নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী জুড়ে নয়, এইখানে সন্ধ্যা নামছে...

লোকালয়ে মোর আলয়, তবু বাস করি অন্যলোকে

জাফরিন

চক্ষে আমার তৃষ্ণা তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে

জাফরিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

"অচরিতার্থ নারী: পুরান থেকে একাল"

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

"আমার স্বামী নেই, পুত্র নেই, মিত্র নেই, পিতা নেই। আমি একাকী।"

পাশাখেলার জনাকীর্ণ সভাতে দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের যে অপমান , সেটা তাকে কতটা যে দুঃখ দিয়েছে 'মহাভারত'-এর কবি তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন দ্রৌপদীর সাথে তার সখা কৃষ্ণের সাক্ষাৎকারের ভেতর দিয়ে।

দ্রৌপদীরা তখন বনবাসে। কিন্তু তিনি বনবাসের কষ্টের কথা বলছেন না, রাজার মেয়ে ভিখারী হয়েছেন, এ নিয়ে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই, তাঁর ক্ষোভ সেই অপমান নিয়ে। সেই যুধিষ্ঠিরের পাশা খেলায় দ্রৌপদীকে পণ করা এবং হেরে যাওয়া। অতঃপর প্রকাশ্য দরবারে শত শত পুরুষ মানুষের উপস্হিতিতে, অধিকাংশের জন্য উপহাসের, অল্প কয়েকজনের জন্য করুনার পাত্র হয়ে বস্ত্রহরণের নির্মম খেলা 'মহাভারত' এর এই নায়িকাকে যে কতটা অভিভূত করেছিল তা আমরা অনুমান করতে পারি।



অপমান! পদে পদে অপমান! অপমান পাশাখেলার আসরে। অপমান আরও কিছুকাল পিছিয়ে স্বয়ংম্বরা সভার সমাপনীতে যখন শ্বাশুড়ি কুন্তির সামান্য ভ্রান্তিপূর্ণ উক্তি "যা এনেছো, পাঁচ ভাইয়ে সমানভাবে ভাগ করে খাও" আজীবনের জন্য তাঁকে পরিনত করল পাঁচ ভাইয়ের সাধারণ ভোগ্যসম্পদে। কবি ব্যাস এসময় পাঠকদের সান্ত্বনা দিতে হাজির করলেন অদ্ভুত গল্প। বললেন, "ওই পাঁচজন আসলে একজনই। তাঁদের সবার মাঝে ইন্দ্র আছেন, পাঁচ রূপে, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ন্যায়"।

আহা! কত সৌভাগ্যবতী নারী যে ইন্দ্রের পাঁচরূপকে একই সাথে নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবেন!



কিন্তু একসঙ্গে পাঁচজন স্বামী পেয়ে দ্রৌপদী নিজের পঞ্চ ইন্দ্রিয় কে তৃপ্ত করছেন এমনটা কল্পনাতেই সম্ভব। বাস্তবে ব্যাপারটা অসম্ভব, কেননা তা অমানবিক।



প্রথমত, দ্রৌপদী তেমনটা চাননি। তিনি ভালবেসেছিলেন এবং বরমাল্য দিয়েছিলেন শুধুমাত্র অর্জুনকেই।



দ্বিতীয়ত, পাঁচজন স্বামী যদি চাইতেনও তবু তারা পরস্পর ভাই হবে, যিনি ভাসুর তিনিই স্বামী, আবার যিনি স্বামী তিনি আবার দেবরও, প্রত্যেকের সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে এক বছর করে থাকতে হবে, পালাক্রমে, প্রত্যেককে একটি করে সন্তান উপহার দিতে হবে এবং সেই সন্তানকে পুত্র সন্তানই হতে হবে- এই যে ব্যবস্হা তাতে নারী ব্যবহৃত হচ্ছেন যন্ত্রের মত। তাঁর অবস্হা নারী স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত নয়, চরম পরাধীনতার নিদর্শন বটে।



দ্রৌপদী এক পর্যায়ে আফসোস করে বলেছেন, "দেখতে পাচ্ছি, মানুষ হচ্ছে কাঠের পুতুল, দেবতারা তাদের নিয়ে ইচ্ছেমত খেলা করে।"

