নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.eurobangla.org/

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ

Jahangir Alam Akash Editor "Euro Bangla" http://www.eurobangla.org/ [email protected] http://penakash.wordpress.com/ http://youtube.com/user/jaakashbd

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘ফেরেস্তাতুল্য’ বর্তমান সরকার শীর্ষ জঙ্গিদেরকে মিডিয়ার মুখোমুখি করেনি, গডফাদারদের বিচার করবেতো?

০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৪৩

জাহাঙ্গীর আলম আকাশ

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার মূল হোতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে ‘বাংলা ভাই’ ও তার আধ্যাত্মিক গুরু শায়খ আবদুর রহমানসহ শীর্ষ ছয় জঙ্গির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েছে গত বছরের মার্চ মাসে। ঝালকাঠিতে বিচারক হত্যার দায়ে জঙ্গিদের মৃত্যুদন্ড হয়। অন্যদিকে জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ-আল-গালিব এখনও জেলহাজতে আছেন। কিন্তু জঙ্গি তৎপরতার মদদদাতা-পৃষ্ঠপোষক তথা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবকশালীরা এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। বাংলা ভাই, আবদুর রহমান এবং ড. গালিবের স্থানীয় পর্যায়ের অনুসারি ক্যাডাররা এখনও বহাল তবিয়তে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘ প্রায় এক বছর শায়খ রহমান ও বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে কথিত সর্বহারা দমনের নামে যে হত্যা-নির্যাতন চালানো হয়েছে, তারও কোন বিচার হয়নি। উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে নির্যাতিতদের আর্তনাদ-আহাজারি আকাশে-বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।

বাংলা ভাই নামক মানুষটি বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের কাছে ছিলেন মূর্তিমান এক আতংক। তার নেতৃত্বে এই অঞ্চলে কায়েম হয়েছিল সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক শাসন। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের একাধিক মন্ত্রী, এমপি ও প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা সম্পন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিসহ পুলিশ প্রশাসন বাংলা ভাই ও তার বাহিনীকে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

বৃহত্তর রাজশাহীতে শুরু হলো যেদিন

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল। আকস্মিকভাবে হাতে বল্লম-হাসুয়া, রামদা, লাঠি আর আগ্নেয়াস্ত্র, কোমরে ও মাথায় সবুজ ফিতা বেঁধে একদল জঙ্গি সন্ত্রাসীর আবির্ভাব ঘটে রাজশাহীর বাগমারায়। পলাশী গ্রামে কৃষি ক্ষেতে কাজ করছিলেন দরিদ্র কৃষক ও আওয়ামী লীগ কর্মী ওয়াসিম ওরফে ওসমান বাবু (২৭)। বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ওসমানকে কুপিয়ে আহত করার পর জবাই করে হত্যা করে। তখন বেলা ১১ টা। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পর জঙ্গিরা আনন্দ-উল্লাস করতে করতে বাগমারা থানার দিকে চলে যায়। এদিন থেকেই বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে শুরু হয় কথিত সর্বহারা নিধন অভিযান। এরপর বাংলা ভাই বাহিনীর সর্বহারা বিরোধী সশস্ত্র অভিযান বৃহত্তর রাজশাহীর রাজশাহী জেলাধীন বাগমারা, পুঠিয়া, নাটোরের নলডাঙ্গা, নাটোর সদর, নওগাঁর আত্রাই, রানীনগর উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে।

হত্যা-নির্যাতনের খতিয়ান

মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হিউম্যান রাইটস (বিআইএইচআর) এর টিএফটি প্রকল্পের অধীন টাস্কফোর্স এগেইনেস্ট টর্চার (টিএফটি) রাজশাহীর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে সশস্ত্র জঙ্গি বাহিনী বৃহত্তর রাজশাহীর ঘরে ঘরে সন্ত্রাস-হত্যা আর নির্যাতনের মধ্য দিয়ে জনমনে চরম ত্রাস ও ভীতির সঞ্চার করে। প্রায় এক বছরের অভিযানে ওই বাহিনীর সন্ত্রাসীরা উল্টো করে ঝুলিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন চালিয়ে ৩২ জন মানুষকে হত্যা করে। নির্যাতনের মাধ্যমে ২ শতাধিক লোককে পঙ্গু করে দেয়। নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ। জনপ্রতিনিধিসহ বহু মানুষ হন ঘর-বাড়ি ছাড়া। বাংলা ভাই বাহিনী ধরে নিয়ে যাবার পর নওগাঁর আত্রাই-রানীনগরের ধর্মীয় সংখ্যালঘু তরুণ সুফল ও সুশান্ত, বাগমারার সাজুরিয়া গ্রামের আবু তালেব ভুট্রা ও বারুইহাটি গ্রামের শহিদুল ইসলামসহ নিখোঁজ রয়েছেন প্রায় ১২ জন লোক। দীর্ঘ চার বছর ধরে এরা নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারনা, নিখোঁজ সকলকেই হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনাসমূহের সঠিক ও কার্যকর তদন্ত হয়নি। হয়নি কোন বিচার। উল্টো নিহতের পরিবার ও নির্যাতিতরা নানান হয়রানি আর বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন। তবে জঙ্গি মদদদানের অভিযোগে দায়ের করা বাগমারার হাসানপুরের নির্যাতিত ফজলুর রহমানের মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শীশ মোহাম্মদ এর ৩১ বছরের কারাদন্ড হয়েছে। যদিও এই দুই অভিযুক্ত পুলিশ বা র‌্যাব এখনও ধরতে পারেনি।

