নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাকে মনে পড়ে!!

২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২

এই প্রবাসের ছাত্রজীবনে আমি একা থাকি। মাঝে মাঝে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়, বুকটা কেমন ধড়ফড় করতে থাকে, আমার চোখে মুখে কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসে- কোন দুঃস্বপ্ন দেখে নয়, তবে কেন? মায়ের কি কিছু হল? আমার তো আর এমন কেউ নেই মা ছাগা যাকে খুব অনুভব করি এত গভীরে- মাকে ফোন দিই, মা ফোন ধরে বলে, ‘তামীম? কিরে কি খবর? ভালো আছিস তুই?’

মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে বুঝার চেষ্টা করি, সবকিছু স্বাভাবিক তো? তারপর বলি, ভালো আছি মা, তুমি কেমন আছো? বাসার সবাই কেমন আছে? কোনো অসুখ নেই তো কারো? মা আমাকে আশ্বস্ত করে। আমি নিশ্চিন্তে নিজেকে সঁপে দিই ঘুমের কোলে।

এই দূরদেশে আসার আগে কোনোদিন ভাবিনি, মায়ের কাছ থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা এত কঠিন, এত অবর্ণনীয়। আমি চলে আসার আগে মা কয়েকদিন খুব ব্যস্ত ছিলেন, সকালে কাজ সেরে বসে পড়তেন সুঁই শাড়ি নিয়ে, আমার জন্য কাঁথা সেলাই করছেন। আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখি, নিবিড় মনে মা আমার সুঁই সুতো দিয়ে সুনিপুণ সারি বেধে চলেছেন, যেন এ সুতোর বুননে বেঁধে রাখছেন আমাকে তার মমতার কোলে।

এই দূর প্রবাসে, সারাদিন এখানে ওখানে যেতে হয়, পড়াশোনার কাজে সময় চলে যায়, তবু রাতে যখন বিছানায় ঘুমোতে যাই- মায়ের সেলানো সেই কাঁথা আমার নিত্যসঙ্গী। কাঁথাটি গায়ে জড়িয়ে মনে মনে অনুভব করি, মায়ের হাতের মমতাময়ী পরশ আমার গায়ে লেগে আছে। এ মরুর দেশের পরম সুখনিদ্রায় সেটুকুই আমার সম্বল।

এই পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে মায়ের নামে কত গান-কবিতা, কত গল্প রচনা, কত নাটক সিনেমা- তবু মা এক রহস্যময়ী জননী। সন্তানের সামান্য দুঃখকষ্টে মায়ের ভেতর যে ঝড় ওঠে, মা তখন ছটফট করেন এক আপার্থিব যন্ত্রণায়, ছেলেটা কি তার ভালো আছে?

এক ছুটিতে দেশ থেকে ফেরার সময় পথে খাওয়ার জন্য আম্মা নুডলস রান্না করে দিয়েছিল। শারজাহ এয়ারপোর্টে বসে প্রচন্ড মনখারাপ আর পেটের ক্ষুধায় যখন হাতের ব্যাগ থেকে বাটি বের করছিলাম, আমি তখন মনে মনে ভাবছি, নুডলস তো এনেছি, চামচ পাবো কই, হাত দিয়ে খেলে সেই দূরে গিয়ে হাত ধুয়ে আসতে হবে, এই ব্যাগপত্র রেখে আবার দূরে যাবো কিভাবে? এসব যখন ভাবছি, কীভাবে খাব- এর উপায় চিন্তা করতে করতে যখন বাটির ঢাকনা খুলি, দেখি, শুধু নুডলস নয়, এর উপর একটি চামচ উপুড় করে রাখা, চোখ দিয়ে পানি চলে এল আমার। ছেলে তার কীভাবে খাবে- সেজন্য এই ছোট্ট জিনিসটি দিতে ভুলেনি- মা ছাড়া এ সোহাগ আর কে জানে, কে পারে।

