![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
মাসে একবার সেলুনে যেতে হয়। নতুন নতুন সেলুন খুঁজে বের করা এবং সেখানে গিয়ে চুল কাটানো আমার শখ। পারতপক্ষে আমি পাকিস্তানি এবং ভারতীয়দের সেলুনে যাই না। ভারতীয়দের সেলুনে হয়তো দুর্বোধ্যভাষার মুভি চলবে, নয়তো আমি বাংলাদেশী বললে বাংলাদেশ নিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুরু করবে। ভারতীয়দের এই বদঅভ্যাস আমার জন্য অসহনীয়। পাকিস্তানীরাও একই জাত।
আমি বাংলাদেশী সেলুনে গিয়ে চুল কাটাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। একে তো দাম সস্তা, মাত্র ১০ রিয়াল। আরেকটি কারণ হল, ক্যাম্পাসের পরিবেশ ছেড়ে ওখানে কিছুক্ষণ সময় কাটালে অনেক রকম গালগল্প শোনা যায়। রাজনীতির গল্প, দেশ-গেরামের নানান গুজব নিয়ে রসালো কথাবার্তা শুনে অনেক কষ্টে হাসি চেপে চুপচাপ শুনি। সেইসাথে নোয়াখালী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ নানা অঞ্চলের ডায়ালগভঙ্গি তো আছেই।
আজকে বের হয়েছি একা। এখানে আমি একা থাকার সুযোগ খুব কম। গেট দিয়ে বের হতেই দেখা গেল, চায়নার বন্ধু আকিল অথবা ভিয়েতনামের দুক, মিশরের ইসলাম অথবা অন্যকেউ সাথে যোগ হয়েছে। হয় ইংরেজী নয়তো আরবীতে অনবরত আড্ডা চালানোর গুরুদায়িত্ব আমার কাঁধে। মুখ পানসে হয়ে আসে। এর চেয়ে একা থাকা ভালো।
একা একা হাঁটছি। সেলুন খুঁজে বেড়াচ্ছি। তুর্কি সেলুন আছে কয়েকটা। একবার ঢুকে বিপদে পড়েছিলাম। মামুলি চুল কাটার জন্য বিল হয়েছিল ৫০ রিয়াল (১২০০ টাকা)। ফেসওয়াশ ৮০ রিয়াল (১৮০০ টাকা)। আমার মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের জন্য এত নবাবী হেয়ারকাটিং অশোভন। সেদিনই তওবা করেছি।
আজকেও সামনে পড়লো। ঢোকার ইচ্ছা হলো না। লাক্স্রারী সেলুন চোখে পড়লো। ভেতরে ফিটফাট। তাই গেলাম। সেুলন খালি। আর কেউ নেই। নাপিত বসে বসে আইফোনে ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত। আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। চেয়ারে বসে পড়লাম। জিজ্ঞেস করলাম, কোন দেশি? নাপিতের উত্তর, দিল্লী। একাকী বসে পড়লাম। নাপিত ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
সেলুনে চুল কাটানোর সময়টুকু আমার জন্য বিরক্তির। চেয়ারে বসার পর প্রথম কাজ, চশমা খুলে ফেলা। চশমাবিহীন আমিও অন্ধ-অবলা। কোন বই পড়া যায় না, টিভিও দেখা যায়না। চুপচাপ বসে কেচির খ্যাচখ্যাচ শব্দ শোনা ছাড়া গতি নেই। একসময় ছোটবেলায় নাপিতের দোকানের এত বড় আরামদায়ক চেয়ার নিয়ে আমার কৌতুহল ছিল। আমি ভাবতাম, এই চেয়ারগুলোতেই অফিস-আদালতে বস-অফিসাররা বসেন। সেলুন এবং অফিস- চেয়ার একই রকম। বড় হলে আমার রুমে এমন একটি সেলুনের চেয়ার কিনে তাতে বসে শখ মেটাবো। এমন ইচ্ছা অনেকবার এই মনে ঢেউ খেলেছে।
