| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলাম হাউস
তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন।তিনি কাউকে জন্ম দেন না, আর তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।তাঁর সমকক্ষ কেউ নয়।
সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ ২
ষষ্ঠবিংশ পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ফিরিশতাগনের জিহাদে শরিক হওয়া।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: لَمَّا رَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الخَنْدَقِ، وَوَضَعَ السِّلاَحَ وَاغْتَسَلَ، أَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، فَقَالَ: " قَدْ وَضَعْتَ السِّلاَحَ؟ وَاللَّهِ مَا وَضَعْنَاهُ، فَاخْرُجْ إِلَيْهِمْ قَالَ: فَإِلَى أَيْنَ؟ قَالَ: هَا هُنَا، وَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ، فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ ".
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে সমরাস্ত্র রেখে গোসল করেছেন মাত্র। এমতাবস্থায় তাঁর কাছে জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি তো অস্ত্রশস্ত্র (খুলে) রেখে দিয়েছেন। আল্লাহর কসম! আমরা এখনও তা খুলিনি। চলুন তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যেতে হবে? তিনি বনূ কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, ঐদিকে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে রওয়ানা হলেন।
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى الغُبَارِ سَاطِعًا فِي زُقَاقِ بَنِي غَنْمٍ، مَوْكِبَ جِبْرِيلَ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِ حِينَ سَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বনূ কুরায়যার মহল্লার দিকে যাচ্ছিলেন তখন [জিবরীল আলাইহিস সালামের অধীন] ফেরেশতা বাহিনীও তাঁর সংগে যাচ্ছিলেন, এমনকি (পথিমধ্যে) বনূ গানম গোত্রের গলিতে জিবরীল আলাইহিস সালামের বাহিনীর গমনে ওড়া ধূলারাশি এখনো যেন আমি দেখতে পাচ্ছি।
সপ্তবিংশ পরিচ্ছেদ
আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিশুদ্ধভাষা ও বাগ্মিতা দান করেছেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ ضِمَادًا، قَدِمَ مَكَّةَ وَكَانَ مِنْ أَزْدِ شَنُوءَةَ، وَكَانَ يَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ، فَسَمِعَ سُفَهَاءَ مِنْ أَهْلِ مَكَّةَ، يَقُولُونَ: إِنَّ مُحَمَّدًا مَجْنُونٌ، فَقَالَ: لَوْ أَنِّي رَأَيْتُ هَذَا الرَّجُلَ لَعَلَّ اللهَ يَشْفِيهِ عَلَى يَدَيَّ، قَالَ فَلَقِيَهُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي أَرْقِي مِنْ هَذِهِ الرِّيحِ، وَإِنَّ اللهَ يَشْفِي عَلَى يَدِي مَنْ شَاءَ، فَهَلْ لَكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ الْحَمْدَ لِلَّهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِينُهُ، مَنْ يَهْدِهِ اللهُ فَلَا مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَا هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، أَمَّا بَعْدُ» قَالَ: فَقَالَ: أَعِدْ عَلَيَّ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ، فَأَعَادَهُنَّ عَلَيْهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، قَالَ: فَقَالَ: لَقَدْ سَمِعْتُ قَوْلَ الْكَهَنَةِ، وَقَوْلَ السَّحَرَةِ، وَقَوْلَ الشُّعَرَاءِ، فَمَا سَمِعْتُ مِثْلَ كَلِمَاتِكَ هَؤُلَاءِ، وَلَقَدْ بَلَغْنَ نَاعُوسَ الْبَحْرِ، قَالَ: فَقَالَ: هَاتِ يَدَكَ أُبَايِعْكَ عَلَى الْإِسْلَامِ، قَالَ: فَبَايَعَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَعَلَى قَوْمِكَ»، قَالَ: وَعَلَى قَوْمِي، قَالَ: فَبَعَثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَرِيَّةً، فَمَرُّوا بِقَوْمِهِ، فَقَالَ صَاحِبُ السَّرِيَّةِ لِلْجَيْشِ: هَلْ أَصَبْتُمْ مِنْ هَؤُلَاءِ شَيْئًا؟ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: أَصَبْتُ مِنْهُمْ مِطْهَرَةً، فَقَالَ: رُدُّوهَا، فَإِنَّ هَؤُلَاءِ قَوْمُ ضِمَادٍ.
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। দিমাদ মক্কায় আগমন করলেন। তিনি আযদ শানুআ গোত্রের সদস্য। তিনি বাতাস লাগার ঝারফুঁক করতেন। তিনি মক্কার কতক নির্বোধকে বলতে শুনেছেন, মুহাম্মাদ নিশ্চয়ই উন্মাদ। দিমাদ বলেন, আমি যদি লোকটিকে দেখতাম তাহলে আল্লাহ হয়ত আমার হাতে তাকে আরোগ্য দান করতেন। রাবী বলেন, তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে বলেন, হে মুহাম্মাদ! আমি এসব বাতাস লাগার ঝাড়ফুঁক করি। আল্লাহ যাকে চান তাকে আমার হাতে আরোগ্য দান করেন। আপনি কি ঝড়ফুঁক করাতে চান? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আমি তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন, কেউ তাকে বিপথগামী করতে পারে না এবং তিনি যাকে বিপথগামী করেন, কেউ তাকে হেদায়েত দান করতে পারেন না। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নাই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। অতঃপর রাবী বলেন, দিমাদ বললেন, আপনার এই কথাগুলো আমাকে পুনরায় শুনান। অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই কথাগুলো তাকে তিনবার পুনরাবৃত্তি করে শুনান। রাবী বলেন, দিমাদ বললো, আমি অনেক গণক ও জাদুকরের কথা শুনেছি, কিন্তু আপনার এই কথাগুলোর অনুরূপ কথা আমি শুনিনি। এই কথাগুলো সমুদ্রের গভীরে পৌঁছে গেছে। রাবী বলেন, দিমাদ বললেন, আপনার হাত প্রসারিত করুন, আমি আপনার নিকট ইসলামের বাই‘আত গ্রহণ করবো। তিনি তাকে বাই‘আত করালেন (ইসলাম গ্রহণ করালেন)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও কি (বাই‘আত প্রযোজ্য)? দিমাদ বলেন, আমার সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রেও। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি ক্ষুদ্র সামরিক বাহিনী (সারিয়্যা) প্রেরণ করলে তারা তার সম্প্রদায়ের এলাকা দিয়ে অতিক্রম করে। তখন বাহিনী প্রধান সৈন্যবাহিনীকে বলেন, তোমরা কি এদের থেকে কিছু গ্রহণ করেছ? দলের একজন বললো, আমি তাদের থেকে একটি পানির পাত্র নিয়েছি। সেনানায়ক বলেন, তোমরা সেটি ফেরত দাও। কারণ তারা দিমাদের সম্প্রদায়।
অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যে রহমত নাযিল হয়েছে।
عَنِ الْمِقْدَادِ، قَالَ: أَقْبَلْتُ أَنَا وَصَاحِبَانِ لِي، وَقَدْ ذَهَبَتْ أَسْمَاعُنَا وَأَبْصَارُنَا مِنَ الْجَهْدِ، فَجَعَلْنَا نَعْرِضُ أَنْفُسَنَا عَلَى أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَيْسَ أَحَدٌ مِنْهُمْ يَقْبَلُنَا، فَأَتَيْنَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْطَلَقَ بِنَا إِلَى أَهْلِهِ، فَإِذَا ثَلَاثَةُ أَعْنُزٍ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «احْتَلِبُوا هَذَا اللَّبَنَ بَيْنَنَا»، قَالَ: فَكُنَّا نَحْتَلِبُ فَيَشْرَبُ كُلُّ إِنْسَانٍ مِنَّا نَصِيبَهُ، وَنَرْفَعُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَصِيبَهُ، قَالَ: فَيَجِيءُ مِنَ اللَّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لَا يُوقِظُ نَائِمًا، وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ، قَالَ: ثُمَّ يَأْتِي الْمَسْجِدَ فَيُصَلِّي، ثُمَّ يَأْتِي شَرَابَهُ فَيَشْرَبُ، فَأَتَانِي الشَّيْطَانُ ذَاتَ لَيْلَةٍ وَقَدْ شَرِبْتُ نَصِيبِي، فَقَالَ: مُحَمَّدٌ يَأْتِي الْأَنْصَارَ فَيُتْحِفُونَهُ، وَيُصِيبُ عِنْدَهُمْ مَا بِهِ حَاجَةٌ إِلَى هَذِهِ الْجُرْعَةِ، فَأَتَيْتُهَا فَشَرِبْتُهَا، فَلَمَّا أَنْ وَغَلَتْ فِي بَطْنِي، وَعَلِمْتُ أَنَّهُ لَيْسَ إِلَيْهَا سَبِيلٌ، قَالَ: نَدَّمَنِي الشَّيْطَانُ، فَقَالَ: وَيْحَكَ، مَا صَنَعْتَ أَشَرِبْتَ شَرَابَ مُحَمَّدٍ، فَيَجِيءُ فَلَا يَجِدُهُ فَيَدْعُو عَلَيْكَ فَتَهْلِكُ فَتَذْهَبُ دُنْيَاكَ وَآخِرَتُكَ، وَعَلَيَّ شَمْلَةٌ إِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى قَدَمَيَّ خَرَجَ رَأْسِي، وَإِذَا وَضَعْتُهَا عَلَى رَأْسِي خَرَجَ قَدَمَايَ، وَجَعَلَ لَا يَجِيئُنِي النَّوْمُ، وَأَمَّا صَاحِبَايَ فَنَامَا وَلَمْ يَصْنَعَا مَا صَنَعْتُ، قَالَ: فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَلَّمَ كَمَا كَانَ يُسَلِّمُ، ثُمَّ أَتَى الْمَسْجِدَ فَصَلَّى، ثُمَّ أَتَى شَرَابَهُ فَكَشَفَ عَنْهُ، فَلَمْ يَجِدْ فِيهِ شَيْئًا، فَرَفَعَ رَأْسَهُ إِلَى السَّمَاءِ، فَقُلْتُ: الْآنَ يَدْعُو عَلَيَّ فَأَهْلِكُ، فَقَالَ: «اللهُمَّ، أَطْعِمْ مَنْ أَطْعَمَنِي، وَأَسْقِ مَنْ أَسْقَانِي»، قَالَ: فَعَمَدْتُ إِلَى الشَّمْلَةِ فَشَدَدْتُهَا عَلَيَّ، وَأَخَذْتُ الشَّفْرَةَ فَانْطَلَقْتُ إِلَى الْأَعْنُزِ أَيُّهَا أَسْمَنُ، فَأَذْبَحُهَا لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا هِيَ حَافِلَةٌ، وَإِذَا هُنَّ حُفَّلٌ كُلُّهُنَّ، فَعَمَدْتُ إِلَى إِنَاءٍ لِآلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا كَانُوا يَطْمَعُونَ أَنْ يَحْتَلِبُوا فِيهِ، قَالَ: فَحَلَبْتُ فِيهِ حَتَّى عَلَتْهُ رَغْوَةٌ، فَجِئْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَشَرِبْتُمْ شَرَابَكُمُ اللَّيْلَةَ»، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، اشْرَبْ، فَشَرِبَ، ثُمَّ نَاوَلَنِي، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، اشْرَبْ، فَشَرِبَ، ثُمَّ نَاوَلَنِي، فَلَمَّا عَرَفْتُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَوِيَ وَأَصَبْتُ دَعْوَتَهُ، ضَحِكْتُ حَتَّى أُلْقِيتُ إِلَى الْأَرْضِ، قَالَ: فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِحْدَى سَوْآتِكَ يَا مِقْدَادُ»، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ، كَانَ مِنْ أَمْرِي كَذَا وَكَذَا وَفَعَلْتُ كَذَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا هَذِهِ إِلَّا رَحْمَةٌ مِنَ اللهِ، أَفَلَا كُنْتَ آذَنْتَنِي فَنُوقِظَ صَاحِبَيْنَا فَيُصِيبَانِ مِنْهَا»، قَالَ: فَقُلْتُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ، مَا أُبَالِي إِذَا أَصَبْتَهَا وَأَصَبْتُهَا مَعَكَ مَنْ أَصَابَهَا مِنَ النَّاسِ.
মিক্বদাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ও আমার দুই সাথী সামনে অগ্রসর হলাম এমন অবস্থায় প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে আমার ও আমার দু সঙ্গীর দৃষ্টিশক্তি ও শ্রুতিশক্তি লোপ পাচ্ছিল। পরে আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের কাছে নিজেদের পেশ করতে লাগলাম। কিন্তু তাঁদের কেউ আমাদেরকে গ্রহণ করলেন না। অবশেষে আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলে তিনি আমাদের নিয়ে তাঁর পরিবারের কাছে গেলেন। সেখানে তিনটি মেষ ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দুধ দোহন করবে। এ দুধ আমরা ভাগ করে পান করব। তিনি বলেন, এরপর থেকে আমরা দুধ দোহন করতাম। আমাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ অংশ পান করতো। আর আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য তার অংশ তুলে রাখতাম। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাতে আসতেন এবং এমনভাবে সালাম দিতেন যাতে ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত না হয় আর জাগ্রত ব্যক্তি শুনতে পায়। রাবী বলেন, এরপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করতেন ও ফিরে এসে দুধপান করতেন। এক রাতে আমার কাছে শয়তান আসলো। আমি তো আমার অংশ পান করে ফেলেছিলাম। সে বললো মুহাম্মাদ আননারীদের কাছে গেলে তারা তাঁকে তোহফা (উপটৌকন) দিবে এবং তাদের কাছে তাঁর এ সামান্য দুধের প্রয়োজনীয়তাও মিটে যাবে। এরপর আমি এসে সেটুকুও পান করে ফেললাম। দুধ যখন ভালভাবে আমার পেটে প্রবেশ করলো এবং আমি বুঝলাম, এ দুধ বের করার আর কোন উপায় নেই, তখন শয়তান আমার থেকে দূর সরে গিয়ে বললো, তোমার সর্বনাশ হোক তুমি কি কাণ্ড করলে! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধপান করে ফেলেছ? তিনি এসে যখন তা পাবেন না, তখন তোমার উপর বদ-দু‘আ করবেন। তাতে তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমার দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। আমার গায়ে ছিল একটা চাদর। যদি আমি তা আমার পদযুগলের উপর রাখি তাহলে আমার মাথা বের হয়ে পড়ে, আর যদি আমি তা আমার মাথার উপর রাখি তাহলে আমার পদযুগল বেরিয়ে পড়ে। আমার ঘুম আসছিলো না। আমার সঙ্গীদ্বয় তো ঘুমাচ্ছিল। তারা তো আমার মতো কাজ করেনি। তিনি বলেন, এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে যেভাবে সালাম দিতেন সেভাবেই সালাম দিলেন। তারপর তিনি মসজিদে এসে সালাত আদায় করলেন। এরপর দুধের কাছে এসে ঢাকনা খুলে সেখানে কিছুই পেলেন না। এরপর তিনি স্বীয় মাথা আসমানের দিকে তুললেন। আমি তখন (মনে মনে) বললাম, এখনই তিনি আমার ওপর বদ-দু‘আ করবেন, আর আমি ধ্বংস হয়ে যাব। তিনি বললেন, হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি আমাকে আহার করায়, তাকে তুমি আহার করাও। আর যে আমাকে পান করায়, তাকে তুমি পান করাও। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এ সময় আমি চাদরটি নিয়ে শরীরে বাধলাম, আর একটি ছুরি নিলাম, তারপর (এই ভেবে) মেষগুলির কাছে গেলাম যে, এগুলোর মাঝে যেটি সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা, আমি সেটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য যবেহ করবো। গিয়ে দেখলাম, সেটি দুধে পরিপূর্ণ এবং অন্যান্য সব মেষও দুধে পরিপূর্ণ। এরপর আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের একটি পাত্র নিয়ে এলাম যাতে তাঁরা দুধ দোহাতেন না। তিনি মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তাতেই দুধ দোহন করলাম, এমনকি পাত্রের উপরিভাগে ফেলা ভেসে উঠলো। এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কি রাতের দুধ পান করেছেন? তিনি বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি পান করুন। তিনি পান করলেন, এরপর আমাকে দিলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি পান করুন। তিনি পান করে আবার আমাকে দিলেন। যখন আমি বুঝতে পারলাম যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিতৃপ্ত হয়ে গেছেন এবং আমি তাঁর দো‘আ পেয়ে গেছি, তখন আমি হাসতে হাসতে যমীনে পড়ে গেলাম। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মিকদাদ! তুমি কি কোনো অপকর্ম করেছেন? তখন আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার এ ই কাণ্ড ঘটে গেছে। অথবা তিনি বলেছেন, আমি এরূপ কাজ করে ফেলেছি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটা একমাত্র আল্লাহর মেহেরবানী! তুমি কেন আমাকে অবহিত করলে না? আমরা আমাদের সাথীদ্বয়কে জাগ্রত করতাম, তাহলে তারাও এর ভাগ পেত! তিনি বলেন, আমি তখন বললাম, যে মহান স্বত্বা আপনাকে সত্য দীনসহ পাঠিয়েছেন, তাঁর শপথ! আপনি যখন পেয়েছেন, অথবা বলেছেন, আমি যখন আপনার সাথে ভাগ পেয়েছি, তখন অন্য কোন লোক পাওয়া না পাওয়ার আমি পরওয়া করি না।
ঊনত্রিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি ও চুলের দ্বারা সাহাবীগণের বরকত লাভ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْغَدَاةَ جَاءَ خَدَمُ الْمَدِينَةِ بِآنِيَتِهِمْ فِيهَا الْمَاءُ، فَمَا يُؤْتَى بِإِنَاءٍ إِلَّا غَمَسَ يَدَهُ فِيهَا، فَرُبَّمَا جَاءُوهُ فِي الْغَدَاةِ الْبَارِدَةِ، فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيهَا».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ভোরের সালাত আদায় করতেন তখন মদীনার খাদিমরা তাদের পাত্রে করে পানি নিয়ে আসত। তাঁর কাছে কোনো পাত্র আনা হলে তিনি তাতে হাত ডুবিয়ে দিতেন। আর শীতের দিনেও কখনো কখনো তিনি হাত ডূবিয়ে দিতেন।
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: لَقَدْ «رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْحَلَّاقُ يَحْلِقُهُ، وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ، فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلَّا فِي يَدِ رَجُلٍ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখেছি ক্ষোরকার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুল মুড়াচ্ছে আর সাহাবীরা তার চারপাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোনো চুল যেন মাটিতে না পড়ে যায়, যেন কারো না কারো হাতে পড়ে।
ত্রিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘামের সুঘ্রাণ
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عِنْدَنَا، فَعَرِقَ، وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُورَةٍ، فَجَعَلَتْ تَسْلِتُ الْعَرَقَ فِيهَا، فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا الَّذِي تَصْنَعِينَ؟» قَالَتْ: هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا، وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের ঘরে আসলেন এবং বিশ্রাম নিলেন। তিনি ঘামছিলেন আর আমার মা একটি শিশি নিয়ে তা মুছে মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে গেলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে উম্মে সুলাইম! একি করছ? আমার মা বললেন, এ আপনার ঘাম, যা আমরা সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত করি, আর এ তো সব সুগন্ধির সেরা সুগন্ধি।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ بَيْتَ أُمِّ سُلَيْمٍ فَيَنَامُ عَلَى فِرَاشِهَا، وَلَيْسَتْ فِيهِ، قَالَ: فَجَاءَ ذَاتَ يَوْمٍ فَنَامَ عَلَى فِرَاشِهَا، فَأُتِيَتْ فَقِيلَ لَهَا: هَذَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَامَ فِي بَيْتِكِ، عَلَى فِرَاشِكِ، قَالَ فَجَاءَتْ وَقَدْ عَرِقَ، وَاسْتَنْقَعَ عَرَقُهُ عَلَى قِطْعَةِ أَدِيمٍ، عَلَى الْفِرَاشِ، فَفَتَحَتْ عَتِيدَتَهَا فَجَعَلَتْ تُنَشِّفُ ذَلِكَ الْعَرَقَ فَتَعْصِرُهُ فِي قَوَارِيرِهَا، فَفَزِعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا تَصْنَعِينَ؟ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ» فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللهِ نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا، قَالَ: «أَصَبْتِ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সুলাইমের ঘরে যেতেন এবং তার বিছানায় ঘুমাতেন আর উম্মে সুলাইম তখন ঘরে থাকতেন না। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, একদিন তিনি এলেন এবং তার বিছানায় ঘুমালেন। অতঃপর তিনি (উম্মে সুলাইম) এলে তাকে বলা হল, ইনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার ঘরে, তোমার বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উম্মে সুলাইম ঘরে এলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ঘেমেছিলেন, আর তাঁর ঘাম চামড়ার বিছানার উপর জমেছিল। উম্মে সুলাইম তার কৌটা খুললেন এবং সে ঘাম মুছে মুছে শিশিতে ভরতে লাগলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে উঠে তাকে বললেন, তুমি কি করছ, হে উম্মে সুলাইম! তিনি বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের শিশুদের বরকতের উদ্দেশ্যে নিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভাল করেছ।
عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ لَهُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ، وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ، فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ وَالْقَوَارِيرِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟» قَالَتْ: عَرَقُكَ أَدُوفُ بِهِ طِيبِي.
উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে আসতেন এবং বিশ্রাম নিতেন। উম্মে সুলাইম তার জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দিলে তিনি তার উপর “কায়লুলা- করতেন। তিনি খুব ঘামতেন আর উম্মে সুলায়ম তা জমা করতেন এবং সুগন্ধির শিশিতে তা রাখতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে উম্মে সুলাইম! এ কী করছ? তিনি বললেন, আপনার ঘাম, আমি তা সুগন্ধির সাথে মিশিয়ে রাখি।
একত্রিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যবহৃত পানি দ্বারা বরকত হাসিল।
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ نَازِلٌ بِالْجِعْرَانَةِ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، وَمَعَهُ بِلَالٌ، فَأَتَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، رَجُلٌ أَعْرَابِيٌّ، فَقَالَ: أَلَا تُنْجِزُ لِي، يَا مُحَمَّدُ مَا وَعَدْتَنِي؟ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَبْشِرْ» فَقَالَ لَهُ الْأَعْرَابِيُّ: أَكْثَرْتَ عَلَيَّ مِنْ «أَبْشِرْ» فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي مُوسَى وَبِلَالٍ، كَهَيْئَةِ الْغَضْبَانِ، فَقَالَ: «إِنَّ هَذَا قَدْ رَدَّ الْبُشْرَى، فَاقْبَلَا أَنْتُمَا» فَقَالَا: قَبِلْنَا، يَا رَسُولَ اللهِ ثُمَّ دَعَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ: «اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا، وَأَبْشِرَا» فَأَخَذَا الْقَدَحَ، فَفَعَلَا مَا أَمَرَهُمَا بِهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَادَتْهُمَا أُمُّ سَلَمَةَ مِنْ وَرَاءِ السِّتْرِ: أَفْضِلَا لِأُمِّكُمَا مِمَّا فِي إِنَائِكُمَا فَأَفْضَلَا لَهَا مِنْهُ طَائِفَةً.
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। তিনি মক্কা ও মদীনার মাঝখানে জি’রানা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সাথে বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুও ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এক বেদুঈন এসে বলল, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আপনার ওয়াদা পূর্ণ করবেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, সুসংবাদ গ্রহণ কর বা খুশি হয়ে যাও। বেদুঈন তাঁকে বলল, আপনি আমাকে বহুত বলেছেন খুশি হয়ে যাও। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাগান্বিত হয়ে আবু মূসা ও বিলালের রাদিয়াল্লাহু আনহুমার দিকে ফিরলেন। অতঃপর তিনি বললেন, এই লোকটি সুসংবাদ প্রত্যাখ্যান করেছে। তোমরা উভয়ে তা গ্রহণ কর। তারা উভয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমরা গ্রহণ করলাম। অতঃপর তিনি এক পেয়ালা পানি নিয়ে ডাকলেন। তিনি তাতে দুই হাত ও মুখ ধুলেন এবং কুলি করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা উভয়ে এই পানি থেকে পান কর এবং নিজেদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশে তা প্রবাহিত কর এবং সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা উভয়ে পেয়ালা তুলে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশমত কাজ করলেন। পর্দার আড়াল থেকে উম্মু সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাদেরকে ডেকে বললেন, তোমাদের মায়ের জন্যও তোমাদের পাত্রের কিছু পানি লও। তারা তাকেও অবশিষ্ট পানির কিছু দিলেন।
বত্রিশতম পরিচ্ছেদ
আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য মানুষের শ্রবণশক্তি খুলে দেন, ফলে তারা অনেক দূরবর্তী স্থান থেকেও তাঁর কথা শুনতে পান।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مُعَاذٍ التَّيْمِيِّ، قَالَ: خَطَبَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَنَحْنُ بِمِنًى فَفُتِحَتْ أَسْمَاعُنَا، حَتَّى كُنَّا نَسْمَعُ مَا يَقُولُ: وَنَحْنُ فِي مَنَازِلِنَا فَطَفِقَ يُعَلِّمُهُمْ مَنَاسِكَهُمْ حَتَّى بَلَغَ الْجِمَارَ فَوَضَعَ أُصْبُعَيْهِ السَّبَّابَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: «بِحَصَى الْخَذْفِ» ثُمَّ أَمَرَ الْمُهَاجِرِينَ فَنَزَلُوا فِي مُقَدَّمِ الْمَسْجِدِ، وَأَمَرَ الْأَنْصَارَ فَنَزَلُوا مِنْ وَرَاءِ الْمَسْجِدِ، ثُمَّ نَزَلَ النَّاسَ بَعْدَ ذَلِكَ.
আবদুর রহমান ইবন মু‘আয আত-তায়মী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা মিনাতে অবস্থানকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা প্রদান করেন। এসময় আমাদের শ্রবণ শক্তি প্রখর হয় এবং তাঁর বক্তব্য আমরা (স্পষ্টরূপে) শুনতে পাই। এ সময় আমরা আমাদের নির্দিষ্ট স্থানে ছিলাম। অতঃপর তিনি আমাদেরকে হজ্জের আহকাম সম্পর্কে শিক্ষা দেন এবং নিক্ষেপ করা পর্যন্ত পৌঁছান। তিনি তাঁর ‘হাতের শাহাদাত ও বৃদ্ধ অঙ্গুলীকে স্বীয় কান পর্যন্ত উঠান, অতঃপর কংকর নিক্ষেপের নিয়ম প্রদর্শন করেন। অতঃপর তিনি মুহাজিরদেকে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে গমণ করতে বললে তারা মসজিদের পশ্চাতে আসন গ্রহণ করেন। এদের পর অন্য লোকেরা স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান গ্রহণ করে।
তেত্রিশতম পরিচ্ছেদ
আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বারা আহলে কিতাবদের মুখোশ উম্মোচণ করেছেন।
عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ الْيَهُودَ جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الزِّنَا؟» فَقَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ، إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ، فَأَتَوْا بِالتَّوْرَاةِ، فَنَشَرُوهَا فَجَعَلَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ، ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَيْكَ، فَرَفَعَهَا فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ، فَقَالُوا: صَدَقَ يَا مُحَمَّدُ، فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ،، فَأَمَرَ بِهِمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يَحْنِي عَلَى الْمَرْأَةِ يَقِيهَا الْحِجَارَةَ.
আবদুল্লাহ্ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জানাল তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা তাওরাতে রজম সম্পর্কে কি পাচ্ছ? তারা বলল, তাদেরকে অপমান ও কশাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার মিথ্যে বলেছ। তাওরাতে অবশ্যই রজমের উল্লেখ রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এল এবং তা খুলল। আর তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রেখে দিয়ে তার আগপিছ পাঠ করল। তখন আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, তাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তারা বলল, আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম সত্যই বলেছেন। হে মুহাম্মদ! তাতে রজমের আয়াত সত্যই বিদ্যমান রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয় সম্বন্ধে নির্দেশ করলেন এবং তাদের উভয়কে রজম করা হল। আমি দেখলাম, পুরুষটি নারীটির ওপর উপুড় হয়ে আছে। সে তাকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।
চৌত্রিশতম পরিচ্ছেদ
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীর মধ্যে যে বরকত দান করেছেন তা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ
عَنْ قَتَادَةَ، أَنَّ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ حَدَّثَهُمْ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ «يَطُوفُ عَلَى نِسَائِهِ، فِي اللَّيْلَةِ الوَاحِدَةِ، وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعُ نِسْوَةٍ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন।
পয়ত্রিশতম পরিচ্ছেদ
কা‘ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সাথীদ্বয়ের তাওবার ঘটনা এবং এ থেকে শিক্ষা। এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، وَكَانَ، قَائِدَ كَعْبٍ مِنْ بَنِيهِ، حِينَ عَمِيَ، قَالَ: سَمِعْتُ كَعْبَ بْنَ مَالِكٍ، يُحَدِّثُ حِينَ تَخَلَّفَ عَنْ قِصَّةِ، تَبُوكَ، قَالَ كَعْبٌ: لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةٍ غَزَاهَا إِلَّا فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، غَيْرَ أَنِّي كُنْتُ تَخَلَّفْتُ فِي غَزْوَةِ بَدْرٍ، وَلَمْ يُعَاتِبْ أَحَدًا تَخَلَّفَ عَنْهَا، إِنَّمَا خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ عِيرَ قُرَيْشٍ، حَتَّى جَمَعَ اللَّهُ بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ عَدُوِّهِمْ عَلَى غَيْرِ مِيعَادٍ، وَلَقَدْ شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ العَقَبَةِ، حِينَ تَوَاثَقْنَا عَلَى الإِسْلاَمِ، وَمَا أُحِبُّ أَنَّ لِي بِهَا مَشْهَدَ بَدْرٍ، وَإِنْ كَانَتْ بَدْرٌ، أَذْكَرَ فِي النَّاسِ مِنْهَا، كَانَ مِنْ خَبَرِي: أَنِّي لَمْ أَكُنْ قَطُّ أَقْوَى وَلاَ أَيْسَرَ حِينَ تَخَلَّفْتُ عَنْهُ، فِي تِلْكَ الغَزَاةِ، وَاللَّهِ مَا اجْتَمَعَتْ عِنْدِي قَبْلَهُ رَاحِلَتَانِ قَطُّ، حَتَّى جَمَعْتُهُمَا فِي تِلْكَ الغَزْوَةِ، وَلَمْ يَكُنْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُرِيدُ غَزْوَةً إِلَّا وَرَّى بِغَيْرِهَا.............. إلى آخر الحديث.. وَلَيْسَ الَّذِي ذَكَرَ اللَّهُ مِمَّا خُلِّفْنَا عَنِ الغَزْوِ، إِنَّمَا هُوَ تَخْلِيفُهُ إِيَّانَا، وَإِرْجَاؤُهُ أَمْرَنَا، عَمَّنْ حَلَفَ لَهُ وَاعْتَذَرَ إِلَيْهِ فَقَبِلَ مِنْهُ.
আবদুল্লাহ্ ইবন কা‘আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অন্ধ হয়ে গেলে তাঁর সন্তানদের মধ্যে থেক যিনি তাঁর সাহায্যকারী ও পথ-প্রদর্শনকারী ছিলেন, তিনি (আবদুল্লাহ্) বলেন, আমি কা’আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, যখন তাবুক যুদ্ধ থেকে তিনি পশ্চাতে থেকে যান তখনকার অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যতগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহন করেন তার মধ্যে তাবুক যুদ্ধ ছাড়া আমি কোনো যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকিনি। তবে আমি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহন করিনি। কিন্তু উক্ত যুদ্ধ থেকে যারা পেছনে পড়ে গেছেন, তাদের কাউকে ভৎসনা করা হয়নি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল কুরাইশ দলের সন্ধানে বের হয়েছিলেন। অবশেষে আল্লাহ্ তা’আলা তাঁদের এবং তাঁদের শত্রুবাহিনীর মধ্যে অঘোষিত যুদ্ধ সংঘটিত করেন। আর আকাবা রজনীতে যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের থেকে ইসলামের উপর অঙ্গীকার গ্রহন করেন, আমি তখন তাঁর সঙ্গে ছিলাম। ফলে বদর প্রান্তরের উপস্থিতিকে আমি প্রিয়তর ও শ্রেষ্ঠতর বলে বিবেচনা করিনি। যদিও আকাবার ঘটনা অপেক্ষা লোকদের মধ্যে বদরের ঘটনা অধিক প্রসিদ্ধ ছিল। আর আমার অবস্থার বিবরন এই- তাবুক যুদ্ধ থেকে আমি যখন পেছনে থাকি তখন আমি এত অধিক সুস্থ, শক্তিশালী ও সচ্ছল ছিলাম যে আল্লাহর কসম, আমার কাছে কখনো ইতোপূর্বে কোনো যুদ্ধে একই সাথে দু’টো যানবাহন সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি, যা আমি এ যুদ্ধের সময় সংগ্রহ করেছিলাম। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে অভিযান পরিচালনার সংকল্প গ্রহন করতেন, দৃশ্যত তার বিপরীত ভাব দেখাতেন। এ যুদ্ধ ছিল ভীষন উত্তাপের সময়, অতি দূরের সফর, বিশাল মরুভূমি এবং অধিক সংখ্যক শত্রুসেনার মুকাবিলা করার। কাজেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযানের অবস্থা মুসলিমদের কাছে প্রকাশ করে দেন যেন তারা যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সম্বল সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী লোক সংখ্যা ছিল অধিক যাদের হিসাব কোনো রেজিষ্ট্রারে লিখিত ছিলনা। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যার ফলে যেকোনো লোক যুদ্ধাভিযান থেকে বিরত থাকতে ইচ্ছা করলে তা সহজেই করতে পারত এবং অহী মারফত এ খবর পরিজ্ঞাত না করা পর্যন্ত তা সংগোপন থাকবে বলে সে ধারনা করত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অভিযান পরিচালনা করেছিলেন এমন সময় যখন ফল-ফলাদি পাকার ও গাছের ছায়ায় আরাম উপভোগের সময় ছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং এবং তাঁর সঙ্গী মুসলিম বাহিনী অভিযানে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহন করে ফেলেন। আমিও প্রতি সকালে তাঁদের সঙ্গে রওয়ানা হওয়ার প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকি। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারিনি। মনে মনে ধারনা করতে থাকি, আমি তো যখন ইচ্ছা যেতে সক্ষম। এই দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আমার সময় কেটে যেতে লাগল। এদিকে অন্য লোকেরা পুরাপুরি প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ফেলল। ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাথী মুসলিমগন রওয়ানা করলেন অথচ আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারলামনা। আমি মনে মনে ভাবলাম, আচ্ছা ঠিক আছে, এক দু’দিনের মধ্যে আমি প্রস্তুত হয়ে পরে তাঁদের সঙ্গে মিলিত হব। এভাবে আমি প্রতিদিন বাড়ি হতে প্রস্তুতিপর্ব সম্পন্ন করার মানসে বের হই, কিন্তু কিছু না করেই ফিরে আসি। আবার বের হই, আবার কিছু না করে ঘরে ফিরে আসি। ইত্যবসরে বাহিনী অগ্রসর হয়ে অনেক দূর চলে গেল। আর আমি রওয়ানা করে তাদের সাথে পথে মিলে যাবার ইচ্ছা পোষন করতে থাকলাম। আফসোস যদি আমি তাই করতাম! কিন্তু তা আমার ভাগ্যে জোটেনি। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রওয়ানা হওয়ার পর আমি লোকদের মধ্যে বের হয়ে তাদের মাঝে বিচরন করতাম। একথা আমার মনকে পীড়া দিত যে, আমি তখন (মদীনায়) মুনাফিক এবং দুর্বল ও অক্ষম লোক ছাড়া অন্য কাউকে দেখতে পেতাম না। এদিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাবুক পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আমার কথা আলোচনা করেননি। অনন্তর তাবুকে একথা জনতার মধ্যে উপবিষ্টাবস্থায় জিজ্ঞাসা করে বসলেন, কা’আব কি করল? বনী সালমা গোত্রের এক লোক বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ধন-সম্পদ ও আত্মগরিমা তাকে আসতে দেয়নি। একথা শুনে মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তুমি যা বললে তা ঠিক নয়। ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কসম, আমরা তাঁকে উত্তম ব্যক্তি বলে জানি। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব রইলেন। কা‘আব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন আমি যখন অবগত হলাম যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছেন, তখন আমি চিন্তাযুক্ত হয়ে পড়লাম এবং মিথ্যার বাহানা খুঁজতে থাকলাম। মনে স্থির করলাম, আগামীকাল এমন কথা বলব, যাতে করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্রোধকে প্রশমিত করতে পারি। আর এ সম্পর্কে আমার পরিবারস্থ জ্ঞানীগুনীদের থেকে পরামর্শ গ্রহন করতে থাকি। এরপর যখন প্রচারিত হলো যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় এসে পৌঁছে যাচ্ছেন, তখন আমার অন্তর থেকে মিথ্যা তিরোহিত হয়ে গেল। আর মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মালো যে, এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করে আমি তাঁকে কখনো ক্রোধমুক্ত করতে সক্ষম হবোনা, যাতে মিথ্যার নামগন্ধ থাকে। অতএব আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত গ্রহন করলাম যে, আমি সত্যই বলব। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রাতে মদীনায় পদার্পন করলেন। তিনি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে প্রথমে মসজিদে গিয়ে দু’রাকাত সালাত আদায় করতেন, তারপর লোকদের সামনে বসতেন। যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ করলেন, তখন যারা পশ্চাদপদ ছিলেন তারা তাঁর কাছে এসে শপথ করে করে অক্ষমতা ও আপত্তি পেশ করতে লাগল। এরা সংখ্যায় আশির অধিক ছিল। অনন্তর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহ্যিকভাবে তাদের ওযর-আপত্তি গ্রহন করলেন, তাদের বায়আত করলেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তাদের অন্তর্নিহিত অবস্থা আল্লাহর হাওয়ালা করে দিলেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমিও এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেদমতে উপস্থিত হলাম। আমি যখন তাঁকে সালাম দিলাম তখন তিনি রাগান্বিত চেহেরায় মুচকি হাসি হাসলেন। তারপর বললেন, এসো। আমি সে অনুসারে অগ্রসর হয়ে একেবারে তাঁর সম্মুখে বসে গেলাম। তখন তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি কারনে তুমি অংশগ্রহন করলেনা? তুমি কি যানবাহন ক্রয় করনি? তখন আমি বললাম, হ্যাঁ, করেছি। আল্লাহর কসম, এ কথা সুনিশ্চিত যে, আমি যদি আপনি ছাড়া অন্য কোনো দুনিয়াদার ব্যক্তির সামনে বসতাম তাহলে আমি তাঁর অসন্তুষ্টিকে ওযর-আপত্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রশমিত করার প্রয়াস চালাতাম। আর আমি তর্কে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আল্লাহর কসম, আমি পরিজ্ঞাত যে, আজ যদি আমি আপনার কাছে মিথ্যা বলে আমার প্রতি আপনাকে রাযী করার চেষ্টা করি, তাহলেই অচিরেই মহান আল্লাহ্ তায়ালা আপনাকে আমার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দিতে পারেন। আর যদি আপনার কাছে সত্য প্রকাশ করি, যাতে আপনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, তবুও আমি এতে মহান আল্লাহ্ তা‘য়ালার ক্ষমা পাওয়ার নির্ঘাত আশা রাখি। না, আল্লাহর কসম, আমার কোনো ওযর ছিলনা। আল্লাহর কসম, সেই অভিযানে আপনার সাথে না যাওয়াকালীন সময় আমি সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও সামর্থ্যবান ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে সত্য কথাই বলেছে। তুমি এখন চলে যাও, যতদিনে না তোমার সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা ফায়সালা করে দেন। তাই আমি উঠে চলে গেলাম। তখন বনী সালিমার কতিপয় লোক আমার অনুসরণ করল। তারা আমাকে বলল, আল্লাহর কসম, তুমি ইতোপূর্বে কোনো গুনাহ্ করেছ বলে আমাদের জানা নেই। তুমি কি অন্যান্য পশ্চাদগামীর মতো তোমার অক্ষমতার একটি ওযর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করে দিতে পারতেনা? আর তোমার এ অপরাধের কারনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনাই তো যথেষ্ট ছিল। আল্লাহর কসম, তারা আমাকে অনবরত কঠিনভাবে ভৎর্সনা করতে থাকে। ফলে আমি পূর্ব স্বীকারোক্তি থেকে প্রত্যাবর্তন করে মিথ্যা বলার বিষয়ে মনে মনে চিন্তা করতে থাকি। এরপর আমি তাদের বললাম, আমার মতো এ কাজ আর কেউ করেছে কি? তারা জওয়াব দিল, হ্যাঁ, আরও দু’জন তোমার মতো বলেছে। এবং তাদের ক্ষেত্রেও তোমার মতো একই রূপ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কে কে? তারা বললো, একজন মুরারা ইবন রবী আমরী এবং অপরজন হলেন হিলাল ইবন উমায়্যা ওয়াকিফী। এরপর তারা আমাকে অবহিত করল যে, তারা উভয়ে উত্তম মানুষ এবং তারা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছেন। সেজন্য উভয়ে আদর্শবান। যখন তারা তাদের নাম উল্লেখ করল, তখন আমি পূর্ব মতের উপর অটল রইলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মধ্যকার যে তিনজন তাবুকে অংশগ্রহন হতে বিরত ছিল তাদের সাথে কথা বলতে মুসলিমদের নিষেধ করে দিলেন। তদনুসারে মুসলিমরা আমাদের পরিহার করে চললো। আমাদের প্রতি তাদের আচরন পরিবর্তন করে নিল। এমনকি এদেশ যেন আমাদের কাছে অপরিচিত হয়ে গেল। এ অবস্থায় আমরা পঞ্চাশ রাত অতিবাহিত করলাম। আমার অপর দু’জন সাথী তো সংকট ও শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হলেন। তারা নিজেদের ঘরে বসে কাঁদতে থাকেন। আর আমি যেহেতু অধিকতর যুবক ও শক্তিশালী ছিলাম তাই বাইরে বের হয়ে আসতাম, মুসলিমদের জামাআতে সালাত আদায় করতাম। এবং বাজারে চলাফেরা করতাম কিন্তু কেউ আমার সাথে কথা বলতনা। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হয়ে তাঁকে সালাম দিতাম। যখন তিনি সালাত শেষে মজলিসে বসতেন তখন আমি মনে মনে বলতাম ও লক্ষ করতাম, তিনি আমার সালামের জবাবে তাঁর ঠোঁটদ্বয় নেড়েছেন কিনা? তারপর আমি তাঁর নিকটবর্তী স্থানে সালাত আদায় করতাম এবং গোপন দৃষ্টিতে তাঁর দিকে দেখতাম যে, আমি যখন সালাতে মগ্ন হতাম তখন তিনি আমার প্রতি দৃষ্টি দিতেন, আর যখন আমি তাঁর দিকে তাকাতাম তখন তিনি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতেন। এভাবে আমার প্রতি লোকদের কঠোরতা ও এড়িয়ে চলার আচরন দীর্ঘকাল ধরে বিরাজমান থাকে। একদা আমি আমার চাচাত ভাই ও প্রিয় বন্ধু আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাগানের প্রাচীর টপকে প্রবেশ করে তাঁকে সালাম দেই। কিন্তু আল্লাহর কসম, তিনি আমার সালামের জওয়াব দিলেন না। আমি তখন বললাম, হে আবু কাতাদা, আপনাকে আমি আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, আপনি কি জানেন যে, আমি আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসি? তখন তিনি নীরবতা পালন করলেন। আমি পুনরায় তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি এবারও কোনো জবাব দিলেন না। আমি পুনরায় (তৃতীয়বারও) তাঁকে কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই ভালো জানেন। তখন আমার চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল। অগত্যা আমি পুনরায় প্রাচীর টপকে ফিরে এলাম। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, একদা আমি মদীনার বাজারে বিচরন করছিলাম। এমতাবস্থায় সিরিয়ার এক কৃষক বনিক যে মদীনার বাজারে খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করার উদ্দেশ্যে এসেছিল, সে বলছে, আমাকে কা’আব ইবন মালিককে কেউ পরিচয় করিয়ে দিতে পারে কি? তখন লোকেরা তাকে আমার প্রতি ইশারায় দেখাচ্ছিল। তখন সে এসে গাসসানি বাদশার একটি পত্র আমার কাছে হস্তান্তর করল। তাতে লেখা ছিল, পর সমাচার এই, আমি জানতে পারলাম যে, আপনার সাথী আপনার প্রতি জুলুম করেছে। আর আল্লাহ্ আপনাকে মর্যাদাহীন ও আশ্রয়হীন করে সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের দেশে চলে আসুন, আমরা আপনাকে সাহায্য-সহানুভূতি করব। আমি যখন এ পত্র পড়লাম, তখন আমি বললাম, এটাও আর একটি পরীক্ষা। তখন আমি চুলা খোঁজ করে তার মধ্যে পত্রটি নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দিলাম। এ সময় পঞ্চাশ দিনের চল্লিশ দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে এক সংবাদবাহক আমার কাছে এসে বলল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি আপনার স্ত্রী হতে পৃথক থাকবেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমি কি তাকে তালাক দিয়ে দিব, না অন্য কিছু করব? তিনি উত্তর দিলেন, তালাক দিতে হবে না বরং তার থেকে পৃথক থাকুন এবং তার নিকটবর্তী হবেননা। আমার অপর দু’জন সঙ্গীর প্রতি একই আদেশ পৌঁছালেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, তুমি তোমার পিত্রালয়ে চলে যাও। আমার এ ব্যাপারে মহান আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত তুমি তথায় অবস্থান কর। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার সঙ্গী হিলাল ইবন উমায়্যার স্ত্রী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, হিলাল ইবন উমায়্যা অতি বৃদ্ধ, এমন বৃদ্ধ যে, তাঁর কোনো খাদিম নেই। আমি তাঁর খেদমত করি, এটা কি অপছন্দ করেন? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না তবে সে তোমার বিছানায় আসতে পারবেনা। সে বলল, আল্লাহর কসম, এ সম্পর্কে তার কোনো অনুভূতিই নেই। আল্লাহর কসম, তিনি এ নির্দেশ পাওয়া অবধি সর্বদা কান্নাকাটি করছেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমার পরিবারের কেউ আমাকে পরামর্শ দিল যে, আপনিও যদি আপনার স্ত্রী সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতেন, যেমন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিলাল ইবন উমায়্যার স্ত্রীকে তাঁর (স্বামীর) খেদমত করার অনুমতি দিয়েছেন। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি কখনো তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইবো না। আমি যদি তার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুমতি চাই, তবে তিনি কি বলবেন, তা আমার জানা নেই। আমি তো নিজেই আমার খেদমতে সক্ষম। এরপর আরও দশরাত অতিবাহিত করলাম। এভাবে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন থেকে আমাদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন তখন থেকে পঞ্চাশ রাত পূর্ন হলো। এরপর আমি পঞ্চাশতম রাত শেষে ফজরের সালাত আদায় করলাম এবং আমাদের ঘরের ছাদে এমন অবস্থায় বসে ছিলাম যা আল্লাহ্ তা’আলা (কুরআনে) বর্ণনা করেছেন। আমার জান-প্রাণ দুর্বিষহ এবং গোটা জগতটা যেন আমার জন্য প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও সংকীর্ন হয়ে গিয়েছিল। এমতাবস্থায় শুনতে পেলাম এক চীৎকার কারীর চীৎকার। সে সালা পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চস্বরে ঘোষনা করছে, হে কা’আব ইবন মালিক! সুসংবাদ গ্রহন করুন। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এ শব্দ আমার কানে পৌঁছামাত্র আমি সিজদায় লুটে পড়লাম। আর আমি অনুভব করলাম যে, আমার সুদিন ও খুশীর খবর এসেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায়ের পর আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ হতে আমাদের তাওবা কবুল হওয়ার সুসংবাদ প্রকাশ করেন। তখন লোকেরা আমার এবং আমার সঙ্গীদ্বয়ের কাছে সুসংবাদ পরিবেশন করতে থাকে। এবং তড়িঘড়ি একজন অশ্বারোহী লোক আমার কাছে আসে এবং আসলাম গোত্রের অপর এক ব্যক্তি দ্রুত আগমন করে পাহাড়ের উপর আরোহন করত চীৎকার দিতে থাকে। তার চীৎকারের শব্দ ঘোড়া অপেক্ষাও দ্রুত পৌঁছল। যার শব্দ আমি শুনেছিলাম সে যখন আমার কাছে সুসংবাদ প্রদান করতে আসল, আমি তখন আমার নিজের পরিধেয় দুটো কাপড় তাকে সুসংবাদ দেওয়ার জন্য দান করলাম। আর আমি আল্লাহর কসম করে বলছি যে, ঐ সময় সেই দুটো কাপড় ছাড়া আমার কাছে আর কোনো কাপড় ছিলোনা। আমি দুটো কাপড় ধার করে পরিধান করলাম এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে রওয়ানা হলাম। লোকেরা দলে দলে আমাকে ধন্যবাদ জানাতে আসতে লাগল। তারা তাওবা কবুলের মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। তারা বলছিল, তোমাকে মুবারকবাদ যে মহান আল্লাহ্ রাববুল আলামিন তোমার তাওবা কবুল করেছেন। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, অবশেষে আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে বসা ছিলেন এবং তাঁর চতুস্পার্শ্বে জনতার সমাবেশ ছিল। তালহা ইবন উবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দ্রুত উঠে এসে আমার সাথে মুসাফাহা করলেন ও মুবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম, তিনি ব্যতীত আর কোনো মুহাজির আমার জন্য দাঁড়াননি। আমি তালহার ব্যবহার ভুলতে পারবোনা। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর আমি যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাম জানালাম, তখন তাঁর চেহারা আনন্দের আতিশয্যে ঝকঝক করছিল। তিনি আমাকে বললেন, তোমার মাতা তোমাকে জন্মদানের দিন হতে যতদিন তোমার উপর অতিবাহিত হয়েছে তার মধ্যে উৎকৃষ্ট ও উত্তম দিনের সুসংবাদ গ্রহন কর। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা কি আপনার পক্ষ থেকে না আল্লাহর পক্ষ থেকে? তিনি বললেন, আমার পক্ষ থেকে নয় বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খুশী হতেন তখন তাঁর চেহারা মুবারক এতো উজ্জ্বল ও প্রোজ্জ্বল হতো যেন পূর্নিমার চাঁদের ফালি। এতে আমরা তাঁর সন্তুষ্টি বুঝতে পারতাম। আমি যখন তাঁর সম্মুখে বসলাম তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমার তাওবা কবুলের শুকরিয়া স্বরূপ আমার ধন-সম্পদ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথে দান করতে চাই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার কিছু মাল তোমার কাছে রেখে দাও। তা তোমার জন্য উত্তম। আমি বললাম, খাইবরে অবস্থিত আমার অংশটি আমার জন্য রাখলাম। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, মহান আল্লাহ্ তা‘আলা সত্য বলার কারনে আমাকে রক্ষা করেছেন, তাই আমার তাওবা কবুলের নিদর্শন অক্ষুন্ন রাখতে আমার অবশিষ্ট জীবনে সত্যই বলব। আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি এ সত্য বলার কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জানিয়েছি, তখন থেকে আজ পর্যন্ত আমার জানামতে কোনো মুসলিমকে সত্য কথার বিনিময়ে এরুপ নিয়ামত আল্লাহ্ দান করেননি যে নিয়ামত আমাকে দান করেছেন। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] যেদিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে সত্য কথা বলেছি সেদিন হতে আজ পর্যন্ত অন্তরে মিথ্যা বলার ইচ্ছাও করিনি। আমি আশা পোষন করি যে, বাকী জীবনও আল্লাহ্ তাআলা আমাকে মিথ্যা থেকে হিফাজত করবেন। এরপর আল্লাহ্ তাআলা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর এই আয়াত নাযিল করেন, “আল্লাহ্ অনুগ্রহ পরায়ন হলেন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি এবং মুহাজিরদের প্রতি...... এবং তোমরা সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও”। [সূরা আত-তাওবা: ১১১-১১৯]। [কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আল্লাহর শপথ, ইসলাম গ্রহনের পর থেকে কখনো আমার উপর এতো উৎকৃষ্ট নিয়ামত আল্লাহ্ প্রদান করেননি যা আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর, তা হলো রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আমার সত্য বলা ও তাঁর সাথে মিথ্যা না বলা, যদি মিথ্যা বলতাম তবে মিথ্যাবাদীদের মতো আমিও ধ্বংস হয়ে যেতাম। সেই মিথ্যাবাদিদের সম্পর্কে যখন ওহী নাযিল হয়েছে তখন জঘন্য অন্তরের সেই লোকদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা তাদের নিকট ফিরে আসলে তারা আল্লাহর শপথ করবে............ আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্ট হবেন না”। [সূরা আত-তাওবা: ৯৫-৯৬]। কা‘আব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের তিনজনের তাওবা কবুল করতে বিলম্ব করা হয়েছে--- যাদের তাওবা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবুল করেছেন যখন তারা তাঁর কাছে শপথ করেছে, তিনি তাদের বাই‘আত গ্রহন করেছেন এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আমাদের বিষয়টি আল্লাহর ফায়সালা না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্থগিত রেখেছেন। এর প্রেক্ষাপটে আল্লাহ্ বলেন--- “সেই তিনজনের প্রতিও যাদের সম্পর্কে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়েছিল”। [সূরা তাওবা: ১১৮]। কুরআনের এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়নি যারা তাবুক যুদ্ধ থেকে পিছনে ছিল ও মিথ্যা কসম করে ওযর- আপত্তি পেশ করেছিল এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তা গ্রহন করেছিলেন। বরং এই আয়াতে তাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে আমরা যারা পেছনে ছিলাম এবং যাদের প্রতি সিদ্ধান্ত দেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছিল।
ছত্রিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে আরেকটি হলো তিনি সালাতে তাঁর পিছনের দিকের অবস্থা দেখতে পেতেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلاَةً، ثُمَّ رَقِيَ المِنْبَرَ، فَقَالَ فِي الصَّلاَةِ وَفِي الرُّكُوعِ: «إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ وَرَائِي كَمَا أَرَاكُمْ».
আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে সালাত আদায় করলেন। তারপর তিনি মিম্বরে উঠলেন এবং বললেন, “তোমাদের সালাতে রুকুতে আমি অবশ্যই তোমাদের আমার পেছন থেকে দেখি, যেমন এখন তোমাদের দেখছি”।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «هَلْ تَرَوْنَ قِبْلَتِي هَا هُنَا، فَوَاللَّهِ مَا يَخْفَى عَلَيَّ خُشُوعُكُمْ وَلاَ رُكُوعُكُمْ، إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِي».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা কি মনে কর যে, আমার দৃষ্টি কেবল কিবলার দিকে? আল্লাহর কসম! আমার কাছে তোমাদের খুশূ (বিনয়) ও রুকু কিছুই গোপন থাকে না। অবশ্যই আমি আমার পেছন থেকেও তোমাদের দেখি।”
সাঁইত্রিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীদের কিছু কারামত তাঁর নবুওয়তের প্রমাণের মধ্যে অন্যতম।
এটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ব্যতীত কাউকে কারামত দান করা হয় না। আর সবচেয়ে বড় কারামত হলো বান্দাহকে কিতাব ও সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তাওফিক দান করা ও শেষ পরিণাম ভাল হওয়া।
عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشَرَةَ رَهْطٍ سَرِيَّةً عَيْنًا، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمْ عَاصِمَ بْنَ ثَابِتٍ الأَنْصَارِيَّ جَدَّ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ»، فَانْطَلَقُوا حَتَّى إِذَا كَانُوا بِالهَدَأَةِ، وَهُوَ بَيْنَ عُسْفَانَ وَمَكَّةَ، ذُكِرُوا لِحَيٍّ مِنْ هُذَيْلٍ، يُقَالُ لَهُمْ بَنُو لَحْيَانَ، فَنَفَرُوا لَهُمْ قَرِيبًا مِنْ مِائَتَيْ رَجُلٍ كُلُّهُمْ رَامٍ، فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ حَتَّى وَجَدُوا مَأْكَلَهُمْ تَمْرًا تَزَوَّدُوهُ مِنَ المَدِينَةِ، فَقَالُوا: هَذَا تَمْرُ يَثْرِبَ فَاقْتَصُّوا آثَارَهُمْ، فَلَمَّا رَآهُمْ عَاصِمٌ وَأَصْحَابُهُ لَجَئُوا إِلَى فَدْفَدٍ وَأَحَاطَ بِهِمُ القَوْمُ، فَقَالُوا لَهُمْ: انْزِلُوا وَأَعْطُونَا بِأَيْدِيكُمْ، وَلَكُمُ العَهْدُ وَالمِيثَاقُ، وَلاَ نَقْتُلُ مِنْكُمْ أَحَدًا، قَالَ عَاصِمُ بْنُ ثَابِتٍ أَمِيرُ السَّرِيَّةِ: أَمَّا أَنَا فَوَاللَّهِ لاَ أَنْزِلُ اليَوْمَ فِي ذِمَّةِ كَافِرٍ، اللَّهُمَّ أَخْبِرْ عَنَّا نَبِيَّكَ، فَرَمَوْهُمْ بِالنَّبْلِ فَقَتَلُوا عَاصِمًا فِي سَبْعَةٍ، فَنَزَلَ إِلَيْهِمْ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ بِالعَهْدِ وَالمِيثَاقِ، مِنْهُمْ خُبَيْبٌ الأَنْصَارِيُّ، وَابْنُ دَثِنَةَ، وَرَجُلٌ آخَرُ، فَلَمَّا اسْتَمْكَنُوا مِنْهُمْ أَطْلَقُوا أَوْتَارَ قِسِيِّهِمْ فَأَوْثَقُوهُمْ، فَقَالَ الرَّجُلُ الثَّالِثُ: هَذَا أَوَّلُ الغَدْرِ، وَاللَّهِ لاَ أَصْحَبُكُمْ إِنَّ لِي فِي هَؤُلاَءِ لَأُسْوَةً يُرِيدُ القَتْلَى، فَجَرَّرُوهُ وَعَالَجُوهُ عَلَى أَنْ يَصْحَبَهُمْ فَأَبَى فَقَتَلُوهُ، فَانْطَلَقُوا بِخُبَيْبٍ، وَابْنِ دَثِنَةَ حَتَّى بَاعُوهُمَا بِمَكَّةَ بَعْدَ وَقْعَةِ بَدْرٍ، فَابْتَاعَ خُبَيْبًا بَنُو الحَارِثِ بْنِ عَامِرِ بْنِ نَوْفَلِ بْنِ عَبْدِ مَنَافٍ، وَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ قَتَلَ الحَارِثَ بْنَ عَامِرٍ يَوْمَ بَدْرٍ، فَلَبِثَ خُبَيْبٌ عِنْدَهُمْ أَسِيرًا، فَأَخْبَرَنِي عُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عِيَاضٍ، أَنَّ بِنْتَ الحَارِثِ أَخْبَرَتْهُ: أَنَّهُمْ حِينَ اجْتَمَعُوا اسْتَعَارَ مِنْهَا مُوسَى يَسْتَحِدُّ بِهَا، فَأَعَارَتْهُ، فَأَخَذَ ابْنًا لِي وَأَنَا غَافِلَةٌ حِينَ أَتَاهُ قَالَتْ: فَوَجَدْتُهُ مُجْلِسَهُ عَلَى فَخِذِهِ وَالمُوسَى بِيَدِهِ، فَفَزِعْتُ فَزْعَةً عَرَفَهَا خُبَيْبٌ فِي وَجْهِي، فَقَالَ: تَخْشَيْنَ أَنْ أَقْتُلَهُ؟ مَا كُنْتُ لِأَفْعَلَ ذَلِكَ، وَاللَّهِ مَا رَأَيْتُ أَسِيرًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ خُبَيْبٍ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَجَدْتُهُ يَوْمًا يَأْكُلُ مِنْ قِطْفِ عِنَبٍ فِي يَدِهِ، وَإِنَّهُ لَمُوثَقٌ فِي الحَدِيدِ، وَمَا بِمَكَّةَ مِنْ ثَمَرٍ، وَكَانَتْ تَقُولُ: إِنَّهُ لَرِزْقٌ مِنَ اللَّهِ رَزَقَهُ خُبَيْبًا، فَلَمَّا خَرَجُوا مِنَ الحَرَمِ لِيَقْتُلُوهُ فِي الحِلِّ، قَالَ لَهُمْ خُبَيْبٌ: ذَرُونِي أَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، فَتَرَكُوهُ، فَرَكَعَ رَكْعَتَيْنِ، ثُمَّ قَالَ: لَوْلاَ أَنْ تَظُنُّوا أَنَّ مَا بِي جَزَعٌ لَطَوَّلْتُهَا، اللَّهُمَّ أَحْصِهِمْ عَدَدًا،
مَا أُبَالِي حِينَ أُقْتَلُ مُسْلِمًا ... عَلَى أَيِّ شِقٍّ كَانَ لِلَّهِ مَصْرَعِي
وَذَلِكَ فِي ذَاتِ الإِلَهِ وَإِنْ يَشَأْ ... يُبَارِكْ عَلَى أَوْصَالِ شِلْوٍ مُمَزَّعِ
فَقَتَلَهُ ابْنُ الحَارِثِ فَكَانَ خُبَيْبٌ هُوَ سَنَّ الرَّكْعَتَيْنِ لِكُلِّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ قُتِلَ صَبْرًا، فَاسْتَجَابَ اللَّهُ لِعَاصِمِ بْنِ ثَابِتٍ يَوْمَ أُصِيبَ، «فَأَخْبَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَصْحَابَهُ خَبَرَهُمْ، وَمَا أُصِيبُوا، وَبَعَثَ نَاسٌ مِنْ كُفَّارِ قُرَيْشٍ إِلَى عَاصِمٍ حِينَ حُدِّثُوا أَنَّهُ قُتِلَ، لِيُؤْتَوْا بِشَيْءٍ مِنْهُ يُعْرَفُ، وَكَانَ قَدْ قَتَلَ رَجُلًا مِنْ عُظَمَائِهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ، فَبُعِثَ عَلَى عَاصِمٍ مِثْلُ الظُّلَّةِ مِنَ الدَّبْرِ، فَحَمَتْهُ مِنْ رَسُولِهِمْ، فَلَمْ يَقْدِرُوا عَلَى أَنْ يَقْطَعَ مِنْ لَحْمِهِ شَيْئًا».
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ব্যক্তিকে গোয়েন্দা হিসাবে সংবাদ সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করেন এবং আসিম ইবন সাবিত আল-আনসারীকে তাদের দলপতি নিযুক্ত করেন। যিনি আসিম ইবন উমর ইবন খাত্তাবের মাতামহ ছিলেন। তাঁরা রওয়ানা হয়ে গেলেন, যখন তাঁরা উসফান ও মক্কার মধ্যবর্তী হাদআত নামক স্থানে পৌঁছেন, তখন হুযায়েল গোত্রের একটি প্রশাখা যাদেরকে লেহইয়ান বলা হয় তাদের কাছে তাদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তারা প্রায় দু’শত তীরন্দাজ ব্যক্তিকে তাদের পশ্চাদপনে প্রেরণ করে। এরা তাঁদের চিহৃ অনুসরণ করে চলতে থাকে। সাহাবীগণ মদীনা থেকে সাথে নিয়ে আসা খেজুর যেখানে বসে খেয়েছিলেন, অবশেষে এরা সে স্থানের সন্ধান পেয়ে গেল, তখন এরা বলল, ইয়াসরিবের খেজুর। এরপর এরা তাঁতের পদচিহৃ অনুসরণ করে চলতে লাগল। যখন আসিম ও এ সাথীগণ তাদের দেখলেন, তখন তাঁর একটি উচু স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলেন। আর কাফিরগণ তাঁদের ঘিরে ফেলল এবং তাঁদেরকে বলতে লাগল, তোমরা অবতরণ কর ও স্বেচ্ছায় বন্দীত্ব বরণ কর। আমরা তোমাদের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিযে, তোমাদের মধ্য থেকে কাউকে আমরা হতা করব না। তখন গোয়েন্দা দলের নেতা আসিম ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! আমি তো আজ কাফিরদের নিরাপত্তায় অবতরণ করবো না। হে আল্লাহ! আমাদের পক্ষআলতে আপনার নবীকে সংবাদ পৌঁছিয়ে দিন।’ অবশেষে কাফিরগণ তীর নিক্ষপ করতে শুরু করল আর তারা আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ সাতজনকে শহীদ করল। এরপর অবশিষ্ট তিনজন খুবাইব আনসারী, যায়দ ইবন দাসিনা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অপর একজন তাদের দেয় প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারের উপর নির্ভর করে তাদের নিকট অবতরণ করলেন। যখন কাফিররা তাদেরকে আয়ত্বে নিয়ে নিল, তখন তারা তাদের ধনুকের রশি খুলে ফেলে (সেই রশি দিয়ে) তাঁদের বেধে ফেললো। তখন তৃতীয়জন বলে উঠলেন, ‘সূচনাতেই বিশ্বাসঘাতকতা! আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের সাথে যাবো না, আমি তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করব, যারা শাহাদাত বরণ করেছে।’ কাফিরগণ তাঁকে তাদের সঙ্গে টেনে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি যেতে অস্বীকার করেন। তখন তারা তাঁকে শহীদ করে ফেলে এবং তারা খুবাই ও ইবন দাসিনাকে নিয়ে চলে যায়। অবশেষে তাদের উভয়কে মক্কায় বিক্রয় করে ফেলে। এ বদর যুদ্ধের পরবর্তী সময়ের কথা। তখন খুবাইবকে হারিস ইবন আমিরের পুত্রগণ ক্রয় করে নেয়। আর বদর যুদ্ধের দিন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু হারিস ইবন আমিরকে হত্যা করেছিলেন। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু কিছু দিন তাদের নিকট বন্দী থাকেন। ইবন শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে উবাইদুল্লাহ ইবন আয়ায অবহিত করেছেন, তাঁকে হারিসের কন্যা জানিয়ে যে, যখন হারিসের পুত্রগণ খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু।কে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল, তখন তিনি তাঁর নিকট থেকে ক্ষৌর কাট সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে একটা ক্ষুর ধার চাইলেন। তখন হারিসের কন্যা তাকে এক খানা ক্ষুর ধার দির। (সে বলেছে) সে সময় ঘটনাক্রমে আমার এক ছেলে আমার অজ্ঞাতে খুবাইবের নিকট চলে যায় এবং আমি দেখলাম যে, আমার ছেলে খুবাইবের উরুর উপর বসে রয়েছে এবং খুবাইবের হাতে রয়েছে ক্ষুর। আমি খুব ভয় পেয়ে গেলাম। খুবাইব আমার চেহেরা দেখে বুঝতে পারলেন যে, আমি ভয় পাচ্ছি। তখন তিনি বললেন, তুমি কি এ ভয় করো যে, আমি এ শিশুটিকে হত্যা করে ফেলব? কখনোমি তা করবো না। (হারিসের কন্যা বলল) আল্লাহর কসম! আমি খুবাইবের ন্যায় উত্তম বন্দী কখনো দেখিনি। আল্লাহর শপথ! আমি একদিন দেখলাম, তিনি লোহার শিকলে আবদ্ধ অবস্থায় আঙ্গুর ছড়া থেকে খাচ্ছেন, যা তার হাতেই ছিল। অথচ এ সময় মক্কায় কোনো ফলই পাওয়া যাচ্ছিল না। হারিসের কন্যা বলতো, এ তো ছিল আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত জীবিকা, যা তিনি খুবাইবকে দান করেছেন। এরপর তারা খুবাইবকে শহীদ করার উদ্দেশ্যে হেরেম থেকে হিল্লের দিকে নিয়ে বের হয়ে পড়ল, তখন খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের বললেন, আমাকে দু’রাকাআত সালাত আদায় করতে দাও। তারা তাঁকে সে অনুমতি দান করল। তিনি দু’রাকাআত সালাত আদায় করে নিলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘তোমরা যদি ধারণা না করতে যে, আমি মৃত্যুর ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছি তবে আমি সালাতকে দীর্ঘায়িত করতাম। হে আল্লাহ! তাদেরকে এক এক করে ধবংশ করুন।’ তারপর তিনি এ কবিতা দু’টি আবৃত্তি করলেন,
‘‘যখন আমি মুসলিম হিসাবে শহীদ হচ্ছি তখন আমি কোনরূপ ভয় করি না। আল্লাহর উদ্দেশ্যে আমাকে যেখানেই মাটিতে লুটিয়ে ফেলা হোক না কেন, (তাতে আমার কিছু যায় আসে না)। আমার এ মৃত্যু আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হচ্ছে। তিনি যদি ইচ্ছা করেন, তবে আমার দেহের প্রতিটি খন্ডিত জোড়াসমূহে বরকত সৃষ্টি করে দিবেন।’’
অবশেষে হারিসের পুত্র তাঁকে শহীদ করে ফেলে। বস্তুত যে মুসলিম বন্দী অবস্থায় শহীদ করা হয় তার জন্য দু’রাকাত সালাত আদায়ের এ রীতি খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুই প্রবর্তন করে গেছেন। যেদিন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু শাহাদাত বরণ করেছিলেন, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দো‘আ কবুল করেছিলেন। সেদিনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাগণকে তাঁদের সংবাদ ও তাঁদের উপর যা’ যা’ আপতিত হয়েছিল সবই অবহিত করেছিলেন। আর যখন কুরাইশ কাফিরদেরকে এ সংবাদ পৌঁছানে হয় যে, আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করা হয়েছে তখন তারা তাঁর নিকট এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করে, যাতে সে ব্যক্তি তাঁর মরদেহ থেকে কিছু অংশ কেটে নিয়োসে। যেন তারা তা দেখে চিনতে পারে। কারণ, বদর যুদ্ধের দিন আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু কুরাইশদের জনৈক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন। আসিমের মরদেহের (হেফাজতের জন্য) মৌমাছির ঝাঁক প্রেরিক হল (এই মৌমাছিরা) তাঁর দেহ আবৃত করে রেখে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে হেফাজত করল। ফলে তারা তাঁর দেহে হতে কোনো এক টোকরা গোশত কেটে নিতে সক্ষম হয়নি।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، قَالَ: لَمَّا وَقَفَ الزُّبَيْرُ يَوْمَ الجَمَلِ دَعَانِي، فَقُمْتُ إِلَى جَنْبِهِ فَقَالَ: " يَا بُنَيِّ، إِنَّهُ لاَ يُقْتَلُ اليَوْمَ إِلَّا ظَالِمٌ أَوْ مَظْلُومٌ، وَإِنِّي لاَ أُرَانِي إِلَّا سَأُقْتَلُ اليَوْمَ مَظْلُومًا، وَإِنَّ مِنْ أَكْبَرِ هَمِّي لَدَيْنِي، أَفَتُرَى يُبْقِي دَيْنُنَا مِنْ مَالِنَا شَيْئًا؟ فَقَالَ: يَا بُنَيِّ بِعْ مَالَنَا، فَاقْضِ دَيْنِي، وَأَوْصَى بِالثُّلُثِ، وَثُلُثِهِ لِبَنِيهِ - يَعْنِي بَنِي عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ - يَقُولُ: ثُلُثُ الثُّلُثِ، فَإِنْ فَضَلَ مِنْ مَالِنَا فَضْلٌ بَعْدَ قَضَاءِ الدَّيْنِ شَيْءٌ، فَثُلُثُهُ لِوَلَدِكَ "، - قَالَ هِشَامٌ: وَكَانَ بَعْضُ وَلَدِ عَبْدِ اللَّهِ، قَدْ وَازَى بَعْضَ بَنِي الزُّبَيْرِ، خُبَيْبٌ، وَعَبَّادٌ وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعَةُ بَنِينَ، وَتِسْعُ بَنَاتٍ -، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: فَجَعَلَ يُوصِينِي بِدَيْنِهِ، وَيَقُولُ: «يَا بُنَيِّ إِنْ عَجَزْتَ عَنْهُ فِي شَيْءٍ، فَاسْتَعِنْ عَلَيْهِ مَوْلاَيَ»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا دَرَيْتُ مَا أَرَادَ حَتَّى قُلْتُ: يَا أَبَةِ مَنْ مَوْلاَكَ؟ قَالَ: «اللَّهُ»، قَالَ: فَوَاللَّهِ مَا وَقَعْتُ فِي كُرْبَةٍ مِنْ دَيْنِهِ، إِلَّا قُلْتُ: يَا مَوْلَى الزُّبَيْرِ اقْضِ عَنْهُ دَيْنَهُ، فَيَقْضِيهِ، فَقُتِلَ الزُّبَيْرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، وَلَمْ يَدَعْ دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِلَّا أَرَضِينَ، مِنْهَا الغَابَةُ، وَإِحْدَى عَشْرَةَ دَارًا بِالْمَدِينَةِ، وَدَارَيْنِ بِالْبَصْرَةِ، وَدَارًا بِالكُوفَةِ، وَدَارًا بِمِصْرَ، قَالَ: وَإِنَّمَا كَانَ دَيْنُهُ الَّذِي عَلَيْهِ، أَنَّ الرَّجُلَ كَانَ يَأْتِيهِ بِالْمَالِ، فَيَسْتَوْدِعُهُ إِيَّاهُ، فَيَقُولُ الزُّبَيْرُ: «لاَ وَلَكِنَّهُ سَلَفٌ، فَإِنِّي أَخْشَى عَلَيْهِ الضَّيْعَةَ»، وَمَا وَلِيَ إِمَارَةً قَطُّ وَلاَ جِبَايَةَ خَرَاجٍ، وَلاَ شَيْئًا إِلَّا أَنْ يَكُونَ فِي غَزْوَةٍ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَوْ مَعَ أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ: فَحَسَبْتُ مَا عَلَيْهِ مِنَ الدَّيْنِ، فَوَجَدْتُهُ أَلْفَيْ أَلْفٍ وَمِائَتَيْ أَلْفٍ، قَالَ: فَلَقِيَ حَكِيمُ بْنُ حِزَامٍ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الزُّبَيْرِ، فَقَالَ: يَا ابْنَ أَخِي، كَمْ عَلَى أَخِي مِنَ الدَّيْنِ فَكَتَمَهُ؟ فَقَالَ: مِائَةُ أَلْفٍ، فَقَالَ حَكِيمٌ: وَاللَّهِ مَا أُرَى أَمْوَالَكُمْ تَسَعُ لِهَذِهِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ: أَفَرَأَيْتَكَ إِنْ كَانَتْ أَلْفَيْ أَلْفٍ وَمِائَتَيْ أَلْفٍ؟ قَالَ: مَا أُرَاكُمْ تُطِيقُونَ هَذَا، فَإِنْ عَجَزْتُمْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ فَاسْتَعِينُوا بِي، قَالَ: وَكَانَ الزُّبَيْرُ اشْتَرَى الغَابَةَ بِسَبْعِينَ وَمِائَةِ أَلْفٍ، فَبَاعَهَا عَبْدُ اللَّهِ بِأَلْفِ أَلْفٍ وَسِتِّ مِائَةِ أَلْفٍ، ثُمَّ قَامَ: فَقَالَ مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ حَقٌّ، فَلْيُوَافِنَا بِالْغَابَةِ، فَأَتَاهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ، وَكَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ أَرْبَعُ مِائَةِ أَلْفٍ، فَقَالَ لِعَبْدِ اللَّهِ: إِنْ شِئْتُمْ تَرَكْتُهَا لَكُمْ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لاَ، قَالَ: فَإِنْ شِئْتُمْ جَعَلْتُمُوهَا فِيمَا تُؤَخِّرُونَ إِنْ أَخَّرْتُمْ؟ فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لاَ، قَالَ: قَالَ: فَاقْطَعُوا لِي قِطْعَةً، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ: لَكَ مِنْ هَاهُنَا إِلَى هَاهُنَا، قَالَ: فَبَاعَ مِنْهَا فَقَضَى دَيْنَهُ فَأَوْفَاهُ، وَبَقِيَ مِنْهَا أَرْبَعَةُ أَسْهُمٍ وَنِصْفٌ، فَقَدِمَ عَلَى مُعَاوِيَةَ، وَعِنْدَهُ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ، وَالمُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ، وَابْنُ زَمْعَةَ، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ: كَمْ قُوِّمَتِ الغَابَةُ؟ قَالَ: كُلُّ سَهْمٍ مِائَةَ أَلْفٍ، قَالَ: كَمْ بَقِيَ؟ قَالَ: أَرْبَعَةُ أَسْهُمٍ وَنِصْفٌ، قَالَ المُنْذِرُ بْنُ الزُّبَيْرِ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، قَالَ عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، وَقَالَ ابْنُ زَمْعَةَ: قَدْ أَخَذْتُ سَهْمًا بِمِائَةِ أَلْفٍ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: كَمْ بَقِيَ؟ فَقَالَ: سَهْمٌ وَنِصْفٌ، قَالَ: قَدْ أَخَذْتُهُ بِخَمْسِينَ وَمِائَةِ أَلْفٍ، قَالَ: وَبَاعَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ جَعْفَرٍ نَصِيبَهُ مِنْ مُعَاوِيَةَ بِسِتِّ مِائَةِ أَلْفٍ، فَلَمَّا فَرَغَ ابْنُ الزُّبَيْرِ مِنْ قَضَاءِ دَيْنِهِ، قَالَ بَنُو الزُّبَيْرِ: اقْسِمْ بَيْنَنَا مِيرَاثَنَا، قَالَ: لاَ، وَاللَّهِ لاَ أَقْسِمُ بَيْنَكُمْ حَتَّى أُنَادِيَ بِالْمَوْسِمِ أَرْبَعَ سِنِينَ: أَلاَ مَنْ كَانَ لَهُ عَلَى الزُّبَيْرِ دَيْنٌ فَلْيَأْتِنَا فَلْنَقْضِهِ، قَالَ: فَجَعَلَ كُلَّ سَنَةٍ يُنَادِي بِالْمَوْسِمِ، فَلَمَّا مَضَى أَرْبَعُ سِنِينَ قَسَمَ بَيْنَهُمْ، قَالَ: فَكَانَ لِلزُّبَيْرِ أَرْبَعُ نِسْوَةٍ، وَرَفَعَ الثُّلُثَ، فَأَصَابَ كُلَّ امْرَأَةٍ أَلْفُ أَلْفٍ وَمِائَتَا أَلْفٍ، فَجَمِيعُ مَالِهِ خَمْسُونَ أَلْفَ أَلْفٍ، وَمِائَتَا أَلْفٍ.
আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উষ্ট্রযুদ্ধের দিন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান গ্রহণ করে আমাকে ডাকলেন। আমি তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে বললেন, হে পুত্র! আজকের দিন জালিম অথবা মাজলুম ব্যতীত কেউ নিহত হবে না। আমার মনে হয়, আমি আজ মাজলুম হিসেবে নিহত হব। আর আমি আমার ঋণ সম্পর্কে বেশি চিন্তিত। তুমি কি মনে কর যে, আমার ঋণ আদায় করার পর আমার সম্পদে কিছু অবশিষ্ট থাকবে? তারপর তিনি বললেন, হে পুত্র! আমার সম্পদ বিক্রয় করে আমার ঋন পরিশোধ করে দিও। তিনি এক তৃতীয়াংশের ওসীয়্যাত করেন। আর সেই এক তৃতীয়াংশের এক তৃতীয়াংশ ওসীয়াত করেন তাঁর (আবদুল্লাহ ইবন যুবায়রের) পুত্রদের জন্য তাঁর অর্থাৎ আবদুল্লাহ, তিনি বললেন, এক তৃতীয়াংশকে এক তৃতীয়াংশে বিভক্ত করবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি আমার সম্পদের কিছু উদ্ধৃত্ত থাকে, তবে তার এক তৃতীয়াংশ তোমার পুত্রদের জন্য। হিশাম (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কোনো কোন পুত্র যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্রদের সমবয়সী ছিলেন। যেমন খুবায়েদ ও আববাদ। আর মৃত্যুকালে তাঁর নয় পুত্র ও নয় কন্যা ছিল। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তিনি আমাকে তাঁর ঋণ সম্পর্কে ওসীয়্যাত করেছিলেন এবং বলেীছলেন, হে পুত্র! যদি এ সবের কোনো বিষয়ে তুমি অক্ষম হও, তবে এ ব্যাপারে আমার মাওলার সাহায্য চাইবে। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমি বুঝে উঠতে পারি নি যে, তিনি মাওলা দ্বারা কাকে উদ্দেশ্য করেছেন। অবশেষে আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, হে পিতা! আপনার মাওলা কে? তিনি উত্তর দিলেন, আল্লাহ। আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমি যখনই তাঁর ঋণ আদায়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি, তখনই বলেছি, হে যুবাইরের মাওলা! তাঁর পক্ষ থেকে তাঁর ঋণ আদায় করে দিন। আর তাঁর করয শোধ হয়ে যেত। এরপর যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হলেন এভং তিনি নগদ কোনো দীনার রেখে যাননি আর না কোনো দিরহাম। তিনি কিছু জমি রেখে যান যার মধ্যে একটি হল গাবা। আরো রেখে যান মদীনায় এগারোটি বাড়ী, বসরায় দু’টি, কূফায় একটি ও মিসরে একটি। আবুদল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যুবায়র রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঋণ থাকার কারণ এই ছিল যে, তাঁর নিকট কেউ যখন কোনো মাল আমানত রাখতে আসতো তখন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন, না, এভাবে নয়’ তুমি তা আমার কাছে ঋণ হিসাবে রেখে যাও। কেননা, আমি ভয় করছি যে, তোমার মাল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা বা কর আদায়কারী অথবা অন্য কোনো কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেননি। অবশ্যই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হয়ে অথবা আবূ বকর, উমর ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুমের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর আমি তাঁর ঋণের পরিমাণ হিসাব করলাম এবং দেখলাম তাঁর ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ পেলাম। রাবী বলেন, সাহাবী হাকিম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেন, হে ভাতিজা। বল তো আমার ভাইয়ের কত ঋণ আছে? তিনি তা প্রকাশ না বললেন, এক লাখ। তখন হাকিম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর কসম! এ সম্পদ দ্বারা এ পরিমাণ ঋণ শোধ হতে পারে, আমি এরূপ মনে করি না। তখন আবুদল্লাহ ইব্ন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, যদি ঋণের পরিমাণ বাইশ লাখ হয়, তবে কি ধারণা করেন? হাকীম ইবন হিযাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি মনে করি না যে, তোমরা এ সামর্থ রাখ। যদি তোমরা এ বিষয়ে সক্ষম হও, তবে আমার সহযোগীতা গ্রহণ করবে। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু গাবাস্থিত ভূমিটি এক লাখ সত্তর হাজারে কিনেছিলেন। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তা ষোল লাখের বিনিময়ে বিক্রয় করেন। আর দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কারা পাওনাদার রয়েছে, তারা আমার সঙ্গে গাবায় এসে মিলিত হবে। তখন আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর নিকট এলেন। যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট তাঁর চার লাখ পাওনা ছিল। তিনি আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, তোমরা চাইলে আমি তা তোমাদের জন্য ছেড়ে দিব। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, যদি তোমরা তা পরে দিতে চাও, তবে তা পরে পরিশোধের অমত্মর্ভুক্ত করতে পার। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না। তখন আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তবে আমাকে এক টুকরা ভূমি দাও। আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এখান থেকে ওখান পর্যাপ্ত জমি আপনার। রাবী বলেন, তারপর আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু গাবার জমি থেকে বিক্রয় করে সম্পূর্ণ ঋণ পরিশোধ করেন। তখনও তাঁর নিকট গাবার জমির সাড়ে চার অংশ অবশিষ্ট থেকে যায়। তারপর তিনি মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে এলেন। সে সময় তাঁর কাছে আমরা ইবন উসমান, মুনযির ইবন যুবাইর ও আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহুম উপস্থিত ছিলেন। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁকে বললেন, গাবার মূল্য কত নির্ধারিত হয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক অংশ এক লাখ হারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কত অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সাড়ে চার অংশ। তখন মুনযির ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি এক অংশ এক লাখে নিলাম। আমর ইবন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। আর আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি একাংশ এক লাখে নিলাম। তখন মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আর কি পরিমাণ অবশিষ্ট আছে? আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, দেড় অংশ অবশিষ্ট রয়েছে। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি তা দেড় লাখে নিলাম। রাবী বলেন, আবদুল্লাহ ইবন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর অংশ মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ছয় লাখে বিক্রয় করেন। তারপর যখন ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতার ঋণ পরিশোধ করে সারলেন, তখন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পুত্ররা বললেন, আমাদের মীরাস ভাগ করে দিন। তখন আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, না, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের মাঝে ভাগ করব না, যতক্ষণ আমি চারটি হজ্জ মৌসুমে এ ঘোষণা প্রচার না করি যে, যদি কেউ যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে ঋণ পাওনা থাকে, সে যেন আমাদের কাছে আসে, আমরা তা পরিশোধ করব। রাবী বলেন, তিনি প্রতি হজ্জের মৌসুমে ঘোষণা প্রচার করেন। তারপর যখন চার বছর অতিবাহিত হল, তখন তিনি তা তাদের মধ্যে ভাগ করে দিলেন। রাবী বলেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর চার স্ত্রী ছিলেন। এক তৃতীয়াংশ পৃথক করে রাখা হল। প্রত্যেক স্ত্রী বার লাখ করে পেলেন। আর যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মোট সম্পত্তি পাঁচ কোটি দু’লাখ ছিল।
عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، سَمِعْتُ البَرَاءَ بْنَ عَازِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَرَأَ رَجُلٌ الكَهْفَ، وَفِي الدَّارِ الدَّابَّةُ، فَجَعَلَتْ تَنْفِرُ، فَسَلَّمَ، فَإِذَا ضَبَابَةٌ، أَوْ سَحَابَةٌ غَشِيَتْهُ، فَذَكَرَهُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «اقْرَأْ فُلاَنُ، فَإِنَّهَا السَّكِينَةُ نَزَلَتْ لِلْقُرْآنِ، أَوْ تَنَزَّلَتْ لِلْقُرْآنِ»
বার’আ ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবী (উসায়দ ইবন হুযায়ব রাদিয়াল্লাহু আনহু) (রাত্রি কালে) ‘সূরা আল-কাহফ’ তিলাওয়াত করছিলেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘোড়া বাঁধা ছিল। ঘোড়াটি তখন (আতঙ্কিত হয়ে) লাফালাফি করতে লাগল। তখন ঐ সাহাবী শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ্র দরবারে দো‘আ করলেন। তারপর তিনি দেখতে পেলেন, একখন্ড মেঘ এসে তাকে ঢেকে ফেলেছে। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে বিষয়টি আলোচনা করলেন। তিনি বললেন, হে অমুক! তুমি এভাবে তিলাওয়াত করতে থাকবে। ইহা তো সাকীনা (প্রশান্তি) ছিল, যা কুরআন তিলাওয়াতের কারণে নাযিল হয়েছিল।
عَنْ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُولِكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ»، وَقَالَ ابْنُ زُرَيْعٍ، عَنْ رَوْحِ بْنِ القَاسِمِ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حَفْصَةَ بِنْتِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَتْ: سَمِعْتُ عُمَرَ نَحْوَهُ وَقَالَ هِشَامٌ، عَنْ زَيْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ حَفْصَةَ، سَمِعْتُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এ বলে দো‘আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাকে তোমার পথে শাহাদাত বরন করার সুযোগ দান কর এবং আমার মৃত্যু তোমার রাসূলের শহরে দাও । ইবন যুরায়’ই (রহ.)... হাফসা বিনত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অনু্রূপ বর্ণনা করতে শুনেছি। হিশাম (রহ.) বলেন, যাইদ তাঁর পিতার সূত্রে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ‘উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ بَنُو قُرَيْظَةَ عَلَى حُكْمِ سَعْدٍ هُوَ ابْنُ مُعَاذٍ، بَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ قَرِيبًا مِنْهُ، فَجَاءَ عَلَى حِمَارٍ، فَلَمَّا دَنَا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «قُومُوا إِلَى سَيِّدِكُمْ» فَجَاءَ، فَجَلَسَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ: إِنَّ هَؤُلاَءِ نَزَلُوا عَلَى حُكْمِكَ، قَالَ: فَإِنِّي أَحْكُمُ أَنْ تُقْتَلَ المُقَاتِلَةُ، وَأَنْ تُسْبَى الذُّرِّيَّةُ، قَالَ: «لَقَدْ حَكَمْتَ فِيهِمْ بِحُكْمِ المَلِكِ».
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন বনী কুরাইযার ইয়াহূদীরা সা‘দ ইবন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু আনহুর মীমাংসায় দুর্গ থেকে বেরিয়ে আসে, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ডেকে পাঠান। আর তখন তিনি ঘটনাস্থলের নিকটই ছিলেন। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু একটি গাধার পিঠে আরোহণ করে আসলেন। যখন তিনি নিকটবর্তী হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা, তোমাদের নেতার প্রতি দন্ডায়মান হও।’ তিনি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসলেন। তখন তাঁকে বললেন, ‘এরা তোমার মীমাংসায় সম্মত হয়েছে। (কাজেই তুমিই তাদের ব্যাপারে ফয়সালা কর)।’ সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমি এই রায় ঘোষণা করছি যে, তাদের মধ্যে থেকে যুদ্ধ করতে সক্ষমদেরকে হত্যা করা হবে এবং মহিলা ও শিশুদের বন্দী করা হবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার ফয়সালার অনুরূপ ফয়সালাই করেছ।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أُصِيبَ سَعْدٌ يَوْمَ الخَنْدَقِ، رَمَاهُ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ، يُقَالُ لَهُ حِبَّانُ بْنُ العَرِقَةِ وَهُوَ حِبَّانُ بْنُ قَيْسٍ، مِنْ بَنِي مَعِيصِ بْنِ عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ رَمَاهُ فِي الأَكْحَلِ، فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْمَةً فِي المَسْجِدِ لِيَعُودَهُ مِنْ قَرِيبٍ، فَلَمَّا رَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الخَنْدَقِ وَضَعَ السِّلاَحَ وَاغْتَسَلَ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهُوَ يَنْفُضُ رَأْسَهُ مِنَ الغُبَارِ، فَقَالَ: " قَدْ وَضَعْتَ السِّلاَحَ، وَاللَّهِ مَا وَضَعْتُهُ، اخْرُجْ إِلَيْهِمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَأَيْنَ فَأَشَارَ إِلَى بَنِي قُرَيْظَةَ " فَأَتَاهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَزَلُوا عَلَى حُكْمِهِ، فَرَدَّ الحُكْمَ إِلَى سَعْدٍ، قَالَ: فَإِنِّي أَحْكُمُ فِيهِمْ: أَنْ تُقْتَلَ المُقَاتِلَةُ، وَأَنْ تُسْبَى النِّسَاءُ وَالذُّرِّيَّةُ، وَأَنْ تُقْسَمَ أَمْوَالُهُمْ قَالَ هِشَامٌ، فَأَخْبَرَنِي أَبِي، عَنْ عَائِشَةَ: " أَنَّ سَعْدًا قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنَّهُ لَيْسَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ أَنْ أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، مِنْ قَوْمٍ كَذَّبُوا رَسُولَكَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَخْرَجُوهُ، اللَّهُمَّ فَإِنِّي أَظُنُّ أَنَّكَ قَدْ وَضَعْتَ الحَرْبَ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمْ، فَإِنْ كَانَ بَقِيَ مِنْ حَرْبِ قُرَيْشٍ شَيْءٌ فَأَبْقِنِي لَهُ، حَتَّى أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، وَإِنْ كُنْتَ وَضَعْتَ الحَرْبَ فَافْجُرْهَا وَاجْعَلْ مَوْتَتِي فِيهَا، فَانْفَجَرَتْ مِنْ لَبَّتِهِ فَلَمْ يَرُعْهُمْ، وَفِي المَسْجِدِ خَيْمَةٌ مِنْ بَنِي غِفَارٍ، إِلَّا الدَّمُ يَسِيلُ إِلَيْهِمْ، فَقَالُوا: يَا أَهْلَ الخَيْمَةِ، مَا هَذَا الَّذِي يَأْتِينَا مِنْ قِبَلِكُمْ؟ فَإِذَا سَعْدٌ يَغْذُو جُرْحُهُ دَمًا، فَمَاتَ مِنْهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ".
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দকের যুদ্ধে সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু আহত হয়েছিলেন। কুরাইশ গোত্রের হিব্বান ইবন ইরকা নামক এক ব্যক্তি তাঁর উভয় বাহুর মধ্যবর্তী রগে তীর বিদ্ধ করেছিল। কাছে থেকে তার শুশ্রূষা করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববীতে একটি খিমা তৈরি করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দকের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করে যখন হাতিয়ার রেখে গোসল সমাপন করলেন তখন জিবরীল আলাইহিস সালাম তাঁর মাথার ধূলোবালি ঝাড়তে ঝাড়তে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, আপনি তো হাতিয়ার রেখে দিয়েছেন, কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি এখনও তা রেখে দেই নি। চলুন তাঁদের প্রতি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন কোথায়? তিনি বনী কুরায়যা গোত্রের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনূ কুরায়যার মহল্লায় এলেন। পরিশেষে তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফয়সালা মেনে নিয়ে দুর্গ থেকে নিচে নেমে এল। কিন্তু তিনি ফয়সালার ভার সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর অর্পণ করলেন। তখন সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তাদের ব্যাপারে আমি এই রায় দিচ্ছি যে, তাদের যোদ্ধাদেরকে হত্যা করা হবে, নারী ও সন্তানদেরকে বন্দী করা হবে এবং তাদের ধন-সম্পদ (মুসলিমদের মধ্যে) বন্টন করে দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী হিশাম (রহ.) বলেন, আমার পিতা [উরওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু] আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু (বনূ কুরায়যার ঘটনার পর) আল্লাহর কাছে এ বলে দো‘আ করছিলেন, হে আল্লাহ্! আপনি তো জানেন, যে সম্প্রদায় আপনার রাসূলকে মিথ্যাবাদী বলেছে এবং দেশ থেকে বের করে দিয়েছে আপনার সন্তুষ্টির জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়ে কোনো কিছুই আমার কাছে অধিক প্রিয় নয়। হে আল্লাহ্! আমি মনে করি (খন্দক যুদ্ধের পর) আপনি তো আমাদের ও তাদের মধ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন তবে এখনো যদি কুরাইশদের বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধ বাকী থেকে থাকে তাহলে আমাকে সে জন্য বাঁচিয়ে রাখুন, যেন আমি আপনার রাস্তায় তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারি। আর যদি যুদ্ধে অবসান ঘটিয়ে থাকেন তাহলে ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত করুন এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটান। এরপর তাঁর ক্ষত স্থান থেকে রক্তক্ষরণ হয়ে তা প্রবাহিত হতে লাগল। মসজিদে বনী গিফার গোত্রের একটি তাঁবু ছিল। তাদের দিকে রক্ত প্রবাহিত হয়ে আসতে দেখে তারা ভীত হয়ে বললেন, হে তাঁবুবাসীগণ আপনাদের দিক থেকে এসব কি আমাদের দিকে বয়ে আসছে? পরে তাঁরা দেখলেন যে, সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবশেষে এ জখমের কারণেই মারা যান।
حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، سَمِعَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ بَكْرٍ السَّهْمِيَّ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ الرُّبَيِّعَ عَمَّتَهُ كَسَرَتْ ثَنِيَّةَ جَارِيَةٍ، فَطَلَبُوا إِلَيْهَا العَفْوَ فَأَبَوْا، فَعَرَضُوا الأَرْشَ فَأَبَوْا، فَأَتَوْا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَوْا، إِلَّا القِصَاصَ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالقِصَاصِ، فَقَالَ أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَتُكْسَرُ ثَنِيَّةُ الرُّبَيِّعِ؟ لاَ وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالحَقِّ لاَ تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أَنَسُ، كِتَابُ اللَّهِ القِصَاصُ». فَرَضِيَ القَوْمُ فَعَفَوْا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لَأَبَرَّهُ ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আনাসের ফুফু রুবাঈ জনৈক বাঁদির সামনের দাঁত ভেঙ্গে ফেলে। এরপর বাঁদির কাছে রুবাঈয়ের লোকেরা ক্ষমা প্রার্থী হলে বাঁদির লোকেরা অস্বীকার করে। তখন তাদের কাছে দীয়াত পেশ করা হল, তখন তা তারা গ্রহণ করল না। অগত্যা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমীপে এসে ঘটনা জানাল। কিন্তু বাঁদির লোকেরা কিসাস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিসাসের নির্দেশ দিলেন। তখন আনাস ইবন নযর রাদিয়াল্লাহু আনহু নিবেদন করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! রুবাঈয়ের সামনে দাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হবে? না যে সত্তা আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ, তাঁর দাঁত ভাঙ্গা হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনাস! আল্লাহর কিতাবই কিসাসের নির্দেশ দেয়। এরপর বাঁদির সম্প্রদায় রাযী হয়ে যায় এবং রুবাঈকে ক্ষমা করে দেয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যিনি আল্লাহর নামে শপথ করেন, আল্লাহ তা পূরণ করেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ المُطَّلِبِ، فَقَالَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا»، قَالَ: فَيُسْقَوْنَ.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহুর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দো‘আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ্! (প্রথমে) আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা দিয়ে দো‘আ করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার উসিলা দিয়ে দো‘আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু‘আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، أَنَّ أَصْحَابَ الصُّفَّةِ، كَانُوا أُنَاسًا فُقَرَاءَ وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ اثْنَيْنِ فَلْيَذْهَبْ بِثَالِثٍ، وَإِنْ أَرْبَعٌ فَخَامِسٌ أَوْ سَادِسٌ» وَأَنَّ أَبَا بَكْرٍ جَاءَ بِثَلاَثَةٍ، فَانْطَلَقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشَرَةٍ، قَالَ: فَهُوَ أَنَا وَأَبِي وَأُمِّي - فَلاَ أَدْرِي قَالَ: وَامْرَأَتِي وَخَادِمٌ - بَيْنَنَا وَبَيْنَ بَيْتِ أَبِي بَكْرٍ، وَإِنَّ أَبَا بَكْرٍ تَعَشَّى عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لَبِثَ حَيْثُ صُلِّيَتِ العِشَاءُ، ثُمَّ رَجَعَ، فَلَبِثَ حَتَّى تَعَشَّى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ اللَّهُ، قَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: وَمَا حَبَسَكَ عَنْ أَضْيَافِكَ - أَوْ قَالَتْ: ضَيْفِكَ - قَالَ: أَوَمَا عَشَّيْتِيهِمْ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ، قَدْ عُرِضُوا فَأَبَوْا، قَالَ: فَذَهَبْتُ أَنَا فَاخْتَبَأْتُ، فَقَالَ يَا غُنْثَرُ فَجَدَّعَ وَسَبَّ، وَقَالَ: كُلُوا لاَ هَنِيئًا، فَقَالَ: وَاللَّهِ لاَ أَطْعَمُهُ أَبَدًا، وَايْمُ اللَّهِ، مَا كُنَّا نَأْخُذُ مِنْ لُقْمَةٍ إِلَّا رَبَا مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرُ مِنْهَا - قَالَ: يَعْنِي حَتَّى شَبِعُوا - وَصَارَتْ أَكْثَرَ مِمَّا كَانَتْ قَبْلَ ذَلِكَ، فَنَظَرَ إِلَيْهَا أَبُو بَكْرٍ فَإِذَا هِيَ كَمَا هِيَ أَوْ أَكْثَرُ مِنْهَا، فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: لاَ وَقُرَّةِ عَيْنِي، لَهِيَ الآنَ أَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِثَلاَثِ مَرَّاتٍ، فَأَكَلَ مِنْهَا أَبُو بَكْرٍ، وَقَالَ: إِنَّمَا كَانَ ذَلِكَ مِنَ الشَّيْطَانِ - يَعْنِي يَمِينَهُ - ثُمَّ أَكَلَ مِنْهَا لُقْمَةً، ثُمَّ حَمَلَهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَصْبَحَتْ عِنْدَهُ، وَكَانَ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمٍ عَقْدٌ، فَمَضَى الأَجَلُ، فَفَرَّقَنَا اثْنَا عَشَرَ رَجُلًا، مَعَ كُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أُنَاسٌ، اللَّهُ أَعْلَمُ كَمْ مَعَ كُلِّ رَجُلٍ، فَأَكَلُوا مِنْهَا أَجْمَعُونَ، أَوْ كَمَا قَالَ.
