| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলাম হাউস
তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আর তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়।
রিয়াদুস সালেহীন (২য় খণ্ড)-১
ইমাম মুহিউদ্দীন আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবন শরফ আন-নাওয়াবী রহ.
হাদীসের শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয় : শাইখ মুহাম্মাদ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.
অনুবাদ : বিশিষ্ট আলেমবর্গ
অনুবাদ সম্পাদনা : আব্দুল হামীদ ফাইযী
كِتَابُ اْلفَضَائِلِ
অধ্যায় (৮): বিভিন্ন নেক আমলের ফযীলত প্রসঙ্গে
180- بَابُ فَضْلِ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
পরিচ্ছেদ - ১৮০: পবিত্র কুরআন পড়ার ফযীলত
1/998 عَنْ أَبي أُمَامَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «اقْرَؤُوا القُرْآنَ ؛ فَإِنَّهُ يَأتِي يَوْمَ القِيَامَةِ شَفِيعاً لأَصْحَابِهِ». رواه مسلم
১/৯৯৮। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “তোমরা কুরআন মাজীদ পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কুরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশ-কারী হিসাবে আগমন করবে।” (মুসলিম)
2/999 وَعَنِ النَّوَّاسِ بنِ سَمْعَانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «يُؤْتَى يَوْمَ القِيَامَةِ بِالقُرْآنِ وَأَهْلِهِ الَّذِينَ كَانُوا يَعْمَلُونَ بِهِ فِي الدُّنْيَا تَقْدُمُهُ سُورَةُ البَقَرَةِ وَآلِ عِمْرَانَ، تُحَاجَّانِ عَنْ صَاحِبِهِمَا». رواه مسلم
২/৯৯৯। নাওয়াস ইবনে সাম‘আন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “কুরআন ও ইহজগতে তার উপর আমলকারীদেরকে (বিচারের দিন মহান আল্লাহর সামনে) পেশ করা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলে ইমরান তার আগে আগে থাকবে এবং তাদের পাঠকারীদের স্বপক্ষে (প্রভুর সঙ্গে) বাদানুবাদে লিপ্ত হবে। (মুসলিম)
3/1000 وَعَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ». رواه البخاري
৩/১০০০। ‘উসমান ইবনে ‘আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সেই, যে নিজে কুরআন শিখে ও অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী)
4/1001 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «اَلَّذِيْ يَقْرَأُ القُرْآنَ وَهُوَ مَاهِرٌ بِهِ مَعَ السَّفَرَةِ الكِرَامِ البَرَرَةِ، وَالَّذِي يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أجْرَانِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১০০১। ‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআনের (শুদ্ধ ভাবে পাঠকারী ও পানির মত হিফযকারী পাকা) হাফেয মহা সম্মানিত পুণ্যবান লিপিকার (ফেরেশতাবর্গের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি (পাকা হিফয না থাকার কারণে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে, তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব।” (একটি তেলাওয়াত ও দ্বিতীয়টি কষ্টের দরুন।) (বুখারী, মুসলিম ৭৯৮নং)
5/1002 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِيْ يَقْرَأُ القُرْآنَ مَثَلُ الأُتْرُجَّةِ: رِيحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ الْمُؤْمِنِ الَّذِيْ لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ: لارِيحَ لَهَا وَطَعْمُهَا حُلْوٌ، وَمَثلُ المُنَافِقِ الَّذِيْ يَقرَأُ القُرآنَ كَمَثلِ الرَّيحَانَةِ: ريحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ المُنَافِقِ الَّذِيْ لاَ يَقْرَأُ القُرْآنَ كَمَثلِ الحَنْظَلَةِ: لَيْسَ لَهَا رِيحٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১০০২। আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআন পাঠকারী মুমিনের উদাহরণ হচ্ছে ঠিক উতরুজ্জা (কমলা লেবুর মত এক ধরণের ফল); যার ঘ্রাণ উত্তম এবং স্বাদও উত্তম। আর যে মুমিন কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক খেজুরের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ তো নেই, তবে স্বাদ মিষ্ট। (অন্যদিকে) কুরআন পাঠকারী মুনাফিকের দৃষ্টান্ত হচ্ছে সুগন্ধিময় (তুলসী) গাছের মত; যার ঘ্রাণ উত্তম, কিন্তু স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কুরআন পড়ে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঠিক মাকাল ফলের মত; যার (উত্তম) ঘ্রাণ নেই, স্বাদও তিক্ত।” (বুখারী, মুসলিম)
6/1003 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ اللهَ يَرْفَعُ بِهَذَا الكِتَابِ أَقْوَاماً وَيَضَعُ بِهِ آخرِينَ». رواه مسلم
৬/১০০৩। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ এই গ্রন্থ (কুরআন মাজীদ) দ্বারা (তার উপর আমলকারী) জনগোষ্ঠীর উত্থান ঘটান এবং এরই দ্বারা (এর অবাধ্য) অন্য গোষ্ঠীর পতন সাধন করেন।” (মুসলিম)
7/1004 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ القُرْآنَ، فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاء اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৭/১০০৪। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু’জনের ক্ষেত্রে ঈর্ষা করা সিদ্ধ। (১) যাকে আল্লাহ কুরআন (মুখস্থ করার শক্তি) দান করেছেন, সুতরাং সে ওর (আলোকে) দিবা-রাত্রি পড়ে ও আমল করে। (২) যাকে আল্লাহ তা‘আলা ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে (আল্লাহর পথে) দিন-রাত ব্যয় করে।” (বুখারী, মুসলিম)
8/1005 وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ يَقْرَأُ سُورَةَ الْكَهْفِ، وَعِنْدَهُ فَرَسٌ مَرْبُوطٌ بِشَطَنَيْنِ، فَتَغَشَّتْهُ سَحَابَةٌ فَجَعَلَتْ تَدْنُوْ، وَجَعَلَ فَرَسُه يَنْفِرُ مِنْهَا، فَلَمَّا أصْبَحَ أتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «تِلْكَ السَّكِينَةُ تَنَزَّلَتْ لِلقُرْآنِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৮/১০০৫। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা একটি লোক সূরা কাহাফ পাঠ করছিল। তার পাশেই দুটো রশি দিয়ে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ইতোমধ্যে লোকটিকে একটি মেঘে ঢেকে নিলো। মেঘটি লোকটির নিকটবর্তী হতে থাকলে ঘোড়াটি তা দেখে চমকাতে আরম্ভ করল। অতঃপর যখন সকাল হলো তখন লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হয়ে উক্ত ঘটনা বর্ণনা করল। তা (শুনে) তিনি বললেন, “ওটি প্রশান্তি ছিল, যা তোমার কুরআন পড়ার দরুন অবতীর্ণ হয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম)
9/1006 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ قَرَأ حَرْفاً مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أمْثَالِهَا، لاَ أَقُولُ: الـم حَرفٌ، وَلَكِنْ: ألِفٌ حَرْفٌ، وَلاَمٌ حَرْفٌ، وَمِيمٌ حَرْفٌ». رواه الترمذي، وقال: (( حديث حسن صحيح ))
৯/১০০৬। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাব (কুরআন মাজীদ)এর একটি বর্ণ পাঠ করবে, তার একটি নেকী হবে। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমান হয়। আমি বলছি না যে, ‘আলিফ-লাম-মীম’ একটি বর্ণ; বরং আলিফ একটি বর্ণ, লাম একটি বর্ণ এবং মীম একটি বর্ণ।” (অর্থাৎ তিনটি বর্ণ দ্বারা গঠিত ‘আলিফ-লাম-মীম, যার নেকীর সংখ্যা হবে ত্রিশ।) (তিরমিযী, হাসান)
10/1007 وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَّضِيَ الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«إنَّ الَّذِيْ لَيْسَ فِيْ جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنَ القُرآنِ كَالْبَيْتِِ الْخَرِبِ» رواه الترمذي وقال: حديث حسن صحيح .
১০/১০০৭। আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কুরআনের কোনো অংশই যে ব্যক্তির পেটে নেই সে (সেই পেট বা উদর) বিরান ঘরের
11/1008 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ: اِقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَؤُهَا». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: (( حديث حسن صحيح ))
১১/১০০৮। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পবিত্র কুরআনের পাঠক, হাফেয ও তার উপর আমলকারীকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, ‘তুমি কুরআন করীম পড়তে থাক ও চড়তে থাক। আর ঠিক সেইভাবে স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে পড়তে থাক, যেভাবে দুনিয়াতে পড়তে। কেননা, (জান্নাতের ভিতর) তোমার স্থান ঠিক সেখানে হবে, যেখানে তোমার শেষ আয়াতটি খতম হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
181- بَابُ الْأَمْرِ بِتَعَهُّدِ الْقُرْآنِ وَالتَّحْذِيْرِ مِنْ تَعْرِيْضِهِ لِلنِّسْيَانِ
পরিচ্ছেদ - ১৮১: কুরআন মাজীদ সযত্নে নিয়মিত পড়া ও তা ভুলে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকার নির্দেশ
1/1009 عَن أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «تَعَاهَدُوا هَذَا القُرْآنَ، فَوَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَهُوَ أَشَدُّ تَفَلُّتاً مِنَ الإِبِلِ فِي عُقُلِهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০০৯। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এই কুরআনের প্রতি যত্ন নাও। (অর্থাৎ নিয়মিত পড়তে থাক ও তার চর্চা রাখ।) সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, উট যেমন তার রশি থেকে অতর্কিতে বের হয়ে যায়, তার চেয়ে অধিক অতর্কিতে কুরআন (স্মৃতি থেকে) বের হয়ে (বিস্মৃত হয়ে) যায়।” (অর্থাৎ অতিশীঘ্র ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।) (বুখারী-মুসলিম)
2/1010 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إنَّمَا مَثَلُ صَاحِبِ الْقُرْآنِ كَمَثَلِ الإِبِلِ المُعَقَّلَةِ، إِنْ عَاهَدَ عَلَيْهَا أَمْسَكَهَا، وَإِنْ أَطْلَقَهَا ذَهَبَتْ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১০১০। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআন-ওয়ালা হল বাঁধা উট-ওয়ালার মত। সে যদি তা বাঁধার পর তার যথারীতি দেখাশোনা করে, তাহলে বাঁধাই থাকবে। নচেৎ ঢিল দিলেই উট পালিয়ে যাবে।” (বুখারী, মুসলিম)
182- بَابُ اِسْتِحْبَابِ تَحْسِيْنِ الصَّوْتِ بِالْقُرْآنِ
وَطَلَبِ الْقِرَاءَةِ مَنْ حَسُنَ الصَّوْتَ وَالْاِسْتِمَاعَ لَهَا
পরিচ্ছেদ - ১৮২: সুললিত কণ্ঠে কুরআন পড়া মুস্তাহাব। মধুরকণ্ঠ কারীকে তা পড়ার আবেদন করা ও তা মনোযোগ সহকারে শোনা প্রসঙ্গে
1/1011 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَا أَذِنَ اللهُ لِشَيءٍ مَا أَذِنَ لِنَبِيٍّ حَسَنِ الصَّوْتِ يَتَغَنَّى بِالقُرْآنِ يَجْهَرُ بِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০১১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “মহান আল্লাহ এভাবে উৎকর্ণ হয়ে কোন কথা শোনেন না, যেভাবে সেই মধুরকণ্ঠী পয়গম্বরের প্রতি উৎকর্ণ হয়ে শোনেন, যিনি মধুর কণ্ঠে উচ্চ স্বরে কুরআন মাজীদ পড়তেন।” (বুখারী, মুসলিম)
আল্লাহর উৎকর্ণ হয়ে শোনার মধ্যে এ কথার ইঙ্গিত রয়েছে যে, তিনি সেই তেলাওয়াতে সন্তুষ্ট হন এবং তা কবুল করেন।
2/1012 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ: «لَقدْ أُوتِيتَ مِزْمَاراً مِنْ مَزَامِيرِ آلِ دَاوُدَ». متفقٌ عَلَيْهِ.
وفي رواية لمسلمٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ: «لَوْ رَأَيْتَنِي وَأنَا أسْتَمِعُ لِقِراءتِكَ الْبَارِحَةَ» ..
২/১০১২। আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, “তোমাকে দাউদের সুললিত কণ্ঠের মত মধুর কণ্ঠ দান করা হয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন, “যদি তুমি আমাকে গত রাতে তোমার তেলাওয়াত শোনা অবস্থায় দেখতে (তাহলে তুমি কতই না খুশি হতে)!”
3/1013 وَعَنِ البَراءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ فِي الْعِشَاءِ بالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ، فَمَا سَمِعْتُ أَحَداً أَحْسَنَ صَوْتاً مِنْهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১০১৩। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এশার নামাযে সূরা ‘ওয়াত্তীন অয্যাইতূন’ পড়তে শুনেছি। বস্তুতঃ আমি তাঁর চেয়ে মধুর কণ্ঠ আর কারো শুনিনি।” (বুখারী, মুসলিম)
4/1014 وَعَنْ أَبي لُبَابَةَ بَشِيرِ بنِ عَبدِ المُنذِرِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ لَمْ يَتَغَنَّ بِالقُرْآنِ فَلَيْسَ مِنَّا» رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ.
৪/১০১৪। আবূ লুবাবাহ বাশীর ইবনে আব্দুল মুনযির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মিষ্ট স্বরে কুরআন পড়ে না, সে আমাদের মধ্যে নয়।” (অর্থাৎ আমাদের ত্বরীকা ও নীতি-আদর্শ বহির্ভূত।) (আবূ দাউদ, উত্তম সূত্রে)
5/1015 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «اِقْرَأْ عَلَيَّ القُرْآنَ»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَقْرَأُ عَلَيْكَ، وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ ؟! قَالَ: «إنِّي أُحِبُّ أَنْ أَسْمَعَهُ مِنْ غَيْرِي». فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ سُورَةَ النِّسَاءِ، حَتَّى جِئْتُ إِلَى هَذِهِ الآيَةِ: فَكَيْفَ إِذَا جِئْنَا مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ بِشَهِيدٍ وَجِئْنَا بِكَ عَلَى هَؤُلاَءِ شَهِيداً قَالَ: «حَسْبُكَ الآنَ» فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ، فَإذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১০১৫। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “(হে ইবনে মাসঊদ!) আমাকে কুরআন পড়ে শুনাও।” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি আপনাকে পড়ে শোনাব, অথচ আপনার উপরে তা অবতীর্ণ করা হয়েছে?’ তিনি বললেন, “অপরের মুখ থেকে (কুরআন পড়া) শুনতে আমি ভালবাসি।” সুতরাং তাঁর সামনে আমি সূরা নিসা পড়তে লাগলাম, পড়তে পড়তে যখন এই (৪১নং) আয়াতে পৌঁছলাম---যার অর্থ, “তখন তাদের কি অবস্থা হবে, যখন প্রত্যেক সম্প্রদায় থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকেও তাদের সাক্ষী-রূপে উপস্থিত করব?” তখন তিনি বললেন, “যথেষ্ট, এখন থাম।” অতঃপর আমি তাঁর দিকে ফিরে দেখি, তাঁর নয়ন যুগল অশ্রু ঝরাচ্ছে। (বুখারী, মুসলিম)
183- بَابُ فِي الْحَثِّ عَلٰى سُوَرٍ وآيَاتٍ مَخْصُوْصَةٍ
পরিচ্ছেদ - ১৮৩: বিশেষ বিশেষ সূরা ও আয়াত পাঠ করার উপর উৎসাহ দান
1/1016 عَن أَبي سَعِيدٍ رَافِعِ بن الْمُعَلَّى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَلاَ أُعَلِّمُكَ أَعْظَمَ سُورَةٍ فِي القُرْآن قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ مِنَ الْمَسْجِدِ ؟» فَأخَذَ بِيَدِي، فَلَمَّا أَرَدْنَا أَنْ نَخْرُجَ، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّكَ قُلْتَ: لأُعَلِّمَنَّكَ أَعْظَمَ سُورَةٍ فِي القُرْآنِ ؟ قَالَ: «اَلْحَمْدُ للهِ رَبِّ العَالَمِينَ، هِيَ السَّبْعُ المَثَانِي وَالقُرْآنُ العَظِيمُ الَّذِيْ أُوتِيتُهُ». رواه البخاري
১/১০১৬। আবূ সাঈদ রাফে’ ইবনে মুআল্লা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না?” এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন। অতঃপর যখন আমরা বাইরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি যে আমাকে বললেন, তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সবচেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?’ সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন’ (সূরা ফাতেহা)। এটি হচ্ছে ‘সাবউ মাসানী’ (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে।” (বুখারী)
2/1017 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِِيِّ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ فِي: - قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ -: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إنَّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ القُرْآنِ» .
وفي روايةٍ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ ِلأَصْحَابِهِ: «أَيَعْجِزُ أحَدُكُمْ أنْ يَقْرَأَ بِثُلُثِ القُرْآنِ فِي لَيْلَةٍ؟»، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ، وَقَالُوا: أَيُّنَا يُطِيقُ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ فَقَالَ: «قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ اللهُ الصَّمَد: ثُلُثُ الْقُرْآنِ». رواه البخاري
২/১০১৭। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল।”
অপর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, ‘তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়তে অপারগ?’ প্রস্তাবটি তাঁদের পক্ষে ভারী মনে হল। তাই তাঁরা বলে উঠলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! এ কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?’ (অর্থাৎ কেউ পারবে না।) তিনি বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ’ (সূরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল।” (অর্থাৎ এই সূরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী অর্জিত হয়) (বুখারী)
3/1018 وَعَنْه: أَنَّ رَجُلاً سَمِعَ رَجُلاً يَقْرَأُ: «قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ» يُرَدِّدُهَا، فَلَمَّا أصْبَحَ جَاءَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ وَكَانَ الرَّجُلُ يَتَقَالُّهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إنَّهَا لَتَعْدِلُ ثُلُثَ القُرْآنِ». رواه البخاري
৩/১০১৮। উক্ত সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু আরও বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি কোন লোককে সূরাটি বারবার পড়তে শুনল। অতঃপর সে সকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে তা ব্যক্ত করল। সে সূরাটিকে নগণ্য মনে করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “সেই সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, নিঃসন্দেহে এই সূরা (ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।” (বুখারী)
4/1019 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ فِي: ﴿ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ﴾ «إنَّهَا تَعْدِلُ ثُلُثَ الْقُرْآنِ». رواه مسلم
৪/১০১৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমতুল্য।” (মুসলিম)
5/1020 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أُحِبُّ هَذِهِ السُّورَةَ: ﴿ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ﴾ قَالَ: «إنَّ حُبَّهَا أدْخَلَكَ الجَنَّةَ». رواه الترمذي، وقال: ((حديث حسن)) . ورواه البخاري في صَحِيحِهِ تعليقاً.
৫/১০২০। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি এই (সূরা) ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ ভালবাসি।’ তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।” (তিরমিযী হাসান সূত্রে, বুখারী বিচ্ছিন্ন সনদে)
6/1021 وَعَنْ عُقبَةَ بنِ عَامِرٍ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتْ هَذِهِ اللَّيْلَةَ لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ قَطُّ ؟ قُلْ أَعْوذُ بِرَبِّ الفَلَقِ وَ قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ». رواه مسلم
৬/১০২১। উক্ববাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন, “তুমি কি দেখনি, আজ রাত্রে আমার উপর কতকগুলি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে; যার অনুরূপ আর কিছু দেখা যায়নি? (আর তা হল,) ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাব্বিন নাস।” (মুসলিম ৮১৪ নং, তিরমিযী)
7/1022 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَعَوَّذُ مِنَ الجَانِّ، وَعَيْنِ الإِنْسَانِ، حَتَّى نَزَلَتْ المُعَوِّذَتَانِ، فَلَمَّا نَزَلَتَا، أَخَذَ بِهِمَا وَتَرَكَ مَا سِوَاهُمَا. رواه الترمذي، وقال: ((حديث حسن))
৭/১০২২। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সূরা ফালাক্ব ও নাস অবতীর্ণ হবার পূর্ব পর্যন্ত নিজ ভাষাতে) জিন ও বদ নজর থেকে (আল্লাহর) আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। পরিশেষে যখন উক্ত সূরা দু’টি অবতীর্ণ হল, তখন ঐ সূরা দু’টি দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতে লাগলেন এবং অন্যান্য সব পরিহার করলেন।’ (তিরমিযী হাসান)
8/1023 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مِنَ القُرْآنِ سُورَةٌ ثَلاثُونَ آيَةً شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ، وَهِيَ: -تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ المُلْكُ-». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال
(حديث حسن))
৮/১০২৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং সব শেষে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে, সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মুলক’ (সূরা মুলক)।”(আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
9/1024 وَعَنْ أَبي مَسعُودٍ البَدْرِيِّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَرَأَ بِالآيَتَيْنِ مِنْ آخِرِ سُورَةِ البَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ». متفقٌ عَلَيْهِ.
৯/১০২৪। আবূ মাসঊদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাক্বারার শেষ আয়াত দু’টি পাঠ করবে, তার জন্য সে দু’টি যথেষ্ট হবে।” (বুখারী, মুসলিম)
বলা হয়েছে যে, সে রাতে অপ্রীতিকর জিনিসের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে। অথবা তাহাজ্জুদের নামায থেকে যথেষ্ট হবে।
10/1025 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ مَقَابِرَ، إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ البَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ البَقرَةِ». رواه مسلم
১০/১০২৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নিজেদের ঘর-বাড়িগুলোকে কবরে পরিণত করো না। যে বাড়িতে সূরা বাকারাহ পাঠ করা হয়, নিশ্চয় সে বাড়ি থেকে শয়তান পলায়ন করে।” (মুসলিম)
(অর্থাৎ সুন্নত ও নফল নামায তথা পবিত্র কুরআন পড়া ত্যাগ করে ঘরকে কবর বানিয়ে দিয়ো না। যেহেতু কবরে এ সব বৈধ নয়।)
11/1026 وَعَنْ أُبَيِّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «يَا أَبَا الْمُنْذِرِ، أَتَدْرِي أَيُّ آيَةٍ مِنْ كِتَابِ الله مَعَكَ أعْظَمُ ؟» قُلْتُ: اللهُ لاَ إلَهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ فَضَرَبَ فِي صَدْرِي، وَقَالَ: «لِيَهْنِكَ العِلْمُ أَبَا الْمُنْذِرِ» . رواه مسلم
১১/১০২৬। উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরআন)এর ভিতর তোমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?” আমি বললাম, ‘সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসি।’ সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপড় মেরে বললেন, “আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক।” (মুসলিম)
(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বরকতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ।)
12/1027 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: وَكَّلَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِحِفْظِ زَكَاةِ رَمَضَانَ، فَأتَانِي آتٍ فَجَعَلَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَام، فَأَخَذْتُهُ فَقُلْتُ: لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنِّي مُحْتَاجٌ، وَعَليَّ عِيَالٌ، وَبِي حَاجَةٌ شَدِيدَةٌ، فَخَلَّيْتُ عَنْهُ، فَأصْبَحْتُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «يَا أَبَا هُرَيرَةَ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ ؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، شَكَا حَاجَةً وَعِيَالاً، فَرحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ . فَقَالَ: «أمَا إنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ» فَعَرَفْتُ أنَّهُ سَيَعُودُ، لِقَولِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَرَصَدْتُهُ، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ، فَقُلْتُ: لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: دَعْنِي فَإنِّي مُحْتَاجٌ، وَعَلَيَّ عِيَالٌ لاَ أَعُودُ، فَرحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ، فَأَصْبَحْتُ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «يَا أَبَا هُرَيرَةَ، مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ ؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، شَكَا حَاجَةً وَعِيَالاً، فَرحِمْتُهُ فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ . فَقَالَ: «إنَّهُ قَدْ كَذَبَكَ وَسَيَعُودُ» فَرَصَدْتُهُ الثَّالثَة، فَجَاءَ يَحْثُو مِنَ الطَّعَامِ فَأَخَذْتُهُ، فَقُلتُ: لأَرْفَعَنَّكَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهَذَا آخِرُ ثَلاَثِ مَرَّاتٍ أَنَّكَ تَزْعُمُ أنَّكَ لاَ تَعُودُ ! فَقَالَ: دَعْنِي فَإنِّي أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ يَنْفَعُكَ اللهُ بِهَا، قُلْتُ: مَا هُنَّ ؟ قَالَ: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَةَ الكُرْسِيِّ، فَإِنَّهُ لَنْ يَزَالَ عَلَيْكَ مِنَ الله حَافِظٌ، وَلاَ يَقْرَبُكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ، فَخَلَّيْتُ سَبِيلَهُ، فَأَصْبَحْتُ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا فَعَلَ أَسِيرُكَ البَارِحَةَ ؟» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، زَعَمَ أَنَّهُ يُعَلِّمُنِي كَلِمَاتٍ يَنْفَعُنِي اللهُ بِهَا، فَخَلَّيْتُ سَبيلَهُ، قَالَ: «مَا هِيَ ؟» قُلْتُ: قَالَ لِي: إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ فَاقْرَأْ آيَة الكُرْسِيِّ مِنْ أَوَّلِهَا حَتَّى تَخْتِمَ الآيَةَ: - اللهُ لاَ إلَهَ إِلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُّومُ - وَقَالَ لِي: لاَ يَزَالُ عَلَيْكَ مِنَ اللهِ حَافِظٌ، وَلَنْ يَقْرَبَكَ شَيْطَانٌ حَتَّى تُصْبِحَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم : «أمَا إنَّهُ قَدْ صَدَقَكَ وَهُوَ كَذُوْبٌ، تَعْلَمُ مَنْ تُخَاطِبُ مُنْذُ ثَلاَثٍ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ ؟» قُلْتُ: لاَ . قَالَ: «ذَاكَ شَيْطَانٌ». رواه البخاري
১২/১০২৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রমযানের যাকাত (ফিতরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন। বস্তুতঃ (আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, ‘তোকে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করব।’ সে আবেদন করল, ‘আমি একজন সত্যিকারের অভাবী। পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুণ অভাব।’ কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট হাযির হলাম।) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কি আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে তার অভাব ও (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল। সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে।”
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুরূপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে। কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম। সে (পূর্ববৎ) এসে আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে বললাম, ‘অবশ্যই তোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পেশ করব।’ সে বলল, ‘আমি অভাবী, পরিবারের দায়িত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না।’ সুতরাং আমার মনে দয়া হল। আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। সকালে উঠে (যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে গেলাম তখন) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “আবূ হুরাইরা! গত রাত্রে তোমার বন্দী কিরূপ আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে তার অভাব ও অসহায় সন্তান-পরিবারের অভিযোগ জানাল। সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সতর্ক থেকো, সে আবার আসবে।”
সুতরাং তৃতীয়বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম। সে (এসে) আঁজলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল। আমি তাকে ধরে বললাম, “এবারে তোকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাযির করবই। এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার। ‘ফিরে আসবো না’ বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস।” সে বলল, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন।’ আমি বললাম, ‘সেগুলি কি?’ সে বলল, ‘যখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে (ঘুমবে)। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’
সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। আবার সকালে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম।) তিনি আমাকে বললেন, “তোমার বন্দী কি আচরণ করেছে?” আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে বলল, “আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন।” বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম।’ তিনি বললেন, “সে শব্দগুলি কি?” আমি বললাম, ‘সে আমাকে বলল, “যখন তুমি বিছানায় (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুম’ পড়ে নেবে।” সে আমাকে আরও বলল, “তার কারণে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে। আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসবে না।” (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, “শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?” আমি বললাম, ‘জী না।’ তিনি বললেন, “সে শয়তান ছিল।” (বুখারী)
13/1028 وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الكَهْفِ، عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ» . وفي رواية: «مِنْ آخِرِ سُورَةِ الكَهْفِ» رواهما مسلم
১৩/১০২৮। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের (ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে।” অন্য বর্ণনায় ‘কাহাফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। (মুসলিম)
14/1029 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: بَيْنَمَا جِبْرِيلُ عليه السلام قَاعِدٌ عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ نَقِيضاً مِنْ فَوقِهِ، فَرَفَعَ رَأسَهُ، فَقَالَ: هَذَا بَابٌ مِنَ السَّمَاءِ فُتِحَ اليَوْمَ وَلَمْ يُفْتَحْ قَطُّ إِلاَّ اليَوْمَ، فنَزلَ منهُ مَلَكٌ، فَقَالَ: هَذَا مَلَكٌ نَزَلَ إِلَى الأَرْضِ لَمْ يَنْزِلْ قَطّ إِلاَّ اليَومَ فَسَلَّمَ وَقَالَ: أَبْشِرْ بِنُورَيْنِ أُوتِيتَهُمَا لَمْ يُؤتَهُمَا نَبِيٌّ قَبْلَكَ: فَاتِحَةُ الكِتَابِ، وَخَواتِيمُ سُورَةِ البَقَرَةِ، لَنْ تَقْرَأَ بِحَرْفٍ مِنْهَا إِلاَّ أُعْطِيتَه. رواه مسلم
১৪/১০২৯। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা জিবরীল عليه السلام নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসে ছিলেন। এমন সময় উপর থেকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তিনি (জিবরীল) মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা আজ খোলা হল। ইতোপূর্বে এটা কখনও খোলা হয়নি। ওদিক দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হল। এই ফেরেশতা যে দুনিয়াতে অবতরণ করেছে, ইতোপূর্বে কখনও অবতরণ করেনি।’ সুতরাং তিনি এসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সালাম জানিয়ে বললেন, “আপনি দু’টি জ্যোতির সুসংবাদ নিন। যা আপনার আগে কোন নবীকে দেওয়া হয়নি। (সে দু’টি হচ্ছে) সূরা ফাতেহা ও সূরা বাক্বারার শেষ আয়াতসমূহ। ওর মধ্য হতে যে বর্ণটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)
184- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْاِجْتِمَاعِ عَلَى الْقِرَاءَةِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৪: কুরআন পঠন-পাঠনের জন্য সমবেত হওয়া মুস্তাহাব
1/1030 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «وَمَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِي بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ يَتلُونَ كِتَابَ اللهِ، وَيَتَدَارَسُونَهُ بَينَهُمْ، إِلاَّ نَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ وَغَشِيتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَحَفَّتْهُمُ المَلاَئِكَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ». رواه مسلم
১/১০৩০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখনই কোনো সম্প্রদায় আল্লাহর ঘরসমূহের মধ্যে কোন এক ঘরে একত্রিত হয়ে আল্লাহর গ্রন্থ (কুরআন) পাঠ করে, তা নিয়ে পরস্পরের মধ্যে অধ্যয়ন করে, তাহলে তাদের প্রতি (আল্লাহর পক্ষ থেকে) প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং তাদেরকে তাঁর রহমত ঢেকে নেয়, আর ফেরেশতাবর্গ তাদেরকে ঘিরে ফেলেন। আল্লাহ স্বয়ং তাঁর নিকটস্থ ফেরেশতামণ্ডলীর কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (মুসলিম)
185- بَابُ فَضْلِ الْوُضُوْءِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৫: ওজুর ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى قَوْله تَعَالَى: مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ وَلِيُتِمَّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٦ ﴾ (المائدة: ٦)
অর্থাৎ “হে ঈমানদারগণ! যখন তোমরা নামাযের জন্য প্রস্তুত হবে, তখন তোমরা তোমাদের মুখমণ্ডল ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর এবং তোমাদের মাথা মাসাহ কর এবং পা গ্রন্থি পর্যন্ত ধৌত কর। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তাহলে বিশেষভাবে (গোসল করে) পবিত্র হও। যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা হতে আগমন করে, অথবা তোমরা স্ত্রী-সহবাস কর এবং পানি না পাও, তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর; তা দিয়ে তোমাদের মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে কোন প্রকার কষ্ট দিতে চান না, বরং তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান ও তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করতে চান, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর।” (সূরা মায়েদাহ ৬ আয়াত)
1/1031 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «إِنَّ أُمَّتِي يُدْعَوْنَ يَوْمَ القِيَامَةِ غُرّاًً مُحَجَّلِينَ مِنْ آثَارِ الوُضُوءِ، فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أنْ يُطِيلَ غُرَّتَهُ فَلْيَفْعَلْ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৩১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “নিশ্চয় আমার উম্মতকে কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় ডাকা হবে, যে সময় তাদের ওজুর অঙ্গগুলো চমকাতে থাকবে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে তার চমক বাড়াতে চায়, সে যেন তা করে।” (অর্থাৎ সে যেন তার ওজুর সীমার অতিরিক্ত অংশও ধুয়ে ফেলে।) (বুখারী, মুসলিম)
২/১০৩২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “(পরকালে) মু’মিনের অলংকার তত-দূর হবে, যতদূর তার ওজুর (পানি) পৌঁছবে।” (মুসলিম)
3/1033 وَعَنْ عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ِ «مَن تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُج مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِه». رواه مسلم
৩/১০৩৩। ‘উসমান ইবনে ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু করবে, তার পাপসমূহ তার দেহ থেকে বেরিয়ে যাবে। এমনকি তার নখগুলোর নিচে থেকেও (পাপ) বেরিয়ে যাবে।” (মুসলিম)
4/1034 وَعَنْه، قَالَ: رَأيتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَوَضَّأَ مِثْلَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمَّ قَالَ: «مَنْ تَوَضَّأ هكَذَا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَكَانَتْ صَلاَتُهُ وَمَشْيُهُ إِلَى المَسْجدِ نَافِلَةً». رواه مسلم
৪/১০৩৪। উক্ত রাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমার এই ওজুর মত ওযু করতে দেখলাম। অতঃপর তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি এরূপ ওযু করবে, তার পূর্বকৃত পাপরাশি মাফ করা হবে এবং তার নামায ও মসজিদের দিকে চলার সওয়াব অতিরিক্ত হবে।” (মুসলিম)
5/1035 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا تَوَضَّأ العَبْدُ المُسْلِمُ - أَو المُؤْمِنُ - فَغَسَلَ وَجْهَهُ، خَرَجَ مِنْ وَجْهِهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ نَظَرَ إِلَيْهَا بِعَيْنَيْهِ مَعَ المَاءِ، أَوْ مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ، فَإذَا غَسَلَ يَدَيْهِ، خَرَجَ مِنْ يَدَيْهِ كُلُّ خَطِيئَةٍ كَانَ بَطَشَتْهَا يَدَاهُ مَعَ المَاءِ، أَو مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ، فَإذَا غَسَلَ رِجْلَيْهِ، خَرَجَتْ كُلُّ خَطِيئَةٍ مَشَتْهَا رِجْلاَهُ مَعَ المَاءِ، أَو مَعَ آخِرِ قَطْرِ المَاءِ، حَتَّى يَخْرُجَ نَقِيَّاً مِنَ الذُّنُوبِ». رواه مسلم
৫/১০৩৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুসলিম কিংবা মুমিন বান্দা যখন ওযু করবে এবং যখন সে নিজ মুখমণ্ডল ধৌত করবে, তখন তার মুখমণ্ডল হতে সেই গোনাহ পানির সাথে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সাথে বের হয়ে যাবে, যে সব গোনাহ তার দু’টি চোখ দিয়ে দেখার ফলে সংঘটিত হয়েছিল। (অনুরূপভাবে) যখন সে নিজ হাত দু’টি ধোবে, তখন তা হতে সে সব পাপ পানির সাথে বা পানির শেষ বিন্দুর সাথে নির্গত হয়ে যাবে, যে সব পাপ তার দুই হাত দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল। আর যখন সে নিজ পা দু’টি ধৌত করবে, তখন তার পা দু’টি হতে সে সমস্ত পাপরাশি পানির সঙ্গে অথবা পানির শেষ বিন্দুর সঙ্গে বের হয়ে যাবে, যেগুলি তার দু’টি পায়ে চলার ফলে সংঘটিত হয়েছিল। শেষ অবধি সে (ক্ষুদ্র) পাপরাশি হতে পাক-পবিত্র হয়ে বেরিয়ে আসবে।” (মুসলিম)
6/1036 وَعَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَتَى المَقبَرَةَ، فَقَالَ: «السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَومٍ مُؤْمِنِينَ، وَإنَّا إنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ، وَدِدْتُ أنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوانَنَا» قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «أنْتُمْ أَصْحَابِي، وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأتُوا بَعْدُ» قَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ فَقَالَ: «أَرَأيْتَ لَوْ أنَّ رَجُلاً لَهُ خَيلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ، أَلاَ يَعْرِفُ خَيْلَهُ ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «إِنَّهُمْ يَأتُونَ غُرّاً مُحَجَّلينَ مِنَ الوُضُوءِ، وَأنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الحَوْضِ». رواه مسلم
৬/১০৩৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) কবরস্থানে এসে (কবর-বাসীদের সম্বোধন করে) বললেন, “হে (পরকালের) ঘরবাসী মুমিনগণ! তোমাদের উপর শান্তি বর্ষণ হোক। যদি আল্লাহ চান তো আমরাও তোমাদের সঙ্গে মিলিত হব। আমার বাসনা যে, যদি আমরা আমাদের ভাইদেরকে দেখতে পেতাম।” সাহাবীগণ নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কি আপনার ভাই নই?’ তিনি বললেন, “তোমরা তো আমার সহচরবৃন্দ। আমার ভাই তারা, যারা এখনো পর্যন্ত আগমন করেনি।” সাহাবীগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার উম্মতের মধ্যে যারা এখনো পর্যন্ত আগমন করেনি, তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনতে পারবেন?’ তিনি বললেন, “আচ্ছা বল, যদি খাঁটি কাল রঙের ঘোড়ার দলে, কোনো লোকের কপাল ও পা সাদা দাগবিশিষ্ট ঘোড়া থাকে, তাহলে কি সে তার ঘোড়া চিনতে পারবে না?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই পারবে, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তারা এই অবস্থায় (হাশরের মাঠে) আগমন করবে যে, ওযু করার দরুন তাদের হাত-পা চমকাতে থাকবে। আর আমি ‘হাওজে’-এ তাদের অগ্রগামী ব্যবস্থাপক হব।” (অর্থাৎ তাদের আগেই আমি সেখানে পৌঁছে যাব।) (মুসলিম)
7/1037 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَلاَ أَدُّلُكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «إِسْبَاغُ الوُضُوءِ عَلَى المَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الخُطَا إِلَى المَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ ؛ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ ؛ فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ». رواه مسلم
৭/১০৩৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা সমবেত সহচরদের উদ্দেশ্যে) বললেন, “তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলব না কি, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন করে দেবেন এবং (জান্নাতে) তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) কষ্টকর অবস্থায় পরিপূর্ণরূপে ওযু করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক অক্তের নামায আদায় করে পরবর্তী অক্তের নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ। এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ।” (মুসলিম)
8/1038 وَعَنْ أَبي مالك الأشعري رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «الطُّهُورُ شَطْرُ الإيمَانِ». رواه مسلم
৮/১০৩৮। আবূ মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(বাহ্যিক) পবিত্রতা অর্জন করা হল অর্ধেক ঈমান।” (মুসলিম)
এ হাদিসটি ‘ধৈর্যের বিবরণ’ পরিচ্ছেদে সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এ মর্মে ‘আমর ইবনে ‘আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, হাদিস ‘আল্লাহর দয়ার আশা রাখার গুরুত্ব’ পরিচ্ছেদের শেষদিকে গত হয়েছে। হাদিসটি বড় গুরুত্বপূর্ণ, যাতে বহু কল্যাণময় কর্মের কথা পরিবেশিত হয়েছে।
9/1039 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ أَوْ فَيُسْبِغُ ألوُضُوءَ، ثُمَّ يَقُوْلُ: أَشهَدُ أَنْ لاَ إلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ ؛ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاءَ». رواه مسلم، وزاد الترمذي: «اَللهم اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ»
৯/১০৩৯। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পরিপূর্ণরূপে ওযু করে যে ব্যক্তি এই দো‘আ বলবে, ‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, অ আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু অরাসূলুহ।’ অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশী নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাস ও প্রেরিত দূত (রসূল)। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা তাতে প্রবেশ করবে।” (মুসলিম)
ইমাম তিরমিযী (উক্ত দুআর শেষে) এ শব্দগুলি অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন, «اَللهم اجْعَلْنِي مِنَ التَّوَّابِينَ، وَاجْعَلْنِي مِنَ المُتَطَهِّرِينَ»
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে তওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কর। (তিরমিযী, সহীহ, তামামুল মিন্নাহ দ্রঃ)
186- بَابُ فَضْلِ الْآذَانِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৬: আযানের ফযীলত
1/1040 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا عَلَيْهِ، ولو يَعْلَمُونَ مَا فِي التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي العَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৪০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লোকেরা যদি জানত যে, আযান দেওয়া ও নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়াবার কি মাহাত্ম্য আছে, অতঃপর (তাতে অংশগ্রহণের জন্য) যদি লটারি ব্যতিরেকে অন্য কোনো উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত। (অনুরূপ) তারা যদি জানত যে, আগে আগে মসজিদে আসার কি ফযীলত, তাহলে তারা সে ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করত। আর তারা যদি জানত যে, এশা ও ফজরের নামায (জামাতে) পড়ার ফযীলত কত বেশি, তাহলে মাটিতে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছা ছেঁচড়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই আসত।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1041وَعَنْ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «المُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْناقاً يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه مسلم
২/১০৪১। মুআবিয়াহ ইবনে আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি, “কিয়ামতের দিনে সমস্ত লোকের চাইতে মুয়াজ্জিনদের গর্দান লম্বা হবে।” (মুসলিম)
3/1042 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَبدِ الرَّحْمَانِ بنِ أَبي صَعْصَعَة: أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الخُدرِيَّ رضي الله عنه، قَالَ لَهُ :إنِّي أَرَاكَ تُحبُّ الغَنَمَ وَالبَادِيَةَ فَإِذَا كُنْتَ فِي غَنَمِك - أَوْ بَادِيتِكَ - فَأذَّنْتَ لِلصَّلاَةِ، فَارْفَعْ صَوْتَكَ بِالنِّدَاءِ، فَإِنَّهُ لاَ يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ المُؤَذِّنِ جِنٌّ، وَلاَ إِنْسٌ، وَلاَ شَيْءٌ، إِلاَّ شَهِدَ لَهُ يَومَ القِيَامَةِ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: سَمِعتُهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم . رواه البخاري
৩/১০৪২। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে স্বা‘স্বা‘আহ হতে বর্ণিত, একদা আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, ‘আমি তোমাকে দেখছি যে, তুমি ছাগল ও মরুভূমি ভালোবাসো। সুতরাং তুমি যখন তোমার ছাগলে বা মরুভূমিতে থাকবে আর নামাযের জন্য আযান দেবে, তখন উচ্চ স্বরে আযান দিয়ো। কারণ মুয়াজ্জিনের আযান ধ্বনি যতদূর পর্যন্ত মানব-দানব ও অন্যান্য বস্তু শুনতে পাবে, কিয়ামতের দিন তারা তার জন্য সাক্ষ্য দেবে।’ আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি এটি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট শুনেছি।’ (বুখারী)
4/1043 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا نُودِيَ بِالصَّلاَةِ، أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ، وَلَهُ ضُرَاطٌ حَتَّى لاَ يَسْمَعَ التَّأذِينَ، فَإِذَا قُضِيَ النِّدَاءُ أقْبَلَ، حَتَّى إِذَا ثُوِّبَ للصَّلاةِ أَدْبَرَ، حَتَّى إِذَا قُضِيَ التَّثْوِيبُ أَقْبَلَ، حَتَّى يَخْطِرَ بَيْنَ المَرْءِ وَنَفْسِهِ، يَقُوْلُ: اذْكُرْ كَذَا وَاذْكُرْ كَذَا - لِمَا لَمْ يَذْكُرْ مِنْ قَبْلُ - حَتَّى يَظَلَّ الرَّجُلُ مَا يَدْرِيْ كَمْ صَلَّى». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১০৪৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন নামাযের জন্য আযান দেওয়া হয়, তখন শয়তান বাতকর্ম করতে করতে পিঠ ঘুরিয়ে পলায়ন করে, যাতে সে আযান শুনতে না পায়। তারপর আযান শেষ হলে ফিরে আসে। শেষ পর্যন্ত যখন ‘তাকবীর’ দেওয়া হয়, তখন আবার পিঠ ঘুরিয়ে পালায়। অতঃপর যখন ‘তাকবীর’ শেষ হয়, তখন আবার ফিরে আসে। পরিশেষে (নামাযী) ব্যক্তির মনে এই কুমন্ত্রণা প্রক্ষেপ করে যে, অমুক জিনিসটা স্মরণ কর, অমুক বস্তুটা খেয়াল কর। সে সমস্ত বিষয় (স্মরণ করায়) যা পূর্বে তার স্মরণে ছিল না। শেষ পর্যন্ত এ ব্যক্তি এরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় যে, সে বুঝতে পারে না, কত রাক‘আত নামায সে আদায় করল।” (বুখারী, মুসলিম)
5/1044 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ فَقُولُوا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ، ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ ؛ فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْراً، ثُمَّ سَلُوا اللهَ لِيَ الوَسِيلَةَ ؛ فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الجَنَّةِ لاَ تَنْبَغِي إِلاَّ لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ، وَأرْجُو أَنْ أَكُونَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لِيَ الوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ». رواه مسلم
৫/১০৪৪। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন যে, “তোমরা যখন আযান শুনবে, তখন (আযানের উত্তরে) মুয়াজ্জিন যা কিছু বলবে, তোমরাও ঠিক তাই বলবে। তারপর আযান শেষে আমার উপর দরূদ পাঠ করবে। কেননা, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে তার প্রতি আল্লাহ দশটি রহমত নাযিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট আমার জন্য ‘অসীলা’ প্রার্থনা করবে। কারণ, ‘অসীলা’ হচ্ছে জান্নাতের এমন একটি স্থান, যা সমস্ত বান্দার মধ্যে কেবল আল্লাহর একটি বান্দা (তার উপযুক্ত) হবে। আর আশা করি, আমিই সেই বান্দা হব। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে, সে (আমার) সুপারিশ প্রাপ্ত হবে।” (মুসলিম)
6/1045 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم «إِذَا سَمِعْتُمُ النِّدَاءَ، فَقُولُوا كَمَا يَقُوْلُ المُؤَذِّنُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১০৪৫। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা আযান ধ্বনি শুনবে, তখন (আযানের উত্তরে) মুয়াজ্জিন যা কিছু বলবে, তোমরাও ঠিক তাই বলো” (বুখারী, মুসলিম)
7/1046 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اَللهم رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاَةِ القَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّداً الوَسِيلَةَ، وَالفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامَاً مَحْمُوداً الَّذِيْ وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتي يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه البخاري
৭/১০৪৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আযান শুনে (আযানের শেষে) এই দো‘আ বলবে,
‘আল্লা-হুম্মা রাব্বা হা-যিহিদ দা‘অতিত্ তা-ম্মাহ, অস্স্বালা-তিল ক্বা-য়িমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল অসীলাতা অলফাযীলাহ, অবআষহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী অ‘আত্তাহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ এই পূর্ণা-ঙ্গ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠা লাভকারী নামাযের প্রভু! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তুমি অসীলা (জান্নাতের এক উচ্চ স্থান) ও মর্যাদা দান কর এবং তাঁকে সেই প্রশংসিত স্থানে পৌঁছাও, যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাঁকে দিয়েছ।
সে ব্যক্তির জন্য কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ অনিবার্য হয়ে যাবে।” (বুখারী)
8/1047 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، أنَّه قَالَ: «مَنْ قَالَ حِيْنَ يَسْمَعُ المُؤَذِّنَ: أَشْهَدُ أَنْ لاَ إلَه إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبّاً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً، وَبِالإِسْلامِ دِيناً، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ» رواه مسلم
৮/১০৪৭। সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আযান শুনে যে ব্যক্তি এই দো‘আ পড়বে,
‘আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, অ আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহু অরাসূলুহ, রাদ্বীতু বিল্লা-হি রাববাঁউ অ বিমুহাম্মাদির রাসূলাঁউ অ বিলইসলা-মি দ্বীনা।’
অর্থাৎ আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দাস ও প্রেরিত রসূল। আল্লাহকে প্রতিপালক বলে মেনে নিয়ে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবীরূপে স্বীকার করে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে গ্রহণ করে আমি সম্মত ও তুষ্ট হয়েছি।
সে ব্যক্তির (ছোট ছোট) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)
9/1048 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «الدُّعَاءُ لاَ يُرَدُّ بَيْنَ الأَذَانِ وَالإقَامَةِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال : (حديث حسن)
৯/১০৪৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আযান ও ইকামতের মধ্য সময়ে কৃত প্রার্থনা রদ করা হয় না।” (অর্থাৎ এ সময়ের দো‘আ কবুল হয়)। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
186- بَابُ فَضْلِ الصَّلَوَاتِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৭: নামাযের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ ٤٥ ﴾ (العنكبوت: ٤٥)
অর্থাৎ “নিশ্চয় নামায অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ হতে বিরত রাখে।” (আনকাবূত ৪৫ আয়াত)
1/1049 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «أَرَأيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرَاً بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ، هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ ؟» قَالُوا: لاَ يَبْقَى مِنْ دَرنهِ شَيْءٌ، قَالَ: «فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الخَطَايَا». متفقٌ عَلَيْهِ .
১/১০৪৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন, “আচ্ছা তোমরা বল তো, যদি কারোর বাড়ির দরজার সামনে একটি নদী থাকে, যাতে সে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তাহলে তার শরীরে কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে কি?” সাহাবীগণ বললেন, ‘(না,) কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে না।’ তিনি বললেন, “পাঁচ অক্তের নামাযের উদাহরণও সেইরূপ। এর দ্বারা আল্লাহ পাপরাশি নিশ্চিহ্ন করে দেন।” (বুখারী)
2/1050 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الخَمْسِ كَمَثَلِ نَهْرٍ جَارٍ غَمْرٍ عَلَى بَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَومٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ». رواه مسلم
২/১০৫০। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পাঁচ অক্তের নামাযের উদাহরণ ঠিক প্রবাহিত নদীর ন্যায়, যা তোমাদের কোনো ব্যক্তির দরজার পাশে থাকে; যাতে সে প্রত্যহ পাঁচবার করে গোসল করে থাকে।” (মুসলিম)
3/1051 وَعَنِ ابنِ مَسعُودٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً أَصَابَ مِنِ امْرَأَةٍ قُبْلَةً، فَأتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَأَخْبَرَهُ فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: ﴿ وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ طَرَفَيِ ٱلنَّهَارِ وَزُلَفٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِۚ إِنَّ ٱلۡحَسَنَٰتِ يُذۡهِبۡنَ ٱلسَّئَِّاتِۚ﴾ (هود: ١١٤) فَقَالَ الرَّجُلُ أَلِيَ هَذَا ؟ قَالَ: «لِجَمِيعِ أُمَّتِي كُلِّهِمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১০৫১। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি এক মহিলাকে চুমা দিয়ে ফেলে। অতঃপর সে (অনুতপ্ত হয়ে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে ঘটনাটি বলে। তখন আল্লাহ এ আয়াত অবতীর্ণ করেন, যার অর্থ: “তুমি নামায প্রতিষ্ঠা কর দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাত্রির প্রথম ভাগে, নিশ্চয় পুণ্য কর্মাদি পাপ-রাশিকে বিদূরিত করে থাকে।” (সূরা হুদ ১১৪ আয়াত) লোকটি বলল, ‘এ বিধান কি কেবল আমার জন্য?’ তিনি বললেন, “আমার উম্মতের সকলের জন্য।” (বুখারী মুসলিম)
4/1052 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُنَّ، مَا لَمْ تُغشَ الكَبَائِرُ». رواه مسلم
৪/১০৫২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পাঁচ অক্তের নামায, এক জুম‘আ থেকে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত এর মধ্যবর্তী সময়ে যেসব পাপ সংঘটিত হয়, সে সবের মোচন-কারী হয় (এই শর্তে যে,) যদি মহাপাপে লিপ্ত না হয়।” (মুসলিম)
5/1053 وَعَنْ عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَا مِنِ امْرِئٍ مُسْلِمٍ تَحْضُرُهُ صَلاَةٌ مَكْتُوبَةٌ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهَا ؛ وَخُشُوعَهَا، وَرُكُوعَهَا، إِلاَّ كَانَتْ كَفَّارَةً لِمَا قَبْلَهَا مِنَ الذُّنُوب مَا لَمْ تُؤتَ كَبِيرةٌ، وَذَلِكَ الدَّهْرَ كُلَّهُ». رواه مسلم
৫/১০৫৩। ‘উসমান ইবনে ‘আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি ফরয নামাযের জন্য ওযু করবে এবং উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করবে। (অতঃপর) তাতে উত্তমরূপে ভক্তি-বিনয়-নম্রতা প্রদর্শন করবে এবং উত্তমরূপে ‘রুকু’ সমাধা করবে। তাহলে তার নামায পূর্বে সংঘটিত পাপ-রাশির জন্য কাফফারা (প্রায়শ্চিত্ত) হয়ে যাবে; যতক্ষণ মহাপাপে লিপ্ত না হবে। আর এ (রহমতে ইলাহির ধারা) সর্বযুগের জন্য প্রযোজ্য।” (মুসলিম)
187- بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الصُّبْحِ وَالْعَصْرِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৮: ফজর ও আসরের নামাযের ফযীলত
1/1054. عَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَلَّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنَّةَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৫৪। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই ঠাণ্ডা নামায পড়ে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
দুই ঠাণ্ডা নামায হচ্ছে: ফজর ও আসরের নামায।
2/1055. وَعَنْ أَبي زُهَيرٍ عُمَارَةَ بنِ رُؤَيْبَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: «لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا» يعني: الفَجْرَ والعَصْرَ . رواه مسلم
২/১০৫৫। আবূ যুহাইর ‘উমারাহ ইবনে রুআইবাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামায) আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।” (মুসলিম)
3/1056. وَعَنْ جُنْدُبِ بنِ سُفيَانَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللهِ، فَانْظُرْ يَا ابْنَ آدَمَ، لاَ يَطْلُبَنَّكَ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيءٍ». رواه مسلم
৩/১০৫৬। জুন্দুব ইবনে সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের নামায পড়ল, সে আল্লাহর জামানত লাভ করল। অতএব হে আদম সন্তান! লক্ষ্য রাখ, আল্লাহ যেন তোমাদের কাছে কোনোভাবেই তার জামানতের কিছু দাবী না করেন।” (মুসলিম)
4/1057. وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ، وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ، وَيجْتَمِعُونَ فِي صَلاَةِ الصُّبْحِ وَصَلاَةِ العَصْرِ، ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ، فَيَسْأَلُهُمُ اللهُ ـ وَهُوَ أعْلَمُ بِهِمْ ـ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادي ؟ فَيَقُوْلونَ: تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ، وَأتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১০৫৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের নিকট দিবারাত্রি ফেরেশতাবর্গ পালাক্রমে যাতায়াত করতে থাকেন। আর ফজর ও আসরের নামাযে তাঁরা একত্রিত হন। অতঃপর যারা তোমাদের কাছে রাত কাটিয়েছেন, তাঁরা ঊর্ধ্বে (আকাশে) চলে যান। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন---অথচ তিনি তাদের সম্পর্কে ভালভাবে পরিজ্ঞাত, ‘তোমরা আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা যখন তাদেরকে ছেড়ে এসেছি, তখন তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল। আর যখন আমরা তাদের নিকট গিয়েছিলাম, তখনও তারা নামাযে প্রবৃত্ত ছিল।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1058. وَعَنْ جَرِيرِ بنِ عَبدِ الله البَجَليِّ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ النبيِّ صلى الله عليه وسلم فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، فَقَالَ: «إنَّكُمْ سَتَرَونَ رَبَّكُمْ كَمَا تَرَوْنَ هَذَا القَمَرَ، لاَ تُضَامُونَ في رُؤْيَتهِ، فَإنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ لاَ تُغْلَبُوا عَلَى صَلاَةٍ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا، فَافْعَلُوا» متفقٌ عَلَيْهِ . وفي رواية: «فَنَظَرَ إِلَى القَمَرِ لَيْلَةَ أرْبَعَ عَشْرَةَ».
৫/১০৫৮। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পূর্ণিমার রাতে বসে ছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা (পরকালে) তোমাদের প্রতিপালককে ঠিক এইভাবে দর্শন করবে, যেভাবে তোমরা এই পূর্ণিমার চাঁদ দর্শন করছ। তাঁকে দেখতে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না। সুতরাং যদি তোমরা সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের আগে (নিয়মিত) নামায পড়তে পরাহত না হতে সক্ষম হও (অর্থাৎ এ নামায ছুটে না যায়), তাহলে অবশ্যই তা বাস্তবায়ন কর।” (বুখারী, মুসলিম) অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি চৌদ্দ তারিখের রাতের চাঁদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন---।
6/1059. وَعَنْ بُرَيْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ العَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ». رواه البخاري
৬/১০৫৯। বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।” (বুখারী)
189- بَابُ فَضْلِ الْمَشْيِ إِلَى الْمَسَاجِدِ
পরিচ্ছেদ - ১৮৯: মসজিদে যাওয়ার ফযীলত
1/1060 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ غَدَا إِلَى المَسْجِدِ أَوْ رَاحَ، أَعَدَّ اللهُ لَهُ فِي الجَنَّةِ نُزُلاً كُلَّمَا غَدَا أَوْ رَاحَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৬০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধ্যায় মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তার জন্য আপ্যায়ন সামগ্রী জান্নাতের মধ্যে প্রস্তুত করেন। সে যতবার সকাল অথবা সন্ধ্যায় গমনাগমন করে, আল্লাহও তার জন্য ততবার আতিথেয়তার সামগ্রী প্রস্তুত করেন।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1061 وَعَنْه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ تَطَهَّرَ فِي بَيْتِهِ، ثُمَّ مَضَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللهِ، لِيَقْضِي فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللهِ، كَانَتْ خُطُواتُهُ، إحْدَاهَا تَحُطُّ خَطِيئَةً، وَالأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً». رواه مسلم
২/১০৬১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে ওযু করে আল্লাহর কোনো ঘরের দিকে এই উদ্দেশ্যে যাত্রা করে যে, আল্লাহর নির্ধারিত কোনো ফরয ইবাদত (নামায) আদায় করবে, তাহলে তার কৃত প্রতিটি দুই পদক্ষেপের মধ্যে একটিতে একটি করে গুনাহ মিটাবে এবং অপরটিতে একটি করে মর্যাদা উন্নত করবে।” (মুসলিম)
3/1062 وَعَنْ أُبيّ بنِ كَعبٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ لاَ أَعْلمُ أَحَداً أبْعَدَ مِنَ المَسْجِدِ مِنْهُ، وَكَانَتْ لاَ تُخْطِئُهُ صَلاَةٌ، فَقِيلَ لَهُ: لَوِ اشْتَرَيْتَ حِمَاراً لِتَرْكَبَهُ فِي الظَّلْمَاءِ وَفِي الرَّمْضَاءِ، قَالَ: مَا يَسُرُّنِي أَنَّ مَنْزِلِي إِلَى جَنْبِ المَسْجِدِ، إنِّي أُرِيدُ أَنْ يُكْتَبَ لِي مَمْشَايَ إِلَى المَسْجِدِ، وَرُجُوعِي إذَا رَجَعْتُ إِلَى أَهْلِي . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قَدْ جَمَعَ اللهُ لكَ ذَلِكَ كُلَّه» رواه مُسلِم
৩/১০৬২। উবাই ইবনে কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক আনসারী ছিল। মসজিদ থেকে তার চাইতে দূরে কোনো ব্যক্তি থাকত বলে আমার জানা নেই। তবুও সে কোনো নামায (মসজিদে জামাতসহ) আদায় করতে ত্রুটি করত না। একদা তাকে বলা হল, ‘যদি একটা গাধা খরিদ করতে এবং রাতের অন্ধকারে ও উত্তপ্ত রাস্তায় তার উপর আরোহণ করতে, (তাহলে ভাল হত)।’ সে বলল, ‘আমার বাসস্থান মসজিদের পাশে হলেও তা আমাকে আনন্দ দিতে পারত না। কারণ আমার মনস্কামনা এই যে, মসজিদে যাবার ও নিজ বাড়ি ফিরার সময় কৃত প্রতিটি পদক্ষেপ যেন লিপিবদ্ধ হয়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার এহেন পুণ্যাগ্রহ দেখে) বললেন, “নিশ্চিতরূপে আল্লাহ তোমার (ভাগ্যে) তা সমস্তই জুটিয়েছেন।” (মুসলিম)
4/1063 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَلَتِ البِقَاعُ حَولَ المَسْجِدِ، فَأَرَادَ بَنُو سَلِمَةَ أَنْ يَنْتَقِلُوا قُرْبَ المَسْجِدِ، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ لَهُمْ: «بَلَغَنِي أَنَّكُم تُرِيدُونَ أَنْ تَنْتَقِلُوا قُرْبَ المَسْجِدِ ؟» قَالُوا: نَعَم، يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ أرَدْنَا ذَلِكَ . فَقَالَ: «بَنِي سَلِمَةَ دِيَارَكُم تُكْتَبْ آثارُكُمْ، دِيَارَكُمْ تُكْتَبْ آثارُكُمْ،» فَقَالُوا: مَا يَسُرُّنَا أَنَّا كُنَّا تَحَوَّلْنَا . رواه مسلم، وروى البخاري معناه من رواية أنس .
৪/১০৬৩। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মসজিদে নববীর আশে-পাশে কিছু জায়গা খালি হল। (এ দেখে) সালেমা গোত্র মসজিদে (নববী)এর নিকট স্থানান্তরিত হবার ইচ্ছা প্রকাশ করল। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারলে তিনি তাদেরকে বললেন, “আমি জানতে পেরেছি যে, তোমরা মসজিদের কাছে চলে আসতে চাঁচ্ছ!” তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমরা এ ইচ্ছা করেছি।’ তিনি বললেন, “হে সালেমা গোত্র! তোমরা নিজেদের (বর্তমান) বাড়িতেই থাক। তোমাদের (মসজিদের পথে) পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হবে। তোমরা নিজেদের (বর্তমান) বাড়িতেই থাক। তোমাদের (মসজিদের পথে) পদক্ষেপসমূহের চিহ্নগুলি লিপিবদ্ধ করা হবে।” তারা বলল, ‘(মসজিদের নিকট) স্থানান্তরিত হওয়া আমাদেরকে আনন্দ দেবে না।’ (মুসলিম, ইমাম বুখারী ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন।)
5/1064 وَعَنْ أَبِي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«إِنَّ أَعْظَمَ النَّاسِ أَجْراً فِي الصَّلاةِ أَبْعَدُهُمْ إلَيْهَا مَمْشىً، فَأَبْعَدُهُمْ، وَالَّذِي يَنْتَظِرُ الصَّلاَةَ حَتَّى يُصَلِّيَهَا مَعَ الإمَامِ أَعظَمُ أَجْراً مِنَ الَّذِي يُصَلِّيهَا ثُمَّ يَنَامُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১০৬৪। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(মসজিদে জামাতসহ) নামায পড়ার ক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি সর্বাধিক বেশী নেকী পায়, যে ব্যক্তি সব চাইতে দূর-দূরান্ত থেকে আসে। আর যে ব্যক্তি (জামাতের সাথে) নামাযের অপেক্ষা না করেই একা নামায পড়ে শুয়ে যায়, তার চাইতে সেই বেশী নেকী পায়, যে নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করে ও ইমামের সাথে জামাত সহকারে নামায আদায় করে।” (বুখারী, মুসলিম)
6/1065 وَعَنْ بُرَيدَة رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَشِّرُوا المَشَّائِينَ فِي الظُّلَمِ إِلَى المَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه أبُو دَاوُدَ وَالتِّرمِذِيُّ
৬/১০৬৫। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রাত্রির অন্ধকারে মসজিদে যাতায়াতকারী লোকাদেরকে কিয়ামতের দিনে পরিপূর্ণ জ্যোতির শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
7/1066 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَلاَ أَدُلُّكُمْ عَلَى مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الخَطَايَا، وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «إِسْبَاغُ الوُضُوءِ عَلَى المَكَارِهِ، وَكَثْرَةُ الخُطَا إلَى المَسَاجِدِ، وَانْتِظَارُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الصَّلاَةِ، فَذَلِكُمُ الرِّبَاطُ، فذَلِكُمُ الرِّبَاطُ». رواه مسلِم
৭/১০৬৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা সমবেত সহচরদের উদ্দেশ্যে) বললেন, “তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না কি, যার দ্বারা আল্লাহ গোনাহসমূহকে মোচন করে দেবেন এবং (জান্নাতে) তার দ্বারা মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই, হে আল্লাহ রসূল!’ তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) কষ্টকর অবস্থায় পরি পূর্ণরূপে ওযু করা, অধিক মাত্রায় মসজিদে গমন করা এবং এক অক্তের নামায আদায় করে পরবর্তী অক্তের নামাযের জন্য প্রতীক্ষা করা। আর এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ। এ হল প্রতিরক্ষা বাহিনীর মত কাজ।” (মুসলিম)
8/1067 وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذا رَأَيْتُمُ الرَّجُلَ يَعْتَادُ المَسَاجِدَ فَاشْهِدُوْا لَهُ بِالْإِيْمَانِ» قال اللَّه عزَّ وجلَّ: { إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللهِ مَنْ آمَن بِاللهِ والْيَومِ الآخِرِ } الآية . رواه الترمذي وقال: حديث حسن .
৮/১০৬৭। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কোনো ব্যক্তিকে তোমরা যখন মসজিদে যাওয়া আসায় অভ্যস্ত দেখতে পাও তখন তার ঈমানদারীর সাক্ষী দাও। কারণ মহান ও পরাক্রমশালী আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করে কেবল তারাই যারা আল্লাহর উপর এবং শেষ দিবসের (পরকালের) উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে...।” (সূরা আত্-তাওবাহ্ঃ ১৮) (তিরমিযী এটিকে হাসান বলেছেন)
190- بَابُ فَضْلِ اِنْتِظَارِ الصَّلَاةِ
পরিচ্ছেদ - ১৯০: নামাযের প্রতীক্ষা করার ফযীলত
1/1068 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَزَالُ أحَدُكُمْ فِي صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ، لاَ يَمنَعُهُ أَنْ يَنقَلِبَ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ الصَّلاةُ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৬৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নামাযের প্রতীক্ষা যতক্ষণ (কাউকে) আবদ্ধ রাখে, ততক্ষণ সে আসলে নামাযের মধ্যেই থাকে; যখন নামায ছাড়া অন্য কোনো কিছু (তাকে) তার স্বীয় পরিবারের কাছে ফিরে যেতে বাধা না দেয়।” (অর্থাৎ নামাযের উদ্দেশ্যে যতক্ষণ বসে থাকে, পুণ্য-প্রাপ্তির দিক দিয়ে সে পরোক্ষভাবে নামাযেই প্রবৃত্ত থাকে।) (বুখারী ও মুসলিম)
2/1069 وَعَنْه رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اَلْمَلائِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ الَّذِيْ صَلَّى فِيهِ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ: اَللهم اغْفِرْ لَهُ، اَللهم ارْحَمْهُ». رواه البُخَارِيُّ
২/১০৬৯। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “ফেরেশতাবর্গ তোমাদের প্রত্যেকের জন্য দো‘আ করে থাকেন, যতক্ষণ সে সেই স্থানে অবস্থান করে, যেখানে সে নামায পড়েছে; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার ওযু নষ্ট হয়েছে; বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! ওর প্রতি সদয় হও।” (বুখারী)
3/1070 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَخَّرَ لَيْلَةً صَلاَةَ العِشَاءِ إِلَى شَطْرِ اللَّيْلِ ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ بَعْدَمَا صَلَّى، فَقَالَ: «صَلَّى النَّاسُ وَرَقَدُوا، وَلَمْ تَزَالُوا فِي صَلاَةٍ مُنْذُ انْتَظَرْتُمُوهَا». رواه البُخَارِيُّ
৩/১০৭০। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায অর্ধেক রাত পর্যন্ত পিছিয়ে দিলেন। অতঃপর নামায পড়ার পর আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, “লোকেরা নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। আর তোমরা নামাযেই ছিলে; যখন থেকে তার অপেক্ষায় ছিলে।” (বুখারী)
191- بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الْجَمَاعَةِ
পরিচ্ছেদ - ১৯১: জামাত সহকারে নামাযের ফযীলত
1/1071 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صَلَاةُ الْجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১০৭১। ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “একাকীর নামায অপেক্ষা জামাতের নামায সাতাশ গুণ উত্তম।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1072 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «صَلاةُ الرَّجُلِ فِي جَمَاعَةٍ تُضَعَّفُ عَلَى صَلاتِهِ فِي بَيْتهِ وَفِي سُوقِهِ خَمْساً وَعِشْرِينَ ضِعْفَاً، وَذَلِكَ أَنَّهُ إِذَا تَوَضَّأ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ، ثُمَّ خَرَجَ إِلَى المَسْجِدِ، لاَ يُخرِجُهُ إِلاَّ الصَّلاةُ، لَمْ يَخْطُ خَطْوَةً إِلاَّ رُفِعَتْ لَهُ بِهَا دَرَجَةٌ، وَحُطَّتْ عَنهُ بِهَا خَطِيئَةٌ، فَإِذَا صَلَّى لَمْ تَزَلِ المَلائِكَةُ تُصَلِّي عَلَيْهِ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ، تَقُولُ: اَللهم صَلِّ عَلَيهِ، اَللهم ارْحَمْهُ، وَلاَ يَزَالُ فِي صَلاَةٍ مَا انْتَظَرَ الصَّلاَةَ». متفقٌ عَلَيهِ، وهذا لفظ البخاري
২/১০৭২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জামাতের সাথে কারো নামায পড়া, তার ঘরে ও বাজারে একা নামায পড়ার চাইতে ২৫ গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ। তা এই জন্য যে, যখন কোনো ব্যক্তি ওযু করে এবং উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করে। অতঃপর মসজিদ অভিমুখে যাত্রা করে। আর একমাত্র নামাযই তাকে (ঘর থেকে) বের করে (অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকে না), তখন তার (পথে চলার সময়) প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি গোনাহ মাফ করা হয়। তারপর সে নামাযান্তে নামায পড়ার জায়গায় যতক্ষণ ওযু সহকারে অবস্থান করে, ফেরেশতাবর্গ তার জন্য দো‘আ করেন; তাঁরা বলেন, ‘হে আল্লাহ! ওর প্রতি অনুগ্রহ কর। হে আল্লাহ! তুমি ওকে রহম কর।’ আর সে ব্যক্তি ততক্ষণ নামাযের মধ্যেই থাকে, যতক্ষণ সে নামাযের প্রতীক্ষা করে।”(বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি বুখারীর)
3/1073 وَعَنْه، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ أَعْمَى، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَيسَ لِي قَائِدٌ يَقُودُنِي إِلَى الْمَسْجِدِ، فَسَأَلَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يُرَخِّصَ لَهُ فَيُصَلِّي فِي بَيْتِهِ، فَرَخَّصَ لَهُ، فَلَّمَا وَلَّى دَعَاهُ، فَقَالَ لَهُ: «هَلْ تَسْمَعُ النِّدَاءَ بِالصَّلاَةِ ؟» قَالَ: نَعَمْ . قَالَ: «فَأَجِبْ». رواه مُسلِم
৩/১০৭৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি অন্ধ লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার কোন পরিচালক নেই, যে আমাকে মসজিদ পর্যন্ত নিয়ে যাবে।’ সুতরাং সে নিজ বাড়িতে নামায পড়ার জন্য আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট অনুমতি চাইল। তিনি তাকে অনুমতি দিলেন। কিন্তু যখন সে পিঠ ঘুরিয়ে রওনা দিল, তখন তিনি তাকে ডেকে বললেন, “তুমি কি আহ্বান (আযান) শুনতে পাও?” সে বলল, ‘জী হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি সাড়া দাও।” (অর্থাৎ মসজিদেই এসে নামায পড়।) (মুসলিম)
4/1074 وَعَنْ عَبدِ الله- وَقِيلَ: عَمْرِو بنِ قَيسٍ - المَعرُوفِ بِابْنِ أُمِّ مَكْتُومٍ الْمُؤَذِّنِ رضي الله عنه أَنَّه قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ المَدينَةَ كَثِيرةُ الهَوَامِّ وَالسِّبَاعِ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«تَسْمَعُ حَيَّ عَلَى الصَّلاةِ حَيَّ عَلَى الفَلاحِ، فَحَيَّهلاً» رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن
৪/১০৭৪। আব্দুল্লাহ (মতান্তরে) আমর ইবনে ক্বায়স ওরফে ইবনে উম্মে মাকতূম মুয়াজ্জিন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মদিনায় সরীসৃপ (সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি বিষাক্ত জন্তু) ও হিংস্র পশু অনেক আছে। (তাই আমাকে নিজ বাড়িতেই নামায পড়ার অনুমতি দিন)।’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কি ‘হাইয়্যা আলাস স্বালাহ ও হাইয়্যা আলাল ফালাহ’ (আযান) শুনতে পাও? (যদি শুনতে পাও), তাহলে মসজিদে এসো।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)
5/1075 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ آمُرَ بِحَطَبٍ فَيُحْتَطَبَ، ثُمَّ آمُرَ بِالصَّلاَةِ فَيُؤذَّنَ لهَاَ، ثُمَّ آمُرَ رَجُلاً فَيَؤُمَّ النَّاسَ، ثُمَّ أُخَالِفَ إِلَى رِجَالٍ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهمْ». متفقٌ عَلَيهِ
৫/১০৭৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন আছে। আমার ইচ্ছা হচ্ছে যে, জ্বালানী কাঠ জমা করার আদেশ দিই। তারপর নামাযের জন্য আযান দেওয়ার আদেশ দিই। তারপর কোন লোককে লোকদের ইমামতি করতে আদেশ দিই। তারপর আমি স্বয়ং সেই সব (পুরুষ) লোকদের কাছে যাই (যারা মসজিদে নামায পড়তে আসেনি) এবং তাদেরকেসহ তাদের ঘর-বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিই।” (বুখারী ও মুসলিম)
(এ দ্বারা প্রমাণ হয় যে, নামায জামাতসহ পড়া ওয়াজিব; যদি কোন শরয়ী ওজর না থাকে।)
6/1076 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَلْقَى اللهَ تَعَالَى غَداً مُسْلِماً، فَلْيُحَافِظْ عَلَى هَؤُلاَءِ الصَّلَوَاتِ حَيْثُ يُنَادَى بِهِنَّ، فَإِنَّ اللهَ شَرَعَ لِنَبِيِّكُمْ صلى الله عليه وسلم سُنَنَ الهُدَى، وَإنَّهُنَّ مِنْ سُنَنِ الهُدَى، وَلَوْ أنَّكُمْ صَلَّيْتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ كَمَا يُصَلِّي هَذَا المُتَخَلِّفُ فِي بَيْتِهِ لَتَرَكْتُمْ سُنَّةَ نَبِيِّكُمْ، وَلَوْ تَرَكْتُمْ سُنَّة نَبِيِّكُم لَضَلَلْتُمْ، وَلَقَدْ رَأيْتُنَا وَمَا يَتَخَلَّفُ عَنْهَا إِلاَّ مُنَافِقٌ مَعْلُومُ النِّفَاقِ، وَلَقَدْ كَانَ الرَّجُلُ يُؤتَى بهِ، يُهَادَى بَيْنَ الرَّجُلَيْنِ حَتَّى يُقَامَ فِي الصَّفِّ . رَوَاهُ مُسلِم
وفي رواية لَهُ قَالَ: إِنّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَّمَنَا سُنَنَ الهُدَى ؛ وَإِنَّ مِنْ سُنَنِ الهُدَى الصَّلاَةَ في المَسْجِدِ الَّذِي يُؤَذَّنُ فِيهِ .
