নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভরসার গান

তরুণ নামের জয়মুকুট শুধু তাহার, বিপুল যাহার আশা, অটল যাহার সাধনা

মানব ও মানবতা

রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।

মানব ও মানবতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতীয় কবির অজানা জীবন - নবীর ভালোবাসায় তিনি হারিয়ে গেলেন দূর সীমানায়

১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৮:১৮

কাজী নজরুল ইসলাম বসে আছেন কল্লোলে। তার চারপাশ ঘিরে বন্ধুদের ভীড়। ভক্তদের জটলা। তারা সবাই কবির কর্মকান্ড দেখছেন। তার গান শুনছেন। একটু দূরে বসে আছেন বাংলাদেশের এক প্রকাশক। তিনি এসেছেন বিশেষ একটি উদ্দেশে। কবির সাথে তার একান্ত কিছু আলাপ আছে। জটলা কিছুটা হালকা হলো। ভীড় কমে আসছে। এখনই বলে ফেলতে হবে কবিকে। এখান থেকে বেরিয়ে গেলে তাকে আর ধরা যাবে না।

তিনি গিয়ে কাছে বসলেন কবির। তারপর তার মনের ইচ্ছা জানালেন কবিকে। ‘আমাদের খুব ইচ্ছা আপনি আমাদের নবীকে নিয়ে একটি বই লিখুন- যা বাঙালীর ঘরে ঘরে নবীকে পরিচয় করাবে নতুন সাজে। আপনি ভালো করেই জানেন, আমরা আমাদের নবীকে চিনতে পারিনি। তার জীবনী কেউ পড়িনি, তার কোমলতা ও নম্রতা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। শুধু মিলাদ-মাহফিলের সময় দাঁড়িয়ে ইয়া নবী সালামু আলাইকা পড়ি, আর কিছু না। জীবনের শেষ প্রান্তে বুড়া হওয়ার আগ পর্যন্ত তার সম্পর্কে কিছুই পড়ি না আমরা।’

প্রকাশকের এমন আকুল আবদার শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন কবি নজরুল ইসলাম। এই কোলাহলমুখর পরিবেশ ছেড়ে তিনি প্রকাশকের হাত ধরে তাকে নিয়ে বাইরে চলে এলেন। গিয়ে বসলেন একটি রেস্টুরেন্টে। তারপর ধীরস্থির হয়ে আবার বললেন, বলুন তো, আপনার প্রস্তাব কী? আমি তো ভাই সারাদিন ব্যস্ত। এই বন্দিশালা থেকে কিভাবে বের হতে পারি- তার ব্যবস্থা করতে পারবেন? এই হট্টগোলে বসে প্রিয়তম মানুষটিকে নিয়ে বই লেখা কিভাবে সম্ভব? উপকরণইবা পাবো কোথায়? আমার অনেক পড়তে হবে। অন্তত এখন কুড়ি-পঁিচশখানা বই-কিতাব লাগবে আমার। বিশেষ করে লাগবে ইবনে হিশামের লেখা, যিনি নবীজির জীবনী লিখে গেছেন পুরোপুরিভাবে।’

কবি নজরুল ইসলামের এই আগ্রহ দেখে বিগলিত হলেন প্রকাশক। তিনি বললেন, আপনি এই সুবে বাংলার পরমপ্রিয় বুলবুল কবি। আপনার কাছে আমাদের এ আঁসুমাখা মিনতি। এমন গ্রন্থ যদি আপনি লিখে যাবার সুযোগ না পান- তবে আপনার কোন ক্ষতি না হলেও মুসলমান হিসেবে এ জাতি হবে চিরবঞ্চিত। আপনি যে উদ্দেশে এ পৃথিবীতে এসেছেন, সেটিও তো অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে।

কাজী নজরুল তখনও ভাবছেন। তিনি বললেন, সবই বুঝলাম। কিন্তু এ গর্ত থেকে আমি মুক্ত হবো কিভাবে?

