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ آذَنَتْ بِصُرْمٍ، وَوَلَّتْ حَذَّاءَ، وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلاَّ صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الإنَاءِ يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا، وَإِنَّكُمْ مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لاَ زَوَالَ لَهَا، فَانْتَقِلُوا بِخَيرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ، فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ الحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَاماً، لاَ يُدْرِكُ لَهَا قَعْراً، وَاللهِ لَتُمْلأَنَّ أَفَعَجِبْتُمْ ؟! وَلَقدْ ذُكِرَ لَنَا أنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسيرَةُ أرْبَعِينَ عَاماً، وَليَأتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ، وَلَقَدْ رَأيْتُنِي سَابعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الشَّجَرِ، حَتَّى قَرِحَتْ أشْدَاقُنَا، فَالتَقَطْتُ بُرْدَةً فَشَقَقْتُهَا بَيْنِي وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ، فاتَّزَرْتُ بِنِصْفِهَا، وَاتَّزَرَ سَعْدٌ بِنِصْفِهَا، فَمَا أصْبَحَ اليَوْمَ مِنَّا أحَدٌ إِلاَّ أَصْبَحَ أمِيراً عَلَى مِصرٍ مِنَ الأَمْصَارِ، وَإنِّي أعُوذُ بِاللهِ أنْ أكُونَ فِي نَفْسِي عَظِيماً، وَعِنْدَ اللهِ صَغِيراً . رواه مسلم
৮/৫০৩। খালেদ ইবনে উমাইর আদাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা বাসরার গভর্নর উতবাহ ইবনে গাযওয়ান খুতবাহ দিলেন। তিনি (খুতবায় সর্বপ্রথমে) আল্লাহর প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘আম্মা বাদ! নিশ্চয় দুনিয়া তার ধ্বংসের কথা ঘোষণা করে দিয়েছে এবং সে মুখ ফিরিয়ে দ্রুতগতিতে পলায়মান আছে। এখন তার (বয়স) পাত্রের তলায় অবশিষ্ট পানীয়ের মত বাকী রয়ে গেছে, যা পাত্রের মালিক (সবশেষে) পান করে। (আর তোমরা এ দুনিয়া থেকে এমন (আখেরাতের) গৃহের দিকে প্রত্যাবর্তন করছ যার ক্ষয় নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের সামনের উত্তম জিনিস নিয়ে প্রত্যাবর্তন কর। কারণ, আমাদেরকে জানানো হয়েছে যে, জাহান্নামের উপর কিনারা থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা ওর মধ্যে সত্তর বছর পর্যন্ত পড়তে থাকবে, তবুও তা তার গভীরতায় (শেষ প্রান্তে) পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নামকে (মানুষ দিয়ে) পরিপূর্ণ করে দেওয়া হবে। তোমরা এটা আশ্চর্য মনে করছ? আর আমাদেরকে এও জানানো হয়েছে যে, জান্নাতের দুয়ারের দু’টি চৌকাঠের মধ্যভাগের দূরত্ব চল্লিশ বছরের পথ। তার উপর এমন এক দিন আসবে যে, তাতে লোকের ভিড়ে পরিপূর্ণ থাকবে।
আমি (ইসলাম প্রচারের শুরুতে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাত জনের মধ্যে একজন ছিলাম। (তখন আমাদের এ অবস্থা ছিল যে,) গাছের পাতা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এমনকি (তা খেয়ে) আমাদের কশে ঘা হয়ে গেল। (সে সময়) আমি একখানি চাদর কুড়িয়ে পেলাম, অতঃপর তা আমি দু’টুকরো করে আমার এবং সা‘দ ইবনে খালেদের মধ্যে ভাগ করে নিলাম। তারপর আমি তার অর্ধেকটাকে লুঙ্গী বানিয়ে পরলাম এবং সা‘দও অর্ধেক লুঙ্গী বানিয়ে পরলেন। কিন্তু আজ আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই কোন না কোন শহরের শাসনকর্তা হয়ে আছে। আর আমি নিজের কাছে বড় এবং আল্লাহর কাছে ছোট হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (মুসলিম)
9/504 وَعَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: أخْرَجَتْ لَنَا عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا كِسَاءً وَإزاراً غَلِيظاً، قالَتْ: قُبِضَ رَسُولُ اللهِ ﷺ في هَذَيْنِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৯/৫০৪। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা আমাদের জন্য একখানি চাদর এবং একখানি মোটা লুঙ্গী বের করে বললেন, ‘এ দু’টি (পরে থাকা অবস্থা)তেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেছেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
10/505 وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: إنِّي لأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ في سَبِيلِ اللهِ، وَلَقَدْ كُنَّا نَغْزُو مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ مَا لَنَا طَعَامٌ إِلاَّ وَرَقُ الْحُبْلَةِ، وَهذَا السَّمُرُ، حَتَّى إنْ كَانَ أحَدُنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ مَا لَهُ خَلْطٌ . متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৫০৫। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমিই প্রথম ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছি। আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে থেকে যুদ্ধ করি, তখন আমাদের অবস্থা এরূপ ছিল যে, হুবলাহ গাছের পাতা ও এই বাবলা ছাড়া আমাদের অন্য কিছুই খাবার ছিল না। এ জন্য আমাদের প্রত্যেকেই ছাগলের লাদির মত মলত্যাগ করতেন; যার একটি আরেকটির সাথে মিশত না।’ (বুখারী ও মুসলিম)
১১/৫০৬। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করতেন, ‘‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার-পরিজনের জন্য প্রয়োজনীয় জীবিকা প্রদান কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
12/507 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَاللهِ الَّذِي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ هُوَ، إنْ كُنْتُ لأَعْتَمِدُ بِكَبِدِي عَلَى الأَرْضِ مِنَ الجُوعِ، وَإنْ كُنْتُ لأَشُدُّ الحَجَرَ عَلَى بَطنِي مِنَ الْجُوعِ . وَلَقَدْ قَعَدْتُ يَوماً عَلَى طَرِيقِهِمُ الَّذِي يَخْرُجُونَ مِنْهُ، فَمَرَّ بِي النِّبيُّ ﷺ، فَتَبَسَّمَ حِيْنَ رَآنِي، وَعَرَفَ مَا فِي وَجْهِي وَمَا فِي نَفْسِي، ثُمَّ قَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «الْحَقْ » وَمَضَى فَاتَّبَعْتُهُ، فَدَخَلَ فَاسْتَأذَنَ، فَأَذِنَ لِي فَدَخَلْتُ، فَوَجَدَ لَبَنَاً في قَدَحٍ، فَقَالَ: « مِنْ أَيْنَ هَذَا اللَّبَنُ ؟ » قَالُوا: أهْدَاهُ لَكَ فُلانٌ -أَو فُلانَةٌ- قَالَ: « أَبَا هِرٍّ » قُلتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «الْحَقْ إِلَى أهْلِ الصُّفَّةِ فَادْعُهُمْ لِي » قَالَ: وَأهْلُ الصُّفَّةِ أضْيَافُ الإِسْلاَمِ، لاَ يَأوُونَ علَى أهْلٍ وَلاَ مَالٍ وَلاَ عَلَى أحَدٍ، وَكَانَ إِذَا أتَتْهُ صَدَقَةٌ بَعَثَ بِهَا إلَيْهِمْ، وَلَمْ يَتَنَاوَلْ مِنْهَا شَيْئاً، وَإِذَا أتَتْهُ هَدِيَّةٌ أرْسَلَ إلَيْهِمْ، وَأصَابَ مِنْهَا، وأشْرَكَهُمْ فِيهَا . فَسَاءَنِي ذَلِكَ، فَقُلْتُ: وَمَا هَذَا اللَّبَنُ في أهْلِ الصُّفَّةِ ! كُنْتُ أحَقُّ أنْ أُصِيبَ مِنْ هَذَا اللَّبَنِ شَرْبَةً أتَقَوَّى بِهَا، فَإذَا جَاءُوا وَأمَرَنِي فَكُنْتُ أنَا أُعْطِيهِمْ ؛ وَمَا عَسَى أنْ يَبْلُغَنِي مِنْ هَذَا اللَّبَنِ . وَلَمْ يَكُنْ مِنْ طَاعَةِ اللهِ وَطَاعَةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ بُدٌّ، فَأَتَيْتُهُمْ فَدَعَوْتُهُمْ، فَأقْبَلُوا وَاسْتَأذَنُوا، فَأَذِنَ لَهُمْ وَأخَذُوا مَجَالِسَهُمْ مِنَ الْبَيْتِ، قَالَ: «يَا أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «خُذْ فَأعْطِهِمْ » قَالَ: فَأخَذْتُ القَدَحَ، فَجَعَلْتُ أُعْطِيهِ الرَّجُل فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ، فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ، فَأُعْطِيهِ الرَّجُلَ فَيَشْرَبُ حَتَّى يَرْوَى، ثُمَّ يَرُدُّ عَلَيَّ الْقَدَحَ حَتَّى انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبيِّ ﷺ، وَقَدْ رَوِيَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ، فَأخَذَ الْقَدَحَ فَوَضَعَهُ عَلَى يَدِهِ، فَنَظَرَ إليَّ فَتَبَسَّمَ، فَقَالَ: «أَبَا هِرٍّ » قُلْتُ: لَبَّيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: « بَقيتُ أنَا وَأنْتَ » قُلْتُ: صَدَقْتَ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ:«اقْعُدْ فَاشْرَبْ » فَقَعَدْتُ فَشَرِبْتُ، فَقَالَ« اشْرَبْ » فَشَرِبْتُ، فَمَا زَالَ يَقُولُ: «اشْرَبْ » حَتَّى قُلْتُ: لاَ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ أجِدُ لَهُ مَسْلكاً ! قَالَ:« فَأرِنِي » فَأعْطَيْتُهُ الْقَدَحَ، فَحَمِدَ الله تَعَالَى، وَسَمَّى وَشَرِبَ الفَضْلَةَ . رواه البخاري
১২/৫০৭। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সেই আল্লাহর কসম, যিনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই! আমি ক্ষুধার জ্বালায় মাটিতে কলিজা (পেট) লাগাতাম এবং পেটে পাথর বাঁধতাম। একদিন লোকেরা যে রাস্তায় বের হয়, সে রাস্তায় বসে গেলাম। কিছুক্ষণ পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে অতিক্রম করা কালীন সময়ে দেখে মুচকি হাসলেন এবং আমার চেহারার অবস্থা ও মনের কথা বুঝে ফেলে বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আমার পিছন ধর।’’ সুতরাং তিনি চলতে লাগলেন এবং আমি তাঁর অনুসরণ করতে লাগলাম। তিনি (নিজ ঘরে) প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি আমার জন্য অনুমতি চাইলেন। তারা আমার জন্য অনুমতি দিলে আমি প্রবেশ করলাম। ঘরে এক পিয়ালা দুধ (দেখতে) পেলেন। তিনি বললেন, ‘‘এ দুধ কোত্থেকে এল?’’ তারা বলল, ‘আপনার জন্য অমুক লোক বা মহিলা উপঢৌকন পাঠিয়েছে।’ তিনি বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘আহলে সুফ্ফাদের ডেকে আন।’’ তাঁরা ইসলামের মেহমান ছিলেন, তাঁদের কোন আশ্রয় ছিল না। ছিল না কোন পরিবার ও ধন-সম্পদ বা অন্য কিছু। (সাদকাহ ও হাদিয়াতে তাঁদের জীবন কাটত।) তাঁর নিকট কোন সাদকাহ এলে তিনি সবটুকুই তাঁদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। তা থেকে তিনি কিছুই গ্রহণ করতেন না। আর কোন হাদিয়া বা উপঢৌকন এলেও তাঁদের নিকট পাঠাতেন। কিন্তু তা থেকে কিছু গ্রহণ করতেন এবং তাঁদেরকে তাতে শরীক করতেন। (তিনি যখন তাঁদেরকে ডাকতে বললেন,) তখন আমাকে খারাপ লাগল। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘এই টুকু দুধে আহলে সূফ্ফাদের কী হবে? আমিই তো বেশী হকদার যে, এই দুধ পান করে একটু শক্তিশালী হতাম। কিন্তু যখন তাঁরা আসবেন এবং তিনি আমাকে আদেশ করলে আমি তাঁদেরকে দুধ পরিবেশন করব। তারপর আমার ভাগে এই দুধের কতটুকুই বা জুটবে!’ অথচ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কথা মান্য করা ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না। সুতরাং আমি তাঁদের নিকট এসে তাঁদেরকে ডাকলাম। তাঁরা এসে প্রবেশ অনুমতি নিয়ে বাড়ীতে প্রবেশ করে নিজ নিজ আসন গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘পিয়ালা নাও এবং ওদেরকে দাও।’’ সুতরাং আমি পিয়ালাটি নিয়ে এক একজনকে দিতে লাগলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। অতঃপর আর একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তিসহকারে পান করে আমাকে পিয়ালা ফেরৎ দিলেন। এইভাবে পরিশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে উপস্থিত হলাম। সে পর্যন্ত তাঁদের সবাই পান করে পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন। অতঃপর তিনি পিয়ালাটি নিয়ে নিজের হাতে রাখলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘‘আবূ হির্র্!’’ আমি বললাম, ‘খিদমতে হাযির, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘এখন বাকী আমি আর তুমি।’’ আমি বললাম, ‘ঠিকই বলেছেন হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘বসো এবং পান কর।’’ আমি বসে পান করলাম। তিনি আবার বললেন, ‘‘পান কর।’’ সুতরাং আমি আবার পান করলাম। অতঃপর তিনি আমাকে পান করার কথা বলতেই থাকলেন। পরিশেষে আমি বললাম, ‘না। (আর পারব না।) সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, এর জন্য আমার পেটে আর কোন জায়গা নেই!’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘কৈ আমাকে দেখাও।’’ সুতরাং আমি তাঁকে পিয়ালা দিলে তিনি মহান আল্লাহর প্রশংসা করলেন এবং ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অবশিষ্ট দুধ পান করলেন। (বুখারী)
13/508 وَعَن مُحَمَّدِ بنِ سِيرِينَ، عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُنِي وَإنِّي لأَخِرُّ فِيمَا بَيْنَ مِنْبَرِ رَسُول اللهِ ﷺ إِلَى حُجْرَةِ عائِشَةَ رضي الله عنها مَغْشِيّاً عَلَيَّ، فَيَجِيءُ الجَائِي، فَيَضَعُ رِجْلَهُ عَلَى عُنُقِي، وَيَرَى أنِّي مَجْنُونٌ وَمَا بِي مِنْ جُنُونٍ، مَا بِي إِلاَّ الْجُوعُ . رواه البخاري
১৩/৫০৮। মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘আমার এ অবস্থা ছিল যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিম্বর এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহুআনহার কক্ষের মধ্যস্থলে (ক্ষুধার জ্বালায়) বেহুশ হয়ে পড়ে থাকতাম। অতঃপর আগন্তুক আসত এবং আমাকে পাগল মনে করে সে তার পা আমার গর্দানের উপর রাখত, অথচ আমার মধ্যে কোন পাগলামি ছিল না। কেবলমাত্র ক্ষুধা ছিল। (যার তীব্রতায় আমি চৈতন্য হারিয়ে ফেলতাম!)’ (বুখারী)
14/ 509 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: تُوُفِّي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَدِرْعُهُ مَرْهُونَةٌ عِنْدَ يَهُودِي في ثَلاثِينَ صَاعاً مِنْ شَعِير . متفق عَلَيْهِ
৫০৯. ১৪/৫০৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন তাঁর বর্ম ত্রিশ সা’ (প্রায় ৭৫ কেজি) যবের বিনিময়ে এক ইয়াহুদীর নিকট বন্ধক রাখা ছিল।’ (বুখারী ও মুসলিম)
15/510 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَهَنَ النَّبِيُّ ﷺ دِرْعَهُ بِشَعِيرٍ، وَمَشَيْتُ إِلَى النَّبيِّ ﷺ بخُبْزِ شَعِيرٍ وَإهَالَةِ سَنِخَةٍ، وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُولُ:«مَا أصْبَحَ لآلِ مُحَمّدٍ صَاعٌ وَلاَ أمْسَى» وَإنَّهُمْ لَتِسْعَةُ أبيَات. رواه البخاري
১৫/৫১০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যবের বিনিময়ে তাঁর বর্ম বন্ধক রেখেছিলেন। আর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে যবের রুটি ও (নষ্ট হওয়া) দুর্গন্ধময় পুরানো চর্বি নিয়ে গেছি। আমি তাঁকে (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) বলতে শুনেছি যে, ‘‘মুহাম্মাদের পরিবারের কাছে কোন সকাল বা সন্ধ্যায় এক সা’ (প্রায় আড়াই কেজি কোন খাদ্যবস্তু) থাকে না।’’ (আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন,) তখন তাঁরা মোট নয় ঘর (পরিবার) ছিলেন।’ (বুখারী)
16/511 وَ عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ سَبعِينَ مِنْ أهْلِ الصُّفَّةِ، مَا مِنهُمْ رَجُلٌ عَلَيْهِ رِدَاءٌ: إمَّا إزارٌ، وَإمَّا كِسَاءٌ، قَدْ رَبَطُوا في أعنَاقِهِمْ، فَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ نِصْفَ السَّاقَيْن، وَمِنْهَا مَا يَبْلُغُ الكَعْبَيْنِ، فَيَجْمَعُهُ بِيَدِهِ كَراهِيَةَ أنْ تُرَى عَوْرَتُهُ . رواه البخاري
১৬/৫১১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি সত্তরজন (আহলে সুফ্ফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর, (এক সঙ্গে দু’টি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। অতঃপর সেই বস্ত্র কারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়।’ (বুখারী)
17/512 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ ﷺ مِنْ أُدْمٍ حَشْوُهُ لِيفٌ. رواه البخاري
১৭/৫১২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিছানা চামড়ার তৈরী ছিল এবং তার ভিতরে ছিল খেজুর গাছের ছোবড়া।’ (বুখারী)
18/513 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا جُلُوساً مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، إِذْ جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الأنْصَارِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، ثُمَّ أدْبَرَ الأَنْصَاريُّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا أخَا الأنْصَارِ، كَيْفَ أخِي سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ ؟ » فَقَالَ: صَالِحٌ، فَقَالَ رَسُول اللهِ ﷺ: «مَنْ يَعُودُهُ مِنْكُمْ ؟ » فَقَامَ وَقُمْنَا مَعَهُ، وَنَحْنُ بضْعَةَ عَشَرَ، مَا عَلَيْنَا نِعَالٌ، وَلاَ خِفَافٌ، وَلاَ قَلاَنِسُ، وَلاَ قُمُصٌ، نَمْشِي في تِلك السِّبَاخِ، حَتَّى جِئْنَاهُ، فَاسْتَأْخَرَ قَوْمُهُ مِنْ حَوْلِه حَتَّى دَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأصْحَابُهُ الَّذِينَ مَعَهُ. رواه مسلم
১৮/৫১৩। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছিলাম, ইতোমধ্যে এক আনসারী এলেন এবং তাঁকে সালাম দিলেন। অতঃপর আনসারী ফিরে যেতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আনসারের ভাই! আমার ভাই সা‘দ ইবনে উবাদাহ কেমন আছে?’’ তিনি বললেন, ‘ভাল আছে।’ তারপর রাসূলুললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কে তাকে (অসুস্থ সা‘দকে) দেখতে যাবে?’’ সুতরাং তিনি উঠে দাড়ালেন এবং আমরাও উঠে দাঁড়ালাম। আমরা দশের কিছু বেশী ছিলাম। আমাদের দেহে জুতো, মোজা, টুপী এবং জামা কিছুই ছিল না। আমরা ঐ পাথুরে যমিনে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট পৌঁছে গেলাম। তার গৃহবাসীরা তাঁর নিকট থেকে সরে গেল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ তাঁর নিকটবর্তী হলেন। (মুসলিম)
19/514 وَعَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، أنّه قَالَ: «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ». قَالَ عِمْرَانُ: فَمَا أدْري قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَرَّتَيْنِ أَو ثَلاَثاً« ثُمَّ يَكُونُ بَعْدَهُمْ قَوْمٌ يَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يُوفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهمُ السَّمَنُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৯/৫১৪। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম যুগ হল আমার সাহাবীদের যুগ। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) যুগ।’’ ইমরান বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর যুগের পর উত্তম যুগ হিসাবে দুই যুগ উল্লেখ করেছেন, না তিন যুগ তা আমার জানা (স্মরণ) নেই।’ ‘‘অতঃপর তোমাদের পর এমন এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদেরকে সাক্ষী মানা হবে না। তারা খেয়ানত করবে এবং তাদের নিকট আমানত রাখা যাবে না। তারা আল্লাহর নামে মানত করবে কিন্তু তা পুরা করবে না। আর তাদের দেহে স্থূলত্ব প্রকাশ পাবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
20/515 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أَنْ تَبْذُلَ الفَضْلَ خَيرٌ لَكَ، وَأنْ تُمسِكَهُ شَرٌ لَكَ، ولاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدأ بِمَنْ تَعُولُ ». رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح »
২০/৫১৫। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! উদ্বৃত্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর দরকার মত মালে নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে।’’ (তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
21/516 وَعَن عُبيْدِ اللهِ بنِ مِحْصَنٍ الأَنصَارِيِّ الخَطمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ أصْبَحَ مِنْكُمْ آمِناً في سِربِهِ، مُعَافَىً في جَسَدِهِ، عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ، فَكَأنَّمَا حِيزَتْ لَهُ الدُّنْيَا بِحَذَافِيرِهَا». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
২১/৫১৬। উবাইদুল্লাহ ইবনে মিহসান আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তার ঘরে অথবা গোষ্ঠীর মধ্যে নিরাপদে ও সুস্থ শরীরে সকাল করেছে এবং তার কাছে একদিনের খাবার আছে, তাকে যেন পার্থিব সমস্ত সম্পদ দান করা হয়েছে।’’ (তিরমিযী, হাসান)
22/517 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ». رواه مسلم
২২/৫১৭। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।’’ (মুসলিম)
23/518 وَعَن أَبي مُحَمَّدٍ فَضَالَة بنِ عُبَيدٍ الأنصاريِّ رضي الله عنه: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «طُوبَى لِمَنْ هُدِيَ لِلإسْلاَمِ، وَكَانَ عَيْشُهُ كَفَافاً وَقَنِعَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
২৩/৫১৮। আবূ মুহাম্মাদ ফাদ্বালা ইবনে উবাইদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘তার জন্য শুভ সংবাদ যাকে ইসলামের পথ দেখানো হয়েছে, পরিমিত জীবিকা দেওয়া হয়েছে এবং সে (যা পেয়েছে তাতে) পরিতুষ্ট আছে।’’ (তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
24/519 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَبِيتُ اللَّيَالِيَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِياً، وَأهْلُهُ لاَ يَجِدُونَ عَشَاءً، وَكَانَ أكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبزَ الشَّعيرِ. رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
২৪/৫১৯। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে কয়েক রাত অনাহারে কাটাতেন এবং পরিবার-পরিজনরা রাতের খাবার পেতেন না। আর তাদের অধিকাংশ রুটি হত যবের।’ (তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
25/520 وعن فَضَالَةَ بنِ عُبَيدٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا صَلَّى بِالنَّاسِ، يَخِرُّ رِجَالٌ مِنْ قَامَتِهِمْ في الصَّلاةِ مِنَ الخَصَاصَةِ ـ وَهُمْ أصْحَابُ الصُّفَّةِ ـ حَتَّى يَقُولَ الأعْرَابُ: هؤُلاَء مَجَانِينٌ . فَإذَا صلَّى رَسُول اللهِ ﷺ انْصَرَفَ إلَيْهِمْ، فَقَالَ: «لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللهِ تَعَالَى، لأَحْبَبْتُمْ أنْ تَزْدَادُوا فَاقَةً وَحَاجَةً ». رواه الترمذي، وقال: «حديث صحيح »
২৫/৫২০। ফাদ্বালাহ ইবনে ‘উবাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদের নামায পড়াতেন, তখন কিছু লোক ক্ষুধার কারণে (দুর্বলতায়) পড়ে যেতেন, আর তাঁরা ছিলেন আহলে সুফ্ফাহ। এমনকি মরুবাসী বেদুঈনরা বলত, ‘এরা পাগল।’ একদা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায সেরে তাদের দিকে মুখ ফিরালেন, তখন বললেন, ‘‘তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে যা রয়েছে, তা যদি তোমরা জানতে, তাহলে তোমরা এর চাইতেও অভাব ও দারিদ্র্য পছন্দ করতে।’’ (তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
26/521 وَعَن أَبي كَرِيمَةَ المِقدَامِ بنِ مَعدِ يكَرِبَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَا مَلأَ آدَمِيٌّ وِعَاءً شَرّاً مِنْ بَطْنٍ، بِحَسْبِ ابنِ آدَمَ أُكُلاَتٌ يُقِمْنَ صُلْبَهُ، فإنْ كانَ لاَ مَحالةَ فثُلُثٌ لِطَعَامِهِ، وَثُلُثٌ لِشَرابِهِ، وَثُلُثٌ لِنَفَسِهِ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
২৬/৫২১। আবূ কারীমা মিক্বদাদ ইবনে মা’দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোন মানুষ এমন কোন পাত্র পূর্ণ করেনি, যা পেট চাইতে মন্দ। মানুষের জন্য তার মেরুদণ্ড সোজা (শক্ত) রাখার জন্য কয়েক গ্রাসই যথেষ্ট। যদি অধিক খেতেই হয়, তাহলে পেটের এক তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য হওয়া উচিত।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
27/522 وَعَن أَبي أُمَامَةَ إِيَاسِ بنِ ثَعلَبَةَ الأَنْصَارِيِّ الحَارِثِي رضي الله عنه، قَالَ: ذَكَرَ أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ ﷺ يَوماً عِنْدَهُ الدُّنْيَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ ألاَ تَسْمَعُونَ ؟ إنَّ البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ، إنَّ البَذَاذَةَ مِنَ الإِيمَانِ » يَعْنِي: التَّقَحُّلَ . رواهُ أَبو داود
২৭/৫২২। আবূ উমামাহ ইয়াস ইবনে সা‘লাবাহ আনসারী হারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীগণ তাঁর নিকট দুনিয়ার কথা আলোচনা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না? তোমরা কি শুনতে পাও না? আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ। আড়ম্বরহীনতা ঈমানের অঙ্গ।’’ অর্থাৎ বিলাসহীনতা। (আবূ দাউদ)
البذاذة হল সাদাসিধা বেশভূষা ব্যবহার করা এবং জাঁকজমক তথা আড়ম্বরপূর্ণ লেবাস বর্জন করা। আর التقحل হল শৌখিনতা ও বিলাসিতা বর্জন করার সাথে রুক্ষ-শুষ্ক দেহ অবলম্বন করা। (এ উভয়ই মু’মিনের গুণ।)
২৮/৫২৩। আবূ আব্দুল্লাহ জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে (এক অভিযানে) পাঠালেন এবং আবূ উবাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আমাদের নেতা বানালেন। (আমাদেরকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ছিল,) আমরা যেন কুরাইশের এক কাফেলার পশ্চাদ্ধাবন করি। তিনি আমাদেরকে পাথেয় সবরূপ এক থলি খেজুর দিলেন। আমাদেরকে দেওয়ার মত এ ছাড়া অন্য কিছু পেলেন না। সুতরাং আবূ উবাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদেরকে একটি একটি করে খেজুর দিতেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনারা সেটা দিয়ে কী করতেন?’ তিনি বললেন, ‘আমরা তা বাচ্চার চুষার মত চুষতাম, তারপর পানি পান করতাম। সুতরাং এটা আমাদের জন্য সারাদিন রাত পর্যন্ত যথেষ্ট হত। আর আমরা লাঠি দ্বারা গাছের পাতা ঝরাতাম, তারপর তা পানিতে ভিজিয়ে খেতাম।
আমরা (একবার) সমুদ্র উপকূলে পথ চলছিলাম, অতঃপর সমুদ্রতীরে বালির বড় ঢিবির মত একটি জিনিস দেখতে পেলাম। এরপর তার কাছাকাছি এসে দেখলাম যে, একটা বড় জন্তু, যাকে আম্বার (মাছ) বলা হয়।’ আবূ উবাইদাহ বললেন, ‘এটা তো মৃত (ফলে তা আমাদের জন্য অবৈধ)।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘না (অবৈধ নয়) বরং আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দূত এবং আল্লাহর পথে (বের হয়েছি) আর তোমরা (এখন) নিরুপায়, সেহেতু খাও।’
সুতরাং আমরা তিনশ’জন লোক একমাস তারই দ্বারা জীবনধারণ করলাম, এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা মোটা হয়ে গেলাম। আমরা ঐ জন্তুর চোখের গর্ত থেকে ঘড়া ঘড়া তেল বের করতাম এবং বলদের মত মাংসের ফালি কাটতাম। একদা আবূ উবাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের মধ্য হতে তেরো জনকে নিয়ে ঐ মাছের একটি চোখের কোটরে বসিয়ে দিলেন। আর তার পাঁজরের একখানি হাড় নিয়ে দাঁড় করালেন। অতঃপর তিনি আমাদের সব চেয়ে বড় উটটার উপর হাওদা চাপিয়ে তার নীচে দিয়ে পার করে দিলেন। আমরা তার মাংস ফালি পাথেয় স্বরূপ সাথে নিলাম। অতঃপর যখন আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম এবং তাঁর কাছে ঐ মাছের কথা আলোচনা করলাম, তখন তিনি বললেন, ‘‘তা জীবিকা ছিল, যা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য বের করেছিলেন। আমাদেরকে খাওয়ানোর মত তোমাদের কাছে তার কিছু মাংস আছে কি?’’ (এ কথা শুনে) আমরা তাঁর নিকট কিছু মাংস পাঠালাম, সুতরাং তিনি তা ভক্ষণ করলেন। (মুসলিম)
29/524 وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ كُمُّ قَمِيْصِ رَسُوْلِِ اللهِ ﷺ إِلىٰ الرُّسْغِ. رواه أبو داؤد والترمذي وقال: حديث حسن.
২৯/৫২৪। আসমা বিনতু ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামার হাতা ছিলো কব্জি পর্যন্ত। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
30/525 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: إنَّا كُنَّا يَوْمَ الْخَنْدَقِ نَحْفِرُ، فَعَرَضَتْ كُدْيَةٌ شَدِيدَةٌ، فَجَاؤُوا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَوا: هَذِهِ كُدْيَةٌ عَرَضَتْ في الخَنْدَقِ . فَقَالَ: «أنَا نَازِلٌ » ثُمَّ قَامَ، وَبَطْنُهُ مَعْصُوبٌ بِحَجَرٍ، وَلَبِثْنَا ثَلاَثَة أيّامٍ لاَ نَذُوقُ ذَوَاقاً فَأخَذَ النَّبِيُّ ﷺ المِعْوَلَ، فَضَرَبَ فَعَادَ كَثِيباً أهْيَلَ أَو أهْيَمَ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي إِلَى البَيْتِ، فَقُلتُ لامْرَأتِي: رَأيْتُ بالنَّبيِّ ﷺ شَيئاً مَا في ذَلِكَ صَبْرٌ فَعِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقَالَت: عِنْدي شَعِيرٌ وَعَنَاقٌ، فَذَبَحْتُ العَنَاقَ وَطَحَنْتُ الشَّعِيرَ حَتَّى جَعَلْنَا اللَّحْمَ في البُرْمَةِ، ثُمَّ جِئْتُ النَّبِيَّ ﷺ، وَالعَجِينُ قَدِ انْكَسَرَ، وَالبُرْمَةُ بَيْنَ الأثَافِيِّ قَدْ كَادَتْ تَنْضِجُ، فَقُلتُ: طُعَيْمٌ لِي، فَقُمْ أنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ وَرَجُلٌ أَوْ رَجُلانِ، قَالَ: «كَمْ هُوَ » ؟ فَذَكَرْتُ لَهُ، فَقَالَ:«كَثِيرٌ طَيِّبٌ قُل لَهَا لاَ تَنْزَعِ البُرْمَةَ، وَلاَ الخُبْزَ مِنَ التَّنُّورِحَتَّى آتِي » فَقَالَ: «قُومُوا »، فَقَامَ المُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهَا فَقُلتُ: وَيْحَكِ قَدْ جَاءَ النبيُّ ﷺ وَالمُهَاجِرُونَ وَالأنْصَارُ وَمَن مَعَهُمْ ! قَالَت: هَلْ سَألَكَ ؟ قُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: «ادْخُلُوا وَلاَ تَضَاغَطُوا » فَجَعَلَ يَكْسرُ الخُبْزَ، وَيَجْعَلُ عَلَيْهِ اللَّحْمَ، وَيُخَمِّرُ البُرْمَةَ وَالتَّنُّورَ إِذَا أخَذَ مِنْهُ، وَيُقَرِّبُ إِلَى أصْحَابِهِ ثُمَّ يَنْزِعُ، فَلَمْ يَزَلْ يِكْسِرُ وَيَغْرِفُ حَتَّى شَبِعُوا، وَبَقِيَ مِنْهُ، فَقَالَ: «كُلِي هَذَا وَأهِدي، فَإنَّ النَّاسَ أصَابَتْهُمْ مَجَاعَةٌ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ جَابِرٍ: لَمَّا حُفِرَ الخَنْدَقُ رَأيْتُ بِالنَّبِيِّ ﷺ خَمَصاً، فَانْكَفَأْتُ إِلَى امْرَأتِي، فَقُلتُ: هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَإنّي رَأيْتُ بِرَسُولِ اللهِ ﷺ خَمَصاً شَديداً، فَأخْرَجَتْ إلَيَّ جِرَاباً فِيه صَاعٌ مِنْ شَعِيرٍ، وَلَنَا بَهِيمَةٌ دَاجِنٌ فَذَبَحْتُهَا، وَطَحَنتِ الشَّعِيرَ، فَفَرَغَتْ إِلَى فَرَاغي، وَقَطَعْتُهَا فِي بُرْمَتِهَا، ثُمَّ وَلَّيْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَت: لاَ تَفْضَحْنِي بِرَسُولِ اللهِ ﷺ وَمَنْ مَعَهُ، فَجِئتُهُ فَسَارَرْتُهُ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ذَبَحْنَا بَهِيمَةً لَنَا، وَطَحَنْتُ صَاعاً مِنْ شَعِيرٍ، فَتَعَالَ أنْتَ وَنَفَرٌ مَعَكَ، فَصَاحَ رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: «يَا أهلَ الخَنْدَقِ: إنَّ جَابِراً قَدْ صَنَعَ سُؤْراً فَحَيَّهَلاً بِكُمْ» فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «لاَ تُنْزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أجِيءَ » فَجِئْتُ، وَجَاءَ النَّبِيُّ ﷺ يَقْدُمُ النَّاسَ، حَتَّى جِئْتُ امْرَأتِي، فَقَالَتْ: بِكَ وَبِكَ ! فقُلْتُ: قَدْ فَعَلْتُ الَّذِي قُلْتِ . فَأخْرَجَتْ عَجِيناً، فَبسَقَ فِيهِ وَبَاركَ، ثُمَّ عَمَدَ إِلَى بُرْمَتِنا فَبصَقَ وَبَارَكَ، ثُمَّ قَالَ:« ادْعِي خَابزَةً فَلْتَخْبِزْ مَعَكِ، وَاقْدَحِي مِنْ بُرْمَتِكُمْ، وَلاَ تُنْزِلُوهَا » وَهُم ألْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللهِ لأَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ وَانْحَرَفُوا، وَإنَّ بُرْمَتَنَا لَتَغِطُّ كَمَا هِيَ، وَإنَّ عَجِينَنَا لَيُخْبَزُ كَمَا هُوَ .
৩০/৫২৫। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম। সেই সময় এক খন্ড কঠিন পাথর বেরিয়ে এলে (যা ভাঙ্গা যাচ্ছিল না) সকলেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘খন্দকের মধ্যে এক খন্ড পাথর বেরিয়েছে (আমরা তা ভাঙ্গতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, ‘‘আমি নিজে খন্দকে অবতরণ করব।’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন। সে সময়ে তাঁর পেটে একটি পাথর বাঁধা ছিল। আর আমরাও অনাহারে ছিলাম; তিনদিন কোন কিছুই খাইনি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এসে) একটি গাঁইতি হাতে নিয়ে পাথরের উপর আঘাত করলেন, ফলে তৎক্ষণাৎ তা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে বালুকা রাশিতে পরিণত হল। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে বাড়ী যাওয়ার জন্য অনুমতি দিন।’ (তিনি অনুমতি দিলে বাড়ী পৌঁছে) আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মধ্যে আমি এমন কিছু দেখেছি, যা আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমার নিকট কোন খাবার আছে কি?’ সে বলল, ‘আমার নিকট কিছু যব ও একটি বকরীর বাচ্চা আছে।’
সুতরাং বকরীর বাচ্চাটি আমি যবেহ করলাম এবং সে যব পিষে দিল। অতঃপর গোশ্ত ডেকচিতে দিয়ে আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। সে সময় আটা খামির হচ্ছিল এবং ডেকচি চুলার ঝিঁকের উপর ছিল ও গোশ্ত প্রায় রান্না হয়ে এসেছিল। তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার (বাড়ীতে) সামান্য কিছু খাবার আছে। ফলে একজন বা দু’জন সাথে নিয়ে আপনি উঠে আসুন।’ তিনি বললেন, ‘‘ কী পরিমাণ খাবার আছে?’’ আমি তাঁর নিকট সব খুলে বললে তিনি বললেন, ‘অনেক এবং উত্তম আছে।’ অতঃপর তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তুমি তোমার স্ত্রীকে গিয়ে বল, সে যেন আমি না আসা পর্যন্ত ডেকচি চুলা থেকে না নামায় এবং রুটি তৈরী না করে।’’ তারপর (সকলের উদ্দেশ্যে) তিনি বললেন, ‘‘তোমরা উঠ! (জাবির তোমাদেরকে খাবারের দাওয়াত দিয়েছে।)’’ মুহাজির ও আনসারগণ উঠলেন (এবং চলতে লাগলেন)। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার সর্বনাশ হোক! (এখন কী হবে?) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মুহাজির, আনসার এবং তাদের অন্য সাথীদের নিয়ে চলে আসছেন।’ তিনি (জাবেরের স্ত্রী) বললেন, ‘তিনি কি আপনাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ (স্ত্রী বললেন, ‘তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন। আমাদের কাছে যা আছে তা তো আপনি তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন।’ জাবের বলেন, তখন আমার কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দূর হল। আমি বললাম, ‘তুমি ঠিকই বলেছ।’) তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘‘তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করো না।’’ এ বলে তিনি রুটি টুকরো করে তার উপর গোশ্ছ দিয়ে সাহাবাদের মাঝে বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি ও চুলা ঢেকে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি রুটি টুকরো করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে তৃপ্তি সহকারে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি (জাবেরের স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘এ তুমি খাও এবং অন্যকে উপহার দাও। কেননা, লোকদেরকে [ুধা পেয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন পরিখা খনন করা হল, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভুখা দেখলাম। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, ‘তোমার নিকট কোন (খাবার) জিনিস আছে কি? কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রচন্ড ক্ষুধার্ত দেখলাম।’ সুতরাং সে একটি চামড়ার থলি বের করল, যাতে এক সা’ (আড়াই কিলো পরিমাণ) যব ছিল। আর আমাদের নিকট একটি গৃহপালিত ছাগলের বাচ্চা ছিল। আমি তা জবাই করলাম এবং আমার স্ত্রী যব পিষল। আমার (মাংস বানানোর কাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত) সেও যব পিষার কাজ সেরে নিল। পুনরায় আমি মাংস টুকরো টুকরো করে হাঁড়িতে রাখলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যেতে লাগলাম। সে বলল, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের কাছে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না।’ সুতরাং আমি তাঁর নিকট এলাম এবং চুপি চুপি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আমাদের একটি ছাগল জবাই করেছি এবং আমার স্ত্রী এক সা যব পিষেছে। সুতরাং আপনি আসুন এবং আপনার সাথে কিছু লোক।’ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিৎকার করে বললেন, ‘‘হে পরিখা খননকারীরা! জাবের খাবার তৈরী করেছে, তোমরা এসো।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘যে পর্যন্ত আমি না আসি, সে পর্যন্ত তুমি চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না এবং আটার রুটি তৈরী করবে না।’’ অতঃপর আমি এলাম এবং নবী @ও এলেন। তিনি লোকদের আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। পরিশেষে আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলাম (এবং তাকে সকলের আসার সংবাদ দিলাম)। সে আমাকে ভৎর্সনা করতে লাগল। আমি বললাম, ‘(এতে আমার দোষ কি?) আমি তো তা-ই করেছি যা তুমি আমাকে বলেছিলে।’ (যাই হোক) সে খমীর বের করে দিল। তিনি তাতে থুতু মারলেন এবং বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর তিনি আমাদের ডেকচির নিকট গিয়ে তাতেও থুতু মারলেন এবং বরকতের দো‘আ করলেন। আর তিনি (আমার স্ত্রীকে) বললেন, ‘‘একজন মহিলা ডাকো; সে তোমার সাথে রুটি তৈরী করুক এবং তুমি ডেচকি থেকে (মাংস) পাত্রে দিতে থাক, কিন্তু চুলা থেকে তা নামাবে না।’’
তাঁরা সংখ্যায় এক হাজার ছিলেন। জাবের বলেন, আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যে, ‘সকলেই খাবার খেলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কিছু অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। আর আমাদের ডেকচি আগের মত ফুটতেই থাকল এবং আমাদের আটা থেকে রুটি প্রস্তুত হতেই রইল।’
31/526 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لأُمِّ سُلَيمٍ: قَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ضَعِيفاً أعْرِفُ فِيهِ الجُوعَ، فَهَلْ عِنْدَكِ مِنْ شَيْءٍ ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ، فَأخْرَجَتْ أقْرَاصاً مِنْ شَعِيرٍ، ثُمَّ أخَذَتْ خِمَاراً لَهَا، فَلَفَّتِ الخُبْزَ بِبَعْضِهِ، ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ ثَوْبِي وَرَدَّتْنِي بِبَعْضِهِ، ثُمَّ أرْسَلَتْني إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَذَهَبتُ بِهِ، فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، جَالِساً في المَسْجِدِ، وَمَعَهُ النَّاسُ، فَقُمْتُ عَلَيْهمْ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ ؟ » فَقُلتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «ألِطَعَامٍ ؟ » فَقُلتُ: نَعَمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «قُومُوا » فَانْطَلَقُوا وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْتُ أَبَا طَلْحَةَ فَأخْبَرْتُهُ، فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ، قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ ؟ فَقَالَتْ: الله وَرَسُولُهُ أعْلَمُ . فَانْطَلَقَ أَبو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، فَأقْبَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَعَهُ حَتَّى دَخَلاَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «هَلُمِّي مَا عِنْدَكِ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ » فَأتَتْ بِذَلِكَ الخُبْزِ، فَأمَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَفُتَّ، وَعَصَرَتْ عَلَيْهِ أمُّ سُلَيْمٍ عُكّةً فَآدَمَتْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَا شَاءَ اللهُ أنْ يَقُولَ، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأَذِنَ لَهُمْ فَأكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا، ثُمَّ قَالَ: «ائْذَنْ لِعَشْرَةٍ » فأذِنَ لَهُم حَتَّى أكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالقَوْمُ سَبْعُونَ رَجُلاً أَو ثَمَانُونَ . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: فَمَا زَالَ يَدْخُلُ عَشرَةٌ، وَيخرجُ عَشرَةٌ حَتَّى لَمْ يَبْقَ مِنْهُمْ أحَدٌ إِلاَّ دَخَلَ، فَأكَلَ حَتَّى شَبِعَ، ثُمَّ هَيَّأهَا فَإذَا هِيَ مِثْلُهَا حِيْنَ أكَلُوا مِنْهَا .
وفي رواية: فَأَكَلُوا عَشرَةً عَشرةً، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلاً، ثُمَّ أكَلَ النَّبِيُّ ﷺ بَعْدَ ذَلِكَ وَأهْلُ البَيْتِ، وَتَرَكُوا سُؤْراً .
وفي رواية: ثُمَّ أفْضَلُوا مَا بَلَغُوا جِيرَانَهُمْ .
وفي رواية عن أنس، قَالَ: جِئتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يوماً، فَوَجَدْتُهُ جَالِساً مَعَ أصْحَابِه، وَقَدْ عَصَبَ بَطْنَهُ، بِعِصَابَةٍ، فَقُلتُ لِبَعْضِ أصْحَابِهِ: لِمَ عَصَبَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بَطْنَهُ ؟ فَقَالَوا: مِنَ الجُوعِ، فَذَهَبْتُ إِلَى أَبي طَلْحَةَ، وَهُوَ زَوْجُ أُمِّ سُلَيْمٍ بِنْتِ مِلْحَانَ، فَقُلتُ: يَا أبتَاهُ، قَدْ رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَصَبَ بَطْنَهُ بِعِصَابَةٍ، فَسَألْتُ بَعْضَ أصْحَابِهِ، فَقَالُوا: من الجُوعِ . فَدَخَلَ أَبُو طَلْحَةَ عَلَى أُمِّي، فَقَالَ: هَلْ مِنْ شَيءٍ ؟ قَالَت: نَعَمْ، عِنْدِي كِسَرٌ مِنْ خُبْزٍ وَتَمَرَاتٌ، فَإنْ جَاءنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَحْدَهُ أشْبَعْنَاهُ، وَإنْ جَاءَ آخَرُ مَعَهُ قَلَّ عَنْهُمْ ... وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيثِ
৩১/৫২৬। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, (একদা আমার সৎবাপ) আবূ ত্বালহা (আমার মা) উম্মে সুলাইমকে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কণ্ঠস্বরটা খুব ক্ষীণ শুনলাম। আমি বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। সুতরাং তোমার নিকট কিছু আছে কি?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর তিনি কিছু যবের রুটি তার ওড়নার এক অংশ দিয়ে বেঁধে গোপনে আমার কাপড়ের নিচে গুঁজে দিলেন। আর অপর অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পাঠালেন। আমি তা নিয়ে গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে বসা অবস্থায় পেলাম। তাঁর সাথে কিছু লোক ছিল। আমি তাদের নিকটে গিয়ে দাঁড়ালাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমাকে আবূ ত্বালহা পাঠিয়েছে?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘কোন খাবারের জন্য নাকি?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (সাথীদেরকে) বললেন, ‘‘ওঠ।’’ সুতরাং তাঁরা রওনা হলেন। আমিও তাঁদের আগে আগে চলতে লাগলাম এবং আবূ ত্বালহার নিকট এসে খবর জানালাম। তখন আবূ ত্বালহা বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোক নিয়ে আসছেন। অথচ আমাদের নিকট সবাইকে খাওয়ানোর মত খাদ্য সামগ্রী নেই (এখন কী করা যায়)?’ উম্মে সুলাইম বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল ভাল জানেন।’ অতঃপর আবূ তালহা (আগে) গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সঙ্গে আগমন করলেন এবং উভয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে উম্মে সুলাইম! তোমার নিকট যা কিছু আছে নিয়ে এসো।’ সুতরাং তিনি ঐ রুটিগুলো এনে হাজির করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলিকে টুকরা টুকরা করতে আদেশ করলেন। অতঃপর তার উপর উম্মে সুলাইম ঘিয়ের পাত্র ঢেলে তরকারি বানালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে আল্লাহর ইচ্ছায় কি কি বলে (ফুঁক) দিলেন। তারপর বললেন, ‘‘দশজনকে আসতে বল।’’ তখন দশজনকে আসতে বলা হল। তারা এসে পরিতৃপ্তি সহকারে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ তখন আরও দশজন এসে খেয়ে বেরিয়ে গেল। তারপর বললেন, ‘‘আরো দশজনকে আসতে বল।’’ এভাবে আগত লোকদের সবাই তৃপ্তি সহকারে খাওয়া-দাওয়া করলেন। আর আগত লোকদের সংখ্যা ছিল ৭০ কিংবা ৮০ জন। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, দশজন করে প্রবেশ করতে এবং বের হতে থাকল। এমনকি শেষ পর্যন্ত এমন কোন ব্যক্তি বাকী রইল না, যে প্রবেশ করে পরিতৃপ্তি সহকারে খায়নি। অতঃপর ঐ খাবার জমা করে দেখা গেল যে, খাওয়ার আগের মতই বাকী রয়েছে।
অন্য বর্ণনায় আছে, তারা দশ দশজন করে খাবার খেল। এইভাবে শেষ পর্যন্ত ৮০ জন লোককে তিনি খাওয়ালেন। সবশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং গৃহবাসীরা খেলেন এবং তাঁরাও কিছু (খাবার) ছেড়ে দিলেন।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, অতঃপর তাঁরা এত খাবার অবশিষ্ট রাখলেন যে, তা প্রতিবেশীদের নিকট পৌঁছে দিলেন।
আরো অন্য এক বর্ণনায় আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম, তারপর দেখলাম যে, তিনি তাঁর সাথীদের সঙ্গে বসে আছেন। তখন তিনি তাঁর পেটে পটি বেঁধে ছিলেন। আমি তাঁর কিছু সাথীকে জিজ্ঞেস করলাম যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেন তাঁর পেটে পট্টি বেঁধে আছেন।’ তাঁরা বললেন, ‘ক্ষুধার কারণে।’ অতঃপর আমি (আমার মা) উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহানের স্বামী আবূ ত্বালহার নিকট গেলাম এবং বললাম, ‘আব্বা! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেটে পট্টি বাঁধা অবস্থায় দেখলাম। আমি তাঁর কিছু সাথীকে (এর কারণ) জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা বললেন, ক্ষুধা।’ অতঃপর আবূ ত্বালহা আমার মায়ের নিকট গিয়ে বললেন, ‘তোমার কাছে কিছু আছে কি?’ মা বললেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে কয়েক টুকরো রুটি এবং কিছু খেজুর আছে। যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট একাই আসেন, তাহলে তাঁকে পরিতৃপ্তি সহকারে খাওয়াব; আর যদি তাঁর সাথে অন্য লোকও এসে যায়, তাহলে তাঁদের জন্য এ খাবার কম হয়ে যাবে।’ অতঃপর বাকী হাদীস পূর্বরূপ। (বুখারী ও মুসলিম)
57- بَابُ الْقَنَاعَةِ وَالْعَفَافِ وَالْاِقْتِصَادِ
فِي الْمَعِيْشَةِ إِنْفَاقِ وَذَمِّ السُّؤَالِ مِنْ غَيْرِ ضَرُوْرَةٍ
পরিচ্ছেদ - ৫৭: অল্পে তুষ্টি, চাওয়া হতে দূরে থাকা এবং মিতাচারিতা ও মিতব্যয়িতার মাহাত্ম্য এবং অপ্রয়োজনে চাওয়ার নিন্দাবাদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ۞وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا﴾ [هود: ٦]
অর্থাৎ “আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।” (সূরা হূদ ৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ لِلۡفُقَرَآءِ ٱلَّذِينَ أُحۡصِرُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ لَا يَسۡتَطِيعُونَ ضَرۡبٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ يَحۡسَبُهُمُ ٱلۡجَاهِلُ أَغۡنِيَآءَ مِنَ ٱلتَّعَفُّفِ تَعۡرِفُهُم بِسِيمَٰهُمۡ لَا يَسَۡٔلُونَ ٱلنَّاسَ إِلۡحَافٗاۗ ﴾ [البقرة: ٢٧٣]
অর্থাৎ “(দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না। তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ إِذَآ أَنفَقُواْ لَمۡ يُسۡرِفُواْ وَلَمۡ يَقۡتُرُواْ وَكَانَ بَيۡنَ ذَٰلِكَ قَوَامٗا ٦٧ ﴾ [الفرقان: ٦٦]
অর্থাৎ “যারা ব্যয় করলে অপচয় করে না, কার্পণ্যও করে না; বরং তারা এ দুয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করে।” (সূরা ফুরকান ৬৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ٥٧﴾ [الذاريات: ٥٦، ٥٧]
অর্থাৎ “আমি সৃষ্টি করেছি জ্বিন ও মানুষকে কেবল এ জন্য যে, তারা আমারই ইবাদত করবে। আমি তাদের নিকট হতে জীবিকা চাই না এবং এও চাই না যে তারা আমার আহার্য যোগাবে।” (সূরা যারিয়াত ৫৬-৫৭ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বের দুই পরিচ্ছেদে অধিকাংশ হাদীস পার হয়েছে। আরো কিছু হাদীস নিম্নরূপঃ-
1/527 عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ الغِنَى عَن كَثرَةِ العَرَض، وَلكِنَّ الغِنَى غِنَى النَّفْسِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫২৭। আবূ-হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বিষয় সম্পদের আধিক্য ধনাঢ্যতা নয়, প্রকৃত ধনাঢ্যতা হলো অন্তরের ধনাঢ্যতা।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/528 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أن رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «قَدْ أفْلَحَ مَنْ أسْلَمَ، وَكَانَ رِزْقُهُ كَفَافاً، وَقَنَّعَهُ اللهُ بِمَا آتَاهُ ». رواه مسلم
২/৫২৮। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সে ব্যক্তি সফলকাম, যে ইসলাম গ্রহণ করেছে, তাকে পরিমিত রুযী দেওয়া হয়েছে এবং আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন তাতে তাকে তুষ্ট করেছেন।’’ (মুসলিম)
৩/৫২৯। হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কিছু চাইলে তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। আবার চাইলাম, তিনি আমাকে দিলেন। অতঃপর বললেন, ‘‘হে হাকীম! এ সম্পদ শ্যামল-সুমিষ্ট। যে ব্যক্তি (লোভহীন) প্রশস্ত হৃদয়ে তা গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি অন্তরের লোভসহ গ্রহণ করবে, তার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে হবে এমন ব্যক্তির মত, যে খায় কিন্তু তার ক্ষুধা মেটে না। উপর হাত নিচু হাত হতে উত্তম।’’ (দাতা গ্রহীতা হতে উত্তম।) হাকীম বলেন, আমি বললাম, ‘যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম! ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার পর মৃত্যু পর্যন্ত আমি কারো কাছ থেকে কিছু গ্রহণ করব না।’ তারপর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাকীমকে অনুদান গ্রহণের জন্য ডাকতেন, কিন্তু তাঁর নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করতেন। অতঃপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে কিছু দেওয়ার জন্য ডাকলেন, কিন্তু তিনি তাঁর নিকট থেকেও কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করলেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘‘হে মুসলিমগণ! হাকীমের ব্যাপারে আমি তোমাদেরকে সাক্ষী বানাচ্ছি যে, আমি তাঁর কাছে ‘ফাই’ থেকে তাঁর প্রাপ্য পেশ করছি, কিন্তু সে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছে।’’ (সত্য সত্যই) হাকীম নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কোন মানুষের নিকট থেকে কিছু গ্রহণ করেননি। (বুখারী ও মুসলিম)
(‘ফাই’ সেই মালকে বলা হয়, যা বিনা যুদ্ধে শত্রুপক্ষ ত্যাগ করে পালিয়ে যায় অথবা যা সন্ধির মাধ্যমে লাভ হয়। পক্ষান্তরে যে মাল দস্তুরমত যুদ্ধ করে জয়যুক্ত হয়ে অর্জিত হয় তাকে ‘মালে গনীমত’ বলা হয়।)
4/530 وَعَن أَبي بُردَةَ، عَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ في غَزاةٍ وَنَحْنُ سِتَّةُ نَفَرٍ بَيْنَنَا بَعِيرٌ نَعْتَقِبُهُ، فَنقِبَت أَقدَامُنَا وَنَقِبَت قَدَمِي، وَسَقَطَت أظْفَارِي، فَكُنَّا نَلُفُّ عَلَى أرْجُلِنا الخِرَقَ، فَسُمِّيَت غَزْوَةَ ذَاتِ الرِّقَاعِ لِمَا كُنَّا نَعْصِبُ عَلَى أرْجُلِنَا مِنَ الخِرَقِ، قَالَ أَبُو بُردَةَ: فَحَدَّثَ أَبُو مُوسَى بِهَذَا الحَدِيثِ، ثُمَّ كَرِه ذَلِكَ، وَقَالَ: مَا كُنْتُ أصْنَعُ بِأنْ أذْكُرَهُ ! قَالَ: كأنَّهُ كَرِهَ أنْ يَكُونَ شَيْئاً مِنْ عَمَلِهِ أفْشَاهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৫৩০। আবূ বুরদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘কোন যুদ্ধে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে রওনা হলাম। আমরা ছিলাম ছ’জন। আমাদের একটি মাত্র উঁট ছিল। পর্যায়ক্রমে এক এক করে আমরা তার পিঠে আরোহন করলাম। (হেঁটে হেঁটে) আমাদের পা ফেটে গেল। আমার পা দু’খানাও ফেটে গেল, খসে গেল নখগুলো। এ কারণে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া বাঁধলাম। এ জন্য এ যুদ্ধকে ‘যাতুর রিকা’ (নেকড়া-ওয়ালা) যুদ্ধ বলা হয়। কেননা, এ যুদ্ধে আমরা আমাদের পায়ে নেকড়া দিয়ে পট্টি বেঁধেছিলাম।’’
আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উক্ত ঘটনা বর্ণনা করতেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এ ঘটনা বর্ণনা করাকে পছন্দ করতেন না। তিনি বলেন, ‘আমি এভাবে বর্ণনা করাকে ভাল মনে করি না।’ সম্ভবতঃ তিনি পছন্দ করতেন না যে, তাঁর কিছু আমল তিনি প্রকাশ করুন। (বুখারী ও মুসলিম)
حُمْرَ النَّعَم . رواه البخاري
৫/৫৩১। ‘আমর ইবনে তাগলিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মাল অথবা যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসা হল। অতঃপর তিনি তা বণ্টন করলেন। তিনি কিছু লোককে দিলেন এবং কিছু লোককে ছাড়লেন। তারপর তিনি খবর পেলেন যে, যাদেরকে তিনি দেননি, তারা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। সুতরাং তিনি (ভাষণের প্রারম্ভে) আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি বর্ণনা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘‘আম্মা বা‘দ! আল্লাহর কসম! আমি কাউকে দিই এবং কাউকে ছাড়ি। যাকে ছাড়ি সে আমার নিকট ঐ ব্যক্তি চেয়ে উত্তম, যাকে দিই। কিন্তু আমি কিছু লোককে কেবলমাত্র এই জন্য দিই যে, আমি তাদের অন্তরে অস্থিরতা ও উদ্বেগ লক্ষ্য করি এবং অন্য কিছু লোককে আমি ঐ ধনবত্তা ও কল্যাণের দিকে সঁপে দিই, যা আল্লাহ তাদের অন্তরে নিহিত রেখেছেন। তাদের মধ্যে ‘আমর ইবনে তাগলিব একজন।’’
আমর ইবনে তাগলিব বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এ কথার বিনিময়ে লাল উঁট নেওয়াও পছন্দ করি না।’ (বুখারী)
6/532 وَعَن حَكِيمِ بنِ حِزَامٍ رضي الله عنه، أنّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأ بِمَنْ تَعُولُ، وَخَيْرُ الصَّدَقَةِ مَا كَانَ عَنْ ظَهْرِ غِنىً، وَمَنْ يَسْتَعْفِفْ يُعِفَّهُ اللهُ، وَمَنْ يَسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ ». متفق عليه، وهذا لفظ البخاري، ولفظ مسلم أخصر.