৬/১০৭৬। আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, সে কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহর সঙ্গে মুসলিম হয়ে সাক্ষাৎ করবে, তার উচিত, সে যেন এই নামাযসমূহ আদায়ের প্রতি যত্ন রাখে, যেখানে তার জন্য আযান দেওয়া হয় (অর্থাৎ মসজিদে); কেননা, মহান আল্লাহ তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিমিত্তে হিদায়েতের পন্থা নির্ধারণ করেছেন। আর নিশ্চয় এই নামাযসমূহ হিদায়েতের অন্যতম পন্থা ও উপায়। যদি তোমরা (ফরয) নামায নিজেদের ঘরেই পড়, যেমন এই পিছিয়ে থাকা লোক নিজ ঘরে নামায পড়ে, তাহলে তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার করবে। আর (মনে রেখো,) যদি তোমরা তোমাদের নবীর তরীকা পরিহার কর, তাহলে নিঃসন্দেহে তোমরা পথহারা হয়ে যাবে। আমি আমাদের লোকদের এই পরিস্থিতি দেখেছি যে, নামায (জামাতসহ পড়া) থেকে কেবল সেই মুনাফিক (কপট মুসলিম) পিছিয়ে থাকে, যে প্রকাশ্য মুনাফিক। আর (দেখেছি যে, পীড়িত) ব্যক্তিকে দু’জনের উপর ভর দিয়ে নিয়ে এসে (নামাযের) সারিতে দাঁড় করানো হতো।’ (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমাদেরকে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিদায়েতের (সৎপথ প্রাপ্তির) পন্থা বলে দিয়েছেন। আর হিদায়েতের অন্যতম পন্থা, সেই মসজিদে নামায পড়া, যেখানে আযান দেওয়া হয়।’
7/1077 وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَا مِنْ ثَلاثَةٍ فِي قَرْيةٍ، وَلاَ بَدْوٍ، لاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إلاَّ قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِم الشَّيْطَانُ . فَعَلَيْكُمْ بِالجَمَاعَةِ، فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ مِنَ الغَنَمِ القَاصِيَة». رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن
৭/১০৭৭। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে কোন গ্রাম বা মরু-অঞ্চলে তিনজন লোক বাস করলে এবং সেখানে (জামাতে) নামায কায়েম না করা হলে শয়তান তাদের উপর প্রভুত্ব বিস্তার করে ফেলে। সুতরাং তোমরা জামাতবদ্ধ হও; কেননা ছাগ পালের মধ্য হতে নেকড়ে সেই ছাগলটিকে ধরে খায়, যে (পাল থেকে) দূরে দূরে থাকে।” (আবূ দাউদ-হাসান সূত্রে)
192- بَابُ الْحَثِّ عَلٰى حُضُوْرِ الْجَمَاعَةِ فِي الصُّبْحِ وَالْعِشَاءِ
পরিচ্ছেদ - ১৯২: ফজর ও এশার জামাতে হাযির হতে উৎসাহদান
1/1078 عَن عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَنْ صَلَّى العِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ، فَكَأنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ، وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ، فَكَأنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ» رواه مُسلِم
وفي رواية الترمذي عَنْ عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ شَهِدَ العِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ كَانَ لَهُ قِيَامُ نِصْفِ لَيلَةٍ، وَمَنْ صَلَّى العِشَاءَ وَالفَجْرَ فِي جَمَاعَةٍ، كَانَ لَهُ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ». قَالَ الترمذي: حديث حسن صحيح
১/১০৭৮। উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি জামাতের সাথে এশার নামায আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত কিয়াম (ইবাদত) করল। আর যে ফজরের নামায জামাতসহ আদায় করল, সে যেন সারা রাত নামায পড়ল।” (মুসলিম)
তিরমিযীর বর্ণনায় উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এশার নামাযের জামাতে হাযির হবে, তার জন্য অর্ধ-রাত পর্যন্ত কিয়াম করার নেকী হবে। আর যে এশা সহ ফজরের নামায জামাতে পড়বে, তার জন্য সারা রাত ব্যাপী কিয়াম করার সমান নেকী হবে।” (তিরমিযী, হাসান)
2/1079 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِي العَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً». متفقٌ عَلَيهِ . وقد سبق بِطولِهِ .
২/১০৭৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি লোকে এশা ও ফজরের নামাযের ফযীলত জানতে পারত, তাহলে তাদেরকে হামাগুড়ি বা পাছা ছেঁচড়ে আসতে হলেও তারা অবশ্যই ঐ নামাযদ্বয়ে আসত।” (বুখারী ও মুসলিম) এটি সবিস্তার ১০৪০ নম্বরে গত হয়েছে।
3/1080 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى المُنَافِقِينَ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ وَالعِشَاءِ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْواً». متفقٌ عَلَيهِ
৩/১০৮০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিক (কপট)দের উপর ফজর ও এশার নামায অপেক্ষা অধিক ভারী নামায আর নেই। যদি তারা এর ফযীলত ও গুরুত্ব জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে বা পাছার ভরে অবশ্যই (মসজিদে) উপস্থিত হত।” (বুখারী ও মুসলিম)
193- بَابُ الْأَمْرِ بِالْمُحَافَظَةِ عَلَى الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ
وَالنَّهْيِ الْأَكِيْدِ وَالْوَعِيْدِ الشَّدِيْدِ فِيْ تَرْكِهِنَّ
পরিচ্ছেদ - ১৯৩: ফরয নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হওয়ার নির্দেশ এবং তা ত্যাগ করা সম্বন্ধে কঠোর নিষেধ ও চরম হুমকি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ حَٰفِظُواْ عَلَى ٱلصَّلَوَٰتِ وَٱلصَّلَوٰةِ ٱلۡوُسۡطَىٰ ٢٣٨ ﴾ (البقرة: ٢٣٨)
অর্থাৎ তোমরা নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান হও; বিশেষ করে মধ্যবর্তী (আসরের) নামাযের প্রতি। (সূরা বাকারাহ ২৩৮ আয়াত)
﴿ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ ﴾ [التوبة: ٥]
অর্থাৎ যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামায পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। (সূরা তাওবাহ ৫ আয়াত)
1/1081 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: سَأَلتُ رَسُولَ اللهِ أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا» قُلْتُ: ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ» قُلْتُ: ثُمَّ أيٌّ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيهِ «»
১/১০৮১। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সর্বোত্তম আমল কি?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কি?’ তিনি বললেন, “মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি বললাম, ‘তারপর কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1082 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيهِ
২/১০৮২। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) এই কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ। (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত প্রদান করা। (৪) কা‘বা গৃহের হজ্জ করা। (৫) রমযান মাসে রোযা পালন করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1083 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلٰهَ إلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ، عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ، إلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللهِ». متفقٌ عَلَيهِ
৩/১০৮৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লোকদের বিরুদ্ধে আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত (সশস্ত্র) সংগ্রাম চালাবার আদেশ দেওয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা এই সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ’ এবং নামায প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত আদায় করবে। সুতরাং যখনই তারা সেসব বাস্তবায়ন করবে, তখনই তারা ইসলামী হক ব্যতিরেকে নিজেদের জান-মাল আমার নিকট হতে বাঁচিয়ে নিবে। আর তাদের (আভ্যন্তরীণ বিষয়ের) হিসাব আল্লাহর দায়িত্বে থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1084 وَعَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه، قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَى اليَمَنِ، فَقَالَ: «إنَّكَ تَأْتِي قَوْماً مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأنِّي رَسُولُ اللهِ، فَإنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ تَعَالَى افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صلَوَاتٍ فِي كُلِّ يَومٍ وَلَيلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أنَّ اللهَ تَعَالَى افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أطَاعُوا لِذلِكَ، فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالهِمْ، وَاتَّقِ دَعْوَةَ المَظْلُومِ، فَإِنَّهُ لَيْسَ بَينَهَا وَبَيْنَ اللهِ حِجَابٌ». متفقٌ عَلَيهِ
৪/১০৮৪। মু‘আয ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে ইয়ামেন পাঠালেন ও বললেন, “নিশ্চয় তুমি কিতাব ধারী সম্প্রদায়ের কাছে যাত্রা করছ। সুতরাং তুমি তাদেরকে এই কথার প্রতি আহ্বান জানাবে যে, তারা সাক্ষ্য দেবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল। যদি তারা ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি দিবারাত্রে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যদি তারা এ কথাটিও মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে অবহিত করবে যে, মহান আল্লাহ তাদের (ধনীদের) উপর যাকাত ফরয করেছেন যা তাদের ধনী ব্যক্তিদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের গরীব মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এই আদেশটিও পালন করতে সম্মত হয়, তাহলে তুমি (যাকাত আদায়ের সময়) তাদের উৎকৃষ্ট মাল-ধন হতে বিরত থাকবে এবং মজলুম (অত্যাচারিত) ব্যক্তির বদ্দুআ থেকে দূরে থাকবে। কেননা, তার ও আল্লাহর মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1085 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالكُفرِ، تَرْكَ الصَّلاَةِ». رواه مُسلِم
৫/১০৮৫। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “মানুষ ও কুফরির মধ্যে (পর্দা) হল, নামায ত্যাগ করা।” (মুসলিম)
6/1086 وَعَنْ بُرَيْدَةَ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اَلعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ الصَّلاَةُ، فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ». رواه التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صحيح
৬/১০৮৬। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে চুক্তি আমাদের ও তাদের (কাফের/মুনাফিকদের) মধ্যে বিদ্যমান, তা হচ্ছে নামায (পড়া)। অতএব যে নামায ত্যাগ করবে, সে নিশ্চয় কাফের হয়ে যাবে।” (তিরমিযী হাসান)
7/1087 وَعَنْ شقِيق بن عبدِ الله التَّابِعيِّ المتَّفَقِ عَلَى جَلاَلَتِهِ رَحِمهُ اللهُ، قَالَ: كَانَ أصْحَابُ محَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم لاَ يَرَوْنَ شَيْئاً مِنَ الأعْمَالِ تَرْكُهُ كُفْرٌ غَيْرَ الصَّلاَةِ . رَوَاهُ التِّرمِذِيُّ في كِتابِ الإيمان بإسنادٍ صحيحٍ
৭/১০৮৭। সর্বজন মান্য শাক্বীক ইবনে আব্দুল্লাহ তাবে‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরবৃন্দ নামায ছাড়া অন্য কোনো আমল ত্যাগ করাকে কুফরীমূলক কাজ বলে মনে করতেন না।’ (তিরমিযী, কিতাবুল ঈমান, বিশুদ্ধ সানাদ)
8/1088 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ أَوَّلَ مَا يُحَاسَبُ بِهِ العَبْدُ يَوْمَ القِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلاَتُهُ، فَإنْ صَلَحَتْ، فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ، وَإنْ فَسَدَتْ، فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ، فَإِنِ انْتَقَصَ مِنْ فَرِيضَتِهِ شَيْءٌ، قَالَ الرَّبُّ - عَزَّ وَجَلَّ: اُنْظُرُوا هَلْ لِعَبدِي مِن تَطَوُّعٍ، فَيُكَمَّلُ مِنْهَا مَا انْتَقَصَ مِنَ الفَرِيضَةِ ؟ ثُمَّ تَكُونُ سَائِرُ أَعْمَالِهِ عَلَى هَذَا». رواه التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ
৮/১০৮৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় কিয়ামতের দিন বান্দার (হক্বুক্বুল্লাহর মধ্যে) যে কাজের হিসাব সর্বপ্রথম নেওয়া হবে তা হচ্ছে তার নামায। সুতরাং যদি তা সঠিক হয়, তাহলে সে পরিত্রাণ পাবে। আর যদি (নামায) পণ্ড ও খারাপ হয়, তাহলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি তার ফরয (ইবাদতের) মধ্যে কিছু কম পড়ে যায়, তাহলে প্রভু বলবেন, ‘দেখ তো! আমার বান্দার কিছু নফল (ইবাদত) আছে কি না, যা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূরণ করে দেওয়া হবে?’ অতঃপর তার অবশিষ্ট সমস্ত আমলের হিসাব ঐভাবে গৃহীত হবে। (তিরমিযী হাসান)
194- بَابُ فَضْلِ الصَفِّ الْأَوَّلِ
وَالْأَمْرِ بِإِتْمَامِ الصُّفُوفِ الأَوَّلِ، وَتَسْوِيَتِهَا، وَالتَّرَاصِّ فِيْهَا
পরিচ্ছেদ - ১৯৪: প্রথম কাতারের ফযীলত, প্রথম কাতারসমূহ পূরণ করা, কাতার সোজা করা এবং ঘন হয়ে কাতার বাঁধার গুরুত্ব
1/1089 عَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَة رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «أَلاَ تَصُفُّونَ كَمَا تَصُفُّ المَلائِكَةُ عِندَ رَبِّهَا» ؟ فَقُلنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيفَ تَصُفُّ المَلائِكَةُ عِندَ رَبِّهَا ؟ قَالَ:. «يُتِمُّونَ الصُّفُوفَ الأُوَلَ، وَيَتَرَاصُّونَ فِي الصَّفِّ» رواه مُسلِم
১/১০৮৯। জাবের ইবনে সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বললেন, “ফেরেশতামন্ডলী যেরূপ তাদের প্রভুর নিকট সারিবদ্ধ হন, তোমরা কি সেরূপ সারিবদ্ধ হবে না।” আমরা নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ফেরেশতামন্ডলী তাদের প্রভুর নিকট কিরূপ সারিবদ্ধ হন?’ তিনি বললেন, “প্রথম সারিগুলো পূর্ণ করেন এবং সারিতে ঘন হয়ে দাঁড়ান।” (মুসলিম)
2/1090 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا». متفقٌ عَلَيهِ
২/১০৯০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লোকেরা যদি জানত যে, আযান দেওয়া ও নামাযের প্রথম সারিতে দাঁড়াবার কি মাহাত্ম্য আছে, অতঃপর (তাতে অংশগ্রহণের জন্য) যদি লটারি ছাড়া অন্য কোন উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত।” (বুখারী, মুসলিম)
3/1091 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «خيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا، وَشَرُّهَا آخِرُهَا، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا». رواه مُسلِم
৩/১০৯১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষদের কাতারের মধ্যে সর্বোত্তম কাতার হল প্রথম কাতার, আর নিকৃষ্টতম কাতার হল শেষ কাতার। আর মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হল পিছনের (শেষ) কাতার এবং নিকৃষ্টতম কাতার হল প্রথম কাতার।” (মুসলিম)
4/1092 وَعَنْ أبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى فِي أصْحَابِهِ تَأَخُّراً، فَقَالَ لَهُمْ: «تَقَدَّمُوا فَأْتَمُّوا بِي، وَلْيَأْتَمَّ بِكُمْ مَنْ بَعْدَكُمْ، لاَ يَزَالُ قَوْمٌ يَتَأَخَّرُونَ حَتَّى يُؤَخِّرَهُمُ الله». رواه مُسلِم
৪/১০৯২। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সাহাবীদের মাঝে (প্রথম কাতার থেকে) পিছিয়ে যাওয়া লক্ষ্য করে তাঁদেরকে বললেন, “এগিয়ে এসো, অতঃপর আমার অনুসরণ কর। আর যারা তোমাদের পরে আছে, তারা তোমাদের অনুসরণ করুক। (মনে রাখবে) লোকে সর্বদা পিছিয়ে যেতে থাকে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকে (তাঁর করুণাদানে) পিছনে করে দেন।” (মুসলিম)
5/1093 وَعَنْ أَبِي مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَمْسَحُ مَنَاكِبَنَا فِي الصَّلاَةِ، وَيَقُوْلُ: «اِسْتَوُوا وَلاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ، لِيَلِيَنِي مِنْكُمْ أُولُو الأَحْلاَمِ وَالنُّهَى، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ». رَوَاهُ مُسلِم
৫/১০৯৩। আবূ মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে (কাতার বাঁধার সময়) আমাদের কাঁধে হাত বুলিয়ে বলতেন, “তোমরা সোজা হয়ে দাঁড়াও, তোমরা (কাতার বাঁধার সময়ে) পরস্পরের বিরোধিতা করো না; নচেৎ তোমাদের অন্তরের মধ্যে বিরোধিতা সৃষ্টি হবে। তোমাদের মধ্যে যারা বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী তারা যেন আমার নিকটবর্তী থাকে। তারপর যারা (জ্ঞান ও যোগ্যতায়) তাদের কাছাকাছি হবে (তারা দাঁড়াবে)। তারপর যারা (জ্ঞান ও যোগ্যতায়) তাদের কাছাকাছি হবে (তারা দাঁড়াবে)।” (মুসলিম)
6/1094 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «سَوُّوْا صُفُوفَكُمْ ؛ فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصَّفِّ مِنْ تَمَامِ الصَّلاَةِ». متفقٌ عَلَيهِ، وفي رواية للبخاري: «فَإِنَّ تَسْوِيَةَ الصُّفُوفِ مِنْ إقَامَةِ الصَّلاَةِ» .
৬/১০৯৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নামাযে দাঁড়িয়ে) বললেন, “তোমরা কাতার সোজা কর। কেননা, কাতার সোজা করা নামাযের পরিপূর্ণতার অংশ বিশেষ।” (বুখারী ও মুসলিম)
বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, “কেননা, কাতার সোজা করা নামায প্রতিষ্ঠা করার অন্তর্ভুক্ত।”
7/1095 وَعَنْه، قَالَ: أُقِيمَتِ الصَّلاَةُ فَأقْبَلَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: «أَقِيمُوا صُفُوفَكُمْ وَتَرَاصُّوا ؛ فَإنِّي أَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِيْ». رواه البُخَارِيُّ بلفظه، ومسلم بمعناه .
وفي رواية للبخاري: وَكَانَ أَحَدُنَا يُلْزِقُ مَنْكِبَهُ بِمَنْكِبِ صَاحِبِهِ وَقَدَمَهُ بِقَدَمِهِ.
৭/১০৯৫। পূর্বোক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নামাযের তাকবীর (ইকামত) দেওয়া হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে মুখ করে বললেন, “তোমরা কাতারসমূহ সোজা কর এবং মিলিতভাবে দাঁড়াও। কারণ, তোমাদেরকে আমার পিছন থেকেও দেখতে পাই।” (এই শব্দে বুখারী এবং একই অর্থে মুসলিম বর্ণনা করেছেন।)
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তার পার্শ্বস্থ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলিয়ে দিত।’
8/1096 وَعَنِ النُّعمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «لَتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ». متفقٌ عَلَيهِ
وفي رواية لمسلم: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُسَوِّي صُفُوفَنَا، حَتَّى كَأنَّمَا يُسَوِّي بِهَا القِدَاحَ حَتَّى رَأى أنَّا قَدْ عَقَلْنَا عَنْهُ، ثُمَّ خَرَجَ يَوماً فَقَامَ حَتَّى كَادَ يُكَبِّرُ، فَرَأى رَجُلاً بَادِياً صَدْرُهُ مِنَ الصَّفِّ، فَقَالَ: «عِبَادَ اللهِ ! لتُسَوُّنَّ صُفُوفَكُمْ، أَوْ لَيُخَالِفَنَّ اللهُ بَيْنَ وُجُوهِكُمْ» .
৮/১০৯৬। নু‘মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “অবশ্যই তোমরা নিজেদের কাতার সোজা করে নিবে; নচেৎ আল্লাহ তোমাদের মুখমণ্ডলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাতারগুলি এমনভাবে সোজা করতেন, যেন তিনি এর দ্বারা তীর সোজা করছেন। (তিনি তাতে প্রবৃত্ত থাকতেন) যতক্ষণ না তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানতে পারতেন যে, আমরা তাঁর কথা বুঝে ফেলেছি। একদিন তিনি বাইরে এলে (তারপর মুয়াজ্জিন) তাকবীর দিতে উদ্যত হচ্ছিল, এমন সময় একটি লোকের উপর তাঁর দৃষ্টি পড়ল, যার বুক কাতার থেকে আগে বেরিয়ে ছিল। তিনি বললেন, “আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা নিজেদের কাতার সোজা করে নাও; নচেৎ তোমাদের মুখমণ্ডলের মধ্যে আল্লাহ বিভিন্নতা ও বিভেদ সৃষ্টি করে দিবেন।”
(অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে হিংসা, বিদ্বেষ ও শত্রুতা জন্ম নেবে, যার অনিবার্য পরিণতি হবে অনৈক্য, অশান্তি, দ্বন্দ্ব-কলহ তথা অধঃপতন।)
9/1097 وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَخَلَّلُ الصَّفَّ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَى نَاحِيَةٍ، يَمْسَحُ صُدُورَنَا وَمَنَاكِبَنَا، وَيَقُوْلُ: «لاَ تَخْتَلِفُوا فَتَخْتَلِفَ قُلُوبُكُمْ. وَكَانَ يَقُوْل: إنَّ اللهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الصُّفُوفِ الأُوَلِ». رواه أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن
৯/১০৯৭। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযে কাতারের ভিতরে ঢুকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত চলা ফেরা করতেন এবং আমাদের বুকে ও কাঁধে হাত দিতেন (অর্থাৎ হাত দিয়ে কাতার ঠিক করতেন) আর বলতেন, “তোমরা বিভেদ করো না (অর্থাৎ কাতার থেকে আগে পিছে হটো না।) নচেৎ তোমাদের অন্তর রাজ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হবে।” তিনি আরও বলতেন, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ প্রথম কাতারগুলির উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাবর্গ তাদের জন্য রহমত প্রার্থনা করেন।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)
10/1098 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَقِيمُوا الصُّفُوفَ، وَحَاذُوا بَيْنَ المَنَاكِبِ، وَسُدُّوا الخَلَلَ، وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوانِكُمْ، ولاَ تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ، وَمَنْ وَصَلَ صَفّاً وَصَلَهُ اللهُ، وَمَنْ قَطَعَ صَفّاً قَطَعَهُ اللهُ». رواه أبُو دَاوُدَ بإسناد صحيح
১০/১০৯৮। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলি সোজা করে নাও। পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। (কাতারের) ফাঁক বন্ধ করে নাও। তোমাদের ভাইদের জন্য হাতের বাজু নরম করে দাও। আর শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ো না। (মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তার সাথে মিল রাখবেন, আর যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করবে (মানে কাতারে ফাঁক রাখবে), আল্লাহও তার সাথে (সম্পর্ক) ছিন্ন করবেন।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
11/1099 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «رُصُّوا صُفُوفَكُمْ، وَقَارِبُوا بَيْنَهَا، وَحَاذُوا بِالأَعْنَاقِ؛ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لأَرَى الشَّيْطَانَ يَدْخُلُ مِنْ خَلَلِ الصَّفِّ، كَأَنَّهُ الحَذَفُ». حديث صحيح رَوَاهُ أبُو دَاوُدَ بإسنادٍ عَلَى شرط مسلم
১১/১০৯৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঘন করে কাতার বাঁধ এবং কাতারগুলিকে পরস্পরের কাছাকাছি রাখ। ঘাড়সমূহ একে অপরের বরাবর কর। সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ আছে, কাতারের মধ্যেকার ফাঁকে শয়তানকে আমি প্রবেশ করতে দেখতে পাই, যেন তা কালো ছাগলের ছানা।” (এ হাদিসটি বিশুদ্ধ, আবূ দাউদ মুসলিমের শর্তানুযায়ী বর্ণনা করেছেন।)
حذف এর অর্থ কালো ছোট জাতের ছাগল, যা ইয়ামেনে পাওয়া যায়।
12/1100 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَتِمُّوا الصَّفَّ المُقَدَّمَ، ثُمَّ الَّذِي يَلِيهِ، فَمَا كَانَ مِنْ نَقْصٍ فَلْيَكُنْ في الصَّفِّ المُؤَخَّرِ». رواه أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن
১২/১১০০। পূর্বোক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (নামায প্রাক্কালে) বলেন, “তোমরা আগের কাতারটি পূর্ণ করে নাও। তারপর ওর সংলগ্ন (কাতার পূর্ণ কর)। তারপর যে অসম্পূর্ণতা থাকে, তা শেষ কাতারে থাকুক।” (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
13/1101 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللَّه صلى الله عليه وسلم:إِنَّ اللَّه وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّوْنَ عَلىٰ مَيَامِنِ الصُّفُوْفِ» رواه أبو داود بإِسناد عَلى شرْطِ مُسْلِمٍ، وفيهِ رجلٌ مُخْتَلَفٌ في توْثِيقِهِ .
১৩/১১০১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ অবশ্যই কাতারগুলোর ডানদিকের উপর রহমত বর্ষণ করেন এবং আল্লাহর ফেরেশতারা তাদের জন্য দো‘আ করতে থাকেন। (আবূ দাউদ)
14/1102 وَعَنِ البَرَاءِ قَالَ: كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَحْبَبْنَا أَنْ نَكُونَ عَنْ يَمِينهِ، يُقْبِلُ عَلَيْنَا بِوَجْهِهِ، فَسَمِعْتُهُ يَقُوْل: «رَبِّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ - أَو تَجْمَعُ - عِبَادَكَ»رواه مُسلِمٌ
১৪/১১০২। বারা’ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পিছনে যখন নামায পড়তাম তখন তাঁর ডান দিকে (দাঁড়ানো) পছন্দ করতাম। যাতে তিনি স্বীয় মুখমণ্ডল আমাদের দিকে ফিরান। বস্তুত আমি (একদিন) তাঁকে বলতে শুনেছি, ‘রাবিব ক্বিনী ‘আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আসু (অথবা তাজমাউ) ‘ইবা-দাক।’ হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার সেই দিনের আযাব থেকে বাঁচিয়ো, যেদিন তুমি স্বীয় বান্দাদেরকে কবর থেকে উঠাবে কিংবা হিসাবের জন্য জমা করবে। (মুসলিম)
১৫/১১০৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা ইমামকে কাতারের ঠিক মাঝখানে কর। আর কাতারের ফাঁক বন্ধ করো।” (আবূ দাউদ, হাদিসের প্রথমাংশ সহীহ নয়।)
195- بابُ فَضْلِ السُّنَنِ الرَّاتِبَةِ مَعَ الفَرَائِضِ
وَبَيَانِ أَقَلِّهَا وَأَكْمَلِهَا وَمَا بَيْنَهُمَا
পরিচ্ছেদ - ১৯৫: ফরয নামাযের সাথে সুন্নাতে ‘মুআক্কাদাহ’ পড়ার ফযীলত। আর সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ ও তার মাঝামাঝি রাকআত-সংখ্যার বিবরণ
1/1104 وَعَنْ أُمِّ المُؤْمِنِينَ أُمِّ حَبِيبَةَ رَمْلَةَ بِنْتِ أَبِي سُفْيَانَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَتْ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلهِ تَعَالىَ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْ عَشرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعاً غَيرَ الفَرِيضَةِ، إِلاَّ بَنَى اللهُ لَهُ بَيْتاً فِي الجَنَّةِ، أَوْ إِلاَّ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِي الجَنَّةِ». رواه مُسلِمٌ
১/১১০৪। মুমিন জননী উম্মে হাবীবাহ রামলা বিনতে আবূ সুফিয়ান (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি আল্লাহর (সন্তুষ্টি অর্জনের) জন্য প্রত্যহ ফরয নামায ছাড়া বারো রাক‘আত সুন্নত নামায পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ করেন অথবা তার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করা হয়।” (মুসলিম)
2/1105 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتْينِ بَعْدَهَا، وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الجُمُعَةِ، وَرَكْعَتَينِ بَعدَ المَغْرِبِ، وَرَكْعَتَينِ بَعدَ العِشَاءِ . متفقٌ عَلَيهِ
২/১১০৫। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে আমি দু’ রাকআত যোহরের (ফরযের) আগে, দু’ রাকআত তার পরে এবং দু’ রাকআত জুমার পরে, দু’ রাকআত মাগরিব বাদ, আর দু’ রাকআত নামায এশার (ফরযের) পরে পড়েছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1106 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ مُغَفَّلٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ، بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلاَةٌ، بَيْنَ كُلِّ أَذَانَينِ صَلاَةٌ». قال في الثَّالِثةِ: «لِمَنْ شَاءَ». متفقٌ عَلَيهِ
৩/১১০৬। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে নামায আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে নামায আছে। প্রত্যেক দুই আযানের মাঝখানে নামায আছে।” তৃতীয়বারে বললেন, “যে চায় তার জন্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
‘দুই আযানের মাঝখানে’ অর্থাৎ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে।
196- بَابُ تَأْكِيْدِ رَكْعَتَيْ سُنَّةِ الصُّبْحِ
পরিচ্ছেদ - ১৯৬: ফজরের দু’ রাকআত সুন্নতের গুরুত্ব
1/1107 عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَدَعُ أَرْبَعاً قَبْلَ الظُّهْرِ، وَرَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الغَدَاةِ . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
১/১১০৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের (ফরয নামাযের) পূর্বে চার রাকআত ও ফজরের আগে দু’ রাকআত নামায কখনো ত্যাগ করতেন না। (বুখারী)
2/1108 وَعَنْها، قَالَتْ: لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى شَيْءٍ مِنَ النَّوَافِلِ أَشَدَّ تَعَاهُداً مِنهُ عَلَى رَكْعَتَي الفَجْرِ . متفقٌ عَلَيهِ
২/১১০৮। উক্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাকআত সুন্নতের প্রতি যেরূপ যত্নবান ছিলেন, সেরূপ অন্য কোনো নফল নামাযের প্রতি ছিলেন না।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1109 وَعَنْها، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «رَكْعَتَا الفَجْرِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا». رواه مُسلِمٌ . وفي رواية: «لَهُمَا أحَبُّ إليَّ مِنَ الدُّنْيَا جَمِيعاً»
২/১১০৯। উক্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ফজরের দু’ রাকআত (সুন্নত) পৃথিবী ও তাতে যা কিছু আছে সবার চেয়ে উত্তম।” (মুসলিম) অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, “ঐ দুই রাকআত আমার নিকট দুনিয়ার সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়।”
4/1110 وَعَنْ أَبِي عَبدِ اللهِ بِلاَلِ بنِ رَبَاح رضي الله عنه مُؤَذِّنِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَنَّهُ أَتَى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِيُؤْذِنَهُ بِصَلاَةِ الغَدَاةِ، فَشَغَلَتْ عَائِشَةُ بِلالاً بِأَمْرٍ سَأَلَتْهُ عَنْهُ، حَتَّى أَصْبَحَ جِدّاً، فَقَامَ بِلاَلٌ فَآذَنَهُ بِالصَّلاَةِ، وَتَابَعَ أَذَانَهُ، فَلَمْ يَخْرُجْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَلَمَّا خَرَجَ صَلَّى بِالنَّاسِ، فَأَخْبَرَهُ أَنَّ عَائِشَةَ شَغَلَتْهُ بِأَمْرٍ سَأَلَتْهُ عَنْهُ حَتَّى أَصْبَحَ جِدّاً، وَأنَّهُ أَبْطَأَ عَلَيْهِ بِالخُرُوجِ، فَقَالَ - يَعْنِي النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم «إنِّي كُنْتُ رَكَعْتُ رَكْعْتَي الفَجْرِ» فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إنَّكَ أَصْبَحْتَ جِدّاً ؟ فقَالَ: «لَوْ أَصْبَحْتُ أَكْثَرَ مِمَّا أَصْبَحْتُ، لَرَكَعْتُهُمَا، وَأَحْسَنْتُهُمَا وَأَجْمَلْتُهُمَا». رواه أبُو دَاوُدَ بإسناد حسن
৪/১১১০। আবূ আব্দুল্লাহ বিলাল ইবনে রাবাহ- যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুয়াজ্জিন ছিলেন।- (একবার) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ফজরের নামাযের খবর দেবার মানসে তাঁর নিকট হাযির হলেন। তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁকে এমন বিষয়ে ব্যস্ত রাখলেন, তিনি যে সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভোর খুব বেশি পরিস্ফুট হয়ে পড়ল, সুতরাং বিলাল দাঁড়িয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নামাযের খবর দিলেন এবং বারংবার জানাতে থাকলেন। কিন্তু তিনি বাইরে আসলেন না। (তার কিছুক্ষণ পর) তিনি আসলেন ও লোকদেরকে নিয়ে নামায পড়লেন। তখন বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালেন যে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁকে এমন বিষয়ে ব্যস্ত রেখেছিলেন, যে সম্পর্কে তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত খুব ফর্সা হয়ে গেল এবং তিনিও বাইরে আসতে দেরি করলেন। তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “আমি ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত পড়ছিলাম।” বিলাল বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো একদম সকাল করে দিলেন।’ তিনি বললেন, “তার চেয়েও বেশি সকাল হয়ে গেলেও, আমি ঐ দু’ রাকআত সুন্নত পড়তাম এবং সুন্দর ও উত্তমরূপে পড়তাম।” (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)
197- بَابُ تَخْفِيْفِ رَكْعَتَي الْفَجْرِ وَبَيَانِ مَا يُقْرَأُ فِيْهِمَا، وَبَيَانِ وَقْتِهِمَا
পরিচ্ছেদ - ১৯৭: ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত হাল্কা পড়া, তাতে কি সূরা পড়া হয় এবং তার সময় কি?
1/1111 عَن عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ بَيْنَ النِّدَاءِ وَاِلإقَامَةِ مِنْ صَلاَةِ الصُّبْحِ . متفقٌ عَلَيهِ .
وفي روايَةٍ لَهُمَا: يُصَلِّي رَكْعَتَي الفَجْرِ، فَيُخَفِّفُهُمَا حَتَّى أَقُولَ: هَلْ قَرَأَ فِيهِمَا بِأُمِّ القُرْآنِ .
وفي رواية لمسلم: كَانَ يُصلِّي رَكْعَتَي الفَجْرِ إِذَا سَمِعَ الأَذَانَ وَيُخَفِّفُهُمَا. وفي رواية: إذَا طَلَعَ الفَجْرُ.
১/১১১১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সময় আযান ও ইকামতের মাঝখানে সংক্ষিপ্ত দু’ রাকআত নামায পড়তেন। (বুখারী ও মুসলিম)
উভয়ের অন্য বর্ণনায় আছে, আযান শোনার পর তিনি ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত এত সংক্ষেপে ও হাল্কা-ভাবে পড়তেন যে, আমি (মনে মনে) বলতাম, ‘তিনি সূরা ফাতেহাও পাঠ করলেন কি না (সন্দেহ)?’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, ‘যখন তিনি আযান শুনতেন তখন ঐ দু’ রাকআত সংক্ষিপ্তভাবে পড়তেন।’ অন্য বর্ণনায় আরও আছে, ‘যখন ফজর উদয় হয়ে যেত।’
2/1112 وَعَنْ حَفصَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَذَّنَ المُؤَذِّنُ لِلْصُّبْحِ وَبَدَا الصُّبْحُ، صَلَّى رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ . متفقٌ عَلَيهِ.
وفي رواية لمسلم: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا طَلَعَ الفَجْرُ لاَ يُصَلِّي إِلاَّ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ .
২/১১১২। হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, যখন মুয়াজ্জিন আযান দিত ও ফজর উদয় হত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায পড়তেন। (বুখারী-মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, যখন ফজর উদয় হত তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায ছাড়া আর কিছু পড়তেন না। (বুখারী ও মুসলিম)
3/1113 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، وَيُوتِرُ بِرَكْعَةٍ مِنْ آخِرِ اللَّيْلِ، وَيُصَلِّي الرَّكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الغَدَاةِ، وَكَأَنَّ الأَذَانَ بِأُذُنَيْهِ . متفقٌ عَلَيهِ
৩/১১১৩। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে (তাহাজ্জুদের নামায) দুই দুই রাকআত করে পড়তেন। আর রাতের শেষ ভাগে এক রাকআত বিতির পড়তেন। ফজরের নামাযের পূর্বে দু’ রাকআত (সুন্নত) পড়তেন। আর এত দ্রুত পড়তেন যেন তাকবীর-ধ্বনি তাঁর কানে পড়ছে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/1114 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقْرَأُ فِي رَكْعَتَي الفَجْرِ فِي الأُولَى مِنْهُمَا: ﴿ قُولُوٓاْ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيۡنَا﴾ [البقرة: ١٣٦] الآيَةَ الَّتِي فِي البَقَرَةِ، وَفِي الآخِرَةِ مِنْهُمَا: ﴿ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَٱشۡهَدۡ بِأَنَّا مُسۡلِمُونَ ٥٢ ﴾ [ال عمران: ٥٢] .
وفي رواية: وَفِي الآخِرَةِ الَّتي فِي آلِ عِمْرَانَ: ﴿تَعَالَوۡاْ إِلَىٰ كَلِمَةٖ سَوَآءِۢ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكُمۡ﴾ [ال عمران: ٦٤]
৪/১১১৪। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সুন্নত নামাযের প্রথম রাকআতে ‘ক্বূলূ আমান্না বিল্লাহি অমা উনযিলা ইলাইনা’ (১৩৬নং) শেষ আয়াত পর্যন্ত - যেটি সূরা বাকারায় আছে - পাঠ করতেন। আর তার দ্বিতীয় রাকআতে ‘আমান্না বিল্লাহি অশহাদ বিআন্না মুসলিমূন’ (আলে ইমরানের ৫২নং আয়াত) পড়তেন।
অন্য বর্ণনায় আছে, দ্বিতীয় রাকআতে আলে-ইমরানের (৬৪নং আয়াত) ‘তাআলাউ ইলা কালিমাতিন সাওয়াইন বাইনানা অবাইনাকুম’ পাঠ করতেন। (মুসলিম)
5/1115 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ فِي رَكْعَتَي الفَجْرِ: { قُلْ يَا أَيُّهَا الكَافِرُونَ } وَ { قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ }. رَوَاهُ مُسلِم
৫/১১১৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’ রাকআত সুন্নতে সূরা ‘ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরূন’ ও ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতেন। (মুসলিম)
৬/১১১৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এক মাস ব্যাপী লক্ষ্য করে দেখলাম, তিনি ফজরের আগে দু’রাকআত সুন্নত নামাযে এই দুই সূরা ‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ ও ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পাঠ করতেন। (তিরমিযী, হাসান)
198- بَابُ اِسْتِحْبَابِ الْاِضْطِجَاعِ بَعْدَ رَكْعَتَي الْفَجْرِ
عَلٰى جَنْبِهِ الْأَيْمَنِ وَالْحَثِّ عَلَيْهِ سَوَاءً كَانَ تَهَجَّدَ بِاللَّيْلِ أَمْ لَا
পরিচ্ছেদ - ১৯৮: তাহাজ্জুদের নামায পড়ুক আর না পড়ুক ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত পড়ে ডান পাশে শোয়া মুস্তাহাব ও তার প্রতি উৎসাহ দান।
1/1117 عن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إذَا صَلَّى رَكعَتَي الفَجْرِ، اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَن . رَوَاهُ البُخَارِي
১/১১১৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত পড়তেন, তখন ডান পাশে শুয়ে (বিশ্রাম) নিতেন।’ (বুখারী)
2/1118 وَعَنْها، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِيمَا بَيْنَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلاَةِ العِشَاءِ إلَى الفَجْرِ إِحْدَى عَشرَةَ رَكْعَةً، يُسَلِّمُ بَيْنَ كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَيُوتِرُ بِوَاحِدَةٍ، فَإِذَا سَكَتَ المُؤَذِّنُ مِنْ صَلاَةِ الفَجْرِ، وَتَبَيَّنَ لَهُ الفَجْرُ، وَجَاءهُ المُؤَذِّنُ، قَامَ فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَينِ، ثُمَّ اضْطَجَعَ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ، هكَذَا حَتَّى يأْتِيَهُ المُؤَذِّنُ لِلإِقَامَةِ . رَوَاهُ مُسلِم
২/১১১৮। উক্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামায শেষ করার পর থেকে নিয়ে ফজরের নামায অবধি এগার রাকআত (তাহাজ্জুদের নামায পড়তেন)। প্রত্যেক দু’ রাকআতে সালাম ফিরতেন এবং এক রাকআত বিতির পড়তেন। অতঃপর যখন মুয়াজ্জিন ফজরের নামাযের আযান দিয়ে চুপ হত এবং ফজর তাঁর সামনে উজ্জ্বল হয়ে উঠত, আর মুয়াজ্জিন (ফজরের সময় সম্পর্কে অবহিত করার জন্য) তাঁর কাছে আসত, তখন তিনি উঠে সংক্ষিপ্তভাবে দু’ রাকআত নামায পড়ে নিতেন। তারপর ডান পার্শে শুয়ে (জিরিয়ে) নিতেন। এইভাবে মুয়াজ্জিন নামাযের তাকবীর দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে হাযির হওয়া পর্যন্ত (তিনি শুয়ে থাকতেন)।’ (মুসলিম)
‘প্রত্যেক দুই রাক‘আতে সালাম ফিরতেন।’ এরূপ মুসলিম শরীফে উল্লিখিত হয়েছে। এর মানে ‘প্রত্যেক দু’ রাকআত পর।’
৩/১১১৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন ফজরের দু’ রাকআত সুন্নত পড়বে, তখন সে যেন তার ডান পাশে শুয়ে যায়।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী বিশুদ্ধ সূত্রে, তিরমিযীর উক্তি: হাদিসটি হাসান সহীহ)
199- بَابُ سُنَّةِ الظُّهْرِ
পরিচ্ছেদ - ১৯৯: যোহরের সুন্নত
1/1120 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ الظُّهْرِ وَرَكْعَتَيْنِ بَعْدَهَا . متفقٌ عَلَيهِ
১/১১২০। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যোহরের আগে দু’ রাকআত ও তার পরে দু’ রাকআত সুন্নত পড়েছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/1121 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يَدَعُ أَرْبَعاً قَبْلَ الظُّهْرِ . رَوَاهُ البُخَارِيُّ
২/১১২১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যোহরের আগে চার রাক‘আত সুন্নত ত্যাগ করতেন না। (বুখারী)
3/1122 وَعَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فِي بَيْتِي قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعاً، ثُمَّ يَخْرُجُ، فَيُصَلِّي بِالنَّاسِ، ثُمَّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ . وَكَانَ يُصَلِّي بِالنَّاسِ المَغْرِبَ، ثُمَّ يَدْخُلُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، وَيُصَلِّي بِالنَّاسِ العِشَاءِ، وَيَدْخُلُ بَيتِي فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ . رَوَاهُ مُسلِم
৩/১১২২। উক্ত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে যোহরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নত পড়তেন, তারপর (মসজিদে) বের হয়ে গিয়ে লোকাদেরকে নিয়ে নামায পড়তেন। অতঃপর ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দু’ রাকআত সুন্নত পড়তেন। তিনি লোকাদেরকে নিয়ে মাগরিবের নামায পড়ার পর আমার ঘরে প্রবেশ করতেন এবং দু’ রাক‘আত সুন্নত পড়তেন। (অনুরূপভাবে) তিনি লোকাদেরকে নিয়ে এশার নামায পড়তেন, অতঃপর আমার ঘরে ফিরে এসে দু’ রাক‘আত সুন্নত পড়তেন।’ (মুসলিম)
4/1123 وَعَنْ أُمِّ حَبِيبَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ حَافَظَ عَلَى أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَأَرْبَعٍ بَعْدَهَا، حَرَّمَهُ اللهُ عَلَى النَّارِ». رواه أبُو دَاوُدَ وَالتِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ صحيح
৪/১১২৩। উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি যোহরের ফরয নামাযের পূর্বে চার রাকআত ও পরে চার রাকআত সুন্নত পড়তে যত্নবান হবে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন।” (আবূ দাউদ, তিরিমিযী হাসান সহীহ)
5/1124 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ السَّائِبِ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي أَرْبَعاً بَعْدَ أَنْ تَزُولَ الشَّمْسُ قَبْلَ الظُّهْرِ، وَقَال: «إِنَّهَا سَاعَةٌ تُفْتَحُ فِيهَا أَبْوَابُ السَّمَاءِ، فَأُحِبُّ أَنْ يَصْعَدَ لِي فِيهَا عَمَلٌ صَالِحٌ». رواه التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ
৫/১১২৪। আব্দুল্লাহ ইবনে সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সূর্য (পশ্চিম গগনে) ঢলে যাবার পর, যোহরের ফরযের পূর্বে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার রাকআত সুন্নত নামায পড়তেন। আর বলতেন, “এটা এমন সময়, যখন আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দেওয়া হয়। তাই আমার পছন্দ যে, সে সময়েই আমার সৎকর্ম ঊর্ধ্বে উঠুক।” (তিরমিযী হাসান)
6/1125 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا لَمْ يُصَلِّ أَربَعاً قَبلَ الظُّهْرِ، صَلاَّهُنَّ بَعْدَهَا . رَوَاهُ التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ
৬/১১২৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যোহরের পূর্বে চার রাক‘আত সুন্নত পড়তে সুযোগ পেতেন না, তখন তার পরে তা পড়ে নিতেন। (তিরমিযী হাসান)
200- بَابُ سُنَّةِ الْعَصْرِ
পরিচ্ছেদ - ২০০: আসরের সুন্নতের বিবরণ
1/1126. عَن عَلِيِّ بنِ أَبِي طَالِبٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي قَبْلَ العَصْرِ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ، يَفْصِلُ بَيْنَهُنَّ بِالتَّسْلِيمِ عَلَى المَلائِكَةِ المُقَرَّبِينَ، وَمَنْ تَبِعَهُمْ مِنَ المُسْلِمِينَ وَالمُؤْمِنِينَ . رَوَاهُ التِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ
১/১১২৬। আলী ইবনে আবী তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের ফরয নামাযের আগে চার রাকআত সুন্নত পড়তেন। তার মাঝখানে নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গ ও তাঁদের অনুসারী মুসলিম ও মুমিনদের প্রতি সালাম পেশ করার মাধ্যমে পার্থক্য করতেন।’ (অর্থাৎ চার রাকআতে দু’ রাকআত পর পর সালাম ফিরতেন।) (তিরমিযী হাসান)
2/1127 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «رَحِمَ اللهُ امْرَءاً صَلَّى قَبْلَ العَصْرِ أَرْبَعاً». رواه أبُو دَاوُدَ وَالتِّرمِذِيُّ، وَقَالَ: حَدِيثٌ حَسَنٌ.
২/১১২৭। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে ব্যক্তি আসরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নত পড়ে।” (আবূ দাঊদ, তিরমিযী হাসান)
3/1128 وعنْ عليِّ بن أَبي طالبٍ، رَضِيَ اللَّه عنهُ، أَنَّ النبيَّ صلى الله عليه وسلم كانَ يُصَلِّي قَبْلَ العَصرِ رَكْعَتَيْنِ .
৩/১১২৮। আলী ইবনু আবী ত্বালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মাঝে মাঝে) আসরের আগে দু রাক‘আত (সুন্নাত) পড়তেন। (আবূ দাউদ) হাদিসটি দুর্বল।
201- بَابُ سُنَّةِ الْمَغْرِبِ بَعْدَهَا وَقَبْلَهَا
পরিচ্ছেদ - ২০১: মাগরিবের ফরয নামাযের পূর্বে ও পরের সুন্নতের বিবরণ
এ বিষয়ে ইবনে উমার ও আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বিশুদ্ধ হাদিস (১১০৫, ১১২২ নম্বরে) গত হয়েছে; যাতে আছে যে, মাগরিবের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ রাকআত নামায পড়তেন।
1/1129 وَعَنْ عبد الله بن مُغَفَّلٍ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صَلُّوا قَبْلَ المَغْرِبِ». قال في الثَّالِثَةِ: «لِمَنْ شَاءَ». رواه البُخَارِيُّ
১/১১২৯। আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’বার) বললেন, “তোমরা মাগরিবের পূর্বে (দু’ রাকআত) নামায পড়।” অতঃপর তৃতীয় বারে তিনি বললেন, “যার ইচ্ছা হবে, (সে পড়বে।)” (বুখারী)
*(যদিও মাগরিবের পূর্বে এটি সুন্নাতে রাতেবা নয় তবুও তিনবার এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করাতে এর গুরুত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। এর প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ দান তথা জোর দেওয়ায় এর মুস্তাহাব হওয়ার কথা প্রতিপন্ন হয়।)
2/1130 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: لَقَدْ رَأيْتُ كِبَارَ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَبْتَدِرُونَ السَّوَارِيَ عِندَ المَغْرِبِ. رَوَاهُ البُخَارِيُّ
২/১১৩০। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বড় বড় সাহাবীদেরকে দেখেছি, তাঁরা মাগরিবের সময় থামগুলোর দিকে দ্রুত বেগে অগ্রসর হতেন।’ (দু’ রাকআত সুন্নত পড়ার উদ্দেশ্যে।) (বুখারী)
3/1131 وَعَنْه، قَالَ: كُنَّا نُصَلِّي عَلَى عَهدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ غُرُوبِ الشَّمْسِ قَبْلَ المَغْرِبِ، فَقِيلَ: أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَلاَّهُمَا ؟ قَالَ: كَانَ يَرَانَا نُصَلِّيهِمَا فَلَمْ يَأمُرْنَا وَلَمْ يَنْهَنَا . رواه مسلم
৩/১১৩১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে সূর্যাস্তের পর মাগরিবের ফরয নামাযের আগে দু’ রাকআত সুন্নত পড়তাম।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দু’ রাকআত পড়তেন কি?’ তিনি বললেন, ‘তিনি আমাদেরকে ওই দু’ রাকআত পড়তে দেখতেন, কিন্তু আমাদেরকে (তার জন্য) আদেশও করতেন না এবং তা থেকে বারণও করতেন না।’ (মুসলিম)
4/1132 وَعَنْه، قَالَ: كُنَّا بِالمَدِينَةِ فَإِذَا أَذَّنَ المُؤَذِّنُ لِصَلاَةِ المَغْرِبِ، ابْتَدَرُوا السَّوَارِيَ، فَرَكَعُوا رَكْعَتَيْنِ، حَتَّى إِنَّ الرَّجُلَ الغَرِيبَ لَيَدْخُلُ المَسْجِدَ فَيَحْسَبُ أَنَّ الصَّلاَةَ قَدْ صُلِّيَتْ مِنْ كَثْرَةِ مَنْ يُصَلِّيهِمَا . رواه مسلم
৪/১১৩২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা মদিনাতে ছিলাম। যখন মুয়াজ্জিন মাগরিবের আযান দিত, তখন লোকেরা থামগুলির দিকে দ্রুত অগ্রসর হত এবং দু’ রাকআত নামায পড়ত। এমনকি কোন বিদেশী অচেনা মানুষ মসজিদে এলে, অধিকাংশ লোকের ঐ দু’ রাকআত পড়া দেখে মনে করত যে, (মাগরিবের ফরয) নামায পড়া হয়ে গেছে (এবং তারা পরের সুন্নত পড়ছে)।’ (মুসলিম)
202- بَابُ سُنَّةِ الْعِشَاءِ بَعْدَهَا وَقَبْلَهَا
পরিচ্ছেদ - ২০২: এশার আগে ও পরের সুন্নতসমূহের বিবরণ
এ বিষয়ে বিগত ইবনে উমরের (১১০৫ নং) হাদিস, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এশার পর দু’ রাকআত সুন্নত পড়েছি’ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফ্ফাল কর্তৃক বর্ণিত (১১০৬নং) হাদিস, ‘প্রত্যেক দুই আযানের মধ্যবর্তী সময়ে নামায আছে।’ উল্লিখিত হয়েছে।
203- بَابُ سُنَّةِ الْجُمُعَةِ
পরিচ্ছেদ - ২০৩: জুমুআর সুন্নত
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পূর্বোক্ত (১১০৫নং) হাদিস গত হয়েছে। তাতে উল্লিখিত হয়েছে যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জুমুআর পর দু’ রাকআত সুন্নত পড়েছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
1/1133 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُم الجُمُعَةَ، فَلْيُصَلِّ بَعْدَهَا أَرْبعاً». رواه مسلم
১/১১৩৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি জুমার নামায আদায় করবে, তখন সে যেন তারপর চার রাকআত (সুন্নত) পড়ে।” (মুসলিম)
2/1134 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ لاَ يُصَلِّي بَعْدَ الجُمُعَةِ حَتَّى يَنْصَرِفَ، فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ في بَيْتِهِ . رواه مسلم
২/১১৩৪। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার পর (মসজিদ থেকে) ফিরে না আসা পর্যন্ত কোন সুন্নত নামায পড়তেন না। সুতরাং নিজ বাড়িতে (এসে) দু’ রাকআত নামায পড়তেন। (মুসলিম)
204- بَابُ اِسْتِحْبَابِ جَعْلِ النَّوَافِلِ فِي الْبَيْتِ سَوَاءً الرَّاتِبَةُ وَغَيْرُهَا وَالْأَمْرِ بِالتَّحْوِيْلِ لِلنَّافِلَةِ مِنْ مَّوْضَعِ الْفَرِيْضَةِ أَوِ الْفَصْلِ بَيْنَهُمَا بِكَلَامٍ
পরিচ্ছেদ - ২০৪: নফল (ও সুন্নত নামায) ঘরে পড়া উত্তম। তা সুন্নতে মুআক্কাদাহ হোক কিংবা অন্য কিছু। সুন্নত বা নফলের জন্য, যে স্থানে ফরয নামায পড়া হয়েছে সে স্থান পরিবর্তন করা বা ফরয ও তার মধ্যে কোনো কথা দ্বারা ব্যবধান সৃষ্টি করার নির্দেশ
1/1135 عَن زَيدِ بنِ ثَابِتٍ رضي الله عنه : أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «صَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإنَّ أفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ المَرْءِ فِي بَيْتِهِ إِلاَّ المَكْتُوبَةَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১১৩৫। যায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা নিজ নিজ বাড়িতে নামায পড়। কারণ, ফরয নামায ব্যতীত পুরুষের উত্তম নামায হল, যা সে নিজ বাড়িতে পড়ে থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1136 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اجْعَلُوا مِنْ صَلاَتِكُمْ فِي بُيُوتِكُمْ، وَلاَ تَتَّخِذُوهَا قُبُوراً». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১১৩৬। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নিজেদের কিছু নামায তোমাদের বাড়িতে পড় এবং সে (ঘর-বাড়ি)গুলিকে কবরে পরিণত করো না।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1137 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ فِي مَسْجِدِهِ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ نَصِيباً مِنْ صَلاَتِهِ ؛ فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِي بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْراً». رواه مسلم
৩/১১৩৭। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় (ফরয) নামায মসজিদে আদায় করে নেবে, সে যেন তার কিছু নামায নিজ বাড়ির জন্যও নির্ধারিত করে। কেননা, তার নিজ ঘরে আদায়কৃত (সুন্নত) নামাযে আল্লাহ তার জন্য কল্যাণ ও বরকত প্রদান করেন।” (মুসলিম)
4/1138 وَعَنْ عُمَرَ بنِ عَطَاءٍ: أَنَّ نَافِعَ بْنَ جُبَيْرٍ أَرْسَلَهُ إِلَى السَّائِبِ ابنِ أُخْتِ نَمِرٍ يَسأَلُهُ عَنْ شَيْءٍ رَآهُ مِنْهُ مُعَاوِيَةُ فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: نَعَمْ، صَلَّيْتُ مَعَهُ الجُمُعَةَ في المَقْصُورَةِ، فَلَمَّا سَلَّمَ الإمَامُ، قُمْتُ فِي مَقَامِي، فَصَلَّيْتُ، فَلَمَّا دَخَلَ أَرْسَلَ إلَيَّ، فَقَالَ: لاَ تَعُدْ لِمَا فَعَلْتَ. إِذَا صَلَّيْتَ الجُمُعَةَ فَلاَ تَصِلْهَا بِصَلاةٍ حَتَّى تَتَكَلَّمَ أَوْ تَخْرُجَ ؛ فَإِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَنَا بِذَلِكَ، أَن لاَ نُوصِلَ صَلاَةً بِصَلاَةٍ حَتَّى نَتَكَلَّمَ أَوْ نَخْرُجَ . رواه مسلم
৪/১১৩৮। উমার ইবনে আতা হতে বর্ণিত, নাফে‘ ইবনে জুবাইর তাঁকে নামেরের ভাগ্নে সায়েবের নিকট এমন একটি বিষয়ে প্রশ্ন করার উদ্দেশ্যে পাঠালেন, যা মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে নামাযের ব্যাপারে করতে দেখেছিলেন। তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি তাঁর (মুয়াবিয়া)র সাথে মাকসূরায় (মসজিদের মধ্যে বাদশাদের জন্য তৈরি বিশেষ নিরাপদ স্থান) জুমার নামায পড়েছি। সুতরাং যখন ইমাম সালাম ফিরালেন, তখন আমি যেখানে ফরয নামায পড়ছিলাম, সেখানেই উঠে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং (সুন্নত) নামায পড়লাম। তারপর যখন মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বাড়ি প্রবেশ করলেন, তখন আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “তুমি যা করলে তা আগামীতে আর কখনো করো না। যখন তুমি জুমার (ফরয) নামায পড়বে, তখন তার সাথে মিলিয়ে অন্য নামায পড়ো না; যতক্ষণ না তুমি কারো সাথে কথা বল অথবা সেখান থেকে অন্যত্র সরে যাও। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আদেশ আমাদেরকে করেছেন যে, আমরা যেন এক নামাযকে অন্য নামাযের সাথে না মিলাই, যতক্ষণ না কোনো লোকের সাথে কথা বলে নেই, কিংবা সেখান হতে অন্যত্র সরে যাই।” (মুসলিম)
205- بَابُ الْحَثِّ عَلٰى صَلَاةِ الْوِتْرِ وَبَيَانِ أَنَّهُ سُنَّةٌ مُّؤَكَّدَةٌ وَبَيَانِ وَقْتِهِ
পরিচ্ছেদ - ২০৫: বিতরের প্রতি উৎসাহ দান, তা সুন্নতে মুআক্কাদাহ এবং তা পড়ার সময়
1/1139 عَن عَليٍّ رضي الله عنه، قَالَ: الوِتْرُ لَيْسَ بِحَتْمٍ كَصَلاَةِ المَكْتُوبَةِ، وَلَكِنْ سَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ اللهَ وِتْرٌ يُحِبُّ الوِتْرَ، فَأَوْتِرُوا يَا أهْلَ القُرْآنِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
১/১১৩৯। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘বিতরের নামায, ফরয নামাযের ন্যায় অপরিহার্য নয়। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে প্রচলিত করেছেন (অর্থাৎ এটি সুন্নত)। তিনি বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ বিতির (বিজোড়) সেহেতু তিনি বিতির (বিজোড়কে) ভালবাসেন। অতএব হে কুরআনের ধারক-বাহকগণ! তোমরা বিতির পড়।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
2/1140 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: مِنْ كُلِّ اللَّيْلِ قَدْ أَوْتَرَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مِنْ أَوَّلِ اللَّيْلِ، وَمِنْ أوْسَطِهِ، وَمِنْ آخِرِهِ، وَانْتَهَى وِتْرُهُ إِلَى السَّحَرِ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১১৪০। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাতের প্রতিটি ভাগেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতির পড়েছেন; রাতের প্রথম ভাগে, এর মধ্য ভাগে ও শেষ ভাগে। তাঁর বিতরের শেষ সময় ছিল ভোরবেলা পর্যন্ত।’ (বুখারী, মুসলিম)
(অর্থাৎ এর প্রথম সময় এশার পর পরই শুরু হয় আর শেষ সময় ফজর উদয়কাল অবধি অবশিষ্ট থাকে। এর মধ্যে যে কোন সময় ১,৩,৫,৭, প্রভৃতি বিজোড় সংখ্যায় বিতির পড়া বিধেয়।)
3/1141 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «اجْعَلُوا آخِرَ صَلاَتِكُمْ بِاللَّيْلِ وِتْراً». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১১৪১। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের রাতের শেষ নামায বিতির কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1142 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَوْتِرُوا قَبْلَ أَنْ تُصْبِحُوا». رواه مسلم
৪/১১৪২। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ফজর হওয়ার পূর্বেই তোমরা বিতির পড়ে ফেল।” (মুসলিম)
5/1143 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي صَلاَتَهُ بِاللَّيْلِ، وَهِيَ مُعْتَرِضَةٌ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَإذَا بَقِيَ الوِتْرُ، أَيْقَظَهَا فَأَوْتَرتْ . رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ: فَإذَا بَقِيَ الوِتْرُ، قَالَ: «قُومِي فَأَوتِرِي يَا عَائِشَة».
৫/১১৪৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাঁর (তাহাজ্জুদ) নামায পড়তেন। আর তিনি (আয়েশা) তাঁর সামনে আড়াআড়ি শুয়ে থাকতেন। অতঃপর যখন (সব নামায পড়ে) বিতির বাকি থাকত, তখন তাঁকে তিনি জাগাতেন এবং তিনি (আয়েশা) বিতির পড়তেন। (মুসলিম)
অন্য বর্ণনায় আছে, যখন বিতির অবশিষ্ট থাকত, তখন তিনি বলতেন, “আয়েশা! উঠ, বিতির পড়ে নাও।”
6/1144 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «بَادِرُوا الصُّبْحَ بِالوِتْرِ».رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৬/১১৪৪। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ফজর হওয়ার আগে ভাগেই বিতির পড়ে নাও।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
৭/১১৪৫। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে না পারার আশংকা করবে, সে যেন শুরু রাতেই বিতির পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি রাতের শেষ ভাগে উঠে (ইবাদত) করার লালসা রাখে, সে যেন রাতের শেষ ভাগেই বিতির সমাধা করে। কারণ, রাতের শেষ ভাগের নামাযে ফেরেশতারা হাজির হন এবং এটিই উত্তম আমল। (মুসলিম)
206- بَابُ فَضْلِ صَلَاةِ الضُّحٰى
وَبَيَانِ أَقَلِّهَا وَأَكْثَرِهَا وَأَوْسَطِهَا، وَالْحَثُّ عَلَى الْمُحَافَظَةِ عَلَيْهَا
পরিচ্ছেদ - ২০৬: চাশতের নামাযের ফযীলত
এর ন্যূনতম অধিকতম ও মধ্যম রাকআত সংখ্যার উল্লেখ তথা অব্যাহত-ভাবে এটি পড়ার প্রতি উৎসাহ দান
1/1146 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي بِصِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَي الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أَرْقُدَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১১৪৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু আমাকে এই তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন; (১) প্রতি মাসে তিনটি (১৩, ১৪, ১৫ তারিখে) রোযা রাখার। (২) চাশতের দু’ রাকআত (সুন্নত) পড়ার। (৩) এবং ঘুমাবার আগে বিতির পড়ে নেওয়ার।’ (বুখারী ও মুসলিম)
ঘুমাবার আগে বিতির পড়ে নেওয়ার হুকুম সেই ব্যক্তির জন্য, যে রাতের শেষে উঠতে পারবে বলে আত্মনির্ভরশীল হতে পারে না। নচেৎ রাতের শেষভাগে বিতির পড়াই বেশী উত্তম।
2/1147 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ: فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرٌ بِالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِن الضُّحَى». رواه مسلم
২/১১৪৭। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ এমন অবস্থায় সকালে উঠে যে, তার (দেহের) প্রতিটি জোড়ের সদকা দেওয়ার জন্য সে দায়বদ্ধ হয়। সুতরাং প্রত্যেক ‘সুবহানাল্লাহ’ বলা সদকাস্বরূপ, প্রত্যেক ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা সদকাস্বরূপ, প্রত্যেক ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা সদকাস্বরূপ, প্রতিটি ‘আল্লাহু আকবার’ বলা সদকাস্বরূপ, সৎকাজের আদেশ দেওয়া সদকাস্বরূপ এবং মন্দ-কাজে বাধা দেওয়া সদকাস্বরূপ। আর এ সমস্ত কিছুর পরিবর্তে দু’ রাকআত (চাশতের) নামায পড়লে তা যথেষ্ট হবে।” (মুসলিম)
3/1148 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي الضُّحَى أَرْبَعاً، وَيَزِيدُ مَا شَاءَ الله . رواه مسلم
৩/১১৪৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাশতের চার রাকআত নামায পড়তেন এবং আল্লাহ যতটা চাইতেন সেই মত তিনি আরও বেশী পড়তেন।’ (মুসলিম)
4/1149 وَعَنْ أُمِّ هَانِىءٍ فَاخِتَةَ بِنتِ أَبي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: ذَهَبْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، عَامَ الفَتْحِ فَوَجَدْتُهُ يَغْتَسِلُ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ غُسْلِهِ، صَلَّى ثَمَانِيَ رَكَعَاتٍ، وَذَلِكَ ضُحىً. متفقٌ عَلَيْهِ . وهذا مختصرُ لفظِ إحدى روايات مسلم
৪/১১৪৯। উম্মে হানী ফাখেতাহ বিনতে আবু তালেব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘মক্কা বিজয়ের বছরে আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে দেখি যে, তিনি গোসল করছেন। যখন তিনি গোসল সম্পন্ন করলেন, তখন আট রাকআত নামায পড়লেন। আর তখন ছিল চাশতের সময়।’ (বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি মুসলিমের একটি বর্ণনার সংক্ষিপ্তসার)
207- بَابُ تَجْوِيْزِ صَلَاةِ الضُّحٰى مِنْ اِرْتِفَاعِ الشَّمْسِ إِلٰى زَوَالِهَا
وَالْأَفْضَلُ أَنْ تُصَلّٰى عِنْدَ اِشْتِدَادِ الْحَرِّ وَاِرْتِفَاعِ الضُّحٰى
পরিচ্ছেদ - ২০৭: সূর্য উঁচুতে ওঠার পর থেকে ঢলা পর্যন্ত চাশতের নামায পড়া বিধেয়। উত্তম হল দিন উত্তপ্ত হলে এবং সূর্য আরও উঁচুতে উঠলে এ নামায পড়া
১/১১৫০। যায়দ ইবন আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা তিনি দেখলেন, একদল লোক চাশতের নামায পড়ছে। তিনি বললেন, ‘যদি ওরা জানত যে, নামায এ সময় ছাড়া অন্য সময়ে পড়া উত্তম। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আওয়াবীন (আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী)দের নামায যখন উটের বাচ্চার পা বালিতে গরম অনুভব করে।” (মুসলিম)
208- بَابُ الْحَثِّ عَلٰى صَلَاةِ تَحِيَّةِ الْمَسْجِدِ
পরিচ্ছেদ - ২০৮: তাহিয়্যাতুল মসজিদ
(মসজিদে প্রবেশ করলে দু’ রাকআত নফল নামায পড়া) এর জন্য উদ্বুদ্ধকরণ। মসজিদে ঢুকে ঐ নফল পড়ার আগে বসা মাকরুহ। যে কোন সময়েই প্রবেশ করা হোক না কেন তা পড়া চলে। উপরন্তু তাহিয়্যাতুল মসজিদের নিয়তে দু’ রাকআত পড়লে অথবা ফরয বা সুন্নতে রাতেবা পড়লে উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে। (অর্থাৎ তাহিয়্যাতুল মসজিদ আর আলাদাভাবে পড়তে হবে না।)
1/1151 عَن أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ المَسْجِدَ، فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১১৫১। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দু’ রাকআত নামায না পড়া অবধি না বসে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1152 وَعَنْ جابرٍ رضي الله عنهقَالَ: أَتَيْتُ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ في المَسْجِدِ، فَقَالَ: «صَلِّ رَكْعَتَيْنِ» متفقٌ عَلَيْهِ
২/১১৫২। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলাম, তখন তিনি মসজিদে ছিলেন। তিনি বললেন, “দু’ রাকআত নামায পড়।” (বুখারী, মুসলিম)
209- بَابُ اِسْتِحْبَابِ رَكْعَتَيْنِ بَعْدَ الْوُضُوْءِ
পরিচ্ছেদ - ২০৯: ওজুর পর তাহিয়্যাতুল ওজুর দু’ রাকআত
নামায পড়া উত্তম
1/1153 عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لِبِلاَلٍ: «يَا بِلاَلُ! حَدِّثْنِي بِأَرْجَى عَمَلٍ عَمِلْتَهُ فِي الإِسْلاَمِ، فَإِنِّي سَمِعْتُ دَفَّ نَعْلَيْكَ بَيْنَ يَدَيَّ فِي الجَنَّةِ» قَالَ: مَا عَمِلْتُ عَمَلاً أَرْجَى عِنْدي مِنْ أَنِّي لَمْ أَتَطَهَّرْ طُهُوراً فِي سَاعَةٍ مِنْ لَيْلٍ أَوْ نَهَارٍ إِلاَّ صَلَّيْتُ بِذَلِكَ الطُّهُورِ مَا كُتِبَ لِي أَنْ أُصَلِّي. متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري
১/১১৫৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশাপ্রদ আমল বল, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর বাস্তবায়িত করেছ। কেননা, আমি (মি’রাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সম্মুখে তোমার জুতার শব্দ শুনেছি।” বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এর চাইতে বেশী আশাপ্রদ এমন কোন আমল করিনি যে, আমি যখনই রাত-দিনের মধ্যে যে কোন সময় পবিত্রতা অর্জন (ওযু, গোসল বা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই ততটুকু নামায পড়েছি, যতটুকু নামায পড়া আমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ ছিল।’ (বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি বুখারীর)
210- بَابُ فَضْلِ يَوْمِ الْجُمُعَةِ وَوُجُوْبِهَا وَالْاِغْتِسَالِ لَهَا
وَالتَّطُيُّبِ وَالتَّبْكِيْرِ إِلَيْهَا وَالدُّعَاءِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْهِ وَبَيَانِ سَاعَةِ الْإِجَابَةِ وَاسْتِحْبَابِ إِكْثَارِ ذِكْرِ اللهِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ
পরিচ্ছেদ - ২১০: জুমার দিনের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব
জুমার জন্য গোসল করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, সকাল সকাল মসজিদে যাওয়া, এ দিনে দো‘আ করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ পড়া ও এ দিনের কোন এক সময়ে দো‘আ কবুল হওয়ার বিবরণ এবং জুমার পর বেশী বেশী মহান আল্লাহর যিকির করা মুস্তাহাব
মহান আল্লাহ বলেছেন,
قَالَ الله تَعَالَى: ﴿ فَإِذَا قُضِيَتِ ٱلصَّلَوٰةُ فَٱنتَشِرُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَٱبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ١٠ ﴾ (الجمعة: ١٠)
অর্থাৎ অতঃপর নামায সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিক-রূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)
1/1154 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَال: قَالَ رَسُول اللهِ «خَيْرُ يَومٍ طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ يَوْمُ الجُمُعَةِ: فِيهِ خُلِقَ آدَمُ، وَفِيهِ أُدْخِلَ الجَنَّةَ، وَفِيهِ أُخْرِجَ مِنْهَا». رواه مسلم
১/১১৫৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যার উপর সূর্য উদিত হয়েছে তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হল জুমার দিন। এই দিনে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এই দিনে তাঁকে জান্নাতে স্থান দেওয়া হয়েছে এবং এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।” (মুসলিম)
2/1155 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الوُضُوءَ ثُمَّ أَتَى الجُمُعَةَ، فَاسْتَمَعَ وَأَنْصَتَ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ وَزِيادَةُ ثَلاَثَةِ أيَّامٍ، وَمَنْ مَسَّ الحَصَى، فَقَدْ لَغَا». رواه مسلم
২/১১৫৫। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযু সম্পাদন করে জুমার নামায পড়তে আসবে এবং নীরবে মনোযোগ-সহকারে (খুতবা) শুনবে, তার সেই জুমআ হতে পরবর্তী জুমার মধ্যবর্তী সময় তথা আরও তিন দিনের (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র) পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কাঁকর স্পর্শ করবে, সে বাজে কাজ করবে।” (মুসলিম)
3/1156 وَعَنْه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الصَّلَوَاتُ الخَمْسُ، وَالجُمُعَةُ إِلَى الجُمُعَةِ، وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ، مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتُنِبَتِ الكَبَائِرُ». رواه مسلم
৩/১১৫৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে আরও বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পাঁচ অক্ত নামায, এক জুমআ হতে পরের জুমআ পর্যন্ত, এক রমজান হতে অন্য রমযান পর্যন্ত (কৃত নামায-রোযা) সেগুলির মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত (ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র) পাপ-রাশির প্রায়শ্চিত্ত (মোচন-কারী) হয় (এই শর্তে যে,) যখন মহাপাপ থেকে বিরত থাকা যাবে।” (মুসলিম)
4/1157 وَعَنْه، وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّهُمَا سَمِعَا رَسُولَ اللهِ، يَقُوْلُ عَلَى أَعْوَادِ مِنْبَرِهِ: «لَيَنْتَهِيَنَّ أَقْوَامٌ عَنْ وَدْعِهِمُ الجُمُعَاتِ أَوْ لَيَخْتِمَنَّ اللهُ عَلَى قُلُوبِهِمْ ثُمَّ لَيَكُونُنَّ مِنَ الغَافِلِينَ». رواه مسلم
৪/১১৫৭। আবূ হুরাইরা ও আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাঁর কাঠের মিম্বারের উপর দাঁড়ানো অবস্থায় এ কথা বলতে শুনেছেন যে, “লোকেরা যেন জুমআ ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকে; নচেৎ আল্লাহ অবশ্যই তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেবেন, তারপর তারা অবশ্যই উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বে।” (মুসলিম)
5/1158. وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمُ الجُمُعَةَ فَلْيَغْتَسِلْ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১১৫৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন জুমাতে আসার ইচ্ছা করবে, তখন সে যেন গোসল করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1159 وَعَنْ أَبي سعيدٍ الخُدْرِي رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «غُسْلُ يَوْمِ الجُمُعَةِ وَاجِبٌ عَلَى كُلِّ مُحْتَلِمٍ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১১৫৯। আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক সাবালকের উপর জুমার দিনের গোসল ওয়াজিব।” (বুখারী ও মুসলিম)
এখানে ওয়াজিবের অর্থ এখতিয়ারী ওয়াজিব (মুস্তাহাব) ধরা হয়েছে। যেমন কেউ তার সাথীকে বলে, ‘আমার উপর তোমার অধিকার ওয়াজিব।’ (অর্থাৎ অবশ্য পালনীয়।) এর মানে প্রকৃত ওয়াজিব নয়; যা ত্যাগ করলে কঠোর শাস্তির উপযুক্ত হতে হয়। আর আল্লাহই অধিক জানেন। (ওয়াজিব না হওয়ার প্রমাণ পরবর্তী হাদিস।)
7/1160 وَعَنْ سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَوَضَّأَ يَوْمَ الجُمُعَةِ فَبِهَا وَنِعْمَتْ وَمَنِ اغْتَسَلَ فَالغُسْلُ أَفْضَلُ» رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
৭/১১৬০। সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে ওযু করল তাহলে তা যথেষ্ট ও উত্তম। আর যে গোসল করল, (তার) গোসল হল সর্বোত্তম।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
8/1161 وَعَنْ سَلمَانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَومَ الجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِن طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ، ثُمَّ يَخْرُجُ فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الجُمُعَةِ الأُخْرَى». رواه البخاري
৮/১১৬১। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোন ব্যক্তি জুমার দিন গোসল ও সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে, নিজসব তেল গায়ে লাগায় অথবা নিজ ঘরের সুগন্ধি (আতর) ব্যবহার করে, অতঃপর (মসজিদে) গিয়ে দু’জনের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি না করেই (যেখানে স্থান পায়, বসে যায়) এবং তার ভাগ্যে যত রাকআত নামায জোটে, আদায় করে। তারপর ইমাম খুতবা আরম্ভ করলে নীরব থাকে, সে ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট জুম‘আ থেকে পরবর্তী জুম‘আ পর্যন্ত কৃত সমুদয় (ছগীরা) গুনাহ-রাশিকে মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারী)
9/1162 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنِ اغْتَسَلَ يَومَ الجُمُعَةِ غُسْلَ الجَنَابَةِ، ثُمَّ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الأُولَى فَكَأنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ كَبْشاً أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الخَامِسَةِ، فَكَأنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإمَامُ، حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ». متفقٌ عَلَيْهِ .
