নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহবান করে, সৎকাজ করে এবং বলে, ‘আমি তো আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)’ তার অপেক্ষা কথায় উত্তম আর কোন্ ব্যক্তি (৪১ : ৩৩)

ইসলাম হাউস

তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আর তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়।

ইসলাম হাউস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০


কুরআন ও সুন্নাহ্‌র আলোকে জান্নাত ও জাহান্নাম
আব্দুর রহমান বিন সাঈদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী রহ.
তাহকীক: ড. সাআদ বিন আলী বিন ওহাফ আল-কাহতানী
অনুবাদ : জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদনা : ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী

ভূমিকা

الحمد لله وحده، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، نبينا محمد وعلى آله وأصحابه أجمعين، أما بعد:
জান্নাত ও জাহান্নাম সম্পর্কে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সংক্ষিপ্ত গবেষণা। এ গবেষণাটি একাধিক কিতাব ও বিভিন্ন তথ্যসূত্র থেকে এখানে একত্র করা হয়েছে এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়েছে। জান্নাত ও জাহান্নাম কাকে বলে, প্রতিটির সংজ্ঞা, গুণাগুণ এবং কিভাবে জান্নাতে প্রবেশ করা যাবে এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচা যাবে? তার উপায় ও উপকরণগুলো এখানে আলোচনায় বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।
বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ আমাদের কারোই অজানা নয়। কারণ, প্রতিটি মানুষের গন্তব্য হয় জান্নাত অথবা জাহান্নাম। এ কারণেই জান্নাত ও জাহান্নামের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া অতীব জরুরি। আমরা আল্লাহর নিকট জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।
এ বিষয়টি আলোচনা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণ হল, যে আমলগুলো জান্নাতে নিয়ে যায়, সে সব আমলসমূহের প্রতি মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং যে আমলগুলো জাহান্নাম থেকে বাঁচায় ও মুক্তি দেয়, সে সব আমলসমূহের প্রতি ভয় প্রদর্শন ও সতর্ক করা।
আমি আলোচ্য বিষয়টিকে নিম্ন লিখিত পদ্ধতিতে গবেষণা আকারে সাজিয়েছি।
প্রথম অধ্যায়: জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা ও বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নাম সমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতের সংজ্ঞা ও নামসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নামসমূহ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমানে আছে কিনা?
প্রথম আলোচনা: জান্নাত বর্তমান থাকার প্রমাণ
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নাম বর্তমান থাকার প্রমাণ
দ্বিতীয় অধ্যায়: জান্নাতীদের নেয়ামত ও জাহান্নামীদের আযাবের বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ
প্রথম আলোচনা: মানসিক নেয়ামতসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: দৈহিক নেয়ামতসমূহ
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামীদের আযাব
প্রথম আলোচনা: মানসিক শাস্তি
দ্বিতীয় আলোচনা: দৈহিক শাস্তি
তৃতীয় অধ্যায়: জান্নাতের পথ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর দয়া দ্বারা, আমল দ্বারা নয়।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামের পথ জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়।
প্রথম আলোচনা: যে সব কারণসমূহ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় আলোচনা: আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবার-পরিজনদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাবো।
সকল প্রশংসা কেবলই আল্লাহর যিনি আমাকে এ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করতে উল্লেখযোগ্য কোন বিপদের সম্মুখীন করেননি। বরং এ বিষয়ে গবেষণাটি ছিল, উপকারী ও উপযোগী। আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আমার সম্মানিত ওস্তাদের; যার নাম মুহাম্মদ আস-সুলাইম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তিনি এ গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করতে গিয়ে আমাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। আর সালাত ও সালাম নাযিল হোক নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তার পরিবার পরিজনের উপর ও তার সাহাবীদের উপর।

গবেষক
আব্দুর রহমান ইব্ন সাঈদ আল কাহতানী
[১৪২২ হিজরি সনের প্রথম দিকে গবেষণাটি সম্পন্ন করেন]