৬/৫৩২। হাকীম ইবনে হিযাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘উপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতা) হাত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে আছে তাদেরকে আগে দাও। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে সাদকাহ করা উত্তম। যে ব্যক্তি (হারাম ও ভিক্ষা করা থেকে) পবিত্র থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে পবিত্র রাখেন এবং যে পরমুখাপেক্ষিতা থেকে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবশূন্য করে দেন।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর, মুসলিমের শব্দগুচ্ছ অধিকতর সংক্ষিপ্ত)
7/533 وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمٰنِ مُعَاوِيَةَ بنِ أبي سُفيَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تُلْحِفُوا في الْمَسْأَلَةِ، فَوَاللهِ لاَ يَسْأَلُنِي أَحَدٌ مِنْكُمْ شَيْئاً، فَتُخْرِجَ لَهُ مَسْأَلَتُهُ مِنِّي شَيْئاً وَأنَا لَهُ كَارِهٌ، فَيُبَارَكَ لَهُ فِيمَا أعْطَيْتُهُ ». رواه مسلم
৭/৫৩৩। আবূ আব্দুর রহমান মুআবিয়া ইবনে আবূ সুফয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা নাছোড় বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করো না। আল্লাহর কসম! তোমাদের মধ্যে যে কেউ আমার নিকট কোন কিছু চাইবে, অতঃপর আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও যদি আমার কাছ থেকে কিছু বের হয় (কাউকে কিছু দিই), তাহলে তাতে বরকত হবে না।’’ (মুসলিম)
8/534 وَعَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَوفِ بنِ مَالِكٍ الأَشْجَعِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ ﷺ تِسْعَةً أَوْ ثَمَانِيَةً أَوْ سَبْعَةً، فَقَالَ: «ألاَ تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ ﷺ » وَكُنَّا حَدِيثِي عَهْدٍ بِبَيْعَةٍ، فَقُلْنَا: قَدْ بَايَعْنَاكَ يَا رَسُولَ اللهِ، ثمَّ قَالَ: «ألا تُبَايِعُونَ رَسُولَ اللهِ » فَبَسَطْنَا أيْدِيَنَا، وَقُلنَا: قدْ بَايَعنَاكَ فَعَلامَ نُبَايِعُكَ ؟ قَالَ: «عَلَى أنْ تَعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً، وَالصَّلَوَاتِ الخَمْسِ وَتُطِيعُوا اللهَ» وأَسَرَّ كَلِمَةً خَفِيفَةً « وَلاَ تَسْألُوا النَّاسَ شَيْئاً ». فَلَقَدْ رَأيْتُ بَعْضَ أُولئِكَ النَّفَرِ يَسْقُطُ سَوطُ أحَدِهِمْ فَمَا يَسأَلُ أحَداً يُنَاوِلُهُ إيّاهُ . رواه مسلم
৮/৫৩৪। আবূ আব্দুর রহমান ‘আওফ ইবনে মালিক আশজা‘ঈ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ৯ জন অথবা ৮ জন অথবা ৭ জন লোক ছিলাম। তিনি বললেন, ‘‘তোমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে বায়‘আত করবে না?’’ (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন) অথচ আমরা কিছু সময় পূর্বেই তাঁর হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি। সুতরাং আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা তো আপনার হাতে বায়‘আত করে ফেলেছি।’ পুনরায় তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি রাসূলুল্লাহর হাতে বায়‘আত করবে না?’’ সুতরাং আমরা নিজেদের হাতগুলো বিস্তার করলাম এবং বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আপনার হাতে বায়‘আত করেছি। সুতরাং এখন কোন্ কথার উপর আপনার হাতে বায়‘আত করব?’ তিনি বললেন, ‘‘এ কথার উপর যে, তোমরা এক আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করবে না, পাঁচ ওয়াক্তের নামায পড়বে এবং আল্লাহর আনুগত্য করবে।’’ আর একটি কথা তিনি চুপিসারে বললেন, “তোমরা লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না।” অতঃপর আমি (বায়‘আত গ্রহণকারীদের) মধ্যে কিছু লোককে দেখছি যে, তাঁদের মধ্যে কারো চাবুক যদি যমীনে পড়ে যেত, তাহলে তিনি কাউকে তা উঠিয়ে দিতে বলতেন না। (বরং স্বয়ং সওয়ারী থেকে নেমে তা উঠিয়ে নিতেন।) (মুসলিম)
9/535 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبيَّ ﷺ، قَالَ:« لاَ تَزَالُ الْمَسْأَلةُ بأَحَدِكُمْ حَتَّى يَلْقَى اللهَ تَعَالَى وَلَيْسَ فِي وَجْهِهِ مُزْعَةُ لَحْمٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৯/৫৩৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সর্বদা ভিক্ষা করতে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করে তো (সে এই অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে,) তার চেহারায় কোন মাংস টুকরা থাকবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
10/536 وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ وَهُوَ عَلَى المِنْبَرِ، وَذَكَرَ الصَّدَقَةَ وَالتَّعَفُّفَ عَنِ الْمَسْأَلَةِ: «اليَدُ العُلْيَا خَيْرٌ مِنَ اليَدِ السُّفْلَى » وَاليَدُ العُلْيَا هِيَ المُنْفِقَةُ، وَالسُّفْلَى هِيَ السَّائِلَةُ. متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৫৩৬। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপর আরোহণ করে বললেন এবং তিনি সাদকাহ ও ভিক্ষা করা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে আলোচনা করলেন। (এই সুযোগে) তিনি বললেন, ‘‘উঁচু হাত নিচু হাত চেয়ে উত্তম, আর দানকারীর হাত হচ্ছে উঁচু হাত এবং ভিক্ষাকারী হাত হচ্ছে নিচু হাত।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
11/537 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ سَألَ النَّاسَ تَكَثُّراً فإنَّمَا يَسْألُ جَمْراً ؛ فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ ». رواه مسلم
১১/৫৩৭। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে। ফলে (সে এখন তা) অল্প ভিক্ষা করুক অথবা বেশী।’’ (মুসলিম)
১২/৫৩৮। সামুরাহ ইবনে জুন্দুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ভিক্ষা করা এক জখম করার কাজ, তা দ্বারা মানুষ নিজ চেহারাকে জখম করে। কিন্তু সে ব্যক্তি যদি বাদশাহর কাছে চায় অথবা নিরুপায় হয়ে চায় (তাহলে তা স্বতন্ত্র)।’’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
13/539 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ فَأنْزَلَهَا بالنَّاسِ لَمْ تُسَدَّ فَاقَتُهُ، وَمَنْ أنْزَلَهَا باللهِ، فَيُوشِكُ اللهُ لَهُ بِرِزْقٍ عَاجِلٍ أَوْ آجِلٍ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن »
১৩/৫৩৯। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অভাবগ্রস্ত হয় এবং তার অভাব লোকদের নিকট প্রকাশ করে, তার অভাব দূর করা হয় না। আর যে ব্যক্তি তা আল্লাহর নিকট প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে শীঘ্র অথবা বিলম্বে জীবিকা প্রদান করেন।’’ (আবু দাউদ, তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
14/540 وَعَن ثَوبَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ تَكَفَّلَ لِي أنْ لاَ يَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئاً، وَأتَكَفَّلُ لَهُ بِالْجَنَّةِ ؟ » فَقُلتُ: أنَا، فَكَانَ لاَ يَسْأَلُ أحَداً شَيْئاً . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
১৪/৫৪০। সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার জন্য এ কথার জামিন হবে যে, সে লোকদের নিকট কোন কিছু চাইবে না, আমি তার জন্য জান্নাতের জামিন হব।’’ আমি বললাম, ‘আমি (এর জামিন)।’ সুতরাং সাওবান কারো নিকট কোন কিছু চাইতেন না। (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
15/541 وَعَن أَبي بِشْرٍ قَبيصَةَ بنِ المُخَارِقِ رضي الله عنه، قَالَ: تَحَمَّلْتُ حَمَالَةً فَأتَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ أسْأَلُهُ فِيهَا، فَقَالَ: «أقِمْ حَتَّى تَأتِيَنَا الصَّدَقَةُ فَنَأمُرَ لَكَ بِهَا » ثُمَّ قَالَ: «يَا قَبيصةُ، إنَّ المَسْأَلَةَ لاَ تَحِلُّ إِلاَّ لأَحَدِ ثلاثَةٍ: رَجُلٌ تَحَمَّلَ حَمَالَةً، فَحَلَّتْ لَهُ المَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَها، ثُمَّ يُمْسِكُ، وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ جَائِحَةٌ اجْتَاحَتْ مَالَهُ، فَحَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَاماً مِنْ عَيش - أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِنْ عَيْشٍ - وَرَجُلٌ أصَابَتْهُ فَاقَةٌ، حَتَّى يَقُولَ ثَلاَثَةٌ مِنْ ذَوِي الحِجَى مِنْ قَوْمِه: لَقَدْ أصَابَتْ فُلاناً فَاقَةٌ. فَحلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ حَتَّى يُصِيبَ قِوَاماً مِن عَيش، أَوْ قَالَ: سِدَاداً مِن عَيشٍ، فَمَا سِوَاهُنَّ مِنَ المسألَةِ يَا قَبِيصَةُ سُحْتٌ، يَأكُلُهَا صَاحِبُهَا سُحْتاً ». رواه مسلم
১৫/৫৪১। আবূ বিশর ক্বাবীসাহ ইবনে মুখারেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একবার এক অর্থদন্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সাদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে ক্বাবীসাহ! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়; (১) যে ব্যক্তি অর্থদন্ডে পড়বে (কারো দিয়াত বা জরিমানা দেওয়ার যামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে। (২) যে ব্যক্তি দুর্যোগগ্রস্ত হবে এবং তার মাল ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না এসেছে। (৩) যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে ক্বাবীস্বাহ অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।’’ (মুসলিম)
16/542 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لَيْسَ المسكينُ الَّذِي يَطُوفُ عَلَى النَّاسِ تَرُدُّهُ اللُّقْمَةُ وَاللُّقْمَتَانِ، وَالتَّمْرَةُ وَالتَّمْرَتَانِ، وَلكِنَّ المِسكينَ الَّذِي لاَ يَجِدُ غِنىً يُغْنِيهِ، وَلاَ يُفْطَنُ لَهُ فَيُتَصَدَّقُ عَلَيْهِ، وَلاَ يَقُومُ فَيَسْألُ النَّاسَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৬/৫৪২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক গ্রাস ও দু’গ্রাস এবং একটি খেজুর ও দু’টি খেজুরের জন্য যে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় সে মিসকীন নয়। (আসলে) মিসকীন তো সেই, যার কাছে (অপর থেকে) অমুখাপেক্ষী হওয়ার মত মাল নেই এবং (বাহ্যতঃ) তাকে গরীবও বুঝায় না যে, তাকে সাদকাহ দেওয়া যাবে। আর সে উঠে লোকের কাছে চায়ও না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
58- بَابُ جَوَازِ الْأَخْذِ مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ وَّلَا تَطَلُّعٍ إِلَيْهِ
পরিচ্ছেদ - ৫৮: বিনা চাওয়ায় এবং বিনা লোভ-লালসায় যে মাল পাওয়া যাবে তা নেওয়া জায়েয
1/543 عَن سَالِمِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ، عَن أَبِيهِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ، عَن عَمَرَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُعْطِيني العَطَاءَ، فَأقُولُ: أَعطِهِ مَنْ هُوَ أفْقَرُ إِلَيْهِ مِنّي. فَقَالَ:«خُذْهُ، إِذَا جَاءَكَ مِنْ هَذَا المَالِ شَيْءٌ وَأنْتَ غَيْرُ مُشْرِفٍ وَلاَ سَائِلٍ، فَخُذْهُ فَتَمَوَّلْهُ، فَإنْ شِئْتَ كُلْهُ، وَإنْ شِئْتَ تَصَدَّقْ بِهِ، وَمَا لاَ، فَلاَ تُتبِعهُ نَفْسَكَ» قَالَ سَالِمٌ: فَكَانَ عَبدُ الله لاَ يَسألُ أحَداً شَيْئاً، وَلاَ يَرُدُّ شَيْئاً أُعْطِيَه. متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫৪৩। সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার থেকে এবং তিনি উমার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যখন কিছু দান করতেন, তখন আমি বলতাম, ‘আমার চেয়ে যে বেশি অভাবী তাকে দিন।’ (একদা) তিনি বললেন, ‘‘তুমি তা নিয়ে নাও। যখন তোমার কাছে এই মাল আসে, আর তোমার মনে লোভ না থাকে এবং তুমি তা যাচ্ঞাও না করে থাক, তাহলে তা গ্রহণ কর এবং তা নিজের মালের সাথে মিলিয়ে নাও। অতঃপর তোমার ইচ্ছা হলে তা খাও, নতুবা দান করে দাও। এ ছাড়া তোমার মনকে তাতে ফেলে রেখো না।’’
সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার বলেন, ‘এ কারণেই (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ কারো কাছে কিছু চাইতেন না এবং তাঁকে কেউ কিছু দিতে চাইলে তা প্রত্যাখ্যান করতেন না। (বরং গ্রহণ করে নিতেন।)’ (বুখারী ও মুসলিম)
59- بَابُ الْحَثِّ عَلَى الْأَكْلِ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
وَالتَّعَفُّفِ بِهِ مِن السُّؤَالِ والتَّعَرُّضِ لِلْإَعْطَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৫৯: স্বহস্তে উপার্জিত খাবার খাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ ﴾ [الجمعة: ١٠]
অর্থাৎ “অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর।” (সূরা জুমুআহ ১০ আয়াত)
1/544 وَعَن أَبي عَبدِ اللهِ الزُبَيرِ بنِ العَوَّامِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لأَنْ يَأخُذَ أحَدُكُمْ أحبُلَهُ ثُمَّ يَأتِيَ الجَبَلَ، فَيَأْتِيَ بحُزمَةٍ مِنْ حَطَبٍ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا، فَيكُفَّ اللهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ النَّاسَ، أعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ ». رواه البخاري
১/৫৪৪। আবূ আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো রশি নিয়ে পাহাড় যাওয়া এবং কাঠের বোঝা পিঠে করে বয়ে আনা ও তা বিক্রি করা, যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, লোকদের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে উত্তম; তারা তাকে দিক বা না দিক।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/545 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لأَنْ يَحْتَطِبَ أحَدُكُمْ حُزْمَةً عَلَى ظَهْرِهِ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أنْ يَسْألَ أَحَداً، فَيُعْطِيَهُ أَوْ يَمْنَعَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৫৪৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারো কাঠের বোঝা সংগ্রহ করে পিঠে করে বয়ে আনা, কোন লোকের কাছে এসে ভিক্ষা করার চেয়ে অনেক ভাল; সে দিক বা না দিক।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/546 وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «كَانَ دَاوُدُ عليه السلام لا يَأكُلُ إِلاَّ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ». رواه البخاري
৩/৫৪৬। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দাঊদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন ছাড়া খেতেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/547 وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «كَانَ زَكرِيّا عليه السلام نَجَّاراً ». رواه مسلم
৪/৫৪৭। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ছুতোর (কাঠ-মিস্ত্রী) ছিলেন।’’ (মুসলিম)
5/548 وَعَنِ المِقدَامِ بنِ مَعْدِيكَرِبَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَاماً قَطُّ خَيْراً مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ عليه السلام كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ ». رواه البخاري
৪/৫৪৮। মিকদাম ইবনে মা‘দীকারিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লার নবী দাউদ আলাইহিস সালাম নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন।’’ (বুখারী)
60- بَابُ الْكَرَمِ وَالْجُوْدِ وَالْإِنْفَاقِ فِيْ وُجُوْهِ الْخَيْرِ
ثِقَةًمبِاللهِ تَعَالٰى
পরিচ্ছেদ - ৬০: দানশীলতা এবং আল্লাহর উপর ভরসা করে পুণ্য কাজে ব্যয় করার বিবরণ
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ۚوَمَآ أَنفَقۡتُم مِّن شَيۡءٖ فَهُوَ يُخۡلِفُهُۥۖ﴾ [سبا: ٣٩]
অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার বিনিময় দেবেন।” (সূরা সাবা’ ৩৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَلِأَنفُسِكُمۡۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ ٱللَّهِۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ يُوَفَّ إِلَيۡكُمۡ وَأَنتُمۡ لَا تُظۡلَمُونَ﴾ [البقرة: ٢٧٢]
অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, তা নিজেদের উপকারের জন্যই। আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে তোমরা দান করো না। আর তোমরা যা দান কর, তার পুরস্কার পূর্ণভাবে প্রদান করা হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿وَمَا تُنفِقُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ﴾ [البقرة: ٢٧٣]
অর্থাৎ “আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ অবহিত।” (সূরা বাকারাহ ২৭৩ আয়াত)
1/549 وعن ابن مسعود رضي الله عنه، عن النبيِّ ﷺ، قَالَ: «لا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا » متفقٌ عَلَيْهِ
২/৫৪৯। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায় (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
* হাদীসের অর্থ হল, উক্ত দুই প্রকার মানুষ ছাড়া অন্য কারো প্রতি ঈর্ষা করা বৈধ নয়।
2/550 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أيُّكُم مَالُ وَارِثِهِ أحبُّ إِلَيْهِ مِنْ مَالِهِ ؟ » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا مِنَّا أحَدٌ إِلاَّ مَالُهُ أحَبُّ إِلَيْهِ . قَالَ: «فإنَّ مَالَهُ مَا قَدَّمَ وَمَالَ وَارِثِهِ مَا أخَّرَ ». رواه البخاري
২/৫৫০। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে এমন ব্যক্তি কে আছে, যে নিজের সম্পদের চেয়ে তার ওয়ারেসের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে?’’ তাঁরা জবাব দিলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মাঝে এমন কোন ব্যক্তি কেউ নেই, যে তার নিজের সম্পদকে বেশি প্রিয় মনে করে না।’ তখন তিনি বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই মানুষের নিজের সম্পদ তাই, যা সে আগে পাঠিয়েছে। আর এ ছাড়া যে মাল বাকী থাকবে, তা হল ওয়ারিসের মাল।’’ (বুখারী)
3/551 عَن عَدِي بنِ حَاتمٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ النَّبيّ ﷺ، يَقُولُ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ ». مُتَّفَقٌ عليه
৩/৫৫১। আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচো; যদিও খেজুরের এক টুকরো সাদকাহ করে হয়!’’ (বুখারী-মুসলিম)
4/552 وَعَن جَابرٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ شَيْئاً قَطُّ، فَقَالَ: لاَ . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৫৫২। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এমন কোনো জিনিসই চাওয়া হয়নি, যা জবাব দিয়ে তিনি ‘না’ বলেছেন। (অর্থাৎ কোনো কিছু তাঁর কাছে চাওয়া হলে তিনি তা দিতে কখনো নিষেধ করেন নি) (বুখারী ও মুসলিম)
৫/৫৫৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিদিন সকালে দু’জন ফিরিশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের বিনিময় দিন।’ আর অপরজন বলেন, ‘হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস দিন।’’ (বুখারী-মুসলিম)
৬/৫৫৪। উক্ত রাবী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি (অভাবীকে) দান কর, আল্লাহ তোমাকে দান করবেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
7/555 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَجُلاً سَألَ رَسُولَ اللهِ ﷺ: أيُّ الإِسلاَمِ خَيْرٌ ؟ قَالَ:« تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৭/৫৫৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘ইসলামের কোন্ কাজটি উত্তম?’ তিনি জবাব দিলেন, ‘‘তুমি অন্নদান করবে এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
8/556 وَعَنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله ﷺ:«أرْبَعُونَ خَصْلَةً: أعْلاَهَا مَنيحَةُ العَنْزِ، مَا مِنْ عَامِلٍ يَعْمَلُ بِخَصْلَة مِنْهَا ؛ رَجَاءَ ثَوَابِهَا وتَصْدِيقَ مَوْعُودِهَا، إلاَّ أدْخَلَهُ اللهُ بِهَا الجَنَّةَ». رواه البخاري
৮/৫৫৬। উক্ত রাবী কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘চল্লিশটি সৎকর্ম আছে, তার মধ্যে উচ্চতম হল, দুধ পানের জন্য (কোন দরিদ্রকে) ছাগল সাময়িকভাবে দান করা। যে কোন আমলকারী এর মধ্য হতে যে কোন একটি সৎকর্মের উপর প্রতিদানের আশা করে ও তার প্রতিশ্রুত পুরস্কারকে সত্য জেনে আমল করবে, তাকে আল্লাহ তার বিনিময়ে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’ (বুখারী, ১৪২ নম্বরেও গত হয়েছে।)
9/557 وَعَن أَبي أُمَامَة صُدّيِّ بنِ عَجْلانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ أن تَبْذُلَ الفَضلَ خَيْرٌ لَكَ، وَأن تُمْسِكَه شَرٌّ لَكَ، وَلاَ تُلاَمُ عَلَى كَفَافٍ، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ، وَاليَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى ». رواه مسلم
৯/৫৫৭। আবূ উমামাহ সুদাই ইবন আজলান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আদম সন্তান! প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল (আল্লাহর পথে) খরচ করা তোমার জন্য মঙ্গল এবং তা আটকে রাখা তোমার জন্য অমঙ্গল। আর প্রয়োজন মত মালে তুমি নিন্দিত হবে না। প্রথমে তাদেরকে দাও, যাদের ভরণ-পোষণ তোমার দায়িত্বে। আর উপরের (উপুড়) হাত নিচের (চিৎ) হাত অপেক্ষা উত্তম।’’ (মুসলিম)
10/558 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَا سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى الإسْلاَمِ شَيْئاً إِلاَّ أعْطَاهُ، وَلَقَدْ جَاءَهُ رَجُلٌ فَأعْطَاهُ غَنَماً بَيْنَ جَبَلَيْنِ، فَرجَعَ إِلَى قَوْمِهِ فَقَالَ: يَا قَوْمِ، أسْلِمُوا فإِنَّ مُحَمَّداً يُعطِي عَطَاءَ مَن لاَ يَخْشَى الفَقْر، وَإنْ كَانَ الرَّجُلُ لَيُسْلِمُ مَا يُريدُ إِلاَّ الدُّنْيَا، فَمَا يَلْبَثُ إِلاَّ يَسِيراً حَتَّى يَكُونَ الإسْلاَمُ أحَبَّ إِلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا . رواه مسلم
১০/৫৫৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ইসলামের স্বার্থে (অর্থাৎ নও মুসলিমের পক্ষ থেকে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যা চাওয়া হত, তিনি তা-ই দিতেন। (একবার) তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এল। তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মধ্যস্থলের সমস্ত বকরীগুলো দিয়ে দিলেন। অতঃপর সে তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। কেননা, মুহাম্মাদ ঐ ব্যক্তির মত দান করেন, যার দরিদ্রতার ভয় নেই।’ যদিও কোন ব্যক্তি কেবলমাত্র দুনিয়া অর্জন করার জন্য ইসলাম গ্রহণ করত, কিন্তু কিছুদিন পরেই ইসলাম তার নিকট দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু থেকে প্রিয় হয়ে যেত। (মুসলিম)
11/559 وَعَن عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ: قَسَمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قَسْماً، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَغَيْرُ هؤلاَءِ كَانُوا أحَقَّ بِهِ مِنْهُمْ؟ فَقَالَ:« إنَّهُمْ خَيَّرُونِي أنْ يَسأَلُوني بِالفُحْشِ، أَوْ يُبَخِّلُونِي، وَلَسْتُ بِبَاخِلٍ ». رواه مسلم
১১/৫৫৯। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু মাল বণ্টন করলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! অন্য লোকেরা এদের চেয়ে এ মালের বেশি হকদার ছিল।’ তিনি বললেন, ‘‘এরা আমাকে দু’টি কথার মধ্যে একটা না একটা গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। হয় তারা আমার নিকট অভদ্রতার সাথে চাইবে (আর আমাকে তা সহ্য করে তাদেরকে দিতে হবে) অথবা তারা আমাকে কৃপণ আখ্যায়িত করবে। অথচ, আমি কৃপণ নই।’’ (মুসলিম)
12/560 وَعَن جُبَيرِ بنِ مُطعِمٍ رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَمَا هُوَ يَسِيرُ مَعَ النَّبيِّ ﷺ مَقْفَلَهُ مِنْ حُنَيْن، فَعَلِقَهُ الأعْرَابُ يَسْألُونَهُ، حَتَّى اضْطَرُّوهُ إِلَى سَمُرَةٍ، فَخَطِفَت رِدَاءَهُ، فَوَقَفَ النَّبيُّ ﷺ، فَقَالَ: « أعْطُونِي رِدَائي، فَلَوْ كَانَ لِي عَدَدُ هذِهِ العِضَاهِ نَعَماً، لَقَسَمْتُهُ بَينَكُمْ، ثُمَّ لاَ تَجِدُونِي بَخِيلاً وَلاَ كَذّاباً وَلاَ جَبَاناً ». رواه البخاري
১২/৫৬০। জুবাইর ইবনে মুত্বইম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তিনি হুনাইনের যুদ্ধ থেকে ফিরার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আসছিলেন। (পথিমধ্যে) কতিপয় বেদুঈন তাঁর নিকট অনুনয়-বিনয় করে চাইতে আরম্ভ করল, এমন কি শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে বাধ্য করে একটি বাবলা গাছের কাছে নিয়ে গেল। যার ফলে তাঁর চাদর (গাছের কাঁটায়) আটকে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেমে গেলেন এবং বললেন, ‘‘তোমরা আমাকে আমার চাদরখানি দাও। যদি আমার নিকট এসব (অসংখ্য) কাঁটা গাছের সমান উঁট থাকত, তাহলে আমি তা তোমাদের মধ্যে বণ্টন করে দিতাম। অতঃপর তোমরা আমাকে কৃপণ, মিথ্যুক বা কাপুরুষ পেতে না।’’ (বুখারী)
13/561 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زَادَ اللهُ عَبْداً بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً، وَمَا تَواضَعَ أحَدٌ للهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ - عز وجل - ». رواه مسلم
১৩/৫৬১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সাদকাহ করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা করার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা (ক্ষমাকারীর) সম্মান বৃদ্ধি করেন। আর কেউ আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য বিনয়ী হলে, আল্লাহ আয্যা অজাল্ল তাকে উচ্চ করেন।’’ (মুসলিম)
14/562 وَعَن أَبي كَبشَةَ عَمرِو بنِ سَعدٍ الأنمَارِي رضي الله عنه: أنّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «ثَلاَثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ، وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثاً فَاحْفَظُوهُ: مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ، وَلاَ ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً صَبَرَ عَلَيْهَا إِلاَّ زَادَهُ اللهُ عِزّاً، وَلاَ فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسألَةٍ إِلاَّ فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقرٍ» - أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا- «وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثاً فَاحْفَظُوهُ» قَالَ: «إنَّمَا الدُّنْيَا لأرْبَعَةِ نَفَرٍ: عَبْدٍ رَزَقَهُ اللهُ مَالاً وَعِلماً، فَهُوَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَيَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَيَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقَّاً، فَهَذَا بِأَفضَلِ المَنَازِلِ . وَعَبْدٍ رَزَقهُ اللهُ عِلْماً، وَلَمْ يَرْزُقْهُ مَالاً، فَهُوَ صَادِقُ النِّيَّةِ، يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالاً لَعَمِلتُ بِعَمَلِ فُلانٍ، فَهُوَ بنيَّتِهِ، فأجْرُهُمَا سَوَاءٌ . وَعَبْدٍ رَزَقَهُ الله مَالاً، وَلَمَ يَرْزُقْهُ عِلْماً، فَهُوَ يَخبطُ في مَالِهِ بغَيرِ عِلْمٍ، لاَ يَتَّقِي فِيهِ رَبَّهُ، وَلاَ يَصِلُ فِيهِ رَحِمَهُ، وَلاَ يَعْلَمُ للهِ فِيهِ حَقّاً، فَهذَا بِأَخْبَثِ المَنَازِلِ . وَعَبْدٍ لَمْ يَرْزُقْهُ اللهُ مَالاً وَلاَ عِلْماً، فَهُوَ يَقُولُ: لَوْ أنَّ لِي مَالاً لَعَمِلْتُ فِيهِ بعَمَلِ فُلاَنٍ، فَهُوَ بنِيَّتِهِ، فَوِزْرُهُمَا سَوَاءٌ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
১৪/৫৬২। আবূ কাবশাহ ‘আমর ইবনে সা‘দ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘আমি তিনটি জিনিসের ব্যাপারে শপথ করছি এবং তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখোঃ (১) কোন বান্দার মাল সাদকাহ করলে কমে যায় না। (২) কোন বান্দার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হলে এবং সে তার উপর ধৈর্য-ধারণ করলে আল্লাহ নিশ্চয় তার সম্মান বাড়িয়ে দেন, আর (৩) কোন বান্দা যাচ্ঞার দুয়ার উদ্ঘাটন করলে আল্লাহ তার জন্য দরিদ্রতার দরজা উদ্ঘাটন করে দেন।’’ অথবা এই রকম অন্য শব্দ তিনি ব্যবহার করলেন।
‘‘আর তোমাদেরকে একটি হাদীস বলছি তা স্মরণ রাখো।’’ তিনি বললেন, ‘‘দুনিয়ায় চার প্রকার লোক আছে; (১) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন। অতঃপর সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে। আর তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তা সে জানে। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে উৎকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। (২) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ (ইসলামী) জ্ঞান দান করেছেন; কিন্তু মাল দান করেননি। সে নিয়তে সত্যনিষ্ঠ, সে বলে যদি আমার মাল থাকত, তাহলে আমি (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের প্রতিদান সমান। (৩) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ মাল দান করেছেন; কিন্তু (ইসলামী) জ্ঞান দান করেননি। সুতরাং সে না জেনে অবৈধরূপে নির্বিচারে মাল খরচ করে; সে তাতে আল্লাহকে ভয় করে না, তার মাধ্যমে নিজ আত্মীয়তা বজায় রাখে না এবং তাতে যে আল্লাহর হক রয়েছে তাও সে জানে না। অতএব সে (আল্লাহর কাছে) সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্তরে অবস্থান করবে। আর (৪) ঐ বান্দা, যাকে আল্লাহ ধন ও (ইসলামী) জ্ঞান কিছুই দান করেননি। কিন্তু সে বলে, যদি আমার নিকট মাল থাকত, তাহলে আমিও (পূর্বোক্ত) অমুকের মত কাজ করতাম। সুতরাং সে নিয়ত অনুসারে বিনিময় পাবে; এদের উভয়ের পাপ সমান।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
15/563 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّهُمْ ذَبَحُوا شَاةً، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ:«مَا بَقِيَ مِنْهَا ؟» قَالَت: مَا بَقِيَ مِنْهَا إِلاَّ كَتِفُها. قَالَ:« بَقِيَ كُلُّهَا غَيْرُ كَتِفِهَا ». رواه الترمذي، وقال: «حديث صحيح »
১৫/৫৬৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, একদা তাঁরা একটি ছাগল জবাই করলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ছাগলটির কতটা (মাংস) অবশিষ্ট আছে?’’ (আয়েশা) বললেন, ‘কেবলমাত্র কাঁধের মাংস ছাড়া তার কিছুই বাকী নেই।’ তিনি বললেন, ‘‘(বরং) কাঁধের মাংস ছাড়া সবটাই বাকী আছে।’’ (তিরমিযী, বিশুদ্ধ সূত্রে)
* অর্থাৎ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, ‘তার সবটুকু মাংসই সাদকা করে দেওয়া হয়েছে এবং কেবলমাত্র কাঁধের মাংস বাকী রয়ে গেছে।’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘কাঁধের মাংস ছাড়া সবই আখেরাতে আমাদের জন্য বাকী আছে।’’ (আসলে যা দান করা হয়, তাই বাকী থাকে।)
16/564 وَعَن أَسمَاءَ بِنتِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَت: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تُوكِي فَيُوكَى عَلَيْكِ». وَفِي رِوَايَةٍ: «أنفقي أَوِ انْفَحِي، أَوْ انْضَحِي، وَلاَ تُحصِي فَيُحْصِي اللهُ عَلَيْكِ، وَلاَ تُوعي فَيُوعي اللهُ عَلَيْكِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৬/৫৬৪। আসমা বিনতে আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি সম্পদ বেঁধে (জমা করে) রেখো না, এরূপ করলে তোমার নিকট (আসা থেকে) তা বেঁধে রাখা হবে।’’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘খরচ কর, অথবা ছেড়ে দাও, অথবা প্রবাহমান কর, গুনে গুনে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহও তোমাকে গুনে গুনে দেবেন। আর তুমি জমা করে রেখো না, এরূপ করলে আল্লাহও তোমার প্রতি (খরচ না করে) জমা করে রাখবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
17/565 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَثَل البَخِيلِ وَالمُنْفِقِ، كَمَثَلِ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُنَّتَانِ مِنْ حَدِيدٍ مِنْ ثُدِيِّهِمَا إِلَى تَرَاقِيهِمَا، فَأَمَّا المُنْفِقُ فَلاَ يُنْفِقُ إِلاَّ سَبَغَتْ - أَوْ وَفَرَتْ - عَلَى جِلْدِهِ حَتَّى تُخْفِيَ بَنَانَهُ، وَتَعْفُو أثرَهُ، وأمَّا البَخِيلُ، فَلاَ يُرِيدُ أَنْ يُنْفِقَ شَيْئاً إِلاَّ لَزِقَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ مَكَانَهَا، فَهُوَ يُوسِّعُهَا فَلاَ تَتَّسِعُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৭/৫৬৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ‘‘কৃপণ ও দানশীলের দৃষ্টান্ত এমন দুই ব্যক্তির মত, যাদের পরিধানে দু’টি লোহার বর্ম রয়েছে। যা তাদের বুক থেকে টুঁটি পর্যন্ত বিস্তৃত। সুতরাং দানশীল যখন দান করে, তখনই সেই বর্ম তার সারা দেহে বিস্তৃত হয়ে যায়, এমনকি (তার ফলে) তা তার আঙ্গুলগুলোকেও ঢেকে ফেলে এবং তার পদচিহ্ন (পাপ বা ত্রুটি) মুছে দেয়। পক্ষান্তরে কৃপণ যখনই কিছু দান করার ইচ্ছা করে, তখনই বর্মের প্রতিটি আংটা যথাস্থানে এঁটে যায়। সে তা প্রশস্ত করতে চাইলেও তা প্র্রশস্ত হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
18/566 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ تَصَدَّقَ بعَدلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلاَّ الطَّيبَ، فَإنَّ اللهَ يَقْبَلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهَا كَمَا يُرَبِّي أحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১৮/৫৬৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (তার) বৈধ উপায়ে উপার্জিত অর্থ থেকে একটি খেজুর পরিমাণও কিছু দান করে---আর আল্লাহ তো বৈধ অর্থ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণই করেন না---সে ব্যক্তির ঐ দানকে আল্লাহ ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তা ঐ ব্যক্তির জন্য লালন-পালন করেন; যেমন তোমাদের কেউ তার অশব-শাবককে লালন-পালন করে থাকে। পরিশেষে তা পাহাড়ের মত হয়ে যায়।’’ (বুখারী-মুসলিম)
19/567 وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي بِفَلاَةٍ مِنَ الأَرْضِ، فَسَمِعَ صَوْتاً في سَحَابَةٍ، اِسقِ حَدِيقَةَ فُلانٍ، فَتَنَحَّى ذَلِكَ السَّحَابُ فَأفْرَغَ مَاءَهُ فِي حَرَّةٍ، فإِذَا شَرْجَةٌ مِنْ تِلْكَ الشِّرَاجِ قَدِ اسْتَوْعَبَت ذَلِكَ الماءَ كُلَّهُ، فَتَتَبَّعَ المَاءَ، فإذَا رَجُلٌ قَائمٌ في حَدِيقَتِهِ يُحَوِّلُ الماءَ بِمِسحَاتِهِ، فَقَالَ لَهُ: يَا عَبْدَ اللهِ، مَا اسمُكَ ؟ قال: فُلانٌ لِلاِسمِ الَّذِي سَمِعَ في السَّحَابَةِ، فَقَالَ لَهُ: يَا عَبدَ اللهِ، لِمَ تَسْألُنِي عَنِ اسْمِي؟ فَقَالَ: إنِّي سَمِعْتُ صَوتْاً فِي السَّحَابِ الَّذِي هَذَا مَاؤُهُ، يَقُولُ: اِسْقِ حَدِيقَةَ فُلاَنٍ لاِسمِكَ، فَمَا تَصْنَعُ فِيهَا، فَقَالَ: أمَا إِذ قُلتَ هَذَا، فَإنِّي أنْظُرُ إِلَى مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، فَأتَصَدَّقُ بِثُلُثِهِ، وَآكُلُ أنَا وَعِيَالِي ثُلُثاً، وَأردُّ فِيهَا ثُلُثَهُ ». رواه مسلم
১৯/৫৬৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক ব্যক্তি বৃক্ষহীন প্রান্তরে মেঘ থেকে শব্দ শুনতে পেল, ‘অমুকের বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ কর।’ অতঃপর সেই মেঘ সরে গিয়ে কালো পাথুরে এক ভূমিতে বর্ষণ করল। তারপর (সেখানকার) নালাসমূহের মধ্যে একটি নালা সম্পূর্ণ পানি নিজের মধ্যে জমা করে নিল। লোকটি সেই পানির অনুসরণ করে কিছু দূর গিয়ে দেখল, একটি লোক কোদাল দ্বারা নিজ বাগানের দিকে পানি ঘুরাচ্ছে। সে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কি ভাই?’ বলল, ‘অমুক।’ এটি ছিল সেই নাম, যে নাম মেঘের আড়ালে সে শুনেছিল। বাগান-ওয়ালা বলল, ‘ওহে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলে?’ লোকটি বলল, ‘আমি মেঘের আড়াল থেকে তোমার নাম ধরে তোমার বাগানে বৃষ্টি বর্ষণ করতে আদেশ শুনলাম। তুমি কি এমন কাজ কর?’ বাগান-ওয়ালা বলল, ‘এ কথা যখন বললে, তখন বলতে হয়; আমি এই বাগানের উৎপন্ন ফল-ফসলকে ভেবে-চিন্তে তিন ভাগে ভাগ করি। অতঃপর তার এক ভাগ দান করি, এক ভাগ আমি আমার পরিজন সহ খেয়ে থাকি এবং বাকী এক ভাগ বাগানের চাষ-খাতে ব্যয় করি।’’ (মুসলিম)
61- بَابُ النَّهْيِ عَنِ البُخْلِ وَالشُّحِّ
পরিচ্ছেদ - ৬১: কৃপণতা ও ব্যয়কুণ্ঠতা
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨ وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠ وَمَا يُغۡنِي عَنۡهُ مَالُهُۥٓ إِذَا تَرَدَّىٰٓ ١١ ﴾ [الليل: ٨، ١١]
অর্থাৎ “পক্ষান্তরে যে কার্পণ্য করে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করে। আর সদ্বিষয়কে মিথ্যাজ্ঞান করে, অচিরেই তার জন্য আমি সুগম করে দেব (জাহান্নামের) কঠোর পরিণামের পথ। যখন সে ধ্বংস হবে, তখন তার সম্পদ তার কোনই কাজে আসবে না।” (সূরা লাইল ৮-১১)
তিনি আরো বলেন,
﴿وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ﴾ [التغابن: ١٦]
অর্থাৎ “যারা অন্তরের কার্পণ্য হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম।” (সূরা তাগাবূন ১৬ আয়াত)
এ বিষয়ে একাধিক হাদীস গত পরিচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে। আরো কিছু নিম্নরূপঃ-
1/568 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «اتَّقُوا الظُّلْمَ ؛ فَإِنَّ الظُّلْمَ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ القِيَامَةِ . وَاتَّقُوا الشُّحَّ ؛ فَإنَّ الشُّحَّ أهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، حَمَلَهُمْ عَلَى أنْ سَفَكُوا دِمَاءهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ ». رواه مسلم
১/৫৬৮। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অত্যাচার করা থেকে বাঁচ। কেননা, অত্যাচার কিয়ামতের দিনের অন্ধকার। আর কৃপণতা থেকে দূরে থাক। কেননা, কৃপণতা তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। (এই কৃপণতাই) তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, ফলে তারা নিজেদের রক্তপাত ঘটিয়েছিল এবং তাদের উপর হারামকৃত বস্তুসমূহকে হালাল করে নিয়েছিল।’’ (মুসলিম)
62- بَابُ الْإِيْثَارِ الْمُوَاسَاةِ
পরিচ্ছেদ - ৬২: ত্যাগ ও সহমর্মিতা প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَيُؤۡثِرُونَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ وَلَوۡ كَانَ بِهِمۡ خَصَاصَةٞۚ ﴾ [الحشر: ٩]
অর্থাৎ “নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তারা (অপরকে) নিজেদের উপর প্রাধান্য দেয়।” (সূরা হাশ্র ৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَيُطۡعِمُونَ ٱلطَّعَامَ عَلَىٰ حُبِّهِۦ مِسۡكِينٗا وَيَتِيمٗا وَأَسِيرًا ٨ ﴾ [الانسان: ٨]
অর্থাৎ “আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীকে অন্নদান করে।” (সূরা দাহার ৮ আয়াত)
1/569 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَ: إنِّي مَجْهُودٌ، فَأرسَلَ إِلَى بَعْضِ نِسَائِهِ، فَقَالَت: وَالَّذي بَعَثَكَ بِالحَقِّ مَا عِنْدِي إِلاَّ مَاءٌ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُخْرَى، فَقَالَتْ مِثلَ ذَلِكَ، حَتَّى قُلْنَ كُلُّهُنَّ مِثلَ ذَلِكَ: لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ مَا عِنْدِي إِلاَّ مَاءٌ . فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: «مَنْ يُضِيفُ هَذَا اللَّيْلَةَ ؟ » فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الأنْصَارِ: أنَا يَا رَسُولَ اللهِ، فَانْطَلَقَ بِهِ إِلَى رَحْلِهِ، فَقَالَ لامْرَأَتِهِ: أكرِمِي ضَيْفَ رَسُولِ اللهِ ﷺ .
وفي روايةٍ قَالَ لامْرَأَتِهِ: هَلْ عِنْدَكِ شَيْءٌ ؟ فَقَالَتْ: لاَ، إِلاَّ قُوتَ صِبيَانِي . قَالَ: فَعَلِّليهم بِشَيْءٍ وَإذَا أرَادُوا العَشَاءَ فَنَوِّمِيهمْ، وَإِذَا دَخَلَ ضَيْفُنَا فَأطْفِئي السِّرَاجَ، وَأَرِيهِ أنَّا نَأكُلُ . فَقَعَدُوا وَأكَلَ الضَّيْفُ وَبَاتَا طَاوِيَيْنِ، فَلَمَّا أصْبَحَ غَدَا عَلَى النَّبيِّ ﷺ، فَقَالَ: «لَقَدْ عَجِبَ الله مِنْ صَنِيعِكُمَا بِضَيْفِكُمَا اللَّيْلَةَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫৬৯। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘আমি ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছি।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন স্ত্রীর নিকট সংবাদ পাঠালেন। তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের সঙ্গে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কিছুই নেই।’ অতঃপর অন্য স্ত্রীর নিকট পাঠালেন। তিনিও অনুরূপ কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত সকল (স্ত্রী)ই ঐ একই কথা বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যের সাথে পাঠিয়েছেন! আমার কাছে পানি ছাড়া কোন কিছুই নেই।’ তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আজকের রাতে কে একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করবে?’’ এক আনসারী বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি একে মেহমান হিসাবে গ্রহণ করব।’ সুতরাং তিনি তাকে সাথে করে নিজ গৃহে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেহমানের খাতির কর।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি (আনসারী) তাঁর স্ত্রীকে বললেন, ‘তোমার নিকট কোন কিছু আছে কি?’ তিনি বললেন না, ‘কেবলমাত্র বাচ্চাদের খাবার আছে।’ তিনি বললেন, ‘কোন জিনিস দ্বারা তাদেরকে ভুলিয়ে রাখবে এবং তারা যখন রাত্রে খাবার চাইবে, তখন তাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে দেবে। অতঃপর যখন আমাদের মেহমান (ঘরে) প্রবেশ করবে, তখন বাতি নিভিয়ে দেবে এবং তাকে দেখাবে যে, আমরাও খাচ্ছি।’ সুতরাং তাঁরা সকলেই খাওয়ার জন্য বসে গেলেন; মেহমান খাবার খেল এবং তাঁরা দু’জনে উপবাসে রাত কাটিয়ে দিলেন। অতঃপর যখন তিনি সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলেন, তখন তিনি বললেন, ‘‘তোমরা দু’জনের আজকের রাতে তোমাদের মেহমানের সাথে তোমাদের ব্যবহারে আল্লাহ বিস্মিত হয়েছেন!’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/570 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:«طَعَامُ الاثْنَيْنِ كَافِي الثَّلاَثَةِ، وَطَعَامُ الثَّلاَثَةِ كَافِي الأربَعَةِ» متفقٌ عَلَيْهِ . وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «طَعَامُ الوَاحِدِ يَكْفِي الاثْنَيْنِ، وَطَعَامُ الاثْنَيْنِ يَكْفِي الأَرْبَعَةَ، وَطَعَامُ الأَرْبَعَة يَكْفِي الثَّمَانِية » .
২/৫৭০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’’ (বুখারী-মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।’’
3/571 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ مَعَ النَّبيِّ ﷺ إذْ جَاءَ رَجُلٌ عَلَى رَاحِلَةٍ لَهُ، فَجَعَلَ يَصرِفُ بَصَرَهُ يَميناً وَشِمَالاً، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ فَليَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ ظَهرَ لَهُ، وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ مِنْ زَادٍ، فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ زَادَ لَهُ ». فَذَكَرَ مِنْ أصْنَافِ المالِ مَا ذَكَرَ حَتَّى رَأيْنَا أنَّهُ لاَ حَقَّ لأَحَدٍ مِنَّا فِي فَضْلٍ . رواه مسلم
৩/৫৭১। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। ইতোমধ্যে একটি লোক তার একটি সওয়ারীর উপর চড়ে (আমাদের নিকট) এল এবং ডানে ও বামে তার দৃষ্টি ফিরাতে লাগল। (এ দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যার নিকট উদ্বৃত্ত সওয়ারী আছে, সে যেন তা ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার নিকট কোন সওয়ারী নেই। আর যার নিকট উদ্বৃত্ত পাথেয় (খাদ্য) রয়েছে, সে যেন ঐ ব্যক্তিকে দেয় যার কোন পাথেয় নেই।’’ এভাবে তিনি বিভিন্ন প্রকার মালের কথা উল্লেখ করলেন। এমনকি আমরা ধারণা করলাম যে, উদ্বৃত্ত মালে আমাদের কারো অধিকার নেই। (মুসলিম)
4/572 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أنَّ أمْرَأةً جَاءَتْ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ بِبُرْدَةٍ مَنْسُوجَةٍ، فَقَالَتْ: نَسَجْتُهَا بِيَدَيَّ لأَكْسُوكَهَا، فَأَخَذَهَا النَّبيُّ ﷺ مُحْتَاجاً إِلَيْهَا، فَخَرَجَ إِلَيْنَا وَإنَّهَا إزَارُهُ، فَقَالَ فُلانٌ: اكْسُنِيهَا مَا أحْسَنَهَا ! فَقَالَ: «نَعَمْ » فَجَلَسَ النَّبيُّ ﷺ في المَجْلِسِ، ثُمَّ رَجَعَ فَطَواهَا، ثُمَّ أرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ: فَقَالَ لَهُ الْقَومُ: مَا أحْسَنْتَ ! لَبِسَهَا النَّبيُّ ﷺ مُحتَاجَاً إِلَيْهَا، ثُمَّ سَألْتَهُ وَعَلِمْتَ أنَّهُ لاَ يَرُدُّ سَائِلاً، فَقَالَ: إنّي وَاللهِ مَا سَألْتُهُ لأَلْبِسَهَا، إنَّمَا سَألْتُهُ لِتَكُونَ كَفَنِي . قَالَ سَهْلٌ: فَكَانَتْ كَفَنَهُ . رواه البخاري
৪/৫৭২। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একটি (হাতে) বুনা চাদর নিয়ে এল। সে বলল, ‘আপনার পরিধানের জন্য চাদরটি আমি নিজ হাতে বুনেছি।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা গ্রহণ করলেন এবং তাঁর চাদরের প্রয়োজনও ছিল। তারপর তিনি লুঙ্গীরূপে পরিধান করে আমাদের সামনে আসলেন। তখন অমুক ব্যক্তি বলল, ‘এটি আমাকে পরার জন্য দান করে দিন। এটি কত সুন্দর!’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, (তাই দেব।)’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে (কিছুক্ষণ) বসলেন। অতঃপর ফিরে গিয়ে তা ভাঁজ করে ঐ লোকটির কাছে পাঠিয়ে দিলেন। লোকেরা বলল, ‘তুমি কাজটা ভাল করলে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তাঁর প্রয়োজনে পরেছিলেন, তবুও তুমি চেয়ে বসলে। অথচ তুমি জান যে, তিনি কারো চাওয়া রদ করেন না।’ ঐ ব্যক্তি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি তা পরার উদ্দেশ্যে চাইনি, আমার চাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য যে, তা আমার কাফন হবে।’ সাহল বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তা তাঁর কাফনই হয়েছিল।’ (বুখারী)
5/573 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ الأشْعَرِيِّينَ إِذَا أرْمَلُوا في الغَزْوِ، أَوْ قَلَّ طَعَامُ عِيَالِهِمْ بِالمَديِنَةِ، جَمَعُوا مَا كَانَ عِنْدَهُمْ في ثَوْبٍ وَاحِدٍ، ثُمَّ اقْتَسَمُوهُ بَيْنَهُمْ في إنَاءٍ وَاحدٍ بِالسَّوِيَّةِ، فَهُمْ مِنِّي وَأنَا مِنْهُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৫৭৩। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আশআরী গোত্রের লোকদের যখন জিহাদের পাথেয় ফুরিয়ে যায় অথবা মদীনাতে তাদের পরিবার পরিজনদের খাদ্য কমে যায়, তখন তারা তাদের নিকট যা কিছু থাকে, তা সবই একটি কাপড়ে জমা করে। অতঃপর তা নিজেদের মধ্যে একটি পাত্রে সমানভাবে বণ্টন করে নেয়। সুতরাং তারা আমার (দলভুক্ত) এবং আমিও তাদের (দলভুক্ত)।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
63- بَابُ التَّنَافُسِ فِيْ أُمُوْرِ الْآخِرَةِ وَالْاِسْتِكْثَارِ مِمَّا يُتَبَرَّكُ فِيْهِ
পরিচ্ছেদ - ৬৩: আখেরাতের কাজে প্রতিযোগিতা করা এবং বরকতময় জিনিস অধিক কামনা করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ﴾ [المطففين: ٢٦]
অর্থাৎ “এ ব্যাপারে (জান্নাত লাভের জন্য) প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।” (সূরা মুত্বাফফিফীন ২৬ আয়াত)
1/574 وَعَن سَهْلِ بن سَعدٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أُتِيَ بِشَرابٍ، فَشَرِبَ مِنْهُ وَعَنْ يَمِينِهِ غُلاَمٌ، وَعَنْ يَسَارِهِ الأشْيَاخُ، فَقَالَ لِلغُلاَمِ: « أتَأذَنُ لِي أنْ أُعْطِيَ هَؤُلاَءِ ؟ » فَقَالَ الغُلامُ: لاَ وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ، لاَ أُوْثِرُ بِنَصِيبي مِنْكَ أحَداً . فَتَلَّهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ في يَدِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫৭৪। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে কোন পানীয় পরিবেশন করা হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। তাঁর ডান দিকে ছিল একটি বালক আর বাম দিকে ছিল কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। (নিয়ম হল, ডান দিকে আগে দেওয়া তাই) তিনি বালকটিকে বললেন, ‘‘তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে, আমি ঐ বয়স্ক লোকদেরকে আগে পান করতে দিই?’’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আপনার কাছ থেকে আমার ভাগে আসা জিনিসের ক্ষেত্রে আমি কাউকে আমার উপর অগ্রাধিকার দেব না।’ (সা‘দ বলেন,) ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পেয়ালাটি তার হাতে তুলে দিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
* ঐ বালক ছিলেন, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু।
2/575 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «بَيْنَا أيُّوبُ عليه السلام يَغْتَسِلُ عُرْيَاناً، فَخَرَّ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ أيُّوبُ يَحْثِي في ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: يَا أيُّوبُ، ألَمْ أكُنْ أغْنَيتكَ عَمَّا تَرَى ؟! قَالَ: بَلَى وَعِزَّتِكَ وَلَكِنْ لاَ غِنى بِيْ عَنْ بَرَكَتِكَ ». رواه البخاري
২/৫৭৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একদা আইয়ূব আলাইহিস সালাম উলঙ্গ হয়ে গোসল করছিলেন। অতঃপর তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল পড়তে লাগল। আইয়ূব আলাইহিস সালাম তা আঁজলা ভরে ভরে বস্ত্রে রাখতে আরম্ভ করলেন। সুতরাং তাঁর প্রতিপালক আয্যা অজাল্ল তাঁকে ডাক দিলেন, ‘হে আইয়ূব! তুমি যা দেখছ তা হতে কি আমি তোমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিইনি?’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই, তোমার ইজ্জতের কসম! কিন্তু আমি তোমার বরকত হতে অমুখাপেক্ষী নই।’’ (বুখারী)
64- بَابُ فَضْلِ الغَنِيِّ الشَّاكِرِ
পরিচ্ছেদ - ৬৪: কৃতজ্ঞ ধনীর মাহাত্ম্য
কৃতজ্ঞ ধনী ঐ ব্যক্তি যে বৈধ পন্থায় ধনার্জন করে এবং তা বৈধ ও বিধেয় পথে ব্যয় করে।
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥ وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧ ﴾ [الليل: ٥، ٧]
অর্থাৎ “সুতরাং যে দান করে ও আল্লাহকে ভয় করে, এবং সদ্বিষয়কে সত্যজ্ঞান করে। অচিরেই আমি তার জন্য সুগম করে দেব (জান্নাতের) সহজ পথ।” (সূরা লায়ল ৫-৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَسَيُجَنَّبُهَا ٱلۡأَتۡقَى ١٧ ٱلَّذِي يُؤۡتِي مَالَهُۥ يَتَزَكَّىٰ ١٨ وَمَا لِأَحَدٍ عِندَهُۥ مِن نِّعۡمَةٖ تُجۡزَىٰٓ ١٩ إِلَّا ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٢٠ وَلَسَوۡفَ يَرۡضَىٰ ٢١ ﴾ [الليل: ١٧، ٢١]
অর্থাৎ “আর আল্লাহভীরুকে তা থেকে দূরে রাখা হবে। যে আত্মশুদ্ধির জন্য তার ধন-সম্পদ দান করে এবং তার প্রতি কারো কোন অনুগ্রহের প্রতিদানে নয়। কেবল তার মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি লাভের প্রত্যাশায়। আর সে অচিরেই সন্তুষ্ট হবে।” (সূরা ঐ ১৭-২১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِن تُبۡدُواْ ٱلصَّدَقَٰتِ فَنِعِمَّا هِيَۖ وَإِن تُخۡفُوهَا وَتُؤۡتُوهَا ٱلۡفُقَرَآءَ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَئَِّاتِكُمۡۗ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ٢٧١ ﴾ [البقرة: ٢٧١]
অর্থাৎ “তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম। এতে তিনি তোমাদের কিছু কিছু পাপ মোচন করবেন, বস্তুত তোমরা যা কর, আল্লাহ তা অবহিত।” (সূরা বাক্বারাহ ২৭১ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ لَن تَنَالُواْ ٱلۡبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُواْ مِمَّا تُحِبُّونَۚ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيۡءٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٩٢ ﴾ [ال عمران: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা কখনও পুণ্য লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে ব্যয় করেছ। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা আলে ইমরান ৯২ আয়াত)
1/576 وعن ابن مسعود رضي الله عنه، عن النبيِّ ﷺ، قَالَ: «لا حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ في الحَقّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا ويُعَلِّمُهَا » متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫৭৬। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ (১) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর তাকে হক পথে অকাতরে দান করার ক্ষমতা দান করেছেন এবং (২) ঐ ব্যক্তির প্রতি যাকে মহান আল্লাহ হিকমত দান করেছেন, অতঃপর সে তার দ্বারা ফায়সালা করে ও তা শিক্ষা দেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম, এটি ৫৪৯ নম্বরে গত হয়েছে।)
2/577 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ في اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ القُرْآنَ، فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ مَالاً، فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৫৭৭। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেবলমাত্র দু’টি বিষয়ে ঈর্ষা করা যায়ঃ (১) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে আল্লাহ কুরআন (শিক্ষা) দিয়েছেন অতঃপর সে দিবারাত্রি তার যত্ন করে (তেলাওয়াত ও আমল করে) এবং (২) ঐ ব্যক্তির (হিংসা করা যায়) যাকে মহান আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন, অতঃপর সে দিবারাত্রি তা দান করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩/৫৭৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা গরীব মুহাজির (সাহাবাগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল।’ তিনি বললেন, ‘‘তা কিভাবে?’’ তাঁরা বললেন, ‘তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তারা সাদকাহ করছে, আর আমরা করতে পারছি না। তারা দাস মুক্ত করছে, আর আমরা পারছি না।’ এ কথা শুনে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না?’’ তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার করে ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে।’’ অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।’’ (বুখারী, মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
65- بَابُ ذِكْرِ الْمَوْتِ وَقَصْرِ الْأَمَلِ
পরিচ্ছেদ - ৬৫: মরণকে স্মরণ এবং কামনা-বাসনা কম করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَإِنَّمَا تُوَفَّوۡنَ أُجُورَكُمۡ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۖ فَمَن زُحۡزِحَ عَنِ ٱلنَّارِ وَأُدۡخِلَ ٱلۡجَنَّةَ فَقَدۡ فَازَۗ وَمَا ٱلۡحَيَوٰةُ ٱلدُّنۡيَآ إِلَّا مَتَٰعُ ٱلۡغُرُورِ ١٨٥ ﴾ [ال عمران: ١٨٥]
অর্থাৎ “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর কিয়ামতের দিনই তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় প্রদান করা হবে। যাকে আগুন (জাহান্নাম) থেকে দূরে রাখা হবে এবং (যে) বেহেশ্তে প্রবেশলাভ করবে সেই হবে সফলকাম। আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা আলে ইমরান ১৮৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسٞ مَّاذَا تَكۡسِبُ غَدٗاۖ وَمَا تَدۡرِي نَفۡسُۢ بِأَيِّ أَرۡضٖ تَمُوتُۚ ﴾ [لقمان: ٣٤]
অর্থাৎ “কেউ জানে না আগামী কাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন্ দেশে তার মৃত্যু ঘটবে।” (সূরা লুকমান ৩৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ﴾ [الاعراف: ٣٤]
অর্থাৎ “অতঃপর যখন তাদের সময় আসে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব অথবা অগ্রগামী করতে পারে না।” (সূরা নাহ্ল ৬১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تُلۡهِكُمۡ أَمۡوَٰلُكُمۡ وَلَآ أَوۡلَٰدُكُمۡ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡخَٰسِرُونَ ٩ وَأَنفِقُواْ مِن مَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ أَحَدَكُمُ ٱلۡمَوۡتُ فَيَقُولَ رَبِّ لَوۡلَآ أَخَّرۡتَنِيٓ إِلَىٰٓ أَجَلٖ قَرِيبٖ فَأَصَّدَّقَ وَأَكُن مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠ وَلَن يُؤَخِّرَ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِذَا جَآءَ أَجَلُهَاۚ وَٱللَّهُ خَبِيرُۢ بِمَا تَعۡمَلُونَ ١١ ﴾ [المنافقون: ٩، ١١]
অর্থাৎ “হে মু’মিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসীন না করে, যারা উদাসীন হবে তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত। আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় কর তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,) ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদকা করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ কিন্তু নির্ধারিত কাল যখন উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ কখনো কাউকেও অবকাশ দেবেন না। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।” (সূরা মুনাফিকূন ৯-১১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ رَبِّ ٱرۡجِعُونِ ٩٩ لَعَلِّيٓ أَعۡمَلُ صَٰلِحٗا فِيمَا تَرَكۡتُۚ كَلَّآۚ إِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَآئِلُهَاۖ وَمِن وَرَآئِهِم بَرۡزَخٌ إِلَىٰ يَوۡمِ يُبۡعَثُونَ ١٠٠ فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ فَلَآ أَنسَابَ بَيۡنَهُمۡ يَوۡمَئِذٖ وَلَا يَتَسَآءَلُونَ ١٠١ فَمَن ثَقُلَتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٢ وَمَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ فَأُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ خَسِرُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ فِي جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ١٠٣ تَلۡفَحُ وُجُوهَهُمُ ٱلنَّارُ وَهُمۡ فِيهَا كَٰلِحُونَ ١٠٤ أَلَمۡ تَكُنۡ ءَايَٰتِي تُتۡلَىٰ عَلَيۡكُمۡ فَكُنتُم بِهَا تُكَذِّبُونَ ١٠٥ قَالُواْ رَبَّنَا غَلَبَتۡ عَلَيۡنَا شِقۡوَتُنَا وَكُنَّا قَوۡمٗا ضَآلِّينَ ١٠٦ رَبَّنَآ أَخۡرِجۡنَا مِنۡهَا فَإِنۡ عُدۡنَا فَإِنَّا ظَٰلِمُونَ ١٠٧ قَالَ ٱخۡسَُٔواْ فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ ١٠٨ إِنَّهُۥ كَانَ فَرِيقٞ مِّنۡ عِبَادِي يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَٱغۡفِرۡ لَنَا وَٱرۡحَمۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰحِمِينَ ١٠٩ فَٱتَّخَذۡتُمُوهُمۡ سِخۡرِيًّا حَتَّىٰٓ أَنسَوۡكُمۡ ذِكۡرِي وَكُنتُم مِّنۡهُمۡ تَضۡحَكُونَ ١١٠ إِنِّي جَزَيۡتُهُمُ ٱلۡيَوۡمَ بِمَا صَبَرُوٓاْ أَنَّهُمۡ هُمُ ٱلۡفَآئِزُونَ ١١١ قَٰلَ كَمۡ لَبِثۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ عَدَدَ سِنِينَ ١١٢ قَالُواْ لَبِثۡنَا يَوۡمًا أَوۡ بَعۡضَ يَوۡمٖ فَسَۡٔلِ ٱلۡعَآدِّينَ ١١٣ قَٰلَ إِن لَّبِثۡتُمۡ إِلَّا قَلِيلٗاۖ لَّوۡ أَنَّكُمۡ كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١٤ أَفَحَسِبۡتُمۡ أَنَّمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ عَبَثٗا وَأَنَّكُمۡ إِلَيۡنَا لَا تُرۡجَعُونَ ١١٥ ﴾ [المؤمنون: ٩٩، ١١٥]
অর্থাৎ “যখন তাদের (অবিশ্বাসী ও পাপীদের) কারো মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে পুনরায় (দুনিয়ায়) প্রেরণ কর। যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’ না এটা হবার নয়; এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র; তাদের সামনে বারযাখ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেওয়া হবে সেদিন পরস্পরের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরের খোঁজ-খবর নিবে না। সুতরাং যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে, তারাই হবে সফলকাম। আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হাল্কা হবে, তারাই নিজেদের ক্ষতি করেছে; তারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে। আগুন তাদের মুখমন্ডলকে দগ্ধ করবে এবং তারা সেখানে থাকবে বীভৎস চেহারায়। তোমাদের নিকট কি আমার আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হতো না? অথচ তোমরা সেগুলিকে মিথ্যা মনে করতে। তারা বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! দুর্ভাগ্য আমাদেরকে পেয়ে বসেছিল এবং আমরা ছিলাম এক বিভ্রান্ত সম্প্রদায়। হে আমাদের প্রতিপালক! এই আগুন হতে আমাদেরকে উদ্ধার কর; অতঃপর আমরা যদি পুনরায় অবিশবাস করি তাহলে অবশ্যই আমরা সীমালংঘনকারী হব।’ আল্লাহ বলবেন, ‘‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না। আমার বান্দাদের মধ্যে একদল ছিল যারা বলত, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা বিশবাস করেছি; সুতরাং তুমি আমাদেরকে ক্ষমা করে দাও ও আমাদের উপর দয়া কর, তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ কিন্তু তাদেরকে নিয়ে তোমরা এতো ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে যে, তা তোমাদেরকে আমার কথা ভুলিয়ে দিয়েছিল; তোমরা তো তাদেরকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাই করতে। আমি আজ তাদেরকে তাদের ধৈর্যের কারণে এমনভাবে পুরস্কৃত করলাম যে, তারাই হল সফলকাম।’’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে কত বছর অবস্থান করেছিলে?’ তারা বলবে, ‘আমরা অবস্থান করেছিলাম এক দিন অথবা একদিনের কিছু অংশ, তুমি না হয় গণনাকারীদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখ।’ তিনি বলবেন, ‘তোমরা অল্পকালই অবস্থান করেছিলে; যদি তোমরা জানতে। তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে না?” (সূরা মু’মিনূন ৯৯-১১৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ ۞أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ وَكَثِيرٞ مِّنۡهُمۡ فَٰسِقُونَ ١٦ ﴾ [الحديد: ١٦]
অর্থাৎ “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে তাদের সময় কি আসেনি যে, আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তাতে তাদের হৃদয় ভক্তি-বিগলিত হবে? এবং পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত তারা হবে না? বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল। আর তাদের অধিকাংশই সত্যত্যাগী।” (সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত)
এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। (হাদীস নিম্নরূপঃ-)
1/579 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِمَنْكِبَيَّ، فَقَالَ: «كُنْ في الدُّنْيَا كَأنَّكَ غَرِيبٌ، أَو عَابِرُ سَبيلٍ» . وَكَانَ ابنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، يَقُولُ: إِذَا أمْسَيتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ الصَّبَاحَ، وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرِ المَسَاءَ، وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ، وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ . رواه البخاري
১/৫৭৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, ‘‘তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।’’ আর ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।’ (বুখারী, এটি ৪৭৫ নম্বরে গত হয়েছে।)
2/580 وَعَنهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَا حَقُّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ، لَهُ شَيْءٌ يُوصِي فِيهِ، يَبيتُ لَيْلَتَيْنِ إِلاَّ وَوَصِيَّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، هَذَا لفظ البخاري .
وفي روايةٍ لمسلمٍ: «يَبِيتُ ثَلاَثَ لَيَالٍ» قَالَ ابنُ عُمَرَ: مَا مَرَّتْ عَلَيَّ لَيْلَةٌ مُنْذُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ ذَلِكَ إِلاَّ وَعِنْدِي وَصِيَّتِي .
২/৫৮০। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে মুসলিমের নিকট অসিয়ত করার মত কোন কিছু আছে, তার জন্য দু’ রাত কাটানো জায়েয নয় এমন অবস্থা ছাড়া যে, তার অসিয়ত-নামা তার নিকট লিখিত (প্রস্তুত) থাকা উচিত।’’ (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর) মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় তিন রাত কাটানোর কথা রয়েছে। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমি যখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি, তখন থেকে আমার উপর এক রাতও পার হয়নি এমন অবস্থা ছাড়া যে আমার অসিয়ত-নামা আমার নিকট প্রস্তুত আছে।’
3/581 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَّ النَّبيُّ ﷺ خُطُوطاً، فَقَالَ: «هَذَا الإنْسَانُ، وَهَذَا أجَلُهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إذْ جَاءَ الخَطُّ الأَقْرَبُ ». رواه البخاري
৩/৫৮১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কয়েকটি রেখা আঁকলেন এবং বললেন, ‘‘এটা হল মানুষ, (এটা তার আশা-আকাঙ্ক্ষা) আর এটা হল তার মৃত্যু, সে এ অবস্থার মধ্যেই থাকে; হঠাৎ নিকটবর্তী রেখা (অর্থাৎ মৃত্যু) এসে পড়ে।’’ (বুখারী)
4/582 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَّ النَّبيُّ ﷺ خَطّاً مُرَبَّعاً، وَخَطَّ خَطّاً في الوَسَطِ خَارِجَاً مِنْهُ، وَخَطَّ خُطَطاً صِغَاراً إِلَى هَذَا الَّذِي في الْوَسَطِ مِنْ جَانِبهِ الَّذِي في الوَسَط، فَقَالَ: « هَذَا الإنْسَانُ، وَهذَا أجَلُهُ مُحيطاً بِهِ ـ أَوْ قَدْ أحَاطَ بِهِ ـ وَهذَا الَّذِي هُوَ خَارِجٌ أمَلُهُ، وَهذِهِ الْخُطَطُ الصِّغَارُ الأَعْرَاضُ، فَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا، نَهَشَهُ هَذَا، وَإنْ أخْطَأَهُ هَذَا، نَهَشَهُ هَذَا ». رواه البخاري
৪/৫৮২। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি চতুর্ভুজ আঁকলেন এবং এর মাঝখানে একটি রেখা টানলেন যেটি চতুর্ভুজের বাইরে চলে গেল। তারপর দু পাশ দিয়ে মাঝের রেখার সাথে ভিতরের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট রেখা মেলালেন এবং বললেন, ‘‘এ মাঝামাঝি রেখাটা হল মানুষ। আর চতুর্ভুজটি হল তার মৃত্যু; যা তাকে ঘিরে রেখেছে। আর বাইরের দিকে বর্ধিত রেখাটি হল তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর ছোট ছোট রেখাগুলো নানা রকম বিপদাপদ। যদি সে এর একটাকে এড়িয়ে যায়, তবে অন্যটা তাকে আক্রমণ করে। আর অন্যটাকেও যদি এড়িয়ে যায়, তবে পরবর্তী অন্য একটি তাকে আক্রমণ করে।’’ (বুখারী)
* এর নক্সা নিম্নরূপঃ-
মৃত্যু
আপদ-বিপদ
6/583 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: « بَادِرُوْا بِالأَعْمَالِ سَبْعاً، هَلْ تَنْتَظِرُوْنَ إلاَّ فَقْراً مُنْسِياً، أَوْ غِنَى مُطغِياً، أَوْ مَرَضاً مُفسِداً، أو هَرَماً مُفَنِّداً، أَو مَوْتاً مُجْهِزِاً، أَوْ الدَّجَّالَ، فَشَرُّ غَائِبٍ يُنْتَظَرُ،أَوِ السَّاعَةَ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ ؟، » رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.
৫/৫৮৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনঃ সাতটি জিনিস প্রকাশ পাওয়ার পূর্বেই তোমরা ভাল কাজের দিকে অগ্রসর হওঃ (১) তোমরা কি এমন দারিদ্রতার জন্য অপেক্ষা করছো যা অমনোযোগী (অক্ষম) করে দেয়, (২) অথবা এ রকম প্রাচুর্যের যা ধর্মদ্রোহী বানিয়ে ফেলে, (৩) অথবা এমন রোগ-ব্যাধির যা (শারিরীক সামর্থ্যকে) ধ্বংস করে দেয়, (৪) অথবা এমন বৃদ্ধাবস্থার যা জ্ঞান-বুদ্ধিকে বিনষ্ট করে দেয়, (৫) অথবা এমন মৃত্যুর যা হঠাৎই উপস্থিত হয়, (৬) কিংবা দাজ্জালের, যা অপেক্ষমান অনুপস্থিত বিষয়ের মধ্যে নিকৃষ্টতর, (৭) অথবা কিয়ামাতের যা অত্যন্ত বিভীষিকাময় ও তিক্তকর। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
5/584 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ» يَعْنِي: المَوْتَ . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
৬/৫৮৪। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
7/585 وَعَن أُبَيِّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ قَامَ، فَقَالَ: «يَا أَيُّهَا النَّاسُ، اذْكُرُوا اللهَ، جَاءتِ الرَّاجِفَةُ، تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ، جَاءَ المَوْتُ بِمَا فِيهِ، جَاءَ المَوْتُ بِمَا فِيهِ » قُلْتُ: يَا رَسُول اللهِ، إنِّي أُكْثِرُ الصَّلاَةَ عَلَيْكَ، فَكَمْ أجْعَلُ لَكَ مِنْ صَلاَتِي ؟ فَقَالَ: «مَا شِئْتَ» قُلْتُ: الرُّبُع، قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ: فَالنِّصْف ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ » قُلْتُ: فالثُّلُثَيْنِ ؟ قَالَ: «مَا شِئْتَ، فَإنْ زِدْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ» قُلْتُ: أجعَلُ لَكَ صَلاَتِي كُلَّهَا ؟ قَالَ: «إذاً تُكْفَى هَمَّكَ، وَيُغْفَر لَكَ ذَنْبُكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
৭/৫৮৫। উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ পার হয়ে যেত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠে দাঁড়াতেন এবং বলতেন, ‘‘হে লোক সকল! আল্লাহকে স্মরণ কর। কম্পনকারী (প্রথম ফুৎকার) এবং তার সহগামী (দ্বিতীয় ফুৎকার) চলে এসেছে এবং মৃত্যুও তার ভয়াবহতা নিয়ে হাজির।’’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি (আমার দো‘আতে) আপনার উপর দরূদ বেশি পড়ি। অতএব আমি আপনার প্রতি দরূদ পড়ার জন্য (দো‘আর) কতটা সময় নির্দিষ্ট করব?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যতটা ইচ্ছা কর।’’ আমি বললাম, ‘এক চতুর্থাংশ?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যতটা চাও। যদি তুমি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম হবে।’’ আমি বললাম, ‘অর্ধেক (সময়)?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও; যদি বেশি কর, তাহলে তা ভাল হবে।’’ আমি বললাম, ‘দুই তৃতীয়াংশ?’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি যা চাও (তাই কর)। যদি বেশি কর, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।’’ আমি বললাম, ‘আমি আমার (দো‘আর) সম্পূর্ণ সময় দরূদের জন্য নির্দিষ্ট করব!’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তো (এ কাজ) তোমার দুশ্চিন্তা (দূর করার) জন্য যথেষ্ট হবে এবং তোমার পাপকে মোচন করা হবে।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
66- بَابُ اِسْتِحْبَابِ زِيَارَةِ الْقُبُوْرِ لِلرِّجَالِ وَمَا يَقُوْلُهُ الزَّائِرُ
পরিচ্ছেদ - ৬৬: পুরুষের জন্য কবর যিয়ারত করা মুস্তাহাব এবং তার দো‘আ
1/586 عَن بُرَيْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كُنْتُ نَهَيْتُكُمْ عَن زِيَارَةِ القُبُورِ فَزُورُوهَا ». رواه مسلم . وفي رواية: «فَمَنْ أرَادَ أنْ يَزُورَ القُبُورَ فَلْيَزُرْ ؛ فإنَّهَا تُذَكِّرُنَا الآخِرَةَ » .
১/৫৮৬। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি তোমাদেরকে (পূর্বে) কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা তা যিয়ারত কর।’’ (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘সুতরাং যে ব্যক্তি কবর যিয়ারত করতে চায়, সে যেন তা করে। কারণ তা আখেরাত স্মরণ করায়।’’
২/৫৮৭। আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়িতে তাঁর পালাতে রাতের শেষভাগে বাকী‘ (নামক মদীনার কবরস্থান) যেতেন এবং বলতেন, ‘আস্সালামু আলাইকুম দা-রা ক্বাওমিম মু’মিনীন অআতাকুম মা তূ‘আদূন, গাদাম মুআজ্জালূন। অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লাহিক্বুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকী‘ইল গারক্বাদ।’
অর্থাৎ হে মুসলিম কবরবাসীগণ! তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের নিকট তা চলে এসেছে যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হচ্ছিল, আগামী কাল (কিয়ামত) পর্যন্ত (বিস্তারিত পুরস্কার ও শাস্তি) বিলম্বিত করা হয়েছে। আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ! তুমি বাক্বী‘উল গারক্বাদবাসীদেরকে ক্ষমা কর। (মুসলিম)
3/588 وَعَن بُرَيدَةَ ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يُعَلِّمُهُمْ إِذَا خَرَجُوا إِلَى المَقَابِرِ أنْ يَقُولَ قَائِلُهُمْ:«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ أهلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنينَ وَالمُسلمينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَلاَحِقونَ، أسْألُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ العَافِيَةَ ». رواه مسلم
৩/৫৮৮। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন সাহাবীগণ কবরস্থান যেতেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা দিতেন যে, তোমরা এ দো‘আ পড়ো,
‘আসসালা-মু আলাইকুম আহলাদ্দিয়া-রি মিনাল মু’মিনীনা অলমুসলিমীন, অইন্না ইনশা-আল্লা-হু বিকুম লালা-হিক্বূন, আসআলুল্লা-হা লানা অলাকুমুল আ-ফিয়াহ।’
অর্থাৎ হে মু’মিন ও মুসলিম কবরবাসিগণ! যদি আল্লাহ চান তাহলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমি আল্লাহর কাছে আমাদের এবং তোমাদের জন্য নিরাপত্তা চাচ্ছি। (মুসলিম)
4/589 وَعَنْ اِبْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِقُبُوْرٍ بِالمَدِينَةِ فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بوَجْهِهِ فَقَالََ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ القُبُوْرِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا وَنَحْنُ بِالأَثَرِ» رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسن.
৪/৫৮৯। ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, মাদীনার কিছু সংখ্যক কবর অতিক্রম করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেনঃ ‘‘হে কবরের অধিবাসীরা! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ও তোমাদেরকে ক্ষমা করুন। তোমরা আমাদের অগ্রগামী। আমরা তোমাদের উত্তরসূরি।’’- (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
67- بَابُ كَرَاهِيَةِ تَمَنِّي الْمَوْتِ
بِسَبَبِ ضُرٍّ نَزَلَ بِهِ وَلَا بَأْسَ بِهِ لخَوْفِ الْفِتْنَةِ فِي الدِّيْنِ
পরিচ্ছেদ - ৬৭: কোন কষ্টের কারণে মৃত্যু-কামনা করা বৈধ নয়, দ্বীনের ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কায় বৈধ
1/590 عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « لَا يَتَمَنَّ أحَدُكُمُ المَوْتَ، إمَّا مُحْسِناً فَلَعَلَّهُ يَزْدَادُ، وَإمَّا مُسِيئاً فَلَعَلَّهُ يَسْتَعْتِبُ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري .
وَفي رِوَايَةٍ لِّمُسلِمٍ عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَتَمَنَّ أَحَدُكُمُ المَوْتَ، وَلاَ يَدْعُ بِهِ مِنْ قَبْلِ أنْ يَأتِيَهُ ؛ إنَّهُ إِذَا مَاتَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ، وَإنَّهُ لاَ يَزِيدُ المُؤْمِنَ عُمُرُهُ إِلاَّ خَيْراً».
১/৫৯০। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে পুণ্যবান হলে সম্ভবতঃ সে পুণ্য বৃদ্ধি করবে। আর পাপী হলে (পাপ থেকে) তাওবাহ করতে পারবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম, শব্দগুলি বুখারীর)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে এবং তা আসার পূর্বে কেউ যেন তার জন্য দো‘আ না করে। কারণ, সে মারা গেলে তার আমল বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ মু’মিনের আয়ু কেবল মঙ্গলই বৃদ্ধি করবে।’’
2/591 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ:«لاَ يَتَمَنَّيَنَّ أحَدُكُمُ المَوْتَ لِضُرٍّ أصَابَهُ، فَإنْ كَانَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً، فَلْيَقُلْ: اَللهم أحْيِني مَا كَانَتِ الحَيَاةُ خَيْراً لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الوَفَاةُ خَيراً لي». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৫৯১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন কোন বিপদের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। আর যদি কেউ এমন অবস্থাতে পতিত হয় যে, তাকে মৃত্যু কামনা করতেই হয়, তাহলে সে (মৃত্যু কামনা না করে দো‘আ করে) বলবে, ‘হে আল্লাহ! যতদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা আমার জন্য মঙ্গলজনক হয়, ততদিন আমাকে জীবিত রাখ। আর যদি আমার জন্য মৃত্যুই মঙ্গলজনক হয়, তাহলে আমাকে মৃত্যু দাও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/592 وَعَن قَيسِ بنِ أَبي حَازِمٍ، قَالَ: دَخَلْنَا عَلَى خَبَّابِ بنِ الأرَتِّ رضي الله عنه نَعُودُهُ وَقَدِ اكْتَوَى سَبْعَ كَيَّاتٍ، فَقَالَ: إنَّ أَصْحَابَنَا الَّذِينَ سَلَفُوا مَضَوْا، وَلَمْ تَنْقُصْهُمُ الدُّنْيَا، وَإنَّا أصَبْنَا مَا لاَ نَجِدُ لَهُ مَوْضِعاً إِلاَّ التُّرَابَ وَلَولاَ أنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَانَا أنْ نَدْعُوَ بالمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ . ثُمَّ أتَيْنَاهُ مَرَّةً أُخْرَى وَهُوَ يَبْنِي حَائِطاً لَهُ، فَقَالَ: إنَّ المُسْلِمَ لَيُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ يُنْفِقُهُ إِلاَّ فِي شَيْءٍ يَجْعَلُهُ في هَذَا التُّرَابِ . متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ رواية البخاري
৩/৫৯২। কাইস ইবনে আবী হাযেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা অসুস্থ খাব্বাব ইবন আরাত্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দেখা করতে গেলাম। সে সময় তিনি (তাঁর দেহে চিকিৎসার জন্য) সাতবার দেগেছিলেন। তিনি বললেন, ‘আমাদের সাথীরা যাঁরা (পূর্বেই) মারা গেছেন তাঁরা এমতাবস্থায় চলে গেছেন যে, দুনিয়া তাদের আমলের সওয়াবে কোন রকম কমতি করতে পারেনি। আর আমরা এমন (সম্পদ) লাভ করেছি, যা মাটি ছাড়া অন্য কোথাও রাখার জায়গা পাচ্ছি না। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মৃত্যু-কামনা করতে নিষেধ না করতেন, তাহলে (রোগ-যন্ত্রণার কারণে) আমি মৃত্যুর জন্য দো‘আ করতাম।’ (কাইস বলেন,) অতঃপর আমরা অন্য এক সময় তাঁর কাছে এলাম। তখন তিনি তাঁর (বাড়ির) দেওয়াল তৈরী করছিলেন। তিনি বললেন, ‘মুসলিম ব্যক্তিকে তার সকল প্রকার ব্যয়ের উপর সওয়াব দান করা হয়, তবে এ মাটিতে ব্যয়কৃত জিনিস ব্যতীত।’ (বুখারী)
68- بَابُ الْوَرَعِ وَتَرْكِ الشُّبُهَاتِ
পরিচ্ছেদ - ৬৮: হারাম বস্তুর ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন এবং সন্দিহান বস্তু পরিহার করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَحۡسَبُونَهُۥ هَيِّنٗا وَهُوَ عِندَ ٱللَّهِ عَظِيمٞ ﴾ [النور: ١٥]
অর্থাৎ “তোমরা একে তুচ্ছ গণ্য করেছিলে; যদিও আল্লাহর দৃষ্টিতে এ ছিল গুরুতর বিষয়।” (সূরা নূর ১৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ إِنَّ رَبَّكَ لَبِٱلۡمِرۡصَادِ ١٤ ﴾ [الفجر: ١٤]
অর্থাৎ “নিশ্চয় তোমার রব্ব সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।” (সূরা ফাজ্র ১৪)
1/593 وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ الحَلاَلَ بَيِّنٌ، وَإنَّ الحَرامَ بَيِّنٌ، وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبَهَاتٌ لاَ يَعْلَمُهُنَّ كَثيرٌ مِنَ النَّاسِ، فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ، اسْتَبْرَأَ لِدِينهِ وَعِرْضِهِ، وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ في الحَرَامِ، كَالرَّاعِي يَرْعَى حَوْلَ الحِمَى يُوشِكُ أنْ يَرْتَعَ فِيهِ، ألاَ وَإنَّ لكُلّ مَلِكٍ حِمَىً، ألاَ وَإنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ، ألاَ وَإنَّ فِي الجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلَحَت صَلَحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ، ألاَ وَهِيَ القَلْبُ » متفقٌ عَلَيْهِ
১/৫৯৩। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই হালাল বিবৃত ও স্পষ্ট এবং হারাম বিবৃত ও স্পষ্ট, আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দিহান বস্তু; যা অনেক লোকেই জানে না। অতএব যে ব্যক্তি এই সন্দিহান বস্তুসমূহ হতে দূরে থাকবে, সে তার দ্বীন ও ইজ্জতকে বাঁচিয়ে নেবে এবং যে ব্যক্তি সন্দিহানে পতিত হবে (সন্দিগ্ধ বস্তু ভক্ষণ করবে), সে হারামে পতিত হবে। (এর উদাহরণ সেই) রাখালের মত, যে নিষিদ্ধ চারণভূমির আশেপাশে পশু চরায়, তার পক্ষে নিষিদ্ধ সীমানায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শোন! প্রত্যেক বাদশাহরই সংরক্ষিত চারণভূমি থাকে। আর শোন! আল্লাহর সংরক্ষিত চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। শোন! দেহের মধ্যে একটি মাংসপিন্ড রয়েছে; যখন তা সুস্থ থাকে, তখন গোটা দেহটাই সুস্থ হয়ে থাকে। আর যখন তা খারাপ হয়ে যায়, তখন গোটা দেহটাই খারাপ হয়ে যায়। শোন! তা হল হৃৎপিন্ড (অন্তর)।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/594 وعن أنسٍ رضي الله عنه: أنَّ النبيَّ ﷺ وَجَدَ تَمْرَةً فِي الطَّرِيقِ، فَقَالَ: «لَوْلاَ أنِّي أخَافُ أنْ تَكُونَ مِنَ الصَّدَقَة لأَكَلْتُهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৫৯৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পথে একটি খেজুর পেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘যদি আমার এর সাদকাহ হওয়ার আশঙ্কা না হত, তাহলে আমি এটি খেয়ে ফেলতাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/595 وَعَنِ النَّوَّاسِ بنِ سَمْعَانَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «البِرُّ: حُسْنُ الخُلُقِ، وَالإِثْمُ: مَا حَاكَ فِي نَفْسِكَ، وَكَرِهْتَ أنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ ». رواه مسلم
৩/৫৯৫। নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘পুণ্যবত্তা হল সচ্চরিত্রতার নাম এবং পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক---এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’ (মুসলিম)
4/596 وَعَن وَابِصَةَ بنِ مَعبَدٍ رضي الله عنه، قَالَ: أتَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، فَقَالَ:« جئتَ تَسْألُ عَنِ البِرِّ ؟ » قُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «اسْتَفْتِ قَلْبَكَ، البرُّ: مَا اطْمَأنَّت إِلَيْهِ النَّفسُ، وَاطْمأنَّ إِلَيْهِ القَلْبُ، وَالإثْمُ: مَا حَاكَ في النَّفْسِ، وَتَرَدَّدَ فِي الصَّدْرِ، وَإنْ أفْتَاكَ النَّاسُ وَأفْتَوكَ » حديث حسن، رواه أحمد والدَّارمِيُّ في مُسْنَدَيْهِمَا
৪/৫৯৬। ওয়াবেসাহ ইবনে মা‘বাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তুমি পুণ্যের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে এসেছ?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খটকা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয় ; যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।’’ (আহমাদ, দারেমী)
5/597 وَعَن أَبي سِرْوَعَةَ عُقبَةَ بنِ الحارِثِ رضي الله عنه: أنَّهُ تَزَوَّجَ ابنَةً لأبي إهَابِ بنِ عَزِيزٍ، فَأتَتْهُ امْرَأةٌ، فَقَالَتْ: إنّي قَدْ أرضَعْتُ عُقْبَةَ وَالَّتِي قَدْ تَزَوَّجَ بِهَا . فَقَالَ لَهَا عُقْبَةُ: مَا أعْلَمُ أنَّك أَرضَعْتِنِي وَلاَ أخْبَرْتِني، فَرَكِبَ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ بِالمَدِينَةِ، فَسَأَلَهُ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «كَيْفَ ؟ وَقَد قِيلَ» فَفَارَقَهَا عُقْبَةُ وَنَكَحَتْ زَوْجاً غَيْرَهُ . رواه البخاري
৫/৫৯৭। আবূ সিরওয়াআহ উক্ববাহ ইবনে হারেস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি আবূ ইহাব ইবনে ‘আযীযের এক কন্যাকে বিবাহ করলেন। অতঃপর তার নিকট এক মহিলা এসে বলল, ‘আমি উক্ববাহকে এবং তার স্ত্রীকে দুধপান করিয়েছি।’ ‘উক্ববাহ তাকে বললেন, ‘তুমি যে আমাকে দুধ পান করিয়েছ তা তো আমি জানি না, আর তুমি আমাকে তার খবরও দাওনি।’ অতঃপর উক্ববাহ (সওয়ারীর উপর) সওয়ার হয়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট মদীনায় এলেন এবং এ ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সব বৃত্তান্ত শুনে) বললেন, ‘‘যখন এ কথা বলা হয়েছে, তখন তুমি কি করে বিবাহ বন্ধন অটুট রাখবে?’’ সুতরাং উক্ববাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে ত্যাগ করলেন এবং সে মহিলা অন্য স্বামী গ্রহণ করল। (বুখারী)
6/598 وَعَنِ الحَسَنِ بنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: حَفِظتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ: «دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৬/৫৯৮। আলীর পুত্র হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে (এ হাদীস) স্মরণ রেখেছি, ‘‘তা বর্জন কর, যা তোমাকে সন্দেহে ফেলে এবং তা গ্রহণ কর, যাতে তোমার সন্দেহ নেই।’’ (তিরমিযী, সহীহ)
7/599 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ لأبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه غُلاَمٌ يُخْرِجُ لَهُ الخَرَاجَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ يَأكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ، فَجَاءَ يَوْماً بِشَيءٍ، فَأكَلَ مِنْهُ أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ لَهُ الغُلامُ: تَدْرِي مَا هَذَا ؟ فَقَالَ أَبُو بكر: وَمَا هُوَ ؟ قَالَ: كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لإنْسَانٍ في الجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الكَهَانَةَ، إِلاَّ أنّي خَدَعْتُهُ، فَلَقِيَنِي، فَأعْطَانِي لِذَلِكَ، هَذَا الَّذِي أكَلْتَ مِنْهُ، فَأدْخَلَ أَبُو بَكْرٍ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِي بَطْنِهِ . رواه البخاري
৭/৫৯৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর একজন ক্রীতদাস ছিল, যে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে ধার্যকৃত কর আদায় করত। আর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সেই আদায়কৃত অর্থ ভক্ষণ করতেন। (অবশ্য প্রত্যহ সে অর্থ হালাল কি না, তা জিজ্ঞাসা করে নিতেন।) একদিনের ঘটনা, ঐ ক্রীতদাস কোন একটা জিনিস এনে তাঁর খিদমতে হাজির করল। আর তিনি (সেদিন ভুলে কিছু জিজ্ঞাসা না করে) তা থেকে কিছু খেয়ে ফেললেন। দাসটি বলল, ‘আপনি কি জানেন, এটা কী জিনিস (যা আপনি ভক্ষণ করলেন)?’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘তা কী?’ দাসটি বলল, ‘আমি জাহেলী যুগে একজন মানুষের ভাগ্য গণনা করেছিলাম। অথচ আমার ভাগ্য গণনা করার মত ভাল জ্ঞান ছিল না। আসলে আমি তাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম। সে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে (পারিশ্রমিকস্বরূপ) এই জিনিস দিলো, যা আপনি ভক্ষণ করলেন।’ এ কথা শুনে আবূ বাকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজের হাত স্বীয় মুখের ভিতরে প্রবেশ করালেন এবং পেটের মধ্যে যা কিছু ছিল বমি করে বের করে দিলেন! (বুখারী)
8/600 وَعَن نَافِعٍ: أَنَّ عُمَرَ بنَ الخَطّابِ رضي الله عنه كَانَ فَرَضَ لِلمُهَاجِرينَ الأَوَّلِينَ أرْبَعَةَ الآفٍ وَفَرَضَ لابْنِهِ ثَلاَثَة آلافٍ وَخَمْسَمئَةٍ، فَقيلَ لَهُ: هُوَ مِنَ المُهَاجِرينَ فَلِمَ نَقَصْتَهُ ؟ فَقَالَ: إنَّمَا هَاجَرَ بِهِ أبُوهُ . يَقُولُ: لَيْسَ هُوَ كَمَنْ هَاجَرَ بِنَفْسِهِ . رواه البخاري
৮/৬০০। নাফে’ থেকে বর্ণিত, উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সর্বপ্রথম হিজরতকারীদের জন্য চার হাজার করে ভাতা নির্দিষ্ট করলেন এবং তাঁর ছেলে (আব্দুল্লাহর) জন্য সাড়ে তিন হাজার নির্দিষ্ট করলেন। তাঁকে বলা হল যে, ‘তিনিও তো মুহাজিরদের একজন; অতএব আপনি তাঁর ভাতা কম করলেন কেন?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তার পিতা তাকে সাথে নিয়ে হিজরত করেছে।’ উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, ‘সে তার মত নয়, যে একাকী হিজরত করেছে।’ (বুখারী)
9/601 وَعَنْ عَطِيَّةَ بْنِ عُرْوَةَ السَّعْدِيِّ الصَّحَابِيِّ رضي الله عنه قَالَ . قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ« لَا يَبْلُغُ العَبْدُ أَنْ يَّكُوْنَ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ حَتّىٰ يَدَعَ مَالَا بَأْسَ بِهِ حَذْراً مِمَّا بِهِ بَأْسٌ ».رواهُ الترمذي وقال: حديثٌ حسن.
৯/৬০১। ‘আতিয়্যাহ্ ইবনু ‘উরওয়াহ্ আস-সা‘দী সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঐ পর্যন্ত বান্দাহ্ মুত্তাক্বীদের মর্যাদায় পৌঁছতে পারে না, সে যতক্ষণ পর্যন্ত নির্দোষ হয়ে বাঁচার জন্য কোনো কোনো নির্দোষ বিষয়াদিও (নিষ্প্রয়োজনীয় বিষয়াদি) পরিত্যাগ না করে। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
69- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْعُزْلَةِ عِنْدَ فَسَادِ النَّاسِ وَالزَّمَانِ أَوِ الْخَوْفِ مِنْ فِتْنَةٍ فِي الدِّيْنِ أَوْ وُقُوْعٍ فِيْ حَرَامٍ وَّشُبُهَاتٍ وَّنَحْوِهَا
পরিচ্ছেদ - ৬৯: যুগের মানুষ খারাপ হলে অথবা ধর্মীয় ব্যাপারে ফিতনার আশঙ্কা হলে অথবা হারাম ও সন্দিহান জিনিসে পতিত হওয়ার ভয় হলে অথবা অনুরূপ কোন কারণে নির্জনতা অবলম্বন করা উত্তম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَفِرُّوٓاْ إِلَى ٱللَّهِۖ إِنِّي لَكُم مِّنۡهُ نَذِيرٞ مُّبِينٞ ٥٠ ﴾ [الذاريات: ٥٠]
অর্থাৎ “সুতরাং তোমরা আল্লাহর দিকে পলায়ন কর; নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য স্পষ্ট সতর্ককারী।” (সূরা যারিয়াহ ৫০ আয়াত)
1/602 وَعَن سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول الله ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ الله يُحِبُّ الْعَبْدَ التَّقِيَّ الغَنِيّ الْخَفِيَّ ». رواه مسلم
১/৬০২। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে পরহেযগার (সংযমশীল), অমুখাপেক্ষী ও আত্মগোপনকারী।’’ (মুসলিম)
2/603 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: أيُّ النَّاسِ أفْضَلُ يَا رَسُولَ الله ؟ قَالَ: «مُؤْمِنٌ مُجَاهِدٌ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ في سَبيلِ اللهِ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «ثُمَّ رَجُلٌ مُعْتَزِلٌ فِي شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ رَبَّهُ » . وفي رواية: «يَتَّقِي اللهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬০৩। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন্ ব্যক্তি সর্বোত্তম?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ঐ মু’মিন যে আল্লাহর পথে তার জান ও মাল দিয়ে যুদ্ধ করে।’’ সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তারপর ঐ ব্যক্তি যে কোন গিরিপথে নির্জনে নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে।’’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে আল্লাহকে ভয় করে এবং লোকদেরকে নিজের মন্দ আচরণ থেকে নিরাপদে রাখে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/604 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يُوشِكُ أنْ يَكُونَ خَيْرَ مَالِ المُسْلِمِ غَنَمٌ يَتَّبِعُ بِهَا شَعَفَ الجِبَالِ، وَمَواقعَ الْقَطْر يَفِرُّ بِدينِهِ مِنَ الفِتَنِ ». رواه البخاري
৩/৬০৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সত্বর এমন এক সময় আসবে যে, ছাগল-ভেড়াই মুসলিমের সর্বোত্তম মাল হবে; যা নিয়ে সে ফিতনা থেকে তার দ্বীনকে বাঁচানোর জন্য পাহাড়-চূড়ায় এবং বৃষ্টিবহুল (অর্থাৎ তৃণবহুল) স্থানে পলায়ন করবে।’’ (বুখারী)
4/605 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ » فَقَالَ أصْحَابُهُ: وأنْتَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ ». رواه البخاري
৪/৬০৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি।’’ তাঁর সাহাবীগণ বললেন, ‘আর আপনিও?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ! আমিও কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’ (বুখারী)
৫/৬০৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সর্বোত্তম জীবন সেই ব্যক্তির, যে আল্লাহর পথে তার ঘোড়ার লাগাম ধরে আছে। যখনই সে যুদ্ধের ভয়ানক শব্দ শোনে, তখনই সেখানে তার পিঠে চড়ে দ্রুতগতিতে পৌঁছে যায়। দ্রুতগতিতে পৌঁছে সে হত্যা অথবা মৃত্যুর সম্ভাব্য জায়গাগুলো খোঁজ করে। অথবা সর্বোত্তম জীবন সেই ব্যক্তির, যে কতিপয় ছাগল-ভেড়া নিয়ে কোন পাহাড়-চূড়ায় কিংবা কোন উপত্যকার মাঝে বসবাস করে। সেখানে সে তার নিকট মৃত্যু আসা পর্যন্ত নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং নিজ প্রতিপালকের ইবাদত করে। লোকদের মধ্যে এ ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় রয়েছে।’’ (মুসলিম)
70- بَابُ فَضْلِ الْاِخْتِلَاطِ بِالنَّاسِ وَحُضُوْرِ جَمْعِهِمْ وَجَمَاعَاتِهِمْ وَمَشَاهِدِ الْخَيْرِ وَمَجَالِسِ الذِّكْرِ مَعَهُمْ وَعِيَادَةِ مَرِيْضِهِمْ وَحُضُوْرِ جَنَائِزِهِمْ وَمُوَاسَاةِ مُحْتَاجِهِمْ وَإِرْشَادِ جَاهِلِهِمْ وَغَيْرَ ذٰلِكَ مِنْ مَّصَالِحِهِمْ لِمَنْ قَدَرَ عَلَى الْأَمْرِ بِالْمَعْرُوْفِ وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُنْكَرِ وَقَمَعَ نَفْسَهُ عَنِ الْإِيْذَاءِ وَصَبَرَ عَلَى الْأَذٰى.
