![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আল্লাহর বান্দা। রাসূল(সা)-এর অনুসারী। মানুষকে সত্যের পথে আহ্বান জানাই!!
আদম সন্তান বলতেই পাপী-গুণাহগার। পাপ করেনি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জন্য জান্নাত তৈরী করেছেন। তাই বলে পাপ নিয়ে তো আর জান্নাতে যাওয়া যায়না। আর এ জন্যই ইসলাম পাপী বান্দার পাপ মোচন করার জন্য নানা রকম ব্যবস্থা করেছে। পাপ থেকে পবিত্র হওয়ার একমাত্র উপায় খাঁটি তওবা। নিজেকে পাপমুক্ত করতে আদম সন্তানের অনেকেই তওবা করে থাকে। কিন্তু কজন সত্যিকার তওবার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম? শুধু মুখে ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ বললেই তওবা হয়না। রয়েছে এর জন্য কতিপয় শর্ত ও বিধি-বিধান। গুণাহ পরিত্যাগ করে অন্তরে ব্যথা জাগিয়ে হায় আফসোস বলে ও অনুতপ্ত হয়ে ভবিষ্যতে উক্ত পাপে জড়িত না হওয়ার দৃঢ় সংকল্পই হলো প্রকৃত তওবা। কিন্তু এমন তওবা কয়জনের ভাগ্যে জোটে? তাইতো আমি তুলে ধরব নবী যুগের এমন একজন ভাগ্যবতী মহিয়সীর জীবন্ত কাহিনী, যিনি তওবা করতে গিয়ে সামাজিক তিরস্কারের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে দুনিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছেন আখেরাত পানে, রেখে গেছেন সারা দুনিয়ার মানুষের জন্য তওবার বেনজির উপমা, কাঁদিয়ে গেছেন হাজারো মা-বোনকে, প্রকম্পিত করেছেন লাখো মানুষের হৃদয়কে, স্থাপন করেছেন সত্য সঠিক তওবার চুড়ান্ত দৃষ্টান্ত, রচনা করেছেন সেচ্ছায় জীবন উৎসর্গের একটি বিস্ময়কর কাহিনী। চলুন আমরা এক পলক দৃষ্টি দেই উক্ত নারীর তওবার কাহিনীর দিকে...
নবী যুগে গামেদি গোত্রের জনৈক মহিলা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিলেন, হ্যাঁ তিনি অবশ্যই ভুল করেছেন। ক্ষণিকের তরে আল্লাহর স্বরণ থেকে গাফেল হয়েছেন। কিন্তু পরক্ষণেই ঈমানি শক্তি ও আল্লাহ ভীরুতা তার অন্তরে দাউ দাউ করে অগ্নি প্রজ্জলিত করে দেয়। অস্থির হয়ে গেলেন। কি করা যায় ভেবে পাচ্ছেননা।
হায়! সদা সজাগ প্রভুর নাফরমানি করে বসলাম। কোন মুখে আমি তার সাথে সাক্ষাত করব? অথচ তিনি আমাকে নিষেধ করেছিলেন।
আর তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়োনা, এটা খুবই অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পন্থা। (সূরা বনী ইসরাঈল : ৩২)
গুণাহের উত্তাপ তার অন্তর পুড়ে ছাই করে দিল। কবীরা গুণাহের বোঝা পাহাড় সম মনে হল। অশ্লীলতার ঘৃণা তার অন্তরে আগুন জ^ালিয়ে দিল। ফলে তিনি শুধু গোপন তওবাতে তৃপ্তি পেলেন না। বললেন, আমি সীমা লঙ্ঘন করেছি। অতএব, হে নবী, আপনি শাস্তি দিয়ে আমাকে পবিত্র করুন।
একি আশ্চর্য! তিনি বিবাহিতা, ভাল করে জানতেন পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলাই হবে তার একমাত্র শাস্তি। প্রিয় নবী ডানে বামে মুখ ফিরিয়ে তাকে দূর করে দিতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না। পরদিন এলেন, তার কাজের উপর প্রমাণ পেশ করার জন্য।
হে নবী! কেন আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন ? তাহলে কি আপনি আমাকে মায়েজ রা. এর মত ফিরিয়ে দিতে চাচ্ছেন? আল্লাহর কসম, আমি ব্যভিচারের কারণে বর্তমানে গর্ভবতী। এবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও সন্তান প্রসব হওয়ার পরে এসো। মাসের পর মাস অতিক্রম করছে। কিন্তু তার অন্তরের আগুন প্রসমিত হচ্ছে না। প্রসবের পর শিশুটিকে কাপড়ে জড়িয়ে উপস্থিত করলেন; এই আমি প্রসব করেছি। এবার তো শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন। এ কেমন পরিস্থিতি! এ কেমন অবস্থা ! দয়ার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : যাও দুধ ছাড়ানোর পর এসো। এক বছর, দুই বছর। কিন্তু তার ইচ্ছার পরিবর্তন হচ্ছে না। দুধ ছাড়ানো হলে প্রমাণ স্বরূপ বাচ্চার হাতে একটি রুটির টুকরা দিয়ে সে অবস্থায় নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। বললেন এই আমি বাচ্চাটির দুধ ছাড়িয়েছি। খানা খাওয়া তার উজ্জল প্রমাণ। এখন তো আপনি আমাকে পবিত্র করতে পারেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নির্দেশে বাচ্চাটিকে অপর এক মুসলমানের হাওলা করা হলো। আদেশ করা হলে তার বুক পর্যন্ত গর্ত করা হলো। উপস্থিত লোকজনকে পাথর নিক্ষেপের আদেশ করা হলো। এদিকে সাহাবি খালেদ ইবনে অলিদ রা. একটি পাথর নিয়ে অগ্রসর হলেন। মহিলার মাথায় নিক্ষেপ করলে রক্ত ছিটকে এসে খাললেদের মুখে পড়ল। খালেদ রা. তাকে গালি দিলেন। আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গালি শুনে বললেন,
مهلا يا خالد، والذي نفسي بيده، لقد تابت توبة لو قسمت بين سبعين لكفتهم.
‘‘হে খালেদ তুমি থাম। যে সত্তার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, এ মহিলা এমন তওবা করেছে, যদি তা সত্তর জন মানুষের মাঝে বন্টন করা হয়, তাহলে তাদের নাজাতের জন্য যথেষ্ট হবে।’’
অতঃপর আদেশ মোতাবেক গোসল দিয়ে কাফন পরানো হলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার জানাযা পড়ালেন। পরে দাফন করা হলো। আমরা কি তার অবস্থা দেখে আশ্চর্য হইনা? দু’বছর পরও পাপের উত্তাপ তাকে দংশন করে যাচ্ছে, আত্মা জালিয়ে দিচ্ছে, অন্তরকে ব্যথা দিচ্ছে। তার জন্য সুসংবাদ। একেই বলা হয় আল্লাহ ভীতি।
এই ঘটনা শিক্ষা দিচ্ছে আমাদের যে কারো থেকে গুণাহ সংঘটিত হওয়া সম্ভব। তবে সেই উত্তম গুণাহগার যে তওবা করে। আর তওবা হওয়া চাই খাটি অন্তরে। হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে তওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেন। আর পাপ রাশিকে পুণ্যে পরিণত করুন। আমিন!
লেখক : আবুল কালাম আযাদ আনোয়ার
সম্পাদনা : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সমাপ্ত
©somewhere in net ltd.