প্রথম অধ্যায়
জান্নাত ও জাহান্নামের পরিচিতি এবং নামসমূহের আলোচনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পরিচিতি ও জান্নাতের নামসমূহ:
জান্নাত: জান্নাত শব্দের আভিধানিক অর্থ বাগান। এ শব্দ থেকেই জিনান বলা হয়ে থাকে। আর আরবরা খেজুর গাছকেও জান্নাত বলে আখ্যায়িত করত( )।
মুখতার আল-কামুসে জান্নাত শব্দের অর্থ: জান্নাত অর্থ- খেজুর গাছ, বিভিন্ন ধরনের গাছ বিশিষ্ট বাগান। এর বহুবচন জিনানুন( )।
পরিভাষায় জান্নাতের সংজ্ঞা: এটি সেই ঘরের একটি ব্যাপক নাম [যে ঘরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার অনুসারীদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন] যাতে রয়েছে অফুরন্ত ও অসংখ্য নেয়ামত, অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি, অন্তহীন খুশি, আনন্দ ও চিরস্থায়ী শান্তি ( )।
জান্নাতের নামসমূহ:
জান্নাতের নাম, অর্থ ও শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে আল্লামা ইবনুল কাইয়েম রহ. বলেন, জান্নাতের সিফাতসমূহের বিবেচনায় জান্নাতের নাম একাধিক, কিন্তু জান্নাত একাধিক নয় জান্নাত একটিই। সুতরাং, এ দিকটির বিবেচনায় একাধিক নামের অর্থ অভিন্ন আর জান্নাতের সিফাতসমূহের দিক বিবেচনায় প্রতিটি নামের অর্থ ভিন্ন। অনুরূপভাবে আল্লাহর নাম, আল্লাহর কিতাবের নাম, আল্লাহর রাসূলদের নাম, আখিরাতের নাম ও জাহান্নামের নাম ইত্যাদি( )। [এগুলো সবই এক, কিন্তু সিফাত একাধিক হওয়ার কারণে এগুলোর নাম একাধিক]
জান্নাতের নামসমূহ:
১- জান্নাত: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢﴾ [النحل: ٣٢]
“জান্নাতে প্রবেশ কর, যে আমল তোমরা করতে তার কারণে” ।
২- দারুস-সালাম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَٱللَّهُ يَدۡعُوٓاْ إِلَىٰ دَارِ ٱلسَّلَٰمِ وَيَهۡدِي مَن يَشَآءُ إِلَىٰ صِرَٰطٖ مُّسۡتَقِيمٖ ٢٥﴾ [يونس: ٢٥]
“আর আল্লাহ শান্তির আবাসের দিকে আহ্বান করেন এবং যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন সরল পথের দিকে”( ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও এরশাদ করেন,
﴿۞لَهُمۡ دَارُ ٱلسَّلَٰمِ عِندَ رَبِّهِمۡۖ وَهُوَ وَلِيُّهُم بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ١٢٧ ﴾ [الانعام: ١٢٧]
“তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে শান্তির আবাস এবং তারা যে আমল করত, তার কারণে তিনি তাদের অভিভাবক”।( ) [যাবতীয় সকল বিপদ আপদ হতে এটি একটি শান্তি ও নিরাপত্তার ঘর( ).।]
৩- দারুল খুলুদ ( ): আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٖۖ ذَٰلِكَ يَوۡمُ ٱلۡخُلُودِ ٣٤ ﴾ [ق: ٣٤]
“তোমরা তাতে শান্তির সাথে প্রবেশ কর। এটাই স্থায়িত্বের দিন” ।
৪- দারুল মুকামাহ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ ٱلَّذِيٓ أَحَلَّنَا دَارَ ٱلۡمُقَامَةِ مِن فَضۡلِهِۦ لَا يَمَسُّنَا فِيهَا نَصَبٞ وَلَا يَمَسُّنَا فِيهَا لُغُوبٞ ٣٥ ﴾ [فاطر: ٣٥]
‘যিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে স্থায়ী নিবাসে স্থান দিয়েছেন, যেখানে কোন কষ্ট আমাদেরকে স্পর্শ করে না এবং যেখানে কোন ক্লান্তিও আমাদেরকে স্পর্শ করে না .’।
৫- জান্নাতুল মাওয়া: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ ١٥﴾ [النجم: ١٥]
“যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত” ।
৬- জান্নাতু আদন : আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿جَنَّٰتِ عَدۡنٍ ٱلَّتِي وَعَدَ ٱلرَّحۡمَٰنُ عِبَادَهُۥ بِٱلۡغَيۡبِۚ إِنَّهُۥ كَانَ وَعۡدُهُۥ مَأۡتِيّٗا ٦١﴾ [مريم: ٦١] .
“তা চিরস্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন গায়েবের সাথে। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদা-কৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী” ।
৭- আল ফিরদাউস: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ كَانَتۡ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلۡفِرۡدَوۡسِ نُزُلًا ١٠٧﴾ [الكهف: ١٠٧]
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস” , ।
৮- জান্নাতুন নাঈম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَهُمۡ جَنَّٰتُ ٱلنَّعِيمِ ٨﴾ [لقمان: ٨]
“নিশ্চয় যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে নিআমতপূর্ণ জান্নাত;”
৯- আল মাকামুল আমীন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, ﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١﴾ [الدخان: ٥١] ( ) ( ). “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে”,
১০- মাকয়াদু সিদকীন: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿فِي مَقۡعَدِ صِدۡقٍ عِندَ مَلِيكٖ مُّقۡتَدِرِۢ ٥٥﴾ [القمر: ٥٥]
“যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহা অধিপতির নিকটে”( ).।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামের সংজ্ঞা ও নামসমূহ:
অভিধানে نار – (নার) শব্দের অর্থ: আগুন যা মানুষ দেখতে পায়, প্রচণ্ড আগুনের তাপ অথবা এমন তাপ যা জ্বালিয়ে দেয়। আল্লাহর বাণীতে উল্লেখিত আগুনকেও نار বলা হয়ে থাকে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ﴿ٱلنَّارُ وَعَدَهَا ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۖ ٧٢﴾ [الحج: ٧٢]
“সেটা আগুন। যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন”( ) ।
আর نار শব্দের বহু বচন أنْوُرٌ - نيران - أنيار ( ).
আর পরিভাষায় نار শব্দের অর্থ: যারা আল্লাহর নাফরমানি করে তাদের জন্য যে আগুন তৈরি করে রাখা হয়েছে, তাকে نار বা জাহান্নাম বলা হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بِ‍َٔايَٰتِنَآ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٣٩﴾ [البقرة: ٣٩]
“আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে” ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿ إِنَّ ٱللَّهَ لَعَنَ ٱلۡكَٰفِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمۡ سَعِيرًا ٦٤ ﴾ [الاحزاب: ٦٤] .
“নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে লা‘নত করেছেন এবং তাদের জন্য জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত রেখেছেন”( )।
জাহান্নামের নামসমূহ: [আল্লাহর নিকট আমরা জাহান্নাম হতে আশ্রয় চাই]
১- নার: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ٱلنَّارُ وَعَدَهَا ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْۖ ٧٢﴾ [الحج: ٧٢]
“সেটা আগুন। যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন” ( ).।
২- জাহান্নাম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ إِنَّ جَهَنَّمَ كَانَتۡ مِرۡصَادٗا ٢١ ﴾ [النبا: ٢١]
“নিশ্চয় জাহান্নাম গোপন ফাঁদ”( ).।
৩- জাহীম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ وَبُرِّزَتِ ٱلۡجَحِيمُ لِمَن يَرَىٰ ٣٦ ﴾ [النازعات: ٣٦]
“আর জাহান্নামকে প্রকাশ করা হবে তার জন্য যে দেখতে পায়” ( ).।