৯/১১৬২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিন নাপাকির গোসলের ন্যায় গোসল করল এবং (সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গে) প্রথম অক্তে মসজিদে এল, সে যেন একটি উঁট দান করল। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি গাভী দান করল। যে ব্যক্তি তৃতীয় সময়ে এলো, সে যেন একটি শিংবিশিষ্ট দুম্বা দান করল। যে ব্যক্তি চতুর্থ সময়ে এলো, সে যেন একটি মুরগী দান করল। আর যে ব্যক্তি পঞ্চম সময়ে এলো, সে যেন একটি ডিম দান করল। তারপর ইমাম যখন খুতবা প্রদানের জন্য বের হন, তখন (লেখক) ফেরেশতাগণ যিকির শোনার জন্য হাজির হয়ে যান।” (বুখারী ও মুসলিম)
10/1163 وَعَنْه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم ذَكَرَ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَقَالَ: «فِيهَا سَاعَةٌ لاَ يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي يَسْألُ اللهَ شَيْئاً، إِلاَّ أَعْطَاهُ إِيَّاهُ» وَأشَارَ بيَدِهِ يُقَلِّلُهَا. متفقٌ عَلَيْهِ
১০/১১৬৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জুমার দিন সম্বন্ধে আলোচনা করে বললেন, “ওতে এমন একটি মুহূর্ত আছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি ঐ মুহূর্তে দাঁড়িয়ে নামায অবস্থায় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে আল্লাহ তাকে তা দান করে থাকেন।” এ কথা বলে তিনি স্বীয় হাত দ্বারা ইঙ্গিত করলেন, সে মুহূর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত। (বুখারী ও মুসলিম)
11/1164 وَعَنْ أَبِي بُرْدَةَ بنِ أَبِي مُوسَى الأَشعَرِيِّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ عَبدُ اللهِ بنُ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَسَمِعْتَ أَبَاكَ يُحَدِّثُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فِي شَأْنِ سَاعَةِ الجُمُعَةِ ؟ قَالَ: قُلْتُ: نَعَمْ، سَمِعْتُهُ يَقُوْل: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: «هِيَ مَا بَيْنَ أَنْ يَجْلِسَ الإِمَامُ إِلَى أَنْ تُقْضَى الصَّلاَةُ». رواه مسلم
১১/১১৬৪। আবূ বুর্দাহ ইবনে আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আপনি কি জুমার দিনের বিশেষ মুহূর্ত সম্পর্কে আপনার পিতাকে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করতে শুনেছেন?’ তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘হ্যাঁ। আমি তাঁকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “সেই মুহূর্তটুকু ইমামের মেম্বারে বসা থেকে নিয়ে নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়ের ভিতরে।” (মুসলিম)
12/1165 وَعَنْ أَوسِ بنِ أَوسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَوْمَ الجُمُعَةِ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاَةِ فِيهِ ؛ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
১২/১১৬৫। আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম একটি দিন হচ্ছে জুমার দিন। সুতরাং ঐ দিনে তোমরা আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কেননা, তোমাদের পাঠ করা দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
211- بَابُ اِسْتِحْبَابِ سُجُوْدِ الشُّكْرِ
عِنْدَ حُصُوْلِ نِعْمَةٍ ظَاهِرَةٍ أَوِ انْدِفَاعِ بَلِيَّةٍ ظَاهِرَةٍ
পরিচ্ছেদ - ২১১: শুক্রের সিজদার বিবরণ
দৃশ্যত: কোন মঙ্গল লাভ হলে বা বাহ্যত: কোন বিপদ-আপদ কেটে গেলে শুকরানা সিজদাহ (কৃতজ্ঞতামূলক সেজদা) করা মুস্তাহাব।
1/1166 عَنْ سَعْدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِن مَكَّةَ نُرِيدُ المَدِينَةَ، فَلَمَّا كُنَّا قَرِيْبًا مِن عَزْوَرَاءَ نَزَلَ ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، فَدَعَا اللَّه سَاعَةً، ثُمَّ خَرَّ سَاجِدًا، فَمَكَثَ طَوِيْلاً، ثُمَّ قَامَ فَرَفَعَ يَدَيْهِ، سَاعَةً، ثُمَّ خَرَّ سَاجِدًا ¬ فَعَلَهُ ثَلَاثاً ¬ وَقَالَ:«إِنِّيْ سَأَلْتُ رَبِّي، وَشَفَعْتُ لِأُمَّتِي، فَأَعْطَانِيْ ثُلُثَ أُمَّتِيْ، فَخَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي شُكْرًا، ثُمَّ رَفَعْتُ رَأْسِيْ، فَسَأَلْتُ رَبِّيْ لِأُمَّتِيْ، فَأَعْطَانِيْ ثُلُثَ أُمَّتِيْ، فَخَرَرْتُ سَاجِداً لِرَبِّيْ شُكْراً، ثُمَّ رَفَعْتُ رَأسِيْ فَسَألْتُ رَبِّيْ لِأُمَّتِيْ، فَأَعْطَانِيْ الثُّلُثَ الآخَرَ، فَخَرَرْتُ سَاجِدًا لِرَبِّي» رواه أبو داود .
১/১১৬৬। সাদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আমরা মক্কা থেকে মদিনার পানে রওয়ানা দিলাম। আমরা যখন ‘আযওয়ারা নামক স্থানের নিকটবর্তী হলাম, তিনি সওয়ারী থেকে নেমে পড়লেন এবং তাঁর দুই হাত তুলে কিছুক্ষণ দো‘আ করলেন, তারপর সেজদা করলেন, দীর্ঘ সময় সেজদায় থাকলেন, তারপর উঠলেন এবং আবার দুই হাত তুলে কিছু সময় দো‘আ করলেন, তারপর আবার সেজদায় নত হলেন। তিনি তিনবার এমন করলেন এবং বললেন: আমি আমার প্রভুর নিকট আবেদন করেছিলাম এবং আমার উম্মতের জন্য সুপারিশ করেছিলাম। আল্লাহ আমাকে আমার এক-তৃতীয়াংশ উম্মত (জান্নাতে) দিয়েছেন। আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য আমি সেজদা করলাম। তারপর আমি মাথা উঠিয়ে আমার উম্মতের জন্য আমার প্রভুর কাছে আবেদন করলাম। তিনি আমাকে আমার আরও এক-তৃতীয়াংশ উম্মত (জান্নাতে) দিলেন। এজন্যও আমি কৃতজ্ঞতার সেজদা করলাম। তারপর মাথা তুলে আমার উম্মতের জন্য আবেদন করলাম। তিনি আমাকে আরও এক-তৃতীয়াংশ উম্মত (জান্নাতে) দিলেন। এজন্যও আমি কৃতজ্ঞতার সেজদা করলাম।
(অবশ্য শুকরানার সিজদাহ অন্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে কোন সুসংবাদ দেওয়া হলে তিনি সিজদাহ করতেন।) (ইবনে মাজাহ ১১৪১নং)
212- بَابُ فَضْلِ قِيَامِ اللَّيْل
পরিচ্ছেদ - ২১২: রাতে উঠে (তাহাজ্জুদ) নামায পড়ার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ وَمِنَ ٱلَّيۡلِ فَتَهَجَّدۡ بِهِۦ نَافِلَةٗ لَّكَ عَسَىٰٓ أَن يَبۡعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامٗا مَّحۡمُودٗا ٧٩ ﴾ (الاسراء: ٧٩)
অর্থাৎ রাত্রির কিছু অংশে তাহাজ্জুদ কায়েম কর; এটা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে। (সূরা বানী ইসরাইল ৭৯ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ يَدۡعُونَ رَبَّهُمۡ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَمِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ يُنفِقُونَ ١٦ ﴾ (السجدة: ١٦)
অর্থাৎ তারা শয্যা ত্যাগ করে আকাঙ্ক্ষা ও আশংকার সাথে তাদের প্রতিপালককে ডাকে এবং আমি তাদেরকে যে রুযী প্রদান করেছি, তা হতে তারা দান করে। (সূরা সেজদা ১৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন, ﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ ﴾ (الذاريات: ١٧)
অর্থাৎ তারা রাত্রির সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত। (সূরা যারিয়াত ১৭ আয়াত)
1/1167. وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُومُ مِنَ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ، فَقُلْتُ لَهُ: لِمَ تَصْنَعُ هَذَا، يَا رَسُولَ اللهِ، وَقَدْ غُفِرَ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأخَّرَ ؟ قَالَ: «أَفَلاَ أَكُونُ عَبْداً شَكُوراً؟» متفقٌ عَلَيْهِ .
১/১১৬৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাত্রির একাংশে (নামাযে) এত দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফাটার উপক্রম হয়ে পড়ত। একদা আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি এত কষ্ট সহ্য করছেন কেন? অথচ আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বললেন, “আমি কি শুকরগুযার বান্দা হব না?” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1168 وَعَن المُغِيرَةِ بن شُعبة رضي الله عنه نَحْوهُ متفقٌ عَلَيْهِ
২/১১৬৮। মুগীরা ইবনে শু‘বা হতেও অনুরূপ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম)
3/1169 وَعَنْ عَليٍّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم طَرَقَهُ وَفَاطِمَةَ لَيْلاً، فَقَالَ: «أَلاَ تُصَلِّيَانِ ؟» متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১১৬৯। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও ফাতেমার নিকট রাত্রি বেলায় আগমন করলেন এবং বললেন, “তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) কি (তাহাজ্জুদের) নামায পড় না?” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1170 وَعَنْ سَالِمِ بنِ عَبدِ الله بنِ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنهما، عَن أَبيِهِ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «نِعْمَ الرَّجُلُ عَبْدُ اللهِ، لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيلِ». قَالَ سالِم: فَكَانَ عَبدُ اللهِ بَعْدَ ذَلِكَ لاَ يَنامُ مِنَ اللَّيلِ إِلاَّ قَلِيلاً . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১১৭০। সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) বললেন, “আব্দুল্লাহ ইবনে উমার কতই না ভাল মানুষ হত, যদি সে রাতে (তাহাজ্জুদের) নামায পড়ত।” সালেম বলেন, ‘তারপর থেকে (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ রাতে অল্পক্ষণই ঘুমাতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
5/1171 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«يَا عَبدَ اللهِ، لاَ تَكُنْ مِثْلَ فُلاَنٍ ؛ كَانَ يَقُومُ اللَّيلَ فَتَرَكَ قِيَامَ اللَّيلِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১১৭১। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুক ব্যক্তির মত হইয়ো না। সে রাতে উঠে নামায পড়ত, তারপর রাতে উঠা ছেড়ে দিল।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1172 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: ذُكِرَ عِنْدَ النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ نَامَ لَيْلَةً حَتَّى أَصْبَحَ، قَالَ: «ذَاكَ رَجُلٌ بَالَ الشَّيطَانُ في أُذُنَيْهِ - أَوْ قَالَ: فِي أُذُنِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১১৭২। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এমন একটি লোকের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উল্লেখ করা হল, যে সকাল পর্যন্ত ঘুমিয়ে রাত্রি যাপন করে। তিনি বললেন, “এ এমন এক মানুষ, যার দু’কানে শয়তান প্রস্রাব করে দিয়েছে।” অথবা বললেন, “যার কানে প্রস্রাব করে দিয়েছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
7/1173 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَعْقِدُ الشَّيطَانُ عَلَى قَافِيَةِ رَأسِ أَحَدِكُمْ، إِذَا هُوَ نَامَ، ثَلاَثَ عُقَدٍ، يَضْرِبُ عَلَى كُلِّ عُقْدَةٍ: عَلَيْكَ لَيْلٌ طَوِيلٌ فَارْقُدْ، فَإِنِ اسْتَيقَظَ، فَذَكَرَ اللهَ تَعَالَى انحَلَّتْ عُقْدَةٌ، فَإِنْ تَوَضَّأَ، انْحَلّتْ عُقدَةٌ، فَإِنْ صَلَّى، انْحَلَّتْ عُقَدُهُ كُلُّهَا، فَأَصْبَحَ نَشِيطاً طَيِّبَ النَّفْسِ، وَإِلاَّ أَصْبحَ خَبِيثَ النَّفْسِ كَسْلاَنَ». متفقٌ عَلَيْهِ
৭/১১৭৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নিদ্রা যায় তখন) তার গ্রীবাদেশে শয়তান তিনটি করে গাঁট বেঁধে দেয়; প্রত্যেক গাঁটে সে এই বলে মন্ত্র পড়ে যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত, অতএব তুমি ঘুমাও।’ অতঃপর যদি সে জেগে উঠে আল্লাহর যিকির করে, তাহলে একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি ওযু করে, তবে তার আর একটি গাঁট খুলে যায়। তারপর যদি নামায পড়ে, তাহলে সমস্ত গাঁট খুলে যায়। আর তার প্রভাত হয় স্ফূর্তি ও ভালো মনে। নচেৎ সে সকালে ওঠে কলুষিত মনে ও অলসতা নিয়ে।” (বুখারী ও মুসলিম)
৮/১১৭৪। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হে লোক সকল! তোমরা ব্যাপকভাবে সালাম প্রচার কর, (ক্ষুধার্তকে) অন্ন দাও এবং লোকে যখন রাতে ঘুমিয়ে থাকবে তখন নামায পড়। তাহলে তোমরা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
9/1175 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ: شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الفَرِيضَةِ: صَلاَةُ اللَّيْلِ». رواه مسلم
৯/১১৭৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রমযান মাসের রোযার পর সর্বোত্তম রোযা হচ্ছে আল্লাহর মাস মুহাররমের রোযা। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায হচ্ছে রাতের (তাহাজ্জুদের) নামায।” (মুসলিম)
10/1176 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صَلاَةُ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، فَإِذَا خِفْتَ الصُّبْحَ فَأَوْتِرْ بِوَاحِدَةٍ». متفقٌ عَلَيْهِ
১০/১১৭৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রাতের নামায দু’ দু’ রাকআত করে। অতঃপর যখন ফজর হওয়ার আশংকা করবে, তখন এক রাকআত বিতির পড়ে নেবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
11/1177 وَعَنْه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ مَثْنَى مَثْنَى، وَيُوتِرُ بِرَكْعَةٍ .متفقٌ عَلَيْهِ
১১/১১৭৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় দু’ দু’ রাকআত করে নামায পড়তেন এবং এক রাকআত বিতির পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
12/1178 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُفْطِرُ مِنَ الشَّهْرِ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يَصُومَ مِنْهُ، وَيَصُومُ حَتَّى نَظُنَّ أَنْ لاَ يُفْطِرَ مِنْهُ شَيْئاً، وَكَانَ لاَ تَشَاءُ أَنْ تَرَاهُ مِنَ اللَّيلِ مُصَلِّياً إِلاَّ رَأيْتَهُ، وَلاَ نَائِماً إِلاَّ رَأيْتَهُ . رواه البخاري
১২/১১৭৮। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘কোন কোন মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে রোযা ত্যাগ করতেন যে, মনে হত তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত মাসে আর রোযাই রাখবেন না। অনুরূপভাবে কোন মাসে এমনভাবে (একাদিক্রমে) রোযা রাখতেন যে, মনে হত তিনি ঐ মাসে আর রোযা ত্যাগই করবেন না। (তাঁর অবস্থা এরূপ ছিল যে,) যদি তুমি তাঁকে রাত্রিতে নামায পড়া অবস্থায় দেখতে না চাইতে, তবু বাস্তবে তাঁকে নামায পড়া অবস্থায় দেখতে পেতে। আর তুমি যদি চাইতে যে, তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখবে না, কিন্তু বাস্তবে তুমি তাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পেতে।’ (বুখারী)
13/1179 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّي إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً ـ تَعْنِي فِي اللَّيلِ ـ يَسْجُدُ السَّجْدَةَ مِنْ ذَلِكَ قَدْرَ مَا يَقْرَأُ أَحَدُكُمْ خَمْسِينَ آيَةً قَبْلَ أَنْ يَرْفَعَ رَأسَهُ، وَيَرْكَعُ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ صَلاَةِ الفَجْرِ، ثُمَّ يَضْطَجِعُ عَلَى شِقِّهِ الأَيْمَنِ حَتَّى يَأتِيَهُ المُنَادِي للصَلاَةِ. رواه البخاري
১৩/১১৭৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগার রাকআত নামায পড়তেন, অর্থাৎ রাতে। তিনি মাথা তোলার পূর্বে এত দীর্ঘ সেজদা করতেন যে, ততক্ষণে তোমাদের কেউ পঞ্চাশ আয়াত পড়তে পারবে। আর ফরয নামাযের পূর্বে দু’ রাকআত সুন্নত নামায পড়ে ডান পাশে শুয়ে আরাম করতেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকট নামাযের ঘোষণাকারী এসে হাযির হত।’ (বুখারী)
14/1180 وَعَنْها، قَالَتْ: مَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَزيدُ - فِي رَمَضَانَ وَلاَ فِي غَيْرِهِ - عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً: يُصَلِّي أَرْبَعاً فَلاَ تَسْألْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي أَرْبَعاً فَلاَ تَسْألْ عَنْ حُسْنِهِنَّ وَطُولِهِنَّ، ثُمَّ يُصَلِّي ثَلاثاً. فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَتَنَامُ قَبْلَ أَنْ تُوتِرَ؟ فَقَالَ: «يَا عَائِشَة، إِنَّ عَيْنَيَّ تَنَامَانِ وَلاَ يَنَامُ قَلْبِي». متفقٌ عَلَيْهِ
১৪/১১৮০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযান ও অন্যান্য মাসে (তাহাজ্জুদ তথা তারাবীহ) ১১ রাকআতের বেশী পড়তেন না। প্রথমে চার রাকআত পড়তেন। সুতরাং তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্পর্কে প্রশ্নই করো না। তারপর (আবার) চার রাকআত পড়তেন। সুতরাং তার সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য সম্বন্ধে প্রশ্নই করো না। অতঃপর তিন রাকআত (বিতির) পড়তেন। (একদা তিনি বিতির পড়ার আগেই শুয়ে গেলেন।) আমি বললাম, “হে আল্লাহর রসূল! আপনি কি বিতির পড়ার পূর্বেই ঘুমাবেন?” তিনি বললেন, “আয়েশা! আমার চক্ষুদ্বয় ঘুমায়; কিন্তু অন্তর জেগে থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)
15/1181 وَعَنْها: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَنَامُ أَوَّلَ اللَّيلِ، وَيَقُومُ آخِرَهُ فَيُصَلِّي . متفقٌ عَلَيْهِ
১৫/১১৮১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের প্রথম দিকে ঘুমাতেন ও শেষের দিকে উঠে নামায পড়তেন। (বুখারী ও মুসলিম)
(অধিকাংশ ক্ষেত্রে তিনি এরূপ করতেন নচেৎ এর ব্যতিক্রমও করতেন।)
16/1182 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم لَيْلَةً، فَلَمْ يَزَلْ قَائِماً حَتَّى هَمَمْتُ بِأَمْرِ سُوءٍ ! قِيلَ: مَا هَمَمْتَ ؟ قَالَ: هَمَمْتُ أَنْ أَجِلْسَ وَأَدَعَهُ . متفقٌ عَلَيْهِ
১৬/১১৮২। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক রাতে নামায পড়েছি। তিনি এত দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে রইলেন যে, শেষ পর্যন্ত আমি একটা মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম।’ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সে ইচ্ছাটা কি করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আমার ইচ্ছা হয়েছিল যে, তাঁকে ছেড়ে দিয়ে বসে পড়ি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
17/1183 وَعَنْ حُذَيفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: صَلَّيْتُ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَافْتَتَحَ البَقَرَةَ، فَقُلْتُ: يَرْكَعُ عِنْدَ المئَةِ، ثُمَّ مَضَى، فَقُلتُ: يُصَلِّي بِهَا فِي رَكْعَةٍ فَمَضَى، فَقُلتُ: يَرْكَعُ بِهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ النِّسَاءَ فَقَرَأَهَا، ثُمَّ افْتَتَحَ آلَ عِمْرَانَ فَقَرَأَهَا، يَقرَأُ مُتَرَسِّلاً: إِذَا مَرَّ بِآيَةٍ فِيهَا تَسبِيحٌ سَبَّحَ، وَإِذَا مَرَّ بِسُؤَالٍ سَأَلَ، وَإِذَا مَرَّ بِتَعَوُّذٍ تَعَوَّذَ، ثُمَّ رَكَعَ، فَجَعَلَ يَقُوْلُ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ العَظِيمِ» فَكَانَ رُكُوعُهُ نَحْواً مِنْ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ: «سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، رَبَّنَا لَكَ الحَمْدُ» ثُمَّ قَامَ طَوِيلاً قَرِيباً مِمَّا رَكَعَ، ثُمَّ سَجَدَ، فَقَالَ: «سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى» فَكَانَ سجُودُهُ قَريباً مِنْ قِيَامِهِ. رواه مسلم.
১৭/১১৮৩। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে এক রাতে নামায পড়লাম। তিনি সূরা বাকারাহ আরম্ভ করলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘একশত আয়াতের মাথায় তিনি রুকু করবেন।’ (কিন্তু) তিনি তারপরও কিরাত চালু রাখলেন। আমি (মনে মনে) বললাম, ‘তিনি এরই দ্বারা (সূরা শেষ করে) রুকু করবেন।’ কিন্তু তিনি সূরা নিসা পড়তে আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ পড়লেন। তারপর তিনি সূরা আলে ইমরান আরম্ভ করলেন এবং সম্পূর্ণ করলেন। তিনি স্পষ্ট ও ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করতেন। যখন এমন আয়াত আসত, যাতে তাসবীহ পাঠ করার উল্লেখ আছে, তখন (আল্লাহর) তাসবীহ পাঠ করতেন। যখন কোন প্রার্থনা সম্বলিত আয়াত অতিক্রম করতেন, তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন। যখন কোন আশ্রয় প্রার্থনার আয়াত অতিক্রম করতেন, তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (অতঃপর) তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু করলেন। সুতরাং তিনি রুকুতে ‘সুবহানা রাবিবয়াল আযীম’ পড়তে আরম্ভ করলেন। আর তাঁর রুকু ও কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা) এক সমান ছিল। তারপর তিনি রুকু থেকে মাথা তুলে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রাববানা অলাকাল হামদ’ (অর্থাৎ আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রশংসা শুনলেন, যে তা তাঁর জন্য করল। হে আমাদের পালনকর্তা তোমার সমস্ত প্রশংসা) পড়লেন। অতঃপর বেশ কিছুক্ষণ (কওমায়) দাঁড়িয়ে থাকলেন রুকুর কাছাকাছি সময় জুড়ে। তারপর সেজদা করলেন এবং তাতে তিনি পড়লেন, ‘সুবহানাল্লা রাবিবয়াল আ‘লা’ (অর্থাৎ আমার মহান প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি)। আর তাঁর সেজদা দীর্ঘ ছিল তার কিয়াম (দাঁড়িয়ে কিরাত পড়া অবস্থা)র কাছাকাছি। (মুসলিম)
১৮/১১৮৪। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সর্বোত্তম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল, তিনি বললেন, “দীর্ঘ কিয়াম-যুক্ত নামায।” (মুসলিম)
19/1185 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى اللهِ صَلاةُ دَاوُدَ، وَأَحَبُّ الصِّيَامِ إِلَى اللهِ صِيَامُ دَاوُدَ، كَانَ يَنَامُ نِصْفَ اللَّيلِ وَيَقُومُ ثُلُثَهُ وَيَنَامُ سُدُسَهُ وَيَصُومُ يَوماً وَيُفْطِرُ يَوْماً». متفقٌ عَلَيْهِ
১৯/১১৮৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম নামায, দাউদ عليه السلام -এর নামায এবং আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম রোযা, দাউদ عليه السلام -এর রোযা; তিনি অর্ধরাত নিদ্রা যেতেন এবং রাতের তৃতীয় ভাগে ইবাদত করার জন্য উঠতেন। অতঃপর রাতের ষষ্ঠাংশে আবার নিদ্রা যেতেন। (অনুরূপভাবে) তিনি একদিন রোযা রাখতেন ও একদিন রোযা ত্যাগ করতেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
20/1186 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: «إِنَّ فِي اللَّيْلِ لَسَاعَةً، لاَ يُوَافِقُهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ يَسْألُ اللهَ تَعَالَى خَيْراً مِنْ أَمْرِ الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، إِلاَّ أعْطَاهُ إيَّاهُ، وَذَلِكَ كُلَّ لَيْلَةٍ». رواه مسلم
২০/১১৮৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “রাত্রিকালে এমন একটি সময় আছে, কোন মুসলিম ব্যক্তি তা পেয়েই দুনিয়া ও আখিরাত বিষয়ক যে কোন উত্তম জিনিস প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে তা দিয়ে থাকেন। ঐ সময়টি প্রত্যেক রাতে থাকে।” (মুসলিম)
21/1187 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ فَلْيَفْتَتِحِ الصَّلاَةَ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ». رواه مسلم
২১/১১৮৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে নামায পড়ার জন্য উঠবে, সে যেন হাল্কা-ভাবে দু’ রাকআত পড়ার মাধ্যমে নামায শুরু করে।” (মুসলিম)
22/1188 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ مِنَ اللَّيْلِ افْتَتَحَ صَلاَتَهُ بِرَكْعَتَيْنِ خَفِيفَتَيْنِ . رواه مسلم
২২/১১৮৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাতে (তাহাজ্জুদের) জন্য উঠতেন, তখন দু’ রাকআত সংক্ষিপ্ত নামায পড়ার মাধ্যমে আরম্ভ করতেন।’ (মুসলিম)
23/1189 وَعَنْها رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا فَاتَتْهُ الصَّلاةُ مِن اللَّيْلِ مِنْ وَجَعٍ أَوْ غَيْرِهِ، صَلَّى مِنَ النَّهَارِ ثِنْتَيْ عَشرَةَ ركْعَةً . رواه مسلم
২৩/১১৮৯। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘দৈহিক ব্যথা-বেদনা বা অন্য কোন অসুবিধার কারণে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাতের নামায ছুটে যেত, তাহলে তিনি দিনের বেলায় ১২ রাকআত নামায পড়তেন।” (মুসলিম)
24/1190 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ، أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ فِيمَا بَيْنَ صَلاَةِ الفَجْرِ وَصَلاَةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْلِ». رواه مسلم
২৪/১১৯০। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় অযীফা (দৈনিক যথা নিয়মে তাহাজ্জুদের নামায) অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে তা রাতেই পড়েছে।” (মুসলিম)
25/1191 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «رَحِمَ اللهُ رَجُلاً قَامَ مِنَ اللَّيْلِ، فَصَلَّى وَأَيْقَظَ امْرَأَتَهُ، فَإِنْ أَبَتْ نَضَحَ فِي وَجْهِهَا المَاءَ، رَحِمَ اللهُ امْرَأَةً قَامَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَصَلَّتْ وَأَيْقَظَتْ زَوْجَهَا، فَإِنْ أَبَى نَضَحَتْ فِي وَجْهِهِ المَاءَ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
২৫/১১৯১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে তার মুখে পানির ছিটা মারে। অনুরূপ আল্লাহ সেই মহিলার প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে নামায পড়ে এবং নিজ স্বামীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে সে তার মুখে পানির ছিটা মারে।” (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সূত্রে)
26/1192 وَعَنْه وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالاَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا أَيْقَظَ الرَّجُلُ أهْلَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّيَا - أَوْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيعاً، كُتِبَا فِي الذَّاكِرِينَ وَالذَّاكِرَاتِ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
২৬/১১৯২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় হতে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাতে জাগিয়ে উভয়ে নামায পড়ে অথবা তারা উভয়ে দু’ রাকআত করে নামায আদায় করে, তবে তাদেরকে (অতীব) যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীদের দলে লিপিবদ্ধ করা হয়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
27/1193 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا نَعَسَ أحَدُكُمْ في الصَّلاَةِ، فَلْيَرْقُدْ حَتَّى يَذْهَبَ عَنْهُ النَّوْمُ، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى وَهُوَ نَاعِسٌ، لَعَلَّهُ يَذْهَبُ يَسْتَغْفِرُ فَيَسُبَّ نَفْسَهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
২৭/১১৯৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাযের মধ্যে তন্দ্রাভিভূত হবে, তখন সে যেন নিদ্রা যায়, যতক্ষণ না তার নিদ্রার চাপ দূর হয়ে যায়। কারণ, যখন কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নামায পড়বে, তখন সে খুব সম্ভবত: ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিতে লাগবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
28/1194 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا قَامَ أَحَدُكُمْ مِنَ اللَّيْلِ، فَاسْتَعْجَمَ القُرْآنَ عَلَى لِسَانِهِ، فَلَمْ يَدْرِ مَا يَقُوْلُ، فَلْيَضْطَجِع». رواه مسلم
২৮/১১৯৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে উঠবে ও (ঘুমের চাপের কারণে) জিহ্বায় কুরআন পড়তে এমন অসুবিধা বোধ করবে যে, সে কি বলছে তা বুঝতে পারবে না, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে।” (মুসলিম)
313- بَابُ اِسْتِحْبَابِ قِيَامِ رَمَضَانَ وَهُوَ التَّرَاوِيْحُ
পরিচ্ছেদ - ২১৩: কিয়ামে রমযান বা তারাবীহর নামায মুস্তাহাব
1/1195 عن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১১৯৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সাওয়াবের আশায় রমযান মাসে কিয়াম করবে (তারাবীহ পড়বে), তার পূর্বেকার পাপসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1196 وَعَنْه، قَالَ: كَانَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم يُرَغِّبُ في قِيَامِ رَمَضَانَ مِنْ غَيْرِ أنْ يَأمُرَهُمْ فِيهِ بِعَزِيمَةٍ، فيَقُوْل: «مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ». رواه مسلم
২/১১৯৬। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামে রমযান (তারাবীহ) সম্পর্কে দৃঢ় আদেশ (ওয়াজিব) না করেই, তার প্রতি উৎসাহ দান করতেন এবং বলতেন, “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে নেকীর আশায় রমযানে কিয়াম (তারাবীহর নামায আদায়) করবে, তার অতীতের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)
214- بَابُ فَضْلِ قِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ وَبَيَانِ أَرْجٰى لَيَالِهَا
পরিচ্ছেদ - ২১৪: শবে কদরের ফযীলত এবং সর্বাধিক সম্ভাবনাময় রাত্রি প্রসঙ্গে
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةِ ٱلۡقَدۡرِ ١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ ٢ لَيۡلَةُ ٱلۡقَدۡرِ خَيۡرٞ مِّنۡ أَلۡفِ شَهۡرٖ ٣ تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا بِإِذۡنِ رَبِّهِم مِّن كُلِّ أَمۡرٖ ٤ سَلَٰمٌ هِيَ حَتَّىٰ مَطۡلَعِ ٱلۡفَجۡرِ ٥ ﴾ [القدر: ١، ٥]
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি এ (কুরআন)কে অবতীর্ণ করেছি মর্যাদাপূর্ণ রাত্রিতে (শবেকদরে)। আর মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি সম্বন্ধে তুমি কি জান? মর্যাদাপূর্ণ রাত্রি সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। ঐ রাত্রিতে ফেরেশতাগণ ও রূহ (জিবরীল) অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিময় সেই রাত্রি ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। (সূরা ক্বাদর)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ حمٓ ١ وَٱلۡكِتَٰبِ ٱلۡمُبِينِ ٢ إِنَّآ أَنزَلۡنَٰهُ فِي لَيۡلَةٖ مُّبَٰرَكَةٍۚ إِنَّا كُنَّا مُنذِرِينَ ٣ فِيهَا يُفۡرَقُ كُلُّ أَمۡرٍ حَكِيمٍ ٤ أَمۡرٗا مِّنۡ عِندِنَآۚ إِنَّا كُنَّا مُرۡسِلِينَ ٥ رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٦ ﴾ (الدخان: ١، ٦)
র্থাৎ, নিশ্চয় আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় (আশিস-পূত শবে কদর) রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। আমার আদেশক্রমে, আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি। এ তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে করুণা; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। (সূরা দুখান ৩ আয়াত)
1/1197 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النبيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَامَ لَيْلَةَ القَدْرِ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১১৯৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি শবেকদরে (ভাগ্য-রজনী অথবা মহীয়সী রজনীতে) ঈমানসহ সাওয়াবের আশায় কিয়াম করে (নামায পড়ে), তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1198 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أُرُوا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي المَنَامِ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأتْ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১১৯৮। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিছু সাহাবিকে স্বপ্নযোগে (রমযান মাসের) শেষ সাত রাতের মধ্যে শবে কদর দেখানো হল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি দেখছি যে, শেষ সাত রাতের ব্যাপারে তোমাদের স্বপ্নগুলি পরস্পরের মুতাবেক। সুতরাং যে ব্যক্তি শবে কদর অনুসন্ধানী হবে, সে যেন শেষ সাত রাতে তা অনুসন্ধান করে।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1199 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ :كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُجَاوِرُ فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ، ويَقُوْل: «تَحرَّوا لَيْلَةَ القَدْرِ في العَشْرِ الأَوَاخرِ مِنْ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১১৯৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশ দিনে এতে-কাফ করতেন এবং বলতেন, “তোমরা রমযানের শেষ দশকে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1200 وعنها رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «تَحَرَّوْا لَيْلَةَ القَدْرِ فِي الوَتْرِ مِنَ العَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ». رواه البخاري
৪/১২০০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রমযান মাসের শেষ দশকের বিজোড় (রাত)গুলিতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” (বুখারী)
5/1201 وَعَنْهَا، رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ العَشْرُ الأَوَاخِرُ مِنْ رَمَضَانَ، أَحْيَا اللَّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَجَدَّ وَشَدَّ المِئزَرَ. متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২০১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যখন রমযানের শেষ দশক প্রবেশ করত, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নিজে জাগতেন, নিজ পরিজনদেরকেও জাগাতেন, কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং কোমরে লুঙ্গি বেঁধে নিতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
6/1202. وَعَنْهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِي رَمَضَانَ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهِ، وَفِي العَشْرِ الأوَاخِرِ مِنْهُ مَا لاَ يَجْتَهِدُ في غَيْرِهِ . رواه مسلم
৬/১২০২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে আরও বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রমযান মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আল্লাহর ইবাদতের জন্য) যত পরিশ্রম করতেন, অন্য কোন মাসে তেমন পরিশ্রম করতেন না। (অনুরূপভাবে) রমযানের শেষ দশকে যত মেহনত করতেন অন্য দিনগুলিতে তত মেহনত করতেন না।’ (মুসলিম, প্রথমাংশ মুসলিম শরীফে নেই। হয়তো বা অন্য কপিতে আছে।)
7/1203 وَعَنْهَا، قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَيُّ لَيلَةٍ لَيْلَةُ القَدْرِ مَا أَقُوْلُ فِيهَا ؟ قَالَ: «قُولِي: اَللهم إنَّكَ عَفُوٌ تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৭/১২০৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (ভাগ্যক্রমে) শবে কদর জেনে নিই, তাহলে তাতে কোন (দো‘আ) পড়ব?’ তিনি বললেন, এই দো‘আ, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া ফা‘ফু ‘আন্নী।” অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা ভালবাসো। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। (তিরমিযী হাসান সহীহ)
215- بَابُ فَضْلِ السِّوَاكِ وَخِصَالِ الْفِطْرَةِ
পরিচ্ছেদ - ২১৫: দাঁতন করার মাহাত্ম্য ও প্রকৃতিগত আচরণসমূহ
1/1204 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ «لَوْلاَ أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي - أَوْ عَلَى النَّاسِ - لأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاَةٍ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২০৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি আমি আমার উম্মতের উপর বা লোকদের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রতিটি নামাযের সাথে মিসওয়াক বা দাঁতন করার আদেশ দিতাম।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1205 وَعَنْ حُذَيْفَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ مِن النَّومِ يَشُوصُ فَاهُ بِالسِّوَاكِ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২০৫। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুম থেকে উঠতেন, তখন তিনি মিসওয়াক বা দাঁতন দিয়ে দাঁত মেজে নিতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1206 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كُنَّا نُعِدُّ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سِوَاكَهُ وَطَهُورَهُ، فَيَبْعَثُهُ اللهُ مَا شَاءَ أَنْ يَبْعَثَهُ مِنَ اللَّيْلِ، فَيَتَسَوَّكُ، وَيَتَوضَّأُ وَيُصَلِّي . رواه مسلم
৩/১২০৬। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দাঁতন ও ওজুর পানি প্রস্তুত করে রাখতাম। অতঃপর আল্লাহর যখন রাতে তাকে জাগাবার ইচ্ছা হত, তখন তিনি জেগে উঠতেন। তারপর মিসওয়াক বা দাঁতন করতেন এবং ওযু করে নামায পড়তেন।’ (মুসলিম)
4/1207 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«أَكْثَرْتُ عَلَيْكُمْ فِي السِّوَاكِ». رواه البخاري
৪/১২০৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদেরকে দাঁতন করার জন্য বেশি তাকীদ করেছি।’ (বুখারী)
5/1208 وَعَن شُرَيحِ بنِ هَانِىءٍ رَضِيَ اللهُ عَنهَ قَالَ: قُلتُ لِعَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: بِأَيِّ شَيْءٍ كَانَ يَبْدَأُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ بَيْتَهُ ؟ قَالَتْ: بِالسِّوَاكِ . رواه مسلم
৫/১২০৮। শুরাইহ ইবনে হানি রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ বাড়িতে প্রবেশ করে সর্বপ্রথম কি কাজ করতেন?’ তিনি বললেন, ‘দাঁতন করতেন।’ (মুসলিম)
6/1209 وَعَن أَبِي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: دَخَلتُ عَلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم وَطَرَفُ السِّوَاكِ عَلَى لِسَانِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلمٍ
৬/১২০৯। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশ করলাম, তখন দাঁতনের একটি দিক তাঁর জিভের উপর রাখা ছিল।’ (বুখারী ও মুসলিম, এ শব্দগুলি মুসলিমের)
7/1210 وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «السِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِ مَرْضَاةٌ للرَّبِّ». رواه النسائي وابنُ خُزَيْمَةَ في صحيحهِ بأسانيدَ صحيحةٍ.
৭/১২১০। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দাঁতন মুখ পবিত্র রাখার ও প্রভুর সন্তুষ্টি লাভের উপকরণ।” (নাসাঈ, ইবনে খুযাইমা তার সহীহ নামক গ্রন্থে বিশুদ্ধ সূত্রে উল্লেখ করেছেন।)
8/1211 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الفِطْرَةُ خَمْسٌ، أَوْ خَمْسٌ مِنَ الفِطْرَةِ: الخِتَانُ، وَالاسْتِحْدَادُ، وَتَقْلِيمُ الأَظْفَارِ، وَنَتْفُ الإِبِطِ، وَقَصُّ الشَّارِبِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৮/১২১১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রকৃতিগত আচরণ (নবীগণের তরীকা) পাঁচটি অথবা পাঁচটি কাজ প্রকৃতিগত আচরণ, (১) খৎনা (লিঙ্গত্বক ছেদন) করা। (২) লজ্জা-স্থানের লোম কেটে পরিষ্কার করা। (৩) নখ কাটা। (৪) বগলের লোম ছিঁড়া। (৫) গোঁফ ছেঁটে ফেলা।” (বুখারী ও মুসলিম)
9/1212 وَعَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «عَشْرٌ مِنَ الفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَاسْتِنْشَاقُ المَاءِ، وَقَصُّ الأَظْفَارِ، وَغَسْلُ البَرَاجِمِ، وَنَتفُ الإِبْطِ، وَحَلْقُ العَانَةِ، وَانْتِقَاصُ المَاءِ». قَالَ الرَّاوِي: وَنَسِيْتُ العَاشِرَةَ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ المَضمَضَةُ . قَالَ وَكِيعٌ - وَهُوَ أحَدُ رُواتِهِ - انْتِقَاصُ المَاءِ: يَعْنِي الاسْتِنْجَاءِ . رواه مسلم
৯/১২১২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দশটি কাজ প্রকৃতিগত আচরণ; (১) গোঁফ ছেঁটে ফেলা। (২) দাড়ি বাড়ানো। (৩) দাঁতন করা। (৪) নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করা। (৫) নখ কাটা। (৬) আঙ্গুলের জোড়সমূহ ধোয়া। (৭) বগলের লোম তুলে ফেলা। (৮) গুপ্তা-ঙ্গের লোম পরিষ্কার করা। (৯) পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা (শৌচকর্ম) করা।” বর্ণনাকারী বলেন, ১০নং আচরণটি ভুলে গেছি, তবে মনে হয়, তা কুলি করা হবে। বর্ণনাকারী ওকি’ বলেন, ‘ইন্তিকাসুল মা’ মানে পানি দিয়ে ইস্তেঞ্জা করা। (মুসলিম)
দাড়ি বাড়ানো মানে: তার কিছুই না কাটা। আঙ্গুলের জোড় মানে: আঙ্গুলের গাঁট।
10/1213 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَحْفُوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى». متفقٌ عَلَيْهِ
১০/১২১৩। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা গোঁফ কেটে ফেল এবং দাড়ি লম্বা কর।” (বুখারী, মুসলিম)
216- بَابُ تَأْكِيْدِ وُجُوْبِ الزَّكَاةِ وَبَيَانِ فَضْلِهَا وَمَا يَتَعَلَّقُ بِهَا
পরিচ্ছেদ - ২১৬: যাকাতের অপরিহার্যতা এবং তার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَأَقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتُواْ ٱلزَّكَوٰةَ ٤٣ ﴾ (البقرة: ٤٣)
অর্থাৎ তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত আদায় কর। (বাকারাহ ৪৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥ ﴾ (البينة: ٥)
অর্থাৎ তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বি-শুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠ-ভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং নামায কায়েম করতে ও যাকাত প্রদান করতে। আর এটাই সঠিক ধর্ম। (বাইয়েনাহ ৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র আরও বলেছেন,
﴿ خُذۡ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡ صَدَقَةٗ تُطَهِّرُهُمۡ وَتُزَكِّيهِم بِهَا ﴾ [التوبة: ١٠٣]
অর্থাৎ তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সদকা গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে। (সূরা তাওবাহ ১০৩ আয়াত)
1/1214 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَإقَامِ الصَّلاَةِ، وَإيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২১৪। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পাঁচটি ভিত্তির উপর দ্বীনে ইসলাম স্থাপিত। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রসূল। (২) নামায প্রতিষ্ঠা করা। (৩) যাকাত আদায় করা। (৪) বায়তুল্লাহর (কা‘বা গৃহে)র হজ্জ করা। এবং (৫) রমযানের রোযা পালন করা।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1215 وَعَن طَلْحَةَ بنِ عُبَيدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ أَهْلِ نَجْدٍ ثَائِرُ الرَّأسِ نَسْمَعُ دَوِيَّ صَوْتِهِ، وَلاَ نَفْقَهُ مَا يَقُولُ، حَتَّى دَنَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَإِذَا هُوَ يَسأَلُ عَنِ الإِسْلاَمِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «خَمْسُ صَلَواتٍ في اليَوْمِ وَاللَّيْلَةِ» قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُنَّ ؟ قَالَ: «لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَّوَّعَ» فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «وَصِيامُ شَهْرِ رَمَضَانَ» قَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهُ ؟ قَالَ: «لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَّوَّعَ» قَالَ: وَذَكَرَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الزَّكَاةَ، فَقَالَ: هَلْ عَلَيَّ غَيْرُهَا ؟ قَالَ: «لاَ، إِلاَّ أَنْ تَطَّوَّعَ» فَأدْبَرَ الرَّجُلُ وَهُوَ يَقُولُ: وَاللهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أَفْلَحَ إِنْ صَدَقَ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২১৫। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন নাজ্দ (রিয়ায এলাকার) অধিবাসীদের একজন আলুলায়িত কেশী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হল। আমরা তার ভনভন শব্দ শুনছিলাম, আর তার কথাও বুঝতে পারছিলাম না। শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসল এবং (তখন বুঝলাম,) সে ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন করছে। (উত্তরে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “(ইসলাম হল,) দিবা-রাত্রিতে পাঁচ অক্তের নামায (প্রতিষ্ঠা করা)।” সে বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য নামায আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, কিন্তু যা কিছু তুমি নফল হিসাবে পড়বে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, “এবং রমযান মাসের রোযা।” লোকটি বলল, ‘তা ছাড়া আমার উপর অন্য রোযা আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাতের কথা বললেন। সে বলল, ‘তাছাড়া আমার উপর অন্য দান আছে কি?’ তিনি বললেন, “না, তবে তুমি যা নফল হিসাবে করবে।” তারপর লোকটি পিঠ ফিরিয়ে এ কথা বলতে বলতে যেতে লাগল, ‘আল্লাহর কসম! আমি এর চাইতে বেশী কিছু করব না এবং এর চেয়ে কমও করব না।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি সত্য বলে থাকলে পরিত্রাণ পেয়ে গেল।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1216 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ مُعاذاً رضي الله عنه إِلَى اليَمَنِ، فَقَالَ: «ادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَأنِّي رَسُولُ اللهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ تَعَالَى، افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَواتٍ فِي كُلِّ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذلِكَ، فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ، وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২১৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে ইয়ামন পাঠাবার সময়ে (তাঁর উদ্দেশ্যে) বললেন, “তাদের (ইয়ামানবাসীদেরকে সর্বপ্রথম) এই সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, আর আমি আল্লাহর রসূল। যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দেবে যে, আল্লাহ তাদের উপর রাতদিনে পাঁচ অক্তের নামায ফরয করেছেন। অতঃপর যদি তারা এ কথা মেনে নেয়, তাহলে তাদেরকে জানিয়ে দাও যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন; যা তাদের মধ্যে যারা (নিসাব পরিমাণ) মালের অধিকারী তাদের নিকট থেকে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্র ও অভাবী মানুষদের মাঝে তা বণ্টন করে দেওয়া হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1217 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ، وَيُؤتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ، إِلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُم عَلَى الله». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২১৭। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষের বিরুদ্ধে ততক্ষণ সংগ্রাম করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রসূল। আর নামায কায়েম করবে ও (ধনের) যাকাত আদায় করবে। যখন তারা এগুলি বাস্তবায়ন করবে, তখন ইসলামী হক (অর্থদণ্ড ইত্যাদি) ছাড়া তারা নিজেদের জান-মাল আমার নিকট হতে সুরক্ষিত করে নেবে। আর (অন্তরের গভীরে কুফরি বা পাপ লুকানো থাকলে) তাদের হিসাব আল্লাহর জিম্মায়।” (বুখারী, মুসলিম)
5/1218 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم - وَكَانَ أَبُو بَكْر - وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ العَرَبِ، فَقَالَ عُمَرُ رضي الله عنه: كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولوُا لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، فَمَنْ قَالَهَا فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ إِلاَّ بِحَقِّهِ، وَحِسَابُهُ عَلَى الله». فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: وَاللهِ لأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ المَالِ . وَاللهِ لَوْ مَنَعُونِي عِقَالاً كَانُوا يُؤدُّونَهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهِ . قَالَ عُمَرُ: فَوَاللهِ مَا هُوَ إِلاَّ أَنْ رَأيْتُ اللهَ قَدْ شَرَحَ صَدْرَ أَبي بَكْرٍ لِلقِتَالِ، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الحَقُّ . متفقٌ عَلَيْهِ .
৫/১২১৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা গেলেন এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খলীফা নিযুক্ত হলেন। আর আরববাসীদের মধ্যে যার কাফের (মুরতাদ) হবার ছিল সে কাফের (মুরতাদ) হয়ে গেল, (এবং যারা সম্পূর্ণ ধর্মত্যাগ করেনি; বরং যাকাত দিতে অস্বীকার করছে মাত্র, তাদের বিরুদ্ধে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু সশস্ত্র সংগ্রামের সংকল্প প্রকাশ করলেন) তখন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ঐ (যাকাত দিতে নারাজ) লোকদের বিরুদ্ধে কেমন করে যুদ্ধ করবেন অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, “লোকেরা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই) না বলা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি। অতএব যে ব্যক্তি তা বলবে, সে ইসলামী অধিকার (অর্থদণ্ড ইত্যাদি) ছাড়া তার জান-মাল আমার নিকট থেকে নিরাপদ করে নেবে। আর তার (অন্তরের গভীরে কুফরি বা পাপ লুকানো থাকলে) হিসাব আল্লাহর জিম্মায়”? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, তার বিরুদ্ধে আমি লড়াই করব। কারণ, যাকাত মালের উপর আরোপিত হক। আল্লাহর শপথ! আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যে রশি আদায় করত, তা যদি আমাকে না দেয়, তাহলে তা না দেওয়ার জন্য তাদের বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করবই।’ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! অচিরেই আমি দেখলাম যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হৃদয়কে যুদ্ধের জন্য প্রশস্ত করেছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে, তাঁর সিদ্ধান্তই যথার্থ।’ (বুখারী)
6/1219 وَعَن أَبي أيُّوبَ: أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: أَخْبِرْنِي بِعَمَلٍ يُدْخِلُنِي الجَنَّةَ، قَالَ: «تَعْبُدُ اللهَ، وَلاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤْتِي الزَّكَاةَ، وَتَصِلُ الرَّحِمَ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১২১৯। আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলল, ‘আমাকে এমন একটি আমল বলুন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর বন্দেগী করবে, আর তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন অটুট রাখবে।” (বুখারী, মুসলিম)
7/1220 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ أَعْرَابِياً أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ إِذَا عَمِلْتُهُ، دَخَلْتُ الجَنَّةَ . قَالَ: «تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤتِي الزَّكَاةَ المَفْرُوضَةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ». قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا، فَلَمَّا وَلَّى، قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى هَذَا» . متفقٌ عَلَيْهِ
৭/১২২০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন এক আমলের কথা বলে দিন, যার উপর আমল করলে, আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর ইবাদত করবে ও তাঁর সাথে কোন কিছুকে অংশীদার স্থির করবে না। নামায কায়েম করবে, ফরয যাকাত আদায় করবে ও রমযানের রোযা পালন করবে।” সে বলল, ‘সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে আমার জীবন আছে, আমি এর চেয়ে বেশী করব না।’ তারপর যখন সে লোকটা পিঠ ফিরে চলতে লাগল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি জান্নাতবাসীদের কোন লোক দেখতে আগ্রহী, সে যেন এই লোকটিকে দেখে।” (বুখারী ও মুসলিম)
8/1221 وَعَن جَرِيرِ بْنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه، قَالَ: بَايَعْتُ النَّبِيَ صلى الله عليه وسلم عَلَى إقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ . متفقٌ عَلَيْهِ
৮/১২২১। জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে নামায কায়েম করার, যাকাত আদায় করার ও প্রতিটি মুসলমানের মঙ্গল কামনা করার বায়‘আত করেছি।’ (বুখারী ও মুসলিম)
9/1222 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ، وَلاَ فِضَّةٍ، لاَ يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلاَّ إِذَا كَانَ يَومُ القِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا في نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ، وَجَبِينُهُ، وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ في يَومٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ ألْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ العِبَادِ فَيَرَى سَبيلَهُ، إِمَّا إِلَى الجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ» قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَالإِبِلُ ؟ قَالَ: «وَلاَ صَاحِبِ إِبِلٍ لاَ يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، وَمِنْ حَقِّهَا حَلْبُهَا يَومَ وِرْدِهَا، إِلاَّ إِذَا كَانَ يَومُ القِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَتْ، لاَ يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيلاً وَاحِداً، تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا، وَتَعَضُّهُ بِأفْوَاهِهَا، كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولاَهَا، رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ ألْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضى بَيْنَ العِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ، إمَّا إِلَى الجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ». قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَالبَقَرُ وَالغَنَمُ ؟ قَالَ: «وَلاَ صَاحِبِ بَقَرٍ وَلاَ غَنَمٍ لاَ يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلاَّ إِذَا كَانَ يَوْمُ القِيَامَةِ، بُطِحَ لَهَا بقَاعٍ قَرْقَرٍ، لاَ يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئاً، لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ، وَلاَ جَلْحَاءُ، وَلاَ عَضْبَاءُ، تَنْطَحُهُ بقُرُونِهَا، وَتَطَؤُهُ بِأَظْلاَفِهَا، كُلَّمَا مرَّ عَلَيْهِ أُولاَهَا، رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا، فِي يَومٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ ألْفَ سَنَة حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ العِبَادِ، فَيَرَى سَبيِلَهُ، إِمَّا إِلَى الجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ». قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ فَالخَيْلُ ؟ قَالَ: «الخَيلُ ثَلاَثَةٌ: هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ، وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ، وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ . فَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْراً وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الإِسْلاَمِ، فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ، وَأَمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ سِتْرٌ، فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبيلِ اللهِ، ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللهِ فِي ظُهُورِهَا، وَلاَ رِقَابِهَا، فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ، وَأمَّا الَّتِي هِيَ لَهُ أَجْرٌ، فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِي سَبيلِ اللهِ لأَهْلِ الإِسْلاَمِ فِي مَرْجٍ، أَوْ رَوْضَةٍ فَمَا أكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ المَرْجِ أَوْ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَات وكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَات، وَلاَ تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفاً أَوْ شَرَفَيْنِ إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا، وَأَرْوَاثِهَا حَسَنَاتٍ، وَلاَ مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ، فَشَرِبَتْ مِنْهُ، وَلاَ يُرِيدُ أَنْ يَسْقِيهَا إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ». قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ فَالْحُمُرُ ؟ قَالَ: «مَا أُنْزِلَ عَلَيَّ في الحُمُرِ شَيْءٌ إِلاَّ هَذِهِ الآيَةُ الفَاذَّةُ الجَامِعَةُ: { فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْراً يَرَهُ وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرّاً يَرَهُ }». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلم
৯/১২২২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক সোনা ও চাঁদির অধিকারী ব্যক্তি যে তার হক (যাকাত) আদায় করে না, যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তার জন্য ঐ সমুদয় সোনা-চাঁদিকে আগুনে দিয়ে বহু পাত তৈরি করা হবে। অতঃপর সেগুলোকে জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগা হবে। যখনই সে পাত ঠাণ্ডা হয়ে যাবে, তখনই তা পুনরায় গরম করে অনুরূপ দাগার শাস্তি সেই দিনে চলতেই থাকবে, যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার পথ দেখতে পাবে; হয় জান্নাতের দিকে, না হয় জাহান্নামের দিকে।”
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর উটের ব্যাপারে কি হবে?’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক উটের মালিকও; যে তার হক (যাকাত) আদায় করবে না---আর তার অন্যতম হক এই যে, পানি পান করাবার দিন তাকে দোহন করা (এবং সে দুধ লোকদের দান করা)- যখন কিয়ামতের দিন আসবে, তখন তাকে এক সমতল প্রশস্ত প্রান্তরে উপুড় করে ফেলা হবে। আর তার উট সকল পূর্ণ সংখ্যায় উপস্থিত হবে; ওদের মধ্যে একটি বাচ্চাকেও অনুপস্থিত দেখবে না। অতঃপর সেই উটদল তাদের খুর দ্বারা তাকে দলবে এবং মুখ দ্বারা তাকে কামড়াতে থাকবে। এইভাবে যখনই তাদের শেষ দল তাকে দলে অতিক্রম করে যাবে, তখনই পুনরায় প্রথম দলটি উপস্থিত হবে। তার এই শাস্তি সেদিন হবে, যার পরিমাণ হবে ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার শেষ পরিণাম দর্শন করবে; জান্নাতের অথবা জাহান্নামের।”
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! গরু-ছাগলের ব্যাপারে কি হবে?’ তিনি বললেন, “আর প্রত্যেক গরু-ছাগলের মালিককেও; যে তার হক আদায় করবে না, যখন কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে, তখন তাদের সামনে তাকে এক সমতল প্রশস্ত ময়দানে উপুড় করে ফেলা হবে; যাদের একটিকেও সে অনুপস্থিত দেখবে না এবং তাদের কেউই শিং-বাঁকা, শিং-বিহীন ও শিং-ভাঙ্গা থাকবে না। প্রত্যেকেই তার শিং দ্বারা তাকে আঘাত করতে থাকবে এবং খুর দ্বারা দলতে থাকবে। তাদের শেষ দলটি যখনই (ঢুস মেরে ও দলে) পার হয়ে যাবে তখনই প্রথম দলটি পুনরায় এসে উপস্থিত হবে। এই শাস্তি সেদিন হবে যার পরিমাণ ৫০ হাজার বছরের সমান; যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দাদের মাঝে বিচার-নিষ্পত্তি শেষ করা হয়েছে। অতঃপর সে তার রাস্তা ধরবে; জান্নাতের দিকে, নতুবা জাহান্নামের দিকে।”
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর ঘোড়া সম্পর্কে কি হবে?’ তিনি বললেন, “ঘোড়া হল তিন প্রকারের; ঘোড়া কারো পক্ষে পাপের বোঝা, কারো পক্ষে পর্দাস্বরূপ এবং কারো জন্য সওয়াবের বিষয়। যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে পাপের বোঝা তা হল সেই ব্যক্তির ঘোড়া, যে লোক প্রদর্শন, গর্বপ্রকাশ এবং মুসলিমদের প্রতি শত্রুতার উদ্দেশ্যে পালন করেছে। এ ঘোড়া হল তার মালিকের জন্য পাপের বোঝা।
যে ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে পর্দাস্বরূপ, তা হল সেই ব্যক্তির ঘোড়া, যাকে সে আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের জন্য) প্রস্তুত রেখেছে। অতঃপর সে তার পিঠ ও গর্দানে আল্লাহর হক ভুলে যায়নি। তার যথার্থ প্রতিপালন করে জিহাদ করেছে। এ ঘোড়া হল তার মালিকের পক্ষে (জাহান্নাম হতে অথবা ইজ্জত-সম্মানের জন্য) পর্দাস্বরূপ।
আর যে ঘোড়া তার মালিকের জন্য সওয়াবের বিষয়, তা হল সেই ঘোড়া যাকে তার মালিক মুসলিমদের (প্রতিরক্ষার) উদ্দেশ্যে কোন চারণভূমি বা বাগানে প্রস্তুত রেখেছে। তখন সে ঘোড়া ঐ চারণভূমি বা বাগানের যা কিছু খাবে, তার খাওয়া ঐ (ঘাস-পাতা) পরিমাণ সওয়াব মালিকের জন্য লিপিবদ্ধ হবে। অনুরূপ লেখা হবে তার লাদ ও পেশাব পরিমাণ সওয়াব। সে ঘোড়া যখনই তার রশি ছিড়ে একটি অথবা দু’টি ময়দান অতিক্রম করবে, তখনই তার পদক্ষেপ ও লাদ পরিমাণ সওয়াব তার মালিকের জন্য লিখিত হবে। অনুরূপ তার মালিক যদি তাকে কোন নদীর কিনারায় নিয়ে যায়, অতঃপর সে সেই নদী হতে পানি পান করে অথচ মালিকের পান করানোর ইচ্ছা থাকে না, তবুও আল্লাহ তা‘আলা তার পান করা পানির সমপরিমাণ সওয়াব মালিকের জন্য লিপিবদ্ধ করে দেবেন।”
জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আর গাধা সম্পর্কে কি হবে?’ তিনি বললেন, “গাধার ব্যাপারে এই ব্যাপকার্থক একক আয়াতটি ছাড়া আমার উপর অন্য কিছু অবতীর্ণ হয়নি,
﴿ فَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٍ خَيۡرٗا يَرَهُۥ ٧ وَمَن يَعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّةٖ شَرّٗا يَرَهُۥ ٨ ﴾ (الزلزلة: ٧، ٨)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি অণু-পরিমাণ সৎকর্ম করবে সে তাও (কিয়ামতে) প্রত্যক্ষ করবে এবং যে ব্যক্তি অণু-পরিমাণ অসৎকার্য করবে সে তাও (সেদিন) প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা যিলযাল ৭-৮ আয়াত) (বুখারী ২৩৭১, মুসলিম ৯৮৭নং, নাসাঈ, হাদিসের শব্দাবলী সহীহ মুসলিম শরীফের।)
217- بَابُ وُجُوْبِ صَوْمِ رَمَضَانَ
وَبَيَانِ فَضْلِ الصِّيَامِ وَمَا يَتَعَلَّقُ بِهِ
পরিচ্ছেদ - ২১৭: রমযানের রোযা ফরয, তার ফযীলত ও আনুষঙ্গিক জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُونَ ١٨٣ أَيَّامٗا مَّعۡدُودَٰتٖۚ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ وَعَلَى ٱلَّذِينَ يُطِيقُونَهُۥ فِدۡيَةٞ طَعَامُ مِسۡكِينٖۖ فَمَن تَطَوَّعَ خَيۡرٗا فَهُوَ خَيۡرٞ لَّهُۥۚ وَأَن تَصُومُواْ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١٨٤ شَهۡرُ رَمَضَانَ ٱلَّذِيٓ أُنزِلَ فِيهِ ٱلۡقُرۡءَانُ هُدٗى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَٰتٖ مِّنَ ٱلۡهُدَىٰ وَٱلۡفُرۡقَانِۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ ٱلشَّهۡرَ فَلۡيَصُمۡهُۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۗ ١٨٥ ﴾ (البقرة: ١٨٣، ١٨٥)
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের (রোযার) বিধান দেওয়া হল, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা সংযম-শীল হতে পার। (রোযা) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না (যারা রোযা রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। আর যদি তোমরা রোযা রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণ-প্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার। রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী-রূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে অবশ্যই রোযা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। (সূরা বাকারাহ ১৮৩- ১৮৫ আয়াত)
1/1223 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ لَهُ إِلاَّ الصِّيَام، فَإِنَّهُ لِي وَأَنَا أَجْزِي بِهِ، وَالصِّيَامُ جُنَّةٌ، فَإِذَا كَانَ يَومُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ . وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ . لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ يَفْرَحُهُمَا: إِذَا أَفْطَرَ فَرِحَ بِفِطرِهِ، وَإِذَا لَقِيَ رَبَّهُ فَرِحَ بِصَوْمِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ روايةِ البُخَارِي.
وفي روايةٍ لَهُ: «يَتْرُكُ طَعَامَهُ، وَشَرَابَهُ، وَشَهْوَتَهُ مِنْ أَجْلِي، الصِّيَامُ لِي وَأنَا أَجْزِي بِهِ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا».
وفي رواية لمسلم: «كُلُّ عَمَلِ ابْنِ آدَمَ يُضَاعَفُ، اَلْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا إِلَى سَبْعِمِئَةِ ضِعْفٍ . قَالَ الله تَعَالَى: إِلاَّ الصَّوْمَ فَإِنَّهُ لِي وَأنَا أَجْزِي بِهِ؛ يَدَعُ شَهْوَتَهُ وَطَعَامَهُ مِنْ أَجْلِي. لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ: فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهِ، وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبِّهِ . وَلَخُلُوفُ فِيهِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ المِسْكِ».
১/১২২৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মহান আল্লাহ বলেন, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি সৎকর্ম তার জন্যই; কিন্তু রোযা স্বতন্ত্র, তা আমারই জন্য, আর আমিই তার প্রতিদান দেব।’ রোযা ঢাল স্বরূপ অতএব তোমাদের কেউ যেন রোযার দিনে অশ্লীল না বলে এবং হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ তাকে গালি-গালাজ করে অথবা তার সাথে লড়াই-ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, ‘আমি রোযা রেখেছি।’ সেই মহান সত্তার শপথ! যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে, নিঃসন্দেহে রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা বেশী উৎকৃষ্ট। রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে, তখন সে আনন্দিত হয়; (১) যখন সে ইফতার করে (ইফতারের জন্য সে আনন্দিত হয়)। আর (২) যখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে, স্বীয় রোযার জন্য সে আনন্দিত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম, এই শব্দগুলি বুখারীর)
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সে (রোজাদার) পানাহার ও যৌনাচার বর্জন করে একমাত্র আমারই জন্য। রোযা আমার জন্যই। আর আমি নিজে তার পুরস্কার দেব। আর প্রত্যেক নেকী দশগুণ বর্ধিত হয়।’
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “আদম সন্তানের প্রত্যেক সৎকর্ম কয়েকগুণ বর্ধিত করা হয়। একটি নেকী দশগুণ থেকে নিয়ে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘কিন্তু রোযা ছাড়া। কেননা, তা আমার উদ্দেশ্যে (পালিত) হয়। আর আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। সে পানাহার ও কাম প্রবৃত্তি আমার (সন্তুষ্টি অর্জনের) উদ্দেশ্যেই বর্জন করে।’ রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দময় মুহূর্ত রয়েছে। একটি আনন্দ হল ইফতারের সময়, আর অপরটি তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎকালে। আর নিশ্চয় তার মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধ অপেক্ষা অধিক উৎকৃষ্ট।”
2/1224 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللهِ نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا خَيرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ». قَالَ أَبُو بَكْرٍ: بِأَبي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللهِ ! مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرورةٍ، فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الأَبوَابِ كُلِّهَا ؟ فَقَالَ: «نَعَمْ، وَأَرْجُو أنْ تَكُونَ مِنْهُمْ».متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২২৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া বস্তু ব্যয় করে, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে, ‘হে আল্লাহর বান্দাহ! এ দরজাটি উত্তম (এদিকে এস)।’ সুতরাং যে নামাযীদের দলভুক্ত হবে, তাকে নামাযের দরজা থেকে ডাক দেওয়া হবে। আর যে মুজাহিদদের দলভুক্ত হবে। তাকে জিহাদের দরজা থেকে ডাকা হবে। যে রোযাদারদের দলভুক্ত হবে, তাকে ‘রাইয়ান’ নামক দরজা থেকে আহ্বান করা হবে। আর দাতাকে দানের দরজা থেকে ডাকা হবে।” এ সব শুনে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার মাতা-পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, যাকে ডাকা হবে, তার ঐ সকল দরজার তো কোন প্রয়োজন নেই। (কেননা মুখ্য উদ্দেশ্য হল, কোনভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা।) কিন্তু এমন কেউ হবে কি, যাকে উক্ত সকল দরজাসমূহ থেকে ডাকা হবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর আশা করি, তুমি তাদের দলভুক্ত হবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1225 وَعَنْ سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إنَّ في الجَنَّةِ بَاباً يُقَالُ لَهُ: الرَّيَّانُ، يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَومَ القِيَامَةِ، لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أحدٌ غَيْرُهُمْ، يقال: أيْنَ الصَّائِمُونَ ؟ فَيَقُومُونَ لاَ يَدخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ، فَإذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২২৫। সাহল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে এমন একটি দরজা আছে, যার নাম হল ‘রাইয়ান’; সেখান দিয়ে কেবল রোযাদারগণই কিয়ামতের দিনে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া আর কেউ সেদিক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা করা হবে, ‘রোযাদাররা কোথায়?’ তখন তারা দণ্ডায়মান হবে। (এবং ঐ দরজা দিয়ে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে) তারপর যখন তাদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে, তখন দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর সেখান দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1226 وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْماً فِي سَبِيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ اليَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرِيفَاً». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২২৬। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে (অর্থাৎ জিহাদ-কালীন বা প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন-কল্পে) একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন রোযার বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (পরিমাণ পথ) দূরে রাখবেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1227 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَاناً وَاحْتِسَاباً، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ» متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২২৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমান সহকারে নেকীর আশায় রমযানের রোযা পালন করে, তার অতীতের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1228 وَعَنْه رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ، فُتِحَتْ أَبْوَاب الجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِينُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১২২৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহে রমযানের আগমন ঘটলে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শৃঙ্খলিত করা হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
7/1229 وَعَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ، وَأَفْطِرُوا لِرُؤيَتِهِ، فَإِنْ غَبِيَ عَلَيْكُمْ، فَأَكْمِلُوا عِدَّةَ شَعْبَانَ ثَلاَثِينَ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ البخاري .