নিহতদের তালিকা

টিএফটির রিপোর্টে বাংলা ভাই বাহিনীর নির্যাতনে নিহত ৩২ জনের মধ্যে পরিচয় মিলেছে যাদের তারা হলেন ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল ওয়াসিম ওরফে ওসমান বাবুকে, ১১ এপ্রিল (১১ এপ্রিল নির্যাতনের পর ১৭ এপ্রিল নিহত) বাংলা বাগমারার কনোপাড়ার গোলাম রব্বানী মুকুলকে উপরে লটকিয়ে, ২০ এপ্রিল দূর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আজাহার আলীকে, ২২ এপ্রিল নওগাঁর রানীনগরের বেলঘরিয়ার মোশারর হোসেন, নাটোরের পীরগাছার সাইফুর, ২৩ জুলাই নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ের কাশিয়াবাড়ির দীপংকরকে একইভাবে, ২৭ এপ্রিল নওগাঁর আত্রাই কাশিয়াবাড়ির দীপংকর রায় ও ইউপি দফাদার, এপ্রিল মাসেই দূর্গাপুরের আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি সদস্য আজাহার আলীকে নির্যাতন করলে তিনি অসুস্থ্য হয়ে গত বছরে মৃত্যুবরণ করেন, ১ মে আত্রাইয়ের ভোঁপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শেখ ফরিদ, অজ্ঞাত ৩ ব্যক্তি, রাজশাহীর বাগমারার নীমপাড়ার রাবেয়ার ১৩ মে ধর্ষণের কারণে ১৪ মে আত্মহনন, ১৫ মে বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও সর্বহারার নেতা নওগাঁরা রানীনগরের সফিকপুরের আবদুল কাইয়ুম বাদশাকে হত্যার পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখা, ২৪ জুন রানীনগরের সিম্বা গ্রামের আওয়ামী লীগ ও সর্বহারা নেতা খেজুর আলীকে টুকরো টুকরো করে কেটে, রাণনিগরের বড়গাছার আফজালকে, ৩০ জুন গাছে ঝুলিয়ে বর্বর নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয় বাগমারার মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ইয়াসিন আলী, ২৫ জুন নাটোরের বাসুদেবপুরে অজ্ঞাতনামা ৩ ব্যক্তিকে হত্যা, ১৪ নভেম্বর রানীনগরের ভেটি ক্যাম্পে ছাত্রলীগ নেতা জিয়াউল হক জিয়া, ২৭ নভেম্বর বাগমারার তাহেরপুরের বিষ্ণুপুরে বাসদ (মাহবুব) নেতা আলী আকবরকে, ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি বাগমারার শ্রীপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুরকে হত্যা ও আওয়ামী লীগ নেতা জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধাকে হত্যা প্রচেষ্টা চালানো হয়। এছাড়া বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া বৃদ্ধ রহিমা বেওয়া কিছুদিন আগে মারা গেছেন।

বাংলা ভাই ও তার বাহিনীকে মদদ ও সহযোগিতা করেছেন যারা

বাংলা ভাই বাহিনীর এসব কর্মকান্ডের প্রতি রাজশাহীর বহুল অেেলাচিত তৎকালিন এসপি মাসুদ মিয়া (জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে চাকুরিচ্যুত), রাজশাহীর পুঠিয়া-দূর্গাপুর থেকে নির্বাচিত বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে এলডিপি নেতা আলমগীর কবির, সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, সাবেক ডাক ও টেলিযোগোযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হক’র সরাসরি মদদ ও সহযোগিতা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলা ভাই ও জঙ্গি তৎপরতার নেপথ্যে জামায়াত-শিবিরের হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সিপিবি ও আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ করা হয়। এছাড়া জামায়াতের আমির সাবেক শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের সেক্রেটারী জেনারেল সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদের বিরুদ্ধেও সিপিবি ও ১৪ দল একই অভিযোগ করেছে।

বাংলা ভাইয়ের অস্তিত্ব অস্বীকার-স্বীকার ও গ্রেফতারের নির্দেশ

ইসলামী বিপ্লবের নামে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে উত্তরাঞ্চলে পরিচালিত হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় দেশের বাইরে ও ভেতরে সরকার প্রচন্ড সমালোচনার মুখে পড়ে। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতারা বলতে থাকেন যে, বাংলা ভাই ও বাংলা ভাই বাহিনী বা জঙ্গি সংগঠনের কোন অস্তিত্ব নেই বাংলাদেশে। এসব মিডিয়ার সৃষ্টি বলে সরকার দায় এড়িয়ে যায়। এরই মধ্যে ২০০৪ সালের ২৩ মে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলা ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘জঙ্গি বা বাংলা ভাই’র অস্তিত্ব নেই’ এমন বক্তব্য অসাঢ় প্রমাণিত হয় প্রাথমিকভাবে।