পরিচ্ছেদ - ৭০: মানুষের সাথে মিলামিশা, জুম‘আহ, জামা‘আত, ঈদ ও যিকিরের মজলিস (জালসায় ও দ্বীনী মজলিসে) লোকদের সাথে উপস্থিত হওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে কুশল জিজ্ঞাসা করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, অভাবীদের সাথে সমবেদনা প্রকাশ করা, অজ্ঞকে পথ প্রদর্শন করা এবং অনুরূপ অন্যান্য কল্যাণময় কাজের জন্য মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা তার জন্য মুস্তাহাব, যে ভাল কাজের নির্দেশ এবং মন্দ কাজ থেকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর অপরকে কষ্ট দেওয়া থেকে সে নিজেকে বিরত রাখে এবং অপরের পক্ষ থেকে কষ্ট পৌঁছলে ধৈর্য ধারণ করে।
(ইমাম নাওয়াবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,) জেনে রাখো যে, লোকদের সাথে মিলামিশার যে পদ্ধতি আমি বর্ণনা করেছি সেটাই স্বীকৃত; যা রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং বাকী নবীদের পদ্ধতি ছিল। অনুরূপ পদ্ধতি ছিল খুলাফায়ে রাশেদীন এবং তাঁদের পরে সাহাবা ও তাবেঈনদের এবং তাঁদের পরে মুসলিমদের উলামা ও সজ্জনদের। এই অভিমত অধিকাংশ তাবেঈন ও তাঁদের পরবর্তীদেরও। ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ এবং অধিকাংশ ফিক্হবিদও এই মত পোষণ করেছেন। (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ঈন) আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَتَعَاوَنُواْ عَلَى ٱلۡبِرِّ وَٱلتَّقۡوَىٰۖ﴾ [المائدة: ٢]
অর্থাৎ “কল্যাণকর ও সংযমশীলতার পথে একে অপরের সহযোগিতা কর।” (সূরা মায়েদা ২ আয়াত)
এ মর্মে আর অনেক বিদিত আয়াত রয়েছে।( )
71- بَابُ التَّوَاضُعِ وَخَفْضِ الْجَنَاحِ لِلْمُؤْمِنِيْنَ
পরিচ্ছেদ - ৭১: মু’মিনদের জন্য বিনয়ী ও বিনম্র হওয়ার গুরুত্ব
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “তুমি তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি সদয় হও।” (সূরা শু‘আরা ২১৫ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَن يَرۡتَدَّ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَسَوۡفَ يَأۡتِي ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ يُحِبُّهُمۡ وَيُحِبُّونَهُۥٓ أَذِلَّةٍ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى ٱلۡكَٰفِرِينَ﴾ [المائدة: ٥٤]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্যে কেউ দ্বীন থেকে ফিরে গেলে আল্লাহ এমন এক সম্প্রদায় আনয়ন করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন ও যারা তাঁকে ভালবাসবে, তারা হবে মুমিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর।” (সূরা মাইদাহ ৫৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنَّا خَلَقۡنَٰكُم مِّن ذَكَرٖ وَأُنثَىٰ وَجَعَلۡنَٰكُمۡ شُعُوبٗا وَقَبَآئِلَ لِتَعَارَفُوٓاْۚ إِنَّ أَكۡرَمَكُمۡ عِندَ ٱللَّهِ أَتۡقَىٰكُمۡۚ﴾ [الحجرات: ١٣]
অর্থাৎ “হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ ও এক নারী হতে, পরে তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক আল্লাহ-ভীরু।” (সূরা হুজরাত ১৩ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَلَا تُزَكُّوٓاْ أَنفُسَكُمۡۖ هُوَ أَعۡلَمُ بِمَنِ ٱتَّقَىٰٓ﴾ [النجم: ٣٢]
অর্থাৎ “তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তিনিই সম্যক জানেন আল্লাহভীরু কে।” (সূরা নাজ্ম ৩২আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَنَادَىٰٓ أَصۡحَٰبُ ٱلۡأَعۡرَافِ رِجَالٗا يَعۡرِفُونَهُم بِسِيمَىٰهُمۡ قَالُواْ مَآ أَغۡنَىٰ عَنكُمۡ جَمۡعُكُمۡ وَمَا كُنتُمۡ تَسۡتَكۡبِرُونَ ٤٨ أَهَٰٓؤُلَآءِ ٱلَّذِينَ أَقۡسَمۡتُمۡ لَا يَنَالُهُمُ ٱللَّهُ بِرَحۡمَةٍۚ ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡكُمۡ وَلَآ أَنتُمۡ تَحۡزَنُونَ ٤٩ ﴾ [الاعراف: ٤٨، ٤٩]
অর্থাৎ “আ‘রাফবাসিগণ কিছু লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পেরে তাদেরকে আহবান করে বলবে, তোমাদের দল ও তোমাদের অহংকার কোন কাজে আসল না। দেখ এদেরই সম্বন্ধে কি তোমরা শপথ করে বলতে যে, আল্লাহ এদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন না। এদেরকেই বলা হবে, তোমরা বেহেশ্তে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আ’রাফ ৪৮-৪৯ আয়াত)
1/607 وَعَن عِيَاضِ بنِ حِمَارٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ الله أوْحَى إِلَيَّ أنْ تَوَاضَعُوا حَتَّى لاَ يَفْخَرَ أحَدٌ عَلَى أحَدٍ، وَلاَ يَبْغِي أحَدٌ عَلَى أحَدٍ ». رواه مسلم
১/৬০৭। ‘ইয়াদ ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহী পাঠালেন যে, তোমরা পরস্পরে নম্র ব্যবহার অবলম্বন কর। যাতে কেউ যেন কারো প্রতি গর্ব না করে এবং কেউ যেন কারো প্রতি যুলুম না করে।’’ (মুসলিম)
2/608 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: «مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زادَ اللهُ عَبْداً بعَفْوٍ إِلاَّ عِزّاً، وَمَا تَوَاضَعَ أحَدٌ للهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللهُ ». رواه مسلم
২/৬০৮। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সাদকা করলে মাল কমে যায় না এবং ক্ষমা করলে আল্লাহ বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। আর যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে (মর্যাদায়) উচ্চ করেন।’’ (মুসলিম)
৩/৬০৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কতিপয় শিশুর পাশ দিয়ে গেলেন অতঃপর তিনি তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমই করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/610 وَعَنهُ، قَالَ: إِنْ كَانَتِ الأَمَةُ مِنْ إمَاءِ المَدينَةِ لَتَأْخُذُ بِيَدِ النَّبِيِّ ﷺ، فَتَنْطَلِقُ بِهِ حَيْثُ شَاءتْ . رواه البخاري
৪/ ৬১০। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মদীনার ক্রীতদাসীদের মধ্যে এক ক্রীতদাসী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাত ধরে নিত, তারপর সে (নিজের প্রয়োজনে) তার ইচ্ছামত তাঁকে নিয়ে যেত।’ (বুখারী)
5/611 وَعَنِ الأَسْوَدِ بنِ يَزيدَ، قَالَ: سُئِلَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا مَا كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَصْنَعُ فِي بَيْتِهِ ؟ قَالَت: كَانَ يَكُونُ في مِهْنَةِ أهْلِهِ ـ يَعنِي: خِدمَة أَهلِه ـ فَإِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، خَرَجَ إِلَى الصَّلاَةِ . رواه البخاري
৫/৬১১। আসওয়াদ ইবনে ইয়াযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে কী কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘গৃহস্থালি কাজ করতেন; অর্থাৎ স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতেন। অতঃপর নামাযের (সময়) হলে তিনি নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন।’ (বুখারী)
* (এই গৃহস্থালি কাজের ব্যাখ্যায় মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, ‘তিনি নিজের জুতা পরিষ্কার করতেন, কাপড় সিলাই করতেন, দুধ দোহাতেন এবং নিজের খিদমত নিজে করতেন।’ তাছাড়া এ কথা বিদিত যে, তাঁর একাধিক দাস-দাসীও ছিল।)
6/612 وَعَن أَبي رِفَاعَةَ تَمِيمِ بنِ أُسَيْدٍ رضي الله عنه، قَالَ: انْتَهَيْتُ إِلَى رَسُولِ الله ﷺ وَهُوَ يَخطُبُ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، رَجُلٌ غَرِيبٌ جَاءَ يَسْألُ عَن دِينهِ لاَ يَدْرِي مَا دِينُهُ ؟ فَأقْبَلَ عَليَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ، وتَرَكَ خُطْبَتَهُ حَتَّى انْتَهَى إلَيَّ، فَأُتِيَ بِكُرْسيٍّ، فَقَعَدَ عَلَيْهِ، وَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ، ثُمَّ أَتَى خُطْبَتَهُ فَأتَمَّ آخِرَهَا . رواه مسلم
৬/৬১২। আবূ রিফাআহ তামীম ইবনে উসাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম তখন তিনি খুতবা দিচ্ছিলেন। অতঃপর আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসুল! আমি একজন বিদেশী মানুষ নিজের দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি, আমি জানি না আমার দ্বীন কী?’ (এ কথা শুনে) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার দিকে ফিরলেন এবং খুতবা দেওয়া বর্জন করলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনি আমার নিকটে এলেন। অতঃপর একটি চেয়ার আনা হল। তিনি তার উপর বসে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যা শিক্ষা দিয়েছেন তা থেকে আমাকে শিখাতে লাগলেন। অতঃপর তিনি খুতবায় ফিরে এসে তার শেষাংশটুকু পুরা করলেন। (মুসলিম)
7/613 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا أكَلَ طَعَاماً، لَعِقَ أصَابِعَهُ الثَّلاَثَ . قَالَ: وَقَالَ:«إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِط عَنهَا الأَذَى، وَلِيَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْها لِلشَّيْطان ». وأَمَرَ أن تُسلَتَ القَصْعَةُ، قَالَ: «فإنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ في أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَة ». رواه مسلم
৭/৬১৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আহার করতেন তখন স্বীয় তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, ‘‘কারো খাবারের লুকমা নিচে পড়ে গেলে সে যেন তা তুলে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।’’ আর তিনি আমাদেরকে খাদ্যপাত্র (বা বাসন) ভালভাবে চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’ (মুসলিম)
8/614 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «مَا بَعَثَ اللهُ نَبِيّاً إِلاَّ رَعَى الْغَنَمَ ». فَقَالَ أصْحَابُهُ: وأنْتَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، كُنْتُ أرْعَاهَا عَلَى قَرَارِيطَ لأَهْلِ مَكَّةَ ». رواه البخاري
৮/৬১৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরী চরাননি। তাঁর সাহাবীগণ বললেন, আর আপনিও? তিনি বললেন, হ্যাঁ! আমি কয়েক ক্বীরাত্বের বিনিময়ে মক্কাবাসীদের বকরী চরাতাম।’’ (বুখারী)
9/615 وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «لَوْ دُعِيتُ إِلَى كُراعٍ أَوْ ذِرَاعٍ لأَجَبْتُ، وَلَو أُهْدِيَ إِلَيَّ ذِرَاعٌ أَوْ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ ». رواه البخاري
৯/৬১৫। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি আমাকে ছাগলাদির পা অথবা বাহু খাওয়ানোর জন্য দাওয়াত দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা কবুল করব। আর যদি আমাকে পা অথবা বাহু উপঢৌকন দেওয়া হয়, তাহলে আমি নিশ্চয় তা সাদরে গ্রহণ করব।’’ (বুখারী)
10/616 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَتْ نَاقَةُ رَسُولِ اللهِ ﷺ العَضْبَاءُ لاَ تُسْبَقُ، أَوْ لاَ تَكَادُ تُسْبَقُ، فَجَاءَ أعْرَابيٌّ عَلَى قَعُودٍ لَهُ، فَسَبَقَهَا، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ حَتَّى عَرَفَهُ، فَقَالَ: «حَقٌّ عَلَى اللهِ أنْ لاَ يَرْتَفِعَ شَيْءٌ مِنَ الدُّنْيَا إِلاَّ وَضَعَهُ ». رواه البخاري
১০/৬১৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আযববা নামক উটনীটি প্রতিযোগিতায় কোনদিন হারত না অথবা তাকে অতিক্রম করে কেউ যেতে পারত না। একবার এক বেদুঈন তার একটি সওয়ারী উঁটে সওয়ার হয়ে আসলে সেটি তার আগে চলে গেল। মুসলিমদের কাছে তা কষ্টদায়ক মনে হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা জানতে পারলে বললেন, ‘‘আল্লাহর বিধান হল, দুনিয়ার কোনো জিনিস উন্নত হলে, তিনি তাকে অবনত করেন।’’ (বুখারী)
72- بَابُ تَحْرِيْمِ الْكِبْرِ وَالْإِعْجَابِ
পরিচ্ছেদ - ৭২: অহংকার প্রদর্শন ও গর্ববোধ করা অবৈধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوّٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فَسَادٗاۚ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِينَ٨٣﴾ [القصص: ٨٣]
অর্থাৎ “এ আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর মুত্তাকীদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম।” (সূরা ক্বাসাস ৮৩ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ ﴾ [الاسراء: ٣٧]
অর্থাৎ “ভূ-পৃষ্ঠে দম্ভভরে বিচরণ করো না, তুমি তো কখনোই পদভারে ভূ-পৃষ্ঠ বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনোই পর্বত-প্রমাণ হতে পারবে না।” (সূরা ইসরা ৩৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا تُصَعِّرۡ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمۡشِ فِي ٱلۡأَرۡضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخۡتَالٖ فَخُورٖ ١٨ ﴾ [لقمان: ١٨]
অর্থাৎ “মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না; কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।” (সূরা লুকমান ১৮ আয়াত)
‘গাল ফুলায়ো না’ অর্থাৎ অহংকারের সাথে চেহারা বিকৃত করো না।
মহান আল্লাহ কারূন সম্বন্ধে বলেন,
﴿ ۞إِنَّ قَٰرُونَ كَانَ مِن قَوۡمِ مُوسَىٰ فَبَغَىٰ عَلَيۡهِمۡۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡكُنُوزِ مَآ إِنَّ مَفَاتِحَهُۥ لَتَنُوٓأُ بِٱلۡعُصۡبَةِ أُوْلِي ٱلۡقُوَّةِ إِذۡ قَالَ لَهُۥ قَوۡمُهُۥ لَا تَفۡرَحۡۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡفَرِحِينَ ٧٦ وَٱبۡتَغِ فِيمَآ ءَاتَىٰكَ ٱللَّهُ ٱلدَّارَ ٱلۡأٓخِرَةَۖ وَلَا تَنسَ نَصِيبَكَ مِنَ ٱلدُّنۡيَاۖ وَأَحۡسِن كَمَآ أَحۡسَنَ ٱللَّهُ إِلَيۡكَۖ وَلَا تَبۡغِ ٱلۡفَسَادَ فِي ٱلۡأَرۡضِۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٧٧ قَالَ إِنَّمَآ أُوتِيتُهُۥ عَلَىٰ عِلۡمٍ عِندِيٓۚ أَوَ لَمۡ يَعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ قَدۡ أَهۡلَكَ مِن قَبۡلِهِۦ مِنَ ٱلۡقُرُونِ مَنۡ هُوَ أَشَدُّ مِنۡهُ قُوَّةٗ وَأَكۡثَرُ جَمۡعٗاۚ وَلَا يُسَۡٔلُ عَن ذُنُوبِهِمُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ ٧٨ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ فِي زِينَتِهِۦۖ قَالَ ٱلَّذِينَ يُرِيدُونَ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا يَٰلَيۡتَ لَنَا مِثۡلَ مَآ ُوتِيَ قَٰرُونُ إِنَّهُۥ لَذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٧٩ وَقَالَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ وَيۡلَكُمۡ ثَوَابُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لِّمَنۡ ءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗاۚ وَلَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلصَّٰبِرُونَ ٨٠ فَخَسَفۡنَا بِهِۦ وَبِدَارِهِ ٱلۡأَرۡضَ فَمَا كَانَ لَهُۥ مِن فِئَةٖ يَنصُرُونَهُۥ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَمَا كَانَ مِنَ ٱلۡمُنتَصِرِينَ ٨١ ﴾ [القصص: ٧٦، ٨١]
অর্থাৎ “কারূন ছিল মূসার সম্প্রদায়ভুক্ত, কিন্তু সে তাদের প্রতি যুলুম করেছিল। আমি তাকে ধনভান্ডার দান করেছিলাম যার চাবিগুলি বহন করা একদল বলবান লোকের পক্ষেও কষ্টসাধ্য ছিল। স্মরণ কর, তার সম্প্রদায় তাকে বলেছিল, দম্ভ করো না, আল্লাহ দাম্ভিকদেরকে পছন্দ করেন না। আল্লাহ যা তোমাকে দিয়েছেন তার মাধ্যমে পরলোকের কল্যাণ অনুসন্ধান কর। আর তুমি তোমার ইহলোকের অংশ ভুলে যেয়ো না। তুমি (পরের প্রতি) অনুগ্রহ কর, যেমন আল্লাহ তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেয়ো না। আল্লাহ অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীকে ভালবাসেন না। সে বলল, ‘এ সম্পদ আমি আমার জ্ঞানবলে প্রাপ্ত হয়েছি।’ সে কি জানত না আল্লাহ তার পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেছেন যারা তার থেকেও শক্তিতে ছিল প্রবল, সম্পদে ছিল প্রাচুর্যশালী? আর অপরাধীদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাও করা হবে না। কারূন তার সম্প্রদায়ের সম্মুখে জাঁকজমক সহকারে বাহির হল। যারা পার্থিব জীবন কামনা করত তারা বলল, আহা! কারূনকে যা দেওয়া হয়েছে সেরূপ যদি আমাদেরও থাকত; প্রকৃতই সে মহা ভাগ্যবান। আর যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছিল তারা বলল, ধিক্ তোমাদের! যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে তাদের জন্য আল্লাহর পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ। আর ধৈর্যশীল ব্যতীত তা অন্য কেউ পায় না। অতঃপর আমি কারূনকে ও তার প্রাসাদকে মাটিতে ধসিয়ে দিলাম। তার স্বপক্ষে এমন কোন দল ছিল না যে আল্লাহর শাস্তির বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করতে পারত এবং সে নিজেও আত্মরক্ষায় সক্ষম ছিল না।” (সূরা ক্বাস্বাস ৭৬-৮১ আয়াত)
1/617 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَدْخُلُ الجَنَّةَ مَنْ كَانَ في قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّة مِنْ كِبْرٍ ! » فَقَالَ رَجُلٌ: إنَّ الرَّجُلَ يُحِبُّ أنْ يَكُونَ ثَوْبُهُ حَسَناً، ونَعْلُهُ حَسَنَةً ؟ قَالَ:«إنَّ اللهَ جَمِيلٌ يُحِبُّ الجَمَالَ، الكِبْرُ: بَطَرُ الحَقِّ وَغَمْطُ النَّاسِ » رواه مسلم
১/৬১৭। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহঙ্কার থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ একটি লোক বলল, ‘মানুষ তো ভালবাসে যে, তার পোশাক সুন্দর হোক ও তার জুতো সুন্দর হোক, (তাহলে)?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ সুন্দর, তিনি সৌন্দর্যকে ভালবাসেন। (সুন্দর পোশাক ও সুন্দর জুতো ব্যবহার অহংকার নয়, বরং) অহংকার হল, সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে তুচ্ছজ্ঞান করা।’’ (মুসলিম)
২/৬১৮। সালামাহ ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তার বাম হাত দ্বারা খেল। তিনি বললেন, ‘‘তোমার ডান হাত দ্বারা খাও।’’ সে বলল, ‘আমি অপারগ।’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি (যেন ডান হাতে খেতে) না পারো।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা মানতে তাকে অহংকারই বাধা দিয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, ‘(তারপর) থেকে সে তার ডান হাত মুখ পর্যন্ত উঠাতে পারেনি।’ (মুসলিম)
3/619 وَعَن حَارِثَةَ بنِ وهْبٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ:«أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأهْلِ النَّارِ ؟ كُلُّ عُتُلٍّ جَوّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ
৩/৬১৯। হারেসাহ ইবনে অহাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘আমি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না কি? (তারা হল) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় দাম্ভিক ব্যক্তি।’’ (বুখারী, মুসলিম)
৪/৬২০। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘জান্নাত এবং জাহান্নাম পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া করল। জাহান্নাম বলল, ‘আমার মধ্যে বড় বড় উদ্ধত এবং অহংকারীরা বসবাস করবে।’ আর জান্নাত বলল, ‘আমার মধ্যে দুর্বল এবং মিসকীনরা বসবাস করবে।’ অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের মধ্যে মীমাংসা করলেন যে, ‘হে জান্নাত! তুমি আমার অনুগ্রহ, আমি তোমার দ্বারা যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। এবং হে জাহান্নাম! তুমি আমার শাস্তি, আমি তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা তাকে শাস্তি দেব। আর তোমাদের দুটোকেই পরিপূর্ণ করা আমার দায়িত্ব।’’ (মুসলিম)
5/621 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «لاَ يَنْظُرُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَرَّ إزَارَهُ بَطَراً ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৬২১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তির দিকে (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না, যে অহংকারের সাথে তার লুঙ্গি (প্যাণ্ট্, পায়জামা মাটিতে) ছেঁচড়াবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/622 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَة، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلاَ يَنْظُرُ إلَيْهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ ألِيمٌ: شَيْخٌ زَانٍ، وَمَلِكٌ كَذَّابٌ، وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ ». رواه مسلم
৬/৬২২। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন তিন প্রকার লোকের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের দিকে (অনুগ্রহের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, (১) ব্যভিচারী বৃদ্ধ, (২) মিথ্যাবাদী বাদশাহ এবং (৩) অহংকারী গরীব।’’ (মুসলিম)
7/623 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «قَالَ الله - عَزَّ وَجَلَّ -: العِزُّ إِزَارِي، وَالكِبرِيَاءُ رِدَائِي، فَمَنْ يُنَازِعُنِي فِي وَاحِدٍ مِنهُمَا فَقَد عَذَّبْتُهُ ». رواه مسلم
৭/৬২৩। সাবেক রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘সম্মান আমার লুঙ্গি এবং গর্ব আমার চাদর। (অর্থাৎ খাস আমার গুণ।) সুতরাং যে ব্যক্তি আমার কাছ থেকে এর মধ্য থেকে যে কোন একটি টেনে নিতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’ (মুসলিম)
8/624 وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمشِي فِي حُلَّةٍ تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ، مُرَجِّلٌ رَأسَهُ، يَخْتَالُ فِي مَشْيَتهِ، إِذْ خَسَفَ اللهُ بِهِ، فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ في الأَرضِ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৮/৬২৪। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একদা (পূর্ববর্তী উম্মতের) এক ব্যক্তি একজোড়া পোশাক পরে, গর্বভরে, মাথা আঁচড়ে অহংকারের সাথে চলা-ফেরা করছিল। ইত্যবসরে আল্লাহ তার (পায়ের নীচের মাটিকে) ধসিয়ে দিলেন। সুতরাং সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মাটির গভীরে নেমে যেতেই থাকবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
9/625 وَعَنْ سَلَمَةَ بْنِ الْأَكْوَعِ رضي الله عنهقَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: «لَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَذْهَبُ بِنفْسِهِ حَتّىٰ يُكْتَبَ فِي الجَبَّارِيْنَ، فَيُصِيْبُهُ مَا أَصَابَهُمْ » رواهُ الترمذي وقال: حديث حسن .
৯/৬২৫ সালামাহ্ ইবনুল আক্ওয়া’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অহংকারবশত নিজকে বড় মনে করে লোকজনকে উপেক্ষা করে চলতে থাকে। পরিশেষে অহংকারী ও উদ্ধতদের মধ্যে তার নাম লিখা হয়, তারপর সে অহংকারী ও উদ্ধত লোকদের বিপদে পতিত হয়। (তিরমিযি)। হাদীসটি যঈফ। সিলসিলাহ যয়ীফাহ ১৯১৪নং)
73- بَابُ حُسْنِ الْخُلُقِ
পরিচ্ছেদ - ৭৩: সচ্চরিত্রতার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٖ ٤ ﴾ [القلم: ٤]
অর্থাৎ “তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।” (সূরা ক্বালাম ৪ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ فِي ٱلسَّرَّآءِ وَٱلضَّرَّآءِ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “সেই দ্বীনদারদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে, ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
1/626 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أحْسَنَ النَّاسِ خُلُقاً . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬২৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব মানুষের চাইতে বেশি সুন্দর চরিত্রের ছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/627 وَعَنهُ، قَالَ: مَا مَسِسْتُ دِيبَاجاً وَلاَ حَرِيراً ألْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلاَ شَمَمْتُ رَائِحَةً قَطُّ أطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلَقَدْ خَدَمتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَشْرَ سِنِينَ، فَمَا قَالَ لِي قَطُّ: أُفٍّ، وَلاَ قَالَ لِشَيءٍ فَعَلْتُهُ: لِمَ فَعَلْتَه ؟ وَلاَ لشَيءٍ لَمْ أفعَلهُ: ألاَ فَعَلْتَ كَذَا ؟ متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬২৭। উক্ত রাবী হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর করতল অপেক্ষা অধিকতর কোমল কোনো পুরু বা পাতলা রেশম আমি স্পর্শ করিনি। আর তাঁর শরীরের সুগন্ধ অপেক্ষা অধিকতর সুগন্ধ কোন বস্তু আমি কখনো শুঁকিনি। আর আমি দশ বছর পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। তিনি কখনোও আমার জন্য ‘উঃ’ শব্দ বলেননি। কোন কাজ করে বসলে তিনি এ কথা জিজ্ঞেস করেননি যে, ‘তুমি এ কাজ কেন করলে?’ এবং কোন কাজ না করলে তিনি বলেননি যে, ‘তা কেন করলে না?’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/628 وَعَنِ الصَّعبِ بنِ جَثَّامَةَ رضي الله عنه، قَالَ: أَهدَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ حِمَاراً وَحْشِيّاً، فَرَدَّهُ عَلَيَّ، فَلَمَّا رَأَى مَا فِي وَجهِي، قَالَ: « إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلاَّ ِلأَنَّا حُرُمٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৬২৮। সা‘ব ইবনে জাসসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (শিকার করা) এক জংলী গাধা উপঢৌকন দিলাম। কিন্তু তিনি তা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি আমার চেহারায় (বিষণ্ণতার চিহ্ন) দেখে বললেন, ‘‘আমরা ইহরামের অবস্থায় আছি, তাই আমরা এটি তোমাকে ফিরিয়ে দিলাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম) (যেহেতু ইহরাম অবস্থায় শিকার করা ও তার গোশ্ত খাওয়া নিষিদ্ধ।)
4/629 وَعَنِ النَّوَاسِ بنِ سَمعَانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَن البِرِّ وَالإثمِ، فَقَالَ: « البِرُّ: حُسنُ الخُلُقِ، والإثمُ: مَا حَاكَ فِي صَدرِكَ، وكَرِهْتَ أن يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ ». رواه مسلم
৪/৬২৯। নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পুণ্য ও পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেন, ‘‘পুণ্য হল সচ্চরিত্রতার নাম। আর পাপ হল তাই, যা তোমার অন্তরে সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং তা লোকে জেনে ফেলুক এ কথা তুমি অপছন্দ কর।’’ (মুসলিম)
5/630 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: لَمْ يَكُن رَسُولُ اللهِ ﷺ فَاحِشاً وَلاَ مُتَفَحِّشاً، وَكَانَ يَقُولُ: « إنَّ مِنْ خِيَارِكُمْ أحْسَنَكُمْ أخْلاَقاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৬৩০। আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (প্রকৃতিগতভাবে কথা ও কাজে) অশ্লীল ছিলেন না এবং (ইচ্ছাকৃতভাবেও) অশ্লীল ছিলেন না। আর তিনি বলতেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই উত্তম, যে তোমাদের মধ্যে সুন্দরতম চরিত্রের অধিকারী।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/631 وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: «مَا مِنْ شَيْءٍ أثْقَلُ فِي مِيزَانِ العَبدِ المُؤْمِنِ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ حُسْنِ الخُلُقِ، وَإنَّ الله يُبْغِضُ الفَاحِشَ البَذِيَّ». رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
৬/৬৩১। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন (নেকী) ওজন করার দাঁড়ি-পাল্লায় সচ্চরিত্রতার চেয়ে কোনো বস্তুই অধিক ভারী হবে না। আর আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও চোয়াড়কে অপছন্দ করেন।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
7/632 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنْ أكثرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ ؟ قَالَ:«تَقْوَى اللهِ وَحُسنُ الخُلُقِ »، وَسُئِلَ عَنْ أكْثَرِ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ، فَقَالَ: « الفَمُ وَالفَرْجُ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৭/৬৩২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জান্নাতে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহভীতি ও সচ্চরিত্র।’’ আর তাঁকে (এটাও) জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন্ আমল মানুষকে বেশি জাহান্নামে নিয়ে যাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘মুখ ও যৌনাঙ্গ (অর্থাৎ উভয় দ্বারা সংঘটিত পাপ)।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
8/633 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «أكْمَلُ المُؤمِنِينَ إِيمَاناً أحسَنُهُمْ خُلُقاً، وَخِيَارُكُمْ خِيَارُكُمْ لِنِسَائِهِمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৮/৬৩৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মু’মিনদের মধ্যে সে ব্যক্তি পূর্ণ মু’মিন, যে তাদের মধ্যে চরিত্রের দিক দিয়ে সুন্দরতম। আর তোমাদের উত্তম ব্যক্তি তারা, যারা তাদের স্ত্রীদের নিকট উত্তম।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ সূত্রে)
9/634 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «إنَّ المُؤْمِنَ لَيُدْرِكُ بِحُسْنِ خُلُقِه دَرَجَةَ الصَّائِمِ القَائِمِ». رواه أَبُو داود
৯/৬৩৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘অবশ্যই মু’মিন তার সদাচারিতার কারণে দিনে (নফল) রোযাদার এবং রাতে (নফল) ইবাদতকারীর মর্যাদা পেয়ে থাকে।’’ (আবু দাউদ)
9/635 وَعَن أَبِي أُمَامَةَ البَاهِليِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أنَا زَعِيمٌ بِبَيتٍ في رَبَضِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ المِرَاءَ وَإنْ كَانَ مُحِقّاً، وَبِبَيْتٍ في وَسَطِ الجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الكَذِبَ وَإنْ كَانَ مَازِحاً، وَبِبَيْتٍ في أعلَى الجَنَّةِ لِمَنْ حَسُنَ خُلُقُهُ » . حديث صحيح، رواه أَبُو داود بإسناد صحيح .
১০/৬৩৫। আবূ উমামাহ বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতের শেষ সীমায় একটি ঘর দেওয়ার জন্য জামিন হচ্ছি, যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া সত্ত্বেও কলহ-বিবাদ বর্জন করে। সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের মধ্যস্থলে একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যে উপহাসছলেও মিথ্যা বলা বর্জন করে। আর সেই ব্যক্তির জন্য আমি জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় একটি ঘরের জামিন হচ্ছি, যার চরিত্র সুন্দর।’’ (আবূ দাউদ)
10/636 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ الله ﷺ، قَالَ: « إنَّ مِنْ أحَبِّكُمْ إليَّ، وَأقْرَبِكُمْ مِنِّي مَجْلِساً يَوْمَ القِيَامَةِ، أحَاسِنَكُم أخْلاَقاً، وَإنَّ أبْغَضَكُمْ إلَيَّ وَأبْعَدَكُمْ مِنِّي يَوْمَ القِيَامَةِ، الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ وَالمُتَفَيْهقُونَ » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ عَلِمْنَا« الثَّرْثَارُونَ وَالمُتَشَدِّقُونَ »، فمَا المُتَفَيْهقُونَ ؟ قَالَ: « المُتَكَبِّرُونَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১১/৬৩৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে আমার প্রিয়তম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকটতম ব্যক্তিদের কিছু সেই লোক হবে যারা তোমাদের মধ্যে চরিত্রে শ্রেষ্ঠতম। আর তোমাদের মধ্যে আমার নিকট ঘৃণ্যতম এবং কিয়ামতের দিন অবস্থানে আমার নিকট থেকে দূরতম হবে তারা; যারা ‘সারসার’ (অনর্থক অত্যধিক আবোল-তাবোল বলে যারা) ও ‘মুতাশাদ্দিক’ (বা আলস্যভরে টেনে টেনে কথা বলে যারা) এবং যারা ‘মুতাফাইহিক’ লোক; সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘সারসার’ (অনর্থক কথাবার্তা যারা বলে) এবং মুতাশাদ্দিক (আলস্যভরে বা কায়দা করে টেনে-টেনে কথা বলে) তাদেরকে তো চিনলাম; কিন্তু ‘মুতাফাইহিক’ কারা? রাসূল বললেন, অহংকারীরা।’’ (তিরমিযী, হাসান)
11/637 وَرَوَى التِّرمِذِي عَن عَبدِ اللهِ بنِ المُبَارَكِ رَحِمَهُ اللهُ فِي تَفسِيرِ حُسْنِ الخُلُقِ، قَالَ: «هُوَ طَلاَقَةُ الوَجه، وَبَذْلُ المَعرُوفِ، وَكَفُّ الأذَى ».
ইমাম তিরমিযী আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক (রাহিমাহুল্লাহ) হতে সচ্চরিত্রতার ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, ‘তা হল, সর্বদা হাসিমুখ থাকা, মানুষের উপকার করা এবং কাউকে কষ্ট না দেওয়া।’
74- بَابُ الْحِلْمِ وَالْأَنَاةَِ وَالْرِّفْقِ
পরিচ্ছেদ - ৭৪: সহনশীলতা, ধীর-স্থিরতা ও কোমলতার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য বেহেশত প্রস্তুত রাখা হয়েছে যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَا تَسۡتَوِي ٱلۡحَسَنَةُ وَلَا ٱلسَّيِّئَةُۚ ٱدۡفَعۡ بِٱلَّتِي هِيَ أَحۡسَنُ فَإِذَا ٱلَّذِي بَيۡنَكَ وَبَيۡنَهُۥ عَدَٰوَةٞ كَأَنَّهُۥ وَلِيٌّ حَمِيمٞ ٣٤ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ٱلَّذِينَ صَبَرُواْ وَمَا يُلَقَّىٰهَآ إِلَّا ذُو حَظٍّ عَظِيمٖ ٣٥ ﴾ [فصلت: ٣٤، ٣٥]
অর্থাৎ “ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। উৎকৃষ্ট দ্বারা মন্দ প্রতিহত কর; তাহলে যাদের সাথে তোমার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত। এ চরিত্রের অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা ধৈর্যশীল, এ চরিত্রের অধিকারী তারাই হয়, যারা মহাভাগ্যবান। যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (সূরা হা-মীম সাজদাহ ৩৪-৩৬ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
1/637 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ ِلأَشَجِّ عَبْدِ القَيْسِ: « إِنَّ فِيكَ خَصْلَتَيْنِ يُحِبُّهُمَا اللهُ: الْحِلْمُ وَالأنَاةُ ». رواه مسلم
১/৬৩৭। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাজ্জ্ আব্দুল কায়েসকে বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় তোমার মধ্যে এমন দু’টি স্বভাব রয়েছে যা আল্লাহ পছন্দ করেন; সহনশীলতা ও চিন্তা-ভাবনা করে কাজ করা।’’ (মুসলিম)
2/638 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفْقَ فِي الأَمْرِ كُلِّه ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬৩৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা কোমল; তিনি প্রত্যেকটি ব্যাপারে কোমলতা ও নম্রতাকে ভালবাসেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/639 وَعَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « إنَّ اللهَ رَفِيقٌ يُحِبُّ الرِّفقَ، وَيُعْطِي عَلَى الرِّفقِ، مَا لاَ يُعْطِي عَلَى العُنْفِ، وَمَا لاَ يُعْطِي عَلَى مَا سِوَاهُ ». رواه مسلم
৩/৬৩৯। উক্ত বর্ণনাকারিণী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতাকে ভালবাসেন। তিনি নম্রতার উপরে যা দেন তা তিনি কঠোরতা এবং অন্য কোন জিনিসের উপর দেন না।’’ (মুসলিম)
4/640 وَعَنهَا: أنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « إنَّ الرِّفْقَ لاَ يَكُونُ في شَيْءٍ إِلاَّ زَانَهُ، وَلاَ يُنْزَعُ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ شَانَهُ ». رواه مسلم
৪/৬৪০। সাবেক রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নম্রতা যে জিনিসেই থাকে, তাকে তা সুন্দর বানিয়ে দেয় এবং তা যে জিনিস থেকেই বের করে নেওয়া হয়, তাকে তা অসুন্দর বানিয়ে দেয়।’’ (মুসলিম)
5/641 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: بَالَ أعْرَابيٌّ فِي المَسجدِ، فَقَامَ النَّاسُ إِلَيْهِ لِيَقَعُوا فِيهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « دَعُوهُ وَأرِيقُوا عَلَى بَوْلِهِ سَجْلاً مِنْ مَاءٍ، أَوْ ذَنُوباً مِنْ مَاءٍ، فَإنَّمَا بُعِثْتُمْ مُيَسِّرِينَ وَلَم تُبْعَثُوا مُعَسِّرِينَ ». رواه البخاري
৫/৬৪১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক বেদুঈন মসজিদের ভিতরে প্রস্রাব করে দিল। সুতরাং লোকেরা তাকে ধমক দেওয়ার জন্য উঠে দাঁড়াল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ওকে ছেড়ে দাও এবং প্রস্রাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। কেননা তোমাদেরকে সহজ নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়েছে, কঠোর নীতি অবলম্বন করার জন্য পাঠানো হয়নি।’’ (বুখারী)
৬/৬৪২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না এবং (লোকদেরকে) সুসংবাদ দাও। তাদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করো না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
7/643 وَعَن جَرِيرِ بنِ عبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَنْ يُحْرَمِ الرِفْقَ، يُحْرَمِ الخَيْرَ كلَّهُ ». رواه مسلم
৭/৬৪৩। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়, তাকে সমস্ত মঙ্গল থেকে বঞ্চিত করে দেওয়া হয়।’’ (মুসলিম)
8/644 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ ﷺ: أَوْصِنِي . قَالَ: «لاَ تَغْضَبْ »، فَرَدَّدَ مِرَاراً، قَالَ: « لاَ تَغْضَبْ ». رواه البخاري
৮/৬৪৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘আপনি আমাকে কিছু অসিয়ত করুন!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ সে ব্যক্তি এ কথাটি কয়েকবার বলল। তিনি (প্রত্যেক বারেই একই কথা) বললেন, ‘‘তুমি রাগান্বিত হয়ো না।’’ (বুখারী)
9/645 وَعَن أَبي يَعلَى شَدَّادِ بنِ أَوسٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إنَّ الله كَتَبَ الإحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ، فَإذَا قَتَلْتُم فَأحْسِنُوا القِتْلَة، وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأحْسِنُوا الذِّبْحَةَ، وَليُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَه، وَلْيُرِح ذَبِيحَتَهُ ». رواه مسلم
৯/৬৪৫। আবূ ইয়া’লা শাদ্দাদ ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মহান আল্লাহ প্রতিটি কাজকে উত্তমরূপে (অথবা অনুগ্রহের সাথে) সম্পাদন করাটাকে ফরয করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যখন (কাউকে) হত্যা করবে, তখন ভালভাবে হত্যা করো এবং যখন (পশু) জবাই করবে, তখন ভালভালে জবাই করো। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, সে যেন নিজ ছুরি ধারাল করে নেয় এবং যবেহযোগ্য পশুকে আরাম দেয়।’’ (অর্থাৎ জবাই-এর কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে।) (মুসলিম)
10/646 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: مَا خُيِّرَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بَيْنَ أمْرَيْنِ قَطُّ إِلاَّ أَخَذَ أيْسَرَهُمَا، مَا لَمْ يَكُنْ إثماً، فَإنْ كَانَ إثماً، كَانَ أبْعَدَ النَّاسِ مِنْهُ . وَمَا انْتَقَمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لِنَفْسِهِ في شَيْءٍ قَطُّ، إِلاَّ أن تُنْتَهَكَ حُرْمَةُ الله، فَيَنْتَقِمَ لِلَّهِ تَعَالَى . متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৬৪৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখনই দু’টি কাজের মধ্যে স্বাধীনতা দেওয়া হত, তখনই তিনি সে দু’টির মধ্যে সহজ কাজটি গ্রহণ করতেন; যদি সে কাজটি গর্হিত না হত। কিন্তু তা গর্হিত কাজ হলে তিনি তা থেকে সকলের চেয়ে বেশি দূরে থাকতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজের জন্য কখনই কোন বিষয়ে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কিন্তু (কেউ) আল্লাহর হারামকৃত কাজ করে ফেললে তিনি কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য প্রতিশোধ নিতেন।’(বুখারী ও মুসলিম)
11/647 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « ألاَ أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّار ؟ أَوْ بِمَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّار ؟ تَحْرُمُ عَلَى كُلِّ قَرِيبٍ، هَيّنٍ، لَيِّنٍ، سَهْلٍ » رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن»
১১/৬৪৭। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি কি তোমাদেরকে সে সমস্ত লোক সম্পর্কে বলব না, যারা জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম অথবা যাদের জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম? এ (আগুন) প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য হারাম হবে, যে মানুষের নিকটবর্তী, নম্র, সহজ ও সরল।’’ (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
75- بَابُ الْعَفْوِ وَالْإِعْرَاضِ عَنِ الْجَاهِلِيْنَ
পরিচ্ছেদ ৭৫: মার্জনা করা এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চলার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ ١٩٩ ﴾ [الاعراف: ١٩٩]
অর্থাৎ “তুমি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন কর, সৎকাজের নির্দেশ দাও এবং মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।” (সূরা আ’রাফ ১৯৯ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ فَٱصۡفَحِ ٱلصَّفۡحَ ٱلۡجَمِيلَ ﴾ [الحجر: ٨٥]
অর্থাৎ “তুমি পরম সৌজন্যের সাথে তাদেরকে ক্ষমা কর।” (সূরা হিজ্র ৮৫ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ۖ وَلۡيَعۡفُواْ وَلۡيَصۡفَحُوٓاْۗ أَلَا تُحِبُّونَ أَن يَغۡفِرَ ٱللَّهُ لَكُمۡۚ ﴾ [النور: ٢٢]
অর্থাৎ “তারা যেন ওদেরকে ক্ষমা করে এবং ওদের দোষ-ত্রুটি মার্জনা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিন?” (সূরা নূর ২২ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
بَلْ أرْجُو أنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৪৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ‘আপনার উপর কি উহুদের দিনের চেয়েও কঠিন দিন এসেছে?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি তোমার কওম থেকে বহু কষ্ট পেয়েছি এবং সবচেয়ে বেশি কষ্ট আক্বাবার দিন পেয়েছি, যেদিন আমি নিজেকে ইবনে আব্দে ইয়ালীল ইবনে আব্দে কুলাল (ত্বায়েফের এক বড় সর্দার) এর উপর (ইসলামের দিকে আহবান করার জন্য) পেশ করেছিলাম। সে আমার দাওয়াত গ্রহণ করল না। সুতরাং আমি চিন্তিত হয়ে চলতে শুরু করলাম। তারপর ‘ক্বারনুস সা‘আলিব’ (বর্তমানে সাইল কাবীর) নামক স্থানে পৌঁছলে সেখানে কিছু স্বস্তি অনুভব করলাম। আমি (আকাশের দিকে) মাথা উঠিয়ে দেখতে পেলাম যে, একটা মেঘখন্ড আমার উপর ছায়া করে আছে। অতঃপর গভীর দৃষ্টিতে দেখলাম, তাতে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম রয়েছেন। তিনি আমাকে ডেকে বললেন, ‘আপনার কওম আপনাকে যে কথা বলেছে এবং তারা আপনাকে যে জবাব দিয়েছে, তা সবই মহান আল্লাহ শুনেছেন। অতঃপর তিনি আপনার নিকট পর্বতমালার ফিরিশ্তাকে পাঠিয়েছেন, যেন আপনি তাঁকে তাদের (ত্বায়েফবাসীদের) ব্যাপারে যা ইচ্ছা আদেশ দেন।’ অতঃপর পর্বতমালার ফিরিশ্তা আমাকে আওয়াজ দিলেন এবং আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনার কওম আপনাকে যা বলেছে, তা (সবই) মহান আল্লাহ শুনেছেন। আমি হচ্ছি পর্বতমালার ফিরিশ্তা। আমার প্রভু আমাকে আপনার নিকট পাঠিয়েছেন, যেন আপনি আমাকে তাদের ব্যাপারে (কোন) নির্দেশ দেন। সুতরাং আপনি কী চান? আপনি চাইলে, আমি (মক্কার) বড় বড় পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দেব।’ (এ কথা শুনে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘(এমন কাজ করবেন না) বরং আমি আশা করছি যে, মহান আল্লাহ তাদের পৃষ্ঠদেশ থেকে এমন লোকের আবির্ভাব ঘটাবেন, যারা এক আল্লাহর উপাসনা করবে এবং তাঁর সাথে কোন জিনিসকে শরীক করবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/649 وَعَنهَا، قَالَتْ: مَا ضَرَبَ رَسُولُ اللهِ ﷺ شَيْئاً قَطُّ بِيَدِهِ، وَلاَ امْرَأةً وَلاَ خَادِماً، إِلاَّ أنْ يُجَاهِدَ فِي سَبيلِ اللهِ، وَمَا نِيلَ مِنْهُ شَيْءٌ قَطُّ فَيَنْتَقِمَ مِنْ صَاحِبِهِ، إِلاَّ أن يُنْتَهَكَ شَيْءٌ مِنْ مَحَارِمِ اللهِ تَعَالَى، فَيَنْتَقِمُ للهِ تَعَالَى . رواه مسلم
২/৬৪৯। উক্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ ব্যতীত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কাউকে সবহস্তে মারেননি, না কোন স্ত্রীকে না কোন দাস-দাসীকে। কারো দিক থেকে তিনি কোন কষ্ট পেলে কষ্টদাতার নিকট থেকে প্রতিশোধ নেননি। হ্যাঁ, যদি আল্লাহর হারামকৃত কোন জিনিস লংঘন করা হত (অর্থাৎ কেউ চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি কাজ করে ফেলত), তাহলে আল্লাহর জন্যই তিনি প্রতিশোধ নিতেন (শাস্তি দিতেন)।’ (মুসলিম)
3/650 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ أَمشِي مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَعَلَيْهِ بُرْدٌ نَجْرَانيٌّ غَلِيظُ الحَاشِيَةِ، فأدْرَكَهُ أعْرَابِيٌّ فَجَبذَهُ بِرِدَائِهِ جَبْذَةً شَديدةً، فَنَظَرْتُ إِلَى صَفْحَةِ عَاتِقِ النَّبيِّ ﷺ، وَقَدْ أثَّرَتْ بِهَا حَاشِيَةُ الرِّدَاءِ مِنْ شِدَّةِ جَبْذَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا مُحَمَّدُ، مُر لِي مِنْ مَالِ اللهِ الَّذِي عِنْدَكَ . فَالتَفَتَ إِلَيْهِ، فَضَحِكَ ثُمَّ أَمَرَ لَهُ بِعَطَاءٍ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৬৫০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন (একদা) আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে পথ চলছিলাম। সে সময় তাঁর উপর মোটা পেড়ে একখানি নাজরানী চাদর ছিল। অতঃপর পথে এক বেদুঈনের সঙ্গে দেখা হল। সে তাঁর চাদর ধরে খুব জোরে টান দিল। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁধের এক পাশে দেখলাম যে, খুব জোরে টানার কারণে চাদরের পাড়ের দাগ পড়ে গেছে। পুনরায় সে বলল, ‘ওহে মুহাম্মাদ! তোমার নিকট আল্লাহর যে মাল আছে, তা থেকে আমাকে দেওয়ার আদেশ কর।’ তিনি তার দিকে মুখ ফিরিয়ে হাসলেন। অতঃপর তাকে (কিছু মাল) দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
4/651 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَأَنِّي أَنظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ يَحْكِي نَبِيّاً مِنَ الأَنبِيَاءِ، صَلَوَاتُ اللهِ وَسَلامُه عَلَيْهِمْ، ضَرَبَهُ قَوْمُهُ فَأدْمَوْهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدَّمَ عَنْ وَجْهِهِ، ويَقُولُ: « اَللهم اغْفِرْ لِقَوْمِي ؛ فَإنَّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৬৫১। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি যেন (এখনো) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীদের মধ্যে এক নবীর ঘটনা বর্ণনা করতে দেখছি, তাঁর সম্প্রদায় তাঁকে রক্তাক্ত করে দিয়েছে, আর তিনি তাঁর চেহারা থেকে রক্ত মুছছেন এবং বলছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার সম্প্রদায়কে ক্ষমা করে দাও। কেননা তারা অজ্ঞ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/652 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « لَيْسَ الشَّديدُ بِالصُّرَعَةِ، إنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৬৫২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কুশ্তিগীর বীর সে নয়, যে প্রতিন্দ্বীকে চিৎপাত করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে বীর সেই, যে ক্রোধের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
76- بَابُ اِحْتِمَالِ الْأَذٰى
পরিচ্ছেদ - ৭৬: কষ্ট সহ্য করার মাহাত্ম্য
﴿ وَٱلۡكَٰظِمِينَ ٱلۡغَيۡظَ وَٱلۡعَافِينَ عَنِ ٱلنَّاسِۗ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ﴾ [ال عمران: ١٣٤]
অর্থাৎ “(সেই ধর্মভীরুদের জন্য জান্নাত প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় দান করে,) ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ (বিশুদ্ধচিত্ত) সৎকর্মশীলদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান ১৩৪ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَلَمَن صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَٰلِكَ لَمِنۡ عَزۡمِ ٱلۡأُمُورِ ٤٣ ﴾ [الشورا: ٤٣]
অর্থাৎ “অবশ্যই যে ধৈর্য ধারণ করে এবং ক্ষমা করে, নিশ্চয় তা দৃঢ়-সংকল্পের কাজ।” (সূরা শূরা ৪৩ আয়াত)
এ ব্যাপারে পূর্বোক্ত পরিচ্ছেদের হাদীসসমূহ উল্লেখ্য। আরো একটি হাদীসঃ
1/653 عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنّ لِي قَرَابةً أصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوني، وَأُحْسِنُ إلَيْهِمْ وَيُسِيئُونَ إلَيَّ، وَأحْلَمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُونَ عَلَيَّ، فَقَالَ: « لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ، فَكأنَّمَا تُسِفُّهُمْ الْمَلَّ، وَلاَ يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذلِكَ ». رواه مسلم
১/৬৫৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কিছু আত্মীয় আছে, আমি তাদের সাথে আত্মীয়তা বজায় রাখি, আর তারা ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, আর তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। তারা কষ্ট দিলে আমি সহ্য করি, আর তারা আমার সাথে মূর্খের আচরণ করে।’ তিনি বললেন, ‘‘যদি তা-ই হয়, তাহলে তুমি যেন তাদের মুখে গরম ছাই নিক্ষেপ করছ (অর্থাৎ এ কাজে তারা গোনাহগার হয়।) এবং তোমার সাথে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাহায্যকারী থাকবে; যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এর উপর অবিচল থাকবে।’’ (মুসলিম, এটি৩২৩ নম্বরেও গত হয়েছে)
77- بَابُ الْغَضَبِ إِذَا انْتُهِكَتْ حُرُمَاتُ الشَّرْعِ وَالْاِنْتِصَارِ لِدِيْنَ اللهِ تَعَالٰى
পরিচ্ছেদ - ৭৭: শরীয়তের নির্দেশাবলী লংঘন করতে দেখলে ক্রোধান্বিত হওয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের সংরক্ষণ ও পৃষ্ঠপোষকতার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ حُرُمَٰتِ ٱللَّهِ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥ عِندَ رَبِّهِۦۗ﴾ [الحج: ٣٠]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর নিষিদ্ধ (স্থান বা) বিধানসমূহের সম্মান করলে তার প্রতিপালকের নিকট তার জন্য এটাই উত্তম।” (সূরা হাজ্জ্ব ৩০ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ إِن تَنصُرُواْ ٱللَّهَ يَنصُرۡكُمۡ وَيُثَبِّتۡ أَقۡدَامَكُمۡ ٧ ﴾ [محمد: ٧]
অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন, এবং তোমাদের পা দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত রাখবেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৭ আয়াত)
1/654 وَعَن أَبي مَسعُودٍ عُقْبَةَ بنِ عَمْرٍو البَدْرِي رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَ: إنِّي لأَتَأخَّرُ عَن صَلاةِ الصُّبْحِ مِنْ أَجْلِ فُلاَنٍ مِمَّا يُطِيلُ بِنَا ! فَمَا رَأيْتُ النَّبيَّ ﷺ غَضِبَ في مَوْعِظَةٍ قَطُّ أشَدَّ مِمَّا غَضِبَ يَوْمَئذٍ ؛ فَقَالَ: « يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إنَّ مِنْكُمْ مُنَفِّرِينَ، فَأيُّكُمْ أمَّ النَّاسَ فَلْيُوجِزْ ؛ فَإنَّ مِنْ وَرَائِهِ الكَبِيرَ وَالصَّغِيرَ وَذَا الحَاجَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৫৪। আবূ মাসঊদ উক্বাহ ইবনে আমর বাদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘অমুক ব্যক্তি লম্বা নামায পড়ায়, তার জন্য আমি ফজরের নামায থেকে পিছনে থাকি।’ অতঃপর আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোন ভাষণে সেদিনকার থেকে বেশী রাগান্বিত হতে দেখিনি। তিনি বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমাদের মধ্যে কিছু লোক লোকদের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি করছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ লোকদের ইমামতি করবে, সে যেন সংক্ষেপে নামায পড়ায়। কারণ তার পিছনে বৃদ্ধ, শিশু এবং এমনও লোক রয়েছে যার কোন প্রয়োজন আছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/655 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: قَدِمَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ سَفرٍ، وَقَدْ سَتَرْتُ سَهْوَةً لِي بِقِرَامٍ فِيهِ تَمَاثِيلُ، فَلَمَّا رَآهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ هَتَكَهُ وَتَلَوَّنَ وَجهُهُ، وَقَالَ: « يَا عَائِشَةُ، أشَدُّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ يَوْمَ القيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بخَلْقِ اللهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক সফর থেকে (বাড়ী) ফিরলেন। সে সময় আমি ঘরের সামনে তাকে একটি পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছিলাম, যাতে অনেক ছবি ছিল। অতঃপর যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখলেন তখন ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। (রাগে) তাঁর চেহারা (লাল)বর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে আয়েশা! কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক কঠিন শাস্তি তাদের হবে, যারা আল্লাহর সৃষ্ট জীবের মত আকৃতি (অঙ্কণ বা নির্মাণ) করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/656 وَعَنهَا: أَنَّ قُرَيْشاً أهَمَّهُمْ شَأنُ المَرأَةِ المَخزُومِيَّةِ الَّتي سَرَقَتْ، فَقَالُوا: مَنْ يُكَلِّمُ فِيهَا رَسُولَ اللهِ ﷺ ؟ فَقَالُوا: مَنْ يَجْتَرِئُ عَلَيْهِ إِلاَّ أُسَامَةُ بنُ زَيْدٍ حِبُّ رَسُولِ اللهِ ﷺ ؟ فَكَلَّمَهُ أُسَامَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أتَشْفَعُ فِي حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللهِ تَعَالَى ؟! » ثُمَّ قامَ فَاخْتَطَبَ، ثُمَّ قَالَ: « إنَّمَا أهْلَك مَنْ قَبْلَكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ، وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أقامُوا عَلَيْهِ الحَدَّ، وَايْمُ الله، لَوْ أَنَّ فَاطمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعتُ يَدَهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৬৫৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেই বর্ণিত, যে মাখযূমী মহিলাটি চুরি করেছিল তার ব্যাপারটি কুরায়েশদেরকে চিন্তান্বিত করে তুলেছিল। সুতরাং তারা বলল, ‘এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রিয় উসামাহ ইবন যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছাড়া আর কে সাহস করতে পারবে?’ ফলে উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর সাথে কথা বললেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘আল্লাহর নির্ধারিত দণ্ডবিধির ব্যাপারে তুমি সুপারিশ করছ?’’ অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং ভাষণ দিলেন। তাতে তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের পূর্বেকার লোকেরা এ জন্যই ধ্বংস হয়েছে যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে ছেড়ে দিত। আর যখন তাদের মধ্যে কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত, তখন তারা তাকে শাস্তি প্রদান করত। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা চুরি করত, তাহলে আমি তারও হাত কেটে দিতাম।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/657 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ رَأى نُخَامَةً فِي القِبلَةِ، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُؤِيَ في وَجْهِهِ ؛ فَقَامَ فَحَكَّهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ: « إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِهِ فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ، وَإنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبيْنَ القِبلَةِ، فَلاَ يَبْزُقَنَّ أحَدُكُمْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ » ثُمَّ أخَذَ طَرَفَ رِدَائِهِ فَبَصَقَ فِيهِ، ثُمَّ رَدَّ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ، فَقَالَ: « أَوْ يَفْعَلُ هَكَذَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৬৫৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলার (দিকের দেওয়ালে) থুতু দেখতে পেলেন এটা তাঁর প্রতি খুব ভারী মনে হল; এমনকি তাঁর চেহারায় সে চিহ্ন দেখা গেল। ফলে দাঁড়ালেন এবং তিনি তা নিজ হাত দ্বারা ঘষে তুলে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন নামাযে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে কানে কানে (ফিসফিস করে কথা) বলে। আর তার প্রতিপালক তার ও কেবলার মধ্যস্থলে থাকেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যেন কেবলার দিকে থুতু না ফেলে; বরং তার বামে অথবা পদতলে ফেলে। অতঃপর তিনি তাঁর চাদরের এক প্রান্ত ধরে তাতে থুতু নিক্ষেপ করলেন। তারপর তিনি তার এক অংশকে আর এক অংশের সাথে রগড়ে দিয়ে বললেন, কিংবা এইরূপ করে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
* বাম দিকে অথবা পায়ের নিচে থুতু ফেলার নির্দেশ তখন পালনীয়, যখন নামায মসজিদ ছাড়া অন্য কোথাও (মাটিতে) হবে। পক্ষান্তরে নামায মসজিদে হলে কাপড়ে (অথবা টিসুতেই) থুতু (শ্লেষ্মা ইত্যাদি) ফেলতে হবে।
78- بَابُ أَمْرِ وُلَاةِ الْأَمْرِ بِالرِّفْقِ بِرِعَايَاهُمْ وَنَصِيْحَتِهِمْ وَالشَّفْقَةِ عَلَيْهِمْ وَالنَّهْيِ عَنْ غَشِّهِمْ وَالتَّشْدِيْدِ عَلَيْهِمْ وَإِهْمَالِ مَصَالِحِهِمْ وَالْغَفْلَةِ عَنْهُمْ وَعَنْ حَوَائِجِهِمْ
পরিচ্ছেদ - ৭৮: প্রজাদের সাথে শাসকদের কোমল ব্যবহার করা, তাদের মঙ্গল কামনা করা, তাদের প্রতি স্নেহপরবশ হওয়ার আদেশ এবং প্রজাদেরকে ধোঁকা দেওয়া, তাদের প্রতি কঠোর হওয়া, তাদের সবার্থ উপেক্ষা করা, তাদের ও তাদের প্রয়োজন সম্বন্ধে উদাসীন হওয়া নিষিদ্ধ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِمَنِ ٱتَّبَعَكَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٢١٥ ﴾ [الشعراء: ٢١٥]
অর্থাৎ “তোমার অনুসারী বিশ্বাসীদের প্রতি তুমি সদয় হও।” (সূরা শুআরা ২১৫ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ ۞إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ وَإِيتَآيِٕ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَيَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِ وَٱلۡبَغۡيِۚ يَعِظُكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَذَكَّرُونَ ٩٠ ﴾ [النحل: ٩٠]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের নির্দেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসৎকার্য ও সীমালংঘন করা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন; যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর।” (সূরা নাহ্ল ৯০ আয়াত)
5/658 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتهِ: الإمَامُ رَاعٍ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ في أهلِهِ وَمَسؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ في بَيْتِ زَوْجِهَا وَمَسْؤُولَةٌ عَنْ رَعِيَّتِهَا، وَالخَادِمُ رَاعٍ في مال سيِّدِهِ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَمَسْؤُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ » متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৫৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘প্রতিটি মানুষই দায়িত্বশীল, সুতরাং প্রত্যেকে অবশ্যই তার অধীনস্থদের দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। দেশের শাসক জনগণের দায়িত্বশীল, সে তার দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জবাবদিহী করবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, অতএব সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের দায়িত্বশীলা, কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতা ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/659 وَعَن أَبي يَعلَى مَعْقِل بنِ يَسارٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَستَرْعِيهِ اللهُ رَعِيَّةً، يَمُوتُ يَوْمَ يَمُوتُ وَهُوَ غَاشٌّ لِرَعِيَّتِهِ، إِلاَّ حَرَّمَ اللهُ عَلَيْهِ الجَنَّة ». متفقٌ عليه
وَفِي رِوَايَةٍ: « فَلَمْ يَحُطْهَا بِنُصْحِهِ لَمْ يَجِدْ رَائِحَةَ الجَنَّة » .
وَفي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ: «مَا مِنْ أميرٍ يَلِي أُمُورَ المُسْلِمينَ، ثُمَّ لاَ يَجْهَدُ لَهُمْ وَيَنْصَحُ لَهُمْ، إِلاَّ لَمْ يَدْخُلْ مَعَهُمُ الْجَنَّةَ».
২/৬৫৯। আবূ য়্যা’লা মা‘ক্বিল ইবনে য়্যাসার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘কোনো বান্দাকে আল্লাহ কোন প্রজার উপর শাসক বানালে, যেদিন সে মরবে সেদিন যদি সে প্রজার প্রতি ধোঁকাবাজি করে মরে, তাহলে আল্লাহ তার প্রতি জান্নাত হারাম করে দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘অতঃপর সে (শাসক) তার হিতাকাঙ্ক্ষিতার সাথে তাদের অধিকারসমূহ রক্ষা করল না, সে জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’’
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে কোনো আমীর মুসলিমদের দেখাশুনার দায়িত্ব নিল, অতঃপর সে তাদের (সমস্যা দূর করার) চেষ্টা করল না এবং তাদের হিতাকাঙ্ক্ষী হল না, সে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’’
7/660 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ فِي بَيْتِي هَذَا: «اَللهم مَنْ وَلِيَ مِنْ أمْرِ أُمَّتِي شَيْئاً فَشَقَّ عَلَيْهِمْ، فَاشْقُقْ عَلَيْهِ، وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئاً فَرَفَقَ بِهِمْ، فَارفُقْ بِهِ». رواه مسلم
৩/৬৬০। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমার এই ঘরে বলতে শুনেছি, ‘‘হে আল্লাহ! যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে কষ্টে ফেলবে, তুমি তাকে কষ্টে ফেলো। আর যে কেউ আমার উম্মতের কোন কাজের কিছু দায়িত্ব নিয়ে তাদের সাথে নম্রতা করবে, তুমি তার সাথে নম্রতা করো।’’ (মুসলিম)
8/661 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « كَانَتْ بَنُو إسرَائِيلَ تَسُوسُهُم الأَنبِيَاء، كُلَّمَا هَلَكَ نَبِيٌّ خَلَفَهُ نَبيٌّ، وَإنَّهُ لاَ نَبِيَّ بَعْدِي، وَسَيكُونُ بَعْدِي خُلفَاءُ فَيَكثُرُونَ»، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ قَالَ: « أَوْفُوا بِبَيْعَةِ الأَوَّلِ فَالأَوَّلِ، ثُمَّ أَعْطُوهُمْ حَقَّهُمْ، وَاسْأَلُوا اللهَ الَّذِي لَكُمْ، فَإنَّ اللهَ سَائِلُهُمْ عَمَّا اسْتَرْعَاهُمْ ». متفقٌ عليه
৪/৬৬১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘বানী ইস্রাঈলদের (দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের কাজ) পরিচালনা করতেন নবীগণ। যখনই কোন নবী মারা যেতেন, তখনই অন্য আর এক নবী তাঁর প্রতিনিধি হতেন। (জেনে রাখ) আমার পর কোন নবী নেই, বরং আমার পর অধিক সংখ্যায় খলীফা হবে।’’ সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাদেরকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘যার নিকট প্রথমে বায়‘আত করবে, তা পালন করবে। তারপর যার নিকট বায়‘আত করবে, তা পালন করবে। অতঃপর তাদের অধিকার আদায় করবে এবং তোমাদের অধিকার আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে। কারণ, মহান আল্লাহ তাদেরকে প্রজাপালনের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/662 وَعَن عَائِذِ بنِ عَمرٍو رضي الله عنه: أَنَّهُ دَخَلَ عَلَى عُبَيْدِ اللهِ بنِ زِيَادٍ، فَقَالَ لَهُ: أيْ بُنَيَّ، إنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إنَّ شَرَّ الرِّعَاءِ الحُطَمَةُ» فإيَاكَ أن تَكُونَ مِنْهُمْ . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৬৬২। ‘আয়েয ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি তাকে বললেন, ‘হে বৎস! আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘নিশ্চয় নিকৃষ্টতম শাসক সে, যে প্রজাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করে।’’ সুতরাং তুমি তাদের দলভুক্ত হওয়া থেকে দূরে থাকো।’ (বুখারী ও মুসলিম)
10/663 وَعَن أَبي مَريَمَ الأَزدِيِّ رضي الله عنه: أنّه قَالَ لِمُعَاوِيَةَ رضي الله عنه: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَنْ وَلاَّهُ اللهُ شَيْئاً مِنْ أُمُورِ المُسْلِمِينَ، فَاحْتَجَبَ دُونَ حَاجَتِهِمْ وَخَلَّتِهِمْ وَفَقْرِهِمْ، احْتَجَبَ اللهُ دُونَ حَاجَتِهِ وَخَلَّتِهِ وَفَقْرِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ». فَجَعَلَ مُعَاوِيَةُ رَجُلاً عَلَى حَوَائِجِ النَّاسِ . رواه أَبُو داود والترمذي
৬/৬৬৩। আবূ মারয়্যাম আযদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তিকে আল্লাহ মুসলিমদের কোনো (রাজ) কার্যে নিযুক্ত করলেন, অতঃপর সে তাদের অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন ও অনটন থেকে পর্দা বা বাধা সৃষ্টি করলো, কিয়ামতের দিন আল্লাহ সে ব্যক্তির অভাব-অভিযোগ, প্রয়োজন ও অনটন থেকে পর্দা বা বাধা প্রদান করবেন।’’ (তা পূরণ করবেন না।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
79- بَابُ الْوَالِي الْعَادِلِ
পরিচ্ছেদ - ৭৯: ন্যায়পরায়ণ শাসকের মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ يَأۡمُرُ بِٱلۡعَدۡلِ وَٱلۡإِحۡسَٰنِ ﴾ [النحل: ٩٠]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচরণের নির্দেশ দেন---।” (সূরা নাহ্ল ৯০ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَأَقۡسِطُوٓاْۖ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُقۡسِطِينَ﴾ [الحجرات: ٩]
অর্থাৎ “সুবিচার কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা হুজুরাত ৩৮১ আয়াত)
1/664 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عن النَّبيِّ ﷺ، قَالَ: « سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ في ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إلاَّ ظِلُّهُ: إمَامٌ عَادِلٌ، وَشَابٌّ نَشَأ في عِبَادَةِ الله - عز وجل -، وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ بِالمَسَاجِدِ، وَرَجُلاَنِ تَحَابّا في اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيهِ وتَفَرَّقَا عَلَيهِ، وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأةٌ ذَاتُ مَنصَبٍ وَجَمَالٍ، فَقَالَ: إنِّي أخَافُ الله، وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ، فَأخْفَاهَا حَتَّى لاَ تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ، وَرَجُلٌ ذَكَرَ الله خَالِياً فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ ». مُتَّفَقٌ عَلَيهِ .
১/৬৬৪। আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না; (তারা হল,) ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ (রাষ্ট্রনেতা), সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ আয্যা অজাল্লার ইবাদতে অতিবাহিত হয়, সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (অবৈধ যৌন-মিলনের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি।’ সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখে পানি বয়ে যায়।’’ (বুখারী-মুসলিম)
2/665 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إنَّ المُقْسِطِينَ عِنْدَ اللهِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ: الَّذِينَ يَعْدِلُونَ في حُكْمِهِمْ وأَهْلِيْهِم وَمَا وَلُوْا ». رواه مسلم
২/৬৬৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয় ন্যায় বিচারকরা আল্লাহর নিকট জ্যোতির মিম্বরের উপর অবস্থান করবে। যারা তাদের বিচারে এবং তাদের গৃহবাসীদের মধ্যে ও যে সমস্ত কাজে তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে, তাতে তারা ইনসাফ করে’’(মুসলিম)
3/666 وَعَن عَوفِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «خِيَارُ أَئِمَّتِكُمُ الَّذِينَ تُحِبُّونَهُمْ وَيُحِبُّونَكُمْ، وَتُصَلُّونَ عَلَيْهِمْ وَيُصَلُّونَ عَلَيْكُمْ . وشِرَارُ أئِمَّتِكُم الَّذِينَ تُبْغِضُونَهُمْ وَيُبْغِضُونَكُمْ، وَتَلعَنُونَهُمْ وَيَلْعَنُونَكُمْ»، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، أفَلاَ نُنَابِذُهُم ؟ قَالَ: «لاَ، مَا أقَامُوا فِيْكُمُ الصَّلاَةَ . لاَ، مَا أقَامُوا فِيكُمُ الصَّلاَةَ ». رواه مسلم
৩/৬৬৬। আওফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘তোমাদের সর্বোৎকৃষ্ট শাসকবৃন্দ তারা, যাদেরকে তোমরা ভালবাস এবং তারাও তোমাদেরকে ভালবাসে, তোমরা তাদের জন্য দো‘আ কর এবং তারাও তোমাদের জন্য দো‘আ করে। আর তোমাদের নিকৃষ্টতম শাসকবৃন্দ তারা, যাদেরকে তোমরা ঘৃণা কর এবং তারাও তোমাদেরকে ঘৃণা করে, তোমরা তাদেরকে অভিশাপ কর এবং তারাও তোমাদেরকে অভিশাপ করে।’’ (বর্ণনাকারী) বলেন, আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠা করবে। না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা তোমাদের মধ্যে নামায প্রতিষ্ঠা করবে।’’ (মুসলিম)
৪/৬৬৭। ‘ইয়াদ্ব ইবনে হিমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘জান্নাতী তিন প্রকার। (১) ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, যাকে ভাল কাজ করার তওফীক দেওয়া হয়েছে। (২) ঐ ব্যক্তি যে প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিমের প্রতি দয়ালু ও নম্র-হৃদয় এবং (৩) সেই ব্যক্তি যে বহু সন্তানের (গরীব) পিতা হওয়া সত্ত্বেও হারাম ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দূরে থাকে। (মুসলিম)
80- بَابُ وُجُوْبِ طَاعَةِ وُلَاةِ الْأُمُوْرِ فِيْ غَيْرِ مَعْصِيَةٍ
وَّتَحْرِيْمِ طَاعَتِهِمْ فِي الْمَعْصِيَةِ
পরিচ্ছেদ - ৮০: বৈধ কাজে শাসকবৃন্দের আনুগত্য করা ওয়াজিব এবং অবৈধ কাজে তাদের আনুগত্য করা হারাম
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَأَطِيعُواْ ٱلرَّسُولَ وَأُوْلِي ٱلۡأَمۡرِ مِنكُمۡۖ فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩ ﴾ [النساء: ٥٩]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর অনুগত হও, রসূলের অনুগত হও ও তোমাদের নেতৃবর্গের।” (সূরা নিসা ৫৯ আয়াত)
1/668 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « عَلَى المَرْءِ الْمُسْلِمِ السَّمْعُ والطَّاعَةُ فِيمَا أحَبَّ وكَرِهَ، إِلاَّ أنْ يُؤْمَرَ بِمَعْصِيةٍ، فَإِذَا أُمِرَ بِمَعْصِيةٍ فَلاَ سَمْعَ وَلاَ طَاعَةَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৬৮। ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের জন্য (তার শাসকদের) কথা শোনা ও মানা ফরয, তাকে সে কথা পছন্দ লাগুক অথবা অপছন্দ লাগুক; যতক্ষণ না তাকে পাপকাজের নির্দেশ দেওয়া হয়। অতঃপর যখন তাকে পাপকাজের আদেশ দেওয়া হবে তখন তার কথা শোনাও যাবে না, মানাও যাবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/669 وَعَنهُ، قَالَ: كُنَّا إِذَا بَايَعْنَا رَسُولَ اللهِ ﷺ عَلَى السَّمعِ والطَّاعَةِ، يَقُولُ لَنَا: « فِيمَا اسْتَطَعْتُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬৬৯। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাঁর কথা শোনার ও আনুগত্য করার উপর বায়‘আত করছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘‘যাতে তোমাদের সাধ্য রয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/670 وَعَنهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَنْ خَلَعَ يَداً مِنْ طَاعَةٍ لَقِيَ اللهَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ حُجَّةَ لَهُ، وَمَنْ مَاتَ وَلَيْسَ في عُنُقِهِ بَيْعَةٌ، مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ». رواه مسلم
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: « وَمَنْ مَاتَ وَهُوَ مُفَارِقٌ لِلجَمَاعَةِ، فَإنَّهُ يَمُوتُ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً » .
