![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রঙের দুনিয়ায় আমি এখনও ছাত্র,তবে শখের বশে লেখক, সাংবাদিক, অনুবাদক আবার কখনো আরও অনেক কিছু।
শুক্রবারের অবসর বিকালে একটু ঘোরাফেরা কিংবা বিনোদনের জন্য দোহাবাসী এসে ভিড় জমায় কাতারের রাজধানী দোহা শহরের ‘কোর্নিশে’। সাগরের তীরঘেঁষে সাত কিলোমিটার দীর্ঘ ওয়াকওয়ে এবং একপাশে সবুজ ঘাসের প্রশস্ত গালিচা। সারি সারি খেজুর গাছের ছায়ায় বসে সাগরের শান্ত জলরাশির দিকে তাকিয়ে দেশ সুদূরে ফেলে আসা পরিবার-পরিজনের কথা ভাবেন প্রবাসীরা। পরস্পরের আড্ডায় খোশগল্পে ভুলে থাকতে চান বিদেশজীবনের হাড়ভাঙা খাটুনি কিংবা পরিবারবিহীন নিঃসঙ্গ জীবনের বেদনা। যারা পরিবারসহ থাকেন, তারাও সপরিবারে এসে সাগরতীরে ঘোরাফেরা করেন। সবমিলিয়ে শুক্রবারের বিকালজুড়ে কোর্নিশ থাকে নানা দেশ ও বর্ণের বিচিত্র মানুষের পদচারণায় মুখর মুখরিত।
গতকাল আমিও যখন হাঁটছিলাম- হঠাৎ চোখে পড়লো সামান্য দূরে ছায়ায় বসে মনের সুখে কাবাব খাচ্ছেন একজন পরিচ্ছন্নকর্মী। শুভ্র সফেদ শশ্র“মন্ডিত এই প্রবীন পরিচ্ছন্নকর্মীকে দেখলে যে কারোরই মায়া কিংবা কিছু কথা বলার ইচ্ছা জাগা স্বাভাবিক। অবসর বিকালে কৌতুহলী নয়নে এগিয়ে গেলাম তার কাছে।
অনুমান সত্যি হলো। প্রবীন এ মানুষটি বাংলাদেশী। নাম- চান মিয়া। সিলেটের লালাবাজারে বাড়ি। দীর্ঘ তেত্রিশ বছর ধরে তিনি কাতারে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, ‘এত বছর? এই বয়সেও এখানে পড়ে আছেন? দেশে আর কবে যাবেন?’
লোকটির হাসিমুখে সরল স্বীকারোক্তি ‘দেশে যাবো কেন? এখানে আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন। ১৯৮০ সালে মাত্র পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে বালাদিয়া বা সিটি কর্পোরেশনের ভিসায় কাতারে এসেছিলাম। তখন বেতন ছিল ১২৬০ কাতারি রিয়াল। খুব ভালোভাবেই দিন যাচ্ছিল। তারপর একসময় আকস্মিক অন্ধকার নেমে এল। কয়েক বছর যেতে না যেতেই বেতন কমিয়ে ৭৫০ রিয়াল করে দেয়া হলো। এভাবে কেটে গেল আরও অনেক বছর। গত দু বছর আগে আবার বেতন বেড়েছে। বাড়তে বাড়তে এখন তা পৌঁছেছে ২২০০ রিয়ালে যা বাংলাদেশী টাকায় বর্তমানে ৪৭ হাজার টাকা।’
সাগরের পাশে বসে আমার মতো তরুণ উৎসাহী বাংলাদেশীকে পেয়ে তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। চোখে মুখে তার তৃপ্তি ও আনন্দের আলো। বিকালের সূর্যকিরণ সেই আলোর কাছে ম্লান। তিনি বলে চলেছেন, ‘এখন প্রতিদিন ছয়-সাত ঘন্টা ডিউটি করি। বিকাল তিনটা থেকে রাত নয়টা-দশট পর্যন্ত। এখানে ওখানে পড়ে থাকা ময়লা উঠিয়ে নিই। প্রায় প্রতিদিন মানুষ এখানে আসে এবং আমাকে দেখলে মায়া করে। নির্দিষ্ট বেতনের বাইরে প্রতিদিন ১০০-১৫০ রিয়াল বখশিশ পাই। লোকজনের এ মায়ায় ভর করেই তেত্রিশ বছর কাটিয়ে দিলাম বিদেশমাটিতে।’
