নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কথা সর্বস্ব

নিঃস্ব হবো জেনেও, দর্শনার্থী আমি।

বাবু পাগলা

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো ছোট ঘাসফুলের জন্যে ... একটি টলোমলো শিশিরবিন্দুর জন্যে .. আমি হয়তো মারা যাবো চৈত্রের বাতাসে উড়ে যাওয়া একটি পাঁপড়ির জন্যে ! একফোঁটা বৃষ্টির জন্যে ...

বাবু পাগলা › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ুন আহমেদ, জোছনা বিলাস এবং অন্যান্য।

২০ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:৪১





‘পানি নেন’।

মজিদ চমকে তাকাল। পানির গ্লাস নিয়ে নসু আসে নি, এসেছে জাহেদা। সে অন্যান্য দিনের মত মাথা নিচু করে দাড়িয়ে নেই। সে তাকিয়ে আছে মজিদের চোখের দিকে। পানির গ্লাস ঠক করে টেবিলে নামিয়ে রাখল না। গ্লাস হাতে নিয়েই সে দাঁড়িয়ে আছে। আজ পানির গ্লাস তার হাত থেকেই নিতে হবে।

‘কেমন আছ জাহেদা ?’

‘ভাল ?’

জাহেদার চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। আশ্চর্য মেয়েটার চোখ এত সুন্দর।

‘পানি নিন। কতক্ষণ গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে থাকব ?’

মজিদ পানির গ্লাস নিল। তার তৃষ্ণা চলে গেছে। তবুও এক চুমুকে পানির গ্লাস শেষ করল।

জাহেদা বলল ‘স্যার, বাবা আপনার সম্পর্কে যা বলেছে তা কি সত্যি’ ?

‘হ্যাঁ। সত্যি’।

‘এই সব আর করবেন না’ ।

‘না আর কোনদিন করব না” ।

‘আমার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করুন’।

মজিদ বিস্মিত হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। কি বলছে এই মেয়ে ?

জাহেদার চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। মেয়েরা তাদের অশ্রু অন্যদের দেখাতে চায় না, প্রিয়জনদের তো কখনই না। কিন্তু জাহেদা তার চোখ নিচু করছে না। সে তাকিয়েই আছে।

‘আপনি কোথাও যাবেন না। এই বাড়িতেই থাকবেন। আমি বাবাকে বলেছি’ ।

‘বাবা তোমার কথা শুনবে ?’

‘হ্যাঁ শুনবে। কই, আপনি তো আমার হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করছেন না’।

মজিদ হাত বাড়াতেই নৈঃশব্দবতী তাকে জড়িয়ে ধরল। এ কি অদ্ভুত কাণ্ড! দরজা খোলা, জানালা খোলা, লোকজন আসা-যাওয়া করছেন। নৈঃশব্দবতী কাঁদছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে।



মজিদ তার খাটে বসে আছে। তার হাতে একগাদা কাগজ। তার সারা জীবনে লেখা প্রতিটা কবিতা এই কাগজের তাড়ায় লেখা আছে। মজিদ বসে বসে কাগজগুলি ছিঁড়ে কুচি কুচি করছে। একটি প্রিয় জিনিস পেতে হলে অন্য একটি প্রিয় জিনিস ছাড়তে হয়। সে আজ থেকে কবিতা ছাড়ল। কবিতাকে তার আর প্রয়োজন নেই।





এটা হুমায়ূন আহমেদের “কবি” উপন্যাসের একটা ছোট্ট অংশ (পৃষ্ঠা ২৪৩-২৪৪), আমি হয়তো খুব বেশি বই পড়ি নি। তবে এর মত রোমান্টিকতার ছায়া আমি আর কোথাও খুঁজে পাই নি। বহুবার পড়েছি উপন্যাসটা।



আমার বই পড়ার শুরুর কথা বলি। খুব ছোটবেলায় সুকুমার রায়ের সমগ্র শিশু সাহিত্য, সত্যজিৎ রায়ের ছোট গল্প মাতাল করত। একবার কোনও এক বিশাল (!) অসুস্থতায় সম্ভবত চিকেন পক্সে পরে দিন-রাত মশারির মধ্যে শুয়ে থাকতাম। তখন নিজের রূপকথা-কমিক্সের বহুবার রেভাইস শেষে, হাত বাড়াই বড় ভাইয়ের বিশাল হুমায়ূন কালেকশানের দিকে। ‘নন্দিত নরকে’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘পেন্সিলে আঁকা পরী’, ‘তোমাদের এই নগরে’, ‘দরজার ওপাশে’, ‘ময়ূরাক্ষী’ আরও অনেক পড়েছিলাম। একটা কথা আমি নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেই, ‘আমার হাতে বইএর সুপার গ্লু লাগিয়েছে হুমায়ূন আহমেদ, আমাকে বই পড়া শিখিয়েছে হুমায়ূন আহমেদ’।