وفي رواية لمسلم: «فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَصُومُوا ثَلاَثِينَ يَوْماً»
৬/১২২৯। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। যদি (কালক্রমে) তোমাদের উপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয় (এবং চাঁদ দেখতে না পাওয়া যায়), তাহলে শা’বান (মাসের) গুণতি ত্রিশ পূর্ণ করে নাও।” (বুখারী ও মুসলিম, শব্দাবলী বুখারীর)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “তোমাদের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকলে ত্রিশ দিন রোযা রাখ।”
218- بَابُ الْجَوْدِ وَفِعْلِ الْمَعْرُوْفِ وَالْإِكْثَارِ مِنَ الْخَيْرِ
فِيْ شَهْرِ رَمَضَانَ وَالزِّيَادَةِ مِنْ ذٰلِكَ فِي الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْهُ
পরিচ্ছেদ - ২১৮: মাহে রমযানে অ-ধিকাধিক সৎকর্ম ও দান খয়রাত করা তথা এর শেষ দশকে আরও বেশী সৎকর্ম করা প্রসঙ্গে
1/1230 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبْريلُ، وَكَانَ جِبْرِيلُ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ القُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللهِ، حِيْنَ يَلْقَاهُ جِبرِيلُ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِن الرِّيحِ المُرْسَلَةِ. متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত লোকের চেয়ে অধিক দানশীল ছিলেন। আর মাহে রমযানে যখন জিবরাঈল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, তখন তিনি আরও বেশী বদান্যতা প্রদর্শন করতেন। জিবরাঈল মাহে রমযানের প্রত্যেক রজনীতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁর কাছে কুরআন পুনরাবৃত্তি করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিবরাঈলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অবশ্যই কল্যাণবহ মুক্ত বায়ু অপেক্ষা অধিক দানশীল ছিলেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/1231 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ العَشْرُ أَحْيَا اللَّيْلَ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ، وَشَدَّ المِئْزَرَ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৩১। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(রমযানের) শেষ দশক প্রবেশ করলে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং রাতে জাগতেন এবং পরিবার-পরিজনদেরকেও জাগাতেন। আর (ইবাদতের জন্য) কোমর বেঁধে নিতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
219- بَابُ النَّهْيِ عَنْ تَقَدُّمِ رَمَضَانَ بِصَوْمٍمبَعْدَ نِصْفِ شَعْبَانَ إِلَّا لِمَنْ وَصَلَهُ بِمَا قَبْلَهُ، أَوْ وَافَقَ عَادَةً لَّهُ بِأَنْ كَانَ عَادَتُهُ صَوْمَ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ فَوَافَقَهُ
পরিচ্ছেদ - ২১৯: অর্ধ শা’বানের পর রমযানের এক-দু’দিন আগে থেকে রোযা রাখা নিষেধ। তবে সেই ব্যক্তির জন্য অনুমতি রয়েছে যার রোযা পূর্বের রোযার সাথে মিলিত হয়ে অথবা সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখতে অভ্যস্ত হয়ে ঐ দিনে পড়ে
1/1232 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُم رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلاَّ أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَومَهُ، فَليَصُمْ ذَلِكَ اليَوْمَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন রমযান মাসের এক বা দু’দিন আগে (শা’বানের শেষে) রোযা পালন শুরু না করে। অবশ্য সেই ব্যক্তি রোযা রাখতে পারে, যে ঐ দিনে রোযা রাখতে অভ্যস্ত।” (বুখারী ও মুসলিম)
1/1233 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«لاَ تَصُومُوا قَبْلَ رَمضَانَ، صُومُوا لِرُؤيَتِهِ، وَأَفْطِرُوا لِرُؤيَتِهِ، فَإِنْ حَالَتْ دُونَهُ غَيَايَةٌ فَأَكْمِلُوا ثَلاثِينَ يَوْماً». رواه الترمذي، وقال: حديث حسنٌ صحيح
২/১২৩৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা রমযানের পূর্বে রোযা রেখো না। তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোযা ছাড়। আর যদি তার সামনে কোন মেঘ আড়াল করে, তবে (মাসের) ত্রিশ দিন পূর্ণ কর।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
3/1234 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا بَقِيَ نِصْفٌ مِنْ شَعْبَانَ فَلاَ تَصُومُوا». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৩/১২৩৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন শা’বান মাসের অর্ধেক বাকী থাকবে, তখন তোমরা রোযা রাখবে না।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
4/1235 وَعَنْ أَبي اليَقَظَانِ عَمَّارِ بن يَاسِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: مَنْ صَامَ اليَوْمَ الَّذِي يُشَكُّ فِيهِ، فَقَدْ عَصَى أَبَا القَاسِمِ صلى الله عليه وسلم . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৪/১২৩৫। আবূ ইয়াক্বাযান আম্মার ইবনে ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোযা রাখল, সে অবশ্যই আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাফরমানী করল।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান সহীহ)
220- بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ رُؤْيَةِ الْهِلَالِ
পরিচ্ছেদ - ২২০: নতুন চাঁদ দেখলে যা বলতে হয়
1/1236 عَن طَلحَةَ بنِ عُبَيدِ اللهِ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا رَأَى الهلاَلَ، قَالَ: «اَللهم أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ، هِلالُ رُشْدٍ وخَيْرٍ» . رواه الترمذي، وقال :حديث حسن
১/১২৩৬। ত্বালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নতুন চাঁদ দেখতেন তখন এই দো‘আ পড়তেন,
“আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি অলঈমা-নি অসসালা-মাতি অলইসলা-ম, রাববী অরাববুকাল্লা-হ, (হিলালু রুশদিন অখায়র)।”
অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি ঐ চাঁদকে আমাদের উপর উদিত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। (হেদায়েত ও কল্যাণময় চাঁদ!) (তিরমিযী-হাসান, কিন্তু বন্ধনী-ঘেরা শব্দগুলি তিরমিযীতে নেই।)
221- بَابُ فَضْلِ السُّحُوْرِ وَتَأْخِيْرِهِ مَا لَمْ يَخْشَ طُلُوْعَ الْفَجْرِ
পরিচ্ছেদ - ২২১: সেহরি খাওয়ার ফযীলত। যদি ফজর উদয়ের আশংকা না থাকে, তাহলে তা বিলম্ব করে খাওয়া উত্তম
1/1237 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«تَسَحَّرُوا ؛ فَإِنَّ فِي السُّحُورِ بَرَكَةً». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৩৭। আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহরি খাও। কেননা, সেহরিতে বরকত নিহিত আছে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1238. وَعَنْ زَيدِ بنِ ثَابِتٍ رضي الله عنه، قَالَ: تَسَحَّرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ قُمْنَا إِلَى الصَّلاَةِ . قِيلَ: كَمْ كَانَ بَينَهُمَا ؟ قَالَ: قَدْرُ خَمْسِينَ آيةً . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৩৮। যায়েদ ইবনে সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সেহরি খেয়েছি, অতঃপর নামাযে দাঁড়িয়েছি।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘ওই দুয়ের (নামায ও সেহরির) মাঝখানে ব্যবধান কতক্ষণ ছিল?’ তিনি বললেন, ‘(প্রায়) পঞ্চাশ আয়াত পড়ার মত সময়।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1239 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم مُؤَذِّنَانِ: بِلاَلٌ وَابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ بِلاَلاً يُؤَذِّنُ بِلَيْلٍ، فَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يُؤَذِّنَ ابْنُ أُمِّ مَكْتُومٍ». قَالَ: وَلَمْ يَكُنْ بَيْنَهُمَا إِلاَّ أَنْ يَنْزِلَ هَذَا وَيَرْقَى هَذَا. متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৩৯। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দু’জন মুয়াজ্জিন ছিলেন; বিলাল ও ইবনে উম্মে মাকতূম। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “বিলাল যখন রাতে আযান দেবে, তখন তোমরা পানাহার (সেহরি ভক্ষণ) কর; যতক্ষণ পর্যন্ত না ইবনে উম্মে মাকতূম আযান দেবে।” (ইবনে উমার) বলেন, ‘আর তাঁদের উভয়ের আযানের মাঝে এতটুকু ব্যবধান ছিল যে, উনি নামতেন, আর ইনি ছড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
* ((আলেমগণ বলেন, ‘ইনি নামতেন এবং উনি চড়তেন’-এর অর্থ হল, বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু ফজরের পূর্বে (সেহরির) আযান দিতেন, অতঃপর দো‘আ ইত্যাদির মাধ্যমে অপেক্ষা করে ফজর উদয় হওয়া লক্ষ্য করতেন। সুতরাং তিনি ফজর উদয় নিকটবর্তী লক্ষ্য করলে তিনি নেমে (অন্ধ সাহাবী) ইবনে উম্মে মাকতূমকে খবর দিতেন। তিনি ওযু ইত্যাদি করে প্রস্তটি নিতেন। অতঃপর (নির্দিষ্ট উঁচু জায়গায়) চড়ে আযান দিতে শুরু করতেন।))
4/1240 وَعَنْ عَمرِو بنِ العَاص رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وصِيَامِ أَهْلِ الكِتَابِ، أَكْلَةُ السَّحَرِ». رواه مسلم
৪/১২৪০। আমর ইবন আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমাদের রোযা ও কিতাব-ধারীদের (ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদের) রোযার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, সেহরি খাওয়া।” (মুসলিম)
222- بَابُ فَضْلِ تَعْجِيْلِ الْفِطْرِ وَمَا يُفْطِرُ عَلَيْهِ وَمَا يَقُوْلُهُ بَعْدَ الْإِفْطَارِ
পরিচ্ছেদ - ২২২: সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দেরী না করে ইফতার করার ফযীলত, কোন খাদ্য দ্বারা ইফতার করবে ও তার পরের দো‘আ
1/1241 عَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لاَ يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الفِطْرَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৪১। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যতদিন পর্যন্ত মুসলমানেরা শীঘ্র ইফতার করবে ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1242 وَعَنْ أَبي عطِيَّةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَ قَالَ: دَخَلْتُ أَنَا وَمَسْرُوقٌ عَلَى عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، فَقَالَ لَهَا مَسْرُوق: رَجُلاَنِ مِنْ أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ، كِلاَهُمَا لاَ يَألُو عَنِ الخَيْرِ ؛ أَحَدُهُمَا يُعَجِّلُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ، وَالآخَرُ يُؤَخِّرُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ ؟ فَقَالَتْ: مَنْ يُعَجِّلُ المَغْرِبَ وَالإِفْطَارَ ؟ قَالَ: عَبْدُ اللهِ - يعني: ابن مسعود - فَقَالَتْ: هَكَذَا كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصْنَعُ . رواه مسلم
২/১২৪২। আবূ আত্বিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাসরূক আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার নিকট উপস্থিত হলাম। মাসরুক তাঁকে বললেন, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরদের মধ্যে দু’জন সহচর কল্যাণের ব্যাপারে আদৌ ত্রুটি করেন না। তাঁদের একজন মাগরিব ও ইফতার সত্বর সম্পাদন করেন এবং অপরজন মাগরিব ও ইফতার দেরীতে সম্পাদন করেন।’ এ কথা শুনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কে মাগরিব ও ইফতার সত্বর করেন?’ তিনি বললেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপই করতেন।’ (মুসলিম)
3/1243 وَعَنْ أَبي هُريرَةَ رضي الله عنهقالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قال اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: { أَحَبُّ عِبَادِي إِليَّ أَعْجَلُهُمْ فِطْراً } رواه الترمذي وقالَ: حَديثٌ حسنٌ .
৩/১২৪৩। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দাদের মধ্যে যারা দ্রুত ইফতার করে তারাই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়। হাদিসটি দুর্বল (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
4/1244 وَعَنْ عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا أَقْبَلَ اللَّيْلُ مِنْ هَاهُنَا، وَأَدْبَرَ النَّهَارُ مِنْ هَاهُنَا، وَغَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَقَدْ أَفْطَر الصَّائِمُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৪৪। উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে আগমন করবে এবং দিন এ (পশ্চিম) দিক থেকে প্রস্থান করবে এবং সূর্য ডুবে যাবে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1245 وَعَنْ أَبي إِبرَاهِيمَ عَبدِ اللهِ بنِ أَبي أَوفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَهُوَ صَائِمٌ، فَلَمَّا غَرَبَتِ الشَّمْسُ، قَالَ لِبَعْضِ القَوْمِ: «يَا فُلاَنُ انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا»، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَوْ أَمْسَيْتَ ؟ قَالَ: «انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا» قَالَ: إِنَّ عَلَيْكَ نَهَاراً، قَالَ: «انْزِلْ فَاجْدَحْ لَنَا» قَالَ: فَنَزَلَ فَجَدَحَ لَهُمْ فَشَرِبَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ قَالَ:«إِذَا رَأَيْتُمُ اللَّيْلَ قَدْ أَقْبَلَ مِنْ هَاهُنَا، فَقَدْ أَفْطَرَ الصَّائِمُ» وَأشَارَ بِيَدِهِ قِبَلَ المَشْرِقِ . متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২৪৫। আবূ ইব্রাহীম আব্দুল্লাহ ইবনে আবূ আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্যে পথ চলছিলাম, তখন তিনি রোজাদার ছিলেন। অতঃপর যখন সূর্য অস্ত গেল, তখন তিনি সফররত সঙ্গীদের একজনকে বললেন, “হে অমুক! বাহন থেকে নেমে আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আর একটু সন্ধ্যা করতেন (তাহলে ভাল হত।)’ তিনি বললেন, “তুমি বাহন থেকে নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” সে বলল, ‘এখনো দিন হয়ে আছে।’ তিনি আবার বললেন, “তুমি নামো এবং আমাদের জন্য ছাতু ঘুলে দাও।” বর্ণনাকারী বলেন, সুতরাং সে নেমে তাঁদের জন্য ছাতু ঘুলে দিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পান করলেন এবং বললেন, “যখন তোমরা প্রত্যক্ষ করবে যে, রাত্রি এ (পূর্ব) দিক থেকে এসে পড়েছে, তখন অবশ্যই রোজাদার ইফতার করবে।” আর সেই সাথে তিনি পূর্বদিকে ইঙ্গিত করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
6/1246 وَعَنْ سَلْمَانَ بنِ عَامِرِ الضَّبِّيِّ الصَّحَابيِّرضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا أَفْطَرَ أَحَدُكُمْ، فَلْيُفْطِرْ عَلىٰ تَمْرٍ، فَإِنْ لَمْ يَجِدْ، فَلْيُفْطِرْ عَلىٰ مَاءٍ فَإِنَّهُ طَهُوْرٌ» .
৬/১২৪৬। সালমান ইবনু আমির আয-যাববী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি যখন ইফতার করে তখন তার উচিত খুরমা-খেজুর দিয়ে ইফতার করা। তবে সে যদি খুরমা-খেজুর না পায় তাহলে পানি দিয়ে যেন ইফতার করে, কেননা পানি হচ্ছে পাক-পবিত্র। (তিরমিযি) হাদিসটি দুর্বল। দেখুন: দয়ীফ আবূ দাউদ, তিরমিযী)
7/1247 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُفْطِرُ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّي عَلَى رُطَبَاتٍ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ رُطَبَاتٌ فَتُمَيْرَاتٌ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تُمَيْرَاتٌ حَسَا حَسَوَاتٍ مِنْ مَاءٍ . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال:حديث حسن
৭/১২৪৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ার আগে কতিপয় টাটকা পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি টাটকা পাকা খেজুর না পেতেন, তাহলে শুকনো কয়েকটি খেজুর যোগে ইফতার করতেন। যদি শুকনো খেজুরও না হত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করতেন।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
ইমাম নাওয়াবী শিরোনামায় দুর কথা উল্লেখ করেছেন, কিন্তু তার হাদিসটি উল্লেখ করেননি। হাদিসটি নিম্নরূপ:-
عَنِ ابنِ عُمَرَ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَفْطَرَ قَال: «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ». رواه أبو داود
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন,
“যাহাবায যামা-উ অবতাল্লাতিল উরুক্বু অষাবাতাল আজরু ইন শা-আল্লাহ।”
অর্থাৎ পিপাসা দূরীভূত হল, শিরা-উপশিরা সতেজ হল এবং ইন শাআল্লাহ সওয়াব সাব্যস্ত হল। (আবূ দাউদ)
ُ أَمْرِ الصَّائِمِ بحِفْظِ لِسَانِهِ وَجَوَارِحِهِ عَنِ الْمُخَالَفَاتِ والْمُشَاتَمَةِ وَنَحْوِهَا
পরিচ্ছেদ - ২২৩: রোজাদার নিজ জিভ ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলিকে রোযার পরিপন্থী ক্রিয়াকলাপ তথা গালি-গালাজ ও অনুরূপ অন্য অপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখবে।
1/1248 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ، فَلاَ يَرْفُثْ وَلاَ يَصْخَبْ، فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ، فَلْيَقُلْ: إنِّي صَائِمٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৪৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কারো রোযার দিন হবে, সে যেন অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ না করে ও হৈ-হট্টগোল না করে। আর যদি কেউ গালাগালি করে অথবা তার সাথে লড়াই ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে যে, ‘আমি রোজাদার।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1249 وَعَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ: صلى الله عليه وسلم«مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ للهِ حَاجَةٌ فِي أَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ». رواه البخاري
২/১২৪৯। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও তার উপর আমল করা পরিহার না করল, তখন আল্লাহর কোন দরকার নেই যে, সে তার পানাহার ত্যাগ করুক।” (বুখারী)
224- بَابُ فِي مَسَائِلَ مِنَ الصَّوْمِ
পরিচ্ছেদ - ২২৪: রোযা সম্পর্কিত কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়
1/1250 عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا نَسِيَ أَحَدُكُمْ، فَأَكَلَ، أَوْ شَرِبَ، فَلْيُتِمَّ صَوْمَهُ، فَإنَّمَا أطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৫০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি ভুলবশত: কিছু খেয়ে বা পান করে ফেলবে, তখন সে যেন তার রোযা (না ভেঙ্গে) পূর্ণ করে নেয়। কেননা, আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1251 وَعَنْ لَقِيطِ بنِ صَبِرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْنِي عَنِ الوُضُوءِ ؟ قَالَ: «أَسْبِغِ الوُضُوءَ، وَخَلِّلْ بَيْنَ الأَصَابِعِ، وَبَالِغْ فِي الاسْتِنْشَاقِ، إِلاَّ أَنْ تَكُونَ صَائِماً». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
২/১২৫১। লাক্বীত্ব ইবনে সাবেরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! ওযু সম্পর্কে আমাকে বলুন।’ তিনি বললেন, “পূর্ণাঙ্গরূপে ওযু কর। আঙ্গুলগুলোর মধ্যবর্তী জায়গাগুলো খিলাল কর। সজোরে নাকে পানি টেনে (নাক ঝাড়ো); তবে রোযার অবস্থায় নয়।” (অর্থাৎ রোযার অবস্থায় বেশি জোরে নাকে পানি টানা চলবে না।) (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
3/1252 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُدْرِكُهُ الفَجْرُ وَهُوَ جُنُبٌ مِنْ أَهْلِهِ، ثُمَّ يَغْتَسِلُ وَيَصُومُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৫২। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘(কখনো কখনো) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ভোর এভাবে হত যে, তিনি স্ত্রী-মিলন হেতু অপবিত্র অবস্থায় থাকতেন। অতঃপর তিনি গোসল করতেন এবং রোযা করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/1253 وَعَنْ عَائِشَة وَأُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَتَا: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُصْبِحُ جُنُباً مِنْ غَيْرِ حُلُمٍ، ثُمَّ يَصُومُ . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৫৩। আয়েশা ও উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিনা স্বপ্নদোষে (স্ত্রী সহবাস-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় ভোর করতেন, তারপর রোযা পালন করতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
225- بَابُ بَيَانِ فَضْلِ صَوْمِ الْمُحَرَّمِ وَشَعْبَانَ وَالْأَشْهُرِ الْحُرُمِ
পরিচ্ছেদ - ২২৫: মুহাররম, শা'বান তথা অন্যান্য হারাম (পবিত্র) মাসে রোযা রাখার ফযীলত
1/1254 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم«أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ: شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمُ، وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعدَ الفَرِيضَةِ: صَلاَةُ اللَّيْلِ» . رواه مسلم
১/১২৫৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহে রমযানের পর সর্বোত্তম রোযা, আল্লাহর মাস মুহাররম। আর ফরয নামাযের পর সর্বোত্তম নামায রাতের (তাহাজ্জুদ) নামায।” (মুসলিম)
2/1255 عَن عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: لَمْ يَكُنِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ مِنْ شَهْرٍ أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ . وفي رواية: كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ إِلاَّ قَلِيلاً . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৫৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস চাইতে বেশি নফল রোযা অন্য কোন মাসে রাখতেন না। নিঃসন্দেহে তিনি পূর্ণ শাবান মাস রোযা রাখতেন।’
অন্য বর্ণনায় আছে, ‘অল্প কিছুদিন ছাড়া তিনি পূর্ণ শা‘বান মাস রোযা রাখতেন।’ (বুখারী-মুসলিম)
3/1256 وعن مجِيبَةَ البَاهِلِيَّةِ عَنْ أَبِيهَا أَوْ عمِّها، أَنَّهُ أَتى رَسولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ انطَلَقَ فَأَتَاهُ بعدَ سَنَة، وَقَد تَغَيَّرتْ حَالهُ وَهَيْئَتُه، فَقَالَ: يا رَسُولَ اللهِ أَمَا تعْرِفُنِي ؟ قَالَ: «وَمَنْ أَنتَ ؟» قَالَ: أَنَا البَاهِلِيُّ الذي جِئتك عامَ الأَوَّلِ . قَالَ: «فَمَا غَيَّرَكَ، وقَدْ كُنتَ حَسَنَ الهَيئةِ ؟ » قَالَ: ما أَكلتُ طعاماً منذ فَارقْتُكَ إِلاَّ بلَيْلٍ . فَقَال رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«عَذّبْتَ نَفسَكَ»، ثُمَّ قَالَ: «صُمْ شَهرَ الصَّبرِ، ويوماً مِنْ كلِّ شَهر» قال: زِدْنـي، فإِنَّ بي قوَّةً، قَالَ: «صُمْ يَوميْنِ» قال: زِدْني، قال: «صُمْ ثلاثَةَ أَيَّامٍ» قالَ: زِدْني . قال: «صُمْ مِنَ الحُرُمِ وَاتْرُكْ، صُمْ مِنَ الحرُم وَاترُكْ، صُمْ مِنَ الحرُمِ وَاتْرُكُ» وقالَ بِأَصَابِعِهِ الثَّلاثِ فَضَمَّهَا، ثُمَّ أَرْسَلَهَا . رواه أبو داود . «و شهرُ الصَّبرِ»: رَمضانُ .
৩/১২৫৬। মুজীবাহ আল-বাহিলিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে তার বাবা বা চাচার সূত্রে বর্ণিত, তার বাবা বা চাচা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হন। অতঃপর তিনি চলে যান এবং একবছর পর পুনরায় উপস্থিত হন। তার অবস্থা ও চেহারা-সুরাত সে সময় (অনেক) পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আমাকে কি আপনি চিনতে পারছেন না? জবাবে তিনি বললেন, কে তুমি? তিনি বলেন, আমি হলাম সেই বাহিলী, আপনার নিকট প্রথম বছরে এসেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার এ পরিবর্তন কিভাবে হল, তোমার চেহারা-সুরত না বেশ সুন্দর ছিল? বাহিলী উত্তর দেন, আপনার নিকট হতে বিদায় নেয়ার পর থেকে আমি প্রতি রাতে ব্যতীত আর কখনো খাদ্য গ্রহণ করিনি (প্রতিদিন রোযা রেখেছি)। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিজের জীবনকে তুমি কষ্ট দিয়েছ। অতঃপর বললেন, রমজানে রোযা রাখো, এরপর প্রতি মাসে একদিন করে (রোযা রাখো)। বাহিলী বলল, আরও বেশি করে দিন, কারণ আমার ভিতর এর শক্তি আছে। জবাবে বললেন, ঠিক আছে, প্রতি মাসে দু‘দিন করে। বাহিলী বলেন, আমি অধিক সামর্থ্য রাখি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে প্রতি মাসে তিনদিন করে। বাহিলী বলেন, আরও বেশী করুন। জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হারাম মাসগুলোয় (যিলক্বদ, যিলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব) রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও, হারাম মাসগুলোয় রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও, হারাম মাসগুলোয় রোযা রাখো ও ছেড়ে দাও। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর নিজের তিন আঙ্গুল দিয়ে তিনি ইশারা করেন, প্রথমে সেগুলোকে মিলিত করেন, তারপর ছেড়ে দেন (অর্থাৎ তিনদিন রোযা রাখো এবং তিনদিন খাও।
226- بَابُ فَضْلِ الصَّوْمِ وَغَيْرِهِ فِي الْعَشْرِ الْأَوَّلِ مِنْ ذِي الْحِجَّةِ
পরিচ্ছেদ - ২২৬: যুলহজ্জের প্রথম দশকে রোযা পালন তথা অন্যান্য পুণ্যকর্ম করার ফযীলত
1/1257 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«مَا مِنْ أَيَّامٍ، العَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الأَيَّام» يعني أَيَّامَ العَشرِ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَلاَ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ ؟ قَالَ: «وَلاَ الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيءٍ». رواه البخاري
১/১২৫৭। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “এই দিনগুলির (অর্থাৎ যুল হিজ্জার প্রথম দশ দিনের) তুলনায় এমন কোন দিন নেই, যাতে কোন সৎকাজ আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহর পথে জিহাদও নয় কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে কোন (মুজাহিদ) ব্যক্তি যদি তার জান মালসহ বের হয়ে যায় এবং তার কোন কিছুই নিয়ে আর ফিরে না আসে।” (অর্থাৎ শাহাদত বরণ করে, তাহলে হয়তো তার সমান হতে পারে।) (বুখারী)
227- بَابُ فَضْلِ صَوْمِ يَوْمِ عَرَفَةَ وَعَاشُوْرَاءَ وَتَاسُوْعَاءَ
পরিচ্ছেদ - ২২৭: আরাফা ও মুহাররম মাসের নবম ও দশম তারিখে রোযা রাখার ফযীলত
1/1258 وَعَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ صَومِ يَوْمِ عَرَفَةَ، قَالَ: «يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ وَالبَاقِيَةَ» رواه مسلم
১/১২৫৮। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আরাফার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গোনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম)
2/1259 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صَامَ يَومَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيامِهِ. متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৫৯। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশুরার (মুহাররম মাসের দশম) দিনে স্বয়ং রোযা রেখেছেন এবং ঐ দিনে রোযা রাখতে আদেশ করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)
3/1260 وَعَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صِيامِ يَوْمِ عَاشُورَاءَ، فَقَالَ: «يُكَفِّرُ السَّنَةَ المَاضِيَةَ». رواه مسلم
৩/১২৬০। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আশুরার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বললেন, “তা বিগত এক বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়।” (মুসলিম)
4/1261 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم «لَئِنْ بَقِيتُ إِلَى قَابِلٍ لأَصُومَنَّ التَّاسِعَ». رواه مسلم
৪/১২৬১। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আগামী বছর যদি আমি বেঁচে থাকি, তাহলে মুহাররম মাসের নবম তারিখে অবশ্যই রোযা রাখব।” (অর্থাৎ নবম ও দশম দু’দিন ব্যাপী রোযা রাখব।) (মুসলিম)
228- بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ سِتَّةِ أَيَّامٍ مِّنْ شَوَّالٍ
পরিচ্ছেদ - ২২৮: শাওয়াল মাসের ছ’দিন রোযা পালনের ফযীলত
1/1262 عَن أَبي أَيُّوبَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتّاً مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ». رواه مسلم
১/১২৬২। আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি রমযানের রোযা পালনের পর শওয়াল মাসের ছয়দিন রোযা রাখল, সে যেন সারা বছর রোযা রাখল।” (মুসলিম)
২২৯- بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ الْاِثْنَيْنِ وَالْخَمِيْسِ
পরিচ্ছেদ - ২২৯: সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার ফযীলত
1/1263 عَنْ أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم سُئِلَ عَنْ صَومِ يَوْمِ الاِثْنَيْنِ، فَقَالَ: «ذَلِكَ يَومٌ وُلِدْتُ فِيهِ، وَيَومٌ بُعِثْتُ، أَوْ أُنْزِلَ عَلَيَّ فِيهِ». رواه مسلم
১/১২৬৩। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সোমবার দিনে রোযা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, “ওটি এমন একটি দিন, যেদিন আমার জন্ম হয়েছে, যেদিন আমি (নবীরূপে) প্রেরিত হয়েছি অথবা ঐ দিনে আমার প্রতি (সর্বপ্রথম) ‘অহী’ অবতীর্ণ করা হয়েছে।” (মুসলিম)
২/১২৬৪। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(মানুষের) আমলসমূহ সোম ও বৃহস্পতিবারে (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তাই আমি ভালবাসি যে, আমার আমল এমন অবস্থায় পেশ করা হোক, যখন আমি রোযার অবস্থায় থাকি।”(তিরমিযী হাসান) ইমাম মুসলিমও এটি বর্ণনা করেছেন, তবে তাতে রোযার উল্লেখ নেই।
3/1265 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَت: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَحَرَّى صَومَ الاِثْنَيْنِ وَالخَمِيس . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩/১২৬৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সোম ও বৃহস্পতিবারে রোযা রাখার জন্য সমধিক সচেষ্ট থাকতেন।’ (তিরমিযী হাসান)
230- بَابُ اِسْتِحْبَابِ صَوْمِ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ مِّنْ كُلِّ شَهْرٍ وَالْأَفْضَلُ صَوْمُهَا فِيْ أَيَّامِ الْبِيْضِ. وَهِيَ الثَّالِثَ عَشَرَ وَالرَّابِعَ عَشَرَ وَالْخَامِسَ عَشَرَ. وَقِيْلَ: الثَّانِيْ عَشَرَ وَالثَّالِثَ عَشَرَ وَالرَّابِعَ عَشَرَ، وَالصَّحِيْحُ الْمَشْهُوْرُ هُوَ الْأَوَّلُ.
পরিচ্ছেদ - ২৩০: প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা রাখা মুস্তাহাব
প্রতি মাসে শুক্ল পক্ষের ১৩,১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা পালন করা উত্তম।। অন্য মতে ১২,১৩, ও ১৪ তারিখে। প্রথমোক্ত মতটিই প্রসিদ্ধ ও বিশুদ্ধ।
1/1266 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: أَوْصَانِي خَلِيلِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ: صِيَامِ ثَلاَثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَرَكْعَتَي الضُّحَى، وَأَنْ أُوتِرَ قَبْلَ أَنْ أنَامَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৬৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন; প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা। চাশতের দু’ রাকআত নামায আদায় করা এবং নিদ্রা যাবার পূর্বে বিতির নামায পড়া।’ (বুখারী, মুসলিম)
2/1267 وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: أَوصَانِي حَبِيبِي صلى الله عليه وسلم بِثَلاَثٍ لَنْ أَدَعَهُنَّ مَا عِشْتُ: بِصِيَامِ ثَلاثَةِ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ، وَصَلاَةِ الضُّحَى، وَبِأَنْ لاَ أَنَامَ حَتَّى أُوْتِرَ . رواه مسلم
২/১২৬৭। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় বন্ধু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এমন তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, যা আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ত্যাগ করব না; প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির না পড়ে নিদ্রা না যাওয়া।’ (মুসলিম)
3/1268 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمْرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ الله عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «صَوْمُ ثَلاَثَةِ أيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ صَوْمُ الدَّهْرِ كُلِّهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৬৮। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা, সারা বছর ধরে রোযা রাখার সমান।”(বুখারী, মুসলিম)
4/1269 وَعَنْ مُعَاذَةَ العَدَوِيَّةِ: أَنَّهَا سَأَلَتْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثة أيَّامٍ ؟ قَالَت: نَعَمْ . فقلتُ: مِنْ أيِّ الشَّهْرِ كَانَ يَصُومُ ؟ قَالَت: لَمْ يَكُنْ يُبَالِي مِنْ أيِّ الشَّهْرِ يَصُومُ . رواه مسلم
৪/১২৬৯। মুআযাহ আদাভিয়্যাহ কর্তৃক বর্ণিত, তিনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা কে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহর রসূল কি প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখতেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ আমি বললাম, ‘মাসের কোন কোন দিনে রোযা রাখতেন?’ তিনি বললেন, ‘মাসের যে কোন দিনে রোযা রাখতে তিনি পরোয়া করতেন না।’ (মুসলিম)
5/1270 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا صُمْتَ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثاً، فَصُمْ ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৫/১২৭০। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মাসে (নফল) রোযা পালন করলে (শুক্লপক্ষের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।” (তিরমিযী হাসান)
6/1271 وَعَنْ قَتَادَةَ بنِ مِلْحَانَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَأمُرُنَا بِصِيَامِ أيَّامِ البِيضِ: ثَلاَثَ عَشْرَةَ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ . رواه أَبُو داود
৬/১২৭১। ক্বাতাদাহ ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে শুক্লপক্ষের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার জন্য আদেশ করতেন।’ (আবূ দাউদ)
7/1272 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لاَ يُفْطِرُ أَيَّامَ البِيضِ فِي حَضَرٍ وَلاَ سَفَرٍ . رواه النسائي بإسنادٍ حسن
৭/১২৭২। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘরে ও সফরে কোথাও শুক্লপক্ষের (তিন) দিনের রোযা ছাড়তেন না।’ (নাসাঈ হাসান সূত্রে)
231- بَابُ فَضْلٍ مَّنْ فَطَّرَ صَائِمًا
وَفَضْلِ الصَّائِمِ الَّذِيْ يُؤْكَلُ عِنْدَهُ، وَدُعَاءِ الْأَكْلِ لِلْمَأْكُوْلِ عِنْدَهُ
পরিচ্ছেদ - ২৩১: রোজাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত এবং যে রোজাদারের নিকট কিছু ভক্ষণ করা হয় তার ফযীলত এবং যার নিকট ভক্ষণ করা হয় তার জন্য ভক্ষণকারীর দো‘আ.
1/1273 عَن زَيدِ بنِ خَالِدٍ الجُهَنِيِّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ فَطَّرَ صَائِماً، كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ، غَيْرَ أنَّهُ لاَ يُنْقَصُ مِنْ أَجْرِ الصَّائِمِ شَيْءٌ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১/১২৭৩। যায়েদ ইবনে খালেদ জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে (রোজাদারের) সমান নেকীর অধিকারী হবে। আর তাতে রোজাদারের নেকীর কিছুই কমবে না।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
2/1274 وَعَنْ أُمِّ عُمَارَةَ الأَنْصَارِيَّةِ رَضِيَ اللَّه عَنْهَا، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا، فَقَدَّمَتْ إِلَيْهِ طَعَاماً، فَقَالَ: كُلِيْ» فَقَالَتْ: إِنِّيْ صَائِمَةٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ الصَّائِمَ تُصَلِّيْ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ إِذا أُكِلَ عِنْدَهُ حَتّىٰ يَفْرَغُوْا» وَرُبَّمَا قَالَ: حَتّىٰ يَشْبَعُوْا» رواهُ الترمذيُّ وقال: حديثٌ حسنٌ .
২/১২৭৪। উম্মু ‘উমারা আল-আনসারিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন একদিন তার নিকট গেলেন। তার সামনে তিনি খাবার রাখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমিও খাও। তিনি বললেন, আমি তো রোজাদার। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রোজাদারের সামনে যখন খাবার আহার-কারীদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বা পেট ভরে না খাওয়া পর্যন্ত তার (রোজাদারের) জন্য ফেরেশতারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকেন। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
3/1275 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم جَاءَ إِلَى سَعْدِ بنِ عُبَادَةَ رضي الله عنه فَجَاءَ بِخُبْزٍ وَزَيْتٍ، فَأَكَلَ، ثُمَّ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «أَفْطَرَ عِنْدَكُمُ الصَّائِمُونَ ؛ وَأَكَلَ طَعَامَكُمُ الأَبرَارُ، وَصَلَّتْ عَلَيْكُمُ المَلاَئِكَةُ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৩/১২৭৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সায়াদ ইবনে উবাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর নিকট উপস্থিত হলেন। তিনি রুটি ও (জয়তুনের) তেল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মুখে পেশ করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ভক্ষণ করে এই দো‘আ পড়লেন,
‘আফত্বারা ইন্দাকুমুস স্বা-য়িমূন, অআকালা ত্বাআমাকুমুল আবরার, অস্বাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকাহ।’
অর্থাৎ রোজাদারগণ তোমাদের নিকট ইফতার করল। সৎ ব্যক্তিগণ তোমাদের খাবার ভক্ষণ করল এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের (ক্ষমার) জন্য দো‘আ করলেন। (আবূ দাউদ বিশুদ্ধে সূত্রে)
كِتَابُ الْاِعْتِكاَفِ
অধ্যায় (৯): ই‘তিকাফ (ইবাদত-উপাসনার জন্য একান্তে অবস্থান করা)
232- بَابُ فَضْلِ الْاِعْتِكَافِ
পরিচ্ছেদ - ২৩২: রমযান মাসে ই‘তিকাফ সম্পর্কে
1/1276 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৭৬। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
2/1277 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ العَشْرَ الأوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ، حَتَّى تَوَفَّاهُ اللهُ تَعَالَى، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ . متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৭৭। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে মহান আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুদান করা পর্যন্ত ই‘তিকাফ করেছেন। তাঁর (তিরোধানের) পর তাঁর স্ত্রীগণ ই‘তিকাফ করেছেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1278 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَعْتَكِفُ فِي كُلِّ رَمَضَانَ عَشْرَةَ أَيَّامٍ، فَلَمَّا كَانَ العَامُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ اعْتَكَفَ عِشْرِينَ يَوْماً . رواه البخاري
৩/১২৭৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রমযান মাসের (শেষ) দশদিন ই‘তিকাফ করতেন। তারপর যে বছরে তিনি মারা যান, সে বছরে বিশ দিন ই‘তিকাফ করেছিলেন।’ (বুখারী)
كَتَابُ الْحَجِّ
অধ্যায় (১০): (কা‘বাগৃহের) হজ্জ পালন
233- بَابُ وُجُوْبِ الْحَجِّ وَفَضْلِهِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৩: হজ্জ্বের অপরিহার্যতা ও তার ফযীলত
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٩٧ ﴾ (ال عمران: ٩٧)
অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার (পক্ষে) অবশ্য কর্তব্য। আর যে অস্বীকার করবে (সে জেনে রাখুক যে), আল্লাহ জগতের উপর নির্ভরশীল নন। (সূরা আলে ইমরান ৯৭ আয়াত)
1/1279 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَنَّ مُحَمَّداً رَسُولُ اللهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ البَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৭৯। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের ভিত পাঁচটি জিনিসের উপর স্থাপিত আছে। (১) এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা’বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষ, (২) নামায কায়েম করা, (৩) যাকাত প্রদান করা, (৪) বায়তুল্লাহর হজ্জ করা এবং (৫) মাহে রমযানের সিয়াম (রোযা) পালন করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1280 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «أَيُّهَا النَّاسُ، قَدْ فَرَضَ اللهُ عَلَيْكُم الحَجَّ فَحُجُّوا». فَقَالَ رَجُلٌ: أَكُلَّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ فَسَكَتَ، حَتَّى قَالَهَا ثَلاَثاً . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَوْ قُلْتُ نَعَمْ لَوَجَبَتْ، وَلَمَا اسْتَطَعْتُمْ» ثُمَّ قَالَ: «ذَرُوْنِي مَا تَرَكْتُكُمْ ؛ فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ، وَاخْتِلاَفِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ، فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِشَيءٍ فَأتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَن شَيْءٍ فَدَعُوهُ». رواه مسلم
২/১২৮০। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে ভাষণ দানকালে বললেন, “হে লোক সকল! আল্লাহ তোমাদের উপর (বায়তুল্লাহর) হজ্জ ফরয করেছেন, অতএব তোমরা হজ্জ পালন কর।” একটি লোক বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! প্রতি বছর তা করতে হবে কি?’ তিনি নিরুত্তর থাকলেন এবং লোকটি শেষ পর্যন্ত তিনবার জিজ্ঞাসা করল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ। তাহলে (প্রতি বছরে) হজ্জ ফরয হয়ে যেত। আর তোমরা তা পালন করতে অক্ষম হতে।” অতঃপর তিনি বললেন, “তোমরা আমাকে (আমার অবস্থায়) ছেড়ে দাও, যতক্ষণ আমি তোমাদেরকে (তোমাদের সব সব অবস্থায়) ছেড়ে রাখব। কেননা, তোমাদের পূর্বেকার জাতিরা অতি মাত্রায় জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের পয়গম্বরদের বিরোধিতা করার দরুন ধ্বংস হয়েছে। সুতরাং আমি যখন তোমাদেরকে কোন কিছু করার আদেশ দেব, তখন তোমরা তা সাধ্যমত পালন করবে। আর যা করতে নিষেধ করব, তা থেকে বিরত থাকবে।” (মুসলিম)
3/1281 وَعَنْهُ، قَالَ: سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ العَمَلِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ: «إِيمَانٌ بِاللهِ وَرسولِهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا ؟ قَالَ: «حَجٌّ مَبرُورٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৮১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘সর্বোত্তম কাজ কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তার রসূলের প্রতি ঈমান রাখা।” পুনরায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘অতঃপর কি?’ তিনি বললেন, “মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।” (বুখারী ও মুসলিম)
‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ সেই হজ্জকে বলা হয়, যাতে হাজী কোনো প্রকার আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়নি।
4/1282 وَعَنْه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ حَجَّ، فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৮২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি হজ্জ পালন করল এবং (তাতে) কোন অশ্লীল কাজ করল না ও পাপাচার করল না, সে ব্যক্তি ঠিক ঐ দিনকার মত (নিষ্পাপ হয়ে) বাড়ি ফিরবে, যেদিন তার মা তাকে প্রসব করেছিল।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1283 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَينَهُمَا، وَالحَجُّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلاَّ الجَنَّةَ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২৮৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “একটি উমরাহ পরবর্তী উমরাহ পর্যন্ত ঐ দুয়ের মধ্যবর্তী সময়ে কৃত পাপ-রাশির জন্য কাফফারা (মোচন-কারী) হয়। আর ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1284 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، نَرَى الجِهَادَ أَفْضَلَ العَمَلِ، أَفَلاَ نُجَاهِدُ ؟ فَقَالَ: «لَكُنَّ أَفْضَلُ الجِهَادِ: حَجٌّ مَبْرُورٌ». رواه البخاري
৬/১২৮৪। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করাকে সর্বোত্তম কাজ মনে করি, তাহলে কি আমরা জিহাদ করব না?’ তিনি বললেন, “তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে ‘মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।” (বুখারী)
7/1285 وَعَنْها: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ مِنْ أَن يُعْتِقَ اللهُ فِيهِ عَبْداً مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ». رواه مسلم
৭/১২৮৫। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আরাফার দিন অপেক্ষা এমন কোনো দিন নেই, যেদিন আল্লাহ সর্বাধিক বেশী সংখ্যায় বান্দাকে জাহান্নাম-মুক্ত করেন।” (মুসলিম)
8/1286 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «عُمْرَةٌ في رَمَضَانَ تَعْدِلُ حَجَّةً - أَوْ حَجَّةً مَعِي». متفقٌ عَلَيْهِ
৮/১২৮৬। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মাহে রমযানের উমরাহ একটি হজ্জের সমতুল্য অথবা আমার সঙ্গে হজ্জ করার সমতুল্য।” (বুখারী ও মুসলিম)
9/1287 وَعَنْهُ: أَنَّ امرَأَةً قَالَت: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ فَرِيضَةَ اللهِ عَلَى عِبَادِهِ فِي الحَجِّ، أَدْرَكَتْ أَبي شَيْخاً كَبِيراً، لاَ يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ أَفَأحُجُّ عَنْهُ ؟ قَالَ: «نَعَمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
৯/১২৮৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেই বর্ণিত, একজন মহিলা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর স্বীয় বান্দাদের উপর হজ্জের ফরয আমার বৃদ্ধ পিতার উপর এমতাবস্থায় এসে পৌঁছেছে যে, তিনি বাহনের উপর চড়ে বসে থাকতে অক্ষম। আমি কি তার পক্ষ হতে হজ্জ পালন করব?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” (বুখারী ও মুসলিম)
10/1288 وَعَنْ لَقِيطِ بنِ عَامِرٍ رضي الله عنه: أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ، لاَ يَسْتَطِيعُ الحَجَّ، وَلاَ العُمْرَةَ، وَلاَ الظَّعَنَ ؟ قَالَ: «حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১০/১২৮৮। লাক্বীত ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আমার পিতা এত বেশী বৃদ্ধ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি না হজ্জ করতে সক্ষম, না উমরা করতে সক্ষম, আর না সফর করতে পারবেন।’ তিনি বললেন, “তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ ও উমরা সম্পাদন কর।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী-হাসান সহীহ)
11/1289 وَعَنِ السَّائِبِ بنِ يَزِيْدَ رضي الله عنه، قَالَ: حُجَّ بِي مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ، وَأنَا ابنُ سَبعِ سِنينَ . رواه البخاري
১১/১২৮৯। সায়েব ইবনে য়্যাযীদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘বিদায় হজ্জে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাকে নিয়ে হজ্জ করা হয়েছে। আমি তখন সাত বছরের শিশু।’ (বুখারী)
12/1290 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم لَقِيَ رَكْباً بِالرَّوْحَاءِ، فَقَالَ: «مَنِ القَوْمُ ؟» قَالُوا: المُسلِمُونَ . قَالُوا: مَنْ أَنْتَ ؟ قَالَ: «رَسُولُ اللهِ» . فَرَفَعَتِ امْرَأةٌ صَبيّاً، فَقَالَتْ: أَلِهَذَا حَجٌّ ؟ قَالَ: «نَعَمْ، وَلَكِ أَجْرٌ». رواه مسلم
১২/১২৯০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘রাওহা’ নামক স্থানে একটি যাত্রীদলের সাথে সাক্ষাৎকারে বললেন, “তোমরা কোন জাতি?” তারা বলল, ‘আমরা মুসলিম।’ তারা বলল, ‘আপনি কে?’ তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর রসূল।” এই সময়ে একজন মহিলা একটি শিশুকে তুলে ধরে বলল, ‘এর কি হজ্জ হবে?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আর (ওকে হজ্জ করানো বাবত) তোমারও সওয়াব হবে।” (মুসলিম)
13/1291 عَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم حَجَّ عَلَى رَحْلٍ وَكَانَتْ زَامِلَتَهُ. رواه البخاري
১৩/১২৯১। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহনে চড়ে হজ্জ সমাধা করেন। আর ঐ বাহনটিই ছিল প্রয়োজনীয় যাবতীয় সাজ-সরঞ্জামের বাহক। (বুখারী)
* (অর্থাৎ তিনি যে উটের বাহনে চড়ে হজ্জ করেছেন সেই বাহনেই তাঁর খাদ্য-পানীয় তথা অন্যান্য আনুষঙ্গিক আসবাবপত্রও চাপানো ছিল।)
14/1292 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَتْ عُكَاظُ، وَمَجِنَّةُ، وَذُو المَجَازِ أَسْوَاقاً فِي الجَاهِلِيَّةِ، فَتَأَثَّمُوا أَنْ يَتَّجِرُوا في المَوَاسِمِ، فَنَزَلَتْ: ﴿لَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَبۡتَغُواْ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكُمۡۚ﴾ (البقرة: ١٩٨) في مَوَاسِمِ الحَجِّ . رواه البخاري
১৪/১২৯২। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, উকায, মাজিন্নাহ ও যুল-মাজায নামক স্থানগুলিতে (ইসলাম আসার পূর্বে) জাহেলী যুগের বাজার ছিল। তাই সাহাবায়ে কেরাম হজ্জের মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্যমূলক কাজ-কর্মকে পাপ মনে করলেন। তার জন্য এই আয়াত অবতীর্ণ হল, যার অর্থ, “(হজ্জের সময়) তোমাদের জন্য তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ কামনায় (ব্যবসা-বাণিজ্যে) কোন দোষ নেই।” (সূরা বাকারাহ ১৯৮ আয়াত, বুখারী)
كِتَابُ الْـجِهَادِ
অধ্যায় (১১): (আল্লাহর পথে) জিহাদ
234- بَابُ فَضْلِ الْـجِهَادِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৪: জিহাদ ওয়াজিব এবং তাতে সকাল-সন্ধ্যার মাহাত্ম্য
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَقَاتِلُوا المُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ مَعَ المُتَّقِينَ ﴾ ( التوبة: ৩৬ )
অর্থাৎ আর অংশী-বাদীদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, যেমন তারা তোমাদের সকলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। আর জেনে রেখো যে, আল্লাহ মুত্তাকীগণের সাথে রয়েছেন। (সূরা তাওবাহ ৩৬ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٢١٦ ﴾ (البقرة: ٢١٦)
অর্থাৎ তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এটা তোমাদের কাছে অপছন্দ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না সম্ভবত: তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর সম্ভবত: তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না। (সূরা বাকারাহ ২১৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ ٱنفِرُواْ خِفَافٗا وَثِقَالٗا وَجَٰهِدُواْ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ ﴾ [التوبة: ٤١]
“দুর্বল হও অথবা সবল সর্বাবস্থাতেই তোমরা বের হও এবং আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দ্বারা জিহাদ কর।” (সূরা তাওবাহ ৪১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿۞إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١١ ﴾ [التوبة: ١١١]
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ মুমিনদের নিকট থেকে তাদের প্রাণ ও তাদের ধন-সম্পদসমূহকে জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন; তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, যাতে তারা হত্যা করে এবং নিহত হয়ে যায়। এ (যুদ্ধে)র দরুন (জান্নাত প্রদানের) সত্য অঙ্গীকার করা হয়েছে তাওরাতে, ইঞ্জিলে এবং কুরআনে; আর নিজের অঙ্গীকার পালনে আল্লাহ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর অন্য কে আছে? অতএব তোমরা আনন্দ করতে থাক তোমাদের এই ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যা তোমরা সম্পাদন করেছ। আর এটা হচ্ছে মহা সাফল্য।” (সূরা তাওবাহ ১১১)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿لَّا يَسۡتَوِي ٱلۡقَٰعِدُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ غَيۡرُ أُوْلِي ٱلضَّرَرِ وَٱلۡمُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡۚ فَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ دَرَجَةٗۚ وَكُلّٗا وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلۡحُسۡنَىٰۚ وَفَضَّلَ ٱللَّهُ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ عَلَى ٱلۡقَٰعِدِينَ أَجۡرًا عَظِيمٗا ٩٥ ﴾ (النساء : ٩٥)
অর্থাৎ ঈমানদারদের মধ্যে যারা অক্ষম নয় অথচ ঘরে বসে থাকে তারা এবং যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে, তারা সমান নয়। যারা স্বীয় ধন-প্রাণ দ্বারা জিহাদ করে আল্লাহ তাদেরকে যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন; আল্লাহ সকলকেই কল্যাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর যারা ঘরে বসে থাকে তাদের উপর যারা জিহাদ করে তাদেরকে আল্লাহ মহা পুরস্কার দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ তাঁর (আল্লাহর) তরফ হতে মর্যাদা, ক্ষমা ও দয়া। বস্তুতঃ আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা নিসা ৯৫-৯৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ ١١ يَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡ وَيُدۡخِلۡكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ وَمَسَٰكِنَ طَيِّبَةٗ فِي جَنَّٰتِ عَدۡنٖۚ ذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٢ وَأُخۡرَىٰ تُحِبُّونَهَاۖ نَصۡرٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَفَتۡحٞ قَرِيبٞۗ وَبَشِّرِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٣ ﴾ (الصف: ١٠، ١٣)
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বাণিজ্যের সন্ধান বলে দিব না, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলে বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয় যদি তোমরা জানতে। আল্লাহ তোমাদের পাপ-রাশিকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে; যার নিম্নদেশে নদীমালা প্রবাহিত এবং (প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাতের উত্তম বাসগৃহে। এটাই মহা সাফল্য। আর তিনি তোমাদেরকে দান করবেন বাঞ্ছিত আরও একটি অনুগ্রহ; আল্লাহর সাহায্য ও আসন্ন বিজয়। আর বিশ্ববাসীদেরকে সুসংবাদ দাও। (সূরা সাফ্ ১০-১৩ আয়াত)
এ মর্মে প্রসিদ্ধ বহু আয়াত রয়েছে। আর জিহাদের ফযীলত সংক্রান্ত হাদিসও রয়েছে অগণিত। তন্মধ্যে কতিপয় নিম্নরূপ:-
1/1293 عن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: سُئِلَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: أيُّ العَمل أفْضَلُ ؟ قَالَ: «إيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ» قيلَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «الجهادُ في سَبيلِ اللهِ» قِيلَ: ثُمَّ مَاذَا ؟ قَالَ: «حَجٌّ مَبْرُورٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১২৯৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা হল, ‘সর্বোত্তম কাজ কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘তারপর কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল, ‘অতঃপর কি?’ তিনি বললেন, “মাবরূর’ (বিশুদ্ধ বা গৃহীত) হজ্জ।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1294 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ تَعَالَى ؟ قَالَ: «الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا» قُلْتُ: ثُمَّ أيُّ ؟ قَالَ: «بِرُّ الوَالِدَيْنِ» قُلْتُ: ثُمَّ أَيُّ ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১২৯৪। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহর নিকট কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়?’ তিনি বললেন, “যথা সময়ে নামায আদায় করা।” আমি নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “মা-বাপের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি আবার নিবেদন করলাম, ‘তারপর কোনটি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
3/1295 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيُّ العَمَلِ أَفْضلُ ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ بِاللهِ، وَالجِهَادُ في سَبِيلهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১২৯৫। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! সর্বোত্তম আমল কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1296 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَغَدْوَةٌ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَوْ رَوْحَةٌ، خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১২৯৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর পথে এক সকাল বা এক সন্ধ্যা অতিক্রান্ত করা, পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম।” (বুখারী-মুসলিম)
5/1297 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: أَتَى رَجُلٌ رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ: أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «مُؤْمنٌ يُجَاهِدُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فِي سَبيلِ اللهِ» قَالَ: ثُمَّ مَنْ ؟ قَالَ: «مُؤْمِنٌ فِي شِعبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ اللهَ، وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫/১২৯৭। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এই নিবেদন করল যে, ‘সব চাইতে উত্তম ব্যক্তি কে?’ তিনি বললেন, “সেই মুমিন ব্যক্তি, যে নিজ জান-মাল দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে।” সে বলল, ‘তারপর কে?’ তিনি বললেন, “সেই মুমিন, যে পার্বত্য ঘাঁটির মধ্যে কোন ঘাটিতে আল্লাহর ইবাদতে প্রবৃত্ত থাকে ও জনগণকে নিজের মন্দ থেকে মুক্ত রাখে।” (বুখারী ও মুসলিম)
6/1298 وَعَنْ سَهْلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «رِبَاطُ يَوْمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا، وَمَوْضِعُ سَوْطِ أَحَدِكُمْ مِنَ الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا، وَالرَّوْحَةُ يَرُوحُهَا العَبْدُ في سَبِيلِ اللهِ تَعَالَى، أَوِ الغَدْوَةُ، خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا عَلَيْهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
৬/১২৯৮। সাহাল ইবনে সায়াদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর রাহে একদিন সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, পৃথিবী ও ভূ-পৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা উত্তম। আর তোমাদের কারো একটি বেত্র পরিমাণ জান্নাতের স্থান, দুনিয়া তথা তার পৃষ্ঠস্থ যাবতীয় বস্তু অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর তোমাদের কোন ব্যক্তির আল্লাহর পথে (জিহাদ কল্পে) এক সকাল অথবা এক সন্ধ্যা গমন করা পৃথিবী ও তার মধ্যে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।” (বুখারী-মুসলিম)
7/1299 وَعَنْ سَلمَانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُوْلُ: «رِبَاطُ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَيْرٌ مِنْ صِيَامِ شَهْرٍ وَقِيَامِهِ، وَإنْ مَاتَ جَرَى عَلَيْهِ عَمَلُهُ الَّذِيْ كَانَ يَعْمَلُ، وَأُجْرِيَ عَلَيْهِ رِزْقُهُ، وَأَمِنَ الفَتَّانَ». رواه مسلم
৭/১২৯৯। সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “একদিন ও একরাত সীমান্ত প্রহরায় রত থাকা, একমাস ধরে (নফল) রোযা পালন তথা (নফল) নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। আর যদি ঐ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাহলে তাতে ঐ সব কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে, যা সে পূর্বে করত এবং তার বিশেষ রুযী চালু করে দেওয়া হবে এবং তাকে (কবরের) ফিতনা ও বিভিন্ন পরীক্ষা হতে মুক্ত রাখা হবে।” (মুসলিম)
8/1300 وَعَنْ فَضَالَةَ بنِ عُبَيْدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «كُلُّ مَيِّتٍ يُخْتَمُ عَلَى عَمَلِهِ إِلاَّ المُرَابِطَ فِي سَبيلِ اللهِ، فَإِنَّهُ يُنْمَى لَهُ عَمَلهُ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ، وَيُؤَمَّنُ فِتْنَةَ القَبْرِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৮/১৩০০। ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রতিটি মৃত্যুগামী ব্যক্তির পরলোকগমনের পর তার কর্মধারা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় পাহারা রত ব্যক্তির নয়। কেননা, তার আমল কিয়ামতের দিন পর্যন্ত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত করা হবে এবং সে কবরের পরীক্ষা থেকে নিষ্কৃতি পাবে।” (আবূ দাউদ-তিরমিযী হাসান সহীহ)
9/1301 وَعَن عُثمَانَ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُول اللهِ، يَقُول: «رِبَاطُ يَوْمٍ في سَبيلِ اللهِ، خَيْرٌ مِنْ ألْفِ يَوْمٍ فِيمَا سِوَاهُ مِنَ المَنَازِلِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح»
৯/১৩০১। উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহর পথে একদিন সীমান্তে পাহারা দেওয়া, অন্যত্র হাজার দিন পাহারা দেওয়া অপেক্ষা উত্তম।” (তিরমিযী তিনি বলেন, হাদিসটি উত্তম ও বিশুদ্ধ)
10/1302 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «تَضَمَّنَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِي سَبِيلِهِ، لاَ يُخْرِجُهُ إِلاَّ جِهَادٌ فِي سَبِيلِي، وَإِيمَانٌ بِي، وَتَصْدِيقٌ بِرُسُلِي، فَهُوَ عَلَيَّ ضَامِنٌ أَنْ أُدْخِلَهُ الجَنَّةَ، أَوْ أُرْجِعَهُ إِلَى مَنْزِلِهِ الَّذِيْ خَرَجَ مِنْهُ بِمَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ، أَوْ غَنِيمَةٍ . وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، مَا مِنْ كَلْمٍ يُكْلَمُ فِي سَبِيلِ اللهِ، إِلاَّ جَاءَ يَوْمَ القِيَامَةِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ كُلِم ؛ لَوْنُهُ لَوْنُ دَمٍ، وَرِيحُهُ رِيحُ مِسْكٍ. وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَوْلاَ أَنْ يَشُقَّ عَلَى المُسْلِمِينَ مَا قَعَدْتُ خِلاَفَ سَرِيَّةٍ تَغْزُو فِي سَبيلِ اللهِ أَبَداً، وَلكِنْ لاَ أَجِدُ سَعَةً فَأَحْمِلُهُمْ وَلاَ يَجِدُونَ سَعَةً، وَيَشُقُّ عَلَيْهِمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي . وَالَّذِي نَفْس مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَوَدِدْتُ أَنْ أَغْزُوَ فِي سَبيلِ اللهِ، فَأُقْتَلَ، ثُمَّ أَغْزُوَ فَأُقْتَلَ، ثُمَّ أَغْزُوَ فَأُقْتَلَ». رواه مسلم، وروى البخاري بعضه
১০/১৩০২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সে ব্যক্তির (রক্ষণাবেক্ষণের) দায়ভার গ্রহণ করেন, যে ব্যক্তি তাঁর রাস্তায় বের হয়। (আল্লাহ বলেন,) ‘আমার পথে জিহাদ করার স্পৃহা, আমার প্রতি বিশ্বাস, আমার পয়গম্বরদেরকে সত্যজ্ঞানই তাকে (স্বগৃহ থেকে) বের করে। আমি তার এই দায়িত্ব নিই যে, হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাব, না হয় তাকে নেকী বা গনিমতের সম্পদ দিয়ে তার সেই বাড়ির দিকে ফিরিয়ে দেব, যে বাড়ি থেকে সে বের হয়েছিল।’ সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ আছে! আল্লাহর পথে দেহে যে কোন জখম পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে তা ঠিক এই অবস্থায় আগমন করবে যে, যেন আজই জখম হয়েছে। (টাটকা জখম ও রক্ত ঝরবে।) তার রং তো রক্তের রং হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে! যদি মুসলিমদের জন্য কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে আমি কখনো এমন মুজাহিদ বাহিনীর পিছনে বসে থাকতাম না, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করে। কিন্তু আমার এ সঙ্গতি নেই যে, আমি তাদের সকলকে বাহন দিই এবং তাদেরও (সকলের জিহাদে বের হওয়ার) সঙ্গতি নেই। আর (আমি চলে গেলে) আমার পিছনে থেকে যাওয়া তাদের জন্য কষ্টকর হবে। সেই মহান সত্তার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের জীবন আছে! আমার আন্তরিক ইচ্ছা যে, আমি আল্লাহর পথে লড়াই করি এবং শহীদ হই। অতঃপর আবার (জীবিত হয়ে) লড়াই করি, পুনরায় শাহাদত বরণ করি। অতঃপর (পুনর্জীবিত হয়ে) যুদ্ধ করি এবং পুনরায় শহীদ হয়ে যাই।” (বুখারী কিদয়ংশ, মুসলিম)
11/1303 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَا مِنْ مَكْلُومٍ يُكْلَم فِي سَبيِلِ الله إِلاَّ جَاءَ يَومَ القِيَامةِ، وَكَلْمُهُ يُدْمِي: اللَّوْنُ لَوْنُ دَمٍ، وَالرِّيحُ ريحُ مِسكٍ». متفقٌ عَلَيْهِ
১১/১৩০৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোন ক্ষত আল্লাহর রাহে পৌঁছে, কিয়ামতের দিনে ক্ষতিগ্রস্ত মুজাহিদ এমন অবস্থায় আগমন করবে যে, তার ক্ষত হতে রক্ত ঝরবে। রক্তের রং তো (বাহ্যত
রক্তের মত হবে, কিন্তু তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত।” (বুখারী, মুসলিম)
12/1304 وَعَن مُعَاذٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهِ مِن رَجُلٍ مُسْلِمٍ فُوَاقَ نَاقَةٍ، وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ، وَمَنْ جُرِحَ جُرْحاً فِي سَبِيلِ اللهِ أَوْ نُكِبَ نَكْبَةً فَإِنَّهَا تَجِيءُ يَوْمَ القِيَامَةِ كَأَغْزَرِ مَا كَانَتْ: لَونُها الزَّعْفَرَانُ، وَرِيحُهَا كَالمِسْكِ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
১২/১৩০৪। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন মুসলিম যদি আল্লাহর রাহে এতটুকু সময় যুদ্ধ করে যতটুকু দু’বার উটনী দোহাবার মাঝে হয়, তাহলে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। আর যে মুজাহিদকে আল্লাহর পথে কোনো ক্ষত বা আঁচড় পৌঁছে, আঁচড় কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উপস্থিত হবে যে, তা হতে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশী রক্তধারা প্রবাহিত হবে। (দৃশ্যত
তার রং হবে জাফরান, আর তার গন্ধ হবে কস্তুরীর মত।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
13/1305 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِشِعبٍ فِيهِ عُيَيْنَةٌ مِنْ مَاءٍ عَذْبَة، فَأَعْجَبَتْهُ، فَقَالَ: لَو اعْتَزَلْتُ النَّاسَ فَأَقَمْتُ فِي هَذَا الشِّعْبِ، وَلَنْ أَفْعَلَ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ رَسُولَ اللهِ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «لاَ تَفعَلْ؛ فَإِنَّ مُقامَ أَحَدِكُمْ في سَبيلِ اللهِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ سَبْعِينَ عَاماً، أَلاَ تُحِبُّونَ أَنْ يَغْفِرَ الله لَكُمْ، وَيُدْخِلَكُمُ الجَنَّةَ ؟ أُغْزُوا فِي سَبيلِ اللهِ، مَن قَاتَلَ فِي سَبِيلِ اللهِ فُوَاقَ نَاقَةٍ وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
১৩/১৩০৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একজন সাহাবী একটি দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী পথ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সে পথে ছিল একটি ছোট মিষ্টি পানির ঝর্ণা। সুতরাং তা তাঁকে মুগ্ধ করে তুলল। তিনি বললেন, ‘আমি যদি লোকদের থেকে পৃথক হয়ে এই পাহাড়ি পথে বসবাস করতাম, (তাহলে ভাল হত)! তবে এ কাজ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুমতি ব্যতীত কখনই করব না।’ সুতরাং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, “এরূপ করো না। কারণ, আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের কোন ব্যক্তির (জিহাদ উপলক্ষে) অবস্থান করা, নিজ ঘরে সত্তর বছর ব্যাপী নামায পড়া অপেক্ষা উত্তম। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করান? অতএব আল্লাহর রাহে লড়াই কর। (জেনে রেখো,) যে ব্যক্তি আল্লাহর রাহে দু’বার উটনী দোহানোর মধ্যবর্তী সময় পরিমাণ জিহাদ করবে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যাবে।” (তিরমিযী হাসান সূত্রে)
14/1306 وَعَنهُ، قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا يَعْدِلُ الجِهَادَ فِي سَبِيلِ اللهِ ؟ قَالَ: «لاَ تَسْتَطِيعُونَهُ». فَأَعَادُوا عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثاً كُلُّ ذَلِكَ يَقُولُ: «لاَ تَسْتَطِيعُونَهُ» ! ثُمَّ قَالَ: «مَثَلُ المُجَاهِدِ فِي سَبيلِ اللهِ كَمَثلِ الصَّائِمِ القَائِمِ القَانِتِ بِآيَاتِ اللهِ لاَ يَفْتُرُ مِنْ صِيَامٍ، وَلاَ صَلاَةٍ، حَتَّى يَرْجِعَ المُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلمٍ .
وفي رواية البخاري: أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ يَعْدِلُ الجِهَادَ ؟ قَالَ: لاَ أَجِدُهُ» ثُمَّ قَالَ: «هَلْ تَسْتَطِيعُ إِذَا خَرَجَ المُجَاهِدُ أَنْ تَدْخُلَ مَسْجِدَكَ فَتَقُوْمَ وَلاَ تَفْتُرَ، وَتَصُومَ وَلاَ تُفْطِرَ» ؟ فَقَالَ: وَمَنْ يَسْتَطِيعُ ذَلِكَ ؟!
১৪/১৩০৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে জিহাদ করার সমতুল্য আমল কি? তিনি বললেন, “তোমরা তা পারবে না।” তারা তাঁকে দু’-তিনবার ঐ একই কথা জিজ্ঞাসা করতে থাকল, আর তিনি প্রত্যেকবারে বললেন, “তোমরা তার ক্ষমতা রাখ না।” তারপর বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ-কারীর দৃষ্টান্ত ঠিক সেই রোজাদার ও আল্লাহর আয়াত পাঠ করে নামায আদায়কারীর মত, যে রোযা রাখতে ও নামায পড়তে আদৌ ক্লান্তি-বোধ করে না। (এরূপ ততক্ষণ পর্যন্ত গণ্য হয়) যতক্ষণ না মুজাহিদ জিহাদ থেকে ফিরে আসে।” (বুখারী-মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
বুখারীর এক বর্ণনায় আছে, একটি লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন একটি আমল বাতলে দিন, যা জিহাদের সমতুল্য হবে।’ তিনি বললেন, “আমি এ ধরনের আমল তো পাচ্ছি না।” তারপর তিনি বললেন, “তুমি কি এরূপ করতে পারবে যে, মুজাহিদ যখন বের হয়ে যাবে, তখন থেকে তুমি মসজিদে ঢুকে অ-ক্লান্তভাবে নামাযে নিমগ্ন হবে এবং অবিরাম রোযা রাখবে।” সে বলল, ‘ও কাজ কে করতে পারবে?’