৪-সায়ীর: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿فَرِيقٞ فِي ٱلۡجَنَّةِ وَفَرِيقٞ فِي ٱلسَّعِيرِ ٧ ﴾ [الشورى: ٧] “একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে” ।
৫-সাকার: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سَقَرُ ٢٧ لَا تُبۡقِي وَلَا تَذَرُ ٢٨ ﴾ [المدثر: ٢٧، ٢٨]
“কিসে তোমাকে জানাবে জাহান্নামের আগুন কী? এটা অবশিষ্টও রাখবে না এবং ছেড়েও দেবে না” ।
৬- হুতামা: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, ﴿ كَلَّاۖ لَيُنۢبَذَنَّ فِي ٱلۡحُطَمَةِ ٤ ﴾ [الهمزة: ٤] “কখনো নয়, অবশ্যই সে নিক্ষিপ্ত হবে হুতামা’য়” ।
৭- হাবিয়া: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿وَأَمَّا مَنۡ خَفَّتۡ مَوَٰزِينُهُۥ ٨ فَأُمُّهُۥ هَاوِيَةٞ ٩ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا هِيَهۡ ١٠ نَارٌ حَامِيَةُۢ ١١﴾ [القارعة: ٨، ١١]
“আর যার পাল্লা হালকা হবে, তার আবাস হবে হাবিয়া। আর তোমাকে কিসে জানাবে হাবিয়া কি? প্রজ্বলিত অগ্নি” ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
জান্নাত ও জাহান্নাম বর্তমান আছে কিনা? এবং কোথায় আছে?
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাত জাহান্নাম বিদ্যমান থাকার প্রমাণ
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, মিরাজের ঘটনায় তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ হতে বর্ণনা করেন।
«ثم انطلق بي جبريل حتى انتهى بي إلى سدرة المنتهى، فغشيها ألوانٌ لا أدري ما هي، قال: ثم دخلت الجنة، فإذا فيها جنابذ( ) اللؤلؤ، وإذا ترابها المسك » ( ).
“তারপর জিবরীল আ. আমাকে নিয়ে চলতে থাকে। সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছলে তাকে কতক রঙ এসে ডেকে ফেলে। আমি বুঝতে পারিনি এটি কি? তিনি বলেন, ‘তারপর আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম’। জান্নাতকে আমি দেখতে পেলাম, মণি-মুক্তার গম্বুজ। আরও দেখতে পেলাম, জান্নাতের মাটি হল, মিসক”।
وعن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «لـَمّا خلق الله الجنة والنار أرسل جبرائيل إلى الجنة، فقال: انظر إليها، وإلى ما أعددت لأهلها فيها، فجاء فنظر إليها، وإلى ما أعد الله لأهلها فيها... ثم قال: اذهب إلى النار فانظر إليها، وإلى ما أعددت لأهلها فيها، فنظر إليها فإذا هي يركب بعضها بعضاً.. »
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন, “আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করার পর জিবরীল আলাইহিস সালামকে জান্নাতে পাঠান এবং বলেন, তুমি জান্নাতের দিকে তাকাও এবং দেখ আমি জান্নাতে জান্নাতিদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছি। তারপর সে জান্নাতে প্রবেশ করে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতিদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছেন তা দেখেন। তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, তুমি এখন জাহান্নামে প্রবেশ কর, তারপর সে জাহান্নামে প্রবেশ করল, আল্লাহ বললেন, দেখ আমি জাহান্নামীদের জন্য কি কি তৈরি করে রেখেছি। তারপর সে জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখে জাহান্নামের এক অংশ অপর অংশের উপর দাপাদাপি করছে” ।
ইমাম তাহাবী রহ. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাত ও জাহান্নাম আল্লাহর মাখলুক, কখনো তা ধ্বংস হবে না এবং ক্ষয় হবে না। কারণ, আল্লাহ মাখলুককে সৃষ্টির পূর্বে জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করেন। আর জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টির জন্য তিনি মাখলুক হতে অধিবাসী সৃষ্টি করেন। যাদের তিনি জান্নাত দেবেন তা হবে তার পক্ষ হতে তাদের প্রতি অনুগ্রহ। আর যাদের তিনি জাহান্নামে দেবেন তা হবে তার প্রতি আল্লাহর পক্ষ হতে ইনসাফ। প্রত্যেকেই তার সুবিধা অনুযায়ী আমল করবে এবং তাকে যে জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে সে দিকে ধাবিত হবে। আর ভালো ও মন্দ বান্দার উপর নির্ধারিত ( ).।
বর্তমানের জান্নাত বিদ্যমান থাকার উপর হাদিস দ্বারা প্রমাণ:
কা’ব ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« إنما نسمة المؤمن طائرٌ يعْلُقُ في شجر الجنة، حتى يرجعه الله تبارك وتعالى إلى جسده يوم يبعثه »
“মুমিনের আত্মা জান্নাতে পাখির মত, জান্নাতের গাছের সাথে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত ঝুলতে থাকবে। তারপর যখন কিয়ামতের দিন সমগ্র মানুষকে পুনরায় জীবন দান করা হবে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদের রুহকে তাদের দেহে আবার ফেরত দেবেন” ।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জান্নাত ও জাহান্নামের অবস্থান:
জান্নাতের অবস্থান: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡأَبۡرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ ١٨ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ ١٩﴾ [المطففين: ١٨، ١٩]
“কখনো নয়, নিশ্চয় নেককার লোকদের আমলনামা থাকবে ইল্লিয়্যীনে । কিসে তোমাকে জানাবে ‘ইল্লিয়্যীন’ কী” ( )?
আব্দুল্লাহ ইবন‌্ আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ বলেন, ‘ইল্লিয়্যীন’ অর্থ জান্নাত, অথবা সপ্তম আকাশে আরশের নিচে অবস্থিত একটি স্থান( )।
ইমাম ইবন্ কাসীর রহ. আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ইল্লিয়্যিন শব্দটি ‘উলু শব্দ হতে নির্গত। যখন কোন বস্তু উপরে অবস্থান করে, তখন তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার মহত্ব বাড়তে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার বড়ত্ব ও মহত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ﴿وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ ١٩﴾ [المطففين: ١٩] “কিসে তোমাকে জানাবে ‘ইল্লিয়্যীন’ কী”?( )
ইমাম ইবন্ কাসির রহ. আল্লাহর বাণী- ﴿وَفِي ٱلسَّمَآءِ رِزۡقُكُمۡ وَمَا تُوعَدُونَ ٢٢﴾ [الذاريات: ٢٢] “আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক ও প্রতিশ্রুত সব কিছু” ( ) এর তাফসীরে বলেন, এখানে তোমাদের রিযিক অর্থ বৃষ্টি আর তোমাদের যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার অর্থ হল, জান্নাত( ), ( )।
জাহান্নামের স্থান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ ٧ وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ ٨ كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ ٩ ﴾ [المطففين: ٧، ٩]
“কখনো নয়, নিশ্চয় পাপাচারীদের ‘আমলনামা সিজ্জীনে। কিসে তোমাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? লিখিত কিতাব”। এ বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর রহ., ইমাম বগবী রহ. ও ইমাম ইবনে রজব রহ. একাধিক হাদিস উল্লেখ করেন, তাতে তিনি বলেন, সিজ্জীন হল, সপ্ত যমীনের নিচে। অর্থাৎ, যেমনি-ভাবে জান্নাত সাত আসমানের উপরে অনুরূপভাবে জাহান্নাম সপ্ত যমীনের নীচে একটি স্থান( )। » « اللهم إنا نسألك الجنة، ونعوذ بك من النار. [“হে আল্লাহ আমরা তোমার নিকট জান্নাত চাই এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় চাই”]( )।


