নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন যদি মানুষের উপকারে না আসে, সেই জীবনের মূল্য নেই। সবার মাঝে বিলিন হতে পারাই জীবনের স্বার্থকতা। কান্না নিজের জন্য আর হাসি সবার জন্য।

ইসমাঈল আযহার

মেইল[email protected], স্বপ্ন দেখি শুদ্ধ মানুষ হওয়ার, সোনার বাংলা গড়ার। শখ, লেখালেখি, ঘুরে বেড়ানো। সঙ্গি বই। ভালবাসি মাকে, নিজেকে, আমার বাবাকে।

ইসমাঈল আযহার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমাকে হারানোর ব্যথা

০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০



ইবনে আরাবিকে চেনে না পৃথিবীতে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আজ সকালে বিখ্যাত এই মুসলিম দার্শনিক আমার কামরায় হাজির হলেন। আমি খুব কষ্টে আছি। কারণ, আজই আমার প্রেমিকা একরকম বলতে গেলে আমাকে ছেড়ে আজীবনের জন্য চলে গেছে। এ জীবনে হয়ত আর শুনতে পাবো না তার সুন্দর কান্না। শুনবো না তার মাতাল করা সেই হাসি ও কমল কণ্ঠ।

আমার পরীর মতো সুন্দরী প্রেমিকাটির বিয়ে ঠিক হয়েছে ভাগ্যবান এক পুরুষের সঙ্গে। কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মৃত্যু আজ বার বার আমার দিকে উঁকি মারছে। করোনার ভেতরও বাধ্য সন্তানের মতো অফিস করছি। অফিসে অনেক মানুষ আসছে, যাচ্ছে। সংক্রমণের আশঙ্কাও আমাকে ভীষণবাবে পেয়ে বসেছে।

আমার মা বলেন, কী লেখালেখি করিস বাবা? ওসব বাদ দিয়ে অন্যকিছু কর। বাবাও আমার ভবিষ্যৎ জীবন অন্ধকার দেখেন।

মন খারাপ করে বসে আছি। ঘুম ঘুম আসছে। একটু পর অফিসে যাবো। ঠিক এমন সময় দুয়ারে ঠক ঠক শব্দ হলো। দরজা খুলে দেখি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। তিনি কবিতা শুনাতে এসেছেন, আমি তাকে দুয়ার থেকেই তাড়িয়ে দিলাম। বললাম, কবিতা শুনতে ইচ্ছা করছে না। তিনি ফাগুনের গান শোনাতে চাইলেও আমি না করলাম। কারণ, কোনও পুরুষের কণ্ঠে গান আমার ভালো লাগে না।

কিছুক্ষণ পর ইবনে আরাবী নামের বিখ্যাত মানুষটি এলো। বন্ধ দুয়ারের ভেতর দিয়ে তিনি কীভাবে প্রবেশ করলেন আমি জানিনা। তিনি নামাজের মতোই দু হাঠু বিছিয়ে বসলেন। আমি শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে তাকে বলতে চাইলাম, প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দিন। আমার এখন কিছু শুনতে ইচ্ছা করছে না। এমনিতেই একটু আগে কবিগুরু আমাকে বিরক্ত করে গেছেন। কিন্তু বলতে পারলাম না।

আচ্ছা বাংলায় বললে আন্দালুসিয়া এই মানুষটি কিছু বুঝবেন কি?

আমার অনিচ্ছা উপেক্ষা করে তিনি তার সেই পূর্ণ ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে বলতে শুরু করলেন, বাছা! সবর করো, তাতে প্রশান্তি লুকিয়ে আছে।হয়ত বিধাতা তোমার জন্য এরচে ভালো কিছু রেখেছেন। তিনি সর্বদা মানুষের কল্যাণই করেন। জগতের কোনোকিছুই তার অনুমতি ব্যতীত হয় না। যা চাইবে তার নিকট চাও, মন থেকে বলো। সাহসী হও এবং লড়ে যাও, ভীতুর জন্য লজ্জাই অপেক্ষা করছে। আল্লাহর জমিন প্রশস্ত। যা হারিয়েছো তার জন্য আক্ষেপ করো না। ঘটে যাওয়া বিষয়কে ভাগ্য ও বাস্তবতা ভেবে মেনে নাও। মনে রেখো ভাগ্য মানুষের কষ্ট অনুযায়ী হয়।

আমি আবারীকে বললাম, আপনি কি জানেন, আমি সাংবাদিক, আমার ভবিষ্যৎ অনুজ্জল এবং ইনকাম কম হওয়ার জন্য আমার প্রেমিকাকে আমি হারিয়েছি।