15/1307 وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مِنْ خَيْرِ مَعَاشِ النَّاسِ لَهُمْ، رَجُلٌ مُمْسِكٌ عِنَانَ فَرَسِهِ فِي سَبِيلِ اللهِ، يَطِيرُ عَلَى مَتْنِهِ، كُلَّمَا سَمِعَ هَيْعَةً أَوْ فَزْعَةً طَارَ عَلَيْهِ يَبْتَغِي القَتْلَ وَالمَوْتَ مَظَانَّهُ أَوْ رَجُلٌ فِي غُنَيْمَةٍ فِي رَأسِ شَعَفَةٍ مِنْ هَذَا الشَّعَفِ، أَوْ بَطْنِ وَادٍ مِنَ الأَوْدِيَةِ، يُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَيُؤتِي الزَّكَاةَ، وَيَعْبُدُ رَبَّهُ حَتَّى يَأتِيَهُ اليَقِينُ، لَيْسَ مِنَ النَّاسِ إِلاَّ في خَيْرٍ». رواه مسلم
১৫/১৩০৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহর পথে ঘোড়ার লাগাম ধারক ব্যক্তির জীবন, সমস্ত লোকের জীবন চাইতে উত্তম, যে ব্যক্তি যুদ্ধ-ধ্বনি শোনামাত্র ঘোড়ার পিঠে চড়ে উড়ে চলে অথবা কোন শত্রুর ভয় দেখা মাত্র তার পিঠে চড়ে (দ্রুত বেগে) উড়ে যায় এবং শাহাদত অথবা মৃত্যু তার (সব সব) সম্ভাব্য স্থানে সন্ধান করতে থাকে। কিংবা সেই ব্যক্তির (জীবন সর্বোত্তম) যে তার ছাগলের পাল নিয়ে পর্বত-শিখরে বা কোন উপত্যকার মাঝে অবস্থান করে। যথারীতি নামায আদায় করে, যাকাত দেয় এবং আমরণ স্বীয় প্রভুর উপাসনায় প্রবৃত্ত থাকে। লোকদের মধ্যে এ ব্যক্তি উত্তম অবস্থায় রয়েছে।” (মুসলিম)
16/1308 وَعَنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِنَّ فِي الجنَّةِ مِئَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِينَ في سَبِيلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأرْضِ». رواه البخاري
১৬/১৩০৮। উক্ত বর্ণনাকারী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতের মধ্যে একশ’টি স্তর আছে, যা আল্লাহর রাহে জিহাদ-কারীদের জন্য মহান আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন। দুই স্তরের মাঝখানের ব্যবধান আসমান-জমিনের মধ্যবর্তীর দূরত্ব-সম।” (বুখারী)
17/1309 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبّاً، وَبِالإِسْلاَمِ ديناً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً، وَجَبَتْ لَهُ الجَنَّةُ»، فَعَجِبَ لَهَا أَبُو سَعيدٍ، فَقَالَ: أَعِدْهَا عَلَيَّ يَا رَسُولَ اللهِ، فَأَعَادَهَا عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «وَأُخْرَى يَرْفَعُ اللهُ بِهَا العَبْدَ مِئَةَ دَرَجَةٍ فِي الجَنَّةِ، مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَينِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ» قَالَ: وَمَا هيَ يَا رَسُولَ اللهِ ؟ قَالَ: «الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ، الجهَادُ في سَبيلِ اللهِ». رواه مسلم
১৭/১৩০৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব (প্রতিপালক) বলে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে পয়গম্বর-রূপে মেনে নিলো, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে গেল।” আবূ সাঈদ (বর্ণনাকারী) অনুরূপ উক্তি শুনে নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! কথাগুলি আবার বলুন।’ তিনি তাই করলেন। তারপর তিনি বললেন, “আরও একটি পুণ্যের সুসংবাদ, যার বিনিময়ে বান্দার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের মধ্যে একশ’টি স্তর উঁচু করে দেবেন, প্রতি দুই স্তরের মাঝখানের দূরত্ব হবে, আকাশ-পৃথিবীর মধ্যখানের দূরত্ব সম।” আবূ সাঈদ বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সেটি কি?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।” (মুসলিম)
18/1310 وَعَن أَبي بَكْرِ بنِ أَبِي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي رضي الله عنه، وَهُوَ بَحَضْرَةِ العَدُوِّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ أَبْوَابَ الجَنَّةِ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ» فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الهَيْئَةِ، فَقَالَ: يَا أَبَا مُوسَى أَأَنْتَ سَمِعْتَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ هَذَا ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: أَقْرَأُ عَلَيْكُم السَّلاَمَ، ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ، ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى العَدُوِّ فَضَربَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ. رواه مسلم
১৮/১৩১০। আবূ বকর ইবনে আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে এ কথা বলতে শুনেছি---যখন তিনি শত্রুর সামনে বিদ্যমান ছিলেন---আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে জান্নাতের দ্বারসমূহ তরবারির ছায়াতলে রয়েছে।” এ কথা শুনে রুক্ষ বেশধারী জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে উঠল, ‘হে আবূ মুসা! আপনি কি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ কথা বলতে শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ। অতঃপর সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং বলল, তোমাদেরকে বিদায়ী সালাম জানাচ্ছি।’ অতঃপর সে তার তরবারির খাপটি ভেঙ্গে দিয়ে (নগ্ন) তরবারিটি নিয়ে শত্রুর দিকে অগ্রসর হল এবং শত্রুকে আঘাত করে অবশেষে সে শহীদ হয়ে গেল। (মুসলিম)
19/1311 وَعَن أَبي عَبْسٍ عَبدِ الرَّحمَانِ بنِ جَبْرٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِي سَبيلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ». رواه البخاري
১৯/১৩১১। আবূ আব্স আব্দুর রহমান ইবনে জাবর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে বান্দার পদযুগল আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে জাহান্নাম স্পর্শ করবে না।” (বুখারী)
20/1312 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيةِ اللهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلاَ يَجْتَمِعُ عَلَى عَبْدٍ غُبَارٌ فِي سَبيلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
২০/১৩১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সেই ব্যক্তি জাহান্নামে প্রবেশ করবে না, যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে কাঁদে; যতক্ষণ না দুধ স্তনে ফিরে না গেছে। (অর্থাৎ দুধ স্তনে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব, তেমনি তার জাহান্নামে প্রবেশ করাও অসম্ভব।) আর একই বান্দার উপর আল্লাহর পথের ধূলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া একত্র জমা হবে না।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
21/1313 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «عَيْنَانِ لاَ تَمسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِي سَبيلِ اللهِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
২১/১৩১৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “দুই প্রকার চক্ষুকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না। আল্লাহর ভয়ে যে চক্ষু ক্রন্দন করে। আর যে চক্ষু আল্লাহর পথে প্রহরায় রত থাকে।” (তিরমিযী হাসান)
22/1314 وَعَن زَيدِ بنِ خَالِدٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ جَهَّزَ غَازِياً فِي سَبِيلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا، وَمَنْ خَلَفَ غَازياً فِي أَهْلِهِ بِخَيْرٍ فَقَدْ غَزَا». متفقٌ عَلَيْهِ
২২/১৩১৪। যায়দ ইবনে খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে যোদ্ধা প্রস্তুত করে দিল, সে আসলে স্বয়ং যুদ্ধ করল। আর যে ব্যক্তি কোন যোদ্ধার পরিবারের দেখা-শুনা করার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করল, সে আসলে স্বয়ং যুদ্ধ করল।” (বুখারী ও মুসলিম)
23/1315 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَفْضَلُ الصَّدَقَاتِ ظِلُّ فُسْطَاطٍ فِي سَبِيلِ اللهِ وَمَنِيحَةُ خَادِمٍ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَوْ طَرُوقَةُ فَحلٍ فِي سَبِيلِ اللهِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
২৩/১৩১৫। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সর্বোত্তম সদকা আল্লাহর রাহে তাঁবুর ছায়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া, (যার দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়)। আর আল্লাহর রাস্তায় কোন খাদেম দান করা (যার দ্বারা মুজাহিদ সেবা গ্রহণ করে। কিংবা আল্লাহর পথে (গর্ভধারণের উপযুক্ত হৃষ্টপুষ্ট) উটনী দান করা, (যার দুধ দ্বারা মুজাহিদ উপকৃত হয়)।” (তিরমিযী হাসান, সহীহ)
24/1316 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ فَتَىً مِنْ أَسْلَمَ، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أُرِيدُ الغَزْوَ وَلَيْسَ مَعِيَ مَا أَتَجهَّزُ بِهِ، قَالَ: «اِئْتِ فُلاناً فَإِنَّهُ قَدْ كَانَ تَجَهَّزَ فَمَرِضَ» فَأَتَاهُ، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يُقْرِئُكَ السَّلاَمَ، ويَقُول: أَعْطِنِي الَّذِيْ تَجَهَّزْتَ بِهِ . قَالَ: يَا فُلاَنَةُ، أَعْطِيهِ الَّذِي كُنْتُ تَجَهَّزْتُ بِهِ، وَلاَ تَحْبِسِي عَنْهُ شَيْئاً، فَوَاللهِ لاَ تَحْبِسِي مِنْهُ شَيْئاً فَيُبَارَكَ لَكِ فِيهِ . رواه مسلم
২৪/১৩১৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আসলাম গোত্রের এক যুবক এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি জিহাদ করতে চাচ্ছি; কিন্তু তার জন্য আমার কোন সাজ-সরঞ্জাম নেই।’ তিনি বললেন, “তুমি অমুকের নিকট যাও। কারণ, সে (যুদ্ধের জন্য) সাজ-সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছিল; কিন্তু (ভাগ্যক্রমে) সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” সুতরাং সে তার কাছে এসে বলল, ‘রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে সালাম পেশ করেছেন এবং বলেছেন যে, তুমি আমাকে ঐসব সাজ-সরঞ্জাম দিয়ে দাও, যা তুমি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিলে।’ সে (স্বীয় স্ত্রীকে) বলল, ‘হে অমুক! ওকে ঐ সমস্ত সরঞ্জাম দিয়ে দাও, যেগুলি আমি যুদ্ধের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছিলাম। আর ওর মধ্য হতে কোন কিছু রেখে নিও না (বরং সমস্ত দিয়ে দাও)। আল্লাহর শপথ! তুমি তার মধ্য হতে কোন জিনিস আটকে রাখলে, তোমার জন্য তাতে বরকত দেওয়া হবে না।’ (মুসলিম)
25/1317 وَعَن أَبي سَعِيدٍ الخُدرِيْ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَعَثَ إِلَى بَنِي لَحْيَانَ، فَقَالَ: «لِيَنْبَعِثْ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ أَحَدُهُمَا، وَالأَجْرُ بَيْنَهُمَا». رواه مسلم .
وفي روايةٍ لَهُ: «لِيَخْرُجَ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ رَجُلٌ» ثُمَّ قَالَ لِلقَاعِدِ: «أَيُّكُمْ خَلَفَ الخَارِجَ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ بِخَيْرٍ كَانَ لَهُ مِثْلُ نِصْفِ أَجْرِ الخَارِجِ».
২৫/১৩১৭। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, (একবার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ লাহইয়ান গোত্রাভিমুখে (যখন তারা অমুসলিম ছিল) একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন এবং বললেন, “যেন প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন লোক (ঐ বাহিনীতে) যোগদান করে, আর সওয়াব দু’জনের মধ্যে সমান হবে। (যদি পিছনে থাকা ব্যক্তি মুজাহিদের পরিবারের যথাযথ ভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।)” (মুসলিম)
এর অন্য বর্ণনায় আছে, “যেন প্রতি দু’জনের মধ্যে একজন পুরুষ জিহাদে বের হয়।” অতঃপর ঘরে বসে থাকা ব্যক্তির জন্য বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে কেউ জিহাদের উদ্দেশ্যে গমনকারীর পরিবার-পরিজনদের মধ্যে উত্তমরূপে তার প্রতিনিধিত্ব করবে, সে তার (মুজাহিদের) অর্ধেক পুণ্য পাবে।”
** (পূর্বোক্ত হাদিসের সমান নেকীর কথা উল্লিখিত হয়েছে আর এতে অর্ধেকের কথা দৃশ্যত: দুই হাদিসের মধ্যে বিরোধ পরিদৃষ্ট হলেও; আসলে কিন্তু কোন বিরোধ নেই। কারণ, অর্ধেক মানে হচ্ছে দু’জনের মধ্যে একটি নেকীর সমান ভাগ হবে। বিধায় দু’জনের জন্যই আধা-আধি হবে। ফলে দু’জনেরই সমান অংশ দাঁড়াবে।)
26/1318 وَعَن البَرَاءِ، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَجُلٌ مُقَنَّعٌ بِالحَدِيدِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أُقَاتِلُ أَوْ أُسْلِمُ؟ قَالَ: «أَسْلِمْ، ثُمَّ قَاتِلْ» . فَأَسْلَمَ، ثُمَّ قَاتَلَ فَقُتِلَ . فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «عَمِلَ قَلِيلاً وَأُجِرَ كَثِيراً». متفقٌ عَلَيْهِ. وهذا لفظ البخاري
২৬/১৩১৮। বারা’ ইবনে আযেব কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট লোহার শিরস্ত্রাণ পরা মুখ ঢাকা অবস্থায় এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আগে জিহাদ করব, না ইসলাম গ্রহণ করব?’ তিনি বললেন, “আগে ইসলাম গ্রহণ কর, তারপর জিহাদ কর।” সুতরাং সে ইসলাম গ্রহণ করে জিহাদে প্রবৃত্ত হল এবং শহীদ হয়ে গেল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি কাজ তো অল্প করল; কিন্তু পারিশ্রমিক প্রচুর পেল।” (বুখারী, মুসলিম, শব্দগুলি মুসলিমের)
27/1319 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا أَحَدٌ يَدْخُلُ الجَنَّةَ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَلَهُ مَا عَلَى الأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ إِلاَّ الشَّهِيدُ، يَتَمَنَّى أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا، فَيُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ ؛ لِمَا يَرَى مِنَ الكَرَامَةِ» . وفي رواية: لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ» متفقٌ عَلَيْهِ
২৭/১৩১৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তি এমন নেই যে, জান্নাতে যাওয়ার পর এই লোভে জগতে ফিরে আসা পছন্দ করবে যে, ধরা পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবারই সে মালিক হয়ে যাবে। কিন্তু শহীদ (তা করবে। কেননা,) সে প্রাপ্ত মর্যাদা ও সম্মান প্রত্যক্ষ করে ইহজগতে ফিরে এসে দশবার শহীদ হতে কামনা করবে।”
অন্য বর্ণনানুযায়ী “সে প্রাপ্ত শাহাদাতের ফযীলত দেখে এ বাসনা করবে।” (বুখারী-মুসলিম)
28/1320 وَعَن عَبدِ الله بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَغْفِرُ اللهُ لِلْشَّهِيدِ كُلَّ شَيْءٍ إِلاَّ الدَّيْنَ» . رواه مسلم
وفي روايةٍ له: «القَتْلُ فِي سَبِيلِ اللهِ يُكَفِّرُ كُلَّ شَيءٍ إِلاَّ الدَّيْن» .
২৮/১৩২০। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঋণ (মানুষের হক) ছাড়া শহীদের সকল গোনাহ আল্লাহ মাফ করে দেবেন।” (মুসলিম)
এর অন্য এক বর্ণনায় আছে, “আল্লাহর পথে শাহাদত বরণ ঋণ (মানুষের হক) ব্যতীত সমস্ত পাপকে মোচন করে দেয়।”
29/1321 وَعَن أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَامَ فِيهِم فَذَكَرَ أَنَّ الجِهَادَ فِي سَبيلِ اللهِ، وَالإيمَانَ بِاللهِ، أَفْضَلُ الأَعْمَالِ، فَقَامَ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَتُكَفَّرُ عَنِّي خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ لهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «نَعَمْ، إِنْ قُتِلْتَ فِي سَبِيلِ الله وَأَنْتَ صَابِرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيْرُ مُدْبِرٍ»، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «كَيْفَ قُلْتَ ؟» قَالَ: أَرَأيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللهِ، أَتُكَفَّرُ عَنِّي خَطَايَايَ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «نَعَمْ، وَأَنْتَ صَابرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبِلٌ غَيرُ مُدْبِرٍ، إِلاَّ الدَّيْنَ فَإنَّ جِبْريلَ - عَلَيهِ السَّلاَمُ - قَالَ لِي ذَلِكَ». رواه مسلم
২৯/১৩২১। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনমন্ডলীর মাঝে দাঁড়িয়ে ভাষণ দানকালে বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা ও আল্লাহর পথে ঈমান রাখা সর্বোত্তম কর্ম।” জনৈক ব্যক্তি উঠে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি আল্লাহর রাহে লড়াই করে শাহাদত বরণ করি, তাহলে কি আল্লাহ আমার সমুদয় পাপ-রাশিকে মিটিয়ে দেবেন?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, যদি তুমি আল্লাহর পথে নেকীর কামনায় ধৈর্য-সহ্যের সাথে অগ্রসর হয়ে এবং পশ্চাদপসরণ না করে শহীদ হয়ে যাও, (তাহলে আল্লাহ তোমার সমস্ত পাপরাশি মাফ করে দেবেন।)” তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি কি যেন বললে?” সে বলল, ‘আপনি বলুন, যদি আমি আল্লাহর পথে শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমার গুনাহ-খাতাসমূহ তার ফলে মিটে যাবে কি?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হ্যাঁ, ধৈর্য-সহ্যের সাথে, অগ্রসর হয়ে এবং পশ্চাদপসরণ না করে (যদি তুমি শহীদ হয়ে যাও তাহলে)। কিন্তু ঋণ ছাড়া। যেহেতু জিবরীল عليه السلام এখনই আমাকে এ কথা বললেন।” (মুসলিম)
** (অর্থাৎ ঋণ পরিশোধ না করার গোনাহ মাফ হবে না। কারণ, এটি বান্দার হক। আর বান্দার হক বান্দার কাছেই ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।)
30/1322 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: أَيْنَ أنَا يَا رَسُولَ اللهِ إِنْ قُتِلْتُ ؟ قَالَ: «فِي الجَنَّةِ» فَألْقَى تَمَرَاتٍ كُنَّ فِي يَدِهِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ . رواه مسلم
৩০/১৩২২। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি লোক বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি আমি শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমার স্থান কোথায় হবে?’ তিনি বললেন, “জান্নাতে।” সে (এ কথা শুনে) তার হাতের খেজুরগুলি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হল এবং অবশেষে শহীদ হয়ে গেল। (মুসলিম)
31/1323 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: اِنْطَلَقَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَصْحَابُهُ حَتَّى سَبَقُوا المُشْرِكِينَ إِلَى بَدْرٍ، وَجَاءَ المُشْرِكُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لاَ يَقْدِمَنَّ أَحَدٌ مِنْكُمْ إِلَى شَيْءٍ حَتَّى أَكُونَ أنَا دُونَهُ» . فَدَنَا المُشْرِكُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ» قَالَ: يَقُولُ عُمَيْرُ بن الحُمَامِ الأَنْصَارِيُّ رضي الله عنه: يَا رَسُولَ اللهِ، جَنَّةٌ عَرْضُهَا السَّماوَاتُ وَالأَرْضُ ؟ قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: بَخٍ بَخٍ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَولِكَ بَخٍ بَخٍ ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ إِلاَّ رَجَاءَ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِهَا، قَالَ: «فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا». فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرَنِهِ، فَجَعَلَ يَأكُلُ مِنْهُنَّ، ثُمَّ قَالَ: لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي هَذِهِ إِنّهَا لَحَياةٌ طَوِيلَةٌ، فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ التَّمْرِ، ثُمَّ قَاتَلَهُمْ حَتَّى قُتِلَ . رواه مسلم
৩১/১৩২৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় সহচরবৃন্দের সাথে (বদরাভিমুখে) রওনা দিলেন। পরিশেষে মুশরিকদের পূর্বেই তাঁরা বদর স্থানে পৌঁছে গেলেন। তারপর মু-শরিকগণ সেখানে এসে পৌঁছল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা অবশ্যই কেউ কোন বিষয়ে আগে বেড়ে কিছু করবে না; যতক্ষণ আমি নির্দেশ না দেব অথবা আমি স্বয়ং তা করব।” সুতরাং যখন মুশরিকরা নিকটবর্তী হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা সেই জান্নাতের দিকে ওঠো, যার প্রস্থ হল আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সমান।” বর্ণনাকারী বলেন, উমাইর ইবনে হুমাম আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিবেদন করলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! জান্নাতের প্রস্থ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সমান?’ তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” উমাইর বললেন, ‘বাঃ বাঃ!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “বাঃ বাঃ’ শব্দ উচ্চারণ করার জন্য তোমাকে কোন জিনিস উদ্বুদ্ধ করল?” উমাইর বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! হে আল্লাহর রসূল! তার (জান্নাতের) অধিবাসী হওয়ার কামনা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ তিনি বললেন, “তুমি তার অধিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত।” অতঃপর তিনি কতিপয় খেজুর স্বীয় তূণ থেকে বের করে খেতে শুরু করলেন। তারপর বললেন, ‘যদি আমি এগুলি খেতে থাকি, তবে দীর্ঘক্ষণ জীবিত থাকতে হবে (এত দেরী সহ্য হবে না)।’ বিধায় তিনি তাঁর কাছে যত খেজুর ছিল, সব ফেলে দিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়লেন। অবশেষে শহীদ হয়ে গেলেন। (মুসলিম)
13/1324 وَعَنه، قَالَ: جَاءَ نَاسٌ إِلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم أن ابْعَثْ مَعَنَا رِجَالاً يُعَلِّمُونَا القُرْآنَ وَالسُّنَّةَ، فَبَعَثَ إلَيْهِمْ سَبْعِينَ رَجُلاً مِنَ الأَنْصَارِ يُقَالُ لَهُمْ: القُرّاءُ، فِيهِم خَالِي حَرَامٌ، يَقْرَؤُونَ القُرْآنَ، وَيَتَدَارَسُونَ بِاللَّيْلِ يَتَعَلَّمُونَ، وَكَانُوا بِالنَّهَارِ يَجِيئُونَ بِالمَاءِ، فَيَضَعُونَهُ فِي المَسْجِدِ، وَيَحْتَطِبُونَ فَيَبِيعُونَهُ، وَيَشْتَرُونَ بِهِ الطَّعَامَ لأَهْلِ الصُّفَّةِ، وَلِلفُقَرَاءِ، فَبَعَثَهُمُ النَّبِيُّ، فَعَرَضُوا لَهُمْ فَقَتَلُوهُمْ قَبْلَ أَنْ يَبْلُغُوا المَكَانَ، فَقَالُوا: اَللهم بَلِّغْ عَنَّا نَبِيَّنَا أَنَّا قَدْ لَقِينَاكَ فَرَضِينَا عَنْكَ وَرَضِيتَ عَنَّا، وَأتَى رَجُلٌ حَراماً خَالَ أنَسٍ مِنْ خَلْفِهِ، فَطَعَنَهُ بِرُمْحٍ حَتَّى أَنْفَذَهُ، فَقَالَ حَرَامٌ: فُزْتُ وَرَبِّ الكَعْبَةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ إِخْوَانَكُمْ قَدْ قُتِلُوا وَإِنَّهُمْ قَالُوا: اَللهم بَلِّغْ عَنَّا نَبِيَّنَا أَنَّا قَدْ لَقِينَاكَ فَرَضِينَا عَنْكَ وَرَضِيتَ عَنَّا». متفقٌ عَلَيْهِ، وهذا لفظ مسلم
৩২/১৩২৪। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, কয়েকটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে কিছু শিক্ষিত মানুষ পাঠিয়ে দিন, যারা আমাদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা দেবেন।’ সুতরাং তিনি সত্তর জন আনসারীকে পাঠিয়ে দিলেন--যাঁদেরকে ‘কুররা’ (কুরআনের হাফেয) বলা হত। ‘হারাম’ নামক আমার মামাও তাঁদের অন্যতম। তাঁরা রাতে কুরআন পড়তেন, আপোষে কুরআন অধ্যয়ন করতেন এবং শিক্ষা অর্জন করতেন। আর দিনে তাঁরা পানি এনে মসজিদে রাখতেন। কাঠ সংগ্রহ করে তা বিক্রি করতেন এবং তা দিয়ে আহলে সুফ্ফা (মসজিদে নববীতে অবস্থানরত তৎকালীন ইসলামী ছাত্রবৃন্দ) ও গরীবদের জন্য খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে প্রেরণ করলেন। পথিমধ্যে তারা তাঁদেরকে আটকে তাঁদের গন্তব্য-স্থলে পৌঁছনোর পূর্বেই হত্যা করে দিল। শাহাদত প্রাক্কালে তাঁরা এই দো‘আ করলেন, “হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নবীকে এই সংবাদ পৌঁছে দাও যে, আমরা তোমার সাক্ষাৎ লাভ করেছি, অতঃপর তোমার প্রতি আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তুমিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ।” আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মামা ‘হারাম’-এর পশ্চাৎ দিক থেকে একটি লোক এসে বল্লমের খোঁচা মেরে (শরীর ফুঁড়ে) পার করে দিল। হারাম বলে উঠলেন, ‘কা‘বার প্রভুর কসম! আমি সফল হলাম!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (উপস্থিত সাহাবীদের সম্বোধন করে) বললেন, “নিঃসন্দেহে তোমাদের ভাইদেরকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে এবং তারা এ বলে দো‘আ করেছে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের নবীকে এই সংবাদ পৌঁছে দাও যে, আমরা তোমার সাক্ষাৎ লাভ করেছি, অতঃপর তোমার প্রতি আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি এবং তুমিও আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছ।” (বুখারী ও মুসলিম)
33/1325 وَعَنهُ، قَالَ: غَابَ عَمِّي أَنَسُ بنُ النَّضْرِ رضي الله عنه عَن قِتَالِ بَدْرٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، غِبْتُ عَنْ أَوَّلِ قِتَالٍ قَاتَلْتَ المُشْرِكِينَ، لَئِنِ اللهُ أَشْهَدَنِي قِتَالَ المُشْرِكِينَ لَيَرَيَنَّ اللهُ مَا أَصْنَعُ . فَلَمَّا كَانَ يَومُ أُحُدٍ انْكَشَفَ المُسْلِمُونَ فَقَالَ: اَللهم إنِّي أَعْتَذِرُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلاءُ - يَعنِي: أَصْحَابَهُ - وَأَبْرَأُ إلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هؤُلاءِ - يَعنِي: المُشْرِكِينَ - ثُمَّ تَقَدَّمَ فَاسْتَقْبَلَهُ سَعْدُ بنُ مُعَاذٍ رضي الله عنه فَقَالَ: يَا سَعَدَ بنَ مُعَاذٍ رضي الله عنه، الجَنَّةَ وَرَبِّ النَّضْرِ، إنِّي أَجِدُ رِيحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ ! فَقَالَ سَعْدٌ: فَمَا اسْتَطَعْتُ يَا رَسُولَ اللهِ مَا صَنَعَ ! قَالَ أَنَسٌ: فَوَجدْنَا بِهِ بِضعاً وَثَمَانِينَ ضَربَةً بِالسَّيْفِ، أَوْ طَعْنَةً برُمح أَوْ رَمْيةً بِسَهْمٍ، وَوَجَدْنَاهُ قَدْ قُتِلَ وَمَثَّلَ بِهِ المُشْرِكُونَ، فَمَا عَرَفَهُ أَحَدٌ إِلاَّ أُخْتُهُ بِبَنَانِهِ . قَالَ أَنَسٌ: كُنَّا نَرَى - أَوْ نَظُنُّ - أَنَّ هَذِهِ الآية نَزَلتْ فِيهِ وَفي أَشْبَاهِهِ: ﴿ مِّنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ رِجَالٞ صَدَقُواْ مَا عَٰهَدُواْ ٱللَّهَ عَلَيۡهِۖ فَمِنۡهُم مَّن قَضَىٰ نَحۡبَهُۥ﴾ [الاحزاب: ٢٣] إِلَى آخرها . متفقٌ عَلَيْهِ، وَقَدْ سبق في باب المجاهدة
৩৩/১৩২৫। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আমার চাচা আনাস ইবনে ন্যাজর বদরের যুদ্ধে অনুপস্থিত ছিলেন। (যার জন্য তিনি খুবই দুঃখিত হয়েছিলেন।) অতঃপর তিনি একবার বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! প্রথম যে যুদ্ধ আপনি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করলেন, তাতে আমি অনুপস্থিত থাকলাম। যদি (এরপর) আল্লাহ আমাকে মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে হাজির হওয়ার সৌভাগ্য দান করেন, তাহলে আমি কি করব--আল্লাহ তা অবশ্যই দেখাবেন (অথবা দেখবেন)। অতঃপর যখন উহুদের দিন এলো, তখন মুসলিমরা (শুরুতে) ঘাঁটি ছেড়ে দেওয়ার কারণে পরাজিত হলেন। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! এরা অর্থাৎ সঙ্গীরা যা করল, তার জন্য আমি তোমার নিকট ওজর পেশ করছি। আর ওরা অর্থাৎ মুশরিকরা যা করল, তা থেকে আমি তোমার কাছে সম্পর্কহীনতা প্রকাশ করছি।’ অতঃপর তিনি আগে বাড়লেন এবং সামনে সা‘আদ ইবনে মু‘আযকে পেলেন। তিনি বললেন, ‘হে সা‘আদ ইবনে মু‘আয! জান্নাত! কা‘বার প্রভুর কসম! আমি উহুদ অপেক্ষা নিকটতর জায়গা হতে তার সুগন্ধ পাচ্ছি।’ (এই বলে তিনি শত্রুদের মাঝে ঝাঁপিয়ে পড়লেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শাহাদত বরণ করলেন।) সায়াদ বলেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! সে যা করল আমি তা পারলাম না।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমরা তাঁর দেহে আশীর চেয়ে বেশি তরবারি, বর্শা বা তীরের আঘাত চিহ্ন পেলাম। আর আমরা তাকে এই অবস্থায় পেলাম যে, তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং মুশরিকরা তাঁর নাক-কান কেটে নিয়েছে। ফলে কেউ তাঁকে চিনতে পারেনি। কেবল তাঁর বোন তাঁকে তাঁর আঙ্গুলের পাব দেখে চিনেছিল।’ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, ‘আমরা ধারণা করতাম যে, (সূরা আহযাবের ২৩নং এই আয়াত তাঁর ও তাঁর মত লোকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। “মুমিনদের মধ্যে কিছু আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে, ওদের কেউ কেউ নিজ কর্তব্য পূর্ণরূপে সমাধা করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। ওরা তাদের লক্ষ্য পরিবর্তন করেনি।” (বুখারী ও মুসলিম, মুজাহাদা পরিচ্ছেদ ১৫/১১১ নং হাদিস দ্রঃ)
34/1326 وَعَن سَمُرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ رَجُلَيْنِ أَتيَانِي، فَصَعِدَا بِي الشَّجرةَ فَأَدْخَلاَنِي دَاراً هِيَ أَحْسَنُ وَأَفضَلُ، لَمْ أَرَ قَطُّ أحْسَنَ مِنْهَا، قَالاَ: أَمَّا هَذِهِ الدَّارُ فَدَارُ الشُّهَدَاءِ». رواه البخاري، وَهُوَ بعض من حديث طويل فِيهِ أنواع من العلم سيأتي في باب تحريم الكذب إنْ شاء الله تَعَالَى .
৩৪/১৩২৬। সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “রাতে দু’জন লোক আমার কাছে এসে আমাকে গাছের উপর চড়ালো এবং আমাকে একটি সুন্দর ও উত্তম ঘরে প্রবেশ করাল, ওর চাইতে সুন্দর (ঘর) আমি কখনো দেখিনি। তারা (দু’জনে) বলল, ‘--- এই ঘরটি হচ্ছে শহীদদের ঘর।” (বুখারী, এটি একটি সুদীর্ঘ হাদিসের অংশবিশেষ; যাতে আছে বহুমুখী ইলম। ইন শাআল্লাহ ‘মিথ্যা বলা হারাম’ পরিচ্ছেদে বিস্তারিত আসবে।)
35/1327 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ أُمَّ الرُّبَيِّعِ بنتَ البَرَاءِ وَهِيَ أُمُّ حَارِثَةَ بنِ سُرَاقَةَ، أَتَتِ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلاَ تُحَدِّثُنِي عَنْ حَارِثَةَ - وَكَانَ قُتِلَ يَوْمَ بَدْرٍ - فَإِنْ كَانَ فِي الجَنَّةِ صَبَرْتُ، وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ اجْتَهَدْتُ عَلَيْهِ فِي البُكَاءِ، فَقَالَ: «يَا أُمَّ حَارِثَةَ إِنَّهَا جِنَانٌ فِي الجَنَّةِ، وَإنَّ ابْنَكِ أَصَابَ الفِرْدَوْسَ الأَعْلَى». رواه البخاري
৩৫/১৩২৭। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উম্মে রুবাইয়ে’ বিনতে বারা’ যিনি হারেসাহ ইবনে সূরাকার মা, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে হারেসাহ সম্পর্কে কিছু বলবেন না? সে বদরের দিনে খুন হয়েছিল। যদি সে জান্নাতি হয়, তাহলে ধৈর্য ধারণ করব, অন্যথা তার জন্য মন ভরে অত্যধিক কান্না করব।’ তিনি বললেন, “হে হারেসার মা! জান্নাতের মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের জান্নাত আছে। আর তোমার ছেলে সর্বোচ্চ ফিরদাউস (জান্নাতে) পৌঁছে গেছে।” (বুখারী)
36/1328 عَن جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: جِيءَ بِأَبِي إِلَى النَّبِيِّ، قَدْ مُثِّلَ بِهِ، فَوُضِعَ بَيْنَ يَدَيْهِ ؛ فَذَهَبْتُ أَكْشِفُ عَنْ وَجْهِهِ فَنَهَانِي قَوْمِي، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «مَا زَالتِ المَلائِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
৩৬/১৩২৮। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার পিতাকে (উহুদ যুদ্ধের দিন) তাঁর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছেদন হেতু বিকৃত অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে আসা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি পিতার চেহারা খুলতে গেলাম; কিন্তু আমাকে আমার আপনজনরা নিষেধ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “ওকে ফেরেশতাবর্গ নিজেদের ডানাসমূহ দিয়ে সর্বদা ছায়া করছিল।” (বুখারী ও মুসলিম)
37/1329 وَعَن سَهلِ بنِ حُنَيفٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ سَأَلَ اللهَ تَعَالَى الشَّهَادَةَ بِصِدْقٍ بَلَّغَهُ اللهُ مَنَازِلَ الشُّهَدَاءِ، وَإنْ مَاتَ عَلَى فِرَاشِهِ». رواه مسلم
৩৭/১৩২৯। সাহাল ইবনে হুনাইফ রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সত্য নিয়তে আল্লাহর কাছে শাহাদত প্রার্থনা করবে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছিয়ে দিবেন; যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যুবরণ করে।” (মুসলিম)
38/1330 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ طَلَبَ الشَّهَادَةَ صَادِقاً أُعْطِيَهَا وَلَوْ لَمْ تُصِبْهُ». رواه مسلم
৩৮/১৩৩০। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সত্য সত্যই শাহাদত চায়, তাকে তা দেওয়া হয়; যদিও (প্রত্যক্ষভাবে) শাহাদত নসীব না হয়।”(মুসলিম)
39/1331 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا يَجِدُ الشَّهِيدُ مِنْ مَسِّ القَتْلِ إِلاَّ كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ مِنْ مَسِّ القَرْصَةِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৩৯/১৩৩১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শহীদ হত্যার আঘাত ঠিক সেইরূপ অনুভব করে, যেরূপ তোমাদের কেউ চিমটি কাটার বা পিপীলিকার কামড়ের আঘাত অনুভব করে।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
40/1332 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ أَبي أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْضِ أيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيهَا العَدُوَّ انْتَظَرَ حَتَّى مَالَتِ الشَّمْسُ، ثُمَّ قَامَ فِي النَّاسِ فَقَالَ: «أَيُّهَا النَّاسُ، لاَ تَتَمَنَّوا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَاسْأَلُوا اللهَ العَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُموهُمْ فَاصْبِروا؛ وَاعْلَمُوا أَنَّ الجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ» ثُمَّ قَالَ: «اَللهم مُنْزِلَ الكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الأَحْزَابِ، اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪০/১৩৩২। আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, শত্রুর সাথে মোকাবেলার কোন এক দিনে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অপেক্ষা করলেন (অর্থাৎ যুদ্ধ করতে বিলম্ব করলেন)। অবশেষে যখন সূর্য ঢলে গেল, তখন তিনি লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, “হে লোক সকল! তোমরা শত্রুর সঙ্গে সাক্ষাৎ (যুদ্ধ) কামনা করো না এবং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। কিন্তু যখন শত্রুর সাথে সামনা-সামনি হয়ে যাবে, তখন তোমরা দৃঢ়টার সাথে যুদ্ধ কর। আর জেনে নাও যে, জান্নাত তরবারির ছায়ার নীচে রয়েছে।” অতঃপর তিনি দো‘আ করলেন, “হে কিতাব অবতীর্ণ-কারী, মেঘ সঞ্চালনকারী এবং শত্রুসকলকে পরাজিত-কারী! তুমি তাদেরকে পরাজিত কর এবং তাদের মুকাবিলায় আমাদেরকে সাহায্য কর।” (বুখারী, মুসলিম)
41/1333 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِصلى الله عليه وسلم: «ثِنْتَانِ لاَ تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ: الدُّعَاءُ عِنْدَ النِّدَاءِ وَعَندَ البَأسِ حِيْنَ يُلْحِمُ بَعْضُهُم بَعضَاً». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৪১/১৩৩৩। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দুই সময়ের দো‘আ রদ হয় না, কিংবা কম রদ হয়। (এক) আযানের সময়ের দো‘আ। (দুই) যুদ্ধের সময়, যখন তা তুমুল আকার ধারণ করে।” (আবূ দাউদ, সহীহ সানাদ)
42/1334 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا غَزَا، قَالَ: «اَللهم أَنْتَ عَضُدِي وَنَصِيرِي، بِكَ أَحُولُ، وَبِكَ أَصُولُ، وَبِكَ أُقَاتِلُ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
৪২/১৩৩৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধ করতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেন, “আল্লা-হুম্মা আন্তা আদ্বুদী অনাস্বীরী, বিকা আহূলু, অবিকা আসূলু, অবিকা উক্বা-তিল।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমিই আমার বাহুবল এবং তুমিই আমার মদদগার। তোমার মদদেই আমি (শত্রুঘ্ন) কৌশল গ্রহণ করি, তোমারই সাহায্যে দুশমনের উপর আক্রমণ করি এবং তোমারই সাহায্যে যুদ্ধ চালাই। (আবূ দাউদ, তিরিমিযী হাসান)
43/1335 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه:أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا خَافَ قَوماً، قَالَ: «اَللهم إنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُورِهِمْ، وَنَعُوذُ بِكَ مِنْ شُرُورِهمْ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৪৩/১৩৩৫। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন (শত্রুদলের) ভয় করতেন, তখন এই দো‘আ বলতেন, “আল্লা-হুম্মা ইন্না নাজ্‘আলুকা ফী নুহূরিহিম, অনাঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের ঘাড়ের উপর রাখছি এবং ওদের অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ সহীহ সানাদ)
44/1336 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «الخَيْلُ مَعقُودٌ فِي نَوَاصِيهَا الخَيْرُ إِلَى يَومِ القِيَامَةِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪৪/১৩৩৬। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঘোড়ার কপালে কল্যাণ বাঁধা থাকবে।” (বুখারী)
45/1337 وَعَن عُرْوَةَ البَارِقِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «الخَيْلُ مَعقُودٌ في نَوَاصِيهَا الخَيْرُ إِلَى يَومِ القِيَامَةِ: الأَجْرُ، وَالمَغْنَمُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪৫/১৩৩৭। উরওয়াহ বারেকী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ঘোড়ার ললাটে কিয়ামত অবধি কল্যাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে; অর্থাৎ নেকী ও গনিমত।” (বুখারী ও মুসলিম)
46/1338 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنِ احْتَبَسَ فَرَساً فِي سَبِيلِ اللهِ، إِيمَانَاً بِاللهِ، وَتَصْدِيقَاً بِوَعْدِهِ، فَإِنَّ شِبَعَهُ، وَرَيَّهُ وَرَوْثَهُ، وَبَوْلَهُ فِي مِيزَانِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ». رواه البخاري
৪৬/১৩৩৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রেখে ও তাঁর প্রতিশ্রুতিকে সত্য ভেবে আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া বেঁধে রাখে (পালন করে), সে ঘোড়ার (আহার পূর্বক) তৃপ্ত হওয়া, পান যোগে সিক্ত হওয়া, তার পেশাব ও পায়খানা কিয়ামতের দিনে তার (নেকীর) পাল্লায় (ওজন) হবে।” (বুখারী)
47/1339 وَعَن أَبي مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِنَاقَةٍ مَخْطُومَةٍ فَقَالَ: هَذِهِ فِي سَبِيلِ اللهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لَكَ بِهَا يَوْمَ القِيَامَةِ سَبْعُمئَةِ نَاقَةٍ كُلُّهَا مَخْطُومَةٌ». رواه مسلم
৪৭/১৩৩৯। আবু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে লাগাম-যুক্ত উটনী নিয়ে হাজির হল এবং বলল, ‘এটি আল্লাহর পথে (জিহাদের জন্য দান করা হল)।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “কিয়ামতের দিনে তোমার জন্য এর বিনিময়ে সাতশ’টি উটনী হবে; যার প্রত্যেকটি লাগাম-যুক্ত হবে।” (বুখারী)
৪৮/১৩৪০। উক্ববাহ ইবনে আমের জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মিম্বারের উপর খুৎবা দেওয়ার সময় এ কথা বলতে শুনেছি যে, (মহান আল্লাহ বলেছেন,) ﴿وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ ﴾ অর্থাৎ তোমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে যথাসাধ্য শক্তি সঞ্চয় কর। (সূরা আনফাল ৬০) এর ব্যাখ্যায় বললেন, “জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি। জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি। জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি।” (মুসলিম)
49/1341 وَعَنهُ، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «سَتُفْتَحُ عَلَيْكُمْ أَرْضُونَ، وَيَكْفِيكُمُ اللهُ، فَلاَ يَعْجِز أَحَدُكُمْ أَنْ يَلْهُوَ بِأَسْهُمِهِ». رواه مسلم
৪৯/১৩৪১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “অচিরেই তোমাদের জন্য অনেক ভূখণ্ড জয়লাভ হবে এবং (শত্রুদের বিরুদ্ধে) আল্লাহই তোমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন। কাজেই তোমাদের কেউ যেন, তার তীর নিয়ে (অবসর সময়ে) খেলতে (অভ্যাস করতে) অক্ষমতা প্রদর্শন না করে।” (মুসলিম)
50/1342 وَعَنه: أَنَّه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ عُلِّمَ الرَّمْيَ، ثُمَّ تَرَكَهُ، فَلَيْسَ مِنَّا، أَوْ فَقَدْ عَصَى». رواه مسلم
৫০/১৩৪২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে তীরন্দাজির বিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হল, তারপর সে তা পরিত্যাগ করল, সে আমাদের দলভুক্ত নয় অথবা সে অবাধ্যতা করল।” (মুসলিম)
51/1343 وعنهُ رضي اللَّه عنْهُ، قالَ: سمِعْتُ رسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم يقولُ: «إنَّ اللهَ يُدخِلُ بِالسهمِ ثَلاثةَ نَفَرٍ الجنَّةَ: صانِعهُ يحتسِبُ في صنْعتِهِ الخير، والرَّامي بِهِ، ومُنْبِلَهُ، وَارْمُوا وارْكبُوا، وأنْ ترمُوا أَحَبُّ إلَيَّ مِنْ أنْ تَرْكَبُوا . ومَنْ تَرَكَ الرَّميَ بعْد ما عُلِّمهُ رغبَةً عنه . فَإنَّهَا نِعمةٌ تَركَهَا» أوْ قال: كَفَرَهَا» رواهُ أبو داودَ .
৫১/১৩৪৩। আবূ হাম্মাদ ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির আল-জুহানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি বলতে শুনেছি, আল্লাহ তিন ব্যক্তিকে একটি তীরের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, তীর প্রস্তুত কারক, যে তা প্রস্ততে সাওয়াব কামনা করে, তীরটি নিক্ষেপকারী এবং তীরন্দাজের হাতে যে তীর ধরিয়ে দেয়। তোমরা তীরন্দাজী কর ও ঘোড়ায় আরোহণ করা শিখো। তোমরা যদি তীরন্দাজী শিক্ষা গ্রহণ কর তাহলে আমার নিকট তা ঘোড়ায় আরোহণ শিখার চাইতে অধিক প্রিয়। যে লোক তিরন্দাজী শিখার পর তার প্রতি অনাগ্রহী হয়ে তা ছেড়ে দেয় আল্লাহর একটি নি‘মাত সে পরিত্যাগ করে অথবা তিনি (এভাবে) বলেন, সে অকৃতজ্ঞতা দেখায়। (আবূ দাউদ প্রভৃতি)
52/1344 وَعَن سَلَمَةَ بنِ الأكَوَعِ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَى نَفَرٍ يَنْتَضِلُونَ، فَقَالَ: «ارْمُوا بَنِي إِسمعِيلَ، فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِياً». رواه البخاري
৫২/১৩৪৪। সালামাহ ইবনে আকওয়া’ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তীর নিক্ষেপে রত একদল লোকের নিকট দিয়ে অতিক্রম করার সময় বললেন, “হে ইসমাইলের সন্তানেরা। তোমরা তীর নিক্ষেপ কর। কারণ, তোমাদের (আদি) পিতা (ইসমাইল) তীরন্দাজ ছিলেন।” (বুখারী)
53/1345 وَعَن عَمرٍو بنِ عَبَسَة رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ رَمَى بِسَهمٍ فِي سَبِيلِ الله فَهُوَ لَهُ عِدْلُ مُحَرَّرَةٍ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৫৩/১৩৪৫। আমর ইবনে আবাসাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একটি তীর নিক্ষেপ করে, তার জন্য একটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী হয়।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
54/1346 وَعَن أَبي يَحيَى خُرَيْمِ بنِ فَاتِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللهِ كُتِبَ لَهُ سَبْعُمِئَةِ ضِعْفٍ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن.
৫৪/১৩৪৬। আবূ য়্যাহয়্যা খুরাইম ইবনে ফাতেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কিছু খরচ করে, তার জন্য সাতশ’ গুণ নেকী লেখা হয়।” (তিরমিযী, হাসান)
55/1347 وَعَن أَبي سَعِيدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُومُ يَوْماً فِي سَبيلِ اللهِ إِلاَّ بَاعَدَ اللهُ بِذلِكَ اليَوْمِ وَجهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِينَ خَرْيفاً». متفقٌ عَلَيْهِ
৫৫/১৩৪৭। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে বান্দা আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ ঐ একদিন (রোযার) বিনিময়ে তার চেহারাকে জাহান্নাম হতে সত্তর বছর (দূরত্ব সম) দূরে রাখবেন।” (বুখারী, মুসলিম)
56/1348 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ صَامَ يَوْماً فِي سَبِيلِ اللهِ جَعَلَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقاً كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৫৬/১৩৪৮। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখবে, আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যেকার দূরত্ব-সম একটি গর্ত খনন করে দেবেন।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
57/1349 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ مَاتَ وَلَمْ يَغْزُ، وَلَمْ يُحَدِّثْ نَفْسَهُ بِالغَزْوِ، مَاتَ عَلَى شُعْبَةٍ مِنَ النِّفَاقِ». رواه مسلم
৫৭/১৩৪৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ সে জিহাদ করেনি এবং অন্তরে জিহাদ সম্পর্কে কোন চিন্তা-ভাবনাও করেনি, সে মুসাফেকীর একটি শাখায় মৃত্যুবরণ করল।” (মুসলিম)
58/1350 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه، قَالَ: كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، فِي غَزَاةٍ فَقَالَ: «إنَّ بِالمَدِينَةِ لَرِجَالاً مَا سِرْتُمْ مَسِيراً، وَلاَ قَطَعْتُمْ وَادِياً إِلاَّ كَانُوا مَعَكُمْ، حَبَسَهُمُ المَرَض» . وفي رواية: «حَبَسَهُمُ العُذْرُ» . وفي رواية: إِلاَّ شَرَكُوكُمْ في الأجْرِ». رواه البخاري من رواية أنس، ورواه مسلم من رواية جابر واللفظ لَهُ .
৫৮/১৩৫০। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। তিনি বললেন, “মদিনাতে কিছু লোক এমন আছে যে, তোমরা যত সফর করছ এবং যে কোন উপত্যকা অতিক্রম করছ, তারা তোমাদের সঙ্গে রয়েছে। অসুস্থতা তাদেরকে মদিনায় থাকতে বাধ্য করেছে।” আর একটি বর্ণনায় আছে যে, “কোন ওজর তাদেরকে মদিনায় থাকতে বাধ্য করেছে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “তারা নেকীতে তোমাদের অংশীদার।” (বুখারী আনাস হতে, মুসলিম জাবের হতে এবং শব্দাবলী তাঁরই।)
59/1351 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه: أَنَّ أَعْرَابياً أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُذْكَرَ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ ليُرَى مَكَانُهُ ؟ وفي رواية: يُقَاتِلُ شَجَاعَةً، وَيُقَاتِلُ حَمِيَّةً وفي رواية: يُقَاتِلُ غَضَباً، فَمَنْ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ العُلْيَا، فَهُوَ فِي سَبيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৫৯/১৩৫১। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক বেদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল, ‘এক লোক গনিমতের মালের জন্য, এক লোক নাম নেওয়ার জন্য আর এক লোক নিজ মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য জিহাদে অংশ গ্রহণ করল।’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘বীরত্ব দেখাবার জন্য এবং বংশীয় ও গোত্রীয় পক্ষপাতিত্বের জন্য।’ আর এক বর্ণনানুযায়ী, ‘ক্রুদ্ধ হয়ে জিহাদে অংশ গ্রহণ করল। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে জিহাদ করল?’ তিনি বললেন, “যে ব্যক্তি আল্লার বাণীকে উঁচু করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করল, সেই আল্লাহর পথে জিহাদ করল।” (বুখারী ও মুসলিম)
60/1352 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا مِنْ غَازِيَةٍ، أَوْ سَرِيّةٍ تَغْزُو، فَتَغْنَمُ وَتَسْلَمُ، إِلاَّ كَانُوا قَدْ تَعَجَّلُوا ثُلُثَيْ أُجُورهُمْ، وَمَا مِنْ غَازِيَةٍ أَوْ سَرِيّةٍ تُخْفِقُ وَتُصَابُ إِلاَّ تَمَّ لَهُمْ أُجُورهُمْ». رواه مسلم
৬০/১৩৫২। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আ-স রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে যোদ্ধাদল বা সেনাবাহিনী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং গনিমতের সম্পদ অর্জন করল তথা নিরাপদে বাড়ি ফিরে এলো, সে দল বা বাহিনী স্বীয় প্রতিদানের (নেকীর) তিন ভাগের দু’ভাগ (পার্থিব জীবনেই) সত্বর লাভ করে নিলো (এবং একভাগ পরকালে পাবে)। আর যে সেনাদল লড়াই করল এবং গনিমতের মালও পেল না এবং শহীদ বা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেল, সে সেনাদল (পরকালে) পূর্ণ প্রতিদান অর্জন করবে।” (মুসলিম)
61/1353 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اِئْذَنْ لِي فِي السِّيَاحَةِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ سِيَاحَةَ أُمَّتِي الجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللهِ - عز وجل -» رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ
৬১/১৩৫৩। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে (সংসার ত্যাগ করে বিদেশ) ভ্রমণ করার অনুমতি দিন।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমার উম্মতের ভ্রমণ কার্য আল্লাহর পথে জিহাদ করার মধ্যে নিহিত।” (আবূ দাউদ, উত্তম সানাদ)
62/1354 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «قَفْلَةٌ كَغَزْوَةٍ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ جيدٍ
৬২/১৩৫৪। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করার নেকীও জিহাদে লিপ্ত থাকার মতই।” (আবূ দাউদ উত্তম সানাদ)
অর্থাৎ জিহাদ থেকে ফিরে আসার নেকীও জিহাদের মতই। (যেহেতু সে অবসর ও বিশ্রাম জিহাদের স্বার্থেই হয়।)
63/1355 وَعَن السَّائِبِ بنِ يَزِيدَ رضي الله عنه، قَالَ: لَمَّا قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَزْوَةِ تَبُوكَ تَلَقَّاهُ النَّاسُ، فَتَلَقّيتُهُ مَعَ الصِّبْيَانِ عَلَى ثَنيَّةِ الوَدَاعِ. رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح بهذا اللفظ
ورواه البخاري قَالَ: ذَهَبنا نَتَلَقَّى رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، مَعَ الصِّبْيَانِ إِلَى ثَنِيَّةِ الوَدَاعِ.
৬৩/১৩৫৫। সায়েব ইবনে ইয়াযিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবূত অভিযান হতে ফিরে এলেন, তখন তাঁকে (আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল) মানুষ সবাগত জ্ঞাপন করেছিল। আমিও ছোট শিশুদের সাথে (মদিনার উপকণ্ঠে অবস্থিত) ‘সানিয়াতুল অদা’ নামক স্থানে তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলাম।” (আবূ দাউদ- উক্ত শব্দে শুদ্ধ সানাদে)
বুখারীতে আছে, সায়েব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমরা ছোট ছোট ছেলেদের সঙ্গে ‘সানিয়াতুল অদা’ নামক স্থানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর উদ্দেশ্যে গিয়েছিলাম।”
64/1356 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ لَمْ يَغْزُ، أَوْ يُجَهِّزْ غَازِياً، أَوْ يَخْلُفْ غَازياً في أهْلِهِ بِخَيرٍ، أصَابَهُ اللهُ بِقَارعَةٍ قَبْلَ يَوْمِ القِيَامَةِ». رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
৬৪/১৩৫৬। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করল না, অথবা কোন মুজাহিদকে (যুদ্ধ-সরঞ্জাম দিয়ে যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুত করল না কিংবা মুজাহিদদের গৃহবাসীদের ভালভাবে তত্ত্বাবধান করার জন্য তার প্রতিনিধিত্ব করল না, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের পূর্বেই কোন বিপদ বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত করবেন।” (আবূ দাউদ শুদ্ধ সানাদ)
65/1357 وَعَن أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «جَاهِدُوا المُشْرِكِينَ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ وَأَلْسِنَتِكُمْ». رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৬৫/১৩৫৭। আনাস হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমরা জান-মাল ও বাক্য দ্বারা সংগ্রাম চালাও।” (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদ)
66/1358 وَعَن أَبي عَمرٍو - وَيُقَالُ: أَبُو حَكِيمٍ - النُّعْمَانِ بنِ مُقَرِّنٍ رضي الله عنه قَالَ: شَهِدْتُ رَسُولَ اللهِ، إِذَا لَمْ يُقَاتِلْ مِن أَوَّلِ النَّهَارِ أَخَّرَ القِتَالَ حَتَّى تَزُوْلَ الشَّمْسُ، وَتَهُبَّ الرِّيَاحُ، وَيَنْزِلَ النَّصْرُ . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৬৬/১৩৫৮। আবূ আমর মতান্তরে আবূ হাকীম নু’মান ইবনে মুক্বার্রিন হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে যুদ্ধে হাজির ছিলাম। (তাঁর রণকৌশল এই ছিল যে,) যদি তিনি দিনের শুরুতে যুদ্ধ না করতেন, তাহলে সূর্য ঢলে যাওয়া ও বাতাস প্রবাহিত হওয়া এবং সাহায্য নেমে না আসা পর্যন্ত যুদ্ধ স্থগিত রাখতেন।’ (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
67/1359 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لاَ تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ العَدُوِّ، وَاسْأَلُوا اللهَ العَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَاصْبِرُوا». متفقٌ عَلَيْهِ
৬৭/১৩৫৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “শত্রুর সাথে মুকাবিলা করার আকাঙ্ক্ষা করো না; বরং আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা প্রার্থনা কর। আর যদি তাদের সম্মুখীন হয়ে যাও, তাহলে ধৈর্য ধারণ কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
68/1360 وَعَنهُ وَعَن جَابِرٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: الحَرْبُ خَدْعَةٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৬৮/১৩৬০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয় কর্তৃক বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যুদ্ধ হচ্ছে প্রতারণামূলক এক ধরনের চক্রান্ত।” (বুখারী)
(অন্য সময় ধোঁকা ও প্রতারণা অবৈধ হলেও যুদ্ধের সময় তা বৈধ। যেহেতু রক্ত-পিয়াসী শত্রুকে যেন-তেন প্রকারে পরাস্ত করাই উদ্দিষ্ট।)
235- بَابُ بَيَانِ جَمَاعَةٍ مِّنَ الشُّهَدَاءِ فِيْ ثَوَابِ الْآخِرَةِ
وَيُغَسَّلُوْنَ ويُصَلّٰى عَلَيْهِمْ بِخِلَافِ الْقَتِيْلِ فِيْ حَرْبِ الْكُفَّارِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৫: (শহীদদের প্রকারভেদ)
পারলৌকিক সওয়াবের দিক দিয়ে যারা শহীদ, তাঁদেরকে গোসল দিয়ে জানাজার নামায পড়ে সমাধিস্থ করতে হবে। পক্ষান্তরে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত প্রকৃত শহীদদের যে অবস্থায় নিহত হবে সেই অবস্থায় দাফন করতে হবে।
1/1361 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «الشُّهَدَاءُ خَمْسَةٌ: المَطْعُونُ وَالمَبْطُونُ، وَالغَرِيقُ، وَصَاحِبُ الهَدْمِ، وَالشَّهِيدُ فِي سَبِيلِ اللهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৬১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(পারলৌকিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হওয়ার দিক দিয়ে) শহীদ পাঁচ ধরনের; (১) প্লেগ-রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (২) পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত, (৩) পানিতে ডুবে মৃত, (৪) মাটি চাপা পড়ে মৃত এবং (৫) আল্লাহর পথে থাকা অবস্থায় মৃত।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1362 وَعَنهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا تَعُدُّونَ الشُّهَدَاءَ فِيكُمْ ؟» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، مَنْ قُتِلَ فِي سَبيلِ اللهِ فَهُوَ شَهِيدٌ . قَالَ: «إِنَّ شُهَدَاءَ أُمَّتِي إِذَاً لَقَليلٌ» قالوا: فَمَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: «مَنْ قُتِلَ فِي سَبِيلِ الله فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي سَبِيلِ الله فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي الطَّاعُونِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ مَاتَ فِي البَطْنِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَالغَرِيقُ شَهِيدٌ». رواه مسلم
২/১৩৬২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা তোমাদের মাঝে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর?” সকলেই বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আল্লাহর পথে যে নিহত হয়, সেই শহীদ।’ তিনি বললেন, “তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদ খুবই অল্প।” লোকেরা বলল, ‘তাহলে তাঁরা কে কে হে আল্লাহর রসূল?’ তিনি বললেন, “যে আল্লাহর পথে নিহত হয় সে শহীদ, যে আল্লাহর পথে মারা যায় সে শহীদ, যে প্লেগ রোগে মারা যায় সে শহীদ, যে পেটের রোগে প্রাণ হারায়, সে শহীদ এবং যে পানিতে ডুবে মারা যায় সেও শহীদ।” (মুসলিম)
3/1363 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৩৬৩। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ধন-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ।” (বুখারী-মুসলিম)
4/1364 وَعَن أَبي الأعْوَرِ سَعيدِ بنِ زَيدِ بنِ عَمْرِو بنِ نُفَيْلٍ، أَحَدِ العَشَرَةِ المَشْهُودِ لَهُمْ بِالجَنَّةِ، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَنْ قُتِلَ دُونَ مَالِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دَمِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ دِينهِ فَهُوَ شَهِيدٌ، وَمَنْ قُتِلَ دُونَ أَهْلِهِ فَهُوَ شَهِيدٌ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৪/১৩৬৪। জীবদ্দশায় জান্নাতি হবার শুভ সংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের অন্যতম সাহাবী আবুল আ’ওয়ার সাঈদ ইবনে যায়েদ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যে ব্যক্তি তার মাল-ধন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে ব্যক্তি নিজ রক্ত (প্রাণ) রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ। যে তার দ্বীন রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সে শহীদ এবং যে তার পরিবার রক্ষা করতে গিয়ে খুন হয়, সেও শহীদ। (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
5/1365 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَرَأيتَ إنْ جَاءَ رَجُلٌ يُرِيدُ أَخْذَ مَالِي ؟ قَالَ: «فَلاَ تُعْطِهِ مَالَكَ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَاتَلَنِي ؟ قَالَ: «قَاتِلْهُ» قَالَ: أَرَأَيْتَ إِنْ قَتَلَنِي ؟ قَالَ: «فَأَنْتَ شَهِيدٌ» قَالَ: أَرَأيْتَ إِنْ قَتَلْتُهُ ؟ قَالَ: «هُوَ فِي النَّارِ». رواه مسلم
৫/১৩৬৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি কেউ আমার মাল (অবৈধভাবে) নিতে আসে তাহলে কি করতে হবে?’ তিনি বললেন, “তুমি তাকে তোমার মাল দেবে না।” পুনরায় সে নিবেদন করল, ‘যদি সে আমার সাথে লড়াই করে?’ তিনি বললেন, “তাহলে (তুমিও) তার সাথে লড়াই কর।” সে বলল, ‘বলুন, সে যদি আমাকে হত্যা করে দেয়?’ তিনি বললেন, “তাহলে তুমি শহীদ হয়ে যাবে।” সে আবার জিজ্ঞাসা করল, ‘বলুন, আমি যদি তাকে মেরে ফেলি (তাহলে কি হবে)?’ তিনি বললেন, “তাহলে সে জাহান্নামী হবে।” (মুসলিম)
236- بَابُ فَضْلِ الْعِتْقِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৬: ক্রীতদাস মুক্ত করার মাহাত্ম্য
মহান আল্লাহ বলেছেন,﴿ فَلَا ٱقۡتَحَمَ ٱلۡعَقَبَةَ ١١ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا ٱلۡعَقَبَةُ ١٢ فَكُّ رَقَبَةٍ ١٣ ﴾ (البلد: ١١، ١٣)
অর্থাৎ কিন্তু সে গিরি সংকটে প্রবেশ করল না। তুমি কি জান যে, গিরি সংকট কি? তা হচ্ছে দাসকে মুক্তি প্রদান। (সূরা বালাদ ১১-১৩ আয়াত)
1/1366 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُسْلِمَةً أَعْتَقَ اللهُ بِكُلِّ عُضْوٍ مِنْهُ، عُضْواً مِنْهُ في النَّارِ، حَتَّى فَرْجَهُ بِفَرْجِهِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৬৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন মুসলিম ক্রীতদাস মুক্ত করবে, আল্লাহ ঐ ক্রীতদাসের প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে তার একেকটি অঙ্গকে (জাহান্নামের) আগুন থেকে মুক্ত করবেন। এমনকি তার গুপ্তা-ঙ্গের বিনিময়ে তার গুপ্তা-ঙ্গও (মুক্ত করে দেবেন)।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1367 وَعَن أَبي ذرٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَيُّ الأَعمَالِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ: «الإِيمَانُ بِاللهِ، وَالجِهَادُ فِي سَبيلِ اللهِ» قَالَ: قُلْتُ: أَيُّ الرِّقَابِ أَفْضَلُ ؟ قَالَ: «أَنْفَسُهَا عِنْدَ أَهْلِهَا، وَأَكْثَرُهَا ثَمَناً». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১৩৬৭। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কোন আমল সবার চেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।” আমি বললাম, ‘ কি ধরনের ক্রীতদাস মুক্ত করা উত্তম?’ তিনি বললেন, “যে ক্রীতদাস তার মালিকের কাছে সর্বাধিক আকর্ষণীয় এবং সবার চেয়ে বেশি মূল্যবান।” (বুখারী)
237- بَابُ فَضْلِ الْإِحْسَانِ إِلَى الْمَمْلُوْكِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৭: গোলামের সাথে সদ্ব্যবহার করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ ۞وَٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُشۡرِكُواْ بِهِۦ شَيۡٔٗاۖ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنٗا وَبِذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡيَتَٰمَىٰ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡجَارِ ذِي ٱلۡقُرۡبَىٰ وَٱلۡجَارِ ٱلۡجُنُبِ وَٱلصَّاحِبِ بِٱلۡجَنۢبِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتۡ أَيۡمَٰنُكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ مَن كَانَ مُخۡتَالٗا فَخُورًا ٣٦ ﴾ (النساء : ٣٦)
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর উপাসনা কর ও কোন কিছুকে তাঁর অংশী করো না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার কর। (সূরা নিসা ৩৬ আয়াত)
1/1368 وَعَن المَعْرُورِ بنِ سُوَيْدٍ، قَالَ: رَأيْتُ أَبَا ذَرٍّ رضي الله عنه، وَعَلَيهِ حُلَّةٌ وَعَلَى غُلاَمِهِ مِثْلُهَا، فَسَأَلْتُهُ عَنْ ذَلِكَ، فَذَكَرَ أنَّهُ قَدْ سَابَّ رَجُلاً عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَعَيَّرَهُ بِأُمِّهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «إنَّكَ امْرُؤٌ فِيكَ جَاهِليَّةٌ، هُمْ إِخْوَانُكُمْ وَخَوَلُكُمْ، جَعَلَهُمُ الله تَحْتَ أَيدِيْكُمْ، فَمَنْ كَانَ أَخُوهُ تَحْتَ يَدِهِ، فَلْيُطْعِمْهُ مِمَّا يَأكُلُ، وَلْيُلْبِسْهُ مِمَّا يَلْبَسُ، وَلاَ تُكَلِّفُوهُمْ مَا يَغْلِبُهُمْ، فَإنْ كَلَّفْتُمُوهُمْ فَأَعِينُوهُمْ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৬৮। মা’রূর ইবনে সুওয়াইদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে দেখলাম যে, তাঁর পরনে জোড়া পোশাক রয়েছে এবং তাঁর গোলামের পরনেও অনুরূপ জোড়া পোশাক বিদ্যমান! আমি তাঁকে সে সম্পর্কে প্রশ্ন করলাম। তিনি ঘটনা উল্লেখ করে বললেন যে, ‘তিনি আল্লাহর রসূলের যুগে তাঁর এক গোলামকে গালি দিয়েছিলেন এবং তাকে তার মায়ের সম্বন্ধ ধরে হেয় প্রতিপন্ন করেছিলেন। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বলেছিলেন, “(হে আবূ জর!) নিশ্চয় তুমি এমন লোক; যার মধ্যে জাহেলিয়াত (ইসলামের পূর্ব যুগের অভ্যাস) রয়েছে! ওরা তোমাদের ভাই স্বরূপ এবং তোমাদের সেবক। আল্লাহ ওদেরকে তোমাদের মালিকানাধীন করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির ভাইকে আল্লাহ তার মালিকানাধীন করেছেন, সে ব্যক্তি যেন তাকে (দাসকে) তাই খাওয়ায়; যা সে নিজে খায় এবং তাই পরায় যা সে নিজে পরে। আর তোমরা ওদেরকে এমন কাজের ভার দিয়ো না, যা করতে ওরা সক্ষম নয়। পরন্তু যদি তোমরা এমন দুঃসাধ্য কাজের ভার দিয়েই ফেল, তাহলে তোমরা ওদের সহযোগিতা কর।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1369 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا أَتَى أَحَدَكُمْ خَادِمُهُ بِطَعَامِهِ، فَإِنْ لَمْ يُجْلِسْهُ مَعَهُ، فَلْيُنَاوِلْهُ لُقْمَةً أَوْ لُقْمَتَيْنِ أَوْ أُكْلَةً أَوْ أُكْلَتَيْنِ ؛ فَإِنَّهُ وَلِيَ عِلاَجَهُ». رواه البخاري
২/১৩৬৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কোন ব্যক্তির খাদেম (দাস-দাসী) তার নিকট খাবার নিয়ে আসে, তখন যদি তাকে নিজ সঙ্গে (খেতে) না বসায়, তাহলে সে যেন তাকে (কমপক্ষে তার হাতে) এক খাবল বা দু’ খাবল অথবা এক গ্রাস বা দু’ গ্রাস (ঐ খাবার থেকে) তুলে দেয়। কেননা, সে (খাদেম) তা পাক (করার যাবতীয় কষ্ট বরণ) করেছে।” (বুখারী)
238- بَابُ فَضْلِ الْمَمْلُوْكِ الَّذِيْ يُؤَدِّيْ حَقَّ اللهِ وَحَقَّ مَوَالِيْهِ
পরিচ্ছেদ - ২৩৮: আল্লাহর হক এবং নিজ মনিবের হক আদায়কারী গোলামের মাহাত্ম্য
1/1370 عَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ العَبْدَ إِذَا نَصَحَ لِسَيِّدِهِ، وَأَحْسَنَ عِبَادَةَ اللهِ، فَلَهُ أَجْرُهُ مَرَّتَيْنِ». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৭০। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে কোন গোলাম যখন তার মনিবের কল্যাণকামী হয় ও আল্লাহর বন্দেগী (যথারীতি) করে, তখন তার দ্বিগুণ সওয়াব অর্জিত হয়।” (বুখারী )
دِهِ لَوْلاَ الجِهَادُ فِي سَبيلِ اللهِ وَالحَجُّ، وَبِرُّ أُمِّي، لأَحْبَبْتُ أَنْ أَمُوتَ وَأنَا مَمْلُوكٌ. متفقٌ عَلَيْهِ
২/১৩৭১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(আল্লাহ ও নিজ মনিবের) হক আদায়কারী অধীনস্থ দাসের দ্বিগুণ নেকী অর্জিত হয়।” (আবূ হুরাইরা বলেন,) ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আবূ হুরাইরার জীবন আছে! যদি আল্লাহর পথে জিহাদ, হজ্জ ও আমার মায়ের সেবা না থাকত, তাহলে আমি পরাধীন গোলাম রূপে মৃত্যুবরণ করা পছন্দ করতাম।’ (বুখারী ও মুসলিম)
3/1372 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «المَمْلُوكُ الَّذِي يُحْسِنُ عِبَادَةَ رَبِّهِ، وَيُؤَدِّي إِلَى سَيِّدِهِ الَّذِي عَلَيْهِ مِنَ الحَقِّ، وَالنَّصِيحَةِ، وَالطَّاعَةِ، لهُ أَجْرَانِ». رواه البخاري
৩/১৩৭২। আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে অধীনস্থ গোলাম তার প্রতিপালক (আল্লাহর) ইবাদত সুন্দরভাবে করে এবং তার মালিকের অবশ্যপালনীয় হক যথারীতি আদায় করে। তার মঙ্গল কামনা করে ও আনুগত্য করে, তার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব রয়েছে।” (বুখারী)
4/1373 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «ثَلاثَةٌ لَهُمْ أَجْرَانِ: رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ آمَنَ بِنَبِيِّهِ، وَآمَنَ بِمُحَمَّدٍ، وَالعَبْدُ المَمْلُوكُ إِذَا أدَّى حَقَّ الله، وَحَقَّ مَوَالِيهِ، وَرَجُلٌ كَانَتْ لَهُ أَمَةٌ فَأدَّبَهَا فَأَحْسَنَ تَأدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا ؛ فَلَهُ أَجْرَانِ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১৩৭৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতেই বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তিন প্রকার লোকের জন্য দ্বিগুণ সওয়াব হয়। (১) কিতাব ধারী (ইয়াহুদী-খ্রিষ্টানদের) কোন ব্যক্তি তার নিজের নবীর প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং পরে মুহাম্মদের উপর ঈমান আনে। (২) সেই অধীনস্থ গোলাম, যে আল্লাহর হক ও তার মনিবের হক যথারীতি আদায় করে। (৩) সেই ব্যক্তি যার একটি দাসী আছে। তাকে সে আদব-কায়দা শিখায় এবং উৎকৃষ্ট-রূপে তাকে আদব শিক্ষা দেয়, তাকে বিদ্যা শিখায় এবং সুন্দর-রূপে তার শিক্ষা সুসম্পন্ন করে, অতঃপর তাকে স্বাধীন করে দিয়ে বিবাহ করে নেয়, এর জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সওয়াব।” (বুখারী ও মুসলিম)
239- بَابُ فَضْلِ الْعِبَادَةِ فِي الْهَرْجِ وَهُوَ الْاِخْتِلَاطُ وَالْفِتَنُ وَنَحْوُهَا
পরিচ্ছেদ - ২৩৯: ফিতনা-ফাঁসাদের সময় উপাসনা করার ফযীলত
1/1374 عَن مَعْقِلِ بنِ يَسَارٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «العِبَادَةُ في الهَرْجِ كَهِجْرَةٍ إِليَّ». رواه مسلم
১/১৩৭৪। মালেক ইবনে য়্যাসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ফিতনা-ফাঁসাদের সময় ইবাদত-বন্দেগী করা, আমার দিকে ‘হিজরত’ করার সমতুল্য।”(মুসলিম) * (ঈমান ও দ্বীন বাঁচানোর জন্য স্বদেশত্যাগ করাকে ‘হিজরত’ করা বলে।)
240- بَابُ فَضْلِ السَّمَاحَةِ فِي الْبَيْعِ وَالشِّرَاءِ
وَالْأَخْذِ وَالْعَطَاءِ، وَحُسْنِ الْقَضَاءِ وَالتَّقَاضِيْ، وَإِرْجَاحِ الْمِكْيَالِ وَالْمِيْزَانِ، وَالنَّهْيِ عَنْ التَّطْفِيْفِ، وَفَضْلِ إِنْظَارِ الْمُوْسِرِ وَالمُعْسِرِ وَالْوَضْعِ عَنْهُ
পরিচ্ছেদ - ২৪০: ক্রয়-বিক্রয় ও লেনদেনের ক্ষেত্রে উদারতা দেখানো, উত্তমরূপে ঋণ পরিশোধ ও প্রাপ্য তলব করা, ওজন ও মাপে বেশি দেওয়ার মাহাত্ম্য, ওজন ও মাপে নেওয়ার সময় বেশী নেওয়া এবং দেওয়ার সময় কম দেওয়া নিষিদ্ধ এবং ধনী ঋণদাতার অভাবী ঋণগ্রহীতাকে (যথেষ্ট সময় পর্যন্ত) অবকাশ দেওয়া ও তার ঋণ মকুব করার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَمَا تَفۡعَلُواْ مِنۡ خَيۡرٖ فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٞ ٢١٥ ﴾ (البقرة: ٢١٥) অর্থাৎ তোমরা যে কোন সৎকাজ কর না কেন, আল্লাহ তা সম্যকরূপে অবগত। (সূরা বাকারাহ ২৪৫ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَيَٰقَوۡمِ أَوۡفُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ ٨٥ ﴾ (هود: ٨٥)
অর্থাৎ হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা মাপ ও ওজনকে পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন কর এবং লোকদেরকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ো না। (হুদ ৮৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
﴿ وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ ١ ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكۡتَالُواْ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسۡتَوۡفُونَ ٢ وَإِذَا كَالُوهُمۡ أَو وَّزَنُوهُمۡ يُخۡسِرُونَ ٣ أَلَا يَظُنُّ أُوْلَٰٓئِكَ أَنَّهُم مَّبۡعُوثُونَ ٤ لِيَوۡمٍ عَظِيمٖ ٥ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلنَّاسُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٦ ﴾ (المطففين: ١، ٦)
অর্থাৎ ধ্বংস তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয়, যারা লোকের নিকট হতে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় গ্রহণ করে। এবং যখন তাদের জন্য মেপে অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে। এক মহা দিবসে; যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ বিশ্ব-জাহানের প্রতিপালকের সম্মুখে। (মুত্বাফফিফীন ১-৬ আয়াত)
1/1375 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم يَتَقَاضَاهُ فَأَغْلَظَ لَهُ، فَهَمَّ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «دَعُوهُ، فَإِنَّ لِصَاحِبِ الحَقِّ مَقَالاً» ثُمَّ قَالَ: «أَعْطُوهُ سِنّاً مِثْلَ سِنِّهِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، لاَ نَجِدُ إِلاَّ أَمْثَلَ مِنْ سِنِّهِ، قَالَ: «أَعْطُوهُ، فَإِنَّ خَيْرَكُمْ أَحْسَنُكُمْ قَضَاءً». متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৩৭৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একটি লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে রূঢ়ভাবে তাঁর কাছে পাওনা তলব করল। তখন সাহাবীগণ তাকে ভৎর্সনা করতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, “ওকে ছেড়ে দাও। কারণ হক (পাওনা)দারের কথা বলার অধিকার আছে।” তারপর বললেন, “ওকে ঠিক সেই বয়সের (উট) দিয়ে দাও যে বয়সের (উট) ওর ছিল।” তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! তার চেয়ে উত্তম (উট) বৈ পাচ্ছি না।’ তিনি বললেন, “ওকে (ওটিই) দিয়ে দাও, কেননা, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে ব্যক্তি উত্তম-ভাবে ঋণ পরিশোধ করে থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1376 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «رَحِمَ اللهُ رَجُلاً سَمْحاً إِذَا بَاعَ، وَإِذَا اشْتَرَى، وَإِذَا اقْتَضَى». رواه البخاري
২/১৩৭৬। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে ব্যক্তি উদার; যখন সে ক্রয় করে, যখন সে বিক্রয় করে এবং যখন সে পাওনা তলব করে।” (বুখারী)
3/1377 وَعَن أَبي قَتَادَةَ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنَجِّيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ القِيَامَةِ، فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ». رواه مسلم
৩/১৩৭৭। আবূ কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “যাকে এ কথা আনন্দ দেয় যে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনের অস্থিরতা ও বিপদ থেকে নিষ্কৃতি দেবেন, তাহলে সে যেন পরিশোধে অসমর্থ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিকে অবকাশ দান করে অথবা তার ঋণ মওকুফ করে দেয়।” (মুসলিম)
4/1378 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ، وَكَانَ يَقُولُ لِفَتَاهُ: إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِراً فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَتَجَاوَزَ عَنَّا، فَلَقِيَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১৩৭৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “(প্রাচীনকালে) একটি লোক লোকদের ঋণ দিত এবং তার চাকরকে বলত যে, ‘যখন তুমি কোন পরিশোধে অসমর্থ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তির কাছে যাবে, তাকে ক্ষমা করে দেবে। হয়তো (এর প্রতিদানে) আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করলে (অর্থাৎ মারা গেলে) আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
5/1379 وَعَن أَبي مَسعُودٍ البَدرِي رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «حُوسِبَ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَلَمْ يُوجَدْ لَهُ مِنَ الخَيْرِ شَيْءٌ، إِلاَّ أَنَّهُ كَانَ يُخَالِطُ النَّاسَ وَكَانَ مُوسِراً، وَكَانَ يَأمُرُ غِلْمَانَهُ أَنْ يَتَجَاوَزُوا عَن المُعْسِر. قَالَ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ -: نَحْنُ أَحَقُّ بِذلِكَ مِنْهُ؛ تَجَاوَزُوا عَنْهُ». رواه مسلم
৫/১৩৭৯। আবূ মাসঊদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে একটি লোকের হিসাব নেওয়া হয়েছিল। তার একটি মাত্র সৎকর্ম ব্যতিরেকে আর কোন ভাল কাজ পাওয়া যায়নি। সেটি হল এই যে, সে লোক সমাজে মিলে-মিশে থাকত। সে ছিল সচ্ছল (বিত্তশালী) ব্যক্তি। নিজ চাকরদেরকে গরীব ঋণগ্রস্তদের ঋণ মকুব করার নির্দেশ দিত। (এসব দেখে) আল্লাহ আয্যা অজাল্ল বললেন, ‘আমি তো ওর চাইতে বেশি ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকারী। (হে ফেরেশতাবর্গ!) তোমরা ওকে মাফ করে দাও।” (মুসলিম)
6/1380 وَعَن حُذَيفَةَ رضي الله عنه قَالَ: أُتَي اللهُ تَعَالَى بِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِهِ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَقَالَ لَهُ: مَاذَا عَمِلْتَ فِي الدُّنْيَا ؟ قَالَ: «وَلاَ يَكْتُمُونَ اللهَ حَدِيثاً» قَالَ: يَا رَبِّ آتَيْتَنِي مَالَكَ، فَكُنْتُ أُبَايعُ النَّاسَ، وَكَانَ مِنْ خُلُقِي الجَوَازُ، فَكُنْتُ أَتَيَسَّرُ عَلَى المُوسِرِ، وَأُنْظِرُ المُعْسِرَ . فَقَالَ الله تَعَالَى: «أنَا أَحَقُّ بِذَا مِنْكَ تَجَاوَزُوا عَنْ عَبْدِي» فَقَالَ عُقْبَةُ بنُ عَامِرٍ، وَأَبُو مَسعُودٍ الأَنصَارِيُّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: هَكَذَا سَمِعْنَاهُ مِنْ فيِّ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم . رواه مسلم
৬/১৩৮০। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এক এমন বান্দাকে---যাকে তিনি ধনৈশবর্য দ্বারা সমৃদ্ধ করেছেন; তাঁর কাছে হাজির করা হল। তিনি (আল্লাহ) তাকে বললেন, ‘তুমি দুনিয়াতে কি আমল করেছ?’ বর্ণনাকারী বলেন, অথচ আল্লাহর কাছে তারা (লোকেরা) কোন কথা গোপন রাখতে পারে না। সে বলল, ‘প্রভু! তুমি আমাকে ধনঐশ্বর্য দিয়েছিলে। আমি জনগণের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য করেছি। আর উদারতা ছিল আমার বিশেষ অভ্যাস, ধনীর সাথে নমনীয় ব্যবহার দেখাতাম এবং গরীবদেরকে (সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত) অবকাশ দিতাম।’ মহান আল্লাহ বললেন, ‘আমি তোমার চাইতে এ ব্যাপারে অধিক হকদার। (হে ফেরেশতাবর্গ!) তোমরা আমার (এই) বান্দাকে ক্ষমা করে দাও।’ উক্ববাহ ইবনে আমের ও আবূ মাসঊদ আনসারী (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রমুখাৎ এরূপই শুনেছি।’ (মুসলিম)
7/1381 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِراً، أَوْ وَضَعَ لَهُ، أَظَلَّهُ اللهُ يَومَ القِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَومَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৭/১৩৮১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি পরিশোধে অক্ষম কোন ঋণগ্রহীতাকে (তার সচ্ছলতা আসা অবধি) অবকাশ দেবে বা তাকে ক্ষমা করে দেবে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিনে নিজ আরশের ছায়াতলে স্থান দেবেন, যেদিন তার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবে না।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
8/1382 وَعَن جَابِرٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، اِشْتَرَى مِنْهُ بَعِيراً، فَوَزَنَ لَهُ فَأَرْجَحَ . متفقٌ عَلَيْهِ
৮/১৩৮২। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর (জাবেরের) নিকট থেকে একটি উট ক্রয় করলেন। সুতরাং তিনি তার মূল্য পরিশোধ করার সময় (স্বর্ণ-রৌপ্য প্রাপ্য অপেক্ষা) ওজনে বেশি দিলেন। (বুখারী)
9/1383 وَعَن أَبي صَفْوَان سُويْدِ بنِ قَيس قَالَ: جَلَبْتُ أَنَا وَمَخْرَمَةُ العَبْدِيُّ بَزّاً مِنْ هَجَرَ، فَجَاءَنَا النَّبِيُّ، فَسَاوَمَنَا بسَرَاوِيلَ، وَعِندِي وَزَّانٌ يَزِنُ بِالأَجْرِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لِلْوَزَّانِ: «زِنْ وَأَرْجِحْ». رواه أَبُو داود، والترمذي وقال: حديث حسن صحيح
৯/১৩৮৩। আবূ সাফওয়ান সুআইদ ইবনে ক্বাইস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ও মাখরামাহ আব্দী ‘হাজার’ নামক জায়গা থেকে কিছু কাপড় (বিক্রির উদ্দেশ্যে) আমদানি করেছিলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে পায়জামার দর-দাম করতে লাগলেন। আমার নিকটে একজন কয়াল (মাপনদার) ছিল, যে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে (স্বর্ণ-রৌপ্য) ওজন করে দিত। সুতরাং তিনি কয়ালকে বললেন, “ওজন কর ও একটু ঝুঁকিয়ে ওজন কর।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
كتابُ العِلْمِ
অধ্যায় (১২): ইলম (জ্ঞান ও শিক্ষা) বিষয়ক অধ্যায়
241- بابُ فَضْلِ الْعِلْمِ
পরিচ্ছেদ - ২৪১: ইলমের ফযীলত
আল্লাহ বলেন, ﴿ وَقُل رَّبِّ زِدۡنِي عِلۡمٗا ١١٤ ﴾ (طه: ١١٤)
অর্থাৎ বল, হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর। (ত্বা-হা ১১৪ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿ قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ ٩ ﴾ (الزمر: ٩)
অর্থাৎ বল, যারা জানে এবং যারা জানে না তারা কি সমান? (যুমার ৯ আয়াত)
আল্লাহ আরও বলেন,﴿ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ ١١ ﴾ (المجادلة: ١١)
অর্থাৎ যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। (মুজাদালা ১১ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,﴿ إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ غَفُورٌ ٢٨ ﴾ (فاطر: ٢٨)
অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (ফাত্বের ২৮ আয়াত)
১/১৩৮৪। মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাকেই দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী)
2/1385 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ حَسَدَ إِلاَّ فِي اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً، فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الحِكْمَةَ، فَهُوَ يَقْضِي بِهَا وَيُعَلِّمُهَا». متفقٌ عَلَيْهِ
২/১৩৮৫। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেবল দু’জন ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। আর সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা করে থাকে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
এখানে ঈর্ষা বলতে, অপরের ধন ও জ্ঞান দেখে মনে মনে তা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা। সেই সাথে এই কামনা থাকে না যে, অপরের ধ্বংস হয়ে যাক।
3/1386 وَعَن أَبي مُوسَى رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم: «مَثَلُ مَا بَعَثَنِي الله بِهِ مِنَ الهُدَى وَالعِلْمِ كَمَثَلِ غَيْثٍ أَصَابَ أَرْضاً ؛ فَكَانَتْ مِنْهَا طَائِفَةٌ طَيِّبةٌ قَبِلَتِ المَاءَ فَأَنْبَتَتِ الكَلأَ، وَالعُشْبَ الكَثِيرَ، وَكَانَ مِنْهَا أَجَادِبُ أَمْسَكَتِ المَاءَ، فَنَفَعَ اللهُ بِهَا النَّاسَ، فَشَرِبُوا مِنْهَا وَسَقَوْا وَزَرَعُوا، وَأَصَابَ طَائِفَةً مِنْهَا أُخْرَى إِنَّمَا هِيَ قِيعَانٌ ؛ لاَ تُمْسِكُ مَاءً وَلاَ تُنْبِتُ كَلأً، فَذَلِكَ مَثَلُ مَنْ فَقُهَ فِي دِينِ اللهِ، وَنَفَعَهُ مَا بَعَثَنِي اللهُ بِهِ، فَعَلِمَ وَعَلَّمَ، وَمَثَلُ مَنْ لَمْ يَرْفَعْ بِذَلِكَ رَأساً، وَلَمْ يَقْبَلْ هُدَى اللهِ الَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৩৮৬। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে সরল পথ ও জ্ঞান দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে তা ঐ বৃষ্টি সদৃশ যা জমিনে পৌঁছে। অতঃপর তার উর্বর অংশ নিজের মধ্যে শোষণ করে। অতঃপর তা ঘাস এবং প্রচুর শাক-সবজি উৎপন্ন করে। এবং তার এক অংশ চাষের অযোগ্য (খাল জমি); যা পানি আটকে রাখে। ফলে আল্লাহ তা‘আলা তার দ্বারা মানুষকে উপকৃত করেন। সুতরাং তারা তা হতে পান করে এবং (পশুদেরকে) পান করায়, জমি সেচে ও ফসল ফলায়। তার আর এক অংশ শক্ত সমতল ভূমি; যা না পানি শোষণ করে, না ঘাস উৎপন্ন করে। এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির যে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করল এবং আমি যে হিদায়েত ও জ্ঞান দিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার দ্বারা আল্লাহ তাকে উপকৃত করলেন। সুতরাং সে (নিজেও) শিক্ষা করল এবং (অপরকেও) শিক্ষা দিল। আর এই দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তিরও যে এ ব্যাপারে মাথাও উঠাল না এবং আল্লাহর সেই হিদায়েতও গ্রহণ করল না, যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1387 وَعَن سَهلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ لِعَليٍّ رضي الله عنه: «فَوَاللهِ لأَنْ يَهْدِيَ اللهُ بِكَ رَجُلاً وَاحِداً خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১৩৮৭। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (খায়বার যুদ্ধের সময়) আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে সম্বোধন করে বললেন, “আল্লাহর শপথ! তোমার দ্বারা একটি মানুষকেও যদি আল্লাহ সৎপথ দেখান, তবে তা (আরবের মহামূল্যবান) লাল উঁটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।” (বুখারী-মুসলিম)
5/1388 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «بَلِّغُوا عَنِّي وَلَوْ آيَةً، وَحَدِّثُوا عَنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ وَلاَ حَرَجَ، وَمَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّداً فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ». رواه البخاري
৫/১৩৮৮। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার পক্ষ থেকে জনগণকে (আল্লাহর বিধান) পৌঁছে দাও, যদিও একটি আয়াত হয়। বনী-ইসরাইল থেকে (ঘটনা) বর্ণনা কর, তাতে কোন ক্ষতি নেই। আর যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত-ভাবে আমার প্রতি মিথ্যা (বা জাল হাদিস) আরোপ করল, সে যেন নিজ আশ্রয় জাহান্নামে বানিয়ে নিলো।” (বুখারী)
** (প্রকাশ থাকে যে, বনী-ইসরাইল হতে কেবল ইসলাম সমর্থিত হাদিস বর্ণনা করতে পারা যায়। ব্যাপকভাবে তাদের সব রকম হাদিস গ্রহণ করা সমীচীন নয়। আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে মিথ্যা আরোপ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ফলে হাদিস অতি সতর্কভাবে বর্ণনা করা আবশ্যক এবং জাল ও দুর্বল হাদিস থেকে বিরত থাকা নৈতিক কর্তব্য। সহীহ-দ্ব‘ঈফ হাদিসের গ্রন্থ ও কম্পিউটার পোগ্রাম বর্তমানে প্রায় সর্বত্র সুলভ। সুতরাং হাদিস সম্বন্ধেও যাচাই-বাছাই করা মুসলিমদের একটি দ্বীনী কর্তব্য।)
6/1389 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «وَمَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْماً، سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ» . رواه مسلم
৬/১৩৮৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে; যাতে সে বিদ্যা অর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।” (মুসলিম)
7/1390 وَعَنه أَيضاً رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ دَعَا إِلَى هُدىً كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئاً» . رواه مسلم
৭/১৩৯০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে আহ্বান জানাবে, সে তার অনুসারীদের সমতুল্য নেকীর অধিকারী হবে; তাতে তাদের নেকীর কিছুই হ্রাস পাবে না।” (মুসলিম)
8/1391 وَعَنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِذَا مَاتَ ابْنُ آدَمَ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ» . رواه مسلم
৮/১৩৯১। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব রকম আমলের ধারা বন্ধ হয়ে যায়; সদকা জারিয়াহ (বহমান দান খয়রাত, মসজিদ নির্মাণ করা, কূপ খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) অথবা ইলম (জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তার জন্য নেক দো‘আ করতে থাকে।” (মুসলিম)
9/1392 وَعَنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ، مَلْعُونٌ مَا فِيهَا، إِلاَّ ذِكْرَ اللهِ تَعَالَى، وَمَا وَالاَهُ، وَعَالِماً، أَوْ مُتَعَلِّماً» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৯/১৩৯২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “ইহজগৎ অভিশপ্ত, এর মধ্যে যা কিছু আছে সব অভিশপ্ত। তবে মহান আল্লাহর যিকির ও তার সংশ্লিষ্ট ক্রিয়া (তাঁর আনুগত্য) এবং আলেম অথবা তালিবে ইলমের কথা স্বতন্ত্র।” (তিরমিযী হাসান)
10/1393 وَعَنْ أنسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَن خَرَجَ فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ، فَهُوَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ حَتّىٰ يَرْجِعَ» رواهُ الترْمِذيُّ وقال: حديثٌ حَسنٌ .
