নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন যদি মানুষের উপকারে না আসে, সেই জীবনের মূল্য নেই। সবার মাঝে বিলিন হতে পারাই জীবনের স্বার্থকতা। কান্না নিজের জন্য আর হাসি সবার জন্য।

ইসমাঈল আযহার

মেইল[email protected], স্বপ্ন দেখি শুদ্ধ মানুষ হওয়ার, সোনার বাংলা গড়ার। শখ, লেখালেখি, ঘুরে বেড়ানো। সঙ্গি বই। ভালবাসি মাকে, নিজেকে, আমার বাবাকে।

ইসমাঈল আযহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলিমদের নির্যাতন করা-ই কী মানবতার ধর্ম?

০১ লা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:৩১


উইঘুর মুসলিমরা নির্যাতিত হয়ে আসছে অনেক আগ থেকে। চীন সরকার তাদের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিয়েছে। ঠিকমতো আহারও জুটছে না তাদের। উইঘুর মসজিদগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। গত কয়েক মাস আগে একটি স্যাটালাইটে বেশকিছু মসজিদ ভাঙ্গার দৃশ্য ধরা পড়ে। রমজান মাসসহ পুরো বছর জুড়েই তাদের বিভিন্নভাবে নীপিড়ন করে চীন সরকার। স্থানীয় জনগণের নির্যাতনেরও শিকার হন উইঘুর মুসলিমরা। কেউ কী বলতে পারবে এই নির্যাতনের শেষ কোথায়? উইঘুর মুসলিমদের কোনো দোষ নেই। ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়াটাই তাদের অপরাধ।

চীনে নির্যাতিত মুসলমানদের সহায়তা ও তাদেরকে নির্যাতন থেকে জাতিসংঘ কোন ভূমিকা চোখে পড়ে না। ২০১৯ সালের ১৩ এপ্রিল সোয়াস ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের রিডার র‍্যাচেল হ্যারিস দ্য গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয়তে জানানো হয়, টুইটারে শন ঝ্যাং নামে একজন সাংবাদিক স্যাটেলাইটের তোলা দু’টি ছবি প্রকাশ করার বথা।সেই ছবিতে দেখা গেছে, দক্ষিণের হোতান অঞ্চলের কেরিয়া মসজিদটি যেখানে ছিল, ওই জায়গা এখন একদম ফাঁকা। প্রায় ৮০০ বছর আগে ১২৩৭ সালে অসাধারণ এই স্থাপত্য নিদর্শনটি তৈরি হয়েছিল। ১৯৮০ ও ১৯৯০’র দশকে এটির ব্যাপক সংস্কার করা হয়।


২০১৬ সালে তোলা একটি ছবিতে দেখা যায় এক উৎসবের দিন মসজিদটির সামনের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়েছে। আর ২০১৮ সালে দেখা মসজিদটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে শুধুই সমান জমি। র‍্যাচেল আরও বলেন, ২০১৭ সালে কুমুল এলাকায় গিয়ে একজন প্রতিবেদক স্থানীয় কর্মকর্তার কাছে জানতে পারেন, ওই অঞ্চলের ৮০০টি মসজিদের মধ্যে ২০০টি ইতিমধ্যেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল এবং ২০১৮ সালের মধ্যে আরও ৫০০ মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়ার কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল।

২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ইয়েনিশাফাক এক প্রতিবেদনে জানায়, সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে এক ধরনের বন্দীশিবিরে আটকে রেখেছে চীন।

মানবাধিকার সঙস্থাগুলোর মতে, চীনে উইঘুর মুসলিমরা তীব্র নিপীড়নের শিকার। খোদ জাতিসংঘ বলেছে, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট আছে যে প্রায় ১০ লাখ উইঘুরকে শিনজিয়াংএ বন্দীশিবিরে আটক রাখা হয়েছে। চীন এই কেন্দ্রগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে অভিহিত করে থাকে। কিন্তু এরপরও মানবাধিকার সংস্থাগুলো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।


চলতি বছরের ২৭ জুন। বন্দিশিবির থেকে ছাড় পান কয়েক জন নারী। তাদের মধ্যে একজন জানিয়েছিলেন বন্দিশিবিরে তাদের জীবনের কথা। এসময় জিনজিয়াংয়ে বন্দি থাকা নিজের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাকিস্তানি ব্যবসায়ী জানিয়েছিলেন, ক্যাম্পে তাদের শূকরের মাংস ও অ্যালকোহল খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। কাজেই তার স্ত্রী এখন সেই নিষিদ্ধ বস্তু খাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে ছাড়া পেয়েছেন। যদিও এই অন্তরীণ ক্যাম্পকে চীন সরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে। ইসলামে নিষিদ্ধ এমন কার্যক্রম করতে ক্যাম্পের ভেতর তাদের বাধ্য করা হয়।

সম্প্রতি খবর প্রকাশিত হয়েছে, চীনের মুসলিমদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নেওয়া হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিশাল বাজারের চাহিদা পূরণে প্রতি বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা চীন। চোখ, হৃদযন্ত্র, কিডনি, ফুসফুসসহ মূল্যবান নানা অঙ্গ সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেগুলো অন্যান্য রোগীদের শরীরে লাগোনো হচ্ছে ।জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তদন্তকারীদের এক রিপোর্টে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আল-জাজিরা, রয়টার্স ও সিডনি মর্নিং হেরাল্ড এখবর প্রকাশ করেছে।


খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক দশকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিস্থাপন হল, শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে একটি স্বাস্থ্যবান অঙ্গকে অন্য কোনো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা যাতে সেই রোগীর দেহে অঙ্গটি সচল হয় এবং রোগীর জীবন বেঁচে যায়। যকৃত প্রতিস্থাপন, কিডনি প্রতিস্থাপন, হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন এবং ফুসফুস প্রতিস্থাপন এখন এসব অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেষ পর্যায়ের রোগীদের চিকিৎসা করার একমাত্র কার্যকর উপায়।