দ্বিতীয় অধ্যায়:
জান্নাতীদের নেয়ামত ও জাহান্নামীদের আযাবের বর্ণনা
প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ।
প্রথম আলোচনা- জান্নাতীদের মানসিক শান্তি
দ্বিতীয় আলোচনা- জান্নাতীদের দৈহিক শান্তি।
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নামীদের আযাব বা শাস্তি
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামীদের মানসিক আযাব বা শাস্তি
দ্বিতীয় আলোচনা: জাহান্নামীদের দৈহিক আযাব বা শাস্তি।
প্রথম পরিচ্ছেদ:
জান্নাতীদের নেয়ামতসমূহ
প্রথম প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত:
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن الله تبارك وتعالى يقول لأهل الجنة: يا أهل الجنة! فيقولون: لبيك ربنا وسعديك، والخير في يديك، فيقول: هل رضيتم؟! فيقولون: وما لنا لا نرضى يا ربِّ، وقد أعطيتنا ما لم تُعطِ أحداً من خلقك، فيقول: ألا أعطيكم أفضل من ذلك؟! فيقولون: وأي شيء أفضل من ذلك؟ فيقول: أُحلُّ عليكم رضواني، فلا أسخط عليكم بعده أبداً»

“আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীদের ডেকে বলবেন, হে জান্নাতবাসী! উত্তরে তারা বলবেন: হে রব, ‘আমরা তোমার দরবারে উপস্থিত, আমরা তোমার নিকট সফলতা কামনা করছি, যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে’ তখন আল্লাহ তাদের বলবেন, তোমরা কি আমার প্রতি রাজি-খুশি? তারা বলবে, হে আমাদের রব রাজি-খুশি না হওয়ার কি আছে? তুমি আমাদের এমন সবকিছু দিয়েছ, যা তুমি তোমার আর কোন মাখলুককে দাওনি। তারপর আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাদের এর চেয়েও উত্তম কিছু দান করব? তখন তারা বলবে, কোন জিনিস এর চেয়ে উত্তম? তখন আল্লাহ ঘোষণা দেবেন, “তোমাদের প্রতি আমার সন্তুষ্টি অবধারিত, আমি আর কখনো তোমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হব না” , ।
জান্নাতীদের দ্বিতীয় প্রকার নেয়ামত: মনস্তাত্বিক নেয়ামত ও শান্তি:
এক- জান্নাতের নহরসমূহ: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿مَّثَلُ ٱلۡجَنَّةِ ٱلَّتِي وُعِدَ ٱلۡمُتَّقُونَۖ فِيهَآ أَنۡهَٰرٞ مِّن مَّآءٍ غَيۡرِ ءَاسِنٖ وَأَنۡهَٰرٞ مِّن لَّبَنٖ لَّمۡ يَتَغَيَّرۡ طَعۡمُهُۥ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ خَمۡرٖ لَّذَّةٖ لِّلشَّٰرِبِينَ وَأَنۡهَٰرٞ مِّنۡ عَسَلٖ مُّصَفّٗىۖ وَلَهُمۡ فِيهَا مِن كُلِّ ٱلثَّمَرَٰتِ وَمَغۡفِرَةٞ مِّن رَّبِّهِمۡۖ كَمَنۡ هُوَ خَٰلِدٞ فِي ٱلنَّارِ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥﴾ [محمد: ١٥]
“মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হল, তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নহরসমূহ এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা। তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে” ?
আয়াতের তাফসীর: মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের ওয়াদা দেয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত অর্থাৎ গুণাগুণ হল- তাতে রয়েছে নির্মল পানির নহরসমূহ, দুধের ঝর্ণাধারা, যার স্বাদ পরিবর্তিত হয়নি। এ কথার অর্থ, পঁচে গলে যার স্বাদ পরিবর্তন হয়নি এবং দুর্গন্ধ ছড়ায়নি।
‘এবং আছে পরিশোধিত মধুর ঝর্ণাধারা’ তাকে পা পৃষ্ট করেনি এবং ইতঃপূর্বে হাত বদল হয়নি। ‘তথায় তাদের জন্য থাকবে সব ধরনের ফলমূল আর তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা। তারা কি তাদের ন্যায়, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে’ অর্থাৎ যারা এ ধরনের নেয়ামতসমূহের মধ্যে থাকবে তারা কি ওদের মত হবে, যারা চিরদিন জাহান্নামে থাকবে?( ) ,( )।
দুই, তিন- ‘হুর’ তথা সুন্দরী নারী ও জান্নাতীদের বাসস্থান:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿فِيهِنَّ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٥٦ ﴾ [الرحمن: ٥٦]
“সেখানে থাকবে এমন নারীগণ যাদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ থাকবে স্বামীর প্রতি, যাদেরকে ইতঃপূর্বে স্পর্শ করেনি কোন মানুষ আর না কোন জিন”। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٢٤ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٤]
“আর থাকবে ডাগর-চোখা হুর, যেন তারা সুরক্ষিত মুক্তা, তারা যে আমল করত তার প্রতিদানস্বরূপ”। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿مُتَّكِ‍ِٔينَ عَلَىٰ سُرُرٖ مَّصۡفُوفَةٖۖ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠ ﴾ [الطور: ٢٠]
“সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে; আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হুর-এর সাথে”। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«في الجنة خيمة من لؤلؤة مجوفة عرضها ستون ميلاً، في كل زاوية منها أهل ما يرون الآخرين، يطوف عليهم المؤمن »
“জান্নাতের মধ্যে মর্মর পাথরে সুশোভিত গোলাকার তাঁবু রয়েছে যার প্রস্থ ষাট মাইল। তাঁবুগুলোর প্রতিটি কোণে কিছু লোক রয়েছে, তার এক কোণে যারা থাকবে তারা অপর কোণের লোকদের দেখতে পাবে না। মুমিনরা তাদের উপর ঘুরে বেড়াবে ( )।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীতের বাসস্থান ও জান্নাতের রুম সমূহের বর্ণনা দিয়ে বলেন,
﴿لَٰكِنِ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ رَبَّهُمۡ لَهُمۡ غُرَفٞ مِّن فَوۡقِهَا غُرَفٞ مَّبۡنِيَّةٞ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ وَعۡدَ ٱللَّهِ لَا يُخۡلِفُ ٱللَّهُ ٱلۡمِيعَادَ ٢٠﴾ [الزمر: ٢٠]
“কিন্তু যারা নিজদের রবকে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে কক্ষসমূহ যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ। তার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত। এটি আল্লাহর ওয়াদা; আল্লাহ ওয়াদা খেলাফ করেন না” ।