বিগত ২০০৫ সালের ২২ জানুয়ারি বাগমারায় আওয়ামী লীগ নেতা ও জনপ্রিয় ইউপি চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন মৃধাকে বাংলা ভাই বাহিনীর ক্যাডাররা হত্যা করতে এসে জনপ্রতিরোধের শিকার হয়ে জনতার ওপর বোমা হামলা চালিয়ে আওয়াম লীগ নেতা মাহাবুর রহমানকে হত্যা করে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতার প্রতিরোধে আটক বাংলা ভাই বাহিনীর তিন ক্যাডার গণপিটুনিতে নিহত হয় একই দিনে। এ ঘটনার পর ২০০৫ সালের ২৪ জানুয়ারি রাজশাহীর বিতর্কিত এসপি মাসুদ মিয়া প্রথম স্বীকার করেন যে, বাংলা ভাই রয়েছে। প্রায় একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও বাংলা ভাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনার কিছুদিন পর দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রেফতারকৃত বাংলা ভাই বাহিনীর ক্যাডারদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বাংলা ভাই ও বাংলা ভাইয়ের আধ্যাত্মিক গুরু বলে পরিচিত শায়খ আবদুর রহমানের নেতা হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ-আল-গালিবের নাম বেরিয়ে আসে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে পুলিশ ২০০৫ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি দিবাগত শেষ রাতে অর্থাৎ ২৩ ফেব্র“য়ারি ভোরে ড. গালিবকে তার তিন সহযোগি (আবদুস সামাদ সালাফী, আবদুল লতিফ ও আযীযুল্লাহ) সহ গ্রেফতার করে। বাংলা ভাই ও আবদুর রহমান প্রসঙ্গ কার্যত ধামাচাপা পড়ে যায়। ম্লান হয়ে যায় বাংলা ভাইর গ্রেফতার অভিযান। ২০০৫ সালের ১১ মার্চ রাজশাহীর এসপি মাসুদ মিয়াকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়। জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগে চলতি বছরে তাকে চাকুরিচ্যুত করে সরকার। ওই সালের ১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। একই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এই পুরস্কারের টাকার পরিমাণ ঘোষণা করেন। এই দুই জঙ্গি সন্ত্রাসীকে ধারয়ে দিতে পারলে এক কোটি টাকা পুরস্কার প্রদান করা হবে। যেকোন একজনকে ধরিয়ে দিতে পারলে দেয়া হবে ৫০ লাখ টাকার পুরস্কার। বহু নাটকীয়তার পর অবশেষে ২০০৬ সালের ১ মার্চ সিলেটের শাপলাবাগের সূর্য্যদীঘল বাড়ি হতে শায়ক রহমান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে ধরা দেন। বাংলা ভাই একই সালের ৬ মার্চ ধরা পড়েন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার রামপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে।

যে অজুহাতে জঙ্গি তৎপরতা শুরু হলো

দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে কথিত সর্বহারা সন্ত্রাসীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছিলেন বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ। সর্বহারা দমনে শাসক শ্রেণী সবসময় ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার সুযোগে পুলিশ প্রশাসন সর্বহরাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোন অপারেশন পরিচালনা করেনি কখনও। কথিত সর্বহারা সন্ত্রাসীরা ২০০৪ সালের ৭ ফেব্র“য়ারি সন্ধ্যায় নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলাধীন কামারপাড়া বাজারে ভূমি উপমন্ত্রীর ভাইপো ও যুবদল নেতা গামাকে গুলি ও জবাই করে হত্যা করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি সমর্থক সন্ত্রাসীরা নলডাঙ্গার কাজীপাড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক নেতা-কর্মীদের ৩১ টি বাড়ি ও ১৫ টি দোকানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুন লাগানো হয় গান পাউডার ব্যবহারের মাধ্যমে। সাবেক উপমন্ত্রী দুলুর আরেক ভাইপো ও যুবদল নেতা ডলার এবং ভাগ্নে ডালিমের নেতৃত্বে প্রায় দু’শ লোকের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী এই তান্ডবলীলা চালায়। ওই সালের বছরের ফেব্র“য়ারিতেই সর্বহারাদের হাতে ভূমি উপমন্ত্রীর ভাইপো ও যুবদল নেতা গামা, গামার সহযোগি পুঠিয়ার সাধনপুরে যুবদল নেতা পাখি ও দূর্গাপুরের ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপি নেতা আনোয়ার খুন হন। পাখি ও আনোয়ার কমিশনার নাদিম মোস্তফার খুবই ঘনিষ্ঠ। আর সাবেক ভূমি উপমন্ত্রীর ভাইপো কথিত সর্বহারাদের হাতে নিহত হবার পর সর্বহারাদের নিধনের জন্য জঙ্গিদের মাঠে নামানো হয় বলে শোনা যায়। শুরুর দিকে ক্যাডাররা নিজেদেরেকে ‘দুলু বাহিনী, গামা বাহিনী, আল কায়দা বাহিনী, মুসলিম রক্ষা পরিষদ, মুজাহেদীন বাংলাদেশ, হরকাত-উল জিহাদ’ সহ নানা নামে নিজেদেরকে জাহির

করে। পরবর্তীতে তারা জাগ্রত মসলিম জনতা বাংলাদেশ বা জেএমজেবি নামে তাদের অপারেশন চালাতে থাকে। সর্বহারাবিরোধী অখিভযান শুরুর মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই এলাকার সাধারণ মানুষ বুঝে ফেলেন যে বাংলা ভাই বাহিনীর উদ্দেশ্য সর্বহারা নির্মূল নয়। ফলে নব্য এই সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বাহিনীর কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষ অতি দ্রুতই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।

কে এই বাংলা ভাই?