১০/১৩৯৩। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয়। (ইমাম তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
11/1394. وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الخُدْرِي رضي الله عنه، عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «لَنْ يَّشْبَعَ مُؤمِنٌ مِّنْ خَيْرٍ حَتّىٰ يَكُوْنَ مُنْتَهَاهُ الْجَنَّةَ» . رواهُ الترمذيُّ، وقَالَ: حديثٌ حسنٌ .
১১/১৩৯৪। আবূ সা‘ঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: মু‘মিনকে কল্যাণ (দ্বীনের জ্ঞান) কখনো তৃপ্তি দিতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তার শেষ গন্তব্য জান্নাতে পৌঁছে। দ্ব‘ঈফ (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসানা বলেছেন)
12/1395 وَعَن أَبي أُمَامَة رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «فَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِي عَلَى أَدْنَاكُمْ» ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : إِنَّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّماوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَّى الحُوْتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِي النَّاسِ الخَيْرَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
১২/১৩৯৫। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আলেমের ফযীলত আবেদের উপর ঠিক সেই রূপ, যেরূপ আমার ফযীলত তোমাদের উপর।” তারপর আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতাকুল, আসমান-জমিনের সকল বাসিন্দা এমনকি গর্তের মধ্যে পিঁপড়ে এবং (পানির মধ্যে) মাছ পর্যন্ত মানবমন্ডলীর শিক্ষাগুরুদের জন্য মঙ্গল কামনা ও নেক দো‘আ করে থাকে।” (তিরমিযী হাসান)
13/1396. وَعَن أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «مَنْ سَلَكَ طَرِيقاً يَبْتَغِي فِيهِ عِلْماً سَهَّلَ اللهُ لَهُ طَرِيقاً إِلَى الجَنَّةِ، وَإِنَّ المَلاَئِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا لِطَالِبِ العِلْمِ رِضاً بِمَا يَصْنَعُ، وَإِنَّ العَالِمَ لَيَسْتَغْفِرُ لَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَمَنْ فِي الأَرْضِ حَتَّى الحِيتَانُ فِي المَاءِ، وَفَضْلُ العَالِمِ عَلَى العَابِدِ كَفَضْلِ القَمَرِ عَلَى سَائِرِ الكَوَاكِبِ، وَإِنَّ العُلَمَاءَ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ، وَإِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَاراً وَلاَ دِرْهَماً وَإِنَّمَا وَرَّثُوا العِلْمَ، فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بحَظٍّ وَافِرٍ». رواه أَبُو داود والترمذي
১৩/১৩৯৬। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি এমন পথে গমন করে, যাতে সে জ্ঞানার্জন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন। আর ফেরেশতাবর্গ তালেবে ইলমের জন্য তার কাজে প্রসন্ন হয়ে নিজেদের ডানাগুলি বিছিয়ে দেন। অবশ্যই আলেম ব্যক্তির জন্য আকাশ-পৃথিবীর সকল বাসিন্দা এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে। আবেদের উপর আলেমের ফযীলত ঠিক তেমনি, যেমন সমগ্র নক্ষত্রপুঞ্জের উপর পূর্ণিমার চাঁদের ফযীলত। উলামা সম্প্রদায় পরগম্বরদের উত্তরাধিকারী। আর এ কথা সুনিশ্চিত যে, পয়গম্বরগণ কোন রৌপ্য বা স্বর্ণ মুদ্রার কাউকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে যাননি; বরং তাঁরা ইলমের (দ্বীনী জ্ঞানভাণ্ডারের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে গেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তা অর্জন করল, সে পূর্ণ অংশ লাভ করল।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী)
14/1397 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا شَيْئاً، فَبَلَّغَهُ كَمَا سَمِعَهُ، فَرُبَّ مُبَلَّغٍ أَوْعَى مِنْ سَامِعٍ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১৪/১৩৯৭। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির শ্রীবৃদ্ধি করুন, যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে (আমার কোন) হাদিস শুনে যথাযথরূপে হুবহু অপরকে পৌঁছে দেয়। কেননা, যাকে হাদিস বর্ণনা করা হয় এমনও হতে পারে যে, সে শ্রোতা অপেক্ষা অধিক উপলব্ধিকারী ও স্মৃতিধর।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
15/1398 وَعَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ سُئِلَ عَن عِلْمٍ فَكَتَمَهُ، أُلْجِمَ يَوْمَ القِيَامَةِ بِلِجَامٍ مِنْ نَارٍ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
১৫/১৩৯৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
16/1399 وَعَنهُ، قَالَ: قَالَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ - عَزَّ وَجَلَّ - لاَ يَتَعَلَّمُهُ إِلاَّ لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ يَعْنِي: رِيحَهَا . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
১৬/১৩৯৯। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন জ্ঞান অর্জন করল, যার দ্বারা আল্লাহ আয্যা অজাল্লার সন্তুষ্টি লাভ করা যায়, তা সে কেবল পার্থিব স্বার্থ লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করল, কিয়ামতের দিন সে ব্যক্তি জান্নাতের সুগন্ধ পর্যন্ত পাবে না।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)
17/1400 وَعَن عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «إِنَّ اللهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعاً يَنْتَزعهُ مِنَ النَّاسِ، وَلكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِماً، اتَّخَذَ النَّاسُ رُؤُوساً جُهَّالاً، فَسُئِلُوا فَأَفْتوا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا . متفقٌ عَلَيْهِ
১৭/১৪০০। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলামা সম্প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকে শেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
كتابُ حَمْدِ اللهِ تَعَالٰى وَشُكْرِهِ
অধ্যায় (১৩): মহান আল্লাহর প্রশংসা ও তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার
242- بابُ فَضْلِ الْحَمْدِ وَالشُّكْرِ
পরিচ্ছেদ - ২৪২: মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা ওয়াজিব
মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿ فَٱذۡكُرُونِيٓ أَذۡكُرۡكُمۡ وَٱشۡكُرُواْ لِي وَلَا تَكۡفُرُونِ﴾ (البقرة: ١٥٢)
“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন, ﴿لَئِن شَكَرۡتُمۡ لَأَزِيدَنَّكُمۡۖ وَلَئِن كَفَرۡتُمۡ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٞ﴾ (ابراهيم: ٧)
“তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম ৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন, ﴿ وَقُلِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ١١١ ﴾ (الاسراء: ١١١)
“বল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই।” (সূরা ইসরা ১১১ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন, ﴿ وَءَاخِرُ دَعۡوَىٰهُمۡ أَنِ ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٠ ﴾ (يونس : ١٠)
“তাদের শেষ বাক্য হবে, আলহামদু লিল্লাহি রাবিবল আলামীন (সমস্ত প্রশংসা সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য)।” (সূরা ইউনুস ১০ আয়াত)
1/1401 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم، أُتِيَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ بِقَدَحَيْنِ مِنْ خَمْرٍ وَلَبَنٍ، فَنَظَرَ إِلَيْهمَا فَأَخَذَ اللَّبَنَ. فَقَالَ جِبرِيلُ: اَلحَمْدُ للهِ الَّذِي هَدَاكَ لِلفِطْرَةِ لَوْ أَخَذْتَ الخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ. رواه مسلم
১/১৪০১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যে রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মি‘রাজ ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সে রাতে তাঁর নিকট মদ ও দুধের দু’খানা পাত্র আনা হল। তখন তিনি উভয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে দুধের বাটি খানা তুলে নিলেন। এ দেখে জিবরাঈল عليه السلام বললেন: ‘সেই আল্লাহর প্রশংসা, যিনি আপনাকে প্রকৃতির দিকেই পথ দেখালেন। যদি আপনি মদের পাত্রটি ধারণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।’ (মুসলিম)
2/1402 وَعَنْهُ عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم قال: «كُلُّ أمْرٍ ذِيْ بَالٍ لَا يُبْدَأُ فِيْهِ بِـــ: الْحَمْدُ لِلَّه فَهُوَ أقْطُع» حديثٌ حسَنٌ، رواهُ أبو داود وغيرُهُ.
২/১৪০২। আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আল্লাহর প্রশংসার সাথে আরম্ভ না করলে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। (আবূ দাউদ প্রমুখ)
3/1403 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا مَاتَ وَلَدُ العَبْدِ قَالَ اللهُ تَعَالَى لِمَلائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤادِهِ ؟ فيَقُولُونَ: نَعَمْ، فيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي ؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ، فيَقُولُ اللهُ تَعَالَى: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيتاً فِي الجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الحَمْدِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩/১৪০৩। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়, তখন মহান আল্লাহ স্বীয় ফিরিশতাদেরকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জীবন হনন করেছ কি?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘তোমরা তার হৃদয়ের ফলকে হনন করেছ?’ তাঁরা বলেন, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বলেন, ‘সে সময় আমার বান্দা কি বলেছে?’ তারা বলে, ‘সে আপনার হামদ (প্রশংসা) করেছে ও ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন (অর্থাৎ আমরা তোমার এবং তোমার কাছেই অবশ্যই ফিরে যাব) পাঠ করেছে।’ মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমার (সন্তানহারা) বান্দার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি গৃহ নির্মাণ কর, আর তার নাম রাখ, ‘বায়তুল হামদ’ (প্রশংসা-ভবন)।” (তিরমিযী হাসান)
4/1404 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «إِنَّ الله لَيرْضَى عَنِ العَبْدِ يَأكُلُ الأَكْلَةَ، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا، وَيَشْرَبُ الشَّرْبَة، فَيَحْمَدُهُ عَلَيْهَا». رواه مسلم
৪/১৪০৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে বান্দা কিছু খেলে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং কিছু পান করলেও আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আল-হামদু লিল্লাহ পড়ে)।” (মুসলিম)
كتابُ الصَّلَاةِ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
অধ্যায় (১৪): রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ ও সালাম প্রসঙ্গে
243- بَابُ الْأَمْرِ بِالصَّلَاةِ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَفَضْلِهَا وَبَعْضِ صِيَغِهَا
পরিচ্ছেদ - ২৪৩: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করার আদেশ, তার মাহাত্ম্য ও শব্দাবলী
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ (الاحزاب: ٥٦)
“নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর নবীর প্রতি সালাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।” (সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত)
1/1405 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاص، رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاَةً، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْراً» . رواه مسلم
১/১৪০৫। ‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার দরুন তার উপর দশবার দুরুদ পাঠ করবেন।” (মুসলিম)
2/1406 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَوْلَى النَّاسِ بِي يَومَ القِيَامَةِ أَكْثَرُهُمْ عَلَيَّ صَلاَةً» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن .
২/১৪০৬। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে।” (তিরমিযী, হাসান)
3/1407 وَعَنْ أَوسِ بنِ أَوسٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِنَّ مِنْ أَفْضَلِ أَيَّامِكُمْ يَومَ الجُمُعَةِ، فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنَ الصَّلاةِ فِيهِ، فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ». قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، وَكَيفَ تُعْرَضُ صَلاَتُنَا عَلَيْكَ وَقَدْ أَرَمْتَ ؟! قَالَ: يَقُولُ بَلِيتَ . قَالَ: «إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى الأَرْضِ أَجْسَادَ الأَنْبِيَاءِ» . رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৩/১৪০৭। আওস ইবনে আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।” লোকেরা বলল, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি তো (মারা যাওয়ার পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। সে ক্ষেত্রে আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে?’ তিনি বললেন, “আল্লাহ পয়গম্বরদের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।” (বিধায় তাঁদের শরীর আবহমান কাল ধরে অক্ষত থাকবে।) (আবু দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদ)
4/1408 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৪/১৪০৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই অভিশাপ দিলেন যে, “সেই ব্যক্তির নাক ধূলা-ধূসরিত হোক, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হল, অথচ সে (আমার নাম শুনেও) আমার প্রতি দরূদ পড়ল না।” (অর্থাৎ ‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম’ বলল না।) (তিরমিযী হাসান)
5/1409 وَعَنْه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيداً، وَصَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ» . رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৫/১৪০৯। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা আমার কবরকে উৎসব কেন্দ্রে পরিণত করো না (যেমন কবর পূজারীরা উরস ইত্যাদির মেলা লাগিয়ে করে থাকে)। তোমরা আমার প্রতি দরূদ পেশ কর। কারণ, তোমরা যেখানেই থাক, তোমাদের পেশ-কৃত দরূদ আমার কাছে পৌঁছে যায়।” (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সূত্রে)
6/1410 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَا مِنْ أَحَدٍ يُسَلِّمُ عَلَيَّ إِلاَّ رَدَّ اللهُ عَلَيَّ رُوحِي حَتَّى أَرُدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ» . رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح
৬/১৪১০। উক্ত রাবী হতে এটি বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোনো ব্যক্তি যখন আমার উপর সালাম পেশ করে, তখন আল্লাহ আমার মধ্যে আমার আত্মা ফিরিয়ে দেন, ফলে আমি তার সালামের জবাব দিই।” (আবূ দাউদ- বিশুদ্ধ সানাদ)
(এর ধরন আল্লাহই জানেন। অবশ্য এর অর্থ এ নয় যে, তাঁর জবাব কেউ শুনতে পায়।)
7/1411 وَعَنْ عَلِيّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «البَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ، فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৭/১৪১১। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রকৃত কৃপণ সেই ব্যক্তি, যার কাছে আমি উল্লিখিত হলাম (আমার নাম উচ্চারিত হল), অথচ সে আমার প্রতি দরূদ পাঠ করল না।” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
8/1412 وَعَنْ فَضَالَةَ بنِ عُبَيْدٍ رضي الله عنه، قَالَ: سَمِعَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً يَدْعُو فِي صَلاَتِهِ لَمْ يُمَجِّدِ الله تَعَالَى، وَلَمْ يُصَلِّ عَلَى النَّبيِّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «عَجِلَ هَذَا» ثُمَّ دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ - أَوْ لِغَيْرِهِ -: «إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِتَحْمِيدِ رَبِّهِ سُبْحَانَهُ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبيِّ صلى الله عليه وسلم، ثُمَّ يَدْعُو بَعْدُ بِمَا شَاءَ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৮/১৪১২। ফাযালা ইবনে উবাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি লোককে নামাযে প্রার্থনা করতে শুনলেন। সে কিন্তু তাতে আল্লাহর প্রশংসা করেনি এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদও পড়েনি। এ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “লোকটি তাড়াহুড়ো করল।” অতঃপর তিনি তাকে ডাকলেন ও তাকে অথবা অন্য কাউকে বললেন, “যখন কেউ দো‘আ করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনা যোগে ও আমার প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করে দো‘আ আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।” (আবু দাউদ, তিরমিযী)
9/1413 وَعَنْ أَبِي مُحَمَّدٍ كَعْبِ بن عُجْرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ قَدْ عَلِمْنَا كَيْفَ نُسَلِّمُ عَلَيْكَ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ ؟ قَالَ: «قُولُوا: اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجيدٌ . اَللهم بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجْيدٌ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৯/১৪১৩। আবূ মুহাম্মদ কা‘ব ইবনে ‘উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের নিকট এলে। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রতি কিভাবে সালাম পেশ করতে হয় তা জেনেছি, কিন্তু আপনার প্রতি দরূদ কিভাবে পাঠাব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলোঃ-
‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
যার অর্থ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর দরুদ পাঠ করো; যেমন দরূদ পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও অতি সম্মানার্হ। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।” (বুখারী ও মুসলিম)
10/1414 وَعَنْ أَبي مَسعُودٍ البَدرِي رضي الله عنه، قَالَ: أَتَانَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَنَحنُ في مَجْلِسِ سَعدِ بن عُبَادَةَ رضي الله عنه، فَقَالَ لَهُ بَشْيرُ بْنُ سَعدٍ رضي الله عنه : أَمَرَنَا الله تَعَالَى أَنْ نُصَلِّيَ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللهِ، فَكَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ ؟ فَسَكَتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، حَتَّى تَمَنَّيْنَا أَنَّهُ لَمْ يَسْأَلْهُ، ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «قُولُوا: اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْت عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، إنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، وَالسَّلاَمُ كَمَا قَدْ عَلِمْتُمْ» . رواه مسلم
১০/১৪১৪। আবূ মাসঊদ বদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা সায়াদ ইবনে উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে এলে। বাশীর ইবনে সা‘আদ তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! মহান আল্লাহ আমাদেরকে আপনার প্রতি দরূদ পড়তে আদেশ করেছেন, কিন্তু কিভাবে আপনার উপর দরূদ পড়ব?’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিরুত্তর থাকলেন। পরিশেষে আমরা আশা করলাম, যদি (বাশীর) তাঁকে প্রশ্ন না করতেন (তো ভাল হত)। ক্ষণেক পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা বলো,
‘আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আ-লি মুহাম্মদ, কামা বা-রাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম। ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ তথা মুহাম্মদের পরিবারবর্গের উপর সালাত পেশ কর; যেমন সালাত পেশ করেছিলে ইব্রাহীমের পরিবারবর্গের উপর। আর তুমি মুহাম্মদ ও তাঁর পরিজনবর্গের প্রতি বরকত নাযিল কর; যেমন বরকত নাযিল করেছ ইব্রাহীমের পরিজনবর্গের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত ও মহা সম্মানীয়।
আর সালাম কেমন, তা তো তোমরা জেনেছ।” (মুসলিম)
11/1415 وَعَنْ أَبي حُمَيدٍ السَّاعِدِيِّ رضي الله عنه، قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ ؟ قَالَ: «قُولُوا: اَللهم صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى أَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إبْرَاهِيمَ إنَّكَ حَميدٌ مَجِيدٌ» . متفقٌ عَلَيْهِ
১১/১৪১৫। আবূ হুমাইদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা কিভাবে আপনার প্রতি দরূদ পেশ করব?’ তিনি বললেন, “তোমরা বলো, “আল্লা-হুম্মা স্বাল্লি আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা স্বাল্লাইতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, অবা-রিক আলা মুহাম্মাদিঁউ অআলা আযওয়া-জিহি অযুর্রিয়্যাতিহি কামা বারাকতা আলা আ-লি ইবরা-হীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর সালাত পেশ কর; যেমন তুমি ইব্রাহীমের বংশধরের উপর সালাত পেশ করেছ। আর তুমি মুহাম্মদ, তাঁর পত্নীগণ ও তাঁর বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ কর যেমন তুমি ইবরাহীমের বংশধরের উপর বরকত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। (বুখারী ও মুসলিম)
كِتَابُ الْأَذْكَارِ
অধ্যায়: (১৫): যিকির-আযকার প্রসঙ্গে
244- بَابُ فَضْلِ الذِّكْرِ وَالْحَثِّ عَلَيْهِ
পরিচ্ছেদ - ২৪৪: যিকির তথা আল্লাহকে স্মরণ করার ফযীলত ও তার প্রতি উৎসাহ দান
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿وَلَذِكۡرُ ٱللَّهِ أَكۡبَرُۗ﴾ [العنكبوت: ٤٥]
“অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।” (সূরা আনকাবূত ৪৫ আয়াত)
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ فَٱذۡكُرُونِيٓ أَذۡكُرۡكُمۡ ﴾ [البقرة: ١٥٢]
“তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেন,
﴿ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِي نَفۡسِكَ تَضَرُّعٗا وَخِيفَةٗ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَٰفِلِينَ ٢٠٥ ﴾ [الاعراف: ٢٠٥]
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ২০৫ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেন,
﴿ وَٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ كَثِيرٗا لَّعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ﴾ [الجمعة: ١٠]
“আল্লাহকে অধিক-রূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।” (সূরা জুমআ ১০ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُسۡلِمِينَ وَٱلۡمُسۡلِمَٰتِ﴾ إِلَى قَوْله تَعَالَى: ﴿وَٱلذَّٰكِرِينَ ٱللَّهَ كَثِيرٗا وَٱلذَّٰكِرَٰتِ أَعَدَّ ٱللَّهُ لَهُم مَّغۡفِرَةٗ وَأَجۡرًا عَظِيمٗا ٣٥ ﴾ [الاحزاب: ٣٥]
“নিশ্চয়ই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) নারী, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) পুরুষ ও যৌনাঙ্গ হিফাযতকারী (সংযমী) নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী---এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান রেখেছেন।” (সূরা আহযাব ৩৫ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱذۡكُرُواْ ٱللَّهَ ذِكۡرٗا كَثِيرٗا ٤١ وَسَبِّحُوهُ بُكۡرَةٗ وَأَصِيلًا ٤٢ ﴾ [الاحزاب: ٤١، ٤٢]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা আহযাব ৪১-৪২ আয়াত)
এ মর্মে আরও অনেক বিদিত আয়াত রয়েছে।
1/1416 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ، ثَقِيلَتَانِ فِي المِيزَانِ، حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَانِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ العظيمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
১/১৪১৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দু’টি কলেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।” (বুখারী ও মুসলিম)
2/1417 وَعَنْه رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أكْبَرُ، أَحَبُّ إلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ» . رواه مسلم
২/১৪১৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা (সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার। (অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান) পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।” (মুসলিম)
3/1418 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ؛ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وكُتِبَتْ لَهُ مِئَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِئَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزاً مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِي، وَلَمْ يَأتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلاَّ رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ» . وَقَالَ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ، حُطَّتْ خَطَايَاهُ، وَإنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৪১৮। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর।’
অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।
যে ব্যক্তি এই দো‘আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে, তার একশ’টি গুনাহ মোচন করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে তবে।”
তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।” (বুখারী-মুসলিম)
4/1419 وَعَنْ أَبي أَيُّوبَ الأَنصَارِيِّ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، عَشْرَ مَرَّاتٍ . كَانَ كَمَنْ أَعْتَقَ أَرْبَعَةَ أَنْفُسٍ منْ وَلَدِ إسْمَاعِيلَ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৪/১৪১৯। আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শায়ইন ক্বাদীর’ দিনে দশবার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি ইসমাইলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।” (বুখারী-মুসলিম)
5/1420 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَلاَ أُخْبِرُكَ بِأَحَبِّ الكَلاَمِ إِلَى اللهِ ؟ إِنَّ أَحَبَّ الكَلاَمِ إِلَى اللهِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ» . رواه مسلم
৫/১৪২০। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “ আমি কি তোমাকে আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় কথা কি তা জানাব? আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কথা হল, ‘সুবহানাল্লা-হি অবিহামদিহ’ (অর্থাৎ আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি।)” (মুসলিম)
6/1421 وَعَنْ أَبي مَالِكٍ الأَشعَرِي رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «الطُّهُورُ شَطْرُ الإِيمانِ، وَالحَمْدُ للهِ تَمْلأُ المِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالحَمْدُ للهِ تَمْلآنِ - أَوْ تَمْلأُ - مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضِ». رواه مسلم
৬/১৪২১। আবূ মালেক আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পবিত্রতা অর্ধেক ঈমান। আর ‘আলহামদু লিল্লাহ’ (কিয়ামতে নেকীর) দাঁড়িপাল্লাকে ভরে দেবে এবং ‘সুবহানাল্লাহ’ ও ‘আলহামদু লিল্লাহ’ আসমান ও জমিনের মধ্যস্থিত শূন্যতা পূর্ণ করে দেয়।” (মুসলিম)
7/1422 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبِي وَقَّاصٍ رضي الله عنه قَالَ: جَاءَ أَعْرَابيٌّ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: عَلِّمْنِي كَلاَماً أَقُولُهُ. قَالَ: «قُلْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيراً، وَالحَمْدُ للهِ كَثيراً، وَسُبْحَانَ اللهِ رَبِّ العَالِمينَ، وَلاَ حَولَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ العَزِيزِ الحَكِيمِ» قَالَ: فَهَؤُلاَءِ لِرَبِّي، فَمَا لِي ؟ قَالَ: قُلْ: اَللهم اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَارْزُقْنِي» . رواه مسلم
৭/১৪২২। সায়াদ ইবনে আবী অক্কবাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন বেদুঈন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমীপে এসে নিবেদন করল, ‘আমাকে একটি কথা শিখিয়ে দিন, আমি তা বলব।’ তিনি বললেন, “বল,
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, আল্লাহু আকবারু কাবীরা, অলহামদু লিল্লাহি কাসীরা, অসুবহানাল্লাহি রাবিবল আ’লামীন, অলা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আযীযিল হাকীম।’
অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত সত্য উপাস্য নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আল্লাহ সর্বাধিক মহান, আল্লাহর অতীব প্রশংসা, বিশ্বচরাচরের পালনকর্তা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। মহা পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহর সাহায্য ছাড়া নাড়া-চড়া করার (পাপ ও অশুভ জিনিস থেকে বেচে থাকা এবং পুণ্যার্জন ও মঙ্গল সাধন করার) ক্ষমতা নেই।”
লোকটি বলল, ‘এ সব কথাগুলি আমার প্রভুর জন্য হল, আমার জন্য কি?’ তিনি বললেন, “তুমি বল, ‘আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী অহদিনী অরযুক্বনী।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর। আমার প্রতি দয়া কর। আমাকে সৎপথ প্রদর্শন কর ও আমাকে জীবিকা দাও।” (মুসলিম)
8/1423 وَعَنْ ثَوبَانَ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا انْصَرَفَ مِنْ صَلاَتِهِ اسْتَغْفَرَ ثَلاثَاً، وَقَالَ: «اَللهم أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَاذَا الجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ». قِيلَ لِلأَوْزَاعِيِّ - وَهُوَ أَحَدُ رُوَاةِ الحَدِيثِ -: كَيْفَ الاِسْتِغْفَارُ ؟ قَالَ: يَقُولُ: أَسْتَغْفِرُ الله، أَسْتَغْفِرُ الله . رواه مسلم
৮/১৪২৩। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায থেকে সালাম ফিরার পর ঘুরে বসতেন, তখন তিনবার ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন আর পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা আন্তাস সালামু অমিনকাস সালামু তাবারাকতা ইয়া যাল-জালালি অল-ইকরাম। অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি শান্তিময়, তোমার নিকট থেকেই শান্তি আসে। তুমি বরকতময় হে মহিমান্বিত ও মহানুভব।
এ হাদিসটির অন্যতম বর্ণনাকারী আওযায়ী (রহঃ)কে প্রশ্ন করা হল, ‘ইস্তিগফার’ কিভাবে হবে? উত্তরে তিনি বললেন, বলবে, ‘আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’ (অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।) (মুসলিম)
9/1424 وَعَنِ المُغِيرَةِ بنِ شُعبَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا فَرَغَ مِنَ الصَّلاَةِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اَللهم لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الجَدِّ مِنْكَ الجَدُّ» . متفقٌ عَلَيْهِ
৯/১৪২৪। মুগীরাহ ইবন শু‘বাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযান্তে সালাম ফিরতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেন:
‘লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লা-হুম্মা লা মা-নিয়া লিমা আ’ত্বাইতা, অলা মু’ত্বিয়া লিমা মানা’তা অলা য়্যানফাউ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দ্।’
অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দান কর তা রোধ করার এবং যা রোধ কর তা দান করার সাধ্য কারো নেই। আর ধনবানের ধন তোমার আযাব থেকে মুক্তি পেতে কোন উপকারে আসবে না। (বুখারী-মুসলিম)
10/1425 وَعَنْ عَبدِ الله بنِ الزُّبَيْرِ رَضِيَ الله تَعَالَى عَنهُمَا أَنَّه كَانَ يَقُولُ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ، حِيْنَ يُسَلِّمُ: «لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَلاَ نَعْبُدُ إِلاَّ إيَّاهُ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الحَسَنُ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ وَلَوْ كَرِهَ الكَافِرُونَ». قَالَ ابْنُ الزُّبَيْرِ: وَكَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يُهَلِّلُ بِهِنَّ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ . رواه مسلم
১০/১৪২৫। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি প্রতিটি নামাযের পশ্চাতে যখন সালাম ফিরতেন, তখন এই দো‘আটি পড়তেন,
“লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। লা হাউলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অলা না‘বুদু ইল্লা ইয়্যা-হু লাহুন্নি’মাতু অলাহুল ফাযবলু অলাহুস সানা-উল হাসান, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু মুখলিস্বীনা লাহুদ্দীনা অলাউ কারিহাল কা-ফিরূন।”
অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোন সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান। আল্লাহর প্রেরণা দান ছাড়া পাপ থেকে ফিরার এবং সৎকাজ করার (নড়া-চড়ার) শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। তাঁর ছাড়া আমরা আর কারো ইবাদত করিনা, তাঁরই যাবতীয় সম্পদ, তাঁরই যাবতীয় অনুগ্রহ, এবং তাঁরই যাবতীয় সু-প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আমরা বিশুদ্ধ চিত্তে তাঁরই উপাসনা করি, যদিও কাফের দল তা অপছন্দ করে।
ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত দো‘আটি প্রত্যেক নামাযের পর পড়তেন। (মুসলিম)
11/1426 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ فُقَراءَ المُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ، فَقَالُوا: ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثورِ بِالدَّرَجَاتِ العُلَى، وَالنَّعِيمِ المُقِيمِ، يُصَلُّونَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُومُونَ كَمَا نَصُومُ، وَلَهُمْ فَضْلٌ مِنْ أَمْوَالٍ، يَحُجُّونَ، وَيَعْتَمِرُونَ، وَيُجَاهِدُونَ، وَيَتَصَدَّقُونَ . فَقَالَ: «أَلاَ أُعَلِّمُكُمْ شَيْئاً تُدْرِكُونَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ، وَتَسْبِقُونَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ، وَلاَ يَكُونُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلاَّ مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: تُسَبِّحُونَ، وَتَحْمَدُونَ، وَتُكَبِّرُونَ، خَلْفَ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ». قَالَ أَبُو صَالِحٍ الرَّاوِي عَن أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، لَمَّا سُئِلَ عَنْ كَيْفِيَّةِ ذِكْرِهِنَّ قَالَ: يَقُول: سُبْحَان اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، واللهُ أكْبَرُ، حَتَّى يَكُونَ مِنهُنَّ كُلُّهُنَّ ثَلاثاً وَثَلاثِينَ. متفقٌ عَلَيْهِ
وَزَادَ مُسلِمٌ فِي رِوَايَتِهِ: فَرَجَعَ فُقَرَاءُ المُهَاجِرِينَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالُوا: سَمِعَ إِخْوَانُنَا أَهْلُ الأَمْوَالِ بِمَا فَعَلْنَا فَفَعَلُوا مِثْلَهُ ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «ذَلِكَ فَضْلُ الله يُؤتِيهِ مَنْ يَشَاءُ» .
১১/১৪২৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা গরীব মুহাজির (সাহাবিগণ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো উঁচু উঁচু মর্যাদা ও চিরস্থায়ী সম্পদের অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে, যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে, যেমন আমরা রাখছি। কিন্তু তাদের উদ্বৃত্ত মাল আছে, ফলে তারা হজ্জ করছে, উমরাহ করছে, জিহাদ করছে ও সদকা করছে, (আর আমরা করতে পারছি না)।’ এ কথা শুনে তিনি বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে এমন জিনিস শিখিয়ে দেব না, যার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের মর্যাদা লাভ করবে, তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অগ্রবর্তী থাকবে এবং তোমাদের মত কাজ যে করবে, সে ছাড়া অন্য কেউ তোমাদের চাইতে শ্রেষ্ঠতর হতে পারবে না?” তাঁরা বললেন, ‘অবশ্যই হে আল্লাহর রসূল! (আমাদেরকে তা শিখিয়ে দিন।)’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পরে ৩৩ বার তাসবীহ, তাহমীদ ও তাকবীর পাঠ করবে।”
আবূ হুরাইরা থেকে বর্ণনাকারী আবূ সালেহ বলেন, ‘কিভাবে পাঠ করতে হবে, তা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবার’ ও ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবে। যেন প্রত্যেকটি বাক্য ৩৩ বার করে হয়। (বুখারী-মুসলিম)
মুসলিমের বর্ণনায় এ কথা বাড়তি আছে যে, অতঃপর গরীব মুহাজিরগণ পুনরায় আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন, ‘আমরা যে আমল করছি, সে আমল আমাদের ধনী ভাইয়েরা শোনার পর তারাও আমল শুরু করে দিয়েছে? (এখন তো তারা আবার আমাদের চেয়ে অগ্রবর্তী হয়ে যাবে।)’ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এ হল আল্লাহর অনুগ্রহ; তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।”
12/1427 وَعَنْه، عَن رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وحَمِدَ اللهَ ثَلاثاً وَثَلاَثِينَ، وَكَبَّرَ الله ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وَقَالَ تَمَامَ المِئَةِ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ». رواه مسلم
১২/১৪২৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরয) নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ ও ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং একশত পূর্ণ করতে ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুলি শায়ইন ক্বাদীর’ পড়বে, তার গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনার সমান হয়। (মুসলিম)
13/1428 وَعَنْ كَعْبِ بنِ عُجْرَةَ رضي الله عنه، عَنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مُعَقِّبَاتٌ لاَ يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ ـ أَوْ فَاعِلُهُنَّ ـ دُبُرَ كُلِّ صَلاَةٍ مَكْتُوبَةٍ: ثَلاَثٌ وَثَلاَثُونَ تَسْبِيحَةً. وَثَلاَثٌ وثَلاَثُونَ تَحْمِيدَةً، وَأَرْبَعٌ وَثَلاَثُونَ تَكْبِيرَةً» . رواه مسلم
১৩/১৪২৮। কা‘ব ইবনে উজরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নামাযান্তে কিছু বাক্য রয়েছে বা কিছু কর্ম রয়েছে, সেগুলি যে পড়বে বা (পাঠ) করবে, সে আদৌ ব্যর্থ হবে না। তা হচ্ছে প্রত্যেক ফরয নামায বাদ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া।” (মুসলিম)
14/1429 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَتَعَوَّذُ دُبُرَ الصَّلَواتِ بِهؤُلاَءِ الكَلِمَاتِ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبْنِ وَالبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ العُمُرِ، وَأعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ القَبْرِ» . رواه البخاري
১৪/১৪২৯। সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসমূহের শেষাংশে এই দো‘আ পড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বুখলি অ আঊযু বিকা মিনাল জুবনি অ আঊযু বিকা মিন আন উরাদ্দা ইলা আরযালিল উমুরি অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিদ্দুন্য়্যা অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল ক্বাব্র।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট কার্পণ্য ও ভীরুতা থেকে পানাহ চাচ্ছি, স্থবিরতার বয়সে কবলিত হওয়া থেকে আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি আর দুনিয়ার ফিতনা ও কবরের ফিতনা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। (বুখারী)
15/1430 وَعَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، أَخَذَ بِيَدِهِ، وَقَالَ: «يَا مُعَاذُ، وَاللهِ إنِّي لأُحِبُّكَ» فَقَالَ: «أُوصِيكَ يَا مُعَاذُ لاَ تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَة تَقُولُ: اَللهم أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ» . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
১৫/১৪৩০। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বললেন, “হে মুআয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি।” অতঃপর তিনি বললেন, “হে মুআয! আমি তোমাকে অসিয়ত করছি যে, তুমি প্রত্যেক নামাযের শেষাংশে এ দো‘আটি পড়া অবশ্যই ত্যাগ করবে না, ‘আল্লা-হুম্মা আইন্নী আলা যিকরিকা ওয়াশুকরিকা অহুসনি ইবা-দাতিক।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার যিকির (স্মরণ), শুকর (কৃতজ্ঞতা) এবং সুন্দর ইবাদত করতে সাহায্য দান কর।” (আবূ দাউদ, সহীহ সানাদ)
16/1431 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «إِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنْ أَرْبَعٍ، يَقُولُ: اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ المَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ المَسِيحِ الدَّجَّالِ» . رواه مسلم
১৬/১৪৩১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ (নামাযের মধ্যে) তাশাহহুদ (অর্থাৎ আত্-তাহিয়্যাত) পড়বে, তখন সে এ চারটি জিনিস হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে; বলবে,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন আযা-বি জাহান্নাম, অমিন আযা-বিল ক্বাব্র, অমিন ফিতনাতিল মাহয়্যা অলমামা-ত, অমিন শার্রি ফিতনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-ল।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং কানা দাজ্জালের ফিতনার অনিষ্ট থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (মুসলিম)
17/1432 وَعَنْ عَليٍّ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ يَكُونُ مِنْ آخِرِ مَا يَقُولُ بَيْنَ التَّشَهُّدِ وَالتَّسْلِيمِ: «اَللهم اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَسْرَفْتُ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، أَنْتَ الْمُقَدِّمُ، وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ» . رواه مسلم
১৭/১৪৩২। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাশাহহুদ ও সালাম ফিরার মধ্যখানে শেষ বেলায় অর্থাৎ সালাম ফিরবার আগে) এই দো‘আ পড়তেন, “আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু অমা আসরাফতু অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখখিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি, যা অতিরিক্ত করেছি এবং যা তুমি আমার চাইতে অধিক জান। তুমি আদি, তুমিই অন্ত। তুমি ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই। (মুসলিম)
18/1433 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُكْثِرُ أَنْ يَقُوْلَ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ: «سُبْحَانَكَ اَللهم رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اَللهم اغْفِرْ لِي». متفقٌ عَلَيْهِ
১৮/১৪৩৩। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় (নামাযের) রুকু ও সিজদাতে এই তাসবীহটি অধিক মাত্রায় পড়তেন, ‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাববানা অবিহামদিক, আল্লাহুম্মাগফিরলী।’ অর্থাৎ হে আমাদের প্রভু আল্লাহ! তোমার প্রশংসা সহকারে তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা কর। (বুখারী ও মুসলিম)
19/1434 وَعَنْها: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ فِي رُكُوعِهِ وَسُجُودِهِ: «سبُّوحٌ قُدُّوسٌ رَبُّ المَلاَئِكَةِ وَالرُّوحِ» . رواه مسلم
১৯/১৪৩৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় (নামাযের) রুকু ও সিজদাতে পড়তেন, ‘সুববূহুন ক্বুদ্দূসুন রাববুল মালা-ইকাতি অর্রূহ।’ অর্থাৎ অতি নিরঞ্জন, অসীম পবিত্র ফেরেশতামন্ডলী ও জিবরীল عليه السلام -এর প্রভু (আল্লাহ)। (মুসলিম)
20/1435 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظِّمُوا فِيهِ الرَّبَّ - عَزَّ وَجَلَّ -، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَقَمِنٌ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ» . رواه مسلم
২০/১৪৩৫। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “রুকুতে তোমরা রবের বড়াই বর্ণনা কর (অর্থাৎ ‘সুবহানা রাবিবয়্যাল আযীম’ পড়)। আর সিজদায় দো‘আ করতে সচেষ্ট হও। কারণ, তোমাদের জন্য সে দো‘আ কবূল হওয়ার উপযুক্ত।” (মুসলিম)
21/1436 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَقْرَبُ مَا يَكُونُ العَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ» . رواه مسلم
২১/১৪৩৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয় তখন, যখন সে সেজদার অবস্থায় হয়। সুতরাং (ঐ সময়) তোমরা বেশি মাত্রায় দো‘আ কর।” (মুসলিম)
22/1437 وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ فِي سُجُودِهِ: «اَللهم اغْفِرْ لي ذَنْبِي كُلَّهُ: دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ» . رواه مسلم
২২/১৪৩৭। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করার সময় এই দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী যামবী কুল্লাহ, দিক্কবাহু অজিল্লাহ, অআউওয়ালাহু অ আ-খিরাহ, অ আলা-নিয়্যাতাহু অসির্রাহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার কম ও বেশী, পূর্বের ও পরের, প্রকাশিত ও গুপ্ত সকল প্রকার পাপকে মাফ করে দাও। (মুসলিম)
23/1438 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: افْتَقَدْتُ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم، ذَاتَ لَيْلَةٍ، فَتَحَسَّسْتُ، فَإِذَا هُوَ رَاكِعٌ - أَوْ سَاجِدٌ - يَقُولُ: «سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنتَ» وَفِي رِوَايَةٍ: فَوَقَعَتْ يَدِيْ عَلَى بَطْنِ قَدَمَيْهِ، وَهُوَ فِي المَسْجِدِ وَهُمَا مَنْصُوبَتَانِ، وَهُوَ يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ». رواه مسلم
২৩/১৪৩৮। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে (বিছানায়) নিখোঁজ পেলাম। কাজেই আমি হাতড়াতে হাতড়াতে তাকে রুকু বা সিজদার অবস্থায় পেলাম। তিনি তাতে পড়ছিলেন, ‘সুবহানাকা অবিহামদিকা লা ইলা-হা ইল্লা আন্ত্।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাঁর নামাযের স্থানে (সিজদায়) ছিলেন। তাঁর দু’টি পায়ের চেটোয় আমার হাত পড়ল। তাঁর পায়ের পাতা দুটো খাড়া ছিল এবং তিনি এই দো‘আ পড়ছিলেন, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিরিদ্বা-কা মিন সাখাত্বিক, অবিমুআফা-তিকা মিন উক্বূবাতিক, অ আঊযু বিকা মিন্কা লা উহ্স্বী সানা-আন ‘আলাইকা আন্তা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক্।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার সন্তুষ্টির অসীলায় তোমার ক্রোধ থেকে, তোমার ক্ষমাশীলতার অসীলায় তোমার শাস্তি থেকে এবং তোমার সত্তার অসীলায় তোমার আযাব থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি তোমার উপর তোমার প্রশংসা গুনে শেষ করতে পারি না, যেমন তুমি নিজের প্রশংসা নিজে করেছ। (মুসলিম)
24/1439 وَعَنْ سَعدِ بنِ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه قَالَ: كُنَّا عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ: «أَيَعجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكْسِبَ فِي كُلِّ يَومٍ أَلْفَ حَسَنَةٍ !» فَسَأَلَهُ سَائِلٌ مِنْ جُلَسائِهِ: كَيْفَ يَكْسِبُ أَلفَ حَسَنَةٍ ؟ قَالَ: «يُسَبِّحُ مِئَةَ تَسْبِيحَةٍ فَيُكْتَبُ لَهُ أَلْفُ حَسَنَةٍ، أَوْ يُحَطُّ عَنْهُ أَلفُ خَطِيئَةٍ» . رواه مسلم
২৪/১৪৩৯। সায়াদ ইবনে আবূ ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি বললেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তি প্রত্যহ এক হাজার নেকী অর্জন করতে অপারগ হবে কি?” তাঁর সাথে উপবিষ্ট ব্যক্তিদের একজন জিজ্ঞাসা করল, ‘কিভাবে এক হাজার নেকী অর্জন করবে?’ তিনি বললেন, “একশ’বার তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ) পড়বে। ফলে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে।” (মুসলিম)
হুমাইদী বলেন, মুসলিম গ্রন্থে এ রকম أَوْ يُحَطُّ (অথবা --- মিটিয়ে দেওয়া হবে) এসেছে। বারক্বানী বলেন, এটিকে শু’বাহ, আবূ আওয়ানাহ ও ইয়াহয়্যা আলক্বাত্তান সেই মুসা হতে বর্ণনা করেছেন, যার সূত্রে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেছেন। এঁরা বলেছেন, وَيُحَطُّ (এবং --- মিটিয়ে দেওয়া হবে।) অর্থাৎ তাতে ‘ওয়াও’-এর পূর্বে ‘আলিফ’ বর্ণ নেই। (আর তার মানে হল, তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে এবং এক হাজার গুনাহও মিটিয়ে দেওয়া হবে।)
25/1440 وَعَنْ أَبي ذَرٍّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يُصْبحُ عَلَى كُلِّ سُلاَمَى مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقةٌ: فَكُلُّ تَسْبيحَةٍ صَدَقةٌ، وَكُلُّ تَحْميدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وأَمْرٌ بِالمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيٌ عَنِ المُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى». رواه مسلم
২৫/১৪৪০। আবূ জর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে প্রত্যেকের প্রত্যেক (হাড়ের) জোড়ের পক্ষ থেকে প্রাত্যহিক (প্রদেয়) সদকা রয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ বলা) সদকা, প্রত্যেক তাহমীদ (আলহামদু লিল্লাহ বলা) সদকা, প্রত্যেক তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা) সদকা, প্রত্যেক তাকবীর (আল্লাহু আকবার বলা) সদকা এবং ভাল কাজের আদেশ প্রদান ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সদকা। এ সব কাজের পরিবর্তে চাশতের দু’রাক্আত নামায যথেষ্ট হবে।” (মুসলিম)
26/1441 وَعَنْ أُمِّ المُؤمِنِينَ جُوَيْرِيَةَ بِنتِ الحَارِثِ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ مِنْ عِنْدِهَا بُكْرَةً حِيْنَ صَلَّى الصُّبْحَ وَهِيَ فِي مَسْجِدِهَا، ثُمَّ رَجَعَ بَعدَ أَنْ أَضْحَى وَهِيَ جَالِسَةٌ، فَقَالَ: «مَا زِلْتِ عَلَى الحَالِ الَّتي فَارَقَتُكِ عَلَيْهَا ؟» قَالَتْ: نَعَمْ، فَقَالَ النَّبيُّ صلى الله عليه وسلم: «لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ ثَلاثَ مَرَّاتٍ، لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ اليَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ: سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ، وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ» . رواه مسلم
وفي روايةٍ لَهُ: «سُبْحانَ الله عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ الله رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ الله مِدَادَ كَلِمَاتِهِ».
وفي رواية الترمذي: «ألاَ أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُولِينَهَا؟ سُبحَانَ الله عَدَدَ خَلْقِهِ؛ سُبحَانَ الله عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبحَانَ الله عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ الله رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ الله زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ الله زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ الله مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ الله مِدَادَ كَلِمَاتِهِ» .
২৬/১৪৪১। মুমিন জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল ভোরে ফজরের নামায সমাপ্ত করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি (জুয়াইরিয়াহ) স্বীয় জায়নামাজে বসেই রইলেন। তারপর চাশতের সময় তিনি যখন ফিরে এলে, তখনও তিনি সেখানেই বসেছিলেন। এ দেখে তিনি তাঁকে বললেন, “আমি যে অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি রয়েছ?” তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমার নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ যাবৎ) পঠিত দো‘আর মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে এই যে,
‘সুবহা-নাল্লা-হি অবিহামদিহী আদাদা খালক্বিহী, অরিযা নাফসিহী, অযিনাতা আরশিহী, অমিদা-দা কালিমা-তিহ্।’ অর্থাৎ আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ মর্জি অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।” (মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় আছে, ‘সুবহা-নাল্লা-হি আদাদা খালক্বিহ, সুবহা-নাল্লা-হি রিযা নাফসিহ, সুবহা-নাল্লা-হি যিনাতা আরশিহ, সুবহা-নাল্লা-হি মিদা-দা কালিমা-তিহ।’
আর তিরমিযীর বর্ণনায় আছে, (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন,) “আমি কি তোমাকে এমন বাক্যাবলী শিখিয়ে দেব না, যা তুমি বলতে থাকবে? তা হচ্ছে এই যে, ‘সুবহানাল্লাহি আদাদা খালকিহী---।” (প্রত্যেক বাক্য তিনবার করে।)
(জ্ঞাতব্য যে, আল্লাহর বাণীর কোন শেষ নেই।)
27/1442 وَعَنْ أَبي مُوسَى الأَشعَرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لاَ يَذْكُرُهُ مَثَلُ الحَيِّ وَالمَيِّتِ» . رواه البخاري . ورواه مسلم فَقَالَ: «مَثَلُ البَيْتِ الَّذِي يُذْكَرُ اللهُ فِيهِ، وَالبَيْتِ الَّذِي لاَ يُذْكَرُ اللهُ فِيهِ، مَثَلُ الحَيِّ والمَيِّتِ» .
২৭/১৪৪২। আবূ মুসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আল্লাহর যিকির করে আর যে যিকির করে না, উভয়ের উদাহরণ মৃত ও জীবন্ত মানুষের মত।” (বুখারী)
মুসলিম এটি এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, “যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় এবং যে ঘরে আল্লাহর যিকির করা হয় না, উভয়ের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃতের ন্যায়।”
28/1443 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِيْ بِيْ، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي، فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ، ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي مَلأٍ ذَكَرتُهُ فِي مَلأٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ». متفق عَلَيْهِ
২৮/১৪৪৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমি আমার বান্দার ধারণার পাশে থাকি। (অর্থাৎ সে যদি ধারণা রাখে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন, তার তওবা কবুল করবেন, বিপদ আপদ থেকে উদ্ধার করবেন, তাহলে তাই করি।) আর আমি তার সাথে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। সুতরাং সে যদি তার মনে আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে আমার মনে স্মরণ করি, সে যদি কোন সভায় আমাকে স্মরণ করে, তাহলে আমি তাকে তাদের চেয়ে উত্তম ব্যক্তিদের (ফিরিশতাদের) সভায় স্মরণ করি।” (বুখারী ও মুসলিম)
29/1444 وَعَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «سَبَقَ المُفَرِّدُونَ» قَالُوا: وَمَا المُفَرِّدُونَ ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «الذَّاكِرُونََ اللهَ كَثِيراً وَالذَّاكِرَاتِ» . رواه مسلم
২৯/১৪৪৪। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুফার্রিদগণ অগ্রগমন করেছে।” সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, ‘মুফার্রিদ’ কারা, হে আল্লাহর রসূল! তিনি বললেন, “অতিমাত্রায় আল্লাহকে স্মরণকারী নর ও নারী।” (মুসলিম)
30/1445. وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «أَفْضَلُ الذِّكْرِ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩০/১৪৪৫। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির হচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।” (তিরমিযী হাসান)
31/1446 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ بُسْرٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، إِنَّ شَرَائِعَ الإِسْلاَمِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَيَّ، فَأَخْبِرْنِي بِشَيءٍ أَتَشَبَّثُ بِهِ، قَالَ: «لاَ يَزالُ لِسَانُكَ رَطباً مِنْ ذِكْرِ اللهِ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩১/১৪৪৬। আব্দুল্লাহ ইবনে বুসার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! ইসলামী বিধান তো আমার ক্ষেত্রে অনেক বেশী। সুতরাং আপনি আমাকে এমন একটি কাজ বলে দিন, যেটাকে আমি দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে পারি।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর যিকিরে তোমার রসনা যেন সর্বদা সিক্ত থাকে।” (তিরমিযী হাসান)
32/1447 وَعَنْ جَابِرٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «مَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمدِهِ، غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الجَنَّةِ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩২/১৪৪৭। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ পড়ে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি খেজুর বৃক্ষ রোপণ করা হয়।” (তিরমিযী হাসান)
33/1448 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لَقِيْتُ إِبْرَاهِيمَ لَيلَةَ أُسْرِيَ بِي، فَقَالَ: يَا مُحَمّدُ أَقْرِئْْ أُمَّتَكَ مِنِّي السَّلاَمَ، وَأَخْبِرْهُمْ أنَّ الجَنَّةَ طَيَّبَةُ التُّرْبَةِ، عَذْبَةُ المَاءِ، وَأنَّهَا قِيعَانٌ وَأَنَّ غِرَاسَهَا: سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৩৩/১৪৪৮। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মি’রাজের রাতে ইব্রাহীম عليه السلام -এর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ ঘটে। তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মদ! তুমি তোমার উম্মতকে আমার সালাম পেশ করবে এবং তাদেরকে বলে দেবে যে, জান্নাতের মাটি পবিত্র ও উৎকৃষ্ট, তার পানি মিষ্ট। আর তা বৃক্ষহীন একটি সমতলভূমি। আর ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদু লিল্লাহ’ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ হল তার রোপিত বৃক্ষ।” (তিরমিযী-হাসান)
34/1449 وَعَنْ أَبي الدَّردَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ، وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيكِكُمْ، وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ، وَخَيرٍ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ والفِضَّةِ، وَخَيْرٍ لَكُمْ مِنْ أَن تَلْقَوا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ ؟» قَالَوا: بَلَى، قَالَ: ذِكرُ الله تَعَالَى» . رواه الترمذي، قَالَ الحاكم أَبُو عبد الله: إسناده صحيح
৩৪/১৪৪৯। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের উত্তম কাজের সন্ধান দেব না? যা তোমাদের প্রভুর নিকট সবচেয়ে পবিত্র, তোমাদের মর্যাদা সবার চেয়ে বেশি বৃদ্ধিকারী, সোনা-চাঁদি দান করার চেয়ে উত্তম এবং শত্রুর সম্মুখীন হয়ে গর্দান কাটা ও কাটানোর চেয়ে শ্রেয়।” সকলে বলল, ‘অবশ্যই বলে দিন।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ তা‘আলার যিকির।” (তিরমিযী, আবূ আব্দুল্লাহ হাকেম বলেছেন, এর সানাদ সহীহ)
35/1450 وعن سعْدِ بنِ أَبي وقَّاصٍ رضي الله عنه أَنَّهُ دَخَل مع رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم على امْرأَةٍ وبيْنَ يديْهَا نَوىً ¬ أَوْ حصىً ¬ تُسبِّحُ بِه فقال: «أَلا أُخْبِرُك بما هُو أَيْسرُ عَليْكِ مِنْ هذا ¬ أَوْ أَفْضَلُ» فقالَ: «سُبْحانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ في السَّماءِ، وَسُبْحانَ اللهِ عَدَدَ ما خَلَقَ في الأَرْضِ، سُبحانَ اللهِ عَدَدَ مَا بيْنَ ذلك، وسبْحانَ اللهِ عدد ما هُوَ خَالِقٌ . واللهُ أَكْبرُ مِثْلَ ذلكَ، والحَمْد لِلهِ مِثْل ذلِكَ، ولا إِلٰهَ إِلاَّ الله مِثْل ذلِكَ، ولا حوْل ولا قُوَّةَ إِلاَّ باللهِ مِثْلَ ذَلِكَ» . رواه الترمذي وقال: حديثٌ حسنٌ.