আল্লামা ইব্ন কাসীর রহ. বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নেককার বান্দাদের বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাদের জন্য রয়েছে, জান্নাতে কামরাসমূহ। অর্থাৎ উঁচু উঁচু প্রাসাদ। مِّن فَوْقِهَا غُرَفٌ مَّبْنِيَّةٌ، ‘যার উপর নির্মিত আছে আরও কক্ষ’ অর্থাৎ, এক তলার উপর আরেক তলা, অত্যন্ত মজবুত, সু-সজ্জিত ও সু-উচ্চ কামরা সমূহ ।
আবু মালেক আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«إن في الجنة غرفاً يُرى ظاهرُها من باطنها، وباطنُها من ظاهرها، أعدّها الله تعالى لمن أطعم الطعام، وألان الكلام، وتابع الصيام، وأفشى السلام، وصلّى بالليل والناس نيام »
জান্নাতে এমন কতক কামরা আছে, যার বাহির থেকে ভিতর এবং ভিতর থেকে বাহির সবকিছু দেখা যায়। এ কামরাগুলো আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তৈরি করেছেন, তাদের জন্য যারা মানুষকে খানা খাওয়ায়, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, নিয়মিত সাওমের পাবন্দি করে, সালামের প্রসার করে এবং রাতে মানুষ যখন ঘুমায়, তখন সালাত আদায় করে ।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে জান্নাতের ঘরসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে উত্তরে তিনি বলেন,
«لَبِنةٌ من فضة، ولَبِنةٌ من ذهب، ومِلاطها( ) المسك الأذفرُ، وحصباؤها اللؤلؤُ والياقوتُ، وتُربَتُها الزعفران، من يدخلها: ينعم ولا يبأس، ويخلدُ ولا يموت، لا تبلى ثيابهم، ولا يفنى شبابهم »
“জান্নাতের একটি ইট রুপার অপরটি স্বর্ণের আর তার আস্তর হল, মিসক। আর তার সূরকী হল, মুণি মুক্তার পাথর। জান্নাতের মাটি হল, যাফরান। যে ব্যক্তি জান্নাতে একবার প্রবেশ করবে, সে জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করতে থাকবে কখনো সে হতাশ হবে না, জান্নাতে চির কাল থাকবে তাতে সে কখনো মরবে না, তাদের কাপড় কখনো পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন কখনো শেষ হবে না” ।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. তার ‘আন-নুনিয়া’ নামক বিশিষ্ট কাব্যগ্রন্থে জান্নাতের আসনসমূহ ও তার সৌন্দর্যের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুসংহত ও মজবুত কাবা যাকে পাথর ও খুঁটির দ্বারা আবৃত করা হয়েছে তার তাওয়াফ করে, সে সর্বদা সাফা মারওয়া ওয়াদিয়ে মুহাস্সার ও দুটি সবুজ রেখার মাঝে দৌড়তে থাকে। সে মিনার নিকটে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু খাইফ তাকে নিকটে যাওয়া থেকে প্রতিরোধ করছে”।
তিনি আরও বলেন, “যারা তাদের চক্ষুকে বিরত রাখে, তারা তাদের প্রিয়া ছাড়া অন্য কোন মাহবুবকে তালাশ করে না। তাদের চোখ তাদের প্রিয় মানুষটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য কোন যুবকের প্রতি তার দৃষ্টি যায় না”।
তিনি আরও বলেন, “ঐ লোক তার চোখ বিরত রাখার নয়, যে দূর্বল। সুতরাং তারা দুই প্রকার। হে চক্ষু উন্মুক্তকারী ব্যক্তি, অবশ্যই পরবর্তীতে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সে অবশ্যই সৌন্দর্য ও অনুগ্রহ উভয়টি থেকে খালি হবে।
তিনি আরও বলেন, “হে জ্ঞানীজন! তুমি জান্নাতের আসনসমূহের বর্ণনা শোন! তারপর তুমি তোমার জন্য ডাগর চোখ বিশিষ্ট নারী যারা সৌন্দর্য ও সৃষ্টির দিক বিবেচনায় পরিপূর্ণ এবং সর্বাধিক সুন্দর নারী হিসেবে পরিগণিত”।( )
ব্যাখ্যা দানকারী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ﴿وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٢٠﴾ [الطور: ٢٠] “আর আমি তাদেরকে মিলায়ে দেব ডাগর-চোখা হউর-এর সাথে” ।
আল্লামা মুজাহিদ বলেন, الحور শব্দটি حوراء শব্দের বহুবচন। ‘হুর’ বলা হয়-কুমারী নারী, ধবধবে সাদা, কালো চোখ বিশিষ্ট সুন্দরী নারী যাদের দিকে তাকালে তাদের দেহের আকৃতি ও দৈহিক সৌন্দর্য দেখে চক্ষুদ্বয় অভিভূত হয়।
কিন্তু বিশুদ্ধ হল, الحور শব্দটি নির্গত হল, الحور في العين، হতে। অর্থাৎ, কঠিন ধবধবে সাদা যার মধ্যে রয়েছে, কঠিন কালো। মোট কথা তার মধ্যে দুটি অর্থই বিদ্যমান( ) ( ).।
চার, পাঁচ: জান্নাতীদের খাদ্য ও পানীয়:
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ وَلَهُمۡ فِيهَآ أَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞۖ وَهُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٥﴾ [البقرة: ٢٥]
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে তুমি তাদেরকে সুসংবাদ দাও যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। যখনই তাদেরকে জান্নাত থেকে কোন ফল খেতে দেয়া হবে, তারা বলবে, ‘এটা তো পূর্বে আমাদেরকে খেতে দেয়া হয়েছিল’। আর তাদেরকে তা দেয়া হবে সাদৃশ্যপূর্ণ করে এবং তাদের জন্য তাতে থাকবে পূতঃপবিত্র স্ত্রীগণ এবং তারা সেখানে হবে স্থায়ী” । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي ظِلَٰلٖ وَعُيُونٖ ٤١ وَفَوَٰكِهَ مِمَّا يَشۡتَهُونَ ٤٢ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ هَنِيٓ‍َٔۢا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٤٣ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٤٤ ﴾ [المرسلات: ٤١، ٤٤]
“নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণা-বহুল স্থানে, আর ফলমূল-এর মধ্যে, যা তারা চাইবে। (তাদেরকে বলা হবে) ‘তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর; সৎকর্ম-শীলদের আমরা এমন-ই প্রতিদান দিয়ে থাকি” ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَفَٰكِهَةٖ مِّمَّا يَتَخَيَّرُونَ ٢٠ وَلَحۡمِ طَيۡرٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢١﴾ [الواقعة: ٢٠، ٢١]
“আর (ঘোরাফেরা করবে) তাদের পছন্দমত ফল নিয়ে। আর পাখির গোস্ত নিয়ে, যা তারা কামনা করবে” ।
জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«يأكل أهل الجنة فيها ويشربون، ولا يتغوّطون، ولا يمتخّطون، ولا يبولون، ولكن طعامهم ذاك جشاء كرشح المسك، يُلهَمون التسبيح والتحميد كما يُلهَمون النَّفَس »