আবদুর-রাহমান ইবন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, আসহাবে সুফফা ছিলেন খুবই দরিদ্র। (একদা) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার কাছে দু’জনের আহার আছে সে যেন (তাঁদের থেকে) তৃতীয়জনকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের আহারের সংস্থান আছে, সে যেন পঞ্চম বা ষষ্ঠজন সঙ্গে নিয়ে যায়। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তিনজন সাথে নিয়ে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজন নিয়ে আসেন। আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমাদের ঘরে এবং আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘরে আমি, আমার পিতা ও মাতা (এই তিনজন সদস্য) ছিলাম। রাবী বলেন, আমি জানি না, তিনি আমার স্ত্রী এবং খাদিম একথা বলেছিলেন কি না? আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরেই রাতের আহার করেন এবং ইশার সালাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। ইশার সালাতের পর তিনি আবার (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘরে) ফিরে আসেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের আহার শেষ করা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন। আল্লাহ্র ইচ্ছায় কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর বাড়ী ফিরলে তাঁর স্ত্রী তাঁকে বললেন, মেহমানদের কাছে আসতে কিসে আপনাকে ব্যস্ত রেখেছিল? কিংবা তিনি বলেছিলেন, (বর্ণনাকারীর সন্দেহ) মেহমান থেকে। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এখনও তাদের খাবার দাওনি? তিনি বললেন, আপনি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেন। তাদের সামনে হাযির করা হয়েছিল, তবে তারা খেতে সম্মত হননি। তিনি (রাগান্বিত হয়ে) বললেন, ওরে বোকা এবং ভৎসনা করলেন। আর (মেহমানদের) বললেন, খেয়ে নিন। আপনারা অস্বস্তিতে ছিলেন। এরপর তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি এ কখনই খাব না। আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা লুকমা উঠিয়ে নিতেই নীচ থেকে তা অধিক পরিমাণে বেড়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, সকলেই পেট ভরে খেলেন। অথচ আগের চাইতে অধিক খাবার রয়ে গেল। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু খাবারের দিকে তাকিয়ে দেখেতে পেলেন তা আগের সমপরিমাণ কিংবা তার চাইতেও বেশী। তিনি তাঁর স্ত্রীকে বললেন, হে বনূ ফিরাসের বোন। এ কি? তিনি বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! এতো এখন আগের চাইতে তিনগুন বেশী! আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুও তা থেকে আহার করলেন এবং বললেন, আমার সে শপথ শয়তানের পক্ষ থেকেই হয়েছিল। এরপর তিনি আরও লুকমা মুখে দিলেন এবং অবশিষ্ট খাবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে নিয়ে গেলেন। ভোর পর্যন্ত সে খাদ্য রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেখানেই ছিল। এদিকে আমাদের ও অন্য একটি গোত্রের মাঝে সে সন্ধি ছিল তার সময়সীমা পূর্ন হয়ে যায়। (এবং তারা মদীনায় আসে) আমরা তাদের বারজনের নেতৃত্বে ভাগ করে দেই। তাদের প্রত্যকের সংগেই কিছু কিছু লোক ছিল। তবে প্রত্যকের সঙ্গে কতজন ছিল তা আল্লাহ্ই জানেন। তারা সকলেই সেই খাদ্য থেকে আহার করেন। (রাবী বলেন) কিংবা আবদুর রাহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু যে ভাবে বর্ণনা করেছেন।
عَنْ أَبِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ: لَمَّا أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاقُوسِ يُعْمَلُ لِيُضْرَبَ بِهِ لِلنَّاسِ لِجَمْعِ الصَّلَاةِ طَافَ بِي وَأَنَا نَائِمٌ رَجُلٌ يَحْمِلُ نَاقُوسًا فِي يَدِهِ، فَقُلْتُ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَتَبِيعُ النَّاقُوسَ؟ قَالَ: وَمَا تَصْنَعُ بِهِ؟ فَقُلْتُ: نَدْعُو بِهِ إِلَى الصَّلَاةِ، قَالَ: أَفَلَا أَدُلُّكَ عَلَى مَا هُوَ خَيْرٌ مِنْ ذَلِكَ؟ فَقُلْتُ لَهُ: بَلَى، قَالَ: فَقَالَ: تَقُولُ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، قَالَ: ثُمَّ اسْتَأْخَرَ عَنِّي غَيْرَ بَعِيدٍ، ثُمَّ، قَالَ: وَتَقُولُ: إِذَا أَقَمْتَ الصَّلَاةَ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ، اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ، أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَخْبَرْتُهُ، بِمَا رَأَيْتُ فَقَالَ: «إِنَّهَا لَرُؤْيَا حَقٌّ إِنْ شَاءَ اللَّهُ، فَقُمْ مَعَ بِلَالٍ فَأَلْقِ عَلَيْهِ مَا رَأَيْتَ، فَلْيُؤَذِّنْ بِهِ، فَإِنَّهُ أَنْدَى صَوْتًا مِنْكَ» فَقُمْتُ مَعَ بِلَالٍ، فَجَعَلْتُ أُلْقِيهِ عَلَيْهِ، وَيُؤَذِّنُ بِهِ، قَالَ: فَسَمِعَ ذَلِكَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ، وَهُوَ فِي بَيْتِهِ فَخَرَجَ يَجُرُّ رِدَاءَهُ، وَيَقُولُ: وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَقَدْ رَأَيْتُ مِثْلَ مَا رَأَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَلِلَّهِ الْحَمْدُ» قَالَ أَبُو دَاوُدَ: هَكَذَا رِوَايَةُ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدٍ، وَقَالَ: فِيهِ ابْنُ إِسْحَاقَ، عَنِ الزُّهْرِيِّ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَقَالَ مَعْمَرٌ، وَيُونُسُ، عَنِ الزُّهْرِيِّ فِيهِ: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَمْ يُثَنِّيَا.
আবু আব্দুল্লাহ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিংগা ধ্বনি করে লোকদের সালাতের জন্য একত্র করার নির্দেশ প্রদান করেন। তখন একদা আমি স্বপ্নে দেখি যে, এক ব্যক্তি শিংগা হাতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তাকে বলি, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কি শিংগা বিক্রয় বরবে? সে বলে, তুমি শিংগা দিয়ে কি করবে? আমি বললাম, আমি তার সাহায্যে সালাতের জামা‘আতে লোকদের ডাকব। সে বলল, আমি কি এর চেয়ে উত্তম কোনো সন্ধান তোমাকে দেব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন সে বলল, তুমি এইরূপ শব্দ উচ্চারণ করবে,
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্;
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;
হাইয়া আলাসসালাহ, হাইয়া আলাসসালাহ,
হাইয়া আলাল-ফালাহ্, হাইয়া আলাল-ফালাহ্,
আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্।”
রাবী রলেন! অতঃপর ঐ স্থান হতে ঐ ব্যক্তি একটু দুরে সরে গিয়ে দাঁড়ায় এবং বলে- তুমি যখন সালাত পড়তে দাঁড়াবে তখন বলবে,
“আল্লাহু আকরার, আলাহু আকবার;
আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্; আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্;
হাইয়া আলাসসালাহ; হাইয়া আলাল-ফালাহ্;
কাদ কামাতিসসালাহ; কাদ কামাতিসসালাহ,
আলাহু আকবার, আল্লাহু আকবার;
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্”।
অতঃপর ভোর বেলা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে হাযির হয়ে তাঁর নিকট আমার স্বপ্নের বর্ণনা করি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এটা অবশ্যই সত্য স্বপ্ন। অতঃপর তিনি বলেন, তুমি বিলালকে ডেকে তোমার সাথে নাও এবং তুমি যেরূপ স্বপ্ন দেখেছ- তদ্রুপ তাকে শিক্ষা দাও যাতে সে (বিলাল) ঐরূপে-আযান দিতে পারে। কেননা তাঁর কন্ঠস্বর তোমার স্বরের চাইতে অধিক উচ্চ। অতঃপর আমি বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়াই এবং তাকে আযানের শব্দগুলি শিক্ষা দিতে থাকি এবং তিনি উচ্চারণ পূর্বক আযান দিতে থাকেন। বিলালের এই আযান ধ্বনি উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ আবাসে বসে শুনতে পান। তা শুনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এত দ্রুত পদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খিদ্মতে আগমন করেন যে, তাঁর গায়ের চাদর মাটিতে হেচঁড়িয়ে যাচ্ছিলো। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে উপস্হিত হয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! যে মহান সত্তা আপনাকে সত্য নবী হিসাবে প্রেরণ করেছেন, আমিও ঐরূপ স্বপ্ন দেখেছি যেরূপ অন্যরা দেখেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য- (ইবন মাজাহ, তিরমিযী, মুসলিম)।
ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) বলেন, সাইদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ও আবদুল্লাহ্ ইবন যায়েদের সূত্রে ইমাম যুহুরী (রহ.) হতেও এইরূপ হাদীস বর্ণিত আছে। যুহরী থেকে ইবন ইসহাকের সূত্রে “আল্লাহু আকবার, চারবার উল্লেখ আছ। যুহরী থেকে মা‘মার ও ইউনুসের সূত্রে “আল্লাহু আকবার” দুই বার উল্লেখ আছে, তাঁরা চারবার উল্লেখ করেননি।
হকের উপর কায়েম থাকা সবচেয়ে বড় কারামত এটা অলীদের কারামতের মধ্যে শামিল করার কারণ।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاَءَ، لَمْ يَنْظُرِ اللَّهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ» فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّ أَحَدَ شِقَّيْ ثَوْبِي يَسْتَرْخِي، إِلَّا أَنْ أَتَعَاهَدَ ذَلِكَ مِنْهُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكَ لَسْتَ تَصْنَعُ ذَلِكَ خُيَلاَءَ» قَالَ مُوسَى: فَقُلْتُ لِسَالِمٍ أَذَكَرَ عَبْدُ اللَّهِ " مَنْ جَرَّ إِزَارَهُ؟ قَالَ: لَمْ أَسْمَعْهُ ذَكَرَ إِلَّا ثَوْبَهُ ".
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি গর্বের সাথে পরিহিত কাপড় টাকনুর নিম্নভাগে ঝুলিয়ে চলাফিরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তার প্রতি রহমতের নযর করবেন না। এ শুনে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার অজ্ঞাতসারে কাপড়ের একপাশ কোনো কোন সময় নীচে নেমে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তুমি তো গর্বের সাথে তা করছ না। মূসা (রহ.) বলেন, আমি সালিমকে জিজ্ঞাসা করলাম, আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু কি ‘যে ব্যক্তি তার লুঙ্গী ঝুলিয়ে চলল’ বলেছেন? সালিম (রহ.) বললেন, আমি তাকে শুধু কাপড়ের কথা উল্লেখ করতে শুনেছি।
এটা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারামত।
عَنْ عَائِشَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ: أَقْبَلَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَلَى فَرَسِهِ مِنْ مَسْكَنِهِ بِالسُّنْحِ حَتَّى نَزَلَ، فَدَخَلَ المَسْجِدَ، فَلَمْ يُكَلِّمِ النَّاسَ حَتَّى دَخَلَ عَلَى عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، فَتَيَمَّمَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُسَجًّى بِبُرْدِ حِبَرَةٍ، فَكَشَفَ عَنْ وَجْهِهِ، ثُمَّ أَكَبَّ عَلَيْهِ، فَقَبَّلَهُ، ثُمَّ بَكَى، فَقَالَ: «بِأَبِي أَنْتَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ، لاَ يَجْمَعُ اللَّهُ عَلَيْكَ مَوْتَتَيْنِ، أَمَّا المَوْتَةُ الَّتِي كُتِبَتْ عَلَيْكَ فَقَدْ مُتَّهَا»
قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: فَأَخْبَرَنِي ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ أَبَا بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ خَرَجَ، وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يُكَلِّمُ النَّاسَ، فَقَالَ: «اجْلِسْ»، فَأَبَى، فَقَالَ: «اجْلِسْ»، فَأَبَى، فَتَشَهَّدَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَمَالَ إِلَيْهِ النَّاسُ، وَتَرَكُوا عُمَرَ، فَقَالَ: " أَمَّا بَعْدُ، فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ يَعْبُدُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ مَاتَ، وَمَنْ كَانَ يَعْبُدُ اللَّهَ، فَإِنَّ اللَّهَ حَيٌّ لَا يَمُوتُ، قَالَ اللَّهُ تَعَالَى: {وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ} [آل عمران: 144] إِلَى {الشَّاكِرِينَ} [آل عمران: 144] " وَاللَّهِ لَكَأَنَّ النَّاسَ لَمْ يَكُونُوا يَعْلَمُونَ أَنَّ اللَّهَ أَنْزَلَهَا حَتَّى تَلَاهَا أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَتَلَقَّاهَا مِنْهُ النَّاسُ، فَمَا يُسْمَعُ بَشَرٌ إِلَّا يَتْلُوهَا.
আবূ সালামা (র.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিণী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাকে বলেছেন, [রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর খবর পেয়ে] আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু 'সুন্হ'-এ অবস্থিত তাঁর বাড়ি থেকে ঘোড়ায় চড়ে চলে এলেন এবং নেমে মসজিদে প্রবেশ করলেন। সেখানে লোকদের সাথে কোনো কথা না বলে আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার ঘরে প্রবেশ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হলেন। তখন তিনি একখানি 'হিবারাহ' ইয়ামানী চাদর দ্বারা আবৃত ছিলেন। আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমণ্ডল উম্মুক্ত করে তাঁর উপর ঝুকে পড়লেন এবং চুমু খেলেন, তারপর কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ্! আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক। আল্লাহ্ আপনার জন্য দুই মৃত্যু একত্রিত করবেন না। তবে যে মৃত্যু আপনার জন্য নির্ধারিত ছিল তা তো আপনি কবুল করেছেন। আবূ সালামা (র.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে খবর দিয়েছেন যে, (তারপর) আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেরিয়ে এলেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু লোকদের সাথে কথা বলছিলেন। আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, বসে পড়ুন। তিনি তা মানলেন না। আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, বসে পড়ুন, তিনি তা মানলেন না। তখন আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কালিমা-ই-শাহাদাতের দ্বারা (বক্তব্য) আরম্ভ করলেন। লোকেরা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ছেড়ে তাঁর দিকে আকৃষ্ট হন। আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন...... আম্মা বা'দু, তোমাদের মধ্যে যারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইবাদত করতে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই ইন্তিকাল করেছেন। আর যারা মহান আল্লাহ্র ইবাদত করতে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ চিরঞ্জিব, অমর। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেন, “মুহাম্মদ একজন রাসূল মাত্র.... শাকিরীন” পর্যন্ত। [সূরা আলে ইমরান: ১৪৪] আল্লাহ্র কসম, মনে হচ্ছিল যেন আবূ বক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর তিলাওয়াত করার পূর্ব পর্যন্ত লোকদের জানাই ছিল না যে, আল্লাহ্ এ আয়াত নাযিল করেছেন। এখনই যেন লোকেরা আয়াতখানি তার কাছ থেকে পেলেন। প্রতিটি মানুষকেই তখন ঐ আয়াত তিলাওয়াত করতে শোনা গেল।
عَنْ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: كُنَّا عِنْدَ حُذَيْفَةَ، فَقَالَ رَجُلٌ: لَوْ أَدْرَكْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَاتَلْتُ مَعَهُ وَأَبْلَيْتُ، فَقَالَ حُذَيْفَةُ: أَنْتَ كُنْتَ تَفْعَلُ ذَلِكَ؟ لَقَدْ رَأَيْتُنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ الْأَحْزَابِ، وَأَخَذَتْنَا رِيحٌ شَدِيدَةٌ وَقُرٌّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينِي بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟» فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، ثُمَّ قَالَ: «أَلَا رَجُلٌ يَأْتِينَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ جَعَلَهُ اللهُ مَعِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟»، فَسَكَتْنَا فَلَمْ يُجِبْهُ مِنَّا أَحَدٌ، فَقَالَ: «قُمْ يَا حُذَيْفَةُ، فَأْتِنَا بِخَبَرِ الْقَوْمِ»، فَلَمْ أَجِدْ بُدًّا إِذْ دَعَانِي بِاسْمِي أَنْ أَقُومَ، قَالَ: «اذْهَبْ فَأْتِنِي بِخَبَرِ الْقَوْمِ، وَلَا تَذْعَرْهُمْ عَلَيَّ»، فَلَمَّا وَلَّيْتُ مِنْ عِنْدِهِ جَعَلْتُ كَأَنَّمَا أَمْشِي فِي حَمَّامٍ حَتَّى أَتَيْتُهُمْ، فَرَأَيْتُ أَبَا سُفْيَانَ يَصْلِي ظَهْرَهُ بِالنَّارِ، فَوَضَعْتُ سَهْمًا فِي كَبِدِ الْقَوْسِ فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْمِيَهُ، فَذَكَرْتُ قَوْلَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَلَا تَذْعَرْهُمْ عَلَيَّ»، وَلَوْ رَمَيْتُهُ لَأَصَبْتُهُ فَرَجَعْتُ وَأَنَا أَمْشِي فِي مِثْلِ الْحَمَّامِ، فَلَمَّا أَتَيْتُهُ فَأَخْبَرْتُهُ بِخَبَرِ الْقَوْمِ، وَفَرَغْتُ قُرِرْتُ، فَأَلْبَسَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فَضْلِ عَبَاءَةٍ كَانَتْ عَلَيْهِ يُصَلِّي فِيهَا، فَلَمْ أَزَلْ نَائِمًا حَتَّى أَصْبَحْتُ، فَلَمَّا أَصْبَحْتُ قَالَ: «قُمْ يَا نَوْمَانُ»,
ইবরাহীম তায়মী রহ. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: যে, আমরা হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠলো, হায়, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেতাম, তবে তাঁর সঙ্গে মিলে একত্রে যুদ্ধ করতাম এবং-তাতে কোনরূপ পিছপা হতাম না।” হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হয়তো তা তুমি তাই করতে কিন্তু আমি তো আহযাবের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। (-সে রাতে”) প্রচন্ড বায়ু ও তীব্র শীত আমাদের কাবু করে ফেলেছিল। এমনি সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করলেন, ও হে! এমন কেউ আছে কি? যে আমাকে শক্রর খবর এনে দেবে আল্লাহর তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে (মর্যাদার আসনে) রাখবেন?- আমরা তখন চুপ করে রইলাম এবং আমাদের মধ্যে কেউ তার সে আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার বললেন, “ও হে! এমন কোনো ব্যক্তি আছে কি” যে আমাকে শক্রপক্ষের খবর এনে দেবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন আমার সঙ্গে রাখবেন” এবারও আমরা চুপ রইলাম আর আমাদের মধ্যে কেউ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। তিনি আবার ঘোষণা করলেন, ওহে! এমন কেউ আছে কি যে আমাকে শক্র পক্ষের খবর এনে দেবে , আল্লাহ তা‘আলা তাকে কিয়ামতের দিন তাকে আমার সঙ্গে রাখবেন এবারও আমরা চুপ করে রইলাম এবং আমাদের কেউ তাঁর আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এবার তিনি বললেন, হে হুযায়ফা ওঠো এবং তুমি শক্র পক্ষের খবর আমাদের এনে দাও। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এবারা আমার নাম ধরেই ডাক দিলেন, তাই উঠা ছাড়া আমার আর কোন উপায় ছিলনা। এবার তিনি বললেন, “শক্রপক্ষের খবর আমাকে এনে দাও, কিন্তু সাবধান তাদের আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করোনা। তারপর আমি যখন তাঁর নিকট থেকে প্রস্থান করলাম, তখন মনে মনে আমি যেন উষ্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে চলেছি। এভাবে আমি তাদের (শক্রপক্ষের) নিকটে পৌছে গেলাম। তখন আমি লক্ষ্য করলাম আবু সুফিয়ান আগুনের দ্বারা তাঁর পিঠে ছেক দিচ্ছেন। আমি তখন একটি তীর ভুলে ধনুকে সংযোজন করলাম এবং তা নিক্ষেপ করতে মনস্হ করলাম এমন সময় আমার মনে পড়ে গেল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে দিয়েছেন, “তাদেরকে আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে-তূলোনা।......আমি যদি তখন তীর নিক্ষেপ করতাম তবে তীর নির্ঘাৎ লক্ষ্যভেদ করতো। অগত্যা আমি ফিরে আসলাম এবং ফিরে আসার সময়ও উষ্ণতার মধ্য দিয়ে অতিক্রমের মতো উষ্ণতা “অনুভব করলাম। তারপর যখন ফিরে এলাম, তখন প্রতিপক্ষের খবর তাঁকে প্রদান করলাম। আমার দায়িত্ব পালন, করে অবসর হতেই আবার আমি শীতের তীব্রতা অনুভব করলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অতিরিক্ত একটি জামা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দিলেন যা তিনি সাধারণত সালাত আদায়ের সময় গায়ে দিতেন। তারপর আমি ভোর পর্যন্ত একটানা নিদ্রায় আচ্ছন্ন রইলাম। যখন ভোর হল তখন তিনি বললেন, হে গভীর নিদ্রামগ্ন! এখন উঠে পড়ো।
আটত্রিশতম পরিচ্ছেদ
সালেহীন তথা নেকবান্দাহদের স্বপ্ন
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رُؤْيَا المُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».
উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: মু’মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ। সাবিত, হুমাইদ, ইসহাক ইবন আবদুল্লাহ্ ও শুআইব (রহ.) আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ،: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رُؤْيَا المُؤْمِنِ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ» وَرَوَاهُ ثَابِتٌ، وَحُمَيْدٌ، وَإِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَشُعَيْبٌ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মু’মিনের স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ: أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «الرُّؤْيَا الحَسَنَةُ، مِنَ الرَّجُلِ الصَّالِحِ، جُزْءٌ مِنْ سِتَّةٍ وَأَرْبَعِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নেককার লোকের ভাল স্বপ্ন নবুওয়তের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لَمْ يَبْقَ مِنَ النُّبُوَّةِ إِلَّا المُبَشِّرَاتُ» قَالُوا: وَمَا المُبَشِّرَاتُ؟ قَالَ: «الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি ছাড়া নবুওয়তের আর কিছু অবশিষ্ট নেই।। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন, সু-সংবাদবাহী বিষয়াদি কি? তিনি বললেন, ভাল স্বপ্ন।
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ، أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْمُسْلِمِينَ رَأَى فِي النَّوْمِ أَنَّهُ لَقِيَ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ، فَقَالَ: نِعْمَ الْقَوْمُ أَنْتُمْ لَوْلَا أَنَّكُمْ تُشْرِكُونَ، تَقُولُونَ: مَا شَاءَ اللَّهُ وَشَاءَ مُحَمَّدٌ، وَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: " أَمَا وَاللَّهِ، إِنْ كُنْتُ لَأَعْرِفُهَا لَكُمْ، قُولُوا: مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ شَاءَ مُحَمَّدٌ ".
হুযাইফাহ্ ইবন ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক মুসলিম ব্যক্তি স্বপ্ন দেখে যে, আহলে কিতাবের এক ব্যক্তির সাথে তার সাক্ষাৎ হলে সে বললো, তোমরা কতই না উত্তম জাতি, যদি তোমরা শির্ক না করতে। তোমরা বলে থাকো, ‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন এবং মুহাম্মাদ যা ইচ্ছা করেন’’। অতঃপর সে স্বপ্নের কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলো। তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ! শোনো, আমি তো তোমাদের এরূপ কিছু বলতে শিখাইনি। তোমরা বলবে, ‘‘আল্লাহ্ যা ইচ্ছা করেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা চান’’।
عَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ، قَالَ: أُمِرُوا أَنْ يُسَبِّحُوا دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيَحْمَدُوا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيُكَبِّرُوا أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ، فَأُتِيَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فِي مَنَامِهِ، فَقِيلَ لَهُ: أَمَرَكُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُسَبِّحُوا دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَتَحْمَدُوا ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَتُكَبِّرُوا أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَاجْعَلُوهَا خَمْسًا وَعِشْرِينَ، وَاجْعَلُوا فِيهَا التَّهْلِيلَ، فَلَمَّا أَصْبَحَ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ، فَقَالَ: «اجْعَلُوهَا كَذَلِكَ».
যায়দ ইবন সাবিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (একদা) সাহাবায়ে কেরামকে আদেশ করা হলো- তারা যেন প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলে। তারপর যায়দ ইবন সাবিত (রাঃ) এর স্বপ্লে এক আনসারী সাহাবী উপনীত হলে যায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলা হল, তোমাদের কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করেছেন যে, তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার বলবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন ঐ আনসারী বললেন, তোমরা ঐ তাসবীহগুলোকে ২৫ বার করে পড়বে এবং তাতে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ কেও অন্তর্ভুক্ত করে নিবে। যখন সকাল হল তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে স্বপ্ন বৃত্তান্ত বর্ণনা করাতে তিনি বললেন, তোমরা তাসবীহগুলোকে অনুরূপভাবেই পড়বে।
حَدَّثَنَا نَافِعٌ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ: إِنَّ رِجَالًا مِنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانُوا يَرَوْنَ الرُّؤْيَا عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُصُّونَهَا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَيَقُولُ فِيهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ، وَأَنَا غُلاَمٌ حَدِيثُ السِّنِّ، وَبَيْتِي المَسْجِدُ قَبْلَ أَنْ أَنْكِحَ، فَقُلْتُ فِي نَفْسِي: لَوْ كَانَ فِيكَ خَيْرٌ لَرَأَيْتَ مِثْلَ مَا يَرَى هَؤُلاَءِ، فَلَمَّا اضْطَجَعْتُ ذَاتَ لَيْلَةٍ قُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ فِيَّ خَيْرًا فَأَرِنِي رُؤْيَا، فَبَيْنَمَا أَنَا كَذَلِكَ إِذْ جَاءَنِي مَلَكَانِ، فِي يَدِ كُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، يُقْبِلاَنِ بِي إِلَى جَهَنَّمَ، وَأَنَا بَيْنَهُمَا أَدْعُو اللَّهَ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهَنَّمَ، ثُمَّ أُرَانِي لَقِيَنِي مَلَكٌ فِي يَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، فَقَالَ: لَنْ تُرَاعَ، نِعْمَ الرَّجُلُ أَنْتَ، لَوْ كُنْتَ تُكْثِرُ الصَّلاَةَ. فَانْطَلَقُوا بِي حَتَّى وَقَفُوا بِي عَلَى شَفِيرِ جَهَنَّمَ، فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ البِئْرِ، لَهُ قُرُونٌ كَقَرْنِ البِئْرِ، بَيْنَ كُلِّ قَرْنَيْنِ مَلَكٌ بِيَدِهِ مِقْمَعَةٌ مِنْ حَدِيدٍ، وَأَرَى فِيهَا رِجَالًا مُعَلَّقِينَ بِالسَّلاَسِلِ، رُءُوسُهُمْ أَسْفَلَهُمْ، عَرَفْتُ فِيهَا رِجَالًا مِنْ قُرَيْشٍ، فَانْصَرَفُوا بِي عَنْ ذَاتِ اليَمِينِ.
فَقَصَصْتُهَا عَلَى حَفْصَةَ، فَقَصَّتْهَا حَفْصَةُ، عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَجُلٌ صَالِحٌ، لَوْ كَانَ يُصَلِّي مِنَ اللَّيْلِ» فَقَالَ نَافِعٌ: «فَلَمْ يَزَلْ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ».
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বেশ কয়েকজন সাহাবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে স্বপ্ন দেখতেন। অত:পর তারা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তা বর্ণনা করতেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাখ্যা দিতেন যা আল্লাহ ইচ্ছা করতেন। আমি তখন অল্প বয়স্ক যুবক। আর বিয়ের আগে মসজিদই ছিল আমার ঘর। আমি মনে মনে নিজেকে সম্বোধন করে বললাম, যদি তোমার মধ্যে কল্যাণ থাকত তাহলে তুমি তাদের ন্যায় স্বপ্ন দেখতে। আমি এক রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে বললাম, হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন যে, আমার মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত আছে তাহলে আমাকে কোনো একটি স্বপ্ন দেখান। আমি ঐ অবস্থায়ই (ঘুমিয়ে) রইলাম। দেখলাম আমার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসেছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই লোহার একটি করে হাতুড়ি। তারা আমাকে নিয়ে (জাহান্নামের দিকে) অগ্রসর হচ্ছেন। আর আমি তাদের উভয়ের মাঝখানে থেকে আল্লাহর কাছে দোয়া করছি, হে আল্লাহ! আমি জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর আমাকে দেখান হল যে, একজন ফেরেশতা আমার কাছে এসেছেন। তাঁর হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। সে আমাকে বলল, তোমার অবশ্যই কোনো ভয় নেই। তুমি খুবই ভালো লোক। যদি বেশীকরে সালাত আদায় করতে। তারা আমাকে নিয়ে চলল, অবশেষে তারা আমাকে জাহান্নামের (তীরে এনে) দাঁড় করাল, (যা দেখতে) কূপের ন্যায় গোলাকার। আর কূপের ন্যায় এরও রয়েছে অনেক শিং। আর দু’শিং এর মাঝখানে একজন ফেরেশতা, যার হাতে লোহার একটি হাতুড়ি। আর আমি এতে কিছু লোককে (জাহান্নামে) শিকল পরিহিত দেখলাম। তাদের মাথা ছিল নিচের দিকে। কুরাইশের কতক ব্যক্তিকে তথায় আমি চিনে ফেললাম। অত:পর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে ফিরল। এ ঘটনা (স্বপ্ন) আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট বর্ণনা করলাম। আর হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বর্ণনা করলেন: তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবদুল্লাহ তো সত্কর্মপরায়ণ ব্যক্তি। নাফি (রহ.) বলেন, এরপর থেকে তিনি সর্বদা বেশী করে (নফল) সালাত আদায় করতেন।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كُنْتُ غُلاَمًا شَابًّا عَزَبًا فِي عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكُنْتُ أَبِيتُ فِي المَسْجِدِ، وَكَانَ مَنْ رَأَى مَنَامًا قَصَّهُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ: اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ لِي عِنْدكَ خَيْرٌ فَأَرِنِي مَنَامًا يُعَبِّرُهُ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنِمْتُ، فَرَأَيْتُ مَلَكَيْنِ أَتَيَانِي، فَانْطَلَقَا بِي، فَلَقِيَهُمَا مَلَكٌ آخَرُ، فَقَالَ لِي: لَنْ تُرَاعَ، إِنَّكَ رَجُلٌ صَالِحٌ. فَانْطَلَقَا بِي إِلَى النَّارِ، فَإِذَا هِيَ مَطْوِيَّةٌ كَطَيِّ البِئْرِ، وَإِذَا فِيهَا نَاسٌ قَدْ عَرَفْتُ بَعْضَهُمْ، فَأَخَذَا بِي ذَاتَ اليَمِينِ. فَلَمَّا أَصْبَحْتُ ذَكَرْتُ ذَلِكَ لِحَفْصَةَ
فَزَعَمَتْ حَفْصَةُ، أَنَّهَا قَصَّتْهَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدَ اللَّهِ رَجُلٌ صَالِحٌ، لَوْ كَانَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنَ اللَّيْلِ» قَالَ الزُّهْرِيُّ: «وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بَعْدَ ذَلِكَ يُكْثِرُ الصَّلاَةَ مِنَ اللَّيْلِ».
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে অবিবাহিত যুবক ছিলাম। আমি মজদিদেই রাত্রি যাপন করতাম। আর যারাই স্বপ্নে কিছু দেখত তারা তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বর্ণনা করত। আমি বললাম, হে আল্লাহ! যদি তোমার নিকট আমার জন্য কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো কল্যাণ নিহিত থাকে, তাহলে আমাকে কোনো স্বপ্ন দেখাও, যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করেন। আমি নিদ্রা গেলাম, তখন দেখতে পেলাম যে দু’জন ফেরেশতা আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে চলল, এরপর তাদের সাথে অপর একজন ফেরেশতার সাক্ষাত ঘটল। সে আমাকে বলল, তোমার কোনো ভয়ের কারণ নেই। তুমি তো একজন সত্কর্মপরায়ণ লোক। এরপর তারা আামকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে চলল, যেন কূপের ন্যায় গোলাকার নির্মিত। আর এর মধ্যে বেশ কিছু লোক রয়েছে। এদের কতককে আমি চিনতে পারলাম। এরপর তারা আমাকে ডানদিকে নিয়ে চলল। যখন সকাল হল, আমি হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট সব ঘটনা উল্লেখ করলাম। পরে হাফসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন যে, তিনি তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বর্ণনা করেছেন। আর তিনি বলেছেন, আবদুল্লাহ সত্কর্মপরায়ণ লোক। (তিনি আরও বলেছেন) যদি সে রাতে বেশী করে সালাত আদায় করত। যুহরী (রহ.) বলেন, এরপর থেকে আবদুল্লাহ (ইবন উমর) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাতে বেশী করে সালাত আদায় করতে লাগলেন।
ঊনচল্লিশতম পরিচ্ছেদ
কাসাসুল আম্বিয়া তথা নবীগণের ঘটনা
এটা নবুওয়তের প্রমানের সাথে এজন্য সম্পৃক্ত যে, একজন উম্মী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সম্পর্কে সংবাদ দিতেন, তারা কেউ এর প্রতিবাদ বা প্রত্যাখ্যান করতে সক্ষম হয়নি।
কাসাসুল আম্বিয়া শুধু কুরআন ও হাদীসের থেকেই গ্রহণ করা হবে। হাদীসের তুলনায় কুরআনেই নবীগণের ঘটনা বেশি ও অধিক স্পষ্ট।
আমি এখানে নবীগণের ঘটনা সম্পৃক্ত কিছু আয়াত উল্লেখ করেছি যেগুলো দালায়েনুন নুবুওয়াহ এর সাথে সম্পৃক্ত, এগুলো আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ বহন করে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُم مُّصَدِّقٗا لِّمَا بَيۡنَ يَدَيَّ مِنَ ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَمُبَشِّرَۢا بِرَسُولٖ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِي ٱسۡمُهُۥٓ أَحۡمَدُۖ فَلَمَّا جَآءَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ قَالُواْ هَٰذَا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ٦ ﴾ [الصف: ٦]
“আর যখন মারইয়াম পুত্র ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাঈল, নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল। আমার পূর্ববর্তী তাওরাতের সত্যায়নকারী এবং একজন রাসূলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম আহমদ’। অতঃপর সে যখন সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে আগমন করল, তখন তারা বলল, ‘এটাতো স্পষ্ট জাদু”। [সূরা আস্-সাফ: ৬]
আদম ও হাওয়া আলাইহিমাস সালামের ঘটনা
আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন,
﴿ وَلَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ مِن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٢٦ وَٱلۡجَآنَّ خَلَقۡنَٰهُ مِن قَبۡلُ مِن نَّارِ ٱلسَّمُومِ ٢٧ وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي خَٰلِقُۢ بَشَرٗا مِّن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٢٨ فَإِذَا سَوَّيۡتُهُۥ وَنَفَخۡتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُۥ سَٰجِدِينَ ٢٩ فَسَجَدَ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ كُلُّهُمۡ أَجۡمَعُونَ ٣٠ إِلَّآ إِبۡلِيسَ أَبَىٰٓ أَن يَكُونَ مَعَ ٱلسَّٰجِدِينَ ٣١ قَالَ يَٰٓإِبۡلِيسُ مَا لَكَ أَلَّا تَكُونَ مَعَ ٱلسَّٰجِدِينَ ٣٢ قَالَ لَمۡ أَكُن لِّأَسۡجُدَ لِبَشَرٍ خَلَقۡتَهُۥ مِن صَلۡصَٰلٖ مِّنۡ حَمَإٖ مَّسۡنُونٖ ٣٣ ﴾ [الحجر: ٢٦، ٣٣]
“আর অবশ্যই আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। আর ইতঃপূর্বে জিনকে সৃষ্টি করেছি উত্তপ্ত অগ্নিশিখা থেকে। আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, ‘আমি একজন মানুষ সৃষ্টি করতে যাচ্ছি শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে’। ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’। অতঃপর, ফেরেশতারা সকলেই সিজদা করল। ইবলীস ছাড়া। সে সিজদাকারীদের সঙ্গী হতে অস্বীকার করল। তিনি বললেন, ‘হে ইবলীস, তোমার কী হল যে, তুমি সিজদাকারীদের সঙ্গী হলে না’? সে বলল, ‘আমি তো এমন নই যে, একজন মানুষকে আমি সিজদা করব, যাকে আপনি সৃষ্টি করেছেন শুকনো ঠনঠনে কালচে মাটি থেকে”। [সূরা: আল-হিজর: ২৬-৩৩]
তাই আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুকনো ঠনঠনে, কালচে কাদামাটি থেকে। সুতরাং আমরা দারউইনের মতামত প্রত্যাখ্যান করি। যারা মানব জাতির আদি পিতা আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির ব্যাপারে ভুল ব্যাখ্যা করে এবং কুরআনকে মিথ্যারোপ করে। অথচ অনেক মুসলিমই একথা জানে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ: اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর দৈর্ঘ্য ছিল ষাট হাত। এরপর তিনি (আল্লাহ্) তাঁকে (আদমকে) বললেন, যাও ঐ ফিরিশতা দলের প্রতি সালাম কর এবং তাঁরা তোমার সালামের উত্তর কিরূপে দেয় তা মনোযোগ দিয়ে শোন। কেননা এটাই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। তারপর আদম আদম আলাইহিস সালাম (ফিরিশতাদের) বললেন, “আস্সালামু আলাইকুম”। ফিরিশতাগণ তার উত্তরে “আস্সালামু আলাইকা ওয়া রাহামাতুল্লাহ” বললেন। ফিরিশতারা সালামের জওয়াবে “ওয়া রাহ্মাতুল্লাহ” শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। যারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন তারা আদম আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি বিশিষ্ট হবেন। তবে আদম সন্তানদের দেহের দৈর্ঘ্য সর্বদা কমতে কমতে বর্তমান পরিমাপ পর্যন্ত পোঁছেছে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، نَحْوَهُ يَعْنِي «لَوْلاَ بَنُو إِسْرَائِيلَ لَمْ يَخْنَزِ اللَّحْمُ، وَلَوْلاَ حَوَّاءُ لَمْ تَخُنَّ أُنْثَى زَوْجَهَا».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈল যদি না হত তবে গোশত দুর্গন্ধযুক্ত হতো না। আর যদি হাওয়া আলাইহাস সালাম না হতেন তবে কোনো নারীই তাঁর স্বামীর খেয়ানত করত না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ بِلَحْمٍ فَرُفِعَ إِلَيْهِ الذِّرَاعُ، وَكَانَتْ تُعْجِبُهُ فَنَهَشَ مِنْهَا نَهْشَةً، ثُمَّ قَالَ: " أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَهَلْ تَدْرُونَ مِمَّ ذَلِكَ؟ يَجْمَعُ اللَّهُ النَّاسَ الأَوَّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ، يُسْمِعُهُمُ الدَّاعِي وَيَنْفُذُهُمُ البَصَرُ، وَتَدْنُو الشَّمْسُ، فَيَبْلُغُ النَّاسَ مِنَ الغَمِّ وَالكَرْبِ مَا لاَ يُطِيقُونَ وَلاَ يَحْتَمِلُونَ، فَيَقُولُ النَّاسُ: أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ بَلَغَكُمْ، أَلاَ تَنْظُرُونَ مَنْ يَشْفَعُ لَكُمْ إِلَى رَبِّكُمْ؟ فَيَقُولُ بَعْضُ النَّاسِ لِبَعْضٍ: عَلَيْكُمْ بِآدَمَ، فَيَأْتُونَ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ فَيَقُولُونَ لَهُ: أَنْتَ أَبُو البَشَرِ، خَلَقَكَ اللَّهُ بِيَدِهِ، وَنَفَخَ فِيكَ مِنْ رُوحِهِ، وَأَمَرَ المَلاَئِكَةَ فَسَجَدُوا لَكَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا قَدْ بَلَغَنَا؟ فَيَقُولُ آدَمُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، إِنَّكَ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ، وَقَدْ سَمَّاكَ اللَّهُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ فَيَقُولُونَ: يَا إِبْرَاهِيمُ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ كُنْتُ كَذَبْتُ ثَلاَثَ كَذِبَاتٍ - فَذَكَرَهُنَّ أَبُو حَيَّانَ فِي الحَدِيثِ - نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى فَيَأْتُونَ، مُوسَى فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَإِنِّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي المَهْدِ صَبِيًّا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ اليَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثْلَهُ قَطُّ، وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَخَاتِمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ، فَأَنْطَلِقُ فَآتِي تَحْتَ العَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثَّنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا، لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ قَبْلِي، ثُمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ سَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لاَ حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ البَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ، ثُمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنَّ مَا بَيْنَ المِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الجَنَّةِ، كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَحِمْيَرَ - أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى - ".
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত , একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে গোশত আনা হল এবং তাকে সামনের রান পরিবেশন করা হল। তিনি এটা পছন্দ করতেন। তিনি তার থেকে কামড় দিয়ে খেলেন। এরপর বললেন, আমি হব কিয়ামতের দিন মানবকুলের সরদার। তোমাদের কি জানা আছে তা কেন? কিয়ামতের দিন পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব মানুষ এমন এক ময়দানে সমবেত হবে, যেখানে একজন আহ্বানকারীর আহবান সকলে শুনতে পাবে এবং সকলেই একসঙ্গে দৃষ্টিগোচর হবে। সূর্য নিকটে এসে যাবে। মানুষ এমনি কষ্ট ক্লেশের সম্মুখিন হবে যা অসহনীয় ও অসহ্যকর হয়ে পড়বে। তখন লোকেরা বলবে, তোমরা কি বিপদের সম্মুখীন হয়েছ তা কি দেখতে পাচ্ছনা? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজে বের করবেনা যিনি তোমাদের রবের কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশকারি হবেন? কেউ কেউ অন্যদের বলবে যে, আদম আলাইহিস সালামের কাছে চল। তখন সকলে তার কাছে এসে তাকে বলবে, আপনি আবুল বাশার (মানবজাতির পিতা)। আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলে তারা আপনাকে সিজদা করেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে, আমরা কিসের মধ্যে আছি? আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কি অবস্থায় পৌঁছেছি? তখন আদম আলাইহিস সালাম বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি, আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছিলেন, কিন্তু আমি অমান্য করেছি। নফসি, নফসি, নফসি (আমি নিজেই সুপারিশ প্রার্থী), তোমরা অন্যের কাছে যাও। তোমরা নূহ আলাইহিস সালামের কাছে যাও। তখন সকলে নূহ আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে নূহ আলাইহিস সালাম! নিশ্চয়ই আপনি পৃথিবীর মানুষের জন্য প্রথম রাসুল। আর আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে পরম কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুতরাং আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আমার একটি গ্রহণীয় দো‘আ ছিল যা আমি আমার কওমের ব্যপারে করে ফেলেছি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কাছে। তখন তারা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর নবী এবং পৃথিবীর মানুষের মধ্যে আপনি আল্লাহর বন্ধু। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কোনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমি তো তিনটি মিথ্যা বলে ফেলেছিলাম। রাবি আবু হাইয়ান তার বর্ণনায় এগুলোর উল্লেখ করেছেন। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে। তারা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে মুসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ আপনাকে রিসালাত এর সম্মান দান করেন এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানব জাতির উপর মর্যাদা দান করেছেন। আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হননি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। আর আমিতো এক ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলাম। যাকে হত্যা করার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। (এখন) নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে। তারা ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে এসে বলবে, হে ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি আল্লাহর রাসুল এবং কালেমা, যা তিনি মরিয়ম আলাইহিস সালামের উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। আপনি রূহ। আপনি দোলনায় থেকে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আজ আপনি আপনার রবের কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না যে আমরা কিসের মধ্যে আছি? তিনি বলবেন, আজ আমার রব এত রাগান্বিত হয়েছেন যার আগে কনদিন এরূপ রাগান্বিত হন নি আর পরেও এরূপ রাগান্বিত হবেন না। তিনি নিজের কন গুনাহের কথা বলবেন না। নফসি, নফসি, নফসি। তোমরা অন্যের কাছে যাও। যাও তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে। তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলবে, হে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি আল্লাহর রাসুল ও শেষ নবী। আল্লাহ তা‘আলা আপনার আগের, পরের সব গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কিসের মধ্যে আছি? তখন আমি আরশের নীচে এসে আমার রবের সামনে সিজদা দিয়ে পড়ব। তারপর আল্লাহ তা‘আলা তার প্রশংসা এবং গুণগানের এমন সুন্দর পদ্ধতি আমার সামনে খুলে দিবেন যা এর আগে অন্য কারও জন্য খুলেন নি। এরপর বলা হবে, হে মুহাম্মদ! তোমার মাথা উঠাও। তুমি যা চাও তোমাকে দেওয়া হবে। তুমি সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। এরপর আমি মাথা উঠিয়ে বলব, “হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! হে আমার রব! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব নিকাশ হবেনা, তাদেরকে জান্নাতের দরজাসমূহের ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সাথে অন্য দরজায় ও তাদের প্রবেশের অধিকার থাকবে। তারপর তিনি বলবেন, যার হাতে আমার প্রান সে সত্তার শপথ! বেহেশতের এক দরজার দুই পাশের মধ্যবর্তী প্রশস্ততা যেমন মক্কা ও হামিরের মধ্যবর্তী দূরত্ব, অথবা মক্কা ও বসরার মাঝখানের দূরত্ব।
عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إِلَّا كَانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الْأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ كَانَ أَوَّلَ مَنْ سَنَّ الْقَتْلَ».
আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তি অত্যাচারিত হয়ে নিহত হয়, তবে সেই খুনের একাংশ (পাপ) আদম আলাইহিস সালামের প্রথম পূত্র (কাবিল) এর উপর বর্তায়। কেননা, সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রথা প্রচলন করেছিল।
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَمَّا صَوَّرَ اللهُ آدَمَ فِي الْجَنَّةِ تَرَكَهُ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَتْرُكَهُ، فَجَعَلَ إِبْلِيسُ يُطِيفُ بِهِ، يَنْظُرُ مَا هُوَ، فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ عَرَفَ أَنَّهُ خُلِقَ خَلْقًا لَا يَتَمَالَكُ».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে যখন আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি দান করেন তখন তিনি তাকে তাঁর ইচ্ছা ছেড়ে দিলেন। আর ইবলীস তার চতুর্দিকে ঘোরাফেরা করতে এবং দেখতে লাগল যে, জিনিসটি কি? সে যখন দেখতে পেল, তা শূন্য পাত্র তখন বুঝল যে, (আল্লাহ) তাকে এমন এক মাখলূক রূপে করেছেন, যে নিজেকে বশে রাখতে পারে না।
নূহ আলাইহিস সালাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ لَقَدۡ أَرۡسَلۡنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوۡمِهِۦ فَقَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٥٩ قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٦٠ قَالَ يَٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِي ضَلَٰلَةٞ وَلَٰكِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٦١ أُبَلِّغُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَأَنصَحُ لَكُمۡ وَأَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٦٢ أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَآءَكُمۡ ذِكۡرٞ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنكُمۡ لِيُنذِرَكُمۡ وَلِتَتَّقُواْ وَلَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ ٦٣ فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ فِي ٱلۡفُلۡكِ وَأَغۡرَقۡنَا ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَآۚ إِنَّهُمۡ كَانُواْ قَوۡمًا عَمِينَ ٦٤ ﴾ [الاعراف: ٥٩، ٦٤]
“আমি তো নূহকে তার কওমের নিকট প্রেরণ করেছি। অতঃপর সে বলেছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় আমি তোমাদের মহাদিনের আযাবের ভয় করছি’। তার কওম থেকে নেতৃবর্গ বলল, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি’। সে বলল, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো ভ্রান্তি নেই; কিন্তু আমি সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল’। আমি তোমাদের নিকট পৌঁছাচ্ছি আমার রবের রিসালাতসমূহ এবং তোমাদের কল্যাণ কামনা করছি। আর আমি আল্লাহর কাছ থেকে এমন কিছু জানি, যা তোমরা জান না’।‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে, আর যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর এবং যাতে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও’? অতঃপর তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলল। ফলে আমি তাকে ও তার সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদেরকে রক্ষা করলাম; আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছিল তাদেরকে আমি ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ কওম”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৫৯-৬৪]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ وَأُوحِيَ إِلَىٰ نُوحٍ أَنَّهُۥ لَن يُؤۡمِنَ مِن قَوۡمِكَ إِلَّا مَن قَدۡ ءَامَنَ فَلَا تَبۡتَئِسۡ بِمَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ ٣٦ وَٱصۡنَعِ ٱلۡفُلۡكَ بِأَعۡيُنِنَا وَوَحۡيِنَا وَلَا تُخَٰطِبۡنِي فِي ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِنَّهُم مُّغۡرَقُونَ ٣٧ وَيَصۡنَعُ ٱلۡفُلۡكَ وَكُلَّمَا مَرَّ عَلَيۡهِ مَلَأٞ مِّن قَوۡمِهِۦ سَخِرُواْ مِنۡهُۚ قَالَ إِن تَسۡخَرُواْ مِنَّا فَإِنَّا نَسۡخَرُ مِنكُمۡ كَمَا تَسۡخَرُونَ ٣٨ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن يَأۡتِيهِ عَذَابٞ يُخۡزِيهِ وَيَحِلُّ عَلَيۡهِ عَذَابٞ مُّقِيمٌ ٣٩ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَ أَمۡرُنَا وَفَارَ ٱلتَّنُّورُ قُلۡنَا ٱحۡمِلۡ فِيهَا مِن كُلّٖ زَوۡجَيۡنِ ٱثۡنَيۡنِ وَأَهۡلَكَ إِلَّا مَن سَبَقَ عَلَيۡهِ ٱلۡقَوۡلُ وَمَنۡ ءَامَنَۚ وَمَآ ءَامَنَ مَعَهُۥٓ إِلَّا قَلِيلٞ ٤٠ ۞وَقَالَ ٱرۡكَبُواْ فِيهَا بِسۡمِ ٱللَّهِ مَجۡرٜىٰهَا وَمُرۡسَىٰهَآۚ إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٞ رَّحِيمٞ ٤١ وَهِيَ تَجۡرِي بِهِمۡ فِي مَوۡجٖ كَٱلۡجِبَالِ وَنَادَىٰ نُوحٌ ٱبۡنَهُۥ وَكَانَ فِي مَعۡزِلٖ يَٰبُنَيَّ ٱرۡكَب مَّعَنَا وَلَا تَكُن مَّعَ ٱلۡكَٰفِرِينَ ٤٢ قَالَ سََٔاوِيٓ إِلَىٰ جَبَلٖ يَعۡصِمُنِي مِنَ ٱلۡمَآءِۚ قَالَ لَا عَاصِمَ ٱلۡيَوۡمَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِ إِلَّا مَن رَّحِمَۚ وَحَالَ بَيۡنَهُمَا ٱلۡمَوۡجُ فَكَانَ مِنَ ٱلۡمُغۡرَقِينَ ٤٣ وَقِيلَ يَٰٓأَرۡضُ ٱبۡلَعِي مَآءَكِ وَيَٰسَمَآءُ أَقۡلِعِي وَغِيضَ ٱلۡمَآءُ وَقُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ وَٱسۡتَوَتۡ عَلَى ٱلۡجُودِيِّۖ وَقِيلَ بُعۡدٗا لِّلۡقَوۡمِ ٱلظَّٰلِمِينَ ٤٤ وَنَادَىٰ نُوحٞ رَّبَّهُۥ فَقَالَ رَبِّ إِنَّ ٱبۡنِي مِنۡ أَهۡلِي وَإِنَّ وَعۡدَكَ ٱلۡحَقُّ وَأَنتَ أَحۡكَمُ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٤٥ قَالَ يَٰنُوحُ إِنَّهُۥ لَيۡسَ مِنۡ أَهۡلِكَۖ إِنَّهُۥ عَمَلٌ غَيۡرُ صَٰلِحٖۖ فَلَا تَسَۡٔلۡنِ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۖ إِنِّيٓ أَعِظُكَ أَن تَكُونَ مِنَ ٱلۡجَٰهِلِينَ ٤٦ قَالَ رَبِّ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِكَ أَنۡ أَسَۡٔلَكَ مَا لَيۡسَ لِي بِهِۦ عِلۡمٞۖ وَإِلَّا تَغۡفِرۡ لِي وَتَرۡحَمۡنِيٓ أَكُن مِّنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٤٧ قِيلَ يَٰنُوحُ ٱهۡبِطۡ بِسَلَٰمٖ مِّنَّا وَبَرَكَٰتٍ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ أُمَمٖ مِّمَّن مَّعَكَۚ وَأُمَمٞ سَنُمَتِّعُهُمۡ ثُمَّ يَمَسُّهُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٞ ٤٨ تِلۡكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهَآ إِلَيۡكَۖ مَا كُنتَ تَعۡلَمُهَآ أَنتَ وَلَا قَوۡمُكَ مِن قَبۡلِ هَٰذَاۖ فَٱصۡبِرۡۖ إِنَّ ٱلۡعَٰقِبَةَ لِلۡمُتَّقِينَ ٤٩ ﴾ [هود: ٣٦، ٤٩]
“আর নূহের কাছে ওহী পাঠানো হল যে, ‘যারা ঈমান এনেছে, তারা ছাড়া তোমার কওমের আর কেউ ঈমান আনবে না। সুতরাং তারা যা করে সে জন্য তুমি দুঃখিত হয়ো না’।‘আর তুমি আমার চোখের সামনে ও আমার ওহী অনুসারে নৌকা তৈরী কর। আর যারা যুলম করেছে, তাদের ব্যাপারে তুমি আমার কাছে কোনো আবেদন করো না। নিশ্চয় তাদেরকে ডুবানো হবে’।আর সে নৌকা তৈরী করতে লাগল এবং যখনই তার কওমের নেতৃস্থানীয় কোনো ব্যক্তি তার পাশ দিয়ে যেত, তাকে নিয়ে উপহাস করত। সে বলল, ‘যদি তোমরা আমাদের নিয়ে উপহাস কর, তবে আমরাও তোমাদের নিয়ে উপহাস করব, যেমন তোমরা উপহাস করছ’। অতএব, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে, কার উপর সে আযাব আসবে যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং কার উপর আপতিত হবে স্থায়ী আযাব।অবশেষে যখন আমার আদেশ আসল এবং চুলা উথলে উঠল , আমি বললাম, ‘তুমি তাতে তুলে নাও প্রত্যেক শ্রেণী থেকে জোড়া জোড়া এবং যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের ছাড়া তোমার পরিবারকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে। আর তার সাথে অল্পসংখ্যকই ঈমান এনেছিল। আর সে বলল, ‘তোমরা এতে আরোহণ কর। এর চলা ও থামা হবে আল্লাহর নামে। নিশ্চয় আমার রব অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর তা পাহাড়সম ঢেউয়ের মধ্যে তাদেরকে নিয়ে চলছিল এবং নূহ তার পুত্রকে ডাক দিল, আর সে ছিল আলাদা স্থানে- ‘হে আমার পুত্র, আমাদের সাথে আরোহণ কর এবং কাফিরদের সাথে থেকো না’।সে বলল, ‘অচিরেই আমি একটি পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে’। সে (নূহ) বলল, ‘যার প্রতি আল্লাহ দয়া করেছেন সে ছাড়া আজ আল্লাহর আদেশ থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই’। এরপর তাদের উভয়ের মধ্যে ঢেউ অন্তরায় হয়ে গেল। অতঃপর সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল । আর বলা হল, ‘হে যমীন, তুমি তোমার পানি চুষে নাও, আর হে আসমান, বিরত হও’। অতঃপর পানি কমে গেল এবং (আল্লাহর) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হল, আর নৌকা জুদী পর্বতের উপর উঠল এবং ঘোষণা করা হল, ‘ধ্বংস যালিম কওমের জন্য’। আর নূহ তার রবকে ডাকল এবং বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমার সন্তান আমার পরিবারভুক্ত এবং আপনার ওয়াদা নিশ্চয় সত্য। আর আপনি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বিচারক’। তিনি বললেন, ‘হে নূহ, সে নিশ্চয় তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, আমার কাছে তা চেয়ো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও’। সে বলল, ‘হে আমার রব, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই তা চাওয়া থেকে আমি অবশ্যই আপনার আশ্রয় চাই। আর যদি আপনি আমাকে মাফ না করেন এবং আমার প্রতি দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’।বলা হল, ‘হে নূহ, তোমার ও তোমার সাথে যে উম্মত রয়েছে তাদের উপর আমার পক্ষ থেকে শান্তি ও বরকতসহ অবতরণ কর। আর আরো অনেক উম্মতকে আমি জীবন উপভোগ করতে দেব, তারপর আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে স্পর্শ করবে যন্ত্রণাদায়ক আযাব’। এগুলো গায়েবের সংবাদ, আমি তোমাকে ওহীর মাধ্যমে তা জানাচ্ছি। ইতঃপূর্বে তা না তুমি জানতে এবং না তোমার কওম। সুতরাং তুমি সবর কর। নিশ্চয় শুভ পরিণাম কেবল মুত্তাকীদের জন্য”। [সূরা: হূদ: ৩৬-৪৯]
قَالَ ابْنُ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي النَّاسِ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ ثُمَّ ذَكَرَ الدَّجَّالَ فَقَالَ: " إِنِّي لَأُنْذِرُكُمُوهُ، وَمَا مِنْ نَبِيٍّ إِلَّا أَنْذَرَهُ قَوْمَهُ، لَقَدْ أَنْذَرَ نُوحٌ قَوْمَهُ، وَلَكِنِّي أَقُولُ لَكُمْ فِيهِ قَوْلًا لَمْ يَقُلْهُ نَبِيٌّ لِقَوْمِهِ: تَعْلَمُونَ أَنَّهُ أَعْوَرُ، وَأَنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ ".
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা জনসমাবেশে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করলেন, তারপর দাজ্জালের উল্লখ করে বললেন, আমি তোমাদেরকে তার থেকে সতর্ক করছি আর প্রত্যেক নবীই নিজ নিজ সম্প্রদায়কে এ দাজ্জাল থেকে সতর্ক করে দিয়েছেন। নূহ আলাইহি সালাম ও নিজ সম্প্রদায়কে দাজ্জাল থেকে সতর্ক করেছেন। কিন্তু আমি তোমাদেরকে তার সম্বন্ধে এমন একটা কথা বলছি, যা কোনো নবী তাঁর সম্প্রদায়কে বলেননি। তা হলো তোমরা জেনে রেখ, নিশ্চয়ই দাজ্জাল কানা, আর আল্লাহ কানা নন।
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَلاَ أُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا عَنِ الدَّجَّالِ، مَا حَدَّثَ بِهِ نَبِيٌّ قَوْمَهُ: إِنَّهُ أَعْوَرُ، وَإِنَّهُ يَجِيءُ مَعَهُ بِمِثَالِ الجَنَّةِ وَالنَّارِ، فَالَّتِي يَقُولُ إِنَّهَا الجَنَّةُ هِيَ النَّارُ، وَإِنِّي أُنْذِرُكُمْ كَمَا أَنْذَرَ بِهِ نُوحٌ قَوْمَهُ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে দাজ্জাল সম্পর্কে এমন একটি কথা বলে দেব না, যা কোনো নবীই তাঁর সম্প্রদায়কে বলেন নি? তা হলো, নিশ্চয়ই সে হবে কানা, সে সাথে করে জান্নাত এবং জাহান্নামের দু’টি কৃত্রিম ছবি নিয়ে আসবে। অতএব যাকে সে বলবে যে এটি জান্নাত প্রকৃতপক্ষে সেটি হবে জাহান্নাম। আর আমি তার সম্পর্কে তোমাদের ঠিক তেমনি সতর্ক করছি, যেমন নূহ আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়কে সে সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
হূদ আলাইহিস সালাম ও তাঁর সম্প্রদায় ‘আদ
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ ۞وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمۡ هُودٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥٓۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ ٦٥ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦٓ إِنَّا لَنَرَىٰكَ فِي سَفَاهَةٖ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٦٦ قَالَ يَٰقَوۡمِ لَيۡسَ بِي سَفَاهَةٞ وَلَٰكِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٦٧ أُبَلِّغُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَأَنَا۠ لَكُمۡ نَاصِحٌ أَمِينٌ ٦٨ أَوَعَجِبۡتُمۡ أَن جَآءَكُمۡ ذِكۡرٞ مِّن رَّبِّكُمۡ عَلَىٰ رَجُلٖ مِّنكُمۡ لِيُنذِرَكُمۡۚ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعۡدِ قَوۡمِ نُوحٖ وَزَادَكُمۡ فِي ٱلۡخَلۡقِ بَصۜۡطَةٗۖ فَٱذۡكُرُوٓاْ ءَالَآءَ ٱللَّهِ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٦٩ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا لِنَعۡبُدَ ٱللَّهَ وَحۡدَهُۥ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٧٠ قَالَ قَدۡ وَقَعَ عَلَيۡكُم مِّن رَّبِّكُمۡ رِجۡسٞ وَغَضَبٌۖ أَتُجَٰدِلُونَنِي فِيٓ أَسۡمَآءٖ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّا نَزَّلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٖۚ فَٱنتَظِرُوٓاْ إِنِّي مَعَكُم مِّنَ ٱلۡمُنتَظِرِينَ ٧١ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَٱلَّذِينَ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَقَطَعۡنَا دَابِرَ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَاۖ وَمَا كَانُواْ مُؤۡمِنِينَ ٧٢ ﴾ [الاعراف: ٦٥، ٧٢]
“আর (প্রেরণ করলাম) আদ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না’? তার কওমের কাফির নেতৃবৃন্দ বলল, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা অবশ্যই তোমাকে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত মনে করি’। সে বলল, ‘হে আমার কওম, আমার মধ্যে কোনো নির্বুদ্ধিতা নেই; কিন্তু আমি সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল’।‘আমি তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাতসমূহ পৌঁছাচ্ছি, আর আমি তোমাদের জন্য কল্যাণকামী বিশ্বস্ত’।‘তোমরা কি আশ্চর্য হচ্ছো যে, তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তির নিকট উপদেশ এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে সতর্ক করে? আর তোমরা স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে নূহের কওমের পর স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন এবং সৃষ্টিতে তোমাদেরকে দৈহিক গঠন ও শক্তিতে সমৃদ্ধ করেছেন। সুতরাং তোমরা স্মরণ কর আল্লাহর নিআমতসমূহকে, যাতে তোমরা সফলকাম হও’।তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট এজন্য এসেছ যে, আমরা এক আল্লাহর ইবাদাত করি এবং ত্যাগ করি আমাদের পিতৃপুরুষগণ যার ইবাদাত করত? সুতরাং তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিচ্ছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে এসো, যদি তুমি সত্যবাদী হও’। সে বলল, ‘নিশ্চয় তোমাদের উপর তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আযাব ও ক্রোধ পতিত হয়েছে। তোমরা কি এমন নামসমূহের ব্যাপারে আমার সাথে বিবাদ করছ, যার নামকরণ করেছ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা, যার ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ নাযিল করেননি? সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর। আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি’। অতঃপর আমি তাকে ও তার সাথে যারা ছিল, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা রক্ষা করেছি এবং তাদের মূল কেটে দিয়েছি, যারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছিল। আর তারা মুমিন ছিল না”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৬৫-৭২]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ ۞وَٱذۡكُرۡ أَخَا عَادٍ إِذۡ أَنذَرَ قَوۡمَهُۥ بِٱلۡأَحۡقَافِ وَقَدۡ خَلَتِ ٱلنُّذُرُ مِنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦٓ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّا ٱللَّهَ إِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٍ عَظِيمٖ ٢١ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا لِتَأۡفِكَنَا عَنۡ ءَالِهَتِنَا فَأۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٢٢ قَالَ إِنَّمَا ٱلۡعِلۡمُ عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَلَٰكِنِّيٓ أَرَىٰكُمۡ قَوۡمٗا تَجۡهَلُونَ ٢٣ فَلَمَّا رَأَوۡهُ عَارِضٗا مُّسۡتَقۡبِلَ أَوۡدِيَتِهِمۡ قَالُواْ هَٰذَا عَارِضٞ مُّمۡطِرُنَاۚ بَلۡ هُوَ مَا ٱسۡتَعۡجَلۡتُم بِهِۦۖ رِيحٞ فِيهَا عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٤ تُدَمِّرُ كُلَّ شَيۡءِۢ بِأَمۡرِ رَبِّهَا فَأَصۡبَحُواْ لَا يُرَىٰٓ إِلَّا مَسَٰكِنُهُمۡۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٢٥ ﴾ [الاحقاف: ٢١، ٢٥]
আর স্মরণ কর ‘আ’দ সম্প্রদায়ের ভাইয়ের কথা, যখন সে আহকাফের স্বীয় সম্প্রদায়কে সতর্ক করেছিল। আর এমন সতর্ককারীরা তার পূর্বে এবং তার পরেও গত হয়েছে যে, ‘তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর এক ভয়াবহ দিনের আযাবের আশঙ্কা করছি’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদেরকে আমাদের উপাস্যদের থেকে নিবৃত্ত করতে আমাদের নিকট এসেছ? তুমি যদি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও, তাহলে আমাদেরকে যার ভয় দেখাচ্ছ তা নিয়ে এসো’। সে বলল, ‘এ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে। আর যা দিয়ে আমাকে পাঠানো হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে তা-ই প্রচার করি, কিন্তু আমি দেখছি, তোমরা এক মূর্খ সম্প্রদায়’। অতঃপর যখন তারা তাদের উপত্যকার দিকে মেঘমালা দেখল তখন তারা বলল, ‘এ মেঘমালা আমাদেরকে বৃষ্টি দেবে’। (হূদ বলল,) বরং এটি তা-ই যা তোমরা ত্বরান্বিত করতে চেয়েছিলে। এ এক ঝড়, যাতে যন্ত্রণাদায়ক আযাব রয়েছে’। এটা তার রবের নির্দেশে সব কিছু ধ্বংস করে দেবে’। ফলে তারা এমন (ধ্বংস) হয়ে গেল যে, তাদের আবাসস্থল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। এভাবেই আমি অপরাধী কওমকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। [সূরা আল্-আহকাফ: ২১-২৫]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «نُصِرْتُ بِالصَّبَا، وَأُهْلِكَتْ عَادٌ بِالدَّبُورِ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমাকে ভোরের বায়ু (পুবালি বাতাস) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে আর ‘আদ জাতিকে দাবুর বা পশ্চিমের (এক প্রকার মারাত্মক) বায়ু দ্বারা ধংস করা হয়েছে।
عَنْ عَائِشَةَ، زَوْجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهَا قَالَتْ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا عَصَفَتِ الرِّيحُ، قَالَ: «اللهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ»، قَالَتْ: وَإِذَا تَخَيَّلَتِ السَّمَاءُ، تَغَيَّرَ لَوْنُهُ، وَخَرَجَ وَدَخَلَ، وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ، فَإِذَا مَطَرَتْ، سُرِّيَ عَنْهُ، فَعَرَفْتُ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: " لَعَلَّهُ، يَا عَائِشَةُ كَمَا قَالَ قَوْمُ عَادٍ: {فَلَمَّا رَأَوْهُ عَارِضًا مُسْتَقْبِلَ أَوْدِيَتِهِمْ قَالُوا هَذَا عَارِضٌ مُمْطِرُنَا} [الأحقاف: 24] ".
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে দিন ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হত সে দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, হে আল্লাহ! আমি মেঘের কল্যাণ কামনা করছি এবং এর মধ্যে যে সব কল্যাণ রয়েছে এবং যে কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছে তাও এবং আশ্রয় প্রার্থনা করছি এর ক্ষতি, ধ্বংস থেকে এবং যে মন্দ কাজের জন্য পাঠান হয়েছে তা থেকে। আকাশে যখন বিজলী চমকায়, বজ্রের বিকট গর্জন হয়, তখন তাঁর চেহারা মুবারক বিবর্ণ হয়ে যেত, রং পরিবর্তন হয়ে যেত। তিনি পেরেশান হয়ে ঘরে প্রবেশ করতেন আবার বের হতেন এবং আগে বাড়তেন ও পিছনে হটে যেতেন। যখন বর্ষণ হয়ে যেত তখন তার চেহারায় আনন্দ ফূটে উঠত। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা অনুভব করতে পেরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, এতে তিনি উত্তর দিলেন হে আয়িশা! আমার আশংকা হয়, এমন হতে পারে যেমন হুদ আলাইহিস সালামের কাওম বলেছিল, যখন তারা মেঘমালাকে তাদের উপত্যকার দিকে আসতে দেখল, তখন তারা বলতে লাগল, এ প্রসারিত মেঘমালা, আমাদের উপর ভারি বর্ষণ করবে।
عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ، أَنَّهُ سَمِعَ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ يَوْمُ الرِّيحِ وَالْغَيْمِ، عُرِفَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ، وَأَقْبَلَ وَأَدْبَرَ، فَإِذَا مَطَرَتْ سُرَّ بِهِ، وَذَهَبَ عَنْهُ ذَلِكَ، قَالَتْ عَائِشَةُ: فَسَأَلْتُهُ، فَقَالَ: «إِنِّي خَشِيتُ أَنْ يَكُونَ عَذَابًا سُلِّطَ عَلَى أُمَّتِي»، وَيَقُولُ، إِذَا رَأَى الْمَطَرَ: «رَحْمَةٌ».
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহধর্মিনী আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, যে দিন আকাল মেঘাচ্ছন্ন থাকত, ঝড়ো হাওয়া প্রবাহিত হত তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারায় তা প্রকাশ পেত। তিনি পেরেশান হয়ে ঘরে আসতেন, বাহিরে যেতেন। যখন বর্ষণ হয়ে যেত তখন তার চেহরিায় আনন্দের আভা বয়ে যেত, চিন্তা ও পেরেশানী ভাব কেটে যেত। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলাম, তিনি বললেন, আমার আশংকা হয়ে যেত, এতে আমার উম্মাতের উপর প্রেরিত কোনো আযাব রয়েছে এবং তিনি যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন, এত আল্লাহর রহমত।
সালেহ আলাইহিস সালাম ও সামূদ জাতি
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمۡ صَٰلِحٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ قَدۡ جَآءَتۡكُم بَيِّنَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡۖ هَٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَايَةٗۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِيٓ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٖ فَيَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٧٣ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ جَعَلَكُمۡ خُلَفَآءَ مِنۢ بَعۡدِ عَادٖ وَبَوَّأَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورٗا وَتَنۡحِتُونَ ٱلۡجِبَالَ بُيُوتٗاۖ فَٱذۡكُرُوٓاْ ءَالَآءَ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٧٤ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لِلَّذِينَ ٱسۡتُضۡعِفُواْ لِمَنۡ ءَامَنَ مِنۡهُمۡ أَتَعۡلَمُونَ أَنَّ صَٰلِحٗا مُّرۡسَلٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قَالُوٓاْ إِنَّا بِمَآ أُرۡسِلَ بِهِۦ مُؤۡمِنُونَ ٧٥ قَالَ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُوٓاْ إِنَّا بِٱلَّذِيٓ ءَامَنتُم بِهِۦ كَٰفِرُونَ ٧٦ فَعَقَرُواْ ٱلنَّاقَةَ وَعَتَوۡاْ عَنۡ أَمۡرِ رَبِّهِمۡ وَقَالُواْ يَٰصَٰلِحُ ٱئۡتِنَا بِمَا تَعِدُنَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٧٧ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دَارِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٧٨ فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ يَٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحۡتُ لَكُمۡ وَلَٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّٰصِحِينَ ٧٩ ﴾ [الاعراف: ٧٣، ٧٩]
“আর সামূদের নিকট (প্রেরণ করেছি) তাদের ভাই সালিহকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। নিশ্চয় তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। সুতরাং তোমরা তাকে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে আহার করুক। আর তোমরা তাকে মন্দ দ্বারা স্পর্শ করো না। তাহলে তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব পাকড়াও করবে’।আর স্মরণ কর, যখন আদ জাতির পর তিনি তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করলেন এবং তোমাদেরকে যমীনে আবাস দিলেন। তোমরা তার সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করছ এবং পাহাড় কেটে বাড়ি বানাচ্ছ। সুতরাং তোমরা আল্লাহর নিআমতসমূহকে স্মরণ কর এবং যমীনে ফাসাদকারীরূপে ঘুরে বেড়িয়ো না। তার কওমের অহঙ্কারী নেতৃবৃন্দ তাদের সেই মুমিনদেরকে বলল যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত, ‘তোমরা কি জান যে, সালিহ তার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত’? তারা বলল, ‘নিশ্চয় সে যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছে, আমরা তাতে বিশ্বাসী’। যারা অহঙ্কার করেছিল তারা বলল, ‘নিশ্চয় তোমরা যার প্রতি ঈমান এনেছ, আমরা তার প্রতি অস্বীকারকারী’। অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে যবেহ করল এবং তাদের রবের আদেশ অমান্য করল। আর তারা বলল, ‘হে সালিহ, তুমি আমাদেরকে যে ওয়াদা দিয়েছ, তা আমাদের কাছে নিয়ে এসো, যদি তুমি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাক’। ফলে তাদেরকে ভূমিকম্প পাকড়াও করল, তাই সকালে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল। অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, ‘হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের নিকট আমার রবের রিসালাত পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা কল্যাণকামীদেরকে পছন্দ কর না”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৭৩-৭৯]
আল্লাহ তাঁর নবী সালিহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে আরো বলেন,
﴿ وَيَٰقَوۡمِ هَٰذِهِۦ نَاقَةُ ٱللَّهِ لَكُمۡ ءَايَةٗۖ فَذَرُوهَا تَأۡكُلۡ فِيٓ أَرۡضِ ٱللَّهِۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوٓءٖ فَيَأۡخُذَكُمۡ عَذَابٞ قَرِيبٞ ٦٤ فَعَقَرُوهَا فَقَالَ تَمَتَّعُواْ فِي دَارِكُمۡ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٖۖ ذَٰلِكَ وَعۡدٌ غَيۡرُ مَكۡذُوبٖ ٦٥ فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا نَجَّيۡنَا صَٰلِحٗا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَمِنۡ خِزۡيِ يَوۡمِئِذٍۚ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ ٱلۡقَوِيُّ ٱلۡعَزِيزُ ٦٦ وَأَخَذَ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ ٱلصَّيۡحَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دِيَٰرِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٦٧ كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَآۗ أَلَآ إِنَّ ثَمُودَاْ كَفَرُواْ رَبَّهُمۡۗ أَلَا بُعۡدٗا لِّثَمُودَ ٦٨ ﴾ [هود: ٦٤، ٦٨]
‘আর হে আমার কওম, এটি আল্লাহর উট, তোমাদের জন্য নিদর্শনস্বরূপ। তাই তোমরা একে ছেড়ে দাও, সে আল্লাহর যমীনে (বিচরণ করে) খাবে এবং কোনরূপ মন্দভাবে তাকে স্পর্শ করো না, তাহলে তোমাদেরকে আশু আযাব পাকড়াও করবে’। অতঃপর তারা তাকে হত্যা করল। তাই সে বলল, ‘তোমরা তিন দিন নিজ নিজ গৃহে আনন্দে কাটাও। এ এমন এক ওয়াদা, যা মিথ্যা হবার নয়’। অতঃপর যখন আমার আদেশ এল, তখন সালিহ ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা নাজাত দিলাম এবং (নাজাত দিলাম) সেই দিনের লাঞ্ছনা থেকে। নিশ্চয় তোমার রব, তিনি শক্তিশালী, পরাক্রমশালী। আর যারা যুলম করেছিল, বিকট আওয়াজ তাদেরকে পাকড়াও করল, ফলে তারা নিজদের গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল। যেন তারা সেগুলোতে বসবাসই করেনি। জেনে রাখ, নিশ্চয় সামূদ জাতি তাদের রবের সাথে কুফরী করেছে। জেনে রাখ, সামূদ জাতির জন্য রয়েছে ধ্বংস। [সূরা: হূদ: ৬৪-৬৮]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَمْعَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَذَكَرَ الَّذِي عَقَرَ النَّاقَةَ، قَالَ: «انْتَدَبَ لَهَا رَجُلٌ ذُو عِزٍّ وَمَنَعَةٍ فِي قَوْمِهِ كَأَبِي زَمْعَةَ».
আবদুল্লাহ ইবন যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম থেকে শুনেছি এবং তিনি যে লোক (সালিহ আলাইহিস সালামের) উঠনী যখম করেছিল তাঁর উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, উটনীকে হত্যা করার জন্য এমন এক লোক তৈরি হয়েছিল যে তাঁর গোত্রের মধ্যে প্রবল ও শক্তিশালী ছিল, যেমন ছিল আবূ যাম‘আ।
عَنْ عَبْد اللَّهِ بْن زَمْعَة، أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، وَذَكَرَ النَّاقَةَ وَالَّذِي عَقَرَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " {إِذِ انْبَعَثَ أَشْقَاهَا} [الشمس: 12] انْبَعَثَ لَهَا رَجُلٌ عَزِيزٌ عَارِمٌ، مَنِيعٌ فِي رَهْطِهِ، مِثْلُ أَبِي زَمْعَةَ " وَذَكَرَ النِّسَاءَ، فَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ، فَيَجْلِدُ امْرَأَتَهُ جَلْدَ العَبْدِ، فَلَعَلَّهُ يُضَاجِعُهَا مِنْ آخِرِ يَوْمِهِ» ثُمَّ وَعَظَهُمْ فِي ضَحِكِهِمْ مِنَ الضَّرْطَةِ، وَقَالَ: «لِمَ يَضْحَكُ أَحَدُكُمْ مِمَّا يَفْعَلُ».
আব্দুল্লাহ ইবনে যাম‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম কে খুতবা দিতে শুনেছেন, যেখানে তিনি সামূদ গোত্রের কাছে প্রেরিত উটনী ও তার পা কাটার কথা বললেন। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আল্লাহর এ বানী বলেন, “অতএব তাদের মধ্যে যে সর্বাধিক হতভাগা, সে যখন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো” [সূরা শামস: আয়াত ১২] – এর ব্যাখ্যায় বললেন, ঐ উটনীটিকে হত্যা করার জন্য এক হতভাগা শক্তিশালী ব্যক্তি তৎপর হয়ে উঠলো যে সে সমাজের মধ্যে আবু যাম’আতের মত প্রভাবশালী ও অত্যন্ত শক্তিধর ছিল। এই খুতবায় তিনি মেয়েদের সম্পর্কেও আলোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যে তার স্ত্রীকে ক্রীতদাসের মত মারে, কিন্তু ঐ দিন শেষেই সে আবার তার সাথে একই বিছানায় মিলিত হয়। এরপর তিনি বায়ু নিঃসরণের পর হাসি দেওয়া সম্পর্কে উপদেশ দিলেন, কোনো ব্যক্তি সেই কাজটির জন্য কেন হাসে যে কাজটি সে নিজেও করে?
عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَخْبَرَهُ أَنَّ النَّاسَ نَزَلُوا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْضَ ثَمُودَ، الحِجْرَ، فَاسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا، وَاعْتَجَنُوا بِهِ، فَأَمَرَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ يُهَرِيقُوا مَا اسْتَقَوْا مِنْ بِئْرِهَا، وَأَنْ يَعْلِفُوا الإِبِلَ العَجِينَ، وَأَمَرَهُمْ أَنْ يَسْتَقُوا مِنَ البِئْرِ الَّتِي كَانَتْ تَرِدُهَا النَّاقَةُ» تَابَعَهُ أُسَامَةُ، عَنْ نَافِعٍ.
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের সংগে সামূদ জাতির আবাসস্থল ‘হিজর’ নামক স্থানে অবতরণ করলেন আর তখন তাঁরা এক কূপের পানি মশক ভরে রাখলেন এবং এ পানি দ্বারা আটা গুলে নিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম তাদের হুকুম দিলেন, তারা ঐ কূপ থেকে যে পানি ভরে রেখেছে, তা জেন ফেলে দেয় আর পানিতে গোলা আটা যেন উঠগুলোকে খাওয়ায় আর তিনি তাদের হুকুম করলেন তারা যেন ঐ কূপ থেকে মশক ভরে নেয় যেখান থেকে (সালিহ আলাইহিস সালামের উটনীটি পানি পান করত । উসামা (রহ.) নাফি (রহ.) থেকে হাদীস বর্ণনায় উবায়দুল্লাহ (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي سَالِمُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِيهِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا مَرَّ بِالحِجْرِ قَالَ: «لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ، أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ» ثُمَّ تَقَنَّعَ بِرِدَائِهِ وَهُوَ عَلَى الرَّحْلِ ".
আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম (তাবুকের পথে) যখন ‘হিজর’ নামক স্থান অতিক্রম করলেন, তখন তিনি বললেন, তোমরা এমন লোকদের আবাসস্থলে প্রবেশ করো না যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্ম করেছে। তবে প্রবেশ করতে হলে, ক্রন্দনরত অবস্থায়, যেন তাদের প্রতি যে বিপদ এসেছিল তোমাদের প্রতি অনুরূপ বিপদ না আসে। তারপর রাসূলুল্ললাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বাহনের উপর বসা অবস্থায় নিজ চাদর দিয়ে চেহারা মোবারক ঢেকে নিলেন।
عَنْ سَالِمٍ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ، إِلَّا أَنْ تَكُونُوا بَاكِينَ، أَنْ يُصِيبَكُمْ مِثْلُ مَا أَصَابَهُمْ».
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম (তাবুকের পথে সাহাবাদেরকে) নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা একমাত্র ক্রন্দনরত অবস্থায় এমন লোকদের আবাস্থালে প্রবেশ করবে যারা নিজেরাই নিজেদের উপর যুল্ম করেছে। তাদের উপর যে মুসিবত এসেছে তোমাদের উপরও যেন সে মুসীবত না আসে।
ইবরাহীম আলাহিস সালামের ঘটনা
আল্লাহ তা ‘আলা বলেছেন,
﴿ ۞وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَآ إِبۡرَٰهِيمَ رُشۡدَهُۥ مِن قَبۡلُ وَكُنَّا بِهِۦ عَٰلِمِينَ ٥١ إِذۡ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦ مَا هَٰذِهِ ٱلتَّمَاثِيلُ ٱلَّتِيٓ أَنتُمۡ لَهَا عَٰكِفُونَ ٥٢ قَالُواْ وَجَدۡنَآ ءَابَآءَنَا لَهَا عَٰبِدِينَ ٥٣ قَالَ لَقَدۡ كُنتُمۡ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُمۡ فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٥٤ قَالُوٓاْ أَجِئۡتَنَا بِٱلۡحَقِّ أَمۡ أَنتَ مِنَ ٱللَّٰعِبِينَ ٥٥ قَالَ بَل رَّبُّكُمۡ رَبُّ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ ٱلَّذِي فَطَرَهُنَّ وَأَنَا۠ عَلَىٰ ذَٰلِكُم مِّنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ٥٦ وَتَٱللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصۡنَٰمَكُم بَعۡدَ أَن تُوَلُّواْ مُدۡبِرِينَ ٥٧ فَجَعَلَهُمۡ جُذَٰذًا إِلَّا كَبِيرٗا لَّهُمۡ لَعَلَّهُمۡ إِلَيۡهِ يَرۡجِعُونَ ٥٨ قَالُواْ مَن فَعَلَ هَٰذَا بَِٔالِهَتِنَآ إِنَّهُۥ لَمِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٥٩ قَالُواْ سَمِعۡنَا فَتٗى يَذۡكُرُهُمۡ يُقَالُ لَهُۥٓ إِبۡرَٰهِيمُ ٦٠ قَالُواْ فَأۡتُواْ بِهِۦ عَلَىٰٓ أَعۡيُنِ ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡهَدُونَ ٦١ قَالُوٓاْ ءَأَنتَ فَعَلۡتَ هَٰذَا بَِٔالِهَتِنَا يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ٦٢ قَالَ بَلۡ فَعَلَهُۥ كَبِيرُهُمۡ هَٰذَا فَسَۡٔلُوهُمۡ إِن كَانُواْ يَنطِقُونَ ٦٣ فَرَجَعُوٓاْ إِلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ فَقَالُوٓاْ إِنَّكُمۡ أَنتُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٦٤ ثُمَّ نُكِسُواْ عَلَىٰ رُءُوسِهِمۡ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا هَٰٓؤُلَآءِ يَنطِقُونَ ٦٥ قَالَ أَفَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكُمۡ شَيۡٔٗا وَلَا يَضُرُّكُمۡ ٦٦ أُفّٖ لَّكُمۡ وَلِمَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۚ أَفَلَا تَعۡقِلُونَ ٦٧ قَالُواْ حَرِّقُوهُ وَٱنصُرُوٓاْ ءَالِهَتَكُمۡ إِن كُنتُمۡ فَٰعِلِينَ ٦٨ قُلۡنَا يَٰنَارُ كُونِي بَرۡدٗا وَسَلَٰمًا عَلَىٰٓ إِبۡرَٰهِيمَ ٦٩ وَأَرَادُواْ بِهِۦ كَيۡدٗا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَخۡسَرِينَ ٧٠ ﴾ [الانبياء: ٥١، ٧٠]
“আর আমি তো ইতঃপূর্বে ইবরাহীমকে সঠিক পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে ছিলাম সম্যক অবগত। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলল, ‘এ মূর্তিগুলো কী, যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ’? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি’। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছ, নাকি তুমি খেল-তামাশা করছ’? সে বলল, ‘না, বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও যমীনের রব; যিনি এ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী’। আর আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব’। অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, ‘আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে যালিম’। তাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। তারা বলল, ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে নিয়ে এসো, যাতে তারা দেখতে পারে’। তারা বলল, ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’? সে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই একাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’। তখন তারা নিজদের দিকে ফিরে গেল এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম’। অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’। সে (ইবরাহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না’? ‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? তারা বলল, ‘তাকে আগুনে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবদেবীদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও’। আমি বললাম, ‘হে আগুন, তুমি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য’ । আর তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৫১-৭০]
﴿ ۞وَإِنَّ مِن شِيعَتِهِۦ لَإِبۡرَٰهِيمَ ٨٣ إِذۡ جَآءَ رَبَّهُۥ بِقَلۡبٖ سَلِيمٍ ٨٤ إِذۡ قَالَ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦ مَاذَا تَعۡبُدُونَ ٨٥ أَئِفۡكًا ءَالِهَةٗ دُونَ ٱللَّهِ تُرِيدُونَ ٨٦ فَمَا ظَنُّكُم بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٧ فَنَظَرَ نَظۡرَةٗ فِي ٱلنُّجُومِ ٨٨ فَقَالَ إِنِّي سَقِيمٞ ٨٩ فَتَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ مُدۡبِرِينَ ٩٠ فَرَاغَ إِلَىٰٓ ءَالِهَتِهِمۡ فَقَالَ أَلَا تَأۡكُلُونَ ٩١ مَا لَكُمۡ لَا تَنطِقُونَ ٩٢ فَرَاغَ عَلَيۡهِمۡ ضَرۡبَۢا بِٱلۡيَمِينِ ٩٣ فَأَقۡبَلُوٓاْ إِلَيۡهِ يَزِفُّونَ ٩٤ قَالَ أَتَعۡبُدُونَ مَا تَنۡحِتُونَ ٩٥ وَٱللَّهُ خَلَقَكُمۡ وَمَا تَعۡمَلُونَ ٩٦ قَالُواْ ٱبۡنُواْ لَهُۥ بُنۡيَٰنٗا فَأَلۡقُوهُ فِي ٱلۡجَحِيمِ ٩٧ فَأَرَادُواْ بِهِۦ كَيۡدٗا فَجَعَلۡنَٰهُمُ ٱلۡأَسۡفَلِينَ ٩٨ وَقَالَ إِنِّي ذَاهِبٌ إِلَىٰ رَبِّي سَيَهۡدِينِ ٩٩ رَبِّ هَبۡ لِي مِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٠٠ فَبَشَّرۡنَٰهُ بِغُلَٰمٍ حَلِيمٖ ١٠١ فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ ٱلسَّعۡيَ قَالَ يَٰبُنَيَّ إِنِّيٓ أَرَىٰ فِي ٱلۡمَنَامِ أَنِّيٓ أَذۡبَحُكَ فَٱنظُرۡ مَاذَا تَرَىٰۚ قَالَ يَٰٓأَبَتِ ٱفۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُۖ سَتَجِدُنِيٓ إِن شَآءَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٠٢ فَلَمَّآ أَسۡلَمَا وَتَلَّهُۥ لِلۡجَبِينِ ١٠٣ وَنَٰدَيۡنَٰهُ أَن يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ ١٠٤ قَدۡ صَدَّقۡتَ ٱلرُّءۡيَآۚ إِنَّا كَذَٰلِكَ نَجۡزِي ٱلۡمُحۡسِنِينَ ١٠٥ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡبَلَٰٓؤُاْ ٱلۡمُبِينُ ١٠٦ وَفَدَيۡنَٰهُ بِذِبۡحٍ عَظِيمٖ ١٠٧ ﴾ [الصافات: ٨٣، ١٠٧]
“আর নিশ্চয় ইবরাহীম তার দীনের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত। যখন সে বিশুদ্ধচিত্তে তার রবের নিকট উপস্থিত হয়েছিল। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, ‘তোমরা কিসের ইবাদত কর’? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যগুলোকে চাও’? ‘তাহলে সকল সৃষ্টির রব সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী’? অতঃপর সে তারকারাজির মধ্যে একবার দৃষ্টি দিল। তারপর বলল, ‘আমি তো অসুস্থ’। অতঃপর তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তার কাছ থেকে চলে গেল। তারপর চুপে চুপে সে তাদের দেবতাদের কাছে গেল এবং বলল, ‘তোমরা কি খাবে না?’ তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কথা বলছ না’? অতঃপর সে তাদের উপর সজোরে আঘাত হানল। তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে আসল। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলো বানাও, তোমরা কি সেগুলোর উপাসনা কর’, অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’? তারা বলল, ‘তার জন্য একটি স্থাপনা তৈরী কর, তারপর তাকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর’। আর তারা তার ব্যাপারে একটা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাভূত করে দিলাম। আর সে বলল, ‘আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনি অবশ্যই আমাকে হিদায়াত করবেন।‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে কাত করে শুইয়ে দিল তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’।‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান যবেহের বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম”। [সূরা আস্-সাফফাত: ৮৩-১০৭]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ رَبِّ ٱجۡعَلۡ هَٰذَا ٱلۡبَلَدَ ءَامِنٗا وَٱجۡنُبۡنِي وَبَنِيَّ أَن نَّعۡبُدَ ٱلۡأَصۡنَامَ ٣٥ رَبِّ إِنَّهُنَّ أَضۡلَلۡنَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلنَّاسِۖ فَمَن تَبِعَنِي فَإِنَّهُۥ مِنِّيۖ وَمَنۡ عَصَانِي فَإِنَّكَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣٦ رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفِۡٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧ ﴾ [ابراهيم: ٣٥، ٣٧]
“আর স্মরণ কর ‘যখন ইবরাহীম বলল, ‘হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”। [সূরা: ইবরাহীম: ৩৫-৩৭]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِۧمُ رَبِّ أَرِنِي كَيۡفَ تُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰۖ قَالَ أَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَٰكِن لِّيَطۡمَئِنَّ قَلۡبِيۖ قَالَ فَخُذۡ أَرۡبَعَةٗ مِّنَ ٱلطَّيۡرِ فَصُرۡهُنَّ إِلَيۡكَ ثُمَّ ٱجۡعَلۡ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٖ مِّنۡهُنَّ جُزۡءٗا ثُمَّ ٱدۡعُهُنَّ يَأۡتِينَكَ سَعۡيٗاۚ وَٱعۡلَمۡ أَنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ ٢٦٠ ﴾ [البقرة: ٢٦٠]
“আর যখন ইবরাহীম বলল ‘হে, আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনি’? সে বলল, ‘অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা: ২৬০]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَآ إِبۡرَٰهِيمَ بِٱلۡبُشۡرَىٰ قَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞۖ فَمَا لَبِثَ أَن جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِيذٖ ٦٩ فَلَمَّا رَءَآ أَيۡدِيَهُمۡ لَا تَصِلُ إِلَيۡهِ نَكِرَهُمۡ وَأَوۡجَسَ مِنۡهُمۡ خِيفَةٗۚ قَالُواْ لَا تَخَفۡ إِنَّآ أُرۡسِلۡنَآ إِلَىٰ قَوۡمِ لُوطٖ ٧٠ وَٱمۡرَأَتُهُۥ قَآئِمَةٞ فَضَحِكَتۡ فَبَشَّرۡنَٰهَا بِإِسۡحَٰقَ وَمِن وَرَآءِ إِسۡحَٰقَ يَعۡقُوبَ ٧١ قَالَتۡ يَٰوَيۡلَتَىٰٓ ءَأَلِدُ وَأَنَا۠ عَجُوزٞ وَهَٰذَا بَعۡلِي شَيۡخًاۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيۡءٌ عَجِيبٞ ٧٢ قَالُوٓاْ أَتَعۡجَبِينَ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۖ رَحۡمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَٰتُهُۥ عَلَيۡكُمۡ أَهۡلَ ٱلۡبَيۡتِۚ إِنَّهُۥ حَمِيدٞ مَّجِيدٞ ٧٣ فَلَمَّا ذَهَبَ عَنۡ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلرَّوۡعُ وَجَآءَتۡهُ ٱلۡبُشۡرَىٰ يُجَٰدِلُنَا فِي قَوۡمِ لُوطٍ ٧٤ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ لَحَلِيمٌ أَوَّٰهٞ مُّنِيبٞ ٧٥ يَٰٓإِبۡرَٰهِيمُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَآۖ إِنَّهُۥ قَدۡ جَآءَ أَمۡرُ رَبِّكَۖ وَإِنَّهُمۡ ءَاتِيهِمۡ عَذَابٌ غَيۡرُ مَرۡدُودٖ ٧٦ ﴾ [هود: ٦٩، ٧٦]
“আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি’। আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের। সে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’! তারা বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’। অতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, অধিক অনুনয় বিনয়কারী, আল্লাহমুখী। হে ইবরাহীম, তুমি এ থেকে বিরত হও। নিশ্চয় তোমার রবের সিদ্ধান্ত এসে গেছে এবং নিশ্চয় তাদের উপর আসবে আযাব, যা প্রতিহত হবার নয়”। [সূরা: হূদ: ৬৯-৭৬]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ: " لَقِيتُ مُوسَى، قَالَ: فَنَعَتَهُ، فَإِذَا رَجُلٌ - حَسِبْتُهُ قَالَ - مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الرَّأْسِ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، قَالَ: وَلَقِيتُ عِيسَى فَنَعَتَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: - رَبْعَةٌ أَحْمَرُ، كَأَنَّمَا خَرَجَ مِنْ دِيمَاسٍ - يَعْنِي الحَمَّامَ -، وَرَأَيْتُ إِبْرَاهِيمَ وَأَنَا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِهِ، قَالَ: وَأُتِيتُ بِإِنَاءَيْنِ، أَحَدُهُمَا لَبَنٌ وَالآخَرُ فِيهِ خَمْرٌ، فَقِيلَ لِي: خُذْ أَيَّهُمَا شِئْتَ، فَأَخَذْتُ اللَّبَنَ فَشَرِبْتُهُ، فَقِيلَ لِي: هُدِيتَ الفِطْرَةَ، أَوْ أَصَبْتَ الفِطْرَةَ، أَمَا إِنَّكَ لَوْ أَخَذْتَ الخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজ রজনীতি আমি মূসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালামের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা আলাইহিস সালাম একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঈসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। এরপর তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা হত বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হলো, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হলো, আপনি ফিত্রাত বা স্বাভাবিকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} [الأنبياء: 104]، وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ القِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ، وَإِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ، فَأَقُولُ أَصْحَابِي أَصْحَابِي، فَيَقُولُ: إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ، فَأَقُولُ كَمَا قَالَ العَبْدُ الصَّالِحُ ": {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي} [المائدة: 117]- إِلَى قَوْلِهِ - {العَزِيزُ الحَكِيمُ} [البقرة: 129].