৩৫/১৪৫০। সায়াদ ইবনু আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে জনৈক মহিলার নিকট গেলেন। তার সম্মুখে তখন খেজুরের বিচি বা কাঁকর ছিল। সেগুলোর সাহায্যে তিনি তাসবীহ গণনা করছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাকে আমি কি এমন বিষয়ের কথা জানাবো যা তোমার জন্য এর চেয়ে সহজ বা এর চেয়ে উত্তম? তা হচ্ছে, “সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খালাক্বা ফিস্ সামায়ি” (আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সব জিনিসের সমসংখ্যক যা তিনি আকাশে সৃষ্টি করেছেন) “ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা খালাক্বা ফিল আরযি” (আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেসব বস্তুর সমসংখ্যক যা তিনি দুনিয়াতে সৃষ্টি করেছেন) “ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা বাইনা যালিক” (পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সকল জিনিসের সমান যা ঐ দু‘টির মাঝে রয়েছে) “ওয়া সুবহানাল্লাহি ‘আদাদা মা হুয়া খালিকুন” (পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সব জিনিসের সমসংখ্যক তিনি যার স্রষ্টা) আর “আল্লাহু আকবার বাক্যটিও এভাবেই পাঠ করো, “আল-হামদু লিল্লাহি” বাক্যটিও এভাবেই পাঠ কর, “লা- ইলা- হা ইল্লাল্লাহু” বাক্যটিও এভাবেই পাঠ কর, “লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি” বাক্যটিও এরূপেই পাঠ কর। (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
36/1451 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم :«أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى كَنْزٍ مِنْ كُنُوزِ الجَنَّةِ ؟» فَقُلتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ». متفق عَلَيْهِ
৩৬/১৪৫১। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তোমাকে জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডারের কথা বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ (বুখারী ও মুসলিম)
245- بَابُ ذِكْرِ اللهِ تَعَالٰى قَائِمًا وَقَاعِدًا وَمُضْطَجِعًا
وَمُحْدَثًا وَجُنُبًا وَحَائِضًا إِلَّا الْقُرْآنُ فَلَا يَحِلُّ لِجُنُبٍ وَلَا حَائِضٍ
পরিচ্ছেদ - ২৪৫: আল্লাহর যিকির সর্বাবস্থায়
দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, ওযূহীন ও (বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় আল্লাহর যিকির করা যায়। অবশ্য (বীর্যপাত বা সঙ্গম-জনিত) অপবিত্র অবস্থায় এবং মহিলাদের মাসিক অবস্থায় কুরআন পাঠ বৈধ নয়।
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ ١٩١ ﴾ (ال عمران: ١٩٠، ١٩١)
“নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে।” (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১ আয়াত)
1/1452 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُ اللهَ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ. رواهُ مسلم
১/১৪৫২। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বক্ষণ (সর্বাবস্থায়) আল্লাহর যিকির করতেন।’ (মুসলিম)
2/1453 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا أَتَى أَهْلَهُ قَالَ: بِسْمِ الله، اَللهم جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ، وَجَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا، فَقُضِيَ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ، لَمْ يَضُرَّهُ» . متفق عَلَيْهِ
২/১৪৫৩। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছা করে, তখন এই দো‘আ পড়ে,
‘বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ শাইত্বা-না অজান্নিবিশ শায়ত্বা-না মা রাযাক্বতানা।’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করছি, হে আল্লাহ! তুমি শয়তানকে আমাদের নিকট থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে যে (সন্তান) দান করবে তার থেকেও শয়তানকে দূরে রাখ।
তাহলে ওদের ভাগ্যে সন্তান এলে, শয়তান তার কোন ক্ষতি করতে পারে না। (বুখারী-মুসলিম)
246- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ عِنْدَ نَوْمِهِ وَاسْتِيْقَاظِهِ
পরিচ্ছেদ - ২৪৬: ঘুমাবার ও ঘুম থেকে উঠার সময় দো‘আ
1/1454 عَنْ حُذَيفَةَ، وَأَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ، قَالَ: «بِاسْمِكَ اَللهم أَحْيَا وَأَمُوتُ» وَإذَا اسْتَيقَظَ قَالَ: «الحَمْدُ للهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَماتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ» . رواه البخاري
১/১৪৫৪। হুযাইফা ও আবু যর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বিছানায় শোবার জন্য যেতেন, তখন এই দো‘আ পড়তেন, ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা আহ্ইয়া অআমূত।’ (অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি বাঁচি ও মরি)। আর যখন ঘুম থেকে জাগতেন তখন পড়তেন। ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহয়্যা-না বা‘দা মা আমা-তানা অ ইলাইহিন নুশূর।’ অর্থাৎ যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে মারার পর আবার জীবিত করলেন এবং তাঁরই প্রতি পুনরুত্থান ঘটবে। (বুখারী)
247- بَابُ فَضْلِ حَلَقِ الذِّكْرِ
والنَّدْبِ إِلٰى مُلَازَمَتِهَا وَالنَّهْيِ عَنْ مُفَارَقَتِهَا لِغَيْرِ عُذْرٍ
পরিচ্ছেদ - ২৪৭: জিকিরের মহফিলের ফযীলত
এবং উক্ত সভায় অংশগ্রহণ করা উত্তম আর বিনা ওজরে তা ছেড়ে চলে যাওয়া নিষেধ।
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَٱصۡبِرۡ نَفۡسَكَ مَعَ ٱلَّذِينَ يَدۡعُونَ رَبَّهُم بِٱلۡغَدَوٰةِ وَٱلۡعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجۡهَهُۥۖ وَلَا تَعۡدُ عَيۡنَاكَ عَنۡهُمۡ ٢٨ ﴾ (الكهف: ٢٨)
অর্থাৎ তুমি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখ, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে থাকে এবং তুমি তাদের নিকট হতে স্বীয় দৃষ্টি ফিরায়ো না। (সূরা কাহাফ ২৮ আয়াত)
1/1455 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إنَّ للهِ تَعَالَى مَلائِكَةً يَطُوفُونَ فِي الطُّرُقِ يَلْتَمِسُونَ أَهْلَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا قَوْمَاً يَذْكُرُونَ اللهَ - عَزَّ وَجَلَّ -، تَنَادَوْا: هَلُمُّوا إِلَى حَاجَتِكُمْ، فَيَحُفُّونَهُمْ بِأَجْنِحَتِهِم إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَسْألُهُمْ رَبُّهُمْ -وَهُوَ أعْلَم -: مَا يَقُولُ عِبَادي ؟ قَالَ: يَقُولُون: يُسَبِّحُونَكَ، وَيُكبِّرُونَكَ، وَيَحْمَدُونَكَ، ويُمَجِّدُونَكَ، فيَقُولُ: هَلْ رَأَوْنِي ؟ فيَقُولُونَ: لاَ وَاللهِ مَا رَأَوْكَ . فَيَقُولُ: كَيْفَ لَوْ رَأَوْنِي ؟! قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأَوْكَ كَانُوا أَشَدَّ لَكَ عِبَادَةً، وَأَشَدَّ لَكَ تَمْجِيداً، وَأَكْثَرَ لَكَ تَسْبِيحاً . فَيَقُولُ: فَمَاذَا يَسْأَلُونَ ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: يَسْأَلُونَكَ الجَنَّةَ . قَالَ: يَقُولُ: وَهَل رَأَوْهَا ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لاَ وَاللهِ يَا رَبِّ مَا رَأَوْهَا . قَالَ: يَقُولُ: فَكَيفَ لَوْ رَأَوْهَا ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ أَنَّهُمْ رَأوْهَا كَانُوا أَشَدَّ عَلَيْهَا حِرْصاً، وَأَشَدَّ لَهَا طَلَباً، وَأَعْظَمَ فِيهَا رَغْبَةً . قَالَ: فَمِمَّ يَتَعَوَّذُونَ ؟ قَالَ: يَقُولُون: يَتَعَوَّذُونَ مِنَ النَّارِ ؛ قَالَ: فيَقُولُ: وَهَلْ رَأَوْهَا ؟ قَالَ: يَقُولُونَ: لاَ وَاللهِ مَا رَأَوْهَا . فيَقُولُ: كَيْفَ لَوْ رَأَوْهَا ؟! قَالَ: يَقُولُونَ: لَوْ رَأوْهَا كَانُوا أَشَدَّ مِنْهَا فِرَاراً، وَأَشَدَّ لَهَا مَخَافَةً . قَالَ: فيَقُولُ: فَأُشْهِدُكُمْ أنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُم، قَالَ: يَقُولُ مَلَكٌ مِنَ المَلاَئِكَةِ: فِيهِمْ فُلاَنٌ لَيْسَ مِنْهُمْ، إنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ، قَالَ: هُمُ الجُلَسَاءُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ» . متفق عَلَيْهِ
১/১৪৫৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন, যারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে যিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর যিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহ্বান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরও বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি চায় তারা?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরও বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরও বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরও বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা জাহান্নাম থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জাহান্নাম দেখেছে?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘ কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফেরেশতারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’ ফেরেশতাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।” (বুখারী-মুসলিম)
2/1456 وَفِي رِوَايَةِ لِمُسلِمٍ عَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ للهِ مَلاَئِكَةً سَيَّارَةً فُضُلاً يَتَتَبُّعُونَ مَجَالِسَ الذِّكْرِ، فَإِذَا وَجَدُوا مَجْلِساً فِيهِ ذِكْرٌ، قَعَدُوا مَعَهُمْ، وَحَفَّ بَعْضُهُمْ بَعْضاً بِأَجْنِحَتِهِمْ حَتَّى يَمْلَؤُوا مَا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ السَّمَاءِ الدُّنْيَا، فَإِذَا تَفَرَّقُوا عَرَجُوا وَصَعدُوا إِلَى السَّمَاءِ، فَيَسْأَلُهُمْ اللهُ - عَزَّ وَجَلَّ - - وَهُوَ أَعْلَمُ -: مِنْ أَيْنَ جِئْتُمْ ؟ فَيَقُولُونَ: جِئْنَا مِنْ عِنْدِ عِبَادٍ لَكَ فِي الأَرْضِ: يُسَبِّحُونَكَ، وَيُكبِّرُونَكَ، وَيُهَلِّلُونَكَ، وَيَحْمَدُونَكَ، وَيَسْألُونَكَ . قَالَ: وَمَاذَا يَسْألُونِي ؟ قَالُوا: يَسْألُونَكَ جَنَّتَكَ . قَالَ: وَهَلْ رَأَوْا جَنَّتِي ؟ قَالُوا: لاَ، أَيْ رَبِّ . قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا جَنَّتِي؟! قَالُوا: وَيَستَجِيرُونَكَ . قَالَ: وَمِمَّ يَسْتَجِيرُونِي ؟ قَالُوا: مِنْ نَارِكَ يَا رَبِّ. قَالَ: وَهَلْ رَأوْا نَارِي ؟ قَالُوا: لاَ، قَالَ: فَكَيْفَ لَوْ رَأَوْا نَارِي ؟! قَالُوا: وَيَسْتَغفِرُونَكَ ؟ فيَقُولُ: قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ، وَأَعْطَيْتُهُمْ مَا سَأَلُوا، وَأَجَرْتُهُمْ مِمَّا اسْتَجَارُوا . قَالَ: فيَقُولُونَ: رَبِّ فِيهِمْ فُلاَنٌ عَبْدٌ خَطَّاءٌ إنَّمَا مَرَّ، فَجَلَسَ مَعَهُمْ . فيَقُولُ: وَلهُ غَفَرْتُ، هُمُ القَومُ لاَ يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ» .
মুসলিমের আবূ হুরাইরা কর্তৃক এক বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “অবশ্যই আল্লাহর অতিরিক্তি কিছু ভ্রাম্যমান ফেরেশতা আছেন, যারা জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন এমন মজলিস পেয়ে যান, যাতে আল্লাহর যিকির হয়, তখন তাঁরা সেখানে বসে যান। তাঁরা পরস্পরকে ডানা দিয়ে ঢেকে নেন। পরিশেষে তাঁদের ও নিচের আসমানের মধ্যবর্তী জায়গা পরিপূর্ণ করে দেন। অতঃপর লোকেরা মজলিস ত্যাগ করলে তাঁরা আসমানে উঠেন। তখন আল্লাহ আয্যা অজাল্ল অধিক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমরা কোথা থেকে এলে?’ তাঁরা বলেন, ‘আমরা পৃথিবী থেকে আপনার এমন কতকগুলি বান্দার নিকট থেকে এলাম, যারা আপনার তাসবীহ, তাকবীর, তাহলীল ও তাহমীদ পড়ে এবং আপনার নিকট প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আপনার জান্নাত প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জান্নাত দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জান্নাত দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘তারা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।’ তিনি বলেন, ‘তারা আমার নিকট কি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে?’ তাঁরা বলেন, ‘আপনার জাহান্নাম থেকে, হে প্রতিপালক!’ তিনি বলেন, ‘তারা কি আমার জাহান্নাম দেখেছে?’ তাঁরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, ‘কেমন হত, যদি তারা আমার জাহান্নাম দেখত?’ তাঁরা বলেন, ‘আর তারা আপনার নিকট ক্ষমা চায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম, তারা যা প্রার্থনা করে তা দান করলাম এবং যা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তা থেকে আশ্রয় দিলাম।’ তাঁরা বলেন, ‘হে প্রতিপালক! ওদের মধ্যে অমুক পাপী বান্দা এমনি পার হতে গিয়ে তাদের সাথে বসে গিয়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমি তাকেও ক্ষমা করে দিলাম! কারণ তারা সেই সম্প্রদায়, তাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত হয় না।’
3/1457 وَعَنْهُ وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالاَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «لاَ يَقْعُدُ قَومٌ يَذْكُرُوْنَ اللهَ - عَزَّ وَجَلَّ - إِلاَّ حَفَّتْهُمُ المَلائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمُ السَّكِينَةُ ؛ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ» . رواه مسلم
২/১৪৫৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখনই কোন সম্প্রদায় আল্লাহ আয্যা অজাল্লার যিকিরে রত হয়, তখনই তাদেরকে ফেরেশতাবর্গ ঢেকে নেন, তাদেরকে রহমত আচ্ছন্ন করে নেয়, তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয় এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফেরেশতাবর্গের কাছে তাদের কথা আলোচনা করেন।” (মুসলিম)
3/1458 وَعَنْ أَبِي وَاقِدٍ الحَارِثِ بنِ عَوفٍ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم بَيْنَمَا هُوَ جَالِسٌ فِي المَسْجِدِ، وَالنَّاسُ مَعَهُ، إِذْ أَقْبَلَ ثَلاثَةُ نَفَرٍ، فَأَقْبَلَ اثْنَانِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَذَهَبَ وَاحِدٌ ؛ فَوَقَفَا عَلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم. فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَرَأَى فُرْجَةً فِي الحَلْقَةِ فَجَلَسَ فِيهَا، وَأَمَّا الآخَرُ فَجَلَسَ خَلْفَهُمْ، وَأَمَّا الثَّالِثُ فَأَدْبَرَ ذَاهِباً . فَلَمَّا فَرَغَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «أَلاَ أُخْبِرُكُمْ عَنِ النَّفَرِ الثَّلاَثَةِ: أَمَّا أَحَدُهُمْ فَأَوَى إِلَى اللهِ فآوَاهُ اللهُ إِلَيْهِ . وَأَمَّا الآخَرُ فَاسْتَحْيَى فَاسْتَحْيَى اللهُ مِنْهُ، وَأَمَّا الآخَرُ، فَأَعْرَضَ، فَأَعْرَضَ اللهُ عَنْهُ». متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৪৫৭। আবূ ওয়াক্বেদ হারেস ইবনে আওফ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে বসেছিলেন এবং তাঁর সঙ্গে কিছু লোকও ছিল। ইতোমধ্যে তিনজন লোক আগমন করল। তাদের মধ্যে দু’জন আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে উপস্থিত হল এবং একজন চলে গেল। নবাগত দু’জন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পাশে দাঁড়িয়ে রইল। তাদের একজন সভার মধ্যে ফাঁক দেখে সেখানে বসে পড়ল। আর অপরজন সভার পিছনে বসে গেল। আর তৃতীয় ব্যক্তি পিঠ ঘুরিয়ে প্রস্থান করল। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবসর পেলেন, তখন বললেন, “তোমাদেরকে তিন ব্যক্তি সম্পর্কে বলব না কি? তাদের একজন তো আল্লাহর কাছে আশ্রয় গ্রহণ করল, ফলে আল্লাহ তাকে আশ্রয় দান করলেন। আর দ্বিতীয়জন সে (সভার মধ্যে ঢুকে বসতে) লজ্জাবোধ করল, বিধায় আল্লাহও তাঁর ব্যাপারে লজ্জাশীলতা প্রয়োগ (করে তাকে রহম) করলেন। আর তৃতীয়-জন মুখ ফিরিয়ে নিলো, বিধায় আল্লাহও তার দিক থেকে বিমুখ হয়ে গেলেন।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1459 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه قَالَ: خَرَجَ مُعَاوِيَةَ رضي الله عنه عَلَى حَلْقَةٍ فِي المَسْجِدِ، فَقَالَ: مَا أَجْلَسَكُمْ؟ قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللهَ . قَالَ: آللهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلاَّ ذَاكَ ؟ قَالُوا: مَا أَجْلَسَنَا إِلاَّ ذَاكَ، قَالَ: أَمَّا إِنِّي لَمْ اسْتَحْلِفْكُمْ تُهْمَةً لَكُمْ، وَمَا كَانَ أَحَدٌ بِمَنْزِلَتِي مِنْ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَقَلَّ عَنْهُ حَدِيثاً مِنِّي: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَقَالَ: «مَا أَجْلَسَكُمْ ؟» قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِلإِسْلاَمِ ؛ وَمَنَّ بِهِ عَلَيْنَا . قَالَ: «آللهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلاَّ ذَاكَ ؟» قَالُوا: وَاللهِ مَا أَجْلَسَنَا إِلاَّ ذَاكَ . قَالَ: «أَمَا إنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهْمَةً لَكُمْ، وَلَكِنَّهُ أَتَانِي جِبرِيلُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ الله يُبَاهِي بِكُمُ المَلاَئِكَةَ» . رواه مسلم
৪/১৪৫৮। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুআবিয়াহ রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার মসজিদে (কিছু লোকের) এক হালকায় (গোল বৈঠকে) এসে বললেন, ‘তোমরা এখানে কি উদ্দেশ্যে বসেছ?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর যিকির করার উদ্দেশ্যে বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কসম! তোমরা একমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই বসেছ?’ তারা জবাব দিল, ‘(হ্যাঁ,) আমরা একমাত্র ঐ উদ্দেশ্যেই বসেছি।’ তিনি বললেন, ‘শোন! তোমাদেরকে (মিথ্যাবাদী) অপবাদ আরোপ করে কসম করাইনি। (মনে রাখবে) কোন ব্যক্তি এমন নেই, যে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আমার সমমর্যাদা লাভ করেছে এবং আমার থেকে কম হাদিস বর্ণনা করেছে। নিঃসন্দেহে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) স্বীয় সহচরদের এক হালকায় উপস্থিত হয়ে তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা এখানে কি উদ্দেশ্যে বসেছ?” তাঁরা জবাব দিলেন, ‘উদ্দেশ্য এই যে, আমরা আল্লাহর যিকির করব এবং তাঁর প্রশংসা করব যে, তিনি আমাদেরকে ইসলামের পথ দেখিয়েছেন ও তার মাধ্যমে আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন।’ এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আল্লাহর কসম! তোমরা একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই এখানে বসেছ?” তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা কেবল এ উদ্দেশ্যেই বসেছি।’ তিনি বললেন, “শোন! আমি তোমাদেরকে এ জন্য কসম করাইনি যে, আমি তোমাদেরকে মিথ্যাবাদী ভেবে অপবাদ আরোপ করছি। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার এই যে, জিবরীল আমার কাছে এসে বললেন, ‘আল্লাহ তোমাদেরকে নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করছেন!” (মুসলিম)
248- بَابُ الذِّكْرِ عِنْدَ الصَّبَاحِ وَالْمَسَاءِ
পরিচ্ছেদ - ২৪৮: সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর যিকির
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِي نَفۡسِكَ تَضَرُّعٗا وَخِيفَةٗ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَٰفِلِينَ ٢٠٥ ﴾ (الاعراف: ٢٠٤)
“অর্থাৎ তোমার প্রতিপালককে মনে মনে সবিনয় ও সশঙ্কচিত্তে অনুচ্চস্বরে প্রত্যুষে ও সন্ধ্যায় স্মরণ কর এবং তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হইয়ো না।” (সূরা আ’রাফ ২০৫ আয়াত)
আরবি ভাষাবিদগণ বলেছেন, آصال শব্দটি أصيل এর বহুবচন। এ (সন্ধ্যা) হল আসর ও মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়।
তিনি আরও বলেছেন, ﴿ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ قَبۡلَ طُلُوعِ ٱلشَّمۡسِ وَقَبۡلَ غُرُوبِهَاۖ ١٣٠ ﴾ (طه: ١٣٠)
“সূর্যের উদয় ও অস্তের পূর্বে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা বর্ণনা কর।”(সূরা ত্বাহা ১৩০ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ﴿ وَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّكَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِبۡكَٰرِ ٥٥ ﴾ (غافر: ٥٥)
“সকাল-বিকালে তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা মুমিন ৫৫ আয়াত)
আরবি ভাষাবিদগণ বলেছেন, عشي (বিকাল) হল সূর্য ঢলার পর থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময়।
তিনি অন্য স্থানে বলেছেন,
﴿فِي بُيُوتٍ أَذِنَ ٱللَّهُ أَن تُرۡفَعَ وَيُذۡكَرَ فِيهَا ٱسۡمُهُۥ يُسَبِّحُ لَهُۥ فِيهَا بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ ٣٦ رِجَالٞ لَّا تُلۡهِيهِمۡ تِجَٰرَةٞ وَلَا بَيۡعٌ عَن ذِكۡرِ ٱللَّهِ ٣٧ ﴾ (النور : ٣٦، ٣٧)
“সে সব গৃহে---যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন---সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে, সে সব লোক যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয় বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে বিরত রাখে না।” (সূরা নূর ৩৬-৩৭ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, ﴿ إِنَّا سَخَّرۡنَا ٱلۡجِبَالَ مَعَهُۥ يُسَبِّحۡنَ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِشۡرَاقِ ١٨ ﴾ (ص : ١٨)
“আমি পর্বতমালাকে তার (দাঊদের) বশীভূত করেছিলাম; ঐগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার সঙ্গে আমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করত।” (সূরা স্বা-দ ১৮ আয়াত)
1/1459 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ وَحينَ يُمْسِي: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، مِئَةَ مَرَّةٍ، لَمْ يَأَتِ أَحَدٌ يَوْمَ القِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ، إِلاَّ أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ أَوْ زَادَ» . رواه مسلم
১/১৪৫৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ একশবার পাঠ করবে, কিয়ামতের দিনে ওর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)।” (মুসলিম)
2/1460. وَعَنْهُ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ الله مَا لَقِيْتُ مِنْ عَقْرَبٍ لَدَغَتْنِي البَارِحَةَ! قَالَ: «أَمَا لَوْ قُلْتَ حِيْنَ أَمْسَيْتَ: أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ: لَمْ تَضُرَّك» . رواه مسلم
২/১৪৬০। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! গত রাতে বিছার কামড়ে আমি যে কত কষ্ট পেয়েছি, (তা বলার নয়)।’ তিনি বললেন, “শোন! যদি তুমি সন্ধ্যাবেলায় এই দো‘আ পাঠ করতে,
‘আঊযু বিকালিমা-তিল্লা-হিত্তা-ম্মা-তি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’ অর্থাৎ আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর অসীলায় তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার মন্দ হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
তাহলে তা তোমার ক্ষতি করতে পারত না।” (মুসলিম)
3/1461 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، أَنَّه كَانَ يَقُولُ إِذَا أَصْبَحَ: «اَللهم بِكَ أَصْبَحْنَا، وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُورُ» . وَإِذَا أَمسَى قَالَ: «اَللهم بِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا، وَبِكَ نَمُوتُ . وَإِلْيَكَ النُّشُورُ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
৩/১৪৬১। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এই দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা অবিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সকাল হল এবং তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হয়, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের পুনর্জীবন।
আর সন্ধ্যায় এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, অবিকা নাহ্ইয়া, অবিকা নামূতু অইলাইকান নুশূর।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমারই হুকুমে আমাদের সন্ধ্যা হল, তোমারই হুকুমে আমরা জীবিত থাকি, তোমারই হুকুমে আমরা মৃত্যু বরণ করব এবং তোমারই দিকে আমাদের প্রত্যাবর্তন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
4/1462 وَعَنْهُ: أَنَّ أَبَا بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رضي الله عنه قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ مُرْنِي بِكَلِمَاتٍ أَقُولُهُنَّ إِذَا أَصْبَحْتُ وَإِذَا أَمْسَيْتُ، قَالَ: «قُلْ: اَللهم فَاطِرَ السَّمَاواتِ وَالأَرْضِ عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ ؛ رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَّرِّ نَفْسِي وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ» قَالَ: «قُلْهَا إِذَا أَصْبَحْتَ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ، وَإِذَا أَخَذْتَ مَضْجَعَكَ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৪/১৪৬২। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে কিছু বাক্য বাতলে দিন, যেগুলি সকাল-সন্ধ্যায় আমি পড়তে থাকব।’ তিনি বললেন, “বল, ‘আল্লা-হুম্মা ফা-ত্বিরাস সামা-ওয়া-তি অল আরযিব আ-লিমাল গায়বি অশশাহা-দাহ, রাব্বা কুলি শাইয়িন অমালীকাহ, আশহাদু আল লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা আঊযু বিকা মিন শার্রি নাফসী অশার্রিশ শায়ত্বা-নি অশির্কিহ।’
অর্থাৎ হে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃজন-কর্তা, উপস্থিত ও অনুপস্থিত পরিজ্ঞাত, প্রত্যেক বস্তুর প্রতিপালক ও অধিপতি আল্লাহ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই। আমি আমার আত্মার মন্দ হতে এবং শয়তানের মন্দ ও শিরক হতে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
সকাল-সন্ধ্যা তথা শোবার সময় পাঠ করো। (আবু দাউদ, তিরিমিযী হাসান সহীহ)
5/1463 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه قَالَ: كَانَ نَبِيُّ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَمْسَى قَالَ: «أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى المُلْكُ للهِ، وَالحَمْدُ للهِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ» قَالَ الرَّاوِي: أَرَاهُ قَالَ فِيهِنَّ: «لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدير، رَبِّ أَسْألُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنَ الكَسَلِ، وَسُوءِ الكِبَرِ، رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ، وَعَذَابٍ فِي القَبْرِ»، وَإِذَا أَصْبَحَ قَالَ ذَلِكَ أَيضاً: «أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ المُلْكُ للهِ» . رواه مسلم
৫/১৪৬৩। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সন্ধ্যাবেলায় এই দো‘আ পড়তেন,
‘আম্সাইনা অ আমসাল মুলকু লিল্লা-হ, অলহামদু লিল্লা-হ, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু অহ্দাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হাম্দু অহুয়া আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর। রাবিব আস্আলুকা খাইরা মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ খাইরা মা বা’দাহা, অ আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ফী হা-যিহিল লাইলাতি অ শার্রি মা বা’দাহা, রাবিব আঊযু বিকা মিনাল কাসালি অ সূইল কিবার, রাবিব আঊযু বিকা মিন আযা-বিন ফিন্না-রি অ আযা-বিন ফিল ক্বাব্র।’
অর্থাৎ আমরা এবং সারা রাজ্য আল্লাহর জন্য সন্ধ্যায় উপনীত হলাম। আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, (বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে বললেন,) তাঁর কোন শরীক নেই, তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব, তাঁরই জন্য যাবতীয় স্তুতি, এবং তিনি সকল বস্তুর উপর সর্বশক্তিমান। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট এই রাতে যে কল্যাণ নিহিত আছে তা এবং তার পরেও যে কল্যাণ আছে তাও প্রার্থনা করছি। আর আমি তোমার নিকট এই রাত্রে যে অকল্যাণ আছে তা এবং তারপরেও যে অকল্যাণ আছে তা হতে আশ্রয় চাচ্ছি। হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমার নিকট অলসতা এবং বার্ধক্যের মন্দ হতে পানাহ চাচ্ছি। হে আমার প্রভু! আমি তোমার নিকট জাহান্নামের এবং কবরের সকল প্রকার আযাব হতে আশ্রয় চাচ্ছি।
তিনি যখন সকালে উঠতেন তখনও এই দো‘আ পাঠ করতেন; বলতেন ‘আস্বাহনা ও আসবাহাল মুলকু লিল্লাহ------।’ (মুসলিম)
6/1464 وَعَنْ عَبدِ اللهِ بنِ خُبَيْبٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «اِقْرَأْ: قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ، وَالمُعَوِّذَتَيْنِ حِيْنَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبحُ، ثَلاَثَ مَرَّاتٍ تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৬/১৪৬৪। আব্দুল্লাহ ইবনে খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “সকাল-সন্ধ্যায় ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ (সূরা ইখলাস) এবং ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবল ফালাক্ব’ ও ‘ক্বুল আঊযু বিরাবিবন্নাস’ তিনবার করে পড়। তাহলে প্রতিটি (ক্ষতিকর) জিনিস থেকে নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
7/1465 وَعَنْ عُثمَانَ بنِ عَفَّانَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَا مِنْ عَبْدٍ يَقُولُ فِي صَبَاحِ كُلِّ يَوْمٍ وَمَسَاءِ كُلِّ لَيْلَةٍ: بِسْمِ اللهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ، ثَلاثَ مَرَّاتٍ، إِلاَّ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৭/১৪৬৫। উসমান ইবনে আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকাল ও সন্ধ্যায় এই দো‘আ তিনবার করে পড়বে,
‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা য়্যাযুবর্রু মাআসমিহী শাইউন ফিল আরযিব অলা ফিসসামা-ই অহুওয়াস সামীউল আলীম।’
অর্থাৎ আমি শুরু করছি সেই আল্লাহর নামে যার নামের সাথে পৃথিবীর ও আকাশের কোন জিনিস ক্ষতি সাধন করতে পারে না এবং তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা।
কোন জিনিস সে ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবে না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)
249- بَابُ مَا يَقُوْلُهُ عِنْدَ النَّوْمِ
পরিচ্ছেদ - ২৪৯: ঘুমাবার সময়ের দো‘আ
মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ لَأٓيَٰتٖ لِّأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ١٩٠ ٱلَّذِينَ يَذۡكُرُونَ ٱللَّهَ قِيَٰمٗا وَقُعُودٗا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمۡ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ١٩١ ﴾ (ال عمران: ١٩٠، ١٩١)
“নিশ্চয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকদের জন্য নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে। (সূরা আলে ইমরান ১৯০-১৯১ আয়াত)
1/1466 وَعَنْ حُذَيْفَةَ، وَأَبِي ذَرٍّ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِراشِهِ، قَالَ: «بِاسْمِكَ اَللهم أَحْيَا وَأَمُوتُ» . رواه البخاري
১/১৪৬৬। হুযাইফা ও আবূ যর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শোবার সময় এই দো‘আ পড়তেন, ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা আহ্ইয়াহ অ আমূতু।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি বাঁচি ও মরি)। (বুখারী)
2/1467 وَعَنْ عليٍّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَهُ وَلِفَاطِمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: «إِذَا أَوَيْتُمَا إِلَى فِرَاشِكُمَا - أَوْ إِذَا أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا - فَكَبِّرا ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، وَسَبِّحَا ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ، واحْمَدَا ثَلاَثاً وَثَلاَثِينَ» وَفِي رِوَايَةٍ: التَّسْبِيحُ أَرْبَعاً وَثَلاَثِينَ، وَفِي رِوَايَةٍ: التَّكْبِيرُ أَرْبَعاً وَثَلاَثِينَ . متفق عَلَيْهِ
২/১৪৬৭। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা তাঁকে ও ফাতেমাকে বললেন, “যখন তোমরা বিছানায় যাবে, তখন ৩৩ বার ‘আল্লাহ আকবার’, ৩৩ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ৩৩ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পাঠ করবে।” অন্য এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘সুবহানাল্লাহ’, আর এক বর্ণনা অনুপাতে ৩৪ বার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়তে আদেশ করেছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
3/1468 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا أَوَى أَحَدُكُمْ إِلَى فِرَاشِهِ فَليَنْفُضْ فِرَاشَهُ بِدَاخِلَةِ إِزَارِهِ، فَإِنَّهُ لاَ يَدْرِي مَا خَلَفَهُ عَلَيْهِ، ثُمَّ يَقُولُ: بِاسمِكَ رَبِّي وَضَعْتُ جَنْبِي، وَبِكَ أَرْفَعُهُ، إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَارْحَمْهَا، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا، فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ». متفق عَلَيْهِ
৩/১৪৬৮। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ শয্যা গ্রহণ করবে, তখন সে যেন নিজ লুঙ্গীর একাংশ দ্বারা তার বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ, সে জানে না যে, তার অনুপস্থিতিতে কি কি জিনিস সেখানে এসেছে। তারপর এই দো‘আ পড়বে,
‘বিসমিকা রাবিব অযা‘তু জানবী অবিকা আরফা‘উহু ফাইন আমসাকতা নাফসী ফারহামহা অইন আরসালতাহা ফাহফাযহা বিমা তাহফাযু বিহী ইবা-দাকাস স্বা-লিহীন।’
অর্থাৎ হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমারই নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম এবং তোমারই নামে তা উঠাইব। অতএব যদি তুমি আমার আত্মাকে আবদ্ধ করে নাও, তাহলে তার প্রতি করুণা করো। আর যদি তা ছেড়ে দাও, তাহলে তাকে ঐ জিনিস দ্বারা হিফাজত কর, যার দ্বারা তুমি তোমার নেক বান্দাদের করে থাক।” (বুখারী ও মুসলিম)
4/1469 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، كَانَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ نَفَثَ فِي يَدَيْهِ، وَقَرَأَ بِالمُعَوِّذَاتِ، ومَسَحَ بِهِمَا جَسَدَهُ . متفق عَلَيْهِ
وَفِي رِوَايَةٍ لَهُمَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا فَقَرأَ فِيهِمَا: «قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الفَلَقِ، وَقُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ» ثُمَّ مَسَحَ بِهِما مَا استْطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ، يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأَسِهِ وَوَجْهِهِ، وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ . متفق عَلَيْهِ
৪/১৪৬৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা-গ্রহণ করতেন, তখন নিজ হাত দু’টিতে ‘মুআউবিযাত’ (তিন ক্বুল) পড়ে ফুঁ দিতেন এবং তার দ্বারা নিজ সমগ্র শরীরে বোলাতেন। (বুখারী ও মুসলিম)
এক অন্য বর্ণনায় আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক রাতে যখন ঘুমাবার জন্য শয্যা গ্রহণ করতেন তখন দু’ হাতের চেটো একত্রে জমা করতেন এবং তাতে তিন ক্বুল পড়ে ফুঁ দিতেন। তারপর তার দ্বারা দেহের ওপর যতদূর সম্ভব বোলাতেন; মাথা, চেহারা ও দেহের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এরূপ তিনি তিনবার করতেন। (বুখারী, মুসলিম)
5/1470 وَعَنِ البَرَاءِ بنِ عَازِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «إِذَا أَتَيتَ مَضْجَعَكَ فَتَوَضَّأْ وَضُوءَكَ لِلصَّلاَةِ، ثُمَّ اضْطَجِعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيْمَن، وَقُلْ: اَللهم أَسْلَمْتُ نَفْسِي إِلَيْكَ، وَوَجَّهْتُ وَجْهِي إِلَيْكَ، وَفَوَّضْتُ أَمْرِي إِلَيكَ، وَأَلْجَأتُ ظَهرِي إِلَيْكَ، رَغْبَةً وَرَهْبَةً إِلَيكَ، لاَ مَلْجَأَ وَلاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيكَ، آمَنْتُ بِكِتابِكَ الَّذِي أَنْزَلْتَ، وَبِنَبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْتَ، فَإِنْ مِتَّ مِتَّ عَلَى الفِطْرَةِ، وَاجْعَلْهُنَّ آخِرَ مَا تَقُولُ». متفق عَلَيْهِ
৫/১৪৭০। বারা’ ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে, তখন নামাযের ওজুর ন্যায় ওযু করবে। তারপর ডানপাশে শুয়ে এই দো‘আ পড়বে, ‘আল্লা-হুম্মা আসলামতু নাফসী ইলাইক, অ অজ্জাহতু অজহিয়া ইলাইক, অফাউওয়াযবতু আমরী ইলাইক, অ আলজা’তু যাহরী ইলাইক, রাগ্বাতাঁঊ অরাহবাতান্ ইলাইক্, লা মাল্জাআ’ অলা মান্জা মিনকা ইল্লা ইলাইক, আ-মানতু বিকিতা-বিকাল্লাযী আনযালতা অ বিনাবিয়্যিকাল্লাযী আরসাল্ত্।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আমার প্রাণ তোমার প্রতি সমর্পণ করেছি, আমার মুখমণ্ডল তোমার প্রতি ফিরিয়েছি, আমার সকল কর্মের দায়িত্ব তোমাকে সোপর্দ করেছি, আমার পিঠকে তোমার দিকে লাগিয়েছি (তোমার উপরেই সকল ভরসা রেখেছি), এসব কিছু তোমার সওয়াবের আশায় ও তোমার আযাবের ভয়ে করেছি। তোমার নিকট ছাড়া তোমার আযাব থেকে বাঁচতে কোন আশ্রয়স্থল নেই। তুমি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছ তার উপর এবং তুমি যে নবী প্রেরণ করেছ তার উপর ঈমান এনেছি। (বুখারী ও মুসলিম)
6/1471 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ قَالَ: «اَلحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا، وَكَفَانَا وَآوَانَا، فَكَمْ مِمَّنْ لاَ كَافِيَ لَهُ وَلاَ مُؤْوِيَ» . رواه مسلم
৬ /১৪৭১। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শয্যা গ্রহণ করতেন তখন এই দো‘আ পড়তেন, ‘আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত্বআমানা অ সাক্বা-না অকাফা-না অ আ-ওয়া-না, ফাকাম মিম্মাল লা কা-ফিয়া লাহু অলা মু’বী।’
অর্থাৎ সেই আল্লাহর সমস্ত প্রশংসা যিনি আমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছেন এবং আশ্রয় দিয়েছেন। অথচ কত এমন লোক আছে যাদের যথেষ্ট-কারী ও আশ্রয়দাতা নেই। (মুসলিম)
7/1472 وَعَنْ حُذَيفَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْقُدَ، وَضَعَ يَدَهُ اليُمْنَى تَحْتَ خَدِّهِ، ثُمَّ يَقُولُ: «اَللهم قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن .
ورواه أَبُو داود ؛ من رواية حَفْصَةَ رَضِيَ اللهُ عنها، وفيهِ: أَنَّهُ كَانَ يَقُولُهُ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ.
৭/১৪৭২। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাবার ইচ্ছা করতেন, তখন স্বীয় ডান হাতটি গালের নিচে স্থাপন করতেন, তারপর এই দো‘আ পাঠ করতেন। ‘আল্লাহুম্মা ক্বিনী আযাবাকা য়্যাওমা তাব্আসু ইবাদাকা।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! সেই দিনের আযাব থেকে আমাকে নিষ্কৃতি দাও, যেদিন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে। (তিরমিযী-হাসান)
আবূ দাউদ এ হাদিসটিকে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণনা করেছেন। তাতে আছে যে, তিনি ঐ দো‘আ তিনবার পড়তেন। (কিন্তু তা সহীহ নয়।)
كِتَابُ الدَّعْوَاتِ
অধ্যায় (১৬): (প্রার্থনামূলক) দো‘আসমূহ
250- بَابُ فَضْلِ الدُّعَاءِ
পরিচ্ছেদ - ২৫০: দো‘আর গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কতিপয় দো‘আর নমুনা
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠ ﴾ (غافر: ٦٠)
“তোমাদের প্রতিপালক বলেন, তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।” (সূরা গাফের ৬০ আয়াত)
তিনি বলেন, ﴿ ٱدۡعُواْ رَبَّكُمۡ تَضَرُّعٗا وَخُفۡيَةًۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُعۡتَدِينَ ٥٥ ﴾ (الاعراف: ٥٤)
“তোমরা কাকুতি-মিনতি সহকারে ও সংগোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাক, নিশ্চয় তিনি সীমালংঘন কারীদেরকে পছন্দ করেন না।” (সূরা আ’রাফ ৫৫ অয়াত)
তিনি আরও বলেন, وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ ١٨٦ ﴾ (البقرة: ١٨٦)
“আর আমার দাসগণ যখন আমার সম্বন্ধে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, তখন তুমি বল, আমি তো কাছেই আছি। যখন কোন প্রার্থনাকারী আমাকে ডাকে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই।” (সূরা বাক্বারাহ১৮৬ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন,
﴿ أَمَّن يُجِيبُ ٱلۡمُضۡطَرَّ إِذَا دَعَاهُ وَيَكۡشِفُ ٱلسُّوٓءَ ﴾ [النمل: ٦٢]
“অথবা (উপাস্য) তিনি, যিনি আর্তের আহবানে সাড়া দেন যখন সে তাঁকে ডাকে এবং বিপদ-আপদ দূরীভূত করেন।” (সূরা নামল ৬২ আয়াত)
1/1473 وَعَنْ النُّعْمَانِ بنِ بَشِيرٍ رَضِيَ الله عَنهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الدُّعَاءُ هُوَ العِبَادَةُ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১/১৪৭৩। নু’মান ইবনে বাশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “দো‘আই হল (মূল) ইবাদত।” (আবূ দাউদ তিরমিযী হাসান সহীহ)
2/1474 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، قَالَتْ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَسْتَحِبُّ الجَوَامِعَ مِنَ الدُّعَاءِ، وَيَدَعُ مَا سِوَى ذَلِكَ . رواه أَبُو داود بإسناد جيدٍ
২/১৪৭৪। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অল্প শব্দে বহুল অর্থবোধক দো‘আ পছন্দ করতেন এবং তা ছাড়া অন্য দো‘আ পরিহার করতেন।’ (আবূ দাউদ, উত্তম সানাদে)
3/1475 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ أَكثَرُ دُعَاءِ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم: «اَللهم آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ» متفقٌ عَلَيْهِ .
زاد مسلم في روايتهِ قَالَ: وَكَانَ أَنَسٌ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدَعْوَةٍ دَعَا بِهَا، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ بِدُعَاءٍ دَعَا بِهَا فِيهِ.
৩/১৪৭৫। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকাংশ দো‘আ এই হত, ‘আল্লাহুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুন্য়্যা হাসানাহ, অফিল আ-খিরাতে হাসানাহ, অক্বিনা আযাবান্নার।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দাও। আর জাহান্নামের আযাব থেকে আমাদেরকে বাঁচাও। (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় বর্ধিত আকারে আছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন একটি দো‘আ করার ইচ্ছা করতেন, তখন ঐ দো‘আ করতেন। আবার যখন (বিভিন্ন) দো‘আ করার ইচ্ছা করতেন, তখন তার মাঝেও ঐ দো‘আ করতেন।
4/1476 وَعَنِ ابنِ مَسعُود رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ: «اَللهم إِنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى، وَالتُّقَى، وَالعَفَافَ، وَالغِنَى» . رواه مسلم
৪/১৪৭৬। ইবনে মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ করতেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অত্তুক্বা অলআফা-ফা অলগিনা।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট হেদায়েত, পরহেজগারি, অশ্লীলতা হতে পবিত্রতা এবং সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি। (মুসলিম)
5/1477 وَعَنْ طَارِقِ بنِ أَشْيَمَ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ الرَّجُلُ إِذَا أَسْلَمَ عَلَّمَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الصَّلاَةَ ثُمَّ أَمَرَهُ أَنْ يَدْعُوَ بِهَؤلاَءِ الكَلِمَاتِ: «اَللهم اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِني، وَعَافِني، وَارْزُقْنِي» . رواه مسلم
৫/১৪৭৭। ত্বারেক ইবনে আশ্য়্যাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কেউ ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে নামায শিখাতেন। তারপর তাকে এই দো‘আ পাঠ করতে আদেশ করতেন, ‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী, অরহামনী, অহদিনী, অ আ-ফিনী, অরযুক্বনী।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, আমার প্রতি দয়া কর, আমাকে সঠিক পথ দেখাও, আমাকে নিরাপত্তা দান কর এবং আমাকে জীবিকা দাও। (মুসলিম)
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ত্বারেক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, যখন তাঁর নিকটে একটি লোক এসে নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! যখন আমি আমার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করব, তখন কি বলব?’ তখন তিনি বললেন, “বল, ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলী---।’ কারণ, এই শব্দগুলিতে তোমার ইহকাল-পরকাল উভয়ই শামিল রয়েছে।”
6/1478 وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بنِ عَمرِو بنِ العَاصِ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «اَللهم مُصَرِّفَ القُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ» . رواه مسلم
৬/১৪৭৮। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লা-হুম্মা মুসার্রিফাল ক্বুলূবি স্বার্রিফ ক্বুলূবানা আলা ত্বা-আ’তিক।’
অর্থ:- হে আল্লাহ! হে হৃদয়সমূহকে আবর্তনকারী! তুমি আমাদের হৃদয়সমূহকে তোমার আনুগত্যের উপর আবর্তিত কর। (মুসলিম)
7/1479 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «تَعَوَّذُوا بِاللهِ مِنْ جَهْدِ البَلاَءِ، وَدَرَكِ الشَّقَاءِ، وَسُوْءِ القَضَاءِ، وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ». متفق عَلَيْهِ
وفي روايةٍ قَالَ سُفيَانُ: أَشُكُّ أنِّي زِدْتُ وَاحِدَةً مِنْهَا .
৭/১৪৭৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তোমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চেয়ে বল, ‘(আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা) মিন জাহদিল বালা-ই অদারাকিশ শাক্বা-ই অসূইল ক্বাযবা-ই অশামা-তাতিল আ’দা-’।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট কঠিন দুরবস্থা (অল্প ধনে জনের আধিক্য), দুর্ভাগ্যের নাগাল, মন্দ ভাগ্য এবং দুশমন-হাসি থেকে রক্ষা কামনা করছি। (মুসলিম)
এক বর্ণনায় সুফিয়ান বলেছেন, ‘আমার সন্দেহ হয় যে, ঐ কথাগুলির মধ্যে একটি কথা আমি বাড়িয়ে দিয়েছি।’
8/1480 وَعَنْهُ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «اَللهم أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي هُوَ عِصْمَةُ أَمْرِي، وَأَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتي فِيهَا مَعَاشِي، وَأَصْلِحْ لِي آخِرتِيَ الَّتي فِيهَا مَعَادِي، وَاجْعَلِ الحَيَاةَ زِيَادَةً لِي فِي كُلِّ خَيْرٍ، وَاجْعَلِ المَوتَ رَاحَةً لِي مِنْ كُلِّ شَرٍّ» . رواه مسلم
৮/১৪৮০। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লা-হুম্মা আস্বলিহ লী দীনিয়াল্লাযী হুয়া ইসমাতু আমরী, অ আস্ব্লিহ লী দুন্য়্যা-য়্যাল্লাতী ফীহা মাআ-শী, অ আস্ব্লিহ লী আ-খিরাতিয়াল্লাতী ফীহা মাআ-দী। অজআলিল হায়া-তা যিয়া-দাতাল লী ফী কুলি খাইর্। অজআলিল মাউতা রা-হাতাল লী মিন কুলি শার্র্।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার দ্বীনকে শুধরে দাও, যা আমার সকল কর্মের হিফাযতকারী। আমার পার্থিব জীবনকে শুধরে দাও, যাতে আমার জীবিকা রয়েছে। আমার পরকালকে শুধরে দাও, যাতে আমার প্রত্যাবর্তন হবে। আমার জন্য হায়াতকে প্রত্যেক কল্যাণে বৃদ্ধি কর এবং মওতকে প্রত্যেক অকল্যাণ থেকে আরামদায়ক কর। (মুসলিম)
8/1481 وَعَنْ عَلِيٍّ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «قُلْ: اَللهم اهْدِنِي، وَسَدِّدْنِي».
وفي رواية: «اَللهم إنِّي أَسْأَلُكَ الهُدَى وَالسَّدَادَ» . رواه مسلم
৯/১৪৮১। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, “তুমি বল, ‘আল্লাহুম্মাহদিনী অসাদ্দিদনী।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাকে হিদায়েত কর ও সোজাভাবে রাখ।
অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা অস্সাদা-দ’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট হেদায়েত ও সরল পথ কামনা করছি। (মুসলিম)
10/1482 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجْزِ، وَالكَسَلِ، وَالجُبْنِ، وَالهَرَمِ، وَالبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ المَحْيَا وَالمَمَاتِ» .
وفي رواية: «وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ» . رواه مسلم
১০/১৪৮২। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল আজ্যি অল-কাসালি অল-জুব্নি অল-হারামি অল-বুখ্ল, অ আঊযু বিকা মিন আযাবিল ক্বাবরি, অ আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিল মাহ্য়্যা অল-মামাতি, (অ যবালাইদ্ দাইনি অ গালাবাতির রিজা-ল।)’
অর্থ- হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট অক্ষমতা, অলসতা, ভীরুতা, স্থবিরতা ও কৃপণতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি কবরের আযাব থেকে, আশ্রয় কামনা করছি জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে (এবং ঋণের ভার ও মানুষের প্রতাপ থেকে)।
অপর বর্ণনায় (যুক্ত) আছে, অদ্বাল‘ইদ-দাইনি অ গালাবাতির রিজা-ল। (মুসলিম)
11/1483 وَعَنْ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيق رضي الله عنه: أَنَّه قَالَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: عَلِّمْنِي دُعَاءً أَدْعُوْ بِهِ فِي صَلاَتِي، قَالَ: «قُلْ: اَللهم إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي، إِنَّكَ أَنْتَ الغَفُورُ الرَّحِيمُ». متفق عَلَيْهِ
وفي روايةٍ: «وَفِي بَيتِيْ» وَرُوِيَ: «ظُلماً كَثِيراً» وَرُوِي: «كَبِيراً» بالثاء المثلثة وبالباء الموحدة ؛ فينبغي أنْ يجمع بينهما فيقال: كَثِيراً كَبِيراً .
১১/১৪৮৩। আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললেন, ‘আমাকে এমন দো‘আ শিখিয়ে দিন, যা দিয়ে আমি আমার নামাযে প্রার্থনা করব।’ তিনি বললেন, “তুমি বল, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসীরাঁউ অলা য়্যাগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা অরহামনী, ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহীম। (বুখারী-মুসলিম)
এক বর্ণনায় আছে, ‘(যা দিয়ে আমি আমার নামাযে) এবং আমার ঘরে (প্রার্থনা করব।)’ ‘যুলমান কাসীরান’-এর স্থলে কোন কোন বর্ণনায় ‘যুলমান কাবীরান’ও বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং উচিত হল, উভয় বর্ণনা একত্র করে ‘যুলমান কাসীরান কাবীরান’ বলা।
12/1484 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: أَنَّه كَانَ يَدْعُو بِهَذَا الدُّعَاءِ: «اَللهم اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي وَجَهْلِي، وَإِسرَافِي فِي أَمْرِي، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنّي، اَللهم اغْفِرْ لِي جِدِّي وَهَزْلِي ؛ وَخَطَئِي وَعَمْدِي ؛ وَكُلُّ ذَلِكَ عِنْدِي، اَللهم اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ، وَمَا أَنتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي، أَنْتَ المُقَدِّمُ، وَأَنْتَ المُؤَخِّرُ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ». متفق عَلَيْهِ
১২/১৪৮৪। আবূ মুসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পড়তেন,
‘আল্লা-হুম্মাগফির লী খাত্বীআতী অজাহলী অইসরা-ফী ফী আমরী, অমা আন্তা আ‘লামু বিহী মিন্নী। আল্লা-হুম্মাগফির লী জিদ্দী অহাযলী অখাত্বাঈ অআম্দী, অকুল্লু যা-লিকা ইন্দী। আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ’লানতু অমা আন্তা আ’লামু বিহী মিন্নী, আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অ আন্তাল মুআখ্খিরু অআন্তা আলা কুলি শাইয়িন ক্বাদীর।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপ, মুর্খামি, কর্মে সীমালঙ্ঘনকে এবং যা তুমি আমার চেয়ে অধিক জান, তা আমার জন্য ক্ষমা করে দাও। আল্লাহ গো! তুমি আমার অযথার্থ ও যথার্থ, অনিচ্ছাকৃত ও ইচ্ছাকৃত-ভাবে করা পাপসমূহকে মার্জনা করে দাও। আর এই প্রত্যেকটি পাপ আমার আছে।
হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মার্জনা কর, যে অপরাধ আমি পূর্বে করেছি এবং যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি এবং যা প্রকাশ্যে করেছি এবং যা তুমি অধিক জান। তুমিই অগ্র-সরকারী ও তুমিই পশ্চাদপদকারী এবং তুমি প্রতিটি বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। (বুখারী ও মুসলিম)
13/1485 وَعَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ فِي دُعَائِهِ: «اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَمِلْتُ وَمِنْ شَرِّ مَا لَمْ أَعْمَلْ» . رواه مسلم
১৩/১৪৮৫। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ দো‘আতে এই শব্দগুলি বলতেন,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন শার্রি মা ‘আমিলতু অ মিন শার্রি মা লাম আ‘মাল।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আমার কৃত (পাপের) অনিষ্ট হতে এবং অকৃত (পুণ্যের) মন্দ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (অথবা অপরের কৃত পাপের ব্যাপক শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।) (মুসলিম)
14/1486 وَعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا، قَالَ: كَانَ مِن دُعَاءِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ» . رواه مسلم
১৪/১৪৮৬। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি দো‘আ ছিল,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন যাওয়া-লি নি’মাতিকা অতাহাউবুলি আ-ফিয়াতিকা অফুজাআতি নিক্বমাতিকা অজামী-ই সাখাত্বিক।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট তোমার অনুগ্রহের অপসরণ, নিরাপত্তার প্রত্যাবর্তন, আকস্মিক পাকড়াও এবং যাবতীয় অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসলিম)
15/1487 وَعَنْ زَيدِ بنِ أَرْقَمَ رضي الله عنه، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، يَقُولُ: «اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخْلِ وَالهَرَمِ، وَعَذَابِ القَبْرِ، اَللهم آتِ نَفْسِي تَقْوَاهَا، وَزَكِّها أَنْتَ خَيْرُ مَنْ زَكَّاهَا، أَنْتَ وَلِيُّهَا وَمَوْلاَهَا، اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لاَ يَنْفَعُ؛ وَمِنْ قَلْبٍ لاَ يَخْشَعُ، وَمِنْ نَفْسٍ لاَ تَشْبَعُ ؛ وَمِنْ دَعْوَةٍ لاَ يُسْتَجابُ لَهَا» .رواه مسلم
১৫/১৪৮৭। যায়েদ ইবনে আরক্বাম রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পাঠ করতেন,
“আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল আজ্যি অলকাসালি অলবুখ্লি অলহারামি অ আযা-বিল ক্বাব্র্। আল্লা-হুম্মা আ-তি নাফসী তাক্বওয়া-হা অযাক্কিহা আন্তা খাইরু মান যাক্কা-হা, আন্তা অলিয়্যুহা অমাউলা-হা। আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন ইলমিল লা য়্যানফা’, অমিন ক্বালবিল লা য়্যাখশা’, অমিন নাফসিল লা তাশবা’, অমিন দা’ওয়াতিল লা য়্যুস্তাজা-বু লাহা।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, স্থবিরতা এবং কবরের আযাব থেকে পানাহ চাচ্ছি। হে আল্লাহ আমার আত্মায় তোমার ভীতি প্রদান কর এবং তাকে পবিত্র কর, তুমিই শ্রেষ্ঠ পবিত্রকারী। তুমিই তার অভিভাবক ও প্রভু। হে আল্লাহ আমি তোমার নিকট সেই ইলম থেকে পানাহ চাচ্ছি, যা কোন উপকারে আসে না। সেই হৃদয় থেকে পানাহ চাচ্ছি , যা বিনয়ী হয় না। সেই আত্মা থেকে পানাহ চাচ্ছি, যা তৃপ্ত হয় না এবং সেই দো‘আ থেকে পানাহ চাচ্ছি , যা কবুল হয় না। (মুসলিম)
16/1488 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ: «اَللهم لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وإلَيْكَ أنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وإلَيْكَ حَاكَمْتُ . فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ، وَمَا أَخَّرْتُ، وَمَا أَسْرَرْتُ، وَمَا أعْلَنْتُ، أنتَ المُقَدِّمُ، وأَنْتَ المُؤَخِّرُ، لا إِلٰهَ إِلاَّ أنْتَ» . زَادَ بَعْضُ الرُّوَاةِ: «وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ باللهِ». متفق عَلَيْهِ
১৬/১৪৮৮। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আটি পড়তেন,
‘আল্লা-হুম্মা লাকা আসলামতু অবিকা আ-মানতু, অ আলাইকা তাওয়াক্কালতু, অ ইলাইকা আনাবতু, অবিকা খা-স্বামতু অ ইলাইকা হা-কামতু ফাগ্ফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখ্খারতু অমা আসরারতু অমা আ’লানতু আন্তাল মুক্বাদ্দিমু অআন্তাল মুআখ্খিরু লা ইলা-হা ইল্লা আন্তা (অলা হাওলা অলা ক্বুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।)’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমারই নিকট আত্মসমর্পণ করেছি, তোমার উপরেই ঈমান (বিশ্বাস) রেখেছি, তোমার উপরেই ভরসা করেছি, তোমার দিকে অভিমুখী হয়েছি, তোমারই সাহায্যে বিতর্ক করেছি, তোমারই নিকট বিচার প্রার্থী হয়েছি। অতএব তুমি আমার পূর্বের, পরের, গুপ্ত ও প্রকাশ্য পাপকে মাফ করে দাও। তুমিই অগ্র-সরকারী ও তুমিই পশ্চাদপদকারী। তুমি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। (কোন কোন বর্ণনাকারীর বর্ধিত বর্ণনা) তোমার তওফীক ছাড়া পাপ থেকে ফিরার ও সৎকাজ করার সাধ্য নেই। (বুখারী ও মুসলিম)
17/1489 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَدعُو بِهَؤُلاَءِ الكَلِمَاتِ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ النَّارِ، وَعَذَابِ النَّارِ، وَمِنْ شَرِّ الغِنَى وَالفَقْرِ» . رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح ؛ وهذا لفظ أَبي داود .
১৭/১৪৮৯। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শব্দাবলী যোগে দো‘আ করতেন,
‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন ফিতনাতিন্নারি অআযাবিন্নারি, অমিন শার্রিল গিনা অলফাক্ব্র।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ফিতনা থেকে, জাহান্নামের আযাব থেকে এবং ধনবত্তা ও দারিদ্র্যের মন্দ থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ, এ-শব্দগুলি আবূ দাউদের)
18/1490 وَعَنْ زِيَادِ بنِ عِلاَقَةَ عَن عَمِّهِ، وَهُوَ قُطْبَةُ بنُ مالِكٍ رضي الله عنه، قَالَ: كَان النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأخْلاَقِ، وَالأعْمَالِ، والأهْواءِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
১৮/১৪৯০। যিয়াদ ইবনে ইলাক্বাহ স্বীয় চাচা কুত্ববাহ ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পড়তেন, “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন মুনকারা-তিল আখলা-ক্বি অলআ’মা-লি অলআহওয়া-’।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট দুশ্চরিত্র, অসৎ কর্ম ও কু-প্রবৃত্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। (তিরমিযী হাসান)
19/1491 وَعَنْ شَكَلِ بنِ حُمَيدٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، علِّمْنِي دُعَاءً، قَالَ: «قُلْ: اَللهم إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَمِنْ شَرِّ بَصَرِي، وَمِنْ شَرِّ لِسَانِي، وَمِنْ شَرِّ قَلْبِي، وَمِنْ شَرِّ مَنِيِّي». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن
১৯/১৪৯১। শাকাল ইবনে হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে একটি দো‘আ শিখিয়ে দিন।’ তিনি বললেন, “বল,
‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন শার্রি সাম্য়ী, অমিন শার্রি বাস্বারী, অমিন শার্রি লিসানী, অমিন শার্রি ক্বালবী, অমিন শার্রি মানিইয়্যী।”
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট আমার কর্ণ, চক্ষু, রসনা, অন্তর এবং বীর্য (যৌনাঙ্গে)র অনিষ্ট থেকে শরণ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)
20/1492 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه: أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ، وَالجُنُونِ، وَالجُذَامِ، وَسَيِّيءِ الأَسْقَامِ» . رواه أَبُو داود بإسناد صحيحٍ
২০/১৪৯২। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দো‘আ পড়তেন, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল বারাস্বি অলজুনূনি অলজুযা-মি অমিন সাইয়্যিইল আসক্বা-ম।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি তোমার নিকট ধবল, উন্মাদ, কুষ্ঠরোগ এবং সকল প্রকার কঠিন ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)
21/1493 وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «اَللهم إنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُوعِ، فَإِنَّهُ بِئْسَ الضَّجِيعُ، وَأَعُوذُ بِكَ منَ الخِيَانَةِ، فَإِنَّهَا بِئْسَتِ البِطَانَةُ» . رواه أَبُو داود بإسناد صحيح
২১/১৪৯৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দো‘আটি পাঠ করতেন, ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিনাল জূ-’, ফাইন্নাহু বি’সায্ যবাজী-’। অ আঊযু বিকা মিনাল খিয়ানাহ, ফাইন্নাহা বি’সাতিল বিত্বা-নাহ।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট ক্ষুধা থেকে পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা নিকৃষ্ট শয়ন-সাথী। আর আমি খেয়ানত থেকেও পানাহ চাচ্ছি, কারণ তা নিকৃষ্ট সহচর। (আবূ দাউদ বিশুদ্ধ সানাদ)
22/1494 وَعَنْ عَليٍّ رضي الله عنه: أَنَّ مُكَاتِباً جَاءَهُ فَقَالَ: إِنِّي عَجَزْتُ عَنْ كِتَابَتِي فَأَعِنِّي، قَالَ: ألاَ أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيهنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لَوْ كَانَ عَلَيْكَ مِثْلُ جَبَلٍ دَيْناً أَدَّاهُ اللهُ عَنْكَ؟ قُلْ: «اَللهم اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
২২/১৪৯৪। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একজন ‘মুকাতিব’ (লিখিত চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিতে প্রতিশ্রুতি-বদ্ধ কৃতদাস) তাঁর নিকট এসে নিবেদন করল, ‘আমি আমার নির্ধারিত অর্থ দিতে অপারগ, অতএব আপনি আমাকে সাহায্য করুন।’ (এ কথা শুনে) তিনি বললেন, ‘তোমাকে কি এমন দো‘আ শিখিয়ে দিব না, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর পর্বত সমপরিমাণ ঋণও থাকে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তোমার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করে দেবেন। বল, ‘আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা আন হারা-মিক, অআগনিনী বিফাযবলিকা আম্মান সিওয়া-ক।’
অর্থাৎ হে আল্লাহ! তোমার হালাল রুযী দিয়ে হারাম রুযী থেকে আমার জন্য যথেষ্ট কর এবং তুমি ছাড়া অন্য সকল থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী কর। (তিরমিযী হাসান)
23/1495 وعَنْ عِمْرانَ بنِ الحُصينِ رَضي اللهُ عنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم علَّم أَباهُ حُصيْناً كَلِمتَيْنِ يدعُو بهما: «اللَّهُمَّ أَلهِمْني رُشْدِي، وأَعِذني مِن شَرِّ نفسي» . رواهُ الترمذيُّ وقَالَ: حديثٌ حسنٌ
২৩/১৪৯৫। ইমরান ইবনুল হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (রাবী) পিতা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে দু’টি কালিমা শিখিয়েছেন যা দিয়ে তিনি দো‘আ করতেন: “হে আল্লাহ! আমার অন্তকরণে হিদায়েত পৌঁছাও, আর হৃদয়ের অনিষ্ঠটা থেকে আমাকে রক্ষা কর।” (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
24/1496 وَعَنْ أَبي الفَضلِ العَبَّاسِ بنِ عَبدِ المُطَّلِبِ رضي الله عنهقَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ عَلِّمْنِي شَيْئاً أَسْألُهُ اللهَ تَعَالَى، قَالَ: «سَلوا اللهَ العَافِيَةَ» فَمَكَثْتُ أَيَّاماً، ثُمَّ جِئْتُ فَقُلتُ: يَا رَسُولَ اللهِ عَلِّمْنِي شَيْئاً أَسْألُهُ الله تَعَالَى، قَالَ لي: «يَا عَبَّاسُ، يَا عَمَّ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، سَلُوا اللهَ العَافِيَةَ في الدُّنيَا وَالآخِرَةِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
২৪/১৪৯৬। আবূল ফায্ল আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন জিনিস শিক্ষা দান করুন, যা মহান আল্লাহর কাছে চেয়ে নেব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহর নিকট নিরাপত্তা চাও।” অতঃপর আমি কিছুদিন থেমে থাকার পর পুনরায় এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন জিনিস শিখিয়ে দিন, যা আল্লাহর কাছে চেয়ে নেব।’ তিনি আমাকে বললেন, “হে আব্বাস! হে আল্লাহর রসূলের চাচা! আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা কর।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
25/1497 وَعَنْ شَهْرِ بنِ حَوشَبٍ، قَالَ: قُلْتُ لأُمِّ سَلَمَةَ رَضِيَ اللهُ عَنهَا، يَا أُمَّ المُؤمِنِينَ، مَا كَانَ أَكثَرُ دُعَاءِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، إِذَا كَانَ عِنْدَكِ ؟ قَالَتْ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَائِهِ: «يَا مُقَلِّبَ القُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
২৫/১৪৯৭। শাহর ইবনে হাওশাব হতে রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি উম্মে সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা কে বললাম, হে মুমিন জননী! আল্লাহর রসূল যখন আপনার নিকট অবস্থান করতেন, তখন কোন দো‘আ তিনি অধিক মাত্রায় পাঠ করতেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ এই দো‘আ পড়তেন, ‘ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবি ষাবিবত ক্বালবী আলা দীনিক।’ অর্থাৎ হে হৃদয়সমূহকে বিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ। (তিরমিযী, হাসান)
26/1498 وَعَنْ أَبِيْ الدَّردَاءِ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «كَانَ مِنْ دُعَاءِ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَلَام: «اَللهم إِنِّيْ أَسْأَلُكَ حُبَّكَ، وَحُبَّ مَنْ يُّحِبُّكَ، وَالْعَمَلَ الذِّيْ يُبَلِّغُنِيْ حُبَّكَ اَللهم اجْعَلْ حُبَّكَ أَحَبَّ إِلَيَّ مِن نَّفْسِيْ، وَأَهْلِيْ، وَمِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ» روَاهُ الترمذيُّ وَقَالَ: حديثٌ حسنٌ
২৬/১৪৯৮। আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: দাউদ (আঃ)-এর এতটি দো‘আ ছিল: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা হুববাকা ওয়া হুববা মাইয়্যুহিববুকা ওয়াল ‘আমালাল্লাযী ইউবাল্লিগুনী হুববাকা, আল্লাহুম্মাজআল হুববাকা আহাববা ইলাইয়্যা মিন নাফসী ওয়া আহলী ওয়া মিনাল মাইল বারিদ” (হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি তোমার ভালবাসা চাচ্ছি এবং সেই লোকের ভালবাসা চাচ্ছি, যে তোমাকে ভালবাসে, আর এমন আমল চাচ্ছি, যা আমাকে তোমার ভালবাসার নিকট পৌঁছিয়ে দিবে। হে আল্লাহ! আমার কাছে তোমার ভালবাসাকে আমার জীবন, আমার পরিবার-পরিজন ও ঠাণ্ডা পানির চেয়ে অধিক প্রিয় কর)। (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
27/1499 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «أَلِظُّوا بـ ( يَاذا الجَلاَلِ والإكْرامِ )». رواه الترمذي، ورواه النسائي من رواية ربيعة بن عامِرٍ الصحابي، قَالَ الحاكم: حديث صحيح الإسناد
২৭/১৪৯৯। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ইয়া যাল জালালি অলইকরাম!’ বাক্যটি আবশ্যিকভাবে বড্ড গুরুত্ব দাও।” (তিরমিযী,নাসায়ী সাহাবী রাবীআহ ইবন আমের থেকে বর্ণনা করেছেন। হাকেম বলেছেন, হাদিসটির সনদ সহীহ)।
28/1500 وَعَنْ أَبِيْ أُمَامَة رضي الله عنه قَالَ: دَعَا رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم بِدُعَاءٍ كَثِيْرٍ، لَمْ نَحْفَظْ مِنْهُ شَيْئاً، قُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ دَعَوْتَ بِدُعَاءٍ كَثِيرٍْ لَمْ نَحْفَظْ مِنْهُ شَيْئاً، فَقَالَ: «أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلىٰ مَا يَجْمَعُ ذَلِكَ كُلَّهُ ؟ تَقُوْلُ: «اَللهم إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِمَا سَأَلَكَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحَمَّدٌ، َوأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا اسْتَعَاذَ مِنْهُ نَبِيُّكَ مُحمَّدٌ، وَأَنْتَ المُسْتَعَانُ، وَعَلَيْكَ الْبَلَاغُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ» رواهُ الترمذيُّ وقَالَ: حديثٌ حَسَنٌ .
২৮/১৫০০। আবূ উমামাহ্ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগণিত দো‘আ করেছিলেন, তার কোনটি আমরা স্মরণ রাখতে পারলাম না। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! আপনি অধিক সংখ্যক দো‘আ করেছেন, তার কিছুই আমরা মনে রাখতে পারিনি। তিনি বললেন: তোমাদেরকে আমি কি এরূপ একটি দো‘আ শিখিয়ে দেব না, যা সব দো‘আকে সংযুক্ত করবে? তোমরা বল: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মিন খাইরি মা সাআলাকা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওয়া আ‘উযু বিকা মিন শাররি মাস্তা‘আযাকা মিনহু নাবিয়্যুকা মুহাম্মাদুন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওয়া আনতাল মুসতা‘আনু ওয়া আলাইকাল বালাগ, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা, ইল্লা বিল্লাহ” (হে আল্লাহ! তোমার নিকট সেই সকল কল্যাণ কামনা করছি, যা তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার নিকট প্রার্থনা করেছেন। আর তোমার নিকট সেই সকল অকল্যাণ হতে আশ্রয় কামনা করছি যে সকল অকল্যাণ হতে তোমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। তুমিই সাহায্যকারী। তোমার নিকট সব পৌঁছে যাবে এবং তোমার সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বিরত থাকার ও পুণ্য করার ক্ষমতা কারো নেই। (তিরমিযী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন)
২৯/১৫০১। ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর একটি দো‘আ ছিল: “আল্লাহুম্মা ইন্নী আসআলুকা মুজিবাতি রহমাতিকা, ওয়া ‘আযাইমা মাগফিরাতিকা, ওয়াস সালামাতা মিন কুলি ইসমিন ওয়াল গনীমাতা মিন কুলি বিররিন, ওয়াল ফাওযা বিল জান্নাতি ওয়ান নাজাতা মিনান নার” (হে আল্লাহ! তোমার কাছে আমি তোমার রহমত নির্ধারণকারী বিষয় প্রার্থনা করছি, তোমার মাগফিরাতের কার্যকারণসমূহ প্রার্থনা করছি, আর (প্রার্থনা করছি) প্রতিটি গুনাহ হতে দূরে থাকা ও প্রতিটি নেকী লাভ করা এবং জান্নাতের সাফল্য ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি)
251- بَابُ فَضْلِ الدُّعَاءِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ
পরিচ্ছেদ - ২৫১: কারো পশ্চাতে তার জন্য দো‘আর ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَٱلَّذِينَ جَآءُو مِنۢ بَعۡدِهِمۡ يَقُولُونَ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لَنَا وَلِإِخۡوَٰنِنَا ٱلَّذِينَ سَبَقُونَا بِٱلۡإِيمَٰنِ ١٠ ﴾ (الحشر: ١٠)
“যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এবং বিশ্বাসে অগ্রণী আমাদের ভ্রাতাদেরকে ক্ষমা কর (এবং মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ রেখো না)।” (সূরা হাশর ১০ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, ﴿ وَٱسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۢبِكَ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ وَٱلۡمُؤۡمِنَٰتِۗ ١٩ ﴾ (محمد : ١٩)
“তুমি ক্ষমা-প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নর-নারীদের ত্রুটির জন্য।” (সূরা মুহাম্মদ ১৯ আয়াত)
তিনি ইব্রাহীম عليه السلام-এর দো‘আ উদ্ধৃত করে বলেছেন,
﴿ رَبَّنَا ٱغۡفِرۡ لِي وَلِوَٰلِدَيَّ وَلِلۡمُؤۡمِنِينَ يَوۡمَ يَقُومُ ٱلۡحِسَابُ ٤١ ﴾ (ابراهيم: ٤١)
“হে আমার প্রতিপালক! যেদিন হিসাব হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং বিশ্ববাসীদেরকে ক্ষমা করো।” (সূরা ইব্রাহীম ৪১ আয়াত)
1/1502 وَعَنْ أَبي الدرداء رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلمٍ يَدْعُو لأَخِيهِ بِظَهْرِ الغَيْبِ إِلاَّ قَالَ المَلَكُ: وَلَكَ بِمِثْل» . رواه مسلم
১/১৫০২। আবূ দরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন, “যখনই কোন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের জন্য পশ্চাতে অদৃশ্যে দো‘আ করে, তখনই তার (মাথার উপর নিযুক্ত) ফেরেশতা বলেন, ‘আর তোমার জন্যও অনুরূপ।” (মুসলিম)
2/1503 وَعَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُوْلُ: «دَعْوَةُ المَرْءِ المُسْلِمِ لأَخِيهِ بِظَهْرِ الغَيْبِ مُسْتَجَابَةٌ، عِنْدَ رَأسِهِ مَلَكٌ مُوَكَّلٌ كُلَّمَا دَعَا لأَخِيهِ بِخَيْرٍ قَالَ المَلَكُ المُوَكَّلُ بِهِ: آمِينَ، وَلَكَ بِمِثْلٍ». رواه مسلم
২/১৫০৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, কোন মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দো‘আ করলে তা কবুল হয়। তার মাথার নিকট একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকেন, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য নেক দো‘আ করে, তখনই ফেরেশতা বলেন, ‘আমীন এবং তোমার জন্যও অনুরূপ।” (মুসলিম)
252- بَابُ فِيْ مَسَائِلِ مِنَ الدُّعَاءِ
পরিচ্ছেদ - ২৫২: দো‘আ সম্পর্কিত কতিপয় জ্ঞাতব্য বিষয়
1/1504 وَعَنْ أُسَامَةَ بنِ زَيدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ صُنِعَ إِلَيْهِ مَعْرُوفٌ، فَقَالَ لِفاعِلهِ: جَزَاكَ اللهُ خَيراً، فَقَدْ أَبْلَغَ فِي الثَّنَاءِ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১/১৫০৪। উসামাহ ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তির জন্য কোন উপকার করা হল এবং সে উপকারকারীকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রা’ (অর্থাৎ আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেন) বলে দো‘আ দিল, সে নিঃসন্দেহে (উপকারীর) পূর্ণাঙ্গরূপে প্রশংসা করল।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
২/১৫০৫। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে, নিজেদের সন্তান-সন্ততির বিরুদ্ধে, নিজেদের ধন-সম্পদের বিরুদ্ধে বদ্দু‘আ করো না (কেননা, হয়তো এমন হতে পারে যে,) তোমরা আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একটি সময় পেয়ে বস, যখন আল্লাহর কাছে যা প্রার্থনা করবে, তোমাদের জন্য তা কবূল করে নেবেন।” (কাজেই বদ দো‘আও কবূল হয়ে যাবে। অতএব এ থেকে সাবধান)। (মুসলিম)
3/1506 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «أَقْرَبُ مَا يَكُونُ العَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ». رواه مسلم
৩/১৫০৬। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা সিজদার অবস্থায় স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটবর্তী হয়। অতএব তোমরা অধিক মাত্রায় (ঐ অবস্থায়) দো‘আ কর।” (মুসলিম)
4/1507 وَعَنْهُ: أنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «يُسْتَجَابُ لأَحَدِكُمْ مَا لَمْ يَعْجَلْ: يَقُوْلُ: قَدْ دَعْوتُ رَبِّي، فَلَمْ يَسْتَجِبْ لِي». متفق عَلَيْهِ
وفي روايةٍ لمسلمٍ: «لاَ يَزالُ يُسْتَجَابُ لِلعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بإِثْمٍ، أَوْ قَطيعَةِ رَحِمٍ، مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ». قيل: يَا رَسُولَ اللهِ مَا الاِسْتِعْجَالُ ؟ قَالَ: «يَقُوْلُ: قَدْ دَعوْتُ، وَقَدْ دَعَوْتُ، فَلَمْ أرَ يَسْتَجِيبُ لِي، فَيَسْتحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ».