“জান্নাতীরা জান্নাতে খাবে এবং পান করবে, কিন্তু তারা জান্নাতে পেশাব পায়খানা করবে না এবং তাদের নাক দিয়ে কোন সর্দি বের হবে না। তাদের খাদ্যগুলো হবে মিসকের ফোটার মত একটি ঢেকুর মাত্র। তাদের মুখ থেকে তাসবীহ ও তাহমীদ নিশ্বাসের মত বের হতে থাকব , ।
দ্বিতীয় অধ্যায়
জাহান্নামীদের শাস্তি :
প্রথম বিষয়: মনস্তাত্বিক শাস্তি বা মানসিক আযাব: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَقَالَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لَمَّا قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ إِنَّ ٱللَّهَ وَعَدَكُمۡ وَعۡدَ ٱلۡحَقِّ وَوَعَدتُّكُمۡ فَأَخۡلَفۡتُكُمۡۖ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيۡكُم مِّن سُلۡطَٰنٍ إِلَّآ أَن دَعَوۡتُكُمۡ فَٱسۡتَجَبۡتُمۡ لِيۖ فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوٓاْ أَنفُسَكُمۖ مَّآ أَنَا۠ بِمُصۡرِخِكُمۡ وَمَآ أَنتُم بِمُصۡرِخِيَّ إِنِّي كَفَرۡتُ بِمَآ أَشۡرَكۡتُمُونِ مِن قَبۡلُۗ إِنَّ ٱلظَّٰلِمِينَ لَهُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٢﴾ [ابراهيم: ٢٢]
“আর যখন যাবতীয় বিষয়ের ফয়সালা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলেন সত্য ওয়াদা, তোমাদের উপর আমার কোন আধিপত্য ছিল না, তবে আমিও তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম, এখন আমি তা ভঙ্গ করলাম। তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছি, আর তোমরা আমার দাওয়াতে সাড়া দিয়েছ। সুতরাং তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করো না, বরং নিজদেরকেই ভর্ৎসনা কর। আমি তোমাদের উদ্ধারকারী নই, আর তোমরাও আমার উদ্ধারকারী নও। ইতঃপূর্বে তোমরা আমাকে যার সাথে শরীক করেছ, নিশ্চয় আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয় যালিমদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব’ ।
জাহান্নামীদের জন্য সবচেয়ে বড় আযাব হল, আল্লাহর দর্শন থেকে তাদের বঞ্চিত হওয়া। জাহান্নামীদের মাঝে আর আল্লাহর মাঝে একটি পর্দা থাকবে। ফলে তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ ١٥ ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ ١٦ ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ ١٧﴾ [المطففين: ١٥، ١٧]
“কখনো নয়, নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে। তারপর নিশ্চয় তারা প্রজ্বলিত আগুনে প্রবেশ করবে। তারপর বলা হবে, এটাই তা যা তোমরা অস্বীকার করতে” ।
দ্বিতীয় বিষয় : জাহান্নামীদের দৈহিক শাস্তি
জাহান্নামীদের সবচেয়ে বড় শাস্তি হল, তাদের মধ্যে যারা কাফের ও মুনাফেক তারা চিরকাল জাহান্নামের অবস্থান করবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এ বিষয়ে এরশাদ করে বলেন,
﴿إِنَّ ٱلۡمُجۡرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَٰلِدُونَ ٧٤ لَا يُفَتَّرُ عَنۡهُمۡ وَهُمۡ فِيهِ مُبۡلِسُونَ ٧٥ ﴾ [الزخرف: ٧٤، ٧٥]
“নিশ্চয় অপরাধীরা জাহান্নামের আযাবে স্থায়ী হবে; তাদের থেকে আযাব কমানো হবে না এবং তাতে তারা হতাশ হয়ে পড়বে” । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করে বলেন,
﴿فَذُوقُواْ فَلَن نَّزِيدَكُمۡ إِلَّا عَذَابًا ٣٠﴾ [النبا: ٣٠]
“সুতরাং তোমরা স্বাদ গ্রহণ কর। আর আমি তো কেবল তোমাদের আযাবই বৃদ্ধি করব” । আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরও বলেন, ﴿ وَسُقُواْ مَآءً حَمِيمٗا فَقَطَّعَ أَمۡعَآءَهُمۡ ١٥ ﴾ [محمد: ١٥]
“এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানি পান করানো হবে ফলে তা তাদের নাড়িভুঁড়ি ছিন্নÑবিচ্ছিন্ন করে দেবে” ?
আল্লামা সা’দী রহ. বলেন, তাদেরকে জাহান্নামে অত্যন্ত গরম পানি পান করানো হবে( ).।
জাহান্নামীদের আরেকটি শাস্তি হল, জাহীম ও যাক্কুম: আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿ِإنَّ شَجَرَتَ ٱلزَّقُّومِ ٤٣ طَعَامُ ٱلۡأَثِيمِ ٤٤ كَٱلۡمُهۡلِ يَغۡلِي فِي ٱلۡبُطُونِ ٤٥ كَغَلۡيِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٦ خُذُوهُ فَٱعۡتِلُوهُ إِلَىٰ سَوَآءِ ٱلۡجَحِيمِ ٤٧ ثُمَّ صُبُّواْ فَوۡقَ رَأۡسِهِۦ مِنۡ عَذَابِ ٱلۡحَمِيمِ ٤٨ ذُقۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡكَرِيمُ ٤٩﴾ [الدخان: ٤٣، ٤٩]
“নিশ্চয় যাক্কূম বৃক্ষ, পাপীর খাদ্য ; গলিত তামার মত, উদরসমূহে ফুটতে থাকবে। ফুটন্ত পানির মত, (বলা হবে) ‘ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও। তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও। (বলা হবে) ‘তুমি আস্বাদন কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত” ।
আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা সা’দী রহ. বলেন , , কিয়ামত দিবসের কথা আলোচনা করার পর, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জানিয়ে দেন যে, মানুষকে সেদিন দুটি ভাগে ভাগ করা হবে। একদল জান্নাতে যাবে এবং একদল জাহান্নামে যাবে। যারা জাহান্নামে যাবে তারা অপরাধী যারা আল্লাহর নাফরমানি ও আল্লাহর সাথে কুফরী করেছিল। আর তাদের খাদ্য হবে, জাক্কুম বৃক্ষ। এটি একটি অতীব খারাপ ও ভয়ানক বৃক্ষ। আর তাদের খাদ্য হবে দুর্গন্ধযুক্ত, পঁচা গলা পিতের মত। যার গন্ধ ও স্বাদ হবে খুব তীক্ত ও অসহনীয়। আর তাদের দেয়া হবে, গরম খাওয়ার, তা তাদের উদরসমূহে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত গরম পানির মত। আযাবে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বলা হবে, তুমি বেদনাদায়ক শাস্তি ও ভয়াবহ আযাব উপভোগ করতে থাক। [إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡكَرِيمُ] অর্থাৎ তোমার বিশ্বাস অনুযায়ী তুমি শক্তিশালী তুমি নিজেকে আল্লাহর আযাব হতে বিরত রাখতে সক্ষম হবে। আর তুমি আল্লাহর নিকট সম্মানী। তোমাকে কোন শাস্তি স্পর্শ করবে না। কিন্তু মনে রাখবে, আজকের দিন তুমি বুঝতে পারবে তুমি কি সম্মানী নাকি নিকৃষ্ট, অপমানিত ও লাঞ্ছিত।


