নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গালিগালাজ অভিশাপে বিষাক্ত সমাজ

১০ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭



গত রমজান মাসের কোন এক সকাল। আমি বাসা থেকে বেরিয়ে রিকশায় কোথাও যাচ্ছিলাম। অপেক্ষমান কয়েকজন রিকশাওয়ালার মধ্যে একজন বয়স্ক চাচাকে বেছে নিলাম। পঞ্চাশছোয়া বয়সের মানুষটির তার ধবধবে সাদা দাড়ি। ধীরলয়ে তিনি রিকশা চালাচ্ছেন। দূর থেকে বাস আসতে দেখে রাস্তার পাশে সরতে গিয়ে হঠাৎ এক রিকশাওয়ালা এই রিকশাটির সাথে লাগিয়ে দিল। চাচামিয়াও সাথে সাথে রিকশাটি নিয়ন্ত্রণ করে আরও বামে সরে গেলেন। তারপর মুখ খুলে বলে ফেললেন, .....পুত! রমজান মাস বইলা তোরে আর কিছু কইলাম না! বাইচা গেলি!!’



আমি অবাক হলাম রমজান মাসের জন্য রিকশাওয়ালা বুড়োচাচার সম্মান দেখে। আবার ‘আর কিছু কইলাম না’ বাক্যটির সূচনায় তিনি অনেক জঘন্য কথা বলে ফেলেছেন দেখে ব্যথিত হলাম। এটুকু হয়তো তার অভ্যাস হয়ে গেছে। ফলে পবিত্র রমজান মাসকে সম্মান জানানোর আগেই যে তিনি তাতে অপমানের গালি ঢেলে দিয়েছেন, বেচারার সেদিকে হুশ নেই।

কথাবার্তায় এমন অসচেতনতা কিংবা সচেতনভাবে ইচ্ছাকৃত এসব গালিগালাজ আমাদের কাছে আজকাল খুব পরিচিত। রিকশাওয়ালা থেকে নিয়ে রাজনীতিবিদরাও এ ব্যাপারে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। খুব সাধারণ কথার শুরু কিংবা শেষে গালির অহেতুক ব্যবহারে শহুরে তরুণরাও পিছিয়ে নেই। পাড়া-মহল্লার আড্ডায় নানা রকমের কুৎসিত গালি-গালাজের বিকৃত চর্চা দিনদিন খুব স্বাভাবিক সহনীয় হয়ে আসছে। আর অফিস আদালতে কিংবা রাস্তাঘাটে ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারি শুরু হলে দু পক্ষের কুৎসিত গালির দৃশ্যে খোদ শয়তানও হয়তো লজ্জায় মুখ আড়াল করে।

টিভিসংস্কৃতির মোহগ্রস্ত আজকের আধুনিক সমাজের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় এভাবেই ‘শব্দ ও কথার অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার’ বাড়ছে। সামান্য তুচ্ছ কারণে বাবা তার ছেলেকে গালি দিচ্ছে, মালিক-মহাজন তার কর্মচারীকে মা-বাবা তুলে গালি দিচ্ছে। গালি-গালাজের এ মহোৎসবে ভেসে যাচ্ছে মানবিক ভদ্রতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। পার্থিব সামাজিকতার এমন অধঃপতনের পাশাপাশি এটি যে আমাদের ইসলাম এবং ঈমানের জন্যও ক্ষতিকর- তা হয়তো আমাদের জানা নেই।

বুখারী এবং মুসলিম শরীফে হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের বর্ণনায় রাসূল সা. বলেছেন, কোন মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকের কাজ। অন্য হাদীসে রাসূল সা. বলেছেন, মুমিন কখনো অপবাদ দেয়না, কাউকে অভিশাপ করে না। মুমিন ব্যক্তি কথা ও কাজে অশ্লীলতা এবং নির্লজ্জ ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। (আহমদ, ইবনে হিব্বান, হাকেম)

একদিন রাসূল সা. সাহাবাদেরকে বললেন, নিজের মা-বাবাকে গালি দেয়া মারাত্মক পর্যায়ের কবিরা গুনাহ। সাহাবারা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেউ কি তার নিজের মা-বাবাকে গালি দিতে পারে? রাসূল সা. বিষয়টি বুঝিয়ে বললেন, কেউ যদি অন্য কারো মা-বাবা তুলে গালি দেয়- তবে ঐ লোকটিও তো গালিদাতার মা-বাবাকে নিয়ে গালি দিবে। (মুছান্নাফে আবু শায়বা)

