নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আস্‌সালামু 'আলাইকুম

আমি আল্লাহর বান্দা। রাসূল(সা)-এর অনুসারী। মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান জানাই!!

বাতি-ঘর

আমি আল্লাহর বান্দা। রাসূল(সা)-এর অনুসারী। মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান জানাই!!

বাতি-ঘর › বিস্তারিত পোস্টঃ

নক্ষত্রের জন্ম মৃত্যু

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৪

রাতের আকাশে মিটমিট করে জ্বলছে হাজার কোটি তারা ( নক্ষত্র ) । অকল্পনীয় দুরত্বে থাকা সত্বেও তারাদের আলো আমরা দেখতে পাই । স্বাভাবিক ভাবেই মনে প্রশ্ন আসতে পারে , কিভাবে একটি তারার সৃষ্টি হয় ? আর এই যে মিটমিট করে জ্বলছে কি ভাবে ? তারাদের অভ্যন্তরে তাপের রহস্য ১৯৩৮ সালে বিজ্ঞানী হানস্ বেথে ( Bethe ) ও ফন উইসজেইকার উদঘাটন করেন । বস্তু গঠিত হয় পরমাণু দিয়ে , আর পরমাণু গঠিত হয় গোটাকতক ভিন্ন ভিন্ন মৌলিক কণিকা (ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন) দিয়ে । তারার প্রধান উপাদান হলো হাইড্রোজেন(H2) ও কিছু হিলিয়াম(He) গ্যাস । এই গ্যাস যখন এক জায়গায় জড়ো হতে হতে একটি পিন্ডের আকার নিলে তখন শুরু হয় মহাকর্ষের খেলা । এই মহাকর্ষের টানে প্রকান্ড গ্যাসীয় পিন্ড সংকুচিত হতে থাকে । যতই সংকুচিত হয় সংকোচনের মাত্রা ও বাড়তে থাকে । এই পযার্য়ে সৃষ্টি হয় প্রোটোস্টার ( Protostar )। Protostar-এর চিত্রঃ