তৃতীয় অধ্যায়
জান্নাতের পথ ও জাহান্নাম থেকে বাঁচার উপায়

প্রথম পরিচ্ছেদ: জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: যে সব কারণগুলো জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর রহমতের দ্বারাই হয়ে থাকে, আমল দ্বারা নয়

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: জাহান্নাম হতে মুক্তি ও জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামে প্রবেশের কারণসমূহ
দ্বিতীয় আলোচনা: আল্লাহর আযাব থেকে আমরা নিজেদের কীভাবে বাঁচাবো?


প্রথম পরিচ্ছেদ:
জান্নাতের পথ ও জান্নাতে প্রবেশের কারণসমূহ
প্রথম আলোচনা: জান্নাতের প্রবেশের কারণ
১- আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يُطِعِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ يُدۡخِلۡهُ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ خَٰلِدِينَ فِيهَاۚ وَذَٰلِكَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١٣﴾ [النساء: ١٣]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে আল্লাহ তাকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত রয়েছে নহরসমূহ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর এটা মহা সফলতা” ।
২-উপকারী ইলমের অনুসন্ধান করা।[কুরআন ও সুন্নাহের ইলম]
৩- ঈমান ও আমলে সালেহ [নেক আমলসমূহ]
নেক আমলসমূহ:
ক- ইসলাম ও ঈমানের রুকন সমূহকে পরিপূর্ণরূপে আদায় করা।
খ- সুন্দর চরিত্র, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা, ফকীর মিছকীনদের জন্য ব্যয় করা, মেহমানের মেহমানদারি করা ইত্যাদি।
জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমসমূহ:
-মাতা-পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করা
- আল্লাহর যিকির করা
-দয়া করা
-সালামের প্রসার
-দুর্বল অসহায় ও গরীব লোকদের প্রতি দয়া করা, দ্বীনের ব্যাপারে মানুষকে সহযোগিতা করা। ( ).
দ্বিতীয় আলোচনা: জান্নাতে প্রবেশ করা আল্লাহর দয়ায় হয়ে থাকে আমলের মাধ্যমে নয়।
প্রমাণ: আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
«قاربوا وسدِّدوا، واعلموا أنه لن ينجو أحد منكم بعمله » قالوا: يا رسول الله، ولا أنت؟ قال: « ولا أنا إلاّ أن يتغمّدني الله برحمة منه وفضل »
“তোমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর এবং আমলসমূহকে সুন্দর কর, আর মনে রাখবে তোমাদের কেউ তার আমল দ্বারা জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি পাবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, আপনিও কি নাজাত পাবেন না হে আল্লাহর রাসূল! রাসূল বললেন, না আমিও না, তবে যদি আল্লাহ তাঁর রহমত ও দয়া দ্বারা আমাবে ঢেকে ফেলে তাহলে আমি নাজাত পাব ।
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ বলেন,
« سدِّدوا، وقاربوا، وأبشروا؛ فإنه لا يُدخِل أحداً الجنة عملُهُ » قالوا: ولا أنت يا رسول الله؟ قال: « ولا أنا، إلاّ أن يتغمدني الله بمغفرة ورحمة » وفي لفظ: « واعلموا أن أحبّ العمل إلى الله أدومه وإن قلّ »
“তোমরা তোমাদের আমলসমূহকে সংশোধন কর, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন কর এবং তোমরা সু-সংবাদ গ্রহণ কর। কারণ, কাউকে তার আমল জান্নাতে প্রবেশ করাবে না। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর আপনিও কি আপনার আমলের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না। উত্তরে তিনি বলেন, আমিও না, তবে যদি আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা আমার অনুকুলে থাকে। অপর শব্দে বর্ণিত, তোমরা মনে রাখবে, আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল যা স্থায়ী হয়, যদিও তা কম” ।
ইমাম নববী রহ. বলেন, উল্লেখিত হাদিস সমূহের বাহ্যিক অর্থ হক পন্থীদের জন্য প্রমাণ। কারণ তারা বলেন, কোন ব্যক্তি সাওয়াব বা জান্নাত তার আমল দ্বারা লাভ করতে পারবে না। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর বাণী:
﴿ٱدۡخُلُواْ ٱلۡجَنَّةَ بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٣٢﴾ [النحل: ٣٢]
“তোমরা তোমাদের আমলের কারণে জান্নাতে প্রবেশ কর” ।
﴿وَتِلۡكَ ٱلۡجَنَّةُ ٱلَّتِيٓ أُورِثۡتُمُوهَا بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٧٢﴾ [الزخرف: ٧٢]
“আর এটিই জান্নাত, তোমাদের নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর অধিকারী করা হয়েছে” । এবং এ ধরনের আরও যত আয়াত আছে, যাতে প্রমাণিত হয়, মানুষ তাদের আমলের মাধ্যমেই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এগুলো উল্লেখিত হাদিসসমূহের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং আয়াতের অর্থ হল, জান্নাতে প্রবেশ করা আমলের দ্বারা হবে, কিন্তু আমল করার তাওফিক, হিদায়েত, আমলে এখলাস ও আমল কবুল করা আল্লাহর রহমত ও দয়ার কারণেই হয়ে থাকে। সুতরাং এ কথা বলা বাহুল্য যে শুধু আমল দ্বারা কোন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর এটিই হল, হাদিসের মর্মার্থ। মোট কথা, একজন লোক জান্নাতে আমলের করার মাধ্যমে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হল, আল্লাহর রহমত। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।(
দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জাহান্নামের প্রবেশের কারণ
প্রথম আলোচনা: জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারণগুলো:
জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়ার কারণ অসংখ্য ও অগণিত। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন। সামগ্রিক কারণ হল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানি করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَمَن يَعۡصِ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُۥ يُدۡخِلۡهُ نَارًا خَٰلِدٗا فِيهَا وَلَهُۥ عَذَابٞ مُّهِينٞ ١٤﴾ [النساء: ١٤]
“আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব” ।
জাহান্নামে প্রবেশের আরও কারণ:
১- আল্লাহর সাথে শরিক করা। ২- নবী ও রাসূলদের অস্বীকার করা। ৩- কুফরী করা। ৪- হিংসা করা। ৫- যুলম ও অত্যাচার করা। ৬- আমানতের খিয়ানত করা ৭- আত্মীয়তা সম্পর্ক ছিন্ন করা। ৮- কার্পণ্য করা। ৯- মুনাফেকি করা। ১০- আল্লাহর আযাব হতে নির্ভীক হওয়া। ১১- আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া। ১২- কুরআন ও হাদিসে যে সব কবীরাগুনাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে সব কবীরা গুনাহে লিপ্ত হওয়া।
দ্বিতীয় আলোচনা: কিভাবে আমরা আমাদের নিজেদের ও আমাদের পরিবার-পরিজনদের জাহান্নাম থেকে বাঁচাবো?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُ عَلَيۡهَا مَلَٰٓئِكَةٌ غِلَاظٞ شِدَادٞ لَّا يَعۡصُونَ ٱللَّهَ مَآ أَمَرَهُمۡ وَيَفۡعَلُونَ مَا يُؤۡمَرُونَ ٦﴾ [التحريم: ٦]
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকুল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়” ।
আল্লামা সা’দী রহ. বলেন, তোমাদের মধ্যে যাদের প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ঈমানের মত নেয়ামত দিয়ে অনুগ্রহ করেছে, তোমরা ঈমানের আবশ্যকীয় বিষয় ও শর্তসমূহ পূরণ কর। আর তোমরা তোমাদের নিজেদের এবং পরিবার-পরিজনদের ভয়াবহ জাহান্নাম যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তার আগুন থেকে বাঁচাও। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, [قُوٓاْ أَنفُسَكُمۡ وَأَهۡلِيكُمۡ نَارٗا] “তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচা”। আর তোমাদের আত্মরক্ষার উপায় হল, আল্লাহর আদেশকে নিজেদের জন্য বাধ্যতামূলক করা, তার আদেশ পালনে দায়িত্বশীল হওয়া এবং তার নিষিদ্ধ বিষয় হতে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব কর্মে অসন্তুষ্ট হন বা আযাব দেন, সে সব কর্ম থেকে তাওবা করা। আর পরিবার পরিজন, সন্তান সন্ততিকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর উপায় হল, তাদের উত্তম শিক্ষা দেয়া, শাসন করা, তাদেরকে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মানার উপর বাধ্য করা। একজন মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদ হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে যা করার নির্দেশ দিয়েছে তা না করবে। আর স্ত্রী সন্তান একজন মানুষের অভিভাবকত্বে ও পরিচালনার অন্তর্ভুক্ত। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জাহান্নামকে এত ভয়াবহ করে মানুষের নিকট তুলে ধরেছেন, যাতে মানুষ আল্লাহর আদেশের প্রতি উদাসীন না হয়( ).। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন,
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ تِجَٰرَةٖ تُنجِيكُم مِّنۡ عَذَابٍ أَلِيمٖ ١٠ ﴾ [الصف: ١٠]
“হে ঈমানদারগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে” ? তারপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উল্লেখ করেন:
1 –تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ
“তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে”
2 – وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ
“এবং তোমরা তোমাদের ধনÑসম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে”।
সুতরাং, মনে রাখতে হবে, এ দুটি হল, আল্লাহর অনুমতিক্রমে জান্নাতে প্রবেশের এবং জাহান্নাম হতে মুক্তির কারণ। আমরা আল্লাহর নিকট জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং আল্লাহর নিকট জান্নাত চাচ্ছি।
আল্লামা সা’দী রহ. আয়াত দু’টির তাফসীরে বলেন, এটি পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ তাঁর মুমিন বান্দাদের জন্য মহৎ ব্যবসা, মহান উদ্দেশ্য ও উন্নত চাহিদা লাভের প্রতি অসিয়ত, পথ দেখানো এবং দিক নির্দেশনা, যার দ্বারা কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং মহা নেয়ামতের সফলতা অর্জন করা যাবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাতে বুঝা যায় বিষয়টি এমন যার প্রতি প্রতিটি বিচক্ষণ লোক বলতেই আগ্রহ করবে এবং প্রতিটি জ্ঞানী লোক তার দিক মাথা উঁচু করে দেখবে। সুতরাং, বিষয়টি এমন- যেমন বলা হল, এ ব্যবসাটি কি যার এত মূল্য? তখন বলল, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। আর এ কথা আমরা সবাই জানি পরিপূর্ণ ঈমান হল আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে সব বিষয়ে অটল বিশ্বাস করার নির্দেশ দিয়েছেন, তার প্রতি অটল বিশ্বাস করা। এ বিশ্বাসের অপরিহার্য দাবী হল শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলসমূহের অন্যতম মূল্যবান আমল হল, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা, এ কারণেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, [وَتُجَٰهِدُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ بِأَمۡوَٰلِكُمۡ وَأَنفُسِكُمۡۚ] অর্থাৎ তোমরা তোমাদের জান মাল দিয়ে ইসলামের দুশমনদের প্রতিহত করা, আল্লাহর দ্বীনকে বিজয় করা এবং আল্লাহর কালিমাকে আল্লাহর যমীনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তোমরা তোমাদের সম্পদ হতে যা তোমাদের জন্য সহজ হয় তা ব্যয় করবে। কিন্তু এ কাজটি যদিও তোমার জন্য অপছন্দনীয় হয় এবং তোমার জন্য কষ্টকর হয় কিন্তু মনে রাখবে এটি তোমার জন্য উত্তম। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেন, [خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُمۡ تَعۡلَمُونَ] এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে।
জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণসমূহ:
আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আমল করা এবং আল্লাহ যে সব কর্মে নারাজ হন তা হতে দূরে থাকা: যখন কোন ব্যক্তি তার প্রভুর আনুগত্য করে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা করতে নিষেধ করেছেন, তা হতে বিরত থাকে তাহলে সে আসবাব সমূহের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। তাওফিক ও কবুল আল্লাহর হাতে। আল্লাহর নিকট আমরা তার ফযল ও অনুগ্রহ কামনা করি। জাহান্নাম থেকে বাঁচার কারণগুলো আরও বিস্তারিত জানতে চাইলে আহলে ইলমরা এ বিষয়ে যে সব কিতাব লিপিবদ্ধ করেছেন তা দেখুন। সালাত ও সালাম নাযিল হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ এর উপর এবং তার সমগ্র সাহাবীদের উপর।