৪/১৫০৭। উক্ত রাবী হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কোন ব্যক্তির দো‘আ গৃহীত হয়; যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে; বলে, ‘আমার প্রভুর নিকট দো‘আ তো করলাম, কিন্তু তিনি আমার দো‘আ কবূল করলেন না।” (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে, “বান্দার দো‘আ ততক্ষণ পর্যন্ত কবূল করা হয়, যতক্ষণ সে গুনাহর জন্য বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার জন্য দো‘আ না করে, আর যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়ো করে।” জিজ্ঞাসা করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল! তাড়াহুড়ো মানে কি?’ তিনি বললেন, “দো‘আকারী বলে, ‘দো‘আ করলাম, আবার দো‘আ করলাম, অথচ দেখলাম না যে, তিনি আমার দো‘আ কবূল করছেন।’ কাজেই সে তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে বসে পড়ে ও দো‘আ করা ত্যাগ করে দেয়।”
5/1508 وَعَنْ أَبي أُمَامَة رضي الله عنه قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَيُّ الدُّعاءِ أَسْمَعُ ؟ قَالَ: «جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَواتِ المَكْتُوباتِ» . رواه الترمذي،وقال: حديث حسن
৫/১৫০৮। আবূ উমামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করা হল, ‘কোন দো‘আ সর্বাধিক শোনা (কবূল করা) হয়?’ তিনি বললেন, “রাত্রির শেষভাগে এবং ফরয নামাযসমূহের শেষাংশে।” (তিরমিযী হাসান)
6/1509 وَعَنْ عُبَادَةَ بنِ الصَّامِتِ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَا عَلَى الأَرْضِ مُسْلِمٌ يَدْعُو الله تَعَالَى بِدَعْوَةٍ إِلاَّ آتَاهُ اللهُ إيَّاهَا، أَوْ صَرفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا، مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ، أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَومِ: إِذاً نُكْثِرُ قَالَ: «اللهُ أكْثَرُ». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
وَرَوَاهُ الحَاكِمُ مِنْ رِوَايَةِ أَبِي سَعِيدٍ وَزَادَ فِيهِ: «أَوْ يَدَّخِرَ لَهُ مِن الأَجْرِ مثْلَها» .
৬/১৫০৯। উবাদাহ ইবনে সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ধরার বুকে যে মুসলিম ব্যক্তিই আল্লাহর কাছে দো‘আ করে (তা ব্যর্থ যায় না); হয় আল্লাহ তা তাকে দেন অথবা অনুরূপ কোন মন্দ তার উপর থেকে অপসারণ করেন; যতক্ষণ পর্যন্ত সে (দো‘আকারী) গুনাহ বা আত্মীয়তা ছিন্ন করার দো‘আ না করবে।” একটি লোক বলল, ‘তাহলে তো আমরা অধিক মাত্রায় দো‘আ করব।’ তিনি বললেন, “আল্লাহ সর্বাধিক অনুগ্রহশীল” (তিরমিযী-হাসান সহীহ)
হাকেম আবূ সাঈদ হতে এগুলি বর্ধিত আকারে বর্ণনা করেছেন, “অথবা তার সম পরিমাণ পুণ্য তার জন্য সঞ্চিত রাখা হয় (যা তার পরকালে কাজে আসবে)।”
7/1510 وَعَنِ ابنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُول اللهِ كَانَ يَقُوْلُ عِنْدَ الكَرْبِ: «لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ العَظِيمُ الحَلِيمُ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ رَبُّ العَرْشِ العَظيمِ، لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ رَبُّ السَّمَاوَاتِ، وَرَبُّ الأَرْضِ، وَرَبُّ العَرْشِ الكَرِيمِ». متفق عَلَيْهِ
৭/১৫১০। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিপদ ও কষ্টের সময় এই দো‘আ পড়তেন,
‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হুল আযীমুল হালীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুল আরশিল আযীম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাববুস সামা-ওয়া-তি অরাববুল আরযিব অরাববুল আরশিল করীম।’
অর্থ, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই; যিনি সুমহান, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই; যিনি সুবৃহৎ আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য আরাধ্য নেই; যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও সম্মানিত আরশের অধিপতি। (বুখারী-মুসলিম)
253- بَابُ كَرَامَاتِ الْأَوْلِيَاءِ وَفَضْلِهِمْ
পরিচ্ছেদ - ২৫৩: আল্লাহর প্রিয় বন্ধুদের কারামত (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) এবং তাঁদের মাহাত্ম্য
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ أَلَآ إِنَّ أَوۡلِيَآءَ ٱللَّهِ لَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٦٢ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَكَانُواْ يَتَّقُونَ ٦٣ لَهُمُ ٱلۡبُشۡرَىٰ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِي ٱلۡأٓخِرَةِۚ لَا تَبۡدِيلَ لِكَلِمَٰتِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٦٤ ﴾ (يونس : ٦٢، ٦٤)
“মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশংকা আছে আর না তারা বিষণ্ণ হবে। তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনে তাক্বওয়া অবলম্বন করে থাকে। তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর বাণীসমূহের কোন পরিবর্তন নেই; এটাই হচ্ছে বিরাট সফলতা।” (সূরা ইউনুস ৬২-৬৪ আয়াত)
আরও বলেন,﴿ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي﴾ (مريم: ٢٥، ٢٦)
“তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কাণ্ড হিলিয়ে দাও; ওটা তোমার সামনে সদ্যপক্ব তাজা খেজুর ফেলতে থাকবে। সুতরাং আহার কর, পান কর---।” (সূরা মারয়্যাম ২৫-২৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন,
﴿ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ ﴾ (ال عمران: ٣٧)
“যখনই যাকারিয়া মিহরাবে (কক্ষে) তার সঙ্গে দেখা করতে যেত, তখনই তার নিকট খাদ্য-সামগ্রী দেখতে পেত। সে বলত, ‘হে মারয়্যাম! এসব তুমি কোথা থেকে পেলে?’ সে বলত, ‘তা আল্লাহর কাছ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পর্যাপ্ত জীবিকা দান করে থাকেন।” (সূরা আলে ইমরান ৩৭ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَإِذِ ٱعۡتَزَلۡتُمُوهُمۡ وَمَا يَعۡبُدُونَ إِلَّا ٱللَّهَ فَأۡوُۥٓاْ إِلَى ٱلۡكَهۡفِ يَنشُرۡ لَكُمۡ رَبُّكُم مِّن رَّحۡمَتِهِۦ وَيُهَيِّئۡ لَكُم مِّنۡ أَمۡرِكُم مِّرۡفَقٗا ١٦ ۞وَتَرَى ٱلشَّمۡسَ إِذَا طَلَعَت تَّزَٰوَرُ عَن كَهۡفِهِمۡ ذَاتَ ٱلۡيَمِينِ وَإِذَا غَرَبَت تَّقۡرِضُهُمۡ ذَاتَ ٱلشِّمَالِ ١٧ ﴾ (الكهف: ١٦، ١٧)
“তোমরা যখন তাদের ও তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করে তাদের সংস্পর্শ হতে বিচ্ছিন্ন হলে তখন তোমরা গুহায় আশ্রয় গ্রহণ কর; তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের জন্য তাঁর দয়া বিস্তার করবেন এবং তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজকর্মকে ফলপ্রসূ করবার ব্যবস্থা করবেন। তুমি দেখলে দেখতে, সূর্য উদয়কালে তাদের গুহার ডান দিকে হেলে অতিক্রম করছে এবং অস্তকালে তাদেরকে অতিক্রম করছে বাম পাশ দিয়ে---।” (সূরা কাহাফ ১৬-১৭ আয়াত)
1/1511 وَعَنْ أَبي مُحَمَّدٍ عَبدِ الرَّحْمَانِ بنِ أَبي بَكرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفّةِ كَانُوا أُنَاساً فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَرَّةً: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ، فَلْيَذْهَبْ بثَالِثٍ، وَمنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ، فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ بِسَادِسٍ» أَوْ كَمَا قَالَ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ رضي الله عنه، جَاءَ بِثَلاَثَةٍ، وَانْطَلَقَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بعَشَرَةٍ، وَأَنَّ أَبَا بَكرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيّ، ثُمَّ لَبِثَ حَتَّى صَلَّى العِشَاءَ، ثُمَّ رَجَعَ، فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللهُ . قَالَتِ امْرَأتُهُ: مَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ ؟ قَالَ: أَوَمَا عَشَّيْتِهمْ ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ وَقَدْ عَرَضُوا عَلَيْهِمْ، قَالَ: فَذَهَبتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ، فَقالَ: يَا غُنْثَرُ، فَجَدَّعَ وَسَبَّ، وَقَالَ: كُلُوا لاَ هَنِيئاً وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَداً، قَالَ: وَايْمُ اللهِ مَا كُنَّا نَأخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلاَّ رَبَا مِنْ أَسفَلِهَا أَكْثَرَ مِنهَا حَتَّى شَبِعُوا، وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبلَ ذَلِكَ، فَنَظَرَ إِلَيهَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ لاِمرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا ؟ قَالَتْ: لاَ وَقُرَّةِ عَينِيْ لَهِيَ الآنَ أَكثَرُ مِنهَا قَبلَ ذَلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ ! فَأَكَلَ مِنهَا أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ: إنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشَّيطَانِ، يَعنِيْ: يَمِينَهُ . ثُمَّ أَكَلَ مِنهَا لُقْمَةً، ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ. وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَهْدٌ، فَمَضَى الأَجَلُ، فَتَفَرَّقْنَا اثْنَيْ عَشَرَ رَجُلاً، مَعَ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أُنَاسٌ، اللهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ فَأَكَلُوا مِنْهَا أَجْمَعُونَ .
وَفِي رِوايَةٍ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ قَالَ لِعَبْدِ الرَّحْمَانِ: دُونَكَ أَضْيَافَكَ، فَإِنِّي مُنْطَلِقٌ إِلَى النَّبيِّ، فَافْرُغْ مِنْ قِرَاهُم قَبْلَ أَنْ أَجِيءَ، فَانْطَلَقَ عَبْدُ الرَّحْمانِ، فَأَتَاهُمْ بِمَا عِنْدَهُ، فَقَالَ: اِطْعَمُوا ؛ فَقَالُوا: أَينَ رَبُّ مَنْزِلِنا ؟ قَالَ: اِطْعَمُوا، قَالُوا: مَا نحنُ بِآكِلِينَ حَتَّى يَجِيءَ رَبُّ مَنْزِلِنَا، قَالَ: اقْبَلُوا عَنَّا قِرَاكُمْ، فَإِنَّهُ إِنْ جَاءَ وَلَمْ تَطْعَمُوا، لَنَلْقَيَنَّ مِنْهُ فَأبَوْا، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ يَجِدُ عَلَيَّ، فَلَمَّا جَاءَ تَنَحَّيْتُ عَنْهُ، فَقَالَ: مَا صَنَعْتُمْ ؟ فَأَخْبَرُوهُ، فَقَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحمانِ، فَسَكَتُّ: ثُمَّ قَالَ: يَا عَبْدَ الرَّحْمانِ، فَسَكَتُّ، فَقَالَ: يَا غُنْثَرُ أَقْسَمْتُ عَلَيْكَ إِنْ كُنْتَ تَسْمَعُ صَوتِي لَمَا جِئْتَ ! فَخَرَجْتُ، فَقُلْتُ: سَلْ أَضْيَافَكَ، فَقَالُوا: صَدَقَ، أَتَانَا بِهِ، فَقَالَ: إِنَّمَا انْتَظَرْتُمُونِي وَاللهِ لاَ أَطْعَمُهُ اللَّيْلَةَ . فَقَالَ الآخَرُونَ: وَاللهِ لاَ نَطْعَمُهُ حَتَّى تَطْعَمَهُ فَقَالَ: وَيْلَكُمْ مَا لَكُمْ لاَ تَقْبَلُونَ عَنَّا قِرَاكُمْ ؟ هَاتِ طَعَامَكَ، فَجَاءَ بِهِ، فَوَضَعَ يَدَهُ فَقَالَ: بِسْمِ اللهِ، الأُولَى مِنَ الشَّيْطَانِ، فَأَكَلَ وَأَكَلُوا. متفق عَلَيْهِ
১/১৫১১। আবূ মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ইবনে আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, ‘আসহাবে সুফ্ফাহ’ (তৎকালীন মসজিদে নববীতে একটি ছাউনিবিশিষ্ট ঘর ছিল। সেখানে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তত্ত্বাবধানে কিছু সাহাবী আশ্রয় গ্রহণ করতেন ও বসবাস করতেন। তাঁরা) গরীব মানুষ ছিলেন। একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাদের মধ্য থেকে) তৃতীয় জনকে সাথে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনের আহারের অবস্থা আছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ জনকে সাথে নিয়ে যায়।” আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে এলে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে সাথে নিয়ে গেলেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহর ঘরেই রাতের আহার করেন এবং এশার নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এশার নামাযের পর তিনি পুনরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘরে ফিরে আসেন এবং আল্লাহর ইচ্ছামত রাতের কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর তিনি বাড়ি ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, ‘বাইরে কিসে আপনাকে আটকে রেখেছিল?’ তিনি বললেন, ‘তুমি এখনো তাঁদেরকে খাবার দাওনি?’ স্ত্রী বললেন, ‘আপনি না আসা পর্যন্ত তাঁরা খেতে রাজি হলেন না। তাঁদের সামনে খাবার দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা তা খাননি।’ আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, (পিতার তিরস্কারের ভয়ে) আমি লুকিয়ে গেলাম। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বলে উঠলেন, ‘ওরে মূর্খ!’ অতঃপর নাক কাটা ইত্যাদি বলে গালাগালি করলেন এবং (মেহমানদের উদ্দেশ্যে) বললেন, ‘আপনারা স্বচ্ছন্দে খান, আল্লাহর কসম! আমি মোটেই খাব না।’
আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল।’ তিনি বলেন, ‘সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ পূর্বের চেয়ে বেশি খাবার রয়ে গেল।’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবারের দিকে তাকিয়ে স্ত্রীকে বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এ তো পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি!’ সুতরাং আবূ বাক্ রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, ‘আমার (খাব না বলে) সে কসম শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’ তারপর তিনি আরও খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাবার তাঁর নিকটেই ছিল।
এদিকে আমাদের এবং অন্য একটি গোত্রের মাঝে যে চুক্তি ছিল তার সময়সীমা পূর্ণ হয়ে যায়। (এবং তারা মদিনায় আসে।) অতঃপর আমরা তাদেরকে তাদের বারো জনের নেতৃত্বে ভাগ করে দিই। প্রত্যেকের সাথেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যেকের সাথে কতজন ছিল তা আল্লাহই বেশি জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য আহার করে।
অন্য বর্ণনায় আছে, আবূ বকর ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন, তা দেখে তাঁর স্ত্রীও ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন। আর তা দেখে মেহমানরাও তিনি সঙ্গে না খেলে ‘খাবেন না’ বলে কসম করলেন! আবূ বকর বললেন, ‘এ সব (কসম) শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খাবার আনতে বলে নিজে খেলেন এবং মেহমানরাও খেলেন। তাঁরা যখনই লুকমা (খাদ্য-গ্রাস) উঠিয়ে খাচ্ছিলেন, তখনই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু (স্ত্রীকে) বললেন, ‘হে বনু ফিরাসের বোন! এ কি?’ স্ত্রী বললেন, ‘আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এখন এ তো খেতে শুরু করার আগের চেয়ে অধিক বেশি!’ সুতরাং সকলেই খেলেন এবং অতিরিক্ত খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে পাঠিয়ে দিলেন। আব্দুর রহমান বলেন, ‘তিনি তা হতে খেলেন।’
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আবূ বকর আব্দুর রহমানকে বললেন, ‘তোমার মেহমান নাও। (তুমি তাদের খাতির কর) আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যাচ্ছি। আমার ফিরে আসার আগে আগেই তুমি (খাইয়ে) তাঁদের খাতির সম্পন্ন করো।’ সুতরাং আব্দুর রহমান তাঁর নিকট যে খাবার ছিল, তা নিয়ে তাঁদের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘আপনারা খান।’ কিন্তু মেহমানরা বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ওয়ালা কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘আপনারা খান।’ তাঁরা বললেন, ‘আমাদের বাড়ি-ওয়ালা না আসা পর্যন্ত আমরা খাব না।’ আব্দুর রহমান বললেন, ‘আপনারা আমাদের তরফ থেকে মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করুন। কারণ তিনি এসে যদি দেখেন যে, আপনারা খাননি, তাহলে অবশ্যই আমরা তাঁর নিকট থেকে (বড় ভৎর্সনা) পাব।’ কিন্তু তাঁরা (খেতে) অস্বীকার করলেন।
(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি বুঝে নিলাম যে, তিনি আমার উপর খাপ্পা হবেন। অতঃপর তিনি এলে আমি তাঁর নিকট থেকে সরে গেলাম। তিনি বললেন, ‘ কি করেছ তোমরা?’ তাঁরা তাঁকে ব্যাপারটা খুলে বললেন। অতঃপর তিনি ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান!’ আব্দুর রহমান নিরুত্তর থাকলেন। তিনি আবার ডাক দিলেন, ‘আব্দুর রহমান?’ কিন্তু তখনও তিনি নীরব থাকলেন। তারপর আবার বললেন, ‘এ বেওকুফ! আমি তোমাকে কসম দিচ্ছি, যদি তুমি আমার ডাক শুনতে পাচ্ছ, তাহলে এসে যাও।’
(আব্দুর রহমান বলেন,) তখন আমি (বাধ্য হয়ে) বের হয়ে এলাম। বললাম, ‘আপনি আপনার মেহমানদেরকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন, (আমি তাঁদেরকে খেতে দিয়েছিলাম কি না?)’ তাঁরা বললেন, ‘ও সত্যই বলেছে। ও আমাদের কাছে খাবার নিয়ে এসেছিল। (আমরাই আপনার অপেক্ষায় খাইনি।)’ আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘তোমরা আমার অপেক্ষা করে বসে আছ। কিন্তু আল্লাহর কসম! আজ রাতে আমি আহার করব না।’ তাঁরা বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি না খাওয়া পর্যন্ত আমরাও খাব না।’ তিনি বললেন, ‘ধিক্কার তোমাদের প্রতি! তোমাদের কি হয়েছে যে, আমাদের পক্ষ থেকে মেহমান-নেওয়াযী গ্রহণ করবে না?’ (অতঃপর আব্দুর রহমানের উদ্দেশ্য বললেন,) ‘নিয়ে এস তোমার খাবার।’ তিনি খাবার নিয়ে এলে আবূ বকর তাতে হাত রেখে বললেন, ‘বিস্মিল্লাহ। প্রথম (রাগের অবস্থায় কসম) ছিল শয়তানের পক্ষ থেকে।’ সুতরাং তিনি খেলেন এবং মেহমানরাও আহার করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)
2/1512 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَقَدْ كَانَ فِيمَا قَبْلَكُمْ مِنَ الأُمَمِ نَاسٌ مُحَدَّثُوْنَ، فَإنْ يَكُ فِي أُمَّتِي أَحَدٌ فَإِنَّهُ عُمَرُ» . رواه البخاري ورواه مسلم من رواية عائشة . وفي روايتهما قَالَ ابن وهب: «مُحَدَّثُونَ» أَيْ مُلْهَمُونَ .
২/১৫১২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী জাতির মধ্যে অনেক ‘মুহাদ্দাস’ লোক ছিল। যদি আমার উম্মতের মধ্যে কেউ ‘মুহাদ্দাস’ থাকে, তাহলে সে হল উমার।” (বুখারী)
ইমাম মুসলিমও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেছেন। উক্ত দুই গ্রন্থের বর্ণনায় আছে, ইবনে অহাব বলেন, ‘মুহাদ্দাস’ হলেন তাঁরা, যাঁদের মনে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) ইলহাম (ভালো-মন্দের জ্ঞান প্রক্ষেপ) করা হয়।
3/1513 وَعَنْ جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: شَكَا أَهْلُ الكُوفَةِ سَعْداً يَعنِي: ابنَ أَبي وَقَّاصٍ رضي الله عنه، إِلَى عُمَرَ بنِ الخَطَّابِ رضي الله عنه فَعَزَلَهُ، وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْهِمْ عَمَّاراً، فَشَكَوا حَتَّى ذَكَرُوا أَنَّهُ لاَ يُحْسِنُ يُصَلِّي، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ، فَقَالَ: يَا أَبَا إسْحَاقَ، إنَّ هَؤُلاَءِ يَزْعُمُونَ أَنَّكَ لاَ تُحْسِنُ تُصَلِّي، فَقَالَ: أَمَّا أَنَا وَاللهِ فَإنِّي كُنْتُ أُصَلِّي بِهِمْ صَلاَةَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، لاَ أَخْرِمُ عَنْها، أُصَلِّي صَلاَتَي العِشَاءِ فَأَرْكُدُ فِي الأُولَيَيْنِ، وَأُخِفُّ فِي الأُخْرَيَيْنِ . قَالَ: ذَلِكَ الظَّنُّ بِكَ يَا أَبَا إِسْحَاقَ، وَأَرْسَلَ مَعَهُ رَجُلاً - أَوْ رِجَالاً - إِلَى الكُوفَةِ يَسْأَلُ عَنْهُ أَهْلَ الكُوفَةِ، فَلَمْ يَدَعْ مَسْجِداً إِلاَّ سَأَلَ عَنْهُ، وَيُثْنُونَ مَعْرُوفاً، حَتَّى دَخَلَ مَسْجِداً لِبَنِي عَبْسٍ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ، يُقَالُ لَهُ أُسَامَةُ بْنُ قَتَادَةَ، يُكَنَّى أَبَا سَعْدَةَ، فَقَالَ: أَمَا إِذْ نَشَدْتَنَا فَإِنَّ سَعْداً كَانَ لاَ يَسِيرُ بِالسَّرِيَّةِ وَلاَ يَقْسِمُ بِالسَّوِيَّةِ، وَلاَ يَعْدِلُ فِي القَضِيَّةِ . قَالَ سَعْدٌ: أَمَا وَاللهِ لأَدْعُوَنَّ بِثَلاَثٍ: اَللهم إِنْ كَانَ عَبْدُكَ هَذَا كَاذِباً، قَامَ رِيَاءً، وَسُمْعَةً، فَأَطِلْ عُمُرَهُ، وَأَطِلْ فَقْرَهُ، وَعَرِّضْهُ لِلْفِتَنِ . وَكَانَ بَعْدَ ذَلِكَ إِذَا سُئِلَ يَقُوْلُ: شَيْخٌ كَبيرٌ مَفْتُونٌ، أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعدٍ رضي الله عنه . قَالَ عَبدُ المَلِكِ بنُ عُمَيْرٍ الرَّاوِي عَن جَابِرِ بنِ سَمُرَةَ: فَأَنَا رَأَيْتُهُ بَعْدُ قَدْ سَقَطَ حَاجِبَاهُ عَلَى عَيْنَيْهِ مِنَ الكِبَرِ، وَإِنَّهُ لَيَتَعَرَّضُ لِلْجَوارِي فِي الطُّرُقِ فَيَغْمِزُهُنَّ . متفق عَلَيْهِ
৩/১৫১৩। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, কুফাবাসীরা উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে সায়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলল, ‘সে ভালভাবে নামায পড়তে জানে না।’ কাজেই তিনি তাঁকে ডেকে পাঠালেন এবং (যখন তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর কাছে হাযির হলেন, তখন) তিনি তাঁকে বললেন, ‘হে ইসহাকের পিতা! ওরা বলছে যে, তুমি উত্তম-ভাবে নামায আদায় কর না।’ জবাবে তিনি বললেন, ‘যাই হোক, আল্লাহর কসম! আমি তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামাযের মত নামায পড়াই, তা থেকে (একটুও) কম করি না। যোহর ও আসরের দুই নামাযের প্রথম দু’ রাকআতে দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করি এবং দ্বিতীয় দু-রাকআতকে সংক্ষিপ্ত করি।’ উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু (এ কথা শুনে বললেন,) ‘ইসহাকের পিতা! তোমার সম্পর্কে ঐ ধারণাই ছিল।’ পরে তিনি তাঁর সঙ্গে একজন বা কয়েকজন লোক কূফা নগরীতে প্রেরণ করলেন। যাতে করে কূফা নগরীর প্রতিটি মসজিদে গিয়ে সায়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। সুতরাং প্রত্যেক মসজিদেই তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতে লাগল এবং সকলেই তাঁর প্রশংসা করল। শেষ পর্যন্ত যখন তারা বনু আব্সার মসজিদে উপনীত হল। তখন সেখানে আবূ সা’দাহ উসামাহ ইবনে ক্বাতাদাহ নামক এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগল, ‘যখন আপনারা আমাদেরকে জিজ্ঞাসাই করলেন, তখন (প্রকাশ করে দিচ্ছি শুনুন,) সায়াদ সেনা বাহিনীর সঙ্গে (জিহাদে) যান না, নায্যভাবে (কোন জিনিস) বণ্টন করেন না এবং ইনসাফের সাথে বিচার করেন না।’ সায়াদ তখন (জবাবে) বলে উঠলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই তিনটি বদ্দুআ করব: হে আল্লাহ! যদি তোমার বান্দা মিথ্যাবাদী হয়, রিয়া (লোক প্রদর্শন হেতু) ও খ্যাতির জন্য এভাবে দণ্ডায়মান হয়ে থাকে, তাহলে তুমি ওর আয়ু দীর্ঘ করে দাও এবং ওর দরিদ্রতা বাড়িয়ে দাও এবং ওকে ফিতনার কবলে ফেল।’ (বাস্তবিক তার অবস্থা ঐরূপই হয়েছিল।) সুতরাং যখন তাকে (কুশল) জিজ্ঞাসা করা হত, তখন উত্তরে বলত, ‘অত্যন্ত বৃদ্ধ হয়ে পড়েছি এবং ফিতনায় পতিত হয়েছি; সা’দের বদ্দুআ আমাকে লেগে গেছে।’
জাবের ইবনে সামুরাহ থেকে বর্ণনাকারী আব্দুল মালেক ইবন উমাইর বলেন, ‘আমি পরে তাকে দেখেছি যে, সে অত্যন্ত বার্ধক্যের কারণে তার চোখের ভ্রূগুলি চোখের উপরে লটকে পড়েছে আর রাস্তায় রাস্তায় দাসীদেরকে উত্যক্ত করত ও আঙ্গুল বা চোখ দ্বারা তাদেরকে ইশারা করত।’ (বুখারী ও মুসলিম)
4/1514. وَعَنْ عُروَةَ بنِ الزُّبَيرِرَضِيَ اللهُ عَنْه: أَنَّ سَعِيدَ بنَ زَيدِ بنِ عَمرِو بنِ نُفَيلٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه، خَاصَمَتْهُ أَرْوَى بِنْتُ أَوْسٍ إِلَى مَرْوَانَ بْنِ الحَكَمِ، وَادَّعَتْ أَنَّهُ أَخَذَ شَيْئاً مِنْ أَرْضِهَا، فَقَالَ سَعِيدٌ: أَنَا كُنْتُ آخُذُ شَيئاً مِنْ أَرْضِهَا بَعْدَ الَّذِي سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم !؟ قَالَ: مَاذَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم ؟ قَالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «مَنْ أَخَذَ شِبْراً مِنَ الأَرْضِ ظُلْماً، طُوِّقَهُ إِلَى سَبْعِ أَرْضِينَ» فَقَالَ لَهُ مَرْوَانُ: لاَ أَسْألُكَ بَيِّنَةً بَعْدَ هَذَا، فَقَالَ سَعِيدٌ: اَللهم إنْ كَانَتْ كَاذِبَةً، فَأَعْمِ بَصَرَها، وَاقْتُلْهَا فِي أَرْضِهَا، قَالَ: فَمَا مَاتَتْ حَتَّى ذَهَبَ بَصَرُهَا، وَبَيْنَمَا هِيَ تَمْشِي فِي أَرْضِهَا إِذْ وَقَعَتْ فِي حُفْرَةٍ فَماتَتْ . متفق عَلَيْهِ
رَآهَا عَمْيَاءَ تَلْتَمِسُ الجُدُرَ تَقُوْلُ: أَصَابَتْنِي دَعْوَةُ سَعِيدٍ، وَأنَّهَا مَرَّتْ عَلَى بِئرٍ فِي الدَّارِ الَّتي خَاصَمَتْهُ فِيهَا، فَوَقَعَتْ فِيهَا، وكانتْ قَبْرَها .
৪/১৫১৪। উরওয়াহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সাঈদ ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বিরুদ্ধে আরওয়া বিনতে আওস নামক এক মহিলা মারওয়ান ইবনে হাকামের দরবারে মোকাদ্দামা পেশ করল; সে দাবি জানাল যে, ‘সাঈদ আমার কিছু জমি আত্মসাৎ করেছেন।’ সাঈদ বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (এ বিষয়ে ধমক) শোনার পরও কি আমি তার কিছু জমি দাবিয়ে নিতে পারি?’ মারওয়ান বললেন, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কি (ধমক) শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দাবিয়ে নেবে, (কিয়ামতের দিনে) সাত তবক জমিন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।” এ কথা শুনে মারওয়ান বললেন, ‘এরপর আমি আপনার কাছে কোন প্রমাণ তলব করব না।’ সুতরাং সাঈদ (বাদী পক্ষীয়) মহিলার প্রতি বদ্দুআ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে ওর চক্ষু অন্ধ করে দাও এবং ওকে ওর জমিতেই মৃত্যু দাও।’
বর্ণনাকারী বলেন, ‘মহিলাটির মৃত্যুর পূর্বে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল এবং একবার সে নিজ জমিতে চলছিল। হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে মারা গেল।’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুহাম্মদ ইবন যায়দ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার কর্তৃক মুসলিমের অনুরূপ এক বর্ণনায় আছে, তিনি তাকে দেখেছেন, সে অন্ধ অবস্থায় দেওয়াল হাতড়ে বেড়াত। বলত, ‘আমাকে সাঈদের বদ্দুআ লেগে গেছে।’ আর সে যে জায়গার ব্যাপারে সাঈদের বিরুদ্ধে মিথ্যা নালিশ করেছিল, সেই জায়গার এক কুঁয়াতে পড়ে গিয়ে সেটাই তার কবর হয়ে গেছে!
5/1515 وَعَنْ جَابِرِ بنِ عَبدِ اللهِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا حَضَرَتْ أُحُدٌ دعَانِي أَبي مِنَ اللَّيلِ فَقَالَ: مَا أُرَاني إِلاَّ مَقْتُولاً فِي أَوَّلِ مَنْ يُقْتَلُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ، وَإِنِّي لاَ أَتْرُكُ بَعْدِي أَعَزَّ عَلَيَّ مِنْكَ غَيْرَ نَفْسِ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، وَإِنَّ عَلَيَّ دَيْناً فَاقْضِ، وَاسْتَوْصِ بِأَخَوَاتِكَ خَيْراً، فَأَصْبَحْنَا، فَكَانَ أَوَّلَ قَتِيلٍ، وَدَفَنْتُ مَعَهُ آخَرَ فِي قَبْرِهِ، ثُمَّ لَمْ تَطِبْ نَفْسِي أَنْ أَتْرُكَهُ مَعَ آخَرَ، فَاسْتَخْرَجْتُهُ بَعْدَ سِتَّةِ أَشْهُرٍ، فَإِذَا هُوَ كَيَوْمِ وَضَعْتُهُ غَيْرَ أُذنِهِ، فَجَعَلْتُهُ فِي قَبْرٍ عَلَى حِدَةٍ . رواه البخاري
৫/১৫১৫। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উহুদের যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়। রাতে আমাকে আমার পিতা ডেকে বললেন, ‘আমার মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরবৃন্দের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম শহীদ হবেন, আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর, তোমাকে ছাড়া ধরা-পৃষ্ঠে প্রিয়তম আর কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমার উপর ঋণ আছে, তা পরিশোধ করে দেবে। তোমার বোনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ সুতরাং যখন আমরা ভোরে উঠলাম, তখন দেখলাম যে, সর্বপ্রথম উনিই শাহাদত বরণ করেছেন। আমি তাঁর সাথে আর এক ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করলাম। তারপর অন্যজনকে তাঁর সঙ্গে একই কবরে দাফন করাতে আমার মনে শান্তি হল না। সুতরাং ছয়মাস পর আমি তাঁকে কবর হতে বের করলাম। (দেখা গেল) তার কান ব্যতীত (তার দেহ) সেদিনকার মত অবিকল ছিল, যেদিন তাকে কবরে রাখা হয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে একটি আলাদা কবরে দাফন করলাম। (বুখারী)
6/1516 وَعَنْ أَنَسٍ رضي الله عنه:أَنَّ رَجُلَينِ مِنْ أَصحَابِ النَّبِيِّ، خَرَجَا مِنْ عِنْدِ النَّبِيِّ، فِي لَيْلَةٍ مُظْلِمَةٍ وَمَعَهُمَا مِثْلُ المِصْبَاحَيْنِ بَيْنَ أَيْديهِمَا. فَلَمَّا افْتَرَقَا، صَارَ مَعَ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا وَاحِدٌ حَتَّى أَتَى أَهْلَهُ. رواهُ البُخاري مِنْ طُرُقٍ؛ وفي بَعْضِهَا أنَّ الرَّجُلَيْنِ أُسَيْدُ بنُ حُضير، وَعَبّادُ بنُ بِشْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا.
৬/১৫১৬। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর মধ্য থেকে দু’জন সাহাবী অন্ধকার রাতে তাঁর নিকট হতে বাইরে গমন করেন। আর তাঁদের আগে আগে প্রদীপের ন্যায় কোন আলো বিদ্যমান ছিল। পরে যখন তাঁরা একে অপর থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, তখনও প্রত্যেকের সঙ্গে আলো ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌঁছে গেলেন। (এটিকে বুখারী কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন বর্ণনায়, ঐ দুই সাহাবীর নাম ছিল, উসাইদ ইবনে হুযাইর ও আববাদ ইবনে বিশ্র। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।)
7/1517 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: بَعَثَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَةَ رَهْطٍ عَيْناً سَرِيَّة، وَأَمَّرَ عَلَيْهَا عَاصِمَ بنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالهَدْأَةِ ؛ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ ؛ ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْل يُقالُ لَهُمْ: بَنُو لِحيَانَ، فَنَفَرُوا لَهُمْ بِقَرِيبٍ مِنْ مِئَةِ رَجُلٍ رَامٍ، فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ، فَلَمَّا أَحَسَّ بِهِمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ، لَجَأُوْا إِلَى مَوْضِعٍ، فَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ، فَقَالُوا: انْزِلُوا فَأَعْطُوا بِأَيْدِيكُمْ وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ أَنْ لاَ نَقْتُلَ مِنْكُمْ أَحَداً . فَقَالَ عَاصِمُ بنُ ثَابِتٍ رضي الله عنه: أَيُّهَا القَوْمُ، أَمَّا أَنَا، فَلاَ أَنْزِلُ عَلَى ذِمَّةِ كَافِرٍ: اَللهم أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ، فَرَمَوهُمْ بِالنّبْلِ فَقَتلُوا عَاصِماً، وَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ عَلَى العَهْدِ وَالمِيثاقِ، مِنْهُمْ خُبَيْبٌ، وَزَيدُ بنُ الدَّثِنَةِ وَرَجُلٌ آخَرُ. فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ، فَرَبطُوهُمْ بِهَا . قَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ: هَذَا أَوَّلُ الغَدْرِ وَاللهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ إنَّ لِي بِهَؤُلاَءِ أُسْوَةً، يُرِيدُ القَتْلَى، فَجَرُّوهُ وعَالَجُوهُ، فَأَبَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ، فَقَتَلُوهُ، وَانْطَلَقُوا بِخُبَيبٍ، وَزَيْدِ بنِ الدَّثِنَةِ، حَتَّى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ ؛ فَابْتَاعَ بَنُو الحارِثِ بنِ عامِرِ بنِ نَوْفَلِ بنِ عبدِ مَنَافٍ خُبيباً، وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ يَوْمَ بَدْرٍ . فَلِبثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيراً حَتَّى أَجْمَعُوا عَلَى قَتْلِهِ، فاسْتَعَارَ مِنْ بَعْضِ بَنَاتِ الحَارثِ مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا فَأَعَارَتْهُ، فَدَرَجَ بُنَيٌّ لَهَا وَهِيَ غَافِلَةٌ حَتَّى أَتَاهُ، فَوَجَدَتهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخْذِهِ وَالمُوسَى بِيَدِهِ، فَفَزِعَتْ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ . فَقَالَ: أَتَخَشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ مَا كُنْتُ لأَفْعَلَ ذَلِكَ ! قَالَتْ: وَاللهِ مَا رَأيْتُ أَسِيراً خَيراً مِنْ خُبَيْبٍ، فَوَاللهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْماً يَأكُلُ قِطْفاً مِنْ عِنَبٍ فِي يَدِهِ وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ بِالحَدِيدِ وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرَةٍ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ رَزَقَهُ اللهُ خُبَيْباً . فَلَمَّا خَرَجُوا بِهِ مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ: دَعُونِي أُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ، فَتَرَكُوهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ فَقَالَ: وَاللهِ لَوْلاَ أَنْ تَحْسَبُوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَزِدْتُ: اَللهم أَحْصِهِمْ عَدَداً، وَاقْتُلهُمْ بِدَدَاً، وَلاَ تُبْقِ مِنْهُمْ أَحَداً . وَقَالَ:
فَلَسْتُ أُبَالِي حِيْنَ أُقْتَلُ مُسْلِماً * عَلَى أيِّ جَنْبٍ كَانَ للهِ مَصْرَعِي
وَذَلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ * يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
وَكَانَ خُبَيبٌ هُوَ سَنَّ لِكُلِّ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْراً الصَّلاَةَ . وَأَخْبَرَ - يَعنِي: النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم - أَصْحَابَهُ يَوْمَ أُصِيبُوا خَبَرَهُمْ، وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمِ بنِ ثَابِتٍ رضي الله عنه حِيْنَ حُدِّثُوا أَنَّهُ قُتِلَ أَنْ يُؤْتَوا بِشَيءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ، وكَانَ قَتَلَ رَجُلاً مِنْ عُظَمَائِهِمْ، فَبَعَثَ اللهُ لِعَاصِمٍ مِثْلَ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ فَحَمَتْهُ مِنْ رُسُلِهِمْ، فَلَمْ يَقْدِرُوا أَنْ يَقْطَعُوا مِنْهُ شَيْئاً . رواه البخاري
৭/১৫১৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মুশরিকদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য) আসেম ইবনে সাবেত আনসারীর নেতৃত্বে একটি গুপ্তচরের দল কোথাও পাঠালেন। যেতে যেতে তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদ্আহ নামক স্থানে পৌঁছলে হুযায়ল গোত্রের একটি শাখা বানী লিহইয়ানের নিকট তাঁদের আগমনের কথা জানিয়ে দেওয়া হল। এ সংবাদ পাওয়ার পর তারা প্রায় একশজন তীরন্দাজ সমভিব্যাহারে তাঁদের প্রতি ধাওয়া করল। দলটি তাদের (মুসলিম গোয়েন্দা দলের) পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগল। আসেম ও তাঁর সাথীগণ বুঝতে পেরে একটি (উঁচু) জায়গায় (পাহাড়ে) আশ্রয় নিলেন। এবার শত্রুদল তাঁদেরকে ঘিরে ফেলল এবং বলল, ‘নেমে এসে আত্মসমর্পণ কর, তোমাদের জন্য (নিরাপত্তার) প্রতিশ্রুতি রইল; তোমাদের কাউকে আমরা হত্যা করব না।’ আসেম ইবন সাবেত বললেন, ‘আমি কোন কাফেরের প্রতিশ্রুতিতে আশ্বস্ত হয়ে এখান থেকে অবতরণ করব না। হে আল্লাহ! আমাদের এ সংবাদ তোমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পৌঁছিয়ে দাও।’ অতঃপর তারা মুসলিম গোয়েন্দা-দলের প্রতি তীর বর্ষণ করতে শুরু করল। তারা আসেমকে শহীদ করে দিল। আর তাঁদের মধ্যে তিনজন তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী নেমে এলে। তাঁরা হলেন, খুবাইব, যায়দ ইবন দাসিনাহ ও অন্য একজন (আব্দুল্লাহ ইবন ত্বারিক)। অতঃপর তারা তাঁদেরকে কাবু করে ফেলার পর নিজেদের ধনুকের তার খুলে তার দ্বারা তাঁদেরকে বেঁধে ফেলল। এ দেখে তাঁদের সাথে তৃতীয় সাহাবী (আব্দুল্লাহ) বললেন, ‘এটা প্রথম বিশ্বাসঘাতকতা। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাব না। ঐ শহীদগণই আমার আদর্শ।’ কিন্তু তারা তাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য বহু টানা-হেঁচড়া করল এবং বহু চেষ্টা করল। কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে যেতে অস্বীকার করলেন। অবশেষে কাফেরগণ তাঁকে শহীদ করে দিল এবং খুবাইব ও যায়দ ইবন দাসিনাকে বদর যুদ্ধের পরে মক্কার বাজারে গিয়ে বিক্রি করে দিল। বনী হারেস ইবন আমের ইবন নাওফাল ইবন আব্দে মানাফ গোত্রের লোকেরা খুবাইবকে ক্রয় করে নিলো। আর খুবাইব বদর যুদ্ধের দিন হারেসকে হত্যা করেছিলেন। তাই তিনি তাদের নিকট বেশ কিছুদিন বন্দী অবস্থায় কাটালেন। অবশেষে তারা তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে একমত হল। একদা তিনি নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার জন্য হারেসের কোন এক কন্যার নিকট থেকে একখানা ক্ষুর চাইলেন। সে তাঁকে তা দিল। সে অন্যমনস্ক থাকলে তার একটি শিশু বাচ্চা (খেলতে খেলতে) তাঁর নিকট চলে গেল। অতঃপর সে খুবাইবকে দেখল যে, তিনি বাচ্চাটাকে নিজের উরুর উপর বসিয়ে রেখেছেন এবং ক্ষুরটি তাঁর হাতে রয়েছে। এতে সে ভীষণভাবে ঘাবড়ে গেল। খুবাইব তা বুঝতে পেরে বললেন, ‘একে হত্যা করে ফেলব ভেবে তুমি কি ভয় পাচ্ছ? আমি তা করব না।’
(পরবর্তী কালে মুসলিম হওয়ার পর) হারেসের উক্ত কন্যা বর্ণনা করেন যে, ‘আল্লাহর কসম! আমি খুবাইব অপেক্ষা উত্তম বন্দী আর কখনও দেখিনি। আল্লাহর কসম! আমি তাঁকে একদিন আঙ্গুরের থোকা থেকে আঙ্গুর খেতে দেখেছি। অথচ তখন মক্কায় কোন ফলই ছিল না। অধিকন্তু তিনি তখন লোহার শিকলে আবদ্ধ ছিলেন। এ আঙ্গুর তাঁর জন্য আল্লাহর তরফ থেকে প্রদত্ত রিয্ক ছাড়া আর কিছুই নয়।’
অতঃপর তাঁকে হত্যা করার জন্য যখন হারামের বাইরে নিয়ে গেল, তখন তিনি তাদেরকে বললেন, ‘আমাকে দু’ রাকআত নামায আদায় করার সুযোগ দাও।’ সুতরাং তারা তাঁকে ছেড়ে দিল এবং তিনি দু’ রাকআত নামায আদায় করলেন। (নামায শেষে তিনি তাদেরকে) বললেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছি, তোমরা যদি এ কথা মনে না করতে, তাহলে আমি (নামাযকে) আরও দীর্ঘায়িত করতাম।’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে গুণে রাখ, তাদেরকে বিক্ষিপ্তভাবে ধ্বংস কর এবং তাদের মধ্যে কাউকেও বাকী রেখো না।
তারপর তিনি আবৃত্তি করলেন,
‘যেহেতু আমি মুসলিম হিসাবে মৃত্যুবরণ করছি তাই আমার কোন পরোয়া নেই
আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কোন পার্শে আমি লুটিয়ে পড়ি।
আমি যেহেতু আল্লাহর পথেই মৃত্যুবরণ করছি,
আর তিনি ইচ্ছা করলে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে বরকত দান করতে পারেন।’
খুবাইবই প্রথম ছিলেন, যিনি প্রত্যেক সেই মুসলিমের জন্য (হত হওয়ার পূর্বে দুই রাকআত) নামায সুন্নত করে যান, যাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়।
এদিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিবর্গকে সেই দিনই তাঁদের খবর জানালেন, যেদিন তাঁদেরকে হত্যা করা হয়।
অপর দিকে কুরাইশের কিছু লোক আসেম ইবন সাবেতের খুন হওয়া শুনে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর মৃতদেহ থেকে পরিচিত কোন অংশ নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠিয়ে দিল। আর তিনি বদর যুদ্ধের দিন তাদের একজন বড় নেতাকে হত্যা করেছিলেন। তখন আল্লাহ মেঘের মত এক ঝাঁক মৌমাছি পাঠিয়ে দিলেন; যা তাদের প্রেরিত লোকদের হাত থেকে আসেমের লাশকে রক্ষা করল। সুতরাং তারা তাঁর দেহ থেকে কোন অংশ কেটে নিতে সক্ষম হল না। (বুখারী)
এ পরিচ্ছেদে আরও অন্যান্য বহু সহীহ হাদিস রয়েছে, যার কিছু এই কিতাবের যথাস্থানে উল্লিখিত হয়েছে। যেমন সেই কিশোরের হাদিস, যে একজন পাদ্রী ও জাদুকরের কাছে যাতায়াত করত, জুরাইজের হাদিস, গুহার মুখে পাথর চাপা পড়া তিন গুহা-বন্দীর হাদিস, সেই সৎলোকের হাদিস, যিনি মেঘ থেকে আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলেন, ‘অমুকের বাগানে পানি বর্ষণ কর’ ইত্যাদি। এ পরিচ্ছেদের দলীল প্রচুর ও প্রসিদ্ধ। আর আল্লাহই তওফীকদাতা।
8/1518 وعَنِ ابنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: مَا سَمِعْتُ عُمَرَ رضي الله عنه يَقُوْلُ لِشَيءٍ قَطُّ: إِنِّي لأَظُنُّهُ كَذَا، إِلاَّ كَانَ كَمَا يَظُنُّ . رواه البخاري
৮/১৫১৮। ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখনই কোন বিষয়ে আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বলতে শুনতাম, ‘আমার মনে হয়, এটা এই হবে’ তখনই (দেখতাম) বাস্তবে তাই হত; যা তিনি ধারণা করতেন!” (বুখারী)
كِتَابُ الْأُمُوْرِ الْمَنْهِيِّ عَنْهَا
অধ্যায় (১৭): নিষিদ্ধ বিষয়াবলী
254- بَابُ تَحْرِيْمِ الْغِيْبَةِ وَالْأَمْرِ بِحِفْظِ اللِّسَانِ
পরিচ্ছেদ - ২৫৪: গীবত (পরনিন্দা) নিষিদ্ধ এবং বাক্ সংযমের
নির্দেশ ও গুরুত্ব
মহান আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَۚ إِنَّ ٱللَّهَ تَوَّابٞ رَّحِيمٞ ١٢ ﴾ (الحجرات: ١٢)
অর্থাৎ তোমরা একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা (গীবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করতে চাইবে? বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে ঘৃণাই কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (সূরা হুজুরাত ১২ আয়াত)
তিনি বলেছেন,
﴿ وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦ ﴾ (الاسراء: ٣٦)
অর্থাৎ যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইয়ো না। নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাইল ৩৬ আয়াত)
তিনি আরও বলেছেন, ﴿ مَّا يَلۡفِظُ مِن قَوۡلٍ إِلَّا لَدَيۡهِ رَقِيبٌ عَتِيدٞ ١٨ ﴾ (ق: ١٨)
অর্থাৎ মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে (তা লিপিবদ্ধ করার জন্য) তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে। (সূরা ক্বাফ ১৮ আয়াত)
জেনে রাখুন যে, যে কথায় উপকার আছে বলে স্পষ্ট হয়, সে কথা ছাড়া অন্য সব (অসঙ্গত) কথা হতে নিজ জিহ্বাকে সংযত রাখা প্রত্যেক ভারপ্রাপ্ত মুসলিম ব্যক্তির উচিত। যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা দুটোই সমান, সেখানে চুপ থাকাটাই সুন্নত। কেননা, বৈধ কথাবার্তাও অনেক সময় হারাম অথবা মাকরূহ পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। অধিকাংশ এরূপই ঘটে থাকে। আর (বিপদ ও পাপ থেকে) নিরাপত্তার সমতুল্য কোন বস্তু নেই।
1/1519 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَاليَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْراً أَوْ لِيَصْمُتْ». متفق عَلَيْهِ
১/১৫১৯। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।” (বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদিসে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, উপকারী কথা ছাড়া কোন কথা বলা উচিত নয়। অর্থাৎ সেই কথা যার উপকারিতা স্পষ্ট। পক্ষান্তরে যে কথার উপকারিতা সম্বন্ধে সন্দেহ হয়, সে কথা বলা উচিত নয়।
2/1520 وَعَنْ أَبي مُوسَى رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَيُّ المُسْلمِينَ أَفْضَلُ ؟ قَالَ: «مَنْ سَلِمَ المُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ». متفق عَلَيْهِ
২/১৫২০। আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! সর্বোত্তম মুসলিম কে?’ তিনি বললেন, “যার জিহ্বা ও হাত থেকে মুসলিমরা নিরাপদ থাকে।” (মুসলিম)
3/1521 وَعَنْ سَهْلِ بنِ سَعدٍ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنَّةَ». متفق عَلَيْهِ
৩/১৫২১। সাহাল ইবনে সায়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (অঙ্গ জিভ) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (অঙ্গ গুপ্তা-ঙ্গ) সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেবে, আমি তার জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব।” (বুখারী)
4/1522 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّه سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ: «إنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا إِلَى النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ». متفق عَلَيْهِ
৪/১৫২২। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেন যে, “মানুষ চিন্তা-ভাবনা না করে এমন কথাবার্তা বলে ফেলে, যার দ্বারা তার পদস্খলন ঘ’টে পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যবর্তী দূরত্ব থেকে বেশি দূরত্ব দোযখে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী, মুসলিম)
5/1523 وَعَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ الله تَعَالَى مَا يُلْقِي لَهَا بَالاً يَرْفَعُهُ اللهُ بِهَا دَرَجَاتٍ، وَإِنَّ العَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلَمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ تَعَالَى لاَ يُلْقِي لَهَا بَالاً يَهْوِيْ بِهَا فِي جَهَنَّمَ». رواه البخاري
৫/১৫২৩। উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষজনক এমন কথা অন্যমনস্ক হয়ে বলে ফেলে, যার ফলে আল্লাহ তার মর্যাদা উন্নীত করে দেন। আবার কখনো বান্দা অন্যমনস্ক হয়ে আল্লাহর অসন্তোষজনক এমন কথা বলে ফেলে, যার ফলে সে জাহান্নামে গিয়ে পতিত হয়।” (বুখারী)
6/1524 وَعَنْ أَبي عَبدِ الرَّحْمَانِ بِلاَلِ بنِ الحَارِثِ المُزَنِيِّ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ تَعَالَى مَا كَانَ يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ اللهُ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ إِلَى يَومِ يَلْقَاهُ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ مَا كَانَ يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ الله لَهُ بِهَا سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ يَلْقَاهُ». رواه مالك في المُوَطَّأ، والترمذي، وقال: «حديث حسن صحيح
৬/১৫২৪। আবূ আব্দুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুযানী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মানুষ আল্লাহ তা‘আলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তাঁর সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন।” (মুঅত্তা মালেক, তিরমিযী, হাসান সহীহ)
7/1525 وَعَنْ سُفيَانَ بنِ عَبدِ اللهِ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ حَدِّثنِي بِأَمْرٍ أَعْتَصِمُ بِهِ قَالَ: قلْ: رَبِّيَ اللهُ ثُمَّ اسْتَقِمْ» قُلْتُ: يَا رَسُول اللهِ، مَا أَخْوَفُ مَا تَخَافُ عَلَيَّ ؟ فَأَخَذَ بِلِسَانِ نَفْسِهِ، ثُمَّ قَالَ: «هَذَا» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
৭/১৫২৫। সুফিয়ান ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন কথা বাতলে দিন, যা মজবুত-ভাবে ধরে রাখব।’ তিনি বললেন, “তুমি বল, আমার রব আল্লাহ, অতঃপর তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাক।” আমি পুনরায় নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমার জন্য আপনি কোন জিনিসকে সব চাইতে বেশি ভয় করেন?’ তিনি স্বীয় জিহ্বাকে (স্বহস্তে) ধারণ-পূর্বক বললেন, “এটাকে।” (তিরমিযী হাসান সহীহ)
8/1526 وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَا تُكْثِرُوْا الْكَلَامَ بِغَيْرِ ذِكْرِ اللهِ، فَإِنَّ كَثْرَةَ الْكَلَامِ بِغَيْرِ ذِكْرِ اللَّه تَعَالىٰ قَسْوَةٌ لِلْقَلْبِ، وَإِنَّ أبْعَدَ النَّاسِ مِنَ اللهِ القَلْبُ القَاسِي» . رواه الترمذي .
৮/১৫২৬। আবদুল্লাহ ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর যিকির ভিন্ন অধিক কথা বলো না। কেননা আল্লাহ তা‘আলার যিকির শূন্য অধিক কথা বার্তা অন্তরকে শক্ত করে ফেলে আর শক্ত অন্তরের লোক আল্লাহ থেকে সবচাইতে দূরে। (তিরমিযি)
9/1527 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «مَنْ وَقَاهُ اللهُ شَرَّ مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ، وَشَرَّ مَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ دَخَلَ الجَنَّةَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
৯/১৫২৭। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তার দুই চোয়ালের মধ্যস্থিত অঙ্গ (জিহ্বা) ও দু’পায়ের মাঝখানের অঙ্গ (লজ্জা-স্থান)এর ক্ষতি থেকে মুক্ত রাখবেন, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী হাসান)
10/1528 وَعَنْ عُقبَةَ بنِ عَامرٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ مَا النَّجَاةُ ؟ قَالَ: «أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ» . رواه الترمذي، وقال: حديث حسن
১০/১৫২৮। উক্ববাহ ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! কিসে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব?’ তিনি বললেন, “তুমি নিজ রসনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখ। তোমার ঘর তোমার জন্য প্রশস্ত হোক। (অর্থাৎ অবসর সময়ে নিজ গৃহে অবস্থান কর।) আর নিজ পাপের জন্য ক্রন্দন কর।” (তিরমিযী হাসান)
11/1529 وَعَنْ أَبي سَعِيدٍ الخُدرِي رضي الله عنه، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ، فَإِنَّ الأَعْضَاءَ كُلَّهَا تَكْفُرُ اللِّسانَ، تَقُولُ: اتَّقِ اللهَ فِينَا، فَإِنَّما نَحنُ بِكَ ؛ فَإِنِ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا، وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا» . رواه الترمذي
১১/১৫২৯। আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত বিনীতভাবে নিবেদন করে যে, ‘তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ, আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সাথেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা সরল থাক, তাহলে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন কর, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব।” (তিরমিযী)
12/1530 وَعَنْ مُعَاذٍ رضي الله عنه قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَخْبِرْني بِعَمَلٍ يُدْخِلُني الجَنَّةَ وَيُبَاعِدُنِي مِنَ النَّارِ ؟ قَالَ: «لَقَدْ سَأَلتَ عَنْ عَظِيمٍ، وَإِنَّهُ لَيَسِيرٌ عَلَى مَنْ يَسَّرَهُ اللهُ تَعَالَى عَلَيْهِ: تَعْبُدُ اللهَ لاَ تُشْرِكُ بِهِ شَيْئاً، وَتُقِيمُ الصَّلاَةَ، وَتُؤتِي الزَّكَاةَ، وَتَصُومُ رَمَضَانَ، وَتَحُجُّ البَيْتَ» ثُمَّ قَالَ: «أَلاَ أَدُلُّكَ عَلَى أَبْوَابِ الخَيْرِ ؟ الصَّوْمُ جُنَّةٌ، وَالصَّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النَّارَ، وَصَلاَةُ الرَّجُلِ مِنْ جَوْفِ اللَّيْلِ» ثُمَّ تَلاَ: ﴿ تَتَجَافَىٰ جُنُوبُهُمۡ عَنِ ٱلۡمَضَاجِعِ ﴾ حَتَّى بَلَغَ ﴿ يَعۡمَلُونَ ﴾ [السجدة: ١٦، ١٧] ثُمَّ قَالَ: «أَلاَ أُخْبِرُكَ بِرَأْسِ الأَمْرِ، وَعَمُودِهِ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ» قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «رَأسُ الأمْرِ الإسْلامُ، وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ، وَذِرْوَةِ سِنَامِهِ الجِهادُ» ثُمَّ قَالَ: «أَلاَ أُخْبِرُكَ بِمِلاَكِ ذَلِكَ كُلِّهِ !» قُلْتُ: بلَى يَا رَسُولَ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ وَقَالَ: «كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُوْنَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ ؟ فَقَالَ: «ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ! وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ إِلاَّ حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ ؟». رواه الترمذي، وقال: حديث حسن صحيح
১২/১৫৩০। মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাকে এমন আমল বাতলে দেন, যা আমাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে।’ তিনি বললেন, “তুমি বিরাট (কঠিন) কাজ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে। তবে এটা তার পক্ষে সহজ হবে, যার পক্ষে মহান আল্লাহ সহজ করে দেবেন। (আর তা হচ্ছে এই যে,) তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার কোন অংশী স্থাপন করবে না। নামায প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত দেবে, মাহে রমযানের রোযা পালন করবে এবং কাবা গৃহের হজ্জ পালন করবে।” পুনরায় তিনি বললেন, “তোমাকে কল্যাণের দ্বারসমূহ বাতলে দেব না কি? রোযা ঢাল স্বরূপ, সদকা গুনাহ নিশ্চিহ্ন করে; যেমন পানি আগুনকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। আর মধ্য রাত্রিতে মানুষের নামায।” অতঃপর তিনি এই আয়াত দু’টি পড়লেন- যার অর্থ, “তারা শয্যা ত্যাগ করে, আশায় বুক বেধে এবং আশংকায় ভীতি-বিহ্বল হয়ে তাদের প্রতিপালককে আহ্বান করে এবং আমি তাদেরকে যে সব জীবিকা দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে থাকে। তাদের সৎকর্মের পুরস্কার স্বরূপ তাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর যা কিছু লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, কেউ তা অবগত নয়।” (সূরা সেজদা ১৬-১৭ আয়াত) তারপর বললেন, “আমি তোমাকে সব বিষয়ের (দ্বীনের) মস্তক, তার খুঁটি, তার উচ্চতম চূড়া বাতলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বাতলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “বিষয়ের মস্তক হচ্ছে ইসলাম, তার স্তম্ভ হচ্ছে নামায এবং তার উচ্চতম চূড়া হচ্ছে জিহাদ।” পুনরায় তিনি প্রশ্ন করলেন, “আমি তোমাকে সে সবের মূল সম্বন্ধে বলে দেব না কি?” আমি বললাম, ‘অবশ্যই বলে দিন, হে আল্লাহর রসূল!’ তখন তিনি নিজ জিভটিকে ধরে বললেন, “তোমার মধ্যে এটিকে সংযত রাখ।” মু‘আয বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমরা যে কথা বলি তাতেও কি আমাদেরকে হিসাব দিতে হবে?’ তিনি বললেন, “তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক হে মুআয! মানুষকে তাদের নিজেদের জিভ-ঘটিত পাপ ছাড়া অন্য কিছু কি তাদের মুখ থুবড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে?” (তিরমিযী, হাসান সহীহ)
13/1531 وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أنَّ رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ ؟» قَالُوا: اَللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ: أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ مَا تَقُوْلُ فَقَدْ بَهَتَّهُ». رواه مسلم
১৩/১৫৩১। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক বর্ণিত, একদা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা কি জান, গীবত কাকে বলে?” লোকেরা বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রসূল অধিক জানেন।’ তিনি বললেন, “তোমার ভাই যা অপছন্দ করে, তাই তার পশ্চাতে আলোচনা করা।” বলা হল, ‘আমি যা বলি, তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে, তাহলে আপনার রায় কি? (সেটাও কি গীবত হবে?)’ তিনি বললেন, “তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তার গীবত করলে। আর তুমি যা (সমালোচনা করে) বললে, তা যদি তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তাকে অপবাদ দিলে।” (মুসলিম)
14/1532. وَعَنْ أَبي بَكْرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فِي خُطْبَتِهِ يَوْمَ النَّحْرِ بِمِنًى فِي حَجَّةِ الوَدَاعِ: «إِنَّ دِمَاءَكُمْ، وَأَمْوَالَكُمْ، وَأَعْرَاضَكُمْ، حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِي شَهْرِكُمْ هَذَا، فِي بَلَدِكُمْ هَذَا، أَلاَ هَلْ بَلَّغْتُ». متفق عَلَيْهِ
১৪/১৫৩২। আবূ বাকরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজ্জে মিনায় ভাষণ দানকালে বলেছেন, “নিশ্চয় তোমাদের রক্ত, তোমাদের মাল এবং তোমাদের সম্ভ্রম তোমাদের (আপসের মধ্যে) এ রকমই হারাম, যেমন তোমাদের এ দিনের সম্মান তোমাদের এ মাসে এবং তোমাদের এ শহরে রয়েছে। শোন! আমি কি পৌঁছে দিলাম?” (বুখারী-মুসলিম)
15/1533 وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قُلْتُ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم: حَسْبُكَ مِنْ صَفِيَّةَ كَذَا وَكَذَا . قَالَ بَعْضُ الرُّوَاةِ: تَعْنِي قَصِيرَةً، فقالَ: «لَقَدْ قُلْتِ كَلِمَةً لَوْ مُزِجَتْ بِمَاءِ البَحْرِ لَمَزَجَتْهُ!» قَالَتْ: وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَاناً فَقَالَ: «مَا أُحِبُّ أنِّي حَكَيْتُ إِنْسَاناً وَإِنَّ لِي كَذَا وَكَذَا». رواه أَبُو داود والترمذي، وقال: حديث حسن صحيح .
১৫/১৫৩৩। আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বললাম, ‘আপনার জন্য সাফিয়ার এই এই হওয়া যথেষ্ট।’ (কোন কোন বর্ণনাকারী বলেন, তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, সাফিয়া বেঁটে।) এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমাকে) বললেন, “তুমি এমন কথা বললে, যদি তা সমুদ্রের পানিতে মিশানো হয়, তাহলে তার স্বাদ পরিবর্তন করে দেবে!”
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একদা তাঁর নিকট একটি লোকের পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করলাম। তিনি বললেন, “কোন ব্যক্তির পরিহাসমূলক ভঙ্গি নকল করি আর তার বিনিময়ে এত এত পরিমাণ ধনপ্রাপ্তি হই, এটা আমি আদৌ পছন্দ করি না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান সহীহ)
مَزَجَته এর ভাবার্থ হল, তার সাংঘাতিক দুর্গন্ধ ও নিকৃষ্টতার কারণে সমুদ্রের পানিতে মিশে তার স্বাদ অথবা গন্ধ পরিবর্তন করে দেয়। এই উপমাটি গীবত নিষিদ্ধ হওয়া ও তা থেকে সতর্কীকরণের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রভাবশালী ও পরিণত বাক্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤ ﴾ (النجم : ٣، ٤)
অর্থাৎ (আমার নবী) মনগড়া কথা বলে না, (সে যা কিছু বলে) তা প্রত্যাদেশ-কৃত ওহী ব্যতীত আর কিছুই নয়। (সূরা নাজ্ম ৩-৪ আয়াত)
16/1534. وَعَنْ أَنسٍ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: «لَمَّا عُرِجَ بي مَرَرْتُ بِقَومٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمِشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ: مَنْ هَؤُلاَءِ يَا جِبرِيلُ؟ قَالَ: هَؤُلاَءِ الَّذِينَ يَأكُلُوْنَ لُحُومَ النَّاسِ، وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ !» . رواه أَبُو داود
১৬/১৫৩৪। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আমাকে মি‘রাজে নিয়ে যাওয়া হল, সে সময় এমন ধরনের কিছু মানুষের নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম, যাদের নখ ছিল তামার, তা দিয়ে তারা নিজেদের মুখমণ্ডল খামচে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি, প্রশ্ন করলাম, ওরা কারা? হে জিবরীল! তিনি বললেন, ওরা সেই লোক, যারা মানুষের মাংস ভক্ষণ করত ও তাদের সম্ভ্রম লুটে বেড়াত।” (আবূ দাউদ)
17/1535. وَعَنْ أَبي هُرَيرَةَ رضي الله عنه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «كُلُّ المُسْلِمِ عَلَى المُسْلِمِ حَرَامٌ: دَمُهُ وَعِرْضُهُ وَمَالُهُ» . رواه مسلم
১৭/১৫৩৫। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক মুসলিমের রক্ত, সম্ভ্রম ও ধন-সম্পদ অন্য মুসলিমের উপর হারাম।” (মুসলিম)
255- بَابُ تَحْرِيْمِ سِمَاعِ الْغِيْبَةِ
وَأَمْرِ مَنْ سَمِعَ غِيْبَةً مُحَرَّمَةً بِرَدِّهَا، وَالْإِنْكَارِ عَلٰى قَائِلِهَا
فَإِنْ عَجِزَ أَوْ لَمْ يَقْبَلْ مِنْهُ فَارَقَ ذٰلِكَ الْمَجْلِسَ إِنْ أَمْكَنَهُ
পরিচ্ছেদ - ২৫৫ : গীবতে [পরচর্চায়] অংশগ্রহণ করা হারাম। যার নিকট গীবত করা হয় তার উচিত গীবতকারীর তীব্র প্রতিবাদ করা এবং তার সমর্থন না করা। আর তাতে সক্ষম না হলে সম্ভব হলে উক্ত সভা ত্যাগ করে চলে যাওয়া
মহান আল্লাহ বলেছেন, ﴿ وَإِذَا سَمِعُواْ ٱللَّغۡوَ أَعۡرَضُواْ عَنۡهُ ٥٥ ﴾ [القصص: ٥٥]
“ওরা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন ওরা তা পরিহার করে চলে।” (সূরা কাসাস ৫৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন, ﴿ وَٱلَّذِينَ هُمۡ عَنِ ٱللَّغۡوِ مُعۡرِضُونَ ٣ ﴾ [المؤمنون : ٣]
অর্থাৎ যারা অসার ক্রিয়া-কলাপ হতে বিরত থাকে। (সূরা মু’মিনূন ৩ আয়াত)
তিনি অন্যত্র বলেছেন, ﴿إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦ ﴾ [الاسراء: ٣٦]
অর্থাৎ নিশ্চয় কর্ণ, চক্ষু ও হৃদয় ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে। (সূরা বনী ইসরাঈল ৩৬ আয়াত)
তিনি অন্য জায়গায় বলেছেন,
﴿ وَإِذَا رَأَيۡتَ ٱلَّذِينَ يَخُوضُونَ فِيٓ ءَايَٰتِنَا فَأَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ حَتَّىٰ يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيۡرِهِۦۚ وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ ٱلشَّيۡطَٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ ٱلذِّكۡرَىٰ مَعَ ٱلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٦٨ ﴾ [الانعام: ٦٨]
অর্থাৎ তুমি যখন দেখ, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে ব্যঙ্গ আলোচনায় মগ্ন হয়, তখন তুমি দূরে সরে পড়; যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে আলোচনায় প্রবৃত্ত হয় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে, তাহলে স্মরণ হওয়ার পরে তুমি অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আন‘আম ৬৮ আয়াত)
1/1536 وَعَنْ أَبِي الدَّردَاءِ رضي الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ، رَدَّ اللهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَومَ القيَامَةِ» . رواه الترمذي، وقال :[ حديث حسن ]
১/১৫৩৬। আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের সম্ভ্রম রক্ষা করবে, কিয়ামতের দিনে আল্লাহ তা'আলা জাহান্নামের আগুন থেকে তার চেহারাকে রক্ষা করবেন।’’ (তিরমিযী- হাসান)
2/1437 وَعَنْ عِتبَانَ بنِ مَالكٍ رضي الله عنه فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ المَشْهُورِ الَّذِيْ تَقَدَّمَ فِي بَابِ الرَّجَاءِ قَالَ: قَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُصَلِّي فَقَالَ: «أَيْنَ مَالِكُ بنُ الدُّخْشُمِ ؟» فَقَالَ رَجُلٌ : ذَلِكَ مُنَافِقٌ لاَ يُحِبُّ اللهَ وَلاَ رَسُولَهُ، فَقَالَ النَّبِيّ صلى الله عليه وسلم : «لاَ تَقُلْ ذَلِكَ أَلاَ تَراهُ قَدْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ يُريدُ بِذَلكَ وَجْهَ اللهِ ! وإنَّ الله قَدْ حَرَّمَ عَلَى النَّارِ مَنْ قَالَ: لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ يَبْتَغي بِذَلِكَ وَجْهَ اللهِ» . متفق عَلَيْهِ
২/১৫৩৭। ইতবান ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যা বিগত ‘আল্লাহর প্রতি আশা’ পরিচ্ছেদে বর্ণিত একটি সুদীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষ। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামায পড়ানোর উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘মালেক ইবনে দুখ্শুম কোথায়!’’ একটি লোক বলে উঠল, ‘সে তো একজন মুনাফিক; আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালবাসে না।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘ও কথা বলো না। তুমি কি মনে কর না যে, সে [কালিমাহ] ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়েছে এবং সে তার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চায়? যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার উদ্দেশ্যে [কালিমাহ] ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে, আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেন।’’ (বুখারী, মুসলিম)
3/1538 وَعَنْ كَعْبِ بنِ مَالِكٍ رضي الله عنه فِي حَدِيثِهِ الطَّوِيلِ فِي قِصَّةِ تَوْبَتِهِ وَقَدْ سَبَقَ فِي بَابِ التَّوبَةِ. قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ جَالِسٌ فِي القَومِ بِتَبُوكَ : «مَا فَعَلَ كَعْبُ بنُ مَالِكٍ ؟» فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي سَلِمَةَ: يَا رَسُولَ اللهِ! حَبَسَهُ بُرْدَاهُ وَالنَّظَرُ فِي عِطْفَيْهِ . فَقَالَ لَهُ مُعاذُ بنُ جَبَلٍ: بِئْسَ مَا قُلْتَ، وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ مَا عَلِمنَا عَلَيْهِ إِلاَّ خَيْراً، فَسَكَتَ رَسُول اللهِ صلى الله عليه وسلم . متفقٌ عَلَيْهِ
৩/১৫৩৮। কা’ব ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, যা তাওবাহ পরিচ্ছেদে ২২ নম্বরে সুদীর্ঘ হাদিস তাঁর তাওবার কাহিনী অতিবাহিত হয়েছে, তিনি বলেন, তাবূক পৌঁছে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মাঝে বসে ছিলেন, তখন আমার ব্যাপারে বললেন, ‘‘কা’ব বিন মালেকের কি হয়েছে?’’ বানু সালেমাহ [গোত্রের] একটি লোক বলে উঠল যে, ‘হে আল্লাহর রসূল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব [বাহু] দর্শন [অর্থাৎ ধন ও তার অহংকার] তাকে আটকে দিয়েছে।’ [এ কথা শুনে] মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘‘তুমি নিকৃষ্ট কথা বললে। আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রসূল! আমরা তাকে ভালই জানি।’’ সুতরাং আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব থাকলেন। (বুখারী, মুসলিম)

©somewhere in net ltd.