নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাবাইন্যা সালাম

৩০ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:৫০

গঞ্জের হাটে অনেকগুলো চায়ের দোকান। সব দোকানেই টিভি আছে। ডিশ লাইন। চায়ের কাস্টমার শুধু চায়ের জন্য দোকানে আসবে না। চায়ের সাথে টা লাগবে। টা এখন টেলিভিশন।

সবচেয়ে বড় চায়ের দোকানের মালিক সালাম মিয়া। মানুষ তারে ডাকে, চাবাইন্যা সালাম। অদ্ভুত নাম। তার দোকানে টিভি আছে। কিন্তু ডিশ নাই। বিটিভির কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান চলে বেশির ভাগ সময়। আর মাঝে মাঝে হুজুরদের ভিডিও সিডির ওয়াজ। ওয়াজের সুর ভালো হলে মানুষ জমে। সালাম মিয়ার চায়ের দোকান তখন ছোটখাটো ওয়াজ মাহফিলের মতো মনে হয়।

চাবাইন্যা সালামের একমাত্র ছেলে। নাম বেলাল। গায়ের রং কালো। গলার সুর সুমিষ্ট। বেলাল মাদরাসায় পড়ে। সুর করে কেরাত পড়তে পারে। তার হুজুর সালামকে একদিন বলেছে, আপনার পুতেরে দেখলে আমার মনে হয় মদীনার বেলালের কথা। হাবশার এক গোলাম কি মাত মাতাইল দুনিয়াটায়। এত এত সাহাবী, সুন্দর সাহাবী, ধনী সাহাবী, নেতা সাহাবী, আর মসজিদের আযানের জন্য রাসূল রাখলেন ঐ বেলালরে। দেখছো নি কারবার! এই কালা বেলাল মক্কা বিজয়ের দিন কাবা ঘরের ছাদে উইঠা আজান দিয়া দিল। আবার মসজিদে আকসা যখন বিজয় হইল, খলিফা উমরের সময়, ঐখানে আযান দিবো কে? সাহাবারা কয়, বেলাল ছাড়া আর কে?’ আপনার পুতে যেন অরিজিনাল বেলালের মতো হয়, খেয়াল রাখবেন। আমি তার মধ্যে অন্যরকম ভাব দেখতাছি।’ উসতাদজীর মুখে এমন কথা শুনে চাবাইন্যা সালামের চোখে পানি চলে এসেছিল সেদিন।

সকাল থেকে চাবাইন্যা সালাম সাদা লুঙ্গি পরে বসে আছে দোকানে। টিভিতে দেখার মতো এখন কিছু নেই। তার দৃষ্টি ঘড়ির দিকে। যোহরের পরপর তার ছেলে আসবে। বেলালের এক হুজুর তারে বাজার পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিয়ে যাবে। সালাম মিয়া তার ছেলেকে নিয়ে খুশি মনে বাড়ীতে যাবেন।



বাজার থেকে তার বাড়ি এক কিলোমিটারের পথ। সকাল সন্ধ্যা তিনি হেঁটে হেঁটে যান। বৃহস্পতিবারের কথা আলাদা। বেলালরে নিয়া তিনি রিকশায় যান। আজকেও তিনি রিকশায় যাবেন। পুতেরে ডান পাশে বসাবেন। নিজে বসবেন বাম পাশে। এইটা বেলালের জন্য সম্মান।



আজ সকালে গোসল করে সাদা লুঙ্গি পরে এসেছেন। আগে তার এ অভ্যাস ছিল না। নতুন হয়েছে। পুতের সাথে একসাথে গোসল করতের পুকুরে। গোসল শেষে বেলাল তার কাপড় ধুয়ে দেয়ার জন্য টানাটানি করে। আব্বা! আমারে দেন। আপনি উপরে যাইয়া খাড়ান। আমি আপনার লুঙ্গি গামছা খচান দিয়া আসতাছি।’



ছেলের হাতে বাবার কাপড় ধোয়ার দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে সালাম মিয়ার। কিন্তু আনন্দের এত ভার সয় না তার। তার চোখে পানি চলে আসে। ব্যাপারটা লজ্জার। সালাম মিয়া এখন তাই আগেই গোসল সেরে নেয়।



হাটে শহর থেকে কেউ আসলে এই নাম দেখে অবাক হয়। শুরু হয় ইন্টারভিউ।

-আপনার নাম চাবাইন্যা সালাম কেন?

-ঘটনা আছে। ঘটনা ছাড়া কি আর এই নাম দিছে আমারে। তয় আমি এডি নিয়ে ভাবিনা। নামাটা তো আর খারাপ না।

-ঘটনাটা কী?

-আমার বেলালরে তো চিনেন। আমার পুত। ও মাদরাসার থেন বাড়ি আইসা পয়লা নাম্বারে আমারে কয়, আব্বা, আপনার সালাম দেওন ঠিক নাই। আপনি মাইনষেরে ইসলামালাইকুম কন, এইডা উচিত না। সালাম হইল, আসসালামু আলাইকুম। আপনার নামের সাথে কত সুন্দর শব্দ সালাম, আর আপনার মুখের সালাম সুন্দর না। এই সালাম আর চলবে না। আমার কাছ থেকে শিখেন আব্বা! বলেন, আস সালামু আলাইকুম। আমিও শিখলাম।

পরের দিন থেন পুতের শেখানো নয়া সালামের পেক্টিস স্টাট করলাম। পরথমবার ভুলে আগের ইসলামালাইকুম বের হলেও আবার সাথে সথে নতুনভাবে দিতে লাগলাম। এইসব দেইখা ঐ যে বদ মফিজ রে চিনেন না! বদে কয়, আমি নাকি চাবাইয়া চাবাইয়া সালাম দেয়া শুরু করছি। আলাইকুম কওনের সময় আইনের উচ্চারণে মুখের ভেতর চাপ দেওন লাগে, এইটা বলে চাবানো। এই বদে হাটের মাইনষেরে আমার নাম শিখাইছে, চাবাইন্যা সালাম। খোদার আজিব কারিশমা, সালাম আমার নামের লাস্ট অংশ। দুইডাই মিইলা গেল। হেই থেন আমি চাবাইন্যা সালাম। হিস্টোরী শেষ।’



-তাই নাকি! দারুণ ইতিহাস। দেন, চা দেন।



কাস্টমারের কৌতুহল শেষ হয়।

সালাম মিয়ার হাতে সময় নেই।

বেলা হয়ে আসছে। বেলালের আসার সময় হয়েছে।



এ অংশটুকু রাশেদ মিয়ার অবসর শীর্ষক ধারাবাহিকের ৩য় পর্ব। বানিয়ে বানিয়ে গল্প লেখার চেষ্টা। কেমন হচ্ছে- বোদ্ধা পাঠকদের পরামর্শ চাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০৩

মোহাম্মদ একরাম হোসেন বলেছেন: ভাল হয়েছে চালিয়ে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.