পরিশিষ্ট
সমস্ত প্রশংসা কেবলই আল্লাহর জন্য এবং তাঁরই জন্য পূর্বের ও পরবর্তীর যাবতীয় প্রশংসা। আল্লাহর অপার অনুগ্রহে জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে গবেষণাটি শেষ করছি। এ গবেষণায় রয়েছে জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা, নামসমূহ, জান্নাতের নেয়ামতসমূহ ও জাহান্নামের আযাব এবং যে সব উপকরণগুলো জান্নাত ও জাহান্নামের দিকে মানুষকে নিয়ে যায় তার বর্ণনা।
এ গবেষণামুলক রিসালাটির উল্লেখযোগ্য দিক হল, এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে জান্নাত ও জাহান্নামের সংজ্ঞা জান্নাত ও জাহান্নামের বর্ণনার উপর কিছু প্রমাণাদি একত্র করা হয়েছে, যাতে একজন পাঠক খুব দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে এবং জান্নাতের লাভ করতে আগ্রহী হয় এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে।
আর অসিয়ত ও উপদেশ হল:
প্রথমত: আল্লাহকে ভয় করার প্রতি অসিয়ত যাতে একজন বান্দা জান্নাত লাভে সক্ষম হয় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পায়।
দ্বিতীয়ত: জান্নাত ও জাহান্নাম বিষয়ে আরো বিস্তারিত লেখার জন্য উপদেশ দেই। যাতে যারা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চায় তাদের জন্য সহজ হয় এবং যারা সত্যিকার ইলমকে বাড়াতে চায় তাদের জন্য পাথেয় হয়।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، والصلاة [والسلام] على نبينا محمد [وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم بإحسان إلى يوم الدين.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.