বিদেশ থেকে উপার্জিত অর্থে সিলেটের লালাবাজারে দুইতলা বাড়ি করেছেন চানমিয়া। পরিবারে স্ত্রী, এক ছেলে ও দু মেয়ে। সবাই দেশেই থাকেন। মেধাশক্তির দুর্বলতায় ছেলেটির পড়ালেখা হয়নি বলে জানালেন তিনি। খুব শিগগিরই তাকে কাতারে নিয়ে আসবেন। আর দু বছর পর তার চাকরির মেয়াদ শেষ। তাকে স্থায়ীভাবে চলে যেতে হবে বাংলাদেশে। কিন্তু নিজের সন্তানকে রেখে যাবেন কাতারের মাটিতে। দেশের সংঘাত ও হানাহানির পরিবেশ থেকে দূরে তার ছেলেটিও ভালো থাকবে বলে আশাবাদ চানমিয়ার।
জীবন জীবিকার সন্ধানে ভরা তারুণ্যে দেশ ছেড়ে এসেছিলেন চানমিয়া। তারপর এই সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছর ধরে তিনি কাতারের ঘাসমাটি কিংবা রাজপথ পরিস্কার করেছেন। এখন তার বয়স ৫৮। কাজের ধরণ কিংবা থাকা-খাওয়া নিয়ে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই চানমিয়ার। দু বছর পর পর দেশে যান। মোবাইলের কল্যাণে নিয়মিত স্ত্রী পরিজনের কণ্ঠ শুনতে পান। একসময় খুব কষ্টে গেলেও নিয়মতান্ত্রিক সঞ্চয় করতে পেরেছেন বলেই তিনি আজ খুব সুখী।
চানমিয়ার পাশে বসে যখন তার সুখ-সাফল্যের গল্প শুনছিলাম, তখনও বেশ কয়েকজন আরব নারী এসে তার হাতে গুজে দিচ্ছিল দশ, বিশ কিংবা পঞ্চাশ রিয়ালের ‘মমতাময় বখশিশ’। আরবীতে দুআ জানিয়ে কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে সেসব পকেটে ভরছিলেন তিনি। হাতের প্লেটে থাকা কাবাবও কিছুক্ষণ আগে এক পরিবার ডেকে নিয়ে তুলে দিয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার এভাবেই মানুষের মায়া ও আনন্দের ভাগিদার হয়ে কেটে যায় চানমিয়ার।
কাতারের ঝকঝকে রাজপথ কিংবা আবর্জনামুক্ত সবুজ বাগানগুলোর এ অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পেছনে চানমিয়ার মতো আরো অসংখ্য বাংলাদেশী কর্মীরা দিন-রাত নিরন্তর খেটে চলেছেন। মাসশেষে লাইন ধরে পরিবারের জন্য উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠিয়ে দেন তারা। সেটা পেয়ে হাসি ফুটে পরিবারের মুখে, দেশের অর্থনীতির চাকা গতিময় হয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে- কিন্তু এই সুখ-সমৃদ্ধির কারিগর চানমিয়ারা চিরকালই রয়ে যান প্রচারের আড়ালে।
২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৯
মনে নাই বলেছেন: সত্যি কথা বলতে বিদেশের এয়ারপোর্টগুলোতে অনেক নিরাপদবোধ করি, কিন্তু আমাদের এয়ারপোর্টে গেলেই ভয়ের মধ্যে থাকি, কখন যে কি হয় দুশ্চিন্তার শেষ নাই।
৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৫
জনাব মাহাবুব বলেছেন: ইয়াহু! ভাই এই মাত্র সেফ (জেনারেল) হইলাম। এখন মন ভরে লিখতে পারবো।
সবাইকে শুভেচ্ছা।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০২
আনোয়ার ভাই বলেছেন: শ্রদ্ধেয় চান মিয়ারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখলেও তাদের কথা মনে রাখে না কেউ। নিজ দেশের এয়ারপোর্টে এসে তারা নানা বিড়ম্বনার শিকার হয়।
খুব ভাল লেখা। ধন্যবাদ লেখককে।