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর ময়দানে খালি পা, বিবস্ত্র এবং খাতনাবিহীন অবস্তায় উপস্থিত করা হবে। এরপর তিনি (এ কথার সমর্থনে) পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, “যে ভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সুচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই”। [আম্বিয়া : ১০৪] আর কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপর পরানো হবে তিনি হবেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আর (সে দিন) আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে । তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী! এ সময় আল্লাহ্বলবেন, যখন আপনি এদের থেকে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহ্র নেক বান্দা ঈসা আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন; তেমন আমি বলব, “হে আল্লাহ্! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [বাকারা: ১২৯]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " هَاجَرَ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ بِسَارَةَ، فَدَخَلَ بِهَا قَرْيَةً فِيهَا مَلِكٌ مِنَ المُلُوكِ، أَوْ جَبَّارٌ مِنَ الجَبَابِرَةِ، فَقِيلَ: دَخَلَ إِبْرَاهِيمُ بِامْرَأَةٍ هِيَ مِنْ أَحْسَنِ النِّسَاءِ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ: أَنْ يَا إِبْرَاهِيمُ مَنْ هَذِهِ الَّتِي مَعَكَ؟ قَالَ: أُخْتِي، ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهَا فَقَالَ: لاَ تُكَذِّبِي حَدِيثِي، فَإِنِّي أَخْبَرْتُهُمْ أَنَّكِ أُخْتِي، وَاللَّهِ إِنْ عَلَى الأَرْضِ مُؤْمِنٌ غَيْرِي وَغَيْرُكِ، فَأَرْسَلَ بِهَا إِلَيْهِ فَقَامَ إِلَيْهَا، فَقَامَتْ تَوَضَّأُ وَتُصَلِّي، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ، وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي، إِلَّا عَلَى زَوْجِي فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيَّ الكَافِرَ، فَغُطَّ حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ "، قَالَ الأَعْرَجُ: قَالَ أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ: إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: " قَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ يَمُتْ يُقَالُ هِيَ قَتَلَتْهُ، فَأُرْسِلَ ثُمَّ قَامَ إِلَيْهَا، فَقَامَتْ تَوَضَّأُ تُصَلِّي، وَتَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي إِلَّا عَلَى زَوْجِي، فَلاَ تُسَلِّطْ عَلَيَّ هَذَا الكَافِرَ، فَغُطَّ حَتَّى رَكَضَ بِرِجْلِهِ "، قَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ، قَالَ أَبُو سَلَمَةَ: قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: " فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ إِنْ يَمُتْ فَيُقَالُ هِيَ قَتَلَتْهُ، فَأُرْسِلَ فِي الثَّانِيَةِ، أَوْ فِي الثَّالِثَةِ، فَقَالَ: وَاللَّهِ مَا أَرْسَلْتُمْ إِلَيَّ إِلَّا شَيْطَانًا، ارْجِعُوهَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، وَأَعْطُوهَا آجَرَ فَرَجَعَتْ إِلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، فَقَالَتْ: أَشَعَرْتَ أَنَّ اللَّهَ كَبَتَ الكَافِرَ وَأَخْدَمَ وَلِيدَةً ".
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী সারা’কে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে ইবরাহীম, তোমার সাথে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। তারপর তিনি সারা’র কাছে ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করোনা। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম. দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই-বোন। এরপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম (বাদশাহর নির্দেশে) সারা’কে বাদশাহর কাছ পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযু করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দুআ করলেন, হে মহান আল্লাহ্ তা’আলা, আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া সকল থেকে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষন করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিওনা। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগল। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন, এ যদি মারা যায়, তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দুইবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম, তোমরা আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের কাছে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদীয়া স্বরুপ দান কর। সারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, মহান আল্লাহ্ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদি হাদীয়া হিসাবে দেয়।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ح حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، عَنْ حَمَّادِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَمْ يَكْذِبْ إِبْرَاهِيمُ إِلَّا ثَلاَثَ كَذَبَاتٍ: بَيْنَمَا إِبْرَاهِيمُ مَرَّ بِجَبَّارٍ وَمَعَهُ سَارَةُ فَذَكَرَ الحَدِيثَ، فَأَعْطَاهَا هَاجَرَ، قَالَتْ: كَفَّ اللَّهُ يَدَ الكَافِرِ وَأَخْدَمَنِي آجَرَ " قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: «فَتِلْكَ أُمُّكُمْ يَا بَنِي مَاءِ السَّمَاءِ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনবার ব্যতীত কোনো মিথ্যা কথা বলেন নি। অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে ‘সারা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তাঁর সেবার জন্য তাঁকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আলস্নাহ্ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতের জন্য আজেরা (হাজেরা)-কে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘হে আকাশের পানির সমত্মানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা।’’
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ البَيْتَ، فَوَجَدَ فِيهِ صُورَةَ إِبْرَاهِيمَ، وَصُورَةَ مَرْيَمَ، فَقَالَ «أَمَا لَهُمْ، فَقَدْ سَمِعُوا أَنَّ المَلاَئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ، هَذَا إِبْرَاهِيمُ مُصَوَّرٌ، فَمَا لَهُ يَسْتَقْسِمُ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও মারইয়ামের ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের (কুরাইশদের) কি হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না। এ যে ইব্রাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নিরধারক জুয়ার তীর নিক্ষেপরত অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন!
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَمَّا رَأَى الصُّوَرَ فِي البَيْتِ لَمْ يَدْخُلْ حَتَّى أَمَرَ بِهَا فَمُحِيَتْ، وَرَأَى إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ بِأَيْدِيهِمَا الأَزْلاَمُ، فَقَالَ «قَاتَلَهُمُ اللَّهُ، وَاللَّهِ إِنِ اسْتَقْسَمَا بِالأَزْلاَمِ قَطُّ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা’বা ঘরে ছবিসমূহ দেকতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশ তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালামের হাতে ভাগ্য নিরধারণের তীর। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) অপর লানত বর্ষণ করুক। আল্লাহ্র কসম, তারা দু’জন কখনও ভাগ্য নির্ধারক তীর করেন নি।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ القِيَامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ إِبْرَاهِيمُ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لاَ تَعْصِنِي، فَيَقُولُ أَبُوهُ: فَاليَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ، فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ: يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لاَ تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ، فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِي الأَبْعَدِ؟ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى: " إِنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ عَلَى الكَافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ، مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ، فَإِذَا هُوَ بِذِيخٍ مُلْتَطِخٍ، فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডল কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (আল্লাহ্র কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমর থকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইব্রাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সরবশরীরে রক্তমাখা আক্তি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، مَوْلَى الْمَهْرِيِّ، أَنَّهُ أَصَابَهُمْ بِالْمَدِينَةِ جَهْدٌ وَشِدَّةٌ، وَأَنَّهُ أَتَى أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، فَقَالَ لَهُ: إِنِّي كَثِيرُ الْعِيَالِ، وَقَدْ أَصَابَتْنَا شِدَّةٌ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَنْقُلَ عِيَالِي إِلَى بَعْضِ الرِّيفِ، فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ: لَا تَفْعَلْ، الْزَمِ الْمَدِينَةَ، فَإِنَّا خَرَجْنَا مَعَ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَظُنُّ أَنَّهُ قَالَ - حَتَّى قَدِمْنَا عُسْفَانَ، فَأَقَامَ بِهَا لَيَالِيَ، فَقَالَ النَّاسُ: وَاللهِ مَا نَحْنُ هَا هُنَا فِي شَيْءٍ، وَإِنَّ عِيَالَنَا لَخُلُوفٌ مَا نَأْمَنُ عَلَيْهِمْ، فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «مَا هَذَا الَّذِي بَلَغَنِي مِنْ حَدِيثِكُمْ؟» - مَا أَدْرِي كَيْفَ قَالَ - «وَالَّذِي أَحْلِفُ بِهِ - أَوْ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ - لَقَدْ هَمَمْتُ - أَوْ إِنْ شِئْتُمْ لَا أَدْرِي أَيَّتَهُمَا قَالَ - لَآمُرَنَّ بِنَاقَتِي تُرْحَلُ، ثُمَّ لَا أَحُلُّ لَهَا عُقْدَةً حَتَّى أَقْدَمَ الْمَدِينَةَ»، وَقَالَ: «اللهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ فَجَعَلَهَا حَرَمًا، وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ حَرَامًا مَا بَيْنَ مَأْزِمَيْهَا، أَنْ لَا يُهْرَاقَ فِيهَا دَمٌ، وَلَا يُحْمَلَ فِيهَا سِلَاحٌ لِقِتَالٍ، وَلَا تُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلَّا لِعَلْفٍ، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا، اللهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، اللهُمَّ اجْعَلْ مَعَ الْبَرَكَةِ بَرَكَتَيْنِ، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، مَا مِنَ الْمَدِينَةِ شِعْبٌ، وَلَا نَقْبٌ إِلَّا عَلَيْهِ مَلَكَانِ يَحْرُسَانِهَا حَتَّى تَقْدَمُوا إِلَيْهَا»، ثُمَّ قَالَ لِلنَّاسِ: «ارْتَحِلُوا»، فَارْتَحَلْنَا، فَأَقْبَلْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ، فَوَالَّذِي نَحْلِفُ بِهِ أَوْ يُحْلَفُ بِهِ - الشَّكُّ مِنْ حَمَّادٍ - مَا وَضَعْنَا رِحَالَنَا حِينَ دَخَلْنَا الْمَدِينَةَ حَتَّى أَغَارَ عَلَيْنَا بَنُو عَبْدِ اللهِ بْنِ غَطَفَانَ، وَمَا يَهِيجُهُمْ قَبْلَ ذَلِكَ شَيْءٌ.
আবু সাঈদ, মাওলা মাহরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তারা মদীনায় কষ্ট ও দুঃখে পতিত হন। তিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্হিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যনা অনেক এবং আমরা দুঃখ দুর্দশার সমুঙ্খীন হয়েছি। তাই আমি আমার পবিবারকে কোনো শস্য শ্যামল এলাকায় স্থানান্তরের মনস্হ করেছি। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা করো না বরং মদীনাকে আকড়ে থাক। কারণ, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যে এবং উসফান পর্যন্ত পৌছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্থান করলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌছলে তিনি বলেন, কি ব্যাপার, তোমাদের একথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথাটা কিভাবে পূর্বব্যক্ত করেছেন তা আমার মনে নেই। সেই সত্তার নামে শপথ অথবা সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য আমি মনস্হ করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোনটি বলেছেন, তা আমার সঠিক মনে নাই। তবে আমি নিশ্চিত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিব এবং মদীনায় পৌছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব না)। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে। আর আমি মদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্হলে অবস্হিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপাথর পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের সা’- এ বকরত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আমাদের আরো দুটি বরকত দান করুন। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদীনার এমন কোনো প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু-জন করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই। পুনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা রওনা হও।” অতএব আমরা রওনা হলাম এবং মদীনায় এসে পৌছলাম । সেই সত্তার শপথ যার নামে আমরা শপথ করি অথবা যার নামে শপথ করা হয়- হাম্মাদ তার উধর্বতন রাবী কোনটি বলেছেন সে সমন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মদীনায় প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি ইত্যাবসরে আবদুল্লাহ ইবন গাতফান গোত্রের লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে, অথচ এরূপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয় নি।
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ، وَإِنِّي حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ مَا بَيْنَ لَابَتَيْهَا، لَا يُقْطَعُ عِضَاهُهَا، وَلَا يُصَادُ صَيْدُهَا».
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মদীনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএব এখানকার কোনো কাটাযূক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না।
حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ عَبْدَ الرَّحْمَنِ، حَدَّثَهُ، عَنْ أَبِيهِ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «إِنِّي حَرَّمْتُ مَا بَيْنَ لَابَتَيِ الْمَدِينَةِ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ»، قَالَ: ثُمَّ كَانَ أَبُو سَعِيدٍ يَأْخُذُ، وَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: يَجِدُ أَحَدَنَا فِي يَدِهِ الطَّيْرُ، فَيَفُكُّهُ مِنْ يَدِهِ، ثُمَّ يُرْسِلُهُ.
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মদীনার দুই প্রাস্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (রাবী) আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যদি আমাদের কারও হাতে পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন।
আল্লাহর নবী শো‘আইব আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ قَدۡ جَآءَتۡكُم بَيِّنَةٞ مِّن رَّبِّكُمۡۖ فَأَوۡفُواْ ٱلۡكَيۡلَ وَٱلۡمِيزَانَ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تُفۡسِدُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ بَعۡدَ إِصۡلَٰحِهَاۚ ذَٰلِكُمۡ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٨٥ وَلَا تَقۡعُدُواْ بِكُلِّ صِرَٰطٖ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ مَنۡ ءَامَنَ بِهِۦ وَتَبۡغُونَهَا عِوَجٗاۚ وَٱذۡكُرُوٓاْ إِذۡ كُنتُمۡ قَلِيلٗا فَكَثَّرَكُمۡۖ وَٱنظُرُواْ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ٨٦ وَإِن كَانَ طَآئِفَةٞ مِّنكُمۡ ءَامَنُواْ بِٱلَّذِيٓ أُرۡسِلۡتُ بِهِۦ وَطَآئِفَةٞ لَّمۡ يُؤۡمِنُواْ فَٱصۡبِرُواْ حَتَّىٰ يَحۡكُمَ ٱللَّهُ بَيۡنَنَاۚ وَهُوَ خَيۡرُ ٱلۡحَٰكِمِينَ ٨٧ ۞قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ يَٰشُعَيۡبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرۡيَتِنَآ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَٰرِهِينَ ٨٨ قَدِ ٱفۡتَرَيۡنَا عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا إِنۡ عُدۡنَا فِي مِلَّتِكُم بَعۡدَ إِذۡ نَجَّىٰنَا ٱللَّهُ مِنۡهَاۚ وَمَا يَكُونُ لَنَآ أَن نَّعُودَ فِيهَآ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّنَاۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيۡءٍ عِلۡمًاۚ عَلَى ٱللَّهِ تَوَكَّلۡنَاۚ رَبَّنَا ٱفۡتَحۡ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَ قَوۡمِنَا بِٱلۡحَقِّ وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلۡفَٰتِحِينَ ٨٩ وَقَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَئِنِ ٱتَّبَعۡتُمۡ شُعَيۡبًا إِنَّكُمۡ إِذٗا لَّخَٰسِرُونَ ٩٠ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلرَّجۡفَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دَارِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٩١ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ شُعَيۡبٗا كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَاۚ ٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ شُعَيۡبٗا كَانُواْ هُمُ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٩٢ فَتَوَلَّىٰ عَنۡهُمۡ وَقَالَ يَٰقَوۡمِ لَقَدۡ أَبۡلَغۡتُكُمۡ رِسَٰلَٰتِ رَبِّي وَنَصَحۡتُ لَكُمۡۖ فَكَيۡفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوۡمٖ كَٰفِرِينَ ٩٣ ﴾ [الاعراف: ٨٥، ٩٣]
“আর মাদইয়ানে (প্রেরণ করেছিলাম) তাদের ভাই শু‘আইবকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর। তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই। তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণ এসেছে। সুতরাং তোমরা পরিমাণে ও ওজনে পরিপূর্ণ দাও এবং মানুষকে তাদের পণ্যে কম দেবে না; আর তোমরা যমীনে ফাসাদ করবে না তা সংশোধনের পর। এগুলো তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা মুমিন হও’।আর যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে ভয় দেখাতে, আল্লাহর পথ থেকে বাধা দিতে এবং তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করতে তোমরা প্রতিটি পথে বসে থেকো না’। আর স্মরণ কর, যখন তোমরা ছিলে কম, অতঃপর তিনি তোমাদেরকে অধিক করেছেন এবং দেখ, কিরূপ হয়েছে ফাসাদকারীদের পরিণতি। আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি যদি তোমাদের একটি দল ঈমান আনে আর অন্য দল ঈমান না আনে, তাহলে ধৈর্যধারণ কর, যতক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মধ্যে ফয়সালা করেন। আর তিনি উত্তম ফয়সালাকারী। তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ অহঙ্কার করেছিল তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে।’ সে বলল, ‘যদিও আমরা তা অপছন্দ করি তবুও?’ আমরা তো আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করলাম যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে যাই- সেই ধর্ম থেকে আল্লাহ আমাদেরকে নাজাত দেওয়ার পর। আর আমাদের জন্য উচিত হবে না তাতে ফিরে যাওয়া। তবে আমাদের রব আল্লাহ চাইলে (সেটা ভিন্ন কথা)। আমাদের রব জ্ঞান দ্বারা সব কিছু পরিব্যাপ্ত করে আছেন। আল্লাহরই উপর আমরা তাওয়াক্কুল করি। হে আমাদের রব, আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী। আর তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ কুফরী করেছিল তারা বলল, ‘যদি তোমরা শু‘আইবকে অনুসরণ কর তাহলে নিশ্চয় তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। তারপর তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে মরে রইল। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল, মনে হয় যেন তারা সেখানে বসবাসই করেনি। যারা শু‘আইবকে মিথ্যাবাদী বলেছিল তারাই ছিল ক্ষতিগ্রস্ত। অতঃপর সে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল এবং বলল, হে আমার কওম, আমি তো তোমাদের কাছে আমার রবের রিসালাতের দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য কল্যাণ কামনা করেছি। সুতরাং আমি কীভাবে কাফির জাতির ব্যাপারে দুঃখ করব”! [সূরা আল-আ'রাফ: ৮৫-৯৩]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ ۞وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ وَلَا تَنقُصُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَۖ إِنِّيٓ أَرَىٰكُم بِخَيۡرٖ وَإِنِّيٓ أَخَافُ عَلَيۡكُمۡ عَذَابَ يَوۡمٖ مُّحِيطٖ ٨٤ وَيَٰقَوۡمِ أَوۡفُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٨٥ بَقِيَّتُ ٱللَّهِ خَيۡرٞ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَۚ وَمَآ أَنَا۠ عَلَيۡكُم بِحَفِيظٖ ٨٦ قَالُواْ يَٰشُعَيۡبُ أَصَلَوٰتُكَ تَأۡمُرُكَ أَن نَّتۡرُكَ مَا يَعۡبُدُ ءَابَآؤُنَآ أَوۡ أَن نَّفۡعَلَ فِيٓ أَمۡوَٰلِنَا مَا نَشَٰٓؤُاْۖ إِنَّكَ لَأَنتَ ٱلۡحَلِيمُ ٱلرَّشِيدُ ٨٧ قَالَ يَٰقَوۡمِ أَرَءَيۡتُمۡ إِن كُنتُ عَلَىٰ بَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّي وَرَزَقَنِي مِنۡهُ رِزۡقًا حَسَنٗاۚ وَمَآ أُرِيدُ أَنۡ أُخَالِفَكُمۡ إِلَىٰ مَآ أَنۡهَىٰكُمۡ عَنۡهُۚ إِنۡ أُرِيدُ إِلَّا ٱلۡإِصۡلَٰحَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُۚ وَمَا تَوۡفِيقِيٓ إِلَّا بِٱللَّهِۚ عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ ٨٨ وَيَٰقَوۡمِ لَا يَجۡرِمَنَّكُمۡ شِقَاقِيٓ أَن يُصِيبَكُم مِّثۡلُ مَآ أَصَابَ قَوۡمَ نُوحٍ أَوۡ قَوۡمَ هُودٍ أَوۡ قَوۡمَ صَٰلِحٖۚ وَمَا قَوۡمُ لُوطٖ مِّنكُم بِبَعِيدٖ ٨٩ وَٱسۡتَغۡفِرُواْ رَبَّكُمۡ ثُمَّ تُوبُوٓاْ إِلَيۡهِۚ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٞ وَدُودٞ ٩٠ قَالُواْ يَٰشُعَيۡبُ مَا نَفۡقَهُ كَثِيرٗا مِّمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَىٰكَ فِينَا ضَعِيفٗاۖ وَلَوۡلَا رَهۡطُكَ لَرَجَمۡنَٰكَۖ وَمَآ أَنتَ عَلَيۡنَا بِعَزِيزٖ ٩١ قَالَ يَٰقَوۡمِ أَرَهۡطِيٓ أَعَزُّ عَلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَٱتَّخَذۡتُمُوهُ وَرَآءَكُمۡ ظِهۡرِيًّاۖ إِنَّ رَبِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ مُحِيطٞ ٩٢ وَيَٰقَوۡمِ ٱعۡمَلُواْ عَلَىٰ مَكَانَتِكُمۡ إِنِّي عَٰمِلٞۖ سَوۡفَ تَعۡلَمُونَ مَن يَأۡتِيهِ عَذَابٞ يُخۡزِيهِ وَمَنۡ هُوَ كَٰذِبٞۖ وَٱرۡتَقِبُوٓاْ إِنِّي مَعَكُمۡ رَقِيبٞ ٩٣ وَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا نَجَّيۡنَا شُعَيۡبٗا وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَهُۥ بِرَحۡمَةٖ مِّنَّا وَأَخَذَتِ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ ٱلصَّيۡحَةُ فَأَصۡبَحُواْ فِي دِيَٰرِهِمۡ جَٰثِمِينَ ٩٤ كَأَن لَّمۡ يَغۡنَوۡاْ فِيهَآۗ أَلَا بُعۡدٗا لِّمَدۡيَنَ كَمَا بَعِدَتۡ ثَمُودُ ٩٥ ﴾ [هود: ٨٤، ٩٥]
"আর মাদইয়ানে আমি (পাঠিয়েছিলাম) তাদের ভাই শু‘আইবকে। সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা আল্লাহর ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো (সত্য) ইলাহ নেই এবং মাপ ও ওযন কম করো না; আমি তো তোমাদের প্রাচুর্যশীল দেখছি, কিন্তু আমি তোমাদের উপর এক সর্বগ্রাসী দিনের আযাবের ভয় করছি’। আর হে আমার কওম, মাপ ও ওযন পূর্ণ কর ইনসাফের সাথে এবং মানুষকে তাদের পণ্য কম দিও না; আর যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়িও না, ‘আল্লাহর দেওয়া উদ্বৃত্ত লাভ তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর আমি তো তোমাদের হিফাযতকারী নই’। তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, তোমার সালাত কি তোমাকে এই নির্দেশ প্রদান করে যে, আমাদের পিতৃপুরুষগণ যাদের ইবাদাত করত, আমরা তাদের ত্যাগ করি? অথবা আমাদের সম্পদে আমরা ইচ্ছামত যা করি তাও (ত্যাগ করি?) তুমি তো বেশ সহনশীল সুবোধ’! সে বলল, ‘হে আমার কওম, তোমরা কী মনে কর, আমি যদি আমার রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণের উপর থাকি এবং তিনি আমাকে তাঁর পক্ষ থেকে উত্তম রিযিক দান করে থাকেন (তাহলে কী করে আমি আমার দায়িত্ব পরিত্যাগ করব)! যে কাজ থেকে আমি তোমাদেরকে নিষেধ করছি, তোমাদের বিরোধিতা করে সে কাজটি আমি করতে চাই না। আমি আমার সাধ্যমত সংশোধন চাই। আল্লাহর সহায়তা ছাড়া আমার কোনো তওফীক নেই। আমি তাঁরই উপর তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই কাছে ফিরে যাই’।‘আর হে আমার কওম, আমার সাথে বৈরিতা তোমাদেরকে যেন এমন কাজে প্ররোচিত না করে যার ফলে তোমাদের সেরূপ আযাব আসবে যেরূপ এসেছিল নূহের কওমের উপর অথবা হূদের কওমের উপর অথবা সালিহের কওমের উপর। আর লূতের কওম তো তোমাদের থেকে দূরে নয়’।‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তিগফার কর অতঃপর তাঁরই কাছে তাওবা কর। নিশ্চয় আমার রব পরম দয়ালু, অতীব ভালবাসা পোষণকারী’।তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, তুমি যা বল, তার অনেক কিছুই আমরা বুঝি না। আর তোমাকে তো আমরা আমাদের মধ্যে দুর্বলই দেখতে পাচ্ছি। যদি তোমার আত্মীয়-স্বজন না থাকত, তবে আমরা তোমাকে অবশ্যই পাথর মেরে হত্যা করতাম। আর আমাদের উপর তুমি শক্তিশালী নও’। সে বলল, ‘হে আমার কওম! আমার স্বজনরা কি তোমাদের কাছে আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সম্মানিত? আর তোমরা তাঁকে একেবারে পেছনে ঠেলে দিলে? তোমরা যা কর, নিশ্চয় আমার রব তা পরিবেষ্টন করে আছেন’।আর হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের অবস্থানে কাজ করে যাও, আমিও কাজ করছি। অচিরেই তোমরা জানতে পারবে কার কাছে আসবে সে আযাব যা তাকে লাঞ্ছিত করবে এবং কে মিথ্যাবাদী। আর তোমরা অপেক্ষা কর, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান।আর যখন আমার আদেশ আসল, তখন শু‘আইব ও তার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে রহমত দ্বারা নাজাত দিলাম এবং যারা যুলম করেছিল তাদেরকে পাকড়াও করল বিকট আওয়াজ। ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকল। যেন তারা সেখানে বসবাসই করেনি। জেনে রাখ, ধ্বংস মাদইয়ানের জন্য, যেরূপ ধ্বংস হয়েছে সামূদ জাতি"। [সূরা: হূদ: ৮৪-৯৫]
আল্লাহর নবী লূত আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতির ঘটনা
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ وَلُوطًا إِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهِۦٓ أَتَأۡتُونَ ٱلۡفَٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنۡ أَحَدٖ مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٨٠ إِنَّكُمۡ لَتَأۡتُونَ ٱلرِّجَالَ شَهۡوَةٗ مِّن دُونِ ٱلنِّسَآءِۚ بَلۡ أَنتُمۡ قَوۡمٞ مُّسۡرِفُونَ ٨١ وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوۡمِهِۦٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓاْ أَخۡرِجُوهُم مِّن قَرۡيَتِكُمۡۖ إِنَّهُمۡ أُنَاسٞ يَتَطَهَّرُونَ ٨٢ فَأَنجَيۡنَٰهُ وَأَهۡلَهُۥٓ إِلَّا ٱمۡرَأَتَهُۥ كَانَتۡ مِنَ ٱلۡغَٰبِرِينَ ٨٣ وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِم مَّطَرٗاۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُجۡرِمِينَ ٨٤ ﴾ [الاعراف: ٨٠، ٨٤]
"আর (প্রেরণ করেছি) লূতকে। যখন সে তার কওমকে বলল, ‘তোমরা কি এমন অশালীন কাজ করছ, যা তোমাদের পূর্বে সৃষ্টিকুলের কেউ করেনি’? তোমরা তো নারীদের ছাড়া পুরুষদের সাথে কামনা পূর্ণ করছ, বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী কওম’। আর তার কওমের উত্তর কেবল এই ছিল যে, তারা বলল, ‘তাদেরকে তোমরা তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও। নিশ্চয় তারা এমন লোক, যারা অতি পবিত্র হতে চায়’। তাই আমি তাকে ও তার পরিবারকে রক্ষা করলাম তার স্ত্রী ছাড়া। সে ছিল পেছনে থেকে যাওয়া লোকদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি তাদের উপর বর্ষণ করেছিলাম বৃষ্টি। সুতরাং দেখ, অপরাধীদের পরিণতি কিরূপ ছিল"। [সূরা আল-আ‘রাফ: ৮০-৮৪]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ فَلَمَّا جَآءَ ءَالَ لُوطٍ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٦١ قَالَ إِنَّكُمۡ قَوۡمٞ مُّنكَرُونَ ٦٢ قَالُواْ بَلۡ جِئۡنَٰكَ بِمَا كَانُواْ فِيهِ يَمۡتَرُونَ ٦٣ وَأَتَيۡنَٰكَ بِٱلۡحَقِّ وَإِنَّا لَصَٰدِقُونَ ٦٤ فَأَسۡرِ بِأَهۡلِكَ بِقِطۡعٖ مِّنَ ٱلَّيۡلِ وَٱتَّبِعۡ أَدۡبَٰرَهُمۡ وَلَا يَلۡتَفِتۡ مِنكُمۡ أَحَدٞ وَٱمۡضُواْ حَيۡثُ تُؤۡمَرُونَ ٦٥ وَقَضَيۡنَآ إِلَيۡهِ ذَٰلِكَ ٱلۡأَمۡرَ أَنَّ دَابِرَ هَٰٓؤُلَآءِ مَقۡطُوعٞ مُّصۡبِحِينَ ٦٦ وَجَآءَ أَهۡلُ ٱلۡمَدِينَةِ يَسۡتَبۡشِرُونَ ٦٧ قَالَ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ ضَيۡفِي فَلَا تَفۡضَحُونِ ٦٨ وَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ ٦٩ قَالُوٓاْ أَوَ لَمۡ نَنۡهَكَ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٧٠ قَالَ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِيٓ إِن كُنتُمۡ فَٰعِلِينَ ٧١ لَعَمۡرُكَ إِنَّهُمۡ لَفِي سَكۡرَتِهِمۡ يَعۡمَهُونَ ٧٢ فَأَخَذَتۡهُمُ ٱلصَّيۡحَةُ مُشۡرِقِينَ ٧٣ فَجَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهِمۡ حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٍ ٧٤ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَٰتٖ لِّلۡمُتَوَسِّمِينَ ٧٥ وَإِنَّهَا لَبِسَبِيلٖ مُّقِيمٍ ٧٦ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لِّلۡمُؤۡمِنِينَ ٧٧ ﴾ [الحجر: ٦١، ٧٧]
"এরপর যখন ফেরেশতাগণ লূতের পরিবারের কাছে আসল, সে বলল, ‘তোমরা তো অপরিচিত লোক’। তারা বলল, ‘বরং আমরা তোমার কাছে এমন বিষয় নিয়ে এসেছি, যাতে তারা সন্দেহ করত’। আর আমরা তোমার নিকট সত্য নিয়ে এসেছি এবং আমরা অবশ্যই সত্যবাদী’। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে বেরিয়ে পড় রাতের একাংশে, আর তুমি তাদের পেছনে চল, আর তোমাদের কেউ পেছনে ফিরে তাকাবে না এবং যেভাবে তোমাদের নির্দেশ করা হয়েছে সেভাবেই চলতে থাকবে’। আর আমি তাকে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলাম যে, নিশ্চয় সকালে এদের শিকড় কেটে ফেলা হবে। আর শহরের অধিবাসীরা উৎফুল¬ হয়ে হাযির হল। সে বলল, ‘নিশ্চয় এরা আমার মেহমান, সুতরাং আমাকে অপমানিত করো না’। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে লাঞ্ছিত করো না’। তারা বলল, ‘আমরা কি জগদ্বাসীর কারো মেহমানদারী করতে তোমাকে নিষেধ করিনি’? সে বলল, ‘ওরা আমার মেয়ে , যদি তোমরা করতেই চাও (তবে বিবাহের মাধ্যমে বৈধ উপায়ে কর)। তোমার জীবনের কসম, নিশ্চয় তারা তাদেরকে নেশায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। অতএব সূর্যোদয়কালে বিকট আওয়াজ তাদের পেয়ে বসল। অতঃপর আমি তার (নগরীর) উপরকে নিচে উলটে দিলাম এবং তাদের উপর বর্ষণ করলাম পোড়া মাটির পাথর। নিশ্চয় এতে পর্যবেক্ষণকারীদের জন্য রয়েছে নিদর্শনমালা। আর নিশ্চয় তা পথের পাশেই বিদ্যমান । নিশ্চয় এতে মুমিনদের জন্য রয়েছে নিদর্শন"। [সূরা: আল-হিজর: ৬১-৭৭]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,
﴿ وَلَمَّا جَآءَتۡ رُسُلُنَا لُوطٗا سِيٓءَ بِهِمۡ وَضَاقَ بِهِمۡ ذَرۡعٗا وَقَالَ هَٰذَا يَوۡمٌ عَصِيبٞ ٧٧ وَجَآءَهُۥ قَوۡمُهُۥ يُهۡرَعُونَ إِلَيۡهِ وَمِن قَبۡلُ كَانُواْيَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ هَٰٓؤُلَآءِ بَنَاتِي هُنَّ أَطۡهَرُ لَكُمۡۖ فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ وَلَا تُخۡزُونِ فِي ضَيۡفِيٓۖ أَلَيۡسَ مِنكُمۡ رَجُلٞ رَّشِيدٞ ٧٨ قَالُواْ لَقَدۡ عَلِمۡتَ مَا لَنَا فِي بَنَاتِكَ مِنۡ حَقّٖ وَإِنَّكَ لَتَعۡلَمُ مَا نُرِيدُ ٧٩ قَالَ لَوۡ أَنَّ لِي بِكُمۡ قُوَّةً أَوۡ ءَاوِيٓ إِلَىٰ رُكۡنٖ شَدِيدٖ ٨٠ قَالُواْ يَٰلُوطُ إِنَّا رُسُلُ رَبِّكَ لَن يَصِلُوٓاْ إِلَيۡكَۖ فَأَسۡرِ بِأَهۡلِكَ بِقِطۡعٖ مِّنَ ٱلَّيۡلِ وَلَا يَلۡتَفِتۡ مِنكُمۡ أَحَدٌ إِلَّا ٱمۡرَأَتَكَۖ إِنَّهُۥ مُصِيبُهَا مَآ أَصَابَهُمۡۚ إِنَّ مَوۡعِدَهُمُ ٱلصُّبۡحُۚ أَلَيۡسَ ٱلصُّبۡحُ بِقَرِيبٖ ٨١ فَلَمَّا جَآءَ أَمۡرُنَا جَعَلۡنَا عَٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمۡطَرۡنَا عَلَيۡهَا حِجَارَةٗ مِّن سِجِّيلٖ مَّنضُودٖ ٨٢ مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَۖ وَمَا هِيَ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ بِبَعِيدٖ ٨٣ ﴾ [هود: ٧٧، ٨٣]
“আর যখন লূতের কাছে আমার ফেরেশতা আসল, তখন তাদের (আগমনের) কারণে তার অস্বস্তিবোধ হল এবং তার অন্তর খুব সঙ্কুচিত হয়ে গেল। আর সে বলল, ‘এ তো কঠিন দিন’। আর তার কওম তার কাছে ছুটে আসল এবং ইতঃপূর্বে তারা মন্দ কাজ করত। সে বলল, ‘হে আমার কওম, এরা আমার মেয়ে, তারা তোমাদের জন্য পবিত্র। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমার মেহমানদের ব্যাপারে তোমরা আমাকে অপমানিত করো না। তোমাদের মধ্যে কি কোনো সুবোধ ব্যক্তি নেই’? তারা বলল, ‘তুমি অবশ্যই জান, তোমার মেয়েদের ব্যাপারে আমাদের কোনো প্রয়োজন নেই। আর আমরা কী চাই, তা তুমি নিশ্চয় জান’। সে বলল, ‘তোমাদের প্রতিরোধে যদি আমার কোনো শক্তি থাকত অথবা আমি কোনো সুদৃঢ় স্তম্ভের আশ্রয় নিতে পারতাম’ ! তারা বলল, ‘হে লূত, আমরা তোমার রবের প্রেরিত ফেরেশতা, তারা কখনো তোমার কাছে পৌঁছতে পারবে না। সুতরাং তুমি তোমার পরিবার নিয়ে রাতের কোনো এক অংশে রওয়ানা হও, আর তোমাদের কেউ পিছে তাকাবে না। তবে তোমার স্ত্রী (রওয়ানা হবে না), কেননা তাকে তা-ই আক্রান্ত করবে যা তাদেরকে আক্রান্ত করবে। নিশ্চয় তাদের (আযাবের) নির্ধারিত সময় হচ্ছে সকাল। সকাল কি নিকটে নয়’? অতঃপর যখন আমার আদেশ এসে গেল, তখন আমি জনপদের উপরকে নীচে উল্টে দিলাম এবং ক্রমাগত পোড়ামাটির পাথর বর্ষণ করলাম, যা চিহ্নত ছিল তোমার রবের কাছে। আর তা যালিমদের থেকে দূরে নয়"। [সূরা: হূদ: ৭৭-৮৩]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَغْفِرُ اللَّهُ لِلُوطٍ، إِنْ كَانَ لَيَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ লূত আলাইহিস সালামকে ক্ষমা করুন। তিনি একদা সুদৃঢ় খুঁটির আশ্রয় চেয়েছিলেন।
ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা হাজির আলাইহাস সালামের ঘটনা
قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: أَوَّلَ مَا اتَّخَذَ النِّسَاءُ المِنْطَقَ مِنْ قِبَلِ أُمِّ إِسْمَاعِيلَ، اتَّخَذَتْ مِنْطَقًا لِتُعَفِّيَ أَثَرَهَا عَلَى سَارَةَ، ثُمَّ جَاءَ بِهَا إِبْرَاهِيمُ وَبِابْنِهَا إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُرْضِعُهُ، حَتَّى وَضَعَهُمَا عِنْدَ البَيْتِ عِنْدَ دَوْحَةٍ، فَوْقَ زَمْزَمَ فِي أَعْلَى المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ، فَوَضَعَهُمَا هُنَالِكَ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَابًا فِيهِ تَمْرٌ، وَسِقَاءً فِيهِ مَاءٌ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقًا، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ فَقَالَتْ: يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الوَادِي، الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلاَ شَيْءٌ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ مِرَارًا، وَجَعَلَ لاَ يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ لَهُ: آللَّهُ الَّذِي أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ نَعَمْ، قَالَتْ: إِذَنْ لاَ يُضَيِّعُنَا، ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ إِبْرَاهِيمُ حَتَّى إِذَا كَانَ عِنْدَ الثَّنِيَّةِ حَيْثُ لاَ يَرَوْنَهُ، اسْتَقْبَلَ بِوَجْهِهِ البَيْتَ، ثُمَّ دَعَا بِهَؤُلاَءِ الكَلِمَاتِ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ: رَبِّ {إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ عِنْدَ بَيْتِكَ المُحَرَّمِ} [إبراهيم: 37]- حَتَّى بَلَغَ - {يَشْكُرُونَ} [إبراهيم: 37] " وَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تُرْضِعُ إِسْمَاعِيلَ وَتَشْرَبُ مِنْ ذَلِكَ المَاءِ، حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا فِي السِّقَاءِ عَطِشَتْ وَعَطِشَ ابْنُهَا، وَجَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهِ يَتَلَوَّى، أَوْ قَالَ يَتَلَبَّطُ، فَانْطَلَقَتْ كَرَاهِيَةَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَوَجَدَتِ الصَّفَا أَقْرَبَ جَبَلٍ فِي الأَرْضِ يَلِيهَا، فَقَامَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَتِ الوَادِيَ تَنْظُرُ هَلْ تَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَهَبَطَتْ مِنَ الصَّفَا حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الوَادِيَ رَفَعَتْ طَرَفَ دِرْعِهَا، ثُمَّ سَعَتْ سَعْيَ الإِنْسَانِ المَجْهُودِ حَتَّى جَاوَزَتِ الوَادِيَ، ثُمَّ أَتَتِ المَرْوَةَ فَقَامَتْ عَلَيْهَا وَنَظَرَتْ هَلْ تَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ سَبْعَ مَرَّاتٍ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا» فَلَمَّا أَشْرَفَتْ عَلَى المَرْوَةِ سَمِعَتْ صَوْتًا، فَقَالَتْ صَهٍ - تُرِيدُ نَفْسَهَا -، ثُمَّ تَسَمَّعَتْ، فَسَمِعَتْ أَيْضًا، فَقَالَتْ: قَدْ أَسْمَعْتَ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ غِوَاثٌ، فَإِذَا هِيَ بِالْمَلَكِ عِنْدَ مَوْضِعِ زَمْزَمَ، فَبَحَثَ بِعَقِبِهِ، أَوْ قَالَ بِجَنَاحِهِ، حَتَّى ظَهَرَ المَاءُ، فَجَعَلَتْ تُحَوِّضُهُ وَتَقُولُ بِيَدِهَا هَكَذَا، وَجَعَلَتْ تَغْرِفُ مِنَ المَاءِ فِي سِقَائِهَا وَهُوَ يَفُورُ بَعْدَ مَا تَغْرِفُ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ - أَوْ قَالَ: لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ المَاءِ -، لَكَانَتْ زَمْزَمُ عَيْنًا مَعِينًا " قَالَ: فَشَرِبَتْ وَأَرْضَعَتْ وَلَدَهَا، فَقَالَ لَهَا المَلَكُ: لاَ تَخَافُوا الضَّيْعَةَ، فَإِنَّ هَا هُنَا بَيْتَ اللَّهِ، يَبْنِي هَذَا الغُلاَمُ وَأَبُوهُ، وَإِنَّ اللَّهَ لاَ يُضِيعُ أَهْلَهُ، وَكَانَ البَيْتُ مُرْتَفِعًا مِنَ الأَرْضِ كَالرَّابِيَةِ، تَأْتِيهِ السُّيُولُ، فَتَأْخُذُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ، فَكَانَتْ كَذَلِكَ حَتَّى مَرَّتْ بِهِمْ رُفْقَةٌ مِنْ جُرْهُمَ، أَوْ أَهْلُ بَيْتٍ مِنْ جُرْهُمَ، مُقْبِلِينَ مِنْ طَرِيقِ كَدَاءٍ، فَنَزَلُوا فِي أَسْفَلِ مَكَّةَ فَرَأَوْا طَائِرًا عَائِفًا، فَقَالُوا: إِنَّ هَذَا الطَّائِرَ لَيَدُورُ عَلَى مَاءٍ، لَعَهْدُنَا بِهَذَا الوَادِي وَمَا فِيهِ مَاءٌ، فَأَرْسَلُوا جَرِيًّا أَوْ جَرِيَّيْنِ فَإِذَا هُمْ بِالْمَاءِ، فَرَجَعُوا فَأَخْبَرُوهُمْ بِالْمَاءِ فَأَقْبَلُوا، قَالَ: وَأُمُّ إِسْمَاعِيلَ عِنْدَ المَاءِ، فَقَالُوا: أَتَأْذَنِينَ لَنَا أَنْ نَنْزِلَ عِنْدَكِ؟ فَقَالَتْ: نَعَمْ، وَلَكِنْ لاَ حَقَّ لَكُمْ فِي المَاءِ، قَالُوا: نَعَمْ، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَأَلْفَى ذَلِكَ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُحِبُّ الإِنْسَ» فَنَزَلُوا وَأَرْسَلُوا إِلَى أَهْلِيهِمْ فَنَزَلُوا مَعَهُمْ، حَتَّى إِذَا كَانَ بِهَا أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْهُمْ، وَشَبَّ الغُلاَمُ وَتَعَلَّمَ العَرَبِيَّةَ مِنْهُمْ، وَأَنْفَسَهُمْ وَأَعْجَبَهُمْ حِينَ شَبَّ، فَلَمَّا أَدْرَكَ زَوَّجُوهُ امْرَأَةً مِنْهُمْ، وَمَاتَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَاءَ إِبْرَاهِيمُ بَعْدَمَا تَزَوَّجَ إِسْمَاعِيلُ يُطَالِعُ تَرِكَتَهُ، فَلَمْ يَجِدْ إِسْمَاعِيلَ، فَسَأَلَ امْرَأَتَهُ عَنْهُ فَقَالَتْ: خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا، ثُمَّ سَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ نَحْنُ بِشَرٍّ، نَحْنُ فِي ضِيقٍ وَشِدَّةٍ، فَشَكَتْ إِلَيْهِ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَقُولِي لَهُ يُغَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ كَأَنَّهُ آنَسَ شَيْئًا، فَقَالَ: هَلْ جَاءَكُمْ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، جَاءَنَا شَيْخٌ كَذَا وَكَذَا، فَسَأَلَنَا عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، وَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا فِي جَهْدٍ وَشِدَّةٍ، قَالَ: فَهَلْ أَوْصَاكِ بِشَيْءٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَقُولُ غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكِ أَبِي، وَقَدْ أَمَرَنِي أَنْ أُفَارِقَكِ، الحَقِي بِأَهْلِكِ، فَطَلَّقَهَا، وَتَزَوَّجَ مِنْهُمْ أُخْرَى، فَلَبِثَ عَنْهُمْ إِبْرَاهِيمُ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ أَتَاهُمْ بَعْدُ فَلَمْ يَجِدْهُ، فَدَخَلَ عَلَى امْرَأَتِهِ فَسَأَلَهَا عَنْهُ، فَقَالَتْ: خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا، قَالَ: كَيْفَ أَنْتُمْ؟ وَسَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ: نَحْنُ بِخَيْرٍ وَسَعَةٍ، وَأَثْنَتْ عَلَى اللَّهِ، فَقَالَ: مَا طَعَامُكُمْ؟ قَالَتِ اللَّحْمُ، قَالَ فَمَا شَرَابُكُمْ؟ قَالَتِ المَاءُ. قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي اللَّحْمِ وَالمَاءِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ يَوْمَئِذٍ حَبٌّ، وَلَوْ كَانَ لَهُمْ دَعَا لَهُمْ فِيهِ». قَالَ: فَهُمَا لاَ يَخْلُو عَلَيْهِمَا أَحَدٌ بِغَيْرِ مَكَّةَ إِلَّا لَمْ يُوَافِقَاهُ، قَالَ: فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَاقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَمُرِيهِ يُثْبِتُ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ قَالَ: هَلْ أَتَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، أَتَانَا شَيْخٌ حَسَنُ الهَيْئَةِ، وَأَثْنَتْ عَلَيْهِ، فَسَأَلَنِي عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا بِخَيْرٍ، قَالَ: فَأَوْصَاكِ بِشَيْءٍ، قَالَتْ: نَعَمْ، هُوَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلاَمَ، وَيَأْمُرُكَ أَنْ تُثْبِتَ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكِ أَبِي وَأَنْتِ العَتَبَةُ، أَمَرَنِي أَنْ أُمْسِكَكِ، ثُمَّ لَبِثَ عَنْهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ جَاءَ بَعْدَ ذَلِكَ، وَإِسْمَاعِيلُ يَبْرِي نَبْلًا لَهُ تَحْتَ دَوْحَةٍ قَرِيبًا مِنْ زَمْزَمَ، فَلَمَّا رَآهُ قَامَ إِلَيْهِ، فَصَنَعَا كَمَا يَصْنَعُ الوَالِدُ بِالوَلَدِ وَالوَلَدُ بِالوَالِدِ، ثُمَّ قَالَ يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِأَمْرٍ، قَالَ: فَاصْنَعْ مَا أَمَرَكَ رَبُّكَ، قَالَ: وَتُعِينُنِي؟ قَالَ: وَأُعِينُكَ، قَالَ: فَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِيَ هَا هُنَا بَيْتًا، وَأَشَارَ إِلَى أَكَمَةٍ مُرْتَفِعَةٍ عَلَى مَا حَوْلَهَا، قَالَ: فَعِنْدَ ذَلِكَ رَفَعَا القَوَاعِدَ مِنَ البَيْتِ، فَجَعَلَ إِسْمَاعِيلُ يَأْتِي بِالحِجَارَةِ وَإِبْرَاهِيمُ يَبْنِي، حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَ البِنَاءُ، جَاءَ بِهَذَا الحَجَرِ فَوَضَعَهُ لَهُ فَقَامَ عَلَيْهِ، وَهُوَ يَبْنِي وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ، وَهُمَا يَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127]، قَالَ: فَجَعَلاَ يَبْنِيَانِ حَتَّى يَدُورَا حَوْلَ البَيْتِ وَهُمَا يَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127].
সাঈদ ইবন জুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নারী জাতি সর্বপ্রথম কোমরবন্দ বানানো শিখেছে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মায়ের (হাযেরা) নিকট থেকে। হাযেরা আলাইহাস সালামের কোমরবন্দ লাগাতেন সারাহ আলাইহাস সালামের থেকে নিজের মর্যাদা গোপন রাখার জন্য। তারপর (আল্লাহর হুকুমে) ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের হাযেরা আলাইহাস সালামের এবং তাঁর শিশু ছেলে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে সাথে নিয়ে বের হলেন, এ অবস্থায় যে, হাযেরা আলাইহাস সালাম শিশুকে দুধ পান করাতেন। অবশেষে যেখানে কা‘বা ঘির অবস্থিত, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের তাঁদের উভয়কে সেখানে নিয়ে এসে মসজিদের উঁচু অংশে যমযম কূপের উপরে অবস্থিত একটি বিরাট গাছের নীচে তাদেরকে রাখলেন। তখন মক্কায় না ছিল কোনো মানুষ না ছিল কোনরূপ পানির ব্যবস্থা। পরে তিনি তাদেরকে সেখানেই রেখে গেলেন। আর এছাড়া তিনি তাদের কাছে রেখে গেলেন একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং একটি মশকে কিছু পরিমাণ পানি। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা পিছু পিছু ছুটে আসলেন এবং বলতে লাগলেন, হে ইব্রাহীম! আপনি কোথায় চলে যাচ্ছেন? আমাদেরকে এমন এক ময়দানে রেখে যাচ্ছেন, যেখানে না আছে কোনো সাহায্যকারী আর না আছে (পানাহারের) ব্যবস্থা। তিনি একথা তাকে বারবার বললেন। কিন্তু ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর দিকে তাকালেন না। তখন হাযেরা আলাইহাস সালাম তাঁকে বললেন, এ (নির্বাসনের) আদেশ কি আপনাকে আল্লাহ দিয়েছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। হাযেরা আলাইহাস সালাম বললেন, তাহলে আল্লাহ্ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। আর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও সামনে চললেন। চলতে চলতে যখন তিনি গিরিপথের বাঁকে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী ও সন্তান তাঁকে আর দেখতে পাচ্চেন না, তখন কা’বা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন। তারপর তিনি দু’হাত তুলে এ দো‘আ করলেন, আর বললেন, ‘‘হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার পরিবারকে কতকে আপনার সম্মানিত ঘরের নিকট এক অনুর্বর উপত্যকায় .........যাতে আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে”। [সূরা ইবরাহীম: ৩৭] (এ দো‘আ করে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম চলে গেলেন) আর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে স্বীয় স্তন্যের দুধ পান করাতেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করতেন। অবশেষে মশকে যা পানি ছিল তা ফুরিয়ে গেল। তিনি নিজে পিপাসিত হলেন, এবং তাঁর (বুকের দুধ শুখিয়ে যাওয়ায়) শিশু পুত্রটি পিপাসায় কাতর হয়ে পড়ল। তিনি শিশুটির প্রতি দেখতে লাগলেন। পিপাসায় তার বুক ধরফড় করেছে অথবা রাবী বলেন, সে মাটিতে পড়ে ছটফট করছে। শিশুপুত্রের এ করুন অবস্থার প্রতি তাকানো অসহনীয় হয়ে পড়ায় তিনি সরে গেলেন আর তাঁর অবস্থানের সংলগ্ন পর্বত ‘সাফা’ কে একমাত্র তাঁর নিকটমত পর্বত হিসাবে পেলেন। এরপর তিনি তার উপর উঠে দাঁড়ালেন আর ময়দানের দিকে তাকালেন। এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখলেন, কোথাও কাউকে দেখা যায় না? কিন্তু তিনি কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন ‘সাফা’ পর্বত থেকে নেমে পড়লেন। এমন কি যখন তিনি নিচু ময়দান পর্যন্ত পৌছলেন, তখন তিনি তাঁর কামিজের এক প্রান্ত তুলে ধরে একজন শ্রান্ত-ক্লান্ত মানুষের ন্যায় ছুটে চললেন। অবশেষে ময়দানে অতিক্রম করে ‘মারওয়া’ পাহাড়ের নিকট এসে তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। তারপর এদিকে সেদিকে তাকালেন, কাউকে দেখতে পান কিনা? কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলেন না। এমনিভাবে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এজন্যই মানুষ (হজ্জ বা উমরার সময়) এ পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সায়ী করে থাকে। এরপর এরপর তিনি যখন মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন, তখন একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং তিনি নিজেকেই নিজে বললেন, একটু অপেক্ষা কর। (মনোযোগ দিয়ে শুনি)। তিনি একাগ্রচিত্তে শুনলেন। তখন তিনি বললেন, তুমি তো তোমার শব্দ শুনিয়েছ, আর আমিও শুনেছি)। যদি তোমার কাছে কোনো সাহায্যকারী থাকে (তাহলে আমাকে সাহায্য কর)। হঠাৎ যেখানে যমযম কূপ অবস্থিত সেখানে তিনি একজন ফিরিশ্তা দেখতে পেলেন। সেই ফিরিশতা আপন পায়ের গোড়ালি দ্বারা আঘাত করলেন অথবা তিনি বলছেন, আপন ডানা দ্বারা আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। তখন হাযেরা আলাইহাস সালামের চারপাশে নিজ হাতে বাঁধা দিয়ে এক হাউযের ন্যায় করে দিলেন এবং হাতের কোষভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। তখনো পানি উপছে উঠতে থাকলো। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসমাঈলের মাকে আল্লাহ রহম করুন। যদি তিনি বাঁধ না দিয়ে যমযমকে এভাবে ছেড়ে দিতেন কিংবা বলেছেন, যদি কোষে ভরে পানি মশকে জমা না করতেন, তাহলে যমযম একটি কূপ না হয়ে একটি প্রবাহমান ঝর্ণায় পরিণত হতো। রাবী বলেন, তারপর হাযেরা আলাইহাস সালাম পানি পান করলেন, আর শিশু পুত্রকেও দুধ পান করালেন, তখন ফিরিশতা তাঁকে বললেন, আপনি ধ্বংসের কোনো আশংকা করবেন না। কেননা এখানেই আল্লাহর ঘর রয়েছে। এ শিশুটি এবং তাঁর পিতা দু’জনে এখানে ঘর নির্মাণ করবে এবং আল্লাহ তার আপনজনকে কখনও ধ্বংস করেন না। ঐ সময় আল্লাহর ঘরের স্থানটি যমীন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যা আসার ফলে তাঁর দানে বামে ভেঙ্গে যাচ্ছিল। এরপর হাযেরা আলাইহাস সালাম এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। অবশেষে (ইয়ামান দেশীয়) জুরহুম গোত্রের একদল লোক তাদের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিল। অথবা রাবী বলেন, জুরহুম পরিবারের কিছু লোক কাদা নামক উঁচু ভুমির পথ ধরে এদিক আসছিল। তারা মক্কার নিচু ভুমিতে অবতরণ করল এবং তারা দেখতে পেল একঝাঁক পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তখন তারা বলল, নিশ্চয় এ পাখিগুলো পানির উপর উড়ছে। আমরা এ ময়দানের পথ হয়ে বহুবার অতিক্রম করেছি। কিন্তু এখানে কোনো পানি ছিল না। তখন তারা একজন কি দু’জন লোক সেখানে পাঠালো। তারা সেখানে গিয়েই পানি দেখতে পেল। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে পানির সকলকে পানির সংবাদ দিল। সনবাদ শুনে সবাই সেদিকে অগ্রসর হল। রাবী বলেন, ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা পানির নিকট ছিলেন। তারা তাঁকে বলল, আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন কি? তিনি জবাব দিলেন, হ্যাঁ। তবে, এ পানির উপর তোমাদের কোনো অধিকার থাকবে না। তারা হাঁ, বলে তাদের মত প্রকাশ করল। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এ ঘটনা ইসমাঈলের মাকে একটি সুযোগ এনে দিল। আর তিনিও মানুষের সাহচর্য চেয়েছিলেন। এরপর তারা সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবার –পরিজনের নিকটও সংবাদ পাঠাল। তারপর তারাও এসে তাদের সাথে বসবাস করতে লাগল। পরিশেষে সেখানে তাদের কয়েকটি পরিবারের বসতি স্থাপিত হল। আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম ও যৌবন উপনীত হলেন এবং তাদের থেকে আরবী ভাষা শিখলেন। যৌবনে পৌছে তিনি তাদের কাছে অধিক আকর্ষণীয় ও প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন। এরপর যখন তিনি পূর্ণ যৌবন লাভ করলেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে তাদেরই একটি মেয়েকে বিবাহ দিল। এরই মধ্যে ইসমাঈলের মা হাযেরা আলাইহাস সালাম ইন্তেকাল করেন। ইসমাঈলের বিবাহের পর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু তিনি ইসমাঈলকে পেলেন না। তিনি তাঁর স্ত্রীকে তাঁর সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। স্ত্রী বলল, তিনি আমাদের জীবিকার খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। এরপর তিনি পুত্রবধুকে তাদের জীবন যাত্রা এবং অবস্থা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমরা অতি দুরাবস্থায়, অতি টানাটানি ও খুব কষ্টে আছি। সে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিকট তাদের দুর্দশার অভিযোগ করল। তিনি বললেন, তোমার স্বামী বাড়ী আসলে, তাঁকে আমার সালাম জানিয়ে বলবে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়। এরপর যখন ইসমাঈল বাড়ী আসলেন, তখন তিনি যেন (তাঁর পিতা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আগমনের) কিছুটা আভাস পেলেন। তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদেরকে কাছে কেউ কি এসেছিল? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং আমাকে আপনার সম্বন্ধে জজ্ঞাসা করছিলেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ দিলাম। তিনি আমাকে আমাদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাঁকে জানালাম, আমরা খুব কষ্ট ও অভাবে আছি। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি তোমাকে কোনো উপদেশ দিয়েছেন? স্ত্রী বলল, হ্যাঁ। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌঁছাই এবং তিনি আরো বলেছেন, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি আমার পিতা। এ কথা দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে গেছেন, আমি যেন তোমাকে পৃথক করে দেই। অতএব তুমি তোমার আপন জন্দের কাছে চলে যাও। এ কথা বলে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং ঐ লোকদের থেকে অপর একটি মেয়েকে বিবাহ করলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এদের থেকে দূরে রইলেন, আল্লাহ যতদিন চাইলেন। তারপর তিনি আবার এদের দেখতে আসলেন। কিন্তু এবারও তিনি ইসমাঈল আলাইহিস সালামের দেখা পেলেন না। তিনি ছেলের বউয়ের নিকট উপস্থিত হলেন এবং তাঁকে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বললো, তিনি আমাদের খাবারের খোঁজে বেরিয়ে গেছেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা জানতে চাইলেন। তখন সে বলল, আমরা ভাল এবং স্বচ্ছলতার মধ্যেই আছি। আর সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? সে বলল, গোশত। তিনি আবার জানতে চাইলেন, তোমাদের পানীয় কি? সে বলল, পানি। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঐ সময় তাদের সেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন হতো না। যদি হতো তাহলে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম সে বিষয়েও তাদের জন্য দো‘আ করতেন। বর্ণনাকারী বলেন, মক্কা ব্যতিত অন্য কোথাও কেউ শুধু গোসত ও পানি দ্বারা জীবন ধারণ করতে পারেনা। কেননা, শুধু গোসত ও পানি জীবনযাপনের অনুকূল হতে পারে না। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, যখন তোমার স্বামী ফিরে আসবে, তখন তাঁকে আমার সালাম বলবে, আর তাঁকে আমার পক্ষ থেকে হুকুম করবে যে, সে যেন তার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখে। এরপর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন ফিরে আসলেন, তখন তিনি বললেন, তোমাদের নিকট কেউ এসেছিলেন কি? সে বলল, হ্যাঁ। একজন সুন্দর আকৃতিকে বৃদ্ধ লোক এসেছিলেন এবং সে তাঁর প্রশংসা করলো, (তারপর বললো) তিনি আমাএক আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমাকে আপনার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি তাঁকে আপনার সংবাদ জানিয়েছি। এরপর তিনি আমার নিকট আমাদের জীবনযাপন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমি তাঁকে জানিয়েছি যে, আমরা ভাল আছি। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, তিনি কি তোমাকে আর কোনো কিচুর জন্য আদেশ করেছেন? সে বললো, হ্যাঁ। তিনি আপনার প্রতি সালাম জানিয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনি যেন আপনার ঘরের দরজায় চৌকাঠ ঠিক রাখেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনিই আমার পিতা। আর তুমি হলে আমার ঘরের দরজার চৌকাঠ। একথার দ্বারা তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তোমাকে স্ত্রী হিসাবে বহাল রাখি। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এদের থেকে দূরে রইলেন, যদ্দিন আল্লাহ চাইলেন। এরপর তিনি আবার আসলেন। (দেখতে পেলেন) যমযম কূপের নিকটস্থ একটি বৃক্ষের নীচে বসে ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। যখন তিনি তাঁর পিতাকে দেখতে পেলেন, তিনি দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলেন। এরপর একজন বাপ-বেটার সঙ্গে, একজন বেটা-বাপের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে যেরূপ করে থাকে তারা উভয়ে তাই করলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, হে ইসমাঈল। আল্লাহ্ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার রব ! আপনাকে যা আদেশ করেছেন, তা করুন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহ্ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। এই বলে তিনি উঁচু টিলাটির দিকে ইশারা করলেন যে, এর চারপাশে ঘেরাও দিয়ে, তখনই তাঁরা উভয়ে কা’বা ঘরের দেওয়াল উঠাতে লেগে গেলেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর আনতেন, আর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম নির্মাণ করতেন। পরিশেষে যখন দেওয়াল উঁচু হয়ে গেল, তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালাম (মাকামে ইব্রাহীম নামে খ্যাত) পাথরটি আনলেন এবং ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের জন্য তা যথাস্থানে রাখলেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তার উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ করতে লাগলেন। আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর যোগান দিতে থাকেন। তখন তারা উভয়ে দো‘আ করতে থাকলেন, হে আমাদের রব। আমাদের থেকে (একাজ) কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন। তাঁরা উভয়ে আবার কা’বা ঘর তৈরি করতে থাকেন। এবং কা’বা ঘরের চার দিকে ঘুরে ঘুরে এ দো‘আ করতে থাকেন। ‘‘হে আমাদের রব! আমাদের থেকে (এ শ্রমটুকু) কবুল করে নিন। নিশ্চয়ই আপনি সব কিছু শুনেন ও জানেন।’’ [সূরা বাকারা : ১২৭]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا كَانَ بَيْنَ إِبْرَاهِيمَ وَبَيْنَ أَهْلِهِ مَا كَانَ، خَرَجَ بِإِسْمَاعِيلَ وَأُمِّ إِسْمَاعِيلَ، وَمَعَهُمْ شَنَّةٌ فِيهَا مَاءٌ، فَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تَشْرَبُ مِنَ الشَّنَّةِ، فَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى قَدِمَ مَكَّةَ فَوَضَعَهَا تَحْتَ دَوْحَةٍ، ثُمَّ رَجَعَ إِبْرَاهِيمُ إِلَى أَهْلِهِ، فَاتَّبَعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، حَتَّى لَمَّا بَلَغُوا كَدَاءً نَادَتْهُ مِنْ وَرَائِهِ: يَا إِبْرَاهِيمُ إِلَى مَنْ تَتْرُكُنَا؟ قَالَ: إِلَى اللَّهِ، قَالَتْ: رَضِيتُ بِاللَّهِ، قَالَ: فَرَجَعَتْ فَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ الشَّنَّةِ وَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، حَتَّى لَمَّا فَنِيَ المَاءُ، قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَدًا، قَالَ فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا فَنَظَرَتْ، وَنَظَرَتْ هَلْ تُحِسُّ أَحَدًا، فَلَمْ تُحِسَّ أَحَدًا، فَلَمَّا بَلَغَتِ الوَادِيَ سَعَتْ وَأَتَتِ المَرْوَةَ، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ أَشْوَاطًا، ثُمَّ قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، تَعْنِي الصَّبِيَّ، فَذَهَبَتْ فَنَظَرَتْ فَإِذَا هُوَ عَلَى حَالِهِ كَأَنَّهُ يَنْشَغُ لِلْمَوْتِ، فَلَمْ تُقِرَّهَا نَفْسُهَا، فَقَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ، لَعَلِّي أُحِسُّ أَحَدًا، فَذَهَبَتْ فَصَعِدَتِ الصَّفَا، فَنَظَرَتْ وَنَظَرَتْ فَلَمْ تُحِسَّ أَحَدًا، حَتَّى أَتَمَّتْ سَبْعًا، ثُمَّ قَالَتْ: لَوْ ذَهَبْتُ فَنَظَرْتُ مَا فَعَلَ، فَإِذَا هِيَ بِصَوْتٍ، فَقَالَتْ: أَغِثْ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ خَيْرٌ، فَإِذَا جِبْرِيلُ، قَالَ: فَقَالَ بِعَقِبِهِ هَكَذَا، وَغَمَزَ عَقِبَهُ عَلَى الأَرْضِ، قَالَ: فَانْبَثَقَ المَاءُ، فَدَهَشَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَعَلَتْ تَحْفِزُ، قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ تَرَكَتْهُ كَانَ المَاءُ ظَاهِرًا». قَالَ: فَجَعَلَتْ تَشْرَبُ مِنَ المَاءِ وَيَدِرُّ لَبَنُهَا عَلَى صَبِيِّهَا، قَالَ: فَمَرَّ نَاسٌ مِنْ جُرْهُمَ بِبَطْنِ الوَادِي، فَإِذَا هُمْ بِطَيْرٍ، كَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوا ذَاكَ، وَقَالُوا: مَا يَكُونُ الطَّيْرُ إِلَّا عَلَى مَاءٍ، فَبَعَثُوا رَسُولَهُمْ فَنَظَرَ فَإِذَا هُمْ بِالْمَاءِ، فَأَتَاهُمْ فَأَخْبَرَهُمْ، فَأَتَوْا إِلَيْهَا فَقَالُوا: يَا أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، أَتَأْذَنِينَ لَنَا أَنْ نَكُونَ مَعَكِ، أَوْ نَسْكُنَ مَعَكِ، فَبَلَغَ ابْنُهَا فَنَكَحَ فِيهِمُ امْرَأَةً، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، قَالَ: فَجَاءَ فَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ؟ فَقَالَتِ امْرَأَتُهُ: ذَهَبَ يَصِيدُ، قَالَ: قُولِي لَهُ إِذَا جَاءَ غَيِّرْ عَتَبَةَ بَابِكَ، فَلَمَّا جَاءَ أَخْبَرَتْهُ، قَالَ: أَنْتِ ذَاكِ، فَاذْهَبِي إِلَى أَهْلِكِ، قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، قَالَ: فَجَاءَ، فَقَالَ: أَيْنَ إِسْمَاعِيلُ؟ فَقَالَتِ امْرَأَتُهُ: ذَهَبَ يَصِيدُ، فَقَالَتْ: أَلاَ تَنْزِلُ فَتَطْعَمَ وَتَشْرَبَ، فَقَالَ: وَمَا طَعَامُكُمْ وَمَا شَرَابُكُمْ؟ قَالَتْ: طَعَامُنَا اللَّحْمُ وَشَرَابُنَا المَاءُ، قَالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ فِي طَعَامِهِمْ وَشَرَابِهِمْ، قَالَ: فَقَالَ أَبُو القَاسِمِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بَرَكَةٌ بِدَعْوَةِ إِبْرَاهِيمَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِمَا وَسَلَّمَ» قَالَ: ثُمَّ إِنَّهُ بَدَا لِإِبْرَاهِيمَ، فَقَالَ لِأَهْلِهِ: إِنِّي مُطَّلِعٌ تَرِكَتِي، فَجَاءَ فَوَافَقَ إِسْمَاعِيلَ مِنْ وَرَاءِ زَمْزَمَ يُصْلِحُ نَبْلًا لَهُ، فَقَالَ: يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ رَبَّكَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِيَ لَهُ بَيْتًا، قَالَ: أَطِعْ رَبَّكَ، قَالَ: إِنَّهُ قَدْ أَمَرَنِي أَنْ تُعِينَنِي عَلَيْهِ، قَالَ: إِذَنْ أَفْعَلَ، أَوْ كَمَا قَالَ: قَالَ فَقَامَا فَجَعَلَ إِبْرَاهِيمُ يَبْنِي، وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَيَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127]. قَالَ: حَتَّى ارْتَفَعَ البِنَاءُ، وَضَعُفَ الشَّيْخُ عَنْ نَقْلِ الحِجَارَةِ، فَقَامَ عَلَى حَجَرِ المَقَامِ، فَجَعَلَ يُنَاوِلُهُ الحِجَارَةَ وَيَقُولاَنِ: {رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ العَلِيمُ} [البقرة: 127].
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর স্ত্রী (সারার) মাঝে যা হওয়ার হয়ে গেল, তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (শিশুপুত্র) ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং তাঁর মাকে নিয়ে বের হলেন। তাদের সাথে একটি থলে ছিল, যাতে পানি ছিল। ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা মশক থেকে পানি পান করতেন। ফলে শিশুর জন্য তাঁর স্তন্যে দুধ বাড়তে থাকে। অবশেষে ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম মক্কায় পৌছে হাযেরকে (শিশুপুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামসহ) একটি বিরাট বৃক্ষের নীচে থাকার ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম আপন পরিবার (সারার) নিকট ফিরে চললেন। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা কিছু দূর পর্যন্ত তাঁর অনুসরণ করলেন। অবশেষে যখন কাদা নামক স্থানে পৌছলেন, তখন তিনি পিছনে থেকে ডেকে বললেন, হে ইব্রাহীম! আপনি আমাদেরকে কার কাছে রেখে যাচ্ছেন? ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, আল্লাহর কাছে। হাযেরা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর হাযেরা আলাইহিস সালাম ফিরে আসলেন, তিনি মশক থেকে পানি পান করতেন আর শিশুর জন্য (তাঁর স্তন্যের) দুধ বাড়ত। অবশেষে যখন পানি শেষ হয়ে গেল। তখন ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা বললেন, আমি যদি গিয়ে এদিকে সেদিকে তাকাতাম! তাহলে হয়ত কোনো মানুষ দেখতে পেতাম। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, এরপর ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা গেলেন এবং সাফা পাহাড়ে উঠলেন আর এদিকে ওদিকে তাকালেন এবং কাউকে দেখেন কিনা এজন্য বিশেষভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তু কাউকেও দেখতে পেলেন না। (এরপর যখন নীচু ভূমিতে পৌছলেন) তখন দ্রুত বেগে মারওয়া পাহাড়ে এসে গেলেন। এবং এভাবে তিনি কয়েক চক্কর দিলেন। পুনরায় তিনি (মনে মনে) বললেন, যদি গিয়ে দেখতাম যে শিশুটি কি করছে। এরপর তিনি গেলেন এবং দেখতে পেলেন যে সে তার অবস্থায়ই আছে। সে যেন মরণাপন্ন হয়ে গেছে। এতে তাঁর মন স্বস্তি পাচ্ছিল না। তখন তিনি বললেন, যদি সেখানে (আবার) যেতাম এবং এদিকে সেদিকে তাকিয়ে দেখতাম। সম্ভবতঃ কাউকে দেখতে পেতাম। এরপর তিনি গেলেন, সাফা পাহাড়ের উপর উঠলেন এবং এদিক সেদিক দেখলেন এবং গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন। কিন্তূ কাউকে দেখতে পেলেন না। এমনকি তিনি সাতটি চক্কর পূর্ণ করলেন। এরপর তিনি মনে মনে বললেন, যদি যেতাম তখন দেখতাম যে সে কি করছে। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, যদি আপনার কোনো সাহায্য করার থাকে তবে আমাকে সাহায্য করুন। হঠাৎ তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে দেখতে পেলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন তিনি (জিবরীল) তাঁর পায়ের গোড়ালি দ্বারা এরূপ করলেন অর্থাৎ গোড়ালি দ্বারা যমীনের উপর আঘাত করলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখনই পানি বেরিয়ে আসল। এ দেখে ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মা অস্থির হয়ে গেলেন এবং গর্ত খনন করতে লাগলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এ প্রসঙ্গে আবুল কাসিম (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, হাযেরা আলাইহাস সালাম যদি একে তার অবস্থায় উপর ছেড়ে দিতেন তাহলে পানি বিস্তৃত হয়ে যেত। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন হাযেরা আলাইহাস সালাম পানি পান করতে লাগলেন এবং তাঁর সন্তানের জন্য তাঁর দুধ বাড়তে থাকে। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর জুরহুম গোত্রের (ইয়ামান দেশীয়) একদল লোক উপত্যকার নীচু ভূমি দিয়ে অতিক্রম করচিল। হঠাৎ তারা দেখল কিছু পাখি উড়ছে। তারা যেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিল না আর তারা বলতে লাগল এসব পাখি তো পানি ছাড়া কোথাও থাকতে পারে না। তখন তারা সেখানে তাদের একজন দুত পাঠাল। সে সেখানে গিয়ে দেখল, সেখানে পানি মাওজুদ আছে। তখন সে তার দলের লোকদের কাছে ফিরে আসল এবং তাদেরকে সংবাদ দিল। এরপর তারা হাযেরা আলাইহাস সালামের কাছে এসে বলল, হে ইসমাঈলের মা। আপনি কি আমাদেরকে আপনার কাছে থাকা অথবা (রাবী বলেছেন), আপনার কাছে বসবাস করার অনুমতি দিবেন? (হাযেরা আলাইহাস সালাম তাদেরকে বসবাসের অনুমতি দিলেন এবং এভাবে অনেক দিন কেতে গেল)। এরপর তাঁর ছেলে বয়ঃপ্রাপ্ত হল। তখন তিনি (ইসমাঈল আলাইহিস সালাম) জুরহুম গোত্রেরই একটি মেয়ে বিয়ে করলেন। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, পুনরায় ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মনে জাগল (ইসমাঈল আলাইহিস সালাম এবং তাঁর মা হাযেরার কথা) তখন তিনি তাঁর স্ত্রীকে (সারা) বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের অবস্থা সম্পর্কে খবর নিতে চাই রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, এরপর তিনি (তাদের কাছে) আসলেন এবং সালাম দিলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহিস সালামের স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, সে যখন আসবে তখন তুমি তাঁকে আমার এ নির্দেশের কথা বলবে, ‘‘তুমি ঘরের চৌকাঠখানা বদলিয়ে ফেলবে। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম যখন আসলেন, তখন স্ত্রী তাঁকে খবরটি জানালেন, তখন তিনি স্ত্রীকে বললেন, তুমি সেই চৌকাঠ। অতএব তুমি তোমার পিতামাতার কাছে চলে যাও। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, অতঃপর (তাদের কথা) ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের আবার মনে পড়ল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা) কে বললেন, আমি আমার নির্বাসিত পরিবারের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি সেখানে আসলেন, এবং (পুত্রবধূকে) জিজ্ঞাসা করলেন, ইসমাঈল কোথায়? ইসমাঈল আলাইহিস সালামের স্ত্রী বলল, তিনি শিকারে গিয়েছেন। পুত্রবধু তাঁকে বললেন, আপনি কি আমাদের এখানে অবস্থান করবেন না? কিছু পানাহার করবেন না? তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম বললেন, তোমাদের খাদ্য এবং পানীয় কি? স্ত্রী বলল, আমাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তাদের খাদ্য হল গোশত আর পানীয় হল পানি। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম দো‘আ করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্! তাদের খাদ্য এবং পানীয় দ্রব্যের মধ্যে বরকত দিন।’’ রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আবুল কাসিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের দু‘আর কারণেই (মক্কার খাদ্য ও পানীয় দ্রব্যের মধ্যে) বরকত রয়েছে। রাবী (ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আবার কিছুদিন পর ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের মনে তাঁর নির্বাসিত পরিজনের কথা জাগল। তখন তিনি তাঁর স্ত্রী (সারা)-কে বললেন, আমি আমার পরিত্যক্ত পরিজনের খবর নিতে চাই। এরপর তিনি আলেন এবং ইসমাঈলের দেখা পেলেন, তিনি যমযম কূপের পিছনে বসে তাঁর একটি তীর মেরামত করেছেন। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ডেকে বললেন, হে ইসমাঈল! তোমার রব তাঁর জন্য একখানা ঘর নির্মাণ করতে আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনার রবের নির্দেশ পালন করুন। ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বললেন, তাহলে আমি তা করব অথবা তিনি অনুরূপ কিছু বলেছিলেন। এরপর উভয়ে উঠে দাঁড়ালেন। ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ইমারাত বানাতে লাগলেন আর ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাথর এনে দিতে লাগলেন আর তাঁরা উভয়ে এ দো‘আ করছিলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজ কবুল করুন। আপনি তো সব কিছু শুনেন এবং জানেন রাবী বলেন, এরই মধ্যে প্রাচীর উঁচু হয়ে গেল আর বৃদ্ধ ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম এতটা উঠতে দুর্বল হয়ে পড়লেন। তখন তিনি (মাকামে ইব্রাহীমের) পাথরের উপর দাঁড়ালেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তাঁকে পাতজর এগিয়ে দিতে লাগলেন আর উভয়ে এ দো‘আ পড়তে লাগলেন, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের এ কাজটুকু কবূল করুন। নিঃসন্দেহে আপনি সবকিছু শুনেন ও জানেন। [সূরা বাকারা: ১২৭]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، لَوْلاَ أَنَّهَا عَجِلَتْ، لَكَانَ زَمْزَمُ عَيْنًا مَعِينًا».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ইসলামাঈলের মায়ের প্রতি আল্লাহ্ রহম করুন। যদি তিনি তাড়াতাড়ি না করতেন, তবে যমযম একটির প্রবহমান ঝরণায় পরিণত হত।
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ الأَكْوَعِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى نَفَرٍ مِنْ أَسْلَمَ يَنْتَضِلُونَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ارْمُوا بَنِي إِسْمَاعِيلَ، فَإِنَّ أَبَاكُمْ كَانَ رَامِيًا ارْمُوا، وَأَنَا مَعَ بَنِي فُلاَنٍ» قَالَ: فَأَمْسَكَ أَحَدُ الفَرِيقَيْنِ بِأَيْدِيهِمْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا لَكُمْ لاَ تَرْمُونَ». فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ نَرْمِي وَأَنْتَ مَعَهُمْ، قَالَ: «ارْمُوا وَأَنَا مَعَكُمْ كُلِّكُمْ».
সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়ামানের) আসলাম গোত্রের একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। এ সময় তাঁরা তীরন্দাজীর প্রতিযোগিতা করছিল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে বনী ইসমাঈল! তোমরা তীরন্দাজী করে যাও। কেননা তোমাদের পূর্বপুরুষ ইসমাঈল আলাইহিস সালাম তীরন্দাজ ছিলেন। সুতরাং তোমরাও তীরন্দাজী করে যাও আর আমি অমুক গোত্রের লোকদের সাথে আছি। রাবী বলন, (এ কথা শুনে) তাদের এক পক্ষ হাত চালনা থেকে বিরত হয়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কি হল, তোমরা যে তীরন্দাজী করছ না? তখন তারা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কিভাবে তীর ছুঁড়তে পারি, অথচ আপনি তো তাদের সাথে রয়েছেন। তখন তিনি বললেন, তোমরা তীর ছুঁড়তে থাক, আমি তোমাদের সবার সাথেই আছি।
আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ إِذۡ قَالَ يُوسُفُ لِأَبِيهِ يَٰٓأَبَتِ إِنِّي رَأَيۡتُ أَحَدَ عَشَرَ كَوۡكَبٗا وَٱلشَّمۡسَ وَٱلۡقَمَرَ رَأَيۡتُهُمۡ لِي سَٰجِدِينَ ٤ قَالَ يَٰبُنَيَّ لَا تَقۡصُصۡ رُءۡيَاكَ عَلَىٰٓ إِخۡوَتِكَ فَيَكِيدُواْ لَكَ كَيۡدًاۖ إِنَّ ٱلشَّيۡطَٰنَ لِلۡإِنسَٰنِ عَدُوّٞ مُّبِينٞ ٥ وَكَذَٰلِكَ يَجۡتَبِيكَ رَبُّكَ وَيُعَلِّمُكَ مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِ وَيُتِمُّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكَ وَعَلَىٰٓ ءَالِ يَعۡقُوبَ كَمَآ أَتَمَّهَا عَلَىٰٓ أَبَوَيۡكَ مِن قَبۡلُ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡحَٰقَۚ إِنَّ رَبَّكَ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦ ﴾ [يوسف: ٤، ٦]
"যখন ইউসুফ তার পিতাকে বলল, ‘হে আমার পিতা, আমি দেখেছি এগারটি নক্ষত্র, সূর্য ও চাঁদকে, আমি দেখেছি তাদেরকে আমার প্রতি সিজদাবনত অবস্থায়’। সে বলল, ‘হে আমার পুত্র, তুমি তোমার ভাইদের নিকট তোমার স্বপ্নের বর্ণনা দিও না, তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন’। আর এভাবে তোমার রব তোমাকে মনোনীত করবেন এবং তোমাকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা শিক্ষা দেবেন। আর তোমার উপর ও ইয়াকূবের পরিবারের উপর তাঁর নিআমত পূর্ণ করবেন যেভাবে তিনি তা পূর্বে পূর্ণ করেছিলেন তোমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম ও ইসহাকের উপর, নিশ্চয় তোমার রব সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়"। [সূরা: ইউসুফ: ৪-৬]
﴿ وَلَقَدۡ هَمَّتۡ بِهِۦۖ وَهَمَّ بِهَا لَوۡلَآ أَن رَّءَا بُرۡهَٰنَ رَبِّهِۦۚ كَذَٰلِكَ لِنَصۡرِفَ عَنۡهُ ٱلسُّوٓءَ وَٱلۡفَحۡشَآءَۚ إِنَّهُۥ مِنۡ عِبَادِنَا ٱلۡمُخۡلَصِينَ ٢٤ وَٱسۡتَبَقَا ٱلۡبَابَ وَقَدَّتۡ قَمِيصَهُۥ مِن دُبُرٖ وَأَلۡفَيَا سَيِّدَهَا لَدَا ٱلۡبَابِۚ قَالَتۡ مَا جَزَآءُ مَنۡ أَرَادَ بِأَهۡلِكَ سُوٓءًا إِلَّآ أَن يُسۡجَنَ أَوۡ عَذَابٌ أَلِيمٞ ٢٥ قَالَ هِيَ رَٰوَدَتۡنِي عَن نَّفۡسِيۚ وَشَهِدَ شَاهِدٞ مِّنۡ أَهۡلِهَآ إِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن قُبُلٖ فَصَدَقَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٢٦ وَإِن كَانَ قَمِيصُهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٖ فَكَذَبَتۡ وَهُوَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ٢٧ فَلَمَّا رَءَا قَمِيصَهُۥ قُدَّ مِن دُبُرٖ قَالَ إِنَّهُۥ مِن كَيۡدِكُنَّۖ إِنَّ كَيۡدَكُنَّ عَظِيمٞ ٢٨ يُوسُفُ أَعۡرِضۡ عَنۡ هَٰذَاۚ وَٱسۡتَغۡفِرِي لِذَنۢبِكِۖ إِنَّكِ كُنتِ مِنَ ٱلۡخَاطِِٔينَ ٢٩ ۞وَقَالَ نِسۡوَةٞ فِي ٱلۡمَدِينَةِ ٱمۡرَأَتُ ٱلۡعَزِيزِ تُرَٰوِدُ فَتَىٰهَا عَن نَّفۡسِهِۦۖ قَدۡ شَغَفَهَا حُبًّاۖ إِنَّا لَنَرَىٰهَا فِي ضَلَٰلٖ مُّبِينٖ ٣٠ فَلَمَّا سَمِعَتۡ بِمَكۡرِهِنَّ أَرۡسَلَتۡ إِلَيۡهِنَّ وَأَعۡتَدَتۡ لَهُنَّ مُتَّكَٔٗا وَءَاتَتۡ كُلَّ وَٰحِدَةٖ مِّنۡهُنَّ سِكِّينٗا وَقَالَتِ ٱخۡرُجۡ عَلَيۡهِنَّۖ فَلَمَّا رَأَيۡنَهُۥٓ أَكۡبَرۡنَهُۥ وَقَطَّعۡنَ أَيۡدِيَهُنَّ وَقُلۡنَ حَٰشَ لِلَّهِ مَا هَٰذَا بَشَرًا إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا مَلَكٞ كَرِيمٞ ٣١ قَالَتۡ فَذَٰلِكُنَّ ٱلَّذِي لُمۡتُنَّنِي فِيهِۖ وَلَقَدۡ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفۡسِهِۦ فَٱسۡتَعۡصَمَۖ وَلَئِن لَّمۡ يَفۡعَلۡ مَآ ءَامُرُهُۥ لَيُسۡجَنَنَّ وَلَيَكُونٗا مِّنَ ٱلصَّٰغِرِينَ ٣٢ ﴾ [يوسف: ٢٤، ٣٢]
"আর সে মহিলা তার প্রতি আসক্ত হল, আর সেও তার প্রতি আসক্ত হত, যদি না তার রবের স্পষ্ট প্রমাণ প্রত্যক্ষ করত। এভাবেই, যাতে আমি তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দেই। নিশ্চয় সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। আর তারা উভয়ে দরজার দিকে দৌড়ে গেল এবং মহিলা পেছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল। আর তারা মহিলার স্বামীকে দরজার কাছে পেল। মহিলা বলল, ‘যে লোক তোমার পরিবারের সাথে মন্দকর্ম করতে চেয়েছে, তাকে কারাবন্দি করা বা যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি দেওয়া ছাড়া তার আর কী দন্ড হতে পারে’? সে বলল, ‘সে-ই আমাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছে’। আর মহিলার পরিবার থেকে এক সাক্ষ্যদাতা সাক্ষ্য প্রদান করল, ‘যদি তার জামা সামনের দিক থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) সত্য বলেছে এবং সে (পুরুষ) মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। আর তার জামা যদি পেছন থেকে ছেঁড়া হয় তাহলে সে (মহিলা) মিথ্যা বলেছে এবং সে (পুরুষ) হচ্ছে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’। অতঃপর যখন সে দেখল, তার জামা পেছন থেকে ছেঁড়া তখন বলল, ‘নিশ্চয় এটি তোমাদের ষড়যন্ত্র। নিশ্চয় তোমাদের ষড়যন্ত্র ভয়ানক’।‘ইউসুফ, তুমি এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাও, আর (হে নারী) তুমি তোমার পাপের জন্য ইস্তেগফার কর। নিশ্চয় তুমিই পাপীদের অন্তর্ভূক্ত’। আর নগরীতে মহিলারা বলাবলি করল, ‘আযীয পত্নী স্বীয় যুবককে কুপ্ররোচনা দিচ্ছে। (যুবকের প্রতি) গভীর প্রেম তাকে আসক্ত করে ফেলেছে, নিশ্চয় আমরা তাকে প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে দেখতে পাচ্ছি’। অতঃপর যখন সে তাদের কূটকৌশলের কথা শুনতে পেল, তখন তাদেরকে ডেকে পাঠাল এবং তাদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, আর তাদের প্রত্যেককে একটি করে ছুরি প্রদান করল এবং ইউসুফকে বলল, ‘তাদের সামনে বেরিয়ে আস’। অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তাকে বিশাল সৌন্দর্যের অধিকারী মনে করল এবং তারা নিজদের হাত কেটে ফেলল আর বলল, ‘মহিমা আল্লাহর, এতো মানুষ নয়। এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা’।সে বলল, ‘এ-ই সে, যার ব্যাপারে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করেছিলে। আর আমিই তাকে কুপ্ররোচনা দিয়েছি; কিন্তু সে বিরত থেকেছে এবং আমি তাকে যা আদেশ করছি সে যদি তা না করে তবে অবশ্যই সে কারারুদ্ধ হবে এবং নিশ্চয় সে অপদস্থদের অন্তর্ভুক্ত হবে"। [সূরা: ইউসুফ: ২৪-৩২]
﴿ وَدَخَلَ مَعَهُ ٱلسِّجۡنَ فَتَيَانِۖ قَالَ أَحَدُهُمَآ إِنِّيٓ أَرَىٰنِيٓ أَعۡصِرُ خَمۡرٗاۖ وَقَالَ ٱلۡأٓخَرُ إِنِّيٓ أَرَىٰنِيٓ أَحۡمِلُ فَوۡقَ رَأۡسِي خُبۡزٗا تَأۡكُلُ ٱلطَّيۡرُ مِنۡهُۖ نَبِّئۡنَا بِتَأۡوِيلِهِۦٓۖ إِنَّا نَرَىٰكَ مِنَ ٱلۡمُحۡسِنِينَ ٣٦ قَالَ لَا يَأۡتِيكُمَا طَعَامٞ تُرۡزَقَانِهِۦٓ إِلَّا نَبَّأۡتُكُمَا بِتَأۡوِيلِهِۦ قَبۡلَ أَن يَأۡتِيَكُمَاۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّيٓۚ إِنِّي تَرَكۡتُ مِلَّةَ قَوۡمٖ لَّا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَهُم بِٱلۡأٓخِرَةِ هُمۡ كَٰفِرُونَ ٣٧ وَٱتَّبَعۡتُ مِلَّةَ ءَابَآءِيٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَإِسۡحَٰقَ وَيَعۡقُوبَۚ مَا كَانَ لَنَآ أَن نُّشۡرِكَ بِٱللَّهِ مِن شَيۡءٖۚ ذَٰلِكَ مِن فَضۡلِ ٱللَّهِ عَلَيۡنَا وَعَلَى ٱلنَّاسِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَشۡكُرُونَ ٣٨ يَٰصَٰحِبَيِ ٱلسِّجۡنِ ءَأَرۡبَابٞ مُّتَفَرِّقُونَ خَيۡرٌ أَمِ ٱللَّهُ ٱلۡوَٰحِدُ ٱلۡقَهَّارُ ٣٩ مَا تَعۡبُدُونَ مِن دُونِهِۦٓ إِلَّآ أَسۡمَآءٗ سَمَّيۡتُمُوهَآ أَنتُمۡ وَءَابَآؤُكُم مَّآ أَنزَلَ ٱللَّهُ بِهَا مِن سُلۡطَٰنٍۚ إِنِ ٱلۡحُكۡمُ إِلَّا لِلَّهِ أَمَرَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُۚ ذَٰلِكَ ٱلدِّينُ ٱلۡقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَ ٱلنَّاسِ لَا يَعۡلَمُونَ ٤٠ يَٰصَٰحِبَيِ ٱلسِّجۡنِ أَمَّآ أَحَدُكُمَا فَيَسۡقِي رَبَّهُۥ خَمۡرٗاۖ وَأَمَّا ٱلۡأٓخَرُ فَيُصۡلَبُ فَتَأۡكُلُ ٱلطَّيۡرُ مِن رَّأۡسِهِۦۚ قُضِيَ ٱلۡأَمۡرُ ٱلَّذِي فِيهِ تَسۡتَفۡتِيَانِ ٤١ ﴾ [يوسف: ٣٦، ٤١]
"আর কারাগারে তার সাথে প্রবেশ করল দু’জন যুবক। তাদের একজন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখতে পেলাম যে, আমি মদ নিংড়াচ্ছি’। আর অপর জন বলল, ‘আমি স্বপ্নে আমাকে দেখেছি যে, আমি আমার মাথার উপর রুটি বহন করছি তা থেকে পাখি খাচ্ছে। আপনি আমাদেরকে এর ব্যাখ্যা অবহিত করুন। নিশ্চয় আমরা আপনাকে ইহসানকারীদের অন্তর্ভুক্ত দেখতে পাচ্ছি’। সে বলল, ‘তোমাদেরকে যে খাদ্য দেওয়া হয় তা তোমাদের কাছে আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা জানিয়ে দেব। সেটি এমন জ্ঞান থেকেই বলব যা আমার রব আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। নিশ্চয়ই আমি পরিত্যাগ করেছি সে কওমের ধর্ম যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে না এবং যারা আখিরাতকে অস্বীকারকারী’।‘আর আমি অনুসরণ করেছি আমার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের ধর্ম। আল্লাহর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করা আমাদের জন্য সঙ্গত নয়। এটি আমাদের ও সকল মানুষের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না’। হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়, বহু সংখ্যক ভিন্ন ভিন্ন রব ভাল নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ’? তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে নিছক কতগুলো নামের ইবাদাত করছ, যাদের নামকরণ তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষরা করেছ, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রমাণ নাযিল করেননি। বিধান একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত করো না’। এটিই সঠিক দীন, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না’।‘হে আমার কারা সঙ্গীদ্বয়, তোমাদের একজন স্বীয় মনিবকে মদপান করাবে। আর অন্যজনকে শূলে চড়ানো হবে, অতঃপর পাখি তার মাথা থেকে আহার করবে। যে বিষয়ে তোমরা জানতে চাচ্ছ তার সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে"। [সূরা: ইউসুফ: ৩৬-৪১]
﴿ وَقَالَ ٱلۡمَلِكُ إِنِّيٓ أَرَىٰ سَبۡعَ بَقَرَٰتٖ سِمَانٖ يَأۡكُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٞ وَسَبۡعَ سُنۢبُلَٰتٍ خُضۡرٖ وَأُخَرَ يَابِسَٰتٖۖ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَأُ أَفۡتُونِي فِي رُءۡيَٰيَ إِن كُنتُمۡ لِلرُّءۡيَا تَعۡبُرُونَ ٤٣ قَالُوٓاْ أَضۡغَٰثُ أَحۡلَٰمٖۖ وَمَا نَحۡنُ بِتَأۡوِيلِ ٱلۡأَحۡلَٰمِ بِعَٰلِمِينَ ٤٤ وَقَالَ ٱلَّذِي نَجَا مِنۡهُمَا وَٱدَّكَرَ بَعۡدَ أُمَّةٍ أَنَا۠ أُنَبِّئُكُم بِتَأۡوِيلِهِۦ فَأَرۡسِلُونِ ٤٥ يُوسُفُ أَيُّهَا ٱلصِّدِّيقُ أَفۡتِنَا فِي سَبۡعِ بَقَرَٰتٖ سِمَانٖ يَأۡكُلُهُنَّ سَبۡعٌ عِجَافٞ وَسَبۡعِ سُنۢبُلَٰتٍ خُضۡرٖ وَأُخَرَ يَابِسَٰتٖ لَّعَلِّيٓ أَرۡجِعُ إِلَى ٱلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَعۡلَمُونَ ٤٦ قَالَ تَزۡرَعُونَ سَبۡعَ سِنِينَ دَأَبٗا فَمَا حَصَدتُّمۡ فَذَرُوهُ فِي سُنۢبُلِهِۦٓ إِلَّا قَلِيلٗا مِّمَّا تَأۡكُلُونَ ٤٧ ثُمَّ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ سَبۡعٞ شِدَادٞ يَأۡكُلۡنَ مَا قَدَّمۡتُمۡ لَهُنَّ إِلَّا قَلِيلٗا مِّمَّا تُحۡصِنُونَ ٤٨ ثُمَّ يَأۡتِي مِنۢ بَعۡدِ ذَٰلِكَ عَامٞ فِيهِ يُغَاثُ ٱلنَّاسُ وَفِيهِ يَعۡصِرُونَ ٤٩ ﴾ [يوسف: ٤٣، ٤٩]
"আর বাদশাহ বলল, ‘আমি স্বপ্নে দেখছি, সাতটি মোটা তাজা গাভী, তাদের খেয়ে ফেলছে সাতটি ক্ষীণকায় গাভী এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক। হে পারিষদবর্গ, তোমরা আমাকে আমার স্বপ্ন সম্বন্ধে ব্যাখ্যা দাও যদি তোমরা স্বপ্নের ব্যাখ্যা দিয়ে থাক’। তারা বলল, ‘এটি এলোমেলো অলীক স্বপ্ন। আর আমরা এরূপ স্বপ্ন ব্যাখ্যায় জ্ঞানী নই’। আর সে দু’জনের মধ্যে যে মুক্তি পেয়েছিল, সে বলল এবং দীর্ঘ দিন পর তার স্মরণ হল, ‘আমি তোমাদেরকে এর ব্যাখ্যা জানিয়ে দিচ্ছি, অতএব তোমরা আমাকে পাঠিয়ে দাও’।হে ইউসুফ, হে সত্যবাদী, আপনি আমাদের ব্যাখ্যা দিন, সাতটি মোটা তাজা গাভী সম্বন্ধে, যাদের খাচ্ছে সাতটি ক্ষীণকায় গাভী এবং সাতটি সবুজ শীষ ও অপর সাতটি শুষ্ক শীষ সম্পর্কে, যাতে আমি লোকদের কাছে ফিরে যেতে পারি যেন তারা জানতে পারে’। সে বলল, ‘তোমরা সাত বছর একাধারে চাষাবাদ করবে অতঃপর যে শস্য কেটে ঘরে তুলবে তার মধ্য থেকে যে সামান্য পরিমাণ খাবে সেগুলো ছাড়া সব শীষের মধ্যে রেখে দেবে’। তারপর আসবে সাতটি কঠিন বছর। এর জন্য তোমরা পূর্বে যা সঞ্চয় করে রেখে দেবে এরা (ঐ সময়ের লোকেরা) সেগুলো খেয়ে ফেলবে, সামান্য কিছু ছাড়া যা তোমরা সংরক্ষণ করে রাখবে’।‘এরপর আসবে এমন এক বছর যাতে মানুষ বৃষ্টি সিক্ত হবে এবং যাতে তারা (ফলের ও যয়তুনের) রস নিংড়াবে"। [সূরা: ইউসুফ: ৪৩-৪৯]
﴿ ٱذۡهَبُواْ بِقَمِيصِي هَٰذَا فَأَلۡقُوهُ عَلَىٰ وَجۡهِ أَبِي يَأۡتِ بَصِيرٗا وَأۡتُونِي بِأَهۡلِكُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩٣ وَلَمَّا فَصَلَتِ ٱلۡعِيرُ قَالَ أَبُوهُمۡ إِنِّي لَأَجِدُ رِيحَ يُوسُفَۖ لَوۡلَآ أَن تُفَنِّدُونِ ٩٤ قَالُواْ تَٱللَّهِ إِنَّكَ لَفِي ضَلَٰلِكَ ٱلۡقَدِيمِ ٩٥ فَلَمَّآ أَن جَآءَ ٱلۡبَشِيرُ أَلۡقَىٰهُ عَلَىٰ وَجۡهِهِۦ فَٱرۡتَدَّ بَصِيرٗاۖ قَالَ أَلَمۡ أَقُل لَّكُمۡ إِنِّيٓ أَعۡلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٩٦ قَالُواْ يَٰٓأَبَانَا ٱسۡتَغۡفِرۡ لَنَا ذُنُوبَنَآ إِنَّا كُنَّا خَٰطِِٔينَ ٩٧ قَالَ سَوۡفَ أَسۡتَغۡفِرُ لَكُمۡ رَبِّيٓۖ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٩٨ فَلَمَّا دَخَلُواْ عَلَىٰ يُوسُفَ ءَاوَىٰٓ إِلَيۡهِ أَبَوَيۡهِ وَقَالَ ٱدۡخُلُواْ مِصۡرَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ ٩٩ وَرَفَعَ أَبَوَيۡهِ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ وَخَرُّواْ لَهُۥ سُجَّدٗاۖ وَقَالَ يَٰٓأَبَتِ هَٰذَا تَأۡوِيلُ رُءۡيَٰيَ مِن قَبۡلُ قَدۡ جَعَلَهَا رَبِّي حَقّٗاۖ وَقَدۡ أَحۡسَنَ بِيٓ إِذۡ أَخۡرَجَنِي مِنَ ٱلسِّجۡنِ وَجَآءَ بِكُم مِّنَ ٱلۡبَدۡوِ مِنۢ بَعۡدِ أَن نَّزَغَ ٱلشَّيۡطَٰنُ بَيۡنِي وَبَيۡنَ إِخۡوَتِيٓۚ إِنَّ رَبِّي لَطِيفٞ لِّمَا يَشَآءُۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡعَلِيمُ ٱلۡحَكِيمُ ١٠٠ ۞رَبِّ قَدۡ ءَاتَيۡتَنِي مِنَ ٱلۡمُلۡكِ وَعَلَّمۡتَنِي مِن تَأۡوِيلِ ٱلۡأَحَادِيثِۚ فَاطِرَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ أَنتَ وَلِيِّۦ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ تَوَفَّنِي مُسۡلِمٗا وَأَلۡحِقۡنِي بِٱلصَّٰلِحِينَ ١٠١ ذَٰلِكَ مِنۡ أَنۢبَآءِ ٱلۡغَيۡبِ نُوحِيهِ إِلَيۡكَۖ وَمَا كُنتَ لَدَيۡهِمۡ إِذۡ أَجۡمَعُوٓاْ أَمۡرَهُمۡ وَهُمۡ يَمۡكُرُونَ ١٠٢ ﴾ [يوسف: ٩٣، ١٠٢]
“তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও, অতঃপর সেটি আমার পিতার চেহারায় ফেল। এতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন। আর তোমরা তোমাদের পরিবারের সকলকে নিয়ে আমার কাছে চলে আস’। আর যখন কাফেলা বের হল, তাদের পিতা বলল, ‘নিশ্চয় আমি ইউসুফের ঘ্রাণ পাচ্ছি, যদি তোমরা আমাকে নির্বোধবৃদ্ধ মনে না কর’। তারা বলল, ‘আল্লাহর কসম, আপনি তো সেই পুরোন ভ্রান্তিতেই আছেন’। অতঃপর যখন সুসংবাদদাতা এল, তখন সে জামাটি তার চেহারায় ফেলল। এতে সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল, বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে বলিনি, নিশ্চয় আমি আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যা জানি তোমরা তা জান না’। তারা বলল, ‘হে আমাদের পিতা, আপনি আমাদের পাপ মোচনের জন্য ক্ষমা চান। নিশ্চয় আমরা ছিলাম অপরাধী’। সে বলল, ‘অচিরেই আমি তোমাদের জন্য আমার রবের নিকট ক্ষমা চাইব, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’। অতঃপর যখন তারা ইউসুফের নিকট প্রবেশ করল, তখন সে তার পিতামাতাকে নিজের কাছে স্থান করে দিল এবং বলল, ‘আল্লাহর ইচ্ছায় আপনারা নিরাপদে মিসরে প্রবেশ করুন’।আর সে তার পিতামাতাকে রাজাসনে উঠাল এবং তারা সকলে তার সামনে সেজদায় লুটিয়ে পড়ল এবং সে বলল, ‘হে আমার পিতা, এই হল আমার ইতঃপূর্বের স্বপ্নের ব্যাখ্যা, আমার রব তা বাস্তবে পরিণত করেছেন আর তিনি আমার উপর এহসান করেছেন, যখন আমাকে জেলখানা থেকে বের করেছেন এবং তোমাদেরকে গ্রাম থেকে নিয়ে এসেছেন, শয়তান আমার ও আমার ভাইদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করার পর। নিশ্চয় আমার রব যা ইচ্ছা করেন, তা বাস্তবায়নে তিনি সূক্ষ্মদর্শী। নিশ্চয় তিনি সম্যক জ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’।‘হে আমার রব, আপনি আমাকে কিছু রাজত্ব দান করেছেন এবং স্বপ্নের কিছু ব্যাখ্যা শিখিয়েছেন। হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন’। এগুলো গায়েবের সংবাদ, যা আমি তোমার কাছে ওহী করছি। তুমি তো তাদের নিকট ছিলে না যখন তারা তাদের সিদ্ধান্তে একমত হয়েছিল অথচ তারা ষড়যন্ত্র করছিল"। [সূরা: ইউসুফ: ৯৩-১০২]
حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ؟ قَالَ: «أَتْقَاهُمْ» فَقَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: «فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ، ابْنُ نَبِيِّ اللَّهِ، ابْنِ نَبِيِّ اللَّهِ، ابْنِ خَلِيلِ اللَّهِ» قَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: «فَعَنْ مَعَادِنِ العَرَبِ تَسْأَلُونِ؟ خِيَارُهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإِسْلاَمِ، إِذَا فَقُهُوا» قَالَ: أَبُو أُسَامَةَ، وَمُعْتَمِرٌ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী। তখন তারা বলল, আমরা তো আপনাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তা হলে (সবচেয়ে সম্মানিত ব্যাক্তি) আল্লাহর নবী ইউসুফ আলাইহিস সালাম, যিনি আল্লাহর নবী (ইয়াকুব আলাইহিস সালাম)-এর পুত্র, আল্লাহ্র নবী (ইসহাক আলাইহিস সালাম)-এর পৌত্র, এবং আল্লাহর খলিল (ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম)-এর প্রপৌত্র। তারা বলল, আমরা আপনাকে এ সম্বন্ধেও জিজ্ঞাসা করিনি। তিনি বললেন, তাহলে কি তোমরা আরবের মূল্যবান গোত্রসমুহ সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করছ? জাহিলী জুগে তাদের মধ্যে যারা সর্বোত্তম ব্যাক্তি ছিলেন, ইসলামেও তাঁরা সর্বোত্তম ব্যাক্তি যদি তাঁরা ইসলামী জ্ঞানার্জন করেন। আবূ উসামা ও মু’তামির (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।
আল্লাহর নবী আইয়ুব আলাইহিস সালাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ ۞وَأَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلضُّرُّ وَأَنتَ أَرۡحَمُ ٱلرَّٰحِمِينَ ٨٣ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ فَكَشَفۡنَا مَا بِهِۦ مِن ضُرّٖۖ وَءَاتَيۡنَٰهُ أَهۡلَهُۥ وَمِثۡلَهُم مَّعَهُمۡ رَحۡمَةٗ مِّنۡ عِندِنَا وَذِكۡرَىٰ لِلۡعَٰبِدِينَ ٨٤ ﴾ [الانبياء: ٨٣، ٨٤]
“আর স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল, ‘আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের মত আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৩-৮৪]
﴿ وَٱذۡكُرۡ عَبۡدَنَآ أَيُّوبَ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥٓ أَنِّي مَسَّنِيَ ٱلشَّيۡطَٰنُ بِنُصۡبٖ وَعَذَابٍ ٤١ ٱرۡكُضۡ بِرِجۡلِكَۖ هَٰذَا مُغۡتَسَلُۢ بَارِدٞ وَشَرَابٞ ٤٢ وَوَهَبۡنَا لَهُۥٓ أَهۡلَهُۥ وَمِثۡلَهُم مَّعَهُمۡ رَحۡمَةٗ مِّنَّا وَذِكۡرَىٰ لِأُوْلِي ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٤٣ وَخُذۡ بِيَدِكَ ضِغۡثٗا فَٱضۡرِب بِّهِۦ وَلَا تَحۡنَثۡۗ إِنَّا وَجَدۡنَٰهُ صَابِرٗاۚ نِّعۡمَ ٱلۡعَبۡدُ إِنَّهُۥٓ أَوَّابٞ ٤٤ ﴾ [ص: ٤١، ٤٤]
“আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইউবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, ‘শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আযাবের ছোঁয়া দিয়েছে’।[আমি বললাম], ‘তুমি তোমার পা দিয়ে (ভূমিতে) আঘাত কর, এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়’। আর আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ ও বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ আমি তাকে দান করলাম তার পরিবার-পরিজন ও তাদের সাথে তাদের অনুরূপ অনেককে। আর তুমি তোমার হাতে এক মুঠো তৃণলতা নাও এবং তা দিয়ে আঘাত কর। আর কসম ভংগ করো না। নিশ্চয় আমি তাকে ধৈর্যশীল পেয়েছি। সে কতই না উত্তম বান্দা! নিশ্চয়ই সে ছিল আমার অভিমুখী”। [সূরা সোয়াদ: ৪১-৪৪]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «بَيْنَمَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا، خَرَّ عَلَيْهِ رِجْلُ جَرَادٍ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ يَحْثِي فِي ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ يَا أَيُّوبُ أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى، قَالَ بَلَى يَا رَبِّ، وَلَكِنْ لاَ غِنَى لِي عَنْ بَرَكَتِكَ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা আইয়্যুব আলাইহিস সালাম নগ্ন দেহে গোসল করেছিলেন। এমন সময় তাঁর উপর স্বর্ণের এক ঝাঁক পঙ্গপাল পতিত হল। তিনি সেগুলো দু’হাতে কাপড়ে রাখতে লাগলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে ডেকে বললেন, হে আইয়্যুব! তুমি যা দেখতে পাচ্ছ, তা থেকে কি আমি তোমাকে মুখাপেক্ষীহীন করে দেই নি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, হে রব! কিন্তু আমি আপনার বরকতের অমুখাপেক্ষী নই।
আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর জাতি
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ أُمِّ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَرۡضِعِيهِۖ فَإِذَا خِفۡتِ عَلَيۡهِ فَأَلۡقِيهِ فِي ٱلۡيَمِّ وَلَا تَخَافِي وَلَا تَحۡزَنِيٓۖ إِنَّا رَآدُّوهُ إِلَيۡكِ وَجَاعِلُوهُ مِنَ ٱلۡمُرۡسَلِينَ ٧ فَٱلۡتَقَطَهُۥٓ ءَالُ فِرۡعَوۡنَ لِيَكُونَ لَهُمۡ عَدُوّٗا وَحَزَنًاۗ إِنَّ فِرۡعَوۡنَ وَهَٰمَٰنَ وَجُنُودَهُمَا كَانُواْ خَٰطِِٔينَ ٨ وَقَالَتِ ٱمۡرَأَتُ فِرۡعَوۡنَ قُرَّتُ عَيۡنٖ لِّي وَلَكَۖ لَا تَقۡتُلُوهُ عَسَىٰٓ أَن يَنفَعَنَآ أَوۡ نَتَّخِذَهُۥ وَلَدٗا وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ٩ وَأَصۡبَحَ فُؤَادُ أُمِّ مُوسَىٰ فَٰرِغًاۖ إِن كَادَتۡ لَتُبۡدِي بِهِۦ لَوۡلَآ أَن رَّبَطۡنَا عَلَىٰ قَلۡبِهَا لِتَكُونَ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٠ وَقَالَتۡ لِأُخۡتِهِۦ قُصِّيهِۖ فَبَصُرَتۡ بِهِۦ عَن جُنُبٖ وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ١١ ۞وَحَرَّمۡنَا عَلَيۡهِ ٱلۡمَرَاضِعَ مِن قَبۡلُ فَقَالَتۡ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰٓ أَهۡلِ بَيۡتٖ يَكۡفُلُونَهُۥ لَكُمۡ وَهُمۡ لَهُۥ نَٰصِحُونَ ١٢ فَرَدَدۡنَٰهُ إِلَىٰٓ أُمِّهِۦ كَيۡ تَقَرَّ عَيۡنُهَا وَلَا تَحۡزَنَ وَلِتَعۡلَمَ أَنَّ وَعۡدَ ٱللَّهِ حَقّٞ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٣ ﴾ [القصص: ٧، ١٣]
“আর আমি মূসার মায়ের প্রতি নির্দেশ পাঠালাম, ‘তুমি তাকে দুধ পান করাও। অতঃপর যখন তুমি তার ব্যাপারে আশঙ্কা করবে, তখন তাকে দরিয়ায় নিক্ষেপ করবে। আর তুমি ভয় করবে না এবং চিন্তা করবে না। নিশ্চয় আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেব এবং তাকে রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত করব’। অতঃপর ফির‘আউন পরিবার তাকে উঠিয়ে নিল, পরিণামে সে তাদের শত্রু ও দুঃশ্চিন্তার কারণ হবে। নিশ্চয় ফির‘আউন, হামান ও তাদের সৈন্যরা ছিল অপরাধী। আর ফির‘আউনের স্ত্রী বলল, ‘এ শিশুটি আমার ও তোমার চক্ষু শীতলকারী, তাকে হত্যা করো না। আশা করা যায়, সে আমাদের কোনো উপকারে আসবে। অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে পারি’। অথচ তারা উপলব্ধি করতে পারেনি। আর মূসার মায়ের অন্তর বিচলিত হয়ে উঠেছিল। সে তো তার পরিচয় প্রকাশ করেই দিত, যদি আমি তার অন্তরকে দৃঢ় করে না দিতাম, যাতে সে আস্থাশীলদের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর সে মূসার বোনকে বলল, ‘এর পিছনে পিছনে যাও’। সে দূর থেকে তাকে দেখছিল, কিন্তু তারা টের পায়নি।আর আমি তার জন্য পূর্ব থেকেই ধাত্রী (স্তন্য পান) নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলাম। তারপর মূসার বোন এসে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি পরিবারের সন্ধান দেব, যারা এ শিশুটিকে তোমাদের পক্ষে লালন পালন করবে এবং তারা তার শুভাকাঙ্ক্ষী হবে’। অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম, যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে যেন কোনো দুশ্চিন্তা না করে। আর সে যেন জানতে পারে যে, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য। কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না”। [সূরা আল্-কাসাস: ৭-১৩]
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿ ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۢ بَعۡدِهِم مُّوسَىٰ بَِٔايَٰتِنَآ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَإِيْهِۦ فَظَلَمُواْ بِهَاۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلۡمُفۡسِدِينَ ١٠٣ وَقَالَ مُوسَىٰ يَٰفِرۡعَوۡنُ إِنِّي رَسُولٞ مِّن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٠٤ حَقِيقٌ عَلَىٰٓ أَن لَّآ أَقُولَ عَلَى ٱللَّهِ إِلَّا ٱلۡحَقَّۚ قَدۡ جِئۡتُكُم بِبَيِّنَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ فَأَرۡسِلۡ مَعِيَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ١٠٥ قَالَ إِن كُنتَ جِئۡتَ بَِٔايَةٖ فَأۡتِ بِهَآ إِن كُنتَ مِنَ ٱلصَّٰدِقِينَ ١٠٦ فَأَلۡقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعۡبَانٞ مُّبِينٞ ١٠٧ وَنَزَعَ يَدَهُۥ فَإِذَا هِيَ بَيۡضَآءُ لِلنَّٰظِرِينَ ١٠٨ قَالَ ٱلۡمَلَأُ مِن قَوۡمِ فِرۡعَوۡنَ إِنَّ هَٰذَا لَسَٰحِرٌ عَلِيمٞ ١٠٩ يُرِيدُ أَن يُخۡرِجَكُم مِّنۡ أَرۡضِكُمۡۖ فَمَاذَا تَأۡمُرُونَ ١١٠ قَالُوٓاْ أَرۡجِهۡ وَأَخَاهُ وَأَرۡسِلۡ فِي ٱلۡمَدَآئِنِ حَٰشِرِينَ ١١١ يَأۡتُوكَ بِكُلِّ سَٰحِرٍ عَلِيمٖ ١١٢ وَجَآءَ ٱلسَّحَرَةُ فِرۡعَوۡنَ قَالُوٓاْ إِنَّ لَنَا لَأَجۡرًا إِن كُنَّا نَحۡنُ ٱلۡغَٰلِبِينَ ١١٣ قَالَ نَعَمۡ وَإِنَّكُمۡ لَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ١١٤ قَالُواْ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلۡقِيَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ نَحۡنُ ٱلۡمُلۡقِينَ ١١٥ قَالَ أَلۡقُواْۖ فَلَمَّآ أَلۡقَوۡاْ سَحَرُوٓاْ أَعۡيُنَ ٱلنَّاسِ وَٱسۡتَرۡهَبُوهُمۡ وَجَآءُو بِسِحۡرٍ عَظِيمٖ ١١٦ ۞وَأَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَلۡقِ عَصَاكَۖ فَإِذَا هِيَ تَلۡقَفُ مَا يَأۡفِكُونَ ١١٧ فَوَقَعَ ٱلۡحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١١٨ فَغُلِبُواْ هُنَالِكَ وَٱنقَلَبُواْ صَٰغِرِينَ ١١٩ وَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سَٰجِدِينَ ١٢٠ قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١٢١ رَبِّ مُوسَىٰ وَهَٰرُونَ ١٢٢ قَالَ فِرۡعَوۡنُ ءَامَنتُم بِهِۦ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّ هَٰذَا لَمَكۡرٞ مَّكَرۡتُمُوهُ فِي ٱلۡمَدِينَةِ لِتُخۡرِجُواْ مِنۡهَآ أَهۡلَهَاۖ فَسَوۡفَ تَعۡلَمُونَ ١٢٣ لَأُقَطِّعَنَّ أَيۡدِيَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَٰفٖ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمۡ أَجۡمَعِينَ ١٢٤ قَالُوٓاْ إِنَّآ إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ ١٢٥ وَمَا تَنقِمُ مِنَّآ إِلَّآ أَنۡ ءَامَنَّا بَِٔايَٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَاۚ رَبَّنَآ أَفۡرِغۡ عَلَيۡنَا صَبۡرٗا وَتَوَفَّنَا مُسۡلِمِينَ ١٢٦ ﴾ [الاعراف: ١٠٣، ١٢٦]
“অতঃপর তাদের পরে আমি মূসাকে আমার আয়াতসমূহ সহকারে ফির‘আউন ও তার সভাসদদের কাছে পাঠিয়েছি। অতঃপর তারা এর সাথে যুলম করেছে। সুতরাং লক্ষ্য কর, ফাসাদকারীদের পরিণাম কীরূপ হয়েছিল। মূসা বলল, ‘হে ফির‘আউন, আমি তো সকল সৃষ্টির রবের পক্ষ থেকে রাসূল।’ সমীচীন যে, আমি আল্লাহ সম্পর্কে সত্য ছাড়া বলব না। আমি তোমাদের রবের নিকট থেকে স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছি। সুতরাং তুমি বনী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।’ সে বলল, ‘তুমি যদি কোনো আয়াত নিয়ে আস তবে তা পেশ কর, যদি তুমি সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ তখন সে ছেড়ে দিল তার লাঠি। তৎক্ষণাৎ তা এক স্পষ্ট অজগর হয়ে গেল। আর সে বের করল তার হাত, তৎক্ষণাৎ তা দর্শকদের কাছে ধবধবে সাদা (দেখাচ্ছিল)। ফির‘আউনের কওমের সভাসদরা বলল, ‘নিশ্চয় এ হল বিজ্ঞ জাদুকর।’‘সে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করতে চায়, সুতরাং তোমরা কী নির্দেশ দেবে?’ তারা বলল, ‘আপনি তাকে ও তার ভাইকে সুযোগ দিন এবং শহরগুলোতে সংগ্রহকারী পাঠিয়ে দিন।’‘তারা আপনার কাছে সকল বিজ্ঞ জাদুকরকে নিয়ে আসবে।’ আর জাদুকররা ফির‘আউনের কাছে আসল। তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমাদের জন্য পারিশ্রমিক আছে, যদি আমরা বিজয়ী হই?’ সে বলল, ‘হ্যাঁ, আর অবশ্যই তোমরা আমার ঘনিষ্ঠ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ তারা বলল, ‘হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ করবে, নয়তো আমরাই নিক্ষেপ করব।’ সে বলল, ‘তোমরা নিক্ষেপ কর।’ অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করল তখন তারা লোকদের চোখে জাদু করল এবং তাদেরকে ভীত করে তুলল। তারা বড় জাদু প্রদর্শন করল। আর আমি মূসার প্রতি ওহী পাঠালাম যে, ‘তুমি তোমার লাঠি ছেড়ে দাও’ তৎক্ষণাৎ সে গিলতে লাগল সেগুলিকে যে অলীক বস্তু তারা বানিয়েছিল। ফলে সত্য প্রকাশ হয়ে গেল এবং তারা যা কিছু করছিল তা বাতিল হয়ে গেল। তাই সেখানে তারা পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত হয়ে গেল। আর জাদুকররা সিজদায় পড়ে গেল। তারা বলল, ‘আমরা সকল সৃষ্টির রবের প্রতি ঈমান আনলাম, মূসা ও হারূনের রবের প্রতি।’ ফির‘আউন বলল, ‘আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার আগে তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে! নিশ্চয় এটা এমন এক চক্রান্ত যা তোমরা শহরে করেছ সেখান থেকে তার অধিবাসীদেরকে বের করার জন্য। সুতরাং তোমরা অচিরেই জানতে পারবে।’ আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেব। তারপর অবশ্যই তোমাদের সবাইকে শূলে চড়াব।’ তারা বলল, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের কাছে প্রত্যাবর্তন করব। আর তুমি আমাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করছ শুধু এ কারণে যে, আমরা আমাদের রবের আয়াতসমূহের প্রতি ঈমান এনেছি, যখন তা আমাদের কাছে এসেছে। হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১০৩-১২৬]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ وَهَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ مُوسَىٰٓ ٩ إِذۡ رَءَا نَارٗا فَقَالَ لِأَهۡلِهِ ٱمۡكُثُوٓاْ إِنِّيٓ ءَانَسۡتُ نَارٗا لَّعَلِّيٓ ءَاتِيكُم مِّنۡهَا بِقَبَسٍ أَوۡ أَجِدُ عَلَى ٱلنَّارِ هُدٗى ١٠ فَلَمَّآ أَتَىٰهَا نُودِيَ يَٰمُوسَىٰٓ ١١ إِنِّيٓ أَنَا۠ رَبُّكَ فَٱخۡلَعۡ نَعۡلَيۡكَ إِنَّكَ بِٱلۡوَادِ ٱلۡمُقَدَّسِ طُوٗى ١٢ وَأَنَا ٱخۡتَرۡتُكَ فَٱسۡتَمِعۡ لِمَا يُوحَىٰٓ ١٣ إِنَّنِيٓ أَنَا ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنَا۠ فَٱعۡبُدۡنِي وَأَقِمِ ٱلصَّلَوٰةَ لِذِكۡرِيٓ ١٤ إِنَّ ٱلسَّاعَةَ ءَاتِيَةٌ أَكَادُ أُخۡفِيهَا لِتُجۡزَىٰ كُلُّ نَفۡسِۢ بِمَا تَسۡعَىٰ ١٥ فَلَا يَصُدَّنَّكَ عَنۡهَا مَن لَّا يُؤۡمِنُ بِهَا وَٱتَّبَعَ هَوَىٰهُ فَتَرۡدَىٰ ١٦ وَمَا تِلۡكَ بِيَمِينِكَ يَٰمُوسَىٰ ١٧ قَالَ هِيَ عَصَايَ أَتَوَكَّؤُاْ عَلَيۡهَا وَأَهُشُّ بِهَا عَلَىٰ غَنَمِي وَلِيَ فِيهَا مََٔارِبُ أُخۡرَىٰ ١٨ قَالَ أَلۡقِهَا يَٰمُوسَىٰ ١٩ فَأَلۡقَىٰهَا فَإِذَا هِيَ حَيَّةٞ تَسۡعَىٰ ٢٠ قَالَ خُذۡهَا وَلَا تَخَفۡۖ سَنُعِيدُهَا سِيرَتَهَا ٱلۡأُولَىٰ ٢١ وَٱضۡمُمۡ يَدَكَ إِلَىٰ جَنَاحِكَ تَخۡرُجۡ بَيۡضَآءَ مِنۡ غَيۡرِ سُوٓءٍ ءَايَةً أُخۡرَىٰ ٢٢ لِنُرِيَكَ مِنۡ ءَايَٰتِنَا ٱلۡكُبۡرَى ٢٣ ٱذۡهَبۡ إِلَىٰ فِرۡعَوۡنَ إِنَّهُۥ طَغَىٰ ٢٤ قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِي صَدۡرِي ٢٥ وَيَسِّرۡ لِيٓ أَمۡرِي ٢٦ وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَةٗ مِّن لِّسَانِي ٢٧ يَفۡقَهُواْ قَوۡلِي ٢٨ وَٱجۡعَل لِّي وَزِيرٗا مِّنۡ أَهۡلِي ٢٩ هَٰرُونَ أَخِي ٣٠ ٱشۡدُدۡ بِهِۦٓ أَزۡرِي ٣١ وَأَشۡرِكۡهُ فِيٓ أَمۡرِي ٣٢ كَيۡ نُسَبِّحَكَ كَثِيرٗا ٣٣ وَنَذۡكُرَكَ كَثِيرًا ٣٤ إِنَّكَ كُنتَ بِنَا بَصِيرٗا ٣٥ قَالَ قَدۡ أُوتِيتَ سُؤۡلَكَ يَٰمُوسَىٰ ٣٦ وَلَقَدۡ مَنَنَّا عَلَيۡكَ مَرَّةً أُخۡرَىٰٓ ٣٧ إِذۡ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰٓ أُمِّكَ مَا يُوحَىٰٓ ٣٨ أَنِ ٱقۡذِفِيهِ فِي ٱلتَّابُوتِ فَٱقۡذِفِيهِ فِي ٱلۡيَمِّ فَلۡيُلۡقِهِ ٱلۡيَمُّ بِٱلسَّاحِلِ يَأۡخُذۡهُ عَدُوّٞ لِّي وَعَدُوّٞ لَّهُۥۚ وَأَلۡقَيۡتُ عَلَيۡكَ مَحَبَّةٗ مِّنِّي وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ٣٩ إِذۡ تَمۡشِيٓ أُخۡتُكَ فَتَقُولُ هَلۡ أَدُلُّكُمۡ عَلَىٰ مَن يَكۡفُلُهُۥۖ فَرَجَعۡنَٰكَ إِلَىٰٓ أُمِّكَ كَيۡ تَقَرَّ عَيۡنُهَا وَلَا تَحۡزَنَۚ وَقَتَلۡتَ نَفۡسٗا فَنَجَّيۡنَٰكَ مِنَ ٱلۡغَمِّ وَفَتَنَّٰكَ فُتُونٗاۚ فَلَبِثۡتَ سِنِينَ فِيٓ أَهۡلِ مَدۡيَنَ ثُمَّ جِئۡتَ عَلَىٰ قَدَرٖ يَٰمُوسَىٰ ٤٠ ﴾ [طه: ٩، ٤٠]
“আর তোমার কাছে কি মূসার কথা পৌঁছেছে? যখন সে আগুন দেখল, তখন নিজ পরিবারকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, আশা করি আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাব।’ যখন সে আগুনের কাছে আসল তখন তাকে আহবান করা হল, ‘হে মূসা’ নিশ্চয় আমি তোমার রব; সুতরাং তোমার জুতা জোড়া খুলে ফেল, নিশ্চয় তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ’।‘আর আমি তোমাকে মনোনীত করেছি, সুতরাং যা ওহীরূপে পাঠানো হচ্ছে তা মনোযোগ দিয়ে শুন’।‘নিশ্চয় আমি আল্লাহ, আমি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই; সুতরাং আমার ইবাদাত কর এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম কর’।‘নিশ্চয় কিয়ামত আসবে; আমি তা গোপন রাখতে চাই যাতে প্রত্যেককে স্বীয় চেষ্টা-সাধনা অনুযায়ী প্রতিদান দেওয়া যায়’। অতএব যে ব্যক্তি তার প্রতি ঈমান রাখে না এবং স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে যেন কিছুতেই তাতে ঈমান আনয়নে তোমাকে বাধা দিতে না পারে; অন্যথায় তুমি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর ‘হে মূসা, তোমার ডান হাতে ওটা কি’? সে বলল, ‘এটি আমার লাঠি; আমি এর ওপর ভর করি, এটি দিয়ে আমি আমার মেষপালের জন্য গাছের পাতা পাড়ি এবং এটি আমার আরো অনেক কাজে লাগে।’ তিনি বললেন, ‘হে মূসা! ওটা ফেলে দাও।’ অতঃপর সে তা ফেলে দিল; অমনি তা সাপ হয়ে ছুটতে লাগল। তিনি বললেন, ‘ওটা ধর এবং ভয় করো না, আমি ওকে ওর পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব’।‘আর তোমার হাত তোমার বগলের সাথে মিলাও, তাহলে তা উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসবে কোনরূপ ত্রুটি ছাড়া; আরেকটি নিদর্শনরূপে’। এটা এজন্য যে, আমি তোমাকে আমার বড় বড় নিদর্শনসমূহের কিছু দেখাব।‘ফির‘আউনের কাছে যাও; নিশ্চয় সে সীমালঙ্ঘন করেছে’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন’‘এবং আমার কাজ সহজ করে দিন, ‘আর আমার জিহবার জড়তা দূর করে দিন- যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে’।‘আর আমার পরিবার থেকে আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দিন। আমার ভাই হারূনকে’‘তার দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় করুন এবং তাকে আমার কাজে শরীক করুন’।‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি’, এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি।‘আপনিই তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা’। তিনি বললেন, ‘হে মূসা, তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেওয়া হল’।‘আর আমি আরো একবার তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম’। ‘যখন আমি তোমার মাতাকে জানিয়ে দিয়েছিলাম যা জানাবার ছিল, ‘যে, তুমি তাঁকে সিন্ধুকের মধ্যে রেখে দাও। তারপর তা দরিয়ায় ভাসিয়ে দাও। যেন দরিয়া তাকে তীরে ঠেলে দেয়। ফলে তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু নিয়ে নেবে। আর আমি আমার পক্ষ থেকে তোমার প্রতি ভালবাসা ঢেলে দিয়েছিলাম, যাতে তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও’। যখন তোমার বোন (সিন্দুকের সাথে সাথে) চলছিল। অতঃপর সে গিয়ে বলল, ‘আমি কি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দেব, যে এর দায়িত্বভার নিতে পারবে’? অতঃপর আমি তোমাকে তোমার মায়ের নিকট ফিরিয়ে দিলাম; যাতে তার চোখ জুড়ায় এবং সে দুঃখ না পায়। আর তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলে। তখন আমি তোমাকে মানোবেদনা থেকে মুক্তি দিলাম এবং তোমাকে আমি বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি। অতঃপর তুমি কয়েক বছর মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে অবস্থান করেছ। হে মূসা, তারপর নির্ধারিত সময়ে তুমি এসে উপস্থিত হলে”। [সূরা তা-হা: ৯-৪০]
আল্লাহ আরো বলেছেন,
﴿ وَلَقَدۡ أَرَيۡنَٰهُ ءَايَٰتِنَا كُلَّهَا فَكَذَّبَ وَأَبَىٰ ٥٦ قَالَ أَجِئۡتَنَا لِتُخۡرِجَنَا مِنۡ أَرۡضِنَا بِسِحۡرِكَ يَٰمُوسَىٰ ٥٧ فَلَنَأۡتِيَنَّكَ بِسِحۡرٖ مِّثۡلِهِۦ فَٱجۡعَلۡ بَيۡنَنَا وَبَيۡنَكَ مَوۡعِدٗا لَّا نُخۡلِفُهُۥ نَحۡنُ وَلَآ أَنتَ مَكَانٗا سُوٗى ٥٨ قَالَ مَوۡعِدُكُمۡ يَوۡمُ ٱلزِّينَةِ وَأَن يُحۡشَرَ ٱلنَّاسُ ضُحٗى ٥٩ فَتَوَلَّىٰ فِرۡعَوۡنُ فَجَمَعَ كَيۡدَهُۥ ثُمَّ أَتَىٰ ٦٠ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ وَيۡلَكُمۡ لَا تَفۡتَرُواْ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبٗا فَيُسۡحِتَكُم بِعَذَابٖۖ وَقَدۡ خَابَ مَنِ ٱفۡتَرَىٰ ٦١ فَتَنَٰزَعُوٓاْ أَمۡرَهُم بَيۡنَهُمۡ وَأَسَرُّواْ ٱلنَّجۡوَىٰ ٦٢ قَالُوٓاْ إِنۡ هَٰذَٰنِ لَسَٰحِرَٰنِ يُرِيدَانِ أَن يُخۡرِجَاكُم مِّنۡ أَرۡضِكُم بِسِحۡرِهِمَا وَيَذۡهَبَا بِطَرِيقَتِكُمُ ٱلۡمُثۡلَىٰ ٦٣ فَأَجۡمِعُواْ كَيۡدَكُمۡ ثُمَّ ٱئۡتُواْ صَفّٗاۚ وَقَدۡ أَفۡلَحَ ٱلۡيَوۡمَ مَنِ ٱسۡتَعۡلَىٰ ٦٤ قَالُواْ يَٰمُوسَىٰٓ إِمَّآ أَن تُلۡقِيَ وَإِمَّآ أَن نَّكُونَ أَوَّلَ مَنۡ أَلۡقَىٰ ٦٥ قَالَ بَلۡ أَلۡقُواْۖ فَإِذَا حِبَالُهُمۡ وَعِصِيُّهُمۡ يُخَيَّلُ إِلَيۡهِ مِن سِحۡرِهِمۡ أَنَّهَا تَسۡعَىٰ ٦٦ فَأَوۡجَسَ فِي نَفۡسِهِۦ خِيفَةٗ مُّوسَىٰ ٦٧ قُلۡنَا لَا تَخَفۡ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡأَعۡلَىٰ ٦٨ وَأَلۡقِ مَا فِي يَمِينِكَ تَلۡقَفۡ مَا صَنَعُوٓاْۖ إِنَّمَا صَنَعُواْ كَيۡدُ سَٰحِرٖۖ وَلَا يُفۡلِحُ ٱلسَّاحِرُ حَيۡثُ أَتَىٰ ٦٩ فَأُلۡقِيَ ٱلسَّحَرَةُ سُجَّدٗا قَالُوٓاْ ءَامَنَّا بِرَبِّ هَٰرُونَ وَمُوسَىٰ ٧٠ قَالَ ءَامَنتُمۡ لَهُۥ قَبۡلَ أَنۡ ءَاذَنَ لَكُمۡۖ إِنَّهُۥ لَكَبِيرُكُمُ ٱلَّذِي عَلَّمَكُمُ ٱلسِّحۡرَۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيۡدِيَكُمۡ وَأَرۡجُلَكُم مِّنۡ خِلَٰفٖ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمۡ فِي جُذُوعِ ٱلنَّخۡلِ وَلَتَعۡلَمُنَّ أَيُّنَآ أَشَدُّ عَذَابٗا وَأَبۡقَىٰ ٧١ قَالُواْ لَن نُّؤۡثِرَكَ عَلَىٰ مَا جَآءَنَا مِنَ ٱلۡبَيِّنَٰتِ وَٱلَّذِي فَطَرَنَاۖ فَٱقۡضِ مَآ أَنتَ قَاضٍۖ إِنَّمَا تَقۡضِي هَٰذِهِ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَآ ٧٢ إِنَّآ ءَامَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغۡفِرَ لَنَا خَطَٰيَٰنَا وَمَآ أَكۡرَهۡتَنَا عَلَيۡهِ مِنَ ٱلسِّحۡرِۗ وَٱللَّهُ خَيۡرٞ وَأَبۡقَىٰٓ ٧٣ ﴾ [طه: ٥٦، ٧٣]
“আমি তাকে আমার সকল নিদর্শন দেখিয়েছিলাম, কিন্তু সে মিথ্যা আরোপ করেছে এবং অমান্য করেছে। সে বলল, ‘হে মূসা, তুমি কি আমাদের কাছে এজন্য এসেছ যে, তোমার জাদুর দ্বারা আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবে’? ‘তাহলে আমরা অবশ্যই তোমার নিকট অনুরূপ জাদু নিয়ে আসব। সুতরাং একটা মধ্যবর্তী স্থানে আমাদের ও তোমার মিলিত হওয়ার জন্য একটি সময় নির্ধারণ কর, যা আমরাও লঙ্ঘন করব না, তুমিও করবে না’। মূসা বলল, ‘তোমাদের নির্ধারিত সময় হল উৎসবের দিন। আর সেদিন পূর্বাহ্নেই যেন লোকজনকে সমবেত করা হয়’। অতঃপর ফির‘আউন উঠে গেল। তারপর সে তার কৌশল একত্র করল, তারপর সে আসল। মূসা তাদেরকে বলল, ‘তোমাদের দুর্ভাগ্য! তোমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করো না। করলে তিনি আযাব দ্বারা তোমাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা আরোপ করে, সে-ই ব্যর্থ হয়। তখন তারা নিজদের মধ্যে তাদের কর্ম সম্বন্ধে বাক-বিতন্ডা করল এবং তারা গোপনে পরামর্শ করল। তারা বলল, ‘এ দু’জন অবশ্যই জাদুকর। তারা চায় তাদের জাদুর মাধ্যমে তোমাদেরকে তোমাদের দেশ থেকে বের করে দিতে এবং তোমাদের উৎকৃষ্ট জীবন পদ্ধতি ধ্বংস করে দিতে’।‘কাজেই তোমরা তোমাদের কলা-কৌশল জমা কর। তারপর তোমরা সবাই সারিবদ্ধভাবে আস। আর আজ যে বিজয়ী হবে, সে-ই সফল হবে’। তারা বলল, হে মূসা, হয় তুমি নিক্ষেপ কর, না হয় আমরাই প্রথমে নিক্ষেপ করি। মূসা বলল, ‘বরং তোমরাই নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাদের জাদুর প্রভাবে মূসার কাছে মনে হল যেন তাদের রশি ও লাঠিগুলো ছুটোছুটি করছে। তখন মূসা তার অন্তরে কিছুটা ভীতি অনুভব করল। আমি বললাম, ‘তুমি ভয় পেয়ো না, নিশ্চয় তুমিই বিজয়ী হবে’।‘আর তোমার ডান হাতে যা আছে, তা ফেলে দাও। তারা যা করেছে, এটা সেগুলো গ্রাস করে ফেলবে। তারা যা করেছে, তাতো কেবল জাদুকরের কৌশল। আর জাদুকর যেখানেই আসুক না কেন, সে সফল হবে না’। অতঃপর জাদুকরেরা সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। তারা বলল, ‘আমরা হারূন ও মূসার রবের প্রতি ঈমান আনলাম’।ফির‘আউন বলল, ‘কী, আমি তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়ার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয় সে-ই তোমাদের প্রধান, যে তোমাদেরকে জাদু শিখিয়েছে। সুতরাং আমি অবশ্যই তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলব এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর গাছের কান্ডে শূলিবিদ্ধ করবই। আর তোমরা অবশ্যই জানতে পারবে, আমাদের মধ্যে কার আযাব বেশী কঠোর এবং বেশী স্থায়ী।তারা বলল, ‘আমাদের নিকট যে সকল স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তার উপর আমরা তোমাকে কিছুতেই প্রাধান্য দেব না। সুতরাং তুমি যা ফয়সালা করতে চাও, তাই করো। তুমিতো কেবল এ দুনিয়ার জীবনের উপর কর্তৃত্ব করতে পার’।‘নিশ্চয় আমরা আমাদের রবের প্রতি ঈমান এনেছি, যাতে তিনি আমাদের অপরাধসমূহ এবং যে জাদু তুমি আমাদেরকে করতে বাধ্য করেছ, তা ক্ষমা করে দেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী”। [সূরা তা-হা: ৫৬-৭৩]
﴿ وَلَقَدۡ أَوۡحَيۡنَآ إِلَىٰ مُوسَىٰٓ أَنۡ أَسۡرِ بِعِبَادِي فَٱضۡرِبۡ لَهُمۡ طَرِيقٗا فِي ٱلۡبَحۡرِ يَبَسٗا لَّا تَخَٰفُ دَرَكٗا وَلَا تَخۡشَىٰ ٧٧ فَأَتۡبَعَهُمۡ فِرۡعَوۡنُ بِجُنُودِهِۦ فَغَشِيَهُم مِّنَ ٱلۡيَمِّ مَا غَشِيَهُمۡ ٧٨ وَأَضَلَّ فِرۡعَوۡنُ قَوۡمَهُۥ وَمَا هَدَىٰ ٧٩ يَٰبَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ قَدۡ أَنجَيۡنَٰكُم مِّنۡ عَدُوِّكُمۡ وَوَٰعَدۡنَٰكُمۡ جَانِبَ ٱلطُّورِ ٱلۡأَيۡمَنَ وَنَزَّلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰ ٨٠ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡ وَلَا تَطۡغَوۡاْ فِيهِ فَيَحِلَّ عَلَيۡكُمۡ غَضَبِيۖ وَمَن يَحۡلِلۡ عَلَيۡهِ غَضَبِي فَقَدۡ هَوَىٰ ٨١ ﴾ [طه: ٧٧، ٨١]
“আর আমি অবশ্যই মূসার কাছে ওহী প্রেরণ করেছিলাম যে, ‘আমার বান্দাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় রওয়ানা হও। অতঃপর সজোরে আঘাত করে তাদের জন্য শুকনো রাস্তা বানাও। পেছন থেকে ধরে ফেলার আশংকা করো না এবং ভয়ও করো না’। তারপর ফির‘আউন তার সেনাবাহিনী সহ তাদের পিছু নিল। অতঃপর সমুদ্র তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করল। আর ফির‘আউন তার কওমকে পথভ্রষ্ট করেছিল এবং সে সঠিক পথ দেখায়নি। হে বনী ইসরাঈল, আমিই তোমাদেরকে তোমাদের শত্রু থেকে নাজাত দিয়েছি। আর তোমাদেরকে ওয়াদা দিয়েছিলাম তূর পাহাড়ের ডান পাশের এবং আমি তোমাদের জন্য অবতরণ করেছিলাম ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’। আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দান করেছি তা থেকে ভালগুলো খাও এবং এতে সীমালঙ্ঘন করো না। করলে তোমাদের উপর আমার গযব পতিত হবে। আর যার উপর আমার গযব পতিত হয় সে অবশ্যই ধ্বংস হয়”।[সূরা তা-হা: ৭৭-৮১]
﴿ وَلَقَدۡ أَخَذۡنَآ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ بِٱلسِّنِينَ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ ١٣٠ فَإِذَا جَآءَتۡهُمُ ٱلۡحَسَنَةُ قَالُواْ لَنَا هَٰذِهِۦۖ وَإِن تُصِبۡهُمۡ سَيِّئَةٞ يَطَّيَّرُواْ بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُۥٓۗ أَلَآ إِنَّمَا طَٰٓئِرُهُمۡ عِندَ ٱللَّهِ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ١٣١ وَقَالُواْ مَهۡمَا تَأۡتِنَا بِهِۦ مِنۡ ءَايَةٖ لِّتَسۡحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحۡنُ لَكَ بِمُؤۡمِنِينَ ١٣٢ فَأَرۡسَلۡنَا عَلَيۡهِمُ ٱلطُّوفَانَ وَٱلۡجَرَادَ وَٱلۡقُمَّلَ وَٱلضَّفَادِعَ وَٱلدَّمَ ءَايَٰتٖ مُّفَصَّلَٰتٖ فَٱسۡتَكۡبَرُواْ وَكَانُواْ قَوۡمٗا مُّجۡرِمِينَ ١٣٣ وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيۡهِمُ ٱلرِّجۡزُ قَالُواْ يَٰمُوسَى ٱدۡعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَۖ لَئِن كَشَفۡتَ عَنَّا ٱلرِّجۡزَ لَنُؤۡمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرۡسِلَنَّ مَعَكَ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ ١٣٤ فَلَمَّا كَشَفۡنَا عَنۡهُمُ ٱلرِّجۡزَ إِلَىٰٓ أَجَلٍ هُم بَٰلِغُوهُ إِذَا هُمۡ يَنكُثُونَ ١٣٥ فَٱنتَقَمۡنَا مِنۡهُمۡ فَأَغۡرَقۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡيَمِّ بِأَنَّهُمۡ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا وَكَانُواْ عَنۡهَا غَٰفِلِينَ ١٣٦ وَأَوۡرَثۡنَا ٱلۡقَوۡمَ ٱلَّذِينَ كَانُواْ يُسۡتَضۡعَفُونَ مَشَٰرِقَ ٱلۡأَرۡضِ وَمَغَٰرِبَهَا ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۖ وَتَمَّتۡ كَلِمَتُ رَبِّكَ ٱلۡحُسۡنَىٰ عَلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ بِمَا صَبَرُواْۖ وَدَمَّرۡنَا مَا كَانَ يَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَقَوۡمُهُۥ وَمَا كَانُواْ يَعۡرِشُونَ ١٣٧ ﴾ [الاعراف: ١٣٠، ١٣٧]
“আর আমি পাকড়াও করেছি ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে দুর্ভিক্ষ ও ফল- ফলাদির ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।অতঃপর যখন তাদের কাছে কল্যাণ আসত, তখন তারা বলত, ‘এটা আমাদের জন্য।’ আর যখন তাদের কাছে অকল্যাণ পৌঁছত তখন তারা মূসা ও তার সঙ্গীদেরকে অশুভলক্ষুণে মনে করত। তাদের কল্যাণ-অকল্যাণ তো আল্লাহর কাছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না। আর তারা বলল, ‘তুমি আমাদেরকে জাদু করার জন্য যে কোনো নিদর্শন আমাদের কাছে নিয়ে আস না কেন আমরা তো তোমার প্রতি ঈমান আনব না।’ সুতরাং আমি তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত নিদর্শনাবলী হিসাবে পাঠালাম তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত। তার পরেও তারা অহঙ্কার করল। আর তারা ছিল এক অপরাধী কওম। আর যখন তাদের উপর আযাব পতিত হল তখন তারা বলল, ‘হে মূসা আমাদের জন্য তুমি তোমার রবের কাছে দুআ কর তিনি যে ওয়াদা তোমার সাথে করেছেন সে অনুযায়ী। যদি তুমি আমাদের উপর থেকে আযাব সরিয়ে দাও তাহলে অবশ্যই আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব এবং অবশ্যই তোমার সাথে বনী ইসরাঈলকে পাঠিয়ে দেব।’ অতঃপর যখনই আমি তাদের থেকে আযাব সরিয়ে নিতাম কিছু কালের জন্য যা তাদের জন্য নির্ধারিত ছিল, তখনই তারা অঙ্গীকার ভঙ্গ করত। অতঃপর আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ নিলাম, ফলে তাদেরকে সমুদ্রে ডুবিয়ে দিলাম। কারণ তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে এবং এ সম্পর্কে তারা ছিল গাফেল ।আর যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত আমি তাদেরকে যমীনের পূর্ব ও তার পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেখানে আমি বরকত দিয়েছি এবং বনী ইসরাঈলের উপর তোমার রবের উত্তম বাণী পরিপূর্ণ হল। কারণ তারা ধৈর্য ধারণ করেছে। আর ধ্বংস করে দিলাম যা কিছু তৈরি করেছিল ফির‘আউন ও তার কওম এবং তারা যা নির্মাণ করেছিল”। [সূরা আল-আ‘রাফ: ১৩০-১৩৭]
﴿ ۞وَإِذِ ٱسۡتَسۡقَىٰ مُوسَىٰ لِقَوۡمِهِۦ فَقُلۡنَا ٱضۡرِب بِّعَصَاكَ ٱلۡحَجَرَۖ فَٱنفَجَرَتۡ مِنۡهُ ٱثۡنَتَا عَشۡرَةَ عَيۡنٗاۖ قَدۡ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٖ مَّشۡرَبَهُمۡۖ كُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ مِن رِّزۡقِ ٱللَّهِ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٦٠ ﴾ [البقرة: ٦٠]
“আর স্মরণ কর, যখন মূসা তার কওমর জন্য পানি চাইল, তখন আমি বললাম, ‘তুমি তোমার লাঠি দ্বারা পাথরকে আঘাত কর’। ফলে তা থেকে উৎসারিত হল বারটি ঝরনা। প্রতিটি দল তাদের পানি পানের স্থান জেনে নিল। তোমরা আল্লাহর রিযিক থেকে আহার কর ও পান কর এবং ফাসাদকারী হয়ে যমীনে ঘুরে বেড়িয়ো না”। [সূরা বাকারা: ৬০]
﴿ وَإِذۡ قَتَلۡتُمۡ نَفۡسٗا فَٱدَّٰرَٰٔتُمۡ فِيهَاۖ وَٱللَّهُ مُخۡرِجٞ مَّا كُنتُمۡ تَكۡتُمُونَ ٧٢ فَقُلۡنَا ٱضۡرِبُوهُ بِبَعۡضِهَاۚ كَذَٰلِكَ يُحۡيِ ٱللَّهُ ٱلۡمَوۡتَىٰ وَيُرِيكُمۡ ءَايَٰتِهِۦ لَعَلَّكُمۡ تَعۡقِلُونَ ٧٣ ﴾ [البقرة: ٧٢، ٧٣]
“আর স্মরণ কর, যখন তোমরা একজনকে হত্যা করলে অতঃপর সে ব্যাপারে একে অপরকে দোষারোপ করলে। আর আল্লাহ প্রকাশ করে দিলেন তোমরা যা গোপন করছিলে। অতঃপর আমি বললাম, ‘তোমরা তাকে আঘাত কর গাভীটির (গোশ্তের) কিছু অংশ দিয়ে। এভাবে আল্লাহ জীবিত করেন মৃতদেরকে। আর তিনি তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শনসমূহ দেখান, যাতে তোমরা বুঝ”। [সূরা বাকারা: ৭২-৭৩]
﴿ وَإِذۡ قُلۡتُمۡ يَٰمُوسَىٰ لَن نُّؤۡمِنَ لَكَ حَتَّىٰ نَرَى ٱللَّهَ جَهۡرَةٗ فَأَخَذَتۡكُمُ ٱلصَّٰعِقَةُ وَأَنتُمۡ تَنظُرُونَ ٥٥ ثُمَّ بَعَثۡنَٰكُم مِّنۢ بَعۡدِ مَوۡتِكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٥٦ وَظَلَّلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡغَمَامَ وَأَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمُ ٱلۡمَنَّ وَٱلسَّلۡوَىٰۖ كُلُواْ مِن طَيِّبَٰتِ مَا رَزَقۡنَٰكُمۡۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَٰكِن كَانُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ يَظۡلِمُونَ ٥٧ ﴾ [البقرة: ٥٥، ٥٧]
“আর যখন তোমরা বললে, ‘হে মূসা, আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনব না, যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ্যে আল্লাহকে দেখি’। ফলে বজ্র তোমাদেরকে পাকড়াও করল আর তোমরা তা দেখছিলে। অতঃপর আমি তোমাদের মৃত্যুর পর তোমাদেরকে পুনঃজীবন দান করলাম, যাতে তোমরা শোকর আদায় কর।আর আমি তোমাদের উপর মেঘের ছায়া দিলাম এবং তোমাদের প্রতি নাযিল করলাম ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ । তোমরা সে পবিত্র বস্তু থেকে আহার কর, যা আমি তোমাদেরকে রিযিক দিয়েছি। আর তারা আমার প্রতি যুলম করেনি, বরং তারা নিজদেরকেই যুলম করত”। [সূরা বাকারা: ৫৫-৫৭]
﴿ وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَآ إِنَّكَ ءَاتَيۡتَ فِرۡعَوۡنَ وَمَلَأَهُۥ زِينَةٗ وَأَمۡوَٰلٗا فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّواْ عَن سَبِيلِكَۖ رَبَّنَا ٱطۡمِسۡ عَلَىٰٓ أَمۡوَٰلِهِمۡ وَٱشۡدُدۡ عَلَىٰ قُلُوبِهِمۡ فَلَا يُؤۡمِنُواْ حَتَّىٰ يَرَوُاْ ٱلۡعَذَابَ ٱلۡأَلِيمَ ٨٨ قَالَ قَدۡ أُجِيبَت دَّعۡوَتُكُمَا فَٱسۡتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَآنِّ سَبِيلَ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَ ٨٩ ﴾ [يونس: ٨٨، ٨٩]
“আর মূসা বলল, ‘হে আমাদের রব, আপনি ফির‘আউন ও তার পারিষদবর্গকে দুনিয়াবী জীবনে সৌন্দর্য ও ধন-সম্পদ দান করেছেন। হে আমাদের রব, যাতে তারা আপনার পথ থেকে গোমরাহ করতে পারে। হে আমাদের রব, তাদের ধন-সম্পদ নিশ্চিহ্ন করে দিন, তাদের অন্তরসমূহকে কঠোর করে দিন। ফলে তারা ঈমান আনবে না, যতক্ষণ না যন্ত্রণাদায়ক আযাব দেখে’। তিনি বললেন, ‘তোমাদের দো‘আ কবূল করা হয়েছে। সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং যারা জানে না তাদের পথ অনুসরণ করো না”। [সূরা ইউনুস: ৮৮-৮৯]
قَالَ: سَعِيدُ بْنُ جُبَيْرٍ، قَالَ: قُلْتُ لِابْنِ عَبَّاسٍ: إِنَّ نَوْفًا البَكَالِيَّ يَزْعُمُ أَنَّ مُوسَى لَيْسَ بِمُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ، إِنَّمَا هُوَ مُوسَى آخَرُ؟ فَقَالَ: كَذَبَ عَدُوُّ اللَّهِ حَدَّثَنَا أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: قَامَ مُوسَى النَّبِيُّ خَطِيبًا فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ فَسُئِلَ أَيُّ النَّاسِ أَعْلَمُ؟ فَقَالَ: أَنَا أَعْلَمُ، فَعَتَبَ اللَّهُ عَلَيْهِ، إِذْ لَمْ يَرُدَّ العِلْمَ إِلَيْهِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنَّ عَبْدًا مِنْ عِبَادِي بِمَجْمَعِ البَحْرَيْنِ، هُوَ أَعْلَمُ مِنْكَ. قَالَ: يَا رَبِّ، وَكَيْفَ بِهِ؟ فَقِيلَ لَهُ: احْمِلْ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ، فَإِذَا فَقَدْتَهُ فَهُوَ ثَمَّ، فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقَ بِفَتَاهُ يُوشَعَ بْنِ نُونٍ، وَحَمَلاَ حُوتًا فِي مِكْتَلٍ، حَتَّى كَانَا عِنْدَ الصَّخْرَةِ وَضَعَا رُءُوسَهُمَا وَنَامَا، فَانْسَلَّ الحُوتُ مِنَ المِكْتَلِ فَاتَّخَذَ سَبِيلَهُ فِي البَحْرِ سَرَبًا، وَكَانَ لِمُوسَى وَفَتَاهُ عَجَبًا، فَانْطَلَقَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِهِمَا وَيَوْمَهُمَا، فَلَمَّا أَصْبَحَ قَالَ مُوسَى لِفَتَاهُ: آتِنَا غَدَاءَنَا، لَقَدْ لَقِينَا مِنْ سَفَرِنَا هَذَا نَصَبًا، وَلَمْ يَجِدْ مُوسَى مَسًّا مِنَ النَّصَبِ حَتَّى جَاوَزَ المَكَانَ الَّذِي أُمِرَ بِهِ، فَقَالَ لَهُ فَتَاهُ: (أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ) قَالَ مُوسَى: (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا) فَلَمَّا انْتَهَيَا إِلَى الصَّخْرَةِ، إِذَا رَجُلٌ مُسَجًّى بِثَوْبٍ، أَوْ قَالَ تَسَجَّى بِثَوْبِهِ، فَسَلَّمَ مُوسَى، فَقَالَ الخَضِرُ: وَأَنَّى بِأَرْضِكَ السَّلاَمُ؟ فَقَالَ: أَنَا مُوسَى، فَقَالَ: مُوسَى بَنِي إِسْرَائِيلَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلَى أَنْ تُعَلِّمَنِي مِمَّا عُلِّمْتَ رَشَدًا قَالَ: إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا، يَا مُوسَى إِنِّي عَلَى عِلْمٍ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ عَلَّمَنِيهِ لاَ تَعْلَمُهُ أَنْتَ، وَأَنْتَ عَلَى عِلْمٍ عَلَّمَكَهُ لاَ أَعْلَمُهُ، قَالَ: سَتَجِدُنِي إِنْ شَاءَ اللَّهُ صَابِرًا، وَلاَ أَعْصِي لَكَ أَمْرًا، فَانْطَلَقَا يَمْشِيَانِ عَلَى سَاحِلِ البَحْرِ، لَيْسَ لَهُمَا سَفِينَةٌ، فَمَرَّتْ بِهِمَا سَفِينَةٌ، فَكَلَّمُوهُمْ أَنْ يَحْمِلُوهُمَا، فَعُرِفَ الخَضِرُ فَحَمَلُوهُمَا بِغَيْرِ نَوْلٍ، فَجَاءَ عُصْفُورٌ، فَوَقَعَ عَلَى حَرْفِ السَّفِينَةِ، فَنَقَرَ نَقْرَةً أَوْ نَقْرَتَيْنِ فِي البَحْرِ، فَقَالَ الخَضِرُ: يَا مُوسَى مَا نَقَصَ عِلْمِي وَعِلْمُكَ مِنْ عِلْمِ اللَّهِ إِلَّا كَنَقْرَةِ هَذَا العُصْفُورِ فِي البَحْرِ، فَعَمَدَ الخَضِرُ إِلَى لَوْحٍ مِنْ أَلْوَاحِ السَّفِينَةِ، فَنَزَعَهُ، فَقَالَ مُوسَى: قَوْمٌ حَمَلُونَا بِغَيْرِ نَوْلٍ عَمَدْتَ إِلَى سَفِينَتِهِمْ فَخَرَقْتَهَا لِتُغْرِقَ أَهْلَهَا؟ قَالَ: أَلَمْ أَقُلْ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا؟ قَالَ: لاَ تُؤَاخِذْنِي بِمَا نَسِيتُ وَلاَ تُرْهِقْنِي مِنْ أَمْرِي عُسْرًا - فَكَانَتِ الأُولَى مِنْ مُوسَى نِسْيَانًا -، فَانْطَلَقَا، فَإِذَا غُلاَمٌ يَلْعَبُ مَعَ الغِلْمَانِ، فَأَخَذَ الخَضِرُ بِرَأْسِهِ مِنْ أَعْلاَهُ فَاقْتَلَعَ رَأْسَهُ بِيَدِهِ، فَقَالَ مُوسَى: أَقَتَلْتَ نَفْسًا زَكِيَّةً بِغَيْرِ نَفْسٍ؟ قَالَ: أَلَمْ أَقُلْ لَكَ إِنَّكَ لَنْ تَسْتَطِيعَ مَعِيَ صَبْرًا؟ - قَالَ ابْنُ عُيَيْنَةَ: وَهَذَا أَوْكَدُ - فَانْطَلَقَا، حَتَّى إِذَا أَتَيَا أَهْلَ قَرْيَةٍ اسْتَطْعَمَا أَهْلَهَا، فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوهُمَا، فَوَجَدَا فِيهَا جِدَارًا يُرِيدُ أَنْ يَنْقَضَّ فَأَقَامَهُ، قَالَ الخَضِرُ: بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ، فَقَالَ لَهُ مُوسَى: لَوْ شِئْتَ لاَتَّخَذْتَ عَلَيْهِ أَجْرًا، قَالَ: هَذَا فِرَاقُ بَيْنِي وَبَيْنِكَ " قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَرْحَمُ اللَّهُ مُوسَى، لَوَدِدْنَا لَوْ صَبَرَ حَتَّى يُقَصَّ عَلَيْنَا مِنْ أَمْرِهِمَا».
সা‘ঈদ ইবন জুবায়র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, নাওফ আল-বাকালী দাবী করে যে, মূসা আলাইহিস সালাম [যিনি খাযির আলাইহিস সালামের সাক্ষাৎ লাভ করেছিলেন] বনী ইসরাঈলের মূসা নন বরং তিনি অন্য এক মূসা। (একথা শুনে তিনি) তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন মিথ্যা বলেছে। উবাঈ ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম একবার বনী ইসরাঈলদের মধ্য বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন। তখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, সবচাইতে জ্ঞানী কে? তিনি বললেন, ‘আমি সবচাইতে জ্ঞানী।’ মহান আল্লাহ তাঁকে সতর্ক করে দিলেন। কেননা তিনি ইলমকে আল্লাহর উপর ন্যস্ত করেন নি। তারপর আল্লাহ তাঁর নিকট এ ওহী পাঠালেন, দুই সমুদ্রের সংগমস্থলে আমার বান্দাদের মধ্য এক বান্দা রয়েছে, যে তোমার চাইতে বেশী জ্ঞানী। তিনি বলেন, ‘ইয়া রব! কিভাবে তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যাবে?’ তখন তাঁকে বলা হল, থলের মধ্য একটি মাছ নিয়ে নাও। এরপর যেখানে সেটি হারিয়ে ফেলবে সেখানেই তাঁকে পাবে। তারপর তিনি রওয়ানা হলেন এবং ইউশা‘ ইবন নূন নামক তাঁর একজন খাদিমও তাঁর সাথে চলল। তাঁরা থলের মধ্য একটি মাছ নিলেন। চলার পথে তাঁরা একটি বড় পাথরের কাছে এসে, সেখানে মাথা রেখে শুয়ে পড়লেন। তারপর মাছটি (জীবিত হয়ে) থলে থেকে বেরিয়ে গেল এবং সুড়ঙ্গের মত পথ করে সমুদ্রে চলে গেল। এ ব্যাপারটি মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর খাদিম-এর জন্য ছিল আশ্চর্যের বিষয়। এরপর তাঁরা তাঁদের বাকী রাতটুকু এবং পরের দিনভর চলতে থাকলেন। পরে ভোরবেলা মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর খাদিমকে বললেন, ‘আমাদের নাশতা নিয়ে এস, আমরা আমাদের এ সফরে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি, আর মূসা আলাইহিস সালাম কে যে স্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে স্থান অতিক্রম করার পূর্বে তিনি ক্লান্ত অনুভব করেন নি। তারপর তাঁর খাদিম তাঁকে বলল, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছন, আমরা যখন পাথরের পাশে বিশ্রাম করছিলাম, তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছি? মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমরা তো সেই স্থানটিই খুঁজছিলাম। তারপর তাঁরা তাঁদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল। তাঁরা সেই পাথরের কাছে পোঁছে, কাপড়ে আবৃত (বর্ণনাকারী বলেন) কাপড় মুড়ি দেওয়া এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন। মূসা আলাইহিস সালাম তাঁকে সালাম দিলেন। তখন খাযির বললেন, এ দেশে সালাম কোথা থেকে এল! তিনি বললেন, ‘আমি মূসা।’ খাযির জিজ্ঞাসা করলেন, ‘বনী ইসরাইলের মূসা আলাইহিস সালাম?’ তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আরো বললেন, “আমি কি আপনাকে অনুসরণ করতে পারি এ শর্তে যে, সত্য পথের যে জ্ঞান আপনাকে দান করা হয়েছে, তা থেকে আমাকে শিক্ষা দিবেন? খাযির বললেন, “তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।” ‘মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, “আল্লাহ চাইলে আপনি আমাকে ধৈর্যশীল পাবেন এবং আমি আপনার আদেশ অমান্য করব না। তারপর তাঁরা দুজন সমুদ্র তীর দিয়ে চলতে লাগলেন, তাঁদের কোনো নৌকা ছিল না। ইতিমধ্যে তাঁদের কাছ দিয়ে একটি নৌকা যচ্ছিল। তাঁরা নৌকাওয়ালাদের সঙ্গে তাঁদের আরোহণ করিয়ে নেওয়ার কথা বললেন। তারা খাযিরকে চিনতে পারল এবং ভাড়া ব্যতিরেকে তাঁদের নৌকায় তুলে নিল। তখন একটি চড়ুই পাখি এসে নৌকার এক প্রান্তে বসে দুই-একবার সমুদ্রে তার ঠোঁট মারল। খাযির বললেন, ‘হে মূসা আলাইহিস সালাম! আমার ইল্ম এবং তোমার ইল্ম (সব মিলেও) আল্লাহর ইল্ম থেকে সমুদ্র থেকে চড়ুই পাখি্র ঠোঁটে যতটুকু পানি এসেছে ততটুকু পরিমাণও কমাতে পারবে না।’ এরপর খাযির নৌকার তক্তাগুলির মধ্য থেকে একটি খুলে ফেললেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, এরা আমাদের ভাড়া ছড়া আরোহণ করিয়েছে, আর আপনি আরোহীদের ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য নৌকায় ফাটল সৃষ্টি করলেন?’ খাযির বললেন, “আমি কি বলিনি যে, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।” মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আমার ভুলের জন্য আমাকে অপরাধী করবেন না এবং আমার ব্যাপারে অধির কঠোরতা অবলম্বন করবেন না।’ বর্ণনাকারী বলেন, ইহা মূসা আলাইহিস সালাম এর প্রথম ভুল। তারপর তাঁরা উভয়ে (নৌকা থেকে নেমে) চলতে লাগলেন। (পথে) একটি বালক অন্যান্য বালকের সাথে খেলছিল। খাযির তার মাথার উপর দিক দিয়ে ধরলেন এবং হাত দিয়ে তার মাথা ছিদ্র করে ফেললেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আপনি কি একটি নিষ্পাপ জীবন নাশ করলেন কোনো হত্যার অপরাধ ছাড়াই?’ খাযির বললেন, “আমি তোমাকে বলিনি যে, তুমি কিছুতেই আমার সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না?” ইবন ‘উয়ায়না (রহ.) বলেন, এটা ছিল পূর্বের চেয়ে বেশী জোরালো। তারপর আবারো চলতে লাগলেন; চলতে চলতে তাঁরা এক গ্রামের অধিবাসীদের কাছে পৌঁছে তাদের কাছে খাবার চাইলেন, কিন্তু তারা তাঁদের মেহমানদারী করতে অস্বীকার করল। তারপর সেখানে তাঁরা এক পতনোন্মুখ প্রাচীর দেখতে পেলেন। খাযির তাঁর হাত দিয়ে সেটি খাড়া করে দিলেন। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘আপনি ইচ্ছে করলে এর জন্য পারিশ্রমিক গ্রগন করতে পারতেন।’ তিনি বললেন, ‘এখানেই তোমার আর আমার সম্পর্কের অবসান।’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলাইহিস সালামের ওপর রহম করুন। আমাদের কতই না মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতো যদি তিনি সবর করতেন, তাহলে আমাদের কাছে তাঁদের আরো ঘটনাবলী বর্ণনা করা হতো।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّهُ تَمَارَى هُوَ وَالحُرُّ بْنُ قَيْسِ بْنِ حِصْنٍ الفَزَارِيُّ فِي صَاحِبِ مُوسَى، قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: هُوَ خَضِرٌ، فَمَرَّ بِهِمَا أُبَيُّ بْنُ كَعْبٍ، فَدَعَاهُ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقَالَ: إِنِّي تَمَارَيْتُ أَنَا وَصَاحِبِي هَذَا فِي صَاحِبِ مُوسَى، الَّذِي سَأَلَ مُوسَى السَّبِيلَ إِلَى لُقِيِّهِ، هَلْ سَمِعْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ شَأْنَهُ؟ قَالَ: نَعَمْ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " بَيْنَمَا مُوسَى فِي مَلَإٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ جَاءَهُ رَجُلٌ فَقَالَ: هَلْ تَعْلَمُ أَحَدًا أَعْلَمَ مِنْكَ؟ " قَالَ مُوسَى: لاَ، فَأَوْحَى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى مُوسَى: بَلَى، عَبْدُنَا خَضِرٌ، فَسَأَلَ مُوسَى السَّبِيلَ إِلَيْهِ، فَجَعَلَ اللَّهُ لَهُ الحُوتَ آيَةً، وَقِيلَ لَهُ: إِذَا فَقَدْتَ الحُوتَ فَارْجِعْ، فَإِنَّكَ سَتَلْقَاهُ، وَكَانَ يَتَّبِعُ أَثَرَ الحُوتِ فِي البَحْرِ، فَقَالَ لِمُوسَى فَتَاهُ: (أَرَأَيْتَ إِذْ أَوَيْنَا إِلَى الصَّخْرَةِ فَإِنِّي نَسِيتُ الحُوتَ وَمَا أَنْسَانِيهِ إِلَّا الشَّيْطَانُ أَنْ أَذْكُرَهُ)، قَالَ: (ذَلِكَ مَا كُنَّا نَبْغِي فَارْتَدَّا عَلَى آثَارِهِمَا قَصَصًا)، فَوَجَدَا خَضِرًا، فَكَانَ مِنْ شَأْنِهِمَا الَّذِي قَصَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي كِتَابِهِ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি এবং হুর ইবন কায়স ইবন হিসন আল ফাযারী মূসা আলাইহিস সালামের সঙ্গী সম্পর্কে বাদানুবাদ করেছিলেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তিনি ছিলেন খিযর। ঘটনাক্রমে তখন তাদের পাশ দিয়ে উবাঈ ইবন কা’ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যাচ্ছিলেন। ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে ডেকে বললেন, আমি ও আমার এ ভাই মতবিরোধ পোষণ করছি মূসা আলাইহিস সালামের সেই সঙ্গীর ব্যাপারে যাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্র কাছে পথের সন্ধান চেয়েছিলেন—আপনি কি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, একবার মূসা আলাইহিস সালাম বনী ইসরাঈলের কোনো এক মজলিসে হাজির ছিলেন। তখন তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আপনি কাউকে আপনার চেয়ে অধিক জ্ঞানী বলে জানেন কি?’ মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, ‘না।’ তখন আল্লাহ্ তা’আলা মূসা আলাইহিস সালামের কাছে অহী পাঠালেন, হ্যাঁ, আমার বান্দা খিযর।’ অতঃপর মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর সাথে সাক্ষাত করার রাস্তা জানতে চাইলেন। আল্লাহ্ তা‘আলা মাছকে তার জ্ন্য নিশানা বানিয়ে দিলেন এবং তাঁকে বলা হল, তুমি যখন মাছটি হারিয়ে ফেলবে তখন ফিরে আসবে। কারণ, কিছুক্ষনের মধ্যেই তুমি তাঁর সাক্ষাত পাবে। তখন তিনি সমুদ্রে সে মাছের অনুসরন করতে লাগলেন। মূসা আলাইহিস সালামকে তাঁর সঙ্গী যুবক বললেন, (কুরআনে এসেছে) “আপনি কি লক্ষ্য করেছেন আমরা যখন পাথরের কাছে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তখন আমি মাছের কথা ভুলে গিয়েছিলাম? শয়তান তার কথা আমাকে ভুলিয়ে দিয়েছিল। ........মূসা বললেন, আমরা তো সে স্থানটিরই অনুসন্ধান করছিলাম। এরপর তারা নিজেদের পদচিহ্ন ধরে ফিরে চলল”। [সূরা আল-কাহফ: ৬৪] তাঁরা খিযরকে পেলেন। তাদের ঘটনা তা-ই, যা আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " كَانَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ يَغْتَسِلُونَ عُرَاةً، يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، وَكَانَ مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَغْتَسِلُ وَحْدَهُ، فَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا يَمْنَعُ مُوسَى أَنْ يَغْتَسِلَ مَعَنَا إِلَّا أَنَّهُ آدَرُ، فَذَهَبَ مَرَّةً يَغْتَسِلُ، فَوَضَعَ ثَوْبَهُ عَلَى حَجَرٍ، فَفَرَّ الحَجَرُ بِثَوْبِهِ، فَخَرَجَ مُوسَى فِي إِثْرِهِ، يَقُولُ: ثَوْبِي يَا حَجَرُ، حَتَّى نَظَرَتْ بَنُو إِسْرَائِيلَ إِلَى مُوسَى، فَقَالُوا: وَاللَّهِ مَا بِمُوسَى مِنْ بَأْسٍ، وَأَخَذَ ثَوْبَهُ، فَطَفِقَ بِالحَجَرِ ضَرْبًا " فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَاللَّهِ إِنَّهُ لَنَدَبٌ بِالحَجَرِ، سِتَّةٌ أَوْ سَبْعَةٌ، ضَرْبًا بِالحَجَرِ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বনী ইসরাঈলের লোকেরা নগ্ন হয়ে একে অপরকে দেখা অবস্থায় গোসল করত। কিন্তু মূসা আলাইহিস সালাম একাকী গোসল করতেন। এতে বনী ইসরাঈলের লোকেরা বলাবলি করছিল, আল্লাহর কসম! মূসা আলাইহিস সালাম ‘কোষবৃদ্ধি’ রোগের কারনেই আমাদের সাথে গোসল করে না। একবার মূসা আলাইহিস সালাম একটা পাথরের উপর কাপড় রেখে গোসল করছিলেন। পাথরটা তাঁর কাপড় নিয়ে পালাতে লাগল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম “পাথর! আমার কাপড় দাও, পাথর! আমার কাপড় দাও” বলে পেছন পেছন ছুটলেন। এদিকে বনী ইসরাঈল মূসার দিকে তাকাল। তখন তারা বলল, আল্লাহ্র কসম! মূসার কোনো রোগ নেই। মূসা আলাইহিস সালাম পাথর থেকে কাপড় নিয়ে পরলেন এবং পাথরটাকে পিটাতে লাগলেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহ্র কসম! পাথরটিতে ছয় কিংবা সাতটি পিটুনির দাগ পড়ে গেল।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " بَيْنَا أَيُّوبُ يَغْتَسِلُ عُرْيَانًا، فَخَرَّ عَلَيْهِ جَرَادٌ مِنْ ذَهَبٍ، فَجَعَلَ أَيُّوبُ يَحْتَثِي فِي ثَوْبِهِ، فَنَادَاهُ رَبُّهُ: يَا أَيُّوبُ، أَلَمْ أَكُنْ أَغْنَيْتُكَ عَمَّا تَرَى؟ قَالَ: بَلَى وَعِزَّتِكَ، وَلَكِنْ لاَ غِنَى بِي عَنْ بَرَكَتِكَ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আরো বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক সময় আইয়ূব আলাইহিস সালাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করছিলেন। তখন তাঁর উপর সোনার পঙ্গপাল বর্ষিত হচ্ছিল। আইয়ূব আলাইহিস সালাম তাঁর কাপড়ে সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিলেন। তখন তাঁর রব তাঁকে বললেন, হে আইয়ূব! আমি কি তোমাকে এগুলো থেকে অমুখাপেক্ষী করিনি? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আপনার ইজ্জতের কসম! অবশ্যই করেছেন। তবে আমি আপনার বরকত থেকে বেনিয়ায নেই। এভাবে বর্ণনা করেছেন ইব্রাহীম (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একবার আইয়ূব আলাইহিস সালাম বিবস্ত্রাবস্থায় গোসল করেছিলেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مُوسَى كَانَ رَجُلًا حَيِيًّا سِتِّيرًا، لاَ يُرَى مِنْ جِلْدِهِ شَيْءٌ اسْتِحْيَاءً مِنْهُ، فَآذَاهُ مَنْ آذَاهُ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ فَقَالُوا: مَا يَسْتَتِرُ هَذَا التَّسَتُّرَ، إِلَّا مِنْ عَيْبٍ بِجِلْدِهِ: إِمَّا بَرَصٌ وَإِمَّا أُدْرَةٌ: وَإِمَّا آفَةٌ، وَإِنَّ اللَّهَ أَرَادَ أَنْ يُبَرِّئَهُ مِمَّا قَالُوا لِمُوسَى، فَخَلاَ يَوْمًا وَحْدَهُ، فَوَضَعَ ثِيَابَهُ عَلَى الحَجَرِ، ثُمَّ اغْتَسَلَ، فَلَمَّا فَرَغَ أَقْبَلَ إِلَى ثِيَابِهِ لِيَأْخُذَهَا، وَإِنَّ الحَجَرَ عَدَا بِثَوْبِهِ، فَأَخَذَ مُوسَى عَصَاهُ وَطَلَبَ الحَجَرَ، فَجَعَلَ يَقُولُ: ثَوْبِي حَجَرُ، ثَوْبِي حَجَرُ، حَتَّى انْتَهَى إِلَى مَلَإٍ مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَرَأَوْهُ عُرْيَانًا أَحْسَنَ مَا خَلَقَ اللَّهُ، وَأَبْرَأَهُ مِمَّا يَقُولُونَ، وَقَامَ الحَجَرُ، فَأَخَذَ ثَوْبَهُ فَلَبِسَهُ، وَطَفِقَ بِالحَجَرِ ضَرْبًا بِعَصَاهُ، فَوَاللَّهِ إِنَّ بِالحَجَرِ لَنَدَبًا مِنْ أَثَرِ ضَرْبِهِ، ثَلاَثًا أَوْ أَرْبَعًا أَوْ خَمْسًا، فَذَلِكَ قَوْلُهُ: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لاَ تَكُونُوا كَالَّذِينَ آذَوْا مُوسَى فَبَرَّأَهُ اللَّهُ مِمَّا قَالُوا وَكَانَ عِنْدَ اللَّهِ وَجِيهًا ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মূসা আলাইহিস সালাম অত্যন্ত লজ্জাশীল ছিলেন, সব সময় শরীর আবৃত রাখতেন। তাঁর দেহের কোনো অংশ খোলা দেখা যেতনা তা থেকে তিনি লজ্জাবোধ করতেন। বনী ইসরাঈলের কিছু সংখ্যক লোক তাঁকে খুব কষ্ট দিত। তারা বলত, তিনি যে শরীরকে এত বেশী ঢেকে রাখেন, তাঁর একমাত্র কারণ হলো, তাঁর শরীরে কোনো দোষ আছে। হয়ত শ্বেত রোগ অথবা একশিরা বা অন্য কোনো রোগ আছে। আল্লাহ্তা’আলা ইচ্ছা করলেন মূসা আলাইহিস সালাম সম্পর্কে তারা যে অপবাদ রটিয়েছি তা থেকে তাঁকে মুক্ত করবেন। এরপর একদিন নির্জন স্থানে গিয়ে তিনি একাকী হলেন এবং তাঁর পরণের কাপর খুলে একটি পাথরের উপর রাখলেন, তারপর গোসল করলেন, গোসল সেরে যখনই তিনি কাপর নেওয়ার জন্য সেদিকে এগিয়ে গেলেন তাঁর কাপড়সহ পাথরটি ছুটে চলল। এরপর মূসা আলাইহিস সালাম লাঠিটি হাতে নিয়ে পাথরটি পেছনে পেছনে ছুটলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার কাপড় হে পাথর! হে পাথর! পরিশেষে পাথরটি বনী ইসরাঈলের একটি জন সমাবেশে গিয়ে পৌছল। তখন তারা মূসা আলাইহিস সালামকে বিবস্ত্র অবস্থায় দেখল যে তিনি আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণ এবং তারা তাঁকে যে অপবাদ দিয়েছিল সে সব দোষ থেকে তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত। আর পাথরটি থামল, তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর কাপড় নিয়ে পরিধান করলেন এবং তাঁর হাতের লাঠি দিয়ে পাথরটিকে জোরে জোরে আঘাত করতে লাগলেন। আল্লাহর কসম! এতে পাথরটিতে তিন, চার, কিংবা পাঁচটি আঘাতের দাগ পড়ে গেল। আর এটিই হলো আল্লাহর এ বাণীর মর্ম, “হে মুমিনগণ! তোমরা তাদের ন্যায় হয়োনা যারা মূসা আলাইহিস সালামকে কষ্ট দিয়েছিল। এরপর আল্লাহ তাকে নির্দোষ প্রমাণিত করেন তা থেকে যা তারা রটনা করেছিল। আর তিনি ছিলেন আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান”। [সূরা আল-আহযাব : ৬৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَمَّا قَدِمَ المَدِينَةَ، وَجَدَهُمْ يَصُومُونَ يَوْمًا، يَعْنِي عَاشُورَاءَ، فَقَالُوا: هَذَا يَوْمٌ عَظِيمٌ، وَهُوَ يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ فِيهِ مُوسَى، وَأَغْرَقَ آلَ فِرْعَوْنَ، فَصَامَ مُوسَى شُكْرًا لِلَّهِ، فَقَالَ «أَنَا أَوْلَى بِمُوسَى مِنْهُمْ» فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন (হিজরত করে) মদীনায় আগমন করেন, তখন তিনি মদিনাবাসীকে এমনভাবে পেলেন যে, তারা একদিন সাওম পালন করে অর্থাৎ সে দিনটি হল আশুরার দিন। (জিজ্ঞাসা করার পর) তারা বলল, এটি একটি মহান দিবস। এ এমন দিন যে দিনে আল্লাহ্ মুসা আলাইহিস সালামকে নাজাত দিয়েছেন এবং ফিরাউনের সম্প্রদায়কে ডুবিয়ে দিয়েছেন। এরপর মূ্সা আলাইহিস সালামশুকরিয়া হিসাবে আদিন সাওম পালন করেছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের তুলনায় আমি হলাম মূসা আলাইহিস সালা্মের অধিক ঘনিষ্ঠ। কাজেই তিনি নিজেও এদিন সাওম পালন করেছেন এবং (সবাইকে) এদিন সাওম পালনের আদেশ দিয়েছেন।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «النَّاسُ يَصْعَقُونَ يَوْمَ القِيَامَةِ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ، فَإِذَا أَنَا بِمُوسَى آخِذٌ بِقَائِمَةٍ مِنْ قَوَائِمِ العَرْشِ، فَلاَ أَدْرِي أَفَاقَ قَبْلِي أَمْ جُوزِيَ بِصَعْقَةِ الطُّورِ».
আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন সব মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। এরপর সর্বপ্রথম আমারই হুশ ফিরে আসবে। তখন আমি মূসা আলাইহিস সালামকে দেখতে পাব যে, তিনি আরশের খুঁটিগুলোর একটি খুঁটি ধরে রেখেছেন। আমি জানিনা, আমার আগেই কি তাঁর হুশ আসল, না-কি তূর পাহাড়ে বেহুশ হওয়ার প্রতিদানে তাঁকে দেওয়া হল।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: اسْتَبَّ رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ وَرَجُلٌ مِنَ اليَهُودِ، فَقَالَ المُسْلِمُ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى العَالَمِينَ، فِي قَسَمٍ يُقْسِمُ بِهِ، فَقَالَ اليَهُودِيُّ: وَالَّذِي اصْطَفَى مُوسَى عَلَى العَالَمِينَ، فَرَفَعَ المُسْلِمُ عِنْدَ ذَلِكَ يَدَهُ فَلَطَمَ اليَهُودِيَّ، فَذَهَبَ اليَهُودِيُّ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَهُ الَّذِي كَانَ مِنْ أَمْرِهِ وَأَمْرِ المُسْلِمِ، فَقَالَ «لاَ تُخَيِّرُونِي عَلَى مُوسَى، فَإِنَّ النَّاسَ يَصْعَقُونَ، فَأَكُونُ أَوَّلَ مَنْ يُفِيقُ، فَإِذَا مُوسَى بَاطِشٌ بِجَانِبِ العَرْشِ، فَلاَ أَدْرِي أَكَانَ فِيمَنْ صَعِقَ فَأَفَاقَ قَبْلِي، أَوْ كَانَ مِمَّنِ اسْتَثْنَى اللَّهُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মুসলিম আর একজন ইয়াহূদী পরস্পরকে গালি দিল। মুসলিম ব্যাক্তি বললেন, সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সমগ্র জগতের উপর মনোনীত করেছেন। কসম করার তিনি একথাটি বলেছেন। তখন ইয়াহূদী লোকটিও বলল, ঐ সত্তার কসম! যিনি মূসা আলাইহিস সালামকে সমগ্র জাগতের উপর মনোনীত করেছেন। তখন সেই মুসলিম সাহাবী সে সময় তার হাত উঠিয়ে ইয়াহূদী লোকটিকে একটি চড় মারলেন। তখন সে ইয়াহূদী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গেল এবং ঐ ঘটনাটি অবহিত করলো যা তার ও মুসলিম সাহাবীর মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমাকে মূসা আলাইহিস সালামের উপর উপর মর্যাদা দেখাতে যেওনা (কেননা কিয়ামতের দিন) সকল মানুষ বেহুশ হয়ে যাবে। আর আমিই সর্বপ্রথম হুশ ফিরে পাব। তখনই আমি মূসা আলাইহিস সালামকে দেখব, তিনি আরশের একপাশ ধরে রয়েছেন। আমি জানিনা, যারা বেহুশ হয়েছিল, তিনিও কি তাদের মধ্যে ছিলেন? তারপর আমার আগে তাঁর হুশ এসে গেসে? অথবা তিনি তাদেরই একজন, যাদেরকে আল্লাহ বেহুশ হওয়া থেকে বাদ দিয়েছিলেন।
عَنْ حُمَيْدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " احْتَجَّ آدَمُ وَمُوسَى، فَقَالَ لَهُ مُوسَى: أَنْتَ آدَمُ الَّذِي أَخْرَجَتْكَ خَطِيئَتُكَ مِنَ الجَنَّةِ، فَقَالَ لَهُ آدَمُ: أَنْتَ مُوسَى الَّذِي اصْطَفَاكَ اللَّهُ بِرِسَالاَتِهِ وَبِكَلاَمِهِ، ثُمَّ تَلُومُنِي عَلَى أَمْرٍ قُدِّرَ عَلَيَّ قَبْلَ أَنْ أُخْلَقَ " فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَحَجَّ آدَمُ مُوسَى مَرَّتَيْنِ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আদম আলাইহিস সালাম ও মূসা আলাইহিস সালাম (রূহানী জগতে) তর্ক-বিতর্ক করছিলেন। তখন মূসা আলাইহিস সালাম তাঁকে বলছিলেন, আপনি সেই আদম যে, আপনার ভুল আপনাকে বেহেশত থেকে বের করে দিয়েছিল। আদম আলাইহিস সালাম তাঁকে বললেন, আপনি সেই মূসা আলাইহিস সালাম যে, আপনাকে আল্লাহ তাঁর রিসালাত দান এবং বাক্যালাপ দ্বারা সম্মানিত করেছিলেন। তারপরও আপনি আমাকে এমন একটি বিষয়ে দোষারোপ করছেন, যা আমার সৃষ্টির আগেই আমার তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’বার বলেছেন, এ বিতর্কে আদম আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালামের উপর জয়ী হন।
عَنْ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ قَالَ: إِنَّ الْيَهُودَ جَاءُوا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرُوا لَهُ أَنَّ رَجُلًا مِنْهُمْ وَامْرَأَةً زَنَيَا، فَقَالَ لَهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَا تَجِدُونَ فِي التَّوْرَاةِ فِي شَأْنِ الزِّنَا؟» فَقَالُوا: نَفْضَحُهُمْ وَيُجْلَدُونَ، فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: كَذَبْتُمْ، إِنَّ فِيهَا الرَّجْمَ، فَأَتَوْا بِالتَّوْرَاةِ، فَنَشَرُوهَا فَجَعَلَ أَحَدُهُمْ يَدَهُ عَلَى آيَةِ الرَّجْمِ، ثُمَّ جَعَلَ يَقْرَأُ مَا قَبْلَهَا وَمَا بَعْدَهَا، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَلَامٍ: ارْفَعْ يَدَيْكَ، فَرَفَعَهَا فَإِذَا فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ، فَقَالُوا: صَدَقَ يَا مُحَمَّدُ، فِيهَا آيَةُ الرَّجْمِ،، فَأَمَرَ بِهِمَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَرُجِمَا، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ: فَرَأَيْتُ الرَّجُلَ يَحْنِي عَلَى الْمَرْأَةِ يَقِيهَا الْحِجَارَةَ.
আবদুল্লাহ্ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়াহুদীগণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে জানাল তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী যিনা করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা তাওরাতে রজম সম্পর্কে কি পাচ্ছ? তারা বলল, তাদেরকে অপমান ও কশাঘাত করা হয়। আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার মিথ্যে বলেছ। তাওরাতে অবশ্যই রজমের উল্লেখ রয়েছে। তারা তাওরাত নিয়ে এল এবং তা খুলল। আর তাদের একজন রজমের আয়াতের ওপর হাত রেখে দিয়ে তার আগপিছ পাঠ করল। তখন আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, তাতে রজমের আয়াত বিদ্যমান রয়েছে। তারা বলল, আবদুল্লাহ্ ইবন সালাম সত্যই বলেছেন। হে মুহাম্মদ! তাতে রজমের আয়াত সত্যই বিদ্যমান রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উভয় সম্বন্ধে নির্দেশ করলেন এবং তাদের উভয়কে রজম করা হল। আমি দেখলাম, পুরুষটি নারীটির ওপর উপুড় হয়ে আছে। সে তাকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষা করছে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ بِوَادِي الْأَزْرَقِ، فَقَالَ: «أَيُّ وَادٍ هَذَا؟» فَقَالُوا: هَذَا وَادِي الْأَزْرَقِ، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ هَابِطًا مِنَ الثَّنِيَّةِ، وَلَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللهِ بِالتَّلْبِيَةِ»، ثُمَّ أَتَى عَلَى ثَنِيَّةِ هَرْشَى، فَقَالَ: «أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟» قَالُوا: ثَنِيَّةُ هَرْشَى، قَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ بْنِ مَتَّى عَلَيْهِ السَّلَامُ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ جَعْدَةٍ عَلَيْهِ جُبَّةٌ مِنْ صُوفٍ، خِطَامُ نَاقَتِهِ خُلْبَةٌ وَهُوَ يُلَبِّي»، قَالَ ابْنُ حَنْبَلٍ فِي حَدِيثِهِ: قَالَ هُشَيْمٌ: يَعْنِي لِيفًا.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আযরাক উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন, তখন বললেন, এটি কোনো উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর দিলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি যেন মূসা আলাইহিস সালামকে গিরিপথ থেকে অবতরণ করতে দেখছি, তিনি উচ্চম্বরে তালবিয়া পাঠ করছিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হারশা গিরিপথে আসলেন। তিনি বললেন, এটি কোনো গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা গিরিপথ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন ইউনূস ইবন মাত্তা আলাইহিস সালামকে দেখছি। তিনি সুঠামদেহী লাল বর্নের উষ্ট্রের পিঠে আরোহিত; গায়ে একটি পশমী জোব্বা, আর তাঁর উষ্টের রশিটি খেজুরের ছাল দিয়ে তৈরি, তিনি তালবিয়া পাঠ করছিলেন। ইবন হানবাল তার হাদীসে বলেন, হুশায়ম বলেছেন, আরবি এর অর্থ আরবি খেজুর বৃক্ষের ছাল।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: سِرْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، فَمَرَرْنَا بِوَادٍ، فَقَالَ: «أَيُّ وَادٍ هَذَا؟» فَقَالُوا: وَادِي الْأَزْرَقِ، فَقَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - فَذَكَرَ مِنْ لَوْنِهِ وَشَعَرِهِ شَيْئًا لَمْ يَحْفَظْهُ دَاوُدُ - وَاضِعًا إِصْبَعَيْهِ فِي أُذُنَيْهِ، لَهُ جُؤَارٌ إِلَى اللهِ بِالتَّلْبِيَةِ، مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي» قَالَ: ثُمَّ سِرْنَا حَتَّى أَتَيْنَا عَلَى ثَنِيَّةٍ، فَقَالَ: «أَيُّ ثَنِيَّةٍ هَذِهِ؟» قَالُوا: هَرْشَى - أَوْ لِفْتٌ - فَقَالَ: «كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى يُونُسَ عَلَى نَاقَةٍ حَمْرَاءَ، عَلَيْهِ جُبَّةُ صُوفٍ، خِطَامُ نَاقَتِهِ لِيفٌ خُلْبَةٌ، مَارًّا بِهَذَا الْوَادِي مُلَبِّيًا».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যকার এক স্থানে সফর করছিলাম। আমরা একটি উপত্যকা অতিক্রম করছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোনো উপত্যকা? সঙ্গীগণ উত্তর করলেন, আযরাক উপত্যকা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন এখনও মূসা আলাইহিস সালামকে দেখতে পাচ্ছি, তিনি তাঁর কর্ণদ্বয়ের ছিদ্রে আঙ্গূল স্থাপন পূর্বক উচ্চঃস্বরে তালবিয়া পাঠ করে এ উপত্যকা অতিক্রম করে যাচ্ছেন। বর্ণনাকারী বলেন, এখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালা্মের দেহের বর্ণ ও চুলের আকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু রাবী দাউদ তা স্বরণ রাখতে পারেন নি। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারপর আমরা সামনে আরো অগ্রসর হলাম এবং একটি গিরিপথে এসে পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটি কোনো গিরিপথ? সঙ্গীগণ বললেন, হারশা কিংবা লিফত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যেন এখনও ইউনূস আলাইহিস সালামকে দেখতে পাচ্ছি তালবিয়া পাঠ করা অবস্থায় তিনি গিরিপথ অতিক্রম করে যাচ্ছেন। তাঁর গায়ে একটি পশমী জোব্বা আর তিনি একটি লাল বর্ণের উষ্ট্রির পিঠে আরোহিত। তাঁর উষ্টির রশিটি খেজুর বৃক্ষের ছাল দ্বারা তৈরি।
আল্লাহর নবী মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবের কাছে সর্বোচ্চ জান্নাতীর মর্যারা আর সর্বনিম্ন জান্নাতীর মর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা।
قَالَ سُفْيَانُ: رَفَعَهُ أَحَدُهُمَا، أُرَاهُ ابْنَ أَبْجَرَ - قَالَ: " سَأَلَ مُوسَى رَبَّهُ، مَا أَدْنَى أَهْلِ الْجَنَّةِ مَنْزِلَةً، قَالَ: هُوَ رَجُلٌ يَجِيءُ بَعْدَ مَا أُدْخِلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، فَيُقَالُ لَهُ: ادْخُلِ الْجَنَّةَ، فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ، كَيْفَ وَقَدْ نَزَلَ النَّاسُ مَنَازِلَهُمْ، وَأَخَذُوا أَخَذَاتِهِمْ، فَيُقَالُ لَهُ: أَتَرْضَى أَنْ يَكُونَ لَكَ مِثْلُ مُلْكِ مَلِكٍ مِنْ مُلُوكِ الدُّنْيَا؟ فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: لَكَ ذَلِكَ، وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ وَمِثْلُهُ، فَقَالَ فِي الْخَامِسَةِ: رَضِيتُ رَبِّ، فَيَقُولُ: هَذَا لَكَ وَعَشَرَةُ أَمْثَالِهِ، وَلَكَ مَا اشْتَهَتْ نَفْسُكَ، وَلَذَّتْ عَيْنُكَ، فَيَقُولُ: رَضِيتُ رَبِّ، قَالَ: رَبِّ، فَأَعْلَاهُمْ مَنْزِلَةً؟ قَالَ: أُولَئِكَ الَّذِينَ أَرَدْتُ غَرَسْتُ كَرَامَتَهُمْ بِيَدِي، وَخَتَمْتُ عَلَيْهَا، فَلَمْ تَرَ عَيْنٌ، وَلَمْ تَسْمَعْ أُذُنٌ، وَلَمْ يَخْطُرْ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ "، قَالَ: وَمِصْدَاقُهُ فِي كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ: " {فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ} [السجدة: 17] الْآيَةَ.