যাকে তাকে সামান্য তুচ্ছ কারণে অভিশাপ করাও আমাদের কাছে সহজ হয়ে যাচ্ছে। আরও ভয়াবহ ব্যাপার হল, আজকাল মা-বাবারাও কোন কারণে রাগ কিংবা বিরক্ত হলে প্রিয় সন্তানকেও অভিশাপ করছেন অবলীলায়। অথচ রাসূল সা. কয়েকটি হাদীসে এ বিষয়টিকে অত্যন্ত ভয়াবহ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি এমন অসচেতন আচরণ থেকে বিরত থাকতে আদেশ দিয়েছেন। হযরত আবু দারদার বর্ণনায় রাসূল সা. বলেন, বান্দা যখন কোন বস্তুকে অভিশাপ করে তখন তার অভিশাপ আকাশের দিকে রওয়ানা হয়। কিন্তু আকাশের দরজা তখন বন্ধ করে দেয়া হয়। তারপর সেটি পৃথিবীর বুকে ফেরত আসে এবং ডানে বামে উপযুক্ত পাত্র খুঁজতে থাকে- যাকে অভিশাপ দেয়া হয়েছে সে সত্যিই এর উপযুক্ত হলে তার উপর সেটি পতিত হয়- নয়তো সেটি অভিশাপকারী ব্যক্তির উপরই কার্যকর হয়। (আবু দাউদ) রাসূল সা. আরও বলেছেন, কোন মুমিনকে অভিশাপ দেয়া তাকে হত্যা করার নামান্তর।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি। বর্তমান সময়ে ইসলামবিরোধী অপশক্তি কিংবা নাস্তিক ব্লগারসহ যে কোন অনৈসলামী কাউকে প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমরা গালিগালাজে যেন লিপ্ত না হয়ে যাই। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ পাক সুস্পষ্ট ভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করে- তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। কারণ এতে তারাও অজ্ঞতাপ্রসূত শত্র“তা করে আল্লাহ পাককে গালি দিতে পারে।’ (সূরা আনআম-১৭)

অন্যায় ভাবে নির্যাতিত এবং প্রতারিত কেউ নিজের দুঃখ ও রাগ সামলাতে না পারলে ঐ অন্যায়কারী কিংবা ধোঁকাবাজ সম্পর্কে বদদুআ করতে পারে। সুতরাং কোন অন্যায়কারী- যার অব্যাহত অন্যায়ে অন্যরা অতিষ্ঠ এবং নির্যাতিত- তার জন্য বদদুআ বৈধ। তবে এ ক্ষেত্রেও তার সংশোধনের জন্য দুআ করা কিংবা সামর্থ থাকলে তাকে মাফ করে দেয়া উত্তম। রাসূল সা. সাহাবায়ে কেরামকে এমনটাই নসীহত করতেন। তিনি বলতেন, যে তোমার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তুমি তার সাথে মিলে থাকো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে তাকেও তুমি দান করো এবং যে তোমার সাথে অসৎ ব্যবহার করে- তার সাথে ভালো ব্যবহার করো। (আহমদ)

চারিদিকে প্রতিযোগিতা এবং অসহনীয় পরিস্থিতির এই দুঃসময়ে সামান্য ঝড় বৃষ্টি কিংবা দুর্যোগ দেখা দিলে কেউ কেউ আবহাওয়া-মৌসুমকেও মন্দ বলেন, গালি দিয়ে বসেন। পরিস্থিতি খারাপ হলে আমরা ‘সময়’কেও অভিশাপ দিয়ে থাকি। অথচ হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাক বলেছেন, আদম সন্তান সময়কে গালি দিয়ে আমাকে কষ্ট দেয়, অথচ এ সময়ের আবর্তন তো আমারই হাতে।’

এই ক্ষুদ্র জীবনে প্রতিদিনের ফরয ইবাদতের অতিরিক্ত খুব বেশি নফল ইবাদতের সুযোগ হয়তো আমাদের হয়ে উঠে না। কিন্তু জীবনযাপনের ব্যস্ততায় আকস্মিক আপদ-বিপদ কিংবা সাময়িক উত্তেজনায় মুখ ফসকে কটুবাক্য অথবা গালি-গালাজ কিংবা কাউকে অভিশাপ দিয়ে নিজের দ্বীন-দুনিয়ার সর্বনাশ ডেকে আনা সচেতন ঈমানদারের পরিচয় নয়। শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ‘মুখ’ এর সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং নিজেদের মানসিকতায় নবীর সুমহান আখলাকের দৈনন্দিন চর্চা ছাড়া আমাদের বর্তমান কলুষিত সমাজ এবং চারিদিকে বিষাক্ত পরিস্থিতির এ করুণ অবনতি বা অধঃপতন রোধ করার আর কোন যান্ত্রিক উপায় নেই, অন্য কোন অলৌকিক সমাধানও নেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.