নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক সুপ্ত গোয়েন্দা, মানুষের ভীতরে মনুষ্যত্ব খুঁজে বেড়াই।

ইসমাম মাহমুদ

ইসমাম মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোহিঙ্গাদের উৎপত্তি ও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ। ( প্রথম অংশ)

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮


অষ্টম শতাব্দীর কথা। কয়েকটি আরব মুসলিম বাণিজ্য বহর আরাকান তীরবর্তী রামরি দ্বীপের পাশে বিদ্ধস্ত হলে জাহাজের আরোহীরা রহম রহম অর্থাৎ বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে। তখন থেকেই আরাকানের স্থানীয় লোকজন তাদেরকে রহম গোত্রের লোক বলে ডাকতো। তারা সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে। কালের বিবর্তনে সেখানেই বেড়ে উঠে তাদের বংশধরেরা। ধীরে ধীরে রহম শব্দটি পরিবর্তন হয়ে রোহাই এওবং পববর্তীতে তা রোহিঙ্গা নাম ধারণ করে।

কিন্তু এই ইতিহাস নিয়েও বিতর্ক আছে। কোন কোন ইতিহাসবিদ মনে করেন , তারা আফগানিস্তানের গোর প্রদেশের রোহা জেলার অধিবাসীদের বংশধর। কেননা বাংলার প্রথম মুসলিম শাসক ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খলজি আফগানিস্তানের রোহা জেলার কিছু ব্যক্তি কে ইসলাম প্রচারের জন্য আরাকান রাজ্যে পাঠিয়েছিলেন। সেই রোহা বা রোহাং অথবা রোহাইন শব্দ থেকে আসে রোহিঙ্গা।
এই দুইটি ঘটনা থেকে এটা পরিষ্কার যে তারা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলিমদের সংমিশ্রণে এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী। এরা কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। নবম শতকে আরব, মোঘল, তুর্কী ও পর্তুগীজরা সাবেক বার্মা বা বর্তমানে মায়ানমারে বসতি গড়ে। এই ভিনদেশিদের ধারায় আখিয়াবকে রাজধানী করে আরাকান রাজ্য গড়ে তুলে। যার বর্তমান নাম রাখাইন রাজ্য। এই আরাকান রাজ্য ছিল মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে। ১৭৭৫ সালে মগরা আরাকানে আক্রমন করলে রোহিঙ্গারা যুদ্ধে পরাজিত হয়। এই সময় রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে বনে ও নাফ নদীর তীরে আশ্রয় নেয়। ১৮২৫ সালে ইংরেজদের দখলে চলে যায় বার্মা, আরাকান আবার তাদের সাহিত্য শাসন ফিরে পায়। এরপর বাঙ্গালী ও ভারতীয়রা বর্তমান মায়নমারের রেঙ্গুন কেন্দ্রিক ব্যবসা বাণিজ্য জড়িয়ে পড়ে, পিছিয়ে পড়ে বার্মিজরা। এই জন্য তারা রোহিঙ্গাদের দায়ী করতো। এবং সেই থেকে শুরু হয় রোহিঙ্গা আর বার্মিজদের শত্রুতা। পররবর্তী তা আরো জোরালো ভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এবং রোহিঙ্গাদের গণহারে হত্যা করা হতো।

১৯৪৭ সালে যখন দেশ ভাগ হয় তখন নাফ নদীর এইপার আর ঐপারে সীমান্ত দাঁড়িয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হলো তৎকালীন বার্মা যা বর্তমানে মায়ানমার নামে পরিচিত। রোহিঙ্গাদের সাথে সংঘর্ষ শুরো হয় তখন থেকে, রাখাইন আর মগদের অত্যাচার দিন দিন বেরেই যাচ্ছে । এটা চরম পর্যায়ে পৌঁছায় তখন যখন ১৯৬২ সালে যখন সামরিক শাসন জারি হয়। ১৯৭১ সালে এসে শেষমেষ তাদের নাগরিকত্বই কেড়ে নিয়েছিল বার্মিজ সরকার। আরো তিন বছর পর ১৯৭৪ সালে এসে রোহিঙ্গারা হারিয়েছে তাদের ভোটাধিকার। ১৯৭৮ সালে বার্মাতে ( মায়ানমার) শুরু হলো রোহিঙ্গা নিধন। মাঝখানে নাফ নদী ফেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ২.৫০ লাখ রোহিঙ্গা, এটাই ছিলো প্রথম ধাপ। ১৯৮৮ সালে এসে মায়ানমারে স্বাস্থ্য আর শিক্ষার অধিকারও হারিয়ে ফেলে রোহিঙ্গারা। দুইবছর পর ১৯৯০ সালে আবার শুরু হয় রাখাইন-রোহিঙ্গা দাঙ্গা। আবার পরাজিত হয় তারা। কোন উপায় না পেয়ে দ্বিতীরবারের মতো আবার বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে প্রবেশ করে রোহিঙ্গারা। এইবার ৩ লাখেরও বেশি। কিন্তু পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ভাবে চাপের মুখে পড়ে ২ লাখ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় মায়ানমার। ২০১১ সাল থেকে গণতন্ত্রের পথে হাঁটতে শুরু করে দেশটি। কিন্তু নাগরিকত্বের স্বীকৃতি তখনো জুটেনি রোহিঙ্গাদের।

এটাতো ছিল কাগজে কলমে হিসাব। কিন্তু বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ কখনো সাল কিংবা হিসাব করে প্রবেশ করেনি। প্রতিদিনই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে এই দেশে। যার লিখিত হিসেব বা অনুলিপি নেই।

১৯৯১ সালে ঢুকে পড়া সেই ৩ লক্ষাদিক রোহিঙ্গা মুসলিম আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশের কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, হোয়াইকাং, পুটিবুনিয়া, নয়া পাড়া, বালুখালী, ঠ্যাংখালী, আইংখালী ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা জুড়ে। তবে টেকনাফের নয়া পাড়া ও উখিয়ার কুতুপালং দুই শরনার্থী শিবির সরকারি ভাবে স্বীকৃত। নয়া পাড়া ক্যাম্পে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার শরনার্থী এবং অপর ক্যাম্প কুতুপালং এ ১০ হাজার ২শত ছয় জন শরনার্থী নথিভুক্ত হয়। ক্যাম্পে থাকা এইসব রোহিঙ্গাদের প্রত্যেকের সন্তান সংখ্যা গড়ে ০৬-০৭ জন এবং বিয়েও একাদিক। বিশ বছরে এখানে জন্ম নিয়েছে প্রায় ৪৭ হাজার শিশু, আর মৃত্যু বরণ করেছে প্রায় ১১ হাজার শিশু। তার মানে আরো ৩৬ হাজার রোহিঙ্গা বেড়ে উঠেছে ক্যাম্প দুইটিতে।

( সংগৃহীত ও সংকলিত)

( বিঃদ্রঃ এই জরিপ ২০১১ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ , এর পরের গুলো আবার পরবর্তী পর্বে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.