কথিত সর্বহারাবিরোধী অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে উত্তরাঞ্চলে হত্যা-নির্যাতনের মাধ্যমে ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টিকারি একটি নাম বাংলা ভাই। জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ এর প্রধান ও জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)’র অপারেশনাল চিফ বাংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম (৪৫)’র পিতা নাজির হোসেন। তার বাড়ি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার মহিষবাহান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামে।

বাংলা ভাই একই উপজেলার তরফ সরতাজ ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ১৯৮৯ সালে দাখিল, ১৯৯১ সালে আলিম, ১৯৯৫ সালে বগুড়া আযীযুল হক কলেজ থেকে বাংলায় বিএ অনার্স এবং ১৯৯৭ সালে একই কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি গাবতলী উপজেলার লাঠিগঞ্জ স্কুল ও কলেজে তিন বছর চাকুরি করেন বাংলার প্রভাষক হিসেবে। চাকুরির ফাঁকে ফাঁকে বগুড়া শহরে ছাত্রশিবিরের নিয়ন্ত্রিত রেটিনা কোচিং সেন্টার পরিচালনা করতেন। তবে অন্য একটি মতে, পরীক্ষার ফলাফল ভাল না হওয়ায় ছাত্রশিবিরের পরিচালিত ঢাকাস্থ কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা শুরু করেন। তার অন্য ভাই রফিকুল ইসলাম গাবতলী উপজেলার গেরিরহাটে চাতালের ব্যবসায় নিয়োজিত এবং আরেক ভাই জহুরুল ইসলাম গাবতলী উপজেলার মহিষবাহান ইউনিয়নের মোকসেদিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক। বাংলা ভাই গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা গ্রামের চিলমানেরপাড়া মাদ্রাসার শিক্ষক ইব্রাহিম হোসেনের কন্যা রোকেয়া বেগমকে বিয়ে করেন। তার এক শ্যালক ওমর ফারুক সাঘাটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছাত্রজীবনে বাংলা ভাই ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

আন্তর্জাতিক জঙ্গি কানেকশন ও বাংলা ভাই

ঢাকায় ইসলামী উগ্রপন্থী আন্তর্জাতিক স্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে জড়িত হন এবং সা¤প্রদায়িক নেতা কথিত ইসলামী বিপ্লব’র স্বপ্নদ্রষ্টা জামালপুরের শায়খ আবদুর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ-আল-গালিবের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। মুসলিম ও জিহাদি সংগঠন সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও মটিভেশন ক্যাম্প পরিচালনা করতে থাকেন। এজন্য বেছে নেয়া হয় গ্রামের দরিদ্র যুবকদের। গ্রামে গ্রামে মসজিদ আর মাদ্রাসাগুলোতে সাংগঠনিক ও অস্ত্রসহ জিহাদি নানান প্রশিক্ষণ চলতে থাকে।

ডঃ মু. আসাদুল্লাহ-আল গালিব, ‘বাংলা ভাই’, শায়খ আবদুর রহমান, জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ আর আহলে হাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ একই সূতোয় বাঁধা। ডঃ গালিবের মতবাদ হচ্ছে ‘জিহাদের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে নিতে হবে। তবে তার আগে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে সমাজকে অস্থির করে রাখা এবং মানুষকে বর্তমান সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে বিষিয়ে তোলা’। এই মতবাদে দীক্ষা নিয়ে রাজশাহী, দিনাজপুর, বগুড়া, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, সিলেট, জামালপুর, কুমিল্লা, জয়পুরহাটসহ বাংলাদেশের প্রায় ৬০ টি জেলায় তাদের অর্ধ লক্ষাধিক সুসংগঠিত কর্মী বাহিনী রয়েছে।

পাকিস্তান, লিবিয়া, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, রোহিঙ্গা শরনার্থী সন্ত্রাসীসহ বহু দেশের মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠনের সাথে ‘বাগার’ বা বাংলা ভাই-গালিব ও রহমান’র যোগাযোগ রয়েছে। মূলত এই তিন ব্যক্তিই বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘তথাকথিত ইসলামী বিপ্লব’ ঘটানোর নামে

সন্ত্রাস, বোমাবাজি, হত্যা-নির্যাতন পরিচালনাসহ সহজ-সরল মানুষের মধ্যে চাপিয়ে দেয়া ধর্মীয় অনুশাসন কায়েমের চেষ্টা করছেন। দীর্ঘ আড়াই দশক ধরে গোপনে সংগঠিত হয়ে গত ৪/৫ বছর আগে প্রকাশ্য সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারের জন্য আলোচিত তিন ব্যক্তির মাধ্যমে ভারতের উত্তর প্রদেশের আবদুল মতিন সালাফী মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফাণ্ড সংগ্রহ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তের ভারতের লালগোলাসহ বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে নগদ অর্থ প্রেরণ করে থাকেন। সৌদি আরবে সালাফী আন্দোলন নামে পরিচিত থাকলেও বাংলাদেশে আহলে হাদীছ আন্দোলন নামে পরিচিত এবং তাদের তরুণ-যুব সংগঠন বাংলাদেশে আহলে হাদীছ যুবসংঘ বা জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি) পরিচিত। একই সংগঠন ভারতে জায়সে হিনদ, পাকিস্তানে জায়সে মোহাম্মদ জঙ্গি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আলোচিত। আল-কায়দা নেটওয়ার্কের সাথেও এদের যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। সেনাবাহিনীর ভেতরেও প্রায় তিন হাজার গালিব অনুসারি রয়েছে বলে জানা গেছে।