আমার এ হোস্টেলে কত আধুনিক আর দামী দামী খাবারের সমারোহ, রোজ রোজ বিরিয়ানী, কাবাব, কোপ্তা, স্যুপ, ম্যাকরনি, নুডলস, পিজা, বার্গার, স্যান্ডউইচ- আমি সেসব সামনে নিয়ে ভাবি, মায়ের হাতের সামান্য ডাল ভাজির সাথে কি এর কোন তুলনা হয়? আহা! কেউ যদি এই সবগুলোর বিনিময়ে আমাকে মায়ের হাতের এক লোকমা এনে দিত।



জীবনভর নিজের সব অভাব অভিযোগ চেপে রাখা আমার মায়ের নিত্যঅভ্যাস। তবু আমি এটা ওটা নিয়ে যাই মায়ের জন্য, কোনটা যে তার সত্যিই ভালো লাগে- আমি বুঝতে চেষ্টা করি, সবসময় ভাবি, মা যদি একটু বলতো, তামীম, এবার আসার সময় ঐ জিনিসটা একটু আনিস, আমার ভালো লেগেছে।’ আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজে হলেও মায়ের জন্য সেটি নিয়ে যাবো, দ্বিগুণ তিনগুণ করে নিয়ে যাবো, প্রতিবারই আমি নিরাশ হই মায়ের কোন চাওয়া নেই দেখে। সেই একই কথা, ‘আমার কিছু লাগবে না, তোর জন্য জমিয়ে রাখ, পরে কাজে লাগবে।’

প্রতিটি শুক্রবার যখন অবসরে বসে থাকি, আম্মার বকাঝকা আর কথাগুলো বারবার কানে ভেসে আসে, আমি সেসব মনে করেই শান্ত হয়ে থাকি। আদরের সোহাগে ভাসিয়ে দিলেও আম্মা আমার কাজের ব্যাপরে কোন ছাড় দিতে নারাজ। প্রতিবারই বিদায়ের সময় আম্মার একটিই উপদেশ, ‘আমল করিস বাবা। আর শরীরের দিকে খেয়াল রাখবি।’ আমার পার্থিব ও অপার্থিব সাফল্যের জন্য মায়ের মনে ব্যাকুলতা আমায় ছুঁয়ে যায় এ ছোট্ট কথায়। পরম দয়াময়ের কাছে আমার একটিই প্রার্থনা, আমার আয়ুর বিনিময়ে হলেও তমি আমার মাকে বাঁচিয়ে রেখো অনেক অনেক দিন।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৮

বোকামন বলেছেন:
মা ......

২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৬

রমনা টেক বলেছেন: সত্যিইতো মাকে দেখিনা অনেকদিন হলো। /:) /:) /:)

৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

সািহদা বলেছেন: ছোট একটা চামচে এত ভালবাসা খুঁজে নেয়ার ব্যাপারটা অনেক ভাল লাগলো!! অসাধারণ!!

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩১

যোগী বলেছেন:
আপনার মত আমিও মা কে ছাড়া অনেক দুরে থাকি
মা কে ভিষন মনে পড়ে সবসময়।

৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৮:২২

ঝটিকা বলেছেন: মা তো মা'ই। যুগে যুগে সব কিছুর পরিবর্তন সাধিত হয়েছে কিন্তু আল্লাহ সন্তানের প্রতি মায়ের মনে যে দরদ ঢেলে দিয়েছেন তা অপরিবর্তত রয়ে গেছে।

দুর প্রবাসে আমার মা এখন আমার কাছে কি যে আনন্দে আছি :)। সব মা'দের জন্য দোয়া রইল, আমার মা'র জন্যও দোয়া করবেন।

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৩৪

আরজু পনি বলেছেন:

মা'র কাছ থেকে দুরে থাকি বলে মায়ের কথা এলেই চোখ ভিজে উঠে :(

মা বেঁচে থাকুক জনম জনম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.