এই অবস্থা এমন একটি পর্যায়ে চলে আসে , তখন পরমাণুর ভিতরকার কণিকাগুলো কাছাকাছি এসে পরস্পরের সাথে ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করে দেয় । এর ফলে তৈরী হয় তাপ এবং এভাবে চলতে চলতে অভ্যন্তরের তাপমাএা যখন ১৫ মিলিয়ন ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড ছাড়িয়ে যায় তখনই তৈরী হয় একটি দীপ্তিশালী তারার । এই পদ্ধতিকে বলা হয় নিউক্লিয়ার ফিউসন ( Nuclear Fusion ) বা পারমাণবিক একীভবন । তারাদের কেন্দ্রে এই বিক্রিয়া ঘটার ফলেই আলো বিকরিত হয় । এই প্রক্রিয়া অনুযায়ী প্রতি সেকেন্ডে একটি তারার কেন্দ্রে ৪ টি হাইড্রোজেন পরমাণু মিলে একটি হিলিয়াম পরমাণুর সৃষ্টি হচ্ছে এই রুপান্তরের পরেও কিছু পরিমাণ ভর বাকী থেকে যায় , বাড়তি এই ভর ( Mass ) শক্তিতে পরিণত হয় । এবং অন্য সব তারাদের মতই আমাদের সূর্যও এভাবেই সৃষ্টি হয়েছিল । এবং সূর্যের দেহ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৪০,০০,০০০ টনের মতো হাইড্রোজেন শক্তি বা বিকিরণের আকারে শেষ হচ্ছে । আর এর জন্যই সূর্যের আলো এবং তাপের এত প্রচন্ডতা । মহাকাশে সূর্যের চেয়ে হাজার গুন বড় নক্ষত্র আছে , যেমন বানরাজ ( Rigel ) এর ব্যাস সূর্যের ব্যাসের ৩৩ গুন । মহাকাশে এই রকম অগুনিত তারার জম্ন হচ্ছে আবার অগুনিত তারার মৃত্যু হচ্ছে । একটি তারা জ্বলতে জ্বলতে এক সময় তার অভ্যন্তরের সমস্ত হাইড্রোজেন যখন নিঃশেষ যায় তখন সেই তারাটির মৃত্যু ঘন্টা বেজে ওঠে , এবং এটি কয়েকটি পযার্য়ে শেষ হয় । তারার জীবনের প্রথম পর্ব : একে বলে মেইন সিকোয়েন্স ( Main sequence ) বা প্রধান পযার্য় । একটি তারা যখন জ্বলে ওঠে তখন সেই তারাটির মাঝে দুটি বল কাজ করে , একটি বল হলো মহাকর্ষীয় বল ( Gravitational Force ) এই বল বাইরের সব বস্তুকে কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত করার চেষ্টা করে । অন্যটি বিকিরণ জনিত চাপ ( Radiation Pressure ) যা তারাটির কেন্দ্র থেকে বাইরে এসে এই একমুখি টানকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে । এই বল দুটি যখন সমান হয় তখন তারাটি একটি স্হিতিশীল অবস্হায় পৌছে , একে বলে তারাটির প্রধান পযার্য় । আমাদের সূর্য বর্তমানে এই পযার্য়ে আছে , এবং বিজ্ঞানীদের ধারনা সূর্য আরো প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর এইভাবে থাকবে । লোহিত দানব ( Red Giant ) : তারার জীবনের দ্বিতীয় পযার্য় । একটি তারা যখন তার মোট হাইড্রোজেনের এক দশমাংশ খরচ করে ফেলবে সাথে সাথে তারাটি অস্হির হয়ে উঠবে । এই অবস্হায় তারাটির কেন্দ্র মহাকর্ষ বলের প্রভাবে অসম্ভব সংকুচিত হতে থাকবে , কেন্দ্রের তাপ বহুগুন বেড়ে যাবে । এই তাপের ফলে তারাটির বাইরের অংশ তপ্ত হয়ে সম্প্রসারিত হবে , এই লাল দানবের পৃষ্ঠের তাপ হবে প্রায় ৩,৫০০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড । সূর্য যখন লোহিত দানব পযার্য়ে পৌছাবে তখন সূর্যের বাইরের অংশ সম্প্রসারিত হয়ে বৃহস্পতির কক্ষপথ পযর্ন্ত পৌছে যাবে । আকশে এই রকম অনেক লাল দানব তারা আছে , যেমনঃ কালপুরুষ ( Orion ) মন্ডলের আদ্রা ( Betelgeuse ) , বৃশ্চিক ( Scorpius ) মন্ডলের জ্যেস্ঠা ( Antares ) এই তারাদের খালি চোখেই লাল রংয়ের দেখতে পাবেন । শ্বেত বামন ( White dwarf ) : এই পযার্য়ে তারাটির বাকী হাইড্রোজেনটুকু হিলিয়ামে পরিবর্তিত হয়ে তাপ আকারে বিকরিত হতে থাকে , এবং বাইরের অংশটি কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । তখন একে বলে প্লানেটরী নীহারিকা ( Planetary nebula ) এই রকম একটি গ্রহ নীহারিকা হেলিক্স ( Helix nebula ) নীহারিকা । এবং তারাটি পূর্বের তুলনায় বহুগুন ছোট হয়ে যায় । তখন এর ব্যাস হয় প্রায় ১৩,০০০ কিঃমিঃ । কিন্ত ছোট হলেও তারাটির ভর থাকবে অপরিবর্তীত । তখন এই তারার এক টেবিল চামচ পদার্থের ওজন হবে প্রায় ৫ টন । কাল বামন ( Black dwarf ) : শ্বেত বামন পযার্য়ে তারাটির দেহের তাপ ও এক সময় নিঃশেষ হয়ে যাবে , এবং এমন একটি পযার্য়ে উপনীত হবে যখন তারাটি আর সংকুচিত হতে পারবে না , এবং সেই সাথে আর তাপের ও বৃদ্ধি ঘটবে না । এবার ধীরে ধীরে তারাটির কাল বামন রুপে পরিণত হয়ে মহাকাশের কোন একখানে পড়ে থাকবে তারাটির মৃতদেহ ।