উত্তরাঞ্চলের প্রথম অপারেশন

বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে জঙ্গিরা পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধে অংশ নেয়। ২০০৩ সালের ১ আগস্ট রাতে জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মহেশপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওইসময় বাংলা ভাই ও তার সহযোগি জঙ্গিরা পুলিশের অস্ত্র লুটে নেয়। জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের মুজাহিদ ও যোদ্ধা হিসেবে বাংলা ভাই সেদিন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। দেশের অভ্যন্তরে এটাই বাংলা ভাইয়ের প্রথম সশস্ত্র অভিযান। এখানে জিহাদি দলিল-দস্তাবেজসহ বাংলা ভাইয়ের ১৯ সহযোগি জঙ্গি ক্যাডার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এর ক’দিন পরে গ্রেফতারকৃত সহযোগিদের দেখতে গিয়ে বাংলা ভাই ধরা পড়েন।

বাংলা ভাই গ্রেফতার হয়েছিলেন, কিন্তু...

২০০২ সালের ১৭ আগস্ট বাগেরহাটের মোল্লাহাটে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতন ও আওয়ামী লীগ নেতা ও তার কন্যাকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে পুলিশ বাংলা ভাইকে তার সহযোগিদেরসহ গ্রেফতার করেছিল। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর পরই বাংলা ভাই তার জঙ্গি পরিচয় গোপন করে নিজেকে আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশের একজন নেতা ও বিশিষ্ট আলেম এবং তার নাম সিদ্দিকুল ইসলাম বলে উপস্থাপন করেছিলেন। বাংলা ভাই ওইসময় চার সপ্তাহ বাগেরহাট জেলহাজতে ছিলেন। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকারের কতিপয় প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপির তদবিরে তিনি ছাড়া পান। স¤প্রতি এই মামলাটি পুনরুজ্জীবীত করে বাংলা ভাই ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়।

এসপি মাসুদ মিয়ার সঙ্গে বাংলা ভাইয়ের বৈঠক

২০০৪ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ৯ টায় বাংলা ভাই ঢাকা মেট্রো-চ-১১-০৪১১ নম্বরের সাদা রঙের মাইক্রোবাসযোগে ৭/৮ জন সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে বাগমারা থেকে রওনা দেন। মোহনপুরে এসে জনতার রোষানলে পড়ে ওই মাইক্রোবাসটি। জনতা ডাকাত মনে করে মাইক্রোবাসটি ঘিরে ফেলে। পরে ক্যাডারদের হাতে থাকা ওয়্যারলেস সেটে পুলিশে খবর দেন বাংলা ভাই। খবর পেয়ে তড়ি ঘড়ি করে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর বর্ণালী মোড়ে দ্বিতীয় দফায় জনতা মাইক্রোবাসটিকে আটক করে। এসময় একই কায়দায় বাংলা ভাই ওয়্যারলেসে আলফা-ওয়ান (পুলিশ কমিশনার এর সেট) এর কাছে সংবাদ পাঠান। এর কিছুক্ষণ পরেই আরএমপির পুলিশ কমিশনার এর একটি বিশেষ দল এসে বাংলা ভাই এর মাইক্রোটি নিয়ে যায় সরাসরি পুলিশ সুপারের অফিসে।

ওইদিন পুলিশ সুপার মাসুদ মিয়ার সঙ্গে তার কার্যালয়ে প্রায় দু’ঘন্টাব্যাপি রুদ্ধদার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাংলা ভাই মাইক্রোবাসে উঠে বাগমারার উদ্দেশে রওনা দেন। এর আগে দুই রাত বাংলা ভাইয়ের ওই দল মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে মাইক্রোবাসে করে সশস্ত্র টহল দেয়।

বাংলা ভাই বাহিনীর রাজশাহী অভিযান

একই বছরের ২৩ মে বাংলা ভাই বাহিনীর হাজার হাজার ক্যাডার রাজশাহীতে সশস্ত্র মহড়া দেয়। এদিন সশস্ত্র মহড়া দেয়ার পর রাজশাহীর ডিসি আজিজ হাসান, এসপি মাসুদ ময়া ও ডিআইজি (বর্তমানে পুলিশের আইজি) নূর মোহাম্মদের কাছে ‘জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ’ এর নামে স্মারকলিপি প্রদান করে। ওইসময় প্রশাসন জঙ্গি বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডারদের জামাই আদর করে প্রটেকশন দিয়েছিল।