৩/৬৭০। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রস্লুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি (বৈধ কাজে শাসকের) আনুগত্য করা থেকে হাত গুটিয়ে নিল, সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার জন্য কোন প্রমাণ থাকবে না। আর যে ব্যক্তি (রাষ্ট্রনেতার হাতে) বায়‘আত না করে মৃত্যুবরণ করল, সে জাহেলিয়াতের মরা মরল।’’
এর অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে, ‘‘যে (রাষ্ট্রীয়) জামাআত ত্যাগ করে মারা গেল, সে জাহেলিয়াতের মৃত্যুবরণ করল।’’ (মুসলিম)
4/671 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « اِسْمَعُوا وأطِيعُوا، وَإنِ استُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشيٌّ، كَأَنَّ رأْسَهُ زَبيبةٌ ». رواه البخاري
৪/৬৭১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘(শাসকদের) কথা শোনো এবং (তাদের) আনুগত্য কর; যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো ক্রীতদাসকে (নেতা) নিযুক্ত করা হয়; যেন তার মাথাটা কিশমিশ। (অর্থাৎ কিশমিশের ন্যায় ক্ষুদ্র ও বিশ্রী তবুও)!’’ (বুখারী)
5/672 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « عَلَيْكَ السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ في عُسْرِكَ وَيُسْرِكَ، وَمَنْشَطِكَ وَمَكْرَهِكَ، وَأثَرَةٍ عَلَيْكَ ». رواه مسلم
৫/৬৭২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমার প্রতি দুঃখে-সুখে, হর্ষে-বিষাদে এবং তোমার উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার সময়ে (শাসকের) কথা শোনা ও (তার) আনুগত্য করা ফরয।’’ (মুসলিম)
6/673 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرٍو رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ فِي سَفَرٍ، فَنَزَلْنَا مَنْزِلاً، فَمِنَّا مَنْ يُصْلِحُ خِبَاءَهُ، وَمِنّا مَنْ يَنْتَضِلُ، وَمِنَّا مَنْ هُوَ في جَشَرِهِ، إذْ نَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ ﷺ: الصَّلاةَ جَامِعَةً. فَاجْتَمَعْنَا إِلَى رَسُول الله ﷺ، فَقَالَ: « إنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبيٌّ قَبْلِي إِلاَّ كَانَ حَقّاً عَلَيْهِ أنْ يَدُلَّ أُمَّتَهُ عَلَى خَيْرِ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ، وَيُنْذِرَهُم شَرَّ مَا يَعْلَمُهُ لَهُمْ . وَإنَّ أُمَّتَكُمْ هذِهِ جُعِلَ عَافِيَتُهَا في أوَّلِهَا، وَسَيُصيبُ آخِرَهَا بَلاَءٌ وَأمُورٌ تُنْكِرُونَهَا، وَتَجِيءُ فِتنَةٌ يُرَقِّقُ بَعْضُهَا بَعْضاً، وَتَجِيءُ الفتنَةُ فَيقُولُ المُؤْمِنُ: هذه مُهلكتي، ثُمَّ تنكشفُ، وتجيء الفتنةُ فيقولُ المؤمنُ: هذِهِ هذِهِ . فَمَنْ أحَبَّ أنْ يُزَحْزَحَ عَنِ النَّارِ، ويُدْخَلَ الجَنَّةَ، فَلْتَأتِهِ منيَّتُهُ وَهُوَ يُؤْمِنَ باللهِ واليَوْمِ الآخِرِ، وَلْيَأتِ إِلَى النَّاسِ الَّذِي يُحِبُّ أنْ يُؤتَى إِلَيْهِ. وَمَنْ بَايَعَ إمَاماً فَأعْطَاهُ صَفْقَةَ يَدِهِ، وَثَمَرَةَ قَلْبِهِ، فَلْيُطِعْهُ إن استَطَاعَ، فإنْ جَاءَ آخَرُ يُنَازِعُهُ فَاضْرِبُوا عُنْقَ الآخَرِ ». رواه مسلم
৬/৬৭৩। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা আল্লাহর রসূলের সাথে এক সফরে ছিলাম। অতঃপর (বিশ্রামের জন্য) এক স্থানে অবতরণ করলাম। তারপর আমাদের কিছু লোক তাঁবু ঠিক করছিল এবং কতক লোক তীরন্দাজিতে প্রতিযোগিতা করছিল ও কতক লোক জন্তুদের ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণাকারী ঘোষণা করল যে, ‘‘নামাযের জন্য জমায়েত হও।’’ সুতরাং আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একত্রিত হলাম। তারপর তিনি বললেন, ‘‘আমার পূর্বে প্রত্যেক নবীর জন্য জরুরী ছিল, তাঁর উম্মতকে এমন কর্মসমূহের নির্দেশ দেওয়া, যা তিনি তাদের জন্য ভালো মনে করেন এবং এমন কর্মসমূহ থেকে ভীতি-প্রদর্শন করা, যা তিনি তাদের জন্য মন্দ মনে করেন। আর তোমাদের এই উম্মত এমন, যাদের প্রথমাংশে নিরাপত্তা রাখা হয়েছে এবং তাদের শেষাংশে রয়েছে পরীক্ষা (ফিতনা-ফাসাদ) এবং এমন ব্যাপার সকল, যা তোমরা পছন্দ করবে না। এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে যে, একটি অন্যটি হাল্কা করে দেবে (অর্থাৎ পরের ফিতনাটি আগের ফিতনা অপেক্ষা গুরুতর হবে)। ফিতনা এসে গেলে মু’মিন ব্যক্তি বলবে, এটাই আমার ধ্বংসের কারণ হবে। অতঃপর তা দূরীভূত হবে। পুনরায় অন্য ফিতনা প্রকাশ পাবে, তখন মু’মিন বলবে, ‘এটাই এটাই (আমার সবচেয়ে বড় ফিতনা)।’ অতএব যে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে থাকতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করতে ভালবাসে, তার নিকট এই অবস্থায় মৃত্যু আসুক যে, সে আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং লোকদের সাথে সেই ব্যবহার প্রদর্শন করে, যা সে নিজের সাথে প্রদর্শন পছন্দ করে। আর যে ব্যক্তি রাষ্ট্রনেতার সাথে বায়‘আত করে, সে নিজের হাত এবং নিজ অন্তরের ফল (নিষ্ঠা) তাকে দিয়ে দেয়, সে সাধ্যমত তার আনুগত্য করুক। অতঃপর অন্য কেউ যদি তার (প্রথম ইমামের) সাথে (ক্ষমতা কাড়ার) ঝগড়া করে, তাহলে দ্বিতীয়জনের গর্দান উড়িয়ে দাও।’’ (মুসলিম)
7/674 وَعَن أَبي هُنَيْدَةَ وَائِلِ بنِ حُجْرٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَألَ سَلَمَةُ بن يَزيدَ الجُعفِيُّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ الله، أَرَأَيتَ إنْ قامَت عَلَيْنَا أُمَرَاءُ يَسألُونَا حَقَّهُم، وَيمْنَعُونَا حَقَّنَا، فَمَا تَأْمُرُنَا ؟ فَأعْرَضَ عَنهُ، ثُمَّ سَألَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «اسْمَعْوا وَأَطِيعُوا، فإنَّمَا عَلَيْهِمْ مَا حُمِّلُوا، وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ ». رواه مسلم
৭/৬৭৪। আবূ হুনাইদা ওয়াইল ইবনে হুজর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সালামাহ ইবনে য়্যাযীদ জু‘ফী আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘হে আল্লাহর নবী! আপনি বলুন, যদি আমাদের উপর (অসৎ) শাসক নিযুক্ত হয় এবং আমাদের কাছে তাদের অধিকার চায় ও আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে। অতএব এ ব্যাপারে আপনি কী নির্দেশ দেন?’ তিনি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। পুনরায় তিনি জিজ্ঞাসা করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা (তাদের) কথা শুনো এবং (তাদের) আনুগত্য করো। কারণ তাদের দায়িত্বে তা রয়েছে, যা তাদের উপর চাপানো হয়েছে (অর্থাৎ সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণতা) এবং তোমাদের দায়িত্বে তা রয়েছে, যা তোমাদের উপর অর্পণ করা হয়েছে (অর্থাৎ নেতা ও শাসকের আনুগত্য)।’’ (মুসলিম)
8/675 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّهَا سَتَكُونُ بَعْدِي أثَرَةٌ وَأُمُورٌ تُنْكِرُونَهَا ! » قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ تَأمُرُ مَنْ أدْرَكَ مِنَّا ذَلِكَ ؟ قَالَ: « تُؤَدُّونَ الحَقَّ الَّذِي عَلَيْكُمْ، وَتَسْأَلُونَ اللهَ الَّذِي لَكُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৮/৬৭৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমার পর স্বেচ্ছাচারী শাসন হবে এবং অন্যান্য (আপত্তিকর) ব্যাপার সকল প্রকাশ পাবে, যা তোমরা অপছন্দ করবে।’’ সাহাবীরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্যে যে এ যুগ পাবে, তাকে আপনি কী আদেশ দিচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের প্রতি যে হক রয়েছে, তা তোমরা আদায় করবে এবং তোমাদের যে হক (শাসকের উপর রয়েছে), তা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/676 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ أطَاعَنِي فَقَدْ أطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَانِي فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمَنْ يُطِعِ الأَمِيرَ فَقَدْ أطَاعَنِي، وَمَنْ يَعصِ الأميرَ فَقَدْ عَصَانِي ». متفقٌ عَلَيْهِ
৯/৬৭৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে (প্রকৃতপক্ষে) আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে আমার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আল্লাহর অবাধ্যতা করল। আর যে ব্যক্তি নেতার আনুগত্য করল, সে (আসলে) আমার আনুগত্য করল এবং যে নেতার অবাধ্যতা করল, সে (আসলে) আমার অবাধ্যতা করল।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
10/677 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَنْ كَرِهَ مِنْ أمِيرِهِ شَيْئاً فَلْيَصْبِرْ، فَإنَّهُ مَنْ خَرَجَ مِنَ السُّلطَانِ شِبْراً مَاتَ مِيتَةً جَاهِلِيَّةً ». متفقٌ عَلَيْهِ
১০/৬৭৭। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার নেতার কোন কাজ অপছন্দ করবে, তার উচিত হবে (তার উপর) ধৈর্য ধারণ করা। কারণ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও শাসকের আনুগত্য থেকে বেরিয়ে যাবে, তার মৃত্যু জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
11/678 وَعَن أَبي بَكرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَنْ أهانَ السُّلطَانَ أَهَانَهُ الله ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১১/৬৭৮। আবূ বাক্রাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি বাদশাহকে অপমান করবে, আল্লাহ তাকে অপমানিত করবেন।’’ (তিরমিযী, হাসান)
এ মর্মে আরো সহীহ হাদীস বিদ্যমান। কিছু হাদীস বিভিন্ন পরিচ্ছেদে উল্লিখিত হয়েছে।
81- بَابُ النَّهْيِ عَنْ سُؤَالِ الْإِمَارَةِ وَاِخْتِيَارِ تَرْكِ الْوَلَايَاتِ
إِذَا لَمْ يَتَعَيَّنْ عَلَيْهِ أَوْ تَدْعُ حَاجَةٌ إِلَيْهِ
পরিচ্ছেদ - ৮১: পদ চাওয়া নিষেধ এবং রাষ্ট্রীয় পদ পরিহার করাই উত্তম; যদি সেই একমাত্র তার যোগ্য অথবা তার নিযুক্ত হওয়া জরুরী না হয়
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ تِلۡكَ ٱلدَّارُ ٱلۡأٓخِرَةُ نَجۡعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوّٗا فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فَسَادٗاۚ وَٱلۡعَٰقِبَةُ لِلۡمُتَّقِينَ ٨٣ ﴾ [القصص: ٨٣]
অর্থাৎ “এটি আখেরাতের আবাস; যা আমি নির্ধারিত করি তাদেরই জন্য যারা এ পৃথিবীতে উদ্ধত হতে ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায় না। আর মুত্তাকীদের জন্যই শুভ পরিণাম।” (সূরা ক্বাসাস ৮৩ আয়াত)
1/679 وَعَن أَبي سَعِيدٍ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « يَا عَبْدَ الرَّحمَانِ بنَ سَمُرَةَ، لاَ تَسْأَلِ الإمَارَةَ ؛ فَإِنّكَ إِنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ غَيْرِ مَسْألَةٍ أُعِنْتَ عَلَيْهَا، وَإنْ أُعْطِيتَهَا عَنْ مَسْألَةٍ وُكِلْتَ إِلَيْهَا، وَإِذَا حَلَفْتَ عَلَى يَمِينٍ، فَرَأيْتَ غَيْرَهَا خَيْراً مِنْهَا، فَأتِ الَّذِي هُوَ خَيْرٌ وَكَفِّرْ عَنْ يَمِينكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৭৯। আবূ সা‘ঈদ আব্দুর রহমান ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুর রহমান ইবন সামুরাহ! তুমি সরকারী পদ চেয়ো না। কারণ তুমি যদি তা না চেয়ে পাও, তাহলে তাতে তোমাকে সাহায্য করা হবে। আর যদি তুমি তা চাওয়ার কারণে পাও, তাহলে তা তোমাকে সঁপে দেওয়া হবে। (এবং তাতে আল্লাহর সাহায্য পাবে না।) আর যখন তুমি কোন কথার উপর কসম খাবে, অতঃপর তা থেকে অন্য কাজ উত্তম মনে করবে, তখন উত্তম কাজটা কর এবং তোমার কসমের কাফফারা দিয়ে দাও।’’ (বুখারী-মুসলিম)
2/680 وَعَن أَبي ذرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا أَبَا ذَرٍّ، إنِّي أرَاكَ ضَعِيفاً، وَإنِّي أُحِبُّ لَكَ مَا أُحِبُّ لِنَفْسِي . لاَ تَأَمَّرَنَّ عَلَى اثْنَيْنِ، وَلاَ تَوَلَّيَنَّ مَالَ يَتِيمٍ ». رواه مسلم
২/৬৮০। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! আমি তোমাকে দুর্বল দেখছি এবং আমি তোমার জন্য তাই ভালবাসি, যা আমি নিজের জন্য ভালবাসি। (সুতরাং) তুমি অবশ্যই দু’জনের নেতা হয়ো না এবং এতীমের মালের তত্ত্বাবধায়ক হয়ো না।’’ (মুসলিম)
3/681وَعَنهُ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ألا تَسْتَعْمِلُني ؟ فَضَرَبَ بِيَدِهِ عَلَى مَنْكِبِي، ثُمَّ قَالَ: « يَا أَبَا ذَرٍّ، إنَّكَ ضَعِيفٌ، وَإِنَّهَا أَمَانَةٌ، وَإنَّهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ خِزْيٌ وَنَدَامَةٌ، إِلاَّ مَنْ أخَذَهَا بِحَقِّهَا، وَأدَّى الَّذِي عَلَيْهِ فِيهَا ». رواه مسلم
৩/৬৮১। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ রসূল! আপনি আমাকে (কোন স্থানের সরকারী) কর্মচারী কেন নিযুক্ত করছেন না?’ তিনি নিজ হাত আমার কাঁধের উপর মেরে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! তুমি দুর্বল এবং (এ পদ) আমানত ও এটা কিয়ামতের দিন অপমান ও অনুতাপের কারণ হবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তা হকের সাথে (যোগ্যতার ভিত্তিতে) গ্রহণ করল এবং নিজ দায়িত্ব (যথাযথভাবে) পালন করল (তার জন্য এ পদ লজ্জা ও অনুতাপের কারণ নয়)।’’ (মুসলিম)
4/682 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إنَّكُمْ سَتَحْرِصُونَ عَلَى الإمَارَةِ، وَسَتَكونُ نَدَامَةً يَوْمَ القِيَامَةِ ». رواه البخاري
৪/৬৮২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অতি সত্বর নেতৃত্বের লোভ করবে। (কিন্তু স্মরণ রাখো) এটি কিয়ামতের দিন অনুতাপের কারণ হবে। (বুখারী)
82- بَابُ حَثِّ السُّلْطَانِ وَالْقَاضِيْ وَغَيْرِهِمَا مِنْ وُلَاةِ الْأُمُوْرِ
عَلٰى اِتِّخَاذِ وَزِيْرٍ صَالِحٍ وَتَحْذِيْرِهِمْ مِنْ قُرَنَاءِ السُّوْءِ وَالْقُبُوْلِ مِنْهُمْ
পরিচ্ছেদ - ৮২: বাদশাহ, বিচারক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে সৎ মন্ত্রী ও উপদেষ্টা নিযুক্ত করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং তাদেরকে খারাপ সঙ্গী থেকে ও তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা থেকে ভীতি-প্রদর্শন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱلۡأَخِلَّآءُ يَوۡمَئِذِۢ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوٌّ إِلَّا ٱلۡمُتَّقِينَ ٦٧ ﴾ [الزخرف: ٦٧]
অর্থাৎ “বন্ধুরা সেদিন একে অপরের শত্রু হয়ে পড়বে, তবে আল্লাহ সচেতন ব্যক্তিরা নয়।” (সূরা যুখরুফ ৬৭ আয়াত)
5/683 وَعَن أَبي سَعِيدٍ وَأَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَا بَعَثَ اللهُ مِنْ نَبِيٍّ، وَلاَ اسْتَخْلَفَ مِنْ خَلِيفَةٍ إِلاَّ كَانَتْ لَهُ بِطَانَتَانِ: بِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بِالمَعْرُوفِ وتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَبِطَانَةٌ تَأمُرُهُ بِالشَّرِّ وَتَحُضُّهُ عَلَيْهِ، وَالمَعْصُومُ مَنْ عَصَمَ اللهُ ». رواه البخاري
১/৬৮৩। আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখনই কোন নবী প্রেরণ করেন এবং কোন খলীফা নির্বাচিত করেন, তখনই তাঁর জন্য দু’জন সঙ্গী নিযুক্ত করে দেন। একজন সঙ্গী তাঁকে ভাল কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর দ্বিতীয়জন সঙ্গী তাঁকে মন্দ কাজের নির্দেশ দেয় এবং তার প্রতি উৎসাহিত করে। আর রক্ষা পান কেবলমাত্র তিনিই, যাকে আল্লাহ রক্ষা করেন।’’ (বুখারী)
6/684 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا أرَادَ اللهُ بِالأَمِيرِ خَيْراً، جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ صِدقٍ، إنْ نَسِيَ ذَكَّرَهُ، وَإنْ ذَكَرَ أعَانَهُ، وَإِذَا أرَادَ بِهِ غَيْرَ ذَلِكَ جَعَلَ لَهُ وَزِيرَ سُوءٍ، إنْ نَسِيَ لَمْ يُذَكِّرْهُ، وَإنْ ذَكَرَ لَمْ يُعِنْهُ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ عَلَى شرط مسلم
২/৬৮৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন আল্লাহ কোন শাসকের মঙ্গল চান, তখন তিনি তার জন্য সত্যনিষ্ঠ (শুভাকাঙ্ক্ষী) মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক (কোন কথা) ভুলে গেলে সে তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে। আর যখন আল্লাহ তার অন্য কিছু (অমঙ্গল) চান, তখন তার জন্য মন্দ মন্ত্রী নিযুক্ত করে দেন। শাসক বিস্মৃত হলে সে তাকে স্মরণ করিয়ে দেয় না এবং স্মরণ থাকলে তার সাহায্য করে না।’’ (আবূ দাঊদ উত্তম সূত্রে মুসলিমের শর্তে)
83- بَابُ النَّهْيِ عَنْ تَوَلِّيَةِ الْإِمَارَةِ وَالْقَضَاءِ وَغَيْرِهِمَا
مِنَ الْوَلَايَاتِ لِمَنْ سَأَلَهَا أَوْ حَرَصَ عَلَيْهَا فَعَرَّضَ بِهَا
পরিচ্ছেদ - ৮৩: যে ব্যক্তি নেতা, বিচারক অথবা অন্যান্য সরকারী পদ চাইবে অথবা পাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করবে অথবা তার জন্য ইঙ্গিত করবে তাকে পদ দেওয়া নিষেধ
1/685 عَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبيِّ ﷺ أنَا وَرَجُلاَنِ مِنْ بَنِي عَمِّي، فَقَالَ أحَدُهُمَا: يَا رَسُولَ اللهِ! أمِّرْنَا عَلَى بَعْضِ مَا وَلاَّكَ اللهُ - عز وجل -، وَقَالَ الآخَرُ مِثلَ ذَلِكَ، فَقَالَ: « إنَّا وَاللهِ لاَ نُوَلِّي هَذَا العَمَلَ أحَداً سَألَهُ، أَوْ أحَداً حَرَصَ عَلَيْهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৮৫। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন যে, আমি এবং আমার চাচাতো দু’ভাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম। সে দু’জনের মধ্যে একজন বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আপনাকে যে সব শাসন-ক্ষমতা দান করেছেন, তার মধ্যে কিছু (এলাকার) শাসনভার আমাকে প্রদান করুন।’ দ্বিতীয়জনও একই কথা বলল। উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহর কসম! যে সরকারী পদ চেয়ে নেয় অথবা তার প্রতি লোভ রাখে, তাকে অবশ্যই আমরা এ কাজ দিই না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
كِتَابُ الْأَدَب
অধ্যায় (১): শিষ্টাচার
84- بَابُ الْحَيَاءِ وَفَضْلِهِ وَالْحَثِّ عَلَى التَّخَلُقِّ بِهِ
পরিচ্ছেদ - ৮৪: লজ্জাশীলতা ও তার মাহাত্ম্য এবং এ গুণে গুণান্বিত হওয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান
1/686 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ مَرَّ عَلَى رَجُلٍ مِنَ الأنْصَار وَهُوَ يَعِظُ أخَاهُ في الحَيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « دَعْهُ، فَإنَّ الْحَيَاءَ مِنَ الإيمَانِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৮৬। ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসার ব্যক্তির পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। যিনি তার ভাইকে লজ্জার ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তাকে ছেড়ে দাও। কেননা, লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/687 وَعَن عِمرَانَ بنِ حُصَينٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « الْحَيَاءُ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسلِمٍ: « اَلحَيَاءُ خَيْرٌ كُلُّهُ ». أَوْ قَالَ: « الْحَيَاءُ كُلُّهُ خَيْرٌ » .
২/৬৮৭। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লজ্জা মঙ্গলই বয়ে আনে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, “লজ্জা মঙ্গলই সবটুকু” অথবা বলেছেন, ‘‘লজ্জার সবটুকু মঙ্গলই মঙ্গল”।
(বিঃদ্রঃ কিন্তু গুপ্ত সমস্যায় শরীয়তের সমাধান জানার ব্যাপারে লজ্জা করা ঠিক নয়।)
3/688 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « الإيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ شُعْبَةً: فَأفْضَلُهَا قَوْلُ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ الله، وَأدْنَاهَا إمَاطَةُ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الإيمَانِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৬৮৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ঈমানের সত্তর অথবা ষাট অপেক্ষা কিছু বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোত্তম শাখা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন শাখা পথ থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
* কষ্টদায়ক জিনিস যেমন, ঢেলা, পাথর, পোড়া কয়লা, ভাঙ্গা কাঁচ, কাঁটা, গাছের ডাল, নোংরা জিনিস ইত্যাদি, যাতে পথিক কষ্ট পায়।
4/689 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ أشَدَّ حَيَاءً مِنَ العَذْرَاءِ في خِدْرِهَا، فَإذَا رَأَى شَيْئاً يَكْرَهُهُ عَرَفْنَاهُ في وَجْهِه . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৬৮৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তঃপুরবাসিনী কুমারীর চেয়েও বেশি লজ্জাশীল ছিলেন। যখন তিনি কোন জিনিস অপছন্দ করতেন আমরা তাঁর চেহারায় তা বুঝতে পারতাম।’ (বুখারী ও মুসলিম)
আলেমগণ বলেন, ‘লজ্জাশীলতার প্রকৃতত্ব হল এমন সৎচরিত্রতা, যা নোংরা বর্জন করতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে এবং অধিকারীর অধিকার আদায়ে ত্রুটি প্রদর্শন করতে বিরত রাখে।
আবুল কাসেম জুনাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, ‘লজ্জাশীলতা হল, নিয়ামত লক্ষ্য করা এবং সেই সাথে (তার কৃতজ্ঞতায়) ত্রুটি লক্ষ্য করা। এই দুয়ের মাঝে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তাকেই লজ্জা বলা হয়।’
85- بَابُ حِفْظِ السِّرِّ
পরিচ্ছেদ - ৮৫: গোপনীয়তা রক্ষা করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا﴾ [الاسراء: ٣٤]
অর্থাৎ “প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ৩৪ আয়াত)
1/690 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ مِنْ أشَرِّ النَّاسِ عِنْدَ اللهِ مَنْزِلَةً يَوْمَ القِيَامَةِ الرَّجُلَ يُفْضِي إِلَى الْمَرْأةِ وتُفْضِي إِلَيْهِ، ثُمَّ يَنْشُرُ سِرَّهَا » رواه مسلم
১/৬৯০। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সেই ব্যক্তি হবে, যে স্ত্রীর সঙ্গে মিলন করে এবং স্ত্রী তার সঙ্গে মিলন করে। অতঃপর সে তার (স্ত্রীর) গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়।’’ (মুসলিম)
2/691 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ عُمَرَ رضي الله عنه حِيْنَ تأيَّمَتْ بِنْتُهُ حَفْصَةُ، قَالَ: لَقِيتُ عُثْمَانَ بْنَ عَفّانَ رضي الله عنه، فَعَرَضْتُ عَلَيْهِ حَفْصَةَ، فَقُلْتُ: إنْ شِئْتَ أَنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بِنْتَ عُمَرَ ؟ قَالَ: سأنْظُرُ فِي أمْرِي . فَلَبِثْتُ لَيَالِيَ ثُمَّ لَقِيَنِي، فَقَالَ: قَدْ بَدَا لِي أنْ لاَ أتَزَوَّجَ يَوْمِي هَذَا . فَلَقِيتُ أَبَا بَكْرٍ رضي الله عنه، فَقُلتُ: إنْ شِئْتَ أنْكَحْتُكَ حَفْصَةَ بنْتَ عُمَرَ، فَصَمتَ أَبُو بَكْرٍ رضي الله عنه، فَلَمْ يَرْجِعْ إلَيَّ شَيْئاً ! فَكُنْتُ عَلَيْهِ أوْجَدَ مِنِّي عَلَى عُثْمَانَ، فَلَبِثَ لَيَالِيَ ثُمَّ خَطَبَهَا النَّبيُّ ﷺ، فَأنْكَحْتُهَا إيَّاهُ. فَلَقِيَنِي أَبُو بَكْرٍ، فَقَالَ: لَعَلَّكَ وَجَدْتَ عَلَيَّ حِيْنَ عَرَضْتَ عَلَيَّ حَفْصَةَ فَلَمْ أرْجِعْ إِلَيْكَ شَيْئاً؟ فَقُلتُ: نَعَمْ، قَالَ: فَإنَّهُ لَمْ يَمْنَعْنِي أَنْ أرْجِعَ إِلَيْكَ فِيمَا عَرَضْتَ عَلَيَّ إِلاَّ أنِّي كُنْتُ عَلِمْتُ أنَّ النبيَّ ﷺ ذَكَرَهَا، فَلَمْ أكُنْ ِلأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ الله ﷺ، وَلَوْ تَرَكَهَا النَّبيُّ ﷺ لَقَبِلْتُهَا . رواه البخاري
২/৬৯১। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। যখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কন্যা হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বিধবা হয়ে গেলেন, তখন তিনি বললেন যে, আমি ‘উসমান ইবনে ‘আফ্ফানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম এবং হাফসাকে বিবাহ করার জন্য দরখাস্ত দিয়ে তাঁকে বললাম, ‘আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বিবাহ আমি উমারের কন্যা হাফসার সাথে দিয়ে দিচ্ছি?’ তিনি বললেন, ‘আমি আমার (এ) ব্যাপারে বিবেচনা করব।’ সুতরাং আমি কয়েকটি রাত্রি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর তিনি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘আমার এখন বিয়ে না করাটাই ভাল মনে করছি।’ (উমার বলেন,) অতঃপর আমি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর সাথে দেখা করে বললাম, ‘যদি আপনি ইচ্ছা করেন, তাহলে আমি আপনার বিবাহ হাফসার সাথে দিয়ে দিই।’ আবূ বকর চুপ থাকলেন এবং কোন উত্তর দিলেন না। সুতরাং আমি ‘উসমান অপেক্ষা তাঁর প্রতি বেশী দুঃখিত হলাম। তারপর কয়েকটি রাত্রি অপেক্ষা করলাম। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং তাকে বিবাহের পায়গাম দিলেন। ফলে আমি হাফসার বিবাহ তাঁর সাথেই দিয়ে দিলাম। তারপর আবূ বকর আমার সাথে সাক্ষাৎ করে বললেন, ‘আপনি আমাকে হাফসাকে বিবাহ করার দরখাস্ত দিয়েছিলেন এবং আমি কোন উত্তর দিইনি। সেজন্য হয়তো আপনি আমার উপর দুঃখিত হয়েছেন? আমি বললাম, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘আমার আপনাকে উত্তর না দেওয়ার কারণ এই ছিল যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বিবাহ করার ব্যাপারে আলোচনা করেছিলেন। সুতরাং আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাফসাকে বর্জন করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই আমি তাকে গ্রহণ করতাম।’ (বুখারী)
3/692 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كُنَّ أَزْوَاجُ النَّبيِّ ﷺ عِنْدَهُ، فَأقْبَلَتْ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا تَمْشِي، مَا تُخْطِئُ مِشيتُهَا مِنْ مشْيَةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ شَيْئاً، فَلَمَّا رَآهَا رَحَّبَ بِهَا، وَقَالَ: «مَرْحَباً بابْنَتِي »، ثُمَّ أجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ سَارَّهَا فَبَكتْ بُكَاءً شَدِيداً، فَلَمَّا رَأَى جَزَعَهَا، سَارَّهَا الثَّانِيَةَ فَضَحِكَتْ، فَقُلتُ لَهَا: خَصَّكِ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ بَيْنِ نِسَائِهِ بِالسِّرَارِ، ثُمَّ أنْتِ تَبْكِينَ ! فَلَمَّا قَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ سَألْتُهَا: مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ اللهِ ﷺ ؟ قَالَتْ: مَا كُنْتُ لأُفْشِي عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ سِرَّهُ، فَلَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ ﷺ قُلْتُ: عَزَمْتُ عَلَيْكِ بِمَا لِي عَلَيْكِ مِنَ الحَقِّ، لَمَا حَدَّثْتِنِي مَا قَالَ لَكِ رَسُولُ اللهِ ﷺ ؟ فَقَالَتْ: أمَّا الآنَ فَنَعَمْ، أمَّا حِيْنَ سَارَّنِي في المَرَّةِ الأُولَى فَأَخْبَرَنِي أَنَّ جِبْريلَ كَانَ يُعَارِضُهُ القُرآنَ فِي كُلِّ سَنَةٍ مَرَّةً أَوْ مَرَّتَيْنِ، وَأنَّهُ عَارَضَهُ الآنَ مَرَّتَيْنِ، وَإنِّي لا أُرَى الأجَلَ إِلاَّ قَدِ اقْتَرَبَ، فَاتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِي، فَإِنَّهُ نِعْمَ السَّلَفُ أنَا لَكِ، فَبَكَيْتُ بُكَائِي الَّذِي رَأيْتِ، فَلَمَّا رَأى جَزَعِي سَارَّنِي الثَّانِيَةَ، فَقَالَ: « يَا فَاطِمَةُ، أمَا تَرْضَيْنَ أنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ المُؤُمِنِينَ، أَوْ سَيَّدَةَ نِساءِ هذِهِ الأُمَّةِ ؟ » فَضَحِكتُ ضَحِكِي الَّذِي رَأيْتِ . متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلم
৩/৬৯২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীরা সকলেই তাঁর কাছে ছিল। ইত্যবসরে ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেঁটে (আমাদের নিকট) এল। তার চলন এবং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চলনের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে স্বাগত জানালেন এবং বললেন, ‘আমার কন্যার শুভাগমন হোক।’ অতঃপর তিনি তাকে নিজের ডান অথবা বাম পাশে বসালেন। তারপর তিনি তাকে কানে কানে গোপনে কিছু বললেন। ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জোরেশোরে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। সুতরাং তিনি তার অস্থিরতা দেখে পুনর্বার তাকে কানে কানে কিছু বললেন। ফলে (এবার) সে হাসতে লাগল। (আয়েশা বলেন,) অতঃপর আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর স্ত্রীদের মাঝে (তাদেরকে বাদ দিয়ে) তোমাকে গোপনে কিছু বলার জন্য বেছে নেওয়া সত্ত্বেও তুমি কাঁদছ?’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উঠে গেলেন, তখন আমি তাকে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বললেন?’ সে বলল, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গোপন কথা প্রকাশ করব না।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করলে আমি ফাতেমাকে বললাম, ‘তোমার প্রতি আমার অধিকার রয়েছে। তাই আমি তোমাকে কসম দিয়ে বলছি যে, তুমি আমাকে বল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে কী বলেছিলেন?’ সে বলল, ‘এখন বলতে কোন অসুবিধা নেই।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমবারে কানাকানি করার সময় আমাকে সংবাদ দিয়েছিলেন যে, ‘‘জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম প্রত্যেক বছর একবার (অথবা দু’বার) করে কুরআন শোনান। কিন্তু এখন তিনি দু’বার শুনালেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারছি যে, আমার মৃত্যু সন্নিকটে। সুতরাং তুমি (হে ফাতেমা!) আল্লাহকে ভয় করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। কেননা, আমি তোমার জন্য উত্তম অগ্রগামী।’’ সুতরাং আমি (এ কথা শুনে) কেঁদে ফেললাম, যা তুমি দেখলে। অতঃপর তিনি আমার অস্থিরতা দেখে দ্বিতীয়বার কানে কানে বললেন, ‘‘হে ফাতেমা! তুমি কি এটা পছন্দ কর না যে, মু’মিন নারীদের তুমি সর্দার হবে অথবা এই উম্মতের নারীদের সর্দার হবে?’’ সুতরাং (এমন সুসংবাদ শুনে) আমি হাসলাম, যা তুমি দেখলে।’ (বুখারী, শব্দাবলী মুসলিমের)
4/693 وَعَن ثَابِتٍ، عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: أتَى عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأنَا ألْعَبُ مَعَ الغِلْمَانِ، فَسَلمَ عَلَيْنَا، فَبَعَثَني إِلَى حَاجَةٍ، فَأبْطَأتُ عَلَى أُمِّي . فَلَمَّا جِئْتُ، قَالَتْ: مَا حَبَسَكَ ؟ فَقُلتُ: بَعَثَني رَسُولُ الله ﷺ لِحَاجَةٍ، قَالَتْ: مَا حَاجَتُهُ ؟ قُلْتُ: إنَّهاَ سِرٌّ . قَالَتْ: لاَ تُخْبِرَنَّ بِسرِّ رَسُولِ اللهِ ﷺ أحَداً، قَالَ أنَسٌ: وَاللهِ لَوْ حَدَّثْتُ بِهِ أحَداً لَحَدَّثْتُكَ بِهِ يَا ثَابِتُ . رواه مسلم وروى البخاري بعضه مختصراً.
৪/৬৯৩। সাবেত হতে বর্ণিত, আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন যখন আমি বালকদের সাথে খেলা করছিলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে সালাম দিয়ে আমাকে কোন কাজে পাঠালেন। সুতরাং আমার মায়ের নিকট আসতে বিলম্ব হয়ে গেল। তারপর যখন আমি (বাড়ি) এলাম, তখন মা বললেন, ‘কিসে তোমাকে আটকে রেখেছিল?’ আমি বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে কোন প্রয়োজনে পাঠিয়েছিলেন।’ মা বললেন, ‘তাঁর কী প্রয়োজন ছিল?’ আমি বললাম, ‘সেটা তো ভেদের কথা।’ তিনি বললেন, ‘তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভেদ খবরদার (কাউকে) বলবে না।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি আমি (এ ভেদ) কাউকে বলতাম, তাহলে তোমাকে বলতাম হে সাবেত!’ (মুসলিম, বুখারী সংক্ষেপে)
86- بَابُ الْوَفَاءِ بِالْعَهْدِ وَإِنْجَازِ الْوَعْدِ
পরিচ্ছেদ - ৮৬: চুক্তি পূরণ, প্রতিশ্রুতি রক্ষা ও অঙ্গীকার
পালন করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَوۡفُواْ بِٱلۡعَهۡدِۖ إِنَّ ٱلۡعَهۡدَ كَانَ مَسُۡٔولٗا﴾ [الاسراء: ٣٤]
অর্থাৎ “আর প্রতিশ্রুতি পালন করো; নিশ্চয়ই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (সূরা বানী ইস্রাঈল ৩৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَأَوۡفُواْ بِعَهۡدِ ٱللَّهِ إِذَا عَٰهَدتُّمۡ ﴾ [النحل: ٩١]
অর্থাৎ “তোমরা যখন পরস্পর অঙ্গীকার কর তখন আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ কর।” (সূরা নাহ্ল ৯১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَوۡفُواْ بِٱلۡعُقُودِۚ ﴾ [المائدة: ١]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা চুক্তিসমূহ পূর্ণ কর।” (সূরা মাইদাহ ১ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٢ كَبُرَ مَقۡتًا عِندَ ٱللَّهِ أَن تَقُولُواْ مَا لَا تَفۡعَلُونَ ٣ ﴾ [الصف: ٢، ٣]
অর্থাৎ “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যা কর না, তা তোমরা বল কেন? তোমরা যা কর না তোমাদের তা বলা আল্লাহর নিকট অতিশয় অসন্তোষজনক।” (সূরা স্বাফ্ফ ২-৩ আয়াত)
1/694 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « آيَةُ المُنَافِقِ ثَلاَثٌ: إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ، وَإِذَا وَعَدَ أخْلَفَ، وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ». متفقٌ عَلَيْهِ .
زَادَ في رِوَايةٍ لمسلم: « وإنْ صَامَ وَصَلَّى وَزَعَمَ أنَّهُ مُسْلِمٌ » .
১/৬৯৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুনাফিকের চিহ্ন হল তিনটি (১) কথা বললে মিথ্যা বলে। (২) ওয়াদা করলে তা খেলাপ করে। এবং (৩) আমানত রাখা হলে তাতে খিয়ানত করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যদিও সে রোযা রাখে এবং নামায পড়ে ও ধারণা করে যে, সে মুসলিম।’’
২/৬৯৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যার মধ্যে চারটি স্বভাব পাওয়া যাবে, সে খাঁটি মুনাফেক হয়ে যাবে। আর যার মধ্যে এগুলোর একটি স্বভাব থাকবে, তার মধ্যে মুনাফেকীর একটি স্বভাব থেকে যাবে; যতক্ষণ না সে তা বর্জন করবে। (১) তাকে আমানত দেওয়া হলে সে খিয়ানত করবে। (২) কথা বললে মিথ্যা বলবে। (৩) ওয়াদা করলে খেলাপ করবে। এবং (৪) ঝগড়া করলে গালি-গালাজ করবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
৩/৬৯৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘বাহরাইন থেকে মাল এলে তোমাকে এতটা, এতটা এবং এতটা দেব।’’ অতঃপর বাহরাইনের মাল আসার পূর্বেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন। তারপর বাহরাইনের মাল এসে গেলে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঘোষণা করলেন, ‘যার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট প্রাপ্য কোন প্রতিশ্রুতি অথবা ঋণ আছে, সে আমার নিকট আসুক।’ (ঘোষণা শুনে) আমি (জাবের) তাঁকে বললাম যে, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এতটা মাল দেওয়ার ওয়াদা করেছিলেন।’ অতঃপর তিনি আঁজলা ভরে আমাকে দিলেন। আমি তা গুণে পাঁচশ’ পেলাম। তারপর তিনি বললেন, ‘এর দ্বিগুণ আরো নাও।’ (বুখারী ও মুসলিম)
87- بَابُ الْأَمْرِ بِالْمُحَافَظَةِ عَلٰى مَا اِعْتَادَهُ مِنَ الْخَيْرِ
পরিচ্ছেদ ৮৭: সদাচার অব্যাহত রাখার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ ﴾ [الرعد: ١١]
অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না; যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে।” (সূরা রা’দ ১১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّتِي نَقَضَتۡ غَزۡلَهَا مِنۢ بَعۡدِ قُوَّةٍ أَنكَٰثٗا﴾ [النحل: ٩٢]
অর্থাৎ “তোমরা সে নারীর মত হয়ো না, যে তার সুতা মজবুত করে পাকাবার পর ওর পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।” (সূরা নাহ্ল ৯২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَا يَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ مِن قَبۡلُ فَطَالَ عَلَيۡهِمُ ٱلۡأَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوبُهُمۡۖ ﴾ [الحديد: ١٦]
অর্থাৎ “পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের মত তারা হবে না বহুকাল অতিক্রান্ত হয়ে গেলে যাদের অন্তর কঠিন হয়ে পড়েছিল।” (সূরা হাদীদ ১৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿فَمَا رَعَوۡهَا حَقَّ رِعَايَتِهَاۖ ﴾ [الحديد: ٢٧]
অর্থাৎ “এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি।” (সূরা হাদীদ ২৭ আয়াত)
1/697 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا عبْدَ اللهِ ! لاَ تَكُنْ مِثْلَ فُلانٍ، كَانَ يَقُومُ اللَّيْلَ فَتَرَكَ قِيَامَ اللَّيْلِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৯৭। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাকে বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুকের মত হয়ো না, যে রাত্রে উঠে ইবাদত করত, অতঃপর সে রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায ছেড়ে দিয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
88- بَابُ اِسْتِحْبَابِ طِيْبِ الْكَلَامِ وَطَلَاقَةِ الْوَجْهِ عِنْدَ اللِّقَاءِ
পরিচ্ছেদ - ৮৮: মিষ্টি কথা বলা এবং হাসি মুখে সাক্ষাৎ করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ۡ وَٱخۡفِضۡ جَنَاحَكَ لِلۡمُؤۡمِنِينَ ﴾ [الحجر: ٨٨]
অর্থাৎ “মু’মিনদের জন্য তুমি তোমার বাহুকে অবনমিত রাখ।” (সূরা হিজ্র ৮৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَوۡ كُنتَ فَظًّا غَلِيظَ ٱلۡقَلۡبِ لَٱنفَضُّواْ مِنۡ حَوۡلِكَۖ ﴾ [ال عمران: ١٥٩]
অর্থাৎ “আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি হয়েছিলে কোমল-হৃদয়; যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর চিত্ত হতে তাহলে তারা তোমার আশপাশ হতে সরে পড়ত।” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)
1/698 وَعَن عَدِيِّ بنِ حَاتِمٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৬৯৮। আদী ইবনে হাতেম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি আধখানা খেজুর দান করে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে পার তবুও বাঁচ। যদি কোন ব্যক্তি এটাও না পায়, তাহলে সে যেন ভাল কথা বলে বাঁচে। (বুখারী ও মুসলিম)
2/699 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « وَالكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৬৯৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভাল কথা বলাও সাদকাহ। (বুখারী ও মুসলিম, বিস্তারিত হাদীস পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।)
3/700 وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئاً، وَلَوْ أنْ تَلْقَى أخَاكَ بوَجْهٍ طَلْقٍ». رواه مسلم
৩/৭০০। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি কোন ভাল কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’’ (মুসলিম) (অর্থাৎ মুসলিম ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি ভালো কাজ।)
89- اِسْتِحْبَابِ بَيَانِ الْكَلَامِ وَإِيْضَاحِهِ لِلْمُخَاطَبِ
وَتَكْرِيْرِهِ لِيَفْهَمَ إِذَا لَمْ يَفْهَمْ إِلَّا بِذٰلِكَ
পরিচ্ছেদ - ৮৯: কথা স্পষ্ট করে বলা এবং সম্বোধিত ব্যক্তি বুঝতে না পারলে একটি কথাকে বারবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলা উত্তম
1/701 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّ النَّبيَّ ﷺ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةً أعَادَهَا ثَلاَثاً حَتَّى تُفْهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثاً . رواه البخاري
১/৭০১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন কথা বুঝাবার জন্য তিনবার করে বলতেন এবং কোন সম্প্রদায়ের নিকট এলে তিনবার সালাম দিতেন। (বুখারী)
* (কথা জটিল হলে প্রয়োজনে তিনবার ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলতেন। আর সভা বড় হলে অথবা কতক মানুষ শুনতে না পেলে অথবা প্রবেশ-অনুমতি নিতে হলে তিনবার সালাম দিতেন।)
2/702 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ كَلاَمُ رَسُولِ اللهِ ﷺ كَلاماً فَصْلاً يَفْهَمُهُ كُلُّ مَنْ يَسْمَعُهُ . رواه أَبُو داود
২/৭০২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘আনহা বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা স্পষ্ট ছিল, সব শ্রোতাই তা বুঝে ফেলত।’ (আবূ দাঊদ)
90- إِصْغَاءِ الْجَلِيْسِ لِحَدِيْثِ جَلِيْسِهِ الَّذِيْ لَيْسَ بِحَرَامٍ
وَّاِسْتِنْصَاتِ الْعَالِمِ وَالْوَاعِظِ حَاضِرِيْ مَجْلِسِهِ
পরিচ্ছেদ - ৯০: সঙ্গীর বৈধ কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা, আলেম ও বক্তার সভায় সমবেত জনগণকে চুপ থাকতে অনুরোধ করা
1/703 عَن جَرِيرِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي حَجَّةِ الْوَدَاعِ: «اِسْتَنْصِتِ النَّاسَ» ثُمَّ قَالَ: «لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفّاراً يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭০৩। জারীর ইবনে ‘আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জ্বে আমাকে বললেন, ‘‘সমবেত জনগণকে চুপ করতে বল।’’ তারপর বললেন, ‘‘আমার পর তোমরা কাফের হয়ে ফিরো না যে, একে অন্যের গর্দান কর্তনে প্রবৃত্ত হবে।’’ (অর্থাৎ নিজেদের মধ্যে খুনাখুনি ও হানাহানিতে জড়িয়ে পড়ো না)। (বুখারী-মুসলিম)
91- الْوَعْظُ وَالْاِقْتِصَادُ فِيْهِ
পরিচ্ছেদ - ৯১: ওয়ায-নসীহত এবং তাতে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করার বিবরণ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ٱدۡعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِٱلۡحِكۡمَةِ وَٱلۡمَوۡعِظَةِ ٱلۡحَسَنَةِۖ ﴾ [النحل: ١٢٥]
অর্থাৎ “তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা।” (সূরা নাহ্ল ১২৫ আয়াত)
১/৭০৪। আবূ ওয়ায়েল শাক্বীক্ব ইবনে সালামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রত্যেক বৃহস্পতিবারে আমাদেরকে নসীহত শুনাতেন। একটি লোক তাঁকে নিবেদন করল, ‘হে আবূ আব্দুর রহমান! আমার বাসনা এই যে, আপনি আমাদেরকে যদি প্রত্যেক দিন নসীহত শুনাতেন (তো ভাল হত)।’ তিনি বললেন, ‘স্মরণে রাখবে, আমাকে এতে বাধা দিচ্ছে এই যে, আমি তোমাদেরকে বিরক্ত করতে অপছন্দ করি। আমি নসীহতের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি ঠিক ঐভাবে লক্ষ্য রাখছি, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বিরক্ত হবার আশংকায় উক্ত বিষয়ে আমাদের প্রতি লক্ষ্য রাখতেন।’ (অর্থাৎ মাঝে-মধ্যে বিশেষ প্রয়োজন মাফিক নসীহত শুনাতেন।) (বুখারী-মুসলিম)
2/705 وَعَن أَبي اليَقَظَانِ عَمَّارِ بنِ يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ الله ِﷺ، يَقُولُ: «إنَّ طُولَ صَلاَةِ الرَّجُلِ، وَقِصَرَ خُطْبَتِهِ، مَئِنَّةٌ مِنْ فِقهِهِ، فَأَطِيلُوا الصَّلاَةَ وَأقْصِرُوا الْخُطْبَةَ ». رواه مسلم
২/৭০৫। আবুল ইয়াক্বাযান ‘আম্মার ইবনে ইয়াসের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘মানুষের (জুম‘আর) দীর্ঘ নামায ও তার সংক্ষিপ্ত খুতবা তার শরয়ী জ্ঞানের পরিচায়ক। অতএব তোমরা নামায লম্বা কর এবং খুতবা ছোট কর।’’ (মুসলিম)
3/706 وَعَن مُعاوِيَةَ بنِ الحَكَمِ السُّلَمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَا أنَا أُصَلّي مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، إذْ عَطَسَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَقُلْتُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَرَمَانِي القَوْمُ بِأبْصَارِهِمْ ! فَقُلْتُ: وَاثُكْلَ أُمِّيَاهُ، مَا شَأنُكُمْ تَنْظُرُونَ إلَيَّ ؟! فَجَعَلُوا يَضْرِبُونَ بِأَيدِيهِم عَلَى أَفْخَاذِهِمْ ! فَلَمَّا رَأيْتُهُمْ يُصَمِّتُونَنِي لَكِنّي سَكَتُّ، فَلَمَّا صَلّى رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَبِأبِي هُوَ وَأُمِّي، مَا رَأيْتُ مُعَلِّماً قَبْلَهُ وَلاَ بَعْدَهُ أحْسَنَ تَعْلِيماً مِنْهُ، فَوَاللهِ مَا كَهَرَني، وَلاَ ضَرَبَنِي، وَلاَ شَتَمَنِي . قَالَ: « إنَّ هذِهِ الصَّلاَةَ لاَ يَصْلُحُ فِيهَا شَيْءٌ مِنْ كَلامِ النَّاسِ، إنَّمَا هِيَ التَّسْبِيحُ وَالتَّكْبِيرُ، وَقِراءةُ القُرْآنِ »، أَوْ كَمَا قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ . قلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنّي حَدِيثُ عَهْدٍ بِجَاهِلِيَّةٍ، وَقَدْ جَاءَ اللهُ بِالإسْلاَمِ، وَإنَّ مِنّا رِجَالاً يَأتُونَ الْكُهّانَ؟ قَالَ: « فَلاَ تَأتِهِمْ ». قُلْتُ: وَمِنّا رِجَالٌ يَتَطَيَّرُونَ ؟ قَالَ: « ذَاكَ شَيْء يَجِدُونَهُ في صُدُورِهِمْ فَلاَ يَصُدَّنَّهُمْ ». رواه مسلم
৩/৭০৬। মুআবিয়া ইবনে হাকাম সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে নামায পড়ছিলাম। ইত্যবসরে হঠাৎ একজন মুক্তাদীর হাঁচি হলে আমি (তার জবাবে) ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ (আল্লাহ তোমাকে রহম করুন) বললাম। তখন অন্য মুক্তাদীরা আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে লাগল। আমি বললাম, ‘হায়! হায়! আমার মা আমাকে হারিয়ে ফেলুক! তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা আমার দিকে তাকিয়ে দেখছো?’ (এ কথা শুনে) তারা তাদের নিজ নিজ হাত দিয়ে নিজ নিজ উরুতে আঘাত করতে লাগল। তাদেরকে যখন দেখলাম যে, তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে (তখন তো আমার অত্যন্ত রাগ হয়েছিল); কিন্তু আমি চুপ হয়ে গেলাম। অতঃপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায সমাপ্ত করলেন---আমার পিতা-মাতা তাঁর জন্য কুরবান হোক, আমি তাঁর চেয়ে উত্তম শিক্ষাদাতা না আগে দেখেছি আর না এর পরে। আল্লাহর শপথ! তিনি না আমাকে তিরস্কার করলেন, আর না আমাকে মারধর করলেন, আর না আমাকে গালি দিলেন ---তখন তিনি বললেন, ‘‘এই নামাযে লোকদের কোন কথা বলা বৈধ নয়। (এতে যা বলতে হয়,) তা হল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ।’’ অথবা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মত কোন কথা বললেন। আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি জাহেলিয়াতের লাগোয়া সময়ের (নও মুসলিম)। আল্লাহ ইসলাম আনয়ন করেছেন। আমাদের মধ্যে কিছু লোক গণকের কাছে (অদৃষ্ট ও ভবিষ্যৎ জানতে) যায়।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি তাদের কাছে যাবে না।’’ আমি বললাম, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক অশুভ লক্ষণ গ্রহণ করে থাকে।’ তিনি বললেন, ‘‘এটা এমন একটি অনুভূতি যা লোকে তাদের অন্তরে উপলব্ধি করে থাকে। সুতরাং এই অনুভূতি তাদেরকে যেন (বাঞ্ছিত কর্ম সম্পাদনে) বাধা না দেয়।’’ (মুসলিম)
4/707 وَعَن العِرْبَاضِ بنِ سَارِيَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَعَظَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ مَوْعِظَةً وَجِلَتْ مِنْهَا القُلُوبُ، وَذَرَفَتْ مِنْهَا العُيُونُ ... وَذَكَرَ الحَدِيثَ وَقَدْ سَبَقَ بِكَمَالِهِ في باب الأمْر بِالمُحَافَظَةِ عَلَى السُّنَّة، وَذَكَرْنَا أنَّ التَّرْمِذِيَّ، قَالَ: «إنّه حديث حسن صحيح »
৪/৭০৭। ইরবাদ্ব ইবনে সারিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এমন এক মর্মস্পর্শী ভাষণ শুনালেন, যার দ্বারা আমাদের অন্তরসমূহ ভয়ে কেঁপে উঠল এবং চক্ষুসমূহ অশ্রু বিগলিত করতে লাগল।.... অতঃপর ইরবাদ্ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাকী হাদীস বর্ণনা করেছেন, যা সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব পরিচ্ছেদে (১৬১ নম্বরে) পূর্ণরূপে গত হয়েছে। আর আমরা সেখানে উল্লেখ করেছি যে, তিরমিযী বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।
92- بَابُ الْوَقَارِ وَالسَّكِيْنَةِ
পরিচ্ছেদ - ৯২: গাম্ভীর্য ও স্থিরতা অবলম্বন করার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَعِبَادُ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلَّذِينَ يَمۡشُونَ عَلَى ٱلۡأَرۡضِ هَوۡنٗا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ ٱلۡجَٰهِلُونَ قَالُواْ سَلَٰمٗا ٦٣ ﴾ [الفرقان: ٦٢]
অর্থাৎ “পরম দয়াময়ের দাস, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে তখন তারা বলে, ‘সালাম’।” (সূরা ফুরকান ৬৩ আয়াত)
1/708 وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: مَا رَأيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ مُسْتَجْمِعاً قَطُّ ضَاحِكاً حَتَّى تُرَى مِنهُ لَهَوَاتُهُ، إنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ . متفقٌ عَلَيْهِ .
১/৭০৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো এমন উচ্চহাস্য হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর আলজিভ দেখতে পাওয়া যেত। আসলে তিনি মুচকি হাসতেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
93- بَابُ النُّدُبِ إِلٰى إِتْيَانِ الصَّلَاةِ وَالْعِلْمِ وَنَحْوِهِمَا
مِنَ الْعِبَادَاتِ بِالسَّكِيْنَةِ وَالْوَقَارِ
পরিচ্ছেদ - ৯৩: নামায, ইলম শিক্ষা তথা অন্যান্য ইবাদতে ধীর-স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের সাথে গিয়ে যোগদান করা উত্তম
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ ذَٰلِكَۖ وَمَن يُعَظِّمۡ شَعَٰٓئِرَ ٱللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقۡوَى ٱلۡقُلُوبِ ٣٢ ﴾ [الحج: ٣٢]
অর্থাৎ “কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের তাক্বওয়া (সংযমশীলতা)রই বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা হজ্জ্ব ৩২ আয়াত)
1/709 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَلاَ تَأتُوهَا وَأنْتُمْ تَسْعَونَ، وَأتُوهَا وَأنْتُمْ تَمْشُونَ، وَعَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ، فَمَا أدْرَكْتُم فَصَلُّوا، وَمَا فَاتكُمْ فَأَتِمُّوا». متفقٌ عَلَيْهِ
زَادَ مُسلِمٌ في رِوَايةٍ لَهُ: « فَإنَّ أحَدَكُمْ إِذَا كَانَ يَعْمِدُ إِلَى الصَّلاَةِ فَهُوَ في صَلاَةٍ »
১/৭০৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন নামাযের জন্য ইক্বামত (তাকবীর) দেওয়া হয় তখন তোমরা তাতে দৌড়ে আসবে না, বরং তোমরা গাম্ভীর্য-সহকারে স্বাভাবিকরূপে হেঁটে আসবে। তারপর যতটা নামায (ইমামের সাথে) পাবে, পড়ে নেবে। আর যতটা ছুটে যাবে, ততটা (নিজে) পূরণ করে নেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় এ কথা বেশি আছে, ‘‘কারণ তোমাদের কেউ যখন নামাযের উদ্দেশ্যে যায়, সে আসলে নামাযেই থাকে।’’
2/710 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّهُ دَفَعَ مَعَ النَّبيِّ ﷺ يَوْمَ عَرَفَةَ فَسَمِعَ النَّبِيُّ ﷺ وَرَاءهُ زَجْراً شَديداً وَضَرْباً وَصَوْتاً للإِبْلِ، فَأشَارَ بِسَوْطِهِ إلَيْهِمْ، وَقَالَ: «يَا أيُّهَا النَّاسُ، عَلَيْكُمْ بالسَّكِينَةِ، فَإنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بالإيضَاعِ ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه .
২/৭১০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আরাফার দিনে (মুযদালিফা) ফিরছিলেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছন থেকে (উটকে) কঠিন ধমক ও মারধর করার এবং উঁটের (কষ্ট) শব্দ শুনতে পেলেন। তৎক্ষণাৎ তিনি তাদের দিকে আপন চাবুক দ্বারা ইশারা করে বললেন, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা ধীরতা ও স্থিরতা অবলম্বন কর। কেননা, দ্রুত গতিতে বাহন দৌড়ানোতে পুণ্য নেই।’’ (বুখারী ও মুসলিম কিছু অংশ)
94- بَابُ إِكْرَامِ الضَّيْفِ
পরিচ্ছেদ - ৯৪: মেহমানের খাতির করার গুরুত্ব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ هَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ضَيۡفِ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلۡمُكۡرَمِينَ ٢٤ إِذۡ دَخَلُواْ عَلَيۡهِ فَقَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞ قَوۡمٞ مُّنكَرُونَ ٢٥ فَرَاغَ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦ فَجَآءَ بِعِجۡلٖ سَمِينٖ ٢٦ فَقَرَّبَهُۥٓ إِلَيۡهِمۡ قَالَ أَلَا تَأۡكُلُونَ ٢٧ ﴾ [الذاريات: ٢٤، ٢٧]
অর্থাৎ “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, সালাম। উত্তরে সে বলল, সালাম। এরা তো অপরিচিত লোক। অতঃপর ইব্রাহীম সংগোপনে তার স্ত্রীর নিকট গেল এবং একটি (ভুনা) মাংসল বাছুর নিয়ে এল। তা তাদের সামনে রাখল এবং বলল, তোমরা খাচ্ছ না কেন?” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَجَآءَهُۥ قَوۡمُهُۥ يُهۡرَعُونَ إِلَيۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُواْيَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِي ضَيۡفِيٓۖ أَلَيۡسَ مِنكُمۡ رَجُلٞ رَّشِيدٞ ٧٨ ﴾ [هود: ٧٨]
অর্থাৎ “আর তার সম্প্রদায় তার কাছে ছুটে এল এবং তারা পূর্ব হতে কুকর্ম করেই আসছিল; লূত বলল, হে আমার সম্প্রদায়! (তোমাদের ঘরে) আমার এই কন্যারা রয়েছে, এরা তোমাদের জন্য পবিত্রতম। অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে আমার মেহমানদের ব্যাপারে লাঞ্ছিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোন ভালো মানুষ নেই?” (সূরা হুদ ৭৮ আয়াত)
1/711 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ النبيَّ ﷺ، قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَومِ الآخِرِ، فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭১১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের সম্মান করে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/712 وَعَن أَبي شُرَيْح خُوَيْلِدِ بن عَمرٍو الخُزَاعِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ جَائِزَتَهُ» قَالُوا: وَمَا جَائِزَتُهُ ؟ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «يَوْمُهُ وَلَيْلَتُهُ، وَالضِّيَافَةُ ثَلاَثَةُ أيَّامٍ، فَمَا كَانَ وَرَاءَ ذَلِكَ فَهُوَ صَدَقَةٌ عَلَيْهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
وفي رواية لِمسلمٍ: «لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أنْ يُقِيمَ عِنْدَ أخِيهِ حَتَّى يُؤْثِمَهُ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكيْفَ يُؤْثِمُهُ ؟ قَالَ: « يُقِيمُ عِنْدَهُ وَلاَ شَيْءَ لَهُ يُقْرِيه بِهِ » .
২/৭১২। আবূ শুরাইহ খুয়াইলিদ ইবনে ‘আমর খুযা‘য়ী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই মেহমানের পারিতোষিকসহ তার সম্মান করে।’’ লোকেরা বলল, ‘তার পারিতোষিক কী? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘একদিন ও একরাত (উত্তমভাবে পানাহারের ব্যবস্থা করা)। আর সাধারণতঃ মেহমানের খাতির তিন দিন পর্যন্ত। (অতঃপর স্বেচ্ছায় তার চলে যাওয়া উচিত)। তিনদিনের অতিরিক্ত হবে মেযবানের জন্য সাদকাহস্বরূপ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘কোনো মুসলিমের জন্য তার ভাইয়ের নিকট এতটা থাকা বৈধ নয়, যাতে সে তাকে গোনাহগার করে ফেলে।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাকে কিভাবে গোনাহগার করে ফেলে?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এ ওর কাছে থেকে যায়, অথচ ওর এমন কিছু থাকে না, যার দ্বারা সে মেহমানের খাতির করতে পারে।’’
95- بَابُ اِسْتِحْبَابِ التَّبْشِيْرِ وَالتَّهْنِئَةِ بِالْخَيْرِ
পরিচ্ছেদ - ৯৫: কোন ভাল জিনিসের সুসংবাদ ও তার জন্য মুবারকবাদ জানানো মুস্তাহাব
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَبَشِّرۡ عِبَادِ ١٧ ٱلَّذِينَ يَسۡتَمِعُونَ ٱلۡقَوۡلَ فَيَتَّبِعُونَ أَحۡسَنَهُۥٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ هَدَىٰهُمُ ٱللَّهُۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمۡ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٨ ﴾ [الزمر: ١٧، ١٨]
অর্থাৎ “তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। অতএব সুসংবাদ দাও আমার দাসদেরকে; যারা মনোযোগ সহকারে কথা শোনে এবং যা উত্তম তার অনুসরণ করে। ওদেরকে আল্লাহ সৎপথে পরিচালিত করেন এবং ওরাই বুদ্ধিমান।” (সূরা যুমার ১৭-১৮ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ يُبَشِّرُهُمۡ رَبُّهُم بِرَحۡمَةٖ مِّنۡهُ وَرِضۡوَٰنٖ وَجَنَّٰتٖ لَّهُمۡ فِيهَا نَعِيمٞ مُّقِيمٌ ٢١ ﴾ [التوبة: ٢١]
অর্থাৎ “তাদের প্রতিপালক তাদেরকে নিজ দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের সুসংবাদ দিচ্ছেন; যেখানে তাদের জন্য স্থায়ী সুখ-সমৃদ্ধি রয়েছে।” (সূরা তাওবাহ ২১ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَأَبۡشِرُواْ بِٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي كُنتُمۡ تُوعَدُونَ ﴾ [فصلت: ٣٠]
অর্থাৎ তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার সুসংবাদ নাও। (হা-মীম সাজদাহ ৩০ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ ﴾ [الصافات: ١٠١]
অর্থাৎ “অতঃপর আমি তাকে এক ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম।” (সূরা স্বা-ফফাত ১০১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَآ إِبۡرَٰهِيمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ ﴾ [هود: ٦٩]
অর্থাৎ “আর আমার প্রেরিত ফিরিশ্তারা ইব্রাহীমের নিকট সুসংবাদ নিয়ে আগমন করল।” (সূরা হূদ ৬৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَٱمۡرَأَتُهُۥ قَآئِمَةٞ فَضَحِكَتۡ فَبَشَّرۡنَٰهَا بِإِسۡحَٰقَ وَمِن وَرَآءِ إِسۡحَٰقَ يَعۡقُوبَ ٧١ ﴾ [هود: ٧١]
অর্থাৎ “সে সময় তার স্ত্রী দণ্ডায়মান ছিল, সে হেসে উঠল তখন আমি তাকে (ইব্রাহীমের স্ত্রীকে) সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের।” (সূরা হূদ ৭১ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ فَنَادَتۡهُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٞ يُصَلِّي فِي ٱلۡمِحۡرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيَىٰ﴾ [ال عمران: ٣٩]
অর্থাৎ “যখন (যাকারিয়া) মিহরাবে নামাযে রত ছিলেন তখন ফেরেশ্তাগণ তাকে সম্বোধন করে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহয়্যার সুসংবাদ দিচ্ছেন।” (আলে ইমরান ৩৯ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ إِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرۡيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٖ مِّنۡهُ ٱسۡمُهُ ٱلۡمَسِيحُ ﴾ [ال عمران: ٤٥]
অর্থাৎ “(স্মরণ কর) যখন ফেরেশ্তাগণ বললেন, হে মারয়্যাম! নিশ্চয় আল্লাহ নিজের পক্ষ থেকে তোমাকে একটি কালেমা (দ্বারা সৃষ্টসন্তানে)র সুসংবাদ দিচ্ছেন; যার নাম হবে মসীহ।” (আলে ইমরান ৪৫ আয়াত)
এ ছাড়া এ মর্মে অনেক আয়াত রয়েছে, যা অনেকের জানা আছে। আর উক্ত বিষয়ে হাদীসও অনেক বেশী বিদ্যমান, যা বিশুদ্ধ গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে বলে সুপ্রসিদ্ধ। তার মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপঃ-
1/713 عَن أَبي إِبرَاهِيمَ، وَيُقَالُ: أَبُو مُحَمَّدٍ، وَيُقَالُ: أَبُو مُعَاوِيَةَ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي أَوفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنّ رَسُولَ اللهِ ﷺ بَشَّرَ خَدِيجَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا بِبَيْتٍ في الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لاَ صَخَبَ فِيهِ، وَلاَ نَصَبَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭১৩। আবূ ইব্রাহীম মতান্তরে আবূ মুহাম্মাদ বা আবূ মু‘আবিয়াহ ‘আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজা রাদিয়াল্লাহু‘আনহাকে জান্নাতে (তার জন্য) ফাঁপা মুক্তা নির্মিত একটি অট্টালিকার সুসংবাদ দান করলেন; যেখানে কোন হট্টগোল ও ক্লান্তি থাকবে না। (বুখারী ও মুসলিম)
২/৭১৪। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি নিজ বাড়িতে ওযূ করে বাইরে গেলেন। এবং তিনি (মনে মনে) বললেন যে, ‘আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহচর্যে থাকব।’ সুতরাং তিনি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর রসূল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। সাহাবীগণ উত্তর দিলেন যে, ‘তিনি এই দিকে গমন করেছেন।’ আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তাঁর পশ্চাতে চলতে থাকলাম এবং তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করতে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত তিনি ‘আরীস’ কুয়ার (সন্নিকটবর্তী একটি বাগানে) প্রবেশ করলেন। আমি (বাগানের) প্রবেশ দ্বারের পাশে বসে থাকলাম। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেশাব-পায়খানা সমাধা করে ওযূ করলেন। অতঃপর আমি উঠে তাঁর দিকে অগ্রসর হলাম। দেখলাম, তিনি ‘আরীস’ কুয়ার পাড়ের মাঝখানে পায়ের নলা খুলে পা দুটো তাতে ঝুলিয়ে বসে আছেন। আমি তাঁকে সালাম দিয়ে আবার ফিরে এসে প্রবেশ-পথে বসে রইলাম। আর মনে মনে বললাম যে, ‘আজ আমি অবশ্যই আল্লাহর রসূলের দ্বার রক্ষক হব।’ সুতরাং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে দরজায় ধাক্কা দিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘আবূ বকর।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ তারপর আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গিয়ে নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহ রসূল! উনি আবূ বকর, প্রবেশ করার অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। আর তার সাথে জান্নাতের সুসংবাদ জানিয়ে দাও।’’ সুতরাং আমি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এসে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন।’ আবূ বকর প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান দিকে পায়ের নলার কাপড় তুলে পা দুখানি কুয়াতে ঝুলিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত বসে পড়লেন।
আমি পুনরায় দ্বার প্রান্তে ফিরে এসে বসে গেলাম। আমি মনে মনে বললাম, আমার ভাইকে ওযূ করা অবস্থায় ছেড়ে এসেছি; (ওযূর পরে) সে আমার পশ্চাতে আসবে। আল্লাহ যদি তার জন্য কল্যাণ চান, তাহলে তাকে (এখানে) আনবেন। হঠাৎ একটি লোক এসে দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কে?’ সে বলল, ‘উমার ইবন খাত্তাব।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ অতঃপর আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে নিবেদন করলাম যে, ‘উনি উমার। প্রবেশ অনুমতি চাচ্ছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও এবং ওকেও জান্নাতের সুসংবাদ জানাও।’’ সুতরাং আমি উমারের নিকট এসে বললাম, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে প্রবেশ অনুমতি দিচ্ছেন এবং জান্নাতের শুভ সংবাদও জানাচ্ছেন।’ সুতরাং তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং কুয়ার পাড়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাম পাশে কুয়ায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়লেন।
আমি আবার সেখানে ফিরে এসে বসে পড়লাম। আর মনে মনে বলতে থাকলাম, আল্লাহ যদি আমার ভাইয়ের মঙ্গল চান, তাহলে অবশ্যই তাকে নিয়ে আসবেন। (ইত্যবসরে) হঠাৎ একটি লোক দরজা নড়াল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কে?’ সে বলল, ‘আমি উসমান ইবনে আফ্ফান।’ আমি বললাম, ‘একটু থামুন।’ তারপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁর সম্পর্কে অবহিত করলাম। তিনি বললেন, ‘‘ওকে অনুমতি দাও। আর জান্নাতের সুসংবাদ জানাও। তবে ওর জীবনে বিপর্যয় আছে।’’ আমি ফিরে এসে তাঁকে বললাম, ‘প্রবেশ করুন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছেন। তবে আপনার বিপর্যয় আছে।’ সুতরাং তিনি সেখানে প্রবেশ করে দেখলেন যে, কুয়ার এক পাড় পূর্ণ হয়েছে ফলে তিনি তাঁদের সামনের অপর পাড়ে গিয়ে বসে গেলেন।
সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব বলেন যে, ‘এ ঘটনা দ্বারা আমি বুঝেছি যে, তাঁদের তিনজনের সমাধি একই স্থানে হবে। (আর উসমানের সমাধি অন্য জায়গায় হবে।)’ (বুখারী-মুসলিম)
এক বর্ণনায় এ সব শব্দাবলী বাড়তিভাবে এসেছে যে, (আবূ মূসা বলেন,) ‘আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বার রক্ষার নির্দেশ দিলেন।’ আর তাতে এ কথাও আছে যে, যখন তিনি উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে সুসংবাদ (ও বিপর্যয়ের কথা) জানালেন, তখন তিনি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়লেন এবং বললেন, ‘আল্লাহুল মুস্তা‘আন।’ অর্থাৎ আল্লাহই সাহায্যস্থল। (বুখারী-মুসলিম)
3/715 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا قُعُوداً حَوْلَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَمَعَنَا أَبُو بَكرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا في نَفَرٍ، فَقَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ بَيْنِ أظْهُرِنَا فَأبْطَأَ عَلَيْنَا، وَخَشِينَا أنْ يُقْتَطَعَ دُونَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا، فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ، فَخَرَجْتُ أبْتَغِي رَسُولَ اللهِ ﷺ، حَتَّى أتَيْتُ حَائِطاً لِلأَنصَارِ لِبَني النَّجَارِ، فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أجِدُ لَهُ بَاباً ؟ فَلَمْ أجِدْ ! فَإذَا رَبِيعٌ يَدْخُلُ في جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَهُ ـ وَالرَّبِيعُ: الجَدْوَلُ الصَّغِيرُ ـ فَاحْتَفَرْتُ، فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: « أَبُو هُرَيْرَةَ ؟» فَقُلتُ: نَعَمْ، يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «مَا شأنُكَ؟ » قُلْتُ: كُنْتَ بَيْنَ أظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأبْطَأتَ عَلَيْنَا، فَخَشِينَا أنْ تُقْتَطَعَ دُونَنَا، فَفَزِعْنَا، فَكُنْتُ أوّلَ مَنْ فَزِعَ، فَأتَيْتُ هٰذَا الحَائِطَ، فَاحْتَفَرْتُ كَمَا يَحْتَفِرُ الثَّعْلَبُ، وَهَؤُلاَءِ النَّاسُ وَرَائِي . فَقَالَ: « يَا أَبَا هُرَيرَةَ » وَأعْطَانِي نَعْلَيْهِ، فَقَالَ: «اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ، فَمَنْ لَقِيتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الحَائِطِ يَشْهَدُ أنْ لاَ إلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُسْتَيْقِنَاً بِهَا قَلْبُهُ، فَبَشِّرْهُ بِالجَنَّةِ ... » وَذَكَرَ الحديثَ بِطُوْلِهِ، رواه مسلم .
৩/৭১৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চারিপাশে বসেছিলাম। আমাদের সাথে আবূ বকর ও উমার (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) তথা অন্যান্য সাহাবীগণও ছিলেন। ইত্যবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝ থেকে উঠে (বাইরে) চলে গেলেন। যখন তিনি ফিরে আসতে দেরি করে দিলেন, তখন আমাদের আশংকা হল যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে তিনি (শত্রু) কবলিত না হন। এ দুশ্চিন্তায় আমরা ঘাবড়ে গেলাম এবং উঠে পড়লাম। তাঁদের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সুতরাং আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। শেষ পর্যন্ত আমি আনসারদের বনূ নাজ্জারের একটি বাগানে পৌঁছে তার চতুর্দিকে ঘুরতে লাগলাম, যদি কোন (প্রবেশ) দরজা পাই। কিন্তু তার কোন (প্রবেশ) দরজা পেলাম না। হঠাৎ দেখলাম বাইরের একটি কুয়া থেকে সরু নালা ঐ বাগানের ভিতরে চলে গেছে। আমি সেখান দিয়ে জড়সড় হয়ে বাগানের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। (দেখলাম,) আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত। তিনি বলে উঠলেন, ‘‘আবূ হুরাইরা?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘কী ব্যাপার তোমার?’’ আমি বললাম, ‘আপনি আমাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অকস্মাৎ উঠে বাইরে এলেন। তারপর আপনার ফিরতে দেরি দেখে আমরা এই দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে পড়ি যে, আমাদের অনুপস্থিতিতে হয়তো আপনি (শত্রু) কবলিত হয়ে পড়বেন। যার ফলে আমরা সকলে ঘাবড়ে উঠলাম। সর্বপ্রথম আমিই বিচলিত হয়ে উঠে এই বাগানে এসে জড়সড় হয়ে শিয়ালের মত ঢুকে পড়লাম। আর সব লোক আমার পিছনে আসছে।’ তিনি আমাকে সম্বোধন করে তাঁর জুতা জোড়া দিয়ে বললেন, ‘‘আবূ হুরাইরা! আমার এ জুতো জোড়া সঙ্গে নিয়ে যাও এবং এ বাগানের বাইরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পাঠকারী যে কোন ব্যক্তির সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে, তাকে জান্নাতের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।’’
অতঃপর সুদীর্ঘ হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম)
4/716 وَعَنِ ابنِ شِمَاسَة، قَالَ: حَضَرْنَا عَمْرَو بنَ العَاصِ رضي الله عنه وَهُوَ في سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، فَبَكَى طَوِيلاً، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الجِدَارِ، فَجَعَلَ ابْنُهُ، يَقُولُ: يَا أبَتَاهُ، أمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بكَذَا ؟ أمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِكَذَا ؟ فَأقْبَلَ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: إنَّ أفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أنْ لاَ إلٰهَ إِلاَّ الله، وَأنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، إنِّي قَدْ كُنْتُ عَلَى أطْبَاقٍ ثَلاَثٍ: لَقَدْ رَأيْتُنِي وَمَا أحَدٌ أشَدُّ بُغضاً لِرَسُولِ اللهِ ﷺ مِنِّي، وَلاَ أحَبَّ إليَّ مِنْ أنْ أكُونَ قدِ اسْتَمكَنتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُهُ، فَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلكَ الحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أهْلِ النَّارِ، فَلَمَّا جَعَلَ اللهُ الإسلاَمَ في قَلْبِي أتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ، فقُلْتُ: اُبسُطْ يَمِينَكَ فَلأُبَايِعُكَ، فَبَسَطَ يَمِينَهُ فَقَبَضْتُ يَدِي، فَقَالَ: « مَا لَكَ يَا عَمْرُو ؟ » قُلتُ: أَرَدتُ أنْ أشْتَرِطَ، قَالَ: « تَشْتَرِطُ مَاذا ؟ » قُلْتُ: أنْ يُغْفَرَ لِي، قَالَ: « أمَا عَلِمْتَ أن الإِسلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ، وَأن الهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبلَهَا، وَأنَّ الحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ؟ ». وَمَا كَانَ أحدٌ أحَبَّ إليَّ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلاَ أجَلَّ في عَينِي مِنْهُ وَمَا كُنْتُ أُطيقُ أَن أَملأُ عَينَيَّ مِنْهُ ؛ إِجلاَلاً لَهُ، وَلَو سُئِلتُ أَن أَصِفَهُ مَا أَطَقتُ، ِلأَنِّي لَمْ أَكُن أَملأُ عَينَيَّ مِنْهُ، وَلَو مُتُّ عَلَى تِلْكَ الحَالِ لَرجَوْتُ أَن أكُونَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، ثُمَّ وَلِينَا أشْيَاءَ مَا أدْرِي مَا حَالِي فِيهَا ؟ فَإِذَا أنَا مُتُّ فَلاَ تَصحَبَنِّي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ، فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي، فَشُنُّوا عَليَّ التُّرَابَ شَنّاً، ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزورٌ، وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا، حَتَّى أَسْتَأنِسَ بِكُمْ، وَأنْظُرَ مَا أُرَاجعُ بِهِ رُسُلَ رَبّي . رواه مسلم .
৪/৭১৬। ইবনে শিমাসাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর মরণোন্মুখ সময়ে আমরা তাঁর নিকটে উপস্থিত হলাম। তিনি অনেকক্ষণ ধরে কাঁদতে থাকলেন এবং দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরূপ অবস্থা দেখে তাঁর এক ছেলে বলল, ‘আব্বাজান! আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি? আপনাকে কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অমুক জিনিসের সুসংবাদ দেননি?’ এ কথা শুনে তিনি তাঁর চেহারা সামনের দিকে করে বললেন, আমাদের সর্বোত্তম পুঁজি হল, এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসূল। আমি তিনটি স্তর অতিক্রম করেছি। (এক) আমার চেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি বড় বিদ্বেষী আর কেউ ছিল না। তাঁকে হত্যা করার ক্ষমতা অর্জন করাই ছিল আমার তৎকালীন সর্বাধিক প্রিয় বাসনা। যদি (দুর্ভাগ্যক্রমে) তখন মারা যেতাম, তাহলে নিঃসন্দেহে আমি জাহান্নামী হতাম।
(দুই) তারপর যখন আল্লাহ তা‘আলা আমার অন্তরে ইসলাম প্রক্ষিপ্ত করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে নিবেদন করলাম, ‘আপনার ডান হাত প্রসারিত করুন। আমি আপনার হাতে বায়‘আত করতে চাই।’ বস্তুত তিনি ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন। কিন্তু আমি আমার হাত টেনে নিলাম। তিনি বললেন, ‘‘আমর! কী ব্যাপার?’’ আমি নিবেদন করলাম, ‘একটি শর্ত আরোপ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘‘শর্তটি কী?’’ আমি বললাম, ‘আমাকে ক্ষমা করা হোক---শুধু এতটুকুই।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি জানো না যে, ইসলাম পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে মিটিয়ে দেয়, হিজরত পূর্বের সমস্ত পাপরাশিকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলে এবং হজ্জ্বও পূর্বের পাপসমূহ ধ্বংস করে দেয়?’’
তখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা অধিক প্রিয় মানুষ আর কেউ নেই। আর আমার দৃষ্টিতে তাঁর চেয়ে সম্মানীয় ব্যক্তি আর কেউ নেই। তাঁকে সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার অবস্থা এরূপ ছিল যে, তাঁর দিকে নয়নভরে তাকাতে পারতাম না। যার ফলে আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে যে, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গঠনাকৃতি কিরূপ ছিল?’ তাহলে আমি তা বলতে পারব না। এ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হয়ে যেত, তাহলে আশা ছিল যে, আমি জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
(তিন) তারপর বহু দায়িত্বপূর্ণ বিষয়াদির খপ্পরে পড়লাম। জানি না, তাতে আমার অবস্থা কী? সুতরাং আমি মারা গেলে কোন মাতমকারিণী অথবা আগুন যেন অবশ্যই আমার (জানাযার) সাথে না থাকে। তারপর যখন আমাকে দাফন করবে, তখন যেন তোমরা আমার কবরে অল্প অল্প করে মাটি দেবে। অতঃপর একটি উট যবেহ করে তার মাংস বণ্টন করার সময় পরিমাণ আমার কবরের পাশে অপেক্ষা করবে। যাতে আমি তোমাদের সাহায্যে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারি এবং আমার প্রভুর প্রেরিত ফিরিশ্তাদের সঙ্গে কিরূপ বাক্-বিনিময় করি, তা দেখে নিই। (মুসলিম)
96- بَابُ وِدَاعِ الصَّاحِبِ وَوَصِيَّتِهِ عِنْدَ فِرَاقِهِ لِسَفَرٍ
وَّغَيْرِهِِ وَالدُّعَاءِ لَهُ وَطَلَبِ الدُّعَاءِ مِنْهُ
পরিচ্ছেদ - ৯৬: সফরকারীকে উপদেশ দেওয়া, বিদায় দেওয়ার দো‘আ পড়া ও তার কাছে নেক দো‘আর নিবেদন ইত্যাদি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَوَصَّىٰ بِهَآ إِبۡرَٰهِۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَٰبَنِيَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٣٢ أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ ١٣٣ ﴾ [البقرة: ١٣٢، ١٣٣]
অর্থাৎ “ইব্রাহীম ও ইয়াকূব এ সম্বন্ধে তাদের পুত্রগণকে নির্দেশ দিয়েছিল, হে পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য দ্বীনকে (ইসলাম ধর্মকে) মনোনীত করেছেন। সুতরাং আত্মসমর্পণকারী না হয়ে তোমরা অবশ্যই মৃত্যুবরণ করো না। ইয়াকুবের নিকট যখন মৃত্যু এসেছিল তোমরা কি তখন উপস্থিত ছিলে? সে যখন নিজ পুত্রগণকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আমার (মৃত্যুর) পরে তোমরা কিসের উপাসনা করবে। তারা তখন বলেছিল, আমরা আপনার উপাস্য ও আপনার পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের উপাস্য, সেই অদ্বিতীয় উপাস্যের উপাসনা করব। আর আমরা তাঁর কাছে আত্মসমর্পণকারী।” (সূরা বাক্বারাহ ১৩২-১৩৩ আয়াত)
এ বিষয়ে অনেক হাদীস আছে তন্মধ্যেঃ-
حَدِيثُ زَيدِ بنِ أَرقَمٍ رضي الله عنه الَّذِي سَبَقَ فِي بَابِ إِكرَامِ أهْلِ بَيْتِ رَسُولِ اللهِ ﷺ قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِينَا خَطِيباً، فَحَمِدَ الله، وَأثْنَى عَلَيْهِ، وَوَعَظَ وَذَكَّرَ، ثُمَّ قَالَ: « أمَّا بَعْدُ، ألاَ أيُّهَا النَّاسُ، إنَّمَا أنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أنْ يَأتِيَ رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ، وَأنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ، أوَّلَهُمَا: كِتَابُ اللهِ، فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ، فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ »، فَحَثَّ عَلَى كِتَابِ اللهِ، وَرَغَّبَ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: « وَأَهْلُ بَيْتِي، أُذَكِّرُكُمُ اللهَ في أهْلِ بَيْتِي ». رواه مسلم، وَقَدْ سَبَقَ بِطُولِهِ.
যায়েদ ইবনে আরক্বামের হাদীস যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরিবার পরিজনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করার পরিচ্ছেদে অতীত হয়ে গেছে, তাতে যায়দ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের মাঝে উঠে ভাষণ দান করলেন; তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন তাঁর গুণ বর্ণনা করলেন এবং উপদেশ ও নসীহত করলেন ও বললেন, ‘‘অতঃপর হে জনমন্ডলী! শোন! আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমার প্রতিপালকের দূত আমার নিকট পৌঁছে যাবে। আর আমি তাঁর ডাকে সাড়া দেব। এমতাবস্থায় আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি ভারী (সম্মানিত) বস্তু রেখে যাচ্ছি, প্রথমটি আল্লাহর কিতাব; যাতে হিদায়াত ও আলো নিহিত আছে। অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাবকে সুদৃঢ়ভাবে ধারণ করো।’’
অতঃপর তিনি আল্লাহর কিতাব (মান্য করার) ব্যাপারে উৎসাহিত করলেন এবং তার প্রতি অনুপ্রাণিত করলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘‘দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে আমার পরিবার-পরিজন। আমি তোমাদেরকে আমার ‘আহলে বায়ত’ (পরিবার)এর ব্যাপারে আল্লাহ স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। (যেন তাদের প্রতি কোন অন্যায় আচরণ করো না।)’’ (মুসলিম ২৪০৮, হাদীসটি পূর্ণরূপে পূর্বে গত হয়েছে।)
1/717 وَعَن أَبي سُلَيمَانَ مَالِكِ بنِ الحُوَيْرِثِ رضي الله عنه، قَالَ: أَتَيْنَا رَسُولَ اللهِ ﷺ، وَنَحْنُ شَبَبَةٌ مُتَقَارِبُونَ، فَأقَمْنَا عِنْدَهُ عِشْرِينَ لَيْلَةً، وَكَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ رَحِيماً رَفِيقاً، فَظَنَّ أنَّا قَدِ اشْتَقْنَا أهْلَنَا، فَسَألَنَا عَمَّنْ تَرَكْنَا مِنْ أهْلِنَا، فَأخْبَرْنَاهُ، فَقَالَ: « ارْجِعُوا إِلَى أهْلِيكُمْ، فَأَقِيمُوا فِيهمْ، وَعَلِّمُوهُم وَمُرُوهُمْ، وَصَلُّوا صَلاَةَ كَذَا فِي حِيْنِ كَذَا، وَصَلُّوا كَذَا فِي حِيْنِ كَذَا، فَإذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَلْيُؤَذِّنْ لَكُمْ أحَدُكُمْ وَلْيَؤُمَّكُمْ أكْبَرُكُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ .
زاد البخاري في رواية لَهُ: «وَصَلُّوا كَمَا رَأيْتُمُونِي أُصَلِّي » .
১/৭১৭। আবূ সুলায়মান মালেক ইবনে হুওয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা প্রায় সমবয়স্ক কতিপয় নব যুবক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বিশ দিন অবস্থান করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহপরবশ ছিলেন। তাই তিনি ধারণা করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাবার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে উঠেছি। সেহেতু তিনি আমাদেরকে প্রশ্ন করলেন যে, আমরা আমাদের পরিবারে কাকে ছেড়ে এসেছি? সুতরাং আমরা তাঁকে জানালে তিনি বললেন, ‘‘তোমরা তোমাদের পরিবারের কাছে ফিরে যাও এবং তাদের মাঝেই বসবাস কর। তাদেরকে শিক্ষা দান কর এবং তাদেরকে (ভাল কাজের) আদেশ দাও। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। অমুক নামায অমুক সময়ে পড়। সুতরাং যখন নামাযের সময় হবে, তখন তোমাদের মধ্যে কেউ একজন আযান দেবে এবং তোমাদের মধ্যে যে বড় সে ইমামতি করবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারীর বর্ণনায় এরূপ বাড়তিভাবে আছে যে, ‘‘আমাকে তোমরা যেভাবে নামায পড়তে দেখেছ, ঠিক সেইভাবেই নামায পড়।’’
2/718 وعن عُمَرَ بنِ الخطاب رضي الله عنه قال: اسْتَأْذَنْتُ النبي ﷺ في الْعُمْرَةِ، فَأَذِنَ، وقال: « لا تنْسنَا يَا أخيَّ مِنْ دُعَائِك » فقالَ كَلِمَةً ما يَسُرُّني أَنَّ لِي بهَا الدُّنْيَا . وفي رواية قال: « أَشْرِكْنَا يَا أخَيَّ في دُعَائِكَ » رواه أبو داود، والترمذي وقال: حديث حسن صحيح .
২/৭১৮। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে উমরাহ করার অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেনঃ প্রিয় ভাই আমার, তোমার দো‘আর সময় আমাদেরকে যেন ভুলো না। এমন বাক্য তিনি উচ্চারণ করলেন, যার বিনিময়ে সমস্ত পৃথিবীটা আমার হয়ে গেলেও তা আমার কাছে আনন্দদায়ক হিসাবে (গণ্য) নয়। অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভাইয়া! তুমি আমাদেরকেও তোমার দো‘আয় শরীক রেখো। (আবু দাউদ ও তিরমিযি) দুর্বল।
3/719 وَعَن سَالِمِ بنِ عَبدِ اللهِ بنِ عُمَرَ: أنَّ عَبدَ اللهِ بنَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، كَانَ يَقُولُ للرَّجُلِ إِذَا أرَادَ سَفَراً: اُدْنُ مِنِّي حَتَّى أُوَدِّعَكَ كَمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُوَدِّعُنَا، فَيَقُولُ: « أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ، وَأمَانَتَكَ، وَخَواتِيمَ عَمَلِكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৩/৭১৯। সালেম ইবন আব্দুল্লাহ ইবনে উমার হতে বর্ণিত, সফরকারীকে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন, আমার নিকটবর্তী হও, তোমাকে ঠিক সেইভাবে বিদায় দেব, যেভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিদায় দিতেন। সুতরাং তিনি বলতেন, ‘আস্তাউদি‘উল্লা-হা দীনাকা অআমা-নাতাকা অখাওয়াতীমা ‘আমালিক।’ অর্থাৎ তোমার দ্বীন, তোমার সততা এবং তোমার কাজের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম। (তিরমিযী হাসান সহীহ)
4/720 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ يَزِيدَ الخَطْمِيِّ الصَّحَابيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا أرَادَ أنْ يُوَدِّعَ الجَيشَ، قَالَ: « أسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكُمْ، وَأمَانَتَكُمْ، وَخَواتِيمَ أعْمَالِكُمْ ». حديث صحيح، رواه أَبُو داود وغيره بإسناد صحيح
৪/৭২০। সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে য়্যাযীদ খাত্বমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সেনাবাহিনীকে বিদায় জানাতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন, ‘আস্তাওদি‘উল্লাহা দ্বীনাকুম অআমানাতাকুম অখাওয়াতীমা আ‘মালিকুম। অর্থাৎ তোমাদের দ্বীন, তোমাদের সততা এবং তোমাদের কর্মসমূহের পরিণাম আল্লাহকে সঁপে দিলাম। (সহীহ হাদীস, আবূ দাঊদ ও অন্যান্য বিশুদ্ধ সূত্রে)
5/721 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنّي أُرِيدُ سَفَراً، فَزَوِّدْنِي، فَقَالَ: « زَوَّدَكَ الله التَّقْوَى » قَالَ: زِدْنِي قَالَ: « وَغَفَرَ ذَنْبَكَ » قَالَ: زِدْنِي، قَالَ: « وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
৫/৭২১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে নিবেদন জানাল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি সফরে যাব, সুতরাং আমাকে পাথেয় দিন।’ তিনি উত্তরে এই দো‘আ দিলেন, ‘যাউওয়াদাকাল্লা-হুত্ তাক্বওয়া।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে সংযমশীলতার পাথেয় দান করুন। লোকটি পুনরায় বলল, ‘আমাকে আরো পাথেয় দিন।’ তিনি দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘অগাফারা যামবাকা।’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করুন। লোকটি আবার নিবেদন করল, ‘আমাকে আরো দিন।’ তিনি পুনরায় দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘অয়্যাস্সারা লাকাল খাইরা হাইসুমা কুন্ত্।’ অর্থাৎ তুমি যেখানেই থাক, আল্লাহ যেন তোমার জন্য কল্যাণ সহজ করে দেন। (তিরমিযী হাসান)
97- بَابُ الْاِسْتِخَارَةِ وَالْمُشَاوَرَةِ
পরিচ্ছেদ - ৯৭: ইস্তেখারা (মঙ্গল জ্ঞান লাভ করা) ও পরামর্শ করা প্রসঙ্গে
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَشَاوِرۡهُمۡ فِي ٱلۡأَمۡرِۖ ﴾ [ال عمران: ١٥٩]
অর্থাৎ “কাজে-কর্মে তুমি তাদের সাথে পরামর্শ কর।” (সূরা আলে ইমরান ১৫৯ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَأَمۡرُهُمۡ شُورَىٰ بَيۡنَهُمۡ ﴾ [الشورى: ٣٨]
অর্থাৎ “তারা আপোসে পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে।” (সূরা শূরা ৩৮ আয়াত)
1/722 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُعَلِّمُنَا الاسْتِخَارَةَ في الأُمُورِ كُلِّهَا كَالسُّورَةِ مِنَ القُرْآنِ، يَقُولُ: « إِذَا هَمَّ أحَدُكُمْ بِالأَمْرِ، فَلْيَركعْ رَكْعَتَيْنِ مِنْ غَيْرِ الفَرِيضَةِ، ثُمَّ ليَقُلْ: اَللهم إنِّي أسْتَخِيرُكَ بِعِلْمِكَ، وَأسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْألُكَ مِنْ فَضْلِكَ العَظِيْمِ، فَإنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أقْدِرُ، وَتَعْلَمُ وَلاَ أعْلَمُ، وَأنْتَ عَلاَّمُ الْغُيُوبِ . اَللهم إنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأمْرَ خَيْرٌ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أمْرِي » أَوْ قَالَ: « عَاجِلِ أمْرِي وَآجِلِهِ، فَاقْدُرْهُ لِي وَيَسِّرْهُ لِي، ثُمَّ بَارِكْ لِي فِيهِ . وَإنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِي فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي » أَوْ قَالَ: « عَاجِلِ أمْرِي وَآجِلِهِ ؛ فَاصْرِفْهُ عَنِّي، وَاصْرِفْنِي عَنْهُ، وَاقْدُرْ لِيَ الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ، ثُمَّ أرْضِنِي بِهِ » قَالَ: « وَيُسَمِّيْ حَاجَتَهُ ». رواه البخاري .
১/৭২২। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে যাবতীয় কাজের জন্য ইস্তেখারা শিখাতেন। যেভাবে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। (আর) বলতেন, ‘যখন তোমাদের কারো কোন বিশেষ কাজ করার ইচ্ছা হয়, তখন সে যেন ফরয সালাত ব্যতীত দু’ রাকআত নামায পড়ে এই দো‘আ বলেঃ-
‘‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্তাখীরুকা বিইলমিকা অ আস্তাক্বদিরুকা বি ক্বুদরাতিকা অ আসআলুকা মিন ফাযবলিকাল আযীম, ফাইন্নাকা তাক্বদিরু অলা আক্বদিরু অতা’লামু অলা আ’লামু অ আন্তা আল্লা-মুল গুয়ূব। আল্লা-হুম্মা ইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা (এখানে যে কাজের জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে উল্লেখ করবে) খাইরুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-ক্বিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাক্বদুরহু লী, অয়্যাস্সিরহু লী, সুম্মা বা-রিক লী ফীহ। অইন কুন্তা তা’লামু আন্না হা-যাল আমরা শার্রুল লী ফী দীনী অ মাআ’শী অ আ’-ক্বিবাতি আমরী অ আ’-জিলিহী অ আ-জিলিহ, ফাস্বরিফহু আন্নী অস্বরিফনী আনহু, অক্বদুর লিয়াল খাইরা হাইসু কা-না সুম্মা আরযিবনী বিহ।’’
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট তোমার ইলমের সাথে মঙ্গল প্রার্থনা করছি। তোমার কুদরতের সাথে শক্তি প্রার্থনা করছি এবং তোমার বিরাট অনুগ্রহ থেকে ভিক্ষা যাচনা করছি। কেননা, তুমি শক্তি রাখ, আমি শক্তি রাখি না। তুমি জান, আমি জানি না এবং তুমি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা। হে আল্লাহ! যদি তুমি এই (এখানে যে কাজের জন্য ইস্তেখারা করা হচ্ছে তা মনে মনে উল্লেখ করবে) কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে ভালো জান, তাহলে তা আমার জন্য নির্ধারিত ও সহজ করে দাও। অতঃপর তাতে আমার জন্য বরকত দান কর। আর যদি তুমি এই কাজ আমার জন্য আমার দ্বীন, দুনিয়া, জীবন এবং কাজের বিলম্বিত ও অবিলম্বিত পরিণামে মন্দ জান, তাহলে তা আমার নিকট থেকে ফিরিয়ে নাও এবং আমাকে ওর নিকট থেকে সরিয়ে দাও। আর যেখানেই হোক মঙ্গল আমার জন্য বাস্তবায়িত কর, অতঃপর তাতে আমার মনকে পরিতুষ্ট করে দাও।
তিনি বলেন, ‘‘সে এ সময়ে তার প্রয়োজনের বিষয়টি উল্লেখ করবে।’’ (অর্থাৎ দো‘আ কালীন সময়ে ‘আন্না হা-যাল আম্রা’ এর জায়গায় প্রয়োজনীয় বিষয়টি উল্লেখ করবে।)
98- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الذِّهَابِ إِلٰى صَلَاةِ الْعِيْدِ وَالرُّجُوْعِ مِنْ طَرِيْقٍ آخَرَ
পরিচ্ছেদ - ৯৮: ঈদের নামায পড়তে, রোগী দেখতে, হজ্জ, জিহাদ বা জানাযা ইত্যাদিতে যেতে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে ফিরে আসা মুস্তাহাব; যাতে ইবাদতের জায়গা বেশী হয়
1/723 عَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا كَانَ يَومُ عيدٍ خَالَفَ الطَّريقَ . رواه البخاري
১/৭২৩। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের দিনে রাস্তা পরিবর্তন করতেন। (বুখারী)
* রাস্তা পরিবর্তনের মানে হচ্ছে যে, এক রাস্তায় যেতেন আর অন্য রাস্তায় ফিরতেন।
2/724 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَخْرُجُ مِنْ طَريق الشَّجَرَةِ، وَيَدْخُلُ مِنْ طَريقِ الْمُعَرَّسِ، وَإِذَا دَخَلَ مَكَّةَ، دَخَلَ مِن الثَّنِيَّةِ الْعُلْيَا، وَيَخْرُجُ مِنَ الثَّنِيَّةِ السُّفْلَى . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৭২৪। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মদীনা থেকে বাইরে গমনকালে) শাজারা নামক জায়গার রাস্তা ধরে বের হতেন এবং ফিরার সময় (যুল হুলাইফার) মুআর্রাস মসজিদের পথ ধরে (মদীনায়) প্রবেশ করতেন। অনুরূপ যখন তিনি মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন আস্-সানিয়াতুল উল্ইয়ার পথ হয়ে। আর যখন বের হতেন তখন আস্-সানিয়াতুস সুফলার পথ হয়ে। (বুখারী ও মুসলিম)
99- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَقْدِيْمِ اليَمِيْنِ فِيْ كُلِّ مَا هُوَ مِنْ بَابِ التَّكْرِيْمِ
পরিচ্ছেদ - ৯৯: সম্মান প্রদর্শনের স্থানে ডানকে অগ্রাধিকার দেওয়া মুস্তাহাব হওয়া (ডান-বাম ব্যবহারবিধি)
সমস্ত ভাল ও সম্মানজনক কাজকর্মে ডান হাত ব্যবহার করা বা ডান দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম; যথাঃ ওযূ, গোসল, তায়াম্মুম, পোশাক পরা, জুতা, মোজা, পায়জামা পরা, মসজিদে প্রবেশ করা, দাঁতন করা, সুরমা লাগানো, নখকাটা, গোঁফ কাটা, বগলের লোম তোলা, চুল কামানো, নামায থেকে সালাম ফেরা, পানাহার করা, মুসাফাহ করা, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, পায়খানা থেকে বের হওয়া, কোন জিনিস লেন-দেন করা ইত্যাদি। আর উক্ত কার্যাদির বিপরীত অন্যান্য কর্মসমূহে বাম হাত ব্যবহার বা বাম দিককে অগ্রাধিকার দেওয়া উত্তম। যেমন নাকঝাড়া, থুতু ফেলা, মসজিদ থেকে বের হওয়া, পোশাক, জুতা, মোজা, পায়জামা ইত্যাদি খোলা, পেশাব-পায়খানার পর ইস্তিঞ্জা (পানি বা ঢিল ব্যবহার) করা, ঘৃণিত কিছু স্পর্শ করা ইত্যাদি।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ فَأَمَّا مَنۡ أُوتِيَ كِتَٰبَهُۥ بِيَمِينِهِۦ فَيَقُولُ هَآؤُمُ ٱقۡرَءُواْ كِتَٰبِيَهۡ ١٩ ﴾ [الحاقة: ١٩]
অর্থাৎ “সুতরাং যাকে তার আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে সে বলবে, এই নাও, আমার আমলনামা পড়ে দেখ।”(সূরা হা-ক্কাহ ১৯ আয়াত)
তিনি বলেছেন,
﴿ فَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَيۡمَنَةِ ٨ وَأَصۡحَٰبُ ٱلۡمَشَۡٔمَةِ مَآ أَصۡحَٰبُ ٱلۡمَشَۡٔمَةِ ٩ ﴾ [الواقعة: ٨، ٩]
অর্থাৎ “ডানওয়ালারা; কত ভাগ্যবান ডানওয়ালারা! আর বামওয়ালারা; কত হতভাগ্য বামওয়ালারা!” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৮-৯ আয়াত)
1/725 وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ في شَأنِهِ كُلِّهِ: في طُهُورِهِ، وَتَرَجُّلِهِ، وَتَنَعُّلِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭২৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত কাজে (যেমন) ওযূ করা, মাথা আঁচড়ানো ও জুতা পরা (প্রভৃতি সমস্ত ভাল) কাজে ডান দিক থেকে শুরু করা পছন্দ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/726 وَعَنهَا، قَالَتْ: كَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ ﷺ اليُمْنَى لِطُهُورِهِ وَطَعَامِهِ، وَكَانَتِ الْيُسْرَى لِخَلائِهِ وَمَا كَانَ مِنْ أذَىً . حديث صحيح، رواه أَبُو داود وغيره بإسنادٍ صحيحٍ
২/৭২৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ডান হাত তাঁর ওযূ ও আহারের জন্য ব্যবহার হত এবং বাম হাত তাঁর পেশাব-পায়খানা ও নোংরা স্পর্শ করার সব ক্ষেত্রে ব্যবহার হত।’ (হাদীসটি বিশুদ্ধ, আবূ দাঊদ প্রভৃতি বিশুদ্ধ সূত্রে)
3/727 وَعَن أُمِّ عَطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ النِّبيَّ ﷺ قَالَ لَهُنَّ فِي غَسْلِ ابْنَتِهِ زَيْنَبَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: «اِبْدَأنَ بِمَيَامِنِهَا، وَمَوَاضِعِ الوُضُوءِ مِنْهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৭২৭। উম্মে আত্বিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যা যায়নাবের (লাশ) গোসল দেওয়ার সময় তাদের (মহিলাদেরকে) আদেশ করলেন যে, ‘‘তোমরা ওর ডান দিক থেকে ও ওযূর অঙ্গসমূহ থেকে গোসল আরম্ভ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/728 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا انْتَعَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيُمْنَى، وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدأْ بِالشِّمَالِ . لِتَكُنْ اليُمْنَى أوَّلَهُمَا تُنْعَلُ، وَآخِرُهُمَا تُنْزَعُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৭২৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কেউ যখন জুতা পরবে, তখন সে যেন ডান পা দিয়ে শুরু করে। আর যখন খুলবে, তখন সে যেন বাম পা দিয়ে শুরু করে। ডান পায়ের জুতা যেন আগে পরা হয় এবং পরে খোলা হয়।’’ (বুখারী, মুসলিম)
5/729 وَعَن حَفصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَجعَلُ يَمِينَهُ لطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ، وَيَجْعَلُ يَسَارَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ . رواه أَبُو داود والترمذي وغيره
৫/৭২৯। হাফসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার ও কাপড় পরার ক্ষেত্রে স্বীয় ডান হাত কাজে লাগাতেন এবং তাছাড়া অন্যান্য (নোংরা স্পর্শ ইত্যাদি) কাজে বাম হাত লাগাতেন।’ (আবূ দাঊদ ও অন্যান্য)
6/730 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا لَبِسْتُمْ، وَإِذَا تَوَضَّأتُمْ، فَابْدَأُوا بِأَيَامِنِكُمْ». حديث صحيح، رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح
৬/৭৩০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা কাপড় পরিধান করার সময় ও ওযূ করার সময় তোমাদের ডান দিক থেকে আরম্ভ কর।’’ (আবূ দাঊদ তিরমিযী, সহীহ সূত্রে)
7/731 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَتَى مِنىً، فَأتَى الْجَمْرَةَ فَرَمَاهَا، ثُمَّ أتَى مَنْزِلَهُ بِمِنَىً وَنَحَرَ، ثُمَّ قَالَ لِلحَلاَّقِ: «خُذْ» وأشَارَ إِلَى جَانِبهِ الأَيْمَنِ، ثُمَّ الأَيْسَرِ، ثُمَّ جَعَلَ يُعْطِيهِ النَّاسَ. متفقٌ عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ: لَمَّا رَمَى الجَمْرَةَ، وَنَحَرَ نُسُكَهُ وَحَلَقَ، نَاوَلَ الحَلاَّقَ شِقَّهُ الأَيْمَنَ فَحَلَقَهُ، ثُمَّ دَعَا أَبَا طَلْحَةَ الأنْصَارِيَّ رضي الله عنه، فَأعْطَاهُ إيَّاهُ، ثُمَّ نَاوَلَهُ الشِّقَّ الأَيْسَرَ، فَقَالَ: « اِحْلِقْ »، فَحَلَقَهُ فَأعْطَاهُ أَبَا طَلْحَةَ، فَقَالَ: « اِقْسِمْهُ بَيْنَ النَّاسِ » .
৭/৭৩১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিনায় আগমন করলেন। তারপর জামরায় এসে কাঁকর মারলেন। তারপর পুনরায় মিনায় নিজ ডেরায় ফিরে গেলেন এবং কুরবানীর পশু যবেহ করলেন। তারপর নাপিতকে নিজ মাথার ডান দিকে ইশারা করে বললেন, ‘‘নাও।’’ তারপর বামদিকে (ইশারা করে মাথা নেড়া করলেন)। তারপর মাথার চুল জনগণের মাঝে বিতরণ করতে লাগলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, যখন তিনি জামরায় কাঁকর মারলেন এবং কুরবানী পশু নহর (যবেহ) করলেন এবং মাথা মুন্ডন করলেন, সেই সময় তিনি নাপিতকে মাথার ডান দিকটা বাড়িয়ে দিলেন। সে সেদিকটি মুন্ডন করল। তারপর তিনি আবূ ত্বালহা আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে ডেকে (চুলগুলি) তাকে দিলেন। অতঃপর বাম পার্শ্ব নাপিতকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘‘মুন্ডন কর।’’ সুতরাং সে সেদিকটা মুন্ডন করে দিল। অতঃপর তিনি আবূ ত্বালহাকে চুলগুলি দিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘‘জনগণের মাঝে ওগুলি বণ্টন করে দাও।’’
كِتَابُ أَدَبِ الطَّعَامِ
অধ্যায় (২): পানাহারের আদব-কায়দা
100- بَابُ التَّسْمِيَةِ فِيْ أَوَّلِهِ وَالْحَمْدِ فِيْ آخِرِهِ
পরিচ্ছেদ - ১০০: শুরুতে বিস্মিল্লাহ এবং শেষে আল-হামদু লিল্লাহ বলা
1/732 وَعَن عُمَرَ بنِ أبي سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « سَمِّ اللهَ، وَكُلْ بِيَمِينكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৩২। উমার ইবনে আবূ সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একদা খাবার সময়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘(শুরুতে) ‘বিসমিল্লাহ’ বল, ডান হাত দ্বারা আহার কর এবং তোমার নিকট (সামনে) থেকে খাও।’’ (বুখারী)
2/733 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا أكَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ تَعَالَى، فإنْ نَسِيَ أنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى فِي أوَّلِهِ، فَلْيَقُلْ: بِسمِ اللهِ أوَّلَهُ وَآخِرَهُ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن صحيح ».
২/৭৩৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন আহার করবে, সে যেন শুরুতে আল্লাহ তা‘আলার নাম নেয়। যদি শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু অ আখেরাহ।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী-হাসান সহীহ)
3/734 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ دُخُولِهِ، وَعِندَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ لأَصْحَابِهِ: لاَ مَبِيتَ لَكُمْ وَلاَ عَشَاءَ، وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ دُخُولِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: أدْرَكْتُمُ المَبِيتَ ؛ وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ تَعَالَى عِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ: أدْرَكْتُم المَبِيتَ وَالعَشَاءَ ». رواه مسلم
৩/৭৩৪। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘কোন ব্যক্তি যখন নিজ বাড়ি প্রবেশের সময় ও আহারের সময় আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে; অর্থাৎ (‘বিসমিল্লাহ’ বলে) তখন শয়তান তার অনুচরদেরকে বলে, ‘আজ না তোমরা এ ঘরে রাত্রি যাপন করতে পারবে, আর না খাবার পাবে।’ অন্যথা যখন সে প্রবেশ কালে আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না), তখন শয়তান বলে, ‘তোমরা রাত্রি যাপন করার স্থান পেলে।’ আর যখন আহার কালেও আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না (অর্থাৎ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে না), তখন সে তার চেলাদেরকে বলে, ‘তোমরা রাত্রিযাপন স্থল ও নৈশভোজ উভয়ই পেয়ে গেলে।’’ (মুসলিম)
4/735 وَعَن حُذَيْفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ طَعَاماً، لَمْ نَضَعْ أَيدِينَا حَتَّى يَبْدَأَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَيَضَعَ يَدَهُ، وَإنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ مَرَّةً طَعَاماً، فَجَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأنَّهَا تُدْفَعُ، فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا في الطَّعَامِ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِيَدِهَا، ثُمَّ جَاءَ أَعْرَابِيّ كأنَّمَا يُدْفَعُ، فَأخَذَ بِيَدهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ أنْ لاَ يُذْكَرَ اسْمُ اللهِ تَعَالَى عَلَيْهِ، وَإنَّهُ جَاءَ بِهَذِهِ الجَارِيَةِ لِيَسْتَحِلَّ بِهَا، فأَخَذْتُ بِيَدِهَا، فَجَاءَ بِهَذَا الأَعرَابيّ لِيَسْتَحِلَّ بِهِ، فَأخذْتُ بِيَدِهِ، والَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إنَّ يَدَهُ فِي يَدِي مَعَ يَدَيْهِمَا » ثُمَّ ذَكَرَ اسْمَ اللهِ تَعَالَى وَأكَلَ. رواه مسلم
৪/৭৩৫। হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা যখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে আহারে বসতাম, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারে হাত রেখে শুরু না করা পর্যন্ত আমরা তাতে হাত রাখতাম না (এবং আহার শুরু করতাম না)। একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে খাবারে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ একটি বাচ্চা মেয়ে এমনভাবে এল, যেন তাকে (পিছন থেকে) ধাক্কা দেওয়া হচ্ছিল এবং সে নিজ হাত খাবারে দিতে উদ্যত হয়েছিল, এমন অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে নিলেন। তারপর এক বেদুঈনও (তদ্রূপ দ্রুত বেগে) এল, যেন তাকে ধাক্কা মারা হচ্ছিল (সেও খাবারে হাত রাখতে উদ্যত হলে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাতও ধরে নিলেন এবং বললেন, ‘‘যে খাবারে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, শয়তান সে খাদ্যকে হালাল মনে করে। আর এ মেয়েটিকে শয়তানই নিয়ে এসেছে, যাতে ওর বদৌলতে নিজের জন্য খাদ্য হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি তার হাত ধরে ফেললাম। তারপর সে বেদুঈনকে নিয়ে এল, যাতে ওর দ্বারা খাদ্য হালাল করতে পারে। কিন্তু আমি ওর হাতও ধরে নিলাম। সেই মহান সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, শয়তানের হাত ঐ দু’জনের হাতের সঙ্গে আমার হাতে (ধরা পড়েছিল)।’’ অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করলেন। (মুসলিম)
৫/৭৩৬। উমাইয়্যাহ্ ইবনু মাখ্শী সাহাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বসা ছিলেন এবং এক ব্যক্তি আল্লাহর নাম না নিয়েই খাবার খাচ্ছিলো। তার খাওয়া শেষ হতে আর কেবল এক লোকমা বাকি। এই শেষ লোকমাটি মুখে দেওয়ার সময় সে বললো, ‘‘বিস্মিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’’ (আমি আল্লাহর নাম নিচ্ছি খাওয়ার শুরু এবং শেষভাগে)। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন। তিনি বললেনঃ তার সাথে শাইতান বরাবর খাবার খেয়ে যাচ্ছিল। সে আল্লাহর নাম নেয়ার সাথে সাথেই শাইতানের পেটে যা কিছু ছিল, বমি করে সবকিছু ফেলে দিল। (আবু দাউদ, নাসায়ী)
6/737 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَأكُلُ طَعَاماً فِي سِتَّةٍ مِنْ أصْحَابِهِ، فَجَاءَ أعْرَابِيٌّ، فَأكَلَهُ بلُقْمَتَيْنِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « أَمَا إنَّهُ لَوْ سَمَّى لَكَفَاكُمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৬/৭৩৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ছয়জন সাহাবীর সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুঈন হাযির হল এবং সে দু’গ্রাসেই সমস্ত খাদ্য খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ সব দেখে) বললেন, ‘‘শোনো! যদি এ ব্যক্তি (শুরুতে) ‘বিসমিল্লাহ’ বলত, তাহলে এই খাবারই তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হত।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
7/738 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا رَفَعَ مَائِدَتَهُ، قَالَ: « الْحَمْدُ للهِ حَمداً كَثِيراً طَيِّباً مُبَاركَاً فِيهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ، وَلاَ مُوَدَّعٍ، وَلاَ مُسْتَغْنَىً عَنْهُ رَبَّنَا ». رواه البخاري
৭/৭৩৮। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দস্তরখানা গুটাতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেনঃ-
“আলহামদু লিল্লা-হি হামদান কাসীরান ত্বাইয়্যিবাম মুবা-রাকান ফীহি গায়রা মাকফিইয়্যিন অলা মুওয়াদ্দাইন অলা মুস্তাগনান আনহু রাববানা।” অর্থাৎ আল্লাহর জন্য অগণিত পবিত্র ও বরকতপূর্ণ প্রশংসা। অকুণ্ঠ, নিরবচ্ছিন্ন, প্রয়োজন-সাপেক্ষ প্রশংসা। হে আমাদের প্রভু! (বুখারী)
8/739 وَعَن مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ أكَلَ طَعَامَاً، فَقَالَ: الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أطْعَمَنِي هَذَا، وَرَزَقنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلاَ قُوَّةٍ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
৮/৭৩৯। মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আহার শেষে এই দো‘আ পড়বেঃ-
‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্ব্আমানী হা-যা অরাযাক্বানীহি মিন গাইরি হাওলিম মিন্নী অলা ক্বুউওয়াহ।’ (অর্থাৎ সেই আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা যিনি আমাকে এ খাওয়ালেন এবং জীবিকা দান করলেন, আমার কোন চেষ্টা ও সামর্থ্য ছাড়াই) সে ব্যক্তির পূর্বের সমস্ত (ছোট) পাপ মোচন করে দেওয়া হবে।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান)
101- بَابُ لَا يُعِيْبُ الطَّعَامُ وَاِسْتِحْبَابِ مَدْحِهِ
পরিচ্ছেদ - ১০১: কোন খাবারের দোষত্রুটি বর্ণনা না করা এবং তার প্রশংসা করা উত্তম
1/740 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: مَا عَابَ رَسُولُ اللهِ ﷺ طَعَامَاً قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أكَلَهُ، وَإنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৪০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন খাবারের দোষ বর্ণনা করেননি। ভাল লাগলে তিনি তা খেয়েছেন এবং খারাপ লাগলে তিনি তা ত্যাগ করেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/741 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ سَأَلَ أهْلَهُ الأُدْمَ، فَقَالُوا: مَا عِنْدَنَا إِلاَّ خَلٌّ، فَدَعَا بِهِ، فَجَعَلَ يَأكُلُ، ويَقُولُ: « نِعْمَ الأُدْمُ الخَلُّ، نِعْمَ الأُدْمُ الخَلُّ ». رواه مسلم
২/৭৪১। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ পরিবারের কাছে তরকারি চাইলেন। তারা বলল, ‘আমাদের নিকট সির্কা ছাড়া আর কিছুই নেই।’ তিনি তাই চাইলেন এবং (তা দিয়ে) আহার করতে থাকলেন ও বলতে থাকলেন, ‘‘সির্কা কতই না চমৎকার তরকারি। সির্কা কতই না ভাল ব্যঞ্জন।’’ (মুসলিম)
102- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ مَنْ حَضَرَ الطَّعَامَ وَهُوَ صَائِمٌ إِذَا لَمْ يُفْطِرْ
পরিচ্ছেদ - ১০২: নফল রোযাদারের সামনে খাবার এসে গেলে যখন সে রোযা ভাঙ্গতে প্রস্তুত নয়, তখন সে কী বলবে?
1/742 عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا دُعِيَ أحَدُكُمْ فَلْيُجِبْ، فَإنْ كَانَ صَائِماً فَلْيُصَلِّ، وَإنْ كَانَ مُفْطِراً فَلْيَطْعَمْ ». رواه مسلم
১/৭৪২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কাউকে খাবারের দাওয়াত দেওয়া হয়, তখন সে যেন তা (কোন আপত্তিকর ব্যাপার না থাকলে সাদরে) গ্রহণ করে। আর সে যদি রোযা অবস্থায় থাকে, তাহলে (দাওয়াতকারীর জন্য) দো‘আ করে। আর যদি রোযা অবস্থায় না থাকে, তাহলে যেন আহার করে। (মুসলিম)
103- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ مَنْ دُعِيَ إِلٰى طَعَامٍ فَتَبِعَهُ غَيْرُهُ
পরিচ্ছেদ - ১০৩: নিমন্ত্রিত ব্যক্তির কেউ সাথী হলে সে নিমন্ত্রণদাতাকে কী বলবে?
2/743 عَن أَبي مَسعُودٍ البَدْريِّ رضي الله عنه، قَالَ: دَعَا رَجُلٌ النَّبِيَّ ﷺ لِطَعَامٍ صَنعَهُ لَهُ خَامِسَ خَمْسَةٍ، فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ، فَلَمَّا بَلَغَ البَابَ، قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « إنَّ هَذَا تَبِعَنَا، فَإنْ شِئْتَ أنْ تَأْذَنَ لَهُ، وَإنْ شِئْتَ رَجَعَ ». قَالَ: بل آذَنُ لَهُ يَا رَسُولَ اللهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৭৪৩। আবূ মাস‘ঊদ বদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খাবারের জন্য দাওয়াত দিল, যা সে পাঁচ জনের জন্য প্রস্তুত করেছিল, যার পঞ্চম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। (রাস্তায়) এক (অনাহূত) ব্যক্তি তাঁদের অনুগামী হল। যখন তাঁরা বাড়ির দরজায় পৌঁছলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমন্ত্রণকারীকে) বললেন, ‘‘এ ব্যক্তি আমাদের সাথে চলে এসেছে। তুমি চাইলে ওকে অনুমতি দিতে পার, না চাইলে ও ফিরে যাবে।’’ কিন্তু সে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! বরং আমি তাকে অনুমতি দিলাম।’ (বুখারী ও মুসলিম)
104- بَابُ الْأَكْلِ مِمَّا يَلِيْهِ وَوَعْظِهِ وَتَأْدِيْبِهِ مَنْ يُّسِيْءُ أَكْلَهُ
পরিচ্ছেদ - ১০৪: নিজের সামনে এক ধার থেকে আহার করা ও বে-নিয়ম আহারকারীকে উপদেশ ও আদব-কায়দা শিক্ষা দেওয়া প্রসঙ্গে
1/744عَن عُمَرَ بنِ أَبي سَلمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنْتُ غُلاَماً فِي حِجْرِ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللهَ تَعَالَى، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيكَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৪৪। উমার ইবনে আবী সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বাল্যকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর তত্ত্বাবধানে ছিলাম। একদা খাবার পাত্রে আমার হাত ছুটাছুটি করছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘ওহে কিশোর! ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনে এক তরফ থেকে খাও।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/745 وَعَن سَلَمَةَ بنِ الأَكْوَعِ رضي الله عنه: أنَّ رَجُلاً أَكَلَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ ﷺ بِشِمَالِهِ، فَقَالَ: « كُلْ بِيَمِينِكَ» قَالَ: لاَ أسْتَطِيعُ . قَالَ: « لاَ اسْتَطَعْتَ » ! مَا مَنَعَهُ إِلاَّ الكِبْرُ ! فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيهِ . رواه مسلم
২/৭৪৫। সালামা ইবনে আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে একটি লোক তার বাম হাত দ্বারা আহার করল। (এ দেখে) তিনি বললেন, ‘‘তুমি ডান হাত দ্বারা খাও।’’ সে বলল, ‘আমি পারবো না!’ তিনি বদ-দো‘আ দিয়ে বললেন, ‘‘তুমি যেন না পারো।’’ ওর অহংকারই ওকে (কথা মানতে) বাধা দিয়েছিল। সুতরাং তারপর থেকে সে আর তার হাত মুখে তুলতে পারেনি। (মুসলিম)
105- بَابُ النَّهْيِ عَنِ الْقِرَانِ بَيْنَ تَمْرَتَيْنِ وَنَحْوِهِمَا
পরিচ্ছেদ - ১০৫: একপাত্রে দলবদ্ধভাবে খাবার সময় সাথীদের অনুমতি ছাড়া খেজুর বা অনুরূপ কোন ফল জোড়া জোড়া খাওয়া নিষেধ।
1/746 عَن جَبَلَة بنِ سُحَيْمٍ، قَالَ: أصَابَنَا عَامُ سَنَةٍ مَعَ ابنِ الزُّبَيْرِ ؛ فَرُزِقْنَا تَمْراً، وَكَانَ عَبدُ اللهِ بنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا يَمُرُّ بِنَا وَنَحنُ نَأكُلُ، فَيَقُولُ: لاَ تُقَارِنُوا، فَإِنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى عنِ القِرَانِ، ثُمَّ يَقُولُ: إِلاَّ أنْ يَسْتَأذِنَ الرَّجُلُ أخَاهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৪৬। জাবালাহ ইবনে সুহাইম বলেন, ইবনে যুবাইরের খেলাফতকালে আমরা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়েছিলাম। সুতরাং আমাদেরকে খেজুর দেওয়া হত। আর ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করতেন, যখন আমরা তা আহার করতাম। তিনি বলতেন, ‘তোমরা জোড়া জোড়া খেজুর এক সাথে খাবে না। কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোড়া খেজুর (দুটো খেজুর এক সঙ্গে) খেতে বারণ করেছেন।’ তারপর বললেন, ‘তবে যদি তার সঙ্গী ভাইয়ের কাছে সে অনুমতি গ্রহণ করে (তবে তা স্বতন্ত্র ব্যাপার)।’ (বুখারী, মুসলিম)
106- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ وَيَفْعَلُهُ مَنْ يَّأْكُلُ وَلَا يَشْبَعُ
পরিচ্ছেদ - ১০৬: খাওয়া সত্ত্বেও পরিতৃপ্ত না হলে কী বলা ও করা উচিত?
1/747 عَن وَحْشِيِّ بنِ حَربٍ رضي الله عنه: أَنَّ أَصحَابَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّا نَأكُلُ وَلاَ نَشْبَعُ ؟ قَالَ: « فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُونَ » قَالُوا: نَعَمْ . قَالَ: « فَاجْتَمِعُوا عَلَى طَعَامِكُمْ، وَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ، يُبَارَكْ لَكُمْ فِيهِ ». رواه أَبُو داود
১/৭৪৭। অহশী ইবনে হার্ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, সাহাবাগণ নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা খাই, কিন্তু যেন পেট ভরে না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে হয়তো তোমরা আলাদা আলাদা খাও।’’ তারা বললেন, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা জামা‘আতবদ্ধভাবে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করো, তাহলে তাতে তোমাদের জন্য বরকত দান করা হবে।’’ (আবূ দাঊদ)
107- بَابُ الْأَمْرِ بِالْأَكْلِ مِنْ جَانِبِ الْقَصْعَةِ وَالنَّهْيِ عَنِ الْأَكْلِ مِنْ وَسَطِهَا
পরিচ্ছেদ - ১০৭: খাবার বাসনের এক ধার থেকে খাওয়ার নির্দেশ এবং তার মাঝখান থেকে খাওয়া নিষেধ
এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী পূর্বে পার হয়ে গেছে, ‘‘তুমি তোমার সামনে একধার থেকে খাও।’’ (বুখারী, মুসলিম)
1/748 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « البَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطعَامِ ؛ فَكُلُوا مِنْ حَافَتَيْهِ، وَلاَ تَأكُلُوا مِنْ وَسَطِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
১/৭৪৮। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যেহেতু খাবারের মাঝখানে বরকত নাযিল হয়, সেহেতু তোমরা ওর দুই ধার থেকে খাও, আর ওর মাঝখান থেকে খেয়ো না।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
2/749 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ بُسْرٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ لِلنَّبِيِّ ﷺ قَصْعَةٌ يُقَالُ لَهَا: الغَرَّاءُ يَحْمِلُهَا أرْبَعَةُ رِجَالٍ ؛ فَلَمَّا أضْحَوْا وَسَجَدُوا الضُّحَى أُتِيَ بِتِلْكَ الْقَصْعَةِ ؛ يَعنِي وَقَدْ ثُرِدَ فِيهَا، فَالتَفُّوا عَلَيْهَا، فَلَمَّا كَثُرُوا جَثَا رَسُولُ اللهِ ﷺ . فَقَالَ أَعرَابيٌّ: مَا هَذِهِ الجِلْسَةُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ اللهَ جَعَلَنِي عَبْداً كَرِيماً، وَلَمْ يَجْعَلْنِي جَبَّاراً عَنِيداً »، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « كُلُوا مِنْ حَوَالَيْهَا، وَدَعُوا ذِرْوَتَهَا يُبَارَكْ فِيهَا ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيد
২/৭৪৯। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি পাত্র ছিল যাকে ‘গার্রা’ বলা হত, সেটাকে চারজন মানুষ ধরে তুলতো। একদা চাশ্তের সময়ে যখন চাশ্তের নামায পড়ার পর ঐ (বিশাল) পাত্রটি আনা হল---অর্থাৎ তাতে ‘সারীদ’ (মাংস ও খন্ড খন্ড রুটি সংমিশ্রণে প্রস্তুত সুসবাদু খাদ্য) রাখার পর, তখন লোকেরা তাতে জমায়েত হল। লোকের পরিমাণ যখন বেশি হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাঁটুর ভরে বসে পড়লেন। (এরূপ দেখে) জনৈক বেদুঈন বলল, ‘এ কেমন বসা?’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘নিশ্চিতরূপে আল্লাহ আমাকে ভদ্র (বিনয়ী) বান্দা করেছেন এবং উদ্ধত ও হঠকারী করেননি।’’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা পাত্রের এক ধার থেকে খেতে থাক। আর ওর শীর্ষভাগ ছেড়ে দাও, ওখানে বরকত অবতীর্ণ হবে।’’ (আবূ দাঊদ উত্তম সনদে)
108- بَابُ كَرَاهِيَةِ الْأَكْلِ مُتَّكِئًا
পরিচ্ছেদ - ১০৮: ঠেস দিয়ে বসে আহার করা অপছন্দনীয়
وَهْبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «لاَ آكُلُ مُتَّكِئاً». رواه البخاري
১/৭৫০। আবূ জুহাইফা অহাব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আমি হেলান দিয়ে বসে আহার করি না।’’ (বুখারী)
ইমাম খাত্ত্বাবী (রঃ) বলেন, ‘এখানে হেলান দিয়ে বসার মানে হচ্ছে নিচে কোন নরম গদি বা আসনে চেপে বসা। উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক ভোজনবিলাসী পেটুক মানুষের মত কোন গদিতে চেপে বা ঠেস বালিশে হেলান দিয়ে বসতেন না এবং তিনি আরামের সাথে না বসে এমনভাবে হাঁটু দু’টি উঁচু করে বসতেন, যেন উঠে দাঁড়াবেন। তিনি যথা পরিমিতভাবে আহার করতেন।’ --এ হল ইমাম খাত্ত্বাবীর কথা। অন্যান্য আলেমগণ এ অর্থের দিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, একপার্শ্বে ভর দিয়ে চেপে বসা হল হেলান দিয়ে বসা। আর আল্লাহই সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।
2/751 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ جَالِساً مُقْعِياً يَأكُلُ تَمْراً . رواه مسلم
২/৭৫১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উঁচু হয়ে বসে খেজুর খেতে দেখেছি।’ (মুসলিম)
* উঁচু হয়ে বসার পদ্ধতি এই যে, পায়ের নলা দুখানা উঁচু করে বুকের সাথে লাগিয়ে মাটিতে বা কোন আসনে পাছা ঠেকিয়ে বসা।
109- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْأَكْلِ بِثَلَاثِ أَصَابِعَ
পরিচ্ছেদ - ১০৯: তিন আঙ্গুল দ্বারা খাবার খাওয়া মুস্তাহাব
খাওয়ার পর আঙ্গুল চেটে ও চুষে খাওয়া উত্তম। তা চাটার পূর্বে মুছে (বা ধুয়ে) ফেলা অপছন্দনীয়। বাসন চেটে খাওয়া ও নিচে পড়ে যাওয়া খাবারের লুকমা বা দানা তুলে খাওয়া উত্তম এবং আঙ্গুল চাটা বা চুষার পর হাত-পা ইত্যাদিতে মুছা বৈধ।
1/752عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا أكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَاماً، فَلاَ يَمْسَحْ أَصَابِعَهُ حَتَّى يَلْعَقَهَا أَوْ يُلْعِقَها ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৭৫২। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন আহার করে, সে যেন তার আঙ্গুলগুলি না মুছে; যতক্ষণ না সে তা নিজে চেটে খায় কিংবা অন্য (শিশু প্রভৃতি)কে দিয়ে চাঁটিয়ে নেয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/753 وَعَن كَعبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَأكُلُ بثَلاَثِ أَصَابِعَ، فَإِذَا فَرَغَ لَعِقَهَا . رواه مسلم
২/৭৫৩। কা‘ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিন আঙ্গুল দ্বারা (রুটি, খেজুর ইত্যাদি) খেতে দেখেছি। অতঃপর যখন তিনি খাবার শেষ করলেন, তখন সেগুলিকে চাটলেন।’ (মুসলিম)
3/754 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أَمَرَ بِلَعْقِ الأَصَابِعِ وَالصَّحفَةِ، وَقَالَ: « إنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ فِي أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَةُ ». رواه مسلم
৩/৭৫৪। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারান্তে আঙ্গুল ও থালা চেটে খাবার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাদ্যে বরকত নিহিত আছে।’’ (মুসলিম)
4/755 وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا وَقَعَتْ لُقْمَةُ أحَدِكُمْ، فَلْيأخُذْهَا فَلْيُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أَذىً، وَلْيَأْكُلْهَا، وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطَان، وَلاَ يَمْسَحْ يَدَهُ بِالمِنْدِيل حَتَّى يَلْعَقَ أصَابِعَهُ، فَإنَّهُ لاَ يَدْري فِي أيِّ طَعَامِهِ البَرَكَةُ ». رواه مسلم
৪/৭৫৫। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কারো খাদ্য গ্রাস (বা দানা পাত্রের বাইরে) পড়ে যাবে, তখন সে যেন তা থেকে নোংরা দূর করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ছেড়ে না দেয়। আর রুমালে হাত মুছে ফেলার পূর্বে যেন আঙ্গুলগুলি চেটে নেয়। কেননা, সে জানে না যে, তার কোন্ খাদ্যাংশে বরকত নিহিত আছে।’’ (মুসলিম)
5/756 وَعَنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إنَّ الشَّيْطَانَ يَحْضُرُ أحَدَكُمْ عِنْدَ كُلِّ شَيْءٍ مِنْ شَأنِهِ، حَتَّى يَحْضُرَهُ عِنْدَ طَعَامِهِ، فإذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أحَدِكُمْ فَلْيَأخُذْهَا فَليُمِطْ مَا كَانَ بِهَا مِنْ أذىً، ثُمَّ لِيَأْكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا للشَّيْطَانِ، فإذَا فَرَغَ فَلْيَلْعَقْ أصَابِعَهُ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي فِي أيِّ طَعَامِهِ البَرَكَةُ ». رواه مسلم
৫/৭৫৬। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘শয়তান তোমাদের সমস্ত কাজ কর্মে তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়; এমনকি তোমাদের খাবারের সময়েও উপস্থিত হয়। সুতরাং যখন কারো খাবার লুকমা (থালার বাইরে) পড়ে যায়, তখন সে যেন তা তুলে তা থেকে নোংরা পরিষ্কার করে খেয়ে নেয় এবং শয়তানের জন্য তা ফেলে না রাখে। আর আহারান্তে আঙ্গুলগুলি চেটে নেয়। কারণ, তার জানা নেই যে, তার কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে। (মুসলিম)
6/757 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا أكَلَ طَعَاماً، لَعِقَ أصَابِعَهُ الثَّلاَثَ . قَالَ: وَقَالَ: «إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِط عَنهَا الأَذَى، وليَأكُلْهَا وَلاَ يَدَعْهَا لِلشَّيْطان». وأَمَرَ أن تُسلَتَ القَصْعَةُ، قَالَ: « فإنَّكُمْ لاَ تَدْرُونَ في أيِّ طَعَامِكُمُ البَرَكَة ». رواه مسلم
৬/৭৫৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আহার করতেন তখন নিজ তিনটি আঙ্গুল চেটে খেতেন এবং বলতেন, ‘‘কারো খাবারের লুকমা নিচে পড়ে গেলে, সে যেন তা তুলে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলে এবং শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে।’’ আর তিনি আমাদেরকে খাদ্যপাত্র (বা বাসন) চেটে খেতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, ‘‘তোমরা জান না যে, তোমাদের কোন্ খাবারে বরকত নিহিত আছে।’’ (মুসলিম)
7/758 وَعَن سَعِيدِ بنِ الحَارِثِ: أَنَّهُ سَأَلَ جَابِراً رضي الله عنه عَنِ الوُضُوءِ مِمَّا مَسَّتِ النَّارُ، فَقَالَ: لاَ، قَدْ كُنَّا زَمَنَ النَّبِيِّ ﷺ لاَ نَجِدُ مِثْلَ ذَلِكَ الطَّعامِ إِلاَّ قَلِيلاً، فَإِذَا نَحْنُ وَجَدْنَاهُ، لَمْ يَكُنْ لَنَا مَنَادِيلُ إِلاَّ أَكُفَّنَا، وَسَواعِدَنَا، وَأقْدَامَنَا، ثُمَّ نُصَلِّي وَلاَ نَتَوَضَّأُ . رواه البخاري
৭/৭৫৮। সা‘ঈদ ইবন হারেস কর্তৃক বর্ণিত, তিনি জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আগুনে স্পর্শ করা বস্তু খাওয়ার পর ওযূ করা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, ‘না। (ওযূ করতে হবে না।) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে তো আমরা এরূপ খাদ্য খুব কমই পেতাম। আর যখন আমরা তা পেতাম, তখন আমাদের তো হাতের চেটো, হাতের নলা ও পা ছাড়া কোন রুমাল ছিল না। (আমরা এগুলিতে মুছে ফেলতাম।) তারপর (নতুন) ওযূ না করেই আমরা নামায আদায় করতাম।’ (বুখারী)
110- بَابُ تَكْثِيْرِ الْأَيْدِيْ عَلَى الطَّعَامِ
পরিচ্ছেদ - ১১০: কোন সীমিত খাবারে অনেক
মানুষের হাত পড়লে বরকত হয়
1/759 عَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « طَعَامُ الاِثنَينِ كَافِي الثَّلاَثَةِ، وَطَعَامُ الثَّلاَثَةِ كَافِي الأَربَعَةِ ». متفق عَلَيْهِ
১/৭৫৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য যথেষ্ট এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/760 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « طَعَامُ الوَاحِدِ يَكْفِي الاِثْنَيْنِ، وَطَعَامُ الاِثْنَيْنِ يَكْفِي الأَرْبَعَةَ، وَطَعَامُ الأَرْبَعَةِ يَكْفِي الثَّمَانِيَةَ ». رواه مسلم
২/৭৬০। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য যথেষ্ট এবং দু’জনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট, আর চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট।’’ (মুসলিম)
111- بَابُ أَدَبِ الشُّرْبِ
পরিচ্ছেদ - ১১১: পান করার আদব-কায়দা
পানপাত্রের বাইরে নিঃশ্বাস ফেলা উত্তম এবং তার ভিতরে নিঃশ্বাস ফেলা মকরূহ। পানপাত্র ডান দিক থেকে পরিবেশন করা উত্তম।
1/761 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَتَنَفَّسُ فِي الشَّرابِ ثَلاَثاً . متفق عَلَيْهِ
১/৭৬১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানি পান করার সময় তিনবার দম নিতেন। (অর্থাৎ তিনি পান পাত্রের বাইরে তিনবার নিঃশ্বাস ফেলতেন।) (বুখারী ও মুসলিম)
২/৭৬২। ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, উঁটের ন্যায় তোমরা এক নিঃশ্বাসে পানি পান করো না, বরং দুই তিনবার (শ্বাস নিয়ে) পান করো। আর যখন তোমরা পানি পান করা শুরু কর তখন বিসমিল্লাহ বলো এবং যখন পান করা শেষ করো তখন ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলো। হাদীসটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটি হাসান হাদীস।
3/763 وَعَن أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى أنْ يُتَنَفَّسَ فِي الإِنَاءِ . متفق عَلَيْهِ
৩/৭৬৩। আবূ ক্বাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান পাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
4/764 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أُتِيَ بِلَبَنٍ قَدْ شِيبَ بِمَاءٍ، وَعَن يَمِينهِ أعْرَابيٌّ، وَعَن يَسَارِهِ أَبُو بَكْر رضي الله عنه، فَشَرِبَ، ثُمَّ أعْطَى الأَعْرَابيَّ، وَقَالَ: « اَلأَيْمَنُ فَالأَيْمَنُ ». متفق عَلَيْهِ
৪/৭৬৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পানি মিশ্রিত দুধ আনা হল। (তখন) তাঁর ডান দিকে এক বেদুঈন ছিল ও বাম দিকে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (বসে) ছিলেন। বস্তুত তিনি তা পান করে বেদুঈনকে দিলেন এবং বললেন, ‘‘ডান দিকের ব্যক্তির অগ্রাধিকার রয়েছে, তারপর তার ডান দিকের ব্যক্তির অগ্রাধিকার রয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/765 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ أُتِيَ بِشَرَابٍ، فَشَرِبَ مِنْهُ وَعَن يَمِينِهِ غُلاَمٌ، وَعَن يَسَارِهِ أَشْيَاخٌ، فَقَالَ لِلغُلاَمِ: « أتَأْذَنُ لِي أنْ أُعْطِيَ هؤُلاَءِ ؟ » فَقَالَ الغُلامُ: لاَ وَاللهِ، لاَ أُوثِرُ بِنَصِيبِي مِنْكَ أَحَداً . فَتَلَّهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي يَدِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৭৬৫। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে শরবত পরিবেশন করা হল। তিনি তা থেকে পান করলেন। আর তাঁর ডান দিকে ছিল একটি বালক। আর বাম দিকে ছিল কয়েকজন বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বালকটিকে বললেন, ‘‘তুমি কি আমাকে অনুমতি দেবে, আমি ঐ বয়স্ক লোকগুলিকে আগে পান করতে দিই?’’ বালকটি বলল, ‘আল্লাহর কসম! আপনার কাছ থেকে আমার ভাগে আসা জিনিসের ক্ষেত্রে আমি কাউকে আমার উপর অগ্রাধিকার দেব না।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন পেয়ালাটি তার হাতে তুলে দিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
* উক্ত বালক ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন।
112- بَابُ كَرَاهَةِ الشُّرْبِ مِنْ فَمِ الْقِرْبَةِ وَنَحْوِهَا
وَبَيَانِ أَنَّهُ كَرَاهَةُ تَنْزِيْهٍ لَا تَحْرِيْمٍ
পরিচ্ছেদ - ১১২: মশ্ক ইত্যাদির মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা অপছন্দনীয়, তবে তা হারাম নয়
1/766 عَن أَبي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللهِ ﷺ عَنِ اخْتِنَاثِ الأَسْقِيَةِ . يعني: أن تُكْسَرَ أفْواهُها، وَيُشْرَبَ مِنْهَا . متفق عَلَيْهِ
১/৭৬৬। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখ বাঁকিয়ে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
২/৭৬৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মশকের মুখে মুখ লাগিয়ে পানি পান করতে বারণ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
3/768 وَعَن أُمِّ ثَابِتٍ كَبْشَةَ بِنتِ ثَابِتٍ أُخْتِ حَسَّانَ بنِ ثَابِتٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَتْ: دَخَلَ عَلَيَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ فَشَرِبَ مِنْ فيِّ قِرْبَةٍ مُعَلَّقَةٍ قَائِماً، فَقُمْتُ إِلَى فِيْهَا فَقَطَعْتُهُ . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৩/৭৬৮। উম্মে সাবেত কাবশাহ বিনতে সাবেত, হাসসান ইবনে সাবেতের ভগিনী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন এবং একটি ঝুলন্ত মশকের মুখ থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন। সুতরাং আমি উঠে তার মুখটা কেটে নিলাম। (তিরমিযী হাসান সহীহ)
উম্মে সাবেত মশকের মুখটি কেটেছিলেন; যাতে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র মুখ স্পর্শকৃত ঐ অংশটুকু সংরক্ষণ করেন, তার দ্বারা বরকত লাভ করেন এবং অসম্মান থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। এ হাদীসটি সরাসরি পাত্রের মুখ থেকে পানি পান করার বৈধতার উপর বর্তানো যায়। আর পূর্বোক্ত হাদীস দু’টি এ ব্যাপারে উত্তম ও পূর্ণাঙ্গরীতি বর্ণনা করার জন্য এসেছে। আর আল্লাহই বেশি জানেন।
113- بَابُ كَرَاهَةِ النَّفْخِ فِي الشَّرَابِ
পরিচ্ছেদ - ১১৩: পানি পান করার সময় তাতে ফুঁ দেওয়া মাকরূহ
1/769 عَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه: أنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى عَن النَّفْخِ فِي الشَّرَابِ، فَقَالَ رَجُلٌ: القَذَاةُ أَرَاهَا فِي الإِنَاءِ ؟ فَقَالَ: « أَهرِقْهَا » . قَالَ: إنِّي لاَ أرْوَى مِنْ نَفَسٍ وَاحِدٍ ؟ قَالَ: « فَأَبِنِ القَدَحَ إِذَاً عَنْ فِيكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
১/৭৬৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানীয় পানকালে তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। একটি লোক নিবেদন করল, ‘পানপাত্রে (যদি) আমি খড়কুটো দেখতে পাই?’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তা ঢেলে ফেলে দাও।’’ সে নিবেদন করল, ‘এক শ্বাসে পানি পান করে আমার তৃপ্তি হয় না।’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে তুমি পেয়ালা মুখ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে নিঃশ্বাস গ্রহণ করো।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
২/৭৭০. وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النبيَّ ﷺ نَهَى أَنْ يُتَنَفَّسَ فِي الإِنَاءِ أَوْ يُنْفَخَ فِيهِ . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
২/৭৭০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানপাত্রে নিঃশ্বাস ফেলতে বা তাতে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী হাসান সহীহ)
114- بَابُ بَيَانِ جَوَازِ الشُّرْبِ قَائِمًا
পরিচ্ছেদ - ১১৪: দাঁড়িয়ে পান করা
দাঁড়িয়ে পান করা বৈধ; কিন্তু বসে পান করা সর্বোত্তম ও পূর্ণাঙ্গ রীতি। এ মর্মে কাবশার পূর্বোক্ত হাদীসটি দ্রষ্টব্য।
1/771 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَقَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ مِنْ زَمْزَمَ، فَشَرِبَ وَهُوَ قَائِمٌ. متفق عَلَيْهِ
১/৭৭১। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যমযমের পানি পান করিয়েছি। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/772 وَعَنِ النَّزَّالِ بنِ سَبْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: أَتَى عَلِيٌّ رضي الله عنه بَابَ الرَّحْبَةِ، فَشَرِبَ قَائِماً، وَقَالَ: إنِّي رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ فَعَلَ كَمَا رَأَيْتُمُونِي فَعَلْتُ . رواه البخاري
২/৭৭২। নায্যাল ইবনে সাবরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুফা নগরীর ‘রাহবাহ’র দ্বারপ্রান্তে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে দাঁড়িয়ে পানি পান করলেন এবং বললেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ঠিক এভাবে (পান) করতে দেখেছি, যেভাবে তোমরা আমাকে (পান) করতে দেখলে।’ (বুখারী)
3/773 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا عَلَى عَهدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ نَأكُلُ وَنَحْنُ نَمشِي، وَنَشْرَبُ ونَحْنُ قِيامٌ . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৩/৭৭৩। ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আমরা চলতে চলতে আহার করতাম এবং দাঁড়িয়ে পান করতাম।’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
4/774 وَعَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أَبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَشْرَبُ قَائِماً وقَاعِداً . رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৪/৭৭৪। ‘আমর ইবনে শু‘আইব তাঁর পিতা থেকে তিনি স্বীয় দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাঁড়িয়ে ও বসে পানি পান করতে দেখেছি।’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
5/775 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ: أَنَّهُ نَهَى أَن يَشْرَبَ الرَّجُلُ قَائِماً . قَالَ قَتَادَةُ: فَقُلْنَا لأَنَسٍ: فَالأَكْلُ ؟ قَالَ: ذَلِكَ أَشَرُّ ـ أَوْ أخْبَثُ ـ رواه مسلم . وَفِي رِوَايَةٍ لَهُ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ زَجَرَ عَن الشُّرْبِ قائِماً .
৫/৭৭৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোককে দাঁড়িয়ে পান করতে নিষেধ করেছেন। কাতাদাহ বলেন, আমরা আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে প্রশ্ন করলাম, ‘আর (দাঁড়িয়ে) খাওয়া?’ তিনি বললেন, ‘তা তো আরো মন্দ বা আরো জঘন্য কাজ।’ (মুসলিম)
তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে পান করার ব্যাপারে ধমক দিয়েছেন।
6/776 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ يَشْرَبَنَّ أحَدٌ مِنْكُمْ قَائِماً، فَمَنْ نَسِيَ فَلْيَسْتَقِيء ». رواه مسلم
৬/৭৭৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই দাঁড়িয়ে পান না করে। আর যদি ভুলে যায় (ভুলবশতঃ পান করে ফেলে), তাহলে সে যেন বমি করে দেয়।’’ (মুসলিম)
115- بَابُ اِسْتِحْبَابِ كَوْنِ سَاقِي الْقَوْمِ آخِرَهُمْ شُرْبًا
পরিচ্ছেদ - ১১৫: পানীয় পরিবেশনকারীর সবার শেষে পান করা উত্তম
1/777 عَن أَبِي قَتَادَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « سَاقِيُ القَومِ آخِرُهُمْ شُرْباً ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
১/৭৭৭। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদেরকে পানি পরিবেশনকারী তাদের সবার শেষে পান করবে।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
116- بَابُ جَوَازِ الشُّرْبِ في الإناء
পরিচ্ছেদ - ১১৬: পান-পাত্রের বিবরণ
সোনা-রূপা ছাড়া সমস্ত পবিত্র পানপাত্রে পান করা জায়েয। আর বিনা পাত্রে ও হাত না লাগিয়ে সরাসরি নদী ইত্যাদির পানিতে মুখ লাগিয়ে পান করা বৈধ এবং পানাহার, ওযূ তথা সমস্ত কাজে সোনা-রূপার পাত্র ব্যবহার হারাম।
2/778 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَقَامَ مَن كَانَ قَريبَ الدَّارِ إِلَى أهْلِهِ، وبَقِيَ قَوْمٌ، فَأُتِيَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِمَخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ، فَصَغُرَ المَخْضَبُ أنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ كُلُّهُمْ . قَالُوا: كَمْ كُنْتُمْ ؟ قَالَ: ثَمَانِينَ وَزِيَادَةً . متفق عَلَيْهِ، هذه رواية البخاري
وفي رواية لَهُ ولمسلم: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ مَاءٍ، فَأُتِيَ بِقَدَحٍ رَحْرَاحٍ فِيهِ شَيْءٌ مِنْ ماءٍ، فَوَضَعَ أصابعَهُ فِيهِ . قَالَ أنسٌ: فَجَعلْتُ أنْظُرُ إِلَى الماءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْن أصَابِعِهِ، فَحَزَرْتُ مَنْ تَوضَّأ مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانينَ .
১/৭৭৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একবার নামাযের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ি কাছে ছিল, তাঁরা (ওযূ করার জন্য) বাড়ি গেলেন। আর কিছু লোক থেকে গেলেন (তাঁদের কোন ওযূর ব্যবস্থা ছিল না)। সুতরাং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর মুঠি খোলাও মুশকিল ছিল। তা থেকেই সমস্ত লোক ওযূ করলেন।’ (আনাসকে উপস্থিত) লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘আপনারা কতজন ছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আশিজনেরও বেশি।’ (বুখারী-মুসলিম, এটি বুখারীর বর্ণনা)
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এবং মুসলিমের বর্ণনায় আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পানির পাত্র চাইলেন। সুতরাং তাঁর জন্য প্রশস্ত একটি অগভীর পেয়ালা আনা হল, যাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি স্বীয় আঙ্গুলগুলি ঐ পানিতে রাখলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘আমি তাঁর আঙ্গুলসমুহের ফাঁক দিয়ে পানির ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে দেখছিলাম। অনুমান করে দেখলাম, ওযূকারীদের সংখ্যা প্রায় সত্তর থেকে আশিজনের মাঝামাঝি ছিল।’
2/779 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ زَيدٍ رضي الله عنه، قَالَ: أتَانَا النَّبِيُّ ﷺ فَأَخْرَجْنَا لَهُ مَاءً في تَوْرٍ مِنْ صُفْر فَتَوَضَّأَ. رواه البخاري
২/৭৭৯। আব্দুল্লাহ ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাদের নিকট এলেন। আমরা তাঁকে পিতলের একটি পাত্রে পানি দিলাম, তিনি (তা দিয়ে) ওযূ করলেন।’ (বুখারী)
৩/৭৮০। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক আনসারীর নিকট গেলেন। আর তাঁর সঙ্গে একজন সাহাবীও ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যদি তোমার মশকে রাতের বাসী পানি থাকে, তাহলে নিয়ে এসো; নচেৎ সরাসরি পানিতে মুখ লাগিয়ে পান করে নেব।’’ (বুখারী)
4/781 وَعَن حُذَيفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: إنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَانَا عَنِ الحَرِيرِ، وَالدِّيبَاجِ، وَالشُّربِ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وَقَالَ: «هِيَ لَهُمْ فِي الدُّنْيَا، وَهِيَ لَكُمْ فِي الآخِرَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৭৮১। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পাতলা ও মোটা রেশমী কাপড় পরতে ও সোনা-রূপার পাত্রে পান করতে নিষেধ করেছেন। আর তিনি বলেছেন, ‘‘তা হল তাদের (কাফেরদের) জন্য দুনিয়ায় এবং তোমাদের (মুসলিমদের) জন্য আখেরাতে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/782 وَعَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: « اَلَّذِيْ يَشْرَبُ فِي آنِيَةِ الفِضَّةِ، إنَّمَا يُجَرْجِرُ في بَطْنِهِ نَارَ جَهَنَّمَ ». متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية لمسلم: « إنَّ الَّذِي يَأكُلُ أَوْ يَشْرَبُ في آنِيَةِ الفِضَّةِ وَالذَّهَبِ » .
وفي رواية لَهُ: « مَنْ شَرِبَ في إناءٍ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ، فَإنَّمَا يُجَرْجِرُ في بَطْنِهِ نَارَاً مِنْ جَهَنَّم».
৫/৭৮২। উম্মে সালামাহ্ রাদিয়াল্লাহু‘আনহা হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান করে।’’ (বুখারী)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি সোনা-রূপার পাত্রে পানাহার করে...।’’
তাঁর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি সোনা অথবা রূপার পাত্রে পান করে, সে আসলে নিজ উদরে জাহান্নামের আগুন ঢক্ঢক্ করে পান করে।’’
كِتَابُ اللِّبَاس
অধ্যায় (৩): পোষাক-পরিচছদ
117- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الثَّوْبِ الْأَبْيَضِ
পরিচ্ছেদ - ১১৭: কোন্ শ্রেণীর কাপড় উত্তম
সাদা রঙের কাপড় উত্তম। আর লাল, সবুজ ও কালো রঙের কাপড় বৈধ। আর রেশমী বস্ত্র ছাড়া সুতি, উল, পশম ও লোম ইত্যাদির কাপড় পরিধান করা জায়েয।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ ﴾ [الاعراف: ٢٦]
অর্থাৎ “হে বনী আদম! (হে মানবজাতি) তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ অবতীর্ণ করেছি। আর সংযমশীলতার পরিচ্ছদই সর্বোৎকৃষ্ট।” (সূরা আ’রাফ ২৬ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ وَجَعَلَ لَكُمۡ سَرَٰبِيلَ تَقِيكُمُ ٱلۡحَرَّ وَسَرَٰبِيلَ تَقِيكُم بَأۡسَكُمۡۚ ﴾ [النحل: ٨١]
অর্থাৎ তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; যা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে। (সূরা নাহ্ল ৮১ আয়াত)
1/783 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « اِلْبَسُوا مِنْ ثِيَابِكُمْ البَيَاضَ ؛ فَإنَّهَا مِنْ خَيْرِ ثِيَابِكُمْ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح.
১/৭৮৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা তোমাদের সাদা রঙের কাপড় পরিধান কর। কেননা, তা তোমাদের সর্বোত্তম কাপড়। আর ওতেই তোমাদের মৃত ব্যক্তিদেরকে কাফন দাও।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
2/784 وَعَن سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « اِلْبَسُوا البَيَاضَ ؛ فَإنَّهَا أَطْهَرُ وَأطْيَبُ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ ». رواه النسائي والحاكم، وقال: «حديث صحيح »
২/৭৮৪। সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সাদা রঙের কাপড় পরিধান কর। কেননা, তা সবচেয়ে পবিত্র ও উৎকৃষ্ট। আর ওতেই তোমাদের মৃতদেরকে কাফন দাও।’’ (নাসাঈ, হাকেম, তিনি বলেন হাদীসটি সহীহ)
3/785 وَعَنِ البَرَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مَرْبُوعاً، وَلَقَدْ رَأيْتُهُ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مَا رَأيْتُ شَيْئاً قَطُّ أحْسَنَ مِنْهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৭৮৫। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম আকৃতির লম্বা ছিলেন। আমি তাঁকে লাল পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখেছি। আমি তাঁর চাইতে অধিক সুন্দর আর কাউকে দেখিনি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/786 وَعَن أَبي جُحَيفَةَ وَهْبِ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: رَأيتُ النبيَّ ﷺ بِمكّةَ وَهُوَ بِالأَبْطَحِ في قُبَّةٍ لَهُ حَمْرَاءَ مِنْ أَدَمٍ، فَخَرَجَ بِلاَلٌ بِوَضُوئِهِ، فَمِنْ نَاضِحٍ وَنَائِلٍ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ ﷺ وَعَلَيهِ حُلَّةٌ حَمْرَاءُ، كَأنِّي أنْظُرُ إِلَى بَيَاضِ سَاقَيْهِ، فَتَوَضّأ وَأذَّنَ بِلاَلٌ، فَجَعَلْتُ أتَتَبَّعُ فَاهُ هَاهُنَا وَهَاهُنَا، يَقُولُ يَمِيناً وَشِمَالاً: حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ، حَيَّ عَلَى الفَلاَحِ، ثُمَّ رُكِزَتْ لَهُ عَنَزَةٌ، فَتَقَدَّمَ فَصَلَّى يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ الْكَلْبُ وَالْحِمَارُ لاَ يُمْنَعُ . متفقٌ عَلَيْهِ .
৪/৭৮৬। আবূ জুহাইফাহ অহাব ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মক্কায় দেখলাম, যখন তিনি আবত্বাহ নামক স্থানে চর্মনির্মিত লাল রঙের শিবিরে অবস্থান করছিলেন। বিলাল তাঁর ওযূর পানি নিয়ে বাইরে বের হলেন। কিছু লোক (বরকত হাসিল করার জন্য) উক্ত পানির ছিটা পেল আর কিছু সংখ্যক লোক পানি পেল। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাল রঙের জোড়া বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় বাইরে এলেন। যেন আমি তাঁর দুই পায়ের গোছার শুভ্রতা প্রত্যক্ষ করছি। অতঃপর তিনি ওযূ করলেন এবং বিলাল আযান দিলেন। আমি তাঁর এদিক ওদিক মুখ ফিরানো লক্ষ্য করছিলাম। তিনি ডানে ও বামে মুখ ফিরিয়ে ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ’, ‘হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ বলছিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য একটি বর্শা (সুতরাহ স্বরূপ) পুঁতে দেওয়া হল। তারপর তিনি সামনে এগিয়ে গেলেন এবং নামায পড়ালেন। তাঁর (সুতরার) সামনে দিয়ে কুকুর ও গাধা অতিক্রম করছিল। সেগুলোকে বাধা দেওয়া হচ্ছিল না। (বুখারী ও মুসলিম)
5/787 وَعَن أَبي رِمْثَة رِفَاعَةَ التَّيْمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ وَعَلَيهِ ثَوبَانِ أَخْضَرَانِ . رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح
৫/৭৮৭। আবূ রিমসা রিফাআহ তাইমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পরনে দুটো সবুজ রঙের কাপড় দেখেছি।’ (আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
6/788 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ دَخَلَ يَوْمَ فَتْحِ مَكَّةَ وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاء . رواه مسلم
৬/৭৮৮। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবিজয়ের দিন (সেখানে) কাল রঙের পাগড়ী পরে প্রবেশ করেছিলেন। (মুসলিম)
7/789 وَعَن أَبي سَعِيدٍ عَمرِو بنِ حُرَيْثٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَأنِّي أنْظُرُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ وَعَلَيهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ، قَدْ أرْخَى طَرَفَيْهَا بَيْنَ كَتِفَيْهِ . رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ خَطَبَ النَّاسَ، وَعَلَيْهِ عِمَامَةٌ سَوْدَاءُ .