আমাদের সূর্য সহ এই ধরনের অন্যান্য তারার শেষ পরিনতি এই রকম হবে । এখানে উল্লেখ্য কোন তারার পরিনতি কি হবে তা নির্ভর করবে তারাটির আদি ভরের উপর । এবং একটি শ্বেত বামনের ভর কোন ভাবেই সূর্যের ভরের দেড় গুনের বেশী হতে পারবে না । এই সীমারেখাকে চন্দ্র শেখর সীমা বলে । কোন তারার ভর যদি শ্বেত বামনের চেয়ে বেশী হয় তাহলে সেই তারাটির শেষ পযার্য়ে আরো কিছু পরিবর্তন ঘটবে । নিউট্রন স্টার ( Neutron star ) : বেশী ভর সম্পন্ন তারাটি শ্বেত বামন পযার্য় অতিক্রম করবে , এবং মাধ্যাকর্ষণ চাপে তারাটি আরো সংকুচিত হতে থাকবে এবং ভিতরের তাপ বাড়তে বাড়তে এমন পযার্য়ে আসবে যে এই তাপে তারাটিতে একটি প্রচন্ড বিস্ফোরন ঘটবে , এবং তারাটির বাইরের অংশ ছিটকে মহাকাশের বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পরবে । একে বলে সুপার নোভা ( Super nova ) বা নব তারা । এই বিস্ফোরনের আলো এতই উজ্জল হয় যে একটি গ্যালাস্কীর উজ্জলতাও এর কাছে কিছুই না । যদিও এই উজ্জলতা বেশী সময় স্হায়ী হয় না । এই রকম নব তারা হলো বৃষ ( Taurus ) মন্ডলের কাঁকড়া ( Crab nebula ) নীহারিকা , ট্যারানটুলা ( Tarantula nebula ) নীহারিকা যাকে সুপার নোভা ১৯৮৭ বলে । বিজ্ঞানীদের ধারনা মহাকাশে ছিটকে পড়া এই গ্যাস পরবর্তীতে আবার এক জায়গায় সংকুচিত হয়ে আবার নতুন তারার সৃষ্টি করে । এই পযার্য়ে এসে ইলেকট্রন প্রোটন একসাথে হয়ে নিউট্রনে পরিণত হয় । তখন একে বলে নিউট্রন স্টার । মহাকাশে রেডিও তরঙ্গ বিকিরনকারী এই ধরনের তারাকে পালসার ( Pulsar = Pulsating radio sources ) বলে । এই তারার ব্যাস মাএ ১০ কিঃমিঃ কিন্তু এর ঘনত্ব এত বেশী যা প্রায় তিন সৌর ভরের সমান । এই তারার এক টেবিল চামচ পদার্থের ওজন প্রায় ১০০ বিলিয়ন টন । কাঁকড়া নীহারিকার মধ্যে যে তারাটি আছে , সেটি একটি নিউট্রন স্টার । ব্লাক হোল ( Black Hole ) : এই পযার্য়ে অবিরাম সংকোচন চলতে থাকে , মধ্যাকর্ষণের টানে সমস্ত পদার্থ কেন্দ্রের দিকে জড় হতে থাকে । এবং এই শক্তি এমন এক পযার্য়ে পৌছায় যখন কোন কিছুই আর সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে না । এর মধ্যাকর্ষণ টান উপেক্ষা করে আলো পযর্ন্ত বেড়িয়ে আসতে পারে না । আর আলো না আসতে পারায় এই বস্তুটিকে চোখেও দেখা যায় না । মহাকাশের এই বস্তুটিকে বলা হয় কৃষ্ণ গহ্ববর । এর ঘনত্ব এত বেশী যে এর গামলা পদার্থ যদি পৃথিবীতে আনা যায় তার ওজনের জন্য পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে । একে চোখে দেখা না গেলেও এর অবস্হান বের করা সম্ভব । একটি ব্ল্যাক হোলের আকর্ষণ বলয় বিশাল এলাকা জুড়ে একে ঘিরে রাখে । এবং এই আকর্ষণ বলয়ের মধ্যে যদি কোন তারা এসে পড়ে , তখন সেই তারার শরীর থেকে পদার্থ একটি সর্পিল গতিতে কৃষ্ণ গহ্ববরের দিকে আসতে থাকে এবং পদার্থ গহ্ববরের ভিতরে ঢোকার সময় প্রচন্ড গতিতে ঘুরতে থাকে , এবং এর এক পযার্য়ে X রশ্নির সৃষ্টি হয় , বিজ্ঞানীরা এই রশ্মির ঝলক দেখে এর অস্তিত আবিষ্কার বা অনুভব করেন । এই রকম একটি গহ্ববর আছে সিগনাস ( বক ) মন্ডলে যাকে সিগানাস X১ বলে । Black hole হলো একটি তারার চরমতম অবস্হা , তবে সব তারা এই অবস্হায় পৌছাবে না । শুধু মাএ চন্দ্র শেখরের সীমার চেয়ে অত্যাধিক বেশি ভর সম্পন্ন তারার এই পরিণতি হবে । এই হলো একটি তারার সংক্ষিপ্ত জীবন মৃত্যুর বর্ননা ।

(সূত্রঃ ইন্টারনেট)







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.