নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক সুপ্ত গোয়েন্দা, মানুষের ভীতরে মনুষ্যত্ব খুঁজে বেড়াই।

ইসমাম মাহমুদ

ইসমাম মাহমুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিতুর বিয়ে!!

১৯ শে আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৫৮

ডাকনাম মিতু। খুব সুন্দর না?


নামটা আসলে মিতুর বাবার দেওয়া। মিতু যখন জন্ম গ্রহণ করে তখন মিতুর বাবা ছিলো সেনাবাহিনীর অফিসার। অথচ মেয়ের জন্মের সময় তিনি পাশে নেই। দেখতে আসবে বলে ছুটি চেয়েছিলো, কিন্তু তাকে ছুটি দেওয়া হয়নি। তখন কলিজার টুকরা মেয়েকে এক পলক দেখতে সেনাবাহিনীর চাকুরী ছেড়ে চলে এসেছিলেন তিনি। এসেই মেয়ের নাম রেখেছে আফরোজা সুলতানা , ডাক নাম মিতু। জন্মের পর থেকে সব সময় বন্ধুর মতো কাছে ছিলো মিতুর বাবা। খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে পৃথিবীতে বেশির ভাগ মেয়েরই খুব ভালো বন্ধু তার বাবা। কারণ পৃথিবীতে সব বাবার কাছে তার মেয়ে রাজকন্যার মতো। মিতুও তার বাবার কাছে তেমনি, বলতে পারেন তার চাইতেও বেশি কিছু।


ছোট বেলা থেকেই মিতু যখন অসুস্থ হয়ে হসপিটালাইজড হয়ে যাই তখন তার বাবাও তার সাথে হাসপাতালে থাকতো। মিতু সুস্থ না হওয়ার আগ অব্ধি কোথাও যেতো না। সব সময় সবার চাইতে একটু বেশিই কেয়ার নিতেন।
একবার মিতুকে নার্স ইঞ্জেকশন দিতে দেখে মিতুর বাবা প্রায় কেঁদেই দিয়েছিলো, তখন মিতুই বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলো “ বাবা! এটা তেমন কিছু না, আমার এতটুকুও ব্যথা লাগেনি”।


মন খারাপ থাকলে মিতু বাড়ির ছাদে পায়চারী করতো, আর কেউ না বুঝলে বিষয়টা মিতুর বাবা ঠিকই বুঝে যেতো। মধ্য রাতে মোটরসাইকেলে করে নিয়ন আলোই সারা শহর ঘুরে ঘুরে উপভোগ করতো মেয়ে আর বাবা। তারপর এলাকার মিতুমত চাচার দোকানে এসে ভাপা পিঠা আর চা খেয়ে বাসায় গিয়ে দেখতো মিতুর মা ঘুমাচ্ছে। মিতুর মা আবার ঘুমকাতুরে মানুষ, ঘুমালে আর খেয়াল থাকে না কিছুর প্রতি।
অবশ্য তারাও তাকে বিরক্ত করে না। বাবা মেয়ে দুজনে নিজ দায়িত্ব খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।


মিতুর বিয়ের ব্যাপারটা নিয়ে মিতুর বাবা খুবই উদ্ধিগ্ন, কিন্তু মিতু বিয়ের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। কারণ মিতু চাই নিজের একটা পরিচয় তৈরি করে নিতে। পড়া লেখা শেষ করে ভালো একটা জব করবে, বাবা-মাকে দেখবে। বাবা-মা যে তাদের সবটা দিয়ে দায়িত্ব নিয়ে মিতুকে বড় করেছে, নিশ্চয় মিতুরও এখন একটা দায়িত্ব আছে। তারপর না হয় বাবার পছন্দে একটা বিয়ে করবে।
অবশ্য এইসব বিষয়ে মিতুর বাবা মিতুর পক্ষেই এতদিন রায় দিয়ে এসেছে। কিন্তু মিতুর বাবার মাথাটা খেয়েছে মিতুর বাবার বন্ধু আর পাড়া প্রতিবেশি। তাদের সেই লেইম লজিক।
মেয়েকে এত পড়িয়ে কি হবে, রান্নায় তো করতে হবে। বয়স বেড়ে গেলে বিয়ে দিতে কষ্ট হবে, বয়স্ক মেয়ের বিয়ে হয় না। আয়বুড়ো হয়ে থাকতে হবে , আরো কতো কথা।
বাবার সাফ কথা এইবার বিয়ে করতেই হবে।