তিনি কথা পূর্বের ভাবগাম্ভীর্য ধরে রেখে বললেন, তবে শোনো বাছা, এটা ব্যর্থতা নয়, ঈশ্বর ছাড়া ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কেউ ধারণা রাখে না।

তিনি বললেন, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে এ যাবৎ অনেক ধনী ও বিত্তবানদের আগমন ঘটেছে। যাদের কেউ আজ নেই। অনেকের সম্পদ এতো বেশি ছিলো যে, সম্পদ রক্ষণের কামরাগুলোর চাবি বহন করতে সত্তুরটি উট লাগতো। তারা সবাই আজ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তুমি অঢেল সম্পদের মালিক হও বা না হও মৃত্যু তোমার আসবেই। তোমার শরীর মাটিতে খাবে, আর তোমার সম্পাদ খাবে অন্যরা। মাঝখান দিয়ে তুমি শুধু কষ্টই করে যাবে। তোমার আজকের দিনের যারা অঢেল সম্পাদের মালিক আছে তারাও একদিন চলে যাবে। দেখো না, সামান্য করোনাভাইরাসের কারণে কী নাজেহাল অবস্থায়ই না হয়েছে পৃথিবীটার। বেঁচে থাকার জন্য খাবে, খাওয়ার জন্য বাঁচবে না। তবে হ্যা, যদি মানুষের জন্য কিছু করতে পারো তা অবশ্যই করবে। সর্বদা ঈশ্বরের সরণাপন্ন হবে। ঈশ্বরই একমাত্র প্রশান্তি দান করতে পারেন। আর মনে রাখবে পরিশ্রমী ব্যক্তিকেই সবাই মনে রাখে এবং তা সফলতা এনে দেয়।

প্রেমিকা হারানের শোকে আমি তার কোনও কথাই মন দিয়ে শুনতে পারলাম না। তিনি চলে যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এতো মহান হলেন কীভাবে?

তিনি তার বিখ্যাত উক্তিটি শোনালেন, ‘আমার একাকীত্ব যাপন শুরু হতো ফজরের সময়, যখন সূর্যকিরণ ধীরে ধীরে সব অন্ধকার দূর করে দিতে থাকে। তখন ‘গায়েবি’ (অদৃশ্য) জগতের রহস্যগুলো আমার কাছে একে একে জট খুলত। ১৪ মাস আমি নির্জনে ধ্যান করেছি, সেগুলো দেখেছি আর লিখেছি।’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি আমাকে ধ্যান করতে বলছেন? আমি তো বিখ্যাত ওইপন্যাসিক হতে চাই, লেখক হতে চাই।

তিনি বললেন, ‘জ্ঞান আহরণ করো, কারণ অজ্ঞ ব্যক্তি তার অজ্ঞতা সম্পর্কেও অজ্ঞ। সে তার অজ্ঞতায় প্রতিনিয়ত অবগাহন করে চলে! জ্ঞানী ব্যক্তিও তার জ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞানী নয়। কারণ সে প্রতিনিয়ত তার জ্ঞানের আলোয় অবগাহন করে চলে! আর যে ব্যক্তি আল্লাহর একক অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে, একটি গাধাও তার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে বলে সে প্রমাণ করে।

আরাবি চলে গেলেন, তখনও আমার মুখের সামনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছো তুমি।

অফিসে বসে কাজের ফাঁকে দ্রুত লিখেছি, কোনো ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



অফিসে বসে লিখিয়েন না, সৎ হওয়ার চেষ্টার চেষ্টা করেন; ৮ ঘন্টা কাজের অভ্যাস করেন, সৎ হয়ে যাবেন।

০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৮

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: সৎ হওয়ার চেষ্টার চেষ্টা করে, জ্বি, দোয়া করবেন চাঁদ ভাইয়া, যেন সৎ হতে পারি।

২| ০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: এই সব কি হচ্ছে?? ইবিনে আাবি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনা্থ!!!!!!!!!!!!!

০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৯

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: কখনও কখনও মনে যা আসে তাই লিখতে হয়, সব সময় না।

৩| ০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখক বলেছেন, " সৎ হওয়ার চেষ্টার চেষ্টা করে, জ্বি, দোয়া করবেন চাঁদ ভাইয়া, যেন সৎ হতে পারি। "

-আমার দোয়ায় কাজ হবে না; আপনি ৮ ঘন্টা সঠিভাবে নিজ দায়িত্ব পালন করুন, সৎ হয়ে যাবেন ও চাকুরীতে ভালো করবেন।

৪| ০৩ রা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ইবনে আরাবী এক অনন্য দার্শনিক, সাধক, সিদ্ধপুরুষ বটে।