সুফিয়ান রহ. মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন, তাদের একজন মনে হয় ইবন আবজার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মূসা আলাইহিস সালাম তাঁর রবকে জিজ্ঞেস করলেন, একজন নিম্ন শ্রেণীর বেহেশতীর কিরূপ মযার্দা হবে? আল্লাহ তা‘আলা বললেন, সমস্ত জান্নাতবাসীকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর পর এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে। তাকে বলা হবে, যাও, জান্নাতে প্রবেশ করো। সে বলবে, হে প্রভু, এখন ওখানে গিয়ে কি করবো? প্রত্যেক ব্যক্তিই তো স্ব স্ব স্থান ও যা যা নেওয়ার তা নিয়ে ফেলেছে। আমি ওখানে গিয়ে কিছুই তো পাবো না। তখন আল্লাহ বলবেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে যে, দুনিয়ার যেকোন বাদশার রাজ্যের সম পরিমাণ এক রাজত্ব তোমাকে দেওয়া হবে? সে বলবে, আমি সন্তুষ্ট, হে আমার প্রভু, তখন আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমাকে তা দেওয়া হল এবং তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ, তার দ্বিগুণ দেওয়া হল। পঞ্চম বারে সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি, হে আমার পরওয়ারদিগার। অতঃপর তিনি বলবেন, তোমাকে তা দেওয়া হলো এবং তার দশগুণ পরিমাণ দেওয়া হলো। আর তোমাকে তাও দেওয়া হলো, যা তোমার মন চায় ও চোখে ভাল লাগে। সে ব্যক্তি বলবে, আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, সবোর্চ্চ শ্রেণী বেহেশতীর মযার্দা কিরূপ হবে? মহান আল্লাহ বললেন, এরা সেই সমস্ত লোক যাদেরকে আমি নিজের হাতে মযার্দার স্থানে উন্নীত করেছি এবং এর ওপর মোহর করে দিয়েছে। তাদেরকে এমন কিছু প্রদান করা হবে যা কোনো চোখে কখনো দেখেনি, কোনো কান কখনো শুনেনি, এমনকি কোনো অন্তর তা কল্পনাও করতে পারেনি। বণর্নাকারী বলেন, এর প্রমাণে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কিতাবে রয়েছে, “তাদের কাজের প্রতিদানস্বরুপ তাদের জন্য চক্ষুশীতলকারী যে সমগ্রী গোপন রাখা হয়েছে, কোনো প্রাণীরই তার খবর নেই” [সূরা সাজদা: ১৭]
মূসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক মালাকুল মাউতকে প্রহার
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: " أُرْسِلَ مَلَكُ المَوْتِ إِلَى مُوسَى عَلَيْهِمَا السَّلاَمُ، فَلَمَّا جَاءَهُ صَكَّهُ، فَرَجَعَ إِلَى رَبِّهِ، فَقَالَ: أَرْسَلْتَنِي إِلَى عَبْدٍ لاَ يُرِيدُ المَوْتَ، قَالَ: ارْجِعْ إِلَيْهِ فَقُلْ لَهُ يَضَعُ يَدَهُ عَلَى مَتْنِ ثَوْرٍ، فَلَهُ بِمَا غَطَّتْ يَدُهُ بِكُلِّ شَعَرَةٍ سَنَةٌ، قَالَ: أَيْ رَبِّ، ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: ثُمَّ المَوْتُ، قَالَ: فَالْآنَ، قَالَ: فَسَأَلَ اللَّهَ أَنْ يُدْنِيَهُ مِنَ الأَرْضِ المُقَدَّسَةِ رَمْيَةً بِحَجَرٍ، قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَوْ كُنْتُ ثَمَّ لَأَرَيْتُكُمْ قَبْرَهُ، إِلَى جَانِبِ الطَّرِيقِ تَحْتَ الكَثِيبِ الأَحْمَرِ» قَالَ وَأَخْبَرَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامٍ، حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوَهُ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মালাকুল মউত ফিরিশতাকে মূসা আলাইহিস সালামের নিকট তাঁর (জান কবযের) জন্য পাঠান হয়েছিল। ফিরিশতা যখন তাঁর নিকট আসলেন, তিনি তাঁর চোখে থাপ্পর মারলেন। রখন ফিরিশতা তাঁর রবের নিকট ফিরে গেলেন এবং বললেন, আপনি এমন এক বান্দার নিকট পাঠিয়েছেন যে মরতে চায় না। আল্লাহ্ বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে যাও এবং তাকে বল সে যেন তার একটি হাত একটি গরুর পিঠে রাখে, তার হাত যতগুলো পশম দাকবে তার প্রতিটি পশমের পরিবরতে তাকে এক বছর করে হায়াত দেওয়া হবে। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, হে রব! তারপর কি হবে? আল্লাহ বললেন, তারপর মৃত্যু। মূসা আলাইহিস সালাম বললেন, এখনই হউক। (রাবী) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন তিনি আল্লাহর নিকট আরয করলেন, তাঁকে যেন ‘আরদে মুকাদ্দাস’ বা পবিত্র ভুমি থেকে পাথর নিক্ষেপের দূরত্বের সমান স্থানে পৌছে দেওয়া হয়। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যদি সেখানে থাকতাম তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে রাস্তার পার্শ্বে লাল টিলার নীচে কবরটি দেখিয়ে দিতাম। রাবী আব্দুর রায্যাক বলেন, মা’মর (র) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
আল্লাহর নবী হারুন আলাইহিস সালামের ঘটনা
عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَدَّثَهُمْ عَنْ " لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ: حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الخَامِسَةَ، فَإِذَا هَارُونُ، قَالَ: هَذَا هَارُونُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، فَسَلَّمْتُ عَلَيْهِ فَرَدَّ، ثُمَّ قَالَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ " تَابَعَهُ ثَابِتٌ، وَعَبَّادُ بْنُ أَبِي عَلِيٍّ، عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
মালিক ইবন সা‘সা‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম মিরাজ রাত্রির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁদের কাছে এও বলেন, তিনি যখন পঞ্চম আকাশে এসে পৌছলেন, তখন হঠাৎ সেখানে হারূন আলাইহিস সালামের সাথে সাক্ষাৎ হল। জিবরীল আলাইহিস সালাম বললেন, ইনি হলেন, হারূন আলাইহিস সালাম তাঁকে সালাম করুন। তখন আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, মারহাবা পুণ্যবান ভাই ও পুণ্যবান নবী। সাবিত এবং আব্বাদ ইবন আবূ আলী (রহ.) আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনায় কাতাদা (রহ.)-এর অনুসরণ করেছেন।
আল্লাহর নবী দাউদ ও সুলাইমান আলাইহিমাস সালাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ ۞وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ مِنَّا فَضۡلٗاۖ يَٰجِبَالُ أَوِّبِي مَعَهُۥ وَٱلطَّيۡرَۖ وَأَلَنَّا لَهُ ٱلۡحَدِيدَ ١٠ أَنِ ٱعۡمَلۡ سَٰبِغَٰتٖ وَقَدِّرۡ فِي ٱلسَّرۡدِۖ وَٱعۡمَلُواْ صَٰلِحًاۖ إِنِّي بِمَا تَعۡمَلُونَ بَصِيرٞ ١١ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ غُدُوُّهَا شَهۡرٞ وَرَوَاحُهَا شَهۡرٞۖ وَأَسَلۡنَا لَهُۥ عَيۡنَ ٱلۡقِطۡرِۖ وَمِنَ ٱلۡجِنِّ مَن يَعۡمَلُ بَيۡنَ يَدَيۡهِ بِإِذۡنِ رَبِّهِۦۖ وَمَن يَزِغۡ مِنۡهُمۡ عَنۡ أَمۡرِنَا نُذِقۡهُ مِنۡ عَذَابِ ٱلسَّعِيرِ ١٢ يَعۡمَلُونَ لَهُۥ مَا يَشَآءُ مِن مَّحَٰرِيبَ وَتَمَٰثِيلَ وَجِفَانٖ كَٱلۡجَوَابِ وَقُدُورٖ رَّاسِيَٰتٍۚ ٱعۡمَلُوٓاْ ءَالَ دَاوُۥدَ شُكۡرٗاۚ وَقَلِيلٞ مِّنۡ عِبَادِيَ ٱلشَّكُورُ ١٣ ﴾ [سبا: ١٠، ١٣]
“আর অবশ্যই আমি আমার পক্ষ থেকে দাঊদের প্রতি অনুগ্রহ করেছিলাম। (আমি আদেশ করলাম) ‘হে পর্বতমালা, তোমরা তার সাথে আমার পবিত্রতা ঘোষণা কর’ এবং পাখিদেরকেও (এ আদেশ দিয়েছিলাম)। আর আমি তার জন্য লোহাকেও নরম করে দিয়েছিলাম, (এ নির্দেশ দিয়ে যে,) ‘তুমি পরিপূর্ণ বর্ম তৈরী কর এবং যথার্থ পরিমাণে প্রস্তুত কর’। আর তোমরা সৎকর্ম কর। তোমরা যা কিছু কর নিশ্চয় আমি তার সম্যক দ্রষ্টা।আর সুলাইমানের জন্য আমি বাতাসকে অনুগত করে দিয়েছিলাম, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত। আর আমি তার জন্য গলিত তামার প্রস্রবণ প্রবাহিত করেছিলাম। আর কতিপয় জিন তার রবের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত। তাদের মধ্যে যে আমার নির্দেশ থেকে বিচ্যুত হয় তাকে আমি জ্বলন্ত আগুনের আযাব আস্বাদন করাব। তারা তৈরী করত সুলাইমানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাউযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি। ‘হে দাঊদ পরিবার, তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ”। [সূরা সাবা’ : ১০-১৩]
﴿ وَلَقَدۡ ءَاتَيۡنَا دَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ عِلۡمٗاۖ وَقَالَا ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ ٱلَّذِي فَضَّلَنَا عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّنۡ عِبَادِهِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ١٥ وَوَرِثَ سُلَيۡمَٰنُ دَاوُۥدَۖ وَقَالَ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ عُلِّمۡنَا مَنطِقَ ٱلطَّيۡرِ وَأُوتِينَا مِن كُلِّ شَيۡءٍۖ إِنَّ هَٰذَا لَهُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡمُبِينُ ١٦ وَحُشِرَ لِسُلَيۡمَٰنَ جُنُودُهُۥ مِنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِ وَٱلطَّيۡرِ فَهُمۡ يُوزَعُونَ ١٧ حَتَّىٰٓ إِذَآ أَتَوۡاْ عَلَىٰ وَادِ ٱلنَّمۡلِ قَالَتۡ نَمۡلَةٞ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّمۡلُ ٱدۡخُلُواْ مَسَٰكِنَكُمۡ لَا يَحۡطِمَنَّكُمۡ سُلَيۡمَٰنُ وَجُنُودُهُۥ وَهُمۡ لَا يَشۡعُرُونَ ١٨ فَتَبَسَّمَ ضَاحِكٗا مِّن قَوۡلِهَا وَقَالَ رَبِّ أَوۡزِعۡنِيٓ أَنۡ أَشۡكُرَ نِعۡمَتَكَ ٱلَّتِيٓ أَنۡعَمۡتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَٰلِدَيَّ وَأَنۡ أَعۡمَلَ صَٰلِحٗا تَرۡضَىٰهُ وَأَدۡخِلۡنِي بِرَحۡمَتِكَ فِي عِبَادِكَ ٱلصَّٰلِحِينَ ١٩ وَتَفَقَّدَ ٱلطَّيۡرَ فَقَالَ مَا لِيَ لَآ أَرَى ٱلۡهُدۡهُدَ أَمۡ كَانَ مِنَ ٱلۡغَآئِبِينَ ٢٠ لَأُعَذِّبَنَّهُۥ عَذَابٗا شَدِيدًا أَوۡ لَأَاْذۡبَحَنَّهُۥٓ أَوۡ لَيَأۡتِيَنِّي بِسُلۡطَٰنٖ مُّبِينٖ ٢١ فَمَكَثَ غَيۡرَ بَعِيدٖ فَقَالَ أَحَطتُ بِمَا لَمۡ تُحِطۡ بِهِۦ وَجِئۡتُكَ مِن سَبَإِۢ بِنَبَإٖ يَقِينٍ ٢٢ إِنِّي وَجَدتُّ ٱمۡرَأَةٗ تَمۡلِكُهُمۡ وَأُوتِيَتۡ مِن كُلِّ شَيۡءٖ وَلَهَا عَرۡشٌ عَظِيمٞ ٢٣ وَجَدتُّهَا وَقَوۡمَهَا يَسۡجُدُونَ لِلشَّمۡسِ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ أَعۡمَٰلَهُمۡ فَصَدَّهُمۡ عَنِ ٱلسَّبِيلِ فَهُمۡ لَا يَهۡتَدُونَ ٢٤ أَلَّاۤ يَسۡجُدُواْۤ لِلَّهِ ٱلَّذِي يُخۡرِجُ ٱلۡخَبۡءَ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَيَعۡلَمُ مَا تُخۡفُونَ وَمَا تُعۡلِنُونَ ٢٥ ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ ٱلۡعَرۡشِ ٱلۡعَظِيمِ۩ ٢٦ ۞قَالَ سَنَنظُرُ أَصَدَقۡتَ أَمۡ كُنتَ مِنَ ٱلۡكَٰذِبِينَ ٢٧ ٱذۡهَب بِّكِتَٰبِي هَٰذَا فَأَلۡقِهۡ إِلَيۡهِمۡ ثُمَّ تَوَلَّ عَنۡهُمۡ فَٱنظُرۡ مَاذَا يَرۡجِعُونَ ٢٨ قَالَتۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ إِنِّيٓ أُلۡقِيَ إِلَيَّ كِتَٰبٞ كَرِيمٌ ٢٩ إِنَّهُۥ مِن سُلَيۡمَٰنَ وَإِنَّهُۥ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ ٣٠ أَلَّا تَعۡلُواْ عَلَيَّ وَأۡتُونِي مُسۡلِمِينَ ٣١ قَالَتۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ أَفۡتُونِي فِيٓ أَمۡرِي مَا كُنتُ قَاطِعَةً أَمۡرًا حَتَّىٰ تَشۡهَدُونِ ٣٢ قَالُواْ نَحۡنُ أُوْلُواْ قُوَّةٖ وَأُوْلُواْ بَأۡسٖ شَدِيدٖ وَٱلۡأَمۡرُ إِلَيۡكِ فَٱنظُرِي مَاذَا تَأۡمُرِينَ ٣٣ قَالَتۡ إِنَّ ٱلۡمُلُوكَ إِذَا دَخَلُواْ قَرۡيَةً أَفۡسَدُوهَا وَجَعَلُوٓاْ أَعِزَّةَ أَهۡلِهَآ أَذِلَّةٗۚ وَكَذَٰلِكَ يَفۡعَلُونَ ٣٤ وَإِنِّي مُرۡسِلَةٌ إِلَيۡهِم بِهَدِيَّةٖ فَنَاظِرَةُۢ بِمَ يَرۡجِعُ ٱلۡمُرۡسَلُونَ ٣٥ فَلَمَّا جَآءَ سُلَيۡمَٰنَ قَالَ أَتُمِدُّونَنِ بِمَالٖ فَمَآ ءَاتَىٰنِۦَ ٱللَّهُ خَيۡرٞ مِّمَّآ ءَاتَىٰكُمۚ بَلۡ أَنتُم بِهَدِيَّتِكُمۡ تَفۡرَحُونَ ٣٦ ٱرۡجِعۡ إِلَيۡهِمۡ فَلَنَأۡتِيَنَّهُم بِجُنُودٖ لَّا قِبَلَ لَهُم بِهَا وَلَنُخۡرِجَنَّهُم مِّنۡهَآ أَذِلَّةٗ وَهُمۡ صَٰغِرُونَ ٣٧ قَالَ يَٰٓأَيُّهَا ٱلۡمَلَؤُاْ أَيُّكُمۡ يَأۡتِينِي بِعَرۡشِهَا قَبۡلَ أَن يَأۡتُونِي مُسۡلِمِينَ ٣٨ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ قَالَ ٱلَّذِي عِندَهُۥ عِلۡمٞ مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن يَرۡتَدَّ إِلَيۡكَ طَرۡفُكَۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسۡتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَٰذَا مِن فَضۡلِ رَبِّي لِيَبۡلُوَنِيٓ ءَأَشۡكُرُ أَمۡ أَكۡفُرُۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشۡكُرُ لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيّٞ كَرِيمٞ ٤٠ قَالَ نَكِّرُواْ لَهَا عَرۡشَهَا نَنظُرۡ أَتَهۡتَدِيٓ أَمۡ تَكُونُ مِنَ ٱلَّذِينَ لَا يَهۡتَدُونَ ٤١ فَلَمَّا جَآءَتۡ قِيلَ أَهَٰكَذَا عَرۡشُكِۖ قَالَتۡ كَأَنَّهُۥ هُوَۚ وَأُوتِينَا ٱلۡعِلۡمَ مِن قَبۡلِهَا وَكُنَّا مُسۡلِمِينَ ٤٢ وَصَدَّهَا مَا كَانَت تَّعۡبُدُ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ إِنَّهَا كَانَتۡ مِن قَوۡمٖ كَٰفِرِينَ ٤٣ قِيلَ لَهَا ٱدۡخُلِي ٱلصَّرۡحَۖ فَلَمَّا رَأَتۡهُ حَسِبَتۡهُ لُجَّةٗ وَكَشَفَتۡ عَن سَاقَيۡهَاۚ قَالَ إِنَّهُۥ صَرۡحٞ مُّمَرَّدٞ مِّن قَوَارِيرَۗ قَالَتۡ رَبِّ إِنِّي ظَلَمۡتُ نَفۡسِي وَأَسۡلَمۡتُ مَعَ سُلَيۡمَٰنَ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٤٤ ﴾ [النمل: ١٥، ٤٤]
“আর অবশ্যই আমি দাঊদ ও সুলাইমানকে জ্ঞান দান করেছি এবং তারা উভয়ে বলল, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই, যিনি তাঁর অনেক মুমিন বান্দাদের উপর আমাদেরকে মর্যাদা দান করেছেন’। আর সুলাইমান দাঊদের ওয়ারিস হল এবং সে বলল, ‘হে মানুষ, আমাদেরকে পাখির ভাষা শেখানো হয়েছে এবং আমাদেরকে সকল কিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট অনুগ্রহ’। আর সুলাইমানের জন্য তার সেনাবাহিনী থেকে জিন, মানুষ ও পাখিদের সমবেত করা হল। তারপর এদেরকে বিন্যস্ত করা হল। অবশেষে যখন তারা পিপড়ার উপত্যকায় পৌঁছল তখন এক পিপড়া বলল, ‘ওহে পিপড়ার দল, তোমরা তোমাদের বাসস্থানে প্রবেশ কর। সুলাইমান ও তার বাহিনী তোমাদেরকে যেন অজ্ঞাতসারে পিষ্ট করে মারতে না পারে’।তারপর সুলাইমান তার কথায় মুচকি হাসল এবং বলল, ‘হে আমার রব, তুমি আমার প্রতি ও আমার পিতা-মাতার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য আমাকে তোমার শুকরিয়া আদায় করার তাওফীক দাও। আর আমি যাতে এমন সৎকাজ করতে পারি যা তুমি পছন্দ কর। আর তোমার অনুগ্রহে তুমি আমাকে তোমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’। আর সুলাইমান পাখিদের খোঁজ খবর নিল। তারপর সে বলল, ‘কী ব্যাপার, আমি হুদহুদকে দেখছি না; নাকি সে অনুপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত’? অবশ্যই আমি তাকে কঠিন আযাব দেব অথবা তাকে যবেহ করব। অথবা সে আমার কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আসবে’। তারপর অনতিবিলম্বে হুদহুদ এসে বলল, ‘আমি যা অবগত হয়েছি আপনি তা অবগত নন, আমি সাবা থেকে আপনার জন্য নিশ্চিত খবর নিয়ে এসেছি’। আমি এক নারীকে দেখতে পেলাম, সে তাদের উপর রাজত্ব করছে। তাকে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। আর তার আছে এক বিশাল সিংহাসন’।‘আমি তাকে ও তার কওমকে দেখতে পেলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। আর শয়তান তাদের কার্যাবলীকে তাদের জন্য সৌন্দর্যমন্ডিত করে দিয়েছে এবং তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত করেছে, ফলে তারা হিদায়াত পায় না’। যাতে তারা আল্লাহকে সিজদা না করে, যিনি আসমান ও যমীনের লুকায়িত বস্তুকে বের করেন। আর তোমরা যা গোপন কর এবং তোমরা যা প্রকাশ কর তিনি সবই জানেন। আল্লাহ ছাড়া সত্যিকারের কোনো ইলাহ নেই। তিনি মহা আরশের রব। সুলাইমান বলল, আমরা দেখব, ‘তুমি কি সত্য বলেছ, নাকি তুমি মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত’।‘তুমি আমার এ পত্র নিয়ে যাও। অতঃপর এটা তাদের কাছে নিক্ষেপ কর, তারপর তাদের কাছ থেকে সরে থাক এবং দেখ, তারা কী জবাব দেয়’? সে (রাণী) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ! নিশ্চয় আমাকে এক সম্মানজনক পত্র দেওয়া হয়েছে’।‘নিশ্চয় এটা সুলাইমানের পক্ষ থেকে। আর নিশ্চয় এটা পরম করুণাময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে’।‘যাতে তোমরা আমার প্রতি উদ্ধত না হও এবং অনুগত হয়ে আমার কাছে আস’। সে (রাণী) বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তোমরা আমার ব্যাপারে আমাকে অভিমত দাও। তোমাদের উপস্থিতি ছাড়া আমি কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি না। তারা বলল, ‘আমরা শক্তিশালী ও কঠোর যোদ্ধা, আর সিদ্ধান্ত আপনার কাছেই। অতএব চিন্তা করে দেখুন, আপনি কী নির্দেশ দেবেন’। সে বলল, ‘নিশ্চয় রাজা-বাদশাহরা যখন কোনো জনপদে প্রবেশ করে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার সম্মানিত অধিবাসীদেরকে অপদস্থ করে। আর তা-ই তারা করবে’।‘আর নিশ্চয় আমি তাদের কাছে উপঢৌকন পাঠাচ্ছি, তারপর দেখি দূতেরা কী নিয়ে ফিরে আসে’।অতঃপর দূত যখন সুলাইমানের কাছে আসল, তখন সে বলল, ‘তোমরা কি আমাকে সম্পদ দ্বারা সাহায্য করতে চাচ্ছ? সুতরাং আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা থেকে উত্তম। বরং তোমরা তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে খুশি হও’।‘তোমরা তাদের কাছে ফিরে যাও। তারপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে এমন সৈন্যবাহিনী নিয়ে আসব যার মুকাবিলা করার শক্তি তাদের নেই। আর আমি অবশ্যই তাদেরকে সেখান থেকে লাঞ্ছিত অবস্থায় বের করে দেব আর তারা অপমানিত।’ সুলাইমান বলল, ‘হে পারিষদবর্গ, তারা আমার কাছে আত্মসমর্পণ করে আসার পূর্বে তোমাদের মধ্যে কে তার (রাণীর) সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারবে’? এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত।যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’। সুলাইমান বলল, ‘তোমরা তার জন্য তার সিংহাসনের আকার-আকৃতি পরিবর্তন করে দাও। দেখব সে সঠিক দিশা পায় নাকি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে, যারা সঠিক দিশা পায় না’। অতঃপর যখন সে আসল, তখন তাকে বলা হল; ‘এরূপই কি তোমার সিংহাসন’? সে বলল, ‘এটি যেন সেটিই’। আর বলল, ‘আমাদেরকে তার পূর্বেই জ্ঞান দান করা হয়েছিল এবং আমরা আত্মসমর্পণ করেছিলাম’। আর আল্লাহকে বাদ দিয়ে যার পূজা সে করত তা তাকে ঈমান থেকে নিবৃত্ত করেছিল। নিশ্চয় সে ছিল কাফির সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত।তাকে বলা হল, ‘প্রাসাদটিতে প্রবেশ কর’। অতঃপর যখন সে তা দেখল, সে তাকে এক গভীর জলাশয় ধারণা করল, এবং তার পায়ের গোছাদ্বয় অনাবৃত করল। সুলাইমান বলল, ‘এটি আসলে স্বচ্ছ কাঁচ-নির্মিত প্রাসাদ’। সে বলল, ‘হে আমার রব, নিশ্চয় আমি আমার নিজের প্রতি যুলম করেছি। আমি সুলাইমানের সাথে সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম”। [সূরা আন্-নামাল: ১৫-৪৪]
﴿ وَدَاوُۥدَ وَسُلَيۡمَٰنَ إِذۡ يَحۡكُمَانِ فِي ٱلۡحَرۡثِ إِذۡ نَفَشَتۡ فِيهِ غَنَمُ ٱلۡقَوۡمِ وَكُنَّا لِحُكۡمِهِمۡ شَٰهِدِينَ ٧٨ فَفَهَّمۡنَٰهَا سُلَيۡمَٰنَۚ وَكُلًّا ءَاتَيۡنَا حُكۡمٗا وَعِلۡمٗاۚ وَسَخَّرۡنَا مَعَ دَاوُۥدَ ٱلۡجِبَالَ يُسَبِّحۡنَ وَٱلطَّيۡرَۚ وَكُنَّا فَٰعِلِينَ ٧٩ وَعَلَّمۡنَٰهُ صَنۡعَةَ لَبُوسٖ لَّكُمۡ لِتُحۡصِنَكُم مِّنۢ بَأۡسِكُمۡۖ فَهَلۡ أَنتُمۡ شَٰكِرُونَ ٨٠ وَلِسُلَيۡمَٰنَ ٱلرِّيحَ عَاصِفَةٗ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦٓ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ٱلَّتِي بَٰرَكۡنَا فِيهَاۚ وَكُنَّا بِكُلِّ شَيۡءٍ عَٰلِمِينَ ٨١ وَمِنَ ٱلشَّيَٰطِينِ مَن يَغُوصُونَ لَهُۥ وَيَعۡمَلُونَ عَمَلٗا دُونَ ذَٰلِكَۖ وَكُنَّا لَهُمۡ حَٰفِظِينَ ٨٢ ﴾ [الانبياء: ٧٨، ٨٢]
“আর স্মরণ কর দাঊদ ও সুলায়মানের কথা, যখন তারা শস্যক্ষেত সম্পর্কে বিচার করছিল। যাতে রাতের বেলায় কোনো কওমের মেষ ঢুকে পড়েছিল। আর আমি তাদের বিচার কাজ দেখছিলাম।অতঃপর আমি এ বিষয়ের ফয়সালা সুলায়মানকে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। আর আমি তাদের প্রত্যেককেই দিয়েছিলাম প্রজ্ঞা ও জ্ঞান। আর আমি পর্বতমালা ও পাখীদেরকে দাঊদের অধীন করে দিয়েছিলাম, তারা দাঊদের সাথে আমার তাসবীহ পাঠ করত। আর এসবকিছু আমিই করছিলাম। আর আমিই তাকে তোমাদের জন্য বর্ম বানানো শিক্ষা দিয়েছিলাম। যাতে তা যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে? আর আমি সুলায়মানের জন্য অনুগত করে দিয়েছিলাম প্রবল হাওয়াকে, যা তার নির্দেশে প্রবাহিত হত সেই দেশের দিকে, যেখানে আমি বরকত রেখেছি। আর আমি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কেই অবগত ছিলাম। আর শয়তানদের মধ্যে কতক তার জন্য ডুবুরীর কাজ করত, এছাড়া অন্যান্য কাজও করত। আর আমিই তাদের জন্য হিফাযতকারী ছিলাম”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৭৮-৮২]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ «خُفِّفَ عَلَى دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ القُرْآنُ، فَكَانَ يَأْمُرُ بِدَوَابِّهِ فَتُسْرَجُ، فَيَقْرَأُ القُرْآنَ قَبْلَ أَنْ تُسْرَجَ دَوَابُّهُ، وَلاَ يَأْكُلُ إِلَّا مِنْ عَمَلِ يَدِهِ» رَوَاهُ مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ صَفْوَانَ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দাউদ আলাইহিস সালামের পক্ষে কুরআন (যাবুর) তিলাওয়াত সহজ করে দেওয়া হয়েছিল। তিনি তাঁর যানবাহনের পশুর উপর গদি বাঁধার আদেশ করতেন, তখন তার উপর গদি বাধা হতো। তারপর তাঁর যানবাহনের পশুটির উপর গদি বাঁধার পূর্বেই তিনি যাবুর তিলাওয়াত করে শেষ করে ফেলতেন। তিনি নিজ হাতে উপার্জন করেই খেতেন। মূসা ইবন উকবা (রহ.) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীসটি রেওয়াত করেছেন।
عَنْ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرٍو رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أُخْبِرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنِّي أَقُولُ: وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ، وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ " فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَنْتَ الَّذِي تَقُولُ وَاللَّهِ لَأَصُومَنَّ النَّهَارَ وَلَأَقُومَنَّ اللَّيْلَ مَا عِشْتُ» قُلْتُ: قَدْ قُلْتُهُ قَالَ: «إِنَّكَ لاَ تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ، فَصُمْ وَأَفْطِرْ، وَقُمْ وَنَمْ، وَصُمْ مِنَ الشَّهْرِ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَإِنَّ الحَسَنَةَ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَذَلِكَ مِثْلُ صِيَامِ الدَّهْرِ» فَقُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمَيْنِ» قَالَ: قُلْتُ: إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ، قَالَ: فَصُمْ يَوْمًا وَأَفْطِرْ يَوْمًا، وَذَلِكَ صِيَامُ دَاوُدَ وَهُوَ أَعْدَلُ الصِّيَامِ " قُلْتُ إِنِّي أُطِيقُ أَفْضَلَ مِنْهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «لاَ أَفْضَلَ مِنْ ذَلِكَ».
আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানান হলো যে, আমি বলছি, আল্লাহ্র কসম! আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন অবশ্যই আমি বিরামহীনভাবে দিনে সাওম পালন করবো এবং রাতে ইবাদতে রত থাকবো। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তুমিই কি বলছো, ‘আল্লাহর কসম, আমি যতদিন বাঁচবো, ততদিন দিনে সাওম পালন করবো এবং রাতে ইবাদাত রত থাকবো। আমি আরয করলাম, আমিই তা বলছি। তিনি বললেন, সেই শক্তি তোমার নেই। কাজেই সাওমও পালন কর, ইফ্তারও কর অর্থাৎ বিরতি দাও। রাতে ইবাদাতও কর এবং ঘুম যাও। আর প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। কেননা প্রতিটি নেক কাজের কমপক্ষে দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায় আর এটা সারা বছর সাওম পালন করার সমান। তখন আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি এর চেয়েও বেশী সাওম পালন করার ক্ষমতা রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে তুমি একদিন সাওম পালন কর আর দু’দিন ইফতার কর অর্থাৎ বিরতি দাও। তখন আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমি এর চেয়েও অধিক পালন করার শক্তি রাখি। তখন তিনি বললেন, তাহলে একদিন সাওম পালন কর আর একদিন বিরতি দাও। এটা দাউদ আলাইহিস সালামের সাওম পালনের পদ্ধতি। আর এটাই সাওম পালনের উত্তম পদ্ধতি। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি এর চেয়েও বেশী শক্তি রাখি। তিনি বললেন, এর চেয়ে অধিক কিছু নেই।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ، قَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَلَمْ أُنَبَّأْ أَنَّكَ تَقُومُ اللَّيْلَ وَتَصُومُ النَّهَارَ» فَقُلْتُ: نَعَمْ، فَقَالَ: «فَإِنَّكَ إِذَا فَعَلْتَ ذَلِكَ هَجَمَتِ العَيْنُ، وَنَفِهَتِ النَّفْسُ، صُمْ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ ثَلاَثَةَ أَيَّامٍ، فَذَلِكَ صَوْمُ الدَّهْرِ، أَوْ كَصَوْمِ الدَّهْرِ» قُلْتُ: إِنِّي أَجِدُ بِي، - قَالَ مِسْعَرٌ يَعْنِي قُوَّةً - قَالَ: «فَصُمْ صَوْمَ دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ، وَكَانَ يَصُومُ يَوْمًا وَيُفْطِرُ يَوْمًا، وَلاَ يَفِرُّ إِذَا لاَقَى».
আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমি কি অবহিত হইনি যে, তুমি রাত ভর ইবাদাত কর এবং দিন ভর সাওম পালন কর! আমি বল্ললাম, হ্যাঁ। (খবর সত্য) তিনি বললেন, যদি তুমি এরূপ কর; তবে তোমার দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়ে যাবে এবং দেহ অবসন্ন হয়ে যাবে। কাজেই প্রতি মাসে তিন দিন সাওম পালন কর। তাহলে তা সারা বছরের সাওমের সমতুল্য হয়ে যাবে। আমি বললাম, আমি আমার মধ্যে আরো বেশী পাই। মিসআর (রহ.) বলেন, এখানে শক্তি বুঝানো হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি দাউদ আলাইহিস সালামের পদ্ধতিতে সাওম পালন কর। তিনি একদিন সাওম পালন করতেন আর একদিন বিরত থাকতেন। আর শত্রুর সম্মুখীন হলে তিনি কখনও পলায়ন করতেন না।
আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿ وَلَقَدۡ فَتَنَّا سُلَيۡمَٰنَ وَأَلۡقَيۡنَا عَلَىٰ كُرۡسِيِّهِۦ جَسَدٗا ثُمَّ أَنَابَ ٣٤ قَالَ رَبِّ ٱغۡفِرۡ لِي وَهَبۡ لِي مُلۡكٗا لَّا يَنۢبَغِي لِأَحَدٖ مِّنۢ بَعۡدِيٓۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡوَهَّابُ ٣٥ فَسَخَّرۡنَا لَهُ ٱلرِّيحَ تَجۡرِي بِأَمۡرِهِۦ رُخَآءً حَيۡثُ أَصَابَ ٣٦ وَٱلشَّيَٰطِينَ كُلَّ بَنَّآءٖ وَغَوَّاصٖ ٣٧ وَءَاخَرِينَ مُقَرَّنِينَ فِي ٱلۡأَصۡفَادِ ٣٨ هَٰذَا عَطَآؤُنَا فَٱمۡنُنۡ أَوۡ أَمۡسِكۡ بِغَيۡرِ حِسَابٖ ٣٩ وَإِنَّ لَهُۥ عِندَنَا لَزُلۡفَىٰ وَحُسۡنَ مََٔابٖ ٤٠ ﴾ [ص: ٣٤، ٤٠]
“আর আমি তো সুলাইমানকে পরীক্ষা করেছিলাম এবং তার সিংহাসনের উপর রেখেছিলাম একটি দেহ , অতঃপর সে আমার অভিমুখী হল। সুলাইমান বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমাকে এমন এক রাজত্ব দান করুন যা আমার পর আর কারও জন্যই প্রযোজ্য হবে না। নিশ্চয়ই আপনি বড়ই দানশীল। ফলে আমি বায়ুকে তার অনুগত করে দিলাম যা তার আদেশে মৃদুমন্দভাবে প্রবাহিত হত, যেখানে সে পৌঁছতে চাইত। আর (অনুগত করে দিলাম) প্রত্যেক প্রাসাদ নির্মাণকারী ও ডুবুরী শয়তান [জিন]সমূহকেও আর শেকলে আবদ্ধ আরও অনেককে। এটি আমার অনুগ্রহ। অতএব তুমি এটি অন্যের জন্য খরচ কর অথবা নিজের জন্য রেখে দাও, এর কোনো হিসাব দিতে হবে না। আর আমার নিকট রয়েছে তার জন্য নৈকট্য ও শুভ পরিণাম”। [সূরা সোয়াদ: ৩৪-৪০]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَّ سُلَيْمَانَ بْنَ دَاوُدَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَنَى بَيْتَ الْمَقْدِسِ سَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خِلَالًا ثَلَاثَةً: سَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حُكْمًا يُصَادِفُ حُكْمَهُ فَأُوتِيَهُ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ مُلْكًا لَا يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِهِ فَأُوتِيَهُ، وَسَأَلَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حِينَ فَرَغَ مِنْ بِنَاءِ الْمَسْجِدِ أَنْ لَا يَأْتِيَهُ أَحَدٌ لَا يَنْهَزُهُ إِلَّا الصَّلَاةُ فِيهِ أَنْ يُخْرِجَهُ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ ".
আবদুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, সুলায়মান ইবন দাঊদ আলাইহিস সালাম যখন বায়তুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করলেন, তখন তিনি আল্লাহ তা’আলার কাছে তিনটি বস্তু চাইলেন: তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলেন এমন ফয়সালা যা তাঁর ফয়সালার মত হয়। তা তাঁকে প্রদান করা হল। আর তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট চাইলেন এমন রাজ্য, যার অধিকারী তারপর আর কেউ হবে না। তাও তাঁকে দেওয়া হল। আর যখন তিনি মসজিদ নির্মাণের কাজ সমাপ্ত করলেন তখন তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করলেন, যে ব্যক্তি তাতে সালাতের জন্য আগমন করবে, তাকে যেন পাপ থেকে ঐদিনের মত মু্ক্ত করে দেন যেদিন সে তার মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল।
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ: قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فَسَمِعْنَاهُ يَقُولُ: «أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ»، ثُمَّ قَالَ: «أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ ثَلَاثًا»، وَبَسَطَ يَدَهُ كَأَنَّهُ يَتَنَاوَلُ شَيْئًا، فَلَمَّا فَرَغَ مِنَ الصَّلَاةِ قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ سَمِعْنَاكَ تَقُولُ فِي الصَّلَاةِ شَيْئًا لَمْ نَسْمَعْكَ تَقُولُهُ قَبْلَ ذَلِكَ، وَرَأَيْنَاكَ بَسَطْتَ يَدَكَ، قَالَ: " إِنَّ عَدُوَّ اللَّهِ إِبْلِيسَ جَاءَ بِشِهَابٍ مِنْ نَارٍ لِيَجْعَلَهُ فِي وَجْهِي، فَقُلْتُ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قُلْتُ: أَلْعَنُكَ بِلَعْنَةِ اللَّهِ، فَلَمْ يَسْتَأْخِرْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَرَدْتُ أَنْ آخُذَهُ، وَاللَّهِ لَوْلَا دَعْوَةُ أَخِينَا سُلَيْمَانَ لَأَصْبَحَ مُوثَقًا بِهَا يَلْعَبُ بِهِ وِلْدَانُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ ".
আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) সালাতে দাঁড়ালে আমরা তাকে বলতে শুনলাম, আমি তোর (ইবলীস) থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। তারপর বললেন, আমি আল্লাহর লানত দ্বারা তোকে লানত দিচ্ছি। (এ বাক্যটি তিনি) তিনবার (বললেন) এবং হাত প্রসারিত করলেন যেন কোন কিছু ধরতে চাচ্ছেন। যখন তিনি সালাত শেষ করলেন, আমরা বললাম, ইয়া রাসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! (আজ) আমরা সালাতে আপনাকে এমন কিছু বলতে শুনেছি যা ইতোপূর্বে আর কখনো বলতে শুনিনি, আর (আজ) আপনাকে হাত প্রসারিত করতে দেখেছি। তিনি বললেন, আল্লাহর দুশমন ইবলীস অগ্নিস্ফুলিংগ নিয়ে এসেছিল আমার চেহারায় নিক্ষেপ করার জন্য, তখন আমি তিনবার বললাম, আমি তোর থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। এরপর আমি তিনবার বললাম, আল্লাহর লানত দ্বারা আমি তোকে লানত দিচ্ছি। এতেও সে যখন পেছনে সরে গেল না তখন আমি তাকে ধরতে ইচ্ছা করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! যদি আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সালামের দো‘আ না থাকতো তা হলে সে ভোর পর্যন্ত খৃঁটির সাথে বাঁধা থাকতো। তার সাথে মদীনার শিশু?-কিশোররা খেলা করত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ عِفْرِيتًا مِنَ الجِنِّ تَفَلَّتَ البَارِحَةَ لِيَقْطَعَ عَلَيَّ صَلاَتِي، فَأَمْكَنَنِي اللَّهُ مِنْهُ فَأَخَذْتُهُ، فَأَرَدْتُ أَنْ أَرْبُطَهُ عَلَى سَارِيَةٍ مِنْ سَوَارِي المَسْجِدِ حَتَّى تَنْظُرُوا إِلَيْهِ كُلُّكُمْ، فَذَكَرْتُ دَعْوَةَ أَخِي سُلَيْمَانَ رَبِّ هَبْ لِي مُلْكًا لاَ يَنْبَغِي لِأَحَدٍ مِنْ بَعْدِي فَرَدَدْتُهُ خَاسِئًا» {عِفْرِيتٌ} [النمل: 39] مُتَمَرِّدٌ مِنْ إِنْسٍ أَوْ جَانٍّ، مِثْلُ زِبْنِيَةٍ جَمَاعَتُهَا الزَّبَانِيَةُ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, একটি অবাধ্য জ্বিন এক রাতে আমার সালাতে বিঘ্ন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে আমার নিকট আসল। আল্লাহ্ আমাকে তাঁর উপর ক্ষমতা প্রদান করলেন। আমি তাঁকে পাকড়াও করলাম এবং মসজিদের একটি খুটির সঙ্গে বেঁধে রাখার মনস্থ করলাম, যাতে তোমরা সবাই সচক্ষে তাঁকে দেখতে পাও। তখনই আমার ভাই সুলায়মান আলাইহিস সালামের দু‘আটি আমার মনে পড়লো। “হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুণ এবং আমাকে দান করুন এবং আমাকে দান করুন এমন এক রাজ্য যার অধিকারী আমার পরে আমি ছাড়া কেউ না হয়”। [সূরা নামল : ৩৯] এরপর আমি জ্বিনটিকে ব্যর্থ এবং অপমানিত করে ছেড়ে দিলাম। জিন অথবা ইনসানের অত্যন্ত পিশাচ ব্যক্তিকে ইফ্রীত বলা হয়। ইফ্রীত ও ইফ্রীয়াতুন যিব্নীয়াতুন-এর ন্যায় এক বচন, যার বহু বচন যাবানিয়াতুন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ: سُلَيْمَانُ بْنُ دَاوُدَ لَأَطُوفَنَّ اللَّيْلَةَ عَلَى سَبْعِينَ امْرَأَةً، تَحْمِلُ كُلُّ امْرَأَةٍ فَارِسًا يُجَاهِدُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَقَالَ لَهُ صَاحِبُهُ: إِنْ شَاءَ اللَّهُ، فَلَمْ يَقُلْ، وَلَمْ تَحْمِلْ شَيْئًا إِلَّا وَاحِدًا، سَاقِطًا أَحَدُ شِقَّيْهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ قَالَهَا لَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ " قَالَ شُعَيْبٌ وَابْنُ أَبِي الزِّنَادِ: تِسْعِينَ وَهُوَ أَصَحُّ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সুলায়মান ইবন দাউদ আলাইহিস সালাম বলেছেন, আজ রাতে আমি আমার সত্তর জন্য স্ত্রীর নিকট যাব। প্রত্যেক স্ত্রী একজন করে আশারোহী যোদ্ধা গর্ভধারণ করবে। এরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে। তখন তাঁর সাথী বললেন, ইনশাআল্লাহ্ (বলুন)। কিন্তু তিনি মুখে তা বলেন নি। এরপর একজন স্ত্রী ব্যতীত কেউ গর্ভধারণ করলেন, না। সে যাও এক (পুত্র) সন্তান প্রসব করলেন। তাও তার এক অঙ্গ ছিল না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ‘ইনশাআল্লাহ্’ মুখে বলতেন, তা হলে (সবগুলো সন্তানই জন্ম নিত এবং) আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতো। শু‘আয়ব এবং আবূ যিনাদ (রহ.) এখানে নব্বই জন্য স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন আর এটাই সঠিক বর্ণনা।
حَدَّثَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: " مَثَلِي وَمَثَلُ النَّاسِ، كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتَوْقَدَ نَارًا، فَجَعَلَ الفَرَاشُ وَهَذِهِ الدَّوَابُّ تَقَعُ فِي النَّارِ، وَقَالَ: كَانَتِ امْرَأَتَانِ مَعَهُمَا ابْنَاهُمَا، جَاءَ الذِّئْبُ فَذَهَبَ بِابْنِ إِحْدَاهُمَا، فَقَالَتْ صَاحِبَتُهَا: إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ، وَقَالَتِ الأُخْرَى: إِنَّمَا ذَهَبَ بِابْنِكِ، فَتَحَاكَمَتَا إِلَى دَاوُدَ، فَقَضَى بِهِ لِلْكُبْرَى، فَخَرَجَتَا عَلَى سُلَيْمَانَ بْنِ دَاوُدَ فَأَخْبَرَتَاهُ، فَقَالَ: ائْتُونِي بِالسِّكِّينِ أَشُقُّهُ بَيْنَهُمَا، فَقَالَتِ الصُّغْرَى: لاَ تَفْعَلْ يَرْحَمُكَ اللَّهُ، هُوَ ابْنُهَا، فَقَضَى بِهِ لِلصُّغْرَى " قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: وَاللَّهِ إِنْ سَمِعْتُ بِالسِّكِّينِ إِلَّا يَوْمَئِذٍ، وَمَا كُنَّا نَقُولُ إِلَّا المُدْيَةُ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, আমার ও অন্যান্য মানুষের উপমা হলো এমন যেমন কোনো এক ব্যক্তি আগুন জ্বালাল এবং তাতে পতঙ্গ এবং কীটগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে পড়তে লাগল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দু’জন মহিলা ছিল। তাদের সঙ্গে দু’টি সন্তানও ছিল। হঠাৎ একটি বাঘ এসে তাদের একজনের ছেলে নিয়ে গেল। সাথের একজন মহিলা বললো, ‘‘না, বাঘে তোমার ছেলেটি নিয়ে গেছে।’’ তারপর উভয় মহিলাই দাউদ আলাইহিস সালামের নিকট এ বিরোধ মীমাংসার জন্য বিচারপ্রার্থী হলো। তখন তিনি ছেলেটির বিষয়ে বয়স্কা মহিলাটির পক্ষে রায় দিলেন। তারপর তারা উভয়ে (বিচারালয় থেকে) বেরিয়ে দাউদ আলাইহিস সালামের পুত্র সুলায়মান আলাইহিস সালামের কাছ দিয়ে যেতে লাগল এবং তারা উভয়ে তাঁকে ঘটনাটি জানালেন। তখন তিনি লোকদেরকে বললেন, তোমরা আমার কাছে ছোরা আনয়ন কর। আমি ছেলেটিকে দু’ টুক্রা করে তাদের উভয়ের মধ্যে ভাগ করে দেই। এ কথা শুনে অল্প বয়স্কা মহিলাটি বলে উঠলো, তা করবেন না, আল্লাহ্ আপনার উপর রহম করুন। ছেলেটি তারই। (এটা আমি মেনে নিচ্ছি) তখন তিনি ছেলেটির ব্যাপারে অল্প বয়স্কা মহিলাটির পক্ষেই রায় দিলেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! ছোরা অর্থে শব্দটি আমি ঐ দিনই শুনেছি। আর না হয় আমরা তো ছোরাকেই বলতাম।
আল্লাহর নবী ইউনূস আলাইহিস সালাম
﴿ وَذَا ٱلنُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَٰضِبٗا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقۡدِرَ عَلَيۡهِ فَنَادَىٰ فِي ٱلظُّلُمَٰتِ أَن لَّآ إِلَٰهَ إِلَّآ أَنتَ سُبۡحَٰنَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ٨٧ فَٱسۡتَجَبۡنَا لَهُۥ وَنَجَّيۡنَٰهُ مِنَ ٱلۡغَمِّۚ وَكَذَٰلِكَ نُۨجِي ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٨٨ ﴾ [الانبياء: ٨٧، ٨٨]
“আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র মহান। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ । অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৮৭-৮৮]
عَنِ ابْن عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " لاَ يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ: أَنَا خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّى ". وَنَسَبَهُ إِلَى أَبِيهِ،
وَذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ، فَقَالَ: " مُوسَى آدَمُ، طُوَالٌ، كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَقَالَ: عِيسَى جَعْدٌ مَرْبُوعٌ " وَذَكَرَ مَالِكًا خَازِنَ النَّارِ، وَذَكَرَ الدَّجَّالَ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কোনো ব্যাক্তির একথা বলা উচিৎ হবেনা যে, আমি (নবী) ইউনুস ইবন মাত্তার চেয়ে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথা বলতে গিয়ে ইউনুস আলাইহিস সালামের পিতার নাম উল্লেখ করেছেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিরাজের রজনীর কথাও উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন মূসা আলাইহিস সালাম বাদামী রং বিশিষ্ট দীর্ঘদেহী ছিলেন। যেন তিনি শানুআ গোত্রের একজন লোক। তিনি আরো বলেছেন যে, ঈসা আলাইহিস সালাম ছিলেন মধ্যমদেহী, কোঁকড়ানো চুলওয়ালা ব্যক্তি। আর তিনি দোযখের দারোগা মালিক এবং দাজ্জালের কথাও উল্লেখ করেছেন।
আল্লাহর নবী যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া আলাইহিমাস সালাম
আল্লাহ বলেছেন,
﴿ كٓهيعٓصٓ ١ ذِكۡرُ رَحۡمَتِ رَبِّكَ عَبۡدَهُۥ زَكَرِيَّآ ٢ إِذۡ نَادَىٰ رَبَّهُۥ نِدَآءً خَفِيّٗا ٣ قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ ٱلۡعَظۡمُ مِنِّي وَٱشۡتَعَلَ ٱلرَّأۡسُ شَيۡبٗا وَلَمۡ أَكُنۢ بِدُعَآئِكَ رَبِّ شَقِيّٗا ٤ وَإِنِّي خِفۡتُ ٱلۡمَوَٰلِيَ مِن وَرَآءِي وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا فَهَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيّٗا ٥ يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنۡ ءَالِ يَعۡقُوبَۖ وَٱجۡعَلۡهُ رَبِّ رَضِيّٗا ٦ يَٰزَكَرِيَّآ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلَٰمٍ ٱسۡمُهُۥ يَحۡيَىٰ لَمۡ نَجۡعَل لَّهُۥ مِن قَبۡلُ سَمِيّٗا ٧ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَكَانَتِ ٱمۡرَأَتِي عَاقِرٗا وَقَدۡ بَلَغۡتُ مِنَ ٱلۡكِبَرِ عِتِيّٗا ٨ قَالَ كَذَٰلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞ وَقَدۡ خَلَقۡتُكَ مِن قَبۡلُ وَلَمۡ تَكُ شَيۡٔٗا ٩ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَ لَيَالٖ سَوِيّٗا ١٠ فَخَرَجَ عَلَىٰ قَوۡمِهِۦ مِنَ ٱلۡمِحۡرَابِ فَأَوۡحَىٰٓ إِلَيۡهِمۡ أَن سَبِّحُواْ بُكۡرَةٗ وَعَشِيّٗا ١١ ﴾ [مريم: ١، ١١]
“কাফ-হা-ইয়া-‘আঈন-সোয়াদ। এটা তোমার রবের রহমতের বিবরণ তাঁর বান্দা যাকারিয়্যার প্রতি। যখন সে তার রবকে গোপনে ডেকেছিল। সে বলেছিল, ‘হে আমার রব! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যবশতঃ আমার মাথার চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে। হে আমার রব, আপনার নিকট দো‘আ করে আমি কখনো ব্যর্থ হইনি’।‘আর আমার পরে স্বগোত্রীয়দের সম্পর্কে আমি আশংকাবোধ করছি। আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, অতএব আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’।‘যে আমার উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকূবের বংশের উত্তরাধিকারী হবে। হে আমার রব, আপনি তাকে পছন্দনীয় বানিয়ে দিন’।(আল্লাহ বললেন) ‘হে যাকারিয়্যা, আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি, তার নাম ইয়াহইয়া। ইতোপূর্বে কাউকে আমি এ নাম দেইনি’। সে বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা, আর আমিও তো বার্ধক্যের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি’। সে (ফেরেশতা) বলল, ‘এভাবেই’। তোমার রব বলেছেন, ‘এটা আমার জন্য সহজ। আমি তো ইতঃপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, তখন তুমি কিছুই ছিলে না’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমার জন্য একটি নিদর্শন ঠিক করে দিন’। তিনি বললেন, ‘তোমার জন্য এটাই নিদর্শন যে, তুমি সুস্থ থেকেও তিন রাত কারো সাথে কথা বলবে না’। অতঃপর সে মিহরাব হতে বেরিয়ে তার লোকদের সামনে আসল এবং ইশারায় তাদেরকে বলল যে, ‘তোমরা সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবীহ পাঠ কর”। [সূরা মারইয়াম: ১-১১]
﴿ هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُۥۖ قَالَ رَبِّ هَبۡ لِي مِن لَّدُنكَ ذُرِّيَّةٗ طَيِّبَةًۖ إِنَّكَ سَمِيعُ ٱلدُّعَآءِ ٣٨ فَنَادَتۡهُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَهُوَ قَآئِمٞ يُصَلِّي فِي ٱلۡمِحۡرَابِ أَنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكَ بِيَحۡيَىٰ مُصَدِّقَۢا بِكَلِمَةٖ مِّنَ ٱللَّهِ وَسَيِّدٗا وَحَصُورٗا وَنَبِيّٗا مِّنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٣٩ قَالَ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَقَدۡ بَلَغَنِيَ ٱلۡكِبَرُ وَٱمۡرَأَتِي عَاقِرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكَ ٱللَّهُ يَفۡعَلُ مَا يَشَآءُ ٤٠ قَالَ رَبِّ ٱجۡعَل لِّيٓ ءَايَةٗۖ قَالَ ءَايَتُكَ أَلَّا تُكَلِّمَ ٱلنَّاسَ ثَلَٰثَةَ أَيَّامٍ إِلَّا رَمۡزٗاۗ وَٱذۡكُر رَّبَّكَ كَثِيرٗا وَسَبِّحۡ بِٱلۡعَشِيِّ وَٱلۡإِبۡكَٰرِ ٤١ ﴾ [ال عمران: ٣٨، ٤١]
“সেখানে যাকারিয়্যা তার রবের কাছে প্রার্থনা করেছিল, সে বলল, ‘হে আমর রব, আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী’।অতঃপর ফেরেশতারা তাকে ডেকে বলল, সে যখন কক্ষে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করছিল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে ইয়াহইয়া সম্পর্কে সুসংবাদ দিচ্ছেন, যে হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে বাণীর সত্যায়নকারী, নেতা ও নারী সম্ভোগমুক্ত এবং নেককারদের মধ্য থেকে একজন নবী’। সে বলল, ‘হে আমার রব, কীভাবে আমার পুত্র হবে? অথচ আমার তো বার্ধক্য এসে গিয়েছে, আর আমার স্ত্রী বন্ধা’। তিনি বললেন, ‘এভাবেই আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন’। সে বলল, ‘হে আমার রব, আমাকে দেন একটি নিদর্শন’। তিনি বললেন, ‘তোমার নিদর্শন হল, তুমি তিন দিন পর্যন্ত মানুষের সাথে ইশারা ছাড়া কথা বলবে না। আর তোমার রবকে অধিক স্মরণ কর এবং সকাল-সন্ধ্যা তার তাসবীহ পাঠ কর”। [আলে ইমরান: ৩৮-৪১]
عَنْ مَالِكِ بْنِ صَعْصَعَةَ: أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَهُمْ عَنْ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ " ثُمَّ صَعِدَ حَتَّى أَتَى السَّمَاءَ الثَّانِيَةَ فَاسْتَفْتَحَ، قِيلَ: مَنْ هَذَا؟ قَالَ: جِبْرِيلُ قِيلَ: وَمَنْ مَعَكَ؟ قَالَ: مُحَمَّدٌ قِيلَ: وَقَدْ أُرْسِلَ إِلَيْهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَلَمَّا خَلَصْتُ فَإِذَا يَحْيَى وَعِيسَى وَهُمَا ابْنَا خَالَةٍ، قَالَ: هَذَا يَحْيَى وَعِيسَى فَسَلِّمْ عَلَيْهِمَا، فَسَلَّمْتُ فَرَدَّا، ثُمَّ قَالاَ: مَرْحَبًا بِالأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ الصَّالِحِ ".
মালিক ইবন সা‘সা‘আ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাগণের কাছে মিরাজের রাত্রি সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন, অনন্তর তিনি (জিবরীল আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে উপরে বললেন, এমনকি দ্বিতীয় আকাশে এসে পৌছলেন এবং দরজা খুলতে বললেন, জিজ্ঞাসা করা হলো কে? উত্তর দিলেন, আমি জিবরীল আলাইহিস সালাম। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৌছলাম তখন সেখানে ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম এবং ঈসা আলাইহিস সালাম। তাদেরকে সালাম করুন। তখন আমি সালাম করলাম। তাঁরাও সালামের জবাব দিলেন। তারপর তাঁরা বললেন, নেক ভাই এবং নেক নবীর প্রতি মারহাবা।
عَنْ زَيْدِ بْنِ سَلاَّمٍ، أَنَّ أَبَا سَلاَّمٍ، حَدَّثَهُ أَنَّ الحَارِثَ الأَشْعَرِيَّ، حَدَّثَهُ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَ يَحْيَى بْنَ زَكَرِيَّا بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ يَعْمَلَ بِهَا وَيَأْمُرَ بني إسرائيل أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا، وَإِنَّهُ كَادَ أَنْ يُبْطِئَ بِهَا، فَقَالَ عِيسَى: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَكَ بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ لِتَعْمَلَ بِهَا وَتَأْمُرَ بني إسرائيل أَنْ يَعْمَلُوا بِهَا، فَإِمَّا أَنْ تَأْمُرَهُمْ، وَإِمَّا أَنَا آمُرُهُمْ، فَقَالَ يَحْيَى: أَخْشَى إِنْ سَبَقْتَنِي بِهَا أَنْ يُخْسَفَ بِي أَوْ أُعَذَّبَ، فَجَمَعَ النَّاسَ فِي بَيْتِ الْمَقْدِسِ، فَامْتَلأَ الْمَسْجِدُ وَقَعَدُوا عَلَى الشُّرَفِ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِخَمْسِ كَلِمَاتٍ أَنْ أَعْمَلَ بِهِنَّ، وَآمُرَكُمْ أَنْ تَعْمَلُوا بِهِنَّ: أَوَّلُهُنَّ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَإِنَّ مَثَلَ مَنْ أَشْرَكَ بِاللَّهِ كَمَثَلِ رَجُلٍ اشْتَرَى عَبْدًا مِنْ خَالِصِ مَالِهِ بِذَهَبٍ أَوْ وَرِقٍ، فَقَالَ: هَذِهِ دَارِي وَهَذَا عَمَلِي فَاعْمَلْ وَأَدِّ إِلَيَّ، فَكَانَ يَعْمَلُ وَيُؤَدِّي إِلَى غَيْرِ سَيِّدِهِ، فَأَيُّكُمْ يَرْضَى أَنْ يَكُونَ عَبْدُهُ كَذَلِكَ؟ وَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَكُمْ بِالصَّلاَةِ، فَإِذَا صَلَّيْتُمْ فَلاَ تَلْتَفِتُوا فَإِنَّ اللَّهَ يَنْصِبُ وَجْهَهُ لِوَجْهِ عَبْدِهِ فِي صَلاَتِهِ مَا لَمْ يَلْتَفِتْ، وَآمُرُكُمْ بِالصِّيَامِ، فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ فِي عِصَابَةٍ مَعَهُ صُرَّةٌ فِيهَا مِسْكٌ، فَكُلُّهُمْ يَعْجَبُ أَوْ يُعْجِبُهُ رِيحُهَا، وَإِنَّ رِيحَ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَآمُرُكُمْ بِالصَّدَقَةِ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ أَسَرَهُ العَدُوُّ، فَأَوْثَقُوا يَدَهُ إِلَى عُنُقِهِ وَقَدَّمُوهُ لِيَضْرِبُوا عُنُقَهُ، فَقَالَ: أَنَا أَفْدِيهِ مِنْكُمْ بِالقَلِيلِ وَالكَثِيرِ، فَفَدَى نَفْسَهُ مِنْهُمْ، وَآمُرُكُمْ أَنْ تَذْكُرُوا اللَّهَ فَإِنَّ مَثَلَ ذَلِكَ كَمَثَلِ رَجُلٍ خَرَجَ العَدُوُّ فِي أَثَرِهِ سِرَاعًا حَتَّى إِذَا أَتَى عَلَى حِصْنٍ حَصِينٍ فَأَحْرَزَ نَفْسَهُ مِنْهُمْ، كَذَلِكَ العَبْدُ لاَ يُحْرِزُ نَفْسَهُ مِنَ الشَّيْطَانِ إِلاَّ بِذِكْرِ اللهِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَنَا آمُرُكُمْ بِخَمْسٍ اللَّهُ أَمَرَنِي بِهِنَّ، السَّمْعُ وَالطَّاعَةُ وَالجِهَادُ وَالهِجْرَةُ وَالجَمَاعَةُ، فَإِنَّهُ مَنْ فَارَقَ الجَمَاعَةَ قِيدَ شِبْرٍ فَقَدْ خَلَعَ رِبْقَةَ الإِسْلاَمِ مِنْ عُنُقِهِ إِلاَّ أَنْ يَرْجِعَ، وَمَنْ ادَّعَى دَعْوَى الجَاهِلِيَّةِ فَإِنَّهُ مِنْ جُثَا جَهَنَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ؟ قَالَ: وَإِنْ صَلَّى وَصَامَ، فَادْعُوا بِدَعْوَى اللهِ الَّذِي سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمِينَ الْمُؤْمِنِينَ، عِبَادَ اللَّهِ.
হারিস আল-আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহু তা‘আলা ইয়াহ্ইয়া ইবন যাকারিয়া আলাইহিস সালামকে নিজে আমল করতে এবং বনূ ইসরাঈলকেও আমল করার জন্য বলতে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে দিয়েছিলেন। হয় আপনি লোকদের এগুলো করতে নির্দেশ দিন, না হয় আমিই তাদের সেগুলো করতে নির্দেশ দিব। ইয়াহ্ইয়া আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি যদি এই বিষয়ে আমার অগ্রগামী হয়ে যান তবে আমার আশংকা হয় যে আমাকে ভূমিতে ধসিয়ে দেওয়া হবে বা অন্য কোনো আযাব দেওয়া হবে। অনন্তর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাসে লোকদের একত্রিত করলেন। মসজিদ লোকে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এমন কি বারান্দাগুলোতে গিয়েও তারা বসল। তিনি বললেন: আল্লাহ তা‘আলা আমাকে পাঁচ বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন, যেন আমি নিজেও সেগুলোর উপর আমল করি এবং তোমাদেরকেও সেগুলোর উপর আমলের নির্দেশ দিই। প্রথম হল, আল্লাহর ইবাদত করবে তাঁর সঙ্গে কিছুর শরীক করবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে তার উদাহরণ হল, সেই ব্যক্তির মত যে তার সোনা বা রূপা নির্ভেজাল সম্পদ দিয়ে একটি দাস ক্রয় করল। তাকে বলল, এ হল আমার বাড়ি আর এ হল আমার কাজ। তুমি কাজ কর এবং আমাকে আমার হক দিবে। অনন্তর সে কাজ করতে থাকল কিন্তু তার মালিক ভিন্ন অন্যের হক আদায় করল। তোমাদের মধ্যে কেউ কি এই কথার উপর রাযী আছে যে, তার দাস এ ধরনের হোক? আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে সালাতের নির্দেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা যখন সালাত আদায় করবে তখন এদিক-সেদিক তাকাবে না। কেননা যতক্ষণ বান্দা এদিক-সেদিক না তাকায় ততক্ষণ সারাতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নেক দৃষ্টি তাঁর বান্দার চেহারার দিকে নিবিষ্ট করে রাখেন। তোমাদের আমি সিয়ামের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির মত, যে ব্যক্তি একটি দলে অবস্থান করছে। তার সঙ্গে আছে মিশক ভর্তি একটি থলে। দলের প্রত্যেকের কাছেই এ সুগন্ধি ভাল লাগে। আল্লাহ তা‘আলার কাছে মিশকের সুগন্ধি অপেক্ষা সিয়াম পালনকারীর (মুখের) গন্ধ অনেক বেশী সুগন্ধময়। তোমাদের আমি সাদাকা-এর নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে শক্ররা বন্দী করে তার ঘাড় পেঁচিয়ে তার হাত বেঁধে ফেলেছে এবং গর্দান উড়িয়ে দেওয়ার জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে চলেছে। তখন সে ব্যক্তি বলল: আমার কম বেশী যা কিছু আছে সব কিছু মুক্তিপণ হিসাবে তোমাদের দিচ্ছি। অনন্তর সে এভাবে তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিল। (সাদাকার মাধ্যমেও মানূষ নিজেকে আযাব থেকে মুক্ত করে নেয়।) তোমাদের আমি আল্লাহর যিকরের নির্দেশ দিচ্ছি। এর উদাহরণ হল সে ব্যক্তির মত যাকে তার দুশমণ দ্রম্নত পশ্চাদ্ধাবণ করছে। শেষে সে একটি সুন্দর কেল্লার ভিতরে এসে নিজেকে শক্রদের থেকে হেফাজত করে নিল। এমনি ভাবে বান্দা আল্লাহর যিকরের কেল্লা ছাড়া নিজেকে হেফাযত করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আমিও তোমাদের পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিচ্ছি যেগুলোর নির্দেশ তিনি আমাকে দিয়েছেন: কথা শুনবে ও ফরমাবরদারী করবে। জিহাদ, হিজরত এবং মুসলিমদের জামা‘আত অবলম্বন করবে। কেননা, যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণও জামা‘আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সে তার গলা থেকে ইসলামের বেড়ী খুলে ফেলে দিল- যতক্ষণ না সে আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে এসেছে। যে ব্যক্তি জাহেলী যুগের ডাকে ডাকবে সে হল জাহান্নামীদের দলভুক্ত। জনৈক ব্যক্তি তখন বলল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! সে যদি সালাত ও সিয়াম পালন করে তবুও? তিনি বললেন: যদিও সে সালাত আদায় করে এবং সিয়াম পালন করে। সুতরাং মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা রূপে যে নামে আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের নামকরণ করেছেন সেই আল্লাহর ডাকেই তোমরা নিজেদের ডাকবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «كَانَ زَكَرِيَّاءُ نَجَّارًا».
আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকারিয়া আলাইহিস সালাম কাঠমিস্ত্রি ছিলেন।
আল্লাহর নবী ঈসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর মাতা মারইয়াম আলাইহাস সালাম
আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেছেন,
﴿ وَٱذۡكُرۡ فِي ٱلۡكِتَٰبِ مَرۡيَمَ إِذِ ٱنتَبَذَتۡ مِنۡ أَهۡلِهَا مَكَانٗا شَرۡقِيّٗا ١٦ فَٱتَّخَذَتۡ مِن دُونِهِمۡ حِجَابٗا فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧ قَالَتۡ إِنِّيٓ أَعُوذُ بِٱلرَّحۡمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيّٗا ١٨ قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمٗا زَكِيّٗا ١٩ قَالَتۡ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي غُلَٰمٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞ وَلَمۡ أَكُ بَغِيّٗا ٢٠ قَالَ كَذَٰلِكِ قَالَ رَبُّكِ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٞۖ وَلِنَجۡعَلَهُۥٓ ءَايَةٗ لِّلنَّاسِ وَرَحۡمَةٗ مِّنَّاۚ وَكَانَ أَمۡرٗا مَّقۡضِيّٗا ٢١ ۞فَحَمَلَتۡهُ فَٱنتَبَذَتۡ بِهِۦ مَكَانٗا قَصِيّٗا ٢٢ فَأَجَآءَهَا ٱلۡمَخَاضُ إِلَىٰ جِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ قَالَتۡ يَٰلَيۡتَنِي مِتُّ قَبۡلَ هَٰذَا وَكُنتُ نَسۡيٗا مَّنسِيّٗا ٢٣ فَنَادَىٰهَا مِن تَحۡتِهَآ أَلَّا تَحۡزَنِي قَدۡ جَعَلَ رَبُّكِ تَحۡتَكِ سَرِيّٗا ٢٤ وَهُزِّيٓ إِلَيۡكِ بِجِذۡعِ ٱلنَّخۡلَةِ تُسَٰقِطۡ عَلَيۡكِ رُطَبٗا جَنِيّٗا ٢٥ فَكُلِي وَٱشۡرَبِي وَقَرِّي عَيۡنٗاۖ فَإِمَّا تَرَيِنَّ مِنَ ٱلۡبَشَرِ أَحَدٗا فَقُولِيٓ إِنِّي نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمَٰنِ صَوۡمٗا فَلَنۡ أُكَلِّمَ ٱلۡيَوۡمَ إِنسِيّٗا ٢٦ فَأَتَتۡ بِهِۦ قَوۡمَهَا تَحۡمِلُهُۥۖ قَالُواْ يَٰمَرۡيَمُ لَقَدۡ جِئۡتِ شَيۡٔٗا فَرِيّٗا ٢٧ يَٰٓأُخۡتَ هَٰرُونَ مَا كَانَ أَبُوكِ ٱمۡرَأَ سَوۡءٖ وَمَا كَانَتۡ أُمُّكِ بَغِيّٗا ٢٨ فَأَشَارَتۡ إِلَيۡهِۖ قَالُواْ كَيۡفَ نُكَلِّمُ مَن كَانَ فِي ٱلۡمَهۡدِ صَبِيّٗا ٢٩ قَالَ إِنِّي عَبۡدُ ٱللَّهِ ءَاتَىٰنِيَ ٱلۡكِتَٰبَ وَجَعَلَنِي نَبِيّٗا ٣٠ وَجَعَلَنِي مُبَارَكًا أَيۡنَ مَا كُنتُ وَأَوۡصَٰنِي بِٱلصَّلَوٰةِ وَٱلزَّكَوٰةِ مَا دُمۡتُ حَيّٗا ٣١ وَبَرَّۢا بِوَٰلِدَتِي وَلَمۡ يَجۡعَلۡنِي جَبَّارٗا شَقِيّٗا ٣٢ وَٱلسَّلَٰمُ عَلَيَّ يَوۡمَ وُلِدتُّ وَيَوۡمَ أَمُوتُ وَيَوۡمَ أُبۡعَثُ حَيّٗا ٣٣ ذَٰلِكَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَۖ قَوۡلَ ٱلۡحَقِّ ٱلَّذِي فِيهِ يَمۡتَرُونَ ٣٤ مَا كَانَ لِلَّهِ أَن يَتَّخِذَ مِن وَلَدٖۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٣٥ ﴾ [مريم: ١٦، ٣٥]
“আর স্মরণ কর এই কিতাবে মারইয়ামকে যখন সে তার পরিবারবর্গ থেকে পৃথক হয়ে পূর্ব দিকের কোনো এক স্থানে চলে গেল। আর সে তাদের নিকট থেকে (নিজকে) আড়াল করল। তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল। মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও’। সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি’। মারইয়াম বলল, ‘কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আর আমি তো ব্যভিচারিণীও নই’। সে বলল, ‘এভাবেই। তোমার রব বলেছেন, এটা আমার জন্য সহজ। আর যেন আমি তাকে করে দেই মানুষের জন্য নিদর্শন এবং আমার পক্ষ থেকে রহমত। আর এটি একটি সিদ্ধান্তকৃত বিষয়’। তারপর সে তাকে গর্ভে ধারণ করল এবং তা নিয়ে দূরবর্তী একটি স্থানে চলে গেল। অতঃপর প্রসব-বেদনা তাকে খেজুর গাছের কান্ডের কাছে নিয়ে এলো। সে বলল, ‘হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং সম্পূর্ণরূপে বিস্মৃত হতাম’! তখন তার নিচ থেকে সে তাকে ডেকে বলল যে, ‘তুমি চিন্তা করো না। তোমার রব তোমার নিচে একটি ঝর্ণা সৃষ্টি করেছেন’।‘আর তুমি খেজুর গাছের কান্ড ধরে তোমার দিকে নাড়া দাও, তাহলে তা তোমার উপর তাজা-পাকা খেজুর ফেলবে’।‘অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোনো লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোনো মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’। তারপর সে তাকে কোলে নিয়ে নিজ কওমের নিকট আসল। তারা বলল, ‘হে মারইয়াম! তুমি তো এক অদ্ভূত বিষয় নিয়ে এসেছ’! ‘হে হারূনের বোন! তোমার পিতা তো খারাপ লোক ছিল না। আর তোমার মা-ও ছিল না ব্যভিচারিণী’। তখন সে শিশুটির দিকে ইশারা করল। তারা বলল, ‘যে কোলের শিশু আমরা কিভাবে তার সাথে কথা বলব’? শিশুটি বলল, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা; তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন এবং আমাকে নবী বানিয়েছেন’।‘আর যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন এবং যতদিন আমি জীবিত থাকি তিনি আমাকে সালাত ও যাকাত আদায় করতে আদেশ করেছেন’।‘আর আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহঙ্কারী, অবাধ্য করেননি’।‘আর আমার উপর শান্তি, যেদিন আমি জন্মেছি এবং যেদিন আমি মারা যাব আর যেদিন আমাকে জীবিত অবস্থায় উঠানো হবে’। এই হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ঈসা। এটাই সঠিক বক্তব্য, যে বিষয়ে লোকেরা সন্দেহ পোষণ করছে। সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়। তিনি পবিত্র-মহান। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তখন তদুদ্দেশ্যে শুধু বলেন, ‘হও’, অমনি তা হয়ে যায়”। [সূরা মারইয়াম: ১৬-৩৫]
﴿ فَتَقَبَّلَهَا رَبُّهَا بِقَبُولٍ حَسَنٖ وَأَنۢبَتَهَا نَبَاتًا حَسَنٗا وَكَفَّلَهَا زَكَرِيَّاۖ كُلَّمَا دَخَلَ عَلَيۡهَا زَكَرِيَّا ٱلۡمِحۡرَابَ وَجَدَ عِندَهَا رِزۡقٗاۖ قَالَ يَٰمَرۡيَمُ أَنَّىٰ لَكِ هَٰذَاۖ قَالَتۡ هُوَ مِنۡ عِندِ ٱللَّهِۖ إِنَّ ٱللَّهَ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُ بِغَيۡرِ حِسَابٍ ٣٧ ﴾ [ال عمران: ٣٧]
“অতঃপর তার রব তাকে উত্তমভাবে কবুল করলেন এবং তাকে উত্তমভাবে গড়ে তুললেন। আর তাকে যাকারিয়্যার দায়িত্বে দিলেন। যখনই যাকারিয়্যা তার কাছে তার কক্ষে প্রবেশ করত, তখনই তার নিকট খাদ্যসামগ্রী পেত। সে বলত, ‘হে মারইয়াম, কোথা থেকে তোমার জন্য এটি’? সে বলত, ‘এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় আল্লাহ যাকে চান বিনা হিসাবে রিযিক দান করেন”। [আলে ইমরান: ৩৭]
﴿ إِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ يَٰمَرۡيَمُ إِنَّ ٱللَّهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٖ مِّنۡهُ ٱسۡمُهُ ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ وَجِيهٗا فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِينَ ٤٥ وَيُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗا وَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ ٤٦ قَالَتۡ رَبِّ أَنَّىٰ يَكُونُ لِي وَلَدٞ وَلَمۡ يَمۡسَسۡنِي بَشَرٞۖ قَالَ كَذَٰلِكِ ٱللَّهُ يَخۡلُقُ مَا يَشَآءُۚ إِذَا قَضَىٰٓ أَمۡرٗا فَإِنَّمَا يَقُولُ لَهُۥ كُن فَيَكُونُ ٤٧ وَيُعَلِّمُهُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَ ٤٨ وَرَسُولًا إِلَىٰ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ أَنِّي قَدۡ جِئۡتُكُم بَِٔايَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ أَنِّيٓ أَخۡلُقُ لَكُم مِّنَ ٱلطِّينِ كَهَيَۡٔةِ ٱلطَّيۡرِ فَأَنفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ وَأُحۡيِ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۖ وَأُنَبِّئُكُم بِمَا تَأۡكُلُونَ وَمَا تَدَّخِرُونَ فِي بُيُوتِكُمۡۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَأٓيَةٗ لَّكُمۡ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ٤٩ ﴾ [ال عمران: ٤٥، ٤٩]
“স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল, ‘হে মারইয়াম, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন, যার নাম মসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম, যে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’। আর সে মানুষের সাথে কথা বলবে দোলনায় ও পরিণত বয়সে এবং সে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত।মারইয়াম বলল, ‘হে আমার রব, কিভাবে আমার সন্তান হবে? অথচ কোনো মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি’! আল্লাহ বললেন, ‘এভাবেই’ আল্লাহ যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কোনো বিষয়ের সিদ্ধান্ত নেন, তখন তাকে শুধু বলেন, ‘হও’। ফলে তা হয়ে যায়।‘আর তিনি তাকে কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল শিক্ষা দেবেন’।আর বনী ইসরাঈলদের রাসূল বানাবেন (সে বলবে) ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের নিকট তোমাদের রবের পক্ষ থেকে নিদর্শন নিয়ে এসেছি যে, অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য কাদামাটি দিয়ে পাখির আকৃতি বানাব, অতঃপর আমি তাতে ফুঁক দেব। ফলে আল্লাহর হুকুমে সেটি পাখি হয়ে যাবে। আর আমি আল্লাহর হুকুমে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রুগীকে সুস্থ করব এবং মৃতকে জীবিত করব। আর তোমরা যা আহার কর এবং তোমাদের ঘরে যা জমা করে রাখ তা আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দেব। নিশ্চয় এতে তোমাদের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যদি তোমরা মুমিন হও”। [আলে ইমরান: ৪৫-৪৯]
﴿ إِذۡ قَالَ ٱللَّهُ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ ٱذۡكُرۡ نِعۡمَتِي عَلَيۡكَ وَعَلَىٰ وَٰلِدَتِكَ إِذۡ أَيَّدتُّكَ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِ تُكَلِّمُ ٱلنَّاسَ فِي ٱلۡمَهۡدِ وَكَهۡلٗاۖ وَإِذۡ عَلَّمۡتُكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَٱلتَّوۡرَىٰةَ وَٱلۡإِنجِيلَۖ وَإِذۡ تَخۡلُقُ مِنَ ٱلطِّينِ كَهَيَۡٔةِ ٱلطَّيۡرِ بِإِذۡنِي فَتَنفُخُ فِيهَا فَتَكُونُ طَيۡرَۢا بِإِذۡنِيۖ وَتُبۡرِئُ ٱلۡأَكۡمَهَ وَٱلۡأَبۡرَصَ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ تُخۡرِجُ ٱلۡمَوۡتَىٰ بِإِذۡنِيۖ وَإِذۡ كَفَفۡتُ بَنِيٓ إِسۡرَٰٓءِيلَ عَنكَ إِذۡ جِئۡتَهُم بِٱلۡبَيِّنَٰتِ فَقَالَ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ مِنۡهُمۡ إِنۡ هَٰذَآ إِلَّا سِحۡرٞ مُّبِينٞ ١١٠ ﴾ [المائدة: ١١٠]
“যখন আল্লাহ বলবেন, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার উপর ও তোমার মাতার উপর আমার নি‘আমত স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে শক্তিশালী করেছিলাম পবিত্র আত্মা দিয়ে, তুমি মানুষের সাথে কথা বলতে দোলনায় ও পরিণত বয়সে। আর যখন আমি তোমাকে শিক্ষা দিয়েছিলাম কিতাব, হিকমাত, তাওরাত ও ইনজীল; আর যখন আমার আদেশে কাদামাটি থেকে পাখির আকৃতির মত গঠন করতে এবং তাতে ফুঁক দিতে, ফলে আমার আদেশে তা পাখি হয়ে যেত। আর তুমি আমার আদেশে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীকে সুস্থ করতে এবং যখন আমার আদেশে তুমি মৃতকে জীবিত বের করতে। আর যখন তুমি স্পষ্ট প্রমাণাদি নিয়ে এসেছিলে তখন আমি বনী ইসরাঈলকে তোমার থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলাম। অতঃপর তাদের মধ্যে যারা কুফরী করেছিল তারা বলেছিল, এতো স্পষ্ট জাদু”। [আল-মায়েদা: ১১০]
﴿ إِذۡ قَالَ ٱلۡحَوَارِيُّونَ يَٰعِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ هَلۡ يَسۡتَطِيعُ رَبُّكَ أَن يُنَزِّلَ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِۖ قَالَ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ إِن كُنتُم مُّؤۡمِنِينَ ١١٢ قَالُواْ نُرِيدُ أَن نَّأۡكُلَ مِنۡهَا وَتَطۡمَئِنَّ قُلُوبُنَا وَنَعۡلَمَ أَن قَدۡ صَدَقۡتَنَا وَنَكُونَ عَلَيۡهَا مِنَ ٱلشَّٰهِدِينَ ١١٣ قَالَ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ ٱللَّهُمَّ رَبَّنَآ أَنزِلۡ عَلَيۡنَا مَآئِدَةٗ مِّنَ ٱلسَّمَآءِ تَكُونُ لَنَا عِيدٗا لِّأَوَّلِنَا وَءَاخِرِنَا وَءَايَةٗ مِّنكَۖ وَٱرۡزُقۡنَا وَأَنتَ خَيۡرُ ٱلرَّٰزِقِينَ ١١٤ قَالَ ٱللَّهُ إِنِّي مُنَزِّلُهَا عَلَيۡكُمۡۖ فَمَن يَكۡفُرۡ بَعۡدُ مِنكُمۡ فَإِنِّيٓ أُعَذِّبُهُۥ عَذَابٗا لَّآ أُعَذِّبُهُۥٓ أَحَدٗا مِّنَ ٱلۡعَٰلَمِينَ ١١٥ ﴾ [المائدة: ١١٢، ١١٥]
“যখন হাওয়ারীগণ বলেছিল, ‘হে মারইয়ামের পুত্র ঈসা, তোমার রব কি পারে আমাদের উপর আসমান থেকে খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করতে?’ সে বলেছিল, ‘আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যদি তোমরা মুমিন হও’। তারা বলল, ‘আমরা তা থেকে খেতে চাই। আর আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হবে এবং আমরা জানব যে, তুমি আমাদেরকে সত্যই বলেছ, আর আমরা এ ব্যাপারে সাক্ষীদের অন্তর্ভুক্ত হব।’মারইয়ামের পুত্র ঈসা বলল, ‘হে আল্লাহ, হে আমাদের রব, আসমান থেকে আমাদের প্রতি খাবারপূর্ণ দস্তরখান নাযিল করুন; এটা আমাদের জন্য ঈদ হবে। আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের জন্য। আর আপনার পক্ষ থেকে এক নিদর্শন হবে। আর আমাদেরকে রিযিক দান করুন, আপনিই শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা’। আল্লাহ বললেন, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতি তা নাযিল করব; কিন্তু এরপর তোমাদের মধ্যে যে কুফরী করবে তাকে নিশ্চয় আমি এমন আযাব দেব, যে আযাব সৃষ্টিকুলের কাউকে দেব না”। [আল-মায়েদা: ১১২-১১৫]
﴿ وَبِكُفۡرِهِمۡ وَقَوۡلِهِمۡ عَلَىٰ مَرۡيَمَ بُهۡتَٰنًا عَظِيمٗا ١٥٦ وَقَوۡلِهِمۡ إِنَّا قَتَلۡنَا ٱلۡمَسِيحَ عِيسَى ٱبۡنَ مَرۡيَمَ رَسُولَ ٱللَّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَٰكِن شُبِّهَ لَهُمۡۚ وَإِنَّ ٱلَّذِينَ ٱخۡتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكّٖ مِّنۡهُۚ مَا لَهُم بِهِۦ مِنۡ عِلۡمٍ إِلَّا ٱتِّبَاعَ ٱلظَّنِّۚ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينَۢا ١٥٧ بَل رَّفَعَهُ ٱللَّهُ إِلَيۡهِۚ وَكَانَ ٱللَّهُ عَزِيزًا حَكِيمٗا ١٥٨ ﴾ [النساء: ١٥٦، ١٥٨]
“আর তাদের কুফরীর কারণে এবং মারইয়ামের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপবাদ দেওয়ার কারণে।এবং তাদের এ কথার কারণে যে, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল মারইয়াম পুত্র ঈসা মাসীহকে হত্যা করেছি’। অথচ তারা তাকে হত্যা করেনি এবং তাকে শূলেও চড়ায়নি। বরং তাদেরকে ধাঁধায় ফেলা হয়েছিল। আর নিশ্চয় যারা তাতে মতবিরোধ করেছিল, অবশ্যই তারা তার ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে ছিল। ধারণার অনুসরণ ছাড়া এ ব্যাপারে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। আর এটা নিশ্চিত যে, তারা তাকে হত্যা করেনি। বরং আল্লাহ তাঁর কাছে তাকে তুলে নিয়েছেন এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আন্-নিসা: ১৫৬-১৫৮]
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَا مِنْ بَنِي آدَمَ مَوْلُودٌ إِلَّا يَمَسُّهُ الشَّيْطَانُ حِينَ يُولَدُ، فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ، غَيْرَ مَرْيَمَ وَابْنِهَا» ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: {وَإِنِّي أُعِيذُهَا بِكَ وَذُرِّيَّتَهَا مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ} [آل عمران: 36] ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, এমন কোনো আদম সন্তান নেই, যাকে জন্মের সময় শয়তান স্পর্শ করে না। জন্মের সময় শয়তানের স্পর্শের কারণেই সে চিৎকার করে কাঁদে। তবে মারিয়াম এবং তাঁর ছেলে (ঈসা) আলাইহিস সালামের ব্যতিক্রম। তারপর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, (এর কারণ হলো মারিয়ামের মায়ের এ সালাত ‘‘হে আল্লাহ্! নিশ্চয় আমি আপনার নিকট তাঁর এবং তাঁর বংশধরদের জন্য বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি” [সূরা আলে ইমরান: ৩৬]।
عَنْ هِشَامٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبِي، قَالَ:، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ جَعْفَرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «خَيْرُ نِسَائِهَا مَرْيَمُ ابْنَةُ عِمْرَانَ، وَخَيْرُ نِسَائِهَا خَدِيجَةُ».
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, (ঐ সময়ের) সমগ্র নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম আলাইহাস সালাম হলেন সর্বোত্তম আর (এ সময়ে) নারীদের সেরা হলেন খাদীজা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা।
عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " فَضْلُ عَائِشَةَ عَلَى النِّسَاءِ كَفَضْلِ الثَّرِيدِ عَلَى سَائِرِ الطَّعَامِ، كَمَلَ مِنَ الرِّجَالِ كَثِيرٌ، وَلَمْ يَكْمُلْ مِنَ النِّسَاءِ: إِلَّا مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ، وَآسِيَةُ امْرَأَةُ فِرْعَوْنَ ".
আবূ মূসা আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সকল নারীর উপর আয়েশার মর্যাদা এমন, যেমন সকল খাদ্য সামগ্রির উপর সারীদের মর্যাদা। পুরুষদের মধ্যে অনেকেই কামালিয়াত অরজন করেছেন। (অতিত যুগে) কিন্তূ নারীদের মধ্যে ইমরানের কন্যা মারিয়াম এবং ফিরাউনের স্ত্রী আছিয়া ব্যতিত কেউ কামালিয়াত অর্জন করতে পারেনি।
عَنْ عُبَادَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ شَهِدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ، وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَالجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ العَمَلِ».
উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল আর নিশ্চয়ই ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল তাঁর সেই কালিমা যা তিনি মারিয়ামকে পৌছিয়েছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ মাত্র, আর জান্নাত সত্য ও জাহান্নাম সত্য আল্লাহ্তাকে জান্নাত প্রবেশ করাবেন, তার আমল যাই হোক না কেন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " لَمْ يَتَكَلَّمْ فِي المَهْدِ إِلَّا ثَلاَثَةٌ: عِيسَى، وَكَانَ فِي بَنِي إِسْرَائِيلَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ جُرَيْجٌ، كَانَ يُصَلِّي، جَاءَتْهُ أُمُّهُ فَدَعَتْهُ، فَقَالَ: أُجِيبُهَا أَوْ أُصَلِّي، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ لاَ تُمِتْهُ حَتَّى تُرِيَهُ وُجُوهَ المُومِسَاتِ، وَكَانَ جُرَيْجٌ فِي صَوْمَعَتِهِ، فَتَعَرَّضَتْ لَهُ امْرَأَةٌ وَكَلَّمَتْهُ فَأَبَى، فَأَتَتْ رَاعِيًا فَأَمْكَنَتْهُ مِنْ نَفْسِهَا، فَوَلَدَتْ غُلاَمًا، فَقَالَتْ: مِنْ جُرَيْجٍ فَأَتَوْهُ فَكَسَرُوا صَوْمَعَتَهُ وَأَنْزَلُوهُ وَسَبُّوهُ، فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى ثُمَّ أَتَى الغُلاَمَ، فَقَالَ: مَنْ أَبُوكَ يَا غُلاَمُ؟ قَالَ: الرَّاعِي، قَالُوا: نَبْنِي صَوْمَعَتَكَ مِنْ ذَهَبٍ؟ قَالَ: لاَ، إِلَّا مِنْ طِينٍ. وَكَانَتِ امْرَأَةٌ تُرْضِعُ ابْنًا لَهَا مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ، فَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ رَاكِبٌ ذُو شَارَةٍ فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ اجْعَلِ ابْنِي مِثْلَهُ، فَتَرَكَ ثَدْيَهَا وَأَقْبَلَ عَلَى الرَّاكِبِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلْنِي مِثْلَهُ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى ثَدْيِهَا يَمَصُّهُ، - قَالَ: أَبُو هُرَيْرَةَ كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَمَصُّ إِصْبَعَهُ - ثُمَّ مُرَّ بِأَمَةٍ، فَقَالَتْ: اللَّهُمَّ لاَ تَجْعَلِ ابْنِي مِثْلَ هَذِهِ، فَتَرَكَ ثَدْيَهَا، فَقَالَ: اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِثْلَهَا، فَقَالَتْ: لِمَ ذَاكَ؟ فَقَالَ: الرَّاكِبُ جَبَّارٌ مِنَ الجَبَابِرَةِ، وَهَذِهِ الأَمَةُ يَقُولُونَ: سَرَقْتِ، زَنَيْتِ، وَلَمْ تَفْعَلْ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তিন জন শিশু ব্যতিত আর কেউ দোলনায় থেকে কথা বলেনি। বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি যাকে ‘জুরাইজ’ বলে ডাকা হতো। একদা ইবাদাতে রত থাকা অবস্থায় তার মা এসে তাকে ডাকল। সে ভাবল আমি কি তার ডাকে সারা দেব, না সালাত আদায় করতে থাকব। (জবাব না পেয়ে) তার মা বলল, ইয়া আল্লাহ্! ব্যভিচারিণীর চেহারা না দেখা পর্যন্ত তুমি তাকে মৃত্যু দিও না। জুরায়জ তার ইবাদাত খানায় থাকত । একবার তার কাছে একটি মহিলা আসল। সে (অসৎ উদ্দেশ্যে সাধনের জন্য) তার সাথে কথা বলল। কিন্তু জুরায়জ তা অস্বীকার করল। তারপর মহিলাটি একজন রাখালের নিকট গেল এবং তাকে দিয়ে মনোবাসনা পূরণ করল। পরে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো।এটি কার থেকে? স্ত্রী লোকটি বলল, জুরাইজ থেকে। লোকেরা তার কাছে আসল এবং তার ইবাদাত খানা ভেঙ্গে দিল। আর তাকে নীচে নামিয়ে আনল ও তাকে গালি গালাজ করল। তখন জুরাইজ অযু সেরে ইবাদাত করল। এরপর নবজাত শিশুটির নিকট এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল। হে শিশু! তোমার পিতা কে? সে জবাব দিল সেই রাখাল। তারা (বনী ইসরাঈলেরা) বলল, আমরা আপনার ইবাদতখানাটি সোনা দিয়ে তৈরি করে দিচ্ছি। সে বুলল, না। তবে মাটি দিয়ে (করতে পার)। বনী ইসরাঈলের একজন মহিলা তার শিশুকে দুধ পান করাচ্ছিল। তার কাছ দিয়ে দিয়ে একজন সুদর্শন পুরুষ আরোহী চলে গেল। মহিলাটি দো‘আ করল, ইয়া আল্লাহ্! আমার ছেলেটিকে তার মত বানাও। শিশুটি তখনই তার মায়ের স্তন ছেড়ে দিল। এবং আরোহীটির দিকে মুখ ফিরালো। আর বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমাকে তার মত করনা। এরপর মুখ ফিরিয়ে দুধ পান করতে লাগল। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পাচ্ছি তিনি আঙ্গুল চুষছেন। এরপর সেই মহিলাটির পাশ দিয়ে একটি দাসী চলে গেল। মহিলাটি বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমার শিশুকে এর মত করো না। শিশুটি তৎক্ষনাৎ তার মায়ের দুধ ছেড়ে দিল। আর বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমাকে তার মত কর। তার মা জিজ্ঞাসা করল, তা কেন? শিশুটি জবাব দিল, সেই আরোহীটি ছিল যালিমদের একজন । আর এ দাসীটি লোকে বলছে তুমি চুরি করেছ, যিনা করেছ। অথচ সে কিছুই করেনি।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رَأَيْتُ عِيسَى ومُوسَى وَإِبْرَاهِيمَ، فَأَمَّا عِيسَى فَأَحْمَرُ جَعْدٌ عَرِيضُ الصَّدْرِ، وَأَمَّا مُوسَى، فَآدَمُ جَسِيمٌ سَبْطٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ الزُّطِّ».