বাংলা ভাই বাহিনী যা যা করতো

কথিত সর্বহারা দমনের নামে বৃহত্তর রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও আইন নিজের হাতে তুলে নিত। কতিপয় প্রভাবশালী এমপি ও মন্ত্রীর মদদে পুলিশী সহায়তায় ‘জাগ্রত মুসলিম বাংলাদেশ’ নামের জঙ্গি সংগঠনের সশস্ত্র ক্যাডাররা এলাকায় ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। রাজশাহীর বাগমারা, পুঠিয়া, দূর্গাপুর, নাটোরের নলডাঙ্গা, নওগাঁর আত্রাই ও এসব উপজেলার আশপাশের এলাকাগুলোতে সর্বহারা দমনের নামে বাংলা ভাইয়ের রাজত্ব চলেছে। বাংলা ভাই’র বাহিনী বাধ্যতামূলকভাবে এলাকার জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে নানান ফতোয়া। এর মধ্যে সকলকে বাধ্যতামূলকভাবে নামাজ আদায় (এমনকি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদেরও জোর করে নামাজ পড়নো হতো), সিগারেট-বিড়ি পান বন্ধ, মহিলাদেরকে বোরকা পড়তে বাধ্য করা উল্লেখযোগ্য। এর অন্যথা হলে চালানো হতো বর্বর নির্যাতন। এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল অন্তত ৯ টি নির্যাতন কেন্দ্র। যেখানে চলেছে মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতন আর নৃশংসতা। সর্বহারা সন্দেহে যাকে তাকে ধরে এনে ওপরে ঝুলিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হতো। নির্যাতনের সময় আত্মচিৎকার মাইক্রোফোনে শোনানো হতো। এটা করা হতো যাতে বাংলা ভাই ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিরোধ গড়ে তোলার সাহস না পায়।

সাংÿাদিক ও রাজনীতিকদের হত্যার হুমকি

বহুল আলোচিত বাংলা ভাই বাহিনী’র যত রাগ সাংবাদিকদের ওপর। বাংলা ভাই বাহিনীর জঙ্গিরা গত বছরের ২৩ মে রাজশাহীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সমাবেশ করে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয় দৈনিক জনকন্ঠ’র রাজশাহীস্থ স্টাফ রিপোর্টার আনিসুজ্জামান, দৈনিক সংবাদ এর স্টাফ রিপোর্টার, ডয়েচেভেলে রেডিও জার্মানের ফ্রি-ল্যান্স সংবাদদাতা ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদ’র স্টাফ রিপোর্টার মাহাতাব চৌধুরী, ফটো সাংবাদিক সেলিম জাহাঙ্গীর, রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক ও ওয়ার্কাস পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে।

বাংলা ভাইয়ের সরাসরি নাম পরিচয় দিয়ে একমাত্র জিডি

সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর আলম আকাশ ২০০৪ সালের ৩০ মে মৌলবাদি জঙ্গি সংগঠন জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমবি)’র নেতা তথাকথিত বাংলা ভাই বাহিনীর হত্যা-খুন-নির্যাতন-চাঁদাবাজি ও সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক দুই নেতাকে হত্যার হুমকিদানের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দু’টি জিডি দায়ের করেছিলেন। কিন্তু ওই জডি দু’টির তদন্ত করেনি পুলিশ।

জিডিতে বলা হয়েছে, (বাগমারা থানার জিডি নম্বর-১৬৪৭, বোয়ালিয়া থানার জিডি নম্বর-১৫৮৭ উভয়ের তারিখ-৩০/০৫/২০০৪) গত ১ এপ্রিল থেকে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের বাগমারা, আত্রাই, রানীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গা, দূর্গাপুর, পুঠিয়া প্রভৃতি এলাকায় কথিত সর্বহারা দমনের নামে মানুষের ওপর নির্যাতন-জুলুম চালাচ্ছে। হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ফসল লুটসহ নানা অপকর্ম করছে। দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকা সত্তে¡ও বাংলা ভাই বাহিনী তথা একটি প্রাইভেট বাহিনী দেশের প্রচলিত আইন-কানুন ও সংবিধানের কোন তোয়াক্কা না করে সাধারণ মানুষের ওপর বর্বর ও নৃশংস নির্যাতন চালাচ্ছে। মানুষকে উপরে লটকিয়ে নির্যাতন, নির্যাতনের পর লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখার ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এসব কারণে মানুষের মধ্যে ভীতি, ত্রাস ও আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৫ ধারা অনুযায়ী কেউ কাউকে কোন অবস্থাতেই নির্যাতন করতে পারবে না। কিন্তু তারপরও স্বঘোষিত বাংলা ভাই ওরফে সিদ্দিকুল ইসলাম, ওরফে আবদুর রহমান, ওরফে আজিজুর রহমান, ওরফে আবদুল আজিজ, ওরফে ওমর আলী লিটু, ওরফে ওমর ফারুক পিতা নাজির হোসেন ওরফে শমসের আলী, সাং-কর্ণিপাড়া, উপজেলা-গাবতলী, জেলা-বগুড়া’র নেতৃত্বে কথিত সর্বহারা দমনের নামে গণ-মানুষের ওপর চলছে বাংলা ভাই বাহিনী’র একাত্তরের কায়দায় বর্বর নির্যাতন। বাংলা ভাই বাহিনী’র নির্যাতনের মাধ্যমে গত ১ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত (জিডি করার দিন পর্যন্ত) এক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যসহ মোট ১০ জন হত্যা হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় দু’শ মানুষ।