তিনি বলতে পারতেন দেবতাদের নয়, ব্যবস্হাটা মানুষেরই তৈরী। পুরুষ মানুষের। পুরুষ মানুষ জুয়া খেলে এবং যুদ্ধ করে। তারাই কারণ। নিজেরাই। নারী শুধু দূর্ভোগই সহ্য করে। কী পুরানের গল্পে, কী আধুনিক যুগের ঝাঁ-চকচকে মোড়কে সজ্জিত সমাজে। এসব কথা তিনি বলেননি। এসব বলা হয় না, বলা যায় না।



সবকিছু পুরুষতান্ত্রিক। কেবল পুত্র, পুত্র, এবং পুত্র। যার পুত্র নেই তার কিছু নেই। নিজের ঔরসে না জন্মালে ক্ষেত্রজ হলেও চলবে। ধৃতরাষ্ট্রের পুত্র একশ'জন, কন্যা একটি। পাণ্ডবদের প্রত্যেকের একটি করে পুত্র, কন্যা নেই। দ্রৌপদী যে ঘৃণা প্রকাশ করেছেন তাঁর সে ক্ষমতা খুবই কমে যেত যদি তিনি পুত্র সন্তানের পরিবর্তে পাঁচটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিতেন। বালাই ষাট!



এমনকি দ্রৌপদীর জন্মও ছিল অনাকাংখিত। পিতা দ্রৌপদ যে ব্রত করেন তা পুত্র সন্তানেরই জন্য। ভাইয়ের সাথে এই অগ্নিকন্যার ধরায় আগমন ছিল নিতান্তই বাড়তি, সহজ বাংলায় যাকে বলে "ফাও"।



হায়রে নারী! আজও কী তুমি সেই মহাভারতের অতিপ্রাকৃতিক আধিভৌতিক জগতের অবস্হান থেকে বিন্দুমাত্র উন্নতি করতে পেরেছ নিজেকে?



দ্রৌপদী তেজস্বী, প্রতিবাদী, দুঃসাহসী, প্রতিশোধপরায়ন নারী। যেন এক জ্যা-বিহীন ধনুকেরই প্রতিমূর্তি। আবার সেই অগ্নিকন্যারও আছে আত্মসমর্পনের অধ্যায় এবং সেটিই সবচেয়ে করুন। এই যে আত্মসমর্পন, একে অধঃপতন বলি কিংবা পরিস্হিতির কাছে অসহায়ত্ব বলি, দ্রৌপদী তথা সকল নারীর জীবনের এটি খুবই মর্মন্তিক সত্য। দ্রৌপদীর রুখে দাঁড়ানো তাঁর এই আত্মসম্মানকে আরও প্রত্যক্ষ করে তোলে, আকাশের বিদ্যুল্লতায় যেমন ধরণীর সরোবরকে দেখা যায়, অনুমান করা যায় তার গভীরতাও। আমরাও অনুমান করতে পারি কতটা অচরিতার্থ এবং কেন অচরিতার্থ দ্রৌপদীর জীবন।



আজকের নারী পুরানের সেই মহানায়িকাকে কতটুকু অতিক্রম করতে পেরেছে? কোন কোন ক্ষেত্রে? বরং ক্ষেত্রবিশেষে নারী আজ আরও বেশি অবলা, রুদ্ধদ্বারবাসিনী, ভীতু ও নির্যাতনসহা। শৃঙ্খলকে অলংকার ভাবতে থাকা নারীর সংখ্যা আরও বেশি সেই পৌরানিক গালগল্পের জগতের চেয়ে। ক্ষোভ আজ লুপ্ত ষড়যন্ত্রে জালে।

পুরুষতন্ত্রের জয় যুগে যুগে!

জয় শোষনের, জয় দুঃশাসনের!