৭/৭৮৯। আবূ সা‘ঈদ ‘আমর ইবনে হুরাইস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাল রঙের পাগড়ী পরিহিত অবস্থায় দেখছি, তিনি তাঁর পাগড়ীর দুই প্রান্ত দুই কাঁধের মাঝখানে ঝুলিয়ে রেখেছিলেন।’ (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাল রঙের পাগড়ী মাথায় বেঁধে লোকদের মাঝে খুতবা দিচ্ছিলেন।’
8/790 وَعَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كُفِّنَ رَسُولُ اللهِ ﷺ فِي ثَلاَثَةِ أثْوَابٍ بِيضٍ سَحُولِيَّةٍ مِنْ كُرْسُفٍ، لَيْسَ فِيهَا قَمِيصٌ وَلاَ عِمَامَةٌ .متفقٌ عَلَيْهِ
৮/৭৯০। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি সাদা সুতি বস্ত্রে কাফন দেওয়া হয়েছে যেগুলি ইয়ামানের ‘সাহুল’ নামক স্থানে প্রস্তুত করা হয়েছিল। ওগুলির মধ্যে কামীস (জামা) ছিল না। আর পাগড়ীও ছিল না।’’ (বুখারী-মুসলিম)
৯/৭৯১। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন সকালে বের হলেন, তখন তাঁর দেহে পালানের ছবি ছাপা কাল লোমের চাদর ছিল।’ (মুসলিম)
‘মুরাহহাল’ বলা হয় সেই কাপড়কে, যাতে ‘রাহল’ (উটের পিঠে স্থিত জিন্ বা পালান) এর ছবি ছাপা থাকে। আরবীতে পালানকে ‘আকওয়ার’ও বলে।
10/792 وَعَنِ المُغِيرَةِ بنِ شُعْبَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كُنْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ ﷺ ذَاتَ لَيْلَةٍ فِي مَسِيرٍ، فَقَالَ لِي: «أمَعَكَ مَاءٌ ؟» قُلتُ: نَعَمْ، فَنَزَلَ عَنْ رَاحِلَتِهِ فَمَشَى حَتَّى تَوَارَى فِي سَوَادِ اللَّيْلِ، ثُمَّ جَاءَ فَأفْرَغْتُ عَلَيْهِ مِنَ الإدَاوَةِ، فَغَسَلَ وَجْهَهُ وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ، فَلَمْ يَسْتَطِعْ أَنْ يُخْرِجَ ذِرَاعَيْهِ مِنْهَا حَتَّى أخْرَجَهُمَا مِنْ أسْفَلِ الْجُبَّةِ، فَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ وَمَسَحَ بِرَأسِهِ، ثُمَّ أهْوَيْتُ لأَنْزِعَ خُفَّيْهِ، فَقَالَ: « دَعْهُمَا فَإنِّي أَدْخَلْتُهُمَا طَاهِرَتَيْنِ » وَمَسحَ عَلَيْهِمَا . متفقٌ عَلَيْهِ .
وفي رواية: وَعَلَيْهِ جُبَّةٌ شَامِيَّةٌ ضَيِّقَةُ الكُمَّيْنِ .
وفي رواية: أنَّ هذِهِ القَضِيَّةَ كَانَتْ في غَزْوَةِ تَبُوكَ .
১০/৭৯২। মুগীরাহ ইবনে শু’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সফরে আমি রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘‘তোমার কাছে পানি আছে কি?’’ আমি বললাম, ‘জী হ্যাঁ।’ সুতরাং তিনি স্বীয় বাহন থেকে নামলেন এবং চলতে লাগলেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত রাতের অন্ধকারে অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারপর যখন ফিরে এলেন, তখন আমি পাত্র থেকে (পানি) ঢেলে দিলাম। তিনি তাঁর মুখমন্ডল ধুলেন। তাঁর পরনে ছিল পশমী জুববা। তিনি তা হতে তাঁর হাত দু’টিকে বের করতে সক্ষম হলেন না। পরিশেষে তিনি জুববার নিচের দিক দিয়ে হাত বের করলেন। অতঃপর তিনি তাঁর হাত দু’টি ধুলেন ও মাথা মাসাহ করলেন। তারপর আমি তাঁর মোজা খুলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম। তিনি বললেন, ছেড়ে দাও। কেননা, আমি ওগুলো পবিত্র (ওযূ) অবস্থায় পায়ে দিয়েছি। অতঃপর তিনি তার উপর মাসাহ করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
অপর বর্ণনায় আছে, তাঁর দেহে ছিল শামী জুববা; যার হাতা দু’টি টাইট ছিল।
অন্য বর্ণনায় আছে, এ ঘটনাটি ছিল তাবূক যুদ্ধের সফরে।
118- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْقَمِيْصِ
পরিচ্ছেদ - ১১৮: জামা পরিধান করা উত্তম
1/793 عَن أُمِّ سَلَمَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ أحَبُّ الثِّيَابِ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ الْقَمِيصَ . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن » .
১/৭৯৩। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয় পোশাক ছিল কামীস (জামা)।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান)
119- بَابُ صِفَةِ طُوْلِ الْقَمِيْصِ وَالْكُمِّ وَالْإِزَارِ وَطَرَفِ الْعِمَامَةِ وَتَحْرِيْمِ إِسْبَالِ شَيْءٍ مِّنْ ذٰلِكَ عَلٰى سَبِيْلِ الْخُيَلَاءِ وَكَرَاهَتِهِ مِنْ غَيْرِ خُيَلَاءِ
পরিচ্ছেদ - ১১৯: জামা-পায়জামা, জামার হাতা, লুঙ্গি তথা পাগড়ীর প্রান্ত কতটুকু লম্বা হবে? অহংকারবশতঃ ওগুলি ঝুলিয়ে পরা হারাম ও নিরহংকারে তা ঝুলানো অপছন্দনীয়
1/794 عَن أَسمَاءَ بِنتِ يَزِيدَ الأَنصَارِيَّةِ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ كُمُّ قَمِيصِ رَسُولِ اللهِ ﷺ إِلَى الرُّسْغِ . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
১/৭৯৪। আসমা বিনতে য়্যাযীদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জামার হাতা কব্জি পর্যন্ত লম্বা ছিল।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান)
2/795 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ ». فَقَالَ أَبُو بَكرٍ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ إِزَارِي يَسْتَرْخِي إِلاَّ أنْ أَتَعَاهَدَهُ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّكَ لَسْتَ مِمَّنْ يَفْعَلُهُ خُيَلاءَ ». رواه البخاري وروى مسلم بعضه .
২/৭৯৫। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে নিজের পোশাক মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে, আল্লাহ তার প্রতি কিয়ামতের দিন (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! খেয়াল না করলে আমার লুঙ্গি ঢিলে হয়ে নেমে যায়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তাদের শ্রেণীভুক্ত নও, যারা তা অহংকারবশতঃ করে থাকে।’’ (বুখারী, মুসলিম এর আংশিক বর্ণনা করেছেন।)
3/796 وَعَن أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « لاَ يَنْظُرُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ إِلَى مَنْ جَرَّ إِزَارَهُ بَطَراً ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৭৯৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে অহংকারের সাথে নিজের লুঙ্গি ঝুলিয়ে চলে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার প্রতি (রহমতের দৃষ্টিতে) তাকাবেন না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/797 وَعَنهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « مَا أسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإِزَارِ فَفِي النَّارِ ». رواه البخاري
৪/৭৯৭। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘লুঙ্গির যে পরিমাণটুকু পায়ের গাঁটের নীচে যাবে, সে পরিমাণ জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারী)
5/798 وَعَن أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ، وَلاَ يُزَكِّيهِمْ، وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ». قَالَ: فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللهِ ﷺ ثَلاَثَ مِرَارٍ، قَالَ أَبُو ذرٍّ: خَابُوا وَخَسِرُوا ! مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «المُسْبِلُ، وَالمنَّانُ، وَالمُنْفِقُ سِلْعَتَهُ بِالحَلِفِ الكاذِبِ ». رواه مسلم . وفي رواية لَهُ: «المُسْبِلُ إزَارَهُ » .
৫/৭৯৮। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন ব্যক্তির সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য থাকবে যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি।’’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত বাক্যগুলি তিনবার বললেন।’ আবূ যার্র বললেন, ‘তারা ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হোক! তারা কারা? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘(লুঙ্গি-কাপড়) পায়ের গাঁটের নীচে যে ঝুলিয়ে পরে, দান করে যে লোকের কাছে দানের কথা বলে বেড়ায় এবং মিথ্যা কসম খেয়ে যে পণ্য বিক্রি করে।’’ (মুসলিম) তাঁর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘যে লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরে।’’
6/799 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « الإِسْبَالُ فِي الإِزَارِ، وَالقَمِيصِ، وَالعِمَامَةِ، مَنْ جَرَّ شَيْئاً خُيَلاءَ لَمْ ينْظُرِ الله إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ ». رواه أَبُو داود والنسائي بإسناد صحيح
৬/৭৯৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লুঙ্গি, জামা ও পাগড়ীতে ঝুলানোর কাজ হয়ে থাকে। (অর্থাৎ এগুলি ঝুলিয়ে পরলে গুনাহ হয়।) যে ব্যক্তি অহংকারবশতঃ কিছু মাটিতে ছেঁচড়ে চলবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’ (আবূ দাঊদ, নাসায়ী বিশুদ্ধ সূত্রে)
7/800 وَعَن أَبي جُرَيٍّ جَابِرِ بنِ سُلَيْمٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيْتُ رَجُلاً يَصْدُرُ النَّاسُ عَنْ رَأْيهِ، لا يَقُولُ شَيْئاً إِلاَّ صَدَرُوا عَنْهُ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا ؟ قَالُوا: رَسُولُ اللهِ ﷺ . قُلْتُ: عَلَيْكَ السَّلامُ يَا رَسُولَ اللهِ – مَرَّتَينِ - قَالَ: « لاَ تَقُلْ: عَلَيْكَ السَّلامُ، عَلَيْكَ السَّلامُ تَحِيَّةُ المَوْتَى، قُلْ: السَّلامُ عَلَيْكَ ». قَالَ: قُلْتُ: أنْتَ رَسُولُ اللهِ ؟ قَالَ: « أنَا رَسُولُ اللهِ الَّذِي إِذَا أَصَابَكَ ضُرٌّ فَدَعَوْتَهُ كَشَفَهُ عَنْكَ، وَإِذَا أَصَابَكَ عَامُ سَنَةٍ فَدَعَوْتَهُ أَنْبَتَهَا لَكَ، وَإِذَا كُنْتَ بِأَرْضٍ قَفْرٍ أَوْ فَلاَةٍ فَضَلَّتْ رَاحِلَتُكَ، فَدَعَوْتَهُ رَدَّهَا عَلَيْكَ ». قَالَ: قُلْتُ: اِعْهَدْ إِلَيَّ. قَالَ: « لاَ تَسُبَّنَ أحَداً ». قَالَ: فَمَا سَبَبْتُ بَعْدَهُ حُرّاً، وَلاَ عَبْداً، وَلاَ بَعِيراً، وَلاَ شَاةً، « وَلاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ المَعْرُوفِ شَيْئاً، وَأَنْ تُكَلِّمَ أخَاكَ وَأنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُكَ، إنَّ ذَلِكَ مِنَ المَعْرُوفِ، وَارْفَعْ إزَارَكَ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، فَإنْ أبَيْتَ فَإلَى الكَعْبَينِ، وَإيَّاكَ وَإسْبَالَ الإِزَارِ فَإنَّهَا مِنَ المَخِيلَةِ. وَإنَّ اللهَ لاَ يُحِبُّ المَخِيلَةَ ؛ وَإِنِ امْرُؤٌ شَتَمَكَ وَعَيَّرَكَ بِمَا يَعْلَمُ فِيكَ فَلاَ تُعَيِّرْهُ بِمَا تَعْلَمُ فِيهِ، فَإنَّمَا وَبَالُ ذَلِكَ عَلَيْهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي بإسناد صحيح، وقال الترمذي: «حديث حسن صحيح »
৭/৮০০। আবূ জুরাই জাবের ইবনে সুলাইম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখলাম, যাঁর মতানুযায়ী লোকে কাজ করছে, তাঁর কথা তারা মেনে নিচ্ছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘এ লোকটি কে?’ লোকেরা বলল, ‘ইনি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ আমি তাঁকে ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলাল্লাহ’ দু’বার বললাম। তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। ‘আলাইকাস সালাম’ তো মৃতদের জন্য অভিবাদন বাণী। তুমি বলো ‘আসসালামু আলাইকা।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি সেই আল্লাহর রসূল, যে আল্লাহকে কোনো বিপদের সময় যদি ডাকো, তাহলে তিনি তোমার বিপদ দূর করে দেবেন। যদি দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা কর, তাহলে তিনি তোমার জন্য যমীন থেকে ফসল উৎপাদন করবেন। কোন গাছপালা বিহীন জনশূন্য মরুভূমিতে তোমার বাহন হারিয়ে গেলে তুমি যদি তাঁর নিকট দো‘আ কর, তাহলে তিনি তোমার বাহন তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবেন।’’
জাবের বলেন, আমি বললাম, ‘আপনি আমাকে বিশেষ উপদেশ দান করুন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কাউকে কখনো গালি-গালাজ করো না।’’ সুতরাং তারপর থেকে আমি না কোন স্বাধীন-পরাধীন ব্যক্তিকে, না কোন উট আর না কোন ছাগলকে গালি দিয়েছি।
(দ্বিতীয় উপদেশ হচ্ছে এই যে,) ‘‘কোন পুণ্যকর্মকে তুচ্ছ জ্ঞান করো না। নিঃসন্দেহে সহাস্য বদনে কোন মুসলিম ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বাক্যালাপ করা নেকীর কাজ। নিজ লুঙ্গি পায়ের অর্ধ রলা পর্যন্ত উঁচু রেখো। তা যদি মানতে না চাও, তাহলে গাঁট পর্যন্ত ঝুলাতে পার। লুঙ্গি ঝুলিয়ে পরা থেকে দূরে থেকো। কেননা, এতে অহংকার জন্মায়। আর নিশ্চয় আল্লাহ অহংকারকে পছন্দ করেন না। যদি কেউ তোমাকে গালি দেয় অথবা এমন দোষ ধরে তোমাকে লজ্জা দেয়, যা তোমার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানে, তাহলে তুমি তার এমন দোষ ধরে তাকে লজ্জা দিয়ো না, যা তার মধ্যে বিদ্যমান আছে বলে জানো। যেহেতু তার কুফল তার উপরই বর্তাবে (তোমার উপর নয়)।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
8/801 وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَمَا رَجُلٌ يُصَلِّى مُسْبِلٌ إِزَارَهُ، قَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: « اِذْهَبْ فَتَوَضَّأْ » فَذَهَبَ فَتَوضَّأَ، ثُمَّ جَاءَ، فَقَالَ: «اِذْهَبْ فَتَوَضَّأْ » فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُوْلَ اللهِ . مَالَكَ أَمَرْتَهُ أَن يَّتَوَضَّأَ ثُمَّ سَكَتَّ عَنْهُ ؟ قَالَ: «إِنَّهُ كَانَ يُصَلِّى وَهُوَ مُسْبِلٌ إِزَارَهُ، إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ صَلَاةَ رَجُلٍ مُسْبِلٍ » .
৮/৮০১। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি (টাখনুর নীচে) লুঙ্গি ঝুলিয়ে সালাত পড়ছিলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, যাও, পুনরায় ওযূ কর। সে আবার ওযূ করে করে এলো। তিনি আবার বললেনঃ যাও, পুনরায় ওযূ কর। একজন বললো, হে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! কেন আপনি তাকে ওযূ করার নির্দেশ দিচ্ছেন, তারপর নীরবতা পালন করছেন? তিনি বললেনঃ এ লোক তার লুঙ্গি (টাখনুর নীচে) ঝুলিয়ে দিয়ে সালাত পড়ছিলো। অথচ আল্লাহ এমন ব্যক্তির সালাত কবূল করেন না, যে তার পায়জামা এরকম ঝুলিয়ে দিয়ে সালাত আদায় করে।
9/802 وعن قَيسِ بن بشرٍ التَّغْلبيِّ قال: أَخْبَرنى أبي وكان جليساً لأبي الدَّرداءِ قال: كان بِدِمشقَ رَجُلٌ من أَصحاب النبى ﷺ يقال له سهلُ ابنُ الحنظَليَّةِ، وكان رجُلاً مُتَوحِّداً قَلَّمَا يُجالسُ النَّاسَ، إِنَّمَا هو صلاةٌ، فَإِذا فرغَ فَإِنَّمَا هو تسبيح وتكبيرٌ حتى يأْتيَ أهْلَهُ، فَمَرَّ بِنَا ونَحنُ عِند أبي الدَّردَاءِ، فقال له أَبو الدَّردَاءِ: كَلِمةً تَنْفَعُنَا ولا تضُرُّكَ، . قال: بَعثَ رسول اللهِ ﷺ سريَّةً فَقَدِمَتْ، فَجَاءَ رَجُلٌ مِنهم فَجَلسَ في المَجْلِس الذي يَجلِسُ فِيهِ رسول اللهِ ﷺ، فقال لرجُلٍ إِلى جَنْبهِ: لَوْ رَأَيتنَا حِينَ التقَيْنَا نَحنُ والعدُو، فَحمَل فلانٌ فَطَعَنَ، فقال: خُذْهَا مِنِّى . وأَنَا الغُلامُ الغِفَارِيُّ، كَيْفَ تَرى في قوْلِهِ ؟ قال: مَا أَرَاهُ إِلا قَدْ بَطَلَ أَجرُهُ . فسَمِعَ بِذلكَ آخَرُ فقال: مَا أَرَى بِذَلَكَ بأْساً، فَتَنَازعا حَتى سَمِعَ رسول اللهِ ﷺ فقال: « سُبْحان اللهِ ؟ لا بَأْس أَن يُؤْجَرَ ويُحْمَد » فَرَأَيْتُ أَبا الدَّرْدَاءِ سُرَّ بِذلكَ، وجعلَ يَرْفَعُ رأْسَه إِلَيهِ وَيَقُولُ: أأَنْتَ سمِعْتَ ذَلكَ مِنْ رسول اللهِ ﷺ،؟ فيقول: نعَمْ، فما زال يعِيدُ عَلَيْهِ حتى إِنّى لأَقولُ لَيَبرُكَنَّ على ركْبَتَيْهِ .
قال: فَمَرَّ بِنَا يَوماً آخَرَ، فقال له أَبُو الدَّرْدَاءِ: كَلِمَةً تَنفَعُنَا ولا تَضُرُّكَ، قال: قال لَنَا رسول اللهِ ﷺ: « المُنْفِقُ عَلى الخَيْلِ كالبَاسِطِ يَدَهُ بالصَّدَقة لا يَقْبِضُهَا» . ثم مرَّ بِنَا يوماً آخر، فقال له أَبو الدَّرْدَاءِ: كَلِمَةً تَنْفَعُنَا وَلا تَضرُّكَ، قال: قال رسول اللهِ ﷺ: « نعْمَ الرَّجُلُ خُرَيْمٌ الأَسَديُّ، لولا طُولُ جُمته وَإِسْبَالُ إِزَارِه » فبَلغَ ذلك خُرَيماً، فَعجَّلَ فَأَخَذَ شَفرَةً فَقَطَعَ بها جُمتَهُ إِلى أُذنيْه، ورفعَ إِزَارَهُ إِلى أَنْصَاف سَاقَيْه . ثَمَّ مَرَّ بنَا يَوْماً آخَرَ فَقَالَ لَهُ أَبُو الدَّرْدَاءِ: كَلِمةً تَنْفَعُنَا ولاَ تَضُرُّكَ قَالَ: سَمعْتُ رسُولَ اللهِ ﷺ يقُولُ: « إِنَّكُمْ قَادمُونَ عَلى إِخْوانِكُمْ . فَأَصْلِحُوا رِحَالَكمْ، وأَصْلحوا لبَاسَكُمْ حتى تَكُونُوا كَأَنَّكُمْ شَامَة في النَّاسِ، فَإِنَّ اللهَ لاَ يُحبُّ الفُحْشَ وَلاَ التَّفَحُش » . رواهُ أَبو داود بإِسنادٍ حسنٍ، إِلاَّ قَيْسَ بن بشر، فاخْتَلَفُوا في توثيقِهِ وتَضْعفيه، وقد روى له مسلم .
৯/৮০২। কাইস ইবনু বিশর আত-তাগলিবী (রাহঃ)-এর সঙ্গী ছিলেন। তিনি (বিশর) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবী দামিশকে ছিলেন। তাকে বলা হতো সাহল ইবনু হানযালিয়্যা। তিনি একাকিত্বকে বেশি পছন্দ করতেন, লোকদের সাথে খুব কমই উঠাবসা করতেন, অধিকাংশ সময় সালাতেই কাটিয়ে দিতেন, সালাত থেকে অবসর হয়ে তার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তাসবীহ্ ও তাকবীরে মগ্ন থাকতেন। (একদিন) তিনি আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। তখন আমরা আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কাছে ছিলাম। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, আমাদেরকে এমন কোন কথা বলে দিন, যা আমাদের উপকার দিবে আর আপনারও কোন ক্ষতি হবে না। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ছোট্ট বাহিনী প্রেরণ করলেন। বাহিনী ফিরে আসার পর তাদের একজন ঐ মাজলিশে এসে বসে পড়লো যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বসা ছিলেন। তার পাশে বসা লোকটিকে আগন্তুক লোকটি বললো, তুমি যদি আমাদেরকে তখন দেখতে জিহাদের ময়দানে আমরা যখন শত্রুর মুখোমুখি হয়েছিলাম, বর্শা উঁচিয়ে অমুক (কাফির) আক্রমণ করলো এবং আঘাত হানলো। উত্তরে (আক্রান্ত মুসলিমটি) বললো, এই নে আমার পক্ষ থেকে, আর আমি হচ্ছি গিফার গোত্রের যুবক। তার এই বক্তব্য বিষয়ে আপনি কী বলেন? লোকটি বললো, আমার মতে (অহংকারের কারণে) তার সাওয়াব বিনষ্ট হয়ে গেছে। এই কথা আরেকজন শুনে বললো, এতে তো আমি কোন দোষ দেখি না। তারা বিতর্কে লিপ্ত হলো, এমনকি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তা শুনে ফেলেন। তিনি বললেনঃ সুবহানাল্লাহ! এতে কোন দোষ নেই, সে (আখেরাতে) পুরষ্কৃত হবে এবং (ইহকালে) প্রশংসিত হবে। কাইস ইবনু বিশর বলেন, আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কে আমি দেখলাম যে, এতে তিনি খুশি হয়েছেন এবং তাঁর দিকে নিজের মাথা উঠিয়ে বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে একথা শুনেছেন কি? ইবনু হানযালিয়্যা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ শুনেছি। আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এই কথাটি বারবার ইবনু হানযালিয়্যার সামনে বলতে লাগলেন। অবশেষে আমি বলেই ফেললাম, আপনি কি ইবনু হানযালিয়্যার হাঁটুর উপর চড়ে বসতে চান?
বর্ণনাকারী বলেন, আবুদ দারদা আরেকদিন আমাদের কাছে গেলেন, তখন আবুদ দারদা বললেন, একটি বাক্য যা আমাদের উপকার দেবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন, ঘোড়ার জন্য ব্যয় করা সেই সদকা সমতুল্য যে সদকা করে হাত সংকুচিত করা হয় নি। তারপর তিনি অপরদিন আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আবুদ দারদা বললেন, একটি বাক্য, যা আমাদের উপকৃত করবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খুরাইম আল-আসাদী কতইনা ভালো লোক, যদি না তার মাথার চুল খুব লম্বা হতো, আর যদি না তার লুঙ্গি টাখনুর নিচে না যেত”। কথাটি খুরাইমের কাছে পৌঁছলে তিনি তাড়াতাড়ি ছুরি নিয়ে তার মাথার লম্বা চুল কানের মাঝ বরাবর কেটে ফেললেন, আর তাঁর লুঙ্গিকে নলার মাঝখান পর্যন্ত উঠিয়ে নিলেন। তারপর আরেকদিন আমাদের পাশ দিয়ে গেলেন, তখন আবুদ দারদা রা. তাকে বললেন, একটি বাক্য যা আমাদেরকে উপকৃত করবে, তোমার কোনো ক্ষতি করবে না, তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে যাচ্ছ, সুতরাং তোমরা তোমাদের বাহনগুলোকে ঠিক করে নাও, তোমাদের পরিধেয় বস্ত্রগুলো এমনভাবে ঠিক করে নাও যাতে করে তোমাদেরকে মানুষের মাঝে মনে হবে তেমন যেমন তিলের দাগ। কেননা, আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা করা ও বলা কোনোটাই পছন্দ করেন না।’ আবূ দাউদ হাদীসটিকে হাসান সনদে বর্ণনা করেন, তবে কাইস ইবন বিশর ব্যতীত; কারণ তার গ্রহণযোগ্যতা কিংবা দুর্বলতা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। যদিও ইমাম মুসলিম তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।
10/803 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إزْرَةُ المُسْلِمِ إِلَى نِصْفِ السَّاقِ، وَلاَ حَرَجَ ـ أَوْ لاَ جُنَاحَ ـ فِيمَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الكَعْبَيْنِ، فمَا كَانَ أسْفَلَ مِنَ الكَعْبَيْنِ فَهُوَ في النَّارِ، وَمَنْ جَرَّ إزَارَهُ بَطَراً لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ
১০/৮০৩। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মুসলিমের লুঙ্গি অর্ধ গোছা পর্যন্ত ঝুলানো উচিত। গাঁটের উপর পর্যন্ত ঝুললে ক্ষতি নেই। যে অংশ লুঙ্গি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলবে, তা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। আর অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি পায়ের গাঁটের নীচে ঝুলিয়ে লুঙ্গি পরবে, তার দিকে আল্লাহ (করুণার দৃষ্টিতে) তাকিয়ে দেখবেন না।’’ (আবূ দাঊদ, সহীহ সূত্রে)
11/804 وَعَنْ ابنِ عُمَرَ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَرتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ وَفِي إزَارِي استِرخَاءٌ، فَقَالَ: «يَا عَبدَ اللهِ، ارْفَعْ إزَارَكَ ». فَرَفَعْتُهُ ثُمَّ قَالَ: « زِدْ » فَزِدْتُ، فَمَا زِلْتُ أتَحَرَّاهَا بَعْدُ . فَقَالَ بَعْضُ القَوْم: إِلَى أينَ ؟ فَقَالَ: إِلَى أنْصَافِ السَّاقَيْنِ . رواه مسلم
১১/৮০৪। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন আমার লুঙ্গি বেশ ঝুলে ছিল। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘হে আব্দুল্লাহ! লুঙ্গি উঠিয়ে পর।’’ অতএব আমি লুঙ্গি তুলে পরলাম। তিনি আবার বললেন, ‘‘আরো উঁচু কর।’’ আমি আরো উঁচু করলাম। এরপর বরাবর আমি এর খেয়াল রাখতে থাকলাম; যেন লুঙ্গি নীচে না নামে। কিছু লোক (আব্দুল্লাহকে) জিজ্ঞাসা করল, ‘কতদূর পর্যন্ত ঝুলিয়ে পরা যাবে?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘অর্ধ গোছা পর্যন্ত।’ (মুসলিম)
12/805 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ ». فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ: فَكَيْفَ تَصْنَعُ النِّسَاءُ بذُيُولِهِنَّ ؟ قَالَ: « يُرْخِينَ شِبْراً ». قَالَتْ: إِذَاً تَنْكَشِفُ أقْدَامُهُنَّ. قَالَ: «فَيُرخِينَهُ ذِرَاعاً لاَ يَزِدْنَ» رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
১২/৮০৫। পূর্বোক্ত বর্ণনাকারী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অহংকারবশতঃ যে ব্যক্তি গাঁটের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার দিকে (করুণার দৃষ্টিতে) দেখবেন না।’’ উম্মে সালামাহ প্রশ্ন করলেন, ‘তাহলে মহিলারা তাদের কাপড়ের নিম্নপ্রান্তের ব্যাপারে কী করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘আধ হাত বেশী ঝুলাবে।’’ উম্মে সালামাহ বললেন, ‘তাহলে তো তাদের পায়ের পাতা খোলা যাবে!’ তিনি বললেন, ‘‘তাহলে এক হাত পর্যন্ত নীচে ঝুলাবে; তার বেশী নয়।’’ (আবূ দাউদ ও তিরমিযী)
120- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَرْكِ التَّرَفُّعِ فِي اللِّبَاسِ تَوَاضُعًا
পরিচ্ছেদ - ১২০: বিনয়বশতঃ মূল্যবান পোশাক পরিধান
ত্যাগ করা মুস্তাহাব
এ পরিচ্ছেদ বিষয়ক কিছু হাদীস ‘উপবাস ও অনাড়ম্বর জীবন-যাপনের মাহাত্ম্য’ পরিচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে।
1/806 وَعَنْ مُعَاذِ بنِ أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَنْ تَرَكَ اللِّبَاسَ تَوَاضُعاً للهِ، وَهُوَ يَقْدِرُ عَلَيْهِ، دَعَاهُ اللهُ يَومَ القِيَامَةِ عَلَى رُؤُوسِ الخَلائِقِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ مِنْ أيِّ حُلَلِ الإيمَانِ شَاءَ يَلْبَسُهَا ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১/৮০৬। মু‘আয ইবনে আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মূল্যবান পোশাক পরার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিনয়বশতঃ তা পরিহার করল, আল্লাহ কিয়ামতের দিন সমস্ত মানুষের সাক্ষাতে তাকে ডেকে স্বাধীনতা দেবেন, সে যেন ঈমানের (অর্থাৎ ঈমানদারদের পোশাক) জোড়াসমূহের মধ্য থেকে যে কোন জোড়া বেছে নিয়ে পরিধান করে।’’ (তিরমিযী, হাসান)
121- بَابُ اِسْتِحْبَابِ التَّوَسُّطِ فِي اللِّبَاسِ
وَلَا يُقْتَصَرُ عَلٰى مَا يَزْرِيْ بِهِ لِغَيْرِ حَاجَةٍ وَلَا مَقْصُوْدٍ شَرْعِيٍّ
পরিচ্ছেদ - ১২১: মধ্যম ধরনের পোশাক পরা উত্তম। অকারণে শরয়ী উদ্দেশ্য ব্যতিত অনুত্তম, যা উপহাস্য হতে পারে এমন পোষাক পরা যাবে না
1/807 عَن عَمرِو بنِ شُعَيبٍ، عَن أَبيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ اللهَ يُحِبُّ أنْ يُرَى أثَرُ نِعْمَتِهِ عَلَى عَبْدِهِ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১/৮০৭। ‘আমর ইবনে ‘শুআইব স্বীয় পিতা হতে, তিনি স্বীয় দাদা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন যে, তাঁর বান্দার উপর তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের প্রভাব ও চিহ্ন দেখা যাক।’’ (তিরমিযী, হাসান)
122- بَابُ تَحْرِيْمِ لِبَاسِ الْحَرِيْرِ عَلَى الرِّجَالِ
وَتَحْرِيْمِ جُلُوْسِهِمْ عَلَيْهِ وَاسْتِنَادِهِمْ إِلَيْهِ وَجَوَازِ لُبْسِهِ لِلنِّسَاءِ
পরিচ্ছেদ - ১২২: রেশমের কাপড় পরা, তার উপরে বসা বা হেলান দেওয়া পুরুষদের জন্য অবৈধ, মহিলাদের জন্য বৈধ
1/808 عَن عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ تَلْبَسُوا الحَرِيرَ ؛ فَإنَّ مَنْ لَبِسَهُ في الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ في الآخِرَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮০৮। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা (পুরুষরা) রেশমের কাপড় পরিধান করো না। কেননা, যে ব্যক্তি দুনিয়াতে রেশমের কাপড় পরিধান করবে, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। (অর্থাৎ সে জান্নাত হতে বঞ্চিত হবে।)’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/809 وَعَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إنَّمَا يَلْبَسُ الحَرِيرَ مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية للبخاري: «مَنْ لاَ خَلاَقَ لَهُ في الآخِرَةِ » .
২/৮০৯। উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, ‘‘সে-ই রেশম পরিধান করে, যার কোনই অংশ নেই।’’ (বুখারী মুসলিম)
বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যার আখেরাতে কোন অংশ নেই।’’
3/810 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ لَبِسَ الحَرِيرَ في الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ في الآخِرَةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৮১০। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়াতে যে রেশমী কাপড় পরবে, আখেরাতে সে তা পরতে পাবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/811 وَعَنْ عَلِيٍّ رضي الله عنه، قَالَ: رَأَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ أخَذَ حَرِيراً، فَجَعَلَهُ فِي يَمِينهِ، وَذَهَبَاً فَجَعَلَهُ فِي شِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ: « إنَّ هَذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ
৪/৮১১। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তিনি ডান হাতে রেশম ধরলেন এবং বাম হাতে সোনা, অতঃপর বললেন, ‘‘আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য এ দু’টি বস্তু হারাম।’’ (আবূ দাঊদ, সহীহ সনদে)
5/812 وَعَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِي رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « حُرِّمَ لِبَاسُ الحَرِيرِ وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي، وَأُحِلَّ لإنَاثِهِمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৫/৮১২। আবূ মূসা ‘আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রেশমের পোশাক ও স্বর্ণ আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য অবৈধ করা হয়েছে, আর মহিলাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে।’’ (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
6/813 وَعَنْ حُذَيْفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: نَهَانَا النَّبِيُّ ﷺ أنْ نَشْرَبَ فِي آنِيَةِ الذَّهَبِ وَالفِضَّةِ، وأنْ نَأْكُلَ فِيهَا، وَعَنْ لُبْس الحَريرِ وَالدِّيبَاج، وأنْ نَجْلِسَ عَلَيْهِ . رواه البخاري
৬/৮১৩। হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোনা ও রূপার পাত্রে পান বা আহার করতে আমাদেরকে নিষেধ করেছেন এবং চিকন ও মোটা রেশম পরিধান করতে অথবা (বেড-কভার বা সীট-কভার বানিয়ে) তার উপর বসতেও নিষেধ করেছেন।’ (বুখারী)
123- بَابُ جَوَازِ لُبْسِ الْحَرِيْرِ لِمَنْ بِهِ حِكَّةٌ
পরিচ্ছেদ - ১২৩: চুলকানি রোগ থাকলে রেশমের কাপড় পরা বৈধ
1/814 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: رَخَّصَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لِلزُّبَيْرِ وعَبْدِ الرَّحْمَانِ بنِ عَوْفٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا فِي لُبْس الحَريرِ لِحَكَّةٍ كَانَتْ بِهِما . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮১৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবাইর ও আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)কে তাদের গায়ে চুলকানি হবার দরুন রেশমী কাপড় পরার অনুমতি দিয়েছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
124- بَابُ النَّهْيِ عَنْ اِفْتِرَاشِ جُلُوْدِ النَّمُوْرِ وَالرُّكُوْبِ عَلَيْهَا
পরিচ্ছেদ - ১২৪: বাঘের চামড়া বিছিয়ে বসা নিষেধ
1/815 عَن مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ تَرْكَبُوا الخَزَّ وَلاَ النِّمَارَ ». حديث حسن، رواه أَبُو داود وغيره بإسناد حسن
১/৮১৫। মু‘আবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রেশমী কাপড় ও বাঘের চামড়ার উপর (বাহনের পিঠে রেখে বা অন্যত্র বিছিয়ে) বসো না।’’ (আবূ দাউদ ও অন্যান্য হাসান সূত্রে)
2/816 وَعَنْ أَبي المَلِيحِ، عَن أَبِيهِ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ نَهَى عَنْ جُلُودِ السِّبَاعِ . رواه أَبُو داود والترمذيُّ والنسائيُّ بأسانِيد صِحَاحٍ . وفي رواية للترمذي: نَهَى عَنْ جُلُودِ السِّبَاعِ أنْ تُفْتَرَشَ.
২/৮১৬। আবুল মালীহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংস্র জন্তুর চামড়ার বিছানায় বসতে নিষেধ করেছেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ বিশুদ্ধ সানাদ সূত্রে)
তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, তিনি হিংস্র জন্তুর চামড়া বিছাতে নিষেধ করেছেন।
125- بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا لَبِسَ ثَوْبًا جَدِيْدًا أَوْ نَعْلًا أَوْ نَحْوَهُ
পরিচ্ছেদ - ১২৫: নতুন কাপড় বা জুতা ইত্যাদি পরার সময় কী বলতে হয়?
1/817 عَن أَبي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا اسْتَجَدَّ ثَوباً سَمَّاهُ بِاسْمِهِ - عِمَامَةً، أَوْ قَميصاً، أَوْ رِدَاءً- يَقُولُ: «اَللهم لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ، أَسْأَلكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ، وَأَعوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن »
১/৮১৭। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন কাপড় পরতেন, তখন পাগড়ী, জামা কিংবা চাদর তার নাম নিয়ে এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু আন্তা কাসাউতানীহ, আসআলুকা মিন খাইরিহী অখাইরি মা সুনি‘আ লাহ, অ‘আঊযু বিকা মিন শার্রিহি অশার্রি মা সুনি‘আ লাহ।’
অর্থ- হে আল্লাহ তোমারই নিমিত্তে সমস্ত প্রশংসা, তুমি আমাকে এই (নতুন কাপড়) পরালে, আমি তোমার নিকট এর কল্যাণ এবং এ যার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর এর অকল্যাণ এবং যার জন্য এ প্রস্তুত করা হয়েছে তার অকল্যাণ থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান)
126- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْاِبْتِدَاءِ بِالْيَمِيْنِ فِي اللِّبَاسِ
পরিচ্ছেদ ১২৬: ডান দিক থেকে পোশাক পরা শুরু করা মুস্তাহাব
পোশাক পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা উত্তম। এ মর্মে অনেক শুদ্ধ হাদীস ইতোপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে।
كِتَابُ آدَابِ النَّوْمِ
অধ্যায় (৪): নিদ্রার আদব
127- بَابُ آدَابِ النَّوْمِ وَالْاِضْطِجَاعِ وَالْقُعُوْدِ وَالْمَجْلِسِ وَالْجَلِيْسِ وَالرُّؤْيَا
পরিচ্ছেদ - ১২৭: ঘুমানো, শোয়া, বসা, বৈঠক, সাথী এবং স্বপ্ন সংক্রান্ত আদব কায়দা
শয়নকালে যা বলতে হয়
1/818 عَنِ البَراءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ نَامَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ، ثُمَّ قَالَ: «اَللهم أسْلَمْتُ نَفسِي إلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أمْرِي إلَيْكَ، وَألْجَأتُ ظَهْرِي إلَيْك، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إلَيْكَ، لاَ مَلْجَأ وَلاَ مَنْجا مِنْكَ إِلاَّ إلَيكَ، آمَنْتُ بِكِتَابِكَ الَّذِي أنْزَلْتَ، وَنَبِيِّكَ الَّذِي أرْسَلْتَ». رواه البخاري بهذا اللفظ في كتاب الأدب من صحيحه
১/৮১৮। বারা’ ইবনে ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন এবং এই দো‘আ পড়তেনঃ-
‘আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইকা অ অজ্জাহতু অজহিয়া ইলাইক, অফাউওয়াদ্বতু আমরী ইলাইক, অ আলজা’তু যাহরী ইলাইক, রাগ্বাতাঁঊ অরাহবাতান্ ইলাইক্, লা মাল্জাআ অলা মান্জা মিনকা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা অ নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসাল্ত্।’
অর্থ - হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণ তোমার প্রতি সমর্পণ করেছি, আমার মুখমন্ডল তোমার প্রতি ফিরিয়েছি, আমার সকল কর্মের দায়িত্ব তোমাকে সোপর্দ করেছি, আমার পিঠকে তোমার দিকে লাগিয়েছি (তোমার উপরেই সকল ভরসা রেখেছি), এসব কিছু তোমার সওয়াবের আশায় ও তোমার আযাবের ভয়ে করেছি। তোমার নিকট ছাড়া তোমার আযাব থেকে বাঁচতে কোন আশ্রয়স্থল নেই। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার উপর এবং তুমি যে নবী প্রেরণ করেছ তার উপর ঈমান এনেছি। (বুখারী এই শব্দমালায়, আদব অধ্যায়)
2/819 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا أتَيْتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأ وُضُوءَكَ لِلْصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَنِ، وَقُلْ ...» وذَكَرَ نَحْوَهُ، وفيه: «وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮১৯। উক্ত রাবী হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘তুমি যখন তোমার বিছানায় (ঘুমাবার জন্য) আসবে, তখন তুমি নামাযের ওযূর মত ওযূ কর। অতঃপর ডান পার্শ্বে শুয়ে (পূর্বোক্ত) দো‘আ পাঠ কর....।’’ অতঃপর বর্ণনাকারী ঐ দো‘আটি উল্লেখ করলেন। আর এ বর্ণনায় আছে যে, ‘‘ওই দো‘আগুলো হোক তোমার সর্বশেষে কথা।’’ (বুখারী-মুসলিম)
৩/৮২০। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে এগারো রাকআত নামায পড়তেন। যখন ফজর উদয় হত, তখন তিনি দু’রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায পড়তেন, তারপর তাঁর ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন; শেষ পর্যন্ত মুআয্যিন এসে তাঁকে (জামাআতের সময় হওয়ার) খবর জানাত।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/821 وَعَنْ حُذَيْفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبيُّ ﷺ إِذَا أخَذَ مَضْجَعَهُ مِنَ اللَّيْلِ وَضَعَ يَدَهُ تَحْتَ خَدِّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: « اَللهم بِاسْمِكَ أمُوتُ وَأحْيَا » وَإِذَا اسْتَيْقَظَ قَالَ: « الْحَمْدُ للهِ الَّذِي أحْيَانَا بَعْدَ مَا أمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُشُورُ ». رواه البخاري
৪/৮২১। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রিতে যখন শয্যাগ্রহণ করতেন, তখন তিনি গালের নীচে হাত রেখে এই দো‘আ পড়তেনঃ ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু অ আহয়্যা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মরি ও বাঁচি।
আর যখন জাগতেন তখন বলতেনঃ ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহয়্যা-না বা’দা মা আমা-তানা অ ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থাৎ সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে মৃত্যু (নিদ্রা) দেওয়ার পর জীবিত করলেন এবং তাঁরই দিকে আমাদের পুনর্জীবন। (বুখারী)
5/822 وَعَنْ يَعِيشَ بنِ طِخْفَةَ الغِفَارِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ أَبي: بَينَمَا أَنَا مُضْطَجِعٌ فِي الْمَسْجِدِ عَلَى بَطْنِي إِذَا رَجُلٌ يُحَرِّكُنِي بِرِجلِهِ، فَقَالَ: « إنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللهُ »، قَالَ: فَنظَرْتُ، فَإِذَا رَسُولُ اللهِ ﷺ . رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৫/৮২২। য়্যা‘ঈশ ইবনে ত্বিখফাহ্ গিফারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতা বলেন, একদা আমি মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় একটি লোক আমাকে পা দিয়ে নড়িয়ে বলল, ‘‘এ ধরনের শোয়াকে আল্লাহ অপছন্দ করেন।’’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকিয়ে দেখলাম তো তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন।’ (আবূ দাউদ, সহীহ সনদ)
6/823 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «مَنْ قَعَدَ مَقْعَدَاً لَمْ يَذْكُرِ الله تَعَالَى فِيهِ، كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى تِرَةٌ، وَمَنِ اضْطَجَعَ مَضجَعاً لاَ يَذْكُرُ اللهَ تَعَالَى فِيهِ، كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ حسن
৬/৮২৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন মজলিসে বসে, যেখানে সে আল্লাহর যিকর করে না, (এর জন্য) আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর পরিতাপ ও কমি আসবে। আর যে ব্যক্তি এমন জায়গায় শয়ন করে, যেখানে সে আল্লাহর যিকির করে না, (এর জন্য) আল্লাহর তরফ থেকে তার উপর পরিতাপ ও কমি আসবে।’’ (আবু দাঊদ, হাসান)
128- بَابُ جَوَازِ الْاِسْتِلْقَاءِ عَلَى الْقَفَا وَوَضْعِ إِحْدَى الرِّجْلَيْنِ عَلَى الْأُخْرٰى إِذَا لَمْ يُخَفْ اِنْكِشَافُ الْعَوْرَةِ وَ جَوَلِزِ الْقُعُوْدِ مُتَرَبِّعًا وَمُحْتَبِيًا
পরিচ্ছেদ - ১২৮: গুপ্তাঙ্গ খুলে যাওয়ার আশংকা না থাকলে একটি পায়ের উপর অন্য পা চাপিয়ে চিৎ হয়ে শোয়া বৈধ এবং দুই পা গুটিয়ে (বাবু হয়ে) বসা ও হাঁটু দু’টিকে বুকে লাগিয়ে কাপড় বা কোন কিছু দিয়ে পিঠের সাথে বেঁধে বসা বৈধ
1/824 عَن عَبدِ اللهِ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّه رَأَى رَسُولُ اللهِ ﷺ مُسْتَلْقِياً في الْمَسْجِدِ، وَاضِعاً إحْدَى رِجْلَيْهِ عَلَى الأُخْرَى . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮২৪। আব্দুল্লাহ ইবনে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে এমনভাবে চিৎ হয়ে শোয়া অবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছেন যে, তিনি একটি পা অন্য পায়ের উপর চাপিয়ে রেখেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
2/825 وَعَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا صَلَّى الفَجْرَ تَرَبَّعَ فِي مَجْلِسِهِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَسْنَاءَ . حديث صحيح، رواه أَبُو داود وغيره بأسانيد صحيحة
২/৮২৫। জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামায সমাপ্ত করতেন তখন ভালোভাবে সূর্যোদয় না হওয়া অবধি নামায পড়ার জায়গাতেই দুই বা গুটিয়ে (বাবু হয়ে) বসে থাকতেন।’ (সহীহ হাদীস, এটি আবূ দাউদ প্রমুখ বিশুদ্ধ সানাদে বর্ণনা করেছেন)
3/826 وَعَنْ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: رَأَيتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ بِفِنَاءِ الكَعْبَةِ مُحْتَبِياً بِيَدَيْهِ هَكَذَا، وَوَصَفَ بِيَدَيْهِ الاِحْتِبَاءَ، وَهُوَ القُرْفُصَاءُ . رواه البخاري
৩/৮২৬। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কা‘বা প্রাঙ্গনে বুকে হাঁটু লাগিয়ে হাত দিয়ে ধরে এভাবে বসে থাকতে দেখেছি।’ আর তিনি নিজের হাত দুখানা ধরে উক্ত (ইহতিবা) বসার ধরন বর্ণনা করলেন। ওটাকেই আরবীতে ‘কুরফুসা’ও বলা হয়। (বুখারী)
4/827 وَعَنْ قَيْلَةَ بِنْتِ مَخْرَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: رَأَيتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ قَاعِدٌ القُرْفُصَاءَ، فَلَمَّا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ المُتَخَشِّعَ فِي الجِلْسَةِ أُرْعِدْتُ مِنَ الفَرَقِ. رواه أَبُو داود والترمذي
৪/৮২৭। ক্বাইলা বিনতে মাখরামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুকে হাঁটু লাগিয়ে হাত দিয়ে দুটোকে জড়িয়ে উঁচু হয়ে বসে থাকতে দেখেছি। যখন তাকে বিনীতভাবে বসে থাকতে দেখলাম, তখন ভয়ে আমি কাঁপতে লাগলাম।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী)
5/828 وَعَنْ الشَّريدِ بنِ سُوَيْدٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ بِي رَسُولُ اللهِ ﷺ وَأَنَا جَالِسٌ هَكَذَا، وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِيَ اليُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِي، وَاتَّكَأتُ عَلَى أَليَةِ يَدِي، فَقَالَ: « أَتَقْعُدُ قِعْدَةَ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ ؟! » رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৫/৮২৮। শারীদ ইবনে সুয়াইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আর আমি এভাবে অর্থাৎ বাঁম হাতটিকে পিঠের পিছনে রেখে হাতের চেটোতে ভর দিয়ে বসেছিলাম। তা দেখে তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি অভিশপ্ত (ইয়াহুদী)দের বসার মত বসছ?’’ (আবূ দাঊদ সহীহ সানাদ)
129- بَابُ فِيْ آدَابِ الْمَجْلِسِ وَالْجَلِيْسِ
পরিচ্ছেদ - ১২৯: মজলিস ও বসার সাথীর নানা আদব-কায়দা
1/829 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ يُقِيمَنَّ أحَدُكُمْ رَجُلاً مِنْ مَجْلِسِهِ ثُمَّ يَجْلِسُ فِيهِ، وَلَكِنْ تَوَسَّعُوا وَتَفَسَّحُوا ». وكَانَ ابْنُ عُمَرَ إِذَا قَامَ لَهُ رَجُلٌ مِنْ مَجْلِسِهِ لَمْ يَجْلِسْ فِيهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮২৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তি অন্য কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে যেন অবশ্যই না বসে। বরং তোমরা জায়গা প্রশস্ত করে ও নড়ে-সরে জায়গা করে বসো।’’ ইবনে উমারের জন্য মজলিস থেকে কেউ উঠে গেলে সেখানে তিনি বসতেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
2/830 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنْ مَجْلِسٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ، فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ ». رواه مسلم
২/৮৩০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘মজলিস থেকে কেউ উঠে গিয়ে আবার সেখানে ফিরে এলে সেই ঐ জায়গার বেশি হকদার।’’ (মুসলিম)
3/831 وَعَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كُنَّا إِذَا أَتَيْنَا النَّبِيَّ ﷺ، جلَسَ أحَدُنَا حَيْثُ يَنْتَهِي. رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
৩/৮৩১। জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে আসতাম, তখন যেখানে মজলিস শেষ হত সেখানে বসে যেতাম।’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান)
4/832 وَعَنْ أَبي عَبدِ اللهِ سَلْمَانَ الفَارِسِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَينِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى ». رواه البخاري
৪/৮৩২। আবূ আব্দুল্লাহ সালমান ফারেসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি জুমআর দিনে গোসল করে, যথাসম্ভব পবিত্রতা অর্জন করে, তেল ব্যবহার করে অথবা ঘরের সুগন্ধি নিয়ে লাগায়। অতঃপর জুমআর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে প্রবেশ করে দু’জনের মধ্যে পৃথক করে না। তারপর তার ভাগ্যে যতটা লেখা হয়েছে, ততটা নামায আদায় করে, তারপর যখন ইমাম খুৎবা দেয় তখন সে চুপ থাকে, তাহলে তার জন্য এক জুমআহ থেকে অন্য জুমআহ পর্যন্ত কৃত পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’’ (বুখারী)
5/833 وَعَنْ عَمرِو بنِ شُعَيْبٍ، عَن أَبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « لاَ يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُفَرِّقَ بَيْنَ اثْنَيْنِ إِلاَّ بِإِذْنِهِمَا ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن » .
وفي رواية لأبي داود: « لاَ يُجْلسُ بَيْنَ رَجُلَيْنِ إِلاَّ بِإذْنِهِمَا ».
৫/৮৩৩। ‘আমর ইবনে শুয়াইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু স্বীয় পিতা থেকে তিনি স্বীয় দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন ব্যক্তির জন্য এটা বৈধ নয় যে, সে দু’জনের মধ্যে তাদের বিনা অনুমতিতে তফাৎ সৃষ্টি করবে। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান )
আবূ দাউদের এক বর্ণনায় আছে, ‘‘দু’জনের মধ্যে তাদের বিনা অনুমতিতে বসা যাবে না।’’
6/834 وعن حذيفة بن اليمان رضي الله عنه أنَّ رَسولَ اللهِ ﷺلَعَنَ مَنْ جَلَسَ وَسَطَ الحَلْقَةَ . رواه أبو داود بإسناد حسن. وروى الترمذي عن أبي مِجْلزٍ أن رَجُلاً قَعَدَ وَسَطَ حَلقْة فقال حُذَيْفَةُ: مُلْعُونٌ عَلٰى لِسَانِ مُحَمَّدٍ ﷺ أوْ لَعَنَ الله عَلٰى لِسَانِ محُمَدٍ ﷺ مَنْ جَلَسَ وَسَطَ الْحَلْقةِ. قال الترمذي: حديث حسن صحيح .
৬/৮৩৪। হুযাইফাহ ইবনুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এমন লোককে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন, যে লোক মাজলিশের মধ্যখানে গিয়ে বসে পড়ে। হাদীসটি আবূ দাউদ উত্তম সনদে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী আবূ মিজলায (রাহঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, এক মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়লে হুযাইফাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এ কাজটির উপর) অভিশাপ বর্ষণ করেছেন অথবা সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ দিয়ে অভিশাপ বর্ষণ করেন যে মাজলিসের মাঝখানে বসে পড়ে। তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ।
7/835 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « خَيْرُ المَجَالِسِ أوْسَعُهَا». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح عَلَى شرط البخاري
৭/৮৩৫। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে সভা সবচেয়ে বেশি প্রশস্ত সেটা সবচেয়ে উত্তম সভা।’’ (আবূ দাঊদ, বুখারীর শর্তে সহীহ)
8/836 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ جَلَسَ فِي مَجْلِسٍ، فَكَثُرَ فِيهِ لَغَطُهُ فَقَالَ قَبْلَ أَنْ يَقُومَ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ: سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إلَيْكَ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا كَانَ فِي مَجْلِسِهِ ذَلِكَ». رواه الترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
৮/৮৩৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন সভায় বসে, যাতে খুব বেশি হৈ-হল্লা হয়, অতঃপর যদি উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়ার আগে এই দো‘আ পড়ে, ‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা অ আতূবু ইলাইক্।’’ (অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষি দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি।) তাহলে উক্ত মজলিসে কৃত অপরাধ তার জন্য ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
* (প্রকাশ থাকে যে, এই দো‘আকে ‘কাফফারাতুল মাজলিস’-এর দো‘আ বলা হয়।
9/837 وَعَنْ أَبي بَرْزَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَقُولُ بِأَخَرَةٍ إِذَا أرَادَ أنْ يَقُومَ مِنَ الْمَجْلِسِ: «سُبْحَانَكَ اَللهم وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنتَ أسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيكَ ». فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّكَ لَتَقُولُ قَوْلاً مَا كُنْتَ تَقُولُهُ فِيمَا مَضَى ؟ قَالَ: « ذَلِكَ كَفَّارَةٌ لِمَا يَكُونُ في المَجْلِسِ ». رواه أَبُو داود، ورواه الحاكم أَبُو عبد الله في " المستدرك " من رواية عائشة رَضِيَ اللهُ عَنهَا وقال: «صحيح الإسناد »
৯/৮৩৭। আবূ বার্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সভা থেকে উঠে চলে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখন শেষের বেলায় এই দো‘আ পড়তেন ‘‘সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা অবিহামদিকা, আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা, আস্তাগফিরুকা অআতূবু ইলাইক।’’ অর্থাৎ তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করি হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সাথে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে তওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি।
একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি যে দো‘আ পড়লেন অতীতে তো তা পড়তেন না।’ তিনি বললেন, ‘‘এই দো‘আটি মজলিসে (সংঘটিত ভুল-ত্রুটি)র কাফ্ফারাস্বরূপ।’’ (আবূ দাঊদ, আবূ আব্দুল্লাহ হাকেম আয়েশা রাযিবয়াল্লাহ আনহা হতে তাঁর ‘মুস্তাদরাক’ নামক গ্রন্থে এই হাদীসটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেছেন।)
10/838 وَعَنْ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَقُومُ مِنْ مَجْلِسٍ حَتَّى يَدْعُوَ بِهَؤُلاَءِ الدَّعَواتِ: « اَللهم اقْسِمْ لَنَا مِنْ خَشْيَتِكَ مَا تَحُولُ بِهِ بَيْنَنَا وَبَيْنَ مَعَاصِيكَ، وَمِنْ طَاعَتِكَ مَا تُبَلِّغُنَا بِهِ جَنَّتَكَ، وَمِنَ الْيَقِينِ مَا تُهَوِّنُ عَلَيْنَا مَصَائِبَ الدُّنْيَا، اَللهم مَتِّعْنَا بِأَسْمَاعِنَا، وَأَبْصَارِنَا، وَقُوَّتِنَا مَا أحْيَيْتَنَا، وَاجْعَلْهُ الوَارِثَ مِنَّا، وَاجْعَلْ ثَأرَنَا عَلَى مَنْ ظَلَمَنَا، وَانْصُرْنَا عَلَى مَنْ عَادَانَا، وَلاَ تَجْعَلْ مُصِيبَتَنَا فِي دِينِنَا، وَلاَ تَجْعَلِ الدُّنْيَا أَكْبَرَ هَمِّنَا، وَلاَ مَبْلَغَ عِلْمِنَا، وَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيْنَا مَنْ لاَ يَرْحَمُنَا ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১০/৮৩৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, খুব কম মজলিসই এমন হতো, যেখান থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ না পড়ে উঠতেন, (অর্থাৎ অধিকাংশ মজলিস থেকে উঠার আগে এই দো‘আ পড়তেন,)
‘‘আল্লা-হুম্মাক্বসিম লানা মিন খাশ্য়্যাতিকা মা তাহূলু বিহী বাইনানা অবাইনা মা‘আ-স্বীক, অমিন ত্বা-‘আতিকা মা তুবাল্লিগুনা বিহী জান্নাতাক, অমিনাল য়্যাক্বীনি মা তুহাউবিনু বিহী আলাইনা মাস্বা-ইবাদ দুন্য়্যা। আল্লাহুম্মা মাত্তি‘না বিআসমা-‘ইনা অ আবস্বা-রিনা অ ক্বুউওয়াতিনা মা আহয়্যাইতানা, অজ্‘আলহুল ওয়া-রিসা মিন্না। অজ‘আল সা’রানা আলা মান যালামানা, অনস্বুরনা ‘আলা মান ‘আ-দা-না, অলা তাজ‘আল মুস্বীবাতানা ফী দীনিনা। অলা তাজ‘আলিদ্দুন্য়্যা আকবারা হাম্মিনা অলা মাবলাগা ‘ইলমিনা, অলা তুসাল্লিত্ব ‘আলাইনা মাল লা য়্যারহামুনা।’’
অর্থাৎ আল্লাহ গো! আমাদের জন্য তোমার ভীতি বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের ও তোমার অবাধ্যাচরণের মাঝে অন্তরাল সৃষ্টি কর। তোমার আনুগত্য বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদেরকে তোমার জান্নাতে পৌঁছাও। আমাদের জন্য এমন একীন (প্রত্যয়) বিতরণ কর, যার দ্বারা তুমি আমাদের উপর দুনিয়ার বিপদসমূহকে সহজ করে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কর্ণ, চক্ষু ও শক্তি দবারা যতদিন আমাদেরকে জীবিত রাখ, ততদিন আমাদেরকে উপকৃত কর এবং তা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত অবশিষ্ট রাখ। যারা আমাদের উপর অত্যাচার করেছে, তাদের নিকট আমাদের প্রতিশোধ নাও। যারা আমাদের সাথে শত্রুতা করেছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর। আমাদের দ্বীনে আমাদেরকে বিপদগ্রস্ত করো না। দুনিয়াকে আমাদের বৃহত্তম চিন্তার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের শেষ সীমা করো না, আর যারা আমাদের উপর রহম করে না, তাদেরকে আমাদের উপর ক্ষমতাসীন করো না। (তিরমিযী, হাসান)
11/839 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لاَ يَذْكُرُونَ الله تَعَالَى فِيهِ، إِلاَّ قَامُوا عَنْ مِثْل جِيفَةِ حِمَارٍ، وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةٌ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
১১/৮৩৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে জনগোষ্ঠীই কোন সভা থেকে, তাতে আল্লাহর যিকির না করেই উঠে যায়, আসলে তারা যেন মরা গাধা থেকে উঠে যায়। (অর্থাৎ যেন মৃত গাধার গোশ্ত ভক্ষণান্তে উঠে চলে যায়।) আর তাদের জন্য অনুতাপ হবে।’’ (আবূ দাঊদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
12/840 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِساً لَمْ يَذْكُرُوا اللهِ تَعَالَى فِيهِ، وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ فِيهِ، إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةٌ ؛ فَإنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ، وَإنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
১২/৮৪০। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে কোন জনগোষ্ঠী কোন মজলিসে বসে তাতে আল্লাহর যিকির না করে এবং তাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ না করে, তাদেরই নোকসান (দুর্ভোগ) হবে; আল্লাহ যদি ইচ্ছা করেন তো তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং যদি চান তো তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিযী, হাসান)
13/841 وَعَنْهُ، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَنْ قَعَدَ مَقْعَداً لَمْ يَذْكُرِ الله تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ، وَمَنِ اضْطَجَعَ مَضْجَعَاً لاَ يَذْكُرُ اللهَ تَعَالَى فِيهِ كَانَتْ عَلَيْهِ مِنَ اللهِ تِرَةٌ ». رواه أَبُو داود
১৩/৮৪১। উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন বৈঠকে বসে তাতে আল্লাহর যিকির করল না, তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার ক্ষতি হবে। আর যে ব্যক্তি কোন শয্যায় শয়ন করে তাতে আল্লাহর যিকির করে না, তাহলে আল্লাহর তরফ থেকে তার ক্ষতি হবে।’’ (আবু দাঊদ)
130- بَابُ الرُّؤْيَا وَمَا يَتَعَلَّقُ بِهَا
পরিচ্ছেদ - ১৩০: স্বপ্ন ও তার আনুষঙ্গিক বিবরণ
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنۡ ءَايَٰتِهِۦ مَنَامُكُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ﴾ [الروم: ٢٣]
অর্থাৎ “তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে তোমাদের রাতের বেলায় ও দিবাভাগে ঘুমানো।” (সূরা রূম ২৩ আয়াত)
1/842 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبوَّةِ إِلاَّ المُبَشِّرَاتِ» قَالُوا: وَمَا المُبَشِّرَاتُ ؟ قَالَ: « الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ ». رواه البخاري
১/৮৪২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘সুসংবাদ ছাড়া নবুঅতের কিছু বাকি থাকবে না।’’ লোকেরা প্রশ্ন করল, ‘সুসংবাদ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘সুস্বপ্ন।’’ (বুখারী)
2/843 وَعَنْهُ: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « إِذَا اقْتَرَبَ الزَّمَانُ لَمْ تَكَدْ رُؤيَا المُؤْمِنِ تَكْذِبُ، وَرُؤْيَا الْمُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأرْبَعِينَ جُزْءاً مِنَ النُّبُوَّةِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وفي رواية: « أصْدَقُكُمْ رُؤْيَا، أصْدَقُكُمْ حَدِيثاً ».
২/৮৪৩। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘(কিয়ামতের) নিকটবর্তী যুগে মু’মিনের স্বপ্ন মিথ্যা হবে না। আর মু’মিনের স্বপ্ন নবুঅতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।’’ (অর্থাৎ মু’মিন স্বপ্ন যোগে ভবিষ্যতের খবর জানতে পারে। যেমন, অহীর দ্বারা নবীদেরকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অবহিত করা হত।) (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘আর তোমাদের মধ্যে যে সবচেয়ে বেশি সত্য কথা বলে, তার স্বপ্ন সবচেয়ে বেশি সত্য।’’
3/844 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ رَآنِي فِي المَنَامِ فَسَيَرَانِي فِي اليَقَظَةِ - أَوْ كَأنَّما رَآنِي في اليَقَظَةِ- لاَ يَتَمَثَّلُ الشَّيْطَانُ بِي». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৮৪৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দর্শন করল, সে আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দর্শন করবে অথবা সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্থায় দেখল। কেননা, শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।’’ (বুখারী-মুসলিম)
4/845 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا رَأَى أحَدُكُمْ رُؤيَا يُحِبُّهَا، فَإنَّمَا هِيَ مِنَ اللهِ تَعَالَى، فَلْيَحْمَدِ اللهَ عَلَيْهَا، وَلْيُحَدِّثْ بِهَا ـ وَفِي رِوَايَةٍ: فَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا إِلاَّ مَنْ يُحِبُّ ـ وَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ، فإنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ مِنْ شَرِّهَا، وَلاَ يَذْكُرْهَا لأَحَدٍ ؛ فَإنَّهَا لا تَضُرُّهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৮৪৫। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘যখন তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি এমন স্বপ্ন দর্শন করে যা তার কাছে প্রীতিকর, তখন তা নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। সুতরাং সে যেন তার জন্য আল্লাহর প্রশংসা করে এবং সে তা (স্বপ্ন) ব্যক্ত করে।’’ অন্য বর্ণনায় আছে যে, ‘‘সে যেন তা তার প্রিয়জন ছাড়া অন্য কারো কাছে ব্যক্ত না করে। আর যখন তাছাড়া কোন অপ্রীতিকর স্বপ্ন দর্শন করে, তখন তা নিঃসন্দেহে শয়তানের পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। সুতরাং সে যেন তার অনিষ্ট থেকে (আল্লাহর নিকট) আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং কাউকে তা ব্যক্ত না করে। কেননা, (তাহলে) তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/846 وَعَنْ أَبي قَتَادَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ ـ وفي رواية: الرُّؤْيَا الحَسَنَةُ ـ مِنَ اللهِ، وَالحُلُمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَمَنْ رَأَى شَيْئاً يَكْرَهُهُ فَلْيَنْفُثْ عَن شِمَالِهِ ثَلاَثاً، وَلْيَتَعَوَّذْ مِنَ الشَّيْطَانِ ؛ فإنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৮৪৬। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সুস্বপ্ন (অন্য এক বর্ণনায় আছে) সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং কুস্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে (দেখানো) হয়। অতএব যে অপ্রীতিকর কিছু দেখবে, সে যেন তার বাম দিকে তিনবার হাল্কাভাবে থুতু মারে ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/847 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: «إِذَا رَأَى أحَدُكُمْ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا، فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلاثَاً، وَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلاَثاً، وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ ». رواه مسلم
৬/৮৪৭। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ তার অপছন্দনীয় কোন স্বপ্ন দেখবে, তখন সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুতু মারে এবং শয়তান থেকে তিনবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। আর যে পার্শ্বে সে শুয়ে থাকে, সে পার্শ্ব যেন বদল করে নেয়।’’ (মুসলিম)
৭/৮৪৮। আবুল আসক্বা‘ ওয়াসিলাহ ইবনে আসক্বা‘ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সবচেয়ে বড় মিথ্যারোপ হল সেই ব্যক্তির কাজ, যে অপরের বাপকে নিজ বাপ বলে দাবি করে অথবা তার চক্ষুকে তা দেখায় যা সে (বাস্তবে) দেখেনি। (অর্থাৎ স্বপ্ন দেখার মিথ্যা দাবি করে।) অথবা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেননি তা তাঁর প্রতি মিথ্যাভাবে আরোপ করে।’’ (বুখারী)
كِتَابُ السَّلاَمِ
অধ্যায় (৫): সালামের আদব
131- بَابُ فَضْلِ السَّلَامِ وَالْأَمْرِ بِإِفْشَائِهِ
পরিচ্ছেদ - ১৩১: সালাম দেওয়ার গুরুত্ব ও তা ব্যাপকভাবে
প্রচার করার নির্দেশ
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ﴾ [النور: ٢٧]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ ﴾ [النور: ٦١]
অর্থাৎ “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে, তখন তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এ হবে আল্লাহর নিকট হতে কল্যাণময় ও পবিত্র অভিবাদন।” (সূরা নূর ৬১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَإِذَا حُيِّيتُم بِتَحِيَّةٖ فَحَيُّواْ بِأَحۡسَنَ مِنۡهَآ أَوۡ رُدُّوهَآۗ ﴾ [النساء: ٨٦]
অর্থাৎ “যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয় (সালাম দেওয়া হয়), তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন কর অথবা ওরই অনুরূপ কর।” (সূরা নিসা ৮৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেছেন,
﴿ هَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ضَيۡفِ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلۡمُكۡرَمِينَ ٢٤ إِذۡ دَخَلُواْ عَلَيۡهِ فَقَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞ ﴾ [الذاريات: ٢٤، ٢٥]
অর্থাৎ “তোমার নিকট ইব্রাহীমের সম্মানিত মেহমানদের বৃত্তান্ত এসেছে কি? যখন তারা তার নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘সালাম।’ উত্তরে সে বলল, ‘সালাম।’” (সূরা যারিয়াত ২৪-২৫ আয়াত)
1/849 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، أنَّ رَجُلاً سَأَلَ رَسُولَ اللهِ ﷺ: أَيُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ ؟ قَالَ: « تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮৪৯। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল, ‘সর্বোত্তম ইসলামী কাজ কী?’ তিনি বললেন, “(ক্ষুধার্তকে) অন্নদান করবে এবং পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে (ব্যাপকভাবে) সালাম পেশ করবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
2/850 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « لَمَّا خَلَقَ اللهُ آدَمَ عليه السلام، قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولئِكَ ـ نَفَرٍ مِنَ المَلاَئِكَةِ جُلُوسٌ ـ فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ ؛ فَإنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيتِكَ . فَقَالَ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮৫০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ যখন আদম আলাইহিস সালাম-কে সৃষ্টি করলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘তুমি যাও এবং ঐ যে ফিরিশ্তামন্ডলীর একটি দল বসে আছে, তাদের উপর সালাম পেশ কর। আর ওরা তোমার সালামের কী জবাব দিচ্ছে তা মন দিয়ে শুনো। কেননা, ওটাই হবে তোমার ও তোমার সন্তান-সন্ততির সালাম বিনিময়ের রীতি।’ সুতরাং তিনি (তাঁদের কাছে গিয়ে) বললেন, ‘আসসালামু আলাকুম’। তাঁরা উত্তরে বললেন, ‘আসসালামু আলাইকা অরাহমাতুল্লাহ’। অতএব তাঁরা ‘অরাহমাতুল্লাহ’ শব্দটা বেশী বললেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/851 وَعَنْ أَبي عُمَارَةَ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بِسَبْعٍ: بِعِيَادَةِ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتِ العَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ المَظْلُومِ، وَإفْشَاءِ السَّلاَمِ، وَإبْرَارِ المُقسِمِ . متفقٌ عَلَيْهِ، هَذَا لفظ إحدى روايات البخاري
২/৮৫১। আবূ উমারা বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি (কর্ম করতে) আদেশ করেছেনঃ (১) রোগী দেখতে যাওয়া, (২) জানাযার অনুসরণ করা, (৩) হাঁচির জবাব দেওয়া, (৪) দুর্বলকে সাহায্য করা, (৫) নির্যাতিত ব্যক্তির সাহায্য করা, (৬) সালাম প্রচার করা, এবং (৭) শপথকারীর শপথ পুরা করা।’ (বুখারী-মুসলিম)
4/852 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ تَدْخُلُوا الجَنَّةَ حَتَّى تُؤمِنُوا، وَلاَ تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا، أوَلاَ أدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ ؟ أَفْشُوا السَّلاَمَ بَيْنَكُمْ ». رواه مسلم
৪/৮৫২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।’’ (মুসলিম)
5/853 وَعَنْ أَبي يُوسُفَ عَبدِ اللهِ بنِ سَلاَمٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « يَا أيُّهَا النَّاسُ، أَفْشُوا السَّلاَمَ، وَأطْعِمُوا الطَّعَامَ، وَصِلُوا الأرْحَامَ، وَصَلُّوا والنَّاسُ نِيَامٌ، تَدْخُلُوا الجَنَّةَ بِسَلاَم ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
৫/৮৫৩। আবূ ইউসুফ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘হে লোক সকল! তোমরা সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্নদান কর, আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখ এবং লোকে যখন (রাতে) ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
6/854 وَعَنْ الطُّفَيْلِ بنِ أُبَيِّ بنِ كَعبٍ: أنَّه كَانَ يَأتِي عَبدَ اللهِ بنَ عُمَرَ، فَيَغدُو مَعَهُ إِلَى السُّوقِ، قَالَ: فَإِذَا غَدَوْنَا إِلَى السُّوقِ، لَمْ يَمُرَّ عَبدُ الله عَلَى سَقَّاطٍ وَلاَ صَاحِبِ بَيْعَةٍ، وَلاَ مِسْكِينٍ، وَلاَ أحَدٍ إِلاَّ سَلَّمَ عَلَيْهِ، قَالَ الطُّفَيْلُ: فَجِئْتُ عَبدَ اللهِ بنَ عُمَرَ يَوْماً، فَاسْتَتْبَعَنِي إِلَى السُّوقِ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا تَصْنَعُ بِالسُّوقِ، وَأنْتَ لا تَقِفُ عَلَى البَيْعِ، وَلاَ تَسْأَلُ عَنِ السِّلَعِ، وَلاَ تَسُومُ بِهَا، وَلاَ تَجْلِسُ في مَجَالِسِ السُّوقِ ؟ وَأقُولُ: اجْلِسْ بِنَا هاهُنَا نَتَحَدَّث، فَقَالَ: يَا أَبَا بَطْنٍ ـ وَكَانَ الطفَيْلُ ذَا بَطْنٍ ـ إنَّمَا نَغْدُو مِنْ أجْلِ السَّلاَمِ، فنُسَلِّمُ عَلَى مَنْ لَقِيْنَاهُ . رواه مالك في المُوطَّأ بإسنادٍ صحيح
৬/৮৫৪। তুফাইল ইবনে উবাই ইবনে কা‘ব হতে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর কাছে আসতেন এবং সকালে তাঁর সঙ্গে বাজার যেতেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা সকালে বাজারে যেতাম, তখন তিনি প্রত্যেক খুচরা বিক্রেতা, স্থায়ী ব্যবসায়ী, মিসকীন, তথা অন্য কোন ব্যক্তির নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাকে সালাম দিতেন।’ তুফাইল বলেন, সুতরাং আমি একদিন (অভ্যাসমত) আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট গেলাম। তিনি আমাকে তাঁর সঙ্গে বাজারে যেতে বললেন। আমি বললাম, ‘আপনি বাজার গিয়ে কী করবেন? আপনি তো বেচা-কেনার জন্য কোথাও থামেন না, কোন পণ্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন না, তার দর-দাম জানতে চান না এবং বাজারের কোন মজলিসে বসেনও না। আমি বলছি, এখানে আমাদের সাথে বসে যান, এখানেই কথাবার্তা বলি।’ (তুফাইলের ভুঁড়ি মোটা ছিল, সেই জন্য) তিনি বললেন, ‘ওহে ভুঁড়িমোটা! আমরা সকাল বেলায় বাজারে একমাত্র সালাম পেশ করার উদ্দেশ্যে যাই; যার সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়, আমরা তাকে সালাম দিই।’ (মুঅত্ত্বা মালেক, বিশুদ্ধ সূত্রে)
132- بَابُ كَيْفِيَةِ السَّلَامِ
পরিচ্ছেদ - ১৩২: সালাম দেওয়ার পদ্ধতি
প্রথমে যে সালাম দেবে তার এরূপ বলা (উচিত), ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’। এটা মুস্তাহাব। সে বহুবচন সর্বনাম ব্যবহার করবে; যদিও যাকে সালাম দেওয়া হয় সে একা হোক না কেন। আর সালামের উত্তরদাতা বলবে ‘অআলাইকুমুস সালামু অরহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ, অর্থাৎ সে শুরুতে সংযোজক অব্যয় ‘অ’ বা ‘ওয়া’ শব্দ ব্যবহার করবে।
1/855 عَن عِمْرَانَ بنِ الحُصَينِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَقَالَ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَرَدَّ عَلَيْهِ ثُمَّ جَلَسَ، فَقَالَ النبيُّ ﷺ: « عَشْرٌ » ثُمَّ جَاءَ آخَرُ، فَقَالَ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ، فَقَالَ: « عِشْرُونَ » ثُمَّ جَاءَ آخَرُ، فَقَالَ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ الله وَبَركَاتُهُ، فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ، فَقَالَ: « ثَلاثُونَ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
১/৮৫৫। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে এভাবে সালাম করল ‘আসসালামু আলাইকুম’ আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জবাব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসে গেলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য দশটি নেকী।’’ তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরহমাতুল্লাহ’ বলে সালাম পেশ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের উত্তর দিলেন এবং লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য বিশটি নেকী।’’ তারপর আর একজন এসে ‘আসসালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলে সালাম দিল। তিনি তার জবাব দিলেন। অতঃপর সে বসলে তিনি বললেন, ‘‘ওর জন্য ত্রিশটি নেকী।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সূত্রে)
2/856 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: « هَذَا جِبريلُ يَقْرَأُ عَلَيْكِ السَّلاَمَ» قَالَتْ: قُلْتُ: وَعَلَيْهِ السَّلاَمُ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮৫৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘এই জিব্রীল আলাইহিস সালাম তোমাকে সালাম পেশ করছেন।’’ তিনি বলেন, আমিও উত্তরে বললাম, ‘অআলাইহিস সালামু অরাহ্মাতুল্লাহি অবারাকাতুহ।’ (বুখারী ও মুসলিম)
এই গ্রন্থদ্বয়ের কোন কোন বর্ণনায় ‘অবারাকাতুহ’ শব্দ এসেছে, আবার কোন কোন বর্ণনায় তা আসেনি। তবুও নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীর অতিরিক্ত বর্ণনা গ্রহণীয়।
3/857 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ إِذَا تَكَلَّمَ بِكَلِمَةٍ أعَادَهَا ثَلاثَاً حَتَّى تُفهَمَ عَنْهُ، وَإِذَا أتَى عَلَى قَوْمٍ فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ سَلَّمَ عَلَيْهِمْ ثَلاَثاً . رواه البخاري . وهذا مَحْمُولٌ عَلَى مَا إِذَا كَانَ الجَمْعُ كَثِيراً.