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (মিরাজের রাতে) আমি ঈসা আলাইহিস সালাম, মূসা আলাইহিস সালাম ও ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে দেখেছি। ঈসা আলাইহিস সালাম গৌর বর্ণ, সোজা চুল এবং প্রশস্ত বক্ষবিশিষ্ট লোক ছিলেন, মূসা আলাইহিস সালাম বাদামি রং বিশিষ্ট ছিলেন, তাঁর দেহ ছিল সুঠাম এবং মাথার চুল ছিল কোকড়ানো যেন ‘যুত’ গোত্রের একজন লোক।
عَنْ نَافِعٍ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: ذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَوْمًا بَيْنَ ظَهْرَيِ النَّاسِ المَسِيحَ الدَّجَّالَ، فَقَالَ: " إِنَّ اللَّهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ، أَلاَ إِنَّ المَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ العَيْنِ اليُمْنَى، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ،
وَأَرَانِي اللَّيْلَةَ عِنْدَ الكَعْبَةِ فِي المَنَامِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، كَأَحْسَنِ مَا يُرَى مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ تَضْرِبُ لِمَّتُهُ بَيْنَ مَنْكِبَيْهِ، رَجِلُ الشَّعَرِ، يَقْطُرُ رَأْسُهُ مَاءً، وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَيْ رَجُلَيْنِ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: هَذَا المَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ، ثُمَّ رَأَيْتُ رَجُلًا وَرَاءَهُ جَعْدًا قَطِطًا أَعْوَرَ العَيْنِ اليُمْنَى، كَأَشْبَهِ مَنْ رَأَيْتُ بِابْنِ قَطَنٍ، وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلَى مَنْكِبَيْ رَجُلٍ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: المَسِيحُ الدَّجَّالُ " تَابَعَهُ عُبَيْدُ اللَّهِ، عَنْ نَافِعٍ.
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকজনের সামনে মাসীহ দাজ্জালের কথা উল্লেখ করলেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্ টেঁড়া নন। সাবধান! মাসীহ দাজ্জালের ডান চোখ টেঁড়া। তার চোখ যেন ফুলে যাওয়া আঙ্গুরের মত। আমি এক রাতে স্বপ্নে নিজেকে কা’বার কাছে দেখলাম। হঠাৎ সেখানে বাদামী রং এর এক ব্যক্তিকে দেখলাম। তোমরা যেমন সুন্দর বাদামী রঙের লোক দেখে থাক তার থেকেও বেশী সুন্দর ছিলেন তিনি। তাঁর মাথার সোজা চুল, তার দু’কাঁধ পর্যন্ত ঝূলছিল। তার মাথা থেকে পানি ফোটা ফোটা করে পরছিল। তিনি দু’জন লোকের কাঁধে হাত রেখে কা’বা শরীফ তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ইনি কে? তারা জবাব দিলেন, ইনি হলেন, মসীহ ইবন মারিয়াম। তারপর তাঁর পিছনে আর একজন লোককে দেখলাম। তাঁর মাথার চুল ছিল বেশ কোঁকড়ানো, ডান চোখ টেঁড়া, আকৃতিতে সে আমার দেখা মত ইবন কাতানের অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ। সে একজন লোকের দু’কাঁধে ভর করে কা’বার চারদিকে ঘুরছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হল মাসীহ দাজ্জাল।
عَنْ سَالِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لاَ وَاللَّهِ مَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعِيسَى أَحْمَرُ، وَلَكِنْ قَالَ: " بَيْنَمَا أَنَا نَائِمٌ أَطُوفُ بِالكَعْبَةِ، فَإِذَا رَجُلٌ آدَمُ، سَبْطُ الشَّعَرِ، يُهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ، يَنْطِفُ رَأْسُهُ مَاءً، أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً، فَقُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: ابْنُ مَرْيَمَ، فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ، فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ، جَعْدُ الرَّأْسِ، أَعْوَرُ عَيْنِهِ اليُمْنَى، كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ، قُلْتُ: مَنْ هَذَا؟ قَالُوا: هَذَا الدَّجَّالُ، وَأَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ، شَبَهًا ابْنُ قَطَنٍ " قَالَ الزُّهْرِيُّ: رَجُلٌ مِنْ خُزَاعَةَ، هَلَكَ فِي الجَاهِلِيَّةِ.
সালিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পিতা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা বলেননি যে ঈসা আলাইহিস সালাম রক্তিম বর্ণের ছিলেন। বরং বলেছেন, একদা আমি স্বপ্নে কা’বা ঘর তাইয়াফ করছিলাম। হঠাৎ সোজা চুল ও বাদামী রং বিশিষ্ট একজন লোক দেখলাম। তিনি দু’জন লোকের মাঝখানে চলছেন। তাঁর মাথার পানি ঝরে পড়ছে অথবা বলেছেন, তার মাথা থেকে পানি বেয়ে পড়ছে। আমি বললাম, ইনি কে? তারা বললেন, ইনি মারিয়ামের পুত্র। তখন আমি এদিক সেদিক তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম, এক ব্যক্তি তার গায়ের রং লালবর্ণ, খুব মোটা, মাথার চুল কোকড়ানো এবং তার ডান চোখ টেঁড়া। তার চোখ যেন ফুলা আঙ্গুরের ন্যায়। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কে? তারা বললেন, এ হলো মানুষের মধ্যে ইবন কাতানের সাথে তার অধিক সাদৃশ্য রয়েছ। যুহরী (রহ.) তার বর্ণনায় বলেন, ইবন কাতান খুযা‘আ গোত্রের লোক, সে জাহেলী যুগেই মারা গেছে।
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «أَنَا أَوْلَى النَّاسِ بِابْنِ مَرْيَمَ، وَالأَنْبِيَاءُ أَوْلاَدُ عَلَّاتٍ، لَيْسَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ نَبِيٌّ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমি মারিয়ামের পুত্র ঈসার বেশী নিকটতম। আর নবীগণ পরস্পর আল্লাতী ভাই অর্থাৎ দীনের মূল বিষয়ে এক এবং বিধানে বিভিন্ন। আমার ও তার (ঈসার) মাঝখানে কোনো নবী নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " رَأَى عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَجُلًا يَسْرِقُ، فَقَالَ لَهُ: أَسَرَقْتَ؟ قَالَ: كَلَّا وَاللَّهِ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلَّا هُوَ، فَقَالَ عِيسَى: آمَنْتُ بِاللَّهِ، وَكَذَّبْتُ عَيْنِي ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঈসা আলাইহিস সালাম এক ব্যাক্তিকে চুরি করতে দেখলেন, তখন তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি চুরি করেছ? সে বলল, কখনও নয়। সেই সত্তার কসম। যিনি ব্যাতীত আর কোনো ইলাহ নেই। তখন ঈসা আলাইহিস সালাম বললেন, আমি আল্লাহ্র প্রতি ঈমান এনেছি আর আমি আমার দু’নয়নকে বাহ্যত সমর্থন করলাম না।
عَنْ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا أَدَّبَ الرَّجُلُ أَمَتَهُ فَأَحْسَنَ تَأْدِيبَهَا، وَعَلَّمَهَا فَأَحْسَنَ تَعْلِيمَهَا، ثُمَّ أَعْتَقَهَا فَتَزَوَّجَهَا كَانَ لَهُ أَجْرَانِ، وَإِذَا آمَنَ بِعِيسَى، ثُمَّ آمَنَ بِي فَلَهُ أَجْرَانِ، وَالعَبْدُ إِذَا اتَّقَى رَبَّهُ وَأَطَاعَ مَوَالِيَهُ، فَلَهُ أَجْرَانِ».
আবূ মূসা মাশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোনো লোক তার দাসীকে আদব-কায়দা শিখায় এবং তা ভালভাবে শিখায় এবং তাকে দীন শিখায় আর তা উত্তমভাবে শিখায় তারপর তাদের আযাদ করে দেয় অতঃপর তাকে বিয়ে করে তবে সে দু’টি করে সওয়াব পাবে। আর যদি কেউ ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ঈমান আনয়ন করে তারপর আমার প্রতিও ঈমান আনে, তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে। আর গোলাম যদি তার প্রতিপালককে ভয় করে এবং তার মনিবদেরকে মেনে চলে তার জন্যও দু’টি করে সওয়াব রয়েছে।
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ سَعِيدَ بْنَ المُسَيِّبِ، سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلًا، فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ، وَيَقْتُلَ الخِنْزِيرَ، وَيَضَعَ الجِزْيَةَ، وَيَفِيضَ المَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»، ثُمَّ يَقُولُ أَبُو هُرَيْرَةَ: " وَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: {وَإِنْ مِنْ أَهْلِ الكِتَابِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ، وَيَوْمَ القِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا} [النساء: 159] ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রান, অচিরেই তোমাদের মাঝে মারিয়ামের পুত্র ঈসা আলাইহিস সালাম শাসক ও ন্যায় বিচারক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ‘ক্রুশ’ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকর মেরে ফেলবেন এবং তিনি যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাবেন। তখন সম্পদের স্রোত বয়ে চলবে। এমনকি কেউ তা গ্রহন করতে চাইবে না। তখন আল্লাহকে একটি সিজ্দা করা সমগ্র দুনিয়া এবং তার মধ্যকার সমস্ত সম্পদ থেকে বেশী মূল্যবান বলে গণ্য হবে। এরপর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তোমরা ইচ্ছা করলে এর সমর্থনে এ আয়াতটি পড়তে পার, “কিতাবীদের মধ্যে প্রত্যেকে তাঁর [ঈসা আলাইহিস সালামের] মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামতের দীন তিনি তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবেন” [সূরা নিসা: ১৫৯]।
কুরআনের অস্পষ্টভাবে উল্লেখিত নবীগণের আলোচনা
عَنِ أَبِي هُرَيْرَة رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: " قَرَصَتْ نَمْلَةٌ نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ، فَأُحْرِقَتْ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَحْرَقْتَ أُمَّةً مِنَ الأُمَمِ تُسَبِّحُ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যেকোন একজন নবীকে পিপিলীকা কামড় দেয়। তিনি পিপিলীকা সহবাসাটি জ্বালিয়ে দেওয়ার আদেশ করেন এবং তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি অহী অবতীর্ণ করেন, তোমাকে একটি পিপিলীকা কামড় দিয়েছে আর তুমি আল্লাহর তাসবীহ পাঠকারী জাতিকে জ্বালিয়ে দিয়েছ।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " نَزَلَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ تَحْتَ شَجَرَةٍ، فَلَدَغَتْهُ نَمْلَةٌ، فَأَمَرَ بِجَهَازِهِ فَأُخْرِجَ مِنْ تَحْتِهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِبَيْتِهَا فَأُحْرِقَ بِالنَّارِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ: فَهَلَّا نَمْلَةً وَاحِدَةً ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নবীগণের মধ্যে কোনো এক নবী গাছের নীচে অবতরণ করেন। এরপর তাঁকে একটি পিপড়ায় কামড় দেয়। তিনি তাঁর প্রয়োজনীয় আসবাবসম্বন্ধে নির্দেশ দিলেন। এগুলো গাছের নীচ হতে বের করে দেওয়া হল। তারপর তিনি নির্দেশ দিলে পিপড়ার বাসা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। তখন আল্লাহ তাঁর প্রতি অহী নাযিল করলেন, ‘তুমি একটি মাত্র পিপড়াকে কে সাজা দিলে না?।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " غَزَا نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ، فَقَالَ لِقَوْمِهِ: لاَ يَتْبَعْنِي رَجُلٌ مَلَكَ بُضْعَ امْرَأَةٍ، وَهُوَ يُرِيدُ أَنْ يَبْنِيَ بِهَا؟ وَلَمَّا يَبْنِ بِهَا، وَلاَ أَحَدٌ بَنَى بُيُوتًا وَلَمْ يَرْفَعْ سُقُوفَهَا، وَلاَ أَحَدٌ اشْتَرَى غَنَمًا أَوْ خَلِفَاتٍ وَهُوَ يَنْتَظِرُ وِلاَدَهَا، فَغَزَا فَدَنَا مِنَ القَرْيَةِ صَلاَةَ العَصْرِ أَوْ قَرِيبًا مِنْ ذَلِكَ، فَقَالَ لِلشَّمْسِ: إِنَّكِ مَأْمُورَةٌ وَأَنَا مَأْمُورٌ اللَّهُمَّ احْبِسْهَا عَلَيْنَا، فَحُبِسَتْ حَتَّى فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ، فَجَمَعَ الغَنَائِمَ، فَجَاءَتْ يَعْنِي النَّارَ لِتَأْكُلَهَا، فَلَمْ تَطْعَمْهَا فَقَالَ: إِنَّ فِيكُمْ غُلُولًا، فَلْيُبَايِعْنِي مِنْ كُلِّ قَبِيلَةٍ رَجُلٌ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: فِيكُمُ الغُلُولُ، فَلْيُبَايِعْنِي قَبِيلَتُكَ، فَلَزِقَتْ يَدُ رَجُلَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: فِيكُمُ الغُلُولُ، فَجَاءُوا بِرَأْسٍ مِثْلِ رَأْسِ بَقَرَةٍ مِنَ الذَّهَبِ، فَوَضَعُوهَا، فَجَاءَتِ النَّارُ، فَأَكَلَتْهَا ثُمَّ أَحَلَّ اللَّهُ لَنَا الغَنَائِمَ رَأَى ضَعْفَنَا، وَعَجْزَنَا فَأَحَلَّهَا لَنَا ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘কোন একজন নবী জিহাদ করেছিলেন। তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, এমন কোনো ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে না, যে কোনো মহিলাকে বিবাহ করেছে এবং তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা রাখে, কিন্তু সে এখনো মিলিত হয়নি। এমন ব্যক্তিও না যে ঘর তৈরী করেছে কিন্তু তার ছাদ তোলেনি। আর এমন ব্যক্তিও না যে গর্ভবতী ছাগল বা উটনী কিনেছে এবং সে তার প্রসবের অপেক্ষা করছে। তারপর তিনি জিহাদে গেলেন এবং আসরের সালাতের সময় কিংবা এর কাছাকাছি সময়ের একটি জনপথের নিকটবর্তী হলেন। তখন তিনি সূর্যকে বললেন, তুমিও আদিষ্ট আর আমিও আদিষ্ট। ইয়া আল্লাহ! সূর্যকে থামিয়ে দিন। তখন তাকে থামিয়ে দেওয়া হল। অবশেষে আল্লাহ তাঁকে বিজয় দান করেন। এরপর তিনি গনীমত একত্রিত করলেন। তখন সেগুলি জ্বালিয়ে দিতে আগুন এল কিন্তু আগুন তা জ্বালালো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, তোমাদের মধ্যে (গনীমতের) আত্মসাৎকারী রয়েছে। প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন যেন আমার কাছে বাইয়াত করে। সে সময় একজনের হাত নবীর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে আত্মসাৎ রয়েছে। কাজেই তোমার গোত্রের লোকেরা যেন আমার কাছে বাইয়অত করে। এ সময় দু’ব্যক্তির বা তিন ব্যক্তির হাত তাঁর হাতের সঙ্গে আটকে গেল। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যেই আত্মসাৎ রয়েছে। অবশেষে তারা একটি গাভীর সমতুল্য স্বর্ণ উপস্থিত করল এবং তা রেখে দিল। তারপর আগুন এসে তা জ্বালিয়ে ফেলল। এরপর আল্লাহ আমাদর জন্য গনীমত হালাল করে দিলেন এবং আমাদের দুর্বলতা ও অক্ষমতা লক্ষ্য করে তা আমাদের জন্য তা হালাল করে দিলেন।
চল্লিশতম পরিচ্ছেদ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ حُذَيْفَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: «لَقَدْ خَطَبَنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُطْبَةً، مَا تَرَكَ فِيهَا شَيْئًا إِلَى قِيَامِ السَّاعَةِ إِلَّا ذَكَرَهُ»، عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ، إِنْ كُنْتُ لَأَرَى الشَّيْءَ قَدْ نَسِيتُ، فَأَعْرِفُ مَا يَعْرِفُ الرَّجُلُ إِذَا غَابَ عَنْهُ فَرَآهُ فَعَرَفَهُ.
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদা) আমাদের মাঝে এমন একটি ভাষণ প্রদান করলেন যাতে কিয়ামত পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এমন কোনো কথায় বাদ দেননি। এগুলি স্মরণ রাখা যার সৌভাগ্য সে স্মরণ রেখেছে আর যে ভুলে যাবার সে ভুলে গিয়েছে। আমি ভুলে যাওয়া কোনো কিছু যখন দেখতে পাই তখন তা চিনে নিতে পারি এভাবে যেমন, কোনো ব্যক্তি কাউকে হারিয়ে ফেললে আবার যখন তাকে দেখতে পায় তখন চিনতে পারে।
حَدَّثَنِي أَبُو زَيْدٍ يَعْنِي عَمْرَو بْنَ أَخْطَبَ، قَالَ: «صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَجْرَ، وَصَعِدَ الْمِنْبَرَ فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الظُّهْرُ، فَنَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى حَضَرَتِ الْعَصْرُ، ثُمَّ نَزَلَ فَصَلَّى، ثُمَّ صَعِدَ الْمِنْبَرَ، فَخَطَبَنَا حَتَّى غَرَبَتِ الشَّمْسُ، فَأَخْبَرَنَا بِمَا كَانَ وَبِمَا هُوَ كَائِنٌ» فَأَعْلَمُنَا أَحْفَظُنَا.
আবু যায়িদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর মিম্বরে আরোহণ করে খুতবা দিলেন। অবশেষে যোহরের সালাতের সময় হল। তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করতঃ সালাত আদায় করলেন। এরপর আবার মিম্বরে আরোহণ করতঃ তিনি খুতবা দিলেন। এবার আসরের সালাতের সময় হল। তিনি মিম্বর থেকে অবতরণ করে সালাত আদায় করে পুনরায় মিম্বরে আরোহণ করলেন এবং আমাদেরকে লক্ষ্য করে খূৎবা দিলেন। অতঃপর সূর্য অস্তমিত হলে তিনি আমাদেরকে যা হয়েছে এবং যা হবে ইত্যাকার বিষয়ে সংবাদ দিলেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এ কথাগুলো সর্বাধিক স্বরন রেখেছেন আমাদের মাঝে এ বিষয়ে তিনি সর্বাধিক জ্ঞাত।
ঘটনাবলী উল্লেখের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ হওয়ার আশঙ্কায় অনেক হাদীস ব্যাখ্যা ছাড়া ছেড়ে দিয়েছি।
এমনিভাবে শাহেদের স্থানে সতর্ক করিনি। সেক্ষেত্রে শুধু বাবের তরজমা উল্লেখ করেছি। এভাবে অনেক মুহাদ্দীসগণ করেছেন।
আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খলিফা হওয়ার ইশারা
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي مَرَضِهِ " ادْعِي لِي أَبَا بَكْرٍ، أَبَاكِ، وَأَخَاكِ، حَتَّى أَكْتُبَ كِتَابًا، فَإِنِّي أَخَافُ أَنْ يَتَمَنَّى مُتَمَنٍّ وَيَقُولُ قَائِلٌ: أَنَا أَوْلَى، وَيَأْبَى اللهُ وَالْمُؤْمِنُونَ إِلَّا أَبَا بَكْرٍ ".
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে তাঁর রোগ শয্যায় বললেন, তোমার আব্বা ও ভাইকে ডাক। আমি একটা পত্র লিখে দিই। কেননা আমি ভয় করছি যে, কোনো আশা পোষণকারী আশা করবে, আর কেউ বলবে, আমিই শ্রেষ্ঠ। অথচ আবু বকর ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ অস্কীকার করেন এবং মুসলিমরাও অস্বীকার করে।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَتَتِ امْرَأَةٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَرَهَا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْهِ، قَالَتْ: أَرَأَيْتَ إِنْ جِئْتُ وَلَمْ أَجِدْكَ؟ كَأَنَّهَا تَقُولُ: المَوْتَ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْرٍ».
জুবায়র ইবন মুতঈম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এলো। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবু বকরের নিকট আসবে।
عَنْ حَمْزَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّهُ أَخْبَرَهُ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: لَمَّا اشْتَدَّ بِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعُهُ قِيلَ لَهُ فِي الصَّلاَةِ، فَقَالَ: «مُرُوا أَبَا بَكْرٍ فَلْيُصَلِّ بِالنَّاسِ» قَالَتْ عَائِشَةُ: إِنَّ أَبَا بَكْرٍ رَجُلٌ رَقِيقٌ، إِذَا قَرَأَ غَلَبَهُ البُكَاءُ، قَالَ: «مُرُوهُ فَيُصَلِّي» فَعَاوَدَتْهُ، قَالَ: «مُرُوهُ فَيُصَلِّي، إِنَّكُنَّ صَوَاحِبُ يُوسُفَ».
আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ্য হয়ে পড়লেন, ক্রমে তাঁর অসুস্থতা বেড়ে যায়। তখন তিনি বললেন, আবু বকরকে লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে বল। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন তিনি তো কোমল হৃদয়ের লোক। যখন আপনার স্থানে দাঁড়াবেন, তখন তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারো বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আবার সে কথা বললেন। তখন তিনি আবার বললেন, আবু বকরকে বল, সে যেন লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করে। তোমরা ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথী রমণীদেরই মত।
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ الأَنْصَارِيُّ - وَكَانَ تَبِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخَدَمَهُ وَصَحِبَهُ - أَنَّ أَبَا بَكْرٍ كَانَ يُصَلِّي لَهُمْ فِي وَجَعِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمُ الِاثْنَيْنِ وَهُمْ صُفُوفٌ فِي الصَّلاَةِ، فَكَشَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سِتْرَ الحُجْرَةِ يَنْظُرُ إِلَيْنَا وَهُوَ قَائِمٌ كَأَنَّ وَجْهَهُ وَرَقَةُ مُصْحَفٍ، ثُمَّ تَبَسَّمَ يَضْحَكُ، فَهَمَمْنَا أَنْ نَفْتَتِنَ مِنَ الفَرَحِ بِرُؤْيَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَنَكَصَ أَبُو بَكْرٍ عَلَى عَقِبَيْهِ لِيَصِلَ الصَّفَّ، وَظَنَّ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَارِجٌ إِلَى الصَّلاَةِ «فَأَشَارَ إِلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَتِمُّوا صَلاَتَكُمْ وَأَرْخَى السِّتْرَ فَتُوُفِّيَ مِنْ يَوْمِهِ».
আনাস ইবন মালিক আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী, খাদিম ও সাহাবী ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত অবস্থায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সাহাবীগণকে নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অবশেষে যখন সোমবার এবং লোকেরা সালাতের জন্য কাতারে দাঁড়ালো, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুজরার পর্দা উঠিয়ে আমাদের দিকে তাকালেন। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর চেহারা যেন কোরআনের পৃষ্ঠা (এর ন্যায় ঝলমল করছিল)। তিনি মুচকি হাসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেয়ে আমরা খুশিতে প্রায় আত্মহারা হয়ে গিয়ে ছিলাম এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কাতারে দাঁড়ানোর জন্য পিছন দিকে সরে আসছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হয়তো সালাতে আসবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ইশারায় বললেন যে, তোমরা তোমাদের সালাত পূর্ণ করে নাও। এরপর তিনি পর্দা ফেলে দিলেন। সে দিনই তিনি ইনতিকাল করেন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: «لَمْ يَخْرُجِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثًا»، فَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَذَهَبَ أَبُو بَكْرٍ يَتَقَدَّمُ، فَقَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِالحِجَابِ فَرَفَعَهُ، فَلَمَّا وَضَحَ وَجْهُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا نَظَرْنَا مَنْظَرًا كَانَ أَعْجَبَ إِلَيْنَا مِنْ وَجْهِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ وَضَحَ لَنَا، فَأَوْمَأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى أَبِي بَكْرٍ أَنْ يَتَقَدَّمَ، وَأَرْخَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الحِجَابَ، فَلَمْ يُقْدَرْ عَلَيْهِ حَتَّى مَاتَ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (রোগশয্যায় থাকার কারণে) তিনি দিন পর্যন্ত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে আসেন নি। এ সময় একবার সালাতের ইকামত দেওয়া হল। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইমামতি করার জন্য অগ্রসর হচ্ছিলেন। এমন সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরের পর্দা ধরে উঠালেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেহারা যখন আমাদের সম্মুখে প্রকাশ পেল, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের ইশারায় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে (ইমামতির জন্য) এগিয়ে যেতে বললেন এবং পর্দা ফেলে দেন। তারপর মৃত্যুর পূর্বে তাঁকে আর দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
শাইখাইন তথা আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার খিলাফাতের ইঙ্গিত
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ النَّاسَ مُجْتَمِعِينَ فِي صَعِيدٍ، فَقَامَ أَبُو بَكْرٍ فَنَزَعَ ذَنُوبًا أَوْ ذَنُوبَيْنِ، وَفِي بَعْضِ نَزْعِهِ ضَعْفٌ، وَاللَّهُ يَغْفِرُ لَهُ ثُمَّ أَخَذَهَا عُمَرُ فَاسْتَحَالَتْ بِيَدِهِ غَرْبًا، فَلَمْ أَرَ عَبْقَرِيًّا فِي النَّاسِ يَفْرِي فَرِيَّهُ حَتَّى ضَرَبَ النَّاسُ بِعَطَنٍ».
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একদা (স্বপ্নে) লোকজনকে একটি মাঠে সমবেত দেখতে পেলাম। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উঠে দাঁড়ালেন এবং (একটি) কুপ থেকে এক অথবা দুই (রাবির সন্দেহ) বালতি পানি উঠালেন। পানি উঠাতে তিনি দুর্বলতা বোধ করছিলেন। আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন। তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বালতিটি হাতে নিলেন। বালতিটি তখন বৃহদাকার হয়ে গেল। আমি মানুষের মধ্যে পানি উঠাতে উমরের মত দক্ষ ও শক্তিশালী ব্যক্তি কখনো দেখিনি। অবশেষে উপস্থিত লোকেরা তাদের উটগুলোকে পানি পান করিয়ে উটশালায় নিয়ে গেল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পরে যারা মুরতাদ হবে তাদের সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تُحْشَرُونَ حُفَاةً، عُرَاةً، غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ: {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} [الأنبياء: 104] فَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى إِبْرَاهِيمُ، ثُمَّ يُؤْخَذُ بِرِجَالٍ مِنْ أَصْحَابِي ذَاتَ اليَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ، فَأَقُولُ: أَصْحَابِي، فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ، فَأَقُولُ كَمَا قَالَ العَبْدُ الصَّالِحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ: {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ، فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِي كُنْتَ أَنْتَ الرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ، وَأَنْتَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ شَهِيدٌ، إِنْ تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ، وَإِنْ تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنْتَ العَزِيزُ الحَكِيمُ} [المائدة: 118]، قَالَ: مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ الفَرَبْرِيُّ، ذُكِرَ عَنْ أَبِي عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ قَبِيصَةَ، قَالَ: " هُمُ المُرْتَدُّونَ الَّذِينَ ارْتَدُّوا عَلَى عَهْدِ أَبِي بَكْرٍ فَقَاتَلَهُمْ أَبُو بَكرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা হাশরের মাঠে খালি-পা, খালি-গা এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমবেত হবে। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন, “যেভাবে আমি প্রথবার সৃষ্টির সূচনা করেছিলাম সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করবো। এটা আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পুর্ণ করব”। [সূরা আম্বিয়া: ১০৪] এরপর (হাশরে) সর্বপ্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। তারপর আমার সাহাবীদের কিছু সংখ্যককে ডান দিকে (জান্নাতে) এবং কিছু সংখ্যককে বাম দিকে (জাহান্নামে) নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী। তখন বলা হবে আপনি তাদের থেকে বিদায় নেওয়ার পর তারা মুরতাদ হয়ে গেছে। তখন আমি এমন কথা বলব, যেমন বলেছিল, পুণ্যবান বান্দা ঈসা ইবন মারিয়াম আলাইহিস সালাম। তার উক্তিটি হলো এ আয়াত, “আর আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম ততদিন আমি তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম। এরপর আপনি যখন আমকে উঠিয়ে নিলেন তখন আপনিই তাদের হেফাযতকারী ছিলেন। আর আপনি তো সবকিছুর উপরই সাক্ষী। যদি আপনি তাদেরকে আযাব দেন, তবে এরা আপনারই বান্দা। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন তবে আপনি নিশ্চয়ই পরাক্রমশীল ও প্রজ্ঞাময়। [সূরা মায়েদা: ১১৮] কাবীসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এরা হলো ঐ সব মুরতাদ যারা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিলাফতকালে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।
عَنِ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ، قَالَ: قَالَتْ أَسْمَاءُ: عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: " أَنَا عَلَى حَوْضِي أَنْتَظِرُ مَنْ يَرِدُ عَلَيَّ، فَيُؤْخَذُ بِنَاسٍ مِنْ دُونِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي، فَيُقَالُ: لاَ تَدْرِي، مَشَوْا عَلَى القَهْقَرَى " قَالَ ابْنُ أَبِي مُلَيْكَةَ: «اللَّهُمَّ إِنَّا نَعُوذُ بِكَ أَنْ نَرْجِعَ عَلَى أَعْقَابِنَا، أَوْ نُفْتَنَ».
আসমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি আমার হাউযের পাশে আগমনকারী লোকদের অপেক্ষায় থাকব। তখন আমার সম্মুখ থেকে কতিপয় লোককে ধরে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলব, এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, আপনি জানেন না, এরা (আপনার পথ ছেড়ে) পিছনে চলে গিয়েছিল। (বর্ণনাকারী) ইবন আবূ মুলায়কা বলেন: হে আল্লাহ! পিছনে ফিরে যাওয়া কিংবা ফিতনায় পতিত হওয়া থেকে আমরা আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি।
عَنْ أَبِي وَائِلٍ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، لَيُرْفَعَنَّ إِلَيَّ رِجَالٌ مِنْكُمْ، حَتَّى إِذَا أَهْوَيْتُ لِأُنَاوِلَهُمْ اخْتُلِجُوا دُونِي، فَأَقُولُ: أَيْ رَبِّ أَصْحَابِي، يَقُولُ: لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ ".
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আমি হাউযে কাউসারের নিকট তোমাদের আগেই উপস্থিত থাকব। তোমাদের থেকে কিছু লোককে আমার নিকট পেশ করা হবে।কিন্তু আমি যখন তাদের পান করাতে অগ্রসর হব, তখন তাদেরকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হবে। আমি বলব, হে রব! এরা তো আমার সাথী। তখন তিনি বলবেন, আপনার পর তারা নতুন কী ঘটিয়েছে তা আপনি জানেন না।
عَنْ أَبِي حَازِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «أَنَا فَرَطُكُمْ عَلَى الحَوْضِ، فَمَنْ وَرَدَهُ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهُ أَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ» قَالَ أَبُو حَازِمٍ: فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ أَبِي عَيَّاشٍ، - وَأَنَا أُحَدِّثُهُمْ هَذَا، فَقَالَ: هَكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ: نَعَمْ، قَالَ: وَأَنَا - أَشْهَدُ عَلَى أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، لَسَمِعْتُهُ يَزِيدُ فِيهِ قَالَ: " إِنَّهُمْ مِنِّي، فَيُقَالُ: إِنَّكَ لاَ تَدْرِي مَا بَدَّلُوا بَعْدَكَ، فَأَقُولُ: سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِي ".
সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আমি হাউযের পাড়ে তোমাদের আগে উপস্থিত থাকব। যে সেখানে উপস্থিত হবে, সে সেখান থেকে পান করার সুযোগ পাবে। আর যে কেউবার সে হাউয থেকে পান করবে সে কখনই তৃষ্ণার্ত হবে না। অবশ্যই এমন কিছু দল আমার কাছে উপস্থিত হবে যাদেরকে আমি (আমার উম্মত বলে) চিনতে পারব এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। কিন্তু এর পরই তাদের ও আমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।
আবূ হাযিম (রহ.) বলেন, আমি হাদীস বর্ণনা করছিলাম, এমতাবস্থায় নু’মান ইবন আয়াস আমার কাছ থেকে এ হাদীসটি শুনে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কি সাহল থেকে হাদীসটি অনুরূপ শুনেছেন। আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন সে বলল, আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আমি আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে এ হাদীসে অতিরিক্ত বলতে শুনেছি যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বলবেন: এরা তো আমারই অনুসারী। তখন বলা হবে, আপনি নিশ্চয়ই অবহিত নন যে, আপনার পরে এরা দীনের মধ্যে কি পরিবর্তন করেছে। এশুনে আমি বলব, যারা আমার পরে পরিবর্তন করেছে, তারা দূর হোক, দূর হোক।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
তাবেঈগণ সাহাবীদের থেকে এবং তাবেতাবেঈনগন তাবেঈদের থেকে ইলম শুনবে ও শিখবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَسْمَعُونَ وَيُسْمَعُ مِنْكُمْ وَيُسْمَعُ مِمَّنْ سَمِعَ مِنْكُمْ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমার নিকট হতে শ্রবণ কর এবং লোকেরা তোমাদের নিকট হতে শ্রবণ করবে। আর যারা তোমাদের নিকট হতে শোনবে তাদের নিকট হতে অন্য লোকেরা শ্রবণ করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
অধিক ভূমিকম্প হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقْبَضَ العِلْمُ، وَتَكْثُرَ الزَّلاَزِلُ، وَيَتَقَارَبَ الزَّمَانُ، وَتَظْهَرَ الفِتَنُ، وَيَكْثُرَ الهَرْجُ - وَهُوَ القَتْلُ القَتْلُ - حَتَّى يَكْثُرَ فِيكُمُ المَالُ فَيَفِيضَ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না, যে পর্যন্ত না ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভুমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। (হারজ অর্থ খুনখারাবী) তোমাদের সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
ছোটদের থেকে বাদশাহ হবে, বড়দের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এবং অপাত্রে ইলম হবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى نَتْرُكُ الْأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ، وَالنَّهْيَ عَنِ الْمُنْكَرِ؟ قَالَ: «إِذَا ظَهَرَ فِيكُمْ مَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ» ، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا ظَهَرَ فِي الْأُمَمِ قَبْلَنَا؟ قَالَ: «الْمُلْكُ فِي صِغَارِكُمْ، وَالْفَاحِشَةُ فِي كِبَارِكُمْ، وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ» قَالَ زَيْدٌ: " تَفْسِيرُ مَعْنَى قَوْلِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالْعِلْمُ فِي رُذَالَتِكُمْ» ، إِذَا كَانَ الْعِلْمُ فِي الْفُسَّاقِ ".
আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করা কখন ত্যাগ করবো? তিনি বলেন, যখন তোমাদের মাঝে সেইসব বিষয় প্রকাশ পাবে, যা তোমাদের পুর্ববর্তী উম্মাতদের মাঝে প্রকাশ পেয়েছিলো। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের পূর্বেকার উম্মাতগণের যুগে কি কি বিষয় প্রকাশ পেয়েছিলো? তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যকার নিকৃষ্ট তরুণদের হাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা চলে যাবে। বয়স্ক লোক অশ্লীল কার্যকলাপে লিপ্ত হবে এবং নিকৃষ্ট লোক জ্ঞানের অধিকারী হবে। রাবী যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, ‘‘নিকৃষ্ট ও নীচ ব্যক্তিরা জ্ঞানের অধিকারী হবে’’, এর তাৎপর্য হলো, পাপাচারীরা জ্ঞানের বাহক হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
মানুষের মাঝে মদপান ও যেনা ব্যভিচার বেড়ে যাবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ وَيَثْبُتَ الجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
মুসলমানের বড় দু’টি দলের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হবে।
قَالَ: أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত এমন দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে যাদের দাবী হবে এক অর্থাৎ উভয় পক্ষ নিজেদেরকে সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে দাবী করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَقْتَتِلَ فِئَتَانِ فَيَكُونَ بَيْنَهُمَا مَقْتَلَةٌ عَظِيمَةٌ، دَعْوَاهُمَا وَاحِدَةٌ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُبْعَثَ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، قَرِيبًا مِنْ ثَلاَثِينَ، كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَسُولُ اللَّهِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত দুটি দলের মধ্যে যুদ্ধ না হবে। তাদের মধ্যে হবে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। তাদের দাবী হবে অভিন্ন। আর কিয়ামত কায়েম হবেনা যে পর্যন্ত প্রায় ত্রিশজন মিথ্যাবাদী দাজ্জালের আবির্ভাব না হবে। এরা সবাই নিজ নিজকে আল্লাহ্র রাসূল বলে দাবী করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী:
সাহাবীরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর তাঁকে দেখার আকাঙ্ক্ষা করবে।
عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا: وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ فِي يَدِهِ لَيَأْتِيَنَّ عَلَى أَحَدِكُمْ يَوْمٌ وَلَا يَرَانِي، ثُمَّ لَأَنْ يَرَانِي أَحَبُّ إِلَيْهِ مَنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ مَعَهُمْ» قَالَ أَبُو إِسْحَاقَ: الْمَعْنَى فِيهِ عِنْدِي، لَأَنْ يَرَانِي مَعَهُمْ أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ، وَهُوَ عِنْدِي مُقَدَّمٌ وَمُؤَخَّرٌ.
হাম্মাম ইবন মুনাব্বিহ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এটা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, অতঃপর তিনি কতকগুলো হাদীস উল্লেখ করলেন। তার মধ্য থেকে একটি হাদীস হল এই যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুহাম্মদের প্রাণ যার হাতে, তাঁর কসম! তোমাদের কারো উপর এমন এক সময় আসবে যখন সে আমাকে দেখতে পাবে না আর আমার দর্শন লাভ তার কাছে তখন তার ধন-ঐশ্বর্য্য ও পরিবার-পরিজনের চেয়েও প্রিয় হবে। আবু ইসহাক বলেন: এর মধ্যে আমার নিকট অর্থ হলো নিশ্চয়ই আমাকে দেখা তাদের কাছে তার পরিবার ও ধন-সম্পদ থেকে অধিকতর প্রিয় হবে এবং ওটা আমার নিকট অগ্র-পশ্চাৎ করা হয়েছে।
ওয়াইস করনী সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ، أَنَّ أَهْلَ الْكُوفَةِ وَفَدُوا إِلَى عُمَرَ، وَفِيهِمْ رَجُلٌ مِمَّنْ كَانَ يَسْخَرُ بِأُوَيْسٍ، فَقَالَ عُمَرُ: هَلْ هَاهُنَا أَحَدٌ مِنَ الْقَرَنِيِّينَ؟ فَجَاءَ ذَلِكَ الرَّجُلُ فَقَالَ عُمَرُ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ قَالَ: «إِنَّ رَجُلًا يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَنِ يُقَالُ لَهُ أُوَيْسٌ، لَا يَدَعُ بِالْيَمَنِ غَيْرَ أُمٍّ لَهُ، قَدْ كَانَ بِهِ بَيَاضٌ، فَدَعَا اللهَ فَأَذْهَبَهُ عَنْهُ، إِلَّا مَوْضِعَ الدِّينَارِ أَوِ الدِّرْهَمِ، فَمَنْ لَقِيَهُ مِنْكُمْ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
উসায়র ইবন জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, কুফার একটি প্রতিনিধি দল উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে এলো। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তিও ছিল, যে উওয়াস (রহ.)-কে উপহাস করত। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, এখানে করনী গোত্রের কোনো লোক আছে কি? তখন সেই লোকটি এলো। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কাছে ইয়ামন থেকে এক ব্যক্তি আসবে, যে উওয়াস নামে পরিচিত। ইয়ামানে তাঁর মা ব্যতীত কেউ থাকবে না। তার শ্বেতরোগ হয়েছিল। সে আল্লাহর কাছে দূ‘আ করার বদৌলতে আল্লাহ তাকে শ্বেত রোগ মুক্ত করে দেন। তবে কেবল মাত্র এক দীনার অথবা এক দিরহাম পরিমাণ স্থান বাকী থাকে। তোমাদের মধ্য থেকে যদি কেউ তাঁর সাক্ষাৎ পায় সে যেন নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দুআ কামনা করে।
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ: إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ خَيْرَ التَّابِعِينَ رَجُلٌ يُقَالُ لَهُ أُوَيْسٌ، وَلَهُ وَالِدَةٌ وَكَانَ بِهِ بَيَاضٌ فَمُرُوهُ فَلْيَسْتَغْفِرْ لَكُمْ».
উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, অবশ্যই তাবিঈনগণের মধ্যে সেই ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ যে উওয়াস নামে পরিচিত। তাঁর একমাত্র মা আছে এবং তার শ্বেত রোগ হয়েছিল। তোমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করবে যেন সে তোমাদের মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করে।
عَنْ أُسَيْرِ بْنِ جَابِرٍ، قَالَ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِذَا أَتَى عَلَيْهِ أَمْدَادُ أَهْلِ الْيَمَنِ، سَأَلَهُمْ: أَفِيكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ؟ حَتَّى أَتَى عَلَى أُوَيْسٍ فَقَالَ: أَنْتَ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: مِنْ مُرَادٍ ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَكَانَ بِكَ بَرَصٌ فَبَرَأْتَ مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: لَكَ وَالِدَةٌ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَأْتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ، مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ، لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ» فَاسْتَغْفِرْ لِي، فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: أَيْنَ تُرِيدُ؟ قَالَ: الْكُوفَةَ، قَالَ: أَلَا أَكْتُبُ لَكَ إِلَى عَامِلِهَا؟ قَالَ: أَكُونُ فِي غَبْرَاءِ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَيَّ. قَالَ: فَلَمَّا كَانَ مِنَ الْعَامِ الْمُقْبِلِ حَجَّ رَجُلٌ مِنْ أَشْرَافِهِمْ، فَوَافَقَ عُمَرَ، فَسَأَلَهُ عَنْ أُوَيْسٍ، قَالَ: تَرَكْتُهُ رَثَّ الْبَيْتِ، قَلِيلَ الْمَتَاعِ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَأْتِي عَلَيْكُمْ أُوَيْسُ بْنُ عَامِرٍ مَعَ أَمْدَادِ أَهْلِ الْيَمَنِ مِنْ مُرَادٍ، ثُمَّ مِنْ قَرَنٍ، كَانَ بِهِ بَرَصٌ فَبَرَأَ مِنْهُ، إِلَّا مَوْضِعَ دِرْهَمٍ لَهُ وَالِدَةٌ هُوَ بِهَا بَرٌّ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ، فَإِنِ اسْتَطَعْتَ أَنْ يَسْتَغْفِرَ لَكَ فَافْعَلْ» فَأَتَى أُوَيْسًا فَقَالَ: اسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: أَنْتَ أَحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: اسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: أَنْتَ أَحْدَثُ عَهْدًا بِسَفَرٍ صَالِحٍ، فَاسْتَغْفِرْ لِي، قَالَ: لَقِيتَ عُمَرَ؟ قَالَ: نَعَمْ، فَاسْتَغْفَرَ لَهُ، فَفَطِنَ لَهُ النَّاسُ، فَانْطَلَقَ عَلَى وَجْهِهِ، قَالَ أُسَيْرٌ: وَكَسَوْتُهُ بُرْدَةً، فَكَانَ كُلَّمَا رَآهُ إِنْسَانٌ قَالَ: مِنْ أَيْنَ لِأُوَيْسٍ هَذِهِ الْبُرْدَةُ.
উসায়র ইবন জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অভ্যাস ছিল, যখন ইয়ামনের কোনো সাহায্যকারী দল তার কাছে আসত তখন তিনি তাঁদের জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মধ্যে কি উওয়াস ইবন আমির আছে? অবশেষে তিনি উওয়াসকে পান। তখন তিনি বললেন, তুমি কি উওয়াস ইবন আমির? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, মুরাদ গোত্রের কারান বংশের? বললেন, হ্যাঁ। জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি শ্বেত রোগ ছিল এবং তা নিরাময় হয়েছে, কেবলমাত্র এক দিরহাম স্থান ব্যতীত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মা কি আছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, “তোমাদের কাছে মুরাদ গোত্রের কারান বংশের উওয়াস ইবন আমির ইয়ামানের সাহায্যকারী দলের সঙ্গে আসবে। তাঁর ছিল শ্বেত রোগ। পরে তা নিরাময় হয়ে গিয়েছে। কেবলমাত্র এক দিরহাম ব্যতিরেকে। তার মা রয়েছেন। সে তাঁর প্রতি অতি সেবাপরায়ন। এমন ব্যক্তি আল্লাহর উপর কসম করে নিলে আল্লাহ তা পূর্ণ করে দেন। কাজেই যদি তুমি তোমার জন্য তার কাছে মাগফিরাতের দো‘আ কামনার সুযোগ পাও তাহলে তা করবে।” সুতরাং আপনি আমার জন্য মাগফিরাতের দো‘আ করুন। তখন উওয়াস (রহ.) তার মাগফিরাতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, তুমি কোথায় যেতে চাও? তিনি বললেন, কুফা এলাকায়। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি কি তোমার জন্য কুফার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখে দেব? তিনি বললেন, আমি অখ্যাত গরীব লোকদের মধ্যে থাকাই পছন্দ করি। বর্ণনাকারী বলেন, পরবর্তী বছরে তাদের অতিজাত লোকদের মধ্যে এক ব্যক্তি হাজ্জ করতে এলো এবং উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সংগে তার সাক্ষাৎ হল। তখন তিনি তাকে উওয়াস কারানী (রহ.)-এর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে বলল, আমি তাঁকে জীর্ণ গৃহে সম্পদহীন অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, তোমাদের কাছে কারান বংশের মুরাদ গোত্রের উওয়াস ইবন আমির (রহ.) ইয়ামানের একদল সাহায্যকারীর সঙ্গে আসবে। তার শ্বেত রোগ ছিল। সে তা থেকে আরোগ্য লাভ করে, এক দিরহাম পরিমাণ স্থান ব্যতীত। তাঁর মা রয়েছেন, সে তার অতি সেবাপরায়ণ। যদি সে আল্লাহর নামে কসম খায় তবে আল্লাহ তা‘আলা তা পূর্ণ করে দেন। তোমরা নিজের জন্য তাঁর কাছে মাগফিরাতের দো‘আ চাওয়ার সুযোগ পেলে তা করবে। সে ব্যক্তি উওয়াসের কাছে এল এবং বলল, আমার জন্য মাগফিরাত-এর দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর থেকে। অতএব, আমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি আমার অন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি তো নেক সফর থেকে। অতএব, আমার জন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি আমার অন্য দো‘আ করুন। তিনি বললেন, আপনি কি উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তাঁর জন্য দো‘আ করেছেন। ফলে মানুষ তাঁকে চিনে ফেলল। অতঃপর তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন। উসাইর রহ. বলেন, আমি তাঁকে একখানা চাদর পড়িয়েছি। এরপর মানুষ যখনই তাঁকে দেখত তখন তাঁকে জিজ্ঞেস করত চাদরখানি কোথা থেকে পেলে?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
যেসব লোক কুরআনের মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করবে তাদের সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: تَلَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {هُوَ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ، فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ، وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللهُ، وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِنْ عِنْدِ رَبِّنَا، وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ} قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا رَأَيْتُمُ الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ، فَأُولَئِكَ الَّذِينَ سَمَّى اللهُ فَاحْذَرُوهُمْ».
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করলেন, “তিনিই তোমার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, যার কতক আয়াত সুম্পষ্ট দ্যর্থহীন; এইগুলো কিতাবের মূল অংশ আর অন্যগুলো রুপক। যাদের অন্তরে সত্য-লঙ্ঘন প্রবণতা রয়েছে, শুধু উভই ফিতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে যা রুপক তার অনুসরণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না; আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, আমরা এতে বিশ্বাস করি, সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে আগত এবং বোধশক্তি সস্পন্নরা ব্যতীত অপর কেউ শিক্ষা “গ্রহণ করে না।” [সূরা আলে ইমরান: ৭] তিনি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সে সব লোকদের দেখতে পাবে যারা সাদৃশ্যপূর্ণ আয়াতের অর্থের সন্ধ্যানে ব্যাপৃত, এরাই সে সব ব্যক্তি, যাদের কথা আল্লাহ উল্লেখ করেছেন, তখন আমরা তাদের থেকে দূরে থাকবো।
আবু আব্দুর রহমান বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সংবাদ দিয়েছেন সেভাবেই তা প্রতিফলিত হয়েছে। বিদ‘আতী ও আল্লাহদ্রোহীরা সর্বদা মুতাশাবিহাত আয়াত দ্বারাই দলিল দিয়ে থাকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
প্রথম তিন শতাব্দীর লোকদের ইসতিকামাত তথা দীনের উপর অটল থাকার সংবাদ।
عَنْ عِمْرَان بْن حُصَيْنٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خَيْرُكُمْ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ» - قَالَ عِمْرَانُ: لاَ أَدْرِي أَذَكَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعْدُ قَرْنَيْنِ أَوْ ثَلاَثَةً - قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَخُونُونَ وَلاَ يُؤْتَمَنُونَ، وَيَشْهَدُونَ وَلاَ يُسْتَشْهَدُونَ، وَيَنْذِرُونَ وَلاَ يَفُونَ، وَيَظْهَرُ فِيهِمُ السِّمَنُ».
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। তারপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, এরপর নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তার যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলছিলেন, না তিন যুগের কথা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের পর এমন লোকদের আগমন ঘটবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানতদারী রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মান্নত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে, না। তাদের মধ্যে মেদ বৃদ্ধি পাবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ» قَالَ إِبْرَاهِيمُ: «وَكَانُوا يَضْرِبُونَنَا عَلَى الشَّهَادَةِ، وَالعَهْدِ».
আবদুল্লাহ (ইবন মাস’উদ) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার যুগের লোকেরাই হচ্ছে সর্বোত্তম লোক, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী, এরপর যারা তাদের নিকটবর্তী যুগের। এরপরে এমন সব লোক আসবে যারা কসম করার আগেই সাক্ষ্য দিবে, আবার সাক্ষ্য দেওয়ার আগে কসম করে বসবে। ইবরাহীম (নাখঈ) (রহ.) বলেন, আমাদেরকে সাক্ষ্য দিলে ও অংগীকার করলে মারতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মুসলিমগণ কিছু দেশ জয়লাভ করবে এবং কিছু মানুষ মদিনা থেকে বেরিয়ে যাবে।
عَنْ سُفْيَانَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «تُفْتَحُ اليَمَنُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ الشَّأْمُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ العِرَاقُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ».
সুফিয়ান ইবন আবূ যুহায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামান বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ
عَنِ الأَعْمَشِ، قَالَ: حَدَّثَنِي شَقِيقٌ، قَالَ: سَمِعْتُ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا جُلُوسًا عِنْدَ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ يَحْفَظُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الفِتْنَةِ، قُلْتُ أَنَا كَمَا قَالَهُ: قَالَ: إِنَّكَ عَلَيْهِ أَوْ عَلَيْهَا لَجَرِيءٌ، قُلْتُ: «فِتْنَةُ الرَّجُلِ فِي أَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَجَارِهِ، تُكَفِّرُهَا الصَّلاَةُ وَالصَّوْمُ وَالصَّدَقَةُ، وَالأَمْرُ وَالنَّهْيُ»، قَالَ: لَيْسَ هَذَا أُرِيدُ، وَلَكِنِ الفِتْنَةُ الَّتِي تَمُوجُ كَمَا يَمُوجُ البَحْرُ، قَالَ: لَيْسَ عَلَيْكَ مِنْهَا بَأْسٌ يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، إِنَّ بَيْنَكَ وَبَيْنَهَا بَابًا مُغْلَقًا، قَالَ: أَيُكْسَرُ أَمْ يُفْتَحُ؟ قَالَ: يُكْسَرُ، قَالَ: إِذًا لاَ يُغْلَقَ أَبَدًا، قُلْنَا: أَكَانَ عُمَرُ يَعْلَمُ البَابَ؟ قَالَ: نَعَمْ، كَمَا أَنَّ دُونَ الغَدِ اللَّيْلَةَ، إِنِّي حَدَّثْتُهُ بِحَدِيثٍ لَيْسَ بِالأَغَالِيطِ فَهِبْنَا أَنْ نَسْأَلَ حُذَيْفَةَ، فَأَمَرْنَا مَسْرُوقًا فَسَأَلَهُ، فَقَالَ: البَابُ عُمَرُ.
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, ফিতনা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য তোমাদের মধ্যে কে স্মরণ রেখেছ? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘যেমনি তিনি বলেছিলেন হুবহু তেমনিই আমি মনে রেখেছি’। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী স্মরণ রাখার ব্যপারে তুমি খুব দৃঢ়তার পরিচয় দিচ্ছ। আমি বললাম, (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন) মানুষ নিজের পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, পাড়া-প্রতিবেশীদের ব্যাপারে যে ফেতনায় পতিত হয়-সালাত, সিয়াম, সাদাকা, (ন্যায়ের) আদেশ ও (অন্যায়ের) নিষেধ তা দূরীভূত করে দেয়। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা আমার উদ্দেশ্যে নয়। বরং আমি সেই ফিতনার কথা বলছি, যা সমুদ্র তরঙ্গের ন্যায় ভয়াল হবে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! সে ব্যাপারে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। কেননা, আপনার ও সে ফিতনার মাঝখানে একটি বন্ধ দরজা রয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, সে দরজাটি ভেঙ্গে ফেলা হবে, না খুলে দওয়া হবে? হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ভেঙ্গে ফেলা হবে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাহলে তো আর কোনো দিন তা বন্ধ করা যাবে না। [হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র শাকীক (রহ.) বললেন], আমরা জিজ্ঞাসা করতে আমার ভয় পাছিলাম। তাই, আমরা মাসরূক (রহ.) – কে বললাম এবং তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, দরজাটি উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাতের সংবাদ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: ذَكَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِتْنَةً، فَقَالَ: يُقْتَلُ هَذَا فِيهَا مَظْلُومًا لِعُثْمَانَ.
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, এতে উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মাজলুম হয়ে নিহত হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হবেন।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: أَقْبَلَتْ فَاطِمَةُ تَمْشِي كَأَنَّ مِشْيَتَهَا مَشْيُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَرْحَبًا بِابْنَتِي» ثُمَّ أَجْلَسَهَا عَنْ يَمِينِهِ، أَوْ عَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَبَكَتْ، فَقُلْتُ لَهَا: لِمَ تَبْكِينَ؟ ثُمَّ أَسَرَّ إِلَيْهَا حَدِيثًا فَضَحِكَتْ، فَقُلْتُ: مَا رَأَيْتُ كَاليَوْمِ فَرَحًا أَقْرَبَ مِنْ حُزْنٍ، فَسَأَلْتُهَا عَمَّا قَالَ: فَقَالَتْ: مَا كُنْتُ لِأُفْشِيَ سِرَّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، حَتَّى قُبِضَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْتُهَا.
فَقَالَتْ: أَسَرَّ إِلَيَّ: «إِنَّ جِبْرِيلَ كَانَ يُعَارِضُنِي القُرْآنَ كُلَّ سَنَةٍ مَرَّةً، وَإِنَّهُ عَارَضَنِي العَامَ مَرَّتَيْنِ، وَلاَ أُرَاهُ إِلَّا حَضَرَ أَجَلِي، وَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِي لَحَاقًا بِي». فَبَكَيْتُ، فَقَالَ: «أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ تَكُونِي سَيِّدَةَ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ، أَوْ نِسَاءِ المُؤْمِنِينَ» فَضَحِكْتُ لِذَلِكَ.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চলার ভঙ্গিতে চলতে চলতে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাদের নিকট আগমন করলেন। তাঁকে দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার স্নেহের কন্যাকে অনেক অনেক মোবারকবাদ। তারপর তাঁকে তাঁর ডানপাশে অথবা বামপাশে (রাবির সন্দেহ) বসালেন এবং তাঁর সাথে চুপিচুপি (কি যেন) কথা বললেন। তখন তিনি (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) কেঁদে দিলেন। আমি (আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললাম কাঁদছেন কেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, পুনরায় চুপিচুপি তাঁর সাথে কথা বললেন। তিনি (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) এবার হেঁসে উঠলেন। আমি (আয়িশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) বললাম, আজকের মত দুঃখ ও বেদনার সাথে সাথে আনন্দ ও খুশী আমি আর কখনো দেখিনি। আমি তাঁকে (ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা) কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি বলেছিলেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গোপন কথাকে প্রকাশ করবো না। পরিশেষে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইন্তেকাল হয়ে যাওয়ার পর আমি তাঁকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি কি বলেছিলেন? তিনি বললেন, তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথমবার আমাকে বলেছিলেন, জিবরীল আলাইহিস সালাম প্রতিবছর একবার আমার সঙ্গে পরস্পর কোরআন পাঠ করতেন, এ বছর দু’বার এরূপ পড়ে শুনিয়েছেন। আমার মনে হয় আমার বিদায় কাল ঘনিয়ে এসেছে এবং এরপর আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তা শুনে আমি কেঁদে দিলাম। দ্বিতীয়বার বলেছিলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, জান্নাতবাসি মহিলাদের অথবা মু’মিন মহিলাদের তুমি সরদার (নেত্রী) হবে। এ কথা শুনে আমি হেসেছিলাম।
حَدَّثَنِي يَحْيَى بْنُ قَزَعَةَ، حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: دَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ ابْنَتَهُ فِي شَكْوَاهُ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ فَسَارَّهَا بِشَيْءٍ فَبَكَتْ، ثُمَّ دَعَاهَا فَسَارَّهَا فَضَحِكَتْ، قَالَتْ: فَسَأَلْتُهَا عَنْ ذَلِكَ، فَقَالَتْ: «سَارَّنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ يُقْبَضُ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيهِ، فَبَكَيْتُ ثُمَّ سَارَّنِي فَأَخْبَرَنِي أَنِّي أَوَّلُ أَهْلِ بَيْتِهِ أَتْبَعُهُ فَضَحِكْتُ».
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তিম রোগকালে তাঁর কন্য ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ডেকে পাঠালেন। এরপর চুপিচাপি কি যেন বললেন। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তা শুনে কেঁদে ফেললেন। তারপর আবার ডেকে তাঁকে চুপিচাপি আরো কি যেন বললেন। এতে ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা হেঁসে উঠলেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি হাঁসি-কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, (প্রথম বার) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে চুপে চুপে বলেছিলেন, যে রোগে তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এ রোগেই তাঁর ওফাত হবে; তাই আমি কেঁদে দিয়েছিলাম। এরপর তিনি চুপিচাপি আমাকে বলেছিলেন, তার পরিবার পরিজনের মধ্যে আমিই সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হব, এতে আমি হেঁসে দিয়েছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
প্রথম তিন শতাব্দীতে ইসলামী বিজয় সাধিত হবে।
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ الخُدْرِيُّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيَقُولُونَ: فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ، ثُمَّ يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، فَيَغْزُو فِئَامٌ مِنَ النَّاسِ، فَيُقَالُ: هَلْ فِيكُمْ مَنْ صَاحَبَ مَنْ صَاحَبَ أَصْحَابَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ، فَيُفْتَحُ لَهُمْ ".
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জনগনের উপর এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ সাহাবী) তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ সাহাবীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। তারপর জনগনের উপর পুনরায় এমন এক সময় আসবে যখন তাদের বিরাট সৈন্যবাহিনী (শত্রুদের বিরুদ্ধে) যুদ্ধে লিপ্ত থাকবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কেউ আছেন কি যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহচার্য লাভে ধন্য কিংবা কোনো ব্যক্তির (সাহাবীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবেয়ী) তখন তাঁরা বলবেন, হ্যাঁ আছেন। তখন (ঐ তাবেয়ীর বরকতে) তাদেরকে জয়ী করা হবে। এরপর লোকদের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন তাদের বিরাট বাহিনী জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। তখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমাদের মধ্যে এমন কি কেউ আছেন, যিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণের সাহচার্য লাভকারী কোনো বক্তির (তাবেয়ীর) সাহচার্য লাভ করেছেন? (অর্থাৎ তাবে-তাবেয়ী) বলা হবে আছেন। তখন তাদেরকে (ঐ তাবে-তাবেয়ীর বরকতে) জয়ী করা হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
যাইনাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের মধ্যে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে মিলিত হবে।
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَسْرَعُكُنَّ لَحَاقًا بِي أَطْوَلُكُنَّ يَدًا» قَالَتْ: فَكُنَّ يَتَطَاوَلْنَ أَيَّتُهُنَّ أَطْوَلُ يَدًا، قَالَتْ: فَكَانَتْ أَطْوَلَنَا يَدًا زَيْنَبُ، لِأَنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ بِيَدِهَا وَتَصَدَّقُ.
উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সে-ই আমার সাথে মিলিত হবে যার হাত সর্বাধিক লম্বা। সুতরাং সব বিবিরা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন কার হাত বেশি লম্বা। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, অবশেষে আমাদের মধ্যে যয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা বলে স্হির হল। কারণ তিনি হাত দিয়ে কাজ করতেন এবং দান-খয়রাত করতেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
আলী ও মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার মধ্যকর বিবেদ ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَخْبَرَنِي أَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، وَالضَّحَّاكُ الْهَمْدَانِيُّ، أَنَّ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، قَالَ: بَيْنَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَقْسِمُ قَسْمًا، أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ، وَهُوَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اعْدِلْ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «وَيْلَكَ وَمَنْ يَعْدِلُ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ؟ قَدْ خِبْتُ وَخَسِرْتُ إِنْ لَمْ أَعْدِلْ» فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي فِيهِ أَضْرِبْ عُنُقَهُ، قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «دَعْهُ، فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلَاتَهُ مَعَ صَلَاتِهِمْ، وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى رِصَافِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى نَضِيِّهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ - وَهُوَ الْقِدْحُ - ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلَا يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، سَبَقَ الْفَرْثَ وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ رَجُلٌ أَسْوَدُ، إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْيِ الْمَرْأَةِ، أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ تَتَدَرْدَرُ، يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ» قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «فَأَشْهَدُ أَنِّي سَمِعْتُ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَاتَلَهُمْ وَأَنَا مَعَهُ، فَأَمَرَ بِذَلِكَ الرَّجُلِ فَالْتُمِسَ، فَوُجِدَ، فَأُتِيَ بِهِ، حَتَّى نَظَرْتُ إِلَيْهِ، عَلَى نَعْتِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الَّذِي نَعَتَ».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বসা ছিলাম। তখন তিনি কিছু সম্পদ বন্টন করলেন। সে সময় বনী তামীম গোত্রের যুল খুওসায়সিরা নামক এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল ইনসাফ করুন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ধবংস হোক কে ইনসাফ করবে যদি আমি ইনসাফ না করি! আমি যদি ইসনাফ না করি তবে তো আমি অকৃতকার্য ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাব। তখন উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে অনুমতি দিন, আমি তার গর্দান উড়িয়ে দেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার সঙ্গী সাহলরা তো এমন যে, তোমরা তোমাদের সালাতকে তাদের তুলনায় তুচ্ছ মনে করবে এবং তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তাদের সিয়ামের তুলনায় নগণ্য মনে করবে। তারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে- যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার লক্ষ্যস্হল অতিক্রম করে। তখন তীর নিক্ষেপকারী ব্যক্তি ধনুকের নাসল পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। এরপর সে এর রুসাফ পরীক্ষা করে দেখবে এতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তারপর সে এর নায়িইও পরীক্ষা করে দেখবে এতে ও কিছুই পাওয়া যাবে না। কাদাহকেই নাযিই বলা হয়। তারপর সে এর কুযায পরীক্ষা করে দেখবে এতেও পাওয়া যাবে না। তীর এত তীব্র গতিতে বেরিয়ে যায় যে মল বা রক্তের গাদ এতে লাগতেই পারে না। এ সম্প্রদায়ের লোকদের পরিচয় এই যে, এক কাল ব্যক্তি যার উভয় বাহুহ-তে একটি বাবু হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায় অথবা এক টূকরা বাড়তি গোশতের ন্যায়। এদের আবির্ভাব তখন হবে যখন লোকদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেবে। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি একথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের সাথে যুদ্ধ করেছেন, তখন আমি তার সাথে ছিলাম। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ লোকটিকে খোজ করার নির্দেশ দেওয়ার পর তাকে তালাশ করে পাওয়া গেল। এরপর তাকে আনা হল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার যে নিদর্শন করেছেন সে বর্ণিত নিদর্শন মুতাবিক আমি তার দিকে তাকালাম।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ قَوْمًا يَكُونُونَ فِي أُمَّتِهِ، يَخْرُجُونَ فِي فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ، سِيمَاهُمْ التَّحَالُقُ قَالَ: «هُمْ شَرُّ الْخَلْقِ - أَوْ مِنْ أَشَرِّ الْخَلْقِ - يَقْتُلُهُمْ أَدْنَى الطَّائِفَتَيْنِ إِلَى الْحَقِّ» قَالَ: فَضَرَبَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَهُمْ مَثَلًا، أَوْ قَالَ قَوْلًا «الرَّجُلُ يَرْمِي الرَّمِيَّةَ - أَوْ قَالَ الْغَرَضَ - فَيَنْظُرُ فِي النَّصْلِ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً، وَيَنْظُرُ فِي النَّضِيِّ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً، وَيَنْظُرُ فِي الْفُوقِ فَلَا يَرَى بَصِيرَةً» قَالَ: قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: «وَأَنْتُمْ قَتَلْتُمُوهُمْ، يَا أَهْلَ الْعِرَاقِ».
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল লোক সম্পর্কে আলোচনা করলেন যারা তাঁর উম্মাতের মাঝেই সৃষ্টি হবে। তারা আবির্ভুত হবে ঐ সময় যখন মানুষের মধ্যে বিরোধ দেখা দিবে। তাদের নিদর্শন এই যে, তাদের মাথা মুন্ডান থাকবে। তারা সৃষ্টির নিকৃষ্ট বা সর্বাধিক নিকৃষ্ট লোক হবে। তা-দেরকে দু’দলের এমন দলটি হত্যা করবে যারা সভ্যের দিকে অধিক নিকটবর্তী এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের একটি উপমা বর্ণনা করলেন অথবা করলেন, এক ব্যক্তি লক্ষ্যস্হল নিরুপন করে তীর নিক্ষেপ করে এরপর নাসল পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতে বিব্দুমাত্র রক্তও সে দেখতে পায় না। এরপর এর নাযিই পরীক্ষা করে দেখে, এতেও বিন্দুমাত্র রক্ত সে দেখে না। তারপর সে এর ফুক পরীক্ষা করে দেখে কিন্তু এতেও সে বিন্দুমাত্র কোনো কিছু দেখতে পায় না। বর্ণনাকারী আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, হে ইরাকবাসী! তোমরা তাদেরকে হত্যা করেছ।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَمْرُقُ مَارِقَةٌ عِنْدَ فُرْقَةٍ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، يَقْتُلُهَا أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ».
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুসলিমদের মতবিরোধের সময় একটি দল বের হবে, তাদেরকে হত্যা করবে, দু-দলের এমন দলটি যারা হকের অধিক নিকটবর্তী।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَكُونُ فِي أُمَّتِي فِرْقَتَانِ، فَتَخْرُجُ مِنْ بَيْنِهِمَا مَارِقَةٌ، يَلِي قَتْلَهُمْ أَوْلَاهُمْ بِالْحَقِّ».
আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মাতে দুটি দল সৃষ্টি হবে। তখন তাদের থেকে অন্য আরেকটি দল সৃষ্টি হবে। এদলকে দুদলের ওই দলহ হত্যা করবে যারা হকের অধীক নিকটবর্তী।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «تَمْرُقُ مَارِقَةٌ فِي فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ، فَيَلِي قَتْلَهُمْ أَوْلَى الطَّائِفَتَيْنِ بِالْحَقِّ».
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মানুষের মধ্যে যখন মত বিরোধ দেখা দিবে তখন একদল লোক বের হবে। তাদেরকে হত্যা করবে দু”দলের যে দলটি হকের অধিক নিকটবর্তী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সমজোতা।
عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ: سَمِعْتُ الحَسَنَ، يَقُولُ: اسْتَقْبَلَ وَاللَّهِ الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ مُعَاوِيَةَ بِكَتَائِبَ أَمْثَالِ الجِبَالِ، فَقَالَ عَمْرُو بْنُ العَاصِ: إِنِّي لَأَرَى كَتَائِبَ لاَ تُوَلِّي حَتَّى تَقْتُلَ أَقْرَانَهَا، فَقَالَ لَهُ مُعَاوِيَةُ وَكَانَ وَاللَّهِ خَيْرَ الرَّجُلَيْنِ: أَيْ عَمْرُو إِنْ قَتَلَ هَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ، وَهَؤُلاَءِ هَؤُلاَءِ مَنْ لِي بِأُمُورِ النَّاسِ مَنْ لِي بِنِسَائِهِمْ مَنْ لِي بِضَيْعَتِهِمْ، فَبَعَثَ إِلَيْهِ رَجُلَيْنِ مِنْ قُرَيْشٍ مِنْ بَنِي عَبْدِ شَمْسٍ: عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ سَمُرَةَ، وَعَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَامِرِ بْنِ كُرَيْزٍ، فَقَالَ: اذْهَبَا إِلَى هَذَا الرَّجُلِ، فَاعْرِضَا عَلَيْهِ، وَقُولاَ لَهُ: وَاطْلُبَا إِلَيْهِ، فَأَتَيَاهُ، فَدَخَلاَ عَلَيْهِ فَتَكَلَّمَا، وَقَالاَ لَهُ: فَطَلَبَا إِلَيْهِ، فَقَالَ لَهُمَا الحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ: إِنَّا بَنُو عَبْدِ المُطَّلِبِ، قَدْ أَصَبْنَا مِنْ هَذَا المَالِ، وَإِنَّ هَذِهِ الأُمَّةَ قَدْ عَاثَتْ فِي دِمَائِهَا، قَالاَ: فَإِنَّهُ يَعْرِضُ عَلَيْكَ كَذَا وَكَذَا، وَيَطْلُبُ إِلَيْكَ وَيَسْأَلُكَ قَالَ: فَمَنْ لِي بِهَذَا، قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَمَا سَأَلَهُمَا شَيْئًا إِلَّا قَالاَ: نَحْنُ لَكَ بِهِ، فَصَالَحَهُ، فَقَالَ الحَسَنُ: وَلَقَدْ سَمِعْتُ أَبَا بَكْرَةَ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى المِنْبَرِ وَالحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ إِلَى جَنْبِهِ، وَهُوَ يُقْبِلُ عَلَى النَّاسِ مَرَّةً، وَعَلَيْهِ أُخْرَى وَيَقُولُ: «إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ»، قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: " قَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ: إِنَّمَا ثَبَتَ لَنَا سَمَاعُ الحَسَنِ مِنْ أَبِي بَكْرَةَ، بِهَذَا الحَدِيثِ ".
আবু মূসা রহ. হাসান (বসরী) রহ. হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম, হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পর্বত সদৃস সেনাদল নিয়ে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মুখোমুখি হলেন। আমার ইবন আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি এমন সেনাদল দেখতে পাচ্ছি যারা প্রতিপক্ষকে হত্যা না করে ফির যাবে না। মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তখন বললেন, আল্লাহর কসম! (আর মু‘আবিয়া ও আমর ইবনুল ‘আস) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উভয়ের মধ্যে মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন উত্তম ব্যক্তি। ‘হে ‘আমর! এরা ওদের এবং ওরা এদের হত্যা করলে আমি কাকে দিয়ে লোকের সমস্যার সমাধান করব? তাদের নারীদের কে তত্ত্ববধান করবে? তাদের দূর্বল ও শিশুদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে? তারপর তিনি কুরায়শের বানূ আবদে শামস শাখার দু’জন আব্দুর রহমান ইবন সামুরাহ ও আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, ‘তোমরা উভয়ে এই লোকটির কাছে যাও এবং তার কাছে (সন্ধির) প্রস্তাব পেশ করো, তাঁর সঙ্গে আরোচনা করো ও তার বক্তব্য জানতে চেষ্টা কর।’ তারা তার কাছে গেলেন এবং তার সঙ্গে কখা বললেন, আলাপ-আলোচনা করলেন এবং তার বক্তব্য জানলেন। হাসান ইবন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের বললেন, ‘আমরা আব্দুল মুত্তালিবের সন্তান, এই সম্পদ (বায়তুল মালের) আমরা পেয়েছি। আর এরা রক্তপাতে লিপ্ত হয়েছে।’ তারা উভয়ে বললেন, (মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) আপনার কাছে এরূপ বক্তব্য পেশ করেছেন। আর আপনার বক্তব্যও জানতে চেয়েছেন ও সন্ধি কামনা করেছেন। তিনি বললেন, ‘এ দায়িত্ব কে নেবে? তারা বললেন, আমরা আপনার জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণ করছি।’ এরপর তিনি তাদের কাছে যে সব প্রশ্ন করলেন, তারা (তার জওয়াবে) বললেন, ‘আমরা এ দায়িত্ব নিচ্ছি।’ তারপর তিনি তার সাথে সন্ধি করলেন। হাসান (বসরী) (র) বলেন, আমি আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছিঃ রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি মিম্বরের উপর দেখেছি, হাসান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পাশে ছিলেন। তিনি একবার লোকদের দিকে আর একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলেন আর বলছিলেন, আমার এ সন্তান নেতৃস্থানীয়। সম্ভবত তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা মুসরমানের দু’টি বড় দলের মধ্যে মীমাংশাকরাবেন।’ আবু আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আলী ইবন আব্দুল্লাহ আমাকে বলেছেন যে, এ হাদীসের মাধ্যমেই আবু বাকরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাসানের শ্রুতি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
‘আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাহাদাত
عَنْ عِكْرِمَةَ، قَالَ لِي ابْنُ عَبَّاسٍ وَلِابْنِهِ عَلِيٍّ: انْطَلِقَا إِلَى أَبِي سَعِيدٍ فَاسْمَعَا مِنْ حَدِيثِهِ، فَانْطَلَقْنَا فَإِذَا هُوَ فِي حَائِطٍ يُصْلِحُهُ، فَأَخَذَ رِدَاءَهُ فَاحْتَبَى، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا حَتَّى أَتَى ذِكْرُ بِنَاءِ المَسْجِدِ، فَقَالَ: كُنَّا نَحْمِلُ لَبِنَةً لَبِنَةً وَعَمَّارٌ لَبِنَتَيْنِ لَبِنَتَيْنِ، فَرَآهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيَنْفُضُ التُّرَابَ عَنْهُ، وَيَقُولُ: «وَيْحَ عَمَّارٍ، تَقْتُلُهُ الفِئَةُ البَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الجَنَّةِ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ» قَالَ: يَقُولُ عَمَّارٌ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الفِتَنِ ".
ইকরিমা (রহ.) বর্ণিত, তিনি বলেন: ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাকে ও তার ছেলে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, তোমরা উভয়ই আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কাছে যাও এবং তাঁর থেকে হদীস শুনে আস। আমরা গেলাম। তখন তিনি এক বাগানে কাজ করছেন। তিনি আমাদেরকে দেখে চাদরে হাঁটু মুড়ি দিয়ে বসলেন এবং পরে হাদিস বর্ণনা শুরু করলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি মসজিদে নববী নির্মাণ আলোচনায় আসলেন। তিনি বললেন: আমরা একটা একটা করে কাঁচা ইট বহন করছিলাম আর আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দুটো দুটো করে কাঁচা ইট বহন করছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে তাঁর দেহ থেকে মাটি ঝাড়তে লাগলেন এবং বলতে লাগলেন, আম্মারের জন্য আফসোস, তাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে আহবান করবে জান্নাতের দিকে আর তারা আহবান করবে জাহান্নামের দিকে। আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: তখন আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন: আমি ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ لِعَمَّارٍ: «تَقْتُلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ».
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আম্মার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলেছেন, তোমাকে রাষ্ট্রদ্রোহী লোকেরা হত্যা করবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
খাইবার থেকে ইয়াহুদীরা বিতাড়িত হবে।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: لَمَّا فَدَعَ أَهْلُ خَيْبَرَ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَامَ عُمَرُ خَطِيبًا، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عَامَلَ يَهُودَ خَيْبَرَ عَلَى أَمْوَالِهِمْ، وَقَالَ: «نُقِرُّكُمْ مَا أَقَرَّكُمُ اللَّهُ» وَإِنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ خَرَجَ إِلَى مَالِهِ هُنَاكَ، فَعُدِيَ عَلَيْهِ مِنَ اللَّيْلِ، فَفُدِعَتْ يَدَاهُ وَرِجْلاَهُ، وَلَيْسَ لَنَا هُنَاكَ عَدُوٌّ غَيْرَهُمْ، هُمْ عَدُوُّنَا وَتُهْمَتُنَا وَقَدْ رَأَيْتُ إِجْلاَءَهُمْ، فَلَمَّا أَجْمَعَ عُمَرُ عَلَى ذَلِكَ أَتَاهُ أَحَدُ بَنِي أَبِي الحُقَيْقِ، فَقَالَ: يَا أَمِيرَ المُؤْمِنِينَ، أَتُخْرِجُنَا وَقَدْ أَقَرَّنَا مُحَمَّدٌ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَامَلَنَا عَلَى الأَمْوَالِ وَشَرَطَ ذَلِكَ لَنَا، فَقَالَ عُمَرُ: أَظَنَنْتَ أَنِّي نَسِيتُ قَوْلَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ بِكَ إِذَا أُخْرِجْتَ مِنْ خَيْبَرَ تَعْدُو بِكَ قَلُوصُكَ لَيْلَةً بَعْدَ لَيْلَةٍ» فَقَالَ: كَانَتْ هَذِهِ هُزَيْلَةً مِنْ أَبِي القَاسِمِ، قَالَ: كَذَبْتَ يَا عَدُوَّ اللَّهِ، فَأَجْلاَهُمْ عُمَرُ، وَأَعْطَاهُمْ قِيمَةَ مَا كَانَ لَهُمْ مِنَ الثَّمَرِ، مَالًا وَإِبِلًا، وَعُرُوضًا مِنْ أَقْتَابٍ وَحِبَالٍ وَغَيْرِ ذَلِكَ رَوَاهُ حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَحْسِبُهُ عَنْ نَافِعٍ، عَنْ ابْنِ عُمَرَ، عَنْ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اخْتَصَرَهُ.
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খায়বারবাসীরা আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাত, পা ভেঙ্গে দিল, তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারের ইয়াহূদীদের সাথে তাদের বিষয় সম্পত্তি সম্পর্কে চুক্তি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, আল্লাহ তাআলা যতদিন তোমাদের রাখেন, ততদিন আমরাও তোমাদের রাকব। এমতাবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর নিজ সম্পত্তি দেখাশুনা করার জন্য খায়বার গমন করলে এক রাতে তাঁর উপর আক্রমন করা হয় এবং তাঁর দুটি হাত পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেখানে ইয়াহূদীরা ছাড়া আর কোনো শত্রু নেই। তারাই আমাদের দুশমন। তাদের উপর আমাদের সন্দেহ। অতএব আমি তাদের নির্বাসিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এ ব্যাপারে তাঁর দৃঢ় মত প্রকাশ করলেন, তখন আবু হুকায়ক গোত্রের এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘হে আমীরুল মুমিনীন, আপনি কি আমাদের খায়বার থেকে বহিস্কার করবেন? অথচ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এখানে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন। আর উক্ত সম্পত্তির ব্যাপারে আমাদের সাথে বর্গাচাষের ব্যবস্থা করেন এবং আমাদের এ শর্তে দেন।’ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘তুমি কি মনে করেছ যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে উক্তি ভুলে গিয়েছি, তোমার কি অবস্থা হবে, যখন তোমাকে খায়বার থেকে বের করে দেওয়া হবে এবং তোমার উটগুলো রাতের পর রাত তোমাকে নিয়ে ছুটবে।’ সে বলল, ‘এ উক্তি তো আবুল কাসিম এর পক্স থেকে বিদ্রুপ স্বরূপ ছিল।’ উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন! তুমি মিথ্যা বলছ।’ তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের নির্বাসিত করেন এবং তাদের ফসলাদি, মালপত্র, উট, লাগাম রশি ইত্যাদি সামগ্রীর মূল্য দিয়ে দেন। রিওয়ায়াতটি হাম্মদ ইবন সালামা (রহ.) উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছেন, অথচ সে জাহান্নামে যাবে।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، التَقَى هُوَ وَالمُشْرِكُونَ، فَاقْتَتَلُوا، فَلَمَّا مَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى عَسْكَرِهِ، وَمَالَ الآخَرُونَ إِلَى عَسْكَرِهِمْ، وَفِي أَصْحَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلٌ، لاَ يَدَعُ لَهُمْ شَاذَّةً وَلاَ فَاذَّةً إِلَّا اتَّبَعَهَا يَضْرِبُهَا بِسَيْفِهِ، فَقَالَ: مَا أَجْزَأَ مِنَّا اليَوْمَ أَحَدٌ كَمَا أَجْزَأَ فُلاَنٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا إِنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ»، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ: أَنَا صَاحِبُهُ، قَالَ: فَخَرَجَ مَعَهُ كُلَّمَا وَقَفَ وَقَفَ مَعَهُ، وَإِذَا أَسْرَعَ أَسْرَعَ مَعَهُ، قَالَ: فَجُرِحَ الرَّجُلُ جُرْحًا شَدِيدًا، فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ بِالأَرْضِ، وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ، ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَى سَيْفِهِ، فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَخَرَجَ الرَّجُلُ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ، قَالَ: «وَمَا ذَاكَ؟» قَالَ: الرَّجُلُ الَّذِي ذَكَرْتَ آنِفًا أَنَّهُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، فَأَعْظَمَ النَّاسُ ذَلِكَ، فَقُلْتُ: أَنَا لَكُمْ بِهِ، فَخَرَجْتُ فِي طَلَبِهِ، ثُمَّ جُرِحَ جُرْحًا شَدِيدًا، فَاسْتَعْجَلَ المَوْتَ، فَوَضَعَ نَصْلَ سَيْفِهِ فِي الأَرْضِ وَذُبَابَهُ بَيْنَ ثَدْيَيْهِ ثُمَّ تَحَامَلَ عَلَيْهِ فَقَتَلَ نَفْسَهُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ ذَلِكَ: «إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الجَنَّةِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ، وَهُوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ، فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ، وَهُوَ مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ».
সাহল ইবন সা‘দ সাঈদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুশরিকদের মধ্যে মুকাবিলা হয় এবং উভয় পক্ষ তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ সৈন্যদলের কাছে ফিরে এলেন, মুশরিকরাও নিজ সৈন্যদলে ফিরে গেল। সেই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে কোনো মুশরিককে দেখলেই তার পশ্চাদ্ধবন করত এবং তাকে তলোয়ার দিয়ে আক্রমন করত। বর্ণনাকরী (সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, আজ আমাদের কেউ অমুকের মত যুদ্ধ করতে পারেনি। তা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তো জাহান্নামের বাসিন্দা হবে। একজন সাহাবী বলে উঠলেন, আমি তার সঙ্গী হব। তারপর তিনি তার সাথে বেরিয়ে পড়লেন, সে দাঁড়ালে তিনিও দাঁড়াতেন এবং সে দ্রুত চললে সেও দ্রুত চলতেন। তিনি বললেন, এক সময় সে মারাত্মাকভাবে আহত হলো এবং সে দ্রুত মৃত্যু কামনা করতে লাগল। এক সময় তলোয়ারের বাট মাটিতে লাগল এবং এর তীক্ষ্ণ দিক বুকে চেপে ধরে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। অনুসরণকারী লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কি ব্যাপার? যে লোকটি সম্পর্কে, আপনি কিছুক্ষণ আগেই বলেছিলেন যে, সে জাহান্নামী হবে। তা শুনে সাহাবীগণ বিষয়টিকে অস্বাভাবিক মনে করলেন। আমি তাদের বললাম যে, আমি লোকটির সম্পর্কে খবর তোমাদের জানাবো। তারপর আমি তার পিছু পিছু বের হলাম এবং সে শীঘ্রই মৃত্যু কামনা করতে থাকল। তারপর তার তলোয়ারের বাট মাটিতে রেখে এর তীক্ষ্ণ ধার বুকে চেপে ধরল এবং তার উপরে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন বললেন, ‘মানুষের বাহ্যিক বিচারে অনেক সময় কোনো ব্যক্তি জান্নাতবাসীর মত আমল করতে থাকে, প্রকৃতপক্ষে সে জাহান্নামী হয় এবং অনুরফভাবে মানুষের বাহ্যিক বিচারে কোনো ব্যক্তি জাহান্নামীর মতামল করলেও প্রকৃতপক্ষে সে জান্নাতবাসী হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মতের কিছু লোক জিহাদের জন্য সমুদ্রযানে আরোহণ করবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ سَمِعَهُ يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْخُلُ عَلَى أُمِّ حَرَامٍ بِنْتِ مِلْحَانَ فَتُطْعِمُهُ - وَكَانَتْ أُمُّ حَرَامٍ تَحْتَ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ - فَدَخَلَ عَلَيْهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَطْعَمَتْهُ وَجَعَلَتْ تَفْلِي رَأْسَهُ، فَنَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: " نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ، يَرْكَبُونَ ثَبَجَ هَذَا البَحْرِ مُلُوكًا عَلَى الأَسِرَّةِ، أَوْ: مِثْلَ المُلُوكِ عَلَى الأَسِرَّةِ "، شَكَّ إِسْحَاقُ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهمْ، فَدَعَا لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ وَضَعَ رَأْسَهُ، ثُمَّ اسْتَيْقَظَ وَهُوَ يَضْحَكُ، فَقُلْتُ: وَمَا يُضْحِكُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي عُرِضُوا عَلَيَّ غُزَاةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ» - كَمَا قَالَ فِي الأَوَّلِ - قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ، قَالَ: «أَنْتِ مِنَ الأَوَّلِينَ»، فَرَكِبَتِ البَحْرَ فِي زَمَانِ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، فَصُرِعَتْ عَنْ دَابَّتِهَا حِينَ خَرَجَتْ مِنَ البَحْرِ، فَهَلَكَتْ.
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হারাম বিন্ত মিলহান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে যাতায়াত করতেন এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খেতে দিতেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন, উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর স্ত্রী। একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ঘরে তাশরীফ নিয়ে গেলে তিনি তাঁকোহার করান এবং তাঁর মথার উকুন বাচতে থাকেন। এক সময় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুমিয়ে পড়েন। তিনি হাসতে হাসতে ঘুম থেকে জাগলেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি তাঁকে জিজ্ঞাস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! হাসির কারণ কি?’ তিনি বললেন, ‘আমার উম্মাতের কিছু লোককে আল্লাহর পথে জিহাদরত অবস্থায় আমার সামনে পেশ করা হয়। তারা এ সমুদ্রের মঝে এমনভাবে আরোহী যেমন বাদশাহ তখতের উপর অথবা বলেছেন, বাদশাহর মত তখতে উপবিষ্ট।’ এ শব্দ বর্ণনায় ইসহাক (রহ.) সন্দেহ করেছেন। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন যেন আমাকে তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার মাথা রাখেন (ঘুমিয়ে পড়েন)। তারপর হাসতে হাসতে জেগে উঠলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসার কারণ কি?’ তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে থেকে আল্লাহর পথে জিহাদরত কিছু লোককে আমার সামনে পেম করা হয়।’ পরবর্তী অংশ প্রথম উক্তির মত। উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি বললেন, তুমি তো প্রথম দলের মধ্যেই আছ। তারপর মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সময় উম্মে হারাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা জিহাদের উদ্দেশ্যে সামদ্রিক সফরে যান এবং সমুদ্র থেকে যখন অবতরণ করেন তখন তিনি তাঁর সওয়ারী থেকে ছিটকে পড়েন। আর এতে তিনি শাহাদত বরণ করেন।
মিশর বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ شِمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا ذَرٍّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ أَرْضًا يُذْكَرُ فِيهَا الْقِيرَاطُ، فَاسْتَوْصُوا بِأَهْلِهَا خَيْرًا، فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا، فَإِذَا رَأَيْتُمْ رَجُلَيْنِ يَقْتَتِلَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَاخْرُجْ مِنْهَا» قَالَ: فَمَرَّ بِرَبِيعَةَ، وَعَبْدِ الرَّحْمَنِ، ابْنَيْ شُرَحْبِيلَ ابْنِ حَسَنَةَ، يَتَنَازَعَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَخَرَجَ مِنْهَا.
আবদুর রাহমান ইবনে শুমাসাতান মিহরী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা অচিরেই এমন একটি ভূখন্ড জয় করবে যেখানে কীরাতের (দিরহাম বা দীনারের অংশবিশেষ) প্রচলন আছে। সেখানকার লোকদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করবে। কেননা তোমাদের ওপর তাদের অধিকার রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে (অর্থাৎ ইসমাঈল আলাইহিস সালামের মাতা হাজেরার জন্মভূমি ছিল মিসরে। তিনি আরবদের আদি মাতা)। তোমরা যখন দুই ব্যক্তিকে সেখানে একটি ইটের জায়গায় দাঁড়িয়ে পরষ্পর দ্বন্দ্বে লিপ্ত দেখবে তখন সেখান থেকে চলে আসবে।
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَفْتَحُونَ مِصْرَ وَهِيَ أَرْضٌ يُسَمَّى فِيهَا الْقِيرَاطُ، فَإِذَا فَتَحْتُمُوهَا فَأَحْسِنُوا إِلَى أَهْلِهَا، فَإِنَّ لَهُمْ ذِمَّةً وَرَحِمًا» أَوْ قَالَ «ذِمَّةً وَصِهْرًا، فَإِذَا رَأَيْتَ رَجُلَيْنِ يَخْتَصِمَانِ فِيهَا فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ، فَاخْرُجْ مِنْهَا» قَالَ: فَرَأَيْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ شُرَحْبِيلَ بْنِ حَسَنَةَ، وَأَخَاهُ رَبِيعَةَ يَخْتَصِمَانِ فِي مَوْضِعِ لَبِنَةٍ فَخَرَجْتُ مِنْهَا.
আবু যার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, তোমরা অচিরেই মিসর জয় করবে। সেখানে কীরাতের প্রচলন রয়েছে। তোমরা যখন সে দেশ জয় করবে তখন সেখানকার অধিবাসীদের সাথে সহানুভূতিপূর্ণ ব্যবহার করবে। কেননা তোমাদের ওপর তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। অথবা তিনি বলেছেন, তাদের ব্যাপারে তোমাদের দায়িত্ব রয়েছে এবং তাদের সাথে তোমাদের শ্বশুর-জামাইয়ের সম্পর্ক রয়েছে [মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী এবং তাঁর পুত্র ইবরাহীম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর মাতা মারিয়ার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার জন্মভূমি ছিল মিসর]। তুমি যখন সেখানে দুই ব্যক্তিকে একই ইটের উপর পরস্পর বিবাদে লিপ্ত দেখবে তখন সে দেশ পরিত্যাগ করবে। রাবী বলেন, আমি আবদুর রহমান ইবনে শুরাহবিল ইবনে হাসান ও তার ভাই রবী’আকে সেখানে একটি ইটের স্থানে পরস্পর বিবাদে লিপ্ত দেখলাম। ফলে আমি সেখান থেকে প্রস্থান করে চলে আসলাম।
আনসারগণ যেসব নিদর্শণ পাবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ زَيْدِ بْنِ عَاصِمٍ، قَالَ: لَمَّا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ، قَسَمَ فِي النَّاسِ فِي المُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ، وَلَمْ يُعْطِ الأَنْصَارَ شَيْئًا، فَكَأَنَّهُمْ وَجَدُوا إِذْ لَمْ يُصِبْهُمْ مَا أَصَابَ النَّاسَ، فَخَطَبَهُمْ فَقَالَ: «يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ، أَلَمْ أَجِدْكُمْ ضُلَّالًا فَهَدَاكُمُ اللَّهُ بِي، وَكُنْتُمْ مُتَفَرِّقِينَ فَأَلَّفَكُمُ اللَّهُ بِي، وَعَالَةً فَأَغْنَاكُمُ اللَّهُ بِي» كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ، قَالَ: «مَا يَمْنَعُكُمْ أَنْ تُجِيبُوا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ». قَالَ: كُلَّمَا قَالَ شَيْئًا، قَالُوا: اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمَنُّ، قَالَ: " لَوْ شِئْتُمْ قُلْتُمْ: جِئْتَنَا كَذَا وَكَذَا، أَتَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالشَّاةِ وَالبَعِيرِ، وَتَذْهَبُونَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رِحَالِكُمْ، لَوْلاَ الهِجْرَةُ لَكُنْتُ امْرَأً مِنَ الأَنْصَارِ، وَلَوْ سَلَكَ النَّاسُ وَادِيًا وَشِعْبًا لَسَلَكْتُ وَادِيَ الأَنْصَارِ وَشِعْبَهَا، الأَنْصَارُ شِعَارٌ وَالنَّاسُ دِثَارٌ، إِنَّكُمْ سَتَلْقَوْنَ بَعْدِي أُثْرَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوْنِي عَلَى الحَوْضِ ".