বাংলা ভাই বাহিনী’র অপরাধ, নির্যাতন, হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, সন্ত্রাস ও নৈরাাজ্যের খবর পরিবেশন করার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ভাই বাহিনী’র জঙ্গি সন্ত্রাসীরা ৪ সাংবাদিক এবং বাংলা ভাই বাহিনী’র তৎপরতা বন্ধের লক্ষ্যে আন্দোলনের নেতৃত্বদানের কারণে আওয়ামী লীগ নেতা তাজুল ইসলাম মোহাম্মদ ফারুক ও ওয়ার্কাস পার্টি নেতা ফজলে হোসেন বাদশাকে হত্যার হুমকি দেয়। ২০০৪ সালের ২৩ মে হাতে লাঠি, হকিস্টিক, ছোরা, বল্লম, কালো ব্যাগ ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে ওই বাহিনী বাগমারা থেকে রাজশাহী মহানগরীতে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। ওইদিনই সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বাংলা ভাই বাহিনী’র জঙ্গিরা এই হুমকি দেয় বলে জিডিতে উল্লেখ রয়েছে। এই জিডি ছাড়া বাংলা ভাইয়ের নামে সরাসরি কোন অভিযোগ নেই বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের কোন থানায়। কিন্তু পুলিশ ওই জিডির কোন তদন্তই করেনি।

নির্যাতিতদের কথা

রানীনগরের বীর মুক্তিযোদ্ধা বাংলা ভাই বাহিনীর হাতে নির্যাতিত আবদুল জলিল (৫৮) একাত্তরে অস্ত্র হাতে নিয়ে দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সেই দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধাকে বাংলা ভাই বাহিনী হাত থেকে খাবারের প্লেট ফেলে দিয়ে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। অশ্র“সিক্ত চোখে তিনি তার ওপর পরিচালিত বর্বর নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করার সময় সেখানে উপস্থিত সকলের চোখ অশ্র“সিক্ত হয়ে ওঠে। একইভাবে ভেটি মাদ্রাসার নৈশ প্রহরি আবদুর রাজ্জাক (৫২) কে পিটিয়েছে জঙ্গিরা। তার ওপর গরম পানি ঢালা হয়েছে। তিনি এখন পঙ্গু (প্রতিবন্ধি)। তিনি বলেন, ‘আল্লাহই ওদের বিচার করবে’।

পঙ্গু (প্রতিবন্ধি) ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই বাংলার মাটিতেই যেন বাংলা ভাই ও তার সহযোগিদের ফাঁসি হয়। আমার এই একটাই চাওয়া।’ শাফিনুর নাহার বলেন, ‘বাংলা ভাই বাহিনীর অপকর্মের বিরুদ্ধে আমিই প্রথম মামলা দায়ের করি। জঙ্গিদের ভয়ে এডভোকেট মামলার তদবির করারও সাহস পাননি। জঙ্গি মদদদাতা ও গডফাদার, এসপি মাসুদ মিয়া ও বাংলা ভাই বাহিনীর সকল ক্যাডারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।’

বাংলা ভাই বাহিনী ধরে নিয়ে যাবার পর থেকেই নিখোঁজ বাগমারার সাজুরিয়া গ্রামের আবু তালেবের মা রাবেয়া বেওয়া বললেন, ‘বাংলা ভাইর সন্ত্রাসীরা আমার ছেলেকে রমজান কায়ার বাড়িতে ধরে নিয়ে যায়। আমি বাংলা ভাইর কাছে গেলে সে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমার ছেলে পানি পানি করে চিৎকার করলেও ওরা এক ফোটা পানি দেয়নি। ওরা আমাকে ও আমার স্বামীকেও হত্যার হুমকি দেয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করনু। কিন্তু আমার ছেলের খোঁচ আইজ পর্যন্ত পানুনা। আমি এখন কি খাবো। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই, ক্ষতিপূরণ চাই।’

নিহত মুকুলের মা খোদেজা বেওয়া বলেন, ‘তাহেরপুর হাইস্কুল মাঠে ইসলামী জলসার নামে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। সেখানে গাছে লটকিয়ে আমার ছেলেকে মেরেছে ওরা। নির্যাতনের আত্মচিৎকারের সময় আমি শুধু মা ডাক শুনতে পেয়েছি। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’

জঙ্গিরা খেজুর আলীর লাশ চার টুকরো করে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল। সেই খেজুরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা বলেন, ‘বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবিরের ইশারায় আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে মারতে মারতে তুলে নিয়ে যায়। ধান বিক্রির টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে। আমার স্বামীর অপরাধ একটাই, সে থানা ছাত্রলীগের পাঠাগার সম্পাদক ছিল। বাংলা ভাই কি করে থানার পুলিশের সামনে দিনের আলোয় হত্যা-নির্যাতন করতে পারলো? বৃদ্ধ শ্বশুর আর আমার দুই শিশু কন্যার এখন কি হবে? বাংলা ভাই কি বলতে পারবে আমার এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো? সরকার এমন একটি বাহিনী বানালো যে বাহিনী জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দেয়া ছাড়া আর কিছুই দিতে পারলোনা। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে সিম্বা স্কুল ভোট কেন্দ্রে আলমগীর কবির ক্যানভাস করার সময় আমার ভাই প্রতিবাদ করায় লাশ চার টুকরো করে তার প্রতিশোধ নিয়েছে। বাংলা ভাইয়ের ক্যাডাররা এখন বলে বেড়াচ্ছে খেজুরকে চার টুকরো করলাম, বাদশার লাশ গাছে ঝুলালাম। কিছুইতো হলোনা। শুধু নাটকীয়ভাবে আমাদেরকে গ্রেফতারই করা হবে। কিছুই হবেনা আমাদের। আমি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির ও ক্যাডারদের ফাঁসি চাই। ক্যাডাররা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে আইন তাদের ধরছে না কেন?’

