![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই যুগে ভালোবাসা কেমন জানি, চোখের দেখাতেই হয়ে যায়। আর আমরা তার সাইন্টিফিক নাম দিয়েছি ক্রাশ। মেয়েটি দেখতে সুন্দর, তাই হুট করে বলে ফেললাম ভালোবাসি। ছেলেটি অনেক বিলক্ষণ, হাসার সময় মনে হয় শাহরুক খান। আর জিম করা বডি যেন সালমান খান তাই তার সঙ্গে ঘুরতে, কথা বলতে ভালোবাসি। তার ভেতরটা না, বাইরের রূপটিই প্রধান হয়ে ওঠে। অনেকটা মাকাল ফলের মতো; উপরে দেখতে ভালো, ভেতরটা পচা কালো! অথচ যেই মানুষের অবয়ব দেখে কারো সাথে তুলনা করা হয় সেটা কখনোই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হতে পারে না, বরঞ্চ সেটাও ভালো লাগার একাংশ ধরে নেওয়া যায়। এর চাইতে বেশি কিছু ভাবা অনেকটা অলীক কল্পনা মাত্র।
কিংবা এমন একটা মেয়ে দেখলেন যার দীঘল কালো চুল, মায়া হরিণী চোখ, হাসলে মুখে টোল পড়ে, কথা গুলো একদম অমায়িক। ব্যস! এইটূকুই যতেষ্ট, পড়ে গেলেন প্রেমে। এমন ভাবে পড়লেন উঠে আসার চান্স নেই। এক প্রকার উন্মাদ মেয়েটির জন্য। যেন সে বললে আপনি আকাশের চাঁদ এনে দিতেও রাজি।
অথবা এমন একটা ছেলেকে দেখলেন যে বেশ লম্বা, তামিলনাড়ুর নায়ক প্রবাসকেও হার মানাবে। পরিবারের দিক থেকে উচ্চবিত্ত, টাকা পয়সার তোয়াক্কা করে না। দামী পারফিউম, কাপড় পরিধান করে। ব্যাস! প্রেমে পড়তে আর কি লাগে। একজনের ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারটা সুন্দর, ডিএসএলআর আছে। ছেলেটা ছবি এডিটিং ও পারদর্শী। তাছাড়া লিখেও ভালো, গল্পে আর কবিতায় শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কেও হাত মানাবে। অন্যএকজনের সাথে রঙ নাম্বারে পরিচিয়, কোকিল কণ্ঠ, গানের গলা এতো ভালো যে শুনে প্রেমে না পড়ে উপায় নেই। এবারও পড়ে গেলে প্রেমে। মানে ধপ্পাস!
বর্তমানে বেশিরভাগ সম্পর্ক এই ভাবেই শুরু হয়। তারপর মুঠোফোন ভর্তি টাকা নিয়ে দিন রাত একি কথা গুলো রিপিট জিজ্ঞেস করতে থাকা, একজন আরেকজনকে বাবু-সোনা-টিয়ে-ময়না এই নামে সম্মোহন করা। সিনেমা দেখা, ফাস্টফুড খাওয়া। এক সাথে পার্কের কোন এক কোণে গিয়ে হাতে হাত রেখে বাদাম ছিলতে ছিলতে অলস সময় ব্যয় করে। তারপর ভালোলাগা গুলো ফুরিয়ে আসলে একজনের উপর অন্যজন দোষারোপ করে ছেড়ে চলে যাওয়া। হুম ঠিক ধরেছেন, ব্রেকআপ! সবার ক্ষেত্রে না হলেএ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেষমেশ এটাই ঘটে। এর একটাই কারণ তাদের মধ্যে যা ছিলো তার পুরোটাই আকৃষ্টতা মাত্র।
অনেকেই বলতে দেখেছি তার বেশ কয়েকটা গালফ্রেন্ড আছে। যার মধ্যে একটা মাত্র রিয়েল লাভার, বাকি সবাইকে নাকি টাইমপাসের জন্য রাখা হয়েছে। আমি চিন্তা করতেছি ঐ মেয়েটাই আবার তাকে টাইম পাসের জন্য ব্যবহার করছে নাতো? কারণ আমরাই সবাই জানি প্রকৃতি তার প্রতিশোধ ঠিকই নেই।
এমন ছোট ছোট অনেক বিষয় আপনার ভালো লাগবে। কারো কথা বলার ধরন, কারো চলার ভঙ্গী, কারো হাসি আপনার ভালো লাগার একাংশ। সেটাকে আপনি ভালোবাসা নয় ভালো লাগা হিসেবে প্রাধান্য দিন। কারণ কাউকে ভালোবাসা অতোটা সহজ না, যতোটা আপনি মনে করেন। ভালোবেসে কারো হাত ধরে অনেকদূর পর্যন্ত যাওয়া চারটে খানে কথা নয়। কাউকে ভালোবেসে পুরো পৃথিবীর বিপক্ষে দাঁড়ানো অনেক সাহসের ব্যাপার।যেটা ভালোবাসাতে আছে।
ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি গেলেই বুকের হার্টবিট বাড়তে থাকবে, বুকের মধ্যে এমন ঘূর্ণিঝড় উঠবে যেটা থামানো অনেক কষ্টসাধ্য। অথচ ভালো লাগার মানুষের সামনের গেলে তার কিছু প্রতিফলিত হবে না। ভালোবাসা মানুষের চোখে চোখ পড়তেই যতদ্রুত সম্ভব সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করবে, অথচ ভালো লাগার মানুষের চোখের দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগবে। কেননা সে তোমার ভালো লাগার পাত্র।
ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে অমাবস্যাতিথির ঘুটঘুটে অন্ধকারকেও পূর্ণিমারাতের জ্যোৎস্নাময়ী আলোর মতো মনে হবে। কেনোনা তখন তোমার সাথে তোমার ভালোবাসার চাঁদ বসে আছে। ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকলে মাঘমাসের কনকনে শীতের দিনটাকে হেমন্তের পাতা ঝরা দিনের মতো মনে হবে। আর বর্ষার ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে যখন তখন ভিজতে ইচ্ছে করে। বাজি ধরতে রাজি হয়ে যাবেন এই পৃথিবীর বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কোন চিন্তা না করেই।
আর এটাই ভালোবাসা।
©somewhere in net ltd.