আবদুল্লাহ্ ইবন যায়দ ইবন আসিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুনায়নের দিবসে আল্লাহ যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে গনীমতের সম্পদ দান করলেন তখন তিনি ঐগুলো সেসব মানুষের মধ্যে বন্টন করে দিলেন যাদের হৃদয়কে ঈমানের উপর সুদৃঢ় করার প্রয়োজন তিনি অনুভব করেছিলেন। আর আনসারগণকে কিছুই তিনি দেননি। ফলে তাঁরা যেন নাখোশ হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তাঁরা তা পান নি। অথবা তিনি বলেছেন, তাঁরা যেন দুঃখিত হয়ে গেলেন। কেননা অন্যান্য লোক যা পেয়েছে তারা তা পাননি। কাজেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সম্বোধন করে বললেন, হে আনসারগণ! আমি কি তোমাদেরকে গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত পাইনি, যার পরে আল্লাহ্ আমার দ্বারা তোমাদেরকে হেদায়েত দান করেছেন? তোমরা ছিলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন, যার পর আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরকে জুড়ে দিয়েছেন। তোমরা ছিলে রিক্তহস্ত, যার পরে আল্লাহ্ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে অভাবমুক্ত করেছেন। এভাবে যখনই তিনি কোনো কথা বলেছেন তখন আনসারগন জবাবে বলতেন, আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, আল্লাহর রাসূলের জবাব দিতে তোমাদেরক বাধা দিচ্ছে কিসে? তাঁরা তখনও তিনি যা কিছু বলছেন তার উত্তরে বলে গেলেন, আল্লাহ্ এবাং তাঁর রাসূলই আমাদের উপর অধিক ইহ্সানকারী। তিনি বললেন, তোমরা ইচ্ছা করলে বলতে পার যে, আপনি আমাদের কাছে এমন এমন (সংকটময়) সময়ে এসেছিলেন (যেগুলোকে আমরা বিদূরিত করেছি এবং আপনাকে সাহায্য করেছি) কিন্তু তোমরা কি এ কথার সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক বকরী ও উট নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা তোমাদের বাড়ি ফিরে যাবে আল্লাহর নবীকে সাথে নিয়ে। যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাকে হিজরত করানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত না থাকত তা হলে আমি আনসারদের মধ্যকারই একজন থাকতাম। যদি লোকজন কোনো উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়ে চলে তা হলে আমি আনসারদের উপত্যকা ও গিরিপথ দিয়েই চলব। আনসারগণ হলো (নববী) দেহ সংযুক্ত গেঞ্জি আর অন্যান্য লোক হল উপরের জামা। আমার বিদায়ের পর অচিরেই তোমরা দেখতে পাবে অন্যদের অগ্রাধিকার। তখন ধৈর্য ধারণ করবে (দীনের উপর টিকে থাকবে) অবশেষে তোমরা হাউজে কাউসারে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: أَخْبَرَنِي أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ نَاسٌ مِنَ الأَنْصَارِ، حِينَ أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَفَاءَ مِنْ أَمْوَالِ هَوَازِنَ، فَطَفِقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي رِجَالًا المِائَةَ مِنَ الإِبِلِ، فَقَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ، قَالَ أَنَسٌ: فَحُدِّثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَقَالَتِهِمْ، فَأَرْسَلَ إِلَى الأَنْصَارِ فَجَمَعَهُمْ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، وَلَمْ يَدْعُ مَعَهُمْ غَيْرَهُمْ، فَلَمَّا اجْتَمَعُوا قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: «مَا حَدِيثٌ بَلَغَنِي عَنْكُمْ»، فَقَالَ فُقَهَاءُ الأَنْصَارِ: أَمَّا رُؤَسَاؤُنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ فَلَمْ يَقُولُوا شَيْئًا، وَأَمَّا نَاسٌ مِنَّا حَدِيثَةٌ أَسْنَانُهُمْ فَقَالُوا: يَغْفِرُ اللَّهُ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعْطِي قُرَيْشًا وَيَتْرُكُنَا، وَسُيُوفُنَا تَقْطُرُ مِنْ دِمَائِهِمْ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «فَإِنِّي أُعْطِي رِجَالًا حَدِيثِي عَهْدٍ بِكُفْرٍ أَتَأَلَّفُهُمْ، أَمَا تَرْضَوْنَ أَنْ يَذْهَبَ النَّاسُ بِالأَمْوَالِ، وَتَذْهَبُونَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى رِحَالِكُمْ، فَوَاللَّهِ لَمَا تَنْقَلِبُونَ بِهِ خَيْرٌ مِمَّا يَنْقَلِبُونَ بِهِ» قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ قَدْ رَضِينَا، فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَجِدُونَ أُثْرَةً شَدِيدَةً، فَاصْبِرُوا حَتَّى تَلْقَوُا اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنِّي عَلَى الحَوْضِ» قَالَ أَنَسٌ: «فَلَمْ يَصْبِرُوا».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাওয়াযিন গোত্রের সম্পদ থেকে গনীমত হিসেবে যতটুকু দান করতে চেয়েছেন দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় লোককে এক একশ’ করে উট দান করতে লাগলেন। (এ অবস্থা দেখে) আনসারদের কিছুসংখ্যক লোক বলে ফেললেন, আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারি থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তাঁদের এ কথা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বর্ণনা করা হলে তিনি আনসারদের কাছে সংবাদ পাঠালেন এবং তাদেরকে একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে জামায়েত করলেন। এবং তাঁরা ব্যতীত অন্য কাউকে এখানে উপস্থিত থাকতে অনুমতি দেননি। এরপর তাঁরা সবাই জমায়েত হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে বললেন, তোমাদের কাছ থেকে কি কথা আমার নিকট পৌঁছলো? আনসারদের বিজ্ঞ উলামাবৃন্দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাদের নেতৃস্থানীয় কেউ তো কিছু বলেনি, তবে আমাদের কতিপয় কমবয়সী লোকেরা বলেছে যে, আল্লাহ্ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ক্ষমা করুন, তিনি আমাদেরকে বাদ দিয়ে কুরাইশদেরকে (গনীমতের মাল) দিচ্ছেন। অথচ আমাদের তরবারিগুলো থেকে এখনো তাদের তাজা রক্ত টপকাচ্ছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি অবশ্য এমন কিছু লোককে (গনীমতের মাল) দিচ্ছি যারা সবেমাত্র কুফর ত্যাগ করে ইসলামে প্রবেশ করেছে। আর তা এ জন্যে যেন তাদের মনকে আমি ঈমানের উপর সুদৃঢ় করতে পারি। তোমরা কি এত সন্তুষ্ট নও যে, অন্যান্য লোক ফিরে যাবে ধন-সম্পদ নিয়ে আর তোমরা বাড়ি ফিরে যাবে (আল্লাহর) নবীকে সঙ্গে নিয়ে? আল্লাহর কসম, তোমরা যে জিনিস নিয়ে ফিরে যাবে তা অনেক উত্তম ঐ ধন-সম্পদ অপেক্ষা, যা নিয়ে তারা ফিরে যাচ্ছে। আনসারগন বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আমরা এতে সন্তুষ্ট থাকলাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, অচিরেই তোমরা (নিজেদের উপর) অন্যদের প্রাধান্য প্রবলভাবে অনুভব করতে থাকবে। অতএব, আমার মৃত্যুর পর আল্লাহ্এবং তাঁর রাসূলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত তোমরা সবর করে থাকবে। আমি হাউজে কাউসারের নিকট থাকন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, কিন্তু তাঁরা (আনসাররা) সবর করেননি।
আনসারগণের সংখ্যা হ্রাস পাওয়া সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَرَضِهِ الَّذِي مَاتَ فِيهِ، بِمِلْحَفَةٍ قَدْ عَصَّبَ بِعِصَابَةٍ دَسْمَاءَ، حَتَّى جَلَسَ عَلَى المِنْبَرِ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ النَّاسَ يَكْثُرُونَ وَيَقِلُّ الأَنْصَارُ، حَتَّى يَكُونُوا فِي النَّاسِ بِمَنْزِلَةِ المِلْحِ فِي الطَّعَامِ، فَمَنْ وَلِيَ مِنْكُمْ شَيْئًا يَضُرُّ فِيهِ قَوْمًا وَيَنْفَعُ فِيهِ آخَرِينَ، فَلْيَقْبَلْ مِنْ مُحْسِنِهِمْ وَيَتَجَاوَزْ عَنْ مُسِيئِهِمْ» فَكَانَ آخِرَ مَجْلِسٍ جَلَسَ بِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্তিম রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর (একদিন বৃহস্পতিবার) একটি চাদর পরিধান করে এবং মাথায় একটি কাল কাপড় দিয়ে পট্টি বেঁধে ঘর থেকে বের হয়ে সোজা মিম্বারের উপর গিয়ে বসলেন। আল্লাহ্ তা‘আলার হামদ ও সানা পাঠ করার পর বললেন, আম্মা বাদ। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে, আর আনসারদের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকবে। ক্রমান্বয়ে তাদের অবস্থা লোকের মাঝে এ রকম দাঁড়াবে যেমন খাদ্যের মধ্যে লবণ। তখন তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি মানুষকে উপকার বা ক্ষতি করার মত ক্ষমতা লাভ করবে তখন সে যেন আনসারদের ভাল কার্যাবলি কবুল করে এবং তাদের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখে। এটাই ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লানের সর্বশেষ মজলিস।
হাজ্জাজ ইবন ইউসূফের অত্যাচার ও মুখতার ইবন আবী উবাইদ আস-সাকাফীর মিথ্যাচার সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَبِي نَوْفَلٍ، رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ عَلَى عَقَبَةِ الْمَدِينَةِ، قَالَ: فَجَعَلَتْ قُرَيْشٌ تَمُرُّ عَلَيْهِ، وَالنَّاسُ حَتَّى مَرَّ عَلَيْهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، فَوَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكَ، أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَبَا خُبَيْبٍ أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ لَقَدْ كُنْتُ أَنْهَاكَ عَنْ هَذَا، أَمَا وَاللهِ إِنْ كُنْتَ، مَا عَلِمْتُ، صَوَّامًا، قَوَّامًا، وَصُولًا لِلرَّحِمِ، أَمَا وَاللهِ لَأُمَّةٌ أَنْتَ أَشَرُّهَا لَأُمَّةٌ خَيْرٌ، ثُمَّ نَفَذَ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ، فَبَلَغَ الْحَجَّاجَ مَوْقِفُ عَبْدِ اللهِ وَقَوْلُهُ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ، فَأُنْزِلَ عَنْ جِذْعِهِ، فَأُلْقِيَ فِي قُبُورِ الْيَهُودِ، ثُمَّ أَرْسَلَ إِلَى أُمِّهِ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِي بَكْرٍ، فَأَبَتْ أَنْ تَأْتِيَهُ، فَأَعَادَ عَلَيْهَا الرَّسُولَ: لَتَأْتِيَنِّي أَوْ لَأَبْعَثَنَّ إِلَيْكِ مَنْ يَسْحَبُكِ بِقُرُونِكِ، قَالَ: فَأَبَتْ وَقَالَتْ: وَاللهِ لَا آتِيكَ حَتَّى تَبْعَثَ إِلَيَّ مَنْ يَسْحَبُنِي بِقُرُونِي، قَالَ: فَقَالَ: أَرُونِي سِبْتَيَّ فَأَخَذَ نَعْلَيْهِ، ثُمَّ انْطَلَقَ يَتَوَذَّفُ، حَتَّى دَخَلَ عَلَيْهَا، فَقَالَ: كَيْفَ رَأَيْتِنِي صَنَعْتُ بِعَدُوِّ اللهِ؟ قَالَتْ: رَأَيْتُكَ أَفْسَدْتَ عَلَيْهِ دُنْيَاهُ، وَأَفْسَدَ عَلَيْكَ آخِرَتَكَ، بَلَغَنِي أَنَّكَ تَقُولُ لَهُ: يَا ابْنَ ذَاتِ النِّطَاقَيْنِ أَنَا، وَاللهِ ذَاتُ النِّطَاقَيْنِ، أَمَّا أَحَدُهُمَا فَكُنْتُ أَرْفَعُ بِهِ طَعَامَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَطَعَامَ أَبِي بَكْرٍ مِنَ الدَّوَابِّ، وَأَمَّا الْآخَرُ فَنِطَاقُ الْمَرْأَةِ الَّتِي لَا تَسْتَغْنِي عَنْهُ، أَمَا إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَنَا، «أَنَّ فِي ثَقِيفٍ كَذَّابًا وَمُبِيرًا» فَأَمَّا الْكَذَّابُ فَرَأَيْنَاهُ، وَأَمَّا الْمُبِيرُ فَلَا إِخَالُكَ إِلَّا إِيَّاهُ، قَالَ: فَقَامَ عَنْهَا وَلَمْ يُرَاجِعْهَا.
আবু নাওফাল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে মদীনার উপত্যকায় দেখলাম। কুরাইশ বংশের লোকেরা তাকে অতিক্রম করে যেত এবং অপরাপর লোকও (অভিশপ্ত হাজ্জাজ তাকে ফাঁসী দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল)। অবশেষে আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও তার কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তার পাশে দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে খুবাইরের পিতা! আসসালামু আলাইকা, হে খুবাইরের পিতা! আসসালামু আলাইকা! হে আবু খুবাইব। আসসালামু আলাইকা। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ (খিলাফতের দাবীদার হওয়া) থেকে নিষেধ করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ থেকে বিরত থাকতে বলেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে এ থেকে বারণ করেছিলাম। আল্লাহর শপথ! আমি যতদূর জানি- তুমি ছিলে সাওম পালনকারী, রাতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইবাদকারী এবং আত্মীয়ার সম্পর্ক সম্মিলনকারী। আল্লাহর শপথ! যারা তোমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে তাদের চেয়ে তুমি উত্তম। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু চলে গেলেন। তার অবস্থান এবং মন্তব্য (ইবন যুবাইর সম্পর্কে) হাজ্জাজের কানে পৌঁছলো। এই ইতর লোক পাঠিয়ে তার (ইবনে যুবাইরের) লাশ ফাঁসীকাষ্ঠ থেকে নামিয়ে ইহুদীদের কবরে তা নিক্ষেপ করায়। অতঃপর সে তার (আবদুল্লাহ) মা আসমা বিনতে আবু বাক্র রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার কাছে তাকে ডেকে আনার জন্য লোক পাঠায়। কিন্তু তিনি হাজ্জাজের কাছে উপস্থিত হয়ে অস্বীকৃতি জানান। সে আবারো তাকে ডেকে নেওয়ার জন্য দূত পাঠায় এবং বলে যে, তুমি স্বেচ্ছায় আসলে আসো অন্যথায় আমি এমন লোক পাঠাবো, যে তোমার চুলের বেনী ধরে টেনে নিয়ে আসবে। রাবী বলেন, এবারও তিনি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে বললেন, তুমি যতক্ষণ এমন ব্যক্তিকে না পাঠাবে, যে আমার চুলের বেনী ধরে টেনে নিতে পারে- আমি ততক্ষণ তোমার কাছে যাব না। রাবী বলেন, হাজ্জাজ বলল, আমার জুতা আনো, সে জুতা পরল এবং সদর্পে রওনা হল। অবশেষে আসমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ঘরে এসে পৌঁছলো। সে বলল, তুমি দেখেছ আমি আল্লাহর দুশমনের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছি। তিনি উত্তরে বললেন, আমি দেখেছি, তুমি তার পার্থিব জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছ আর সে তোমার আখরাতকে বরবাদ করে দিয়েছে। আমি জানতে পেরেছি তুমি তাকে বলেছ, হে দুটি কোমর-বন্ধনীর পুত্র। আল্লাহর শপথ! আমি নিশ্চিতই দুই কোমরবন্ধ ব্যবহারকারিনী। একটি কোমর বন্ধ হচ্ছে- আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বাকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খাদ্যদ্রব্য বেঁধে তুলে রাখাতাম যাতে পশু তা খেয়ে ফেলতে না পারে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেই কোমরবন্ধ যা মহিলাদের প্রয়োজন। সাবধান! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, “সাকীফ গোত্র থেকে এক মিত্যাবাদী এবং এক নরহত্যাকারীর আবির্ভাব হবে”। মিথ্যাবাদীকে আমরা অবশ্যই দেখেছি। আর গণহত্যাকারী তোমাকে ছাড়া আর কাউকে আমি মনে করি না। এ কথা শুনে হাজ্জাজ উঠে পড়ল এবং তার কথার কোনো প্রতিউত্তর করল না।
আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাতে খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ سَلَمَةَ، قَالَ: كَانَ عَلِيٌّ قَدْ تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَيْبَرَ، وَكَانَ بِهِ رَمَدٌ، فَقَالَ: أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَخَرَجَ عَلِيٌّ فَلَحِقَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا كَانَ مَسَاءُ اللَّيْلَةِ الَّتِي فَتَحَهَا اللَّهُ فِي صَبَاحِهَا، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ، أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ، غَدًا رَجُلًا يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، أَوْ قَالَ: يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ، يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيْهِ " فَإِذَا نَحْنُ بِعَلِيٍّ وَمَا نَرْجُوهُ، فَقَالُوا: هَذَا عَلِيٌّ فَأَعْطَاهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّايَةَ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ.
সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খায়বার যুদ্ধে যাননি। কেননা তাঁর চোখে অসুখ ছিল। এতে তিনি (মনে মনে) বললেন, আমি কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে (জিহাদে) যাব না? তারপর তিনি বেড়িয়ে পড়লেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হলেন। যেদিন সকালে আল্লাহ বিজয় দান করলেন, তার পূর্ব রাত্রে (সান্ধ্যায়) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আগামী কাল সকালে আমি এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা প্রদান করব, অথবা বলেছিলেন যে এমন এক ব্যক্তি ঝান্ডা গ্রহণ করবে যাঁকে আল্লাহ এবং তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালবাসেন, অথবা বলেছিলেন, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করাবেন। তারপর আমরা দখেতে পেলাম তিনি হলেন আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, অথচ আমরা তাঁর সম্পর্কে এমনটি আশা করি নি। তাই সকলেই বলে উঠলেন, এই যে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দিলেন এবং তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দিলেন।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلًا يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَى يَدَيْهِ»، قَالَ: فَبَاتَ النَّاسُ يَدُوكُونَ لَيْلَتَهُمْ أَيُّهُمْ يُعْطَاهَا، فَلَمَّا أَصْبَحَ النَّاسُ غَدَوْا عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كُلُّهُمْ يَرْجُو أَنْ يُعْطَاهَا، فَقَالَ: «أَيْنَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ». فَقَالُوا: يَشْتَكِي عَيْنَيْهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَأَرْسِلُوا إِلَيْهِ فَأْتُونِي بِهِ». فَلَمَّا جَاءَ بَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ وَدَعَا لَهُ، فَبَرَأَ حَتَّى كَأَنْ لَمْ يَكُنْ بِهِ وَجَعٌ، فَأَعْطَاهُ الرَّايَةَ، فَقَالَ عَلِيٌّ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُقَاتِلُهُمْ حَتَّى يَكُونُوا مِثْلَنَا؟ فَقَالَ: «انْفُذْ عَلَى رِسْلِكَ حَتَّى تَنْزِلَ بِسَاحَتِهِمْ، ثُمَّ ادْعُهُمْ إِلَى الإِسْلاَمِ، وَأَخْبِرْهُمْ بِمَا يَجِبُ عَلَيْهِمْ مِنْ حَقِّ اللَّهِ فِيهِ، فَوَاللَّهِ لَأَنْ يَهْدِيَ اللَّهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا، خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُونَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ».
সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব যাঁর হাতে আল্লাহ্ বিজয় দান করবেন। রাবী বলেন, তারা এই আগ্রহ ভরে রাত্রি যাপন করলেন যে, কাকে ঐ পতাকা দেওয়া হবে। যখন সকাল হল তখন সকলেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে হাযির হলেন। তাদের প্রত্যেকেই এ আশা পোষণ করছিলেন যে, পতাকা তাকে দেওয়া হবে। তারপর তিনি বললেন, আলী ইব্ন আবূ তালিব কোথায়? তাঁরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি চক্ষু রোগে আক্রান্ত। তিনি বললেন, কাউকে পাঠিয়ে তাঁকে আমার কাছে নিয়ে এস। যখন তিনি এলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর দু'চোখে থুথু লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দু‘আও করলেন। এতে তিনি এমন সুস্থ হয়ে গেলেন যেন তাঁর চোখে কোনো রোগই ছিলনা। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে পতাকাটি দিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের মত না হয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কি তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাব। তিনি বললেন, তুমি সোজা অগ্রসর হতে থাক এবং তাদের আঙ্গিনায় উপনীত হয়ে তাদেরকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দাও। তাদের উপর আল্লাহর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য বর্তাবে তাও তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম, তোমাদের দ্বারা যদি একটি মানুষও হিদায়েত প্রাপ্ত হয়, তা হবে তোমার জন্য লাল রঙ্গের উট প্রাপ্তির চেয়েও অধিক উত্তম।
পারস্য বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ جُبَيْرِ بْنِ حَيَّةَ، قَالَ: بَعَثَ عُمَرُ النَّاسَ فِي أَفْنَاءِ الأَمْصَارِ، يُقَاتِلُونَ المُشْرِكِينَ، فَأَسْلَمَ الهُرْمُزَانُ، فَقَالَ: إِنِّي مُسْتَشِيرُكَ فِي مَغَازِيَّ هَذِهِ؟ قَالَ: نَعَمْ مَثَلُهَا وَمَثَلُ مَنْ فِيهَا مِنَ النَّاسِ مِنْ عَدُوِّ المُسْلِمِينَ مَثَلُ طَائِرٍ لَهُ رَأْسٌ وَلَهُ جَنَاحَانِ وَلَهُ رِجْلاَنِ، فَإِنْ كُسِرَ أَحَدُ الجَنَاحَيْنِ نَهَضَتِ الرِّجْلاَنِ بِجَنَاحٍ وَالرَّأْسُ، فَإِنْ كُسِرَ الجَنَاحُ الآخَرُ نَهَضَتِ الرِّجْلاَنِ وَالرَّأْسُ، وَإِنْ شُدِخَ الرَّأْسُ ذَهَبَتِ الرِّجْلاَنِ وَالجَنَاحَانِ وَالرَّأْسُ، فَالرَّأْسُ كِسْرَى، وَالجَنَاحُ قَيْصَرُ، وَالجَنَاحُ الآخَرُ فَارِسُ، فَمُرِ المُسْلِمِينَ، فَلْيَنْفِرُوا إِلَى كِسْرَى، - وَقَالَ بَكْرٌ، وَزِيَادٌ جَمِيعًا عَنْ جُبَيْرِ بْنِ حَيَّةَ - قَالَ: فَنَدَبَنَا عُمَرُ، وَاسْتَعْمَلَ عَلَيْنَا النُّعْمَانَ بْنَ مُقَرِّنٍ، حَتَّى إِذَا كُنَّا بِأَرْضِ العَدُوِّ، وَخَرَجَ عَلَيْنَا عَامِلُ كِسْرَى فِي أَرْبَعِينَ أَلْفًا، فَقَامَ تَرْجُمَانٌ، فَقَالَ: لِيُكَلِّمْنِي رَجُلٌ مِنْكُمْ، فَقَالَ المُغِيرَةُ: سَلْ عَمَّا شِئْتَ؟ قَالَ: مَا أَنْتُمْ؟ قَالَ: نَحْنُ أُنَاسٌ مِنَ العَرَبِ، كُنَّا فِي شَقَاءٍ شَدِيدٍ وَبَلاَءٍ شَدِيدٍ، نَمَصُّ الجِلْدَ وَالنَّوَى مِنَ الجُوعِ، وَنَلْبَسُ الوَبَرَ وَالشَّعَرَ، وَنَعْبُدُ الشَّجَرَ وَالحَجَرَ، فَبَيْنَا نَحْنُ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الأَرَضِينَ - تَعَالَى ذِكْرُهُ وَجَلَّتْ عَظَمَتُهُ - إِلَيْنَا نَبِيًّا مِنْ أَنْفُسِنَا نَعْرِفُ أَبَاهُ وَأُمَّهُ، فَأَمَرَنَا نَبِيُّنَا رَسُولُ رَبِّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَنْ نُقَاتِلَكُمْ حَتَّى تَعْبُدُوا اللَّهَ وَحْدَهُ، أَوْ تُؤَدُّوا الجِزْيَةَ، وَأَخْبَرَنَا نَبِيُّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ رِسَالَةِ رَبِّنَا، أَنَّهُ مَنْ قُتِلَ مِنَّا صَارَ إِلَى الجَنَّةِ فِي نَعِيمٍ لَمْ يَرَ مِثْلَهَا قَطُّ، وَمَنْ بَقِيَ مِنَّا مَلَكَ رِقَابَكُمْ».
জুবাইর ইবন হাইয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরে সেনাদল পাঠালেন। সে সময় হুরমযান (মাদায়েনের শাসক) ইসলা গ্রহণ করে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, আমি এ সব ব্যাপারে তোমার পরামর্শ গ্রহণ করতে চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে। এ সকল দেশ এবং দেশে মুসলিমদের দুসমন যেসব লোক বাস করছে, তাদের উদাহরণ একটি পাখির ন্যায়, যার একটি মাথা, দু’টি পা রয়েছে। যদি একটি ডানা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তাহলে দু’টি পাও মাথার সাহায্যে উঠে দাঁড়াবে। আর যদি মাথা ভেঙ্গে দেওয়া হয়, তবে উভয় পা, উভয় ডানা ও মাথা সবই অকেজো হয়ে যাবে। কিসরা শত্রুদের হলো মাথা, কায়সার হলো একটি ডানা, আর পারস্য হলো অপর ডানা। কাজেই মুসলিমগণকে এ আদেশ করুন, তারা যেন কিসরার উপর আক্রমন করে। বকর ও যিয়াদ (রহ.) উভয়ে জুবাইর ইবন হাইয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমাদের ডাকলেন আর আমাদের উপর নু‘মান ইবন মুকাররিনকে আমির নিযুক্ত করেন। আমরা যখন শত্রু দেশে পৌঁছলাম, কিসরা এক সেনাপতি চল্লিম হাজার সৈন্য নিয়ে আমাদের মুকাবিলায় আসল। তখন তার পক্ষ থেকে একজন দোভাষী দাঁড়িয়ে বলল, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমার সঙ্গে আলোচনা করুক। তখন মুগীরা ইবন (শু‘বা) রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, যা ইচ্ছা প্রশ্ন করতে পার। সে বলল, তোমরা কারা? তিনি বললেন, আমরা আরবের লোক। দীর্ঘ দিন আমরা অতিশয় দুর্ভাগ্য (কুফরীতে) এবং কঠিন বিপদে (দারিদ্রে) ছিলাম। ক্ষুধার তাড়নায় আমরা চামড়া ও খেজুর গুটি চুষতাম। চুল ও পশম পরিধান করতাম বৃক্ষ ও পাথর পূজা করতাম। আমরা যখন এ অবস্থায় পতিত তখন আসমান ও যমীনের প্রতিপালক আমাদের মধ্য থেকে একজন নবী প্রেরণ করেন। তাঁর পিতা-মাতাকে আমরা চিনি। আমাদের নবী ও আমাদের রবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ করেছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত কর কিংবা জিযিয়া দাও। আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের রবের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আমাদের মধ্য থেকে যে নিহত হবে, সে জান্নাতে এমন নিয়মত লাভ করবে, যা কখনো দেখা যায়নি। আর আমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে তোমাদের গর্দানের মালিক হবে।
হিরা বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ، قَالَ: بَيْنَا أَنَا عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ أَتَاهُ رَجُلٌ فَشَكَا إِلَيْهِ الفَاقَةَ، ثُمَّ أَتَاهُ آخَرُ فَشَكَا إِلَيْهِ قَطْعَ السَّبِيلِ، فَقَالَ: «يَا عَدِيُّ، هَلْ رَأَيْتَ الحِيرَةَ؟» قُلْتُ: لَمْ أَرَهَا، وَقَدْ أُنْبِئْتُ عَنْهَا، قَالَ «فَإِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، لَتَرَيَنَّ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الحِيرَةِ، حَتَّى تَطُوفَ بِالكَعْبَةِ لاَ تَخَافُ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ، - قُلْتُ فِيمَا بَيْنِي وَبَيْنَ نَفْسِي فَأَيْنَ دُعَّارُ طَيِّئٍ الَّذِينَ قَدْ سَعَّرُوا البِلاَدَ -، وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ لَتُفْتَحَنَّ كُنُوزُ كِسْرَى»، قُلْتُ: كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ؟ قَالَ: " كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ، وَلَئِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، لَتَرَيَنَّ الرَّجُلَ يُخْرِجُ مِلْءَ كَفِّهِ مِنْ ذَهَبٍ أَوْ فِضَّةٍ، يَطْلُبُ مَنْ يَقْبَلُهُ مِنْهُ فَلاَ يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهُ مِنْهُ، وَلَيَلْقَيَنَّ اللَّهَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ يَلْقَاهُ، وَلَيْسَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهُ تَرْجُمَانٌ يُتَرْجِمُ لَهُ، فَلَيَقُولَنَّ لَهُ: أَلَمْ أَبْعَثْ إِلَيْكَ رَسُولًا فَيُبَلِّغَكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى، فَيَقُولُ: أَلَمْ أُعْطِكَ مَالًا وَأُفْضِلْ عَلَيْكَ؟ فَيَقُولُ: بَلَى، فَيَنْظُرُ عَنْ يَمِينِهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ، وَيَنْظُرُ عَنْ يَسَارِهِ فَلاَ يَرَى إِلَّا جَهَنَّمَ " قَالَ عَدِيٌّ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «اتَّقُوا النَّارَ وَلَوْ بِشِقَّةِ تَمْرَةٍ فَمَنْ لَمْ يَجِدْ شِقَّةَ تَمْرَةٍ فَبِكَلِمَةٍ طَيِّبَةٍ» قَالَ عَدِيٌّ: فَرَأَيْتُ الظَّعِينَةَ تَرْتَحِلُ مِنَ الحِيرَةِ حَتَّى تَطُوفَ بِالكَعْبَةِ لاَ تَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، وَكُنْتُ فِيمَنِ افْتَتَحَ كُنُوزَ كِسْرَى بْنِ هُرْمُزَ وَلَئِنْ طَالَتْ بِكُمْ حَيَاةٌ، لَتَرَوُنَّ مَا قَالَ النَّبِيُّ أَبُو القَاسِمِ: صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُخْرِجُ مِلْءَ كَفِّهِ حَدَّثَنِي عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، أَخْبَرَنَا سَعِيدُ بْنُ بِشْرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو مُجَاهِدٍ، حَدَّثَنَا مُحِلُّ بْنُ خَلِيفَةَ، سَمِعْتُ عَدِيًّا كُنْتُ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
‘আদি ইবন হাতিম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিসে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি এসে দুর্ভিক্ষের অভিযোগ করল। তারপর আর এক ব্যক্তি এসে ডাকাতের উৎপাতের কথা বলে অনুযোগ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ‘আদী, তুমি কি হীরা নামক স্থানটি দেখেছ? আমি বললাম, দেখি নাই, তবে স্থানটি আমার জানা আছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও তবে দেখতে পাবে একজন উট সওয়ার হাওদানশীল মহিলা হীরা থেকে রওয়ানা হয়ে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করে যাবে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবেন না। আমি মনে মনে বলতে লাগলাম তাঈ গোত্রের ডাকাতগুলো কোথায় থাকবে যারা ফিতনা ফাসাদের আগুন জ্বালিয়ে দেশকে ছারখার করে দিচ্ছে। তিনি বললেন, তুমি যদি দীর্ঘজীবি হও, তবে নিশ্চয়ই দেখতে পাবে যে, কিসরার (পারস্য সম্রাট) ধনভাণ্ডার কবজা করা হয়েছে। আমি বললাম, কিসরা ইবন হুরমুযের? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, কিসরা ইবন হুরমুযের। তোমার আয়ু যদি দীর্ঘ হয় তবে অবশ্যই তুমি দেখতে পাবে, লোকজন মুষ্টিভরা যাকাতের স্বর্ণ-রৌপ্য নিয়ে বের হবে এবং এমন ব্যক্তিকে তালাশ করে বেড়াবে যে তাদের এ মাল গ্রহণ করে। কিন্তু গ্রহণকারী একটি মানুষও পাবেনা। তোমাদের প্রত্যেকটি মানুষ কিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করবে। তখন তার ও আল্লাহর মাঝে অন্য কোনো দোভাষী থাকবেনা যিনি ভাষান্তর করে বলবেন। আল্লাহ্ বলবেন, আমি কি (দুনিয়াতে) তোমার নিকট আমার বাণী পৌঁছানোর জন্য রাসূল প্রেরণ করিনি? সে বলবে, হ্যাঁ। প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি দান করিনি এবং দয়া মেহেরবানী করিনি? তখন সে বলবে, হ্যাঁ, দিয়েছেন। তারপর সে ডান দিকে নজর করবে, জাহান্নাম ব্যতীত আর কিছুই দেখতে পাবে না। আবার সে বাম দিকে নজর করবে, তখনো সে জাহান্নাম ব্যতীত কিছুই দেখবে না। ‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, অর্ধেকটি খেজুর দান করে হলেও জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা কর আর যদি তাও করার তৌফিক না হয় তবে মানুষের জন্য মঙ্গলজনক সৎ ও ভাল কথা বলে নিজেকে আগুন থেকে রক্ষা কর। ‘আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি নিজে দেখেছি, এক উট সাওয়ার মহিলা হীরা থেকে একাকী রওয়ানা হয়ে কা’বাহ শরীফ তাওয়াফ করেছে। সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করে না। আর পারস্য সম্রাট কিসরা ইবন হুরমুযের ধনভাণ্ডার যারা দখল করেছিল, তাদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। যদি তোমরা দীর্ঘজীবি হও, তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছেন, তা স্বচক্ষে দেখতে পাবে। (অর্থাৎ মুষ্টিভরা স্বর্ণ দিতে চাইবে কিন্তু কেউ নিতে চাইবে না।)
রোম ও পারস্য ধ্বংস ও তা মুসলিমগণের বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا هَلَكَ كِسْرَى، فَلاَ كِسْرَى بَعْدَهُ، وَإِذَا هَلَكَ قَيْصَرُ فَلاَ قَيْصَرَ بَعْدَهُ، وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، لَتُنْفِقُنَّ كُنُوزَهُمَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন কিসরা (পারস্য সম্রাটের উপাধি) ধ্বংস হবে, তারপর অন্য কোনো কিসরার আবির্ভাব হবে না। যখন কায়সার (রোম সম্রাটের উপাধি) ধ্বংস হবে তখন আর কোনো কায়সারের আবির্ভাব হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একথাও বলেছেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ নিশ্চয়ই এ দুই সাম্রাজ্যের ধনভাণ্ডার তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করবে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ، رَفَعَهُ، قَالَ: " إِذَا هَلَكَ كِسْرَى فَلاَ كِسْرَى بَعْدَهُ، وَذَكَرَ وَقَالَ: لَتُنْفَقَنَّ كُنُوزُهُمَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ".
জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিসরা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কিসরা আগমন হবে না এবং কায়সার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আর কোনো কায়সারের আগমন হবে না। রাবী উল্লেখ করেন যে, (তিনি আরো বলেছেন) নিশ্চয়ই তাদের ধনভাণ্ডার আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করা হবে।
মদীনায় যেসব ফিতনা সংঘটিত হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أُسَامَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: أَشْرَفَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى أُطُمٍ مِنَ الآطَامِ، فَقَالَ: «هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى؟ إِنِّي أَرَى الفِتَنَ تَقَعُ خِلاَلَ بُيُوتِكُمْ مَوَاقِعَ القَطْرِ».
উসামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন মদিনায় একটি উচু টিলায় আরোহণ করলেন, তারপর (সাহাবায়ে কেরামকে লক্ষ করে) বললেন, আমি যা দেখেছি, তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? আমি দেখছি বাড়ি ধারার ন্যায় ফাসাদ ঢুকে পড়ছে তোমাদের ঘরে ঘরে।
একদল হকপন্থী বিজয়ী দল ও কিয়ামত পর্যন্ত টিকেথাকার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
حَدَّثَنَا قَيْسٌ، سَمِعْتُ المُغِيرَةَ بْنَ شُعْبَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ يَزَالُ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي ظَاهِرِينَ حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ ظَاهِرُونَ».
মুগীরা ইবন শু’বা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমনকি কিয়ামত আসবে তখনো তারা বিজয়ী থাকবে।
حَدَّثَنِي عُمَيْرُ بْنُ هَانِئٍ، أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاوِيَةَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «لاَ يَزَالُ مِنْ أُمَّتِي أُمَّةٌ قَائِمَةٌ بِأَمْرِ اللَّهِ، لاَ يَضُرُّهُمْ مَنْ خَذَلَهُمْ، وَلاَ مَنْ خَالَفَهُمْ، حَتَّى يَأْتِيَهُمْ أَمْرُ اللَّهِ وَهُمْ عَلَى ذَلِكَ» قَالَ عُمَيْرٌ: فَقَالَ مَالِكُ بْنُ يُخَامِرَ: قَالَ مُعَاذٌ: وَهُمْ بِالشَّأْمِ، فَقَالَ مُعَاوِيَةُ: هَذَا مَالِكٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ سَمِعَ مُعَاذًا يَقُولُ: وَهُمْ بِالشَّأْمِ.
মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা আল্লাহর দীনের উপর অটল থাকবে। তাদেরকে যারা সাহায্য না করবে অথবা তাদের বিরোধীতা করবে, তারা তাদের কোনো প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি কিয়ামত আসা পর্যন্ত তাঁরা তাদের অবস্থার উপর মজবুত থাকবে। উমাইর ইবন হানী (রহ.) মালিক ইবন ইউখামিরের (রহ.) বরাত দিয়ে বলেন, মু’আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে। মু’আবিয়া (রহ.) বলেন, মালিক (রহ.) এর ধারণা যে, ঐ দলটি সিরিয়ায় অবস্থান করবে বলে মু’আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন।
নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার কিছু দাজ্জাল সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَإِنَّ أُمَّتِي سَيَبْلُغُ مُلْكُهَا مَا زُوِيَ لِي مِنْهَا، وَأُعْطِيتُ الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ، وَإِنِّي سَأَلْتُ رَبِّي لِأُمَّتِي أَنْ لَا يُهْلِكَهَا بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا يُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، فَيَسْتَبِيحَ بَيْضَتَهُمْ، وَإِنَّ رَبِّي قَالَ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي إِذَا قَضَيْتُ قَضَاءً فَإِنَّهُ لَا يُرَدُّ، وَإِنِّي أَعْطَيْتُكَ لِأُمَّتِكَ أَنْ لَا أُهْلِكَهُمْ بِسَنَةٍ عَامَّةٍ، وَأَنْ لَا أُسَلِّطَ عَلَيْهِمْ عَدُوًّا مِنْ سِوَى أَنْفُسِهِمْ، يَسْتَبِيحُ بَيْضَتَهُمْ، وَلَوِ اجْتَمَعَ عَلَيْهِمْ مَنْ بِأَقْطَارِهَا - أَوْ قَالَ مَنْ بَيْنَ أَقْطَارِهَا - حَتَّى يَكُونَ بَعْضُهُمْ يُهْلِكُ بَعْضًا، وَيَسْبِي بَعْضُهُمْ بَعْضًا ".
সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ সমন্ত পৃথিবীকে ভাজ করে আমার সামনে রেখে দিয়েছেন। অতঃপর আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। পৃথিবীর যে পরিমাণ অংশ শুটিয়ে আমার সম্মুখে রাখা হয়েছিল সে পর্যন্ত আমার উম্মাতের রাজত্ব পৌছবে। আমাকে লাল ও সাদা দু-টি ধনাগার দেওয়া হয়েছে। আমি আমার উম্মাতের জন্য আমার প্রতিপালকের নিকট এ দুআ করেছি, যেন তিনি তাদেরকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংসনা করেন এবং যেন তিনি তাদের উপর নিজেদের ব্যতীত এমন কোনো শক্রকে চাপিয়ে না দেন যারা তাদের দলকে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দিবে। এ কথা শুনে আমার প্রতিপালক বললেন, হে মুহাম্মদ! আমি যা সিদ্ধান্ত করি তা কখনো প্রতিহত হয় না। আমি তোমার দুআ কবুল করেছি। আমি তোমার উম্মাতকে সাধারণ দুর্ভিক্ষের দ্বারা ধ্বংস করবো না এবং তাদের উপর তাদের নিজেদের ব্যতীত অন্য এমন কোন শক্রকে চাপিয়ে দেবো না যারা তাদের সমষ্টিকে বিক্ষিপ্ত ও ধ্বংস করতে সক্ষম হবে। যদিও তিনি বিভিন্ন প্রান্ত হতে লোক সমবেত হয়ে চেষ্টা করে না কেন। তবে মুসলিমগণ পরস্পর একে অপরকে ধ্বংস করবে এবং একে অপরকে বন্দী করবে।
عَنْ ثَوْبَانَ، أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ اللهَ تَعَالَى زَوَى لِي الْأَرْضَ، حَتَّى رَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا، وَأَعْطَانِي الْكَنْزَيْنِ الْأَحْمَرَ وَالْأَبْيَضَ» ثُمَّ ذَكَرَ نَحْوَ حَدِيثِ أَيُّوبَ، عَنْ أَبِي قِلَابَةَ.
সাওবান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পৃথিবীকে গুটিয়ে আল্লাহ তায়ালা আমার সামনে পেশ করেছেন। আমি এর পূর্ব দিগন্ত হতে পশ্চিম দিগন্ত পর্যন্ত দেখে নিয়েছি। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে লাল ও সাদা দুটি ধন-ভাণ্ডার দান করেছেন। অতঃপর কাতাদা (রহ.) আইউবের সুত্রে আবু কেলাবা (রহ.) হতে বর্ণিত হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেছেন।
মানুষ আল্লাহর শুরু সম্পর্কে সন্দেহ করবে এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " لَنْ يَبْرَحَ النَّاسُ يَتَسَاءَلُونَ حَتَّى يَقُولُوا: هَذَا اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ، فَمَنْ خَلَقَ اللَّهَ ".
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লোকেরা পরস্পরে প্রশ্ন করতে থাকবে যে, ইনি আল্লাহ সবকিছুরই স্রষ্টা, তবে আল্লাহকে কে সৃষ্টি করলেন?
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يَأْتِي الشَّيْطَانُ أَحَدَكُمْ فَيَقُولُ: مَنْ خَلَقَ كَذَا، مَنْ خَلَقَ كَذَا، حَتَّى يَقُولَ: مَنْ خَلَقَ رَبَّكَ؟ فَإِذَا بَلَغَهُ فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ وَلْيَنْتَهِ ".
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কারো কাছে শংতান আসতে পারে এবং সে বলতে পারে, এ বস্তু সৃষ্টি করেছেন? ঐ বস্তু সৃষ্টি করেছে? এরূপ প্রশ্ন করতে করতে শেস পর্যণ্ত বলে বসবে, তোমার প্রতিপালককে কে সৃষ্টি করেছে? যখন বিষয়টি এ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে তখন সে যেন অবশ্যই আল্লাহর কাছে পানাহ চায় এবং বিরত হয়ে যায়।
কিছু ফিতনা সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী, যা তাঁর ইন্তিকালের পরে সংঘটিত হয়েছিল।
عَنِ ابْنِ المُسَيِّبِ، وَأَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سَتَكُونُ فِتَنٌ القَاعِدُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ القَائِمِ، وَالقَائِمُ فِيهَا خَيْرٌ مِنَ المَاشِي، وَالمَاشِي فِيهَا خَيْرٌ مِنَ السَّاعِي، وَمَنْ يُشْرِفْ لَهَا تَسْتَشْرِفْهُ، وَمَنْ وَجَدَ مَلْجَأً أَوْ مَعَاذًا فَلْيَعُذْ بِهِ»
عَنْ نَوْفَلِ بْنِ مُعَاوِيَةَ، مِثْلَ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ، هَذَا إِلَّا أَنَّ أَبَا بَكْرٍ يَزِيدُ «مِنَ الصَّلاَةِ صَلاَةٌ مَنْ فَاتَتْهُ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ وَمَالَهُ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অচিরেই অসংখ্য সর্বগ্রাসী ফিতনা ফাসাদ আসতে থাকবে। ঐ সময় বসা ব্যক্তি দাঁড়ানো ব্যক্তির চেয়ে উত্তম (নিরাপদ), দাঁড়ানো ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি হতে অধিক রক্ষিত আর চলমান ব্যক্তি ধাবমান ব্যক্তির চেয়ে অধিক বিপদমুক্ত। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে চোখ তুলে তাকাবে ফিতনা তাকে গ্রাস করবে। তখন যদি কোনো ব্যক্তি তাঁর দীন রক্ষার জন্য কোনো ঠিকানা ঠিকানা অথবা নিরাপদ আশ্রয় পায়, তবে সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করাই উচিৎ হবে। ইবন শিহাব যুহরী (র.) নাওফাল ইবন মু’আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসের অনুরূপই বর্ণনা করেছেন। তবে অতিরিক্ত আর একটি কথাও বর্ণনা করেছেন যে এমন একটি সালাত রয়েছে (আসর) যে ব্যক্তির ঐ সালাত কাযা হয়ে গেল, তার পরিবার পরিজন ধন-সম্পদ সবই যেন ধ্বংস হয়ে গেল।
মুসলিমগণ যখন সুদ ও দুনিয়াদারীতে পতিত হবে তখন তাদের অধঃপতন সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ البَاهِلِيِّ، قَالَ: وَرَأَى سِكَّةً وَشَيْئًا مِنْ آلَةِ الحَرْثِ، فَقَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لاَ يَدْخُلُ هَذَا بَيْتَ قَوْمٍ إِلَّا أَدْخَلَهُ اللَّهُ الذُّلَّ».
আবূ উমামা বাহিলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লাঙ্গলের হাল এবং কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি দেখে বললেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি এটা যে সম্প্রদায়ের ঘরে প্রবেশ করে, আল্লাহ্সেখানে অপমান প্রবেশ করান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়ালে পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।
عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَا أَحَدٌ أَكْثَرَ مِنَ الرِّبَا، إِلَّا كَانَ عَاقِبَةُ أَمْرِهِ إِلَى قِلَّةٍ».
ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূদের দ্বারা সম্পদ বাড়িয়েছে, পরিণামে তার সম্পদ হ্রাসপ্রাপ্ত হবেই।
জালিম শাসকদের সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
حَدَّثَنَا زَيْدُ بْنُ وَهْبٍ، سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّكُمْ سَتَرَوْنَ بَعْدِي أَثَرَةً وَأُمُورًا تُنْكِرُونَهَا» قَالُوا: فَمَا تَأْمُرُنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «أَدُّوا إِلَيْهِمْ حَقَّهُمْ، وَسَلُوا اللَّهَ حَقَّكُمْ».
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের বলেছেন: আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করবে। এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পছন্দ করবে না। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তাহলে আমাদের জন্য কি হুকুম করছেন? উত্তরে তিনি বললেন: তাদের হক পরিপূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের প্রাপ্য আল্লাহর কাছে চাইবে।
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ، فَقَالَ: «إِنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ مَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَهُوَ وَارِدٌ عَلَيَّ الْحَوْضَ».
কাব ইবন উজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন, তখন আমরা ছিলাম নয়জন। তিনি বললেন, দেখ, আমার পর শাসক হবে, যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাকে স্বীকার করবে, আর অত্যাচারে তাদের সাহায্য করবে, সে আমার দলভূক্ত নয় এবং আমার সাথে তার কোনো সম্পর্ক থাকবে না। কিয়ামতের দিন সে আমার হাওযে আসবে না, আর যারা এ সকল শাসকের মিথ্যাকে সত্য বলবে না, আর জুলুমেও তাদের সাহায্য করবে না; সে আমার সাথী এবং আমিও তার সাথী আর এ ব্যক্তি আমার হাওযে আগমন করবে।
عَنْ كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ قَالَ: خَرَجَ إِلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ خَمْسَةٌ وَأَرْبَعَةٌ، أَحَدُ الْعَدَدَيْنِ مِنَ الْعَرَبِ، وَالْآخَرُ مِنَ الْعَجَمِ، فَقَالَ: «اسْمَعُوا، هَلْ سَمِعْتُمْ أَنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ، مَنْ دَخَلَ عَلَيْهِمْ فَصَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ يَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يَدْخُلْ عَلَيْهِمْ، وَلَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ، فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَسَيَرِدُ عَلَيَّ الْحَوْضَ».
কাব ইবন উজরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নয় ব্যক্তি ছিলাম, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আগমন করলেন। আমাদের পাচ ব্যক্তি আরবী, আর চার ব্যক্তি ছিল অনারব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শুন, তোমরা শুনে থাকবে যে, আমার পরে শাসক হবে। যারা তাদের নিকট গিয়ে তাদের মিথ্যাকে সত্য বলে প্রতিপাদন করবে, আর অত্যাচারে তাদের সাহায্য করবে আমি তার নই, আর সেও আমার নয়। সে আমার হাওযে আসতে পারবে না। আর যারা তাদের নিকট যাবে না তাদের মিথ্যাকে সত্য প্রতিপাদন করবে না এবং তাদের অত্যাচারে সাহায্য করবে না সে হবে আমার সাথী এবং আমিও হবো তার সাথী, আর সে আমার হাওযে আগমন করবে।
عَنْ عَمْرِو بْنِ مَيْمُونٍ الْأَوْدِيِّ، قَالَ: قَدِمَ عَلَيْنَا مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ الْيَمَنَ رَسُولُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا، قَالَ: فَسَمِعْتُ تَكْبِيرَهُ مَعَ الْفَجْرِ رَجُلٌ أَجَشُّ الصَّوْتِ، قَالَ: فَأُلْقِيَتْ عَلَيْهِ مَحَبَّتِي فَمَا فَارَقْتُهُ حَتَّى دَفَنْتُهُ بِالشَّامِ مَيِّتًا، ثُمَّ نَظَرْتُ إِلَى أَفْقَهِ النَّاسِ بَعْدَهُ فَأَتَيْتُ ابْنَ مَسْعُودٍ فَلَزِمْتُهُ حَتَّى مَاتَ، فَقَالَ: قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كَيْفَ بِكُمْ إِذَا أَتَتْ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يُصَلُّونَ الصَّلَاةَ لِغَيْرِ مِيقَاتِهَا»، قُلْتُ: فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ: «صَلِّ الصَّلَاةَ لِمِيقَاتِهَا وَاجْعَلْ صَلَاتَكَ مَعَهُمْ سُبْحَةً».
আব্দুর রহমান ইবন ইব্রাহীম আমর ইবন মায়মূন (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু‘আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতিনিধি হিসাবে আমাদের নিকট ইয়ামনে আগমন করেন। ফজরেব নামাযে তাঁর কন্ঠস্বর বড় ছিল। এবং তাঁর সাথে আমার প্রগাঢ় মহব্বত সৃষ্টি হওয়ায় আমি তাঁর সাথে অবস্থান করতাম। অতঃপর শামদেশে তিনি ইন্তেকাল করলে আমি তাঁকে সেখানে দাফন করি তাঁর ইন্তেকালের পর আমি অপর একজন জ্ঞান তাপস সাহাবীর অন্বেষণে বের হয়ে ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খিদমতে হাযির হই এবং তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর সাথে অবস্থান করি একদা হযরত ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেন, যখন শাসকবর্গ বিলম্বে সালাত আদায় করবে তখন তুমি কি করবে? আমি বলি- ইয়া রাসূল্লাল্লাহ্! এমতাবস্থায় আপনি আমাকে কি করার নির্দেশ দেন? তিনি বলেন, তুমি নির্ধারিত সময়ে একাকী সালাত আদায় করবে। অতঃপর তাদের সাথে জামাআতে আদায়কৃত সালাত পুনরায় নফল হিসাবে আদায় করবে।
عَنِ الزُّهْرِيِّ، قَالَ: كَانَ مُحَمَّدُ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ يُحَدِّثُ أَنَّهُ بَلَغَ مُعَاوِيَةَ وَهُوَ عِنْدَهُ فِي وَفْدٍ مِنْ قُرَيْشٍ: أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ العَاصِ يُحَدِّثُ أَنَّهُ سَيَكُونُ مَلِكٌ مِنْ قَحْطَانَ، فَغَضِبَ مُعَاوِيَةُ، فَقَامَ فَأَثْنَى عَلَى اللَّهِ بِمَا هُوَ أَهْلُهُ، ثُمَّ قَالَ: أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ رِجَالًا مِنْكُمْ يَتَحَدَّثُونَ أَحَادِيثَ لَيْسَتْ فِي كِتَابِ اللَّهِ، وَلاَ تُؤْثَرُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأُولَئِكَ جُهَّالُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَالأَمَانِيَّ الَّتِي تُضِلُّ أَهْلَهَا، فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ «إِنَّ هَذَا الأَمْرَ فِي قُرَيْشٍ لاَ يُعَادِيهِمْ أَحَدٌ، إِلَّا كَبَّهُ اللَّهُ عَلَى وَجْهِهِ، مَا أَقَامُوا الدِّينَ».
মুহাম্মদ ইবন জুবায়ের ইবন মুত্'ঈম (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট কুরাইশ প্রতিনিধিদের সহিত তার উপস্থিতিতে সংবাদ পৌছলো যে, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেন, অচিরেই কাহতান বংশীয় একজন বাদশাহর আবির্ভাব ঘটবে। ইহা শুনে মু'আবীয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্রোধান্বিত হয়ে খুত্বা দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য হামদ ও সানার পর তিনি বলেন, আমি জানতে পেরেছি, তোমাদের মধ্য হতে কিছু সংখ্যক লোক এমন সব কথাবার্তা বলতে শুরু করেছ যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়নি। এরাই মূর্খ, এদের থেকে সাবধান থাক এবং এরূপ কাল্পনিক ধারনা হতে সতর্ক থাক যা-এর পোষণকারীকে বিপথগামী করে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, যতদিন তারা দীন কায়েমে নিয়োজিত থাকবে ততদিন খিলাফত ও শাসন ক্ষমতা কুরাইশদের হাতেই থাকবে। এ বিষয়ে যে-ই তাদের সহিত শত্রুতা করবে আল্লাহ তাকে অধঃমুখে নিক্ষেপ করবেন (অর্থাৎ লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবেন)।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মানুষ অজ্ঞ লোকদেরকে রাজা বাদশাহ বানাবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ العَاصِ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ اللَّهَ لاَ يَقْبِضُ العِلْمَ انْتِزَاعًا يَنْتَزِعُهُ مِنَ العِبَادِ، وَلَكِنْ يَقْبِضُ العِلْمَ بِقَبْضِ العُلَمَاءِ، حَتَّى إِذَا لَمْ يُبْقِ عَالِمًا اتَّخَذَ النَّاسُ رُءُوسًا جُهَّالًا، فَسُئِلُوا فَأَفْتَوْا بِغَيْرِ عِلْمٍ، فَضَلُّوا وَأَضَلُّوا».
আবদুল্লাহ্ ইবন ‘আমর ইবনুল ‘আস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার অন্তর থেকে ইলম বের করে উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলিমদের উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নেবেন। যখন কোনো আলিম বাকী থাকবে না তখন লোকেরা জাহিলদেরই নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে, তারা না জেনেই ফতোয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও গোমরাহ হবে, আর অপরকেও গোমরাহ করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي مَجْلِسٍ يُحَدِّثُ القَوْمَ، جَاءَهُ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ: مَتَى السَّاعَةُ؟ فَمَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحَدِّثُ، فَقَالَ بَعْضُ القَوْمِ: سَمِعَ مَا قَالَ فَكَرِهَ مَا قَالَ. وَقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ لَمْ يَسْمَعْ، حَتَّى إِذَا قَضَى حَدِيثَهُ قَالَ: «أَيْنَ - أُرَاهُ - السَّائِلُ عَنِ السَّاعَةِ» قَالَ: هَا أَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَإِذَا ضُيِّعَتِ الأَمَانَةُ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ»، قَالَ: كَيْفَ إِضَاعَتُهَا؟ قَالَ: «إِذَا وُسِّدَ الأَمْرُ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهِ فَانْتَظِرِ السَّاعَةَ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে লোকদের সামনে কিছু আলোচনা করছিলেন। ইতিমধ্যে তাঁর কাছে একজন বেদু্ঈন এসে প্রশ্ন করলেন, ‘কিয়ামত কবে?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর আলোচনায় রত রইলেন। এতে কেউ কেউ বললেন, লোকটি য বলেছে তিনি তা শুনেছেন কিন্তু তার কথা পছন্দ করেন নি। আর কেউ কেউ বললেন বরং তিনি শুনতেই পান নি। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলোচনা শেষ করে বললেন, ‘কিয়ামত সম্পর্কে প্রশ্নকারী লোকটি কোথয়?’ সে বলল, ‘এই যে আমি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্!’ তিনি বললেন, ‘যখন আমানত নষ্ট করা হয় তখন কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।’ সে বলল, ‘কিভাবে আমানত নষ্ট করা হয়?’ তিনি বললেন, ‘যখন কোনো কাজের দায়িত্ব অনুপযুক্ত লোকের প্রতি ন্যস্ত হয়, তখন তুমি কিয়ামতের প্রতীক্ষা করবে।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মহামারী মদীনায় প্রবেশ করতে পারবে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ يَدْخُلُ المَدِينَةَ المَسِيحُ، وَلاَ الطَّاعُونُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মদীনা নগরীতে প্রবেশ করতে পারবে না মাসীহ দাজ্জাল, আর না মহামারী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «افْتَرَقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَتَفَرَّقَتِ النَّصَارَى عَلَى إِحْدَى أَوْ ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً، وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়য়াহূদীরা একাত্তর বা বাহাত্তর ফিরকায় (দলে) বিভক্ত হয়েছে; নাসারারাও একাত্তর বা বাহাত্তর দলে বিভক্ত, আর আমার উম্মাত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে।
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، أَنَّهُ قَامَ فِينَا فَقَالَ: أَلَا إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ فِينَا فَقَالَ: " أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ «زَادَ ابْنُ يَحْيَى، وَعَمْرٌو فِي حَدِيثَيْهِمَا» وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ تَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الْأَهْوَاءُ، كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ لِصَاحِبِهِ " وَقَالَ عَمْرٌو: «الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لَا يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلَا مَفْصِلٌ إِلَّا دَخَلَهُ».
মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বলেন, জেনে রাখ! তোমাদের আগের আহলে-কিতাব (ইয়াহূদ ও নাসারা)গণ বাহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে, আর এ মিল্লাতের লোকগণ অদূর ভবিষ্যতে তিয়াত্তর ফিরকায় বিভক্ত হবে। এক ফিরকা হবে জান্নাতী; আর তারা ঐ জামাআতভূক্ত, যারা আল্লাহর কিতাব এবং তাঁর রাসূলের সুন্নাতের অনুসারী হবে। রাবী ইবন ইয়াহ্ইয়া এবং আমর (রহ.) তাদের হাদীসে এরূপ অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে অদূর ভবিষ্যতে এমন একদল লোক সৃষ্টি হবে, যাদের মাঝে গুমরাহী এভাবে বিস্তার লাভ করবে, যেমন ক্ষিপ্ত কুকুরের কাঁমড়ানোর ফলে সৃষ্ট রোগ (যা রোগীকে পাগল বানিয়ে দেয়)। রাবী আমার (রহ.) বলেন।, ক্ষিপ্ত কুকুরের দংশন জনিত রোগ - এমন একটা মারাত্নক ব্যাধি যার বিষাক্ত প্রভাব থেকে রোগীর দেহের রগ ও জোড় কিছুই রক্ষা পায় না।
حَدَّثَنِي عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَمْرٍو السُّلَمِيُّ، وَحُجْرُ بْنُ حُجْرٍ، قَالَا: أَتَيْنَا الْعِرْبَاضَ بْنَ سَارِيَةَ، وَهُوَ مِمَّنْ نَزَلَ فِيهِ {وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ} [التوبة: 92] فَسَلَّمْنَا، وَقُلْنَا: أَتَيْنَاكَ زَائِرِينَ وَعَائِدِينَ وَمُقْتَبِسِينَ، فَقَالَ الْعِرْبَاضُ: صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَيْنَا فَوَعَظَنَا مَوْعِظَةً بَلِيغَةً ذَرَفَتْ مِنْهَا الْعُيُونُ وَوَجِلَتْ مِنْهَا الْقُلُوبُ، فَقَالَ قَائِلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ كَأَنَّ هَذِهِ مَوْعِظَةُ مُوَدِّعٍ، فَمَاذَا تَعْهَدُ إِلَيْنَا؟ فَقَالَ «أُوصِيكُمْ بِتَقْوَى اللَّهِ وَالسَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، وَإِنْ عَبْدًا حَبَشِيًّا، فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ».
হাজার ইবন হাজার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা ইরবাদ ইবন সারিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গমন করি, যার শানে এ আয়াত নাযিল হয়, “তাদের জন্য কোনো অসুবিধা নেই, যারা আপনার নিকট এ জন্য আসে যে, আপনি তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করবেন। আপনি বলেন, আমি তো তোমাদের জন্য কোনো বাহন পাই না”। [সূরা তাওবা: ৯২] রাবী বলেন, আমরা তাঁর কাছে উপস্থিত হয়ে তাঁকে সালাম করি এবং বলি, আমরা আপনাকে দেখার জন্য, আপনার খিদমতের জন্য এবং আপনার কাছ থেকে কিছু সংগ্রহের জন্য এসেছি। তখন তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সঙ্গে সালাত আদায়ের পর, আমাদের দিকে ফিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন, যাতে আমাদের চোখ অশ্রু ভারাক্রান্ত হয় এবং অন্তর ভীত-সন্ত্রস্থ হয়। আমাদের মধ্যে একজন বলেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ! মনে হচ্ছে এ আপনার বিদায়ী ভাষণ, কাজেই আপনি আমাদের আরো কিছু অছীয়ত করুন। তখন তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি তোমাদের তাকওয়া অবলম্বনের জন্য বলছি এবং শোনা ও মানার জন্যও, যদিও তোমাদের আমীর হাবশী গোলাম হয়। কেননা, তোমাদের মাঝে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে, তারা বহু মতভেদ দেখতে পাবে। এমতাবস্থায় তোমাদের উচিত হবে আমার ও আমার খুলাফায়ে-রাশেদার সুন্নাতের অনুসরণ করা, যারা সত্য ও ন্যায়ের অনুসারী। তোমরা তাদের দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করবে। তোমরা বিদ'আতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হতে দূরে থাকবে। কেননা, প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ'আত এবং প্রত্যেক বিদ'আতই গুমরাহী।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
ইলম উঠে যাবে এবং যিনা ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يُرْفَعَ العِلْمُ وَيَثْبُتَ الجَهْلُ، وَيُشْرَبَ الخَمْرُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম লোপ পাবে, অজ্ঞাতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে এবং ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: لَأُحَدِّثَنَّكُمْ حَدِيثًا لاَ يُحَدِّثُكُمْ أَحَدٌ بَعْدِي، سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ: أَنْ يَقِلَّ العِلْمُ، وَيَظْهَرَ الجَهْلُ، وَيَظْهَرَ الزِّنَا، وَتَكْثُرَ النِّسَاءُ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً القَيِّمُ الوَاحِدُ ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তোমাদের এমন একটি হাদীস বর্ণনা করব যা আমার পর তোমাদের কাছে আর কেউ বর্ণনা করবেন না। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম কমে যাবে, অজ্ঞতার প্রসার ঘটবে, ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে, স্ত্রীলোকের সংখ্যা বেড়ে যাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে, এমনকি প্রতি পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকের জন্য মাত্র একজন পুরুষ হবে তত্ত্বাবধায়ক।
عَنْ سَالِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُقْبَضُ العِلْمُ، وَيَظْهَرُ الجَهْلُ وَالفِتَنُ، وَيَكْثُرُ الهَرْجُ»، قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَمَا الهَرْجُ؟ فَقَالَ: «هَكَذَا بِيَدِهِ فَحَرَّفَهَا، كَأَنَّهُ يُرِيدُ القَتْلَ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, (শেষ যামানায়) ‘ইল্ম তুলে নেওয়া হবে, অজ্ঞতা ও ফিতনার প্রসার ঘটবে এবং ‘হারাজ’ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! ‘হারাজ’ কি? তিনি হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন, ‘এ রকম।’ যেন তিনি এর দ্বারা ‘হত্যা’ বুঝিয়েছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তুর্কীদের সাথে মুসলিমদের যুদ্ধ হবে।
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ تَغْلِبَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوا قَوْمًا يَنْتَعِلُونَ نِعَالَ الشَّعَرِ، وَإِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ تُقَاتِلُوا قَوْمًا عِرَاضَ الوُجُوهِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ».
আম্র ইবন তাগলিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন কিয়ামতের আলামতসমূহের একটি এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যারা পশমের জুতা পরিধান করবে। কিয়ামতের আর একটি আলামত এই যে, তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মূখ হবে চওড়া, যেন তাদের মুখমন্ডল পিটানো চামড়ার ঢাল।
قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا التُّرْكَ، صِغَارَ الأَعْيُنِ، حُمْرَ الوُجُوهِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, তোমরা এমন তুর্ক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের চোখ ছোট, চেহারা লাল, নাক চেপ্টা এবং মুখমন্ডল পেটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। আর ততদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে না, যতদিন না তোমরা এমন এক জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের জুতা হবে পশমের।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا نِعَالُهُمُ الشَّعَرُ، وَلاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تُقَاتِلُوا قَوْمًا كَأَنَّ وُجُوهَهُمُ المَجَانُّ المُطْرَقَةُ»، قَالَ سُفْيَانُ وَزَادَ فِيهِ أَبُو الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رِوَايَةً: «صِغَارَ الأَعْيُنِ، ذُلْفَ الأُنُوفِ، كَأَنَّ وُجُوهَهُمْ، المَجَانُّ المُطْرَقَةُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যাদের জুতা হবে পশমের। আর কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষন না তোমরা এমন জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যাদের মুখমন্ডল হবে পিটানো চামড়ার ঢালের ন্যায়। সুফিয়ান (রহ.) বলেন, আ‘রাজ সূত্রে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে আবুযযিনাদ এই রেওয়ায়তে অতিরিক্ত বর্ণনা করেন; তাদের চোখ হবে ছোট, নাক হবে চেপ্টা, তাদের চেহারা যেন পিটানো ঢালের ন্যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মত দুনিয়ার ব্যাপারে অতিউৎসাহী হবে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ أَكْثَرَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ مَا يُخْرِجُ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ بَرَكَاتِ الأَرْضِ» قِيلَ: وَمَا بَرَكَاتُ الأَرْضِ؟ قَالَ: «زَهْرَةُ الدُّنْيَا» فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: هَلْ يَأْتِي الخَيْرُ بِالشَّرِّ؟ فَصَمَتَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى ظَنَنَّا أَنَّهُ يُنْزَلُ عَلَيْهِ، ثُمَّ جَعَلَ يَمْسَحُ عَنْ جَبِينِهِ، فَقَالَ: «أَيْنَ السَّائِلُ؟» قَالَ: أَنَا - قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: لَقَدْ حَمِدْنَاهُ حِينَ طَلَعَ ذَلِكَ - قَالَ: «لاَ يَأْتِي الخَيْرُ إِلَّا بِالخَيْرِ، إِنَّ هَذَا المَالَ خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ، وَإِنَّ كُلَّ مَا أَنْبَتَ الرَّبِيعُ يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ، إِلَّا آكِلَةَ الخَضِرَةِ، أَكَلَتْ حَتَّى إِذَا امْتَدَّتْ خَاصِرَتَاهَا، اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ، فَاجْتَرَّتْ وَثَلَطَتْ وَبَالَتْ، ثُمَّ عَادَتْ فَأَكَلَتْ. وَإِنَّ هَذَا المَالَ حُلْوَةٌ، مَنْ أَخَذَهُ بِحَقِّهِ، وَوَضَعَهُ فِي حَقِّهِ، فَنِعْمَ المَعُونَةُ هُوَ، وَمَنْ أَخَذَهُ بِغَيْرِ حَقِّهِ كَانَ كَالَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ».
আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্যে যমীনের বরকতসমূহ প্রকাশিত করে দেবেন। আমি তোমাদের জন্যে এ ব্যাপারেই সর্বাধিক আশংকা করছি। জিজ্ঞাসা করা হলো, যমীনের বরকতসমূহ কি? তিনি বললেন, দুনিয়ার ঝাঁকজমক। তখন এক ব্যাক্তি তার কাছে বললেন, ভালো কি মন্দ নিয়ে আসবে? তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষন নীরব থাকলেন, যদ্দরুন আমরা ধারণা করলাম যে, এখন তার উপর অহী নাযিল হচ্ছে। এরপর তিনি তার কপাল থেকে ঘাম মুছে জিজ্ঞাসা করলেন, প্রশ্নকারী কোথায়? সে বলল, আমি, আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যখন এটি প্রকাশ পেল, তখন আমরা প্রশ্নকারীর প্রশংসা করলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ভালো একমাত্র ভালোকেই বয়ে আনে। নিশ্চয়ই এ ধনেদৈালত সবুজ শ্যামল সুমিষ্ট। অবশ্য বসন্ত যে সবজি উৎপাদন করে, তা ভক্ষনকারী পশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয় অথবা নিকটে করে দেয়, তবে প্রানী পেট ভরে খেয়ে সূর্য মুখী হয়ে জাবর কাটে, মল-মূত্র ত্যাগ করে এবং পুনঃখায় (এর অবস্থা ভিন্ন)। এ পৃথিবীর ধনদৈালত তদ্রুপ সুমিষ্ট, যে ব্যক্তি তা সৎভাবে গ্রহণ করবে এবং সৎকাজে ব্যায় করবে, তা তার খুবই সাহায্যকারী হবে। আর যে তা অন্যায়ভাবে গ্রহন করবে, তার অবস্থা হবে ঔ ব্যাক্তির মত যে খেতে থাকে আর পরিতৃপ্ত হয় না।
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ يَوْمًا، فَصَلَّى عَلَى أَهْلِ أُحُدٍ صَلاَتَهُ عَلَى المَيِّتِ، ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى المِنْبَرِ، فَقَالَ: «إِنِّي فَرَطُكُمْ، وَأَنَا شَهِيدٌ عَلَيْكُمْ، وَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَنْظُرُ إِلَى حَوْضِي الآنَ، وَإِنِّي قَدْ أُعْطِيتُ مَفَاتِيحَ خَزَائِنِ الأَرْضِ - أَوْ مَفَاتِيحَ الأَرْضِ - وَإِنِّي وَاللَّهِ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تُشْرِكُوا بَعْدِي، وَلَكِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ أَنْ تَنَافَسُوا فِيهَا».
‘উকবা ইবন আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন এবং উহুদের শহীদানের উপর সালাত আদায় করলেন, যেমন তিনি মুর্দার উপর সালাত আদায় করে থাকেন। তারপর মিম্বরে আরোহন করে বললেনঃ আমি তোমাদের অগ্রণী, আমি তোমাদের সাক্ষী হব। আল্লাহর কসম! নিশ্চয়ই আমি আমার —হাওয্' কে এখন দেখছি। আমাকে তো জমিনের ধনাগারের চাবিসমূহ অথবা জমিনের চাবিসমূহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর এ আশংকা করছি যে, তোমরা দুনিয়ার ধন সম্পদে আসক্ত হয়ে যাবে।
عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ، قَالَ ابْنُ شِهَابٍ: حَدَّثَنِي عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ، أَنَّ المِسْوَرَ بْنَ مَخْرَمَةَ، أَخْبَرَهُ: أَنَّ عَمْرَو بْنَ عَوْفٍ، وَهُوَ حَلِيفٌ لِبَنِي عَامِرِ بْنِ لُؤَيٍّ، كَانَ شَهِدَ بَدْرًا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَخْبَرَهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَ أَبَا عُبَيْدَةَ بْنَ الجَرَّاحِ إِلَى البَحْرَيْنِ يَأْتِي بِجِزْيَتِهَا، وَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ صَالَحَ أَهْلَ البَحْرَيْنِ، وَأَمَّرَ عَلَيْهِمُ العَلاَءَ بْنَ الحَضْرَمِيِّ، فَقَدِمَ أَبُو عُبَيْدَةَ بِمَالٍ مِنَ البَحْرَيْنِ، فَسَمِعَتِ الأَنْصَارُ بِقُدُومِهِ، فَوَافَتْهُ صَلاَةَ الصُّبْحِ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا انْصَرَفَ تَعَرَّضُوا لَهُ، فَتَبَسَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَآهُمْ، وَقَالَ: «أَظُنُّكُمْ سَمِعْتُمْ بِقُدُومِ أَبِي عُبَيْدَةَ، وَأَنَّهُ جَاءَ بِشَيْءٍ» قَالُوا: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «فَأَبْشِرُوا وَأَمِّلُوا مَا يَسُرُّكُمْ، فَوَاللَّهِ مَا الفَقْرَ أَخْشَى عَلَيْكُمْ، وَلَكِنْ أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَنْ تُبْسَطَ عَلَيْكُمُ الدُّنْيَا، كَمَا بُسِطَتْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، فَتَنَافَسُوهَا كَمَا تَنَافَسُوهَا، وَتُلْهِيَكُمْ كَمَا أَلْهَتْهُمْ».
আমর ইবন আওফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, তিনি বনী আমর ইবন লুওয়াই- এর সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিলেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বদরের যুদ্ধে ও শরীক ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উবায়দা ইবন জাররাহ্ কে জিজিয়া আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহরাইন বাসীদের সঙ্গে সন্ধি করেছিলেন এবং তাদের উপর আলা ইবন হাযরামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে আমীর নিযুক্ত করেছিলেন। আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বাহরাইন থেকে মালামাল নিয়ে আসেন, আনসারগণ তার আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের সালাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে শরীক হন। সালাত শেষে তারা তার সামনে এলেন। তিনি তাঁদের দেখে হেসে বললেন, আমি মনে করি তোমরা আবূ উবায়দা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আগমনের এবং তিনি যে মাল নিয়ে এসেছেন সে সুসংবাদ শুনেছ। তাঁরা বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তিনি বললেন, তোমরা এ সুসংবাদ গ্রহন করো এবং তোমরা আশা রেখো, যা তোমাদেরকে খুশি করবে, তবে, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদের উপর দরিদ্রতার আশংকা করছি না বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের উপর যেমন দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হয়েছিল, তেমনি তোমাদের উপরও দুনিয়া প্রশস্ত করে দেওয়া হবে। আর তোমরা যা নয় তা তোমাদের আখিরাত বিমুখ করে ফেলবে, যেমন তাদের জন্যে আখিরাত বিমুখ করেছিল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
কিছু লোক কুরাআন বেচে খাবে।
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ نَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَفِينَا الْأَعْرَابِيُّ وَالْأَعْجَمِيُّ، فَقَالَ: «اقْرَءُوا فَكُلٌّ حَسَنٌ وَسَيَجِيءُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَامُ الْقِدْحُ يَتَعَجَّلُونَهُ وَلَا يَتَأَجَّلُونَهُ».
জাবের ইবন আব্দুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা যখন আমরা কিরা‘আত পাঠে মগ্ন ছিলাম, তখন হঠাৎ সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগমন করেন এবং এ সময় আমাদের মধ্যে আরব বেদুইন ও অনারব লোকেরা ছিল। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা পাঠ কর, সকলেই উত্তম। কেননা অদুর ভবিষ্যতে এমন সম্প্রদায় নির্গত হবে, যারা কুরআনকে তীরের মত ঠিক করবে (অর্থাৎ তাজবীদ নিয়ে অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করবে), তা দ্রুত গতিতে পাঠ করবে, ধীরস্হিরভাবে পড়বে না।
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَنَحْنُ نَقْتَرِئُ، فَقَالَ: «الْحَمْدُ لِلَّهِ كِتَابُ اللَّهِ وَاحِدٌ، وَفِيكُمُ الْأَحْمَرُ وَفِيكُمُ الْأَبْيَضُ وَفِيكُمْا لْأَسْوَدُ، اقْرَءُوهُ قَبْلَ أَنْ يَقْرَأَهُ أَقْوَامٌ يُقِيمُونَهُ كَمَا يُقَوَّمُ السَّهْمُ يُتَعَجَّلُ أَجْرُهُ وَلَا يُتَأَجَّلُهُ».
সাহল ইবন সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক দিন আমরা কিরা‘আত পাঠ করাকালীন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্হিত হয়ে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ! আলল্লাহর কিতাব- একই এবং তোমাদের কেউ লাল, কেউ সাদা এবং কেউ কাল রঙের। তোমরা ঐ সম্প্রদায়ের আবির্ভাবের পূর্বে কিরাআত পাঠ কর যারা কুরআনকে তীরের ন্যায় দৃঢ় করবে। তারা কুরআন পাঠের (বিনিময় দুনিয়াতে পেতে) তাড়াহুড়া করবে এবং (আখিরাতের) অপেক্ষা করবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
শাসকগোষ্ঠী ও আলেম ও ইসলামী দলের মাঝে পরস্পর শত্রুতা থাকবে।
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، أَخْبَرَنِي عَامِرُ بْنُ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقْبَلَ ذَاتَ يَوْمٍ مِنَ الْعَالِيَةِ، حَتَّى إِذَا مَرَّ بِمَسْجِدِ بَنِي مُعَاوِيَةَ دَخَلَ فَرَكَعَ فِيهِ رَكْعَتَيْنِ، وَصَلَّيْنَا مَعَهُ، وَدَعَا رَبَّهُ طَوِيلًا، ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَيْنَا، فَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " سَأَلْتُ رَبِّي ثَلَاثًا، فَأَعْطَانِي ثِنْتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً، سَأَلْتُ رَبِّي: أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالسَّنَةِ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالْغَرَقِ فَأَعْطَانِيهَا، وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يَجْعَلَ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَمَنَعَنِيهَا ".
‘আমির ইবন সা‘দ তাঁর পিতা থেকে সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আলিয়া হতে এসে বনূ মু‘আবিয়ায় অবস্হিত মসজিদের নিকট গেলেন। অতঃপর তিনি উক্ত মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকআত সালাত আদায় করলেন। আমরাও তার সাথে সালতি আদায় করলাম। এ সময় তিনি তার প্রতিপালকের নিকট দীর্ঘ দুআ করলেন। এবং দো‘আ শেষে আমাদের নিকট ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিস কামনা করেছি। তন্মধ্যে তিনি আমাকে দুটি প্রদান করেছেন এবং একটি প্রদান করেননি। আমি আমার প্রতিপালকের নিকট কামনা করেছিলাম, যেন তিনি আমার উম্মাতকে দুর্ভিক্ষের দারা ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দো‘আ কবুল করেছেন তাঁর নিকট এও প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মাতকে পানিতে ড়ুবিয়ে ধ্বংস না করেন। তিনি আমার এ দু‘আও কবুল করেছেন। আমি তাঁর নিকট এ মর্মেও দো‘আ করেছিলাম যে, যেন মুসলিম পরস্পর একে অন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়। তিনি আমার এ দো‘আ কবুল করেননি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মত ইসলামের শত্রুর অনুসরণ করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَأْخُذَ أُمَّتِي بِأَخْذِ القُرُونِ قَبْلَهَا، شِبْرًا بِشِبْرٍ وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ»، فَقِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، كَفَارِسَ وَالرُّومِ؟ فَقَالَ: «وَمَنِ النَّاسُ إِلَّا أُولَئِكَ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, কিয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না আমার উম্মাত পূর্বযুগীয়দের আচার-অভ্যাসকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে গ্রহণ না করবে। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! পারস্য ও রোমকদের মত কি? তিনি বললেন: লোকদের মধ্যে আর কারা? এরাই তো!
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لَتَتْبَعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، شِبْرًا شِبْرًا وَذِرَاعًا بِذِرَاعٍ، حَتَّى لَوْ دَخَلُوا جُحْرَ ضَبٍّ تَبِعْتُمُوهُمْ»، قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، اليَهُودُ وَالنَّصَارَى؟ قَالَ: «فَمَنْ».
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন: নিশ্চয় তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের আচার-আচরণকে বিঘতে বিঘতে, হাতে হাতে অনুকরণ করবে। এমনকি তারা যদি গুঁইসাপের গর্তেও প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও এতে তাদের অনুকরণ করবে। আমরা বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! এরা কি ইহুদী ও নাসারা? তিনি বললেন: আর কারা?
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মতের কিছু লোক হালাল হারাম উপার্জনের ক্ষেত্রে পরোয়া করবে না।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «يَأْتِي عَلَى النَّاسِ زَمَانٌ، لاَ يُبَالِي المَرْءُ مَا أَخَذَ مِنْهُ، أَمِنَ الحَلاَلِ أَمْ مِنَ الحَرَامِ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, এমন এক যুগ আসবে, যখন মানুষ পরোয়া করবেনা যে, সে কোথা থেকে অর্জন করল, হালাল থেকে না হারাম থেকে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
পথভ্রষ্ট আহলে কুরআনীদের সম্পর্কে সংবাদ।
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِي كَرِبَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ: «أَلَا إِنِّي أُوتِيتُ الْكِتَابَ، وَمِثْلَهُ مَعَهُ أَلَا يُوشِكُ رَجُلٌ شَبْعَانُ عَلَى أَرِيكَتِهِ يَقُولُ عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْقُرْآنِ فَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَلَالٍ فَأَحِلُّوهُ، وَمَا وَجَدْتُمْ فِيهِ مِنْ حَرَامٍ فَحَرِّمُوهُ، أَلَا لَا يَحِلُّ لَكُمْ لَحْمُ الْحِمَارِ الْأَهْلِيِّ، وَلَا كُلُّ ذِي نَابٍ مِنَ السَّبُعِ، وَلَا لُقَطَةُ مُعَاهِدٍ، إِلَّا أَنْ يَسْتَغْنِيَ عَنْهَا صَاحِبُهَا، وَمَنْ نَزَلَ بِقَوْمٍ فَعَلَيْهِمْ أَنْ يَقْرُوهُ فَإِنْ لَمْ يَقْرُوهُ فَلَهُ أَنْ يُعْقِبَهُمْ بِمِثْلِ قِرَاهُ».
মিকদাম ইবন মা'দীকরাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখ! আমাকে কুরআন প্রদান করা হয়েছে এবং এর সাথে অনুরূপ (হাদীস) দেওয়া হয়েছ। অদূর ভবিষ্যতে একজন অভাবহীন তৃপ্ত ব্যক্তি তার খাটের উপর অবস্থান করে বলবে, তোমরা এ কুরআনকে গ্রহণ কর এবং এতে যা হালাল বলা হয়েছে, তা হালাল হিসাবে গ্রহণ কর; আর যা হারাম বলা হয়েছে তা হারাম হিসাবে গ্রহণ কর। জেনে রাখ! গৃহ-পালিত গাধার গোশত তোমাদের জন্য হালাল নয়, কোনো হিংস্র জন্তুর গোশত ও হালাল নয়, কোনো যিম্মীর পরিত্যক্ত মাল হালাল নয়, তবে যদি তার মালিক তা থেকে বে-পরওয়া হয়, সে আলাদা ব্যাপার। আর যদি কেউ মেহমান হিসারে কোনো কাওমের কাছে যায়, তবে তাদের উচিত তার মেহমানদারী করা। তারা যদি সে ব্যক্তি মেহমানদারী না করে, তবে তাদের নিকট থেকে মেহমানের হক গ্রহণ করার অধিকার তার থাকবে।
عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي رَافِعٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ مُتَّكِئًا عَلَى أَرِيكَتِهِ يَأْتِيهِ الْأَمْرُ مِنْ أَمْرِي مِمَّا أَمَرْتُ بِهِ أَوْ نَهَيْتُ عَنْهُ فَيَقُولُ لَا نَدْرِي مَا وَجَدْنَا فِي كِتَابِ اللَّهِ اتَّبَعْنَاهُ».
আবূ রাফি (রহ.) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে কাউকে এরূপ পাব না, যে তার খাটের উপর বালিশে হেলান দিয়ে থাকে। যদি তার কাছে আমার কোন আদেশ বা নিষেধ আসে, তখন সে বলেঃ আমি তো এ জানি না। বরং আমি আল্লাহ্র কিতাবে যে নির্দেশ পেয়েছি, তার অনুসরণ করি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
নিঃস্ব দরিদ্র লোকেরা বিরাট বিরাট অট্রালিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় গর্বিত হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا بَارِزًا لِلنَّاسِ، فَأَتَاهُ رَجُلٌ، فَقَالَ: يَا رَسُولُ اللهِ، مَا الْإِيمَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكِتَابِهِ، وَلِقَائِهِ، وَرُسُلِهِ، وَتُؤْمِنَ بِالْبَعْثِ الْآخِرِ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِسْلَامُ؟ قَالَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَعْبُدَ اللهَ، وَلَا تُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ الْمَكْتُوبَةَ، وَتُؤَدِّيَ الزَّكَاةَ الْمَفْرُوضَةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، مَا الْإِحْسَانُ؟ قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنَّكَ إِنْ لَا تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: يَا رَسُولَ اللهَ، مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: " مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ، وَلَكِنْ سَأُحَدِّثُكَ عَنْ أَشْرَاطِهَا: إِذَا وَلَدَتِ الْأَمَةُ رَبَّهَا، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا، وَإِذَا كَانَتِ الْعُرَاةُ الْحُفَاةُ رُءُوسَ النَّاسِ، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا، وَإِذَا تَطَاوَلَ رِعَاءُ الْبَهْمِ فِي الْبُنْيَانِ، فَذَاكَ مِنْ أَشْرَاطِهَا فِي خَمْسٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ تَلَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: {إِنَّ اللهِ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ} [لقمان: 34] " قَالَ: ثُمَّ أَدْبَرَ الرَّجُلُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «رُدُّوا عَلَيَّ الرَّجُلَ»، فَأَخَذُوا لِيَرُدُّوهُ، فَلَمْ يَرَوْا شَيْئًا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا جِبْرِيلُ جَاءَ لِيُعَلِّمَ النَّاسَ دِينَهُمْ».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রমাদানের সাওম পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যক্তি প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে, দাসী তার মুনিবকে জন্ম দেবে, এটা কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, বধির ও মূকেরা দেশের শাসক হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট অট্রালিকার মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানে না। তারপর (তিনি কুরআনুল করীম-এর আয়াত) তিলাওয়াত করলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভ জানে না কেউ, কি কামাই করবে সে আগামীকাল। আর জানে না কেউ, কোনো মাটিতে (দেশে) সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। [সূরা লুকমান: ৩৪] তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদের বললেন, তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইনি জিবরীল আলাইহিস সালাম তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ কর।
عَنْ يَحْيَى بْنِ يَعْمَرَ، قَالَ: كَانَ أَوَّلَ مَنْ قَالَ فِي الْقَدَرِ بِالْبَصْرَةِ مَعْبَدٌ الْجُهَنِيُّ، فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَحُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْحِمْيَرِيُّ حَاجَّيْنِ - أَوْ مُعْتَمِرَيْنِ - فَقُلْنَا: لَوْ لَقِينَا أَحَدًا مَنْ أَصْحَابِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلْنَاهُ عَمَّا يَقُولُ هَؤُلَاءِ فِي الْقَدَرِ، فَوُفِّقَ لَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ دَاخِلًا الْمَسْجِدَ، فَاكْتَنَفْتُهُ أَنَا وَصَاحِبِي أَحَدُنَا عَنْ يَمِينِهِ، وَالْآخَرُ عَنْ شِمَالِهِ، فَظَنَنْتُ أَنَّ صَاحِبِي سَيَكِلُ الْكَلَامَ إِلَيَّ، فَقُلْتُ: أَبَا عَبْدِ الرَّحْمَنِ إِنَّهُ قَدْ ظَهَرَ قِبَلَنَا نَاسٌ يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ، وَيَتَقَفَّرُونَ الْعِلْمَ، وَذَكَرَ مِنْ شَأْنِهِمْ، وَأَنَّهُمْ يَزْعُمُونَ أَنْ لَا قَدَرَ، وَأَنَّ الْأَمْرَ أُنُفٌ، قَالَ: «فَإِذَا لَقِيتَ أُولَئِكَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنِّي بَرِيءٌ مِنْهُمْ، وَأَنَّهُمْ بُرَآءُ مِنِّي»، وَالَّذِي يَحْلِفُ بِهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ «لَوْ أَنَّ لِأَحَدِهِمْ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، فَأَنْفَقَهُ مَا قَبِلَ اللهُ مِنْهُ حَتَّى يُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ» ثُمَّ قَالَ: حَدَّثَنِي أَبِي عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ قَالَ: بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ، إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ، شَدِيدُ سَوَادِ الشَّعَرِ، لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ، وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ، حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ، وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ، وَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِسْلَامِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ، وَيُصَدِّقُهُ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ، قَالَ: «أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ، وَمَلَائِكَتِهِ، وَكُتُبِهِ، وَرُسُلِهِ، وَالْيَوْمِ الْآخِرِ، وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ»، قَالَ: صَدَقْتَ، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ الْإِحْسَانِ، قَالَ: «أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ»، قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنِ السَّاعَةِ، قَالَ: «مَا الْمَسْئُولُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ» قَالَ: فَأَخْبِرْنِي عَنْ أَمَارَتِهَا، قَالَ: «أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا، وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُونَ فِي الْبُنْيَانِ»، قَالَ: ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا، ثُمَّ قَالَ لِي: «يَا عُمَرُ أَتَدْرِي مَنِ السَّائِلُ؟» قُلْتُ: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «فَإِنَّهُ جِبْرِيلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِينَكُمْ».
ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি (ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার) বলেন, সর্বপ্রথম ‘কাদর’ সম্পর্কে বসরা শহরে মাবাদ আল জুহানী কথা তোলেন। আমি (ইয়াহইয়া ইবন ইয়া’মার) এবং হুমায়দ ইবন আব্দুর রহমান আল হিমায়রী হজ্জ অথবা উমরা আদায়ের জন্য মক্কায় আসলাম। আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে, যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সাহাবীর সাক্ষাৎ পাই তাহলে তাঁর কাছে এসব লোক তাকদীর সস্পর্কে যা বলে বেড়াচ্ছে, সে বিষয়ে জিজ্ঞেস করতাম। সৌভাগ্যক্রমে মসজিদে নববীতে আমরা আবদুল্লাহ ইবন উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দেখা পাই। আমরা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসলাম। আমার মনে হলো, আমার সাথী চান যে, আমিই কথা বলি। আমি আরয করলাম, হে আবু আবদুর রহমান! আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কুনিয়াত ছিল আবু আবদুর রহমান। আমার দেশে এমন কতিপয় লোকের আবির্ভাব হয়েছে যারা কুরআন পাঠ করে এবং ইলমে দীন সম্পর্কে গবেষণা করে। তিনি তাদের অবস্থা সস্পর্কে আরো কিছু উল্লেখ করেন এবং বলেন যে, তারা মনে করে তাকদীর- বলতে কিছু নেই। সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে। আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোনো সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই। আল্লাহর কসম! যদি এদের কেউ উহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে, তাকদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তারপর তিনি বললেন, আমাকে আমার পিতা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাদীস শুনিয়েছেন যে, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমাদের কাছে এসে হাযির হলেন। তাঁর পরিধানের কাপড় ছিল সাদা ধবধবে, মাথার কেশ ছিল কাল কুচকুচে। তাঁর মধ্যে সফরের কোনো চিহ্ন ছিল না। আমরা কেউ তাঁকে চিনি না। তিনি নিজের দুই হাঁটু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর তার দুই হাত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইসলাম হলো, তুমি এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল, সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাদানের সাওম পালন করবে এবং বায়তুল্লাহ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তার কথা শুনে আমরা বিষ্মিত হলাম যে, তিনিই প্রশ্ন করেছেন আর তিনিই-তা সত্যায়িত করছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে ঈমান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঈমান হলো আল্লাহর প্রতি, তার ফেরেশতাদের প্রতি, তার কিতাবসমূহের প্রতি, তার রাসুলগণের প্রতি এবং আখিরাতের প্রতি ঈমান আনবে, আর তাকদিরের ভালমন্দের প্রতি ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন,আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আমাকে কিয়ামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চাইতে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। আগন্তুক বললেন, আমাকে এর আলামত সস্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তা হলো এই যে, দাসী তার প্রভুর জননী হবে; আর নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ দরিদ্র মেষপালকদের বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত দেখতে পাবে। উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন যে, পরে আগন্তুক প্রস্থান করলেন। আমি বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। তারপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, হে উমর! তুমি জান, এই প্রশ্নকারী কে? আমি আরয করলাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই সম্যক জ্ঞাত আছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি জিবরীল আলাইহিস সালাম। তোমাদের তিনি দীন শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
খাওয়ারিজদের আবির্ভাব ঘটবে।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي نُعْمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ: بَعَثَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الْيَمَنِ، بِذَهَبَةٍ فِي أَدِيمٍ مَقْرُوظٍ لَمْ تُحَصَّلْ مِنْ تُرَابِهَا، قَالَ: فَقَسَمَهَا بَيْنَ أَرْبَعَةِ نَفَرٍ: بَيْنَ عُيَيْنَةَ بْنِ حِصْنٍ، وَالْأَقْرَعِ بْنِ حَابِسٍ، وَزَيْدِ الْخَيْلِ، وَالرَّابِعُ إِمَّا عَلْقَمَةُ بْنُ عُلَاثَةَ، وَإِمَّا عَامِرُ بْنُ الطُّفَيْلِ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ أَصْحَابِهِ: كُنَّا نَحْنُ أَحَقَّ بِهَذَا مِنْ هَؤُلَاءِ، قَالَ: فَبَلَغَ ذَلِكَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَلَا تَأْمَنُونِي؟ وَأَنَا أَمِينُ مَنْ فِي السَّمَاءِ، يَأْتِينِي خَبَرُ السَّمَاءِ صَبَاحًا وَمَسَاءً» قَالَ: فَقَامَ رَجُلٌ غَائِرُ الْعَيْنَيْنِ، مُشْرِفُ الْوَجْنَتَيْنِ، نَاشِزُ الْجَبْهَةِ، كَثُّ اللِّحْيَةِ، مَحْلُوقُ الرَّأْسِ، مُشَمَّرُ الْإِزَارِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، اتَّقِ اللهَ، فَقَالَ: «وَيْلَكَ أَوَلَسْتُ أَحَقَّ أَهْلِ الْأَرْضِ أَنْ يَتَّقِيَ اللهَ» قَالَ: ثُمَّ وَلَّى الرَّجُلُ، فَقَالَ خَالِدُ بْنُ الْوَلِيدِ: يَا رَسُولَ اللهِ، أَلَا أَضْرِبُ عُنُقَهُ؟ فَقَالَ: «لَا، لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ يُصَلِّي» قَالَ خَالِدٌ: وَكَمْ مِنْ مُصَلٍّ يَقُولُ بِلِسَانِهِ مَا لَيْسَ فِي قَلْبِهِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنِّي لَمْ أُومَرْ أَنْ أَنْقُبَ عَنْ قُلُوبِ النَّاسِ، وَلَا أَشُقَّ بُطُونَهُمْ» قَالَ: ثُمَّ نَظَرَ إِلَيْهِ وَهُوَ مُقَفٍّ، فَقَالَ: «إِنَّهُ يَخْرُجُ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمٌ يَتْلُونَ كِتَابَ اللهِ، رَطْبًا لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ» قَالَ: أَظُنُّهُ قَالَ: «لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لَأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ثَمُودَ».
আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইয়ামান থেকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দাবাগাত করা চামড়ার থলিতে করে কিছু সোনা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পাঠালেন। তখনো স্বর্নগুলো মাটি থেকে পৃথক করা হয়নি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ গুলো চার ব্যক্তির মাঝে বণ্টন করে দিলেন। উয়ায়না ইবন হিসন, আকরা ইবন হাবিস, যায়িদ জাল-খায়ল, চতুর্থ ব্যক্তি হয় তো আলকামা ইবন উলাসা অথবা আমির ইবন তুফায়ল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তখন সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন বললেন, তাদের থেকে আমরাই এ মালের অধিক হকদার ছিলাম। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌঁছার পর তিনি বললেন, তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না? অথচ যিনি আসমানে আছেন, তাঁর কাছে আমি আমানতদার। আমার কাছে সকাল সন্ধ্যায় আসমানের খবর আসে। রাবী বলেন, তখন কোটরাগত চোখ, ফোলাগাল, উঁচু ললাট, ঘন দাঁড়ি, মুন্ডিত মস্থক এবং লুঙ্গি কাঁচানো এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি আল্লাহকে ভয় করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমার সর্বনাশ হোক। আল্লাহকে ভয় করার ব্যাপারে পৃথিবীতে আমি কি সর্বাধিক যোগ্য নই? রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি ফিরে চলে গেল। এ সময় খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না? তিনি বললেন, না সম্ভবত সে সালাত আদায় করে। খালিদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, অনেক মুসল্লী আছে যারা মুখ দিয়ে এমন কথা বলে যা তাদের অন্তরে নেই। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মানুষের হদয় অনুসন্ধানের এবং পেট বির্দিন্ন করার জন্য আমি আদিষ্ট হইনি। তারপর তিনি লোকটির দিকে তাকালেন, সে ঘাড় ফিরিয়ে চলে যাচ্ছে। তখন তিনি বললেন, তার বংশে এমন লোক জন্মগ্রহণ করবে যারা অনায়াসে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করবে কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দীন থেকে এভাবে বেরিয়ে যাবে যেমন বেরিয়ে যায় তীর তার শিকার ভেদ করে। রাবী বলেন, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যদি আমি তাদের পাই তবে অবশ্যই আমি তাদের সামুদ সম্প্রদায়ের মত হত্যা করব।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، قَالَ: بَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْسِمُ، جَاءَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ ذِي الخُوَيْصِرَةِ التَّمِيمِيُّ، فَقَالَ: اعْدِلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَالَ: «وَيْلَكَ، وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ أَعْدِلْ» قَالَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ: دَعْنِي أَضْرِبْ عُنُقَهُ، قَالَ: " دَعْهُ، فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا، يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ مَعَ صَلاَتِهِ، وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ فِي قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي رِصَافِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ فِي نَضِيِّهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَيْءٌ، قَدْ سَبَقَ الفَرْثَ وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ رَجُلٌ إِحْدَى يَدَيْهِ، أَوْقَالَ: ثَدْيَيْهِ، مِثْلُ ثَدْيِ المَرْأَةِ، أَوْقَالَ: مِثْلُ البَضْعَةِ تَدَرْدَرُ، يَخْرُجُونَ عَلَى حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ " قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: أَشْهَدُ سَمِعْتُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَأَشْهَدُ أَنَّ عَلِيًّا، قَتَلَهُمْ، وَأَنَا مَعَهُ، جِيءَ بِالرَّجُلِ عَلَى النَّعْتِ الَّذِي نَعَتَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَنَزَلَتْ فِيهِ: {وَمِنْهُمْ مَنْ يَلْمِزُكَ فِي الصَّدَقَاتِ} [التوبة: 58].
আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কোনো কিছু বন্টন করছিলেন। ঘটনাক্রমে আবদুল্লাহ ইবন যুলখুওয়ায়সিরা তামীমী এল এবং বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ইনসাফ করুন। তিনি বললেন, আফসোস তোমার জন্য! আমি যদি ইনসাফ না করি তা হলে আর কে ইনসাফ করবে? উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমাকে অনুমতি দিন। তার গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। তার জন্য সাথীবৃন্দ রয়েছে। যাদের সালাতের তুলনায় তোমরা তোমাদের সালাতকে তুচ্ছ মনে করবে। যাদের সিয়ামের তুলনায় তোমরা তোমাদের সিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। তারা দীন থেকে এরূপ বেরিয়ে যাবে যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের পরে লক্ষ্য করলে তাতে কিছু পাওয়া যায় না। তীরের মুখের বেষ্টনীর প্রতি লক্ষ্য করলেও কিছু পাওয়া যায় না। তীরের কাঠের অংশের দিকে তাকালেও তাতে কিছু পাওয়া যায় না। বরং তীর তীব্র গতিতে বেরিয়ে যাওয়ার কালে তাতে মল ও রক্তের দাগ পর্যন্ত লাগে না। তাদের পরিচয় এই যে, তাদের একটি লোকের একটি হাত অথবা বলেছেন, একটি স্তন্য হবে মহিলাদের স্তনের ন্যায়। অথবা বলেছেন, বাড়তি গোশতের টুকরার ন্যায়। লোকদের মধ্যে বিরোধের সময় তাদের আবির্ভাব হবে। আবূ সা’ঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তা নবী থেকে শুনেছি। এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদেরকে হত্যা করেছেন। আমি তখন তাঁর সাথে ছিলাম। তখন নবী প্রদত্ত বর্ণনার অনুরূপ ব্যক্তিকে আনা হয়েছিল। তিনি বলেন, ওর সম্পর্কেই নাযিল হয়েছে, ওদের মধ্যে এমন লোক আছে যে সাদকা সম্পর্কে তোমাকে দোষারোপ করে। [সূরা তাওবা: ৫৮]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মুশরিকরা বদরের যুদ্ধে পরাজিত হবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ فِي قُبَّةٍ: «اللَّهُمَّ إِنِّي أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ، اللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ لَمْ تُعْبَدْ بَعْدَ اليَوْمِ» فَأَخَذَ أَبُو بَكْرٍ بِيَدِهِ، فَقَالَ: حَسْبُكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ وَهُوَ فِي الدِّرْعِ، فَخَرَجَ وَهُوَ يَقُولُ: {سَيُهْزَمُ الجَمْعُ، وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ، وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ} [القمر: 46]، وَقَالَ وُهَيْبٌ، حَدَّثَنَا خَالِدٌ، يَوْمَ بَدْرٍ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদরের দিন একটি গুম্বুরাজি তাঁবুতে অবস্থান কালে দো‘আ করছিলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আমি আপনার প্রতিজ্ঞা ও ওয়াদার দোহাই দিয়ে বলছি, আপনি যদি চান, তাহলে আজকের পরে আর আপনার ইবাদাত করা হবে না’। এ সময় আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর হাত ধরে বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্, যথেষ্ট হয়েছে। আপনি বার বার মিনতির সঙ্গে আপনার রবের কাছে দো‘আ করেছেন’। সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ম পরিহিত ছিলেন। এরপর তিনি এই আয়াত পাঠ করতে করতে বেরিয়ে এলেন: “শীঘ্রই দুশমনরা পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করবে অধিকন্তু কিয়ামত শাস্তির নির্ধারিত কাল এবং কিয়ামত হবে কঠিনতর ও তিক্ততর। [সূরা আল-কামার: ৪৬] ওহাইব (রহ.) বলেন, খালিদ (রহ.) বলেছেন, ‘বদরের দিন’।
বাইতুল মুকাদ্দিস বিজয়ের ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنِ عَوْف بْنَ مَالِكٍ، قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ وَهُوَ فِي قُبَّةٍ مِنْ أَدَمٍ، فَقَالَ: " اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيِ السَّاعَةِ: مَوْتِي، ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ المَقْدِسِ، ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الغَنَمِ، ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ المَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِينَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا، ثُمَّ فِتْنَةٌ لاَ يَبْقَى بَيْتٌ مِنَ العَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ، ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُونُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ، فَيَغْدِرُونَ فَيَأْتُونَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِينَ غَايَةً، تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا ".
আউফ ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি তাবুক যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এলাম। তিনি তখন একটি চর্ম নির্মিত তাবুতে ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি আলামত গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, তারপরও তোমাদের মাঝে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মত, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দীনার দেওয়া সত্ত্বেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। তারপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতি ঘরে প্রবেশ করবে। তারপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও রোমকদের (খৃষ্টানদের) মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং আশিটি পতাকা উত্তোলন করে তোমাদের মোকাবিলায় আসবে; প্রত্যেক পতাকা তলে বার হাজার সৈন্য দল থাকবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর পরে বারোজন আমীরেব আবির্ভাব হবে।
عَنْ عَبْدِ المَلِكِ، سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «يَكُونُ اثْنَا عَشَرَ أَمِيرًا»، فَقَالَ كَلِمَةً لَمْ أَسْمَعْهَا، فَقَالَ أَبِي: إِنَّهُ قَالَ: «كُلُّهُمْ مِنْ قُرَيْشٍ».
জাবির ইবন সামুরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, বারোজন আমীর হবে। এরপর তিনি একটি কথা বলেছিলেন যা আমি শুনতে পারিনি। তবে আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি বলেছিলেন সকলেই কুরাইশ গোত্র থেকে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে কিছু কল্যাণ ও ফিতনা সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، قَالَتْ: اسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ لَيْلَةٍ فَقَالَ: «سُبْحَانَ اللَّهِ، مَاذَا أُنْزِلَ اللَّيْلَةَ مِنَ الفِتَنِ، وَمَاذَا فُتِحَ مِنَ الخَزَائِنِ، أَيْقِظُوا صَوَاحِبَاتِ الحُجَرِ، فَرُبَّ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ فِي الآخِرَةِ».
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুম থেকে জেগে বলেন, সুবহানআল্লাহ! এ রাতে কতই না বিপদাপদ নেমে আসছে এবং কতই না ভাণ্ডার খুলে দেওয়া হচ্ছে! অন্য সব ঘরের মহিলাগণকেও জানিয়ে দাও, ‘বহু মহিলা যারা দুনিয়ায় বস্ত্র পরিহিতা, তারা আখিরাতে হবে বস্ত্রহীনা।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যামানা পরিবর্তন হবে সে ব্যাপারে ভবিষ্যৎবাণী
عَنِ الزُّبَيْرِ بْنِ عَدِيٍّ، قَالَ: أَتَيْنَا أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، فَشَكَوْنَا إِلَيْهِ مَا نَلْقَى مِنَ الحَجَّاجِ، فَقَالَ: «اصْبِرُوا، فَإِنَّهُ لاَ يَأْتِي عَلَيْكُمْ زَمَانٌ إِلَّا الَّذِي بَعْدَهُ شَرٌّ مِنْهُ، حَتَّى تَلْقَوْا رَبَّكُمْ» سَمِعْتُهُ مِنْ نَبِيِّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
যুবায়র ইবন আদী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট গেলাম এবং হাজ্জাজের পক্ষ থেকে মানুষ যে নির্যাতন ভোগ করছে সে সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করলাম। তিনি বললেন, ধৈর্য ধারণ কর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সহিত মিলিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত (মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোনো যুগ অতিবাহিত হবে না, যার পরবর্তী যুগ তার চেয়েও নিকৃষ্টতর নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর মৃত্যুর একশত বছর পরে তাঁর কোনো সাহাবী জীবিত থাকবেন না
عَنْ سَالِمٍ، وَأَبِي بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي حَثْمَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، قَالَ: صَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العِشَاءَ فِي آخِرِ حَيَاتِهِ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ، فَقَالَ: «أَرَأَيْتَكُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ، فَإِنَّ رَأْسَ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا، لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ».
‘আবদুল্লাহ ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষের দিকে আমাদের নিয়ে ‘ইশার সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরাবার পর তিনি দাঁড়িয়ে বললেন, তোমরা কি এ রাতের সম্পর্কে জান? বর্তমানে যারা পৃথিবীতে রয়েছে, একশ বছরের মাথায় তাদের কেউ আর বাকী থাকবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হিফযের ব্যাপারে আল্লাহর বরকত।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أَسْمَعُ مِنْكَ حَدِيثًا كَثِيرًا أَنْسَاهُ؟ قَالَ: «ابْسُطْ رِدَاءَكَ» فَبَسَطْتُهُ، قَالَ: فَغَرَفَ بِيَدَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: «ضُمَّهُ» فَضَمَمْتُهُ، فَمَا نَسِيتُ شَيْئًا بَعْدَهُ. حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ المُنْذِرِ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي فُدَيْكٍ بِهَذَا أَوْ قَالَ: غَرَفَ بِيَدِهِ فِيهِ.
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আমি আপনার কাছ থেকে বহু হাদীস শুনি কিন্তু ভুলে যাই।’ তিনি বলবেন তোমার চাদর খুলে ধর। আমি খুলে ধরলাম। তিনি দু’হাত অঞ্জলী করে তাতে কিছু ঢেলে দেওয়ার মত করে বললেন, এটা তোমার বুকের সাথে লাগিয়ে ধর। আমি তা বুকের সাথে লাগালাম। এরপর আমি আর কিছুই ভুলিনি। ইবরাহীম ইবনুল মুনযির (রহ.) ইবন আবূ ফুদায়ক (রহ.) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন এবং তাতে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে সে চাদরের মধ্য (কিছু) দিলেন।
قَالَ: أَخْبَرَنِي سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ، وَأَبُو سَلَمَةَ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: إِنَّكُمْ تَقُولُونَ: إِنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ يُكْثِرُ الحَدِيثَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَقُولُونَ مَا بَالُ المُهَاجِرِينَ، وَالأَنْصَارِ لاَ يُحَدِّثُونَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، بِمِثْلِ حَدِيثِ أَبِي هُرَيْرَةَ، وَإِنَّ إِخْوَتِي مِنَ المُهَاجِرِينَ كَانَ يَشْغَلُهُمْ صَفْقٌ بِالأَسْوَاقِ، وَكُنْتُ أَلْزَمُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مِلْءِ بَطْنِي، فَأَشْهَدُ إِذَا غَابُوا، وَأَحْفَظُ إِذَا نَسُوا، وَكَانَ يَشْغَلُ إِخْوَتِي مِنَ الأَنْصَارِ عَمَلُ أَمْوَالِهِمْ، وَكُنْتُ امْرَأً مِسْكِينًا مِنْ مَسَاكِينِ الصُّفَّةِ، أَعِي حِينَ يَنْسَوْنَ، وَقَدْ قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حَدِيثٍ يُحَدِّثُهُ: «إِنَّهُ لَنْ يَبْسُطَ أَحَدٌ ثَوْبَهُ حَتَّى أَقْضِيَ مَقَالَتِي هَذِهِ، ثُمَّ يَجْمَعَ إِلَيْهِ ثَوْبَهُ، إِلَّا وَعَى مَا أَقُولُ»، فَبَسَطْتُ نَمِرَةً عَلَيَّ، حَتَّى إِذَا قَضَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَقَالَتَهُ جَمَعْتُهَا إِلَى صَدْرِي، فَمَا نَسِيتُ مِنْ مَقَالَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِلْكَ مِنْ شَيْءٍ.
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আপনারা বলে থাকেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বেশী বেশী হাদীস বর্ণনা করে থাকে এবং আরো বলেন, মুহাজির ও আনসারদের কি হলো যে, তারা তো রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন না? (কিন্তু ব্যাপার হলো এই যে) আমার মুহাজির ভাইগন বাজারে কেনা-বেচায় ব্যাস্ত থাকতেন আর আমি কোনো প্রকারে আমার পেটের চাহিদা মিটিয়ে (খেয়ে না খেয়ে) রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে পড়ে থাকতাম। তাঁরা যখন (কাজের ব্যাস্ততায়) অনুপস্থিত থাকতেন, আমি তখন উপস্থিত থাকতাম। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষন করতাম। আর আমার আনসার ভাইয়েরা নিজেদের খেত-খামারের কাজে ব্যাপৃত থাকতেন। আমি ছিলাম আসহাবে সুফফার মিসকীনদের এক মিসকীন। তাঁরা যা ভুলে যেতেন, আমি তা সংরক্ষন করতাম। রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এক বর্ণনায় বললেন, আমার এ কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যে কেউ তার কাপড় বিছিয়ে দিবে এবং পরে নিজের শরীরের সাথে তার কাপড় জড়িয়ে নেবে, আমি যা বলছি সে তা স্মরন রাখতে পারবে। [আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন] আমি আমার গায়ের চাদরখানা বিছিয়ে দিলাম, যতক্ষন না রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কথা শেষ করলেন, পরে আমি তা আমার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। ফলে আমি রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে কথার কিছুই ভুলিনি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
বৃষ্টির রাতে লাইলাতুল কদর হবে।
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ: انْطَلَقْتُ إِلَى أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ فَقُلْتُ: أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ نَتَحَدَّثُ، فَخَرَجَ، فَقَالَ: قُلْتُ: حَدِّثْنِي مَا سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي لَيْلَةِ القَدْرِ، قَالَ: اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَشْرَ الأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ، فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَاعْتَكَفَ العَشْرَ الأَوْسَطَ، فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ: إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ، فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ: «مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلْيَرْجِعْ، فَإِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ القَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، وَإِنَّهَا فِي العَشْرِ الأَوَاخِرِ، فِي وِتْرٍ، وَإِنِّي رَأَيْتُ كَأَنِّي أَسْجُدُ فِي طِينٍ وَمَاءٍ» وَكَانَ سَقْفُ المَسْجِدِ جَرِيدَ النَّخْلِ، وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ شَيْئًا، فَجَاءَتْ قَزَعَةٌ، فَأُمْطِرْنَا، فَصَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ وَالمَاءِ عَلَى جَبْهَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَرْنَبَتِهِ تَصْدِيقَ رُؤْيَاهُ.
আবূ সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবূ সায়ীদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমাদের খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি তাকে বললাম, ‘লাইলাতুল কাদর’ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা শুনেছেন, তা আমার কাছে বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রামযানের প্রথম দশ দিন ই’তিকাফ করলেন। আমারও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর তিনি মধ্যবর্তী দশ দিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল আলাইহিস সালাম এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। এরপর রামযানের বিশ তারিখ সকালে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহ্ নবীর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে ‘লাইলাতুল কাদর’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোনো এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোনো কিছুই (মেঘ) দেখিনি, এক বই হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাঁদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে পরিণত হলো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
সালেহীন তথা নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন।
عَنْ مِرْدَاسٍ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَذْهَبُ الصَّالِحُونَ، الأَوَّلُ فَالأَوَّلُ، وَيَبْقَى حُفَالَةٌ كَحُفَالَةِ الشَّعِيرِ، أَوِ التَّمْرِ، لاَ يُبَالِيهِمُ اللَّهُ بَالَةً» قَالَ أَبُو عَبْدِ اللَّهِ: «يُقَالُ حُفَالَةٌ وَحُثَالَةٌ».
মিরদাস আসলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নেককার লোকেরা ক্রমান্বয়ে চলে যাবেন। আর থেকে যাবে নিকৃষ্টরা- যব অথবা খেজুরের মত লোকজন। আল্লাহ্ তা‘আলা এদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ ও করবেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তিনি তাঁর স্ত্রী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার আগে মারা যাবেন।
عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ، قَالَ: سَمِعْتُ القَاسِمَ بْنَ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَالَتْ عَائِشَةُ: وَا رَأْسَاهْ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «ذَاكِ لَوْ كَانَ وَأَنَا حَيٌّ فَأَسْتَغْفِرَ لَكِ وَأَدْعُوَ لَكِ» فَقَالَتْ عَائِشَةُ: وَا ثُكْلِيَاهْ، وَاللَّهِ إِنِّي لَأَظُنُّكَ تُحِبُّ مَوْتِي، وَلَوْ كَانَ ذَاكَ، لَظَلِلْتَ آخِرَ يَوْمِكَ مُعَرِّسًا بِبَعْضِ أَزْوَاجِكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " بَلْ أَنَا وَا رَأْسَاهْ، لَقَدْ هَمَمْتُ - أَوْ أَرَدْتُ - أَنْ أُرْسِلَ إِلَى أَبِي بَكْرٍ وَابْنِهِ وَأَعْهَدَ: أَنْ يَقُولَ القَائِلُونَ - أَوْ يَتَمَنَّى المُتَمَنُّونَ - ثُمَّ قُلْتُ: يَأْبَى اللَّهُ وَيَدْفَعُ المُؤْمِنُونَ، أَوْ يَدْفَعُ اللَّهُ وَيَأْبَى المُؤْمِنُونَ ".
কাসিম ইবন মুহাম্মদ (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেছিলেন “হায় যন্ত্রনায় আমার মাথা গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি এমনটি হয় আর আমি জীবিত থাকি তাহলে আমি তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবো, তোমার জন্য দো‘আ করবো। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বললেন, হায় আফসুস, আল্লাহর কসম। আমার মনে হয় আপনি আমার মৃত্যুকে পছন্দ করেন। আর এমনটি হলে আপনি পরের দিনই আপনার অন্যান্য সহধর্মিনীদের সংগে রাত যাপন করতে পারবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং আমি আমার মাথা গেল বলার বেশী যোগ্য। আমি তো ইচ্ছা করেছিলাম কিংবা বলেছেন, আমি ঠিক করেছিলাম, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তার ছেলের নিকট সংবাদ পাঠাবো এবং অসীয়ত করে যাবো, যেন লোকদের কিছু বলার অবকাশ না থাকে কিংবা আকাঙ্খাকারীদের কোনো আকাঙ্খা করার অবকাশ না থাকে। তারপর ভাবলাম। আল্লাহ (আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ব্যতীত অন্য কেউ খিলাফতের আকাঙ্খা করুক) তা অপছন্দ করবেন, মু’মিনগন তা পরিহার করবেন। কিংবা তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা পরিহার করবেন এবং মু’মিনগন তা অপছন্দ করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মতের কিছু লোক কিছু হারামকে হালাল মনে করবে।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ غَنْمٍ الأَشْعَرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَبُو عَامِرٍ أَوْ أَبُو مَالِكٍ الْأَشْعَرِيُّ، وَاللَّهِ مَا كَذَبَنِي: سَمِعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: " لَيَكُونَنَّ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ، يَسْتَحِلُّونَ الحِرَ وَالحَرِيرَ، وَالخَمْرَ وَالمَعَازِفَ، وَلَيَنْزِلَنَّ أَقْوَامٌ إِلَى جَنْبِ عَلَمٍ، يَرُوحُ عَلَيْهِمْ بِسَارِحَةٍ لَهُمْ، يَأْتِيهِمْ - يَعْنِي الفَقِيرَ - لِحَاجَةٍ فَيَقُولُونَ: ارْجِعْ إِلَيْنَا غَدًا، فَيُبَيِّتُهُمُ اللَّهُ، وَيَضَعُ العَلَمَ، وَيَمْسَخُ آخَرِينَ قِرَدَةً وَخَنَازِيرَ إِلَى يَوْمِ القِيَامَةِ ".
আবদুর রহমান ইবন গানাম আশ’আরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমের কিংবা আবূ মালেক আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন: আমার উম্মতের মাঝে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। অনুরূপভাবে এমন অনেক দল হবে, যারা পর্বতের কিনারায় বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের কাছ কোনো অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা উত্তর দেবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধসিয়ে দেবেন, আর অবশিষ্ট লোকদের তিনি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
মুশরিকরা খন্দকের যুদ্ধের পরে মদীনায় এসে যুদ্ধ করবে না, বরং মদীনাবাসিরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।
عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ صُرَدٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ الْأَحْزَابِ: «نَغْزُوهُمْ، وَلاَ يَغْزُونَنَا».
সুলায়মান ইবন সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আর আমাদের প্রতি আক্রমণ করতে পারবে না।
حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، سَمِعْتُ أَبَا إِسْحَاقَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ سُلَيْمَانَ بْنَ صُرَدٍ، يَقُولُ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: حِينَ أَجْلَى الأَحْزَابَ عَنْهُ: «الآنَ نَغْزُوهُمْ وَلاَ يَغْزُونَنَا، نَحْنُ نَسِيرُ إِلَيْهِمْ».
সুলায়মান ইব্ন সুরাদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আহযাব যুদ্ধের দিন কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী মদীনা ছেড়ে ফিরে যেতে বাধ্য হলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি যে, এখন থেকে আমরাই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তারা আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করতে পারবেনা। আর আমরা তাদের এলাকায় গিয়েই আক্রমণ করব।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দ্বারা কিছু লোক উপকৃত হবে এবং কিছু লোক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মুসলমানেরা তাঁর দ্বারা উপকৃত হয়েছে এবং পারসিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: عَادَنِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ حَجَّةِ الوَدَاعِ مِنْ مَرَضٍ أَشْفَيْتُ مِنْهُ عَلَى المَوْتِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، بَلَغَ بِي مِنَ الوَجَعِ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُو مَالٍ، وَلاَ يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَةٌ لِي وَاحِدَةٌ، أَفَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثَيْ مَالِي؟ قَالَ: «لاَ»، قَالَ: فَأَتَصَدَّقُ بِشَطْرِهِ؟ قَالَ: «الثُّلُثُ يَا سَعْدُ، وَالثُّلُثُ كَثِيرٌ، إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ ذُرِّيَّتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُونَ النَّاسَ وَلَسْتَ بِنَافِقٍ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ، إِلَّا آجَرَكَ اللَّهُ بِهَا حَتَّى اللُّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أُخَلَّفُ بَعْدَ أَصْحَابِي؟ قَالَ: «إِنَّكَ لَنْ تُخَلَّفَ، فَتَعْمَلَ عَمَلًا تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللَّهِ إِلَّا ازْدَدْتَ بِهِ دَرَجَةً وَرِفْعَةً، وَلَعَلَّكَ تُخَلَّفُ حَتَّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ، وَيُضَرَّ بِكَ آخَرُونَ، اللَّهُمَّ أَمْضِ لِأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدَّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ، لَكِنِ البَائِسُ سَعْدُ ابْنُ خَوْلَةَ». يَرْثِي لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تُوُفِّيَ بِمَكَّةَ وَقَالَ أَحْمَدُ بْنُ يُونُسَ، وَمُوسَى، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ.
সা‘দ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, বিদায় হজ্জের বছর আমি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর নিকটবর্তী হয়ে পড়ি তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসেন। তখন আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার রোগ কি পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। আমি একজন বিত্তবান লোক। আমার ওয়ারিশ হচ্ছে একটি মাত্র কন্যা। আমি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ আল্লাহর রাস্তায় সাদকা দিব? তিনি বললেন না। আমি বললাম, তবে কি অর্ধেক? তিনি বললেন, হে সা‘দ এক-তৃতীয়াংশ দান কর। এ তৃতীয়াংশই অনেক বেশী। তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিদেরকে বিত্তবান রেখে যাও ইহাই উত্তম, এর চাইতে যে তুমি তাদেরকে নিঃস্ব রেখে গেলে যে তারা অন্যের নিকট হাত পেতে ভিক্ষা করে। তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের সম্পদশালী রেখে যাবে আর তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা ব্যয় করবে, আল্লাহ তার প্রতিদান তোমাকে দেবে। তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে যে লোকমাটি তুলে দিবে এর প্রতিদানও আল্লাহ তোমাকে দেবে। আমি বললাম, ইয়া আল্লাহ্! আমি কি আমার সাথী সঙ্গীদের থেকে পিছনে পড়ে থাকব? তিনি বললেন, তুমি কখনই পিছনে পড়ে থাকবেনা আর এ অবস্থায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তুমি যে কোনো নেক ‘আমল করবে তাহলে তোমার সম্মান ও মর্যাদা আরো বেড়ে যাবে। সম্ভবতঃ তুমি পিছনে থেকে যাবে এবং এর ফলে তোমার দ্বারা অনেক মানুষ উপকৃত এবং অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হে আল্লাহ্! আমার সাহাবীদের হিজরতকে অক্ষুন্ন রাখুন। তাদেরকে পশ্চাৎমুখি করে ফিরিয়ে নিবেন না। কিন্তু অভাবগ্রস্থ সা‘দ ইবন খওলার মক্কায় মৃত্যুর কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। আহমদ ইবন ইউনুস (রহ.) ও মূসা (রহ.) ইব্রাহীম সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তোমরা উত্তরাধিকারীদের রেখে যাওয়া...।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর হায়াত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى المِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ وَقَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَعَجِبْنَا لَهُ، وَقَالَ النَّاسُ: انْظُرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ، يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا، وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ، وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا، فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ المُخَيَّرَ، وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ هُوَ أَعْلَمَنَا بِهِ، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّ مِنْ أَمَنِّ النَّاسِ عَلَيَّ فِي صُحْبَتِهِ وَمَالِهِ أَبَا بَكْرٍ، وَلَوْ كُنْتُ مُتَّخِذًا خَلِيلًا مِنْ أُمَّتِي لاَتَّخَذْتُ أَبَا بَكْرٍ، إِلَّا خُلَّةَ الإِسْلاَمِ، لاَ يَبْقَيَنَّ فِي المَسْجِدِ خَوْخَةٌ إِلَّا خَوْخَةُ أَبِي بَكْرٍ».
আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে বসলেন এবং বললেন, আল্লাহ তাঁর এক বান্দাকে দুটি বিষয়ের একটির ইখতিয়ার দিয়েছেন। তাঁর একটি হল- দুনিয়ার ভোগ-সম্পদ আর একটি হল আল্লাহ্র নিকট যা রক্ষিত রয়েছে। তখন সে বান্দা আল্লাহর কাছে যা রয়েছে তাই পছন্দ করলেন। একথা শুনে, আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কেঁদে ফেললেন, এবং বললেন, আমাদের পিতা-মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। তাঁর অবস্থা দেখে আমরা বিস্মিত হলাম। লোকেরা বলতে লাগল, এ বৃদ্ধের অবস্থা দেখ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক বান্দার সম্বন্ধে খবর দিলেন যে, তাকে আল্লাহ পার্থিব ভোগ-সম্পদ দেওয়ার এবং তাঁর কাছে যা হয়েছে, এ দু’য়ের মধ্যে ইখতিয়ার দিলেন আর এই বৃদ্ধ বলছে, আপনার জন্য আমাদের মাতাপিতা উৎসর্গ করলাম। (প্রকৃতপক্ষে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই হলেন সেই ইখতিয়ার প্রাপ্ত বান্দা। আর আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুই হলেন আমাদের মধ্যে সবচাইতে বিজ্ঞ ব্যাক্তি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি তার সহচর্য ও মাল দিয়ে আমার প্রতি সর্বাধিক ইহসান করেছেন তিনি হলেন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। যদি আমি আমার উম্মতের কোনো ব্যক্তিকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম তাহলে আবূ বকরকেই করতাম। তবে তার সঙ্গে আমার ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। মসজিদের দিকে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দরজা ছাড়া অন্য কারো দরজা খোলা থাকবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর স্ত্রী হবেন।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُرِيتُكِ فِي المَنَامِ مَرَّتَيْنِ، إِذَا رَجُلٌ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَيَقُولُ: هَذِهِ امْرَأَتُكَ، فَأَكْشِفُهَا فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَأَقُولُ: إِنْ يَكُنْ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ ".
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাকে আমায় দু’বার স্বপ্নে দেখানো হয়েছে। আমি দেখলাম, এক ব্যক্তি তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে এবং বলছে ইনি আপনার স্ত্রী। আমি তার নিকাব উন্মোচন করে দেখতে পাই যে ঐ মহিলাটি তুমিই এবং আমি বলেছি, যদি এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তা হলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أُرِيتُكِ قَبْلَ أَنْ أَتَزَوَّجَكِ مَرَّتَيْنِ، رَأَيْتُ المَلَكَ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَقُلْتُ لَهُ: اكْشِفْ، فَكَشَفَ فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَقُلْتُ: إِنْ يَكُنْ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ، ثُمَّ أُرِيتُكِ يَحْمِلُكِ فِي سَرَقَةٍ مِنْ حَرِيرٍ، فَقُلْتُ: اكْشِفْ، فَكَشَفَ، فَإِذَا هِيَ أَنْتِ، فَقُلْتُ: إِنْ يَكُ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ يُمْضِهِ ".
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাকে (আয়েশাকে) শাদী করার পূর্বেই দু’বার আমাকে দেখানো হয়েছে। আমি দেখেছি, একজন ফেরেশতা তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি নিকাব উন্মোচন করুন। যখন সে নিকব উন্মোচন করল তখন আমি দেখতে পেলাম যে, উক্ত মহিলা তুমিই। আমি তখন বললাম, এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন। এরপর আবার আমাকে দেখানো হল যে, ফেরেশতা তোমাকে রেশমী এক টুকরা কাপড়ে জড়িয়ে বহন করে নিয়ে আসছে। আমি বললাম, আপনি (তার নিকাব) উন্মোচন করুন। সে তা উন্মোচন করলে আমি দেখতে পাই যে, উক্ত মহিলা তুমিই। তখন আমি বললাম: এটা যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে তাহলে তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তিনি আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর আগে ইনতেকাল করবেন।
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَتَتِ امْرَأَةٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَمَرَهَا أَنْ تَرْجِعَ إِلَيْهِ، قَالَتْ: أَرَأَيْتَ إِنْ جِئْتُ وَلَمْ أَجِدْكَ؟ كَأَنَّهَا تَقُولُ: المَوْتَ، قَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنْ لَمْ تَجِدِينِي فَأْتِي أَبَا بَكْرٍ».
জুবায়র ইবন মুতঈম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এলো। (আলোচনা শেষে যাওয়ার সময়) তিনি তাঁকে আবার আসার জন্য বললেন। মহিলা বলল, আমি এসে যদি আপনাকে না পাই তবে কি করব? একথা দ্বারা মহিলাটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আমাকে না পাও তবে আবু বকরের নিকট আসবে।
খাইবার বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا غَزَا بِنَا قَوْمًا، لَمْ يَكُنْ يَغْزُو بِنَا حَتَّى يُصْبِحَ وَيَنْظُرَ، فَإِنْ سَمِعَ أَذَانًا كَفَّ عَنْهُمْ، وَإِنْ لَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا أَغَارَ عَلَيْهِمْ، قَالَ: فَخَرَجْنَا إِلَى خَيْبَرَ، فَانْتَهَيْنَا إِلَيْهِمْ لَيْلًا، فَلَمَّا أَصْبَحَ وَلَمْ يَسْمَعْ أَذَانًا رَكِبَ، وَرَكِبْتُ خَلْفَ أَبِي طَلْحَةَ، وَإِنَّ قَدَمِي لَتَمَسُّ قَدَمَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَخَرَجُوا إِلَيْنَا بِمَكَاتِلِهِمْ وَمَسَاحِيهِمْ، فَلَمَّا رَأَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالُوا: مُحَمَّدٌ وَاللَّهِ، مُحَمَّدٌ وَالخَمِيسُ، قَالَ: فَلَمَّا رَآهُمْ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ {فَسَاءَ صَبَاحُ المُنْذَرِينَ} [الصافات: 177] ".
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমাদের নিয়ে কোনো গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যেতেন, ভোর না হওয়া পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করতেন না বরং লক্ষ্য রাখতেন, যদি তিনি তখন আযান শুনতে পেতেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতেন। আর যদি আযান শুনতে না পেতেন, তাহলে অভিযান চালাতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমারা খায়বারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম এবং রাতের বেলায় তাদের সেখানে পৌছলাম। যখন প্রভাত হল এবং তিনি আযান শুনতে পেলেন না; তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওয়ার হলেন। আমি আবূ তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর পিছনে সাওয়ার হলাম। আমার পা, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কদম মুবারকের সাথে লেগে যাচ্ছিল। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারা তাদের থলে ও কোদাল নিয়ে বেরিয়ে আমাদের দিকে আসল। হঠাৎ তারা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতে পেল, তখন বলে উঠল, ‘এ যে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ্র শপথ! মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পঞ্চ বাহিনী সহ!’ আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দেখে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, খায়বার ধ্বংস হোক। আমরা যখন কোনো কাওমের আঙ্গিনায় অবতরণ করি, তখন সতর্কীকৃতদের প্রভাত হবে কত মন্দ!
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
উমাইয়্যাহ ইবন খালফ নিহত হবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: انْطَلَقَ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ مُعْتَمِرًا، قَالَ: فَنَزَلَ عَلَى أُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ أَبِي صَفْوَانَ، وَكَانَ أُمَيَّةُ إِذَا انْطَلَقَ إِلَى الشَّأْمِ، فَمَرَّ بِالْمَدِينَةِ نَزَلَ عَلَى سَعْدٍ، فَقَالَ أُمَيَّةُ، لِسَعْدٍ: انْتَظِرْ حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ النَّهَارُ، وَغَفَلَ النَّاسُ انْطَلَقْتُ فَطُفْتُ، فَبَيْنَا سَعْدٌ يَطُوفُ إِذَا أَبُو جَهْلٍ، فَقَالَ: مَنْ هَذَا الَّذِي يَطُوفُ بِالكَعْبَةِ؟ فَقَالَ سَعْدٌ: أَنَا سَعْدٌ، فَقَالَ أَبُو جَهْلٍ: تَطُوفُ بِالكَعْبَةِ آمِنًا، وَقَدْ آوَيْتُمْ مُحَمَّدًا وَأَصْحَابَهُ؟ فَقَالَ: نَعَمْ، فَتَلاَحَيَا بَيْنَهُمَا، فَقَالَ أُمَيَّةُ لسَعْدٍ: لاَ تَرْفَعْ صَوْتَكَ عَلَى أَبِي الحَكَمِ، فَإِنَّهُ سَيِّدُ أَهْلِ الوَادِي، ثُمَّ قَالَ سَعْدٌ: وَاللَّهِ لَئِنْ مَنَعْتَنِي أَنْ أَطُوفَ بِالْبَيْتِ لَأَقْطَعَنَّ مَتْجَرَكَ بِالشَّامِ، قَالَ: فَجَعَلَ أُمَيَّةُ يَقُولُ لِسَعْدٍ: لاَ تَرْفَعْ صَوْتَكَ، وَجَعَلَ يُمْسِكُهُ، فَغَضِبَ سَعْدٌ فَقَالَ: دَعْنَا عَنْكَ «فَإِنِّي سَمِعْتُ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَزْعُمُ أَنَّهُ قَاتِلُكَ»، قَالَ: إِيَّايَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: وَاللَّهِ مَا يَكْذِبُ مُحَمَّدٌ إِذَا حَدَّثَ فَرَجَعَ إِلَى امْرَأَتِهِ، فَقَالَ: أَمَا تَعْلَمِينَ مَا قَالَ لِي أَخِي اليَثْرِبِيُّ، قَالَتْ: وَمَا قَالَ؟ قَالَ: زَعَمَ أَنَّهُ سَمِعَ مُحَمَّدًا يَزْعُمُ أَنَّهُ قَاتِلِي، قَالَتْ: فَوَاللَّهِ مَا يَكْذِبُ مُحَمَّدٌ، قَالَ: فَلَمَّا خَرَجُوا إِلَى بَدْرٍ، وَجَاءَ الصَّرِيخُ، قَالَتْ لَهُ امْرَأَتُهُ: أَمَا ذَكَرْتَ مَا قَالَ لَكَ أَخُوكَ اليَثْرِبِيُّ، قَالَ: فَأَرَادَ أَنْ لاَ يَخْرُجَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو جَهْلٍ: إِنَّكَ مِنْ أَشْرَافِ الوَادِي فَسِرْ يَوْمًا أَوْ يَوْمَيْنِ، فَسَارَ مَعَهُمْ، فَقَتَلَهُ اللَّهُ.
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদ ইবন মু‘আয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (আনসারী) ওমরা আদায় করার জন্য (মক্কা) গমন করলেন এবং সাফওয়ানের পিতা উমাইয়া ইবন খালাফ এর বাড়িতে তিনি অতিথি হলেন। উমাইয়াও সিরিয়ায় গমনকালে (মদিনায়) সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়িতে অবস্থান করত। উমাইয়া সা’দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল, অপেক্ষা করুন, যখন দুপুর হবে এবং যখন চলাফেরা কমে যাবে, তখন আপনি যেয়ে তাওয়াফ করে নিবেন। (অবসর মুহূর্তে) সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাওয়াফ করছিলেন। এমতাবস্থায় আবু জেহেল এসে হাজির হল। সা’‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, এ ব্যক্তি কে? যে কা’বার তাওয়াফ করছে? সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সা‘দ। আবু জেহেল বলল, তুমি নির্বিঘ্নে কা’বার তাওয়াফ করছ? অথচ তোমরাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদেরকে আশ্রয় দিয়েছে? সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হ্যাঁ। এভাবে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল। তখন উমাইয়া সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলল, আবুল হাকামের সাথে উচ্চস্বরে কথা বল না, কেননা সে মক্কাবাসীদের (সর্বজন মান্য) নেতা। এরপর সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আল্লাহ্র কসম! তুমি যদি আমাকে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করতে বাঁধা প্রদান কর, তবে আমিও তোমার সিরিয়ার সাথে ব্যবসা বানিজ্যের রাস্তা বন্ধ করে দিব। উমাইয়া সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে তখন বলতে লাগল, তোমার স্বর উচু করো না এবং সে তাঁকে বিরত করতে চেষ্টা করতে লাগল। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ক্রোধান্বিত হয়ে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তারা তোমাকে হত্যা করবে। উমাইয়া বলল, আমাকেই? তিনি বলেলন, হ্যাঁ (তোমাকেই)। উমাইয়া বলল, আল্লাহর কসম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মিথ্যা কথা বলেন না। এরপর উমাইয়া তাঁর স্ত্রীর কাছে ফিরে এসে বলল, তুমি কি জান, আমার ইয়াসরিবী ভাই (মদীনা) আমাকে কি বলেছে? স্ত্রী জিজ্ঞাসা করল কি বলছে? উমাইয়া বলল, সে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছে যে, তারা আমাকে হত্যা করবে। তার স্ত্রী বলল, আল্লাহ্র কসম, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো মিথ্যা বলেন না। যখন মক্কার মুশরিকরা বদরের উদ্দেশ্যে রাওয়ানা হল এবং আহ্বানকারী আহ্বান চালাল। তখন উমাইয়ার স্ত্রী তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিল, তোমার ইয়াসরিবী ভাই তোমাকে যে কথা বলছিল সে কথা কি তোমার স্মরণ নেই? তখন উমাইয়া (বদরের যুদ্ধে) না যাওয়াই সিদ্ধান্ত নিল। আবু জেহেল তাকে বলল, তুমি এ অঞ্চলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। (তুমি যদি না যাও তবে কেউ-ই যাবে না) আমাদের সাথে দুই একদিনের পথ চলো। (এরপর না হয় ফিরে আসবে।) উমাইয়া তাদের সাথে চলল। আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় (বদর প্রান্তে মুসলিমদের হাতে) সে নিহত হল।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর পরিবারে গালিচার কার্পেট হবে।
عَنْ جَابِرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَلْ لَكُمْ مِنْ أَنْمَاطٍ» قُلْتُ: وَأَنَّى يَكُونُ لَنَا الأَنْمَاطُ؟ قَالَ: «أَمَا إِنَّهُ سَيَكُونُ لَكُمُ الأَنْمَاطُ» فَأَنَا أَقُولُ لَهَا - يَعْنِي امْرَأَتَهُ - أَخِّرِي عَنِّي أَنْمَاطَكِ، فَتَقُولُ: أَلَمْ يَقُلِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِنَّهَا سَتَكُونُ لَكُمُ الأَنْمَاطُ» فَأَدَعُهَا.
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের নিকট আনমাত (গালিচার কার্পেট) আছে কি? আমি বললাম আমরা তা পাব কোথায়? তিনি বললেন, অচিরেই তোমরা আনমাত লাভ করবে।(আমার স্ত্রী যখন শয্যায় তা বিছিয়ে দেয়) তখন আমি তাকে বলি, আমার বিছানা থেকে এটা সরিয়ে নাও। তখন সে বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি তা বলেন নাই যে, অচিরেই তোমার আনমাত পেয়ে যাবে? তখন আমি তো (বিছান অবস্থায়) থাকতে দেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর ইনতেকালের পরে মানুষ নিরাপত্তা লাভ করবে এবং বাস্তবে তা হয়েছে।
عَنْ خَبَّابِ بْنِ الأَرَتِّ، قَالَ: شَكَوْنَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ مُتَوَسِّدٌ بُرْدَةً لَهُ فِي ظِلِّ الكَعْبَةِ، قُلْنَا لَهُ: أَلاَ تَسْتَنْصِرُ لَنَا، أَلاَ تَدْعُو اللَّهَ لَنَا؟ قَالَ: «كَانَ الرَّجُلُ فِيمَنْ قَبْلَكُمْ يُحْفَرُ لَهُ فِي الأَرْضِ، فَيُجْعَلُ فِيهِ، فَيُجَاءُ بِالْمِنْشَارِ فَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ فَيُشَقُّ بِاثْنَتَيْنِ، وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَيُمْشَطُ بِأَمْشَاطِ الحَدِيدِ مَا دُونَ لَحْمِهِ مِنْ عَظْمٍ أَوْ عَصَبٍ، وَمَا يَصُدُّهُ ذَلِكَ عَنْ دِينِهِ، وَاللَّهِ لَيُتِمَّنَّ هَذَا الأَمْرَ، حَتَّى يَسِيرَ الرَّاكِبُ مِنْ صَنْعَاءَ إِلَى حَضْرَمَوْتَ، لاَ يَخَافُ إِلَّا اللَّهَ، أَوِ الذِّئْبَ عَلَى غَنَمِهِ، وَلَكِنَّكُمْ تَسْتَعْجِلُونَ».
খাব্বার ইবন আরত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে (কাফিরদের পক্ষ থেকে যে সব নির্যাতন ভোগ করছিলাম এসবের) অভিযোগ করলাম। তখন তিনি নিজের চাদরকে বালিশ বানিয়ে কা’বা শরীফের ছায়ায় বিশ্রাম করছিলেন। আমরা তাঁকে বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) সাহায্য প্রার্থনা করবেন না? আপনি কি আমাদের (দুঃখ দুর্দশা লাঘবের) জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন না? তিনি বললেন, তোমাদের পূর্ববর্তী (ঈমানদার) গণের অবস্থা ছিল এই, তাদের জন্য মাটিতে গর্ত খনন করা হত এবং ঐ গর্তে তাকে পুঁতে রেখে করাত দিয়ে তাঁর মস্তক দ্বিখণ্ডিত করা হত। এ (অমানুষিক নির্যাতনেও) তাদেরকে দীন থেকে বিচ্যুত করতে পারত না। লোহার চিরুনী দিয়ে আঁছড়িয়ে শরীরের হাঁড় পর্যন্ত মাংস ও শিরা উপশিরা সব কিছু ছিন্নভিন্ন করে দিত। এ (লোমহর্ষক নির্যাতন) তাদেরকে দীন থেকে বিমুখ করতে পারেনি। আল্লাহর কসম, আল্লাহ এ দীনকে অবশ্যই পূর্ণতা দান করবেন (এবং সর্বত্র নিরাপদ ও শান্তিময় অবস্থা বিরাজ করবে।) তখনকার দিনের একজন উষ্ট্রারোহী সান‘আ থেকে হাযারামাউত পর্যন্ত ভ্রমণ করবে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকেও ভয় করবে না। অথবা তাঁর মেঘপালের জন্য নেকড়ে বাঘের আশঙ্কাও করবে না। কিন্তু তোমরা (ঐ সময়ের অপেক্ষা না করে) তাড়াহুড়া করছ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, তিনি এমন এক দেশে হিজরত করবেন সেখানে খেজুর গাছ আছে।
عَنْ أَبِي مُوسَى، أُرَاهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «رَأَيْتُ فِي المَنَامِ أَنِّي أُهَاجِرُ مِنْ مَكَّةَ إِلَى أَرْضٍ بِهَا نَخْلٌ، فَذَهَبَ وَهَلِي إِلَى أَنَّهَا اليَمَامَةُ أَوْ هَجَرُ، فَإِذَا هِيَ المَدِينَةُ يَثْرِبُ، وَرَأَيْتُ فِي رُؤْيَايَ هَذِهِ أَنِّي هَزَزْتُ سَيْفًا، فَانْقَطَعَ صَدْرُهُ فَإِذَا هُوَ مَا أُصِيبَ مِنَ المُؤْمِنِينَ يَوْمَ أُحُدٍ، ثُمَّ هَزَزْتُهُ بِأُخْرَى فَعَادَ أَحْسَنَ مَا كَانَ فَإِذَا هُوَ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الفَتْحِ، وَاجْتِمَاعِ المُؤْمِنِينَ وَرَأَيْتُ فِيهَا بَقَرًا، وَاللَّهُ خَيْرٌ فَإِذَا هُمُ المُؤْمِنُونَ يَوْمَ أُحُدٍ، وَإِذَا الخَيْرُ مَا جَاءَ اللَّهُ بِهِ مِنَ الخَيْرِ وَثَوَابِ الصِّدْقِ، الَّذِي آتَانَا اللَّهُ بَعْدَ يَوْمِ بَدْرٍ».
আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি স্বপ্নে দেখতে পেলাম, আমি মক্কা থেকে হিজরত করে এমন এক স্থানে যাচ্ছি যেখানে প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। তখন আমার ধারণা হল, এ স্থানটি ইয়ামামা অথবা হাযর হবে। পরে বুঝতে পেলাম, স্থানটি মদীনা ছিল। যার পূর্বনাম ইয়াসরিব। স্বপ্নে আমি আরো দেখতে পেলাম যে আমি একটি তরবারী হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। হঠাৎ তার অগ্রভাগ ভেঙ্গে গেল। উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের যে বিপর্যয় ঘটেছিল এটা তা-ই। তারপর দ্বিতীয় বার তরবারীটি হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করলাম তখন তরবারীটি পূর্বাবস্থার চেয়েও অধিক উত্তম হয়ে গেল। এর তাৎপর্য হল যে, আল্লাহ মুসলিমগনকে বিজয়ী ও একত্রিত করে দেবেন। আমি স্বপ্নে আরো দেখতে পেলাম, একটি গরু (যা জবাই করা হচ্ছে) এবং শুনতে পেলাম আল্লাহ যা করেন সবই ভালো। এটাই হল উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের শাহাদাত বরণ। আর খায়ের হল – আল্লাহ্র তরফ হতে আগত ঐ সকল কল্যাণই কল্যাণ এবং সত্যবাদিতার পুরষ্কার যা আল্লাহ্ আমাদেরকে বদর যুদ্ধের পর দান করেছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন য, তাঁর মৃত্যু সন্নিকটে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: كَانَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، يُدْنِي ابْنَ عَبَّاسٍ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ: إِنَّ لَنَا أَبْنَاءً مِثْلَهُ، فَقَالَ: إِنَّهُ مِنْ حَيْثُ تَعْلَمُ، فَسَأَلَ عُمَرُ ابْنَ عَبَّاسٍ عَنْ هَذِهِ الآيَةِ، {إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالفَتْحُ} [النصر: 1]، فَقَالَ: «أَجَلُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَعْلَمَهُ إِيَّاهُ» قَالَ: مَا أَعْلَمُ مِنْهَا إِلَّا مَا تَعْلَمُ.
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (তাঁর সভাসদদের মধ্যে) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বিশেষ মর্যাদা দান করতেন। একদিন আবদুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, তাঁর মত ছেলে তো আমাদেরও রয়েছে। এতে তিনি বললেন, এর কারণ তো আপনি নিজেও জানেন। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ডেকে “ইজা যা আ নাসরুল্লহি ওয়াল ফাতহ” আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উত্তর দিলেন, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর ওফাত নিকটবর্তী বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমিও এ আয়াতের ব্যাখ্যা জানি, যা তুমি জান।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর উম্মতেরা তাঁর দ্বীনি ভাই হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَى الْمَقْبُرَةَ، فَقَالَ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُونَ، وَدِدْتُ أَنَّا قَدْ رَأَيْنَا إِخْوَانَنَا» قَالُوا: أَوَلَسْنَا إِخْوَانَكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: «أَنْتُمْ أَصْحَابِي وَإِخْوَانُنَا الَّذِينَ لَمْ يَأْتُوا بَعْدُ» فَقَالُوا: كَيْفَ تَعْرِفُ مَنْ لَمْ يَأْتِ بَعْدُ مِنْ أُمَّتِكَ؟ يَا رَسُولَ اللهِ فَقَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّ رَجُلًا لَهُ خَيْلٌ غُرٌّ مُحَجَّلَةٌ بَيْنَ ظَهْرَيْ خَيْلٍ دُهْمٍ بُهْمٍ أَلَا يَعْرِفُ خَيْلَهُ؟» قَالُوا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ قَالَ: " فَإِنَّهُمْ يَأْتُونَ غُرًّا مُحَجَّلِينَ مِنَ الْوُضُوءِ، وَأَنَا فَرَطُهُمْ عَلَى الْحَوْضِ أَلَا لَيُذَادَنَّ رِجَالٌ عَنْ حَوْضِي كَمَا يُذَادُ الْبَعِيرُ الضَّالُّ أُنَادِيهِمْ أَلَا هَلُمَّ فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ قَدْ بَدَّلُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا ".
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরস্থানে এসে বললেন, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। এটা মুমিনদের ঘর। ইনশা আল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে এসে মিলব। আমার বড় ইচ্ছা হয় আমাদের ভাইদেরকে দেখি। সাহাবায়ে কিরাম আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনিবললেন, তোমরা তো আমার সাহাবী। আর যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তারা আমাদের ভাই। সাহাবীরা আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যারা এখনো (পৃথিবীতে) আসেনি তাদেরকে আপনি কিভাবে চিনবেন? তিনি বললেন, “কেন, যদি কোনো ব্যক্তির কপাল ও হাত-পা সাদাযুক্ত ঘোড়া ঘোর কালো ঘোড়ার মধ্যে মিশে যায়তবে সে কি তার ঘোড়াকে চিনে নিতে পারে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বললেন, তাঁরা (আমারউম্মাত) সেদিন এমন অবস্থায় আসবে যে, উযুর ফলে তাদের মুখমন্ডল হবে নূরানী এবং হাত-পা দীণ্ডিময়। আর হাউযের পাড়ে আমিহব তাদের অগ্রনায়ক। জেনে রাখ, কিছু সংখ্যক লোককে সেদিন আমার হাউয থেকে হটিয়ে দেওয়া হবে যেমনিভাবে পথহারা উটকে হটিয়ে দেওয়া হয়। আমি তাদেরকে ডাকব, এসো এসো। তখন বলা হবে, “এরা আপনার পরে (আপনারদীনকে) পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তখন আমি বলব, দূর হও, দূর হও।
আরব বিশ্বে যা হবে সে সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَكْثُرَ الْمَالُ وَيَفِيضَ، حَتَّى يَخْرُجَ الرَّجُلُ بِزَكَاةِ مَالِهِ فَلَا يَجِدُ أَحَدًا يَقْبَلُهَا مِنْهُ، وَحَتَّى تَعُودَ أَرْضُ الْعَرَبِ مُرُوجًا وَأَنْهَارًا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামত সংঘটিত হবে নাযতক্ষন না প্রঢ়ুর ধন-সম্পদ ও বিপূল প্রাচুর্য প্রকাশ পায়। এমনকি তখন মানুষ তাঁর মালের যাকাত নিয়ে বের হবে, কিন্তু তা গ্রহণ করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না। আরব দেশ চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।
কুরাইশ নেতাদের নিহত হওয়ার স্থান সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَاوَرَ حِينَ بَلَغَهُ إِقْبَالُ أَبِي سُفْيَانَ، قَالَ: فَتَكَلَّمَ أَبُو بَكْرٍ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، ثُمَّ تَكَلَّمَ عُمَرُ، فَأَعْرَضَ عَنْهُ، فَقَامَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ، فَقَالَ: إِيَّانَا تُرِيدُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نُخِيضَهَا الْبَحْرَ لَأَخَضْنَاهَا، وَلَوْ أَمَرْتَنَا أَنْ نَضْرِبَ أَكْبَادَهَا إِلَى بَرْكِ الْغِمَادِ لَفَعَلْنَا، قَالَ: فَنَدَبَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ، فَانْطَلَقُوا حَتَّى نَزَلُوا بَدْرًا، وَوَرَدَتْ عَلَيْهِمْ رَوَايَا قُرَيْشٍ، وَفِيهِمْ غُلَامٌ أَسْوَدُ لِبَنِي الْحَجَّاجِ، فَأَخَذُوهُ، فَكَانَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَسْأَلُونَهُ عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، وَأَصْحَابِهِ، فَيَقُولُ: مَا لِي عِلْمٌ بِأَبِي سُفْيَانَ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فَإِذَا قَالَ ذَلِكَ ضَرَبُوهُ، فَقَالَ: نَعَمْ، أَنَا أُخْبِرُكُمْ، هَذَا أَبُو سُفْيَانَ، فَإِذَا تَرَكُوهُ فَسَأَلُوهُ، فَقَالَ مَا لِي بِأَبِي سُفْيَانَ عِلْمٌ، وَلَكِنْ هَذَا أَبُو جَهْلٍ، وَعُتْبَةُ، وَشَيْبَةُ، وَأُمَيَّةُ بْنُ خَلَفٍ، فِي النَّاسِ، فَإِذَا قَالَ هَذَا أَيْضًا ضَرَبُوهُ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمٌ يُصَلِّي، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ انْصَرَفَ، قَالَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَتَضْرِبُوهُ إِذَا صَدَقَكُمْ، وَتَتْرُكُوهُ إِذَا كَذَبَكُمْ»، قَالَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ»، قَالَ: وَيَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْأَرْضِ «هَاهُنَا، هَاهُنَا»، قَالَ: فَمَا مَاطَ أَحَدُهُمْ عَنْ مَوْضِعِ يَدِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আবু সুফিয়ানের (মদীনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথা বললেন। তিনি তার কথারও কোনো উত্তর দিলেন না। পরিশেষে সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আমাদের জবাব?-প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে-নিশ্চয়ই আমরা যেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে বারকুল গামাদ- পর্যন্ত পৌছার জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে আহবান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মিলীত হলেন। আর সাহাবীগণের সামনে সেখান কুরাইশের সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবু সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলতে লাগলো, আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে আবু জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবন খালফ তো-উপাস্থিত আছে। যখন সে এরুপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবু সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পুনরায় আবু সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবু সুফিয়ান জনগণের মাঝে উপস্তিত আছেন। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্হল। বর্ণনাকারী বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি।
عَنْ ثَابِتٍ، قَالَ: قَالَ أَنَسٌ: كُنْتُ مَعَ عُمَرَ، ح وَحَدَّثَنَا شَيْبَانُ بْنُ فَرُّوخَ - وَاللَّفْظُ لَهُ - حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: كُنَّا مَعَ عُمَرَ بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِينَةِ، فَتَرَاءَيْنَا الْهِلَالَ، وَكُنْتُ رَجُلًا حَدِيدَ الْبَصَرِ، فَرَأَيْتُهُ وَلَيْسَ أَحَدٌ يَزْعُمُ أَنَّهُ رَآهُ غَيْرِي، قَالَ: فَجَعَلْتُ أَقُولُ لِعُمَرَ، أَمَا تَرَاهُ؟ فَجَعَلَ لَا يَرَاهُ، قَالَ: يَقُولُ عُمَرُ: سَأَرَاهُ وَأَنَا مُسْتَلْقٍ عَلَى فِرَاشِي، ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا عَنْ أَهْلِ بَدْرٍ، فَقَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، كَانَ يُرِينَا مَصَارِعَ أَهْلِ بَدْرٍ، بِالْأَمْسِ، يَقُولُ: «هَذَا مَصْرَعُ فُلَانٍ غَدًا، إِنْ شَاءَ اللهُ»، قَالَ: فَقَالَ عُمَرُ: فَوَالَّذِي بَعَثَهُ بِالْحَقِّ مَا أَخْطَئُوا الْحُدُودَ الَّتِي حَدَّ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: فَجُعِلُوا فِي بِئْرٍ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ، فَانْطَلَقَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى انْتَهَى إِلَيْهِمْ، فَقَالَ: «يَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ وَيَا فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ هَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَكُمُ اللهُ وَرَسُولُهُ حَقًّا؟ فَإِنِّي قَدْ وَجَدْتُ مَا وَعَدَنِي اللهُ حَقًّا»، قَالَ عُمَرُ: يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ تُكَلِّمُ أَجْسَادًا لَا أَرْوَاحَ فِيهَا؟ قَالَ: «مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ، غَيْرَ أَنَّهُمْ لَا يَسْتَطِيعُونَ أَنْ يَرُدُّوا عَلَيَّ شَيْئًا».
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে একদা আমরা মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে ছিলাম। তখন আমরা চাঁদ দেখাছিলাম। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলম, তাই আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আমি ব্যতীত কেউ বলেনি যে, সে চাঁদ দেখেছে। তিনি বলেন, আমি উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বলছিলাম, আপনি কি চাঁদ দেখছেন না? এ ই তো চাঁদ। কিন্তু তিনি দেখছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলছিলেন, অল্পক্ষণের মাঝেই আমি দেখতে পাব। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে ছিলাম, এমতাবস্থায় তিনি আমাদের নিকট বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী কাফিরদের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। বললেন, গতকাল বদর যুদ্ধাদের ধরাশায়ী হবার স্থান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দেখাচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, আল্লাহর ইচ্ছায় এটা অমুকের ধরাশায়ী হবার স্থান। বর্ণনাকারী বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছেন, শপথ সে সত্তার, যিনি তাকে সত্য বানী সহ প্রেরণ করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সীমারেখা বলে দিয়েছেন, তারা সে সীমারেখা একটুও অতিক্রম করেনি। অতঃপর তাদেরকে একটি কুপে এক জনের উপর অপর জনকে নিক্ষেপ করা হল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট গিয়ে বললেন, হে অমুকের ছেলে অমুক, হে অমুকের ছেলে অমুক! আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যে ওয়াদা তোমাদের সাথে করেছেন তোমরা কি তা সঠিক পেয়েছো? আমার প্রতিপালক আমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন? আমি তা সঠিক পেয়েছি। তখন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! যে সব দেহে প্রাণ নেই, আপনি তাদের সাথে কিভাবে কথা বলছেন? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি যা বলছি, তা তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শুনছনা। তবে তারা এ কথার উত্তর দিতে সক্ষম নয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তিনি গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পরে প্রকাশ্যে দাওয়াত দিবেন
عَنْ أَبِي أُمَامَةَ - قَالَ عِكْرِمَةُ، وَلَقِيَ شَدَّادٌ أَبَا أُمَامَةَ، وَوَاثِلَةَ، وَصَحِبَ أَنَسًا إِلَى الشَّامِ وَأَثْنَى عَلَيْهِ فَضْلًا وَخَيْرًا - عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: قَالَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ السُّلَمِيُّ: كُنْتُ وَأَنَا فِي الْجَاهِلِيَّةِ أَظُنُّ أَنَّ النَّاسَ عَلَى ضَلَالَةٍ، وَأَنَّهُمْ لَيْسُوا عَلَى شَيْءٍ وَهُمْ يَعْبُدُونَ الْأَوْثَانَ، فَسَمِعْتُ بِرَجُلٍ بِمَكَّةَ يُخْبِرُ أَخْبَارًا، فَقَعَدْتُ عَلَى رَاحِلَتِي، فَقَدِمْتُ عَلَيْهِ، فَإِذَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَخْفِيًا جُرَءَاءُ عَلَيْهِ قَوْمُهُ، فَتَلَطَّفْتُ حَتَّى دَخَلْتُ عَلَيْهِ بِمَكَّةَ، فَقُلْتُ لَهُ: مَا أَنْتَ؟ قَالَ: «أَنَا نَبِيٌّ»، فَقُلْتُ: وَمَا نَبِيٌّ؟ قَالَ: «أَرْسَلَنِي اللهُ»، فَقُلْتُ: وَبِأَيِّ شَيْءٍ أَرْسَلَكَ، قَالَ: «أَرْسَلَنِي بِصِلَةِ الْأَرْحَامِ، وَكَسْرِ الْأَوْثَانِ، وَأَنْ يُوَحَّدَ اللهُ لَا يُشْرَكُ بِهِ شَيْءٌ»، قُلْتُ لَهُ: فَمَنْ مَعَكَ عَلَى هَذَا؟ قَالَ: «حُرٌّ، وَعَبْدٌ»، قَالَ: وَمَعَهُ يَوْمَئِذٍ أَبُو بَكْرٍ، وَبِلَالٌ مِمَّنْ آمَنَ بِهِ، فَقُلْتُ: إِنِّي مُتَّبِعُكَ، قَالَ: «إِنَّكَ لَا تَسْتَطِيعُ ذَلِكَ يَوْمَكَ هَذَا، أَلَا تَرَى حَالِي وَحَالَ النَّاسِ، وَلَكِنِ ارْجِعْ إِلَى أَهْلِكَ فَإِذَا سَمِعْتَ بِي قَدْ ظَهَرْتُ فَأْتِنِي»، قَالَ: فَذَهَبْتُ إِلَى أَهْلِي وَقَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ، وَكُنْتُ فِي أَهْلِي فَجَعَلْتُ أَتَخَبَّرُ الْأَخْبَارَ، وَأَسْأَلُ النَّاسَ حِينَ قَدِمَ الْمَدِينَةَ، حَتَّى قَدِمَ عَلَيَّ نَفَرٌ مِنْ أَهْلِ يَثْرِبَ مِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةَ، فَقُلْتُ: مَا فَعَلَ هَذَا الرَّجُلُ الَّذِي قَدِمَ الْمَدِينَةَ؟ فَقَالُوا النَّاسُ: إِلَيْهِ سِرَاعٌ وَقَدْ أَرَادَ قَوْمُهُ قَتْلَهُ فَلَمْ يَسْتَطِيعُوا ذَلِكَ، فَقَدِمْتُ الْمَدِينَةَ فَدَخَلْتُ عَلَيْهِ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ أَتَعْرِفُنِي؟ قَالَ: «نَعَمْ، أَنْتَ الَّذِي لَقِيتَنِي بِمَكَّةَ»، قَالَ: فَقُلْتُ: بَلَى
فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ أَخْبِرْنِي عَمَّا عَلَّمَكَ اللهُ وَأَجْهَلُهُ، أَخْبِرْنِي عَنِ الصَّلَاةِ، قَالَ: «صَلِّ صَلَاةَ الصُّبْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَتَّى تَرْتَفِعَ، فَإِنَّهَا تَطْلُعُ حِينَ تَطْلُعُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ، ثُمَّ صَلِّ فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى يَسْتَقِلَّ الظِّلُّ بِالرُّمْحِ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ، فَإِنَّ حِينَئِذٍ تُسْجَرُ جَهَنَّمُ، فَإِذَا أَقْبَلَ الْفَيْءُ فَصَلِّ، فَإِنَّ الصَّلَاةَ مَشْهُودَةٌ مَحْضُورَةٌ حَتَّى تُصَلِّيَ الْعَصْرَ، ثُمَّ أَقْصِرْ عَنِ الصَّلَاةِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَإِنَّهَا تَغْرُبُ بَيْنَ قَرْنَيْ شَيْطَانٍ، وَحِينَئِذٍ يَسْجُدُ لَهَا الْكُفَّارُ»
قَالَ: فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ فَالْوُضُوءَ حَدِّثْنِي عَنْهُ، قَالَ: «مَا مِنْكُمْ رَجُلٌ يُقَرِّبُ وَضُوءَهُ فَيَتَمَضْمَضُ، وَيَسْتَنْشِقُ فَيَنْتَثِرُ إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ، وَفِيهِ وَخَيَاشِيمِهِ، ثُمَّ إِذَا غَسَلَ وَجْهَهُ كَمَا أَمَرَهُ اللهُ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا وَجْهِهِ مِنْ أَطْرَافِ لِحْيَتِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ يَدَيْهِ إِلَى الْمِرْفَقَيْنِ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا يَدَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَمْسَحُ رَأْسَهُ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رَأْسِهِ مِنْ أَطْرَافِ شَعْرِهِ مَعَ الْمَاءِ، ثُمَّ يَغْسِلُ قَدَمَيْهِ إِلَى الْكَعْبَيْنِ، إِلَّا خَرَّتْ خَطَايَا رِجْلَيْهِ مِنْ أَنَامِلِهِ مَعَ الْمَاءِ، فَإِنْ هُوَ قَامَ فَصَلَّى، فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَمَجَّدَهُ بِالَّذِي هُوَ لَهُ أَهْلٌ، وَفَرَّغَ قَلْبَهُ لِلَّهِ، إِلَّا انْصَرَفَ مِنْ خَطِيئَتِهِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ».
فَحَدَّثَ عَمْرُو بْنُ عَبَسَةَ بِهَذَا الْحَدِيثِ أَبَا أُمَامَةَ صَاحِبَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو أُمَامَةَ: «يَا عَمْرَو بْنَ عَبَسَةَ، انْظُرْ مَا تَقُولُ فِي مَقَامٍ وَاحِدٍ يُعْطَى هَذَا الرَّجُلُ»، فَقَالَ عَمْرٌو: «يَا أَبَا أُمَامَةَ، لَقَدْ كَبِرَتْ سِنِّي، وَرَقَّ عَظْمِي، وَاقْتَرَبَ أَجَلِي، وَمَا بِي حَاجَةٌ أَنْ أَكْذِبَ عَلَى اللهِ وَلَا عَلَى رَسُولِ اللهِ، لَوْ لَمْ أَسْمَعْهُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا مَرَّةً، أَوْ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلَاثًا حَتَّى عَدَّ سَبْعَ مَرَّاتٍ، مَا حَدَّثْتُ بِهِ أَبَدًا، وَلَكِنِّي سَمِعْتُهُ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ».
ইকরামা (রহ.) বলেন, শাদ্দাদ, আবু উমামা ও ওয়াসিলার সাথে তার সাক্ষাৎ হয়েছে এবং সিরিয়া ভ্রমণকালেও আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সহচর ছিলেন এবং তার প্রশংসা ও গুন বর্ণনা করেছেন। আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমর ইবন আবাসা সুলামী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি প্রাক ইসলাম যুগে সকল মানুষকে পথভ্রষ্ট বলে ধারণা করতাম। তারা কোনো ধর্মের উপর নেই। তারা সবাই মুর্তি পূঁজা, দেব-দেবীর পূঁজা করত। তিনি বলেন, তখন আমি মক্কায় এমন এক ব্যক্তির কথা শুনলাম যিনি বিভিন্ন সংবাদ বর্ণনা করেন। তখন আমি সাওয়ারীর উপর আরোহণ করে তাঁর নিকট এলাম এবং আমি জানতে পারলাম যে তিনি জনসমাবেশ থেকে নিজকে দুরে রাখেন। তাঁর কাওম তাঁর উপর নির্যাতন করে। আমি কৌশলে মক্কায় তার নিকট পৌছিলাম এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনার পরিচয় কি? তিনি বললেন, আমি নবী। আমি বললাম, নবী কি? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আল্লাহ আপনাকে কি দিয়ে পাঠিয়েছেন? তিনি বললেন, আমাকে আত্মীয়তার বন্ধন সুদূঢ় করা, দেব-দেবী ও মূর্তি ভেঙ্গে দেওয়া, আল্লাহকে এক বলে জানা এবং তাঁর সঙ্গে কোনো কিছু শরীক না করা। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এ ব্যাপারে আপনার সঙ্গে কারা আছে? তিনি বললেন, একজন স্বাধীন ব্যক্তি ও একজন কৃতদাস। তিনি বলেন যে, তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিলেন তাদের মধ্যে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন। আমি বললাম, আমিও আপনার অনুসারী হাত চাই। তিনি বললেন, বর্তমান অবস্থায় তুমি তা পারবে না। তুমি আমার অবস্থা ও লোকজনের অবস্থা কি দেখছ না? তুমি বরং পরিজনদের কাছে ফিরে যাও। যখন আমি বিজয় লাভ করেছি বলে শুনতে পাবে তখন আমার কাছে এসো। তিনি বললেন, আমি পরিজনদের কাছে চলে গেলাম। ইতিমধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরত করে মদীনায় গমন করলেন। তখন আমি পরিজনদের মাঝে অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় গমন করার পর থেকে আমি সর্বদা এ বিষয়ে খোঁজ-খবর এবং মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকলাম। মদীনাবাসীদের একদল লোক আমার কাছে এলেন। তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করলাম। যে ব্যক্তি মদীনায় আগমন করেছেন তিনি কি করছেন, তাঁর অবস্থা কি? তারা বললেন, লোকজন অতি দ্রুত তাঁর সাহচর্যে যাচ্ছে তাঁর কাওম তাঁকে হত্যা করতে চাচ্ছিল। কিন্তু তারা সফলকাম হয়নি। আমি ও কথা শুলে মদীনায় গেলাম এবং তাঁর কাছে পৌহুলাম। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাকে চিনতে পেরেছেন? তিনি বললেন হ্যাঁ, তুমি সে ব্যক্তি যে আমার সাথে মক্কায় সাক্ষাৎ করেছিলে। (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, ইয়া-নবী আল্লাহ। আমি জানিনা, আল্লাহ পাক আপনাকে যা কিছু শিখিয়েছেন তা আমাকে শিক্ষা দিন। আমাকে সালাত সম্পর্কে বলুন। তিনি বললেন, ফজরের সালাত আদায় কর। এরপর সূর্য উদিত হয়ে পরিষ্কারভাবে উপরে না উঠা পর্যন্ত তুমি সালাত থেকে বিরত থাক। কেননা সূর্য উদিত হয় তবে -সেটা উদয়ের সময় শয়তানের দু-শিং-এর মাঝখান দিয়ে। সে সময়ে কাফির তাকে সিজদা করে। এরপর সালাত আদায় কর, তীরের ছায়া তার সমান না হওয়া পর্যন্ত। এরপর সালাত থেকে বিরত থাকো কেননা এ সময়ে জাহান্নামকে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর যখন ছায়ায় পরিবর্তন শুরু হয় তখন সালাত পড়তে থাক। ফিরিশতাগণ সালাতে উপস্থিত থাকেন। অর্থাৎ আসরের সালাত আদায় করা পর্যন্ত, তারপর সালাত হতে বিরত থাক সূর্য অস্তমিত না যাওয়া পর্যন্ত। কেননা সূর্য শয়তানের দু-শিং-এর মধ্যে দিয়ে অস্ত যায়। ঐ সময় কাফিররা তাকে সিজদা করে। রাবী বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অযূ সম্পর্কে আমাকে বলে দিন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কোনো ব্যক্তির (কাছে) অযুর পানি পেশ করা হয়, এরপর সে কুলি করে ও নাকে পানি দেয় ও তা পরিষ্কার করে। তখন তার মুখমন্ডলের মূখ গহব্বর ও নাকের সকল গুনাহ ঝরে যায়। তারপর যখন সে আল্লাহ পাকের নির্দেশ অনুসারে মুখমন্ডল ধোয় তখন মুখমন্ডলের চারিদিক থেকে সকল গুনাহ পানির সাথে ঝরে যায়। এরপর যখন দু- হাত ধোয় কুনূই পর্যন্ত, তখন তার উভয় হাতের গুনাহসমূহ আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর উভয় পা গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করলে উভয় পায়ের গুনাহগুলো আঙ্গুল দিয়ে পানির সাথে ঝরে পড়ে। এরপর যদি সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে আল্লাহর হামদ ও সানা বর্ণনা করে, তাঁর মহিমা বর্ণনা করে যথাযোগ্যভাবে ও তাঁর অন্তরে আল্লাহর জন্য মুক্ত করে নিল, তাহলে সে গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে যাবে সেদিনের মত যে দিন তার মাতা তাকে প্রসব করোছিল। আমর ইবন আবাসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও হাদীসটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট বর্ণনা করেন। তখন আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বললেন, হে আমর ইবন আবাসা! ভেবে দেখ, তুমি কি বলছ! একই স্থানে ঐ ব্যক্তিকে এত মর্যাদা দেওয়া হবে। তখন আমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু! আমি বয়োবৃদ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমার হাড়গুলো নরম হয়ে গিয়েছে। আমার মৃত্যু কাল নিকটবর্তী হয়ে পড়েছে। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর মিথ্যা আরোপের কোন প্রয়োজন আমার নেই। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে না শুনতাম একবার দু-বার, তিনবার - এমনকি তিনি সাত বার পর্যন্ত গণনা করলেন। তবে আমি কখনো এ হাদীস বর্ণনা করতাম না। আমি হাদীসটি সাত বারের চেয়েও অনেক বেশী বার শুনেছি।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
হিজাজ থেকে আগুন বের হবে এবং তাতে বসরার উটের ঘাড় আলোকিত হয়ে যাবে।
قَالَ سَعِيدُ بْنُ المُسَيِّبِ: أَخْبَرَنِي أَبُو هُرَيْرَةَ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «لاَ تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَخْرُجَ نَارٌ مِنْ أَرْضِ الحِجَازِ تُضِيءُ أَعْنَاقَ الإِبِلِ بِبُصْرَى».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: কিয়ামত কায়েম হবেনা যতক্ষন না হিজাযের যমীন থেকে আগুন বের হবে, যা বুসরার উটগুলোর গর্দান আলোকিত করে দেবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর উম্মতেরা মসজিদ কারুকার্য করার ব্যাপারে গর্ব করবে।
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَبَاهَى النَّاسُ فِي الْمَسَاجِدِ».
আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, লোকেরা মসজিদে পরস্পরের মধ্যে (নির্মাণ ও কারুকার্য নিয়ে) গর্ব না করা পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর পরে মুজাদ্দিদগণের আগমন হবে যারা দীনের সংস্কার করবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، فِيمَا أَعْلَمُ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا».
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ এ উম্মতের জন্য প্রতি একশত বছর অন্তর একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন, যিনি দীনের সংস্কার করবেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর।
عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خِلَافَةُ النُّبُوَّةِ ثَلَاثُونَ سَنَةً، ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ مَنْ يَشَاءُ، أَوْ مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ».
সাফিনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করবেন, সুলতানাত (বাদশাহী) দান করবেন।
عَنْ سَفِينَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «خِلَافَةُ النُّبُوَّةِ ثَلَاثُونَ سَنَةً، ثُمَّ يُؤْتِي اللَّهُ الْمُلْكَ أَوْ مُلْكَهُ مَنْ يَشَاءُ» قَالَ سَعِيدٌ قَالَ لِي سَفِينَةُ: «أَمْسِكْ عَلَيْكَ أَبَا بَكْرٍ سَنَتَيْنِ، وَعُمَرُ عَشْرًا، وَعُثْمَانُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ، وَعَلِيٌّ كَذَا» قَالَ سَعِيدٌ، قُلْتُ: لِسَفِينَةَ إِنَّ هَؤُلَاءِ يَزْعُمُونَ أَنَّ عَلِيًّا عَلَيْهِ السَّلَام لَمْ يَكُنْ بِخَلِيفَةٍ قَالَ: «كَذَبَتْ أَسْتَاهُ بَنِي الزَّرْقَاءِ يَعْنِي بَنِي مَرْوَانَ».
সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নবুওয়তের খিলাফতের সময়কাল হলো ত্রিশ বছর। এরপর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা রাজত্ব বা বাদশাহী দান করবেন। রাবী সাঈদ (রহ.) বলেন, সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা আমাকে বলেন, তুমি হিসাব কর। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর শাসনকাল হবে দু' বছর; উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর দশ বছর; উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বার বছর এবং আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর অর্থাৎ ছয় বছর। রাবী সাঈদ (রহ.) বলেন, তখন আমি সাফীনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে জিজ্ঞাসা করি যে, বনূ-মারওয়ান এরূপ ধারণা করে যে, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু খলীফাদের অন্তর্ভুক্ত নন। তিনি বলেন, বনূ-মারওয়ানরা মিথ্যা বলেছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
কিয়ামতের নিদর্শনাবলী হলো মালের প্রাচুর্য এবং আধিক্য, ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে আর বিদ্যা বিলুপ্ত হবে।
عَنْ عَمْرِو بْنِ تَغْلِبَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَفْشُوَ الْمَالُ وَيَكْثُرَ، وَتَفْشُوَ التِّجَارَةُ، وَيَظْهَرَ الْعِلْمُ، وَيَبِيعَ الرَّجُلُ الْبَيْعَ فَيَقُولَ: لَا حَتَّى أَسْتَأْمِرَ تَاجِرَ بَنِي فُلَانٍ، وَيُلْتَمَسَ فِي الْحَيِّ الْعَظِيمِ الْكَاتِبُ فَلَا يُوجَدُ ".
‘আমর ইবন তাগলিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মালের প্রাচুর্য এবং আধিক্য হলো কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্তর্গত এবং ব্যবসা বৃদ্ধি পাবে আর বিদ্যা বিলুপ্ত হবে। কোনো ব্যক্তি মাল বিক্রিদাতা বলবে: না, আমি অমুক গোত্রের ব্যবসায়ীর সাথে পরামর্শ করে নেই। আর বিরাট লোকালয়ে লেখক তালাশ করে পাওয়া যারে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
শেষ যমানায় কিছু লোক হবে কালো খিযাব লাগাবে
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَفَعَهُ أَنَّهُ قَالَ: «قَوْمٌ يَخْضِبُونَ بِهَذَا السَّوَادِ آخِرَ الزَّمَانِ كَحَوَاصِلِ الْحَمَامِ، لَا يَرِيحُونَ رَائِحَةَ الْجَنَّةِ».
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শেষ যমানায় কিছু লোক হবে, যারা কালো খিযাব লাগাবে কবুতরের বুকের মত, তারা বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
পারস্যের উপর রোমের বিজয় সাধিত হবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، فِي قَوْلِ اللهِ تَعَالَى: {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ} قَالَ: غُلِبَتْ وَغَلَبَتْ، كَانَ الْمُشْرِكُونَ يُحِبُّونَ أَنْ يَظْهَرَ أَهْلُ فَارِسَ عَلَى الرُّومِ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ أَهْلُ أَوْثَانٍ، وَكَانَ الْمُسْلِمُونَ يُحِبُّونَ أَنْ يَظْهَرَ الرُّومُ عَلَى فَارِسَ لأَنَّهُمْ أَهْلُ كِتَابٍ، فَذَكَرُوهُ لأَبِي بَكْرٍ فَذَكَرَهُ أَبُو بَكْرٍ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: أَمَا إِنَّهُمْ سَيَغْلِبُونَ، فَذَكَرَهُ أَبُو بَكْرٍ لَهُمْ، فَقَالُوا: اجْعَلْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ أَجَلاً، فَإِنْ ظَهَرْنَا كَانَ لَنَا كَذَا وَكَذَا، وَإِنْ ظَهَرْتُمْ كَانَ لَكُمْ كَذَا وَكَذَا، فَجَعَلَ أَجَلاً خَمْسَ سِنِينَ، فَلَمْ يَظْهَرُوا، فَذَكَرَ ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: أَلاَ جَعَلْتَهُ إِلَى دُونَ، قَالَ: أُرَاهُ العَشْرَ، قَالَ سَعِيدٌ: وَالْبِضْعُ مَا دُونَ العَشْرِ، قَالَ: ثُمَّ ظَهَرَتِ الرُّومُ بَعْدُ. قَالَ: فَذَلِكَ قَوْلُهُ تَعَالَى: {الم غُلِبَتِ الرُّومُ}، إِلَى قَوْلِهِ: {يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ} قَالَ سُفْيَانُ: سَمِعْتُ أَنَّهُمْ ظَهَرُوا عَلَيْهِمْ يَوْمَ بَدْرٍ.
ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে
{الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ} প্রসঙ্গে বলেছেন: তিনি غُلِبَتْ وَغَلَبَتْ উভয় পাঠই রয়েছে। তিনি বলেন, মুশরিকরা রোমকদের উপর পারসিকদের বিজয় পছন্দ করতো। কেননা ওরা এবং এরা ছিল মূর্তি পূজারী। আর মুসলিমরা ভালবাসত পারস্যের উপর রোমের বিজয়। কেননা রোমকরা ছিল কিতাবী সম্প্রদায়। তারা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর সঙ্গে এই কথা আলোচনা করে। এরপর আবূ আবূ বকর তা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উল্লেখ করেন। তখন তিনি বললেন: শুনে রাখ, রোমবাসী অবশ্যই অচিরেই জয়লাভ করবে। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন তাদের এই কথা বলেন, তারা বলল, আমাদের এবং তোমার মাঝে এর একটা মেয়াদ নির্ধারণ কর। আমরা যদি জয়ী হই তবে আমাদের হবে অমুক অমুক জিনিস আর তোমরা জয়ী হলে তোমাদের হবে অমুক অমুক জিনিস। তিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ নির্ধারণ করেন। কিন্তু এই সময়ে তাদের বিজয় হয়নি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিষয়টি আলোচনা করা হলে তিনি বললেন: তুমি কেন এর চাইতে বেশী মেয়াদ নির্ধারণ করলে না? সাঈদ (র) বলেন: وَالْبِضْعُ مَا دُونَ العَشْرِ হল দশ বছর থেকে কম। পরবর্তীতে রোমকরা বিজয় লাভ করে। এ প্রসঙ্গে হল আল্লাহর এই বাণী : {الم غُلِبَتِ الرُّومُ} সুফইয়ান (রহ.) বলেন, আমি শুনেছি যে, বদর যুদ্ধের দিন রোমকরা পারস্যের উপর বিজয় লাভ করে।
عَنْ نِيَارِ بْنِ مُكْرَمٍ الأَسْلَمِيِّ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ} فَكَانَتْ فَارِسُ يَوْمَ نَزَلَتْ هَذِهِ الآيَةُ قَاهِرِينَ لِلرُّومِ، وَكَانَ الْمُسْلِمُونَ يُحِبُّونَ ظُهُورَ الرُّومِ عَلَيْهِمْ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ أَهْلُ كِتَابٍ، وَفِي ذَلِكَ قَوْلُ اللهِ تَعَالَى: {وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ العَزِيزُ الرَّحِيمُ} فَكَانَتْ قُرَيْشٌ تُحِبُّ ظُهُورَ فَارِسَ لأَنَّهُمْ وَإِيَّاهُمْ لَيْسُوا بِأَهْلِ كِتَابٍ وَلاَ إِيمَانٍ بِبَعْثٍ، فَلَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى هَذِهِ الآيَةَ، خَرَجَ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ يَصِيحُ فِي نَوَاحِي مَكَّةَ {الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ} قَالَ نَاسٌ مِنْ قُرَيْشٍ لأَبِي بَكْرٍ: فَذَلِكَ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ، زَعَمَ صَاحِبُكَ أَنَّ الرُّومَ سَتَغْلِبُ فَارِسَ فِي بِضْعِ سِنِينَ، أَفَلاَ نُرَاهِنُكَ عَلَى ذَلِكَ، قَالَ: بَلَى، وَذَلِكَ قَبْلَ تَحْرِيمِ الرِّهَانِ، فَارْتَهَنَ أَبُو بَكْرٍ وَالمُشْرِكُونَ وَتَوَاضَعُوا الرِّهَانَ، وَقَالُوا لأَبِي بَكْرٍ: كَمْ تَجْعَلُ البِضْعُ ثَلاَثُ سِنِينَ إِلَى تِسْعِ سِنِينَ، فَسَمِّ بَيْنَنَا وَبَيْنَكَ وَسَطًا تَنْتَهِي إِلَيْهِ، قَالَ: فَسَمَّوْا بَيْنَهُمْ سِتَّ سِنِينَ، قَالَ: فَمَضَتِ السِّتُّ سِنِينَ قَبْلَ أَنْ يَظْهَرُوا، فَأَخَذَ الْمُشْرِكُونَ رَهْنَ أَبِي بَكْرٍ، فَلَمَّا دَخَلَتِ السَّنَةُ السَّابِعَةُ ظَهَرَتِ الرُّومُ عَلَى فَارِسَ، فَعَابَ الْمُسْلِمُونَ عَلَى أَبِي بَكْرٍ تَسْمِيَةَ سِتِّ سِنِينَ، لأَنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ فِي بِضْعِ سِنِينَ، قَالَ: وَأَسْلَمَ عِنْدَ ذَلِكَ نَاسٌ كَثِيرٌ.
নিয়ার ইবন মুকাররাম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
{الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ}
“আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে। নিকটবর্তী অঞ্চলে , আর তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই” । [সূরা রূম: ১-৪]
আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার সময় পারসিকরা রোমকদের উপর বিজয়ী ছিল আর মুসলিমরা তাদের উপর রোমকদের বিজয় ভালবাসতেন। কেননা মুসলিমরা আর এরা উভয়েই ছিলেন আহলে কিতাব। এই প্রসঙ্গে ছিল আল্লাহ্ তা‘আলার এই বাণী:
{وَيَوْمَئِذٍ يَفْرَحُ الْمُؤْمِنُونَ بِنَصْرِ اللهِ يَنْصُرُ مَنْ يَشَاءُ وَهُوَ العَزِيزُ الرَّحِيمُ}
“আর সেদিন মুমিনরা আনন্দিত হবে, আল্লাহর সাহায্যে। তিনি যাকে ইচ্ছা সাহায্য করেন। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু”। [সূরা রূম: ৪-৫]
আর কুরাইশরা ভালবাসত পারসিকদের বিজয়। কেননা এরা উভয়ই আহলে কিতাব ছিল না এবং (মৃত্যুর পর) উত্থানে বিশ্বাসী ছিল না। যা হোক, আল্লাহ্ তা‘আলা এই আয়াত নাযিল করার পর আবূ বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু মক্কার গলিতে গলিতে বের হয়ে পড়েছিলেন এবং চিৎকার করে পাঠ করছিলেন:
{الم غُلِبَتِ الرُّومُ فِي أَدْنَى الأَرْضِ وَهُمْ مِنْ بَعْدِ غَلَبِهِمْ سَيَغْلِبُونَ فِي بِضْعِ سِنِينَ}
“আলিফ-লাম-মীম। রোমানরা পরাজিত হয়েছে। নিকটবর্তী অঞ্চলে, আর তারা তাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই বিজয়ী হবে, কয়েক বছরের মধ্যেই”। [সূরা রূম: ১-৪]
কুরাইশদের কতক লোক তখন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, এ হল আমাদের এবং তোমাদের একটি বিষয়। তোমার নবী তো বলে থাকে যে, কয়েক বছরের মধ্যেই রোম পারস্যের উপর বিজয়ী হবে। আমরা এই বিষয়ে কি একটা বাজি ধরতে পারি না? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন: অবশ্যই। তখনও ইসলামে বাজি নিষিদ্ধ হয়নি! আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও মুশরিকগণ পরস্পর বাজি ধরলেন। কুরাইশরা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, মেয়াদ কতদিন নির্ধারণ করবে? বিদ‘আ শব্দটি তিন থেকে নয় বছর বুঝায় সুতরাং আমাদের এবং তোমার ক্ষেত্রে মাঝামাঝি একটি সময় নির্ধারণ করে নাও, যে সময়ে গিয়ে মেয়াদ শেষ হবে। অনন্তর তারা ছয় বছর সময় নির্ধারণ করেন। কিন্তু ছয় বছর অতিবাহিত হয়ে গেল এ দিকে রোমকদের বিজয় ঘটল না। মুশরিকরা আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্থিরীকৃত বাজির বস্তুটি নিয়ে নিল। সপ্তম বছরে রোমকরা পারসিকদের উপর বিজয় লাভ করে। তখন মুসলিমরা ছয় বছর সময় নির্ধারণের কারণে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দোষারোপ করেন। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা তো এই বিষয়ে فِي بِضْعِ سِنِينَ (তিন থেকে নয় বছর সময়) বলেছিলেন। নিয়ার ইবন মুকাররাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এই সময় বহু লোক ইসলাম গ্রহণ করে।
বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা স্ত্রীলোক সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا، قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ، وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا».
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামবাসী দু-ধরনের লোক, যাদের আমি (এখনো) দেখতে পাইনি। একদল লোক, যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে পিটাবে। আর এক দল স্ত্রীলোক, যারা বস্ত্র পরিহিত হয়েও বিবস্ত্রা, যারা অন্যদের আকর্ষণ কারিনা ও আকৃষ্টা, তাদের- মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কূঁজের ন্যায় ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার খুশবুও পাবে না। অথচ এত এত দূর থেকে তার খুশবু পাওয়া যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
শেষ জামানায় মানুষের মধ্যে আমানতদারীতা কমে যাবে।
عَنْ زَيْدِ بْنِ وَهْبٍ، حَدَّثَنَا حُذَيْفَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدِيثَيْنِ، رَأَيْتُ أَحَدَهُمَا وَأَنَا أَنْتَظِرُ الآخَرَ: حَدَّثَنَا: «أَنَّ الأَمَانَةَ نَزَلَتْ فِي جَذْرِ قُلُوبِ الرِّجَالِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ القُرْآنِ، ثُمَّ عَلِمُوا مِنَ السُّنَّةِ» وَحَدَّثَنَا عَنْ رَفْعِهَا قَالَ: " يَنَامُ الرَّجُلُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ الأَمَانَةُ مِنْ قَلْبِهِ، فَيَظَلُّ أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ الوَكْتِ، ثُمَّ يَنَامُ النَّوْمَةَ فَتُقْبَضُ فَيَبْقَى فِيهَا أَثَرُهَا مِثْلَ أَثَرِ المَجْلِ، كَجَمْرٍ دَحْرَجْتَهُ عَلَى رِجْلِكَ فَنَفِطَ، فَتَرَاهُ مُنْتَبِرًا وَلَيْسَ فِيهِ شَيْءٌ، وَيُصْبِحُ النَّاسُ يَتَبَايَعُونَ، فَلاَ يَكَادُ أَحَدٌ يُؤَدِّي الأَمَانَةَ، فَيُقَالُ: إِنَّ فِي بَنِي فُلاَنٍ رَجُلًا أَمِينًا، وَيُقَالُ لِلرَّجُلِ: مَا أَعْقَلَهُ وَمَا أَظْرَفَهُ وَمَا أَجْلَدَهُ، وَمَا فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ " وَلَقَدْ أَتَى عَلَيَّ زَمَانٌ، وَلاَ أُبَالِي أَيُّكُمْ بَايَعْتُ، لَئِنْ كَانَ مُسْلِمًا رَدَّهُ عَلَيَّ الإِسْلاَمُ، وَإِنْ كَانَ نَصْرَانِيًّا رَدَّهُ عَلَيَّ سَاعِيهِ، وَأَمَّا اليَوْمَ: فَمَا كُنْتُ أُبَايِعُ إِلَّا فُلاَنًا وَفُلاَنًا.
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুটি হাদীস বর্ণনা করেছিলেন, যার একটি আমি দেখেছি (বাস্তবায়িত হয়েছে) আর অপরটির অপেক্ষায় আছি। তিনি আমাদের বলেন, আমানত মানুষের অন্তর্মূলে প্রবিষ্ট হয়। এরপর তারা কুরআন শিখে, তারপর তারা সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করে। তিনি আমাদের আমানত বিলুপ্তি সম্পর্কেও বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, মানুষ এক সময় ঘুমাবে। তার অন্তর থেকে আমানত উঠিয়ে নেওয়া হবে। তখন একটি বিন্দুর ন্যায় চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। এরপর সে আবার ঘুমাবে। তারপর আবার তুলে নেওয়া হবে, তখন ফোসকার ন্যায় তার চিহ্ন অবশিষ্ট থাকবে। যেমন একটা জ্বলন্ত অঙ্গারকে যদি তুমি পায়ের উপর রেখে দাও এতে পায়ে ফোসকা পড়ে, তখন তুমি সেটাকে ফোলা দেখবে। অথচ তার মধ্যে কিছুই নেই। (এ সময়) মানুষ বেচাকেনা করবে বটে কিন্তু কেউ আমানত আদায় করবে না। তখন বলা হবে, অমুক গোত্রে একজন আমানতদার ব্যক্তি আছেন। কোনো কোন লোক সম্পর্কে বলা হবে যে, লোকটি কতই না বুদ্ধিমান, কতই না বিচক্ষণ, কতই না বীর, অথচ তার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান নেই। [এরপর হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন] আমার উপর দিয়ে এমন একটি যুগ অতিবাহিত হয়েছে তখন আমি তোমাদের কার সাথে লেনদেন করছি এ সম্পর্কে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করতাম না। কেননা সে যদি মুসলিম হয় তাহলে তার দীনই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি সে খৃষ্টান হয়, তাহলে তার অভিভাবকরাই (হক আদায়ের জন্য) তাকে আমার কাছে ফিরে আসতে বাধ্য করবে। কিন্তু বর্তমানে আমি অমুক অমুক কে ছাড়া কারো সঙ্গে বেচাকেনা করি না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
তাঁর কিছু সাহাবী পরীক্ষায় পতিত হবেন।
عَنْ حُذَيْفَةَ، قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: «أَحْصُوا لِي كَمْ يَلْفِظُ الْإِسْلَامَ»، قَالَ: فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ، أَتَخَافُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ مَا بَيْنَ السِّتِّمِائَةٍ إِلَى السَّبْعِمِائةٍ؟ قَالَ: «إِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ لَعَلَّكُمْ أَنْ تُبْتَلَوْا»، قَالَ: «فَابْتُلِيَنَا حَتَّى جَعَلَ الرَّجُلُ مِنَّا لَا يُصَلِّي إِلَّا سِرًّا».
হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন আমাদেরকে বললেন, গণনা কর তো, কতজন মানুষ ইসলামের কথা স্বীকার করে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কি আমাদের ব্যাপারে আশঙ্কা করেছেন? আমরা তো প্রায় ছয়শত থেকে সাতশ” লোক আছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন?, তোমরা জান না, অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলা হবে। সাহাবী বলেন, পরবর্তীকালে সত্যিই আমরা পরীক্ষার সম্মুখীন হই, এমন কি আমাদের কোনো কোন ব্যক্তিকে গোপনে সালাত আদায় করতে হতো।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
যে ব্যক্তি মানুষের সম্পদ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে গ্রহণ করে তাঁর শাস্তি।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ».
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়্যাতে আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করেন।
সিরিয়া বিজয় সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَّتَ لِأَهْلِ المَدِينَةِ ذَا الحُلَيْفَةِ، وَلِأَهْلِ الشَّأْمِ الجُحْفَةَ، وَلِأَهْلِ نَجْدٍ قَرْنَ المَنَازِلِ، وَلِأَهْلِ اليَمَنِ يَلَمْلَمَ، هُنَّ لَهُنَّ، وَلِمَنْ أَتَى عَلَيْهِنَّ مِنْ غَيْرِهِنَّ مِمَّنْ أَرَادَ الحَجَّ وَالعُمْرَةَ، وَمَنْ كَانَ دُونَ ذَلِكَ، فَمِنْ حَيْثُ أَنْشَأَ حَتَّى أَهْلُ مَكَّةَ مِنْ مَكَّةَ».
ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহ্রাম বাঁধার স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, মদীনাবাসীদের জন্য যুল-হুলায়ফা, সিরিয়াবাসীদের জন্য জুহফা, নজদবাসীদের জন্য কারনুল-মানাযিল, ইয়ামানবাসীদের জন্য ইয়ালামলাম। হজ্জ ও ‘উমরা নিয়্যাতকারী সেই অঞ্চলের অধিবাসী এবং ঐ সীমারেখা দিয়ে অতিক্রমকারী অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসী সকলের জন্য উক্ত স্থানগুলো মীকাতরূপে গণ্য এবং যারা এ সব মীকাতের ভিতরে (অর্থাৎ মক্কার নিকটবর্তী) স্থানের অধিবাসী, তারা যেখান হতে হজ্জের নিয়্যাত করে বের হবে (সেখান হতে ইহরাম বাঁধবে)। এমন কি মক্কাবাসী মক্কা থেকেই (হজ্জের) ইহরাম বাঁধবে।
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يُهِلُّ أَهْلُ المَدِينَةِ مِنْ ذِي الحُلَيْفَةِ، وَيُهِلُّ أَهْلُ الشَّأْمِ مِنَ الجُحْفَةِ، وَأَهْلُ نَجْدٍ مِنْ قَرْنٍ»، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ وَبَلَغَنِي أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «وَيُهِلُّ أَهْلُ اليَمَنِ مِنْ يَلَمْلَمَ».
ইবন ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মদীনাবাসীগণ যুল-হুলাইফা থেকে, সিরিয়াবাসীগণ জুহফা থেকে ও নজদবাসীগণ কারণ থেকে ইহরাম বাঁধবে। ‘আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি (অন্যের মাধ্যমে) জানতে পেরেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামেনবাসীগণ ইয়ালামলাম থেকে ইহ্রাম বাঁধবে।
عَنْ سُفْيَانَ بْنِ أَبِي زُهَيْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، أَنَّهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «تُفْتَحُ اليَمَنُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ الشَّأْمُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ، وَتُفْتَحُ العِرَاقُ، فَيَأْتِي قَوْمٌ يُبِسُّونَ، فَيَتَحَمَّلُونَ بِأَهْلِيهِمْ وَمَنْ أَطَاعَهُمْ، وَالمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ».
সুফিয়ান ইবন আবূ যুহায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, ইয়ামেন বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে। অথচ মদীনাই তাঁদের জন্য উত্তম ছিল, যদি তাঁরা বুঝত। সিরিয়া বিজিত হবে, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত। এরপর ইরাক বিজিত হবে তখন, তখন একদল লোক নিজেদের সওয়ারী হাঁকিয়ে এসে স্বীয় পরিবার-পরিজন এবং অনুগত লোকদের উঠিয়ে নিয়ে যাবে; অথচ মদীনাই ছিল তাঁদের জন্য কল্যাণকর, যদি তাঁরা জানত।
পরিসমাপ্তি
আলহামদুলিল্লাহ
“সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ” কিতাবখানা শেষ করলাম। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন বইখানা দ্বারা ইসলামের উপকার সাধন করেন। তিনি যেন এ কাজকে একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কবুল করেন।
আল্লাহ সুবহানাহু ওতা‘আলার কাছে দো‘আ করছি তিনি যেন যারা এ কিতাবটি প্রকাশে সর্বাত্বক সহযোগীতা করেছেন তাদেরকে জাযা খাইর দান করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন, প্রিয় ভাই, আলী মাগরিবী, যিনি বইটি কম্পিউটারে লেখার কাজটি করেছেন। আরেকজন হলেন, প্রিয় ভাই, আব্দুল্লাহ ইবন ‘আয়েদ, যিনি সন্নিবেশনের কাজে সাহায্য করেছে। আরেকজন হলেন, প্রিয় ভাই, মুহাম্মদ সুরুর, যিনি প্রকাশনার কাজ সম্পন্ন করেছেন।
“সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ” বইটি সহীহ হাদীসের কিতাব থেকে সংকলিত ও সন্নিবেশিত একখানা কিতাব, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে জমা করতে যতটুকু সহজ ও সাহায্য করেছেন।

©somewhere in net ltd.