অনেকে হুমায়ূন আহমেদকে বাজারি লেখক, সস্তা লেখক বলে গাল পেড়েছেন। তাদের জন্য শুধুমাত্র দুটো প্রশ্ন- ‘একজন লেখকের কি প্রত্যেকটা লেখাই সমান ভাবে অতি উচ্চ মানের হতে হবে ? তা কি কোন লেখকের পক্ষে আদৌ সম্ভব ?’ – আমার তাঁদের যুক্তি জানা নেই। ‘কবি’ , ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘মধ্যাহ্ন’, ‘যদিও সন্ধ্যা’ এই বই গুলো আরেকবার পরে দেখার কথা বলব। আজকে অনেক মজা পেলাম একটা ব্যাপার দেখে। যারা এতদিন কণ্ঠপেশী ফুলিয়ে হুমায়ূন আহমেদকে গালি ছুঁড়েছেন তারাই হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে স্তুতি-গীত গাইছেন। হয়তো এই স্তুতি-গীত মিথ্যে নয়। আমার খুব প্রিয় একজন স্যার বলেন খুব মুখো-মুখি শত্রু একে অপরের মৃত্যুতে কাঁদে। এটা এক ধরণের শূন্যতার ফল। শত্রুতা করার মানুষের শূন্যতা, সমালোচনার রসদের শূন্যতা তাঁদের কাবু করে। মৃত হুমায়ূন আহমেদকে নিয়েও ব্যবসা হবে, অসম্ভব কিছু না। পত্রিকা-চ্যানেল-প্রকাশক সবার পকেট ভারী হবে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না।



হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে একজন অতি সাধারণ হুমায়ূন-ভক্ত হিসেবে শুধু মনে পরছে ক্লাস সেভেন-এইটের দিনগুলোর কথা– ‘কবি’ পড়ে ‘আউলা’ হয়ে যাওয়ার কথা। চাঁদনী রাতে চাঁদ দেখা, প্রবল বৃষ্টিতে খালি পায়ে বন্ধু আকিফ আর ফাহাদ ভাইয়ের সাথে নদী পাড়ের রাস্তায় হেঁটে চলার কথা। সত্যি মিস করছি দিন গুলো। এখনও চাঁদ দেখলে মাতাল হয়ে যাই। বৃষ্টি দেখলে মোবাইল-ওয়ালেট পলিথিনে ভরে বৃষ্টিতে নেমে পরি। প্রবল ঘোরে ডুবে যাই। আমার মধ্যে এই পাগলামোর বীজ হুমায়ূন আহমেদের বোনা। অন্য কারও কাছে এটা সত্যিকার অর্থেই পাগলামো মনে হতে পারে, কিন্তু জোছনা রাতে কিংবা প্রবল বৃষ্টিতে আমার মত সুখী মানুষ এই পৃথিবীতে আর কেউ থাকে কিনা আমার জানা নেই।







খুব শূন্যতায় যখন ভুগি তখন ভাবি- একসময় আমাদের এই ব্যর্থ চাঁদ দেখা কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হবে। কমিটি পুনর্গঠিত হবে। মহাদেব সাহা- নির্মলেন্দু গুণের মত কবিরা হবে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি, হুমায়ূন আহমেদের মত জোছনা-খেকো মানুষরা থাকবে এর উপদেষ্টা কমিটিতে। প্রত্যেক পূর্ণিমায় কবিরা সব সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পরে গম্ভীর মুখে সংবাদ-সম্মেলন ডেকে ঘোষণা দেবে ‘আজ পূর্ণিমা। সকল প্রেমিক-প্রেমিকাকে জোছনা বিলাসের আদেশ দেওয়া গেল। আদেশ অমান্যকারীদের আগামী দু-বর্ষা বৃষ্টিতে ভেজা নিষেধ’, তখন কেউ যদি আমার পাশে না থাকে, বেঁচে থেকে কি লাভ ?



প্রতি পূর্নিমার মধ্যরাতে একবার

আকাশের দিকে তাকাই।

গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে?

আমি সিদ্ধার্থের মত

গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি।

যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত

দরজা খুলে যাবে।

ঘরের ভেতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর।

প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব, আর হাঁটব।

পূর্নিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে,

চারিদিক থেকে বিবিধ কন্ঠ

ডাকবে ..... আয়, আয়, আয় ।



আমি চিরকৃতজ্ঞ আপনার কাছে। যেখানেই থাকুন ভাল থাকুন। আপনার অনেক ইচ্ছে ছিল মৃত্যুর অভিজ্ঞতা নেওয়ার। আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ হল। আফসোস আপনার কাছ থেকে সেই অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে পারলাম না। কখনো যদি ‘চান্নি পসর রাইতে’ আপনার মুখোমুখি হয়ে যাই, সে অভিজ্ঞতার স্বাদ নেবো। অপেক্ষায় থাকলাম ...।।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:৩১

গর্বিত বাঙালী বলেছেন: প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই

এটা আমার খুব প্রিয় একটা কবিতা। আর লেখাটা ভাল হইছে।

শুভ ব্লগিং।

০৩ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:২০

বাবু পাগলা বলেছেন: ধন্যবাদ বাঙ্গালী ভায়া। :) :) :)

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:২৭

লোহিত বামন বলেছেন: ভাল হইসে দাদা। আপনার লেখায় নিজেকে দ্যাখতে পাইতেসি :P :P

১৮ ই আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:০৬

বাবু পাগলা বলেছেন: দ্যাহেন দ্যাহেন ......। :) :) :) :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.