কানাডা প্রবাসী ছেলে, বিয়ের পর মিতুকেও কানাডা নিয়ে যাবে। মেয়ের জন্য এর চাইতে সুখের আর কি হতে পারে। মিতুর বাবার ভাবনা এত ভালো প্রস্তাব বারবার আসে না। তাই হাতছাড়া না করে হে বলে দিয়েছিলো।


অনেক চিন্তা করেছে মিতু। কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না, ঘুরে ফিরে সমাধান একটা বাবার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে। আর সাত-পাঁচ না ভেবে বাবাকে খুশি করতে মিতু বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলো।


আজ মিতুর বিয়ে, অথচ মিতুর খুবই মন খারাপ। এদিকের মিতুর চাইতে বেশি মন খারাপ মিতুর বাবার। যদিও বা বিষয়টা মিতুর চোখের আড়াল করতে ব্যস্ত, তবুও মেয়ে বলে কথা মনের অবস্থাটা ঠিক বুঝে ফেলেছে মিতু।পৃথিবীর এই এক অদ্ভুত নিয়ম। মেয়ে হলে জন্ম নিলে বিয়ের পর স্বামীর ঘরেই আজীবন থাকতে হবে। অথচ মিতুর ইচ্ছে ছিলো তার বাবা-মা সহ স্বামী সংসার নিয়ে এক সাথে থাকবে।


বৃষ্টিতে ভিজে চা খেতে খুব পছন্দ করে মিতু, পূর্নিমার রাতে যখন চাঁদ জ্যোৎস্না ছড়ায় তখন ঘরে মন ঠিকে না তার। জোনাকপোকার আলোই নিজের অবয়ব দেখতে খুব পছন্দ করে সে। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে বৃষ্টিতে ভেজা, অবেলায় নাক ডেকে ঘুমানো, উপন্যাস আর গল্পে ডুবে থাকা, খুব ভোরে শিশির ভেজা দুর্বাঘাসে খালি পায়ে হাঁটা এইসব কিছুতে মিতুর আগ্রহ বেশি। অথচ সে আদৌ জানে না অপরিচিত ঐ মানুষটারকে কাছে মিতুর এইসব ছোট ছোট আবদার প্রাধান্য পাবে নাকি নিছক পাগলামি মনে করে মিতুকে দাবিয়ে রাখবে সে!


মিতুর স্বপ্ন মাটি ছাপা পড়তে যাচ্ছে। এই সমাজের প্রতিবন্ধকতা , শিকল বাঁধা নিয়ম নারীদের উঠে আসতে দেয়নি। কখনো নিজের পরিচয় তৈরি করতে উদ্ভুদ্ধ করেনি। যখনই কেউ উঠে আসতেছে চেয়েছে নানান অজুহাতে তাদের আত্মবিশ্বাসকে দাবিত করে ইচ্ছেকে স্ফীত করে দিয়েছে।


বিয়ের ক্ষেত্রে এই সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারীর চাইতে অল্প বয়সী মেয়েদের বেশী প্রাধান্য দেওয়া হয়। “আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দিব’ -নেপোলিয়ান বোনাপোর্ট এর এই চিরস্মরণীয় উক্তিটি আমাদের সবার জানা।
মিতুকে যখন তার স্বামীর হাতে তুলে দিচ্ছে তখন ইরার বাবা একটুও কান্না করছিলো না, কিন্তু মিতু জানে কতবড় পাথর বুকে ছাপা দিয়ে তার বাবা এই কাজটা সহজেই সম্পন্ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।


মিতু খুব কান্না করতেছে, বারবার বাবাকে বলতে চেষ্টা করছে
“ বাবা! আমি এই বিয়েতে রাজি নই, আমি তোমার আর মায়ের কাছে সারাজীবন থাকতে চাই” ।
কিন্তু মিতুর চোখে জল আর মুখে ব্যর্থতার গ্লানি ছাড়া আর কিছুই নেই। সে অপারগ, বাবা-মায়ের মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে নিজের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করে তবেই বিয়ের পিড়িতে বসেছে সে। নিজের জন্য না হোক বাবার সম্মানের দিকে তাকিয়ে তাকে সহসায় বরণ করে নিতে হবে এই বাস্তবতা।


মিতুর মতো এমন অনেক মেয়ে আছে যারা বাবা-মায়ের ছাপিয়ে দেওয়া ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দেয়। সমাজের নানান প্রতিবন্ধকতা তাদেরকে নিচ থেকে উপরে উঠে আসার সুযোগটা কেড়ে নেয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.