আত্রাই উপজেলার কাশিয়াবাড়ীর নিহত দীপংকরের পিতা দ্বিজেন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই।’ বাগমারার নিহত ইয়াসিনের পিতা ইসমাইল বলেন, ‘আমার ছেলে ইয়াসিন আওয়ামী লীগের সদস্য। আমার ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই। আপনাদের কাছে আমার এটাই অনুরোধ ও দাবি।’ নাটোরের নলডাঙ্গা সরগতিয়া গ্রামের মনোয়ার হোসেন বাবু যাকে বাংলা ভাই নিজে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল হত্যা করে। বাবুর পিতা মহসিন বলেন, ‘আমার ছেলে তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী ছিল। মন্ত্রী ডুলুর ক্যাডার বাংলা ভাইরা আমার ছেলেকে শুধু হত্যাই করেনি আমার বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করেছে। আমাকে ও আমার পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। গত জাতীয় নির্বাচনের পর বাবুকে দু’বার হত্যার চেষ্টা করে ডুলুর লোকেরা। কিন্তু কোন বিচার নাই। আমি ছেলে হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।’

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আত্রাই ভোঁপাড়ার নিহত শেখ ফরিদের শিশু কন্যা ফারজানা বলেন, ‘আমার বাবা নিরপরাধ ছিল। আমার বাবাকে বাংলা ভাইয়েরা কি জন্য মারলো-আমি বাবা হত্যার বিচার চাই।’ শেখ ফরিদের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, ‘বাংলা ভাইসহ ৯ জন ক্যাডার আমার স্বামীকে তিন ঘন্টা ধরে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি আপনাদের কাছে আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।’

নওগাঁর রানীনগর সফিকপুরের আবদুল কাইয়ুম বাদশা যাকে হত্যার পর লাশ বগুড়ার নন্দিগ্রামের ভাটরা ইউনিয়নের বামন গ্রামের রাস্তার ধারে গাছের ওপর উল্টো করে লটকিয়ে রাখা হয়েছিল। বাদশার ছোট ভাই স্কুল শিক্ষক মাহমুদ মুসা বলেন, ‘বাংলাদেশের একটি কলংকজন অধ্যায় ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রচনা করেছিল বাংলা ভাই। সেসময় অত্যাচার-নির্যাতনের একটি নতুন মডেল আমরা দেখতে পাই। কুখ্যাত বাংলা ভাই-শায়খ রহমান ও জেএমবির অত্যাচারের শিকার আমরা। দেশে আইন-কানুন, পুলিশ, র‌্যাব, আর্মি, বিডিআর থাকার পরও একটি প্রাইভেট বাহিনী কেন নামানো হলো? আমার ভাই বাদশাকে অপহরণ করে বাঁশবাড়িয়া ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সেই ক্যাম্প এখনও তল্লাশি করেনি। ক্যাম্পটি এখনও সচল। মাইকিং করে জবাই ও বিচার করার ঘোষণা দিয়ে বাদশাকে হত্যা করে ওরা। এটা কোন দেশ কোন আ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-১

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৫৩

বাংলার দাদা বলেছেন: আপনার আলোচনাটি ভাল লেগেছে। কিন্তু আমার কাছে এক জায়গায় সন্দেহ এখন আছে। সেটি হল- বাংলা ভাই ও আবদুর রহমানের সাথে ড.আসাদুল্লাহ গালিবের মিশ্রন। কারন এদের মধ্যে মুল আদর্শে অনেক ফারাক।

২| ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:০৩

ইউনুস খান বলেছেন: বিএনপি জামাতের যে সব নেতা তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্চয় দিয়েছিল তাদেরকে ধিক্কার জানাই।

কিন্তু এটা সত্যি যে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই কিন্তু এদের বিচার হয়েছিলো।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:০১

সায়েম হক বলেছেন: সবই ঠিক আছে মাগার জামাতের নামে কিছু কওন যাইবো না। ওরা দুধভাত

৪| ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ রাত ৮:১৪

কমজান্তা বলেছেন: বাংলাদেশের ইতিহাসে দুটি হত্যাকান্ড হলো সবছে দুঃখ জনক হৃদয় বিদারক এক ঘৃন্য তার একটি হলো বাংলা ভাই কতৃক একজন মানুষকে পা উপর দিকে দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা আর অন্যটি হলো বাংলা ভাইয়েরই ঘনিষ্টজন কতৃক পল্টন মোড়ে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা এবং লাশের উপর নৃত্য করা। বাংলা ভাইয়ের মত ওদেরও কি ফাঁসি হওয়া উচিৎ নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.