৩/৮৫৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন কথা বলতেন, তখন তা তিনবার বলতেন; যাতে তাঁর কথা বুঝতে পারা যায়। আর যখন কোন গোষ্ঠীর কাছে আসতেন তখনও তিনি তিনবার করে সালাম পেশ করতেন। (বুখারী)
এ বিধান সেই ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যে ক্ষেত্রে জনতার সংখ্যা খুব বেশী হবে।
4/858 وَعَنْ المِقْدَادِ رضي الله عنه في حَدِيثهِ الطَّوِيلِ، قَالَ: كُنَّا نَرْفَعُ للنَّبيِّ ﷺ نَصِيبَهُ مِنَ اللَّبَنِ، فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ، فَيُسَلِّمُ تَسْلِيماً لاَ يُوقِظُ نَائِماً، وَيُسْمِعُ اليَقْظَانَ، فَجَاءَ النَّبِيُّ ﷺ فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ . رواه مسلم
৪/৮৫৮। মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি স্বীয় দীর্ঘ হাদীসে বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য তাঁর অংশের দুধ রেখে দিতাম। তিনি রাতের বেলায় আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যে, তাতে কোন ঘুমন্ত ব্যক্তিকে জাগিয়ে দিতেন না এবং জাগ্রত ব্যক্তিদেরকে শুনাতেন। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাঁর অভ্যাসমত) এসে সালাম দিলেন, যেমন তিনি সালাম দিতেন। (মুসলিম)
5/859 وَعَن أَسْمَاءَ بِنْتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: مَرَّ عَلَيْنَا النَّبِىُّ ﷺ فِى نِسْوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا. رواه أبوداود
৫/৮৫৯। আসমা বিনতে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের একদল মহিলার নিকট দিয়ে পার হওয়ার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন। (আবূ দাঊদ)
(প্রকাশ থাকে যে, নবী ﷺ-এর হাতের ইশারায় মহিলাদেরকে সালাম দেওয়ার তিরমিযীর হাদীসটি সহীহ নয়।)
6/860 وَعَنْ أَبي أُمَامَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِنَّ أوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بالسَّلاَمِ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ، ورواه الترمذي بنحوه وقال: «حديثٌ حسن » . وَقَدْ ذُكر بعده.
৬/৮৬০। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী মানুষ সেই, যে প্রথমে সালাম করে।’’ (আবূ দাঊদ সহীহ সনদ যোগে, তিরমিযীও অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ও বলেছেন হাদীসটি হাসান। এটি পরবর্তীতে ৮৬৩ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে।)
7/861 وَعَنْ أَبي جُرَيٍّ الهُجَيْمِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: أتيتُ رَسُول اللهِ ﷺ، فَقُلتُ: عَلَيْكَ السَّلامُ يَا رَسُولَ اللهِ! قَالَ: « لاَ تَقُلْ عَلَيْكَ السَّلامُ ؛ فَإِنَّ عَلَيْكَ السَّلاَمُ تَحِيَّةُ المَوتَى ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »، وَقَدْ سَبَقَ بِطُولِهِ.
৭/৮৬১। আবূ জুরাই হুজাইমী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হয়ে বললাম, ‘আলাইকাস সালাম’ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি বললেন, ‘‘আলাইকাস সালাম’ বলো না। কেননা, ‘আলাইকাস সালাম’ হচ্ছে মৃত ব্যক্তিদেরকে জানানো অভিবাদন বাক্য।’’ (আবু দাঊদ,তিরমিযী হাসান সহীহ, ইতোপূর্বে সম্পূর্ণ হাদীসটি ৮০০ নম্বরে গত হয়েছে।)
133- بَابُ آدَابِ السَّلَامِ
পরিচ্ছেদ - ১৩৩: সালামের বিভিন্ন আদব-কায়দা
1/862 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى المَاشِي، وَالمَاشِي عَلَى القَاعِدِ، وَالقَليلُ عَلَى الكَثِيرِ ». متفقٌ عَلَيْهِ، وَفِي رِوَايَةٍ لِلبُخَارِي: « وَالصَّغِيرُ عَلَى الكَبِيرِ ».
১/৮৬২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আরোহী পায়ে হাঁটা ব্যক্তিকে, পায়ে হাঁটা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে এবং অল্প সংখ্যক লোক অধিক সংখ্যক লোককে সালাম দেবে।’’ (বুখারী-মুসলিম)
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘ছোট বড়কে সালাম দেবে।’’
2/863 وَعَنْ أَبي أُمَامَةَ صُدَيِّ بنِ عَجلاَنَ البَاهِلِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ أَوْلى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأهُمْ بِالسَّلامِ ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ .
ورواه الترمذي عَن أَبي أُمَامَةَ رضي الله عنه، قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، الرَّجُلاَنِ يَلْتَقِيَانِ أَيُّهُمَا يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ ؟ قَالَ: « أَوْلاَهُمَا بِاللهِ تَعَالَى ». قَالَ الترمذي: «هَذَا حديث حسن »
২/৮৬৩। আবূ উমামাহ সুদাই ইবনে আজলান বাহেলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘লোকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আল্লাহর নিকটবর্তী সেই, যে লোকদেরকে প্রথমে সালাম করে।’’ (আবূ দাঊদ উত্তম সূত্রে)
তিরমিযীও আবূ উমামাহ কর্তৃক বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! দু’জনের সাক্ষাৎকালে তাদের মধ্যে কে প্রথমে সালাম দেবে?’ তিনি বললেন, ‘‘যে মহান আল্লাহর সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে।’’ (তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান)
134- بَابُ اِسْتِحْبَابِ إِعَادَةِ السَّلَامِ
পরিচ্ছেদ - ১৩৪: দ্বিতীয়বার সত্বর সাক্ষাৎ হলেও পুনরায় সালাম দেওয়া মুস্তাহাব, যেমন কোথাও প্রবেশ করার পর বের হয়ে গিয়ে পুনরায় তৎক্ষণাৎ সেখানে প্রবেশ করলে কিংবা দু’জনের মাঝে কোন গাছ তথা অনুরূপ কোন জিনিসের আড়াল হলে, তারপর আবার দেখা হলে পুনরায় সালাম দেওয়া মুস্তাহাব
1/864 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه فِي حَدِيثِ المُسِيءِ صَلاَتَهُ: أَنَّهُ جَاءَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فَسَلَّمَ عَلَيْهِ، فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ، فَقَالَ: « ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ » فَرَجَعَ فَصَلَّى، ثُمَّ جَاءَ فَسَلَّمَ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ، حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ ثَلاثَ مَرَّاتٍ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮৬৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নামায ভুলকারীর হাদীসে এসেছে যে, সে ব্যক্তি এসে নামায পড়ল। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁকে সালাম দিল। তিনি তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, ‘‘ফিরে যাও, এবং নামায পড়। কেননা, তোমার নামায পড়া হয়নি।’’ কাজেই সে ফিরে গিয়ে আবার নামায পড়ল। তারপর পুনরায় এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল। এভাবে সে তিনবার করল। (বুখারী ও মুসলিম)
2/865 وَعَنْهُ، عَنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا لَقِيَ أَحَدُكُمْ أَخَاهُ فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَإنْ حَالَتْ بَيْنَهُمَا شَجَرَةٌ، أَوْ جِدَارٌ، أَوْ حَجَرٌ، ثُمَّ لَقِيَهُ، فَلْيُسَلِّمْ عَلَيْهِ ». رواه أَبُو داود
২/৯৬৫। উক্ত রাবী হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে দেখা করবে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। অতঃপর যদি তাদের দু’জনের মাঝে গাছ বা দেওয়াল অথবা পাথর আড়াল হয়, তারপর আবার সাক্ষাৎ হয়, তাহলে সে যেন আবার সালাম দেয়।’’ (আবূ দাঊদ)
135- بَابُ اِسْتِحْبَابِ السَّلَامِ إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৩৫: নিজ গৃহে প্রবেশ করার সময় সালাম দেওয়া উত্তম
আল্লাহ বলেন,
﴿فَإِذَا دَخَلۡتُم بُيُوتٗا فَسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِكُمۡ تَحِيَّةٗ مِّنۡ عِندِ ٱللَّهِ مُبَٰرَكَةٗ طَيِّبَةٗۚ ﴾ [النور: ٦١]
অর্থাৎ “যখন তোমরা গৃহে প্রবেশ করবে তোমরা তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে।” (সূরা নূর ৬১ আয়াত)
1/866 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ ﷺ: «يَا بُنَيَّ، إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أهْلِكَ، فَسَلِّمْ، يَكُنْ بَرَكَةً عَلَيْكَ، وَعَلَى أهْلِ بَيْتِكَ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح »
১/৮৬৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে বৎস! তোমার বাড়িতে যখন তুমি প্রবেশ করবে, তখন সালাম দাও, তাহলে তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য তা বরকতময় হবে।’’ (তিরমিযী হাসান সহীহ)
136- بَابُ السَّلَامِ عَلَى الصِّبْيَانِ
পরিচ্ছেদ - ১৩৬: শিশুদেরকে সালাম করা প্রসঙ্গে
1/867 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أنَّهُ مَرَّ عَلَى صِبْيَانٍ، فَسَلَّمَ عَلَيْهِمْ، وَقَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَفْعَلُهُ. متفقٌ عَلَيْهِ
১/ ৮৬৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি কতিপয় শিশুর নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
137- بَابُ سَلَامِ الرَّجُلِ عَلٰى زَؤْجَتِهِ وَالْمَرْأَةِ مِنْ مَحَارِمِهِ
وَعَلٰى أَجْنَبِيَّةٍ وَأَجْنَبِيَّاتٍ لَا يُخَافُ الْفِتْنَةُ بِهِنَّ وَسَلَامُهُنَّ بِهٰذَا الشَّرْطِ
পরিচ্ছেদ - ১৩৭: নারী-পুরুষের পারস্পরিক সালাম
নিজ স্ত্রীকে স্বামীর সালাম দেওয়া, অনুরূপভাবে কোন পুরুষের তার ‘মাহরাম’ (যার সাথে বৈবাহিক-সম্পর্ক চিরতরে নিষিদ্ধ এমন) মহিলাকে সালাম দেওয়া, অনুরূপ ফিতনা-ফাসাদের আশংকা না থাকলে ‘গায়র মাহরাম’ (যার সাথে বৈবাহিক-সম্পর্ক কোন সময় বৈধ এমন) মহিলাদেরকে সালাম দেওয়া বৈধ। যেমন উক্ত মহিলাদেরও উক্ত পুরুষদেরকে ঐ শর্ত-সাপেক্ষে সালাম দেওয়া বৈধ।
1/868 عَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَتْ فِينَا امْرَأةٌ ـ وفي رواية: كَانَتْ لَنَا عَجُوزٌ ـ تَأخُذُ مِنْ أصُولِ السِّلْقِ فَتَطْرَحُهُ فِي القِدْرِ، وَتُكَرْكِرُ حَبَّاتٍ مِنْ شَعِيرٍ، فَإذَا صَلَّيْنَا الْجُمُعَةَ، وَانْصَرَفْنَا، نُسَلِّمُ عَلَيْهَا، فَتُقَدِّمُهُ إلَيْنَا . رواه البخاري
১/৮৬৮। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এক মহিলা ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে আমাদের একটি বুড়ি ছিল। সে বীট (কেটে) হাঁড়িতে রেখে তাতে কিছু যব দানা পিষে মিশ্রণ করত। অতঃপর আমরা যখন জুমআর নামায পড়ে ফিরে আসতাম, তখন তাকে সালাম দিতাম। আর সে আমাদের জন্য তা পেশ করত।’ (বুখারী)
2/869 وَعَنْ أُمِّ هَانِىءٍ فَاخِتَةَ بِنتِ أَبي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: أَتَيتُ النَّبِيَّ ﷺ يَوْمَ الفَتْحِ وَهُوَ يَغْتَسِلُ، وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ بِثَوْبٍ، فَسَلَّمْتُ ... وَذَكَرَتِ الحديث . رواه مسلم
২/৮৬৯। উম্মে হানী ফাখেতাহ বিনতে আবী ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের দিন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাজির হলাম। তখন তিনি গোসল করছিলেন। ফাতেমা তাঁকে একটি কাপড় দিয়ে আড়াল করছিলেন। আমি (তাঁকে) সালাম দিলাম।...’ অতঃপর তিনি সম্পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (মুসলিম)
3870 وَعَنْ أسماءَ بِنتِ يَزِيدَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: مَرّ عَلَيْنَا النَّبِيُّ ﷺ فِي نِسوَةٍ فَسَلَّمَ عَلَيْنَا . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:« حديث حسن »، وهذا لفظ أَبي داود .
৩/৮৭০। আসমা বিনতে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাদের) একদল মহিলার নিকট অতিক্রম করার সময় আমাদেরকে সালাম দিলেন।’ (আবু দাঊদ)
তিরমিযীর শব্দগুচ্ছ এরূপঃ ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদ অতিক্রম করছিলেন, মহিলাদের একটা দল বসেছিল, তিনি তাদেরকে হাতের ইঙ্গিতে সালাম দিলেন।’ (এটি সহীহ নয়)
138- بَابُ تَحْرِيْمِ ابْتِدَائِنَا الْكُفَّارَ بِالسَّلَامِ وَكَيْفِيَّةِ الرَّدِّ عَلَيْهِمْ
وَاسْتِحْبَابُ السَّلَامِ عَلٰى أَهْلِ مَجْلِسٍ فِيْهِمْ مُسْلِمُوْنَ وَكُفَّارٌ
পরিচ্ছেদ - ১৩৮: অমুসলিমকে আগে সালাম দেওয়া হারাম এবং তাদের সালামের জবাব দেওয়ার পদ্ধতি। কোন সভায় যদি মুসলিম-অমুসলিম সমবেত থাকে, তাহলে তাদের (মুসলিমদের)কে সালাম দেওয়া মুস্তাহাব
1/871 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « لاَ تَبْدَأُوا اليَهُودَ وَلاَ النَّصَارَى بالسَّلامِ، فَإِذَا لَقِيتُمْ أَحَدَهُمْ في طَرِيقٍ فَاضطَرُّوهُ إِلَى أَضْيَقِهِ». رواه مسلم
১/৮৭১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদেরকে প্রথমে সালাম দিয়ো না। যখন পথিমধ্যে তাদের কারো সাথে সাক্ষাৎ হবে, তখন তাকে পথের এক প্রান্ত দিয়ে যেতে বাধ্য করো।’’ (মুসলিম)
2/872 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا سَلَّمَ عَلَيْكُمْ أهْلُ الكِتَابِ فَقُولُوا: وَعَلَيْكُمْ» متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮৭২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কিতাবধারীরা (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানরা) যখন তোমাদেরকে সালাম দেয়, তখন তোমরা জবাবে বল, ‘ওয়া আলাইকুম।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/873 وَعَنْ أُسَامَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَرَّ عَلَى مَجْلِسٍ فِيهِ أخْلاَطٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُشْرِكينَ ـ عَبَدَة الأَوْثَانِ ـ واليَهُودِ فَسَلَّمَ عَلَيْهِم النبيُّﷺ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৮৭৩। উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সভা অতিক্রম করেন, যার মধ্যে মুসলিম, মুশরিক (মূর্তিপূজক) ও ইয়াহুদীর সমাগম ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সালাম করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
139-بَابُ اسْتِحْبَابِ السَّلَامِ إِذَا قَامَ مِنَ الْمَجْلِسِ وَفَارَقَ جُلَسَاءَهُ أَوْ جَلِيْسَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৩৯: সভা থেকে উঠে যাবার সময়ও সাথীদেরকে ত্যাগ করে যাবার পূর্বে সালাম দেওয়া উত্তম
১/৮৭৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ সভায় পৌঁছবে তখন সালাম দেবে। আর যখন সভা ছেড়ে চলে যাবে, তখনও সালাম দেবে। কেননা, প্রথম সালাম শেষ সালাম অপেক্ষা বেশী উত্তম নয়।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান হাদীস)
140 - بَابُ الاِسْتِئْذَانِ وَآدَابِهِ
পরিচ্ছেদ - ১৪০: বাড়িতে প্রবেশ করার অনুমতি গ্রহণ ও তার আদব-কায়দা
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا تَدۡخُلُواْ بُيُوتًا غَيۡرَ بُيُوتِكُمۡ حَتَّىٰ تَسۡتَأۡنِسُواْ وَتُسَلِّمُواْ عَلَىٰٓ أَهۡلِهَاۚ ﴾ [النور: ٢٧]
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারও গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে ও তাদেরকে সালাম না দিয়ে প্রবেশ করো না।” (সূরা নূর ২৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ وَإِذَا بَلَغَ ٱلۡأَطۡفَٰلُ مِنكُمُ ٱلۡحُلُمَ فَلۡيَسۡتَٔۡذِنُواْ كَمَا ٱسۡتَٔۡذَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۚ ﴾ [النور: ٥٩]
অর্থাৎ “তোমাদের শিশুরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের বয়োজ্যেষ্ঠদের মত (সর্বদা) অনুমতি প্রার্থনা করে।” (সূরা নূর ৫৯ আয়াত)
1/875 عَن أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « الاِسْتِئْذَانُ ثَلاَثٌ، فَإنْ أُذِنَ لَكَ وَإِلاَّ فَارْجِعْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮৭৫। আবূ মূসা আশ্আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘অনুমতি তিনবার নেওয়া চায়। যদি তোমাকে অনুমতি দেয় (তাহলে ভিতরে প্রবেশ করবে) নচেৎ ফিরে যাবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/876 وَعَنْ سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّمَا جُعِلَ الاِسْتِئذَانُ مِنْ أجْلِ البَصَرِ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮৭৬। সাহল ইবনে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দৃষ্টির কারণেই তো (প্রবেশ) অনুমতির বিধান করা হয়েছে।’’ (অর্থাৎ দৃষ্টি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ঐ নির্দেশ।) (বুখারী ও মুসলিম)
3/877 وَعَنْ رِبْعِيِّ بنِ حِرَاشٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا رَجُلٌ مِنْ بَنِي عَامِرٍ أنَّهُ اسْتَأذَنَ عَلَى النَّبِيِّ ﷺ وَهُوَ فِي بَيتٍ، فَقَالَ: أَأَلِجُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ لِخَادِمِهِ: « أُخْرُجْ إِلَى هَذَا فَعَلِّمْهُ الاِسْتِئذَانَ، فَقُلْ لَهُ: قُلِ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ ؟ » فَسَمِعَهُ الرَّجُلُ، فَقَالَ: السَّلامُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُلُ ؟ فَأذِنَ لَهُ النَّبِيُّ ﷺ فَدَخَلَ . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৩/৮৭৭। রিব্য়ী ইবনে হিরাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন বনু ‘আমেরের একটা লোক আমাকে হাদীস বর্ণনা করেছেন যে, সে একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট (প্রবেশ) অনুমতি চাইল। তখন তিনি বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং সে নিবেদন করল, ‘আমি কি প্রবেশ করব?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় খাদেমকে বললেন, ‘বাইরে গিয়ে এই লোকটিকে অনুমতি গ্রহণের পদ্ধতি শিখিয়ে দাও এবং তাকে বল, তুমি বল ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ সুতরাং লোকটা ঐ কথা শুনতে পেয়ে বলল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি কি প্রবেশ করব?’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে প্রবেশ করল। (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে )
4/878 عَن كِلْدَةَ بنِ الحَنْبَلِ رضي الله عنه، قَالَ: أتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ، فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ وَلَمْ أُسَلِّمْ، فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: «ارْجِعْ فَقُلْ: السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، أَأَدْخُل ؟ » رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:«حديث حسن»
৪/৮৭৮। কিল্দাহ ইবনে হাম্বাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে তাঁর কাছে বিনা সালামে প্রবেশ করলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ফিরে যাও এবং বল, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমি ভিতরে আসব কি?’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান)
141-بَابُ بَيَانِ أَنَّ السُّنَّةَ إِذَا قِيْلَ لِلْمُسْتَأْذِنِ: مَنْ أَنْتَ ؟ أَنْ يَقُوْلَ: فُلاَنٌ فَيُسَمِّيَ نَفْسَهُ بِمَا يُعْرَفُ بِهِ مِنْ اِسْمِ أَوْ كُنْيَةٍ وَكَرَاهَةِ قَوْلِهِ«أَنَا» وَنَحْوِهَا
পরিচ্ছেদ - ১৪১: অনুমতি প্রার্থীর জন্য এটা সুন্নত যে, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কে? তখন সে নিজের পরিচিত নাম বা উপনাম ব্যক্ত করবে। আর উত্তরে ‘আমি’ বা অনুরূপ শব্দ বলা অপছন্দনীয়
1/879 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه فِي حَدِيثِهِ الْمَشْهُورِ فيِ الإسرَاءِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « ثُمَّ صَعَدَ بِي جِبْرِيلُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَاسْتَفْتَحَ، فَقِيلَ: مَنْ هَذَا ؟ قَالَ: جِبْرِيلُ، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ، ثُمَّ صَعَدَ إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَاسْتَفْتَحَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا ؟ قَالَ: جِبْرِيل، قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ وَالثَّالِثَةِ وَالرَّابِعَةِ وَسَائِرِهنَّ وَيُقَالُ فِي بَابِ كُلِّ سَمَاءٍ: مَنْ هَذَا ؟ فَيَقُولُ: جِبْريلُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮৭৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে মি’রাজ সম্পর্কিত তাঁর সুদীর্ঘ হাদীস বর্ণিত হয়েছে; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘.... অতঃপর জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে সঙ্গে নিয়ে নিকটবর্তী (প্রথম) আসমানে চড়লেন এবং তার (দরজা) খোলার আবেদন করলেন। তখন জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনি কে?’ জিবরীল বললেন, ‘জিবরীল।’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘আপনার সাথে কে?’ তিনি বললেন, ‘মুহাম্মাদ।’ (এভাবে) তৃতীয়, চতুর্থ তথা বাকি সব আসমানে প্রত্যেক প্রবেশ-দ্বারে জিজ্ঞাসা করা হল ‘আপনি কে?’ আর জিবরীল উত্তর দিলেন, ‘জিবরীল।’ (বুখারী-মুসলিম)
2/880 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجْتُ لَيْلَةً مِنَ اللَّيَالِي، فَإذَا رَسُولُ اللهِ ﷺ يَمْشِي وَحْدَهُ، فَجَعَلْتُ أمْشِي فِي ظلِّ القَمَرِ، فَالْتَفَتَ فَرَآنِي، فَقَالَ: « مَنْ هَذَا ؟ » فَقُلْتُ: أَبُو ذَرٍّ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৮৮০। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন এক রাতে আমি বের হলাম। হঠাৎ (দেখলাম,) রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাই পায়ে হেঁটে চলেছেন। আমি চাঁদের ছায়াতে চলতে লাগলাম। তিনি (পিছনে) ফিরে তাকালে আমাকে দেখে ফেললেন এবং বললেন, ‘‘কে তুমি?’’ আমি বললাম, ‘আবূ যার্র।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/881 وَعَنْ أُمِّ هَانِئٍٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: أَتَيتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يَغْتَسِلُ وَفَاطِمَةُ تَسْتُرُهُ، فَقَالَ: «مَنْ هذِهِ ؟» فَقُلتُ: أَنَا أُمُّ هَانِئٍٍ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/ ৮৮১। উম্মে হানী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাযির হলাম, তখন তিনি গোসল করছিলেন। আর (তাঁর মেয়ে) ফাতেমা তাঁকে কাপড় দিয়ে আড়াল করছিলেন। সুতরাং তিনি বললেন, ‘‘কে তুমি?’’ আমি বললাম, ‘আমি উম্মে হানী।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/882 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: أتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ فَدَقَقْتُ البَابَ، فَقَالَ: « مَنْ هَذَا ؟ » فَقُلتُ: أَنَا، فَقَالَ: « أنَا، أنَا ! » كَأنَّهُ كَرِهَهَا» . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৮৮২। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে দরজায় করাঘাত করলাম। তিনি বললেন, ‘‘কে?’’ আমি বললাম, ‘আমি।’ তিনি বললেন, ‘‘আমি, আমি।’’ যেন তিনি কথাটিকে অপছন্দ করলেন। (বুখারী, মুসলিম)
142- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَشْمِيْتِ الْعَاطِسِ إِذَا حَمِدَ اللهَ تَعَالٰى وَكَرَاهِيَةِ تَشْمِيَتِهِ
إِذَا لَمْ يَحْمَدِ اللهَ تَعَالٰى وَبَيَانِ آدَابِ التَّشْمِيْتِ وَالْعُطَاسِ وَالتَّثَاؤُبِ
পরিচ্ছেদ - ১৪২: যে হাঁচি দিবে সে আলহামদু লিল্লাহ বললে তার উত্তর দেওয়া মুস্তাহাব। নচেৎ তা অপছন্দনীয়। হাঁচির উত্তর দেওয়া, হাঁচি ও হাই তোলা সম্পর্কিত আদব-কায়দা
1/883 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ، قَالَ: « إنَّ الله يُحِبُّ العُطَاسَ، وَيَكْرَهُ التَّثَاؤُبَ، فَإذَا عَطَسَ أَحَدُكُمْ وَحَمِدَ الله تَعَالَى كَانَ حَقّاً عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ سَمِعَهُ أنْ يَقُولَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، وَأَمَّا التَّثَاؤُبُ فَإنَّمَا هُوَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإذَا تَثَاءَبَ أحَدُكُمْ فَلْيَرُدَّهُ مَا اسْتَطَاعَ، فَإنَّ أحَدَكُمْ إِذَا تَثَاءَبَ ضَحِكَ مِنْهُ الشَّيْطَانُ ». رواه البخاري
১/৮৮৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা হাঁচি ভালবাসেন, আর হাই তোলা অপছন্দ করেন। অতএব তোমাদের কেউ যখন হাঁচবে এবং ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়বে তখন প্রত্যেক মুসলিম শ্রোতার উচিত হবে যে, সে তার জবাবে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলবে। আর হাই তোলার ব্যাপারটা এই যে, তা হচ্ছে শয়তানের পক্ষ থেকে (আলস্য ও ক্লান্তির লক্ষণ)। অতএব কেউ যখন হাই তুলবে তখন সে যেন যথাসাধ্য তা রোধ করে। কেননা, যখন তোমাদের কেউ হাই তোলে, তখন শয়তান তা দেখে হাসে।’’ (বুখারী)
2/884 وَعَنْه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « إِذَا عَطَسَ أحَدُكُمْ فَلْيَقُلْ: اَلحَمْدُ للهِ، وَلْيَقُلْ لَهُ أخُوهُ أَوْ صَاحِبُهُ: يَرْحَمُكَ الله. فَإِذَا قَالَ لَهُ: يَرْحَمُكَ اللهُ، فَليَقُلْ: يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ». رواه البخاري
২/৮৮৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাঁচবে, তখন সে যেন বলে, ‘আলহামদু লিল্লাহ।’ (তা শুনে) তার ভাই বা সাথীর বলা উচিত, ‘য়্যারহামুকাল্লাহ।’ সুতরাং যখন জবাবে ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলবে, তখন যে (হাঁচি দিয়েছে) সে বলবে, ‘য়্যাহদীকুমুকাল্লাহু অ য়্যুস্লিহু বালাকুম।’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সুপথ দেখান ও তোমাদের অন্তর সংশোধন করে দেন।)’’ (বুখারী)
3/885 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا عَطَسَ أحَدُكُمْ فَحَمِدَ اللهَ فَشَمِّتُوهُ، فَإنْ لَمْ يَحْمَدِ الله فَلاَ تُشَمِّتُوهُ ». رواه مسلم
৩/৮৮৫। আবূ মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাঁচবে এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলবে, তখন তার উত্তর দাও। যদি সে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ না বলে, তাহলে তার উত্তর দিয়ো না।’’ (মুসলিম)
4/886 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: عَطَسَ رَجُلانِ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ، فَشَمَّتَ أَحَدَهُمَا وَلَمْ يُشَمِّتِ الآخَرَ، فَقَالَ الَّذِي لَمْ يُشَمِّتْهُ: عَطَسَ فُلانٌ فَشَمَّتَّهُ، وَعَطَسْتُ فَلَمْ تُشَمِّتْنِي ؟ فَقَالَ: « هَذَا حَمِدَ الله، وَإنَّكَ لَمْ تَحْمَدِ الله ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/৮৮৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, দু’জন লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে হাঁচল। তিনি তাদের মধ্যে একজনের উত্তর দিলেন। আর দ্বিতীয় জনের উত্তর দিলেন না। যে ব্যক্তির উত্তর দিলেন না সে বলল, ‘অমুক ব্যক্তি হাঁচল তো তার উত্তর দিলেন, আর আমি হাঁচলাম, কিন্তু আপনি আমার উত্তর দিলেন না!?’ তিনি বললেন, ‘‘ঐ ব্যক্তি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়েছে। আর তুমি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ পড়নি তাই।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/887 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا عَطَسَ وَضَعَ يَدَهُ أَوْ ثَوْبَهُ عَلَى فِيهِ، وَخَفَضَ - أَوْ غَضَّ - بِهَا صَوْتَهُ. شك الراوي. رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح»
৫/৮৮৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হাঁচতেন তখন নিজ হাত অথবা কাপড় মুখে রাখতেন এবং তার মাধ্যমে শব্দ কম করতেন।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ)
6/888 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ اليَهُودُ يَتَعَاطَسُونَ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ ﷺ، يَرْجُونَ أنْ يَقُولَ لَهُمْ: يَرْحَمُكُم الله، فَيَقُولُ: « يَهْدِيكُم اللهُ وَيُصْلِحُ بَالَكُمْ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:«حديث حسن صحيح »
৬/৮৮৮। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদী সম্প্রদায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে কৃত্রিমভাবে হাঁচতো এই আশায় যে, তিনি তাদের জন্য ‘য়্যারহামুকাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়া করুন) বলবেন। কিন্তু তিনি (তাদের হাঁচির জবাবে) বলতেন, ‘য়্যাহদীকুমুল্লাহু অয়্যুসলিহু বালাকুম’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে সৎপথগামী করুন ও তোমাদের অন্তরসমূহকে সংশোধন করে দেন।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
7/889 وَعَنْ أَبي سَعِيدِ الخُدرِي رضي الله عنه، قالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا تَثَاءَبَ أحَدُكُمْ فَلْيُمْسِكْ بِيَدِهِ عَلَى فِيهِ ؛ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ ». رواه مسلم
৭/৮৮৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমাদের কেউ হাই তুলবে, তখন সে যেন আপন হাত দিয়ে নিজ মুখ চেপে ধরে রাখে। কেননা, শয়তান (মুখে) প্রবেশ করে থাকে।’’ (মুসলিম)
143- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْمُصَافَحَةِ عِنْدَ اللِّقَاءِ وَبَشَاشَةِ الْوَجْهِ
وَتَقْبِيْلِ يَدِ الرَّجُلِ الصَّالِحِ وَتَقْبِيْلِ وَلَدِهِ شَفَقَةً وَمُعَانَقَةِ الْقَادِمِ مِنْ سَفَرٍ وَكَرَاهِيَةِ الْاِنْحِنَاءِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৩: সাক্ষাৎকালীন আদব
সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করা, হাসিমুখ হওয়া, সৎ ব্যক্তির হাত চুমা, নিজ সন্তানকে স্নেহভরে চুমা দেওয়া, সফর থেকে আগত ব্যক্তির সাথে মু‘আনাকা (কোলাকুলি) করা মুস্তাহাব। আর (কারোর সম্মানার্থে) সামনে মাথা নত করা মাকরূহ।
1/890 عَن أَبي الخَطَّابِ قَتَادَةَ، قَالَ: قُلْتُ ِلأَنَسٍ: أكَانَتِ المُصَافَحَةُ فِي أصْحَابِ رَسُولِ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ: نَعَمْ . رواه البخاري
১/৮৯০। আবূল খাত্ত্বাব ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে জিজ্ঞাসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের মধ্যে কি মুসাফাহা (করমর্দন) করার প্রথা ছিল?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ (বুখারী)
2/891 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: لَمَّا جَاءَ أهْلُ اليَمَنِ، قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « قَدْ جَاءَكُمْ أهْلُ اليَمَنِ ». وَهُمْ أوَّلُ مَنْ جَاءَ بِالمُصَافَحَةِ. رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
২/৮৯১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, যখন ইয়ামানবাসীরা আগমন করল, তখন রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে উঠলেন, ‘‘ইয়ামানবাসীরা তোমাদের নিকট আগমন করেছে।’’ (আনাস বলেন,) এরাই সর্বপ্রথম মুসাফাহা আনয়ন করেছিল। (আবূ দাউদ-বিশুদ্ধ সূত্রে)
3/892 وَعَنْ البَرَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَا مِنْ مُسْلِمَينِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ». رواه أَبُو داود
৩/৮৯২। বারা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’জন মুসলিম সাক্ষাৎকালে মুসাফাহা করলেই একে অপর থেকে পৃথক হবার পূর্বেই তাদের (গুনাহ) মাফ করে দেওয়া হয়।’’ (আবূ দাউদ)
4/893 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أخَاهُ، أَوْ صَدِيقَهُ، أَيَنحَنِي لَهُ؟ قَالَ: « لاَ » . قَالَ: أفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ ؟ قَالَ: « لاَ » قَالَ: فَيَأخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ ؟ قَالَ: « نَعَمْ ». رواه الترمذي، وقال: «حديث حسن »
৪/৮৯৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটা লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের মধ্য থেকে কোন লোক তার ভাইয়ের সাথে কিংবা তার বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করলে তার সামনে কি মাথা নত করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমা দেবে?’ তিনি বললেন, ‘‘না।’’ সে বলল, ‘তাহলে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ (তিরমিযী-হাসান)
5/894 وعن صَفْوان بن عَسَّال رضي الله عنه قال: قال يَهُودي لِصَاحبه اذْهب بنا إلى هذا النبي فأتيا رسول الله ﷺ فَسَألاه عن تسْع آيات بَينات فَذَكرَ الْحَديث إلى قَوْله: فقَبَّلا يَدَهُ وَرِجْلَهُ وقالا: نَشْهَدُ أنَّكَ نبي . رواه الترمذي وغيره بأسانيد صحيحة.
৫/৮৯৪। সাফওয়ান ইবনু আসসাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ইয়াহূদী তার সাথীকে বললঃ এসো আমরা এই নাবীর নিকট যাই। ফলে তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট এল এবং তাঁকে নয়টি সুস্পষ্ট নিদর্শন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করল। হাদীসের বর্ণনাকারী শেষ পর্যন্ত বর্ণনা করেন যে, তারপর তারা দু’জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে ও পায়ে চুমা দিল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি নিঃসন্দেহে আপনি নাবী। এ হাদীস ইমাম তিরমিযী প্রমুখ সহীহ সানাদ সহকারে বর্ণনা করেছেন। (তিরমিযী ও অন্যরা সহীহ সনদে)
6/895 وعن ابن عمر رضي الله عنهما قصة قال فيها: فَدَنَوْنا من النبي ﷺ فقَّبلْنا يده . رواه أبو داود.
৬/৮৯৫। ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি তাতে বলেছেন, অতঃপর আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম এবং তাঁর হাতে চুম্বন দিলাম। হাদীসটি আবূ দাউদ বর্ণনা করেছেন। যঈফ। (এ নম্বরের হাদীসটি দুর্বল।)
7/896 وعن عائشة رضي الله عنها قالت: قَدم: زَيْدُ بُن حَارثة المدينة ورسول الله ﷺفي بَيْتي فأتَاهُ فَقَرَعَ الباب. فَقَام إليهْ النبي ﷺ يَجُرُّ ثوْبَهُ فاعتنقه وقبله » رواه الترمذي وقال: حديث حسن .
৭/৮৯৬। আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, যাইদ ইবনু হারিসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মদীনায় এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে ছিলেন। যাইদ (দেখা করার জন্য) তাঁর কাছে এলেন এবং দরজায় টোকা মারলেন। নিজের কাপড় টানতে টানতে উঠে গিয়ে নাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার সাথে কোলাকুলি করলেন এবং তাকে চুমা দিলেন। (তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)
8/897 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُول اللهِ ﷺ: « لاَ تَحقِرَنَّ مِنَ الْمَعرُوف شَيْئاً، وَلَوْ أنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ». رواه مسلم
৮/৮৯৭। আবূ যার্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘কোন পুণ্য কাজকে তুমি অবশ্যই তুচ্ছ মনে করো না, যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করার পুণ্যই হোক না কেন।’’ (মুসলিম)
9/898 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَبَّلَ النَّبِيُّ ﷺ الحَسَنَ بنَ عَلِيٍّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، فَقَالَ الأقْرَعُ بنُ حَابِسٍ: إنَّ لِي عَشْرَةً مِنَ الْوَلَدِ مَا قَبَّلْتُ مِنْهُمْ أَحَدَاً . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ لاَ يَرْحَمْ لاَ يُرْحَمْ ! ». متفقٌ عَلَيْهِ
৯/৮৯৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ইবনে আলী (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা)কে চুম্বন দিলেন। (তা দেখে) আক্বরা’ ইবনে হাবেস বলে উঠল, ‘আমার তো দশটি সন্তান আছে, তাদের মধ্যে কাউকে আমি চুমা দিইনি।’ (তা শুনে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে দয়া করে না, তার প্রতি দয়া করা হয় না।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
كِتَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ وَتَشْيِيْعِ الْمَيِّتِ
অধ্যায় (৬): রোগীদর্শন ও জানাযায় অংশগ্রহণ
وَالصَّلَاةِ عَلَيْهِ، وَحُضُوْرِ دَفْنِهِ، وَالْمَكْثِ عِنْدَ قَبْرِهِ بَعْدَ دَفْنِهِ
জানাযার নামায পড়া, মৃতের দাফন কাজে যোগদান করা এবং দাফন শেষ হওয়ার পর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করা প্রসঙ্গে
144- بَابُ عِيَادَةِ الْمَرِيْضِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৪: রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করার মাহাত্ম্য
1/899 عَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ بعِيَادَةِ الْمَريضِ، وَاتِّبَاعِ الجَنَازَةِ، وَتَشْمِيتِ العَاطِسِ، وَإبْرَارِ الْمُقْسِمِ، وَنَصْرِ المَظْلُومِ، وَإجَابَةِ الدَّاعِي، وَإفْشَاءِ السَّلاَمِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৮৯৯। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে রোগীর কুশল জিজ্ঞাসা করতে যাওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, কেউ হাঁচলে তার জবাব দেওয়া, কসমকারীর কসম পুরা করা, অত্যাচারিতের সাহায্য করা, নিমন্ত্রণ গ্রহণ করা ও সালাম প্রচার করার আদেশ দিয়েছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/900 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « حَقُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ خَمْسٌ: رَدُّ السَّلاَمِ، وَعِيَادَةُ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعُ الجَنَائِزِ، وَإِجَابَةُ الدَّعْوَةِ، وَتَشْمِيتُ العَاطِسِ ». متفقٌ عَلَيْه
২/৯০০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘এক মুসলিমের অধিকার অপর মুসলিমের উপর পাঁচটিঃ সালামের জবাব দেওয়া, রুগীকে দেখতে যাওয়া, জানাযার সঙ্গে যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচলে তার জবাব দেওয়া।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/901 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِنَّ اللهَ - عَزَّ وَجَلَّ - يَقُولُ يَومَ القِيَامَةِ: يَا ابْنَ آدَمَ، مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أعُودُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ ؟! قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَناً مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَني عِنْدَهُ ! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمِينَ ؟! قَالَ: أمَا عَلِمْتَ أنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلانٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ ! أمَا عَلِمْتَ أنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي ! يَا ابْنَ آدَمَ، اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي ! قَالَ: يَا رَبِّ، كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأنْتَ رَبُّ العَالَمينَ ؟! قَالَ: اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ ! أمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي ! » رواه مسلم
৩/৯০১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্ল কিয়ামতের দিন বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! কিভাবে আমি আপনাকে দেখতে যাব, আপনি তো সারা জাহানের পালনকর্তা?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ ছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে, তাহলে অবশ্যই তুমি আমাকে তার কাছে পেতে?
হে আদম সন্তান! আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছিলাম, তুমি আমাকে খাবার দাওনি।’ সে বলবে, ‘হে প্রভু! আমি আপনাকে কিভাবে খাবার দেব, আপনি তো সারা জাহানের প্রভু?’ আল্লাহ বলবেন, ‘তোমার কি জানা ছিল না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাবার চেয়েছিল, কিন্তু তাকে তুমি খাবার দাওনি? তোমার কি জানা ছিল না যে, যদি তাকে খাবার দিতে, তাহলে অবশ্যই তা আমার কাছে পেতে?
হে আদম সন্তান! তোমার কাছে আমি পানি পান করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে পান করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে প্রভু! আপনাকে কিরূপে পানি পান করাবো, আপনি তো সমগ্র জগতের প্রভু?’ তিনি বলবেন, ‘আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তাকে পান করাতে, তাহলে তা অবশ্যই আমার কাছে পেতে? ’’ (মুসলিম)
4/902 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « عُودُوا المَريضَ، وَأطْعِمُوا الجَائِعَ، وَفُكُّوا العَانِي ». رواه البخاري
৪/৯০২। আবূ মূসা ‘আশআরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা রুগী দেখতে যাও, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর।’’ (বুখারী)
5/903 وَعَنْ ثَوبَانَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « إنَّ المُسْلِمَ إِذَا عَادَ أخَاهُ المُسْلِمَ، لَمْ يَزَلْ في خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ ». قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا خُرْفَةُ الجَنَّةِ ؟ قَالَ: « جَنَاهَا ». رواه مسلم
৫/৯০৩। সওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কোন মুসলিম যখন তার অন্য কোন মুসলিম ভাইয়ের রোগ জিজ্ঞাসা করতে যায়, সে না ফিরা পর্যন্ত জান্নাতের ‘খুরফার’ মধ্যে সর্বদা অবস্থান করে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! খুরফাহ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘জান্নাতের ফল-পাড়া।’’ (মুসলিম)
6/904 وَعَنْ عَلِيٍّ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَا مِنْ مُسْلِم يَعُودُ مُسْلِماً غُدْوةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِي، وَإِنْ عَادَهُ عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُصْبحَ، وَكَانَ لَهُ خَرِيفٌ في الْجَنَّةِ ». رواه الترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
৬/৯০৪। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে কোন মুসলিম অন্য কোন (অসুস্থ) মুসলিমকে সকাল বেলায় কুশল জিজ্ঞাসা করতে যাবে, তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশ্তা কল্যাণ কামনা করবেন। আর যদি সে সন্ধ্যা বেলায় তাকে কুশল জিজ্ঞাসা করতে যায়, তাহলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফিরিশ্তা তার মঙ্গল কামনা করে। আর তার জন্য জান্নাতের মধ্যে পাড়া ফল নির্ধারিত হবে। (তিরমিযী হাসান)
7/905 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ غُلاَمٌ يَهُودِيٌّ يَخْدُمُ النَّبِيَّ ﷺ، فَمَرِضَ، فَأتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ يَعُودُهُ، فَقَعَدَ عِنْدَ رَأسِهِ، فَقَالَ لَهُ: « أسْلِمْ » فَنَظَرَ إِلَى أبِيهِ وَهُوَ عِنْدَهُ ؟ فَقَالَ: أَطِعْ أَبَا القَاسِمِ، فَأَسْلَمَ، فَخَرَجَ النَّبيُّ ﷺ، وَهُوَ يَقُولُ: « اَلحَمْدُ للهِ الَّذِي أنْقَذَهُ منَ النَّارِ ». رواه البخاري
৭/৯০৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন ইয়াহুদী বালক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সেবা করত। হঠাৎ সে অসুস্থ হয়ে পড়ল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রোগ জিজ্ঞাসার উদ্দেশ্যে তার নিকট গেলেন এবং তার শিয়রে বসে তাকে বললেন, ‘‘তুমি ইসলাম গ্রহণ কর।’’ সে তার পিতার দিকে তাকালে--তার পিতা সেখানেই উপস্থিত ছিল--সে বলল, ‘আবুল কাসেমের কথা মেনে নাও।’ সুতরাং সে বালকটি ইসলাম গ্রহণ করল। (তারপর সে মারা গেল।) অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলতে বলতে বের হয়ে চলে গেলেন যে, ‘‘সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, যিনি ওকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে নিলেন।’’ (বুখারী)
145- بَابُ مَا يُدْعٰى بِهِ لِلْمَرِيْضِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৫: অসুস্থ মানুষের জন্য যে সব দো‘আ বলা হয়
1/906 عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أنَّ النَّبيَّ ﷺ، كَانَ إِذَا اشْتَكَى الإنْسَانُ الشَّيْءَ مِنْهُ، أَوْ كَانَتْ بِهِ قَرْحَةٌ أَوْ جُرْحٌ، قَالَ النَّبيُّ ﷺ بِأُصْبُعِهِ هكَذا- وَوَضَعَ سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَة الرَّاوي سَبَّابَتَهُ بِالأَرْضِ ثُمَّ رَفَعَها- وَقَالَ: «بِسمِ اللهِ، تُرْبَةُ أرْضِنَا، بِرِيقَةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى بِهِ سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯০৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, যখন কোন ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট নিজের কোন অসুস্থতার অভিযোগ করত অথবা (তার দেহে) কোন ফোঁড়া কিংবা ক্ষত হত, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ আঙ্গুল নিয়ে এ রকম করতেন। (হাদীসের রাবী) সুফ্য়ান তাঁর শাহাদত আঙ্গুলটিকে যমীনের উপর রাখার পর উঠালেন। (অর্থাৎ তিনি এভাবে মাটি লাগাতেন।) অতঃপর দো‘আটি পড়তেনঃ ‘বিসমিল্লাহি তুরবাতু আরদ্বিনা, বিরীক্বাতি বা’যিবনা, য়্যুশফা বিহী সাক্বীমুনা, বিইযনি রাব্বিনা।’ অর্থাৎ আল্লাহর নামের সঙ্গে আমাদের যমীনের মাটি এবং আমাদের কিছু লোকের থুতু মিশ্রিত করে (ফোঁড়াতে) লাগালাম। আমাদের প্রতিপালকের আদেশে এর দ্বারা আমাদের রুগী সুস্থতা লাভ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)
2/907 وَعَنْها: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يَعُودُ بَعْضَ أَهْلِهِ يَمْسَحُ بِيدِهِ اليُمْنَى، وَيَقُولُ: « اَللهم رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ البَأسَ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَماً ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৯০৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন পরিবারের কোন রোগী-দর্শন করার সময় নিজের ডান হাত তার ব্যথার স্থানে ফিরাতেন এবং এ দো‘আটি পড়তেন, ‘‘আযহিবিল বা’স, রাববান্না-স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক, শিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাক্বামা।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তোমারই আরোগ্য দান হচ্ছে প্রকৃত আরোগ্য দান। তুমি এমনভাবে রোগ নিরাময় কর, যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়। (বুখারী ও মুসলিম)
3/908 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه أَنَّهُ قَالَ لِثَابِتٍ رَحِمَهُ اللهُ: أَلاَ أَرْقِيكَ بِرُقْيَةِ رَسُولِ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: « اَللهم رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ البَأسِ، اِشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لاَ شَافِيَ إِلاَّ أنْتَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَماً ». رواه البخاري
৩/৯০৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি সাবেত (রাহিমাহুল্লাহ)কে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মন্ত্র দ্বারা ঝাড়ফুঁক করব না?’ সাবেত বললেন, ‘অবশ্যই।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এই দো‘আ পড়লেন, ‘‘আল্লাহুম্মা রাববান্না-স, মুযহিবাল বা’স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শা-ফিয়া ইল্লা আন্ত্, শিফা-আল লা য়্যুগা-দিরু সাক্বামা।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! মানুষের প্রতিপালক! তুমি কষ্ট দূর কর এবং আরোগ্য দান কর। (যেহেতু) তুমি রোগ আরোগ্যকারী। তুমি ছাড়া আরোগ্যকারী আর কেউ নেই। তুমি এমনভাবে রোগ নিরাময় কর, যেন তা রোগকে নির্মূল করে দেয়। (বুখারী)
4/909 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبِي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: عَادَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَقَالَ: « اَللهم اشْفِ سَعْداً، اَللهم اشْفِ سَعْداً، اَللهم اشْفِ سَعْداً ». رواه مسلم
৪/৯০৯। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার অসুস্থ অবস্থায়) আমাকে দেখা করতে এসে বললেন, ‘‘হে আল্লাহ! সা‘দকে রোগমুক্ত কর, হে আল্লাহ! সা‘দকে রোগমুক্ত কর। হে আল্লাহ! সা‘দকে রোগমুক্ত কর।’’ (মুসলিম)
5/910 وَعَنْ أَبي عَبدِ اللهِ عُثمَانَ بنِ أَبي العَاصِ رضي الله عنه: أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ وَجَعاً يَجِدُهُ في جَسَدِهِ، فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي يَألَمُ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ: بِسمِ اللهِ ثَلاثاً، وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِعِزَّةِ اللهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أجِدُ وَأُحَاذِرُ ». رواه مسلم
৫/৯১০। আবূ আব্দুল্লাহ ‘উসমান ইবনে আবুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট ঐ ব্যথার অভিযোগ করলেন, যা তিনি তার দেহে অনুভব করছিলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, ‘‘তুমি তোমার দেহের ব্যথিত স্থানে হাত রেখে তিনবার ‘বিসমিল্লাহ’ এবং সাতবার ‘আ‘উযু বি‘ইয্যাতিল্লাহি অক্বুদরাতিহী মিন শার্রি মা আজিদু অউহাযিরু’ বল।’’ অর্থাৎ আল্লাহর ইজ্জত এবং কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করছি, সেই মন্দ থেকে যা আমি পাচ্ছি এবং যা থেকে আমি ভয় করছি। (মুসলিম)
6/911 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « مَنْ عَادَ مَرِيضاً لَمْ يَحْضُرْهُ أَجَلُهُ، فَقَالَ عِنْدَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَسْأَلُ اللهَ العَظيمَ، رَبَّ العَرْشِ العَظِيمِ، أَنْ يَشْفِيَكَ، إِلاَّ عَافَاهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ المَرَضِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »، وَقَالَ الحاكم: «حديث صحيح عَلَى شرط البخاري »
৬/৯১১। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোন রুগ্ন মানুষকে সাক্ষাৎ করবে, যার এখন মরার সময় উপস্থিত হয়নি এবং তার নিকট সাতবার এই দো‘আটি বলবে, ‘আসআলুল্লাহাল আযীম, রাব্বাল আরশিল আযীম, আঁই য়্যাশ্ফিয়াক’ (অর্থাৎ আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য প্রার্থনা করছি), আল্লাহ তাকে সে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সূত্রে, হাকেম, বুখারীর শর্তে সহীহ সূত্রে)
7/912 وَعَنْه: أنَّ النَّبِيِّ ﷺ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِيٍّ يَعُوْدُهُ، وَكَانَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَنْ يَعُوْدُهُ، قَالَ: «لاَ بَأسَ ؛ طَهُورٌ إنْ شَاءَ اللهُ ». رواه البخاري
৭/৯১২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক পীড়িত বেদুঈনের সাক্ষাতে গেলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগীকেই সাক্ষাৎ করতে যেতেন, তাকে বলতেন, ‘‘লা-বা’স, ত্বাহুরুন ইনশাআল্লাহ।’’ অর্থাৎ কোন ক্ষতি নেই, (গোনাহ থেকে) পবিত্র হবে ইন শাআল্লাহ। (বুখারী)
8/913 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه: أَنَّ جِبرِيلَ أتَى النَّبيَّ ﷺ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، اشْتَكَيْتَ ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: بِسْمِ الله أَرْقِيكَ، مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ، مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ، اللهُ يَشْفِيكَ، بِسمِ اللهِ أُرقِيكَ . رواه مسلم
৮/৯১৩। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, জিবরীল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ জিবরীল তখন এই দো‘আটি পড়লেন, ‘বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা, মিন কুল্লি শাইয়িন ইউ’যীকা, অমিন শার্রি কুল্লি নাফসিন আউ ‘আইনি হা-সিদ, আল্লা-হু য়্যাশফীকা, বিসমিল্লা-হি আরক্বীকা।’
অর্থাৎ আমি তোমাকে আল্লাহর নাম নিয়ে প্রত্যেক কষ্টদায়ক বস্তু থেকে এবং প্রত্যেক আত্মা অথবা বদনজরের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে ঝাড়ছি। আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নাম নিয়ে তোমাকে ঝাড়ছি। (মুসলিম)
9/914 وَعَنْ أَبي سعيد الخدري وأَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى رَسُول اللهِ ﷺ، أنّه قَالَ: « مَنْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَاللهُ أكْبَرُ، صَدَّقَهُ رَبُّهُ، فَقَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أنَا وَأَنَا أكْبَرُ . وَإِذَا قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، قَالَ: يَقُولُ: لاَ إِلٰهَ إلاَّ أنَا وَحْدِي لاَ شَريكَ لِي . وَإِذَا قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أنَا لِيَ المُلْكُ وَلِيَ الحَمْدُ . وَإِذَا قَالَ: لاَ إله إِلاَّ اللهُ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللهِ، قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أنَا وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِي » وَكَانَ يقُولُ: « مَنْ قَالَهَا في مَرَضِهِ ثُمَّ مَاتَ لَمْ تَطْعَمْهُ النَّارُ ». رواه الترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
৯/৯১৪। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তাঁরা উভয়েই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অল্লাহু আকবার’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহ সবচেয়ে বড়) বলে, আল্লাহ তার সত্যায়ন করে বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমি সবচেয়ে বড়।’
আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আমি একক, আমার কোন অংশী নেই।’
আর যখন সে বলে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হাম্দ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা তাঁরই এবং তাঁরই যাবতীয় প্রশংসা), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, সার্বভৌম ক্ষমতা আমারই এবং আমারই যাবতীয় প্রশংসা।’
আর যখন সে বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, অলা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই), তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি ছাড়া কোন (সত্য) উপাস্য নেই এবং আমার প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার বা নড়া-চড়ার শক্তি নেই।’
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার পীড়িত অবস্থায় এটি পড়ে মারা যাবে, জাহান্নামের আগুন তাকে খাবে না।’’ (অর্থাৎ সে জাহান্নামে যাবে না।) (তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
146- بَابُ اِسْتِحْبَابِ سُؤَالِ أهلِ الْمَرِيْضِ عَنْ حَالِهِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৬: রোগীর বাড়ির লোককে রোগীর অবস্থা সম্পর্কে
জিজ্ঞাসা করা উত্তম
1/915 عَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبي طَالِبٍ رضي الله عنه، خَرَجَ مِنْ عِنْدِ رَسُولِ اللهِ ﷺ، فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، فَقَالَ النَّاسُ: يَا أَبَا الحَسَنِ، كَيْفَ أصْبَحَ رَسُولُ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ: أصْبَحَ بِحَمْدِ اللهِ بَارِئاً . رواه البخاري
১/৯১৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আলী ইবনে আবী ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হতে তাঁর সেই অসুস্থ অবস্থায় বের হলেন, যাতে তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। অতঃপর লোকেরা বলল, ‘হে হাসানের পিতা! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কী অবস্থায় সকাল করলেন?’ তিনি বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহ, তিনি ভাল অবস্থায় সকাল করলেন।’ (বুখারী)
147- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ مَنْ أَيِسَ مِنْ حَيَاتِهِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৭: জীবন থেকে নিরাশ হওয়ার সময়ে দো‘আ
1/916 عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إلَيَّ، يَقُولُ: « اَللهم اغْفِرْ لِي وارْحَمْنِي، وأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الأَعْلَى ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯১৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই দো‘আ বলতে শুনেছি, যখন তিনি (তাঁর মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে) আমার উপর ঠেস লাগিয়ে ছিলেন, ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী অ আলহিক্বনী বির্রাফীক্বিল আ‘লা।’ অর্থাৎ আল্লাহ গো! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর এবং আমাকে মহান সাথীর সাথে মিলিত কর। (বুখারী-মুসলিম)
2/917 وعنها قالت: رأَيْتُ رسولَ اللهِ ﷺ وهُوَ بِالموتِ، عِندهُ قدحٌ فِيهِ مَاءٌ، وهُو يدخِلُ يدهُ في القَدَحِ، ثم يمسَحُ وجهَهُ بالماءِ، ثم يقول: «اَللهم أَعِنِّي علٰى غمرَاتِ الموْتِ وَسَكَراتِ المَوْتِ » رواه الترمذي.
২/৯১৭। আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, তাঁর উপর তখন মৃত্যু ছেয়ে গিয়েছিল, তাঁর সামনে একটি পানি ভর্তি পাত্র ছিল। তাতে তিনি নিজের (ডান) হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন, অতঃপর (হাতের সাথে লেগে থাকা) পানি দিয়ে তাঁর মুখমন্ডল মুছছিলেন এবং বলছিলেনঃ আল্লাহ! মৃত্যুর কঠোরতা ও তার ভীষণ কষ্টের বিরুদ্ধে আমাকে সহায়তা কর। (তিরমিযী)
148- بَابُ اِسْتِحْبَابِ وَصِيَّةِ أَهْلِ الْمَرِيْضِ وَمَنْ يَّخْدُمُهُ بِالْإِحْسَانِ إِلَيْهِ وَاحْتِمَالِهِ وَالصَّبْرِ عَلٰى مَا يَشُقُّ مِنْ أَمْرِهِ وَكَذَا الْوَصِيَّةِ بِمَنْ قَرُبَ سَبَبُ مَوْتِهِ بِحَدٍّ أَوْ قِصَاصٍ وَنَحْوِهِمَا
পরিচ্ছেদ - ১৪৮: পীড়িতের পরিবার এবং তার সেবাকারীদেরকে পীড়িতের সাথে সদ্ব্যবহার করা এবং সে ক্ষেত্রে কষ্ট বরণ করা ও তার পক্ষ থেকে উদ্ভূত বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধারণ করার জন্য উপদেশ প্রদান। অনুরূপভাবে কোন ইসলামী দণ্ডবিধি প্রয়োগজনিত কারণে যার মৃত্যু আসন্ন, তার সাথেও সদ্ব্যবহার করার উপর তাকীদ
3/918 عَنْ عِمْرانَ بنِ الحُصَيْنِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ أتَتِ النَّبِيَّ ﷺ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزِّنَا، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَصَبْتُ حَدّاً فَأَقِمْهُ عَلَيَّ، فَدَعَا رَسُولُ اللهِ ﷺ وَلِيَّهَا، فَقَالَ: «أحْسِنْ إِلَيْهَا، فَإذَا وَضَعَتْ فَأتِنِي بِهَا » فَفَعَلَ، فَأمَرَ بِهَا النَّبِيُّ ﷺ، فَشُدَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أمَرَ بِهَا فَرُجِمَت، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا . رواه مسلم
৩/৯১৮। ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা ব্যভিচার করে গর্ভবতী হয়েছিল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি শাস্তি পাওয়ার যোগ্যা, সুতরাং আপনি আমাকে শাস্তি দিন।’ অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অভিভাবককে ডেকে বললেন, ‘‘এর সাথে সদ্ব্যবহার কর। অতঃপর সে যখন সন্তান ভূমিষ্ট করবে তখন একে আমার নিকট নিয়ে এসো।’’ সে তাই করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর তার কাপড়খানি মযবুত করে বাঁধার আদেশ করলেন। অতঃপর তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশক্রমে পাথর মেরে শেষ করে দেওয়া হল। অতঃপর তিনি তার জানাযার নামায পড়লেন। (বুখারী)
149- بَابُ جَوَازِ قَوْلِ الْمَرِيْضِ: أَنَا وَجِعٌ، أَوْ شَدِيْدُ الْوَجْعِ أَوْ مَوْعُوْكٌ أَوْ وَارَأْسَاهُ وَنَحْوُ ذٰلِكَ وَبَيَانِ أَنَّهُ لاَ كَرَاهَةَ فِي ذٰلِكَ إِذَا لَمْ يَكُنْ عَلَى التَّسَخُّطِ وَإِظْهَارِ الْجَزَعِ
পরিচ্ছেদ - ১৪৯: রুগ্ন ব্যক্তির জন্য ‘আমার যন্ত্রণা হচ্ছে’ অথবা ‘আমার প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে’ কিংবা ‘আমার জ্বর হয়েছে’ কিংবা ‘হায়! আমার মাথা গেল’ ইত্যাদি বলা জায়েয; যদি তা আল্লাহর প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশের জন্য না হয়
1/919 عَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه، قَالَ: دَخَلْتُ عَلَى النَّبيِّ ﷺ وَهُوَ يُوعَكُ، فَمَسسْتُهُ، فَقُلْتُ: إنَّكَ لَتُوعَكُ وَعَكاً شَديداً، فَقَالَ: « أجَلْ، إنِّي أُوعَكُ كَمَا يُوعَكُ رَجُلانِ مِنْكُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯১৯। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট গেলাম যখন তাঁর জ্বর হয়েছিল। অতঃপর আমি তাঁকে স্পর্শ করে বললাম, ‘আপনার প্রচন্ড জ্বর এসেছে।’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ, তোমাদের দু’জনের সমান আমার জ্বর হয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/920 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ يَعُودُنِي مِنْ وَجَعٍ اشْتَدَّ بِي، فَقُلْتُ: بَلَغَ بِي مَا تَرَى، وَأنَا ذُو مَالٍ، وَلاَ يَرِثُنِي إِلاَّ ابْنَتِي .. وذَكر الحديث . متفقٌ عَلَيْهِ
২/৯২০। সা‘দ ইবনে আবী অক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার (দৈহিক) যন্ত্রণা প্রচন্ডভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সাক্ষাৎ করতে এলেন। আমি বললাম, ‘আমার কী অবস্থা আপনি তা দেখছেন এবং আমি একজন ধনবান মানুষ? আর আমার উত্তরাধিকারী আমার একমাত্র কন্যা।---’ অতঃপর অবশিষ্ট হাদীস বর্ণনা করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
3/921 وَعَنِ القَاسِمِ بنِ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: وَارَأسَاهُ ! فَقَالَ النَّبيُّ ﷺ: « بَلْ أنَا، وَارَأسَاهُ ! » ... وذكر الحديث . رواه البخاري
৩/৯২১। কাসেম ইবনে মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, একদা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, ‘হায়! আমার মাথার ব্যথা।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘বরং হায়! আমার মাথার ব্যথা!’’ (অর্থাৎ আমার মাথাতেও প্রচন্ড ব্যথা হচ্ছে।) (বুখারী)
150- بَابُ تَلْقِيْنِ الْمُحْتَضَرِ: لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ
পরিচ্ছেদ - ১৫০: মুমূর্ষু ব্যক্তিকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্মরণ করিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে
1/922 عَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ كَانَ آخِرَ كَلامِهِ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ دَخَلَ الجَنَّةَ ». رواه أَبُو داود والحاكم، وَقَالَ: «صحيح الإسناد »
১/৯২২। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তির শেষ কথা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ হবে (অর্থাৎ এই কালেমা পড়তে পড়তে যার মৃত্যু হবে), সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ (আবূ দাউদ, হাকেম এটিকে সহীহ বলেছেন।)
২/৯২৩। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ স্মরণ করিয়ে দাও।’’ (মুসলিম)
151- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ بَعْدَ تَغْمِيْضِ الْمَيِّتِ
পরিচ্ছেদ - ১৫১: মৃতের চোখ বন্ধ করার পর দো‘আ
1/924 عَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: دَخَلَ رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى أَبي سَلَمَةَ وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهُ، فَأَغْمَضَهُ، ثُمَّ قَالَ: « إنَّ الرُّوحَ إِذَا قُبِضَ، تَبِعَهُ البَصَرُ » فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أهْلِهِ، فَقَالَ: «لاَ تَدْعُوا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِلاَّ بِخَيْرٍ، فَإنَّ المَلاَئِكَةَ يَؤمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ » ثُمَّ قَالَ: « اَللهم اغْفِرْ لأَبِي سَلَمَة، وَارْفَعْ دَرَجَتْهُ فِي المَهْدِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبهِ فِي الغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ العَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ في قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيهِ ». رواه مسلم
১/৯২৪। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ সালামার নিকট গেলেন। তখন তাঁর (আত্মা বের হওয়ার পর) চোখ খোলা ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা বন্ধ করার পর বললেন, ‘‘যখন (কারো) প্রাণ নিয়ে নেওয়া হয়, তখন চোখ তার দিকে তাকিয়ে থাকে।’’ (এ কথা শুনে) তাঁর পরিবারের কিছু লোক চিল্লিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমরা নিজেদের আত্মার জন্য মঙ্গলেরই দো‘আ কর। কেননা, ফিরিশ্তাবর্গ তোমাদের কথার উপর ‘আমীন’ বলেন।’’ অতঃপর তিনি এই দো‘আ বললেন,
‘আল্লা-হুম্মাগফির লি আবী সালামাহ, (এখানে মৃতের নাম নিতে হবে) অরফা’ দারাজাতাহু ফিল মাহদিইয়্যীন, ওয়াখলুফহু ফী আক্বিবিহী ফিল গা-বিরীন, অগফির লানা অলাহু ইয়া রাববাল ‘আ-লামীন, ওয়াফসাহ লাহু ফী ক্বাবরিহী অ নাউওয়িরলাহু ফীহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি (অমুককে) মাফ করে দাও এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের দলে ওর মর্যাদা উন্নত কর, অবশিষ্টদের মধ্যে ওর পশ্চাতে ওর উত্তরাধিকারী দাও। আমাদেরকে এবং ওকে মার্জনা করে দাও হে বিশ্বজগতের প্রতিপালক! ওর কবরকে প্রশস্ত করো এবং ওর জন্য কবরকে আলোকিত করো। (মুসলিম)
152- بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ الْمَيِّتِ وَمَا يَقُوْلُهُ مَنْ مَاتَ لَهُ مَيِّتٌ
পরিচ্ছেদ - ১৫২: মৃতের নিকট কী বলা যাবে?
এবং মৃতের পরিজনরা কী বলবে?
1/925 عَن أُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا حَضَرتُمُ المَرِيضَ أَو المَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْراً، فَإنَّ المَلائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ »، قَالَتْ: فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ، أتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ، فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّ أَبَا سَلَمَة قَدْ مَاتَ، قَالَ: « قُولِي: اَللهم اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبَى حَسَنَةً ». فَقُلتُ، فَأعْقَبَنِيَ اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ: مُحَمَّداً ﷺ . رواه مسلم
১/৯২৫। উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা পীড়িত অথবা মৃতের নিকট উপস্থিত হলে ভাল কথা বল। কেননা, ফিরিশ্তারা তোমাদের কথায় ‘আমীন’ বলেন।’’ (উম্মে সালামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হা) বলেন, অতঃপর যখন (আমার স্বামী) আবূ সালামাহ মারা গেলেন, তখন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আবূ সালামাহ মারা গেছেন। (সুতরাং আমি এখন কী বলব?)’ তিনি বললেন, তুমি এই দো‘আ বল, ‘আল্লাহুম্মাগফির লী অলাহু, অআ‘ক্বিবনী মিনহু উক্ববা হাসানাহ।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ও তাঁকে মার্জনা কর এবং আমাকে তাঁর চেয়ে উত্তম বিনিময় প্রদান কর।’ সুতরাং আমি তা বললাম, ফলে মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর চেয়ে উত্তম বিনিময় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (স্বামীরূপে) প্রদান করলেন। (মুসলিম)
(মুসলিম ‘পীড়িত অথবা মৃত’ সন্দেহের সাথে বর্ণনা করেছেন। আর আবূ দাঊদ প্রমুখ বিনা সন্দেহে ‘মৃতের নিকট উপস্থিত’ হওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন।)
2/926 وَعَنْها، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَا مِنْ عَبْدٍ تُصيبُهُ مُصِيبَةٌ، فَيَقُولُ: إِنَّا ِللهِ وَإنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اَللهم أجُرْنِي فِي مُصِيبَتي وَاخْلُفْ لِي خَيراً مِنْهَا، إِلاَّ أَجَرَهُ اللهُ تَعَالَى فِي مُصِيبَتِهِ وَأخْلَفَ لَهُ خَيْراً مِنْهَا ». قَالَتْ: فَلَمَّا تُوُفِّيَ أَبُو سَلَمَة قُلتُ كَمَا أمَرَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَأخْلَفَ اللهُ لِي خَيْراً مِنْهُ رَسُولَ اللهِ ﷺ . رواه مسلم
২/৯২৬। উক্ত উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে বান্দা বিপদগ্রস্ত অবস্থায় এই দো‘আ বলবে,
‘ইন্না লিল্লা-হি অইন্না ইলাইহি রা-জি‘ঊন, আল্লা-হুম্মা’জুরনী ফী মুসীবাতী অখ্লুফলী খাইরাম মিনহা।’ (যার অর্থ, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তন করব। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার এই বিপদে প্রতিদান দাও এবং তার জায়গায় উত্তম বিনিময় প্রদান কর।)
আল্লাহ তাকে তার বিপদে প্রতিদান ও তার জায়গায় উত্তম বিনিময় দান করবেন।’’
উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘যখন আবূ সালামাহ মারা গেলেন, তখন আমি সেইরূপ বললাম, যেরূপ বলার আদেশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দিয়েছিলেন। সুতরাং আল্লাহ আমাকে তার চেয়ে উত্তম বিনিময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (স্বামীরূপে) প্রদান করলেন।’ (মুসলিম)
3/927 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا مَاتَ وَلَدُ العَبْدِ، قَالَ اللهُ تَعَالَى لِمَلائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ . فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَة فُؤَادِهِ ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ . فَيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي ؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ . فَيَقُولُ اللهُ تَعَالَى: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتاً فِي الجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الحَمْدِ ». رواه الترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
৩/৯২৭। আবূ মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায় আল্লাহ ফিরিশ্তাদেরকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের প্রাণ নিয়েছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ অতঃপর আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তার অন্তরের ফল কেড়ে নিয়েছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তারপর তিনি বলেন, ‘আমার বান্দা কী বলেছে?’ তাঁরা উত্তরে বলেন, ‘সে তোমার প্রশংসা করেছে এবং ‘‘ইন্না লিল্লা-হি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন’’ পড়েছে।’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ কর এবং তার নাম রাখ---প্রসংশা-গৃহ।’ (তিরমিযী, হাসান)
4/928 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي المُؤمِن عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أهْل الدُّنْيَا، ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الجَنَّةَ ». رواه البخاري
৪/৯২৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি আমার বান্দার পছন্দনীয় পার্থিব জিনিসকে কেড়ে নিই, অতঃপর সে (তাতে) সওয়াবের আশা রাখে, তখন তার জন্য আমার নিকট জান্নাত ছাড়া অন্য কোন বিনিময় নেই।’ (বুখারী)
5/929 وَعَنْ أسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أرْسَلَتْ إحْدى بَنَاتِ النَّبيِّ ﷺ إِلَيْهِ تَدْعُوهُ وَتُخْبِرُهُ أنَّ صَبِيَّاً لَهَا - أَوْ ابْناً- فِي المَوْتِ فَقَالَ لِلرَّسُولِ: « اِرْجِعْ إِلَيْهَا، فَأَخْبِرْهَا أَنَّ للهِ تَعَالَى مَا أخَذَ وَلَهُ مَا أعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمّى، فَمُرْهَا، فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ » ... وذكر تمام الحديث . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৯২৯। উসামাহ ইবনে যায়দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কন্যা তাঁকে ডাকার জন্য এবং এ সংবাদ দেওয়ার জন্য দূত পাঠালেন যে, তাঁর শিশু অথবা পুত্র মরণাপন্ন। অতঃপর তিনি দূতকে বললেন, ‘‘তুমি তার নিকট ফিরে গিয়ে বল, ‘তা আল্লাহরই--যা তিনি নিয়েছেন এবং যা কিছু দিয়েছেন--তাও তাঁরই। আর তাঁর নিকট প্রতিটি জিনিসের নির্দিষ্ট সময় রয়েছে।’ অতএব তাকে বল, সে যেন ধৈর্য ধারণ করে এবং নেকীর আশা রাখে।’’ ---অতঃপর বর্ণনাকারী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
153- بَابُ جَوَازِ الْبُكَاءِ عَلَى الْمَيِّتِ بِغَيْرِ نَدْبٍ وَلاَ نِيَاحَةٍ
পরিচ্ছেদ - ১৫৩: মৃতের জন্য মাতমবিহীন কান্না বৈধ
মাতম করা হারাম। (এ বিষয়ে নিষিদ্ধ বস্তু অধ্যায়ে এক পরিচ্ছেদ আসবে ইন-শাআল্লাহু তা‘আলা।) কাঁদা নিষেধ হওয়ার ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে। আর যে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, ‘‘মৃতকে তার পরিবার-পরিজনদের কাঁদার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়’’ তার অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি কাঁদার অসিয়ত করে মারা যাবে। পক্ষান্তরে কেবলমাত্র সেই কান্না নিষিদ্ধ, যাতে মৃতের প্রশংসা করা হয় অথবা মাতম করা হয়। আর প্রশংসা ও মাতমবিহীন কান্নার বৈধতার ব্যাপারেও বহু হাদীস রয়েছে; তার কিছু নিম্নরূপঃ-
1/930 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ عَادَ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ، وَمَعَهُ عَبدُ الرَّحْمَانِ بْنُ عَوفٍ، وَسَعدُ بْنُ أَبي وَقَّاصٍ، وَعَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُودٍ ، فَبَكَى رَسُولُ اللهِ ﷺ، فَلَمَّا رَأَى القَوْمُ بُكَاءَ رَسُولِ اللهِ ﷺ بَكَوْا، فَقَالَ: « أَلاَ تَسْمَعُونَ ؟ إِنَّ اللهَ لاَ يُعَذِّبُ بِدَمْعِ العَينِ، وَلاَ بِحُزنِ القَلبِ، وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا أَوْ يَرْحَمُ ». وَأشَارَ إِلَى لِسَانِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৩০। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা‘দ ইবনে উবাদার সাক্ষাতে গেলেন। তাঁর সঙ্গে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবী অক্কাস এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও ছিলেন। সেখানে পৌঁছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাঁদা দেখে লোকেরাও কাঁদতে আরম্ভ করল। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘তোমরা কি শুনতে পাও না যে, আল্লাহ চোখের অশ্রু এবং অন্তরের দুঃখের উপর শাস্তি দেন না। কিন্তু তিনি এটার কারণে শাস্তি দেন অথবা দয়া করেন।’’ সেই সাথে তিনি নিজের জিভের দিকে ইঙ্গিত করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
2/931 وَعَنْ أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ رُفِعَ إِلَيْهِ ابنُ ابْنَتِهِ وَهُوَ فِي المَوتِ، فَفَاضَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَ لَهُ سَعدٌ: مَا هَذَا يَا رَسُولِ اللهِ ؟! قَالَ: « هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى فِي قُلُوبِ عِبَادِهِ، وَإنَّمَا يَرْحَمُ اللهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৯৩১। উসামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট তাঁর নাতিকে তার মুমূর্ষু অবস্থায় নিয়ে আসা হল। (ওকে দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় হতে অশ্রু ঝরতে লাগল। সা‘দ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ কী?’ তিনি বললেন, ‘‘এটা রহমত (দয়া); যা আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অন্তরে রেখেছেন। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে দয়ালুদের প্রতিই দয়া করেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/932 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ دَخَلَ عَلَى ابْنِهِ إبْرَاهيمَ رضي الله عنه، وَهُوَ يَجُودُ بِنَفسِهِ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُولِ اللهِ ﷺ تَذْرِفَانِ . فَقَالَ لَهُ عَبدُ الرَّحمَانِ بنُ عَوفٍ: وَأَنتَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟! فَقَالَ: « يَا ابْنَ عَوْفٍ إنَّهَا رَحْمَةٌ» ثُمَّ أَتْبَعَهَا بأُخْرَى، فَقَالَ: « إنَّ العَيْنَ تَدْمَعُ والقَلبُ يَحْزنُ، وَلاَ نَقُولُ إِلاَّ مَا يُرْضِي رَبَّنَا، وَإِنَّا لِفِرَاقِكَ يَا إِبرَاهِيمُ لَمَحزُونُونَ ». رواه البخاري، وروى مسلم بعضه.