আহা! আপনি সাক্ষাৎ পেয়েতো ধন্য হয়ে গেলেন
হোক না কল্পনায়, ধ্যানে বা লেখায় :)

+++

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:২৬

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: তিনি আমার কষ্ট কমাতে পারেন নি।

৫| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৮:৪৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


কি ধরণের বিদ্যানদের 'দার্শনিক" বলা হয়, উহা আপনার জানা আছে? মুসলিম এলকায়, একমাত্র দার্শনিক ছিলেন ওমর খৈয়াম; তিনি অংক, এষ্ট্রোনোমী, এনাটমি, ফিৈওলোজী ও জিওলজি জানাতে বিশ্ব ও মানব সভ্যতার উন্নয়নে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। যাকে তাকে দার্শনিক বলে চালিয়ে দিয়েন না; আমাদের ব্লগার "অনল চৌধুরী"ও নিজকে দার্শনিক বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছেন।

৬| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৯:০৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
যে ব্যক্তি আল্লাহর একক অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে,
একটি গাধাও তার চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে বলে সে প্রমাণ করে।
কথা সত্য !! তাই আল্লাহর একক অস্তিত্ব নিয়ে নয় কোন সংশয়।
আল্লাহ ছাড়া ত্রিভূবনে কিছু নাহি হয়,
চাঁদ তারা নদ নদী সব তার হুকুমে বয়।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:২৮

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: আল্লাহ ছাড়া ত্রিভূবনে কিছু নাহি হয়,
চাঁদ তারা নদ নদী সব তার হুকুমে বয়

ঠিক বলেছেন, দোয়া করবেন ভাইয়া।

৭| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৯:১৫

সাইন বোর্ড বলেছেন: আপনার লেখায় বেশ টান আছে, পাঠককে শেষ পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারে ।

৮| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৯:১৭

রাজীব নুর বলেছেন: লিখুন সমস্যা নাই। কিন্তু লেখার চেয়ে বেশি পড়ুন।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:২৮

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: জি ভাইয়া,

৯| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১০:২৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: একজন দার্শনিক আপনার রুমে আর আপনি বসে আছেন । উঠে দাঁড়ান । নেতা চাল চোর । সরকারী চাকরিজীবি কাজে ফাকি ।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:২৯

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: জি ভাইয়া, দাঁড়িয়েছি

১০| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১১:৪৩

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সম্পদের মালিক হলেও মরবে নাহলেও মরবে।ঈশ্বরের সরনাপন্ন হলেও মরবে না হলেও মরবে।এই কথা বলার জন্য খুববেশী জ্ঞানী হওয়ার দরকার নাই।এটা একটা চলমান ঘটনা।মূল সমস্যা হল জ্ঞান।একটা ধারনা আছে জ্ঞান আল্লাহর দান।আমরা প্রায় বলি আল্লাহ ওর জ্ঞান দেয় নাই।অন্যটা হল অভিজ্ঞতার মাধ্যমে কোন বিষয় বা বস্তু সম্পর্কে অর্জিত ধারনা। একটু কঠিন,কাজ করতে হবে।পর্যবেক্ষন করতে হবে,পর্যালোচনা করতে হবে।
উপন্যাসিক হতে চাইলে সমাজের ঘভীরে মিশতে হবে।বাস্তব থেকে চরিত্র তুলে আনাতে হবে,তানাহলে একশ বই লেখলেও সবই হবে বটতলার উপন্যাস। আপনার সাফল্য কামনা করি।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:৩০

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: প্রত্যেকটি মানুষের একটা ভার আছে। কথা বা জ্ঞান সবাই দিতে পারে। তবে সবার কথা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করে না।

১১| ০৪ ঠা মে, ২০২০ ভোর ৪:১০

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: চমৎকার জীবনবোধের গল্প শোনালেন, ভালো লাগলো।

আরেকটা কথা, এরপর থেকে কখনো প্রেমিকার কান্না শুনতে চাওয়ার জন্য আক্ষেপ করবেন না। প্রেমিকাদের কাঁদাতে নেই।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সকাল ৯:৩২

ইসমাঈল আযহার বলেছেন: হাসি কিন্তু ভালোবাসা প্রমাণ করতে পারে না রিদওয়ান ভাই। তার কান্নাই খুব সরল ভাষায় বলে সে কতো চায় আপনাকে।

১২| ০৪ ঠা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭

রিদওয়ান হাসান বলেছেন: @লেখক বলেছেন, কান্নাই খুব সরল ভাষায় বলে সে কতো চায় আপনাকে।

-তাই বলে কাঁদানোকে বৈধতা দিতে পারেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.