প্রকাশকের মুখে আনন্দের আভা। কবি সাহেব! সে বিষয়েও আমি ভেবেছি। রাজি হলে আপনাকে এক মাসের জন্য দার্জিলিং পাঠাবো, ওখানকার নিরিবিলি পরিবেশে লুই জুবিলি স্যানাটেরিয়ামের চার নম্বর রুমে আপনি থাকবেন। ওখানে বসে বসে লিখবেন। একমাসে লেখা শেষ হবে না জানি, তবে শুরু তো হবে। জানি, নবীর কালাম ভুলতে বসলে সবচেয়ে বেশি কান্না আসবে আপনার!’ এই বলে প্রকাশক ভদ্রলোক কবির হাতে অনেকগুলো টাকা গুঁজে দিলেন। টাকার পরিমাণ- তখনকার দিনের পাঁচশত টাকা।

কবি তখন আনন্দে ভাসছেন। তিনি উঠে দাঁড়িয়ে লোকটিকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, কাল থেকেই। আমি গ্রামোফোন কোম্পানী থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে নিচ্ছি। পড়ে থাকুক এই সব বাদ্যবাজনা। বাদ থাকুক এসব তবলা হারমোনিয়াম। আমি যেন শুনতে পাচ্ছি তার ডাক। তার আহবান।

দুদিন পর।

কবি রেলস্টেশনে গিয়ে পৌঁছলেন। দার্জিলিং মেইলে করে তিনি যাবেন ওখানে। তার সাথে কিছু খাতা-কলম আর কিছু বইপত্র। সেদিন কবির পরনে ছিল খুব সুন্দর খদ্দরের একটি পাঞ্জাবি-পাজামা। মাথায় টুপি। তার সাথে রওয়ানা হলেন একবন্ধু। নাম শাহরিয়ার খান।

অনেকদিন পর এই একটু অবসর পেলেন ক্লান্ত কবি। গান লেখা তারপর সুর করা, ট্রেনিং দেয়া, এখানে ওখানে সভাসমাবেশে হাজির হয়ে গান শোনানো, সংসারের ঝামেলা, টাকা পয়সার টানাটানি, লেখক-প্রকাশকদের তাগাদা- এই সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ট্রেনে উঠে রাজ্যের সব ক্লান্তি যেন এসে ভর করলো তার উপর। ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি। রাতভর ঘুমালেন চলন্ত ট্রেনে। ভোরে জেগে উঠলেন। দূর দেখা যাচ্ছে হিমালয়ের শীর্ষচূড়া। ঝিরঝিরে বাতাসের পরিবেশ। ট্রেন ছুটছে। ভোরের স্নিগ্ধতায় চারিদিকের পরিবেশ উপভোগ করছেন ভাবুক কবি। তিনি কোন এক ঘোরের মধ্যে ডুবে আছেন তন্ময় হয়ে। চিরচঞ্চল বিদ্রোহী নজরুলের এ যেন এক ভিন্ন রূপ।

কবির চিন্তায় তখন শুধুই প্রিয়নবী। নবীর ভালোবাসায় ডুবে আছেন তিনি। চলন্ত ট্রেনের কামরায় বসে কবি যেন ফিরে গেলেন চৌদ্দশ বছর আগের সেই আরবসময়ে। তিনি কাগজ কলম হাতে নিলেন। প্রিয়তম মানুষটির খেদমতে নিবেদন করলেন তার সবটুকু আবেগ ও ভালোবাসার বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলী।

তিনি লেখা শুরু করলেন, না জানা আনন্দে আজ আরাস্তা আজ আরবভূমি/ অচেনা বিহঙ্গ গাহে ফোটে কুসুম বে মরশুমী। আরবের তীর্থ লাগি’ ভিড় করে সব বেহেশত বুঝি/ এসেছে ধরার ধুলায় বিলিয়ে দিতে সুখের পুঁিজ।..’



কবির লেখা এ কয়েকটি লাইন পড়ে বিস্ময়ে হতবাক তার বন্ধু শাহরিয়ার। তিনি বললেন, ধন্য তুমি কবি। ধন্য বাংলা ভাষা এই পঙক্তিতে। তোমার আগে এমন করে হয়তো আর কেউ নবীজীবনী লিখতে পারেনি।





পরের পর্বে সমাপ্ত।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২০

মুহাই বলেছেন: সুন্দর ।

২| ১৬ ই মে, ২০১৩ রাত ৯:২০

মুহাই বলেছেন: সুন্দর ।

৩| ২৮ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:১৭

ডি মুন বলেছেন: বাহ :) :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.