৩/৯৩২। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পুত্র ইব্রাহীমের নিকট গেলেন, যখন সে মারা যাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দু’চোখ দিয়ে অশ্রুপাত হতে লাগল। আব্দুর রহমান ইবনে আওফ তাঁকে বললেন, ‘আপনিও (কাঁদছেন)? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘হে আওফের পুত্র! এটা তো মমতা।’’ অতঃপর দ্বিতীয়বার কেঁদে ফেললেন। তারপর বললেন, ‘‘চোখ অশ্রুপাত করছে এবং অন্তর দুঃখিত হচ্ছে। আমরা সে কথাই বলব, যা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করবে। আর হে ইব্রাহীম! আমরা তোমার বিরহে দুঃখিত।’’ (বুখারী, মুসলিম কিছু অংশ)
এ বিষয়ে আরো অনেক প্রসিদ্ধ সহীহ হাদীস রয়েছে।
154- بَابُ الْكَفِّ عَمَّا يَرٰى فِي الْمَيِّتِ مِنْ مَكْرُوْهٍ
পরিচ্ছেদ - ১৫৪: মৃতের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করা নিষেধ
১/৯৩৩. وَعَنْ أَبي رَافِعٍ أَسلَمَ مَولَى رَسُولِ اللهِ ﷺ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَنْ غَسَّلَ مَيتاً فَكَتَمَ عَلَيْهِ، غَفَرَ اللهُ لَهُ أربَعِينَ مَرَّة ». رواه الحاكم، وَقَالَ: صحيح عَلَى شرط مسلم
১/৯৩৩। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্বাধীনকৃত দাস আবূ রাফে’ আসলাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মৃতকে গোসল দেবে এবং তার দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তাকে চল্লিশবার ক্ষমা করবেন।’’ (হাকেম, মুসলিমের শর্তে সহীহ)
155- بَابُ الصَّلَاةِ عَلَى الْمَيِّتِ وَتَشْيِيْعِهِ وَحُضُوْرِ دَفْنِهِ
وَكَرَاهَةِ اِتِّبَاعِ النِّسَاءِ الْجَنَائِزَ
পরিচ্ছেদ - ১৫৫: জানাযার নামায পড়া, জানাযার সাথে যাওয়া, তাকে কবরস্থ করার কাজে অংশ নেওয়ার মাহাত্ম্য এবং জানাযার সাথে মহিলাদের যাওয়া নিষেধ
1/934 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ شَهِدَ الجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا، فَلَهُ قِيراطٌ، وَمَنْ شَهِدَهَا حَتَّى تُدْفَنَ، فَلَهُ قِيرَاطَانِ » قِيلَ: وَمَا القِيرَاطانِ ؟ قَالَ: « مِثْلُ الجَبَلَيْنِ العَظِيمَيْنِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৩৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি নামায পড়া পর্যন্ত জানাযায় উপস্থিত থাকবে, তার জন্য এক ক্বীরাত্ব সওয়াব রয়েছে। আর যে ব্যক্তি দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে, তার জন্য দুই ক্বীরাত সওয়াব রয়েছে।’’ জিজ্ঞাসা করা হল, ‘দুই ক্বীরাতের পরিমাণ কতটুকু?’ তিনি বললেন, ‘‘দুই বড় পাহাড়ের সমান।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/935 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « مَنِ اتَّبَعَ جَنَازَةَ مُسْلِمٍ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً، وَكَانَ مَعَهُ حَتَّى يُصَلَّى عَلَيْهَا وَيُفرَغَ مِنْ دَفْنِهَا، فَإنَّهُ يَرْجِعُ مِنَ الأَجْرِ بِقيراطَيْنِ كُلُّ قِيرَاطٍ مِثْلُ أُحُدٍ، وَمَنْ صَلَّى عَلَيْهَا، ثُمَّ رَجَعَ قَبْلَ أنْ تُدْفَنَ، فَإنَّهُ يَرْجِعُ بِقيرَاطٍ ». رواه البخاري
২/৯৩৫। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি (আল্লাহর প্রতি) বিশ্বাস রেখে এবং নেকীর আশা রেখে কোনো মুসলিমের জানাযার সাথে যাবে এবং তার জানাযার নামায পড়া এবং তাকে দাফন করা পর্যন্ত তার সাথে থাকবে, সে দু’ ক্বীরাত্ব সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। এক ক্বীরাত উহুদ পাহাড়ের সমান। আর যে ব্যক্তি জানাযার নামায পড়ে মৃতকে সমাধিস্থ করার পূর্বেই ফিরে আসবে, সে এক কীরাত্ব সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে।’’ (বুখারী)
ومعناه: وَلَمْ يُشَدَّدْ في النَّهْيِ كَمَا يُشَدَّدُ في المُحَرَّمَاتِ .
৩/৯৩৬। উম্মে আত্বিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, ‘আমাদেরকে জানাযার সাথে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু (এ ব্যাপারে) আমাদের উপর জোর দেওয়া হয়নি।’ (বুখারী-মুসলিম)
এর অর্থ হল, যেমন অন্যান্য হারাম কাজ কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে, তেমন কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়নি।
156- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَكَثُّرِ الْمُصَلِّيْنَ عَلَى الْجَنَازَةِ
وَجَعْلِ صُفُوْفِهِمْ ثَلَاثَةً فَأَكْثَرَ
পরিচ্ছেদ - ১৫৬: জানাযায় নামাযীর সংখ্যা বেশি হওয়া এবং তাদের তিন অথবা ততোধিক কাতার করা উত্তম
1/937 عَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَا مِنْ مَيتٍ يُصَلِّي عَلَيْهِ أُمَّةٌ مِنَ المُسْلِمِينَ يَبْلُغُونَ مِئَةً كُلُّهُمْ يَشْفَعُونَ لَهُ إِلاَّ شُفِّعُوا فِيهِ ». رواه مسلم
১/৯৩৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে মৃতের জানাযার নামায একটি বড় জামাআত পড়ে, যারা সংখ্যায় একশ’ জন পৌঁছে এবং সকলেই তার ক্ষমার জন্য সুপারিশ করে, তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হয়।’’ (মুসলিম)
2/938 وَعَنِ ابنِ عباسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَا مِنْ رَجُلٍ مُسْلِمٍ يَمُوتُ، فَيقومُ عَلَى جَنَازَتِهِ أَرْبَعُونَ رَجُلاً لاَ يُشْرِكُونَ بِاللهِ شَيْئاً، إِلاَّ شَفَّعَهُمُ اللهُ فِيهِ». رواه مسلم
২/৯৩৮। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যে কোন মুসলিম মারা যাবে এবং তার জানাযায় এমন চল্লিশজন লোক নামায পড়বে, যারা আল্লাহর সাথে কোন জিনিসকে শরীক করে না, আল্লাহ তার ব্যাপারে তাদের সুপারিশ গ্রহণ করবেন।’’ (মুসলিম)
3/939 وَعَنْ مَرثَدِ بنِ عَبدِ اللهِ اليَزَنِيِّ، قَالَ: كَانَ مَالِكُ بنُ هُبَيْرَةَ رضي الله عنه إِذَا صَلَّى عَلَى الجَنَازَةِ، فَتَقَالَّ النَّاس عَلَيْهَا، جَزَّأَهُمْ عَلَيْهَا ثَلاَثَةَ أَجْزَاءٍ، ثُمَّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ صَلَّى عَلَيْهِ ثَلاَثَةُ صُفُوفٍ فَقَدْ أَوْجَبَ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
৩/৯৩৯। মারষাদ ইবনে আব্দুল্লাহ য়্যাযানী বলেন, মালেক ইবনে হুবাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন (কারো) জানাযার নামায পড়তেন এবং লোকের সংখ্যা কম বুঝতে পারতেন, তখন তিনি তাদেরকে তিন কাতারে বণ্টন করতেন। তারপর তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন কাতার (লোক) যার জানাযা পড়ল, সে (জান্নাত) ওয়াজেব করে নিল।’’ (আবু দাঊদ, তিরমিযী, হাসান সূত্রে)
157- بَابُ مَا يُقْرَأُ فِيْ صَلاَةِ الْجَنَازَةِ
পরিচ্ছেদ - ১৫৭: জানাযার নামাযে যে সব দো‘আ পড়া হয়
জানাযার নামাযে চার তকবীর বলবে। প্রথম তকবীরের পর ‘আউযু বিল্লাহ’ পড়ে সূরা ফাতিহা পড়বে। অতঃপর দ্বিতীয় তকবীর বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি দরূদ পড়বে। বলবে, ‘আল্লাহুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদ, অআলা আ-লি মুহাম্মাদ।’ উত্তম হল ‘কামা স্বাল্লাইতা আলা ইবরা-হীমা অ আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ’ পর্যন্ত পুরো পড়া। অধিকাংশ সাধারণ লোকের মত শুধু (সূরা আহযাবের ৫৬নং) এই আয়াতটি ‘ইন্নাল্লাহা অমালাইকাতাহু ইউস্বাল্লূনা আলান নাবী’ যেন না পড়ে। কারণ, এইটুকু পড়েই যথেষ্ট করলে নামায শুদ্ধ হবে না।
অতঃপর তৃতীয় তকবীর বলে মৃতের এবং সকল মুসলিমের জন্য যে সমস্ত দো‘আ পড়বে সে সম্পর্কিত একাধিক হাদীস আমি পরবর্তীতে বর্ণনা করব—ইন-শাআল্লাহু তা‘আলা। পুনরায় চতুর্থ তকবীর বলবে এবং দো‘আ করবে। এখানে সর্বোত্তম দো‘আর মধ্যে এটি একটি, ‘আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহু অলা তাফতিন্না বা’দাহ, অগফির লানা অ লাহ।’
চতুর্থ তকবীরের পর লম্বা দো‘আ করা পছন্দনীয়, অথচ অধিকাংশ লোকের এর বিপরীত অভ্যাস রয়েছে। এ ব্যাপারে ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে প্রমাণিত আছে, যা পরবর্তীতে উল্লেখ করব---ইন-শাআল্লাহু তা‘আলা।
পক্ষান্তরে তৃতীয় তকবীরের পর যে দো‘আগুলি প্রমাণিত আছে তার মধ্যে কিছু নিম্নরূপঃ-
1/940 عَن أَبي عَبدِ الرَّحمَانِ عَوفِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: صَلَّى رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى جَنازَةٍ، فَحَفِظْتُ مِنْ دُعَائِهِ، وَهُوَ يَقُولُ: « اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ، وَأكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِن الخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَس، وَأَبدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلهُ الجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ النَّارِ ». حَتَّى تَمَنَّيتُ أَنْ أَكُونَ أنَا ذَلِكَ الْمَيِّت . رواه مسلم
১/৯৪০। আবূ আব্দুর রহমান আওফ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযায় নামায পড়লেন। আমি তাঁর দো‘আ মুখস্থ করে ফেললাম। সে দো‘আ হল এইঃ-
‘আল্লা-হুম্মাগফির লাহু অরহামহু অ‘আ-ফিহী অ‘ফু ‘আনহু অআকরিম নুযুলাহু অঅসসি‘ মুদখালাহু, অগসিলহু বিলমা-ই অসসালজি অল-বারাদ। অনাক্কিহী মিনাল খাত্বায়্যা কামা নাক্কাইতাস সাউবাল আবয়্যাদা মিনাদ দানাস। অ আবদিলহু দা-রান খাইরাম মিন দা-রিহী অ আহলান খাইরাম মিন আহলিহী অযাওজান খাইরাম মিন যাওজিহ। অ আদখিলহুল জান্নাতা অ আ‘ইযহু মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি অমিন ‘আযা-বিন্নার।’
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ওকে ক্ষমা করে দাও এবং ওকে রহম কর। ওকে নিরাপত্তা দাও এবং মার্জনা করে দাও, ওর মেহেমানী সম্মানজনক কর এবং ওর প্রবেশস্থল প্রশস্ত কর। ওকে তুমি পানি, বরফ ও শিলাবৃষ্টি দ্বারা ধৌত করে দাও এবং ওকে গোনাহ থেকে এমন পরিষ্কার কর, যেমন তুমি সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছ। আর ওকে তুমি ওর ঘর অপেক্ষা উৎকৃষ্ট ঘর, ওর পরিবার অপেক্ষা উত্তম পরিবার, ওর জুড়ী অপেক্ষা উৎকৃষ্ট জুড়ী দান কর। ওকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং কবর ও জাহান্নামের আযাব থেকে রেহাই দাও।
(বর্ণনাকারী সাহাবী আউফ ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন এই দো‘আ বলতে শুনলাম) তখন আমি এই কামনা করলাম যে, যদি আমি এই মাইয়্যেত হতাম! (মুসলিম)
2/941, 3/942, 4/943 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ وَأَبِي قَتَادَةَ وَأَبِي إِبرَاهِيمَ الأَشهَلِي، عَنْ أَبِيهِ - وَأَبُوهُ صَحَابيٌّ رضي الله عنه - عَنِ النَّبِيِّ ﷺ: أنَّهُ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ، فَقَالَ: « اَللهم اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيرنَا وَكَبيرنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وشَاهِدنَا وَغَائِبِنَا، اَللهم مَنْ أحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأحْيِهِ عَلَى الإسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوفَّهُ عَلَى الإيمَان، اَللهم لاَ تَحْرِمْنَا أجْرَهُ، وَلاَ تَفْتِنَّا بَعدَهُ » رواه الترمذي من رواية أَبِي هُرَيرَةَ والأشهلي . ورواه أَبُو داود من رواية أَبِي هُرَيرَةَ وأبي قتادة . قَالَ الحاكم: «حديث أَبِي هُرَيرَةَ صحيح عَلَى شرط البخاري ومسلم »، قَالَ الترمذي: «قَالَ البخاري: أصَحُّ رواياتِ هَذَا الحديث رواية الأشْهَلِيِّ، قَالَ البخاري: وأصح شيء في هَذَا الباب حديث عَوْفِ ابن مَالِكٍ »
২/৯৪১, ৩/৯৪২, ৪/৯৪৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এবং আবূ ইব্রাহীম আশহালী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুতাঁর পিতা হতে যিনি সাহাবী ছিলেন বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযার নামায পড়ার সময় এই দো‘আ পড়লেন,
‘আল্লা-হুম্মাগফির লিহাইয়িনা অমাইয়িতিনা অস্বাগীরিনা অকাবীরিনা অযাকারিনা অউনসা-না অ শা-হিদিনা অগা-য়িবিনা, আল্লা-হুম্মা মান আহয়্যাইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি ‘আলাল ইসলাম, অমান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু ‘আলাল ঈমান, আল্লা-হুম্মা লা তাহরিমনা আজরাহ, অলা তাফতিন্না বা‘দাহ।’
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, পুরুষ ও নারী, উপস্থিত ও অনুপস্থিতকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে যাকে তুমি জীবিত রাখবে তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখ এবং যাকে মরণ দিবে তাকে ঈমানের উপর মরণ দাও। হে আল্লাহ! ওর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না এবং ওর পরে আমাদেরকে ফিতনায় ফেলো না। (তিরমিযী আবূ হুরাইরা ও আশহালী হতে, আবূ দাউদ আবূ হুরাইরা ও আবূ ক্বাতাদাহ হতে। হাকেম বলেছেন, আবূ হুরাইরার হাদীস বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। তিরমিযী বলেন, বুখারী বলেছেন, এ হাদীসের সবচেয়ে সহীহ বর্ণনা হল আশহালীর বর্ণনা। বুখারী বলেন, এ বিষয়ে সবচেয়ে সহীহ হল আওফ ইবন মালেকের হাদীস।)
5/944 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى المَيِّتِ، فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعاء ». رواه أَبُو داود
৫/৯৪৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘যখন তোমরা মৃতের জানাযা পড়বে, তখন তার জন্য আন্তরিকতার সাথে দো‘আ করো।’’ (আবু দাঊদ)
6/945 وَعَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ في الصَّلاةِ عَلى الجَنَازَة: «اَللهم أَنْتَ رَبُّهَا، وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا، وَأَنْتَ هَدَيْتَهَا لِلْإسْلَامِ، وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوْحَهَا، وَأَنْتَ أَعْلمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَّتِهَا، جِئْنَاكَ شُفَعَاءَ لَهُ فَاغْفِرْ لَهُ » . رواه أبو داود .
৬/৯৪৫। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে জানাযার নামাযের সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। জানাযার নামাযে তিনি নিম্নে উল্লেখিত দো‘আ তিলাওয়াত করতেনঃ ‘‘আল্লাহুম্মা আনতা রববুহা ওয়া আনতা খালাক্বতাহা, ওয়া আনতা হাদাইতাহা লিল ইসলামে, ওয়া আনতা ক্বাবাযতা রূহাহা, ওয়া আনতা অ‘লামু বিসিররিহা ওয়া ‘আলানিয়্যাতিহা, জি’নাকা শুফা‘আ- লাহু ফাগফির লাহু’’ (হে আল্লাহ! তুমিই তার প্রভূ-পালনকর্তা, তাকে তুমিই সৃষ্টি করেছো, তুমিই তাকে ইসলামের পথে হিদায়াত দিয়েছো, তুমিই তার জান কবজ করেছো এবং তার গোপন ও প্রকাশ্য (বিষয়াবলী) সম্বন্ধে তুমিই ভাল অবগত। আমরা তার পক্ষে সুপারিশের লক্ষ্যে তোমার কাছে এসেছি। তাই তাকে তুমি ক্ষমা কর)। (আবূ দাউদ) হাদীসটি দুর্বল।
7/946 وَعَنْ وَاثِلَة بنِ الأَسْقَعِ رضي الله عنه، قَالَ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ عَلَى رَجُلٍ مِنَ المُسْلِمِينَ، فَسَمِعْتُهُ يَقُولُ: « اَللهم إنَّ فُلانَ ابْنَ فُلانٍ فِي ذِمَتِّكَ وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ فِتْنَةَ القَبْرِ، وَعذَابَ النَّار، وَأنْتَ أهْلُ الوَفَاءِ وَالحَمْدِ ؛ اَللهم فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، إنَّكَ أنْتَ الغَفُورُ الرَّحيمُ ». رواه أَبُو داود
৭/৯৪৬। ওয়াসেলাহ ইবনে আসকা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এক মুসলিম ব্যক্তির জানাযার নামায পড়ালেন। সুতরাং আমি তাঁকে এই দো‘আটি বলতে শুনলাম,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্না ফুলা-নাবনা ফুলা-নিন ফী যিম্মাতিকা অহাবলি জিওয়ারিক, ফাক্বিহী ফিতনাতাল ক্বাবরি অ আযা-বান্নার, অ আন্তা আহলুল অফা-ই অলহাম্দ, ফাগ্ফির লাহু অরহামহু ইন্নাকা আন্তাল গাফূরুর রাহীম।’
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় অমুকের পুত্র অমুক তোমার দায়িত্বে এবং তোমার আমানতে। অতএব ওকে তুমি কবর ও জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা কর। তুমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী ও প্রশংসার পাত্র। সুতরাং ওকে তুমি মাফ করে দাও এবং ওর প্রতি দয়া কর। নিঃসন্দেহে তুমিই মহাক্ষমাশীল অতি দয়াবান। (আবূ দাউদ)
وفي رواية: كَبَّرَ أرْبَعاً فَمَكَثَ سَاعَةً حَتَّى ظَنَنْتُ أنَّهُ سَيُكَبِّرُ خَمْساً، ثُمَّ سَلَّمَ عَنْ يَمينِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ . فَلَمَّا انْصَرَفَ قُلْنَا لَهُ: مَا هَذَا ؟ فَقَالَ: إنِّي لاَ أَزيدُكُمْ عَلَى مَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَصْنَعُ، أَوْ: هَكَذَا صَنَعَ رَسُولُ اللهِ ﷺ . رواه الحاكم، وَقَالَ: «حديث صحيح »
৮/৯৪৭। আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর এক মেয়ের জানাযায় চার তাকবীর দিলেন। অতঃপর তিনি চতুর্থ তাকবীরের পর দুই তাকবীরের মধ্যস্থলে যতটা সময় লাগে ততক্ষণ দাঁড়িয়ে তার (কন্যার) জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দো‘আ করলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই রকমই করতেন।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি চার তাকবীর বলার পর কিছুক্ষণ থেমে গেলেন, এমনকি আমি ধারণা করলাম যে, তিনি পাঁচ তাকবীর বলবেন। অতঃপর তিনি তাঁর ডানে ও বামে সালাম ফিরলেন। তারপর তিনি যখন নামায শেষ করলেন, তখন আমরা তাঁকে বললাম, ‘একী!?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা করতে দেখেছি, তার চেয়ে বেশী করব না’ অথবা ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রকমই করেছেন।’ (হাকেম সহীহ সূত্রে)
158- بَابُ الْإِسْرَاعِ بِالْجَنَازَةِ
পরিচ্ছেদ - ১৫৮: লাশ শীঘ্র (কবরস্থানে) নিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে
1/948 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « أَسْرِعُوا بِالجَنَازَةِ، فَإنْ تَكُ صَالِحَةً، فَخَيرٌ تُقَدِّمُونَهَا إِلَيْهِ، وَإنْ تَكُ سِوَى ذَلِكَ، فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ » متفقٌ عَلَيْهِ.
وفي روايةٍ لمسلمٍ: « فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا عَلَيْهِ ».
১/৯৪৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা জানাযার (লাশ) নিয়ে যেতে তাড়াতাড়ি কর। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তাহলে ভালো; ভালোর দিকেই তোমরা তাকে পেশ করবে। আর যদি তা এর উল্টো হয়, তাহলে তা মন্দ; যা তোমরা তোমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দেবে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘তোমরা তাকে ভালোর উপরই পেশ করবে।’
2/949 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ، يَقُولُ: « إِذَا وُضِعَت الجَنَازَةُ، فَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعنَاقِهِمْ، فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً، قَالَتْ: قَدِّمُونِي، وَإنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ، قَالَتْ ِلأَهْلِهَا: يَا وَيْلَهَا أَيْنَ تَذْهَبُونَ بِهَا ؟ يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلاَّ الإنْسَانَ، وَلَوْ سَمِعَ الإنسَانُ لَصَعِقَ». رواه البخاري
২/৯৪৯। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘‘যখন জানাযা (খাটে) রাখা হয় এবং লোকেরা তা নিজেদের ঘাড়ে উঠিয়ে নেয়, তখন সে সৎ হলে বলে, ‘আমাকে আগে নিয়ে চল।’ আর অসৎ হলে তার পরিবার-পরিজনদের উদ্দেশ্যে বলে, ‘হায় আমার দুর্ভোগ! তোমরা (আমাকে) কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?’ মানুষ ছাড়া তার এই আওয়াজ সব জিনিসই শুনতে পায়। যদি মানুষ তা শুনতো, তবে নিশ্চয় বেঁহুশ হয়ে যেত।’’ (বুখারী)
159- بَابُ تَعْجِيْلِ قَضَاءِ الدَّيْنِ عَنِ الْمَيِّتِ
وَالْمُبَادَرَةِ إِلٰى تَجْهِيْزِهِ إِلَّا أَنْ يَّمُوْتَ فُجَأَةًَ فَيُتْرَكُ حَتّٰى يُتَيَقَّنُ مَوْتُهُ
পরিচ্ছেদ - ১৫৯: মৃতের ঋণ পরিশোধ করা এবং তার কাফন-দাফনের কাজে শীঘ্রতা করা প্রসঙ্গে। কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত বিলম্ব করা কর্তব্য
1/950 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « نَفْسُ المُؤْمِنِ مُعَلَّقَةٌ بِدَيْنِهِ حَتَّى يُقْضَى عَنْهُ ». رواه الترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن » .
১/৯৫০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘ঋণ পরিশোধ অবধি মু’মিনের আত্মা ঝুলানো থাকে।’’ (অর্থাৎ তার জান্নাতে অথবা জাহান্নামে যাওয়ার ফায়সালা হয় না।) (তিরমিযী হাসান)
1/951 وعن حُصَيْنِ بن وحْوَحٍ رضي الله عنه أَنْ طَلْحَةَ بنَ الْبُرَاءِ بن عازب رضِي اللهُ عنْهما مَرِض، فَأتَاهُ النَّبيُّ ﷺ يَعُودُهُ فَقَالَ: «إنّي لا أُرَى طَلْحةَ إلاَّ قدْ حَدَثَ فِيهِ المَوْتُ فَآذِنُوني بِهِ وَعَجِّلُوا بِهِ، فَإنَّهُ لا يَنْبَغِي لجِيفَةِ مُسْلِمٍ أنْ تُحْبَسَ بَيْنَ ظَهْرَانَيْ أَهْلِهِ » . رواه أبو داود .
২/৯৫১। হুসাইন ইবনু ওয়াহ্ওয়াহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, ত্বালহা ইবনুল বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রোগগ্রস্ত হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে দেখতে গেলেন। তিনি বললেনঃ ত্বালহার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে, তার বিষয়ে এছাড়া আমি আর কিছুই চিন্তা করি না। আমাকে তার মৃত্যুর খবর জানাবে। আর তার দাফন-কাফনের কাজ দ্রুত সমাধা করবে। কারণ, মুসলিমের লাশ তার পরিবারবর্গের নিকট আটকে রাখা উচিত নয়। (আবূ দাউদ)
160- بَابُ الْمَوْعِظَةِ عِنْدَ الْقَبْرِ
পরিচ্ছেদ - ১৬০: কবরের নিকট উপদেশ প্রদান
1/952 عَنْ عَلِيٍّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا فِي جَنَازَةٍ في بَقِيعِ الغَرْقَدِ، فَأَتَانَا رَسُولُ اللهِ ﷺ فَقَعَدَ، وَقَعَدْنَا حَوْلَهُ وَمَعَهُ مِخْصَرَةٌ فَنَكَّسَ وَجَعَلَ يَنْكُتُ بِمِخْصَرَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: « مَا مِنْكُمْ مِنْ أحَدٍ إِلاَّ وَقَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ وَمَقْعَدُهُ مِنَ الجَنَّةِ » فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، أفَلا نَتَّكِلُ عَلَى كِتَابنَا ؟ فَقَالَ: «اِعْمَلُوا ؛ فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ ... » وذكَر تَمَامَ الحديث . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৫২। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমরা এক জানাযার সাথে বাক্বীউল গারক্বাদ (কবর স্থানে) ছিলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বসলেন এবং আমরাও তাঁর আশপাশে বসে গেলাম। তাঁর সাথে একটি ছড়ি ছিল, তিনি মাথা নীচু করে তা দিয়ে (চিন্তাগ্রস্তের মত) মাটিতে আঁক কাটতে লাগলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের প্রত্যেকের জাহান্নামে ও জান্নাতে ঠিকানা লিখে দেওয়া হয়েছে।’’ সাহাবীরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাহলে আমরা কি আমাদের (ভাগ্য) লিপির উপর ভরসা করব না?’ তিনি বললেন, ‘‘(না, বরং) তোমরা কর্ম করতে থাক। কেননা, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য সে কাজ সহজ হয়, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
161- بَابُ الدُّعَاءِ لِلْمَيِّتِ بَعْدَ دَفْنِهِ وَالْقُعُوْدِ عِنْدَ قَبْرِهِ سَاعَةً
لِلدُّعَاءِ لَهُ وَالْاِسْتِغْفَارِ وَالْقِرَاءَةِ
পরিচ্ছেদ - ১৬১: মৃতের জন্য তাকে দাফন করার পর দো‘আ এবং তার জন্য দো‘আ, ইস্তিগফার ও কুরআন পাঠের জন্য তার কবরের নিকট কিছুক্ষণ বসে থাকা প্রসঙ্গে
1/953 وَعَنْ أَبي عَمرٍو - وَقِيلَ: أَبُو عَبدِ اللهِ، وَقِيلَ: أَبُو لَيلَى - عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا فُرِغَ مِن دَفْنِ المَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ، وَقَالَ: « اِسْتَغْفِرُوا ِلأَخِيكُمْ وَسَلُوا لَهُ التَّثْبِيتَ، فَإِنَّهُ الآنَ يُسألُ ». رواه أَبُو داود
১/৯৫৩। আবূ ‘আমর মতান্তরে আবূ আব্দুল্লাহ বা আবূ লাইলা উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতকে সমাধিস্থ করার পর তার নিকট দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘‘তোমরা তোমাদের ভাইদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তার জন্য স্থিরতার দো‘আ কর। কেননা, এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে।’’ (আবূ দাঊদ)
২/৯৫৪। ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ‘তোমরা যখন আমাকে সমাধিস্থ করবে, তখন আমার কবরের আশ-পাশে তোমরা ততক্ষণ অবস্থান করবে, যতক্ষণ একটা উট যবেহ করে তার মাংস বণ্টন করতে লাগে। যেন আমি তোমাদের পেয়ে নিঃসঙ্গতা বোধ না করি এবং জেনে নিই যে, আমি আমার প্রভুর দূতগণকে কী জবাব দিচ্ছি।’ (মুসলিম)
এ বর্ণনাটি পূর্বে ৭১৬ নম্বরে বিস্তারিতভাবে গত হয়ে গেছে।
ইমাম শাফেয়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কবরের নিকট কুরআনের কিছু অংশ পড়া উত্তম। যদি তার নিকট কুরআন খতম করে, তবে তা উত্তম হবে।
162- بَابُ الصَّدَقَةِ عَنْ الْمَيِّتِ وَالدُّعَاءِ لَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৬২: মৃতের পক্ষ থেকে সাদকাহ এবং তার জন্য দো‘আ করা
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ وَلَا تَجۡعَلۡ فِي قُلُوبِنَا غِلّٗا لِّلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَآ إِنَّكَ رَءُوفٞ رَّحِيمٌ ١٠ ﴾ [الحشر: ١٠]
অর্থাৎ যারা তাদের পর আগমন করে তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং ঈমানে অগ্রগামী আমাদের ভ্রাতৃগণকে ক্ষমা করে দেন।’ (সূরা হাশ্র ১০)
1/955 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ ﷺ: إِنَّ أُمِّي افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا وَأُرَاهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ، فَهَلْ لَهَا أجْرٌ إنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا ؟ قَالَ: « نَعَمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু‘আনহা হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, ‘আমার মা হঠাৎ মারা গেছে। আমার ধারণা যে, সে কথা বলার সুযোগ পেলে সাদকাহ করত। সুতরাং আমি যদি তার পক্ষ থেকে সাদকাহ করি, তাহলে কি সে নেকী পাবে?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/956 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا مَاتَ الإنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ». رواه مسلم
২/৯৫৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন কোন মানুষ মারা যায়, তখন তার কর্ম বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিস নয়; (১) সাদকা জারিয়াহ, (২) যে বিদ্যা দ্বারা উপকার পাওয়া যায় অথবা (৩) সৎ সন্তান যে তার জন্য দো‘আ করে।’’ (মুসলিম)
163 - بَابُ ثَنَاءِ النَّاسِ عَلَى الْمَيِّتِ
পরিচ্ছেদ - ১৬৩: মৃত ব্যক্তির জন্য মানুষের প্রশংসার মাহাত্ম্য
1/957 عَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَرُّوا بِجَنَازَةٍ، فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْراً، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « وَجَبَتْ » ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى، فَأثْنَوْا عَلَيْهَا شَرّاً، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « وَجَبَتْ »، فَقَالَ عُمَرُ بنُ الخَطَّابِ رضي الله عنه: مَا وَجَبَت ؟ فَقَالَ: « هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْراً، فَوَجَبتْ لَهُ الجَنَّةُ، وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرّاً، فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللهِ فِي الأَرضِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৫৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিছু লোক একটা জানাযা নিয়ে পার হয়ে গেল। লোকেরা তার প্রশংসা করতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘অবধারিত হয়ে গেল।’’ অতঃপর দ্বিতীয় আর একটি জানাযা নিয়ে পার হলে লোকেরা তার দুর্নাম করতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘অবধারিত হয়ে গেল।’’ উমার ইবন খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘কী অবধারিত হয়ে গেল?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা যে এর প্রশংসা করলে তার জন্য জান্নাত, আর ওর দুর্নাম করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে গেল। তোমরা হলে পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/958 وَعَنْ أَبي الأَسْوَدِ، قَالَ: قَدِمْتُ المَدِينَةَ، فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ بنِ الخَطَّاب رضي الله عنه فَمَرَّتْ بِهمْ جَنَازَةٌ، فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْراً، فَقَالَ عُمَرُ: وَجَبَتْ، ثُمَّ مُرَّ بَأُخْرَى فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْراً، فَقَالَ عُمَرُ: وَجَبَتْ، ثُمَّ مُرَّ بِالثَّالِثَةِ، فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا شَرّاً، فَقَالَ عُمَرُ: وَجَبَتْ، قَالَ أَبُو الأَسوَدِ: فَقُلتُ: وَمَا وَجَبَتْ يَا أَمْيرَ المُؤمِنِينَ ؟ قَالَ: قُلْتُ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « أيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَهُ أرْبَعَةٌ بِخَيرٍ، أَدْخَلَهُ اللهُ الجَنَّةَ » فَقُلْنَا: وَثَلاثَةٌ ؟ قَالَ: «
২/৯৫৮। আবূল আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি মদীনায় এসে উমার ইবনে খাত্ত্বাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট বসলাম। অতঃপর তাঁদের পাশ দিয়ে একটি জানাযা পার হলে তার প্রশংসা করা হল। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ওয়াজেব (অনিবার্য) হয়ে গেল।’ অতঃপর আর একটা জানাযা পার হলে তারও প্রশংসা করা হলে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ওয়াজেব হয়ে গেল।’ অতঃপর তৃতীয় একটা জানাযা পার হলে তার নিন্দা করা হলে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ওয়াজেব হয়ে গেল।’ আবুল আসওয়াদ বলেন, আমি বললাম, ‘কী ওয়াজেব হয়ে গেল? হে আমীরুল মু’মিনীন!’ তিনি বললেন, ‘আমি বললাম, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, ‘‘যে মুসলিমের নেক হওয়ার ব্যাপারে চারজন লোক সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’’ আমরা বললাম, ‘আর তিনজন?’ তিনি বললেন, ‘‘তিনজন হলেও।’’ আমরা বললাম, ‘আর দু’জন?’ তিনি বললেন, ‘‘দু’জন হলেও।’’ অতঃপর আমরা এক জনের (সাক্ষ্য) সম্পর্কে আর জিজ্ঞাসা করলাম না। (বুখারী)
164- بَابُ فَضْلِ مَنْ مَاتَ وَلَهُ أَوْلَادٌ صِغَارٌ
পরিচ্ছেদ - ১৬৪: যার নাবালক সন্তান-সন্ততি মারা যাবে তার ফযীলত
1/959 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَمُوتُ لَهُ ثَلاَثَةٌ لَمْ يَبْلُغُوا الحِنْثَ إِلاَّ أَدْخَلَهُ اللهُ الجَنَّةَ بِفَضْلِ رَحْمَتِهِ إيَّاهُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৫৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে কোন মুসলিমের তিনটি নাবালক সন্তান মারা যাবে, তাকে আল্লাহ তাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের বরকতে জান্নাত দেবেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/960 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ يَمُوتُ لأَحَدٍ مِنَ المُسْلِمينَ ثَلاَثَةٌ مِنَ الوَلَدِ لاَ تَمسُّهُ النَّارُ إِلاَّ تَحِلَّةَ القَسَمِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৯৬০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে কোন মুসলিমের তিনটি (নাবালক) সন্তান মারা যাবে, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। কিন্তু (আল্লাহ) তাঁর কসম পূরা করার জন্য (তাদেরকে জাহান্নামের উপর পার করাবেন)।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
আল্লাহর কসম পুরা করার ব্যাপারে তিনি বলেছেন,
﴿ وَإِن مِّنكُمۡ إِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلَىٰ رَبِّكَ حَتۡمٗا مَّقۡضِيّٗا ٧١ ﴾ [مريم: ٧١]
অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকেই তাতে প্রবেশ করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত। (সূরা মারয়্যাম ৭১ আয়াত)
আর মু’মিনদের প্রত্যেকের জাহান্নামে প্রবেশ করার অর্থ জাহান্নামের উপর স্থাপিত পুলসিরাত পার হওয়া। আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। (আমীন।)
3/961 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَتِ امْرأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، ذَهبَ الرِّجَالُ بِحَدِيثِكَ، فَاجْعَلْ لَنَا مِنْ نَفْسِكَ يَوْماً نَأْتِيكَ فِيهِ تُعَلِّمُنَا مِمَّا عَلَّمَكَ اللهُ، قَالَ: «اجْتَمِعْنَ يَوْمَ كَذَا وَكَذَا » فَاجْتَمَعْنَ، فَأَتَاهُنَّ النَّبِيُّ ﷺ فَعَلَّمَهُنَّ مِمَّا عَلَّمَهُ اللهُ، ثُمَّ قَالَ: « مَا مِنْكُنَّ مِنِ امْرَأَةٍ تُقَدِّمُ ثَلاَثَةً مِنَ الوَلَدِ إِلاَّ كَانُوا لَهَا حِجَاباً مِنَ النَّارِ ». فقَالَتْ امْرَأَةٌ: وَاثْنَينِ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « وَاثْنَيْنِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/৯৬১। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! কেবলমাত্র পুরুষেরাই আপনার হাদীস শোনার সৌভাগ্য লাভ করছে। সুতরাং আপনি আমাদের জন্যও একটি দিন নির্ধারিত করুন। আমরা সে দিন আপনার নিকট আসব, আপনি আমাদেরকে তা শিক্ষা দেবেন, যা আল্লাহ আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘‘তোমরা অমুক অমুক দিন একত্রিত হও।’’ অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট এসে সে শিক্ষা দিলেন, যা আল্লাহ তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তারপর তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে কোন মহিলার তিনটি সন্তান মারা যাবে, তারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড় হয়ে যাবে।’’ এক মহিলা বলল, ‘আর দু’টি সন্তান মারা গেলে?’ তিনি বললেন, ‘‘দু’টি মারা গেলেও (তাই হবে)।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
165- بَابُ الْبُكَاءِ وَالْخَوْفِ عِنْدَ الْمُرُوْرِ بِقُبُوْرِ الظَّالِمِيْنَ
وَمَصَارِعِهِمْ وَإِظْهَارِ الْاِفْتِقَارِ إِلَى اللهِ تَعَالٰى وَالتَّحْذِيْرِ مِنَ الْغَفْلَةِ عَنْ ذٰلِكَ
পরিচ্ছেদ - ১৬৫: অত্যাচারীদের সমাধি এবং তাদের ধ্বংস-স্থানের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় কান্না করা, ভীত হওয়া, আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং এ থেকে গাফেল না থাকা প্রসঙ্গে
1/962 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ لأَصْحَابِهِ - يَعْنِي لَمَّا وَصَلُوا الحِجْرَ - دِيَارَ ثَمُودَ -: « لاَ تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلاَءِ المُعَذَّبِينَ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ، فَإنْ لَمْ تَكُونُوا بَاكِينَ، فَلاَ تَدْخُلُوا عَلَيْهِمْ، لاَ يُصِيبُكُمْ مَا أصَابَهُمْ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وفي روايةٍ قَالَ: لَمَّا مَرَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِالحِجْرِ، قَالَ: « لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ، أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ، إِلاَّ أنْ تَكُونُوا بَاكِينَ ». ثُمَّ قَنَّعَ رَسُولُ اللهِ ﷺ رَأسَهُ وأسْرَعَ السَّيْرَ حَتَّى أَجَازَ الوَادِي .
১/৯৬২। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সামূদ জাতির বাসস্থান হিজ্র (নামক) স্থানে পৌঁছে নিজ সাহাবীদেরকে বললেন, ‘‘তোমরা এ সকল শাস্তিপ্রাপ্তদের স্থানে প্রবেশ করলে কাঁদতে কাঁদতে (প্রবেশ) কর। যদি না কাঁদ, তাহলে তাদের স্থানে প্রবেশ করো না। যেন তাদের মত তোমাদের উপরেও শাস্তি না পৌঁছে যায়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজ্র অতিক্রম করার সময় বললেন, ‘‘তোমরা সেই লোকদের বাসস্থানে প্রবেশ করো না, যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অত্যাচার করেছে। যেন তাদের মত তোমাদের উপরেও আযাব না পৌঁছে। কিন্তু কান্নারত অবস্থায় প্রবেশ করতে পার।’’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ মাথা ঢেকে নিলেন এবং দ্রুত গতিতে উপত্যকা পার হয়ে গেলেন।
كِتَابُ آدَابِ السَّفَرِ
অধ্যায় (৭): সফরের আদব-কায়দা
166- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْخُرُوْجِ يَوْمَ الْخَمِيْسِ أَوَّلَ النَّهَارِ
পরিচ্ছেদ - ১৬৬: বৃহস্পতিবার সকালে সফরে বের হওয়া উত্তম
1/963 عَنْ كَعبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ خَرَجَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ يَوْمَ الخَمِيسِ، وَكَانَ يُحِبُّ أَنْ يَخْرُجَ يَوْمَ الْخَميسِ . متفقٌ عَلَيْهِ.
وفي رواية في الصحيحين: لَقَلَّمَا كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَخْرُجُ إِلاَّ فِي يَوْمِ الخَمِيسِ.
১/৯৬৩। কা‘ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবার বের হলেন। আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বের হওয়া পছন্দ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)
বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্য দিনে কমই সফরে বের হতেন।
(প্রকাশ থাকে যে, বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়ার কথা মুসলিম শরীফে নেই।)
2/964 وَعَنْ صَخرِ بنِ وَدَاعَةَ الغَامِدِيِّ الصَّحَابِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: «اَللهم بَارِكْ ِلأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا». وَكَانَ إِذَا بَعَثَ سَرِيَّةً أَوْ جَيْشَاً بَعَثَهُمْ مِنْ أوَّلِ النَّهَارِ . وَكَانَ صَخْرٌ تَاجِراً، وَكَانَ يَبْعَثُ تِجَارَتَهُ أوَّلَ النَّهَار، فَأَثْرَى وَكَثُرَ مَالُهُ. رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ:«حديث حسن»
২/৯৬৪। স্বাখর ইবনে অদা‘আহ গামেদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও।’’ আর তিনি যখন সেনার ছোট বাহিনী অথবা বড় বাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদেরকে সকালে রওয়ানা করতেন। স্বাখর ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরণ করতেন। ফলে তিনি (এর বরকতে) ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান)
167- بَابُ اِسْتِحْبَابِ طَلَبِ الرُّفْقَةِ وَتَأْمِيْرِهِمْ عَلٰى أَنْفُسِهِمْ وَاحِدًا يُطِيْعُوْنَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৬৭: সফরের জন্য সাথী খোঁজ করা এবং কোন একজনকে আমীর (দলপতি) নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা শ্রেয়
1/965 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لَوْ أَنَّ النَّاسَ يَعْلَمُونَ مِنَ الوحدَةِ مَا أعْلَمُ، مَا سَارَ رَاكبٌ بِلَيْلٍ وَحْدَهُ ! ». رواه البخاري
১/৯৬৫। ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ার একাকী সফর করত না।’’ (বুখারী)
2/966 وَعَنْ عَمرِو بنِ شُعَيْبٍ، عَن أَبِيهِ، عَن جَدِّهِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «الرَّاكِبُ شَيْطَانٌ، وَالرَّاكِبَانِ شَيْطَانَانِ، وَالثَّلاَثَةُ رَكْبٌ ». رواه أَبُو داود والترمذي والنسائي بأسانيد صحيحةٍ، وَقَالَ الترمذي: «حديث حسن »
২/৯৬৬। ‘আমর ইবনে শু‘আইব তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হতে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘একজন (সফরকারী) আরোহী একটি শয়তান এবং দু’জন আরোহী দু’টি শয়তান। আর তিনজন আরোহী একটি কাফেলা।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ বিশুদ্ধসূত্রে)
3/967 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ وأَبِي هُرَيرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنهُمَا، قَالاَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إِذَا خَرَجَ ثَلاَثَةٌ في سَفَرٍ فَليُؤَمِّرُوا أحَدَهُمْ ». حديث حسن، رواه أَبُو داود بإسنادٍ حسن
৩/৯৬৭। আবূ সা‘ঈদ ও আবূ হুরাইরা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।’’ (আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে)
4/968 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ، قَالَ: « خَيْرُ الصَّحَابَةِ أرْبَعَةٌ، وَخَيْرُ السَّرَايَا أرْبَعُمِئَةٍ، وَخَيْرُ الجُيُوشِ أرْبَعَةُ آلاَفٍ، وَلَنْ يُغْلَبَ اثْنَا عَشَرَ ألْفاً مِنْ قِلةٍ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: «حديث حسن »
৪/৯৬৮। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সর্বোত্তম সঙ্গী হল চারজন, সর্বোত্তম ছোট সেনাবাহিনী হল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবাহিনী হল চার হাজার জন। আর বারো হাজার সৈন্য স্বল্পতার কারণে কখনো পরাজিত হবে না।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী, হাসান)
168- بَابُ آدَابِ السَّيْرِ وَالنُّزُوْلِ وَالْمَبِيْتِ فِي السَّفَرِ وَالنَّوْمِ فِي السَّفَرِ وَاِسْتِحْبَابِ السُّرٰى وَالرِّفْقِ بِالدَّوَابِّ وَمُرَاعَاةِ مَصْلَحَتِهَا وَأَمْرِ مَنْ قَصَّرَ فِيْ حَقِّهَا بِالْقِيَامِ بِحَقِّهَا وَجَوَازِ الْإِرْدَافِ عَلَى الدَّابَّةِ إِذَا كَانَتْ تُطِيْقُ ذٰلِكَ
পরিচ্ছেদ - ১৬৮: সফরে চলা, বিশ্রাম নিতে অবতরণ করা, রাত কাটানো এবং সফরে ঘুমানোর আদব-কায়দা। রাতে পথচলা মুস্তাহাব, সওয়ারী পশুদের প্রতি নম্রতা প্রদর্শন করা এবং তাদের বিশ্রামের খেয়াল রাখা। যে তাদের অধিকারের ব্যাপারে ত্রুটি করে তাকে তাদের অধিকার আদায়ের নির্দেশ দেওয়া। সওয়ারী সমর্থ হলে আরোহীর নিজের পিছনে অন্য কাউকে বসানো বৈধ।
1/969 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: «إِذَا سَافَرْتُمْ فِي الخِصْبِ، فَأَعْطُوا الإبلَ حَظَّهَا مِنَ الأَرْضِ، وَإِذَا سَافَرْتُمْ فِي الجَدْبِ، فَأَسْرِعُوا عَلَيْهَا السَّيْرَ، وَبَادِرُوا بِهَا نِقْيَهَا، وَإِذَا عَرَّسْتُمْ، فَاجْتَنِبُوا الطَّرِيقَ ؛ فَإنَّهَا طُرُقُ الدَّوَابِّ، وَمَأوَى الهَوَامِّ بِاللَّيْلِ ». رواه مسلم
১/৯৬৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ভরা যমীনে সফর করবে, তখন উটকে তার যমীনের অংশ দাও (অর্থাৎ কিছুক্ষণ চরতে দাও)। আর যখন তোমরা ঘাস-পানিবিহীন যমীনে সফর করবে, তখন তার উপর চড়ে দ্রুত চলো এবং তার শক্তি শেষ হওয়ার পূর্বেই গন্তব্যস্থানে পৌঁছে যাও। আর যখন তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোন স্থানে অবতরণ করবে, তখন আম রাস্তা থেকে দূরে থাকো। কারণ, তা রাতে (হিংস্র) জন্তুদের রাস্তা এবং (বিষাক্ত) পোকামাকড়ের আশ্রয় স্থল।’’ (মুসলিম)
2/970 وَعَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا كَانَ فِي سَفَرٍ، فَعَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلَى يَمِينهِ، وَإِذَا عَرَّسَ قُبَيلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهُ، وَوَضَعَ رَأسَهُ عَلَى كَفِّهِ . رواه مسلم
২/৯৭০। আবূ ক্বাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে থাকতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য কোথাও অবতরণ করতেন, তখন তিনি ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন। আর তিনি ফজরের কিছুক্ষণ পূর্বে বিশ্রাম নিলে তার হাতটা খাড়া করে হাতের চেটোর উপর মাথা রেখে আরাম করতেন।’ (মুসলিম)
আলেমগণ বলেন, ‘তিনি হাত খাড়া রেখে আরাম করতেন, যাতে গভীর নিদ্রা এসে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত অথবা প্রথম ওয়াক্ত ছুটে না যায়।’
3/971 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « عَلَيْكُمْ بِالدُّلْجَةِ، فَإنَّ الأرْضَ تُطْوَى بِاللَّيْلِ ». رواه أَبُو داود بإسناد حسن
৩/৯৭১। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা রাতে সফর কর। কেননা, রাতে যমীনকে গুটিয়ে দেওয়া হয়।’’ (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে) (অর্থাৎ রাস্তা কম মনে হয়।)
4/972 وَعَنْ أَبي ثَعْلَبَةَ الخُشَنِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّاسُ إِذَا نَزَلُوا مَنْزِلاً تَفَرَّقُوا فِي الشِّعَابِ وَالأوْدِيَةِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « إنَّ تَفَرُّقَكُمْ فِي هَذِهِ الشِّعَابِ وَالأَوْدِيَةِ إِنَّمَا ذَلِكُمْ مِنَ الشَّيْطَانِ!» فَلَمْ يَنْزِلُوا بَعْدَ ذَلِكَ مَنْزِلاً إِلاَّ انْضَمَّ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ. رواه أَبُو داود بإسناد حسن
৪/৯৭২। আবূ সা‘লাবা খুশানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, লোকেরা যখন কোন স্থানে অবতরণ করতেন, তখন তাঁরা গিরিপথ ও উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ।’’ এরপর তাঁরা যখনই কোন মঞ্জিলে অবতরণ করতেন, তখন একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন। (আবূ দাউদ)
5/973 وَعَنْ سَهلِ بنِ عَمرٍو وَقِيلَ: سَهلِ بنِ الرَّبِيعِ بنِ عَمرٍو الأَنصَارِي المَعرُوفِ بِابنِ الحَنظَلِيَّةِ، وَهُوَ مِن أَهلِ بَيعَةِ الرِّضْوَانِ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِبَعِيرٍ قَدْ لَحِقَ ظَهْرُهُ بِبَطْنِهِ، فَقَالَ: «اِتَّقُوا اللهَ فِي هَذِهِ البَهَائِمِ المُعجَمَةِ، فَارْكَبُوهَا صَالِحَةً، وَكُلُوهَا صَالِحَةً». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৫/৯৭৩। সাহল ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মতান্তরে সাহল ইবনে রাবী ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনসারী --যিনি ইবনুল হানযালিয়্যাহ নামে প্রসিদ্ধ এবং ইনি বায়আতে রিযওয়ানে অংশ গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন---তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটা উটের পাশ দিয়ে গেলেন, যার পিঠটা (দুর্বলতার কারণে) পেটের সাথে লেগে গিয়েছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, ‘‘তোমরা এ সব অবলা জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুতরাং তোমরা তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় আরোহণ কর এবং তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় মাংস খাও।’’ (আবু দাঊদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
6/974 وَعَنْ أَبي جَعفَرٍ عَبدِ اللهِ بنِ جَعفَرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: أَردَفَنِي رَسُولُ اللهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ خَلْفَهُ، وَأسَرَّ إليَّ حَدِيثاً لاَ أُحَدِّثُ بِهِ أحَداً مِنَ النَّاسِ، وَكَانَ أحَبَّ مَا اسْتَتَرَ بِهِ رَسُولُ اللهِ ﷺ لِحاجَتِهِ هَدَفٌ أَوْ حَائِشُ نَخْلٍ . يَعنِي: حَائِطَ نَخْلٍ . رواه مسلم هكَذَا مُختصراً .
وزادَ فِيهِ البَرْقَانِي بِإِسنَادِ مُسلِمٍ - بَعدَ قَوْلِهِ: حَائِشُ نَخْلٍ - فَدَخَلَ حَائِطاً لِرَجُلٍ مِنَ الأنْصَارِ، فَإِذَا فِيهِ جَمَلٌ، فَلَمَّا رَأَى رَسُولُ اللهِ ﷺ جَرْجَرَ وَذَرَفَتْ عَيْنَاهُ، فَأَتَاهُ النَّبِيُّ ﷺ فَمَسَحَ سَرَاتَهُ - أيْ: سِنَامَهُ - وَذِفْرَاهُ فَسَكَنَ، فَقَالَ: « مَنْ رَبُّ هَذَا الجَمَلِ ؟ لِمَنْ هَذَا الجَمَلُ ؟ » فَجَاءَ فَتَىً مِنَ الأنْصَارِ، فَقَالَ: هَذَا لِي يَا رَسُولَ اللهِ . قَالَ: « أَفَلاَ تَتَّقِي اللهَ فِي هَذِهِ البَهِيمَةِ الَّتِي مَلَّكَكَ اللهُ إيَّاهَا ؟ فَإنَّهُ يَشْكُو إلَيَّ أنَّكَ تُجِيعُهُ وتُدْئِبُهُ ». رواه أَبُو داود كرواية البرقاني .
৬/৯৭৪। আবূ জা‘ফর আব্দুল্লাহ ইবনে জা‘ফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে সওয়ারীর উপর তাঁর পিছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বললেন, যা আমি কাউকে বলব না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঁচু জায়গা (দেওয়াল, ঢিবি ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মল-মূত্র ত্যাগ করা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন।’ (ইমাম মুসলিম এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন)
বারক্বানী এতে মুসলিমের সূত্রে বর্ধিত আকারে ‘খেজুরের বাগান’ শব্দের পর বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারীর বাগানে প্রবেশ করে সেখানে একটা উট দেখতে পেলেন। উটটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে এসে তার কুঁজে এবং কানের পিছনের অংশে হাত ফিরালেন, ফলে সে শান্ত হল। তারপর তিনি বললেন, ‘‘এই উটের মালিক কে? এই উটটা কার?’’ অতঃপর আনসারদের এক যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি কি এই পশুটার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? কারণ, সে আমার নিকট অভিযোগ করছে যে, তুমি তাকে ক্ষুধায় রাখ এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত করে ফেলো!’’ (আবু দাঊদ)
7/975 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا إِذَا نَزَلْنَا مَنْزِلاً، لاَ نُسَبِّحُ حَتَّى نَحُلَّ الرِّحَالَ . رواه أَبُو داود بإسناد عَلَى شرط مسلم
৭/৯৭৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘আমরা যখন (সফরে) কোন মঞ্জিলে অবতরণ করতাম, তখন সওয়ারীর পালান নামাবার পূর্বে নফল নামায পড়তাম না।’ (আবূ দাঊদ, মুসলিমের শর্তে)
অর্থাৎ আমরা নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও সওয়ারীর পিঠ থেকে পালান নামিয়ে তাকে আরাম না দেওয়ার আগে নামায পড়তে শুরু করতাম না।
169- بَابُ إِعَانَةِ الرَّفِيْقِ
পরিচ্ছেদ - ১৬৯: সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা প্রসঙ্গে
অপরকে সাহায্য করার বিষয়ে অনেক হাদীস পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন; যতক্ষণ বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।’ ‘প্রত্যেক ভাল কাজ সাদকাহ সবরূপ।’ ইত্যাদি।
1/976 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي سَفَرٍ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ عَلَى رَاحِلَةٍ لَهُ، فَجَعَلَ يَصْرِفُ بَصَرَهُ يَمِيناً وَشِمَالاً، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ ظَهْرَ لَهُ، وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلُ زَادٍ فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لاَ زَادَ لَهُ »، فَذَكَرَ مِنْ أصْنَافِ المَالِ مَا ذَكَرَهُ، حَتَّى رَأيْنَا، أنَّهُ لاَ حَقَّ لأَحَدٍ مِنَّا فِي فَضْلٍ . رواه مسلم
১/৯৭৬। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমরা সফরে ছিলাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তার সওয়ারীর উপর চড়ে এল। অতঃপর তার দৃষ্টি ডানে ও বামে ফেরাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যার বাড়তি সওয়ারী আছে, সে যেন তা তাকে দেয় যার সওয়ারী নেই এবং যার অতিরিক্ত সফরের সম্বল রয়েছে, সে যেন সম্বলহীন ব্যক্তিকে দেয়।’’ অতঃপর তিনি আরো কয়েক প্রকার মালের কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা ধারণা করলাম যে, বাড়তি মালে আমাদের কারোর কোন অধিকারই নেই। (মুসলিম)
2/977 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، عَن رَسُولِ اللهِ ﷺ: أنَّهُ أَرَادَ أَنْ يَغْزُوَ، فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ المُهَاجِرِينَ وَالأَنْصَارِ، إِنَّ مِنْ إخْوَانِكُمْ قَوْماً لَيْسَ لَهُمْ مَالٌ، وَلاَ عَشِيرةٌ، فَلْيَضُمَّ أحَدُكُمْ إِلَيْهِ الرَّجُلَيْنِ أَو الثَّلاَثَةَ، فَمَا لأَحَدِنَا مِنْ ظَهْرٍ يَحْمِلُهُ إِلاَّ عُقْبةٌ كَعُقْبَةِ » يَعْني أحَدهِمْ، قَالَ: فَضَمَمْتُ إلَيَّ اثْنَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً مَا لِي إِلاَّ عُقْبَةٌ كَعُقبَةِ أحَدِهِمْ مِنْ جَمَلِي . رواه أَبُو داود
২/৯৭৭। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে মুহাজির ও আনসারের দল! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যাদের কোন মাল নেই, স্বগোত্রীয় লোকও নেই। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন দুই অথবা তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে নেয়। কারণ, আমাদের কারো এমন কোন সওয়ারী নেই, যা তাদের সাথে পালাক্রমে ছাড়া তাকে বহন করতে পারে।’’ জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সুতরাং আমি দু’জন অথবা তিনজনকে সাথে নিলাম। অন্যান্যদের মত আমার উটেও তাদের সাথে পালাক্রমে চড়তাম। (আবূ দাঊদ)
3/978 وَعَنْه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ يَتَخَلَّفُ فِي المَسِيرِ، فَيُزْجِي الضَّعِيفَ، وَيُرْدِفُ وَيَدْعُو لَهُ . رواه أَبُو داود بإسناد حسن
৩/৯৭৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে (সকলের) পিছনে চলতেন। তিনি দুর্বলকে চলতে সাহায্য করতেন এবং তাকে পিছনে বসিয়ে নিতেন ও তার জন্য দো‘আ করতেন। (আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে)
170- بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا رَكِبَ الدَّابَّةَ لِلسَّفَرِ
পরিচ্ছেদ - ১৭০: কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দো‘আ
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَجَعَلَ لَكُم مِّنَ ٱلۡفُلۡكِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ مَا تَرۡكَبُونَ ١٢ لِتَسۡتَوُۥاْ عَلَىٰ ظُهُورِهِۦ ثُمَّ تَذۡكُرُواْ نِعۡمَةَ رَبِّكُمۡ إِذَا ٱسۡتَوَيۡتُمۡ عَلَيۡهِ وَتَقُولُواْ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ ١٣ وَإِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ ١٤﴾ [الزخرف: ١٢، ١٤]
অর্থাৎ “যিনি সব কিছুর যুগলসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তুকে তোমাদের যানবাহনে পরিণত করেছেন। যাতে তোমরা ওদের পিঠে স্থিরভাবে বসে তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ করতে পার, পবিত্র মহান তিনিই যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন; যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী।” (সূরা যুখরুফ ১২-১৪ আয়াত)
1/979 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا اسْتَوَى عَلَى بَعِيرِهِ خَارِجاً إِلَى سَفَرٍ، كَبَّرَ ثَلاثاً، ثُمَّ قَالَ: « سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلبُونَ . اَللّهُمَّ إِنَّا نَسأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا البِرَّ وَالتَّقوَى، وَمِنَ العَمَلِ مَا تَرضَى، اَللهم هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ . اَللهم أنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالخَلِيفَةُ فِي الأَهْلِ . اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ المَنْظَرِ، وَسُوءِ المُنْقَلَبِ فِي الماَلِ وَالأَهْلِ وَالوَلَدِ » وَإِذَا رَجَعَ قَالَهُنَّ وَزَادَ فِيهِنَّ: « آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ ». رواه مسلم
১/৯৭৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে বেরিয়ে উটের পিঠে স্থির হয়ে বসতেন, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এই দো‘আ পড়তেন,
‘সুবহানাল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফী সাফারিনা হা-যাল বির্রা অত্তাক্বওয়া, অমিনাল আমালি মা তারদ্বা। আল্লাহুম্মা হাওওয়িন ‘আলাইনা সাফারানা হা-যা অত্বওয়ি ‘আন্না বু‘দাহ। আল্লাহুম্মা আন্তাস সা-হিবু ফিস সাফারি অলখালীফাতু ফিল আহল। আল্লাহুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিন অ‘সাইস সাফার, অকাআবাতিল মানযার, অসূইল মুনক্কালাবি ফিল মা-লি অল আহলি অল অলাদ।’
অর্থাৎ পবিত্র ও মহান যিনি একে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। ওগো আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের এই যাত্রায় পুণ্যকর্ম, সংযমশীলতা এবং তোমার সন্তোষজনক কার্যকলাপ। হে আল্লাহ! আমাদের এ যাত্রাকে আমাদের জন্য সহজ করে দাও। আমাদের থেকে ওর দূরত্ব গুটিয়ে নাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সঙ্গী। আর পরিবার পরিজনের জন্য (আমাদের) প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে, ভয়ংকর দৃশ্য থেকে এবং বাড়ি ফিরে ধন-সম্পদ, পরিবার ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে কোন অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর বাড়ি ফিরার সময় উক্ত দো‘আর সাথে এগুলিও পড়তেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা ‘আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন।’ (মুসলিম)
2/980 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ سَرجِسَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ ﷺ إِذَا سَافَرَ يَتَعَوَّذُ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَآبَةِ المُنْقَلَبِ، وَالْحَوْرِ بَعْدَ الكَوْنِ، وَدَعْوَةِ المَظْلُومِ، وَسُوءِ المَنْظَرِ في الأَهْلِ وَالمَالِ . رواه مسلم
২/৯৮০। আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ-দো‘আ থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (মুসলিম)
الحَور بعد الكون এভাবেই সহীহ মুসলিমে আছে (الكون এ নূন দিয়ে)। ইমাম তিরমিযী ও নাসাঈও ঐভাবে বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী বলেন, الكور (এ নূনের পরিবর্তে) ‘রা’ বর্ণ সহকারে বর্ণনা করা হয়। আর উভয় বর্ণনাই সঠিক।
আলেমগণ এ দুয়েরই অর্থ বলেছেন যে, ভালো হওয়ার পর খারাপ হওয়া কিংবা বেশি হওয়ার পর কম হওয়া। তাঁরা বলেন, كور শব্দটি تكرير العمامة (অর্থাৎ পাগড়ী পেঁচানো) থেকে গৃহীত। অর্থাৎ মাথায় পাগড়ী জড়ানো বা গুটানো। আর كون শব্দটি كان يكون كوناً থেকে গৃহীত। তার মানে হচ্ছে অস্তিত্বে আসা, স্থির হওয়া।
3/981 وَعَنْ عَلِيِّ بنِ رَبِيعَةَ، قَالَ: شَهِدتُّ عَلِيَّ بنَ أَبِي طَالِبٍ رضي الله عنه، أُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا، فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ، قَالَ: بِسْمِ اللهِ، فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا، قَالَ: الحَمْدُ ِللهِ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنينَ، وَإنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ، ثُمَّ قَالَ: اَلحمْدُ للهِ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: اَللهُ أكْبَرُ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ: سُبْحَانَكَ إنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ، ثُمَّ ضَحِكَ، فَقِيلَ: يَا أَمِيرَ المُؤمِنِينَ، مِنْ أيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ ؟ قَالَ: رَأيتُ النبيَّ ﷺ فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ ثُمَّ ضَحِكَ، فقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، مِنْ أيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ ؟ قَالَ: « إنَّ رَبَّكَ تَعَالَى يَعْجَبُ مِنْ عَبدِهِ إِذَا قَالَ: اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، يَعْلَمُ أنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ غَيْرِي ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ:«حديث حسن»، وفي بعض النسخ:«حسن صحيح». وهذا لفظ أَبي داود
৩/৯৮১। আলী ইবনে রাবীআহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবু ত্বালেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-এর নিকট হাজির ছিলাম। যখন তাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন। অতঃপর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজাভাবে বসলেন তখন বললেন, ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখ্খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাবিবনা লামুনক্বালিবূন।’ অতঃপর তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়লেন। অতঃপর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়লেন। অতঃপর পড়লেন, ‘সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফ্সী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত্।’ অতঃপর তিনি হাসলেন। তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তিনি তাই করলেন, যা আমি করলাম। অতঃপর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমার মহান প্রতিপালক তাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে, ‘ইগফিরলী যুনূবী’ (অর্থাৎ আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও।) সে জানে যে, আমি (আল্লাহ) ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করতে পারে না।’’ (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান, কোন কোন কপিতে আছে, ‘হাসান সহীহ’। আর এ শব্দমালা আবূ দাঊদের।)
171- بَابُ تَكْبِيْرِ الْمُسَافِرِ إِذَا صَعِدَ الثَّنَايَا وَشِبْهَهَا
وَتَسْبِيْحِهِ إِذَا هَبَطَ الْأَوْدِيَةَ وَنَحْوَهَا وَالنَّهْيِ عَنِ الْمُبَالَغَةِ بِرَفْعِ الصَّوْتِ بِالتَّكْبِيْرِ وَنَحْوِهِ
পরিচ্ছেদ - ১৭১: উঁচু জায়গায় চড়ার সময় মুসাফির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নীচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। ‘তকবীর’ ইত্যাদি বলার সময় অত্যন্ত উচ্চঃস্বরে বলা নিষেধ
1/982 عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا، وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا. رواه البخاري
১/৯৮২। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। (বুখারী)
2/983 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوا الثَّنَايَا كَبَّرُوا، وَإِذَا هَبَطُوا سَبَّحُوا . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
২/৯৮৩। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় চড়তেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতেন। (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদে)
3/984 وَعَنْه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ إِذَا قَفَلَ مِنَ الحَجِّ أَوِ العُمْرَةِ، كُلَّمَا أَوْفَى عَلَى ثَنِيَّةٍ أَوْ فَدْفَدٍ كَبَّرَ ثَلاثَاً، ثُمَّ قَالَ: « لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، سَاجِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ ». متفقٌ عَلَيْهِ
وفي رواية لمسلم: إِذَا قَفَلَ مِنَ الجيُوشِ أَوِ السَّرَايَا أَو الحَجِّ أَوِ العُمْرَةِ .
৩/৯৮৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজ্জ কিংবা উমরাহ সেরে ফিরে আসতেন, যখনই কোন পাহাড়ী উঁচু জায়গায় অথবা ঢিবিতে চড়তেন তখনই তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। অতঃপর তিনি বলতেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুল্কু অলাহুল হামদু অহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আ-ইয়বূনা তা-ইবূনা সা-জিদূনা লিরাবিবনা হা-মিদূন। সাদাক্বাল্লাহু ওয়া’দাহ, অনাসারা আব্দাহ্, অহাযামাল আহযাবা অহদাহ।’
অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই সার্বভৌম অধিকার, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতগুযার, সাজদাহকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর প্রতিশ্রুতি সত্য প্রমাণিত করেছেন, তাঁর বান্দাহকে মদদ করেছেন এবং একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, যখন তিনি বড় অথবা ছোট অভিযান অথবা হজ্জ বা উমরাহ থেকে ফিরতেন---।
4/985 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنِّي أُرِيدُ أَنْ أُسَافِرَ فَأَوْصِنِي، قَالَ: «عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، وَالتَّكْبِيرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ ». فَلَمَّا وَلَّى الرَّجُلُ، قَالَ: « اَللهم اطْوِ لَهُ البُعْدَ، وَهَوِّنْ عَلَيْهِ السَّفَرَ ». رواه الترمذي، وَقَالَ: «حديث حسن »
৪/৯৮৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ইচ্ছা করেছি, সফরে যাব, আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, ‘‘তুমি আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করো এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে নিয়মিত ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ো।’’ যখন লোকটা পিছন ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি (তার জন্য দো‘আ করে) বললেন, ‘‘আল্লাহুম্মাতওয়ি লাহুল বু‘দা অহাওয়িন আলাইহিস সাফার।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি ওর পথের দূরত্ব গুটিয়ে দিয়ো এবং ওর জন্য সফর আসান করে দিয়ো। (তিরমিযী হাসান)
5/986 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ ﷺ فِي سَفَرٍ، فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا وَارتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ: « يَا أيُّهَا النَّاسُ، اِرْبَعُوا عَلَى أنْفُسِكُمْ، فَإِنَّكُمْ لاَ تَدْعُونَ أَصَمَّ وَلاَ غَائِباً، إنَّهُ مَعَكُمْ، إنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/৯৮৬। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সফরে ছিলাম। আমরা যখন কোন উঁচু উপত্যকায় চড়তাম তখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’ বলতাম। (একদা) আমাদের শব্দ উঁচু হয়ে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘‘হে লোকসকল! তোমরা নিজেদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন কর। কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না। তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
* (মহান আল্লাহ আরশে আছেন। কিন্তু তাঁর জ্ঞান, দৃষ্টি প্রভৃতি সর্বত্র আছে। সুতরাং তাঁকে শোনাবার জন্য এত উচ্চস্বরে তকবীর ইত্যাদি পড়া নিষ্প্রয়োজন।)
172- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الدُّعَاءِ فِي السَّفَرِ
পরিচ্ছেদ - ১৭২: সফরে দো‘আ করা মুস্তাহাব
1/987 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « ثَلاَثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَات لاَ شَكَّ فِيهِنَّ: دَعْوَةُ المَظْلُومِ، وَدَعْوَةُ المُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ ». رواه أَبُو داود والترمذي، وَقَالَ:«حديث حسن » . وليس في رواية أَبي داود: « عَلَى وَلَدِهِ » .
১/৯৮৭। আবূ আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তিন জনের দো‘আ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়ঃ (১) নির্যাতিত ব্যক্তির দো‘আ, (২) মুসাফিরের দো‘আ এবং (৩) ছেলের জন্য মাতা-পিতার বদ-দো‘আ।’’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
আবূ দাউদের বর্ণনায় ‘‘ছেলের জন্য’’ শব্দগুলি নেই। (অর্থাৎ তাতে আছে, ‘‘পিতা-মাতার দো‘আ।’’)
173- بَابُ مَا يَدْعُوْ بِهِ إِذَا خَافَ نَاسًا أَوْ غَيْرَهُمْ
পরিচ্ছেদ - ১৭৩: মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয় পেলে কী দো‘আ পড়বে?
1/988 عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا خَافَ قَوْماً، قَالَ: « اَللهم إنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهِمْ ». رواه أَبُو داود والنسائي بإسنادٍ صحيحٍ
১/৯৮৮। আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দো‘আ পড়তেন, ‘‘আল্লাহুম্মা ইন্না নাজ‘আলুকা ফী নুহূরিহিম অনা‘ঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম।’’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের মুখোমুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, নাসাঈ বিশুদ্ধ সূত্রে)
174- بَابُ مَا يَقُوْلُ إِذَا نَزَلَ مَنْزِلًا
পরিচ্ছেদ - ১৭৪: কোন মঞ্জিলে (বিশ্রাম নিতে) অবতরণ করলে
সেখানে কী দো‘আ পড়বে?
1/989 عَن خَولَةَ بِنتِ حَكِيمٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ، يَقُولُ: « مَنْ نَزَلَ مَنْزِلاً ثُمَّ قَالَ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ حَتَّى يَرْتَحِلَ مِنْ مَنْزِلِهِ ذَلِكَ». رواه مسلم
১/৯৮৯। খাওলা বিনতে হাকীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘‘যে ব্যক্তি (সফরের) কোন মঞ্জিলে নেমে এই দো‘আ পড়বে, ‘আঊযু বিকালিমাতিল্লা-হিত্ তা-ম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’ (অর্থাৎ আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের অসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আমি আশ্রয় চাচ্ছি।) তাহলে সে মঞ্জিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিস তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম)
2/990 وعن ابن عمرو رَضي اللهُ عنهمَا قال: كانَ رسولُ اللهِ ﷺ إذا سَافَرَ فَأَقبَلَ اللَّيْلُ قال: « يَا أَرْضُ ربِّي وَربُّكِ اللهِ، أَعُوذُ بِاللهِ مِنْ شرِّكِ وشَرِّ ما فِيكِ، وشر ماخُلقَ فيكِ، وشَرِّ ما يدِبُّ عليكِ، وأَعوذ باللهِ مِنْ شَرِّ أَسدٍ وَأَسْودٍ، ومِنَ الحيَّةِ والعقربِ، وَمِنْ سَاكِنِ البلَدِ، ومِنْ والِدٍ وما وَلَد » رواه أبو داود.
২/৯৯০। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর করতেন এবং সফরে রাত্রি হয়ে যেতো, তখন তিনি বলতেনঃ (ইয়া আরদু রাব্বী ও রাব্বুকিল্লাহ, আ‘উযু বিল্লাহি মিন শাররিকি ওয়া শাররি মা ফীকি, ওয়া শাররি মা খুলিক্বা ফীকি, ওয়া শাররি মা ইয়াদিববু আলাইকি, আ‘উযু বিল্লাহি মিন শাররি আসাদিন ওয়া আসওয়াদিন ওয়া মিনাল হাইয়্যাতি ওয়াল আক্বরাবি ওয়া মিন সাকিনিল বালাদি ওয়া মিন ওয়ালিদিও ওয়ামা ওয়ালাদ) (হে মাটি! তোমার ও আমার প্রভু হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা। আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোমার অনিষ্ট থেকে, তোমার ভিতরে যা আছে তার অনিষ্ট থেকে তোমার ভিতরে যা সৃষ্টি করা হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা কিছু তোমার উপরে বিচরণ করে তার অনিষ্ট থেকে। আর আমি আল্লাহর নিকট বাঘ ও কাল সাপ হতে এবং সর্ব প্রকারের সাপ, বিচ্ছু হতে আর শহরবাসীদের অনিষ্টকারিতা হতে এবং জম্মদানকারী ও জন্মলাভকারীর অনিষ্টকারিতা হতে আশ্রয় চাই)। (আবূ দাঊদ)
175- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَعْجِيْلِ الْمُسَافِرِ الرُّجُوْعَ إِلٰى أَهْلِهِ إَذَا قَضٰى حَاجَتَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৭৫: প্রয়োজন পূরণ হয়ে গেলে সফর থেকে
অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব
1/991 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « السَّفَرُ قِطْعَةٌ مِنَ العَذَابِ، يَمْنَعُ أحَدَكُمْ طَعَامَهُ وَشَرابَهُ وَنَوْمَهُ، فَإذَا قَضَى أحَدُكُمْ نَهْمَتَهُ مِنْ سَفَرِهِ، فَلْيُعَجِّلْ إِلَى أهْلِهِ ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৯১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সফর আযাবের অংশ বিশেষ। সফর তোমাদেরকে পানাহার ও নিদ্রা থেকে বিরত রাখে। সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে, তখন সে যেন বাড়ি ফিরার জন্য তাড়াতাড়ি করে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
176- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْقُدُوْمِ عَلٰى أَهْلِهِ نَهَارًا
وَكَرَاهَتِهِ فِي اللَّيْلِ لِغَيْرِ حَاجَةٍ
পরিচ্ছেদ - ১৭৬: সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
1/992 عَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ، قَالَ: « إِذَا أَطَالَ أحَدُكُمُ الغَيْبَةَ فَلاَ يَطْرُقَنَّ أهْلَهُ لَيْلاً»
وفي روايةٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ نَهَى أَنْ يَطْرُقَ الرَّجُلُ أهْلَهُ لَيْلاً . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৯২। জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমাদের কারোর বিদেশের অবস্থান দীর্ঘ হবে, তখন সে যেন অবশ্যই রাত্রিকালে নিজ গৃহে না ফিরে।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন যে, (মুসাফির) পুরুষ যেন স্ত্রীর কাছে রাতের বেলায় প্রবেশ না করে।
(কেননা তাতে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন, স্ত্রীকে অপ্রীতিকর বা অবাঞ্ছনীয় অবস্থায় দেখে দাম্পত্যে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে অথবা স্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত থাকতে পারে ইত্যাদি। তবে পূর্বেই যদি আগমন বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতের বেলায় বাড়ি গেলে কোন ক্ষতি নেই।)
২/৯৯৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না। তিনি সকালে কিংবা বিকালে বাড়ি আগমন করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
177- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ إِذَا رَجَعَ وَإِذَا رَاٰى بَلْدَتَهُ
পরিচ্ছেদ - ১৭৭: সফর থেকে বাড়ি ফিরার সময় এবং
নিজ গ্রাম বা শহর দেখার সময় দো‘আ
এ বিষয়ে বিগত (৯৮৩নং) ইবনে উমার কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটি উল্লেখযোগ্য।
1/994 وَعَنْ أنس رضي الله عنه، قَالَ: أقْبَلْنَا مَعَ النَّبيِّ ﷺ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِظَهْرِ الْمَدِينَةِ، قَالَ: «آيِبُونَ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُونَ ». فَلَمْ يَزَلْ يَقُولُ ذَلِكَ حَتَّى قَدِمْنَا المَدِينَةَ . رواه مسلم
১/৯৯৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে সফর থেকে ফিরে এলাম। পরিশেষে যখন মদীনার উপকণ্ঠে এসে উপনীত হলাম, তখন তিনি এই দো‘আ পড়লেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা, ‘আ-বিদূনা, লিরাবিবনা হা-মিদূন। (অর্থাৎ আমরা সফর থেকে প্রত্যাগমনকারী, তওবাকারী, উপাসনাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী।) মদীনায় আগমন না করা পর্যন্ত তিনি এ দো‘আ অনবরত পড়তে থাকলেন। (মুসলিম)
178- بَابُ اِسْتِحْبَابِ اِبْتِدَاءِ الْقَادِمِ بِالْمَسْجِدِ
الَّذِيْ فِيْ جِوَارِهِ وَصَلَاتِهِ فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ
পরিচ্ছেদ - ১৭৮: সফর থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’ রাকআত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব
1/995 عَن كَعبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ إِذَا قَدِمَ مِنْ سَفَرٍ، بَدَأَ بِالْمَسْجِدِ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৯৫। কা‘ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’ রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
179- بَابُ تَحْرِيْمِ سَفَرِ الْمَرْأَةِ وَحْدَهَا
পরিচ্ছেদ - ১৭৯: কোনো মহিলার একাকিনী সফর করা হারাম
1/996 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: « لاَ يَحِلُّ ِلامْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَومِ الآخِرِ تُسَافِرُ مَسِيرَةَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ عَلَيْهَا ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/৯৯৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/299 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أنَّهُ سَمِعَ النبيَّ ﷺ، يَقُولُ: « لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ، وَلاَ تُسَافِرُ المَرْأةُ إِلاَّ مَعَ ذِي مَحْرَمٍ ». فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ امْرَأتِي خَرَجَتْ حَاجَّةً، وَإنِّي اكْتُتِبْتُ فِي غَزْوَةِ كَذَا وَكَذَا ؟ قَالَ: « انْطَلِقْ فَحُجَّ مَعَ امْرَأَتِكَ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/৯৯৭। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, ‘‘কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যই নির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।’’
এক ব্যক্তি আবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার স্ত্রী হজ্জ পালন করতে বের হয়েছে। আর আমি অমুক অমুক যুদ্ধে নাম লিখিয়েছি।’ তিনি বললেন, ‘‘যাও, তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে হজ্জ কর।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
* যার সাথে চিরতরে বিবাহ হারাম তাকে মাহরাম বা এগানা বলা হয়; তার সাথে সফর বৈধ। বাকী যার সাথে কোনও সময় বিবাহ বৈধ, তাকে গায়র মাহরাম বা বেগানা বলা হয়। তার সাথে সফর করা বৈধ নয়; এমনকি হজ্জের সফর হলেও নয়।

©somewhere in net ltd.