(উদ্ধৃতিসহ কাহিনী বর্ণনা প্রফেসর সিরাজুল ইসলামের লেখনী হতে)



মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:২৯

করতাল বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো, জাফরিন আপু !! মহাভারতের আরো কিছু অংশ যোগ করে দিতে পারতেন। দ্রৌপদী পাঁচ স্বামী পাওয়ার পিছনে আরো একটা গল্প ছিল। বহু আগে পড়া ভুলে গিয়েছি কিছুটা, যেটুকু মনে আছে তা ছিল অনেকটা এরকম ! পূর্বজন্মে দ্রৌপদী একজন ব্যক্তিত্বহীন স্বামী পেয়েছিলেন যার ব্যক্তিত্ত্বহীনতার কারণে তাকে লাঞ্চিত হতে হয়। তখন তিনি মহাদেব এর আরাধনা করেন।তার আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। তিনি তখন রূপবান, গূনবান ,ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বর প্রার্থনা করেন এবং পরপর পাচঁবার এই কথা বলেন। মহাদেব প্রতিবারেই তাকে আশ্বস্ত করেন। আর স্বামীদের সাথে সময় কাটানো নিয়ে অর্জুনের বারো বছর এর বনবাস কাটানো নিয়ে অ একটা গল্প আছে ! লিখতে ইচ্ছা করছে নাহ , পরে সময় করে করবো নে ! ভালো থাকবেন আপু !

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৪১

জাফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া।
দ্রৌপদীর পাঁচ স্বামী লাভের পেছনে প্রচলিত রয়েছে বেশ কয়েকটি কাহিনী। তার মধ্যে একটা আমি বলেছি। অন্যটা আপনি বলেছেন।

আর গল্প তো অনেক আছে। বনবাসের দিনগুলি, কুরুর যুদ্ধ, দ্রৌপদীর মহাপ্রয়ানের গল্প....সবগুলিই মজার। আমি শুধু কিছু কিছু অংশ নির্বাচন করেছি আলোচনার জন্য।

সময় পেলে অবশ্যই মন্তব্য করবেন। তাতে লেখাটা আরও সমৃদ্ধ হবে।
ভাল থাকুন।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:০২

আহমেদ রাকিব বলেছেন: ঐ কাহিনীটা কেন জানি এখনো পড়া হয়ে উঠেনি। বেশ কয়েকবার ভেবেছিলাম পরবো, কিন্তু হয়ে উঠেনি। পোষ্টটা ভালো লাগলো। তবে লেখার সাথে সমসাময়িক কিছু ঘটনাবলি জুড়ে দিতে পারতেন কিন্ত। :)

কেমন আছেন?

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৯

জাফরিন বলেছেন: আরে আপনি! :) কেমন আছেন? আমি ভাল।

দ্রৌপদীর গল্পটা পড়ে আমার এত ইন্টরেস্টিং লেগেছে যে সবাইকে শোনাতে ইচ্ছে হল.... ঠিকই বলেছেন এখনকার সাথে মিলিয়ে বিশ্লেষন করতে পারলে ভাল হত। কিন্তু পরদিনই ছিল আমার পরীক্ষা, তাই সময় পাইনি।

ভাল থাকুন। বহুদিন পর ফিরে এলেন!

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


দ্রৌপদী কাহিনী ভাল লাগল।

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০০

জাফরিন বলেছেন: আমারও বেশ ভাল লেগেছে দ্রৌপদী বৈচিত্র্যময় জীবন।
ধন্যবাদ

৪| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:১৭

আহমেদ রাকিব বলেছেন: এখনতো আর কোনো পরীক্ষা নেই। তাই না? লিখে ফেলুন। দেরী করছেন কেন? :)

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:৪৮

জাফরিন বলেছেন: কেন যেন এখন আর ব্লগে তেমন লিখতে ইচ্ছে করে না....

৫| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৫

আহমেদ রাকিব বলেছেন: হা হা হা হা। তাহলে নিশ্চয়ই এটা বুঝতে পারেন যে কেনই বা পুরোনোরা আজকাল তেমন আর লিখে না। :)

ব্লগের জন্য না হোক। নিজের জন্য হলেও লিখুন। লেখালিখি ব্যাপারটা এমন, একবার ছেড়ে দিলে দেখবেন আবার লিখতে অনেক কষ্ট হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.