নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী জুড়ে নয়, এইখানে সন্ধ্যা নামছে...

লোকালয়ে মোর আলয়, তবু বাস করি অন্যলোকে

জাফরিন

চক্ষে আমার তৃষ্ণা তৃষ্ণা আমার বক্ষ জুড়ে

জাফরিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাইয়ের জন্য ভালবাসা

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৫১

আমার আজকের এই লেখাটা এক ভাইয়ের জন্যে। বিশ্ব ভাই দিবস আছে কি? থাকলে সেদিন তাকে উৎসর্গ করতাম।



স্রষ্টা বুঝি আমাকে ভালবাসা কোটায় পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আকাশের তারার মত অসংখ্য মানুষের অজস্র ভালবাসায় জ্বলজ্বল করে আমার সৌরজগৎ। সবসময় ভালবাসা পেয়েছি চেনা অচেনা হাজারো মানুষের কাছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তো সেই ভালবাসার ঝুলিটা তো কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে! ক্যাম্পাসে অনেক ছোট ভাই, বড় ভাই আছেন। নিজের কোনো ভাই না থাকার আক্ষেপটা তারা সবাই ভালভাবেই পূরন করে দিয়েছেন। ধন্য আমি!

আর আছে এক ছোট ভাই যে সবার চেয়ে আলাদা।



হলের ডাইনিংয়ে কাজ করে সিকান্দার। তার সাথে আমার পরিচয় প্রথমে কথা কাটাকাটির মাধ্যমে। আমি সাধারনত ডাইনিং-এ খাওয়া শেষ করে প্লেটটা নিজেই ধুয়ে রেখে দিতাম। ফেলে রেখে দিলে পরের জনের সমস্যা হতে পারে এই ভেবে।

তো, সিকান্দার আমাকে একদিন বলল, "আপনি এই কাম করেন ক্যান? এইটা আপানের কাম না।" আমি বললাম, "তোমার সমস্যা কী?"

যাই হোক, এভাবে ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও পরে আমাদের মাঝে ভীষন সদ্ভাব হয়ে গেল। এরপর থেকে আমাকে আর কোনোদিন খাবারের জন্য কষ্ট পেতে হয়নি। ভাল কোন খাবার দিলেই সে আমাকে ফোনে জানিয়ে দিত "গরুর কলিজা দিসে, অ্যাইয়া পড়েন", আমি আসতে না পারলেও সে রেখে দিত। বেশি করে খাবার দেয়ায় প্রায়ই আমি আপত্তি করতাম। আর ও এক কথায় জবাব দিত "খায়ালান"।

ওর হুকুম শুনে আমি হাসতাম। ভাইয়ের মতই দাবী করত সে। তার যেকোনও দরকারে আমার কাছেই আব্দার জানাত। আর বাড়ি গেলে বার বার ফোন "কবে আইবেন? আয়া পড়েন"... বাড়িতে যেমন বাবা-মা আর ছোট বোন অপেক্ষা করে, হলে তেমন এক ছোট ভাই। মজাই লাগত।



এই ভালবাসার কোনও প্যাটার্ণ নাই হয়ত। নাই কোনো প্রতিদান। বছরে দু-একবার কিছু উপহার দেয়া, আর মাঝে মাঝে একটু অক্ষরজ্ঞান দেয়ার চেষ্টা ছাড়া কিছু করতেও পারিনি ওর জন্য।



এখন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন শেষ। আমি চলে যাব অন্য কোথাও... উন্নত ভবিষ্যতের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে। আর ও পড়ে রইবে এই চার দেয়ালে ঘেরা জেলখানায়। যেখানে নাই কোনো আশা, ভাগ্য পরিবর্তনের এতটুকু সুযোগ! দিনের পর দিন কত হাজারো উচ্চশিক্ষার্থীদের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে তাদের সেবা করবে, কিন্তু নিজে পড়ে থাকবে অন্ধকারে। হলের ডাইনিং- ক্যান্টিনের এইসব কর্মচারীরা পায় না ন্যূনতম কোনো স্বাস্থ্য ভাতা, শিক্ষা অথবা বিনোদনের সু্যোগ। তারা রাতে ঘুমায় ডাইনিং-এর মেঝেতে অপরিসর জায়গায় একটুখানি বিছানা পেতে। পরিবার পরিজন ফেলে শৈশব- কৈশোর কাটিয়ে দেয় অনাদরে, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে!

মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে - ওরা কি মানুষ? ওরা কী আসলে? ওদের ভবিষ্যত বলতে কিছু আছে? না কি নিজের ভবিষ্যত গড়ার জন্য ওদের আমরা ব্যবহার করছি বিবেকহীনের মত?



সিকান্দার আমার এই লেখাটা পড়তে পারবেনা জানি। তবু ওর কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে গেলাম।

মনে রাখব এই ছোট ভাইগুলোকে।

ঋণী থাকব।

আর যদি সু্যোগ পাই তবে এক ফোঁটা উপকার করে আত্মতৃপ্তি আদায় করব।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৯

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লাগলো । আপনার মনোবাসনা পূর্ণ হোক ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১১

জাফরিন বলেছেন: ধন্যবাদ। দোয়া করবেন

২| ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: একদিন সিকান্দার এই লেখাটা পড়তে পারবে। শুভকামনা ওর জন্যে।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭

জাফরিন বলেছেন: বাহ! চমৎকার এক উইশ রেখে গেলেন ভাইয়া!!!

অশেষ ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.