চীনের সংবাদ মাধ্যম সিজেআর জানিয়েছে, দৈহিক অঙ্গ উৎসের অভাব চীনে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ক্ষেত্রে এক বড় সমস্যা। বর্তমানে জীবন বাঁচানোর জন্য চীনে প্রতিবছর ১৫ লাখ রোগীরঅঙ্গ প্রতিস্থাপনের দরকার হয়। কিন্তু এসব প্রতিস্থাপনের জন্য যত সংখ্যক অঙ্গের প্রয়োজন হয়, তার মাত্র ১ শতাংশের সরবরাহ পাওয়া যায়।


এদিকে বিবিসির সামপ্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উইঘুর মুসলিম শিশুদের তাদের পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। শতশত শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের। বন্দির সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লাখ। শিশুদের শেখানো হচ্ছে না ইসলামী বা তাদের ধর্মীয় সংস্কৃতি। শেকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হচ্ছে পুরো একটা প্রজন্মকে। নারীদের জোরপূর্বক ইনজেকশনের মাধ্যমে বন্ধ্যা করে দেয়া হচ্ছে।

চীন সরকারের এই ইসলাম দমন কেবল উইঘুর মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পুরো চীনজুড়েই এমন অভিযান চলছে। সরকারের সরাসরি নির্দেশনায় এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের এসব ঘটনা তদন্তে ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক কোয়ালিশন টু অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যান্ট অ্যাবিজ অফ চীন (ইটিএসি) ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এ ট্রাইব্যুনাল জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর এমন নৃশংস নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ করেছে। ট্রাইব্যুনালের প্রধান স্যার জিওফ্রে নিস কিউসি এ অপরাধের প্রমাণ পেয়েছেন বলে জানান।


তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ‘জুনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চীনের বন্দী এবং ফালুন গং ও উইঘুর সংখ্যালঘুদের ওপর মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ আমরা পেয়েছি। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে চীন সরকার সংখ্যালঘু মুসলিমদের হত্যা করে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে নিচ্ছে।’ তবে এই জানানো পর্যন্তই সমাপ্ত। কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রিয় পাঠক বলতে পারেন এই নির্যাতনের শেষ কোথায়? তা হয়ত কেউই বলতে পারবে না! চীনের মুসলিমদের ভাগ্য বোধ হয় এমনই রয়ে যাবে। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।

উইঘুর মুসলিমদের পক্ষে অনেক মুসলিম দেশ মিটিং-মিছিল করে বা আন্দোলন করে। বাংলাদেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বরাবরই সরব ইস্যুটি নিয়ে। এর আগে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তারা সমাবেশ করেছে। বাংলাদেশের সরকারকে নির্যাতন বন্ধের আহ্বান জানানো দাবিও জানিয়েছিল দলটি।


মুসলিম ঐতিহ্যবাহী জিনজিয়াং অঞ্চলে উইঘুর জনগোষ্ঠীর বসবাস হাজার বছর আগে থেকে। সেখানে বরং বর্তমান চীনা সম্প্রদায়ই (যারা প্রধানত হান গোষ্ঠীর) বহিরাগত ও জবরদখলদার। মুসলমানদের স্বর্ণযুগে, ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’ নামে অতীতে সুপরিচিত জিনজিয়াংয়ের কাশগড়, ইয়ারকন্দ, খোটান প্রভৃতি স্থান শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্প-বাণিজ্যের সুবাদে বিশ্বে বিখ্যাত ছিল। গত কয়েক দশক জিনজিয়াংয়ের সংখ্যাগুরু উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষেরা অব্যাহত নির্যাতন-নিপীড়ন এবং বঞ্চনা বৈষম্যের সম্মুখীন। এটা বলা চলে যে, তারা ইসলামি ধর্মবিশ্বাস তথা মুসলিম পরিচয় এবং স্বকীয় কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য মূল্যবোধের কারণেই নানাভাবে নির্যাতন ও নিগ্রহের শিকার হয়ে আসছেন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১:৩১

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: মুসলিম হওয়াটা তাদের অপরাধ না, সংখ্যালঘু হওয়াটা তাদের অপরাধ। সারা দুনিয়ার এইটা একটা কমন সমস্যা। আমি ডয়েচ ভেলের একটা ডকুমেন্টরই দেখছিলাম ইউঘুর জাতির উপর, আইন করে দাড়িই রাখা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ একটা ওরা সংখ্যালঘু। সবাইকে মানুষ হিসেবে চিন্তা করলে এইসব রাষ্ট্রপ্রধানদের এইসব জঘন্য কাম কাজ কমবে । নিজের দেশে এই দুর্গাতেই দেখব হিন্দুরা কি পরিমাণ পেইন খায়।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: আমি তো দেখি বাংলাদেশে মুসলিমদের চেয়ে হিন্দুরা নিরাপদ বেশি। আর ভারতে মুসলিমদের কি অবস্থা এটা তো সবাই জানে। সংখ্যা হলেই যদি নির্যাতনের শিকার হতে হয়। তাহলে মানবতার বুলি আওড়িয়ে লাভ কী!! আমরা কেনই বা তাদের সভ্য ভাবি!

২| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ৭:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: ইতিহাস বলে মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। মুসলিম্রা আজ সুযোগ পেলে হিন্দুদের মূর্তি ভাঙ্গে।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৫

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: আমি যদ্দুর জানি মুসলিমরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার।

৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৫

অগ্নিবেশ বলেছেন: এইডা কি কইলা রাজীব ভাই?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.