দিল্লীর এই তরুণ নাপিত আমাকে চিনতে পারেনি। আমি যে বাংলাদেশী এবং উর্দু-হিন্দী বেশভালো ভাবেই বুঝি, বেচারা তা টের পায়নি। তার সাথে কথা হয়েছে ইংরেজীতে। নাপিতও বেশ ভালো ইংরেজী জানে এবং আইফোনের গর্বিত ব্যবহারকারী। কিছুক্ষণ পর তার পকেট থেকে ফুটুস ফুটুস শব্দ আসছিল। চ্যাটিংয়ে বার্তা আসার এলার্ট। বেচারা একটু অস্থির হয়ে উঠছে। বিড়বিড় করে বলছে, আরে ইয়ার, সাবর তো কারো!’ একটু পর আবার বলছে, কিয়া হ্যায়, সাবর ভি নেহি? কিয়া হ্যায়!’ আমি ভাবছি, বেচারা হয়তো তার বেচারীর এ বিচ্ছেদে নাখোশ হয়েছে আমার উপর। এ দেশে নাপিতের বেতন নির্ধারিত। কাস্টমারের কম-বেশির উপর তাদের ক্রেডিট নেই। নাপিতরাও তাই ড্যামকেয়ার।
চুল কাটানো শেষ। সে হাসিমুখে ১৫ রিয়াল নিলো। বাকিটুকু ফেরত দিলো। আমি ফেরতপথে রওয়ানা হলাম। আসার পথে দুটি দৃশ্য আমাকে আনন্দিত করেছে।
সেলুন থেকে হোস্টেল পর্যন্ত ফেরার পথে ছোট একটি গোলচক্কর আছে। ব্যস্ত চক্কর। গাড়ি ঘুরছে তো ঘুরছে। আমার রাস্তা পার হতে হবে। দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটি গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। আমি তাকিয়ে দেখি, গাড়ীর চালক একজন মহিলা। মুখ নেকাবে ঢাকা। আমি হাত উঁচিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে রাস্তা পার হলাম। এদেশে মহিলা গাড়ীচালকদেরকে নিয়ে সবাই তটস্থ থাকে। কখন কোথায় এক্সিডেন্ট করে, ঠিক নেই। আমি অনেকের মুখে শুনেছি, মহিলাচালিত গাড়ির সামনে কিংবা পেছনে থাকতে নেই। তিনি কোথায় কখন ধুপ করে ব্রেক করবেন, ঠিক নেই। লেগে গেলেই বিপদ।
হেঁটে হেঁটে চলে এসেছি হোস্টেলের গেটে। ভেতরে ঢুকে দেখি, কয়েকদেশের ধূমপায়ী তরুণরা নতুন অতিথি বিড়ালছানাকে পেয়ালায় ঢেলে দুধ খাওয়াচ্ছে। হোস্টেলের দুটি কালো কুচকুচে রঙের বিড়াল আগে থেকেই আছে। সাথে যোগ হলো এই নতুন সাদা বিড়ালছানা। অতিথির যতœ-সেবায় ব্যস্ত তারা। দুধ কিনে আনা হয়েছে। এক লিটারের গ্যালন। গোল হয়ে বসে সিগারেট টেনেটেনে তারা সে দৃশ্য দেখছে। প্রতিরাতের এই সময়টায় তারা একসাথে জড়ো হয়। অনেক রাত পর্যন্ত ধূমপান করে। সকালে দেখা যাবে, কয়েকহালি সিগারেটের খালি প্যাকেট, চায়ের অনেকগুলো কাপ আর পানির বোতলগুলো কাত হয়ে পড়ে আছে। জমজমাট রাতের ধূমায়িত আড্ডার সমাপ্তি নীরব দৃশ্য।
অনেকদিন পর একা একা হাঁটলাম। ভালোই লাগছে। আজকে শুক্রবার। ছুটির একটি দিন শেষ। কালকের দিন বাকি। তারপর আবার রুটিনবাঁধা নিয়ম।
২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:২৬
তানজিদ_রূপক বলেছেন: বাহ লেখার মধ্যে একটা একাকী অনুভূতি আছে ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:১৫
কালোপরী বলেছেন: